27. মানত

【1】

মানৎ পূর্ণ করার নির্দেশ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকট সে মানতের কথা জিজ্ঞেস করেন, যা তাঁর মায়ের যিম্মায় ছিল, কিন্তু তিনি তা পূর্ণ করার আগেই মারা যান। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি তাঁর পক্ষ থেকে তা আদায় কর। (ই.ফা. ৪০৮৯, ই.সে. ৪০৮৮) ‘আব্‌দ ইবনু হুমায়দ ও ‘উসমান ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ) ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া, আবূ বাক্‌র ইবনু আবূ শাইবাহ, ‘আমর আন্‌ নাকিদ, ইসহাক্‌ ইবনু ইবরাহীম, হারমালাহ্‌ ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া, ‘আব্‌দ ইবনু হুমায়দ ও ‘উসমান ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ) সবাই যুহরী (রহঃ)- এর সূত্রে লায়স (রহঃ)- এর বর্ণিত সানাদের সমার্থক হাদীস বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪০৯০, ই.সে. ৪০৮৯)

【2】

মানৎ করার নিষেধাজ্ঞা, আর তা কিছু ফিরিয়ে দেয় না

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক সময় আমাদেরকে মানৎ করতে বারণ করতেন এবং বলতেন যে, তা (তাকদীরের) কিছুই ফিরিয়ে দেয় না। তবে এর মাধ্যমে কৃপণের হাত থেকে কিছু বের করা হয়। [২২] (ই.ফা. ৪০৯১, ই.সে. ৪০৯০) ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মানৎ কোন কিছুকে না এগিয়ে আনতে পারে, আর না পিছিয়ে দিতে পারে। তবে এর মাধ্যমে কৃপণ থেকে কিছু (মাল) বের করা হয়। (ই.ফা. ৪০৯২, ই.সে. ৪০৯১) ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানৎ নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন, তা কোন রকম কল্যাণ বয়ে আনে না। তবে এর মাধ্যমে কৃপণ লোকের থেকে কিছু বের করা হয়। (ই.ফা. ৪০৯৩, ই.সে. ৪০৯২) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’, মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) উক্ত সানাদে জারীরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪০৯৪, ই.সে. ৪০৯৩) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মানৎ করো না। কারণ, মানৎ তাকদীর থেকে কোন উপকার করে না। তার মাধ্যমে কেবল কৃপণের সম্পদই বের করা হয়। (ই.ফা. ৪০৯৫, ই.সে. ৪০৯৪) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানৎ করতে বারণ করেছেন এবং বলেছেন, তা তাকদীরকে ফিরাতে পারে না। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র কৃপণের থেকে কিছু বের করা হয়। (ই.ফা. ৪০৯৬, ই.সে. ৪০৯৫) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানৎ এমন কোন জিনিসকে মানুষের নিকটে এনে দেয় না, যা আল্লাহ তার তাকদীরে রাখেননি। কিন্তু মানৎ যদি তাকদীরের অনুকূলে হয়ে যায় তখন এর দ্বারা কৃপণের সে মাল বের করা হয়, যা বের করতে সে ইচ্ছুক ছিল না। (ই.ফা. ৪০৯৭, ই.সে. ৪০৯৬) ‘আম্‌র ইবনু আবূ ‘আমর (রহঃ) ‘আম্‌র ইবনু আবূ ‘আমর (রহঃ)-এর সূত্রে উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪০৯৮, ই.সে. ৪০৯৭)

