36. কুরবানী

【1】

কুরবানী করার সময় প্রসঙ্গে

জুন্‌দাব ইবনু সুফ্‌ইয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ঈদুল আয্‌হায় উপস্থিত ছিলাম। তিনি অন্য কোন কাজ না করে সলাত আদায় করলেন। সলাত শেষে সালাম ফিরলেন। অতঃপর তিনি কুরবানীর গোশ্‌ত দেখতে পেলেন, যা তাঁর সলাত আদায়ের আগেই যাবাহ করা হয়েছিল। তারপর তিনি বললেন, যে লোক সলাত আদায়ের আগে তার কুরবানীর পশু যাবাহ করেছে, সে যেন এর জায়গায় অন্য একটি পশু যাবাহ করে। আর যে ব্যক্তি যাবাহ করেনি সে যেন আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে (বিস্‌মিল্লা-হ) যাবাহ করে। [১] (ই.ফা. ৪৯০৪, ই.সে. ৪৯০৮) জুন্দাব ইবনু সুফ্‌ইয়ান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ঈদুল আয্‌হায় উপস্থিত ছিলাম। তিনি মানুষের সাথে সলাত শেষ করে একটি বকরী দেখতে পেলেন, যা সলাতের আগেই যাবাহ করা হয়েছে। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সলাতের আগে যে লোক যাবাহ করেছে, সে যেন এর জায়গায় অন্য একটি বকরী যাবাহ করে। আর যে যাবাহ করেনি সে যেন এখন আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে যাবাহ করে। (ই.ফা. ৪৯০৫, ই.সে. ৪৯০৯) আস্ওয়াদ ইবনু কায়স (রহঃ) উক্ত সূত্রে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন এবং তাঁরা আবুল আহ্ওয়াস (রহঃ)-এর হাদীসের হুবুহু ... বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৯০৬, ই.সে. ৪৯১০) জুন্দাব বাজালী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সে সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম, যখন তিনি ঈদুল আয্‌হার সলাত আদায় করছিলেন। অতঃপর তিনি খুৎবা দিতে গিয়ে বলেন, যে লোক সলাত সম্পন্ন হওয়ার আগে যাবাহ করেছে সে যেন এর জায়গায় আরেকটি (পশু) যাবাহ করে। আর যে যাবাহ করেনি, সে যেন এখন আল্লাহ্‌র নামে যাবাহ করে। (ই.ফা. ৪৯০৭, ই.সে. ৪৯১১) শু’বাহ (রহঃ) উল্লেখিত সূত্রে হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৯০৮, ই.সে. ৪৯১২) বারা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার মামা আবূ বুরদাহ্‌ (রাঃ) সলাতের আগে কুরবানী করলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ওটা গোশ্‌তের বকরী। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার কাছে ছয় মাসের একটি বকরীর বাচ্চা রয়েছে। তিনি বললেন, সেটি যাবাহ করো। তুমি ব্যতীত অন্য কারো জন্য তা ঠিক হবে না। অতঃপর তিনি বললেন, যে লোক সলাতের আগে যাবাহ করল, সে শুধু নিজের জন্যই যাবাহ করল (অর্থাৎ আল্লাহর জন্য হলো না)। আর যে লোক সলাতের পর যাবাহ করল, তার কুরবানী পূর্ণ হয়ে গেল এবং সে মুসলিমদের শারী’আত অনুযায়ী কাজ করল। (ই.ফা. ৪৯০৯, ই.সে. ৪৯১৩) বারা ইবনু আযিব (রাঃ) তাঁর মামা আবু বুরদাহ্‌ ইবনু নিয়ার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যাবাহ এর আগে যাবাহ করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আজকের দিনে গোশ্‌ত খোঁজা ভাল নয়। তাই আমি আমার পরিবার-পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও স্বীয় গৃহের লোকদের খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে দ্রুত কুরবানী করেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি আবার কুরবানী করো। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার কাছে একটি দুধেল বকরী আছে, যেদি গোশ্‌তের (মাপে) দু’টি বকরীর চেয়েও ভাল। তিনি বললেন, দু’টির কুরবানীর মধ্যে এটিই তোমার উত্তম কুরবানী হবে। আর তুমি ব্যতীত অন্য কারো জন্য ছয় মাসের বকরী যথেষ্ট হবে না। ( ই.ফা. ৪৯১০, ই.সে. ৪৯১৪) বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, (একদা) কুরবানীর দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের লক্ষ্য করে খুৎবা দিলেন এবং বললেনঃ সলাত আদায়ের আগে কেউ যেন যাবাহ না করে। বারা (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমার মামা বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আজকের দিনে তো গোশ্‌ত খোঁজা ভাল নয়। অতঃপর বর্ণনাকারী হুশায়ম (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের উপরোল্লিখিত বাক্য বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪৯১১, ই.সে. ৪৯১৫) বারা (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আমাদের মতো সলাত আদায় করে, আমাদের কিবলামুখী হয় এবং আমাদের মতো কুরবানী করে, সে যেন সলাতের পূর্বে যাবাহ না করে। পরে আমার মামা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমি তো আমার ছেলের পক্ষ থেকে কুরবানী করে ফেলেছি। তিনি বললেন, সেটা তো এমন জিনিস, যা তুমি তোমার পরিবারের জন্য জলদি করে (যাবাহ করে) ফেলেছ। তিনি বললেন, আমার কাছে (এমন) একটি বকরি আছে, যা দুটি বকরীর চেয়ে উত্তম। তিনি বললেন, তুমি সেটা কুরবানী কর। কারন সেটাই তোমার উত্তম কুরবানী হবে। (ই.