44. ফযীলত

【1】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বংশে ফযীলত এবং নুবূওয়াত প্রাপ্তির আগে (তাঁকে) পাথরের সালাম করা প্রসঙ্গ

আবূ ‘আম্মার শাদ্দাদ (রহঃ) তিনি ওয়াসিলাহ্ ইবনু আসকা’ (রহঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ মহান আল্লাহ ইসমা’ঈল (‘আঃ)-এর সন্তানদের থেকে ‘কিনানাহ্’-কে চয়ন করে নিয়েছেন, আর কিনানাহ্ (’র বংশ) হতে, ‘কুরায়শ’-কে বাছাই করে নিয়েছেন আর কুরায়শ (বংশ) হতে বানূ হাশিমকে বাছাই করে নিয়েছেন এবং বানূ হাশিম হতে আমাকে বাছাই করে নিয়েছেন। (ই.ফা. ৫৭৩৯, ই.সে. ৫৭৭০) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি মাক্কায় একটি পাথরকে জানি, যে আমার (নবীরূপে) প্রেরিত হওয়ার আগেও আমাকে সালাম করত; আমি এখনও তাকে সন্দেহাতীতভাবে চিনতে পারি। (ই.ফা. ৫৭৪০, ই.সে. ৫৭৭১)

【2】

আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সমুদয় সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান প্রসঙ্গ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কিয়ামাতের দিন আদাম সন্তানদের সরদার হব এবং আমিই প্রথম ব্যক্তি যার কবর খুলে যাবে এবং আমিই প্রথম সুপারিশকারী ও প্রথম সুপারিশ গৃহীত ব্যক্তি। (ই.ফা. ৫৭৪১, ই.সে. ৫৭৭২)

【3】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মু‘জিযা প্রসঙ্গ

আনাস (রাঃ) একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পানি আনতে বললেন, তখন একটি প্রশস্ত তল বিশিষ্ট অগভীর বর্তন নিয়ে আসা হলো। (তিনি তাতে হাত রেখে বারাকাতের দু’আ করলেন) এবং লোকেরা ওযূ করতে লাগল। আমি তাদের সংখ্যা ষাট হতে আশির মাঝে ধারণা করলাম। বর্ণনাকারী বলেন, আমি পানির দিকে চেয়ে থাকলাম- যা তার আঙ্গুলসমূহের মাঝ থেকে ফোয়ারার মতো বেরিয়ে আসছিল। (ই.ফা. ৫৭৪২, ই.সে. ৫৭৭৩) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে লক্ষ্য করলাম, তখন আসরের সলাতের সময় হয়ে গিয়েছিল আর লোকেরা ওযূর পানি সন্ধান করছিল; কিন্তু তারা খুঁজে পেল না। এ সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে কিছু ওযূর পানি আনা হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে পানির বর্তনে তাঁর হাত রেখে দিলেন এবং লোকদের তা হতে ওযূ করতে বললেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি দেখলাম, পানি তাঁর অঙ্গুলিসমূহের নিচ থেকে উচ্ছ্বল তরঙ্গের মত বেরিয়ে আসছে। তখন লোকেরা ওযূ করল, এমনকি তাদের শেষ লোক পর্যন্ত সবাই অযূ করতে সক্ষম হলো। (ই.ফা. ৫৭৪৩, ই.সে. ৫৭৭৪) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীগণ ‘যাওরা’ নামক স্থানে ছিলেন। রাবী বলেন, ‘যাওরা’ হলো মাদীনার বাজার ও মাসজিদের সন্নিকটে একটি স্থান। সে সময় তিনি একটি পাত্র নিয়ে আসতে বললেন, যাতে অল্প পানি ছিল। তিনি তাঁর (হাতের) মুষ্ঠি তাতে রাখলেন। তখন তাঁর অঙ্গুলিসমূহের মধ্য হতে (পানি) উতড়িয়ে বের হতে লাগল আর তাঁর সাহাবীগণ সবাই অযূ করলেন। বর্ণনাকারী [কাতাদাহ্ (রহঃ)] বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আবূ হাম্যাহ্ (রাঃ)। তাঁরা কতজন ছিলেন? তিনি বললেন, তাঁরা ছিলেন তিনশ’ জনের মতো। (ই.ফা. ৫৭৪৪, ই.সে. ৫৭৭৫) আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘যাওরা’য় ছিলেন। সে সময় একটি পানির পেয়ালা নিয়ে আসা হলো, যার পানিতে তাঁর অঙ্গুলিসমূহ ডুবছিল না অথবা ঐ পরিমাণ, যা তাঁর অঙ্গুলিসমূহ ডুবাতে পারে না। তারপর (পূর্বোল্লিখিত হাদীসের) বর্ণনাকারী হিশাম (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৭৪৫, ই.সে. ৫৭৭৬) জাবির (রাঃ) উম্মু মালিক (রাঃ) তাঁর একটি চামড়ার পেয়ালায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য ঘি উপঢৌকন পাঠাতেন। (কোন কোন সময়) তার ছেলেরা তার নিকট এসে (রুটি মাখাবার জন্য) তরকারি চাইত। কিন্তু তখন তাদের নিকট কিছু থাকত না। তাই তিনি (উম্মু মালিক) সে পেয়ালাটির নিকট যেতেন যাতে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য উপঢৌকন প্রেরণ করতেন। তখন তিনি তাতে কিছু ঘি পেয়ে যেতেন। তারপর তা তার ঘরের (রুটি মাখাবার) তরকারির কাজ দিতে থাকল। যে পর্যন্ত না সেটি (আঙ্গুল দিয়ে মুছে) নিংড়ে ফেললেন। সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলে তিনি বললেনঃ তুমি সেটি নিংড়ে ফেলেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ! তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি সেটিকে (না মুছে) যথাবস্থায় রেখে দিলে তা কিছু মওজুদ থেকেই যেত। (ই.ফা. ৫৭৪৬, ই.সে. ৫৭৭৭) সালামাহ্ ইবনু শাবীব (রহঃ) জাবির (রাঃ) জনৈক লোক খাবার চাইতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলো। তিনি তাকে অর্ধ ওয়াস্ক যব খাবার জন্য দিলেন। লোকটি তা থেকে আহার করতে থাকল আর তার স্ত্রী এবং তাদের (দু’জনের) মেহমানরাও। পরিশেষে সে (একদিন) তা মেপে দেখল। ফলে তা ফুরিয়ে গেল। তারপরে সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট (অভিযোগ নিয়ে) আসল। তিনি বললেন, যতি তুমি তা মেপে না দেখতে, তাহলে তোমরা তা থেকে আহার করতে থাকতে এবং তা তোমাদের জন্য (দীর্ঘ সময়) বিদ্যমান থাকত। (ই.ফা. ৫৭৪৭, ই.সে. ৫৭৭৮) মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, তাবূক যুদ্ধের বছর আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে (যুদ্ধে) বের হলাম। (এ সফরে) তিনি (দু’) সলাত একসাথে আদায় করতেন। অর্থাৎ, যুহ্র ও ‘আস্র একসাথে আদায় করতেন, আর মাগরিব ও ‘ইশা একত্রে আদায় করতেন। পরিশেষে একদিন (এমন) হলো যে, সলাত দেরিতে আদায় করলেন। তারপর বের হয়ে এসে যুহর ও ‘আস্র একসাথে আদায় করলেন, তারপর (তাঁবুতে) ঢুকলেন। অতঃপর আবার বেরিয়ে এলেন এবং মাগরিব ও ‘ইশা একসাথে আদায় করলেন। অতঃপর বললেন, ইন্শাআল্লাহ তোমরা আগামীকাল ‘তাবূক জলাশয়ে’ পৌঁছবে, তবে চাশ্‌তের সময় না হওয়া পর্যন্ত তোমরা সেখানে পৌঁছতে পারবে না। তোমাদের মাঝে যে (ই) সেখানে (প্রথমে) পৌঁছবে সে যেন তার পানির কিছুই স্পর্শ না করে- যতক্ষণ না আমি এসে পৌঁছি। আমরা (ঠিক সময়েই) সেখানে পৌঁছলাম। (কিন্তু) ইতোমধ্যে দু’ লোক আমাদের পূর্বে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল। আর প্রসবণটিতে জুতার ফিতার ন্যায় ক্ষীণ ধারায় সামান্য পানি বের হচ্ছিল। মু’আয বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ দু’জনকে প্রশ্ন করলেন, তোমরা তা হতে কিছু পানি ছুঁয়েছো কি? ….. তারা উভয়ে বলল, হ্যাঁ! তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের দু’জনকে ভর্ৎসনা করলেন। আর আল্লাহর যা ইচ্ছা তাই তাদের বললেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর লোকেরা তাদের হাত দিয়ে অঞ্জলি ভরে ভরে প্রসবণ হতে অল্প অল্প করে (পানি) তুলল, পরিশেষে তা একটি পাত্রে কিছু পরিমাণ জমা হলো। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মাঝে তাঁর দু’হাত এবং মুখ ধুলেন এবং তারপরে তা (পানি) তাতে (প্রসবণে) উল্টিয়ে (ঢেলে) দিলেন। ফলে পানির প্রসবণটি প্রবল পানি ধারায় কিংবা বর্ণনাকারী বলেছেন, অধিক পরিমাণে প্রবাহিত হতে লাগল। আবূ ‘আলী (রহঃ) সন্দেহ করেছেন যে, বর্ণনাকারী এর মধ্যে কোন্টি বলেছেন। এবার লোকেরা পানি প্রয়োজন মতো পান করল। পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে মু’আয! তুমি যদি দীর্ঘায়ু হও, তবে আশা করা যায় যে, তুমি দেখতে পাবে প্রসবণের এ জায়গাটি বাগানে ভরে গেছে। (ই.ফা. ৫৭৪৮, ই.সে. ৫৭৭৯) আবূ হুমায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তাবূক যুদ্ধের জন্য বের হলাম। আমরা ‘ওয়াদিল কুরা’ এলাকায় এক মহিলার একটি বাগানের নিকট পৌঁছলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা এর পরিমাণ ধারণা করো। আমরা এর পরিমাণ অনুমান করলাম। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দশ ওয়াস্ ক(প্রায় পঞ্চাশ মণ) পরিমাণ ধারণা করলেন এবং (মেয়ে লোকটিকে) বললেন, ইন্শাআল্লাহ আমরা তোমার এখানে ফিরে আসা পর্যন্ত এ পরিমাণ ধরে রাখো। তারপরে আমরা অগ্রসর হলাম এবং তাবূকে পৌঁছে গেলাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আজ রাতে প্রচণ্ড বায়ু প্রবাহ তোমাদের উপর দিয়ে বয়ে যাবে। তাই তোমাদের কেউ যেন তার মধ্যে দাঁড়িয়ে না থাকে এবং যার উট আছে সে যেন তার দঁড়ি মজবুত করে বেঁধে রাখে। অতঃপর দেখা গেল, অনেক বাতাস প্রবাহিত হলো। জনৈক লোক দাঁড়ালে বাতাস তাকে তুলে নিয়ে পরিশেষে ‘তাই’ নামক পাহাড়ে ফেলে দিল। আর (ঐ সময় নিকটবর্তী) ‘আয়লার’ অঞ্চল প্রধান (শাসক) ইবনুল ‘আলমা’-র দূত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একটি পত্র নিয়ে আসলো এবং তিনি তাঁকে একটি সাদা খচ্চর উপঢৌকন পাঠালেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও তার নিকট চিঠি লিখে পাঠালেন এবং তাকে একটি চাদর উপঢৌকন হিসেবে প্রেরণ করলেন। এরপর আমরা এগিয়ে চলতে চলতে ‘ওয়াদিল কুরা’ পৌঁছলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীলোকটিকে (বাগানের মালিক) তার বাগান সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন যে, তার ফল কি পরিমাণে পৌঁছেছে? সে বলল, দশ ওয়াস্ক। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি দ্রুত যাচ্ছি। তোমাদের মাঝে যার ইচ্ছা হয় সে আমার সাথে অবিলম্বে যেতে পারে। আর যার ইচ্ছা সে থেকে যেতে পারে। অতঃপর আমরা বেরিয়ে গেলাম। পরিশেষে মাদীনার নিকটবর্তী এলাকায় পৌঁছলাম। সে সময় তিনি বললেন, এ (মাদীনাহ্) হলো ‘তাবা’-পবিত্র ও উত্তম জায়গা। আর এ হলো উহুদ। আর তা এমন পর্বত, যে আমাদের ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালবাসি। এরপর বললেন, আনসারীদের শ্রেষ্ঠ পরিবার বানূ নাজ্জার, এরপর বানূ ‘আবদুল আশ্হাল, তারপর বানূ হারিস ইবনু খাযরাজ, অতঃপর বানূ সা‘ইদাহ্ পরিবার। আর আনসারদের প্রতিটি সম্প্রদায়ই ভাল। সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ্‌ (রাঃ) আমাদের সঙ্গে এসে একত্রিত হলে (তাঁর সম্প্রদায়ের) আবূ উসায়দ (রাঃ) তাঁকে বললেন, আপনি কি দেখেননি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসার সম্প্রদায়গুলোর মাঝে ধারাবাহিকভাবে শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছেন এবং আমাদের সম্প্রদায়কে তালিকার শেষে রেখেছেন। তখন সা‘দ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে গেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি আনসার সম্প্রদায়গুলোর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছেন এবং আমাদের শেষে রেখেছেন! তখন তিনি বললেন, শ্রেষ্ঠ তালিকাতে অন্তর্ভুক্ত হওয়াও কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয়? (ই.ফা. ৫৭৪৯, ই.সে. ৫৭৮০) ‘আমর ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) উল্লেখিত সূত্রে আনসারদের প্রতিটি সম্প্রদায়ের কল্যাণ আছে’ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। তিনি পরবর্তী অংশ- সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ্ (রাঃ) সম্বন্ধে বর্ণনা উল্লেখ করেননি। তবে উহায়ব (রহঃ) তাঁর বর্ণিত হাদীসে বেশি উল্লেখ করেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার (ইবনুল ‘আলমা)-র জন্য তাদের জনপদগুলো লিখে দিলেন। উহায়ব (রহঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও তার নিকট চিঠি লিখে প্রেরণ করলেন- উক্তিটি বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৫৭৫০, ই.সে. ৫৭৮১)

【4】

আল্লাহ তা‘আলার উপরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর তাওয়াক্কুল এবং তাঁকে লোকদের (অনিষ্ট) হতে আল্লাহ তা‘আলার হিফাযাত

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে নাজ্দ-এর দিকে একটি জিহাদে গেলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (পেছন হতে এসে) একটি কাঁটাবন যুক্ত উপত্যকায় আমাদের পেলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি গাছের তলায় অবতরণ করলেন এবং তাঁর তলোয়ারটি সে বৃক্ষের একটি শাখায় লটকিয়ে রাখলেন। বর্ণনাকারী [জাবির (রাঃ)] বলেন, আর লোকেরা গাছের ছায়ায় আশ্রয় নেয়ার জন্য প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়ল। বর্ণনাকারী বলেন, পরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ জনৈক লোক আমার নিকট আসলো তখন আমি ঘুমন্ত। সে তলোয়ারটি হাতে নিল। আমি জেগে উঠলাম, আর সে আমার মাথার কাছে দণ্ডায়মান। আমি কিছু বুঝে না উঠতেই (দেখি) উন্মুক্ত তলোয়ারটি তার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে। অতঃপর সে আমাকে বলল, কে তোমাকে আমা হতে রক্ষা করবে? তিনি বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ! সে দ্বিতীয় বার বলল, তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে? তিনি বলেন, আমি বললাম, আল্লাহ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে তখন তলোয়ারটি ভিতরে ঢুকিয়ে রাখল। আর ওই যে সে বসে আছে। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কিছুই বললেন না। (ই.ফা. ৫৭৫১, ই.সে. ৫৭৮২) সিনান ইবনু আবূ সিনান দুওয়ালী ও আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ) ….. তিনি ছিলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একজন সহাবী। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে নাজ্দ অভিমুখে একটি মিশনে গেলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ফিরে এলেন তখন তিনিও তাঁর সাথে ফিরে আসেন। এরপর দুপুরের বিশ্রামকালে সকলে উপস্থিত হলো …..। তারপর ইব্রাহীম ইবনু সা‘দ ও মা‘মার (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের হুবহু উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা.৫৭৫২, ই.সে. ৫৭৮৩) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এগিয়ে চললাম। পরিশেষে আমরা যখন যাতুর রিকা’য় পৌঁছলাম …..। এরপর যুহরী (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে আর কোন কিছু বলেননি- উক্তটি বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৫৭৫৩, ই.সে. ৫৭৮৪)

【5】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে হিদায়াত ও ‘ইলম সহ প্রেরিত হয়েছেন তা দৃষ্টান্তের বিবরণ

আবূ বুরদাহ্ (রাঃ) ও আবূ মূসা (রাঃ)-এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, আল্লাহ তা’আলা আমাকে যে হিদায়াত ও ‘ইল্‌ম সহকারে প্রেরণ করেছেন; তার দৃষ্টান্ত সে বৃষ্টির মত যা কোন ভূমিতে বর্ষিত হলো, আর সে ভূমির উৎকৃষ্ট কতকাংশ পানি গ্রহণ করে এবং প্রচুর তরতাজা ঘাস-পাতা উৎপাদন করে। আর কতকাংশ হলো শক্ত মাটি, যা পানি আবদ্ধ রাখে, ফলে আল্লাহ তা’আলা তা দ্বারা মানুষের উপকার করেন এবং তারা তা থেকে পান করেন, (অন্যদের) পান করায় ও পশু চড়ায়। আর বৃষ্টি সে জমির আরও কিয়দংশ বর্ষিত হলো- যা উঁচু অনুর্বর, যা কোন পানি আবদ্ধ করে রাখে না আর কোন লতা-পাতাও উৎপাদিত করে না। সে উদাহরণ হলো সেসব লোকের- যারা আল্লাহর দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করে এবং আল্লাহ তাদের সেসব বস্তু’ দিয়ে উপকৃত করেন যা নিয়ে আল্লাহ আমাকে প্রেরণ করেছেন। ফলে সে ‘ইল্‌ম অর্জন করে অন্যকেও শিক্ষা দেয়। আর তৃতীয় উদাহরণ হলো ঐ লোকদের যারা তার প্রতি মাথা উঁচু করেও তাকায় না এবং আল্লাহর ঐ হিদায়াতও কবূল করে না, যা নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি। (ই.ফা. ৫৭৫৪, ই.সে. ৫৭৮৫)

【6】

উম্মাতের প্রতি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্নেহ এবং তাদের জন্য ক্ষতিকর বিষয় থেকে গুরুত্ব সহকারে সতর্কীকরণ

আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উদাহরণ এবং আল্লাহ যা দিয়ে আমাকে প্রেরণ করেছেন তার উদাহরণ সে ব্যক্তির উপমার মতো যে তার স্বজাতির নিকট এসে বলে, হে আমার গোত্র! আমি আমার দু’ চোখে (শত্রু) সেনা দেখে এসেছি, আর আমি (সুস্পষ্ট) সতর্ককারী। সুতরাং আত্মরক্ষা করো। তখন তার গোত্রের একদল তার কথা মেনে নিল এবং রাতের অন্ধকারে সুযোগে (জায়গা ত্যাগ করে) চলে গেল। আর একদল তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে ভোর পর্যন্ত স্ব-স্থান হতে চলে গেল। ফলে (শত্রু) বাহিনী সকালে তাদের হামলা করল এবং তাদের সমূলে ধ্বংস করে দিল। সুতরাং এ হলো তাদের উপমা যারা আমার আনুগত্য করল এবং আমি যা নিয়ে এসেছি তার অনুররণ করল এবং ওদের উদাহরণ যারা আমার অবাধ্য হলো এবং যে সত্য আমি নিয়ে এসেছি তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। (ই.ফা. ৫৭৫৫, ই.সে. ৫৭৮৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উপমা ও আমার উম্মাতের উপমা সে ব্যক্তির উপমার মতো, যে অগ্নি প্রজ্জ্বলন করেছে ফলে মাকড় ও কীট-পতঙ্গ তাতে জ্বলতে লাগল। আমি তোমাদের কোমরবন্ধ ধরে (তোমাদের রক্ষার জন্যে) টানছি আর তোমরা সবাই যেন তাতে পড়তে যাচ্ছো। (ই.ফা. ৫৭৫৬, ই.সে. ৫৭৮৭) আবূ যিনাদ (রহঃ) হতে উপরোক্ত সূত্র হুবহু রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৭৫৭, ই.সে. নেই) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, এগুলো হলো সেসব (হাদীস), যা আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আমাদের নিকট রিওয়ায়াত করেছেন। এরপর সেগুলো হতে তিনি কিছু হাদীস বর্ণনা করেন। তার একটি হলো, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার অবস্থা সে লোকের অবস্থার মতো যে আগুন জ্বালিয়েছিল, তখন তাতে তার চতুষ্পার্শ্ব আলোকিত হলো, তখন পতঙ্গ ও সেসব জন্তু যা আগুনে পড়ে থাকে, তাতে পড়তে লাগল আর সে লোক সেগুলোকে বাধা দিতে লাগল। তবে তারা তাকে হারিয়ে দিয়ে তাতে ঢুকে পড়তে লাগল। তিনি বললেন, এটাই হলো তোমাদের অবস্থা আর আমার অবস্থা। আমি আগুন থেকে রক্ষার জন্য তোমাদের কোমরবন্ধগুলো ধরে টানি ও বলি যে, আগুন হতে দূরে থাকো, আগুন থেকে দূরে থাকো এবং তোমরা আমাকে পরাস্ত করে তার মধ্যে ঢুকে পড়ছো। (ই.ফা. ৫৭৫৮, ই.সে. ৫৭৮৮) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উপমা ও তোমাদের উপমা সে লোকের উপমার মতো যে আগুন জ্বালালো, ফলে ফড়িং দল আর পতঙ্গ তাতে ঝাপিয়ে পড়তে লাগল আর সে লোক তাদের তা থেকে বিতাড়িত করতে লাগল। আমিও আগুন থেকে রক্ষার জন্য তোমাদের কোমরবন্ধ ধরে টানছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে যাচ্ছ। (ই.ফা. ৫৭৫৯, ই.সে. ৫৭৮৯)

