3. হায়িয (ঋতুস্রাব)

【1】

পরিহিত কাপড়ের ওপরে ঋতুবতী মহিলার সাথে মেলামেশা করা।

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের কেউ যখন ঋতুবতী হয়ে পড়ত তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশে সে পরিহিত কাপড় ভাল করে বেঁধে নিত। অতঃপর রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাথে মেলামেশা করতেন। (ই.ফা. ৫৭০, ই.সে. ৫৮৬) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের কেউ যখন ঋতুবতী হয়ে পড়ত তখন রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হায়িয আসার স্থানে তাকে শক্ত করে কাপড় বেঁধে নেয়ার নির্দেশ দিতেন। অতঃপর তার সাথে মেলামেশা করতেন। তিনি [আয়িশাহ্ (রাঃ)] বলেন, তোমাদের মধ্যে কে তার যৌনকামনা সেরূপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম-রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেরূপ যৌন কামনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম ছিলেন? (ই.ফা. ৫৭১, ই.সে ৫৮৭) মাইমুনাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহধর্মিণীদের সাথে পরিহিত কাপড়ের উপর ঋতুর অবস্থায় মেলামেশা করতেন। (ই.ফা. ৫৭২, ই.সে. ৫৮৮)

【2】

ঋতুবতী মহিলার সাথে একই চাদরের নীচে শোয়া

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর আযাদকৃত গোলাম কুরায়ব আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী মাইমূনাকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ আমি ঋতুবতী অবস্থায় রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সঙ্গে একই বিছানায় শুইতেন। এ সময় আমার ও তাঁর মাঝে কেবলমাত্র একখানা কাপড়ের আড়াল থাকত। (ই.ফা ৫৭৩, ই.সে. ৫৮৯) উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ও রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি রেখাযুক্ত চাদরের নীচে শুয়েছিলাম। ইতোমধ্যেই আমার হায়িয এলো। আমি চুপিসারে উঠে গিয়ে আমার হায়িয-এর কাপড় পরে নিলাম। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, ‘তোমার কি হায়িয এসেছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি আমাকে (কাছে) ডাকলেন। অতঃপর আমি তাঁর চাদরটির নীচে শুইলাম। ’ রাবী বলেন, তিনি (উম্মু সালামাহ) ও রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র থেকে (পানি নিয়ে) নাপাকির পবিত্র হওয়ার গোসল করতেন। (ই.ফা. ৫৭৪, ই.সে. ৫৯০)

【3】

ঋতুবতী মহিলাদের জন্যে তার স্বামীর মাথা ধুয়ে দেয়া, তার চুল আঁচড়িয়ে দেয়া জায়িয; তার উচ্ছিষ্ট পবিত্র; তার কোলে মাথা রেখে হেলান দেয়া ও সেখানে কুরআন পাঠ করা জায়িয

‘আয়িশাহ (রাঃ) রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ই’তিকাফ করতেন তখন আমার দিকে তাঁর মাথা ঝুঁকিয়ে দিতেন। আমি তা আঁচড়ে দিতাম। (ই’তিকাফ কালে) তিনি ঘরে প্রবেশ করতেন না প্রাকৃতিক প্রয়োজন (যেমন প্রস্রাব পায়খানা) ছাড়া। (ই.ফা. ৫৭৫, ই.সে. ৫৯১) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ(রাঃ) তিনি বলেন, (ই’তিকাফের সময়) আমি যখন প্রাকৃতিক প্রয়োজনে ঘরে প্রবেশ করতাম। ঘরে কোন রোগী থাকে তাহলেও তাকে কোন কথা জিজ্ঞেস না করেই চলে যেতাম। ই’তিকাফের সময় রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদ থেকে আমার দিকে মাথা এগিয়ে দিতেন, আর আমি তাঁর চুল আঁচড়ে দিতাম। ই’তিকাফ থাকাবস্থায় তিনি (প্রাকৃতিক) কোন প্রয়োজন ছাড়া ঘরে প্রবেশ করতেন না। ইবনু রুমহ্ বলেছেন: যখন তাঁরা ইতিকাফের অবস্থায় থাকতেন, প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া ঘরে প্রবেশ করতেন না। (ই.ফা. ৫৭৬, ই.সে. ৫৯২) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইতিকাফে থাকাবস্থায় (অধিকাংশ সময়) মাসজিদ থেকে তাঁর মাথা আমার দিকে বের করে দিতেন। আমি ঋতুবতী অবস্থায় তা ধুয়ে দিতাম। (ই.ফা. ৫৭৭, ই.সে. ৫৯৩) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার দিকে তাঁর মাথা এগিয়ে দিতেন। আমার হুজরায় থেকে ঋতুবতী অবস্থায় আমি তাঁর মাথা আঁচড়ে দিতাম। (ই.ফা. ৫৭৮, ই.সে. ৫৯৪) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ঋতুবতী অবস্থায় রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাথা ধুয়ে দিতাম। (ই.ফা. ৫৭৯, ই.সে. ৫৯৫) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, “মাসজিদ থেকে আমার জায়নামাযটি (হাত বাড়িয়ে) নিয়ে এসো”। তিনি বলেন, আমি বললাম, আমি তো ঋতুবতী। তিনি বললেনঃ তোমার হায়িয তো তোমার হাতে নয়। (ই.ফা. ৫৮০, ই.সে. ৫৯৬) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদ থেকে জায়নামায (হাত বাড়িয়ে) তুলে নিয়ে আসতে আমাকে নির্দেশ দিলেন। আমি বললাম যে, আমি তো ঋতুবতী। তিনি বললেন, তুমি তো আমার কাছে নিয়ে এসো। কারণ হায়িয তোমার হাতে নেই (লেগে যায়নি)। ই.ফা. ৫৮১, ই.সে. ৫৯৭) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই’তিকাফরত অবস্থায় মাসজিদ থেকে বললেন, হে ‘আয়িশাহ! আমাকে কাপড়টা এগিয়ে দাও। তিনি (‘আয়িশাহ (রাঃ)] বলেন, আমি যে ঋতুবতী! জবাবে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ঋতু তো তোমার হাতে লাগে নাই। তারপর আমি তা এনে দিলাম। (ই.ফা. ৫৮২, ই.সে. ৫৯৮) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ঋতুবতী অবস্থায় পানি পান করতাম এবং পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অবশিষ্টটুকু প্রদান করলে আমি যেখানে মুখ লাগিয়ে পান করতাম তিনিও পাত্রের সে স্থানে মুখ লাগিয়ে পান করতেন। আবার আমি ঋতুবতী অবস্থায় হাড় খেয়ে তা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দিলে আমি যেখানে মুখ লাগিয়েছিলাম তিনি সেখানে মুখ লাগিয়ে খেতেন। তবে যুহায়র কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে “পান করার” উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৫৮৩, ই.সে.৫৯৯) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, (অধিকাংশ সময়) রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার হায়িয অবস্থায় আমার কোলে মাথা রেখে কুরআন পাঠ করতেন। (ই.ফা. ৫৮৪, ই.সে. ৬০০) আনাস (রাঃ) ইয়াহূদীগণ তাদের মহিলাদের হায়িজ হলে তার সাথে এক সঙ্গে খাবার খেত না এবং এক ঘরে বাস করত না। সাহাবায়ে কিরাম এ সম্পর্কে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করলেন, “তারা তোমার কাছে হায়িয সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও যে, তা হলো নাপাক। সুতরাং হায়িয অবস্থায় তোমরা মহিলাদের থেকে পৃথক থাক....”(সূরাহ আল বাকারাহ্ ২ : ২২২)। এরপর রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা (সে সময় তাদের সাথে) শুধু সহবাস ছাড়া অন্যান্য সব কাজ কর। এ খবর ইয়াহূদীদের কাছে পৌছলে তারা বলল, এ লোকটি সব কাজেই কেবল আমাদের বিরোধিতা করতে চায়। অতঃপর উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) ও ‘আব্বাস ইবনু বিশর (রাঃ) এসে বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্! ইয়াহূদীরা এমন এমন বলছে। আমরা কি তাদের সাথে (হায়িয অবস্থায়) সহবাস করব না? রসুলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চেহারা মুবারক বিবর্ণ হয়ে গেল। এতে আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি তাদের উপর ভীষণ রাগান্বিত হয়েছেন। তারা (উভয়ে) বেরিয়ে গেল। ইতোমধ্যেই রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে দুধ হাদিয়া এলো। তিনি তাদেরকে ডেকে আনার জন্যে লোক পাঠালেন। (তারা এলে) তিনি তাদেরকে দুধ পান করালেন। তখন তারা বুঝল যে, তিনি তাদের উপর রাগ করেননি। (ই.ফা. ৫৮৫, ই.সে. ৬০১)

【4】

মাযীর বিবরণ

‘আলী (রাঃ) তিনি বললেন, আমার বেশি বেশি মাযী বের হত। আমি এ সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করতাম। কারণ তাঁর কন্যা ছিল আমার স্ত্রী। তাই আমি মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদকে (এ সম্পর্কে জানতে) বললাম, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন তিনি বললেন, এ তার পুরুষাঙ্গ ধুয়ে ফেলবে এবং ওযূ করে নিবে। (ই.ফা. ৫৮৬, ই.সে. ৬০২) ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে মাযী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লজ্জাবোধ করছিলাম ফাতিমার কারণে। তাই আমি মিকদাদকে বললাম, তখন তিনি তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ তাতে (মাযী বের হলে) শুধু ওযূ করতে হয়। (ই.ফা. ৫৮৭, ই.সে. ৬০৩) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আলী আবূ তালিব (রাঃ) বলেন, আমি একবার মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদকে রসুলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে পাঠালাম। তিনি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন যে, কোন লোকের মাযী বের হলে সে তখন কি করবে? তিনি বললেনঃপুরুষাঙ্গ ধুয়ে ফেলবে এবং ওযূ করবে। (ই.ফা. ৫৮৮, ই.সে. ৬০৪)

【5】

ঘুম থেকে জেগে মুখ এবং দু’হাত ধুয়ে নিবে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে (ঘুম থেকে) জেগে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারলেন (প্রস্রাব-পায়খানা), তারপর তাঁর মুখমন্ডল এবং উভয় হাত ধুলেন। এরপর ঘুমিয়ে গেলেন। (ই.ফা. ৫৮৯, ই.সে. ৬০৫)

【6】

নাপাক অবস্থায় ঘুমানো জায়িয; তবে খাদ্যগ্রহণ, শয়নকালে অথবা স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করতে চাইলে তার জন্যে ওযূ করা এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে নেয়া মুস্তাহাব

‘আয়িশাহ (রাঃ) রসুলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপাকী অবস্থায় যখন ঘুমাতে ইচ্ছা করতেন তখন ঘুমাবার আগে সলাতের জন্য যেমন ওযূ করতে হয় তেমন ওযূ করতেন। (ই.ফা. ৫৯০, ই.সে. ৬০৬) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নাপাক থাকতেন তখন কিছু খেতে অথবা ঘুমানো ইচ্ছা করলে ওযূ করে নিতেন যেমন, সলাতের ওযূ করতেন। (ই.ফা. ৫৯১, ই.সে. ৬০৭) মুহাম্মাদ ইবনু আল মুসান্না, ইবনু বাশশার ও ‘উবাইদুল্লাহ্ ইবনু মু‘আয (রহঃ)-এর সূত্রে উক্ত সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইবনু আল মুসান্না তাঁর হাদীসে বলেছেন: আমাকে হাকাম বর্ণনা করে বলেন যে, আমি ইবরাহীমকে এ হাদীস বলতে শুনেছি। ( ই.ফা. ৫৯২, ই.সে. ৬০৮) ইবনু ‘উমার (রাঃ) একদিন ‘উমার (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদের কেউ নাপাক অবস্থায় কি ঘুমাতে পারবে? তিনি বললেনঃহ্যাঁ, যখন সে ওযূ করে নিবে। (ই.ফা. ৫৯৩, ই.সে. ৬০৮) ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘উমার (রাঃ) একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে ফাতাওয়া জিজ্ঞেস করলেন যে, আমাদের কেউ কি নাপাক অবস্থায় ঘুমাতে পারবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, সে যেন ওযূ করে তারপর ঘুমায়। এরপর যখন ইচ্ছা গোসল করে নেয়। (ই.ফা. ৫৯৪, ই.সে. ৬১০) ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) একবার রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বললেন, তিনি যদি রাতে (স্ত্রী সহবাসকালে) নাপাক হন (তাহলে কি করবেন)। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, তুমি (তখন) ওযূ করবে এবং তোমার লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে তারপর ঘুমাবে। (ই.ফা. ৫৯৫, ই.সে. ৬১১) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু আবূ কায়স (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিতর সম্বন্ধে ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম। তিনি (তৎবিষয়ে) হাদীস বর্ণনা করলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি নাপাকির সময় কী করতেন, তিনি কি ঘুমাবার আগে গোসল করতেন, না গোসল করার আগে ঘুমাতেন? তিনি [‘আয়িশাহ (রাঃ)] বললেন, সবই করতেন। কখনো গোসল করে ঘুমাতেন আর কখনো ওযূ করে ঘুমিয়ে পড়তেন। আমি বললাম, সমস্ত প্রশংসা সে আল্লাহর যিনি সব কাজেই অবকাশ রেখেছেন। (ই.ফা. ৫৯৬, ই.সে. ৬১২) যুহায়র ইবনু হারব ও হারূন সা‘ঈদ আল আইলী (রহঃ) মু‘আবিয়াহ্ ইবনু সালিহ (রহঃ) এর সূত্রে উক্ত সানাদে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৯৭, ই.সে. ৬১৩) আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হবে তারপর আবার মিলিত হবার ইচ্ছা করবে সে যেন ওযূ করে নেয়। আবূ বাকর তার হাদীসে ‘উভয় মিলনের মধ্যে ওযূ করবে’ বাক্যটি বাড়িয়েছেন এবং এর স্থলে (আরবী) বলেছেন। (ই.ফা. ৫৯৮, ই.সে. ৬১৪) আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সকল স্ত্রীর কাছে একই গোসলে যেতেন। (ই.ফা. ৫৯৯, ই.সে. ৬১৫)

