40. সালাম

【1】

আরোহী পথচারীকে এবং কম সংখ্যক বেশি সংখ্যককে সালাম করবে

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সওয়ারী পদচারীকে, পদচারী বসে থাকা লোককে এবং কম সংখ্যক লোক বেশি সংখ্যক লোককে সালাম করবে। (ই.ফা. ৫৪৬১, ই.সে. ৫৪৮৩)

【2】

সালামের উত্তর দেয়া রাস্তায় বসার হক

ইসহাক্‌ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ তাল্‌হার আব্বা [‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ] তিনি বলেন, আমরা (গৃহের সম্মুখের উন্মুক্ত) উঠানে বসে গল্প-গুজব করতেছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসলেন এবং আমাদের সম্মুখে দাঁড়িয়ে বললেন, রাস্তা-ঘাটে বসে বৈঠকে করা তোমাদের কি আচরণ? রাস্তাঘাটে মাজলিস করা তোমরা ছেড়ে দাও। আমরা বললাম, আমরা তো কাউকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশে বসিনি। আমরা শলা-পরামর্শ ও আলোচনা করছি। তিনি বললেন, যদি তা না করলেই নয়, তাহলে রাস্তার হক আদায় করবে- আর তা হলো চোখ নিচু রাখা, সালামের উত্তর দেয়া এবং ভাল কথা বলা। (ই.ফা. ৫৪৬২, ই.সে. ৫৪৮৪) আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা পথে বৈঠক করা হতে সাবধান থাকো। তারা বললেন, হে আল্লাহর রসূল! রাস্তায় বসা ব্যতীত আমাদের উপায় নেই। সেখানে আমরা আলাপচারিতায় থাকি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিতান্তই যদি তোমাদের বসতেই হয়, তাহলে তোমরা রাস্তার হক আদায় করবে। তারা প্রশ্ন করলেন, রাস্তার হক কি? তিনি বললেন, দৃষ্টি নিচু রাখা, (কাউকে) কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের উত্তর দেয়া এবং সৎ কাজের নির্দেশ করা ও মন্দ কাজে বাধা প্রদান করা। (ই.ফা. ৫৪৬৩, ই.সে. ৫৪৮৫) যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) হতে উপরোক্ত সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৪৬৪, ইসলামিক সেন্টার ৫৪৮৬)

【3】

এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক্‌ সালামের উত্তর দেয়া

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মুসলিমের প্রতি অপর মুসলিমের হক পাঁচটি। অপর বর্ণনায় ‘আব্‌দ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচটি ব্যাপারে মুসলিমের জন্যে তার ভাইয়ের সম্পর্কে ওয়াজিব। ১. সালামের উত্তর দেয়া, ২. হাঁচিদাতাকে (তার ‘আলহাম্‌দু লিল্লাহ্‌’ বলার উত্তরে) ইয়ারহামুকুল্লাহ বলে দু’আ করা, ৩. দা’ওয়াত কবূল করা, ৪. অসুস্থকে দেখতে যাওয়া এবং ৫. জানাযার সঙ্গে শারীক হওয়া। (রাবী) ‘আবদুর রায্‌যাক (রহঃ) বলেন, মা’মার (রহঃ) এ হাদীস যুহরী (রহঃ) হতে মুরসাল হিসেবে বর্ণনা করতেন, তারপর তিনি ইবনু মুসাইয়্যাব (রহঃ) -এর সানাদে আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) হতে পূর্ণ সানাদে রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৪৬৫, ই.সে. ৫৪৮৭) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিমের প্রতি মুসলিমের হক ছয়টি। প্রশ্ন করা হলো- সেগুলো কী, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, (সেগুলো হলো-) ১. কারো সাথে তোমার দেখা হলে তাকে সালাম করবে, ২. তোমাকে দা’ওয়াত করলে তা তুমি কবূল করবে, ৩. সে তোমার নিকট ভাল উপদেশ চাইলে, তুমি তাকে ভাল উপদেশ দিবে, ৪. সে হাঁচি দিয়ে ‘আলহাম্‌দু লিল্লাহ’ বললে, তার জন্যে তুমি (ইয়ারহামুকাল্লাহ্‌ বলে) রহ্‌মাতের দু’আ করবে, ৫. সে পীড়িত হলে তার সেবা-শুশ্রুষা করবে এবং ৬. সে মৃত্যুবরণ করলে তার (জানাযার) সাথে যাবে। (ই.ফা. ৫৪৬৬, ই.সে. ৫৪৮৮)

【4】

আহলে কিতাব (ইয়াহূদী-নাসারা) -কে আগে সালাম করার নিষিদ্ধকরণ এবং তাদের সালামের উত্তর দেয়ার বিবরণ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আহলে কিতাবের কেউ যদি তোমাদের সালাম করে তোমরা (শুধু এতটুকু) বলবে- ওয়া ‘আলাইকুম- (তোমাদের প্রতিও)। (ই.ফা. ৫৪৬৭, ই.সে. ৫৪৮৯) আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবীগন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে প্রশ্ন করলেন, আহলে কিতাবরা তো আমাদের সালাম দিয়ে থাকে, আমরা কেমন করে তাদের উত্তর দিব? তিনি বললেন, তোমরা বলবে, “ওয়া ‘আলাইকুম”। (ই.ফা. ৫৪৬৮, ই.সে. ৫৪৯০) ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইয়াহুদীরা যে সময় তোমাদের প্রতি সালাম দেয়, সে সময় তাদের কেউ বলে “আস্‌সামু ‘আলাইকুম” (তোমাদের মরণ হোক)। তখন তুমি বলবে ‘ওয়া আলাইকা’- (তোমারও-হোক)। (ই.ফা. ৫৪৬৯, ই.সে. ৫৪৯১) ইবনু উমার (রাঃ) ইবনু উমার (রাঃ) -এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া তিনি বলেছেন- তখন তোমরা বলবে “ওয়া আলাইকুম” অর্থাৎ তোমারও (মৃত্যু হোক)। (ই.ফা. ৫৪৭০, ই.সে. ৫৪৯২) আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা ইয়াহূদী রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট (দেখা করার জন্যে) অনুমতি চাইল। তারা সে সময় বলল, (--) তোমাদের মরণ হোক! তখন আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বললেন, (--) “বরং তোমাদের উপরে মরণ ও লা’নাত হোক। ” তখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আয়িশাহ্‌! আল্লাহ্‌ তা’আলা সকল বিষয়ে সহনশীলতা পছন্দ করেন। আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বললেন, আপনি কি তাদের কটূক্তি শুনেননি? তিনি বললেন, আমিও তো বলে দিয়েছি “ওয়া আলাইকুম” (তোমাদের উপরেও)। (ই.ফা. ৫৪৭১, ই.সে. ৫৪৯৩) যুহ্‌রী (রহঃ) যুহ্‌রী (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এ দু’জনের বর্ণিত হাদীসে আছে যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তো বলেছি- ‘আলাইকুম’ (তোমাদের উপরে) তারা ‘وَ ‘ অব্যয়টির উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৫৪৭২, ই.সে. ৫৪৯৪) আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট কয়েকজন ইয়াহূদী আসলো। তারা বলল- (--) হে আবুল কাসিম! তোমার মৃত্যু হোক। তিনি বললেন, (--) তোমাদের উপরেও। আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম- (--) বরং তোমাদের মৃত্যু ও অপমান হোক। সে সময় রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আয়িশাহ্‌! তুমি অশ্লীলভাষী হয়ো না। তিনি বললেন, তারা কি বলেছে, তা কি আপনি শুনেননি? তিনি বললেন, তারা যা বলেছিল, তা-ই কি আমি তাদের ফিরিয়ে দেইনি? আমি যা বলেছি- ‘ওয়া আলাইকুম’ তোমাদের উপরেও। (ই.ফা. ৫৪৭৩, ই.সে. ৫৪৯৫) আ’মাশ (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) উপরোক্ত সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া তিনি বলেছেন, আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তাদের চক্রান্ত বুঝে ফেললেন এবং তাদের বকা দিলেন। তখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, চুপ কর, হে আয়িশাহ্‌! কারন আল্লাহ্‌ তা’আলা অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা পছন্দ করেন না। তিনি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। সে সময় মহামহিমান্বিত আল্লাহ্‌ অবতীর্ণ করলেন- ‘আর যারা তারা (ইয়াহূদীরা) আপনার নিকট আসে, সে সময় তারা আপনাকে এমন (কতিপয় বাক্য বলে) সম্ভাষণ করে, যেমন (বাক্য দ্বারা) আল্লাহ্‌ আপনাকে সম্ভাষণ করেননি.....” (সূরাহ্‌ আল-মুজালাদাহ্‌ ৫৮ : ৮) আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (ই.ফা. ৫৪৭৪, ই.সে. ৫৪৯৬) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) ইয়াহূদীদের কিছু লোক রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সালাম দিল। তারা বলল- ‘আস্‌সামু আলাইকা ইয়া আবাল কাসিম’। তিনি বললেন, “ওয়া আলাইকুম”। তখন আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বললেন, সে সময় তিনি ক্রোধান্বিত হয়েছিলেন- তারা কি বলল, আপনি কি শোনেননি? তিনি বললেন- হ্যাঁ, শুনেছি এবং তাদের উপর তা ফিরিয়ে দিয়েছি। তাদের বিপক্ষে আমাদের (প্রার্থনা) মঞ্জুর করা হয় কিন্তু আমাদের বিপক্ষে তাদের (প্রার্থনা) কবূল করা হয় না। (ই.ফা. ৫৪৭৫, ই.সে. ৫৪৯৭) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইয়াহূদী ও নাসারাদের আগে বাড়িয়ে সালাম করো না এবং তাদের কাউকে রাস্তায় দেখলে তাকে রাস্তার পাশে চলতে বাধ্য করো। (ই.ফা. ৫৪৭৬, ই.সে. ৫৪৯৮) ওয়াকী (রহঃ) ওয়াকী (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে- ‘যখন তোমরা ইয়াহূদীদের সাথে সাক্ষাৎ করবে...’। আর শু’বাহ্‌ (রহঃ) হতে গৃহীত ইবনু জা’ফার (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে- ‘তিনি আহলে কিতাব সমন্ধে বলেছেন’। ... আর জারীর (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে- ‘যখন তোমরা তাদের সাথে সাক্ষাৎ করবে’ ... তিনি মুশরিকদের কোন দলের নাম উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৫৪৭৭, ই.সে. ৫৪৯৯)

【5】

শিশুদের সালাম করা মুস্তাহাব

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদল বালকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, সে সময় তিনি তাদের সালাম দিলেন। (ই.ফা. ৫৪৭৮, ই.সে. ৫৫০০) সাইয়্যার (রহঃ) ৫৫৫৭-(.../...) .....ইসমা‘ঈল ইবনু সালিম (রহঃ) সাইয়্যার (রহঃ) -এর সানাদে উপরোল্লিখিত সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৪৭৮, ই.সে. ৫৫০১) সাইয়্যার (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সাবিত বুনানী (রহঃ) -এর সাথে হাঁটতে ছিলাম। তিনি একদল কিশোরের নিকট দিয়ে গমনের সময় তাদের সালাম দিলেন এবং (তখন) সাবিত (রহঃ) হাদীস বর্ণনা করলেন যে, তিনি আনাস (রাঃ) -এর সাথে পায়ে হেঁটে চলছিলেন। তিনি (আনাস) একদল কিশোরের নিকট দিয়ে গেলেন এবং তাদের সালাম দিলেন, আনাস (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করেন যে, তিনি (একবার) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে পায়ে হেঁটে চলছিলেন, তিনি, নাবী, (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিশোরদের নিকট দিয়ে চললেন এবং তাদের সালাম দিলেন। (ই.ফা. ৫৪৭৯ ই.সে. ৫৫০২)

【6】

পর্দা তুলে দেয়া বা অপর কোন আলামতকে ‘অনুমতি’ বানানো বৈধ

ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, আমার নিকট তোমার জন্যে প্রবেশাধিকার হলো পর্দা উঠিয়ে রাখা এবং (ঘরে) আমার আলাপচারিতা শুনতে পাওয়া। যে পর্যন্ত না আমি তোমাকে বারণ করি। (ই.ফা. ৫৪৮০, ই.সে. ৫৫০৩) হাসান ইবনু উবাইদুল্লাহ (রহঃ) আবূ বাক্‌র ইবনু আবূ শাইবাহ্‌, মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র ও ইস্‌হাক ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) ..... হাসান ইবনু উবাইদুল্লাহ (রহঃ) হতে উপরোক্ত সূত্রে হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৪৮১, ই.সে. ৫৫০৪)

【7】

প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্যে মহিলাদের ঘরের বাইরে যাওয়ার বৈধতা

আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, পর্দার বিধান আমাদের উপরে আসার পর সাওদাহ্‌ (রাঃ) তার প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বের হলেন, তিনি ছিলেন স্বাস্থ্যবতী, দেহাকৃতিতে তিনি মহিলাদের উপরে থাকতেন; যারা তাঁকে চিনতো, তাদের নিকট নিজেকে আড়াল করতে পারতেন না। তখন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাকে দেখতে পেয়ে বললেন, হে সাওদাহ্‌! আল্লাহ্‌র কসম! তুমি আমাদের নিকট আড়াল করতে পারবে না। চিন্তা করে দেখো, কিভাবে তুমি বের হচ্ছো? আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে তিনি ফিরে আসলেন। সে সময় রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ঘরে ছিলেন এবং রাতে আহার করছিলেন। তাঁর হাতে সে সময় গোশ্‌তের টুকরো একটি হাড় ছিল। সাওদাহ্‌ (রাঃ) (প্রবেশ করে বললেন,) হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি বের হয়েছিলাম, উমার আমাকে এ এ কথা বলেছে। আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বলেন, সে সময় আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁর প্রতি ওয়াহী অবতীর্ণ করেন। অতঃপর তাঁর উপর হতে (ওয়াহীর) অবস্থা উঠিয়ে নেয়া হয় এবং হাড়টি তখনও তাঁর হাতেই ছিল, তা তিনি রেখে দেননি। তখন তিনি বললেন, তোমাদের দরকারে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে (এ বর্ণনা আবূ কুরায়ব-এর)। আবূ বাক্‌র (রহঃ) বর্ণিত বর্ণনায় রয়েছে-“তাঁর দেহাকৃতি নারীদের ঊর্ধ্বে থাকত”। আবূ বাক্‌র (রহঃ) তাঁর বর্ণিত হাদীসে বেশি বর্ণনা করেছেন যে, বর্ণনাকারী হিশাম (রহঃ) বলেছেন, (আরবি) অর্থাৎ-পায়খানার প্রয়োজনে। (ই.ফা. ৫৪৮২, ই.সে. ৫৫০৫) হিশাম (রহঃ) আবূ কুরায়ব (রহঃ) ..... হিশাম (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূত্রে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি ছিলেন এমন এক নারী, যার শরীর অন্যদের তুলনায় উঁচু থাকত। তিনি (আরও) বলেছেন, আর তখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের খাবার গ্রহণ করছিলেন। (ই.ফা. ৫৪৮৩, ই.সে. ৫৫০৬) হিশাম (রহঃ) সুওয়াইদ ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) ..... হিশাম (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৪৮৩, ই.সে. ৫৫০৭) আয়িশাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রীগণ প্রকৃতির ডাকে সারা দেয়ার (প্রস্রাব-পায়খানায় যাওয়ার) সময় রাতের বেলা ‘মানাসি’-এর দিকে বেরিয়ে যেতেন। ‘মানাসি’ হলো প্রশস্ত খোলা জায়গা। ওদিকে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতেন- আপনার স্ত্রীগণের প্রতি পর্দার বিধান আরোপ করুন। কিন্তু রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেটি করেননি। একরাতে ‘ইশার সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রী সাওদাহ্‌ বিনতু যাম্‌‘আহ্‌ (রাঃ) বের হলেন। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী নারী। উমার (রাঃ) তাঁকে ডাক দিয়ে বললেন, হে সাওদাহ্‌! আমরা তোমাকে চিনে ফেলেছি। পর্দার বিধান অবতীর্ণ করার প্রতি দৃঢ় প্রত্যাশায় তিনি এমন করলেন। আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বলেন, তখন আল্লাহ্‌ তা’আলা পর্দা-বিধি অবতীর্ণ করলেন। (ই.ফা. ৫৪৮৪, ই.সে. ৫৫০৮) ইবনু শিহাব (রহঃ) ৫৫৬৫-(.../...) আম্‌র ইন্‌ নাকিদ (রহঃ) ..... ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত হাদীস সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৪৮৫, ই.সে. ৫৫০৯)

【8】

নির্জনে আজ্‌নাবিয়্যাহ্‌ [২৪] মেয়েলোকের নিকট অবস্থান করা এবং তার নিকট প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধকরণ

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হুঁশিয়ার! কোন পুরুষ কোন বয়স্কা নারীর সাথে কিছুতেই রাত্রি যাপন করবে না; তবে যদি সে তার স্বামী হয় কিংবা মাহ্‌রাম হয় (তাহলে করতে পারে)। (ই.ফা. ৫৪৮৬, ই.সে. ৫৫১০) উকবাহ্‌ ইবনু আমির (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হুঁশিয়ার! (বেগানাহ) নারীদের নিকট তোমরা প্রবেশ করা পরিত্যাগ করো। সে সময় আনসারীদের এক লোক বলল- দেবর সম্পর্কে আপনার কি মতামত? তিনি বললেন- দেবর তো মৃত্যু তুল্য। (ই.ফা. ৫৪৮৭, ই.সে. ৫৫১১) ইয়াযীদ আবূ হাবীব (রহঃ) আবূ তাহির (রহঃ) ..... ইয়াযীদ আবূ হাবীব (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূত্রে হুবহু হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৪৮৮, ই.সে. ৫৫১২) ইবনু ওয়াহ্‌ব (রহঃ) ইবনু ওয়াহ্‌ব (রহঃ) বলেন, লায়স ইবনু সা’দ (রহঃ) -কে আমি বলতে শুনেছি যে, (--) শব্দের অর্থ স্বামীর ভাই (দেবর-ভাসুর) এবং স্বামীর আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে তার (স্বামীর ভাইয়ের) সমপর্যায়ের চাচাত ভাই প্রমুখ। (ই.ফা. ৫৪৮৯, ই.সে. ৫৫১৩) আবদুল্লাহ ইবনু আম্‌র ইবনুল ‘আস (রাঃ) [‘আবদুর রহ্‌মান ইবনু জুবায়র (রাঃ) -এর নিকট] (বানূ) হাশিম সম্প্রদায়ের একদল লোক আসমা বিনতু উমায়স (রাঃ) -এর নিকট প্রবেশ করলো। তারপর আবূ বাক্‌র সিদ্দীক (রাঃ) ও (গৃহে) প্রবেশ করলেন, তখন তিনি [আসমা (রাঃ) ], তাঁর সহধর্মিণী ছিলেন। তাদের দেখতে পেয়ে ঐ বিষয়টি (অনুমতি ছাড়া প্রবেশ) অপছন্দ করলেন। তিনি তা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আলোচনা করলেন এবং (এ কথাও) বললেন, ‘অকল্যাণ কিছুই দেখিনি’। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃআল্লাহ্‌ অবশ্যই তাকে এ থেকে পবিত্র রেখেছেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন, আমার আজকের এ দিনের পরে কোন পুরুষ তার সঙ্গে একজন পুরুষ বা দু’জন পুরুষ ছাড়া কোন মহিলার নিকট প্রবেশ করবে না যার স্বামী উপস্থিত নেই। (ই.ফা. ৫৪৯০, ই.সে. ৫৫১৪)

