79. অনুমতি চাওয়া

【1】

সালামের সূচনা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আদাম (আঃ) –কে তাঁর যথাযোগ্য গঠনে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর উচ্চতা ছিল ষাট হাত। তিনি তাঁকে সৃষ্টি করে বললেনঃ তুমি যাও। উপবিষ্ট ফেরেশতাদের এই দলকে সালাম করো এবং তুমি মনোযোগ সহকারে শোনবে তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয়? কারণ এটাই হবে তোমার ও তোমার বংশধরের সম্ভাষণ (তাহিয়্যা)। তাই তিনি গিয়ে বললেনঃ ‘আস্‌সালামু ‘আলাইকুম’। তাঁরা জবাবে বললেনঃ ‘আস্‌সালামু ‘আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’। তাঁরা বাড়িয়ে বললেনঃ ‘ওয়া রহমাতুল্লাহ’ বাক্যটি। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বললেনঃ যারা জান্নাতে প্রবেশ করবে তারা আদাম (আঃ) –এর আকৃতি বিশিষ্ট হবে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত মানুষের আকৃতি ক্রমশঃ কমে আসছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮১)

【2】

আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো না, অনুমতি প্রার্থনা এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম দেয়া ব্যতীত। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর যাতে তোমরা উপদেশ লাভ কর। সেখানে যদি কাউকে না পাও, তাহলে তাতে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়। আর যদি তোমাদেরকে বলা হয়, ‘ফিরে যাও, তাহলে ফিরে যাবে, এটাই তোমাদের জন্য বেশি পবিত্র’। তোমরা যা কর সে সম্পর্কে আল্লাহ সবচেয়ে বেশি অবগত। সে ঘরে কেউ বাস করে না, তোমাদের মালমাত্তা থাকে, সেখানে প্রবেশ করলে তোমাদের কোন পাপ হবেনা, আল্লাহ জানেন তোমরা যা প্রকাশ কর আর যা তোমরা গোপন কর। [১৯ ] (সূরাহ আন্‌-নূর ২৪/২৭-২৯)

[১৯] এ আয়াত নাযিল হওয়ার উপলক্ষ ছিল এই যে, একজন মহিলা সহাবী রসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর দরবারে হাজির হয়ে বললেন: “হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার ঘরে এমন অবস্থায় থাকি যে, তখন আমাকে সে অবস্থায় কেউ দেখতে পাক তা আমি মোটেই পছন্দ করিনা- সে আমার ছেলে-সন্তানই হোক কিংবা পিতা অথচ এ অবস্থায়ও তারা আমার ঘরে প্রবেশ করে। এখন আমি কী করব? এরপরই এ আয়াতটি নাযিল হয়। বস্তুত আয়াতটিতে মুসলিম নারী-পুরুষের পরস্পরের ঘরে প্রবেশ করার প্রসঙ্গে এক স্থায়ী নিয়ম পেশ করা হয়েছে। মেয়েরা নিজেদের ঘরে সাধারণত খোলামেলা অবস্থায়ই থাকে। ঘরের অভ্যন্তরে সব সময় পূর্ণাঙ্গ আচ্ছাদিত করে থাকা মেয়েদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এমতাবস্থায় কারো ঘরে প্রবেশ করা- সে মুহাররম ব্যক্তিই হোক না কেন- মোটেই সমীচীন নয়। আর গায়র মুহাররাম পুরুষের প্রবেশ করার তো কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। কেননা বিনানুমতিতে ও আগাম না জানিয়ে কেউ যদি কারো ঘরে প্রবেশ করে তাহলে ঘরের মেয়েদেরকে অপ্রস্তত অবস্থায় দেখার এবং তাদের দেহের যৌন অঙ্গের উপর নজর পড়ে যাওয়ার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের সঙ্গে চোখাচোখি হতে পারে। তাদের রূপ-যৌবন দেখে পুরুষ দর্শকের মনে যৌন লালসার আগুন জ্বলে উঠতে পারে। আর তারই পরিণামে এ মেয়ে-পুরুষের মাঝে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে গোটা পরিবারকে তছনছ করে দিতে পারে। মেয়েদের যৌন অঙ্গ ঘরের আপন লোকদের দৃষ্টি থেকে এবং তাদের রূপ-যৌবন ভিন পুরুষের নজর থেকে বাঁচাবার উদ্দেশ্যেই এ ব্যবস্থা পেশ করা হয়েছে। জাহিলিয়াতের যুগে এমন হতো যে, কারো ঘরের দুয়ারে গিয়ে আওয়াজ দিয়েই টপ্‌ করে ঘরে প্রবেশ করত, মেয়েদেরকে সামলে নেবারও কোনো সময় দেয়া হত না। ফলে কখনো ঘরের মেয়ে পুরুষ কে একই শয্যায় কাপড় মুড়ি দেয়া অবস্থায় দেখতে পেত, মেয়েদেরকে দেখত অসংবৃত বস্ত্রে। এজন্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছেঃ (---) “সেই ঘরে যদি কোন লোক না পাও তবে তাতে তোমরা প্রবেশ করবে না যতক্ষণ না তোমাদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। আর যদি তোমাদের ফিরে যেতে বলা হয়, তবে তোমরা অবশ্যই ফিরে যাবে। এ হচ্ছে তোমাদের জন্য অধিক পবিত্রতর নীতি । তোমরা যা করো সে সম্পর্কে আল্লাহ পূর্ণ মাত্রায় অবহিত রয়েছেন।” (সূরা নূর আয়াতঃ ২৮) আনাস থেকে বর্ণিত হয়েছে। নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “হে প্রিয় পুত্র, তুমি যখন তোমার ঘরের লোকদের সামনে যেতে চাইবে, তখন বাইরে থেকে সালাম কর। এ সালাম করা তোমার ও তোমাদের ঘরের লোকদের পক্ষে বড়ই বারাকাতের কারণ হবে। কারো ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে প্রথমে সালাম দেবে, না প্রথমে ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইবে, এ নিয়ে দু’রকমের মত পাওয়া যায়। কুরআনে প্রথমে অনুমতি চাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন যে, প্রথমে অনুমতি চাইবে, পরে সালাম দিবে। কিন্তু এ মত বিশুদ্ধ নয়। কুরআনে প্রথমে অনুমতি চাওয়ার কথা বলা হয়েছে বলেই যে প্রথমে তাই করতে হবে এমন কোন কথা নেই। কুরআনে তো কী কী করতে হবে তা এক সঙ্গে বলে দেয়া আছে। এখানে পূর্বাপরের বিশেষ কোন তাৎপর্য নেই। বিশেষত বিশুদ্ধ হাদীসে প্রথমে সালাম করার উপরই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।“ বানী ‘আমের গোত্রীয় এক সহাবী হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেনঃ আমি রসূল- (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলাম। রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দাসীকে নির্দেশ দিলেন বেরিয়ে গিয়ে তাকে বলঃ আপনি আস্‌সালামু আলাইকুম বলে বলুনঃ আমি কি প্রবেশ করব? কারণ সে কীভাবে প্রবেশ করতে হয় ভাল করে তা জানে না.........। [হাদীসটি সহীহ্‌, দেখুন “সহীহ্‌ আবী দাঊদ” (৫১৭৭), “সহীহ্‌ আদাবিল মুফরাদ” (১০৮৪)] আতা বলেনঃ আমি আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ)- কে বলতে শুনেছিঃ কেউ যদি বলেঃ আমি কি [ঘরে] প্রবেশ করব আর সালাম প্রদান না করে তাহলে তুমি তাকে না বল যে পর্যন্ত সে চাবি না নিয়ে আসে। আমি বললামঃ আস্‌সালাম। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। [“সহীহ্‌ আদাবিল মুফরাদ” (১০৮৩)]। ইবনু আব্বাস হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ উমার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করতে গিয়ে বলেছিলেনঃ আস্‌সালামু ‘আলা রসূলিল্লাহ্‌, আস্‌সালামু আলাইকুম ‘উমার কি প্রবেশ করবে? [“সহীহ্‌ আদাবিল মুফরাদ” (১০৮৫)] কালদা ইবনে হাম্বল বলেনঃ আমি রসূলের (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলাম, কিন্ত প্রথমে সালাম করিনি বলে অনুমতিও পাইনি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেনঃ (---) ফিরে যাও, তারপর এসে বল আস্‌সালামু ‘আলাইকুম, তার পরে প্রবেশের অনুমতি চাও। জাবের বর্ণিত হাদীসে রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেনঃ যে লোক প্রথমে সালাম করেনি, তাকে ঘরে প্রবেশ করার অনুমতি দিও না। জাবের বর্ণিত অপর এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ (---) কথা বলার পূর্বে সালাম দাও। আবূ মূসা আশ’আরী ও হুযায়ফা (রাঃ) বলেছেনঃ (---) মাহরাম মেয়েলোকদের কাছে যেতে হলেও প্রথমে অনুমতি চাইতে হবে এক ব্যক্তি রসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমার মায়ের ঘরে যেতে হলেও কি আমি অনুমতি চাইব? রসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেনঃ অবশ্যই । সে লোকটি বললঃ আমি তো তার সঙ্গে একই ঘরে থাকি- তবুও? রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেনঃ হ্যাঁ, অবশ্যই অনুমতি চাইবে। সেই ব্যাক্তি বললঃ আমি তো তার খাদেম। তখন রসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ (---) অবশ্যই পূর্বাহ্নে অনুমতি চাইবে, তুমি কি তোমার মাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পছন্দ কর? তার মানে, অনুমতি না নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলে মাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখতে পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে প্রথমে সালাম করতে হবে এবং পরে প্রবেশের অনুমতি চাইতে হবে। অনুমতি না পেলে ফিরে যেতে হবে। এ ফিরে যাওয়া অধিক ভাল, সম্মানজনক প্রবেশের জন্য কাতর অনুনয়-বিনয় করার হীনতা থেকে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) হাদীসের ইলম লাভের জন্যে কোন কোন আনসারীর ঘরের দ্বারদেশে গিয়ে বলে থাকতেন, ঘরের মালিক বের হয়ে না আসা পর্যন্ত তিনি প্রবেশের অনুমতি চাইতেন না। এ ছিল উস্তাদের প্রতি ছাত্রের বিশেষ আদব, শালীনতা। কারো বাড়ির সামনে গিয়ে প্রবেশের অনুমতির জন্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হলে দরজার ঠিক সোজাসুজি দাঁড়ানও সমীচীন নয়। দরজার ফাঁক দিয়ে ভিতরে নজর করতেও চেষ্টা করবে না। কারণ, নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছেঃ আবদুল্লাহ ইবনে বুসর বলেনঃ নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কারো বাড়ি বা ঘরের দরজায় এসে দাঁড়াতেন, তখন অবশ্যই দরজার দিকে মুখ করে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন না। বরং দরজার ডান কিংবা বাম পাশে সরে দাঁড়াতেন এবং সালাম করতেন। এক ব্যক্তি রসূলে কারীমের (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশেষ কক্ষপথে মাথা উঁচু করে তাকালে রসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তখন ভিতরে ছিলেন এবং তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)হাতে লৌহ নির্মিত চাকুর মত একটি জিনিস ছিল। তখন তিনি বললেনঃ এ ব্যক্তি বাইরে থেকে উঁকি মেরে আমাকে দেখবে তা আগে জানতে পারলে আমি হাতের এ জিনিসটি দ্বারা তার চোখ ফুটিয়ে দিতাম। এ কথা থেকে বোঝা উচিত যে, এ চোখের দৃষ্টি বাঁচানো আর তা থেকে বাঁচবার উদ্দেশ্যেই পূর্বাহ্নে অনুমতি চাওয়ার রীতি করে দেয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে স্পষ্ট, আরো কঠোর হাদীস বর্ণিত আছে। নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ যদি তোমার অনুমতি ছাড়াই তোমার ঘরের মধ্যে উঁকি মেরে তাকায়, আর তুমি যদি পাথর মেরে তার চোখ ফুটিয়ে দাও, তাহলে তাতে তোমার কোন দোষ হবে না। তিনবার অনুমতি চাওয়ার পরও যদি অনুমতি পাওয়া না যায়, তাহলে ফিরে চলে যেতে হবে। আবূ সায়ীদ খুদরী একবার উমার ফারূকের দাওয়াত পেয়ে তাঁর ঘরের দরজায় এসে উপস্থিত হলেন এবং তিনবার সালাম করার পরও কোন জবাব না পাওয়ার কারণে তিনি ফিরে চলে গেলেন। পরে সাক্ষাত হলে উমার ফারূক বললেনঃ “তোমাকে দাওয়াত দেয়া সত্ত্বেও তুমি আমার ঘরে আসলে না কেন?” তিনি বললেনঃ “আমি তো এসেছিলাম, আপনার দরজায় দাঁড়িয়ে তিনবার সালামও করেছিলাম। কিন্তু কারো কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে আমি ফিরে চলে এসেছি। কেননা নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কারো ঘরে যাওয়ার জন্যে তিনবার অনুমতি চেয়েও না পেলে সে যেন ফিরে যায়।” (বুখারী, মুসলিম) ইমাম হাসান বসরী বলেছেনঃ “তিনবার সালাম করার মধ্যে প্রথমবার হল তার আগমন সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া। দ্বিতীয়বার সালাম প্রবেশের অনুমতি লাভের জন্যে এবং তৃতীয়বার হচ্ছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা ।” কেননা তৃতীয়বার সালাম দেয়ার পরও ঘরের ভেতর থেকে কারো জবাব না আসা সত্যই প্রমাণ করে যে, ঘরে কেউ নেই, অন্তত ঘরে এমন কোন পুরুষ নেই, যে তার সালামের জবাব দিতে পারে। আর যদি কেউ ধৈর্য ধরে ঘরের দুয়ারেই দাঁড়িয়েই থাকতে চায়, তবে তারও অনুমতি আছে, কিন্ত শর্ত এই যে, দুয়ারে দাঁড়িয়েই অবিশ্রান্তভাবে ডাকা-ডাকি ও চিল্লাচিল্লি করতে থাকতে পারবে না। একথাই বলা হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতাংশেঃ “তারা যদি ধৈর্য ধারণ করে অপেক্ষায় থাকত যতক্ষণ না তুমি ঘর থেকে বের হচ্ছ, তাহলে তাদের জন্যে খুবই কল্যাণকর হত।” (সূরা হুজরাতঃ ৫) আয়াতটি যদিও বিশেষভাবে রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রসঙ্গে; কিন্তু এর আবেদন ও প্রয়োগ সাধারণ। কোন কোন কিতাবে এরূপ উল্লেখ পাওয়া যায় যে, ইবনে আব্বাস (রাঃ) যিনি ইসলামের বিষয়ে মস্তবড় মনীষী ও বিশেষজ্ঞ ছিলেন – উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) –এর বাড়িতে কুরআন শেখার উদ্দেশ্যে যাতায়াত করতেন। তিনি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতেন, কাউকে ডাক দিতেন না, দরজায় ধাক্কা দিয়েও ঘরের লোকদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলতেন না। যতক্ষণ না উবাই (রাঃ) নিজ ইচ্ছেমত ঘর থেকে বের হতেন, ততক্ষণ এমনিই দাঁড়িয়ে থাকতেন। আব্‌দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ একবার কুরবানীর দিনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফায্‌ল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) –কে আপন সওয়ারীর পিঠে নিজের পেছনে বসালেন। ফায্‌ল একজন সুপুরুষ ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের মাসাআলা মাসায়িল বলে দেয়ার জন্য আসলেন। এ সময় খাশ’আম গোত্রের এক সুন্দরী নারী রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট একটা মাসাআলা জিজ্ঞেস করার জন্য আসল। তখন ফায্‌ল (রাঃ) তার দিকে তাকাতে লাগলেন। মহিলাটির সৌন্দর্য তাঁকে আকৃষ্ট করল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফায্‌ল (রাঃ) –এর দিকে ফিরে দেখলেন যে, ফায্‌ল (রাঃ) তাঁর দিকে তাকাচ্ছেন। তিনি নিজের হাত পেছনের দিকে নিয়ে ফায্‌ল (রাঃ) –এর চিবুক ধরে ঐ নারীর দিকে না তাকানোর জন্য তার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন। [২০] এরপর স্ত্রীলোকটি জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের উপর যে হাজ্জ ফরয হবার বিধান দেয়া হয়েছে, আমার পিতার উপর তা এমন অবস্থায় এসেছে যে, বৃদ্ধ হবার কারণে সওয়ারীর উপরে বসতে তিনি অক্ষম। যদি আমি তার পক্ষ থেকে হাজ্জ আদায় করে নেই, তবে কি তার পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যাবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হাঁ।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮২) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) যে, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাকো। তারা বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাদের রাস্তায় বসা ব্যতীত গত্যন্তর নেই, আমরা সেখানে কথাবার্তা বলি। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদি তোমাদের রাস্তায় মজলিস করা ব্যতীত উপায় না থাকে, তবে তোমরা রাস্তার হক আদায় করবে। তারা বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! রাস্তার হক কী? তিনি বললেন, তা হলো চক্ষু অবনত রাখা, কাউকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা। সালামের জবাব দেয়া এবং সৎকাজের নির্দেশ দেয়া আর অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা।আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৩)