【7】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শেষ নবী হওয়ার বিবরণ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার দৃষ্টান্ত এবং নবী গণের দৃষ্টান্ত সে লোকের দৃষ্টান্তের সাথে তুলনীয়, যে একটি অট্টালিকা প্রস্তুত করল এবং সে তা সুন্দর ও সুদৃশ্যপূর্ণ করল। পরে (তা দর্শনে আগত) লোকেরা তার চারদিকে ঘুরে দেখতে লাগল (এবং) বলতে লাগল যে, এর চাইতে সুন্দর কোন অট্টালিক আমরা দেখিনি। কিন্তু এ একটি ইটের স্থান সমাপ্ত হয়নি। [নবী (‘আঃ) বলেন,] আমিই হলাম সে ইটখানি। (ই.ফা. ৫৭৬০, ই.সে. ৫৭৯০) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ্ (রহঃ) তিনি বলেন এ হলো সে সব হাদীস, যা আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আমাদের নিকট উল্লেখ করেছেন। তারপর তিনি কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেন। তার একটি হলো, আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমার দৃষ্টান্ত ও আমার পূর্বেকার নবী গণের দৃষ্টান্ত সে লোকের উপমার মতো, যে কতকগুলো গৃহ বানালো, তা সুন্দর করল এবং সুদৃশ্য করল এবং পূর্ণাঙ্গ করল; কিন্তু তার কোন একটির কোণে একটি ইটের স্থান ছাড়া (খালি রাখল)। লোকেরা সে ঘরগুলোর চারদিকে চক্কর দিতে লাগল আর সে ঘরগুলো তাদের মুগ্ধ করতে লাগল। পরিশেষে তারা বলতে লাগল, এখানে একখাটি ইট লাগালেন না কেন? তাহলে তো আপনার অট্টালিকা পূর্ণাঙ্গ হত! অতঃপর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন যে, আমি-ই হলাম সে ইটখানি। (ই.ফা. ৫৭৬১, ই.সে. ৫৭৯১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ আমার উপমা এবং আমার পূর্ববর্তী নবী গণের উপমা সে লোকের উপমার মতো, যে একটি অট্টালিকা বানালো এবং তা সুন্দর ও সুচারুরূপে গড়ে তুলল, তবে তার কোণগুলোর কোন এক কোণায় একটি ইটের স্থান ব্যতীত। লোকেরা তার চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল আর তা দেখে আশ্চর্য হতে লাগল এবং পরস্পর বলতে লাগল, ঐ ইটখানি স্থাপন করা হলো না কেন? [নবী (‘আঃ)] বলেনঃ আমি-ই সে ইটখানি আর আমি নবী গণের মোহর ও শেষ নবী। (ই.ফা. ৫৭৬২, ই.সে. ৫৭৯২) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ আমার উপমা এবং নবী গণের উপমা ….. তারপর পূর্বোল্লিখিত হাদীসের অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৭৬৩, ই.সে. ৫৭৯৩) জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উপমা এবং নবী গণের উপমা সে লোকের উপমা তুল্য, যে একটি বাড়ি তৈরি করল এবং সে তা সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ করল, তবে একটি ইটের স্থান ছাড়া। লোকেরা তাতে ঢুকতে লাগল এবং তা দেখে আশ্চর্য হতে লাগল এবং বলাবলি করতে থাকল, যদি এ একখানি ইটের স্থান খালি না থাকত (তবে কতই না উত্তম হত)! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি হলাম সে ইটের স্থান। আমি আগমন করলাম এবং নবীগণের পরম্পরা শেষ করলাম। (ই.ফা. ৫৭৬৪, ই.সে. ৫৭৯৪) সালীম [ইবনু হাইয়ান (রহঃ)] সূত্র হুবহু হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তিনি (আরবি) (পরিপূর্ণ করেছে)-এর স্থলে (আরবি) (সুন্দর করেছে) বলেছেন। (ই.ফা. ৫৫৭৬৪, ই.সে. ৫৭৯৫)

【8】

আল্লাহ তা‘আলা কোন উম্মাতের প্রতি রহম করার ইচ্ছা করলে সে উম্মাতের নবী কে তাদের আগে তুলে নেন

আবূ মূসা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁর বান্দাদের মধ্যে কোন উম্মাতের প্রতি রহ্মাতের ইচ্ছা করেন, তখন তাদের নবীকে তাদের পূর্বেই তুলে নেন এবং তাঁকে তাদের যুগের অগ্রগণ্য ও পূর্ববর্তী করেন। আর যখন কোন উম্মাতকে বিনাশ করার ইচ্ছা করেন, তখন তাদের নবীর জীবিতাবস্থায় তাদের শাস্তি দেন এবং এ অবস্থায় তাদের বিনাশ করেন যে, তিনি (নবী) তা দেখতে পান। এরপর তাদের ধ্বংস দেখে তাঁর চোখ শান্ত করেন, যেহেতু তারা তাঁকে অমান্য করেছিল ও তাঁর আদর্শ অস্বীকার করেছিল। (ই.ফা. ৫৭৬৫, ই.সে. ৫৭৯৬)

【9】

আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জন্য ‘হাওয’ (কাওসার) প্রমাণিত হওয়া এবং হাওযের বিবরণ

জুনদাব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছি, ‘আমি হাওয’-এর নিকট তোমাদের জন্য অগ্রগামী হব। (ই.ফা. ৫৭৬৬, ই.সে. ৫৭৯৭) জুনদাব (রাঃ)-এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুবহু রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৭৬৭, ই.সে. ৫৭৯৮) সাহ্‌ল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আমি ‘হাওয’ (কাওসার)-এর নিকট তোমাদের জন্য অগ্রগামী হব। যে সেখানে আসবে সে তা পান করবে এবং যে তা পান করবে, সে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। আর আমার নিকট এমন কতিপয় দল আসবে, যাদের আমি চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হবে। বর্ণনাকারী আবূ হাযিম (রহঃ) বলেন, আমি যখন তাঁদের নিকট এ হাদীস পেশ করি, তখন নু’মান ইবনু আবূ ‘আইয়্যাশ শুনে বললেন, তুমি কি সাহ্‌ল (রাঃ)-কে এমনই বলতে শুনেছ? তিনি বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ! (ই.ফা. ৫৭৬৮, ই.সে. ৫৭৯৯) নু’মান (রহঃ) আর আমি আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ)–এর ব্যাপারে সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি অবশ্যই তাকে বর্ধিত বর্ণনা করতে শুনেছি যে, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলবেন, এরা তো আমার উম্মাত! তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না, তারা আপনার পরে কি ‘আমাল করেছে। তখন যারা আমার পরে (দীনে) পরিবর্তন-পরিবর্ধন করেছে; আমি তাদের বলবঃ দূর হও, দূর হও। (ই.ফা. ৫৭৬৮, ই.সে. ৫৭৯৯) আবূ হাযিম (রহঃ)-এর মাধ্যমে সাহল (রাঃ)-এর সানাদ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এবং নু’মান ইবনু আবূ ‘আইয়্যাশ (রহঃ)-এর মাধ্যমে আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ)-এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে (পূর্ববর্তী) ইয়া‘কূব (রহঃ)-এর হাদীসের অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৭৬৯, ই.সে. ৫৮০০) আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার ‘হাওয’-এর ব্যবধান এক মাসের রাস্তা, তার সকল কোণ এক সমান, তার পানি রূপার চেয়ে শুভ্র, তার ঘ্রাণ মিশ্ক-এর চেয়ে সুগন্ধযুক্ত এবং তার পাত্রের পরিমাণ আসমানের তারকার ন্যায়। যে লোক তা থেকে পান করবে, সে তার পরে কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। (ই.ফা. ৫৭৭০, ই.সে. ৫৮০১) ইবনু আবূ মুলাইকাহ আর আসমা বিনতু আবূ বকর (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি হাওযের সন্নিকটে থাকব, যাতে দেখতে পারি যে, তোমাদের মাঝে কারা আমার নিকট আসলো। আর আমার সম্মুখ থেকে কতক ব্যক্তিকে আটকানো হবে, তখন আমি বলব- ইয়া রাব্ব্! এরা তো আমার লোক এবং আমার উম্মাত। তখন বলা হবে, আপনি কি জানেন না যে, আপনার পরে এর কি করেছে? আল্লাহর শপথ! এরা আপনার পরে এদের পিছনের দিকেই প্রত্যাবর্তন করেছে। বর্ণনাকারী (নাফি’) বলেন, তাই বর্ণনাকারী ইবনু আবূ মুলাইকাহ্ (রহঃ) বলতেন, হে আল্লাহ! আমরা আপনার আশ্রয় চাচ্ছি, আমাদের পশ্চাতে ফিরে যাওয়া হতে এবং আমাদের দ্বীনের বিষয়ে ফিতনায় আপতিত হওয়া থেকে। (ই.ফা. ৫৭৭০, ই.সে. ৫৮০১) আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর সাহাবীগণের সামনে বলতে শুনেছি যে, আমি ‘হাওয’-এর নিকট তোমাদের মধ্য হতে যারা আমার নিকট আসবে তাদের প্রতীক্ষায় থাকব। আল্লাহর শপথ! আমার কাছ থেকে অবশ্যই কিছু ব্যক্তিকে আলাদা করে দেয়া হবে। তখন আমি বলব, হে রব্ব্! (এরা তো) আমার-ই এবং আমার উম্মাতেরই (লোক)। আল্লাহ বলবেন, আপনি অবশ্যই জানেন না, তারা আপনার পরে কি ‘আমাল করেছে। তারা তো তাদের পশ্চাতের দিকেই প্রত্যাবর্তন করেছে। (ই.ফা. ৫৭৭১, ই.সে. ৫৮০২) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি হাওযের (কাওসারের) ব্যাপারে লোকদেরকে আলোচনা করতে শুনতাম। কিন্তু আমি (নিজে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ সম্পর্কে কিছু শুনিনি। পরে যখন একদিন ঐ ব্যাপারে আলোচনা আসলো- এ সময় একটি মেয়ে আমার চুল আঁচড়িয়ে দিচ্ছিল, তখন আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করতে শুনলাম, হে লোক সকল …..! তখন স্ত্রীলোকটিকে আমি বললাম, তুমি আমার হতে দূরে চলে যাও। সে বলল, তিনি তো পুরুষদের ডাক দিয়েছেন এবং স্ত্রীলোকদের ডাকেননি। আমি বললাম, আমিও, তো লোকদের একজন। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তোমাদের জন্য ‘হাওয’-এর নিকট অগ্রগামী হব। তাই হুঁশিয়ার! আমার নিকট তোমাদের এমন কেউ যেন না আসে, যাকে আমার নিকট হতে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়, যেমন হারানো উটকে ভাগিয়ে দেয়া হয়। আর আমি বলতে থাকব, কেন তাদের তাড়ানো হচ্ছে? তখন বলা হবে- আপনি তো জানেন না, তারা আপনার পরে কী নতুন বিষয়ের আবিষ্কার করেছে? তখন আমিও বলব, দূর হও! (ই.ফা. ৫৭৭২, ই.সে. ৫৮০৩) ‘আবদুল্লাহ ইবনু রাফি’ তিনি বলেন, উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বর্ণনা করতেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনলেন, হে লোক সকল …..। এ সময় উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) চুল আঁচড়াচ্ছিলেন, তখন তিনি কেশ বিন্যাসকারিণীকে বললেন, আমার মাথা আঁচড়ানো বন্ধ রাখো। ….. অবশিষ্টাংশ বর্ণনাকারী কাসিম ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর সানাদে বুকায়র (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অবিকল। (ই.ফা. ৫৭৭৩, ই.সে. ৫৮০৪) উকবাহ্‌ ইবনু ‘আমির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন বাইরে এসে উহুদবাসীদের জন্য জানাযার সলাতের মতো সলাত আদায় করলেন। তারপর মিম্বারের দিকে ফিরে এসে বললেন, আমি তোমাদের জন্য অগ্রগামী এবং তোমাদের ব্যাপারে সাক্ষী। আল্লাহর শপথ! আমি এ মুহূর্তে আমার ‘হাওয’ দেখতে পাচ্ছি। আর আমাকে অবশ্যই দুনিয়ার ধন-ভান্ডারসমূহের চাবিকাঠি কিংবা বলেছেন, দুনিয়ার চাবিসমূহ দেয়া হয়েছে। আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের সম্বন্ধে এ আশঙ্কা করি না যে, তোমরা আমার পরে শির্কে জড়িয়ে পড়বে। তবে, আমি তোমাদের সম্বন্ধে এ সংশয় করি যে, তোমরা দুনিয়ার প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়ব। (ই.ফা. ৫৭৭৪, ই.সে. ৫৮০৫) উকবাহ্‌ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, (একদিন) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের শহীদগণের জন্য সলাত আদায় করলেন তারপর মিম্বারে চড়ে জীবিতদের ও মৃতদের বিদায় দানকারীর মতো বলেনঃ আমি হাওযের দিকে তোমাদের অগ্রগামী। আর জেনে রাখো! তার প্রস্থ যেমন ‘আয়লা’ হতে ‘জুহ্ফা’র ব্যবধান। আমি তোমাদের সম্বদ্ধে ভয় করি না যে, তোমরা আমার পরে শির্কে লিপ্ত হবে। তবে, আমি তোমাদের সম্বন্ধে দুনিয়াকে ভয় করি যে, তা অর্জনের প্রতিযোগিতায় তোমরা জড়িয়ে পড়বে এবং হানাহানি করবে; ফলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। যেমন, তোমাদের পূর্ববর্তীরা ধ্বংস হয়েছে। ‘উক্বাহ্ (রাঃ) বলেন, এ ছিল মিম্বারের উপরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমার সর্বশেষ দেখা। (ই.ফা. ৫৭৭৫, ই.সে. ৫৮০৬) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি ‘হাওযে’র নিকট তোমাদের অগ্রগামী। আর আমি অবশ্যই কিছু দলের সম্বন্ধে বাক-বিতণ্ডা করব এবং আমি অবশ্যই তাদের ব্যাপারে পরাজিত হয়ে যাব। তখন আমি বলব, হে রব্ব্! (এরা তো) আমার সহচর, আমার সঙ্গী। তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না যে, তারা আপনার পরে কি নিত্য-নতুন (বিষয়াদি) আবিষ্কার করেছে? (ই.ফা. ৫৭৭৬, ই.সে. ৫৮০৭) আ‘মাশ (রহঃ) উপরোক্ত সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি ‘আমার সহচর, আমার সঙ্গী’ - উক্তিটি বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৫৭৭৭, ই.সে. ৫৮০৮) আবূ ওয়ায়িল (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে ….. পূর্বোল্লিখিত আ‘মাশ (রহঃ)-এর হাদীসের হুবহু রিওয়ায়াত করেছেন। কিন্তু শু‘বাহ্ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে মুগীরাহ্ (রাঃ)-এর সানাদে রয়েছে ….. আমি আবূ ওয়ায়িল (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি। (ই.ফা. ৫৭৭৮, ই.সে. ৫৮০৯) হুযাইফাহ্ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে মুগীরাহ্ ও আ‘মাশ (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসের হুবহু হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৭৭৯, ই.সে. ৫৮১০) হারিসাহ্ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন যে, তাঁর হাওয মাদীনাহ্ এবং সান’আর মাঝামাঝি ব্যবধানের সমান। অতঃপর মুস্তাওরিদ (রহঃ) তাঁকে বললেন, আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে পাত্রের ব্যাপারে আলোচনা শুনেছেন কি? হারিসাহ্ (রাঃ) উত্তর দিলেন, না। তখন মুস্তাওরিদ (রহঃ) বললেন, সেখানে তারকার মতো পাত্রসমূহ লক্ষ্য করা যাবে। (ই.ফা. ৫৭৮০, ই.সে. ৫৮১১) হারিসাহ্ ইবনু ওয়াহ্ব খুযা’ঈ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শুনেছি এবং তিনি অবিকলরূপে হাওযের বিবরণ দিলেন। কিন্তু তিনি মুস্তাওরিদ ও তাঁর উক্তির বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৫৭৮১, ই.সে. ৫৮১২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের সম্মুখে একটি হাওয থাকবে যার উভয় দিকের ব্যবধান হবে জারবা ও আযরুহার মাঝামাঝি জায়গার সমান। (ই.ফা. ৫৭৮২, ই.সে. ৫৮১৩) ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের সম্মুখে এমন একটি হাওয থাকবে যার প্রশস্ততা জারবা এবং আযরুহার মাঝামাঝি ব্যবধানের সমান। ইবনুল মুসান্নার বর্ণনা মতে, ‘আমার হাওয’ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ৫৭৮৩, ই.সে. ৫৮১৪) ইবনু নুমায়র ও আবূ বক্‌র (রহঃ) উভয়ে ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) উপরোল্লিখিত হাদীসের হুবহু হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) বর্ধিত রিওয়ায়াত করেন। ‘উবাইদুল্লাহ (রহঃ) বলেন, আমি তাকে [নাফি’ (রহঃ)-কে] (জারবা ও আযরুহা সম্বন্ধে) জিজ্ঞেস করলাম, তখন তিনি বললেন, শাম (সিরিয়িা) দেশের সন্নিকটে দু’টি গ্রামের নাম, উভয়ের মধ্যবর্তী ব্যবধান তিন রাতের রাস্তার সমান দূরত্ব। আর ইবনু বিশ্রের বর্ণনাতে ‘তিন দিনের রাস্তা’। (ই.ফা. ৫৭৮৪, ই.সে. ৫৮১৫) ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে ‘উবায়দুল্লাহ্‌র বর্ণিত হাদীসের হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের সম্মুখে একটা হাওয হবে যার প্রশস্ততা জারবা ও আযরুহার মাঝামাঝি ব্যবধানের সমান। সেখানে আকাশে তারকার ন্যায় অনেক পাত্র থাকবে। যে লোক এখানে এসে ঐ হাওযের পানি পান করবে, পরবর্তীতে সে কক্ষনো তৃষ্ণার্ত হবে না। (ই.ফা. ৫৭৮৬, ই.সে. ৫৮১৭) আবূ যার গিফারী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্ন করেছি, হে আল্লাহর রসূল! হাওযের পাত্র কত হবে? তিনি বললেন, যার কব্জায় আমার জীবন তাঁর শপথ! সে হাওযের পাত্র মেঘবিহীন আঁধার রাতের আকাশের নক্ষত্র ও তারকারাজির চাইতেও বেশী। সে সব পাত্র জান্নাতেরই পাত্র। যে ঐ পাত্র হতে পান করবে শেষ পর্যন্ত আর তৃষ্ণার্ত হবে না। ঐ হাওযের মধ্যে জান্নাত হতে প্রবাহিত দু’টো নালার সংমিশ্রণ রয়েছে। যে লোক ঐ হাওয হতে পান করবে সে আর তৃষ্ণার্ত হবে না, সে হাওযের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সমান হবে। সে হাওযের প্রশস্থতা ‘আম্মান থেকে আয়লার মাঝামাঝি ব্যবধানের সমতুল্য। তার পানি দুধের চেয়েও সাদা এবং মধুর চেয়েও বেশি মিষ্টি। (ই.ফা. ৫৭৮৭, ই.সে. ৫৮১৮) সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি আমার হাওযের পাশে থাকবো। ইয়ামানবাসীদের জন্য সর্বসাধারণ লোককে সরিয়ে দেব। আমি আমার লাঠি দিয়ে হাওযের পানির উপর করাঘাত করবো যাতে তাদের উপর তা প্রবাহিত হয়। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সে হাওযের প্রশস্ততা সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, আমার এ স্থান থেকে ‘আম্মানের ব্যবধানের সমান। পুনরায় সে হাওযের পানি সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, দুধের চেয়ে অধিক শুভ্র ও মধুর চেয়ে অতি মিষ্ট। জান্নাত থেকে প্রকাহিত দু’টো নালা দিয়ে সে হাওযের মাঝে পানি আসতে থাকবে। তার একটি (নালা) সোনার এবং অপরটি রূপার। (ই.ফা. ৫৭৮৮, ই.সে. ৫৮১৯) যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) কাতাদাহ্ (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে সাওবান (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তবে এতটুকু পার্থক্য যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কিয়ামাতের দিন হাওযের পাশেই থাকবো। (ই.ফা. ৫৭৮৮, ই.সে. ৫৮২০) সাওবান (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাওযের হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। তারপর তিনি ইয়াহ্ইয়া ইবনু হাম্মাদ (রহঃ)-কে বললেন, আমি আবূ ‘আওয়ানাহ্ (রাঃ) হতেও এ হাদীস শুনেছি। ইয়াহ্ইয়া ইবনু হাম্মাদ (রহঃ) বললেন, আমি শু’বাহ্ (রাঃ) হতে এ হাদীস শুনেছি। তারপর আমি বললাম যে, আপনি এ হাদীস সম্বন্ধে আমাকে একটু সময় দিন, তিনি আমাকে সময় দিলেন এবং আমাকে হাদীসটি শুনালেন। (ই.ফা. ৫৭৮৯, ই.সে. ৫৮২১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আমি আমার হাওয থেকে কতক সংখ্যক ব্যক্তিকে সরিয়ে দেব, যেরূপে অচেনা উটকে সরিয়ে দেয়া হয়। (ই.ফা. ৫৭৯০, ই.সে. ৫৮২২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূর্বেকার হাদীসের হুবহু হাদীস বলেছেন। (ই.ফা. ৫৭৯০, ই.সে. ৫৮২৩) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার হাওযের প্রশস্ততার পরিমাণ হলো আয়লা এবং ইয়ামানের সান’আর ব্যবধানের সমান। আর সেখানে পানির পাত্রগুলো আসমানের নক্ষত্রের ন্যায় অগণিত। (ই.ফা. ৫৭৯১, ই.সে. ৫৮২৪) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই হাওযের পাশে এমন কতিপয় লোক আসবে যারা পৃথিবীতে আমার সাহচর্য পেয়েছিল। এমন কি যখন আমি তাদের দেখতে পাব এবং তাদেরকে আমার সামনে নিয়ে আসা হবে, তখন আমার কাছে আসতে তাদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। অতঃপর আমি বলব, হে প্রভু! এরা আমার সঙ্গী, এরা আমার সঙ্গী। তখন আমাকে বলা হবে, নিশ্চয়ই আপনি জানেন না, আপনার পর এরা কিভাবে দ্বীনের মধ্যে নব উদ্ভাবন করেছে। (ই.ফা. ৫৭৯২, ই.সে. ৫৮২৫) আনাস (রাঃ)-এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অর্থানুরূপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। অতিরিক্ত রয়েছে যে, ‘তার পাত্রগুলোর পরিমাণ নক্ষত্রের ন্যায়’। (ই.ফা. ৫৭৯৩, ই.সে. ৫৮২৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে রিওয়ায়াত করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমার হাওযের দু’ পাশের ব্যবধান এতটুকু যতটুকু মাদীনাহ্ ও সান’আর মাঝে। (ই.ফা. ৫৭৯৪, ই.সে. ৫৮২৭) আনাস (রাঃ)-এর সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হুবহু রিওয়ায়াত করেন। শুধু ব্যবধান এতটুকু যে, এ হাদীসে বর্ণনাকারীদ্বয় সংশয় প্রকাশ করেছেন, ‘কিংবা মাদীনাহ্ ও আম্মানের (জর্ডানের রাজধানী) ব্যবধানের সমান’। আবূ ‘আওয়ানার বর্ণনায় (আরবি) জায়গায় রয়েছে (আরবি)। (ই.ফা. ৫৭৯৫, ই.সে. ৫৮২৮) আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হাওযের কাছে আকাশের তারকারাজির মতো অগণিত স্বর্ণ ও রূপার পানপাত্র দেখতে পাবে। (ই.ফা. ৫৭৯৬, ই.সে. ৫৮২৯) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুবহু রিওয়ায়াত করেছেন। এতে অতিরিক্ত রয়েছে যে, ‘কিংবা আকাশের নক্ষত্রের সংখ্যার চেয়েও বেশি’। (ই.ফা. ৫৭৯৬, ই.সে. ৫৮৩০) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেন, হাওযের আছে আমি তোমাদের অগ্রগামী হব। তার দু’পাশের দূরত্ব সান’আ ও আয়লার ব্যবধানের সমান। তার পাত্রগুলো যেন নক্ষত্রের ন্যায়। (ই.ফা. ৫৭৯৭, ই.সে. ৫৮৩১) ‘আমির ইবনু সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার গোলাম নাফি’র মাধ্যমে জাবির ইবনু সামুরার কাছে লিখে পাঠালাম যে, আপনি আমাকে এমন কোন হাদীস সম্বন্ধে অবহিত করুন যা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শুনেছেন। তিনি বলেন, এরপর তিনি আমাকে লিখেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, ‘আমি হাওযের উপর তোমাদের অগ্রগামী থাকবো’। (ই.ফা. ৫৭৯৮, ই.সে. ৫৮৩২)

