17. বিবাহ

【1】

দৈহিক ও আর্থিক দিক থেকে সামর্থ্য ব্যক্তির বিবাহ করা মুস্তাহাব, আর্থিক অস্বচ্ছল ব্যক্তি সওম পালন করবে

আলক্বামাহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাঃ)-এর সঙ্গে মিনায় পৌঁছলাম। এ সময় ‘উসমান (ইবনু ‘আফ্‌ফান) (রাঃ) এসে তাঁর সাথে মিলিত হলেন। তখন তিনি তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লাগলেন। ‘উসমান (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমরা কি আপনার সঙ্গে এমন একটি যুবতী মেয়ের বিয়ে দিব না, যে হয়ত আপনার অতীত কিছু স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিবে? রাবী বলেন, ‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাঃ) বললেন, আপনি যদি এ কথা বলেন তবে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেছেনঃ “হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে দাম্পত্য জীবনের ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম সে যেন বিবাহ করে। কারণ তা (বিবাহ) দৃষ্টিকে নিচু করে এবং লজ্জাস্থানকে সুরক্ষিত করে। আর যে সক্ষম নয় তার সিয়াম পালন করা উচিত। কারণ তা তার জন্য যৌন কামনা দমনকারী।” (ই.ফা. ৩২৬৪, ই.সে. ৩২৬১) ‘আলক্বামাহ্ (রহঃ) আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ)-এর সাথে মিনায় হাঁটছিলাম। এ সময় ‘উসমান ইবনু ‘আফ্‌ফান (রাঃ) তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। রাবী বলেন, তিনি বললেনঃ হে আবূ ‘আবদুর রহমান! এখানে আসুন। রাবী বলেন, তিনি তাকে একান্তে ডেকে নিলেন এবং ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) যখন দেখলেন গোপনীয়তার কোন প্রয়োজন নেই তখন তিনি আমাকে বললেন, হে ‘আলক্বামাহ্‌! আসো, তখন আমি তাদের সাথে যোগ দিলাম। ‘উসমান (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! আমরা কি তোমাকে একটি কুমারী মেয়ের সাথে বিবাহ দিব না, হয়ত সে তোমার অতীত স্মৃতি স্মরণ করিয়ে দিবে? ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আপনি যদি তাই বলেন,...অবশিষ্ট বর্ণনা আবূ মু’আবিয়ার হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৩২৬৫, ই.সে. ৩২৬২) ‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেছেনঃ হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বৈবাহিক জীবনের ব্যয়ভার বহনে সক্ষম সে যেন বিয়ে করে। কারণ তা দৃষ্টিকে নিচু করে দেয় এবং লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করে। আর যে (ভরণপোষনে) সমর্থ নয়, তাকে অবশ্যই সওম পালন করতে হবে। কারণ তা তার যৌবন কামনা দমনকারী। (ই.ফা. ৩২৬৬, ই.সে. ৩২৬৩) আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আমার চাচা ‘আলক্বামাহ্‌ ও আল আসওয়াদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) এর নিকট গেলাম। এ সময় আমি যুবক ছিলাম। তিনি একটি হাদীস উল্লেখ করলেন। আমি বুঝতে পারলাম যে, তিনি আমাকে লক্ষ্য করেই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ। এ বর্ণনায় আরো আছে, “অতঃপর আমি বিয়ে করতে আর বিলম্ব করিনি।” (ই.ফা. ৩২৬৭, ই.সে. ৩২৬৫) আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা ‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাঃ)-এর নিকট গেলাম এবং আমি ছিলাম দলের মধ্যে সব চাইতে তরুন। ..... উপরের হাদীসের অনুরূপ। তবে এ সূত্রে “অতঃপর আমি বিয়ে করতে আর বিলম্ব করিনি” কথাটুকু উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৩২৬৮, ই.সে. ৩২৬৬) আনাস (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কতিপয় সহাবী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণীদের নিকট তাঁর গোপন ‘ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তাঁদের মধ্যে কেউ বললেন, আমি কখনও বিয়ে করব না, কেউ বললেন, আমি কখনও গোশ্‌ত খাব না, কেউ বললেন, আমি কখনও বিছানায় ঘুমাব না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর প্রশংসা ও গুনাগান করলেন এবং বললেনঃ “লোকদের কী হল যে, তারা এরূপ এরূপ বলছে? অথচ আমি তো সলাতও আদায় করি আবার নিদ্রাও যাই, সওম পালন করি এবং ইফ্‌ত্বারও করি এবং বিয়েও করেছি। অতএব যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার কেউ নয়।” (ই.ফা. ৩২৬৯, ই.সে. ৩২৬৭) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উসমান ইবনু মায’ঊন (রাঃ)-এর নারী সাহচর্য থেকে দূরে থাকার ইচ্ছাকে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি যদি তাকে অনুমতি দিতেন, তবে আমরা নিজেদের খোজা হয়ে যেতাম।[৪৫] (ই.ফা. ৩২৭০, ই.সে. ৩২৬৮) সা’ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সা’দ (ইবনু আবূ ওয়াক্কাস) (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি- ‘উসমান ইবনু মায’ঊন (রাঃ)-এর কৌমার্যব্রত অবলম্বনের প্রস্তাব (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক) প্রত্যাখ্যাত হয়। তাকে অনুমতি দেয়া হলে আমরা অবশ্যই নিজেদের খোজা করে নিতাম। (ই.ফা. ৩২৭১, ই.সে. ৩২৬৯) সা’ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) তিনি সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, ‘উসমান ইবনু মায’ঊন (রাঃ) কৌমার্যব্রত অবলম্বনের প্রস্তাব করলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে (তা করতে) নিষেধ করে দেন। তিনি যদি তাঁকে অনুমতি দিতেন তবে অবশ্যই আমরা নিজেদের খোজা করে নিতাম। (ই.ফা. ৩২৭২, ই.সে. ৩২৭০)

【2】

কোন মহিলাকে দেখে কোন পুরুষের মনে যৌন কামনা জাগ্রত হলে সে যেন তার স্ত্রীর সাথে অথবা ক্রীতদাসীর সাথে গিয়ে মিলিত হয়

জাবির (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মহিলাকে দেখলেন। তখন তিনি তাঁর স্ত্রী যায়নাব –এর নিকট আসলেন। তিনি তখন তার একটি চামড়া পাকা করায় ব্যস্ত ছিলেন এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের প্রয়োজন পূরণ করলেন। অতঃপর বের হয়ে সাহাবীগণের নিকট এসে তিনি বললেনঃ স্ত্রীলোক সামনে আসে শায়ত্বানের বেশে এবং ফিরে যায় শায়ত্বানের বেশে। অতএব তোমাদের কেউ কোন স্ত্রীলোক দেখতে পেলে সে যেন তার স্ত্রীর নিকট আসে। কারণ তা তার মনের ভেতর যা রয়েছে তা দূর করে দেয়।[৪৬] (ই.ফা. ৩২৭৩, ই.সে. ৩২৭১) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি স্ত্রীলোক দেখলেন...উপরের হাদীসের অনুরূপ। তবে এতে আছেঃ “তিনি নিজ স্ত্রী যায়নাব (রাঃ)-এর নিকট এলেন, তখন তিনি একটি চামড়া পাকা করছিলেন” এবং “সে শায়ত্বানের বেশে চলে যায়” উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৩২৭৪, ই.সে. ৩২৭২) জাবির (রাযিঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমাদের কারো যদি কোন স্ত্রীলোক দেখে মনে কিছু উদয় হয় তখন সে যেন তার স্ত্রীর নিকট আসে এবং তার সাথে মিলিত করে। এতে তার মনে যা আছে তা দূর করে। (ই.ফা. ৩২৭৫, ই.সে. ৩২৭৩)

【3】

মুত্‌‘আহ্‌ বিবাহ বৈধ ছিল, পরে তা বাতিল করা হয়, অতঃপর বৈধ করা হয়, আবার বাতিল করা হয় এবং ক্বিয়ামাত পর্যন্ত স্থির থাকবে

