16. হজ্জ

【1】

হাজ্জ ও ‘উমরার ইহরাম অবস্থায় কী ধরনের পোশাক পরিধান করা জায়িয ও কী ধরনের পোশাক নাজায়িয এবং ইহরাম অবস্থায় সুগন্ধির ব্যবহার নিষিদ্ধ

ইবনু ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট জানতে চাইল যে, মুহরিম ব্যক্তি কী ধরনের পোশাক পরবে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মুহরিম ব্যক্তি জামা, পাগড়ী, পায়জামা, টুপি ও মোজা পরিধান করতে পারবে না। তবে কোন ব্যক্তি চপ্পলের অভাবে মোজা পরিধান করলে তাকে পায়ের গোছার নীচ বরাবর মোজার উপরিভাগ কেটে ফেলতে হবে। তোমরা এমন কাপড় পরিধান কর না যা জাফরান বা ওয়ারস-এর রংয়ে রঞ্জিত করা হয়েছে। (ই.ফা. ২৬৫৮, ই.সে. ২৬৫৭) সালিম (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করা হ‘ল যে, মুহরিম ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় কী পরিধান করবে? তিনি বললেন, মুহরিম ব্যক্তি জামা, পাগড়ী, টুপী, পায়জামা, জাফরান বা ওয়ারস দ্বারা রঞ্জিত কাপড় এবং মোজা পরিধান করবে না। কিন্তু তার চপ্পল না থাকলে সে পায়ের গোছার নিম্নাংশ বরাবর মোজার উপরিভাগ কেটে ফেলে তা পরিধান করতে পারবে। (ই.ফা. ২৬৫৯, ই.সে. ২৬৫৮) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহরিম ব্যক্তিকে জাফরান বা ওয়ারস দ্বারা রঞ্জিত কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, কারও চপ্পল না থাকলে সে মোজা পরিধান করবে এবং পায়ের গোছার নীচ বরাবর এর উপরিভাগ কেটে ফেলবে। (ই.ফা. ২৬৬০, ই.সে. ২৬৫৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তাঁর ভাষণে বলতে শুনেছি, মুহরিম ব্যক্তির কাপড় না থাকলে সে পায়জামা পরতে পারবে এবং তার চপ্পল না থাকলে সে মোজা পরতে পারবে। (ই.ফা. ২৬৬১, ই.সে. ২৬৬০) ‘আমর ইবনু দীনার (রহঃ) থেকে এ সানাদ সূত্রে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘আরাফাতের ময়দানে ভাষণ দিতে শুনেছেন-এরপর তিনি উপরোক্ত কথাগুলো বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ২৬৬২, ই.সে. ২৬৬১) আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ্ , ইয়াহ্ইয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া, আবূ কুরায়ব, ‘আলী ইবনু খাশরম ও ‘আলী ইবনু হুজর (রহঃ) সকলেই ‘আমর ইবনু দীনারের সূত্রে এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু শু’বাহ্ ছাড়া তাদের কারও বর্ণনায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “আরাফাতে ভাষণ দিয়েছেন” কথার উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ২৬৬৩, ই.সে. ২৬৬২) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার কাপড় নেই সে পায়জামা পরিধান করতে পারে, আর যার চপ্পল নেই সে মোজা পরতে পারে। (ই.ফা. ২৬৬৪, ই.সে. ২৬৬৩) সাফ্ওয়ান ইবনু ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ (রাঃ) তার পিতা তিনি বলেন, এক ব্যক্তি সুগন্ধিযুক্ত অথবা বলেন, হলুদ রং-এর চিহ্নযুক্ত জুব্বা পরিহিত অবস্থায় জি‘রানাহ্ নামক স্থানে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘উমরাহ্ পালনের সময় আপনি আমাকে কী করার নির্দেশ দেন? এ সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর ওয়াহী নাযিল হচ্ছিল এবং তিনি একটি কাপড় আচ্ছাদিত অবস্থায় ছিলেন। ইয়া‘লা (রাঃ) বলতেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর ওয়াহী নাযিল হওয়া অবস্থায় যদি আমি তাঁকে দেখতে পেতাম! তখন ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, ওয়াহী নাযিল হওয়ার মুহূর্তে তুমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখে খুশি হবে কি? ইয়া‘লা (রাঃ) বলেন, এরপর ‘উমার (রাঃ) কাপড়ের এক কোণ উম্মুক্ত করলেন এবং আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম যে, তাঁর মুখ দিয়ে উঠতি বয়সের উটের আওয়াজের মতো আওয়াজ বের হচ্ছে। যখন তাঁর এ অবস্থা কেটে গেল, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘উমরাহ্ সম্বন্ধে প্রশ্নকারী কোথায়? তিনি বললেন, তোমার দেহ থেকে হলুদ রং ধুয়ে ফেল, অথবা বললেন, সুগন্ধির চিহ্ন। তোমার জুব্বাহ্ খুলে ফেল। অতঃপর তুমি হাজ্জের ইহরামে থাকলে যা করতে, ‘উমরার জন্য তাই কর। (ই.ফা. ২৬৬৫, ই.সে. ২৬৬৪) ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এলো। তখন তিনি জি‘রানাহ্ নামক স্থানে ছিলেন এবং আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছেই ছিলাম। লোকটি (খালূক্ব জাতীয়) সুগন্ধিযুক্ত একটি জুব্বাহ্ পরিহিত ছিল। সে বলল, আমি ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছি এবং আমার পরিধানে এ জুব্বাহ্ রয়েছে এবং আমি খালুক্ব জাতীয় সুগন্ধি ব্যবহার করেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি হাজ্জের ইহরামে থাকলে কী করতে? সে বলল, আমি নিজের এ পরিধেয় খুলে এবং নিজের দেহ থেকে এ সুগন্ধি ধুয়ে ফেলতাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি হজ্জের ইহরামের থাকলে যা করতে, 'উমরার জন্য তাই করো। (ই.ফা ২৬৬৬, ই.সে ২৬৬৫) ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ (রাঃ) ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে বলতেন, আহা! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর যখন ওয়াহী নাযিল হয়, আমি যদি সে অবস্থায় তাঁকে দেখতে পেতাম! একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জি‘রানায় অবস্থান করছিলেন এবং একটি কাপড়ের সাহায্যে তাঁর উপর ছায়া বিস্তার করা হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে তাঁর কিছু সংখ্যক সাহাবাও ছিলেন- যাঁদের মধ্যে ‘উমার (রাঃ)-ও ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি সুগন্ধিযুক্ত জুব্বাহ্ পরিহিত অবস্থায় তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল ! এক ব্যক্তি জুব্বায় সুগন্ধি মেখে তা পরিহিত অবস্থায় ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছে, তার সম্পর্কে আপনার কী অভিমত? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলেন, অতঃপর নীরব রইলেন। এ সময় তাঁর উপর ওয়াহী আসল। ‘উমার (রাঃ) হাতের ইশারায় ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ (রাঃ)-কে বললেন, এদিকে আসো। ইয়া’লা (রাঃ) এসে নিজের মাথা (কাপড়ের মধ্যে) ঢুকিয়ে দিলেন (এবং দেখলেন) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর চেহারা লাল বর্ণ ধারণ করেছে এবং তাঁর মুখ দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছে। অতঃপর এ অবস্থা দূরীভূত হ’ল এবং তিনি বললেন, এই মাত্র যে ব্যক্তি আমার নিকট ‘উমরাহ্ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিল-সে কোথায়? লোকটিকে খুঁজে এনে তাঁর নিকট উপস্থিত করা হ’ল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার সুগন্ধি তিনবার ধুয়ে ফেল এবং জুব্বাহ্ খুলে ফেল। অতঃপর যে নিয়মে হাজ্জ কর, ঠিক সে নিয়মে ‘উমরাহ্ কর। (ই.ফা. ২৬৬৭, ই.সে. ২৬৬৬) ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ (রাঃ) এক ব্যক্তি জি‘রানাহ্ নামক স্থানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসলো। লোকটি ‘উমরার জন্য ইহরাম বাঁধা অবস্থায় ছিল। তার দাড়ি ও মাথার চুল হলুদ রং-এ রঞ্জিত ছিল এবং তার পরনে ছিল একটি জুব্বাহ। সে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি ‘উমরাহ্ করার জন্য ইহরাম বেঁধেছি এবং আমি কী অবস্থায় আছি তা আপনি দেখছেন। তিনি বললেন, তুমি জুব্বাহ্ খুলে ফেল এবং হলূদ রং ধুয়ে ফেল। অতঃপর হাজ্জে যে সব অনুষ্ঠান পালন কর, ‘উমরাতেও তাই কর। (ই.ফা ২৬৬৮, ই.সে. ২৬৬৭) সাফ্ওয়ান তার পিতা সূত্রে (ইবনু উমাইয়্যাহ্) (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে ছিলাম। তাঁর নিকট এক ব্যক্তি জুব্বাহ্ পরিহিত অবস্থায় উপস্থিত হল। তাতে (খালূক্ব জাতীয়) সুগন্ধির চিহ্ন ছিল। সে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছি, আমাকে কী করতে হবে? তিনি তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে নীরব থাকলেন। যখন তাঁর উপর ওয়াহী নাযিল হতে আরম্ভ হল তখন ‘উমার (রাঃ) তাঁকে ছায়া দেয়ার জন্য একখণ্ড কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেন। আমি (ইয়া’লা) ‘উমার (রাঃ)-কে বলেছিলাম, তাঁর উপর যখন ওয়াহী নাযিল হয় তখন আমি তাঁর সঙ্গে কাপড়ের অভ্যন্তরভাগে আমার মাথা ঢুকাতে চাই। যখন ওয়াহী নাযিল হল, ‘উমার (রাঃ) তাঁকে একখণ্ড কাপড় দিয়ে ঢেকে দিলেন। আমি তাঁর নিকট এসে কাপড়ের ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে দিলাম এবং তাঁকে দেখলাম। এ অবস্থা দূরীভূত হলে তিনি বললেন, এ্ই মাত্র ‘উমরাহ্ সম্পর্কে প্রশ্নকারী কোথায়? লোকটি তাঁর সামনে দাঁড়াল। তিনি বললেন, তোমার পরিধানের জুব্বাহ্ খুলে ফেল এবং সুগন্ধির চিহ্ন ধুয়ে ফেল। অতঃপর যেভাবে হাজ্জ সমাপন কর, ঠিক সেভাবে ‘উমরাহ্ কর। (ই.ফা. ২৬৬৯, ই.সে. ২৬৬৮)

【2】

হাজ্জের মীক্বাতসমূহের বর্ণনা

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাবাসীদের জন্য যুল হুলায়ফাহ্, সিরিয়ার অধিবাসীদের জন্য আল জুহফাহ্, নাজদবাসীদের জন্য ক্বারনুল মানাযিল, ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলামকে মীক্বাত হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তিনি আরো বলেন, এগুলো ঐসব এলাকার লোকদের মীক্বাত এবং এর বাইরের যে সব লোক হাজ্জ ও ‘উমরার উদ্দেশে ঐসব এলাকা হয়ে আসবে, তাদের মীক্বাত। আর যেসব লোক উল্লিখিত মীক্বাতসমূহের অভ্যন্তরে বসবাস করে, তারা স্বস্থান থেকে ইহরাম বাঁধবে, এভাবে যারা আরো ভিতরে, তারা সে স্থান হতে। এমনকি মাক্কাবাসীগণ মাক্কাহ্ থেকে তালবিয়াহ্ পাঠ করবে। (ই.ফা. ২৬৭০, ই.সে. ২৬৬৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনার অধিবাসীদের জন্য যুল হুলায়ফাহ্, সিরিয়ার অধিবাসীদের জন্য আল-জুহফাহ্, নাজদবাসীদের জন্য ক্বারনুল মানাযিল এবং ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলামকে মীক্বাত নির্ধারত করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, এগুলো উল্লেখিত এলাকার লোকদের মীক্বাত এবং বাইরের যেসব লোক হাজ্জ ও ‘উমরার উদ্দেশে ঐ সব এলাকা হয়ে আসবে, তাদের মীক্বাত। আর যেসব লোক মীকাতের অভ্যন্তরে বসবাস করে, তারা যে স্থান থেকে ইহরাম বাঁধতে ইচ্ছা করে, সে স্থান হতে। এমনকি মাক্কাবাসীগণ মাক্কাহ্ থেকে ইহরাম বাঁধবে। (ই.ফা. ২৬৭১, ই.সে. ২৬৭০) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মাদীনাবাসীগণ যুল হুলায়ফাহ্ থেকে, সিরিয়াবাসীগণ আল জুহফাহ্ থেকে এবং নাজদবাসীগণ ক্বারনুল থেকে ইহরাম বাঁধবে। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমার কাছে খবর পৌছেছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: ইয়ামানবাসীগণ ইয়ালামলাম থেকে ইহরাম বাঁধবে। (ই.ফা. ২৬৭২, ই.সে. ২৬৭১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, মাদীনাবাসীদের মুহাল (মীক্বাত) যুল হুলায়ফাহ্, সিরিয়াবাসীদের মুহাল মাহ্ইয়া‘আহ্ (মুহাই‘আহ্) অর্থাৎ আল জুহফাহ্ এবং নাজদবাসীদের মুহাল ক্বারন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, লোকেরা বলেন: রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইয়ামানবাসীদের মুহাল ইয়ালামলাম, কিন্তু আমি তা তাঁর নিকট থেকে শুনিনি। (ই.ফা. ২৬৭৩, ই.সে. ২৬৭৩) ইবনু দীনার (রহঃ) তিনি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাবাসীদের যুল হুলায়ফাহ্ থেকে, সিরিয়ার অধিবাসীদেরকে আল জুহফাহ্ থেকে এবং নাজদবাসীদেরকে ক্বারন থেকে ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিয়েছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, তিনি আরও বলেছেন, ইয়ামানবাসীগণ ইয়ালামলাম্ থেকে ইহরাম বাঁধবে। (ই.ফা. ২৬৭৪, ই.সে. ২৬৭২) সালিম (রহঃ) থেকে তার পিতা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মাদীনাবাসীগণ যুল হুলায়ফাহ্ থেকে এবং সিরিয়াবাসীগণ আল-জুহফাহ থেকে, নাজদবাসীগণ ক্বারন থেকে ইহরাম বাঁধবে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, আমার নিকট উল্লেখ করা হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেছেন, “ইয়ামানবাসীগণ ইয়ালামলাম্ থেকে ইহরাম বাঁধবে” কিন্তু এ কথা আমি সরাসরি তাঁর নিকট থেকে শুনিনি। (ই.ফা. ২৬৭৬, ই.সে. ২৬৭৪) আবূ যুবায়র (রহঃ) তিনি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট মুহাল স্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে শুনেছেন। এরপর তিনি হাদীসটি শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন। আবু যুবায়র (রহঃ) বলেন, আমি মনে করি যে, জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট থেকে সরাসরি এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ২৬৭৫, ই.সে. ২৬৭৫) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে মুহাল সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তার জওয়াবে আবূ যুবায়র (রহঃ) তাঁকে বলতে শুনেছেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি (রাবীর ধারণায় তিনি এ হাদীস তাঁর সাথে সংযুক্ত করেছেন) : মাদীনাবাসীদের মুহাল যুল হুলায়ফাহ্, অপর একটি পথ হচ্ছে আল জুহফাহ্, ইরাকবাসীদের মুহাল হচ্ছে যাতু ইরাক্ব, নাজদবাসীদের মুহাল হচ্ছে ক্বারন এবং ইয়ামানবাসীদের মুহাল হচ্ছে ইয়ালামলাম। (ই.ফা. ২৬৭৭, ই.সে. ২৬৭৬)

【3】

তালবিয়াহ্-এর বর্ণনা এবং এর সময়

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর তালবিয়াহ্ নিম্নরূপ ছিল : “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট হাযির হয়েছি, তোমার কাছে হাযির হয়েছি, তোমার দরবারে উপস্থিত আছি। তোমার কোন শারীক নেই, আমি তোমার সমীপে উপস্থিত হয়েছি। যাবতীয় প্রশংসা ও নি’আমাত তোমারই এবং সমগ্র রাজত্ব ও সার্বভৌম কর্তৃত্ব তোমার। তোমার কোন শারীক নেই। ” নাফি’ (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নিজের তরফ থেকে তালবিয়ার সাথে আরও যোগ করতেন : “তোমার দরবারে উপস্থিত হয়েছি, তোমার কাছে হাযির হয়েছি, তোমার খিদমাতের সৌভাগ্য লাভ করেছি। সমস্ত কল্যাণ তোমার হাতে, তোমার কাছে হাযির হয়েছি, সমস্ত আকর্ষণ তোমার প্রতি এবং সকল কাজ তোমারই জন্য।” [১৩] (ই.ফা. ২৬৭৮, ই.সে. ২৬৭৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, যুল হুলায়ফাহ্ মাসজিদের নিকট যখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উষ্ট্রী তাঁকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াত, তখন তিনি তালবিয়াহ্ পাঠ শুরু করতেন। তিনি বলতেন, “লাব্বায়কা আল্ল-হুম্মা...........লা-শারীকা লাকা।” আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলতেন, এ হচ্ছে রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর তালবিয়াহ্। নাফি’ (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সাথে আরও যোগ করতেন : “লাব্বায়কা লাব্বায়কা .........ওয়াল ‘আমালু”। (ই.ফা. ২৬৭৯, ই.সে. ২৬৭৮) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সরাসরি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মুখে তালবিয়াহ্ শিখেছি...... অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ২৬৮০, ই.সে. ২৬৭৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাথার চুল জমাট করা অবস্থায় তালবিয়াহ্ পাঠ করতে শুনেছি। তিনি বলছিলেন, “লাব্বায়কা আল্ল-হুম্মা লাব্বায়কা ........লা-শারীকা লাকা”। তিনি এর সাথে আর কোন কথা যোগ করতেন না। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলতেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল হুলায়ফাহ্ দু‘ রাক’আত সলাত আদায় করতেন। অতঃপর তার উষ্ট্রী যখন তাঁকে নিয়ে যুল হুলায়ফার মাসজিদের সামনে দণ্ডায়মান হতো তখন তিনি ঐসব শব্দ সহকারে তালবিয়াহ্ পাঠ শুরু করতেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আরও বলতেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) ও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই তালবিয়াহ্ পাঠ করতেন এবং বলতেন, “লাব্বায়কা আল্ল-হুম্মা লাব্বায়কা. .........ওয়ার রগ্‌বাউ ইলায়কা ওয়াল ‘আমালু।” (ই.ফা. ২৬৮১, ই.সে. ২৬৮০) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, মুশরিকরা বলত, “লাব্বায়কা লা- শারীকা লাকা”। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, তোমাদের ক্ষতি হোক, ক্ষান্ত হও, ক্ষান্ত হও (সামনে আর বলো না)। তারা এর সাথে আরও বলত, “কিন্তু হে আল্লাহ! তোমার আরও একজন শারীক আছে-তুমিই যার মালিক এবং সে কিছুরই মালিক নয়।” তারা এ কথা বলত আর বায়তুল্লাহ্ ত্বওয়াফ করত। (ই.ফা. ২৬৮২, ই.সে. ২৬৮১)

【4】

মাদীনাবাসীদেরকে যুল হুলায়ফার মাসজিদের নিকট ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দেয়া হয়েছে

সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে তার পিতা সূত্রে তিনি তার পিতাকে বলতে শুনেছেন, তোমাদের এ বায়দা নামক স্থান সম্পর্কে তোমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দিকে সম্পৃক্ত করে ভূল বর্ণনা করে থাক। রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেবলমাত্র যুল হুলায়ফার মাসজিদের নিকটেই ইহরাম বাঁধতেন। (ই.ফা. ২৬৮৩, ই.সে. ২৬৮২) সালিম (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে যখন বলা হ’ল, বায়দা নামক স্থানে ইহরাম বাঁধতে হবে- তখন তিনি বললেন, এ বায়দাকে কেন্দ্র করেই তোমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দিকে সম্পৃক্ত করে ভুল বর্ণনা করে থাক। অথচ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে গাছের নিকট ইহরাম বেঁধে লাব্বায়কা ধ্বনি উচ্চারণ করতেন- যেখান থেকে তাঁর উট তাঁকে নিয়ে রওনা হতো। [১৪] (ই.ফা. ২৬৮৪, ই.সে. ২৬৮৩)

【5】

বাহনে আরোহণ করার স্থান থেকে তালবিয়াহ্ পাঠ প্রসঙ্গে

‘উবায়দ ইবনু জুরায়জ (রহঃ) তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বললেন, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমি আপনাকে এমন চারটি কাজ করতে দেখেছি-যা আপনার সঙ্গী-সাথীদের কাউকে করতে দেখিনি। তিনি বললেন, হে ইবনু জুরায়জ! সেগুলো কী কী? তিনি বললেন, আমি দেখেছি আপনি রুকনে হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী ব্যতীত আর কোন রুকন স্পর্শ করেন না। আমি আরও লক্ষ্য করেছি যে, আপনি পশমবিহীন চামড়ার স্যান্ডেল পরিধান করেন। আমি আরো দেখেছি যে, আপনি হলুদ বর্ণ ব্যবহার করেন। আমি আরও লক্ষ্য করেছি যে, আপনি মাক্কাতে অবস্থান কালে (যিলহজ্জ মাসের) আট তারিখে ইহরাম বাঁধেন। অথচ লোকেরা নতুন চাঁদ দেখার সাথে সাথে ইহরাম বাঁধে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, রুকনসমূহের ব্যাপারে কথা হচ্ছে এই যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে রুকনে হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী ছাড়া অন্য কোন রুকন স্পর্শ করতে দেখিনি। [১৫] আর পশমবিহীন স্যান্ডেলের ব্যাপার হচ্ছে এই যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে পশমবিহীন চামড়ার স্যান্ডেল পরিধান করতে দেখেছি। তিনি তা পায়ে দিয়ে ওযুও করতেন। আমিও তাই এ ধরনের স্যান্ডেল পছন্দ করি। হলুদ রং-এর সম্পর্কে কথা হচ্ছে এই যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ রং ব্যবহার করতে দেখেছি। অতএব আমিও এ রং পছন্দ করি। ইহরাম সম্পর্কে বলতে হয় যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তখনি তালবিয়াহ্ পাঠ করতে শুনেছি যখন তাঁর উট যাত্রা শুরু করেছে। (ই.ফা. ২৬৮৫, ই.সে. ২৬৮৪) ‘উবায়দ ইবনু জুরায়জ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সঙ্গে হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ মিলিয়ে ১২ বার করেছি। আমি বললাম, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমি আপনাকে চারটি কাজ করতে দেখেছি...... অবশিষ্ট বর্ননা পূর্বোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক। কিন্তু তালবিয়্যাহ্ পাঠ প্রসঙ্গে রাবী (ইবনু কুসায়ত্ব) সা’ঈদ মাক্ববুরীর বিপরীত বর্ণনা করেছেন, তবে তার উল্লেখ ব্যতীত আর সব বর্ণনায় কোন বিরোধ হয়নি। (ই.ফা. ২৬৮৬, ই.সে. ২৬৮৫) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পাদানীতে পা রাখতেন এবং তাঁর বাহন দাঁড়িয়ে সোজা হয়ে রওনা করত, তখন তিনি যুল হুলায়ফায় ‘লাব্বায়কা’ ধ্বনি উচ্চারণ করতেন। (ই.ফা. ২৬৮৭, ই.সে. ২৬৮৬) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বর্ণনা করতেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উষ্ট্রী যখন তাঁকে নিয়ে সোজা হয়ে রওনা হতো, তখন তিনি ‘লাব্বায়কা’ ধ্বনি উচ্চারণ করতেন। (ই.ফা. ২৬৮৮, ই.সে. ২৬৮৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আমি দেখলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল হুলায়ফাহ্ নামক স্থানে তাঁর বাহনে আরোহণ করলেন, অতঃপর তা যখন তাঁকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল, তখন তিনি ‘লাব্বায়কা’ ধ্বনি উচ্চারণ করলেন। (ই.ফা. ২৬৮৯, ই.সে. ২৬৮৮)

【6】

মাসজিদে যুল হুলায়ফাতে সালাত আদায় প্রসঙ্গে

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হাজ্জের অনুষ্ঠানাদি শুরু করার প্রারম্ভে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল হুলায়ফায় রাত যাপন করেন এবং এখানকার মাসজিদে সালাত আদায় করেন। (ই.ফা. ২৬৯০, ই.সে. ২৬৮৯)

【7】

ইহরাম অবস্থায় মুহরিম ব্যাক্তির সুগন্ধি ব্যবহার

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ইহরাম বাঁধার সময় এবং (হাজ্জ সমাপনান্তে) ইহরামমুক্ত হবার পর বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফের পূর্বেও আমি তাঁকে সুগন্ধি মেখে দিয়েছি। (ই.ফা. ২৬৯১, ই.সে. ২৬৯০) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নিজ হাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ইহরাম বাঁধার প্রাক্কালে এবং ইহরামমুক্ত হবার পর কিন্তু বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফের পূর্বে তাঁকে সুগন্ধি মেখে দিয়েছি। (ই.ফা. ২৬৯২, ই.সে. ২৬৯১) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম বাঁধার জন্য ইহরামের পোশাক পরিধান করার পূর্বে এবং ইহরামমুক্ত হবার পর বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফের পূর্বে আমি তাঁকে সুগন্ধি মেখে দিতাম। (ই.ফা. ২৬৯৩, ই.সে. ২৬৯২) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ইহরাম বাঁধার সময় এবং ইহরাম মুক্ত হবার পর আমি তাঁকে সুগন্ধি মেখে দিয়েছি। (ই.ফা. ২৬৯৪, ই.সে. ২৬৯৩) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বিদায় হাজ্জের সময় নিজ হাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে যারীরাহ্ (ভারতীয় সুগন্ধি) মেখে দিয়েছি-ইহরাম মুক্ত হবার সময় এবং ইহরাম বাঁধার সময়। (ই.ফা. ২৬৯৫, ই.সে. ২৬৯৪) ‘উসমান ইবনু ‘উরওয়াহ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ইহরাম বাঁধার সময় তাঁকে কী জিনিস দিয়ে সুগন্ধিযুক্ত করেছিলেন? তিনি বললেন, সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধি দ্রব্যের (কস্তুরীর) সাহায্যে। (ই.ফা. ২৬৯৬, ই.সে. ২৬৯৫) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, যতদূর সম্ভব সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধির সাহায্যে আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে ইহরাম বাঁধার পূর্বে সুগন্ধিযুক্ত করতাম, অতঃপর তিনি ইহরাম বাঁধতেন। (ই.ফা. ২৬৯৭, ই.সে. ২৬৯৬) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, যতদূর সম্ভব সর্বোৎকৃষ্ট সুগন্ধি দ্রব্যের সাহায্যে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে ইহরাম বাঁধার প্রাক্কালে এবং ইহরামমুক্ত হবার পর কিন্তু ত্বওয়াফে ইফাযাহ্ [১৬] করার পূর্বে সুগন্ধিযুক্ত করেছি। (ই.ফা. ২৬৯৮, ই.সে. ২৬৯৭) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মাথার সিঁথিতে কস্তুরীর ঔজ্জ্বল্য দেখতে পাচ্ছি, অথচ তিনি তখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। রাবী খালাফের বর্ণনায়, ‘তিনি তখন ইহরামাবস্থায় ছিলেন’ কথার উল্লেখ নেই। তবে তাঁর বর্ণনায় আছে, “এটা তাঁর ইহরামের সময়কার সুগন্ধি।” (ই.ফা. ২৬৯৯, ই.সে. ২৬৯৮) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মাথার সিঁথিতে কস্তূরীর ঔজ্জ্বল্য দেখতে পাচ্ছি, তিনি তখন তালবিয়াহ্ পাঠ করছিলেন। (ই.ফা. ২৭০০, ই.সে. ২৬৯৯) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মাথার সিঁথিতে সুগন্ধির ঔজ্জ্বল্য দেখতে পাচ্ছি, তিনি তখন তালবিয়াহ্ পাঠ করছিলেন। (ই.ফা. ২৭০১, ই.সে. ২৭০০) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যেন দেখতে পাচ্ছি......ওয়াকী’ (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ২৭০২, ই.সে. ২৭০১) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মাথার সিঁথিতে তাঁর ইহরামের অবস্থায় সুগন্ধির ঔজ্জ্বল্য দেখতে পাচ্ছি। (ই.ফা. ২৭০৩, ই.সে. ২৭০২) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সিঁথিতে তাঁর ইহরামের অবস্থায় সুগন্ধির ঔজ্জ্বল্য দেখেছি। (ই.ফা. ২৭০৪, ই.সে. ২৭০৩) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইহরাম বাঁধার সংকল্প করতেন তখন তিনি যথাসাধ্য সর্বোত্তম সগন্ধি ব্যবহার করতেন। অতঃপর আমি তাঁর মাথায় ও দাড়িতে তৈলের চাকচিক্য দেখেছি। (ই.ফা. ২৭০৫, ই.সে. ২৭০৪) ‘আয়িশাহ (রাঃ) আমি যেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সিঁথিতে তাঁর ইহরামের অবস্থায় কস্তুরীর চাকচিক্য দেখতে পাচ্ছি। (ই.ফা. ২৭০৬, ই.সে. ২৭০৫) হাসান ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২৭০৭, ই.সে. ২৭০৬ ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তাঁর ইহরাম বাধাঁর পূর্বে এবং কুরবানীর দিন বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফের পূর্বে কস্তুরী মিশ্রিত সুগন্ধি মেখে দিতাম। (ই.ফা. ২৭০৮, ই.সে. ২৭০৭ ) ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু মুনতাশির (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে তিনি (মুহাম্মাদ) বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে এমন এক ব্যাক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম- যে সুগন্ধি মেখেছে, অতঃপর মুহরিম অবস্থায় ভোরে উপনীত হয়েছে। তিনি বললেন, আমি ভোর বেলা এমন অবস্থায় ইহরাম বাঁধা পছন্দ করি না যে, আমি সুগন্ধি ঝেড়ে ফেলতে ব্যস্ত থাকব। এ কাজ (সুগন্ধি লাগানো) অপেক্ষা আমি আমার দেহে আলকাতরা মাখা অধিক পছন্দনীয় মনে করি। অতঃপর আমি (মুহাম্মাদ) ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলাম এবং তাঁকে অবহিত করলাম যে, ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, “আমি ভোরবেলা এমন অবস্থায় ইহরাম বাঁধা পছন্দ করি না যে, আমি সুগন্ধি ঝেড়ে ফেলতে ব্যস্ত থাকব। এ কাজ (সুগন্ধি লাগানো) অপেক্ষা আমি আমার দেহে আলকাতরা লাগানো অধিক শ্রেয় মনে করি।” তখন ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন , আমি নিজে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তাঁর ইহরাম বাঁধার সময় সুগন্ধি মেখে দিয়েছি। এরপর তিনি তাঁর স্ত্রীদের নিকট চক্কর দিলেন, এরপর ভোরবেলা ইহরাম বাঁধলেন। [১৭] (ই.ফা. ২৭০৯ ই.সে. ২৭০৮) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দেহে সুগন্ধি মেখে দিতাম। অতঃপর তিনি তাঁর স্ত্রীদের নিকট চক্কর দিতেন, অতঃপর ভোরবেলা সুগন্ধি ঝাড়তে ঝাড়তে ইহরাম বাঁধতেন। (ই.ফা. ২৭১০, ই.সে. ২৭০৯) ইবরাহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু মুনতাশির (রহঃ)-এর পিতা তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ ভোরবেলা সুগন্ধির চিহ্ন দূরীভূত করা অবস্থায় ইহরাম বাঁধার তুলনায় ভোরবেলা আলকাতরা মাখা অবস্থায় ইহরাম বাঁধা আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। রাবী বলেন, এরপর আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে তাঁকে ইবনু ‘উমারের উক্তি সম্পর্কে অবহিত করলাম। তখন তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দেহে খুশবু লাগিয়েছি। এরপর তিনি তাঁর স্ত্রীদের কাছে গেলেন। অতঃপর তিনি ইহরাম অবস্থায় ভোর করলেন। (ই.ফা. ২৭১১, ই.সে. ২৭১০)

【8】

মুহরিমের জন্য শিকার করা হারাম

সা’ব ইবনু জাসসামাহ্ আল লায়সী (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বন্য গাধা (গোশত) হাদিয়্যাহ্ স্বরূপ দিলেন। আর তিনি তখন আবওয়া অথবা ওয়াদ্দান নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তিনি তার কাছে তা ফেরত পাঠালেন। সা‘ব (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার চেহারা মলিন দেখে বললেন, আমি তোমাকে তা ফেরত দিতাম না, শুধু ইহরামের কারণেই তা ফেরত দিয়েছি। (ই.ফা. ২৭১২, ই.সে. ২৭১১) যুহরী (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সানাদ তিনি বলেন, আমি (সা‘ব) তাঁকে বন্য গাধার গোশত হাদিয়্যাহ্ দিয়েছিলাম। ইমাম মালিক (রহঃ) যেরূপ বর্ণনা করেছেন। লায়স ও সালিহ এর বর্ণনায় রয়েছে- সা‘ব ইবনু জাসসামাহ্ (রাঃ) তাকে অবহিত করেছেন। (ই.ফা. ২৭১৩, ই.সে. ২৭১২) যুহরী (রহঃ) থেকে উক্তঃ সানাদ তিনি (সা’ব) বলেন, আমি তাঁকে বন্য গাধার গোশত হাদিয়্যাহ্ দিয়েছিলাম। (ই.ফা. ২৭১৪, ই.সে. ২৭১৩) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, সা‘ব ইবনু জাসসামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সা‘ব ইবনু জাসসামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর জন্য বন্য গাধার গোশত উপঢৌকন পাঠিয়েছিলেন। আর তিনি তখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন। রাবী বলেন, তাই তিনি এ উপঢৌকন তাকে ফেরত দিলেন এবং বললেন, আমরা যদি ইহরাম অবস্থায় না থাকতাম তবে তোমার এ উপঢৌকন অবশ্যই গ্রহণ করতাম। (ই.ফা. ২৭১৫, ই.সে. ২৭১৪ ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সা‘ব ইবনু জাসসামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বন্য গাধার পায়ের গোশত হাদিয়্যাহ্ দেন। তখন তা থেকে রক্ত ঝরছিল। আর হাকাম–এর সূত্রে শু‘বাহ কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে বন্য গাধার পেছনের অংশের কথা উল্লেখ আছে। আর হাবীব–এর সূত্রে শু‘বাহ কর্তৃক অপর বর্ণনায় আছে, তিনি (সা‘ব) বন্য গাধার উরুর পার্শ্বের গোশত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য উপঢৌকন পাঠান। কিন্তু তিনি তা ফেরত দেন। (ই.ফা. ২৭১৬, ই.সে. ২৭১৫ ) ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) তাঁর নিকট এলেন। তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন, ইহরাম অবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে শিকার করা জন্তুর গোশত উপঢৌকন দেয়া হয়েছিল। সেটা যে হারাম এ কথা আপনি আমাকে কিভাবে অবহিত করেছিলেন? রাবী (ত্বাউস) বলেন, তিনি বললেন, তাঁকে শিকারকৃত জন্তুর একটি অঙ্গ হাদিয়্যাহ্ দেয়া হয়েছিল, তিনি তা ফেরত দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, আমরা এ গোশত খেতে পারি না, কারণ আমরা ইহরাম অবস্থায় আছি। (ই.ফা. ২৭১৭ , ই.সে. ২৭১৬ ) আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে রওনা হলাম, এমনকি ‘ক্বাহাহ্’ নামক স্থানে গিয়ে পৌঁছলাম। আমাদের কতক ইহরাম অবস্থায় এবং কতক ইহরামবিহীন অবস্থায় ছিল। আমি লক্ষ্য করলাম, আমার সঙ্গীরা একটা কিছুর দিকে তাকাচ্ছে। আমি তাকিয়ে দেখলাম, তা একটি বন্য গাধা। অতএব আমি আমার ঘোড়ার জীন বাঁধলাম এবং বল্লম তুলে নিলাম। এরপর ঘোড়ার পিঠে চেপে বসলাম। এ অবস্থায় আমার চাবুক নিচে পড়ে গেল। আমি আমার সঙ্গীদের তা তুলে দিতে বললাম, তারা ইহরাম অবস্থায় ছিল। তাই তারা আল্লাহর শপথ করে বলল, আমরা তোমাকে এ ব্যাপারে কিছুমাত্র সাহায্য করতে পারব না। অতঃপর আমি নিচে নেমে এসে তা তুললাম। অতঃপর ঘোড়ায় চড়ে গাধার পশ্চাদ্ধাবন করলাম। তা ছিল একটি টিলার আড়ালে। আমি বল্লমের আঘাতে এটাকে হত্যা করলাম। অতঃপর আমার সঙ্গীদের কাছে নিয়ে এলাম। তাদের কতক বলল, তা খাও, আর কতক বলল, খেও না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সম্মুখভাগে ছিলেন। আমি ঘোড়া হাঁকিয়ে তাঁর নিকট উপস্থিত হলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তা হালাল, অতএব তোমরা তা খাও। (ই.ফা. ২৭১৮, ই.সে. ২৭১৭ ) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলেন। মাক্কার একটি পথে যখন আমরা পৌছলাম তখন তিনি তার কতিপয় মুহরিম সঙ্গীসহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে পড়ে গেলেন। তিনি ছিলেন ইহরামমুক্ত। তিনি একটি বন্য গাধা দেখতে পেয়ে নিজের ঘোড়ায় চেপে বসলেন এবং সঙ্গীদেরকে তার চাবুকটি তুলে দিতে বললেন। তারা তা তুলে দিতে রাযি হলেন না। তিনি তাদেরকে নিজের বল্লমটি তুলে দিতে বললেন, এবারও তারা তার কথায় রাজী হলেন না। এরপর তিনি নিজেই তা তুলে নিলেন এবং ঘোড়া হাঁকিয়ে গাধাটি শিকার করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কতিপয় সাহাবী তার গোশত খেলেন এবং কতক তা প্রত্যাখ্যান করলেন। অতএব তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌছে তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি বললেন, এতো খাদ্য, মহামহিম আল্লাহ তোমাদের তা দান করেছেন। (ই.ফা. ২৭১৯, ই.সে. ২৭১৮) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) বন্য গাধা সম্পর্কিত হাদীসটি এ সূত্রেও আবূ নাযর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হয়েছে। কিন্তু যায়দ ইবনু আসলামের বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এর কিছু গোশত তোমাদের সাথে আছে কি? (ই.ফা. ২৭২০, ই.সে. ২৭১৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বাতাদাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা হুদায়বিয়ার বছর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে গেলেন। তাঁর সঙ্গীগণ ইহরাম বাঁধলেন, কিন্তু আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) ইহরাম বাঁধলেন না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অবহিত করা হ‘ল যে, শত্রুরা গয়কাহ্ নামক স্থানে ওঁৎ পেতে আছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদের যাত্রা অব্যাহত রাখলেন। আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর সাহাবীগনের সঙ্গে ছিলাম, তাদের কতক আমার দিকে চেয়ে হাসছিল। আমি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে একটি বন্য গাধা দেখতে পেলাম। আমি বর্শার আঘাতে তার গতিরোধ করলাম এবং সাহাবীগণের সাহায্য চাইলাম। কিন্তু তারা আমাকে সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানালেন। আমরা এর গোশত খেলাম এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশংকাবোধ করলাম। অতএব আমি তাঁর কাছে পৌছার জন্য কখনো ঘোড়া হাঁকিয়ে, আবার কখনো পদব্রজে অগ্রসর হতে লাগলাম। মধ্যরাতে গিফার গোত্রের এক ব্যক্তির সাক্ষাৎ পেলাম এবং তাকে জিজ্ঞেগ করলাম, তুমি কোথায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাক্ষাৎ পেয়েছো? সে বলল, আমি তাঁকে তা‘হিন নামক স্থানে ছেড়ে এসেছি এবং তিনি সুফ্ইয়া নামক স্থানে দুপুরের সময়টা যাত্রা বিরতি করার মনস্থ করেছেন। আমি (আবূ ক্বাতাদাহ্) তাঁর সাথে মিলিত হয়ে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার সাহাবীগন আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং আপনার জন্য আল্লাহর রহমাত কামনা করেছেন। তারা আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশংকা করেছেন। অতএব আপনি তাদের জন্য অপেক্ষা করুন। অতএব তিনি তাদের জন্য অপেক্ষা করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল!! আমি একটি শিকার ধরেছি এবং তার কিছু অংশ আমার কাছে অবশিষ্ট আছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদেরকে বললেন, তোমরা খাও। তারা ইহরাম অবস্থায় রয়েছে। (ই.ফা. ২৭২১, ই.সে. ২৭২০) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জের উদ্দেশে রওনা হলেন এবং আমরাও তাঁর সফরসঙ্গী হলাম। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভিন্ন পথ ধরলেন এবং আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) সহ কতিপয় সাহাবাকে (অন্য পথ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়ে) বললেন, তোমরা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ না করা পর্যন্ত সমুদ্র তীরবর্তী পথ ধরে অগ্রসর হও। আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) বলেন, অতএব তারা সমুদ্র উপকূল বরাবর পথ ধরলেন। তারা যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পথে মোড় নিলেন, তখন আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) ছাড়া আর সকলে ইহরাম বাঁধলেন, তিনি ইহরাম বাঁধলেন না। এ অবস্থায় পথ চলতে চলতে তারা কতকগুলো বন্য গাধা দেখতে পেলেন এবং আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) এগুলোকে আক্রমণ করে একটি গাধী শিকার করলেন। তারা যাত্রা বিরতি দিয়ে গাধীর গোশত খেলেন। আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) বলেন, তারা বললেন, আমরা ইহরাম অবস্থায় শিকারের গোশত খেলাম। এরপর তারা এর অবশিষ্ট গোশত সঙ্গে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মিলিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা ইহরাম বেঁধেছি কিন্তু আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) ইহরাম বাঁধেননি। এ অবস্থায় আমরা কয়েকটি বন্য গাধা দেখতে পেলাম। আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) এগুলোর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে একটি গাধী শিকার করেন। আমরা যাত্রা বিরতি দিয়ে এর গোশত খেয়েছি। অতঃপর আমরা পরস্পর বললাম, আমরা ইহরাম অবস্থায় শিকারকৃত পশুর গোশত আহার করব কি অথচ আমরা মুহরিম? আমরা অবশিষ্ট গোশত সাথে করে নিয়ে এসেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের কেউ কি তা শিকার করার নির্দেশ অথবা ইঙ্গিত করেছে? তারা বললেন, না। তিনি বললেন, তাহলে অবশিষ্ট গোশতও খেতে পার। (ই.ফা. ২৭২২, ই.সে. ২৭২১) ‘উসমান ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাওহাব (রহঃ) থেকে উপরোক্ত সানাদ সূত্রে শায়বানের বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের কেউ কি তাকে (গাধীটি) আক্রমণ করার নির্দেশ দিয়েছে অথবা এর প্রতি ইঙ্গিত করেছে?” আর শু‘বাহর বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, “তোমরা কি (শিকারের দিকে) ইঙ্গিত করেছিলে অথবা সাহায্য করেছিলে” অথবা “শিকার করেছিলে”। শু‘বাহ্ বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু‘টো বাক্য বলেছেন কিনা তা আমার জানা নেই। (ই.ফা. ২৭২৩, ই.সে. ২৭২২) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বাতাদাহ্ (রহঃ) তার পিতা তাকে অবহিত করেছেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে হুদায়বিয়ার অভিযানে অংশগ্রহন করেছিলেন। তিনি বলেন, আমি ছাড়া আর সকলেই ‘উমরাহ্ করার জন্য ইহরাম বেঁধেছিলেন। আমি একটি বন্য গাধা শিকার করলাম এবং আমার মুহরিম সঙ্গীদের এর গোশত্ খাওয়ালাম। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁকে অবহিত করলাম যে, শিকারের অবশিষ্ট গোশ্ত আমাদের সাথে আছে। তিনি বললেন, “তোমরা তা খাও”; তখন তারা ছিলেন মুহরিম। (ই.ফা. ২৭২৪, ই.সে. ২৭২৩) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বাতাদাহ্ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে (সফরে) রওনা হলেন। তারা সবাই ইহরাম অবস্থায় ছিলেন, কিন্তু আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) হালাল অবস্থায় ছিলেন। হাদীসের অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্ববৎ। তবে এ বর্ণনায় আরও আছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, এর কিছু গোশত্ তোমাদের সাথে আছে কি? তারা বললেন, এর পায়ের গোশত্ আমাদের সাথে আছে। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা নিয়ে আহার করলেন। (ই.ফা. ২৭২৫, ই.সে. ২৭২৪) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বাতাদাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) ইহরামকারী একটি দলের সঙ্গে ছিলেন, কিন্তু তিনি ইহরামমুক্ত ছিলেন। হাদীসের পরবর্তী বর্ণনা পূর্ববৎ। এতে আছেঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের কেউ কি শিকারের দিকে ইঙ্গিত করেছে অথবা কোনরূপ নির্দেশ দিয়েছে? তারা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! না। তিনি বললেন, তাহলে এটা খেতে পার। (ই.ফা. ২৭২৬, ই.সে. ২৭২৫) মু‘আয ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘উসমান আত্ তায়মী (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে তিনি বলেন, আমরা ইহরাম অবস্থায় ত্বলহাহ্ ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তাকে (শিকার করা) পাখির গোশ্ত উপঢৌকন দেয়া হল। এ সময় তিনি ঘুমে ছিলেন। আমাদের কতক তা খেল এবং কতক বিরত থাকল। ত্বলহাহ্ (রাঃ) ঘুম থেকে উঠে গোশ্ত আহরনকারীদের অনুকূলে মত প্রকাশ করলেন এবং বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে (ইহরাম অবস্থায়) তা (শিকার করা প্রাণীর গোশ্ত) খেয়েছি। (ই.ফা. ২৭২৭, ই.সে. ২৭২৬)

【9】

হারাম এবং হারামের বাইরে ইহরাম কিংবা ইহরামমুক্ত অবস্থায় কোন্ কোন্ জন্তু হত্যা করা জায়িয

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ এমন চার প্রকার দুষ্ট জন্তু হারাম এবং হারামের বাইরে নিধন করা যায়ঃ চিল (এবং শকুন), কাক, ইঁদুর এবং হিংস্র কুকুর। তিনি (‘উবায়দুল্লাহ) বলেন, আমি ক্বাসিমকে জিজ্ঞেস করলাম, সাপের বিষয়ে আপনার মত কী? তিনি বললেন, তা হীনভাবে হত্যা করতে হবে। (ই.ফা. ২৭২৮, ই.সে. ২৭২৭) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পাঁচ প্রকার দুষ্ট জন্তুকে হারাম এবং হারামের বাইরে নিধন করা যায়ঃ সাপ, আব্ক্বা’ (যার বুক ও পিঠ সাদা বর্ণের) কাক, ইঁদুর, হিংস্র কুকুর এবং চিল। (ই.ফা. ২৭২৯, ই.সে. ২৭২৮) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচটি অনিষ্টকর প্রাণীকে হারামের ভিতরে হত্যা করা যায়ঃ বিচ্ছু, ইঁদুর, কাক, চিল ও হিংস্র কুকুর। (ই.ফা. ২৭৩০, ই.সে. ২৭২৯) হিশাম (রহঃ) পূর্বোক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ২৭৩১, ই.সে. ২৭৩০) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচটি দুষ্ট জন্তু হারামের মধ্যেও হত্যা করতে হবেঃ ইঁদুর, বিচ্ছু, কাক, চিল এবং হিংস্র কুকুর। (ই.ফা. ২৭৩২, ই.সে. ২৭৩১) যুহরী (রহঃ) থেকে এ সানাদে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচটি দুষ্ট অনিষ্টকর জন্তু হারাম ও হারামের বাইরে নিধনের নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসের অবশিষ্ট অংশ ইয়াযীদ ইবনু যুরা'য় (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ২৭৩৩, ই.সে. ২৭৩২) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচটি জন্তুর প্রতিটিই অনিষ্টকর। ইহরাম অবস্থায় তা হত্যা করা যাবেঃ কাক, চিল, হিংস্র কুকুর, বিচ্ছু ও ইঁদুর। (ই.ফা. ২৭৩৪, ই.সে. ২৭৩৩) সালিম (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পাঁচটি জন্তু নিধনে কোন দোষ নেই, হারামের ভিতরে ও ইহরাম অবস্থায়ঃ ইঁদুর, কাক, চিল, বিচ্ছু ও হিংস্র কুকুর। ইবনু আবূ ‘উমার তার রিওয়ায়াতে “হারাম শরীফে বা ইহরাম অবস্থায়” কথাটুকু উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ২৭৩৫, ই.সে. ২৭৩৪) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সহধর্মিণী হাফসাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচটি জন্তুর প্রত্যেকটিই অনিষ্টকর, কেউ তা হত্যা করলে তার কোন দোষ হবে নাঃ বিচ্ছু, কাক, চিল, ইঁদুর ও হিংস্র কুকুর। (ই.ফা. ২৭৩৬, ই.সে. ২৭৩৫) যায়দ ইবনু জুবায়র (রহঃ) এক ব্যক্তি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, মুহরিম ব্যক্তি কোন্ কোন্ জন্তু হত্যা করতে পারে? তিনি বললেন, আমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জনৈকা সহধর্মিণী অবহিত করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইঁদুর, বিচ্ছু, চিল, হিংস্র কুকুর ও কাক হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন অথবা রাবী বলেন, নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (ই.ফা. ২৭৩৭, ই.সে. ২৭৩৬) যায়দ ইবনু জুবায়র (রহঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনু ‘ঊমার (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করল, মুহরিম ব্যক্তি কোন্ কোন্ জন্তু হত্যা করতে পারে? তিনি বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জনৈকা সহধর্মিণী বলেছেন যে, তিনি হিংস্র কুকুর, ইঁদুর, বিচ্ছু, চিল, কাক ও সাপ হত্যা করার নির্দেশ দিতেন। এমনকি সলাতরত অবস্থায়ও তা হত্যা করা যায়। (ই.ফা. ২৭৩৮, ই.সে. ২৭৩৭) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এমন পাঁচটি জন্তু আছে যা মুহরিম ব্যক্তি হত্যা করলে কোন দোষ হবে নাঃ কাক, চিল, বিচ্ছু, ইঁদুর এবং হিংস্র কুকুর। (ই.ফা. ২৭৩৯, ই.সে. ২৭৩৮) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি নাফি’ (রহঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, আপনি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে মুহরিম ব্যক্তির জন্য কোন্ কোন্ প্রাণী হত্যার বৈধতা ঘোষণা করতে শুনেছেন? নাফি’ (রহঃ) আমাকে বললেন, ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) বলেছেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, এমন পাঁচ প্রকারের প্রাণী আছে, কোন ব্যক্তি তা হত্যা করলে তার কোন গুনাহ হবে নাঃ কাক, চিল, বিচ্ছু, ইঁদুর ও হিংস্র কুকুর। (ই.ফা. ২৭৪০, ই.সে. ২৭৩৯) ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে এ সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ইবনু মালিক (রহঃ) ও ইবনু জুরায়জের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে এবং একমাত্র ইবনু জুরায়জ (রহঃ) ব্যতীত নাফি’ “ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি” কথাটি আর কেউ বলেননি। এ বর্ণনায় ইবনু জুরায়জ (রহঃ) ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ)-এর অনুসরণ করেছেন। (ই.ফা. ২৭৪১, ই.সে. ২৭৪০) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, পাঁচ ধরনের প্রাণী, এর কোন একটি হারাম শরীফে বা ইহরাম অবস্থায় হত্যা করা হলে কোন দোষ নেই....পূর্বের হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ২৭৪২, ই.সে. ২৭৪০) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এমন পাঁচ ধরনের প্রাণী আছে, ইহরাম অবস্থায় কোন ব্যক্তি সেগুলো হত্যা করলে তাতে তার কোন গুনাহ হবে নাঃ বিচ্ছু, ইঁদুর, হিংস্র কুকুর, কাক ও চিল। হাদীসের মূল পাঠ ইয়াহ্ইয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়ার বর্ণনা থেকে নেয়া হয়েছে। (ই.ফা. ২৭৪৩, ই.সে. ২৭৪১)

