75. রোগীদের বর্ণনা

【1】

রোগের কাফ্‌ফারা ও ক্ষতিপূরণ।

এবং মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ “যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে তাকে সেই কাজের প্রতিফল দেয়া হবে।” (সূরাহ আন্‌-নিসা ৪/১২৩) আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল বিপদ-আপদ আসে এর দ্বারা আল্লাহ্‌ তার পাপ দূর করে দেন। এমনকি যে কাঁটা তার শরীরে ফুটে এর দ্বারাও।[মুসলিম ৪৫/১৪, হাঃ ২৫৭২, আহমাদ ২৪৮৮২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫২২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২৫) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তার গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।[মুসলিম ৪৫/১৪, হাঃ ২৫৭৩]আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২৬) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তির উপর যে কষ্ট ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফুটে, এ সবের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তার গুণাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।[মুসলিম ৪৫/১৪, হাঃ ২৫৭৩]আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২৬) কা’ব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন ব্যক্তির উদাহরণ হল শস্যক্ষেতের নরম চারা গাছের মত, যাকে বাতাস একবার কাত করে ফেলে, আরেকবার সোজা করে দেয়। আর মুনাফিকের দৃষ্টান্ত, ভূমির উপর শক্তভাবে স্থাপিত বৃক্ষ, যাকে কিছুতেই নোয়ানো যায় না। শেষে এক ঝটকায় মূলসহ তা উপড়ে যায়। যাকারিয়্যা...... কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আমাদের কাছে এরকম বর্ণনা করেছেন। [মুসলিম ৫০/১৪, হাঃ ২৮১০]আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২৭) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন ব্যক্তির দৃষ্টান্ত হল, শস্যক্ষেতের নরম চারাগাছের মত। যে কোন দিক থেকেই তার দিকে বাতাস আসলে বাতাস তাকে নুইয়ে দেয়। আবার যখন বাতাসের প্রবাহ বন্ধ হয় তখন তা সোজা হয়ে দাঁড়ায়। বালা মুসিবত মু’মিনকে নোয়াতে থাকে। আর ফাসিক হল শক্ত ভূমির উপর শক্তভাবে সোজা হয়ে দাঁড়ানো গাছের মত, যাকে আল্লাহ যখন ইচ্ছে করেন ভেঙ্গে দেন। [৭৪৬৬; মুসলিম ৫০/১৪, হাঃ ২৮০৯] আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২৮) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ্‌ যে ব্যক্তির কল্যাণ কামনা করেন তাকে তিনি দুঃখকষ্টে পতিত করেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১২৯)

【2】

রোগের তীব্রতা

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চেয়ে বেশী রোগ যন্ত্রণা ভোগকারী অন্য কাকেও দেখিনি। [১][মুসলিম ৪৫/১৪, হাঃ ২৫৭০, আহমাদ ২৫৪৫৩]আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩০) আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অসুস্থ অবস্থায় তাঁর কাছে গেলাম। এ সময় তিনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমি বললামঃ নিশ্চয়ই আপনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত। আমি এও বললাম যে, এটা এজন্য যে, আপনার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। যে কেউ রোগাক্রান্ত হয়, তাথেকে গুনাহসমূহ এভাবে ঝরে যায়, যেভাবে গাছ হতে তার পাতাগুলো ঝরে যায়। [৫৬৪৮, ৫৬৬০, ৫৬৬১, ৫৬৬৭; মুসলিম ৪৫/১৪, হাঃ ২৫৭১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩১)

【3】

মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন নবীগণ। এরপরে ক্রমশ প্রথম ব্যক্তি এবং পরবর্তী প্রথম ব্যক্তি।

আবদুল্লাহ (রাঃ তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি তো ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত। তিনি বললেনঃ হাঁ। তোমাদের দু’ব্যক্তি যতটুকু জ্বরে আক্রান্ত হয়, আমি একাই ততটুকু জ্বরে আক্রান্ত হই। আমি বললামঃ এটি এজন্য যে, আপনার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ তাই। কেননা যেকোন মুসলিম দুঃখ কষ্টে পতিত হয়, তা একটা কাঁটা কিংবা আরো ক্ষুদ্র কিছু হোক না কেন, এর মাধ্যমে আল্লাহ তার গুনাহগুলোকে মুছে দেন, যেমন গাছ থেকে তার পাতাগুলো ঝরে পড়ে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩২)

