47. তাকদীর

【1】

মায়ের উদরে মানুষের সৃষ্টি রহস্য, তার ভাগ্যের রিয্‌ক, মুত্যুস্থান, ‘আমাল, হতভাগ্য ও সৌভাগ্য লিপিবদ্ধকরণ

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) তিনি বলেন, সাদিকুল মাসদূক (ন্যায়পরায়ণ ও ন্যায়নিষ্ঠরূপে প্রত্যায়িত) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, তোমাদের প্রত্যেকের শুক্রকীট তার মায়ের গর্ভে চল্লিশ দিন একত্রিত করা হয়। তারপর হুবহু চল্লিশ দিনে তা একটি গোশত টুকরায় পরিণত হয়। তারপর আল্লাহ্‌ তা ‘আলার পক্ষ থেকে একজন ফেরেশ্তাকে প্রেরণ করা হয়। সে তাতে রূহ্ ফুঁকে দেয়। আর তাঁকে চারটি কালিমা (বিষয়) লিপিবদ্ধ করার আদেশ করা হয়। রিয্ক, মৃত্যুক্ষণ, কর্ম, বদ্কার ও নেক্কার। সে সত্তার শপথ যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই! নিশ্চয়ই তোমাদের মাঝ হতে কেউ জান্নাতীদের ‘আমালের (আমলের)ন্যায় ‘আমাল (আমল) করতে থাকে। অবশেষে তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র একহাত দূরত্ব থাকে। অতঃপর ভাগ্যের লিখন তার উপর জয়ী হয়ে যায়। ফলে সে জাহান্নামীদের কর্ম শুরু করে। এরপর সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হয়। আর তোমাদের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তি জাহান্নামের কাজ-কর্ম করতে থাকে। ফলে জাহান্নামের মাঝে ও তার মাঝে মাত্র একহাত দূরত্ব থাকে। তারপর ভাগ্যলিপি তার উপর জয়ী হয়। ফলে সে জান্নাতীদের ন্যায় ‘আমাল করে। অবশেষে জান্নাতে প্রবিষ্ট হয়। (ই.ফা. ৬৪৮২, ই.সে. ৬৫৩৪) জারীর ইবনু ‘আবদুল হামীদ, ‘ঈসা ইবনু ইউনুস, ওয়াকী‘ ও শু‘বাহ্ ইবনুল হাজ্জাজ (রহঃ) সকলে আ‘মাশ (রহঃ) হতে এ সূত্র হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি (আ‘মাশ) ওয়াকী‘ বর্ণিত হাদীসে বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের কারো সৃষ্টি (শুক্রকীট) তার মায়ের গর্ভে চল্লিশ রাত্রি একত্রি রাখা হয়। আর তিনি শু‘বার সানাদে মু‘আয বর্ণিত হাদীসে বলেছেন, চল্লিশ রাত কিংবা চল্লিশ দিন। কিন্তু জারীর ও ‘ঈসা (রহঃ)-এর হাদীসে কেবলমাত্র ………… (চল্লিশ দিবসের) কথা উল্লেখ রয়েছে। (ই.ফা. ৬৪৮৩, ই.সে. ৬৫৩৫) হুযাইফাহ্ ইবুন আসীদ (রহঃ) হতে মারফূ‘ সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, জরায়ুতে চল্লিশ অথবা পঁয়তাল্লিশ দিন রেণু জমা থাকার পর সেখানে ফেরেশ্ তা গমন করে। অতঃপর সে বলতে থাকে, হে আমার প্রভু! সে কি হতভাগ্য না সৌভাগ্যবান? তখন উভয়টাতে লিপিবদ্ধ করা হয়। তারপর সে বলতে থাকে, হে আমার রব! সে কি পুরুষ না মহিলা? তখন আদেশ অনুসারে উভয়টা লিপিবদ্ধ করা হয়। তার ‘আমাল, আচরণ, মৃত্যুক্ষণ ও জীবনোপকরণ লিপিবদ্ধ করা হয়। তারপর ফলকটিকে পেঁচিয়ে দেয়া হয়। তাতে কোন অতিরিক্ত করা হবে না এবং ঘাটতিও হবে না। (ই.ফা. ৬৪৮৪, ই.সে. ৬৫৩৬) ‘আমির ইবনু ওয়াসিলাহ্ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) তিনি বলেছেন, দুর্ভাগ্য সে লোক, যে তার মায়ের গর্ভ হতে দুর্ভাগা আর সৌভাগ্যবান লোক সে, যে অন্যের নিকট হতে উপদেশ লাভ করে। অতঃপর তিনি রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবাদের মধ্য থেকে একজন সহাবা যাকে হুযাইফাহ্ ইবনু আসীদ আল গিফারী বলা হয় তার কাছে আসলেন। তখন তিনি তাঁর নিকট ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)-এর কথা বর্ণনা করলেন এবং বললেন, ‘আমালহীন কোন লোক কিভাবে দুর্ভাগ্যবান হতে পারে? অতঃপর তিনি [হুযাইফাহ্ (রাঃ)] তাঁকে বললেন, তুমি কি এতে আশ্চর্য হচ্ছ? আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, যখন (মাতৃগর্ভে) শুক্রকীটের উপর বিয়াল্লিশ দিন চলে যায় তখন আল্লাহ তা‘আলা একজন ফেরেশ্তা প্রেরণ করেন। তিনি ওটাকে (শুক্রকে) একটি রূপ দান করে, তার কান, চোখ, চামড়া, গোশ্ত ও হাড় সৃষ্টি করে দেয়। তারপর ফেরেশতা বলে, হে আমাদের রব! সেটা কি পুরুষ, না মহিলা হবে? তখন তোমার প্রভু যা চান সিদ্ধান্ত দেন এবং ফেরেশ্তা আদেশ অনুসারে তা লিখে ফেলেন। তারপর সে বলতে থাকে, হে আমাদের রব! তার জীবিকা কি হবে? তখন তোমার রব তাঁর মর্জি অনুযায়ী ফায়সালা করেন এবং ফেরেশ্তা তা লিপিবদ্ধ করেন। এরপর ফেরেশ্তা তাঁর হাতে একটি লিপিবদ্ধ কিতাব নিয়ে বের হন। সে এটাকে বৃদ্ধিও করে না এবং ঘাটতিও করে না। (ই.