【10】

কোন অসুবিধার কারনে ইহরাম অবস্থায় মাথা কামানো জায়িয, মাথা কামালে ফিদ্ইয়াহ্ দেয়া ওয়াজিব এবং ফিদ্ইয়ার পরিমাণ

কা‘ব ইবনু 'উজরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে এলেন এবং আমি তখন চুলায় আমার হাঁড়ি বা পাতিলের নীচে আগুন জ্বালাচ্ছিলাম-আর উকুন আমার চেহারার উপর গড়িয়ে পড়ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার মাথার পোকাগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হ্যা। তিনি বললেন, তাহলে মাথা মুড়িয়ে ফেল এবং তিনদিন সওম পালন কর অথবা ছয়জন মিসকিনকে আহার করাও অথবা একটি কুরবানী কর। আইয়ূব (রহঃ) বলেন, আমার মনে নেই তিনি (মুজাহিদ) কোন্ শব্দটি আগে বলেছেন। (ই.ফা. ২৭৪৪, ই.সে.২৭৪২) আইয়ূব (রহঃ) থেকে এ সানাদ সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২৭৪৫, ই.সে. ২৭৪৩) কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার সম্পর্কে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হবে অথবা যার মাথায় কোন অসুখ হবে এবং এ কারণে সে মাথা মুড়িয়ে ফেলে, তবে তাকে ফিদ্ইয়্যাহ্ হিসেবে সওম পালন করতে হবে অথবা সদাক্বাহ্ দিতে হবে অথবা কুরবানী করতে হবে”- (সূরাহ আল বাকারাঃ ১৯৬)। রাবী বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এলাম এবং তিনি বললেন, আরও নিকটে আসো। অতএব আমি নিকটবর্তী হলাম এবং তিনি বললেন, পোকাগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? ইবনু ‘আওন (রহঃ) (নিজস্ব সূত্র পরম্পরায়) বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছিলেন, হ্যাঁ। কা‘ব (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে সওম অথবা সদাক্বাহ্ কর ছয়জন মিসকীনের মাঝে এক ফারাক্ব (তিন সা’) পরিমাণ, অথবা সহজলভ্য হলে কুরবানীর মাধ্যমে ফিদ্ইয়্যাহ্ আদায়ের নির্দেশ দিলেন। (ই.ফা. ২৭৪৬, ই.সে. ২৭৪৪) কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট দাঁড়ালেন এবং তখন তার মাথা থেকে উকুন ঝরে পরছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তোমার মাথা কামিয়ে ফেল। রাবী বলেন, অতএব আমার সম্পর্কে এ নাযিল হয়ঃ “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হবে অথবা যার মাথায় কোন অসুখ হবে (এবং এ কারণে মাথা মুড়িয়ে ফেলবে) তবে তাকে ফিদ্ইয়্যাহ্ হিসেবে সওম পালন করতে হবে অথবা সদাক্বাহ্ দিতে হবে অথবা কুরবানী করতে হবে”- (সূরাহ্ আল বাকারা ২:১৯৬)। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, তুমি তিনদিন সওম পালন কর অথবা এক ফারাক্ব (তিন সা’) খাদ্য ছয়জন মিসকিনকে দান কর অথবা করবানী কর- যা সহজলভ্য হয়। (ই.ফা. ২৭৪৭, ই.সে. ২৭৪৫) কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদায়বিয়ায় তার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন- মাক্কায় প্রবেশের পূর্বে- তিনি যখন ইহরাম অবস্থায় ছিলেন এবং নিজের হাঁড়ির নিচে আগুন জ্বালাচ্ছিলেন। এ অবস্থায় তার (মাথা থেকে) মুখমণ্ডলে উকুন ঝরে পড়ছিল। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এগুলো কি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রসূলুল্লাহ বললেন, তাহলে তোমার মাথা মুড়িয়ে ফেল এবং ছয়জন মিসকিনকে এক ফারাক খাদ্য দান কর (এক ফারাক্ব-এ তিন সা’), অথবা তিনদিন সওম পালন কর অথবা একটি কুরবানী কর। ইবনু আবূ নাজীহ-এর বর্ণনায় আছে, “অথবা একটি বকরী কুরবানী কর।” (ই.ফা. ২৭৪৮, ই.সে. ২৭৪৬) কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদায়বিয়ায় তার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, পোকাগুলো কি তোমার মাথায় উপদ্রব করছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, মাথা মুড়িয়ে ফেল। অতঃপর একটি বকরী কুরবানী কর অথবা তিনদিন সওম পালন কর অথবা ছয়জন মিসকিনকে তিন সা’ খেজুর খেতে দাও। (ই.ফা. ২৭৪৯, ই.সে. ২৭৪৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মা‘ক্বিল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মাসজিদে কা‘ব ইবনু ‘উজ্রাহ্ (রাঃ)-এর নিকট বসলাম। অতঃপর আমি তাকে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম, “ফিদ্ইয়াহ্ হিসেবে সওম পালন করতে হবে অথবা সদক্বাহ্ দিতে হবে অথবা কুরবানী করতে হবে।” কা‘ব (রাঃ) বললেন, তা আমার সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আমার মাথায় কিছু কষ্ট ছিল। অতঃপর আমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট নিয়ে যাওয়া হল এবং তখন আমার মুখমণ্ডলে উকুন গড়িয়ে পড়ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি যা দেখছি তাতে মনে হয় যে, তোমার অসহনীয় কষ্ট হচ্ছে। তুমি কি একটি বকরী সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে? আমি বললাম, না। তখন আয়াত নাযিল হয়, “ফিদ্ইয়াহ্ হিসেবে সওম পালন করতে হবে, সদাক্বাহ্ করতে হবে অথবা কুরবানী করতে হবে।” নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তিনদিন সওম পালন কর অথবা ছয়জন মিসকীনের প্রত্যেককে অর্ধ সা‘ করে খাদ্য দান কর। কা‘ব (রাঃ) বলেন, আয়াতটি বিশেষভাবে আমার প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছে কিন্তু এর নির্দেশ সাধারণভাবে তোমাদের সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। (ই.ফা. ২৭৫০, ই.সে. ২৭৪৮) কা‘ব ইবনু ‘উজরাহ (রাঃ) তিনি ইহরাম অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে রওনা হলেন। তার মাথা ও দাঁড়িতে উকুন ধরে যায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা জানতে পেরে তাকে ডেকে পাঠালেন এবং একজন নাপিতও ডাকলেন। সে তার মাথা মুড়িয়ে দিল। অতঃপর তিনি বললেন, তোমার সাথে কুরবানীর পশু আছে কি? তিনি বললেন, আমি তা সংগ্রহ করতে সক্ষম নই। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তিনদিন সওম পালনের অথবা ছয়জন মিসকীনের প্রত্যেককে এক সা’ করে খাদ্য দান করার নির্দেশ দিলেন। আল্লাহ তা‘আলা বিশেষ করে তার প্রসঙ্গে নাযিল করলেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি রোগাক্রান্ত হবে অথবা যার মাথায় কোন অসুখ হবে...”। অতঃপর এ আয়াতের নির্দেশ সাধারণভাবে সকল মুসলিমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। (ই.ফা. ২৭৫১, ই.সে. ২৭৪৯)

【11】

ইহরাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো জায়িয

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়ে ছিলেন। (ই.ফা. ২৭৫২, ই.সে. ২৭৫০) ইবনু বুহায়নাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় মাক্কায় যাবার পথে নিজের মাথার মথ্যস্থলে শিঙ্গা লাগিয়েছিলেন। (ই.ফা. ২৭৫৩, ই.সে. ২৭৫১)

【12】

ইহরাম অবস্থায় চোখের চিকিৎসা করানো জায়িয

নুবায়হ ইবনু ওয়াহ্ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমার (ইহরাম অবস্থায়) আবান ইবনু ‘উসমান (রহঃ)-এর সাথে রওনা হলাম। আমরা মালাল নামক স্থানে পৌঁছলে ‘উমার ইবনু ‘উবায়দুল্লাহর চোখে পীড়া দেখা দিল। রাওহা নামক স্থানে পৌঁছে তার চোখের ব্যথা আরও তীব্রতর হ‘ল। তিনি (নুবায়হ) আবান ইবনু ‘উসমান (রহঃ)-এর কাছে (কী করতে হবে তা) জিজ্ঞেস করার জন্য একজনকে পাঠালেন, তিনি বলে পাঠালেন, চোখে মুসব্বারের প্রলেপ দাও, কারণ ‘উসমান (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ইহরাম অবস্থায় এক ব্যক্তির চক্ষুরোগ দেখা দিলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার চোখে মুসব্বারের প্রলেপ দেন। (ই.ফা. ২৭৫৪, ই.সে. ২৭৫২) নুবায়হ ইবনু ওয়াহাব্ (রহঃ) ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু মা‘মার-এর পুত্র ‘উমারের চোখ ফুলে উঠলে তিনি সুরমা লাগানোর ইচ্ছা করলেন। কিন্তু আবান ইবনু ‘উসমান (রাঃ) তাকে চোখে সুরমা লাগাতে নিষেধ করলেন এবং মুসব্বারের প্রলেপ দেয়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি ‘উসমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাঃ)-এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এও বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছেন। (ই.ফা. ২৭৫৫, ই.সে. ২৭৫৩)

【13】

মুহরিম ব্যক্তির জন্য শরীর ও মাথা ধৌত করা জায়িয

ইব্রাহীম ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু হুনায়ন (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস ও মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ্ (রাঃ) আবওয়া নামক স্থানে পরস্পর মতবিরোধে লিপ্ত হলেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, মুহরিম ব্যক্তি মাথা ধৌত করতে পারবে, কিন্তু মিসওয়ার (রাঃ) বললেন, সে মাথা ধৌত করতে পারবে না। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে (অর্থাৎ ‘আবদুল্লাহ ইবনু হুনায়নকে) এ সম্পর্কিত মাসাআলাহ্ জানার জন্য আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ)-এর নিকট পাঠালেন। আমি তাকে কূপের দু‘ খুঁটির মাঝে গোসলরত অবস্থায় পেলাম। তিনি একখণ্ড কাপড় টাঙ্গিয়ে নিজেকে আড়াল করে নিয়েছিলেন। আমি তাকে সালাম করলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? আমি বললাম, ‘আবদুল্লাহ ইবনু হুনায়ন, আমাকে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আপনার নিকট এ কথা জিজ্ঞেস করার জন্য পাঠিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম অবস্থায় কিভাবে মাথা ধৌত করতেন? আবূ আইয়ূব (রাঃ) তার হাত টানানো কাপড়ের উপর রাখলেন এবং তা (সামান্য) নীচু করলেন- যাতে তার মাথা আমার দৃষ্টিগোচর হ‘ল। অতঃপর তিনি তার গোসলে সাহায্যকারী ব্যক্তিকে পানি ঢালতে বললেন। অতপর সে তার মাথায় ঢালল। এরপর তিনি উভয় হাত সামনে ও পিছনে সঞ্চালন করে নিজের মাথা মললেন। এরপর তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এরূপ করতে দেখেছি। (ই.ফা. ২৭৫৬, ই.সে. ২৭৫৪) যায়দ ইবনু আসলাম (রাঃ) এ সানাদ সূত্রে উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, আবূ আইয়ূব (রাঃ) তার উভয় হাত সামনে-পিছনে সঞ্চালন করে সম্পূর্ণ মাথা ভালভাবে মললেন। এরপর মিসওয়ার (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললেন, আমি আর কখনও আপনার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হব না। (ই.ফা. ২৭৫৭, ই.সে. ২৭৫৫)

【14】

ইহরাম অবস্থায় মারা গেলে তার বিধান

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তি তার উটের পিঠ থেকে পড়ে গেল। ফলে তার ঘাড় ভেঙ্গে গেল এবং মারা গেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দাও, তার দু‘ কাপড়েই কাফন দাও এবং তার মাথা অনাবৃত রাখ। কারণ আল্লাহ তা‘আলা কেয়ামতের দিন তাকে তালবিয়াহ্ পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন। (ই.ফা. ২৭৫৮, ই.সে. ২৭৫৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি ‘আরাফার ময়দানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে উকূফরত ছিল। হঠাৎ সে তার বাহন থেকে নীচে পড়ে গেল। এতে তার ঘাড় মটকিয়ে গেল এবং সে মারা গেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে তা অবহিত করা হলে তিনি বললেন, তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল দাও, তার দুই কাপড় দিয়েই তার কাফনের ব্যবস্থা কর, তাকে সুগন্ধি লাগিও না এবং তার মাথাও আবৃত কর না। (রাবী আইয়ূব বললেন) কারণ আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাকে তালবিয়াহ্ পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন। ‘আম্‌র (রহঃ) অনুরূপ বলেছেন। (ই.ফা. ২৭৫৯, ই.সে. ২৭৫৭) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে (‘আরাফাতে) অবস্থান করছিল। হাদীসের অবশিষ্ট বর্ণনা হাম্মাদ-এর সূত্রে আইয়ূবের অনুরূপ বর্ণিত। (ই.ফা. ২৭৬০, ই.সে. ২৭৫৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে এসেছিল। সে উট থেকে পড়ে গেল এবং তার ঘাড় মটকে গেল। ফলে সে মারা গেল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাও এবং তার পরনের দু‘ কাপড়ে তাকে কাফন দাও এবং তার মাথার চুল আবৃত করো না। কারন সে কিয়ামাতের দিন তালবিয়াহ্ পাঠরত অবস্থায় উপস্থিত হবে। (ই.ফা. ২৭৬১, ই.সে. ২৭৫৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে এসেছিল ..... পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে এ বর্ণনায় আছে, “তাকে কিয়ামাতের দিন তালবিয়াহ্ পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে।” এতে আরও আছে, কোথায় সে উটের পিঠ থেকে পড়ে গেল তা সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ২৭৬২, ই.সে. ২৭৬০) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় তার বাহন পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে তার ঘাড় ভেঙ্গে দিলে সে মারা গেল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাও, তার পরিধেয় বস্ত্র দু‘টি দিয়ে তার কাফন দাও, কিন্তু তার মুখমণ্ডল ও মাথা অনাবৃত রাখ। কারণ তাকে কিয়ামাতের দিন তালবিয়াহ্ পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে। (ই.ফা. ২৭৬৩, ই.সে. ২৭৬১) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ছিল। তার উষ্ট্রী তার ঘাড় ভেঙ্গে দিল, ফলে সে মারা গেল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাও, তার পরিধেয় বস্ত্র দু‘খানা দিয়ে তাকে কাফন পরাও, কিন্তু তার দেহে সুগন্ধি মাখাও না এবং তার মাথাও আবৃত করো না। কারণ তাকে কিয়ামাতের দিন মাথার চুল জমাট করা অবস্থায় উঠানো হবে। (ই.ফা. ২৭৬৪, ই.সে. ২৭৬২) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এক ব্যক্তিকে তার উট নীচে ফেলে দিলে তার ঘাড় ভেঙ্গে যায় (এবং সে মারা যায়)। সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ইহরাম অবস্থায় ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাতে, সুগন্ধি না লাগাতে এবং মাথা অনাবৃত রাখতে নির্দেশ দেন। কারণ কিয়ামাতের দিন তাকে মাথার চুল জমাট করা অবস্থায় পুনরুত্থিত করা হবে। (ই.ফা. ২৭৬৫, ই.সে. ২৭৬৩) সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) তিনি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বর্ণনা করতে শুনেছেন, এক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে উপস্থিত হ‘ল হঠাৎ সে তার উষ্ট্রীর পিঠ থেকে পড়ে গেল এবং ঘাড় মটকে যাওয়ার ফলে মারা গেল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাতে, তার পরিধেয় দু‘খণ্ড বস্ত্রে কাফন দিতে, সুগন্ধি না লাগাতে এবং মাথা কাফনের বাইরে রাখতে নির্দেশ দিলেন। শু‘বাহ্ (রহঃ) বলেন, অতঃপর আবূ বিশ্র আমাকে এভাবে বললেন, তাকে এভাবে কাফন পরাও যাতে তার মাথা ও মুখমণ্ডল বাইরে থাকে। কারণ তাকে কিয়ামাতের দিন মাথার চুল জমাট করা অবস্থায় উঠানো হবে। (ই.ফা. ২৭৬৬, ই.সে. ২৭৬৪) সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, এক ব্যক্তিকে তার বাহন নিচে ফেলে দিলে ঘাড় মটকে সে মারা যায়। সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপস্থিত লোকদেরকে নির্দেশ দিলেন তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দিয়ে গোসল করাতে এবং তার মুখমণ্ডল খুলে রাখতে। রাবী বলেন, আমি মনে করি যে, তার মাথা অনাবৃত রেখে কাফন পরাতে নির্দেশ দিলেন। কারণ তাকে তালবিয়াহ্ পাঠরত অবস্থায় পুনরুত্থিত করা হবে। (ই.ফা. ২৭৬৭, ই.সে. ২৭৬৫) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ছিল। তার উষ্ট্রী তাকে পিঠ থেকে ফেলে দেয়ায় তার ঘাড় ভেঙ্গে যায়, এতে সে মারা যায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে গোসল দাও, তার দেহে সুগন্ধি মাখিও না এবং তার মুখমণ্ডলও ঢেকে দিও না। কারণ তাকে তালবিয়াহ্ পাঠরত অবস্থায় উঠানো হবে। (ই.ফা. ২৭৬৮, ই.সে. ২৭৬৬)

【15】

রোগ-ব্যাধি বা অন্য কোন অক্ষমতার কারণে শর্তসাপেক্ষে ইহরাম খুলে ফেলা জায়িয

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুবা‘আহ্ বিনতু যুবায়র (রাঃ)-এর নিকট গেলেন এবং তাকে বললেন, তুমি হাজ্জের ইচ্ছা পোষণ করেছো? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম! কিন্তু আমি প্রায়ই অসুস্থ থাকি। তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি হাজ্জ কর এবং শর্ত রাখ ও বল, হে আল্লাহ! তুমি যেখানে আমাকে আটকিয়ে দিবে (সেখানে আমি ইনরাম খুলব)। তিনি মিকদাদ (রাঃ)-এর স্ত্রী ছিলেন। (ই.ফা. ২৭৬৯, ই.সে. ২৭৬৭) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুবায়র ইবনু ‘আবদুল মুত্ত্বালিব কন্যা যুবা‘আহ্ (রাঃ)-এর নিকট আসলেন। তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি হাজ্জের সংকল্প করেছি- কিন্তু আমি অসুস্থ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি হাজ্জের ইহরাম বাঁধ এবং এই শর্ত কর যে, আল্লাহ! তুমি যেখানে আমাকে আটকিয়ে দিবে সেখানে আমি ইহরাম আমি খুলব। (ই.ফা. ২৭৭০, ই.সে. ২৭৬৮) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২৭৭১, ই.সে. ২৭৬৯) ‘আব্বাস (রাঃ) যুবায়র ইবনু ‘আবদুল মুত্ত্বালিব কন্যা যুবা‘আহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে বললেন, আমি একজন পীড়িত (ভাড়ী) মহিলা এবং আমি হাজ্জের সংকল্প রাখি। আপনি আমাকে কী নির্দেশ দেন? তিনি বললেন, তুমি হাজ্জের ইহরাম বাঁধ এবং শর্ত কর যে, আল্লাহ! তুমি আমাকে যেখানে আটকিয়ে দিবে সেখানে আমি ইহরাম খুলব। রাবী বলেন, তিনি হাজ্জের অনুষ্ঠানাদি পালনে সক্ষম হয়েছিলেন। (ই.ফা. ২৭৭২, ই.সে. ২৭৭০) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) যুবা‘আহ (রাঃ) হাজ্জের ইচ্ছা করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে শর্তসাপেক্ষে ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিলেন। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নির্দেশ মুতাবিক তাই করলেন। (ই.ফা. ২৭৭৩, ই.সে. ২৭৭১) ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুব’আহ (রাঃ)-কে বললেন, তুমি হাজ্জ কর এবং শর্ত রাখ যে, আল্লাহ্! তুমি যেখানে আমাকে থামিয়ে দিবে, সেখানে আমি ইহরাম খুলব। ইসহাক্বের বর্ণনায় আছে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুবা’আহ (রাঃ)-কে এ নির্দেশ দিয়েছিলেন। (ই.ফা. ২৭৭৪, ই.সে.২৭৭২)

【16】

হায়য-নিফাস অবস্থায় ইহরাম বাঁধা জায়িয এবং ইহরাম বাঁধার পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আসমা বিনতু ‘উমায়স (রাঃ) আশ্ শাজার নামক স্থানে আবূ বাকর (রাঃ)-এর পুত্র মুহাম্মাদকে প্রসব করলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাকর (রাঃ)-এর মাধ্যমে তাকে গোসল করে ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিলেন। (ই.ফা. ২৭৭৫, ই.সে.২৭৭৩) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আসমা বিনতু ‘উমায়স (রাঃ) যুল হুলায়ফাহ্ নামক স্থানে সন্তান প্রসব করলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাকর (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন এবং তিনি তদানুযায়ী তাকে গোসল করে ইহরাম বাঁধতে বললেন। (ই.ফা. ২৭৭৬, ই.সে.২৭৭৪)

【17】

ইহরামের প্রকারভেদ, ইফরাদ, ক্বিরান ও তামাত্তু’ হাজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধা জায়িয, একত্রে ‘উমরাহ ও হাজ্জের ইহরাম বাঁধাও জায়িয এবং ক্বিরান হাজ্জ পালনকারী কখন ইহরাম মুক্ত হবে

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বিদায় হাজ্জের বছর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা ‘উমরার জন্য ইহরাম বাঁধলাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যার সাথে হাদী অর্থাৎ কুরবানীর পশু আছে সে যেন একত্রে ‘উমরার সাথে হাজ্জের ইহরাম বাঁধে, অতঃপর ‘উমরাহ ও হাজ্জের অনুষ্ঠান শেষ না করে যেন ইহরামমুক্ত না হয়। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বললেন, আমি হায়য অবস্থায় মাক্কায় পৌঁছলাম। তাই আমি বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ করতে এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সা’ঈ করতে পারিনি। এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তোমার চুলের বেণী খুলে ফেল এবং চিরুনী কর, হাজ্জের ইহরাম বাঁধ এবং ‘উমরাহ পরিত্যাগ কর। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি তাই করলাম। আমাদের হাজ্জের অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে (আমার ভাই) ‘আবদুর রহমানের সাথে তান’ঈম নামক স্থানে পাঠালেন। আমি সেখান থেকে ইহরাম বেঁধে ‘উমরাহ পালন করি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটা তোমার (ইহরাম বাঁধার) স্থান। যে সব লোক শুধু ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছিল, তারা বায়তুল্লাহর ত্বওয়াফ এবং সাফা-মারওয়া পাহারদ্বয়ের মাঝে সা’ঈ করার পর ইহরামমুক্ত হয়ে গেল। অতঃপর তারা মিনা থেকে ফিরে এসে পুনরায় তাদের হাজ্জের ত্বওয়াফ করল আর যারা ‘উমরাহ ও হাজ্জের জন্য একত্রে ইহরাম বেঁধেছিল, তারা একবার ত্বওয়াফ করল। (ই.ফা. ২৭৭৭, ই.সে.২৭৭৫) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বিদায় হাজ্জের বছর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমাদের কেউ শুধু ‘উমরার ইহরাম বাঁধল, আর কেউ শুধু হাজ্জের ইহরাম বাঁধল। এভাবে আমরা মাক্কায় পৌঁছলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যারা ‘উমরার জন্য ইহরাম বেঁধেছে কিন্তু কুরবানীর পশু আনেনি, তারা যেন ইহরাম খুলে ফেলে। আর যারা ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছে এবং সাথে কুরবানীর পশুও এনেছে, তারা কুরবানী করার পরই কেবল ইহরামমুক্ত হবে। আর যারা হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছে তারা যেন হাজ্জ পূর্ণ করে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমার হায়য শুরু হয়ে গেল এবং ‘আরাফাহ্ দিবস পর্যন্ত চলতে থাকল। আমি ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছিলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে মাথার চুল খুলে ফেলতে, তাতে চিরুণী করতে, হাজ্জের ইহরাম বাঁধতে এবং ‘উমরাহ্ পরিত্যাগ করতে নির্দেশ দিলেন। আমি তাই করলাম এবং হাজ্জের অনুষ্ঠানাদি পূর্ণ করলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে (আমার ভাই) ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাকরকে পাঠালেন এবং তিনি আমাকে তান’ঈম থেকে ইহরাম বেধে ‘উমারাহ করার নির্দেশ দিলেন- যেহেতু আমি ‘উমরার ইহরাম পরিত্যাগ করে হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছিলাম; অথচ আমি উক্ত ‘উমরাহ্ সমাপ্ত করতে পারিনি। (ই.ফা. ২৭৭৮, ই.সে. ২৭৭৬) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বিদায় হাজ্জের বছর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমি ‘উমরার ইহরাম বাঁধলাম এবং সাথে কুরবানির পশু নেইনি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যার সাথে কুরবানির পশু আছে, সে যেন তার ‘উমরার সাথে হাজ্জের ইহরামও বাঁধে এবং উভয়ের অনুষ্ঠানাদি সমাপ্ত করার পূর্বে যেন ইহরাম না খুলে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার মাসিক ঋতু শুরু হয়ে গেল। ‘আরাফার রাত শুরু হলে আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি ‘উমরার ইহরাম বেঁধেছিলাম, অতএব আমি কিভাবে হাজ্জ করব? তিনি বললেন, তোমার চুল খুলে ফেল এবং চিরুণী কর, ‘উমরাহ্ স্থগিত রাখ এবং হাজ্জের ইহরাম বাঁধ। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি যখন হাজ্জ সমাপ্ত করলাম, তখন তিনি (আমার ভাই) ‘আবদূর রহমানকে নির্দেশ দিলেন এবং তিনি তদানুযায়ী আমাকে তার বাহনের পেছন দিকে বসিয়ে তান’ঈম থেকে উমরাহ্ করালেন- যেহেতু আমি ‘উমরার অনুষ্ঠান পালন থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয়েছিলাম। (ই.ফা. ২৭৭৯, ই.সে. ২৭৭৭) ‘আয়িশাহ (রাঃ) আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে রওনা হলাম। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি একত্রে হাজ্জ ও ‘উমরার ইহরাম বাঁধতে চায়, সে যেন তাই করে। আর যে ব্যক্তি শুধু হাজ্জের ইহরাম বাঁধতে চায়, সেও যেন তাই করে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুধুমাত্র হাজ্জের ইহরাম বাঁধলেন এবং তাঁর সাথের লোকেরাও তাই করল। কতিপয় লোক ‘উমরাহ্ ও হাজ্জের ইহরাম বাঁধল এবং কতিপয় লোক শুধু ‘উমরার ইহরাম বাঁধল। আমি ‘উমরার উদ্দেশে ইহরামকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। (ই.ফা. ২৭৮০, ই.সে. ২৭৭৮) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) বিদায় হাজ্জের বছর যিলহাজ্জ মাসের নতুন চাঁদ উদয়ের কাছাকাছি সময়ে আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে (মাক্কাহ্) রওনা হলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ‘উমরার ইহরাম বাধঁতে চায়, সে তা করতে পারে। আমার সঙ্গে হাদী বা কুরবানীর পশু না থাকলে আমি ‘উমরার ইহরাম বাধঁতাম। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, লোকদের মধ্যে কতক ‘উমরার ইহরাম বাঁধল এবং কতক হাজ্জের ইহরাম বাঁধল। তিনি বললেন, আমি ‘উমরার উদ্দেশে ইহরামকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। আমরা রওনা হলাম, অতঃপর মাক্কায় পৌঁছে গেলাম। ‘আরাফাহ্ দিবস পর্যন্ত আমার মাসিক ঋতু অব্যাহত থাকল এবং ‘উমরাহ্ করে ইহরাম খোলার সুযোগ পেলাম না। এ সংকটের বিষয়ে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অবহিত করলে তিনি বললেন, তুমি তোমার ‘উমরাহ্ পরিত্যাগ কর, চুলের বাঁধন খুলে ফেল এবং তাতে চিরুণী কর আর হাজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধ। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তাই করলাম। অতঃপর যখন মুহাস্সাব-এর রাত হলো এবং আল্লাহ তা’আলা আমাদের হাজ্জ সমাপন করার তাওফীক্ব দিলেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ)-কে পাঠালেন এবং তিনি আমাকে তাঁর বাহনের পেছনে বসিয়ে তান’ঈম নামক স্থানে রওনা হলেন। অতঃপর আমি ‘উমরার ইহরাম বাঁধলাম। এভাবে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ সমাপনের তাওফীক্ব দান করলেন। এজন্য হাদী বা কুরবানী, সদাক্বাহ্ বা সওম কোনটিই পালন করতে হয়নি। (ই.ফা. ২৭৮১, ই.সে. ২৭৭৯) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, যিলহাজ্জ মাসের নতুন চাঁদ উদয়ের কাছাকাছি সময়ে আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে রওনা হলাম। হাজ্জ করা ছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ‘উমরার ইহরাম বাধঁতে চায়, সে তাই করুক............ হাদীসের অবশিষ্ট অংশ ‘আব্দাহ্’ (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ২৭৮২, ই.সে. ২৭৮০) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, যিলহাজ্জ মাসের নতুন চাঁদ উদয়ের কাছাকাছি সময়ে আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমাদের মধ্যে কতক ‘উমরার, কতক হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ উভয়ের এবং কতক শুধু হাজ্জের ইহরাম বাঁধল। আমি ‘উমরার উদ্দেশে ইহ্‌রামকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। ......অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত (উভয়ের) হাদীসের অনুরূপ। তবে ‘উরওয়াহ্র বর্ণনায় আছে, “আল্লাহ্ তা‘আলা ‘আয়িশা (রাঃ)-কে তার হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ সমাপনের তাওফীক্ব দিলেন।” আর হিশামের বর্ণনায় আছে, “এজন্য (‘উমরার ইহরাম পরিত্যাগ করে হাজ্জের ইহরাম বাঁধার কারণে তাকে) হাদী বা কুরবানীও করতে হয়নি, সওমও পালন করতে হয়নি, সদাক্বাহ্ও দিতে হয়নি।” (ই.ফা. ২৭৮৩, ই.সে. ২৭৮১) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বিদায় হাজ্জের বছর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমাদের মধ্যে কতক ‘উমরার উদ্দেশে, কতক হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ উভয়ের উদ্দেশে এবং কতক শুধু হাজ্জের উদ্দেশে ইহরাম বাঁধল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেবল হাজ্জের ইহরাম বাঁধলেন। যারা ‘উমরার জন্য ইহরাম বেঁধেছিল, তারা (‘উমরাহ্ সমাপনান্তে) ইহরাম খুলে ফেলল। আর যারা শুধু হাজ্জের, আর যারা হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ উভয়ের ইহরাম বেঁধেছিল, তারা কুরবানী দিবসের পূর্ব পর্যন্ত ইহরামমুক্ত হতে পারেনি। (ই.ফা. ২৭৮৪, ই.সে. ২৭৮২) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা একমাত্র হাজ্জের উদ্দেশে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা ‘সারিফ’ নামক স্থানে বা এর কাছাকাছি পৌঁছলে আমার মাসিক ঋতু শুরু হয়ে যায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট এলেন এবং আমি তখন কাঁদছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি হায়য হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহ্ তা‘আলা এটা আদাম (আঃ)-এর কন্যাদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন। অতএব তুমি হাজ্জের যাবতীয় অনুষ্ঠান পূর্ণ কর, শুধু (হায়যকাল শেষ হবার পর) গোসল না করা পর্যন্ত বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ করবে না। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহধর্মিণীগণের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী করেন। (ই.ফা. ২৭৮৫, ই.সে. ২৭৮৩) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা কেবল হাজ্জের উদ্দেশে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা যখন ‘সারিফ’ নামক স্থানে পৌঁছলাম, আমার মাসিক ঋতু শুরু হয়ে গেল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট এলেন এবং আমি তখন কাঁদছিলাম। তিনি বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আমি যদি এ বছর হাজ্জ করতে না আসতাম! তিনি বললেন, কী হয়েছে তোমার? সম্ভবতঃ তুমি ঋতুবতী হয়েছো? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা এটি আদাম (আঃ)-এর কন্যাদের জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তুমি হাজ্জ পালনকারীগণ যা করে, তাই কর কিন্তু পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ করো না। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি যখন মাক্কায় পৌঁছলাম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-তাঁর সাহাবীগণদের বললেন, তোমরা ‘উমরার জন্য ইহরাম বাঁধ। যাদের সাথে হাদী বা কুরবানীর পশু ছিল, তারা ব্যতীত সকলে ‘উমরার ইহরাম বাঁধল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বকর (রাঃ), ‘উমার (রাঃ) ও অন্যান্য স্বচ্ছল লোকদের সাথে কুরবানীর পশু (হাদী) ছিল, তারা (ইতোপূর্বে যারা ইহরাম খুলে ফেলেছিল, মিনার দিকে) অগ্রসর হবার প্রাক্কালে পুনরায় (হাজ্জের) ইহরাম বাঁধল। তিনি বলেন, আমি কুরবানীর দিন পবিত্র হলাম এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশে ত্বওয়াফে ইফাযাহ্ [১৮] করলাম। আমাদের জন্য গরুর গোশ্ত পাঠানো হ’ল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এগুলো কী? তারা বলল, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহধর্মিণীদের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করেছেন। যখন হাসবার রাত এলো, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! লোকেরা হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ পালন করে প্রত্যাবর্তন করছে, আর আমি শুধু হাজ্জ করে প্রত্যাবর্তন করছি। রাবী বলেন, তিনি বলেন, তিনি ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন এবং তদনুযায়ী তিনি আমাকে তার উটের পেছন দিকে বসিয়ে রওনা হলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি ছিলাম অল্প বয়স্কা এবং আমার মনে আছে যে, তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে আমার মাথা বারবার পালানের খুঁটির সাথে আঘাত খাচ্ছিল। এভাবে আমরা তান’ঈম পৌঁছলাম। সেখান থেকে আমি আবার ‘উমরার ইহরাম বাঁধলাম- যা লোকেরা ইতোপূর্বে আদায় করেছে। (ই.ফা. ২৭৮৬, ই.সে. ২৭৮৪) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) আমরা হাজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধলাম। আমরা যখন সারিফ নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন আমি ঋতুবতী হলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট এলেন- আমি তখন কাঁদছিলাম...... অবশিষ্ট বর্ণনা (পূর্ববর্তী) মাজিশূনের হাদীসের অনুরূপ। তবে হাম্মাদের বর্ণনায় নিম্নোক্ত কথার উল্লেখ নেই : “নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বকর (রাঃ), ‘উমার (রাঃ) ও অন্যান্য স্বচ্ছল লোকদের সাথে (হাদী) কুরবানীর পশু ছিল, তাঁরা অগ্রসর হওয়ার প্রাক্কালে পুনরায় (হাজ্জের) ইহরাম বাঁধলেন।” তার বর্ণনায় ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিম্নোক্ত কথার উল্লেখ নেই “আমি ছিলাম অল্প বয়স্কা এবং আমার উত্তমরূপে মনে আছে যে, তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় আমার মাথা বারংবার পালানের খুঁটির সাথে টক্কর খাচ্ছিল।” (ই.ফা. ২৭৮৭, ই.সে. ২৭৮৫) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- ইফরাদ হাজ্জ করেছিলেন। [১৯] (ই.ফা. ২৭৮৮, ই.সে. ২৭৮৬) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা হাজ্জের মাসসমূহে, হাজ্জের সময় ও স্থানসমূহে (অথবা হাজ্জের সময়কার বিধি-নিষেধ অনুসরণ করে) এবং হাজ্জের রাতসমূহে ইহরাম বেঁধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা যখন সারিফ নামক স্থানে যাত্রা বিরতি করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, তোমাদের মধ্যে যার সাথে কুরবানীর পশু নেই, সে যদি চায় তবে সে এই হাজ্জকে ‘উমরায় পরিবর্তিত করে নিক। আর যার সাথে কুরবানীর পশু (হাদী) আছে, সে যেন এরূপ না করে। তাদের মাঝে কিছু সংখ্যক এটা গ্রহণ করল এবং কিছু সংখ্যক- যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল না, তারা ‘উমরাহ্ করল না। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর স্বচ্ছল সাহাবীগণের সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট প্রবেশ করলেন এবং আমি তখন কাঁদছিলাম। তিনি বললেন, তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, আমি আপনার সাহাবীগণের উদ্দেশে আপনার কথাবার্তা শুনেছি যে, আপনি ‘উমরাহ্ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমি তা করতে পারছি না। তিনি বললেন, কেন, তোমার কী হয়েছে? আমি বললাম, আমি সলাত আদায় করতে পারছি না। আমার ঋতু দেখা দিয়েছে। তিনি বললেন, এতে তোমার কোন ক্ষতি নেই, তুমি হাজ্জের অনুষ্ঠানাদি পালন কর। আশা করি আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে ‘উমরাহ্ পালনের সুযোগ দেবেন। তুমি আদাম (আঃ)-এর কন্যাদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি তাদের জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তোমার জন্যও তা নির্ধারণ করেছেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, অতএব আমি হাজ্জের জন্য বের হলাম। অবশেষে মিনায় অবতরণ করলাম এবং পাক হয়ে গেলাম। এরপর আমি বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাস্সাবে অবতরণ করলেন এবং ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ)-কে ডেকে বললেন, তোমার বোনকে হারাম সীমার বাইরে নিয়ে যাও, সে (সেখানে গিয়ে ) ‘উমরার জন্য ইহরাম বাঁধবে এবং বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করবে। আমি তোমাদের জন্য এখানে অপেক্ষা করব। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, আমরা রওনা হয়ে (তান’ঈম) গেলাম এবং (সেখানে) ইহরাম বাঁধলাম, অতঃপর বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ করলাম এবং সাফা-মারওয়াহ্ সা’ঈ করলাম। অতঃপর আমরা মধ্যরাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ফিরে এলাম। তিনি স্বস্থানেই ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি ‘উমরাহ্ সম্পাদন করে নিয়েছো? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি তাঁর সাহাবীগণের রওনা হওয়ার জন্য ঘোষণা দিলেন। তিনি রওনা হয়ে বায়তুল্লাহ পৌঁছলেন এবং ফজরের সলাতের পূর্বে তাঁর ত্বওয়াফ করলেন, অতঃপর মাদীনার উদ্দেশে রওনা হলেন। (ই.ফা. ২৭৮৯, ই.সে. ২৭৮৭) উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের কেউ ইফরাদ হাজ্জের, কেউ ক্বিরান হাজ্জের এবং তামাত্তু’ হাজ্জের ইহরাম বাঁধল। (ই.ফা. ২৭৯০, ই.সে. ২৭৮৮) ক্বাসিম ইবনু মুহামাদ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) হাজ্জ করার জন্য এসেছিলেন। (ই.ফা. ২৭৯১, ই.সে. ২৭৮৯) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) যিল ক্ব‘দাহ্ মাসের পাঁচদিন অবশিষ্ট থাকতে আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে রওনা হলাম। হাজ্জ পালন ছাড়া আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা মাক্কার নিকটবর্তী হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিলেন, যার সাথে কুরবানীর পশু নেই, সে বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সা’ঈ করার পর ইহরাম ভঙ্গ করবে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, কুরবানীর দিন কেউ আমদের জন্য গরুর গোশ্ত নিয়ে এলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ কী? বলা হল, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহধর্মিণীদের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী করেছেন। ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) বলেন, আমি এ হাদীস ক্বাসিম ইবনু মুহাম্মাদের নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! তিনি (‘আম্রাহ্) তোমার নিকট হাদীসটি সঠিকভাবে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ২৭৯২, ই.সে. ২৭৯০) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু আবূ ‘উমার (রাঃ) এ সানাদেও পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২৭৯৩, ই.সে. ২৭৯১) উম্মুল মু’মিনীন [‘আয়িশাহ্ (রাঃ)] তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! লোকেরা দু’টি ‘ইবাদাতসহ (হাজ্জ ও ‘উমরাহ্) প্রত্যাবর্তন করছে, আর আমি একটি মাত্র ‘ইবাদাতসহ (হাজ্জ) ফিরে যাচ্ছি। তিনি বলেন, অপেক্ষা কর। তুমি পবিত্র হয়ে যাবার পর তান‘ঈম চলে যাও এবং সেখানে ইহরাম বাঁধ, অতঃপর অমুক অমুক সময় আমাদের সঙ্গে মিলিত হও। রাবী বলেন, আমার মনে হয় তিনি ভোরবেলার কথা বলেছেন এবং তুমি তোমার পরিশ্রম অথবা খরচ অনুযায়ী (এ ‘উমরার সওয়াব পাবে)। (ই.ফা. ২৭৯৪, ই.সে. ২৭৯২) উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হে আল্লাহর রসূল! লোকেরা দু’টি ‘ইবাদাতের সাওয়াব নিয়ে ফিরে যাচ্ছে... অতঃপর অবশিষ্ট হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২৭৯৫, ই.সে. ২৭৯৩) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, শুধুমাত্র হাজ্জের উদ্দেশেই আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা (মাক্কায়) পৌছে বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করলাম। যারা কুরবানীর পশু (হাদী) সাথে আনেনি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে ইহরাম খোলার নির্দেশ দিলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, অতএব যারা কুরবানীর পশু সঙ্গে আনেনি, তারা ইহরাম ছেড়ে দিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণীগণ সাথে কুরবানীর পশু আনেননি। তাই তারাও ইহরাম খুলে ফেললেন। ‘আয়িশা (রাঃ) আরও বললেন, আমার মাসিক দেখা দিল এবং বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করতে পারলাম না। হাসবায় অবস্থানের রাতে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! লোকেরা হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ করে ফিরে যাচ্ছে, আর আমি শুধু হাজ্জ করে ফিরছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমরা যে রাতে মাক্কায় পৌছেছি, তখন তুমি কি বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করনি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাহলে তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে তান‘ঈম যাও এবং (সেখানে) ‘উমরার ইহরাম বাঁধ। অতঃপর তুমি অমুক অমুক জায়গায় (আমাদের সাথে) মিলিত হতে পারবে। উম্মুল মু’মিনীন সফিয়্যাহ্ (রাঃ) বললেন, মনে হয় আমি আপনাদের আটকিয়ে রাখব। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, দূর হতভাগী, তোমার সর্বনাশ হোক! তুমি কুরবানীর দিন বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করেছো? তিনি বললেন, হ্যাঁ, করেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে কোন অসুবিধা নেই, তুমি অগ্রসর হও। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে সাক্ষাৎ করলেন, তিনি মাক্কার উচ্চভূমি দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন। আর আমি তা অতিক্রম করে নিম্নভূমিতে নামছিলাম। অথবা তিনি উচ্চভূমি অতিক্রম করে নিম্নভূমির দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন, আর আমি নিম্নভূমি থেকে উচ্চভূমির দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। ইসহাক্বের বর্ণনায় আছে, ‘আয়িশা (রাঃ) এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উভয়ে নিম্নভূমি অতিক্রম করছিলেন। (ই.ফা. ২৭৯৬, ই.সে. ২৭৯৪) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে তালবিয়াহ্ পাঠ করতে করতে রওনা হলাম। আমরা সুস্পষ্টভাবে হাজ্জ বা ‘উমরাহ্ কোনটিরই উল্লেখ করিনি।......অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত মানসূর (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ২৭৯৭, ই.সে. ২৭৯৫) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিলহাজ্জ মাসের ৪র্থ অথবা ৫ম দিনে (মাক্কায়) এলেন। এরপর রাগান্বিত অবস্থায় আমার কাছে প্রবেশ করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! কে আপনাকে রাগান্বিত করল, আল্লাহ তাকে আগুনে নিক্ষেপ করুন? তিনি বললেন, তুমি কি জান না- আমি লোকদের একটি কাজের নির্দেশ দিয়েছিলাম অথচ তারা ইতস্ততঃ করছে? রাবী হাকাম বলেন, আমার মনে হয় তিনি বলেছেন, যেন তারা ইতস্ততঃ করছে। আমি যদি পূর্বেই জানতাম, যে বিষয়ে আমি পরে সম্মুখীন হয়েছি, তবে আমি সাথে করে কুরবানীর পশু আনতাম না; বরং পরে তা কিনে নিতাম এবং আমিও ইহরাম খুলে ফেলতাম যেমন অন্যরা ইহরাম খুলেছে। (ই.ফা. ২৭৯৮, ই.সে. ২৭৯৬) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিলহাজ্জ মাসের চার অথবা পাঁচ তারিখে (মাক্কায়) পৌঁছলেন......পূর্বোক্ত গুন্‌দার-এর হাদীসের অনুরূপ। কিন্তু এ সানাদে তিনি (রাবী) হাকামের উক্তিতে এ সন্দেহ, “তারা ইতস্ততঃ করেছে” উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ২৭৯৯, ই.সে. ২৭৯৭) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি ‘উমরার ইহরাম বাঁধলেন, এরপর (মাক্কায়) পৌঁছলেন এবং বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ না করতেই ঋতুবতী হলেন। এরপর তিনি হাজ্জের ইহরাম বাঁধলেন এবং এর যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করলেন (ত্বওয়াফ ব্যতীত)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনায় অগ্রসর হবার দিন তাকে বললেন, তোমার (একবারের) ত্বওয়াফই তোমার হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ উভয়ের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তিনি তাতে তৃপ্ত হলেন না। তাই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ‘আবদুর রহমানের সাথে তান‘ঈম পাঠালেন। অতএব তিনি হাজ্জের পর (এখান থেকে) ইহরাম বেঁধে ‘উমরাহ্ করলেন। (ই.ফা. ২৮০০, ই.সে. ২৭৯৮) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি সারিফ নামক স্থানে ঋতুবতী হলেন এবং ‘আরাফাহ্ দিবসে পবিত্র হলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তোমার সাফা-মারওয়াহ্ পাহাড়দ্বয়ের মধ্যকার সা’ঈ তোমার হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ উভয়টির জন্য যথেষ্ট। (ই.ফা. ২৮০১, ই.সে. ২৭৯৯) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! লোকেরা দু’টি সাওয়াবসহ প্রত্যাবর্তন করবে আর আমি কি মাত্র একটি সাওয়াব নিয়ে ফিরে যাব? তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ)-কে নির্দেশ দিলেন- তাকে নিয়ে তান’ঈম যাওয়ার জন্য। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, তিনি তার উটের পিঠে আমাকে তার পিছনে বসিয়ে রওনা হলেন। আমি আমার ওড়না উঠাচ্ছিলাম এবং তা ঘাড় থেকে সরিয়ে রাখছিলাম। তিনি আমার পায়ে আঘাত করছিলেন- যেমন উটকে আঘাত করেন। আমি তাকে বললাম, আপনি এখানে কাউকে দেখতে পাচ্ছেন কি? তিনি বলেন, আমি (তান‘ঈম পৌঁছে) ‘উমরার ইহরাম বাঁধলাম, অতঃপর (মাক্কায়) ফিরে এসে (ত্বওয়াফ শেষে) হাস্‌বাহ্ নামক স্থানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মিলিত হলাম। (ই.ফা. ২৮০২, ই.সে. ২৮০০) ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাক্‌র (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নির্দেশ দিলেন ‘আয়িশা (রাঃ)-কে (বাহনে) তার পিছনে বসিয়ে তান‘ঈম নিয়ে যাবার জন্য- যাতে তিনি তাঁকে (তান‘ঈম থেকে) ‘উমরাহ্ করান। (ই.ফা. ২৮০৩, ই.সে. ২৮০১) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা ইফরাদ হাজ্জের ইহরাম বেঁধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে (মাক্কার দিকে) অগ্রসর হলাম আর ‘আয়িশা (রাঃ) ‘উমরার ইহরাম বেঁধে আসলেন। আমরা যখন ‘সারিফ’ নামক স্থানে পৌঁছলাম, ‘আয়িশা (রাঃ)-এর মাসিক ঋতু শুরু হ’ল। অবশেষে আমরা মাক্কায় পৌঁছে কা‘বাহ্ ঘর ত্বওয়াফ করলাম এবং সাফা-মারওয়াহ্ পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সা‘ঈ করলাম। আমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল না- রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের ইহরাম খুলে ফেলার নির্দেশ দিলেন। আমরা বললাম, কী প্রকারে ইহরাম খোলা হবে? তিনি বললেন, “সম্পূর্ণরূপে ইহরামমুক্ত হওয়া।” অতএব আমরা স্ত্রী যৌন সঙ্গম করলাম, সুগন্ধি ব্যবহার করলাম এবং সাধারণ পোশাক পরিধান করলাম। তখন ‘আরাফাহ্ দিবস ও আমাদের মাঝে আর মাত্র চার দিনের ব্যবধান ছিল। অতঃপর তালবিয়াহ্ দিবসে (৮ই যিলহাজ্জ) আমরা পুনরায় ইহরাম বাঁধলাম। এদিকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে ক্রন্দনরত অবস্থায় পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কী হয়েছে? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, ব্যাপার এই যে, আমার হায়য দেখা দিয়েছে। লোকেরা ইহরাম খুলেছে কিন্তু আমি ইহরামমুক্ত হতে পারিনি এবং বায়তুল্লাহ্‌রও ত্বওয়াফ করতে পারিনি, আর এখন লোকেরা হাজ্জের উদ্দেশে রওনা হচ্ছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটা এমন একটি ব্যাপার যা আল্লাহ তা’আলা আদাম (আঃ)-এর কন্যা সন্তানদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন। অতএব তুমি গোসল কর এবং হাজ্জের ইহরাম বাঁধ। তিনি তাই করলেন এবং হাজ্জের স্থানসমূহে অবস্থান করলেন। অতঃপর তিনি পবিত্র হলেন, কা‘বাহ্ ঘর ত্বওয়াফ করলেন এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করলেন। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এখন তোমার হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ উভয়টিই পূর্ণ হ’ল। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার অবস্থা এই যে, হাজ্জ না করা পর্যন্ত আমি (‘উমরার জন্য) বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করতে পারিনি, কিন্তু হাজ্জ আদায় করে নিয়েছি। তিনি বললেন, হে ‘আবদুর রহমান! তাকে নিয়ে চলে যাও এবং তান‘ঈম থেকে তাকে ‘উমরাহ্ করাও। এটা ছিল হাসবার রাতের ঘটনা। (ই.ফা. ২৮০৪, ই.সে. ২৮০২) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হলেন, তখন তিনি কাঁদছিলেন। হাদীসের অবশিষ্ট অংশ পূর্বোক্ত লায়স (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ। অবশ্য উক্ত হাদীসের প্রথমাংশ এ হাদীসে বর্ণনা করা হয়নি। (ই.ফা. ২৮০৫, ই.সে. ২৮০৩) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে হাজ্জ উপলক্ষে ‘আয়িশা (রাঃ) ‘উমরার ইহরাম বাঁধলেন... অবশিষ্ট অংশ পূর্বোক্ত লায়স (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ। তবে এ বর্ণনায় আরও আছে- জাবির (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন নমনীয় স্বভাবের। অতএব ‘আয়িশা (রাঃ) যখনই কোন কিছুর আবদার ধরতেন, তিনি সে আবদার রক্ষা করতেন। তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে ‘আবদুর রহমানের সাথে পাঠালেন এবং তিনি তান‘ঈম থেকে ‘উমরার ইহরাম বাঁধলেন। (অধঃস্তন রাবী) মাত্বার (রহঃ) বলেন, আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেছেনঃ ‘আয়িশা (রাঃ) যখনই হাজ্জ করতেন তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যেভাবে হাজ্জ করেছেন তদানুরূপ করতেন। (ই.ফা. ২৮০৬, ই.সে. ২৮০৪) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে হাজ্জের ইহরাম বেঁধে রওনা হলাম। আমাদের সাথে মহিলাগণ এবং শিশুরাও ছিল। আমরা মাক্কায় পৌঁছে বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করলাম এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বললেন, যার সাথে কুরবানীর পশু নেই, সে যেন ইহরাম খুলে ফেলে। আমরা বললাম, কী ধরনের ইহরাম ভঙ্গ করব? তিনি বললেন, সম্পূর্ণরূপে ইহরাম ভঙ্গ কর। রাবী বলেন, অতএব আমরা আমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন করলাম, (সাধারণ) পোশাক পরলাম এবং সুগন্ধি মাখলাম। তালবিয়ার দিন আমরা হাজ্জের ইহরাম বাঁধলাম এবং পূর্বেকার ত্বওয়াফ ও সা‘ঈ আমাদের জন্য যথেষ্ট ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতিটি কুরবানীর গরু এবং উটে সাতজন করে শারীক হবার জন্য আমাদের নির্দেশ দিলেন। (ই.ফা. ২৮০৭, ই.সে. ২৮০৫) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আমরা ইহরামমুক্ত হবার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে (পুনরায়) ইহরাম বাঁধার নির্দেশ দিলেন- যখন আমরা মিনার উদ্দেশে রওনা হলাম। অতএব আমরা আল আব্‌ত্বাহ নামক স্থান থেকে ইহরাম বাঁধলাম। (ই.ফা. ২৮০৮, ই.সে. ২৮০৬) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগণ একবার মাত্র সাফা-মারওয়াহ্ পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সা‘ঈ করেছেন। মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাক্‌র-এর বর্ণনায় আছে, “তাঁর প্রথমবারের ত্বওয়াফ।” (ই.ফা. ২৮০৯, ই.সে. ২৮০৭) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণ কেবল হাজ্জের ইহরামই বাঁধলাম। রাবী ‘আত্বা (রহঃ) বলেছেন, জাবির (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চার যিলহাজ্জের ভোরে (মাক্কায়) পৌঁছে আমাদেরকে ইহরাম খোলার নির্দেশ দিলেন। অধঃস্তন রাবী মাত্বারের বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা ইহরামমুক্ত হও এবং স্ত্রীদের কাছে যাও। কিন্তু তাঁর এ নির্দেশ বাধ্যতামূলক ছিল না, বরং তাদেরকে স্ত্রী সহবাসের অনুমতি দেয়া হয়েছিল মাত্র। জাবির (রাঃ) বলেন, ‘আরাফাহ্ দিবসের আর পাঁচদিন মাত্র বাকী। অতএব আমরা এমন অবস্থায় ‘আরাফায় পৌঁছলাম যে, আমরা যেন এইমাত্র স্ত্রী সঙ্গম করেছি। ‘আত্বা (রহঃ) বলেন, জাবির (রাঃ) তার হাত নেড়ে কথাগুলো বলছিলেন এবং আমি যেন তার হাতের নড়াচড়া দেখতে পাচ্ছি। জাবির (রাঃ) বলেন, ইত্যবসরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন এবং বললেন, তোমরা নিশ্চিত জান- আমি তোমাদের তুলনায় আল্লাহকে অধিক ভয় করি, তোমাদের চেয়ে অধিক সত্যবাদী এবং পুণ্যবান। আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকলে আমি অবশ্যই ইহরাম ভঙ্গ করতাম যেমন তোমরা ভঙ্গ করেছো। আমাকে কী করতে হবে তা পূর্বেই জানতে পারলে আমি সাথে করে কুরবানীর পশু আনতাম না, অতএব তোমরা হালাল হও (ইহরাম ভঙ্গ কর)। ‘আত্বা (রহঃ) বলেছেন, জাবির (রাঃ) বলেনঃ অতএব আমরা হালাল হলাম, তাঁর কথা শুনলাম এবং তাঁর আনুগত্য করলাম। জাবির (রাঃ) আরও বলেন, ‘আলী (রাঃ) (ইয়ামানবাসীদের থেকে আদায়কৃত) খারাজ নিয়ে উপস্থিত হলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি কোন্ ধরনের ইহরাম বেঁধেছো? তিনি বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে ধরনের ইহরাম বেঁধেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি কুরবানী কর এবং ইহরাম অবস্থায় থাক। জাবির (রাঃ) বলেন, ‘আলী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য কুরবানীর পশু এনেছিলেন। সুরাক্বাহ্ ইবনু মালিক জু‘শুম (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এটা কি শুধু এ বছরের জন্য, না সব সমযের জন্য? তিনি বললেন, সর্বকালের জন্য। (ই.ফা. ২৮১০, ই.সে. ২৮০৮) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে হাজ্জের ইহরাম বাঁধলাম। আমরা মাক্কায় পৌঁছলে তিনি আমাদেরকে হালাল হওয়ার এবং এ ইহরামকে ‘উমরার ইহরামে পরিবর্তন করার নির্দেশ দিলেন। আমাদের জন্য তাঁর এ নির্দেশ কঠোর মনে হ’ল এবং আমাদের মনোকষ্ট হ’ল। এ খবর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছল। আমাদের জানা নেই তিনি কি ওয়াহীর মাধ্যমে এ খবর পেয়েছেন, না কেউ তাঁর কাছে এ কথা পৌঁছিয়েছে? তিনি বললেন, হে জনগণ! তোমরা হালাল (ইহরামমুক্ত) হও। আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকলে আমিও তোমাদের অনুরূপ করতাম। জাবির (রাঃ) বলেন, অতএব আমরা ইহরামমুক্ত হলাম, এমনকি স্ত্রী সঙ্গম এবং স্বাভাবিক অবস্থায় সাধারণত যা করা হয়, তাই করলাম। অতঃপর তালবিয়ার দিন (৮ যিলহাজ্জ) আমরা মক্কা ত্যাগ করলাম (মিনা ও ‘আরাফার উদ্দেশে) এবং হাজ্জের ইহরাম বাঁধলাম। (ই.ফা. ২৮১১, ই.সে. ২৮০৯) মূসা ইবনু নাফি‘ (রহঃ) আমি ‘উমরাসহ তামাত্তু‘ হাজ্জের ইহরাম বেঁধে তালবিয়াহ্ দিবসের চারদিন পূর্বে (৪ যিলহাজ্জ) মাক্কায় পৌঁছলাম। লোকেরা বলল, এখন তো আপনার হাজ্জ মাক্কাবাসীদের অনুরূপ হাজ্জ হয়ে যাবে। অতএব আমি ‘আত্বা ইবনু আবূ রাবাহ-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তার কাছে মাসাআলাহ্ জিজ্ঞেস করলাম। ‘আত্বা (রহঃ) বললেন, জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল আনসারী (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে হাজ্জ করেছেন- যে বছর তিনি সঙ্গে করে কুরবানীর পশু নিয়েছিলেন এবং তারা কেবল হাজ্জের (ইফরাদ হাজ্জের) ইহরাম বেঁধেছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা ইহরাম খুলে ফেল, বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ কর, সাফা-মারওয়াহ্ পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সা‘ঈ কর, মাথার চুল ছাঁট এবং ইহরামমুক্ত অবস্থায় থাক। যখন তালবিয়ার দিন আসবে- তখন পুনরায় হাজ্জের ইহরাম বাঁধ এবং এটা তামাত্তু‘ হাজ্জের ইহরামে পরিণত কর। তারা বললেন, কিভাবে আমরা তা তামাত্তু‘তে পরিণত করব, অথচ ইতোপূর্বে আমরা হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছি? তিনি বললেন, আমি তোমাদের যে নির্দেশ দিচ্ছি, তাই কর। কারণ আমি যদি সাথে করে কুরবানীর পশু না আনতাম তবে তোমাদের যে নির্দেশ দিচ্ছি, আমিও তদ্রূপ করতাম। কিন্তু হাদী যথাস্থানে কুরবানী না করা পর্যন্ত আমার জন্য ইহরাম খোলার সুযোগ নেই। অতএব তারা তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করলেন। (ই.ফা. ২৮১২, ই.সে. ২৮১০) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা হাজ্জের ইহরাম বেঁধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে (মাক্কায়) পৌঁছলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে তা ‘উমরার ইহরামে পরিবর্তন করার এবং (‘উমরাহ্ পালনের পর) ইহরামমুক্ত হবার নির্দেশ দিলেন। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে কুরবানীর পশু থাকায় তিনি নিজের হাজ্জের ইহরামকে ‘উমরার ইহরামে পরিবর্তন করতে পারেননি। (ই.ফা. ২৮১৩, ই.সে. ২৮১১)