【3】

আল্লাহর অবাধ্যতায় এবং বান্দার সাধ্যাতীত বিষয়ে মানত পূর্ণ করতে হয় না

ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, সাকীফ গোত্র ছিল বানূ 'উকায়ল গোত্রের মিত্র। সাকীফ গোত্রের লোকেরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর দু’জন সাঃহাবীকে বন্দী করে। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সাঃহাবীরা বানূ 'উকায়ল গোত্রের এক ব্যক্তিকে বন্দী করে এবং তার সাঃথে আযবা নাম্নী উষ্ট্রীকেও আটক করে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছে আসলেন। তখন সে বাঁধা অবস্থায় ছিল। সে ডাক দিল, ইয়া মুহাম্মাদ! ইয়া মুহাম্মাদ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট এলেন এবং বললেন, তোমার কী অবস্থা? সে বললো, আমাকে কী কারণে বন্দী করেছেন? আর কেনই বা হাজীদের অগ্রগামী উষ্ট্রীটিকে আটক করেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বিরাট অপরাধের কারণে। তোমার মিত্র সাকীফ গোত্রের অপরাধের জন্য তোমাকে বন্দী করেছি। এরপর তিনি তার কাছ থেকে ফিরে আসলেন। সে আবার তাঁকে ডেকে বললো, ইয়া মুহাম্মাদ! ইয়া মুহাম্মাদ! আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন বড়ই দয়ালু এবং নম্র স্বভাবের। তাই তিনি তার দিকে আবার এলেন এবং বললেন তোমার কী অবস্থা? সে বললো, আমি একজন মুসলিম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি যদি এ কথা তখন বলতে, যখন তোমার ব্যাপারে তোমার অধিকারে ছিল, তবে তুমি পুরোপুরি সফল হতে। এরপর তিনি ফিরে আসলেন। সে আবারও তাঁকে ডাক দিয়ে বললো, ইয়া মুহাম্মাদ! ইয়া মুহাম্মাদ! তিনি পুনরায় তার কাছে এসে বললেন, তোমার কী হয়েছে? সে বললো, আমি ক্ষুধার্ত, আমাকে খাবার দিন এবং পিপাসিত, আমাকে পান করান। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ-ই তোমার প্রয়োজন? অতঃপর তাকে সেই দু’ব্যক্তির বিনিময়ে মুক্তি দেয়া হয়। রাবী বলেন, একবার এক আনসার মহিলা বন্দী হয় এবং আযবা নাম্নী উষ্ট্রী (তাদের হাতে) ধরা পড়ে। মহিলাটি বাঁধা অবস্থায় ছিল। গোত্রের লোকদের অভ্যাস ছিল তারা তাদের পশু গৃহের সাঃমনে রাখত। এক রাত্রে রমণীটি বন্ধন মুক্ত হয়ে পলায়ন করে এবং উটের কাছে আসে। সে যখনই কোন উটের কাছে আসতো, উট আওয়াজ করতো এবং তখন সে তাকে পরিত্যাগ করতো। অবশেষে সে ‘আযবার’ কাছে এসে পৌঁছে। ‘আযবা’ কোন আওয়াজ করলো না। এ উটনী ছিল বড়ই অনুগত। সে তার পিঠের উপর বসে এবং তাকে হাঁকায়, আর সে চলতে থাকে। তখন তারা তার পলায়ন টের পেয়ে গেল এবং তার খোঁজে ছুটল। কিন্তু ‘আযবা’ তাদেরকে ব্যর্থ করে দেয়। রাবী বলেন, মহিলাও আল্লাহর নামে মানৎ করে যে, আল্লাহ যদি এ উষ্ট্রীর সাহায্যে তাকে মুক্তি দেন, তবে সে অবশ্যই তাকে কুরবানী দিবে। তারপর যখন মহিলাটি মদীনায় আসলেন আর লোক সকল তাকে দেখাদেখি করছেন এবং বলাবলি করছেন। এ আযবা নাম্নী উষ্ট্রী রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর। তারপর তারা রাসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে ঘটনাটি তাঁকে বললেন। তিনি বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ’ কী মন্দ প্রতিদান, যা সে তাকে দিয়েছে। সে আল্লাহর নামে মানৎ করেছে যে, যদি আল্লাহ তাকে এ উষ্ট্রীর উপর রক্ষা করেন তবে সে তাকেই কুরবানী করে দিবে। (জেনে রেখ) পাপের ব্যাপারে মানৎ করলে সে মানৎ পূরণ করতে নেই। আর সে বস্তুর মানৎও পূরণযোগ্য নয়, যার মালিক সে ব্যক্তি নয়। ইবনু হুজ্‌র (রহঃ)- এর বর্ণনায় আছে যে, আল্লাহর নাফারমানীর বিষয়ে মানৎ সংঘটিত হয় না। (ই.ফা. ৪০৯৯, ই.সে. ৪০৯৮) আইয়ূব (রহঃ) আবূ রাবী’ ‘আতাকী, ইসহাক্‌ ইবনু ইবরাহীম ও ইবনু আবূ 'উমার (রহঃ) ... আইয়ূব (রহঃ)- এর সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আর হাম্মাদ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে যে, ‘আযবা’ ছিল ‘উকায়ল গোত্রর কোন এক ব্যক্তির এবং হাজীদের উটের মধ্যে অগ্রগামী। তার হাদীসে আরও আছে যে, মহিলাটি একটি উষ্ট্রীর নিকট আসে, যা ছিল অনুগত ও সওয়ারীতে অভ্যস্ত। আর সাকাফীর হাদীসে আছে যে, তা ছিল একটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উষ্ট্রী। (ই.ফা. ৪১০০, ই.সে. ৪০৯৯)