ক্বায়স (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে জিহাদে অংশগ্রহণ করতাম এবং আমাদের সঙ্গে আমাদের স্ত্রীগণ থাকত না। আমরা বললাম, আমরা কি খাসী হব না? তিনি আমাদের তা থেকে নিষেধ করলেন। অতঃপর তিনি পরিধেয় বস্ত্র দানের বিনিময়ে আমাদের নির্দিষ্ট কালের জন্য নারীদের বিবাহ করার রুখ্‌সত দিলেন। অতঃপর ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) পাঠ করলেনঃ “হে মু’মিনগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট যেসব বস্তু হালাল করেছেন, সে সমুদয়কে তোমরা হারাম করো না এবং সীমালঙ্ঘন করো না আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না”- (সূরা আল মায়িদাহ্‌ ৫:৮৭)। (ই.ফা. ৩২৭৬, ই.সে. ৩২৭৪) ইসমা’ঈল ইবনু আবূ খালিদ (রহঃ) থেকে এ সানাদ উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। অতঃপর তিনি উক্ত আয়াত পাঠ করলেন। তিনি বলেননি যে, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) পড়েছেন।’ (ই.ফা. ৩২৭৭, ই.সে. ৩২৭৫) ইসমা’ঈল (রহঃ) থেকে এ সূত্র উক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। এতে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমরা ছিলাম যুবক। তাই আমরা বললাম, ইয়া রসূলুল্লাহ! আমরা কি খাসী হব না? এতে ‘জিহাদ’ শব্দের উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৩২৭৮, ই.সে. ৩২৭৬) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ ও সালামাহ্‌ ইবনুল আক্‌ওয়া’ (রাযিঃ) তারা উভয়ে বলেন, আমাদের সামনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘোষক বেরিয়ে এসে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের মুত্‌’আহ্‌ বিবাহ করার অনুমতি দিয়েছেন। (ই.ফা. ৩২৭৯, ই.সে. ৩২৭৭) সালামাহ্‌ ইবনুল আক্‌ওয়া’ (রাযিঃ) ও জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এলেন এবং আমাদের মুত্‌’আর (সাময়িক বিবাহের) অনুমতি দিলেন। (ই.ফা. ৩২৮০, ই.সে. ৩২৭৮) ‘আত্বা (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ‘উমরাহ্ পালন করতে এলেন। তখন আমরা তাঁর আবাসে তাঁর নিকট গেলাম। লোকেরা তাঁর নিকট বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করল। অতঃপর তারা মুত’আহ্ সম্পর্কে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, হাঁ, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে এবং আবূ বকর (রাঃ) ও ‘উমার (রাঃ)-এর যুগে মুত্’আহ(বিবাহ) করেছি।[৪৭] (ই.ফা. ৩২৮১, ই.সে. ৩২৭৯) আবু যুবায়র (রহঃ) আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি : আমরা এক মুঠো খেজুর অথবা ময়দার বিনিময়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে এবং আবূ বকর (রাঃ)-এর যুগে মুত’আহ্ বিবাহ করতাম। শেষ পর্যন্ত ‘উমার (রাঃ) ‘আম্‌র ইবনু হুরায়স–এর বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তা নিষিদ্ধ করেন।[৪৮] (ই. ফা. ৩২৮২, ই.সে. ৩২৮০) আবূ নায্‌রাহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকত উপস্থিত ছিলাম। এক ব্যক্তি তার নিকট এসে বলল, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ও ইবনু যুবায়র (রাঃ) দু’ প্রকারের মুত্‌’আহ্‌ (তামাত্তু’ হাজ্জ ও মুত্‌’আহ্‌ বিবাহ)নিয়ে পরস্পর মতবিরোধ করেছেন। তখন জাবির (রাঃ) বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপস্থিতিতে দু’ প্রকারের মুত্‌’আহ করেছি। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) আমাদের উভয়টিই করতে নিষেধ করলেন। অতএব আমরা তা আর করেনি। (ই .ফা. ৩২৮৩, ই.সে. ৩২৮১) ইয়াস ইবনু সালামাহ্ (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্র তিনি(পিতা) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আওত্বাস যুদ্ধের বছর তিন দিনের জন্য মুত্’আহ্ বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি তা নিষিদ্ধ করেন। (ই.ফা. ৩২৮৪, ই.সে. ৩২৮২) রাবী’ ইবনু সাবরাহ্ আল জুহানী (রহঃ) থেকে তাঁর পিতা সাবরাহ (রাযিঃ)–এর সুত্র তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মুত্’আর অনুমতি দিলেন। অতঃপর আমি ও অপর এক ব্যক্তি বানূ ‘আমির গোত্রের একটি মহিলার নিকট গেলাম। সে ছিল দেখতে লম্বা ঘাড় বিশিষ্ট তরুণ উষ্ট্রীর ন্যায়। আমরা নিজেদেরকে তার নিকট (মুত্’আহ্ বিবাহের জন্য) পেশ করলাম। সে বলল, আমাকে কী দিবে? আমি বললাম , আমার চাদর। আমার সাথীও বলল আমার চাঁদর। আমার চাদরের তুলনায় আমার সঙ্গীর চাদরটি বেশি উৎকৃষ্টতর; কিন্তু আমি ছিলাম তুলনায় কম বয়সের যুবক। সে যখন আমার সঙ্গীর চাদরের প্রতি তাকায় তখন তা তার পছন্দ হয় এবং বলল, তুমি এবং তোমার চাদর ই আমার জন্য যথেষ্ট। অতএব আমি তার সাথে তিন দিন অতিবাহিত করলাম। অতপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কারো কাছে মুত্’আহ্ বিবাহের সূত্রে কোন স্ত্রী লোক থাকলে সে যেন তার পথ ছেড়ে দেয় (ত্যাগ করে)। (ই.ফা. ৩২৮৫, ই.সে. ৩২৮৩) রাবী’ ইবনু সাব্‌রাহ্‌ (রহঃ) তাঁর পিতা মক্কা বিজয়াভিযানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বলেন, আমরা তথায় ১৫ দিন অর্থাৎ পূর্ণ ১৩ দিন এবং এক দিন ও এক রাত অবস্থান করি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মুত্‌’আর অনুমতি দিলেন। তখন আমি এবং আমার গোত্রের এক ব্যক্তি বেরিয়ে পড়লাম। আমি তার তুলনায় আকর্ষণীয় চেহারার অধিকারী ছিলাম এবং সে ছিল প্রায় কুৎসিত। আমাদের উভয়ের সাথে একটি করে চাদর ছিল। আমার চাদরটি ছিল পুরাতন এবং আমার চাচাত ভাইয়ের চাদরটি ছিল সম্পূর্ণ নতুন। অবশেষে আমরা মাক্কার নিম্নভূমিতে অথবা উচ্চভূমিতে পৌঁছে একটি যুবতী মেয়ের সাক্ষাৎ পেলাম, যাকে দেখতে উঠতি বয়সের চালাক এবং লম্বাঘাড় বিশিষ্ট উষ্ট্রীর মত। আমরা প্রস্তাব দিলাম, আমাদের দু’জনের কারো সাথে তোমার মুত্‌’আহ বিবাহ কি সম্ভব? সে বলল, তোমরা কী বিনিময় দিবে? তাদের প্রত্যেকে কে নিজ নিজ চাদর মেলে ধরল। সে তাদের উভয়ের দিকে তাকাতে লাগল। আমার সঙ্গীও তার দিকে তাকাল। যখন স্ত্রীলোকটির দিকে তাকিয়ে বলল, তার এ চাদর পুরাতন এবং আমার চাদর একেবারে নতুন। স্ত্রীলোকটি তিনবার কি দু’বার বলল, তার চাদরটি গ্রহনে কোন ক্ষতি নেই। অতঃপর আমি তাকে মুত্‌’আহ বিবাহ করলাম এবং রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা হারাম ঘোষণা না করা পর্যন্ত ফিরে আসিনি। (ই.ফা. ৩২৮৬, ই.সে. ৩২৮৪) সাবরাহ আল জুহানী (রাযিঃ)-এর সুত্র তিনি বলেন, আমরা মাক্কাহ্ বিজয়ের বছর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে মাক্কায় রওনা হলাম ..... বাকী অংশ উপরোক্ত হাদিসের অনুরূপ। তবে এতে রয়েছে, স্ত্রীলোকটি বলল, ‘‘এটা কি ঠিক হবে? তার চাদরটি পুরাতন এবং ছিঁড়ে গেছে।’’ (ই.ফা. ৩২৮৭, ই.সে. ৩২৮৫) সাবরাহ আল জুহানী (রাযিঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলেন। তিনি বললেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদেরকে স্ত্রীলোকদের সাথে মুত্’আহ্ বিবাহের অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু অচিরেই আল্লাহ্ তা‘আলা তা হারাম করেছেন ক্বিয়ামাতের দিন পর্যন্ত। অতএব যার নিকট এ ধরনের বিবাহ সূত্রে কোন স্ত্রীলোক আছে, সে যেন তার পথ ছেড়ে দেয়। আর তোমরা তাদের যা কিছু দিয়েছ তা কেড়ে দিও না। (ই.ফা. ৩২৮৮, ই.সে. ৩২৮৬) ‘আব্দুল ‘আযীয ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) থেকে এ সুত্র তিনি [সাবরাহ আল জুহানী (রাঃ)] বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (কা’বার) দরজা ও রুকনের মাঝে দাড়িয়ে বলতে শুনেছি ..... বাকীঅংশ উপরোক্ত হাদিসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৩২৮৯, ই.সে. ৩২৮৭) ‘আবদুল মালিক ইবনু রাবী’ ইবনু সাবরাহ আল জুহানী (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদা তিনি(দাদা) বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর আমাদের মাক্কায় প্রবেশকালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মুত্‌’আহ্‌ বিবাহের অনুমতি দান করেন। তিনি আমাদের তা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত (নারী সঙ্গ ত্যাগ করে) বের হয়ে আসিনি।(ই.ফা. ৩২৯০, ই.সে. ৩২৮৮) সাব্‌রাহ্‌ ইবনু মা’বাদ (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের বছর তাঁর সাহাবীগণকে স্ত্রীলোকদের সাথে মুত্‌’আর অনুমতি দেন। সাব্‌রাহ্‌ (রাঃ) বলেন, তখন আমি এবং সুলায়ম গোত্রের আমার এক সাথী বের হয়ে পড়লাম এবং শেষ পর্যন্ত আমি গোত্রের এক যুবতীকে পেয়ে গেলাম। সে ছিল দীর্ঘাঙ্গী যুবতী উটনীর ন্যায়। আমরা তার নিকট মুত্‌’আহ্‌ বিবাহের প্রস্তাব দিলাম এবং আমাদের চাদর তার সামনে পেশ করলাম। তখন সে তাকিয়ে দেখল এবং আমাকে আমার সঙ্গীর তুলনায় সুন্দর দেখতে পেল, অপরদিকে আমার চাদরের তুলনায় আমার সঙ্গীর চাদর উৎকৃষ্টতর দেখল। সে মনে মনে কিছুক্ষণ চিন্তা করল। অতঃপর আমার সঙ্গীর চাইতে আমাকে অগ্রাধিকার দিল। তারা আমাদের সাথে তিনদিনের মুত্‌’আহ্‌ করল। অতঃপর রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বিদায় করে দেয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দিলেন।(ই.ফা. ৩২৯১, ই.সে. ৩২৮৯) রাবী’ ইবনু সাবরাহ (রহঃ) থেকে তার পিতার সুত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুত্‌’আহ্‌ (বিবাহ) করতে নিষেধ করেছেন।(ই.ফা. ৩২৯২, ই.সে. ৩২৯০) রাবী’ ইবনু সাবরাহ (রহঃ) থেকে তাঁর পিতার সুত্র রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ্ বিজয়ের দিন মুত্’আহ্ নিষিদ্ধ করেন।(ই.ফা. ৩২৯৩, ই.সে. ৩২৯১) রাবী’ ইবনু সাবরাহ আল জুহানী (রহঃ) থেকে তাঁর পিতার সুত্র রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ্ বিজয়ের কালে স্ত্রীলোকদের সাথে মুত্’আহ্ করতে নিষেধ করেছেন। তাঁর পিতা দু’টি লাল চাদরের বিনিময়ে মুত্’আহ্ করেছিলেন।(ই.ফা. ৩২৯৪, ই.সে. ৩২৯২) উরওয়াহ্‌ ইবনু যুবায়র (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) মাক্কায় (ভাষণ দিতে) দাঁড়িয়ে বললেন, কিছু লোক এমন আছে আল্লাহ্‌ তা’আলা যেমন তাদের চোখ অন্ধ করে দিয়েছেন তেমনি অন্তরকেও অন্ধ করে দিয়েছেন। তারা মুত্‌’আর পক্ষে ফাতাওয়া দেয়। এ কথা বলে তিনি এক ব্যক্তির প্রতি ইঙ্গিত করলেন। সে ব্যক্তি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)। তাঁকে ডেকে বললেন, তুমি একটি অসভ্য ও কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যক্তি। আমার জীবনের শপথ! ইমামুল মুত্তাক্বীন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে মুত্‌’আহ্‌ প্রচলিত ছিল। ইবনু যুবায়র (রাঃ) তাকে বললেন, আপনি নিজে একবার করে দেখুন। আল্লাহর শপথ! আপনি যদি তা (মুত্‌’আহ্‌) করেন তাহলে আপনার জন্য নির্ধারিত পাথর দিয়েই আপনাকে রজম (পাথর নিক্ষেপে হত্যা) করব। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, খালিদ ইবনুল মুজাহির ইবনু সাইফুল্লাহ (রহঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, তিনি এক ব্যক্তির নিকট বসা ছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি এসে তাকে মুত্‌’আহ্‌ সম্পর্কে ফাতাওয়া জিজ্ঞেস করে। তিনি তাকে মুত্‌’আর অনুমতি দিলেন। ইবনু আবূ ‘আম্‌রাহ্‌ আল আনসারী (রাঃ) তাকে বললেন থামুন। সে বলল, কেন? আল্লাহর শপথ! ইমামুল মুত্তাকীন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে তা করা হত। ইবনু আবূ ‘আম্‌রাহ্‌ (রাঃ) বললেন, ইসলামের প্রাথমিক যুগে নিরুপায় অবস্থায় তার অনুমতি ছিল (যেমন নিরুপায় অবস্থায়) মৃত জীব, রক্ত ও শূকরের (গোশ্‌ত ভক্ষণের) ন্যায়। অতঃপর আল্লাহ্‌ তার দীনকে শক্তিশালী এবং সুদৃঢ় করলেন এবং তা নিষিদ্ধ করলেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রাবী’ ইবনু সাব্‌রাহ্‌ আল জুহানী আমাকে জানিয়েছেন যে, তাঁর পিতা বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে আমি দু’টি লাল চাদরের বিনিময়ে ‘আমির গোত্রের একটি স্ত্রীলোকের সাথে মুত্‌আহ্‌ করেছিলাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মুত্‌আহ্‌ করতে নিষেধ করেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) আরও বলেন, আমি রাবী’ ইবনু সাব্‌রাহ্‌কে ‘উমার ইবনু ‘আব্‌দুল ‘আযীয (রহঃ)-এর নিকট তা বর্ণনা করতে শুনেছি, আমি তখন (সেখানে) বসা ছিলাম। (ই.ফা. ৩২৯৫, ই.সে. ৩২৯৩) রাবী’ ইবনু সাবরাহ আল জুহানী (রহঃ) তাঁর পিতার সুত্র রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুত্’আহ্ নিষিদ্ধ করেছেন এবং বলেছেন, সাবধান! আজকের এ দিন থেকে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত মুত্’আহ্ হারাম। যে কেউ (ইতোপূর্বে) মুত্’আহ্ বাবদ যা কিছু দিয়েছে, সে যেন তা ফেরত না দেন। (ই.ফা. ৩২৯৬, ই.সে. ৩২৯৪) আলী ইবনু আবূ তালিব (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বরের যুদ্ধের দিন মুত্‌’আহ্‌ ও গৃহপালিত গাধার গোশ্‌ত নিষিদ্ধ করেছেন।(ই.ফা. ৩২৯৭, ই.সে. ৩২৯৫) মালিক (রহঃ) থেকে এ সুত্র অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। এ সুত্রে আছে, মুহাম্মাদ ইবনু ‘আলী বলেন, তিনি ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-কে জনৈক ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বলতে শুনেছেন, তুমি তো সৎপথ থেকে বিচ্যুত। কেননা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষিদ্ধ করেছেন ..... উক্ত হাদিসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৩২৯৮, ই.সে. ৩২৯৬) আলী (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারের যুদ্ধের দিন মুত্‌’আহ্‌ এবং গৃহপালিত গাধার গোশত নিষিদ্ধ করেছেন। (ই.ফা. ৩২৯৯, ই.সে. ৩২৯৭) আলী (রাযিঃ) তিনি শুনতে পেলেন যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নারীদের সাথে মুত্‌’আর ব্যাপারে কিছুটা শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন। ‘আলী (রাঃ) বললেন, থামো, হে ইবনু ‘আব্বাস! কারণ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারের যুদ্ধের দিন মুত্‌’আহ্‌ ও গৃহপালিত গাধার গোশ্‌ত নিষিদ্ধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৩০০, ই.সে. ৩২৯৮) ‘আলী (রাযিঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে ‘আলী (রাঃ)–কে বলতে শুনেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারের যুদ্ধের দিন মুত্’আহ্ এবং গৃহপালিত গাধার গোশত নিষিদ্ধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৩০১, ই.সে. ৩২৯৯)

【4】

কোন মহিলাকে তার ফুফুর কিংবা তার খালার সাথে একত্রে বিবাহ করা হারাম

আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন স্ত্রীলোক ও তার ফুফুকে এবং কোন স্ত্রীলোক ও তার খালাকে একত্র (একত্রে বিবাহ) করা যাবে না। (ই.ফা. ৩৩০২, ই.সে. ৩৩০০) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারজন মহিলা গ্রহণের ব্যাপারে এ নিষেধাজ্ঞা করেছেন যে, তাদের যেন কোন স্ত্রীলোক ও তার ফুফুকে এবং কোন স্ত্রীলোক ও তার খালাকে একত্র করা না হয়। (ই.ফা. ৩৩০৩, ই.সে. ৩৩০১) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বলতে শুনেছি : ভাইঝির উপর তার ফুফুকে বিবাহ করা যাবে না। অনুরূপভাবে খালার উপর বোনঝিকে বিবাহ করা যাবে না। (ই.ফা. ৩৩০৪, ই.সে. ৩৩০২) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন মহিলা ও তার খালাকে একত্রে বিবাহ করতে নিষেধ করেছেন। রাবী শিহাব (রহঃ) বলেন, আমরা মনে করি, পিতার খালা ও পিতার ফুফু এ পর্যায়ের। (ই.ফা. ৩৩০৫, ই.সে. ৩৩০৩) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মহিলাকে বিবাহ করা যাবে না তার ফুফুর উপরে। (ই.ফা. ৩৩০৬, ই.সে. ৩৩০৪) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৩৩০৭, ই.সে. ৩৩০৫) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যেন তার (মুসলিম) ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়, তার ভাইয়ের দরদাম করার উপর দিয়ে দরদাম না করে। ফুফুর উপরে তার ভাইঝিকে এবং খালার উপরে তার বোনঝিকে বিবাহ করা যাবে না। কোন স্ত্রীলোক যেন নিজের পাত্র ভরে নেয়ার জন্য তার বোনের (অন্য স্ত্রী লোকের) ত্বলাক্ব দাবী না করে, বরং সে বিবাহ করুক। কারণ আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, সে তা পাবেই। (ই.ফা. ৩৩০৮, ই.সে. ৩৩০৬) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ফুফুর উপরে তার ভাইঝিকে এবং খালার উপরে তার বোনঝিকে বিবাহ করতে এবং কোন মহিলাকে তার নিজের পাত্র পূর্ণ করার জন্য তার বোনের ত্বলাক্বের দাবী করতে নিষেধ করেছেন। কারণ আল্লাহই তার রিয্‌কদাতা। (ই.ফা. ৩৩০৯, ই.সে. ৩৩০৭) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন কোন মহিলা ও তার ফুফুকে একত্র করতে এবং কোন মহিলা ও তার খালাকে একত্র করতে। (ই.ফা. ৩৩১০, ই.সে. ৩৩০৮) ‘আমর ইবনু দীনার (রহঃ) এ সানাদে অনুরূপ বর্ণিত হয়ছে। (ই.ফা. ৩৩১১, ই.সে. ৩৩০৯)

