5. গোসল

【1】

গোসলের পূর্বে উযূ করা।

‘আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন প্রথমে তাঁর হাত দু'টো ধুয়ে নিতেন। অতঃপর সালাতের উযূর মত উযূ করতেন। অতঃপর তাঁর আঙ্গুলগুলো পানিতে ডুবিয়ে নিয়ে চুলের গোড়া খিলাল করতেন। অতঃপর তাঁর উভয় হাতের তিন আঁজলা পানি মাথায় ঢালতেন। তারপর তাঁর সারা দেহের উপর পানি ঢেলে দিতেন। (২৬২, ২৭২; মুসলিম ৩/৯, হাঃ ৩১৬, আহমাদ ২৫৭০৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৪৬) মাইমূনা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের উযূর ন্যায় উযূ করলেন, পা দুটো ব্যতীত এবং তাঁর লজ্জাস্থান ও যে যে স্থানে নোংরা লেগেছে তা ধুয়ে নিলেন। অতঃপর নিজের উপর পানি ঢেলে দেন। অতঃপর সেখান হতে সরে গিয়ে পা দু'টো ধুয়ে নেন। এই ছিল তাঁর জানাবাতের গোসল। (২৫৭, ২৫৯, ২৬০, ২৬৬, ২৭৪, ২৭৬, ২৮১; মুসলিম ৩/৯, হাঃ ৩১৭, আহমাদ ২৬৮৬১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৪৭)

【2】

স্বামী-স্ত্রীর এক সাথে গোসল।

'আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র (কাদাহ) হতে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম। সেই পাত্রকে ফারাক বলা হতো। (২৬১, ২৬৩, ২৭৩, ২৯৯, ৫৯৫৬, ৭৩৩৯; মুসলিম ৩/১০, হাঃ ৩১৯, আহমাদ ২৫৮৯৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৪৮)

【3】

এক সা' বা অনুরূপ পাত্রের পানিতে গোসল।

আবূ সালামা (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি ও 'আয়িশা (রাঃ)-এর ভাই 'আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট গমন করলাম। তাঁর ভাই তাঁকে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি প্রায় এক সা' (আড়াই কিলোগ্রাম পরিমাণ)-এর সমপরিমাণ এক পাত্র আনলেন। তারপর তিনি গোসল করলেন এবং স্বীয় মাথার উপর পানি ঢাললেন। তখন আমাদের ও তাঁর মাঝে পর্দা ছিল। আবূ 'আবদুল্লাহ [বুখারী (রহঃ)] বলেন যে, ইয়াযীদ ইব্‌ন হারূন (রহঃ), বাহয্‌ জুদ্দীই (রহঃ) শু’বাহ (রহঃ) থেকে “ نَحْوًا مِنْ صَاعٍ ” এর পরিবর্তে “ قَدْرِ صَاعٍ ” (এক সা’ পরিমাণ) এর কথা বর্ণনা করেন। (মুসলিম ৩/১০, হাঃ ৩২০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৪৯) আবূ জা‘ফার (রহঃ) তিনি ও তাঁর পিতা জাবির ইব্‌নু 'আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ)-এর নিকট ছিলেন। সেখানে আরো কিছু লোক ছিলেন। তাঁরা তাঁকে গোসল সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, এক সা' তোমার জন্য যথেষ্ট। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠলঃ আমার জন্য তা যথেষ্ট নয়। জাবির (রাঃ) বললেনঃ তোমার চেয়ে অধিক চুল যাঁর মাথায় ছিল এবং তোমার চেয়ে যিনি উত্তম ছিলেন (আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জন্য তো এ পরিমাণই যথেষ্ট ছিল। অতঃপর তিনি এক কাপড়ে আমাদের ইমামাত করেন। (২৫৫, ২৫৬; মুসলিম ৩/১১, হাঃ ৩২৯, আহমাদ ১৫০৪১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৫০) ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মাইমূনা (রাঃ) একই পাত্রের পানি দিয়ে গোসল করতেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, ইব্‌নু ‘উয়ায়নাহ (রহঃ) তাঁর শেষ জীবনে ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর মাধ্যমে মাইমূনা (রাঃ) হতে তা বর্ণনা করতেন। তবে আবূ নু'আয়ম (রাঃ)-এর বর্ণনাই ঠিক। (মুসলিম ৩/১০, হাঃ ৩২২, আহমাদ ২৬৮৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৫১)

