50. তওবা

【1】

তাওবার প্রতি উৎসাহ প্রদান ও তার মাধ্যমে মুক্তি লাভ করা

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সানাদে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীন ইরশাদ করেছেন : আমার উপর বান্দার ধারণা অনুযায়ী আমি তার সাথে আছি। সে যেখানেই আমাকে স্মরণ করে আমি তার সাথে আছি। আল্লাহর কসম, শূণ্য মাঠে তোমাদের কেউ হারানো প্রাণী পাওয়ার পর যে আনন্দিত হয় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার তাওবার কারণে এর চেয়েও বেশি আনন্দিত হন। যদি কেউ একবিঘত সমান আমার দিকে অগ্রসর হয় তাহলে আমি তার দিকে একহাত অগ্রসর হই। যদি কেউ একহাত সমান আমার প্রতি অগ্রসর হয়, তাহলে আমি একগজ সমান তার প্রতি অগ্রসর হই। যদি কেউ আমার দিকে পায়ে হেঁটে আসে তবে আমি তার দিকে দৌড়ে আসি। (ই. ফা. ৬৭০০, ই. সে. ৬৭৫৫) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কোন লোক হারানো প্রাণী পাওয়ার পর যে সমান আনন্দিত হয়, তোমাদের তাওবার কারণে আল্লাহ তা‘আলা এর চেয়েও বেশি খুশী হন। (ই. ফা. ৬৭০১, ই. সে. ৬৭৫৬) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সানাদে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৭০২, ই.সে. ৬৭৫৭) হারিস ইবনু সুওয়াইদ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) অসুস্থ ছিলেন। তাঁর সেবা করার জন্য কোন এক সময় আমি তাঁর নিকট প্রবেশ করলাম। তখন তিনি আমাকে দু’টি হাদীস বর্ণনা করলেন। একটি নিজের পক্ষ হতে এবং অন্যটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষ থেকে। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মু’মিন বান্দার তাওবার কারণে ঐ ব্যক্তির চেয়েও অধিক আনন্দিত হন, যে লোক ছায়া-পানিহীন আশঙ্কাপূর্ণ বিজন মাঠে ঘুমিয়ে পড়ে এবং তার সাথে থাকে খাদ্য পানীয় সহ একটি সওয়ারী। এরপর ঘুম হতে সজাগ হয়ে দেখে যে, সওয়ারী কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। তারপর সে সেটি খুঁজতে খুঁজতে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ল এবং বলে, আমি আমার পূর্বের জায়গায় গিয়ে চিরনিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে মারা যাব। (এ কথা বলে) সে মৃত্যুর জন্য বাহুতে মাথা রাখল। কিছুক্ষণ পর জাগ্রত হয়ে সে দেখল, পানাহার সামগ্রী বহনকারী সওয়ারীটি তার কাছে। (সওয়ারী এবং পানাহার সামগ্রী পেয়ে) লোকটি যে পরিমাণ আনন্দিত হয়, মু’মিন বান্দার তাওবার কারণে আল্লাহ তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হন। (ই.ফা. ৬৭০৩, ই.সে. ৬৭৫৮) আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) উক্ত সূত্র তবে তাঁর হাদীসে আছে, মরুভুমির সে ব্যক্তির চেয়েও বেশি আনন্দিত হন। (ই.ফা. ৬৭০৪, ই.সে. ৬৭৫৯) ‘উমারাহ্‌ ইবনু ‘উমায়র (রহঃ) তিনি বলেন, আমি হারিস ইবনু সুওয়াইদকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ আমার কাছে দু’টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। একটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এবং অপরটি তার নিজের তরফ থেকে। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাঁর মু’মিন বান্দার তাওবার কারণে বেশি খুশী হন। জারীর-এর হাদীসের অবিকল। (ই.ফা. ৬৭০৫, ই.