【18】

হাজ্জ ‘উমরাতে উপভোগ করা প্রসঙ্গে

আবূ নায্‌রাহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তামাত্তু’ হাজ্জ করার নির্দেশ দিতেন এবং ইবনু যুবায়র (রাঃ) তামাত্তু’ হাজ্জ করতে নিষেধ করতেন। আমি বিষয়টি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)- এর সামনে পেশ করলাম। তিনি বললেন, এ ঘটনাটি আমার সামনেই ঘটেছে। আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে তামাত্তু’ হাজ্জ করেছি। ‘উমার (রাঃ) খলীফা নির্বাচিত হওয়ার পর বললেন, আল্লাহ তা’আলা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর জন্য যে জিনিস ইচ্ছা এবং যে কারণে ইচ্ছা হালাল করেন এবং কুরআন নাযিল হওয়া সমাপ্ত হয়েছে। অতএব তোমরা আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশ্যে হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ সম্পাদন কর- যেভাবে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন এবং যেসব নারীকে তোমরা মুত্‌’আর (উপভোগ করার) মাধ্যমে বিবাহ করেছো- তাদের সঠিক বিবাহ বন্ধনে নিয়ে নাও। আমার নিকট মুত’আর শর্তে বিবাহকারী কোন পুরুষ লোক এলে আমি অবশ্যই তাকে রজম (প্রস্তরাঘাতে হত্যা) করব। (ই. ফা. ২৮১৪, ই.সে. ২৮১২) ক্বাতাদাহ্‌ (রাঃ)- এর সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এ বর্ণনায় আরও আছে, ‘উমার (রাঃ) বলেন, “তোমাদের হাজ্জকে ‘উমরাহ্‌ থেকে পৃথক কর। কারণ এতে তোমাদের হাজ্জও পূর্ণাঙ্গ হবে এবং ‘উমরাও পূর্ণাঙ্গ হবে”। (ই. ফা. ২৮১৫, ই.সে. ২৮১৩) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে (মাক্কায়) পৌঁছলাম হাজ্জের জন্য তালবিয়াহ্‌ উচ্চারণ করতে করতে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ইহরামকে ‘উমরার ইহরামে পরিবর্তন করার নির্দেশ দিলেন। (ই. ফা. ২৮১৬, ই.সে. ২৮১৪)

【19】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর হাজ্জের বিবরণ

জা’ফার ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে তিনি বলেন, আমরা জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)- এর কাছে গেলাম। তিনি সকলের পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। অবশেষে আমার পরিচয় জানতে চাইলেন। আমি বললাম, আমি মুহাম্মাদ ইবনু ‘আলী ইবনু হুসায়ন। অতএব তিনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে আমার মাথার উপর রাখলেন। তিনি আমার জামার উপর দিকের বোতাম খুললেন তারপর নিচের বোতাম খুললেন। অতঃপর তার হাত আমার বুকের মাঝে রাখলেন। আমি তখন যুবক ছিলাম। তিনি বললেন, হে ভ্রাতুষ্পুত্র! তোমাকে স্বাগত জানাই, তুমি যা জানতে চাও, জিজ্ঞেস কর। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তখন তিনি (বার্ধক্যজনিত কারণে) দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। ইতোমধ্যে সলাতের ওয়াক্ত হয়ে গেল। তিনি নিজেকে একটি চাদর আবৃত করে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি যখনই চাদরের প্রান্ত নিজ কাঁধের উপর রাখতেন – তা (আকারে) ছোট হবার কারণে নীচে পড়ে যেত। তার আরেকটি বড় চাদর তার পাশেই আনলায় রাখা ছিল। তিনি আমাদের নিয়ে সলাতের ইমামত করলেন। অতঃপর আমি বললাম, আপনি আমাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর (বিদায়) হাজ্জ সম্পর্কে অবহিত করুন। জাবির (রাঃ) স্বহস্তে নয় সংখ্যার প্রতি ইঙ্গিত করে বললেনঃ রসূলুল্লাহ নয় বছর (মদীনায়) অবস্থান করেন এবং এ সময়ের মধ্যে হাজ্জ করেননি। অতঃপর ১০ম বর্ষে লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেয়া হ’ল যে , রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এ বছর হাজ্জে যাবেন। সুতরাং মাদীনায় বহু লোকের আগমন হল। তাদের প্রত্যেকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর অনুসরণ করতে এবং তাঁর অনুরূপ ‘আমল করতে আগ্রহী ছিল। আমরা তাঁর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা যখন যুল হুলায়ফাহ্ নামক স্থানে পৌঁছলাম- আসমা বিনতু ‘উমায়স (রাঃ) মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বাক্‌রকে প্রসব করলেন। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট লোক পাঠিয়ে জানতে চাইলেন – এখন আমি কী করব? তিনি বললেন, তুমি গোসল কর, একখণ্ড কাপড় দিয়ে পট্টি বেঁধে নাও এবং ইহরামের পোশাক পরিধান কর। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে (ইহরামের দু’ রাক’আত) সলাত আদায় করলেন। অতঃপর ‘ক্বাসওয়া ‘ নামক উষ্ট্রীতে আরোহণ করলেন। অতঃপর বায়দা নামক স্থানে তাঁর উষ্ট্রী যখন তাঁকে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াল – আমি সামনের দিকে যতদূর দৃষ্টি যায়, তাকিয়ে দেখলাম লোকে লোকারণ্য- কতক সওয়ারীতে, কতক পদব্রজে অগ্রসর হচ্ছে। ডানদিকে, বাঁদিকে এবং পিছনেও একই দৃশ্য। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝখানে ছিলেন এবং তাঁর উপর কুরআন নাযিল হচ্ছিল। একমাত্র তিনিই এর আসল তাৎপর্য জানেন এবং তিনি যা করতেন, আমরাও তাই করতাম। তিনি আল্লাহর তাওহীদ সম্বলিত এ তালবিয়াহ্‌ পাঠ করলেনঃ (আরবি) অর্থঃ ‘‘আমি তোমার দরবারে হাযির আছি, হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে হাযির, আমি তোমার দরবারে হাযির, তোমার কোন শারীক নেই, আমি তোমার দরবারে উপস্থিত। নিশ্চিত সমস্ত প্রশংসা, নি’আমাত তোমারই এবং সমগ্র রাজত্ব তোমার, তোমার কোন শারীক নেই”। লোকেরাও উপরোক্ত তালবিয়াহ্‌ পাঠ করল – যা (আজকাল) পাঠ করা হয়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর থেকে বেশি কিছু বলেননি। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপরোক্ত তালবিয়াহ্‌ পাঠ করতে থাকলেন। জাবির (রাঃ) বলেন, আমরা হাজ্জ ছাড়া অন্য কিছুর নিয়ত করিনি, আমরা ‘উমরার কথা জানতাম না। অবশেষে আমরা যখন তাঁর সঙ্গে বায়তুল্লাহ্‌য় পৌঁছলাম- তিনি রুকন (হাজারে আসওয়াদ) স্পর্শ করলেন, অতঃপর সাতবার কা’বাহ্‌ ঘর ত্বওয়াফ করলেন- তিনবার দ্রুতগতিতে এবং চারবার স্বাভাবিক গতিতে। এরপর তিনি মাক্বামে ইব্‌রাহীমে পৌঁছে এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ (আরবি) অর্থঃ “তোমরা ইব্‌রাহীমের দাঁড়াবার স্থানকে সলাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর”- (সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্‌ ২ : ১২৫)। তিনি মাক্বামে ইব্‌রাহীমকে তাঁর ও বায়তুল্লাহর মাঝখানে রেখে (দু’ রাক’আত সলাত আদায় করলেন)। (জা’ফার বলেন) আমার পিতা (মুহাম্মাদ) বলতেন, আমি যতদূর জানি, তিনি (জাবির) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি দু’ রাক’আত সলাতে সূরাহ্‌ ‘কুল্‌ হুওআল্ল-হু আহাদ’ ও ‘কুল্‌ ইয়া আইয়ুহাল কা-ফিরূন’ পাঠ করেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজারে আসওয়াদের কাছে প্রত্যাবর্তন করলেন এবং তাতে চুমু খেলেন। অতঃপর তিনি দরজা দিয়ে সাফা পাহাড়ের দিকে বের হলেন এবং সাফার নিকটবর্তী হয়ে তিলাওয়াত করলেনঃ (আরবি) অর্থঃ “নিশ্চয়ই সাফা-মারওয়াহ্‌ পাহাড়দ্বয় আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম”- (সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্‌ ২ : ১৫৮) এবং আরো বললেন- আল্লাহ তা’আলা যে পাহাড়ের উল্লেখ করে আরম্ভ করেছেন, আমিও তা দিয়ে আরম্ভ করব। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফা পাহাড় থেকে শুরু করলেন, অতঃপর এতটা উপরে আরোহণ করলেন যে, বায়তুল্লাহ দেখতে পেলেন। তিনি ক্বিবলামুখী হলেন, আল্লাহর একত্ব ও মাহাত্ম্য ঘোষণা করলেন এবং বললেনঃ (আরবি) অর্থঃ ‘আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শারীক নেই। তাঁর জন্য রাজত্ব এবং তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা, তিনি প্রতিটি জিনিসের উপর শক্তিমান। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি এক, তিনি নিজের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন”। তিনি এ দু’আ পড়লেন এবং তিনি অনুরূপ তিনবার বলেছেন। অতঃপর তিনি নেমে মারওয়াহ পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হলেন- যতক্ষণ না তাঁর পা মুবারক উপত্যকার সমতল ভূমিতে গিয়ে ঠেকল। তিনি দ্রুত চললেন- যতক্ষণ না উপত্যকা অতিক্রম করলেন। মারওয়াহ্‌ পাহাড়ে ঊঠার সময় হেঁটে উঠলেন, অতঃপর এখানেও তাই করলেন যা তিনি সাফা পাহাড়ে করেছিলেন। সর্বশেষ ত্বওয়াফে যখন তিনি মারওয়াহ্‌ পাহাড়ে পৌঁছলেন, তখন (লোকদের সম্বোধন করে) বললেনঃ যদি আমি আগেই ব্যাপারটি বুঝতে পারতাম, তাহলে আমি সাথে করে কুরবানীর পশু আনতাম না এবং (হাজ্জের) ইহরামকে ‘উমরায় পরিবর্তন করতাম। অতএব তোমাদের মধ্যে যার সাথে কুরবানীর পশু নেই, সে যেন ইহরাম খুলে ফেলে এবং একে ‘উমরায় পরিণত করে। এ সময় সুরাক্বাহ ইবনু মালিক ইবনু জু’শুম (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এ ব্যবস্থা কি আমাদের এ বছরের জন্য, না সর্বকালের জন্য? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ হাতের আঙ্গুলগুলো পরস্পরের ফাঁকে ঢুকালেন এবং দু’বার বললেন, ‘উমরাহ্‌ হাজ্জের মধ্যে প্রবেশ করেছে। আরও বললেন, না বরং সর্বকালের জন্য, সর্বকালের জন্য। এ সময় ‘আলী (রাঃ) ইয়ামান থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর জন্য কুরবানীর পশু নিয়ে এলেন এবং যারা ইহরাম খুলে ফেলেছে, ফাত্বিমাহ্‌ (রাঃ)-কে তাদের অন্তর্ভুক্ত দেখতে পেলেন। তিনি রঙ্গীন কাপড় পরিহিতা ছিলেন এবং চোখে সুরমা দিয়েছিলেন। ‘আলী (রাঃ) তা অপছন্দ করলেন। ফাত্বিমাহ্‌ (রাঃ) বললেন, আমার পিতা আমাকে এরূপ করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাবী বলেন, ‘আলী (রাঃ) ইরাক্বে থাকতেন, অতএব ফাতিমাহ (রাঃ) যা করেছেন তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে আমি তাকে জানালাম যে, আমি তার এ কাজ অপছন্দ করেছি। তিনি যা উল্লেখ করেছেন, সে বিষয়ে জানার জন্য আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কাছে গেলাম। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ফাত্বিমাহ্‌ সত্য বলেছে, সত্য বলেছে। তুমি হাজ্জের ইহরাম বাঁধার সময় কী বলেছিলে?‘আলী (রাঃ) বললেন, আমি বলেছি, হে আল্লাহ! আমি ইহরাম বাঁধলাম, যেরূপ ইহরাম বেঁধেছেন আপনার রসূল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার সঙ্গে হাদী (কুরবানীর পশু) আছে, অতএব তুমি ইহরাম খুলবে না। জাবির (রাঃ) বলেন, ‘আলী (রাঃ) ইয়ামান থেকে যে পশুপাল নিয়ে এসেছেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের সঙ্গে করে যে সব পশু নিয়ে এসেছিলেন, সর্বসাকুল্যে এর সংখ্যা দাঁড়ালো একশত। অতএব নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং যাদের সঙ্গে কুরবানীর পশু ছিল, তারা ব্যতীত আর সকলেই ইহরাম খুলে ফেললেন এবং চুল কাটলেন। অতঃপর যখন তালবিয়ার দিন (৮যিলহাজ্জ) আসলো, লোকেরা পুনরায় ইহরাম বাঁধলো এবং মিনার দিকে রওনা হ’ল। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওয়ার হয়ে গেলেন এবং সেখানে যুহর, ‘আস্‌র, মাগরিব, ‘ইশা ও ফাজ্‌রের সলাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন এবং নামিরাহ্‌ নামক স্থানে গিয়ে তার জন্য একটি তাঁবু খাটানোর নির্দেশ দিলেন এবং নিজেও রওনা হয়ে গেলেন। কুরায়শগণ নিঃসন্দেহ ছিল যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাশ’আরুল হারামের কাছে অবস্থান করবেন যেমন জাহিলী যুগে কুরায়শগণ করত। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে অগ্রসর হলেন, তারপরে ‘আরাফায় পৌঁছলেন এবং দেখতে পেলেন নামিরায় তাঁর জন্য তাঁবু খাটানো হয়েছে। তিনি এখানে অবতরণ করলে। অতঃপর যখন সূর্য ঢলে পড়ল, তখন তিনি তাঁর ক্বাস্‌ওয়া (নামক উষ্ট্রী)-কে প্রস্তুত করার নির্দেশ দিলেন। তার পিঠে হাওদা লাগানো হ’ল। তখন তিনি বাত্বনে ওয়াদীতে এলেন এবং লোকদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, “তোমাদের রক্ত ও তোমাদের সম্পদ তোমাদের জন্য হারাম যেমন তা হারাম তোমাদের এ দিনে, তোমাদের এ মাসে এবং তোমাদের এ শহরে।” “সাবধান! জাহিলী যুগের সকল ব্যাপার (অপসংস্কৃতি) আমার উভয় পায়ের নীচে। জাহিলী যুগের রক্তের দাবিও বাতিল হ’ল। আমি সর্বপ্রথম যে রক্তপণ বাতিল করছি, তা হল আমাদের বংশের রবী’আহ্‌ ইবনু হারিসের পুত্রের রক্তপণ। সে শিশু অবস্থায় বানূ সা’দ এ দুগ্ধপোষ্য ছিল, তখন হুযায়ল গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করে। “জাহিলী যুগের সুদও বাতিল হল। আমি প্রথম যে সুদ বাতিল করছি তা হল আমাদের বংশের ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্ত্বালিবের সুদ। তার সমস্ত সুদ বাতিল হল”। “তোমরা স্ত্রীলোকদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। তোমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসেবে গ্রহণ করেছ এবং আল্লাহর কালিমার মাধ্যমে তাদের লজ্জাস্থান নিজেদের জন্য হালাল করেছ। তাদের উপরে তোমাদের অধিকার এই যে, তারা যেন তোমাদের শয্যায় এমন কোন লোককে আশ্রয় না দেয় যাকে তোমরা অপছন্দ কর। যদি তারা এরূপ করে, তবে হালকাভাবে প্রহার কর। আর তোমাদের উপর তাদের ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণের ও পোশাক-পরিচ্ছদের হাক্ব রয়েছে। “আমি তোমাদের মাঝে এমন এক জিনিস রেখে যাচ্ছি- যা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব।” “আমার সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হলে, তখন তোমরা কী বলবে?” তারা বলল, আমরা সাক্ষ্য দিব যে, আপনি (আল্লাহর বাণী) পৌঁছিয়েছেন, আপনার হাক্ব আদায় করেছেন এবং সদুপদেশ দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তর্জনী আকাশের দিকে তুলে লোকদের ইশারা করে বললেন, “ইয়া আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক, “ তিনবার এরূপ বললেন।” অতঃপর (মুয়ায্‌যিন) আযান দিলেন ও ইক্বামাত দিলেন এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাত আদায় করলেন। এরপর ইক্বামাত দিলেন এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আস্‌রের সলাত আদায় করলেন। তিনি এ দু’ সলাতের মাঝখানে অন্য কোন সলাত আদায় করেননি। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওয়ার হয়ে মাওক্বিফ (অবস্থানস্থল) এলেন, তাঁর ক্বাস্‌ওয়া উষ্ট্রীর পেট পাথরের স্তূপের দিকে করে দিলেন এবং লোকদের একত্র হবার জায়গা সামনে রেখে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়ালেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত তিনি এভাবে উকূফ করলেন। হলদে আভা কিছু দূরীভূত হ’ল, এমনকি সূর্য গোলক সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গেল। তিনি উসামাহ্‌ (রাঃ)-কে তাঁর বাহনের পিছন দিকে বসালেন এবং ক্বাসওয়ার নাকের দড়ি সজোরে টান দিলেন- ফলে তার মাথা মাওরিক (সওয়ারী ক্লান্তি অবসাদের জন্য যাতে পা রাখে) স্পর্শ করল। তিনি ডান হাতের ইশারায় বললেন, হে জনমণ্ডলী! ধীরে সুস্থে, ধীরে সুস্থে অগ্রসর হও। যখনই তিনি বালুর স্তূপের নিকট পৌঁছতেন, ক্বাসওয়ার নাকের রশি কিছুটা ঢিল দিতেন যাতে সে উপরদিকে উঠতে পারে। এভাবে তিনি মুযদালিফায় পৌঁছলেন এবং এখানে একই আযানে ও দু’ ইক্বামাতে মাগরিব ও ‘ইশার সলাত আদায় করলেন। এ সলাতের মাঝখানে অন্য কোন নাফ্‌ল সলাত আদায় করেননি। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুয়ে পড়লেন। যাবৎ না ফাজ্‌রের ওয়াক্ত হ’ল। অতঃপর ভোর হয়ে গেলে তিনি আযান ও ইক্বামাত সহ ফাজ্‌রের সলাত আদায় করলেন। অতঃপর ক্বাসওয়ার পিঠে আরোহণ করে “মাশ’আরুল হারাম” নামক স্থানে আসলেন। এখানে তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে আল্লাহর নিকট দু’আ করলেন, তাঁর মহত্ব বর্ণনা করলেন, কালিমাহ তাওহীদ পড়লেন এবং তাঁর একত্ব ঘোষণা করলেন। দিনের আলো যথেষ্ট উজ্জ্বল না হওয়া পর্যন্ত তিনি দাঁড়িয়ে এরূপ করতে থাকলেন। সূর্যোদয়ের পূর্বে তিনি আবার রওনা করছিলেন এবং ফায্‌ল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সওয়ারীতে তাঁর পিছনে বসলেন। তিনি ছিলেন যুবক এবং তার মাথার চুল ছিল অত্যন্ত সুন্দর। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন অগ্রসর হলেন- পাশাপাশি একদল মহিলাও যাচ্ছিল। ফায্‌ল (রাঃ) তাদের দিকে তাকাতে লাগলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের হাত ফায্‌লের চেহারার উপর রাখলেন এবং তিনি তার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন এবং ফায্‌ল (রাঃ) অপরদিক দেখতে লাগলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুনরায় অন্যদিক হতে ফায্‌ল (রাঃ)-এর মুখমণ্ডলে হাত রাখলেন। তিনি আবার অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে দেখতে লাগলেন। তিনি ‘বাত্বনে মুহাস্‌সাব’ নামক স্থানে পৌঁছলেন এবং সওয়ারীর গতি কিছুটা দ্রুত করলেন। তিনি মধ্যপথে অগ্রসর হলেন- যা জামরাতুল কুবরার দিকে বেরিয়ে গেছে। তিনি বৃক্ষের নিকটের জামরায় এলেন এবং নিচের খালি জায়গায় দাঁড়িয়ে এখানে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করলেন এবং প্রত্যেকবার ‘আল্ল-হু আকবার’ বললেন। অতঃপর সেখান থেকে কুরবানীর স্থানে এলেন এবং নিজ হাতে তেষট্টিটি পশু যাবাহ করলেন। তিনি কুরবানীর পশুতে ‘আলী (রাঃ)-কেও শারীক করলেন। অতঃপর তিনি প্রতিটি পশুর গোশ্‌তের কিছু অংশ নিয়ে একত্রে রান্না করার নির্দেশ দিলেন। অতএব তাই করা হ’ল। তারা উভয়ে এ গোশ্‌ত থেকে খেলেন এবং ঝোল পান করলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওয়ার হয়ে বায়তুল্লাহ্‌র দিকে রওনা হলেন এবং মাক্কায় পৌঁছে যুহরের সলাত আদায় করলেন। অতঃপর বানূ ‘আবদুল মুত্ত্বালিব –এর লোকদের কাছে আসলেন, তারা লোকদের যামযামের পানি পান করাচ্ছিল। তিনি বললেন, হে ‘আবদুল মুত্ত্বালিবের বংশধরগণ! পানি তোল। আমি যদি আশংকা না করতাম যে, পানি পান করানোর ব্যাপারে লোকেরা তোমাদের পরাভূত করে দিবে, তবে আমি নিজেও তোমাদের সাথে পানি তুলতাম। তখন তারা তাঁকে এক বালতি পানি দিল এবং তিনি তা থেকে কিছু পান করলেন। (ই. ফা. ২৮১৭, ই.সে. ২৮১৫) জা’ফার ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)- এর নিকট এলাম এবং তাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিদায় হাজ্জ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। ...... হাদীসের অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত হাতিম ইবনু ইসমা‘ঈলের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। তবে এ বর্ণনায় আছে : আরও আবূ সাইয়্যারাহ্‌ নামক এক ব্যক্তি (জাহিলী যুগে) লোকদেরকে জীনবিহীন গাধার পিঠে করে (মুযদালিফাহ্‌ থেকে) নিয়ে যেত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মুযদালিফাহ্‌ থেকে আল-মাশ’আরুল-হারাম-এর দিকে অগ্রসর হলেন, তখন কুরায়শরা নিঃসন্দেহ ছিল যে, তিনি এখানে থামবেন এবং অবস্থান করবেন। কিন্তু তিনি আরও সামনে অগ্রসর হলেন এবং এদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ করলেন না-অবশেষে তিনি আরাফতে পৌঁছে সেখানে অবতরণ করলেন। (ই. ফা. ২৮১৮, ই.সে. ২৮১৬)

【20】

সমস্ত ‘আরাফার ময়দানই মাওক্বিফ (অবস্থানস্থল)

জাবির (রাঃ) তার এ হাদীসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আমি এখানে কুরবানী করেছি এবং মিনার গোটা এলাকা কুরবানীর স্থান। অতএব তোমরা যার যার অবস্থানে কুরবানী কর। আর আমি এখানে অবস্থান করছি এবং গোটা ‘আরাফাহ্‌ই অবস্থানস্থল (মাওক্বিফ), মুযদালিফার সবই অবস্থানস্থল এবং আমি এখানে অবস্থান করছি।” (ই. ফা. ২৮১৯, ই.সে. ২৮১৭) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাক্কায় এসে পৌঁছলেন প্রথমে হাজারে আসওয়াদের নিকট এসে তাতে চুমু খেলেন, অতঃপর ত্বওয়াফ করলেন। (ই. ফা. ২৮২০, ই.সে. ২৮১৮)

【21】

''আরাফায় অবস্থান এবং আল্লাহ তা’আলার বাণী- “অতঃপর তোমরা ফিরে যাও যেখান থেকে মানুষেরা ফিরে যায়”

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) কুরায়শগণ এবং তাদের ধর্মের অনুসারীরা (জাহিলী যুগে) মুযদালিফায় অবস্থান করত। তারা নিজেদের নামকরণ করেছিল ‘আল-হুম্‌স’। আর সমস্ত আরববাসীরা ‘আরাফাতে অবস্থান করত। যখন ইসলামের আবির্ভাব হ’ল, আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘আরাফায় অবস্থান করার ও সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের নির্দেশ দেন। আল্লাহর বাণীর তাৎপর্যও তাই :‘‘অতঃপর অন্যান্য লোক যেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে, তোমরাও সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করবে”- (সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্‌ ২ : ১৯৯)। (ই. ফা. ২৮২১, ই.সে. ২৮১৯) হিশাম (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্র তিনি (‘উরওয়াহ্‌) বলেন, আল-হুমস্‌ ব্যতীত সকল আরব উলঙ্গ অবস্থায় বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করত। কুরায়শ ও তাদের বংশধরগণকে ‘আল-হুমস্‌’ বলা হতো। আরবরা উলঙ্গ অবস্থায়ই ত্বওয়াফ করত। কিন্তু আল-হুমস্‌ তাদেরকে কাপড় দান করলে স্বতন্ত্র কথা। তাদের পুরুষরা পুরুষদের এবং মহিলারা মহিলাদের কাপড় দান করত। আল-হুমস্‌ মুযদালিফার বাইরে যেত না, আর সব লোক ‘আরাফায় চলে যেত। হিশাম বলেন, আমার পিতা (‘উরওয়াহ্‌) ‘আয়িশা (রাঃ)-এর সূত্রে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, ’আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বলেছেন, আল হুমস্‌- যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেছেনঃ “অতঃপর অন্যান্য লোক যেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে, তোমরাও সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করবে”- (সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্‌ ২ : ১৯৯)। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, লোকেরা ‘আরাফাহ্‌ থেকে প্রত্যাবর্তন করত আর আল-হুমস্‌ মুযদালিফাহ্‌ থেকে প্রত্যাবর্তন করত। তারা বলত, আমরা কেবলমাত্র হারাম এলাকা থেকেই প্রত্যাবর্তন করব। অতঃপর যখন “তোমরা প্রত্যাবর্তন কর- যেখান থেকে লোকেরা প্রত্যাবর্তন করে” আয়াত নাযিল হ’ল, তখন থেকে তারা ‘আরাফায় গেল। (ই. ফা. ২৮২২, ই.সে. ২৮২০) জুবায়র ইবনু মুত’ইম (রাঃ) আমার একটি উট হারিয়ে গেল। ‘আরাফাহ্‌ দিবসে আমি তাঁর খোঁজে বের হলাম। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে লোকদের সাথে ‘আরাফায় অবস্থানরত দেখলাম। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! ইনি তো হুমস্‌-এর অন্তর্ভুক্ত, কী ব্যাপার ইনি এখানে কেন? অথচ কুরায়শদেরকে হুমস্‌- এর মধ্যে গণ্য করা হতো। (ই. ফা. ২৮২৩, ই.সে. ২৮২১)

【22】

ইহরাম থেকে হালাল হওয়া রহিতকরণ এবং তা পূর্ণ করার নির্দেশ প্রসঙ্গে

আবূ মূসা (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলাম। তিনি বাত্বহা নামক স্থানে উট বসিয়ে যাত্রা বিরতি করছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, তুমি কি হাজ্জের নিয়্যাত করেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তুমি কী ধরনের ইহরাম বেঁধেছ? তিনি বললেন, আমি বলেছি –লাব্বায়কা, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছেন, আমিও তদ্রূপ ইহরাম বাঁধলাম। তিনি বললেন, তুমি ভালই করেছ। এখন বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ কর এবং সাফা-মারওয়ার সা’ঈ কর ,অতঃপর ইহরাম খুলে ফেল। তিনি বলেন, আমি বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করলাম, সাফা-মারওয়ার সা’ঈ করলাম, অতঃপর ক্বায়স গোত্রের এক স্ত্রীলোকের নিকট এলাম। সে আমার মাথার উকুন বেছে দিল। এরপর আমি হাজ্জের ইহরাম বাঁধলাম। আমি লোকদেরকে এভাবেই ফাতাওয়া দিতে থাকলাম ‘উমার (রাঃ)- এর খিলাফাত পর্যন্ত। এ সময় এক ব্যক্তি তাকে বলল, হে আবূ মূসা অথবা (বলল) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ক্বায়স! আপনার কিছু ফাতাওয়া আপাততঃ স্থগিত রাখুন। কারণ আমীরুল মু’মিনীন (‘উমার) আপনার পরে হাজ্জ সম্পর্কে যে নতুন বিধান প্রবর্তন করেছেন, তা আপনি জ্ঞাত নন। তখন আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, হে লোক সকল! আমি যাদের ফাতাওয়া দিয়েছি (ইহরাম খোলা সম্পর্কে) তারা যেন অপেক্ষা করে। কারণ আমীরুল মু’মিনীন অচিরেই তোমাদের নিকট আসছেন, অতএব তাঁর আনুগত্য করা তোমাদের কর্তব্য। রাবী বলেন, ‘উমার (রাঃ) এলেন এবং আমি তাঁর সামনে বিষয়টি উপস্থাপন করলাম। তিনি বললেন, আমরা যদি আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী চলি, তবে তা আমাদের নির্দেশ দেয় (হাজ্জ ও ‘উমরাহ্‌) পূর্ণ করার। আমরা যদি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতের উপর ‘আমল করি, তবে কুরবানীর পশু তার (কুরবানীর) স্থানে না পৌঁছা পর্যন্ত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম খুলেননি। (ই. ফা. ২৮২৪, ই.সে. ২৮২২) শু’বাহ্‌ (রহঃ) এ সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই. ফা. ২৮২৪, ই.সে. ২৮২৩) আবূ মূসা (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলাম। তিনি বাত্বহা নামক স্থানে উট বসিয়ে অবস্থান করছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছ? আমি বললাম, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুরূপ ইহরাম বেঁধেছি। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কুরবানীর পশু এনেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাহলে তুমি বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ এবং সাফা- মারওয়ার মাঝে সা’ঈ করার পর ইহরাম খুলে ফেল। অতএব আমি বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করার পর ইহরাম খুলে ফেললাম। এরপর আমার গোত্রের এক মহিলার নিকট এলাম, সে আমার মাথার চুল আঁচড়িয়ে দিল এবং আমার মাথা ধুয়ে দিল। আমি আবূ বাক্‌র (রাঃ) ও ‘উমার (রাঃ) – এর খিলাফাতকালে লোকদেরকে অনুরূপ ফাতাওয়া দিতাম। হাজ্জের মৌসুম আগত, এ সময় এক ব্যক্তি আমার নিকট এসে বলল, আপনি হয়ত জানেন না , আমীরুল মু’মিনীন (‘উমার) হাজ্জের ব্যাপারে কী নতুন বিধান প্রবর্তন করেছেন। আমি বললাম, হে জনগণ! আমি যাদেরকে কতগুলো বিষয় সম্পর্কে যে ফাতাওয়া দিয়েছি- তারা যেন অপেক্ষা করে। কারণ, ইতোমধ্যেই আমীরুল মু’মিনীন তোমাদের মধ্যে এসে পৌঁছবেন। তোমরা তাঁর অনুসরণ করবে। তিনি (‘উমার) এসে পৌঁছলে আমি বললাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি হাজ্জের ব্যাপারে নতুন কী বিধান দিচ্ছেন? তিনি বললেন, আমরা যদি আল্লাহর কিতাব আঁকড়ে ধরি, তবে আল্লাহ বলেনঃ “তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ পূর্ণ কর”- (সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্‌ ২ : ১৯৬)। আর আমরা যদি আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সুন্নাতের অনুসরণ করি, তাহলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে করে নিয়ে আসা পশু যবাহ না করা পর্যন্ত ইহরাম খুলতেন না। (ই. ফা. ২৮২৫, ই.সে. ২৮২৪) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ইয়ামানে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি যে বছর হাজ্জ করেছিলেন, আমি সে বছর (হাজ্জ) এসে তাঁর সঙ্গে মিলিত হলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, হে আবূ মূসা! ইহরাম বাঁধার সময় তুমি কী নিয়্যাত করেছিলে? আমি বললাম, লাব্বায়কা! আমার ইহরাম নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর ইহরামের অনুরূপ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি সাথে করে কুরবানীর পশু এনেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেনঃ তাহলে যাও, বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ কর, সাফা-মারওয়ার মাঝে সা’ঈ কর, অতঃপর ইহরাম খুলে ফেল। ... হাদীসের অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত শু’বাহ্ ও সুফ্ইয়ানের হাদীস দু’টির অনুরূপ। (ই. ফা. ২৮২৬, ই.সে. ২৮২৫) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি তামাত্তু’ হাজ্জের অনুকূলে ফাতাওয়া দিতেন। এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, আপনি আপনার ফাতাওয়া স্থগিত রাখুন। আপনি হয়ত জানেন না, আপনার পরে আমীরুল মু’মিনীন হাজ্জের ব্যাপারে কী বিধান প্রবর্তন করেছেন। পরে তিনি (আবূ মূসা) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং (এ ব্যাপারে) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি অবশ্যই জানি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ (তামাত্তু’) করেছেন। কিন্তু আমি এটা পছন্দ করি না যে, বিবাহিত লোকেরা গাছের ছায়ায় স্ত্রীদের সাথে যৌন সঙ্গম করবে, অতঃপর এমন অবস্থায় হাজ্জের জন্য রওনা হবে যে, তাদের মাথার চুল দিয়ে পানি টপকে পড়ছে। (ই. ফা. ২৮২৭, ই.সে. ২৮২৬)

【23】

তামাত্তু’ হাজ্জের বৈধতা

ক্বাতাদাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব (রহঃ) বলেছেন, ‘উসমান (রাঃ) তামাত্তু’ হাজ্জ করতে নিষেধ করতেন। আর ‘আলী (রাঃ) তামাত্তু’ হাজ্জ করার নির্দেশ দিতেন। অতএব ‘উসামান (রাঃ) ‘আলী (রাঃ) –এর সঙ্গে কথা বললেন। অতঃপর ‘আলী (রাঃ) বললেন,’ আপনি অবশ্যই জানেন, আমরা নিশ্চিত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে তামাত্তু’ হাজ্জ করেছি। ‘উসমান (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ; কিন্তু আমরা তখন আতঙ্কিত ছিলাম। (ই. ফা. ২৮২৮, ই.সে. ২৮২৭) শু’বাহ্‌ (রহঃ) এ সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ২৮২৯, ই.সে. ২৮২৮) সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) ও ‘উসমান (রাঃ) ‘উসফান’ নামক স্থানে একত্রে হলেন। ‘উসমান (রাঃ) তামাত্তু’ ও ‘উমরাহ্ করতে নিষেধ করতেন। ‘আলী (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে কাজ করেছেন, আপনি তা নিষেধ করেছেন- এতে আপনার উদ্দেশ্য কী? ‘উসমান (রাঃ) বললেন, আপনি আমাকে আপনার কথা থেকে রেহাই দিন। ‘আলী (রাঃ) বললেন, আমি আপনাকে ছাড়তে পারি না। ‘আলী (রাঃ) যখন এ অবস্থা দেখলেন, তিনি একত্রে হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ উভয়ের ইহরাম বাঁধলেন। (ই. ফা. ২৮৩০, ই.সে. ২৮২৯) আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, তামাত্তু’ হাজ্জ মুহাম্মাদ-এর সাহাবীগণের জন্যই বিশেষভাবে নির্দিষ্ট ছিল। (ই. ফা. ২৮৩১, ই.সে. ২৮৩০) আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, তামাত্তু’ হাজ্জ আমাদের জন্য একটি বিশেষ সুবিধা হিসেবে অনুমোদিত ছিল। (ই. ফা. ২৮৩২, ই.সে. ২৮৩১) আবূ যার (রাঃ) দু’টি মুত’আহ কেবল আমাদের যুগের জন্যই নির্দিষ্ট ছিল। অর্থাৎ মুত’আহ্‌ বিবাহ ও তামাত্তু’ হাজ্জ। (ই.ফা. ২৮৩৩, ই.সে. ২৮৩২) ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ শা’সা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্রাহীম নাখা’ঈ ও ইব্রাহীম আত্ তায়মীর নিকট এলাম এবং বললাম, আমি এ বছর হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ একত্রে করতে চাই। ইব্রাহীম নাখা’ঈ বললেন, কিন্তু তোমার পিতা তো এরূপ সংকল্প করেননি। কুতায়বাহ্ (রহঃ).. ইব্রাহীম আত্ তায়মী তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি (পিতা) রাবাযাহ্ নামক স্থানে আবূ যার (রাঃ)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি তার সামনে এ প্রসঙ্গ উপস্থাপন করলেন। আবূ যার (রাঃ) বললেন, তা আমাদের জন্য (একটা সুবিধা স্বরূপ) নির্দিষ্ট ছিল, তোমাদের জন্য নয়। (ই.ফা. ২৮৩৪, ই.সে. ২৮৩৩) গুনায়ম ইবনু ক্বায়স (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)-কে তামাত্তু’ হাজ্জ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, আমরা ‘উমরাহ্‌ আদায় করেছি। এটা সে সময়কার কথা যখন তিনি (আমীর মু’আবিয়াহ্) কাফির ছিলেন এবং মাক্কার বাড়িতে বসবাস করতেন। (ই.ফা. ২৮৩৫, ই.সে. ২৮৩৪) সুলায়মান আত্‌ তায়মী (রহঃ) উক্ত সানাদে বর্ণনা করেন। তিনি এ রিওয়ায়াতে মু’আবিয়াহ্‌ (রাঃ)-এর নাম উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ২৮৩৬, ই.সে. ২৮৩৫) সুলায়মান আত্‌ তায়মী (রহঃ) উক্ত সূত্রে উভয়ের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে এবং সুফ্‌ইয়ানের হাদীসে তামাত্তু’ হাজ্জের উল্লেখ রয়েছে। (ই.ফা. ২৮৩৭, ই.সে. ২৮৩৬) মুত্বাররিফ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) আমাকে বললেন, আমি আজ তোমাকে একটি হাদীস বলব, পরবর্তী সময়ে আল্লাহ তা’আলা এর দ্বারা তোমাকে উপকৃত করবেন। জেনে রাখ, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে যিলহাজ্জ্ব মাসের দশ তারিখের মধ্যে ‘উমরাহ্ করিয়েছিলেন। এটা রহিত করে কোন আয়াত নাযিল হয়নি এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ইন্তিকাল পর্যন্ত তা করতে নিষেধ করেননি। পরে লোকেরা নিজ নিজ ইচ্ছানুযায়ী মত পোষণ করে। (ই.ফা. ২৮৩৮, ই.সে. ২৮৩৭) আল জুরায়রী (রহঃ) উক্ত সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তবে হাতিম তার রিওয়ায়াতে বলেছেন, “এক ব্যক্তি অর্থাৎ ‘উমার (রাঃ) তাঁর নিজ ইচ্ছানুযায়ী মত পোষণ করেন”। (ই.ফা. ২৮৩৯, ই.সে. ২৮৩৮) মুত্বাররিফ (রহঃ তিনি বলেন, ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) আমাকে বললেন, আমি তোমাকে একটি হাদীস শুনাব। আশা করি, আল্লাহ তোমাকে এর দ্বারা উপকৃত করবেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ একত্রে আদায় করেছেন। তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এরূপ করতে নিষেধ করেননি এবং তা হারাম বলে কুরআনের কোন আয়াতও নাযিল হয়নি। (রোগের কারণে) তপ্ত লোহার দাগ গ্রহণ করার পূর্ব পর্যন্ত আমাকে (ফেরেশতাগণ কর্তৃক) সালাম দেয়া অব্যাহত ছিল। আমি দাগ গ্রহণ করলে সালাম দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। আবার যখন দাগ দেয়া বন্ধ করলাম, পুনরায় সালাম দেয়া শুরু হয়। (ই.ফা. ২৮৪০, ই.সে. ২৮৩৯ মুত্বাররিফ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) আমাকে বললেন.. পরবর্তী অংশ উপরোক্ত মু’আয বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ২৮৪১, ই.সে. ২৮৪০) মুত্বাররিফ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) মৃত্যুকালীন রোগে আমাকে ডেকে পাঠান। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কয়েকটি হাদীস বলব, আশা করি আল্লাহ তা’আলা আমার পরে তোমাকে এর দ্বারা উপকৃত করবেন। আমি বেঁচে থাকলে তুমি আমার সূত্রে বর্ণনা করা গোপন রাখবে। আর আমি মারা গেলে তুমি চাইলে তা বর্ণনা করতে পার। আমাকে সালাম করা হতো। জেনে রাখ, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ একত্রে আদায় করেছেন। অতঃপর এ বিষয়ে কোন আয়াতও নাযিল হয়নি এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তা নিষিদ্ধ করেননি। এক ব্যক্তি (‘উমার) এ বিষয়ে যা ইচ্ছা করলেন, তা বললেন। (ই.ফা. ২৮৪২, ই.সে. ২৮৪১) ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, জেনে রাখ, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ একত্রে (একই ইহরামে) আদায় করেছেন। এরপর এ বিষয়ে কোন আয়াত নাযিল হয়নি এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও অনুরূপ করতে আমাদেরকে নিষেধ করেননি। এরপর এক ব্যক্তি এ বিষয়ে নিজ ইচ্ছামত যা বলার, তা বললেন। (ই.ফা. ২৮৪৩, ই.সে. ২৮৪২) ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে তামাত্তু’ হাজ্জ করেছি। এ বিষয়ে কুরআনে কোন আয়াত নাযিল হয়নি। এক ব্যক্তি ইচ্ছামত যা বলার, তাই বললেন। (ই.ফা. ২৮৪৪, ই.সে. ২৮৪৩) ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ)-এর সূত্র তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তামাত্তু’ হাজ্জ আদায় করেছেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে তামাত্তু’ হাজ্জ করেছি। (ই.ফা. ২৮৪৫, ই.সে. ২৮৪৪) ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর কিতাবে মুত্’আহ অর্থাৎ তামাত্তু’ হাজ্জ সম্পর্কে আয়াত নাযিল হয়েছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের তা করার নির্দেশ দিয়েছেন। অতঃপর তামাত্তু’ হাজ্জ সম্পর্কিত আয়াত রহিতকারী কোন আয়াত নাযিল হয়নি এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত তা করতে নিষেধ করেননি। পরবর্তীকালে এক ব্যক্তি নিজ ইচ্ছামত যা বলার, তাই বলেছেন। (ই.ফা. ২৮৪৬, ই.সে. ২৮৪৫) ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) অনুরূপ বর্ণনা করেন। অবশ্য তিনি বলেছেন, “আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে হাজ্জ করেছি।” তিনি এরূপ বলেননি- “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের তা করার নির্দেশ দিয়েছেন”। (ই.ফা. ২৮৪৭, ই.সে. ২৮৪৬)