【3】

আল্লাহ তা’আলার নামের মধ্যে ‘সালাম’ একটি নাম।

আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ “যখন তোমাদেরকে সসম্মানে সালাম প্রদান করা হয়, তখন তোমরা তার চেয়ে উত্তমরূপে জওয়াবী সালাম দাও কিংবা (কমপক্ষে) অনুরূপভাবে দাও।” (সূরা আন-নিসা ৪ : ৮৬) ‘আব্‌দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ যখন আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম, তখন আমরা আল্লাহর প্রতি তাঁর বান্দাদের পক্ষ থেকে সালাম, জিব্রীল ‘আ.)-এর প্রতি সালাম, মীকাঈল (‘আ.)-এর প্রতি সালাম এবং অমুকের প্রতি সালাম দিলাম। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করে, আমাদের দিকে তাঁর চেহারা ফিরিয়ে বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলা নিজেই ‘সালাম’। অতএব যখন তোমাদের কেউ সালাতের মধ্যে বসবে, তখন বলবেঃ التَّحِيَّاتُ لله وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ মুসল্লী যখন এ কথাটা বলবে, তখনই আসমান যমীনে সব নেক বান্দাদের নিকট এ সালাম পৌঁছে যাবে। তারপর বলবে أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه” وَرَسُوْلُه” তারপর সে তার পছন্দমত দু‘আ বেছে নেবে। [৮৩১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৮৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৪)

【4】

অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোকেদের সালাম করবে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে। [৬২৩২, ৬২৩৩,৬২৩৪; মুসলিম ৩৯/১, হাঃ ২১৬০, হাঃ ১০৬২৯] (আ. প্র. ৫৭৯০, ই. ফা. ৫৬৮৫)

【5】

আরোহী পদচারী কে সালাম করবে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আরোহী পদচারীকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে। [৬২৩১] (আ. প্র. ৫৭৯১, ই. ফা. ৫৬৮৬)

【6】

পদচারী উপবিষ্টকে সালাম দিবে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আরোহী পদচারীকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৯২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৭)

【7】

বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে সালাম করবে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বয়োকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্প সংখ্যক অধিক সংখ্যককে সালাম দিবে।(আধুনিক প্রকাশনী- অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- অনুচ্ছেদ)

【8】

সালামের বিস্তারণ।

বারাআ ইব্‌নু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন সাতটি কাজেরঃ রোগীর খোঁজ-খবর নেয়া, জানাযার সঙ্গে যাওয়া, হাঁচি দাতার জন্য দু’আ করা, দুর্বলকে সাহায্য করা, মাযলূমের সাহায্য করা, সালাম প্রসার করা এবং কসমকারীর কসম পূর্ণ করা। আর নিষেধ করেছেন (সাতটি কাজ থেকে): রূপার পাত্রে পানাহার, স্বর্ণের আংটি পরিধান, রেশমী যিনের উপর সাওয়ার হওয়া, মিহিন রেশমী বস্ত্র পরিধান, পাতলা রেশম বস্ত্র ব্যবহার, রেশম মিশ্রিত কাতান বস্ত্র পরিধান এবং গাঢ় রেশমী বস্ত্র পরিধান করা।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৮)

【9】

পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া।

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) এক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলঃ ইসলামে কোন কাজ উত্তম? তিনি বললেনঃ তুমি ক্ষুধার্তকে অন্ন দেবে, আর সালাম দেবে যাকে তুমি চেন আর যাকে চেন না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৮৯) আবূ আইউব (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ কোন মুসলিমের পক্ষে তার কোন ভাইয়ের সাথে তিন দিনের অধিক এমনভাবে সম্পর্কচ্ছেদ করে থাকা বৈধ নয় যে, তাদের দু’জনের দেখা সাক্ষাৎ হলেও একজন এদিকে, আরেকজন অন্যদিকে চেহারা ঘুরিয়ে নেয়। তাদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি যে প্রথম সালাম করবে। আবূ সুফ্‌ইয়ান (রাঃ) বলেন যে, এ হাদীসটি আমি যুহ্‌রী (রহঃ) থেকে তিনবার শুনেছি।(আধুনিক প্রকাশনী- , ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯০)

