24. ফারায়িয

【1】

অংশীদারদের নির্ধারিত অংশ তাদেরকে দিয়ে দাও, তারপর যা থাকবে তা নিকটতম পুরুষদের (আসাবা)

উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিম ব্যক্তি কাফিরের ওয়ারিস হবে না এবং কাফিরও কোন মুসলিমের ওয়ারিস হবে না। (ই.ফা. ৫ম খণ্ড-৩৯৯৫, ই.সে. ৩৯৯৪) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অংশীদারদের নির্ধারিত প্রাপ্য অংশ দিয়ে দাও। অতঃপর যা অবশিষ্ট থাকে তা (আসাবা হিসেবে) নিকটতম পুরুষ লোকের প্রাপ্য। (ই.ফা. ৩৯৯৬, ই.সে. ৩৯৯৫) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অংশীদারদের নির্ধারিত অংশ প্রদান কর। তাপর যে অংশ অবশিষ্ট থাকবে তা নিকটতম পুরুষের প্রাপ্য। (ই.ফা. ৩৯৯৭, ই.সে. ৩৯৯৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সম্পদ অংশীদারদের মধ্যে আল্লাহর কিতাবের ফায়সালা অনুযায়ী বণ্টন কর। তারপর যে অংশ অবশিষ্ট থাকে তা নিকতম পুরুষের প্রাপ্য। (ই.ফা. ৩৯৯৮, ই.সে. ৩৯৯৭) ইবনু তাউস (রহঃ)- এর সূত ইবনু তাউস (রহঃ)- এর সূত্রে উপর্যুক্ত হাদীস, ওয়াহয়ব ও রাওহ্ ইবনু কাসিমের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৩৯৯৯, ই.সে. ৩৯৯৮)