【4】

মাথায় তিনবার পানি ঢালা।

জুবায়র ইব্‌নু মুত'ইম (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তিনবার আমার মাথায় পানি ঢালি। এই বলে তিনি উভয় হাতের দ্বারা ইঙ্গিত করেন। (মুসলিম ৩/১১, হাঃ ৩২৭, আহমাদ ১৬৭৪৯, ১৬৭৮০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৫২) জাবির ইব্‌নু ‘আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের মাথায় তিনবার পানি ঢালতেন। (২৫৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৫৩) আবূ জা'ফার (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমাকে জাবির (রাঃ) বলেছেন, আমার নিকট তোমার চাচাত ভাই অর্থাৎ হাসান ইব্‌নু মুহাম্মাদ ইব্‌নু হানাফিয়াহ আগমন করেছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, জানাবাতের গোসল কীভাবে করতে হয়? আমি বললাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন আঁজলা পানি নিতেন এবং নিজের মাথার উপর ঢেলে দিতেন। অতঃপর নিজের সারা দেহে পানি বহিয়ে দিতেন। তখন হাসান আমাকে বললেন, আমার মাথার চুল খুব বেশি। আমি তাঁকে বললাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুল তোমার চেয়ে অধিক ছিল। (২৫২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৪৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৫৪)

【5】

গোসলে একবার পানি ঢালা ৷

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, মাইমূনাহ্ (রাঃ) বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম৷ তিনি তাঁর হাত দুবার বা তিনবার ধুয়ে নিলেন৷ পরে তাঁর বাম হাতে পানি নিয়ে তাঁর লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেললেন৷ তারপর মাটিতে হাত ঘষলেন৷ তারপর কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন, তাঁর চেহারা ও দু’হাত ধুয়ে নিলেন৷ অতঃপর তাঁর সারা দেহে পানি ঢাললেন৷ তারপর একটু সরে গিয়ে দু’পা ধুয়ে নিলেন৷ (২৪৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৫৫)

【6】

গোসলে হিলাব (উটনীর দুধ দোহনের পাত্র) বা খুশবু ব্যবহার করা৷

‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন হিলাবের অনুরূপ পাত্র চেয়ে নিতেন৷ তারপর এক আঁজলা পানি নিয়ে প্রথমে মাথার ডান পাশ এবং পরে বাম পাশ ধুয়ে ফেলতেন৷ দু’হাতে মাথার মাঝখানে পানি ঢালতেন৷ (মুসলিম ৩/৯, হাঃ ৩১৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৫৬)

【7】

অপবিত্রতার গোসলে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া ৷

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) মাইমূনাহ্ (রাঃ) বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য গোসলের পানি ঢেলে রাখলাম৷ তিনি তাঁর ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতে পানি ঢাললেন এবং উভয় হাত ধুলেন। অতঃপর তাঁর লজ্জাস্থান ধৌত করলেন এবং মাটিতে তাঁর হাত ঘষলেন। পরে তা ধুয়ে কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন, তারপর তাঁর চেহারা ধুলেন এবং মাথার উপর পানি ঢাললেন। পরে ঐ স্থান হতে সরে গিয়ে দু’পা ধুলেন। অবশেষে তাঁকে একটি রুমাল দেয়া হল, কিন্তু তা দিয়ে শরীর মুছলেন না। (২৪৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৫৭)

【8】

পরিচ্ছন্নতার জন্য মাটিতে হাত ঘষা ।

মাইমূনাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপবিত্রতার গোসল করলেন। তিনি নিজের লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেললেন। তারপর হাত দেয়ালে ঘষলেন এবং তা ধুলেন। তারপর সালাতের উযূর ন্যায় উযূ করলেন। গোসল শেষ করে তিনি তাঁর দু’পা ধুয়ে নিলেন। (২৪৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৫৮)

【9】

যখন জানাবাত ছাড়া হাতে কোন নাপাকী না থাকে, ফরয গোসলের আগে হাত না ধুয়ে পানির পাত্রে তা প্রবেশ করানো যায় কি?