【10】

পর্দার আয়াত

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) যে, রসূলুল্লাহ (রাঃ) যখন মদিনায় আসলেন, তখন তাঁর (বর্ণনাকারীর) বয়স ছিল দশ বছর। তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর জীবনের দশটি বছর আমি তাঁর খিদমত করি। আর পর্দার বিধান ব্যাপারে আমি সব চেয়ে অধিক অবগত ছিলাম, যখন তা অবতীর্ণ হয়। উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) প্রায়ই আমাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতেন। যাইনাব বিনত জাহ্‌শ (রাঃ)- এর সঙ্গে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাসরের দিনে প্রথম পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নতুন দুলহা হিসেবে সে দিন লোকেদের দা‘ওয়াত করেন এবং এরপর অনেকেই দা’ওয়াত খেয়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু কয়েকজন তাঁর কাছে রয়ে যান এবং তাদের অবস্থান দীর্ঘায়িত করেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে দাঁড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান এবং আমিও তাঁর সঙ্গে যাই, যাতে তারা বের হয়ে যায়। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলেন এবং আমিও তাঁর সঙ্গে চলি। এমনকি তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ) –এর ঘরের দরজায় এসে পৌঁছেন। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাবলেন যে, নিশ্চয়ই তারা বেরিয়ে গেছে। তখন তিনি ফিরে আসেন আর তাঁর সঙ্গে আমিও ফিরে আসি। তিনি যাইনাব (রাঃ) –এর ঘরে প্রবেশ করে দেখেন যে, তারা তখনও বসেই আছেন, চলে যায়নি। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে গেলেন এবং আমিও তাঁর সঙ্গে ফিরে গেলাম। এমনকি তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ)- এর দরজার চৌকাঠ পর্যন্ত এসে পৌছেন। এরপর তিনি ভাবলেন যে, এখন তারা অবশ্যই বেরিয়ে গেছে। তাই তিনি ফিরে এসে দেখেন যে, তারা বেরিয়ে গেছে। এ সময় পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং তিনি তাঁর ও আমার মধ্যে পর্দা টেনে দেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৯৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯১) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাইনাব (রাঃ) –কে বিয়ে করলেন, তখন একদল (মেহমান) তাঁর ঘরে এসে খাওয়া-দাওয়া করলেন। এরপর তাঁরা ঘরে বসেই আলাপ-আলোচনা করতে লাগলেন। তিনি দাঁড়ালে কিছু লোক উঠে বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু অবশিষ্ট কিছু লোক বসেই থাকলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে প্রবেশ করার জন্য ফিরে এসে দেখলেন যে, তারা বসেই আছেন। কিছুক্ষন পরে তারা উঠে চলে গেলেন। তারপর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ওদের চলে যাবার খবর দিলে তিনি এসে প্রবেশ করলেন। তখন আমি ভেতরে যাওয়ার ইচ্ছে করলে তিনি আমার ও তাঁর মাঝখানে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। এ সময় আল্লাহ্‌ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “হে ইমানদারগণ! তোমরা নবীর ঘরগুলোতে প্রবেশ করো না”। ...... শেষ পর্যন্ত। (সূরাহ আল-আহযাবঃ ৫৩)(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৯৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯২) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ যে, ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর নিকট প্রায়ই বলতেন যে , আপনি আপনার স্ত্রীদের পর্দা করান। কিন্তু তিনি তা করেননি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রীগণ প্রাকৃতিক প্রয়োজনে রাতে মাঠের দিকে বাইরে যেতেন। একবার সাওদাহ বিন্‌ত যাম‘আহ (রাঃ) বেরিয়ে গেলেন। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী মহিলা। ‘উমার (রাঃ) মজলিসে উপস্থিত ছিলেন। তাই তিনি পর্দার নির্দেশ অবতীর্ণ হবার আগ্রহে বললেনঃ ওহে সাওদাহ! আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি। তখন আল্লাহ তা’আলা পর্দার আয়াত নাযিল করলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৯৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৩)

【11】

তাকানোর অনুমতি গ্রহন করা ।

সাহ্‌ল ইবনু সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেনঃ একবার এক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কোন এক হুজরায় উঁকি দিয়ে তাকালো। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে একটা ‘মিদরা’ ছিল, যা দিয়ে তিনি তাঁর মাথা চুলকাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেনঃ যদি আমি জানতাম যে , তুমি উঁকি দিবে, তবে এ দিয়ে তোমার চোখ ফুঁড়ে দিতাম। তাকানোর জন্য অনুমতি গ্রহনের বিধান দেয়া হয়েছে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৭৯৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৪) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) যে , একবার জনৈক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর এক কক্ষে উঁকি দিল। তখন তিনি একটা তীর ফলক কিংবা তীর ফলকসমূহ নিয়ে তার দিকে দৌড়ালেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ তা যেন আমি এখনও দেখছি। তিনি ঐ লোকটির চোখ ফুঁড়ে দেয়ার জন্য তাকে খুঁজছিলেন। [৬৮৮৯, ৬৯০০; মুসলিম ৩৮/৯, হাঃ ২১৫৭, আহমাদ ১৩৫০৭] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৫)

【12】

যৌনাঙ্গ ব্যতীত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যভিচার ।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা বানী আদামের জন্য যিনার একটা অংশ নির্ধারিত রেখেছেন। সে তাতে অবশ্যই জড়িত হবে। চোখের জিনা হলো দেখা, জিহ্বার জিনা হলো কথা বলা, কুপ্রবৃত্তি কামনা ও খাহেশ সৃষ্টি করা এবং যৌনাঙ্গ তা সত্য অথবা মিথ্যা প্রমাণ করে। [২১][মুসলিম ৪৬/৫, হাঃ ২৬৫৭, আহমাদ ৮২২২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৬)

【13】

তিনবার সালাম দেয়া ও অনুমতি চাওয়া ।

আনাস (রাঃ) যে ,নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন সালাম করতেন , তখন তিনবার সালাম দিতেন এবং যখন কথা বলতেন তখন তিনবার তার পুনরাবৃত্তি করতেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৭) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আমি আনসারদের এক মজলিসে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ আবূ মূসা (রাঃ) ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে এসে বললেনঃ আমি তিনবার ‘উমার (রাঃ)- এর নিকট অনুমতি চাইলাম, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হল না। তাই আমি ফিরে এলাম। ‘উমার (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে কিসে বাধা দিল? আমি বললামঃ আমি প্রবেশের জন্য তিনবার অনুমতি চাইলাম, কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হলো না। তাই আমি ফিরে এলাম। (কারণ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যদি তোমাদের কেউ তিনবার প্রবেশের অনুমতি চায়। কিন্তু তাতে অনুমতি দেয়া না হয় তবে সে যেন ফিরে যায়। তখন উমার (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহ্‌র কসম! তোমাকে এ কথার উপর অবশ্যই প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। তিনি সবাইকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের মাঝে কেউ আছে কি যিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে এ হাদীস শুনেছে? তখন উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহ্‌র কসম! আপনার কাছে প্রমাণ দিতে দলের সর্বকনিষ্ঠ ব্যক্তিই উঠে দাঁড়াবে। আর আমি দলের সর্বকনিষ্ঠ ছিলাম। সুতরাং আমি তাঁর সঙ্গে উঠে দাঁড়িয়ে বললামঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অবশ্যই এ কথা বলেছেন। ইবনু মুবারাক বলেন, আবূ সা’ঈদ হতে ভিন্ন একটি সূত্রেও অনুরূপ একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। [২০৬২; মুসলিম ৩৮/৭, হাঃ ২১৫৩, আহমাদ ১৯৬৩০] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮০৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৮)

【14】

যখন কোন ব্যক্তিকে ডাকা হয় আর সে আসে, সেও কি প্রবেশের অনুমতি নিবে ?

আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত । নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ এ ডাকাই তার জন্য অনুমতি । আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ একদিন আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে তাঁর ঘরে প্রবেশ করলাম। তিনি ঘরে গিয়ে একটি পেয়ালায় দুধ পেলেন। তিনি আমাকে বললেনঃ হে আবূ হির! তুমি আহলে সুফ্‌ফার নিকট গিয়ে তাদের আমার নিকট ডেকে আন। তখন আমি তাদের কাছে গিয়ে দা’ওয়াত দিয়ে এলাম। তারপর তারা এসে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তাদের অনুমতি দেয়া হলো। তারপর তারা প্রবেশ করল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৬৯৯)

【15】

শিশুদের সালাম দেয়া।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) যে, একবার তিনি একদল শিশুর পার্শ্ব দিয়ে অতিক্রম করা কালে তিনি তাদের সালাম করে বললেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -ও তা করতেন।[মুসলিম ৩৯/৫, হাঃ ২১৬৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮০৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০০)

【16】

মহিলাকে পুরুষদের এবং পুরুষকে মহিলাদের সালাম দেয়া।

সাহ্‌ল ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা জুমু’আহর দিনে খুশি হতাম। রাবী বলেন, আমি তাঁকে বললামঃ কেন? তিনি বললেনঃ আমাদের একজন বৃদ্ধা মহিলা ছিল। সে কোন লোককে ‘বুদাআ’ নামক খেজুর বাগানে পাঠিয়ে বীট চিনির শিকড় আনতো। তা একটি হাঁড়িতে দিয়ে সে তাতে কিছুটা যবের দানা দিয়ে ঘুঁটে এক রকম খাবার তৈরি করতো। এরপর আমরা যখন জুমু’আহর সলাত আদায় করে ফিরতাম, তখন আমরা ঐ মহিলাকে সালাম দিতাম। তখন সে আমাদের ঐ খাবার পরিবেশন করতো। আমরা এজন্য খুশি হতাম। আমাদের নিয়ম ছিল যে, আমরা জুমু’আহর পরেই মধ্যাহ্ন ভোজন ও মধ্যাহ্ন বিশ্রাম করতাম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮০৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০১) আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ! ইনি জিবরীল (আঃ) তোমাকে সালাম দিচ্ছেন। তখন আমিও বললামঃ ওয়া আলাইহিস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর উদ্দেশ্যে বললেনঃ আমরা যা দেখছি না, তা আপনি দেখছেন। ইউনুস ও নু’মান যুহরী সূত্রে বলেন, এবং ‘বারাকাতুহু’ –ও বলেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮০৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০২)

【17】

যদি কেউ জিজ্ঞেস করেন যে, ইনি কে? আর তিনি বলেন, আমি।

জাবির (রাঃ) জাবির (রাঃ) বলেন, আমার পিতার কিছু ঋণ ছিল। এ সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এলাম এবং দরজায় আঘাত করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ কে? আমি বললামঃ আমি। তখন তিনি বললেনঃ আমি আমি, যেন তিনি তা অপছন্দ করলেন। [২১২৭; মুসলিম ৩৮/৮, হাঃ ২১৫৫] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮০৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৩)

【18】

যে সালামের জবাব দিল এবং বললঃ ‘আলাইকাস্‌ সালাম।

জিবরীল (আঃ) এর সালামের উত্তরে ‘আয়িশাহ (রাঃ) “ওয়া আলাইহিস্‌ সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু” বলেছেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেনঃ আদাম (‘আঃ) –এর সালামের জবাবে ফেরেশতা বলেনঃ “আসসালামু ‘আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ”। আবূ হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলো। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাসজিদের একপার্শ্বে উপবিষ্ট ছিলেন। সে সলাত আদায় করে এসে তাঁকে সালাম করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় করো। কারণ তুমি সলাত আদায় করো নি। সে ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করে এসে আবার সালাম করল। তিনি বললেনঃ ওয়া আলাইকাস সালাম; তুমি ফিরে যাও এবং সালাত আদায় করো। কারণ তুমি সালাত আদায় করোনি। সে ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করে তাঁকে সালাম করল। তখন সে দ্বিতীয় বারে অথবা তার পরের বারে বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আমাকে সালাত শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ যখন তুমি সালাতে দাঁড়ানোর ইচ্ছে করবে, তখন প্রথমে তুমি যথানিয়মে অযূ করবে। তারপর কিবলামুখী দাঁড়িয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন থেকে যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ হবে, তা তিলাওয়াত করবে। তারপর তুমি রুকূ’ করবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর মাথা তুলে ঠিক সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সাজদাহ করবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর আবার মাথা তুলে বসবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর ঠিক এভাবেই তোমার সালাতের যাবতীয় কাজ সমাধা করবে। আবূ উসামাহ (রাঃ) বলেন, এমনকি শেষে তুমি সোজা হয়ে দণ্ডায়মান হবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৪) আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তারপর উঠে বস ধীরস্থিরভাবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৫)

