11. জুমু'আ

【1】

জুমু’আ ফরয হবার বিবরণ।

এ সম্পর্কে আল্লাহ্ তা'আলার বাণীঃ ''জুমু'আর দিনে যখন সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহ্‌র স্মরণের প্রতি ধাবিত হও এবং বন্ধ করে দাও বেচা-কেনা। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা জানতে।'' ----- অর্থ ধাবিত হও। (সূরা আল-জুমু’আ ৬২/৯) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন যে, আমরা দুনিয়ায় (আগমনের দিক দিয়ে) সর্বশেষ, কিন্তু কিয়ামাতের দিন আমরা মর্যাদার ব্যাপারে সবার পূর্বে। ব্যতিক্রম এই যে, আমাদের পূর্বে তাদের কিতাব প্রদান করা হয়েছে। অতঃপর তাদের সে দিন যে দিন তাদের জন্য ইবাদত ফরয করা হয়েছিল তারা এ বিষয়ে মতভেদ করেছে। কিন্তু সে বিষয়ে আল্লাহ্ আমাদের হিদায়েত করেছেন। কাজেই এ ব্যাপারে লোকেরা আমাদের পশ্চাদ্বর্তী। ইয়াহূদীদের (সম্মানীয় দিন হচ্ছে) আগামী কাল (শনিবার) এবং নাসারাদের আগামী পরশু (রোববার)।

【2】

জুমু'আর দিন গোসল করার তাৎপর্য। জুমু'আর দিবসে শিশু কিংবা নারীদের (সালাতের জন্য) উপস্থিতি কি প্রয়োজন?

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ জুমু‘আর সালাতে আসলে সে যেন গোসল করে। ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) ‘উমর ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) জুমু‘আর দিন দাঁড়িয়ে খুত্‌বা দিচ্ছিলেন, এ সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রথম যুগের একজন মুহাজির সাহাবা এলেন। ‘উমর (রাঃ) তাঁকে ডেকে বললেন, এখন সময় কত? তিনি বললেন, আমি ব্যস্ত ছিলাম, তাই ঘরে ফিরে আসতে পারিনি। এমন সময় আযান শুনে কেবল উযূ করে নিলাম। ‘উমর (রাঃ) বললেন, কেবল উযূই? অথচ আপনি জানেন যে, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোসলের নির্দেশ দিতেন। আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জুমু‘আর দিনে প্রত্যেক সাবালকের জন্য গোসল করা ওয়াজিব।

【3】

জুমু‘আর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার।

‘আমর ইব্‌নু সুলাইম আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ সা‘ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) বলেন, আমি এ মর্মে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জুমু‘আর দিন প্রত্যেক বালিগের জন্য গোসল করা কর্তব্য। আর মিস্‌ওয়াক করবে এবং সুগন্ধি পাওয়া গেলে তা ব্যবহার করবে। ‘আম্‌র (ইব্‌নু সুলায়ম) (রহঃ) বলেন, গোসল সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তা ওয়াজিব ৷ কিন্তু মিস্‌ওয়াক ও সুগন্ধি ওয়াজিব কিনা তা আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন। তবে হাদীসে এ রকমই আছে। আবূ ‘আবদুল্লাহ্‌ বুখারী (রহঃ) বলেন, আবূ বক্‌র ইব্‌নু মুনকাদির (রহঃ) হলেন মুহন্মাদ ইব্‌নু মুনকাদির (রহঃ)-এর ভাই ৷ কিন্তু তিনি আবূ বক্‌র হিসেবেই পরিচিত নন। বুকায়র ইব্‌নু আশাজ্জ, সা‘ঈদ ইব্‌নু আবূ হিলাল সহ অনেকে তাঁর হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুহাম্মাদ ইব্‌নু মুনকাদির (রহঃ)-এর কুনিয়াত (উপনাম) ছিল আবূ বক্‌র ও আবূ ‘আবদুল্লাহ্‌। (মুসলিম ৭/১, হাঃ ৮৪৬, আহমাদ ১১২৫০) (আ.প্র. ৮২৯, ই. ফা. ৮৩৬)

【4】

জুমু‘আর মর্যাদা।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন জানাবাত গোসলের ন্যায় গোসল করে এবং সালাতের জন্য আগমন করে সে যেন একটি উট কুরবানী করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় পর্যায়ে আগমন করে সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় পর্যায়ে যে আগমন করে সে যেন একটি শিং বিশিষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। চতুর্থ পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম পর্যায়ে যে আগমন করল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। পরে ইমাম যখন খুত্‌বা দেয়ার জন্য বের হন তখন মালাইকা (ফেরেশতাগণ) যিক্‌র শ্রবণের জন্য উপস্থিত হয়ে থাকে।

【5】

১১/৫.অধ্যায়ঃ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) জুমু‘আর দিন ‘উমর ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) খুত্‌বা দিচ্ছিলেন, এ সময় এক ব্যক্তি মসজিদে আসলে ‘উমর (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, সালাতে সময় মত আসতে তোমরা কেন বাধাগ্রস্ত হও? তিনি বললেন, আযান শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি উযূ করেছি। তখন ‘উমর (রাঃ) বললেন, তোমরা কি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শোননি যে, যখন তোমাদের কেউ জুমু‘আর সালাতে রওয়ানা দেয়, তখন সে যেন গোসল করে নেয়।

