37. পানীয় বস্তু

【1】

মদ হারাম এবং আঙ্গুরের রস, কাঁচা-পাকা খেজুর এবং কিসমিস ইত্যাদি থেকে তৈরি পানীয় যা নেশাগ্রস্ত করে সেগুলোর বর্ণনা

‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বদর দিবসে আমি গনীমাত (যুদ্ধলব্ধ মাল) হতে একটি বয়স্ক উট পেয়েছিলাম। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আর একটি বয়স্ক উট দিয়েছিলেন। একদিন আমি জনৈক আনসারী ব্যক্তির দরজার সামনে সে দু’টি বেঁধে রাখলাম। আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল, সে দু’টির পিঠে করে কিছু ইযখির ঘাস বয়ে আনবো, আর তা বিক্রয় করে ফাতিমাহ্‌ (রাঃ)-এর ওয়ালীমায় সাহায্য নিব। আমার সঙ্গে ছিল বানূ কাইনুকা‘ গোত্রের জনৈক স্বর্ণকার। হামযাহ্‌ ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) সে বাড়িতেই মদ পান করছিল। তার সাথে ছিল একজন গায়িকা। সে (তার গানের মধ্যে) বললঃ (............ আরবি) অর্থাৎ- হে হামযাহ্‌! হৃষ্টপুষ্ট উট দু’টির কাছে যাও এবং মেহমানদের জন্য তা যাবাহ করো। তারপর হামযাহ্‌ ও দু’টির নিকট ছুটে গেল। পরে দু’টিরই কুজ [৩]কেটে ফেললো এবং তাদের পেট ফেড়ে দিল। তারপর সে এ দু’টির কলিজা বের করে নিল। আমি ইবনু শিহাবকে বললাম, তিনি কুজ দু’টি কি করলেন? তিনি বললেন, কুজ দু’টি কেটে সাথে নিয়ে চললেন। ইবনু শিহাব বলেন, ‘আলী (রাঃ) বলেছেন, এ মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলাম। তাঁর নিকট ছিল যায়দ ইবনু হারিসাহ্‌ (রাঃ)। এরপর আমি তাঁকে পুরো ঘটনা জানালাম। তিনি যায়দ (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন। আমিও তাঁর সাথে চললাম। হামযাহ্‌ (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে তিনি তাকে কিছু কঠিন কথা বললেন। হামযাহ্‌ (রাঃ) চোখ তুলে বলল, তোমরা তো আমার বাবার ক্রীতদাস ছাড়া কিছু নও। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিছন দিকে ফিরে আসলেন। এমনকি তিনি তাদের নিকট থেকে বেরিয়ে চলে এলেন। (ই. ফা. ৬ষ্ঠ খণ্ড-৪৯৬৪, ই. সে. ৪৯৭১) বিঃ দ্রঃ ৪৯৬৪ নম্বরটি ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ ভুলক্রমে দুইবার দিয়েছে। ইবনু জুরায়জ (রহঃ) এ সূত্রে হুবহু বর্ণিত হয়েছে। (ই. ফা. ৪৯৬৫, ই. সে. ৪৯৭২) ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, বাদ্‌রের দিন আমি গনীমাত থেকে আমার ভাগে একটি বয়স্ক উট পেয়েছিলাম। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেদিন ‘এক পঞ্চমাংশ’ থেকে আমাকে আর একটি উট দিয়েছিলেন। আমি যখন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তনয়া ফাতিমাহ্‌-এর সাথে বাসর যাপনের আকাঙ্ক্ষা করলাম, তখন বানূ কাইনুকা’ গোত্রের জনৈক স্বর্ণকার ও আমি উভয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ হলাম। সে আমার সাথে যাবে আর আমরা (দু’জনে) ইয্‌খির (ঘাস) নিয়ে আসবো। আমি ইচ্ছা করলাম, এগুলো স্বর্ণকারদের কাছে বিক্রি করে তা দিয়ে আমার বিয়ের ওয়ালীমার বিষয়ে সাহায্য নিব। আমি উট দু’টির জন্য বসার গদি, থলে এবং রশি ইত্যাদি জিনিস সংগ্রহ করছিলাম। আর আমার উট দু’টি একজন আন্‌সারী লোকের গৃহের পাশে বাঁধা ছিল। আমিও যা সংগ্রহ করার সংগ্রহ করলাম। এমন সময় অকস্মাৎ লক্ষ্য করি সে দু’টি (উটের) কুজ কেটে ফেলা হয়েছে, পেটের দিক কেটে ফেলা হয়েছে এবং উভয়ের কলিজা বের করে নেয়া হয়েছে। আমার দু’ নয়ন এ দৃশ্য সহ্য করতে পারল না। আমি বলে উঠলাম, এ কাজ কোন্‌ লোক করল? লোকেরা, বলল হামযাহ্‌ ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব। সে এ বাড়িতে আনসারদের একদল মদ্যপায়ীকারীদের মাঝে আছে। তাকে ও তার সঙ্গীদেরকে গান শুনাচ্ছিল এক গায়িকা। সে তার গানে বললঃ (.........আরবি) অর্থাৎ- হে হামযাহ্‌! তুমি হৃষ্টপুষ্ট উট দু’টির সন্মুখে যাবে কি? পরে হামযাহ্‌ তরবারি নিয়ে উঠলো, উট দু’টির কুজ কেটে ফেললো, পশ্চাৎদিক চিড়ে ফেললো। অতঃপর ও দু’টোর কলিজা নিয়ে গেল। ‘আলী (রাঃ) বলেন, সরাসরি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে গিয়ে উপস্থিত হলাম, তখন তাঁর কাছে ছিল যায়দ ইবনু হারিসাহ্‌ (রাঃ)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার অবয়ব দেখে বুঝতে পারলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ্‌র কসম, আজকের দিনের মতো আমি আর কখনও দেখিনি! হামযাহ্‌ আমার উট দু’টির উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উভয়ের কুজ দু’টি কেটে ফেলেছে, পিছনের দিক কেটে ফেলেছে, এবং কলিজা খুলে নিয়েছে! সে ঐ গৃহে আছে আর তার সাথে আছে মদ্যপায়ীদের কিছু লোক। তিনি বলেন, তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর চাদর নিয়ে আসতে বললেন। অতঃপর তা পরিধান করে হাঁটতে লাগলেন। আমি এবং যায়দ ইবনু হারিসাহ্‌ তাঁর পিছনে পিছনে অনুকরণ করলাম। পরিশেষে তিনি সে ঘরের দরজায় এসে অনুমতি চাইলেন যে ঘরে হামযাহ্‌ ছিল। তারা তাঁকে অনুমতি দিল। তিনি প্রবেশ করেই লক্ষ্য করলেন মদ্যপায়ীর দল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হামযার অপকর্মের জন্য তাকে শাসন ও নিন্দা করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় হামযার চোখ দুটি লাল হয়ে গেল। সে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। এরপর সে তার হাঁটুর দিকে তাকালো, তারপর আরো উঁচুতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল তাঁর নাভীর দিকে, এরপর দৃষ্টি উঠালো তার চেহারার দিকে। এরপর হামযাহ্‌ বলল, তোমরা তো আমার পিতার গোলাম ছাড়া কিছুই নও। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বুঝতে পারলেন সে নেশাগ্রস্ত, তখন তিনি পিছনে হেঁটে বের হয়ে পড়লেন। আমরাও তাঁর সাথে বের হলাম। ( ই. ফা. ৪৯৬৬, ই. সে. ৪৯৭৩) যুহরী (রাঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে হুবহু বর্ণিত আছে। (ই. ফা. ৪৯৬৬, ই. সে. ৪৯৭৪) আনাস ইবনু মালিক (রহঃ) তিনি বলেন, মদ হারাম হওয়ার দিন আমি আবূ তালহার ঘরে লোকদের মদ পান করাচ্ছিলাম। তারা শুকনো ও কাঁচা খেজুরের মদ পান করতো (অর্থাৎ শুকনো ও কাঁচা খেজুর দ্বারা তৈরি ঘন তৈলাক্ত ও সিরকা পান করতো)। হঠাৎ শুনা গেল জনৈক লোক ঘোষণা দিচ্ছে। তিনি বললেন, বের হয়ে দেখো। আমি বের হয়ে দেখলাম, এক লোক ঘোষণা দিচ্ছে : শুনে রাখো মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, অতঃপর মাদীনার চারপাশে ও অলিগলি দিয়ে মদের ঢল প্রবাহিত বইতে থাকে। আবূ তাল্‌হাহ্‌ আমাকে বললেন, বের হও এবং এগুলো ঢেলে দিয়ে আসো। অতঃপর আমি সেগুলো ঢেলে দেই। তারা সবাই বা তাদের কেউ কেউ বললেন, অমুক নিহত হয়েছে! অমুক নিহত হয়েছে! অথচ তাদের উদরে মদ আছে। রাবী বলেন, আমি জ্ঞাত নই যে, এ কথাও আনাস (রাঃ)-এর হাদীসের অন্তর্ভুক্ত কি-না। এরপর আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন: “যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে তারা পূর্বে যা খেয়েছে তাতে তাদের কোন গুনাহ নেই, যদি তারা সতর্ক হয় এবং ঈমান আনে ও সৎকাজ করে”– (সূরা আল-মায়িদাহ্‌) ৫:৯৩)। (ই.ফা.৪৯৬৭, ই.সে.৪৯৭৫) ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু সুহায়ব (রহঃ) তিনি বলেন, মানুষেরা আনাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করল ‘ফাযীখ’ (খেজুরের তৈরি মদ) সম্পর্কে। তিনি বললেন, তোমরা যাকে ‘ফাযীখ’ বলে সম্বোধন কর, তোমাদের এ ফাযীখ ব্যতীত আমাদের আর কোন মদ-ই ছিল না। আমি আমাদের ঘরে আবূ তাল্‌হা, আবূ আইয়ূব (রাঃ) এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আরো কতিপয় সাহাবীকে মদপান করাতে মত্ত ছিলাম। এমন সময় এক লোক এসে বলল, তোমাদের নিকট কি কোন সংবাদ এসেছে? আমরা বললাম, না। সে বলল, মদ তো সম্পূর্ণরুপে নিষেধ করা হয়েছে। তিনি (আবূ তালহা) বললেন, হে আনাস! এ মদের কলসগুলো ঢেলে দাও। তিনি বলেন,তারা উক্ত ব্যক্তির সংবাদের পর কোন খোঁজখবরও করেননি। এ সম্পর্কে কোন জিজ্ঞাসাবাদও করেননি। (ই.ফা. ৪৯৬৮ ই.সে. ৪৯৭৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যখানে দাঁড়িয়ে আমার চাচাদের ‘ফাযীখ’ পান করাচ্ছিলাম। আর বয়সে আমি তাদের সবার ছোট ছিলাম। এ সময় এক লোক এসে বলল, মদ তো হারাম করা হয়েছে। তারা সবাই বললেন, হে আনাস! এ হাড়িগুলো উল্টিয়ে দাও। আমি সেগুলো উপুড় করে ফেলে দিলাম। সুলাইমান বলেন, আমি আনাসকে বললাম, ফাযীখ কি জিনিস? তিনি বললেন, কাঁচা-পাকা খেজুর দ্বারা তৈরিকৃত মদ। তিনি বলেন, আবূ বকর ইবনু আনাস বলেছেন, তখন এটাই ছিল তাদের একমাত্র নেশাজাতীয় দ্রব্য। সুলাইমান বলেন, আমার নিকটে জনৈক লোক আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে রিওয়ায়াত করেছেন যে, তিনিও (আনাস) এ কথা বলেছেন। (ই.ফা. ৪৯৬৯, ই.সে. ৪৯৭৭) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সম্প্রদায়ের মাঝে দাঁড়িয়ে তাদের মদপান করাচ্ছিলাম। এরপর বর্ণনাকারী ইবনু উলাইয়্যার মতো বর্ণনা করেন। তবে তিনি বলেন, তারপর আবূ বকর ইবনু আনাস বললেন, সেকালে ওটাই ছিল তাদের মদ। আনাস (রাঃ) তথায় উপস্থিত ছিলেন, তিনি এ কথা অস্বীকার করেননি। ইবনু ‘আবদুল আ’লা মু’তামির-এর সূত্রে তাঁর বাবা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ যারা তাঁর সাথে ছিল তাঁদের একজন আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, তিনি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, ‘তৎকালীন সময়ে সেটাই ছিল তাদের মদ।’ (ই.ফা. ৪৯৭০, ই.সে. ৪৯৭৮) আনাস ইবনু মালিক (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ তাল্হাহ্, আবূ দুজানাহ্ ও মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে আনসারীদের একদল মানুষের মাঝে মদপান করাচ্ছিলাম। তখন এক লোক আমাদের নিকট এসে বলল, একটি নতুন ব্যাপার ঘটেছে, মদ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অতঃপর আমরা তখন পাত্রগুলো উপুড় করে ঢেলে দিয়েছিলাম। সে মদ ছিল কাঁচা-পাকা মিশ্রিত খেজুরের বানানো। কাতাদাহ্ বলেন, আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেছেন, মদকে হারাম করা হয়েছে। সেকালে তাদের সাধারণ মদ ছিল কাঁচা-পাকায় সংমিশ্রিত খেজুরের তৈরী। (ই.ফা. ৪৯৭১, ই.সে. ৪৯৭৯) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এমন একটি মদপাত্র হতে- আবূ তাল্হাহ্, আবূ দুজানাহ্ ও সুহায়ল ইবনু বাইযা (রাঃ)-কে মদপান করাচ্ছিলাম যার মধ্যে কাঁচা-পাকা খেজুরের মদ ছিল। অতঃপর বর্ণনাকারী সা’ঈদ (রহঃ)-এর হাদীসের হুবহু রিওয়ায়াত করেন। (ই.ফা. ৪৯৭২, ই.সে. ৪৯৮০) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁচা-পাকা খেজুর দিয়ে মদ তৈরী করা এবং তা পান করা থেকে বারণ করেছেন। সেদিন তাই ছিল তাদের সাধারণ নেশাজাতীয় দ্রব্য যেদিন মদ হারাম করা হয়। (ই.ফা. ৪৯৭৩, ই.সে. ৪৯৮১) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ ‘উবাইদাহ্ ইবনু জার্রাহ্, আবূ তালহাহ্ উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-কে মদপান করাচ্ছিলাম, যা কাঁচা ও শুকনো খেজুর দিয়ে তৈরি ছিল। অতঃপর জনৈক আগত ব্যক্তি এসে বলল, মদ তো হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। আবূ তালহাহ্ (রাঃ) বললেন, হে আনাস! তুমি সে কলসটির কাছে গিয়ে তা ভেঙ্গে ফেল। আমি আমাদের মিহরাসটির (ছিদ্রযুক্ত পাথর) নিকট গেলাম এবং কলসের নিম্নাংশে আঘাত কর। যার দরুন সেটি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। (ই.ফা. ৪৯৭৪, ই.সে. ৪৯৮২) জা’ফার (রহঃ) তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা যে আয়াতে মদ নিষিদ্ধ করেছেন, সেটি এমন সময় তৈরি করেছেন, যখন মদীনায় শুধুমাত্র খেজুরের তৈরি মদপান করা হত। (ই.ফা. ৪৯৭৫, ই.সে. ৪৯৮৩)

【2】

মদ দ্বারা সিরকা তৈরি করা নিষেধ

আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মদ দিয়ে সিরকা তৈরি করা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, না। (ই.ফা. ৪৯৭৬, ই.সে. ৪৯৮৪)

【3】

মদ দিয়ে চিকিৎসা করা হারাম

ওয়ায়িল আল-হায্রামী (রাঃ) তিনি বলেন, তারিক ইবনু সুওয়াইদ জু‘ফী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মদ সস্পর্কে প্রশ্ন করলেন। তিনি তাকে বারণ করলেন, কিংবা মদ প্রস্তুত করাকে খুব জঘন্য মনে করলেন। তিনি [তারিক (রাঃ)] বললেন, আমি তো শুধু ঔষধ তৈরি করার জন্য মদ প্রস্তুত করি। তিনি বললেনঃ এটি তো (ব্যাধি নিরামক) ঔষধ নয়, বরং এটি নিজেই ব্যাধি। (ই.ফা. ৪৯৭৭, ই.সে. ৪৯৮৫)

【4】

খেজুর ও আঙ্গুর হতে যা কিছু পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় তাই মদ নামে পরিচিত

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মদ তৈরি হয় দু’টি গাছ (এর ফল) হতে, তা হলো- খেজুর ও আঙ্গুর গাছ (এর ফল)। (ই.ফা. ৪৯৭৮, ই.সে. ৪৯৮৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, মদ তৈরি হয় ঐ দু’টি গাছ (এর ফল) থেকে, তা হলো- খেজুর ও আঙ্গুর গাছ (এর ফল)। (ই.ফা. ৪৯৭৯, ই.সে. ৪৯৮৭) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মদ তৈরি হয় ঐ দু’টি গাছ (এর ফল) থেকে, তা হলো- আঙ্গুর ও খেজুর গাছ (এর ফল)। আবূ কুরায়ব (রহঃ)-এর বর্ণনায় আঙ্গুরকে খেজুর বলা হয়েছে। (ই.ফা. ৪৯৮০, ই.সে. ৪৯৮৮)

