48. ‘ইল্‌ম

【1】

কুরআনের অস্পষ্ট আয়াতের অনুকরণ নিষিদ্ধ হওয়া ও এর অনুসারীদের হতে সতর্কতা অবলম্বন এবং কুরআনে বর্ণিত বিষয়ে মতভেদ নিষিদ্ধকরণ

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিলাওয়াত করলেনঃ “তিনিই তোমার প্রতি এ কিতাবকে অবতীর্ণ করেছেন, যার কতক আয়াত সুস্পষ্ট মজবুত সাংবিধানিক; এগুলো কিতাবের মূলনীতি আর অন্যগুলো অস্পষ্ট। যাদের হৃদয়ে বক্রতা রয়েছে, শুধু তারাই ফিতনাহ্ এবং ভুল ব্যাখ্যার জন্য যা অস্পষ্ট তার অনুকরণ করে। মূলতঃ আল্লাহ ভিন্ন অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না; আর যারা ‘ইল্‌মে সুগভীর তারা বলে, আমরা এতে বিশ্বাস করি, সবই আমাদের রবের নিকট থেকে সত্য এবং বুদ্ধিমান ছাড়া আর কেউ উপদেশ গ্রহণ করে না” – (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান ৩ : ৭)। তিনি (‘আয়িশাহ্) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সেসব লোকদের দেখতে পাবে যারা অস্পষ্ট আয়াতের অর্থের অনুসরণ করে, এরাই সেসব ব্যক্তি, যাদের কথা আল্লাহ আলোচনা করেছেন, সুতরাং তোমরা তাদের থেকে সতর্ক থাক। (ই. ফা. ৬৫৩৩, ই. সে. ৬৫৮৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘ আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, কোন একদিন ভোরে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলাম। তিনি বলেন, একদা তিনি কুরআনের একটি আয়াতের ব্যাপারে দু’ লোকের মতপার্থক্যের আওয়াজ শুনতে পেয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে আসলেন, এ অবস্থায় তাঁর চেহারায় রাগের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছিল। তিনি বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তীরা একমাত্র আল্লাহর কিতাবে দ্বিমত করার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। (ই. ফা. ৬৫৩৪, ই. সে. ৬৫৮৬) জুনদুব ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কুরআন পাঠ করতে থাকো যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের হৃদয়ে তার প্রতি আকর্ষণ থাকে। আর যখন তোমরা তাতে মতভেদ করবে তখন উঠে যাবে। (ই. ফা. ৬৫৩৫, ই. সে. ৬৫৮৭) জুনদুব ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের মনের মধ্যে আকর্ষণ থাকে ততক্ষণ কুরআন পাঠ করো। আর যখন (মন) বিকর্ষিত হয়ে পড়ে তখন উঠে যাবে। (ই. ফা. ৬৫৩৬, ই. সে. ৬৫৮৮) আবূ ‘ইমরান (রাঃ) তিনি বলেন, ছোটবেলা আমরা কূফাতে ছিলাম। তখন জুনদুব (রাঃ) বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কুরআন পাঠ করতে থাকো...... তাঁদের দু‘জনের হাদীসের ন্যায়। (ই. ফা. ৬৫৩৭, ই. সে. ৬৫৮৯)

【2】

সর্বাপেক্ষা বাক-বিতণ্ডা প্রসঙ্গে

‘আয়িশাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা মন্দ সে লোক, যে সর্বাপেক্ষা বাক-বিতণ্ডাকারী। (ই.ফা. ৬৫৩৮, ই. সে. ৬৫৯০)

【3】

ইয়াহূদী-খ্রিস্টানদের আদর্শ অনুকরণ

আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের আগের লোকের নীতি-আদর্শ পুরোপুরিভাবে অনুকরণ করবে, এক বিঘত এক বিঘতের সঙ্গে ও হাত হাতের সঙ্গে, এমনকি তারা যদি গোসর্পের গর্তে ঢুকে থাকে তবুও তোমরা তাদের অনুকরণ করবে। আমরা আবেদন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তারা কি ইয়াহূদী ও নাসারা? তিনি বলেন, তবে আর কারা? (ই.ফা. ৬৫৩৯, ই. সে. ৬৫৯১) যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) হতে আমাদের কিছু সংখ্যক সহাবা (রাঃ) এ সূত্রে তার হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই. ফা. ৬৫৩৯, ই. সে. ৬৫৯২) ‘আতা ইবনু ইয়াসার (রহঃ) ‘আতা ইবনু ইয়াসার (রহঃ)-এর সানাদে যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ) তাঁর হুবহু হাদীস উল্লেখ করেছেন। (ই. ফা. ৬৫৩৯, ই. সে. ৬৫৯৩)