【6】

জুমু‘আর জন্য তৈল ব্যবহার করা।

সালমান ফারসী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হতে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দু’ জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুত্‌বা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমু’আ হতে আরেক জুমু’আ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। তাঊস (রহঃ) আমি ইব্‌নূ ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললাম, সাহাবীগণ বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জুমু‘আর দিন গোসল কর এবং মাথা ধুয়ে ফেল যদিও তোমরা জুনুবী না হয়ে থাক এবং সুগন্ধি ব্যবহার কর। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, গোসল সম্পর্কে নির্দেশ ঠিকই আছে, কিন্তু সুগন্ধি সম্পর্কে আমি জানি না। তাঊস (রহঃ) তিনি ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি যখন, জুমু‘আর দিন গোসল সম্বন্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীর উল্লেখ করেন তখন আমি ইব্‌নূ ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পরিবার পরিজনের সঙ্গে অবস্থান করতেন তখনও কি তিনি সুগন্ধি বা তেল ব্যবহার করতেন? তিনি বললেন, আমি তা জানি না ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) ‘উমর ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) মসজিদে নববীর দরজার নিকটে এক জোড়া রেশমী পোশাক (বিক্রি হতে) দেখে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! যদি এটি আপনি খরিদ করতেন আর জুমু‘আর দিন এবং যখন আপনার নিকট প্রতিনিধি দল আসে তখন আপনি তা পরিধান করতেন। তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা তো সে ব্যক্তিই পরিধান করে, আখিরাতে যার (মঙ্গলের) কোন অংশ নেই। অতঃপর আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ ধরনের কয়েক জোড়া পোশাক আসে, তখন তার এক জোড়া তিনি ‘উমর (রাঃ)-কে প্রদান করেন। ‘উমর (রাঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আমাকে এটি পরতে দিলেন অথচ আপনি উতারিদের (রেশম) পোশাক সম্পর্কে যা বলার তা তো বলেছিলেন। তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাকে এটি নিজের পরার জন্য দেইনি। ‘উমর ইব্‌নূ খাত্তাব (রাঃ) তখন এটি মক্কায় তাঁর এক ভাইকে দিয়ে দেন, যে তখন মুশরিক ছিল।

【7】

যা আছে তার মধ্যে থেকে উত্তম পোশাক পরিধান করবে।

‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) ‘উমর ইব্‌নু খাত্তাব (রাঃ) মসজিদে নববীর দরজার নিকটে এক জোড়া রেশমী পোশাক (বিক্রি হতে) দেখে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! যদি এটি আপনি খরিদ করতেন আর জুমু‘আর দিন এবং যখন আপনার নিকট প্রতিনিধি দল আসে তখন আপনি তা পরিধান করতেন। তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা তো সে ব্যক্তিই পরিধান করে, আখিরাতে যার (মঙ্গলের) কোন অংশ নেই। অতঃপর আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ ধরনের কয়েক জোড়া পোশাক আসে, তখন তার এক জোড়া তিনি ‘উমর (রাঃ)-কে প্রদান করেন। ‘উমর (রাঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আমাকে এটি পরতে দিলেন অথচ আপনি উতারিদের (রেশম) পোশাক সম্পর্কে যা বলার তা তো বলেছিলেন। তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাকে এটি নিজের পরার জন্য দেইনি। ‘উমর ইব্‌নূ খাত্তাব (রাঃ) তখন এটি মক্কায় তাঁর এক ভাইকে দিয়ে দেন, যে তখন মুশরিক ছিল। (৯৪৮,২১০৪, ২৬১২, ২৬১৯, ৩০৫৪, ৫৮৪১, ৫৯৮১, ৬০৮১ মুসলিম ৩৭/ আওয়ালুল কিতাব?, হাঃ ২০৬৮, আহমাদ ৫৮০১) (আ.প্র. ৮৩৫ ই.ফা. ৮৪২)

【8】

জুমু‘আর দিন মিস্‌ওয়াক করা।

আবূ সা‘ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি মিস্‌ওয়াক করতেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক সালাতের সাথে তাদের মিস্‌ওয়াক করার হুকুম করতাম। (৭২৪০; মুসলিম ২/১৫, হাঃ ২৫২, আহমাদ ৭৪১৬) (আ.প্র. ৮৩৬, ই.ফা. ৮৪৩) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি মিস্‌ওয়াক সম্পর্কে তোমাদের যথেষ্ট বলেছি। (আ. প্র. ৮৩৭, ই. ফা. ৮৪৪) হুযাইফা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাতে সালাতের জন্য উঠতেন তখন দাঁত মেজে পরিস্কার করে নিতেন। (২৪৫) (আ. প্র. ৮৩৮, ই.ফা. ৮৪৫)

【9】

অন্যের মিস্‌ওয়াক দিয়ে মিস্‌ওয়াক করা।

‘আয়িশা (রাঃ) ‘আবদুর রহমান ইব্‌নু আবূ বক্‌র (রাঃ) একটি মিস্‌ওয়াক হাতে নিয়ে দাঁত ঘষতে ঘষতে প্রবেশ করলেন। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে তাকালেন। আমি তাঁকে বললাম, হে ‘আবদুর রহমান! মিস্‌ওয়াকটি আমাকে দাও। সে তা আমাকে দিল। আমি ব্যবহৃত অংশ ভেঙ্গে ফেললাম এবং তা চিবিয়ে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিলাম। তিনি আমার বুকে হেলান দিয়ে তা দিয়ে মিস্‌ওয়াক করলেন। (১৩৮৯, ৩১০০, ৩৭৭৪, ৪৪৩৮, ৪৪৪৬, ৪৪৪৯, ৪৪৫০, ৪৪৫১, ৫২১৭, ৬৫১০) (আ. প্র. ৮৩৯, ই.ফা. ৮৪৬)

【10】

জুমু‘আর দিন ফজরের সালাতে কী পড়তে হবে?

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু‘আর দিন ফজরের সালাতে الم تَنْزِيلُ এবং وَهَلْ أَتَى عَلَى الْإِنْسَانِ حِينٌ مِنْ الدَّهْرِ দু’টি সূরা তেলাওয়াত করতেন। (১০৬৮; মুসলিম ৭/৬৪, হাঃ ৮৮০) (আ.প্র. ৮৪০, ই.ফা. ৮৪৭)