【5】

শুকনো খেজুর আর কিসমিস একত্র করে নাবীয [১] প্রস্তুত করা মাক্‌রুহ

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিসমিস ও শুকনো খেজুর এবং কাঁচা-পাকা খেজুর একসাথে মিশিয়ে নাবীয বানাতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৪৯৮১, ই.সে. ৪৯৮৯) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুকনো খেজুর ও কিসমিস একত্র করে নাবীজ তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরও নিষেধ করেছেন কাঁচা-পাকা খেজুর একত্র মিশিয়ে নাবীয বানানো থেকে। (ই.ফা. ৪৯৮২, ই.সে. ৪৯৯০) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কাঁচা-পাকা খর্জুর এবং কিসমিস ও খোরমা মিশ্রণ করে নাবীয বানিও না। (ই.ফা. ৪৯৮৩, ই.সে. ৪৯৯১) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিসমিস ও খোরমা মিশিয়ে ‘নাবীয’ বানাতে বারণ করেছেন। তিনি একসাথে কাঁচা-পাকা খেজুর দিয়ে ‘নাবীয’ প্রস্তুত করতেও বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৪৯৮৪, ই.সে. ৪৯৯২) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খোরমা ও কিসমিস একসঙ্গে মিশ্রণ (করে নাবীয তৈরি) করতে বারণ করেছেন এবং কাঁচা-পাকা খেজুর একত্র (করে নাবীয তৈরি) করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৪৯৮৫, ই.সে. ৪৯৯৩) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে (নাবীয তৈরিতে) কিসমিস ও শুকনো খেজুর এবং কাঁচা-পাকা খেজুর একসাথে মিশাতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৪৯৮৬, ই.সে. ৪৯৯৪) আবূ মাসলামাহ (রহঃ) উপরোল্লিখিত সনদে একইভাবে বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৪৯৮৭, ই.সে. ৪৯৯৫) আবূ সা‘ঈদ খুদ্রী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নাবীয (খেজুর বা আঙ্গুর ভেজানো পানি) পান করতে ইচ্ছা পোষণ করে, সে যেন কিসমিস বা শুকনো খেজুর অথবা কাঁচা খেজুর দ্বারা আলাদাভাবে নাবীয তৈরি করে তা পান করে। (ই.ফা. ৪৯৮৮, ই.সে. ৪৯৯৬) ইসমা‘ঈল ইবনু মুসলিম ‘আবদী (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বারণ করেছেন, যেন আমরা কাঁচা খেজুর শুকনো খেজুরের সঙ্গে না মেশাই অথবা কিসমিস খোরমার সঙ্গে না মেশাই অথবা কিসমিস কাঁচা খেজুরের সাথে না মেশাই। তিনি আরও বলেন, তোমাদের মাঝে যে তা পান করতে আগ্রহী। অতঃপর বর্ণনাকারী ওয়াকী’ (রহঃ)-এর হাদীসের অবকিল বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৪৯৮৮, ই.সে. ৪৯৯৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদাহ্ সূত্রে তাঁর পিতা আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কাঁচা-পাকা খেজুর একসাথে করে নাবীয বানাবে না। কিসমিস ও খোরমা একত্র করেও নাবীয প্রস্তুত করবে না বরং একেকটি আলাদাভাবে নাবীয বানাবে। (ই.ফা. ৪৯৮৯, ই.সে. ৪৯৯৮) ইয়াহ্ইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) উল্লেখিত সূত্রে হুবহু বর্ণিত রয়েছে। (ই.ফা. ৪৯৯০, ই.সে. ৪৯৯৯) আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কাঁচা-পাকা খেজুর একসাথে মিশিয়ে নাবীয বানাবে না এবং কাঁচা খেজুর ও কিসমিস একত্রে মিশিয়ে নাবীয বানাবে না বরং একেকটি দ্বারা আলাদাভাবে নাবীয বানাবে। ইয়াহ্ইয়া ধারণা করেন যে, তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ কাতাদার সঙ্গে দেখা করলে তিনি তাঁর পিতার সনদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ হাদীস তার নিকটে রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৪৯৯১, ই.সে. ৫০০০) ইয়াহ্ইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) উপরোক্ত দু’টি সূত্রে একই রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি ……. এর স্থলে ……. এবং …… এর স্থলে ……. শব্দ উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ৪৯৯১, ই.সে. ৫০০১) আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁচা ও শুকনো খেজুর একত্রে সংমিশ্রণ করা হতে এবং কিসমিস ও শুকনো খেজুর সংমিশ্রণ করা থেকে এবং কাঁচা-পাকা খেজুর সংমিশ্রণ করা হতে বারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রত্যেকটি দিয়ে আলাদাভাবে নাবীয বানাও। (ই.ফা. ৪৯৯২, ই.সে. ৫০০২) [ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) বলেন,] আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ)-এর সনদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হুবহু হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৪৯৯৩, ই.সে. ৫০০২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিসমিস ও শুকনো খেজুর (একত্রে মিশিয়ে নাবীয প্রস্তুত করা) হতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রত্যেকটি দিয়ে পৃথকভাবে নাবীয বানানো যেতে পারে।(ই.ফা. ৪৯৯৪, ই.সে. ৫০০৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন ….. অতঃপর রাবী অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করেন। (ই.ফা. ৪৯৯৪, ই.সে. ৫০০৪) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুকনো খেজুর ও কিসমিস সংমিশ্রণে এবং কাঁচা ও শুকনো খেজুর মিশিয়ে নাবীয প্রস্তুত করতে বারণ করেছেন। তিনি জুরাশ (ইয়ামানের একটি শহর) অধিবাসীদের চিঠি লিখে তাদেরকে শুকনো খেজুর ও কিসমিসের মিশ্রণে নাবীয প্রস্তুত করতে বারণ করেন। (ই.ফা. ৪৯৯৫, ই.সে. ৫০০৫) ওয়াহ্ব ইবনু বাকিয়্যাহ খালিদ তাহ্হান (রহঃ)-এর সনদে শাইবানী (রহঃ) উল্লেখিত সূত্রে শুকনো খেজুর ও কিসমিসের কথা বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি (ওয়াহ্ব) কাঁচা ও শুকনো খেজুরের কথা বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৪৯৯৫, ই.সে ৫০০৫) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলতেন, কাঁচা-পাকা খেজুর একসাথে এবং শুকনো খেজুর ও কিসমিস একত্রে মিশিয়ে নাবীয তৈরি করতে বারণ করা হয়েছে। (ই.ফা. ৪৯৯৬, ই.সে ৫০০৬) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, কাঁচা-পাকা খেজুর মিশিয়ে এবং শুকনো খেজুর ও কিসমিস মিশ্রণে নাবীয তৈরি করতে বারণ করা হয়েছে। (ই.ফা. ৪৯৯৭, ই.সে ৫০০৭)

【6】

মুযাফ্‌ফাত, দুব্বা, হানতাম ও নাকীর [৫] ইত্যাদিতে নাবীয তৈরি করার নিষেধাজ্ঞা (এবং এ হুকুম রহিত হওয়া আর নেশা সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এগুলো বৈধ) হওয়ার বর্ণনা

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুব্বা ও মুযাফ্‌ফাতে নাবীয প্রস্তুত করতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৪৯৯৮, ই.সে ৫০০৮) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুব্বা ও মুযাফ্‌ফাতে নাবীয বানাতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৪৯৯৯, ই.সে ৫০০৮) আবু সালামাহ্ (রহঃ) আবু সালামাহ্ (রহঃ)-ও তাকে অবহিত করেছেন, তিনি আবু হুরায়রা্ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা দুব্বা ও মুযাফ্ফাতে নাবীয বানিও না। অতঃপর আবু হুরায়রা্ (রাঃ) বলেন, হান্তাম ব্যবহার করা থেকেও তোমরা সরে (বেঁচে) থাকো।(ই.ফা. ৪৯৯৯, ই.সে ৫০০৯) আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুযাফ্‌ফাত, হান্‌তাম ও নাকীর (ইত্যাদিতে নাবীয প্রস্তুত করা) হতে বারণ করেছেন। রাবী বলেন, আবু হুরায়রা্ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হলো, হান্‌তাম কি জিনিস? তিনি বললেন, সবুজ রং-এর কলসী।(ই.ফা. ৫০০০, ই.সে ৫০১০) আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুল কায়সের প্রতিনিধি দলকে বলেছেন, আমি তোমাদেরকে দুব্বা, হান্‌তাম, নাকীর ও মুকাইয়্যার হতে বারণ করছি। হান্‌তাম হল মাথা কাটা চামড়ার বাসন হতে। আর তুমি তোমার চামড়ার বানানো মশক হতে নাবীয পান করো এবং এর প্রবেশ মুখ আটকে রাখো। (ই.ফা. ৫০০১, ই.সে ৫০১১) ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুব্বা ও মুযাফ্‌ফাতে নাবীয প্রস্তুত করতে বারণ করেছেন। এ হলো জারীর (রহঃ)-এর বর্ণিত হাদীস। ‘আব্‌সার ও শু‘বাহ্‌ (রহঃ)-এর হাদীসে উল্লেখ আছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুব্বা ও মুযাফ্‌ফাত হতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫০০২, ই.সে ৫০১২) ইব্‌রাহীম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আসওয়াদ (রহঃ)-কে বললাম, আপনি কি উম্মুল মু‘মিনীন [‘আয়িশা (রাঃ)]-কে প্রশ্ন করেছিলেন ¬¬- কোন জিনিসে নাবীয প্রস্তুত করা মাকরূহ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি তখন বলেছিলাম, হে উম্মুল মু‘মিনীন! আমাকে বলুন, রসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন জিনিসে নাবীয প্রস্তুত করতে বারণ করেছেন। তিনি বললেন, তিনি আমাদের পরিবারের সকলকে বারণ করেছেন, আমরা যেন দুব্বা ও মুযাফ্‌ফাতে নাবীয প্রস্তুত না করি। ইব্‌বাহীম (রহঃ) বলেন, আমি আসওয়াদকে বললাম, তিনি [‘আয়িশা (রাঃ)] কি হান্‌তাম ও কলসীর কথা বর্ণনা করেননি? তিনি বললেন, আমি যা শুনেছি, তাই তোমার কাছে বলেছি। সেটিও কি তোমার কাছে বলতে হবে যা আমি শুনিনি? (ই.ফা. ৫০০৩, ই.সে ৫০১৩) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুব্বা ও মুযাফ্‌ফাত হতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫০০৪, ই.সে ৫০১৪) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ)-এর সনদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হুবহু বর্ণনা করা হয়েছে। (ই.ফা. ৫০০৫, ই.সে ৫০১৫) সুমামাহ্‌ ইবনু হায্‌ন কুশাইরী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর সাথে দেখা করে তাঁকে নাবীয সম্বন্ধে প্রশ্ন করলাম। তিনি আমার কাছে উল্লেখ করলেন যে, ‘আবদুল কায়সের প্রতিনিধি দল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসল এবং তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নাবীয সম্পর্কে প্রশ্ন করল। তিনি দুব্বা, নাকীর, মুযাফ্‌ফাত ও হান্‌তাম-এ তাদেরকে নাবীয প্রস্তুত করতে বারণ করলেন। (ই.ফা. ৫০০৬, ই.সে ৫০১৬) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুব্বা, হান্‌তাম, নাকীর ও মুযাফ্‌ফাত হতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫০০৭, ই.সে ৫০১৭) ইসহাক ইবনু সুওয়াইদ (রহঃ) উপরোল্লিখিত সনদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি ‘মুযাফ্‌ফাত’-এর জায়গায় ‘মুকাইয়্যার’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।(ই.ফা. ৫০০৮, ই.সে ৫০১৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল কায়সের প্রতিনিধি রসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসলে তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে দুব্বা, হান্‌তাম, নাকীর এবং মুকাইয়্যার হতে বারণ করছি। হাম্মাদ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে ‘মুকাইয়্যার’ স্থলে ‘মুযাফ্‌ফাত’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে।(ই.ফা. ৫০০৯, ই.সে ৫০১৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুব্বা, হান্‌তাম, মুযাফ্‌ফাত ও নাকীর হতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫০১০, ই.সে ৫০২০) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন- দুব্বা, হান্‌তাম, মুযাফ্‌ফাত ও নাকীর থেকে এবং কাঁচা-পাকা খেজুর একসাথে মিশিয়ে নাবীয প্রস্তুত করা থেকে। (ই.ফা. ৫০১১, ই.সে ৫০২১) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুব্বা, নাকীর ও মুযাফ্‌ফাত হতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫০১২, ই.সে ৫০২২) আবু সা‘ঈদ (রাঃ) রসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কলসীতে নাবীয তৈরি করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৫০১৩, ই.সে ৫০২৩) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুব্বা, হানতাম, নাকীর ও মুযাফফাত (এ নাবীয বানানো) থেকে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ৫০১৪, ই.সে. ৫০২৪) কাতাদাহ (রহঃ) উল্লেখিত সূত্রে বর্ণিত যে, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাবীয বানাতে বারণ করেছেন। অতঃপর রাবী উল্লেখিত হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৫০১৫, ই.সে. ৫০২৫) আবূ সা’ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারণ করেছেন হানতাম, দুব্বা ও নাকীরের (বানানো নাবীয) পান করতে। (ই.ফা. ৫০১৬, ই.সে. ৫০২৬) সা’ঈদ ইবনু যুবায়র (রাঃ) ইবনু ‘উমার ও ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সম্পর্কে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তাঁরা দু’জনেই সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুব্বা, হানতাম, মুযাফফাত ও নাকীর (এ নাবীয বানানো) হতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫০১৭, ই.সে. ৫০২৭) সা’ঈদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) তিনি বলেন, আমি কলসীর নাবীয সম্বন্ধে ইবনু উমার (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কলসীর নাবীযকে নিষিদ্ধ করেছেন। অতঃপর আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট এসে বললাম, ইবনু উমারের কথা কি আপনি শুনেছেন? তিনি বললেন, ইবনু উমার যথার্থই বলেছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কলসীর নাবীযকে নিষিদ্ধ করেছেন। আমি বললাম, কলসীর নাবীয কি? তিনি বললেন, মাটি দ্বারা যে পাত্র প্রস্তুত হয় সেটাই। (ই.ফা. ৫০১৮, ই.সে. ৫০২৮) ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের উদ্দেশ্যে কোন এক যুদ্ধে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, আমি সে দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। তবে আমি তাঁর কাছে পৌঁছার আগেই তিনি (অন্যদিকে) চলে গেলেন। আমি (লোকেদের) প্রশ্ন করলাম, তিনি কি বললেন? তারা বললেন, তিনি দুব্বা ও মুযাফফাতে নাবীয তৈরি করতে বারণ করলেন। (ই.ফা. ৫০১৯, ই.সে. ৫০২৯) উসামাহ (রহঃ) তাঁদের প্রত্যেকেই নাফি (রহঃ)-এর সনদে ইবনু উমার (রাঃ) হতে মালিক (রহঃ)-এর হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। কিন্তু মালিক ও উসামাহ (রহঃ) ভিন্ন অন্য কেউ “কোন এক যুদ্ধে” কথাটি বর্ণনা করেন নি। (ই.ফা. ৫০২০, ই.সে. ৫০৩০) সাবিত (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কলসীর নাবীয হতে বারণ করেছেন কি? তিনি বললেন, মানুষের তো তাই ধারণা। আমি বললাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারণ করেছেন কি-না? তিনি বললেন, মানুষের তো তাই ধারণা। (ই.ফা. ৫০২১, ই.সে. ৫০৩১) তাউস (রহঃ) তিনি বলেন, এক লোক ইবনু উমার (রাঃ)-কে বলল, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি কলসীর নাবীয হতে বারণ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর তাউস বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তা তাঁর নিকট হতে শুনেছি। (ই.ফা. ৫০২২, ই.সে. ৫০৩২) ইবনু উমার (রাঃ) এক লোক তাঁর নিকট এসে বলল, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি কলসী ও লাউয়ের খোলে নাবীয তৈরি করতে বারণ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (ই.ফা. ৫০২৩, ই.সে. ৫০৩৩) ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাড়ি (কলস) ও দুব্বা (-তে নাবীয বানানো) হতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫০২৪, ই.সে. ৫০৩৪) তাউস (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমনি মুহূর্তে জনৈক লোক এসে বলল, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি কলসী, দুব্বা ও মুযাফফাত-এর (বানানো) নাবীয হতে বারণ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (ই.ফা. ৫০২৫, ই.সে. ৫০৩৫) মুহারিব ইবনু দিসার (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হানতাম, দুব্বা ও মুযাফফাত হতে বারণ করেছেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর কাছে কয়েকবার শুনেছি। (ই.ফা. ৫০২৬, ই.সে. ৫০৩৬) ইবনু উমার (রাঃ)-এর সনদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হুবহু রিওয়ায়াত করেছেন। তিনি বলেন, আমার ধারণা তিনি ‘ নাকীর’-এর বিষয়েও বলেছেন। (ই.ফা. ৫০২৭, ই.সে. ৫০৩৭) ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কলসী, দুব্বা , মুযাফফাত হতে বারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা নাবীয প্রস্তুত করো চামড়া দ্বারা নির্মিত পাত্রে। (ই.ফা. ৫০২৮, ই.সে. ৫০৩৮) ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হানতাম হতে বারণ করেছেন। সে সময় আমি বললাম, হানতাম কি? তিনি বললেন, কলসী। (ই.ফা. ৫০২৯, ই.সে. ৫০৩৯) যাযান (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু উমার (রাঃ)-কে বললাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সমস্ত পানীয় হতে বারণ করেছেন সে সম্পর্কে আপনি আপনার ভাষায় আমার কাছে উল্লেখ করুন এবং আমাদের ভাষায় তা বুঝিয়ে দিন। কারণ আপনাদের ভাষা আমাদের ভাষা থেকে ব্যতিক্রম। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারণ করেছেন হানতাম হতে- হানতাম হলো কলসী এবং দুব্বা থেকে, তা হলো- কদু (এর খোল)। আর মুযাফফাত হতে, তা হলো- আলকাতরা মিশ্রিত পাত্র এবং নাকীর থেকে, তা হলো- খেজুর গাছের নিম্নাংশ, যার ভেতরের অংশ ফেলে দিয়ে পাত্রের মতো করা হয়। আর তিনি চামড়া দ্বারা তৈরি পাত্রে নাবীয প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন। (ই.ফা. ৫০৩০, ই.সে. ৫০৪০) আবূ দাউদ (রহঃ) তিনি বলেন, শু’বাহ (রহঃ) উল্লেখিত সূত্রে আমাদের কাছে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫০৩১, ই.সে. ৫০৪১) সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব (রহঃ) আমি ইবনু উমার (রাঃ)-কে এ মিম্বারের নিকট বলতে শুনেছি বলে তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মিম্বারের প্রতি ইশারা করেন। আবদুল কায়সের প্রতিনিধি দল রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসলো এবং তাঁকে মদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে দুব্বা, নাকীর ও হানতাম হতে বারণ করলেন। আমি বললাম, হে আবূ মুহাম্মাদ! মুযাফফাতের কথা? আমরা মনে করলাম, তিনি সম্ভবত ভুলে গেছেন। তিনি বললেন, সেদিন আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) এ কথা বলেছেন আমি তা শুনিনি। তবে তিনি সেটাকে পছন্দ করতেন না। (ই.ফা. ৫০৩২, ই.সে. ৫০৪২) জাবির ও ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাকীর, মুযাফফাত ও দুব্বা (-তে নাবীয তৈরি করা) হতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫০৩৩, ই.সে. ৫০৪৩) ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কলসী, দুব্বা এবং মুযাফ্‌ফাত (ইত্যাদিতে নাবীয তৈরি) হতে বারণ করতে শুনেছি।(ই. ফা. ৫০৩৪, ই. সে. ৫০৪৪) আবূ যুবায়র (রহঃ) আমি জাবির (রাঃ)-কেও বলতে শুনেছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারণ করেছেন কলসী, মুযাফ্ফাত ও নাকীরের (বানানো নাবীয পান করতে)। (ই. ফা. ৫০৩৪, ই. সে. ৫০৪৪) বর্ণনাকারী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য যে নাবীয প্রস্তুত করার জন্য কোন বাসন না পাওয়া গেলে পাথর নির্মিত বাসনে তাঁর জন্য নাবীয প্রস্তুত করা হতো। (ই. ফা. ৫০৩৪, ই. সে. ৫০৪৪) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য পাথর দ্বারা তৈরি পাত্রে নাবীয বানানো হতো। (ই. ফা. ৫০৩৫, ই. ফা. ৫০৪৫) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য চর্ম দ্বারা তৈরি বাসনে নাবীয প্রস্তুত করা হতো। তবে চামড়া নির্মিত বাসন পাওয়া না গেলে পাথর নির্মিত বাসনে তাঁর জন্য নাবীয প্রস্তুত করা হতো। সে সময় এক লোক আবূ যুবায়র-এর নিকটে জিজ্ঞেস করল আর আমি তা শুনলাম। তিনি বললেন, পাথরের ডেগ? তিনি (আবূ যুবায়র) বললেন, হ্যাঁ পাথরের ডেগ। (ই. ফা. ৫০৩৬, ই. ফা. ৫০৪৬) বুরাইদাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে চর্ম নির্মিত পাত্র ব্যতীত অন্য সব পাত্রেই নাবীয প্রস্তুত করা হতে বারণ করেছিলাম। এখন তোমরা সব ধরণের পাত্রেই নাবীয প্রস্তুত করে পান করতে পারো। কিন্তু, নেশা জাতীয় নাবীয পান করো না। [দ্রষ্টব্য হাদীস ২২৬] (ই. ফা. ৫০৩৭, ই. সে. ৫০৪৭) বুরাইদাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে নাবীয তৈরি করতে সব রকম পাত্র (ব্যবহার করা) হতে বারণ করেছিলাম। পাত্রগুলো অথবা (তিনি বলেছেন,) কোন পাত্র কোন জিনিসকে হালাল করতে পারে না হারাম করতে পারে না। তবে সব ধরনের নেশা জাতীয় জিনিসই নিষিদ্ধ। (ই. ফা. ৫০৩৮, ই. সে. ৫০৪৮) বুরাইদাহ্‌ (রাঃ) তিনি তাঁর পিতা হতে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে নিষেধ করেছিলাম চামড়া নির্মিত সব রকম বাসনে (বানানো নাবীয) পান করতে। কিন্তু এখন তোমরা সর্বপ্রকার বাসনেই পান করতে পার। তবে নেশা জাতীয় কোন প্রকার জিনিসই বানানো নাবীয পান করো না। (ই. ফা. ৫০৩৯, ই. সে. ৫০৪৯) আবদুল্লাহ ইবনু আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সকল (চামড়ার ছাড়া) বাসনের নাবীয হতে বারণ করলেন, তখন মানুষেরা বলল, সবাই তো (চামড়ার বাসন) পায় না। পরে তিনি আলকাতরা মিশ্রিত কলসী ব্যতীত ভিন্ন কলসীর ক্ষেত্রে অনুমতি প্রদান করেন। (ই. ফা. ৫০৪০, ই. সে. ৫০৫০)