【7】

মহিলার মানী (বীর্য) বের হলে তার উপর গোসল করা ওয়াজিব

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মু সুলায়ম (রাঃ) যিনি ছিলেন (এ হাদীসের রাবী) ইসহাকের দাদী-একদা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, ‘আয়িশাহ (রাঃ) তখন তাঁর নিকট উপস্থিত ছিলেন-ইয়া রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)!পুরুষ যেমন স্বপ্নে দেখে, নারীও যদি তা দেখে, এমতাবস্থায় সে কি করবে? তখন আয়িশাহ্ (রাঃ) বললেন, উম্মু সুলায়ম! তুমি নারী জাতিকে অপমানিত করেছ। তোমার অকল্যাণ হোক (তার এ কথা ছিল ভাল উদ্দেশ্যে)। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশাহ(রাঃ) কে বললেন, বরং তোমার অকল্যাণ হোক! [এরপর উম্মু সুলায়ম (রাঃ) এর জবাবে বললেন] হ্যাঁ, উম্মু সুলায়ম! সে গোসল করে ফেলবে যখন ঐরূপ দেখবে। (ই.ফা. ৬০০, ই.সে, ৬১৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বলেন, তিনি রসুলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন যে ঘুমে পুরুষ যা দেখে তাই দেখতে পায়। রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মেয়েলোক যখন তেমনই দেখবে তখন সে গোসল করবে। উম্মু সালামাহ (রাঃ) বলেন, এ কথায় আমি লজ্জাবোধ করলাম। তিনি বললেন, এ রকমও কি হয়? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হ্যাঁ, তা না হলে ছেলে মেয়ে তার সদৃশ কেমন করে হয়? পুরুষের বীর্য গাঢ়, সাদা আর মহিলাদের বীর্য পাতলা, হলুদ। দুয়ের মধ্যে থেকে যার বীর্য ওপরে উঠে যায় অথবা আগে চলে যায় (সন্তান) তারই সদৃশ হয়। (ই.ফা. ৬০১, ই.সে. ৬১৭) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, এক মহিলা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ঐ মহিলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, যে পুরুষ লোক ঘুমের মধ্যে যা দেখতে পায় সেও তাই। তখন রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃপুরুষের যা হয় (স্বপ্নদোষ) মহিলাদেরও এমন হলে সে গোসল করবে। (ই.ফা. ৬০২, ই.সে. ৬১৮) উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মু সুলামাহ একদা রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ তা‘আলা হক কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না। তাই মহিলাদের যখন স্বপ্নদোষ হয় তখন কি তার উপর গোসল করা জরুরী? রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃহ্যাঁ, যখন সে বীর্য দেখবে। (এ কথা শুনে) উম্মু সালামা (রাঃ) বললেন, “ইয়া রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মহিলাদেরও কি স্বপ্নদোষ হয়”? তিনি বললেন, তোমার উভয় হাত ধুলিময় হোক! তাহলে তার সন্তান কেমন করে তার সদৃশ হয়? (ই.ফা. ৬০৩, ই.সে. ৬১৯) ‘উরওয়াহ্ এ সানাদে উপরোক্ত হাদীসের অর্থের অবিকল বর্ণিত আছে। তিনি আরো একটু বাড়িয়ে বলেন যে, তিনি [উম্মু সালামা (রাঃ)] বললেন, তুমি নারী জাতিকে লজ্জিত করেছ। (ই.ফা. ৬০৪, ই.সে. ৬২০) উম্মুল মু‘মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন যে, আবূ তালহার সন্তানদের মা উম্মু সুলায়ম একদা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে হিশামের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে এ হাদীসটিতে ব্যতিক্রম যা রয়েছে তা হল, ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, “ছিঃ ছিঃ (অসন্তোষ প্রকাশক শব্দ)! মেয়েলোক কি ঐরূপ দেখে?” (ই.ফা. ৬০৫, ই.সে. ৬২১) ‘আয়িশাহ (রাঃ) এক মহিলা রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলল, মেয়েলোকের যখন স্বপ্নদোষ হবে এবং সে বীর্যরস দেখতে পাবে তখন কি সে গোসল করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এরপর ‘আয়িশাহ (রাঃ) মহিলাটিকে বললেন, তোমার উভয় হাত ধূলিময় হোক এবং তাতে অস্ত্রের খোঁচা লাগুক। তিনি [‘আয়িশাহ (রাঃ)] বলেন, তারপর রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ছেড়ে দাও ওকে (ভর্ৎসনা করো না) সন্তান মা-বাবার সদৃশের কারণেই হয়ে থাকে। যখন স্ত্রীর বীর্য পুরুষের বীর্যের আগে জরায়ুতে প্রবেশ করে তখন সন্তানের আকৃতি তার মামাদের মতই হয়। আর যখন পুরুষের বীর্য মেয়েলোকের বীর্যের উপর প্রাধান্য লাভ করে তখন তার আকৃতি চাচাদের মতই হয়। (ই.ফা. ৬০৬, ই.সে. ৬২২)

【8】

পুরুষ ও মহিলার বীর্যের বর্ণনা এবং সন্তান যে উভয়ের বীর্য ও শুক্র থেকে সৃষ্টি হয় তার বর্ণনা

রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুক্তিপ্রাপ্ত গোলাম সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একবার রসুলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে দাঁড়িয়েছিলাম। ইতোমধ্যেই ইয়াহূদীদের এক ‘আলিম এসে বলল, আসসালামু ‘আলাইকা ইয়া মুহাম্মাদ! এরপর আমি তাকে এমন এক ধাক্কা মারলাম যে, সে প্রায় পড়ে যাওয়ার উপক্রম হলো! সে বলল, তুমি আমাকে ধাক্কা মারলে কেন? আমি বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ্! বলতে পার না। ইয়াহূদী বলল, আমরা তাঁকে তাঁর পরিবার-পরিজন যে নাম রেখেছে সে নামেই ডাকি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার নাম মুহাম্মাদ। আমার পরিবারের লোকই আমার এ নাম রেখেছে। এরপর ইয়াহূদী বলল, আমি আপনাকে (কয়েকটি কথা) জিজ্ঞেস করতে এসেছি। রসুলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তোমার কী লাভ হবে, যদি আমি তোমাকে কিছু বলি? সে বলল, আমি আমার কান পেতে শুনব। এরপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কাছে যে খড়িটি ছিল তা দিয়ে মাটিতে আঁকাঝোকা দাগ কাটতে ছিলেন। তারপর বললেন, জিজ্ঞেস কর। ইয়াহূদী বলল, যেদিন এ জমিন ও আকাশমন্ডলী পাল্টে গিয়ে অন্য জমিন ও আকাশমন্ডলীতে পরিণত হবে (অর্থাৎ কিয়ামাত হবে) সেদিন লোকজন কোথায় থাকবে? রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তারা সেদিন পুলসিরাতের কাছে অন্ধকারে থাকবে। সে বলল, কে সর্বপ্রথম (তা পার হবার) অনুমতি লাভ করবে? তিনি বললেন, দরিদ্র মুহাজিরগণ! ইয়াহূদী বলল, জান্নাতে যখন তারা প্রবেশ করবে তখন তাদের তোহফা কি হবে? তিনি বললেন, মাছের কলিজার টুকরা। সে বলল, এরপর তাদের দুপুরের খাদ্য কি হবে? তিনি বললেন, তাদের জন্য জান্নাতের ষাঁড় যাবাহ করা হবে যা জান্নাতের আশে পাশে চড়ে বেড়ায়। সে বলল, এরপর তাদের পানীয় কি হবে? তিনি বললেন, সেখানকার একটি ঝর্ণার পানি যার নাম ‘সালসাবীল’। সে বলল, আপনি ঠিক বলেছেন। সে আরো বলল যে, আমি আপনার কাছে এমন একটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে এসেছি যা নবী ছাড়া পৃথিবীর কোন অধিবাসী জানে না অথবা একজন কি দুজন লোক ছাড়া। তিনি বললেন, আমি যদি তোমাকে তা বলে দেই তবে তোমার কি কোন উপকার হবে? সে বলল, আমি আমার কান পেতে শুনব। সে বলল, আমি আপনাকে সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে এসেছি। তিনি বললেন, পুরুষের বীর্য সাদা এবং মেয়েলোকের বীর্য হলুদ। যখন উভয়টি একত্রিত হয়ে যায় এবং পুরুষের বীর্য মেয়েলোকের বীর্যের উপর প্রাধান্য লাভ করে তখন আল্লাহর হুকুমে পুত্র সন্তান হয়। আর যখন মেয়েলোকের বীর্য পুরুষের বীর্যের ওপর প্রাধান্য লাভ করে তখন আল্লাহর হুকুমে কন্যা সন্তান হয়্। ইয়াহূদী বলল, আপনি ঠিকই বলেছেন এবং নিশ্চয়ই্ আপনি নাবী। এরপর সে চলে গেল। তখন রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ লোক আমার কাছে যা জিজ্ঞেস করছে, ইতোপূর্বে আমার সে সম্পর্কে কোন জ্ঞানই ছিল না। আল্লাহ্ তা‘আলা এক্ষনে আমাকে তা জানিয়ে দিলেন। (ই.ফা. ৬০৭, ই.সে. ৬২৩) মু‘আবিয়াহ্ ইবনু সাল্লাম একই সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি তার বর্ণনাতে এতটুকু অতিরিক্ত বলেছেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বসে ছিলাম। আর তিনি বললেনঃমাছের কলিজা‘র টুকরা আর তিনি ‘আয্কারা’ ও ‘আ-নাসা’ শব্দ দুটির একবচন রূপ ব্যবহার করেছেন, দ্বিবচন ব্যবহার করেননি। (ই.ফা. ৬০৮, ই.সে. ৬২৪)