【11】

গ্রামে ও শহরে জুমু‘আর সালাত।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মসজিদে জুমু‘আর সালাত অনুষ্ঠিত হবার পর প্রথম জুমু‘আর সালাত অনুষ্ঠিত হয় বাহ্‌রাইনে জুওয়াসা নামক স্থানে অবস্থিত আবদুল কায়স গোত্রের মসজিদে। (৪৩৭১) (আ.প্র. ৮৪১, ই.ফা. ৮৪৮) ‘উমর (রাঃ) আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল। লায়স ইব্‌নু সা‘দ (রাঃ) আরো অতিরিক্ত বলেন, (পরবর্তী রাবী) ইউনুস (রহঃ) বলেছেন, আমি একদা ইব্‌নু শিহাব (রহঃ)-এর সঙ্গে ওয়াদিউল কুরা নামক স্থানে ছিলাম। তখন রুযাইক (ইব্‌নু হুকায়ম (রহঃ) ইব্‌নু শিহাব (রহঃ)-এর নিকট লিখলেন, আপনি কী মনে করেন, আমি কি (এখানে) জুমু‘আর সালাত আদায় করব? রুযায়ক (রহঃ) তখন সেখানে তাঁর জমির কৃষি কাজের তত্ত্বাবধান করতেন। সেখানে একদল সুদানী ও অন্যান্য লোক বাস করত। রুযায়ক (রহঃ) সে সময় আইলা শহরের (আমীর) ছিলেন। ইব্‌নু শিহাব (রহঃ) তাঁকে জুমু’আ কায়িম করার নির্দেশ দিয়ে লিখেছিলেন এবং আমি তাকে এ নির্দেশ দিতে শুনলাম। সালিম (রহঃ) তার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা সকলেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই অধীনস্থদের (দায়িত্ব) জিজ্ঞাস করা হবে। ইমাম [১] একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি, তাঁকে তাঁর অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। পুরুষ তার পরিবার বর্গের অভিভাবক, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। নারী তার স্বামী-গৃহের কর্ত্রী, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। খাদিম তার মনিবের ধন-সম্পদের রক্ষক, তাকেও তার মনিবের ধন-সম্পদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয়, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেনঃ পুত্র তার পিতার ধন-সম্পদের রক্ষক এবং এগুলো সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে। তোমরা সবাই দায়িত্বশীল এবং সবাইকে তাদের অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। (২৪০৯, ২৫৫৪, ২৫৫৮, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫৬০০, ৭১৩৮) (আ.প্র. ৮৪২, ই.ফা. ৮৪৯)

【12】

মহিলা, বালক-বালিকা এবং অন্য যারা জুমু‘আয় উপস্থিত হয় না, তাদের কি গোসল করা জরুরী?

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলেছেন, যাদের উপর জুমু‘আর সালাত ওয়াজিব, শুধু তাদের গোসল করা প্রয়োজন। ‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি জুমু‘আর সালাতে আসবে সে যেন গোসল করে।” আবূ সা‘ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – বলেছেনঃ প্রত্যেক সাবালকের জন্য জুমু‘আর দিন গোসল করা ওয়াজিব। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমরা দুনিয়ার (আগমনের দিক দিয়ে) সর্বশেষে। কিন্তু কিয়ামাতের দিন মর্যাদার দিক দিয়ে সবার পূর্বে। তবে তাদের কিতাব দেয়া হয়েছে আমাদের পূর্বে এবং আমাদের তা দেয়া হয়েছে তাদের পরে। অতঃপর এই দিন (শুক্রবার নির্ধারণ) সম্বন্ধে তাদের মধ্যে মতানৈক্য হয়েছে। আল্লাহ্ আমাদের এ শুক্রবার সম্পর্কে হিদায়েত দান করেছেন। পরের দিন (শনিবার) ইয়াহূদীদের এবং তারপরের দিন (রোববার) নাসারাদের। অতঃপর কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) অতঃপর আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন প্রত্যেক মুসলিমের উপর হক রয়েছে যে, প্রতি সাত দিনের এক দিন সে গোসল করবে, তার মাথা ও শরীর ধৌত করবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক মুসলিমের উপর আল্লাহ্‌র হক রয়েছে যে, প্রতি সাত দিনে একবার সে যেন গোসল করে।

【13】

১১/১৩. অধ্যায়ঃ

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা মহিলাদেরকে রাতে (সালাতের জন্য) মসজিদে যাওয়ার অনুমতি দিবে। ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমর (রাঃ)-এর স্ত্রী (আতিকাহ্‌ বিনত যায়দ) ফজর ও ‘ইশার সালাতের জামা‘আতে মসজিদে হাযির হতেন। তাঁকে বলা হল, আপনি কেন (সালাতের জন্য) বের হন? অথচ আপনি জানেন যে, ‘উমর (রাঃ) তা অপছন্দ করেন এবং মর্যাদা হানিকর মনে করেন। তিনি জবাব দিলেন, তা হলে কিসে বাধা দিচ্ছে যে, ‘উমর (রাঃ) স্বয়ং আমাকে নিষেধ করছেন না? বলা হল, তাঁকে বাধা দেয় আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ আল্লাহ্‌র দাসীদের আল্লাহ্‌র মসজিদে যেতে বারণ করো না।

【14】

বৃষ্টির কারণে জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত না হবার অবকাশ।

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি তাঁর মুয়ায্‌যিনকে এক প্রবল বর্ষণের দিনে বললেন, যখন তুমি (আযানে) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ্‌ বলবে, তখন ‘হাইয়া আলাস্‌ সালাহ্’ বলবে না, বলবে, “সাল্‌লু ফী বুয়ুতিকুম” (তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে সালাত আদায় কর)। তা লোকেরা অপছন্দ করল। তখন তিনি বললেনঃ আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিই (রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ) তা করেছেন। জুমু’আ নিঃসন্দেহে জরুরী। আমি অপছন্দ করি তোমাদেরকে মাটি ও কাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার অসুবিধায় ফেলতে।

【15】

কতদূর হতে জুমু‘আর সালাতে আসবে এবং জুমু’আ কার উপর ওয়াজিব?