【7】

নেশা সৃষ্টিকারী সকল বস্তুই মদ, আর সর্বপ্রকার মদই হারাম

আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিত’ই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলো। তিনি বললেন, নেশাগ্রস্ত করে এমন সকল প্রকার পানীয়ই নিষিদ্ধ। (ই. ফা. ৫০৪১, ই. সে. ৫০৫১) আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি আয়িশাহ্‌ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিত্‌’ই সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলো। তিনি বললেন, নেশা উদ্রেক করে এমন সর্বপ্রকার পানীয়ই নিষিদ্ধ। (ই. ফা. ৫০৪২, ই. সে. ৫০৫২) মা’মার (রহঃ) হতে, তাঁরা সবাই যুহরী (রহঃ) উক্ত সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে সুফ্ইয়ান সালিহ্ (রহঃ)- এর হাদীসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে “বিত্’ই [৬] সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলো”-কথাটি নেই। কিন্তু মা’মার (রহঃ)-এর কথাটি হাদীসে রয়েছে। আর সালিহ্ (রহঃ)-এর হাদীসে রয়েছ যে, তিনি [আয়িশাহ্ (রাঃ)] রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন- সকল প্রকার নেশা উদ্রেককারী পানীয়ই নিষিদ্ধ। (ই. ফা. ৫০৪৩, ই. সে. ৫০৫৩) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এবং মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামানে প্রেরণ করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের অঞ্চলে যব হতে ‘মিয্‌র’ নামক মদ এবং মধু হতে বিত্‌’ই নামক মদ প্রস্তুত করা হয়। তিনি বললেন, সকল প্রকার নেশা উদ্রেককারী জিনিসই নিষিদ্ধ। [দ্রষ্টব্য হাদীস ৪৫২৬] (ই. ফা. ৫০৪৪, ই. সে. ৫০৫৪) সা’ঈদ ইবনু আবূ বুরদাহ্‌ (রাঃ) তাঁর পিতা, তিনি দাদা হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ও মু’আয (রাঃ)-কে ইয়ামানে প্রেরণ করলেন এবং তাদেরকে বললেনঃ তোমরা (মানুষকে) সুসংবাদ দিবে আর (দীনকে) সহজভাবে প্রকাশ করবে, (মানুষকে) দ্বীন শিক্ষা দেবে, কাউকে (দীন থেকে) পৃথক করে দিবে না। আমার ধারণা হয়, তিনি ‘একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করবে’ কথাটিও বলেছেন। তিনি যাত্রা করলে আবূ মূসা (রাঃ) ফিরে এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! তাদের তো মধু থেকে বানানো মদ আছে যা পাকিয়ে ঘন করা হয় এবং ‘মিয্‌র’ আছে যা যব দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যা কিছু সলাত হতে বিরত করে তা-ই হারাম। (ই ফা ৫০৪৫ ই সে ৫০৫৫) আবূ বুরদাহ্‌ (রাঃ) তার পিতা তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ও মু’আয (রাঃ)-কে ইয়ামানে প্রেরণ করে বললেনঃ তোমরা লোকদেরকে (দ্বীনের) আহ্বান করবে, সুখবর দিবে, কাউকে তাড়িয়ে দিবে না। সহজ করবে-কঠিন করবে না। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! ইয়ামানে আমরা দু’রকমের মদ তৈরি করি, আপনি সে ব্যাপারে আমাদেরকে জানান। (১) আল-বিত’ই, যা মধু পাকিয়ে ঘন করে প্রস্তুত করা হয়; (২) আল-মিয্‌র, যা যব পাকিয়ে ঘন করে তৈরি হয়। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কিছু শব্দ অথচ ব্যাপক অর্থবোধক কথা পূর্ণতার সঙ্গে প্রকাশ করার সামর্থ্য দেয়া হয়েছিল। তিনি বললেনঃ প্রত্যেক নেশাযুক্ত জিনিস যা সলাত হতে গাফিল করে তা (পান করতে) বারণ করছি। (ই. ফা. ৫০৪৬, ই. সে. ৫০৫৬) জাবির (রহঃ) ‘জাইশান’ থেকে জনৈক লোক আসলো। জাইশান ইয়ামানের একটি অঞ্চল। অতঃপর সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাদের অঞ্চলে তারা শস্য দিয়ে প্রস্তুত ‘মিয্‌র’ নামক যে মদ পান করে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা কি নেশা তৈরি করে? সে বলল, হ্যাঁ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নেশা উদ্রেক করে এমন সবাই নিষিদ্ধ। আল্লাহ তা’আলা ওয়া’দা করেছেন, যে লোক নেশাযুক্ত জিনিস পান করবে তাঁকে তিনি “তীনাতুল খাবাল” পান করিয়ে ছাড়বেন। মানুষেরা বলল, হে আল্লাহর রসূল! ‘তীনাতুল খাবাল’ কি? তিনি বললেন, জাহান্নামবাসীদের ঘাম বা জাহান্নামবাসীদের মল-মূত্র। (ই. ফা. ৫০৪৭, ই. সে. ৫০৫৭) ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যা কিছু নেশা তৈরি করে তা-ই মদ। আর যা নেশা উদ্রেক করে তাই নিষিদ্ধ। যে লোক দুনিয়াতে মদ পান করবে, আবার সব সময় এ কাজ করে তাওবাহ্‌ না করেই মৃত্যুমুখে পতিত হবে, সে আখিরাতে তা পান করতে পারবে না। (ই. ফা. ৫০৪৮, ই. সে. ৫০৫৮) ইবনু উমার (রাঃ) নিশ্চয়ই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যা কিছু নেশাগ্রস্থ করে তা-ই মদ। আর যা নেশা উদ্রেক করে তা-ই নিষিদ্ধ। (ই. ফা. ৫০৪৯, ই. সে. ৫০৫৯) মূসা ইবনু উক্‌বাহ (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে হুবহু বর্ণিত হয়েছে। (ই. ফা. ৫০৫০, ই. সে. ৫০৬০) ইবনু উমার (রাঃ) সম্ভবত তিনি নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকেই বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, যে জিনিসে নেশা উদ্রেক করে তাই মদ। আর মদ মাত্রই হারাম। (ই. ফা. ৫০৫১, ই. সে. ৫০৬১)

【8】

মদ পানকারী লোক যদি তাওবাহ না করে তবে শাস্তিস্বরূপ আখিরাতে তাকে মদ হতে বিরত রাখা হবে

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক পৃথিবীতে মদ পান করবে, পরকালে তাকে তা থেকে বঞ্চিত থাকবে।(ই.ফা. ৫০৫২, ই.সে. ৫০৬২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, যে লোক দুনিয়াতে মদ পান করবে এবং তাওবাহ্‌ করবে না পরকালে তাকে তা থেকে বঞ্চিত করা হবে। তাকে তা পান করতে দেয়া হবে না। মালিক (রহঃ)-কে বলা হলো- হাদীসটি কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে? তিনি জবাবে বললেন, হ্যাঁ। (ই.ফা. ৫০৫৩, ই.সে. ৫০৬৩) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক পৃথিবীতে মদ পান করবে, পরকালে সে তা পান করতে পারবে না। তবে যদি তাওবাহ্‌ করে। (ই.ফা. ৫০৫৪, ই.সে. ৫০৬৪) ইবনু উমর (রাঃ) ইবনু উমর (রাযিঃ) এর সানাদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে উবাইদুল্লাহ (রহঃ) এর হাদীসের হুবহু বর্ণিত রয়েছে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫০৫৫, ইসলামিক সেন্টার ৫০৬৫)

【9】

যে নাবীয (খেজুর ভেজানো পানি) গাঢ় হয়নি এবং নেশাগ্রস্ত হয়নি, তা পান করা বৈধ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য রাতের প্রথম ভাগে নাবীয প্রস্তত করা হতো। তিনি তা পান করতেন, সেদিন সকালে, আগামী রাতে, পরবর্তী দিনে, এর পরের রাতে এবং পরদিন ‘আস্‌র পর্যন্ত। তবে যদি কিছু পরিশিষ্ট থেকে যেত, তা তিনি তাঁর সেবাদানকারীকে পান করাতেন, কিংবা ফেলে দিতে নির্দেশ দিতেন।(ই.ফা. ৫০৫৬, ই.সে. ৫০৬৬) ইয়াহ্‌ইয়া বাহরানী (রহঃ) তিনি বলেন, মানুষেরা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে নাবীযের ব্যাপারে আলোচনা করলে তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর জন্য মশকে নাবীয প্রস্তত করা হতো। শু‘বাহ্‌ বলেন, সোমবারের রজনীতে (অর্থাৎ রোববার দিবাগত রাতে) তিনি তা সোমবার দিন ও মঙ্গলবার ‘আস্‌র পর্যন্ত পান করতেন। এরপরও কিছু বাকী থাকলে তিনি সেটা খাদিমকে পান করাতেন বা ফেলে দিতেন।(ই.ফা. ৫০৫৭, ই.সে. ৫০৬৭) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য কিসমিস পানিতে ডুবিয়ে রাখা হতো। তিনি সেদিন, তার পরের দিন এবং তৃতীয় দিন বিকালে পর্যন্ত তা পান করতেন। অতঃপর তাঁর নির্দেশে কোন লোককে পান করানো হতো কিংবা ফেলে দেয়া হতো। (ই.ফা. ৫০৫৮, ই.সে. ৫০৬৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য মশকের ভিতরে কিসমিসের নাবীয প্রস্তুত করা হতো। তিনি ঐদিন, তার পরবর্তী দিন এবং পরশু দিন পর্যন্ত তা পান করতেন। তৃতীয় দিনের বিকাল হলে তিনি নিজে তা পান করতেন এবং অপরকে পান করাতেন। তারপরও যদি কিছু বাকী থাকত তিনি তা ঢেলে দিতেন। (ই.ফা. ৫০৫৯, ই.সে. ৫০৬৯) ইয়াহ্‌ইয়া নাখ্‌‘ঈ (রহঃ) তিনি বলেন, কতিপয় লোক ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে মদ কেনা-বেচা এবং এর ব্যবসা সম্পর্কে প্রশ্ন করলো। তিনি বললেন, তোমরা কি মুসলিম? তারা বললো, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে এর কেনা-বেচা ও ব্যবসা জায়িয হবে না। রাবী বলেন, অতঃপর তারা তাঁকে নাবীয সম্বন্ধে প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার ভ্রমণে গিয়ে যখন ফিরে আসলেন, তখন তাঁর সাহাবীদের থেকে কতিপয় লোক হানতাম, নাকীর ও দুব্বার মাঝে নাবীয প্রস্তুত করছিল। তিনি নির্দেশ দিলেন তা ঢেলে ফেলা হয়। অতঃপর তিনি মশ্‌ক আনতে নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তার মধ্যে কিসমিস ও পানি দিয়ে সারারাত রাখা হলো। সেদিন সকালে এবং আগামী রাত ও তার পরবর্তী বিকাল পর্যন্ত তিনি তা হতে পান করেন, আর অন্যদের পান করতে দেন। রাত পার হলে তিনি বাকী অংশের ব্যাপারে আদেশ দিলে, তা ঢেলে ফেলা হলো। (ই.ফা. ৫০৬০, ই.সে. ৫০৭০) সুমামাহ্‌ ইবনু হায্‌ন কুশাইরী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে নাবীয সম্বন্ধে প্রশ্ন করলাম। ‘আয়িশা (রাঃ) এক হাবশী ক্রীতদাসীকে ডেকে বললেন, একে প্রশ্ন করো- রসূলুল্লাহ –এর জন্য সে নাবীয প্রস্তুত করতো। অতঃপর হাবশী মেয়েটি বলল, রাতে আমি তাঁর জন্য মশকের ভিতরে নাবীয প্রস্তুত করতাম এবং সেটি মুখ বন্ধ করে লটকিয়ে রাখতাম। ভোর হলে তিনি এ থেকে পান করতেন। (ই.ফা. ৫০৬১, ই.সে. ৫০৭১) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর জন্য নাবীয তৈরি করতাম এমন মশকে যার প্রবেশদ্বার উপরের দিকে এবং যেটির (নিচের দিকে) বহু ছিদ্র ছিল। আমরা ভোরে নাবীয প্রস্তুত করলে রাত্রেই তিনি পান করতেন। পুনরায় রাতে করলে ভোরেই তিনি পান করতেন। (ই.ফা. ৫০৬২, ই.সে. ৫০৭২) সাহ্‌ল ইবনু সা‘দ (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ উসায়দ সা‘ইদী (রাঃ) তাঁর বিবাহে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে দা‘ওয়াত করলেন। তাঁর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীই সেদিন তাদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। সাহ্‌ল (রাঃ) বললেন, তোমরা কি জান, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কী পান করতে দিয়েছিলেন? তিনি রাতে কিছু খেজুর একটি পাথরের পাত্রে ভিজিয়ে রেখেছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাবার শেষ করলে তিনি তাঁকে তা পান করিয়েছিলেন। (ই.ফা. ৫০৬৩, ই.সে. ৫০৭৩) আবূ হাযিম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সাহ্‌ল (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আবু উসায়দ সা‘ইদী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এলেন এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দা’ওয়াত করলেন। তারপর রাবী উপরোল্লিখিত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেন। তবে তিনি এ কথা বলেননি যে, “খাওয়া শেষ হলে সে নাবীযটুকু তিনি তাঁকে পান করান”।(ই.ফা. ৫০৬৪, ই.সে. ৫০৭৪) সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণনা করেন। তবে তিনি বলছেন, ‘পাথর দিয়ে তৈরি বাসনে (নাবীয বানানো হয়েছিল), এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাবার শেষ করলে তিনি তা হালকা করে একমাত্র তাঁকেই পান করতে দিয়েছিলেন। (ই.ফা. ৫০৬৫, ই.সে. ৫০৭৫) সাহ্‌ল ইবনু সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর কাছে আরবের জনৈকা মহিলার ব্যাপারে আলোচনা করা হলে, তিনি আবূ উসায়দ (রাঃ)-কে তার কাছে লোক প্রেরনের জন্য নির্দেশ দিলেন। তিনি লোক (দুত) পাঠালে উক্ত মহিলা আসলো এবং বানূ সা‘ইদাহ্‌ সম্প্রাদায়ের দুর্গে অবস্থান গ্রহণ করলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে তার কাছে আসলেন। তিনি যখন তার কাছে পোঁছলেন,তখন মহিলা মাথা নীচু করে বসেছিল। তিনি তার সঙ্গে আলাপ করলে সে বলল, আমি আপনার থেকে আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় চাই। তিনি বললেন, আমিও তোমাকে পরিত্রাণ দিলাম। লোকেরা মহিলাকে বলল, তুমি জান ইনি কে? সে বলল, না। তাঁরা বলল, ইনি তো আল্লাহ্‌র রসূল। তিনি তোমাকে বিবাহের প্রস্তাব দিতে এসেছিলেন। তখন সে বলল আমি তো এর অযোগ্য! সাহ্‌ল (রাঃ) বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেদিন প্রত্যাবর্তন করে তিনি ও তাঁর সাহাবীগণ বানূ সা‘ইদার সাকীফায় (বাগানে) নিজেকে উপবেশন করেন। অতঃপর তিনি সাহ্‌লকে বললেন, আমাদেরকে কিছু পান করাও। সাহ্‌ল বলেন, পরে আমি এক পেয়ালাটি বের করে তাদের সকলকেই তা হতে পান করিয়েছিলাম। আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, সাহ্‌ল (রাঃ) আমাদের সম্মুখে বাটিটি বের করলে আমরা তা হতে পান করলাম। অতঃপর ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) তা চাইলে, তিনি তাঁকে সেটি দান করেন। আবূ বক্‌র ইবনু ইসহাক্‌ (রহঃ)-এর রিওয়ায়াতে আছে, তিনি বললেন, হে সাহ্‌ল! তুমি আমাদেরকে পান করাও।(ই.ফা. ৫০৬৬, ই.সে. ৫০৭৬) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার এ পেয়ালাটি দিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মধু, নাবীয, পানি, দুধ ইত্যাদি সকল প্রকার পানীয় (দ্রব্য) পান করিয়েছি। (ই.ফা. ৫০৬৭, ই.সে. ৫০৭৭)