【19】

যদি কেউ বলে যে, অমুক তোমাকে সালাম দিয়েছে।

আয়িশাহ (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ জিবরীল (‘আঃ) তোমাকে সালাম দিয়েছেন। তখন তিনি বললেনঃ ওয়া আলাইহিস্‌ সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহ।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮১১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৬)

【20】

মুসলিম ও মুশরিকদের একত্রিত মাজলিসে সালাম দেয়া।

উসামাহ ইবনু যায়দ (রাঃ) যে, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এমন একটি গাধার উপর সাওয়ার হলেন, যার জ্বীনের নীচে ফাদাকের তৈরী একখানি চাদর ছিল। তিনি উসামাহ ইবনু যায়দকে নিজের পিছনে বসিয়েছিলেন। তখন তিনি হারিস ইবনু খাযরাজ গোত্রের সা’দ ইবনু উবাদাহ (রাঃ) -এর দেখাশোনার উদ্দেশে রওয়ানা হচ্ছিলেন। এটি ছিল বদর যুদ্ধের আগের ঘটনা। তিনি এমন এক মাজলিসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যেখানে মুসলিম, প্রতিমাপূজক, মুশরিক ও ইয়াহূদী ছিল। তাদের মধ্যে ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূলও ছিল। আর এ মাজলিসে ‘আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ)-ও হাজির ছিলেন। যখন সাওয়ারীর পদাঘাতে বিক্ষিপ্ত ধূলাবালি মাজলিসকে ঢেকে ফেলছিল, তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই তার চাদর দিয়ে তার নাক ঢাকল। তারপর বললঃ তোমরা আমাদের উপর ধূলাবালি উড়িয়ো না। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের সালাম করলেন। তারপর এখানে থামলেন ও সাওয়ারী থেকে নেমে তাদের আল্লাহ্‌র প্রতি আহ্বান করলেন এবং তাদের কাছে কুরআন পাঠ করলেন। তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল বললঃ হে আগন্তুক! আপনার এ কথার চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। তবে আপনি যা বলছেন, যদিও তা সত্য, তবুও আপনি আমাদের মাজলিসে এসব বলে আমাদের বিরক্ত করবেন না। আপনি আপনার নিজ বাসস্থানে ফিরে যান। এরপর আমাদের মধ্য হতে কোন লোক আপনার নিকট গেলে তাকে এসব কথা বলবেন। তখন ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আমাদের মাজলিসে আসবেন, আমরা এসব কথা পছন্দ করি। তখন মুসলিম, মুশরিক ও ইয়াহূদীদের মধ্যে পরস্পর গালাগালি শুরু হয়ে গেল। এমনকি তারা একে অন্যের উপর আক্রমণ করতে উদ্যত হল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের নিরস্ত করতে লাগলেন। শেষে তিনি তাঁর সাওয়ারীতে উঠে রওয়ানা হলেন এবং সা’দ ইবনু উবাদাহ্‌র কাছে পোঁছলেন। তারপর তিনি বললেনঃ হে সা’দ! আবূ হুবাব অর্থাৎ ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই কী বলেছে, তা কি তুমি শুনোনি? সা’দ (রাঃ) বললেনঃ সে এমন কথাবার্তা বলেছে। তিনি আরো বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি তাকে মাফ করে দিন। আর তার কথা ছেড়ে দিন। আল্লাহ্‌র শপথ! আল্লাহ্‌ তা’আলা আপনাকে যেসব নি’য়ামত দান করার ছিল তা সবই দান করেছেন। অন্যদিকে এ শহরের অধিবাসীরা তো পরামর্শ করে স্থির করেছিল যে, তারা তাকে রাজমুকুট পরাবে। আর তার শিরে রাজকীয় পাগড়ী বেঁধে দিবে। কিন্তু আল্লাহ্‌ তা’আলা আপনাকে যে দ্বীনে হক দান করেছেন, তা দিয়ে তিনি তাদের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে সে (দুঃখের আগুনে) জ্বলছে। এজন্যই সে আপনার সঙ্গে যে ব্যবহার করেছে, তা আপনি নিজেই দেখেছেন। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে মাফ করে দিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৭)

【21】

গুনাহগার ব্যক্তির তাওবাহ করার আলামাত প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত এবং গুনাহগারের তাওবাহ কবূল হবার প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত যিনি তাকে সালাম করেননি এবং তার সালামের জবাবও দেননি।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেনঃ শরাবখোরদের সালাম দিবে না। আবদুল্লাহ ইবনু কা’ব (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু কা’ব (রাঃ) বলেনঃ যখন কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) তাবূকের যুদ্ধে যোগদান না করে পিছনে রয়ে যান, আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার সাথে সালাম কালাম করতে সকলকে নিষেধ করে দেন। (তখনকার ঘটনা) আমি কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) –কে বলতে শুনেছি যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে আসতাম এবং তাঁকে সালাম করতাম আর মনে মনে বলতাম যে, আমার সালামের জবাবে তাঁর ঠোঁট দু’টি নড়ছে কিনা। পঞ্চাশ দিন পূর্ণ হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজরের সালাতের সময় ঘোষণা দিলেন যে, আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদের তাওবাহ কবূল করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৮)

【22】

অমুসলিমদের সালামের জবাব কীভাবে দিতে হবে।

আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার একদল ইয়াহূদী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললঃ আস্‌সামু আলাইকা। (তোমার মরণ হোক)। আমি এ কথার অর্থ বুঝে বললামঃ আলাইকুমুস্‌ সামু ওয়াল লানাতু। (তোমাদের উপর মৃত্যু ও লা’নাত)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ! তুমি থামো। আল্লাহ্‌ সর্ব হালতে নম্রতা পছন্দ করেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! তারা যা বললোঃ তা কি আপনি শুনেননি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এ জন্যই আমিও বলেছি, ওয়া আলাইকুম (অর্থাৎ তোমাদের উপরও)। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭০৯) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ইয়াহূদী যদি তোমাদের সালাম করে তবে তাদের কেউ অবশ্যই বলবেঃ আস্‌সামু আলাইকা। তখন তোমরা উত্তরে বলবে ‘ওয়াআলাইকা’। [৬৯২৮; মুসলিম ৩৯/৪, হাঃ ২১৬৪, আহমাদ ৪৬৯৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১০) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন আহলে কিতাব তোমাদের সালাম দেয়, তখন তোমরা বলবে ওয়া আলাইকুম (তোমাদের উপরও)। [২৯৬২; মুসলিম ৩৯/৪, হাঃ ২১৬৩, আহমাদ ১১৯৪৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১১)

【23】

কারো এমন পত্রের বিষয়ে স্পষ্টরূপে জানার জন্য তদন্ত করে দেখা, যাতে মুসলিমদের জন্য শংকার কারণ আছে।

আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ও যুবায়র ইবনু আওয়াম (রাঃ) এবং আবূ মারসাদ গানাভী (রাঃ) –কে অশ্ব বের করে নির্দেশ দিলেন যে, তোমরা রওয়ানা হয়ে যাও এবং ‘রওযায়ে খাখে’ গিয়ে উপস্থিত হও। সেখানে একজন মুশরিক স্ত্রীলোক পাবে। তার কাছে হাতিব ইবনু আবূ বালতার দেয়া মুশরিকদের প্রতি প্রেরিত একখানি পত্র আছে। আমরা ঠিক সেই জায়গাতেই তাকে পেয়ে গেলাম যেখানকার কথা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছিলেন। ঐ স্ত্রী লোকটি তার এক উটের উপর সওয়ার ছিল। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, তোমার কাছে যে পত্রখানি আছে তা কোথায়? সে বললঃ আমার সাথে কোন পত্র নেই। তখন আমরা তার উটসহ তাকে বসালাম এবং তার সাওয়ারীর আসবাবপত্রের তল্লাশি করলাম। কিন্তু আমরা কিছুই খুঁজে পেলাম না। আমার দু’জন সাথী বললেনঃ পত্রখানা তো পাওয়া গেল না। আমি বললামঃ আমার জানা আছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অনর্থক কথা বলেননি। তখন তিনি স্ত্রী লোকটিকে ধমক দিয়ে বললেনঃ তোমাকে অবশ্যই চিঠিটা বের করে দিতে হবে, নইলে আমি তোমাকে উলঙ্গ করে তল্লাশি চালাব। এরপর সে যখন আমার দৃঢ়তা লক্ষ্য করলো, তখন সে বাধ্য হয়ে তার কোমরে পেঁচানো চাদরে হাত দিয়ে ঐ পত্রখানা বের করে দিলো। তারপর আমরা তা নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে পোঁছলাম। তখন তিনি হাতিব (রাঃ) –কে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে হাতিব! তুমি কেন এমন কাজ করলে? তিনি বললেনঃ আমার মনে এমন কোন খারাপ ইচ্ছে নেই যে, আমি আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি। আমি আমার দৃঢ় মনোভাব পরিবর্তন করিনি এবং আমি দ্বীনও বদল করিনি। এই চিঠি দ্বারা আমার নিছক উদ্দেশ্য ছিল যে, এতে মাক্কাহবাসীদের উপর আমার দ্বারা এমন উপকার হোক, যার ফলে আল্লাহ্‌ তা’আলা আমার পরিবার ও সম্পদ নিরাপদে রাখবেন। আর সেখানে আপনার অন্যান্য সাহাবীদের এমন লোক আছেন যাঁদের দ্বারা আল্লাহ্‌ তা’আলা তাদের পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা দান করবেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বললেনঃ হাতিব ঠিক কথাই বলেছে। সুতরাং তোমরা তাকে ভালো ব্যতীত অন্য কিছুই বলো না। রাবী বলেনঃ ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) বললেন, তিনি নিশ্চয় আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূল এবং মু’মিনদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। অতএব আমাকে ছেড়ে দিন আমি তাঁর গর্দান উড়িয়ে দেই। রাবী বলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে ‘উমার! তোমার কি জানা নাই যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তা’আলা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সম্পর্কে জ্ঞাত আছেন এবং ঘোষণা করেছেন যে, তোমরা যা ইচ্ছে করতে পার। নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে আছে। রাবী বলেনঃ তখন ‘উমার (রাঃ) –এর দু’চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো। তিনি বললেন, আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূলই সবচেয়ে ভালো জানেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১২)

【24】

গ্রন্থধারীদের নিকট কিভাবে পত্র লিখতে হয়?