ফা. ৬৪৮৫, ই.সে. ৬৫৩৭) আবূ তুফায়ল (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি ‘আমর ইবনুল আল হারিস (রহঃ)-এর হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৪৮৬, ই.সে. ৬৫৩৮) আবূ তুফায়ল আমি আবূ সারীহাহ্ হুযাইফাহ্ ইবনু আসীদ আল গিফারী (রাঃ) -এর নিকট গেলে তিনি বলেন, আমি আমার এ কান দিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, বীর্য জরায়ুতে চল্লিশ রাত স্থির থাকে। তারপর এজন ফেরেশ্তা তাকে আকৃতি প্রদান করেন। রাবী যুহায়র (রহঃ) বলেন, আমার ধারণা তিনি বলেছেন, “যাকে তিনি তৈরি করেন” তখন তিনি বলতে থাকেন, হে আমার প্রভু! সে-কি পুরুষ না মহিলা? তারপর আল্লাহ তাকে পুরুষ কিংবা মহিলা সৃষ্টি করেন। অতঃপর তিনি (ফেরেশ্তা) বলতে থাকেন, হে আমার রব! আপনি তাকে পূর্ণ সৃষ্টি করবেন না অপূর্ণ? তখন আল্লাহ তাকে পূর্ণ অথবা অপূর্ণ সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি বলেন, হে আমার প্রভু! তার জীবনোপকরণ, মৃত্যুক্ষণ, চরিত্র কি হবে? তারপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে হতভাগ্যবান কিংবা সৌভাগ্যবান বানিয়ে দেন। (ই.ফা. ৬৪৮৭, ই.সে. ৬৫৩৯) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবা হুযাইফাহ্ ইবনু আসীদ আল গিফারী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত মারফূ‘ সূত্র তিনি বলেন, যখন আল্লাহ তাঁর আদেশ অনুসারে কোন কিছু সৃষ্টির আকাঙ্খা করেন তখন জরায়ুতে একজন ফেরেশ্তা প্রেরণ করে দেন চল্লিশের কিছু বেশি দিন পরে। তারপর তিনি তাদের হাদীসের হুবহু হাদীস উল্লেখ করেন। (ই.ফা. ৬৪৮৮, ই.সে. ৬৫৪০) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে মারফূ‘ সূত্র তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা জরায়ুতে একজন ফেরেশ্তা প্রেরণ করে দেন। তখন ফেরেশ্তা বলতে থাকেন, হে আমার প্রভু! এখন তা শুক্র। হে আমার রব! এখন তা জমাট রক্ত। হে আমার প্রতিপালক! এখন গোশ্তের খণ্ড। তারপর যখন আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত করেন তখন ফেরেশ্তা বলেন, হে আমার প্রতিপালক! সে-কি পুরুষ না মহিলা, দুর্ভাগ্যবান, না সৌভাগ্যবান হবে? তার রিজিক কি হবে? তার আয়ুষ্কাল কি হবে? তারপর এমনিভাবে মায়ের গর্ভে থাকাবস্থায় সবকিছু লিখে দেয়া হয়। (ই.ফা. ৬৪৮৯, ই.সে. ৬৫৪১) ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বাকী‘ গারকাদে [৪] একটি জানাযা সলাতে উপস্থিত ছিলাম। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট এসে বসলেন এবং আমরাও তাঁর পাশাপাশি বসলাম। তাঁর সাথে ছিল একটি ছড়ি। তিনি মাথা নিচু করেছিলেন। সে সময় তিনি তাঁর ছড়ি দ্বারা জমিনে টোকা দিচ্ছিলেন। তারপর তিনি বললেন, তোমাদের মাঝে এমন কোন লোক নেই, যার পরিণাম আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে বা জাহান্নামে নির্ধারণ করেননি এবং সে দুর্ভাগ্যবান হবে বা সৌভাগ্যবান হবে, তা লিপিবদ্ধ করেননি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন জনৈক লোক আবেদন করল, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা কি আমাদের ভাগ্যলিপির উপর অটুট থেকে ‘আমাল ত্যাগ করব না? তখন তিনি বললেন, যে লোক সৌভাগ্যবান সে সৌভাগ্যবানদের ‘আমালের দিকে ধাবিত হবে। যে হতভাগাদের অন্তর্ভূক্ত সে হতভাগার ‘আমালের প্রতি