23. মুসাকাহ (পানি সেচের বিনিময়ে ফসলের একটি অংশ প্রদান)

【1】

ফল এবং শস্যের একটি অংশের বিনিময়ে মুসাকাহ্ ও মু’আমালাহ্

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাইবারবাসীদের উৎপন্ন ফল-ফসলের আধাআধি শর্তে খাইবারের জমি বর্গা দিয়েছিলেন। (ই. ফা. ৩৮১৮, ই. সে. ৩৮১৭) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাইবারের জমি উৎপন্ন ফল ও ফসলের আধাআধির শর্তে দিয়েছিলেন। তিনি নিজ স্ত্রীদেরকে বছর প্রতি একশ’ ওসাক প্রদান করতেন। তম্মধ্যে আশি ওসাক খুরমা আর বিশ ওসাক যব। ‘উমার (রাঃ) যখন খলীফা হন তখন খাইবারের জমি তিন ভাগে ভাগ করে দেন। তিনি নবী সহধর্মিণীদেরকে ইখ্‌তিয়ার দেন যে, তাঁরা ভূমি ও পানি নিবেন। (অর্থাৎ- নিজেদের দায়িত্বে চাষাবাদের ব্যবস্থা করবেন) অথবা বার্ষিক হারে ওসাক গ্রহণ করবেন। তাঁরা এ ব্যাপারে ভিন্নভিন্ন মত গ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে কেউ ভূমি ও পানি নিলেন আর কেউ বার্ষিক হারে ওসাক গ্রহণ করলেন। ‘আয়িশাহ্ ও হাফ্সাহ্ (রাঃ) ভূমি ও পানি নিয়েছিলেন। ( ই. ফা. ৩৮১৯, ই. সে. ৩৮১৮) আবদুল্লাহ্‌ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাইবারের জমি খাইবারবাসীদের উৎপন্ন শস্য ও ফলের অর্ধেকের শর্তে ব্যবস্থা দিয়েছিলেন এরপর হাদীসটি ‘আলী ইবনু মুসহিরের বর্ণিত হাদীসের ন্যায় বর্ণনা করেন। তবে এ কথাটি তিনি উল্লেখ করেননি যে, ‘আয়িশাহ্ ও হাফ্সাহ (রাঃ) জমি ও পানি নিয়েছিলেন। তিনি এ কথা বলেছেন যে, ‘উমার (রাঃ) নবী সহধর্মিণীদের ইখতিয়ার দেন জমি নিতে, তবে সেখানে পানির উল্লেখ করেননি। ( ই. ফা. ৩৮২০, ই. সে. ৩৮১৯ ) ’আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, খাইবার বিজয়ের পর ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট নিবেদন করে তাদের শ্রমের বিনিময়ে তাদেরকে তথায় থাকতে দেয়ার জন্যে এই শর্তে যে, উৎপন্ন ফসল ও ফলের অর্ধেক তারা পাবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ উপরোক্ত শর্তে যতদিন আমরা চাই ততদিনের জন্যে থাকার অনুমতি দিলাম। এরপরে ’আবদুল্লাহ থেকে ইবনু নুমায়র ও ইবনু মুসহিরের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তাতে এতটুকু বাড়তি আছে যে, খাইবারের প্রাপ্ত ফলকে কয়েক ভাগে ভাগ করা হত। আর তা থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ ভাগের এক ভাগ গ্রহণ করতেন। (ই. ফা. ৩৮২১, ই. সে. ৩৮২০) ’আবদুল্লাহ্ ইবনু ’উমার (রাঃ) সুত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাইবারের বাগান ও যমীন খাইবারের ইয়াহূদীদেরকে এ শর্তে প্রদান করেন যে, তারা নিজেদের মাল খরচ করে তাতে কাজ করবে, আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ফলের অর্ধেক প্রাপ্ত হবেন। (ই. ফা. ৩৮২২, ই. সে. ৩৮২১) ইবনু ’উমার (রাঃ) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) ইয়াহূদী ও নাসারাদেরকে হিজাজের মাটি থেকে বিতাড়িত করে দেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন খাইবার জয় করেন তখন তিনি তাদের তথা হতে বের করে দিতে চেয়েছিলেন। খাইবার যখন বিজিত হলো তখন তা আল্লাহ্‌, তাঁর রসূল ও মুসলিমদের সম্পত্তি হিসেবে পরিণত হয়। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়াহূদীদের বিতাড়িত করার ইচ্ছা পোষণ করেন। পরে ইয়াহূদীরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে তথায় তাদের থাকার অনুমতি প্রার্থনা করে এই শর্তে যে, তারা শ্রম বিনিয়োগ করবে এবং উৎপাদিত ফলের অর্ধেক নিবে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যতদিন এ শর্তের উপর আমাদের ইচ্ছা, থাকার অনুমতি দিলাম। এরপর তারা তথায় রয়ে গেল। পরে ’উমার (রাঃ)তাদের ‘তায়মা’ ও ‘আরীহায়’ বিতাড়িত করেন। (ই. ফা. ৩৮২৩, ই. সে. ৩৮২২)

【2】

ফলজ বৃক্ষ রোপন ও ফসল ফলানোর ফাযীলাত

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোন মুসলিম ফলজ বৃক্ষ রোপন করবে তা থেকে যা কিছু খাওয়া হয় তা তার জন্য দান স্বরূপ, যা কিছু চুরি হয় তাও দান স্বরূপ, বন্য জন্তু যা খেয়ে নেয় তাও দান স্বরূপ। পাখী যা খেয়ে নেয় তাও দান স্বরূপ। আর কেউ কিছু নিয়ে গেলে তাও তার জন্য দান স্বরূপ। (ই. ফা. ৩৮২৪, ই. সে. ৩৮২৩) জাবির (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু মুবাশ্‌শির নাখীয়া নাম্নী এক আনসারী মহিলার খেজুর বাগানে প্রবেশ করেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এই খেজুর গাছ কি কোন মুসলিম ব্যক্তি লাগিয়েছে, না কোন কাফির ব্যক্তি? মহিলা উত্তর দিল মুসলিম। তিনি বললেন, “যে কোন মুসলিম গাছ লাগায় বা ক্ষেত করে, আর তা থেকে মানুষ কিংবা জীব জন্তু অথবা অন্য কিছুতে ভক্ষণ করে, তবে তা তার পক্ষে দান স্বরূপ। (ই. ফা. ৩৮২৫, ই. সে. ৩৮২৪) জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, কোন মুসলিম যদি বৃক্ষ রোপণ করে বা ক্ষেত করে, আর তা থেকে কোন হিংস্র জন্তু কিংবা পাখী অথবা অন্য কিছুতে খেয়ে নেয় তবে এর জন্যে সে সাওয়াব পাবে। ইবনু আবূ খালাফ (রহঃ) বলেছেন – পাখী বা এমন কিছু। (ই. ফা. ৩৮২৬, ই. সে. ৩৮২৫) জাবির ইবনু ’আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা উম্মু মা’বাদ- এর বাগানে ঢুকলেন। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে উম্মু মা’বাদ! এ গাছ কে লাগিয়েছে? কোন মুসলিম ব্যক্তি না কোন কাফির? সে জানাল, মুসলিম। তিনি বললেন, কোন মুসলিম যদি কোন গাছ লাগায়, আর তা থেকে মানুষ কিংবা চতুষ্পদ জন্তু অথবা পাখী খেয়ে নেয়, তবে কিয়ামাতের দিন পর্যন্ত তা তার জন্য সদাকাহ হিসাবে থাকবে। (ই. ফা. ৩৮২৭, ই. সে. ৩৮২৬) আবূ বাক্র ইবনু আবূ শাইবাহ্, আবূ কুরায়ব, ইসহাক্ ইবনু ইব্রাহীম ও ‘আম্‌র আন্ নাকিদ (রহঃ) হাফস্ ইবনু গিয়াস (রহঃ) হতে, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক্ ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) একসাথে আবূ মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) থেকে, ‘আমর আন্ নাকিদ (রহঃ) ‘আম্মার ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) হতে এবং আবূ বাক্র ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) ইবনু ফুযায়ল (রহঃ) হতে এবং এরা প্রত্যেকেই আ’মাশ-এর সূত্রে জাবির (রাঃ) তবে ‘আম্মার (রহঃ) হতে ‘আমরের বর্ণনায় ও মু’আবিয়াহ থেকে আবূ বাকরের বর্ণনায় উম্মু মুবাশ্শির (রাঃ)- এর নাম বাড়তি এসেছে। আর ইবনু ফুযায়লের বর্ণনায় যায়িদ ইবনু হারিসার স্ত্রীর নাম যোগ করা হয়েছে। আর মু’আবিয়ার থেকে ইসহাকের যে বর্ণনা তাতে তিনি কখনও বা তার নাম বাদ দিয়েই বর্ণনা করেন। আর তাঁরা সকলেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ঐ রূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন, যেরূপ বর্ণনা করেছেন ‘আতা’(রহঃ), আবূ যুবায়র ও আমর ইবনু দীনার (রহঃ)। (ই. ফা. ৩৮২৮, ই. সে. ৩৮২৭) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলিম যদি বৃক্ষ রোপন কিংবা ফসল উৎপাদন করে আর তা থেকে পাখী কিংবা মানুষ অথবা চতুষ্পদ জন্তু অথবা পাখী কিছু খায় তবে তা তার পক্ষ থেকে সাদাকাহ্‌ স্বরূপ হবে। (ই. ফা. ৩৮২৯, ই. সে. ৩৮২৮) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা উম্মু মুবাশ্‌শির নাম্নী এক আনসারী মহিলার খেজুর বাগানে গমন করেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করেন, এ খেজুর গাছ কে লাগিয়েছে, কোন মুসলিম ব্যক্তি না কোন কাফির ব্যক্তি? তারা বলল, একজন মুসলিম। এরপর উপরে উল্লিখিত রাবীদের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৮৩০, ই. সে. ৩৮২৯)

【3】

প্রাকৃতিক দুর্যোগে নষ্ট হয়ে যাওয়া ফলের মূল্য ছেড়ে দেয়া

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি যদি তোমার কোন এক ভাইয়ের নিকট ফল বিক্রি করো, তারপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তা বিনষ্ট হয়ে যায়, তবে তার থেকে কিছু আদায় করা তোমার জন্যে হালাল নয়। তোমার ভাইয়ের অর্থ না-হকভাবে কিরূপে গ্রহণ করবে? (ই. ফা. ৩৮৩১, ই. সে. ৩৮৩০) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) হতে উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৮৩২, ই. সে. ৩৮৩১) আনাস (রাঃ) খেজুরের রং পরিবর্তন হয়ে পরিপক্ক হওয়ার পূর্বে তা বিক্রি করতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। আমরা আনাস (রাঃ)- কে জিজ্ঞেস করলাম, রং পরিবর্তন হওয়া বলতে কী বুঝায়? তিনি বললেন, লাল রং বা হলদে রং ধারণ করা। বল তো দেখি, আল্লাহ যদি ফল নষ্ট করে দেন তবে কোন অধিকারে তোমার ভাইয়ের কাছ থেকে অর্থ কিরূপে হালাল করতে পার? (ই. ফা. ৩৮৩৩, ই. সে. ৩৮৩২) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন ফলের রং পরিবর্তন হওয়ার আগে বিক্রি করতে। তারা বলল, রং পরিবর্তন হওয়ার মানে কী? তিনি বললেন, লাল রং ধারণ করা। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ যদি ফল ক্ষতিগ্রস্ত করে দেন তাহলে কিসের বিনিময়ে তুমি তোমার ভাইয়ের অর্থ গ্রহণ করবে? (ই. ফা. ৩৮৩৪, ই. সে. ৩৮৩৩) আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ যদি ফলের মধ্যে পূর্ণতা দান না করেন তাহলে কিভাবে তোমাদের একজন অপর ভাইয়ের অর্থ বৈধ করবে? (ই. ফা. ৩৮৩৫, ই. সে. ৩৮৩৪) জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ ফলের মূল্য গ্রহণ না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইব্‌রাহীম (রহঃ) সুফ্‌ইয়ানের সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৮৩৬, ই. সে. ৩৮৩৫)