【9】

কোন লোককে নারীদের সঙ্গে একাকী দেখা পেলে এবং সে মহিলা তার স্ত্রী বা তার মাহরাম হলে কু-ধারণা কে দমনের জন্য এ স্ত্রীলোক অমুক বলে দেয়া মুস্তাহাব

আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীগণের কোন একজনের সাথে ছিলেন, সে সময় তাঁর নিকট দিয়ে এক লোক যাচ্ছিল। তিনি তাকে ডাকলেন। সে (কাছে) আসলে তিনি বললেন, ওহে! এটা আমার অমুক স্ত্রী। সে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! অপর কারো সম্বন্ধে আমি মন্দ ধারণা করলেও হয়ত করতাম, কিন্তু আপনার সম্বন্ধে তো মন্দ ধারণা করতাম না। সে সময় রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ শাইতান মানুষের রক্ত সঞ্চারণের শিরায় শিরায় চলাফেরা করে থাকে। (ই.ফা. ৫৪৯১, ই.সে. ৫৫১৫) সাফিয়্যাহ্‌ বিনতু হুয়াই (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই‘তিকাফরত ছিলেন। আমি রাত্রিতে তাঁর সাথে দেখা করতে এলাম। (কিছু সময়) তাঁর সাথে কথা বললাম, এরপর ফিরে যাওয়ার জন্যে উঠলাম। তিনিও আমাকে বিদায় দেয়ার জন্যে আমার সঙ্গে উঠলেন। (বর্ণনাকারী বলেন) , সে সময় তার [সাফিয়্যাহ্‌ (রাঃ) ] বাসস্থান ছিল উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ (রাঃ) -এর ঘরে। তখন (সেখান দিয়ে) আনসারীদের দু’জন লোক গমন করছিলেন। তারা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে (এক মহিলার সঙ্গে) দেখতে পেয়ে জলদি যেতে লাগল। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেনঃ তোমরা দু’জন আস্তে আস্তে যাও। এ কিন্তু সাফিয়্যাহ্‌ বিনতু হুয়াই (আমার স্ত্রী)। তারা দু’জন বলল, সুব্‌হানাল্লাহ্‌! হে আল্লাহ্‌র রসূল (আমরা তো কিছু ভাবিনি) ! তিনি বললেন, শাইতান মানুষের শিরায় শিরায় চলাফেরা করে। আর আমি আশঙ্কা করলাম যে, শাইতান তোমাদের দু’জনের মনে কোন মন্দ ধারণা ঢেলে দিবে অথবা (বর্ণনা সন্দেহ) এ বিষয়ে কোন কিছু তৈরি করতে পারে। (ই.ফা. ৫৪৯২, ই.সে. ৫৫১৬) আলী ইবনু হুসায়ন (রহঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রী সাফিয়্যাহ্‌ (রাঃ) তার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রমাযানের শেষ দশকে মাসজিদে (নাবাবীতে) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ই’তিকাফের সময় তিনি তাঁর সাথে দেখা করতে গেলেন। তিনি তাঁর সাথে কিছু সময় আলোচনা করলেন, তারপর প্রত্যাবর্তনের জন্যে উঠে দাঁড়ালেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -ও তাঁকে বিদায় দিতে উঠে দাঁড়ালেন .....। অতঃপর (পূর্ববর্তী হাদীসের রাবী) মা’মার (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মর্মানুযায়ী হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া তিনি বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, শাইতান মানুষের রক্ত সঞ্চারণের শিরায় শিরায় পৌঁছে। “প্রবাহিত হয়” বলেননি। (বরং তিনি এ বর্ণনায় (আরবি) বলেছেন, তিনি (আরবি) বলেন নি (ই.ফা. ৫৪৯২, ই.সে. ৫৫১৭)

【10】

কোন মাজলিসে উপস্থিত হয়ে ফাঁকা স্থান পেলে সেখানে বসে পড়া; নচেৎ সবার পিছনে বসা

আবূ ওয়াকিদ লায়সী (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে আমাদের মধ্যে বসা ছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে সাহাবীগণের এক দলও ছিল। এ সময় তিনজনের একটি জামা‘য়াত সামনে আসলো। এদের দু’জন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দিকে অগ্রসর হলো, আর একজন চলে গেল। বর্ণনাকারী বলেন, তারা দু’জন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সম্মুখে থেমে গেল। তারপর তাদের একজন সমাবেশের মধ্যে একটু খোলা জায়গা দেখতে পেয়ে সেখানে বসে গেল, দ্বিতীয়জন তাদের (মাজলিসের) পিছনে বসল আর তৃতীয় লোক পেছনে ফিরে চলে গেল। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাজলিস) সমাপ্ত করে বললেন, শুন! তিনজনের ক্ষুদে দলটি সম্বন্ধে কি আমি তোমাদের সংবাদ দিব না?- তাদের একজন তো আল্লাহ্‌র কাছে আশ্রয় নিল, আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে আশ্রয় দিলেন। আর একজন লজ্জা সংকোচ করল, আল্লাহ্‌ তার লজ্জা-(এর মর্যাদা) রক্ষা করলেন। আর তৃতীয়জন মুখ ফিরিয়ে নিলো, আল্লাহ্‌ তা’আলাও তার হতে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেন। (ই.ফা. ৫৪৯৩, ই.সে. ৫৫১৮) ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু আবূ কাসীর (রহঃ) ইসহাক্‌ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবূ তাল্‌হাহ্‌ (রহঃ) এ সূত্রে তার নিকট হুবহু অর্থের হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৪৯৪, ই.সে. ৫৫১৯)

【11】

আগে এসে বসা বৈধ অবস্থান থেকে কোন মানুষকে উঠিয়ে দেয়া হারাম

ইবনু উমার (রাঃ) ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন কখনো কোন লোককে তার বসার জায়গা হতে উঠিয়ে দিয়ে সেথায় না বসে। (ই.ফা. ৫৪৯৫, ই.সে. ৫৫২০) ইবনু উমার (রাঃ) ইবনু উমার (রাঃ) -এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে রিওয়ায়াত করেন যে, তিনি বলেছেনঃ কোন লোক কোন লোককে তার বসার স্থান থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেথায় বসবে না বরং তোমরা (বলবে) প্রশস্ত করে দাও, জায়গা বিস্তার করে দাও। (ই.ফা. ৫৪৯৬, ই.সে. ৫৫২১) ইবনু 'উমার (রাঃ) ইবনু 'উমার (রাঃ) -এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে (উপরোক্ত হাদীসের বর্ণনাকারী) লায়স (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এদের বর্ণিত হাদীসে "বরং তোমরা বিস্তৃত করে দাও, প্রশস্ত করে দাও" (কথাটি) বর্ণনা করেননি। আর (তৃতীয় সানাদের) বর্ণনাকারী ইবনু জুরায়জ বর্ধিত রিওয়ায়াত করেছেন যে, আমি নাফি'কে প্রশ্ন করলাম- (এ বিধান) জুমু'আর দিনের জন্য? তিনি বললেন, জুমু'আহ ও অন্যান্য (সকল) দিবসের জন্যে। (ই.ফা. ৫৪৯৭, ই.সে. ৫৫২২) ইবনু 'উমার (রাঃ) ইবনু 'উমার (রাঃ) -এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে রিওয়ায়াত করেন যে, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যেন তার ভাইকে তার বসার জায়গা হতে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে না বসে। আর ইবনু 'উমার (রাঃ) -এর আচরন ছিল যে, কোন লোক তাঁর জন্যে নিজের বসার স্থান থেকে উঠে গেলে তিনি সেথায় বসতেন না। (ই.ফা. ৫৪৯৮, ই.সে. ৫৫২৩) মা'মার (রহঃ) 'আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) , 'আবদুর রাযযাক ও মা'মার (রহঃ) হতে উপরোক্ত সুত্রে অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৪৯৯, ই.সে. ৫৫২৪) জাবির (রাঃ) জাবির (রাঃ) -এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ জুমু'আর দিনে তোমাদের কেউ (মাসজিদের কাতার হতে) তার ভাইকে উঠিয়ে দিয়ে তার বসার জায়গায় বসবে না বরং সে বলব, 'বিস্তার করে দিন'। (ই.ফা. ৫৫০০, ই.সে. ৫৫২৫)

【12】

কেউ আসন ছেড়ে উঠে গিয়ে আবার ফিরে আসলে সে অধিক হকদার হবে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) -এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ 'তোমাদের কেউ' যখন (তার স্থান থেকে) (কিছু সময়ের জন্যে) উঠে যায়...... এ বর্ণনা কুতাইবাহ (রাঃ) -এর ঊর্ধ্বতন বর্ণনাকারী 'আবদুল 'আযীয (রহঃ) -এর এবং অপর ঊর্ধ্বতন বর্ণনাকারী আবূ 'আওয়ানাহ (রহঃ) -এর বর্ণিত হাদীসে আছে, যে লোক তার জায়গা ছেড়ে উঠে যাওয়ার পর আবার সেখানে ফিরে আসে, তাহলে সে সেই স্থানে (পুনরায় বসার ব্যাপারে) বেশি হকদার। (ই.ফা. ৫৫০১, ই.সে. ৫৫২৬)

【13】

পরিচয়বিহীন (অমুহরিম) নারীদের নিকট হিজড়াকে প্রবেশে বাধাদান

উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) এক হিজড়া তার নিকট বসা ছিল। সে সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে ছিলেন। সে উম্মু সালামাহ (রাঃ) -এর ভাইকে বলতে লাগল-হে 'আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়াহ! যদি আগামী দিনে আল্লাহ্ তা'আলা আপনাদেরকে 'তায়িফ' বিজয়ী করেন, তাহলে আমি আপনাকে 'গাইলান-কন্যাকে দেখাব, সে 'চার'টি নিয়ে সম্মুখে আসে আর 'আট'টি নিয়ে পশ্চাৎদিকে যায়।[২৫] রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে এ ধরনের কথা বলতে শুনে বললেন, এ যেন তোমাদের নিকট প্রবেশ না করে। (ই.ফা. ৫৫০২, ই.সে. ৫৫২৭) 'আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক হিজড়া, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সহধর্মিণীগণের নিকট প্রবেশ করত। মানুষজন তাকে বুদ্ধি জ্ঞানহীন হিজড়াদের অন্তর্ভুক্ত মনে করত। বর্ণনাকারী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন গৃহে প্রবেশ করলেন, তখন সে তাঁর কোন এক স্ত্রীর নিকট ছিল আর সে এক মহিলার (দেহ সৌষ্ঠবের) বর্ণনা দিয়ে বলছিল- 'যখন সম্মুখে অগ্রসর হয় তখন চার (ভাঁজ) নিয়ে অগ্রসর হয় এবং যখন পশ্চাতে ফিরে তখন আটটি নিয়ে ফিরে যায়। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সাবধান! এ তো দেখছি এখানকার (নারী রহস্যের) বিষয়াদি বুঝে শুনে। সে যেন তোমাদের নিকট কখনো প্রবেশ না করে। তিনি [আয়িশাহ (রাঃ) ] বলেন, তারপর তারা তার থেকে পর্দা করতো। (ই.ফা. ৫৫০৩, ই.সে. ৫৫২৮)

【14】

অজ্ঞাত নারী পথ-শ্রান্ত হলে তাকে আরোহণের পিছে বসিয়ে দেয়া বৈধ

আসমা বিনতু আবূ বাকর (রাঃ) তিনি বলেন, যুবায়র (রাঃ) আমাকে বিবাহ করলেন, সে সময় একটি ঘোড়া কোন যোগ্য সম্পদ, গোলাম বা অন্য কোন কিছু দুনিয়াতে তার ছিল না। তিনি বলেন, আমি তার ঘোড়াটাকে ঘাস খাওয়াতাম, তার পারিবারিক কাজকর্মেও সঙ্গ দিতাম। আমি তার যত্ন নিতাম, তার পানিবাহী উটের জন্যে খর্জুর বীচি কুড়াতাম, তাকে ঘাস খাওয়াতাম, পানি নিয়ে আসতাম, তার ঢোল ইত্যাদি মেরামত করতাম এবং (রুটির জন্য) আটা মাখতাম। তবে আমি ভাল রুটি বানাতে পারতাম না। তাই আমার কতিপয় আনসারী সাথীর মনিরা আমাকে রুটি পাকিয়ে দিত। তারা ছিল স্বার্থহীন রমণী। আমি যুবায়র-এর জমি থেকে যা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জায়গীর রূপে দিয়েছিলেন (সেখান থেকে) খেজুর বীচি (কুড়িয়ে) আমার মাথায় করে বয়ে আনতাম। সে (জমি) ছিল এক ক্রোসের দু'-তৃতীয়াংশ (প্রায় দু'মাইল) দূরে অবস্থিত। তিনি বলেন, আমি একদিন আসছিলাম আর বীচি(-র বোঝা) আমার মাথায় ছিল। (পথে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দেখা পেলাম, সে সময় তাঁর সাথে সাহাবীগণের একটি ক্ষুদ্র দল ছিল। তিনি আমাকে ডাকলেন এবং (তাঁর বাহন উটটিকে বসাবার জন্যে) ইখ ইখ (আওয়াজ) করলেন যাতে আমাকে সেটির পেছনে উঠিয়ে নিতে পারেন। তিনি [আসমা (রাঃ) ] বলেন, আমি লজ্জাবোধ করলাম আর আমি ছিলাম তোমার [যুবায়র (রযিঃ) ] আত্মমর্যাদাবোধ সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি [যুবায়র (রাঃ) ] বললেন, আল্লাহর শপথ! তোমার মাথায় করে বীচি বয়ে আনাটা (আমার নিকট) তাঁর সাথে তোমার আরোহণের চাইতে অনেক কঠিন (ও কষ্টকর)। তিনি বলেন, অতঃপর (আব্বা) আবূ বাকর (রাঃ) আমার নিকট একটি খাদিম প্রেরণ করলেন। ঘোড়াটি দেখা-শুনার কাজে সে আমার পক্ষে যথেষ্ট হয়ে গেল। সে যেন আমাকে এ দায়িত্ব হতে মুক্ত করেছিল। (ই.ফা. ৫৫০৪, ই.সে. ৫৫২৯) ইবনু আবু মুলাইকাহ (রাঃ) আসমা (রাঃ) বলেছেন, আমি পারিবারিক কাজে যুবায়র (রাঃ) -এর সেবা করতাম। তার একটি ঘোড়া ছিল। আমি (-ই) তা দেখাশুনা করতাম। ঘোড়াটির দেখাশুনা করার চেয়ে কোন কর্ম আমার নিকট ভারী ছিল না। আমি তার জন্যে ঘাস যোগাড় করতাম, তার দেখাশুনা ও সেবা-পরিচর্যা করতে থাকতাম। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি একটি খাদিম পেলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর নিকট কিছু যুদ্ধবন্দী এলে তিনি তাকে একটি খাদিম দিলেন। তিনি [আসমা (রাঃ) ] বলেন, সে (খাদিম) ঘোড়ার দেখাশুনায় আমার জন্যে যথেষ্ট হলো এবং আমি দায়িত্বমুক্ত হলাম। তখন এক অভাবী লোক আমার নিকট এসে বলল, হে 'আবদুল্লাহর মা! আমি একজন অভাবী মানুষ, আপনার গৃহের ছায়ায় বসে বেচাকেনা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছি। তিনি বললেন, তোমাকে আমি অনুমতি দিয়ে ফেললে যুবায়র (রাঃ) (সম্ভবত) তা বাতিল করবে। তাই এক কাজ করো, যুবায়র (রাঃ) উপস্থিত থাকা অবস্থায় তুমি এসে আমার নিকট প্রস্তাব করবে। ঠিক সময় এসে সে বলল, হে 'আবদুল্লাহর মা! আমি একজন অভাবী মানুষ, আপনার গৃহের ছায়ায় বসে বেচাকেনা করার ইচ্ছা করেছি। তিনি বললেন, আমার গৃহ ব্যতীত তোমার জন্যে মাদীনায় আর কোন স্থান নেই (কি)? সে সময় যুবায়র (রাঃ) তাকে বললেন, একটা অভাবী মানুষকে ক্রয়-বিক্রয় করতে দিতে তুমি বাঁধা হয়ে দাড়াঁচ্ছো কেন? তারপর সে (সেথায়) ক্রয়-বিক্রয় করে (বেশকিছু) আয় করল, আমি খাদিমটি তার নিকট বিক্রি করে দিলাম। এ সময় যুবায়র (রাঃ) আমার নিকট প্রবেশ করল-তখন ও তার (বিক্রয়কৃত) মুল্য আমার কোলের উপর ছিল। সে বলল ওগুলো আমাকে দান করে দাও। তিনি বলেন, (আমি বললাম) , আমি ওগুলো সদাকাহ করে দিয়েছি। (ই.ফা. ৫৫০৫, ই.সে. ৫৫৩০)

【15】

তৃতীয় ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তাকে রেখে দু'জনের চুপি চুপি কথা বলা নিষিদ্ধ

‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তিনজন থাকবে, তখন একজনকে রেখে দু’জনে কানে কানে কথা বলবে না। (ই.ফা. ৫৫০৬, ই.সে. ৫৫৩১) ইবনু ‘উমার (রাঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) -এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অর্থানুযায়ী বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৫৫০৭, ই.সে. ৫৫৩২) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা তিনজন হবে, তখন দু’জন আর একজনকে বাদ দিয়ে দু’জনে চুপিচুপি কথা বলবে না, যে পর্যন্ত না অন্য ব্যক্তিদের সঙ্গে মিশে যাও- এ কারণে যে, তাহলে তাকে দুর্ভাবনায় ফেলে দিবে। (ই.ফা. ৫৫০৮, ই.সে. ৫৫৩৩) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা তিনজন হবে, তখন দু’জন তাদের সঙ্গীকে বাদ দিয়ে কানাঘুষা করবে না, (কারণ) তা তাকে দুর্ভাবনায় ফেলবে। (ই.ফা. ৫৫০৯, ই.সে. ৫৫৩৪) আল্‌ আ’মাশ (রহঃ) ইসহাক্‌ ইবনু ইব্‌রাহীম ও ইবনু আবূ ‘উমার (রহঃ) ….. আল্‌ আ’মাশ (রহঃ) -এর সানাদে উপরোল্লিখিত সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৫১০, ই.সে. ৫৫৩৫)