(আরবী) কেননা, আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেছেনঃ জুমু‘আর দিন যখন সালাতের জন্য ডাকা হয়, (তখন) আল্লাহ্‌র যিকরের দিকে দৌড়িয়ে যাওয়া। (সূরা আল-জুমু’আ ৬২/৯) ‘আত্বা (রহঃ) বলেছেন, যখন তুমি কোন বড় শহরে বাস কর, জুমু‘আর দিন সালাতের জন্য আযান দেয়া হলে, তা তুমি শুনতে পাও বা না পাও, তোমাকে অবশ্যই জামা‘আতে হাযির হতে হবে। আনাস (রাঃ) যখন (বস্‌রা হতে) দু’ ফারসাখ্‌ (ছয় মাইল) দূরে অবস্থিত জাবিয়া নামক স্থানে তাঁর বাড়িতে অবস্থান করতেন, তখন কখনো জুমু’আ পড়তেন, কখনো পড়তেন না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, লোকজন তাদের বাড়ি ও উঁচু এলাকা হতেও জুমু‘আর সালাতের জন্য পালাক্রমে আসতেন। আর যেহেতু তারা ধুলো-বালির মধ্য দিয়ে আগমন করতেন, তাই তারা ধূলি মলিন ও ঘর্মাক্ত হয়ে যেতেন। তাঁদের দেহ হতে ঘাম বের হত। একদা তাদের একজন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট ছিলেন। তিনি তাঁকে বললেনঃ যদি তোমরা এ দিনটিতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে।

【16】

সূর্য হেলে গেলে জুমু‘আর সময় হয়

‘উমর, ‘আলী, নু‘মান ইব্‌নু বাশীর এবং ‘আম্‌র ইব্‌নু হুরায়স (রাঃ) হতেও অনুরূপ উল্লেখ রয়েছে। ইয়াহ্‌ইয়া ইব্‌নু সা‘ঈদ (রহঃ) তিনি ‘আম্‌রাহ (রহঃ)-কে জুমু‘আর দিনে গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। ‘আম্‌রাহ (রহঃ) বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেন যে, লোকজন নিজেদের কাজকর্ম নিজেরাই করতেন। যখন তারা দুপুরের পরে জুমু‘আর জন্য যেতেন তখন সে অবস্থায়ই চলে যেতেন। তাই তাঁদের বলা হল, যদি তোমরা গোসল করে নিতে। আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু‘আর সালাত আদায় করতেন, যখন সূর্য হেলে যেত। আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা প্রথম ওয়াক্তেই জুমু‘আর সালাতে যেতাম এবং জুমু‘আর পরে কাইলূলা (দুপুরের বিশ্রাম) করতাম।

【17】

জুমু‘আর দিন যখন সূর্যের উত্তাপ প্রখর হয়।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শীতের সময় প্রথম ওয়াক্তেই সালাত আদায় করতেন। আর তীব্র গরমের সময় ঠাণ্ডা করে (বিলম্ব করে- সালাত আদায় করতেন। অর্থাৎ জুমু‘আর সালাত। ইউনুস ইব্‌নু বুকায়র (রহঃ) আমাদের বলেছেন, আর তিনি সালাত শব্দের উল্লেখ করেছেন, জুমু’আ শব্দের উল্লেখ করেননি। আর বিশ্‌র ইব্‌নু সাবিত (রহঃ) বলেন, আমাদের নিকট আবূ খালদা (রহঃ) বর্ণনা করেছেন যে, জুমু‘আর ইমাম আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করেন। অতঃপর তিনি আনাস (রাঃ)-কে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সালাত কিরুপে আদায় করতেন?

【18】

জুমু‘আর জন্য পায়ে হেঁটে চলা

এবং আল্লাহ্‌র বাণীঃ “তোমরা আল্লাহ্‌র যিকরের জন্য দৌড়িয়ে আস”। যিনি বলেন, ‘সাঈ এর অর্থ কাজ করা, গমন করা। কেননা, আল্লাহ্‌র বাণীঃ ----এর অন্তর্গত সাঈ-এর অর্থ হচ্ছে কাজ করা। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তখন (জুমু‘আর আযানের পর) যাবতীয় ক্রয়-বিক্রয় হারাম হয়ে যায়। আত্বা (রহঃ) বলেন, শিল্প-কারিগরির যাবতীয় কাজই তখন নিষিদ্ধ হয়ে যায়। ইব্‌রাহীম ইব্‌ন সা‘দ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন, জুমু‘আর দিন যখন মুআয্‌যিন সফররত অবস্থায় আযান দেয় তখন তার জন্য জুমু‘আর সালাতে উপস্থিত হওয়া উচিত ৷ আবায়া ইব্‌নু রিফা‘আ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জুমু‘আর সালাতে যাবার কালে আবূ আব্‌স্‌ (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেন, আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, যার দু’পা আল্লাহ্‌র পথে ধূলি ধূসরিত হয়, আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যখন সালাত শুরু হয়, তখন দৌড়িয়ে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে না, বরং হেঁটে গিয়ে সালাতে যোগদান করবে। সালাতে ধীর-স্থিরভাবে যাওয়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কাজেই জামা‘আতের সাথে সালাত যতটুকু পাও আদায় কর, আর যা ছুটে গেছে, পরে তা পূর্ণ করে নাও। আবূ ক্বাতাদা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ তোমরা আমাকে না দেখা পর্যন্ত সালাতে দাঁড়াবে না। তোমাদের জন্য ধীর-স্থির থাকা অত্যাবশ্যক।

【19】

জুমু‘আর দিন দু’জনের মাঝে ফাঁক করে না।

সালমান ফারসী (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন গোসল করে এবং যথাসম্ভব উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করে, অতঃপর তেল মেখে নেয় অথবা সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর (মসজিদে) যায়, আর দু’জনের মধ্যে ফাঁক করে না এবং তার ভাগ্যে নির্ধারিত পরিমাণ সালাত আদায় করে। আর ইমাম যখন (খুত্‌বার জন্য) বের হন তখন চুপ থাকে। তার এ জুমু‘আ এবং পরবর্তী জুমু‘আর মধ্যবর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।

【20】

জুমু‘আর দিন কোন ব্যক্তি তার ভাইকে উঠিয়ে দিয়ে তার জায়গায় বসবে না।

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন, যেন কেউ তার ভাইকে স্বীয় বসার স্থান হতে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সে জায়গায় না বসে। ইব্‌নু জুরাইজ (রহঃ) বলেন, আমি নাফি‘ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ কি শুধু জুমু‘আর ব্যাপারে? তিনি বললেন, জুমু’আ ও অন্যান্য (সালাতের) ব্যাপারেও।