【24】

তামাত্তু’ হাজ্জ পালনকারীর জন্য কুরবানী ওয়াজিব; যে ব্যক্তি এর সামর্থ্য না রাখে, সে হাজ্জের অনুষ্ঠান চলাকালে তিনদিন এবং বাড়িতে প্রত্যাবর্তনের পরে সাতদিন সওম পালন করবে

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বিদায় হাজ্জে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তামাত্তু’ করেছেন, প্রথমে ‘উমরাহ্‌ ও পরে হাজ্জ করেছেন এবং পশু কুরবানী করেছেন। তিনি যুল হুলায়ফাহ্‌ থেকে সাথে করে কুরবানীর পশু নিয়েছিলেন। এখান থেকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথমে ‘উমরার, অতঃপর হাজ্জের তালবিয়াহ্‌ পাঠ শুরু করেন। লোকেরাও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসরণে হাজ্জের সাথে ‘উমরাহ্‌ যুক্ত করে তামাত্তু’ করেছে। কতক লোকেরা কুরবানীর পশু সাথে নিয়েছিল, আর কতকের কুরবানীর পশু ছিল না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাতে উপনীত হয়ে লোকদের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু আছে, হাজ্জ শেষ না করা পর্যন্ত তাদের জন্য (সাময়িকভাবে) নিষিদ্ধ কোন জিনিস হালাল হবে না। আর তোমাদের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু নেই- তার যেন বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সা’ঈ করে মাথার চুল খাটো করার পর ইহরাম খুলে ফেলে। অতঃপর তারা (৮ যিলহাজ্জ) পুনরায় হাজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধবে এবং (নির্দিষ্ট দিনে) কুরবানী করবে। কোন ব্যক্তি বুরবানীর পশু না পেলে হাজ্জ চলাকালীন সময়ে তিনদিন এবং বাড়িতে ফেরার পর সাতদিন সওম পালন করবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কায় পৌঁছে প্রথমে রুকনে (হাজারে আসওয়াদ) স্পর্শ করলেন, অতঃপর বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করলেন- তিন চক্কর সামান্য দ্রুতগতিতে এবং চার চক্কর ধীরগতিতে। বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ সমাপ্ত করে তিনি মাক্বামে ইব্‌রাহীমের নিকট দু’ রাক’আত সলাত আদায় করলেন। অতঃপর সালাম ফিরিয়ে সলাত শেষ করলেন। অতঃপর তিনি সাফা পাহাড়ে এলেন এবং সাফা-মারওয়াহ্‌ পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সাতবার সা’ঈ করলেন। এরপর তিনি কোন জিনিস হালাল করেননি- যা হারাম হয়েছিল (ইহরামের কারণে অর্থাৎ তিনি ইহরামমুক্ত হননি) যে পর্যন্ত না হাজ্জ সমাপন করেন এবং কুরবানীর দিন নিজের পশু কুরবানী না করেন এবং কা’বাহ্‌ ঘর-এর ত্বওয়াফ করেছেন। অতঃপর যে সব জিনিস হারাম ছিল, তা তাঁর জন্য হালাল হয়ে গেল (অর্থাৎ তিনি ইহরাম খুললেন) আর যেসব লোক সাথে করে কুরবানীর পশু এনেছিল, তারাও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুরূপ করেছিল। (ই.ফা. ২৮৪৮, ই.সে. ২৮৪৭) ‘উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ) তাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তামাত্তু’ হাজ্জ পালন এবং তাঁর সাথের লোকদের তামাত্তু’ হাজ্জ সম্পাদন সম্পর্কে অবহিত করেছেন। (ই.ফা. ২৮৪৯, ই.সে. ২৮৪৮)

【25】

ক্বিরান হাজ্জ সমাপনকারী ইফরাদ হাজ্জ সম্পাদনকারীর সাথেই ইহরাম খুলতে পারবে, তার আগে নয়

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী হাফসাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল! কী ব্যাপার, লোকেরা ইহরামমুক্ত হল অথচ আপনি ‘উমরাহ্ করার পরও ইহরাম খুলেননি? তিনি বললেন, আমি আমার মাথার চুল জমাট করেছি এবং কুরবানীর পশুর গলায় মালা বেঁধেছি। অতএব আমি কুরবানী না করা পর্যন্ত ইহরাম খুলতে পারি না। (ই.ফা. ২৮৫০, ই.সে. ২৮৪৯) হাফ্‌সাহ্‌ (রাঃ) আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! কী ব্যাপার, আপনি ইহরাম খুলেননি?... উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ২৮৫১, ই.সে. ২৮৫০) হাফ্সাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! কী ব্যাপার, লোকেরা ইহরাম খুলেছে অথচ আপনি ‘উমরাহ্ করার পরও ইহরাম খুলেননি? তিনি বললেন, আমি কুরবানীর পশুর গলায় মালা বেঁধেছি এবং মাথার চুল জমাট করেছি। অতএব হাজ্জের যাবতীয় অনুষ্ঠান শেষ না করা পর্যন্ত আমি ইহরাম খুলতে পারব না। (ই.ফা. ২৮৫২, ই.সে. ২৮৫১) ইবনু ‘উমার (রাঃ) হাফ্সাহ্ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল!... মালিক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ-কুরবানী না করা পর্যন্ত আমি হালাল হতে পারি না। (ই.ফা. ২৮৫৩, ই.সে. ২৮৫২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, হাফ্সাহ্ (রাঃ) আমাকে বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হাজ্জের দিন তাঁর স্ত্রীদের (‘উমরাহ্ সমাপনের পর) নির্দেশ দিলেন তারা যেন ইহরাম খুলেন। হাফ্সাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আপনাকে ইহরাম খুলতে কিসে বাধা দিচ্ছে? তিনি বললেন, আমি মাথার চুল আঠালো করেছি এবং সাথে কুরবানীর পশু এনেছি। অতএব পশু কুরবানী না করা পর্যন্ত আমি ইহরাম খুলতে পারি না। (ই.ফা. ২৮৫৪, ই.সে. ২৮৫৩)

【26】

বাধাপ্রাপ্ত হলে হালাল হওয়ার বৈধতা এং হাজ্জে ক্বিরান বৈধ হওয়ার বিবরণ

নাফি’ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হাঙ্গামা [হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর মধ্যকার সংঘাত] চলাকালীন সময়ে ‘উমরাহ্ করার উদ্দেশে রওনা হন। তিনি বলেন, বায়তুল্লাহ পৌঁছতে আমরা যদি বাধাপ্রাপ্ত হই তবে (অনুরূপ পরিস্থিতিতে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যেরূপ করেছিলাম, এখনও তদ্রূপ করব। অতএব তিনি রওনা হলেন এবং ‘উমরার ইহরাম বাঁধলেন, তিনি সফর অব্যাহত রাখলেন; যতক্ষণ না আল বায়দা নামক স্থানে পৌঁছলেন। এখানে তিনি নিজের সঙ্গীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ উভয়ের নিয়ম একই। আমি তোমাদের সাক্ষী করছি যে, আমি নিজের জন্য হাজ্জকে ‘উমরার সাথে বাধ্যতামূলক করলাম। (রাবী বলেন) অতএব তিনি রওনা হয়ে বায়তুল্লাহ পৌঁছলেন, সাতবার ত্বওয়াফ করলেন এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাতবার সা’ঈ করলেন, এর অতিরিক্ত কিছু করেননি এবং নিজের (হাজ্জ ও ‘উমরার) জন্য এটাই (এক ত্বওয়াফ ও এক সা’ঈ) যথেষ্ট বিবেচনা করলেন এবং কুরবানী করলেন। (ই.ফা. ২৮৫৫, ই.সে. ২৮৫৪) নাফি’ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ এবং সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ উভয়ে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সাথে কথা বললেন- যে বছর হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এসেছিল। তারা উভয়ে বললেন, এ বছর হাজ্জ না করলে আপনার কী ক্ষতি আছে? কারণ আমাদের আশংকা হচ্ছে- গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং আপনি বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবেন না। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, যদি তা আমার ও বায়তুল্লাহ-এর মাঝে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়ও তবে (অনুরূপ পরিস্থিতিতে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা করেছেন, আমিও তদ্রূপ করব। কুরায়শ কাফিররা যখন তাঁর ও বায়তুল্লাহ্র মাঝে প্রতিবন্ধক হয়েছিল, এ সময় আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম। আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি, আমি ‘উমরার নিয়্যত করলাম। অতঃপর তিনি রওনা হয়ে যুল হুলায়ফাহ্ নামক স্থানে পৌঁছে ‘উমরার জন্য তালবিয়াহ্ পাঠ করলেন। অতঃপর বললেন, যদি আমার পথ উন্মুক্ত থাকে, তবে আমি ‘উমরাহ্ পূর্ণ করব। আর যদি আমার ও বায়তুল্লাহ-এর মাঝে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়, তবে (অনুরূপ পরিস্থিতিতে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা করেছেন আমিও তাই করব। সে সময় আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করলেন : “তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ”-(সূরাহ্ আল আহযাব ৩৩ : ২১)। তিনি আবার চলতে লাগলেন, যতক্ষণ না বায়দা নামক স্থানের উপকণ্ঠে পৌঁছলেন। এখানে পৌঁছে তিনি বললেনঃ হাজ্জ ও ‘উমরার বিধান একই। যদি আমার এবং ‘উমরার মাঝে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়, তবে আমার এবং হাজ্জের মাঝেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। আমি তোমাদের সাক্ষী করছি যে, আমি আমার ‘উমরার সাথে হাজ্জকেও বাধ্যতামূলক করে নিলাম। অতঃপর তিনি অগ্রসর হলেন এবং কুদায়দ নামক স্থানে পৌঁছে কুরবানীর পশু ক্রয় করলেন। অতঃপর তিনি হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ উভয়ের জন্য এক ত্বওয়াফ (সাত চক্কর) ও এক সা’ঈ (সাফা-মারওয়ার মাঝে সাতবার দৌড়) করলেন এবং ইহরাম খুললেন না, বরং হাজ্জ সমাপন করে কুরবানীর দিন উভয়ের ইহরাম খুললেন। (ই.ফা. ২৮৫৬, ই.সে. ২৮৫৫) নাফি’ (রহঃ) হাজ্জাজ যে বছর ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হ’ল- ঐ বছর ‘উমার (রাঃ) হাজ্জের সংকল্প করলেন। অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। এ সূত্রে হাদীসের শেষাংশে উল্লেখ আছে যে, “তিনি বলতেন, যে ব্যক্তি হাজ্জ ও ‘উমরার জন্য একত্রে ইহরাম বাঁধল, তার জন্য এক ত্বওয়াফই (সাত চক্কর) যথেষ্ট এবং উভয়ের অনুষ্ঠান সমাপ্ত না করা পর্যন্ত ইহরাম খুলবে না। (ই.ফা. ২৮৫৭, ই.সে. ২৮৫৬) নাফি‘ (রহঃ) হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফ যে বছর ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হ’ল- সে বছর ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হাজ্জে যাবার সংকল্প করলেন। তাকে বলা হ’ল, লোকদের মধ্যে এখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে এবং আমাদের আশংকা হচ্ছে- তারা আপনাকে বাধা দিবে। তিনি বললেন, “তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ”- (সূরাহ্‌ আল আহযাব ৩৩ : ২১)। এরূপ পরিস্থিতিতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা করেছেন, আমিও অনুরূপ করব। আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি যে, নিশ্চয়ই আমি ‘উমরার সংকল্প করেছি। অতঃপর তিনি রওনা হলেন। অবশেষে যখন আল বায়দার উপকণ্ঠে পৌঁছলেন তখন তিনি বললেন, হাজ্জ ও ‘উমরার অবস্থা একই, তোমরা সাক্ষী থাক। ইবনু রুম্হের বর্ণনায় আছে : আমি তোমাদের সাক্ষী রাখছি যে, আমি নিশ্চয়ই আমার ‘উমরার সাথে হাজ্জ অনিবার্য করে নিলাম। অতঃপর তিনি কুরবানীর পশু সঙ্গে নিলেন যা তিনি কুদায়দ নামক স্থানে ক্রয় করেছিলেন। অতঃপর তিনি হাজ্জ ও ‘উমরার একত্রে ইহরাম বেঁধে অগ্রসর হলেন। অবশেষে মাক্কায় পৌঁছে তিনি বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সা’ঈ করলেন, এর অতিরিক্ত কিছু করলেন না। তিনি কুরবানীও করেননি। মাথা মুণ্ডান বা চুল ছাঁটেননি এবং (ইহরামের কারণে) যা কিছু তার জন্য হারাম হয়েছিল, তার কোনটি হালাল করেননি। অবশেষে কুরবানীর দিন এলে তিনি কুরবানী করলেন ও মাথা কামালেন এবং তার মত অনুযায়ী তিন তার প্রথম ত্বওয়াফ দ্বারাই হাজ্জ ও ‘উমরার ত্বওয়াফ সম্পাদন করে ফেলেছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছেন। (ই.ফা. ২৮৫৮, ই.সে. ২৮৫৭) নাফি’ সূত্রে ইবনু ‘উমার (রাঃ) উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ ঘটনা বর্ণনা করেন। তবে এ সূত্রে হাদীসের প্রথমাংশে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উল্লেখ করেছেন- যখন তাকে বলা হ’ল, আপনি বায়তুল্লাহ এ পৌঁছতে বাধাগ্রস্ত হবেন। তখন তিনি বললেন, তাহলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেরূপ করেছেন, আমিও তদ্রূপ করব। তিনি হাদীসের শেষে উল্লেখ করেননি যে, “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছেন”-যেমন লায়স (রহঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে। (ই.ফা. ২৮৫৯, ই.সে. ২৮৫৮)

【27】

ইফরাদ ও ক্বিরান হাজ্জ প্রসঙ্গে

ইবনু ‘উমার (রাঃ) ইয়াহ্ইয়ার রিওয়ায়াতে আছে যে, তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ইফরাদ হাজ্জের ইহরাম বাঁধলাম। ইবনু ‘আওন-এর রিওয়ায়াতে আছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইফরাদ হাজ্জের ইহরাম বাঁধলেন। (ই.ফা. ২৮৬০, ই.সে. ২৮৫৯) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একত্রে হাজ্জ ও ‘উমরার তালবিয়াহ্ পাঠ করতে শুনেছি। (অধঃস্তন রাবী) বাক্র বলেন, আমি এ হাদীস ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে বর্ণনা করলে তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জের তালবিয়াহ্ পাঠ করেছেন। অতঃপর আমি (বাক্র) আনাস (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তার কাছে ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর বক্তব্য উল্লেখ করি। তখন আনাস (রাঃ) বললেন, তোমরা আমাদেরকেও শিশুই মনে কর। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একত্রে হাজ্জ ও ‘উমরার তালবিয়াহ্ পাঠ করতে শুনেছি। (ই.ফা. ২৮৬১, ই.সে. ২৮৬০) আনাস (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একত্রে হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ আদায় করতে দেখেছেন। রাবী বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমরা শুধু হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছি। আমি (বাক্র) পুনরায় আনাস (রাঃ)-এর নিকট ফিরে আসি এবং ইবনু ‘উমার (রাঃ) যা বলেছেন, সে সম্পর্কে তাকে অবহিত করলাম। আনাস (রাঃ) বললেন, আমরা বুঝি তখন শিশু ছিলাম! [২০] (ই.ফা. ২৮৬২, ই.সে. ২৮৬১)

【28】

হাজীদের জন্য ত্বওয়াফে কুদূম, অতঃপর সা’ঈ মুস্তাহাব

ওয়াবারাহ্ (রহঃ) আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তার নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, আল মাওক্বিফ (‘আরাফাহ্‌)-এ যাবার পূর্বে বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ করা আমার জন্য সঠিক হবে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সে বলল, কিন্তু ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তুমি বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ করো না-যে পর্যন্ত না মাওক্বিফে আসো! ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জ করেছেন এবং মাওক্বিফে যাবার পূর্বেই বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ করেছেন। অতএব তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে বল, তোমার কাছে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা মত ‘আমাল করা উচিত, না ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর কথা মত? (ই.ফা. ২৮৬৩, ই.সে. ২৮৬২) ওয়াবারাহ্‌ (রহঃ) এক ব্যক্তি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, আমি কি বায়তুল্লাহ্‌র ত্বওয়াফ করব অথচ আমি হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছি? তিনি বললেন, কিসে তোমাকে বাধা দিচ্ছে? সে বলল, আমি অমুকের পুত্রকে দেখেছি, তিনি তা পছন্দ করেন না কিন্তু তার তুলনায় আপনি আমাদের অধিক প্রিয়। আমরা লক্ষ্য করছি যে, এ দুনিয়া তাকে প্রলুব্ধ করেছে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, তোমাদের ও আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যাকে দুনিয়া প্রলুব্ধ করেনি? অতঃপর তিনি বললেন, আমরা দেখেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছেন এবং বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সা’ঈ করেছেন। অতএব তুমি সত্যবাদী হলে আল্লাহর হুকুম ও তাঁর রসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত অমুকের সুন্নাতের তুলনায় অনুসরণের বেলায় অগ্রগণ্য। (ই.ফা. ২৮৬৪, ই.সে. ২৮৬৩) ‘আম্‌র ইবনু দীনার (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর নিকট এক লোক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে, ‘উমরাহ্ করার উদ্দেশে আগমন করেছে, অতঃপর বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ করেছে কিন্তু সাফা-মারওয়ার মাঝে সা’ঈ করেনি- সে কি তার স্ত্রীর সাথে মিলতে পারে? ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ্ আগমন করে সাতবার বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ করেন, মাক্বামে ইব্রাহীমের পিছনে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করেন এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে সাতবার সা’ঈ করেন। আর তোমাদের জন্য অবশ্যই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। (ই.ফা. ২৮৬৫, ই.সে. ২৮৬৪) ইবনু ‘উমার (রাঃ) এ সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২৮৬৬, ই.সে. ২৮৬৫)

【29】

উমরার উদ্দেশে ইহরামকারীর জন্য ত্বওয়াফের পরে সা’ঈর পূর্বে ইহরাম খোলা জায়িয নয়, হাজ্জের উদ্দেশে ইহরামকারীও ত্বওয়াফে কুদূমের পর ইহরাম খুলতে পারবে না, ক্বিরান হাজ্জকারীর হুকুমও অনুরূপ

মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) ইরাকের অধিবাসী এক ব্যক্তি তাকে বলল, আমার পক্ষ থেকে আপনি ‘উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করুন যে, এক ব্যক্তি হাজ্জের ইহরাম বাঁধল, সে বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফের পর ইহরাম খুলতে পারবে কিনা? তিনি যদি আপনাকে বলেন, সে ইহরাম খুলতে পারবে না- তবে তাকে বলুন, এক ব্যক্তি বলেছে, সে ইহরাম খুলতে পারবে। রাবী বলেন, অতএব আমি তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যে ব্যক্তি হাজ্জের ইহরাম বেঁধেছে, সে তা সমাধান না করা পর্যন্ত ইহরাম খুলতে পারবে না। আমি বললাম, কিন্তু এক ব্যক্তি তাই বলেছে। তিনি বললেন, সে যা বলছে তা দুঃখজনক। ইরাকের লোকটি আমার সাথে পুনরায় সাক্ষাৎ করলে আমি তাকে উপরোক্ত কথা বললাম। সে বলল, আপনি তাকে বলুন, কিন্তু এক ব্যক্তি বলে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাই করেছেন এবং আসমা (রাঃ) ও যুবায়র (রাঃ) অনুরূপ করেছেন কেন? রাবী বলেন, আমি তার নিকট গিয়ে এ বিষয় তাকে জানাই। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, লোকটি কে? আমি বললাম, জানি না। তিনি বললেন, তার কী হয়েছে যে, সে নিজে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করছে না? আমার মনে হয়, সে ইরাকী। আমি বললাম, জানি না। তিনি বললেন, সে মিথ্যা বলেছে। রসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাজ্জ সম্পর্কে ‘আয়িশা (রাঃ) আমাকে অবহিত করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কায় পৌঁছে সর্বপ্রথম যে কাজ করেছেন তা ছিল এই যে, তিনি ওযূ করেন, এরপর বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করেছেন, অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) হাজ্জ করেছেন। তিনি (মাক্কায় পৌঁছে) সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করেছেন এবং এরপর ‘উমার (রাঃ)-ও অনুরূপ করেছেন। অতঃপর ‘উসমান (রাঃ) হাজ্জ করেছেন। আমি তাকে সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করতে দেখেছি এবং এছাড়া অন্য কিছু করেননি। অতঃপর মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-ও (অনুরূপ করেছেন)। এরপর আমি আমার পিতা যুবায়র ইবনুল ‘আও্ওয়াম (রাঃ)-এর সাথে হাজ্জ করেছি। তিনিও সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করেছেন। এছাড়া অন্য কিছু করেননি। অতঃপর আমি মুহাজির ও আনসারদের অনুরূপ করতে দেখেছি। এছাড়া তারা অন্য কিছু করেননি। অতঃপর সর্বশেষে আমি যাকে অনুরূপ করতে দেখেছি, তিনি হচ্ছেন ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)। তিনি হাজ্জকে ‘উমরাহ্ দ্বারা ভঙ্গ করেননি। আর সে ইবনু ‘উমার (রাঃ) তো তাদের মধ্যে বর্তমান আছে। তারা কেন তাকে জিজ্ঞেস করছে না? এভাবে যত লোক অতীত হয়েছে, তারা মাক্কায় পা রেখেই সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করতেন। অতঃপর তারা ইহরাম খুলতেন না। আর আমি, আমার মা [আসমা বিনতু আবূ বকর (রাঃ)] ও আমার খালা [‘আয়িশা (রাঃ)]-কেও দেখেছি যে, তারা মাক্কায় পৌঁছে প্রথমেই বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করেছেন। এরপরও ইহরাম খুলেননি। আমার মা (আসমা) আমাকে অবহিত করেছেন যে, তিনি তার বোন (‘আয়িশাহ), যুবায়র (রাঃ) এবং অমুক অমুক শুধুমাত্র ‘উমরার ইহরাম বেঁধে মাক্কায় এসেছেন এবং তারা (ত্বওয়াফ ও সা’ঈর পরে) রুকন (হাজারে আসওয়াদ) চুম্বন করার পর ইহরাম খুলেছেন। এ ব্যক্তি (ইরাকী) এ ব্যাপারে যা বলেছে, মিথ্যা বলেছে। (ই.ফা. ২৮৬৭ ই.সে. ২৮৬৬) আসমা বিনতু আবূ বকর (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা ইহরাম বেঁধে রওনা হলাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যার সাথে কুরবানীর পশু রয়েছে, সে যেন ইহরাম অবস্থায় থাকে। আর যার সাথে কুরবানীর পশু নেই, সে যেন ইহরাম খুলে ফেলে। আমার সাথে কুরবানীর পশু ছিল না, তাই আমি ইহরাম খুলে ফেললাম। কিন্তু (আমার স্বামী) যুবায়র (রাঃ)-এর সাথে কুরবানীর পশু ছিল, তাই তিনি ইহরাম খুলেননি। রাবী বলেন, আমি আমার স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করে বের হয়ে গিয়ে যুবায়র (রাঃ)-এর পাশে বসলাম। তিনি বললেন, আমার নিকট থেকে উঠে যাও। আমি বললাম, তুমি কি আশংকা করছ যে, আমি তোমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ব? (ই.ফা. ২৮৬৮, ই.সে. ২৮৬৭) ‘আসমা বিনতু আবূ বাক্‌র (রাঃ) আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে হাজ্জের ইহরাম বেঁধে (মাক্কায়) পৌঁছলাম। অবশিষ্ট বর্ণনা ইবনু জুরায়জের হাদীসের অনুরূপ। তবে এ বর্ণনায় আছে, যুবায়র (রাঃ) বললেন, “তুমি আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাও, দূরে সরে যাও।” আমি (আসমা) বললাম, তুমি কি আশংকা করছ যে, আমি তোমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ব?” (ই.ফা. ২৮৬৯, ই.সে. ২৮৬৮) আসমা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম ‘আবদুল্লাহ আসমা (রাঃ) যখনই আল-হাজুন (হারাম শরীফের সীমার মধ্যে মাক্কার উচ্চভূমিতে একটি পাহাড়) অতিক্রম করতেন, তখনই তিনি তাকে বলতে শুনতেন, সল্লাল্লাহু ‘আলা রসূলিহী (আল্লাহ তা’আলা তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অনুগ্রহ করুন)। আমরা তাঁর সঙ্গে এখানে অবতরণ করেছিলাম, আমাদের বোঝা ছিল কম, বাহনের সংখ্যা অত্যন্ত কম এবং রসদও ছিল সামান্য। আমি, আমার বোন ‘আয়িশা (রাঃ), যুবায়র (রাঃ) এবং আরও অমুক অমুক ‘উমরাহ্ পালন করেছিলাম। আমরা যখনই বায়তুল্লাহ স্পর্শ করলাম, তখনই ইহরাম খুলে ফেললাম। এরপর তৃতীয় প্রহরে হাজ্জের ইহরাম বাঁধলাম। অধঃস্তন রাবী হারূন তার রিওয়ায়াতে বলেছেন, “আসমা (রাঃ)-এর মুক্তদাস” এবং তিনি ‘আবদুল্লাহ’ নাম উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ২৮৭০, ই.সে. ২৮৬৯)

【30】

হাজ্জে তামাত্তু’ প্রসঙ্গে

মুসলিম আল কুর্রী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট তামাত্তু’ হাজ্জ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি তার অনুমতি দিলেন কিন্তু ইবনু যুবায়র তা নিষেধ করতেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, এই তো ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর মা, তিনি বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটা করার অনুমতি দিয়েছেন। তোমরা তার কাছে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস কর। রাবী বলেন, আমরা তার কাছে গেলাম, তিনি ছিলেন স্থুলদেহী এবং তার দৃষ্টিশক্তি লোপ পেয়েছিল। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তামাত্তু’ হাজ্জের অনুমতি দিয়েছেন। (ই.ফা. ২৮৭১, ই.সে. ২৮৭০) শু’বাহ্‌ (রহঃ) এ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। অধঃস্তন রাবী ‘আবদুর রহমানের বর্ণনায় “আল মুত’আহ্‌” উল্লেখ আছে- “মুত’আতুল হাজ্জ” নয় এবং ইবনু জা’ফার (রহঃ)-এর বর্ণনায় শু’বাহ্‌ (রহঃ) বলেন, মুসলিম আল কুর্‌রী (রহঃ) বলেছেন, তামাত্তু’ হাজ্জ না মুত্‌’আহ বিবাহ সম্পর্কে বলা হয়েছে, তা আমি জানি না। (ই.ফা. ২৮৭২, ই.সে. ২৮৭১) মুসলিম আল কুর্‌রী (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমরার ইহরাম বাঁধলেন এবং তাঁর সাহাবীগণ হাজ্জের ইহরাম বাঁধলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগণের মধ্যে যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল, তারা ইহরাম খুলেননি। অন্যরা (ত্বওয়াফ ও সা’ঈর পর) ইহরাম মুক্ত হয়ে গেলেন। যারা সাথে কুরবানীর পশু এনেছিলেন, ত্বল্‌হাহ্‌ (রাঃ) তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অতএবং তিনিও ইহরাম খুলেননি। (ই.ফা. ২৮৭৩, ই.সে. ২৮৭২) শু’বাহ্‌ (রহঃ) পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। তবে তার বর্ণনায় হাদীসের শেষাংশ এরূপ : “যাদের সাথে কুরবানীর পশু ছিল না, ত্বল্‌হাহ্‌ ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ (রাঃ) এবং আরও এক ব্যক্তি তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। অতএব তারা উভয়ে ইহরাম খুলে ফেলেন।” (ই.ফা. ২৮৭৪, ই.সে. ২৮৭৩)

【31】

হাজ্জের মাসসমূহে ‘উমরাহ্‌ পালন করা জায়িয

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ জাহিলী যুগে লোকেরা হাজ্জের মাসসমূহে ‘উমরাহ্ পালন করাকে পৃথিবীর বুকে সর্বাপেক্ষা বড় অপরাধ মনে করত এবং মুহার্রম মাসকে ‘সফর’ মাস হিসেবে গণনা করত। তারা বলত, যখন উটের পিঠ ভালো হয়ে যাবে, হাজীদের পদচিহ্ন লুপ্ত হয়ে যাবে এবং সফর মাস অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন যে ব্যক্তি ‘উমরাহ্ করতে চায়, তার জন্য তা করা জায়িয হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ হাজ্জের ইহরাম বেঁধে যিলহাজ্জের চার তারিখে মাক্কায় পৌঁছলে তিনি তাদের হাজ্জের ইহরামকে ‘উমরার ইহরামে পরিণত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু এ নির্দেশ তাদের কাছে গুরুতর কাজ বলে মনে হ’ল। অতএব তারা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! কিরূপে ইহরামমুক্ত হব? তিনি বললেন, সম্পূর্ণরূপে ইহরামমুক্ত হবে। (ই.ফা. ২৮৭৫, ই.সে. ২৮৭৪) আবুল ‘আলিয়াহ্ আল বার্রা (রহঃ) তিনি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন : রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জের ইহরাম বাঁধলেন। তিনি যিলহাজ্জ মাসের ৪ তারিখের পর (মক্কা) পৌঁছলেন এবং ফজরের সলাত আদায় করলেন। সলাত শেষে তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি এ ইহরামকে ‘উমরার ইহরামে পরিণত করতে চায়, সে তা করতে পারে। (ই.ফা. ২৮৭৬, ই.সে. ২৮৭৫) শু’বাহ্‌ (রহঃ) এ সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। রাওহ্ ও ইয়াহ্ইয়া ইবনু কাসীর (রহঃ)-এর বর্ণনায় নাস্র (রহঃ)-এর অনুরূপ কথা আছে : “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জের ইহরাম বাঁধলেন।” আবূ শিহাব (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে : “আমরা হাজ্জের ইহরাম বেঁধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে রওনা হলাম।” তাদের সকলের বর্ণনায় আছে : “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল বাত্বহা নামক স্থানে ফজরের সলাত আদায় করলেন।” কিন্তু আল জাহযামী (রহঃ)-এর বর্ণনায় এ কথার উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ২৮৭৭, ই.সে. ২৮৭৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ হাজ্জের ইহরাম বেঁধে (যিলহাজ্জ মাসের প্রথম) দশ দিনের চারদিন অতিবাহিত হওয়ার পর মাক্কায় উপনীত হন। তিনি তাদেরকে নির্দেশ দিলেন, তারা যেন এ ইহরামকে ‘উমরার ইহরামে পরিণত করে। (ই.ফা. ২৮৭৮, ই.সে. ২৮৭৭) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘যি তুওয়া’ নামক স্থানে ফজরের সলাত আদায় করলেন। যিলহাজ্জ মাসের চারদিন অতিক্রান্ত হবার পর (মাক্কায়) পৌঁছলেন এবং তাঁর সাহাবীগণের নির্দেশ দিলেন, তারা যেন নিজেদের ইহরামকে ‘উমরায় পরিণত করে- কিন্তু যার সাথে কুরবানীর পশু আছে, সে ব্যতীত। (ই.ফা. ২৮৭৯, ই.সে. ২৮৭৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এই সে ‘উমরাহ্ যা থেকে আমরা ফায়দাহ উঠিয়েছি। অতএব যার সাথে কুরবানীর পশু নেই- সে যেন সম্পূর্ণরূপে ইহরাম খুলে ফেলে। কেননা ‘উমরাকে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত হাজ্জের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। (ই.ফা. ২৮৮০, ই.সে. ২৮৭৯) আবূ জামরাহ্‌ আয্‌ যুবা’ঈ (রহঃ) আমি তামাত্তু’ হাজ্জ করলাম। কতিপয় লোক আমাকে তা করতে নিষেধ করল। আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি আমাকে তা করার নির্দেশ দিলেন। এরপর আমি বায়তুল্লাহ্‌তে আসলাম এবং ঘুমালাম। স্বপ্নে আমার কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘উমরা কবূল হয়েছে এবং হাজ্জও কবূল হয়েছে। আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে এ স্বপ্নের কথা বললাম। তিনি বললেন, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার! এতো আবুল ক্বাসিম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত। (ই.ফা. ২৮৮১, ই.সে. ২৮৮০)

【32】

ইহরাম বাঁধার সময় কুরবানীর পশুর কুঁজের কিছু অংশ ফেঁড়ে দেয়া এবং গলায় মালা পরানো

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল হুলায়ফাহ্ নামক স্থানে যুহরের সলাত আদায় করলেন। অতঃপর নিজের (কুরবানীর) উষ্ট্রী নিয়ে আসতে বললেন এবং কুঁজের ডান দিক দিয়ে ফেড়ে দিলেন। ফলে রক্ত প্রবাহিত হ’ল। অতঃপর তিনি এর গলায় দু’টি পাদুকার মালা পরিয়ে দিলেন। এরপর নিজের বাহনে আরোহণ করলেন। অতঃপর তা যখন তাঁকে নিয়ে আল বায়দায় পৌঁছল, তখন তিনি হাজ্জের তালবিয়াহ্ পাঠ করলেন। (ই.ফা. ২৮৮২, ই.সে. ২৮৮১) ক্বাতাদাহ্‌ (রহঃ) এ সূত্রে শু’বাহ্‌ (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে, অবশ্য তিনি এখানে বলেছেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল হুলায়ফাহ্‌ এলেন”- তবে “যুহরের সলাত আদায় করেছেন” এ কথা উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ২৮৮৩, ই.সে. ২৮৮২) ক্বাতাদাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হাস্সান আ’রাজ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আল হুযায়ম গোত্রের এক ব্যক্তি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বলল, আপনি এ কী ফাতাওয়া দিচ্ছেন যা নিয়ে লোকেরা জটিলতায় পড়েছে? (তা এই) যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করবে, সে ইহরামমুক্ত হতে পারবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, এটা তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত, তা তোমাদের মনঃপুত হোক বা না হোক। (ই.ফা. ২৮৮৪, ই.সে. ২৮৮৩) আবূ হাস্সান (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বলা হ’ল, এ ব্যাপারটি লোকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, যে ব্যক্তি বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করে, সে হালাল হয়ে যায় এবং তার ইহরাম ‘উমরায় পরিণত হয় (যদিও হাজ্জের ইহরাম হয়ে থাকে)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, এটা তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত যদিও তোমাদের নাক ধূলিমলিন হয়। (ই.ফা. ২৮৮৫, ই.সে. ২৮৮৪) ‘আত্বা (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলতেন, যে ব্যক্তি (মাক্কায় পৌঁছে) বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করল, সে ইহরামমুক্ত হয়ে গেল- সে হাজ্জ পালনকারী হোক অথবা অন্য কিছু (‘উমরাহ্‌) পালনকারী। আমি (ইবনু জুরায়জ) ‘আত্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কিসের ভিত্তিতে এ কথা বলেন? তিনি বললেন, আল্লাহর কালামের ভিত্তিতে : “অতঃপর এগুলো কুরবানীর স্থান মর্যাদাবান ঘরের নিকট” – (সূরাহ্‌ হাজ্জ ২২ : ৩৩)। আমি বললাম, তা তো ‘আরাফাহ্‌ থেকে ফেরার পর। তিনি বললেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলতেন, (কুরবানীর স্থান সম্মানিত ঘরের নিকট) তা ‘আরাফায় উকূফের পর হোক অথবা পূর্বে। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কার্যক্রম থেকে প্রমাণ গ্রহণ করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং বিদায় হাজ্জের সময়ে ইহরাম খোলার নির্দেশ দেন। (ই.ফা. ২৮৮৬, ই.সে. ২৮৮৫)

【33】

উমরায় চুল খাটো করা

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মু’আবিয়াহ (রাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি জান আমি কাঁচি দিয়ে মারওয়াহ্‌ পাহাড়ের নিকট রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার চুল ছেঁটে দিয়েছি? আমি তাঁকে বললাম, এটা আপনার বিরুদ্ধে দলীল। (ই.ফা. ২৮৮৭, ই.সে. ২৮৮৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মু’আবিয়াহ ইবনু আবূ সুফ্ইয়ান (রাঃ) তাকে অবহিত করে বলেছেন, আমি মারওয়াহ্ পাহাড়ে একটি কাঁচির সাহায্যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার চুল ছেঁটে দিয়েছি। অথবা আমি (অধঃস্তন রাবীর সন্দেহ) মারওয়াহ্ পাহাড়ের উপর কাঁচির সাহায্যে তাঁর মাথার চুল ছাঁটতে দেখেছি। (ই.ফা. ২৮৮৮, ই.সে. ২৮৮৭) আবূ সা’ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা উচ্চৈঃস্বরে হাজ্জের তালবিয়াহ্ পাঠ করতে করতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে রওনা হলাম। আমরা মাক্কায় পৌঁছলে তিনি আমাদের তা ‘উমরায় পরিণত করার নির্দেশ দিলেন। তালবিয়ার দিন এলে আমরা হাজ্জের ইহরাম বেঁধে মিনার দিকে রওনা হলাম। (ই.ফা. ২৮৮৯, ই.সে. ২৮৮৮) জাবির (রাঃ) ও আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) তারা বলেন, আমরা উচ্চৈঃস্বরে হাজ্জের তালবিয়াহ্ পাঠ করতে করতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মাক্কায় উপনীত হলাম। (ই.ফা. ২৮৯০, ই.সে. ২৮৮৯) আবূ নায্রাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, (তামাত্তু’ হাজ্জ ও মুত্’আহ্ বিবাহ) সম্পর্কে ইবনু ‘আব্বাস ও ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর মধ্যে মতবিরোধ চলছে। জাবির (রাঃ) বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে তা করেছি। এরপর ‘উমার (রাঃ) আমাদের তা করতে নিষেধ করেন। অতএব আমরা আর কখনও তা করিনি। (ই.ফা. ২৮৯১, ই.সে. ২৮৯০)

【34】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তালবিয়াহ্ পাঠ এবং কুরবানীর জন্তু প্রসঙ্গে

আনাস (রাঃ) আলী (রাঃ) ইয়ামান থেকে আগমন করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন : তুমি কিসের ইহরাম বেঁধেছ? তিনি বললেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুরূপ উদ্দেশে ইহরাম বেঁধেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার সাথে কুরবানীর পশু না থাকলে আমি (‘উমরাহ্ করার পর) ইহরাম খুলে ফেলতাম। (ই.ফা. ২৮৯২, ই.সে. ২৮৯১) সালীম ইবনু হাইয়্যান (রহঃ) থেকে এ সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২৮৯৩, ই.সে. ২৮৯২) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এভাবে হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ উভয়ের তালবিয়াহ্ পাঠ করতে শুনেছি : “লাব্বায়কা ‘উম্রাতান ওয়া হাজ্জান, লাব্বায়কা ‘উম্রাতান ওয়া হাজ্জান”। (ই.ফা. ২৮৯৪. ই.সে. ২৮৯৩) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : আমি ‘উমরাহ্ ও হাজ্জ উভয়ের ইহরাম বাঁধছি। (ই.ফা. ২৮৯৫. ই.সে. ২৮৯৪) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, সে সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা (আঃ) নিশ্চিত রাওহা উপত্যকায় হাজ্জ অথবা ‘উমরাহ্‌ অথবা উভয়ের তালবিয়াহ্‌ পাঠ করবেন। [২১] (ই.ফা. ২৮৯৬. ই.সে. ২৮৯৫) ইবনু শিহাব (রহঃ) এ সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, “সে সত্তার শপথ! যাঁর হাতে মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রাণ”। (ই.ফা. ২৮৯৭. ই.সে. ২৮৯৬) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ... পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ২৮৯৮. ই.সে. ২৮৯৭)

【35】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ‘উমরার সংখ্যা ও সময়

আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারবার ‘উমরাহ্ করেছেন এবং হাজ্জের সাথের ‘উমরাহ্ ব্যতীত সকল ‘উমরাহ্ই যুল ক্বা’দায় করেন। (১) হুদায়বিয়াহ্ থেকে বা হুদায়বিয়ার সময়ের ‘উমরাহ্ যুল ক্বা’দাহ্ মাসে, (২) পরবর্তী বছরের ‘উমরাহ্ যুল ক্বা’দাহ্ মাসে, (৩) জি’রানাহ্ থেকে কৃত ‘উমরাহ, যেখানে হুনায়নের গনীমাতের সম্পদ বণ্টন করা হয়েছিল, সে ‘উমরাহ্ যুল ক্বা’দাহ্ মাসে এবং (৪) আর একটি ‘উমরাহ্ যা হাজ্জের সাথে করেন। (ই.ফা. ২৮৯৯. ই.সে. ২৮৯৮) ক্বাতাদাহ্‌ (রহঃ) আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতবার হাজ্জ করেছেন? তিনি বললেন, একবার এবং ‘উমরাহ্‌ করেছেন চারবার।... অবশিষ্ট বর্ণনা হাদ্দাদের হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ২৯০০, ই.সে. ২৮৯৯) আবূ ইসহাক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে থেকে কয়বার যুদ্ধ করেছেন? তিনি বললেন, সতেরবার। রাবী বলেন, যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) আমাকে আরও বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঊনিশবার যুদ্ধ করেছেন এবং তিনি হিজরাত করার পরে একবার হাজ্জ করেছেন, তা হ’ল বিদায় হাজ্জ। আবূ ইসহাক্ব আরও বলেন, তিনি মাক্কাহ্ থেকেও একবার হাজ্জ করেছেন। (ই.ফা. ২৯০১, ই.সে. ২৯০০) ‘উরওয়াহ্‌ ইবনু যুবায়র (রহঃ) আমি ও ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ)-এর ঘরে ঠেস দিয়ে বসেছিলাম এবং আমরা মিসওয়াক দিয়ে তার দাঁত মাজার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আবূ ‘আবদুর রহমান (ইবনু ‘উমার)! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি রজব মাসে ‘উমরাহ্‌ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি (‘উরওয়াহ্‌) বললাম, হে আম্মা! আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন আবূ ‘আবদুর রহমান কী বলছেন? তিনি বললেন, সে কী বলছে? আমি বললাম, তিনি বলছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রজব মাসে ‘উমরাহ্‌ করেছেন। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা আবূ ‘আবদুর রহমানকে ক্ষমা করুন। আমার জীবনের শপথ, তিনি রজব মাসে কখনও ‘উমরাহ্‌ করেননি। আর তিনি যখনই ‘উমরাহ্‌ করেছেন, অবশ্যই আবূ ‘আবদুর রহমান তাঁর সঙ্গে ছিল। রাবী বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) কথাগুলো শুনছিলেন, কিন্তু তিনি হ্যাঁ-ও বলেননি এবং না-ও বলেননি, বরং নীরব ছিলেন। (ই.ফা. ২৯০২, ই.সে. ২৯০১) মুজাহিদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ও ‘উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র মাসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘আয়িশার হুজরায় বসা ছিলেন এবং লোকেরা মাসজিদে চাশ্‌তের সলাত আদায় করছিল। আমরা এদের সলাত সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, তা বিদ’আত। তাকে ‘উরওয়াহ্ বললেন, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতবার ‘উমরাহ্ করেছেন? তিনি বললেন, চারটি ‘উমরাহ্, এর একটি রজব মাসে। আমরা তার কথা অসত্য মনে করা ও তা রদ করা অপছন্দ করলাম। আমরা হুজরাহ থেকে ‘আয়িশা (রাঃ)-এর মিসওয়াক করার শব্দ শুনতে পেলাম। ‘উরওয়াহ্ বললেন, হে উম্মুল মু’মিনীন! আবূ ‘আবদুর রহমান কী বলেছেন তা কি আপনি শুনছেন না? তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সে কী বলে? ‘উরওয়াহ্ বললেন, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারবার ‘উমরাহ্ করেছেন, এর একটি ছিল রজব মাসে। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা আবূ ‘আবদুর রহমানকে রহম করুন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই ‘উমরাহ্ করেছেন, সে তার সাথেই ছিল। তিনি কখনও রজব মাসে ‘উমরাহ্ করেননি। (ই.ফা. ২৯০৩, ই.সে. ২৯০২)

【36】

রমাযান মাসের ‘উমরার ফাযীলাত

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক আনসারী মহিলাকে বললেন যার নাম ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) উল্লেখ করেছিলেন কিন্তু আমি তার নাম ভুলে গেছি- আমাদের সাথে হাজ্জ করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? মহিলা বলল, আমাদের পানি বহনকারী মাত্র দু’টি উট আছে। আমার ছেলের বাপ (স্বামী) ও তার ছেলে এর একটিতে চড়ে হাজ্জ করেন এবং অপরটি আমাদের জন্য রেখে যান পানি বহনের উদ্দেশে। তিনি বললেন, রমাযান মাস এলে তুমি ‘উমরাহ্‌ কর। কারণ এ মাসের ‘উমরাহ্‌ একটা হাজ্জের সমান। (ই.ফা. ২৯০৪, ই.সে. ২৯০৩) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু সিনান নাম্নী এক আনসারী মহিলাকে বললেনঃ আমাদের সাথে হাজ্জ করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? মহিলা বলল, অমুকের পিতা- তার স্বামীর দু’টি পানি বহনকারী উট আছে। এর একটি নিয়ে সে ও তার ছেলে হাজ্জে গিয়েছে। অপরটির সাহায্যে আমাদের গোলাম পানি বহন করছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে রমাযান মাসের ‘উমরাহ্ হাজ্জের সমান কিংবা তিনি বলেছেন, আমাদের সঙ্গে একটি হাজ্জের সমান। (ই.ফা. ২৯০৫, ই.সে. ২৯০৪)

【37】

উচ্চ গিরিপথ দিয়ে মাক্কায় প্রবেশ, নিম্নপথ দিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান এবং যে পথ দিয়ে শহর থেকে বের হয়েছে তার বিপরীত পথ দিয়ে সেখানে প্রবেশ করা মুস্তাহাব

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শাজারার পথ দিয়ে (মাদীনাহ্ থেকে) বের হতেন এবং মু’আর্রাস-এর পথ দিয়ে সেখানে প্রবেশ করতেন। তিনি মাক্কায় প্রবেশকালে উচ্চ গিরিপথ দিয়ে প্রবেশ করতেন এবং নিম্নপথ দিয়ে বের হতেন। (ই.ফা. ২৯০৬, ই.সে. ২৯০৫) ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ)-এর সূত্র উক্ত সানাদে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু রাবী বলেন, যুহায়রের রিওয়ায়াতে রয়েছে, বাত্বহার দিকের উচ্চপথ। (ই.ফা. ২৯০৭, ই.সে. ২৯০৬) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাক্কায় পৌঁছলেন, তখন উচ্চ এলাকা দিয়ে প্রবেশ করলেন এবং নীচু এলাকা দিয়ে বের হলেন। (ই.ফা. ২৯০৮, ই.সে. ২৯০৭) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ্ বিজয়ের বছর মাক্কার উচ্চভূমিতে অবস্থিত ‘কাদা’ টিলা দিয়ে প্রবেশ করেন। হিশাম বলেন, আমার পিতা উভয় স্থান দিয়েই প্রবেশ করতেন, তবে অধিকাংশ সময় ‘কাদা’ টিলা দিয়ে প্রবেশ করতেন। (ই.ফা. ২৯০৯, ই.সে. ২৯০৮)

【38】

মাক্কায় প্রবেশের সংকল্প করলে ‘যী ত্বিওয়াতে’ রাত যাপন করা এবং গোসল করে দিনের বেলা মাক্কায় প্রবেশ করা মুস্তাহাব

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যী ত্বিওয়া নামক স্থানে ভোর পর্যন্ত রাত্রি যাপন করলেন, অতঃপর মাক্কায় প্রবেশ করলেন। নাফি‘ (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-ও তাই করতেন। ইবনু সা‘ঈদের বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে ফাজ্‌রের সলাত আদায় করলেন। ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) বলেন, অথবা তিনি (‘উবায়দুল্লাহ) বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এখানে সকাল পর্যন্ত অবস্থান করলেন। (ই.ফা. ২৯১০, ই.সে. ২৯০৯) নাফি‘ (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) যী ত্বিওয়ায় ভোর পর্যন্ত রাত যাপন না করে মাক্কায় উপনীত হতেন না। তিনি (সেখানে) গোসল করতেন, অতঃপর দিনের বেলায় মাক্কায় প্রবেশ করতেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও তাই করতেন বলে তিনি বলেছেন। (ই.ফা. ২৯১১, ই.সে. ২৯১০) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কায় আগমন করলে প্রথম যী ত্বিওয়ায় অবতরণ করতেন, সেখানে রাত যাপন করতেন, এরপর ফজরের সলাত আদায় করতেন (অতঃপর মাক্কাহ্ শহরে প্রবেশ করতেন)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ সলাতের স্থান ছিল একটি অসমতল টিলার উপর, সেখানে নির্মিত মাসজিদে নয়, বরং নিম্নদিকে অবস্থিত টিলায়। (ই.ফা. ২৯১২, ই.সে. ২৯১১) নাফি‘ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার কাছে বর্ণনা করেন : রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ও কা‘বার দীর্ঘ পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত দুই উপত্যকার দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন। টিলার পাশে নির্মিত মাসজিদ তাঁর বাঁ দিকে থাকত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাতের স্থান এ কালো টিলার পাদদেশে দশ হাত বা তার চেয়ে সামান্য কমবেশি দূরত্বে অবস্থিত ছিল। তিনি দুই টিলার দিকে মুখ করে সলাত আদায় করলেন যা তাঁর ও কা‘বার পার্শ্ববর্তী বড় পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত ছিল। তাঁর উপর আল্লাহর রহমাত ও শান্তি বর্ষিত হোক। (ই.ফা. ২৯১৩, ই.সে. ২৯১২)