ফা. ৪৯১২, ই.সে. ৪৯১৬) বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আজকের দিনে আমাদের প্রথম কাজ হলো সলাত আদায় করা। তারপর আমরা ফিরে গিয়ে কুরবানী করব। যে লোক এরূপ করলো সে আমাদের সুন্নাত পালন করলো। আর যে লোক (সলাতের আগে) যাবাহ করলো, সেটা কেবল গোশ্‌ত (খাওয়ার জন্য) হলো, যা সে নিজের পরিবারের জন্য অগ্রিম ব্যবস্থা করলো। সেটা কুরবানীর কিছুই হলো না। আবূ বুরদাহ্‌ ইবনু নিয়ার (রাঃ) পূর্বেই কুরবানীর নিয়্যাতে যাবাহ করে ফেলেছিলেন। তাই তিনি বললেন, আমার কাছে একটি ছয় মাসের বকরীর বাচ্ছা আছে যা এক বছরের বাচ্চার চেয়েও হৃষ্টপুষ্ট। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি সেটিই কুরবানী করো। তোমার পরে আর কারো জন্য এটা যথেষ্ট হবে না। (ই.ফা. ৪৯১৩, ই.সে. ৪৯১৭) বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অবিকল বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৯১৪, ই.সে. ৪৯১৮) বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন সলাতের পর আমাদের লক্ষ্য করে খুৎবা দিলেন। তারপর রাবী উল্লেখিত বর্ণনাকারীদের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৯১৫, ই.সে. ৪৯১৯) বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, কুরবানীর দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের উদ্দেশ্যে খুৎবা দিলেন। তিনি এতে বললেনঃ সলাতের আগে কেউ যেন কুরবানী না করে। এক লোক বলল, আমার কাছে একটি দুধেল বকরী রয়েছে, যেটি গোশ্‌তের (হিসেবে) দু’টি বকরীর চেয়ে উত্তম। তিনি বললেন, ওটা কুরবানী করো। তোমার পর অন্য কারো জন্য এ রকম ছ’মাসের বাচ্চা (কুরবানী করা) যথেষ্ট হবে না। (ই.ফা. ৪৯১৬, ই.সে. ৪৯২০) বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ বুরদাহ্‌ (রাঃ) সলাতের পূর্বে কুরবানী করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটার পরিবর্তে অন্য একটি কুরবানী করো। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার নিকট শুধু একটি ছ’মাসের বকরীর বাচ্চা আছে। শু’বাহ্‌ (রহঃ) বলেন, মনে হয় তিনি বলেছেন, সেটা এক বছরের বাচ্চার চাইতেও উত্তম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সেটির স্থানে এটি কুরবানী করো। আর তোমার পর অন্য কারো জন্য এটা যথেষ্ট হবে না। (ই.ফা. ৪৯১৭, ই.সে. ৪৯২১) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইসহাক্ ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) শু’বাহ (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূত্র তবে তিনি এটা ‘এক বছরের বাচ্চার চাইতেও উত্তম’ এ বাক্যের বর্ণনায় সংশয়ের বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৪৯১৮, ই.সে. ৪৯২২) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন বললেনঃ যে ব্যক্তি সলাতের পূর্বে যাবাহ করেছে, সে যেন আবার যাবাহ করে। এক লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আজকের দিনে তো গোশ্‌ত খাওয়ার ইচ্ছা হয়ে থাকে! এ সময় সে তার প্রতিবেশীদের প্রয়োজনের কথাও উল্লেখ করে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেন তার কথাকে সত্য মনে করলেন। সে আরো বলল, আমার কাছে একটি ছ’মাসের বকরীর বাচ্চা রয়েছে, যেটি গোশ্‌তের (হিসেবে) অন্য দু’টি বকরীর চাইতেও উত্তম, আমি কি সেটি যাবাহ করব? আনাস (রাঃ) বলেন, পরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে অনুমতি দিলেন। আমার জানা নেই যে, ঐ অনুমতি এ লোক ব্যতিত অন্য কারো জন্যে ছিল কি-না। আনাস (রাঃ) আরো বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি দুম্বার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং সে দু’টি যাবাহ করলেন, আর লোকজন বকরীগুলোর দিকে (অর্থাৎ ঐ দুম্বাগুলোর দিকে) এগিয়ে গেল এবং সেগুলো বন্টন করল। অথবা তিনি বলেছেন, তারা পরস্পর ভাগ-বাটোয়ারা করল। (ই.ফা. ৪৯১৯, ই.সে. ৪৯২৩) আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করলেন, এরপর খুৎবা দিলেন। অতঃপর যে লোক সলাতের আগে কুরবানী করেছে তাকে আবার কুরবানী করার নির্দেশ দিলেন। এরপর বর্ণনাকারী ইবনু ‘উলাইয়্যার হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪৯২০ ই.সে. ৪৯২৪) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন আমাদের উদ্দেশ্যে খুৎবা দিলেন। তারপর গোশ্‌তের গন্ধ পেয়ে (সলাতের আগে) কুরবানী করতে বারণ করলেন। তিনি বললেন, যে ব্যক্তি সলাতের পূর্বে কুরবানী করেছে, সে যেন আবার কুরবানী করে। তারপর বর্ণনাকারী ইবনু ‘উলাইয়্যাহ্‌ ও হাম্মাদ (রহঃ)-এর হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৯২১, ই.সে. ৪৯২৫)