【4】

ঋণের কিছু অংশ ছেড়ে দেয়া মুস্তাহাব

আবূ সা‘ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সময়ে এক ব্যক্তির ক্রয় করা ফল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেক ঋণী হয়ে পড়ে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা তাকে সাহায্য কর। লোকজন তাকে সাহায্য করল, কিন্তু প্রাপ্ত ঋণ পরিশোধের পরিমাণ হলো না। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পাওনাদারদের বললেন, যা তোমরা পেয়েছ তা গ্রহণ কর; এর অতিরিক্ত আর পাবে না। (ই. ফা. ৩৮৩৭, ই. সে. ৩৮৩৬) বুকায়র ইবনুল আশাজ্জ (রহঃ) বুকায়র ইবনুল আশাজ্জ (রহঃ) হতে উক্ত সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৮৩৮, ই. সে. ৩৮৩৭) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা দরজার নিকটে দু’ব্যক্তির উচ্চ কণ্ঠে ঝগড়া শুনতে পান। তাদের একজন অন্যজনের নিকট কোন এক বিষয়ে অব্যাহতি দেয়ার ও সদয় হওয়ার আবেদন করছে। আর অপরজন বলছে যে, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি তা করতে পারব না। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে তাদের দু’জনের কাছে গেলেন এবং বললেন, পুণ্যের কাজ না করার জন্যে আল্লাহ্‌র নামে শপথকারী কোথায়? একজন বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি। এরপর তিনি বললেন, সে যেটি চায় করতে পারে।[১৭] (ই. ফা. ৩৮৩৯, ই. সে. ৩৮৩৮) আবদুল্লাহ ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আমলে একদা মাসজিদের মধ্যে ইবনু আবূ হাদরাদ নামীয় এক ব্যক্তির নিকট স্বীয় প্রাপ্য ঋণের তাগাদা করেন। উভয়ের আওয়াজ উচ্চ হতে থাকে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে আওয়াজ ঘর থেকে শুনতে পান এবং ঘরের পর্দা উঠিয়ে বাইরে তাদের নিকট চলে আসেন। তিনি কা‘বকে ডেকে বললেন, হে কা‘ব! তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি উপস্থিত আছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতের ইশারায় তাকে তার প্রাপ্য ঋণের অর্ধভাগ ক্ষমা করে দিতে বললেন। কা‘ব (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আমি তাই করলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ঋণ গ্রহীতাকে) বললেন, যাও অবশিষ্ট (বাকী অর্ধেক) পরিশোধ করো। (ই. ফা. ৩৮৪০, ই. সে. ৩৮৩৯) কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি একদিন ‘আলী ইবনু আবূ হাদরাদের নিকটে তার প্রাপ্য ঋণের তাগাদা করেন। এরপর তিনি ইবনু ওয়াহ্‌বের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৮৪১, ই. সে. ৩৮৪০) কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ হাদরাদ আসলামীর নিকট কিছু মাল পাওনা ছিলেন। তিনি তার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং শক্ত তাগাদা দেন। উভয়ে পরস্পর কথাবার্তা বলেন এবং এক পর্যায়ে শোরগোল সৃষ্টি হয়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উভয়ের কাছে এলেন এবং কা‘বকে ডেকে হাতের ইশারায় বললেন , অর্ধেক। সুতরাং কা‘ব (রাঃ) ঋণের অর্ধেক গ্রহণ করেন এবং অর্ধেক পরিত্যাগ করেন। (ই. ফা. ৩৮৪১, ই. সে. ৩৮৪০)

【5】

বিক্রিত মাল দেউলিয়া ঘোষিত ক্রেতার নিকট পাওয়া গেলে বিক্রেতা তা ফেরত নিতে পারে

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন অথবা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি দেউলিয়া ঘোষিত কোন লোকের কাছে তার মাল অবিকলভাবে পায় কিংবা কোন মানুষের নিকট পায় যাকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়েছে তবে সে তার মাল ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় বেশী হক্‌দার। (ই. ফা. ৩৮৪২, ই. সে. ৩৮৪১) ইয়াহ্ইয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া, কুতাইবাহ্ ইবনু সা‘ঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুম্হ রাবী’ ও ইয়াহ্ইয়া ইবনু হাবীব..... আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্..... ও মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ভিন্ন ভিন্ন সূত্রে যুহাইর বর্ণিত হাদীসের অর্থ মিলে বর্ণনা করেন। আর তাদের মধ্যে কেবল ইবনু রুম্হ (রহঃ) তার বর্ণনায় বলেছেন- কোন ব্যক্তি দেউলিয়া সাব্যস্ত হলে। (ই. ফা. ৩৮৪৩, ই. সে. ৩৮৪২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেউলিয়া লোকের নিকট যদি কোন বস্তু পাওয়া যায় এবং স্থানান্তরিত না হয়ে থাকে তাহলে বিক্রেতাই ঐ বস্তুর প্রাপক। (ই. ফা. ৩৮৪৪, ই. সে. ৩৮৪৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, যদি কোন লোককে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয় আর কোন লোক স্বীয় সম্পদ অবিকলভাবে তার কাছে পায়, তবে সে ব্যক্তিই তা পাওয়ার বেশী হক রাখে। (ই. ফা. ৩৮৪৫, ই. সে. ৩৮৪৪) কাতাদাহ (রহঃ) কাতাদাহ (রহঃ) হতে উক্ত রূপ বর্ণনা করেন। অবশ্য এ বর্ণনার শেষে বলা হয়েছে সে ব্যক্তিই অন্যান্য সকল পাওনাদারদের চেয়ে বেশী হক্দার। (ই. ফা. ৩৮৪৬, ই. সে. ৩৮৪৫) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক যখন দেউলিয়া হয়ে যায়, আর তার নিকট কোন মাল বিক্রেতা তার বিক্রিত মাল অপরিবর্তিত অবস্থায় পায় তখন সে-ই সে মাল পেতে বেশী হকদার। (ই. ফা. ৩৮৪৭, ই. সে. ৩৮৪৬)

【6】

অসহায়কে সুযোগ দেয়ার ফযীলত

হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতের এক ব্যক্তির রুহের সাথে ফেরেশতাগণ সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞেস করলেনঃ বিশেষ কোন সৎকাজ তুমি করেছ কি? সে বলল, না। তারা বললেনঃ মনে করে দেখো। সে বললঃ আমি মানুষের সাথে লেনদেন করতাম। তারপর অসচ্ছল ব্যক্তিদের সুযোগ দিতে ও সচ্ছল ব্যক্তিদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করতে আমি আমার লোকদের নির্দেশ দিতাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এরপর আল্লাহ তা‘আলা বললেনঃ “ওকে ছেড়ে দাও।” (ই. ফা. ৩৮৪৮, ই. সে. ৩৮৪৭) রিবঈ ইবনু হিরাশ (রহঃ) তিনি বলেনঃ একদা হুযাইফাহ্‌ (রাঃ)-ও আবূ মাস‘উদ (রাঃ) একত্রিত হন। হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) বললেনঃ এক ব্যক্তির তার প্রভুর (আল্লাহ) সাথে সাক্ষাৎ হয়। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞসে করেন, তুমি কী কী সাওয়াবের কাজ করেছ? সে বললঃ আমি তেমন কোন সৎকাজ করিনি; তবে আমি একজন ধনী লোক ছিলাম। আমি মানুষের কাছে পাওনা চাইতাম এভাবে যে, সচ্ছলদেরকে সময় আর গরীবদেরকে মুক্ত করে দিতাম। এরপর আল্লাহ নির্দেশ দিলেনঃ আমার বান্দাকে মাফ করে দাও। আবূ মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এরূপই বলতে শুনেছি। (ই. ফা. ৩৮৪৯, ই. সে. ৩৮৪৮) হুযাইফাহ্ (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তি মৃত্যুর পর জান্নাতে প্রবেশ করে। তাকে জিজ্ঞেস করা হল তুমি কেমন আমল করতে? রাবী বলেনঃ এরপর সে স্মরণ করে বা তাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। সে বললঃ আমি মানুষের সাথে কেনা-বেচা করতাম। দরিদ্র লোকদেরকে আমি অবকাশ দিতাম এবং মুদ্রা বা টাকা মাফ করে দিতাম। এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। এরপর আবূ মাস’ঊদ বলেনঃ এরূপই আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি। (ই. ফা. ৩৮৫০, ই. সে. ৩৮৪৯) হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা’আলার কাছে তাঁর এমন এক বান্দাকে হাযির করা হয়, যাকে তিনি প্রচুর সম্পদ দান করেছিলেন। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করেন, দুনিয়ায় তুমি কী ‘আমাল করেছে? রাবী বলেনঃ আর আল্লাহর নিকট কেউ কোন কথা গোপন রাখতে পারে না। সে বললঃ হে আমার রব! আপনি আপনার সম্পদ আমাকে দান করেছিলেন। আমি মানুষের সাথে ক্রয়-বিক্রয় করতাম। সুতরাং সচ্ছল ব্যক্তির সহিত আমি সহনশীলতা প্রদর্শন করতাম আর গরীবকে সময় দিতাম। আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ এ ব্যাপারে (হে বান্দা) তোমার চেয়ে আমি অধিকযোগ্য। তোমার আমার বান্দাকে ছেড়ে দাও। ‘উক্‌বাহ্ ইবনু ‘আমির জুহানী ও আবূ মাস’ঊদ আনসারী (রাঃ) বলেন, এরূপই আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মুখ থেকে শুনেছি। (ই. ফা. ৩৮৫১, ই. সে. ৩৮৫০) আবূ মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের পূরবর্তী লোকদের মধ্যে এক লোকের হিসেব গ্রহণ করা হয়, কিন্তু তার মধ্যে কোন প্রকার ভাল ‘আমাল পাওয়া যায়নি। কিন্তু সে মানুষের সাথে লেনদেন করত এবং সে ছিল সচ্ছল। তাই দরিদ্র লোকদের ক্ষমা করে দেয়ার জন্যে সে তার কর্মচারীদের নির্দেশ দিত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ বললেনঃ এ ব্যাপারে (অর্থাৎ ক্ষমা করার ব্যাপারে) আমি তার চেয়ে অধিক যোগ্য। একে ক্ষমা করে দাও। (ই. ফা. ৩৮৫২, ই. সে. ৩৮৫১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক লোক মানুষের সাথে লেনদেন করত। সে তার গোলামকে বলে দিত, তুমি যখন কোন অভাবগ্রস্তের কাছে যাবে তখন তাকে ক্ষমা করে দিবে। হয়ত আল্লাহ আমাদেরকেও ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর সে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে মিলিত হলো। আর আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। (ই. ফা. ৩৮৫৩, ই. সে. ৩৮৫২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন যে, আমি শুনেছি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ বলেছেন। (ই. ফা. ৩৮৫৪, ই. সে. ৩৮৫৩) আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ কাতাদাহ্ (রহঃ) আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) একবার তার কাছ থেকে ঋণ গ্রহণকারী একজনকে খোঁজ করেন। সে তার থেকে লুকিয়েছিল। পরে তিনি তাকে পেয়ে যান। সে বললঃ আমি অভাবগ্রস্ত। তিনি বললেনঃ আল্লাহর শপথ! সে বললঃ আল্লাহর শপথ। তিনি বললেনঃ তাহলে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি এটা চায় যে, আল্লাহ তাকে কিয়ামাত দিবসের দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি দিক সে যেন ঋণগ্রস্ত অক্ষম লোকের সহজ ব্যবস্থা করে কিংবা ঋণ মওকূফ করে দেয়। (ই. ফা. ৩৮৫৫, ই. সে. ৩৮৫৪) আইয়ূব (রহঃ) আইয়ূব (রহঃ) হতে উক্ত সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৮৫৭, ই. সে. ৩৮৫৫)

【7】

সক্ষম ব্যাক্তির ঋণ আদায়ে গড়িমসি করা হারাম, ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব অন্যের উপর দেয়া বৈধ এবং তা গ্রহণ করা মুস্তাহাব

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সক্ষম ব্যক্তির ঋণ আদায়ে গড়িমসি করা অত্যাচারের শামিল। তোমাদের কারো প্রতি ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব দিলে সে যেন তা গ্রহণ করে। (ই. ফা. ৩৮৫৬, ই. সে. ৩৮৫৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৮৫৮, ই. সে. ৩৮৫৭)

【8】

মাঠে অবস্থিত পানি যা চারণ ভূমির কাজে লাগে এ পানির বাড়তি অংশ বিক্রি করা অবৈধ এবং তা ব্যবহারে বাধা দেয়া হারাম, আর ষাঁড় বা পাঁঠা দ্বারা মজুরী গ্রহণ কর হারাম