【4】

রোগীর সেবা করা ওয়াজিব।

আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, রোগীর সেবা কর এবং কষ্টে পতিতকে উদ্ধার কর। [৫৫](আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩৩) বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাতটি জিনিসের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি বিষয়ে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদের নিষেধ করেছেনঃ সোনার আংটি, মোটা ও পাতলা এবং কারুকার্য খচিত রেশমী কাপড় ব্যবহার করতে এবং কাস্‌সী ও মীসারাহ [৫৬] কাপড় ব্যবহার করতে। আর তিনি আমাদের আদেশ করেছেনঃ আমরা যেন জানাযার পশ্চাতে যাই, পীড়িতের সেবা করি এবং সালামের প্রসার ঘটাই।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩৪)

【5】

সংজ্ঞাহীন ব্যক্তির সেবা করা।

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমি ভীষণভাবে পীড়িত হয়ে গেলাম। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবু বাক্‌র (রাঃ) পায়ে হেঁটে আমার খোঁজ খবর নেয়ার জন্য আমার নিকট আসলেন। তাঁরা আমাকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আমাকে পেলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অযূ করলেন। তারপর তিনি তাঁর অবশিষ্ট পানি আমার গায়ের উপর ছিটিয়ে দিলেন। ফলে আমি জ্ঞান ফিরার পর দেখলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপস্থিত। আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমার সম্পদের ব্যাপারে আমি কী করব? আমার সম্পদ সম্পর্কে কীভাবে আমি সিদ্ধান্ত গ্রহন করব? তিনি তখন আমাকে কোন জবাব দিলেন না। শেষে মীরাসের আয়াত অবতীর্ণ হল। [১৯৪; মুসলিম ২৩/২, হাঃ ১৬১৬, আহমাদ ১৪৩০২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩৫)

【6】

মৃগী রোগে আক্রান্ত রোগীর ফাযীলাত ।

আত্বা ইবনু আবূ রাবাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে বললেনঃ আমি কি তোমাকে একজন জান্নাতী মহিলা দেখাব না? আমি বললামঃ অবশ্যই। তখন তিনি বললেনঃ এই কালো রঙের মহিলাটি, সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসেছিল। তারপর সে বললঃ আমি মৃগী রোগে আক্রান্ত হই এবং এ অবস্থায় আমার লজ্জাস্থান খুলে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করুন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি যদি চাও ধৈর্যধারণ করতে পার। তোমার জন্য আছে জান্নাত। আর তুমি যদি চাও, তাহলে আমি আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করি, যেন তোমাকে আরোগ্য করেন। স্ত্রীলোকটি বললঃ আমি ধৈর্যধারণ করব। সে বললঃ ঐ অবস্থায় আমার লজ্জাস্থান খুলে যায়, কাজেই আল্লাহর নিকট দু’আ করুন যেন আমার লজ্জাস্থান খুলে না যায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর জন্য দু’আ করলেন। ‘আত্বা (রহ:) হতে বর্ণিত যে, তিনি সেই উম্মু যুফার (রাঃ) -কে দেখেছেন কা’বার গিলাফ ধরা অবস্থায়। সে ছিল দীর্ঘ দেহী কৃষ্ণ বর্ণের এক মহিলা।[মুসলিম ৪৫/১৪, হাঃ ২৫৭৬, আহমাদ ৩২৪০]আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩৭)

【7】

যে ব্যক্তি দৃষ্টিশক্তিহীন হয়ে পড়েছে তার ফাযীলাত।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ বলেছেনঃ আমি যদি আমার কোন বান্দাকে তার অতি প্রিয় দু’টি বস্তু সম্পর্কে পরীক্ষায় ফেলি, আর সে তাতে ধৈর্য ধরে, তাহলে আমি তাকে সে দু’টির বিনিময়ে জান্নাত দান করব। আনাস (রাঃ) বলেন, দু’টি প্রিয় বস্তু হল সে ব্যক্তির চক্ষুদ্বয়। এরকম বর্ণনা করেছেন ‘আশ্‌’আস ইবনু জাবির ও আবূ যিলাল (রহ:) আনাস (রাঃ) -এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে। [৫৭](আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩৮)