ইব্‌ন উ’মর (রাঃ) ও বারা-ইব্‌ন আ’যিব (রাঃ) হাত না ধুয়ে পানিতে হাত ঢুকিয়েছেন, তারপর উযু করেছেন। ইব্‌ন উ’মর (রাঃ) ও ইব্‌ন আ’ব্বাস (রাঃ) যে পানিতে ফরয গোসলের পানির ছিটা পড়েছে তা ব্যবহারে কোন দোষ মনে করতেন না। ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্রের পানি দিয়ে এভাবে গোসল করতাম যে, তাতে আমাদের দু’জনের হাত একের পর এক পড়তে থাকতো। (২৫০; মুসলিম ৩/১০, হাঃ ৩১৯, ৩২১) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৫৯) ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাবাতের গোসল করার সময় প্রথমে হাত ধুয়ে নিতেন। (২৪৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৬০) ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্রের পানি নিয়ে জানাবাতের গোসল করতাম। (২৫০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৬১) ‘আবদুর রহমান ইব্‌নু কাসিম (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে আয়িশা (রাঃ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর স্ত্রীদের কেউ কেউ একই পাত্রের পানি নিয়ে গোসল করতেন। মুসলিম (রহঃ) এবং ওয়াহ্‌ব ইব্‌নু জারীর (রহঃ) শু‘বাহ (রাঃ) হতে ‘তা ফরয গোসল ছিল বলে বর্ণনা করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৬২)

【10】

গোসল ও উযূর অঙ্গ পৃথকভাবে ধোয়া ৷

ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি উযূর অঙ্গসমূহ শুকিয়ে যাওয়ার পর দু’পা ধুয়েছিলেন। মাইমূনাহ্ (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম, তিনি উভয় হাতে পানি ঢেলে দু’বার করে বা তিনবার করে তা ধুয়ে নিলেন৷ অতঃপর তিঁনি ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতে ঢাললেন এবং তাঁর লজ্জাস্থান ধুয়ে নিলেন৷ পরে তাঁর হাত মাটিতে ঘষলেন৷ তারপর কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন। আর তাঁর চেহারা ও হাত দু’টো ধুলেন৷ তারপর তাঁর মাথা তিনবার ধুলেন এবং তাঁর সারা শরীরে পানি ঢাললেন৷ অবশেষে সেখান হতে একটু সরে গিয়ে তাঁর দু’পা ধুয়ে ফেললেন৷ (২৪৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৬৩)

【11】

গোসলের সময় ডান হাত থেকে বাম হাতের উপর পানি ঢালা ৷

মাইমূনাহ্ বিনতু হারিস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য গোসলের পানি রেখে পর্দা করে দিলাম। তিনি পানি দিয়ে দু’বার কিংবা তিনবার হাত ধুলেন৷ সুলায়মান (রাঃ) বলেন, তৃতীয়বারের কথা বলেছেন কিনা আমার মনে পড়ে না। তখন তিনি ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাতে ঢাললেন এবং ‍লজ্জাস্থান‍ ধুয়ে নিলেন৷ তারপর তাঁর হাত মাটিতে বা দেওয়ালে ঘষলেন৷ পরে তিনি কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন এবং তাঁর চেহারা ও দু’হাত ধুলেন এবং মাথা ধুয়ে ফেললেন। তারপর তাঁর শরীরে পানি ঢেলে দিলেন৷ পরে সেখান হতে সরে গিয়ে তাঁর দু’পা ধুয়ে নিলেন৷ অবশেষে আমি তাঁকে একখণ্ড কাপড় দিলাম; কিন্তু তিনি হাতের ইঙ্গিতে নিষেধ করলেন এবং তা নিলেন না। (২৪৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৬৪)

【12】

একাধিকবার বা একাধিক স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হবার পর একবার গোসল করা।