【5】

ইহরামধারী ব্যক্তির বিবাহ করা হারাম এবং তার বিবাহের প্রস্তাব দেয়া দূষণীয়

নুবায়হ ইবনু ওয়াহ্‌ব (রহঃ) ‘উমার ইবনু ‘উবাইদুল্লাহ্ (রহঃ) শায়বাহ্ ইবনু জুবায়রের কন্যার সাথে নিজ পুত্র ত্বল্‌হার বিবাহ দেয়ার মনস্ত করেন। অতএব তিনি ‘উসমান (রাঃ)-এর পুত্র আবানের কাছে লোক পাঠালেন (তাকে বিবাহ অনুষ্ঠানে যোগদানের দা’ওয়াত দেয়ার জন্য)। তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন। আর তিনি এ সময় আমীরুল হাজ্জ ছিলেন। আবান বলেন, আমি ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ)–কে বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (হাজ্জ বা ‘উমরাহ্‌ পালনের উদ্দেশে) ইহরামধারী ব্যক্তি নিজেও বিবাহ করবে না, অন্যকেও বিবাহ করাবে না এবং বিবাহের প্রস্তাবও দিবে না। (ই.ফা. ৩৩১২, ই.সে. ৩৩১০) নুবায়হ ইবনু ওয়াহ্ব (রহঃ) ‘উমার ইবনু ‘উবায়দুল্লাহ্ ইবনু মা’মার আমাকে আবান ইবনু ‘উসমানের নিকট পাঠালেন এ উদ্দেশে যে, তিনি নিজ পুত্রের সাথে শায়বাহ্ ইবনু ‘উসমানের কন্যার বিবাহের প্রস্তাব দেওয়ার মনস্থ করেছিলেন। তিনি (আবান) তখন হাজ্জের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি বললেন, আমি তো তাকে বেদুঈনের মতো আচরণ করতে দেখেছি।” কারণ (এটাতো সাধারণ জ্ঞানের ব্যাপার যে) ইহরামত বস্ত্র পরিহিত ব্যক্তি না বিবাহ করতে পারে, না বিবাহ করাতে পারে।’’ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ হাদীস ‘উসমান (রাঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৩৩১৩, ই.সে. ৩৩১১) উসমান ইবনু আফ্‌ফান (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–বলেছেনঃ মুহরিম ব্যক্তি না বিবাহ করবে, না বিবাহ করাবে, আর না বিবাহের প্রস্তাব দিবে। (ই.ফা. ৩৩১৪, ই.সে. ৩৩১২) উসমান (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুহরিম ব্যক্তি বিবাহ করবে না এবং বিবাহের প্রস্তাবও দিবে না। (ই.ফা. ৩৩১৫, ই.সে. ৩৩১৩) নুবায়হ ইবনু ওয়াহ্‌ব (রহঃ) ‘উমার ইবনু ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু মা’মার হাজ্জের মৌসুমে শায়বাহ্‌ ইবনু জুবায়রের কন্যার সাথে নিজ পুত্র ত্বলহার বিবাহ দেয়ার মনস্ত করলেন। এ সময় আবান ইবনু ‘উসমান ছিলেন আমীরুল হাজ্জ। অতএব তিনি (‘উমার) তার নিকট এ কথা বলে পাঠালেন, আমি ত্বল্‌হাহ্‌ ইবনু ‘উমারের বিবাহ দিতে ইচ্ছা করেছি। অতএব আমি বিবাহ অনুষ্ঠানে আপনার উপস্থিতি কামনা করি। আবান (রহঃ) তাঁকে বললেন, আমি তো তোমাকে নির্বোধ ইরাকীর মতো আচরণ করতে দেখছি। নিশ্চিত আমি ‘উসমান ইবনু ‘আফ্‌ফান (রাঃ)–কে বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইহরামধারী ব্যক্তি বিবাহ করবে না। (ই.ফা. ৩৩১৬, ই.সে. ৩৩১৪) আবূ শা’সা (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে অবহিত করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহরিম অবস্থায় (মায়মূনাকে) বিবাহ করেছেন। ইবনু নুমায়রের বর্ণনায় আরো আছে আমি (ইবনু নুমায়র) যুহরীর নিকট এ হাদীস বর্ণনা করলে তিনি বলেন, আমাকে ইয়াযীদ ইবনুল আসাম অবহিত করেছেন যে, “তিনি ইহরামমুক্ত অবস্থায় তাঁকে বিবাহ করেছেন।”[৪৯] (ই.ফা. ৩৩১৭, ই.সে. ৩৩১৫) ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরামের অবস্থায় মায়মূনাহ্‌ (রাঃ)-কে বিবাহ করেছেন। (ই.ফা. ৩৩১৮, ই.সে. ৩৩১৬) ইয়াযীদ ইবনুল আসাম (রাযিঃ) তিনি বলেন, হারিসের কন্যা মায়মূনাহ্‌ (রাঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইহরাম মুক্ত অবস্থায় তাঁকে বিবাহ করেন। তিনি আরও বলেন, তিনি ছিলেন আমার খালা এবং ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এরও খালা।[৫০] (ই.ফা. ৩৩১৯, ই.সে. ৩৩১৭)

【6】

একজনের বিবাহের প্রস্তাবের উপর অন্যের বিবাহের প্রস্তাব দেয়া নিষেধ, প্রথমোক্ত ব্যক্তি অনুমতি দিলে অথবা প্রস্তাব প্রত্যাহার করলে (তা জায়িয)

ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ যেন অন্যের দামাদামীর উপর দর বাড়িয়ে না বলে এবং অন্যের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। (ই.ফা. ৩৩২০, ই.সে. ৩৩১৮) ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইয়ের দরদামের উপর দরদাম না করে এবং তার বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। তবে সে অনুমতি দিলে (তা জায়িয)। (ই.ফা. ৩৩২১, ই.সে. ৩৩১৯) ‘উবায়দুল্লাহ্ (রহঃ) থেকে এ সূত্র এ হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩৩২২, ই.সে. ৩৩২০) নাফি’ (রহঃ) থেকে এ সূত্র অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৩৩২৩, ই.সে. ৩৩২১) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন- গ্রামের লোকদের পক্ষ থেকে পণ্য দ্রব্য শহরের লোকদের বিক্রয় করে দিতে, অথবা কৃত্রিম ক্রেতা সেজে দাম বাড়িয়ে বলতে, একজনের বিয়ের প্রস্তাবের উপর অপরজনের প্রস্তাব দিতে, একজনের ক্রয়-বিক্রয়ের দরদাম করার উপর অপরজনের দরদাম করতে এবং কোন স্ত্রীলোককে স্বীয় পাত্র পূর্ণ করার উদ্দেশে অপর স্ত্রীলোকের ত্বলাক্ব দাবী করতে। ‘আম্‌রের বর্ণনায় আরো আছেঃ “একজনের দর করার উপর অপরজনকে দর বাড়িয়ে বলতে।” (ই.ফা. ৩৩২৪, ই.সে. ৩৩২২) আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (ক্রয়ের ইচ্ছা না থাকলে দালালী করার উদ্দেশে) দাম বাড়িয়ে বলবে না, কোন ব্যাক্তি যেন তার ভাইয়ের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয় না করে, শহরবাসী যেন গ্রামবাসীর পণ্য বিক্রয় না করে, কোন ব্যাক্তি যেন তার ভাই এর বিয়ের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয় এবং কোন স্ত্রীলোক যেন নিজের পাত্র পূর্ণ করার জন্য অপর স্ত্রীলোকের ত্বলাক্ব দাবী না করে। (ই.ফা. ৩৩২৫, ই.সে. ৩৩২৩ যুহরী (রহঃ) এ সানাদের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তবে মা’মারের বর্ণনায় আছেঃ “কোন ব্যাক্তি যেন ক্রয়-বিক্রয়ে তার ভাইয়ের দামের উপর দিয়ে দাম বাড়িয়ে না বলে।” (ই.ফা. ৩৩২৬, ই.সে. ৩৩২৪) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন মুসলিম যেন অপর মুসলিমের দামের উপর দাম না করে এবং তার বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব না দেয়। (ই.ফা. ৩৩২৭, ই.সে. ৩৩২৫) আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ)-এর সূত্র আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। (ই.ফা. ৩৩২৮, ই.সে. ৩৩২৬) আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তারা “তার ভাইয়ের দামের উপর” এবং “তার ভাইয়ের প্রস্তাবের উপর” কথা দু’টি উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ৩৩২৮, ই.সে. ৩৩২৭) ‘উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাযিঃ) মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন ব্যাক্তি অপর মু’মিন ব্যাক্তির ভাই। অতএব মু’মিনের জন্য তার ভাইয়ের দামের উপর দাম বলা এবং তার ভাইয়ের বিবাহের প্রস্তাবের উপর প্রস্তাব দেয়া হালাল নয়। তবে সে (নিজের প্রস্তাব) প্রত্যাহার করলে স্বতন্ত্র কথা। (ই.ফা. ৩৩২৯, ই.সে. ৩৩২৮)

【7】

শিগার বিবাহ হারাম ও তা বাতিল

ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিগার পদ্ধতির বিবাহ নিষিদ্ধ করেছেন। শিগার হল- কোন ব্যাক্তি কর্তৃক তার কন্যাকে অপর ব্যাক্তির নিকট এ শর্তে বিবাহ দেয়া যে, শেষোক্ত ব্যাক্তি তার কন্যাকে প্রথোমক্ত ব্যাক্তির নিকট বিবাহ দিবে এবং তাদের মধ্যে মাহর দেয়া হবে না। (ই.ফা. ৩৩৩০, ই.সে. ৩৩২৯) ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) এ সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে ‘উবায়দুল্লাহর বর্ণনায় আছে, তিনি বলেনঃ ‘আমি নাফি’ (রহঃ)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, শিগার কী?” (ই.ফা. ৩৩৩১, ই.সে. ৩৩৩০) ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিগার নিষিদ্ধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৩৩২, ই.সে. ৩৩৩১) ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “ইসলামে শিগার নেই।” (ই.ফা. ৩৩৩৩, ই.সে. ৩৩৩২) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিগার পদ্ধতির বিবাহ নিষিদ্ধ করেছেন। ইবনু নুমায়রের বর্ণনায় আরো আছেঃ “শিগার এই যে, কোন ব্যাক্তি অপর ব্যাক্তিকে বলে, তোমার কন্যাকে আমার সাথে বিবাহ দাও এবং আমিও আমার কন্যাকে তোমার সাথে বিবাহ দিব। তোমার বোনকে আমার সাথে বিবাহ দাও, আমিও তোমার সাথে আমার বোনকে বিবাহ দিব।” (ই.ফা. ৩৩৩৪, ই.সে. ৩৩৩৩) ‘উবায়দুল্লাহ্ (রহঃ) থেকে এ সূত্র অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সূত্রে ইবনু নুমায়রের অতিরিক্ত বর্ণনা উল্লেখিত হয়নি। (ই.ফা. ৩৩৩৫, ই.সে. ৩৩৩৪) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিগার পদ্ধতির বিবাহ নিষিদ্ধ করেছেন। (ই.ফা. ৩৩৩৬, ই.সে. ৩৩৩৫)

【8】

বিবাহের শর্তাবলী পূর্ণকরণ

‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত যা অবশ্যই পূরণ করতে হবে- তা হচ্ছে সে শর্ত যার মাধ্যমে তোমরা (স্ত্রীদের) লজ্জাস্থান বৈধ করে নিয়েছো।” হাদীসের মূল পাঠে উদ্ধৃত শব্দাবলী আবূ বাক্‌র ও ইবনুল মুসান্নার বর্ণনা থেকে গৃহীত। তবে ইবনুল মুসান্নার বর্ণনায় “শর্তাবলী” উল্লেখ আছে।(ই.ফা. ৩৩৩৭, ই.সে. ৩৩৩৬)

【9】

পূর্ব বিবাহিতার মৌখিক সম্মতি গ্রহণ এবং কুমারীর নীরবতা সম্মতি হিসেবে বিবেচিত হবে

আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পূর্ব বিবাহিতাকে তার সুস্পষ্ট অনুমতি না নিয়ে এবং কুমারীকে তার সম্মতি না নিয়ে বিবাহ দেয়া যাবে না। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! তার (কুমারীর) সম্মতি কিভাবে নেয়া যাবে? তিনি বললেন, সে নীরব থাকলে। (ই.ফা. ৩৩৩৮, ই.সে. ৩৩৩৭) ইয়াহ্ইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) এ সানাদে হিশামের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। হিশাম, শায়বান ও মু’আবিয়াহ ইবনু সাল্লাম-এ হাদীসে তাদের শব্দ অভিন্ন। (ই.ফা. ৩৩৩৯, ই.সে. ৩৩৩৮) আয়িশাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জিজ্ঞেস করলামঃ যে মেয়েকে তার অভিভাবক বিবাহ দেয়, তার নিকট থেকেও সম্মতি নিতে হবে কি না? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ হাঁ, তার সম্মতি নিতে হবে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে পুর্নবার বললাম, সে তো লজ্জায় পড়বে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার নীরবতাই তার সম্মতি। (ই.ফা. ৩৩৪০, ই.সে. ৩৩৩৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পূর্ব বিবাহিতা তার (নিজের বিবাহের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে) নিজের ব্যাপারে অভিভাবকের তুলনায় অধিক হাক্বদার। কুমারীকে তার থেকে তার ব্যাপারে সম্মতি নিতে হবে, তার নীরবতাই তার সম্মতি। (ই.ফা. ৩৩৪১, ই.সে. ৩৩৪০) ইবনু ‘আব্বাস (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পূর্ব বিবাহিতা তার নিজের ব্যাপারে তার অভিভাবকের তুলনায় অধিক কর্তৃত্বসম্পন্ন এবং কুমারীর সম্মতি নিতে হবে। নীরবতাই তার সম্মতি। (ই.ফা. ৩৩৪২, ই.সে. ৩৩৪১) সুফ্ইয়ান (রহঃ) থেকে এ সূত্র অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। এ সূত্রে আছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পূর্ব বিবাহিতা তার নিজের (বিবাহের) ব্যাপারে তার অভিভাবকের তুলনায় অধিক কর্তৃত্বসম্পন্ন এবং পিতা কুমারী কন্যার নিজের ব্যাপারে তার সম্মতি নিবে। নীরবতাই তার সম্মতি। কখনও তিনি বলেছেন, তার নীরবতাই তার স্বীকৃতি। (ই.ফা. ৩৩৪৩, ই.সে. ৩৩৪২)