【4】

মাত্রাতিরিক্ত চাটুকারিতা ধ্বংস হয়েছে

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অতিরিক্ত চাটুকারীরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেছে। তিনি এ কথাটি তিনবার বলেছেন। (ই. ফা. ৬৫৪০, ই. সে. ৬৫৯৪)

【5】

শেষ যামানায় ‘ইল্‌ম উঠে যাওয়া, অজ্ঞতা ও ফিতনা প্রকাশ পাওয়া প্রসঙ্গে

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাতের নিদর্শনসমূহের অন্যতম নিদর্শন হলো ‘ইলম উঠে যাওয়া, অজ্ঞতা সাব্যস্ত হওয়া, মদ্যপান ও যিনার প্রসার ঘটা। (ই. ফা. ৬৫৪১, ই. সে. ৬৫৯৫) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের নিকট এমন একটি হাদীস আলোচনা করব, যা আমি রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি এবং আমার পরে এমন কেউ তা তোমাদের নিকট উল্লেখ করবে না যিনি সরাসরি তার কাছ থেকে তা শুনতে পেয়েছে? আমি তাঁর নিকট শুনেছি যে, কিয়ামাতের নিদর্শনসমূহের অন্যতম হচ্ছে ‘ইলম উঠিয়ে দেয়া, অজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ, ব্যভিচার প্রসার হবে, মদ্যপান প্রচলিত হবে, পুরুষ (-এর সংখ্যা) হ্রাস পাবে, নারীরা অবশিষ্ট থাকবে, এমনকি পঞ্চাশজন নারী একজন পুরুষের তত্ত্বাবধানে থাকবে। (ই.ফা. ৬৫৪২, ই. সে. ৬৫৯৬) আনাস (রাঃ)-এর সানাদে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনাস (রাঃ)-এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হুবহু হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। ইবনু বিশ্র ও ‘আব্দাহ্ (রহঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, ‘তা তোমাদের নিকট আমার পরে কেউ উল্লেখ করবে না।’ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, ......এরপর তিনি (‘আবদাহ্) তার হুবহু হাদীস উল্লেখ করেছেন। (ই. ফা. ৬৫৪৩, ই. সে. ৬৫৯৭) আবূ ওয়ায়িল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ও আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ)-এর সাথে বসে ছিলাম। তাঁরা উভয়ে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাতের সন্নিকটকালে এমন কিছু সময় আসবে যখন ‘ইল্‌ম তুলে নেয়া হবে। সে সময় অজ্ঞতা নেমে আসবে এবং ‘হার্জ’ বৃদ্ধি পাবে। ‘হার্জ’ মানে হত্যা। (ই. ফা. ৬৫৪৪, ই. সে. ৬৫৯৮) ‘আবদুল্লাহ ও আবূ মূসা আল আশ‘আরী (রাঃ) উভয়ে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনই বলেছেন। কাসিম ইবনু যাকারিয়্যা (রহঃ)...... শাকীক (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ও আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ)-এর সাথে বসে ছিলাম। এহেন মুহূর্তে হাদীস বর্ণনা করছিলেন। তাঁরা উভয়ে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ...... এরপর তারা ওয়াকী‘ ও ইবনু নুমায়র (রাঃ)-এর হাদীসের হুবহু হাদীস বর্ণনা করেন। (ই. ফা. ৬৫৪৫, ই. সে. ৬৫৯৯) আবূ মূসা (রাঃ)-এর সানাদে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ মূসা (রাঃ)-এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হুবহু হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৫৪৬, ই. সে. ৬৬০০) আবূ ওয়ায়িল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ও আবূ মূসা (রাঃ)-এর সাথে বসে ছিলাম। এমন সময় তাঁরা হাদীস বর্ণনা করছিলেন। তখন আবূ মূসা (রাঃ) বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হুবহু হাদীস বলেছেন। (ই. ফা. ৬৫৪৭, ই. সে. ৬৬০১) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাত সন্নিকটবর্তী হলে ‘ইল্‌ম উঠিয়ে নেয়া হবে, ফিতনা প্রসার হবে, কৃপণতা বেড়ে যাবে এবং ‘হার্জ’ বৃদ্ধি পাবে। লোকেরা বলল, ‘হার্জ’ কি? তিনি বললেন, কত্ল (হত্যা)। (ই. ফা. ৬৫৪৮, ই. সে. ৬৬০২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যামানা সন্নিকটবর্তী হবে, ‘ইলম্‌ উঠিয়ে নেয়া হবে। তারপর তার হুবহু হাদীস উল্লেখ করেন। (ই. ফা. ৬৫৪৯, ই. সে. ৬৬০৩) আবূ হুরাইরাহ্ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যামান সন্নিকটবর্তী হলে ‘ইল্‌ম তুলে নেয়া হবে। তারপর মা‘মার (রহঃ) তাঁদের [ইউনুস ও শু‘আয়ব (রহঃ)-এর] হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৬৫৫০, ই.সে. ৬৬০৪) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, যুহরী হুমায়দ হতে আবূ হুরায়রা্ (রাঃ)-এর সানাদে বর্ণিত হাদীসের অবিকল। তবে সালিম, হাম্মাম ও আবূ ইউনুস (রহঃ) (আরবী) (কৃপণতা বিস্তৃত হয়ে পড়বে) কথাটি উল্লখ করেননি। (ই.