【10】

উহুদ যুদ্ধের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষে জিব্রীল ও মীকাঈল ফেরেশ্তার অংশগ্রহণ

সা’দ (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি উহুদ যুদ্ধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ডানে এবং বামে দু’ লোককে দেখতে পাই তাঁদের গায়ে সাদা পোশাক ছিল। এর আগে বা পরে আমি তাঁদেরকে আর কক্ষনো দেখিনি। আসলে তাঁরা ছিলেন জিব্রীল ও মীকাঈল (‘আঃ)। (ই.ফা. ৫৭৯৯, ই.সে. ৫৮৩৩) সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, উহুদ যুদ্ধে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ডানে ও বামে দু’ লোককে দেখতে পাই, যাদের গায়ে ছিল সাদা বস্ত্র। তাঁরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষে কঠিনভাবে যুদ্ধ করছিলেন। এর আগে ও পরে আমি তাঁদের দেখিনি। (ই.ফা. ৫৮০০, ই.সে. ৫৮৩৪)

【11】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বীরত্ব ও যুদ্ধে অগ্রগামী

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সব লোকের মাঝে অতি সুন্দর, অতি দানশীল এবং শ্রেষ্ঠ বীর ছিলেন। কোন এক রাত্রে মাদীনাবাসীরা ভীত হয়ে পড়েছিল। অতঃপর যেদিক থেকে শব্দ আসছিল, লোকেরা সেদিকে ছুটে চলল। রাস্তায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তাদের দেখা হয়, তখন তিনি ফিরে আসছিলেন। কারণ শব্দের দিকে প্রথম তিনিই দৌঁড়ে গিয়েছিলেন। তখন তিনি আবূ তাল্হাহ্ (রাঃ)-এর গদিবিহীন ঘোড়ায় চড়ে ছিলেন। তার কাঁধে তলোয়ার ছিল। তিনি বলছিলেন, তোমরা শঙ্কিত হয়ো না, তোমরা শঙ্কিত হয়ো না। তিনি আরো বললেনঃ আমি এ ঘোড়াকে পেয়েছি সমুদ্রের মতো। কিংবা বললেন, এ তো সমুদ্র। ইতোপূর্বে এ ঘোড়ার গতি ছিল ক্ষীণ। (ই.ফা. ৫৮০১, ই.সে. ৫৮৩৫) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক সময় মাদীনায় ভয়ের কারণ সৃষ্টি হয়েছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ তাল্হাহ্ (রাঃ)-এর একটি ঘোড়া চেয়ে নিলেন। এটিকে ‘মানদূব’ বলা হত। তিনি তার উপর সওয়ার হলেন। অতঃপর বললেন, আমি ঘাবড়ানোর কোন কারণ দেখতে পাইনি। আর এ ঘোড়াটিকে সমুদ্রের মতো পেয়েছি। (ই.ফা. ৫৮০২, ই.সে. ৫৮৩৬) শু‘বাহ্ (রাঃ) উপরোক্ত সূত্রে এ হাদীস রিওয়ায়াত করেন। ইবনু জা‘ফারের হাদীসে আমাদের ঘোড়ার কথা বলা হয়েছে, আবূ তাল্হাহ্ (রাঃ)-এর কথা বলা হয়নি। কাতাদাহ্ (রহঃ)-এর সূত্রে খালিদ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, আমি আনাস (রাঃ) হতে শুনেছি। (ই.ফা. ৫৮০৩, ই.সে. ৫৮৩৭)

【12】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষের মধ্যে প্রবাহমান বায়ু থেকেও শ্রেষ্ঠ দানশীল ছিলেন

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষের মাঝে দানশীলতায় সবচেয়ে বেশী অগ্রগামী ছিলেন। তবে রমাযান মাসে তিনি আরো অধিক দানশীল হতেন। কারণ জিবরীল (‘আঃ) প্রতি বছর রমাযান মাসে তাঁর সাথে দেখা করতেন। রমাযান শেষ হওয়া পর্যন্ত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সম্মুখে কুরআন পাঠ করে শোনাতেন। যখন জিবরীল (‘আঃ) তাঁর সাথে দেখা করতেন তখন তিনি বিক্ষিপ্ত বাতাসের চাইতেও বেশি দানশীল হতেন। (ই.ফা. ৫৮০৪, ই.সে. ৫৮৩৮) যুহরী (রহঃ) হুবহু রিওয়ায়াত করেন। (ই.ফা. ৫৮০৪, ই.সে. ৫৮৩৯)

【13】

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বোত্তম চরিত্রবান ছিলেন

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দশ বছর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাত করেছি। আল্লাহর শপথ! তিনি কখনো আমাকে ‘উহ্’ শব্দও বলেননি এবং কোন সময় আমাকে ‘এটা কেন করলে’, ‘ওটা কেন করনি’ তাও বলেননি। আবূ রাবী’ (রহঃ) বর্ধিত বলেছেন, ‘কোন বিষয় সম্পর্কে যা খাদিমের করা ঠিক নয়’ এবং তাঁর রিওয়ায়াতে আল্লাহর শপথের বর্ণনা নেই। (ই.ফা. ৫৮০৫, ই.সে. ৫৮৪০) আনাস (রাঃ) অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৮০৬, ই.সে. ৫৮৪১) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাদীনায় আসেন তখন আবূ তাল্হাহ্ (রাঃ) হাতে ধরে আমাকে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত হলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আনাস অত্যন্ত বুদ্ধিমান ছেলে, সে আপনার সেবা করবে। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর খিদমাত করেছি সফর ও ইকামাত অবস্থায়। আল্লাহর শপথ! আমি যে কোন কাজই করেছি, তিনি আমাকে বলেননি যে, কেন এমনটি করলে? আর যে কোন কাজই আমি করিনি, ‘কেন তুমি এটি করনি’, এ রকমও বলেননি। (ই.ফা. ৫৮০৭, ই.সে. ৫৮৪২) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নয় বছর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সেবা করেছি। আমার জানা নেই, তিনি কখনো আমায় বলেছেন, কেন তুমি এ কাজ করলে? এবং কোন ব্যাপারে আমাকে কক্ষনো দোষারোপও করেননি। (ই.ফা. ৫৮০৮, ই.সে. ৫৮৪৩) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবচেয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। একদা তিনি আমাকে একটি কাজে যাওয়ার আদেশ করলেন, তখন আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! আবি যাব না; কিন্তু আমার মনে এ বিশ্বাস ছিল, যে কাজে আমাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন আমি সে কাজে যাব। অতঃপর আমি বের হয়ে ছেলেদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। তারা বাজারে খেলাধূলায় লিপ্ত ছিল। হঠাৎ করে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পশ্চাৎদিকে এসে আমার ঘাড় ধরলেন। আনাস (রাঃ) বলেনে, আমি তাঁর প্রতি দৃষ্টি দিলাম তখন তিনি হাসছিলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, হে উনায়স! তুমি কি সেখানে গিয়েছিলে যেখানে তোমাকে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলাম? তিনি বলেন, আমি বললাম হ্যাঁ! হে আল্লাহর রসূল! অবশ্যই আমি যাচ্ছি। (ই.ফা. ৫৮০৯, ই.সে. ৫৮৪৪) আনাস (রাঃ) আল্লাহর শপথ! আমি নয় বছর তাঁর সেবায় ছিলাম, কিন্তু আমার জানা নেই, কোন কাজ আমি করেছি সে ব্যাপারে বলেননি এরূপ কেন করলে কিংবা কোন কাজ করিনি, সে ব্যাপারে বলেননি, কেন অমুক অমুক কাজ করলে না? (ই.ফা. ৫৮০৯, ই.সে. নেই) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমস্ত লোকের মাঝে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। (ই.ফা. ৫৮১০, ই.সে. ৫৮৪৫)

【14】

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে কেউ কিছু চাইলে তিনি কক্ষনো ‘না’ বলেননি এবং তাঁর বদান্যতা প্রসঙ্গ

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কেউ কিছু কামনা করলে কোন দিন তিনি ‘না’ বলেননি। (ই.ফা. ৫৮১১, ই.সে. ৫৮৪৬) মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদিরের সানাদে জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) হুবহু রিওয়ায়াত করেন। (ই.ফা. ৫৮১২, ই.সে. ৫৮৪৭) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ইসলাম গ্রহণ করার পর কেউ কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তা দিয়ে দিতেন। আনাস (রাঃ) বলেন, জনৈক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলো। তিনি তাকে এত বেশী ছাগল দিলেন যাতে দু’উপত্যকার মাঝামাঝি স্থান পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। এরপর সে লোক তার গোত্রের নিকট গিয়ে তাদের বলল, হে আমার জাতি ভাইয়েরা! তোমরা ইসলাম কবূল কর। কারণ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভাবের আশঙ্কা না করে দান করতেই থাকেন। (ই.ফা. ৫৮১৩, ই.সে. ৫৮৪৮) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈক লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে দু’ পাহাড়ের মাঝামাঝি ছাগলগুলো চাইলে তিনি তাকে তা দিয়ে দিলেন। অতঃপর সে লোক তার গোত্রের নিকট প্রত্যাবর্তন শেষে বলল, হে আমার জাতি ভাইয়েরা! তোমরা ইসলাম কবূল কর। আল্লাহর শপথ! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভাবের আশঙ্কা না করে দান করেন। আনাস (রাঃ) বলেন, যদিও মানুষ শুধু ইহকালের উদ্দেশ্যেই ইসলাম গ্রহণ করে তবুও ইসলাম গ্রহণ করতে না করতেই ইসলাম তার কাছে পৃথিবী এবং পৃথিবীর সকল প্রাচুর্যের চাইতে অধিকতর প্রিয় হয়ে যায়। (ই.ফা. ৫৮১৪, ই.সে. ৫৮৪৯) ইবনু শিহাব (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ্ বিজয়ের যুদ্ধ করেন। এরপর তাঁর সাথে যে সব মুসলিম ছিলেন তাদের নিয়ে তিনি বের হন। আর তাঁরা সবাই হুনায়নের যুদ্ধ করেন। এ যুদ্ধে মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দ্বীনের এবং মুসলিমদের সাহায্য করেন। সেদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাফ্ওয়ান ইবনু উমাইয়াহ্কে একশ’ উট দান করেন। এরপর একশ’ উট, পুনরায় আরও একশ’ উট প্রদান করেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, সাফ্ওয়ান (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দান করলেন এবং এমন পরিমাণে আমাকে দান করলেন যে, তিনি আমার কাছে সবচেয়ে নিম্নপ্রকৃতির লোক ছিলেন। অতঃপর তিনি আমাকে অবিরাম দান করতে থাকলেন এমনকি আমার নিকটে সবচেয়ে পছন্দের লোক হয়ে গেলেন। (ই.ফা. ৫৮১৫, ই.সে. ৫৮৫০) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমাদের নিকট যদি বাহরাইন হতে মাল আসে তাহলে তোমাকে এই, এই, এই পরিমাণ দিব এবং তিনি উভয় হাত একত্র করলেন। এরপর বাহরাইন থেকে মাল আসার আগেই রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরলোক গমন করেন। তারপর আবূ বকর (রাঃ)-এর কাছে বাহরাইন হতে মাল আসে। তিনি একজন ঘোষককে এ মর্মে ঘোষণা দেয়ার আদেশ দিলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর যার কিছু ওয়া’দা অথবা ঋণ রয়েছে সে যেন (আমার) নিকট আসে। তখন আমি দাঁড়িয়ে বললাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছিলেন যে, বাহরাইন থেকে যদি আমাদের কাছে মাল আসে তবে তোমাকে এই, এই, এই পরিমাণ দিব। এ কথা শুনে আবূ বকর (রাঃ) এক অঞ্জলি উঠালেন এবং বললেন, গুনে দেখো। আমি তা গুনে দেখলাম তাতে পাঁচশ’ আছে। অতঃপর তিনি বললেন, এর চেয়ে আরো দ্বিগুণ তুমি নিয়ে নাও। (ই.ফা.৫৮১৬, ই.সে.৫৮৫১) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকাল করলেন এবং আবূ বকর (রাঃ)-এর নিকট ‘আলা ইবনু হাযরামীর তরফ হতে মাল আসলো। তখন আবূ বকর (রাঃ) ঘোষণা দিলেন, যার জন্য রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর ঋণ রয়েছে কিংবা তাঁর তরফ হতে কোন ওয়া’দা রয়েছে, সে যেন আমার কাছে চলে আসে। অবশিষ্টাংশ হাদীস ইবনু ‘উয়াইনার অবিকল। (ই.ফা.৫৮১৭, ই.সে.৫৮৫২)

【15】

ছেলেদের প্রতি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর দয়া, বিনয়, আন্তরিকতা এবং তাঁর মর্যাদা