সে. ৬৭৬০) সিমাক (রহঃ) তিনি বলেন, একদা নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) খুত্‌বাহ্‌ দিতে গিয়ে বললেন, আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবার কারণে ঐ লোক হতেও বেশি আনন্দিত হন যে তার একটি উটের উপর সহায় সম্বল বহন করে সফরে বের হয়েছে। আর অবশেষে এক জনমানবহীন মাঠে উপস্থিত হয়। এমতাবস্থায় দুপুর হয়ে যায়। তখন সে নেমে বৃক্ষের তলায় বিশ্রাম করতে থাকে। সে গভীর ঘুমে নিমগ্ন হয় এবং তার উটটি চলে যায়। সে সজাগ হয়ে ঐ টিলায় দৌড়ে গেল, অতঃপর সে কোন কিছু দেখতে পেল না। তারপর সে অপর টিলায় দৌড়ে উঠল কিন্তু সেখানেও কোন কিছু দেখতে পেল না। তারপর সে তৃতীয় এক টিলার উপরে উঠে, কিন্তু সেকানেও কোন কিছু দেখতে পেল না। অবশেষে হতাশ হয়ে সে বিশ্রামাগারে ফিরে গিয়ে সেখানে এসে বসে থাকে। এমন সময় হঠাৎ হাঁটতে হাঁটতে উটটি তার কাছে চলে আসে। অমনি সে তার হাতে এর লাগাম চেপে ধরে। আল্লাহ তার মু’মিন বান্দার তাওবার কারণে ঐ উট প্রাপ্ত লোকের চেয়েও বেশি খুশী হন। বর্ণনাকারী সিমাক (রহঃ) বলেন, শা‘বী (রহঃ) বলেছেন, নু‘মান এ হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে মারফূ‘ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে আমি (সিমাক) নু‘মান (রাঃ)-কে হাদীসটি মারফূ‘ভাবে বর্ণনা করতে শুনিনি। (ই.ফা. ৬৭০৬, ই.সে. ৬৭৬১) বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এ সম্বন্ধে তোমরা কী বললে যে, এক লোক যার নিকট পানাহারের কোন কিছু নেই, এমন মরুভূমিতে উট চলে যায় এবং এর লাগাম মাটিতে টেনে চলতে থাকে, অথচ এর উপর রয়েছে সে লোকের পানাহারের সামগ্রী। তারপর সে তা খোঁজ করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর এহেন মুহূর্তে উক্ত সওয়ারী কোন বৃক্ষের তলা দিয়ে যাওয়ার সময় যদি এর লাগাম ঐ গাছের কাণ্ডের সাথে আটকে যায়, আর আটকানো অবস্থায় যদি সে লোকটি সেটি পেয়ে যায়, তাহলে এ লোক কি পরিমাণ খুশী হবে? সহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সে অত্যন্ত খুশী হবে। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্বীয় বান্দার তাওবার কারণে সওয়ারী প্রাপ্ত ঐ লোকের থেকেও আল্লাহ তা‘আলা অনেক বেশি খুশী হন। জা‘ফার (রহঃ) বলেন, ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ইয়াদ তাঁর পিতা হতে আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৭০৭, ই.সে. ৬৭৬২) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বান্দা যখন আল্লাহর কাছে তাওবাহ্‌ করে তখন আল্লাহ ঐ লোকের চেয়েও বেশি আনন্দিত হন, যে মরুভূমিতে নিজ সওয়ারীর উপর আরোহিত ছিল। তারপর সাওয়ারীটি তার হতে হারিয়ে যায়। আর তার উপর ছিল তার খাদ্য ও পানীয়। এরপর নিরাশ হয়ে সে একটি গাছের ছায়ায় এসে আরাম করে এবং তার উটটি সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় হঠাৎ উটটি তার কাছে এসে দাঁড়ায়। অমনিই সে তার লাগাম ধরে ফেলে। এরপর সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠে, হে আল্লাহ! তুমি আমার বান্দা, আমি তোমার রব। আনন্দে আত্মহারা হয়ে সে ভুল করে ফেলেছে। (ই.ফা. ৬৭০৮, ই.সে. ৬৭৬৩) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দার তাওবার কারণে তোমাদের ঐ লোকের চেয়েও বেশি খুশী হন, যে সজাগ হয়ে তার ঐ উটটি ফিরে পায়, যা সে মরুভূমিতে হারিয়ে ফেলেছিল। (ই.ফা. ৬৭০৯, ই.সে. ৬৭৬৪) আনাস (রাঃ)-এর সানাদে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৭০৯, ই.সে. ৬৭৬৫)