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আবূ সুফ্ইয়ান ইবনু হারব তাকে বলেছেনঃ হিরাক্লিয়াস আবূ সুফ্ইয়ানকে ডেকে পাঠালেন, কুরাইশদের ঐ দলসহ যারা ব্যবসার জন্য সিরিয়া গিয়েছিলেন। তাঁরা সবাই তাঁর নিকট হাজির হলেন। এরপর তিনি ঘটনার বর্ণনা করেন। শেষে বললেন যে, তারপর হিরাক্লিয়াস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর চিঠিটি আনালেন এবং তা পাঠ করা হল। এতে ছিল ‘বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম’ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ এর পক্ষ হতে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতি السَّلاَمُ عَلٰى مَنْ اتَّبَعَ الْهُد‘ى শান্তি বর্ষিত হোক তাদের উপর যারা সৎপথ অনুসরণ করেছে। [৭] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১৩)

【25】

চিঠিপত্র কার নাম দিয়ে শুরু করতে হবে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বানী ইসরাঈলের এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে বললেন যে, সে এক টুকরো কাঠ নিয়ে খোদাই করে এর ভেতর এক হাজার দীনার ভর্তি করে রাখল এবং এর মালিকের প্রতি লেখা একখানা চিঠিও রেখে দিলো। আর ‘উমার ইবনু আবূ সালামাহ সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ এক লোক এক টুকরো কাঠ খোদাই করে তার ভেতরে কিছু মাল রেখে দিল এবং এর সাথে তার প্রাপকের প্রতি একখানা পত্রও ভরে দিল, যার মধ্যে লেখা ছিল, অমুকের পক্ষ থেকে অমুকের প্রতি।(আধুনিক প্রকাশনী- ২৫-অনুচ্ছেদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১৪)

【26】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর বাণীঃ তোমরা তোমাদের সরদারের জন্য দাঁড়াও।

আবূ সা’ঈদ (রাঃ) কুরাইযাহ গোত্রের লোকেরা সা‘দ -এর ফায়সালার উপর আত্মসমর্পণ করলো। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আনার জন্য লোক পাঠালেন। তারপর তিনি এলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহাবীদের বললেনঃ তোমরা আপন সরদারের প্রতি অথবা বললেনঃ তোমাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির সম্মানার্থে উঠে দাঁড়াও। তারপর সা‘দ এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পার্শ্বেই উপবেশন করলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেনঃ এরা তোমার ফায়সালার উপর আত্মসমর্পণ করেছে। তিনি বললেনঃ তা হলে আমি ফায়সালা দিচ্ছি যে, এদের মধ্যে যারা যুদ্ধ করার যোগ্য তাদের হত্যা করা হোক। আর তাদের ছোটদের বন্দী করা হোক। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এদের ব্যাপারে তুমি আল্লাহ তা‘আলার ফায়সালা অনুযায়ীই ফায়সালা দিয়েছ। ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, আমার কোন কোন সঙ্গী উস্তাদ আবুল ওয়ালীদ থেকে আবূ সাঈদের এ হাদীস عَلٰى حُكْمِكَ এর স্থলে إِلٰى حُكْمِكَ শব্দ আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। [৪০৪৩] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১৫)

【27】

মুসাফাহা করা।

ইবনু মাস’উদ (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)যখন আমাকে তাশাহ্‌হুদ শিক্ষা দেন তখন আমার হাত তাঁর দু’ হাতের মাঝে ছিল। কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, একবার আমি মাসজিদে ঢুকেই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে পেয়ে গেলাম। তখন ত্বলহা ইবনু ‘উবাইদুল্লাহ (রাঃ) আমার দিকে দৌড়ে এসে আমার সঙ্গে মুসাফাহা করলেন এবং আমাকে মুবারাকবাদ জানালেন। ক্বাতাদাহ (রহঃ) আমি আনাস (রাঃ) –কে জিজ্ঞেস করলামঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবীগণের মধ্যে কি মুসাফাহা চালু ছিল? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮২০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১৬) আবদুল্লাহ ইবনু হিশাম (রাঃ) যে, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে ছিলাম। তখন তিনি ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) –এর হস্ত ধারণকৃত অবস্থায় ছিলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১৭)

【28】

দু’ হাত ধরে মুসাফাহা করা।

হাম্মাদ ইবনু যায়দ (রহঃ) ইবনু মুবারকের সঙ্গে দু’হস্তে মুসাফাহ করেছেন। ইবনু মাস’উদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত তাঁর উভয় হস্তের মধ্যে রেখে আমাকে এমনভাবে তাশাহ্হুদ শিখিয়েছেন, যেভাবে তিনি আমাকে কুরআনের সূরা শিখাতেনঃ التَّحِيَّاتُ للهِ÷ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلاَمُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ السَّلاَمُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه” وَرَسُوْلُه” এ সময় তিনি আমাদের মাঝেই অবস্থান করছিলেন। তারপর যখন তাঁর ওফাত হয়ে গেল, তখন থেকে আমরা السَّلاَمُ عَلَيْكَ এ স্থলে السَّلاَمُ عَلَى النَّبِيِّ পড়তে লাগলাম। [৮৩১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮২২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১৮)

【29】

আলিঙ্গন করা এবং কারো এ কথা কীভাবে তোমার সকাল হয়েছে?

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) যে, ‘আলী ইবনু আবূ ত্বলিব যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর শেষ কালে তাঁর কাছ থেকে বেরিয়ে এলেন, লোকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করলোঃ হে আবুল হাসান! কীভাবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সকাল হয়েছে? তিনি বললেনঃ আলহাম্‌দু লিল্লাহ্‌ সুস্থ অবস্থায় তাঁর সকাল হয়েছে। তখন ‘আব্বাস (রাঃ) তার হাত ধরে বললেনঃ তুমি কি তাঁর অবস্থা বুঝতে পারছো না? তুমি তিনদিন পরই লাঠির গোলাম হয়ে যাবে। আল্লাহ্‌র কসম! আমি নিঃসন্দেহে ধারণা করছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর এ অসুখেই শীঘ্রই ইন্তিকাল করবেন। আমি বনূ ‘আবদুল মুত্তালিবের চেহারা থেকে তাঁদের মৃত্যুর আলামত বুঝতে পারি। অতএব তুমি আমাদের রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট নিয়ে যাও। আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করবো যে, তাঁর অবর্তমানে খিলাফতের দায়িত্ব কাদের হাতে থাকবে? যদি আমাদের বংশেই থাকে, তবে তা আমরা জেনে রাখলাম। আর যদি অন্য কোন গোত্রের হাতে থাকবে বলে জানি, তবে আমরা তাঁর সাথে পরামর্শ করবো এবং তিনি আমাদের জন্য অসিয়ত করে যাবেন। ‘আলী (রাঃ) বললেনঃ আল্লাহ্‌র কসম! যদি আমরা এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করি আর তিনি এ ব্যাপারে আমাদের বিরত থাকার নির্দেশ দেন, তাহলে লোকজন কখনও আমাদের এ সুযোগ দেবে না। সুতরাং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে কখনো জিজ্ঞেস করবো না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১৯)

【30】

যে ‘লাব্বাইকা’ এবং ‘সা‘দাইকা’ বলে জবাব দিল।

মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, আমি একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পেছনে তাঁর সাওয়ারীর উপর উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তিনি আমাকে ডাক দিলেনঃ ওহে মু’আয! আমি বললাম, লাব্বাইকা ওয়া সদাইকা। তারপর তিনি এরূপ তিনবার ডাকলেন। এরপর বললেনঃ তুমি কি জানো যে, বান্দাদের উপর আল্লাহ্‌র হক কী? তিনি বললেনঃ তা’ হলো, বান্দারা তাঁর ‘ইবাদত করবে আর এতে তাঁর সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক করবে না। আবার কিছুক্ষণ চলার পর তিনি বললেনঃ ওহে মু’আয! আমি জবাবে বললামঃ লাব্বাইকা ওয়া সা’দাইকা। তখন তিনি বললেনঃ তুমি কি জানো যে, বান্দা যখন তাঁর ‘ইবাদত করবে, তখন আল্লাহ্‌র উপর বান্দাদের হক কী হবে? তিনি বললেনঃ তা এই যে, তিনি তাদের আযাব দিবেন না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮২৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২০) যায়দ ইবনু ওয়াহ্‌ব (রহঃ) যায়দ ইবনু ওয়াহ্‌ব (রহঃ) বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আবূ যার (রাঃ) রাবাযাহ নামক স্থানে আমাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, একবার আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর সঙ্গে এশার সময় মাদীনায় হার্‌রা নামক স্থান দিয়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা উহূদ পাহাড়ের সম্মুখীন হলে তিনি আমাকে বললেনঃ হে আবূ যার! আমি এটা পছন্দ করি না যে, আমার নিকট উহূদ পাহাড় পরিমাণ সোনা আসুক। আর ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছাড়া এক দীনার পরিমাণ সোনাও এক রাত অথবা তিন রাত পর্যন্ত আমার হাতে তা থেকে যাক। বরং আমি পছন্দ করি যে, আমি এগুলো আল্লাহ্‌র বান্দাদের এভাবে বিলিয়ে দেই। (কীভাবে দেবেন) তা তাঁর হাত দিয়ে দেখালেন। তারপর বললেনঃ হে আবূ যার! আমি বললামঃ লাব্বাইকা ওয়া স’দাইকা, হে আল্লাহ্‌র রসূল! তখন তিনি বললেনঃ দুনিয়াতে যার বেশি ধন, আখিরাতে তারা হবে অনেক কম সাওয়াবের অধিকারী। তবে যারা তাদের সম্পদকে এভাবে, এভাবে বিলিয়ে দেবে। তারা হবে এর ব্যতিক্রম। তারপর তিনি আমাকে বললেনঃ আমি ফিরে না আসা পর্যন্ত, হে আবূ যার! তুমি এ স্থানেই থাকো। এখান থেকে কোথাও যেয়ো না। এরপর তিনি রওয়ানা হয়ে গেলেন, এমনকি আমার অদৃশ্যে চলে গেলেন। এমন সময় একটা শব্দ শুনলাম। এতে আমি শঙ্কিত হয়ে পড়লাম যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়লেন কিনা? তাই আমি সে দিকে এগিয়ে যেতে চাইলাম। কিন্তু সাথে সাথেই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)এর নিষেধাজ্ঞা- যে কোথাও যেয়ো না- মনে পড়লো এবং আমি থেমে গেলাম। এরপর তিনি ফিরে আসলে আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি একটা আওয়ায শুনে ভীত হয়ে পড়লাম যে, আপনি সেখানে গিয়ে কোন বিপদে পড়লেন কিনা। কিন্তু আপনার কথা স্মরণ করে থেমে গেলাম। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তিনি ছিলেন জিবরীল। তিনি আমার নিকট এসে সংবাদ দিলেন যে, আমার উম্মাতের মধ্যে যে লোক আল্লাহ্‌র সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে মারা যাবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! যদিও সে ব্যক্তি ব্যভিচার করে? যদিও সে ব্যক্তি চুরি করে? তিনি বললেনঃ সে যদিও ব্যভিচার করে, যদিও চুরি করে থাকে তবুও। আ’মাশ (রহঃ) বলেনঃ আমি যায়দকে বললাম, আমার কাছে খবর পৌঁছেছে যে, এ হাদীসের রাবী হলেন আবুদ্‌ দারদা। তিনি বললেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এ হাদীসটি আবূ যারই রাবাযা নামক স্থানে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। আ’মাশ (রহঃ) বলেন, আবূ সালিহও আবূ দারদা (রাঃ) সূত্রে আমার কাছে এ রকম বর্ণনা করেছেন। আর আবূ শিহাব, আ’মাশ থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ ‘তিন দিনের অতিরিক্ত’। [১২৩৭; মুসলিম ১/৪০, হাঃ ৯৪, আহমাদ ২১৪৭১] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২১)