【8】

মহিলাদের পুরুষ রোগীর সেবা করা।

উম্মু দারদা (রাঃ) মাসজিদে অবস্থানকারী এক আনসারের সেবা করেছিলেন। আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনায় আসলেন, তখন আবূ বকর (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ) জ্বরে আক্রান্ত হলেন। তিনি বলেনঃ আমি তাঁদের কাছে গেলাম এবং বললামঃ হে আব্বাজান! আপনাকে কেমন লাগছে? হে বিলাল! আপনাকে কেমন লাগছে? আবূ বকর (রাঃ) -এর অবস্থা ছিল, তিনি যখন জ্বরে আক্রান্ত হতেন তখন তিনি আওড়াতেনঃ “সব মানুষ সুপ্রভাত ভোগ করে আপন পরিবার পরিজনের মধ্যে, আর মৃত্যু অপেক্ষা করে তার জুতার ফিতার চেয়ে নিকটে।” বিলাল (রাঃ) -এর জ্বর যখন থামত তখন তিনি বলতেনঃ “হায়! আমি যদি লাভ করতাম একটি রাত কাটানোর সুযোগ এমন উপত্যকায় যে আমার পাশে আছে ইয্‌খির ও জালীল ঘাস। যদি আমার অবতরণ হতো কোন দিন মাজিন্নার কূপের কাছে। হায়! আমি কি কখনো দেখা পাব শামাহ্‌ ও ত্বফীলের[১]।” ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এসে তাঁকে এদের অবস্থা অবগত করলাম। তখন তিনি দু’আ করে বললেনঃ হে আল্লাহ! মাদীনাহ্‌কে আমাদের কাছে প্রিয় করে দাও, যেমন তুমি আমাদের কাছে মাক্কাহ প্রিয় করে দিয়েছিলে কিংবা সে অপেক্ষা আরো অধিক প্রিয় করে দাও। হে আল্লাহ! আর মাদীনাহকে উপযোগী করে দাও এবং মাদীনাহ্‌র মুদ্দ ও সা’ এর ওযনে বারাকাত দান কর। আর এখানকার জ্বরকে সরিয়ে দাও জুহ্‌ফা এলাকায়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৩৯)

【9】

অসুস্থ শিশুদের সেবা করা।

উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর এক কন্যা (যাইনাব) তাঁর কাছে খবর দিয়েছেন, এ সময় উসামাহ, সা’দ ও সম্ভবতঃ ‘উবাই (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে ছিলেন। খবর এই ছিল যে, (যায়নাব বলেছেন) আমার এক শিশুকন্যা মৃত্যুর দুয়ারে উপনীত। কাজেই আপনি আমাদের এখানে আসুন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কাছে সালাম পাঠিয়ে বলে দিলেনঃ আল্লাহ যা চান নিয়ে নেন, যা চান দিয়ে যান। তাঁর কাছে সব কিছুরই একটা নির্দিষ্ট সময় আছে। কাজেই তুমি ধৈর্য ধর এবং উত্তম বিনিময়ের আশা পোষণ কর। অতঃপর পুনরায় তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট কসম ও তাগিদ দিয়ে প্রেরণ করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে দাঁড়ালেন। আমরাও দাঁড়িয়ে গেলাম। এরপরে শিশুটিকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কোলে তুলে দেয়া হল। এ সময় তার নিঃশ্বাস দ্রুত উঠানামা করছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দু’চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। সা’দ (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এটা কী? তিনি উত্তর দিলেনঃ এটা হল রাহমাত। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা করেন তার হৃদয়ে এটি দিয়ে দেন। আর আল্লাহ তাঁর দয়াদ্র বান্দাদের প্রতিই দয়া করে থাকেন(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪০)

【10】

অসুস্থ বেদুঈনদের সেবা করা।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বেদুঈনের নিকট গিয়েছিলেন, তার রোগ সম্পর্কে জানার জন্য। বর্ণনাকারী বলেন, আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন কোন রোগীকে দেখতে যেতেন তখন তাকে বলতেনঃ কোন ক্ষতি নেই। ইন্‌শাআল্লাহ তুমি তোমার গুনাহসমূহ থেকে পবিত্রতা লাভ করবে। তখন বেদুঈন বললঃ আপনি বলেছেন, এটা গুনাহ থেকে পবিত্র করে দেবে? কক্ষনো না, বরং এটা এমন এক জ্বর যা এক অতি বৃদ্ধকে গরম করছে কিংবা সে বলেছে উত্তপ্ত করছে, যা তাকে কবরে পৌঁছাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হাঁ তাহলে তেমনই।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪১)

【11】

মুশরিক রোগীর দেখাশুনা করা।

আনাস (রাঃ) এক ইয়াহূদীর ছেলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সেবা করত। ছেলেটির অসুখ হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) তাঁর অসুখের খোঁজ নিতে এলেন। এরপর তিনি বললেনঃ তুমি ইসলাম গ্রহণ কর। সে ইসলাম গ্রহণ করল। সা’ঈদ ইবনু মুসায়্যাব (রহ:) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, আবূ ত্বলিব মারা গেলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছে এসেছিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪২)