【2】

কুরবানীর পশুর বয়স

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মুসিন্নাহ্‌ (দুধ দাঁত পড়ে গেছে এমন পশু) ছাড়া কুরবানী করবে না। তবে এটা তোমাদের জন্য কষ্টকর মনে হলে তোমরা ছ’মাসের মেষ-শাবক কুরবানী করতে পার। (ই.ফা. ৪৯২২, ই.সে. ৪৯২৬) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর দিন মাদীনায় আমাদের নিয়ে সলাত আদায় করলেন। তারপর কিছু লোক এ মনে করে আগেই কুরবানী করে ফেললো যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্ভবত কুরবানী করেছেন। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যারা তাঁর পূর্বে কুরবানী করেছে, তাদেরকে আবার আর একটি কুরবানী করার আদেশ করেন এবং তিনি নির্দেশ দেন, কেউ যেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কুরবানী করার আগে কুরবানী না করে। (ই.ফা. ৪৯২৩, ই.সে. ৪৯২৭) ‘উক্‌বাহ্‌ ইবনু ‘আমির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সহাবীগনের মধ্যে কুরবানীর পশু বন্টন করার জন্য তাঁকে কিছু বকরী দিলেন। একটি বাচ্চা (ছ’মাসের) বাকী রয়ে গেল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ ব্যাপারে জানালে তিনি বললেন, তুমি এটা কুরবানী করো। কুতাইবাহ্‌ (রহঃ) ... শব্দের স্থলে ... শব্দটি উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ৪৯২৪, ই.সে. ৪৯২৮) ‘উক্‌বাহ্‌ ইবনু ‘আমির আল-জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মধ্যে কুরবানীর জন্ত ভাগ করলে আমার ভাগে একটি ছ’মাসের বাচ্চা ছাগল পড়ে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি তো ছ’মাসের একটি বাচ্চা (ছাগল) পেয়েছি? তিনি বললেন তা-ই তুমি কুরবানী করো। (ই.ফা. ৪৯২৫, ই.সে. ৪৯২৯) ‘উক্‌বাহ্‌ ‘আমির জুহানী (রহঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণের মধ্যে কুরবানীর জন্তু ভাগ করলেন। অতঃপর বর্ণনাকারী উল্লেখিত অনুবাদের হুবহু রিওয়ায়াত করেন। (ই.ফা. ৪৯২৬, ই.সে. ৪৯৩০)

【3】

কুরবানী করা মুস্তাহাব, আর অপর কে দায়িত্ব না দিয়ে নিজেই তা যাবাহ করা এবং ‘বিস্‌মিল্লা-হ’ ও ‘আল্ল-হু আকবার’ বলাও মুস্তাহাব