【10】

পিতা অপ্রাপ্ত বয়স্কা কুমারী কন্যার বিবাহ দিতে পারে

আয়িশাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বিয়ে করেছেন, আমার বয়স তখন ছয় বছর। তিনি আমাকে নিয়ে বাসর ঘরে যান, তখন আমার বয়স নয় বছর। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা হিজরাত করে মাদীনায় পৌঁছার পর আমি একমাস যাবৎ জ্বরে আক্রান্ত ছিলাম এবং আমার মাথার চুল পড়ে গিয়ে কানের কাছে (কিছু) থাকে। (আমার মা) উম্মু রূমান আমার নিকট এলেন, আমি তখন একটি দোলনার উপরে ছিলাম এবং আমার কাছে আমার খেলার সাথীরাও ছিল। তিনি আমাকে উচ্চৈঃস্বরে ডাকলেন, আমি তার নিকট গেলাম। আমি বুঝতে পারিনি যে, তিনি আমাকে নিয়ে কী করবেন। তিনি আমার হাত ধরে আমাকে দরজায় নিয়ে দাঁড় করালেন। আমি তখন বলছিলাম, আহ, আহ। অবশেষে আমার উদ্বেগ দূরীভূত হল। তিনি আমাকে একটি ঘরে নিয়ে গেলেন। সেখানে আনসার মহিলাগণ উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা সকলে আমার কল্যাণ ও রহমাতের জন্য দু‘আ করলেন এবং আমার সৌভাগ্য কামনা করলেন। তিনি (মা) আমাকে তাঁদের নিকট সমর্পণ করলেন। তাঁরা আমার মাথা ধুয়ে দিলেন এবং আমাকে সুসজ্জিত করলেন। আমি কোন কিছুতে ভীত শংকিত হইনি। চাশ্‌তের সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এলেন এবং তাঁরা আমাকে তাঁর নিকট সমর্পণ করলেন। (ই.ফা. ৩৩৪৪, ই.সে. ৩৩৪৩) আয়িশাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমার ছয় বছর বয়সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বিবাহ করেন এবং আমার নয় বছর বয়সে তিনি আমার সঙ্গে বাসর যাপন করেন। (ই.ফা. ৩৩৪৫, ই.সে. ৩৩৪৪) আয়িশাহ্‌ (রাযিঃ) আছে যে, তার সাত বছর[৫১] বয়সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বিবাহ করেন। তাকে নয় বছর বয়সে তাঁর ঘরে বধুবেশে নেয়া হয় এবং তাঁর সঙ্গে তাঁর খেলার পুতুলগুলোও ছিল। তাঁর আঠার বছর বয়সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকাল করেন। (ই.ফা. ৩৩৪৬, ই.সে. ৩৩৪৫) আয়িশাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন যে, তাঁর ছয় বছর বয়সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বিবাহ করেন, তাঁর নয় বছর বয়সে তিনি তাকে নিয়ে বাসর যাপন করেন এবং আঠার বছর বয়সে তিনি ইন্তিকাল করেন। (ই.ফা. ৩৩৪৭, ই.সে. ৩৩৪৬)

【11】

শাও্ওয়াল মাসে বিবাহ করা বা বিবাহ দেয়া মুস্তাহাব এবং এ মাসে স্ত্রীর সাথে মিলনও মুস্তাহাব

‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে শাও্ওয়াল মাসে বিবাহ করেন এবং শাও্ওয়াল মাসে আমার সাথে প্রথম মিলিত হন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন্ স্ত্রী তাঁর নিকট আমার চাইতে অধিক সম্ভোগ্য ছিলেন? ‘আয়িশা (রাঃ) তাঁর বংশের মেয়েদের শাও্ওয়াল মাসে বাসর ঘরে পাঠানো উত্তম মনে করতেন। (ই.ফা. ৩৩৪৮, ই.সে. ৩৩৪৭) সুফ্ইয়ান (রহঃ) অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সূত্রে ‘আয়িশা (রাঃ)-এর কর্মপন্থা উল্লেখিত হয়নি। (ই.ফা. ৩৩৪৯, ই.সে. ৩৩৪৮)

【12】

কোন মহিলাকে বিবাহ করতে চাইলে বিবাহের পূর্বে তার মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় এক নজর দেখে নেয়া উত্তম

আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে তাঁকে বলল যে, সে আনসার সম্প্রদায়ের এক মেয়েকে বিবাহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি কি তাকে একবার দেখেছো? সে বলল, না। তিনি বললেন, যাও! তুমি তাকে এক নযর দেখে নাও। কারণ আনসারদের চোখে কিছুটা ত্রুটি আছে। (ই.ফা. ৩৩৫০, ই.সে. ৩৩৪৯) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এক ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে বলল, আমি জনৈকা আনসারী মহিলা বিবাহ করেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি কি দেখে নিয়েছিলে? কেননা আনসারদের চোখে ত্রুটি থাকে। লোকটি বললো, আমি তাকে দেখে নিয়েছি। তিনি বললেন, কী পরিমাণ বিনিময়ে তুমি তাকে বিবাহ করছো? লোকটি বললো, চার উকিয়ার বিনিময়ে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, চার উকিয়ার বিনিময়ে? মনে হয় তোমরা পাহাড়ের পার্শ্বদেশ থেকে রৌপ্য খুঁড়ে এনে থাক। আমাদের নিকট এমন কিছু নেই যা দিয়ে তোমাকে দান করতে পারি। তবে আমি তোমাকে শীঘ্রই একটি যুদ্ধাভিযানে পাঠিয়ে দিচ্ছি যার লব্ধ গনীমাত থেকে তুমি একাংশ লাভ করতে পারবে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি বানূ ‘আব্‌স-এর বিরুদ্ধে একটি অভিযান দল প্রেরণ করেন যার সাথে তিনি ঐ লোকটিকে পাঠিয়ে দেন। (ই.ফা. ৩৩৫১, ই.সে. ৩৩৫০)

【13】

মাহর-কুরআন শিক্ষা, লোহার আংটি ইত্যাদি বস্তু কম বা বেশি মাহর হতে পারে এবং যার জন্য কষ্টকর না হয় তার জন্য পাঁচশত দিরহাম মাহর দেয়া মুস্তাহব

সাহ্‌ল ইবনু সা‘দ আস্‌ সা‘ইদী (রাযিঃ) তিনি বলেন, জনৈকা মহিলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি নিজেকে আপনার জন্য হিবা করছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে লক্ষ্য করলেন এবং দৃষ্টি উপরের দিকে উঠিয়ে নিচে নামালেন। অতঃপর তিনি তাঁর শির মুবারক নত করলেন। মহিলা যখন বুঝতে পারল যে, তার সম্বন্ধে কোন সিদ্ধান্ত পৌঁছেননি, তখন সে বসে পড়ল। অতঃপর জনৈক সাহাবী দাঁড়িয়ে আরয করল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! যদি আপনার প্রয়োজন না হয় তাহলে তাকে আমার সাথে বিবাহ দিয়ে দিন। তিনি বললেন, তোমার কাছে কি কিছু আছে? সাহাবী বললেন, না, আল্লাহর কসম হে আল্লাহ্‌র রসূল! তিনি বললেন, তুমি বাড়ী যাও দেখ, কোন কিছু পাও কিনা। সাহাবী বাড়ি গিয়ে আবার ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম, আমি বাড়িতে কোন কিছুই পাইনি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ দেখ, লোহার আংটি হলেও (পাও কিনা)। সাহাবী আবার গেল এবং ফিরে এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আল্লাহ্‌র কসম, আমি লোহার আংটিও পাইনি। তবে আমার এ লুঙ্গিটি আছে। (বর্ণনাকারী) সাহ্‌ল (রাঃ) বলেন, চাদরও ছিল না- যাতে অর্ধেক মহিলাটির জন্য হয়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তোমার লুঙ্গি দ্বারা কী করবে? তা যদি তুমি পর তাহলে স্ত্রীর জন্য সেটির কোন অংশ অবশিষ্ট থাকবে না। আর যদি সে তা পরিধান করে তাহলে (তোমার জন্য) সেটির কোন অংশ অবশিষ্ট থাকবে না। এরপর সে ব্যক্তি বসে রইল। অনেকক্ষণ বসার পর উঠে গেল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ফিরে যেতে দেখে ডেকে পাঠালেন। যখন সে এল রসূল্ললাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কুরআনের কোন অংশ তোমার জানা আছে? উত্তরে সে বললঃ অমুক সূরাহ্‌, অমুক সূরাহ্‌ আমার জানা আছে। এভাবে সে সূরাগুলোর সংখ্যা বলে দিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি এগুলো মুখস্থ পাঠ করতে পার? সাহাবী বলল, হাঁ। তিনি বললেন, যাও, তোমাকে এসব সূরার কারণে এ মহিলাকে তোমার অধিকারে দিয়ে দিলাম। এ হল ইবনু আবূ হাযিম-এর বর্ণনা। আর ইয়া‘কূব-এর বর্ণনা শব্দের দিকে দিয়ে এর কাছাকাছি। (ই.ফা. ৩৩৫২, ই.সে. ৩৩৫১) আবূ হাযিম (রহঃ)-এর সূত্রে সাহল ইবনু সা‘দ (রাযিঃ) এ হাদীস বর্ণনা করেন। অবশ্য কেউ কেউ একে অপর থেকে বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন। তবে যায়িদাহ্-এর হাদীসে রয়েছে, “নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি যাও, আমি তোমার সাথে একে বিবাহ দিলাম। তুমি তাকে কুরআন শিক্ষা দাও।” (ই.ফা. ৩৩৫৩, ই.সে. ৩৩৫২) আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিবাহে মাহর কী পরিমাণ ছিল? তিনি বললেন, তাঁর বিবিগণের মাহরের পরিমাণ ছিল বারো উকিয়্যাহ্ ও এক নাশ্। তিনি বললেন, তুমি কি জান এক নাশ্ এর পরিমাণ কতটুকু? আমি বললাম, ‘না’। তিনি বললেন, এক নাশ্ এর পরিমাণ হল আধা উকিয়্যাহ্। সুতরাং মোট হল পাঁচশত দিরহাম। এ ছিল রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণীগণের মাহর। (ই.ফা. ৩৩৫৪, ই.সে. ৩৩৫৩) আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ)-এর কাপড়ে হলদে রঙ দেখে বললেন, একি? তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি খেজুরের আঁটির সমপরিমাণ সোনার বিনিময়ে এক মহিলাকে বিবাহ করেছি। তিনি বললেন, আল্লাহ তোমাকে বারাকাত দান করুন, তুমি ওয়ালীমাহ্‌ কর, যদিও একটি বকরী দ্বারা হয়। (ই.ফা. ৩৩৫৫, ই.সে. ৩৩৫৪) আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) খেজুরের আঁটি পরিমাণ সোনার বিনিময়ে (মুহরানা দিয়ে) বিবাহ করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ “তুমি ওয়ালীমাহ্‌ কর, যদি তা একটি বকরী দ্বারাও হয়।” (ই.ফা. ৩৩৫৬, ই.সে. ৩৩৫৫) আনাস (রাযিঃ) ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) খেজুরের আঁটি পরিমাণ সোনার (মুহরানার) বিনিময়ে এক মহিলাকে বিবাহ করেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ “তুমি ওয়ালীমাহ্‌ কর, যদি একটি বকরী দিয়েও হয়।” (ই.ফা. ৩৩৫৭, ই.সে. ৩৩৫৬) শু‘বাহ্ সূত্র হুমায়দ থেকে উক্ত সানাদে বর্ণনা করেন। তবে ওয়াহ্ব-এর হাদীসে রয়েছে, ‘আবদুর রহমান (রাঃ) বললেনঃ আমি এক মহিলাকে বিবাহ করেছি। (ই.ফা. ৩৩৫৮, ই.সে. ৩৩৫৭) আনাস (রাযিঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার চেহারায় বাসর যাপনের প্রফুল্লতা দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি এক আনসার মহিলাকে বিবাহ করেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তাকে কী পরিমাণ মাহর দিয়েছো? আমি বললাম, এক নাওয়াত (এক খেজুর পরিমাণ স্বর্ণ)। ইসহাক্ব (রহঃ)-এর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেনঃ ‘এক খেজুর পরিমাণ স্বর্ণের’। (ই.ফা. ৩৩৫৯, ই.সে. ৩৩৫৮) আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) ‘আবদুর রহমান (রাঃ) খেজুরের একটি আঁটি পরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে (মুহরানা দিয়ে) এক মহিলাকে বিবাহ করেন। (ই.ফা. ৩৩৬০, ই.সে. ৩৩৫৯) শু’বাহ্ (রহঃ) উক্ত সানাদে বর্ণনা করেন। তবে এতে রয়েছে, তিনি বললেনঃ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ-এর কোন এক সন্তান স্বর্ণের শব্দও বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৩৩৬১, ই.সে. ৩৩৬০)