【16】

চিকিৎসা, ব্যাধি ও ঝাড়ফুঁক

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থ হয়ে পড়লে জিব্‌রীল (‘আঃ) এ দু’আ পড়ে তাঁকে ফুঁকে দিতেন, তিনি বলতেন, আল্লাহ্‌র নামে-তিনি আপনাকে (ব্যাধি) সুস্থতা দান করুন, সব ব্যাধি থেকে আপনাকে মুক্ত করুন, আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে এবং যখন সে হিংসা করে এবং সকল প্রকার কুদৃষ্টি ব্যক্তির ক্ষতি হতে। (ই.ফা. ৫৫১১, ই.সে. ৫৫৩৬) সা’ঈদ (রাঃ) জিবরীল (‘আঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আগমন করে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (জিবরীল) বললেনঃ আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি- সে সব জিনিস হতে, যা আপনাকে কষ্ট দেয়, সব আত্মার খারাবী অথবা কুদৃষ্টি হতে আল্লাহ আপনাকে মুক্তি দিন; আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়-ফুঁক করছি। (ই.ফা. ৫৫১২, ই.সে. ৫৫৩৭) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, এ হলো ঐ সমস্ত (হাদীস) , যা আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন। এরপর তিনি কয়েকটি হাদীস আলোচনা করেন। সেগুলোর অন্যতম একটি হলো- রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুদৃষ্টির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বাস্তব। (ই.ফা. ৫৫১৩, ই.সে. ৫৫৩৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ ‘কুদৃষ্টির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বাস্তব’। কোন বিষয় যদি ভাগ্যলিপিকে অতিক্রম করত, তাহলে ‘কুদৃষ্টি’ ভাগ্যলিপিকে অতিক্রম করত এবং তোমাদের (কুদৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের) -কে গোসল করতে বলা হলে তোমরা গোসল করাবে। [২৬] (ই.ফা. ৫৫১৪, ই.সে. ৫৫৩৯)

【17】

যাদুকরণ

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, লাবীদ ইবনু আ’সাম নামে বানূ যুরায়ক সম্প্রদায়ের এক ইয়াহূদী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে যাদু করল। তিনি বলেন, এ যাদুর কারণে এমনও হত যে, রসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্মরণ হত যে কোন (পার্থিব) কাজ তিনি করছেন, অথচ (প্রকৃতভাবে) তিনি তা করছেন না। পরিশেষে একদিনে কিংবা এক রাত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আ করলেন; আবার দু’আ করলেন, আবার দু’আ করলেন। অতঃপর বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ্‌! তুমি কি অনুধাবন করতে পেরেছো যে, আল্লাহ আমাকে সে ব্যাপারে সমাধান দিয়েছেন, যে ব্যাপারে আমি তাঁর নিকট সমাধান চেয়েছিলাম? (তা এভাবে যে) (দু’জন ফেরেশ্‌তা) দু’লোক (মানুষের বেশ ধরে) আমার নিকট আসলো। তাদের একজন আমার মস্তকের নিকট এবং অপরজন আমার পায়ের নিকট বসল। অতঃপর আমার মাথার নিকটের লোক পায়ের নিকটের লোককে অথবা আমার পায়ের নিকটের লোকটি আমার মাথার নিকটের লোকটিকে বলল, লোকটির ব্যাধি কি? (অপরজন) বলল, ‘যাদুগ্রস্ত’। (প্রথম জন) বলল, কে তাকে যাদু করেছে? (দ্বিতীয় জন) বলল- লাবীদ ইবনু আ’সাম। (প্রথমজন) বলল, কোন জিনিসে? (দ্বিতীয় জন) বলল- চিরুনি, (আঁচড়ানোর সময় চিরুনীর সঙ্গে) উঠা চুল, (আরও) বলল, পুরুষ খেজুরের ফুলের বেষ্টনীতে। (প্রথমজন) বলল, তা কোথায়? (দ্বিতীয় জন) বলল- ‘যী আরওয়ান’ কুয়ায়। তিনি [‘আয়িশা (রাঃ) ] বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কতিপয় সহাবীকে সাথে নিয়ে সেথায় আসলেন। তারপর (ফিরে এসে) বললেন, হে ‘আয়িশাহ্‌! আল্লাহ্‌র কসম, সে (কূপের) পানি যেন ‘মেন্দীপাতা ভিজানো’ (পানি) এবং সেখানকার খেজুর গাছ যেন শাইতানের মস্তিষ্ক। তিনি বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে আপনি তা (জনসমক্ষে) পুড়ে ফেললেন না কেন? তিনি বললেন, না, (আমি তা উচিত মনে করেনি)। কেননা, আল্লাহ আমাকে তো রোগমুক্ত করেছেন-আর লোকদেরকে কোন অকল্যাণে উত্তেজিত করা অপছন্দ করছি। আমি সে ব্যাপারে নির্দেশ দিলাম। ফলে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়েছে। (ই.ফা. ৫৫১৫, ই.সে. ৫৫৪০) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জাদু করা হলো ...... আবূ কুবায়ব (রহঃ) এ হাদীসটি বিস্তারিত বর্ণনাসহ (উপরোক্ত) ইবনু নুমায়র (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের অর্থানুযায়ী বর্ণনা করেছেন এবং তিনি তাতে এ কথাটিও বলেছেন-পরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কূপের নিকট গমন করলেন এবং সেটির (চার) দিকে লক্ষ্য করলেন। তাতে একটি খেঁজুর গাছ রয়েছে। তিনি [‘আয়িশা (রাঃ) ] আরও বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! তাহলে আপনি তা (লোকালয়ে) বের করে ফেলেন। এ বর্ণনায় জ্বালিয়ে দেয়ার অংশটি বর্ণনা করেননি এবং আমি সে সম্পর্কে নির্দেশ দিলে তা মাটিতে পুঁতে ফেলা হলো, (কথাটিও) বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৫৫১৬, ই.সে. ৫৫৪১)

【18】

বিষ

আনাস (রাঃ) এক ইয়াহূদী নারী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট বিষ মেশানো ছাগলের গোশ্‌ত নিয়ে আসলো। তিনি সেখান হতে (কিয়দংশ) খেলেন। অতঃপর তাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট নিয়ে আসা হলো। তিনি তার কাছে (সে কেন এমন করলো) এ বিষয়ে জানতে চাইলে সে বলল, আমি আপনাকে হত্যা করার ইচ্ছা করছিলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ এ বিষয়ে তোমাকে ক্ষমতা দিবেন না অথবা তিনি বললেনঃ আমার উপরে ক্ষমতা দিবেন এমন নয়। বর্ণনাকারী বলেন, তারা (সাহাবীগণ) বললেন, আমরা কি তাকে ‘হত্যা’ করবো না? তিনি বললেন, না। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর থেকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আল্‌জিভ ও তালুতে তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আমি সর্বদা লক্ষ্য করতাম। (ই.ফা. ৫৫১৭, ই.সে. ৫৫৪২) হিশাম ইবনু যায়দ (রহঃ) আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) -কে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি যে, একজন ইয়াহূদী নারী গোশতে বিষ মিশিয়ে তা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট নিয়ে আসলো। ...... (উপরোক্ত রিওয়ায়াতের) বর্ণনাকারী খালিদ (রহঃ) -এর বর্ণিত হাদীসের অর্থানুযায়ী হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৫১৮, ই.সে. ৫৫৪৩)

【19】

রোগীকে ঝাড়ফুঁক , মন্ত্র করা মুস্তাহাব

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের কোন মানুষ পীড়িত হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাত দ্বারা তাকে মুছে দিতেন, তারপর বলতেনঃ (আরবী) সমস্যা বিদূরিত করে দিন, হে জনগণের পালনকর্তা! আর সুস্থতা দান করুন, আপনিই সুস্থতা দানকারী। আপনার সুস্থতা ও মুক্তি ছাড়া আর কোন (প্রকৃতপক্ষে নির্ভরযোগ্য) শিফা নেই। এমন নিরাময় করুন যার পর কোন রোগ-ব্যাধি বাকী না থাকে। পরবর্তীতে যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পীড়িত হলেন তখন অসুখে অতি দূর্বল হয়ে পড়লেন, সে সময় আমি তাঁর হাত তুলে ধরলাম- যাতে আমিও তেমন করে (মুছে) দিতে পারি তিঁনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেমন করে (মুছে) দিতেন। কিন্তু তিঁনি আমার হাত থেকে তাঁর হাত টেনে (ছাড়িয়ে) নিলেন। অতঃপর বললেনঃ হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করুন এবং আমাকে মহান সঙ্গীর সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দিন! তিনি [‘আয়িশা (রাঃ) ] বলেন, হঠাৎ আমি দেখলাম যে, তাকে উঠিয়ে নিয়েছেন (ইন্তেকাল করেছেন)। (ই.ফা. ৫৫১৯, ই.সে. ৫৫৪৪) আ’মাশ (রহঃ) হতে জারীর (রহঃ) কিন্তু হুশায়ম ও শুবাহ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে- তিনি তাঁর হস্ত দ্বারা তাকে (রোগীকে) মুছে দিলেন। আর (সুফ্‌ইয়ান) সাওরী (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে-তিনি তাঁর ‘ডান’ হস্ত দ্বারা তাকে মুছে দিলেন। আর সুফ্‌ইয়ান (রহঃ) -এর সূত্রে আ’মাশ (রহঃ) হতে ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অবশিষ্টাংশে বর্ণনাকারী বলেছেন- পরে আমি এ হাদীস মানসূর (রহঃ) -কে শুনালে তিনি ইব্‌রাহীম (রহঃ) মাসরূক (রহঃ) ও ‘আয়িশা (রাঃ) হতে হুবহু হাদীস বর্ণনা করে আমাকে শুনালেন। (ই.ফা. ৫৫২০, ই.সে. ৫৫৪৫) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন রোগগ্রস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলে বলতেনঃ (আরবী) “সমস্যা বিদূরিত করে দিন হে লোকেদের প্রতিপালনকারী! তাঁকে সুস্থ করে দিন, আপনিই সুস্থতা দানকারী। আপনার শিফা ব্যাতিত কোন শিফা নেই- এমন শিফা, যার পরে কোন রোগ-ব্যাধি বাকী থাকে না। ” (ই.ফা. ৫৫২১, ই.সে. ৫৫৪৬) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন রোগগ্রস্থ ব্যক্তির নিকট গেলে তার জন্য দু’আ করতেন। তিনি বলতেনঃ (আরবী) “বিপদাপদ সমস্যা বিদূরিত করে দিন হে মানুষের প্রতিপালক! আর আরোগ্য দান করুন। আপনিই আরোগ্য দানকারী, আপনার শিফা ছাড়া কোন শিফা নেই; এমন সুস্থতা দিন, যার পরে কোন রোগ-ব্যাধি বাকী না থাকে। ” কিন্তু আবূ বাক্‌র (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত আছে- তার জন্যে দু’আ করতেন এবং বলতেন (আরবী)। এছাড়া তিনি বলেছেন, আর আপনিই সুস্থতা দানকারী। (ই.ফা. ৫৫২২, ই.সে. ৫৫৪৭) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বর্ণনা (উপরোল্লিখিত) আবূ ‘আওয়ানাহ্‌ এবং জারীর (রহঃ) -এর হাদীসের অবিকল। (ই.ফা. ৫৫২৩, ই.সে. ৫৫৪৮) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু’আ দিয়ে ঝাড়ফুঁক করতেন- (আরবী) “হে জনগণের প্রতিপালক! বিপদাপদ সমস্যা বিদূরিত করুন; আপনার কাছেই রয়েছে উপশম। আপনি ছাড়া আর কেউ-ই (বিপদ) দূরকারী নেই। ” (ই.ফা. ৫৫২৪, ই.সে. ৫৫৪৯) আবূ কুবায়ব (রহঃ) আবূ কুবায়ব (রহঃ) ও ইসহাক্‌ ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) হিশাম (রহঃ) -এর সানাদে উপরোল্লিখিত সূত্রে হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৫২৫, ই.সে. ৫৫৫০)

【20】

মু‘আববিযাত[২৭] সূরাহ পড়ে ঝাড়ফুঁক করা এবং দম করা

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পরিবারবর্গের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি ‘মু’আব্‌বিযাত’ সূরাগুলো পড়ে তাকে ফুঁক দিতেন। পরবর্তীতে তিনি যখন মৃত্যুরোগে আক্রান্ত হলেন তখন আমি তাকে ফুঁক দিতে লাগলাম এবং তাঁর-ই হাত দিয়ে তাঁর দেহটি মুছে দিতে লাগলাম। কেননা আমার হাতের তুলনায় তাঁর হাতটি ছিল অনেক বারাকাতপূর্ণ। আর ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু আইয়ূব (রহঃ) ‘মু’আব্‌বিযাত’ দ্বারা ঝাড়ফুঁক করতেন। (ই.ফা. ৫৫২৬, ই.সে. ৫৫৫১) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি ‘মু’আব্‌বিযাত’ পাঠ করে স্বশরীরে দম করতেন। তাঁর ব্যাধি কঠিন রূপ ধারণ করলে আমি তা পড়ে তাঁর হাত দ্বারা তাঁর দেহটি মুছে দিতাম ঐ হাতের বারাকাতের আশায়। (ই.ফা. ৫৫২৭, ই.সে. ৫৫৫২) ইবনু শিহাব (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে মালিকের সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু মালিকের হাদীস ছাড়া তাদের কারো হাদীসে ‘তাঁর হাতের বারাকাতের আশায়’ কথাটি নেই। ইউনুস (রহঃ) ও যিয়াদ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে-নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থ হয়ে গেলে নিজেকে ‘মু’আব্‌বিযাত’ দ্বারা দম করতেন এবং নিজ হস্তে স্বশরীরে মুছতেন। (ই.ফা. ৫৫২৮, ই.সে. ৫৫৫৩)

【21】

চোখলাগা, পার্শ্বঘা, বিষাক্ত প্রাণীর বিষক্রিয়া ও দুরাবস্থা হতে (মুক্তির জন্য) ঝাড়ফুঁক করা মুস্তাহাব

আস্‌ওয়াদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ) -কে ঝাড়ফুঁক সম্বন্ধে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারীদের একটি পরিবারকে যে কোন বিষধর প্রানীর বিষক্রিয়া হতে মুক্তির জন্যে ঝাড়ফুঁক করার অনুমতি দিয়েছেন। (ই.ফা. ৫৫২৯, ই.সে. ৫৫৫৪) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারীদের একটি গৃহের লোকদের বিষাক্ত জন্তুর বিষক্রিয়া থেকে (রোগমুক্তি লাভের আশায়) ঝাড়ফুঁক করার অনুমতি দিয়েছেন। (ই.ফা. ৫৫৩০, ই.সে. ৫৫৫৫) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়ম করে ছিলেন যে, মানুষ তার (শরীরের) কোথাও অসুস্থতা অনুভব করলে অথবা তাতে কোন ফোঁড়া বা আঘাতপ্রাপ্ত (হয়ে) থাকলে- রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর আঙ্গুল দ্বারা এ রকম করতেন- (এ কথা বলে এভাবে করার ধরণ বুঝানোর জন্য)। বর্ণনাকারী সুফ্‌ইয়ান (রহঃ) তার বুড়ো আঙ্গুলটি জমিনে রাখলেন- অতঃপর তা তুলে নিলেন এবং সে সময় এ দু’আ পড়তেন (আরবী) অর্থাৎ- আল্লাহর নামে- আমাদের জমিনের ধূলামাটি আমাদের কারো (মুখের) লালার সঙ্গে (মিলিয়ে) -আমাদের পালনকর্তার আদেশে তা দিয়ে আমাদের অসুস্থ ব্যক্তির আরোগ্য লাভের উদ্দেশে (মালিশ করছি)। তবে ইবনু আবূ শাইবাহ্‌ (রহঃ) (তার বর্ণনাতে) বলেছেন- (আরবী) ‘শিফা দান করা হয়। ’ এবং যুহায়র (রহঃ) বলেছেন, (আরবী) ‘আমাদের রোগীর সুস্থতা লাভের উদ্দেশে।’ (ই.ফা. ৫৫৩১, ই.সে. ৫৫৫৬) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে চোখলাগা হতে (মুক্ত হওয়ার জন্য) ঝাড়ফুঁক করার আদেশ করতেন। (ই.ফা. ৫৫৩২, ই.সে. ৫৫৫৭) মিস’আর (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু নুমায়র (রহঃ) ..... মিস’আর (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূত্রে হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৫৩৩, ই.সে. ৫৫৫৮) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কুদৃষ্টি হতে (বাঁচার জন্য) ঝাড়ফুঁক করার আদেশ করতেন। (ই.ফা. ৫৫৩৪, ই.সে. ৫৫৫৯) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, বিষাক্ত জন্তুর বিষক্রিয়া, পার্শ্বঘা ও চোখলাগা থেকে (বাঁচার জন্য) ঝাড়ফুঁক করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। (ই.ফা. ৫৫৩৫, ই.সে. ৫৫৬০) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুদৃষ্টি লাগা, বিষাক্ত জন্তুর বিষক্রিয়া ও বিষাক্ত পার্শ্বঘা থেকে বেঁচে থাকতে ঝাড়ফুঁকের অনুমতি দিয়েছেন। (ই.ফা. ৫৫৩৬, ই.সে ৫৫৬১) সুফইয়ান ইউসুফ ইবনু ‘আবদুল্লাহর ইবনু হারিস-এর সূত্রে হাদীস বর্ণিত রয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার স্ত্রী উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর গৃহে একটি বালিকার মুখমন্ডলে (কালো বা হলুদ) দাগ লক্ষ্য করে বললেন, তার কুদৃষ্টি লেগেছে, তার জন্য ঝাড়ফুঁক করো। অর্থাৎ তার চেহারায় হলুদ দাগ পড়ার কারণে। (ই.ফা. ৫৫৩৭, ই.সে ৫৫৬২) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাযম পরিবারকে সাপের ছোবলে আঘাতপ্রাপ্ত রোগীকে ঝাড়ফুঁক করার অনুমতি দেন এবং আসমা বিনতু ‘উমায়স (রাঃ) -কে বললেন, আমার ভাই [জা‘ফার (রাঃ)] এর ছেলে-মেয়েদের কি হলো যে, তাদের শরীর আমি দুর্বল দেখতে পাচ্ছি? তাদের কি অভাব দেখা দিয়েছে? তিনি (আসমা) বললেন, না কিন্তু তাদের উপর তাড়াতাড়ি কুনযর লেগে যায়। তিনি বললেন, তুমি তাদের ঝাড়-ফুঁক কর। তিনি বললেন, তখন আমি তাঁর নিকট (দু‘আটি) উপস্থাপন করলাম। তিনি বললেন, (ঠিক আছে) তুমি তাদের ঝাড়ফুঁক করে দাও। (ই.ফা. ৫৫৩৮, ই.সে. ৫৫৬৩) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বানু ‘আমরকে সাপের ছোবলে আক্রান্ত রোগীর ঝাড়ফুঁকের অনুমতি দেন। আবূ যুবায়র (রহঃ) আরও বলেছেন-আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে আরও বলতে শুনেছি যে, একটি বিছা আমাদের এক লোককে ছোবল দিল। আমরা সেথায় রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে বসাছিলাম। তখন এক লোক বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি (তাকে) ঝেড়ে দেই? তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কোন লোক যদি তার ভাইয়ের (কোনও) উপকার করতে পারে, সে যেন (তা) করে। (ই.ফা. ৫৫৩৯, ই.সে. ৫৫৬৪) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) ইবনু জুরায়জ (রহঃ) (থেকে) উপরোক্ত সূত্রে অবিকল হাদীস বর্ণনা করেন। তবে তিনি বলেছেন-তখন ব্যক্তিদের মাঝে এক লোক বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি তাকে ঝাড়ফুঁক করতে পারি? তিনি (শুধু) ‘ঝাড়ফুঁক করি’ বলেননি (বরং ‘তাকে’ শব্দটিও বলেছেন)। (ই.ফা. ৫৫ ৪০, ই.সে ৫৫৬৫) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমার একজন মামা ছিলেন, যিনি বিচ্ছুর ছোবলে ঝাড়ফুঁক করতেন। এ সময় (একদিন) রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সব ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ ঘোষনা করলেন। সে সময় তিনি (আমার মামা) তাঁর খিদমাতে এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি ঝাড়ফুঁক হারাম করে দিয়েছেন। হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমি তো বিছার ছোবল থেকে আত্মরক্ষার্থে ঝাড়ফুঁক করে থাকি? তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে যে কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের কোন উপকার করতে সমর্থ হলে সে যেন তা করে। (ই.ফা. ৫৫৪১, ই.সে. ৫৫৬৬) আ‘মাশ (রহঃ) ‘উসমান ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ)..... আ‘মাশ (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূত্রে অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৫৪২, ই.সে. ৫৫৬৭) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (এক সময়) ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ করে দিলেন। অতঃপর ‘আমর ইবনু হাযম সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমাদের নিকট একটি ঝাড়ফুঁক ছিল, যা দিয়ে আমরা বিচ্ছুর ছোবলে ঝাড়ফুঁক করতাম, এখন আপনি তো ঝাড়ফুঁক নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। বর্ণনাকারী [জাবির (রাঃ)] বলেন, তারা তা তাঁর নিকট উপস্থাপন করল। তখন তিনি বললেন, কোন সমস্যা দেখতে পাচ্ছি না তোমাদের মধ্যে যে কেউ তার ভাইয়ের কোনও উপকার করতে সমর্থ হলে সে যেন তার উপকার করে। (ই.ফা. ৫৫৪৩, ই.সে. ৫৫৬৮)