【12】

কোন রোগীকে দেখতে গিয়ে সলাতের সময় হলে সেখানেই উপস্থিত লোকদের নিয়ে জামা’আতবদ্ধ সলাত আদায় করা।

আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অসুস্থতার সময় লোকজন তাঁকে দেখার জন্য তাঁর কাছে আসলে তিনি তাঁদের নিয়ে বসা অবস্থায় সলাত আদায় করেন। লোকজন দাঁড়িয়ে সলাত শুরু করেছিল, ফলে তিনি তাদের ইঙ্গিত করলেন, বসে যাও। সলাত শেষ করে তিনি বলেনঃ ইমাম হল এমন ব্যক্তি যাকে অনুসরণ করতে হয়। সে রুকু করলে তোমরাও রুকু করবে। সে যখন মাথা উঠাবে, তোমরাও মাখা উঠাবে। সে যখন বসে সলাত আদায় করবে, তখন তোমরাও বসে সলাত আদায় করবে। হুমাইদী (রহ:) বলেছেনঃ এ হাদীসটি রহিত হয়ে গেছে। আবূ ‘আবদুল্লাহ বুখারী (রহ:) বলেন, কেননা, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনে শেষ যে সলাত আদায় করেন তাতে তিনি নিজে বসে সলাত আদায় করেন আর লোকজন তাঁর পেছনে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪৩)

【13】

রোগীর দেহে হাত রাখা।

আয়িশা বিন্‌ত সা’দ (রাঃ) তাঁর পিতা বলেছেন, আমি যখন মক্কায় ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ি তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দেখার জন্য আসেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র নবী! আমি সম্পদ রেখে যাচ্ছি। আর আমার একটি মাত্র কন্যা ব্যতীত আর কেউ নেই। এ অবস্থায় আমি কি আমার দু’তৃতীয়াংশ সম্পদ অসীয়ত করে এক-তৃতীয়াংশ রেখে যাব? তিনি উত্তর দিলেনঃ না। আমি বললামঃ তা হলে অর্ধেক রেখে দিয়ে আর অর্ধেক অসীয়ত করে যেতে পারি? তিনি বললেনঃ না। আমি বললামঃ তাহলে দু’তৃতীয়াংশ রেখে দিয়ে এক-তৃতীয়াংশ অসীয়ত করে যেতে পারি? তিনি উত্তর দিলেনঃ এক-তৃতীয়াংশ পার, তবে এক-তৃতীয়াংশও অনেক। তারপর তিনি আমার কপালের উপর তাঁর হাত রাখলেন এবং আমার চেহারা ও পেটের উপর তাঁর হাত বুলিয়ে বললেনঃ হে আল্লাহ, সা’দকে তুমি আরোগ্য কর। তাঁর হিজরাত পূর্ণ করে দাও। আমি তাঁর হাতের শীতল স্পর্শ এখনও পাচ্ছি এবং মনে করি আমি তা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত পাব।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪৪) আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে প্রবেশ করলাম। তখন তিনি ভয়ানক জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তাঁর গায়ে হাত বুলিয়ে দিলাম এবং বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ আমি এমন কঠিন জ্বরে আক্রান্ত হই, যা তোমাদের দু’জনের হয়ে থাকে। আমি বললামঃ এটা এজন্য যে, আপনার জন্য বিনিময়ও দ্বিগুণ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ! এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে কোন মুসলিমের উপর কোন কষ্ট বা রোগ-ব্যাধি হলে আল্লাহ তাঁর গুনাহগুলো ঝরিয়ে দেন, যেমনভাবে গাছ তার পাতাগুলো ঝরিয়ে দেয়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪৫)

【14】

রোগীর সামনে কী বলতে হবে এবং তাকে কী জবাব দিতে হবে।

আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অসুস্থতার সময় তাঁর কাছে এলাম। এরপর তাঁর শরীরে হাত বুলিয়ে দিলাম। এ সময় তিনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি বললামঃ আপনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত এবং এটা এজন্য যে, আপনার জন্য আছে দ্বিগুণ সাওয়াব। তিনি বললেনঃ হাঁ! কোন মুসলিমের উপর কোন কষ্ট আপতিত হলে তাত্থেকে গুনাহ্‌গুলো এমনভাবে ঝরে যায়, যেভাবে গাছ হতে পাতা ঝরে যায়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রোগীকে দেখার জন্য তার কাছে প্রবেশ করলেন। তখন তিনি বলেনঃ কোন ক্ষতি নেই, ইন্‌শাআল্লাহ গুনাহ থেকে তুমি পবিত্রতা লাভ করবে। রোগী বলে উঠলঃ কক্ষনো না বরং এটি এমন জ্বর, যা এক অতি বৃদ্ধের শরীরে টগবগ করে ফুটছে এন তাকে কবরে পৌঁছাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হাঁ, তবে তাই।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪৭)