【14】

স্বীয় ক্রীতদাসীকে আযাদ করে বিবাহ করার ফাযীলাত প্রসঙ্গে

আনাস (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারের যুদ্ধে যান। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা খায়বারের কাছে অন্ধকার থাকতেই ফাজ্‌রের সলাত আদায় করলাম। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আবূ ত্বলহাহ্‌ (রাঃ) সওয়ার হলেন। আমি ছিলাম আবূ ত্বলহাহ (রাঃ)-এর রাদীফ (তাঁর বাহনে তার পশ্চাতে উপবিষ্ট) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারের গলি দিয়ে রওনা দিলেন। এ সময় আমার হাঁটু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উরুদেশ স্পর্শ করছিল এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উরু থেকে লুঙ্গি সরে যাচ্ছিল। আর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উরুর শুভ্রতা দেখছিলাম। যখন তিনি বস্তিতে প্রবেশ করলেন তখন বললেন, আল্লাহু আকবার, খায়বার ধ্বংস হোক। বস্তুত আমরা যখন কোন সম্প্রদায়ের আঙ্গিনায় অবতরণ করি তখন সতর্ককৃতদের প্রভাত হবে কত মন্দ! এ কথা তিনি তিনবার বলেন। বর্ণনাকারী বলেন, ঐ সময় লোকজন তাদের কাজে বের হচ্ছিল। তারা বলতে লাগলো, মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (এসেছেন)। বর্ণনাকারী ‘আবদুল ‘আযীয বলেন, আমাদের কোন কোন উস্তায বলেছেন, ‘পুরো বাহিনী সহ’। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা খায়বার জয় করলাম এবং বন্দীদের একত্রিত করা হল। তখন দিহ্‌ইয়া (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! কয়েদীদের মধ্যে থেকে আমাকে একজন দাসী প্রদান করুন। তিনি বললেনঃযাও, একজন দাসী নিয়ে নাও। তিনি সফিয়্যাহ্‌ বিন্‌ত হুয়াইকে নিয়ে নিলেন। তখন এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, হে আল্লাহর নাবী! আপনি বানূ কুরায়যাহ্‌ ও বানূ নাযীর-এর সর্দার হুয়াইয়ের কন্যা সফিয়্যাকে দিহ্‌ইয়াকে দিয়ে দিয়েছেন। ইনি একমাত্র আপনারই উপযুক্ত হতে পারে। তিনি বললেন তাকে সফিয়্যাহ্‌সহ ডাক। তারপর দিহ্‌ইয়া (রাঃ) সফিয়্যাহ্‌সহ উপস্থিত হলেন। যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন, তখন তিনি দিহ্‌ইয়া, (রাঃ)-কে বললেন, তুমি সফিয়্যাহ্‌ ব্যতীত কয়েদীদের মধ্য থেকে অন্য কোন দাসী নিয়ে নাও। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি সফিয়্যাকে আযাদ করলেন এবং তাঁকে বিবাহ করলেন। আনাসকে লক্ষ্য করে সাবিত (রাঃ) বললেন, হে আবূ হামযাহ্‌! তিনি তাঁকে কী মাহর দিলেন? তিনি বললেন, তিনি তাঁর সত্তাকে মুক্তি দান করেন এবং এর বিনিময়ে তাঁকে বিবাহ করেন। তারপর তিনি যখন (ফেরার) পথে ছিলেন তখন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) সফিয়্যাহ্‌ (রাঃ)-কে তাঁর জন্য প্রস্তুত করেন এবং রাতে তাঁর কাছে পাঠিয়ে দেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সঙ্গে বাসর উদযাপনের পর ভোর হলে তিনি ঘোষণা করলেন, যার নিকট যা কিছু আছে তা নিয়ে যেন উপস্থিত হয়। আর তিনি চামড়ার বড় দস্তরখান বিছালেন। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে কেউ পানীয়, কেউ খেজুর ও কেউ ঘি নিয়ে হাযির হল। তারপর এসব মিলিয়ে তারা হায়স তৈরী করেন। আর তাই ছিল রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওয়ালীমাহ্‌। (ই.ফা. ৩৩৬২, ই.সে. ৩৩৬১) আনাস (রাযিঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি সফিয়্যাকে আযাদ করলেন এবং তাঁর আযাদ করাকে মাহর ধার্য করলেন। অপর এক হাদীসে মু’আয তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, “নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফিয়্যাকে বিবাহ করেন এবং তাঁর আযাদ করাটাই ছিল মাহর।”(ই.ফা. ৩৩৬৩, ই.সে. ৩৩৬২) আবূ মূসা (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে তার দাসী আযাদ করে তাকে বিয়ে করে, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সাওয়াব। (ই.ফা. ৩৩৬৪, ই.সে. ৩৩৬৩) আনাস (রাযিঃ) তিনি বলেন, খায়বারের যুদ্ধে আমি আবূ ত্বল্‌হাহ্‌ (রাঃ)-এর পিছনে সওয়ার ছিলাম। আমার পা তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কদম মুবারক স্পর্শ করছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা সূর্যোদয়ের সময় খায়বারবাসীদের নিকট পৌছলাম। তারা তখন চতুষ্পদ জন্তু, কোদাল, বস্তু ও রশি নিয়ে বের হচ্ছিল। তারা বলতে লাগলো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পঞ্চবাহিনী (পূর্ণ বাহিনী) নিয়ে এসে গেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃখায়বার ধ্বংস হোক, আমরা যখন কোন শত্রু দলের আঙ্গিনায় অবতরণ করি তখন সতর্কীকৃত লোকদের প্রভাত হয় মন্দ। বর্ণনাকারী বলেন, (ঐ অভিযানে) আল্লাহ তাদের পরাজিত করেছেন। দিহ্‌ইয়া (রাঃ)-এর ভাগে পড়ে সুন্দরী দাসী। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাতজন দাসের বিনিময়ে সে দাসীকে খরিদ করে নেন। অত:পর তিনি তাকে উম্মু সুলায়ম (রাঃ)-এর হাওয়ালা করেন যাতে তিনি তাঁকে ঠিকঠাক করে প্রস্তুত করে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় রাবী এ কথাও বলেছেন, সে যেন তাঁর ঘরে ‘ইদ্দাত পূর্ণ করে। তিনি ছিলেন হুয়াইর কন্যা সফিয়্যাহ্‌। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুর, পানীয় ও ঘি দিয়ে তার ওয়ালীমাহ্‌ করলেন। এ উদ্দেশে জমিনের কিছু অংশ গর্ত আকারের করে তাতে চামড়ার বড় দস্তরখান বিছিয়ে দেয়া হয়। এতেই পানীয় ও ঘি রাখা হয়। সকলেই তা তৃপ্তির সাথে আহার করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা বলতে লাগল: আমরা জানি না, তিনি তাকে বিবাহ করলেন, না উম্মু ওয়ালাদ (দাসী) রূপে গ্রহণ করলেন। আবার কয়েকজন বলতে লাগল, যদি তিনি তাঁর পর্দার ব্যবস্থা না করেন তবে তিনি তাঁর উম্মু ওয়ালাদ। তিনি যখন বাহনে সওয়ার হওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন তাঁর জন্য পর্দার ব্যবস্থা করলেন। এরপর সফিয়্যাহ্‌ (রাঃ) উটের পিছনের দিকে বসলেন। তখন লোকেরা জানতে পারল যে, তিনি তাঁকে বিবাহ করেছেন। সাহাবীগণ যখন মাদীনার নিকটবর্তী হলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন দ্রুত অগ্রসর হতে থাকলেন এবং আমরাও দ্রুত চললাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আদবা’ নামক উষ্ট্রী হোঁচট খেলে তিনি উটের পিঠ থেকে জমিনে পড়ে গেল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমিনে পড়ে যান এবং সফিয়্যাহ্‌ (রাঃ)ও পড়ে যান। তিনি দাঁড়িয়ে সফিয়্যাহ্‌ (রাঃ)-কে পর্দার দ্বারা আবৃত করে দেন। এ দেখে কতিপয় মহিলা বলতে লাগল, ইয়াহুদী মহিলাকে আল্লাহ তাঁর রহমাত থেকে বঞ্চিত করুন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হে আবূ হামযাহ্‌! সত্যিই কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটনী থেকে জমিনে পড়ে গিয়েছিলেন? তিনি শপথ করে বললেন, হাঁ। (ই.ফা. ৩৩৬৫, ই.সে. ৩৩৬৪) আনাস (রাযিঃ) আমি নিজে যায়নাব (রাঃ)-এর ওয়ালীমাহ্ অনুষ্ঠানে ছিলাম। সে অনুষ্ঠানে র সূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের তৃপ্তি সহকারে রুটি ও গোশত আহার করিয়ে ছিলেন। সে ওয়ালীমার দা‘ওয়াত দেয়ার জন্য তিনি আমাকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি যখন ওয়ালীমার কাজ শেষ করে উঠলেন আমিও তাঁর পিছনে চললাম। তখনও দু’জন লোক ঘরে কথাবার্তায় ব্যস্ত রইল, তারা বের হল না। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীগনের নিকট গেলেন এবং প্রত্যেককেই ‘আস্সালামু আলায়কুম’ বলে সালাম জানিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে গৃহবাসী! তোমরা কেমন আছো? উত্তরে প্রত্যেকেই বলেন, “আমরা ভাল আছি, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি আপনার নব পরিণীতাকে কেমন পেয়েছেন? বললেন, ভালই। তিনি যখন এ কাজ শেষ করে ফিরে এলেন আমিও তাঁর সঙ্গে ফিরে এলাম। যখন তিনি দরজার কাছে এলেন- দেখলেন যে, সে দু’জন আলোচনায় রত আছে। তারা তাঁকে ফিরে যেতে দেখে উঠে চলে গেল। আনাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমার মনে নেই, ঘর থেকে ঐ দু’জন লোকের বের হয়ে যাওয়ার কথা আমি তাঁকে জানিয়ে ছিলাম, না এ ব্যাপারে তাঁর উপর ওয়াহী নাযিল হয়েছিল। তিনি আবার ফিরে এলেন এবং আমিও তার সঙ্গে ফিরে এলাম। যখন তিনি দরজার চৌকাঠে পা রাখলেন তখন তিনি আমার ও তাঁর মাঝে পর্দা টেনে দিলেন, আর আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করেন- “তোমরা নাবীর ঘরে তাঁর বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করবে না।” (ই.ফা. ৩৩৬৫, ই.সে. ৩৩৬৪) আনাস (রাযিঃ) তিনি বলেন, সফিয়্যাহ্‌ (রাঃ) দিহ্‌ইয়া (রাঃ)-এর ভাগে পড়েন। লোকেরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তাঁর প্রশংসা করে বলতে লাগলো, আমরা কয়েদীদের মধ্যে তাঁর কোন জুড়ি দেখিনি। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন তিনি দিহ্‌ইয়াকে ডেকে পাঠালেন এবং সফিয়্যার বদলে তাকে যা তিনি চাইলেন তা দিয়ে দিলেন। অত:পর তিনি সফিয়্যাকে আমার মা (উম্মু সুলায়ম)-এর কাছে দিয়ে বললেন, তুমি তাকে (সাজিয়ে) ঠিকঠাক করে দাও। আনাস (রাঃ) বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার থেকে বের হয়ে পড়লেন। যখন ছেড়ে আসলেন তখন অবতরণ করলেন। অত:পর সফিয়্যার উপর একটি তাঁবু খাটিয়ে দিলেন। ভোরে উঠে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যার কাছে উদ্বৃত্ত খাদ্য আছে সে যেন তা আমার কাছে নিয়ে আসে। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন লোকজন তার উদ্বৃত্ত খেজুর এবং উদ্বৃত্ত ছাতু আনতে লাগল। এমনকি এগুলোর একটি স্তুপ পরিমাণ জমা করে হায়স তৈরী করল। অত:পর সকলে হায়স থেকে খেতে লাগল এবং বৃষ্টির পানির হাওয থেকে তারা পানি পান করতে লাগল। বর্ণনাকারী (সাবিত) বলেন, আনাস (রাঃ) বলেন, তাই ছিল সফিয়্যাহ্‌ (রাঃ)-এর ওয়ালীমাহ্‌। তিনি বলেন, অত:পর আমরা রওনা দিলাম এবং যখন মাদীনার প্রাচীরগুলো দেখতে পেলাম তখন মাদীনার জন্য আমাদের মন উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। আমরা আমাদের সওয়ারীগুলোকে দ্রুত চালনা করলাম এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সওয়ারীকে দ্রুত চালালেন। আনাস (রাঃ) বলেন, সফিয়্যাহ্‌ তাঁর পিছনে তাঁর সাথে সওয়ার করে গিয়েছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উটনী হোঁচট খায়। ফলে তিনি ও সফিয়্যাহ্‌ (রাঃ) পড়ে যান। বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা কেউ তাঁর ও সফিয়্যার দিকে দৃষ্টিপাত করেননি। ইতোমধ্যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে তাঁকে আবৃত করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমরা মাদীনায় প্রবেশ করলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অপরাপর সহধর্মিণীগণ বের হয়ে সফিয়্যাকে একজন আর একজনকে দেখাতে লাগলেন এবং তাঁর মাটিতে পড়ে যাওয়ার কারণে আফসোস করতে লাগলেন।(ই.ফা. ৩৩৬৬, ই.সে. ৩৩৬৫)

【15】

যায়নাব বিনতু জাহ্‌শকে বিবাহ করা, পর্দার হুমুম নাযিল হওয়া এবং বিবাহের ওয়ালীমাহ্‌ সাবিত হওয়া