【21】

জুমু‘আর দিনের আযান।

সায়িব ইব্‌নু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ) এবং উমর (রাঃ)-এর সময় জুমু‘আর দিন ইমাম যখন মিম্বরের উপর বসতেন, তখন প্রথম আযান দেয়া হত। পরে যখন ‘উসমান (রাঃ) খলীফা হলেন এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি ‘যাওরাহ’ হতে তৃতীয় [১] আযান বৃদ্ধি করেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ্ (ইমাম বুখারী) (রহঃ) বলেন, ‘যাওরাহ’ হল মাদীনার অদূরে বাজারের একটি স্থান।

【22】

জুমু‘আর দিন একজন মুয়ায্‌যিনের আযান দেয়া।

সায়িব ইব্‌নু ইয়াযীদ (রাঃ) মদীনার অধিবাসীদের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেল, তখন জুমু‘আর দিন তৃতীয় আযান যিনি বৃদ্ধি করলেন, তিনি হলেন, উসমান ইব্‌নু ‘আফ্‌ফান (রাঃ)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় (জুমু‘আর জন্য) একজন ব্যতীত মুয়ায্‌যিন ছিল না এবং জুমু‘আর দিন আযান দেয়া হত যখন ইমাম বসতেন অর্থাৎ মিম্বরের উপর খুত্‌বার পূর্বে।

【23】

ইমাম মিম্বারের উপর বসে জবাব দিবেন, যখন আযানের আওয়ায শ্রবণ করেন।

মু‘আবিয়াহ ইব্‌নু আবূ সুফিয়ান (রাঃ) তিনি মিম্বারে বসা অবস্থায় মুয়ায্‌যিন আযান দিলেন। মুয়ায্‌যিন বললেন, “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার” মু‘আবিয়াহ (রাঃ) বললেন, “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।” মুয়ায্‌যিন বললেন, “আশ্‌হাদু আল্ লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” তিনি বললেন এবং আমিও (বলছি “আশ্‌হাদু আল্ লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ”)। মুয়ায্‌যিন বললেন, “আশ্‌হাদু আন্না মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্‌” তখন মু‘আবিয়াহ বললেন এবং আমিও বললাম। যখন (মুয়ায্‌যিন) আযান শেষ করলেন, তখন মু‘আবিয়াহ (রাঃ) বললেন, হে লোক সকল! তোমরা আমার হতে যে বাক্যগুলো শুনেছ, তা আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মুয়ায্‌যিনের আযানের সময় এ মজলিসে বাক্যগুলো বলতে আমি শুনেছি।

【24】

আযানের সময় মিম্বারের উপর বসা।

সায়িব ইব্‌নু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, মসজিদে মুসল্লীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে, ‘উসমান (রাঃ) জুমু‘আর দিন দ্বিতীয় আযানের নির্দেশ দেন। অথচ (ইতোপূর্বে) জুমু‘আর দিন ইমাম যখন (মিম্বারের উপর) বসতেন, তখন আযান দেয়া হতো।

【25】

খুত্‌বার সময় আযান।

সায়িব ইব্‌নু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বক্‌র এবং ‘উমর (রাঃ)-এর যুগে জুমু‘আর দিন ইমাম যখন মিম্বারের উপর বসতেন, তখন প্রথম আযান দেয়া হত। অত:পর যখন ‘উসমান (রাঃ)-এর খিলাফাতের সময় এল এবং লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন জুমু‘আর দিন তৃতীয় [১] আযানের নির্দেশ দেন। ‘যাওরা’ নামক স্থান হতে এ আযান দেয়া হয়, পরে এ আযানের সিলসিলা চলতে থাকে।

【26】

মিম্বারের উপর খুত্‌বা দেয়া।

আনাস (রাঃ) বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বার হতে খুত্‌বা দিতেন। আবূ হাযিম ইব্‌নু দীনার (রাঃ) (একদিন) কিছু লোক সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’দ সা’ঈদীর নিকট আগমন করে এবং মিম্বরটি কো্ন কাঠের তৈরি ছিল, এ নিয়ে তাদের মনে প্রশ্ন জেগে ছিল। তারা এ সম্পর্কে তাঁর নিকট জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি সম্যকরূপে অবগত আছি যে, তা কিসের ছিল। প্রথম যেদিন তা স্থাপন করা হয় এবং প্রথম যে দিন এর উপর আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসেন তা আমি দেখেছি। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের অমুক মহিলার (বর্ণনাকারী বলেন, সাহ্‌ল (রাঃ) তার নামও উল্লেখ করেছিলেন) নিকট লোক পাঠিয়ে বলেছিলেন, তোমার কাঠমিস্ত্রি গোলামকে আমার জন্য কিছু কাঠ দিয়ে এমন জিনিস তৈরি করার নির্দেশ দাও, যার উপর বসে আমি লোকদের সাথে কথা বলতে পারি। অতঃপর সে মহিলা তাকে আদেশ করেন এবং সে (মদীনাহ হতে নয় মাইল দূরবর্তী) গাবা’র ঝাউ কাঠ দ্বারা তা তৈরি করে নিয়ে আসে। মহিলাটি আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তা পাঠিয়েছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশে এখানেই তা স্থাপন করা হয়। অতঃপর আমি দেখেছি, এর উপর আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করেছেন। এর উপর উঠে তাকবীর দিয়েছেন এবং এখানে (দাঁড়িয়ে) রুকূ’ করেছেন। অতঃপর পিছনের দিকে নেমে এসে মিম্বারের গোড়ায় সিজদা করেছেন এবং (এ সিজদা) পুনরায় করেছেন, অতঃপর সালাত শেষ করে সমবেত লোকদের দিকে ফিরে বলেছেনঃ হে লোক সকল! আমি এটা এ জন্য করেছি যে, তোমরা যেন আমার অনুসরণ করতে এবং আমার সালাত শিখে নিতে পার। জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, (মসজিদে নাববীতে) এমন একটি (খেজুর গাছের) খুঁটি ছিল যার সাথে হেলান দিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়াতেন। অতঃপর যখন তাঁর জন্য মিম্বর স্থাপন করা হল, আমরা তখন খুঁটি হতে দশ মাসের গর্ভবতী উট্‌নীর মত ক্রন্দন করার শব্দ শুনতে পেলাম। এমনটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বার হতে নেমে এসে খুঁটির উপর হাত রাখলেন। ‘আবদুল্লাহ্ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বারের উপর হতে খুত্‌বা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমু’আর সালাতে আসে সে যেন গোসল করে নেয়।