【22】

শিরক মুক্ত ঝাড়ফুঁকে কোন দোষ নেই

‘আওফ ইবনু মালিক আশজা’ঈ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা জাহিলী (মূর্খতার) যুগে (বিভিন্ন) মন্ত্র দিয়ে ঝাড়ফুঁক করতাম। এজন্যে আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আবেদন করলাম-হে আল্লাহর রসূল! এক্ষেত্রে আপনার মতামত কি? তিনি বললেন, তোমাদের মন্ত্রগুলো আমার নিকট উপস্থাপন করো, ঝাড়ফুঁকে কোন দোষ নেই-যদি তাতে কোন শিরক (জাতীয় কথা) না থাকে। (ই.ফা. ৫৫৪৪, ই.সে. ৫৫৬৯)

【23】

কুরআন মাজীদ এবং অন্যান্য দু‘আ-যিকর দিয়ে ঝাড়ফুঁক করে বিনিময় গ্রহণ বৈধ

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কিছু সংখ্যক সহাবী কোন এক সফরে ছিলেন, তাঁরা কোন একটি আরব সম্প্রদায়ের বসতির নিকট দিয়ে রাস্তা অতিক্রমকালে তাদের নিকট মেহমানদারীর ব্যাপারে বললেন। কিন্তু তারা তাদের আতিথেয়তা করল না। পরে তাদেরকে তারা বলল, তোমাদের দলে কি কোন ঝাড়ফুঁককারী আছে? কারণ, বসতির সর্দারকে সাপে দংশন করেছেন অথবা (বর্ণনাকারীর সংশয়ে তারা বলল-) বিপদগ্রস্থ হয়েছে। সে সময় এক লোক বলল, হ্যাঁ। তারপরে সে তার নিকট গমন করে সূরা আল আল-ফাতিহাহ্ দ্বারা ঝাড়ফুঁক করল। যার দরুন ব্যক্তিটি ভাল হয়ে গেল এবং ঝাড়ফুঁককারীকে বকরীর একটি ক্ষুদ্র পাল দেয়া হলো। সে তা নিতে আপত্তি জানালো এবং সে বলল, যতক্ষন তা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বর্ণনা না করি-(ততক্ষন গ্রহণ করতে পারি না)। অতঃপর সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বিষয়টি তাঁর নিকট বর্ণনা করে সে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর শপথ! আমি ফাতিহাতুল কিতাব ছাড়া ভিন্ন কোন কিছু দিয়ে ঝাড়ফুঁক করিনি। সে সময় তিনি মৃদু হাসঁলেন এবং বললেন, তুমি কি করে বুঝলে যে, তা দিয়ে ঝাড়ফুঁক করা যায়? অতঃপর বললেন, তাদের নিকট থেকে তা নিয়ে নাও এবং তোমাদের সঙ্গে আমার জন্যও একাংশ রেখো। (ই.ফা. ৫৫৪৫, ই.সে. ৫৫৭০) আবূ বিশর (রহঃ) তিনি বলেন, যে (ওঝা) উম্মুল কুরআন-সূরা আল-ফাতিহাহ্ পাঠ করতে লাগল এবং তার থু-থু একত্রে করে থুক দিতে লাগল। ফলে ব্যক্তিটি সুস্থ হয়ে গেল। (ই.ফা ৫৫৪৬, ই.সে. ৫৫৭১) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা একটি স্থানে নামলাম। অতঃপর আমাদের নিকট একটি মহিলা এসে বলল, এলাকার সর্দারকে সাপে কেটেছে, তোমাদের মাঝে কি কোন ঝাড়ফুঁককারী আছে? সে সময় আমাদের এক লোক উঠে তার সাথে গেল- সে যে সুন্দর ঝাড়ফুঁক করতে পারে তা আমাদের জানা ছিল না। সে সূরা আল-ফাতিহা দ্বারা তাকে ঝাড়ফুঁক করল। এতে সে সুস্থ হয়ে গেল। তখন তারা তাকে একপাল বকরী দিল এবং আমাদের দুধ পান করাল। আমরা বললাম, তুমি কি ভাল ঝাড়ফুঁক করতে জানতে? সে বলল, আমি তো সূরা আল-ফাতিহাহ্ ব্যতীত আর কিছু দিয়ে তাকে ঝাড়ফুঁক করিনি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি বললাম, তোমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গমন না করা পর্যন্ত ঐ বকরীগুলোকে এখান হতে নিয়ে যেওনা। তারপরে আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে তাঁর নিকট তা পেশ করলাম। তিনি বললেন, সে-কি করে বুঝল যে, এ সূরাটি দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা যায়? তোমরা বকরীগুলো বন্টন করে নাও এবং আমার জন্যে তোমাদের সাথে একটি অংশ রেখ। (ই.ফা. ৫৫৪৭, ই.সে. ৫৫৭২) হিশাম (রহঃ) মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) .......... হিশাম (রহঃ) এ সূত্রে অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি বলেছেন-সে সময় তার সঙ্গে আমাদের এক লোক উঠে দাঁড়াল-যাকে আমরা ঝাড়ফুঁক বিষয়ে (পারদর্শী) মনে করতাম না। (ই.ফা. ৫৫৪৮, ই.সে. ৫৫৭৩)

【24】

ঝাড়ফুঁকের সময় আক্রান্ত জায়গায় হাত রাখা মুস্তাহাব

‘উসমান ইবনু আবুল ‘আস-সাকাফী (রাঃ) ‘উসমান ইবনু আবুল ‘আস-সাকাফী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট একটি ব্যথার অভিযোগ করলেন, যা তিনি ইসলাম গ্রহণের পর থেকে তার দেহে অনুভব করছেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তোমার শরীরের যে অংশ ব্যথাযুক্ত হয়, তার উপরে তোমার হাত রেখে তিনবার ‘বিসমিল্লা-হ’ বলবে এবং সাতবার বলবে- “আল্লাহ এবং তাঁর ক্ষমতার আশ্রয় প্রার্থনা করছি-যা আমি অনুভব করি এবং যা ধারণা করি তার অনিষ্ট হতে।” (ই. ফা. ৫৫৫১, ই. সে. ৫৫৭৪)

【25】

সালাতে কুমন্ত্রণাদাতা শাইতান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করা

‘আবদুল আ’লা (রহঃ) ‘আবদুল আ’লা (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, ‘উসমান ইবনু আবুল আস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন-হে আল্লাহর রসূল! শাইতান আমার, আমার সালাত ও কিরাআতের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং সব কিছুতে গোলমাল বাধিয়ে দেয়। তখন রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এটা এক (প্রকারের) শাইতান-যার নাম ‘খিনযিব’। যে সময় তুমি তার উপস্থিতি বুঝতে পারবে তখন (আঊযুবিল্লাহ পড়ে) তার অনিষ্ট হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে তিনবার তোমার বাম পাশে থু থু ফেলবে। তিনি বলেন, তারপরে আমি তা করলাম আর আল্লাহ আমার হতে তা দূর করে দিলেন। (ই.ফা. ৫৫৫০, ই.সে. ৫৫৭৫) তিনি ‘উসমান ইবনু আবূল আস (রাঃ) মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) ...........তিনি ‘উসমান ইবনু আবূল আস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এলেন। তারপর অবিকল (হাদীস) বর্ণনা করেছেন, কিন্তু সালিম ইবনু নূহ্ ‘তিনবার এর কথাটি তার হাদীসে বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৫৫৫১, ই.সে. ৫৫৭৬) ‘উসমান ইবনু আবুল আস্-সাকাফী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল!....... অতঃপর তাদের বর্ণিত হাদীসের অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৫৫২, ই.সে. ৫৫৭৭)

【26】

প্রতিটি রোগের প্রতিকার রয়েছে এবং চিকিৎসা করা মুস্তাহাব

জাবির (রাঃ) হারূন ইবনু মা‘রূফ এবং আবূ তাহির ও আহমাদ ইবনু ‘ঈসা (রহঃ) ......জাবির (রাঃ) এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ননা করেন যে, তিনি বলেছেন-প্রতিটি ব্যাধির প্রতিকার রয়েছে। অতএব রোগে যথাযথ ঔষধ প্রয়োগ করা হলে আল্লাহর ইচ্ছায় আরোগ্য লাভ হয়। (ই.ফা. ৫৫৫৩, ই.সে. ৫৫৭৮) ‘আসিম ইবনু ‘উমার ইবনু কাতাদাহ্ (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আল-মুকাননা’ (রহঃ) কে অসুস্থতার দরুন দেখতে গেলেন। কিছুক্ষন পরে তিনি বললেন-যে পর্যন্ত না তুমি শিঙ্গা লাগাবে সে পর্যন্ত আমি স্থান ত্যাগ করব না। কারণ, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, তাতে শিফা রয়েছে। (ই.ফা. ৫৫৫৪, ই.সে. ৫৫৭৯) ‘আসিম ইবনু ‘উমার ইবনু কাতাদাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাদের পরিবারে এলেন, তখন জনৈক লোক খুজলী-পাঁচড়ায় অথবা (বর্ণনা সংশয়) -তিনি বললেন, আঘাতে অসুস্থ হয়েছিল। তিনি বললেন, তুমি কি অসুস্থতাবোধ করছো? সে বলল-আমার খুজলি-পাঁচড়া আমাকে ভয়স্কর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। তিনি তখন (খাদিমকে) বললেন, হে যুবক! আমার নিকট একজন শিঙ্গা প্রয়োগকারী (বৈদ্য) নিয়ে আসো। তখন তিনি তাকে বললেন, বৈদ্যকে দিয়ে আপনি কি করবেন, হে আবূ ‘আবদুল্লাহ? তিনি বললেন, আমি তাতে একটা শিঙ্গার নল ঝুলাতে চাই। সে বলল, আল্লাহর শপথ! মাছি আমার শরীরে বসলে কিংবা কাপড়ের ছোঁয়া আমার শরীরে লাগলে তা-ই আমাকে বেদনা দেয় এবং আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে- (তাহলে শিঙ্গার বেদনা কি করে সহ্য করবো)? তারপরে তিনি যখন ঐ ব্যাপারে তার ধৈর্যহারা লক্ষ্য করলেন তখন বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের ব্যবস্থাপত্রের কোন কিছুতে যদি কল্যাণ থেকে থাকে তাহলে তা শিঙ্গার নল অথবা মধুর শরবত পান অথবা আগুনের সেঁকে রয়েছে। রসুলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আরও) বলেছেন-(নিতান্ত প্রয়োজন না পড়লে আমি গরম লোহার সেঁক লাগিয়ে চিকিৎসা করা অপছন্দ করি। বর্ণনাকারী বলেন, সে একজন শিঙ্গাবিদ (বৈদ্য) নিয়ে এলো, সে তার শিঙ্গা লাগাল। ফলে ব্যথানুভুতি বিদুরিত হয়ে গেল। (ই.ফা. ৫৫৫৫, ই.সে. ৫৫৮০) জাবির (রাঃ) কুতাইবাহ্ ইবনু সা’ঈদ এবং মুহাম্মাদ ইবনু রুম্হ (রহঃ) …… জাবির (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট শিঙ্গা লাগানোর বিষয়ে অনুমতি চাইলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে শিঙ্গা লাগিয়ে দেয়ার জন্য আবূ তাইবাহ্ (রাঃ) কে নির্দেশ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় যে, তিনি (ঊর্ধ্বতন বর্ণনাকারী) বলেছেন যে, সে ছিল তাঁর দুধ ভাই অথবা নাবালক কিশোর। (ই. ফা. ৫৫৫৬, ই. সে. ৫৫৮১) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) এর নিকট জনৈক ডাক্তার প্রেরণ করলেন। সে তার একটি ধমনী কর্তন করে দিল, পরে লোহা গরম করে (রক্ত বন্ধ করার জন্য) তাতে সেঁক দিয়ে দিল। (ই. ফা. ৫৫৫৭, ই. সে. ৫৫৮২) আ’মাশ (রহঃ) ‘উসমান ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ), ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) …… আ’মাশ (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি ‘সে তাঁর একটি ধমনী কর্তন করে দিল’- কথাটি বর্ণনা করেননি। (ই. ফা. ৫৫৫৮, ই. সে. ৫৫৮৩) আবূ সুফ্ইয়ান (রহঃ) বিশ্র ইবনু খালিদ…… আবূ সুফ্ইয়ান (রহঃ) বলেন, আমি জাবির (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, খন্দক যুদ্ধে উবাই (রাঃ) এর হাত (কিংবা পা) এর মূল ধমনীতে তীর লাগানো হলো, তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে লোহা গরম করে দাগ দিলেন। (ই. ফা. ৫৫৫৯, ই. সে.৫৫৮৪) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) এর মূল রগে তীর লাগানো হলো। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্বহস্তে একটি তীর ফলক দ্বারা তার রগ কর্তন করে দাগ দিয়ে দিলেন। তারপর তা ফুলে উঠলে দ্বিতীয়বার দাগ দিয়ে দিলেন। (ই. ফা. ৫৫৬০, ই. সে. ৫৫৮৫) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আহ্মাদ ইবনু সা’ঈদ ইবনু সাখ্র দারিমী (রহঃ) …… ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে রিওয়ায়াত করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একবার) শিঙ্গা নিলেন ও শিঙ্গাবিদকে তার বিনিময় দিলেন এবং একবার তিনি নাকে ঔষধের ফোটা নিলেন। (ই. ফা. ৫৫৬১, ই. সে. ৫৫৮৬) ‘আম্‌র ইবনু ‘আমির আনসারী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রহঃ) কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিঙ্গা নিয়েছিলেন - আর তিনি (যথার্থ পারিশ্রমিকও দিয়েছিলেন- কেননা, তিনি) মজুরির বিষয়ে কারো প্রতি যুল্ম করতেন না। (ই. ফা. ৫৫৬২, ই. সে. ৫৫৮৭) ইবনু ‘উমার (রাঃ) যুহায়র ইবনু হার্ব (রহঃ) ও মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) …… ইবনু ‘উমার (রাঃ) এর সানাদে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে রিওয়ায়াত করেন যে, তিনি বলেছেনঃ জ্বর হলো জাহান্নামের উত্তাপ তাই পানি দিয়ে তাকে শীতল করো। (ই. ফা. ৫৫৬৩, ই. সে. ৫৫৮৮) ইবনু ‘উমার (রাঃ) ইবনু নুমায়র ও আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ) …… ইবনু ‘উমার (রাঃ) এর সানাদে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জ্বরের প্রচন্ডতা আসে জাহান্নামের তাপ হতে। তাই পানি দিয়ে তোমরা তাকে শীতল করবে। (ই. ফা. ৫৫৬৪, ই. সে. ৫৫৮৯) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জ্বর জাহান্নামের সঞ্চিত উত্তাপ; তাই তাকে পানি দিয়ে নিভিয়ে দাও। (ই. ফা. ৫৫৬৫, ই. সে. ৫৫৯০) ইবনু ‘উমার (রাঃ) আহ্‌মাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু হাকাম (রহঃ) এবং হারূন ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) ...... ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে রিওয়ায়াত করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জ্বর জাহান্নামের সঞ্চিত উত্তাপ; তাই তাকে পানি দিয়ে শীতল করে দাও। (ই. ফা. ৫৫৬৬, ই. সে. ৫৫৯১) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) আবূ বাক্‌র ইবনু আবূ শাইবাহ্‌ ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ...... ‘আয়িশা (রাঃ) হতে রিওয়ায়াত করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জ্বর জাহান্নামের সঞ্চিত উত্তাপ; তাই তাকে পানি দ্বারা শীতল করো। (ই. ফা. ৫৫৬৭, ই. সে. ৫৫৯২) হিশাম (রহঃ) ইসহাক্‌ ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) ...... হিশাম (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূত্রে অবিকল রিওয়ায়াত করেছেন। (ই. ফা. ৫৫৬৮, ই. সে. ৫৫৯৩) আসমা (রহঃ) তার নিকট জ্বরাক্রান্ত কোন স্ত্রীলোককে নিয়ে আসা হলে তিনি পানি নিয়ে আসতে বলতেন। এরপর তা তার বক্ষের উপর ঢেলে দিতেন এবং বলতেন- রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তাকে পানি দিয়ে শীতল করো। তিনি আরও বলেছেন, তা জাহান্নামের সঞ্চিত উত্তাপ। (ই. ফা. ৫৫৬৯, ই. সে. ৫৫৯৪) হিশাম (রহঃ) আবূ কুরায়ব (রহঃ) ...... হিশাম (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূত্রে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে [আবূ কুরায়ব (রহঃ) -এর ঊর্ধ্বতন বর্ণনাকারী] ইবনু নুমায়র (রহঃ) - এর বর্ণিত হাদীসে আছে- ‘তার (রোগিনী) ও তার জামার ফাঁকা জায়গার মধ্যে পানি প্রবাহিত করে দিতেন’। আর (অন্য ঊর্ধ্বতন বর্ণনাকারী) উসামাহ্‌ (রহঃ) -এর হাদীসে ‘তা জাহান্নামের সঞ্চিত তাপ’ কথাটি তিনি বর্ণনা করেননি। (ই. ফা. ৫৫৭০, ই. সে. ৫৫৯৫) ‘আবায়াহ্‌ ইবনু রিফা‘আহ্‌ (রহঃ) হান্নাদ ইবনু সারী (রহঃ) ...... ‘আবায়াহ্‌ ইবনু রিফা‘আহ্‌ (রহঃ) -এর সানাদে তাঁর দাদা রাফি‘ ইবনু খাদিজ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আমি বলতে শুনেছি যে, জ্বর জাহান্নামের তীব্র উত্তাপের অংশ বিশেষ, তাই তোমরা তাকে পানি দ্বারা শীতল করো। (ই. ফা. ৫৫৭১, ই. সে. ৫৫৯৬) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) আবূ বাক্‌র ইবনু শাইবাহ্‌ (রহঃ) ...... মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) , মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম (রহঃ) ও আবূ বাক্‌র ইবনু নাফি‘ (রহঃ) ...... রাফি‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) রিওয়ায়াত করেন, তিনি বলেন, আমি রসূলিল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, জ্বর জাহান্নামের উত্তাপ হতে (উদ্ভূত) । তাই তোমাদের পক্ষ হতে তাকে পানি দিয়ে শীতল করো। তবে বর্ণনাকারী আবূ বাক্‌র (রহঃ) ‘তোমাদের পক্ষ হতে’ অংশটুকু বর্ণনা করেননি। (ই. ফা. ৫৫৭২, ই. সে. ৫৫৯৭)