【39】

উমরার ত্বওয়াফে এবং হাজ্জের প্রথম ত্বওয়াফে রামাল (দ্রুত পদক্ষেপে অতিক্রম) করা মুস্তাহাব

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়তুল্লাহ্য় প্রথমবারের ত্বওয়াফে তিন চক্কর দ্রুত পদক্ষেপে এবং চার চক্কর স্বাভাবিক পদক্ষেপে ত্বওয়াফ করতেন। তিনি সাফা-মারওয়ার মাঝে সা’ঈর সময় (বাত্বনুল মাসীল) মাসীল উপত্যকার মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়াতেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ)-ও তাই করতেন। (ই.ফা. ২৯১৪, ই.সে. ২৯১৩) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথমে মাক্কায় পৌঁছে হাজ্জ ও ‘উমরার জন্য বায়তুল্লাহ্র যে ত্বওয়াফ করতেন, তাতে তিন চক্কর দ্রুত পদক্ষেপে এবং চার চক্কর স্বাভাবিক পদক্ষেপে সম্পন্ন করতেন। অতঃপর দু’রাক’আত সালাত আদায় করতেন। অতঃপর সাফা-মারওয়ার মাঝে সা’ঈ করতেন। (ই.ফা. ২৯১৫, ই.সে. ২৯১৪) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আমি দেখেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কায় পৌঁছে যখন হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করতেন, তখন তিনি সাত চক্করের মধ্যে তিন চক্কর দ্রুত পদক্ষেপে সমাধান করতেন। (ই.ফা. ২৯১৬, ই.সে. ২৯১৫) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজারে আসওয়াদ থেকে শুরু করে হাজারে আসওয়াদ পর্যন্ত তিন চক্কর দ্রুত পদক্ষেপে এবং চার চক্কর স্বাভাবিক গতিতে সম্পন্ন করেছেন। (ই.ফা. ২৯১৭, ই.সে. ২৯১৬) নাফি‘ (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) হাজারে আসওয়াদ থেকে হাজারে আসওয়াদ পর্যন্ত দ্রুত পদক্ষেপে ত্বওয়াফ করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছেন। (ই.ফা. ২৯১৮, ই.সে. ২৯১৭) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দেখেছি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজারে আসওয়াদ থেকে দ্রুত পদক্ষেপে তিন চক্কর দিয়েছেন এবং হাজারে আসওয়াদে পৌঁছে শেষ করেছেন। (ই.ফা. ২৯১৯, ই.সে. ২৯১৮) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দ্রুত পদক্ষেপে হাজারে আসওয়াদ থেকে হাজারে আসওয়াদ পর্যন্ত তিন ত্বওয়াফ সম্পন্ন করেছেন। (ই.ফা. ২৯২০, ই.সে. ২৯১৯) আবূ তুফায়ল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, বায়তুল্লাহর চারদিক তিনবার দ্রুত গতিতে এবং চারবার স্বাভাবিক গতিতে প্রদক্ষিণ করা কি আপনি সুন্নাত মনে করেন? আপনার সম্প্রদায়ের লোকেরা তা সুন্নাত মনে করে। তিনি বললেন, তারা সত্য বলেছে এবং অসত্যও বলেছে। রাবী বলেন, আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম- “তারা সত্য বলেছে এবং অসত্য বলেছে”-আপনার এ কথার ব্যাখ্যা কী? তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কায় আগমন করলে মুশরিকরা বলল, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণেরা শারীরিক দূর্বলতার কারণে বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ করতে সক্ষম হবে না। তারা তাঁর প্রতি হিংসা পোষণ করত। তাই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণকে দ্রুত পদক্ষেপে তিনবার এবং স্বাভাবিক গতিতে চারবার (বায়তুল্লাহ) প্রদক্ষিণ করার নির্দেশ দেন। আমি তাঁকে (পুনরায়) বললাম, আপনি আমাকে সাফা-মারওয়ার মাঝে সওয়ার অবস্থায় প্রদক্ষিণ সম্পর্কে অবহিত করুন, তা কি সুন্নাত? কারণ আপনার সম্প্রদায়ের লোকেরা মনে করে তা সুন্নাত। তিনি বললেন, তারা সত্য বলেছে এবং অসত্যও বলেছে। আমি তাকে বললাম, “তারা সত্য বলেছে এবং অসত্যও বলেছে”-আপনার এ কথার ব্যাখ্যা কী? তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কায় এলেন। তাঁর আশেপাশে প্রচুর লোক সমাগম হলো। এমনকি যুবতী মেয়েরা পর্যন্ত (তাঁকে একটু দেখার জন্য) ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। লোকেরা বলাবলি করছিল, ইনি মুহাম্মাদ ইনি মুহাম্মাদ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে থেকে লোকদেরকে হটিয়ে দেয়া হতো না। তাঁর আশেপাশে প্রচুর লোক সমাগম হবার কারণে তিনি (উষ্ট্রীতে) আরোহণ করেন, অথচ স্বাভাবিক গতিতে পদব্রজে যাওয়া ও সা‘ঈ করা উত্তম। (ই.ফা. ২৯২১, ই.সে. ২৯২০) আল জুরায়রী (রহঃ) সূত্রে অত্র সানাদ অনুরূপ বর্ণিত। তিনি বলেন, “তারা মাক্কাবাসী হিংসুক সম্প্রদায়”। তবে তিনি (আরবী) বলেননি তাঁরা তার সঙ্গে হিংসা করে। (ই.ফা. ২৯২২, ই.সে. ২৯২১) আবূ তুফায়ল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)–কে বললাম, আপনার সম্প্রদায় বলে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়তুল্লাহ্‌র ত্বওয়াফে ও সাফা-মারওয়ার সা‘ঈতে রামাল করেছেন, আর এটা সুন্নাত। তিনি বললেন, তারা সত্য বলেছে এবং অসত্য বলেছে। (ই.ফা. ২৯২৩, ই.সে. ২৯২২) আবুত্ব-তুফায়ল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললাম, আমি যেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখছি। তিনি বললেন, আমার কাছে তাঁর বিবরণ পেশ কর। তিনি বললেন, আমি তাঁকে মারওয়ার নিকট একটি উষ্ট্রীর পিঠে আরোহিত অবস্থায় দেখেছি। তাঁর চারপাশে লোকের ভীড় ছিল। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, তিনিই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। কারণ সাহাবীগণের তাড়িয়ে দেয়া হতো না এবং তাদের ধমকও দেয়া হতো না। (ই.ফা. ২৯২৪, ই.সে. ২৯২৩) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ মাক্কায় আগমন করলেন। ইয়াসরিবের জ্বর তাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছিল। মুশরিকরা বলল, আগামীকাল তোমাদের এখানে একদল লোক আসবে- যাদেরকে জ্বরে দুর্বল করে দিয়েছে এবং তারা তাতে ভীষণভাবে আক্রান্ত হয়েছে। মুশরিকরা হাতীম-এ বসে থাকল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণকে নির্দেশ দিলেন, তারা যেন তিন চক্কর দ্রুতপদে এবং হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝখানে স্বাভাবিক গতিতে চলে- যাতে মুশরিকদেরকে তাদের বীরত্ব দেখানো যায়। মুশরিকরা বলল, তোমরা তো এদের সম্পর্কে ধারণা করেছিলে যে, জ্বর তাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছে অথচ তারা এমন শক্তিশালী। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দয়াপরবশ হয়ে তাদেরকে সাত চক্কর দ্রুত পদক্ষেপে সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেননি (যাতে তারা ক্লান্ত হয়ে না যায়)। (ই.ফা. ২৯২৫, ই.সে. ২৯২৪) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বরেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এজন্য দ্রুত পদক্ষেপে বায়তুল্লাহ-এর ত্বওয়াফ করেছেন- যাতে তিনি মুশরিকগণকে স্বীয় শক্তি প্রদর্শন করতে পারেন। (ই.ফা. ২৯২৬, ই.সে. ২৯২৫)

【40】

ত্বওয়াফের সময় দুই রুকনে ইয়ামানীতে চুম্বন করা মুস্তাহাব, অপর দুই (শামী) রুকন ব্যতীত

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দুই ইয়ামানী রুকন ব্যতীত বায়তুল্লাহর অন্য কিছু স্পর্শ করতে দেখিনি। (ই.ফা. ২৯২৭, ই.সে. ২৯২৬) সালিম (রহঃ) তার পিতার তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুক্নে আসওয়াদ (হাজারে আসওয়াদ সংযুক্ত কোণ) এবং তৎসংলগ্ন দিকের কোণ যা জুমাহী গোত্রের বসতির দিকে অবস্থিত, ব্যতীত বায়তুল্লাহর আর কোন রুকন স্পর্শ করতেন না। (ই.ফা. ২৯২৮, ই.সে. ২৯২৭) ‘আবদুল্লাহ (ইবনু ‘উমার) (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজারে আসওয়াদ ও রুক্নে ইয়ামানী ব্যতীত আর কিছু স্পর্শ করতেন না। (ই.ফা. ২৯২৯, ই.সে. ২৯২৮) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এ দুই রুক্ন অর্থাৎ ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদ কোণ স্পর্শ করা পরিত্যাগ করিনি- যখন থেকে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তা স্পর্শ করতে দেখেছি। তা কষ্টকর বা সুবিধাজনক যে কোন অবস্থায় হোক না কেন। (ই.ফা. ২৯৩০, ই.সে. ২৯২৯) নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে হাজারে আসওয়াদ স্বহস্তে স্পর্শ করে তাতে চুমু খেতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যে দিন তা করতে দেখেছি- তখন থেকে আমি তা কখনো পরিত্যাগ করিনি। (ই.ফা. ২৯৩১, ই.সে. ২৯৩০) আবূ তুফায়ল আল বাক্‌রী (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দুই রুক্‌নে ইয়ামানী ব্যতীত কখনও অন্য কিছু স্পর্শ করতে দেখিনি। (ই.ফা. ২৯৩২, ই.সে. ২৯৩১)

【41】

ত্বওয়াফের সময় হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করা মুস্তাহাব

সালিম (রহঃ) তাঁর পিতা তাঁকে বর্ণনা করতে যেয়ে বলেছেন যে, ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হাজারে আসওয়াদে চুম্বন করে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি নিশ্চিত জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র। আমি যদি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখতাম তবে আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। অনুরূপ একটি হাদীস যায়দ ইবনু আসলাম থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২৯৩৩, ই.সে. ২৯৩২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘উমার (রাঃ) হাজারে আসওয়াদকে চুম্বন করলেন এবং বললেন, আমি তোমাকে চুম্বন করছি বটে কিন্তু অবশ্যই জানি যে, তুমি একটি পাথর মাত্র। কিন্তু আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তোমায় চুম্বন করতে দেখেছি। (ই.ফা. ২৯৩৪, ই.সে. নেই) ‘আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি লৌহ মানব অর্থাৎ ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে কৃষ্ণ পাথর হাজারে আসওয়াদ চুমো দিতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে চুম্বন করব এবং আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একটি পাথর, তুমি কারও ক্ষতিও করতে পার না এবং উপকারও করতে পার না। আমি যদি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখতাম তবে আমি তোমায় চুম্বন করতাম না। (ই.ফা. ২৯৩৫, ই.সে. ২৯৩৩) ‘আবিস ইবনু রবীআ‘হ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উমার (রাঃ)-কে হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন, আমি অবশ্যই তোমায় চুম্বন করছি এবং আমি জানি যে, তুমি অবশ্যই একটি পাথর। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে আমি কখনও তোমায় চুম্বন করতাম না। (ই.ফা. ২৯৩৬, ই.সে. ২৯৩৪) সুওয়ায়দ ইবনু গাফালাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উমার (রাঃ)-কে হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করতে এবং তা জড়িয়ে ধরতে দেখেছি। তিনি বলেছেন, আমি তোমার প্রতি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গভীর ভালোবাসা লক্ষ্য করেছি। (ই.ফা. ২৯৩৭, ই.সে. ২৯৩৫) সুফ্‌ইয়ান (রহঃ) এ সূত্রে উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, কিন্তু আমি আবুল ক্বাসিম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তোমার প্রতি গভীর ভালোবাসা পোষণ করতে দেখেছি। এ বর্ণনায় “তিনি তা জড়িয়ে ধরলেন” কথার উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ২৯৩৮, ই.সে. ২৯৩৬)

【42】

উট ও অন্যান্য সওয়ারীতে আরোহণ করে ত্বওয়াফ করা এবং আরোহীর জন্য লাঠি ইত্যাদির সাহায্যে পাথর স্পর্শ করা জায়িয

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বিদায় হাজ্জে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটে সওয়ার হয়ে বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ করেন এবং একটি ছড়ির (মিহজান) সাহায্যে রুকন (পাথর) স্পর্শ করেন। (ই.ফা. ২৯৩৯, ই.সে. ২৯৩৭) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উটনীর উপর থেকে (বায়তুল্লাহ) ত্বওয়াফ করেন এবং তাঁর ছড়ির সাহায্যে পাথর স্পর্শ করেন- যেন লোকেরা তাঁকে দেখতে পায়। তিনি উঁচুতে থাকেন যাতে তারা তাঁকে মাসআলাহ্-মাসায়িল জিজ্ঞেস করতে পারে, কেননা তিনি লোক দ্বারা বেষ্টিত ছিলেন। (ই.ফা. ২৯৪০, ই.সে. ২৯৩৮) আবূ যুবায়র (রহঃ) তিনি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন : বিদায় হাজ্জে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওয়ারীতে আরোহণ করে বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ ও সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করেছেন-যাতে লোকেরা তাঁকে দেখতে পায়, তিনি সবার উপরে থাকেন এবং তার নিকট তারা (প্রয়োজনের বিষয়) জিজ্ঞেস করতে পারে। কারণ লোকেরা তাঁকে বেষ্টন করে রেখেছিল। ইবনু খাশ্রমের বর্ণনায় “তারা যেন তাঁকে প্রয়োজনীয় বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে পারে” কথাটুকু উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ২৯৪১, ই. সে. ২৯৩৯) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উটে সওয়ার হয়ে কা‘বার চতুর্দিকে প্রদক্ষিন করেন এবং রুকন স্পর্শ করেন- লোকদের তাঁর নিকট থেকে হটিয়ে দেয়াটা অপছন্দ হওয়ার কারণে। (ই.ফা. ২৯৪২, ই.সে. ২৯৪০) মা‘রূফ ইবনু খার্রাবূয (রহঃ তিনি বলেন, আমি আবূ তুফায়ল (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ করতে, তাঁর সাথের লাঠি দিয়ে রুকন স্পর্শ করতে এবং লাঠিতে চুম্বন করতে দেখেছি। (ই.ফা. ২৯৪৩, ই.সে. ২৯৪১) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আমার অসুস্থতার কথা জানালাম। তিনি বললেন, তুমি সওয়ারী অবস্থায় লোকদের পেছন থেকে ত্বওয়াফ কর। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি (সেভাবে) ত্বওয়াফ করলাম- তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়তুল্লাহ্র পাশে সলাত আদায় করছিলেন। আর তিনি তাতে তিলাওয়াত করছিলেন : আত্ব তূর, ওয়া কিতাবিম্ মাস্তূর। (ই.ফা. ২৯৪৪, ই. সে. ২৯৪২)

【43】

সাফা-মারওয়ার মাঝে দৌড়ানো (সা‘ঈ) হাজ্জের অন্যতম রুকন, এ ছাড়া হাজ্জ শুদ্ধ হয় না

হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) থেকে তার পিতা সূত্র তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বললাম, আমি মনে করি কোন ব্যক্তি সাফা-মারওয়াহ্‌ পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সা‘ঈ না করলে তার কোন ক্ষতি হবে না। তিনি জিজ্ঞেস করলেন কেন? আমি বললাম, কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেনঃ ‘সাফা-মারওয়াহ্‌ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম ......” – (সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৫৮)। তখন ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, কোন ব্যক্তি সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ না করলে আল্লাহ তার হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ পূর্ণ করেন না। তুমি যা বলেছ যদি তাই হতো তবে আয়াতটি এভাবে হতো, “ঐ দুই পাহাড়ের মাঝে না দৌড়ালে কোন অসুবিধা নেই।” তুমি কি জান ব্যাপারটি কী ছিল? ব্যাপার তো ছিল এই যে, আনসারগণ জাহিলী যুগে দু’টি প্রতিমার নামে সমুদ্রের তীরে ইহরাম বাঁধত। একটির নাম ইনসাফ, অপরটির নাম নায়িলাহ্। তারা এসে সাফা-মারওয়াহ্ সা‘ঈ করত। অতঃপর মাথা কামাতো। ইসলামের আবির্ভাবের পর তারা জাহিলী যুগে যা করত, সে কারণে সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করা খারাপ মনে করল। তাই আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন : “সাফা-মারওয়াহ্ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম.......।” অতঃপর লোকেরা সা‘ঈ করে। [২২] (ই.ফা. ২৯৪৫, ই.সে. ২৯৪৩) ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বললাম, আমি যদি সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ না করি তবে এতে আমার জন্য কোন দোষ মনে করি না। তিনি বললেন, কেন? আমি বললাম, কেননা মহামহিম আল্লাহ বলেন: “সাফা-মারওয়াহ্ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম ....।” তখন ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, তুমি যেরূপ বলছ, যদি তাই হতো, তবে আয়াতের বক্তব্য এরূপ হতো : “এ দুই পাহাড়ের মাঝে না দৌড়ালে কোন দোষ নেই।” এ আয়াত আনসারদের সম্পর্কে নাযিল করা হয়। জাহিলী যুগে তারা যখন লাব্বায়কা বলত- তা মানাৎ দেবীর নামে লাব্বায়কা ধ্বনি করত। তাই তারা মনে করত যে, সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করা তাদের জন্য ঠিক নয়। তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে (বিদায়) হাজ্জে এসে তাঁর নিকট এ বিষয়ে উল্লেখ করলে আল্লাহ উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন। অতএব আমার জীবনের শপথ! যে সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ না করে- আল্লাহ তার হাজ্জ পূর্ণ করবেন না। (ই.ফা. ২৯৪৬, ই.সে. ২৯৪৪) ‘উরওয়াহ ইবনু যুবায়র (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বললাম, কোন ব্যক্তি সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ না করলে এতে আমি দোষের কিছু দেখি না এবং আমি নিজেও এতদুভয়ের মাঝে সা‘ঈ বর্জন করায় কিছু মনে করি না। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, হে বোনপুত্র! তুমি যা বলেছ তা মন্দ বলেছ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সাফা-মারওয়ার মাঝে) ত্বওয়াফ (সা‘ঈ) করেছেন এবং মুসলিমরাও ত্বওয়াফ করেছে। অতএব তা সুন্নাত। যে সব লোক (জাহিলি যুগে) ‘মুশাল্লাল’ নামক স্থানে অবস্থিত নাফরমান মানাৎ দেবীর নামে ইহরাম বাঁধত, তারা সাফা ও মারওয়ার মাঝে ত্বওয়াফ করত না। ইসলামের আবির্ভাবের পর আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেন, “সাফা-মারওয়াহ্ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কেউ কা‘বাহ্ ঘরের হাজ্জ কিংবা ‘উমরাহ্ পালন করে, এ দু’টির মধ্যে প্রদক্ষিণ করলে এতে তার কোন পাপ নেই .....” – (সূরাহ আল বাক্বারাহ্ ২ :১৫৮)। তুমি যা বলেছ, ব্যাপারটি যদি তদ্রূপ হতো তবে বলা হতো, “এ দু’টির মধ্যে প্রদক্ষিণ না করলে তার কোন পাপ নেই।” ইমাম যুহ্রী (রহঃ) বলেন, এ প্রসঙ্গটি আমি আবূ বকর ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু হারিস ইবনু হিশামের কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি তাতে বিস্মিত হলেন এবং বললেন, এর নামই জ্ঞান। তিনি আরও বললেন, জ্ঞানবান সমাজের অনেক লোককে বলতে শুনেছি-সাফা-মারওয়ার মাঝে ত্বওয়াফ বর্জনকারী আরবের অধিবাসীরা বলত, এ দুই পাথরের মাঝে ত্বওয়াফ করা জাহিলী যুগের কাজ। আর আনসার সম্প্রদায়ের লোকেরা বলত, আমাদেরকে বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং সাফা-মারওয়ার মাঝে ত্বওয়াফের নির্দেশ দেয়া হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন : “সাফা-মারওয়াহ্ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম।” আবূ বকর ইবনু ‘আবদুর রহমান বলেন, আমিও মনে করি যে, উল্লেখিত দুই সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে উপরোক্ত আয়াত নাযিল হয়েছে। (ই.ফা. ২৯৪৭, ই.সে. ২৯৪৫) উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম .... পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে এ বর্ণনায় আছে- তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা সাফা-মারওয়ার মাঝে ত্বওয়াফকে খারাপ করি। তখন আল্লাহ তা’আলা নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেন : “সাফা-মারওয়াহ্ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। সুতরাং যে কেউ বায়তুল্লাহর হাজ্জ কিংবা ‘উমরাহ্ পালন করে- এ দুটির মাঝে ত্বওয়াফ করলে তার কোন দোষ নেই।” ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতদুভয়ের মাঝে ত্বওয়াফ করাকে বিধিবদ্ধ করেছেন। অতএব এতদুভয়ের মাঝে ত্বওয়াফ বর্জন করার কারো অধিকার নেই। (ই.ফা. ২৯৪৮, ই.সে. ২৯৪৬) ‘উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) তাকে অভিহিত করেছেন যে, আনসার সম্প্রদায় ও গাস্সান গোত্রের নিয়ম ছিল, তারা ইসলাম গ্রহণের পূর্বে মানাৎ দেবীর জন্য ইহরাম বাঁধত। অতএব তারা সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈ করাকে পাপ মনে করত। এটা ছিল তাদের পূর্ব-পুরুষদের রীতি যে, তাদের কোন ব্যক্তি মানাৎ দেবীর জন্য ইহরাম বাঁধলে সাফা-মারওয়ার মাঝে ত্বওয়াফ করত না। তারা ইসলাম গ্রহনের পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। তখন এ প্রসঙ্গে মহামহিম আল্লাহ নাযিল করেন : “সাফা-মারওয়াহ্ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। অতএব যে কেউ বায়তুল্লাহর হাজ্জ অথবা ‘উমরাহ্ পালন করে, এতদুভয়ের মাঝে ত্বওয়াফ করলে তার কোন দোষ নেই এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে সৎকাজ করলে আল্লাহ পুরস্কারদাতা ও সর্বজ্ঞ” – (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২ : ১৫৮) (ই.ফা. ২৯৪৯, ই.সে. ২৯৪৭) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আনসারগণ সাফা-মারওয়ার মাঝে ত্বওয়াফকে খারাপ কাজ মনে করত। অতএব এই সঙ্গে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয় : “সাফা-মারওয়াহ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। অতএব যে কোন ব্যক্তি বায়তুল্লাহর হাজ্জ অথবা ‘উমরাহ্ পালন করে এতদুভয়ের মাঝে ত্বওয়াফ করলে, তার কোন দোষ নেই ......।” (ই.ফা. ২৯৫০, ই.সে. ২৯৪৮)

【44】

সা‘ঈ একাধিবার করতে হবে না

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগণ সাফা-মারওয়ার মাঝে একবারের অধিক সা‘ঈ করেননি। (ই.ফা. ২৯৫১, ই.সে. ২৯৪৯) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) এ সূত্র উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, “একবার মাত্র সা‘ঈ (সাত চক্কর), তা হচ্ছে প্রথমবারের সা‘ঈ।” (ই.ফা. ২৯৫২, ই.সে. ২৯৫০)

【45】

কুরবানীর দিন জামরাতুল ‘আক্বাবায় পাথর নিক্ষেপ শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত হাজ্জ পালনকারীর তালবিয়াহ্ পাঠ করা মুস্তাহাব

উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আরাফার ময়দান থেকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর পিছনে তাঁর বাহনে আরোহণ করলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযদালিফার নিকটবর্তী পাহাড়ের বামপাশে পৌঁছে উটকে হাঁটু গেড়ে বসালেন, এরপর (নেমে গিয়ে) পেশাব করলেন এবং ফিরে এলেন। আমি তাঁকে ওযূর পানি ঢেলে দিলাম এবং তিনি সংক্ষেপে (অল্প পানি ব্যবহার করে) ওযূ সেরে নিলেন। এরপর আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! সলাতের সময় হয়েছে। তিনি বললেন, আরও সামনে গিয়ে সলাত আদায় করব। অতএব রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাহনে আরোহণ করলেন এবং মুযদালিফায় পৌঁছে সলাত আদায় করলেন। এরপর তিনি সকালবেলা ফাযল (রাঃ)–কে তাঁর (বাহনে) পিছন দিকে বসিয়ে রওনা হলেন। (ই.ফা. ২৯৫৩, ই.সে. ২৯৫১) কুরায়ব ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ফাযল –এর সূত্রে আমাকে অবহিত করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামরায় [২৩] পৌছার পূর্ব পর্যন্ত অনবরত তালবিয়াহ্‌ পাঠ করছিলেন। (ই.ফা. ২৯৫৩, ই.সে. ২৯৫১) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযদালিফায় ফায্লকে বাহনে তাঁর পিছনে বসালেন। রাবী বলেন, এরপর ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে অবহিত করলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামরাতুল ‘আক্বাবায় পাথর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত অনবরত তালবিয়াহ্ পাঠ করতে থাকেন। (ই.ফা. ২৯৫৪, ই.সে. ২৯৫২) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে তার ভাই ফায্‌ল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর বাহনে তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরাফাতে সন্ধ্যাবেলা এবং মুযদালিফায় ভোরবেলা লোকদের উদ্দেশে বললেন, যখন তারা অগ্রসর হচ্ছিল- “তোমরা ধীরে-সুস্থে অগ্রসর হও।” তিনিও নিজে উষ্ট্রীর গতি ধীর করে অগ্রসর হচ্ছিলেন এবং এভাবে মুহাস্‌সির পৌঁছলেন- যা মিনার অন্তর্গত। তিনি (এখানে) বললেন, তোমরা নুড়ি পাথর তুলে নাও যা জামরায় নিক্ষেপ করা হয়। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামরায় পাথর নিক্ষেপ পর্যন্ত অনবরত তালবিয়াহ্‌ পাঠ করতে থাকলেন। (ই.ফা. ২৯৫৫, ই.সে. ২৯৫৩) আবূ যুবায়র (রহঃ) এ সানাদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে রাবী এ কথাটি উল্লেখ করেননি –“রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামরায় পাথর নিক্ষেপ পর্যন্ত অনবরত তালবিয়াহ্‌ পাঠ করতে থাকলেন।” কিন্তু এতে উল্লেখ আছে: “নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিলেন (নিক্ষেপের জন্য) নুড়ি কিভাবে ধরবে।” (ই.ফা. ২৯৫৬, ই.সে. ২৯৫৪) ‘আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা মুযদালিফায় (সমবেত) ছিলাম। এ সময় যাঁর উপর সূরাহ বাক্বারাহ নাযিল হয়েছে, তাঁকে এ স্থানে বলতে শুনলাম: “লাব্বায়কা আল্ল-হুম্মা লাব্বায়কা।” (ই.ফা. ২৯৫৭, ই.সে. ২৯৫৫) ‘আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) মুযদালিফাহ্ রওনার প্রাক্কালে তালবিয়াহ্ পাঠ করলেন। বলা হ’ল, এ সম্ভবত বেদুঈন (হাজ্জের অনুষ্ঠানাদি সঠিকভাবে জানে না)। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, লোকেরা কি (রসূলের সুন্নাত) ভুলে গেছে, না পথভ্রষ্ট হয়েছে! যাঁর উপর সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ নাযিল হয়েছে, তাঁকে আমি এ স্থানে বলতে শুনেছি: “লাব্বায়কা আল্ল-হুম্মা লাব্বায়কা।” (ই.ফা. ২৯৫৮, ই.সে. ২৯৫৬) হুসায়ন (রহঃ) এ সানাদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২৯৫৯, ই.সে. ২৯৫৭) ‘আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ ও আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তারা বলেন, আমরা ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)–কে মুযদালিফায় বলতে শুনেছি যে, যাঁর উপর সূরাহ্ বাক্বারাহ্ নাযিল হয়েছে, তাঁকে আমি বলতে শুনেছি: “লাব্বায়কা আল্ল-হুম্মা লাব্বায়কা।” এরপর তিনি (ইবনু মাস‘ঊদ) তালবিয়াহ্ পাঠ করলেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে তালবিয়াহ্ পাঠ করলাম। (ই.ফা. ২৯৬০, ই.সে. ২৯৫৮)

【46】

‘আরাফাহ্ দিবসে মিনা থেকে ‘আরাফাতে যাবার পথে তালবিয়াহ্ ও তাকবীর পাঠ করার বর্ণনা

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার পিতা তিনি বলেন, আমরা সকালবেলা যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সাথে মিনা থেকে ‘আরাফার দিকে রওনা হলাম, তখন আমাদের মধ্যে কতক তালবিয়াহ্‌ পাঠকারী এবং কতক তাকবীর পাঠকারী ছিল। (ই.ফা. ২৯৬১, ই.সে. ২৯৫৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাঁর পিতা তিনি বলেন, আমরা ‘আরাফাহ্‌ দিবসের সকালবেলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সাথে ছিলাম। আমাদের মধ্যে কতক তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করছিল, আর কতক তালবিয়াহ্‌ পাঠ করছিল। আমরা তাকবীর ধ্বনি করেছি। অধঃস্তন রাবী (‘আবদুল্লাহ ইবনু আবু সালামাহ্‌) বলেন, আমি (‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহকে) বললাম, কী আশ্চর্য! আপনি তাকে (‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার) কেন জিজ্ঞেস করলেন না যে, আপনি এ ক্ষেত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে কী করতে দেখেছেন? (ই.ফা. ২৯৬২, ই.সে. ২৯৬০) মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর আস্ সাক্বাফী (রহঃ) তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)–এর সাথে সকালবেলা মিনা থেকে ‘আরাফায় যাওয়ার সময় তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা এ দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সাথে কিভাবে কী করতেন? তিনি বললেন, আমাদের কতক তালবিয়াহ্ পাঠ করত কিন্তু তাতে বাধা দেয়া হতো না এবং কতক তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করত কিন্তু তাতেও বাধা দেয়া হতো না। (ই.ফা. ২৯৬৩, ই.সে. ২৯৬১) মুহাম্মাদ ইবনু আবূ বকর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আরাফাহ্ দিবসের সকালবেলা আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)–কে জিজ্ঞেস করলাম, এ দিন আপনারা তালবিয়ার ক্ষেত্রে কী বলতেন? তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সাথে আমি ও তাঁর সাহাবীগণ এ পথ ভ্রমণ করেছি। আমাদের কতক ‘আল্ল-হু আকবার’ ধ্বনি উচ্চারণ করেছে এবং কতক তালবিয়াহ্ (লাব্বায়কা আল্ল-হুম্মা লাব্বায়কা) উচ্চারণ করেছে। এতে আমাদের কেউ কারো দোষ ধরেনি। (ই.ফা. ২৯৬৪, ই.সে. ২৯৬২)

【47】

‘আরাফাহ্ থেকে মুযদালিফায় প্রত্যাবর্তন এবং মুযদালিফায় এ রাতের মাগরিব ও ‘ইশার সালাত একত্রে আদায় করা মুস্তাহাব

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)–এর আযাদকৃত গোলাম কুরায়ব থেকে উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি তাকে বলতে শুনেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরাফাহ্‌ থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন, পাহাড়ের সরু পথের নিকট পৌঁছে বাহন থেকে নেমে পেশাব করলেন, এরপর হালকা ওযূ করলেন, পূর্ণ ওযূ নয়। আমি তাঁকে বললাম, সলাতের ওয়াক্ত হয়ে গেছে। তিনি বললেন, সামনে এগিয়ে সলাত আদায় করব। এরপর তিনি সওয়ারীতে আরোহণ করলেন, মুযদালিফায় পৌঁছে পূর্ণাঙ্গ ওযূ করলেন। এরপর সলাতের ইক্বামাত দেয়া হল এবং (এখানে) মাগরিবের সলাত আদায় করলেন। অতঃপর প্রত্যেকে নিজ নিজ উট বসাল (বিশ্রামের জন্য), এরপর ‘ইশার সলাতের ইক্বামাত দেয়া হল এবং তিনি ‘ইশার সলাত আদায় করলেন। এ দুই সলাতের মধ্যে তিনি অন্য কোন সলাত আদায় করেননি। (ই.ফা. ২৯৬৫, ই.সে. ২৯৬৩) উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আরাফাত থেকে প্রত্যাবর্তনের পথে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য কোন এক গিরিপথে গেলেন। এরপর আমি তাঁর ওযুর পানি ঢেলে দিলাম, এরপর বললাম, সলাত আদায় করবেন কি? তিনি বললেন, সামনে এগিয়ে সলাত আদায় করব। (ই.ফা. ২৯৬৬, ই.সে. ২৯৬৪) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)–এর আযাদকৃত গোলাম কুরায়ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)–কে বলতে শুনেছি: রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরাফাহ্ থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন। তিনি গিরিপথের নিকটে পৌঁছে বাহন থেকে নেমে পেশাব করলেন। উসামাহ্ এ কথা বলেননি যে, তিনি পানি ঢেলে দিয়েছেন। বরং বলেছেন, তিনি পানি চাইলেন এবং হালকাভাবে ওযূ করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি কি সলাত আদায় করবেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সলাত তো তোমার সম্মুখে রয়েছে। রাবী বলেন, এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলতে থাকলেন এবং মুযদালিফায় পৌঁছলেন। এরপর মাগরিব ও ‘ইশার সলাত আদায় করলেন। (ই.ফা. ২৯৬৭, ই.সে. ২৯৬৫) কুরায়ব (রহঃ) উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)–কে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনি যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সাথে তাঁর বাহনে আরোহণ করলেন, তখন ‘আরাফাহ্ দিবসের সন্ধ্যায় আপনারা কী করেছিলেন? তিনি বললেন, যে উপত্যকায় লোকেরা মাগরিবের সময় নিজের উটকে (বিশ্রামের জন্য) বসায়, সেখানে এলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উষ্ট্রী বসালেন এবং পেশাব করলেন। উসামাহ্ (রাঃ) পানি ঢেলে দেয়ার কথা বলেননি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযূর পানি চেয়ে আনলেন এবং হালকাভাবে ওযূ করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি কি সলাত আদায় করবেন? তিনি বললেন, সলাত তোমার সম্মুখে। এরপর তিনি সওয়ার হয়ে রওনা করলেন। অবশেষে আমরা মুযদালিফায় আসলাম। মাগরিবের সলাত আদায় করলেন। লোকেরা নিজ নিজ স্থানে উট বসাল কিন্তু মাল-সামান খুলল না, এমনকি ‘ইশার সলাতে দাঁড়ালেন এবং সালাত আদায় করলেন। এরপর লোকেরা মাল-সামান নামাল। আমি (কুরায়ব) বললাম, ভোর হওয়ার পর আপনারা কী করলেন? তিনি (উসামাহ্) বললেন, ফায্ল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁর বাহনে (তাঁর পিছনে) সওয়ার হলেন এবং আমি কুরায়শদের অগ্রভাগে পদব্রজে রওনা হলাম। (ই.ফা. ২৯৬৮, ই.সে. ২৯৬৬) উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) যে উপত্যকায় মাক্কার সম্ভ্রান্ত লোকেরা অবতরণ করত, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে অবতরণ করে পেশাব করলেন। তিনি পানি ঢেলে দেয়ার কথা উল্লেখ করেননি। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযূর পানি চাইলেন এবং হালকা ওযূ করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! সলাত। তিনি বললেন, সলাত সামনে এগিয়ে আদায় করা হবে। (ই.ফা. ২৯৬৯, ই.সে. ২৯৬৭) উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রহঃ) ‘আরাফাহ্ থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সওয়ারীতে পিছনে উপবিষ্ট ছিলেন। উপত্যকায় পৌঁছে তিনি তাঁর উটনী বসালেন, এরপর প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য গেলেন। তিনি ফিরে এলেন। আমি পাত্র থেকে পানি ঢেলে দিলাম এবং তিনি ওযূ করলেন, এরপর সওয়ার হলেন এবং মুযদালিফায় পৌঁছে তিনি মাগরিব ও ‘ইশার সালাত একত্রে আদায় করলেন। (ই.ফা. ২৯৭০, ই.সে. ২৯৬৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আরাফাহ্ থেকে প্রত্যাবর্তনের জন্য রওনা হলেন। উসামাহ্ (রাঃ) তাঁর পিছনে উপবিষ্ট ছিলেন। উসামাহ্ (রাঃ) বলেন, তিনি মুযদালিফায় পৌঁছা পর্যন্ত অনবরত চলতে থাকলেন। (ই.ফা. ২৯৭১, ই.সে. ২৯৬৯) হিশাম (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্র তিনি ('উরওয়াহ্‌) বলেন, উসামাহ্‌ (রাঃ)-কে আমার উপস্থিতিতে জিজ্ঞেস করা হল অথবা (অধঃস্তন রাবীর সন্দেহ) আমি উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাকে তাঁর সওয়ারীর পিছনে বসিয়ে ছিলেন, তখন তিনি কিভাবে চলেছিলেন? তিনি বললেন, তিনি ধীর গতিতে সওয়ারী চালালেন, যখন খোলা জায়গা পেলেন, তখন দ্রুতগতিতে হাঁকালেন। (ই.ফা. ২৯৭২, ই.সে. ২৯৭০) হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ (রহঃ) থেকে এ সূত্র অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হুমায়দের রিওয়ায়াতে আছে, রাবী হিশাম (রহঃ) বলেন, (আরবি) এর চেয়ে আরো দ্রুত গতিতে চলাকে (আরবি) বলা হয়। (ই.ফা. ২৯৭৩, ই.সে. ২৯৭১) আবূ আইয়ূব (রাঃ) তিনি বিদায় হাজ্জে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশার সালাত আদায় করেছেন। (ই.ফা. ২৯৭৪, ই.সে. ২৯৭২) ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) থেকে এ সূত্র উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইবনু রুমহ্‌ তার বর্ণনায় ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ আল খাত্বমীর সূত্রে উল্লেখ করেছেন যে, আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)-এর খিলাফাতকালে কূফার আমীর ছিলেন। (ই.ফা. ২৯৭৫, ই.সে. ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশার সলাত একত্রে আদায় করেন। (ই.ফা. ২৯৭৬, ই.সে. ২৯৭৩) ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, তার পিতা বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশার সলাত একত্রে আদায় করেছেন। তিনি এ দুই সলাতের মধ্যে অন্য কোন সলাত (সুন্নাত বা নাফ্ল) আদায় করেননি। তিনি মাগরিব তিন রাক‘আত এবং ‘ইশা দু’রাক‘আত আদায় করেছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-ও (মুযদালিফায়) অনুরূপভাবে সলাত আদায় করতেন এবং এ অবস্থায় তিনি ইন্তিকাল করেন। (ই.ফা. ২৯৭৭, ই.সে. ২৯৭৪) সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) তিনি (মুযদালিফায়) মাগরিব ও ‘ইশার সলাত এক ইক্বামাতে একই সাথে আদায় করেছেন। এরপর তিনি ইবনু ‘উমার (রাঃ) সম্পর্কে বলেছেন যে, তিনিও অনুরূপভাবে সলাত আদায় করেছেন। আর ইবনু ‘উমার (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ করেছেন। (ই.ফা. ২৯৭৮, ই.সে. ২৯৭৫) শু‘বাহ্‌ (রহঃ)-এর সূত্র এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। এতে উল্লেখ আছে, “তিনি একই ইক্বামাতে দু’ ওয়াক্তের সলাত আদায় করেছেন।” (ই.ফা. ২৯৭৯, ই.সে. ২৯৭৬) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মুযদালিফায়) মাগরিব ও ‘ইশার সলাত একত্রে (একই সময়ে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন নিয়্যাতে) আদায় করেছেন। তিনি এক ইক্বামাতেই মাগরিবের সলাত তিন রাক‘আত এবং ‘ইশার সলাত দু’রাক‘আত আদায় করেছেন। (ই.ফা. ২৯৮০, ই.সে. ২৯৭৭) সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) আমরা ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সাথে (‘আরাফাহ্‌ থেকে মুযদালিফায়) এলাম। তিনি আমাদের সাথে মাগরিব ও ‘ইশার সলাত এক ইক্বামাতে আদায় করেন। সলাত শেষ করে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ স্থানে আমাদের নিয়ে এভাবে সলাত আদায় করেছেন। (ই.ফা. ২৯৮১, ই.সে. ২৯৭৮)

【48】

কুরবানীর দিন, মুযদালিফায় ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথেই ফজরের সলাত আদায় করা মুস্তাহাব

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নির্ধারিত ওয়াক্তেই সলাত আদায় করতে দেখেছি। তবে মুযদালিফায় মাগরিব ও ‘ইশার সলাত আদায় করেছেন এবং রাতের ভোরে ফজরের সলাত নির্ধারিত সময়ের পূর্বে অর্থাৎ ওয়াক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আদায় করেছে। (ই.ফা. ২৯৮২, ই.সে. ২৯৭৯) আ‘মাশ (রহঃ)-এর সূত্র উক্ত সানাদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ বর্ণনার শেষাংশ নিম্নরূপঃ “ওয়াক্ত হবার সাথে সাথেই অন্ধকারের মধ্যে তা আদায় করেছেন।” (ই.ফা. ২৯৮৩, ই.সে. ২৯৮০)

【49】

দুর্বল ও বৃদ্ধদের, বিশেষতঃ মহিলাদের ভোর রাতে রাস্তায় ভিড় হবার পূর্বেই মুযদালিফাহ্ থেকে মিনায় পাঠানো এবং অন্যদের ফজর পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করা মুস্তাহাব

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, সাওদাহ্ (রাঃ) মুযদালিফার রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগেই এবং রাস্তায় জনতার ভিড় হবার পূর্বেই মিনার উদ্দেশে যাত্রার জন্য তাঁর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেন। তিনি ছিলেন স্থূলদেহী। (অধঃস্তন রাবী) আল-ক্বাসিম বলেন, (আরবি) শব্দের অর্থ (আরবি) (ভারী)। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে অনুমতি দিলেন। অতএব তিনি তাঁর আগেই রওনা হয়ে গেলেন এবং আমরা ফজর পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করলাম। তারপর আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে রওনা হলাম। আমিও যদি সাওদাহ (রাঃ)-এর মতো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অনুমতি নিয়ে আগে ভাগে চলে যেতাম, তবে তা আরও আনন্দদায়ক হতো- যে আনন্দ এখন আমি অনুভব করছি, তার তুলনায়। (ই.ফা. ২৯৮৪, ই.সে. ২৯৮১) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, সাওদাহ্ (রাঃ) ছিলেন ভারী ও স্থূলদেহী। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট মুযদালিফাহ্ থেকে রাত থাকতেই প্রস্থান করার অনুমতি চাইলেন। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) আরও বলেন, হায়! যদি সাওদাহ্ (রাঃ)-এর মতো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আমিও অনুমতি প্রার্থনা করতাম! ‘আয়িশা (রাঃ) ইমামের সাথে মুযদালিফাহ্ হতে রওনা হতেন। (ই.ফা. ২৯৮৫, ই.সে. ২৯৮২) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম আমিও যদি সাওদাহ্ (রাঃ)-এর অনুরূপ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করতাম! তিনি মিনায় পৌঁছে ফাজ্‌রের সলাত আদায় করেন এবং লোকদের পৌঁছার পূর্বেই জামরায় পাথর নিক্ষেপ করেন। ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বলা হ’ল, সাওদাহ্ (রাঃ) কি তাঁর নিকট অনুমতি চেয়েছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি ছিলেন স্থূলদেহী এবং ভারী, তাই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অনুমতি চেয়েছিলেন এবং তিনি তাকে অনুমতি দিয়েছিলেন। (ই.ফা. ২৯৮৬, ই.সে. ২৯৮৩) ‘আবদুর রহমান ইবনু ক্বাসিম (রহঃ) এ সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ২৯৮৭, ই.সে. ২৯৮৪) আসমা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমাকে আসমা (রাঃ) মুযদালিফাহ্ অবস্থানকালে জিজ্ঞেস করলেন, চাঁদ ডুবেছে কি? আমি বললাম, না। অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ সলাত আদায় করলেন। পরে পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, হে বৎস! চাঁদ ডুবেছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমার সাথে রওনা হও। আমরা রওনা হলাম এবং জামরাহ্ (পৌঁছে) তিনি কাঁকর নিক্ষেপ করলেন, এরপর নিজের তাঁবুতে সলাত আদায় করলেন। আমি তাকে বললাম, হে সম্মানিত মহিলা! আমরা খুব ভোরে রওনা হয়েছিলাম। তিনি বললেন, কোন অসুবিধা নেই হে বৎস! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের খুব ভোরে রওনা হবার অনুমতি দিয়েছিলেন। (ই.ফা. ২৯৮৮, ই.সে. ২৯৮৫) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে এ সূত্র উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এতে আছেঃ “আসমা (রাঃ) বলেন, হে বৎস! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহধর্মিণীকে অনুমতি দিয়েছিলেন।” (ই.ফা. ২৯৮৯, ই.সে. ২৯৮৬) (সালিম) ইবনু শাও্‌ওয়াল (রাঃ) (সালিম) ইবনু শাও্‌ওয়াল (রাঃ) উম্মু হাবীবাহ্‌ (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি তাকে অবহিত করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত থাকতেই তাকে মুযদালিফাহ্‌ থেকে মিনায় (পাঠিয়ে দেন)। (ই.ফা. ২৯৯০, ই.সে. ২৯৮৭) সালিম ইবনু শাও্ওয়াল সূত্রে উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ‘আমাল থেকে এরূপ করতাম, অর্থাৎ রাতের অন্ধকারেই মুযদালিফাহ্ থেকে মিনায় চলে আসতাম। নাক্বিদ-এর বর্ণনায় আছে, “মুযদালিফাহ্ থেকে আমরা রাতের অন্ধকারেই রওনা হতাম।” (ই.ফা. ২৯৯১, ই.সে. ২৯৮৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে মালপত্র নিয়ে অথবা (অপর বর্ণনা অনুযায়ী) দুর্বল লোকদের সাথে রাত থাকতেই মুযদালিফাহ্ থেকে (মিনার উদ্দেশে) পাঠিয়ে দেন। (ই. ফা. ২৯৯২, ই. সে. ২৯৮৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিবারের যে দুর্বলদের (মুযদালিফাহ্‌ থেকে) সর্বাগ্রে পাঠিয়ে দেন, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। (ই. ফা. ২৯৯৩, ই. সে. ২৯৯০) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিবারের যে দুর্বলদের আগেভাগে পাঠিয়ে দেন, আমি তাদের সাথে ছিলাম। (ই.ফা. ২৯৯৪, ই.সে. ২৯৯১) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর মালপত্র নিয়ে ভোর রাতে মুযদালিফাহ্ থেকে (মিনায়) পাঠিয়ে দেন। আমি (ইবনু জুরায়জ) ‘আত্বাকে বললাম, আপনি জানেন কি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে গভীর রাতে পাঠিয়েছেন”? তিনি বললেন, না, কেবল ভোর রাতের কথাই আমি জানি। আমি তাঁকে পুনরায় বললাম, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, “আমরা ফজরের সলাতের পূর্বেই জামরায় পাথর নিক্ষেপ করেছি।” তাহলে তিনি ফজরের সলাত কোথায় আদায় করেছেন? ‘আত্বা বললেন, না, আমি এতটুকুই জানি। (ই.ফা. ২৯৯৫, ই.সে. ২৯৯২) সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার সাথের দুর্বল লোকদেরকে মুযদালিফার নিকটবর্তী স্থান মাশ‘আরুল হারামে রাতে অবস্থানের জন্য আগে ভাগেই পাঠিয়ে দিতেন। অতএব তারা রাতের বেলা যতক্ষণ ইচ্ছা আল্লাহর যিকির করত। ইমামের অবস্থান ও ফিরে আসার পূর্বেই তারা (এখান থেকে) রওনা হতো। অতএব তাদের মধ্যে কেউ ফজরের সলাতের সময় মিনায় পৌঁছত এবং কেউ ফজরের সলাতের পরে। তারা এখানে পৌঁছে জামরায় পাথর নিক্ষেপ করত। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলতেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুর্বল ও বৃদ্ধদের এ অনুমতি প্রদান করেছেন। [২৪] (ই.ফা. ২৯৯৬, ই.সে. ২৯৯৩)

【50】

মাক্কাহ্ মু‘আজ্জামাকে বাঁ পাশে রেখে উপত্যকার মধ্যস্থলে দাঁড়িয়ে জাম্রাতুল ‘আক্বাবায় কাঁকর নিক্ষেপ করা এবং প্রতিটি পাথর নিক্ষেপের সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলা

‘আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) উপত্যকার মধ্যখানে দাঁড়িয়ে জামরাতুল ‘আক্বাবায় সাতটি পাথর নিক্ষেপ করেছেন এবং প্রতিটি পাথরের সাথে তাকবীর বলেছেন। রাবী বলেন, তাকে বলা হ’ল, লোকেরা তো উচ্চ স্থানে দাঁড়িয়ে পাথর নিক্ষেপ করে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বললেন, সে সত্তার শপথ, যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, এ সেই স্থান যেখানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ নাযিল হয়েছে। (ই.ফা. ২৯৯৭, ই.সে. ২৯৯৪) আ‘মাশ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফকে মিম্বারে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতে গিয়ে বলতে শুনেছিঃ জিবরীল (‘আঃ) যে ক্রমবিন্যাসে কুরআন মাজীদ সাজিয়েছেন, তোমরা তদনুযায়ী তা সুবিন্যস্ত কর। যেমন, প্রথম সে সূরাহ্ যার মধ্যে গাভী সম্পর্কে আলোচনা এসেছে। এরপর যে সূরায় মহিলাদের সম্পর্কে, এরপর সে সূরাহ্ যার মধ্যে ‘ইমরান-পরিবার সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে। আ‘মাশ (রহঃ) বলেন, এরপর আমি ইব্রাহীমের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে হাজ্জাজের বক্তব্য সম্পর্কে অবহিত করলাম। তিনি তাকে গালি দিলেন। এরপর বললেন, ‘আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ আমাকে বলেছেন যে, তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)-এর সাথে ছিলেন। তিনি জামরাতুল ‘আক্বাবায় এলেন, উপত্যকার মাঝে দাঁড়ালেন এবং জামরাহ্কে নিজের সম্মুখভাগে রাখলেন, এরপর উপত্যকার মাঝে দাঁড়িয়ে সাতটি কাঁকর নিক্ষেপ করলেন, প্রত্যেকবার নিক্ষেপের সাথে সাথে ‘আল্ল-হু আকবার’ বললেন। রাবী বলেন, আমি বললাম, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! লোকেরা উপত্যকার উপরিভাগ থেকে পাথর নিক্ষেপ করে। তিনি বললেন, সে সত্তার শপথ যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, এ সেই স্থান যেখানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ নাযিল হয়েছিল। (ই.ফা. ২৯৯৮, ই.সে. ২৯৯৫) আ‘মাশ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি হাজ্জাজকে বলতে শুনেছি, তোমরা বল না সূরাতুল বাক্বারাহ্...... এরপর ইবনু মুসহির বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ২৯৯৯, ই.সে. ২৯৯৬) ‘আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি ‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস‘ঊদ) (রাঃ)-এর সাথে হাজ্জ করেন। রাবী বলেন, তিনি (‘আবদুল্লাহ) জামরায় সাতটি কাঁকর নিক্ষেপ করেন- বায়তুল্লাহকে বামদিকে এবং মিনাকে ডানদিকে রেখে এবং তিনি বলেন, এই সে স্থান যেখানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ নাযিল করা হয়েছিল। (ই.ফা. ৩০০১, ই.সে. ২৯৯৭) শু‘বাহ্‌ (রহঃ) এ সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি বলেছেন, “তিনি (‘আবদুল্লাহ) যখন জামরাতুল ‘আক্বাবায় এলেন।” (ই.ফা. ৩০০১, ই.সে. ২৯৯৮) ‘আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি বলেন ‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস‘ঊদ) (রাঃ)-কে বলা হল, লোকেরা ‘আক্বাবার উচ্চভূমি থেকে পাথর নিক্ষেপ করে। রাবী বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) উপত্যকার মধ্যভাগে দাঁড়িয়ে তা নিক্ষেপ করলেন। এরপর তিনি বলেন, সে সত্তার শপথ যিনি ব্যতীত অন্য কোন মা‘বূদ নেই, যাঁর উপর সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ নাযিল হয়েছে, তিনি এই স্থান থেকে কাঁকর নিক্ষেপ করেন। (ই.ফা. ৩০০২, ই.সে. ২৯৯৯)

【51】

কুরবানীর দিন সওয়ারীতে আরোহিত অবস্থায় জামরাতুল ‘আক্বাবায় কাঁকর নিক্ষেপ করা মুস্তাহাব এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীঃ “আমার নিকট থেকে তোমরা হাজ্জের নিয়ম-কানুন শিখে নাও।”

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কুরবানীর দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সওয়ারীতে আরোহিত অবস্থায় পাথর নিক্ষেপ করতে দেখেছি এবং তিনি বলেছিলেনঃ “আমার নিকট থেকে তোমরা হাজ্জের নিয়ম-কানুন শিখে নাও। কারণ আমি জানি না- এ হাজ্জের পর আমি আর হাজ্জ করতে পারব কিনা।” (ই.ফা. ৩০০৩, ই.সে. ৩০০০) উম্মুল হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বিদায় হাজ্জ করেছি এবং আমি দেখেছি, তিনি জামরাতুল ‘আক্বাবায় পাথর নিক্ষেপ করে সওয়ারীতে চড়ে ফিরে আসেন এবং তার সাথে ছিলেন বিলাল ও উসামাহ্ (রাঃ)। তাদের একজন উটের লাগাম ধরে তা টেনে নিচ্ছিলেন এবং অপরজন সূর্যের তাপের কারণে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার উপর কাপড় ধরে রাখছিলেন। উম্মুল হুসায়ন (রাঃ) আরো বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনেক কথা বললেন। এরপর আমি তাঁকে বলতে শুনেছিঃ যদি নাক-কান কাটা কোন কাফ্রী (কালো) ক্রীতদাসকেও তোমাদের নেতা নিয়োগ করা হয় এবং সে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী তোমাদের পরিচালনা করে, তবে তার (নির্দেশ) শোন এবং আনুগত্য কর। (ই.ফা. ৩০০৪, ই.সে. ৩০০১) উম্মুল হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বিদায় হাজ্জ করেছি। আমি উসামাহ্ ও বিলালকে দেখেছি যে, তাদের একজন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উষ্ট্রীর লাগাম ধরে আছেন এবং অপরজন কাপড় দিয়ে তাঁকে রৌদ্র তাপ থেকে ছায়া দান করছেন। এমতাবস্থায় তিনি জামরায় কাঁকর নিক্ষেপ করেন। ইমাম মুসলিম বলেন, আবূ ‘আবদুর রহীমের নাম খালিদ ইবনু আবূ ইয়াযীদ যিনি মুহাম্মাদ ইবনু সালামার মামা- ওয়াকী‘ এবং হাজ্জাজ আ’ওয়ার তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩০০৫, ই.সে. ৩০০২)

【52】

জামরায় নিক্ষিপ্ত পাথর ক্ষুদ্র হওয়া মুস্তাহাব

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জামরায় ক্ষুদ্র পাথর নুড়ি (পাথর) নিক্ষেপ করতে দেখেছি। (ই.ফা. ৩০০৬, ই.সে. ৩০০৩)

【53】

পাথর নিক্ষেপের জন্য মুস্তাহাব সময়

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন সূর্য কিছুটা উপরে উঠলে জামরায় পাথর নিক্ষেপ করেন, পুনরায় দ্বিপ্রহরের পরে। (ই.ফা. ৩০০৭, ই.সে.) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)... পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৩০০৮, ই.সে. ৩০০৪)

【54】

জামরায় প্রতিবার সাতটি করে নুড়ি পাথর নিক্ষেপ করবে

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইস্তিঞ্জায় ব্যবহৃত ঢিলার সংখ্যা বেজোড়, জামরায় নিক্ষিপ্ত পাথরের সংখ্যা বেজোড়, সাফা-মারওয়ার মাঝে সা‘ঈর সংখ্যা বেজোড় এবং ত্বওয়াফও বেজোড়। অতএব তোমাদের যে কেউ যখন ইস্তঞ্জায় ঢিলা ব্যবহার করবে সে যেন বেজোড় সংখ্যক ব্যবহার করে। (ই.ফা. ৩০০৯, ই.সে. ৩০০৬)

【55】

চুল ছাঁটার চেয়ে কামানো উত্তম এবং ছাঁটাও জায়িয

‘আবদুল্লাহ (ইবনু ‘উমার) (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা মুণ্ডন করলেন। তাঁর কিছু সংখ্যক সাহাবীও মাথা মুণ্ডন করলেন আর কিছু সংখ্যক চুল খাটো করলেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক অথবা দু’বার বললেনঃ যারা মাথা মুণ্ডন করেছে, আল্লাহ তাদের উপর অনুগ্রহ করুন। অতঃপর তিনি বললেনঃ যারা চুল খাটো করেছে, তাদের উপরও। (ই.ফা. ৩০১০, ই.সে. ৩০০৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আল্লাহ! মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি দয়া করুন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! চুল খাটোকারীদের প্রতিও। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! মাথা মুন্ডনকারীদের প্রতি দয়া করুন। তারা বললেন, চুল খাটোকারীদের জন্যও (দু’আ করুন) হে আল্লাহ রসূল! তিনি বললেন, এবং চুল খাটোকারীদের প্রতিও। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, আবূ ইসহাক্ব ইব্রাহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু সুফ্ইয়ান এ হাদীসটি মুসলিম ইবনু হাজ্জাজ-এর সূত্রে আমার নিকট বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩০১১, ই.সে. ৩০০৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করুন! তারা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! চুল ছোটকারীদের জন্য (দু’আ করুন)। তিনি বললেন, মাথা মুণ্ডনকারীদেরকে আল্লাহ রহম করুন। তারা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! চুল ছোটকারীদের জন্যও। তিনি বললেন, মাথা মুণ্ডনকারীদের প্রতি আল্লাহ দয়া করুন। তারা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! চুল ছোটকারীদের প্রতিও। তিনি বললেন, চুল ছোটকারীদের প্রতিও। (ই.ফা. ৩০১২, ই.সে. ৩০০৯) ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ) থেকে এ সূত্র উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তার বর্ণনায় আছে, “চতুর্থবারে তিনি বললেনঃ চুল খাটোকারীদের উপরও (রহম করুন)।” (ই. ফা. ৩০১৩, ই. সে. ৩০১০) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আল্লাহ! মাথা মুণ্ডনকারীদেরকে ক্ষমা করুন। তারা বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! চুল খাটোকারীদের (ক্ষমার জন্য দু’আ করুন)। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! মাথা মুণ্ডনকারীদের ক্ষমা করুন। তারা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! চুল খাটোকারীদেরও। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! মাথা মুণ্ডনকারীদের গুনাহ মাফ করুন। তারা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! চুল খাটোকারীদেরও। তিনি বললেন, চুল খাটোকারীদেরও (গুনাহ ক্ষমা করুন)। (ই.ফা. ৩০১৪, ই.সে. ৩০১১) আবু হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) এ সানাদ সূত্রেও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপরোক্ত হাদীসে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩০১৫, ই.সে. ৩০১২) ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু হুসায়ন (রহঃ) থেকে তার দাদীর সূত্র তিনি (দাদী) বিদায় হাজ্জকালে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাথা মুন্ডনকারীদের জন্য তিনবার এবং চুল খাটোকারীদের জন্য একবার দু’আ করতে শুনেছেন। ওয়াকী’র বর্ণনায় ‘বিদায় হাজ্জ’ কথাটুকু উল্লেখিত হয়নি। (ই.ফা. ৩০১৬, ই.সে. ৩০১৩) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হাজ্জকালে নিজের মাথার চুল মুণ্ডন করেছেন। (ই.ফা. ৩০১৭, ই.সে. ৩০১৪)

【56】

কুরবানীর দিন সুন্নাত সম্মত নিয়ম এই যে, প্রথমে (জামরায়) কঙ্কর নিক্ষেপ করতে হবে, অতঃপর কুরবানী করতে হবে, অতঃপর মাথা মুণ্ডন করতে হবে এবং তা ডান পাশ থেকে শুরু করতে হবে

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনায় এলেন, অতঃপর জামরায় এসে পাথর নিক্ষেপ করলেন। অতঃপর তিনি মিনায় নিজ স্থানে ফিরে এলেন এবং কুরবানী করলেন। অতঃপর হাজ্জাম (ক্ষৌরকার)-কে ইশারায় বললেনঃ মাথার ডান পাশ থেকে শুরু কর, অতঃপর বাম পাশ। অতঃপর তিনি লোকদেরকে নিজের চুল দান করলেন। (ই.ফা. ৩০১৮, ই.সে. ৩০১৫) হিশাম (রহঃ) এ সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। আবূ বাক্‌র (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতের ইশারা দিয়ে হাজ্জামকে মাথার ডান পাশ থেকে শুরু করতে বললেন। অতঃপর তিনি কাছের লোকদের মাঝে নিজের চুল দান (বন্টন) করলেন। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি হাজ্জামকে মাথার বাম পাশের চুল কাটার ইঙ্গিত করলেন। সে তাই করল। এ চুলগুলো তিনি উম্মু সুলায়ম (রাঃ)-কে দান করলেন। আর আবূ কুরায়বের বর্ণনায় আছেঃ হাজ্জাম ডান পাশ থেকে ক্ষৌরকার্য শুরু করল। তিনি লোকদের একটি দু’টি করে চুল দিলেন। অতঃপর বাঁ পাশের চুল কাটার নির্দেশ দিলেন এবং সে তাই (মাথা মুণ্ডন) করল। অতঃপর তিনি বললেনঃ আবূ ত্বলহাহ্‌! এখানে আসো। অতএব তিনি এবারের চুলগুলো তাকে দান করলেন। (ই.ফা. ৩০১৯, ই.সে. ৩০১৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামরাতুল ‘আক্বাবায় পাথর নিক্ষেপ করলেন, অতঃপর কুরবানীর উটের নিকট ফিরে এসে তা যাবাহ করলেন। হাজ্জাম নিকটেই বসা ছিল। তিনি মাথার দিকে হাতের ইশারা করলেন এবং সে তাঁর মাথার ডান পাশের চুল কামিয়ে দিল। তিনি তা নিকটস্থ লোকদের মধ্যে বণ্টন করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, মাথার অপরাংশ কামাও। তিনি বললেন, আবূ ত্বলহাহ্ কোথায়? তখন তিনি সেগুলো তাকেই দান করলেন। (ই.ফা. ৩০২০, ই.সে. ৩০১৭) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জামরায় পাথর নিক্ষেপ করলেন। অতঃপর কুরবানী করলেন, অতঃপর মাথা কামালেন, তিনি ক্ষৌরকারের প্রতি মাথার ডান পাশ এগিয়ে দিলেন এবং সে তা চেঁছে দিল। অতঃপর তিনি আবূ ত্বলহাহ্‌ আল আনসারী (রাঃ)-কে ডাকলেন এবং তাকে (নিজের) চুল দান করলেন। অতঃপর তিনি মাথার বাম পাশ এগিয়ে দিলেন এবং বললেন, কামিয়ে দাও। (অতএব ক্ষৌরকার) তা কামিয়ে দিল। তিনি চুলগুলো আবূ ত্বলহাহ্‌ (রাঃ)-কে দিয়ে বললেন, এগুলো লোকদের মধ্যে বণ্টন কর। (ই.ফা. ৩০২১, ই.সে. ৩০১৮)

【57】

পাথর নিক্ষেপের পূর্বে কুরবানী করা, কুরবানী ও পাথর নিক্ষেপের পূর্বে মাথা মুড়ানো এবং এসবের আগে ত্বওয়াফ করা জায়িয প্রসঙ্গ

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের সঙ্গে মিনায় অবস্হান করলেন-যাতে তারা প্রয়োজনীয় বিষয় তাঁর কাছ থেকে জেনে নিতে পারে। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! না জানার কারণে আমি কুরবানী করার পূর্বে মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই, তুমি কুরবানী কর। অতঃপর এক ব্যক্তি তাঁর নিকট উপস্হিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জানতাম না, ফলে পাথর নিক্ষেপের পূর্বে কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ অসুবিধা নেই, তুমি পাথর নিক্ষেপ কর। রাবী বলেন, অজ্ঞতাবশতঃ কাজ আগে অথবা পরে করা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট জিজ্ঞেস করা হলেই তিনি বলেন, তুমি এখন করে নাও, তাতে কোন দোষ নেই। (ই.ফা. ৩০২২, ই.সে. ৩০১৯) ‘ঈসা ইবনু ত্বলহাহ্ আত্ তামীমী (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সওয়ারীর উপর অবস্থান করলেন। লোকেরা তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে থাকল। তাদের কেউ জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জানতাম না যে, কুরবানীর পূর্বে পাথর নিক্ষেপ করতে হয়। তাই আমি পাথর নিক্ষেপের পূর্বে কুরবানী করে ফেলেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃপাথর নিক্ষেপ কর, এতে কোন দোষ হবে না। অপর ব্যক্তি এসে বলল, আমি জানতাম না যে, মাথা কামানোর পূর্বে কুরবানী করতে হবে। অতএব আমি কুরবানীর পূর্বে মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেনঃ কোন দোষ নেই, তুমি কুরবানী কর। রাবী বলেন, মানুষ অজ্ঞতাবশতঃ যেসব কাজের ক্ষেত্রে পরেরটি আগে করে ফেলেছে, এ সম্পর্কে বা এ জাতীয় বিষয় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে জিজ্ঞেস করা হলেই আমি তাঁকে বলতে শুনেছি: তোমরা তা করে নাও, এতে কোন দোষ হবে না। (ই.ফা. ৩০২৩, ই.সে. ৩০২০) যুহরী (রহঃ) এ সূত্রে উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩০২৪, ই.সে. ৩০২১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন ভাষণ দিচ্ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জানতাম না যে, এ কাজ অমুক অমুক কাজের পূর্বে করতে হয়। এরপর আর এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি মনে করেছিলাম এ কাজ অমুক অমুক তিনটি (পাথর নিক্ষেপ, কুরবানী, মাথা কামানো,) কাজের পূর্বে করতে হয়। তিনি বললেনঃ করে নাও, কোন অসুবিধে নেই। (ই.ফা. ৩০২৫, ই.সে. ৩০২২) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) থেকে এ সূত্র মুহাম্মাদ ইবনু বাক্‌র–এর বর্ণনা ‘ঈসার বর্ণনার অনুরূপ। তবে তার বর্ণনায় “ঐ তিন কাজ” কথাটুকু উল্লেখ নেই। ইয়াহ্‍ইয়া আল উমাবীর বর্ণনায় আছে: “আমি কুরবানী করার পূর্বে মাথা মুণ্ডন করেছি, পাথর নিক্ষেপের পূর্বে কুরবানী করেছি ইত্যাদি।” (ই.ফা. ৩০২৬, ই.সে. ৩০২৩) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট এসে বলল, আমি যবাহ্ করার পূর্বে মাথা কামিয়ে ফেলেছি। তিনি বললেন, কোন দোষ নেই, এখন যবাহ্ কর। (অতঃপর একজন) বলল, আমি পাথর নিক্ষেপের পূর্বে কুরবানী করেছি। তিনি বললেনঃ কোন ক্ষতি নেই, তুমি এখন পাথর নিক্ষেপ কর। (ই.ফা. ৩০২৭, ই.সে. ৩০২৪) যুহরী (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) বলেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে মিনায় তাঁর উষ্ট্রীর উপর অবস্থানরত দেখেছি। এ সময় এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এলো… উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৩০২৮, ই.সে. ৩০২৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন জামরাতুল ‘আক্বাবার নিকট অবস্থানরত ছিলেন। আমি এক ব্যক্তিকে তাঁর নিকট এসে বলতে শুনলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি পাথর নিক্ষেপের পূর্বে মাথা কামিয়ে নিয়েছি। তিনি বললেন, কোন অসুবিধে নেই, পাথর নিক্ষেপ করে নাও। আরেক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বলল, আমি পাথর নিক্ষেপের পূর্বে কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেন, কোন দোষ নেই, পাথর নিক্ষেপ করে নাও। অপর এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বলল, আমি পাথর নিক্ষেপের পূর্বে বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ করে ফেলেছি। তিনি বললেন, পাথর নিক্ষেপ কর, তাতে কোন অসুবিধে নেই। রাবী বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি, সেদিন যে সম্পর্কেই (আগে-পিছে করার ক্ষেত্রে) তাঁর নিকট জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তিনি বলেছেনঃ কোন দোষ নেই, এখন করে নাও। (ই.ফা. ৩০২৯, ই.সে. ৩০২৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট কুরবানী, মাথা মুণ্ডন, পাথর নিক্ষেপ, আগের অনুষ্ঠান পরে, এবং পরের অনুষ্ঠান আগে হয়ে যাওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ কোন দোষ নেই। (ই.ফা. ৩০৩০, ই.সে. ৩০২৭)

【58】

কুরবানীর দিন ত্বওয়াফুল ইফাযাহ্ সম্পন্ন করা উত্তম

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন ত্বওয়াফুল ইফাযাহ্ সম্পন্ন করেন, অতঃপর মিনায় ফিরে এসে যুহরের সলাত আদায় করেন। নাফি‘ বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ)-ও কুরবানীর দিন ত্বওয়াফুল ইফাযাহ্ সম্পন্ন করতেন, অতঃপর ফিরে এসে মিনায় যুহরের সলাত আদায় করতেন এবং বলতেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছেন। (ই.ফা. ৩০৩১, ই.সে. ৩০২৮) ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু রুফাই‘(রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বললাম, আপনার যা স্মরণ আছে সে সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তালবিয়ার দিন (৮ই যিলহাজ্জ) যুহরের সলাত কোথায় আদায় করেছেন? তিনি বললেন, মিনায়। আমি বললাম (হাজ্জ সমাপনান্তে) বিদায়ের দিন তিনি ‘আসরের সলাত কোথায় আদায় করেছেন? তিনি বললেন, আবত্বাহ উপত্যকায়। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা প্রশাসকগণ যা করেন, তদ্রুপ কর। (ই.ফা. ৩০৩২, ই.সে. ৩০২৯)

【59】

বিদায়ের দিন আল-মুহাস্সাবে অবতরণ এবং সেখানে যুহর ও পরের ওয়াক্তের সলাত আদায় করা মুস্তাহাব

ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ) ও ‘উমার (রাঃ) আবত্বাহ নামক স্হানে অবতরণ করতেন। (ই.ফা. ৩০৩৩, ই.সে. ৩০৩০) নাফি‘ (রাঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) মুহাসসাবে যাত্রা বিরতি সুন্নাত মনে করতেন। তিনি বিদায়ের দিন (১২ অথবা ১৩ যিলহাজ্জ) সেখানে যুহরেরর সলাত আদায় করতেন। নাফি‘ বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাসসাবে যাত্রা বিরতি করেছেন এবং তাঁর পরে খলীফাগণও। (ই.ফা. ৩০৩৪, ই.সে. ৩০৩১) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আবত্বাহে অবতরণ করা সুন্নাত নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেবল এজন্য সেখানে যাত্রা বিরতি করেছিলেন যে, সেখান থেকে তাঁর জন্য যাত্রা করা সহজতর ছিল। (ই.ফা. ৩০৩৫, ই .সে. ৩০৩২) হিশাম (রহঃ) এ সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৩০৩৬, ই.সে. ৩০৩৩) সালিম (রহঃ) আবূ বাকর (রাঃ), ‘উমার (রাঃ) ও ইবনু ‘উমার (রাঃ) আবত্বাহে অবতরণ করতেন। যুহরী বলেন, আমাকে ‘উরওয়াহ্ অবহিত করেছেন যে, ‘আয়িশা (রাঃ) আবত্বাহে যাত্রা বিরতি করতেন না। তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেবলমাত্র (বিশ্রামের জন্য) এখানে যাত্রা বিরতি করতেন যাতে সামনের পথ অতিক্রম সহজ হয়। (ই.ফা. ৩০৩৭, ই.সে. ৩০৩৪) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, মুহাসসাবে যাত্রা বিরতি বাধ্যতামূলক নয়। এটি একটি মাঞ্জিল যেখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাত্রা বিরতি করেছেন। (ই.ফা. ৩০৩৮, ই.সে. ৩০৩৫) সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ রাফি‘ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মিনা থেকে রওনা হলেন তখন তিনি আমাকে আবত্বাহে যাত্রা বিরতির নির্দেশ দেননি। বরং আমি সেখানে পৌঁছে তাঁবু খাটালাম, এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে সেখানে অবতরণ করলেন। আবূ রাফি‘ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর মালপত্রের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ছিলেন। (ই.ফা. ৩০৩৯, ই.সে. ৩০৩৬) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)–এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, ইনশাআল্লাহ আমরা আগামীকাল সকালে খায়ফে বানী কিনানায় অবতরণ করব- যেখানে তারা (কাফিররা) কুফরীর উপর অবিচল থাকার শপথ নিয়েছিল। (ই.ফা. ৩০৪০, ই.সে. ৩০৩৭) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা মিনায় থাকা কালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বললেনঃ আগামীকাল সকালে আমরা কিনানাহ্ গোত্রের ঘাঁটিতে অবতরণ করব যেখানে তারা কুফরির উপর অটল থাকার শপথ করেছিল। তা হচ্ছে– কুরায়শ ও কিনানাহ্ গোত্র হাশিম ও মুত্ত্বালিব গোত্রদ্বয়ের বিরুদ্ধে এ মর্মে চুক্তিবদ্ধ হয় যে, এরা তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করবে না এবং বাণিজ্যিক লেনদেন করবে না- যতক্ষণ তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাদের হাতে অর্পণ না করবে– এ হচ্ছে সেই মুহাস্সাব। (ই.ফা. ৩০৪১, ই.সে. ৩০৩৮) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, আল্লাহ যদি আমাদের বিজয় দান করেন তবে ইনশা-আল্লাহ আমাদের মাঞ্জিল হবে খায়ফে, যেখানে কুরায়শরা কুফরির উপর অটল থাকার শপথ করেছিল। (ই.ফা. ৩০৪২, ই.সে. ৩০৩৯)

【60】

আইয়্যামে তাশরীক্বের রাতগুলো মিনায় অতিবাহিত করা ওয়াজিব, পানি সরবরাহকারীগণ এ নির্দেশের বহির্ভূত

ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) মিনার রাতগুলো মাক্কাতে অতিবাহিত করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করলেন। কারণ পানি সরবরাহের দায়িত্ব তার উপর ন্যস্ত ছিল। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। (ই.ফা. ৩০৪৩, ই.সে. ৩০৪০) ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রহঃ) এ সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩০৪৪, ই.সে. ৩০৪১) বকর ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল মুযানী (রহঃ তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে কা‘বার সন্নিকটে বসা ছিলাম। এ সময় এক বেদুঈন তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, কী ব্যাপার? আমি দেখছি আপনার চাচাতো ভাইয়েরা (আগন্তুকদের) মধু ও দুধ পান করায়। আর আপনারা নাবী্য (খেজুরের তৈরী শরবত) পান করান? তা কি আপনাদের দরিদ্রতার কারণে, না কৃপণতার কারণে? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) “আল্হামদু লিল্লাহ” উচ্চারণ করে বললেন, আমাদের না দারিদ্র্য আক্রান্ত করেছে, না কৃপণতা। প্রকৃত ব্যাপার এই যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সওয়ারীতে চড়ে এখানে এলেন এবং তাঁকে এক পেয়ালা নবীয দিলাম। তিনি তা পান করলেন এবং অবশিষ্টটুকু উসামাকে পান করালেন। এরপর তিনি বললেন, “তোমরা খুবই উত্তম কাজ করছো এবং এরূপই করতে থাক।” অতএব রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের যা করার নির্দেশ দিয়েছেন- আমরা তার পরিবর্তন করতে চাই না। (ই.ফা. ৩০৪৫, ই.সে. ৩০৪২)

【61】

কুরবানীর গোশ্ত, চামড়া ও উটের পিঠে ব্যবহৃত ঝুলদান- খয়রাত করা এবং এসব দিয়ে কসাইয়ের পারিশ্রমিক পরিশোধ না করা

‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর কুরবানীর উটগুলোর নিকট দাঁড়াতে এবং এগুলোর গোশ্ত, চামড়া ও ঝুল দান- খয়রাত করে দিতে নির্দেশ দিলেন এবং তা দিয়ে কসাইয়ের মজুরি দিতে নিষেধ করলেন এবং বললেনঃ আমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে তার মজুরি পরিশোধ করে দেব। (ই.ফা. ৩০৪৬, ই.সে. ৩০৪৩) ‘আবদুল কারীম আল জাযারী (রহঃ) এ সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩০৪৭, ই.সে. ৩০৪৪) ‘আলী (রাঃ) এ সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এ বর্ণনায় কসাইয়ের মজুরির কথা উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৩০৪৮, ই.সে. ৩০৪৫) ‘আলী ইবনু আবূ ত্বলিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তাঁর কুরবানীকৃত উটগুলোর নিকট অবস্থানের নির্দেশ দিলেন। তিনি তাকে উটের সমস্ত গোশ্ত, চামড়া ও ঝুল মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করারও নির্দেশ দিলেন এবং তা থেকে কসাইকে মজুরি স্বরূপ কিছু দিতে নিষেধ করলেন। (ই.ফা. ৩০৪৯, ই.সে. ৩০৪৬) ‘আলী ইবনু আবূ ত্বলিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে নির্দেশ দিলেন ... উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৩০৫০, ই.সে. ৩০৪৭)

【62】

ভাগে কুরবানী দেয়া জায়িয এবং একটি উট অথবা গরুতে সাতজন পর্যন্ত শারীক হওয়া যায়

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, হুদাইবিয়ার বছর (৬ষ্ঠ হিজরী) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সাথে প্রতি সাতজনের পক্ষ থেকে একটি উট এবং প্রতি সাতজনের পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করেছি। (ই.ফা. ৩০৫১, ই.সে. ৩০৪৮) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা হাজ্জের ইহরাম বেঁধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে রওনা হলাম। তিনি আমাদেরকে প্রতিটি উট বা গরু সাতজনে মিলে কুরবানী করার নির্দেশ দিলেন। (ই.ফা. ৩০৫২, ই.সে. ৩০৪৯) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে হাজ্জ সমাপন করি। আমরা সাত শারীকে একটি করে উট বা গরু কুরবানী করেছি। (ই.ফা. ৩০৫৩, ই.সে. ৩০৫০) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ পালনকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সাতজনে মিলে একটি উট কুরবানী করেছি। এক ব্যক্তি জাবির (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, জাযূর-এ যে ক’জন শারীক হতে পারে- বাদানাহ্-তেও কি অনুরূপ শারীক হওয়া যায়? তখন তিনি বললেন, উভয় তো একই। জাবির (রাঃ) হুদায়বিয়ায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা ঐদিন ৭০টি উট কুরবানী করেছি। প্রতিটি উটেই ৭ জন শারীক ছিলাম। [২৫] (ই.ফা. ৩০৫৪, ই.সে. ৩০৫১) আবূ যুবায়র (রহঃ) তিনি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিদায় হাজ্জ সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছেন। তিনি [(জাবির (রাঃ)] বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ইহরাম খোলার সময় কয়েকজন শারীক হয়ে এক-একটি পশু কুরবানীর নির্দেশ দেন। এটা সে সময়ের কথা যখন তিনি তাদেরকে (‘উমরাহ্ আদায়ের পর) হাজ্জের ইহরাম ভঙ্গ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। [২৬] (ই.ফা. ৩০৫৫, ই.সে. ৩০৫২) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে তামাত্তু’ হাজ্জ করেছি। আমরা সাত শারীকে মিলে একটি গরু কুরবানী করেছি। (ই.ফা. ৩০৫৬, ই.সে. ৩০৫৩) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন ‘আয়িশা (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে একটি গরু কুরবানী করেন। (ই.ফা. ৩০৫৭, ই.সে. ৩০৫৪) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহধর্মিণীদের পক্ষ থেকে একটি কুরবানী করেছেন। কিন্তু ইবনু বাকর (রহঃ) কর্তৃক ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে যে, তিনি তাঁর হাজ্জ উদযাপনকালে একটি গাভী কুরবানী করেন। (ই.ফা. ৩০৫৮, ই.সে. ৩০৫৫)

【63】

উটকে দণ্ডায়মান অবস্থায় কুরবানী করা মুস্তাহাব

যিয়াদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তির কাছে এলেন। সে তার উটকে বসিয়ে কুরবানী করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তিনি বললেন, এটাকে দাঁড় করিয়ে কুরবানী কর। এটাই তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত। [২৭] (ই.ফা. ৩০৫৯, ই.সে. ৩০৫৬)

【64】

যে নিজে (মাক্কাতে) যেতে ইচ্ছা রাখে না, তার পক্ষে কুরবানীর পশু হারামে পাঠানো ও গলায় মালা পরানো এবং মালা পাকানো মুস্তাহাব, আর (প্রেরক) ইহরামকারীর অনুরূপ হবে না এবং এ কারণে তার উপর (ইহরামধারীদের মতো) কোন কিছু হারাম হবে না

‘উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র ও ‘আমরাহ্ বিনতু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদিনাহ্ থেকে তাঁর কুরবানীর পশু (মাক্কার হারামে) পাঠাতেন। আমি তাঁর কুরবানীর পশুর (গলায় বাঁধার জন্য) মালা তৈরি করে দিতাম। এরপর তিনি এমন কোন জিনিস থেকে বিরত থাকতেন না- যা থেকে ইহরামধারীদের বিরত থাকতে হয়। (ই.ফা. ৩০৬০, ই.সে. ৩০৫৭) ইবনু শিহাব (রহঃ) এ সানাদে (উপরোক্ত হাদীসের) অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩০৬১, ই.সে. ৩০৫৮) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার চোখে সে দৃশ্য ভাসছে- আমি যেন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কুরবানীর পশুর (গলায় পরানোর জন্য) মালা তৈরি করে দিচ্ছি। ..... অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত হাদীদের অনুরূপ। (ই.ফা. ৩০৬২, ই.সে. ৩০৫৯) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার হাত দিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কুরবানীর পশুর মালা বানিয়ে দিয়েছি। এরপর তিনি কোন জিনিস থেকে বিরত থাকতেন না এবং তা পরিহার করতেন না (যা হাজ্জের ইহরামধারীকে পরিহার করতে হয়)। (ই.ফা. ৩০৬৩, ই.সে. ৩০৬০) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নিজ হাতে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কুরবানীর পশুর মালা বানিয়ে দিয়েছি। এরপর তিনি কুরবানীর পশুকে চিহ্নিত করেন ও গলায় মালা বেঁধে দেন। এরপর তিনি বায়তুল্লাহ পাঠিয়ে দেন এবং মাদীনায় অবস্থান করেন। ফলে তাঁর উপর এমন কোন জিনিস হারাম হয়নি যা তাঁর জন্য হালাল ছিল। (ই.ফা. ৩০৬৪, ই.সে. ৩০৬১) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কুরবানীর পশু (মাক্কায়) পাঠিয়ে দিতেন। আমি নিজ হাতে এর মালা তৈরি করে দিতাম। অতঃপর তিনি এমন কোন জিনিস থেকে বিরত থাকতেন না- যা থেকে কোন ইহরামবিহীন ব্যক্তি বিরত থাকে না। (ই.ফা. ৩০৬৫, ই.সে. ৩০৬২) উম্মুল মু’মিনীন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রঙিন পশমের সূতা যা আমাদের কাছে ছিল, তা দিয়ে এ সব মালা তৈরী করেছি। অতঃপর তিনি ভোরবেলা ইহ্‌রামবিহীন অবস্থায় উপনীত হন এবং আমাদের কাছে আসেন, ইহ্‌রামবিহীন ব্যক্তি নিজ স্ত্রীর সাথে যা করে, তিনিও তাই করেছেন; কিংবা তিনি বলেন, লোকে তার স্ত্রীর কাছে যেভাবে এসে থাকে, তিনিও সেভাবে আসেন। (ই.ফা. ৩০৬৬, ই.সে. ৩০৬৩) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যেন নিজেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কুরবানী মেষের জন্য মালা তৈরী দেখতে পাচ্ছি। তিনি তা হারামে পাঠীয়ে দেন এবং আমাদের মাঝে অবস্থান করেন ইহ্‌রামবিহীন ব্যক্তির মতো। (ই.ফা. ৩০৬৭, ই.সে. ৩০৬৪) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কুরবানীর পশুর জন্য মালা তৈরী করে দিতাম এবং তিনি তা নিজের কুরবানী পশুর গলায় পরিয়ে দিতেন, এরপর তা (মাক্কায়) পাঠিয়ে দিতেন। অতঃপর তিনি (মাদীনায়) অবস্থান করতেন এবং এমন কিছু থেকে বিরত থাকতেন না- যা থেকে ইহ্‌রামবিহীন ব্যক্তি বিরত থাকে। (ই.ফা. ৩০৬৮, ই.সে. ৩০৬৫) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়তুল্লাহর হারামে (কুরবানীর উদ্দেশে) ছাগল পাঠান এবং এর গলায় মালা বাঁধেন। (ই.ফা. ৩০৬৯, ই.সে. ৩০৬৬) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বকরীর গলায় মালা পরিয়ে তা (কুরবানীর উদ্দেশে বায়তুল্লাহ্য়) পাঠিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরামবিহীন অবস্থায় ছিলেন এবং কোন জিনিস তাঁর জন্য হারাম ছিল না (যা মুহরিমের জন্য হারাম)। (ই.ফা. ৩০৭০, ই.সে. ৩০৬৭) ‘আম্রাহ্ বিনতু ‘আবদূর রহমান (রহঃ) ইবনু যিয়াদ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে লিখেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ ‘যে ব্যক্তি (মাক্কার হারামে) কুরবানীর পশু পাঠায়, হাজীদের জন্য যা করা হারাম তার জন্যও তা করা হারাম যতক্ষণ না ঐ পশু কুরবানী করা হয়। আমি কুরবানীর পশু (হারামে) পাঠীয়েছি। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত আমাকে লিখে জানাবেন।” ‘আম্রাহ্ (রহঃ) বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) যেভাবে বলেছেন, ব্যাপারটি তা নয়। আমি নিজ হাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কুরবানীর পশুর (গলায় বাঁধার) জন্য মালা তৈরী করে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ হাতে তা পশুর গলায় বেঁধেছেন, অতঃপর আমার পিতার মাধ্যমে তা (হারাম শরীফে) পাঠিয়েছেন। কিন্তু এর ফলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর এমন কোন জিনিষ হারাম হয়নি- যা আল্লাহ তা’আলা তাঁর জন্য হালাল করেছেন। অতঃপর পশু কুরবানী করা হয়েছে। (ই.ফা. ৩০৭১, ই.সে. ৩০৬৮) মাসরূক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে পর্দার আড়াল থেকে হাত তালি দিয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি নিজ হাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কুরবানীর পশুর জন্য মালা তৈরী করে দিতাম। অতঃপর তিনি (তাঁর) কুরবানীর পশু (মাক্কায়) পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু পশু কুরবানী হওয়ার সময় পর্যন্ত তিনি এমন কোন জিনিস থেকে বিরত থাকতেন না যা থেকে সাধারণত ইহরাহমধারী ব্যক্তিগণ বিরত থাকে। (ই.ফা. ৩০৭২, ই.সে. ৩০৬৯) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩০৭৩, ই.সে. ৩০৭০)

【65】

প্রয়োজনবোধে কুরবানীর পশুর উপর আরোহণ করা জায়িয

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে একটি উট টেনে নিয়ে যেতে দেখলেন। তিনি বললেনঃ এর পিঠে সওয়ার হও। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, এটা কুরবানীর উট। তিনি দ্বিতীয় অথবা তৃতীয়বারে বললেনঃ তোমার জন্য আফসোস! এর পিঠে আরোহণ কর। (ই.ফা. ৩০৭৪, ই.সে. ৩০৭১) আবূ যিনাদ (রহঃ) এ সূত্রে পুর্বোক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রাবী বলেন, একদা এক ব্যক্তি গলায় মালা পরিহিত একটি কুরবানী উট হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। (ই.ফা. ৩০৭৫, ই.সে. ৩০৭২) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর থেকে এ হাদীস আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন। এরপর তিনি কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে একটি এই যে, তিনি বলেন, একদা আক ব্যক্তি কুরবানীর একটি উট হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। এর গলায় মালা পরিহিত ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তোমার জন্য আফসোস! এর পিঠে আরোহণ কর। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, এটা কুরবানীর পশু। তিনি বললেন, তোমার জন্য আফসোস, এর পিঠে আরোহণ কর, তোমার জন্য আফসোস! এর পিঠে চড়ে যাও। (ই.ফা. ৩০৭৬, ই.সে. ৩০৭৩) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে একটি উট টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি বললেন, এর পিঠে চড়ে যাও। সে বলল, এটা কুরবানীর উট। তিনি দু’তিনবার বললেন, এর পিঠে চড়ে যাও। (ই.ফা. ৩০৭৭, ই.সে. ৩০৭৪) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট দিয়ে কুরবানীর উট অথবা কুরবানীর পশু নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি বললেন, পিঠে চড়ে যাও। সে বলল, এটা কুরবানীর উট, কুরবানীর পশু। তিনি বললেন, তাহলেও। (ই.ফা. ৩০৭৮, ই.সে. ৩০৭৫) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট দিয়া একটি কুরবানীর ঊট নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল...এরপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩০৭৯, ই.সে. ৩০৭৬) আবূ যুবায়র (রহঃ) আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট কুরবানীর পশুর পিঠে আরোহণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে শুনেছি। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ প্রয়োজনবোধে এর পিঠে আরোহণ করতে পার, একে কষ্ট না দিয়ে- যতক্ষণ না অন্য সাওয়ারী পাও। (ই.ফা. ৩০৮০, ই.সে. ৩০৭৭) আবূ যুবায়র (রহঃ) আমি জাবির (রাঃ)-এর নিকট কুরবানীর পশুর পিঠে আরোহণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ সহানুভূতির সাথে এর পিঠে আরোহণ কর- যদি অন্য কোন সওয়ারী না পাও। (ই.ফা. ৩০৮১, ই.সে. ৩০৭৮)

【66】

কুরবানীর পশু পথিমধ্যে অচল হয়ে পড়লে কী করতে হবে?

মূসা ইবনু সালামাহ্ আল হুযালী (রহঃ) আমি সিনান ইবনু সালামাহ্ ‘উমরাহ্ পালনের জন্য রওনা হলাম। সিনানের একটি কুরবানীর উট ছিল। সে পশুটি হাঁকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে পশুটি অচল হয়ে পড়লে এ ব্যাপারে সে অসহায় ও চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ল এবং (মনে মনে বলল) এ যদি সামনে অগ্রসর হতে না পারে, তবে এটাকে কি করে গন্তব্যস্থলে নেয়া যাবে? সে বলল, যদি মাক্কাহ্ পর্যন্ত পৌছাতে পারতাম তবে এ সম্পর্কে ভালরূপে মাসাআলাহ্ জেনে নিতাম। রাবী বলেন, আমরা দিনের প্রথমভাগে আবার চলতে শুরু করলাম এবং ‘বাত্বহা’ নামক স্থানে যাত্রা বিরতি করলাম। সিনান বলল, চল আমরা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে (বিষয়টি) আলোচনা করি। ‘রাবী বলেন, সিনান তার নিকটে নিজের উটের কথা বর্ণনা করল। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, তুমি উত্তমরূপে অবহিত ব্যক্তির নিকটই বিষটি বর্ণনা করেছ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির মাধ্যমে ষোলটি উট (মাক্কার হারামে) পাঠালেন এবং তাকে এগুলোর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করলেন। রাবী বলেন, সে রওনা হয়ে গেল এবং পুনরায় ফিরে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! যদি এর মধ্যকার কোন পশু চলচ্ছক্তিহীন হয়ে পড়ে, তবে কি করব? তিনি বললেনঃ তা যাবাহ কর এবং এর (গলায় বাঁধা) জুতা জোড়া রক্তে রঞ্জিত করে এর কুঁজের উপর রেখে দাও। এর গোশত তুমি খাবে না, তোমার সঙ্গীদের কেউও খাবে না। (ই.ফা. ৩০৮২, ই.সে. ৩০৭৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে আঠারটি উট (কুরবানীর জন্য মাক্কার হারামে) পাঠেলেন। .... অবশিষ্ট ‘আবদুল ওয়ারিশের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে এ সানাদে হাদীসের প্রথমাংশের (সিনানের সাথে সংশ্লিষ্ট) ঘটনা উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৩০৮৩, ই.সে. ৩০৮০) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তার নিকট যুআয়ব আবূ ক্ববীসাহ্ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কুরবানীর উটসহ (মাক্কায়) পাঠাতেন এবং বলে দিতেনঃ “এগুলোর মধ্যকার কোন উট দুর্বল হয়ে চলতে অক্ষম হয়ে পড়লে এবং তুমি এর মৃত্যুর আশংকা করলে তা যাবাহ করে দিও। অতঃপর এর (গলায় বাঁধা) জুতা জোড়া রক্ত রঞ্জিত করে এর কুঁজে ছাপ মেরে দিও। তুমি এবং তোমার সঙ্গীদের কেইউ গোশ্ত খাবে না।” (ই.ফা. ৩০৮৪, ই.সে. ৩০৮১)

【67】

বিদায়ী ত্বওয়াফ বাধ্যতামূলক কিন্তু ঋতুবতী মহিলার ক্ষেত্রে তা পরিত্যাজ্য

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা বিভিন্ন পথ দিয়ে প্রত্যাবর্তন করছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “কেউই যেন শেষবারের মতো বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ না করা পর্যন্ত প্রত্যাবর্তন না করে।” যুহায়ের বর্ণনায় আরবি (মাঝে) ফী অব্যয়টি উল্লেখিত হয়নি। (ই.ফা.৩০৮৫, ই.সে.৩০৮২) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) লোকদেরকে (প্রত্যাবর্তনকালে) শেষবারের মত বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ঋতুবতী মহিলাদেরকে তা থেকে রেহাই দেয়া হয়েছে।(ই.ফা. ৩০৮৬, ই.সে. ৩০৮৩) ত্বাউস (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললেন, আপনি কি এ ফাতওয়া দিচ্ছেন যে, হায়যগ্রস্ত মহিলা বিদায়ী ত্বওয়াফ না করেই প্রস্থান করতে পারবে? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাকে বললেন, যদি আপনি আশ্বস্ত না হতে পারেন, তবে অমুক আনসারী মহিলাকে জিজ্ঞেস করুন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি তাকে এরূপ নির্দেশ দিয়েছিলেন? ত্বাওস বলেন, যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) হাসতে হাসতে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট ফিরে এসে বললেন, আমি মনে করি আপনি সত্য কথাই বলেছেন। (ই.ফা. ৩০৮৭, ই.সে. ৩০৮৪) আবূ সালামাহ্ ও ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, উম্মুল মু’মিনীন সফিয়্যাহ্ বিনতু হুয়াই (রাঃ) ত্বওয়াফে ইফাযাহ্ করার পর হায়যগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। ‘আয়িশা (রাঃ) আরও বলেন, আমি তার হায়িযের কথা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উল্লেখ করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে কি আমাদেরকে আটকিয়ে রাখবে? ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সে ত্বওয়াফে ইফাযাহ্ করার পর হায়যগ্রস্ত হয়েছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে সে রওনা হতে পারে। [২৮] (ই.ফা. ৩০৮৮, ই.সে. ৩০৮৫) ইবনু শিহাব (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী সফিয়্যাহ্ বিনতু হুয়াই বিদায় হাজ্জকালে পবিত্র অবস্থায় ত্বওয়াফে ইফযাহ্ করার পর হায়যগ্রস্ত হন।...অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত লায়সের হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৩০৮৯, ই.সে. ৩০৮৬) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উল্লেখ করলেন যে, সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-এর হায়য হয়েছে। অবশিষ্ট যুহরীর হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৩০৯০, ই.সে. ৩০৮৭) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আশংকা করছিলাম যে, সফিয়্যাহ্ (রাঃ) ত্বওয়াফে ইফাযাহ্ করার পূর্বেই হায়যগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এলেন এবং বললেনঃ “সফিয়্যাহ্ আমাদের আটকে রাখবে হয়ত।” আমরা বললাম, তিনি ত্বওয়াফে ইফাযাহ্ করেছেন। তিনি বললেনঃ “তাহলে আটকে পড়ার কোন কারণ নেই।” (ই.ফা. ৩০৯১, ই.সে. ৩০৮৮) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! সফিয়্যাহ্ বিনতু হুইয়াই হায়যগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হয়ত সে আমাদের আটকে রাখবে। সে কি তোমাদের সঙ্গে বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফ করেনি? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তবে তোমরা চল। (ই.ফা. ৩০৯২, ই.সে. ৩০৮৯) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) কোন পুরুষ স্ত্রীর সাথে সাধারণত যা করার ইচ্ছা করে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সফিয়্যাহ্ (রাঃ)-এর সাথে তাই করার ইচ্ছা করলেন। তারা বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তিনি হায়যগ্রস্তা। তিনি বললেন, তাহলে সে তো আমাদের এখানে অবস্থান করতে বাধ্য করবে। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি কুরবানীর দিন (বায়তুল্লাহ-এর) যিয়ারাত করেছেন। তিনি বললেন, তাহলে সে তোমাদের সঙ্গে যাত্রা করুক। (ই.ফা. ৩০৯৩, ই.সে. ৩০৯০) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রওনা হওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন সফিয়্যাকে তাঁর তাঁবুর দরজায় চিন্তিতা ও অবসাদগ্রস্তা দেখতে পেলেন। তিনি বললেনঃ বন্ধ্যা নারী! তুমি আমাদের (এখানে) আটকে রাখবে? তিনি পুনরায় তাকে বললেনঃ তুমি কি কুরবানীর দিন (বায়তুল্লাহ) যিয়ারত করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে রওনা হও। (ই.ফা. ৩০৯৪, ই.সে. ৩০৯১) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এ সূত্রে উপরোক্ত হাকামের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সূত্রে ‘চিন্তিতা’ ও ‘অবসাদগ্রস্তা’ শব্দদ্বয়ের উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৩০৯৫, ই.সে. ৩০৯২)

【68】

হাজ্জ পালনকারী ও অন্যান্যের জন্য কা’বাহ্ ঘরের অভ্যন্তরে প্রবেশ এবং সলাত আদায় করা, এর সকল পাশে দু’আ করা মুস্তাহাব