【15】

রোগীর দেখাশুনা করা, আরোহী অবস্থায়, পায়ে চলা অবস্থায় এবং গাধার পিঠে সাওয়ারীর পিছনে বসে।

উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি গাধার পিঠে আরোহণ করলেন। গাধাটির পিঠে ছিল ‘ফাদক’ এলাকায় তৈরী চাদর মোড়ানো একটি গদি। তিনি নিজের পেছনে উসামাহ (রাঃ) -কে বসিয়ে অসুস্থ সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) -কে দেখতে গিয়েছিলেন। এটা বদ্‌র যুদ্ধের পূর্বেকার ঘটনা। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলতে চলতে এক পর্যায়ে এক মজলিসের পার্শ্ব অতিক্রম করতে লাগলেন। সেখানে ছিল ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল। এ ঘটনা ছিল ‘আবদুল্লাহর ইসলাম গ্রহণের আগের। মজলিসটির মধ্যে মুসলিম, মুশরিক, মূর্তিপূজক ও ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের লোকও ছিল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) -ও সে মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। সাওয়ারী জানোয়ারটির পায়ের ধূলা-বালু যখন মজলিসের লোকদের মাঝে উড়তে লাগল, তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই তার চাদর দিয়ে নিজের নাক চেপে ধরল এবং বললঃ আমাদের উপর ধূলাবালু উড়াবেন না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম দিলেন এবং নীচে অবতরণ করে তাদের আল্লাহ্‌র প্রতি আহ্বান জানালেন। এরপর তিনি তাদের সামনে কুরআন পাঠ করলেন। তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই তাঁকে বললঃ জনাব, আপনি যা বলেছেন আমার কাছে তা পছন্দনীয় নয়। যদি এসব কথা সত্য হয়, তাহলে আপনি এ মজলিসে আমাদের কষ্ট দিবেন না। বরং আপনি নিজের বাড়ীতে চলে যান এবং সেখানে যে আপনার কাছে যাবে, তার কাছে এসব বিবরণ প্রকাশ করবেন। ইবনু রাওয়াহা বলে উঠলেনঃ অবশ্য, হে আল্লাহ্‌র রসূল! এসব কথাবার্তা নিয়ে আমাদের মজলিসে আসবেন। আমরা এগুলো পছন্দ করি। এরপর মুসলিম, মুশরিক ও ইয়াহূদীদের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়ে গেল, এমনকি তারা পরস্পর মারামারি করতে উদ্যত হলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের শান্ত ও নীরব করার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। অবশেষে সবাই শান্ত হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাওয়ারীর উপর আরোহন করেন এবং সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) -এর বাড়ীতে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি তাঁকে অর্থাৎ সা’দ (রাঃ) -কে বললেনঃ তুমি কি শুনতে পাওনি আবূ হুবাব অর্থাৎ ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই কী উক্তি করেছে? সা’দ (রাঃ) উত্তর দিলেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! তাকে ক্ষমা করুন এবং উপেক্ষা করুন। আল্লাহ আপনাকে যে মর্যাদা দান করার ইচ্ছে করেছেন তা দান করেছেন। আমাদের এ উপ-দ্বীপ এলাকার লোকজন একমত হয়েছিল তাকে রাজমুকুট পরিয়ে দেয়ার জন্য এবং তাকে নেতৃত্ব দান করার জন্য। এরপর যখন আপনাকে আল্লাহ যে হক ও সত্য দান করেছেন তখন এর দ্বারা তার ইচ্ছে বরবাদ হয়ে গেল। এতে সে ভীষণ মনোক্ষুণ্ন হল। আর আপনি তার যে ব্যবহার দেখলেন, এটিই তার কারণ।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪৮) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার অসুস্থতা দেখার জন্য আমার কাছে এসেছিলেন। এ সময় তিনি গাধার পিঠে আরোহী ছিলেন না, ঘোড়ার পিঠেও ছিলেন না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৪৯)

【16】

রোগীর উক্তি “আমি যাতনাগ্রস্থ” কিংবা আমার মাথা গেল, কিংবা আমার যন্ত্রণা প্রচন্ড আকার ধারণ করেছে এর বর্ণনা।