【27】

মুখের কিনারা দিয়ে ঔষধ খাওয়া প্রসঙ্গে

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অসুস্থতার সময় তাঁর মুখের কিনারায় ঔষধ ঢেলে দিলাম; তখন তিনি ইঙ্গিত করেলন যে, আমার মুখে ওষুধ দিও না। আমরা বললাম, এটা ওষুধের প্রতি রোগীর অনীহার কারণ। অতঃপর যখন তিনি জ্ঞান ফিরে পেলেন, তখন বললেন, তোমাদের সবার মুখের কিনারায় ওষুধ ঢেলে দেয়া হবে- তবে ‘আব্বাস ছাড়া; কেননা তিনি তোমাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন না। (ই. ফা. ৫৫৭৩, ই. সে. ৫৫৯৮)

【28】

ভারতীয় চন্দন দ্বারা চিকিৎসা করা- সেটাই কুস্‌ত

‘উক্কাশাহ্‌ ইবনু মিহ্‌সান-এর ভগ্নি উম্মু কায়স বিনতু মিহ্‌সান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার এক ছেলেকে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলাম, সে তখনও (সাধারণ) খাবার গ্রহণের বয়সে পৌঁছেনি- বাচ্চাটি তাঁর শরীরে প্রস্রাব করে দিল। তিনি পানি আনালেন এবং তা ছিটিয়ে দিলেন। (ই. ফা. ৫৫৭৪, ই. সে. ৫৫৯৯) বর্ণনাকারী তিনি বলেন, আর একবার আমি আমার (এক) ছেলেকে নিয়ে তাঁর নিকট প্রবেশ করলাম- যার গলদেশে ব্যথার কারণে আমি তার (নাসারন্ধ্রে পাকানো নেকড়া দ্বারা) যন্ত্রনা সারানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। তিনি বললেন, নেকড়ার এ প্রক্রিয়ায় তোমাদের ছেলে-মেয়ের গলার ব্যথার চিকিৎসা করো কেন? তোমরা (বরং) হিন্দুস্তানী চন্দন ব্যবহার করবে। কারণ এতে সাতটি (রোগের) নিরাময় আছে। তন্মধ্যে একটি (আরবি) গলা ব্যথায় নাকে হিন্দী চন্দনের নির্যাস দেয়া হবে, আর (আরবি) চোয়ালের এক পার্শ্ব দিয়ে ঢেলে দেয়া হবে। (ই. ফা. ৫৫৭৪, ই. সে. ৫৫৯৯) ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উতবাহ্‌ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) উম্মু কায়স বিনতু মিহ্‌সান (রাঃ) তিনি ছিলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর হাতে বাই‘আত গ্রহণকারিণী প্রথম পর্যায়ের মুহাজির নারীগণের অন্যতমা। আর তিনি হলেন বানূ আসাদ ইবনু খুযাইমার একজন সদস্য ‘উক্কাশাহ্‌ ইবনু মিহ্‌সান (রাঃ) -এর ভগ্নি। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (উম্মু কায়স) আমাকে সংবাদ জানিয়েছন যে, তিনি তার একটি ছেলেকে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট আসলেন, যে তখনও (সাধারণ) খাদ্য খাওয়ার উপযোগী হয়নি। আর তখন তিনি পাকানো নেকড়া নাসারন্দ্রে ঢুকিয়ে ঐ ছেলেটির গলা ব্যাথা সাড়ানোর ব্যবস্থা করে ছিলেন। বর্ণনাকারী ইউনুস (রহঃ) বলেন, (আরবি) অর্থ (আরবি) অর্থাৎ- ঘাড়ের আশেপাশে ব্যথা বা রক্ত জমার আশঙ্কায় নাসিকারন্ধ্রে নেকড়া ঢুকিয়ে নিরাময়ের বন্দোবস্ত করেছিলেন। তিনি বলেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা পাকানো নেকড়া ঢুকিয়ে তোমাদের বাচ্চাদের নিরাময়ের বন্দোবস্ত করো কেন? তোমরা (বরং) এ ভারতীয় চন্দন ব্যবহার করবে, কেননা তাতে নিশ্চয়ই সাতটি (রোগের) ওষুধ আছে। তার মধ্যে (আরবি) একটি। (ই. ফা. ৫৫৭৫, ই. সে. ৫৬০০) ‘উবাইদুল্লাহ তিনি আমাকে আরও জানিয়েছেন যে, তার ঐ ছেলেটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোলে প্রস্রাব করে দিল। সে সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামান্য পানি নিয়ে আসতে বললেন এবং তার প্রস্রাবের উপর ঢেলে দিলেন, কিন্তু একেবারে পুরোপুরি ধুলেন না। (ই. ফা. ৫৫৭৫, ই. সে. ৫৬০০)

【29】

কালো জিরা দিয়ে চিকিৎসাকরণ

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, কালো জিরা সকল প্রকার রোগের উপশম আছে-তবে ‘আস্‌সাম’ ব্যতীত। আর ‘আস্‌সা-ম’ হলো মৃত্যু। এর ‘আল হাব্বাতুস্‌ সাওদা’ হলো (স্থানীয় ভাষায়) ‘শূনীয’ (অর্থাৎ- কালো জিরা)। (ই. ফা. ৫৫৭৬, ই. সে. ৫৬০১) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) আবূ তাহির (রহঃ) ...... আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) -এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে (পূর্বোক্ত) ‘উকায়ল (রহঃ)-এর হাদীসের অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে (দ্বিতীয় সানাদে) সুফ্‌ইয়ান (রহঃ) ও (প্রথম সূত্রে) ইউনুস (রহঃ)-এর হাদীসে ‘আল হাব্বাতুস্‌ সাওদা রয়েছে। (তার বিশ্লেষণে) তিনি ‘শূণীয’ শব্দটি বলেননি। (ই. ফা. ৫৫৭৬, ই. সে. ৫৬০২) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু আইয়ুব, কুতাইবাহ্‌ ইবনু সা‘ইদ ও ইবনু হুজর (রহঃ) ...আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মৃত্যু ছাড়া এমন কোন রোগ নেই কালো জিরায় যার আরোগ্যতা নেই। (ই. ফা ৫৫১৫, ই. সে ৫৬০৩)

【30】

তালবীনাহ্‌- (সাগু-বার্লি তরল হালুয়া) রোগীর অন্তরের জন্য প্রশান্তিদায়ক

‘উরওয়াহ্‌ (রহঃ) ‘আবদুল মালিক ইবনু শু‘আয়ব ইবনু লায়স ইবনু সা‘দ (রহঃ) ‘উরওয়াহ্‌ (রহঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তাঁর নীতি ছিল যে, যখন তার পরিবারের কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করতো এবং সে প্রেক্ষিতে মহিলাগণ একত্রিত হত, তারপরে পরিবারের লোক ও বিশিষ্ট (আত্নীয়) ছাড়া অবশিষ্টরা চলে যেত, তখন তিনি এক ডেকচি তালবীনাহ্‌ রান্না করার আদেশ দিতেন। তা রান্না করা হত; অতঃপর ‘সারীদ’ প্রস্তুত করে তালবীনাহ্‌ তার উপর ঢেলে দেয়া হত। অতঃপর তিনি বলতেন, এটা হতে তোমরা খাও। কারণ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি ‘তালবীনাহ্‌’ রোগীর মনে প্রশান্তি দেয় এবং দুঃখ কিছুটা লাঘব করে। (ই.ফা. ৫৫৭৮, ই. সে. ৫৬০৪)

【31】

মধু পানে চিকিৎসা প্রসঙ্গ

আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈক লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বলল, আমার ভাইয়ের উদারাময় হচ্ছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে মধু পান করাও। সে তাকে মধুপান করালো। তারপর এসে বলল, আমি তাকে মধু পান করিয়েছি কিন্তু তার পীড়া আরও বেড়ে গেছে। তিনি এভাবে তিনবার বললেন। অতঃপর লোকটি চতুর্থবার এসে বললে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে মধু পান করাও। লোকটি বলল, মধুপান করিয়েছি কিন্তু উদারাময় ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহই সত্য বলেছেন, তোমার ভাইয়ের পেটের যন্ত্রণাটি মিথ্যা। অতঃপর পুনরায় তাকে পান করালে সুস্থ হয়ে গেল। (ই. ফা. ৫৫৭৯, ই. সে. ৫৬০৫) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) জনৈক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বলল, আমার ভাইয়ের উদারাময় হয়েছে। তিনি বললেন, তাকে মধু পান করাও। ... হাদীসের বাকী অংশটুকু শু‘বাহ্‌ বর্ণিত হাদীসের অর্থেই বর্ণিত হয়েছেন। (ই. ফা. ৫৫৭৯, ই. সে. ৫৬০৬)

【32】

প্লেগ, লক্ষণ ও জ্যোতিষীর গণনা ইত্যাদির বিবরণ

‘আমির (রহঃ) তিনি তাঁর আব্বা সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ (রাঃ) -কে এ মর্মে প্রশ্ন করতে শুনেছেন যে, আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট প্লেগ সম্বন্ধে কি শুনেছেন? তখন উসামাহ্‌ (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্লেগ একটি ‘আযাব যা বানী ইস্‌রাঈল অথবা (বর্ণনা সংশয়) যারা তোমাদের আগে ছিল তাদের উপরে প্রেরণ করা হয়েছিল। অতএব তোমরা কোন মহল্লায় প্লেগের ব্যাপারে শুনলে সেখানে যেও না। আর কোন এলাকায় প্লেগ চোখে পড়লে এবং তোমরা সেখানে অবস্থানরত থাকলে সেখান হতে বের হয়ে যাবে না। বর্ণনাকারী আবূ নায্‌র (রহঃ) বলেছেন, শুধু পলায়নের লক্ষ্যে সে জায়গা ছেড়ে যেও না। (ই.ফা. ৫৫৮০, ই. সে. ৫৬০৭) উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্লেগ শাস্তির প্রতীক। মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ তা‘আলা তা দ্বারা তাঁর বান্দাদের কথিপয় ব্যক্তিকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। তাই কোন অঞ্চলে এর প্রভাবের খবর পেলে তোমরা সেথায় যেও না এবং তোমরা কোন অঞ্চলে অবস্থানকালে সেখানে প্লেগ লক্ষ্য করলে সেখান থেকে পালিয়ে যাবে না। এ বর্ণনা কা‘নাব (রহঃ) -এর। আর কুতাইবাহ্‌ (রহঃ) -এর বর্ণনাও সে রকম। (ই. ফা. ৫৫৮১, ই. সে. ৫৬০৮) উসামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এ প্লেগ একটি গযব, যা তোমাদের পূর্বেকার লোকদের উপর অথবা বানী-ইস্রাঈলের উপরে চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। সুতরাং কোন অঞ্চলে তা লক্ষ্য করলে তা থেকে পালানোর জন্য সে অঞ্চল ছেড়ে যেওনা এবং কোন অঞ্চলে প্লেগ লক্ষ্য করলে সেথায় অনুপ্রবেশ ও করো না। (ই.ফা. ৫৫৮২, ই.সে. ৫৬০৯) ‘আমির ইবনু সা‘দ (রহঃ) জনৈক লোক সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) -কে প্লেগ সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ (রাঃ) বললেন, আমি সে ব্যাপারে তোমাকে সংবাদ দিচ্ছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তা একটি গযব অথবা একটি মহামারী যা আল্লাহ তা‘আলা বানী ইস্‌রাঈলের একটি উপদল কিংবা তোমাদের পূর্বেকার কোন একদল ব্যক্তির উপরে প্রেরণ করেছিলেন। অতএব কোন অঞ্চলে তার কথা তোমরা জানলে সেথায় তোমরা প্রবেশ করো না; তদ্রুপ কোন তোমাদের উপর তা এসে পড়লে সেখান থেকে পালিয়ে যেও না। (ই.ফা. ৫৫৮৩, ই.সে. ৫৬১০) আবূ বাক্‌র ইবনু আবূ শাইবাহ্‌ (রাঃ) আবূ রাবী‘ সুলাইমান ইবনু দাঊদ, কুতাইবাহ্‌ ইবনু সা‘ঈদ ও আবূ বাক্‌র ইবনু আবূ শাইবাহ্‌ (রাঃ) ‘আম্‌র ইবনু দীনার (রহঃ) হতে ইবনু জারায়জ (রহঃ) -এর সূত্রে তাঁর বর্ণিত হাদীসের অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৫৮৪, ই.সে. ৫৬১১) উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ (রাঃ) আবূ তাহির আহ্‌মাদ ইবনু ‘আম্‌র ও হারমালাহ্‌ ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) …..উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ (রাঃ)-এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে রিওয়ায়াত করেন যে, তিনি বলেছেন, এ রোগ একটি মহামারী যা দ্বারা তোমাদের পূর্ববর্তী অনেক উম্মতকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। অতঃপর তা জমিনেই রয়ে গেছে, তাই এক সময় তা চলে যায় ও আরেক সময় তা ফিরে আসে। অতএব যে লোক কোন অঞ্চলে এ রোগের কথা শুনতে পারে সে যেন কোনক্রমেই সেখানে না যায়, আর যে লোক কোথাও থাকা অবস্থায় সেথায় তা এসে পড়ে যেখান হতে যেন সে পালিয়ে না যায়। (ই.ফা. ৫৫৮৫, ই.সে. ৫৬১২) যুহরী (রহঃ) আবূ কামিল জাহ্‌দারী (রহঃ) …..যুহরী (রহঃ) হতে ইউনুস (রহঃ) -এর সূত্রে তার বর্ণিত হাদীসের অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ৫৫৮৬, ই.সে. ৫৬১৩) হাবীব (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা মদীনায় ছিলাম। তখন আমার নিকট সংবাদ আসলো যে, কূফায় প্লেগের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। তখন ‘আতা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) প্রমুখ সাহাবাগণ আমাকে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম): যখন তুমি কোন অঞ্চলে অবস্থান করবে সেখানে তা প্রকাশ পেলে সেখান থেকে বের হয়ো না। আর যদি তোমার নিকট খবর পৌঁছে যে, তা কোন অঞ্চলে রয়েছে, তাহলে সেখানে গমন করো না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম- এ বর্ণনা কার পক্ষ হতে? তাঁরা বললেন, ‘আমির ইবনু সা‘দ (রহঃ) হতে-তিনি তা বর্ণনা করে থাকেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি তাঁর নিকট গেলাম। তারা বলল, তিনি গৃহে নেই। তখন আমি তাঁর ভাই ইব্‌রাহীম ইবনু সা‘দ (রহঃ) -এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, উসামাহ্‌ (রাঃ) যখন সা‘দকে হাদীস শুনাচ্ছিলেন, তখন আমি উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, এ রোগ একটি মহামারী অথবা একটি ‘আযাব কিংবা ‘আযাবের অবশিষ্টাংশ-যা দ্বারা তোমাদের পূর্বেকার কতিপয় লোককে শাস্তি দেয়া হয়েছিল। অতএব কোন অঞ্চলে তোমাদের অবস্থানকালে যদি তা থাকে সে সময় সেখান থেকে তোমরা বের হয়ো না। আর যদি তোমাদের নিকট খবর আসে যে, তা কোন অঞ্চলে দেখা দিয়েছে, তবে সেখানে গমন করো না। হাবীব (রহঃ) বলেন, তখন আমি ইব্‌রাহীম (রহঃ) -কে বললাম, আপনি কি শুনেছেন যখন উসামাহ্‌ (রাঃ) সা‘দ (রাঃ) -এর নিকট হাদীস বর্ণনা করেছিলেন, আর তিনি তা অস্বীকার করেননি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (ই.ফা. ৫৫৮৭, ই.সে. ৫৬১৪) শু‘বাহ্‌ (রহঃ) ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু মু‘আয (রহঃ) …..শু‘বাহ্‌ (রহঃ)-এর সূত্রে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি হাদীসের শুরুতে ‘আতা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) সম্পর্কিত ঘটনা পেশ করেননি। (ই.ফা. ৫৫৮৮, ই.সে. ৫৬১৫) সা‘দ ইবনু মালিক (রাঃ) আবূ বাক্‌র ইবনু আবূ শাইবাহ্‌ (রহঃ) ….সা‘দ ইবনু মালিক (রাঃ) খুযাইমাহ্‌ ইবনু সাবিত (রাঃ) ও উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অতঃপর শু‘বাহ (রহঃ) -এর হাদীসের অনুরুপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৫৮৯, ই.সে. ৫৬১৬) ইব্‌রাহীম ইবনু সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাসাম (রাঃ) তিনি বলেন, উসামাহ্‌ ইবনু যায়দ (রাঃ) ও সা‘দ (রাঃ) বসে বসে আলাপ করছিলেন। তাঁরা উভয়ে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (পূর্বোল্লেখিত) বর্ণনাকারীদের হাদীসের মতো। (ই.ফা. ৫৫৯০, ই.সে. ৫৬১৭) ইব্‌রাহীম ইবনু সা‘দ ইবনু মালিক (রাঃ) ওয়াহ্‌ব ইবনু বাকিয়্যাহ্‌ (রহঃ) …..ইব্‌রাহীম ইবনু সা‘দ ইবনু মালিক (রাঃ) তাঁর পিতা (সা‘দ) -এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উপরোল্লিখিত বর্ণনাকারীদের হাদীসের হুবাহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৫৯০, ই.সে. ৫৬১৮) ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া তামীমী (রহঃ) ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া তামীমী (রহঃ) …..‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে রিওয়ায়াত করেন যে, ‘উমার (রাঃ) শামের (সিরিয়ার) দিকে রওয়ানা হলেন। ‘সার্‌গ’ নামক স্থান পর্যন্ত পৌছালে ‘আজনাদ’ অধিবাসীদের (প্রতিনিধি ও অধিনায়ক) আবূ ‘উবাইদাহ্‌ ইবনু জার্‌রাহ্‌ ও তাঁর সহকর্মী গণ তাঁর সাথে দেখা করলেন। তখন তাঁরা সংবাদ দিলেন যে, শামে মহামারী আরাম্ভ হয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন-প্রাথমিক যুগের মুহাজিরদের আমার নিকট ডেকে আন। আমি তাদেরকে ডেকে নিয়ে আসলে তিনি তাঁদেরকে সংবাদ দিলেন যে, শামে মহামারী আরাম্ভ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে তাঁদের কাছে থেকে পরামর্শ চাইলেন। অতঃপর তাঁরা দ্বন্দে পড়ে গেল। তাঁদের কেউ কেউ বলল, আপনি একটি বিশেষ কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছেন, তাই আমরা আপনার ফিরে যাওয়া যথাযথ মনে করি না। আর কেউ কেউ বললেন, আপনার সঙ্গে অনেক প্রবীণ লোক এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণ রয়েছেন। তাই আমরা তাঁদেরকে এ মহামারীর সম্মুখে ছেড়ে দেয়া যুক্তিসঙ্গত মনে করি না। তিনি বললেন, আপনারা উঠুন! তারপর বললেন, আনসারীদের আমার নিকট ডেকে আনো। আমি তাঁদেরকে তাঁর নিকট ডেকে নিয়ে আসলে তিনি তাঁদের কাছেও পরামর্শ চাইলেন। তাঁরা মুহাজিরদের পন্থা অনুকরণ করলেন এবং মুহাজিরগণের মতো তাঁদের মধ্যেও দ্বিমত সৃষ্টি হলো। তিনি বললেন, আপনারা উঠুন! তারপর তিনি বললেন, (মক্কা) বিজয়ের পূর্বে হিজরতকারী কুরায়শের মুরুব্বীদের যারা এখানে আছেন, তাঁদের আমার নিকট পাঠাও। আমি তাঁদেরকে ডেকে আনলাম। তাঁদের দু’জনও কিন্তু ভিন্নমত পোষণ করলেন না। তাঁরা (সকলেই) বললেন, আমরা যুক্তিযুক্ত মনে করি যে, আপনি লোকদের নিয়ে ফিরে যান এবং তাঁদেরকে এ মহামারীর দিকে ঠেলে দিবেন না। তখন ‘উমার(রাঃ) লোকদের মাঝে ঘোষণা দিলেন, আমি ভোরে সাওয়ারীর উপর থাকবো, তোমরাও ভোরে সাওয়ারীর উপর আরোহণ করবে। তখন আবূ ‘উবাইদাহ্‌ ইবুন জার্‌রাহ্‌ (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র তাকদীর হতে ভেগে যাওয়া ? তখন ‘উমার(রাঃ) বললেন, হে আবূ ‘উবাইদাহ্! তুমি ছাড়া অন্য কেউ এমন করলে, (রাবী বলেন) ‘ উমার (রাঃ) তাঁর বিরুদ্ধাচারণ অপছন্দ করতেন। (তিনি বললেন) হ্যাঁ! আমরা আল্লাহ্‌র তাক্‌দীর হতে আল্লাহ্‌রই তাক্‌দীরের দিকে পলায়ন করছি। তোমার যদি একপাল উট থাকে আর তুমি একটি উপত্যকায় অবতীর্ণ হও যার দু’টি প্রান্তর রয়েছে, যার একটি সবুজ শ্যামল, অপরটি তৃণশূন্য; সে ক্ষেত্রে তুমি যদি সবুজ শ্যামল প্রান্তরে (উট) চরাও, তাহলে আল্লাহ্‌র তাকদীরেই সেখানে চরাবে আর যদি তৃণশূন্য প্রান্তরে চরাও, তাহলেও আল্লাহ্‌র তাকদীরেই সেখানে চরাবে। রাবী বলেন, এ সময়ে ‘আবদুল রহমান ইবনু ‘আওফ(রাঃ) এলেন, তিনি (এতক্ষণ) তাঁর কোন প্রয়োজনে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন, এ বিষয়ে আমার নিকট (হাদীসের) ‘ইল্‌ম রয়েছে। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যখন তোমরা কোন এলাকায় সেটার খবর শুনতে পাও, তখন তার উপরে (দুঃসাহস দেখিয়ে) এগিয়ে যাবে না। আর যখন কোন দেশে তোমাদের সেখানে থাকা অবস্থায় তা দেখা যায়, তখন তা হতে পলায়ন করে বেরিয়ে পড়ো না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন ‘উমার(রাঃ) আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন। অতঃপর চলে গেলেন। (ই.ফা. ৫৫৯১, ই.সে. ৫৬১৯) মালিক (রহঃ) ইসহাক্‌ ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ), মুহাম্মাদ ইবনু রাফি‘ ও ‘আব্‌দ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) মা‘মার (রহঃ) উপরোক্ত সূত্রে মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের হুবুহু বর্ণনা করেছেন। মা‘মার (রহঃ)-এর হাদীসে অতিরিক্ত বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন [‘উমার(রাঃ)] আবূ ‘উবাইদাহ্‌কে আরো বললেন, বলো তো, সে যদি তৃণশূন্য উপত্যকায় চড়ায় আর সবুজ শ্যামল উপত্যকা পরিত্যাগ করে তাহলে তুমি কি তাকে ব্যর্থ সাব্যস্ত করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ! তিনি বললেন, তাহলে এবার চলো। বর্ণনাকারী বলেন, পরবর্তীতে সফর করে তিনি মদীনায় এসে বললেন, এটি অবস্থান স্থল অথবা তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ, এটি অবতরণ স্থল। (ই. ফা. ৫৫৯২, ই. সে. ৫৬২০) ইবনু শিহাব (রহঃ) আবূ তাহির (রহঃ) ও হারমালাহ্‌ ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সানাদে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস এটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেননি যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ৫৫৯২, ই. সে. ৫৬২১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমির ইবনু রাবী‘আহ্‌ ‘উমার (রাঃ) শামের দিকে সফরে বের হলেন, ‘সার্‌গ’ পর্যন্ত গমন করলে তাঁর নিকটে (খবর) আসল যে, শামে মহামারী লক্ষ্য করা গেছে। তখন ‘আবদুর রহ্‌মান ইবনু ‘আওফ(রাঃ) তাঁকে সংবাদ দিলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন কোন অঞ্চলে মহামারীর (সংবাদ) শুনবে, তখন তার দিকে অগ্রসর হবে না। আর যখন কোন অঞ্চলে সেটা দেখা দিবে, আর তোমরা সেখানে রয়েছো, তাহলে সেখান থেকে পালিয়ে বের হয়ে যেও না। অতঃপর ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) সার্‌গ হতে প্রত্যাবর্তন করলেন। সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (ইবনু ‘উমার) (রাঃ) হতে ইবনু শিহাব (রহঃ) -এর বর্ণনাতে রয়েছে যে, ‘আবদুর রহ্‌মান ইবনু ‘আওফ(রাঃ) -এর হাদীসের অনুসরণে ‘উমার(রাঃ) লোকদের নিয়ে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। (ই. ফা. ৫৫৯৩, ই. সে. ৫৬২২)