ধাবিত হবে। তারপর তিনি বললেন, তোমরা ‘আমাল করো। প্রত্যেকের পথ সহজ করে দেয়া হয়েছে। অবশ্যই সৌভাগ্যবান লোকদেরকে সৌভাগ্যের ‘আমাল করা সহজ করে দেয়া হচ্ছে। হতভাগ্যদেরকে হতভাগ্যের ‘আমাল সহজ করে দেয়া হচ্ছে। তাপর তিনি তিলাওয়াত করলেন, “সুতরাং যে দান করল, তাক্ওয়া অর্জন করল এবং যা উত্তম তা সত্যায়ন করল, আমি তাদের জন্যে সফলতার পথ সুগম করে দিব এবং যারা বখিলী করল এবং নিজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ অমুখাপেক্ষী মনে করল আর যা উত্তম তা মিথ্যা সাব্যস্ত করল, আমি তার জন্যে কঠোর বিফল পথ সহজ করে দিব”- (সূরাহ্ আল লায়ল ৯২ : ৫-১০)। (ই.ফা. ৬৪৭৮, ই.সে. ৬৫৩০) মানসূর (রাঃ) তিনি (মানসূর) বলেন, তাছাড়া তিনি বলেছেন, “একটি লাকড়ি ধারণ করলেন এবং ছড়ি” শব্দটি তিনি বলেননি। ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) আবুল আহওয়াস (রহঃ)-এর সানাদে তার হাদীসে বলেছেন, তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পড়লেন। (ই.ফা. ৬৪৯১, ই.সে. ৬৫৪৩) ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক টুকরা লাকড়ি হাতে নিয়ে বসে ছিলেন। তিনি তা দ্বারা জমিনে টোকা দিচ্ছিলেন। তারপর তিনি নিজের মাথা উঠালেন এবং বললেন, তোমাদের মাঝে এমন কেউ নেই যে তার ঠিকানা জান্নাতে বা জাহান্নামে নির্ধারিত নেই। তারা সকলে বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তাহলে আমরা কেন কাজ-কর্ম করব? আমরা কি ভরসা করব না? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না, বরং তোমরা ‘আমাল করতে থাকো। যাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার জন্য সহজ করা হয়েছে। তারপর তিনি পাঠ করলেন, “সুতরাং যারা দান-সদাকাহ্ করল, তাক্ওয়া অর্জন করল এবং যা ভাল তা সত্যায়ন করল, ….. ….. আমি কঠোর পরিণামের পথ সহজ করে দিব, এ পর্যন্ত”- (সূরাহ্ আল লায়ল ৯২ : ৫-১০)। (ই.ফা. ৬৪৯২, ই.সে. ৬৫৪৪) ‘আলী (রাঃ)-এর সানাদে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আলী (রাঃ)-এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৪৯৩, ই.সে. ৬৫৪৫) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, সুরাকাহ্ ইবনু মালিক ইবনু জু‘শুম (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলেন, অতঃপর বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদের সামনে আমাদের দ্বীন সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করুন, যেন আমরা এই মাত্র সৃষ্ট হয়েছি। আজকের ‘আমাল কি ঐ বিষয়ের উপর যার সম্পর্কে কলম লিখে শুকিয়ে গেছে এবং তাক্দীর তার উপর চলছে? নাকি আমরা ভবিষ্যতে তার সামনাসামনি হব? তিনি বললেন, না; বরং কলম যা কিছু লিখার লিখে শুকিয়ে গেছে ও সে অনুযায়ী তাকদীর জারী হয়ে গেছে। সুরাকাহ্ বললেন, তাহলে কিসের জন্য ‘আমাল করার প্রয়োজন? যুহায়র বলেন, অতঃপর আবূ যুবায়র কিছু কথা বললেন, যা আমি বুঝতে পারিনি। অতঃপর আমি (লোকেদের) প্রশ্ন করলাম, তিনি কি বললেন। জবাবে বললেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা ‘আমাল করতে থাকো; প্রত্যেকের জন্য সে পথ সহজ করা হয়েছে। (ই.ফা. ৬৪৯৪, ই.সে. ৬৫৪৬) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সানাদে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ মর্মে হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক ‘আমালকারীকে তার ‘আমালের পথ সহজ করে দেয়া হয়েছে। (ই.ফা. ৬৪৯৫, ই.সে. নেই) ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! জাহান্নামীদের হতে জান্নাতীদের সুনির্দিষ্ট হয়েছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ প্রতীয়মান হয়েছে। তিনি (রাবী) বলেন, বলা হলো, তাহলে ‘আমালকারী কিসের জন্য ‘আমাল করবে? তিনি বললেন, প্রত্যেক লোকের জন্যে সে কর্মটি সহজ করে দেয়া হবে, যার জন্যে তাকে বানানো হয়েছে। (ই.