আনাস (রাযিঃ) তিনি বলেন, যখন যায়নাব (রাঃ)-এর ‘ইদ্দাত পূর্ণ হল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়দ (রাঃ)-কে বললেন, তুমি যায়নাবের নিকট আমার কথা উল্লেখ কর। আনাস (রাঃ) বলেন, যায়দ (রাঃ) রওনা হলেন এবং তাঁর নিকট গেলেন। তখন তিনি আটা খামির করছিলেন। যায়দ (রাঃ) বলেন, আমি যখন তাঁকে দেখলাম তাঁর মর্যাদা আমার অন্তরে এমনভাবে জাগ্রত হল যে, আমি তাঁর প্রতি তাকাতে পারলাম না। কেননা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে স্মরণ করেছেন। তাই আমি তাঁর দিকে পিঠ ফিরে দাঁড়ালাম এবং পিছনের দিকে সরে পড়লাম। এরপর বললাম, হে যায়নাব! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে স্মরণ করে আমাকে পাঠিয়েছেন। তিনি বললেন, আমি এ সম্পর্কে কিছুই করব না যে পর্যন্ত না আমি আমার রবের কাছ থেকে নির্দেশ লাভ না করি। এরপর তিনি তার সলাতের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন। এদিকে কুরআন নাযিল হল এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে যায়নাবের বিনা অনুমতিতেই তাঁর ঘরে প্রবেশ করলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমরা দেখেছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (যায়নাবের সে বিবাহ উপলক্ষে) দুপুর বেলায় আমাদের রুটি গোশ্‌ত খাইয়েছেন। খাওয়া-দাওয়ার পর লোকেরা বের হয়ে গেল কিন্তু কয়েকজন লোক খাওয়ার পর আলাপে মশগুল থাকল। এ সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে পড়লেন, আমিও তাঁর অনুসরণ করলাম। তিনি তাঁর বিবিগণের ঘরে ঘরে উপস্থিত হয়ে তাঁদের সালাম করতে লাগলেন। আর বিবিগণ তাঁকে জিজ্ঞেস করছিলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার এ স্ত্রীকে কেমন পেয়েছেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমার মনে নেই, (আলাপরত) সে লোকদের বের হয়ে যাওয়ার কথা আমিই তাঁকে জানিয়ে ছিলাম, না তিনিই আমাকে জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, অত:পর তিনি চললেন এবং সে ঘরে প্রবেশ করলেন। আমিও তাঁর সঙ্গে প্রবেশ করতে যাচ্ছিলাম। তিনি আমার ও তাঁর মধ্যে পর্দা টেনে দিলেন। আর পর্দার বিধান নাযিল হল। আনাস (রাঃ) বলেন, লোকদের নাসীহাত দিলেন দেয়ার যা ছিল। ইবনু রাফি’ তার হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করতে গিয়ে এ আয়াত উল্লেখ করেন: (অর্থ) “তোমাদের অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নবী গৃহে প্রবেশ করবে না... কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না।”- (সূরাহ্‌ আল আহযাব ৩৩:৫৩)।” (ই.ফা. ৩৩৬৭, ই.সে. ৩৩৬৬) আনাস (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কোন মহিলার জন্য- আবূ কামিল বলেন, তাঁর কোন স্ত্রীর জন্য- সেরূপ ওয়ালীমাহ করতে দেখিনি যেমন ওয়ালীমাহ করেছেন যায়নাবের জন্য। তার জন্য তিনি একটি বকরী যাবাহ করেছেন। (ই.ফা. ৩৩৬৮, ই.সে. ৩৩৬৭) আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) তিনি বলেন, যায়নাব (রাঃ)-এর জন্য রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এত অধিক পরিমাণ অথবা উত্তমভাবে ওয়ালীমাহ্‌ করেছিলেন, যা তিনি তাঁর সহধর্মিণীদের কারো জন্য করেননি। সাবিত বুনানী জিজ্ঞেস করেন, তিনি কী দিয়ে ওয়ালীমাহ্‌ করেছিলেন? তিনি (আনাস রাযিঃ) বললেন, সবাইকে তিনি রুটি ও গোশ্‌ত খাওয়ালেন। এমনকি তারা উদ্বৃত্ত রেখে গেল। (ই.ফা. ৩৩৬৯, ই.সে. ৩৩৬৮) আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন যায়নাব বিনতু জাহ্‌শ (রাঃ)-কে বিবাহ করেন তখন তিনি লোকদের দা’ওয়াত করেন। তারা খাওয়া-দাওয়া করে বসে কথাবার্তা বলতে লাগল। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেন দাঁড়াতে উদ্যত হলেন তবুও তারা উঠল না। এরূপ দেখে তিনি উঠে গেলেন। তারা উঠে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে যারা উঠবার তারা উঠে গেল। ‘আসিম ও ইবনু ‘আবদুল আ’লা (রহঃ)-এর বর্ণনায় অতিরিক্ত রয়েছে- আনাস (রাঃ) বলেন, কিন্তু তিনজন লোক ঘরে বসে রইল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘবে প্রবেশ করার জন্য এসে দেখতে পান যে, কয়েকজন লোক বসে আছে। এরপর তারাও উঠে চলে গেল। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি এসে তাদের চলে যাওয়ার সংবাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিলাম। আনাস (রাঃ) বলেন, তিনি এসে প্রবেশ করলেন। আমিও তাঁর সঙ্গে প্রবেশ করতে অগ্রসর হলাম। এ সময় তিনি আমার ও তাঁর মাঝখানে পর্দা ঝুলিয়ে দিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন: “তোমাদের অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে নাবীগৃহে প্রবেশ করবে না।... -আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা গুরুতর অপরাধ”। (ই.ফা. ৩৩৭০, ই.সে. ৩৩৬৯) আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমি পর্দার হুকুম সংক্রান্ত ঘটনা সম্পর্কে সবার চাইতে বেশি অবগত। এ ব্যাপারে উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়নাব বিনতু জাহ্‌শের স্বামী হন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বিবাহ করেন মাদীনায়। এ উপলক্ষে তিনি দ্বিপ্রহরের সময় খাওয়ার জন্য লোকদের দা’ওয়াত দেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসলেন এবং তারা তাঁর সঙ্গে বসল। লোকদের যারা উঠে যাওয়ার উঠে গেল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠলেন এবং রওনা হলেন। আমিও তাঁর সঙ্গে চলতে থাকলাম। তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর হুজরায় পৌঁছলেন। যখন তিনি ধারণা করলেন যে, তারা (উপবিষ্ট লোকজন) বেরিয়ে গেছে তখন তিনি ফিরে এলেন এবং আমিও তাঁর সঙ্গে ফিরে এলাম। দেখা গেল, তখন তারা তাদের জায়গায় বসা আছে। তখন তিনি ফিরে গেলেন এবং আমিও তাঁর সঙ্গে দ্বিতীয়বার ফিরে গেলাম। তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর হুজরায় পৌঁছলেন। আবার তিনি যায়নাবের ঘরের দিকে ফিরলেন। দেখা গেল, লোকেরা চলে গেছে। তখন তিনি আমার ও তাঁর মাঝখানে পর্দা টেনে দিলেন। আর পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হয়। (ই.ফা. ৩৩৭১, ই.সে. ৩৩৭০) আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (যায়নাব বিনতু জাহ্‌শকে) বিবাহ করেন এবং তার সহধর্মিণীর কাছে গেলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমার মা উম্মু সুলায়ম (রাঃ) হায়স (হালুয়া) তৈরী করেছিলেন এবং তা একখানি ছোট পাত্রে রেখে আমাকে বললেন, হে আনাস! এটা রসূলুল্লাহ এর কাছে নিয়ে যাও এবং তাঁকে বল, এটা আমার মা আপনার খিদমাতে পাঠিয়েছেন এবং আপনাকে সালাম পৌছিয়েছেন। (আরও বলো যে) তিনি বলেছেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! এ সামান্য (হায়স) আপনার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে (দেয়া হল)। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি হায়স নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলাম এবং বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার মা আপনাকে সালাম দিয়েছেন এবং বলেছেনঃ এ সামান্য (হায়স) আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে দেয়া হল। তিনি বললেন, এটা রাখ। অত:পর বললেনঃতুমি যাও, অমুক অমুক অমুককে দা’ওয়াত দাও এবং সেসব লোককেও যাদের সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে। এ বলে, তিনি লোকদের নাম বললেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি তখন বর্ণিত লোকদের দা’ওয়াত দিলাম এবং তাদেরও যাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। সাবিত (র:) বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, (আমন্ত্রিত লোকদের) সংখ্যা কত ছিল? তিনি বললেন, প্রায় তিনশত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, হে আনাস! (হায়সের) পাত্রটি নিয়ে এসো। আনাস (রাঃ) বলেন, দা’ওয়াতপ্রাপ্ত লোকজন এসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরে ও তাঁর চতুষ্পার্শ্বে ভীড় করলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন- তোমরা দশ দশ জন করে একত্রিত হয়ে প্রত্যেকই পাত্র থেকে নিজের সামনের স্থান থেকে খাদ্য গ্রহণ কর। আনাস (রাঃ) বললেন, সকলেই খেয়ে তৃপ্ত হলেন। তিনি বলেন, একদল গেল আরেক দল প্রবেশ করল। এভাবে সকলে খাবার কাজ সেরে নিল। অত:পর তিনি আমাকে বললেন, হে আনাস! (হায়সের পাত্র) উঠাও। তিনি বলেন, এরপর আমি পাত্রটি তুলে নিলাম। পাত্রটি রাখার সময় এতে খাদ্য বেশি ছিল কিনা সেটি উঠাবার সময় তা আমি বুঝতে পারিনি। আনাস (রাঃ) বলেন, তাদের কিছু লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরে বসে কথাবার্তা বলতে লাগল। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সেখানে) বসা ছিলেন এবং তাঁর সহধর্মিণী (যায়নাব) দেয়ালমুখী হয়ে পিছনে ফিরে রইলেন। তাদের উপস্থিতি তাঁর কাছে কষ্টকর মনে হল। অত:পর তিনি তাঁর অন্যান্য বিবিদের কাছে বেরিয়ে গেলেন এবং কিছুক্ষণ পর ফিরে এলেন। তাঁরা যখন দেখল যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে এসেছেন, তারা বুঝতে পারল যে, তাদের এ কাজ (আলাপচারিতা) তাঁর (সাঃ-এর) জন্য কষ্টকর হয়েছে। আনাস (রাঃ) বললেন, তখন তারা তাড়াতাড়ি দরজার দিকে এগিয়ে গেল এবং সবাই বেরিয়ে গেল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এলেন এবং পর্দা টেনে দিলেন এবং পর্দার ভিতরে প্রবেশ করলেন। আমি ঘরে বসে রইলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি আমার কাছে ফিরে এলেন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে এসে এ আয়াতগুলো লোকদের কাছে পাঠ করে শোনালেন- (অর্থ) “হে মুমিনগণ! তোমাদের অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা আহার্য প্রস্তুতের জন্য অপেক্ষা না করে আহার গ্রহণের জন্য নাবীর গৃহে প্রবশ করবে না, তবে তোমাদের আহ্বান করলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং আহারের পর তোমরা চলে যাবে এবং কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়বে না। কারণ তোমাদের এ আচরণ নাবীকে কষ্ট দেয়” ... আয়াতের শেষ পর্যন্ত (সূরাহ্‌ আল আহযাব ৩৩: ৫৩) রাবী জা’দ (রহঃ) বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন, আমি লোকদের কাছে হাদীস বর্ণনা করছিলাম, এ আয়াতের প্রতি অনুগত হওয়ার জন্যে। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিবিগণকে পর্দার আড়ালে নেয়া হল। (ই.ফা. ৩৩৭২, ই.সে. ৩৩৭১) আনাস (রাযিঃ) তিনি বলেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যায়নাবকে বিবাহ করলেন তখন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) পাথরের একটি পাত্রে তাঁর জন্য হায়স পাঠালেন। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতুমি যাও, মুসলিমদের মধ্যে যার সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হয় তাকে আমার পক্ষ থেকে দা’ওয়াত দাও। অত:পর যার সঙ্গে সাক্ষাৎ হল আমি তাকে দা’ওয়াত দিলাম। তারা তাঁর কাছে আসতে শুরু করল এবং খেয়ে চলে যেতে লাগল। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত খাদ্যের উপর রাখলেন এবং তাতে দু’আ পড়লেন। এতে আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় তিনি যা পাঠ করার তা পড়লেন। যারই সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে তাকেই দা’ওয়াত দিতে বাদ দেইনি। সকলেই খেল এবং তৃপ্ত হল। তারা বেরিয়ে গেল কিন্তু তাদের একদল রয়ে গেল। তারা তাঁর সেখানে দীর্ঘালাপে লিপ্ত রইল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের কিছু বলতে লজ্জাবোধ করছিলেন। তাই তিনি নিজেই বেরিয়ে গেলেন এবং তাদের ঘরে রেখে গেলেন। তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত নাযিল করেন- (অর্থ) “হে মু’মিনগণ! তোমাদের অনুমতি দেয়া না হলে আহার্য প্রস্তুতের জন্য অপেক্ষা না করে আহার গ্রহণের জন্য তোমরা নবী গৃহে প্রবেশ করবে না।” ক্বাতাদাহ্‌ (রহঃ) বলেন, তোমরা আহার্য প্রস্তুতির সময়ের যদি অপেক্ষা না কর তবে তোমাদের আহ্বান করলে তোমরা প্রবেশ করবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র”- (সূরাহ্‌ আল আহ্‌যাব ৩৩:৫৩)। (ই.ফা. ৩৩৭৩, ই.সে. ৩৩৭২)