【31】

কেউ কাউকে তার বসার স্থান থেকে উঠাবে না।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি অপর কাউকে তার বসার স্থান থেকে উঠিয়ে দিয়ে সে সেখানে বসবে না।[৯১১; মুসলিম ৩৯/১১, হাঃ ২১৭৭, আহমাদ ৬০৬৯] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮২৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২২)

【32】

(আরবি) “যখন বলা হয়- ‘মাজলিস প্রশস্ত করে দাও’, তখন তোমরা তা প্রশস্ত করে দিবে, আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে প্রশস্ততা দান করবেন ... ।” (সূরা মুজাদালাহ ৫৮/১১)

ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কোন লোককে তার বসার স্থান থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে অন্য লোক বসতে নিষেধ করেছেন। তবে তোমরা বসার জায়গা প্রশস্ত করে দাও এবং ব্যবস্থা করে দাও। ইবনু ‘উমার (রাঃ) কেউ তার জায়গা থেকে উঠে যাক এবং তার স্থানে অন্যজন বসুক তা পছন্দ করতেন না। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২৩)

【33】

সাথীদের অনুমতি না নিয়ে মজলিস কিংবা ঘর থেকে উঠে যাওয়া, কিংবা নিজে উঠে যাবার প্রস্তুতি গ্রহণ করা যাতে অন্যরা উঠে যায়।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যাইনাব বিন্‌ত জাহশ (রাঃ) –কে বিয়ে করলেন, তখন তিনি কয়েকজন লোককে দা’ওয়াত করলেন। তাঁরা খাদ্য গ্রহণের পর বসে বসে অনেক সময় পর্যন্ত আলাপ-আলোচনায় মশগুল থাকলেন। তখন তিনি নিজে চলে যাবার ভাব প্রকাশ করলেন। কিন্তু তাতেও তাঁরা উঠলেন না। তিনি এ অবস্থা দেখে নিজেই উঠে দাঁড়ালেন। যখন তিনি চলে গেলেন, তখন লোকদের মধ্যে যারা দাঁড়াবার ইচ্ছে করলেন, তারা তাঁর সঙ্গেই উঠে চলে গেলেন। কিন্তু তাদের তিনজন থেকে গেলেন। এরপর যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফিরে এসে ঘরে প্রবেশ করতে চাইলেন, তখন দেখলেন যে ঐ তিনজন তখনো বসে আছেন। কিছুক্ষণ পর তারাও উঠে চলে গেলে, আমি গিয়ে তাঁকে তাদের চলে যাবার সংবাদ দিলাম। এরপর তিনি এসে ঘরে ঢুকলেন। তখন আমিও প্রবেশ করতে চাইলে তিনি আমার ও তাঁর মধ্যে পর্দা টেনে দিলেন। এ সময় আল্লাহ্‌ তা’আলা ওয়াহী অবতীর্ণ করলেনঃ “তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোন! নবীগৃহে প্রবেশ কর না যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয় ...... আল্লাহ্‌র দৃষ্টিতে এটা মহা অপরাধ।” – (সূরাহ আল-আহযাব ৩৩/৫৩)।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮২৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২৪)

【34】

দু’ হাঁটুকে খাড়া করে দু’ হাতে বেড় দিয়ে নিতম্বের উপর বসা।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –কে কা’বা’র আঙ্গিনায় দু’ হাঁটু খাড়া করে দু’ হাত দিয়ে তা বেড় দিয়ে এভাবে উপবিষ্ট অবস্থায় পেয়েছি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২৫)

【35】

যিনি তার সাথীদের সামনে হেলান দিয়ে বসেন।

খাব্বাব (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর কাছে আসলাম। তখন তিনি একটা চাদর দিয়ে বালিশ বানিয়ে তাতে হেলান দিচ্ছিলেন। আমি বললামঃ আপনি কি (আমার মুক্তির জন্য) আল্লাহ্‌র নিকট দু’আ করবেন না? তখন তিনি সোজা হয়ে বসলেন। আবূ বাক্‌রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি কি তোমাদের নিকৃষ্ট কাবীরাহ গুনাহের বর্ণনা দিব না? সকলে বললেনঃ হাঁ হে আল্লাহ্‌র রসূল! তখন তিনি বললেনঃ তা হলো, আল্লাহ্‌র সঙ্গে কোন কিছুকে শারীক করা এবং মাতা-পিতার অবাধ্যতা।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৩১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২৬)

【36】

বিশেষ প্রয়োজনে অথবা যে কোন উদ্দেশ্যে যিনি তাড়াতাড়ি চলেন।

মুসাদ্দাদ মুসাদ্দাদ, বিশ্‌রের এক সূত্রে এ রকম হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে অধিক বর্ণনা করেছেন যে, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। এরপর তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেনঃ হুশিয়ার হও! আর (সবচেয়ে বড় গুনাহ) মিথ্যা কথা বলা। এ কথাটা তিনি বারবার বলতে থাকলেন। এমনকি আমরা বললামঃ হায়! তিনি যদি থামতেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২৬) উক্‌বাহ ইবনু হারিস (রাঃ) উক্‌বাহ ইবনু হারিস (রাঃ) বলেনঃ একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘আসরের সলাত আদায় পূর্বক দ্রুত গিয়ে নিজ ঘরে প্রবেশ করলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৩৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২৭)

【37】

পালঙ্ক ব্যবহার করা।

আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (আমার) পালঙ্কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করতেন। তখন আমি তাঁর কিবলার মাঝে শুয়ে থাকতাম। যখন আমার কোন প্রয়োজন হতো, তখন আমি তাঁর দিকে মুখ করে উঠে দাঁড়ানো পছন্দ করতাম না বরং আমি শায়িত অবস্থাতেই পেছনের দিক দিয়ে কেটে পড়তাম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২৮) আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর নিকট আমার অধিক সওম পালন করার কথা উল্লেখ করা হলো। তখন তিনি আমার ঘরে আসলেন এবং আমি তাঁর উদ্দেশ্যে খেজুরের ছালে ভরা চামড়ার একটা বালিশ পেশ করলাম। তিনি মাটিতেই বসে গেলেন। আর বালিশটা আমার ও তাঁর মাঝে থেকে গেল। তিনি আমাকে বললেনঃ প্রত্যেক মাসে তিনদিন সওম পালন করা কি তোমার জন্যে যথেষ্ট নয়? আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! তিনি বললেনঃ তা হলে পাঁচ দিন? আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! তিনি বললেনঃ তবে সাতদিন? আমি আবার বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! তিনি বললেনঃ তবে নয়দিন? আমি পুনরায় বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! তিনি বললেনঃ তা হলে এগার দিন? আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! তখন তিনি বললেনঃ দাউদ (‘আঃ) –এর সওমের চেয়ে অধিক কোন (নাফ্‌ল) সওম নেই। তিনি প্রত্যেক মাসের অর্ধেক দিন সওম পালন করতেন অর্থাৎ একদিন সওম পালন করতেন আর একদিন পালন করতেন না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২৯)

【38】

হেলান দেয়ার জন্য যাঁকে একটা বালিশ পেশ করা হয়।

ইব্‌রাহীম (রহঃ) তিনি বলেন, একবার ‘আলক্বামাহ (রহ.) সিরিয়ায় গমন করলেন। তখন তিনি মসজিদে গিয়ে দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করে দু‘আ করলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে একজন নেক সঙ্গী দান করুন। এরপর তিনি আবুদ্ দারদা -এর পাশে গিয়ে বসে পড়লেন। তারপর তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আপনি কোন্ শহরের লোক? তিনি জবাব দিলেনঃ আমি কূফার অধিবাসী। তিনি জিজ্ঞেস করলেন ঃ আপনাদের মধ্যে কি সেই লোক নেই। যিনি ঐ ভেদ সম্পর্কে জানতেন, যা অপর কেউ জানতেন না? রাবী বলেন) অর্থাৎ হুযাইফাহ । আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ আপনাদের মধ্যে কি এমন লোক নেই, অথবা আছেন, যাঁকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের দু‘আর কারণে শয়তান থেকে পানাহ দিয়েছেন? রাবী বলেন) অর্থাৎ ‘আম্মার তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ আর আপনাদের মধ্যে কি সে লোক নেই যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মিস্ওয়াক ও বালিশের দায়িত্বে ছিলেন? রাবী বলেন) অর্থাৎ ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ । আবুদ্ দারদা তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ সূরায়ে {‏وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى‏}‏‏ কীভাবে পড়তেন? তিনি বললেনঃ তিনি ‘ওয়ামা খালাকায যাকারা ওয়াল উনসা’র স্থলে ‘ওয়ামা খালাকা’ অংশটুকু বাদ দিয়ে) পড়তেন {‏وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى‏}। তখন তিনি বললেনঃ এখানকার লোকেরা আমাকে এ সূরা সম্পর্কে সন্দেহে নিক্ষেপ করেছে। অথচ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ রকমই শুনেছি। আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৩৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩০)

【39】

জুমু’আহ্‌র সলাত পর কা-ইলাহ।

সাহ্‌ল ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা জুমু’আহর সলাতের পরেই ‘কা-ইলাহ’ করতাম এবং দুপুরের খাদ্য গ্রহণ করতাম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩১)

【40】

মাসজিদে কা-ইলাহ করা।

সাহ্‌ল ইবনু সা’দ (রাঃ) আলী (রাঃ) –এর কাছে ‘আবূ তুরাব’ –এর চেয়ে প্রিয় কোন নাম ছিল না। এ নামে ডাকা হলে তিনি খুবই খুশি হতেন। কারণ একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফাতেমাহ (রাঃ) –এর ঘরে আসলেন। তখন ‘আলী (রাঃ) -কে ঘরে পেলেন না। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার চাচাতো ভাই কোথায়? তিনি বললেনঃ আমার ও তাঁর মাঝে কিছু ঘটে যাওয়ায় তিনি আমার সঙ্গে রাগ করে বেরিয়ে গেছেন। আমার কাছে কা-ইলাহ করেননি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জনৈক লোককে বললেনঃ দেখতো সে কোথায়? সে লোকটি এসে বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! তিনি তো মাসজিদে ঘুমিয়ে আছেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এসে দেখতে পেলেন যে, তিনি কাত হয়ে শুয়ে আছেন, আর তাঁর চাদরখানা পার্শ্ব থেকে পড়ে গেছে। ফলে তার গায়ে মাটি লেগে গেছে। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর গায়ের মাটি ঝাড়তে লাগলেন এবং বলতে লাগলেনঃ ওঠো, আবূ তুরাব (মাটির বাপ) ওঠো, আবূ তুরাব! এ কথাটা তিনি দু’বার বললেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩২)