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ শিং বিশিষ্ট সাদা-কালো ধুসর রংয়ের দু’টি দুম্বা স্বহস্তে যাবাহ করেন। (যাবাহ করার সময়) তিনি ‘বিস্‌মিল্লা-হ’ ও ‘আল্ল-হু আকবার’ বলেন [২] এবং (যাবাহ্‌কালে) তাঁর একখানা পা দুম্বা দু’টির ঘাড়ের পাশে রাখেন। (ই.ফা. ৪৯২৭, ই.সে. ৪৯৩১) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’শিং যুক্ত সাদা-কালো বর্ণের দু’টি দুম্বা কুরবানী করেন। তিনি আরও বলেন, আমি-তাঁকে দুম্বা দু’টি স্বহস্তে যাবাহ করতে দেখেছি। আরও দেখেছি, তিনি ও দু’টির ঘাড়ের পাশে নিজ পা দিয়ে চেপে রাখেন এবং ‘বিস্‌মিল্লা-হ’ ও ‘আল্লাহ আকবার’ বলেন। (ই.ফা. ৪৯২৮, ই.সে. ৪৯৩২) আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানী করেন। রাবী পরবর্তী অংশ উল্লেখিত হাদীসের মতই রিওয়ায়াত করেন। শু’বাহ্‌ (রহঃ) বলেন, আমি কাতাদাহ্‌কে বললাম, আপনি কি আনাস (রাঃ) থেকে হাদীসটি শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ (শুনেছি)। (ই.ফা. ৪৯২৯, ই.সে. ৪৯৩৩) আনাস (রাঃ) আনাস (রাঃ)-এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হুবহু রিওয়ায়াত করেন। তবে তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘আমি তাঁকে ......... বলতেও শুনেছি। (ই.ফা. ৪৯৩০, ই.সে. ৪৯৩৪) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানী করার জন্য শিংওয়ালা দুম্বাটি আনতে নির্দেশ দেন- যেটি কালোর মধ্যে চলাফেরা করতো (অর্থাৎ- পায়ের গোড়া কালো ছিল), কালোর মধ্যে শুইতো (অর্থাৎ- পেটের নিচের অংশ কালো ছিল) এবং কালো মধ্য দিয়ে দেখতে (অর্থাৎ- চোখের চারদিকে কালো ছিল)। সেটি আনা হলে তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে বললেন, ছোরাটি নিয়ে এসো। অতঃপর বলেন, ওটা পাথরে ধার দাও। তিনি তা ধার দিলেন। পরে তিনি সেটি নিলেন এবং দুম্বাটি ধরে শোয়ালেন। তারপর সেটা যাবাহ করলেন এবং বললেন- ............ “আল্লাহ্‌র নামে। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবার ও তাঁর উম্মাতের পক্ষ হতে এটা ক্ববূল করে নাও”। তারপর এটা কুরবানী করেন। (ই.ফা. ৪৯৩১, ই.সে. ৪৯৩৫)