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে এবং উসামাহ্, বিলাল ও ‘উসমান ইবনু ত্বল্হাহ্ আল হাজাবী (রাঃ) কা’বার অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন। অতঃপর তিনি ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন এবং কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করলেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, বের হয়ে আসলে আমি বিলালকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী করেছেন? তিনি বললেন, তিনি দু’টি থাম নিজের বাঁ দিকে, একটি থাম ডান পাশে এবং তিনটি থাম পিছনে রেখে সলাত আদায় করলেন। তৎকালে বায়তুল্লাহ ছয়টি থামের উপর দন্ডায়মান ছিল। (ই.ফা. ৩০৯৬, ই.সে. ৩০৯৩) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাক্কায়) এলেন এবং কা’বার চত্বরে অবতরণ করলেন। অতঃপর ‘উসমান ইবনু ত্বল্হাহ্ (রাঃ)-কে ডেকে পাঠালেন। তিনি চাবি নিয়ে এলেন এবং (কা’বার) দরজা খুললেন। রাবী বলেন অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল উসামাহ্ ইবনু যায়দ ও ‘উসমান ইবনু ত্বলহাহ্ (রাঃ) ভিতরে প্রবেশ করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দরজা (ভিতর থেকে) বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন, অতএব তা বন্ধ করে দেয়া হলো। তারা কিছু সময় ভিতরে অবস্থান করলেন। অতঃপর দরজা খোলা হল। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি বাইরে সকলের আগে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মিলিত হলাম এবং বিলাল তাঁর পিছনে ছিলেন। আমি বিলালকে বললাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি কা’বার অভ্যন্তরে সলাত আদায় করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, কোন্ জায়গায়? বিলাল (রাঃ) বললেন, তাঁর সামনের দু’টি থামের মাঝখানে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, তিনি কত রাক’আত সলাত আদায় করেছেন, বিলালের নিকট তা জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি। (ই.ফা. ৩০৯৭, ই.সে. ৩০৯৪) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, মাক্কাহ্ বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)-এর উষ্ট্রীতে আরোহণ করে (মাক্কায়) আগমন করেন। উসামাহ্ (রাঃ) উষ্ট্রীকে কা’বার চত্বরে বসান। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উসমান ইবনু ত্বল্হাহ্ (রাঃ)-কে ডাকলেন এবং বললেন, আমার নিকট (কা’বার) চাবি নিয়ে এসো। তিনি তার মায়ের নিকট উপস্থিত হয়ে চাবি চাইলেন কিন্তু তিনি তাকে চাবি দিতে অস্বীকৃতি জানান। ‘উসমান (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! তাঁকে চাবি দিন, অন্যথায় এ তরবারি আমার পিঠ ভেদ করে চলে যাবে। অতঃপর তিনি তাকে চাবি দিলেন। তিনি চাবি নিয়ে নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে তাঁর নিকট হস্তান্তর করেন। তিনি কা’বার দরজা খুললেন। ...হাদীসে অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্বোক্ত হাম্মাদ ইবনু যায়দের হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৩০৯৮, ই.সে. ৩০৯৫) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়তুল্লাহ্র অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন এবং তাঁর সঙ্গে ছিলেন উসামাহ্, বিলাল ও ‘উসমান ইবনু ত্বল্হাহ্ (রাঃ)। লোকেরা অনেকক্ষণ দরজা বন্ধ করে রাখল। অতঃপর তা খোলা হ’ল। আমিই সর্বপ্রথম (অগ্রসর হয়ে ভিতরে) প্রবেশ করে বিলালকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন্ স্থানে সলাত আদায় করেছেন? বিলাল বললেন, সামনের দু’থামের মাঝখানে। আমি তাকে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কত রাক’আত সলাত আদায় করেছেন। (ই.ফা. ৩০৯৯, ই.সে . ৩০৯৬) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি কা’বার নিকটে পৌছলেন। ইতোমধ্যে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), বিলাল ও উসামাহ্ (রাঃ) কা’বার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। ‘উসমান ইবনু ত্বল্হাহ্ (রাঃ) দরজা বন্ধ করে দিলেন। তারা কিছু সময় কা’বার অভ্যন্তরে অবস্থান করলেন। অতঃপর দরজা খোলা হ’ল এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেরিয়ে এলেন। আমি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম এবং বায়তুল্লাহ্র অভ্যন্তরে প্রবেশ করে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোথায় সলাত আদায় করেছেন? তারা বললেন, এখানে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, তিনি কত রাক’আত সালাত আদায় করেছেন তা আমি তাদের নিকট জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি। (ই.ফা. ৩১০০, ই.সে. ৩০৯৭) সালিম (রহঃ) থেকে তার পিতা সূত্র তিনি (পিতা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উসামাহ্ ইবনু যায়দ, বিলাল ও ‘উসমান ইবনু ত্বল্হাহ্ (রাঃ) বায়তুল্লাহ্য় প্রবেশ করলেন। অতঃপর তারা দরজা বন্ধ করে দিলেন। অতঃপর যখন তারা দরজা খুললেন, তখন প্রথমেই আমি ভিতরে প্রবেশ করলাম এবং বিলালের সাথে মিলিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি ভিতরে সলাত আদায় করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি দু’ইয়ামানী থামের মাঝখানে সলাত আদায় করেছেন। (ই.ফা. ৩১০১, ই.সে. ৩০৯৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি (‘আবদুল্লাহ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), উসামাহ্ ইবনু যায়দ, বিলাল ও ‘উসমান ইবনু ত্বল্হাহ্ (রাঃ)-কে কা’বার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেখলাম। তাদের সঙ্গে আর কেউ প্রবেশ করেনি। অতঃপর দরজা বন্ধ করে দেয়া হ’ল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, বিলাল অথবা ‘উসমান ইবনু ত্বল্হাহ্ (রাঃ) আমাকে অবহিত করলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বার কেন্দ্রস্থলে ইয়ামানী দু’স্তম্ভের [২৯] মাঝখানে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলেন। (ই.ফা. ৩১০২, ই.সে. ৩০৯৯) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) আমি ‘আত্বা (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম- আপনি কি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ তোমাদেরকে কেবল ত্বওয়াফের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, বায়তুল্লাহ্র অভ্যন্তরে প্রবেশের নির্দেশ দেয়া হয়নি?” ‘আত্বা বললেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তো কা’বার অভ্যন্তরে প্রবেশ নিষেধ করেননি, বরং আমি তাকে বলতে শুনেছিঃ উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) আমাকে অবহিত করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়তুল্লাহ্র অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এর সকল পাশে দু’আ করেছেন কিন্তু বের হওয়া পর্যন্ত কোন সলাত আদায় করেননি। তিনি বের হয়ে এসে বায়তুল্লাহর দিকে মুখ করে দু’রাক’আত সলাত আদায় করেছেন এবং বলেছেন, এ হ’ল ক্বিবলাহ্। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এর পার্শ্ব বলতে কী বুঝায়? তা দিয়ে কি কোণ বুঝানো হয়েছে? তিনি (‘আত্বা) আরও বললেন, এর সমস্ত পার্শ্ব ও কোণই ক্বিবলাহ্। [৩০] (ই.ফা. ৩১০৩, ই.সে. ৩১০০) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কা’বার অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন। আর তাতে ছিল ছয়টি স্তম্ভ। একটি থামের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি দু’আ করেছেন কিন্তু সলাত আদায় করেননি। (ই.ফা. ৩১০৪, ই.সে. ৩১০১) ইসমা’ঈল ইবনু আবূ খালিদ (রহঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবী আবূ আওফা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উমরাহ্ আদায়কালে বায়তুল্লাহ্র অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিলেন কি? তিনি বললেন, না। [৩১] (ই.ফা. ৩১০৫, ই.সে ৩১০২)

【69】

কা’বাহ্ ঘর ভেঙ্গে পুনর্নির্মাণ

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তোমার জাতির লোকদের কুফরি পরিত্যাগের যুগটি নিকটবর্তী না হলে আমি কা’বাহ্ ঘর ভেঙ্গে তা ইব্রাহীম (আঃ)-এর ভিত্তির উপর পুনর্নির্মাণ করতাম। কারণ কুরায়শগণ কা’বাহ্ ঘর নির্মাণের সময় এর আয়তন ছোট করে দিয়েছে। আর তার পেছনে একটি দরজা স্থাপণ করতাম। (ই.ফা. ৩১০৬, ই.সে. ৩১০৩) হিশাম (রহঃ) এ সানাদে বর্ণিত। (ই.ফা. ৩১০৭, ই.সে. ৩১০৪) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি কি দেখনি যে, তোমার গোত্রের লোকেরা কা’বাহ্ ঘর নির্মাণের সময় তা ইব্রাহীম (‘আঃ)-এর ভিত্গুলোর চেয়ে ছোট করে দেয়? ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি কি তা ইব্রাহীম (‘আঃ)-এর ভিতের উপর পুনর্নির্মাণ করতে চান? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের কওমের কুফরী পরিত্যাগের যুগটি যদি নিকটতর না হতো। (তবে তাই করতাম)। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, যদিও বা ‘আয়িশা (রাঃ) তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখে শুনে থাকবেন। কিন্তু হাজারের নিকটবর্তী উভয় রুকনের স্পর্শ ত্যাগ করতে দেখিনি। তবে বায়তুল্লাহ ইব্রাহীম (‘আঃ)–এর গোটা ভিতের উপর পুনর্নির্মিত হয়নি। (ই.ফা. ৩১০৮, ই.সে.৩১০৫) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা যদি জাহিলী যুগের কাছাকাছি না হতো অথবা নিকট অতীতে কুফরি ত্যাগ না করত, তবে আমি অবশ্যই কা’বায় পুঞ্জীভূত সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতাম, এর দরজা ভূমির সমতলে স্থাপন করতাম এবং হাতীমকে কা’বার অন্তর্ভুক্ত করে দিতাম। (ই.ফা. ৩১০৯, ই.সে. ৩১০৬) সা’ঈদ ইবনু মীনা (রহঃ) আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আমার খালা ‘আয়িশা (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ্! তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা নিকট অতীতে শির্ক পরিত্যাগ না করলে আমি কা’বাহ্ ঘর ভেঙ্গে এর ভিত ভূমির সমতলে স্থাপন করতাম। এর দু’টি দরজা করতাম-একটি পূর্বদিকে, অপরটি পশ্চিমদিকে এবং আল হাজার (হাতীম)-এর ছয় গজ স্থান কা’বার অন্তর্ভুক্ত করতাম। কেননা কুরায়শরা কা’বাহ্ ঘর নির্মাণকালে এর ভিত ছোট করে দেয়। (ই.ফা. ৩১১০, ই.সে ৩১০৭) ‘আত্বা (রহঃ) তিনি বলেন, ইয়াযীদ ইবনু মু’আবিয়ার সময় কা’বাহ্ ঘর দগ্ধীভূত হয়েছিল- যখন সিরীয় বাহিনী মাক্কায় যুদ্ধে লিপ্ত ছিল (৬৩ হিজরী) এবং কা’বার যা হবার তাই হ’ল। হাজ্জের মৌসুমে লোকদের আগমনের সময় ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) কা’বাকে এ অবস্থায় রেখে দিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল লোকদেরকে উদ্দীপ্ত করা অথবা তাদের মধ্যে সিরীয়দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার মনোবল সৃষ্টি করা। লোকেরা সমবেত হলে তিনি বললেন, হে জনগণ! আমাকে কা’বাহ্ ঘর সম্পর্কে পরামর্শ দিন। আমি কি তা ভেঙ্গে ফেলে সম্পূর্ণ নতুনভাবে গড়ে তুলব, নাকি শুধু এর ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করব? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমার মনে একটি মতের উদয় হয়েছে, আমি মনে করি যে, শুধু ক্ষতিগ্রস্ত অংশ তুমি মেরামত করবে এবং লোকদের ইসলাম গ্রহণ ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নুবূওয়াত লাভকালীন সময়ে কা’বাহ্ ঘর ও পাথরসমূহ যে অবস্থায় ছিল, তা সে অবস্থায় রেখে দিবে। ইবনু যুবায়র (রাঃ) বললেন, আপনাদের কারো ঘর অগ্নিদগ্ধ হলে তা সংস্কার না করা পর্যন্ত তিনি স্বস্তি লাভ করতে পারেন না। অতএব আপনাদের প্রতিপালকের ঘর কী করে এরূপ জীর্ণ অবস্থায় রাখা যেতে পারে? আমি আমার রব-এর কাছে তিনদিন ইস্তিখারা করব (অভিপ্রায় অবগত হবার জন্য) অতঃপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। তিনদিন পর তিনি কা’বাহ্ ঘর ভেঙ্গে পুনর্নির্মাণের দৃঢ় সিদ্ধান্তে উপনিত হলেন। লোকেরা আশংকা করল যে, সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি কা’বার ছাদে উঠবে, সে হয়ত কোন আসমানী গযবে নিপতিত হবে। শেষ পর্যন্ত এক ব্যক্তি (ছাদ ভাঙ্গার জন্য) কা’বার ছাদে উঠল এবং তার একটি পাথর নীচে ফেলল। লোকেরা যখন দেখল সে কোন বিপদে পড়েনি, তখন তারাও তাকে অনুসরণ করল এবং কা’বাহ্ ঘর ভেঙ্গে জমিনের সাথে মিশিয়ে দিল। অতঃপর ইবনু যুবায়র (রাঃ) কতগুলো থাম স্থাপন করে এগুলোর সাথে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। অবশেষে কা’বার দেয়ালের গাঁথুনি উচ্চ হল। ইবনু যুবায়র (রাঃ) বললেন, অবশ্যই আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “লোকেরা যদি নিকট অতীতে কুফরি ত্যাগ না করত এবং আমার নিকটও কা’বাকে পুনর্নির্মাণ করার মত অর্থ-সামর্থ্যও নেই- তাহলে আমি অবশ্যই আল-হাজার (হাতীম)-এর পাঁচ গজ স্থান কা’বাহ্ ঘরের অন্তর্ভুক্ত করতাম এবং লোকদের প্রবেশের জন্য ও বের হবার জন্য এর দু’টি দরজা বানাতাম।” ইবনু যুবায়র (রাঃ) বলেন, বর্তমানে আমার হাতে তা নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ আছে এবং লোকদের তরফ থেকেও কোন প্রতিবাদের আশংকা নেই। রাবী বলেন, এরপর তিনি হাতীমের পাঁচ গজ এলাকা কা’বার অন্তর্ভুক্ত করলেন। ফলে তা (পুরাতন) ভিতের উপর গড়ে উঠল। [যার উপর ইব্রাহীম (‘আঃ) তা গড়েছিলেন]। এবং লোকেরা তা অবলোকন করল। এ ভিতের উপর দেয়াল গড়ে তোলা হল। কা’বার দৈর্ঘ্য ছিল আঠার গজ। তা যখন (প্রস্থে) বাড়ানো হল, তখন (স্বাভাবিকভাবেই দৈর্ঘ্য) তা ছোট হওয়ায় দৈর্ঘ্যে তা আরও দশ গজ বৃদ্ধি করা হল এবং এর দু’টি দরজা নির্মাণ করা হল, একটি প্রবেশের জন্য এবং অপরটি প্রস্থানের জন্য। ইবনু যুবায়র (রাঃ) শহীদ হলে হাজ্জাজ (ইবনু ইউসুফ) ‘আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ানকে তা লিখে জানাল। সে আরও জানাল যে, ইবনু যুবায়র (কা’বাহ্ ঘর) সে ভিতের উপর নির্মাণ করেছে। [যা ছিল ইব্রাহীম (‘আঃ)-এর ভিত] এবং মাক্কার বিশ্বস্ত লোকেরা তা যাচাই করে দেখেছে। ‘আবদুল মালিক তাকে লিখে পাঠালেন যে, কোন বিষয়ে ইবনু যুবায়রকে অভিযুক্ত করার প্রয়োজন আমাদের নেই। সে দৈর্ঘ্যে যতটুকু বর্ধিত করেছে, তা বহাল রাখ এবং হাতীমের দিকে যতটুকু বর্ধিত করেছে, তা ভেঙ্গে পূর্বাবস্থায় নিয়ে আসো। আর সে যে (নতুন) দরজা খুলেছে তা বন্ধ করে দাও। এরপর হাজ্জাজ তা ভেঙ্গে পূর্বের ভিতের উপর পুনর্নির্মাণ করে। [৩২] (ই.ফা ৩১১১, ই.সে.৩১০৮) হারিস ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ রবী’আহ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উবায়দ বলেন, হারিস ইবনু ‘আবদুল্লাহ প্রতিনিধি হিসেবে ‘আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ানের রাজত্বকালে তার নিকট গিয়েছিলেন। ‘আবদুল মালিক বললেন, আমি মনে করি না যে, আবূ যুবায়র অর্থাৎ ইবনু যুবায়র (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট এমন কিছু শুনেছেন যার দাবি তিনি করে থাকেন। [অর্থাৎ ইব্রাহীম (‘আঃ)-এর ভিতের উপর কা’বাহ ঘরের পুণর্নিমাণের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অভিপ্রায় সম্পর্কিত কোন হাদীস তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট শুনেননি]। হারিস বলেন, হ্যাঁ, আমি নিজেই তার নিকট এ হাদীস শুনেছি। ‘আবদুল মালিক বললেন, আপনি তাকে কী বলতে শুনেছেন? হারিস বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “তোমার ক্বওমের লোকেরা কা’বাহ্ ঘরের ভিত (আয়তনে) ছোট করে ফেলেছে। অতীতে তারা শির্ক পরিত্যাগ না করলে আমি তাদের পরিত্যক্ত অংশটুকু কা’বার অন্তর্ভুক্ত করে দিতাম। তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা যদি আমার পরে তা পুণর্নিমাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে এসো, আমি তোমাকে তাদের পরিত্যক্ত অংশটুকু দেখিয়ে দিই”- অতএব রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশাহ-কে (হাতীম সংলগ্ন) প্রায় সাত গজ স্থান দেখিয়ে দিলেন। এ হাদীস ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উবায়দ কর্তৃক বর্ণিত। ওয়ালীদ ইবনু ‘আত্বা ও বর্ণনার উপর আরো বৃদ্ধি করেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি জমিনের সমতলে দু’টি দরজাও নির্মাণ করতাম- একটি পূর্বদিকে এবং অপরটি পশ্চিম দিকে। তুমি কি জান তোমার গোত্রের লোকেরা কা’বার দরজা (ভূমি থেকে) উঁচুতে স্থাপন করেছে কেন?” ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “গর্ব ও অহংকারের বশবর্তী হয়ে (তারা এটা করেছে) যাকে কেবল সে ব্যক্তিই কা’বার অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে- যাকে তারা অনুমতি দিবে। যখন কোন ব্যক্তি কা’বার অভ্যন্তরে প্রবেশের ইচ্ছা করত, তারা তাকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে দিত। এমনকি সে যখন তাতে প্রবেশ করত, তখন তারা তাকে টেনে নিচে ফেলে দিত”। ‘আবদুল মালিক হারিসকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাবী বলেন, কিছুক্ষণ তিনি হাতের ছড়ি দিয়ে মাটি খুঁড়তে লাগলেন, এরপর বললেনঃ আমি তার (ইবনু যুবায়র) কাজ স্ব অবস্থায় বহাল রাখার আকাঙক্ষা করছি। (ই.ফা. ৩১১২, ই.সে. ৩১০৯) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) এ সানাদে ইবনু বাকর-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩১১৩, ই.সে. ৩১১০) আবূ ক্বাযা’আহ্ (রহঃ) ‘আবদুল মালিক ইবনু মারওয়ান বায়তুল্লাহ ত্বওয়াফকালে বলে উঠলেন, আল্লাহ ইবনু যুবায়রকে ধ্বংস করুন- যেহেতু সে উম্মুল মু’মিনীন [‘আয়িশা (রাঃ)]-এর উপর মিথ্যারোপ করেছেন যে, সে তাকে নাকি বলতে শুনেছে, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে ‘আয়িশাহ্! তোমার সম্প্রদায় যদি অতীতে কুফরি পরিত্যাগকারী না হতো তবে আমি কা’বাহ্ ঘর বেঙ্গে তাতে হাতীমের অংশ যুক্ত করে দিতাম। কারণ তোমার সম্প্রদায় কা’বার আয়তন ছোট করে দিয়েছে”। (আবদুল মালিকের এ কথার উপর) হারিস ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ রবী’আহ্ বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন! এ কথা আর বলবেন না। কারণ আমি নিজে উম্মুল মু’মিনীন [‘আয়িশা (রাঃ)]-কে এ কথা বলতে শুনেছি। অতঃপর ‘আবদুল মালিক বললেন, কা’বাহ্ ঘর ভাঙ্গার পূর্বে যদি আমি তা শুনতে পেতাম, তাহলে ইবনু যুবায়রের ভিতের উপরই তা অটুট রাখতাম। (ই.ফা. ৩১১৪, ই.সে. ৩১১১)

【70】

কা’বার দেয়াল ও দরজার অবস্থান

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, হাতীমের দেয়াল কি বায়তুল্লাহ্র অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, তবে তার কেন এটাকে বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত করেনি? তিনি বললেন, তোমার সম্প্রদায়ের নিকট পর্যপ্ত অর্থ ছিল না। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, এর দরজা উঁচুতে স্থাপিত হবার কারণ কী? তিনি বললেন, তাও তোমার সম্প্রদায়ের কাণ্ড- যাতে তাদের কাঙ্খিত ব্যক্তি তাতে প্রবেশাধিকার পায় এবং অবাঞ্ছিত ব্যক্তি প্রবেশ করতে না পারে। তোমার ক্বওমের জাহিলিয়্যাত পরিত্যাগের যুগ নিকটতম না হলে এবং আমার যদি এ আশংকা না হতো যে, তাদের অন্তর পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে- তা হলে আমি অবশ্যই (হাতীমের) দেয়াল বায়তুল্লাহর অন্তর্ভুক্ত করে দিতাম এবং কা’বার দরজা জমিনের সমতলে স্থাপন করার বিষয়ে বিবেচনা করতাম। (ই.ফা. ৩১১৫, ই.সে. ৩১১২) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আল্ হাজার (হাতীম) সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম। এরপর পূর্বোক্ত আবুল আহ্ওয়াস-এর হাদীসের অনুরূপ। এ বর্ণনায় আছে [‘আয়িশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন], “এর দরজা উঁচুতে স্থাপিত হবার কারণ কী যে, সিঁড়ি ব্যতীত তাতে উঠা যায় না?” এতে আরো আছেঃ “তাদের অন্তর পরিবর্তিত হয়ে যাবার আশংকায়”। (ই.ফা. ৩১১৬, ই.সে. ৩১১৩)

【71】

বিকলাঙ্গ, বার্ধক্য ইত্যাদির কারণে অক্ষম ব্যক্তির পক্ষ হতে অথবা মৃত ব্যক্তির পক্ষ হতে হাজ্জ সম্পাদন

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ফায্ল ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সওয়ারীতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে উপবিষ্ট ছিলেন। এমতাবস্থায় খাস’আম গোত্রের এক মহিলা তাঁর নিকট মাসআলাহ্ জিজ্ঞেস করতে আসলো। ফায্লও তার দিকে তাকাচ্ছিল এবং মহিলাটিও ফায্লের দিকে তাকাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফায্ল-এর মুখমণ্ডল অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন। মহিলাটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর যে হাজ্জ ফরয করেছেন- তা আমার বৃদ্দ পিতার উপরও ফরয হয়েছে, কিন্তু তিনি বাহনের উপর অবস্থান করতে অক্ষম। আমি কি তার পক্ষ থেকে হাজ্জ করতে পারি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, এটা বিদায় হাজ্জের সময়কার ঘটনা। [৩৩] (ই.ফা. ৩১১৭, ই.সে. ৩১১৪) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে তার ভাই ফায্লের সূত্র খাস’আম গোত্রের এক মহিলা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা অতি বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন এবং তার উপর আল্লাহর ধার্যকৃত হাজ্জ ফারয হয়েছে। কিন্তু তিনি উটের পিঠে বসে থাকতে সক্ষম নন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তার পক্ষ থেকে হাজ্জ কর। (ই.ফা. ৩১১৮, ই.সে. ৩১১৫)

【72】

নাবালকের হাজ্জ করা জায়িয এবং যে ব্যক্তি তাকে হাজ্জ করতে সহায়তা করে, সে সাওয়াবের অধিকারী হবে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাওহা নামক স্থানে একদল আরোহীর সাক্ষাৎ পেলেন এবং তিনি বললেন, তোমরা কোন্ সম্প্রদায়ের লোক? তারা বলল, আমরা মুসলিম। তারা আরও জিজ্ঞেস করল, আপনি কে? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল। এরপর এক মহিলা তাঁর সামনে একটি শিশুকে তুলে ধরে জিজ্ঞেস করল, এর জন্য হাজ্জ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ এবং তোমার জন্য সাওয়াব রয়েছে। [৩৪] (ই.ফা. ৩১১৯, ই.সে. ৩১১৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক মহিলা তার শিশু পুত্রকে তুলে ধরে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! এর জন্য হাজ্জ হবে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ এবং তোমার জন্য রয়েছে সাওয়াব। (ই.ফা. ৩১২০, ই.সে. ৩১১৭) কুরায়ব (রহঃ) এক মহিলা তার শিশুকে তুলে ধরে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এর হাজ্জ হবে কি? হ্যাঁ এবং তোমার জন্য সাওয়াব হবে। (ই.ফা. ৩১২১, ই.সে. ৩১১৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এ সানাদ সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩১২২, ই.সে. ৩১১৯)

【73】

জীবনে একবার হাজ্জ পালন ফারয

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন এবং বললেনঃ হে জনগণ! তোমাদের উপর হাজ্জ ফারয করা হয়েছে। অতএব তোমরা হাজ্জ কর। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! তা কি প্রতি বছর? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব থাকলেন এবং সে তিনবার কথাটি বলল। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি হ্যাঁ বললে তা ওয়াজিব হয়ে যাবে (প্রতি বছরের জন্য) অথচ তোমরা তা পালন করতে সক্ষম হবে না। তিনি পুনরায় বললেন, তোমরা আমাকে ততটুকু কথার উপর থাকতে দাও যতটুকু আমি তোমাদের জন্য বলি। কারণ তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা তাদের অধিক প্রশ্নের কারণে এবং তাদের নবীদের বিরোধিতার কারণে ধ্বংস হয়েছে। অতএব আমি তোমাদের যখন কোন কিছু করার নির্দেশ দেই-তোমরা তা যথাসাধ্য পালন কর এবং যখন তোমাদের কোন কিছু করতে নিষেধ করি তখন তা পরিত্যাগ কর। (ই.ফা. ৩১২৩, ই.সে. ৩১২০)

【74】

মহিলাদের মাহরামের সঙ্গে হাজ্জ অথবা কোন প্রয়োজনীয় সফর করা

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মহিলা যেন সাথে মাহ্রাম ব্যক্তি ছাড়া একাকী তিন দিনের (দূরত্বে) সফর না করে। (ই.ফা. ৩১২৪, ই.সে. ৩১২১) ‘উবায়দুল্লাহ (রহঃ)-এর সূত্র আবূ বাকর (রাঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে ‘তিন দিনের অতিরিক্ত’ আর ইবনু নুমায়র (রহঃ)-এর পিতার সূত্রে বর্ণনায় রয়েছে- সালাসাহ্ (তিনরাত)। (ই.ফা. ৩১২৫, ই.সে. ৩১২২) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে স্ত্রীলোক আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান এনেছে- তার জন্য সাথে কোন মাহ্রাম ব্যক্তি ছাড়া তিন দিনের দূরত্বে পথের সফর করা বৈধ নয়। (ই.ফা. ৩১২৬, ই.সে. ৩১২৩) ক্বাযা’আহ্ (রহঃ তিনি বলেন, আমি আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাঃ)-এর নিকট থেকে একটি হাদীস শুনে আশ্চর্যান্বিত হলাম এবং তাকে জিজ্ঞেস করলাম-আপনি কি তা সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শুনিনি তা কেন তাঁর নামে বলব। ক্বাযা’আহ্ (রহঃ) বলেন, আমি আবূ সা’ঈদ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমরা কেবল তিনটি মাসজিদের দিকেই (সাওয়াবের উদ্দেশে) সফর কর: “আমার এ মাসজিদ, মাসজিদুল হারাম এবং মাসজিদুল আক্বসা।” আমি তাঁকে আরও বলতে শুনেছি: “কোন মহিলা যেন দু’দিনের পথেও সফর না করে- তার সাথে তার কোন মাহরাম পুরুষ অথবা তার স্বামী ব্যতীত”। (ই.ফা. ৩১২৭, ই.সে. ৩১২৪) আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট চারটি কথা শুনেছি এবং তা আমার পছন্দ হয়েছে ও আমার কাছে ভাল লেগেছে। সাথে স্বামী অথবা কোন মাহরাম ব্যক্তি ব্যতীত কোন মহিলাকে দু’দিনের পথও সফর করতে তিনি নিষেধ করেছেন। অতঃপর তিনি অবশিষ্ট হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৩১২৮, ই.সে. ৩১২৫) আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন স্ত্রীলোক যেন সাথে কোন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত তিন দিনের দূরত্বের পথ সফর না করে। (ই.ফা. ৩১২৯, ই.সে. ৩১২৬) আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন স্ত্রীলোক যেন তিন দিনের দূরত্বের পথ একাকী সফর না করেন- তার সাথে একজন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত। (ই.ফা. ৩১৩০, ই.সে. ৩১২৭) ক্বাতাদাহ্ (রহঃ) এ সানাদ সূত্রে উপরোক্ত হাদীদের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। এ বর্ণনায় আছেঃ “তিন দিনের অতিরিক্ত দূরত্ব সাথে মাহরাম পুরুষ ব্যতীত”। (ই.ফা. ৩১৩১, ই.সে. ৩১২৮) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিম মহিলার জন্য তার সাথে কোন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত এক রাতের পথও সফর করা বৈধ নয়। (ই.ফা. ৩১৩২, ই.সে. ৩১২৯) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে কোন মহিলা আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে- তার জন্য সাথে কোন মাহ্রাম পুরূষ ব্যতীত এক দিনের দূরত্বের পথ সফর করা হালাল নয়। [৩৫] (ই.ফা. ৩১৩৩, ই.সে. ৩১৩০) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে কোন মহিলা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে- তার জন্য সঙ্গে কোন মাহরাম পুরুষ ব্যতীত একাকী এক দিন ও এক রাতের দূরত্বের পথও সফর করা হালাল নয়। (ই.ফা. ৩১৩৪, ই.সে. ৩১৩১) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন স্ত্রীলোকের জন্য তার সাথে কোন মাহরাম ব্যক্তি ব্যতীত তিন দিনের দূরত্বের পথ সফর করা বৈধ নয়। (ই.ফা. ৩১৩৫, ই.সে. ৩১৩২) আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে কোন মহিলা আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে- তার পিতা অথবা তার ছেলে অথবা তার স্বামী অথবা তার ভাই অথবা তার অপর কোন মাহরাম আত্মীয় তার সফর সঙ্গী না হলে তার জন্য তিনদিন বা তার অতিরিক্ত সময়ের পথ সফর করা হালাল নয়। (ই.ফা. ৩১৩৬, ই.সে. ৩১৩৪) আ’মাশ (রহঃ) এ সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩১৩৭, ই.সে. ৩১৩৫) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভাষণ দিতে শুনেছিঃ সাথে মাহরাম পুরুষ না থাকা অবস্থায় কোন পুরুষ লোক যেন কোন মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ না করে। কোন স্ত্রীলোক যেন সাথে কোন মাহরাম পুরুষ ছাড়া একাকী সফর না করে। এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার স্ত্রী হাজ্জের উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে এবং আমাকে অমুক সৈন্য বাহিনীতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে- যা অমুক স্থানে যুদ্ধে যাবে। তিনি বললেন, তুমি চলে যাও এবং তোমার স্ত্রীর সাথে হাজ্জ কর। (ই.ফা. ৩১৩৮, ই.সে. ৩১৩৬) আমর ইবনু দীনার (রহঃ) এ সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩১৩৯, ই.সে. ৩১৩৭) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) এ সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিম্নোক্ত কথার উল্লেখ নেই: “কোন পুরুষ লোক যেন কোন মহিলার সাথে একান্তে সাক্ষাৎ না করে, কিন্তু তার সাথে কোন মাহরাম পুরুষ থাকলে স্বতন্ত্র কথা”। (ই.ফা. ৩১৪০, ই.সে. ৩১৩৮)

【75】

হাজ্জের সফরে বা অন্য কোন সফরের উদ্দেশে যানবাহনে আরোহণকালীন দু’আ পড়া মুস্তাহাব এবং এর উক্ত দু’আর বর্ণনা

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোথাও সফরের উদ্দেশে তাঁর উটে আরোহণের সময় তিনবার “আল্ল-হু আকবার” (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) বলতেন, এরপর যে দু’আ পাঠ করতেন তার অর্থ এই : “পবিত্র মহান সে সত্তা- যিনি একে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের প্রতিপালকের নিকট ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! আমাদের এ সফরে আমরা তোমার নিকট কল্যাণ, তাক্বওয়া এবং তোমার সন্তুষ্টি বিধানকারী কাজের তাওফীক চাই। হে আল্লাহ! আমাদের এ সফর আমাদের জন্য সহজ করে দাও এবং এর দূরত্ব কমিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমিই (আমাদের) সফরসঙ্গী এবং পরিবারের তত্ত্বাবধানকারী। হে আল্লাহ! তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি সফরের কষ্ট, দুঃখজনক দৃশ্য এবং ফিরে এসে সম্পদ ও পরিবারের ক্ষতিকর পরিবর্তন থেকে”। এরপর তিনি যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন তখনও উপরোক্ত দু’আ পড়তেন এবং এর সাথে যোগ করতেন: (অর্থ) “আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাহ্কারী, আমাদের প্রতিপালকের ‘ইবাদাতকারী ও প্রশংসাকারী”। (ই.ফা. ৩১৪১, ই.সে. ৩১৩৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সফর করতেন তখন আশ্রয় প্রার্থনা করতেন সফরের কষ্ট থেকে, দুঃখজনক প্রত্যাবর্তন থেকে, সুখময় অবস্থার পর দুঃখময় অবস্থায় পতিত হওয়া থেকে, মাযলূমের বদদু’আ থেকে এবং সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের ক্ষতিকর দৃশ্য অবলোকন থেকে। (ই.ফা. ৩১৪২, ই.সে. ৩১৪০) ‘আসিম আল- আহওয়াল (রহঃ) এ সানাদে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য ‘আবদুল ওয়াহিদের বর্ণনায় ‘ফীল মাল ওয়াল আহ্ল’ এবং মুহাম্মাদ ইবনু হাযম-এর বর্ণনায় প্রত্যাবর্তনকালে প্রথমে ‘আহ্ল’ শব্দ রয়েছে। উভয়ের বর্ণনায় রয়েছেঃ “আয় আল্লাহ! আমি সফরের কষ্ট ক্লান্তি হতে তোমার কাছে পানাহ চাই।“ (ই.ফা. ৩১৪৩, ই.সে. ৩১৪১)

【76】

হাজ্জের সফর ইত্যাদি থেকে প্রত্যাবর্তন করে যে দু’আ পড়তে হয়

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিহাদ, অভিযান, হাজ্জ অথবা ‘উমরাহ্ করে ফিরে আসার সময় যখন কোন উঁচু টিলা বা কংকরময় উচ্চভূমিতে আরোহণ করতেন তখন তিনবার “আল্ল-হু আকবার” (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) ধ্বনি দিতেন, এরপর এ দু’আ পড়তেন। (অর্থ) “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শারীক নেই। তাঁরই রাজত্ব (বা সার্বভৌমত্ব), তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা এবং তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। (আমরা) প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাহ্কারী, ‘ইবাদাতকারী, আমাদের প্রতিপালককে সাজদাহ্কারী ও প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাঁর ওয়া’দা পূর্ণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেছেন”। (ই.ফা. ৩১৪৪, ই.সে. ৩১৪২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) এ সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। শুধুমাত্র আইয়ূবের বর্ণনায় দু’বার তাকবীরের কথা উল্লেখ আছে। (ই.ফা. ৩১৪৫, ই.সে. ৩১৪৩) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ও আবূ ত্বল্হাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে প্রত্যাবর্তন করলাম এবং সফিয়্যাহ্ (রাঃ) তাঁর উষ্ট্রীর পিঠে পেছনে সওয়ার ছিলেন। আমরা যখন মাদীনাহ্ শহরতলীতে পৌঁছলাম তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু’আ পড়লেন : (অর্থ) “আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাহ্কারী, আমাদের প্রভুর ‘ইবাদাতকারী, প্রশংসাকারী”। আমরা মাদীনায় প্রবেশ করা পর্যন্ত তিনি অবিরত এ দু’আ পড়তে থাকতেন। (ই.ফা. ৩১৪৬, ই.সে. ৩১৪৪) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এ সানাদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩১৪৭, ই.সে. ৩১৪৪)

【77】

হাজ্জ, ‘উমরাহ্ ইত্যাদি সমাপনান্তে প্রত্যাবর্তনের পথে যুল হুলায়ফার বাত্বহা নামক স্থানে অবতরণ ও সলাত আদায় করা মুস্তাহাব

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল হুলায়ফার কংকরময় ভূমি (বাত্বহা)-তে তাঁর উট বসালেন এবং সেখানে সলাত আদায় করলেন। নাফি’ (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) ও তাই করতেন। (ই.ফা. ৩১৪৮, ই.সে. ৩১৪৫) নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) যুল হুলায়ফার বাত্বহা প্রান্তরে তাঁর উট বসাতেন যেখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উট বসাতেন এবং সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ৩১৪৯, ই.সে. ৩১৪৬) মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব আল মুসাইয়্যাবী (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) হাজ্জ অথবা ‘উমরাহ সমাপনান্তে ফেরার পথে যুল হুলায়ফার কংকরময় ভূমিতে নিজের উট বসাতেন যেখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উট বসাতেন। (ই.ফা. ৩১৫০, ই.সে. ৩১৪৭) সালিম (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্র যুল হুলায়ফায় রাতের শেষ ভাগে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট (কোন আগন্তুক মালাক) আবির্ভূত হয়। তাঁকে বলা হল, আপনি বারাকাতপূর্ণ পাথরময় স্থানে (অবস্থান করছেন)। (ই.ফা. ৩১৫১, ই.সে. ৩১৪৮) সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রহঃ) থেকে তাঁর পিতার সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল হুলায়ফার উপত্যকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থানকালে রাতের বিশেষ প্রহরে তাঁর নিকট (কোন মালাক) আবির্ভূত হয় এবং বলা হয়ঃ আপনি বারাকাতপূর্ণ কংকরময় স্থানে (অবস্থান করছেন)। মূসা ‘উক্ববাহ্ (রহঃ) বলেন, সালিম (রহঃ) আমাদের সাথে সফরকালে মাসজিদের নিকট তাঁর উট বসাতেন যেখানে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নিজের উট বসাতেন এবং এ স্থানকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অবতরণ (অবস্থান) স্থল মনে করতেন। স্থানটি উপত্যকার কেন্দ্রস্থলে নির্মিত মাসজিদের নিম্নদেশের সমতলে মাসজিদ ও ক্বিব্লার মাঝখানে অবস্থিত। (ই.ফা. ৩১৫২, ই..সে. ৩১৪৯)

【78】

মুশরিকরা বায়তুল্লাহর হাজ্জ করবে না, উলঙ্গ অবস্থায় আল্লাহর ঘর ত্বওয়াফ করবে না এবং হাজ্জের বড় দিনের বর্ণনা

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জের পূর্ববর্তী (বছরের) যে হাজ্জে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর সিদ্দীক্ব (রাঃ)-কে আমীর নিয়োগ করেছিলেন, সে হাজ্জের সময় তিনি (আবূ বকর) আমাকে সহ একদল লোকদের কুরবানীর দিন জনগণের মধ্যে নিম্নোক্ত ঘোষণা দেয়ার জন্য পাঠালেনঃ “এ বছরের পর মুশরিকরা আর হাজ্জ করতে পারবে না এবং উলঙ্গ অবস্থায় আল্লাহর ঘর ত্বওয়াফ করবে না”। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর এ হাদীস অনুযায়ী হুমায়দ ইবনু ‘আবদুর রহমান বলতেন- “মহান হাজ্জের দিন হচ্ছে এ কুরবানীর দিন”। [৩৬] (ই.ফা. ৩১৫৩, ই.সে. ৩১৫০)

【79】

হাজ্জ, ‘উমরাহ্ ও ‘আরাফাহ্ দিবসের ফাযীলাত

সা’ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘আরাফাহ্ দিবসের তুলনায় এমন কোন দিন নেই- যেদিন আল্লাহ তা’আলা সর্বাধিক লোককে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দান করেন। আল্লাহ তা’আলা নিকটবর্তী হন, অতঃপর বান্দাদের সম্পর্কে মালায়িকার সামনে গৌরব করেন এবং বলেনঃ তারা কী উদ্দেশে সমবেত হয়েছে (বা তারা কী চায়)? (ই.ফা. ৩১৫৪, ই.সে. ৩১৫১) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ একটি ‘উমরাহ্ পরবর্তী ‘উমরাহ্ পর্যন্ত মাঝখানের গুনাহসমূহের কাফ্ফারাহ্ স্বরূপ এবং ত্রুটিমুক্ত (অথবা আল্লাহর নিকট গৃহীত) হাজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া এর কিছু নয়। (ই.ফা. ৩১৫৫, ই.সে. ৩১৫২) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এ সানাদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩১৫৬, ই.সে. ৩১৫৩) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এ (কা’বাহ্) ঘরে (হাজ্জের উদ্দেশে) আসে, অতঃপর অশ্লীল আচরণও করে না এবং দুষ্কর্মও করে না সে এমন (নিষ্পাপ) ভাবে প্রত্যাবর্তন করে যে তার জননী তাকে (নিষ্পাপ অবস্থায়) প্রসব করেছেন। (ই.ফা. ৩১৫৭, ই.সে. ৩১৫৪) মানসূর (রহঃ) এ সানাদের পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে হাদীসটি এভাবে শুরু হয়েছে “যে ব্যক্তি হাজ্জ করে এবং (এ সময়) কোনরূপ অশ্লীল আচরণও করে না, দুষ্কর্মও করে না”। (ই.ফা. ৩১৫৮, ই.সে. ৩১৫৫) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) এ সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩১৫৯, ই.সে. ৩১৫৬)

【80】

হাজীদের মাক্কায় যাত্রাবিরতি দেয়া এবং এখানকার বাড়ী-ঘরের উত্তরাধিকারিত্ব

উসামাহ্ ইবনু যায়দ ইবনু হারিসাহ্ (রাঃ) তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি মাক্কায় আপনার বাড়িতে অবতরণ করবেন? তিনি বললেন, “আক্বীল কি আমাদের জন্য কোন চার দেয়াল বা ঘর অবশিষ্ট রেখেছে?” আবূ ত্বালিবের (মৃত্যুর পর তার পুত্র) ‘আক্বীল ও ত্বালিব তার ওয়ারিস হয়, কিন্তু জা’ফার ও ‘আলী তার কোন কিছুর ওয়ারিস হতে পারেনি। কেননা তারা উভয়ে (আবূ ত্বালিবের মৃত্যুর সময়) ছিলেন মুসলিম এবং ‘আক্বীল ও ত্বালিব ছিল কাফির। (ই.ফা. ৩১৬০, ই.সে. ৩১৫৭) উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আগামীকাল কোথায় অবতরণ করবেন? এটা ছিল তাঁর বিদায় হাজ্জকালীন ঘটনা, যখন আমরা মাক্কার নিকটবর্তী হয়েছিলাম। তিনি উত্তরে বললেন, ‘আক্বীল কি আমাদের জন্য কোন বাসস্থান অবশিষ্ট রেখেছে? (ই.ফা. ৩১৬১, ই.সে. ৩১৫৮) উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর মর্জি আপনি আগামীকাল কোথায় অবতরণ করবেন? এটা মাক্কাহ্ বিজয়কালের বক্তব্য। তিনি বললেন, ‘আক্বীল কি আমাদের জন্য কোন বাসস্থান অবশিষ্ট রেখেছে? (ই.ফা. ৩১৬২, ই.সে. ৩১৫৯)

【81】

হাজ্জ ও ‘উমরাহ্ সমাপনান্তে মুহাজিরগণের মাক্কায় অনধিক তিনদিন অবস্থান জায়িয

‘আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, হাজ্জ সমাপনান্তে প্রত্যাবর্তনের পূর্বে মুহাজিরগণ তিনদিন মাক্কায় অবস্থান করবে। তিনি যেন এ বাক্যের দ্বারা তিন দিনের অধিক না হবার কথা বলেছেন। (ই.ফা. ৩১৬৩, ই.সে. ৩১৬০) ‘আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুহাজিরগণ হাজ্জ সমাপনান্তে মাক্কায় তিনদিন অবস্থান করতে পারবে। (ই.ফা. ৩১৬৪, ই.সে. ৩১৬১) ‘আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : হাজ্জ সমাপনান্তে মুহাজিরগণ তিন রাত মাক্কায় অবস্থান করবে। (ই.ফা. ৩১৬৫, ই.সে. ৩১৬২) ‘আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হাজ্জের অনুষ্ঠানাদি শেষ করার পর মুহাজিরগণ মাক্কায় তিনদিন অবস্থান করতে পারবে। (ই.ফা. ৩১৬৬, ই.সে. ৩১৬৩) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) এ সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩১৬৭, ই.সে. ৩১৬৪)

【82】

মাক্কার হারামে হওয়া, হারামের অভ্যন্তরে ও উপকণ্ঠে শিকার কার্য চিরস্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ, এখানকার গাছপালা উপড়ানো ও ঘাস কাটা নিষেধ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন বলেছেনঃ হিজরাতের আর প্রয়োজন নেই, কিন্তু জিহাদ ও নিয়্যাত অব্যাহত থাকবে। তোমাদেরকে যখন জিহাদের আহ্বান জানানো হয় তখন জিহাদে যোগদান কর। মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন তিনি আরও বলেন, আল্লাহ তা’আলা এ শহরকে সম্মানিত করেছেন- যেদিন তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন সেদিন থেকে। অতএব ক্বিয়ামাত পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা এ শহরের মর্যাদা ও সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখবেন। তিনি এ শহরে আমার পূর্বে আর কারও জন্য যুদ্ধ বৈধ করেননি। আমার জন্য মাত্র এক দিনের কিছু সময় তিনি এখানে যুদ্ধ বৈধ করেছিলেন। অতএব তথায় যুদ্ধ বিগ্রহ করা হারাম। আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক ক্বিয়ামাত পর্যন্ত নিষিদ্ধ করার কারণে এখানকার কোন কাঁটাযুক্ত গাছ উপড়ানো যাবে না, এখানকার শিকারের পশ্চাদ্ধাবণ করা যাবে না, এখানকার পতিত জিনিস তোলা যাবে না। তখন ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! কিন্তু ইয্খির (লম্বা ঘাস) সম্পর্কে (অনুমতি দিন)। কারণ তা স্বর্ণকার ও তাদের ঘরের কাজে লাগে। তিনি বললেন, কিন্তু ইযখির (তোলার অনুমতি দেয়া হল)। (ই.ফা. ৩১৬৮, ই.সে. ৩১৬৫) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ (রাঃ) মানসূর (রহঃ) থেকে এ সূত্রে সামান্য শাব্দিক পার্থক্য সহকারে উপরোক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এতে তিনি “যেদিন আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন” কথাটুকুর উল্লেখ করেননি এবং ‘ক্বিতাল’ শব্দের পরিবর্তে ‘ক্বতল’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। (ই.ফা. ৩১৬৯, ই.সে. ৩১৬৬) আবূ শুরায়হ আল ‘আদাবী (রাঃ) ‘আম্‌র ইবনু সা’ঈদ (ইবনুল ‘আস ইবনু উমাইয়্যাহ্) যখন মাক্কাহ অভিযানের উদ্দেশে সৈন্য বাহিনীসহ রওনা করেন তখন আবূ শুরায়হ (রাঃ) তাকে বলেন, হে আমীর! আমাকে অনুমতি দিন একটি কথা বলতে যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের দিন সকাল বেলা দাঁড়িয়ে বলেছিলেন- যা আমার দু’কান শুনেছে, আমার অন্তর সংরক্ষণ করেছে এবং উভয় চোখ সে দৃশ্য দেখেছে। যখন তিনি তা বলেছিলেন, প্রথমে তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেন, নিশ্চয়ই মাক্কাকে আল্লাহ তা’আলা হারামে পরিণত করেছেন- কোন মানুষ তাকে হারামের মর্যাদায় উন্নীত করেনি। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনের উপর ঈমান রাখে- তার পক্ষে সেখানে রক্ত প্রবাহিত করা বা সেখানকার কোন গাছ উপড়ানো হালাল নয়। যদি কোন ব্যক্তি আল্লাহর রসূলের উদাহরণ পেশ করে এখানে রক্তপাত বৈধ করতে চায় তবে তোমরা তাকে বলে দিও, আল্লাহ তা’আলা তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এজন্য অনুমতি দিয়েছিলেন এবং তোমাদের জন্য কখনও অনুমতি দেননি। আর আমার জন্য তিনি তাও এক দিনের সামান্য সময় সেখানে যুদ্ধের অনুমতি দিয়েছিলেন। আজকে তার সে হুরমাত (মর্যাদা) গতকালের মতো পুণঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উপস্থিত লোকেরা যেন (এ কথা) অনুপস্থিতদের নিকট পৌঁছে দেয়। আবূ শুরায়হ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হল- ‘আম্‌র আপনাকে কী জবাব দিল? তিনি বললেন, হে আবূ শুরায়হ্! এ সম্পর্কে আমি আপনারে চেয়ে অধিক জ্ঞাত আছি। নিশ্চয়ই হারাম (কা’বাহ্) কোন পাপীকে, কোন হত্যাকারীকে এবং কোন অনিষ্টকারীকে আশ্রয় দেয় না। (ই.ফা. ৩১৭০, ই.সে. ৩১৬৭) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাক্কাহ্ বিজয় দান করলেন- তখন তিনি লোকদের উদ্দেশে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তিনি প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা করলেন। অতঃপর বললেন, নিশ্চিত আল্লাহ তা’আলা হস্তী বাহিনীর মাক্কায় প্রবেশে বাধা প্রদান করেছেন এবং তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মু’মিনদেরকে মাক্কাহ্ অভিযানে বিজয়ী করেছেন। আমার পূর্বে কারও জন্য এখানে রক্তপাত বৈধ ছিল না। আর আমার জন্যও একদিনের কিছু সময় এখানে যুদ্ধ করা হালাল করা হয়েছিল। আমার পরে আর কারও জন্য তা কখনও হালাল করা হবে না। অতএব এখানকার শিকারের পশ্চাদ্ধাবণ করা যাবে না, এখানকার কাঁটাদার গাছও উপড়ানো যাবে না এবং এখানকার পতিত জিনিস তোলা যাবে না। তবে ঘোষণা প্রদানকারী (তা তুলে নিতে পারবে)। কারও কোন আত্মীয় নিহত হয়ে তার জন্য দু’টি অবস্থার যে কোন একটি গ্রহণের অধিকার রয়েছে : হয় ফিদ্য়া (রক্তপণ) গ্রহণ করতে হবে নতুবা হত্যাকারীকে ক্বিসাস স্বরূপ হত্যা করতে হবে। ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসুল! কিন্তু ইযখির ঘাস যা আমরা ক্ববরে দিয়ে থাকি এবং আমাদের ঘরের চালায় ব্যবহার করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কিন্তু ইযখির ঘাস (এর কাটার অনুমতি দেয়া হল)। ইয়ামানের অধিবাসী আবূ শাহ্ (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আমাকে (এ কথাগুলো) লিখে দেয়ার ব্যবস্থা করুন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা আবূ শাহকে লিখে দাও। ওয়ালীদ (রহঃ) বলেন, আমি আওযা‘ঈ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম : “হে আল্লাহর রসূল! আমকে লিখে দেয়ার ব্যবস্থা করুন”- তাঁর এ কথার অর্থ কী? তিনি বললেন, যে ভাষণ তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিতে শুনলেন তা। (ই.ফা. ৩১৭১, ই.সে. ৩১৬৮) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, বানূ লায়স কর্তৃক বানূ খুযা’আর এক ব্যক্তি হত্যার প্রতিশোধ স্বরূপ শেষোক্ত গোত্রের লোকেরা মাক্কাহ্ বিজয়ের সময়ে প্রথমোক্ত গোত্রের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ খবর পৌঁছলে তিনি নিজ সওয়ারীতে আরোহণ পূর্বক ভাষণ দেন এবং বলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা হস্তী বাহিনীর মাক্কায় প্রবেশ প্রতিরোধ করেন এবং তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মু’মিনদেরকে এর উপর বিজয়ী করেন। সাবধান! আমার পূর্বে কারও জন্য এখানে রক্তপাত হালাল ছিল না এবং আমার পরেও কখনও কারও জন্য তা হালাল নয়। সাবধান! আমার জন্যও এক দিনের সামান্য সময় এখানে (রক্তপাত) বৈধ করা হয়েছিল। সাবধান! এ মুহূর্তে আবার তা (আমার জন্যও) হারাম হয়ে গেল। অতএব এখানকার কাঁটাযুক্ত বৃক্ষও উপড়ানো যাবে না, গাছপালাও কাটা যাবে না এবং পথে পড়ে থাকা বস্তুও তোলা যাবে না। তবে ঘোষণা প্রদানকারী ব্যক্তি (তা তুলতে পারবে)। যার কোন আত্মীয় নিহত হয়েছে তার দু’টি ব্যবস্থার যে কোন একটি গ্রহণ করার অধিকার রয়েছে। হয় ফিদ্য়া (রক্তপণ) গ্রহণ করতে হবে, নতুবা ক্বিসাস স্বরূপ হত্যাকারীকে হত্যা করতে হবে। রাবী বলেন, আবূ শাহ্ (রাঃ) নামক ইয়ামানের এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আামকে লিখে দিন। তিনি বললেন, তোমরা আবূ শাহ্কে লিখে দাও। কুরায়শ বংশের এক ব্যক্তি বললেন, কিন্তু ইযখির ঘাস- আমরা তো তা আমাদের ঘর তৈরির কাজে এবং ক্ববরে ব্যবহার করে থাকি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইযখির ঘাস ব্যতীত। (ই.ফা. ৩১৭২, ই.সে. ৩১৬৯)