【2】

ইস্তিগ্‌ফার ও তাওবার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হওয়া প্রসঙ্গে

আইয়ূব (রাঃ) যখন তাঁর মৃত্যু সমুপস্থিত তখন তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শুনা একটি হাদীস আমি তোমাদের নিকট হতে গোপন রেখেছিলাম। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, যদি তোমরা পাপ না করতে তবে আল্লাহ তা‘আলা এমন মাখ্‌লূক বানাতেন যারা পাপ করতো এবং আল্লাহ তাদেরকে মাফ করে দিতেন। (ই.ফা. ৬৭১০, ই.সে. ৬৭৬৬) আবূ আইয়ূব আল আনসারী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি তোমাদের কোন পাপ না থাকতো যা আল্লাহ মাফ করে দেন, তবে অবশ্যই আল্লাহ এমন সম্প্রদায় বানাতেন যাদের পাপ হত এবং তিনি তা মাফ করে দিতেন। (ই.ফা. ৬৭১১, ই.সে. ৬৭৬৭) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে সত্তার হাতে আমার জীবন, আমি তাঁর কসম করে বলছি, তোমরা যদি পাপ না করতে তবে অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে এমন সম্প্রদায় বানাতেন যারা পাপ করে ক্ষমা চাইতো এবং তিনি তাদের মাফ করে দিতেন। (ই.ফা. ৬৭১২, ই.সে. ৬৭৬৮)

【3】

সার্বক্ষণিক আল্লাহর যিক্‌র ও পরকালের বিষয়ে চিন্তা করা ও আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থাকা এবং কোন কোন সময় তা ছেড়ে দেয়া ও দুনিয়াবী কাজে লিপ্ত থাকা জায়িয

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাতিব হান্‌যালাহ্‌ আল্‌ উসাইয়িদী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আবূ বাক্‌র সিদ্দীক (রাঃ) আমার সঙ্গে দেখা করলেন এবং আমাকে প্রশ্ন করলেন, হে হানযালাহ্‌! তুমি কেমন আছ? তিনি বলেন, জবাবে আমি বললাম, হানযালাহ্‌ তো মুনাফিক হয়ে গেছে। সে সময় তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ্‌ তুমি কি বলছ? হানযালাহ্‌ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে থাকি, তিনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নামের কথা শুনিয়ে দেন, যেন আমরা উভয়টি চাক্ষুষ দেখছি। সুতরাং আমরা যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সন্নিকটে থেকে বের হয়ে আপনজন স্ত্রী-সন্তান এবং ধন-সম্পদের মধ্যে নিমগ্ন হয়ে যাই তখন আমরা এর অনেক বিষয় ভুলে যাই। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমারও একই অবস্থা। নিশ্চয়ই আমরা এ বিষয় নিয়ে সাক্ষাৎ করবো। তারপর আমি এবং আবূ বকর (রাঃ) রওনা করলাম এবং এমনকি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! হানযালাহ্‌ মুনাফিক হয়ে গেছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তা কী? আমি বললাম, আমরা আপনার কাছে থাকি, আপনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নামের কথা মনে করিয়ে দেন, যেন আমরা তা সরাসরি দেখতে পাই। তারপর আমরা যখন আপনার নিকট হতে বের হই এবং স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদের মধ্যে নিমগ্ন হই সে সময় আমরা এর অনেক বিষয় ভুলে যাই। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে সত্তার হাতে আমার জীবন আমি তাঁর কসম করে বলছি। আমার কাছে থাকাকালে তোমাদের যে অবস্থা হয়, যদি তোমরা সবসময় এ অবস্থায় অনড় থাকতে এবং সার্বক্ষণিক আল্লাহর যিক্‌রে পড়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ফেরেশ্‌তাগণ তোমাদের বিছানায় ও রাস্তায় তোমাদের সাথে মুসাফাহা করত। কিন্তু হে হানযালাহ্‌! এক ঘণ্টা (আল্লাহর যিক্‌রে) আর এক ঘন্টা (দুনিয়াবী কাজে ব্যয় করবে) অর্থাৎ আস্তে আস্তে (চেষ্টা কর)। এ কথাটি তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার বললেন। (ই.ফা. ৬৭১৩, ই.সে. ৬৭৬৯) হানযালাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা এক সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ছিলাম। তিনি আমাদেরকে ওয়ায করলেন এবং জাহান্নামের কথা মনে করিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, তারপর আমি গৃহে আসলাম এবং সন্তান-সন্ততিদের সাথে খেল-তামাশা করলাম এবং স্ত্রীর সাথে ক্রীড়া-কৌতুক করলাম। এরপর আমি বাড়ি থেকে রওনা করলাম। পথে আবূ বকর (রাঃ)-এর সাথে দেখা করলাম। আমি তাঁর সাথে এ প্রসঙ্গে আলোচনা করলাম। অতঃপর তিনি বললেন, আমিও তো এমনই করি, যেমন তুমি বললে। তারপর আমরা দু’জনই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দেখা করলাম। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! হানযালাহ্‌ তো মুনাফিক হয়ে গেছে। তারপর তিনি বললেন, তা কী? তারপর আমি আমার সম্পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করলাম। এরপর আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমিও তো এমনই করি যেমন হানযালাহ্‌ করেছে। তিনি বললেন, হে হানযালাহ্‌! কিছু সময় আল্লাহর স্মরণের জন্য এবং কিছু সময় দুনিয়াবী কাজের জন্য। ওয়ায-নাসীহাতের মুহূর্তে তোমাদের মন যেমন থাকে, সবসময় যদি তা এ রকম থাকত তবে ফেরেশ্‌তাগণ অবশ্যই তোমাদের সাথে মুসাফাহা করত। এমনকি প্রকাশ্যে রাস্তায় তারা তোমাদের সালাম করত। (ই.ফা. ৬৭১৪, ই.সে. ৬৭৭০) হান্‌যালাহ্‌ আত্‌ তামীমী আল উসাইয়িদী আল কাতিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ছিলাম। তিনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নামের কথা মনে করিয়ে দিলেন। তারপর সুফ্‌ইয়ান (রাঃ) হাদীসটি পূর্বোক্ত হাদীসদ্বয়ের হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৭১৫, ই.সে. ৬৭৭১)