【4】

যা রক্ত ঝরায় তা দিয়েই যাবাহ করা বৈধ, তবে দাঁত-নখ ও সকল হাড় ব্যতীত

রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা আগামীকাল শত্রুর সঙ্গে মুকাবিলা করবো। অথচ আমাদের সঙ্গে কোন ছুরি নেই। তিনি বললেন, তাড়াতাড়ি কিংবা ভালভাবে দেখে নিখঁতভাবে যাবাহ করবে। যা রক্ত প্রবাহিত করে, যার উপর আল্লাহ্‌র নাম নেয়া হয় তা (দিয়ে যাবাহকৃত জন্তু) খাও। তবে তা যেন দাঁত ও নখ না হয়। আমি তোমাদের কাছে এর কারণ বর্ণনা করেছি। কেননা দাঁত হলো হাড় বিশেষ, আর নখ হলো হাবশীদের ছুরি। রাবী বলেন, আমরা গনীমাতের কিছু উট ও বকরী পেলাম। সেখান থেকে একটি উট ছুটে গেলে এক লোক তীর মেরে সেটাকে আটকিয়ে ফেললো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এসব উটের মধ্যেও বন্য প্রাণীর মতো আচরণ রয়েছে। অতএব এগুলোর মাঝে কোন একটি যদি নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে যায় তবে তার সঙ্গে এরূপ ব্যবহারই করবে। (ই.ফা. ৪৯৩২, ই.সে. ৪৯৩৬) রাফি‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) আমরা তিহামার অন্তর্গত ‘যুল-হুলাইফাহ্‌’ নামক জায়গায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। সেখানে আমরা বকরী ও উট পেলাম। লোকজন তাড়াতাড়ি করে ডেগের মধ্যে এগুলোর গোশ্‌ত জ্বাল দিতে লাগলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিলে ডেগগুলোর পার্শ্বদেশ উল্টিয়ে দেয়া হলো। তারপর একটি উট দশটি ছাগলের সমান গণ্য করা হলো। রাবী হাদীসের অবশিষ্টাংশ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু সা‘ঈদ- এর হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪৯৩৩, ই.সে. ৪৯৩৭) রাফি ‘ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা আগামীকাল শত্রুর সঙ্গে মুকাবিলা করবো। অথচ আমাদের সঙ্গে কোন ছুরি নেই। (ধারালো) বাঁশের খোলস দ্বারা কি যাবাহ করবো? রাবী ইসমা’ঈল পুরো ঘটনাসহ হাদীসটি বর্ণনা করেন। তিনি [”রাফি (রাঃ)] আরও বলেন, উক্ত উটগুলোর মধ্য হতে একটি উট ছুটে গেলে আমরা তীর ছুঁড়ে সেটাকে পাকড়াও। (ই.ফা. ৪৯৩৪, ই.সে. ৪৯৩৮) সা‘ঈদ ইবনু মাসরূক (রহঃ) উপরোক্ত সানাদে হাদীসটি শেষ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গরূপে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসে তিনি ‘আমাদের সঙ্গে ছুরি নেই, আমরা কি বাঁশ দ্বারা যাবাহ করবো’ রাফি‘-এর এ উক্তিটি উল্লেখ করেন। (ই.ফা. ৪৯৩৪, ই.সে. ৪৯৩৯) রাফি‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা আগামীকাল দুশমনের সঙ্গে মুকাবিলা করবো, অথচ আমাদের কাছে কোন ছুরি নেই। শু‘বাহ্‌ শেষ পর্যন্ত হাদীসটি উল্লেখ করেন। তবে তিনি এ কথাটি উল্লেখ করেননি, “কিছু লোক তাড়াতাড়ি করে, পরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশে সেগুলো (ডেগ বা পাতিলগুলো) উল্টিয়ে দেয়া হয়।” তবে (এ অংশটি ব্যতীত) তিনি পুরো ঘটনাই বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৯৩৫, ই.সে.৪৯৪০)

【5】

ইসলাম সূচনালগ্নে তিনদিনের পরে কুরবানীর গোশ্ত খাওয়া সম্বন্ধে যে নিষেধাজ্ঞা অর্পিত হয়েছিল তার বর্ণনা এবং তা রহিত হওয়া ও যতদিন ইচ্ছা ততদিন পর্যন্ত খাওয়া বৈধ হওয়ার বর্ণনা