【9】

অপবিত্রতার গোসলের বিবরণ

‘আয়িশাহ(রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন অপবিত্রতা থেকে গোসল করতেন তখন প্রথমে দুই হাত ধুতেন। তারপর ডান হাত দিয়ে বাম হাতে পানি ঢেলে লজ্জাস্থান ধুতেন। তারা সলাতের ওযূর মত ওযূ করতেন। তারপর পানি নিয়ে তাঁর আঙ্গুলগুলো চুলের গোড়ায় ঢুকাতেন। এমনিভাবে যখন মনে করতেন যে, চুল ভিজে গেছে তখন মাথায় তিন আজল (দুই হাতের তালু ভরা) পানি ঢালতেন। তারপর সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে দিতেন। তারপর তাঁর উভয় পা ধুয়ে ফেলতেন। [৮২] (ই.ফা. ৬০৯, ই.সে. ৬২৫) হিশাম অবিকল সানাদে উক্ত হাদীসটি বর্ণিত আছে। তবে তাদের হাদীসে পা ধোয়ার কথা উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৬১০, ই.সে. ৬২৬) ‘আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপবিত্রতা থেকে গোসলের সময় প্রথমে তাঁর উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধুতেন। এরপর আবূ মু‘আবিয়ার হাদীসের অবিকল উল্লেখ করেন কিন্তু তিনি উভয় পা ধোয়ার কথা উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৬১১, ই.সে. নেই) ‘আয়িশাহ (রাঃ) রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন অপিবত্রতা থেকে গোসল করতেন তখন পাত্রে হাত ঢুকানোর আগে প্রথমেই তাঁর দুই হাত ধুতেন, তারপর সলাতের ওযূর মত ওযূ করতেন। (ই.ফা. ৬১২, ই.সে. ৬২৭) ‘আবূদল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমার খালা মাইমুনাহ্ আমাকে বলেছেন, আমি রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অপবিত্রতার গোসলের জন্যে পানির পাত্র এগিয়ে দিতাম। তিনি প্রথমে দু’হাতের কব্জি পর্যন্ত দু‘বার অথবা তিনবার ধুয়ে নিলেন। তারপর পাত্রের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে বাম হাতে লজ্জাস্থান ধুয়ে পরিষ্কার করলেন। পরে বাম হাতখানা মাটিতে খুব করে রগড়ালেন, এরপর ধুয়ে নিলেন। অতঃপর উক্তস্থান থেকে সরে গিয়ে পা দু’খানা ধুলেন। অতঃপর আমি তাঁর শরীর মোছার জন্যে কাপড় বা রুমাল নিয়ে আসলে তিনি তা ব্যবহার না করে বরং ফেরত দিলেন। [৮৩] (ই.ফা. ৬১৩, ই.সে. ৬২৮) মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ্, আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্, আবূ কুরায়ব, আল আশাজ্জ ও ইসহাক্ প্রত্যেকেই ওয়াকী’ হতে এবং ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ কুরায়ব আবূ মু‘আবিয়াহ্ হতে উভয়ে আ‘মাশ উক্ত সানাদের হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে তাদের উভয়ের হাদীসে তিন আঁজলা পানি মাথায় ঢেলে দেয়ার কথা নেই। আর ওয়াকী‘-এর হাদীসে ওযূর পূর্ণ বর্ণনা দেয়া হয়েছে। অতঃপর তিনি কুলি করা এবং নাকে পানি দেয়ার কথা তার হাদীসে বর্ণনা করেছেন। আবূ মু‘আবিয়ার হাদীসে রুমালের কথা উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৬১৪, ই.সে. ৬২৯) মাইমুনাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে রুমাল দেয়া হল, কিন্তু তিনি তা স্পর্শ করলেন না। তিনি পানি নিয়ে এরূপ করছিলেন অর্থাৎ পানি ঝেড়ে ফেলেছিলেন। (ই.ফা. ৬১৫, ই.সে. ৬৩০) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন অপবিত্রতা থেকে গোসল করতেন তখন হিলাব-এর (দুধ দোহন করার পাত্রের) মতো একটি পানির পাত্র চেয়ে নিতেন। অতঃপর এক হাত দিয়ে পানি নিয়ে প্রথমে মাথার ডান দিকে ধুয়ে ফেলতেন তারপর বাম দিক ধুতেন, তারপর উভয় হাত দিয়ে পানি নিয়ে মাথায় ঢেলে দিতেন। (ই.ফা. ৬১৬, ই.সে. ৬৩১)

【10】

অপবিত্রতার গোসলে কতটুকু পরিমাণ পানি ব্যবহার মুস্তাহাব, পুরুষ এবং মেয়েলোক একই অবস্থায় একই পাত্র থেকে পানি নিয়ে গোসল করা এবং তাদের উভয়ের মধ্যে একজনের অবশিষ্ট পানি দিয়ে অপরজনের গোসল করার বর্ণনা।

‘আয়িশাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ফারাক্ (সাড়ে সাত কেজি) পরিমাণ পাত্রের পানি দিয়ে অপবিত্রতার গোসল করতেন। [৮৪] (ই.ফা. ৬১৭, ই.সে. ৬৩২) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ফারাক পরিমাণ পানি দিয়ে গোসল করতেন। অনেক সময় আমি এবং তিনি একই পাত্রে গোসল করতাম। সুফইয়ানের হাদীসে বর্ণিত হয়েছে “একই পাত্র থেকে”। কুতাইবাহ বলেন, সুফইয়ান বলেছেন, ফারাক্ হল তিন ‘সা’ পরিমাণ। [৮৫] (ই.ফা. ৬১৮, ই.সে. ৬৩৩) আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি বলেন, আমি এবং ‘আয়িশাহ(রাঃ) এর দুধ ভাই একবার তাঁর কাছে গেলাম। অতঃপর তাঁর দুধ ভাই তাঁকে রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অপবিত্রতার গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি একটি পাত্র আনালেন যা ছিল এক ‘সা’ পরিমাণ। তারপর তিনি গোসল করলেন। আমাদের এবং তাঁর মধ্যে পর্দা ছিল। তিনি তাঁর মাথায় তিনবার পানি ঢাললেন। আবূ সালামা বলেন, রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীগণ মাথার চুল কেটে রাখতেন তা ওয়াফরা-এর ন্যায় হয়ে যেত (ঘার বরাবর লম্বা চুলই ওয়াফরা)। [৮৬] (ই.ফা. ৬১৯, ই.সে. ৬৩৪) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন গোসল করতেন তখন ডানদিক থেকে শুরু করতেন। তিনি প্রথমেই ডান হাতে পানি ঢেলে তা ধুয়ে ফেলতেন। তারপর ডান হাত দিয়ে শরীরের যেখানে নাপাকী থাকত সেখানে পানি ঢেলে দিতেন এবং বাম হাত দিয়ে তা ধুয়ে ফেলতেন। এটা শেষ করে তিনি মাথায় পানি ঢালতেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি এবং রসুলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উভয়েই অপবিত্র অবস্থায় একই পাত্র থেকে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম। (ই.ফা. ৬২০, ই.সে. ৬৩৫) ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেছেন, তিনি এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র থেকে গোসল করতেন যাতে তিন মুদ্‌ বা তার সম পরিমান পানি ধরত। (ই.ফা. ৬২১, ই.সে. ৬৩৬) ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এবং রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র থেকে (পানি নিয়ে) গোসল করতাম। আমাদের দুজনের হাত ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তাতে লাগত। এ গোসল ছিল অপবিত্রতা থেকে। (ই.ফা. ৬২২, ই.সে. ৬৩৮) ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এবং রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম যা আমার এবং তাঁর মাঝখানে থাকত। তিনি আমার থেকে আগে তাড়াতাড়ি করে ফেলতেন। তখন আমি বলতাম, আমার জন্য একটু রেখে দিন, আমার জন্য একটু রেখে দিন। তিনি [‘আয়িশাহহ (রাঃ)] বলেন যে তারা উভয়েই অপবিত্র ছিলেন। (ই.ফা. ৬২৩, ই.সে. ৬৩৭) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, মাইমুনাহ্‌ (রাঃ) আমাকে বলেন যে, তিনি ও রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্রে গোসল করতেন। (ই.ফা. ৬২৪, ই.সে. ৬৩৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাইমুনাহ্‌ (রাঃ) এর উদ্বৃত্ত পানি দিয়ে গোসল করতেন। (ই.ফা. ৬২৫, ই.সে. ৬৪০) উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, তিনি এবং রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্রে অপবিত্রতার গোসল করতেন।(ই.ফা. ৬২৬, ই.সে. ৬৪১) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঁচ মাক্‌কুক পানি দিয়ে গোসল করতেন এবং এক মাক্‌কুক পানি দিয়ে ওযূ করতেন। আর ইবনু আল মুসান্না বলেছেন: পাঁচ মাক্‌কুক দিয়ে গোসল করতেন এবং বর্ণনাকারীদের মধ্যে ইবনু মু’আয ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি ‘ইবনু জাব্‌র’ শব্দটি উল্লেখ করেননি। (মাক্‌কুক ও মুদ্‌ পৌনে এগার ছটাক পরিমাণ এবং এক সা’ দু’সের এগার ছটাক পরিমাণ।) (ই.ফা. ৬২৭, ই.সে. ৬৪২) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মুদ্‌ পানি দিয়ে ওযূ করতেন এবং এক সা’ থেকে পাঁচ মুদ্‌ পর্যন্ত পানি দিয়ে গোসল করতেন। (ই.ফা. ৬২৮, ই.সে. ৬৪৩) সাফীনাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, এক সা’ পানিতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অপবিত্রতার গোসল সম্পন্ন হয়ে যেত এবং এক মুদ্‌ পানিতে ওযূ হয়ে যেত। (ই.ফা. ৬২৯, ই.সে. ৬৪৪) সাফীনাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবা আবূ বকর (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সা’ পানি দিয়ে গোসল এবং এক মুদ্‌ পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন (ওযূ)করতেন। আর ইবনু হুজ্‌র তাঁর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে বা তিনি বলেছেন, এক মুদ্‌ পানি তাঁকে অপবিত্রতা থেকে পবিত্র করতেন। তিনি (আবূ রাইহানাহ্‌) বলেন, সাফীনাহ্‌ অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তাই আমি তাঁর বর্ণিত হাদীসের উপর নির্ভর করতে পারি না। (ই.ফা. ৬৩০, ই.সে. ৬৪৫)

【11】

মাথা এবং কতিপয় অঙ্গে (গোসলের সময়) তিনবার পানি ঢেলে দেয়া মুস্তাহাব

জুবায়র ইবনু মুত’ইম (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সম্মুখে লোকেরা গোসল নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু করল। কেউ কেউ বলল, আমি তো এ পরিমাণ পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে থাকি। তখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তো আমার মাথায় তিন কোষ পানি ঢেলে থাকি। [৮৭] (ই.ফা. ৬৩১, ই.সে. ৬৪৬) জুবায়র ইবনু মুত’ইম (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে একবার অপবিত্রতা থেকে গোসলের আলোচনা করা হলে তিনি বললেন, আমি তো আমার মাথায় তিন বার পানি ঢেলে দেই। (ই.ফা. ৬৩২, ই.সে. ৬৪৭) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) (তিনি বলেছেন) সাকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দল এসে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করলঃ আমাদের এলাকাটি অত্যন্ত শীতপ্রধান, সেখানে আমরা (অপবিত্রতার) গোসল কীভাবে করব? তিনি বললেন, আমি তো আমার মাথায় তিন বার পানি ঢেলে থাকি। ইবনু সালিম হুশায়ম ও আবূ বিশর্‌ এর মাধ্যমে তাঁর বর্ণিত হাদীসে বলেছেন, সাকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দল এসে ‘হে আল্লাহর রাসুল’ বলে সম্বোধন করেছিল। (ই.ফা. ৬৩৩, ই.সে. ৬৪৮) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) (তিনি বলেছেন) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপবিত্রতার গোসল করার সময় মাথায় তিন আঁজলা পানি ঢালতেন। হাসান ইবনু মুহাম্মাদ তাঁকে (জাবিরকে) বললেন, আমার মাথায় তো চুল অনেক (কাজেই এটুকু পানি তো আমার জন্য যথেষ্ট নয়) জবাবে জাবির বললেন, ভাতিজা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাথায় চুল তোমার চেয়ে অনেক বেশি এবং উত্তম ও পরিচ্ছন্ন ছিল। (ই.ফা. ৬৩৪, ই.সে. ৬৪৯)