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রাত্রে আমার একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, আমি তার নাম আমার পিতা ইব্রাহীম (আঃ)-এর নামে রাখি। এরপর তিনি উম্মু সায়ফ নামক একজন মহিলাকে ঐ সন্তানটি দিলেন। তিনি একজন কর্মকারের সহধর্মিণী। কর্মকারের নাম আবূ সায়ফ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন আবূ সায়ফ-এর নিকট যাচ্ছিলেন আর আমিও তাঁর সঙ্গে যাচ্ছিলাম। যখন আমরা আবূ সায়ফের গৃহে উপস্থিত হই তখন সে তার হাপর বা ফুঁকনীতে ফুঁক দিচ্ছিল, সারা গৃহ ধুঁয়ায় ভরপুর ছিল। আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগে দৌঁড়ে গিয়ে আবূ সায়ফকে বললাম, তুমি একটু থামো। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসছেন। সে থামল। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছেলেকে ডাকলেন এবং তাকে জড়িয়ে ধরে আদর করলেন এবং যা আল্লাহ্‌র ইচ্ছা রয়েছে তা বললেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি এ ছেলেকে দেখলাম, সে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে বড় বড় শ্বাস ফেলছিল। তা দেখে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর দু’নয়ন অশ্রু ভিজে গেল। আর তিনি বললেনঃ চোখ কাঁদছে, মন কাতর হচ্ছে, মুখে আমরা তাই বলব রব্বুল ‘আলামীন যা পছন্দ করেন। হে ইব্রাহীম! আল্লাহ্‌র শপথ! আমরা তোমার জন্য খুবই ব্যথিত। (ই.ফা.৫৮১৮, ই.সে.৫৮৫৩) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চাইতে শিশুদের প্রতি বেশী দয়াশীল আর কাউকে আমি দেখিনি। তিনি বলেন, (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর ছেলে) ইব্রাহীম (রাঃ) মাদীনার গ্রামাঞ্চলে দুধ পান করতেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে দেখার জন্য সেখানে যেতেন আর আমরাও তাঁর সাথে যেতাম। তিনি দাইয়ের গৃহে ঢুকতেন, আর সেখানে ধুঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকত। কেননা, তার দুধপিতা কর্মকার (কামার) ছিল। তিনি ছেলেকে কোলে তুলে চুমু খেতেন। পরে তিনি প্রত্যাবর্তন করতেন। ‘আম্‌র ইবনু সা’ঈদ (রাঃ) বলেন, যখন ইব্রাহীম (রাঃ) মৃত্যুবরণ করেন তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ইব্রাহীম আমার পুত্র, দুধ পান করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। তার জন্য দুধপিতা ও দুধমাতা রয়েছে, যারা জান্নাতে তাকে দুধ পান করার সময়-সীমা পর্যন্ত দুধ পান করাবে। (ই.ফা.৫৮১৯, ই.সে.৫৮৫৪) আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেঁয়ো আরবীয় লোক আসলো। তারা প্রশ্ন করল, আপনারা কি আপনাদের বাচ্চাদের চুমু দেন? উপস্থিত সবাই বললেন, হ্যাঁ! তখন তারা বললেন, কিন্তু আল্লাহ্‌র শপথ! আমরা তো তাদের চুমু দেই না। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি কি করবো, আল্লাহ্ যদি তোমাদের হতে দয়া দূর করে নিয়ে থাকেন। ইবনু নুমায়রের বর্ণনাতে আছে, তোমার অন্তর হতে......। (ই.ফা.৫৮২০, ই.সে.৫৮৫৫) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আকরা’ ইবনু হাবিস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখলেন যে, তিনি (ইমাম) হাসান (রাঃ)-কে চুমু দিচ্ছেন। তখন আকরা’ ইবনু হাবিস (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার দশটি সন্তান রয়েছে। আমি তাদের কাউকে চুমু দেইনি। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যারা দয়া করে না (আল্লাহ্ কর্তৃক) তাদের প্রতি দয়া করা হবে না। (ই.ফা.৫৮২১, ই.সে.৫৮৫৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা.৫৮২২, ই.সে.৫৮৫৭) জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে না (কিয়ামতের দিন) আল্লাহও তার প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন না। (ই.ফা.৫৮২৩, ই.সে.৫৮৫৮) জারীর (রাঃ) আ’মাশের হাদীসের হুবহু রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা.৫৮২৪, ই.সে.৫৮৫৯)

【16】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অধিক লজ্জাশীলতা

আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্দানশীল কুমারী মহিলার চাইতেও অধিক লজ্জাশীল ছিলেন। আর যখন তিনি কোন জিনিসকে অপছন্দ করতেন আমরা তাঁর মুখাবয়ব হতে তা বুঝতে পারতাম। (ই.ফা.৫৮২৫, ই.সে.৫৮৬০) মাসরূক (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ)-এর নিকট গিয়েছিলাম যখন মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) কূফায় এসেছিলেন। মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্বন্ধে বর্ণনা দিয়ে বললেন, তিনি অশ্লীল ছিলেন না এবং অশ্লীল কথা বলতেন না। মু’আবিয়াহ্ (রাঃ) আরো বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে উত্তম সে লোক যার চরিত্র উত্তম। (ই.ফা.৫৮২৬, ই.সে.৫৮৬১) আ’মাশ (রাঃ) একই সূত্রে অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা.৫৮২৭, ই.সে.৫৮৬২)

【17】

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুচকি হাসি ও উত্তম জীবন যাপন

সিমাক ইবনু হার্ব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বসতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ! অনেকবার। তিনি ফাজ্‌রের সলাত যেখানে আদায় করতেন সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত সেখান হতে উঠতেন না। এরপর যখন সূর্যোদয় হতো তখন তিনি উঠে দাঁড়াতেন। লোকেরা কথাবার্তা বলতো, জাহিলী যুগের ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করতো এবং হাসতো আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও মুচকি হাসতেন। (ই.ফা.৫৮২৮, ই.সে.৫৮৬৩)

【18】

স্ত্রীলোকদের প্রতি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দয়া এবং তাদের আরোহণ জন্তুর সাথে পরিচালকদের প্রতি আন্তরিকতার নির্দেশ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক সফরে ছিলেন, তখন আনজাশাহ্ নামক একজন হাবশী ক্রীতদাস গীত গাইছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আনজাশাহ্! ধীরে চলো এবং উটগুলোকে কাঁচপাত্রবাহী উটের মতো (সতর্কতার সাথে) ধাবিত করো। (ই.ফা.৫৮২৯, ই.সে.৫৮৬৪) আনাস (রাঃ)-এর সানাদ অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা.৫৮৩০, ই.সে.৫৮৬৫) আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের নিকট আসলেন। আনজাশাহ্ নামধারী একজন উট চালক তাদের উটকে ধাওয়া করছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি বিনাশ হও, ওহে আনজাশাহ্! কাঁচপাত্র নিয়ে আস্তে চলো। আবূ কিলাবাহ্ বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন কথা বলেছেন যা তোমাদের কেউ বললে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হতো। (ই.ফা.৫৮৩১, ই.সে.৫৮৬৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মু সুলায়ম (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদের সাথে ছিলেন এবং একজন উট চালক তাঁদের উট হাঁকাচ্ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আনজাশাহ্! কাঁচপাত্র নিয়ে আস্তে চলো। (ই.ফা.৫৮৩২, ই.সে.৫৮৬৭) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ এর একজন সুমধুর কণ্ঠের গায়ক ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ ওহে আনজাশাহ্! আস্তে চলো, কাঁচপাত্রগুলো ভেঙ্গে ফেলো না অর্থাৎ- দুর্বল নারীদের (কষ্ট দিও না)। (ই.ফা.৫৮৩৩, ই.সে.৫৮৬৮) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে রিওয়ায়াত করেছেন, তবে ‘সুললিত কণ্ঠের গায়ক’ উক্তিটি বর্ণনা করেননি। (ই.ফা.৫৮৩৪, ই.সে.৫৮৬৯)

【19】

সৎ লোকদের সাথে নবী (আঃ)-এর আচরণ, তাঁর মাধ্যমে তাঁদের পুণ্য লাভকরণ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ভোরের সলাত আদায় করতেন তখন মাদীনার খাদিমরা তাদের পাত্রে করে পানি নিয়ে আসত আর তাঁর নিকট যদি কোন পাত্র আনা হলেই তিনি তাতে হাত ডুবিয়ে দিতেন। আর শীতের ঠাণ্ডা সকালেও মাঝে মাঝে তিনি হাত ডুবিয়ে দিতেন। (ই.ফা.৫৮৩৫, ই.সে.৫৮৭০) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দেখেছি নাপিত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুল ছাটছে আর সহাবীরা তাঁর চতুর্পাশ ঘিরে রেখেছেন। তাঁরা চাইতেন যে, কোন চুল যেন মাটিতে না পড়ে তা যেন কারো না কারো হাতে পড়ে। (ই.ফা. ৫৮৩৬, ই.সে.৫৮৭১) আনাস (রাঃ) এক মহিলার বিবেকে (জ্ঞানে) কিছু বিকৃতি ছিল। সে বলল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনার সঙ্গে আমার একটা দরকার আছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে অমুকের মা! তোমার ইচ্ছামত কোন রাস্তায় তুমি অপেক্ষা কর যাতে করে আমি তোমার প্রয়োজন পুরো করতে পারি। তারপর তিনি কোন একটা জনপথে তার সাথে জনমানবশূন্য এলাকায় আলাপ করেন এবং মহিলাটি প্রয়োজনমুক্ত হয়। (ই.ফা. ৫৮৩৭, ই.সে.৫৮৭২)

【20】

খারাপ কাজ হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর দূরে অবস্থান এবং মুবাহ্‌ কাজের মাঝে সহজটিকে গ্রহণ করা এবং আল্লাহ্‌র মর্যাদা হানি হয় এমন বিষয়ে প্রতিশোধ নেয়া

আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দু’টো বিষয়ের কোন একটি গ্রহণের স্বাধীনতা দেয়া হত তখন তিনি সহজটি সাদরে গ্রহণ করতেন, যদি না তা দোষের হত। আর যদি তা দূষণীয় হতো তবে তা হতে তিনি সবার চেয়ে দূরে থাকতেন। নিজের জন্য কোন দিন প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন না, তবে আল্লাহ্‌র মর্যাদা হানি হলে (প্রতিশোধ নিতেন)। (ই.ফা. ৫৮৩৮, ই.সে.৫৮৭৩) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) উপরোক্ত সূত্রে অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন (ই.ফা. ৫৮৩৯, ই.সে.৫৮৭৪) হারমালাহ্ ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) উপরোল্লিখিত একাধিক সূত্রের বর্ণনাকারীগণ এ সূত্রে মালিকের হাদীসের হুবহু রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৮৩৯, ই.সে.৫৮৭৪) আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সম্মুখে এমন দু’টো বিষয়ের স্বাধীনতা দেয়া হত যার একটি অপরটির তুলনায় সহজ তখন তিনি সহজটিকেই গ্রহণ করতেন, যদি সেটি দোষের না হত। আর দূষণীয় হলে তিনি তা হতে সর্বাধিক দূরে থাকতেন। (ই.ফা. ৫৮৪০, ই.সে.৫৮৭৫) হিশাম (রাঃ)-এর সানাদ উপরোক্ত সূত্রে বর্ণিত দু’টোর মাঝে সহজটি পর্যন্ত উল্লেখ করেন এবং তিনি পরবর্তী অংশ উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৫৮৪১, ই.সে.৫৮৭৬) আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্বহস্তে কোন দিন কাউকে আঘাত করেননি, কোন নারীকেও না, খাদিমকেও না, আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ ব্যতিত। আর যে তাঁর অনিষ্ট করেছে তার থেকেও প্রতিশোধও নেননি। তবে আল্লাহুর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন বিষয়ে তিনি তাঁর প্রতিশোধ নিয়েছেন। (ই.ফা. ৫৮৪২, ই.সে.৫৮৭৭) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্, আবূ কুরায়ব (রহঃ) একই সূত্রে হিশাম হতে রিওয়ায়াত করেছেন। তবে তাঁদের একে অন্য হতে কিছু বর্ধিত রিওয়ায়াত করেছেন।(ই.ফা. ৫৮৪৩, ই.সে.৫৮৭৮)

【21】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর শরীরের সুরভি ও কোমলতা

জাবির ইবনু সামুরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে যুহরের সলাত আদায় করলাম। এরপর তিনি তাঁর বাড়ীর উদ্দেশে বের হলেন, আমিও তাঁর সাথে বের হলাম। সম্মুখে কয়েকটি শিশু আসলো। তিনি একজন একজন করে এদের সবার গালে হাত স্পর্শ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি আমার গালেও হাত বুলালেন। আমি তাঁর হাতে এমন ঠাণ্ডা পরশ ও সুগন্ধি পেয়েছি (মনে হলো) যেন তিনি খুশবুওয়ালার পাত্র হতে হাত বের করেছেন। (ই.ফা. ৫৮৪৪, ই.সে.৫৮৭৯) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর (দেহের) চেয়ে অধিক সুগন্ধময় কোন ‘আম্বার, মিশ্‌ক বা ভিন্ন কোন বস্তুর ঘ্রাণ আমি গ্রহণ করিনি এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর (দেহের) চাইতে কোমল রেশম বা নরম বস্ত্র আমি ছুঁয়ে দেখিনি। (ই.ফা. ৫৮৪৫, ই.সে.৫৮৮০) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন শুভ্র উজ্জ্বল বর্ণের। তাঁর ঘাম যেন মুক্তার মতো। তিনি চলার সময় সম্মুখ পানে ঝুঁকে চলতেন। আমি নরম কাপড় বা রেশমকেও তাঁর হাতের তালুর মতো নরম পাইনি এবং মিশ্‌ক ও আম্বারের মাঝেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শরীরের চেয়ে অধিক সুগন্ধ পাইনি। (ই.ফা. ৫৮৪৬, ই.সে.৫৮৮১)

【22】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ঘামের সুগন্ধ এবং তা থেকে বারাকাত লাভ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের গৃহে আসলেন এবং আরাম করলেন। তিনি ঘর্মাক্ত হলেন, আর আমার মা একটি ছোট বোতল নিয়ে মুছে তাতে ভরতে লাগলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাগ্রত হলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, হে উম্মু সুলায়ম! একি করছ? আমার মা বললেন, এ হচ্ছে আপনার ঘাম, যা আমরা সুগন্ধির সাথে মেশাই, আর এ তো সব সুগন্ধির সেরা সুগন্ধি।(ই.ফা. ৫৮৪৭, ই.সে.৫৮৮২) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু সুলায়মের গৃহে যেতেন এবং তার বিছানায় আরাম করতেন আর উম্মু সুলায়ম তখন গৃহে থাকত না। আনাস (রাঃ) বলেন, একদিন তিনি এলেন এবং তার বিছানায় ঘুমালেন। উম্মু সুলায়মকে বলা হলো, ইনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমার গৃহে, তোমার বিছানায় ঘুমিয়ে গেছেন। আনাস (রাঃ) বলেন, উম্মু সুলায়ম গৃহে প্রবেশ করলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন ঘর্মাক্ত হয়েছেন, আর তাঁর ঘাম চামড়ার বিছানার উপর জমে গেছে, উম্মু সুলায়ম তার কৌটা খুললেন এবং সে ঘাম মুছে মুছে ছোট একটি বোতলে ভরতে লাগলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হঠাৎ উঠে গেলেন এবং বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! তুমি কি করছ? তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাদের শিশুদের জন্য তার বারাকাত নিচ্ছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ভাল করেছ। (ই.ফা. ৫৮৪৮, ই.সে.৫৮৮৩) উম্মু সুলায়ম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট আসতেন এবং বিশ্রাম নিতেন, উম্মু সুলায়ম তাঁর জন্য একটা চামড়ার বিছানা বিছিয়ে দিলে তিনি তার উপর ‘কায়লূলা’৩৫ করতেন। তিনি প্রচণ্ড ঘামতেন আর উম্মু সুলায়ম তা একত্র করতেন এবং সুগন্ধির বোতলে তা মিশিয়ে রাখতেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে উম্মু সুলায়ম! এ কী করছ? তিনি বললেন, আপনার ঘাম, আমি সেটা সুগন্ধির সঙ্গে মিশিয়ে রাখি। (ই.ফা. ৫৮৪৯, ই.সে.৫৮৮৪)

【23】

শীতের দিনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ওয়াহী এলে তিনি ঘেমে যেতেন

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, শীতের দিনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ হত আর তাঁর কপাল বেয়ে ঘাম পড়তো। (ই.ফা. ৫৮৫০, ই.সে.৫৮৮৫) আয়িশাহ্‌ (রাঃ) হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার নিকট ওয়াহী নাযিল হয় কীভাবে? তিনি বললেনঃ কখনো তা আসে ঘণ্টার ধ্বনির মতো শব্দ করে আর তা আমার জন্য অনেক কষ্টকর হয়। এরপর ওয়াহী থেমে যায়, আর আমি মুখস্থ করে নেই। আবার কখনো (ওয়াহী নিয়ে) পুরুষের ছদ্মবেশে একজন ফেরেশ্‌তা আসেন এবং তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নেই। (ই.ফা. ৫৮৫১, ই.সে.৫৮৮৬) উবাদাহ্‌ ইবনু সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর যখন ওয়াহী অবতীর্ণ হতো তাঁর খুব কষ্ট হত এবং তাঁর মুখাবয়ব কেমন যেন শুকিয়ে যেত। (ই.ফা. ৫৮৫২, ই.সে.৫৮৮৭) উবাদাহ্‌ ইবনু সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর যখন ওয়াহী অবতীর্ণ হতো তখন তিনি শীর নত করে ফেলতেন এবং তাঁর সহাবীরাও শীর নত করতেন। অতঃপর যখন ওয়াহী নাযিল শেষ হয়ে আসত তিনি তাঁর মাথা উঠাতেন। (ই.ফা. ৫৮৫৩, ই.সে.৫৮৮৮)

【24】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর চুল ঝুলিয়ে দেয়া ও তার সিঁথির বিবরণ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আহলে কিতাবরা তাদের চুল কপালের সামনে ঝুলিয়ে রাখতো এবং মুশরিকরা সিঁথি কাটতো। যে বিষয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি কোন নির্দেশ আসতো না, সে বিষয়ে তিনি আহ্‌লে কিতাবদের মতো পালন করা পছন্দ করতেন। তাই তিনি তাঁর চুল কপালে (প্রথমে) ঝুলিয়ে রাখেন এবং পরবর্তী সময় সিঁথি কাটতে থাকেন। (ই.ফা. ৫৮৫৪, ই.সে.৫৮৮৯) আবূ তাহির (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ)-এর সূত্রে এ সানাদ হুবহু হাদীস রিওয়ায়াত করেন। (ই.ফা ৫৮৫৪, ই.সে ৫৮৯০)

【25】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বর্ণনা এবং তাঁর চেহারা ছিল সবচাইতে সুন্দর

বারা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন মাঝারি আকৃতির পুরুষ। তাঁর দুই কাঁধের ব্যবধান ছিল অধিক (অর্থাৎ তাঁর কাঁধ ও বক্ষ প্রশস্ত ছিল)। চুল ছিল কানের লতিকা পর্যন্ত লম্বিত। তাঁর গায়ে লাল পোশাক পড়া ছিল। তাঁর চাইতে অতি সুন্দর কোন কিছু আমি কক্ষনো প্রত্যক্ষ করিনি। (ই.ফা. ৫৮৫৫ , ই.সে. ৫৮৯১) বারা (রাঃ) তিনি বলেন, চুলওয়ালা, লাল পোশাক পরিহিত কোন লোককে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেয়ে সুন্দর দেখিনি। তাঁর চুল কাঁধ স্পর্শ করতো। উভয় কাঁধের মধ্যে বেশ দূরত্ব ছিল। তিনি লম্বাও ছিলেন না, বেঁটেও ছিলেন না। আবূ কুরায়ব (রহঃ) বলেন, ‘তাঁর চুল ছিল’। (ই.ফা. ৫৮৫৬ , ই.সে. ৫৮৯২) বারা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবচেয়ে সুন্দর মুখাবয়বের অধিকারী ছিলেন। আর তিনি সবচেয়ে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি খুব লম্বাও ছিলেন না এবং বেঁটেও ছিলেন না। (ই.ফা. ৫৮৫৭ , ই.সে. ৫৮৯৩)

【26】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর চুলের বর্ণনা

কাতাদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেমন চুলের অধিকারী ছিল? তিনি বললেন, তিনি মধ্যম ধরনের চুলের অধিকারী ছিলেন, চুলগুলো একেবারে কোঁকড়ানোও ছিল না আর একেবারে সোজাও ছিল না, তা ছিল দু’কাঁধ এবং দু’কানের মাঝ বরাবর। (ই.ফা. ৫৮৫৮ , ই.সে. ৫৮৯৪) আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুল তাঁর দু’কাঁধ স্পর্শ করত। (ই.ফা. ৫৮৫৯, ই.সে. ৫৮৯৫) আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুল তাঁর দু’ কানের অর্ধেক পর্যন্ত ঝুলানো ছিল। (ই.ফা. ৫৮৬০ , ই.সে. ৫৮৯৬)

【27】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মুখাবয়ব, দু’টি চোখ ও গোড়ালির বর্ণনা

জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশস্ত চেহারার অধিকারী ছিলেন, টানাটানা নয়ন এবং সুষম গোড়ালি বিশিষ্ট আকৃতির অধিকারী ছিলেন। রাবী শু’বাহ্ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, প্রশস্ত চেহারা কেমন? তিনি বললেন, বড় মুখাবয়ব। শু’বাহ্ বলেন, আমি বললাম, টানা চোখ কেমন? তিনি বললেন, চোখ দু’টো দীঘল দীর্ঘ ডাগর। তিনি বলেন যে, আমি বললাম, সুষম গোড়ালি কেমন? তিনি বললেন, হাল্‌কা গোড়ালি। (ই.ফা. ৫৮৬১, ই.সে. ৫৮৯৭)

【28】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উজ্জ্বল লাবণ্যময় চেহারা বিশিষ্ট ছিলেন