আবূ ‘উবায়দ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) এর সাথে ঈদগাহে উপস্থিত ছিলাম। তিনি খুতবার আগে সলাত আদায় করলেন এবং বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে তিনদিনের পর কুরবানীর গোশ্‌ত খেতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৪৯৩৬, ই.সে. ৪৯৪১) আবূ ‘উবায়দ (রহঃ) তিনি ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সাথে ঈদগাহে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, (পরবতী সময়) আমি ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-এর সাথে সলাত আদায় করেছি। তিনি খুতবার আগে আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করেন। তারপর লোকজনের উদ্দেশ্যে খুত্‌বাহ্‌ দেন। (খুতবায়) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনদিনের পর কুরবানীর গোশ্‌ত আহার করতে তোমাদের বারণ করেছেন। অতএব তোমরা তা খেয়ো না। (ই.ফা. ৪৯৩৭, ই.সে. ৪৯৪২) যুহায়র ইবনু হারব, হাসান হুলওয়ানী ও ‘আব্দ ইবনু হুমায়দ, যুহরী (রহঃ) উক্ত সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৯৩৮, ই.সে. ৪৯৪৩) ইবনু ‘উমার (রাঃ) এর সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেনঃ কেউ যেন কুরবানীর গোশ্ত তিনদিনের পরে না খায়। (ই.ফা. ৪৯৩৯, ই.সে. ৪৯৪৪) ইবনু ‘উমার (রাঃ) এর সানাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে লায়স (রহঃ) এর হাদীসের হুবহু রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৪৯৪০, ই.সে. ৪৯৪৫) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন দিনের উপরে কুরবানীর গোশ্‌ত আহার করতে বারণ করেছেন। সালিম (রহঃ) বলেন, এজন্য ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনদিনের উপর কুরবানীর গোশ্‌ত খেতেন না। ইবনু আবূ ‘উমার ‘তিনদিনের পর’ কথাটি বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪৯৪১, ই.সে. ৪৯৪৬) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ওয়াকিদ (রাঃ) তিনি বলেন, তিন দিনের উপরে কুরবানীর গোশ্‌ত খেতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বাক্‌র (রহঃ) বলেন, আমি বিষয়টি ‘আম্‌রাহ্‌ (রাঃ) এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ইবনু ওয়াকিদ সত্যই বলেছেন। আমি ‘আয়িশা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যামানায় ‘ঈদুল আযহার সময় বেদুঈনদের কিছু পরিবার শহরে আগমন করে, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা তিনদিনের পরিমাণ জমা রেখে বাকী গোশ্‌তগুলো সাদাকাহ্‌ করে দাও। পরবতী সময়ে লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মানুষেরা তো কুরবানীর পশুর চামড়া দিয়ে পাত্র প্রস্তুত করছে এবং তার মাঝে চর্বি গলাচ্ছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাতে কি হয়েছে? তারা বলল, আপনিই তো তিনদিনের বেশি কুরবানীর গোশ্‌ত খাওয়া হতে বারণ করেছেন। তিনি বললেনঃ আমি তো বেদুঈনদের আগমণের কারণে এ কথা বলেছিলাম। অতঃপর এখন তোমরা খেতে পার, জমা করে রাখতে পার এবং সাদাকাহ্‌ করতে পার। (ই.ফা. ৪৯৪২, ই.সে. ৪৯৪৭) জাবির (রাঃ) কর্তৃক নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি তিনদিনের পরেও কুরবানীর গোশ্ত খেতে বারণ করেছেন। তারপর পরবর্তীকালে তিনি বলেছেন, এখন তোমরা খেতে পার, পাথেয় হিসেবে ব্যবহার করতে পার এবং সঞ্চয় করে রাখতে পার। (ই.ফা. ৪৯৪৩, ই.সে. ৪৯৪৮) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা মিনায় তিনদিনের বেশি কুরবানীর গোশ্‌ত খেতাম না। পরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুমতি দিয়ে বললেনঃ তোমরা খেতে পার এবং অতিরিক্ত হিসেবে জমাও রাখতে পার। (ইবনু জুরায়জ বলেন) আমি ‘আতাকে বললাম, জাবির (রাঃ) কি ‘মাদীনায় আগমন করা পর্যন্ত’ কথাটি বলেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (ই.ফা. ৪৯৪৪, ই.সে. ৪৯৪৯) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা তিনদিনের বেশি কুরবানীর গোশ্‌ত জমা করে রাখতাম না। পরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনদিনের পরেও এ থেকে খাওয়ার এবং পথেয় হিসেবে ব্যবহার করার জন্য আমাদের অনুমতি দেন। (ই.ফা. ৪৯৪৫, ই.সে. ৪৯৫০) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময় মাদীনায় পৌঁছা পর্যন্ত কুরবানীর গোশ্‌ত পাথেয় হিসেবে নিয়ে আসতাম। (ই.ফা. ৪৯৪৬, ই.সে. ৪৯৫১) আবূ সা“ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে মাদীনার লোকেরা! তোমরা যেন তিন দিনের বেশি কুরবানীর গোশ্‌ত না খাও। ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ... (তিনদিন) শব্দ উল্লেখ করেছেন। তারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে অভিযোগ (আপত্তি) করলো যে, তাদের পরিবার-পরিজন, কাজের লোক ও সেবক রয়েছে। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে তোমরা নিজেরা খাও, অন্যকে খাওয়াও এবং জমা করে রাখো। ইবনুল মুসান্না (রহঃ) বলেন, “আবদুল আ’লা (রহঃ) সন্দেহ করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ... শব্দ বলেছেন, না ... শব্দ। (ই.ফা. ৪৯৪৭, ই.সে. ৪৯৫২) সালামাহ্‌ ইবনু আক্‌ওয়া’ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তি কুরবানী করবে, সে যেন ঈদের তৃতীয় রাতের পর তার বাড়িতে কুরবানীর পশুর কোন কিছু সঞ্চিত না রাখে। আগামী বছর যখন আগত হলো, তখন লোকজনেরা বলল, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমরা কি গত বছরের মতো করবো? তিনি বললেন, না। সে বছর তো মানুষ খুব দুর্দশায় ছিল, তাই আমি চেয়েছিলাম যাতে সকলের কাছে কুরবানীর (গোশ্‌ত) পৌঁছে যায়। (ই.ফা. ৪৯৪৮, ই.সে. ৪৯৫৩) সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কুরবানীর জন্তু যাবাহ করলেন। তারপর বললেন, হে সাওবান! এর গোশ্‌ত উত্তমভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করো। তারপর থেকে তিনি মাদীনায় আগমন করা পর্যন্ত আমি তাঁকে উক্ত গোশ্‌ত হতে খাওয়াতে থাকি। (ই.ফা. ৪৯৪৯, ই.সে. ৪৯৫৪) মু“আবিয়াহ্ ইবনু সালিহ্ (রহঃ) উল্লেখিত সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৯৫০, ই.সে. ৪৯৫৫) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর গোলাম সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদায় হাজ্জের কালে আমাকে বললেনঃ এ গোশ্‌ত উত্তমরূপে সংরক্ষণ কর। আমি তা ভাল করে রেখে দিলাম। তিনি মাদীনায় পৌঁছা পর্যন্ত এ গোশ্‌ত খেতে থাকেন। (ই.ফা. ৪৯৫১, ই.সে. ৪৯৫৬) ইয়াহ্ইয়া ইবনু হামযাহ্ (রহঃ) উল্লেখিত সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি “বিদায় হাজ্জের সময়” কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৪৯৫১, ই.সে. ৪৯৫৭) বুরাইদাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কবর যিয়ারাত হতে তোমাদের বারণ করেছিলাম, এখন তোমরা যিয়ারাত করতে পার। আর আমি তোমাদের তিনদিনের বেশি কুরবানীর গোশ্‌ত খেতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা নিজেদের প্রয়োজন অনুপাতে জমা করে রাখতে পার। আমি আরো তোমাদের নিষেধ করেছিলাম চর্ম দ্বারা নির্মিত পাত্র ব্যতীত অন্যান্য সকল পাত্রে তৈরি নাবীয (খেজুর ভেজানো পানি) পান করতে, এখন তোমরা যে কোন পাত্র থেকেই পান করতে পারো। তবে যা কিছু নেশা সৃষ্টি করে তা পান করো না। ( ই.ফা. ৪৯৫২, ই.সে. ৪৯৫৮) বুরাইদাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদের বারণ করেছিলাম ...। তারপর রাবী আবূ সিনানের হাদীসের অবিকল অর্থ বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪৯৫৩, ই.সে. ৪৯৫৯)