【12】

গোসলকারিনীর (অপবিত্রতার) মাথার বেনীর হুকুম

উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো মাথায় চুলের বেনী গেঁথে থাকি। সুতরাং অপবিত্রতার গোসলের সময় কি আমি তা খুলব? তিনি বললেন, না। বরং তোমার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, তুমি মাথার ওপর তিন আঁজলা পানি ঢেলে দিবে। অতঃপর সারা শরীরে পানি ঢেলে দিয়ে পবিত্র হয়ে যাবে। [৮৮] (ই.ফা. ৬৩৫, ই.সে. ৬৫০) ‘আম্‌র আন্‌ নাকিদ ও ‘আব্‌দ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) এর সূত্রে এ সানাদে উক্ত হাদীসটি বর্ণিত আছে। ‘আব্‌দুর রায্‌যাকের হাদীসে রয়েছে যে, “আমি কি তা হায়িয ও অপবিত্রতা থেকে গোসলের জন্যে খুলবো? তিনি বললেন, না”।এরপর ইবনু ‘উয়াইনার (উপরোক্ত) হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৬৩৬, ই.সে. ৬৫১) আহমাদ ইবনু সা’ঈদ আদ্‌ দারিমী (রহঃ) এর সূত্রে আইয়ূব ইবনু মূসা (রাঃ) হতে এ সূত্রে সেখানে উল্লেখ আছে যে, “আমি কি তা খুলে অপবিত্রতা থেকে গোসল করব?” সেখানে তিনি হায়িযের কথা উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৬৩৭, ই.সে. ৬৫২) ‘উবায়দ ইবনু ‘উমায়র (রহঃ) তিনি বলেছেন, ‘আয়িশাহ(রাঃ) এর নিকটে খবর পৌঁছিল যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র স্ত্রীলোকদেরকে গোসলের সময় তাদের মাথার চুল (বেনী) খোলার আদেশ দিয়ে থাকেন। এ কথা জানার পর ‘আয়িশাহ(রাঃ) বলেন, আশ্চর্য লাগে ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) এর মত লোক মেয়েদেরকে গোসলের সময় মাথার চুল খোলার আদেশ করেন। তাহলে তো তিনি তাদেরকে মাথার চুল মুড়ে ফেলার আদেশ দিতে পারেন। অথচ আমি এবং রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সাথে একই পাত্র থেকে পানি নিয়ে অপবিত্রতার গোসল করেছি। এ সময় আমি আমার মাথায় তিন কোষ (দুই হাতের তালুর) অধিক পানি ঢালিনি। (ই.ফা. ৬৩৮, ই.সে. ৬৫৩)

【13】

হায়িয থেকে গোসলকারিনীর জন্যে রক্তের স্থানে (লজ্জাস্থানে) সুগন্ধযুক্ত কাপড়ের টুকরা বা তুলা ব্যবহার করা মুস্তাহাব

‘আয়িশাহ (রাঃ) এক মহিলা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করল যে, কিভাবে সে তাঁর হায়িয থেকে গোসল করবে? হাদীসের রাবী বলেন, ‘আয়িশাহ(রাঃ) উল্লেখ করেন যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভদ্রমহিলাকে সে কিভাবে গোসল করবে, তা শিখিয়ে দিলেন তারপর সুগন্ধযুক্ত কাপড় বা তুলা ব্যবহার করবে এবং তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। সে বলল, এ সুগন্ধযুক্ত কাপড় দ্বারা আমি কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করব? তিনি বললেন, তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ্‌! (এত সোজা কথাও বুঝ না)। এরপর তিনি (মুখ) সরিয়ে নিলেন। (রাবী বলেন) সুফ্‌ইয়ান ইবনু ‘উয়াইনাহ্‌ নিজ মুখের উপর হাত দিয়ে আমাদেরকে ইশারা করে দেখালেন। ‘আয়িশাহ(রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে আমার দিকে টেনে আনলাম। আর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বুঝাতে চাচ্ছেন তা আমি বুঝে ফেললাম। অতঃপর আমি মহিলাটিকে বললাম, তুমি তা (সুগন্ধযুক্ত কাপড় বা তুলা) রক্তের স্থানে (লজ্জাস্থানে) বুলিয়ে নিবে। ইবনু ‘উমার তাঁর বর্ণিত হাদীসে বলেছেন, তিনি বলেনঃ আমি বললাম, রক্তের স্থানে সুগন্ধযুক্ত কাপড়টি বুলিয়ে দিন। (ই.ফা. ৬৩৯, ই.সে. ৬৫৪) ‘আয়িশাহ(রাঃ) এক মহিলা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করল যে, আমি তুহ্‌র এর (হায়িয থেকে পবিত্রতার) সময় কিভাবে গোসল করব? তিনি বললেন, এক টুকরো সুগন্ধযুক্ত কাপড় বা তুলা নিবে তারপর তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। এরপর সুফ্‌ইয়ানের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৬৪০, ই.সে. ৬৫৫) ‘আয়িশা (রাঃ) একদা আসমা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কাছে হায়িযের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেন, তোমাদের কেউ পানি এবং বরইয়ের পাতা নিয়ে সুন্দর ভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে। তারপর মাথায় পানি ঢেলে দিয়ে দিয়ে ভালভাবে নাড়াচড়া করবে যাতে পানি সমস্ত চুলের গোড়া পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তারপর তার উপর পানি ঢেলে দিবে। তারপর সুগন্ধযুক্ত কাপড় নিয়ে তার দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। আসমা বলল, তা দিয়ে সে কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে। অতঃপর ‘আয়িশা (রাঃ) তাকে যেন চুপি চুপি বলে দিলেন, রক্ত বের হবার জায়গায় তা বুলিয়ে দিবে। সে অপবিত্রতার গোসল সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করল। তিনি বললেন, পানি নিয়ে তার দ্বারা সুন্দরভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে। তার মাথায় পানি ঢেলে দিয়ে ভাল করে নাড়াচড়া করবে যাতে চুলের গোঁড়ায় পানি পৌঁছে যায়। তারপর সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে দিবে। ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, আনসারদের মহিলারা কত ভাল ! লজ্জা তাদেরকে দীন-এর জ্ঞান থেকে ফিরিয়ে রাখে না। (ই.ফা. ৬৪১, ই.সে. ৬৫৬) শু’বাহ্‌ অবিকল বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! তা দ্বারা পবিত্রতা লাভ করবে। অতঃপর তিনি আড়াল করলেন। (ই.ফা. ৬৪২, ই.সে. ৬৫৭) ‘আয়িশা (রাযিঃ) তিনি বলেন, আসমা বিনতু শাকাল রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমাদের কেউ যখন হায়িয থেকে পবিত্র হবে তখন সে কিভাবে গোসল করবে? এরপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে হাদীসটির মধ্যে অপবিত্রতার গোসলের কথা উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৬৪৩, ই.সে. ৬৫৮)

【14】

ইসতিহাযাহ [৮৯] বা রক্তপ্রদর রোগগ্রস্ত মহিলার গোসল ও তার সলাত প্রসঙ্গ

[৮৯] ইসতিহাযাহ্‌ বলা হয় ঐ রক্তকে যা হায়িয ও নিফাসের নির্দিষ্ট সময় ব্যতীত মহিলাদের লজ্জাস্থান দিয়ে রক্ত বের হয় । এ রক্ত একটি রগ থেকে বের হয়ে থাকে যাকে আদিল বলা হয় । আর হায়িযের রক্ত জরায়ুর ভিতর থেকে বের হয় । ইসতিহাযার রক্ত সাধারনত লাল কিংবা হলদে অথবা মেটে রং হয় এবং হায়িযের রক্ত স্বভাবত কালচে রং হয় । সুতরাং রক্তের প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখলে উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বুঝা যায় । ইসতিহাযাহ রোগাক্রান্ত মহিলা সুস্থ মহিলার মত সলাত, সওম, ই’তিকাফ, কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত সহ যাবতীয় ইবাদত বন্দেগী করতে পারবে । তবে প্রত্যেক ওয়াক্তের সলাতে প্রারম্ভে ওযূ করে নিবে । আর যখন সলাত আদায় করার নিয়্যাত করবে তখন লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে এবং উক্তস্থানে এক টুকরো কাপড়, তুলা লাগিয়ে রাখবে । (নাবাবী) ‘আয়িশা (রাঃ) ফাতিমাহ্‌ বিনতু আবূ হুরায়শ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসুল! আমি একজন ইসতিহাযাহ্‌ বা রক্তপ্রদর রোগগ্রস্ত নারী। কখনো এ রোগ থেকে মুক্ত হই না। তাই আমি এ সলাত আদায় করা কি ছেড়ে দিব? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ না , তুমি সলাত আদায় ছাড়বেনা। কেননা, এ হায়িয না বরং একটি শিরা নিঃসৃত রক্ত। তাই যখন হায়িয দেখা দিবে তখন শুধু সলাত আদায় করবেনা। আর যখন হায়িয ভাল হয়ে যাবে তখন রক্ত ধুয়ে ফেলে গোসল করে পবিত্র হয়ে সলাত আদায় করবে। (ই.ফা. ৬৪৪, ই.সে. ৬৫৯) জারীর (রাযিঃ) ফাতিমাহ্‌ বিনতু আবূ হুবায়শ ইবনু ‘আব্দুল মুত্তালিব ইবনু আসাদ যিনি আমাদের বংশের একজন মহিলা ছিলেন- রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এলেন। আর হাম্মাদ ইবনু যায়দ-এর হাদীসে একতা অক্ষর অতিরিক্ত ছিল, আমরা তা উল্লেখ করিনি। (ই.ফা. ৬৪৫, ই.সে. ৬৬০) ‘আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মু হাবীবাহ্‌ বিনতু জাহ্‌শ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে মাসআলা জানতে চেয়ে বলল, আমার ইসতিহাযাহ্‌ হয়েছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ওটা হল একতা রগের (ধমনী) রক্ত। তাই তুমি গোসল করে ফেলবে তারপর সলাত আদায় করবে। এরপর সে প্রতি সলাতের সময়ই গোসল করত। রাবী লায়স ইবনু সা’দ বলেন, ইবনু শিহাব এ কথা উল্লেখ করেননি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু হাবীবাহ্‌কে প্রত্যেক সলাতের সময়ই গোসলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বরং এটা সে নিজের থেকেই করত। ইবনু রুম্‌হ তার বর্ণনায় জাহ্‌শের কন্যার কথা বলেছেন, উম্মু হাবীবার নাম উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৬৪৬, ই.সে. ৬৬১) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী আয়িশা (রাযিঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শ্যালিকা এবং আব্দুর রহমান ইবনু ‘আওফ-এর স্ত্রী হাবীবাহ্‌ বিনতু জাহা্‌শ সাত বছর যাবৎ ইসতিহাযার রোগী ছিলেন। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এ ব্যাপারে মাসআলা জানতে চাইলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটা হায়িয নয়; বরং ধমনীর (রগের) রক্ত। তাই তুমি গোসল করে ফেল এবং সলাত আদায় কর। ‘আয়িশাহহ্‌ (রাঃ) বলেন, এরপর তিনি তার বোন যায়নাব বিনতু জাহ্‌শ-এর ঘরে একটি পাত্রের মধ্যে বসে গোসল করতেন। এমনকি পানি রক্তে লাল হয়ে যেত। ইবনু শিহাব বলেন, আমি এই হাদীসটি আবূ বাক্‌র ইবনু ‘আব্দুর রহমান ইবনুল হারিস ইবনু হিশাম-এর কাছের বর্ণনা করলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ তা’য়ালা হিন্‌দের ওপর রহমাত করুন। সে যদি এ ফাতাওয়ার (মাসআলাহ্‌) শুনতে পেত! আল্লাহর কসম! সে শুধু কাঁদত। কারন সে সলাত আদায় করতনা (এ মাসআলা তার জানা ছিলনা। ফলে সলাত আদায় করতে না পারার কারণে কাঁদত)। (ই.ফা. ৬৪৭, ই.সে. ৬৬২) আয়িশাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, উম্মু হাবীবাহ্‌ বিনতু জাহ্‌শ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এলো। আর সাত বৎসর ধরে তার ইসতিহাযাহ্‌ চলছিল। এরপর রাবী আবূ ‘ইমরান ‘আম্‌র ইবনুল হারিসের অনুরূপ “এমনকি পানি রক্তে লাল হয়ে যেত” পর্যন্ত বর্ণনা করেন এর পরবর্তী অংশ তিনি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৬৪৮, ই.সে. ৬৬৩) ‘আয়িশাহ (রাযিঃ) জাহ্‌শ-এর কন্যার সাত বৎসর যাবত ইসতিহাযাহ্‌ ছিল। এরপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। (ই.ফা. ৬৪৯, ই.সে. ৬৬৪) ‘আয়িশা (রাযিঃ) তিনি বলেন, উম্মু হাবীবাহ্‌ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। এরপর ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি তার পাত্র দেখেছি রক্তে পরিপূর্ণ। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তোমার হায়িয যে কয়দিন হয়, সে কয়দিন পরিমাণ তুমি অপেক্ষা কর। তারপর গোসল করে ফেল এবং সলাত আদায় কর। (ই.ফা. ৬৫০, ই.সে. ৬৬৫) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাযিঃ) তিনি বলেছেন, ‘আব্দুর রহমান ইবনু ‘আওফ-এর স্ত্রী উম্মু হাবীবাহ্‌ বিনতু জাহ্‌শ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে তার রক্ত প্রদরের অসুবিধার কথা বলল। তিনি তাকে বললেনঃ তুমি তোমার মাসিক ঋতুর মেয়াদ পরিমাণ অপেক্ষা কর (অর্থাৎ) এ সময়ে সলাত আদায় করবেনা। এ সময় পার হলে তুমি গোসল করবে এবং সলাত আদায় করবে। তাই তিনি প্রতেক সলাতের সময়েই গোসল করতেন।৯০ (ই.ফা. ৬৫১, ই.সে. ৬৬৬)