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রয়োজনের চেয়ে বেশী পানি বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (ই. ফা. ৩৮৫৯, ই. সে. ৩৮৫৮) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন; উট দ্বারা পাল দিয়ে তার মজুরী নিতে এবং চাষের ও জমির বিনিময়ে পানি বিক্রি করতে। এসব রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। (ই. ফা. ৩৮৬০, ই. সে. ৩৮৫৯) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রয়োজনের চেয়ে বেশী পানি ব্যবহারে কাউকে বাধা দেয়া যাবে না। কারণ এর দ্বারা ঘাস উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। (ই. ফা. ৩৮৬১, ই. সে. ৩৮৬০) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রয়োজনের চেয়ে বেশী পানি তোমরা বন্ধ করে রেখ না। কারণ এর দ্বারা তোমরা ঘাস উৎপাদন বন্ধ করে ফেলবে। (ই. ফা. ৩৮৬২, ই. সে. ৩৮৬১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এমনিতে জন্ম নেয় ঘাস বিক্রির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি বিক্রি করা যাবে না। [১৮] (ই. ফা. ৩৮৬৩, ই. সে. ৩৮৬২)

【9】

কুকুরের মূল্য, গণকের গণনা কাজের মজুরী ও ব্যভিচারিণীর ব্যভিচার দ্বারা উপার্জিত অর্থ হারাম এবং বিড়াল বিক্রি করা নিষেধ

আবূ মাস’ঊদ আনসারী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুরের মূল্য, ব্যভিচারিণীর ব্যভিচার দ্বারা উপার্জিত অর্থ এবং গণকের গণনা দ্বারা উপার্জিত অর্থ গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। (ই. ফা. ৩৮৬৪, ই. সে. ৩৮৬৩) কুতাইবাহ্ ইবনু সা’ঈদ ও মুহাম্মাদ ইবনু রুম্হ (রহঃ) লায়স ইবনু সা’দ (রহঃ) হতে এবং আবূ বাক্র ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) সুফ্ইয়ান ইবনু ‘উয়াইনাহ্ (রহঃ) হতে এবং তাঁরা উভয়ে যুহরী (রহঃ) এ সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে ইবনু রুম্হের বর্ণনায় লায়স (রহঃ) আবূ মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে শুনেননি। (ই. ফা. ৩৮৬৫, ই. সে. ৩৮৬৪) রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছি যে, নিকৃষ্ট উপার্জন বেশ্যা বৃত্তির উপার্জন এবং কুকুরের মূল্য আর রক্ত মোক্ষণকারীর (শিঙ্গা লাগানোর) আয়। (ই. ফা. ৩৮৬৬, ই. সে. ৩৮৬৫) রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুকুরের মূল্য নিকৃষ্ট, ব্যভিচারিণীর ব্যভিচারের আয় নিকৃষ্ট এবং রক্ত মোক্ষণকারীর উপার্জন নিকৃষ্ট। (ই. ফা. ৩৮৬৭, ই. সে. ৩৮৬৬) ইয়াহ্ইয়া ইবনু কাসীর (রহঃ)- এর সূত্রে ইয়াহ্ইয়া ইবনু কাসীর (রহঃ)- এর সূত্রে এ হাদীস উক্তরূপে বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৮৬৮, ই. সে. ৩৮৬৭) রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৮৬৯, ই. সে. ৩৮৬৮) আবূ যুবায়র (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি জাবির (রাঃ)- এর নিকট কুকুর ও বিড়ালের মূল্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন। (ই. ফা. ৩৮৭০, ই. সে. ৩৮৬৯)

【10】

কুকুর হত্যার আদেশ ও তা রহিত হওয়ার বর্ণনা এবং শিকার করা অথবা ক্ষেত পাহারা বা জীবজন্তু পাহারা বা এ জাতীয় কোন কাজের উদ্দেশ্য ব্যতীত কুকুর পালন করা হারাম হওয়ার বর্ণনা

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর হত্যা করার জন্যে নির্দেশ দিয়েছেন। (ই. ফা. ৩৮৭১, ই. সে. ৩৮৭০) ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর হত্যা করার নির্দেশ দিয়ে মাদীনার চারপাশে লোক পাঠালেন যাতে কুকুর হত্যা করা হয়। (ই. ফা. ৩৮৭২, ই. সে. ৩৮৭১) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর হত্যার নির্দেশ দিতেন। অতঃপর মাদীনার ভেতরে ও তার চারপাশের কুকুর ধাওয়া করা হত। আর কোন কুকুরই আমরা না মেরে ছেড়ে দিতাম না। এমনকি বেদুঈনদের দুগ্ধবতী উষ্ট্রীর সাথে যে কুকুর থাকত (পাহারার জন্য) তাও আমরা হত্যা করতাম। (ই. ফা. ৩৮৭৩, ই. সে. ৩৮৭২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর হত্যা করতে হুকুম দিয়েছেন। তবে শিকারী কুকুর, বকরী পাহারা দানের কুকুর অথবা অন্য জীবজন্তু পাহারা দেয়া কুকুর ব্যতীত। অতঃপর ইবনু ‘উমারের নিকট বলা হলো যে, আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) তো ক্ষেত পাহারার কুকুরের কথাও বলে থাকেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেনঃ আবূ হুরাইরার ক্ষেত আছে। [১৯] (ই. ফা. ৩৮৭৪, ই. সে. ৩৮৭৩) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলতেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর হত্যা করার জন্য আমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। অতঃপর কোন বেদুঈন নারী কুকুরসহ আগমন করলে আমরা তাও হত্যা করে ফেলতাম। পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা হত্যা করতে নিষেধ করেন এবং বলেনঃ চোখের উপর সাদা দু’টিকা বিশিষ্ট ঘন কালো রঙের কুকুর তোমরা হত্যা কর, কেননা তা হল শাইতান (অর্থাৎ-অতি নিকৃষ্ট)। (ই. ফা. ৩৮৭৫, ই. সে. ৩৮৭৪) ইবনু মুগাফ্‌ফাল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর হত্যা করতে বলেন। পরে তিনি বলেছেনঃ এদের এবং কুকুরের কী অবস্থা! অতঃপর শিকারী কুকুর ও বকরীর পাল পাহারার ব্যাপারে তিনি অনুমতি প্রদান করেন। (ই. ফা. ৩৮৭৬, ই. সে. ৩৮৭৫) শু’বাহ (রহঃ) শু’বাহ (রহঃ) হতে উক্তরুপে বর্ণনা করেন। আর ইবনু হাতিম ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে বলেনঃ “এবং তিনি অনুমতি দিয়েছেন বকরীর পাল পাহারার, শিকারী এবং ক্ষেত পাহারার কুকুরের ক্ষেত্রে।” (ই. ফা. ৩৮৭৭, ই. সে. ৩৮৭৬) ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন কুকুর পালন করে যা গৃহপালিত জীব-জন্তু পাহারা দেয়ার জন্যেও নয় কিংবা শিকার করার জন্যেও নয়, তাহলে প্রতিদিন তার সাওয়াব থেকে দু’কীরাত হ্রাস পেতে থাকবে। (ই. ফা. ৩৮৭৮, ই. সে. ৩৮৭৭) সালিম (রহঃ) তাঁর পিতার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি শিকারী কুকুর কিংবা গৃহপালিত পশুর পাহারার কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর পালন করবে, প্রতিদিন তার সাওয়াব থেকে দু’কীরাত করে কমতে থাকবে। (ই. ফা. ৩৮৭৯, ই. সে. ৩৮৭৮) ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি শিকারী কুকুর অথবা জীবজন্তু পাহারা দেয়ার কুকুর ছাড়া অন্য কুকুর পালন করবে প্রতিদিন তার ‘আমাল থেকে দু’কীরাত করে কমতে থাকবে। (ই. ফা. ৩৮৮০, ই. সে. ৩৮৭৯) সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ তাঁর পিত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি জীবজন্তু পাহারার কুকুর বা শিকারী কুকুর ছাড়া অন্য কুকুর পালন করবে তার ‘আমাল থেকে প্রতিদিন এক কীরাত করে কমে যাবে। ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) বলেছেন, “ কিংবা ক্ষেত পাহারার কুকুর।” (ই. ফা. ৩৮৮১, ই. সে. ৩৮৮০) সালিম (রহঃ) তাঁর পিতার সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে ব্যক্তি শিকারী কুকুর অথবা গৃহপালিত পশু পাহারার কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর পালন করবে প্রতিদিন তার ‘আমাল থেকে দু’কীরাত করে কমতে থাকবে। সালিম (রহঃ) বলেন, আবু হুরায়রা্‌ (রাঃ) বলতেন- “ কিংবা ক্ষেত পাহারার কুকুর।” আর তিনি ক্ষেত খামারের মালিক ছিলেন। (ই. ফা. ৩৮৮২, ই. সে. ৩৮৮১) সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ তাঁর পিতা তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ঘরের মালিক জীব জন্তু পাহারা বা শিকারের কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর পালন করবে প্রতিদিন তার ‘আমাল থেকে দু’কীরাত করে কমতে থাকবে। (ই. ফা. ৩৮৮৩, ই. সে. ৩৮৮২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন যে , নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ক্ষেত বা বকরীর পাল পাহারার কুকুর অথবা শিকারী কুকুর ব্যতীত অন্য কুকুর রাখবে, প্রতিদিন তার সাওয়াব থেকে এক কীরাত করে কমতে থাকবে। (ই. ফা. ৩৮৮৪, ই. সে. ৩৮৮৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেন, শিকার কিংবা জীবজন্তু পাহারার প্রয়োজন ছাড়া যে ব্যক্তি কুকুর পালন করে, প্রতিদিন তার সাওয়াব থেকে দু’কীরাত করে কমতে থাকে। আর আবূ তাহিরের বর্ণনায় “ ক্ষেত পাহারার জন্যে” কথাটি নেই। (ই. ফা. ৩৮৮৫, ই. সে. ৩৮৮৪) আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জীবজন্তু পাহারার অথবা শিকারী অথবা ক্ষেত পাহারার কুকুর ছাড়া অন্য কুকুর রাখবে, তার সাওয়াব থেকে প্রতিদিন এক কীরাত করে কমে যাবে। যুহরী (রহঃ) বলেনঃ ইবনু ‘উমারের নিকট আবূ হুরাইরার বক্তব্যটি উল্লেখ করা হলে তিনি বললেনঃ আল্লাহ আবূ হুরাইরার প্রতি রহমত করুন। তিনি ছিলেন একজন কৃষক। (ই. ফা. ৩৮৮৬, ই. সে. ৩৮৮৫) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুকুর রাখবে তার ‘আমাল থেকে প্রতিদিন এক কীরাত করে কমতে থাকবে, তবে ক্ষেত পাহারার কিংবা জীবজন্তু পাহারার কুকুর ব্যতীত। (ই. ফা. ৩৮৮৭, ই. সে. ৩৮৮৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ হুরায়রা্ (রাঃ)-এর সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে উক্ত রূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৮৮৮, ই. সে. ৩৮৮৭) ইয়াহ্ইয়া ইবনু আবূ কাসীর -এর সূত্রে ইয়াহ্ইয়া ইবনু আবূ কাসীর -এর সূত্রে উক্ত রূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৮৮৯, ই. সে. ৩৮৮৮) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন কুকুর রাখবে যা শিকারী অথবা বকরীর পাল পাহারা দেয়ার উদ্দেশ্য ব্যতীত তাহলে প্রতিদিন তার ‘আমাল থেকে এক কীরাত করে কমতে থাকবে। (ই. ফা. ৩৮৯০, ই. সে. ৩৮৮৯) সুফ্‌ইয়ান ইবনু যুহায়র (রাঃ) তিনি ছিলেন শানূআহ গোত্রের লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবী। তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি এমন কুকুর পালন করবে যা তার ক্ষেতের বা জীবজন্তু পাহারার কাজে ব্যতীত হয়, তবে প্রতিদিন তার নেক আমাল থেকে এক কীরাত পরিমাণ কমতে থাকে। রাবী বললেনঃ আপনি কি এ কথা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এ মাসজিদের প্রভুর শপথ। (ই. ফা. ৩৮৯১, ই. সে. ৩৮৯০) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তাদের নিকট একবার সুফ্‌ইয়ান ইবনু আবু যুহায়র আশ্‌-শানায়িয়্যু প্রতিনিধি হয়ে আগমন করেন। অতঃপর তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উপরের অনুরূপ। (ই. ফা. ৩৮৯২, ই. সে. ৩৮৯১)