ফা. ৬৪৯৬, ই.সে. ৬৫৪৭) শাইবান ইবনু ফার্রূখ, আবূ বাক্র ইবনু আবূ শাইবাহ্, যুহায়র ইবনু হার্ব, ইসহাক্ ইবনু ইব্রাহীম, ইবনু নুমায়র, ইয়াহ্ইয়া ইবনুল ইয়াহ্ইয়া ও ইবনু মুসান্না (রহঃ) সব সানাদেই ইয়াযীদ আর্ রিশ্ক (রহঃ) হতে এ সূত্রে হাম্মাদ শাইবান ইবনু ফার্রূখ, আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ্, যুহায়র ইবনু হার্ব, ইসহাক্ ইবনু ইব্রাহীম, ইবনু নুমায়র, ইয়াহ্ইয়া ইবনুল ইয়াহ্ইয়া ও ইবনু মুসান্না (রহঃ) সব সানাদেই ইয়াযীদ আর্ রিশ্ক (রহঃ) হতে এ সূত্রে হাম্মাদ-এর হাদীসের অর্থে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর এছাড়া ‘আবদুল ওয়ারিস বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, সে বলেছে, আমি বললাম, “হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)!” (ই.ফা. ৬৪৯৭, ই.সে. ৬৫৪৮) আবুল আসওয়াদ আদ্ দিয়ালী (রহঃ) তিনি বলেন, ‘ইমরান ইবনু হুসায়ন (রহঃ) আমাকে বললেন, আজকাল মানুষেরা যা ‘আমাল করে এবং তাতে যা কষ্ট করে, সে ব্যাপারে আপনার মতামত কি? তা-কি এমন বিষয় যা তাদের উপর সিদ্ধান্ত গৃহীত ও অতীতে সাব্যস্ত হয়ে গেছে যা তাদের উপর পূর্ব নির্ধারিত? নাকি ভবিষ্যতে করা হবে যা তাদের নিকট তাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়ে আসছেন এবং যাদের উপর দলীল-প্রমাণ সাব্যস্ত হয়েছে? আমি বললাম বরং বিষয়টি তো তাদের উপর সিদ্ধান্ত গৃহীত ও অতীত সাব্যস্ত হয়ে গেছে। তিনি (রাবী) বলেন, অতঃপর তিনি বললেন, তা কি যুল্ম হবে না? তিনি বললেন, এতে আমি অত্যন্ত ঘাবড়ে গেলাম এবং বললাম, প্রতিটি বিষয় আল্লাহর মাখলুক এবং তাঁর আওতাধীন। সুতরাং তিনি যা করেন, সে বিষয়ে জবাবদিহিতা নেই অথবা তাদেরকে কৈফিয়ত দিতে হবে না। কিন্তু তারা যা করে সে বিষয়ে তাদের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে। অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, আল্লাহ আপনার প্রতি দয়া করুন। আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করে আপনার অনুভূতি অনুমান করতে চেয়েছিলাম। মুযাইনাহ্ গোত্রের দু’ ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! লোকেরা আজকাল যেসব ‘আমাল করে এবং পরিশ্রম করে, সেগুলো কি তাদের উপর সিদ্ধান্ত গৃহীত ও অতীত সাব্যস্ত হয়ে গেছে, আগে নির্দিষ্টতা থেকে? নাকি ভবিষ্যতে যে ‘আমাল করা হবে, যা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকট নিয়ে আসছেন এবং তাদের উপর দলীল প্রমাণ সাব্যস্ত আছে? জবাবে তিনি বললেন, না; বরং বিষয়টি তাদের উপর সিদ্ধান্ত করা হয়েছে এবং অতীতে সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছে? আল্লাহর কিতাবে তার সত্যায়ন: “আর শপথ মানুষের এবং তাঁর যিনি তাকে সম্পূর্ণ করেছেন, এরপর তার উপর তিনি পাপ-পুণ্যের জ্ঞান ঢেলে দিয়েছেন”- (সূরাহ্ আশ্ শামস্ ৯১ : ৭-৮)। (ই.ফা. ৬৪৯৮, ই.সে. ৬৫৪৯) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক দীর্ঘকাল জান্নাতীদের ন্যায় ‘আমাল করবে। এরপর জাহান্নামীদের ‘আমালের সাথে তার ‘আমাল পরিসমাপ্ত হয়। আর এক লোক দীর্ঘকাল ধরে জাহান্নামীদের ‘আমালের ন্যায় ‘আমাল করবে। তারপর জান্নাতীদের ‘আমালের সাথে তার ‘আমাল পরিসমাপ্ত হবে। (ই.ফা. ৬৪৯৯, ই.সে. ৬৫৫০) সাহ্‌ল ইবনু সা‘দ আস্ সা‘ইদী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি জনসাধারণের সামনে প্রকাশিত ‘আমালের বিবেচনায় জান্নাতীদের ‘আমালের ন্যায় ‘আমাল করবে; অথচ সে জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত। আর কোন ব্যক্তি জনসাধারণের সামনে প্রকাশিত ‘আমালের বিবেচনায় জাহান্নামীদের ‘আমালের ন্যায় ‘আমাল করবে, অথচ সে জান্নাতীদের অন্তর্ভূক্ত। (ই.ফা. ৬৫০০, ই.সে. ৬৫৫১)