【15】

ঋতুবতী মহিলার উপর সওম কায়া করা জরুরী, সলাত নয়

মু’আযাহ্‌ (রহঃ) জনৈক মহিলা ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করল, আমাদের কেউ কি তার হায়িযের দিন গুলোর সলাত কাযা করবে? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, তুমি কি হারুরিয়্যাহ্‌ [৯১] (খারিজীয়া)? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে আমাদের কারো হায়িয হলে পড়ে তাকে (সলাত) কাযা করার নির্দেশ দেয়া হতো না। (ই.ফা. ৬৫২, ই.সে. ৬৬৭) মু’আযাহ্‌ (রহঃ) তিনি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, ঋতুবতী মহিলা কি সলাত কাযা করবে? ‘আয়িশাহহ (রাঃ) বললেন, তুমি কি হারুরিয়্যাহ্‌? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পত্নীগনের হায়িয হতো, তিনি কি তাদেরকে (সলাত) কাযা করার হুকুম দিয়েছেন? মুহাম্মাদ ইবনু জা’ফার বলেন (আরবি) সলাত কাযা করা। (ই.ফা. ৬৫৩, ই.সে. ৬৬৮) মু’আযাহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, ঋতুবতী মহিলা সওম কাযা করবে এবং সলাত কাযা করবেনা এটা কেমন কথা? তুমি কি হারুরিয়্যাহ্‌? আমি বললাম, আমি হারুরিয়্যাহ্‌ নয়; বরং আমি (জানার জন্যই কেবল) জিজ্ঞেস করছি। তিনি [‘আয়িশা (রাঃ)] বললেন, আমাদের এরূপ হত। তখন আমাদেরকে কেবল সওম কাযা করার নির্দেশ দেয়া হত, সলাত কাযা করার নির্দেশ দেয়া হত না। (ই.ফা. ৬৫৪, ই.সে. ৬৬৯)

【16】

গোসল করার সময় কাপড় কিংবা অনুরূপ কিছু দিয়ে পর্দা করে নেবে

উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাযিঃ) তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের বছর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলাম। তখন আমি তাকে এ অবস্থায় পেলাম যে, তিনি গোসল করছিলেন, আর তার কন্যা ফাতিমাহ্‌ একটি কাপড় দিয়ে তাকে আড়াল করে রেখেছিল।৯২ (ই.ফা. ৬৫৫, ই.সে. ৬৭০) উম্মু হানী বিনতু আবূ তালিব (রাযিঃ) মক্কা বিজয়ের বছর তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এলেন। তিনি তখন মাক্কার উঁচু এলাকায় অবস্থান করছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোসল করতে গেলে ফাতিমাহ্‌ তাঁকে আড়াল করেন। এরপর তিনি নিজের কাপড় নিয়ে পরিধান করলেন। তারপর আট রাক’আত চাশতের সলাত আদায় করলেন। (ই.ফা. ৬৫৬, ই.সে. ৬৭১) সা’ঈদ ইবনু আবূ হিন্‌দ (রাঃ) অতঃপর তিনি বলেন, এরপর তাঁর কন্যা ফাতিমাহ্‌ তাঁর কাপড় দিয়ে তাঁকে আড়াল করে রেখেছিল। গোসল শেষে তিনি ঐ কাপড় নিয়ে পরিধান করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে আট রাক’আত সলাত আদায় করলেন। আর সেটা ছিল চাশতের সময়। (ই.ফা. ৬৫৭, ই.সে. ৬৭২) মাইমুনাহ্‌ (রাযিঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্যে পানি রাখলাম এবং তাঁকে আড়াল করলাম। এরপর তিনি গোসল করলেন। (ই.ফা. ৬৫৮, ই.সে. ৬৭৩)

【17】

লজ্জাস্থানের দিকে তাকানো হারাম

আবূ সা’ঈদ আল খুদরী(রাযিঃ) রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন পুরুষ অপর পুরুষের লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলা লজ্জাস্থানের দিকে তাকাবে না; কোন পুরুষ অপর পুরুষের সাথে এক কাপড়ের নীচে (উলঙ্গ অবস্থায়) ঘুমাবে না এবং কোন মহিলা অপর মহিলার সাথে একই কাপড়ের নীচে ঘুমাবে না।৯৩ (ই.ফা. ৬৫৯, ই.সে. ৬৭৪) যাহ্‌হাক ইবনু ‘উসমান (রহঃ)-এর সূত্রে উক্ত সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তাঁরা উভয়েই (আরবি) এর স্থলে (আরবি) এর উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ- উলঙ্গ অবস্থায় পুরুষ পুরুষের দিকে এবং নারী নারীর দিকে তাকাতে পারবেনা এবং একই বিছানায় ঘুমাবে না। (ই.ফা. ৬৬০, ই.সে. ৬৭৫)

【18】

নির্জনে উলঙ্গ হয়ে গোসল করা জায়িয

হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ্‌ (রহঃ) তিনি কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করে বলেন, এগুলো আবূ হুরায়রা (রাঃ) মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে একটি হল, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বানী ইসরাঈলগণ উলঙ্গ হয়ে গোসল করত, একে ওপরের লজ্জাস্থানের দিকে দেখত। আর মূসা (‘আঃ) গোসল করতেন একাকী। তাই তারা বলাবলি করত, আল্লাহর কসম মূসা আমাদের সাথে গোসল করে না কারণ তার একশিরা রোগ হয়েছে। একবার তিনি গোসল করতে গিয়ে একটি পাথরের উপর তাঁর কাপড় রাখলেন। এরপর পাথরটি তাঁর কাপড় নিয়ে দৌড়াতে লাগল। রাবী বলেন, মূসা (‘আঃ) তার পিছু পিছু ছুটলেন আর বলতে লাগলেন, পাথর! আমার কাপড়, পাথর! আমার কাপড়। এমনিভাবে বনী ইসরাঈলগণ মূসা (‘আঃ)-এর লজ্জাস্থান দেখে ফেলল এবং তারা বলল, আল্লাহর কসম মুসার তো কোন খুত নেই। এরপর পাথর দাঁড়িয়ে গেল এবং তাঁকে দেখে নিল। রাবী বলেন, এরপর তিনি তাঁর কাপড় তুলে নিলেন এবং (রাগে) পাথরকে মারতে শুরু করে দিলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! পাথরের ওপর মূসা (আঃ)- এর আঘাতের ছয়টি কি সাতটি চিহ্ন রয়েছে। (ই.ফা. ৬৬১, ই.সে. ৬৭৬)

【19】

লজ্জাস্থান ঢাকার ব্যাপারে বিশেষভাবে সাবধানতা অবলম্বনের বর্ণনা

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন কা’বাহ্‌ তৈরি করা হচ্ছিল তখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও ‘আব্বাস (রাঃ) পাথর বয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, পাথর বহনের সুবিধার্থে তোমার লুঙ্গি কাঁধের উপর তুলে নাও। এরপর তিনি এরুপ করলেন। সাথে সাথেই তিনি (বেহুশ হয়ে) মাটিতে পড়ে গেলেন। আর তাঁর উভয় চোখ আকাশের দিকে নিবদ্ধ হল। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, আমার লুঙ্গি , আমার লুঙ্গি। এরপর তাঁর লুঙ্গি পরিয়ে দেয়া হল। ইবনু রাফি’ তার রিওয়াতে কাধের স্থলে ঘাড়ে উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ৬৬২, ই.সে. ৬৭৭) জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সাথে কা’বাহ্‌ মেরামতের জন্যে পাথর বয়ে নিচ্ছিলেন। আর তাঁর পরনের ছিল লুঙ্গি। এরপর তাঁর চাচা ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে বললেন, ভাতিজা; তোমার লুঙ্গি খুলে যদি কাঁধের উপর পাথরের নীচে রেখে নিতে (তাহলে ভাল হত)। তিনি লুঙ্গি খুলে তাঁর কাঁধের উপর রাখলেন। সাথে সাথেই তিনি বেহুশ হয়ে পড়ে গেলেন। যাবির (রাঃ) বলেন, সেদিনের পর থেকে আর কখনো তাঁকে উলঙ্গ দেখা যায়নি। (ই.ফা. ৬৬৩, ই.সে.৬৭৮) মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একটি ভারী পাথর বয়ে নিয়ে যাচ্ছিলাম। আর তখন আমার পরনে ছিল একটা পাতলা লুঙ্গি। তিনি বলেন, এরপর আমার লুঙ্গি খুলে গেল। পাথরটি তখন আমার কাছে ছিল। তাই আমি লুঙ্গি তুলে নিতে পারলাম না। এমনিভাবে আমি পাথরটি যথাস্থানে নিয়ে গেলাম। এরপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার কাপড়ের কাছে ফিরে গিয়ে তা নিয়ে এসো। আর কখনো উলঙ্গ হয়ে চলবে না। (ই.ফা. ৬৬৪, ই.সে. ৬৭৯)

【20】

প্রসাবের ও পায়খানার সময় পর্দা করা

আব্দুল্লাহ ইবনু জা’ফার (রাঃ) তিনি বলেছেন, একদিন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর সাওয়ারীর পিছন দিকে বসালেন এবং আমাকে চুপে চুপে এমন একটি কথা বললেন যা আমি কাউকে কখন বলব না। তবে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রাকৃতিক প্রয়োজন সমাধা করার সময় উচু ঢিলা অথবা ঘন গাছগাছালি দ্বারা ঢাকা স্থানকে সবচেয়ে বেশী পছন্দ করতেন। ইবনু আসমা তাঁর বর্ণিত হাদীসে বলেছেন, অর্থাৎ খেজুর বাগানের আড়ালে মানাবীয় প্রয়োজন সমাধান করাটাই বেশী পছন্দ করতেন। (ই.ফা. ৬৬৫, ই.সে. ৬৮০)

【21】

একমাত্র বীর্যপাত থেকে গোসল ফার্‌য করণ [৯৪]