【33】

সংক্রমণ, কুলক্ষণ, হামাহ্, অনাহারে পেট কামড়ানো কীট, নক্ষত্রের প্রভাবে বর্ষণ ও পথ বিভ্রমের ভূত-প্রেতের অস্তিত্ব নেই; তবে অসুস্থ উটের মালিক তার উট সুস্থ উটের কাছে নিয়ে আসবে না

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) (এ হাদীস সে সময়ের) যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: সংক্রমণ ব্যাধি, ক্ষুধায় পেট কামড়ানো পোকা (বা সফর মাসের অগ্রপশ্চাৎকরণ) ও মৃত মানুষের আত্না হতে পেঁচার জন্ম বলতে কিছু নেই। সে সময় জনৈক বেদুঈন বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তাহলে সে উট পালের কি অবস্থা, যা কোন বালুকাময় ভূমিতে থাকে যা ব্যাধিমুক্ত বলবান। অতঃপর সেখানে খোচ-পাঁচড়া আক্রান্ত (কোন) উট এসে তাদের মধ্য প্রবেশ করে তাদের সবগুলোকে পাঁচড়ায় আক্রান্ত করে দেয়? তিনি বললেন, তাহলে প্রথম (উট) টিকে কে সংক্রমিত করেছিল? (ই. ফা. ৫৫৯৪, ই. সে. ৫৬২৩) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সংক্রামক ব্যাধি, কুলক্ষণ, অনাহারে পেট কামড়ানো পোকা ও হামাহ্‌-এসবের কোন অস্তিত্ব নেই। সে সময় জনৈক বেদুঈন আরব বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! বর্ণনাকারী ইউনুস (রহঃ) কর্তৃক রিওয়ায়াতকৃত হাদীসের অবিকল। (ই. ফা. ৫৫৯৫, ই. সে. ৫৬২৪) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সংক্রমণ বলতে কিছু নেই…..। সে সময় জনৈক বেদুঈন আরব দন্ডায়মান হলো, ….এর পরের অংশ ইউনুস ও সালিহ্‌ (রহঃ) এর হাদিসের মত বর্ণনা করেছেন। (পূর্বোক্ত সুত্রে) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ ইবনু উখ্‌তু নামির (রহঃ) বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: সংক্রামক ব্যাধি, অনাহারে পেট কামড়ানো পোকা এবং হামাহ্‌ বলতে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। (ই. ফা. ৫৫৯৬, ই. সে. ৫৬২৫) আবূ সালামাহ্‌ ইবনু ‘আবদুর রহ্‌মান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সংক্রমণ (এর অস্তিত্ব) নেই। তিনি আরও বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ব্যাধিযুক্ত উটপালের মালিক (অসুস্থ উটগুলোকে) সুস্থ উটপালের মালিকের (উটের) ধারে কাছে আনবে না। (ই. ফা. ৫৫৯৭, ই. সে. ৫৬২৬) আবূ সালামাহ্‌ (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) এ দু’টি হাদীসই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে রিওয়ায়াত করতেন। অতঃপর আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) তাঁর (প্রথম হাদীসের) ‘সংক্রমণ নেই’ বলা হতে চুপ থাকেন এবং অসুস্থ উটপালের মালিক সুস্থ উটপালের মালিকের নিকট আনবে না-এ বর্ণনায় অটল থাকেন। বর্ণনাকারী বলেন, (একদিন) আল্‌ হারিস ইবনু আবূ যুবাব (রহঃ) -তিনি আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) -এর চাচাত ভাই বললেন, হে আবূ হুরায়রা! আমি তো আপনাকে বলতে শুনতাম, আপনি এ হাদীসের সঙ্গে আরও একটি হাদীস আমাদের নিকট বর্ণনা করতেন, যা বর্ণনায় আপনি এখন নিশ্চুপ রয়েছেন। আপনি বলতেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘সংক্রমণ নেই’। তখন আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) অস্বীকার করলেন এবং বললেন, অসুস্থ পালের মালিক সুস্থ পালের মালিকের নিকট নিয়ে যাবে না। তখন হারিস(রহঃ) এ নিয়ে তাঁর সাথে তর্ক লিপ্ত হলেন। ফলে আবু হুরায়রা (রাঃ) গোস্বা হয়ে হাবশী ভাষায় কিছু বললেন। তিনি হারিস (রহঃ) -কে বললেন, তুমি কি বুঝতে পেরেছো আমি কি বলেছি? তিনি বললেন, না। আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) বললেন, আমি বলেছি, আমি অস্বীকার করছি। আবূ সালামাহ্‌ (রহঃ) বলেন, আমার জীবনের কসম! আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) নিশ্চই আমাদের নিকট হাদীস রিওয়ায়াত করতেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন ‘সংক্রমণ নেই’। এখন আমি জানি না যে, আবূ হুরায়রা্‌(রাঃ) ভুলে গেলেন, নাকি একটি দ্বারা অপরটিকে রহিত করে দিয়েছেন [২৮] (ই. ফা. ৫৫৯৭, ই. সে. ৫৬২৬) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সংক্রমণ (-এর বাস্তবতা) নেই- ঐ সঙ্গে এও বর্ণনা করতেন, পালের মালিক (তার) অসুস্থ উট অন্য মালিকের সুস্থ উটপালের নিকট নিয়ে আসবে না। অবশিষ্টাংশ বর্ণনাকারী ইউনুস (রহঃ) -এর হাদীসের হুবহু। (ই.ফা. ৫৫৯৮, ই.সে. ৫৬২৭) যুহ্‌রী (রহঃ) ‘আবুল্লাহ ইবনু ‘আবদুর রহ্‌মান দারিমী (রহঃ) …..যুহ্‌রী (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূত্রে হুবাহু রিওয়ায়াত করেছেন। (ই. ফা. ৫৫৯৯, ই. সে. ৫৬২৮) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সংক্রামক ব্যাধি, কুলক্ষণে পেঁচা, নক্ষত্র (প্রভাবে বর্ষণ) ও (ক্ষুধায় পেট কামড়ানো) পোকা- এসবের অস্তিত্ব নেই। (ই.ফা. ৫৬০০, ই.সে. ৫৬২৯) জাবির (রাযিঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সংক্রামক ব্যাধি, কুলক্ষণ ও (মাঠে ময়দানে পথ ভুলানো নানা রঙ্গে রূপধারী) ভূত-প্রেত (এর অস্তিত্ব) নেই। (ই.ফা. ৫৬০১, ই.সে. ৫৬৩০) জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সংক্রামক ব্যাধি, পথ ভুলানো ভূত এবং ক্ষুধায় পেট কামড়ানো পোকা (এর অস্তিত্ব) নেই। (ই.ফা. ৫৬০২, ই.সে. ৫৬৩১) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, সংক্রামক ব্যাধি, অনাহারে পেট কামড়ানো পোকা ও পথ ভুলানো ভূত (এর অস্তিত্ব) নেই। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি আবূ যুবায়র (রহঃ) -কে তাঁর শিষ্যদের নিকট নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণী (আরবি) এর ব্যাখ্যা দিতে শুনেছি। আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেছেন, (আরবি) হলো (আরবি) পেটের পোকা। জাবির (রাঃ) কে প্রশ্ন করা হল- কি রকম? তিনি বললেন, ‘ কথিত পেটের পোকাসমূহ’। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (আরবি) এর বিশ্লেষণ করেন নি। আবূ যুবায়র (রহঃ) বলেছেন, তা সেসব যারা বিভিন্ন রূপ ধরে মানুষ কে রাস্তা ভুলায়। (ই.ফা. ৫৬০৩, ই.সে. ৫৬৩২)

【34】

অশুভ লক্ষণ, সুলক্ষণ ও সম্ভব্য অপয়া বিষয়বস্তুর বিবরণ

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, কোন কুলক্ষণ নেই। তবে তার মাঝে উত্তম হল ফাল তথা শুভ-লক্ষণ। বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল! ‘ফাল’ কি? তিনি বললেন, (যেমন) এমন কিছু কথা উত্তম, যা তোমাদের কেউ শুনতে পায়। (ই.ফা. ৫৬০৪, ই.সে. ৫৬৩৩) যুহ্‌রী (রহঃ) ‘আবদুল মালিক ইবনু শু’আয়ব ইবনু লায়স, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুর রহ্‌মান দারিমী (রহঃ) যুহ্‌রী (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূত্রে হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে বর্ণনাকারী ‘উকায়ল(রহঃ) -এর হাদীস আছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত’। তিনি ‘আমি শুনেছি’ বলেন নি। আর রাবী শু‘আয়ব (রহঃ) তাঁর হাদীসে বলেছেন, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি’ , যেমন মা’মার (রহঃ) বলেছেন। (ই.ফা. ৫৬০৫, ই.সে. ৫৬৩৪) আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সংক্রমণ ও কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই; তবে ফাল ও শুভলক্ষণ (অর্থাৎ - ভাল শব্দ তথা উত্তম কথা) আমাকে বিমোহিত করে। (ই.ফা. ৫৬০৬, ই.সে. ৫৬৩৫) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) -এর সানাদে মালিক (রহঃ) -এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সংক্রমণ ও কুলক্ষণ(এর বৈধতা) নেই। তবে আমাকে আনন্দ দেয় ফাল ও সুলক্ষণ। বর্ণনাকারী বলেন, তখন বলা হলো, ফাল কী? তিনি বললেন, উত্তম কথা। (ই.ফা. ৫৬০৭, ই.সে. ৫৬৩৬) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, সংক্রমণ ও অশুভ লক্ষণ নেই। আর আমি পছন্দ করি উত্তম ফাল তথা ভাল কথা। (ই.ফা. ৫৬০৮, ই.সে. ৫৬৩৭) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, সংক্রমণ, পেঁচা ও কু-ধারণা (বিশ্বাসের বৈধতা) নেই; আর আমি ভাল ‘ফাল’ পছন্দ করি। (ই.ফা. ৫৬০৯, ই.সে ৫৬৩৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অশুভ লক্ষণ আছে ঘর, নারী ও ঘোড়ায়। (ই.ফা. ৫৬১০, ই.সে. ৫৬৩৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সংক্রমণ ও অশুভ বলতে কিছু নেই; তবে অশুভ লক্ষণ আছে তিনটি বস্তুতে স্ত্রী, ঘোড়া ও বাড়িতে। (ই.ফা. ৫৬১১, ই.সে. ৫৬৪০) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ইবনু আবূ ‘উমার (রাঃ) ...... ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) -এর দু’পুত্র সালিম ও হামযাহ্‌ (রহঃ) তাঁদের পিতার সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে, ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া, ‘আম্‌র আন্‌ নাকিদ ও যুহায়র ইবনু হার্‌ব (রহঃ) সালিম (রহঃ) তাঁর পিতার সনদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে, ‘আমর আন্‌ নাকিদ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) -এর সনদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে, ‘আবদুল মালিক ইবনু শু’আয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) , ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুর রহমান দারিমী (রহঃ) সালিম (রহঃ) তাঁর পিতার সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অশুভ লক্ষণের ব্যাপারে বর্ণনাকারী মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী ইউনুস ইবনু ইয়াযীদ ছাড়া এঁদের কেউ ইবনু ‘উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে সংক্রমণ ও অশুভ উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৫৬১২, ই.সে. ৫৬৪১) ইবনু ‘উমার (রাঃ) আহ্‌মাদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু হাকাম (রহঃ) ....ইবনু ‘উমার (রাঃ) -এর সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেনঃ যদি কোন কিছুতে অশুভ বলতে কিছু থাকে, তা হবে ঘোড়া, গৃহ ও মেয়ে লোক এটা সত্য। (ই.ফা. ৫৬১৩, ই.ফা. ৫৬৪২) শু’বাহ (রহঃ) হারূন ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) শু’বাহ (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে একই হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি [আরবীতে হাক্ক] (এটা সত্য) শব্দটি বলেননি। (ই.ফা. ৫৬১৪, ই.সে. ৫৬৪৩) হামযাহ্‌ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আবূ বাক্‌র ইবনু ইসহাক্‌ (রহঃ) .... হামযাহ্‌ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর সানাদে তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি অশুভ লক্ষণ কোন কিছুতে থেকে থাকে তাহলে তা রয়েছে ঘোড়া, ঘর-বাড়ি ও নারীর মাঝে। (ই.ফা. ৫৬১৫, ই.সে. ৫৬৪৪) সাহ্‌ল ইবনু সা’দ (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি তা থাকে তাহলে নারী, ঘোড়া ও ঘর-বাড়ি অর্থাৎ- অশুভ লক্ষণ। (ই.ফা. ৫৬১৬, ই.সে. ৫৬৪৫) সাহ্‌ল ইবনু সা’দ (রাঃ) আবূ বাক্‌র ইবনূ আবূ শাইবাহ্‌ (রহঃ) ..... সাহ্‌ল ইবনু সা’দ (রাঃ) -এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হুবহু রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৬১৭, ই.সে ৫৬৪৬) জাবির (রাঃ) ইসহাক্‌ ইবনু ইব্‌রাহীম হান্‌যালী (রহঃ) আবূ যুবায়র (রহঃ) ......... জাবির (রাঃ) থেকে শুনেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন কিছুতে যদি (অশুভ লক্ষণ) থেকে থাকে, তাহলে ঘর (আবাসস্থল), খাদিম ও ঘোড়া (এ তিনটি জিনিসে) রয়েছে। (ই.ফা. ৫৬১৮, ই.সে. ৫৬৪৭)