【2】

আদাম (‘আঃ) ও মূসা (‘আঃ)-এর বাক-বিতণ্ডা

তাউস (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আদাম (‘আঃ) ও মূসা (‘আঃ)-এর মাঝে বাক-বিতণ্ডা হয়। মূসা (‘আঃ) বললেন, হে আদাম! আপনি আমাদের পিতা, আপনি আমাদেরকে মাহরুম করেছেন এবং জান্নাত হতে আমাদেরকে বের করে দিয়েছেন। এরপর আদাম (‘আঃ) তাঁকে বললেন, আপনি তো মূসা (‘আঃ)। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে আপনাকে চয়ন করেছেন এবং আপনাকে লিখিত কিতাব (তাওরাত) দিয়েছেন। আপনি কি এমন বিষয়ে আমাকে ভর্ৎসনা করছেন যা আমার সৃষ্টির চল্লিশ বৎসর আগে আল্লাহ তা‘আলা নির্ধারণ করে রেখেছেন? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আদাম (‘আঃ) মূসা (‘আঃ)-এর উপর বাক-বিতণ্ডায় জয়ী হলেন। আদাম (‘আঃ) মূসা (‘আঃ)-এর উপর বাক-বিতণ্ডায় জয়ী হলেন। আর ইবনু আবূ ‘উমার ও ইবনু ‘আব্দাহ্ বর্ণিত হাদীসে তাদের একজন বলেছেন, লিখে দিয়েছেন; অপরজন বলেছেন, তিনি তাঁর হস্তে আপনার জন্য তাওরাত লিখে দিয়েছেন। (ই.ফা. ৬৫০১, ই.সে. ৬৫৫২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আদাম (‘আঃ) ও মূসা (‘আঃ) পরস্পরের বাদানুবাদ করেন। এতে আদাম (‘আঃ) মূসা (‘আঃ)-এর উপর জয়ী হলেন। মূসা (‘আঃ) আদাম-কে বললেন, আপনি তো সে আদাম (‘আঃ) যিনি মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করেছেন এবং জান্নাত হতে তাদেরকে বের করেছেন। তারপর আদাম (‘আঃ) বললেন, আপনি তো সে লোক (নাবী) যাকে আল্লাহ তা‘আলা সকল বস্তুর জ্ঞান দান করেছেন এবং তাকে মনোনীত করে রিসালাতের দায়িত্ব দিয়ে মানুষের নিকট প্রেরণ করেছেন? মূসা (‘আঃ) বললেন, হ্যাঁ। আদাম (‘আঃ) বললেন, আপনি আমাকে এমন একটি বিষয়ে ভর্ৎসনা করেছেন, যা আমার জন্মের আগেই আল্লাহ আমার জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। (ই.ফা. ৬৫০২, ই.সে. ৬৫৫৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আদাম (‘আঃ) ও মূসা (‘আঃ) তাঁদের রবের নিকট ঝগড়া করলেন।৫ অতঃপর আদাম (‘আঃ) মূসা (আঃ)-এর উপর জয়ী হলেন। মূসা (‘আঃ) বললেন, আপনি তো সে আদাম (‘আঃ) যাকে আল্লাহ তা‘আলা নিজ হস্তে সৃষ্টি করেছেন এবং আপনার মধ্যে তিনি তাঁর রূহকে ফুঁকে দিয়েছেন, তিনি তাঁর ফেরেশ্তাদের দিয়ে আপনাকে সাজদাহ্ করিয়েছেন এবং তাঁর জান্নাতে আপনাকে আবাসন করে দিয়েছেন। তারপর আপনি আপনার ভুলের কারণে মানবজাতিকে দুনিয়াতে নামিয়ে দিয়েছেন? এরপর আদাম (‘আঃ) বললেন, আপনি তো সে মূসা (‘আঃ) যাকে আল্লাহ তা‘আলা রিসালাত দিয়েছেন তার সাথে কথা বলার জন্য বাছাই করেছেন এবং আপনাকে দান করেছেন তক্তিসমূহ, তাতে সব বিষয়ের বর্ণনা লিখিত রয়েছে এং নির্জনে আলাপচারিতার জন্যে নৈকট্য দান করেছেন। সুতরাং আমার জন্মের কত বৎসর পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা তাওরাত লিপিবদ্ধ করেছেন তা-কি আপনি দেখেছেন? মূসা (‘আঃ) বললেন, চল্লিশ বৎসর পূর্বে। আদাম (‘আঃ) বললেন, আপনি কি তাতে পাননি- ‘আদাম তাঁর রবের আদেশ অমান্য করেছেন এবং পথভ্রষ্ট হয়েছেন’। আদাম (‘আঃ) বললেন, এরপর আপনি আমাকে আমার এমন কর্মের জন্য কেন ভর্ৎসনা করছেন যা আমাকে সৃষ্টি করার চল্লিশ বৎসর পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা আমার উপর লিখে রেখেছেন? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এরপর আদাম (‘আঃ) মূসা (‘আঃ)-এর উপর জয়ী হলেন। (ই.ফা. ৬৫০৩, ই.সে. ৬৫৫৪) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আদাম (‘আঃ) ও মূসা (‘আঃ) বাদানুবাদ করেন। তখন মূসা (‘আঃ) তাকে বললেন, আপনি তো সে আদাম (‘আঃ) যাকে তাঁর ভুলে জান্নাত হতে বের করে দিয়েছে। এরপর আদাম (‘আঃ) তাকে বললেন, আপনি তো সে মূসা (‘আঃ) আল্লাহ তা‘আলা যাকে তাঁর রিসালাত ও কথা বলার জন্যে বাছাই করেছেন। তারপরও তুমি আমাকে তিরস্কার করছ, এমন একটি ব্যাপারে, যা আমার জন্মের আগে আমার উপর ভাগ্যলিপিতে নির্ধারিত হয়েছিল। পরিশেষে আদাম (‘আঃ) মূসা (‘আঃ)-এর উপর জয়ী হলেন। (ই.ফা. ৬৫০৪, ই.সে. ৬৫৫৫) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সানাদে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ হুরায়রা্ (রাঃ)-এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে তাদের হাদীসের মর্মের হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৫০৫, ই.সে. ৬৫৫৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) আবূ হুরায়রা্ (রাঃ)-এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে তাদের হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৫০৬, ই.সে. ৬৫৫৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা সকল মাখলুকের তাকদীর আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বৎসর পূর্বে লিখেছেন। তিনি বলেছেন, সে সময় আল্লাহর ‘আর্শ পানির উপরে ছিল। (ই.ফা. ৬৫০৭, ই.সে. ৬৫৫৮) আবূ হানী (রাঃ) আবূ হানী (রাঃ)-এর সানাদে তার হাদীসৈর হুবহু বর্ণনা করেছেন। তবে তারা উভয়ে তাদের হাদীসে “তাঁর ‘আর্শ পানির উপর ছিল” কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৬৫০৮, ই.সে. ৬৫৫৯)

【3】

আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে চান হৃদয়সমূহ পরিবর্তন করেন

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন যে, তিনি বলেছেন, আদাম সন্তানের কল্বসমূহ পরম দয়াময় আল্লাহ তা‘আলার দু’আঙ্গুলের মধ্যে এমনভাবে আছে যেন তা একটি কল্ব। তিনি যেভাবে চান সেভাবেই তা উলটপালট করেন। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “কল্বসমূহের পরিচালক হে আল্লাহ! আপনি আমাদের কল্বসমূহকে তোমার বশ্যতার উপর স্থির রাখুন।” (ই.ফা. ৬৫০৯, ই.সে. ৬৫৬০)