জুরাইরী সূত্রে আবূ তুফায়ল (রাঃ) তিনি (জুরাইরী) বলেন, আমি তাঁকে (আবূ তুফায়লকে) প্রশ্ন করলাম যে, আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে প্রত্যক্ষ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ! তিনি ছিলেন ফর্সা, লাবণ্যময়, উজ্জ্বল চেহারার অধিকারী। মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (রহঃ) বলেন, একশ’ হিজরীতে আবূ তুফায়ল (রাঃ) মৃত্যুবরণ করেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাহাবীদের মাঝে সর্বশেষ তিনিই ইন্তেকাল করেন। (ই.ফা. ৫৮৬২, ই.সে. ৫৮৯৮) আবু তুফায়ল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছেন আমি ব্যতীত এমন কেউ পৃথিবীতে আর বাকী নেই। বর্ণনাকারী বলেন, তাকে বললাম, তাকে কেমন দেখেছেন? তিনি বললেন, ফর্সা, লাবণ্যময় এবং মধ্যমাকৃতির। (ই.ফা. ৫৮৬৩, ই.সে. ৫৮৯৯)

【29】

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর বার্ধক্য

আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্, ইবনু নুমায়র ও ‘আমর আন্ নাকিদ (রহঃ) তিনি বলেন, আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি খিযাব (কলপ) লাগাতেন? তিনি বললেনঃ এতটুকু বার্ধক্য তাঁর মধ্যে লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু ইবনু ইদ্রীস (রহঃ) বলেন, তিনি যেন সামান্য করছিলেন। তবে আবূ বকর ও ‘উমার (রাঃ) মেহেদী এবং কাতাম দ্বারা কলপ লাগিয়েছেন। (ই.ফা. ৫৮৬৪, ই.সে. ৫৯০০) ইবনু সীরীন (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি খিযাব লাগিয়েছিলেন? উত্তরে আনাস (রাঃ) বললেনঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খিযাব লাগানোর বয়সে পৌঁছাননি। এরপর তিনি বললেন, তাঁর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর) দাড়িতে কিছু সাদা লোম ছিল মাত্র। ইবনু সীরীন (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আবূ বকর (রাঃ) লাগাতেন কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। মেহেদী ও কাতাম দ্বারা খিযাব লাগাতেন। (ই.ফা. ৫৮৬৫, ই.সে. ৫৯০১) ইবনু সীরীন (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি কলপ দিতেন? তিনি বললেন, তাঁর মধ্যে কিছু মাত্র বার্ধক্য দেখা দিয়েছিল। (ই.ফা. ৫৮৬৬, ই.সে. ৫৯০২) আবূ রাবী’ ‘আতাকী (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কলপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলেন, আমি যদি ইচ্ছা করতাম তাহলে তাঁর মাথার শুভ্র চুল গুনে ফেলতে পারতাম। তিনি বলেন, তিনি কলপ দেননি। তবে আবূ বকর (রাঃ) মেহেদী এবং কাতাম (ঘাস জাতীয় এক ধরনের উদ্ভিদ) দ্বারা কলপ মেখেছেন এবং ‘উমার (রাঃ) কেবল মেহেদী দ্বারা কলপ লাগিয়েছেন। (ই.ফা. ৫৮৬৭, ই.সে. ৫৯০৩) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, কারো চুল ও দাড়ির সাদা চুল উঠিয়ে ফেলা মাকরূহ এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কক্ষনো কলপ দেননি। কিছু সাদা তাঁর অধরের৩৬ নীচের ছোট দাড়িতে ছিল, তাঁর কানপট্টিতে কিছু আর মাথায় কিছু ছিল। (ই.ফা. ৫৮৬৮, ই.সে. ৫৯০৪) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না (রহঃ) এ সূত্রেই হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৮৬৮, ই.সে. ৫৯০৫) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না, ইবনু বাশ্শার, আহ্মাদ ইবনু ইব্রাহীম দাওরাকী ও হারূন ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) এঁরা সবাই রিওয়ায়াত করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বার্ধক্যের ব্যাপারে আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আল্লাহ তাঁকে বার্ধক্য দিয়ে সৌন্দর্যহীন করেননি। (ই.ফা. ৫৮৬৯, ই.সে. ৫৯০৫) আবূ জুহাইফাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এতটুকু সাদা হতে দেখেছি। আর যুহায়র (রহঃ) এ কথা বলার সময় তাঁর কতক অঙ্গুলি ছোট দাড়ির উপর রাখলেন। পরে লোকেরা আবূ জুহাইফাহ্‌কে বলল, আপনি তখন কেমন বয়সের ছিলেন? তিনি বললেন, আমি তীর তৈরী করা ও তাতে পাখা লাগানোর বয়সে উপনীত হয়েছি। (ই.ফা. ৫৮৭০, ই.সে. ৫৯০৬) আবূ জুহাইফাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, তাঁর রং ছিল শুভ্র, তিনি প্রায় বার্ধক্যেই উপনীত হয়েছিলেন, হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ) দেখতে তাঁর মতোই ছিল। (ই.ফা. ৫৮৭১, ই.সে. ৫৯০৭) আবূ জুহাইফাহ্ (রাঃ) এ হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন; তবে এর বর্ণনাকারীরা “ফর্সা এবং প্রায় বৃদ্ধি হয়ে গিয়েছিলেন” এ কথাগুলো বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ৫৮৭২, ই.সে. ৫৯০৮) সিমাক ইবনু হার্‌ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইবনু সামুরাহ্‌ (রাঃ) হতে শুনেছি, তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বার্ধক্যের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, যখন তিনি মাথায় তেল মাখতেন তখন সাদা বর্ণ দেখা যেত না। কিন্তু যখন তেল মাখতেন না তখন দেখা যেত। (ই.ফা. ৫৮৭৩, ই.সে. ৫৯০৯) জাবির ইবনু সামুরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুল এবং দাড়ির সামনের অংশ সাদা হয়ে গিয়েছিল। তিনি যখন তেল দিতেন (সাদা) চুল তখন দেখা যেত না, আর যখন চুল অগোছালো হত তখন (সাদা) দেখা যেত। তাঁর দাড়ি প্রচুর ঘন ছিল। জনৈক লোক বলল, তাঁর চেহারা ছিল তরবারির ন্যায়। জাবির (রাঃ) বললেন, না, তাঁর চেহারা ছিল সূর্য ও চন্দ্রের ন্যায় (উজ্জ্বল) গোলাকার। আমি তাঁর পিঠের উপরিভাগে কবুতরের ডিম সদৃশ নুবূওয়াতের মোহর দেখেছি। এটির রং ছিল তাঁর গায়ের রংয়ের মতো। (ই.ফা. ৫৮৭৪, ই.সে. ৫৯১০)

【30】

মোহরে নুবুওয়াতের প্রমাণ, গুণাবলী এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর শরীরে তার অবস্থান

জাবির ইবনু সামুরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিঠে মোহরে নুবূওয়াত দেখেছি- যেন তা দেখতে কবুতরের ডিমের ন্যায়। (ই.ফা. ৫৮৭৫, ই.সে. ৫৯১১) সিমাক (রাঃ) এ সূত্রে অনুরূপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৮৭৬, ই.সে. ৫৯১২) সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার খালা আমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে গেলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! এটি আমার বোনের পুত্র। সে রোগগ্রস্ত। তখন তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন এবং আমার জন্য বারাকাতের দু’আ করলেন। তারপর তিনি ওযূ করলেন। আমি তাঁর ওযূর পানি হতে পান করলাম। অতঃপর তাঁর পশ্চাতে দাঁড়ালাম এবং তাঁর দু’কাঁধের মাঝে মোহরে নুবূওয়াত প্রত্যক্ষ করলাম হাজালার ডিমের ন্যায়। (ই.ফা. ৫৮৭৭, ই.সে. ৫৯১৩) আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখেছি এবং তাঁর সাথে গোশ্‌ত ও রুটি খেয়েছি কিংবা বলেছেন ‘সারীদ’ খেয়েছি। তিনি বলেন যে, আমি তাঁকে বললাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ! তোমার জন্যও। অতঃপর এ আয়াতটি তিলওয়াত করলেন, “তোমরা পাপের জন্য মার্জনা চাও এবং ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদের জন্য”- (সূরাহ্‌ মুহাম্মাদ ৪৭:১৯)।আবদুল্লাহ বলেন, এরপর আমি ঘুরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে গেলাম। আর মোহরে নুবূওয়াত দেখলাম, যা দু’কাঁধের মধ্যবর্তী বাম দিকের বাহুর হাড়ের নিকট অঙ্গুলির ন্যায়, যাতে তিলক ছিল। (ই.ফা. ৫৮৭৮, ই.সে. ৫৯১৪)

【31】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর গুণাবলী, নুবূওয়াত প্রাপ্তি ও বয়স প্রসঙ্গ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেশি লম্বাও ছিলেন না এবং বেশি খাটোও ছিলেন না। আবার একেবারে সাদাও ছিলেন না এবং অতিরঞ্জিত সাদা কালো মিশ্রিত ও ছিলেন না। তাঁর চুল বেশি কোঁকড়ানো ও ছিল না এবং একেবারে সোজা ও ছিল না। চল্লিশ বছর বয়সে আল্লাহ তা’আলা তাঁকে নুবূওয়াত দান করেন। অতঃপর তিনি মাক্কায় দশ বছর অবস্থান করেন এবং মাদীনায় দশ বছর। ষাঁট বছরের মাথায় আল্লাহ তা’আলা তাঁকে ওফাত দান করেন। এ সময় তাঁর মাথায় ও দাড়িতে বিশটি কেশও সাদা ছিল না। (ই.ফা. ৫৮৭৯, ই.সে. ৫৯১৫) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) মালিক ইবনু আনাস বর্ণিত হাদীসের অবিকল রিওয়ায়াত করেছেন। তাঁরা তাঁদের হাদীসে “উজ্জ্বল সাদা বর্ণের ছিলেন” বর্ধিত বলেছেন। (ই.ফা. ৫৮৮০, ই.সে. ৫৯১৬)

【32】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ওফাতকালে বয়স কত ছিল

... আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাত হয়েছে তেষট্টি বছর বয়সে, আবূ বাক্‌র সিদ্দীক (রাঃ)-এরও তেষট্টি বছর বয়সে, ‘উমার (রাঃ)-এরও তেষট্টি বছর বয়সে। (ই.ফা. ৫৮৮১, ই.সে. ৫৯১৭) আয়িশাহ্‌ (রাঃ) যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাত হলো, তখন তাঁর বয়স তেষট্টি বছর হয়েছিল। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব (রহঃ)-ও আমাকে অনুরূপ জানিয়েছেন। (ই.ফা. ৫৮৮২, ই.সে. ৫৯১৮) ইবনু শিহাব (রহঃ) দু’টো সূত্রের মাধ্যমে ‘উকায়ল-এর হাদীসের হুবহু রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৮৮৩, ই.সে. ৫৯১৯)

【33】

মাক্কায় ও মাদীনায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অবস্থানকাল কত ছিল

আম্‌র (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উরওয়াহ্‌কে প্রশ্ন করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কায় কতদিন ছিলেন? তিনি বললেন, দশ বছর। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তো বলেন, তেরো বছর। (ই.ফা. ৫৮৮৪, ই.সে. ৫৯২০) আম্‌র (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উরওয়াহ্‌কে প্রশ্ন করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কায় কত দিন অবস্থান করেছিলেন? তিনি বললেন, দশ বছর। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, ইবনু ‘আব্বাস তো বলেন, দশ বছরের বেশি। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি ইবনু ‘আব্বাসের জন্য দু‘আ করে বললেন, তিনি এ তত্ত্ব কবিদের থেকে গ্রহণ করেছেন। (ই.ফা. ৫৮৮৫, ই.সে. ৫৯২১) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মাক্কায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তের বছর ছিলেন এবং তেষট্টি বছর বয়সে তিনি ইন্তিকাল করেন। (ই.ফা. ৫৮৮৬, ই.সে. ৫৯২২) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কায় তের বছর অবস্থান করেছিলেন, সে সময় তাঁর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ হয় এবং মাদীনায় দশ বছর ছিলেন। আর তাঁর যখন ওফাত হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল তেষট্টি বছর। (ই.ফা. ৫৮৮৭, ই.সে. ৫৯২৩) আবূ ইসহাক্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উত্‌বাহ্‌ (রাঃ)-এর সাথে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন মানুষেরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বয়স নিয়ে আলোচনায় লিপ্ত হল। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, আবূ বকর (রাঃ) (বয়সে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তুলনায় বড় ছিলেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তিকাল হয় তখন তাঁর বয়স হয়েছিল তেষট্টি বছর। আর আবূ বকর (রাঃ)-এর যখন ওফাত হয়, তখন তাঁর বয়সও তেষট্টি বছর হয়েছিল। আর ‘উমার (রাঃ) শাহাদাত বরণ করেন তখন তাঁর বয়স হয়েছিল তেষট্টি বছর। বর্ণনাকারী বলেন, লোকদের মাঝে ‘আম্‌র ইবনু সা‘দ নামধারী একজন বলল, জারীর আমাকে বলেছেন যে, আমরা মু‘আবিয়াহ্‌ (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম। মানুষেরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বয়সের বর্ণনা করল। সে সময় মু‘আবিয়াহ্‌ (রাঃ) বললেন, যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তিকাল হয় তখন তাঁর বয়স ছিল তেষট্টি বছর। আর যখন আবূ বকর (রাঃ) ইন্তিকাল করেন তখন তাঁর বয়স ছিল তেষট্টি বছর এবং ‘উমার (রাঃ) শাহাদাতপ্রাপ্ত হন তখন তাঁর বয়সও তেষট্টি বছর ছিল। (ই.ফা. ৫৮৮৮, ই.সে. ৫৯২৪) জারীর (রাঃ) তিনি মু‘আবিয়াহ্‌ (রাঃ)-কে খুতবাহ্‌ দিতে শুনেছেন। মু‘আবিয়াহ্‌ (রাঃ) বললেন, যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাত হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল তেষট্টি বছর। আবূ বকর (রাঃ), ‘উমার (রাঃ)-ও তেষট্টি বছর (বয়সে ইন্তিকাল করেন) এবং আমি তেষট্টি বছর (বয়সের)। (ই.ফা. ৫৮৮৯, ই.সে. ৫৯২৫) বানূ হাশিমের মুক্তদাস ‘আম্মার (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যখন ওফাত হয় তখন তাঁর (বয়স) কত ছিল? ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, আমি চিন্তা করিনি যে, তুমি তাঁর গোত্রের ব্যক্তি হয়েও এ কথাটা অজানা রইবে। আমি বললাম, আমি লোকদের প্রশ্ন করেছি, তারা ভিন্ন মতাবলম্বন করেছেন। তাই এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য জানা আমি বেশি ভাল মনে করলাম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, তুমি কি হিসাব করতে জানো? তিনি বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আচ্ছা ‘চল্লিশ’ স্মরণ রেখ। এ সময় তিনি রসূল হন। এর সাথে পনের বছর যোগ করো, মাক্কায় যখন অবস্থান করেন ভয় এবং নিরাপত্তায়। আরো দশ হিজরাতের পর হতে মাদীনায়। (ই.ফা. ৫৮৯০, ই.সে. ৫৯২৬) ইউনুস (রাঃ) উপরোক্ত সূত্রে ইয়াযীদ ইবনু যুরাই‘-এর হাদীসের অবিকল রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৮৯১, ই.সে. ৫৯২৭) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)৩৭ পঁয়ষট্টি বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। (ই.ফা. ৫৮৯২, ই.সে. ৫৯২৮) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) এ সূত্রে খালিদ হতে রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৮৯২, ই.সে. ৫৯২৯) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কায় পনের বছর থাকেন, সাত বছর শব্দ শুনতেন এবং আলো দেখতে পেতেন, কিন্তু ভিন্ন কিছু দেখতেন না। আর আট বছর তাঁর নিকট ওয়াহী আসত। অতঃপর মাদীনায় দশ বছর থাকেন। (ই.ফা. ৫৮৯৩, ই.সে. ৫৯৩০)

【34】

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নামসমূহ

জুবায়র ইবনু মুত‘ইম (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি ‘মুহাম্মাদ’ (প্রশংসিত), আমি ‘আহ্‌মাদ’ (অত্যধিক প্রশংসাকারী), আমি ‘আল-মাহী’ (বিলুপ্তকারী) এমন লোক যে, আমার মাধ্যমে কুফ্‌রকে নিঃশেষ করা হবে। আমি ‘আল-হাশির’ (একত্রকারী) এমন ব্যক্তি যে, আমার পেছনে লোকেদের একত্রিত করা হবে। আমি ‘আল-আকিব’ (সর্বশেষ); আর আল-আকীব, ঐ লোক যার পর আর কোন নবী নেই। (ই.ফা. ৫৮৯৪, ই.সে. ৫৯৩১) জুবায়র ইবনু মুত‘ইম (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার বহু নাম রয়েছে। আমি মুহাম্মাদ, আমি আহ্‌মাদ, আমি ‘আল-মাহী’ (বিলোপ সাধনকারী) ঐ লোক যে, আমার মাধ্যমে আল্লাহ কুফ্‌রকে নিঃশেষ করবেন, আমি ‘আল-হাশির’ (একত্রকারী) এমন লোক যে, আমার পায়ের নিকট লোকেদের একত্রিত করা হবে। আমি ‘আল-আকীব’ (শেষ); এমন লোক যার পর কেউ (নবী) নেই এবং আল্লাহ তাঁর নাম রেখেছেন রঊফ ও রহীম। (ই.ফা. ৫৮৯৫, ই.সে. ৫৯৩২) যুহরী (রহঃ) এ সূত্রে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। শু‘আয়ব এবং মা‘মার (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে ‘আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শুনেছি’ তিনি বর্ণনা করেছেন। আর মা‘মারের হাদীসে আছে, তিনি বলেন, আমি যুহরী (রহঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, ‘আল-আকিব’ কী? তিনি বললেন, এমন লোক যার পর আর নবী নেই। মা’মার ও ‘উকায়ল-এর হাদীসে রয়েছে ‘আল-কাফারাতা’, আর শু‘আয়ব-এর হাদীসে আছে ‘আল-কুফ্‌র’। (ই.ফা. ৫৮৯৬, ই.সে. ৫৯৩৩) আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট তাঁর নিজের নামগুলো রিওয়ায়াত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি মুহাম্মাদ, আহ্‌মাদ, আল-মুকাফ্‌ফী (সর্বশেষ), আল-হাশির (একত্রকারী), তাওবার নবী ও রহ্‌মাতের নবী। (ই.ফা. ৫৮৯৭, ই.সে. ৫৯৩৪)

【35】

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর আল্লাহ সম্বন্ধে জ্ঞান এবং তাঁকে অত্যধিক ভয় করা

আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, একটি কাজ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করলেন এবং এটি জারি রাখলেন। এ খবর তাঁর কিছু সহাবার নিকট পৌঁছলে তারা এ কাজটি পছন্দ করলেন না এবং এ থেকে বিরত রইলেন। এ কথা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানতে পেরে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিলেন। তিনি বললেনঃ জনগণের কী হলো, তাদের নিকট এ খবর পৌঁছেছে যে, একটা কাজে আমি সম্মতি দিয়েছি, তারপরও তারা একে নিকৃষ্ট মনে করছে এবং এ থেকে বিরত থাকছে। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ সম্পর্কে আমি সবচেয়ে বেশী জানি এবং আল্লাহকে তাদের তুলনায় অত্যধিক ভয় করি। (ই.ফা. ৫৮৯৮, ই.সে. ৫৯৩৫) আ‘মাশ (রহঃ) এ সূত্রে জারীর (রাঃ)-এর হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৮৯৯, ই.সে. ৫৯৩৬) আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি কাজকে জায়িয করলেন, অন্য কিছু লোক তো খারাপ মনে করল। এ কথা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি রেগে গেলেন; এমনকি তাঁর মুখায়বে রাগ প্রকাশ পেল। তখন তিনি বললেনঃ লোকদের কী হলো যে, আমার জন্য বৈধ একটা কাজে তারা আগ্রহ প্রকাশ করছে না। আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই আল্লাহ সম্পর্কে তাদের চেয়ে অধিক জানি এবং তাকে অধিক ভয় করি। (ই.ফা. ৫৯০০, ই.সে. ৫৯৩৭)

【36】

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অনুসরণ ওয়াজিব হওয়া প্রসঙ্গে

আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ) আনসারদের জনৈক লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মুখে যুবায়র (রাঃ)-এর সাথে পানি সেচের নালা নিয়ে বিতর্ক করল যা থেকে তারা খেজুর গাছে পানি দিত। আনসার ব্যক্তিটি বললেন, পানি ছেড়ে দাও, তা প্রবাহিত হতে থাকুক। যুবায়র (রাঃ) তা মানলেন না। শেষ অবধি সকলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মুখে তর্ক করলে তিনি যুবায়রকে বললেন, হে যুবায়র! তোমার পানি নেয়া হলে তোমার প্রতিবেশীর জন্য ছেড়ে দাও। সে সময় আনসার ব্যক্তিটি রাগান্বিত স্বরে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! যুবায়র তো আপনার ফুফাতো ভাই। এতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারার রং পাল্টে গেলো। তিনি বললেন, হে যুবায়র! নিজের বৃক্ষগুলোকে পানি দাও এবং পানি আটকিয়ে রাখো, যে পর্যন্ত না পানি বাঁধ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। যুবায়র (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমার ধারণা হয় এ আয়াত সে ব্যাপারেই নাযিল হয় : “তোমার প্রতিপালকের কসম! ততক্ষণ পর্যন্ত তারা মু’মিন হতে পারবে না ......”- (সূরাহ্‌ আন্‌ নিসা ৪ : ৭৫)। (ই.ফা. ৫৯০১, ই.সে. ৫৯৩৮)

【37】

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সম্মান প্রদর্শন করা এবং অকারণে বেশি প্রশ্ন করা বা কষ্ট দেয়া ও অবাঞ্চিত ইত্যাদি বিষয় থেকে বিরত থাকা

আবদুর রহমান ও সা’ঈদ ইবনু মুসাইয়্যিব (রহঃ) তাঁরা দু’জনে বলেন, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) বলতেন যে, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, আমি তোমাদের যা বারণ করেছি তা হতে বিরত থাকো এবং যা তোমাদের নির্দেশ করেছি তা যা সম্ভব পালন করো। কেননা, অধিক জিজ্ঞাসা ও স্বীয় নবী গণের সঙ্গে মতবিরোধ তোমাদের পূর্ববর্তীদের ধ্বংস করেছে। (ই.ফা. ৫৯০২, ই.সে. ৫৯৩৯) ইবনু শিহাব (রাঃ) এ সূত্রে অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৯০৩, ই.সে. ৫৯৪০) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি তোমাদের জন্য যা ছেড়ে দিয়েছি তোমরাও আমাকে সে বিষয়ে ছেড়ে দাও” (অর্থাৎ সে বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করো না)। হাম্মাম (রহঃ)-এর হাদীসে আছে, “যে বিষয়ে তোমাদের ছাড় দেয়া হয়েছে।” কারণ তোমাদের পূর্ববর্তীরা ধ্বংস হয়েছে, এরপর তাঁরা আবূ হুরায়রা হতে যুহরী এবং আবূ সালামাহ্ (রহঃ)-এর হাদীসের অবিকল রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৯০৪, ই.সে. ৫৯৪১) সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিমদের মাঝে সর্বাধিক দোষী ঐসব লোক, যে এমন ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে, যা মুসলিমদের জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ ছিল না। আর তাঁর জিজ্ঞেস করার কারণে সে ব্যাপারটি মুসলিমদের উপর হারাম করে দেওয়া হয়। (ই.ফা. ৫৯০৫, ই.সে. ৫৯৪২) সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিমদের মধ্যে সর্বাধিক অপরাধী মুসলিম সে-ই, যে মুসলিমদের জন্য যা অবৈধ নয়, এমন ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে, আর সে ব্যাপারটি তার জিজ্ঞেস করার কারণে লোকদের উপর অবৈধ ঘোষণা দেওয়া হয়। (ই.ফা. ৫৯০৬, ই.সে. ৫৯৪৩) হারমালাহ্ ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) ইউনুস থেকে এবং ‘আবদ ইবনু হুমায়দ মা’মার উভয়ে উক্ত সানাদে যুহরী (রহঃ) হতে রিওয়ায়াত করেন। তবে মা’মার-এর হাদীসে যুহরীর রিওয়ায়াতে বর্ধিত আছে- “কোন লোক কোন ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে এবং তৎসম্পর্কে অধিক জিজ্ঞেস করে”। ইবনু সা’দ (রহঃ) থেকে বর্ণিত ইউনুসের হাদীসে আছে যে, যুহরী (রহঃ) বলেছেন, তিনি ‘আমির ইবনু সা’দ হতে শুনেছেন। (ই.ফা. ৫৯০৬, ই.সে. ৫৯৪৪) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, তাঁর সহাবীদের কোন কথা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছল। তখন তিনি এক বক্তৃতা দিলেন এবং বললেনঃ আমার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম উপস্থিত করা হয়। আজকের মতো ভাল এবং মন্দ আমি আর কখনো দেখিনি। আমি যা জানতে পেরেছি, তা যদি তোমরা জানতে, তবে তোমরা অবশ্যই খুবই কম হাসতে এবং বেশী কাঁদতে। আনাস (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবীদের উপর এর চাইতে বিভীষিকাময় কোন দিন আর আসেনি। তাঁরা নিজেদের মাথা আবৃত করল এবং তাঁদের ভেতর হতে কান্নার আওয়াজ আসতে লাগল। আনাস (রাঃ) বলেন, তারপর ‘উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, আমরা সন্তুষ্টচিত্তে আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নবী হিসেবে মেনে নিলাম। অতঃপর এক লোক দাঁড়িয়ে বলল, আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা অমুক। তখন এ আয়াত নাযিল হলোঃ “হে মু’মিনগণ! তোমরা সেসব ব্যাপারে জিজ্ঞেস করো না, যা উন্মোচিত হলে তোমরা বেদনার্ত হবে”- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ১০১)। (ই.ফা. ৫৯০৭, ই.সে. ৫৯৪৫) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈক লোক বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা অমুক। আর তখনই নাযিল হয়ঃ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা সেসব ব্যাপারে জিজ্ঞেস করো না যা উন্মেচিত হলে তোমরা বেদনার্ত হবে’’ ... আয়াতের শেষাংশ পর্যন্ত। (ই.ফা. ৫৯০৮, ই.সে. ৫৯৪৬) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য ঢলে যাওয়ার পর বের হলেন এবং লোকদের নিয়ে যুহরের সলাত আদায় করলেন। যখন সালাম ফিরালেন তখন মিম্বারে দাঁড়িয়ে কিয়ামাতের আলোচনা করে বর্ণনা করলেন যে, এর পূর্বে বহু বড় বড় বিষয় ঘটবে। তারপর বললেনঃ তোমাদের মাঝে যে লোক আমাকে কোন ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে চায় সে যেন ঐ সম্বন্ধে আমাকে জিজ্ঞেস করে। আল্লাহর শপথ! যতক্ষণ পর্যন্ত আমি এ স্থানে রয়েছি ততক্ষণ তোমরা আমাকে যে বিষয়েই জিজ্ঞেস করবে আমি তা বলে দিব। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে লোকেরা অনেক চিৎকার আরম্ভ করে দিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারবার বলতে থাকলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করো। তখন ‘আব্দুল্লাহ ইবনু হুযাফাহ্‌ (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, আমার পিতা কে? হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হুযাফাহ্। তারপর যখন রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারবার বলতে থাকলেন, আমাকে জিজ্ঞেস করো। তখন ‘উমার (রাঃ) হাঁটু গেড়ে বসে বললেন, সন্তুষ্টচিত্তে আমরা আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রসূল হিসেবে মেনে নিয়েছি। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, যখন ‘উমার (রাঃ) এ কথা বললেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেমে গেলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বিপদ সন্নিকটবর্তী। মুহাম্মাদের জীবন যাঁর হাতে তাঁর শপথ! এ দেয়ালটির পাশে এখনই আমার সামনে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হয়েছে। অতএব, আজকের মতো ভাল এবং খারাবী আমি আর দেখিনি। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উত্‌বাহ্ আমাকে বলেছেন, তিনি বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু হুযাফার মা ‘আব্দুল্লাহ ইবনু হুযাফাহ্‌কে বলেছেন, তোর চাইতে অধিক অবাধ্য কোন সন্তানের ব্যাপারে আমি শুনিনি। তুই কি এ কথা হতে নিশ্চিন্ত ছিলি যে, তোর মাও হয়ত এমন কোন পাপ করে বসেছে যা জাহিলী যুগের নারীরা করত, আর তুই তোর মাকে লোকদের সম্মুখে অপমান করতিস? ‘আব্দুল্লাহ ইবনু হুযাফাহ্ (রাঃ) জবাবে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমাকে যদি একটা কালো হাবশীর সঙ্গেও সম্পর্কিত করতেন তাহলে আমি তা মেনে নিতাম। (ই.ফা. ৫৯০৯, ই.সে. ৫৯৪৭) আনাস (রাঃ)-এর সানাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। ‘উবাইদুল্লাহ হাদীসটিও এর সাথে রয়েছে, তবে শু’আয়ব যুহরীর সূত্রে তিনি ‘আবদুল্লাহ থেকে, তিনি জনৈক আহলে ‘ইল্‌ম থেকে শুনেছেন- ‘আবদুল্লাহ ইবনু হুযাফার মা ইউনুসের হাদীসের অনুরূপ বলেছেন। (ই.ফা. ৫৯১০, ই.সে. ৫৯৪৮) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) লোকেরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করতে লাগল। এমনকি তারা তাঁকে প্রশ্ন করে জর্জরিত করে ফেলল, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে এসে মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেনঃ আমাকে প্রশ্ন করো, যে কোন ব্যাপারে তোমরা আমাকে প্রশ্ন করবে, আমি অবশ্যই তোমাদের নিকট তা বর্ণনা করে দিব। লোকেরা এ কথা শুনে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হতে মুখ বন্ধ রাখল এবং ঘাবড়িয়ে গেল, না জানি সামনে কোন ঘটনা সামনে এসে পড়ে। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি ডানে বামে দেখতে লাগলাম। সকল লোক স্ব স্ব মাথা আবৃত করে কান্নাকাটি করছিল। তখন মাসজিদ হতে জনৈক ব্যক্তি উঠল যার সাথে ঝগড়া লাগলে তাঁর পিতা ছাড়া অন্যের দিকে তাকে সম্পর্কিত করা হতো। সে বলল, হে আল্লাহর নবী! কে আমার পিতা? তিনি বললেন, তোমার পিতা হুযাফাহ্। তারপর ‘উমার (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, (আমরা আন্তরিকতার সাথে) আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে রসূল হিসেবে মেনে নিলাম। আর আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি ফিতনার অকল্যাণ থেকে। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আজকের মতো ভাল এবং খারাপ আমি কক্ষনো দেখিনি। আমার সামনে জান্নাত ও জাহান্নামের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তাই আমি উভয়টিকে এ দেয়ালের পাশে দেখতে পাই। (ই.ফা. ৫৯১১, ই.সে. ৫৯৪৯) আনাস (রাঃ) এ বিবরণই রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৯১২, ই.সে. ৫৯৫০) আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এমন কতক ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলো যা তিনি অপছন্দ করেন। যখন এ রকম প্রশ্ন বারবার করা হলো, তিনি রাগান্বিত হয়ে লোকদেরকে বললেনঃ যা ইচ্ছে তোমরা আমাকে প্রশ্ন করো। জনৈক লোক বলল, আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা হুযাফাহ্‌। আরেক লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমার পিতা কে? তিনি বললেনঃ তোমার পিতা শাইবার গোলাম সালিম। ‘উমার (রাঃ) যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখমণ্ডলে রাগের লক্ষণ দেখতে পেলেন, তখন বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমরা আল্লাহর নিকট তাওবাহ্ করছি। আবূ কুরায়ব (রহঃ)-এর বর্ণনায় (কেবল এটুকু) আছে, ‘বলল, কে আমার পিতা, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, তোমার পিতা শাইবার দাস সালিম। (ই.ফা. ৫৯১৩, ই.সে. ৫৯৫১)

【38】

শারী’য়াত হিসেবে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা আদেশ করেছেন তা পালন করা ওয়াজিব আর পার্থিব বিষয়ে তিনি যে অভিমত ব্যক্ত করেন তা পালন করা ওয়াজিব নয়

তাল্‌হাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে খর্জুর বৃক্ষের মাথায় দাঁড়ানো একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এরা কি করছে? মানুষেরা বলল, এরা খেজুর গাছের পরাগায়ণ করছে। নরকে মাদীর (কেশর) সংমিশ্রণ করে, ফলে তা গর্ভ ধারণ করে। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার মনে হয় না এতে কোন লাভ হয়। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বক্তব্য সাহাবাদের নিকট পৌঁছলে তাঁরা প্রজনন কর্ম থেকে বিরত থাকেন। তারপর এ সংবাদ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেয়া হলো। তিনি বললেন, এতে যদি তাদের লাভ হয়ে থাকে তবে তাঁরা করুক। আমি তো ধারণাপ্রসুত- এ কথা বলেছি। তাই তোমরা আমার অনুমানকে ধরে রেখো না। কিন্তু আমি যদি আল্লাহর তরফ হতে কোন কথা বলি, তবে সেটার উপর ‘আমাল করো। কারণ আমি আল্লাহর উপর কখনই মিথ্যা অপবাদ দেই না। (ই.ফা. ৫৯১৪, ই.সে. ৫৯৫২) রাফি’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় আসলেন। সে সময় লোকেরা খেজুর বৃক্ষ তাবীর করত। বর্ণনাকারী বলেন, অর্থাৎ- খেজুর বৃক্ষকে পরাগায়ন করাত। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা কি করছ? তাঁরা বলল, আমরা তো এমন করে আসছি। তিনি বললেন, (আমার মনে হয়) তোমরা এমন না করলেই ভাল হয়। তাই তাঁরা তা ছেড়ে দিল। আর এতে করে খেজুর ঝরে পড়ল কিংবা বর্ণনাকারী বলেছেন, তার উৎপাদন হ্রাস পেল। বর্ণনাকারী বলেন, মানুষেরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ ঘটনা ব্যক্ত করল। তখন তিনি বললেন, আমি তো একজন মানুষ মাত্র এতে কোন সন্দেহ নেই। দ্বীনের ব্যাপারে যখন তোমাদের আমি কোন নির্দেশ দেই তোমরা তখন তা পালন করবে, আর যখন কোন কথা আমি আমার ধ্যান-ধারণা থেকে বলি, তখন (বুঝতে হবে) আমি একজন মানুষ মাত্র। বর্ণনাকারী ‘ইকরামাহ্ (রহঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ বলেছেন। আর মা’কিরী (রহঃ) নিঃসন্দেহে শুধু ‘নাফাযাত’ (ঝড়ে পড়ল) বলেছেন। (ই.ফা. ৫৯১৫, ই.সে. ৫৯৫৩) আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যারা খেজুর বৃক্ষ তাবীর করত এদের কতক ব্যক্তির নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, এটি যদি না করতে তাহলে তোমাদের ভাল হতো। লোকেরা বিরত থাকল। এতে চিটা খেজুর উৎপন্ন হলো। তারপরে কোন এক সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি প্রশ্ন করলেন, তোমাদের খেজুর বৃক্ষের কি হলো? ব্যক্তিরা বলল, আপনি এরূপ এরূপ বলেছিলেন (সেটি করায় এমন হয়েছে)। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের দুনিয়াবী ব্যাপারে তোমরাই ভাল জানো। (ই.ফা. ৫৯১৬, ই.সে. ৫৯৫৪)

【39】

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখার ফযীলত ও এর আকাঙ্ক্ষা

হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আমাদের নিকট রিওয়ায়াত করেছেন, তার মাঝ হতে একটি হাদীস হলো এই যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন তাঁর শপথ! তোমাদের উপর এমন এক মুহূর্ত আসবে যখন তোমরা আমার সাক্ষাৎ পাবে না; আর আমার সাক্ষাৎ লাভ তোমাদের নিকট তখন তোমাদের ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজনের চেয়েও অধিক আকাঙ্খার বস্তু হবে। আবূ ইসহাক্ বলেন, হাদীসের শব্দের মধ্যে কিছু তাক্‌দীম ও তাখীর হয়েছে। আমার মতে, হাদীসের অর্থ হল “আমাকে তাদের সাথে দেখতে পাওয়াটা তাদের নিকট তাদের পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের চেয়ে অধিক প্রিয় হবে।” (ই.ফা. ৫৯১৭, ই.সে. ৫৯৫৫)

【40】

‘ঈসা (আঃ)এর ফযীলত

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আমি মারইয়ামের পুত্রের সর্বাধিক কাছাকাছি। নবী গণ একে অপরের ভাইয়ের মতো এবং আমার ও তাঁর মাঝে কোন নবী নেই। (ই.ফা. ৫৯১৮, ই.সে. ৫৯৫৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি ‘ঈসা (‘আঃ)-এর সর্বাধিক কাছাকাছি। নবী গণ একে অপরের (বৈমাত্রেয় ভাইয়ের) পিতৃসন্তানের মতো এবং আমার ও ‘ঈসার মধ্যবর্তী সময়ে কোন নবী নেই। (ই.ফা. ৫৯১৯, ই.সে. ৫৯৫৭) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, দুনিয়া ও আখিরাতে আমি ‘ঈসা (‘আঃ)-এর সর্বাধিক নিকটবর্তী। লোকেরা বলল, এটি কীভাবে হে আল্লাহর রসূল? তখন তিনি বললেনঃ নবী গণ একই পিতার সন্তানের মতো। তাঁদের মাতা ভিন্ন। তাঁদের দ্বীন একটিই। আর তাঁর এবং আমার মাঝে কোন নবীও নেই। (ই.ফা. ৫৯২০, ই.সে. ৫৯৫৮) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এমন কোন নবভূমিষ্ঠ সন্তান নেই যাকে শাইতান স্পর্শ করে না। আর সে নবজাত সন্তান শাইতানের স্পর্শে কান্নাকাটি শুরু করে, কেবল মারইয়াম পুত্র এবং তাঁর মা ব্যতীত। তারপর আবু হুরায়রা্‌(রাঃ) বলেন, তোমাদের ইচ্ছা হলে পড়োঃ “অবশ্যই আমি অভিশপ্ত শাইতান থেকে তাঁর ও তাঁর বংশধরদের জন্য তোমার শরণাপন্ন হচ্ছি”–(সূরাহ্‌ আ-লি ‘ইমরান ৩ : ৩৬)। (ই.ফা. ৫৯২১, ই.সে.৫৯৫৯) যুহরী (রহঃ) উপরোক্ত সূত্রে রিওয়ায়াত করেছেন, “জন্মের সময় সে তাকে স্পর্শ করে, তখন শাইতানের স্পর্শে সে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়”। শু’আয়বের হাদিসে আছে “শাইতানের স্পর্শ”। (ই.ফা. ৫৯২১, ই.সে. ৫৯৬০) আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেন, প্রত্যেক বানী আদামকেই শাইতান স্পর্শ করে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করে, কেবল মারইয়াম ও তাঁর পুত্র [‘ঈসা(‘আ:)] এর ব্যতিক্রম। (ই.ফা. ৫৯২২, ই.সে. ৫৯৬১) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেনঃ ভূমিষ্ঠ হওয়ার প্রাক্কালে বাচ্চার চিৎকার শাইতানের খোঁচার কারণে হয়। (ই.ফা. ৫৯২৩, ই.সে. নেই) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেছেন, মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা (‘আঃ) জনৈক লোককে চুরি করতে দেখলেন। সে সময় তিনি তাকে বললেন, তুমি চুরি করেছো। সে বলল, কক্ষনো না। যিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে আর কোন মা’বূদ নেই, তাঁর কসম! (আমি চুরি করিনি)। তখন ‘ঈসা (‘আঃ) বললেন, আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করলাম আর আমি নিজেকে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করলাম। (ই.ফা. ৫৯২৪, ই.সে. ৫৯৬২)