【10】

দুধ পানের বৈধতা সম্পর্কে

বারা (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ বক্‌র সিদ্দীক (রাঃ) বলেছেন, নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সাথে যখন আমার মক্কা হতে মাদীনার দিকে রওনা দিলাম। এক সময় আমার এক রাখালের পাশ দিয়ে পথ অতিক্রম করছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিপাসা হলে আমি তাঁর জন্য কিছু দুধ দোহন করে নিয়ে আসলাম। তিনি তা পান করলে আমি খুব আনন্দিত হলাম। (ই.ফা. ৫০৬৮, ই.সে. ৫০৭৮) বারা (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ বক্‌র সিদ্দীক (রাঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কা থেকে মাদীনার দিকে বের হলেন। তখন সুরাকাহ্‌ ইবনু মালিক ইবনু জু‘শুম তাঁর পশ্চাদ্ধাবন করল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উপর বদদু‘আ করলে তার ঘোড়া জমিনে দেবে গেলো। সে বলল, আমার জন্য দু‘আ করুন, আমি আপনার কোন ক্ষতি করবো না। তিনি বলেন, রসূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘আ করলেন। ....... বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিপাসার্ত হলেন এবং তাঁরা এক বকরীর রাখালের নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। আবূ বক্‌র সিদ্দীক (রাঃ) বলেন, আমি একখানা বাটি নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর জন্য কিছু দুধ দোহন করে আনলাম। তিনি তা পান করলেন। আমি আনন্দিত হলাম। (ই.ফা. ৫০৬৯, ই.সে. ৫০৭৯) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) মি‘রাজের রাত্রে ঈলিয়া নামক স্থানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে মদ ও দুধের দু’টি পেয়ালা নিয়ে আসা হলে তিনি সে দু‘টির প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন, অতঃপর তিনি দুধ গ্রহন করলেন। জিব্‌রীল (আঃ) বললেনঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র – যিনি আপনাকে স্বভাবসুলভ রাস্তা গ্রহণের তাওফীক দিয়েছেন। যদি আপনি মদের পেয়ালা গ্রহণ করতেন তবে আপনার উম্মাত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত। [দ্রষ্টব্য হাদীস ৪২৪] (ই.ফা. ৫০৭০, ই.সে. ৫০৮০) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আনা হলো। অতঃপর বর্ণনাকারী উপরোল্লিখিত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি ঈলিয়া ব্যাপারটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৫০৭১, ই.সে. ৫০৮১)

【11】

নাবীয পান করা ও পাত্র ঢেকে রাখা প্রসঙ্গে

আবূ হুমায়দ সা‘ইদী (রাঃ) তিনি বলেন, নাকী‘ নামক জায়গা হতে এক বাটি দুধ নিয়ে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আসলাম। বাটিটি ছিল ঢাকনাবিহিন। তিনি বললেনঃ তুমি একে ঢাকলে না কেন, এর উপর একটি কাঠি রেখে হলেও? আবূ হুমায়দ (রাঃ) বলেন, রাতে মশকের মুখ বেঁধে রাখতে ও দরজা আটকানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (ই.ফা. ৫০৭২, ই.সে. ৫০৮২) আবূ হুমায়দ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এক পেয়ালা দুধ নিয়ে এলেন। পরবর্তী অংশ উপরোল্লিখিত হাদীসের মতই। রাবী বলেন, রাবী যাকারিয়্যা (রহঃ) আবূ হুমায়দ এর বর্ণনায় উপরোল্লিখিত ‘রাতে’ কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৫০৭৩, ই.সে. ৫০৮৩) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। তিনি কিছু পান করার ইচ্ছা করলে এক লোক বলল, হে আল্লাহর রসুল! আমরা কি আপনাকে নাবীয পান করতে দিবো? তিনি বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর লোকটি তাড়াতাড়ি চলে গেল এবং একটি বাটি নিয়ে আসলো তার মধ্যে নাবীয ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এর উপর একটি কাঠি দিয়ে হলেও তুমি এটি ঢেকে আনলে না কেন? আবূ হুমায়দ (রাঃ) বলেন, তারপর তিনি পান করলেন। (ই.ফা. ৫০৭৪, ই.সে. ৫০৮৪) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ হুমায়দ (রাঃ) নামক এক লোক নাকী‘ (নামক জায়গা) থেকে এক বাটি দুধ নিয়ে এলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃতুমি এটা আবৃত করে আনলে না কেন, এর উপর একটা কাঠি দিয়ে হলেও? (ই.ফা. ৫০৭৫, ই.সে. ৫০৮৫)

【12】

পাত্র ঢেকে রাখা, মশকের মুখ বেঁধে রাখা, দরজা বন্ধ করা ও এ সময়ে আল্লাহ্‌র নাম নেয়া, রাতে শোয়ার সময় বাতি বা আগুন নিভানো এবং মাগরিবের পর ছেলেমেয়ে ও গৃহপালিত পশুগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখার আদেশ

জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা (রাতে) বাসনগুলো ঢেকে রাখবে, মশ্‌কগুলোর প্রবেশদ্বার আটকিয়ে রাখবে, ফটকগুলো বন্ধ করবে এবং বাতিগুলো নিভিয়ে দিবে। কারণ, শাইতান মশ্‌কের মুখ ও দরজা খুলতে পারে না এবং বাসনও অনাবৃত করতে পারে না। যদি তোমাদের কেউ তার বাসনের উপর রাখার জন্য কাঠি ছাড়া অন্য কিছু না পায়, তবে সে যেন তাই রেখে দেয় এবং আল্লাহ্‌র নাম উচ্চারণ করে। কেননা ইঁদুর ঘরের মালিকদের ঘর তাড়াতাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। কুতাইবাহ্‌ তাঁর হাদীসে ‘দরজা আটকাও’ কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা.৫০৭৬, ই.সে. ৫০৮৬) জাবির (রাঃ) তবে তিনি বলেছেন- তোমরা বাসনগুলো উল্টিয়ে বা কাত করে রাখবে অথবা ঢেকে রাখবে। আর তিনি বাসনগুলোর উপর কাঠি দেয়ার কথা উল্লেখ করেননি। (ই.ফা.৫০৭৭, ই.সে. ৫০৮৭) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা দরজা আটকিয়ে রাখবে। তারপর রাবী লায়স (রহঃ) এর হাদীসের মত হুবহু বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, তোমরা বাসনগুলো আবৃত রাখবে। তিনি আরও বলেন, ইঁদুর ঘরের অধিবাসীদের পোশাক পুড়িয়ে ফেলে। (ই.ফা.৫০৭৮, ই.সে. ৫০৮৮) জাবির (রাঃ) এর সনদ নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে তাঁদের হাদীসের হুবহু বর্ণিত আছে। তিনি বলেছেন, ইঁদুর গৃহবাসীদের ঘর জ্বালিয়ে দেয়। (ই.ফা.৫০৭৯, ই.সে. ৫০৮৯) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রাত্রি যখন ঘনিভূত হবে অথবা বলেছেন, তোমরা সন্ধ্যায় উপনীত হবে তখন তোমরা তোমাদের সন্তানদের দেখে রাখবে। কেননা শাইতান তখন ঘুরাফেরা করে। রাত্রি ঘন্টাখানিক পার হলে তাদের ছেড়ে দাও। আর দরজাগুলো আটকিয়ে রাখবে এবং আল্লাহ্‌র নাম উচ্চারণ করবে। কেননা শাইতান কোন বন্ধ দরজা খুলতে পারে না। আর তোমরা তোমাদের মশকসমূহের মুখ বেঁধে রাখবে এবং আল্লাহ্‌র নাম মনে করবে। আর তোমাদের বাসনগুলো আবৃত রাখবে, যদি তার উপর একটি কাঠিও রেখে হয় এবং আল্লাহ্‌র নাম উচ্চারণ করবে। আর তোমাদের বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। (ই.ফা.৫০৮০, ই.সে. ৫০৯০) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি ‘আতা (রহঃ)-এর হাদীসের মতই বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি ‘আল্লাহ্‌র নাম স্মরণ করার’ কথা বর্ণনা করেননি। (ই.ফা.৫০৮১, ই.সে. ৫০৯১) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) ‘আতা ও ‘আমর ইবনু দীনার (রহঃ) রাওহ্ (রহঃ)-এর সনদের হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা.৫০৮২, ই.সে. ৫০৯২) জাবির (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের গৃহপালিত জন্তু এবং সন্তানদেরকে সূর্য ডোবার সময় বের হতে দিবে না যতক্ষণ না ‘ইশার কালোর অন্ধকার অতিবাহিত হয়। কারণ সূর্য ডোবার পর থেকে ‘ইশার কালোর অন্ধকার পার হওয়া পর্যন্ত শাইতান ঘুরাফেরা করতে থাকে। (ই.ফা.৫০৮৩, ই.সে. ৫০৯৩) জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে যুহায়র (রহঃ)-এর হাদীসের অনুরুপ বর্ণিত আছে। (ই.ফা.৫০৮৪, ই.সে. ৫০৯৪) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা বাসনগুলো আবৃত রাখবে এবং মশ্‌কসমূহের মুখ বেঁধে রাখবে। কারণ বছরে একটি এমন রাত আছে, যে রাতে মহামারী অবতীর্ণ হয়। যে কোন খোলা পাত্র এবং বন্ধকহীন মশ্‌কের উপর দিয়ে তা অতিবাহিত হয়, তাতেই সে মহামারী নেমে আসে। (ই.ফা.৫০৮৫, ই.সে. ৫০৯৫) লায়স ইবনু সা‘দ (রহঃ) হতে উপরোক্ত সূত্র হুবহু বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তিনি বলেছেন, ‘কেননা বছরে একটি এমন দিন রয়েছে, যে দিনে মহামারী ধেয়ে আসে।’ বর্ণনাকারী হাদীসের শেষলগ্নে বাড়তি বলেছেন যে, লায়স বলেছেন, আমাদের মাঝে অনারবরা “প্রথম কানুন” [১]মাসে তা থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। (ই.ফা.৫০৮৬, ই.সে. ৫০৯৬) সালিম সূত্রে তার পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ঘরে অগ্নি প্রজ্জ্বলন অবস্থায় শায়িত হবে না। (ই.ফা.৫০৮৭, ই.সে. ৫০৯৭) আবূ মূসা (রাঃ) একবার রাতে মাদীনায় ঘরের অধিবাসীসহ একটি বাড়ি পুড়ে গেল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানানো হলে তিনি বললেনঃ এ আগুন তোমাদের শত্রু। অতএব তোমরা রাতে শোয়ার সময় তা নিভিয়ে ফেলবে। (ই.ফা.৫০৮৮, ই.সে. ৫০৯৮)

【13】

পানাহারের নিয়ম ও বিধান

হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, কোন খাবার অনুষ্ঠানে যখন আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে উপবিষ্ট হতাম। যতক্ষণ তিনি স্বীয় হাত রেখে আরম্ভ না করতেন ততক্ষণ আমরা আমাদের হাত (আহারে) রাখতাম না। একবার আমরা তাঁর সাথে এক খাবার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলাম। এমনি মুহূর্তে একটি মেয়ে এলো। (মনে হচ্ছিল) যেন তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সে খাবারে হাত দিতে গেলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাত ধরে নিলেন। অতঃপর একজন বেদুঈন এলো। (মনে হচ্ছিল) যেন তাকে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছিল। তিনি তারও হাত ধরে নিলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ্‌র নাম স্মরণ করা না হলে শাইতান সে খাদ্যকে হালাল করে ফেলে। আর সে এ মেয়েটিকে নিয়ে এসেছে যাতে করে (এ খাদ্যকে) তার দ্বারা হালাল করতে পারে। অতঃপর আমি তার হাত ধরে ফেললে সে এ বেদুঈনকে নিয়ে এসেছে। যাতে করে (এ খাদ্যকে) তার দ্বারা হালাল করতে পারে। কিন্তু আমি তারও হাত ধরে ফেলেছি। সে সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন! অবশ্যই তার (শাইতানের) হাত মেয়েটির হাতসহ আমার হাতের মুঠোয়। (ই.ফা.৫০৮৯, ই.সে. ৫০৯৯) হুযাইফাহ্‌ ইবনু ইয়ামান (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদেরকে যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কোন খাবার উপলক্ষে দা‘ওয়াত করা হতো। অতঃপর বর্ণনাকারী আবূ মু‘আবিয়াহ্‌ (রহঃ)-এর হাদীসের মতই বর্ণনা করেন। তবে তিনি (...আরবি) –এর স্থলে (...আরবি) এবং মেয়ের বেলায় (...আরবি) স্থলে (...আরবি) শব্দ উচ্চারণ করেন। আর এ হাদীসে তিনি মেয়েটির আগমনের পূর্বে বেদুঈনের আসার কথা বর্ণনা করেছেন এবং হাদীসের শেষে অতিরিক্ত বলেছেন, ‘তারপর তিনি “বিসমিল্লাহ” বলেন এবং খাদ্য গ্রহণ করেন’। (ই.ফা.৫০৯০, ই.সে. ৫১০০) আ‘মাশ (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে হুবহু বর্ণিত আছে। তবে তিনি মেয়েটির আসা ও পরে বেদুঈনের আসার কথা উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা.৫০৯০, ই.সে. নেই) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন যে যখন কোন ব্যাক্তি তার ঘরে প্রবেশের এবং খাবার গ্রহণের সময় আল্লাহ্‌র নাম স্মরণ করে, তখন শাইতান হতাশ হয়ে (তার সঙ্গীদের) বলে- তোমাদের (এখানে) রাত্রি যাপনও নেই, খাওয়াও নেই। আর যখন সে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে আল্লাহ্‌র নাম স্মরণ না করে, তখন শাইতান বলে, তোমরা থাকার স্থান পেয়ে গেলে। আর যখন সে খাবারের সময় আল্লাহ্‌র নাম স্মরণ না করে, তখন সে (শাইতান) বলে, তোমাদের নিশি যাপন ও রাতের খাওয়ার আয়োজন হলো। (ই.ফা. ৫০৯১, ই.সে. ৫১০১) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন। তারপর রাবী আবূ ‘আসিম (রহঃ) –এর হাদীসের মত বর্ণনা করেন। কিন্তু তিনি (আরবি) শব্দের স্থানে (আরবি) এবং (আরবি) এর জায়গায় (আরবি) বলেছেন। (ই.ফা. ৫০৯১, ই.সে. ৫১০২) জাবির (রাঃ) আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা বাম হাতে আহার করবে না। কারণ, শাইতান বাম হাতে আহার করে। (ই.ফা. ৫০৯২, ই.সে. ৫১০৩) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ খাদ্য খায়, তখন সে যেন ডান হাতে খায় আর যখন পান করে, সে যেন ডান হাতে পান করে কারণ শাইতান বাম হাতে খায় ও পান করে। (ই.ফা. ৫০৯৩, ই.সে. ৫১০৪) কুতাইবাহ্ ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) হতে, ভিন্ন সূত্রে ইবনু নুমায়র (রহঃ) তার পিতা নুমায়র থেকে, অন্য একটি সূত্রে ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ইয়াহ্ইয়া আল-কাত্তান (রহঃ) হতে, শেষাংশে দু’জন ‘উবাইদুল্লাহ হতে, আর তারা সবাই যুহরী (রহঃ) সুফ্ইয়ান (রহঃ)-এর সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫০৯৪, ই.সা. ৫১০৫) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন বাম হাতে পানাহার না করে। কারণ শাইতান বাম হাতে পানাহার করে। রাবী বলেন, নাফি’ (রহঃ) এতে অতিরিক্ত করতেন, বাম হাতে যেন কোন (কিছু) আদান-প্রদানও না করে। আবূ তাহির (রহঃ)-এর বর্ণনায় (আরবি) এর জায়গায় (আরবি) শব্দ রয়েছে। (ই.ফা. ৫০৯৫, ই.সে. ৫১০৬) সালামাহ্‌ ইবনু আক্‌ওয়া (রাঃ) এক লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বাম হাতে খাদ্য গ্রহণ করছিল। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার ডান হাতে খাও। সে বলল, আমি পারবো না। তিনি বললেনঃ তুমি যেন না-ই পার। শুধুমাত্র অহমিকাই তাকে বারণ করছে। সালামাহ্‌ (রাঃ) বলেন, সে আর কখনো তার ডান হাত মুখের নিকট উঠাতে পারেনি। (ই.ফা. ৫০৯৬, ই.সে. ৫১০৭) ‘উমার ইবনু আবূ সালামাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। খাবার বাসনে আমার হাত চারপাশে ঘুরত। তিনি আমাকে বললেনঃ হে বালক! তুমি তোমার ডান হাতে খাও এবং নিজের পাশ হতে খাও। (ই.ফা. ৫০৯৭, ই.সে. ৫১০৮) ‘উমার ইবনু আবূ সালামাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সাথে খাবার খাচ্ছিলাম। আমি বাসনের বিভিন্ন দিকে হতে গোশ্‌ত নিতে লাগলাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি নিজের পাশ থেকে ভক্ষণ কর। (ই.ফা. ৫০৯৮, ই.ফা. ৫১০৯) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্তনের মুখে মুখ লাগিয়ে পান করতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫০৯৯, ই.সে. ৫১১০) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলছেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মশ্‌ক বাকিয়ে এর মুখে মুখ লাগিয়ে পান করতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫১০০, ই.সে. ৫১১১) যুহরী (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে হুবহু বর্ণনা করেছেন। তবে রাবী মা’মার বলেছেন, (আরবি) অর্থ মশ্কের মাথা হেলিয়ে তাতে মুখ লাগিয়ে পান করা।(ই.ফা. ৫১০১, ই.সে. ৫১১২)

【14】

দাঁড়িয়ে পান করা মাকরূহ

আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে পান করা হতে শাসন করেছেন।(ই.ফা. ৫১০২, ই.সে. ৫১১৩) আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন লোককে দণ্ডায়মান হয়ে পান করতে বারণ করেছেন। কাতাদাহ্‌ বলেন, আমরা বললাম, তবে খাবারের ব্যাপারে (আদেশ কি)? তিনি বললেন, সেটা তো আরো নিকৃষ্ট, আরো জঘন্য। (ই.ফা. ৫১০৩, ই.সে. ৫১১৪) আনাস (রাঃ) –এর সনদ নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হুবহু রিওয়ায়াত করেছেন। তবে রাবী হিশাম (রহঃ) কাতাদাহ্ (রাঃ) –এর উক্তিটি বর্ণনা করেননি।(ই.ফা. ৫১০৪, ই.সে. ৫১১৫) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে পান করা হতে কঠিনভাবে সাবধান করেছেন। (ই.ফা. ৫১০৫, ই.সে. ৫১১৬) আবূ সা‘ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে পান করতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫১০৬, ই.সে.৫১১৭) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন কখনো দাঁড়িয়ে পান না করে। কেউ ভুলে পান করলে সে যেন পরে বমি করে ফেলে। (ই.ফা. ৫১০৭, ই.সে. ৫১১৮)