【41】

যিনি কোন কাওমের নিকট যান এবং তাদের নিকট ‘কা-ইলাহ’ করেন।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ উম্মু সুলায়ম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর জন্য চামড়ার বিছানা বিছিয়ে দিতেন এবং তিনি সেখানেই ঐ চামড়ার বিছানার উপর কায়লুলা করতেন। অতঃপর তিনি যখন ঘুম থেকে উঠতেন, তখন তিনি তাঁর শরীরের কিছুটা ঘাম ও চুল সংগ্রহ করতেন এবং তা একটা বোতলের মধ্যে জমা করতেন এবং পরে ‘সুক্ক’ নামক সুগন্ধিতে মিশাতেন। রাবী বর্ণনা করেন যে, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) –এর মৃত্যু সন্নিকট হলে, তিনি আমাকে অসিয়ত করলেনঃ যেন ঐ সুক্ক থেকে কিছুটা তাঁর সুগন্ধির সাথে মিলানো হয়। তাই তা তাঁর সুগন্ধিতে মেশানো হয়েছিল। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৩৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩৩) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘কুবা’ এর দিকে যখন যেতেন তখন প্রায়ই উম্মু হারাম বিনতে মিলহান (রাঃ) –এর ঘরে প্রবেশ করতেন এবং তিনি তাঁকে খানা খাওয়াতেন। তিনি ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) –এর স্ত্রী ছিলেন। একদিন তিনি তার ঘরে গেলে তাঁকে খাবার খাওয়ালেন। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখানেই ঘুমালেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি সজাগ হয়ে হাসতে লাগলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনাকে কিসে হাসাচ্ছে? তিনি বললেনঃ স্বপ্নে আমাকে আমার উম্মাতের আল্লাহ্‌র পথে জিহাদকারী কিছু সংখ্যক মুজাহিদ দেখানো হয়েছে, যারা এই বিস্তীর্ণ সমুদ্রের মাঝে বাদশাহ্‌দের মত সিংহাসনে আসীন। তখন তিনি বললেনঃ আপনি দু’আ করুন যেন আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। তিনি সে দু’আ করলেন এবং বিছানায় মাথা রেখে আবার শুয়ে পরলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি আবার হাসতে হাসতে জাগ্রত হলেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনাকে কিসে হাসাচ্ছে? তিনি বললেনঃ (স্বপ্নে) আমাকে আমার উম্মাতের আল্লাহ্‌র পথে জিহাদকারী কিছু সংখ্যক মুজাহিদ দেখানো হয়েছে, যারা এই বিস্তীর্ণ সমুদ্রের মাঝে বাদশাহ্‌দের মত সিংহাসনে আসীন। তখন আবার আমি বললামঃ আপনি আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করুন যেন তিনি আমাকে তাদের মধ্যে শামিল করে নেন। তিনি বললেনঃ তুমি প্রথম বাহিনীরই মধ্যে শামিল থাকবে। সুতরাং তিনি মু’আবিয়াহ (রাঃ) –এর আমলে সামুদ্রিক অভিযানে যান এবং অভিযান থেকে ফিরে এসে নিজের সওয়ারী থেকে পড়ে গিয়ে শাহাদাত বরণ করেন।[২৭৮৮, ২৭৮৯; মুসলিম ৩৩/৪৯, হাঃ ১৯১২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩৪) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ‘কুবা’ এর দিকে যখন যেতেন তখন প্রায়ই উম্মু হারাম বিনতে মিলহান (রাঃ) –এর ঘরে প্রবেশ করতেন এবং তিনি তাঁকে খানা খাওয়াতেন। তিনি ‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) –এর স্ত্রী ছিলেন। একদিন তিনি তার ঘরে গেলে তাঁকে খাবার খাওয়ালেন। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সেখানেই ঘুমালেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি সজাগ হয়ে হাসতে লাগলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনাকে কিসে হাসাচ্ছে? তিনি বললেনঃ স্বপ্নে আমাকে আমার উম্মাতের আল্লাহ্‌র পথে জিহাদকারী কিছু সংখ্যক মুজাহিদ দেখানো হয়েছে, যারা এই বিস্তীর্ণ সমুদ্রের মাঝে বাদশাহ্‌দের মত সিংহাসনে আসীন। তখন তিনি বললেনঃ আপনি দু’আ করুন যেন আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। তিনি সে দু’আ করলেন এবং বিছানায় মাথা রেখে আবার শুয়ে পরলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি আবার হাসতে হাসতে জাগ্রত হলেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনাকে কিসে হাসাচ্ছে? তিনি বললেনঃ (স্বপ্নে) আমাকে আমার উম্মাতের আল্লাহ্‌র পথে জিহাদকারী কিছু সংখ্যক মুজাহিদ দেখানো হয়েছে, যারা এই বিস্তীর্ণ সমুদ্রের মাঝে বাদশাহ্‌দের মত সিংহাসনে আসীন। তখন আবার আমি বললামঃ আপনি আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করুন যেন তিনি আমাকে তাদের মধ্যে শামিল করে নেন। তিনি বললেনঃ তুমি প্রথম বাহিনীরই মধ্যে শামিল থাকবে। সুতরাং তিনি মু’আবিয়াহ (রাঃ) –এর আমলে সামুদ্রিক অভিযানে যান এবং অভিযান থেকে ফিরে এসে নিজের সওয়ারী থেকে পড়ে গিয়ে শাহাদাত বরণ করেন। [২৭৮৮, ২৭৮৯; মুসলিম ৩৩/৪৯, হাঃ ১৯১২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৪০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩৪)

【42】

যেভাবে সহজ, সেভাবেই বসা।

আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দু’ রকমের লেবাস এবং দু’ ধরণের বিক্রয় নিষেধ করেছেন। ইশতিমালে সম্মা [১] এবং এক কাপড় পরে ইহতিবা [২] করতে নিষেধ করেছেন যাতে তার লজ্জাস্থানে কাপড়ের কোন অংশ না থাকে। এবং মুলামাসা ও মুনাবাযা – বেচাকেনা থেকেও।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৪১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩৫)

【43】

যিনি মানুষের সামনে কারো সঙ্গে কানে কানে কথা বলেন। আর যিনি আপন বন্ধুর গোপন কথা কারো কাছে প্রকাশ করেননি। অবশ্য তাঁর মৃত্যুর পর তা প্রকাশ করেন।

উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) একবার আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর সব স্ত্রী তাঁর নিকট জমায়েত হয়েছিলাম। আমাদের একজনও অনুপস্থিত ছিলাম না। এমন সময় ফাতেমাহ (রাঃ) পায়ে হেঁটে আসছিলেন। আল্লাহ্‌র কসম! তাঁর হাঁটা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর হাঁটার মতই ছিল। তিনি যখন তাঁকে দেখলেন, তখন তিনি আমার মেয়ের আগমণ শুভ হোক বলে তাঁকে সম্বর্ধনা জানালেন। এরপর তিনি যখন তাঁকে নিজের ডান পাশে অথবা (রাবী বলেন) বাম পাশে বসালেন। তারপর তিনি তার সঙ্গে কানে-কানে কিছু কথা বললেন, তিনি (ফাতেমাহ) খুব অধিক কাঁদতে লাগলেন। এরপর তাঁকে চিন্তিত দেখে দ্বিতীয়বার তাঁর সঙ্গে তিনি কানে-কানে আরও কিছু কথা বললেন। তখন ফাতেমাহ (রাঃ) হাসতে লাগলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর স্ত্রীগণের মধ্য থেকে আমি বললামঃ আমাদের উপস্থিতিতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিশেষ করে আপনার সঙ্গে বিশেষ কী গোপনীয় কথা কানে-কানে বললেন, যার ফলে আপনি খুব কাঁদছিলেন? এরপর যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উঠে চলে গেলেন, তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম যে, তিনি আপনাকে কানে-কানে কী বলেছিলেন? তিনি বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর ভেদ (গোপনীয় কথা) ফাঁস করবো না। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর মৃত্যু হল। তখন আমি তাঁকে বললামঃ আপনার উপর আমার যে দাবী আছে, আপনাকে আমি তার কসম দিয়ে বলছি যে, আপনি কি গোপনীয় কথাটি আমাকে জানাবেন না? তখন ফাতেমাহ (রাঃ) বললেনঃ হাঁ এখন আপনাকে জানাবো। সুতরাং তিনি আমাকে জানাতে গিয়ে বললেনঃ প্রথমবার তিনি আমার নিকট যে গোপন কথা বলেন, তা হলো এই যে, তিনি আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, জিবরীল (‘আঃ) প্রতি বছর এসে পূর্ণ কুরআন একবার আমার নিকট পেশ করতেন। কিন্তু এ বছর তিনি এসে তা আমার কাছে দু’ বার পেশ করেছেন। এতে আমি ধারণা করছি যে, আমার চির বিদায়ের সময় সন্নিকট। সুতরাং তুমি আল্লাহ্‌কে ভয় করে চলবে এবং বিপদে ধৈর্য্যধারণ করবে। নিশ্চয়ই আমি তোমার জন্য উত্তম অগ্রগমনকারী। তখন আমি কাঁদলাম যা নিজেই দেখলেন। তারপর যখন আমাকে চিন্তিত দেখলেন, তখন দ্বিতীয়বার আমাকে কানে-কানে বললেনঃ তুমি জান্নাতের মুসলিম মহিলাদের অথবা এ উম্মাতের মহিলাদের নেত্রী হওয়াতে সন্তুষ্ট হবে না? (আমি তখন হাসলাম)।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩৬) উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) একবার আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর সব স্ত্রী তাঁর নিকট জমায়েত হয়েছিলাম। আমাদের একজনও অনুপস্থিত ছিলাম না। এমন সময় ফাতেমাহ (রাঃ) পায়ে হেঁটে আসছিলেন। আল্লাহ্‌র কসম! তাঁর হাঁটা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর হাঁটার মতই ছিল। তিনি যখন তাঁকে দেখলেন, তখন তিনি আমার মেয়ের আগমণ শুভ হোক বলে তাঁকে সম্বর্ধনা জানালেন। এরপর তিনি যখন তাঁকে নিজের ডান পাশে অথবা (রাবী বলেন) বাম পাশে বসালেন। তারপর তিনি তার সঙ্গে কানে-কানে কিছু কথা বললেন, তিনি (ফাতেমাহ) খুব অধিক কাঁদতে লাগলেন। এরপর তাঁকে চিন্তিত দেখে দ্বিতীয়বার তাঁর সঙ্গে তিনি কানে-কানে আরও কিছু কথা বললেন। তখন ফাতেমাহ (রাঃ) হাসতে লাগলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর স্ত্রীগণের মধ্য থেকে আমি বললামঃ আমাদের উপস্থিতিতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিশেষ করে আপনার সঙ্গে বিশেষ কী গোপনীয় কথা কানে-কানে বললেন, যার ফলে আপনি খুব কাঁদছিলেন? এরপর যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উঠে চলে গেলেন, তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম যে, তিনি আপনাকে কানে-কানে কী বলেছিলেন? তিনি বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর ভেদ (গোপনীয় কথা) ফাঁস করবো না। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) –এর মৃত্যু হল। তখন আমি তাঁকে বললামঃ আপনার উপর আমার যে দাবী আছে, আপনাকে আমি তার কসম দিয়ে বলছি যে, আপনি কি গোপনীয় কথাটি আমাকে জানাবেন না? তখন ফাতেমাহ (রাঃ) বললেনঃ হাঁ এখন আপনাকে জানাবো। সুতরাং তিনি আমাকে জানাতে গিয়ে বললেনঃ প্রথমবার তিনি আমার নিকট যে গোপন কথা বলেন, তা হলো এই যে, তিনি আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, জিবরীল (‘আঃ) প্রতি বছর এসে পূর্ণ কুরআন একবার আমার নিকট পেশ করতেন। কিন্তু এ বছর তিনি এসে তা আমার কাছে দু’ বার পেশ করেছেন। এতে আমি ধারণা করছি যে, আমার চির বিদায়ের সময় সন্নিকট। সুতরাং তুমি আল্লাহ্‌কে ভয় করে চলবে এবং বিপদে ধৈর্য্যধারণ করবে। নিশ্চয়ই আমি তোমার জন্য উত্তম অগ্রগমনকারী। তখন আমি কাঁদলাম যা নিজেই দেখলেন। তারপর যখন আমাকে চিন্তিত দেখলেন, তখন দ্বিতীয়বার আমাকে কানে-কানে বললেনঃ তুমি জান্নাতের মুসলিম মহিলাদের অথবা এ উম্মাতের মহিলাদের নেত্রী হওয়াতে সন্তুষ্ট হবে না? (আমি তখন হাসলাম)।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩৬)