【83】

নিষ্প্রয়োজনে মাক্কায় অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : তোমাদের কারো জন্য মাক্কায় অস্ত্র বহন করা হালাল নয়। (ই.ফা. ৩১৭৩, ই.সে. ৩১৭০)

【84】

মাক্কায় ইহরামবিহীন অবস্থায় প্রবেশ জায়িয

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ্ বিজয়ের সময়ে লৌহ শিরস্ত্রাণ পরিহিত অবস্থায় মাক্কায় প্রবেশ করেন। তিনি যখন তা মাথা থেকে নামিয়ে রাখলেন তখন এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বলল, ইবনু খাত্বালা-কে কা’বার গেলাফের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। তিনি বললেন, তোমরা তাকে হত্যা কর। [ইয়াহ্ইয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া ইমাম মালিককে জিজ্ঞেস করেন যে, ইমাম যুহরী (রহঃ) আনাস (রাঃ)-এর সুত্রে তাঁকে এ হাদীস বলেছেন, কিনা] তিনি বলেন, হাঁ। [৩৭] (ই.ফা. ৩১৭৪, ই.সে. ৩১৭১) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কায় প্রবেশ করলেন। কুতায়বাহ (রহঃ) বলেন, “তিনি মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন ইহরামবিহীন অবস্থায় কালো পাগড়ী পরিধান করে মাক্কায় প্রবেশ করেন। কুতায়বাহ্ (রহঃ)-এর রিওয়ায়াতে উল্লেখ রয়েছে যে, জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কালো পাগড়ী পরিধান করে মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন প্রবেশ করেন। (ই.ফা. ৩১৭৫, ই.সে. ৩১৭২) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন কালো পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় মাক্কায় প্রবেশ করেন। (ই.ফা. ৩১৭৬, ই.সে. ৩১৭৩) জা’ফার ইবনু আমর ইবনু হুরায়স (রাঃ) থেকে তাঁর পিতার সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথায় কালো পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় লোকদের উদ্দেশ্যে (মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন) ভাষণ দেন। (ই.ফা. ৩১৭৭, ই.সে. ৩১৭৪) জা’ফার ইবনু ‘আমর ইবনু হুরায়স (রাঃ)-এর পিতার সূ্ত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কালো পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় মিম্বারের উপর (উপবিস্ট) দেখতে পাচ্ছি এবং তিনি পাগড়ীর দু’প্রান্ত কাঁধের মাঝ বরাবর ঝুলিয়ে রেখেছেন। আবূ বকর (রহঃ)-এর বর্ণনায় ‘মিম্বারের উপর’ কথাটুকু উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৩১৭৮, ই.সে. ৩১৭৫)

【85】

মাদীনার ফাযীলাত, এ শহরে বারাকাত দানের জন্য নবী (স.)-এর দু’আ, মাদীনাহ্ ও হারামের মর্যাদা এবং এখানে শিকার ও এখানকার গাছপালা কর্তন নিষিদ্ধ ও মাদীনার হারামের সীমা

‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আসিম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ইব্রাহীম (‘আঃ) মাক্কাকে হারাম বানিয়েছেন এবং এখানকার বাসিন্দাদের জন্য দু’আ করেছেন। আর আমি নিশ্চয়ই মাদীনাকে হারামে পরিণত করলাম ঠিক যেভাবে ইবরাহীম (‘আঃ) মাক্কাকে হারামে পরিণত করেছেন। আমি এখানকার মুদ্দ ও সা’ (ওজন পরিমাপের দু’টি একক) এর জন্য দু’আ করলাম যেরূপ ইব্রাহীম (‘আঃ) মাক্কার অধিবাসীদের জন্য দু’আ করেছেন। (ই.ফা. ৩১৭৯, ই.সে. ৩১৭৬) ‘আমর ইবনু ইয়াহ্ইয়া আল মাযিনী (রহঃ) এ সূত্রে উক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩১৮০, ই.সে. ৩১৭৭) রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইব্রাহীম (‘আঃ) মাক্কাকে হারামে পরিণত করেছেন, আর আমি দু’টি কৃষ্ণ প্রস্তরময় ভূমির মধ্যবর্তী স্থানকে হারাম ঘোষণা করছি। তিনি মাদীনাকে বুঝিয়েছেন। (ই.ফা. ৩১৮১, ই.সে. ৩১৭৮) নাফি’ ইবনু জুবায়র (রহঃ) মারওয়ান ইবনু হাকাম লোকদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। তিনি মাক্কাহ্ ও তার বাসিন্দা এবং এর হারামের মর্যাদা সম্পর্কে উল্লেখ করলেন। তখন রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তাকে ডাক দিয়ে বললেন, কী ব্যাপার! আমি আপনাকে মাক্কাহ্, তার অধিবাসী এবং তার হারামের মর্যাদা সম্পর্কে উল্লেখ করতে শুনছি, অথচ মাদীনাহ্, তার অধিবাসী এবং তার হারামের মর্যাদা সম্পর্কে আপনি কিছুই বলেননি; অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনার দু’প্রান্তের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী স্থানকে হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর এ হাদীস আমাদের নিকট একটি খাওলানী চামড়ায় লিপিবদ্ধ আছে। আপনি চাইলে আমি তা আপনার সামনে পড়ে শোনাতে পারি। রাবী বলেন, মারওয়ান চুপ হয়ে গেলেন, অতঃপর বললেন, অবশ্য আমিও এ রকম কিছু শুনেছি। (ই.ফা. ৩১৮২, ই.সে. ৩১৭৯) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয় ইব্রাহীম (‘আঃ) মাক্কার হারাম নির্ধারণ করেছেন, আর আমি মাদীনাকে হারাম বলে ঘোষণা করছি- এর দু’প্রান্তের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশকে। অতএবং এখানকার কোন কাঁটাযুক্ত গাছও কাটা যাবে না এবং এখানকার জীবজন্তুও শিকার করা যাবে না। (ই.ফা. ৩১৮৩, ই.সে. ৩১৮০) ‘আমির ইবনু সা’ঈদ (রাঃ) তাঁর পিতা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি মাদীনার দু’ পার্শ্বের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশকে হারাম বলে ঘোষণা দিচ্ছি। এখানকার কাঁটাযুক্ত গাছও কাটা যাবে না এবং এখানকার জীবজন্তুও শিকার করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, মাদীনাহ্ তার অধিবাসীদের জন্য কল্যাণকর স্থান, যদি তারা বুঝে। যে ব্যক্তি অনাগ্রহবশতঃ মাদীনাহ্ ত্যাগ করে, আল্লাহ তার চাইতে উত্তম ব্যক্তিকে তার স্থলবর্তী করেন। আর যে ব্যক্তি এখানে ক্ষুধা ও কষ্টের সময় ধৈর্যধারণ করে, আমি তার জন্য ক্বিয়ামাতের দিন শাফা’আতকারী অথবা বলেছেন, সাক্ষী হব। (ই.ফা. ৩১৮৪, ই.সে. ৩১৮১) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তৎপরবর্তী অংশ উপরোক্ত ইবনু নুমায়রের অনুরূপ। তবে এ হাদীসে অতিরিক্ত আছে যে, [রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন] যে ব্যক্তিই মাদীনাবাসীদের ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করবে আল্লাহ তা’আলা তাকে জাহান্নামের আগুনে এমনভাবে বিগলিত করবেন, যেভাবে আগুনের তাপে সীসা গলে যায় অথবা লবণ পানিতে দ্রবীভূত হয়ে যায়। (ই.ফা. ৩১৮৫, ই.সে. ৩১৮২) ‘আমির ইবনু সা’দ (রাঃ) সা’দ (রাঃ) আল-‘আক্বীক্বে তার আবাসে রওনা হলেন। পথিমধ্যে তিনি একটি ক্রীতদাসকে একটি গাছ কাটতে অথবা (লাঠি দিয়ে) এর পাতা ঝরাতে দেখলেন। অতএব তিনি তার অস্ত্র কেড়ে নিলেন। তিনি ফিরে এলে ঐ গোলামের মনিব এসে তার সাথে আলাপ করলেন এবং তাদের গোলামের নিকট থেকে তিনি যা কেড়ে নিয়েছেন তা তাদের কাছে অথবা তাদের গোলামের কাছে ফেরত দিতে অনুরোধ করলেন। তিনি বললেন, যে জিনিস রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে উপহার স্বরূপ দিয়েছেন তা ফেরত দেয়ার ব্যাপারে আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি। অতএবং তিনি তা ফেরত দিতে অস্বীকার করলেন। (ই.ফা. ৩১৮৬, ই.সে. ৩১৮৩) ‘আম্‌র ইবনু আবূ ‘আম্‌র (রহঃ) তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ত্বল্হাহ্ (রাঃ) কে বললেনঃ তোমাদের বালকদের মধ্য থেকে একজন বালক আমার খিদমাতের জন্য খুজে আন। অতএব আবূ ত্বল্হাহ্ (রাঃ) আমাকে বাহনে তাঁর পিছনে বসিয়ে রওনা হলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই (বাহন থেকে) নামতেন, আমি তাঁর প্রয়োজনীয় সেবা করতাম। এ হাদীসে তিনি আরও বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অগ্রসর হতে থাকলেন এবং উহুদ পাহাড় তাঁর দৃষ্টিগোচর হল- তিনি বললেনঃ “এ পাহাড় আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালবাসি”। তিনি যখন মাদীনার নিকটবর্তী হলেন তখন বললেনঃ “হে আল্লাহ! তাদের (মাদীনার অধিবাসীদের) মুদ্দ ও সা’-এ বারাকাত দান করুন”। (ই.ফা. ৩১৮৭, ই.সে. ৩১৮৪) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এ সূ্ত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে অতিরিক্ত এই যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি মাদীনার দু’ প্রান্তের কংকরময় মাঠের মধ্যবর্তী স্থানকে হারাম করছি।” (ই.ফা. ৩১৮৮, ই.সে. ৩১৮৫) ‘আসিম (রহঃ) আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি মাদীনাকে হারাম করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এখান থেকে ওখানের মধ্যবর্তী স্থান। অতএব যে ব্যক্তি এখানে কোন পাপ করে, তিনি পুণরায় আমাকে বললেন, তা খুবই ভয়ংকর ব্যাপার যে, এখানে কোন পাপ করে তার উপর আল্লাহ, তাঁর মালাক্ব এবং সমগ্র মানব জাতির লা’নাত। ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাঁর ফরয অথবা নফল কোন ‘ইবাদাতই কবুল করবেন না। [৩৮] রাবী বলেন, আনাস (রাঃ)-এর পুত্র বললেন, “অথবা যে কোন পাপীকে আশ্রয় দিল”। (ই.ফা. ৩১৮৯, ই.সে. ৩১৮৬) ‘আসিম আল আহওয়ার (রহঃ) আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি মাদীনাকে হারাম করেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ, তা হারাম। অতএব এখানকার উদ্ভিদ উপড়ানো যাবে না। যে বক্তি তা করবে তার উপর আল্লাহ, তাঁর মালাক্ব এবং সমগ্র মানব জাতির লা’নাত। (ই.ফা. ৩১৯০, ই.সে. ৩১৮৭) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: হে আল্লাহ! তাদের বারাকাত দান করুন দাঁড়িপাল্লায়, তাদের সা’-এ এবং তাদের মুদ্দ-এ। (ই.ফা. ৩১৯১, ই.সে. ৩১৮৮) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আ করলেন : “হে আল্লাহ! আপনি মাক্কাতে বারাকাত দান করেছেন, মাদীনায় তার দ্বিগুণ বারাকাত দান করুন”। (ই.ফা. ৩১৯২, ই.সে. ৩১৮৯) ইব্রাহীম আত্ তায়মী (রহঃ) থেকে তাঁর পিতার সূত্র তিনি বলেন, ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি ধারণা করে যে, আমাদের (আহলে বায়ত) কাছে আল্লাহ্‌র কিতাব ছাড়া যা আমরা পাঠ করি এবং এ সহীফাহ্ রাবী বলেন, অর্থাৎ ঐ সহীফাহ্ যা তাঁর তরবারির খাপে ঝুলন্ত ছিল তা ছাড়া কিছু আছে, সে মিথ্যা বলে। এ সহীফায় উটের বয়স [৩৯] এবং কিছু যখমের বর্ণনা ছিল। এর মধ্যে আরও ছিল, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মাদীনার ‘আয়র ও সাওর এর মধ্যবর্তী স্থান হারাম। এখানে যে ব্যক্তি কোন বিদ’আতী কর্মে লিপ্ত হয় অথবা কোন বিদ্’আতীতে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, তাঁর মালায়িকার ও সমগ্র মানব জাতির লা’নাত। ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তার কোন ফারয ও নফল ‘ইবাদাত কবূল করবেন না। মুসলিমদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা প্রদানে সকলে সমান। তাদের নিম্নস্তরের একজনের প্রদত্ত নিরাপত্তাও কার্যকর। যে অন্য পিতার সাথে নিজ বংশ দাবী করে অথবা নিজ মুনীবের পরিবর্তে অন্য মুনীবের সাথে নিজেকে সম্পর্কিত করে তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাদের ও সমগ্র মানব জাতির লা’নাত। আল্লাহ তা’আলা ক্বিয়ামাতরে দিন তার ফরয বা নফল কোন ‘ইবাদাতই গ্রহণ করবেন না। রাবী বলেন, আবূ বকর ও যুহায়রের হাদীস শেষ হয়ে গেছে “তাদের নিন্মস্তরের একজনের প্রদত্ত নিরাপত্তাও কার্যকরী” এ কথা পর্যন্ত। তারা এর পরবর্তী অংশ উল্লেখ করেননি। তাদের উভয়ের বর্ণনায় “তাঁর তরবারির খাপে ঝুলন্ত” কথাটুকু উল্লেখিত হয়নি। (ই.ফা. ৩১৯৩, ই.সে. ৩১৯০) আ’মাশ (রহঃ) থেকে এ সূত্র অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এতে উল্লেখ আছে “যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের সাথে (নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর) বিশ্বাসঘাতকতা করে তার উপর আল্লাহ, তাঁর মালায়িকার ও সমগ্র মানব জাতির লা’নাত। ক্বিয়ামাতের দিন তার ফারয বা নাফল কোন ‘ইবাদাতই কবূল করা হবে না। তাদের (‘আলী ও ওয়াকী’) উভয়ের বর্ণনায় “যে ব্যক্তি নিজ পিতৃ পরিচয়ের পরিবর্তে অন্য পিতৃ পরিচয়ের দাবী করে” কথাটুকুর উল্লেখ এবং ওয়াকী’র বর্ণনায় “ক্বিয়ামাতের দিন” কথাটুকুর উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৩১৯৪, ই.সে. ৩১৯১) আ’মাশ (রহঃ) এ সূ্ত্রে ইবনু মুসহির ও ওয়াকী’র হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এদের বর্ণনায় “গোলাম নিজের মুনীবের পরিবর্তে অন্যকে নিজের মুনীব বলে পরিচয় দেয়” কথাটুকু নেই। আর তার প্রতি লা’নাতের কথা উল্লেখিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩১৯৫, ই.সে. ৩১৯২) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মাদীনাহ্ হারাম। অতএব, যে এখানে কোন পাপে লিপ্ত হয় অথবা কোন পাপীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহ, তাঁর মালায়িকাহ্ এবং সমগ্র মানব জাতির লা’নাত। ক্বিয়ামাতের দিন তার ফারয বা নফল (কিছুই) কবূল করা হবে না। (ই.ফা. ৩১৯৬, ই.সে. ৩১৯৩) আ’মাশ (রহঃ) এ সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তিনি ‘ক্বিয়ামাতের দিন’ কথাটুকু বলেননি। তিনি বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন, “মুসলিমদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা প্রদানে সকলে সমান। তাদের নিম্নস্তরের একজনের প্রদত্ত নিরাপত্তা ও কার্যকর। কেউ যদি মুসলিম প্রদত্ত নিরাপত্তার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে তবে তার উপর আল্লাহ, তাঁর মালায়িকাহ্ এবং সমগ্র মানব জাতির লা’নাত। ক্বিয়ামাতের দিন তার ফারয বা নফল কিছুই কবূল হবে না। (ই.ফা. ৩১৯৭, ই.সে. ৩১৯৪) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যদি মাদীনায় হরিণ বিচরণ করতে দেখি তবে তাকে ভয় দেখাব না। (কেননা) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাদীনার দু’ পার্শ্বের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশ হারাম। (ই.ফা. ৩১৯৮, ই.সে. ৩১৯৫) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনার দু’পার্শ্বের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশ হারাম ঘোষণা করেছেন। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি যদি মাদীনার দু’পার্শ্বের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশে হরিণ বিচরণ করতে দেখি, তবে আমি তাকে উত্যক্ত করব না এবং তিনি মাদীনার চারপাশের বারো মাইল পর্যন্ত চরণভূমি ঘোষণা করেছেন। (ই.ফা. ৩১৯৯, ই.সে. ৩১৯৬) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা যখন প্রথম (পাকা) ফল দেখতে পেত, তা নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসত এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তা গ্রহণ করতেন তখন তিনি নিম্নোক্ত দু’আ পড়তেন : “হে আল্লাহ! আপনি আমাদের ফলে (বা উৎপন্ন ফসলে) বারাকাত দান করুন, আমাদের মাদীনায় বারাকাত দান করুন, আমাদের সা’-এ বারাকাত দান করুন এবং আমাদের মুদ্দ-এ বারাকাত দান করুন। হে আল্লাহ! নিশ্চয় ইব্রাহীম (‘আঃ) আপনার বান্দা, প্রিয় বন্ধু ও নবী। আর আমিও আপনার বান্দা ও নবী। তিনি মাক্কার জন্য আপনার নিকট দু’আ করেছেন। আমিও আপনার নিকট মাদীনার জন্য দু’আ করছি- যেমন তিনি মাক্কার জন্য আপনার নিকট দু’আ করেছিলেন এবং তার সাথে অনুরূপ আরও কিছু”। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি কোন শিশুকে ডাকতেন এবং তাকে এ ফল দিয়ে দিতেন। (ই.ফা. ৩২০০, ই.সে. ৩১৯৭) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) মৌসুমের প্রথম ফল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেয়া হত। তিনি তখন বলতেন : “হে আল্লাহ! আমাদের মাদীনায়, আমাদের ফলে (বা উৎপন্ন ফসলে), আমাদের মুদ্দ-এ ও আমাদের সা’-এ বারাকাত দান করুন, বারাকাতের উপর বারাকাত দান করুন”। অতঃপর তিনি ফলটি তাঁর নিকট উপস্থিত সবচেয়ে শিশুকে দিয়ে দিতেন। (ই.ফা. ৩২০১, ই.সে. ৩১৯৮)

【86】

মাদীনাতে বসবাস করার প্রতি উৎসাহ প্রদান ও এর বিপদে ধৈর্য ধারণ করা

আবূ সা’ঈদ মাওলা আল মাহরী (রহঃ) তাঁরা মাদীনায় কষ্ট ও দুঃখে পতিত হন। তিনি আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে বললেন, আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা অনেক এবং আমরা দুঃখ দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছি। তাই আমি আমার পরিবারকে কোন শস্য শ্যামল এলাকায় স্থানান্তরের মনস্থ করেছি। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বললেন, তা করো না বরং মাদীনাকে আঁকড়ে থাক। কারণ, একদা আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বের হলাম, আমার মনে হয়, তিনি এও বলেছেন যে, এবং ‘উস্ফান পর্যন্ত পৌঁছলেন। এখানে তিনি কয়েক রাত অবস্থান করলেন। লোকেরা বলল, আল্লাহর কসম! আমরা এখানে অযথা সময় নষ্ট করছি। অথচ আমাদের পরিবার পরিজন আমাদের পশ্চাতে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে এবং আমরা তাদের (নিরাপত্তার) ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছি না। এ কথা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি বলেনঃ কী ব্যাপার, তোমাদের এ কথা আমার নিকটে পৌঁছেছে। রাবী বলেন, আবূ সা’ঈদ (রাঃ) কথাটা কিভাবে পুনর্ব্যক্ত করেছেন তা আমার হুবহু মনে নেই। সে সত্তার নামে শপথ অথবা সে সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! অবশ্য আমি মনস্থ করেছি, অথবা যদি তোমরা চাও- রাবী বলেন, আবূ সা’ঈদ (রাঃ) কোন্টি বলেছেন তা আমার সঠিক মনে নেই। তবে আমি নিশ্চত আমার উষ্ট্রীকে অগ্রসর হবার নির্দেশ দিব এবং মাদীনায় পৌঁছা পর্যন্ত তার একটি গিটও খুলব না। (যাত্রা বিরতি করব না)। অতঃপর তিনি বললেন, “হে আল্লাহ! নিশ্চয় ইব্রাহীম (‘আঃ) মাক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন এবং তা পবিত্র ও সম্মানিত হয়েছে। আর আমি মাদীনাকে হারাম ঘোষনা করলাম- যা দু’পাহাড়ের (‘আয়র ও উহুদ) মধ্যস্থলে অবস্থিত। অতএবং এখানে রক্তপাত করা যাবে না, এখানে যুদ্ধের উদ্দেশে অস্ত্রবহন করা যাবে না এবং পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্য ব্যতীত গাছপালার পাতাও পাড়া যাবে না। হে আল্লাহ! আমাদের এ শহরে বারাকাত দান করুন, হে আল্লাহ! আমাদের সা’-এ বারাকাত দান করুন, হে আল্লাহ! আমাদের মুদ্দ-এ বারাকাত দান করুন, হে আল্লাহ! বারাকাতের সাথে আমাদের আরো দু’টি বারাকাত দান করুন। সে সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! মাদীনার এমন কোন প্রবেশ পথ বা গিরি পথ, বা পাহাড়ের পথ নেই যেখানে তোমাদের মাদীনায় ফিরে আসা পর্যন্ত দু’জন করে মালাক পাহারায় নিযুক্ত নেই। পুনরায় তিনি লোকদের উদ্দেশে বললেন, “তোমরা রওনা হও”। অতএব আমরা রওনা হলাম এবং মাদীনাহ্ এসে পৌঁছলাম। সে সত্তার শপথ যাঁর নামে আমরা শপথ করি অথবা যাঁর নামে শপথ করা হয়- হাম্মাদ তাঁর ঊর্দ্ধতন রাবী কোন্টি বলেছেন সে সম্বন্ধে সন্দেহে পড়েছেন। আমরা মাদীনাহ্ প্রবেশ করে বাহনের পিঠের হাওদা তখনও খুলিনি- ইত্যবসরে ‘আবদুল্লাহ ইবনু গাত্বফান গোত্রের লোকেরা আমাদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ করে, অথচ ইতোপূর্বে এরূপ কিছু করার দুঃসাহস তাদের হয়নি। (ই.ফা. ৩২০২, ই.সে. ৩১৯৯) আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে আল্লাহ! আমাদের মুদ্দ ও সা’-এ বারাকাত দিন এবং বারাকাতের সাথে আরও দু’টি বারাকাত দান করুন। (ই.ফা. ৩২০৩, ই.সে. ৩২০০) ইয়াহ্ইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) এ সূ্ত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩২০৪, ই.সে. ৩২০১) আবূ সা’ঈদ মাওলা আল মাহরী (রহঃ) তিনি আল হাররার রাতগুলোতে আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাঃ)-এর নিকট এলেন এবং মাদীনাহ্ থেকে (কোথাও) চলে যাওয়ার পরামর্শ করলেন। তিনি তাঁর কাছে এখানকার দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও নিজের বৃহৎ পরিবারের অভিযোগ করলেন। তিনি তাঁকে আরও জানালেন যে, তিনি এখানকার ক্লেশ ও রুক্ষ আবহাওয়া বরদাশ্ত করতে পারছেন না। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) তাঁকে বললেন, তোমার জন্য দুঃখ হয়, আমি তোমাকে মাদীনাহ্ ত্যাগের পরামর্শ দিতে পারি না। কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এখানকার কষ্ট সহ্য করে মৃত্যুবরণ করবে, ক্বিয়ামাতের দিন অবশ্যই আমি তার জন্য শাফা’আত করব অথবা সাক্ষী হব, যদি সে মুসলিম হয়ে থাকে। (ই.ফা. ৩২০৫, ই.সে. ৩২০১-৩২০২) আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন : মাদীনার দু’প্রান্তের প্রস্তরময় ভূমির মধ্যবর্তী স্থানকে আমি হারাম ঘোষণা করছি, যেমন ইব্রাহীম (‘আঃ) মাক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। (অধঃস্তন রাবী) ‘আবদুর রহমান বলেন, অতঃপর আবূ সা’ঈদ (রাঃ) যদি আমাদের কারও হাতে পাখি দেখতে পেতেন তবে তিনি তার হাত থেকে পাখিকে মুক্ত করে ছেড়ে দিতেন। (ই.ফা. ৩২০৬, ই.সে. ৩২০৩) সাহ্‌ল ইবনু হুনায়ফ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত দিয়ে মাদীনার দিকে ইঙ্গিত করে বললেনঃ ঐ স্থান হারাম ও নিরাপদ। (ই.ফা. ৩২০৭, ই.সে. ৩২০৪) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা মাদীনায় এলাম এবং তা ছিল অস্বাস্থ্যকর স্থান। আবূ বকর (রাঃ) ও বিলাল (রাঃ) অসুস্থ হয়ে পড়লেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণের অসুস্থতা লক্ষ্য করে দু’আ করলেন : “হে আল্লাহ! মাদীনাকে আমাদের জন্য প্রিয় স্থান করুন যেমন মাক্কাকে প্রিয় স্থান করেছেন অথবা আরও অধিক, তাকে স্বাস্থ্যকর স্থানে পরিণত করুন, আমাদের জন্য এখানকার সা’ ও মুদ্দ-এ বারাকাত দান করুন এবং জ্বর জুহফায় সরিয়ে দিন”। (ই.ফা. ৩২০৮, ই.সে. ৩২০৫) হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩২০৯, ই.সে. ৩২০৬). ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি এখানকার দুঃখ কষ্ট সহ্য করে আমি ক্বিয়ামাতের দিন অবশ্যই তার জন্য শাফা’আত করব অথবা তার পক্ষে সাক্ষী হব। (ই.ফা. ৩২১০, ই.সে. ৩২০৭) যুবায়রের আযাদকৃত গোলাম ইউহান্নিস (রহঃ) তিনি ফিৎনার সময় ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলেন। তার নিকট তার এক আযাদকৃত বাঁদী সালাম দিয়ে বলল, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমি (মাদীনাহ্ থেকে) বের হয়ে যাওয়ার ইচ্ছা করছি। আমাদের উপর দিয়ে কঠিন সময় অতিবাহিত হচ্ছে। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তাকে বললেন, বোকা মেয়ে, থেকে যাও। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : “যে ব্যক্তি মাদীনার দুঃখ কষ্ট ও বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করবে আমি ক্বিয়ামাতের দিন তার পক্ষে সাক্ষী হব অথবা তার শাফা’আতকারী হব। (ই.ফা. ৩২১১, ই.সে. ৩২০৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি এখানকার দুঃখকষ্ঠ ও বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করে আমি ক্বিয়ামাতের দিন তার পক্ষে সাক্ষী হব অথবা তার শাফা’আতকারী হব। ‘এখানকার’ বলতে মাদীনাকে বুঝানো হয়েছে। (ই.ফা. ৩২১২, ই.সে. ৩২০৯) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমার উম্মতের যে ব্যক্তি মাদীনার দুঃখকষ্ট ও বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করবে, তার জন্যই আমি ক্বিয়ামাতের দিন শাফা’আতকারী হব অথবা তার পক্ষে সাক্ষী হব। (ই.ফা. ৩২১৩, ই.সে. ৩২১০) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে এ সুত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩২১৪, ই.সে. ৩২১১) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মাদীনার দুঃখকষ্টের উপর ধৈর্যধারণ করবে ...। অবশিষ্টাংশ আগের হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৩২১৫, ই.সে. ৩২১২)

【87】

মহামারী ও দাজ্জালের প্রবেশ থেকে মাদীনাহ্ সুরক্ষিত

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাদীনার প্রবেশ পথে মালায়িকাহ্ প্রহরারত। তথায় মহামারী ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। (ই.ফা. ৩২১৬, ই.সে. ৩২১৩) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাসীহ্ (দাজ্জাল) মাদীনাহ্ আক্রমণের উদ্দেশে এসে উহুদ পাহাড়ের পশ্চাতে অবতরণ করবে এবং মালায়িকাহ্ তার মুখ (গতি) সিরিয়ার দিকে ফিরিয়ে দিবে আর তথায় সে ধ্বংস হবে।[৪০] (ই.ফা. ৩২১৭, ই.সে. ৩২১৪)

【88】

মাদীনাহ্ নিজের মধ্য থেকে নিকৃষ্ট জিনিস বের করে দিবে

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (মাদীনার) লোকদের উপর এমন এক সময় আসবে যখন কোন ব্যক্তি তার চাচাত ভাইকে এবং নিকটাত্মীয়কে ডেকে বলবে, ‘আসো, কোন উর্বর এলাকায় গিয়ে বসতি স্থাপন করি, আসো, কোন শস্য-শ্যামল এলাকায় গিয়ে বাস করি। কিন্তু মাদীনাই তাদের জন্য উত্তম যদি তারা জানত! সে সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! যদি কোন ব্যক্তি মাদীনার উপর বিরক্ত হয়ে চলে যায় তবে আল্লাহ্ তা’আলা তার চাইতে উত্তম ব্যক্তি তার স্থলবর্তী করবেন। সাবধান! মাদীনাহ্ হচ্ছে হাপর তুল্য, যা নিজের মধ্য হতে নিকৃষ্ট জিনিস (ময়লা) বের করে দেয়। ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষন মাদীনাহ্ তার বুক থেকে নিকৃষ্ট লোকদের বের করে না দিবে যেমন হাপর লোহার ময়লা দূর করে দেয়। (ই.ফা. ৩২১৮, ই.সে. ৩২১৫) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি এমন একটি জনপদে (হিজরাতের) জন্য আদিষ্ট যা সমস্ত জনপদ খেয়ে ফেলবে (আধিপত্য বিস্তার করবে)। লোকেরা তাকে ইয়াস্রিব নামে অভিহিত করেছে। অথচ তা হল মাদীনাহ্। তা লোকদের এমনভাবে বের করবে যেমনিভাবে হাপর লোহার ময়লা বের করে। (ই.ফা. ৩২১৯, ই.সে. ৩২১৬) ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) এ সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এরা দু’জন বলেছেন: “যেমন হাপর ময়লা দূর করে” এবং “লোহা” শব্দের উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৩২২০, ই.সে. ৩২১৭) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) এক বেদুঈন (গ্রাম্য লোক) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট (ইসলামে দীক্ষিত হবার) বায়’আত হল। অতঃপর বেদুঈন মাদীনায় প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হল। সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমার বায়’আত প্রত্যাহার করুন। তিনি তার কথা প্রত্যাখান করলেন। সে পুনরায় তাঁর নিকট এসে বলল, আমার বায়’আত ফিরিয়ে নিন। তিনি তা অস্বীকার করলেন। সে পুনরায় এসে বলল, ইয়া মুহাম্মাদ! আমার বায়’আত প্রত্যাহার করুন। তিনি এবারও অস্বীকার করলেন। সে পুনরায় এসে বলল, ইয়া মুহাম্মাদ! আমার বায়’য়াত প্রত্যাহার করুন। তিনি এবারও অস্বীকার করলেন। অতঃপর বেদুঈন (মাদীনাহ্ থেকে) চলে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “মাদীনাহ্ হচ্ছে হাপর স্বরুপ, সে নিজের বুক থেকে ময়লা বহিস্কার করে দেয় এবং পবিত্র জিনিস ধুয়ে মুছে সাফ করে”। (ই.ফা. ৩২২১, ই.সে. ৩২১৮) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ)-এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, এ হল ত্বয়বাহ্ (পবিত্র) অর্থাৎ মাদীনাহ্, তা ময়লা দূর করে দেয় যেমন আগুন রুপার ময়লা দূর করে দেয়। (ই.ফা. ৩২২২, ই.সে. ৩২১৯) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ্ তা’আলা মাদীনার নাম রেখেছেন ‘ত্বাবাহ্’।(ই.ফা. ৩২২৩, ই.সে. ৩২২০)

【89】

মাদীনাবাসীদের যে ক্ষতি করতে চায় আল্লাহ্ তাকে গলিয়ে দিবেন

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আবুল ক্বাসিম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শহরের অর্থাৎ মাদীনার অধিবাসীদের ক্ষতি করতে চাইবে আল্লাহ্ তাকে এমনভাবে গলিয়ে দিবেন যেমন লবণ পানিতে গলে যায়। (ই.ফা. ৩২২৪, ই.সে. ৩২২১) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এখানকার (মাদীনার) অধিবাসীদের ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা করবে, আল্লাহ্ তাকে গলিয়ে ফেলবেন যেমন লবণ পানিতে গলে যায়। (ই.ফা. ৩২২৫, ই.সে. ৩২২২) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)–এর সুত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩২২৬, ই.সে. ৩২২৩) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মাদীনাবাসীদের ক্ষতি করতে চাইবে, আল্লাহ্ তাকে এমনভাবে গলিয়ে দিবেন যেমন লবণ পানিতে গলে যায়। (ই.ফা. ৩২২৭, ই.সে. ৩২২৪) সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ .... উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে এ সূত্রে আকস্মিক ‘আক্রমণ’ অথবা ‘ক্ষতিসাধন’ এর কথা উল্লেখ আছে। (ই.ফা. ৩২২৮, ই.সে. ৩২২৫) আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) ও সা’দ ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “হে আল্লাহ্! মাদীনাবাসীদের মুদ্দ-এ বারাকাত দান করুন” ... অবশিষ্ট বর্ণনা পূর্ববৎ। তবে এতে আরো আছে : “যে ব্যক্তি এখানকার অধিবাসীদের ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করবে, আল্লাহ্ তাকে এমনভাবে গলিয়ে দিবেন যেমন পানিতে লবণ গলে যায়”। (ই.ফা. ৩২২৯, ই.সে. ৩২২৬)

【90】

শহর ও জনপদের বিজয় সত্ত্বেও মাদীনায় বসবাসে উৎসাহিত করা

সুফ্ইয়ান ইবনু যুহায়র (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শাম (সিরিয়া) বিজিত হবে। ফলে একদল লোক সপরিবারে মাদীনাহ্ থেকে চলে যাবে উট হাঁকাতে হাঁকাতে। অথচ মাদীনাহ্ তাদের জন্য কল্যাণকর ছিল যদি তারা বুঝতে পারত। এরপর ইয়ামান বিজিত হবে। ফলে একদল লোক উট হাঁকিয়ে সপরিবারে চলে যাবে (মাদীনাহ্ থেকে)। অথচ মাদীনাই ছিল তাদের জন্য কল্যাণকর যদি তারা তা বুঝতে পারত। এরপর ইরাক বিজিত হবে। ফলে একদল লোক উট হাঁকিয়ে সপরিবারে মাদীনাহ্ থেকে বের হয়ে যাবে অথচ মাদীনাই ছিল তাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তারা বুঝতে পারত।। (ই.ফা. ৩২৩০, ই.সে. ৩২২৭) সুফ্ইয়ান ইবনু যুহায়র (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ ইয়ামান বিজিত হবে। ফলে একদল লোক নিজেদের পরিবারবর্গ ও অনুসারীদের নিয়ে উট হাঁকিয়ে তথায় চলে যাবে। অথচ মাদীনাই ছিল তাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তারা বুঝতে পারত। অতঃপর শাম (সিরিয়া) বিজিত হবে। ফলে একদল লোক নিজেদের পরিবার-পরিজন ও অনুসারীদের নিয়ে উট হাঁকিয়ে তথায় চলে যাবে। অথচ মাদীনাই ছিল তাদের জন্য কল্যাণকর যদি তারা বুঝতে পারত। অতঃপর ইরাক বিজিত হবে। ফলে একদল লোক নিজেদের পরিবার ও অনুসারীদের নিয়ে উট হাঁকিয়ে তথায় চলে যাবে। অথচ মাদীনাই ছিল কল্যাণকর, যদি তারা বুঝতে পারত। [৪১] (ই.ফা. ৩২৩১, ই.সে. ৩২২৮)

【91】

মাদীনাবাসীরা যখন তা (মাদীনাহ্) ত্যাগ করবে

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহ্ সম্পর্কে বলেছেনঃ “এখানকার লোকেরা মাদীনাহ্ ত্যাগ করবে, সে স্থান তাদের জন্য কল্যাণকর হওয়া সত্ত্বেও। আর তা এমনভাবে জনশূন্য হয়ে যাবে যে, তা হিংস্র জন্তু ও পাখির আবাসে পরিণত হবে।” ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, আবূ সফ্ওয়ান- ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল মালিক ছিলেন ইয়াতীম। তিনি ইবনু জুরায়জের তত্ত্বাবধানে দশ বছর প্রতিপালিত হন। (ই.ফা. ৩২৩২, ই.সে. ৩২২৯) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ লোকেরা মাদীনাহ্ ত্যাগ করবে তাদের জন্য তা (মাদীনায় বসবাস) কল্যাণকর হওয়া সত্ত্বেও এবং কেবল হিংস্র জন্তু ও পাখিরাই সেখানে বসবাস করবে। অতঃপর মুযায়নাহ্ গোত্রের দু’টি রাখাল মাদীনার উদ্দেশ্যে রওনা হবে উচ্চস্বরে নিজেদের মেষপাল হাঁকিয়ে। তারা সে স্থান হিংস্র প্রাণীতে ভর্তি দেখতে পাবে। তারা সানিয়্যাতুল বিদা’ উপত্যকা পর্যন্ত পৌছে উপুড় হয়ে পড়ে যাবে। (ই.ফা. ৩২৩৩, ই.সে. ৩২৩০)

【92】

রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ক্ববর ও তাঁর মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের একটি বাগান

‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ আল মাযিনী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগানসমূহের একটি।” (ই.ফা. ৩২৩৪, ই.সে. ৩২৩১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ আল আনসারী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগানসমূহের অন্তর্ভুক্ত। (ই.ফা. ৩২৩৫, ই.সে. ৩২৩২) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মধ্যবর্তী স্থান জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান। আর আমার মিম্বার (কাওসার নামক) হাওযের উপরে অবস্থিত। (ই.ফা. ৩২৩৬, ই.সে. ৩২৩৩)

【93】

উহুদ পাহাড় আমাদেরকে ভালবাসে, আমরাও তাকে ভালবাসী

আবূ হুমায়দ (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে তাবূক যুদ্ধে রওনা হলাম। অতঃপর আবূ হুমায়দ (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করেন। তাতে তিনি বললেন, (যুদ্ধ শেষে) আমরা পুনরায় অগ্রসর হলাম এবং ওয়াদিল কুরায় [৪২] পৌছলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “আমি দ্রুত অগ্রসর হই। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার সঙ্গে চলতে চায় সে আমার সঙ্গে দ্রুত চলুক। আর যার ইচ্ছা সে থেমে আসুক। তখন আমরা রওনা হলাম এবং অবশেষে মাদীনাহ্ আমাদের দৃষ্টিগোচর হলে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ (মাদীনাহ্) হচ্ছে ত্বাবাহ্ এবং এ হচ্ছে উহুদ আর উহুদ এমন একটি পাহাড় যা আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসী। (ই.ফা. ৩২৩৭, ই.সে. ৩২৩৪) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উহুদ এমন একটি পাহাড় যা আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি। (ই.ফা. ৩২৩৮, ই.সে. ৩২৩৫) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদ পাহাড়ের দিকে তাকালেন এবং বললেন, উহুদ এমন একটি পাহাড় যে আমাদের ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি। (ই.ফা. ৩২৩৯, ই.সে. ৩২৩৬)

【94】

মাক্কাহ্ ও মাদীনার মাসজিদদ্বয়ে সলাত আদায়ের ফাযীলাত

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমার এ মাসজিদে (মাসজিদে নাবাবীতে) এক (রাক’আত) সলাত মাসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্য কোন মাসজিদে এক হাজার (রাক’আত) সলাতের চেয়েও উত্তম। (ই.ফা. ৩২৪০, ই.সে. ৩২৩৭) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার এ মাসজিদে এক (রাক’আত) সলাত মাসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্য সকল মাসজিদে আদায়কৃত এক হাজার (রাক’আত সলাতের তুলনায় অধিক ফাযীলাতপূর্ণ)। (ই.ফা. ৩২৪১, ই.সে. ৩২৩৮) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর শাগরিদ আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদুর রহমান ও আবূ ‘আবদুল্লাহ আগার (জুহায়নাহ্ গোত্রের মুক্তদাস) তাঁরা উভয়ে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাসজিদে এক (রাক’আত) সলাত আদায় মাসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্য যে কোন মাসজিদে হাজার (রাক’আত) সলাতের তুলনায় অধিক ফাযীলাতপূর্ণ। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবীগণের সমাপ্তি (সর্বশেষ নবী) এবং তাঁর মাসজিদ (নবী-রসূলগণ কর্তৃক নির্মিত মাসজিদসমূহের মধ্যে) সর্বশেষ মাসজিদ। আবূ সালামাহ্ ও আবূ ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, নিঃসন্দেহে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) যে সব কথা বলেছেন, তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস থেকেই বলেছেন। এজন্য আমরা তাঁর ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত তাঁর নিকট থেকে এ হাদীস সত্যায়িত করে নেয়ার প্রয়োজনবোধ করিনি। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর ইন্তিকালের পর তাঁর নিকট থেকে এ হাদীসের সত্যায়ন সম্পর্কে আমরা পরস্পর আলোচনা করি এবং একে অপরকে দোষারোপ করি যে, কেন আমরা এ হাদীস সম্পর্কে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করিনি যে, তিনি তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন কিনা। এ অবস্থায় একদা আমরা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইব্রাহীম ইবনু ক্বারিয-এর কাছে বসলাম এবং এ হাদীস ও তা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট থেকে বর্ণিত হওয়া সম্পর্কে আলোচনা উত্থাপন করলাম। তখন ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইব্রাহীম ইবনু ক্বারিয (রহঃ) আমাদের বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চিত আমি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “অতএব অবশ্যই আমি নবীগণের সমাপ্তি এবং আমার মাসজিদ সর্বশেষ মাসজিদ।” (ই.ফা. ৩২৪২, ই.সে. ৩২৩৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইব্রাহীম ইবনু ক্বারিয (রহঃ) তিনি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে বর্ণনা করতে শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমার এ মাসজিদে এক (রাক’আত) সলাত অন্য সকল মাসজিদে এক হাজার (রাক’আত) সলাতের চেয়ে উত্তম অথবা এ মাসজিদ ছাড়া অ্ন্য যে কোন মাসজিদে এক হাজার (রাক’আত) সলাতের সমতুল্য কিন্তু মাসজিদুল হারামের কথা স্বতন্ত্র। (ই.ফা. ৩২৪৩, ই.সে. ৩২৪০) ইয়াহ্ইয়া ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) থেকে এ সূত্র উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩২৪৪, ই.সে. ৩২৪১) ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমার এ মাসজিদে এক (রাক’আত) সলাত মাসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্য যে কোন মাসজিদে এক হাজার (রাক’আত) সলাতের চেয়ে অধিক ফাযীলাতপূর্ণ। (ই.ফা. ৩২৪৫, ই.সে. ৩২৪২) ‘উবায়দুল্লাহ্ ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) এ সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩২৪৬, ই.সে. ৩২৪৩) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি………… উক্ত হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৩২৪৭, ই.সে. ৩২৪৪) ইবনু ‘উমার (রাঃ) এ সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩২৪৮, ই.সে. ৩২৪৫) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক স্ত্রীলোক রোগাক্রান্ত হওয়ার পর বলল, আল্লাহ আমাকে রোগমুক্তি দান করলে আমি গিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাসে অবশ্যই সলাত আদায় করব। অতঃপর সে আরোগ্য লাভ করল এবং (বায়তুল মুকাদ্দাস) যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিল এবং সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী মায়মুনাহ্ (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে সালাম দিয়ে এ সম্পর্কে অবহিত করল। তিনি বললেন, তুমি এখানে থাক, যা কিছু পাথেয় নিয়েছো তা খাও এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাসজিদে সলাত আদায় কর, কারণ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ “এ মাসজিদে এক (রাক’আত) সলাত আদায় মাসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্য যেকোন মাসজিদে এক হাজার (রাক’আত) সলাত আদায়ের চেয়েও বেশী ফাযীলাতপূর্ণ। (ই.ফা. ৩২৪৯, ই.সে. ৩২৪৬)

【95】

তিন মাসজিদ ব্যতীত সফরের প্রস্তুতি নেয়া যায় না

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, উটের পিঠে হাওদা আটাঁ যাবে না (সফর করা যাবে না) তিনটি মাসজিদ ব্যতীতঃ এ মাসজিদ, মাসজিদুল হারাম ও মাসজিদুল আক্বসা। (ই.ফা. ৩২৫০, ই.সে. ৩২৪৭) যুহরী (রহঃ) এ সূত্রে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথা এভাবে শুরু হয়েছেঃ “তিনটি মাসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে।” (ই.ফা. ৩২৫১, ই.সে. ৩২৪৮) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেবলমাত্র তিনটি মাসজিদের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবেঃ কা’বাহ মাসজিদ, আমার এ মাসজিদ এবং ঈলিয়ার মাসজিদ (বায়তুল মুকাদ্দাস) (ই.ফা. ৩২৫২, ই.সে. ৩২৪৯)

【96】

যে মসজিদের ভিত্তি তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত তার বর্ননা এবং তা হল মদীনায় মাসজিদে নাবাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

আবু সালামাহ্ ইবনু ‘আব্দুর রহমান (রহঃ) আবু সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ)-এর পুত্র ‘আব্দুর রহমান (রহঃ) আমার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘যে মাসজিদের ভিত্তি তাক্বওয়ার উপর স্থাপিত হয়েছে” সে মাসজিদ সম্পর্কে আপনার পিতাকে আপনি কিরূপ বলতে শুনেছেন? তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে বলেছেন, তার কোন এক স্ত্রীর ঘরে আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। আমি বললাম হে আল্লাহর রসুল! সে মাসজিদ কোনটি যার ভিত্তি তাক্বওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? রাবী (আবু সাঈদ) বলেন, তিনি একমুষ্টি কাঁকর তুলে তা জমিনের বুকে নিক্ষেপ করলেন, অতঃপর বললেন, “তা তোমাদের এ মাসজিদ মদীনার মাসজিদ।” রাবী (আবু সালামাহ্) বলেন, এখন আমি বললাম, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চিত আমিও আপনার পিতাকে এভাবেই ঐ মাসজিদের উল্লেখ করতে শুনেছি। (ই.ফা. ৩২৫৩, ই.সে. ৩২৫০) আবু সা’ঈদ (রাঃ) আবু সা’ঈদ (রাঃ) থেকে এ সানাদে উক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্নীত হয়েছে। কিন্তু এ সানাদের মধ্যে ‘আব্দুর রহমান ইবনু আবু সা’ঈদের নাম উল্লেখিত হয়নি। (ই.ফা. ৩২৫৪, ই.সে. ৩২৫১)

【97】

কুবা মাসজিদের ফাযীলাত এবং তাতে সলাত আদায় ও তা যিয়ারাতের ফাযীলাত

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পদব্রজে অথবা বাহনে চড়ে মাসজিদে যিয়ারাতের জন্য যেতেন। (ই.ফা. ৩২৫৫, ই.সে. ৩২৫২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পদব্রজে অথবা বাহনে চড়ে কুবা মাসজিদে আসতেন। অতঃপর তিনি সেখানে দু’ রাকা’আত সলাত আদায় করতেন। [৪৩] অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবু বাকর (রাঃ) বলেছেন, ইবনু নুমায়র (রাঃ) বলেন, অতঃপর তিনি সেখানে দু’ রাক’আত সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ৩২৫৬, ই.সে. ৩২৫৩) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পদব্রজে বা বাহনে চড়ে কুবায় আসতেন। (ই.ফা. ৩২৫৭, ই.সে. ৩২৫৪) ইবনু ‘উমার (রাঃ) এ সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩২৫৮, ই.সে. ৩২৫৫) ‘আব্দুল্লাহ ইবনু দীনার (রহঃ) তিনি ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাহনে চড়ে এবং পদব্রজে কুবায় আসতেন। [৪৪] (ই.ফা. ৩২৫৯, ই.সে. ৩২৫৬) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাহনে চড়ে ও পদব্রজে কুবায় আসতেন। (ই.ফা. ৩২৬০, ই.সে. ৩২৫৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) প্রতি শনিবার কুবায় আসতেন। তিনি বলতেন, আমি রসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রতি শনিবার এখানে আসতে দেখেছি। (ই.ফা. ৩২৬১, ই.সে. ৩২৫৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি শনিবার কুবায় আসতেন। তিনি বাহনে চড়ে এবং পায়ে হেঁটে সেখানে আসতেন। ইবনু দীনার (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ)ও অনুরূপ ‘আমাল করতেন। (ই.ফা. ৩২৬২, ই.সে. ৩২৫৯) ইবনু দীনার (রহঃ) এ সানাদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে, কিন্তু এ সূত্রে “প্রতি শনিবার” কথাটুকু উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৩২৬৩, ই.সে. ৩২৬০)