আর আইয়ূব (‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তিঃ “ আমি দুঃখ কষ্টে নিপতিত হয়েছি, তুমি তো দয়ালুদের সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু ।” (সূরাহ আল-আম্বিয়া ২১ : ৮৩) কা’ব ইবনু ‘উজরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পথ অতিক্রম করছিলেন, এ সময় আমি হাঁড়ির নীচে লাকড়ি জ্বালাচ্ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমার মাথার উকুন কি তোমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। আমি বললামঃ জ্বি, হ্যাঁ। তখন তিনি নাপিত ডাকলেন। সে মাথা মুড়িয়ে দিল। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ‘ফিদ্‌ইয়া’ আদায় করার নির্দেশ দিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৫৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫০) কাসিম ইবনু মুহাম্মাদ (রহ:) তিনি বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছিলেন ‘হায় যন্ত্রণায় আমার মাথা গেল’। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি এমনটি হয় আর আমি জীবিত থাকি তাহলে আমি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব, তোমার জন্য দু’আ করব। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ হায় আফসোস, আল্লাহর শপথ। আমার ধারণা আপনি আমার মৃত্যুকে পছন্দ করেন। আর তা হলে আপনি পরের দিনই আপনার অন্যান্য স্ত্রীদের সঙ্গে রাত কাটাতে পারবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বরং আমি আমার মাথা গেল বলার অধিক যোগ্য। আমি তো ইচ্ছে করেছিলাম কিংবা বলেছেন, আমি ঠিক করেছিলামঃ আবূ বকর (রাঃ) ও তার ছেলের নিকট সংবাদ পাঠাব এবং অসীয়ত করে যাব, যেন লোকদের কিছু বলার অবকাশ না থাকে কিংবা আকাঙ্খাকারীদের কোন আকাঙ্খা করার অবকাশ না থাকে। তারপর ভাবলাম। আল্লাহ (আবূ বাক্‌র ছাড়া অন্যের খলীফা হওয়া) তা অপছন্দ করবেন, মু’মিনগণ তা বর্জন করবেন। কিংবা তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ তা প্রতিহত করবেন এবং মু’মিনগণ তা অপছন্দ করবেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫১) ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে গেলাম। তখন তিনি জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তাঁর গায়ে আমার হাত দিলাম এবং বললামঃ আপনি কঠিন জ্বরে আক্রান্ত। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, যেমন তোমাদের দু’জনকে ভুগতে হয়। ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) বললেনঃ আপনার জন্য আছে দ্বিগুণ সওয়াব। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, কোন মুসলিম কষ্ট বা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে কিংবা অন্য কোন যন্ত্রণায় পতিত হলে, আল্লাহ তার গুনাহসমূহ মোচন করে দেন, যেমনভাবে বৃক্ষ তার পাতাগুলো ঝরিয়ে দেয়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫২) আমির ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জের সময় আমার রোগ কঠিন আকার ধারণ করলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে আসলেন। আমি বললামঃ (মৃত্যু) আমার সন্নিকটে এসে গেছে যা আপনি দেখতে পাচ্ছেন অথচ আমি একজন বিত্তবান ব্যক্তি। একটি মাত্র কন্যা ব্যতীত আমার কোন ওয়ারিশ নেই। এখন আমি আমার সম্পদের দু’তৃতীয়াংশ সদাক্বাহ করতে পারি কি? তিনি উত্তর দিলেনঃ না। আমি বললামঃ তাহলে অর্ধেক? তিনি বললেনঃ না। আমি বললামঃ এক তৃতীয়াংশ। তিনি বললেনঃ এও অনেক অধিক। নিশ্চয়ই তোমার ওয়ারিশদের স্বাবলম্বী রেখে যাওয়াই শ্রেয় তাদের নিঃস্ব ও মানুষের দ্বারস্থ করে যাবার চেয়ে। আর তুমি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভে যে ব্যয়ই কর না কেন, তার বিনিময়ে তোমাকে সাওয়াব দেয়া হবে। এমনকি তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে আহার তুলে দাও তাতেও।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫৩)