【4】

সকল বিষয় নির্ধারিত

তাউস (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক সহাবাকে দেখতে পেয়েছি। তারা বলতেন যে, সকল বিষয় নির্ধারিত (সৃষ্ট)। তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সকল বিষয় নির্দিষ্ট পরিমাণে সৃষ্ট; এমনকি অক্ষমতা ও বুদ্ধিমত্তা বা বুদ্ধিমত্তা ও অক্ষমতাও। (ই.ফা. ৬৫১০, ই.সে. ৬৫৬১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, কুরায়শ গোত্রের মুশরিক্রা ভাগ্যলিপির ব্যাপারে বিবাদ করতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করলো। তারপর এ আয়াত নাযিল হলো- “যেদিন তাদেরকে নিম্নমুখী করে জাহান্নামে টেনে আনা হবে এবং (বলা হবে) জাহান্নামের আগুনের ছোয়া আস্বাদন করো। নিশ্চয়ই আমি সকল বিষয়বস্তু পরিমিত পরিমাণে সৃষ্টি করেছি।” (ই.ফা. ৬৫১১, ই.সে. ৬৫৬২)

【5】

আদাম সন্তানের উপর ব্যভিচার ও অন্যান্য বিষয়ের অংশ পরিমিত

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) যা বলেছেন ‘লামাম’ (আকর্ষণীয় বড় গুনাহ) বিষয়ে তার চেয়ে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ কোন বিষয় আমি দেখিনি। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ তা‘আলা আদাম সন্তানের উপর ব্যভিচারের যে ভাগ লিখেছেন, নিঃসন্দেহে তা সে পাবে। দু’চোখের ব্যভিচার দেখা, যবানের ব্যভিচার, পরস্পর কথোপকথনের ব্যভিচার, মনের ব্যভিচার কামন-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে অথবা মিথ্যা সাব্যস্ত করে। ‘আব্দ (রহঃ) তাউস-এর বর্ণনায় বলেছেন যে, তিনি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে শুনেছেন। (ই.ফা. ৬৫১২, ই.সে. ৬৫৬৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সানাদে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেন, আদাম সন্তানের উপর ব্যভিচারের যে অংশ লিখিত রয়েছে তা অবশ্যই সে প্রাপ্ত হবে। নিঃসন্দেহে দু’চোখের ব্যভিচার হলো তাকানো, দু’কানের ব্যভিচার হলো শোনা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো কথোপকথন করা, হাতের ব্যভিচার হলো শক্ত করে ধরা, পায়ের ব্যভিচার হলো হেঁটে যাওয়া, হৃদয়ের ব্যভিচার হচ্ছে কামনা-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে বা মিথ্যা সাব্যস্ত করে। (ই.ফা. ৬৫১৩, ই.সে. ৬৫৬৪)

【6】

প্রত্যেক শিশু ইসলামী স্বভাবের উপর জন্মানোর মর্মার্থ এবং কাফির ও মুসলিমদের মৃত শিশুর বিধান