【2】

কালালার [২০] উত্তরাধিকার সংক্রান্ত

[২০] সন্তান ও পিতৃমাতৃহীন অবস্থায় মারা গেলে তাকে ‘কালালাহ্‌’ বলা হয়। জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একবার অসুস্থ হয়ে পড়ি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বকর (রাঃ) পায়ে হেঁটে আমাকে দেখতে আসেন। আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযূ করেন এবং ওযূর অবশিষ্ট পানি আমার উপর ছিটিয়ে দেন। আমি জ্ঞান ফিরে পেলাম, আর বললাম, হে আল্লাহর ‘রসূল! আমি আমার সম্পদ কিরূপে বণ্টন করবো? তিনি আমাকে কোন উত্তর দেননি, মীরাস সংক্রান্ত আয়াত (অর্থাৎ “লোকে আপনার নিকট ব্যবস্থা জানতে চায়, বলুন, পিতামাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি সম্বন্ধে তোমাদেরকে আল্লাহ জানাচ্ছেন...”-(সূরা আন্‌ নিসা ৪:১৭৬) নাযিল হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। (ই.ফা. ৪০০০, ই.সে. ৩৯৯৯) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবু বকর (রাঃ) পায়ে হেঁটে বানু সালামায় আমাকে দেখতে আসেন। তারা আমাকে অজ্ঞান অবস্থায় পান। রাসুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানি আনতে বলেন। এরপর তিনি ওযূ করেন, তারপর তা থেকে কিছু পানি আমার উপর ছিটিয়ে দেন। আমি জ্ঞান ফিরে পেলাম, আর বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসুল ! আমি আমার সম্পদ কিভাবে বন্টন করবো? তখন এ আয়াত নাযিল হয় – “ আল্লাহ তোমাদের সন্তানাদি সম্বন্ধে নির্দেশ দিচ্ছেন, এক পুত্রের অংশ দু’কন্যার অংশের সমান...............“- ( সূরা আন নিসা ৪:১১)। ( ই.ফা ৪০০১, ই.সে ৪০০০ ) জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখতে আসেন। আমি রোগাক্রান্ত ছিলাম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আবূ বকর (রাঃ)। তাঁরা উভয়েই পায়ে হেঁটে আসেন। তিনি এসে আমাকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পান। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযূ করেন এবং অবশিষ্ট পানির কিছু আমার উপর ছিটেয়ে দেন। আমি জ্ঞান ফিরে পেয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে দেখতে পেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আমার সম্পদ কিভাবে বণ্টন করবো? আমাকে তিনি কোন উত্তর দিলেন না, যতক্ষণ না মীরাসের আয়াত নাযিল হয়। (ই.ফা. ৪০০২, ই.সে. ৪০০১) জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে আগমন করেন। আমি তখন রোগে জ্ঞানহারা হয়ে পড়ি। তারপর তিনি ওযূ করেন। তাঁর ওযূর কিছু অংশ লোকেরা আমার উপর ছিটিয়ে দেন। আমি জ্ঞান ফিরে পেয়ে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! কালালাহ্‌ অবস্থায় আমার মীরাস বণ্টন হবে। অতঃপর মীরাসের আয়াত অবতীর্ণ হয়। আমি মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদিরকে বললাম (আরবী) তিনি বললেন, এমনটিই অবতীর্ণ হয়েছে। (ই.ফা. ৪০০৩, ই.সে. ৪০০২) ইসহাক্ ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) নায্র ইবনু শুমায়ল ও আবূ ‘আমির ‘আকাদী (রহঃ) হতে এবং মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না (রহঃ) ওয়াহ্ব ইবনু জারীর (রহঃ) হতে এবং তারা সকলেই শু’বাহ্ (রহঃ) উক্ত হাদীস বর্ণনা করেন। ওয়াহ্ব ইবনু জারীর- এর হাদীস আছে ‘ফারায়িয’- এর আয়াত নাযিল হলো। আর নায্র ও ‘আকীদার বর্ণনায় আছে ‘ফারয-এর আয়াত নাযিল হলো’। কিন্ত তাদের কারও বর্ণনায় এ কথা নেই যে, শু‘বাহ্ ইবনু মুনকাদির বলছেন। (ই.ফা. ৪০০৪, ই.সে. ৪০০৩) মা’দান ইবনু তালহাহ্‌ (রাঃ) উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) এক জুমু’আর দিনে খুত্‌বাহ্‌ প্রদান করেন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বকর (রাঃ)- এর কথা বললেন। তারপর তিনি বললেন, আমি আমার পরে এমন কোন বিষয় রেখে যাব না, যা আমার নিকট ‘কালালা’র চেয়ে বেশী জটিল। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বারবার কোন বিষয় নিয়ে জিজ্ঞেস করিনি, যেমনটি বারবার জিজ্ঞেস করেছি ’কালালাহ্‌’ সম্পর্কে। আর তিনিও অন্য কোন বিষয়ে এমন কঠোরতা আমাকে দেখাননি যেরূপ কঠোরতা দেখিয়েছেন এ বিষয়ে। এমনকি তিনি তাঁর আঙ্গুল আমার বুকের উপর চেপে ধরে বলেছেন, হে ‘উমার! গ্রীষ্মকালে অবতীর্ণ সূরা নিসার শেষের আয়াত কি তোমার জন্য যথেষ্ট নয়? আর আমি যদি জীবিত থাকি তবে এ ব্যাপারে এমন ফায়সালা করবো যা দেখে কুরআন পাঠকারী আর যে কুরান পড়ে না উভয়েই ফায়সালা করবে। (ই.ফা. ৪০০৫, ই.সে. ৪০০৪) কাতাদার সূত্রে কাতাদার সূত্রে এ সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪০০৬, ই.সে. ৪০০৫)

【3】

কালালাহ্‌ সম্পর্কিত আয়াতই সর্বশেষ নাযিলকৃত আয়াত

বারা (রাঃ) তিনি বলেন, কুরআনের সর্বশেষ যে আয়াত নাযিল হয় তা হলোঃ (আরবী) তারা আপনার কাছে জানতে চায়, আপনি বলুন, আল্লাহ তা’আলা কালালার ব্যাপারে সমাধান দিচ্ছেন। (ই.ফা. ৪০০৭, ই.সে. ৪০০৬) আবূ ইসহাক্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি বারা ইবনু ’আযিব (রাঃ)- কে শুনেছি যে, সর্বশেষ নাযিলকৃত আয়াত ‘কালালা’র আয়াত এবং সর্বশেষ নাযিলকৃত ‘সূরা বারাআত। (ই.ফা. ৪০০৮, ই.সে. ৪০০৭) বারা (রহঃ) সর্বশেষ অবতীর্ণ পূর্ণাঙ্গ সূরা, সূরা তাওবাহ্‌ আর সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত ’কালালাহ্‌’ আয়াত। (ই.ফা. ৪০০৯, ই.সে. ৪০০৮) বারা (রাঃ) বারা (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে অতিরিক্ত এ কথাটি বলেন যে, ‘সর্বশেষ অবতীর্ণ পূর্ণাঙ্গ সূরা’। (ই.ফা. ৪০১০, ই.সে. ৪০০৯) বারা (রাঃ) তিনি বলেন, সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত (আরবী)। (ই.ফা. ৪০১১, ই.সে. ৪০১০)