【27】

দাঁড়িয়ে খুত্‌বা প্রদান করা।

আনাস (রাঃ) বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুত্‌বা দিতেন। ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুত্‌বা দিতেন। অতঃপর বসতেন এবং পুনরায় দাঁড়াতেন। যেমন তোমরা এখন করে থাক।

【28】

খুত্‌বার সময় মুসল্লীগণের ইমামের দিকে আর ইমাম মুসল্লীগণের দিকে মুখ করা।

ইব্‌নু ‘উমর ও আনাস (রাঃ) ইমামের দিকে মুখ করতেন। আবূ সা’ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা মিম্বারের উপর বসলেন এবং আমরা তাঁর চারদিকে (মুখ করে) বসলাম।

【29】

খুত্‌বায় আল্লাহ্‌র হাম্‌দের পর ‘আম্‌মা বা‘দু’ বলা।

‘ইক্বরিমাহ (রহঃ) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) – এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। আস্‌মা বিন্‌ত আবূ বক্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, আমি (একদিন) ‘আয়িশা (রাঃ) এর নিকট গেলাম। লোকজন তখন সালাত আদায় করছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, লোকদের কী হয়েছে? তখন তিনি মাথা দিয়ে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি কোন নিদর্শন? তিনি মাথা দিয়ে ইঙ্গিত করে, হ্যাঁ বললেন। (এরপর আমিও তাঁদের সঙ্গে সালাত যোগ দিলাম) অতঃপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত এত দীর্ঘায়িত করলেন যে, আমি প্রায় অজ্ঞান হতে যাচ্ছিলাম। আমার পার্শ্বেই একটি চামড়ার মশকে পানি রাখা ছিল। আমি সেটা খুললাম এবং আমার মাথায় পানি দিতে লাগলাম। অতঃপর যখন সূর্য উজ্জ্বল হয়ে উঠলো তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত সমাপ্ত করলেন এবং লোকজনের উদ্দেশ্যে খুত্‌বা পেশ করলেন। প্রথমে তিনি আল্লাহ্‌র যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন। অতঃপর বললেন, আম্‌মা বা’দু। আসমা (রাঃ) বলেন, তখন কয়েকজন আনসারী মহিলা শোরগোল করছিলেন। তাই আমি চুপ করাবার উদ্দেশ্যে তাঁদের প্রতি ঝুঁকে পড়লাম। অতঃপর ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী বললেন? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, এমন কোন জিনিস নেই যা আমাকে দেখানো হয়নি আমি এ জায়গা হতে সব কিছুই দেখেছি। এমন কি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখলাম। আমার নিকট ওয়াহী পাঠানো হয়েছে যে, তোমাদেরকে কবরে মাসীহ্ দাজ্জালের ফিত্‌নার ন্যায় অথবা তিনি বলেছেন, সে ফিত্‌নার কাছাকাছি ফিতনায় ফেলা হবে। (অর্থাৎ তোমাদেরকে পরীক্ষার সম্মুখীন করা হবে) তোমাদের প্রত্যেককে (কবরে) উঠানো এবং প্রশ্ন করা হবে, এ ব্যক্তি (রসূলুল্লাহ্) সম্পর্কে তুমি কী জান? তখন মু’মিন অথবা মুকিন (নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু’টোর মধ্যে কোন শব্দটি বলেছিলেন এ ব্যাপারে বর্ণনাকারী হিশামের মনে সন্দেহ রয়েছে) বলবে, তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল, তিনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তিনি আমাদের নিকট সুস্পষ্ট দালীল ও হিদায়েত নিয়ে এসেছিলেন। অতঃপর আমরা ঈমান এনেছি, তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়েছি, তাঁর আনুগত্য করেছি এবং তাকে সত্য বলে গ্রহণ করেছি। তখন তাঁকে বলা হবে, তুমি ঘুমিয়ে থাক, যেহেতু তুমি নেককার। তুমি যে তাঁর প্রতি ঈমান এনেছ তা আমরা অবশ্যই জানতাম। আর মুনাফিক বা মুরতাব (সন্দেহ পোষণকারী) (এ দু’টোর মধ্যে কোন্ শব্দটি বলেছিলেন এ সম্পর্কে বর্ণনাকারী হিশামের মনে সন্দেহ রয়েছে)-কেও প্রশ্ন করা হবে যে, এ ব্যক্তি সম্পর্কে তুমি কী জান? উত্তরে সে বলবে, আমি কিছুই জানি না। অবশ্য মানুষকে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছি, আমিও তাই বলতাম। হিশাম (রহঃ) বলেন, ফাতিমা (রাঃ) আমার নিকট যা বলেছেন, তা সবটুকু আমি উত্তমরূপে স্মরণ রেখেছি। তবে তিনি ওদের প্রতি যে কঠোরতা করা হবে তাও উল্লেখ করেছেন। ‘আম্‌র ইব্‌নু তাগলিব (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কিছু মাল বা কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দী উপস্থিত করা হলে তিনি তা বণ্টন করে দিলেন। বণ্টনের সময় কিছু লোককে দিলেন এবং কিছু লোককে বাদ দিলেন। অতঃপর তাঁর নিকট সংবাদ পৌঁছলো যে, যাদের তিনি দেননি, তারা অসন্তুষ্ট হয়েছে। তখন আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন ও তাঁর মহিমা বর্ণনা করলেন, অতঃপর বললেনঃ ‘আম্‌মা বা‘দ। আল্লাহ্‌র শপথ! আমি কোন লোককে দেই আর কোন লোককে দেই না। যাকে আমি দেইনা সে, যাকে আমি দেই তাঁর চেয়ে আমার নিকট অধিক প্রিয়। তবে আমি এমন লোকদের দেই যাদের অন্তরে অধৈর্য ও মালের প্রতি লিপ্সা দেখতে পাই; আর কিছু লোককে আল্লাহ্‌ যাদের অন্তরে অমুখাপেক্ষিতা ও কল্যাণ রেখেছেন, তাদের সে অবস্থার উপর ন্যস্ত করি। তাদের মধ্যে আম্‌র ইব্‌নু তাগলিব একজন। বর্ণনাকারী ‘আম্‌র ইব্‌নু তাগলিব (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ বাণীর পরিবর্তে আমি লাল উটও [১] পছন্দ করি না। ‘আয়িশা (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক রাতের মধ্যভাগে বের হলেন এবং মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করলেন। তাঁর সঙ্গে সাহাবীগণও সালাত আদায় করলেন, সকালে তাঁরা এ নিয়ে আলোচনা করলেন। ফলে (দ্বিতীয় রাতে) এর চেয়ে অধিক সংখ্যক সাহাবা একত্রিত হলেন এবং তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলেন। পরের দিন সকালেও তাঁরা এ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। ফলে তৃতীয় রাতে মসজিদে লোকসংখ্যা অত্যাধিক বৃদ্ধি পেল। আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হলেন এবং সাহাবীগণ তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলেন। চতুর্থ রাতে মসজিদে মুসল্লীগণের স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। অবশেষে তিনি ফজরের সালাতের জন্য বের হলেন এবং ফজরের সালাত শেষ করে লোকদের দিকে ফিরলেন। অতঃপর আল্লাহ্‌র হামদ ও সানা বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেনঃ আম্‌মা বা’দ (তারপর বক্তব্য এই যে) এখানে তোমাদের উপস্থিতি আমার নিকট গোপন ছিল না, কিন্তু আমার আশংকা ছিল, তা তোমাদের জন্য ফরয করে দেয়া হয় আর তোমরা তা আদায় করতে অপারগ হয়ে পড়। আবু হুমায়দ সা’ঈদ (রাঃ) এক সন্ধ্যায় সালাতের পর আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন এবং শাহাদাত বাণী পাঠ করলেন। আর যথাযথভাবে আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন। অতঃপর বললেন, ‘আম্মা বা’দ’। মিসওয়ার ইবনু মাখ্‌রামা (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন। অতঃপর আমি তাঁকে তাওহীদের সাক্ষ্য বাণী পাঠান্তে বলতে শুনলাম, ‘আম্‌মা বা’দ’। ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বরের উপর আরোহণ করলেন। এ ছিল তাঁর জীবনের শেষ মজলিস। তিনি বসেছিলেন, তাঁর দু’ কাঁধের উপর বড় চাদর জড়ানো ছিল এবং মাথায় বাঁধা ছিল কালো পট্টি। তিনি আল্লাহ্‌র গুণকীর্তন করলেন এবং তাঁর মহিমা বর্ণনা করলেন, অতঃপর বললেন, হে লোক সকল! তোমরা আমার নিকট আস। লোকজন তাঁর নিকট একত্র হলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ ‘আম্‌মা বা’দ’। শুনে রাখ, এ আনসার গোত্র সংখ্যায় কমতে থাকবে এবং অন্য লোকেরা সংখ্যায় বাড়তে থাকবে। কাজেই যে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উম্মাতের কোন বিষয়ের কর্তৃত্ব লাভ করবে এবং সে এর সাহায্যে কারো ক্ষতি বা উপকার করার সুযোগ পাবে, সে যেন এই আনসারদের সৎ লোকদের ভাল কাজগুলো গ্রহণ করে এবং তাদের মন্দ কাজগুলো মাফ করে দেয়।