মুহাম্মাদ ইব্‌নু মুনতাশির (রহঃ) তাঁর পিতা তিনি বলেনঃ আমি ‘আয়িশা (রাঃ) এর নিকট [আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ)-এর উক্তিটি [১] উল্লেখ করলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌ আবূ ‘আবদুর রহমানকে রহম করুন। আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সুগন্ধি লাগাতাম, তারপর তিনি তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হতেন। তারপর ভোরবেলায় এমন অবস্থায় ইহ্‌রাম বাঁধতেন যে, তাঁর দেহ হতে খুশবু ছড়িয়ে পড়তো। (২৭০; মুসলিম ১৫/৭, হাঃ ১১৯২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৬৫) আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীগণের নিকট দিনের বা রাতের কোন এক সময়ে পর্যায়ক্রমে মিলিত হতেন। তাঁরা ছিলেন এগারজন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কি এত শক্তি রাখতেন? তিনি বললেন, আমরা পরস্পর বলাবলি করতাম যে, তাঁকে ত্রিশজনের [১] শক্তি দেয়া হয়েছে। সা’ঈদ (রহঃ) ক্বাতাদাহ (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন, আনাস (রাঃ) তাঁদের নিকট হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে (এগারজনের স্থলে) নয়জনের কথা বলেছেন। (২৮৪, ৫০৬৮, ৫২১৫ দ্রষ্টব্য) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬১, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৬৬)

【13】

মযী বের হলে তা ধুয়ে ফেলে উযূ করা।

‘আলী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার অধিক মযী বের হত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা আমার স্ত্রী হবার কারনে আমি একজনকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করার জন্য পাঠালাম। তিনি প্রশ্ন করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ উযূ কর এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেল। (১৩২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৬৭)

【14】

খুশবু লাগিয়ে গোসল করার পর খুসবুর আসর থেকে গেলে।

মুহাম্মাদ ইব্‌নু মুনতাশির (রহঃ) আমি ‘আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম এবং আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) এর উক্তি উল্লেখ করলাম,- “আমি এমন অবস্থায় ইহরাম বাঁধা পছন্দ করি না যাতে সকালে আমার দেহ হতে সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে।” ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সুগন্ধি লাগিয়েছি, তার পর তিনি পর্যায়ক্রমে তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন এবং তাঁর ইহ’রাম অবস্থায় সকাল হয়েছে। (২৬৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৬৮) ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি যেন এখনো দেখছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ইহ্‌রাম অবস্থায় তাঁর সিঁথিতে খুশবুর ঔজ্জ্বল্য রয়েছে। (১৫৩৮, ৫৯১৮, ৫৯২৩; মুসলিম ১৫/৭, হাঃ ১১৯০, আহমাদ ২৫৮৩৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৪, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৬৯)

【15】

চুল খিলাল করা এবং চামড়া ভিজেছে বলে নিশ্চিত হওয়ার পর তাতে পানি ঢালা।

‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তখন তিনি দু’হাত ধৌত করতেন এবং সালাতের উযূর মত উযূ করতেন। তারপর গোসল করতেন। পরে তাঁর হাত দিয়ে চুল খিলাল করতেন। চামড়া ভিজেছে বলে যখন তিনি নিশ্চিত হতেন, তখন তাতে তিনবার পানি ঢালতেন। তারপর সমস্ত শরীর ধুয়ে ফেলতেন। (২৪৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৫, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৭০) ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি আরো বলেছেনঃ আমি ও আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র হতে গোসল করতাম। আমরা একই সাথে তা হতে আঁজলা ভরে পানি নিতাম। (২৫০) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৫ শেষাংশ, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৭০)

【16】

অপবিত্র অবস্থায় যে উযূ করে সমস্ত শরীর ধোয় কিন্তু উযূর প্রত্যঙ্গগুলো দ্বিতীয়বার ধোয় না।

মাইমূনা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাবাতের গোসলের জন্য পানি রাখলেন। তারপর দু’বার বা তিনবার ডান হাত দিয়ে বাম হাতের উপর পানি ঢাললেন এবং তাঁর লজ্জাস্থান ধৌত করলেন। তারপর তাঁর হাত মাটিতে বা দেয়ালে দু’বার বা তিনবার ঘষলেন। পরে তিনি কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন এবং চেহারা ও দু’হাত ধৌত করলেন। তারপর তাঁর মাথায় পানি ঢাললেন এবং তাঁর শরীর ধুলেন। অতঃপর একটু সরে গিয়ে তাঁর দু’পা ধৌত করলেন। মাইমূনা (রাঃ) বলেনঃ অতঃপর আমি একখণ্ড কাপড় দিলে তিনি তা নিলেন না, বরং নিজ হাতে পানি ঝেড়ে ফেলতে থাকলেন। (২৪৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৭১)