【15】

যমযমের পানি দাঁড়িয়ে পান করা প্রসঙ্গে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যমযম হতে পানি পান করিয়েছি। তিনি দাঁড়িয়ে তা পান করলেন। (ই.ফা. ৫১০৮, ই.সে. ৫১১৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যমযম কুয়া হতে ছোট বালতি দ্বারা পানি উঠিয়ে দাঁড়িয়ে পান করেছেন। (ই.ফা. ৫১০৯, ই.সে. ৫১২০) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে যমযম হতে পানি পান করেছেন। (ই.ফা. ৫১১০, ই.সে. ৫১২১) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যমযম হতে (পানি) পান করিয়েছি। তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় পান করেছেন এবং তিনি পানি চেয়ে লোক পাঠালেন, তথন তিনি বাইতুল্লাহর নিকটে ছিলেন। (ই.ফা. ৫১১১, ই.সে. ৫১২২) শু’বাহ (রহঃ) উল্লেখিত সূত্রে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তাদের দু’জনের হাদীসে রয়েছে- ‘আমি তাঁর নিকট বালতি নিয়ে আসলাম’। (ই.ফা. ৫১১২, ই.সে. ৫১২৩)

【16】

পান করার সময় পাত্রে নি:শ্বাস ফেলা মাকরূহ এবং পাত্রের বাইরে তিনবার শ্বাস নেয়া মুস্তাহাব

আবূ কাতাদাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানপাত্রের মধ্যে শ্বাস ফেলতে বারণ করেছেন। [দ্রষ্টব্য হাদীস ৬১৩] (ই.ফা. ৫১১৩, ই.সে. ৫১২৪) আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (যখন পান করতেন) তিনবার পাত্রে (পাত্রের বাইরে) শ্বাস নিতেন। (ই.ফা. ৫১১৪, ই.সে. ৫১২৫) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, পান করার সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার নিশ্বাস নিতেন এবং বলতেন, এতে করে ভালভাবে প্রশান্তি লাভ হয়, তৃষ্ণার্তের কষ্ট লাঘব হয় এবং খুব আরামে গলধঃকরণ হয়। আনাস (রাঃ) বলেন, আমিও পান করার সময় তিনবার নিঃশ্বাস নিয়ে থাকি। (ই.ফা. ৫১১৫, ই.সে. ৫১২৬) আনাস (রাঃ)-এর সনদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হুবহু বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী (আরবি) শব্দের স্থানে (আরবি) বলেছেন। (ই.ফা. ৫১১৬, ই.সে. ৫১২৭)

【17】

পানি, দুধ ইত্যাদি পরিবেশনে ব্যক্তি তার ডান দিক থেকে শুরু করবে

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে পানি মেশানো কিছু দুধ আনা হলো। তাঁর ডান দিকে একজন বেদুঈন ছিল, বামদিকে ছিলেন আবূ বাকর (রাঃ)। তিনি পান করলেন। অত:পর বেদুঈনকে দিয়ে বললেনঃডান থেকে, ডানে হওয়া করণীয়। (ই.ফা. ৫১১৭, ই.সে. ৫১২৮) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাদীনায় আসেন তখন আমার বয়স ছিল দশ বছর। তিনি যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন আমার বয়স বিশ বছর। আমার মা-খালাগণ আমাকে তাঁর সেবা করার জন্য প্রেরণা দিতেন। একবার তিনি আমাদের গৃহে আসলেন, আমরা তাঁর জন্য পালিত বকরীর দুধ দোহন করলাম, গৃহের একটি কুয়া থেকে অল্প পানি মেশানো হলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পান করলেন। তাঁর বাম দিকে আবূ বাকর (রাঃ) ছিলেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাকর (রাঃ)-কে দিন। কিন্তু তিনি তাঁর ডান পাশের বেদুঈনকে দিলেন এবং বললেনঃডান দিক হতে, ডানের হক বেশি। (ই.ফা. ৫১১৮, ই.সে. ৫১২৯) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের গৃহে আগমন করে কিছু পান করতে ইচ্ছা করলেন। আমরা তাঁর জন্য একটি ছাগলের দুধ দোহন করলাম। তারপর আমি আমার এ কূপ হতে কিছু পানি দুধের সাথে মেশালাম। তিনি (আনাস) বলেন, অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পান করলেন। আবূ বাকর (রাঃ) তাঁর বাম পাশে ছিলেন। ‘উমার (রাঃ) তাঁর সম্মুখে আর তাঁর ডানদিকে ছিল এক বেদুঈন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পান করা শেষ করলেন, তখন ‘উমার (রাঃ) আবূ বাকরকে দেখিয়ে তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ তো আবূ বাকর (রাঃ) (তাঁকে দিন)। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাকর ও উমার (রাঃ)-কে (আগে) না দিয়ে সে বেদুঈনকে দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃআগে ডান পাশের মানুষদের। ডান পাশের মানুষদের, ডান পাশের লোকদেরই বেশী হক রয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেন, এতএব এটা সুন্নাত, এটা সুন্নাত, এটা সুন্নাত। (ই.ফা. ৫১১৯, ই.সে. ৫১৩০) সাহল ইবনু সা’দ সা’ইদী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে কিছু পানীয় আনা হলে তিনি সামান্য পান করলেন। তাঁর ডান পাশে ছিল একটি ছেলে আর বাম পাশে কিছু বৃদ্ধ মানুষ। তিনি ছেলেটিকে বললেন, তুমি কি তাদেঁরকে দেয়ার জন্য আমাকে অনুমতি দিবে? ছেলেটি বলল, না। আল্লাহর শপথ! আপনার নিকট হতে যা পাওনা আমার ভাগে (তাতে) আমি অন্য কাউকে প্রাধান্য দিব না। আনাস (রাঃ) বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুধের বাটি তার হাতেই তুলে দিলেন। (ই.ফা. ৫১২০, ই.সে. ৫১৩১) সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ)-এর সনদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হুবহু বর্ণনা করেছেন। তারা দু’জনেই (আরবি) (তার হাতে দিলেন) শব্দটি বর্ণনা করেননি। তবে ইয়াকুব (রহঃ)-এর বর্ণনায় (আরবি) এর স্থানে (আরবি) (তাকেই দিলেন) উক্তিটি বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৫১২১, ই.সে. ৫১৩২)

【18】

আঙ্গুল ও বাসন চেটে খাওয়া এবং পড়ে যাওয়া খাবারে যে আবর্জনা লেগেছে তা মুছে খাওয়া মুস্তাহাব, আর চেটে খাওয়ার আগে হাত মুছে ফেলা মাকরূহ; (কারণ ঐ বাকী অংশের মধ্যে খাদ্যের বারাকাত থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে)

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন আহার করে, সে যেন তার হাত মুছে না ফেলে যতক্ষণ না সে তা চেটে খায় [৮] বা অপরকে দিয়ে চাটায়। (ই.ফা. ৫১২২, ই.সে. ৫১৩৩) ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যখন তোমাদের কেউ আহার করে, সে যেন স্বীয় হস্ত মুছে না ফেলে যতক্ষণ না সে তা নিজে চেটে খায় কিংবা অপরকে দিয়ে চাটায়। (ই.ফা. ৫১২৩, ই.সে. ৫১৩৪) কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে তাঁর আঙ্গুল তিনটি [৯] হতে খাবার চেটে খেতে দেখেছি। কিন্তু ইবনু হাতিম (রহঃ) (আরবি) (তিন) শব্দটি উল্লেখ করেননি। আর ইবনু আবূ শাইবাহ তাঁর বর্ণনায় ‘আবদুর রহমান ইবনু কা’ব (রহঃ) ‘তাঁর পিতা হতে’ সূত্রটির কথা বলেছেন। (ই.ফা. ৫১২৪, ই.সে. ৫১৩৫) কা’ব ইবনু মালিক (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন আঙ্গুলে খাবার খেতেন এবং হাত মুছার আগে তা চেটে খেতেন। (ই.ফা. ৫১২৫, ই.সে. ৫১৩৬) কা’ব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন আঙ্গুলে খাবার খেতেন এবং খাবার শেষ করে আঙ্গুলগুলো চেটে খেতেন। (ই.ফা. ৫১২৬, ই.সে. ৫১৩৭) কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হুবহু রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫১২৭, ই.সে. ৫১৩৮) জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আঙ্গুল ও বাসন চেটে খেতে [১০] নির্দেশ করেছেন। আর তিনি বলেছেন: (খাদ্যের) কোন অংশে বারাকাত আছে তা তোমরা জান না। (ই.ফা. ৫১২৮, ই.সে. ৫১৩৯) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কারো লোকমা পড়ে গেলে সে যেন তা তুলে নেয়। তারপর তাতে যে আবর্জনা স্পর্শ করেছে তা যেন দূরীভূত করে এবং খাদ্যটুকু খেয়ে ফেলে। শাইতানের জন্য সেটি যেন ফেলে না রাখে। আর তার আঙ্গুল চেটে না খাওয়া পর্যন্ত সে যেন তার হাত রুমাল দিয়ে মুছে না ফেলে। কেননা সে জানে না খাদ্যের কোন অংশে বারাকাত রয়েছে। (ই.ফা. ৫১২৯, ই.সে. ৫১৪০) সুফইয়ান (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে হুবহু বর্ণনা করেছেন। তাঁদের দু’জনের হাদীসে আছে, ‘সে ব্যক্তি যেন তার হাত রুমাল দিয়ে মুছে না ফেলে, যতক্ষণ না সে তার নিজের হাত চেটে খায় কিংবা অপরকে দিয়ে চাটায়। ... পরবর্তীতে বাকী অংশে উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ৫১৩০, ই.সে. ৫১৪১) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, শাইতান তোমাদের সকল কাজ-কর্মে উপস্থিত হয়। এমনকি তোমাদের কারো খাবারের সময়ও সে উপস্থিত হয়। সুতরাং তোমাদের যদি কারো লোকমা মাটিতে পড়ে যায়, সে যেন তাতে লেগে যাওয়া আবর্জনা সরিয়ে তা খেয়ে ফেলে। শাইতানের জন্য জন্য যেন ফেলে না রাখে। খাবার শেষে সে যেন তার আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কেননা সে জানেনা, তার খাদ্যের কোন অংশে বারাকাত (কল্যাণ) রয়েছে। (ই.ফা. ৫১৩১, ই.সে. ৫১৪২) আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) দু’জনই আবূ মু’আবিয়াহ (রহঃ) হতে, তিনি আ’মাশ (রহঃ) হতে উপরোক্ত সূত্র “যখন তোমাদের কারো লোকমা পড়ে যায়, ... হাদীসের শেষ পর্যন্ত। তবে আবূ মু’আবিয়াহ (রহঃ) হাদীসের প্রথমাংশ ‘শাইতান তোমাদের প্রতিটি কাজে-কর্মে উপস্থিত হয়’-কথাটি উত্থাপন করেননি। (ই.ফা. ৫১৩২, ই.সে. ৫১৪৩) জাবির (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে চেটে খাওয়ার ব্যাপারে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবূ সুফইয়ান (রহঃ) জাবির (রাঃ)-এর সনদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে রিওয়ায়াত করেছেন। তিনিও তাদের উভয়ের হাদীসের ন্যায় লোকমার কথা বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫১৩৩, ই.সে. ৫১৪৪) আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন খাদ্য খেতেন তখন তাঁর আঙ্গুল তিনটি চেটে খেতেন এবং তিনি বলেছেন: তোমাদের কারো লোকমা যদি মাটিতে পড়ে যায় তবে সে যেন তা হতে ময়লা দূর করে এবং খাবারটুকু খেয়ে ফেলে, তা যেন শাইতানের জন্য রেখে না দেয়। আর তিনি আমাদের বাসন মুছে খেতে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘কারণ তোমরা জান না, তোমাদের খাবারের কোন অংশে কল্যাণ রয়েছে’। (ই.ফা. ৫১৩৪, ই.সে. ৫১৪৫) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: তোমাদের কেউ যখন খাবার খায়, সে যেন তার আঙ্গুলগুলো চেটে খায়। কারণ সে জানে না খাদ্যের কোন অংশে বারাকাত রয়েছে। (ই.ফা. ৫১৩৫, ই.সে. ৫১৪৬) হাম্মাদ (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত। তবে তিনি বলেছেন, তোমাদের সবাই যেন বাসন চেটে খায়। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা জান না তোমাদের কোন খাদ্যে বারাকাত রয়েছে অথবা কোন খাদ্যে বারাকাত দেয়া হয়। (ই.ফা. ৫১৩৫, ই.সে. ৫১৪৭)

【19】

মেযবানের দাওয়াত ছাড়াই যদি কেউ মেহমানের পশ্চাদানুসরণ করে তবে মেহমান কি করবে? পশ্চাদানুসারীদের জন্য মেযবান থেকে অনুমতি নিয়ে নেয়া মুস্তাহাব।

আবূ মাসউদ আনসারী (রাঃ) আবূ শু’আয়ব নামধারী এক আনসারী ব্যক্তি ছিল। তার একজন কসাই দাস ছিল। লোকটি একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখে তাঁর অবয়বে ক্ষুধার আভাস অনুভব করলো। পরে তার গোলামকে বলল, তোমার কল্যাণ হোক আমাদের পাঁচজনের জন্য তুমি খাবার তৈরী করো। কেননা আমি পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দাওয়াত দিতে ইচ্ছা পোষণ করেছি। তখন সে খাবার তৈরী করলো। তারপর লোকটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে তাঁকে সহ পাঁচজনকে দাওয়াত দিল। জনৈক লোক তাঁদের পিছু অনুসরণ করলো। দরজা পর্যন্ত পৌঁছলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃএ লোকটি আমাদের পিছু পিছু এসেছে। তুমি চাইলে তাকে অনুমতি দিতে পার, আর যদি ইচ্ছা কর তবে সে প্রত্যাবর্তন করবে। লোকটি বলল, না। বরং আমি তাকে অনুমতি দিচ্ছি, হে আল্লাহর রসূল! (ই.ফা. ৫১৩৬, ই.সে. ৫১৪৮) আবূ মাসউদ (রাঃ)-এর সনদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে জারীর (রাঃ)-এর হাদীসের অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু নাসর ইবনু আলী পুরো সানাদ হাদ্দাসানা দিয়ে বর্ণনা করেছেন এবং পুরো হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫১৩৭, ই.সে. ৫১৪৯) জাবির (রাঃ) ভিন্ন সূত্রে সালামাহ ইবনু শাবীব (রহঃ) ... আবূ মাস’উদ (রাঃ)-এর সনদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫১৩৮, ই.সে. ৫১৫০) আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর একজন ইরানী প্রতিবেশী ভাল সালুন রান্না করতে পারতো। একদা সে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর জন্য সামান্য খাবার তৈরী করে তাঁকে দা’ওয়াত করতে আসলো। তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)– এর দিকে ইশারা করে বললেন এই যে, ‘আয়িশাহ্‌ আছেন। সে বলল, না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ (তাহলে আমিও) না। লোকটি আবার তাঁকে দাওয়াত করল। রাসূলুল্লাহ বললেনঃ ইনিও [‘আয়িশা (রাঃ)]? সে বলল, না রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ (আমিও) না। এরপর সে পুনরায় তাঁকে দাওয়াত করতে আসলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ইনিও? লোকটি তৃতীয়বার বলল, হ্যাঁ। তারপর তাঁরা উভয়েই দাঁড়ালেন এবং একজনের পিছনে আরেকজন চলে তার গৃহে এসে পৌঁছলেন। (ই ফা. ৫১৩৯, ই সে, ৫১৫১)