[৯৪] কিন্তু পরবর্তীতে এ হুকুম মানসুখ (রহিত) হয়ে যায় এবং শুধু সহবাসের দ্বারাই গোসল ফারয হয়। আব্দুর রহমান ইবনু আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) তাঁর পিতা আবূ সা’ঈদ আল খুদরী কোন এক সোমবারে আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে কুবা এলাকার দিকে গেলাম। আমরা বানু সালিম গোত্রের মহল্লায় পৌঁছালে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইত্‌বান এর গেইটে দাঁড়ালেন এবং তাকে উচ্চঃস্বরে ডাকলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি পরনের লুঙ্গি হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে বের হয়ে আসলেন। এ অবস্থা দেখে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমরা কি লোকটিকে তাড়াহুড়োয় ফেলে দিলাম? তখন ‘ইতবান বললেন, হে আল্লাহর রসূল! যদি কোন ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীর সাথে সহবাসের সময় তাড়াহুড়ো করে এবং তাতে বীর্যপাত না হয় তখন তাকে কি করতে হবে? (অর্থাৎ তাকে গোসল করতে হবে কিনা?) জবাবে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বস্তুত বীর্যপাত ঘটলেই গোসল করতে হবে। [৯৫] (ই.ফা. ৬৬৬, ই.সে. ৬৮১) আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পানির (ধাতু বের হলে) দ্বারা (গোসল) ফারয হয়। (ই.ফা. ৬৬৭, ই.সে. ৬৮২) আবূল ‘আলা ইবনু শিখ্‌খীর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর এক হাদীস অপর হাদীসকে মানসুখ (রহিত) করে দিতে যেমনিভাবে কুরআনের এক আয়াত অপর আয়াতকে মানসুখ করে। (ই.ফা. ৬৬৮, ই.সে. ৬৮৩) আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক আনসারীর (বাড়ির) সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এরপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সংবাদ পাঠালেন। সে বেরিয়ে এলো আর তার মাথা থেকে তখন ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরছিল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সম্ভবত আমরা তোমাকে তাড়াহুড়োর মধ্যে ফেলেছি। সে বলল হ্যাঁ, ইয়া রসূলুল্লাহ্‌! তিনি বললেন, যখন (কোন কারণে) তোমাকে তাড়াতাড়ি (বীর্য বের হবার আগেই উঠে পড়তে হয়) অথবা বীর্য বের হতে বাধাপ্রাপ্ত হও তখন তোমার উপর গোসল করা (ফারয) নয় বরং তোমার উপর শুধু ওযূ করা জরুরী। আর ইবনু বাশশার বলেন, যখন তোমাকে তাড়াহুড়ার মধ্যে ফেলা হয়েছে বা তোমাকে বীর্যপাত করতে বাধা দেয়া হয়েছে। (ই.ফা. ৬৬৯, ই.সে. ৬৬৮) উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করলাম সে ব্যক্তি সম্পর্কে যে স্ত্রী সহবাস করে (অথচ) তারপর বীর্যপাত হল না। তিনি বললেন, স্ত্রীর (লজ্জাস্থান) থেকে তার (লজ্জাস্থানে) যা লেগেছে তা ধুয়ে ফেলবে। তারপর ওযূ করবে এবং সলাত আদায় করবে। (ই.ফা. ৬৭০, ই.সে. ৬৮৫) উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তারপর বীর্যপাত হয় না- তাঁর সম্পর্কে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সে তার লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে এবং ওযূ করবে। (ই.ফা. ৬৭১, ই.সে. ৬৮৬) যায়দ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) একদা তিনি ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ)-কে প্রশ্ন করেন, কোন লোক যদি তাঁর স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করে এবং বীর্যপাত না হয় তাহলে তাঁর হুকুম কি? ‘উসমান (রাঃ) বললেন, সে সালাতের ওযূ করে নিবে। এবং তার লজ্জাস্থান ধুয়ে ফেলবে। ‘উসমান (রাঃ) বলেন, আমি এটা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি। (ই.ফা. ৬৭২, ই.সে. ৬৮৭) আবূ আইয়ুব (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এমন শুনেছেন। (ই.ফা. ৬৭৩, ই.সে. ৬৮৮)

【22】

কেবল বীর্যপাত হলেই গোসল করতে হবে, এ হুকুম রহিতকরণ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন কেউ তার স্ত্রীর চার-হাত পায়ের মাঝখানে বসবে এবং তার সাথে মিলবে তখন তার উপর গোসল ফারয হবে। মাতার-এর হাদীসে ‘যদিও বীর্য বের না করে’- বাক্যটি অতিরিক্ত রয়েছে। যুহায়র বলেছেন, তাদের মধ্য হতে কেউ যদি নারীর চার শাখার মধ্যে বসে। [৯৬] (ই.ফা. ৬৭৪, ই.সে. ৬৮৯) কাতাদাহ্‌ (রহঃ) অবিকল বর্ণিত রয়েছে। তবে শু’বার হাদীসে ‘এরপর মিলিত হয়’ কথাটির উল্লেখ আছে। কিন্তু ‘যদিও বীর্য বের না হয়’- কথাটি বর্ণনা নেই। (ই.ফা. ৬৭৫, ই.সে. ৬৯০) আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) তিনি বলেন, মুহাজির ও আনসারদের একটি দল এ ব্যাপারে মতবিরোধ করল। আনসারগণ বলল, জোরে অথবা স্বাভাবিক গতিতে পানি (বীর্য) বের না হলে গোসল ফারয হয় না। আর মুহাজিরগণ বলল, স্ত্রী সঙ্গে শুধু মিললেই গোসল ফারয (বীর্য বের হোক বা না হোক) আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, আমি এ ব্যপারে তোমাদেরকে শান্ত করছি। এরপর আমি উঠে গিয়ে ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। আমাকে অনুমতি দেয়া হল। আমি তাকে বললাম, মা ! অথবা (তিনি বলছিলেন) হে মু’মিনদের মা! আমি আপনার কাছে একটি বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে চাই কিন্তু আমি লজ্জাবোধ করছি। তুমি তোমার গর্ভধারিণী মাকে যে ব্যপারে প্রশ্ন করতে পারতে সে ব্যপারে আমাকে প্রশ্ন করতে লজ্জাবোধ করো না। আমি তো তোমার মা। আমি বললাম, গোসল কিসে ফারয হয়? তিনি বললেন, জানা-কোন লোকের কাছেই তুমি প্রশ্ন করেছ। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন কোন পুরুষ স্ত্রীর চার হাত-পায়ের মাঝখানে বসবে এবং একের লজ্জাস্থান অপরের লজ্জাস্থানের সাথে লাগবে তখন গোসল ফারয হবে। (ই.ফা. ৬৭৬, ই.সে. ৬৯১) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক লোক রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করল-যদি কেউ তার স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করে, অতঃপর বীর্য বের হবার আগেই তার পুরুষাঙ্গ বের করে ফেলে তাহলে কি তাদের উভয়ের গোসল ফারয হবে? এ সময়ে ‘আয়িশাহ (রাঃ) সেখানে উপবিষ্ট ছিলেন। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি এবং আয়িশাহ্‌ (রাঃ) ঐরূপ করি, এরপর আমরা গোসল করে ফেলি। (ই.ফা. ৬৭৭, ই.সে. ৬৯২)

【23】

অগ্নি স্পৃষ্ট দ্রব্যাদি থেকে (খাবার পর) ওযূ করা সম্পর্কে [৯৭]

[৯৭] অগ্নি স্পৃষ্ট দ্রব্যাদি খাবার পর ওযূ করা। ইমাম নাবাবী (রহঃ) বলেন, ইমাম মুসলিম (রহঃ) এ অধ্যায়ে প্রথমে এ সকল হাদীসের উল্লেখ করেছেন, যেগুলোর দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, আগুনের দ্বারা পাকানো খাদ্যবস্তু খেলে ওযূ নষ্ট হয়ে যায়। অতঃপর ঐ সকল হাদীসের বর্ণনা পেশ করেছেন, যেগুলোর দ্বারা প্রমানিত হয়েছে যে, এ ধরনের খাবার খেলে ওযূ নষ্ট হয় না। সুতরাং প্রথমে উল্লেখিত হাদীসসমুহ মানসুখ (রহিত)। এ ব্যাপারে পূর্ববর্তী জমহুর উলামায়ে কিরাম, সাহাবায়ি কিরাম ও তাবি’ঈনে প্রায় ঐকমত্য ঘোষণা করেছেন। তবে যে কোন জিনিস খাওয়ার পর কুলি করা এবং হাত-মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলা মুস্তাহাব (নাবাবী) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে ওযূ করতে হবে। (ই.ফা. ৬৭৮, ই.সে. ৬৯৩) ইবনু শিহাব বলেন, ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) তাঁকে বলেছেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইব্‌রাহীম ইবনু কারিয (রহঃ) তিনি একদিন আবূ হুরায়রা (রাঃ)- কে মাসজিদের সামনে ওযূ করতে দেখেছেন। আবূ হুরায়রা(রাঃ) বলেন, আমি কয়েক টুকরো পনির খেয়েছি, তাই ওযূ করছি। কেননা, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। তোমরা আগুনের রান্না করা খাবার খেলে ওযূ করবে। (ই.ফা. ৬৭৮, ই.সে. ৬৯৩) ইবনু শিহাব আমি সা’ঈদ ইবনু খালিদ ইবনু ‘আম্‌র ইবনু ‘উসমান –এর কাছে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছিলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন যে, তিনি আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে ওযূ করা সম্পর্কে ‘উরওয়াহ্‌ন ইবনু যুবায়রকে জিজ্ঞেস করলেন, তিনি বললেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ)- কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন, তোমরা আগুনে রান্না করা খাবার খেয়ে ওযূ করবে। (ই.ফা. ৬৭৮, ই.সে. ৬৯৩)

【24】

আগুনে রান্না খাবার খেয়ে ওযূ করার বিধান মানসুখ (রহিত) হওয়া সম্পর্কে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) একদা রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বকরীর কাঁধের গোশ্‌ত খেলেন তারপর সলাত আদায় করলেন কিন্তু ওযূ করলেন না। (ই.ফা. ৬৭৯, ই.সে. ৬৯৪) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার হাড়ে লাগানো গোশ্‌ত অথবা গোশ্‌ত খেলেন। তারপর সলাত আদায় করলেন; কিন্ত ওযূ করলেন না এবং পানিও স্পর্শ করলেন না। (ই.ফা. ৬৮০, ই.সে. ৬৯৫) ‘আম্‌র ইবনু উমাইয়্যাহ্‌ আয্‌ যামরী (রাঃ) তিনি একবার দেখলেন যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটী বকরীর কাঁধের গোশ্‌ত কেটে খাচ্ছেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করলেন আর ওযূ করলেন না। (ই.ফা. ৬৮১, ই.সে. ৬৯৬) ‘আম্‌র ইবনু উমাইয়্যাহ আয্‌ যামরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একবার রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলাম তিনি একটী বকরীর কাঁধের গোশ্‌ত (ছুরি দিয়ে) কাটছেন। এরপর তিনি তা খেলেন। ইতিমধ্যেই সলাতের জন্যে ডাকা হল। তিনি তখন দাঁড়িয়ে গেলেন এবং ছুরিটি ফেলে দিলেন এবং সলাত আদায় করলেন; কিন্তু ওযূ করলেন না। (ই.ফা. ৬৮২, ই.সে. ৬৯৭) ইবনু শিহাব বলেন, ‘আলী ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস তাঁর পিতা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস-এর মাধ্যমে রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৮২, ই.সে. ৬৯৭) ‘আম্‌র বলেন, বুকায়র ইবনু আল আশাজ্জ কুরায়ব-এর সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী মাইমূনাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার তাঁর কাছে বসে কাঁধের গোশ্‌ত খেলেন, তারপর সলাত আদায় করলেন কিন্তু ওযূ করলেন না। (ই.ফা. ৬৮২, ই.সে. ৬৯৭) ইয়া’কূব ইবনু আল আশাজ্জ কুরায়ব-এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী মায়মুনাহ্‌ (রাঃ) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৮২, ই.সে. ৬৯৭) আবূ রাফি’ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য বকরীর পেটের গোশ্‌ত ভুনা করতাম (তিনি তা খেতেন) তারপর পুনরায় ওযূ না করেই সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ৬৮২, ই.সে. ৬৯৭) ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার দুধ পান করলেন। তারপর পানি আনালেন। এরপর কুলি করলেন এবং বললেন, এতে তৈলাক্ত পদার্থ রয়েছে। (ই.ফা. ৬৮৩, ই.সে. ৬৯৮) আহমাদ ইবনু ‘ঈসা (রহঃ), যুহায়র ইবনু হার্‌ব, হারমালাহ্‌ ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া প্রত্যেকেই ইবনু শিহাব থেকে ‘উকায়ল-এর সানাদে যুহরী থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৮৪, ই.সে. ৬৯৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার কাপড় পরে সলাতের জন্য বের হলেন। এমন সময় কিছু রুটি ও গোশ্‌ত উপঢৌকন এলো। এরপর তিনি (সেখান থেকে) তিনি লুকমা খেলেন। তারপর লোকদেরকে নিয়ে সলাত আদায় করলেন এবং পানি স্পর্শও করলেন না। (ই.ফা. ৬৮৫, ই.সে. ৭০০) মুহাম্মাদ ইবনু ‘আম্‌র ইবনু ‘আতা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি একদিন ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তারপর তিনি ইবনু হাল্‌হালাহ্‌-এর হাদীস (উপরোক্ত হাদীস)-এর অনুরূপ বর্ণনা করেন। সেখানে উল্লেখ আছে যে, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এমন করতে দেখেছেন। আর এ হাদীসের রাবী শুধু সলাত আদায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। লোকদেরকে নিয়ে কথাটির উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৬৮৬, ই.সে. ৭০১)