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, প্রতিটি নবজাতক স্বভাবজাত ইসলাম নিয়ে জন্মলাভ করে। অতঃপর তার বাবা-মা তাকে ইয়াহূদী বানিয়ে দেয়, খ্রীষ্টান বানিয়ে দেয় এবং আগুনপূজারী বানিয়ে দেয়, যেমন চতুষ্পদ প্রাণী পূর্ণাঙ্গ চতুষ্পদ বাচ্চা জন্ম দেয় তোমরা কি তাতে কোন অঙ্গ কর্তিত বাচ্চা উপলব্ধি করছ? তারপর আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) বললেন, ইচ্ছা করলে তোমরা এ আয়াতটি পাঠ করতে পারঃ “আল্লাহর ফিত্রাতে যার উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই”- (সূরাহ্ আর্ রূম ৩৩:৩০)৬ (ই.ফা. ৬৫১৪, ই.সে. ৬৫৬৫) যুহরী (রহঃ) যুহরী (রহঃ) হতে এ সূত্রে হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। মা’মার (রহঃ) বলেন, যেমন চতুষ্পদ প্রাণী চতুষ্পদ বাচ্চা জন্ম দিতে হয় এবং তিনি (আরবি) (পূর্ণাঙ্গ) শব্দটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ৬৫১৫, ই.সে. ৬৫৬৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি বাচ্চা স্বভাবজাত ইসলামের উপর জন্মলাভ করে। তারপর তিনি বলেছেন, তোমরা পাঠ করঃ “আল্লাহর ফিত্রাত যার উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন নেই। এ-ই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন”-(সূরাহ্ আর্ রূম ৩০:৩০)। (ই.ফা. ৬৫১৬, ই.সে. ৬৫৬৭) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি বাচ্চা স্বভাবজাত ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করছেন। তারপর পিতা-মাতা তাকে ইয়াহূদী বানিয়ে দিয়েছে, খ্রীষ্টান বানিয়ে দিয়েছে এবং মুশরিক বানিয়ে দিয়েছে। অতঃপর জনৈক লোক বলল। হে আল্লাহর রসূল! যদি সে এর পূর্বে ইন্তিকাল করে তার ব্যাপারে আপনার মত কি? তিনি বললেন, তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ ভাল জানেন। (ই.ফা. ৬৫১৭, ই.সে. ৬৫৬৮) আ’মাশ (রহঃ) আ’মাশ (রহঃ) হতে এ সূত্রে হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনু নুমায়র বর্ণিত হাদীসে আছে- “প্রতিটি বাচ্চা স্বভাবজাত ইসলামের উপর ভূমিষ্ঠ হয়”। আর আবূ মু’আবিয়াহ্ (রহঃ)-এর সানাদে আবূ বকর (রহঃ)-এর বর্ণনায় আছে, “এ স্বভাবজাতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে স্পষ্ট করে কথা বলা পর্যন্ত (তার উপর বহাল থাকে)”। এবং আবূ মু’আবিয়াহ্ (রহঃ)-এর সানাদে আবূ কুরায়ব (রহঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে, “এমন কোন বাচ্চা নেই যা এ স্বভাবজাত ইসলামের উপর জন্মলাভ করে না, যে পর্যন্ত না সে কথা ব্যক্ত করতে পারে”। (ই.ফা. ৬৫১৮, ই.সে. ৬৫৬৯) হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ (রহঃ) তিনি বলেন, এ হাদীসটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আবূ হুরায়রা্ (রাঃ) আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি তার কিছু সংখ্যক হাদীস আলোচনা করেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি শিশু স্বভাবজাত ইসলামের উপর জন্মলাভ করে তারপর বাবা-মা তাকে ইয়াহূদী বানিয়ে দেয়, না খ্রীষ্টান বানিয়ে দেয়, যেমন উষ্ট্রী চতুষ্পদ জন্ম দিয়ে থাকে। তোমরা কি তাদের মাঝে কানকাটা কোন প্রাণী দেখতে পাও? এমনকি তোমরাই সেগুলোর কর্ণ ছিদ্র করে দাও। সহাবারা বলল, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যে শিশু ছোট বেলায়ই মারা যাবে, তার ব্যাপারে আপনারা কী মতামত? তিনি বললেন, তাদের কৃতকর্মের ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন। (ই.ফা. ৬৫১৯, ই.সে. ৬৫৭০) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেকটি মানুষের বাচ্চাকে তার মা ফিতরাতের উপর জন্ম দিয়েছেন। পরে তার পিতামাতাই তাকে ইয়াহূদী বানিয়ে দিয়েছে, খ্রীষ্টান বানিয়ে দিয়েছে এবং অগ্নিপূজ়ারী বানিয়ে দিয়েছে। যদি তার পিতা-মাতা মুসলিম হয় তবে বাচ্চাটিও মুসলিম হবে। প্রত্যেক বাচ্চাকে মা জন্মদানের সময় শাইতান তার দু’পাঁজরে খোঁচা দেয়। কেবলমাত্র মারইয়াম ও তার পুত্র ‘ঈসা (‘আঃ)-কে শাইতান খোঁচা দিতে পারেনি। (ই.ফা. ৬৫২০, ই.সে. ৬৫৭১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মুশরিকদের নিষ্পাপ বাচ্চার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, তাদের কর্মের ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন। (ই.ফা. ৬৫২১, ই.সে. ৬৫৭২) যুহরী (রহঃ) হতে ইউনুস ও ইবনু আবূ যি’ব (রহঃ)-এর সূত্র তাদের দু’জনের (শু’আয়ব ও মা’কাল) হাদীসের হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া শু’আয়ব ও মা’কাল-এর বর্ণিত হাদীসে আছে।। তথায় (আরবি) এর স্থানে (আরবি) (মুশরিকদের সন্তান-সন্ততি) উল্লেখ আছে। (ই.ফা. ৬৫২২, ই.সে. ৬৫৭৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, মুশরিকদের ছোট সন্তান যারা শিশু অবস্থায় ইন্তিকাল করে, তাদের ব্যাপারে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হলো। জবাবে তিনি বললেন তারা কি ‘আমাল করত সে সম্পর্কে আল্লাহই অধিক অবগত। (ই.ফা. ৬৫২৩, ই.সে. ৬৫৭৪) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মুশরিকদের বাচ্চাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, তাদের কর্মের ব্যাপারে আল্লাহই অধিক পরিজ্ঞাত। কেননা তিনিই তাদের সৃষ্টি করেছেন। (ই.ফা. ৬৫২৪, ই.সে. ৬৫৭৫) উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই যে ছেলেটিকে খাযির (আঃ) (আল্লাহর আদেশে) হত্যা করেছিলেন তাকে কাফিরের স্বভাব দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছিল। যদি সে জীবিত থাকত তাহলে সে তার পিতা-মাতাকে অবাধ্যতা ও কুফরি করতে বাধ্য করত। (ই.ফা. ৬৫২৫, ই.সে. ৬৫৭৬) মু’মিন জননী ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একটি নাবালক ছেলে মারা গেল আমি বললাম, তার জন্যে সৌভাগ্য। সে তো জান্নাতের চড়ুই পাখিদের থেকে এক চড়ুই পাখি (অর্থাৎ-নির্দ্বিধায় চলাচল করবে)। এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি জান না যে, আল্লাহ তা’আলা তৈরি করেছেন জান্নাত এবং তৈরি করেছেন জাহান্নাম। এরপর তিনি এ জান্নাতের জন্য যোগ্য নিবাসী এবং জাহান্নামের জন্য যোগ্য নিবাসী তৈরি করেছেন। (ই.ফা. ৬৫২৬, ই.সে. ৬৫৭৭) উম্মুল মু’মিন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি আনসার নাবালক বাচ্চার জানাযায় উপস্থিত হওয়ার জন্য আমন্ত্রিত হলেন। এরপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এ নাবালকটি তো সৌভাগ্যবান। সে তো জান্নাতে চড়ুই পাখিদের থেকে একটি চড়ুই পাখি। সে পাপকর্ম করেনি এবং পাপ তাকে স্পর্শ করেনি। তিনি বললেন, এছাড়া আরো কিছু আছে, হে ‘আয়িশাহ্! নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আ’লা জান্নাতের জন্য উপযুক্ত অধিবাসী সৃষ্টি করেছেন তাদেরকে, যাদেরকে সে উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করা করেছে, অথচ তখন তারা বাপ দাদাদের ঔরসে ছিল। আর তিনি সৃষ্টি করেছেন যাদেরকে জাহান্নামদের জন্য তাদের সে উদ্দেশ্যেই পয়দা করেছেন আর তারা তখন তাদের বাপ দাদাদের ঔরসে ছিল। (ই.ফা. ৬৫২৭, ই.সে. ৬৫৭৮) তালহাহ্ ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) হতে ওয়াকী’ (রহঃ)-এর সূ তালহাহ্ ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) হতে ওয়াকী’ (রহঃ)-এর সূত্রে তার হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৫২৮, ই.সে. ৬৫৭৯)