【17】

মসজিদের ভিতরে নিজের জানাবাতের কথা স্মরণ হলে তখনই বেরিয়ে পড়বে, তায়াম্মুম করতে হবে না।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ একবার সালাতের ইক্বামাত দেয়া হলে সবাই দাঁড়িয়ে কাতার সোজা করছিলেন, তখন আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সামনে বেরিয়ে আসলেন। তিনি মুসাল্লায় দাঁড়ালে তাঁর মনে হলো যে, তিনি জানাবাত অবস্থায় আছেন। তখন তিনি আমাদের বললেনঃ স্ব স্ব স্থানে দাঁড়িয়ে থাক। তিনি ফিরে গিয়ে গোসল করে আবার আমাদের সামনে আসলেন এবং তাঁর মাথা হতে পানি ঝরছিল। তিনি তাকবীর (তাহ্‌রীমাহ) বাঁধলেন, আর আমরাও তাঁর সাথে সালাত আদায় করলাম। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৭২) ‘আবদুল আ’লা (রহঃ) যুহরী (রহঃ) হতে এবং আওযা’ঈ (রহঃ)-ও যুহরী (রহঃ) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (৬৩৯, ৬৪০; মুসলিম ৫/২৯, হাঃ ৬০৫, আহমাদ ১০৭২৪)

【18】

জানাবাতের গোসলের পর দু’ হাত ঝাড়া।

মাইমূনা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য গোসলের পানি রাখলাম এবং কাপর দিয়ে পর্দা করে দিলাম। তিনি দু’হাতের উপর পানি ঢেলে উভয় হাত দুয়ে নিলেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধৌত করলেন। পরে হাতে মাটি লাগিয়ে ঘষে নিলেন এবং ধুয়ে ফেললেন। অতঃপর কুলি করলেন, নাকে পানি দিলেন, চেহারা ও দু’হাত (কনুই পর্যন্ত) ধৌত করলেন। তারপর মাথায় পানি ঢাললেন ও সমস্ত শরীরে পানি পৌছালেন। তারপর একটু সরে গিয়ে দু’পা ধুয়ে নিলেন। অতঃপর আমি তাঁকে একটা কাপড় দিলাম কিন্তু তা নিলেন না। তিনি দু’হাত ঝাড়তে ঝাড়তে চলে গেলেন। (২৪৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৮, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৭৩)

【19】

মাথার ডান দিক হতে গোসল শুরু করা।

‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমাদের কারও জানাবাতের গোসলের প্রয়োজন হলে সে দু’হাতে পানি নিয়ে তিনবার মাথায় ঢালত। পরে হাতে পানি নিয়ে ডান পাশে তিনবার এবং আবার অপর হাতে পানি নিয়ে বাম পাশে তিনবার ঢালত। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৬৯, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ২৭৪)

【20】

নির্জনে বিবস্ত্র হয়ে গোসল করা এবং পর্দা করে গোসল করা। পর্দা করে গোসল করাই উত্তম

বাহায (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, লজ্জা করার ব্যাপারে মানুষের চেয়ে আল্লাহ্‌ তা’আলাই হকদার। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বানী ইসরাঈলের লোকেরা নগ্ন হয়ে একে অপরকে দেখা অবস্থায় গোসল করতো। কিন্তু মূসা (‘আঃ) একাকী গোসল করতেন। এতে বানী ইসরাঈলের লোকেরা বলাবলি করছিল, আল্লাহর কসম, মূসা (‘আঃ) ‘কোষবৃদ্ধি’ রোগের কারণেই আমাদের সাথে গোসল করেন না। একবার মূসা (‘আঃ) একটা পাথরের উপর কাপড় রেখে গোসল করছিলেন। পাথরটা তাঁর কাপড় নিয়ে পালাতে লাগল। তখন মূসা (‘আঃ) “পাথর! আমার কাপড় দাও,” “পাথর! আমার কাপড় দাও”, বলে পেছনে পেছনে ছুটলেন। এদিকে বাণী ইসরাঈল মূসার দিকে তাকাল। তখন তারা বলল, আল্লাহর কসম মূসার কোন রোগ নেই। মূসা (‘আঃ) পাথর থেকে কাপড় নিয়ে পরলেন এবং পাথরটাকে পিটাতে লাগলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, পাথরটিতে ছয় কিংবা সাতটা পিটুনীর দাগ পড়ে গেল। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি আরো বলেন যে, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক সময় আইয়ুব (‘আঃ) বিবস্ত্রাবস্থায় গোসল করছিলেন। তখন তাঁর উপর সোনার পঙ্গপাল বর্ষিত হচ্ছিল। আইয়ুব (‘আঃ) তাঁর কাপড়ে সেগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন। তখন তাঁর রব তাঁকে বললেনঃ হে আইয়ুব! আমি কি তোমাকে এগুলো হতে অমুখাপেক্ষী করিনি? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, আপনার ইয্‌যতের কসম। অবশ্যই করেছেন। তবে আমি আপনার বরকত হতে বেনিয়ায নই। এভাবে বর্ণনা করেছেন ইব্‌রাহীম (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একদা আইয়ুব (‘আঃ) বিবস্ত্র অবস্থায় গোসল করেছিলেন।