【17】

তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও, রোগীর এ কথা বলা।

আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ইন্তিকালের সময় আগত হল, তখন ঘরের মধ্যে অনেক মানুষের জমায়েত ছিল। যাঁদের মধ্যে ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) -ও ছিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (রোগ কাতর অবস্থায়) বললেনঃ লও, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দেব, যাতে পরবর্তীতে তোমরা পথভ্রষ্ট না হও। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর রোগ যন্ত্রণা তীব্র হয়ে উঠেছে, আর তোমাদের কাছে কুরআন মাওজুদ। আর আল্লাহ্‌র কিতাবই আমাদের জন্য যথেষ্ট। এ সময় আহলে বাইতের মধ্যে মতানৈক্যের সৃষ্টি হল। তাঁরা বাদানুবাদে প্রবৃত্ত হলেন, তন্মধ্যে কেউ কেউ বলতে লাগলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে কাগজ পৌঁছে দাও এবং তিনি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দেবেন, যাতে পরবর্তীতে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট না হও। আবার তাদের মধ্যে ‘উমার (রাঃ) যা বললেন, তা বলে যেতে লাগলেন। এভাবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে তাঁদের বাকবিতন্ডা ও মতভেদ বেড়ে চলল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা উঠে যাও। ‘উবাইদুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলতেন, বড় মুসীবত হল লোকজনের সেই মতভেদ ও তর্ক-বিতর্ক, যা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সেই লিখে দেয়ার মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫৪)

【18】

দু’আ নেয়ার উদ্দেশে অসুস্থ শিশুকে নিয়ে যাওয়া।

সায়িব (রাঃ) তিনি বলেন, আমার খালা আমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে নিয়ে গেলেন। এরপর তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার বোনের ছেলে পীড়িত। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার মাথায় হাত বুলালেন এবং আমার জন্য বারাকাতের দু’আ করলেন। এরপর তিনি অযূ করলেন। আমি তাঁর অযূর বেঁচে যাওয়া পানি পান করলাম এবং তাঁর পৃষ্ঠের পশ্চাতে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন আমি মোহরে নবুওয়াতের পানে চেয়ে দেখলাম। সেটি তাঁর দু’স্কন্ধের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এবং খাটিয়ার গোলাকৃতি ঘুন্টির মত।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫৫)

【19】

রোগী কর্তৃক মৃত্যু কামনা করা।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ দুঃখ কষ্টে পতিত হবার কারণে যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি কিছু করতেই চায়, তা হলে সে যেন বলেঃ হে আল্লাহ! আমাকে জীবিত রাখ, যতদিন আমার জন্য বেঁচে থাকা কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার জন্য মরে যাওয়া কল্যাণকর হয়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৬০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫৬) কায়স ইবনু আবূ হাযিম (রহ:) তিনি বলেন, আমরা অসুস্থ খব্বাব (রাঃ) -কে দেখতে গেলাম। এ সময় (চিকিৎসার জন্য তাঁকে) সাতবার দাগ লাগানো হয়েছিল। তখন তিনি বললেনঃ আমাদের সাথীরা ইন্তিকাল করেছেন। তাঁরা এমন অবস্থায় চলে গেছেন যে, দুনিয়া তাঁদের ‘আমলের সাওয়াবে কোন রকম কমতি করতে পারেনি। আর আমরা এমন জিনিস লাভ করেছি, যা মাটি ভিন্ন অন্য কোথাও রাখার জায়গা পাচ্ছি না। যদি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মৃত্যুর জন্য দু’আ কামনা করতে নিষেধ না করতেন, তবে আমি মৃত্যুর জন্য দু’আ করতাম। অতঃপর আমরা আরেকবার তাঁর কাছে এসেছিলাম। তখন তিনি তাঁর বাগানের দেয়াল তৈরী করছিলেন। তিনি বললেনঃ মুসলিমকে তাঁর যাবতীয় ব্যয়ের জন্য সাওয়াব দান করা হয়, তবে এ মাটিতে স্থাপিত জিনিসের কথা আলাদা।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৬১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫৭) আবূ হুরায়রা (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কোন ব্যক্তিকে তার নেক ‘আমাল জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারবে না। লোকজন প্রশ্ন করলঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনাকেও নয়? তিনি বললেনঃ আমাকেও নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ আমাকে তাঁর করুণা ও দয়া দিয়ে আবৃত না করেন। কাজেই মধ্যমপন্থা গ্রহণ কর এবং নৈকট্য লাভের চেষ্টা চালিয়ে যাও। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কেননা, সে ভাল লোক হলে (বয়স দ্বারা) তার নেক ‘আমাল বৃদ্ধি হতে পারে। আর খারাপ লোক হলে সে তাওবাহ করার সুযোগ পাবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৬২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫৮) আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আমার পায়ের উপর হেলান দেয়া অবস্থায় বলতে শুনেছিঃ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, আমার প্রতি দয়া কর, আর আমাকে মহান বন্ধুর সঙ্গে মিলিত কর।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৬৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৫৯)