【6】

ফারা“ ও “আতীরাহ্‌

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) এর সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অন্য সানাদে মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ ও ‘আব্দ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ফারা’ ও ‘আতীরাহ্ (রজব মাসের প্রথম দশদিনের যাবাহকৃত পশু) বলতে (ইসলামে) কিছু নেই। ইবনু রাফি‘ (রহঃ) তার রিওয়ায়াতে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন- ফারা’ হলো (পশুর) প্রথম বাচ্চা, যা তারা যাবাহ করতো। (ই.ফা. ৪৯৫৪, ই.সে. ৪৯৬০)

【7】

যে ব্যক্তি যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশদিনে প্রবেশ করল এবং কুরবানী দেয়ার ইচ্ছা করল তার জন্য চুল ও নখ কর্তন নিষেধ

উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) নাবী (সা) বলেছেনঃ যখন (যিলহাজ্জ মাসের) প্রথম দশদিন উপস্থিত হয়, আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে, তবে সে যেন তার চুল ও নখের কিছুই স্পর্শ না করে (কর্তন না করে)। সুফ্‌ইয়ান (রহঃ) কে বলা হলো, অনেকে তো হাদীসটিকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উল্লেখ করেন না। তিনি বললেন, আমি কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকেই উল্লেখ করি। (ই.ফা. ৪৯৫৫, ই.সে. ৪৯৬১) উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন (যিলহাজ্জ মাসের) প্রথম দশদিন উপস্থিত হয় আর কারো নিকট কুরবানীর পশু উপস্থিত থাকে, যা সে যাবাহ করার নিয়্যাত রাখে, তবে সে যেন তার চুল ও নখ না কাটে। (ই.ফা. ৪৯৫৬, ই.সে. ৪৯৬২) উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) নাবী (সা) বলেছেনঃ যখন তোমরা যিলহাজ্জ মাসের (নতুন চাঁদ দেখতে পাও) আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে, তবে সে যেন তার চুল না ছাটে ও নখ না কাটে। (ই.ফা. ৪৯৫৭, ই.সে. ৪৯৬৩) ‘উমার কিংবা ‘আমর ইবনু মুসলিম (রহঃ) হতে এ সূত্র অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৪৯৫৮, ই.সে. ৪৯৬৪) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোকের কাছে কুরবানীর পশু আছে সে যেন যিলহাজ্জের নতুন চাঁদ দেখার পর ঈদের দিন থেকে কুরবানী করা পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে। (ই.ফা. ৪৯৫৯, ই.সে. ৪৯৬৫) ‘আম্‌র ইবনু মুসলিম ইবনু ‘আম্মার আল-লাইসী (রহঃ) তিনি বলেছেন, আমরা গোসলখানায় ছিলাম কুরবানীর ঈদের কিছুদিন আগে। কতিপয় লোক চুন দিয়ে নাভীর নিচের পশম পরিস্কার করল। গোসলখানায় উপস্থিত লোকদের একজন বললেন, সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব (রাঃ) এটা অপছন্দ করেন। পরে আমি সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব (রাঃ) এর সাথে দেখা করে বিষয়টি তাঁকে জানালাম। তিনি বললেন, হে ভাতিজা! এ হাদীসটি তো মানুষ ভুলে গেছে এবং ছেড়ে দিয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) আমার কাছে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ......... রাবী মুহাম্মাদ ইবনু ‘আম্‌র (রহঃ) হতে মু‘আয (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মতই অর্থবোধক শব্দাবলী উল্লেখ করেন। (ই.ফা. ৪৯৬০, ই.সে. ৪৯৬৬) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন ...... অন্যান্যদের বর্ণিত হাদীসের সমার্থক। (ই.ফা. ৪৯৬১, ই.সে. ৪৯৬৭)

