48. বন্ধক
স্থায়ী বাসস্থানে থাকা অবস্থায় বন্ধক রাখা।
মহান আল্লাহর বাণীঃ যদি তোমরা সফরে থাক এবং কোন লেখক না পাও, তবে বন্ধক রাখা বৈধ। (আল-বাকারা : ২৮৩) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যবের বিনিময়ে তাঁর বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন। আমি একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে যবের রুটি এবং দুর্গন্ধ যুক্ত চর্বি নিয়ে গেলাম, তখন তাঁকে বলতে শুনলাম, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবার পরিজনের কাছে কোন সকাল বা সন্ধ্যায় এক সা‘ এর অতিরিক্ত (কোন খাদ্য) দ্রব্য থাকে না। [আনাস (রাঃ) বলেন] সে সময়ে তারা মোট নয় ঘর (নয় পরিবার) ছিলেন।
যে ব্যক্তি নিজ বর্ম বন্ধক রাখে।
‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ইয়াহূদীর কাছ হতে নির্দিষ্ট মেয়াদে খাদ্য শস্য খরিদ করেন এবং নিজের বর্ম তার কাছে বন্ধক রাখেন।
অস্ত্র বন্ধক রাখা।
জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কা‘ব ইবনু আশরাফকে হত্যা করার দায়িত্ব কে নিতে পারবে? আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলকে সে তো কষ্ট দিয়েছে। মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) তখন বললেন, আমি। পরে তিনি তার কাছে গিয়ে বললেন, আমরা তোমার কাছে এক ওয়াসাক অথবা বলেছেন, দু’ওয়াসাক (খাদ্য) ধার চাচ্ছি। সে বলল, তোমাদের মহিলাদেরকে আমার কাছে বন্ধক রাখ। তিনি বললেন, তুমি হলে আরবের সেরা সুন্দর ব্যক্তি। তোমার কাছে কিভাবে মহিলাদেরকে বন্ধক রাখতে পারি? সে বলল, তাহলে তোমাদের সন্তানদের আমার কাছে বন্ধক রাখ। তিনি বললেন, কিভাবে সন্তানদেরকে তোমার কাছে বন্ধক রাখি। পরে এই বলে তাদের নিন্দা করা হবে যে, দু’ এক ওয়াসাকের জন্য তারা বন্ধক ছিল, এটা আমাদের জন্য হবে বিরাট কলঙ্ক। তার চেয়ে বরং আমরা তোমার কাছে আমাদের অস্ত্র বন্ধক রাখতে পারি। রাবী সুফিয়ান (রহঃ) (আরবী) শব্দের অর্থ করেছেন অস্ত্র। তারপর তিনি তাকে পরে আসার প্রতিশ্রুতি দিলেন এবং (পরে এসে) তাঁরা তাকে হত্যা করলেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে সে সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলেন।
বন্ধক রাখা জন্তুর উপর চড়া যায় এবং দুধ দোহন করা যায়।
মুগীরা (রহঃ) ইবরাহীম (রহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, হারিয়ে যাওয়া প্রাণী যে পাবে সে তার ঘাসের (ও অন্যান্য প্রয়োজনীয়) খরচ পরিমাণ আরোহণ করতে পারবে এবং ঘাসের খরচ পরিমাণ দুধ দোহন করতে পারবে। বন্ধক প্রাণীর ব্যাপারটিও অনুরূপ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বন্ধকী প্রাণীর উপর তার খরচ পরিমাণ আরোহণ করা যাবে। তদ্রূপ দুধেল প্রাণী বন্ধক থকলে (খরচ পরমাণ) তার দুধ পান করা যাবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বাহনের পশু বন্ধক থাকলে তার খরচের পরিমাণে তাতে আরোহণ করা যাবে। তদ্রূপ দুধেল প্রাণী বন্ধক থাকলে তার খরচের পরিমাণে দুধ পান করা যাবে। (মোট কথা) আরোহণকারী এবং দুধ পানকারীকেই খরচ বহন করতে হবে।
ইয়াহূদী ও অন্যান্যদের (অমুসলিমের) নিকট বন্ধক রাখা।
‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ইয়াহুদী হতে কিছু খাদ্যদ্রব্য কিনেছিলেন এবং তার কাছে নিজের বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন।
বন্ধকদাতা ও বন্ধক গ্রহীতার মাঝে বিরোধ দেখা দিলে বা অনুরূপ কোন কিছু হলে বাদীর দায়িত্ব সাক্ষী পেশ করা আর বিবাদীর দায়িত্ব শপথ করা।