【4】

আল্লাহ তা‘আলার রহ্‌মাতের ব্যাপকতা যা তার গোস্বাকে অতিক্রম করেছে

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন আল্লাহ তা‘আলা মাখলূক সৃষ্টি করলেন তখন তিনি তাঁর কিতাবে লিপিবদ্ধ করলেন এবং তা তাঁর নিকট ‘আর্‌শের উপরে রয়েছে। (তিনি লিখেছেন) আমার গোস্বার উপর রহমাত বিজয়ী থাকবে। (ই.ফা. ৬৭১৬, ই.সে. ৬৭৭২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সু্ত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমার গোস্বাকে আমার রহমাত অতিক্রম করেছে। (ই.ফা. ৬৭১৭, ই.সে. ৬৭৭৩) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ যখন মাখলূক সৃষ্টি করলেন তখন তিনি তাঁর কিতাবের মধ্যে নিজের কাছে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। (তাতে তিনি লিখে রেখেছেন) আমার গোস্বার উপর রহমাত বিজয়ী থাকবে। (ই.ফা. ৬৭১৮, ই.সে. ৬৭৭৪) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রহ্‌মাতকে একশ’ ভাগ করে নিরানব্বই ভাগ নিজের কাছে আটকিয়ে রেখেছেন এবং একভাগ পৃথিবীতে অবতীর্ণ করেছেন। রহ্‌মাতের এ অংশ হতেই সৃষ্টজীব পরস্পর একে অন্যের প্রতি দয়া করে, এমনকি প্রাণী পর্যন্ত; যে স্বীয় ক্ষুরকে নিজ সন্তানাদির গায়ে লাগার ভয়ে তা তুলে নিয়ে থাকে। (ই.ফা. ৬৭১৯, ই.সে. ৬৭৭৫) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা একশ’ ভাগ রহ্‌মাত সৃষ্টি করে একভাগ সৃষ্টির মধ্যে রেখে দিয়েছেন এবং নিরানব্বই ভাগ নিজের নিকট লুকায়িত রেখেছেন। (ই.ফা. ৬৭২০, ই.সে. ৬৭৭৬) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহর একশ’ ভাগ রহ্‌মাত আছে। তন্মধ্যে একভাগ রহ্‌মাত তিনি জিন, ইনসান, চুতষ্পদ জন্তু ও কীট-পতঙ্গের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। এ এক ভাগ রহ্‌মাতের কারণেই সৃষ্ট জীব পরস্পর একে অপরের প্রতি দয়া করে এবং এ এক ভাগ রাহ্‌মাতের মাধ্যমে বন্য পশু নিজ সন্তানের প্রতি দয়া ও অনুকম্পা প্রদর্শন করে। মহান আল্লাহ তাঁর একশ’ ভাগ রহ্‌মাতের নিরানব্বই ভাগ রহ্‌মাত নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। এর দ্বারা তিনি কিয়ামাতের দিন স্বীয় বান্দাদের প্রতি দয়া করবেন। (ই.ফা. ৬৭২১, ই.সে. ৬৭৭৭) সালমান আল ফারিসী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার একশ’ ভাগ রহ্‌মাত আছে। তার মধ্যে একভাগ রহ্‌মাতের দ্বারাই সৃষ্ট জীব পরস্পর একে অন্যের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে। বাকী নিরানব্বই ভাগ রহ্‌মাত রাখা হয়েছে কিয়ামাত দিনের জন্য। (ই.ফা. ৬৭২২, ই.সে. ৬৭৭৮) মু‘তামির-এর পিতা উপরোক্ত সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৭২৩, ই.সে. ৬৭৭৯) সালমান (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আকাশমণ্ডলী ও জমিন সৃষ্টির সময়ে আল্লাহ তা‘আলা একশ’ রহ্‌মাত সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেকটি রহ্‌মাত আকাশ ও জমিনের দূরত্বের সমপরিমাণ। এ একশ’ রহ্‌মাত হতে একভাগ রহ্‌মাত দুনিয়ার জন্য নির্ধারণ করেছেন। এর তাগিদেই মা তার সন্তানের প্রতি এতটুকু স্নেহপরায়ণা হয়ে থাকে এবং বন্য পশু-পাখি একে অপরের প্রতি অনুরক্ত হয়। যখন কিয়ামাত দিবস হবে তখন আল্লাহ তা‘আলা এ রহমাত দ্বারা (একভাগকেও নিরানব্বই ভাগের সাথে মিলিয়ে একশ’) পূর্ণ করবেন। (ই.