【11】

শিঙ্গা লাগিয়ে মজুরী নেয়া হালাল

হুমায়দ (রহঃ) তিনি বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর নিকট শিঙ্গা দিয়ে উপার্জন করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিঙ্গা (নিজ শরীরে) লাগিয়েছেন। আবূ তাইবাহ্‌ তাকে শিঙ্গা দিয়েছে। তিনি তাকে দু’সা’ খাদ্য বস্তু দেয়ার নির্দেশ দেন এবং তার মুনিবের সাথে আলোচনা করেন। এতে তারা তার উপর ধার্যকৃত কর কমিয়ে দেয়। তিনি আরও বলেনঃ তোমরা যেসব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাও শিঙ্গা তার মধ্যে একটি উত্তম ব্যবস্থা অথবা (বলেছেন) এটা তোমাদের ঔষধের মধ্যে অধিক ফলদায়ক। (ই. ফা. ৩৮৯৩, ই. সে. ৩৮৯২) হুমায়দ (রহঃ) -এর সূত্রে তিনি বলেন, আনাস (রাঃ)-এর নিকট শিঙ্গা দিয়ে মজুরী গ্রহন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। অতঃপর তিনি এরূপ বর্ণনা করেন। তাছাড়া তিনি বলেন, তোমরা যেসব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাও শিঙ্গা লাগানো এবং ‘কুসতুল বাহরী (চন্দন কাঠ) ব্যবহার তার মধ্যে অতি উত্তম ব্যবস্থা। অতএব তোমরা তোমাদের শিশুদের কণ্ঠনালী চেপে বসিয়ে দিয়ে কষ্ট দিও না। (ই. ফা. ৩৮৯৪, ই. সে. ৩৮৯৩) হুমায়দ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের শিঙ্গা লাগিয়ে থাকে এমন বালককে ডেকে পাঠান। সে তাঁর শরীরে শিঙ্গা লাগায়। অতঃপর তিনি তাকে এক সা’ অথবা এক মুদ বা দু’মুদ পরিমাণ পরিশোধ করতে আদেশ করেন এবং তার সম্পর্কে আলোচনা করেন। এতে তার উপর থেকে কর হ্রাস করে দেওয়া হয়। (ই. ফা. ৩৮৯৫, ই. সে. ৩৮৯৪) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিঙ্গা লাগিয়েছেন এবং শিঙ্গা প্রয়োগকারীকে তার মজুরী দিয়েছেন এবং তিনি নাকে ঔষধ ঢেলে ব্যবহার করেছেন। (ই. ফা. ৩৮৯৬, ই. সে. ৩৮৯৫) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন,বানূ বায়াযাহ্‌-এর একটি গোলাম নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে শিঙ্গা লাগায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে মজুরী প্রদান করেন এবং তার মালিকের সাথে আলোচনা করেন। এতে সে তার উপর থেকে ধার্যকৃত দৈনিক মজুরীর হার কমিয়ে দেয়। যদি হারাম হতো তা হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দিতেন না। (ই. ফা. ৩৮৯৭, ই. সে. ৩৮৯৬)

【12】

মদ বিক্রি করা হারাম

আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মাদীনায় খুত্‌বা দিতে শুনেছি। তিনি বলেছেনঃ হে লোক সকল! আল্লাহ তা’আলা মদের বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন। হয়তো এ ব্যাপারে তিনি শীঘ্রই কোন সুস্পষ্ট নির্দেশ দান করবেন।সুতরাং কারো নিকট এর কিছু থাকলে সে যেন তা বিক্রি করে দেয় এবং কাজে লাগায়। রাবী বলেন, অল্প কয়েকদিন পরেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা মদ হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং যার নিকট এ আয়াত পৌঁছবে এবং তার নিকট এর কিছু অবশিষ্ট থাকে, তবে সে যেন তা পান না করে এবং বিক্রি না করে। রাবী বলেন, তখন যাদের নিকট তা ছিল, তা নিয়ে তারা মাদীনার রাস্তায় নেমে আসলো এবং ঢেলে দিলো। (ই. ফা. ৩৮৯৮, ই. সে. ৩৮৯৭) ‘আবদুর রহমান ইবন ওয়ালাতা আস সাবাঈ মিসরী (রহঃ) -এর সূত তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট আঙ্গুরের রস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এক মশক মদ উপহার স্বরূপ নিয়ে আসে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি কি জান না যে, আল্লাহ সেটা হারাম করে দিয়েছেন? সে বলল, না। অতঃপর সে এক ব্যক্তির সাথে কানাকানি করল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে গোপনে কী বললে? সে বলল, আমি তাকে এটা বিক্রি করার পরামর্শ দিয়েছি। এরপর তিনি বললেন, যিনি (আল্লাহ) এটা পান করা হারাম করেছেন তিনি এর বিক্রিও হারাম করে দিয়েছেন। রাবী বলেন, এরপর সে মশ্কের মুখ খুলে দিল এবং তার মধ্যে যা কিছু ছিল সব পড়ে গেল। (ই. ফা. ৩৮৯৯, ই. সে. ৩৮৯৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৯০০, ই. সে. ৩৮৯৯) আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, সূরা আল-বাক্বারাহ্‌ -এর শেষের আয়াতগুলো লোকদের পড়ে শোনান। এরপর মদের বেচাকেনা নিষিদ্ধ করেন। (ই. ফা. ৩৯০১, ই. সে. ৩৯০০) আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন সূরা আল-বাকারাহ্‌-র সুদ সম্পর্কীয় শেষের আয়াতগুলো নাযিল হল তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদের দিকে বের হয়ে আসেন এবং মদের বেচাকেনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। (ই. ফা. ৩৯০২, ই. সে. ৩৯০১)

【13】

মদ, মৃতজন্তু, শূকর ও মূর্তি বিক্রি করা হারাম

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মক্কা বিজয়ের বছরে মাক্কায় অবস্থানকালে বলতে শুনেছেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূল হারাম ঘোষণা করেছেন মদ, মৃতজন্তু, শূকর ও মূর্তি বিক্রয় করা। তখন জিজ্ঞেস করা হলো হে আল্লাহর রসূল! মৃতজন্তুর চর্বি সম্পর্কে আপনি কী বলেন? কেননা এটা নৌকায় লাগানো হয়, চামড়ায় মালিশ করা হয় এবং মানুষ এর দ্বারা আগুন জ্বালায়। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, তা হারাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ ইয়াহুদী জাতিকে তখনই ধ্বংস করেছেন,যখন আল্লাহ তাদের মৃতের চর্বি হারাম করেন আর তারা তা গলিয়ে বিক্রি করেছে এবং তার মূল্য খেয়েছে। (ই. ফা. ৩৯০৩, ই. সে. ৩৯০২) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মক্কা বিজয়ের বছরে লাইসের হাদীসের অনুরূপ বলতে শুনেছি। (ই. ফা. ৩৯০৪, ই. সে. ৩৯০৩) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ)-এর নিকট এ খবর এলো যে, সামুরা (রাঃ) মদ বিক্রি করেছেন। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ সামুরার ধ্বংস করুন। সে-কি জানে না যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ ইয়াহুদী জাতির উপর অভিশাপ দিয়েছেন। তাদের উপর চর্বি হারাম করা হয়েছিল। এরপর তারা তা গলিয়ে বিক্রি করে। (ই. ফা. ৩৯০৫, ই. সে. ৩৯০৪) ‘আমর ইবনু দীনার (রহঃ) ‘আমর ইবনু দীনার (রহঃ) হতে উক্ত সানাদে উল্লিখিত রূপ বর্ণিত। (ই. ফা. ৩৯০৬, ই. সে. ৩৯০৫) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ আল্লাহ ইয়াহুদীদের ধ্বংস করে দিন। তিনি তাদের উপর চর্বি হারাম করেছেন, তারপর তারা তা বিক্রি করে মূল্য ভক্ষণ করেছে। (ই. ফা. ৩৯০৭, ই. সে. ৩৯০৬) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ ইয়াহুদী জাতিকে ধ্বংস করুন। তাদের উপর চর্বি হারাম করা হয়েছে, তারপর তারা তা বিক্রি করে তার মূল্য ভক্ষণ করেছে। (ই. ফা. ৩৯০৮, ই. সে. ৩৯০৭)

【14】

সুদ

আবু সা’ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ সমান সমান না হলে বিক্রি করো না, সেটার এক অংশ অন্য অংশ অপেক্ষা বেশী করো না। আর রূপার বিনিময়ে রূপা সমান সমান না হলে বিক্রি করো না এবং সেটার এক অংশ অপর অংশ অপেক্ষা বেশী করো না। আর সেটার কোনটিকেই নগদের বিনিময়ে বাকীতে বিক্রি করো না। (ই. ফা. ৩৯০৯, ই. সে. ৩৯০৮) নাফি’ (রহঃ) -এর সুত্রে লায়স গোত্রের এক ব্যাক্তি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বলল যে, আবু সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এটা বর্ণনা করেছেনঃ কুতাইবাহ্র বর্ণনা রয়েছে এটা শুনে ‘আবদুল্লাহ নাফি’ (রহঃ)- কে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলেন। আর ইবনু রুমহ্ (রহঃ) -এর বর্ণনা মতে নাফি’ (রহঃ) বলেন, এরপর ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) চলে গেলেন, আমিও লায়সী গোত্রের লোকটি আমাকে জানিয়েছে যে, আপনি এ কথা প্রচার করছেন- রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুপার বিনিময়ে রুপা সমান পরিমাণ ব্যতীত বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন, তদ্রুপ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ পরিমাণের সমান ব্যতীত বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। তখন আবু সা’ঈদ (রাঃ) আপন অঙ্গুলি দ্বারা তাঁর দু’চোখ ও দু’কানের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, আমার চক্ষুদ্বয় দেখেছে ও কর্ণদ্বয় শুনেছে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এ কথা বলতে যে, তোমরা স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ বিক্রি করো না এবং রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য বিক্রি করো না, সমান সমান পরিমাণ ব্যতিত। আর তোমরা সেটার এক অংশকে অন্য অংশ অপেক্ষা বেশী করো না এবং হাতে হাতে ব্যতীত নগদের বিনিময়ে বাকীতে বিক্রি করো না। (ই. ফা. ৩৯১০, ই. সে. ৩৯০৯) আবু সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) আবু সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৯১১, ই. সে. ৩৯১০) আবু সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য ওজন ও পরিমাণ সমান সমান হওয়া ব্যতিরেকে বিক্রি করো না। (ই. ফা. ৩৯১২, ই. সে. ৩৯১১) উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা এক দীনারকে দু’ দীনারের বিনিময়ে এবং এক দিরহামকে দু’ দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করো না। (ই. ফা. ৩৯১৩, ই. সে. ৩৯১২)