【21】

লোকের সামনে গোসলের সময় পর্দা করা।

উম্মু হানী বিনতু আবূ ত্বলিব (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি মাক্কাহ বিজয়ের বছর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গিয়ে তাঁকে গোসলরত অবস্থায় দেখলাম, ফাতিমাহ (রাঃ) তাঁকে পর্দা করে রেখেছিলেন। আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন ইনি কে? আমি বললামঃ আমি উম্মু হানী। মাইমূনা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য পর্দা করেছিলাম আর তিনি জানাবাতের গোসল করছিলেন। তিনি দু’হাত ধুলেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতে পানি নিয়ে লজ্জাস্থান এবং যেখানে কিছু লেগেছিল তা ধুয়ে ফেললেন। তারপর মাটিতে বা দেয়ালে হাত ঘষলেন এবং দু’পা ছাড়া সালাতের উযূর মতই উযূ করলেন। তারপর তাঁর সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছালেন। তারপর একটু সরে গিয়ে দু’পা ধুলেন। আবূ ‘আওয়ানাহ (রহঃ) ও [ سِتَرَ] (পর্দা করা) এর ব্যাপারটি এই হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

【22】

মহিলাদের ইহ’তিলাম (স্বপ্নদোষ) হলে।

উম্মুল মু‘মিনীন উম্মু সালামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আবূ তালহা (রাঃ) এর স্ত্রী উম্মু সুলায়ম (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খিদমাতে এসে বললেনঃ ইয়া রসূলাল্লাহ! আল্লাহ্ তা‘আলা হকের ব্যাপারে লজ্জা করেন না। স্ত্রীলোকের ইহ্‌তিলাম (স্বপ্নদোষ) হলে কি ফরয গোসল করবে? আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হাঁ, যদি তারা বীর্য দেখে।

【23】

জুনুবী ব্যক্তির ঘাম, নিশ্চয়ই মুসলিম অপবিত্র নয়।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ তাঁর সাথে মদীনার কোন এক পথে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দেখা হলো। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তখন জানাবাত অবস্থায় ছিলেন। তিনি বলেন, আমি নিজেকে অপবিত্র মনে করে সরে পড়লাম। পরে আবূ হুরায়রা (রাঃ) গোসল করে এলেন। পুনরায় সাক্ষাত হলে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ ওহে আবূ হুরাইরা! কোথায় ছিলে? আবূ হুরায়রা (রাঃ) বললেনঃ আমি জানাবাতের অবস্থায় আপনার সঙ্গে বসা সমীচীন মনে করিনি। তিনি বললেনঃ সুবহানাল্লাহ্‌! মু’মিন অপবিত্র হয় না।

【24】

জানাবাতের অবস্থায় বের হওয়া এবং বাজার ইত্যাদিতে চলাফেরা করা।

‘আত্বা (রহঃ) বলেছেন, অপবিত্র ব্যক্তি উযূ না করেও শিঙ্গা লাগাতে, নখ কাটতে এবং মাথা মুণ্ডন করতে পারে। আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই রাতে পর্যায়ক্রমে তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হতেন। তখন তাঁর নয়জন স্ত্রী ছিলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার সাথে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাক্ষাত হলো, তখন আমি জুনুবী ছিলাম। তিনি আমার হাত ধরলেন, আমি তাঁর সাথে চললাম। এক স্থানে তিনি বসে পড়লেন। তখন আমি সরে পড়ে বাসস্থানে এসে গোসল করলাম। আবার তাঁর নিকট গিয়ে তাঁকে বসা অবস্থায় পেলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন আবূ হুরায়রা! কোথায় ছিলে? আমি তাঁকে (ঘটনা) বললাম। তখন তিনি বললেনঃ ‘সুবহানাল্লাহ্‌! মু’মিন অপবিত্র হয় না’।