ফা. ৬৭২৪, ই.সে. ৬৭৭৯) ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, এক সময় কয়েকজন বন্দী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে আসা হলো। বন্দীদের মধ্যে থেকে একজন নারী কেবলই অনুসন্ধানে রত ছিল। সে বন্দীদের মধ্যে কোন শিশুকে পাওয়া মাত্র তাকে কোলো নিয়ে পেটের সাথে জড়িয়ে ধরে তাকে দুগ্ধ পান করাত। এ দেখে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের প্রশ্ন করলেন, এ মহিলাটি কি তার সন্তানদেরকে আগুনে ফেলতে রাজি হবে? আমরা বললাম, না। আল্লাহর শপথ! সে কোন সময় তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারবে না। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সন্তানের উপর এ মহিলাটির দয়া হতেও আল্লাহ বেশি দয়ালু। (ই.ফা. ৬৭২৫, ই.সে. ৬৭৮০) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর কাছে যে কি পরিমাণ শাস্তি রয়েছে, ঈমানদারগণ যদি তা জানত তবে কেউ তাঁর কাছে জান্নাতের প্রত্যাশা করত না। এমনিভাবে আল্লাহর কাছে যে পরিমাণ দয়া আছে, অবিশ্বাসীরা যদি তা জানত তবে কেউ তার জান্নাত থেকে নিরাশ হত না। (ই.ফা. ৬৭২৬, ই.সে. ৬৭৮১) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জনৈক লোক যে জীবনে কক্ষনো কোন প্রকার সাওয়াবের কাজ করেনি, যখন সে মারা যাবে তার পরিবার পরিজনকে ডেকে বলল, মৃত্যুর পর তোমরা তাকে পুড়ে ফেলবে সেটার অর্ধেক স্থলভাগে বাতাসে উড়িয়ে দিবে এবং অর্ধেক পানিতে নিক্ষেপ করবে। কারণ আল্লাহর কসম! আমাকে যদি আল্লাহ পুনঃ একত্রিত করতে পারেন তাহলে তিনি আমাকে অবশ্যই এমন ‘আযাব দিবেন, যা পৃথিবীর অন্য কাউকে কখনো দেননি। তারপর লোকটি যখন ইন্তিকাল করল তখন তার পরিবারের লোকেরা তার নির্দেশ অনুযায়ী তদ্রূপ করল। তখন আল্লাহ তা‘আলা স্থলভাগকে আদেশ দিলেন সে তার মধ্যস্থিত যা কিছু আছে (ছাই) একত্রিত করলো। এরপর পানিতে মিশ্রিত ভাগকে নির্দেশ দিলেন। সেও তার মধ্যস্থিত সব কিছু একত্রিত করে দিল। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি এমনটি কেন করলে? সে বলল, হে আমার রব! আপনার ভয়ে। আপনি তো সর্বজ্ঞ। তখন আল্লাহ তা‘আলা সদয় হয়ে তাকে মাফ করে দিলেন। (ই.ফা. ৬৭২৭, ই.সে. ৬৭৮২) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেন, এক লোক তার নিজের উপর সীমাহীন পাপ করেছে। এরপর যখন মৃত্যু সমুপস্থিত তখন সে তার সন্তান-সন্ততিদেরকে ওয়াসীয়াত করে বলল, আমার ইন্তিকালের পর তোমরা আমাকে আগুনে পুড়িয়ে ছাইগুলোকে ভালোভাবে পিষবে। তারপর আমাকে সমুদ্রের মধ্যে বাতাসে ছেড়ে দিবে। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ যদি আমাকে পেয়ে যান, তবে নিশ্চিতই তিনি আমাকে এমন ‘আযাব দিবেন, যা তিনি আর কাউকে দেননি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সন্তানগণ তার সঙ্গে হুবহু তাই করল। এরপর আল্লাহ তা‘আলা মাটিকে বললেন, তুমি তার যে ছাই ধারণ করছো তা একত্রিত করে দাও। ফলে সে সোজা হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল। তখন আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এ কর্ম করার কারণে কিসে তোমাকে উৎসাহিত করেছে? উত্তরে সে বলল, (আরবী) অথবা (আরবী)–আপনার ভয়ে। এ কথার প্রেক্ষিতে আল্লাহ সদয় হয়ে তাকে মাফ করে দেন। (ই.