【15】

স্বর্ণের বদলে রৌপ্য ও রৌপ্যের বদলে স্বর্ণ নগদ বেচাকেনা

মালিক ইবনু আওস ইবনু হাদাসান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এ কথা বলতে বলতে আগালাম যে, দিরহাম বিনিময় করতে পারে এমন কে আছে? তখন তালহাহ্ ইবনু ‘উবাইদুল্লাহ (রাঃ) ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর নিকটেই ছিলেন- তিনি বললেন, তোমার স্বর্ণ আমাদেরকে দেখাও এবং তুমি পরে এসো। আমাদের গোলাম যখন আসবে তখন তোমার রৌপ্য দিয়ে দিব। তখন ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেনঃ কখনো নয়; আল্লাহ্‌র শপথ! হয় তুমি তার দিরহাম এখনই প্রদান করো, অন্যথায় তার স্বর্ণ তাকে ফিরিয়ে দাও। কারণ, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ নগদ নগদ বিক্রি না হলে সুদ হবে, গমের বিনিময়ে গম নগদ নগদ এবং হাতে হাতে বিক্রি না হলে সুদ হবে, যবের বিনিময়ে যব নগদ নগদ না হলে সুদ হবে এবং খেজুরের বিনিময়ে খেজুর নগদ বিক্রি না হলে তাও সুদে পরিণত হবে। (ই. ফা. ৩৯১৪, ই. সে. ৩৯১৩) যুহরী (রহঃ) যুহরী (রহঃ) হতে উক্ত রূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই. ফা. ৩৯১৫, ই. সে. ৩৯১৪) আবু কিলাবাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সিরিয়ায় এক মাজলিসে উপস্থিত ছিলাম। তথায় মুসলিম ইবনু ইয়াসারও ছিলেন। এমন সময় আবুল আশ’আসের আগমন হলো। তাঁরা বলল, আবুল আশ’আস, আমিও বললাম, আবুল আশ’আস (এসেছেন)। অতঃপর তিনি বসলেন। আমি তাঁকে বললাম, আমাদের ভাইদের কাছে ‘উবাদাহ্ ইবনু সামিত (রাঃ)-এর হাদীসটি শোনান। তিনি বললেন, আচ্ছা আমরা একবার এক যুদ্ধে অবতীর্ণ হই। মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) ছিলেন সেনাপতি। প্রচুর পরিমাণ গনীমাত আমাদের হাতে। আমাদের এ গনীমাতের মধ্যে রুপার একটা পাত্রও ছিল। মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) সেটা লোকদের বেতন-ভাতার বিনিময়ে বিক্রি করার জন্যে একজনকে আদেশ দান করেন। লোকেরা সবাই এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করল। ‘উবাদাহ্ ইবনু সামিত (রাঃ)-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি দণ্ডায়মান হন এবং বলেন আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিষেধ করতে শুনেছি- স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিমিয়ে খেজুর ও লবণের বিনিময়ে লবণ বিক্রি করতে, পরিমাণে সমান সমান ও নগদ নগদ ছাড়া। যে অতিরিক্ত দিবে বা অতিরিক্ত গ্রহণ করবে সে সুদের কাজ-কারবার করল। এরপর লোকজন যা কিছু নিয়েছিল তা ফেরত দিলো এবং মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছে দিলো। তিনি ভাষণ দিতে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বললেন, মানুষের একী অবস্থা হল, তাঁরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এমন বহু হাদীস বর্ণনা করেন যা আমরা তাঁর থেকে শুনিনি অথচ আমরা তাঁর নিকট উপস্থিত থাকতাম এবং তাঁরই নৈকট্য পেতাম। এরপর ‘উবাদাহ (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং বর্ণনার পুনরাবৃত্তি করে বললেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যা কিছু শুনেছি তা অবশ্যই বর্ণনা করব, যদিও মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) তা অপছন্দ করেন অথবা বলেছেন যে, যদিও মু’আবিয়াহ্ তাতে দুঃখিত হন। এতে আমার কিছু আসে যায় না, তাঁর বাহিনীতে এক কালো রাত্র না থাকি।হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, তিনি এ কথাই বলেছেন কিংবা এর অনুরূপ কিছু। (ই. ফা. ৩৯১৬, ই. সে. ৩৯১৫) আইয়ূব (রহঃ) আইয়ূব (রহঃ) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৯১৭, ই. সে. ৩৯১৬) উবাদাহ ইবনু সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিমিয়ে খেজুর ও লবণের বিনিময়ে লবণ সমান সমান পরিমাণ ও হাতে হাতে (নগদ) হবে। অবশ্য এ দ্রব্যগুলো যদি একটি অপরটির ব্যতিক্রম হয় (অর্থাৎ- পণ্য এক জাতীয় না হয়) তোমরা যেরূপ ইচ্ছা বিক্রি করতে পার যদি হাতে হাতে (নগদে) হয়। (ই. ফা. ৩৯১৮, ই. সে. ৩৯১৭) আবূ সা’ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ, রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব, খেজুরের বিনিমিয়ে খেজুর ও লবণের বিনিময়ে লবণ সমান সমান ও নগদ নগদ হতে হবে। এরপর কেউ যদি বাড়তি কিছু প্রদান করে বা অতিরিক্ত গ্রহণ করে তবে তা সুদ হয়ে যাবে। গ্রহণকারী ও প্রদানকারী এতে একই রকম হবে। (ই. ফা. ৩৯১৯, ই. সে. ৩৯১৮) আবু সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ সমান সমান হতে হবে। অতঃপর উপরের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৯২০, ই. সে. ৩৯১৯) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: খেজুরের বিনিময়ে খেজুর, গমের বিনিময়ে গম, যবের বিনিময়ে যব ও লবণের বিনিময়ে লবণ সম পরিমান ও হাতে হাতে হতে হবে। কেউ যদি বেশী দেয় বা বেশী নেয় তবে সুদ হবে। তবে যদি এর শ্রেণী পরবর্তন হয়। (তবে কম-বেশী জায়িয হবে। (ই. ফা. ৩৯২১, ই. সে. ৩৯২০) ফুযায়ল ইবনু গায্ওয়ান (রহঃ) ফুযায়ল ইবনু গায্ওয়ান (রহঃ) হতে এ সানাদে বর্ণিত। তবে তিনি “হাতে হাতে” কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই. ফা. ৩৯২২, ই. সে. ৩৯২১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ এবং রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য পরিমাপে সমান সমান ও রকমে একই প্রকার করতে হবে। যে অতিরিক্ত দিবে বা অতিরিক্ত গ্রহণ করবে, তা সুদ হবে। (ই. ফা. ৩৯২৩, ই. সে. ৩৯২২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দীনারের (স্বর্ণ মুদ্রা) বিনিময়ে দীনার, উভয়ের মধ্যে কোনটি বেশী হতে পারবে না এবং দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম উভয়ের মধ্যে কোনটি বেশী হতে পারবে না। (ই.ফা. ৩৯২৪, ই.সে. ৩৯২৩) মূসা ইবনু আবূ তামীম (রহঃ) মূসা ইবনু আবূ তামীম (রহঃ) -এর সানাদে উল্লিখিত হাদীস অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই. ফা. ৩৯২৫, ই. সে. ৩৯২৪)

【16】

স্বর্ণের বিনিময়ে রৌপ্য বাকীতে বিক্রয় নিষিদ্ধ

‘আবুল মিনহাল (রহঃ) -এর সূত্রে তিনি বলেন, আমার এক শরীক মৌসুম পর্যন্ত বা হাজ্জ পর্যন্ত কিছু রূপা বাকীতে বিক্রি করে। অতঃপর সে আমার কাছে আসে এবং আমাকে জানায়। আমি বললাম, এ কাজটি ঠিক হয়নি। সে বলল, আমি এটা বাজারে বিক্রি করেছি কিন্তু কেউ তো আমাকে এ থেকে বারণ করেনি। এরপর আমি বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ)-এর নিকটে এসে তাঁকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আগমন করেন, তখন আমরা এ জাতীয় ক্রয়-বিক্রয় করতাম। তিনি বললেন, যদি নগদ নগদ হয় তাহলে কোন আপত্তি নেই, আর যদি বাকীতে হয় তবে সুদ হবে। তুমি যায়দ ইবনু আরকাম (রাঃ)-এর নিকট যাও, যেহেতু তিনি আমার চেয়ে বড় ব্যবসায়ী। অতঃপর আমি তাঁর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলাম। তিনিও অনুরূপ বললেন। (ই. ফা. ৩৯২৬, ই. সে. ৩৯২৫) ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু মু‘আয ‘আম্বারী (রহঃ) আবুল মিনহাল (রহঃ) তিনি বলেন, আমি বারা ইবনু ‘আযিবকে সার্ফ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, যায়দ ইবনু আরকামকে জিজ্ঞেস করো। কেননা তিনি অধিক বিজ্ঞ ব্যক্তি। এরপর উভয়ে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বর্ণের বিনিময়ে রৌপ্য বাকীতে বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন। (ই. ফা. ৩৯২৭, ই. সে. ৩৯২৬) আবূ বাক্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রৌপ্যের বিনিময়ে রৌপ্য ও স্বর্ণের বিনিময়ে স্বর্ণ সমান সমান না হলে বিনিময় করতে নিষেধ করেছেন এবং স্বর্ণের বিনিময়ে রৌপ্য ক্রয় করার অনুমতি দিয়েছেন, যেভাবে আমরা চাই এবং রৌপ্যের বিনিময়ে স্বর্ণ ক্রয় করতে যেরূপে আমরা ইচ্ছা করি। অতঃপর এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেন, হাতে হাতে (নগদ)। লোকটি বলল, এরূপই আমি শুনেছি। (ই. ফা. ৩৯২৮, ই. সে. ৩৯২৭) আবূ বাক্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন, অতঃপর উক্তরূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৯২৯, ই .সে. ৩৯২৮)

【17】

পুতি ও স্বর্ণযুক্ত হার বিক্রয়

ফুযালাহ্‌ ইবনু ‘উবাদাহ্‌ আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাইবারে অবস্থানকালে তাঁর নিকট গনীমাতের একটি হার উপস্থিত করা হয়। তাতে পুতি ও স্বর্ণ লাগান ছিল। হারটি বিক্রি হচ্ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হারের সাথে যুক্ত স্বর্ণের ব্যাপারে আদেশ দান করেন। অতঃপর কেবল সেটাকেই (স্বর্ণ) আলাদা করা হয়। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেন, স্বর্ণের বদলে স্বর্ণ সমান ওজনে বিক্রি করতে হবে। (ই. ফা. ৩৯৩০, ই. সে. ৩৯২৯) ফুযালাহ্‌ ইবনু ‘উবায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি খাইবারের যুদ্ধের দিনে বার দীনার এর বিনিময়ে একটি হার ক্রয় করি। তাতে স্বর্ণ ও পুতি ছিল। এরপর আমি তা আলাদা করলাম এবং বার দীনারের চেয়ে অধিক পেলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকটে বিষয়টি আমি উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, আলাদা না করে বিক্রি করা যাবে না। (ই. ফা. ৩৯৩১, ই. সে. ৩৯৩০) সা‘ঈদ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) সা‘ঈদ ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) হতে উক্ত রূপ বর্ণিত। (ই. ফা. ৩৯৩২, ই. সে. ৩৯৩১) ফুযালাহ্‌ ইবনু ‘উবায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা খাইবার দিবসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে ছিলাম। ইয়াহূদীদের সাথে এক উকিয়া স্বর্ণ দু’ বা তিন দীনারের বিনিময়ে ক্রয়-বিক্রয় করতাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্বর্ণের সমান সমান ওজন ব্যতিরেকে বিক্রি করো না। (ই. ফা. ৩৯৩৩, ই. সে. ৩৯৩২) হানাশ (রহঃ) -এর সূত্রে তিনি বলেন, আমরা কোন এক যুদ্ধে ফুযালাহ্ ইবনু ‘উবায়দ এর সঙ্গে ছিলাম। আমার ও আমার সাথীদের অংশে একটি হার আসে যার মধ্যে স্বর্ণ, রৌপ্য ও জাওহার খচিত ছিল। আমি সেটা খরিদ করে রাখতে ইচ্ছা করলাম। তাই ফুযালাহ্ ইবনু ‘উবায়দ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এর স্বর্ণ আলাদা করে এক পাল্লায় রাখ আর তোমার স্বর্ণ অন্য পাল্লায় রাখ এবং পরিমাপের সমান সমান না হলে গ্রহণ করো না। কারণ, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন সমান সমান না হলে গ্রহণ না করে। (ই. ফা. ৩৯৩৪, ই. সে. ৩৯৩৩)