【44】

চিত্‌ হয়ে শোয়া

আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ আনসারী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে মাসজিদে চিত হয়ে শুয়ে থাকতে দেখেছি, তখন তাঁর এক পা অন্য পায়ের উপর রাখা ছিল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৪৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩৭

【45】

তৃতীয় ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে দু’জনে কানে-কানে বলবে না।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ হে মু’মিনগণ! যখন গোপন পরামর্শ কর, সে পরামর্শ যেন পাপাচার, সীমালঙ্ঘন….. মু’মিনদের কর্তব্য আল্লাহ্‌র উপর নির্ভর করা।”-(সূরাহ আল-মুজাদালাহ ৫৮/৯-১০)। আরও আল্লাহ্‌র বাণীঃ হে মু’মিনগণ! তোমরা রসূলের সঙ্গে চুপিচুপি কথা বলতে চাইলে তার পূর্বে সদাকাহ প্রদান করবে…..তোমরা যা কর আল্লাহ্‌ তা সম্যক অবগত - (সূরাহ আল-মুজাদালাহ ৫৮/১২-১৩) আবদুল্লাহ (রাঃ) যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোথাও তিনজন থাকলে তৃতীয় জনকে বাদ দিয়ে দু’জনে মিলে চুপি চুপি কথা বলবে না।[মুসলিম পর্ব ৩৯/হাঃ ২১৮৩, আহমাদ ৪৬৮৫] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৪৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩৮)

【46】

গোপনীয়তা রক্ষা করা।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে একটি বিষয় গোপনে বলেছিলেন। আমি তাঁর পরেও কাউকে তা জানাইনি। এটা সম্পর্কে উম্মু সুলায়ম (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁকেও বলিনি। [মুসলিম ৪৪/৩২, হাঃ ২৪৮২, আহমাদ ১৩২৯২] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩৯)

【47】

তিনজনের অধিক হলে গোপনে কথা বলা, আর কানে-কানে কথা বলা দূষণীয় নয়।

আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোথাও তোমরা তিনজনে থাকলে একজনকে বাদ দিয়ে দু’জনে কানে-কানে কথা বলবে না। এতে তার মনে দুঃখ হবে। তোমরা পরস্পর মিশে গেলে তবে তা করাতে দোষ নেই।[মুসলিম ৩৯/১৫, হাঃ ২১৮৪, আহমাদ ৪৪২৪] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৪৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৪০) আবদুল্লাহ (রাঃ) যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন কিছু মাল লোকজনকে বণ্টন করে দিলেন। তখন একজন আনসারী মন্তব্য করলেন যে, এ বাঁটোয়ারা এমন, যার মধ্যে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়নি। তখন আমি বললাম সাবধান! আল্লাহ্‌র কসম! আমি নিশ্চয়ই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -এর নিকট গিয়ে এ কথাটা বলে দিব। এরপর আমি তাঁর নিকট গেলাম। কিন্তু তখন তিনি একদল সাহাবীর মধ্যে ছিলেন। তাই আমি কথাটা তাঁকে কানে-কানেই বললাম। তখন তিনি রেগে গেলেন। এমনকি তাঁর চেহারার রঙ লাল হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পরে তিনি বললেনঃ মূসা (‘আঃ)-এর উপর রহমত অবতীর্ণ হোক। তাঁকে এর চেয়ে অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি ধৈর্য্য অবলম্বন করেছেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৪১)

【48】

দীর্ঘক্ষণ কারো সাথে কানে-কানে কথা বলা।

আল্লাহ্‌ তা’আলার বাণীঃ “তারা গোপনে পরস্পর আলোচনায় বসে।” (সূরাহ ইসরা ১৭/৪৭) [আরবী] শব্দটির মাসদার হচ্ছে [আরবী]। এর দ্বারাই তাদের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে পরস্পর চুপিসারে কথা বলাবলি করা। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) একবার সলাতের ইক্বামাত হয়ে গেলো, তখনও একজন লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সঙ্গে কানে-কানে কথা বলছিলেন এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে তিনি এভাবে আলাপ করতে থাকলেন। এমনকি তাঁর সঙ্গীগণ ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলেন।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৪২)

【49】

ঘুমানোর সময় ঘরে আগুন রাখবে না।

সালিম (রহঃ) সালিম (রহঃ) তাঁর পিতা থেকে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ যখন তোমরা ঘুমাবে তখন তোমাদের ঘরে আগুন রেখে ঘুমাবে না।[মুসলিম ৩৬/১২, হাঃ ২০১৫, আহমাদ ৪৫১৫] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৪৩) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, একবার রাত্রি কালে মাদীনাহ্‌র এক ঘরে আগুন লেগে ঘরের লোকজনসমূহ পুড়ে গেল। এদের অবস্থা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) -কে অবহিত করা হল। তিনি বললেনঃ এ আগুন নিঃসন্দেহে তোমাদের চরম শত্রু। সুতরাং তোমরা যখন ঘুমাতে যাবে, তখন তা নিভিয়ে দিবে। [মুসলিম ৩৬/১২, হাঃ ১৬, আহমাদ ১৯৫৮৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৪৪) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেছেনঃ তোমাদের পানাহারের পাত্রগুলো ঢেকে রাখবে। আর ঘুমাবার সময় (ঘরের) দরজাগুলো বন্ধ করবে এবং বাতিগুলো নিভিয়ে ফেলবে। কারণ প্রায়ই দুষ্ট ইঁদুরগুলো জ্বালানো বাতির ফিতাগুলো টেনে নিয়ে যায় এবং ঘরের লোকজনকে পুড়িয়ে মারে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৫১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৪৫)

【50】

রাতে দরজা বন্ধ করা।

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ রাতে যখন তোমরা ঘুমাতে যাবে, তখন বাতি নিভিয়ে দেবে, দরজা বন্ধ করবে, খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যাদি ঢেকে রাখবে এবং মশ্‌কের মুখ বেঁধে রাখবে। হাম্মাম বলেনঃ এক টুকরা কাঠ দিয়ে হলেও।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৫২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৪৬)

【51】

বয়োঃপ্রাপ্তির পর খাত্‌না করা এবং বগলের পশম উপড়ানো।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেছেনঃ মানুষের স্বভাবগত বিষয় হলো পাঁচটিঃ খাত্‌না করা, নাভির নীচের পশম কামানো, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, গোফ ছাঁটা এবং (অতিরিক্ত) নখ কাটা।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৫৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৪৭) আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ ইব্‌রাহীম (আঃ) আশি বছর বয়সের পর ‘কাদূম’ নামক স্থানে নিজেই নিজের খাত্‌না করেন। কুতাইবাহ (রহঃ)আবুষ যিনাদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ‘কাদ্দুম’ একটি জায়গার নাম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৫৪, ৫৮৫৩ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭১৮) সা’ঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) তিনি [সা’ঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ)] আরও বলেনঃ তাদের নিয়ম ছিল যে, সাবালক না হওয়া পর্যন্ত তারা খাত্‌না করতেন না।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৪৯) সা’ঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) - কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)- এর ওফাতের সময় আপনি বয়সে কার মত ছিলেন? তিনি বললেনঃ আমি তখন খাত্‌নাকৃত ছিলাম।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৫৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৪৯)

【52】

যেসব খেলাধুলা আল্লাহ্‌র আনুগত্য থেকে বিরত রাখে সেগুলো বাতিল (হারাম)।

আর ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে, যে তার বন্ধুকে বললো, চলো, আমি তোমার সাথে জুয়া খেলবো। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্‌র বাণীঃ “মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশতঃ অসার বাক্য ক্রয় করে নেয়।” (সূরাহ লুকমান ৩১/৬) আবূ হুরায়রা (রাঃ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি শপথ করে এবং তার শপথে বলে লাত ও উয্যার শপথ, তা হলে সে যেন لاَ إِلٰهَ إِلاَّاللهُ বলে, আর যে তার বন্ধুকে বলেঃ এসো আমি তোমার সাথে জুয়া খেলবো সে যেন সদাকাহ করে। আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৫০)

【53】

পাকা ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ ক্বিয়ামতের এক নিদর্শন হলো, তখন পশুর রাখালেরা পাকা বাড়ি-ঘর নির্মাণে পারস্পরিক প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে আমার খেয়াল হলো যে, আমি নিজ হাতে আল্লাহ্‌র কোন সৃষ্টির সাহায্য ব্যতীত এমন একটা ঘর বানিয়ে নেই, যা আমাকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করবে এবং আমাকে রোদ থেকে ছায়া দিবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৫১) ইবনু ‘উমার (রাঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণনা করেন। আল্লাহ্‌র কসম! আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর পর থেকে এ পর্যন্ত কোন ইটের উপর ইট রাখিনি। (পাকা ঘর নির্মাণ করিনি) আমি কোন খেজুরের চারা লাগাইনি। সুফ্‌ইয়ান (রাবী) বর্ণনা করেন, আমি এ হাদীসটি তাঁর পরিবারের এক লোকের কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র কসম! তিনি তো নিশ্চয়ই পাকা ঘর বানিয়েছেন। সুফ্‌ইয়ান বলেন, তখন আমি বললাম, তা হলে সম্ভবতঃ এ হাদীসটি তাঁর পাকা ঘর বানানোর আগেকার হবে।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৮৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৫২)