【25】

উটের গোশ্‌ত খেয়ে ওযূ করা সম্পর্কে

জাবির ইবনু সামুরাহ্‌ (রাযি:) এক লোক রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, আমি কি বকরীর গোশ্‌ত খেয়ে ওযূ করব? তিনি বললেন, তোমার ইচ্ছা ওযূ করতে পার আর নাও করতে পার। সে বলল,আমি কি উটের গোশ্‌ত খেয়ে ওযূ করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, উটের গোশ্‌ত খেয়ে তুমি ওযূ করবে। সে বলল, আমি কি বকরীর ঘরে সলাত আদায় করতে পারি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সে বলল, আমি কি উটের ঘরে সলাত আদায় করতে পারি? তিনি বললেন, না। [৯৮] (ই.ফা. ৬৮৭, ই.সে. ৭০২) আবূ বক্‌র ইবনু আবূ শায়বাহ্‌ ও কাসিম ইবনু যাকারিয়্যা (রহঃ) জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) হতে আবূ কামিল-এর অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৮৮, ই.সে. ৭০৩)

【26】

পবিত্রতা সম্পর্কে নিশ্চিত বিশ্বাস থাকার পর ওযূ ভঙ্গের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিলে সে ওযূ দিয়ে সলাত আদায় করা জায়িয হওয়ার দলীল

‘আব্বাদ ইবনু আত্‌ তামীম তার চাচা তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে সে ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলেন সলাতের মধ্যে যার এমন মনে হয় যেন কিছু (বায়ু) বের হল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে (সলাত ছেড়ে) যাবে না যতক্ষণ না (বায়ু বের হবার) শব্দ শুনবে অথবা (তার) গন্ধ পাবে। আবূ বক্‌র ও যুহায়র ইবনু হার্‌ব তাদের বর্ণনায় উল্লেখ করেন যে, ঐ ব্যক্তি ছিলেন ‘আবদুল্লাহ ইবনু যায়দ। (ই.ফা. ৬৮৯, ই.সে. ৭০৪) আবূ হুরাইয়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ যখন তার পেটের মধ্যে কিছু অনুভব করে তারপর তার সন্দেহ দেখা দেয় যে, পেট থেকে কিছু বের হল কি না। তখন সে যেন মাসজিদ থেকে কখনও বের না হয় যতক্ষন না শব্দ শোনে অথবা গন্ধ পায়। (অর্থাৎ ওযূ ভঙ্গের পূর্ণ বিশ্বাস না হওয়া পর্যন্ত যেন বের না হয়।) (ই.ফা. ৬৯০, ই.সে. ৭০৫)

【27】

মৃত জন্তুর চামড়া পাকা (দাবাগত) করার পর পবিত্র হয়ে যায়। [৯৯]

[৯৯] ইমাম নাববী (রহঃ) বলেনঃ যে সমস্ত বস্তুর দ্বারা ভিজা চামড়া শুকিয়ে যায় এবং তার দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায়। অতঃপর আর চামড়া পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। এ জাতীয় জিনিসের দ্বারা চামড়া পাকা (দাবাগত) করা বৈধ আছে। যেমন- আনারের (ডালিমের) ছাল ফিটকিরী, লবণ ইত্যাদি। শুধুমাত্র রোদ্রে শুকালে চামড়া দাবাগত তথা পাকা হবে না। পাকা (দাবাগত দেয়া) চামড়া জীবিত পশুর হোক অথবা মৃত পশুরই হোক যে কোন কাজে ব্যবহার করা অথবা বিক্রি করা জায়িয আছে। (নাবাবী) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, মাইমূনাহ্‌ (রাঃ)-এর দাসীকে কেউ একটি বকরী সদকাহ্‌ দিল। পরে সে বকরীটি মারা যায়। সে সময় রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মরে পড়ে থাকা বকরীটির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ অবস্থা দেখে তিনি বললেন, তোমরা কেন চামড়া খুলে নিয়ে তা পাকা করে তা দিয়ে উপকৃত হও না? সাহাবাগণ বললেন, এটা যে মৃত। তিনি বললেন, (তাতে কি) এটা খাওয়া হারাম (চামড়া ব্যবহার করা তো হারাম নয়)। আবূ বাক্‌র ও ইবনু ‘উমার মাইমূনাহ্‌ থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। (অর্থাৎ রাবী মাইমূনাহ্‌ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস নন) (ই.ফা. ৬৯১, ই.সে. ৭০৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি মৃত বকরী দেখলেন যা মাইমূনাহ্‌ (রাঃ)-এর দাসীকে সদাকাহ্‌ হিসেবে দেয়া হয়েছিল। অতঃপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা এর চামড়া দিয়ে উপকৃত হও না কেন? সাহাবাগণ বললেন, এটা তো মৃত। তিনি বললেন, এটা তো খাওয়া হারাম। (ই.ফা. ৬৯২, ই.সে. ৭০৭) হাসান আল হুলওয়ানী ও ‘আব্‌দ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) সানাদে ইউনুস-এর রিওয়াতের অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছে। (ই.ফা. ৬৯৩, ই.সে. ৭০৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফেলে দেয়া একটি মরা বকরীর সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন যা মাইমূনাহ্‌ (রাঃ)-এর দাসীকে সদকাহ হিসেবে দেয়া হয়েছিল। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তারা এর চামড়া কেন খুলে নিল না? চামড়াটি পাকা করে তা দিয়ে উপকৃত হত। (ই.ফা. ৬৯৪, ই.সে. ৭০৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মাইমূনাহ্‌ (রাঃ) তাঁকে জানান যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন এক স্ত্রীর একটি পালিত বকরী ছিল। সেটি মারা গেল। তখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা কেন চামড়া খুলে নিচ্ছ না সেটা দিয়ে উপকৃত হতে! (ই.ফা. ৬৯৫, ই.সে. ৭১০) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাইমূনাহ্‌ (রাঃ)-এর দাসীর একটি মরা বকরীর সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বললেন, তোমরা এর চামড়া দিয়ে উপকৃত হও না কেন? (ই.ফা. ৬৯৬, ই.সে. ৭১১) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, চামড়া যখন পাকা (দাবাগাত) করা হয় তখন তা পবিত্র হয়ে যায়। (ই.ফা. ৬৯৭, ই.সে. ৭১২) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইয়াহ্‌ইয়ার হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৬৯৮, ই.সে. ৭১৩) আবূল খায়র (রহঃ) (মারসাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল ইয়াযানী) তিনি বলেছেন, একদিন আমি ইবনু ওয়া’লাহ্‌ আস্‌ সাবায়ীর গায়ে একটা নরম পশমের তৈরী জামা দেখে তা স্পর্শ করে দেখলাম। তখন তিনি বললেন, কি ব্যাপার স্পর্শ করে দেখছো যে? (নাপাক মনে করেছো নাকি!) আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাসকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। বলেছিলাম, আমরা মাগরিবে (মরক্কো) বাস করি। আমাদের সাথে বার্বার এবং অগ্নিপূজকরাও বাস করে। তাদের যাবাহ করে মেষের পোশাক আমাদের কাছে আসে। অথচ আমরা তাদের যাবাহ করা পশুর গোশ্‌ত খাই না। তারা আমাদের জন্য চর্বি ভর্তি মশকও নিয়ে আসে। এ কথা শুনে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস বললেন, আমরা এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ্‌ ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, চামড়া পাকা করলে পবিত্র হয়ে যায়। (ই.ফা. ৬৯৯, ই.সে. ৭১৪) ইবনু ওয়া’লাহ্‌ আস্‌ সাবায়ী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, আমরা পশ্চিম দেশে থাকি। সেখানে আমাদের কাছে অগ্নিপূজকরা মশক নিয়ে আসে, সেটাতে পানি এবং চর্বি জাতীয় পদার্থ থাকে (আমরা সেগুলো ব্যবহার করব কি?)। তিনি বললেন, তা পান করে নাও। আমি বললাম, এটা কি আপনার নিজের অভিমত? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, চামড়া পাকা (দাবাগাত) করলেই তা পবিত্র হয়ে যায়। (ই.ফা. ৭০০, ই.সে. ৭১৫)

【28】

তায়াম্মুম-এর বিবরণ [১০০]