ফা. ৬৭২৮, ই.সে. ৬৭৮৩) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেছেন, জনৈক মহিলা একটি বিড়ালের কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। সে বিড়ালটি বেঁধে রেখেছিল; অথচ তাকে কোন আহারও প্রদান করেনি এবং জমি থেকে কীট-পতঙ্গ বা ঘাসপাতা খাবার জন্য তাকে ছেড়েও দেয়নি। এমনিভাবে বিড়ালটির মৃত্যু হয়। যুহরী (রহঃ) বলেন, উপরোল্লিখিত হাদীস দু’টো এ কারণেই আলোচনা করা হয়েছে, যেন মানুষ ‘আমাল পরিত্যাগ করে আল্লাহর রহমাতের উপর ভরসা করে বসে না থাকে (পাপরাশিতে ডুবে না থাকে) এবং যেন মানুষ আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে (‘আযাবের ভয়ে) নিরাশ না হয়ে যায়। (ই.ফা. ৬৭২৮, ই.সে. ৬৭৮৩) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুলাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, একজন গোলাম তার নিজের আত্মার প্রতি যুল্‌ম করেছিল অর্থাৎ সীমাহীন পাপ করেছিল। তারপর তিনি (আরবী) পর্যন্ত মা‘মার-এর বর্ণিত হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। তবে বিড়ালের কাহিনী সম্পর্কিত মহিলার হাদীসটি বর্ণনা করেননি। তবে যুবাইদী (রহঃ)-এর হাদীসে রয়েছে, তারপর আল্লাহ তা‘আলা- যারা তার সর্বাঙ্গ গ্রাস করেছে তাদের বললেন, তার যে যে অংশে তোমরা খেয়ে ফেলেছো, তা সমন্বিত করে দাও। (ই.ফা. ৬৭২৯, ই.সে. ৬৭৮৪) আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করলে, (তিনি বলেছেন,) আগের যুগের এক লোক ছিল। আল্লাহ তা‘আলা তাকে অনেক সন্তান এবং অনেক প্রাচুর্য দিয়েছিলেন। সে তার সন্তান-সন্ততিদের বলল, আমি যা তোমাদের আদেশ করব অবশ্যই তোমরা তা করবে নচেৎ আমি অন্য কাউকে আমার ধন-সম্পদের উত্তরাধিকার করে দিব। আমি যখন মরে যাবো তখন তোমরা আমাকে আগুনে জ্বালিয়ে ফেলবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় যে, সে এও বলেছে যে, তারপর আমাকে পিষে বাতাসে উড়িয়ে দিবে। কারণ আল্লাহর কাছে আগে আমি কোন সাওয়াব পাঠাইনি। আল্লাহ তা‘আলা আমাকে সাজা দেয়ার উপর শক্তি রাখেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এ বিষয়ে সে তার সন্তানদের থেকে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করল। এরপর তারা তার পিতার ক্ষেত্রে তেমনি করল। আমার রবের কসম! এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে প্রশ্ন করলেন, এ কর্ম করার বিষয়ে কিসে তোমাকে উৎসাহিত করেছে? সে বলল, আপনার ভয়ে। এ কথা শুনে আল্লাহ তাকে আর কোন ‘আযাব দেননি। (ই.ফা. ৬৭৩০, ই.সে. ৬৭৮৫) কাতাদাহ্‌ (রহঃ) তারা সকলেই শু‘বার সানাদের ন্যয় উক্ত হাদীসটি শু‘বার হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। শাইবান-এর হাদীসে (আরবী)-এর স্থলে (আরবী)-(আল্লাহ তাকে দান করেছেন) বর্ণিত আছে। আর আত্‌ তাইমীর হাদীসের মধ্যে (আরবী)-এর স্থলে (আরবী) বর্ণিত আছে। কাতাদাহ্‌ (রহঃ)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, সে আল্লাহর কাছে কোন বিষয়ই একত্রিত করেনি। শাইবান-এর হাদীসে আছে, (আরবী) এবং আবূ ‘আওয়ানার হাদীসে আছে (আরবী) বা অক্ষরের স্থলে (আরবী) অক্ষর আছে। (ই.ফা. ৬৭৩১, ই.সে. ৬৭৮৬)