ফা. ৬৫৫১, ই.সে. ৬৬০৫) ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র ইবনুল ‘আস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন যে, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হতে ‘ইল্‌ম ছিনিয়ে নেবেন না। তবে তিনি ‘আলিম সম্প্রদায়কে কব্য করে ‘ইল্‌ম উঠিয়ে নিবেন। এমনকি যখন একজন ‘আলিমও থাকবে না তখন মানুষেরা মূর্খ মানুষদেরকে নেতা বানিয়ে নিবে। মানুষ তাদের নিকট সামাধান চাইবে, এরপর তারা না জেনে ফাতাওয়া প্রদান করবে। ফলে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবে এবং মানুষদেরও গুমরাহ করবে। (ই.ফা. ৬৫৫২, ই.সে. ৬৬০৬) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ)-এর সানাদে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জারীর-এর হাদীসের অবিকল বর্ণিত। হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) ‘উমার ইবনু ‘আলী (রহঃ)-এর বর্ণিত হাদীসে এ অংশটুকু বর্ধিত বলেছেন- ‘এরপর আমি (ইবনু ‘উরওয়াহ্) এক বৎসরের মাথায় (পরে)’ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাঁকে প্রশ্ন করলাম; এরপর তিনি হাদীসটি যেমন বর্ণনা দিয়েছিলেন, আমাকে হুবহু হাদীসটি বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি। (ই.ফা. ৬৫৫৩, ই.সে. ৬৬০৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র ইবনুল ‘আস (রাঃ) হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ্ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ৬৫৫৪, ই.সে. ৬৬০৮) ‘উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (রহঃ) তিনি বলেন, আমাকে ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, হে আমার বোনের ছেলে! আমার নিকট সংবাদ এসেছে যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) আমাদের সাথে হাজ্জব্রত পালনে এসেছেন। তাঁর সাথে তুমি দেখা করে প্রশ্ন করো। কেননা, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তিনি বহু জ্ঞানার্জন করেছেন। তিনি (‘উরওয়াহ্) বলেন, এমন সময় আমি তাঁর সাথে দেখা করে এমন বহু ব্যাপারে প্রশ্ন করলাম, যা তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উল্লেখ করেছেন। ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) বলেন, যা তিনি আলোচনা করেছিলেন সে সকল বিষয়ের মধ্যে একটি ছিল এই যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা মানুষের নিকট থেকে ইল্ম কেড়ে নিবেন না। তবে তিনি ‘আলিমদের উঠিয়ে নিয়ে যাবেন। সুতরাং তাদের সাথে ‘ইল্‌মও উঠে যাবে। আর মানুষের মধ্যে অবশিষ্ট থাকবে মূর্খ নেতাকর্মীরা। তারা না জেনে-শুনে মানুষদের ফাতাওয়া দিবে। ফলে তারা পথভ্রষ্ট হবে এবং তাদেরও পথভ্রষ্ট করবে। ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) বলেন, আমি যখন এ হাদীসটি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলাম তখন তিনি হাদীসটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেন এবং বিরত্তিভাব প্রকাশ করে বললেন, তিনি [‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাযি] কি তোমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, তিনি কি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এটি বলতে শুনেছেন? ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) বললেন, এমনকি পরবর্তী বৎসর হাজ্জের সময় এসে গেলো তখন তিনি তাকে [‘উরওয়াহ্ (রহঃ)-কে] বললেন, অবশ্যই ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) (হাজ্জে) গমন করেছেন। তার সাথে দেখা করো। তারপর তাকে তুমি সে হাদীসের ব্যাপারে প্রশ্ন করো ‘ইল্‌ম সম্পর্কে তিনি তোমার নিকট আলোচনা করেছেন। ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) বললেন, তখন আমি তার সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে প্রশ্ন করলাম। তখন তিনি তা আমার নিকটে আলোচনা করলেন, যেমন তিনি প্রথমবার আমার কাছে বর্ণনা করেছিলেন। ‘উরওয়াহ্ বলেন, যখন আমি তাঁকে [‘আয়িশা (রাঃ)-কে] বিষয়টি অবহিত করলাম তখন তিনি বললেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ)-কে সত্য কথা বলে এমনটি মনে করি এবং তিনি এ হাদীসে বিন্দুমাত্র বেশি কিংবা কম করেননি। (ই.ফা. ৬৫৫৫, ই.সে. ৬৬০৯)