【35】

জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষীর কাছে গমনাগমন নিষিদ্ধ

মু’আবিয়াহ্‌ ইবনু হাকাম সুলামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! কিছু কর্মকান্ড আমরা অজ্ঞতার যুগে করতাম, (তার মধ্যে একটি হল) আমরা জ্যোতিষীর নিকট যেতাম। তিনি বললেন, আর জ্যোতিষীর নিকটে যেয়ো না। আমি বললাম, আমরা (নানা পদ্ধতিতে) ভাগ্য গণনা করতাম। তিনি বললেন, সেটি এমন একটি জিনিস, যা তোমাদের কেউ তার মনে উপলব্ধি করে, তবে সেটি যেন তোমাদের (কাজ-কর্ম হতে) বিরত না রাখে। (ই.ফা. ৫৬১৯, ই.সে. ৫৬৪৮) যুহরী (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি, ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম, আবদ ইবনু হুমায়দ ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ) যুহরী (রহঃ) হতে উপরোক্ত সূত্রে ইউনুস (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। কিন্তবর্ণনাকারী মালিক (রহঃ) তাঁর বর্ণিত হাদীসে ‘শুভাশুভ’ এর কথা উল্লেখ করেছেন। তাতে জ্যোতিষী এরব্যাপারটি উল্লেখ নেই। (ই. ফা. ৫৬২০, ই. সে. ৫৬৪৯) মু’আবিয়াহ ইবনু হাকাম সুলামী (রাঃ) মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ (রহঃ) ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) … মু’আবিয়াহ ইবনু হাকাম সুলামী (রাঃ) এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে, মু’আবিয়াহ (রাঃ) হতে আবূ সালামাহ (রহঃ) এর সানাদে যুহরী (রহঃ) এর অবিকল বর্ণনা করেছেন। কিন্ত ইয়াহইয়া ইবনু কাসীর (রহঃ) বর্ধিত করে বলেছেন, আমি (মু’আবিয়াহ) বললাম, আমাদের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে, যারা রেখা এঁকে(ভাগ্য নির্ধারণ) করে থাকে। তিনি বললেন, নবীদের মধ্যে একজন নবী রেখা অঙ্কন (ভাগ্য নির্ণয়) করতেন। সুতরাং যার রেখা তাঁর (রেখার) অবিকল হবে তা সেরূপই (সত্যই।) (ই. ফা. ৫৬২১, ই.সে. ৫৬৫০) আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জ্যোতিষীরা কোন ব্যাপারে আমাদের কোন কথা বলত, অতঃপর তা আমরাবাস্তবে প্রত্যক্ষ করতাম। তিনি বললেন, সেটি একটি বাস্তব সত্য কথা, যা কোন জ্বিন চুরি করে এনে সেটি তার দোসর ঠাকুরের কর্ণে প্রবেশ করাতো, আর সে তার সঙ্গে একশ’টি অবাস্তব মিথ্যা জুড়ে দিত। (ই. ফা. ৫৬২২, ই. সে.৫৬৫১) ‘আয়িশাহ (রাঃ) একদল লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট জ্যোতিষীদের ব্যাপারে জানতে চাইলো। সে সময় রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেন, ওরা (বাস্তব) কোন কিছুর উপরে (প্রতিষ্ঠিত) নয়। তারা বলল, হে আল্লাহর রসূল! তারা তো প্রায় সময় এমন কিছু বিষয়ে (আগাম) কথা বলে, যা বাস্তব হয়ে যায়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ঐ (একটি) কথা বাস্তব সত্যের অন্তর্ভুক্ত, যা জ্বিনেরা চুরি করে নিয়ে আসে এবং মুরগীর মতো কুট কুট করে তা তার দোসরের শ্রবণশক্তিতে ঢুকিয়ে দেয়। পরবর্তিতে তারা তার সঙ্গে শতাধিক মিথ্যা জুড়ে দেয়। (ই. ফা. ৫৬২৩, ই. সে.৫৬৫২) ইবনু শিহাব (রহঃ) আবূ তাহির (রহঃ) …. ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূত্রে যুহরী (রহঃ) হতে মা’কিল (রহঃ) এর হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ৫৬২৪, ই. সে.৫৬৫৩) আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীগণের মধ্যে আনসারদের জনৈক ব্যক্তি আমাকে সংবাদ দিয়েছে যে, তাঁরা এক রাত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে বসা ছিলেন। সে সময় একটি নক্ষত্র পতিত হলো, যার দরুন আলোকিত হয়ে উঠল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেন, এ ধরনের (তারকা) পতিত হলে অজ্ঞতার যুগে তোমরা কি বলতে? তারা বলল, আল্লাহ এবং তাঁর রসূলই অধিক ভাল জানেন। আমরা বলতাম, আজ রাতে মনে হয় কোন মহান লোকের ভুমিষ্ঠ হয়েছে অথবা কোন মহান লোক মৃত্যুবরণ করেছেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জেনে রাখো যে, তা কারো মৃত্যু কিংবা কারো জন্মের কারণে পতিত হয় না; কল্যাণময় ও মহান নামের অধিকারী আমাদের প্রতিপালক যখন কোন বিষয়ের সমাধান দেন, তখন আরশ বহনকারী ফেরেশতারা তাসবীহ পাঠ করে। অতঃপর তাসবীহ পাঠ করে সে আকাশের ফেরেশতারা, যারা তাদের পার্শ্ববর্তী; পরিশষে তাসবীহ পাঠ এ নিকটবর্তী (পৃথিবীর) আসমানের অধিবাসীদের পর্যন্ত পৌছে। অতঃপর আরশ বহনকারীদের (ফেরেশতা) পার্শ্ববতী যারা তাঁরা আরশ বহনকারীদের বলে তোমাদের প্রতিপালক কি বললেন? সে সময় তিনি তাদের যা কিছু বলেছেন, তারা সে সংবাদ বর্ণনা করে। বর্ণনাকারী বলেন, পরে আসমান সমূহের অধিবাসীরা একে অপরকে সংবাদ আদান-প্রদান করে। পরিশেষে এ নিকটবর্তীআকাশে সংবাদ পৌছে। সে সময় জ্বিনেরা অতর্কিতে গোপন খবরটি শুনে নেয় এবং তাদের দোসর জ্যোতিষীদের নিকট পৌছিয়ে দেয়, আর সাথে অতিরিক্ত কিছু জুড়ে দেয়। ফলে যা তারা ঠিকঠাকভাবে নিয়ে আসতে পারে, তাই ঠিক হয়; তবে তারা তাতে (কথামালা) সুবিন্যস্ত ও সংযোজন করে। (ই. ফা. ৫৬২৫, ই. সে.৫৬৫৪) যুহরী (রহঃ) যুহায়র ইবনু হারব আবূ তাহির হারমালাহ ও সালামাহ ইবনু শাবীব (রহঃ) … যুহরী (রহঃ) হতে উপরোক্ত সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কিন্ত ইউনুস (রহঃ) বলেছেন, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আনসার সাহাবীগণের কতিপয় লোক আমাকে বলেছেন। আর আওযা’ঈ (রহঃ) এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তবে তারা সেটার মধ্যে (কথামালা) সুবিন্যস্ত ও সংযোজিত করে দেয়। আর ইউনুস (রহঃ) এর হাদীসে আছে, এত তারা অতিরিক্ত ও অতিরঞ্জিত করে। ইউনুস (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে বাড়িয়ে বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “পরিশেষে যখন তাদের অন্তর হতে সংশয় দূর করে দেয়া হয়, সে সময় তারা বলে, তোমাদে স্রষ্টা কি বললেন? তারা বলে ঠিকই বলেছেন”- (সূরাহ সাবা ৩৪: ২৩) । আর মা’লিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে আওযা’ঈ (রহঃ) যেমন বলেছেন, তবে তাতে তারা সুবিন্যস্ত ও সংযোজিত করে এরই উল্লেখআছে। (ই. ফা. ৫৬২৬, ই. সে.৫৬৫৫) মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না আনাযী (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কতক স্ত্রীর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে লোক ‘আররাফ’ [২৯] (অর্থাৎ হারানো জিনিসের সংবাদদাতা) এর (গণকের) নিকট গেল এবং তাকে কোন ব্যাপারে প্রশ্ন করল চল্লিশ রাত্রি তার কোন সলাত গ্রহনযোগ্য হবে না। (ই. ফা. ৫৬২৭, ই. সে.৫৬৫৬)

【36】

কুষ্ঠ প্রভৃতি রোগাক্রান্ত ব্যক্তি হতে বেঁচে থাকা

আমর ইবনু শারীদ (রাঃ) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ (রহঃ) … আমর ইবনু শারীদ (রাঃ) এর সানাদে তাঁর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাকীফ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দলের মধ্য জনৈক কুষ্ঠ রোগী ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট (খবর) পাঠালেন যে, আমরা তোমকে বাই‘আত করে নিয়েছি, তুমি ফিরে যাও। [৩০] (ই. ফা. ৫৬২৮, ই. সে.৫৬৫৭)

【37】

সর্প ইত্যাদি হত্যা প্রসঙ্গ

আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পিষ্ঠে দুটি শুভ্র রেখাযুক্ত বিষধর সার্প হত্যা করার আদৈশ দিয়েছে। কারণ সেটা চোখের জ্যোতি হরণ করে নেয় এবং গর্ভস্থিত সন্তানের উপর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ফেলে। (ই. ফা. ৫৬২৯, ই. সে.৫৬৫৮) হিশাম (রহঃ) ইসহাক্‌ ইবনু ইব্‌রাহীম (রহঃ) হিশাম (রহঃ) ... উপরোল্লিখিত সূ্রেত হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন, ‘লেজ বিহীন পিঠে দু’টি শুভ্র রেখাযুক্ত সর্প’। (ই.ফা. ৫৬৩০, ই.সে. ৫৬৫৯) সালিম (রহঃ) আম্‌র ইবনু মুহাম্মাদ আন্‌ নাকিদ (রহঃ) ... সালিম (রহঃ) তাঁর পিতা সূ্ত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এমন সব সাপ যেগুলোর পিঠে দু’টি শুভ্র রেখাযুক্ত ও লেজবিহীন সাপ মেরে ফেলে। কারণ, এ দু’টি গর্ভপাত ঘটায় এবং চোখের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। বর্ণনাকারী বলেন, তাই ইবনু ‘উমার (রহঃ) যে কোন সর্প পেলে সাথে সাথে তাকে মেরে ফেলতেন। (একদিন) আবূ লুবাবাহ্‌ ইবনু ‘আবদুল মুন্‌যির (রহঃ) কিংবা যায়দ ইবনু খাত্তাব (রহঃ) তাকে লক্ষ্য করলেন যে, তিনি একটি সাপ মারার জন্য ছুটছেন। তখন তিনি [আবূ লুবাবাহ্‌ বা যায়দ (রহঃ) ] বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘর বাড়িতে বসবাসকারী (সাপ) হত্যা করতে বারণ করেছেন! (ই.ফা. ৫৬৩১, ই.সে. ৫৬৬০) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে আমি কুকুর ধ্বংসের নির্দেশ প্রদান করতে শুনেছি- তিনি বলতেন, সাপ আর কুকুরগুলো মেরে ফেল। আর (বিশেষত) পিঠে ডোরাকাটা ও লেজকাটা সাপ মেরে ফেল। কেননা, এ দু’টি মানুষের চোখের শক্তি কেড়ে নেয় এবং গর্ভবতীদের গর্ভপাত ঘটায়। (সানাদের মধ্যবর্তী) বর্ণনাকারী যুহ্‌রী (রহঃ) বলেন, আমাদের অনুমানে সেটি তাদের বিষের কারণে; তবে এ ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সর্বাধিক জ্ঞাত। বর্ণনাকারী সালিম (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেছেন, তারপরে আমার অবস্থা এমন হলো যে, কোন সর্প দেখলেই আমি তাকে হত্যা না করে ছাড়তাম না। একদিনের ঘটনা, আমি গৃহে অবস্থান করে এমন একটি একটি সাপ ধাওয়া করছিলাম। তখান যায়দ ইবনু খাত্তাব (রাঃ) অথবা আবূ লুবাবাহ্‌ (রাঃ) আমর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, আর আমি ধাওয়া করছিলাম। তিনি বললেন, থামো! হে ‘আবদুল্লাহ! তখন আমি বললাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো এদের হত্যা করার আদেশ দিয়েছেন। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘর-বাড়িতে অবস্থানকারী সাপ ধ্বংস করতে বারণও করেছেন। (ই.ফা. ৫৬৩২, ই.সে. ৫৬৬১) যুহ্‌রী (রহঃ) হারমালাহ্‌ ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া, ‘আব্‌দ ইবনু হুমায়দ ও হাসান হুলওয়ানী (রহঃ) যুহ্‌রী (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূ্রেত হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে (শেষ সানাদে) বর্ণনাকারী সালিহ্‌ (রহঃ) বলেছেন, ‘পরিশেষে আবূ লুবাবাহ্‌ ইবনু ‘আবদুল মুন্‌যির (রাঃ) এবং’ যায়দ ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আমাকে প্রত্যক্ষ করলেন... এবং তাঁরা উভয়ে বললেন যে, তিনি ঘর-বাড়িতে অবস্থানকারী সাপ হত্যা করতে বারণ করেছেন। আর (প্রথম সূত্রের) বর্ণনাকারী ইউসুস (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছে- ‘সব ধরনের সাপ মেরে ফেল’। তিনি ‘পিঠে ডোরাকাটা বিশিষ্ট ও লেজকাটা সাপ’ কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৫৬৩২, ই.সে. ৫৬৬২) নাফি’ (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু রুম্‌হ ও কুতাইবাহ্‌ ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) ... নাফি’ (রহঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, আবূ লুবাবাহ্‌ (রাঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) -এর সঙ্গে তাঁর গৃহে তাঁর জন্য একটি দরজা খুলে নেয়ার বিষয়ে কথা বলছিলেন-যেটা দ্বারা তিনি মাসজিদের দিকে চলাচলের রাস্তা কাছাকাঠি করতে পারবেন। তখন কিশোররা (দেয়াল খুঁড়তে গিয়ে) একটি সাপের খোলস পেল। সে সময় ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, ওটিকে সন্ধান করে বের করে হত্যা কর। তখন আবূ লুবাবাহ্‌ (রাঃ) বললেন, তোমরা সেটিকে হত্যা করো না। কারণ, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘর-বাড়িতে অবস্থানকারী সাপগুলোকে হত্যা করতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫৬৩৩, ই.সে. ৫৬৬৩) নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) সব ধরনের সাপ মেরে ফেলতেন। পরিশেষ আবূ লুবাবাহ্‌ ইবনু আবদুল মুন্‌যির আল-বাদ্‌রী (রাঃ) আমাদের হাদীস শুনালেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গৃহের সাপগুলোকে হত্যা করতে বারণ করেছেন। অতঃপর তিনি [ইবনু ‘উমার (রাঃ)] তা থেকে সংযত রইলেন। (ই.ফা. ৫৬৩৪, ই.সে. ৫৬৬৪) নাফি’ (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) খবর দিয়েছেন যে, তিনি আবূ লুবাবাহ্‌ (রাঃ) -কে ইবনু ‘উমার (রাঃ) -এর নিকট (হাদীসের) সংবাদ দিতে শুনেছেন এ মর্মে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গৃহের (ছোট-খাটো) সাপগুলো হত্যা করতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫৬৩৫, ই.সে. ৫৬৬৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) ও আবূ লুবাবাহ্‌ (রাঃ) ইসহাক্‌ ইবনু মূসা আনসারী (রহঃ) ... ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আবূ লুবাবাহ্‌ (রাঃ) -এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে .... (ভিন্ন সূত্রে) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু আসমা যুবা’ঈ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে এ মর্মে বর্ণিত যে, আবূ লুবাবাহ্‌ (রাঃ) তাঁকে (হাদীসের) সংবাদ দিয়েছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাড়ী-ঘরে অবস্থানকারী সাপগুলো হত্যা করতে বারণ করেছেন। (ই.ফা. ৫৬৩৬, ই.সে. ৫৬৬৬) নাফি’ (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) .. নাফি’ (রহঃ) সংবাদ দিয়েছেন যে, আবূ লুবাবাহ্‌ ইবনু ‘আবদুল মুন্‌যির আনসারী (রাঃ) কুবায় বসবাস করতেন। অতঃপর তিনি স্থান পরিবর্তন করে মাদীনায় (মাসজিদে নাবাবীর সন্নিকটে) আসলেন। এমতাবস্থায় যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাঁর [আবূ লুবাবাহ্‌ (রাঃ) -এর] সঙ্গে উপবিস্ট ছিলেন এবং তাঁর জন্য ছোট আাকরে একটি দরজা খুলছিলেন। অকস্মাৎ সে সময় তাঁরা বাড়ি ঘরে অবস্থানকারী একটি সাপ লক্ষ্য করলেন। তারা ওটিকে হত্যা করতে অগ্রসর হলে আবূ লুবাবাহ্‌ (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেগুলো মেরে ফেলতে বারণ করেছেন। তিনি (ওগুলো বলে) বাড়ি-ঘরে অবস্থানকারী সাপ বুঝাতে চেয়েছে। আর লেজকাটা ও পিঠে দু’টি সাদা দাগ বিশিষ্ট সাপ মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। বলা হয়ে যে, সে (সাপ) দু’টি এমন, যারা চোখের জ্যোতি নষ্ট করে দেয় এবং নারীদের গর্ভপাত ঘটায়। (ই.ফা. ৫৬৩৭, ই.সে. ৫৬৬৭) নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, একদিন ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাঁর ভেঙ্গে ফেলা একটি দেয়ালের নিকট ছিলেন। অতঃপর একটি সাপের খোলস দেখতে পেয়ে বললেন, একে সন্ধান করে তা হত্যা কর। আবূ লুবাবাহ্‌ আনসারী (রাঃ) বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি যে, তিনি সেসব সাপ হত্যা করতে বারণ করেছেন যেগুলো বাড়ি-ঘরে অবস্থান করে; কিন্তু লেজ কাটা ও পিঠে দু’টি সাদা দাগযুক্ত সাপ (হত্যা করতে বলেছেন)। কারণ এ দু’টি এমন যারা দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নেয় এবং স্ত্রীলোকদের গর্ভপাত ঘটায়। (ই.ফা. ৫৬৩৭, ই.সে. ৫৬৬৮) নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, একবার আবূ লুবাবাহ্‌ (রাঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) -এর নিকট দিয়ে গেলেন। সে সময় ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) -এর গৃহের নিকট অবস্থিত দালানের কাছে ছিলেন। তখন তিনি একটি সাপ হত্যা করার জন্য লুকিয়ে ছিলেন। শেষাংশ লায়স ইবনু সা’দ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের মতো। (ই.ফা. ৫৬৩৯, ই.সে. ৫৬৬৯) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে একটি (পাহাড়ী) গুহায় ছিলাম। সে সময় কেবল (আরবী) (সূরা আল-মুরসালাত) তার উপরে অবতীর্ণ হয়েছিল, আর আমরা তাঁর কণ্ঠ থেকে তা সতেজভাবে (সরাসরি) শুনছিলাম। অকস্মাৎ একটি সাপ আমাদের সম্মুখে বের হয়ে আসলো। তিনি বললেন, তোমরা ওটাকে হত্যা করো। আমরা হতা করার জন্য তার পিছনে দৌড় প্রতিযোগিতা আরম্ভ করলাম। কিন্তু সে আমাদের হারিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা ওকে তোমাদের অনিষ্ট থেকে হিফাযাত করেছেন, যেমন তিনি তোমাদের হিফাযাত করেছেন তার অনিষ্ট হতে। (ই.ফা. ৫৬৪০, ই.সে. ৫৬৭০) আ’মাশ (রহঃ) কুতাইবাহ্‌ ইবনু সা’ঈদ ও ‘উসমান ইবনু আবূ শাইবাহ্‌ (রহঃ) ... আ’মাশ (রহঃ) হতে উপরোল্লিখিত সূ্রেত হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৬৪১, ই.সে. ৫৬৭১) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ‘মুহ্‌রিম’ লোককে মিনায় একটি সাপ হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। (ই.ফা. ৫৬৪২, ই.সে. ৫৬৭২) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে একটি (পাহাড়ী) গুহায় অবস্থান করছিলাম। বাকী অংশ জারীর (রহঃ) ও আবূ মু’আবিয়াহ্‌ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মতই। (ই.ফা. ৫৬৪৩, ই.সে. ৫৬৭৩) হিশাম ইবন যুহ্‌রাহ্‌ (রহঃ) -এর মুক্ত গোলাম আবূ সায়িব (রহঃ) তিনি আবূ সা’ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) -এর নিকট তাঁর গৃহে ঢুকলেন। তিনি বলেন, সে সময় আমি তাঁকে সলাতরত অবস্থায় পেলাম এবং তাঁর সলাত শেষ করা পর্যন্ত তাঁর অপেক্ষায় বসে থাকলাম। সে সময় গৃহের কোণে রেখে দেয়া খেজুর ডালের স্তুপের মাঝে কিচু একটার নড়াচড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। আমরা দেখতে পেলাম যে, এটি একটি সাপ। আমি সেটিকে হত্যা করার জন্য লাফ দেয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম। তখন তিনি (সলাতে থেকেই) ইঙ্গিত করলেন যে, বসে থাকে। সলাত সমাপ্ত করে গৃহের একটি ঘরের দিকে ইশারা করে বললেন, এ ঘরটি কি তুমি দেখতে পাচ্ছ? আমি বললাম, হ্যাঁ! তিনি বললেন, সেখানে নববিবাহিত আমাদের এক যুবক থাকত। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে খন্দক যুদ্ধে বের হলাম। ঐ যুবক মধ্যাহ্নের সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট অনুমতি চেয়ে নিত এবং তার পরিবারের নিকট ফিরে যেত। একদিন সে (যথারীতি) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট অনুমতি কামনা করলে তিনি তাকে বললেন, তোমার যুদ্ধাস্ত্র তোমার সঙ্গে নিয়ে যাও। কারণ, আমি তোমার উপরে বানূ কুরাইযাহ্‌ (ইয়াহূদীদের আক্রমণ) -এর সংশয়করছি। ব্যক্তিটি তার অস্ত্র নিয়ে (গৃহে) প্রত্যাবর্তন করল। সেখানে সে তার (সদ্য বিবাহিতা) স্ত্রীকে দু’দরজার মাঝে দণ্ডায়মান অবন্থায় লক্ষ্য করল এবং (তার প্রতি সন্দিহান হয়ে) তাকে বল্লম দিয়ে আঘাত হানার উদ্দেশে তা তার দিকে স্থির করে ধরল। আত্মসম্মানবোধ তাকে পেয়ে বসেছিল। তখন সে (স্ত্রী) বলল, তোমার বল্লমটি নিজের নিকট সংযত রাখো এবং ঘরে প্রবেশ করো। তুমি যাতে তা দেখতে পারো, যা আমাকে বের হতে বাধ্য করেছে। সে গৃহে ঢুকেই দেখতে পেল যে, এক বিশালাকার সাপ বিছানার উপরে কুণ্ডলী পাকিয়ে রয়েছে। সে এর প্রতি বল্লম স্থিত করে তার মাধ্যমে এটিকে গেঁথে ফেলল। অতঃপর বের হয়ে তা (বল্লমটি) বাড়ীর মধ্যেই পুঁতে রাখল। সে সময় তা নড়ে চড়ে তাকে ছোবল মারলো এবং (ক্ষণিকের মধ্যে) সাপ কিংবা যুবক এ দু’জনের কে বেশী দ্রুত মৃত্যুবরণকারী ছিল তা আঁচ করা গেল না। বর্ণনাকারী [আবূ সা’ঊদ (রাঃ)] বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে যেয়ে ঘটনাটি বিবরণ দিয়ে তাঁকে বললাম, আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন, তিনি যেন আমাদের মাঝে তাকে আবার তাজা করে দেন। সে সময় তিনি বললেন, তোমরা তোমাদের সঙ্গীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো। তারপর বললেন, মাদীনায় কিছু জিন রয়েছে, যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে। তাই, (সাপ ইত্যাদিরূপে) তাদের কিয়দংশ তোমরা লক্ষ্য করলে তাকে তিন দিন সাবধান সংকেত দিবে; তারপরে তোমাদের সম্মুখে (তা) প্রকাশ পেলে তাকে হত্যা করবে। কারণ, সে একটি (অবাধ্য) শাইতান, (অর্থাৎ, সে মুসলিম নয়)। (ই.ফা. ৫৬৪৪, ই.সে. ৫৬৭৪) আবূ সায়িব (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা আবূ সা’ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) -এর নিকট গমন করলাম। আমরা উপবিষ্ট ছিলাম, এমতাবস্থায় অকস্মাৎ তাঁর খাটের নীচে একটা নড়াচড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। তাকিয়ে দেখি যে, সেটা একটা সাপ... ঘটনা সহ হাদীসটি (পূর্বোল্লিখিত) সাইফী (রহঃ) হতে মালিক (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এতে তিনি বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; এসব গৃহে আরও কতক অধিবাসী রয়েছে। সুতরাং সে রকমের কোন কিছু তোমরা লক্ষ্য করলে তাদের প্রতি তিনবার সাবধান বাণী উচ্চারণ করবে, এতে যদি (তারা) চলে যায় তো ভাল! নতুবা তোমরা তাকে হত্যা করবে। কারণ সে কাফির (অবাধ্য)। আর তিনি তাদের (মৃত ব্যক্তির অভিভাবকদের) বললেন, তোমরা চলে যাও এবং তোমাদের সঙ্গীকে দাফন করো। (ই.ফা. ৫৬৪৫, ই.সে. ৫৬৭৫) আবূসা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাদীনায় জিনদের এমন একটি দল রয়েছে, যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে। তাই যে লোক এসব গৃহের অধিবাসী (সাপ ইত্যাদির রূপধারী) এ ধরনের কোন কিছু দেখতে পায়, সে যেন তাকে তিনবার সাবধানী সংকেত দেয়; তারপরও যদি তার সম্মুখে তা প্রকাশ পায় তবে সে যেন তা হত্যা করে ফেলে, কারণ একট (অবাধ্য) শাইতান। (ই.ফা. ৫৬৪৬, ই.সে. ৫৬৭৬)