【41】

ইব্‌রাহীম খলীল ‘(আঃ)- এর মর্যাদা

আনাস ইবনু মালিক (রহঃ) তিনি বলেন, জনৈক লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বলল, হে সৃষ্টির সেরা! তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তিনি (সৃষ্টির সেরা) তো ইব্‌রাহীম (‘আঃ)। (ই.ফা. ৫৯২৫, ই.সে. ৫৯৬৩) আনাস (রাঃ) অবিকল হাদিস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৯২৬, ই.সে. ৫৯৬৪) আনাস (রাঃ) এর সানাদ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৯২৭, ই.সে. ৫৯৬৫) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইব্‌রাহীম (‘আঃ) খত্‌না করেছেন কুড়ালজাত অস্ত্র দ্বারা, সে সময় তাঁর বয়স হয়েছিল আশি বছর। (ই.ফা.৫৯২৮, ই.সে.৫৯৬৬) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমরা ইব্‌রাহীম (‘আঃ)-এর চেয়ে সর্বাধিক সন্দেহপরায়ণ। যখন তিনি বলেছিলেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আপনি মৃতকে কিভাবে জীবিত করেন, আমাকে দেখান। তিনি বললেনঃ তবে কি তুমি বিশ্বাস করো না? তিনি বললেনঃ কেন করব না, তবে তা শুধু আমার আত্মার প্রশান্তির জন্য। লুত (‘আঃ)-কে আল্লাহ রহম করুন, তিনি মজবুত-কঠিন স্তম্ভের আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। আমি যদি ইউসুফ(‘আঃ)-এর মত দীর্ঘ সময় জেলখানায় কারাবদ্ধ হতাম তবে আহ্বানকারীর ডাক শুনামাত্র সাড়া দিতাম। (ই.ফা. ৫৯২৯, ই.সে. ৫৯৬৭) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সানাদ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে ইউনুস তার সানাদে যুহরী (রহঃ) হতে বর্ণিত হাদিসের মর্মে হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা.৫৯৩০, ই.সে.৫৯৬৮) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেনঃ আল্লাহ লূত (‘আঃ)-কে মাফ করে দিন, তিনি শক্ত-কঠিন খুঁটির আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। (ই.ফা.৫৯৩১, ই.সে.৫৯৬৯) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ নবী ইব্‌রাহীম (‘আঃ) কক্ষনো মিথ্যা বলেননি; তিনবার ছাড়া। দু’বার আল্লাহ সম্পর্কিত। একবার তো তিনি বলেছিলেন, ‘আমি রোগগ্রস্ত’ আর তাঁর কথা, “বরং এদের বড়টাই এ কাজ করেছে”। অন্যটা ‘সারা’ সম্বন্ধে। যে সময় তিনি এক যালিম শাসকের দেশে গিয়েছিলেন, সারাও তাঁর সাথে ছিলেন। সারা ছিলেন সুন্দরীদের সেরা। সে সময় ইব্‌রাহীম (‘আঃ) সারাকে বললেন, এ যালিম শাসক যদি অবহিত হন যে, তুমি আমার সহধর্মিনী তবে তোমাকে জোরপূর্বক নিয়ে নেবে। সুতরাং তোমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, তুমি বলবে যে, তুমি আমার বোন। ইসলামের দিক দিয়ে তুমি তো আমার বোনই হও। কারণ তুমি আর আমি ব্যতীত দুনিয়াতে আর কোন মুসলিম রয়েছে বলে আমার জানা নেই। যখন ইব্‌রাহীম (‘আঃ) সে যালিম শাসকের দেশে পৌঁছলেন, তখন শাসকের লোকজন তাঁর নিকট সারাকে দেখতে পেয়ে শাসকের নিকট এসে বলল, আপনার ভূমিতে এমন একজন নারী এসেছে, আপনিই কেবল তার উপযুক্ত। শাসক সারাকে ডেকে পাঠালে ইব্‌রাহীম (‘আঃ) সলাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। যখন সারা শাসকের নিকট পৌঁছলেন, সে বেহুঁশের মতো সারার দিকে হাত বাড়াতেই তার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে এঁটে গেল। শাসক বলল, তুমি আল্লাহর নিকট আমার হাত খুলে যাওয়ার দু’আ করো। আমি তোমাকে বিরক্ত করব না। তিনি দু’আ করলেন। আবার সে হাত বাড়াল, তখন প্রথম মুষ্টির চেয়ে অধিক শক্ত হয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেল। সারাকে সে আগের মতই বলল। তিনি দু’আ করলেন। পুনরায় সে হাত বাড়াল। তখন প্রথম দু’বারের চেয়ে আরো বেশি শক্তভাবে তার হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেল। তখন শাসক বলল, তুমি আল্লাহর কাছে আমার হাত খুলে দেয়ার জন্য দু’আ করো, আল্লাহর শপথ! তোমাকে আমি উত্যক্ত করব না। তিনি দু’আ করলেন। তার হাত খুলে গেল। তখন সে ঐ ব্যক্তিটিকে ডাকলো যে সারাকে এনেছিল। বলল, তুই তো আমার নিকট শাইতান নিয়ে এসেছিস, মানুষ আনিসনি। একে আমার ভূমি হতে বের করে দে। সঙ্গে হাজেরাকে দিয়ে দে। রাবী বলেন, সারা এগিয়ে চললেন। ইব্‌রাহীম (‘আঃ) তাকে দেখে এগিয়ে আসলেন এবং তাঁকে প্রশ্ন করলেন, কি ঘটল? তিনি বললেন, ভালই। আল্লাহ তা’আলা আমার উপর হতে এ দুষ্কৃতির হাতকে ফিরিয়ে রেখেছেন। আর একটা সেবিকাও দিয়েছেন। আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) বলেন, এ সেবিকাই তোমাদের মা, হে আকাশের পানির সন্তানেরা। (ই.ফা. ৫৯৩২, ই.সে. ৫৯৭০)

【42】

মুসা‘ (আঃ)-এর ফযীলত

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বনী ইসরাঈলরা বস্ত্রবিহীন অবস্থায় গোসল করত। তারা পরস্পরের গুপ্তাঙ্গ দেখত। আর মূসা (‘আঃ) একাকী গোসল করতেন। লোকেরা বলত, মূসা আমাদের সঙ্গে গোসল করে না। কেননা [মূসা (‘আঃ)-এর] অণ্ডকোষে রোগ আছে। বর্ণনাকারী বলেন, একদা মূসা (‘আঃ) পাথরের উপর কাপড় রেখে গোসল দিচ্ছিলেন। সে সময় পাথরটি তাঁর বস্ত্র নিয়ে ছুটতে লাগল। তখন মূসা (‘আঃ) “ও পাথর! আমার কাপড় দে”, “হে পাথর! আমার কাপড় দে” বলে পাথরটির পিছু পিছু দৌঁড়াতে লাগলেন, এতে বনী ইসরাঈল (প্রকাশ্যে) তাঁর গুপ্তাঙ্গ দেখে ফেলল এবং বলল, আল্লাহর শপথ! মুসার তো কোন রোগ নেই। তারপর পাথরটি থেমে গেল, যখন ভালভাবে তা দৃষ্টিপাত হলো। মূসা (‘আঃ) কাপড় নিলেন এবং পাথরটিকে মারতে শুরু করলেন। আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! এ পাথরটির গায়ে মূসা (‘আঃ)-এর ছয় থেকে সাতটি মারের চিহ্ন রয়েছে। (ই.ফা. ৫৯৩৩, ই.সে. ৫৯৭১) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, মূসা (‘আঃ) অতি লজ্জাশীল লোক ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাকে কেউ বস্ত্রহীন অবস্থায় দেখেনি। বনী ইসরাঈলরা বলতেছিল, মুসার অণ্ডকোষ রোগগ্রস্ত। একদা তিনি পানিতে গোসল করতে গিয়ে কাপড়গুলো একটা পাথরের উপর রাখলেন। পাথরটি (কাপড়সহ) দৌঁড়ে পালাতে লাগলো। তিনি তার লাঠি হাতে পাথরটিকে মারতে মারতে এর পশ্চাতে ছুটলেন। বলতে লাগলেন, (হে পাথর!) আমার কাপড়, হে পাথর! আমার কাপড়। পাথরটি বনী ইসরাঈলের এক জনসমাবেশে গিয়ে থামলো। এ প্রসঙ্গে এ আয়াত নাযিল হলোঃ “হে মু’মিনগণ! তোমরা তাদের ন্যায় হয়ো না যারা মূসা (‘আঃ)-কে অপবাদ দিয়েছে। তাদের দেয়া অপবাদ হতে আল্লাহ তাঁকে পবিত্র করে দিয়েছেন এবং তিনি আল্লাহর নিকট ছিলেন সম্মানিত”-(সূরা আল আহ্‌যাব ২৩ : ৬৯) (ই.ফা. ৫৯৩৪, ই.সে. ৫৯৭২) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, মালাকুল মাওতকে মূসা (‘আঃ)-এর নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। যখন ফেরেশ্‌তা তাঁর নিকট আসলেন তখন মূসা (‘আঃ) তাঁকে একটা চড় মারলেন। তাতে তাঁর এটা চোখ নষ্ট হয়ে গেল। তারপর তিনি আল্লাহর নিকট ফিরে গেলেন এবং বললেন, আপনি আমাকে এমন এক বান্দার নিকট পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহ তা’আলা ফেরেশ্‌তার দৃষ্টি পুনর্বহাল করে দিয়ে বললেন, পুনরায় তাঁর কাছে যাও এবং তাঁকে বলো, সে যেন তাঁর হাত একটি বলদের পৃষ্ঠের উপর রাখে। এতে যতগুলো লোম তাঁর হাতের নীচে পড়বে প্রতিটি লোমের পরিবর্তে সে এক বছর হায়াত পাবে। মূসা(‘আঃ) বললেন, তারপর কী হবে? আল্লাহ বলেন, তারপর মরণ। মূসা(‘আঃ) বললেন, তাহলে এখনই। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমাকে পবিত্র ভূমির এক ঢিলের কাছাকাছি করুন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি যদি সেখানে থাকতাম তাহলে পথের পাশে লাল বালির স্তূপের নিকট মূসা (‘আঃ)-এর কবর দেখিয়ে দিতাম। (ই.ফা. ৫৯৩৫, ই.সে. ৫৯৭৩) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একদা মালাকুল মাওত মূসা (‘আঃ)-এর নিকট এসে বলল, মূসা! তোমার প্রতিপালকের নিকট চলো। বর্ণনাকারী বলেন, তখন তাঁর চোখের উপর মূসা (‘আঃ) তাকে একটা চপেটাঘাত করলেন, এতে তাঁর চোখ নষ্ট হয়ে গেল। তারপর ফেরেশ্‌তা আল্লাহর নিকট ফিরে গিয়ে বললেন, আপনি আমাকে আপনার এমন এক বান্দার নিকট পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না এবং সে আমার চোখ নষ্ট করে দিয়েছে। আল্লাহ তাঁর চোখ ঠিক করে দিলেন এবং বললেন, আমার বান্দার নিকট আবার যাও এবং বলো, তুমি কি আরও দীর্ঘায়ু চাও? যদি তা চাও তবে তোমার হাত একটি বলদের পৃষ্ঠের উপর রাখো। এতে তোমার হাতের নিচে যতগুলো পশম পড়বে, তত বছর তুমি জীবিত থাকবে। মূসা বললেন, তারপর কি? আল্লাহ বললেন, তারপর মৃত্যুবরণ করবে। মূসা (‘আঃ) বললেন, তবে এখনই ভাল। হে আল্লাহ! আমাকে পবিত্র ভূমি একটি পাথরের ঢিলের দূরত্বে নিয়ে মৃত্যু দান করুন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহর কসম! যদি আমি সেখানে থাকতাম তবে পথের কিনারে লাল বালুকা স্তূপের পাশে তাঁর কবর তোমাদের দেখিয়ে দিতাম। (ই.ফা. ৫৯৩৬, ই.সে. ৫৯৭৪) আবূ ইসহাক, মা’মার (রহঃ) অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৯৩৬, ই.সে. নেই) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন যে, এক ইয়াহূদী কিছু মাল বিক্রি করছিল, দাম দেয়া হলে সে তাতে মনতুষ্ট হলো না, কিংবা এটাকে খারাপ মনে করল, সে বলল, না হবে না, তাঁর কসম যিনি মুসা (‘আঃ)-কে লোকদের জন্য মনোনীত করেছেন। এ কথা এক আনসারী শুনতে পেয়ে ইয়াহূদীর গালে একটি চড় মারলেন এবং বললেন, তুই বলিস, মূসা (‘আঃ)-কে লোকদের মধ্য হতে মনোনীত করেছেন অথচ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদ্যমান রয়েছেন। ঐ ইয়াহুদী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে আবুল কাসিম! আমি যিম্মী এবং মুসলিম দেশের নিরাপত্তাপ্রাপ্ত মানুষ, আমাকে অমুক লোক চড় মেরেছে। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করলেন, কেন তুমি তার গালে চড় দিলে? আনসারী বললেন, সে বলেছে যিনি মানুষের মধ্যে মূসা (‘আঃ)-কে মনোনীত করেছেন অথচ আপনি আমাদের মাঝে বিদ্যমান। আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) বলেন, রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুব ক্রোধান্বিত হলেন। রাগের চিহ্ন তাঁর মুখমণ্ডলে ফুটে উঠল। আর বললেনঃ নবী দের মাঝে একজনকে অপর জনের উপর মর্যাদা দিও না। কারণ যখন কিয়ামাতের দিন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে তখন আসমান ও জমিনের সবাই বেঁহুশ হয়ে পড়বে, কেবল আল্লাহ যাদের চাইবেন তাঁরা ব্যতীত। তারপরে দ্বিতীয়বার যখন ফুঁৎকার দেয়া হবে তখন সর্বপ্রথম আমিই উত্থিত হব এবং দেখতে পাব যে, মূসা (‘আঃ) ‘আর্‌শ ধরে রয়েছেন। আমার জানা নেই যে, তূর পাহাড়ে তাঁর বেঁহুশ হওয়াটাই তাঁর এখনকার বেহুঁশ না হওয়ার কারণ, না আমার আগেই তাঁকে চেতনা ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে? আর আমি এ কথাও বলি না যে, কোন পয়গম্বর ইউনুস ইবনু মাত্তা (‘আঃ)-এর তুলনায় অনেক মর্যাদাবান। (ই.ফা. ৫৯৩৭, ই.সে. ৫৯৭৫) ‘আবদুল ‘আযীয ইবনু আবূ সালামাহ্ (রাঃ) একই সূত্রে হুবহু হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৯৩৭, ই.সে. ৫৯৭৬) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ইয়াহূদী ও এক মুসলিম পরস্পর গালাগালি করল। মুসলিম বলল, তাঁর কসম! যিনি সারা দুনিয়ার মাঝে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে নির্বাচিত করেছেন। ইয়াহূদী বলল, কসম তাঁর! যিনি মূসা (‘আঃ)-কে নির্বাচিত করেছেন সারা দুনিয়ার মাঝে! বর্ণনাকারী বলেন, এমন সময় মুসলিম হাত তুলল এবং ইয়াহূদীর গালে চড় মারল। অতঃপর ইয়াহূদী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেল এবং তার ও মুসলিমের ঘটনা বলল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা আমাকে মূসা (‘আঃ)-এর উপর মর্যাদা দিও না। কেননা মানুষেরা যখন বেঁহুশ হবে। সর্বপ্রথম আমি হুঁশ ফিরে পাব, তখন দেখতে পাব যে, মূসা (‘আঃ) ‘আর্‌শের কিনারা ধরে রয়েছেন। জানি না, তিনি কি বেহুঁশ হয়ে আমার আগেই হুঁশ ফিরে পেয়েছেন, নাকি যারা বেঁহুশ হননি তিনি তাঁদের মাঝে রয়েছেন। (ই. ফা. ৫৯৩৮, ই.সে. ৫৯৭৭) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, এক মুসলিম ও ইয়াহূদী পরস্পর গালাগালি করল-তারপর ইব্‌রাহীম ইবনু সা‘ঈদ ইবনু শিহাব হতে বর্ণিত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৫৯৩৯, ই.সে. ৫৯৭৮) আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, এক ইয়াহূদী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল তার গালে চড় দেয়া হয়েছে- যুহরীর হাদীসের মর্মানুযায়ী হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। কিন্তু তিনি শুধু এ কথাই বলেছেন যে, “জানি না তিনি অচেতন হয়ে আমার পূর্বেই হুঁশ ফিরে পেয়েছেন, না-কি তূরের অচেতনই তাঁর জন্য যথেষ্ট হয়েছে।” (ই.ফা. ৫৯৪০, ই.সে. ৫৯৭৯) আবূ সা‘ঈদ খুদ্‌রী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নবীদের মাঝে একের উপরে অন্যকে প্রধান্য দিও না। (ই. ফা. ৫৯৪১, ই.সে. ৫৯৮০) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে রাত্রে আমার মি‘রাজ হয়েছিল সে রাত্রে আমি মূসা (‘আঃ)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম। লাল বালুকা স্তুপের নিকট তাঁর কবরে তিনি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন। (ই.ফা. ৫৯৪২, ই.সে. ৫৯৮১) আনাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি মূসা (‘আঃ)-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন তিনি তাঁর কবরে সলাত আদায় করছিলেন। ‘ঈসার হাদীসে বর্ধিত আছে যে, “আমাকে যে রাত্রে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে রাত্রে আমি যাচ্ছিলাম।” (ই.ফা. ৫৯৪৩, ই.সে. ৫৯৮২)

【43】

ইউনুস (‘আঃ)-এর বর্ণনা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর উক্তি- কারো এ কথা বলা ঠিক নয় যে, আমি ইউনুস ইবনু মাত্তা থেকে উত্তম

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা বলেছেন, আমার কোন বান্দার ক্ষেত্রেই এ কথা বলা ঠিক নয় যে, “ইউনুস ইবনু মাত্তা হতে আমি উত্তম।” (ই.ফা. ৫৯৪৪, ই.সে. ৫৯৮৩) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বান্দার ক্ষেত্রেই এ কথা বলা ঠিক নয়, “আমি ইউনুস ইবনু মাত্তা হতে উত্তম।” ইউনুস (‘আঃ)-কে এখানে তাঁর পিতা মাতার সঙ্গে সম্পর্কিত করা হয়েছে। (ই.ফা. ৫৯৪৫, ই.সে. ৫৯৮৪)

【44】

ইউসুফ (‘আঃ)-এর ফযীলত

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মানুষের মাঝে সবচাইতে সম্মানিত ব্যক্তি কে? তিনি বলেনঃ তাদের মাঝে সর্বোত্তম মুত্তাকী ব্যক্তি। প্রশ্নকারীরা বললেন, আমরা এ ব্যাপারে আপনাকে প্রশ্ন করছি না। তিনি বলেলনঃ তবে ইউসুফ (‘আঃ) আল্লাহর নবী এবং আল্লাহর নবীর সন্তান, যিনি আল্লাহর খলীলের পুত্র। তারা বলল, এ ব্যাপারেও আমরা আপনাকে জিজ্ঞেস করিনি। তিনি বলেলনঃ তবে কি তোমরা আরবের বংশ-উৎস সম্মন্ধে প্রশ্ন করছ? জাহিলী যুগে যারা তাদের মাঝে উত্তম ছিল ইসলামের পরও তারাই উত্তম গণ্য, তারা যদি দ্বীনের ‘ইল্‌ম অর্জন করে। (ই.ফা. ৫৯৪৬, ই.সে. ৫৯৮৫)

【45】

যাকারিয়্যা (‘আঃ)-এর ফযীলত

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাকারিয়্যা (‘আঃ) কাঠমিস্ত্রী ছিলেন। (ই.ফা. ৫৯৪৭, ই.সে. ৫৯৮৬)