【18】

খাদ্যের বদলে খাদ্য সমান সমান বিক্রয়

মা‘মার ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি এক সা‘ গমসহ তার গোলামকে পাঠিয়ে দেন এবং বলে দেন যে, এটা বিক্রি করে তা দিয়ে যব কিনে আনো। গোলাম চলে যায় এবং এক সা‘ ও সা‘য়ের কিছু অতিরিক্ত গ্রহণ করে। যখন সে মা‘মারের নিকট উপস্থিত হলো এবং যখন তাঁকে এ বষয়ে অবহিত করল মা‘মার (রহঃ) তাকে বলল, তুমি এরূপ কেন করেছ? পুনরায় যাও ও তাকে ফেরত দাও, সমপরিমাণ ব্যতীত কিছুতেই গ্রহণ করবে না। কারণ, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ খাদ্যের বিনিময়ে খাদ্য সমান সমান হতে হবে। আর ঐ সময়ে যব ছিল আমাদের খাদ্য। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো এটা তো সেটার অনুরূপ নয়। তিনি বললেন, অনুরূপ হওয়ার আশংকা আমি বোধ করছি। (ই. ফা. ৩৯৩৫, ই. সে. ৩৯৩৪) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) ও আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তাঁরা উভয়ে বর্ণনা করেন যে, আনসারদের ‘আদী গোত্রের এক ব্যক্তিকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাইবারে আমির নিযুক্ত করেন। সে জানীব জাতীয় (উন্নত মানের) খেজুর নিয়ে আসে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, খাইবারের সমস্ত খেজুরই কি এ রকম? সে বলল, না; আল্লাহর কসম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা মিশ্রিত খেজুরের দু’ সা‘ -এর বিনিময়ে এক সা‘ ক্রয় করি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এরূপ করো না বরং সমান সমানভাবে করো অথবা একটি বিক্রি করে তার মূল্য দিয়ে অন্যটি খরিদ করিও, অনুরূপভাবে ওজনের ক্ষেত্রেও। (ই. ফা. ৩৯৩৬, ই. সে. ৩৯৩৫) আবূ সা‘ঈদ খুদরী ও আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে খায়বরের আমির নিযুক্ত করেন। সে জানীব শ্রেণীর খেজুর নিয়ে তাঁর নিকট আগমন করে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ খাইবারের সব খেজুর কি এ শ্রেণীর? সে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আল্লাহর কসম! এরূপ নয়। আমরা এ শ্রেণীর এক সা‘ দু’ সা‘র বদলে এবং দু’ সা‘ তিন সা‘র বদলে খরিদ করে থাকি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এরূপ করো না। মিশ্রিত খেজুর দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করো। তারপর দিরহামের বিনিময়ে জানীব খরিদ করো। (ই. ফা. ৩৯৩৭, ই. সে. ৩৯৩৬) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, বার্‌নী জাতীয় খেজুর নিয়ে বিলাল (রাঃ) আগমন করলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, এ কোত্থেকে এনেছ? বিলাল (রাঃ) বলল, আমাদের নিকট নিম্ন শ্রেণীর খেজুর ছিল আমি তা থেকে দু’ সা‘ এক সা‘ -এর বিনিময়ে বিক্রি করেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে খাওয়ানোর জন্যে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেনঃ হায় আফসোস! এতো সাক্ষাত সুদ, এরূপ করো না, বরং যখন তুমি খেজুর ক্রয় করতে চাও, তখন এটাকে বিক্রি করবে, তারপর এর মূল্য দ্বারা ক্রয় করবে। ইবনু সাহ্‌ল (রহঃ) তাঁর বর্ণনায় ‘তখন’ শব্দটি উল্লেখ করেননি। (ই. ফা. ৩৯৩৮, ই. সে. ৩৯৩৭) আবূ সা‘ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট কিছু খেজুর আনা হয়। তিনি বললেন, আমাদের খেজুর অপেক্ষা এ খেজুর তো খুবই উত্তম। লোকটি বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাদের দু’ সা‘ খেজুর এক সা‘র বিনিময়ে বিক্রি করেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ তো সুদ। এটা ফেরত দাও, তারপর আমাদের খেজুর বিক্রি কর এবং এ জাতীয় খেজুর আমাদের জন্যে ক্রয় করো। (ই. ফা. ৩৯৩৯, ই. সে. ৩৯৩৮) আবু সা’ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আমলে মিশ্রিত খেজুর আমাদের দেয়া হত আর তা হচ্ছে মিশ্রিত খেজুর। আমরা এর দু’ সা’ এক সা’র বিনিময়ে বিক্রি করে দিতাম। এ সংবাদ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট পৌঁছালো। তিনি বলেন, দু’ সা’ খেজুর এক সা’র বিনিময়ে, দু’ সা’ গম এক সা’র বিনিময়ে এবং দু’ দিরহাম এক দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করা চলবে না। (ই. ফা. ৩৯৪০, ই. সে. ৩৯৩৯) আবূ নায্‌রাহ্‌ (রহঃ) -এর সূত্রে তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে সার্ফ (স্বর্ণ- রৌপ্যের বিনিময়) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তিনি বলেন, সেটা কি নগদ নগদ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন এতে কোন আপত্তি নেই। অতঃপর আমি সা’ঈদকে জানালাম এবং বললাম, আমি ইবনু ‘আব্বাসের নিকট সার্ফ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি বলেছেন সেটা কি নগদ নগদ? আমি বলেছি, হ্যাঁ। তিনি বলেছেন, কোন ক্ষতি নেই। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বলেছেন, আমি শীঘ্রই তাকে লিখে দিচ্ছি। অতঃপর তিনি আর তোমাদেরকে এ ফাতাওয়া দিবেন না। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম। কতিপয় যুবক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট কিছু খেজুর নিয়ে আসে। সে বলল, এটা আমাদের দেশের খেজুরের মধ্যে অথবা আমাদের এ বছরের খেজুরের মধ্যে কিছুটা খারাপ ছিল। অতঃপর আমি এটা গ্রহণ করি এবং কিছুটা বৃদ্ধি করি। তিনি বলেন, বেশী দিয়েছ তো সুদ প্রদান করেছ, এর কাছেও যেয়ো না। যখন তোমার খেজুরের মধ্যে কোন খারাপ খেজুর দেখবে তখন তা বিক্রি করে দিও, পরে যে খেজুর পছন্দ করো তা ক্রয় করো। (ই. ফা. ৩৯৪১, ই. সে. ৩৯৪০) আবূ নাযরাহ্ (রাঃ) এর সূত্রে তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট বায় -এ সার্ফ (স্বর্ণ-রৌপ্যের বিনিময়) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তারা এতে কোন দোষ মনে করেননি। পরবর্তীকালে একবার আমি আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। তার নিকট সার্ফ বিষয়ে জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, যা বাড়তি হবে তা সুদ। কিন্তু তাদের দু’জনের মতের কারণে আমি এর প্রতিবাদ করলাম। এরপর তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যা শুনেছি তাই তোমার কাছে বর্ণনা করেছি। একদা তাঁর নিকট খেজুরের বাগানের এক মালিক এক সা’ ভালো মানের খেজুর নিয়ে আসে। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খেজুরও এই শ্রেণীরই ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ এ তুমি কোথায় পেলে? সে বলল, আমি দু’ সা’ খেজুর নিয়ে বাজারে যাই এবং তার বদলে এক সা’ ক্রয় করি। কেননা বাজারে এটির মূল্য এতো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বল্লেনঃ আফসোস তোমার প্রতি, তুমি সুদের কাজ করেছ। যখন তুমি এরূপ চাও, তখন তোমার খেজুর কোন বস্তুর বিনিময়ে বিক্রি করে দিবে। পরে তোমার বস্তুর বিনিময়ে যে প্রকার খেজুর চাও কিনবে। আবূ সা’ঈদ (রাঃ) বলেন, সুতরাং খেজুরের বিনিময়ে খেজুর সুদ হওয়ায় অধিক যোগ্য নাকি রৌপ্যের বিনিময়ে অতিরিক্ত রৌপ্য সুদ হওয়ার বেশী যোগ্য। রাবী বলেন, পরবর্তীকালে আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর নিকট এসেছি এবং তিনি আমাকে নিষেধ করেছেন। আর আমি ইবনু ‘আব্বাসের নিকট যাইনি। রাবী বলেন, আবুস সাহ্বা (রহঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি এ ব্যাপারে ইবনু ‘আব্বাসের কাছে মাক্কায় জিজ্ঞেস করেছিলেন, তখন তিনি তা পছন্দ করেননি। (ই. ফা. ৩৯৪২, ই. সে. ৩৯৪১) আবূ সা’ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) তিনি বলেন, দীনারের বিনিময়ে দীনার ও দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম সমান সমান হওয়া চাই। যে বেশি দিবে বা বেশি নিবে সে সুদের কারবার করল। আমি তাকে বললাম, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তো অন্য কিছু বলে থাকেন। তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাসের সাথে সাক্ষাত করেছি এবং জিজ্ঞেস করেছি যে, আপনি এটা যা বলেছেন, তা-কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছেন, না-কি আল্লাহর কিতাবে পেয়েছেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এটা শুনিনি এবং আল্লাহর কিতাবেও পাইনি বরং উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বাকী বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সুদ হয়। (ই. ফা. ৩৯৪৩, ই. সে. ৩৯৪২) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ (রাঃ) জানিয়েছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সুদ কেবল বাকীতে হয়। (ই. ফা. ৩৯৪৪, ই. সে. ৩৯৪৩) উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নগদ বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সুদ হয় না। (ই. ফা. ৩৯৪৫, ই. সে. ৩৯৪৪) আতা ইবনু আবূ রাবাহ্‌ (রাঃ) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করে জিজ্ঞেস করেন, ‘সারফ্‌’ সম্পর্কে আপনার যে বক্তব্য, তার কিছু কি আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছেন, না-কি আল্লাহর কিতাবে কিছু পেয়েছেন? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, কোনটাই আমি বলছি না। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে তো আপনারা অধিক জানেন এবং আল্লাহর কিতাবেও তা আমি জানি না। বরং উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সুদ কেবল বাকীর ক্ষেত্রেই হয়। (ই. ফা. ৩৯৪৬, ই. সে. ৩৯৪৫)

【19】

সুদখোর এবং সুদদাতা উভয়ের জন্য অভিশাপ

আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিশাপ দিয়েছেন সুদখোরের প্রতি ও সুদদাতার প্রতি। রাবী বলেন, আমি বললানঃ এর লেখকের প্রতি ও সাক্ষী দু’জনের প্রতিও। তিনি বলেন, আমরা কেবল তাই বর্ণনা করি যা আমরা শুনেছি। (ই. ফা. ৩৯৪৭, ই. সে. ৩৯৪৬) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লা’নত করেছেন সুদখোরের উপর, সুদদাতার উপর, এর লেখকের উপর ও তার সাক্ষী দু’জনের উপর এবং বলেছেন এরা সবাই সমান। (ই. ফা. ৩৯৪৮, ই. সে. ৩৯৪৭)

【20】

হালাল গ্রহণ ও সন্দেহজনক বস্তু পরিত্যাগ করা

নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি শুনেছিঃ অর্থাৎ- বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, রাবী বলেনঃ (এ সময় নু’মান তাঁর আঙ্গুল দ’টি দ্বারা কানের দিকে ইশারা করেন, নিশ্চয়ই হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট, আর এ উভয়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহজনক বিষয়, অনেক লোকই সেগুলো জানে না। যে ব্যাক্তি এসব সন্দেহজনক বিষয় থেক দূরে থাকে সে তার দ্বীন ও মর্যাদাকে নিরাপদের রাখে, আর যে লোক সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হবে সে হারামের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়বে। যেমন কোন রাখাল সংরক্ষিত চারণভূমির পাশে পশু চরায়, আশংকা রয়েছে সে পশু তার ভেতরে গিয়ে ঘাস খাবে। সাবধান! প্রত্যেক রাজারই সংরক্ষিত এলাকা থাকে, সাবধান! আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর হারামকৃত বিষয়গুলো। জেনে রেখো, দেহের মধ্যে এক টুকরা গোশ্‌ত আছে। যখন তা সুস্থ থাকে তখন সমস্ত দেহই সুস্থ থকে। আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায় তখন সমস্ত দেহই নষ্ট হয়ে যায়। স্মরণ রেখো, তা হলো ‘কাল্‌ব’ হৃদয়। (ই. ফা. ৩৯৪৯, ই. সে. ৩৯৪৮) যাকারীয়্যা (রহঃ) যাকারীয়্যা (রহঃ) -এর সূত্রে উক্ত সানাদে এরূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৯৫০, ই. সে. ৩৯৪৮) নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন। অবশ্য যাকারিয়্যা (রহঃ) বর্ণিত হাদীস তাদের হাদীস থেকে অধিক পূর্ণ ও অধিক পরিচিত। (ই. ফা. ৩৯৫১, ই. সে. ৩৯৫০) নু’মান ইবনু বাশীর ইবনু সা’দ (রাঃ) যিনি ছিলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর একজন সঙ্গী। তিনি হিম্‌সে লোকদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, হালাল সুস্পষ্ট এবং হারামও সুস্পষ্ট। অতঃপর তিনি শা’বী (রহঃ) হতে যাকারিয়্যা (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন তার উক্তি। “আশঙ্কা রয়েছে সেটার ভেতরে চলে যাওয়ার” পর্যন্ত। (ই. ফা. ৩৯৫২, ই. সে. ৩৯৫১)