【38】

কাঁকলাস (টিকটিকি) মেরে ফেলা মুস্তাহাব

উম্মু শারীক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে কাঁকলাস মেরে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু ইবনু আবূ শাইবাহ্‌ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে (শুধু) ‘নির্দেশ করেছেন’ রয়েছে, (অর্থাৎ, ‘তাকে’ শব্দটি নেই)। (ই.ফা. ৫৬৪৭, ই.সে. ৫৬৭৭) উম্মু শারীক (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে কাঁকলাস হত্যা করার বিষয়ে বিধান জানতে চাইলেন, তখন তিনি তাকে তা মেরে ফেলার নির্দেশ দিলেন। উম্মু শারীক (রাঃ) হলেন বানূ ‘আমির ইবনু লুওয়াই সম্প্রদায়ের জনৈক স্ত্রীলোক। এ হাদীসের রিওয়ায়াতে ইবনু আবূ খালাফ ও ‘আব্‌দ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) -এর শব্দ অভিন্ন। আর ইবনু ওয়াহ্‌ব (রহঃ) (প্রথম সূত্রে) -এর বর্ণিত হাদীস (এর শব্দ) -এর পাশাপাশি। (ই.ফা. ৫৬৪৮, ই.সে. ৫৬৭৮) ‘আমির ইবনু সা’ঈদ (রহঃ) -এর পিতা [সা’ঈদ (রাঃ) ] নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁকলাস হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাকে ‘ছোট্ট ফাসিক’ ‘ক্ষুদে দুষ্কৃতিকারী’ নাম দিয়েছেন। (ই.ফা. ৫৬৪৯, ই.সে. ৫৬৭৯) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাঁকলাসকে ‘ছোট্ট ফাসিক’ বলেছেন। হারামালাহ (রহঃ) বর্ধিতাকারে বর্ণনা করেন যে, তিনি [‘আয়িশা (রাঃ) ] বলেছেন যে, (তবে) আমি তাঁকে তা হত্যা করার আদেশ দিতে শুনিনি। (ই.ফা. ৫৬৫০, ই.সে. ৫৬৮০) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রথম আঘাতে যে লোক কাঁকলাস মারবে, তার জন্য রয়েছে এত এত পরিমাণ সাওয়াব। আর যে লোক দ্বিতীয় আঘাতে তাকে হত্যা করবে, তার জন্য এত এত পরিমাণ সাওয়াব, প্রথমবারের চাইতে কম। আর তৃতীয় আঘাতে হত্যা করে ফেলে, তাহলে তার জন্য এত এত পরিমাণ সাওয়াব, তবে দ্বিতীয়বারের থেকে কম। (ই.ফা. ৫৬৫১, ই.সে. ৫৬৮১) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) সূ্ত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে সুহায়ল (রহঃ) হতে সংকলিত খালিদ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মর্মার্থ সম্পন্ন হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু শুধামাত্র (অনুরূপ সানাদের) বর্ণনাকারী জাবীর (রহঃ) (এর বর্ণনায় ভিন্নতা রয়েছে) , তাঁর বর্নিত হাদীসে আছে, যে লোক প্রথম আঘাতে কাঁকলাস হত্যা করবে, তার জন্য একশ’ সাওয়াব লেখা হয়, আর দ্বিতীয় আঘাতে এর চেয়ে কম আর তৃতীয় আঘাতে তার থেকে কম (সাওয়াব লেখা হয়)। (ই.ফা. ৫৬৫২, ই.সে. ৫৬৮২) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) মুহাম্মাদ ইবনু সাব্বাহ্‌ (রহঃ) ... আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) -এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রথম আঘাতে (হত্যা করতে পারলে) সত্তরটি সাওয়াব। (ই.ফা. ৫৬৫৩, ই.সে. ৫৬৮৩)

【39】

পিঁপড়া মারার নিষেধাজ্ঞা

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত যে, একটি পিঁপড়া নবীদের কোন নবীকে কামড় দিলে তিনি পিঁপড়ার বসতি সম্বন্ধে আদেশ দিলেন, ফলে তা জ্বালিয়ে দেয়া হলো। সে সময় আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিকট এ প্রেক্ষিতে ওয়াহী নাযিল করলেন যে, একটি (মাত্র) পিঁপড়া তোমাকে কামড় দিল, তাতেই কিনা সমস্ত উম্মাত ও সৃষ্টিকূলের এমন একটি সৃষ্টি জাতিকে জ্বালিয়ে দিলে যারা আল্লাহর তাসবীহ্‌ পাঠ করছিল? (ই.ফা. ৫৬৫৪, ই.সে. ৫৬৮৪) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নবীদের মধ্যে কোন একজন নবী একটি বৃক্ষের নিচে অবস্থান নিলেন, সে সময় একটি পিঁপড়া তাঁকে কামড় দিল। তিনি এ ব্যাপারে নির্দেশ করলে তার আসবাবপত্র গাছ তলা হতে সরিয়ে ফেলা হলো। তারপর তাদের পিঁপড়া সম্বন্ধে নির্দেশ দিলে তাদের বাসা জ্বালিয়ে দেয়া হলো। তখন আল্লাহ তা’আলা তার নিকট ওয়াহী প্রেরণ করলেন, এমতাবস্থায় একটি মাত্র (অপরাধী) পিঁপড়াকে (শাস্তি) দিলেন না কেন? (ই.ফা. ৫৬৫৫, ই.সে. ৫৬৮৫) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, এ হলো সেসব হাদীস যা আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন, এ বলে তিনি কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করলেন, (সেগুলোর একটি হলো) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নবীকূলের একজন নবী একটি বৃক্ষের নিচে অবস্থান করলেন, তখন একটি পিঁপড়া তাঁকে কামড় দিল, সে সময় তিনি তার আসবাবপত্র (বের করার) বিষয়ে আদেশ দিলে তা বৃক্ষের নিচ থেকে বের করা হলো এবং তিনি নির্দেশ দিলে পিঁপড়াগলো আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হলো। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিকট ওয়াহী প্রেরণ করলেন, এহেন অবস্থায় একটি মাত্র পিঁপড়াকে (শাস্তি) দিলেন না কেন? (ই.ফা. ৫৬৫৬, ই.সে. ৫৬৮৬)

【40】

বিড়াল হত্যা করা হারাম

‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক স্ত্রী লোককে একটি বিড়ালের জন্য ‘আযাব দেয়া হয় এজন্য যে, সে বিড়ালটিকে আটকে রেখেছিল, পরিশেষে সে-টি মারা গেল। যার জন্য সে জাহান্নামে গেল। যে মেয়ে লোকটি বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছে, নিজেও পানাহার করায়নি আর সেটিকে ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে যমিনের পোকা মাকড় খেয়ে বাঁচতে পারে। (ই.ফা. ৫৬৫৭, ই.সে. ৫৬৮৭) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নাস্‌র ইবনু ‘আলী জাহ্‌যামী (রহঃ) ... আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ)-এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উপরোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৬৫৮, ই.সে. ৫৬৮৮) ইবনু ‘উমার (রাঃ) হারূন ইবনু ‘আবদুল্লাহ ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফার (রহঃ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) -এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ রকম বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৬৫৯, ই.সে. ৫৬৮৯) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একটি মেয়ে লোককে একটি বিড়ালের কারণে শাস্তি দেয়া হয়। সে নিজেও বিড়ালটিকে পানাহর করায়নি এবং তাকে ছেড়েও দেয়নি যাতে করে সে (নিজে) জমিনের পোকা-মাকড় খেতে পারে। (ই.ফা. ৫৬৬০, ই.সে. ৫৬৯০) হিশাম (রহঃ) হিশাম (রহঃ) উপরোল্লিখিত সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁদের উভয়ের বর্ণিত হাদীসে আছে, ‘সে তাকে আটকে রাখল’। (এছাড়া প্রথম সানাদের) বর্ণনাকারী আবূ মু’আবিয়াহ্‌ (রহঃ) -এর বর্ণিত হাদীসে আছে, জমিনের ‘কীটপতঙ্গ’। অর্থাৎ (আরবী) শব্দের স্থানে (আরবী) অর্থ একই) শব্দ আছে। (ই.ফা. ৫৬৬১, ই.সে. ৫৬৯১) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) -এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে (পূর্বোল্লিখিত সানাদের) বর্ণনাকারী হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ্‌ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের মর্মে বর্ণনা করেছেন। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) মুহাম্মাদ ইবনু রাফি’ (রহঃ) ... আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) -এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে পূর্ব বর্ণিত হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৬৬৩, ই.সে. ৫৬৯৩)

【41】

যে কোন পশু পাখীকে পান করানো ও খাবার দেওয়ার ফযীলাত

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জনৈক লোক কোন রাস্তা দিয়ে হাঁটছিল, এমতাবস্থায় সে খুব তৃষ্ণার্ত হলো। সে একটি কূপ দেখতে পেয়ে তাতে নেমে পড়ল এবং পানি পান করল। তারপর সে বেরিয়ে এলো। সে সময় দেখতে পেল যে, (তৃষ্ণায় কাতর) একটি কুকুর জিভ বের করে হাঁপাচ্ছে আর মাটি চাটছে। লোকটি (মনে মনে) বলল, কুকুরটিকে আমার মতো তীব্র তৃষ্ণায় পেয়েছে। তখন সে কুয়ায় নামল এবং তার (চামড়ার) মোজায় পানি ভরল। তারপরে সে তার মুখ বন্ধ করে উপরে উঠল এবং কুকুরটিকে পান করাল। মহান আল্লাহতার (এ ‘আমালের) কদর করলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। (সাহাবীগণ) প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহ রসূল! তাহলে কি আমাদের জন্য এসব প্রাণীর ব্যাপারেও (সদাচরণে) সওয়াব রয়েছে? তিনি বললৈন, প্রতিটি ‘তাজা কলিজায়’ সাওয়াব রয়েছে। (ই.ফা. ৫৬৬৪, ই.সে. ৫৬৯৪) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) -এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত যে, এক বেশ্যা নারী কোন এক গরমের দিনে একটি কুকুরকে একটি কুয়ার পাশে ঘুরতে দেখতে পেল। সেটি তৃষ্ণায় তার জিভ বের করে হাঁপাচ্ছিল। তখন সে তার (চামড়ার) মোজা দ্বারা তার জন্য পানি তুলে আনল এবং পান করাল। অবশেষে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো। (ই.ফা. ৫৬৬৫, ই.সে. ৫৬৯৫) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একটি কুকুর একটি (পানি ভর্তি) কূপের চতুর্দিকে ঘুরপাক খাচ্ছিল। তৃষ্ণায় যে প্রায় মৃত্যু পথযাত্রী হয়েছি।। সে সময় বানী ইসরাঈলের পতিতাদের এক পতিতা তাকে লক্ষ্য করলো এবং (দয়াদ্র হয়ে) সে তার (চামড়ার) মোজা খুলে ফেলল এবং তার জন্য পানি উঠিয়ে এনে তাকে পান করিয়ে দিল। যার কারণে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হলো। (ই.ফা. ৫৬৬৬, ই.সে. ৫৬৯৬)