【30】

জুমু’আর দিন দু’ খুত্‌বার মধ্যখানে বসা।

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ খুত্‌বা দিতেন আর দু’ খুত্‌বার মধ্যখানে বসতেন।

【31】

মনোযোগের সাথে খুত্‌বা শোনা।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জুমু’আর দিন মসজিদের দরজায় মালাইকা (ফেরেশতাগণ) অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে পূর্বে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার পূর্বে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি মোটাতাজা উট কুরবানী করে। অতঃপর যে আসে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে একটি গাভী কুরবানী করে। অতঃপর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগী দানকারীর ন্যায়। অতঃপর আগমনকারী ব্যক্তি একটি ডিম দানকারীর ন্যায়। অতঃপর ইমাম যখন বের হন তখন মালাইকা (ফেরেশতাগণ) তাঁদের খাতা বন্ধ করে দিয়ে মনোযোগ সহকারে খুত্‌বা শ্রবণ করতে থাকেন।

【32】

ইমাম খুত্‌বা দেয়ার সময় কাউকে আসতে দেখলে তাকে দু’ রাক’আত সালাত আদায়ের নির্দেশ দেয়া।

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, (কোন এক) জুমু’আর দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের সামনে খুত্‌বা দিচ্ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে অমুক! তুমি কি সালাত আদায় করেছ? সে বলল, না; তিনি বললেন, উঠ, সালাত আদায় করে নাও। [১]

【33】

ইমাম খুত্‌বা দেয়ার সময় যিনি মসজিদে আগমন করবেন তার সংক্ষেপে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করা।

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক জুমা’আহ্‌র দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্‌বা দেয়ার সময় এক ব্যক্তি প্রবেশ করলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সালাত আদায় করেছ কি? সে বলল, না; তিনি বললেনঃ উঠ, দু’রাক’আত সালাত আদায় কর।

【34】

খুত্‌বায় দু’ হাত উত্তোলন করা।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক জুম’আর দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্‌বা দিচ্ছিলেন। তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! (পানির অভাবে) ঘোড়া মরে যাচ্ছে, ছাগল বকরীও মরে যাচ্ছে। কাজেই আপনি দু’আ করুন, যেন আল্লাহ্‌ আমাদেরকে বৃষ্টি দান করেন। তখন তিনি দু’হাত প্রসারিত করলেন এবং দু’আ করলেন।