【46】

খাযির (‘আঃ)-এর ফযীলত

সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নাওফ বিকালী বলেন যে, বনী ইসরাঈলের নবী মূসা খাযীর (‘আঃ)-এর সঙ্গী মূসা নন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শত্রু মিথ্যারোপ করেছে। আমি উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) হতে শুনেছি, তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, মূসা (‘আঃ) বনী ইসরাঈলের মধ্যে বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্‌ লোক সর্বাধিক জ্ঞানী? তিনি জবাব দিলেন, “আমি সর্বাধিক জ্ঞানী।” আল্লাহ তা‘আলা (এ উত্তরে) তাঁর প্রতি অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ করলেন। কেননা, মূসা (‘আঃ) জ্ঞানকে আল্লাহর প্রতি ন্যস্ত করেননি। তারপর আল্লাহ তাঁর প্রতি ওয়াহী প্রেরণ করলেন যে, দু‘সাগরের মধ্যস্থলে আমার বান্দাদের মাঝে এক বান্দা আছে, যে তোমার তুলনায় বেশি জ্ঞানী। মূসা (‘আঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে প্রতিপালক! আমি কীভাবে তাঁর সন্ধান পাব? তাঁকে বলা হলো, থলের ভেতর একটি মাছ নাও। মাছটি যে খানে হারিয়ে যাবে সেখানেই তাঁকে পাবে। তাঁর পর তিনি রওনা হলেন। তাঁর সাথে তাঁর খাদিম ইউশা‘ ইবনু নূনও চললেন এবং মূসা (‘আঃ) একটি মাছ ব্যাগে নিয়ে নিলেন। তিনি ও তাঁর খাদিম চলতে চলতে একটি চটানে উপস্থিত হলেন। এখানে মূসা (‘আঃ) শুয়ে পড়লেন। তাঁর সঙ্গীও শুয়ে পড়ল। মাছটি নড়েচড়ে ব্যাগ হতে বের হয়ে সমুদ্রে ঝাপিয়ে পড়ল। এদিকে আল্লাহ তা‘আলা পানির গতিরোধ করে দিলেন। এমনকি একটি গর্তের মতো হয়ে গেল এবং মাছটির জন্য একটি সুড়ঙ্গের ন্যায় হয়ে গেল। মূসা (‘আঃ) ও তাঁর খাদিমের জন্য এটি একটি আশ্চর্যের বিষয় হলো। তারপর তাঁরা আবার দিবা-রাত্রি চললেন। মূসা (‘আঃ)- এর সঙ্গী সংবাদটি দিতে ভুলে গেল। যখন সকাল হলো মূসা (আঃ) তাঁর খাদিমকে বললেন, আমাদের নাশ্‌তা বের করো। আমরা তো এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আদেশকৃত জায়গা অতিক্রম করে না যাওয়া পর্যন্ত তাঁরা ক্লান্ত হননি। খাদিম বলল, আপনি কি জানেন, যখনই আমরা বড় পাথরটার নিকট বিশ্রাম নিয়েছিলাম তখন আমি মাছের কথাটি ভুলে গেলাম? আর শাইতানই আমাকে আপনাকে বলার কথা ভুলিয়ে দিয়েছে এবং বিস্ময়করভাবে মাছটি সমুদ্রে তার নিজের পথ বের করে চলে গেছে। মূসা (‘আঃ) বললেন, এ স্থানটিই তো আমরা সন্ধান করছি। তারপর দু‘জনেই নিজ নিজ পায়ের চিহ্ন অনুকরণ করে বড় পাথর পর্যন্ত পোঁছলেন। সেখানে চাদরে আচ্ছাদিত জনৈক লোককে দেখতে পেলেন। মূসা (‘আঃ) তাঁকে সালাম দিলেন। খাযির (‘আঃ) বললেন, তোমাদের এ ভূমিতে সালাম কোত্থেকে আসলো? মূসা (‘আঃ) বললেন, আমি মূসা। তিনি প্রশ্ন করলেন, বনী ইসরাঈলের মূসা? তিনি বললেন, হ্যাঁ। খাযির বললেন, আল্লাহ তাঁর ‘ইল্‌ম হতে এমন এক ‘ইল্‌ম তোমাকে দিয়েছেন যা আমি জানি না এবং আল্লাহ তাঁর ‘ইল্‌ম হতে এমন এক ‘ইল্‌ম আমাকে দিয়েছেন যা তুমি জান না। মূসা (‘আঃ) বললেন, আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই যেন আপনার মতো ‘ইল্‌ম আমাকে দান করেন। খাযির (‘আঃ) বললেন, তূমি আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না। আর কী করেই তুমি ধৈর্য ধারণ করবে, যা সম্বন্ধে তুমি অজ্ঞাত? মূসা (‘আঃ) বললেন ইনশাআল্লহ্‌, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল অবস্থায় পাবেন। আর আপনার কোন আদেশ আমি অমান্য করব না। খাযির (‘আঃ) বললেন, আচ্ছা তুমি যদি আমার অনুকরণ করো তবে আমি নিজে কিছু বর্ণনা না করা পর্যন্ত কোন ব্যাপারে আমাকে জিজ্ঞেস করবে না। মূসা (‘আঃ) বললেন, আচ্ছা। খাযির এবং মূসা (‘আঃ) দু‘জনে সমুদ্রের তীর ধরে পথ চলতে লাগলেন। সামনে দিয়ে একটি নৌকা আসলো। তারা নৌকাওয়ালাকে তাঁদের তুলে নিতে বললেন। তারা খাযির (‘আঃ)-কে চিনে ফেলল, তাই দু‘জনকেই বিনা ভাড়াই উঠিয়ে নিল। কিছুক্ষণ পর খাযির (‘আঃ) নৌকার একটি তক্তার প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন এবং তা উঠিয়ে ফেললেন। (তা দেখে) মূসা (‘আঃ) বললেন, তারা তো এমন ব্যক্তি যে, আমাদের বিনা ভাড়ায় উঠিয়ে নিয়েছে; আর আপনি তাদের নৌকাটি ছিদ্র করে দিলেন যাতে নৌকা ডুবে যায়? আপনি তো সাংঘাতিক কাজ করেছেন। খাযির (‘আঃ) বললেন, আমি কি তোমায় বলিনি যে, তুমি আমার সাথে ধৈর্য ধরে থাকতে সক্ষম হবে না। মূসা (‘আ) বললেন, আপনি আমার এ ভুল মাফ করে দিবেন। আর আমাকে কঠিন অবস্থায় ফেলবেন না। তারপর নৌকার বাইরে এলেন এবং উভয়ে সমুদ্র তীর ধরে চলতে লাগলেন। হঠাৎ একটি বালকের সম্মুখীন হলেন, যে অন্যান্য বালকদের সাথে খেলা করছিল। খাযির (‘আঃ) তাঁর মাথাটা হাত দিয়ে ধরে ছিঁড়ে ফেলে হত্যা করলেন। মূসা (‘আঃ) তাঁকে বললেন, আপনি কোন প্রাণের বিনিময় ব্যতীত একটা নিষ্পাপ প্রাণকে শেষ করে দিলেন? আপনি তো বড়ই মন্দ কাজ করলেন! খাযির (‘আঃ) বললেন, আমি কি তোমাকে বলিনি যে, আমার সঙ্গে তুমি ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না এবং এ ভুল প্রথমটার তুলনায় আরো মারাত্মক। মূসা (‘আঃ) বললেন, হ্যাঁ! তারপর যদি আর কোন ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি তাহলে আমাকে সাথে রাখবেন না। নিঃসন্দেহে আপনার প্রতি আমার ত্রুটি চরমে পৌঁছেছে। তারপর দু‘জনেই পথ চলতে লাগলেন এবং একটি গ্রামে পৌঁছে গ্রামবাসীর নিকট খাদ্য কামনা করলেন। তারা তাঁদের আতিথেয়তা করতে আপত্তি জানালেন। তারপর তাঁরা একটি দেয়াল পেলেন, যেটি ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে অর্থাৎ- ঝুঁকে পড়েছে। খাযির (‘আঃ) আপন হাতে সেটি ঠিক করে সোজা করে দিলেন। মূসা (‘আঃ) বললেন, আমরা এ গোত্রের নিকট আসলে তারা আমাদের মেহমানদারী করেনি এবং খেতে দেয়নি। আপনি চাইলে এদের কাছ থেকে মজুরি নিতে পারতেন। খাযির (‘আঃ) বললেন, এবার আমার ও তোমার মাঝে ব্যবধান সূচিত হলো। এখন আমি তোমাকে এসব মর্মার্থ বলছি, যে সবের উপর তুমি ধৈর্যধারণ করতে সক্ষম হওনি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ মূসা (‘আঃ)-এর উপর রহম করুন, আমার ইচ্ছা হয় যে, যদি তিনি ধৈর্যধারণ করতেন তাহলে আমাদের নিকট তাঁদের আরো ঘটনাসমূহের বর্ণনা দেয়া হতো। বর্ণনাকারী বললেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ প্রথমটা মূসা (‘আঃ) ভুলবশত করেছিলেন। এ-ও বলেছেন, একটা চড়ুই পাখি এসে নৌকার কিনারে বসে সমুদ্রে চঞ্চু মারল। সে সময় খাযির (‘আঃ) মূসাকে বললেন, আমার ও তোমার জ্ঞান আল্লাহর জ্ঞানের চেয়ে ততই কম, যতটি সমুদ্রের পানি হতে এ চড়ুইটি কমিয়েছে। সা‘ঈদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) পড়তেনঃ (আরবী) (এদের সামনে একজন বাদশাহ ছিল, যে সকল ভাল নৌকা কেঁড়ে নিত) তিনি আরো পড়তেন, (আরবী) (আর সে বালকটি কাফির ছিল)। (ই.ফে. ৫৯৪৮, ই.সে. ৫৯৮৭) সা‘ঈদ জুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)- বলা হলো, নাওফ দাবী করে যে, মূসা (‘আঃ) যিনি জ্ঞান অনুসন্ধানে বেরিয়ে ছিলেন, তিনি বনী ইসরাঈলের মূসা নন। ইবনু ‘আব্বাস (রযিঃ) বলেন, হে সা‘ঈদ! তুমি কি তাকে এ কথা বলতে শুনেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ! তিনি বললেন, নাওফ মিথ্যারোপ করেছে। (ই.ফে. ৫৯৪৯, ই.সে. ৫৯৮৮) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, মূসা (‘আঃ) একদা তাঁর গোষ্ঠীর সম্মুখে আল্লাহ তা‘আলার নি‘আমাত এবং বালা-মুসীবাত মনে করিয়ে উপদেশ দিচ্ছিলেন। কথা প্রসঙ্গে তিনি বলে ফেললেন, দুনিয়াতে আমার তুলনায় উত্তম এবং অধিক জ্ঞানী কোন লোক আছে বলে আমার জানা নেই। আল্লাহ মূসা (‘আঃ)-এর প্রতি ওয়াহী পাঠালেনঃ আমি জানি মূসা‘র চাইতে উত্তম কে বা কার নিকট কল্যাণ রয়েছে। পৃথিবীতে অবশ্যই এক লোক রয়েছে যে, তোমার তুলনায় অধিক জ্ঞানী। মূসা (‘আঃ) বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তাঁর পথ জানিয়ে দিন। তাঁকে বলা হলো, লবণাক্ত একটি মাছ সাথে নিয়ে যাও। এ মাছ যেখানে হারিয়ে যাবে সেখানেই সে ব্যক্তি আছে। মূসা (‘আঃ) এবং তাঁর খাদিম রওনা হলেন, পরিশেষে তাঁরা একটি বড় পাথরের নিকট পৌঁছালেন। সে সময় মূসা (‘আঃ) তাঁর সঙ্গীকে রেখে গোপনে চলে গেলেন। তারপর মাছটি ছটফট করে পানিতে নেমে গেল এবং পানিও ছিদ্রের মতো রয়ে গেল, মাছের রাস্তায় সংমিশ্রন হলো না। মূসা (‘আঃ)-এর খাদিম বললেন, হ্যাঁ, আমি আল্লাহর নবীর সঙ্গে মিলিত হয়ে তাঁকে এ বিবরণ দিব। তারপরে তিনি ভুলে গেলেন। তাঁরা যখন আরো সম্মুখে চলে গেলেন। তখন মূসা (‘আঃ) বললেন, আমার নাশ্তা দাও, এ সফরে তো আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যতক্ষণ তাঁরা এ জায়গাটি ত্যাগ করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁদের ক্লান্তি আসেনি। তাঁর সাথীর যখন স্মরণে আসলো তখন বলল, আপনি কি জানেন যখন আমরা পাথরের নিকট আশ্রয় নিয়েছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গেছি। আর শাইতানই আমাকে আপনার নিকট বলার কথা ভুলিয়ে দিয়েছে এবং অবাক করার মতো মাছটি সমুদ্রে তার রাস্তা করে নিয়েছে। মূসা (‘আঃ) বললেন, এ-ই তো ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। সুতরাং তাঁরা পথ অনুসরণ করে প্রত্যাবর্তন করলেন। তখন তাঁর খাদিম মাছের জায়গাটি তাঁকে দেখালো। মূসা (‘আঃ) বললেন, এ জায়গার বর্ণনাই আমাকে দেয়া হয়েছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তারপর মূসা (‘আঃ) সন্ধান করছিলেন, এমতাবস্থায় তিনি কাপড়ে ঢাকা খাযির (‘আঃ)-কে গলদেশের উপড় চীৎ হয়ে ঘুমানো দেখতে পেলেন। কিংবা অন্য বর্ণনায়, গলদেশের উপর সোজাসজি। মূসা (‘আঃ) বললেন, আস্সালামু ‘আলাইকুম। খাযির (‘আঃ) মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে বললেন, ওয়া ‘আলাইকুমুস্ সালাম, তুমি কে? মূসা (‘আঃ) বললেন, আমি মূসা। তিনি বললেন, কোন্ মূসা? মূসা (‘আঃ) উত্তর দিলেন, বনী ইসরাঈলের মূসা। খাযির (‘আঃ) বললেন, তোমার এ মহান আগমন কিসের জন্য? মূসা (‘আঃ) বললেন, আমি এসেছি যেন আপনাকে যে জ্ঞান দান করা হয়েছে তা হতে আপনি আমায় কিছু শিক্ষা দেন। খাযির (‘আঃ) বললেন, আমার সাথে তুমি ধৈর্য ধরতে পারবে না। আর এমন ব্যাপারে কেমন করে তুমি ধৈর্য ধরবে, যার ‘ইল্‌ম তোমাকে দেয়া হয়নি। এরূপ বিষয় হতে পারে যা করতে আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তুমি যখন তা দেখবে তখন তুমি ধৈর্য ধারণ করবে না। মূসা (‘আঃ) বললেন, ইনশাআল্লাহ্ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যেই পাবেন। আর আমি আপনার কোন আদেশ অমান্য করব না। খাযির (‘আঃ) বললেন, তুমি আমার অনুগামী হও তবে আমাকে কোন ব্যাপারে জিজ্ঞেস করো না, যতক্ষণ না আমি নিজেই এ ব্যাপারে বর্ণনা করি। তারপর উভয়ই চললেন, পরিশেষে একটি নৌকায় চড়লেন। তখন খাযির (‘আঃ) নৌকার একাংশ ভেঙ্গে ফেললেন। মূসা (‘আঃ) তাঁকে বললেন, আপনি কি নৌকাটি ভেঙ্গে ফেললেন, নৌকারোহীদের ডুবিয়ে ফেলার জন্যে? আপনি তো বড় মারাত্মক কাজ করলেন। খাযির (‘আঃ) বললেন আমি কি তোমাকে বলিনি যে, তুমি আমার সাথে ধৈর্য ধরতে পারবে না? মূসা (‘আঃ) বললেন, আমি ভুলে গিয়েছি, আপনি আমাকে দোষী সাব্যস্ত করবেন না। আমার ব্যাপারটিকে আপনি কঠিন করবেন না। পুনরায় উভয়ে চলতে লাগলেন। এক স্থানে দেখতে পেলেন বালকরা খেলায় লিপ্ত। খাযির (‘আঃ) অবলীলাক্রমে একটি শিশুর নিকট গিয়ে তাকে হত্যা করলেন। এতে মূসা (‘আঃ) খুব ঘাবড়ে গিয়ে বললেন, আপনি প্রাণ বিনিময় ছাড়াই একটি নিষ্পাপ প্রাণকে হত্যা করলেন? আপনি বড়ই নৃশংস কাজ করেছেন। এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ রহ্মাত বর্ষণ করুন আমাদের ও মূসা (‘আঃ)-এর উপর তিনি যদি জলদি না করতেন তাহলে অবাক হওয়ার আরো মতো অনেক ঘটনা দেখতে পেতেন। তবে তিনি খাযির (‘আঃ)-এর সম্মুখে লজ্জিত হয়ে বললেন, তারপর যদি আমি আপনাকে আর কোন কিছু জিজ্ঞেস করি তবে আপনি আমায় সাথে রাখবেন না। সত্যিই আমার ব্যাপার খুবই আপত্তিকর হয়েছে। যদি মূসা (‘আঃ) ধৈর্য ধরতেন তাহলে আরো বিস্ময়কর ব্যাপার দেখতে পেতেন। যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন নবীর বর্ণনা করতেন, প্রথমে নিজেকে দিয়ে আরম্ভ করতেন আর বলতেন, আল্লাহ আমাদের উপর রহম করুন এবং আমার অমুক ভাইয়ের উপরও। এভাবে নিজেদের উপর আল্লাহর রহ্মাত কামনা করতেন। অতঃপর দু‘জনে চললেন এবং মন্দ লোকদের একটি লোকালয়ে গিয়ে উঠলেন। তারা লোকদের অসংখ্য জায়গায় ঘুরে তাদের নিকট খাবার চাইলেন। তারা তাদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। তারপর তাঁরা ধ্বসে পড়ার উপক্রম একটা দেয়াল দেখতে পেলেন। খাযির (‘আঃ) সেটি মেরামত করে দিলেন। মূসা (‘আঃ) বললেন, আপনি চাইলে এর বিনিময়ে মজুরি নিতে পারতেন। খাযির (‘আঃ) বললেন, এখানেই আমার আর তোমার মাঝে সম্পর্কছেদ। খাযির (‘আঃ) মূসা (‘আঃ)-এর বস্ত্র ধরে বললেন, তুমি যেসব বিষয়ের উপর ধৈর্যহারা হয়ে পড়েছিলে সে সবের ঘটনা বলে দিচ্ছি। ‘নৌকাটি ছিল কিছু গরীব লোকের যারা সমুদ্রে কাজ করত’ – আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়লেন। তারপর যখন এটাকে দখল করতে লোক আসলো, তখন ছিদ্রযুক্ত (অচলাবস্থা) দেখে ছেড়ে দিল। অতঃপর নৌকাওয়ালারা একটা কাঠ দ্বারা নৌকাটি মেরামত করে নিলো। আর বালকটি সূচনালগ্নেই ছিল কাফির। তার মা-বাবা তাকে বড়ই আদর করত। সে বড় হলে ওদের দু‘জনকেই অবাধ্যতা ও কুফরির দিকে নিয়ে যেত। অতএব আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম, আল্লাহ যেন তাদেরকে এর বিনিময়ে আরো উত্তম পবিত্র স্বভাবের ও অধিক স্নেহভাজন ছেলে দান করেন। ‘আর দেয়ালটি ছিল শহরের দু‘টো ইয়াতীম বালকের’- আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (ই.ফা. ৫৯৪৯, ই.সে. ৫৯৮৯) আবূ ইসহাক্ (রাঃ) অবিকল হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। (ই.ফা. ৫৯৫০, ই.সে. ৫৯৯০) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-(আরবী) এর স্থলে (আরবী) এরূপও পড়েছেন (দু‘টোর অর্থ একই)। (ই.ফা. ৫৯৫১, ই.সে. ৫৯৯১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) ইবনু ‘আব্বাস এবং কায়স ইবনু হিস্ন, মূসা (‘আঃ)-এর সঙ্গী সম্পর্কে তর্ক করলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেন, সঙ্গীটি খাযির (‘আঃ) ছিলেন। অতঃপর সেখনে উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) আসলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আবূ তুফায়ল! এদিকে আসুন, আমি এবং সে তর্ক করছি- মূসা (‘আঃ)-এর সঙ্গীর সম্বন্ধে যার নিকট তিনি গিয়েছিলেন। আপনি কি এ সম্বন্ধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে কিছু জেনেছেন? উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বললেন, আমি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, মূসা (‘আঃ) এক সমাবেশে কিছু বলেছিলেন, এমতাবস্থায় একটা লোক এসে জিজ্ঞেস করল, আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী কোন লোক সম্বন্ধে কি আপনার জানা আছে? মূসা (‘আঃ) বললেন, না। তখন আল্লাহ ওয়াহী প্রেরণ করলেন, আমার বান্দা খাযির তোমার তুলনায় অধিক জানেন। মূসা (‘আঃ) খাযির (‘আঃ)-এর সাথে দেখার করার উপায় জানতে চাইলেন। আল্লাহ তা‘আলা মাছকে নমুনা হিসাবে চিহ্নিত করলেন এবং আদেশ করা হলো, যখন তুমি মাছটি হারিয়ে ফেলবে তখন ফিরবে আর তাঁর দর্শনও পাবে। মূসা (‘আঃ) আল্লাহর ইচ্ছা মতো চললেন। তারপর তাঁর সঙ্গীকে বললেন, আমাদের নাস্তা বের করো। খাদিম বলল, আপনার কি জানা আছে যে, যখন আমরা সাখরাহ্ (পাথরের নিকট) পৌঁছলাম তখন মাছের কথা ভুলে গিয়েছি; আর শাইতানই আমাদের ভুলে দেয়ার কারণ। মূসা (‘আঃ) বললেন, এটাই তো আমরা প্রত্যাশা করতাম। সুতরাং দু‘জনেই পদাঙ্ক অনুসরণ করে ফিরলেন এবং খাযির (‘আঃ)-কে পেলেন। পরবর্তী ঘটনা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইউনুস (রহঃ)-এর বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, ‘তারা সমুদ্রগামী মাছটির নিদর্শন অনুসরণ করে ফিরলেন’। (ই.ফা. ৫৯৫২, ই.সে. ৫৯৯২)