[১০০] ‘তায়াম্মুম’ শব্দের অর্থ সংকল্প করা, ইচ্ছা করা। শরী’আতের দৃষ্টিতে পবিত্রতা অর্জনের সংকল্পে পবিত্র মাটিতে হাত মেরে মুখমন্ডল এবং কব্জির উপরিভাগ মাসাহ করাই ‘তায়াম্মুম’। তবে তায়াম্মুমের নিয়্যাত করবে এবং ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন এক সফরে আমরা তাঁর সাথে বের হলাম। আমরা যখন বাইদা অথবা যাতুল জায়শ নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন আমার হার খুলে পড়ে গেল। রসূলুল্লাহ্‌(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা খোঁজ করতে সেখানে থামলেন। আর লোকজনও তাঁর সাথে সাথে থামালেন। তাদের কাছাকাছি কোথাও পানি ছিল না এবং তাদের নিজেদের কাছেও পানি ছিল না। অতঃপর লোকজন আবূ বক্‌র(রাঃ)-এর কাছে এসে বলতে লাগল, আপনি দেখছেন না আয়িশাহ্‌ (রাঃ) কি করলো? রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আটকে দিয়েছে এবং সে সাথে সমস্ত লোককে আটকে রেখেছে। অথচ তাদের কাছাকাছি কোথাও পানি নেই আর না তাদের নিজেদের কাছে পানি আছে। অতঃপর আবূ বক্‌র(রাঃ) আমার কাছে এলেন। তখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার উরুর উপর মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলেন। তিনি এসে বললেন, তুমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং সমস্ত লোকজনকে আটকে রেখেছ। অথচ না তারা পানির কাছাকাছি রয়েছে, আর না তদের নিজেদের কাছে পানি আছে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) আমাকে ভৎসনা করলেন এবং যতদূর বলার বললেন। তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমার পাঁজরে আঘাত করলেন। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার উরুর উপর থাকার কারণে আমি নড়তেও পারলাম না। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়েই রইলেন। এমনি করে পানি বিহীনভাবে সকাল হয়। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন। অতঃপর তারা তায়াম্মুম করলেন। তখন উসায়দ ইবনু হুযায়র যিনি ছিলেন নকীব (দলপতি)-দের অন্যতম বললেন, হে আবূ বাক্‌র পরিবার। এটাই আপনার প্রথম বারাকাত নয়।” ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি যে উটের ওপর ছিলাম সেটিকে চলার জন্যে উঠালাম। তখন উক্ত হারটি তার নীচে পাওয়া গেল। (ই.ফা. ৭০১, ই.সে. ৭১৬) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি আসমা (রাঃ) থেকে একটি হার ধার নিয়েছিলেন। অতঃপর তা হারিয়ে গেল। তখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবাদের মধ্যে কিছু লোককে খুঁজতে পাঠালেন। (পথে) তাদের সলাতের সময় হয়ে গেল। তখন তারা ওযূ ছাড়াই সলাত আদায় করলেন। এরপর তারা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে এ ঘটনা জানালেন। তখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হল। এ সময় উসায়দ ইবনু হুযায়র বললেন, আল্লাহ তা’আলা আপনাকে (আয়িশাহ্‌) উত্তম বদলা দান করুন। আল্লাহর কসম! আপনার ওপর যখনই কোন সমস্যা এসেছে তখন আল্লাহ তা’আলা আপনার জন্যে এর সমাধানের পথ করে দিয়েছেন এবং মুসলিমদের জন্য তাতে বারাকাত রেখেছেন। [১০১] (ই.ফা. ৭০২, ই.সে. ৭১৭) শাকীক (রহঃ) তিনি বলেন, আমি একবার ‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) ও আবূ মূসা (রাঃ)-এর কাছে বসেছিলাম। তখন আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, হে আবূ ‘আবদুর রহমান! কোন্‌ লোক যদি জুনুবী হয় (যার ফলে তার গোসল ফরয হয়) এবং সে এক মাস যাবৎ পানি না পায় তাহলে সে কিভাবে সলাত আদায় করবে? ‘আবদুল্লাহ বললেন, সে তায়ম্মুম করবে না যদিও একমাস পানি না পায়। আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, তাহলে সূরাহ্‌ মায়িদাহ্‌ এর এ আয়াত-......... “যদি তোমরা পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম কর”- (সূরাহ আল মায়িদাহ্‌ ৫ : ৬) এর কি হবে? ‘আবদুল্লাহ বললেন, এ আয়াতের দ্বারা তাদেরকে যদি তায়াম্মুমের অনুমতি দেয়া হয় তাহলে (ধীরে ধীরে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছবে যে) পানি ঠান্ডাবোধ হলে তারা মাটি দিয়ে তায়াম্মুম শুরু করবে। আবূ মূসা (রাঃ) তখন ‘আবদুল্লাহ-কে বললেন, আপনি কি ‘আম্মার-এর বর্ণনা শোনেননি (তিনি বলেন) যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কোন এক প্রয়োজনে পাঠালেন। (পথিমধ্যে) আমি অপবিত্র হয়ে গেলাম এবং পানি পেলাম না। তখন আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম চতুস্পদ জন্তু যেভাবে মাটিতে গড়াগড়ি দেয়। তারপর আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে এ ঘটনা বললাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার জন্যে দু’হাত দিয়ে এরূপ করাই যথেষ্ট ছিল-এ বলে তিনি তাঁর দু’হাত একবার মাটিতে মারলেন। তারপর বামহাত দিয়ে ডানহাত মাসাহ করলেন এবং উভয় হাতের কব্জির উপরিভাগ ও মুখমন্ডল মাসাহ করলেন। ‘আবদুল্লাহ বললেন, তুমি কি দেখোনি যে, ‘উমার (রাঃ) ‘আম্মার (রাঃ)-এর কথা যথেষ্ট মনে করেননি? (ই.ফা. ৭০৩, ই.সে. ৭১৮) শাকীক (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ মূসা ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বললেন, এরপর আবূ মু’আবিয়ার হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার জন্যে এরূপ করাই যথেষ্ট ছিল-এ বলে তিনি তাঁর উভয় হাত মাটিতে মারলেন। অতঃপর ঝেড়ে মুখমন্ডল এবং উভয় কব্জি মাসাহ করলেন। (ই.ফা. ৭০৪, ই.সে. ৭১৯) ‘আবদুর রহমান ইবনু আবযা (রাঃ) এক লোক ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে এসে বলল, আমি অপবিত্র হয়েছি কিন্তু পানি পাইনি (তখন কি করব?)। তিনি বললেন, তুমি সলাত আদায় করো না। তখন ‘আম্মার (রাঃ) বললেন, আমীরুল মু’মিনীন! আপনার কি স্মরণ নেই যে, আমি ও আপনি কোন এক অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলাম। অতঃপর আমরা উভয়েই অপবিত্র হয়ে পড়লাম। আর কোথাও পানি পেলাম না তখন আপনি সলাত আদায় করলেন না কিন্তু আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম এবং সলাত আদায় করলাম। অতঃপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ ঘটনা জানালে তিনি বললেন, তোমার জন্যে এটাই যথেষ্ট ছিল যে, তুমি দু’হাত জমিনে মারতে তারপর ফুঁক দিয়ে আলগা ধুলা ফেলে দিতে তারপর উভয় হাতের কব্জি দ্বারা মাসাহ করতে তোমার দু’হাতে ও চেহারা”। ‘উমার (রাঃ) বললেন, “আম্মার! আল্লাহকে ভয় কর”। তিনি [‘আম্মার (রাঃ)] বললেন, “আপনি চাইলে আমি এটা আর বর্ণনা করব না”। হাকাম বলেন, ‘আবদুর রহমান ইবনু আবযার পুত্র তার পিতা ‘আবদুর রহমান থেকে আমার কাছে যার্‌-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তিনি বললেন, অতঃপর ‘উমার (রাঃ) বললেন, তোমার বর্ণনায় দায়-দায়িত্ব তোমার উপর। (ই.ফা. ৭০৫, ই.সে.৭২০) ‘আবদুর রহমান ইবনু আবযা (রাঃ) এক লোক ‘উমার (রাঃ)-এর কাছে এসে বলল, আমি অপবিত্র হয়েছি এবং পানি পাইনি (তখন ক করব?)-(এরপর রাবী পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাতে অতিরিক্ত আছে যে, ‘আম্মার (রাঃ) বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন আল্লাহ তা’আলার আমার ওপর আপনার যে হক রেখেছেন (অর্থাৎ আপনাকে খলীফা বানিয়েছেন) তার প্রতি লক্ষ্য রেখে বলছিঃ আপনি চাইলে আমি আর কারও কাছে এটা বর্ণনা করব না এবং সালামাহ্‌ আমার কাছে যার্‌ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন কথাটি উল্লেখ করেনি। (ই.ফা. ৭০৬, ই.সে. ৭২১) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর মুক্তকৃত দাস ‘উমায়র তিনি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, আমি এবং উম্মুল মু’মিনীন মাইমূনাহ্‌ (রাঃ)-এর মুক্তকৃত দাস ‘আবদুর রহমান ইবনু ইয়াসার একবার আবূল জাহ্‌ম ইবনুল হারিস ইবনুস্‌ সিম্মা আল-আনাসারীর কাছে গেলাম। তখন আবূল জাহম (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার বি’রি জামাল (মাদীনার নিকটবর্তী একটি স্থান)-এর দিক থেকে আসছিলেন, অতঃপর পথিমধ্যে এক ব্যক্তি তার সাথে সাক্ষাত করে সালাম দিল কিন্তু তিনি তার উত্তর দিলেন না বরং একটি দেয়ালের কাছে গিয়ে তাঁর মুখমন্ডল এবং উভয় হাত মাসাহ করলেন। তারপর তার সালামের জবাব দিলেন। (ই.ফা. ৭০৬, ই.সে. ৭২১) ইবনু ‘উমার (রাঃ) এক ব্যক্তি পথ দিয়ে যাচ্ছিল। আর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন প্রস্রাব করছিলেন। সে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম করল। কিন্তু তিনি তার জবাব দিলান না। (ই.ফা. ৭০৭, ই.সে. ৭২২)

【29】

মুসলিম অপবিত্র (নাপাক) হয় না

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি একবার মাদীনার কোন এক রাস্তায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি (আবূ হুরায়রা) তখন (জানাবাত) অপবিত্র অবস্থায় ছিলেন। এ কারণে তিনি আস্তে করে পাশ দিয়ে চলে গেলেন এবং গোসল করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে খোঁজ করলেন। যখন তিনি আসলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “হে আবূ হুরায়রা! তুমি কোথায় ছিলে? তিনি বললেন, ইয়া রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার সঙ্গে যখন আমার সাক্ষাৎ হয় তখন আমি অপবিত্রাবস্থায় ছিলাম। তাই আমি গোসল না করে আপনার মাজলিসে বসা ভাল মনে করিনি। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সুবহানাল্লাহ! মু’মিন তো অপবিত্র হয় না। [১০২] (ই.ফা. ৭০৮, ই.সে. ৭২৩) হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) একদিন অপবিত্র থাকা অবস্থায় রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তার সাক্ষাৎ হয়, ফলে তিনি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন এবং গোসল করে পরে এলেন এবং বললেন, আমি জানাবাত (গোসল ফারয হওয়ার কারণে নাপাক) অবস্থায় ছিলাম। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, মুসলিম তো নাপাক হয় না। (ই.ফা. ৭০৯, ই.সে. ৭২৪)

【30】

জুনুবী বা অন্য কারণে অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহ তা’আলার যিক্‌র করা

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর যিক্‌র করতেন। (ই.ফা. ৭১০, ই.সে. ৭২৫)

【31】

বিনা ওযূতে খাবার খাওয়া জায়িয, এরূপ করা মাকরূহ নয়; আর ওযূ নষ্ট হলে তৎক্ষণাৎ ওযূ করাও অপরিহার্য নয়।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানা থেকে বের হলেন। ইতিমধ্যেই খাবার আনা হল। লোকজন তাঁকে ওযূর কথা আলোচনা করল। তিনি বললেন, আমি কি সলাত আদায়ের ইচ্ছা করছি যে, ওযূ করব? (ই.ফা. ৭১১, ই.সে. ৭২৬) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ছিলাম। তিনি পায়খানা থেকে এলেন। খাবার আনা হল। তাকে বলা হল, আপনি কি ওযূ করবেন না? তিনি বললেন, কেন? আমি কি সলাত আদায় করছি যে, ওযূ করব? (ই.ফা. ৭১২, ই.সে. ৭২৭) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার পায়খানায় গেলেন। পরে তিনি যখন (পায়খানা সেরে ফিরে) এলেন তখন তাঁর সামনে খাবার দেয়া হল। অতঃপর তাঁকে বলা হল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ওযূ করবেন না? তিনি বললেন, কেন? সলাতের জন্য? (ই.ফা. ৭১৩, ই.সে. ৭২৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানা থেকে তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করে আসলে তাঁর সামনে খাবার এনে দেয়া হল। তিনি তা খেলেন, কিন্তু পায়খানা থেকে বের হয়ে পানি স্পর্শও করেননি (অর্থাৎ ওযূ করলেন না)। মুহাম্মাদ ইবনু মুসলিম বললেন, ‘আম্‌র ইবনু দীনার সা’ঈদ ইবনু হুওয়াইরিসের মাধ্যমে আমার কাছে এতটুকু বর্ণনা করেছেন যে, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলা হল, আপনি তো ওযূ করলেন না? জবাবে তিনি বলেছেনঃ আমি তো এখন সলাত আদায় করি না যে ওযূ করতে হবে? ‘আম্‌র ইবনু দীনার বলেছেন যে, তিনি হাদীসটি সা’ঈদ ইবনু হুওয়াইরিস-এর নিকট থেকে নিজে শুনেছেন। (ই.ফা. ৭১৪, ই.সে. ৭২৯)

【32】

শৌচাগারে প্রবেশ করলে কি বলতে হবে

আনাস (রাঃ) রসূলুলাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শৌচাগারে প্রবেশ করার সময় বলতেন, “আল্ল-হুম্মা আ’ঊযুবিকা মিনাল খুব্‌সি ওয়াল খবা-য়িস” অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুষ্ট পুরুষ ও জিন্‌ ও নারী জিন থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।”(ই.ফা. ৭১৫, ই.সে. ৭৩০) ‘আবূল ‘আযীয (রহঃ) অবিকল বর্ণিত রয়েছে। এ বর্ণনায় “আ’ঊযু বিল্লা-হি মিনাল খুব্‌সি ওয়াল খবা-য়িস” এর উল্লেখ আছে। (ই.ফা. ৭১৬, ই.সে. ৭৩১)

【33】

বসে ঘুমালে ওযূ নষ্ট হয় না।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেছেন, একদা সলাতের ইকামাত দেয়া হয়ে গেল। কিন্তু রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখনও এক লোকের সঙ্গে চুপে চুপে আলাপ করছিলেন। লোকেরা বসে বসে ঘুমিয়ে না পড়া পর্যন্ত তিনি সলাতে এসে দাঁড়াননি। সলাতে দাঁড়াতে দাঁড়াতে তাঁর দেরি হওয়ায় লোকেরা (বসে বসে) ঘুমিয়ে পড়েছিল। (ই.ফা. ৭১৭, ই.সে. ৭৩২) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেছেন, একদিন সলাতের জন্য ইকামাত দেয়া হয়ে গেল। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখনও এক ব্যক্তির চুপে চুপে আলাপ করছিলেন। তিনি দীর্ঘক্ষণ আলাপ করলেন। এমনকি সহাবারা সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন। এরপর তিনি আসলেন এবং তাদের সাথে করে সলাত আদায় করলেন (ই.ফা. ৭১৮, ই.সে. ৭৩৩) কাতাদাহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবাগণ ঘুমিয়ে যেতেন তারপর সলাত আদায় করতেন কিন্তু ওযূ করতেন না। বর্ণনাকারী শু’বাহ্‌ (রাঃ) বলেন, আমি কাতাদাহ্‌কে বললাম “আপনি কি নিজে আনাস (রাঃ)-এর কাছ থেকে শুনেছেন”? তিনি বললেন, “হ্যাঁ, আল্লাহর কসম!” (ই.ফা. ৭১৯, ই.সে. ৭৩৪) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, (একদা) ‘ইশার জামা’আত দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তখন এক লোক বলল, আমার কিছু প্রয়োজন আছে। পরে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে তাঁর সাথে আলাপ করতে লাগলেন। তিনি এতক্ষণ ধরে আলাপ করলেন যে, উপস্থিত সকলেই অথবা কিছু লোক ঘুমিয়ে পড়ল (বসে বসে)। তারপর তারা সলাত আদায় করল। (ই.ফা. ৭২০, ই.সে. ৭৩৫)