ইবনু আবূ মুলাইকা তিনি বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট আমি (একবার বাদী বিবাদীর মতবিরোধ সম্পর্কে) লিখে পাঠালাম। তার জবাবে তিনি আমাকে লিখলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই ফায়সালা দিয়েছেন যে, (বাদী সাক্ষী পেশ করতে ব্যর্থ হলে) কসম করা বিবাদীর কর্তব্য। ‘আবদুল্লাহ্ (ইবনু মাসঊদ) (রাঃ) তিনি বলেন, মিথ্যা কসম করে যে ব্যক্তি অর্থ-সম্পদ হস্তগত করে সে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এ অবস্থায় যে, আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত থাকবেন। তারপর আল্লাহ তা‘আলা [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর] উক্ত বাণী সমর্থন করে আয়াত নাযিল করলেন : “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের প্রতিশ্রুতি তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, তারা পরকালে কোন অংশ পাবে না আর কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাদের সাথে কথাও বলবেন না এবং তাদের প্রতি দৃষ্টিপাতও করবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না, আর তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে”- (আল ইমরান ৭৭)। (রাবী বলেন) পরে আশ‘আস ইবনু কায়স (রাঃ) আমাদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আবূ আবদুর রহমান (ইবনু মাসঊদ) তোমাদের কী হাদীস শুনালেন (রাবী বলেন), আমরা তাকে হাদীসটি শুনালে তিনি বললেন, তিনি নির্ভুল হাদীস শুনিয়েছেন। আমাকে কেন্দ্র করেই তো আয়াতটি নাযিল হয়েছিল। কুয়া (এর মালিকানা) নিয়ে আমার সাথে এক লোকের ঝগড়া চলছিল। পরে আমরা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে বিরোধটি উত্থাপন করলাম। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আমাকে) বললেন, তুমি দু’জন সাক্ষী উপস্থিত করবে, নতুবা সে হলফ করবে। আমি বললাম, তবে তো সে নির্দ্বিধায় হলফ করে বসবে। তখন রসূলুলাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা হলফ করে অর্থ-সম্পদ হস্তগত করবে, সে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাৎ করবে এ অবস্থায় যে, আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত থাকবেন। তিনি (আশ‘আস) বলেন, তখন আল্লাহ তা‘আলা এর সমর্থনে আয়াত নাযিল করলেন। অতঃপর তিনি (আশ‘আস) এই আয়াত : (আরবী) তিলাওয়াত করলেন। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, মিথ্যা কসম করে যে ব্যক্তি অর্থ-সম্পদ হস্তগত করে সে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এ অবস্থায় যে, আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত থাকবেন। তারপর আল্লাহ তা‘আলা [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর] উক্ত বাণী সমর্থন করে আয়াত নাযিল করলেন : “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের প্রতিশ্রুতি তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, তারা পরকালে কোন অংশ পাবে না আর কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাদের সাথে কথাও বলবেন না এবং তাদের প্রতি দৃষ্টিপাতও করবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না, আর তাদের জন্য মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে”- (আল ইমরান ৭৭)। (রাবী বলেন) পরে আশ‘আস ইবনু কায়স (রাঃ) আমাদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আবূ আবদুর রহমান (ইবনু মাসঊদ) তোমাদের কী হাদীস শুনালেন (রাবী বলেন), আমরা তাকে হাদীসটি শুনালে তিনি বললেন, তিনি নির্ভুল হাদীস শুনিয়েছেন। আমাকে কেন্দ্র করেই তো আয়াতটি নাযিল হয়েছিল। কুয়া (এর মালিকানা) নিয়ে আমার সাথে এক লোকের ঝগড়া চলছিল। পরে আমরা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে বিরোধটি উত্থাপন করলাম। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আমাকে) বললেন, তুমি দু’জন সাক্ষী উপস্থিত করবে, নতুবা সে হলফ করবে। আমি বললাম, তবে তো সে নির্দ্বিধায় হলফ করে বসবে। তখন রসূলুলাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি মিথ্যা হলফ করে অর্থ-সম্পদ হস্তগত করবে, সে (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ্র সাথে সাক্ষাৎ করবে এ অবস্থায় যে, আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত থাকবেন। তিনি (আশ‘আস) বলেন, তখন আল্লাহ তা‘আলা এর সমর্থনে আয়াত নাযিল করলেন। অতঃপর তিনি (আশ‘আস) এই আয়াত : (আরবী) তিলাওয়াত করলেন।