【21】

উট বিক্রি করা ও নিজে তাতে আরোহণের শর্ত করা

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি তার ক্লান্ত উটের উপর আরোহী হয়ে ভ্রমণ করছিলেন। তিনি উটটি ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা করেন। তিনি বলেন, এরপর আমার সাথে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাক্ষাৎ হয়। তিনি আমার জন্য দু’আ করেন এবং উটটিকে আঘাত করেন। এরপর উট এমনভাবে চলতে থেকে যে, যেমন আর কখনও চলেনি। তিনি বলেন, এটি আমার নিকট এক উকিয়ার বিনিময়ে বিক্রি করো। আমি বললাম, না। তিনি আবারও বললেন, আমার নিকট এটিকে বিক্রি করে দাও। অতঃপর এক উকিয়ার বিনিময়ে তা বিক্রি করে দিলাম এবং আমার বাড়ী পর্যন্ত তাতে আরোহী হওয়ার শর্ত করলাম। যখন আমি পৌঁছালাম তখন তাঁর নিকট উট নিয়ে আসলাম। তিনি আমাকে তাঁর মূল্য পরিশোধ করলেন। পরে ফিরে গেলাম। তিনি আমার পেছনে ডাকতে পাঠালেন এবং বললেন, আমি কি তোমার উট নেয়ার জন্য মূল্য কম বলেছিলাম? তোমার উট নিয়ে যাও এবং তোমার দিরহামও তুমি নিয়ে যাও। ( ই. ফা. ৩৯৫৩, ই. সে. ৩৯৫২) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে ইবনু নুমায়রের হাদীসের মতই বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৯৫৪, ই. সে. ৩৯৫৩) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে জিহাদে যাই। আমি একটি ধীরগতির উটের পিঠে চলছিলাম, তিনি আমাকে বললেনঃ তোমার উটের কী হয়েছে? আমি বললাম, অসুখ হয়েছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পশ্চাতে গেলেন এবং উটকে ধমক দিলেন ও দু’আ করলেন। এরপর তা সকল উটের আগে আগে চলতে থাকে। তিনি বললেন, এখন তোমার উটের অবস্থা কী? আমি বললাম, ভালই; আপনার বারাকাতের পরশ লেগেছে। তিনি বলএন, এটি আমার নিকট বেচে দিবে কি? আমি লজ্জিত হলাম। কারণ এটা ছাড়া আমাদের অন্য কোন বহনকারী উট ছিল না। অবশেষে বললাম, হ্যাঁ। সুতরাং নবী (সাঃ ) -এর নিকট এটা এ শর্তে বিক্রি করলাম যে, মাদীনাহ্‌ পর্যন্ত তার উপর আরোহণ করা আমার অধিকারে থাকবে। তিনি বললেন, এরপর আমি আরয করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমি সদ্য বিবাহিত। তাই আমি তাঁর নিকট অনুমতি চাইলাম (তাড়াতাড়ি চলে আসার), তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। সুতরাং অন্যান্য লোকের আগেই আমি মাদীনার দিকে রওয়ানা হলাম। যখন শেষ সীমায় পৌঁছালাম তখন আমার মামার সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। তিনি আমার কাছে উটের অবস্থা জিজ্ঞেস করলেন। আমি তাকে সে সব কথা জানালাম যা এ ব্যাপারে আমি করেছি। তিনি এজন্যে আমাকে তিরস্কার করলেন। জাবির (রাঃ) বললেন, আমি যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট অনুমতি প্রার্থনা করি তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কুমারী মেয়ে বিবাহ করেছো, না পূর্ব বিবাহিতাকে? বললাম, আমি পূর্ব বিবাহিতাকে নারীকে বিবাহ করেছি। তিনি বললেন, কেন কুমারী বিবাহ করোনি? যার সাথে তুমি আমোদ-প্রমোদ করতে আর সেও তোমার সাথে আমোদ-প্রমোদ করত। আমি বললেম, হে আল্লাহর রসূল! আমার কয়েকজন ছোট ছোট বোন রেখে আমার পিতা মারা যান অথবা (বলেন) শাহাদাত বরণ করেন। তাই আমি পছন্দ করিনি তাদের নিকট তাদেরই মত আর একজনকে বিবাহ করে আনতে যে তাদের সুশিক্ষা দিতে ও দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারবে না। এ কারণে আমি পূর্ব বিবাহিতা নারীকে বিবাহ করেছি, যাতে সে তাদের দেখাশুনা করতে পারে ও সুশিক্ষা দিতে পারে। জাবির (রাঃ) বলেন, যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় পৌঁছালেন, আমি ভোরে উটসহ তাঁর নিকট হাযির হলাম। তিনি তার মূল্য আমাকে প্রদান করেন এবং উটও ফেরত দেন। (ই. ফা. ৩৯৫৫, ই. সে. ৩৯৫৪) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে মক্কা থেকে মাদীনায় আগমন করি। অতঃপর আমার উট অসুস্থ হয়ে পড়ে, অতঃপর পূর্ণ ঘটনাসহ তিনি হাদীস বর্ণনা করেন। আর এ বর্ণনায় আছে যে, তিনি আমাকে বললেন, আমার নিকট তোমার এ উট বিক্রি করো। আমি বললাম, না, বরং এটা আপনারই হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, না, বরং আমার নিকটে বিক্রি কর। আমি বললাম, তাহলে আমার উপর এক ব্যক্তির এক উকীয়্যাহ্‌ স্বর্ণ পাওনা আছে তার বিনিময়ে এটি আপনার। তিনি বললেন, আমি এটা নিয়ে এলাম। তুমি এতে আরোহী হয়ে মাদীনাহ্‌ পর্যন্ত যেতে পারবে। জাবির (রাঃ) বললেন, যখন আমি মাদীনায় পৌঁছালাম তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলালকে বললেন, একে এক উকীয়্যাহ্‌ স্বর্ণ দাও এবং কিছু বাড়তি দাও। অতঃপর তিনি আমাকে এক উকীয়্যাহ্‌ স্বর্ণ দিলেন এবং এক কীরাত বাড়তি দিলেন। জাবির (রাঃ)বলেন, আমি (মনে মনে) বললামঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর এ বাড়তি বস্তু কখনও আমার থেকে আলাদা হবে না। রাবী বলেন, অতঃপর তা আমার নিকট একটি থলির মধ্যে থাকত। সিরিয়াবাসীরা হার্‌রা দিবসে তা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। (ই. ফা. ৩৯৫৬, ই. সে. ৩৯৫৫) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা এক সফরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ছিলাম। আমার উট পিছনে থেকে যায়, অতঃপর হাদীসটি পূর্ণ বর্ণনা করেন। আর তাতে বলেনঃ অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটটিকে খোঁচা দিলেন। তারপর সর্বদা আমাকে বেশি দিতে থাকেন এবং বলতে থাকেন, আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন। (ই. ফা. ৩৯৫৭, ই. সে. ৩৯৫৬) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, যখন আমার নিকট নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসলেন তখন আমার উট ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তারপর তিনি উটটিকে খোঁচা দিলেন। এতে সে দৌড়াতে শুরু করল। পরে আমি এটার লাগাম টেনে ধরি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কথা শুনার জন্য, কিন্তু তা আমি পেরে উঠলাম না। অবশেষে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে একত্রিত হন এবং বলেন, আমার নিকট একে বিক্রি করো। সুতরাং পাঁচ উকিয়্যার বিনিময়ে আমি একে বিক্রি করি। জাবির (রাঃ) বলেন, আমি এ শর্ত করলাম যে, মাদীনাহ্‌ পর্যন্ত আমি এতে সওয়ার হয়ে যাব। তিনি বলেন, মাদীনাহ্‌ পর্যন্ত তুমি সওয়ার হতে পারবে। জাবির (রাঃ) বলেন, যখন আমি মাদীনায় পৌঁছালাম তখন উটসহ আমি তাঁর নিকট গেলাম। তিনি আমাকে আরো এক উকিয়্যাহ্‌ বাড়তি দেন এবং পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটটিও আমাকে প্রদান করেন। (ই. ফা. ৩৯৫৮, ই. সে. ৩৯৫৭) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে কোন এক সফরে সঙ্গী থাকি। রাবী বলেন, হয়ত তিনি যুদ্ধে সফরের কথা বলেছেন এবং পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। তাতে আরও বাড়তে আছে যে, তিনি বলেনঃ হে জাবির! আমি কি মূল্য পরিশোধ করেছি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলেন, মূল্য তোমার, উটও তোমার। (ই. ফা. ৩৯৫৯, ই. সে. ৩৯৫৮) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার থেকে একটি উট দু’ উকিয়্যাহ্ ও এক দিরহাম বা দু’ দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করেন। যখন তিনি সিরার নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন একটি গাভী যাবাহ করার জন্যে আমাকে আদেশ দেন। তারা সকলেই তা খেলেন। যখন তিনি মাদীনায় পৌঁছেন তখন আমাকে মাসজিদে আসার ও দু’রাক‘আত আদায়ের হুকুম করেন। তিনি আমাকে উটের মূল্য ওজন করে দেন এবং কিছু বেশী দেন। (ই. ফা. ৩৯৬০, ই. সে. ৩৯৫৯) জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ঘটনা বর্ণনা করেন। এতে তিনি আরও বলেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে দাম বলেন আমার থেকে সে দামে তা ক্রয় করেন। তিনি দু’ উকীয়্যাহ্ ও এক দিরহাম এবং দু’ দিরহামের কথা উল্লেখ করেননি। আর তিনি গাভী যাবাহ করার কথা বলেন। সুতরাং তা নহর করা হয় ও পরে গোশ্ত বণ্টন করা হয়। (ই. ফা. ৩৯৬১, ই. সে. ৩৯৬০) জাবির (রাঃ) , নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেন, আমি চার দীনার মূল্যে তোমার উট নিলাম, আর এর পিঠে চড়ে তুমি মাদীনায় যেতে পারবে। (ই. ফা. ৩৯৬২, ই. সে. ৩৯৬১)

【22】

কোন কিছু ধার নেয়া এবং তারচেয়ে উৎকৃষ্ট কিছু দ্বারা ধার পরিশোধ করা উত্তম

আবূ রাফি‘ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির থেকে একটি উটের বাচ্চা ধার নেন। এরপর তাঁর নিকট সদাকাহ্র উট আসে। তিনি আবূ রাফি‘কে সে ব্যক্তির উটের ধার শোধ করার আদেশ দান করেন। আবূ রাফি‘ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ফিরে এসে জানালেন যে, সদাকাহ্র উটের মধ্যে আমি সেরূপ দেখছি না , তার চেয়ে উৎকৃষ্ট উট আছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ওটাই তাকে দাও। সে ব্যক্তিই উত্তম যে ধার পরিশোধে উত্তম। (ই. ফা. ৩৯৬৩, ই. সে. ৩৯৬২) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আযাদকৃত গোলাম আবূ রাফি‘ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটের একটি বাচ্চা ধার নেন, এরপর উক্তরূপ বর্ণনা করেন। তবে এতে তিনি বলেন যে, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে সে ব্যক্তি ভাল যে দেনা পরিশোধে উত্তম। (ই. ফা. ৩৯৬৪, ই. সে. ৩৯৬৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উপর এক ব্যক্তির ঋণ ছিল। সে তাঁর সাথে কঠোর ব্যবহার করে। এতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবীগণ তাকে (শাসন করতে) উদ্যত হন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ পাওনাদারের কিছু বলার অধিকার আছে। তারপর তিনি সাহাবীদেরকে বললেনঃ তোমরা তার জন্যে একটি উট খরিদ করো এবং তাকে সেটি দিয়ে দাও। তারা বললেন, আমরা যে উট পাই তা তার উটের চেয়ে উত্তম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ওটা খরিদ করো ও তাকে দিয়ে দাও। কারণ তোমাদেরক বা তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম যে দেনা পরিশোধ করার ব্যাপারে উত্তম। (ই. ফা. ৩৯৬৫, ই. সে. ৩৯৬৪) আবূ কুরায়ব (রহঃ) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি উট ঋণ করে আনেন। অতঃপর এর থেকে বড় একটি উট তাকে দিয়ে বলেন, তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি উত্তম , যে উত্তমভাবে ঋণ শোধ করে। (ই. ফা. ৩৯৬৬, ই. সে. ৩৯৬৫) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে ধার নেয়া উট দাবী করতে থাকে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার উটের চেয়ে উৎকৃষ্ট উট তাকে দাও এবং বলেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম সে ব্যক্তি, যে ধার পরিশোধের ক্ষেত্রে উত্তম। (ই .ফা. ৩৯৬৭, ই. সে. ৩৯৬৬)

【23】

একই শ্রেণীর পশু কম-বেশি করে বিনিময় করা বৈধ

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একদা একজন গোলাম এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট হিজারাতের উপর বাই‘আত করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বুঝতে পারেননি যে, সে লোকটি গোলাম। অতঃপর তার মনিব তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে চলে আসেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ আমার কাছে একে বিক্রি করে দাও। তারপর তিনি দু’জন কালো রং বিশিষ্ট গোলামের বিনিময়ে একে খরিদ করেন। এরপর থেকে তিনি বাই‘আত নিতেন না যতক্ষণ না জিজ্ঞেস করতেন যে, সে গোলাম কি-না? (ই. ফা. ৩৯৬৮, ই. সে. ৩৯৬৭)