【5】

বার বার পাপ করা ও তাওবাহ্‌ করার কারণেও তাওবাহ্‌ গৃহীত হওয়ার বর্ণনা

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় রব আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, জনৈক বান্দা পাপ করে বলল, হে আমার রব! আমার পাপ মার্জনা করে দাও। তারপর আল্লাহ তা‘আলা বললেন, আমার বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে, যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে ধরেন। এ কথা বলার পর সে আবার পাপ করল এবং বলল, হে আমার রব। আমার পাপ ক্ষমা করে দাও। তারপর আল্লাহ তা‘আলা বললেন, আমার এক বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে শাস্তি দিতে পারেন। তারপর সে পুনরায় পাপ করে বলল, হে আমার রব! আমার পাপ মাফ করে দাও। এ কথা শুনে আল্লাহ তা‘আলা পুনরায় বলেন, আমার বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন প্রভু আছে, যিনি বান্দার পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে পাকড়াও করেন। তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে বান্দা! এখন যা ইচ্ছা তুমি ‘আমাল করো। আমি তোমার গুনাহ মাফ করে দিয়েছি। বর্ণনাকারী ‘আবদুল আ’লা বলেন, “এখন যা ইচ্ছা তুমি ‘আমাল করো” কথাটি আল্লাহ তা‘আলা তৃতীয়বারের পর বলেছেন, না চতুর্থবারের পর বলেছেন, তা আমি জানি না। (ই.ফা. ৬৭৩২, ই.সে. ৬৭৮৭) ‘আবদুল আ’লা ইবনু হাম্মাদ আন্ নার্সী (রহঃ) উপরোক্ত সূত্রে অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৭৩২, ই.সে. ৬৭৮৮) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘এক লোক পাপ করল’ এ মর্মে একটি হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। এরপর রাবী‘ হাম্মাদ ইবনু সালামার অবিকল হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসের মাঝে (আরবী)-কথাটি তিনবার বর্ণিত আছে এবং তৃতীয়বারের পর রয়েছে- ‘আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম।’ তাই এখন সে যা ইচ্ছা তা ‘আমাল করুক। (ই.ফা. ৬৭৩৩, ই.সে. ৬৭৮৯) আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, রাতে আল্লাহ তা‘আলা তার নিজ দয়ার হাত প্রসারিত করেন যেন দিবসের অপরাধী তার নিকট তাওবাহ্‌ করে এমনিভাবে দিনে তিনি তার নিজ হাত প্রশস্ত করেন যেন রাতের অপরাধী তার নিকট তাওবাহ্‌ করে। এমনিভাবে দৈনন্দিন চলতে থাকবে পশ্চিম দিগন্ত থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। (ই.ফা. ৬৭৩৪, ই.সে. ৬৭৯০) শুবাহ (রহঃ) শুবাহ (রহঃ) থেকে এ সূত্রে অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭৩৫, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৯১)