【4】

যে ব্যক্তি সম্পদ রেখে যাবে তা তার ওয়ারিসগণ পাবে

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট যদি এমনও মৃত দেহ (জানাযার জন্যে) আসতো যার উপর ঋণ থাকতো, তবে তিনি জিজ্ঞেস করতেন, সে কি তার ঋণ পরিশোধের জন্যে ঐ পরিমাণ সম্পদ রেখে গেছে, যা দ্বারা ঋণ পরিশোধ হতে পারে? যদি জানান হতো যে, সে ঋণ পূর্ণ করার পরিমাণ সম্পদ রেখে গেছে, তবে তিনি তার জানাযাহ পড়তেন। অন্যথায় বলতেন, তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযাহ্‌ পড়ো। যখন আল্লাহ্‌ তাঁর জন্য সম্পদের সমৃদ্ধির পথ খুলে দেন, তখন তিনি বলেন যে, আমি মুমিনদের জন্যে তাদের নিজেদের অপেক্ষাও বেশি নিকটবর্তী। সুতরাং যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত অবস্থায় মারা যাবে, তার সে ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব আমার উপর। আর যে লোক সম্পদ রেখে যাবে, তা তার উত্তরাধিকারীদের প্রাপ্য। (ই.ফা. ৪০১২, ই.সে. ৪০১১) যুহরী (রহঃ) যুহরী (রহঃ)- এর সূত্রে উক্ত সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪০১৩, ই.সে. ৪০১২) ইবনু হুরাইরাহ্ (রাঃ)- এর সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, ঐ সত্তার শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! পৃথিবীর উপর এমন কোন মু’মিন নেই, যার সবচেয়ে নিকটতম (অধিকতর আপন) লোক আমি নই। সুতরাং যে লোক ঋণ অথবা সন্তান রেখে যাবে, আমি হবো তার অভিভাবক। আর তোমাদের কেউ যদি সম্পদ রেখে যায় তবে সে মাল পাবে তার নিকটজনেরা; সে যেই হোক না কেন। (ই.ফা. ৪০১৪, ই.সে. ৪০১৩) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ)- এর সূত্রে তিনি বলেন, এগুলো আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি কতগুলো হাদীস বর্ণনা করেন। তার মধ্যে একটি এই যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহর কিতাব মুতাবিক অন্য সব লোক অপেক্ষা আমি মু’মিনদের সবচেয়ে নিকটবর্তী। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ঋণ অথবা নিঃসম্বল পরিজন রেখে যায়, তখন আমাকে ডাকিও, আমি তার অভিভাবক। আর তোমাদের মধ্যে যে সম্পদ রেখে যায়, তার সম্পদের অধিকারী হবে তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় যেই থাকুক। (ই.ফা. ৪০১৫, ই.সে. ৪০১৪) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি সম্পদ ছেড়ে যায়, তা তার উত্তরাধিকারীদের প্রাপ্য। আর যে নিঃসম্বল পরিজন রেখে যায়, তার দায়িত্ব আমাদের। (ই.ফা. ৪০১৬, ই.সে. ৪০১৫) আবূ বাকর ইবনু নাফি‘ (রহঃ) গুনদার থেকে এবং যুহায়র ইবনু হার্ব (রহঃ) ‘আবদুর রহমান ইবনু মাহদী (রহঃ) হতে উভয়ে শু‘বাহ (রহঃ) উপরিউক্ত সানাদে বর্ণনা করেন। অবশ্য গুনদার বর্ণিত হাদীসে আছে, আর যে ব্যক্তি নিঃসম্বল পরিজন রেখে যায়, আমি তাদের অভিভাবক হবো। (ই.ফা. ৪০১৭, ই.সে. ৪০১৬)