【20】

মেযবানের সন্তুষ্টি সম্পর্কে নিশ্চিত থাকলে অন্যকে সাথে নিয়ে তার গৃহে উপস্থিত হওয়া জায়িয, আর একত্র থেকে খাওয়া মুস্তাহাব।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদিনে কিংবা রাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তার বাড়ী থেকে) বের হয়ে আবূ বকর (রাঃ) ও ‘উমার (রাঃ) –কে দর্শন করলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, এ সময় কিসে তোমাদের গৃহ হতে বের করেছে? তাঁরা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! উপবাসের যন্ত্রনায়। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,যে মহান আল্লাহ্‌র হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম, যা তোমাদের বের করে এনেছে, আমাকেও তা-ই বের করে এনেছে, চলো। তাঁরা উভয়ে তাঁর সাথে চলতে লাগলেন। তার পর তিনি এক আনসারীর গৃহে এলেন। তখন তিনি বাড়ীতে ছিলেন না। তাঁর সধর্মিণী তাঁকে [রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] দেখে বলল, মারহাবা ওয়া আহলান (আরবী)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে প্রশ্ন করলেন, অমুক কোথায়? স্ত্রীলোকটি বলল, তিনি আমাদের জন্য মিষ্ট পানি আনতে গেছেন। তখনই আনসারী ব্যক্তিটি উপস্থিত হয়ে রাসূলুল্লহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর দু’ সাথীকে দেখতে পেয়ে বললেন, আল্লাহ্‌র প্রশংসা, আজ মেহমানের দিক হতে আমার থেকে সৌভাগ্যবান আর কেউ নেই। তারপর সে গিয়ে একটি খেজুরের ছড়া নিয়ে আসলেন। তাতে কাচা, পাকা ও শুকনা খেজুর ছিল। তিনি বললেন, আপনারা এ ছড়া থেকে খান। এরপর তিনি ছুরি নিলেন (ছাগল যাবাহ করার জন্য) তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, সাবধান, দুধওয়ালা বকরী যাবাহ করবে না। অতঃপর তাদের জন্য (বকরী) যাবাহ করলে তাঁরা বকরীর গোশত ও কাঁদির খেজুর খেলেন এবং (মিঠা) পানি পান করলেন। তাঁরা সকলে ক্ষুদা মিটালেন ও পরিতৃপ্ত হলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন আবূ বক্‌র ও ‘উমার (রাঃ) –কে কেন্দ্র করে বললেনঃ যে সত্তার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম! কিয়ামতের দিন এ নি’য়ামত সম্বন্ধে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে। ক্ষুধা তোমাদের বাড়ি হতে বের করে এনেছে অথচ তোমরা এ নি’য়ামত লাভ না করে ফেরত যাওনি। (ই.ফা. ৫১৪০, ই.সে. ৫১৫২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, একবার আবূ বাকর (রাঃ) বসে ছিলেন। তাঁর সাথে ‘উমার (রাঃ) ও ছিলেন। সে সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের পাশে এসে বললেনঃ কোন জিনিস তোমাদের এ স্থানে বসিয়ে রেখেছে? তাঁরা বললেন, সে আল্লাহ্‌র কসম! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন। ক্ষুধা আমাদের ঘর থেকে আমাদের বাইরে নিয়ে এসেছে। অতঃপর বর্ণনাকারী খালাফ ইব্‌নে খলীফা (রহঃ) –এর হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৫১৪১, ই.সে. ৫১৫৩) জাবির ইব্‌নে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, (খন্দক যুদ্ধের প্রাক্কালে) পরিখা খোড়ার সময় আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর দেহে ক্ষুধার যন্ত্রণা লক্ষ্য করলাম। অতঃপর আমার সহধর্মিণীর নিকট ফিরে এসে তাঁকে বললাম, তোমার কাছে কিছু আছে কি? কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)– কে চরম ক্ষুধারত অবস্থায় দেখেছি। অতঃপর সে একটি চামড়ার ব্যাগ বের করলো, যার মধ্যে এক সা’ পরিমাণ যব ছিল। আর আমাদের একটা গৃহপালিত বকরী ছিল। আমি ওটা যাবাহ করলাম, আর স্ত্রী যবগুলো ভালভাবে পিষে নিল। আমার কাজ সম্পাদনের সঙ্গে সঙ্গে সেও তাঁর কাজ শেষ করলো। আমি (রান্নার জন্য) গোশ্‌ত কেটে ডেগচিতে রাখলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)– এর কাছে ফিরে এলাম। (যাওয়ার সময়) আমার স্ত্রী আমাকে বলল, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথীদের দিয়ে তুমি আমাকে লাঞ্ছিত কর না। তিনি বলেন, তারপর আমি তাঁর নিকট এসে চুপি চুপি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমরা একটি বকরী যাবাহ করেছি আর আমাদের এক সা’ পরিমাণ যব ছিল আমার স্ত্রী তাই পিষে নিয়েছে। সুতরাং আপনি কয়েকজনকে সাথে নিয়ে আসুন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দরাজ কণ্ঠে বললেন, হে পরিখা খননকারীরা! জাবির তোমাদের জন্য কিছু খাবার তৈরী করেছে। তোমরা সকলে চলো। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আমাকে বললেনঃ আমি না আসা পর্যন্ত তোমাদের ডেগ (চুলা থেকে) নামাবে না এবং খামীর দ্বারা রুটি প্রস্তত করবে না। আমি আসলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষদের আগে আগে আসলেন। আমি আমার স্ত্রীর নিকট এলে সে আমাকে (তিরস্কার করে) বলল, তোমার ধ্বংস হোক, তোমার ধ্বংস হোক। আমি বললাম, আমি তাই করেছি, তুমি যাই আমাকে বলেছিলে। অতঃপর সে খামিরগুলো বের করলো তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মধ্যে একটু লালা দিলেন এবং বারাকাতের দু’য়া করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, রুটি প্রস্ততকারীনিকে ডাক, যে তোমার সঙ্গে রুটি প্রস্তত করবে। আর তুমি পাতিল হতে পেয়ালা ভরে ভরে নিবে। আর ডেগ (চুল্লি হতে) নামাবে না। তাঁরা ছিলেন মোট এক হাজার মানুষ। আল্লাহ্‌র নামে শপথ করছি! তাঁরা সকলে খাবার খেলেন। পরিশেষে তাঁরা তা রেখে এমনভাবে ফিরে গেলেন যে, আমাদের ডেগ আগের মতো উতলিয়ে পড়ছিল। আর আমাদের খামীর পূর্বের মতো রুটি প্রস্তত করা হচ্ছিল। (ই.ফা. ৫১৪২, ই.সে. ৫১৫৪) আনাস ইব্‌নে মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, (একদা) আবূ তালহাহ্‌ (রাঃ) উম্মু সুলায়ম (রাঃ)- কে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দুর্বল শব্দ শ্রবণ করে বুঝতে পেরেছি যে, তিনি ক্ষুধার্ত। তাই তোমার কাছে কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি যবের কয়েক খণ্ড রুটি বের করলেন। তারপর তার ওড়না নিলেন এবং এটির একাংশ দিয়ে রুটিগুলো পেচিয়ে আমার কাপড়ের তলায় গুঁজে দিলেন এবং ওপর অংশ আমার দেহে জড়িয়ে দিলেন। অতঃপর আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে প্রেরণ করলেন। তিনি (আনাস) বলেন, আমি এগুলো নিয়ে এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে দেখতে পেলাম তিনি মসজিদে বসে আছেন। তাঁর সাথে আরও মানুষ ছিলেন। আমি তাঁদের নিকট গিয়ে দাঁড়ালাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাকে আবূ তালহাহ প্রেরণ করেছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, খাওয়ার ব্যাপারে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাথীদের বললেন, সবাই চলো। আনাস (রাঃ) বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গেলেন। আর আমি তাদের সামনে চলতে লাগলাম। পরিশেষে আমি আবূ তালহাহ (রাঃ)-এর কাছে এসে তাঁকে (ঘটনা) খবর দিলাম তখন আবূ তালহাহ (রাঃ) বললেন, হে উম্মু সুলায়ম (রাঃ)! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো লোকদের নিয়ে আসছেন, অথচ আমাদের কাছে সে পরিমাণ খাদ্য নেই যা দিয়ে তাঁদের আপ্যায়ন করতে পারি। [উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেন, (তুমি উদ্বিগ্ন হয়ো না) আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। আনাস (রাঃ) বলেন, তারপর আবূ তালহাহ (রাঃ) যেয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সাথে দেখা করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাথে এসে (উভয়ে) ঘরে ঢুকলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) –কে লক্ষ্য করে বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! তোমার কাছে যা আছে নিয়ে আসো। তিনি সে রুটিগুলো তা সাথে করে নিয়ে আসলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দান করলেন সেগুলো টুকরা টুকরা করা হলো। আর উম্মু সুলায়ম (রাঃ) চামড়া দ্বারা তৈরী ঘি-এর পাত্রটি চিপে সেটি সালুন হিসেবে দিলেন। আর এর ভিতরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র ইচ্ছানুযায়ী কিছু পড়লেন। অতঃপর বললেন , দশজনকে আসতে বলো। তাদের ডাকা হলে এসে তৃপ্তির সাথে খাবার খেয়ে বেরিয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আরো দশজনকে আসতে বলো। তাদের ডাকা হলে তারা পেট ভরে খেয়ে চলে গেলেন। পুনরায় তিনি বললেন, দশ জনকে ডাক। এভাবে দলের সকলে পেটপুরে খাবার খেলেন। সত্তর কিংবা আশিজন লোক তাদের দলে ছিল। (ই. ফা. ৫১৪৩, ই.সে. ৫১৫৫) আনাস ইব্‌নে মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ তালহাহ (রাঃ) কিছু খাদ্যের ব্যবস্থা করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে দাওয়াত করার জন্য আমাকে প্রেরণ করলেন। আমি তাঁর নিকট গেলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথীদের সাথে ছিলেন। তিনি আমার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। আমি লজ্জার সাথে বললাম, আপনি আবূ তালহার দাওয়াত কবুল করুন। তখন তিনি লোকদের বললেনঃ তোমরা সবাই চলো। আবূ তালহাহ (রাঃ) হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি তো শুধুমাত্র আপনার জন্য সামান্য খাবার ব্যবস্থা করেছি। আনাস (রাঃ) বলেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাবারগুলো ছুঁয়ে দেখলেন এবং এতে বারাকাতের দু’য়া করলেন। অতঃপর বললেন, আমার সাথীদের মধ্য থেকে দশজন করে ঘরে নিয়ে এসো। তিনি তাঁদের বললেন, তোমরা খেতে থাক। তিনি তাঁদের জন্য তাঁর আঙ্গুলের মধ্য থেকে কিছু বের করে দিলেন। তাঁরা সকলে তৃপ্তি সহ খাওয়ার পর বেরিয়ে গেলেন। অতঃপর বললেন, আরো দশজনকে ঘরে নিয়ে এসো। তারাও আহার শেষে বের হয়ে গেলেন। এভাবে দশজন ঘরে প্রবেশ করে এবং দশজন বের হয়ে যায়। এমনকি তাদের মাঝ থেকে একজন বাকী থাকেনি যে ঘরে ঢুকেনি। অতঃপর তিনি পাত্র খুলে দেখলেন, সকলে আহার করার পূর্বে যেমন ছিল এখনও ঠিক তেমনি আছে। [১১] (ই. ফা. ৫১৪৪ ই.সে.৫১৫৬) আনাস ইব্‌নে মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ তালহাহ (রাঃ) আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে প্রেরণ করলেন। রাবী ইব্‌নে নুমায়র (রহঃ) –এর হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেন। তবে হাদীসটির শেষাংশে তিনি বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাকী অংশ জমা করে এতে বারাকাতের প্রার্থনা করলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, ফলে তা (পূর্বে) যেমনি ছিল আবার তেমনি হয়ে গেল এবং তিনি বললেনঃ এবার তোমরা নাও। (ই. ফা. ৫১৪৫, ই. সে. ৫১৫৭) আনাস ইব্‌নে মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একমাত্র নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর জন্য খাবার তৈরী করতে আবূ তালহাহ (রাঃ) উম্মু সুলায়ম (রাঃ)–কে আদেশ করলেন। অতঃপর তিনি আমাকে তাঁর কাছে প্রেরণ করলেন। অতঃপর রাবী শেষ পর্যন্ত হাদীস তি রিওয়ায়াত করেন। এ হাদীসে তিনি বলেছেন, অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাতে হাত-রাখলেন এবং আল্লাহ্‌র নাম স্মরণ করলেন। অতঃপর বললেন, দশজনকে ডাকো। তাদের ডাকলে তারা ঘরে ঢুকলো। তিনি বললেন, তোমরা ‘বিসমিল্লাহ’ (আল্লাহ্‌র নামে) বলে খাওয়া শুরু করো। তারা আহার করলো। এভাবে আশিজনের সাথে এ রকম করলেন। সবশেষে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও ঘরের লোকেরা খাবার খেলেন এবং কিয়দংশ রেখে গেলেন। (ই. ফা. ৫১৪৬, ই. সে. ৫১৫৮) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) –এর সনদ আবূ তালহাহ্ (রাঃ)- এর খাবারের এ বর্ণনাটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে রিওয়ায়াত করেছেন। এর মধ্যে রাবী বলেছেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমনের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আবূ তালহাহ্ (রাঃ) দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর তাঁকে বললেন, হে আল্লহার রাসূল! এতো কিছু মাত্র (অল্প খাবার)। তিনি বললেন, তাই নিয়ে আসো। আল্লাহ অবশ্যই এতে বারাকাত দান করবেন। (ই.ফা ৫১৪৭, ই.সে. ৫১৫৯) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। এতে বর্ণনাকারী বলেছেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাবার খেলেন। ঘরের অধিকারীরা ও খাবার খেলো এবং তাদের প্রতিবেশীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য কিয়দাংশ রাখলেন। (ই.ফা. ৫১৪৮, ই.সে. ৫১৬০) আনাস ইব্‌নে মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ তালহাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে মাসজিদে শয়ন করে ও পিঠ উপর-নিচ করতে দেখলেন। তখন তিনি উম্মু সুলায়ম (রাঃ)-এর সন্নিকটে এসে বসলেন। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে মাসজিদে শয়ন করে পেট ও পিঠ উপর-নীচ করতে লক্ষ্য করেছি। আমার ধারণা হল , তিনি ক্ষুধার্ত। তারপর রাবী শেষ পর্যন্ত হাদীস টি বর্ণনা করেন। এতে তিনি বলেছেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ তালহাহ (রাঃ), উম্মু সুলায়ম (রাঃ) ও আনাস (রাঃ) খাবার খেলেন। সামান্য অবশিষ্ট র‍য়ে গেলে আমরা সেটা প্রতিবেশীরদের কাছে উপটৌকন প্রেরণ করলাম। (ই. ফা. ৫১৪৯, ই . সে. ৫১৬১) আনাস ইব্‌নে মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাছে এসে তাঁকে দেখলাম, তিনি সাহাবীদের সাথে বসে আলোচনায় রত আছেন এবং এবং তিনি তাঁর পেট একটি কাপড়ের টুকরো দিয়ে বেঁধে রেখেছেন। বর্ণনাকারী উসামাহ্‌ বলেন, পাথর সহ ছিল কি-না এতে আমার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। আমি তাঁর কোন এক সাহাবীকে প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পেট কেন বেধে রেখেছেন? তাঁরা বললেন, ক্ষুধার তাড়নায়। তারপর আমি আবূ তালহাহ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। তিনি উম্মু সুলায়ম বিনতে মিলহান (রাঃ) –এর স্বামী ছিলেন। আমি বললাম, আব্বা! আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে প্রত্যক্ষ করলাম, তিনি বস্ত্র দ্বারা তাঁর পেট বেঁধে রেখেছেন। আমি তাঁর এক সাহাবীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বললেন, ক্ষুধার যন্ত্রণায়। অতঃপর আবূ তালহাহ (রাঃ) আমার মায়ের নিকট গিয়ে বললেন, কিছু আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ; আমার কাছে কয়েক টুকরা রুটি আর কিছু খেজুর আছে। যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ঘরে একাকী আসেন, তাহলে আমরা তাঁকে তৃপ্তি সহকারে আহার করাতে পারি। আর যদি ভিন্ন কেউ তাঁর সাথে তাহলে তাঁদের সামান্য হবে। অতঃপর বর্ণনাকারী ঘটনা সহ পূর্ব হাদীস টি বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৫১৫০, ই. সে. ৫১৬২) আনাস ইবনে মালিক (রাঃ)-এর সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আবূ তালহার আহারের ব্যাপারে তাঁদের (উপরোল্লিখিত রাবীদের) হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেন। ( ই. ফা. ৫১৫১, ই. সে. ৫১৬৩)

【21】

ঝোল খাওয়া জায়িয এবং লাউ খাওয়া মুস্তাহাব আর মেযবান অপছন্দ না করলে, মেহমান হয়েও একই দস্তরখানে উপবেশনকারীদের একজন অন্যজনকে এগিয়ে দেয়া জায়িয।

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, এক দর্জি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর জন্য কিছু খাদ্য প্রস্তত করে তাঁকে দাওয়াত করলো। আনাস ইব্‌নে মালিক (রাঃ) বলেন, সে দা’ওয়াতে আমি ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সাথে গেলাম। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সম্মুখে যবের রুটি, ঝোল বিশিষ্ট লাউ ও শুকনো গোশত পেশ করা হলো। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে লক্ষ্য করলাম, তিনি থালার চারপাশে থেকে লাউ সন্ধান করেছেন। সেদিন থেকে আমিও লাউ পছন্দ করতে লাগলাম। (ই. ফা. ৫১৫২, ই. সে. ৫১৬৪) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈক লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে দা’ওয়াত করলো। আমি ও তাঁর সাথে গেলাম। তরকারী আনা হলো যাতে লাউ ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে লাউগুলো খেতে লাগলেন। লাউ তাঁর নিকট ভাল লাগছিল। তিনি বলেন, এ অবস্থা দেখে স্বয়ং আমি না খেয়ে এগুলো তাঁর নিকট বাড়িয়ে দিতে লাগলাম। আনাস (রাঃ) বলেন, তারপর থেকে সব সময় লাউ আমার প্রিয় খাবার হয়ে যায়। (ই. ফা. ৫১৫৩, ই. সে. ৫১৬৫) আনাস ইব্‌নে মালিক (রাঃ) এক দর্জি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে দা’ওয়াত করলো। রাবী অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, সাবিত (রহঃ) বলেছেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, অতঃপর আমার জন্য যদি আহার তৈরী করা হতো এবং এতে আমি লাউ দিতে সমর্থ হলে তাই করা হতো। (ই. ফা. ৫১৫৪, ই. সে. ৫১৬৬)

【22】

খেজুরের বিচি খেজুরের বাহিরে ফেলা মুস্তাহাব এবং মেজবানের জন্য মেহমানের দু’আ করা, সৎ মেহমান থেকে দু’আ চাওয়া ও মেহমানের তাতে সাড়া দেয়া মুস্তাহাব।

আব্দুল্লাহ ইব্‌নে বুস্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার আব্বার কাছে আসলেন। আমরা তাঁর সম্মুখে কিছু খাবার ও ওয়াতবাহ (খেজুর চূর্ণ, পনির ও ঘি যোগে তৈরী এক প্রকার খাদ্য) পেশ করলাম। তিনি তা হতে খেলেন। অতঃপর খেজুর নিয়ে আসলে তিনি তা খেতে লাগলেন। আর বিচিগুলো মধ্যমা ও সাহাদাত অঙ্গুলি একত্র করে দু’আঙ্গুলের মাঝখান দিয়ে ফেলতে লাগলেন। শু’বাহ্‌ বলেন, এটা আমার অনুমান। তবে ইন্‌শা আল্লাহ্‌ এতে দু’আঙ্গুলের মাঝখানে দিয়ে বীজ ফেলার কথাটি আছে। অতঃপর তাঁর নিকটে সুপেয় আনা হলে তিনি তা পান করেন। পরে তিনি তাঁর ডান পাশের লোককে দিলেন। ‘আব্দুল্লাহ ইব্‌নে বুস্‌র (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমার আব্বা তাঁর সাওয়ারীর লাগাম ধরে বললেন, আপনি আমাদের জন্য আল্লাহ্‌র নিকট প্রার্থনা করুন। তখন তিনি বললেন, ইয়া আল্লাহ্‌! তুমি তাঁদের রিযকে বারাকাত দাও, তাঁদের ক্ষমা করো এবং তাঁদের প্রতি দয়া করো। (ই. ফা. ৫১৫৫, ই. সে. ৫১৬৭) শু’বাহ (রহঃ) উপরোল্লেখিত সূত্রে হাদীস টি বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁরা দু’জনেই দু’আঙ্গুলের মধ্য দিয়ে বিচি ফেলে দেয়ার ব্যাপারে শু’বাহর সন্দেহের কথা উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৫১৫৬, ই.সে.৫১৬৮)

【23】

শশা ও তাজা খেজুরের সংমিশ্রণে আহার করা।

আব্দুল্লাহ ইব্‌নে জা’ফর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে সতেজ খেজুরের সঙ্গে শশা খেতে লক্ষ্য করেছি। (ই. ফা. ৫১৫৭, ই. সে. ৫১৬৯)

【24】

আহারকারীর বিনয়-নম্রতা মুস্তাহাব এবং তার উপবেশনের নিয়ম-কানুন।

আনাস ইব্‌নে মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জানুদ্বয় উচ্চে তুলে উপরি বৈঠকে খেজুর খেতে লক্ষ্য করেছি। (ই. ফা. ৫১৫৮, ই.সে. ৫১৭০) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট শুকনো খেজুর আনা হলে তিনি তা ভাগ করতে লাগলেন এবং স্বয়ং জানুদ্বয় তুলে উপরি বৈঠক অবস্থায় জলদি এগুলো থেকে আহার করছিলেন। যুহায়র (রহঃ)-এর বর্ণনায় (আরবী) শব্দের স্থান (আরবী) শব্দ বর্ণিত হয়েছে। (দু’টি শব্দের একই অর্থ – দ্রুত)। (ই.ফা. ৫১৫৯, ৫১৭১)