【24】

প্রবাসে ও আবাসে বন্ধক রাখা বৈধ

আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ইয়াহূদীর থেকে বাকীতে কিছু খাদ্য বস্তু ক্রয় করেন। অতঃপর তাঁর বর্মটি বন্ধক হিসেবে তাকে প্রদান করেন। (ই. ফা. ৩৯৬৯, ই. সে. ৩৯৬৮) আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ইয়াহূদী থেকে কিছু খাদ্য সামগ্রী খরিদ করেন এবং তাঁর লৌহ বর্মটি তার কাছে বন্ধক রাখেন। (ই. ফা. ৩৯৭০, ই. সে. ৩৯৬৯) আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা এক ইয়াহূদীর কাছ থেকে নির্ধারিত সময়ের শর্তে কিছু খাদ্য সামগ্রী খরিদ করেন এবং স্বীয় লৌহ বর্ম তার কাছে বন্ধক রাখেন। (ই. ফা. ৩৯৭১, ই. সে. ৩৯৭০) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুবহু বর্ণনা করেন। তবে তাতে লোহার ব্যাপারে উল্লেখ নেই। (ই. ফা. ৩৯৭২, ই. সে. ৩৯৭১)

【25】

সালাম (অগ্রিম) ক্রয়-বিক্রয় প্রসঙ্গে

আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাদীনায় আগমন করেন তখন মাদীনাবাসীরা এক বা দু’ বছর মেয়াদে বিভিন্ন ধরনের ফল অগ্রিম ক্রয় করত। অতঃপর তিনি বলেন, যে কেউ খেজুর অগ্রিম ক্রয় করবে, সে যেন নির্ধারিত পরিমাপে এবং নির্ধারিত ওজনে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত সময়ের জন্য ক্রয় করে। (ই .ফা. ৩৯৭৩, ই. সে. ৩৯৭২) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করেন আর সে সময়ে মাদীনার লোকজন খেজুর অগ্রিম ক্রয় করত। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেনঃ যে অগ্রিম ক্রয় করতে চায়, সে যেন নির্ধারিত পরিমাপ ও নির্ধারিত ওজনে ক্রয় করে। (ই. ফা. ৩৯৭৪, ই. সে. ৩৯৭৩) ইয়াহ্ইয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া, আবূ বাক্র ইবনু শাইবাহ্ ও ইসমাঈল ইবনু সালিম (রহঃ) সকলেই ইবনু ‘উয়াইনাহ্ সূত্রে ইবনু আবূ নাজীহ্ (রহঃ) উপরোক্ত সানাদে ‘আবদুল ওয়ারিস (রহঃ) -এর বর্ণিত হাদীসের মতো হাদীস বর্ণনা করেন। তবে ইবনু ‘উয়াইনাহ্ (রহঃ) নির্দিষ্ট সময়ের কথা উল্লেখ করেননি। (ই. ফা. ৩৯৭৫, ই. সে. ৩৯৭৪) সুফ্‌ইয়ানের সূত্রে ইবনু আবূ নাজীহ্‌ (রহঃ) আপন সানাদে ইবনু ‘উয়াইনাহ্র হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন এবং সুফ্ইয়ান (রহঃ) এতে নির্ধারিত সময়ের কথে উল্লেখ করেছেন। (ই. ফা. ৩৯৭৬, ই. সে. ৩৯৭৫)

【26】

খাদ্য-দ্রব্য গুদামজাত করা হারাম হাওয়া

মা‘মার (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গুদামজাতকারী ব্যক্তি পাপাচারী। অতঃপর সা‘ঈদকে বলা হলো, আপনি তো গুদামজাত করেন। সা‘ঈদ (রহঃ) বললেন যে, মা‘মার এ হাদীস বর্ণনা করছেন- তিনিও গুদামজাত করে থাকেন। (ই. ফা. ৩৯৭৭, ই. সে. ৩৯৭৬) মা‘মার ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাপাচারী লোক ব্যতীত কেউ গুদামজাত করে না। (ই. ফা. ৩৯৭৮, ই. সে. ৩৯৭৭) ‘আদী ইবনু কা’ব গোত্রের জনৈক মা‘মার ইবনু আবূ মা‘মার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অতঃপর ইয়াহ্ইয়া থেকে সুলাইমান ইবনু বিলাল (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেন। (ই. ফা. ৩৯৭৯, ই. সে. ৩৯৭৮)

【27】

বেচাকেনায় কসম খাওয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, কসমে পণ্য-দ্রব্যের কাটতি হয়, তবে তা লাভ ধ্বংসকারী। (ই. ফা. ৩৯৮০, ই. সে. ৩৯৭৯) আবূ কাতাদাহ্‌ আনসারী (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেন যে, তোমরা বিরত থাকো ব্যবসায়ের মধ্যে অধিক কসম খাওয়া থেকে। কেননা সেটা পণ্য বিক্রয়ে সহায়তা করে কিন্তু বারাকাত বিনষ্ট করে দেয়। (ই. ফা. ৩৯৮১, ই. সে. ৩৯৮০)

【28】

শুফ্’আহ্ (শরীক ব্যক্তি ক্রয়ের বেশী হকদার)

জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জমি অথবা বাগানে যদি কারও কোন শরীক থাকে, তবে ঐ শরীকের অনুমতি না নিয়ে সে তা বিক্রি করতে পারবে না। সে চাইলে গ্রহণ করবে আর না চাইলে ছেড়ে দিবে। (ই. ফা. ৩৯৮২, ই. সে. ৩৯৮১) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেসব শরিকী বিষয়ে শুফ্‌’আর পক্ষে হুকুম দিয়েছেন যা বিভক্ত করা যায় না- জমি হোক বা বাগান। আপন শরিককে না জানিয়ে তা বিক্রি করা বৈধ নয়। সে ইচ্ছে করলে রাখবে আর ইচ্ছে করলে ছেড়ে দিবে। যদি সে বিক্রি করে এবং শরীককে অবগত না করে তাহলে সে শরীকই তা পাওয়ার অধিকতর হকদার।(ই. ফা. ৩৯৮৩, ই. সে. ৩৯৮২) আবূ তাহির (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি শরীকি বিষয়ে শুফ্’আর অধিকার আছে- জমি হোক বা বাড়ী অথবা প্রাচীর। বিক্রি করা তার পক্ষে বৈধ হবে না, শরীকের নিকট পেশ করা ব্যতীত। অতঃপর হয়ত সে গ্রহণ করবে অথবা পরিত্যাগ করবে। যদি সে না বলে তবে তার শরীকই সেটার বেশী অধিকারী যতদিন তাকে খবর দেয়া না হবে। (ই. ফা. ৩৯৮৪, ই. সে. ৩৯৮৩)

【29】

প্রতিবেশীর প্রাচীরের গায়ে কাঠ স্থাপন করা

আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার প্রাচীরের গায়ে কাঠ স্থাপন করতে যেন আপন প্রতিবেশীকে বারণ না করে। এরপর আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) বলেন, কী ব্যাপার! আমি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে অমনোযোগী দেখতে পাচ্ছি। আল্লহর কসম! আমি অবশ্যই তা দিয়ে তোমাদের ঘাড়ে ছুঁড়ে মারবো। (ই. ফা. ৩৯৮৫, ই. সে. ৩৯৮৪) যুহরী (রহঃ) সূত্রে যুহরী (রহঃ) সূত্রে এ সানাদে হুবহু হাদীস বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৯৮৬, ই. সে. ৩৯৮৫)

【30】

যুল্‌ম করে জায়গা-জমি এবং অন্যান্য কিছু জোর পূর্বক দখল করা হারাম

সা’ঈদ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আম্‌র ইবনু নুফায়ল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কারও এক বিঘত (অর্ধহাত) জমি দখল করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার গলায় সাত স্তর যমীন বেড়িরূপে পরিয়ে দেবেন। (ই. ফা. ৩৯৮৭, ই. সে. ৩৯৮৬) সা’ঈদ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আমর ইবনু নুফায়ল (রাঃ) ‘আরওয়া’ নামক এক মহিলা বাড়ীর কিছু অংশ নিয়ে তার সাথে ঝগড়া বাধায়। তিনি বললেন, তোমরা ওকে বলতে দাও এবং তার দাবীকৃত জমি ছেড়ে দাও। কারণ, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছিঃ যে কেউ অন্যায়ভাবে এক বিঘত জমি জবর দখল করবে কিয়ামতের দিন তাকে সাত স্তর জমিনের বেড়ি (তার গলায়) পরিয়ে দেয়া হবে। হে আল্লাহ! ‘আরওয়া যদি মিথ্যাবাদিনী হয় তবে তার চোখ অন্ধ করে দিন এবং তার ঘরেই তার কবর করুন।রাবী বলেন, পরবর্তীকালে আমি আরওয়াকে অন্ধ অবস্থায় দেখেছি, প্রাচীরে প্রাচীরে সে আঘাত খেয়ে খেয়ে চলত। সে বলতো, সা’ঈদ ইবনু যায়দের বদ্‌দু’আ আমার লেগেছে। একদিন সে বাড়ির মধ্যে চলাচল করছিল। বাড়ির মধ্যে এক কুয়ার কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় সে তাতে পড়ে যায়, কুয়াই তার কবর হয়। (ই. ফা. ৩৯৮৮, ই. সে. ৩৯৮৭) উরওয়াহ্‌ (রহঃ) আরওয়া বিনতু উওয়ায়স সা’ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ)-এর উপর দাবী করেন যে, তিনি আরওয়ার জমির কিছু অংশ জবর দখল করেছেন। সে মারওয়ান ইবনু হাকামের (উমাইয়াহ্‌ শাসক) নিকট এর বিচার দাবি করে। সা’ঈদ বললেনঃ আমি কী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর থেকে ঐ কথা শোনার পরে তার জমির কিছু অংশ জবর দখল করতে কেমন করে পারি? তিনি বললেন, আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কী কথা শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি জোরপূর্বক দখল করবে কিয়ামতের দিন তাকে সাত স্তর জমিনের বেড়ি (তার গলায়) পরিয়ে দেয়া হবে। মারওয়ান বললেন, এরপর আপনার নিকট আর প্রমাণের কথা জিজ্ঞেস করব না। এরপর সা’ঈদ বললেন, হে আল্লাহ! ‘আরওয়া যদি মিথ্যাবাদিনী হয় তবে তার দু’চোখ অন্ধ করে দিন এবং তার জমিতে তাকে মৃত্যুদান করুন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর সে অন্ধ না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেনি। পরে তার জমিতে চলার সময় হঠাৎ এক গর্তে পড়ে মারা যায়। (ই. ফা. ৩৯৮৯, ই. সে. ৩৯৮৮) সা’ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জোরপূর্বক এক বিঘত পরিমাণ জমি দখল করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত স্তর জমির বেড়ি পরিয়ে দেয়া হবে। (ই. ফা. ৩৯৯০, ই. সে. ৩৯৮৯) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেও যদি এক বিঘত জমি না-হকভাবে জবর দখল করে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সাত স্তর যমীনের বেড়ি পরিয়ে দিবেন। (ই.ফা. ৩৯৯১, ই. সে. ৩৯৯০) মুহাম্মাদ ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) আবূ সালামাহ্‌ (রাঃ) তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন। তার ও তার গোত্রের মাঝে একটি জমি নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল। তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে গমন করেন এবং তাঁকে সে বিষয়ে বলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, হে আবূ সালামাহ্‌! জমি থেকে বেঁচে থাকো। কেননা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেনঃ যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি যুল্‌ম করে নিবে তাঁকে সাত স্তর জমির বেড়ি পরানো হবে। (ই.ফা. ৩৯৯২, ই. সে. ৩৯৯১) মুহাম্মাদ ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) আবূ সালামাহ্‌ (রাঃ) তাঁকে বলেছেন যে, তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকত উপস্থিত হন। অতঃপর উক্ত রূপ বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৩৯৯৩, ই. সে. ৩৯৯২)

【31】

মতবিরোধ দেখা দিলে রাস্তার পরিমাণ কী হবে?

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নাবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা রাস্তার ব্যাপারে মতবিরোধ করবে তখন তা সাত হাত প্রশস্ত করতে হবে। (ই. ফা. ৩৯৯৪, ই. সে. ৩৯৯৩)