【8】

আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর নামে যাবাহ করা হারাম হওয়া প্রসঙ্গে

আবূ তুফায়ল ‘আমির ইবনু ওয়াসিলাহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এক লোক তাঁর নিকট এসে বলল, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে আড়ালে কি বলেছিলেন? রাবী বলেন, তিনি রেগে গেলেন এবং বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের কাছ থেকে গোপন রেখে আমার নিকট একান্তে কিছু বলেননি। তবে তিনি আমাকে চারটি (বিশেষ শিক্ষণীয়) কথা বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকটি বলল হে আমীরুল মু’মিনীন! সে চারটি কথা কি? তিনি বললেনঃ ১. যে লোক তার পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করে, আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত করেন, ২. যে লোক আল্লাহ ব্যতীত ভিন্ন কারো নামে যাবাহ করে আল্লাহ তার উপরও অভিসম্পাত করেন, ৩. ঐ ব্যক্তির উপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, যে কোন বিদ‘আতী লোককে আশ্রয় দেয় এবং ৪. যে ব্যক্তি জমিনের (সীমানার) চিহ্নসমূহ অন্যায়ভাবে পরিবর্তন করে, তার উপরও আল্লাহ অভিসম্পাত করেন। (ই.ফা. ৪৯৬২, ই.সে. ৪৯৬৮) আবূ তুফায়ল (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা ‘আলী (রাঃ) কে বললাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে গোপনে যা জানিয়েছেন, সে বিষয়ে আমাদের কিছু বলুন। তিনি বললেন, মানুষের নিকট গোপন রেখেছেন এমন কিছুই তিনি আমার নিকট একান্তে বলেননি। তবে আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যাবাহ করে, আল্লাহ তাকে লা‘নাত করেন; যে লোক কোন বিদ‘আতীকে ঠাই দেয়, আল্লাহ তাকে লা‘নাত করেন; যে লোক আপন পিতা-মাতাকে লা‘নাত করে, আল্লাহ তাকে লা‘নাত করেন এবং যে ব্যক্তি (জমিনের) চিহ্নসমূহ পরিবর্তন করে, আল্লাহ তাকে লা‘নত করেন। (ই.ফা. ৪৯৬৩, ই.সে. ৪৯৬৯) আবূ তুফায়ল (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) কে প্রশ্ন করা হলো, রসূলুল্লাহ (সা) কি আপনাদের নিকট বিশেষভাবে কিছু বলে গেছেন। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সা) সর্বসাধারণের কাছে প্রকাশ করেননি এমন কোন ব্যাপারে আমাদেরকে বিশেষভাবে কিছু বলে যাননি, তবে একমাত্র আমার তলোয়ারের এ খাপটিতে যা আছে তা ব্যতীত। রাবী বলেন, তারপর তিনি তার তরবারির খাপ থেকে একটি সহীফাহ্‌ (লিখিত কাগজ) বের করলেন, যাতে লেখা ছিল- ‘আল্লাহ অভিসম্পাত করেন সে ব্যক্তিকে, যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যাবাহ করে, আল্লাহ অভিসম্পাত করেন সে লোককে, যে জমিনের সীমানা চিহ্নসমূহ চুরি করে, আল্লাহ অভিসম্পাত করেন সে ব্যক্তিকে, যে তার পিতাকে অভিসম্পাত করে। আল্লাহ অভিসম্পাত করেন সে ব্যক্তিকে, যে কোন বিদ‘আতী আশ্রয় দেয়।’ (ই.ফা. ৪৯৬৪, ই.সে. ৪৯৭০)