【25】

জামা’আতে আহারকারীর জন্য এক লোকমায় দু’টি করে খেজুর ইত্যাদি খাওয়া নিষেধ, তবে যদি সঙ্গীরা অনুমতি দেয় (তবে জায়িয)।

জাবালাহ্‌ ইব্‌নে সুহায়ম (রহঃ) তিনি বলেন, ইব্‌নে যুবায়র (রাঃ) আমাদেরকে খাদ্য হিসেবে খেজুর দিতেন। তৎকালীন সময় লোকেরা অনাহারে পতিত হয়েছিল। আমরা তাই খেয়ে থাকতাম। একবার আমরা খাবার খাচ্ছিলাম। তখন ইব্‌নে ‘উমার (রাঃ) আমাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, তোমরা একাধিক খেজুর এক সঙ্গে খেও না। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সাথে একাধিক খেজুর খেতে বারণ করেছেন। তবে যদি কেউ তার (সাথী) ভাইয়ের অনুমতি নিয়ে নেয় (তাহলে খেতে পারে)। শু’বাহ (রহঃ) বলেন, আমার ধারণা হয়, অনুমতি নেয়ার কথাটা ইব্‌নে ‘উমার (রাঃ)-এরই কথা। (ই. ফা. ৫১৬০, ই.সে. ৫১৭২) উবাইদুল্লাহ ইব্‌নু মু’য়ায মুহাম্মাদ ইব্‌নু বাশশার শু’বাহ (রহঃ) উপরোল্লেখিত সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁদের হাদীসে (অনুমতি সম্পর্কে) শু’বাহ (রহঃ) –এর কথা এবং জাবালাহ (রহঃ) এর এ কথা নেই যে, ‘তখন মানুষ অনাহারে পতিত হয়েছিল’। (ই. ফা. ৫১৬১, ৫১৭৩) জাবালাহ ইব্‌নে সুহায়ম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) –কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথীদের অনুমতি ব্যতীত কোন লোকের এক সাথে দু’টি করে খেজুর ভক্ষন করা হতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫১৬২, ই.সে. ৫১৭৪)

【26】

খেজুর ইত্যাদি খাদ্য পরিবারের লোকজনের জন্য সঞ্চিত রাখা।

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে পরিবারে লোকদের নিকট খেজুর আছে, তারা অনাহার থাকে না। ( ই. ফা. ৫১৬৩, ই.সে. ৫১৭৫) ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে ‘আয়িশাহ! যে গৃহে খেজুর নেই সে গৃহের মানুষজন ক্ষুধার্ত। এ কথাটি তিনি দু’বার বা তিনবার বলেছিলেন। (ই.ফা. ৫১৬৪, ই.সে. ৫১৭৬)

【27】

মাদীনার খেজুরের মর্যাদা।

সা’দ ইব্‌নু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে, লোক মাদীনার উভয় সীমান্তের মধ্যে উৎপাদিত খেজুরের সাতটি করে প্রতি সকালে আহার করে সন্ধ্যা অবধি কোন বিষ তাঁর অনিষ্ট করতে পারে না। (ই.ফা. ৫১৬৫, ই. সে. ৫১৭৭) সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে সাতটি আজওয়া (মদীনার উৎপন্ন এক জাতীয় উৎকৃষ্ট মানের খেজুর) আহার করে, সেদিন তাঁকে কোন বিষ বা যাদু অনিষ্ট করতে পারে না। (ই.ফা. ৫১৬৬, ই.সে.৫১৭৮) ইবনে আবূ ‘উমার মারওয়ান আল-ফাযারী (রহঃ) ভিন্ন সূত্রে ইসহাক্ ইব্‌নে ইবরাহীম (রহঃ) আবূ বদর শুজা’ ইব্‌নে ওয়ালীদ (রহঃ) হতে, তাঁরা দু’জনেই হাশিম (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অবিকল বর্ণনা করেছেন। তবে তারা উভয়ে ‘আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে বলতে শুনেছি’ উক্তিটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৫১৬৭, ই.সে. ৫১৭৯) ‘আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাদীনার উঁচু ভূমির ‘আজওয়াহ্‌ খেজুরে শিফা (রোগমুক্তি) রয়েছে। কিংবা তিনি বলেছেন, এগুলো প্রতি সকালে খাবারে বিষমুক্ত ঔষধের কাজ করে। (ই.ফা.৫১৬৮, ই.সে. ৫১৮০)

【28】

কামআহ্ [১] -এর ফাযীলাত ও এর মাধ্যমে চোখের চিকিৎসা

সা‘ঈদ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আম্‌র ইবনু নুফায়ল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, কামআহ্ মান্না জাতীয়। আর এর নিগৃহীত রস চোখের জন্য উপশম। (ই.ফা. ৫১৬৯, ই.সে. ৫১৮১) সা‘ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, কামআহ্ মান্না জাতীয় এবং এর রস চোখের জন্য উপশম। (ই.ফা. ৫১৭০, ই.সে. ৫১৮২) সা‘ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ)-এর সনদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অবিকল বর্ণিত রয়েছে। শু‘বাহ্ (রহঃ) বলেন, হাকাম (রহঃ) যখন আমার নিকট হাদীসটি রিওয়ায়াত করলেন, তখন আমি ‘আবদুল মালিক (রহঃ)-এর হাদীসটিকে আর “গারীব” (অর্থাৎ- যে হাদীসের সনদে শুধুমাত্র কোন একজন বর্ণনাকারী থাকে) মনে করলাম না। (ই.ফা. ৫১৭১, ই.সে. ৫১৮৩) সা‘ঈদ ইবনু যায়দ ইবনু ‘আম্‌র ইবনু নুফায়ল (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কামআহ্ মান্না জাতীয় (উদ্ভিদ) যা বানী ইস্রাঈলের উপর আল্লাহ নাযিল করেছিলেন এবং এটা হতে নিগৃহীত রস চোখের উপশম। (ই.ফা. ৫১৭২, ই.সে. ৫১৮৪) সা‘ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ)-এর সনদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, কামআহ্ মান্না জাতীয় (উদ্ভিদ) যা মহান আল্লাহ মূসা (‘আঃ)-এর উপর নাযিল করেছিলেন এবং এর রস চোখের জন্য নিরাময়। (ই.ফা. ৫১৭৩, ই.সে. ৫১৮৫) সা‘ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কাম্আহ্ এক প্রকারের মান্না জাতীয় (উদ্ভিদ) যা মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করেছিলেন বানী ইস্রাঈলের উপর। আর এটির রস চোখের জন্য ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। (ই.ফা. ৫১৭৪, ই.সে. ৫১৮৬) সা‘ঈদ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কাম্আহ্ মান্না জাতীয় এক প্রকার উদ্ভিদ। এর রস চোখের জন্য এক প্রকার ঔষধ। (ই.ফা. ৫১৭৫, ই.সে. ৫১৮৭)

【29】

কালো কাবাস (পিলু ফল)-এর ফাযীলাত

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ‘মার্রুয যাহ্রান’ নামক জায়গায় কাবাস (পিলু ফল) সংগ্রহ করেছিলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তাত্থেকে শুধু কালোগুলো সংগ্রহ। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা সে সময় বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি সম্ভবত বকরী চরিয়েছেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ। সকল নবীই বকরী চরিয়েছেন (বর্ণনাকারী বলেন) কিংবা তিনি শুধু এ ধরনের কোন কথা বলেছেন। (ই.ফা. ৫১৭৬, ই.সে. ৫১৮৮)

【30】

সিরকার ফাযীলাত এবং তা সালুন হিসেবে ব্যবহার করা প্রসঙ্গে

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সিরকা তো খুব মজাদার সালুন। (ই.ফা. ৫১৭৭, ই.সে. ৫১৮৯) সুলাইমান ইবনু বিলাল (রহঃ) উল্লেখিত সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত রয়েছে। তবে তিনি (... আরবি) বলেছেন (...আরবি) বলে শব্দের মাঝে কোন সংশয় প্রকাশ করেননি। (ই.ফা. ৫১৭৮, ই.সে. ৫১৯০) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর গৃহের লোকদের নিকট সালুন চাইলে তাঁরা বললো, সিরকা ব্যতীত আমাদের নিকট ভিন্ন কিছু নেই। সে সময় তিনি তাই নিয়ে আসতে বললেন এবং খাওয়ার সময় বললেন, সিরকা কত ভাল তরকারি, সিরকা কত চমৎকার তরকারি! (ই.ফা. ৫১৭৯, ই.সে. ৫১৯১) নাফি’ তিনি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার হাত ধরে স্বীয় ঘরে গেলেন। (খাদেম) এক খণ্ড রুটি তাঁর সম্মুখে পেশ করলে তিনি বললেনঃ কোন তরকারি কি নেই? তারা বলল, না। তবে অল্প কিছু সিরকা রয়েছে। তিনি বললেন, সিরকা তো ভাল তরকারি। জাবির (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্‌র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ কথা শুনার পর আমি সিরকা পছন্দ করতে থাকি। তাল্হাহ্ (রহঃ) বলেন, আমিও জাবির (রাঃ)-এর কাছে এ কথা শুনার পর হতে সিরকা পছন্দ করতে লাগলাম। (ই.ফা. ৫১৮০, ই.সে. ৫১৯২) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদা) তার হাত ধরে স্বীয় ঘরে গেলেন। অতঃপর রাবী সিরকা কত উত্তম তরকারি- পর্যন্ত ইবনু ‘উলাইয়্যাহ্ (রহঃ)-এর হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি এর পরবর্তী অংশ উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৫১৮১, ই.সে. ৫১৯৩) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার গৃহে বসা ছিলাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে ইঙ্গিত করলে আমি তাঁর নিকট উঠে গেলাম। তিনি আমার হাত ধরলেন। অতঃপর আমরা চললাম। পরিশেষে তিনি তাঁর কোন এক সহধর্মিণীর ঘরে এসে ঢুকলেন। অতঃপর তিনি আমাকে প্রবেশাধিকার দিলে আমি পর্দার ভিতরে ঢুকলাম। তিনি বললেনঃ কিছু খাবার আছে কি? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ। পরে তিন টুকরো রুটি আনা হলো এবং তা দস্তরখানে রাখা হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি টুকরো নিয়ে তাঁর সম্মুখে রাখলেন। অপর একটি নিয়ে আমার সম্মুখে রাখলেন। অতঃপর তৃতীয় টুকরোটি দু’খণ্ড করলেন এবং এটির অর্ধেক তাঁর সামনে অবশিষ্ট অর্ধেক আমার সামনে রাখলেন। এরপর বললেনঃ কোন সালুন আছে কি? তাঁরা বললেনঃ সামান্য পরিমাণ সিরকা আছে। তিনি বললেন, তাই নিয়ে আসো। সেটা তো খুব ভালো তরকারি। (ই.ফা. ৫১৮২, ই.সে. ৫১৯৪)

【31】

রসুন খাওয়া বৈধ এবং যে লোক বড়দের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করে এটা তার জন্য খাওয়া পরিহার করা কর্তব্য, অন্যান্য দুর্গন্ধযুক্ত বস্তুর বিধানও তাই

আবূ আইয়ূব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কোন খাদ্য নিয়ে আসলে তিনি সামান্য খেতেন আর বাকীটুকু আমার নিকট প্রেরণ করতেন। একদা তিনি এমন কিছু খাবার প্রেরণ করলেন যা হতে তিনি কিছুই আহার করেনি। কেননা তাতে রসুন ছিল। আমি তার কাছে জানতে চাইলাম, এটা কি নিষিদ্ধ? তিনি বললেন, না। তবে গন্ধের কারণে ওটা আমার কাছে অপছন্দনীয়। তিনি বললেন, তাহলে আমিও তা পছন্দ করবো না, যা আপনি পছন্দ করেননি। (ই.ফা. ৫১৮৩, ই.সে. ৫১৯৫) শু‘বাহ্ (রহঃ) উল্লেখিত সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৫১৮৪, ই.সে. ৫১৯৬) আবূ আইয়ূব (রাঃ) (হিজরাতের সময়) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর গৃহে মেহমান হলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবস্থান করতেন নীচ তলায় এবং আবূ আইয়ূব (রাঃ) অবস্থান করতেন উপর তলায়। একদা রাত্রে আবূ আইয়ূব (রাঃ) জাগ্রত হয়ে বললেন, আমরা তো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথার উপর চলাফেরা করি। তখন তিনি সে স্থান হতে দূরে গিয়ে এক কোণে রাত্রি যাপন করলেন। অতঃপর (সকালে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তিনি ব্যাপারটি জানালে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, নীচ তলায়েই অনেক সুবিধা। তখন তিনি বললেন, আপনি নীচে থাকবেন এমন ছাদে আমি উঠবো না। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপর তলায় এবং আবূ আইয়ূব (রাঃ) নীচ তলায় জায়গা পরিবর্তন করলেন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য খাদ্য প্রস্তুত করতেন যখন (অবশিষ্ট) খাদ্য ফেরত আনা হতো, তখন তিনি জানতে চাইতেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন্ জায়গায় তাঁর আঙ্গুল স্পর্শ করেছেন। অতঃপর তাঁর আঙ্গুলের স্থান অনুসরণ করে সেখান থেকে খেতেন। একবার তিনি তাঁর জন্য খানা প্রস্তুত করলেন, যার মধ্যে রসুন ছিল। তাঁর নিকট ফেরত নিয়ে আসলে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আঙ্গুল স্পর্শের স্থান সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। তাঁকে বলা হলো, তিনি এগুলো খাননি। তিনি হতভম্ব হয়ে গেলেন এবং তাঁর কাছে গেলেন। তিনি বললেন, তাহলে আপনি যা পছন্দ করেন না, আমিও তা পছন্দ করি না। তিনি বলেন, নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সে সময় ওয়াহী আসত। (ই.ফা. ৫১৮৫, ই.সে. ৫১৯৭)