【16】

দা‘ওয়াতে সাড়া দেয়ার নির্দেশ

ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যখন তোমাদের কাউকে ওয়ালীমার দা’ওয়াত দেয়া হয়, সে যেন ঐ দা’ওয়াতে সাড়া দেয়। (ই.ফা. ৩৩৭৪, ই.সে. ৩৩৭৩) ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যখন তোমাদের কাউকে ওয়ালীমার দা’ওয়াত দেয়া হয়, সে যেন তা কবুল করে। (রাবী) খালিদ (রহঃ) বলেন, ‘উবায়দুল্লাহ্‌ (রহঃ) একে বিবাহের ওয়ালীমাহ্‌ বলে গ্রহণ করেছেন। (ই.ফা. ৩৩৭৫, ই.সে. ৩৩৭৪) ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমাদের কাউকে বিবাহের ওয়ালীমার দা’ওয়াত দেয়া হলে সে যেন তা কবূল করে।(ই.ফা. ৩৩৭৬, ই.সে. ৩৩৭৫) ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কাউকে দা’ওয়াত দেয়া হলে তাতে সাড়া দিবে। (ই.ফা. ৩৩৭৭, ই.সে. ৩৩৭৬) ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) তিনি বলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যখন তোমাদের কেউ তার ভাইকে দা’ওয়াত দেয় সে যেন তার দা’ওয়াতে সাড়া দেয়, বিবাহের অনুষ্ঠানই হোক বা সে রকম (অন্য কোন অনুষ্ঠান)। (ই.ফা. ৩৩৭৮, ই.সে. ৩৩৭৭) ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যদি কাউকে কোন বিবাহ অনুষ্ঠানে অথবা এ ধরণের অন্য কোন অনুষ্ঠানে দা’ওয়াত দেয়া হয়, সে যেন সাড়া দেয়। (ই.ফা. ৩৩৭৯, ই.সে. ৩৩৭৮) আবদুল্লাহ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন তোমাদেরকে দা’ওয়াত দেয়া হয় তখন তোমরা দা’ওয়াতে আসবে।” (ই.ফা. ৩৩৮০, ই.সে. ৩৩৭৯) ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা এ দা’ওয়াতে সাড়া দিবে যখন তোমাদেরকে তার জন্য দা’ওয়াত দেয়া হয়। রাবী বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বিবাহের দা’ওয়াতে বা বিয়ে ছাড়া অন্য যে কোন দা’ওয়াতে আসতেন। এমনকি তিনি সায়িম অবস্থায়ও (দা’ওয়াতে আসতেন)। (ই.ফা. ৩৩৮১, ই.সে. ৩৩৮০) ইবনু ‘উমার (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : যখন তোমাদের বকরীর পায়া খাওয়ার দা’ওয়াত দেয়া হয় তখন তোমরা তাতে সাড়া দিও। (ই.ফা. ৩৩৮২, ই.সে. ৩৩৮১) জাবির (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কাউকে খাওয়ার জন্য দা’ওয়াত দেয়া হয়, তখন সে যেন দা’ওয়াতে সাড়া দেয়। অতঃপর ইচ্ছা করলে আহার করবে, না হয় না করবে। ইবনুল মুসান্না (রহঃ) তার বর্ণনায় ‘পানাহারের দিকে’ কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৩৩৮৩, ই.সে. ৩৩৮২) আবূ যুবায়র (রহঃ) এ সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা.৩৩৮৪, ই.সে.৩৩৮৩) আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কাউকে দা’ওয়াত দেয়া হয় সে যেন তাতে সাড়া দেয়। যদি সে সায়িম হয় তাহলে সে (ওখানে গিয়ে) দু’আ- সলাত রত থাকবে। আর যদি সায়িম না হয় তাহলে সে আহার করবে। (ই.ফা. ৩৩৮৫, ই.সে. ৩৩৮৪) আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলতেন, সে ওয়ালীমার খাদ্য কতই না মন্দ যা খাওয়ার জন্য কেবল ধনীদের দা’ওয়াত দেয়া হয়, আর গরীবদের তা থেকে বঞ্চিত করা হয় বলে তারা তাতে যোগ দিতে পারে না। যে ব্যক্তি দা’ওয়াত সাড়া দেয় না সে আল্লাহ্ তা’আলা ও তাঁর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাফরমানী করল। (ই.ফা. ৩৩৮৬, ই.সে. ৩৩৮৫) ইবনু আবূ ‘উমার (রহঃ) তিনি বলেন, সুফ্ইয়ান (রহঃ) বলেছেন, আমি যুহরী (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম- হে আবূ বকর! “এই যে হাদীস- ‘সব চাইতে মন্দ খাদ্য ধনীদের খাদ্য’- এ সম্পর্কে আপনার কী মত? শুনে তিনি হাসলেন এবং বললেন, না, ধনীদের খাদ্য সব চাইতে মন্দ খাদ্য নয়। সুফ্ইয়ান (রহঃ) বললেন, আমার পিতা যেহেতু ধনী লোক ছিলেন এজন্য হাদীসখানি আমাকে ঘাবড়িয়ে তুলেছিল, যখন আমি তা শুনতে পেলাম। তাই আমি এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম যুহরী (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করি। (ইমাম) যুহরী (রহঃ) উত্তর দিলেন, আমার নিকট ‘আবদুর রহমান আল আ’রাজ (রহঃ) হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, ওয়ালীমার খাদ্য সবচাইতে নিকৃষ্ট খাদ্য। অতঃপর তিনি মালিক (রহঃ)-এর হাদীসের ন্যায় হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৩৮৭, ই.সে. ৩৩৮৬) আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, নিকৃষ্ট খাদ্য হলো ওয়ালীমার খাদ্য। মালিক এর হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৩৩৮৮, ই.সে. ৩৩৮৭) আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ)-এর সুত্র অনুরূপ বর্ণিত। (ই.ফা. ৩৩৮৯, ই.সে. ৩৩৮৮) আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিকৃষ্টতম খাদ্য হল ওয়ালীমার খাদ্য যেখানে আগমনকারীদের বাধা দেয়া হয়। আর অনিচ্ছুকদের দা’ওয়াত দেয়া হয়। যে ব্যক্তি দা’ওয়াতে সাড়া দেয় না সে আল্লাহ্ এবং তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাফরমানী করল। (ই.ফা. ৩৩৯০, ই.সে. ৩৩৮৯)

【17】

ত্বলাকপ্রাপ্তা স্ত্রী হালাল হবে না ত্বলাকদাতার জন্য, যতক্ষণ না সে তাকে ছাড়া অন্য স্বামীকে বিবাহ করে এবং সে তার সাথে যৌন সঙ্গম করে এবং অতঃপর তাকে ত্বলাক্ব দেয় এবং তার ‘ইদ্দাত শেষ হয়

আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রিফা’আহ্-এর স্ত্রী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বলল, আমি রিফা’আর নিকট ছিলাম। সে আমাকে ত্বলাক্ব দিয়েছে পূর্ণ ত্বলাক্ব। অতঃপর আমি ‘আবদুর রহমান ইবনু যুবায়রকে বিবাহ করি। তার কাছে রয়েছে কাপড়ের ঝালরের মত। এতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হাসি হাসলেন এবং বললেন, তুমি কি রিফা’আর নিকট ফিরে যেতে চাও? না, (তা হয় না) যে পর্যন্ত না তুমি তার স্বাদ গ্রহন করবে এবং সে তোমার স্বাদ গ্রহন করবে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আবূ বকর (রাঃ) ছিলেন তার কাছে এবং খালিদ ইবনু সা’ঈদ (রাঃ) ছিলেন দরজায়। তিনি (প্রবেশের) অনুমতির অপেক্ষা করছিলেন। তিনি ডাক দিয়ে বললেন, হে আবূ বকর! আপনি কি শুনেন না এ মহিলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উচ্চৈঃস্বরে কী কথা বলছে। (ই.ফা. ৩৩৯১, ই.সে. ৩৩৯০) ‘উরওয়াহ্ ইবনু যুবাযর (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী ‘আয়িশা (রাঃ) তাঁকে সংবাদ দিয়েছেন যে, রিফা’আহ্ আল কুয়াযী (রাঃ) তার স্ত্রীকে ত্বলাক্ব দেয় এবং সে তাকে পুরাপুরি ত্বলাক্ব দিয়ে দেয়। অতঃপর সে স্ত্রী লোকটি ‘আবদুর রহমান ইবনু যুবায়র (রাঃ)-কে বিবাহ করে। এরপর সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! সে ছিল রিফা’আর অধীনে। সে তাকে পুরোপুরি তিন দিন ত্বলাক্ব দেয়। অতঃপর সে ‘আবদুর রহমান ইবনু যুবায়র (রাঃ)-কে বিবাহ করে। আল্লাহ্‌র কসম, তার সাথে তো রয়েছে কাপড়ের ঝালরের মতো। এ বলে, মহিলা তার উড়নার আঁচল ধরে দেখাল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেসে দিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি সম্ভবত রিফা’আর নিকট ফিরে যেতে চাও? না তা হয় না, যতক্ষণ না সে তোমার স্বাদ করে এবং তুমি তার স্বাদ কর। আবূ বাক্র (রাঃ) তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে বসা ছিলেন। আর খালিদ ইবনু সা’ঈদ ইবনু ‘আস (রাঃ) ছিলেন হুজরার দরজায় বসা। তাকে (ঘরে প্রবেশ করার) অনুমতি দেয়া হয়নি। রাবী বলেন, তখন খালিদ (রাঃ) আবূ বাক্র (রাঃ)-কে ডেকে বললেন, আপনি কেন মহিলাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তার এ সব কথা প্রকাশ করা থেকে বারণ করলেন না। (ই.ফা. ৩৩৯২, ই.সে. ৩৩৯১) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) রিফা’আহ্ আল কুরাযী তার স্ত্রী ত্বলাক্ব দেয়। এরপর সে ‘আবদুর রহমান ইবনু যুবায়রকে বিয়ে করে। অতঃপর সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! রিফা’আহ্ তাকে পুরোপুরি তিন ত্বলাক্ব দিয়ে দেয়। এরপর ইউনুস বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৩৩৯৩, ই.সে. ৩৩৯২) আয়িশাহ্ (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এক মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় যাকে একজন বিবাহ করে, অতঃপর সে তাকে ত্বলাক্ব দেয়। এরপর সে মহিলা আরেকজনকে বিয়ে করে। কিন্তু সে তার সাথে সঙ্গমের আগেই ত্বলাক্ব দেয়। এমতাবস্থায় উক্ত মহিলা প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে কি? তিনি বললেনঃ না, যে পর্যন্ত না সে ঐ স্ত্রীর স্বাদ গ্রহন করে। (ই.ফা. ৩৩৯৪, ই.সে. ৩৩৯৩) হিশাম (রাযিঃ) আবূ বকর ইবনু আবূ শায়বাহ্ ও আবূ কুরায়ব (রহিমাহুমাল্লাহ) ..... আবূ মু’আবিয়াহ্ সহ সকলেই হিশাম (রাঃ) থেকে উক্ত সানাদে হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৩৯৫, ই.সে. ৩৩৯৪) আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন ত্বলাক্ব দেয়। অতঃপর অন্য একজন তাকে বিয়ে করে। এরপর সে তাকে সঙ্গমের আগেই ত্বলাক্ব দিয়ে দেয়। পরে প্রথম স্বামী তাকে বিয়ে করতে চায়- এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হলে, তিনি বললেনঃ না, তা হবে না যে পর্যন্ত না তারা একে অন্যের স্বাদ গ্রহন করবে, যেভাবে প্রথম স্বামী তার স্বাদ গ্রহন করেছিল। (ই.ফা. ৩৩৯৬, ই.সে. ৩৩৯৫) ‘উবায়দুল্লাহ্ (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহিমাহুমাল্লাহ) ..... ইয়াহ্ইয়া অর্থাৎ ইবনু সা’ঈদ সহ সকলেই ‘উবায়দুল্লাহ্ (রহঃ) থেকে উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। ‘উবায়দুল্লাহ্ সুত্রে ইয়াহ্ইয়া হাদীসে বলেন যে, কাসিম ‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৩৩৯৭, ই.সে. ৩৩৯৬)

【18】

মিলনের প্রাক্কালে যা পাঠ করা মুস্তাহাব

ইবনু ‘আব্বাস (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ তার স্ত্রীর সাথে মিলতে চায় সে যেন বলে (অর্থ-) “বিসমিল্লাহ্ হে আল্লাহ্! আমাদের শায়ত্বান থেকে রক্ষা করুন, আর আমাদের যা তুমি দান করবে তাকেও শয়তান থেকে দূরে রাখুন”। কেননা এ মিলনে তাদের ভাগ্যে যদি কোন সন্তান হয় তবে শায়তান কখনো তার ক্ষতি করতে পারবে না। (ই.ফা. ৩৩৯৮, ই.সে. ৩৩৯৭) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না, ইবনু বাশ্শার, ইবনু নুমায়র ও ‘আবদ ইবনু হুমায়দ (রহিমাহুমুল্লাহ) ..... সকলেই সাওরী (রহঃ) থেকে, তারা (শু’বাহ্ ও ‘আবদুর রায্যাক) উভয়ে মানসূর জারীরের হাদীসের মর্মানুযায়ী রিওয়ায়াত করেন। তবে শু’বাহ্ তার হাদীসে “বিসমিল্লাহ্” এর উল্লেখ করেননি এবং সাওরী সুত্রে ‘আবদুর রায্যাক এর রিওয়ায়াতে “বিসমিল্লাহ্” রয়েছে। আর ইবনু নুমায়র-এর রিওয়ায়াতে রয়েছে যে, মানসূর বলেছেন, আমি মনে করি তিনি বলেছেন, “বিসমিল্লাহ্” (ই.ফা. ৩৩৯৯, ই.সে. ৩৩৯৮)

【19】

মলদ্বার ব্যতীত স্ত্রীর সম্মুখ বা পেছন দিক থেকে সঙ্গম করা জায়িয

জাবির (রাযি:) তিনি বলেনঃ ইয়াহূদিরা বলতো, কোন লোক স্ত্রীর পেছন দিক থেকে তার যোনি দারে সঙ্গম করলে এতে সন্তান টেরা চক্ষু বিশিষ্ট হবে। এ প্রসঙ্গে নাযিল হয় অর্থাৎ “স্ত্রীগন তোমাদের শস্যক্ষেত্র। অতএব, তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার”-(সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২:২২৩)। (ই.ফা ৩৪০০, ই.সে ৩৩৯৯) ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) ইয়াহূদীরা বলত যে, স্ত্রীর পিছন দিক থেকে যোনী দ্বারে যদি সঙ্গম করা হয় এবং এতে সে যদি গর্ভবতী হয় তাহলে তার সন্তান হবে টেরা চক্ষু বিশিষ্ট। রাবী বলেন, এ প্রসঙ্গে নাযিল হল- “স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র, অতএব তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করতে পার”- (সূরাহ্ আল বাক্বারাহ্ ২:২২৩)। (ই.ফা ৩৪০১, ই.সে ৩৪০০) জাবির (রাযিঃ) থেকে যুহরী সুত্র নু’মান অতিরিক্ত বলেছেন, স্বামী ইচ্ছে করলে উপুড় করে, ইচ্ছা করলে উপুড় না করে তবে একই দ্বারে হতে হবে। (ই.ফা ৩৪০২, ই.সে ৩৪০১)

【20】

স্বামীর বিছানা পরিহার করা স্ত্রীর জন্য নিষিদ্ধ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ)-এর সুত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, স্বামীর বিছানা পরিহার করে কোন স্ত্রী রাত্রি যাপন করলে ফজর পর্যন্ত মালাকগণ তার প্রতি লা’নত করতে থাকে। (ই.ফা ৩৪০৩, ই.সে ৩৪০২) শু’বাহ্ (রহঃ)-এর সুত্র এই সানাদের বর্ণনায় বলেছেন, ফিরে না আসা পর্যন্ত কথার উল্লেখ আছে। (ই.ফা. ৩৪০৪, ই.সে. ৩৪০৩) আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কসম সেই সত্তার যাঁর হাতে আমার জীবন। কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে যখন বিছানায় আহবান করে, কিন্তু সে তা অস্বীকার করে, নিঃসন্দেহে যে পর্যন্ত সে তার স্ত্রীর প্রতি সন্তুষ্টি না হয়, ততক্ষন আসমানবাসী তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকে। (ই.ফা. ৩৪০৫, ই.সে. ৩৪০৪) আবূ হুরায়রাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বামী যখন স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে এবং সে না আসে তার স্বামী তার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে রাত্রি যাপন করে, সে স্ত্রীর প্রতি ফেরেশতাগণ ভোর হওয়া পর্যন্ত লা’নাত করতে থাকে। (ই.ফা. ৩৪০৬, ই.সে. ৩৪০৫)