【25】

অপবিত্র ব্যক্তির গোসলের পূর্বে উযূ করে ঘরে অবস্থান করা।

আবূ সালামা (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি ‘আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলামঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি জানাবাতের অবস্থায় ঘুমাতেন? তিনি বললেনঃ হাঁ, তবে তিনি উযূ করে নিতেন।

【26】

জুনুবীর ঘুমানো।

‘উমার ইব্‌নুল-খাত্তাব (রাঃ) তিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমাদের কেউ জানাবাতের অবস্থায় ঘুমাতে পারবে কি? তিনি বললেনঃ হাঁ, উযূ করে নিয়ে জানাবাতের অবস্থায়ও ঘুমাতে পারে।

【27】

জুনুবী উযূ করে নিদ্রা যাবে।

‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানাবাতের অবস্থায় ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন তিনি লজ্জাস্থান ধুয়ে সালাতের উযূর মত উযূ করতেন। ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমাদের কেউ জুনুবী অবস্থায় ঘুমাতে পারবে কি? তিনি বললেনঃ হাঁ, যদি উযূ করে নেয়। ‘আবদুল্লাহ ইব্‌নু উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ উমর ইব্‌নুল খাত্তাব (রাঃ) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, রাতে কোন সময় তাঁর গোসল ফরয হয় (তখন কী করতে হবে?) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ উযূ করবে, লজ্জাস্থান ধুয়ে নিবে তারপর ঘুমাবে।

【28】

দু’লজ্জাস্থান পরস্পর মিলিত হলে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি স্ত্রীর চার শাখার মাঝে বসে তার সাথে সঙ্গত হলে, তার উপর গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। ‘আমর (রহঃ) শু‘বাহ্‌র সূত্রে এই হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর মূসা (রাঃ) হাসান [বাসরী (রহঃ)]-এর সূত্রেও অনুরূপ বলেছেন। আবূ ‘আবদুল্লাহ্‌ (রহঃ) বলেনঃ এটা উত্তম ও অধিকতর মযবুত। মতভেদের কারণে আমরা অন্য হাদীসটিও বর্ণনা করেছি, গোসল করাই অধিকতর সাবধানতা।

【29】

স্ত্রী অঙ্গ হতে কিছু লাগলে ধুয়ে ফেলা।

যায়দ ইব্‌নু খালিদ আল-জুহানী (রহঃ) তিনি ‘উসমান ইব্‌নু ‘আফফান (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ স্বামী-স্ত্রী সঙ্গত হলে যদি মনি বের না হয় (তখন কী করবে)? উসমান (রাঃ) বললেনঃ সালাতের উযূর মত উযূ করবে এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে। ‘উসমান (রাঃ) বলেনঃ আমি এটা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শুনেছি। অতঃপর আলী ইব্‌নু আবূ ত্বলিব, যুবায়র ইব্‌নুল-আও্‌ওয়াম, ত্বলহা ইব্‌নু ‘উবাইদুল্লাহ ও উবাই ইব্‌নু কা‘ব (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তারা সবাই ঐ একই জবাব দিয়েছেন। আবূ সালামা (রহঃ) আবূ আইয়ুব (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি [আবূ আইয়ুব (রাঃ)] এ কথা আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শুনেছেন। উবাই ইব্‌নু কা‘ব (রাঃ) তিনি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রসূল! স্ত্রীর সাথে সঙ্গত হলে যদি বীর্য বের না হয় (তার হুকুম কী?) তিনি বলেলেনঃ স্ত্রী থেকে যা লেগেছে তা ধুয়ে উযূ করবে ও সালাত আদায় করবে। আবূ ‘আবদুল্লাহ [বুখারী (রহঃ)] বলেনঃ গোসল করাই শ্রেয়। আর তা-ই সর্বশেষ হুকুম। আমি এই শেষের হাদীসটি বর্ণনা করেছি মতভেদ থাকার কারণে। কিন্তু পানি (গোসল) অধিক পবিত্রকারী। [১]