【32】

মেহমানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করার ফাযীলাত

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, আমি চরম অনাহারে ভুগছি। তিনি তাঁর কোন এক সহধর্মিণীর নিকট লোক প্রেরণ করলে তিনি বললেন, যে স্রষ্টা আপনাকে সঠিক দীনসহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম! আমার নিকট পানি ব্যতীত আর কিছু নেই। তিনি অপর এক স্ত্রীর নিকট লোক প্রেরণ করলে তিনিও অনুরূপ কথা বললেন। এভাবে তাঁরা সবাই একই কথা বললেন যে, সে সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, আমার কাছে পানি ব্যতীত আর কিছু নেই। তখন তিনি বললেন, আজ রাত্রে লোকটির কে অতিথিপরায়ণ হবে? আল্লাহ তার উপর দয়া করুন! তখন এক আন্সারী লোক উঠে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি। অতঃপর লোকটিকে নিয়ে আন্সারী নিজ বাড়িতে গেলেন এবং তাঁর সহধর্মিণীকে বললেন, তোমার নিকট কিছু আছে কি? সে বলল না। তবে সন্তানদের জন্য অল্প কিছু খাবার আছে। তিনি বললেন, তুমি তাদের কিছু একটা দিয়ে ব্যস্ত রাখো। আর যখন অতিথি ঘরে ঢুকবে, তখন তুমি আলোটা নিভিয়ে দেবে। আর তাকে বুঝাবে যে, আমরাও খাবার খাচ্ছি। সে (মেহমান) যখন খাওয়া আরম্ভ করবে তখন তুমি আলোর পাশে যেয়ে সেটা নিভিয়ে দেবে। রাবী বলেন, অতঃপর তারা বসে থাকলেন এবং অতিথি খেতে শুরু করলো। সকালে তিনি (আনসারী) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আসলে, তিনি বললেনঃআজ রাত্রে অতিথির সঙ্গে তোমাদের উভয়ের ব্যবহারে আল্লাহ খুশী হয়েছেন। (ই.ফা. ৫১৮৬, ই.সে. ৫১৯৮) আবূ হুরাইরাহ্ (রহঃ) এক আনসারী লোকের বাড়িতে এক অতিথি রাত কাটালেন। তাঁর কাছে তাঁর ও সন্তানদের জন্য অল্প কিছু খাদ্য ব্যতীত আর কিছু ছিল না। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন, বাচ্চাদের ঘুমিয়ে দাও, আলোটা বন্ধ করে দাও এবং তোমার নিকট যা কিছু আছে তাই অতিথির জন্য পেশ করো। রাবী বলেন, এরপর এ আয়াতটি নাযিল হয় : “তারা তাদের উপর অপরকে প্রাধান্য দেয়, যদিও তারা অনাহারে থাকে”- (সূরা আল হাশ্র ৫৯ : ৯) (ই.ফা. ৫১৮৭, ই.সে. ৫১৯৯) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মেহমান হয়ে এক লোক তাঁর নিকট এলেন। কিন্তু তাঁর কাছে এমন কিছু ছিল না যা দিয়ে তিনি সে ব্যক্তির আপ্যায়ন করবেন। তখন তিনি বললেন, এর মেহমানদারী করার মতো কেউ কি আছে? আল্লাহ তার উপর দয়া করুক! এ সময় আবূ তাল্হাহ্ নামক এক আনসারী লোক দাঁড়ালেন এবং লোকটিকে আপন গৃহে নিয়ে গেলেন। অতঃপর রাবী শেষ পর্যন্ত হাদীসটি জারীর (রহঃ)-এর হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। আর তিনি ওয়াকী’ (রহঃ)-এর মতো আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কথাও বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫১৮৮, ই.সে. ৫২০০) মিক্‌দাদ (রাঃ) তিনি বলেন, প্রচুর খাদ্য সংকটে আমার ও আমার দু’সাথীর দৃষ্টিশক্তি ও শ্রুতিশক্তি কমে যায়। অতঃপর আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের নিকটে নিজেদের উত্থাপন করতে লাগলাম। কিন্তু তাঁদের কেউ আমাদের কথা শুনলেন না। সবশেষে আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করলে তিনি আমাদের সাথে নিয়ে তার পরিবারের নিকটে গেলেন। সেখানে তিনটি বকরী ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা দুধ দোহন করবে। এ দুধ আমরা বণ্টন করে পান করবো। তিনি বলেন, এরপর থেকে আমরা দুধ দোহন করতাম। আমাদের সবাই যার যার অংশ পান করতো। আর আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য তাঁর অংশ উঠিয়ে রাখতাম। মিকদাদ (রাঃ) বলেন, তিনি রাত্রে এসে এমনভাবে সালাম দিতেন যাতে নিদ্রারত লোক উঠে না যায় এবং জাগ্রত লোক শুনতে পায়। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি মাসজিদে এসে সলাত আদায় করতেন। প্রত্যাবর্তন করে দুধ পান করতেন। একদা রাতে আমার নিকটে শাইতান আগমন করলো। আমি তো আমার অংশ পান করে ফেলেছিলাম। সে বলল, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারীদের নিকটে গেলে তারা তাঁকে উপঢৌকন দিবে এবং তাদের নিকটে তাঁর এ অল্প দুধের প্রয়োজনীয়তাও ফুরিয়ে যাবে। অতঃপর আমি এসে সেটুকুও পান করে ফেললাম। দুধ যখন উত্তমভাবে আমার পেটে ঢুকে গেলে আমি বুঝলাম, এ দুধ বের করার আর কোন উপায় নেই তখন শইতান আমার থেকে দূরে সরে গিয়ে বলল, তোমার ধ্বংস হোক, তুমি একি করলে! তুমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুধ পান করে ফেলেছ? তিনি জাগ্রত হয়ে যখন তা পাবেন না, তখন তোমার উপর বদ-দু’আ করবেন এতে তুমি সর্বনাশ হয়ে যাবে এবং তোমার ইহকাল ও পরকাল নিঃশেষ হয়ে যাবে। আমার শরীরে একটা চাদর ছিল। আমি যদি তা আমার পাদ্বয়ের উপর রাখি তাহলে আমার মাথা বের হয়ে পড়ে, আর যদি আমি তা আমার মাথার উপর রাখি তাহলে আমার পদদ্বয় বেরিয়ে পড়ে। কিছুতেই আমার ঘুম আসছিল না। আমার সাথীদ্বয় তো নিদ্রাচ্ছন্ন ছিল। তারা তো আমার মতো কাজ করেনি। তিনি বলেন অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করে যেভাবে সালাম করতেন সেভাবেই সালাম করলেন। অতঃপর তিনি মাসজিদে এসে সলাত আদায় করলেন। অতঃপর দুধের নিকটে এসে ঢাকনা খুলে সেখানে কিছুই পেলেন না। এরপর তিনি নিজ মাথা আকাশের দিকে তুললেন। আমি তখন (মনে মনে) বললাম, এখনই হয়তো আমার উপর তিনি বদ্দু’আ করবেন, আর আমি নিঃশেষ হয়ে যাবো। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! যে লোক আমার খাবারের ব্যবস্থা করে তুমি তার খাদ্যের ব্যবস্থা কর। আর যে আমাকে পান করায় তাকে তুমি পান করাও। মিকদাদ (রাঃ) বলেন, তখন আমি চাদরটি নিয়ে গায়ে বাঁধলাম এবং একটি ছুরি নিলাম, অতঃপর (এ ভেবে) বকরীগুলোর কাছে গেলাম যে, এদের মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশি মোটাতাজা আমি সেটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য যাবাহ করবো। সেখানে গিয়ে দেখলাম, সেটি দুধে পরিপূর্ণ এবং অন্যান্য সব বকরীও দুধে স্বয়ংস্পূর্ণ। অতঃপর আমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের একটি বাসন নিয়ে এলাম যার মধ্যে তাঁরা দুধ দোহাতেন না। তিনি [মিকদাদ (রাঃ)] বলেন, আমি তার মধ্যেই দুধ দোহন করলাম, এমনকি বাসনের উপরের অংশ ফেনা ফেসে উঠলো। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আগমন করলাম। তিনি বললেন, তোমরা কি রাত্রের দুধ পান করেছো? তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি পান করুন। তিনি পান করে আমাকে দিলেন। আমি যখন বুঝতে পারলাম যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিতৃপ্ত হয়ে গেছেন এবং আমি তাঁর নেক দু’আ পেয়ে গেছি, তখন আমি খুশীতে হাসতে হাসতে মাটিতে নুয়ে পড়লে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে মিকদাদ! এটা তোমার এক মন্দকাজ? তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার এ ঘটনা ঘটে গেছে। কিংবা তিনি বলেছেন, আমার দ্বারা এরূপ কাজ হয়ে গেছে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা একমাত্র আল্লাহ্‌র মেহেরবানী! তুমি কেন আমাকে জানালে না? আমরা আমাদের সঙ্গীদ্বয়কে জাগাতাম, তাহলে তারাও এর অংশ পেত। তিনি বলেন, আমি তখন বললাম, যে মহান স্রষ্টা আপনাকে সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর কসম! আপনি যখন পেয়েছেন এবং আমি যখন আপনার সঙ্গে ভাগ পেয়েছি, তখন ভিন্ন কোন ব্যক্তি পাওয়া না পাওয়ার আমি তোয়াক্কা করি না। (ই.ফা. ৫১৮৯, ই.সে. ৫২০১) সুলাইমান ইবনু মুগীরাহ্ (রহঃ) উল্লেখিত সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত রয়েছে। (ই.ফা. ৫১৯০, ই.সে. ৫২০২) ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা একশ’ ত্রিশ জন ব্যক্তি (এক সফরে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের মাঝে কারো নিকট খাবার আছে কি? দেখা গেল, এক লোকের নিকটে এক সা’ বা সমপরিমাণ খাদ্য রয়েছে। তা (মিশিয়ে) খামীর করা হলো। অতঃপর এলামেলো চুলে দীর্ঘাঙ্গ এক মুশ্রিক লোক কিছু ছাগল হাঁকিয়ে নিয়ে আসলো। নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এগুলো বিক্রি করে দিবে না উপঢৌকন হিসেবে দিবে? কিংবা উপঢৌকন শব্দের স্থলে তিনি দান করবে বলেছিলেন। লোকটি বলল, না; আমি বরং বিক্রি করবো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট থেকে একটি বকরী ক্রয় করলেন। বকরীটা যাবাহ করা হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কলিজা ভূনা করতে নির্দেশ দিলেন। বর্ণনাকারী ‘আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! একশ’ ত্রিশজনের মাঝে একজনও এমন ছিলনা যাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এক টুকরো কলিজা দেননি। যারা সমবেত ছিল তাদেরকে তো তখনই দিয়েছেন। আর যারা উপস্থিত ছিল না তাদের জন্য পৃথকভাবে তুলে রেখেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, গোশ্ত দুটি বাসনে বণ্টন করে রাখলেন। আমরা সবাই তৃপ্তি সহকারে খেলাম। তরপরও বাসন দু’টিতে গোশত অতিরিক্ত থাকলো। আমি তা উটের উপর বহন করে নিয়ে গেলাম। কিংবা তিনি (রাবী) যেভাবে রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫১৯১, ই.সে. ৫২০৩) ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) আসহাবে সুফ্ফার মানুষজন দরিদ্র ছিলেন। তাই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার বললেনঃ যার কাছে দু’জনের খাদ্য আছে সে যেন তৃতীয় এক জনকে নিয়ে যায়। আর যার নিকটে চার জনের খাদ্য রয়েছে, সে যেন পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ ব্যক্তিকে নিয়ে যায়। কিংবা রাবী যেভাবে বর্ণনা করেছেন। রাবী বলেন, আবূ বকর (রাঃ) তিনজনকে সাথে নিয়ে আগমন করলেন। আর আল্লাহ্‌র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দশজনকে নিয়ে রওনা হলেন। আমার পরিবারে আমরা ছিলাম তিনজন আমি, আমার আব্বা ও আমার আম্মা। রাবী বলেন, আমি জানি না, তিনি বলেছেন কি-না যে, আমার সহধর্মিণী আমাদের ও আবূ বকরের গৃহে শারীক খাদিম। বর্ণনাকারী বলেন, আবূ বকর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাড়িতে রাতের খাবার খেলেন। অতঃপর তিনি প্রতীক্ষা করলেন। পরিশেষে ‘ইশার সলাত আদায় করা হলো। সলাত শেষে ফিরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিদ্রাচ্ছন্ন হওয়া পর্যন্ত তিনি প্রতীক্ষা করলেন। অতঃপর আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় রাত্রির কিছু অংশ পার হতে তিনি (বাড়িতে) প্রত্যাবর্তন করলেন। তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, অতিথি রেখে দেরী করলেন কেন? তিনি বললেন, কেন? তুমি কি তাঁদের রাত্রের খাবার খাওয়াওনি? তাঁর সহধর্মিণী বললেন, আপনি না ফেরা পর্যন্ত তাঁরা খাবার খেতে নারাজ। কয়েক বারই খাবার দেয়া হয়েছে কিন্তু মেহমানরা তাঁদের কথা হতে ফিরে আসেনি। ‘আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, আমি যেয়ে পালিয়ে রইলাম। তিনি বললেন, হে নির্বোধ! অতঃপর তিনি আমাকে বকাঝকা করলেন। আর (মেহমানদের) বললেন, ভাল হলো না। আপনারা খাবার গ্রহণ করুন। তিনি আরও বললেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি এ খাবার গ্রহণ করবো না। ‘আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমরা যে লোকমাই মুখে দিচ্ছিলাম তার নীচে এর থেকে বহু পরিমাণে বৃদ্ধি পেলে আবূ বকর (রাঃ) খাবারের প্রতি খেয়াল করে দেখলেন, তা যেমন ছিল তেমনি আছে বা তার চেয়েও বেশী হয়েছে। তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, হে উখ্ত (বোন) বানী ফিরাস! একি অবস্থা, তিনি বললেন, কিছু না। আমার চোখের প্রশান্তি এগুলো যা আগে ছিল তার থেকে তিন গুণ বর্ধিত হয়েছে। ‘আবদুর রহমান বলেন, অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) কিছু খেয়ে বললেন, ওটা অর্থাৎ- শপথটা ছিল শাইতানের নিকট থেকে, তারপর আরও এক লোকমা খেলেন। অতঃপর সেগুলো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে চললেন। আমিও তার নিকটে সকাল পর্যন্ত ছিলাম। তিনি বলেন, আমাদের এবং কোন এক গোত্রের মধ্যে একটি অঙ্গীকারনামা ছিল। যার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আমরা (বারটি দল করে) বার জন ব্যক্তি নিযুক্ত করলাম। প্রত্যেক ব্যক্তির সঙ্গে অনেক ব্যক্তি ছিল। আল্লাহই ভাল জানেন, প্রত্যেক লোকের সাথে কতজন ব্যক্তি ছিল। তাদের প্রত্যেকের কাছে এ খাদ্য প্রেরণ করা হলো এবং তারা সকলেই সে খাবার খেলেন। কিংবা রাবী যেভাবে বর্ননা করেছেন। (ই.ফা. ৫১৯২, ই.সে. ৫২০৪) ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর (রাঃ) তিনি বলেন, একবার কিছু অতিথি আমাদের গৃহে আসলেন। (বর্ণনাকারী বলেন)। আমার আব্বা রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে কথোপকথন করতেন। তাই তিনি যাওয়ার সময় বললেন, হে ‘আবদুর রহমান! মেহমাদারীর সব কাজ সুন্দরভাবে শেষ করবে। ‘আবদুর রহমান বলেন, রাত হলে আমি অতিথিদের আহার নিয়ে আসলাম। কিন্তু তারা খেতে সম্মত হলেন না। তারা বললেন, যতক্ষণ গৃহের মালিক এসে আমাদের সঙ্গে না খাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা খাবো না। আমি তাঁদের বললাম, তিনি অত্যন্ত ক্ষিপ্ত লোক। আপনারা যদি খাওয়া-দাওয়া না করেন তাহলে আমার শঙ্কা হচ্ছে তার পক্ষ হতে আমাকে হয়তো বকাঝকা শুনতে হবে। তিনি বলেন, তাঁরা কেউ সম্মত হলোই না। আমার আব্বা এসে শুরুতেই তাঁদের সংবাদ নিলেন। তিনি বললেন, তোমরা কি অতিথিপরায়ণের কাজ শেষ করেছো? তাঁরা বললো, না। আল্লাহ্‌র শপথ! আমরা সমাপ্ত করিনি। তিনি বললেন, আমি কি ‘আবদুর রহমানকে আদেশ দিয়ে যাইনি? ‘আবদুর রহমান বলেন, আমি তাঁর চোখের পলক হতে আড়ালে গিয়েছিলাম। তিনি বললেন, হে ‘আবদুর রহমান! আমি আরও সরে গেলাম। তিনি আবার বললেন, ওরে নির্বোধ! আমি শপথ করে তোমাকে বলছি যদি তুমি আমার শব্দ শুনে থাকো তাহলে উপস্থিত হও। তিনি বলেন, তখন আমি উপস্থিত হয়ে বললাম, আল্লাহ্‌র শপথ! আমার কোন দোষ নেই। আপনার অতিথিদের প্রশ্ন করে দেখুন। আমি তাঁদের আহার নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু আপনি না ফেরা পর্যন্ত তাঁরা খেতে রাযী হলেন না। তখন তিনি (অতিথিদের) বললেন, আপনাদের কি হয়েছে? আপনারা কেন আমাদের পরিবেশন কবূল করেননি। ‘আবদুর রহমান বলেন, তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আজ রাতে খাবো না। অতিথিরাও শপথ করে বলল, যতক্ষণ আপনি না খাবেন ততক্ষণ আমরাও খাব না। তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আজকের রাত্রের মতো এতো মন্দ রাত আমি আর দেখিনি। আফসোস, তোমরা কেন আমাদের আপ্যায়ন কবূল করবে না? তিনি বললেন, প্রথমে যা হয়েছে তা শাইতানের তরফ হতে হয়েছে। তোমরা খাবার নিয়ে আসো। রাবী বলেন, অতঃপর খাবার নিয়ে আসলে তিনি ‘বিসমিল্লাহ্’ পড়ে খাওয়া শুরু করলেন। তাঁরাও খাওয়া শুরু করলো। ‘আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, পরদিন সকালে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে যেয়ে বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! তারা তো শপথ পূর্ণ করেছে। কিন্তু আমি শপথ ভেঙ্গে ফেলেছি। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বরং তুমি সবচেয়ে বেশী সৎকর্মশীল এবং উত্তম ব্যক্তি। ‘আবদুর রহমান বলেন, কাফ্ফারার কথা আমার নিকটে পৌঁছেনি। (ই.ফা. ৫১৯৩, ই.সে. ৫২০৫)

【33】

সামান্য খাদ্য সমানভাবে বণ্টনের ফাযীলাত এবং দু’জনের খাবার তিন জনের জন্য যথেষ্ট হওযা প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু’জনের খাদ্য তিনজনের জন্য এবং তিনজনের খাদ্য চারজনের জন্য যথেষ্ট। (ই.ফা. ৫১৯৪, ই.সে. ৫২০৬) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, একজনের খাদ্য দু’জনের জন্য পর্যাপ্ত এবং দু’জনের খাদ্য চারজনের জন্য যথেষ্ট, এমনিভাবে চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট। ইসহাক্ (রহঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে, “রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিনি “আমি শুনেছি” কথাটি বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৫১৯৫, ই.সে. ৫২০৭) জাবির (রাঃ)-এর সনদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে ইবনু জুরায়জ (রহঃ) হাদীসের হুবহু বর্ণিত আছে। (ই.ফা. ৫১৯৬, ই.সে. ৫২০৮) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একজনের খাদ্য দু’জনের জন্য পর্যাপ্ত এবং দু’জনের খাদ্য চারজনের জন্য যথেষ্ট। (ই.ফা. ৫১৯৭, ই.সে. ৫২০৯) জাবির (রাঃ)-এর সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ এক লোকের খাবার দু’লোকের জন্য যথেষ্ট। দু’লোকের খাদ্য চার লোকের জন্য যথেষ্ট। আর চারজনের খাদ্য আটজনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট। (ই.ফা.৫১৯৮, ই.সে. ৫২১০)

【34】

ঈমানদার লোক এক আঁতে খায় আর কাফির লোক সাত আঁতে খায়

ইবনু ‘উমার (রাঃ) সনদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, কাফির লোক সাত আঁতে খায় আর মু’মিন খায় এক আঁতে। [১৩] (ই.ফা. ৫১৯৯, ই.সে. ৫২১১) ইবনু ‘উমার (রাঃ) সনদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫২০০, ই.সে. ৫২১২) নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) এক মিসকীন কে প্রত্যক্ষ করলেন, সে শুধু সম্মুখে হাত মারছে এবং এভাবে সে প্রচুর খাবার শেষ করে ফেলেছে। তিনি (নাফি’) বলেন, তখন ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, তুমি এ জাতীয় লোককে আর কখনো আমার নিকটে নিয়ে আসবেনা। কেননা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, কাফির লোক সাত আঁতে ভক্ষণ করে। (ই.ফা. ৫২০১, ই.সে. ৫২১৩) জাবির ও ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঈমানদার লোক এক আঁতে ভক্ষণ করে আর কাফির লোক সাত আঁতে ভক্ষণ করে। (ই.ফা. ৫২০২, ই.সে. ৫২১৪) জাবির (রাঃ) এর সনদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হুবহু রিওয়ায়াত আছে। এখানে রাবী ‘উমার (রাঃ)-এর কথা বর্ণনা করেন নি। (ই.ফা. ৫২০৩, ই.সে. ৫২১৫) আবূ মূসা (রাঃ)-এর সনদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ মু’মিন একআঁতে খায় এবং কাফির সাত আঁতে খায়। (ই.ফা. ৫২০৪, ই.সে. ৫২১৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সনদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তাঁদের সবার হাদীসের হুবহু বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৫২০৫, ই.সে. ৫২১৭) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) জনৈক কাফির লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অতিথি হলো। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বকরীর দুধ দোহন করতে নির্দেশ দিলেন। দুধ দোহন শেষ হলে ব্যক্তিটি সে দুধটুকু পান করলো। এরপর অন্য একটি বকরী দোহন করা হলে সে তাও পান করলো। পুনরায় আরেকটি দোহন করা হলে সে টার দুধও সে পান করলো। এভাবে সে সাতটি বকরীর দুধপান করে ফেলল। পরবর্তী দিন সকালে সেই ইসলাম গ্রহণ করলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুনরায় তার জন্য একটি বকরীর দুধ দোহন করার নির্দেশ দিলে তখন সে আর তার পুরো টুকু পান করতে পারল না। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মু’মিন একআঁতে পান করে। আর কাফির সাতআঁতে পান করে। (ই.ফা. ৫২০৬, ই.সে. ৫২১৮)

【35】

খাবারের দোষ-ত্রুটি প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সময় কোন খাদ্যকে মন্দ বলেননি। কোন খাদ্য প্রিয় হলে খেয়েছেন আর পছন্দ না হলে ছেড়ে দিয়েছেন। [১৪] (ই.ফা. ৫২০৭, ই.সে. ৫২১৯) আ’মাশ (রহঃ) উল্লেখিত সনদে অবিকল রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫২০৮, ই.সে. ৫২২০) আ’মাশ হতে উল্লেখিত সনদ হুবহু রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫২০৯, ই.সে. ৫২২১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কক্ষনো কোন খাদ্যের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করতে দেখিনি। তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইচ্ছা জাগলে খেতেন আর অনিচ্ছা হলে চুপ থাকতেন। (ই.ফা. ৫২১০, ই.সে.) আবূ কুরায়র ও মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ)……… আবূ হুরায়রা্ (রাঃ)-এর সনদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হুবহু রিওয়ায়াত রয়েছে। (ই.ফা. ৫২১১, ই.সে. ৫২২২-৫২২৩)