【35】

জুমু’আর দিন খুত্‌বায় বৃষ্টির জন্য দু’আ পাঠ করা।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে একবার দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। সে সময় কোন এক জুমু’আর দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্‌বা দিচ্ছিলিন। তখন এক বেদুইন উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! (বৃষ্টির অভাবে) সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পরিবার পরিজনও অনাহারে রয়েছে। তাই আপনি আল্লাহ্‌র নিকট আমাদের জন্য দু’আ করুন। তিনি দু’ হাত তুললেন। সে সময় আমরা আকাশে এক খণ্ড মেঘও দেখিনি। যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ (করে বলছি)! (দু’আ শেষে) তিনি দু’ হাত (এখনও) নামান নি, এমন সময় পাহাড়ের ন্যায় মেঘের বিরাট বিরাট খণ্ড উঠে আসল। অতঃপর তিনি মিম্বার হতে নীচে নামেননি, এমন সময় দেখতে পেলাম তাঁর দাড়ির উপর ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। সে দিন আমাদের এখানে বৃষ্টি হল। এর পরে ক্রমাগত দু’দিন এবং পরবর্তী জুমু’আ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন। (পরবর্তী জুমু’আর দিন) সে বেদুইন অথবা অন্য কেউ উঠে দাঁড়াল এবং আরয করল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! (বৃষ্টির কারণে) এখন আমাদের বাড়ী ঘর ধ্বসে পড়ছে, সম্পদ ডুবে যাচ্ছে। তাই আপনি আমাদের জন্য আল্লাহ্‌র নিকট দু’আ করুন। তখন তিনি দু’ হাত তুললেন এবং বললেনঃ হে আল্লাহ্‌ আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় (বৃষ্টি দাও), আমাদের উপর নয়। (দু’আর সময়) তিনি মেঘের এক একটি খণ্ডের দিকে ইশারা করছিলেন, আর সেখানকার মেঘ কেটে যাচ্ছিল। এর ফলে চতুর্দিকে মেঘ পরিবেষ্টিত অবস্থায় ঢালের ন্যায় মদীনার আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে এবং কানাত উপত্যকার পানি একমাস ধরে প্রবাহিত হতে লাগল, তখন (মদীনার) চারপাশের যে কোন অঞ্চল হতে যে কেউ এসেছে, সে এ প্রবল বৃষ্টির কথা আলোচনা করেছে।

【36】

জুমু’আর দিন ইমাম খুত্‌বাহ দেয়ার সময় অন্যকে চুপ করানো।

যদি কেউ তার সাথীকে (মুসল্লীকে বলে) চুপ থাক, তাহলে সে একটি অনর্থক কথা বললো। সালমান ফারসী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, যখন ইমাম কথা বলবেন, তখন চুপ থাকবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জুমু’আর দিন যখন তোমার পাশের মুসল্লীকে চুপ থাক বলবে, অথচ ইমাম খুত্‌বা দিচ্ছেন, তা হলে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে।

【37】

জুমু’আর দিনের সে মুহূর্তটি।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আর দিন সম্পর্কে আলোচনা করেন এবং বলেন, এ দিনে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, যে কোন মুসলিম বান্দা যদি এ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্‌র নিকট কিছু প্রার্থনা করে, তবে তিনি তাকে অবশ্যই তা দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত।

【38】

জুমু’আর সালাতে কিছু মুসল্লী যদি ইমামের নিকট হতে চলে যায় তাহলে ইমাম ও অবশিষ্ট মুসল্লীগণের সালাত বৈধ হবে।

জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে (জুমু’আর) সালাত আদায় করছিলাম। এমন সময় খাদ্য দ্রব্য বহনকারী একটি উটের কাফিলা হাযির হল এবং তারা (মুসল্লীগণ) সে দিকে এত অধিক মনোযোগী হলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মাত্র বারোজন মুসল্লী অবশিষ্ট ছিলেন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “এবং যখন তারা ব্যবসা বা খেল তামাশা দেখতে পেল তখন সে দিকে দ্রুত চলে গেল এবং আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে গেল”- (সূরা জুমু’আ ৬২/১১)।

【39】

জুমু’আর (ফরয সালাতের) পূর্বে ও পরে সালাত আদায় করা।

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের পূর্বে দু’ রাক’আত ও পরে দু’ রাক’আত, মাগরিবের পর নিজের ঘরে দু’ রাক’আত এবং ‘ইশার পর দু’ রাক’আত সালাত আদায় করতেন। আর জুমু’আর দিন নিজের ঘরে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতেন না। (ঘরে গিয়ে) দু’ রাক’আত সালাত আদায় করতেন। [১]

【40】

মহান আল্লাহ্‌র বাণী : “অতঃপর যখন সালাত সমাপ্ত হবে তখন তোমরা যমীনে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ তালাশ করবে।” (সুরাহ্ জুমু’আ ৬২/১০)

সাহ্‌ল (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে বসবাসকারিণী জনৈকা মহিলা একটি ছোট নহরের পাশে ক্ষেতে বীটের চাষ করতেন। জুমু’আর দিনে সে বীটের মূল তুলে এনে রান্নার জন্য ডেগে চড়াতেন এবং এর উপর এক মুঠো যবের আটা দিয়ে রান্না করতেন। তখন এ বীট মূলই এর গোশ্‌ত (গোশতের বিকল্প) হয়ে যেত। আমরা জুমু’আর সালাত হতে ফিরে এসে তাঁকে সালাম দিতাম। তিনি তখন খাদ্য আমাদের সামনে রাখতেন এবং আমরা তা খেতাম। আমরা সে খাদ্যের আশায় জুমু’আর দিন উদগ্রীব থাকতাম। সাহ্‌ল ইব্‌নু সা’দ (রাঃ) তিনি আরো বলেছেন, জুমু’আ (সালাতের) পরই আমরা কায়লূলাহ (দুপুরের শয়ন ও হাল্‌কা নিদ্রা) এবং দুপুরের আহার্য গ্রহণ করতাম।

【41】

জুমু’আর পরে কায়লুলাহ (দুপুরে শয়ন ও হালকা নিদ্রা)।

হুমাইদ (রাঃ) তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন: আমরা সকাল সকাল জুমু’আয় যেতাম অতঃপর (সালাত শেষে) কায়লূলাহ করতাম। সাহ্‌ল (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে জুমু’আর সালাত আদায় করতাম। অতঃপর দুপুরের বিশ্রাম ও হালকা নিদ্রা যেতাম।