【6】

যে লোক কোন সুন্দর নীতি অথবা মন্দ নীতি চালু করে এবং যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে অথবা বিভ্রান্তের দিকে আহ্বান করে

জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক যাযাবর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে আসলো। তাদের পরনে পশমী পোশাক ছিল। তিনি তাদের নিকৃষ্ট অবস্থা দেখলেন। তাদের অভাবে আক্রমণ করেছে। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষদের (তাদেরকে) দান-সদাকাহ্ করার জন্যে উৎসাহিত করলেন। মানুষেরা দান-সদাকাহ্ দিতে ইতস্তত করছিল। এমনকি এর প্রতিক্রিয়া তাঁর চেহারায় দেখা গেল। রাবী বলেন, তারপর একজন আনসারী লোক একটি রূপার (টাকার) ব্যাগ নিয়ে আসলেন। তারপর অন্যজন আসলেন। তারপর পর্যায়ক্রমে আসতে লাগলেন, পরিশেষে তাঁর মুখে আনন্দের চিহ্ন দেখা গেল। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে লোক ইসলামে কোন সুন্নাত চালু করলো এবং পরবর্তীকালে সে অনুসারে ‘আমাল করা হলো তাহলে ‘আমালকারীর প্রতিদানের সমান প্রতিদান তার জন্য লিখিত হবে। এতে তাদের প্রতিদানে কোন ঘাটটি হবে না, আর যে লোক ইসলামে কোন অশুভ নীতি চালু করলো এবং তারপর সে অনুযায়ী ‘আমাল করা হলো তাহলে ঐ ‘আমালকারীর খারাপ প্রতিদানের সমান গুনাহ তার জন্য লিখিত হবে। এতে তাদের পাপ সামান্য ঘাটতি হবে না। (ই.ফা. ৬৫৫৬, ই.সে. ৬৬১০) জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবাহ্ দিলেন এবং মানুষদেরকে দান করার জন্য উৎসাহ প্রদান করলেন। এরপর জারীর বর্ণিত হাদীসের হুবহু বর্ণনানুযায়ী। (ই.ফা. ৬৫৫৭, ই.সে. ৬৬১১) জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক কোন ভাল কর্মের প্রবর্তন করে না, যা পরবর্তীকালে কাজে পরিণত করা হয়। তারপর তিনি সম্পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেন। (ই.ফা. ৬৫৫৮, ই.সে. ৬৬১২) জারীর (রাঃ)-এর সানাদে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না, আবূ বকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ ও ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) ..... জারীর (রাঃ)-এর সানাদে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৫৫৯, ই.সে. ৬৬১৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে তার জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমান প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্য ঘাটতি হবে না। আর যে লোক বিভ্রান্তির দিকে ডাকে তার উপর সে রাস্তার অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে। এতে তাদের পাপরাশি সামান্য হালকা হবে না। (ই.ফা. ৬৫৬০, ই.সে. ৬৬১৪)