【7】

মৃত্যুক্ষণ, জীবিকা ইত্যাদি পূর্ব নির্ধারিত ভাগ্যলিপি থেকে কম-বেশি হয় না

‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবনসঙ্গী উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহ! আমার স্বামী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আমার পিতা আবূ সুফ্ইয়ান ও আমার ভাই মু’আবিয়া (রাঃ)-এর সাথে আমাকে সাচ্ছন্দ্য জীবন দান করুন। ‘আবদুল্লাহ বলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তো আল্লাহর নিকট নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল, দিন-কাল সুনির্ধারিত কয়েকদিন এবং বন্টনকৃত জীবনোপরকণ সম্পর্কে মুনাজাত করলে। এ বিষয়গুলো কখনো যথাসময়ের আগে বাড়বে না বা যথাসময়ের পরে বিলম্ব হবে না। যদি তুমি আল্লাহর নিকটে জাহান্নামের শাস্তি হতে মুক্তি লাভের জন্য অথবা কবরের ‘আযাব হতে মুক্তির জন্য দু’আ করতে তাহলে উত্তম কিংবা শ্রেয় হত। তিনি বলেন, তাঁর নিকটে (বানী ইসরাঈলের) বানরে পরিণত হওয়ার কথা আলোচনা করা হলো। মিস’আর বলেন, আমি মনে করি , শূকরে পরিণত হওয়ার কথাও আলোচনা করা হয়। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা’আলা যাদের আকৃতি বিকৃতি করেছেন তাদের কোন বংশ বা উত্তরাধিকারী রাখেননি। ঐ আকৃতি বিকৃতির পূর্বেও পৃথিবীতে বানর ও শূকর ছিল। (ই.ফা. ৬৫২৯, ই.সে. ৬৫৮০) মিস’আর (রাঃ) হতে বর্ণিত এ সূত্র হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া ইবনু বিশ্র ও ওয়াকী’ হতে তাঁর হাদীসে (আরবি) (জাহান্নামদের আগুন এবং কবরের শাস্তি থেকে) উল্লেখ রয়েছে। (ই.ফা. ৬৫৩০, ই.সে. ৬৫৮১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মু হাবীবাহ্ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ! আমার স্বামী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আমার পিতা আবূ সুফ্ইয়ান ও আমার ভাই মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর সাথে আমাকে সাচ্ছন্দ্য জীবন দান করুন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু হাবীবাকে বললেন, তুমি তো আল্লাহর নিকটে আবেদন করলে নির্দিষ্ট আয়ুষ্কাল, সীমিত সুযোগ এবং বন্টিত জীবনোপকরণ, যার যথাসময় আসার পূর্বে বাড়বে না এবং যথাসময় আসার পরে দেরী হবে না। যদি তুমি আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে যেন তিনি তোমাকে জাহান্নাম হতে এবং কবরের শাস্তি হতে মুক্তি দান করেন তবে তা তোমার জন্য সবচেয়ে উত্তম হত। বর্ণনাকারী বলেন, এক লোক জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! এ বানর ও শূকরগুলোই তো অভিশপ্ত দল যাদের আকৃতি বিকৃতি করা হয়েছিল তাদের বংশধর? নবী (সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ তা’আলা যে সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেন বা যে সম্প্রদায়কে (বিকৃতি ঘটিয়ে)শাস্তি দেন, তাদের বংশধর অবশিষ্ট রাখেন না। আর অভিশপ্ত বিকৃতি আকৃতির পূর্বেও পৃথিবীতে বানর ও শূকর ছিল। (ই.ফা. ৬৫৩১, ই.সে. ৬৫৮২) সুফ্ইয়ান (রহঃ) আবু দাউদ, সুলাইমান ইবনু মা’বাদ (রহঃ), সুফইয়ান (রহঃ) এ সূত্রে হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া তিনি বলেন آثَارٍ مَوْطُوءَةٍ এর স্থানে آثَارٍ مَبْلُوغَةٍ (সীমিত নিদর্শন) রয়েছে। ইবনু মা’বাদ (রহঃ) বলেছেন, কেউ قَبْلَ حِلِّهِ এর অর্থ করেছেন نُزُولِهِ অর্থাৎ- আগমনের পূর্বে। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫৩১, ইসলামিক সেন্টার ৬৫৮৩)

【8】

শক্তি প্রয়োগ, অক্ষমতা পরিত্যাগ, আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনা এবং আল্লাহ কর্তৃক ভাগ্যলিপি ও (আল্লাহর প্রতি) সমর্পণ করার নির্দেশ প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, শক্তিধর ঈমানদার দুর্বল ঈমানদারের তুলনায় আল্লাহর নিকট উত্তম ও অতীব পছন্দনীয়। তবে প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যান নিহিত আছে, যাতে তোমার উপকার রয়েছে তা অর্জনে তুমি আগ্রহী হও এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা কর। তুমি অক্ষম হয়ে যেও না। এমন বলো না যে, যদি আমি এমন এমন করতাম তবে এমন হত না। বরং এ কথা বলো যে, আল্লাহ তা‘আলা যা নিদিষ্ট করেছেন এবং যা চেয়েছেন তাই করেছেন। কেননা (আরবি)(যদি) শব্দটি শাইতানের কর্মের দুয়ার খুলে দেয়। (ই. ফা. ৬৫৩২, ই. সে. ৬৫৮৪)