【4】

যিনি হেঁটে কা'বায় যাওয়ার মানৎ করেন

আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার এক বৃদ্ধকে দেখলেন যে, সে তার দু’পুত্রের উপর ভর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এর কী হলো? তারা বললো, সে হেঁটে চলার মানৎ করেছে। তিনি বললেন, এভাবে নিজেকে শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলার কিছু আসে যায় না। অতঃপর তিনি তাকে সওয়ারিতে আরোহী হতে বলেন। (ই.ফা. ৪১০১, ই.সে. ৪১০০) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) , একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বৃদ্ধকে তার দু’পুত্রের মাঝে তাদের উপর ভর দিয়ে চলতে দেখেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ ব্যক্তির কী হলো? তার দু’পুত্র বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! তাঁর উপর (হেঁটে যাওয়ার) মানৎ ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ওহে বৃদ্ধ! তুমি বাহনে উঠ। কেননা আল্লাহ তোমার ও তোমার মানতের ব্যাপারে অমুখাপেক্ষী। এ শব্দ হল কুতাইবাহ্‌ ও ইবনু হুজ্‌র (রহঃ)- এর। (ই.ফা. ৪১০২, ই.সে. ৪১০১) কুতাইবাহ্‌ ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) কুতাইবাহ্‌ ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) ... 'আম্‌র ইবনু আবূ 'আম্‌র (রহঃ) সূত্রে উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪১০৩, ই.সে. ৪১০২) উক্‌বাহ্‌ ইবনু 'আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমার বোন খালি পায়ে হেঁটে বাইতুল্লাহ যাওয়ার মানৎ করে। সে আমাকে তার জন্যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট ফাতওয়া জানার জন্যে আদেশ করে। আমি তাঁর কাছে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, সে যেন পায়ে হেঁটে ও আরোহণ করে যায়। (ই.ফা. ৪১০৪, ই.সে. ৪১০৩) উকবাহ ইবনু 'আমির জুহানী (রহঃ) তিনি বলেন, আমার বোন একবার মানৎ করে, পরবর্তী অংশ মুফায্‌যাল বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। এ হাদীসে (আরবী) (নগ্ন পায়ে) শব্দটি উল্লেখ করা হয়নি এবং অতিরিক্ত বলেছেন যে, “আবুল খায়র (রহঃ) ‘উকবাহ (রাঃ) থেকে পৃথক হতেন না।” (ই.ফা. ৪১০৫, ই.সে. ৪১০৪) ইয়াযীদ ইবনু আবূ হাবীব (রহঃ) উক্ত সানাদে 'আবদুর রায্‌যাক (রহঃ)- এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪১০৬, ই.সে. ৪১০৪/ক)

【5】

মানতের কাফ্‌ফারাহ্‌ প্রসঙ্গে

উকবাহ ইবনু 'আমির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কসমের কাফ্‌ফারাই মানতের কাফ্‌ফারাহ্‌। (ই.ফা. ৪১০৭, ই.সে. ৪১০৫)