【20】

রোগীর জন্য শুশ্রুষাকারীর দু’আ করা।

আয়িশা বিন্‌ত সা’দ তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আল্লাহ! সা’দকে আরোগ্য কর। আয়িশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিয়ম ছিল, তিনি যখন কোন রোগীর কাছে আসতেন কিংবা তাঁর নিকট যখন কোন রোগীকে আনা হত, তখন তিনি বলতেনঃ কষ্ট দূর করে দাও। হে মানুষের রব, আরোগ্য দান কর, তুমিই একমাত্র আরোগ্যদানকারী। তোমার আরোগ্য ছাড়া অন্য কোন আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দান কর যা সামান্যতম রোগকেও অবশিষ্ট না রাখে। [৫৭৪৩, ৫৭৪৪, ৫৭৫০; মুসলিম ৩৯/১৯, হাঃ ২১৯১, আহমাদ ২৪২৩০] ‘আমর ইবনু আবূ কায়স ও ইবরাহীম ইব্‌নু তুহমান হাদীসটি মানসূর, ইবরাহীম ও আবুয্ যুহা থেকে إِذَا أُتِيَ بِالْمَرِيضِ ‘‘যখন কোন রোগীকে আনা হত’’, এভাবে বর্ণনা করেছেন। জারীর হাদীসটি মানসূর, আবুয্ যুহা সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি إِذَا أَتٰى مَرِيضًا ‘‘যখন রোগীর কাছে আসতেন’’ এ শব্দসহ বর্ণনা করেছেন। আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬০)

【21】

রোগীর শুশ্রুষাকারীর অযূ করা।

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে প্রবেশ করলেন, তখন আমি পীড়িত ছিলাম। তিনি অযূ করলেন। অতঃপর আমার গায়ের উপর অযূর পানি ছিটিয়ে দিলেন। কিংবা বর্ণনাকারী বলেছেনঃ এরপর তিনি উপস্থিত লোকদের বলেছেনঃ তার গায়ে পানি ছিটিয়ে দাও। এতে আমি সংজ্ঞা ফিরে পেলাম। আমি বললামঃ কালালাহ্ (পিতাও নেই, সন্তানও নেই) ছাড়া আমার কোন ওয়ারিশ নেই। কাজেই আমার রেখে যাওয়া সম্পদ কীভাবে বন্টন করা হবে? তখন ফারায়েয সম্বন্ধীয় আয়াত অবতীর্ণ হয়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৬৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬১)

【22】

জ্বর, প্লেগ ও মহামারী দূর হবার জন্য কোন ব্যক্তির দু’আ করা ।

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাদীনাহ) আসলেন, তখন আবূ বকর (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ) জ্বরে আক্রান্ত হলেন। তিনি বলেনঃ আমি তাঁদের নিকট বললামঃ আব্বাজান, আপনি কেমন অনুভব করছেন? হে বিলাল! আপনি কেমন অনুভব করছেন? তিনি বলেনঃ আবূ বকর (রাঃ) যখন জ্বরে আক্রান্ত হতেন তখন তিনি আবৃত্তি করতেন, “সব মানুষ সুপ্রভাত ভোগ করে আপন পরিবার পরিজন নিয়ে , আর মৃত্যু অপেক্ষা করে তার জুতার ফিতার চেয়েও নিকটে।” আর বিলাল (রাঃ)–এর নিয়ম ছিল যখন তাঁর জ্বর ছেড়ে যেত, তিনি তখন উচ্চ আওয়াজে বলতেনঃ হায়! আমি যদি পেতাম একটি রাত অতিবাহিত করার সুযোগ এমন উপত্যকায় যেখানে আমার পাশে আছে ইয্‌খির ও জালীল ঘাস। যদি আমার অবতরণ হত কোন দিন মাযিন্না এলাকার কূপের কাছে, যদি আমার চোখে ভেসে উঠত শামা ও তাফীল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে গেলাম এবং তাঁকে সংবাদ দিলাম। তখন তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ্‌! আমাদের কাছে মাদীনাহ্‌কে প্রিয় করে দাও, যেভাবে আমাদের কাছে প্রিয় ছিল মাক্কাহ এবং মাদীনাহ্‌কে স্বাস্থ্যকর বানিয়ে দাও। আর মাদীনাহ্‌র মুদ্দ ও সা’তে বরকত দাও এবং মাদীনাহ্‌র জ্বরকে স্থানান্তরিত কর ‘জুহ্‌ফা’ এলাকায়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫২৬৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫১৬২)