【21】

স্ত্রীর গোপনীয়তা প্রকাশ করা নিষিদ্ধ

আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন সে ব্যাক্তি হবে আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম পর্যায়ের, যে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সাথে মিলিত হয়, অতঃপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়। (ই.ফা. ৩৪০৭, ই.সে. ৩৪০৬) আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সে ব্যক্তি ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ্‌র কাছে সর্বাপেক্ষা বড় আমানত খিয়ানতকারী যে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সাথে মিলিত হয়। অতঃপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়। ইবনু নুমায়র বলেন, “ইন্না মিন ‘আযিম” স্হলে “ইন্না ‘আযিম” (সবচেয়ে অধিক) হবে। (ই.ফা. ৩৪০৮, ই.সে. ৩৪০৭)

【22】

আয্ল-এর হুকুম

ইবনু মুহায়রিয (রহঃ) তিনি বলেন, আমি এবং আবূ সিরমাহ্ (রহঃ) আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। আবূ সিরমাহ্ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবূ সা’ঈদ! আপনি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘আয্ল সম্পর্কে আলোচনা করতে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হাঁ আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বানূ মুস্তালিক-এর যুদ্ধ করেছি। সে যুদ্ধে আমরা আরবের সবচেয়ে সুন্দরী বাঁদীদের বন্দী করলাম। এদিকে আমরা দীর্ঘকাল স্ত্রী সাহচর্য থেকে বঞ্চিত ছিলাম। অন্যদিকে আমরা ছিলাম সম্পদের প্রতি অনুরাগী। এমতাবস্হায় আমরা বাঁদীদের দ্বারা উদ্দেশ্য হাসিল করার এবং ‘আয্ল করার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু আমরা এ কথাও আলোচনা করলাম যে, আমরা কি এ কাজ করতে যাব, অথচ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মধ্যে উপস্হিত রয়েছেন। তাঁর নিকট আমরা কি এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করব না! তাই আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ ঐ কাজ না করাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা, আল্লাহ তা’আলা ক্বিয়ামাত পর্যন্ত যত মানুষ সৃষ্টি করার কথা লিখে রেখেছেন সে সব মানুষ সৃষ্টি হবেই। (ই.ফা. ৩৪০৯, ই.সে. ৩৪০৮) মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহ্ইয়া ইবনু হাব্বান (রহঃ) উক্ত সানাদে রাবী‘আর হাদীসের মর্মানুযায়ী হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে সে হাদীসে উল্লেখ আছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “কেননা আল্লাহ তা’আলা ক্বিয়ামাতের দিন পর্যন্ত যত মাখলুক্ব সৃষ্টি করবেন তা লিখে দিয়েছেন।” (ই.ফা. ৩৪১০, ই.সে. ৩৪০৯) আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমরা কিছু সংখ্যক যুদ্ধবন্দিনী লাভ করেছিলাম। (তাদের সাথে) আমরা ‘আয্ল করছিলাম। এরপর আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি আমাদের বললেন, অবশ্যই তোমরা এ কাজ করবে। অবশ্যই তোমরা এ কাজ করবে। অবশ্যই তোমরা এ কাজ করবে। (বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন) বস্তুত ক্বিয়ামাত পর্যন্ত যত প্রানী সৃষ্টি হওয়ার তা সৃষ্টি হবেই। (ই.ফা. ৩৪১১, ই.সে. ৩৪১০) আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) তিনি বলেছেন, মা’বাদ ইবনু সীরীন (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাঃ) থেকে এ হাদীসটি শুনেছেন? তিনি [আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাঃ)] বললেন, হাঁ, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে। তিনি বলেন, এটা না করলে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা, এটা হল তাক্বদীরের অন্তর্ভুক্ত।” (ই.ফা. ৩৪১২, ই.সে. ৩৪১১) শু’বাহ্ (রহঃ)-এর সূত্রে আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) অনুরূপ সানাদে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তাদের হাদীসে রয়েছে- নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয্ল সম্পর্কে বলেছেনঃ এ কাজ না করলে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা এটা তাক্বদীরের অন্তর্গত। রাবী বাহ্য-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, শু’বাহ্ (রহঃ) বলেছেনঃ আমি তাকে (আনাস ইবনু সীরীন) জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাঃ) থেকে এ হাদীসটি শুনেছেন? তিনি বললেন, হাঁ। (ই.ফা. ৩৪১৩, ই.সে. ৩৪১২) আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘আয্ল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ তা না করলে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা, এ হল তাক্বদীরের অন্তভুক্ত। মুহাম্মাদ (রহঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তি “লা ‘আলাইকুম” (তোমাদের কোন ক্ষতি নেই)-নিষেধাজ্ঞারই নিকটবর্তী। (ই.ফা. ৩৪১৪, ই.সে. ৩৪১৩) আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাযিঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ‘আয্ল সম্পর্কে উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, তোমরা তা কেন করতে চাও? তারা বলল, এমন লোক আছে যার স্ত্রী সন্তানকে দুধ পান করায় সে তার সঙ্গে সঙ্গত হয়। অথচ এতে সে গর্ভবতী হোক তা সে পছন্দ করে না। আবার কোন লোকের দাসী আছে, সে তার সঙ্গে সংগত হয় কিন্তু এতে সে গর্ভবতী হোক তা সে অপছন্দ করে। তিনি বললেন, ‘তা না করলে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই। কেননা, তা তাক্বদীরের উপর নির্ভরশীল’। ইবনু ‘আওন (রহঃ) বলেন, আমি এ হাদীস হাসান (রহঃ)-এর কাছে বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র কসম, এ হল সতর্কবানী স্বরূপ। (ই.ফা. ৩৪১৫, ই.সে. ৩৪১৪) ইবনু ‘আওন (রহঃ) সুত্র তিনি বলেন, আমি মুহাম্মাদ সূত্রে ইব্রাহীমকে হাদীস বর্ণনা করেছি অর্থাৎ ‘আয্ল সম্পর্কে। তিনি বলেন, ‘আবদুর রহমান ইবনু বিশ্র (রহঃ) হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৩৪১৬, ই.সে. ৩৪১৫) মা’বাদ ইবনু সীরীন (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম! আপনি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘আয্ল সম্পর্কে কোন আলোচনা করতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হাঁ- এ বলে তিনি বর্ণিত ইবনু ‘আওনের হাদীসের ন্যায় (আরবী) পর্যন্ত বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৪১৭, ই.সে. ৩৪১৬) আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাযিঃ) তিনি বলেন, ‘আয্ল সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উল্লেখ করা হল। তিনি বললেন, তোমাদের কেউ কেন এ কাজ করে-তিনি এ ব্যাপারে একথা বলেন নি, “তোমাদের কেউ যেন এ কাজ না করে। কোন সৃষ্টি জীব নেই যাকে আল্লাহ সৃষ্টি করেননি।” (ই.ফা. ৩৪১৮, ই.সে. ৩৪১৭) আবূ সা’ঈদ আল খুদ্রী (রাযিঃ) তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘আয্ল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বললেনঃ সব পানিতেই সন্তান পয়দা হয় না। মূলত আল্লাহ যখন কোন বস্তু সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করেন তখন কোন কিছুই তাকে বাধা দিতে পারে না। (ই.ফা. ৩৪১৯, ই.সে. ৩৪১৮) আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাযিঃ)-এর সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৩৪২০, ই.সে. ৩৪১৯) জাবির (রাযিঃ) এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, আমার একটি দাসী আছে যে আমাদের খিদ্মাত ও পানি সরবরাহের কাজে নিয়োজিত। আমি তার নিকট আসা যাওয়া করে থাকি, কিন্তু সে গর্ভবতী হোক তা আমি পছন্দ করি না। তখন তিনি বললেন, তুমি ইচ্ছে করলে তার সাথে ‘আয্ল করতে পার। তবে তার তাক্বদীরে সন্তান থাকলে তা তার মাধ্যমে আসবেই। লোকটি কিছু দিন অতিবাহিত করল। অতঃপর সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, দাসীটি গর্ভবতী হয়েছে। তিনি বললেন, আমি তোমাকে এ মর্মে জানিয়ে ছিলাম যে, তার তাক্বদীরে যা আছে তা আসবেই। (ই.ফা. ৩৪২১, ই.সে. ৩৪২০) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল, আমার একটি দাসী আছে। আমি তার সাথে ‘আয্ল করে থাকি। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ কাজ আল্লাহর ইচ্ছাকে কিছুতেই প্রতিহত করতে পারে না। রাবী বলেন, এরপর সে ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! যে দাসীটির কথা আপনার কাছে উল্লেখ করেছিলাম সে গর্ভবতী হয়েছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “আমি আল্লাহর বান্দা ও আল্লাহর রাসুল।” (ই.ফা. ৩৪২২, ই.সে. ৩৪২১) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাযিঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছ থেকে এসে সুফ্ইয়ান বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ মর্মে হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৪২৩, ই.সে. ৩৪২২) জাবির (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমরা ‘আয্ল করতাম আর কুরআন নাযিল হত। এর উপর ইসহাক্ব আরো বাড়িয়ে বলেছেন যে, সুফ্ইয়ান (রহঃ) বলেন, এতে যদি নিষেধ করার মতো কিছু থাকত, তরে কুরআন তা নিষেধ করে দিত। (ই.ফা. ৩৪২৪, ই.সে. ৩৪২৩) আত্বা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, “আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যামানায় ‘আয্ল করতাম।” (ই.ফা. ৩৪২৫, ই.সে. ৩৪২৪) জাবির (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যামানায় ‘আয্ল করতাম। এ সংবাদ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পৌছলে এ থেকে তিনি নিষেধ করেননি। (ই.ফা. ৩৪২৬, ই.সে. ৩৪২৫)

【23】

গর্ভবতী যুদ্ধবন্দিনী দাসীর সাথে সঙ্গম করা হারাম

আবূ দারদা (রাযিঃ) একদা আসন্ন প্রসবা জনৈকা গর্ভবতী দাসীকে তাঁবুর দরজায় আনা হয়। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সম্ভবত ঐ ব্যক্তি তার সাথে সঙ্গম করতে চায়। লোকেরা বলল, হাঁ। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি মনে করেছি, তাকে এমন লা’নাত দেই, যে লা’নাতসহ সে ক্ববরে প্রবেশ করে। কিভাবে সে তাকে (দাসীর গর্ভস্থ সন্তানকে) ওয়ারিস বানাবে অথচ তা তার জন্য বৈধ নয়? কেমন করে সে তাকে (সন্তানকে) খাদিম বানাবে অথচ সে তার জন্য বৈধ নয়। (ই.ফা. ৩৪২৭, ই.সে. ৩৪২৬) শু’বাহ্ (রহঃ) সুত্র এই সানাদে বর্ণিত। (ই.ফা. ৩৪২৮, ই.সে. ৩৪২৭)

【24】

‘গীলাহ্’ অর্থাৎ স্তন্যদায়িনী স্ত্রীর সাথে সঙ্গমের বৈধতা এবং ‘আয্ল মাকরূহ হওয়া প্রসঙ্গে

জুদামাহ্ বিন্তু ওয়াহ্ব আসাদিয়্যাহ্ (রাযিঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, আমি স্তন্যদায়িনী স্ত্রীর সাথে সঙ্গম নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ইচ্ছে করলাম। এরপর আমার নিকট আলোচনা করা হল যে, রোম ও পারস্যবাসী লোকেরাও তা করে থাকে, অথচ তাতে তাদের সন্তানদের কোন ক্ষতি হয় না। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেন, খালাফ তার সানাদ বর্ণনায় “জুদামাহ্ আল আসদিয়্যাহ্” উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ইয়াহ্ইয়া বর্ণিত ‘জুযামাহ্’ শব্দটিই সঠিক ও নির্ভুল। (ই.ফা. ৩৪২৯, ই.সে. ৩৪২৮) উকাশার ভগ্নি জুদামাহ্ বিনতু ওয়াহ্ব (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমি একদিন কিছু সংখ্যক লোকের সাথে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে হাযির হলাম। তিনি তখন বলছিলেন, আমি স্তন্যদায়িনী মহিলার সাথে সঙ্গম করা নিষেধ করার ইচ্ছা করলাম, এমতাবস্হায় আমি রোম ও পারস্যবাসী লোকদের অবস্হার কথা বিবেচনা করে অবগত হলাম যে, তারা তাদের স্তন্যদায়িনী স্ত্রীর সাথে সংগম করে থাকে, কিন্তু তা তাদের সন্তান সন্ততির কোনরূপ ক্ষতি করে না। অতঃপর লোকেরা তাকে ‘আয্ল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা হল গোপন হত্যা। রাবী ‘উবায়দুল্লাহ্ তাঁর বর্ণনায় আল মুক্রি সূত্রে আয়াতটুকুও উল্লেখ করেছেন অর্থাৎ “যখন জীবন্ত সমাধিস্হ কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছে”- (সূরাহ্ আত্ তাকভীরঃ ৮১:৮-৯) (ই.ফা. ৩৪৩০, ই.সে. ৩৪২৯) জুদামাহ্ বিনতু ওয়াহ্ব আল আসাদিয়্যাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। (এরপর) সা’ঈদ ইবনু আবূ আয়য়ূব (রহঃ) থেকে বর্ণিত ‘আয্ল ও গীলাহ্ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে (গীলাহ্-এর পরিবর্তে) ‘গিয়াল’ উল্লেখ করেন। (ই.ফা. ৩৪৩১, ই.সে. ৩৪৩০) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাযিঃ) এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, আমি আমার স্ত্রীর সাথে ‘আয্ল করে থাকি। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি এ কাজ কেন কর? লোকটি বলল, আমি তার সন্তানের ক্ষতির আশংকা করি। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি এ কাজ ক্ষতিকর হত তাহলে তা পারস্য ও রোমবাসীদেরও ক্ষতিসাধন করত। রাবী যুহায়র তাঁর বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন, এ কাজ (‘আয্ল) যদি এ উদ্দেশ্যেই হয় তাহলে তা করা সঠিক নয়। কেননা তা পারস্য ও রোমবাসীদের কোন প্রকার ক্ষতি করে নি। (ই.ফা. ৩৪৩২, ই.সে. ৩৪৩১)