【6】

আল্লাহর আত্মমর্যাদা এবং অশ্লীল কাজ হারাম হওয়ার বর্ণনা

‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর তুলনায় আত্মপ্রশংসা বেশি পছন্দকারী কেউ নেই। এজন্যই তিনি নিজে নিজের প্রশংসা করেছেন। এমনিভাবে আল্লাহর তুলনায় বেশি আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্নও কেউ নেই। এজন্যই প্রকাশ্য এবং গোপনীয় সকল প্রকার অশ্লীলতাকে তিনি হারাম ঘোষণা করেছেন। (ই.ফা. ৬৭৩৬, ই.সে. ৬৭৯২) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন আর কোন সত্তা নেই। এজন্যেই প্রকাশ্য-গোপনীয় সকল প্রকার অশ্লীলতাকে তিনি হারাম ঘোষণা করেছেন এবং আল্লাহ তা‘আলা থেকে আত্মপ্রশংসা বেশি পছন্দকারীও আর কোন সত্তা নেই। (ই.ফা. ৬৭৩৭, ই.সে. ৬৭৯৩) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন আর কেউ নেই। এ কারণেই প্রকাশ্য ও গোপনীয় সকল প্রকার অশ্লীলতাকে তিনি হারাম করে দিয়েছেন। এমনিভাবে আল্লাহ থেকে অধিক আত্মপ্রশংসা পছন্দকারীও কেউ নেই। এ কারণেই তিনি তাঁর স্বীয় সত্তার প্রশংসা করেছেন। (ই.ফা. ৬৭৩৮, ই.সে. ৬৭৯৪) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মপ্রশংসা পছন্দকারী কেউ নেই। এজন্যই তিনি তাঁর স্বীয় সত্তার প্রশংসা করেছেন। এমনিভাবে আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্ম-মর্যাদাবোধ সম্পন্নও কোন লোক নেই। এজন্যই তিনি সকল প্রকার অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন। আল্লাহর চেয়ে বেশি পরিমাণে ওযর-আপত্তি গ্রহণকারীও আর কেউ নেই। এজন্যই তিনি কিতাব নাযিল করেছেন এবং রসূল পাঠিয়েছেন। (ই.ফা. ৬৭৩৯, ই.সে. ৬৭৯৫) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশ করেন এবং মু’মিনগণও স্বীয় আত্মমর্যাদাবোধ প্রকাশ করে। আল্লাহর আত্মমর্যাদায় আঘাত আসে যখন মু’মিন আল্লাহ কর্তৃক হারাম কর্মে অগ্রসর হয়। (ই.ফা. ৬৭৪০, ই.সে. ৬৭৯৬) আসমা বিনতু আবূ বকর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ বলতে শুনেছি যে, আল্লাহর চেয়ে বেশি আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন আর কেউ নেই। (ই.ফা. ৬৭৪০, ই.সে. ৬৭৯৬) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাজ্জাজের বর্ণনার অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। এ রিওয়ায়াতের মধ্যে আসমা (রাঃ)-এর কথা উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ৬৭৪১, ই.সে. ৬৭৯৭) আসমা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা হতে বেশি আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন আর কেউ নেই। (ই.ফা. ৬৭৪২, ই.সে. ৬৭৯৮) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মু’মিন আত্মমর্যাদা হিফাযাত করে। আল্লাহ তা‘আলা সর্বাধিক আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন। (ই.ফা. ৬৭৪৩, ই.সে. ৬৭৯৯) ‘আলা (রহঃ) ‘আলা (রহঃ) হতে এ সূ্ত্রে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৭৩৪৪, ই.সে. ৬৮০০)

【7】

মহান আল্লাহর বাণী : “নিশ্চয়ই সৎকর্ম গুনাহসমুহকে দূর করে দেয় ।” (সূরাহ্ হূদ ১১ : ১১৪)

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) (তিনি বলেন,) এক লোক কোন মাহিলাকে চুম্বন করে। তারপর সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে এ বিষয়টি বর্ণনা করল। রাবী বলেন, তখন আয়াত নাযিল হলোঃ “সলাত প্রতিষ্ঠা করবে দিনের দু’ প্রান্তে এবং রাতের কিয়দংশে। নিশ্চয়ই সৎকর্ম গুনাহসমূহকে দূর করে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে এটা তাদের জন্য এক উপদেশ”- (সূরাহ্‌ হূদ ১১ : ১১৪)। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর লোকটি বলল, হে আল্লাহর রসূল! এ বিধান কি একমাত্র আমার জন্য? তিনি বললেন, আমার উম্মাতের যে কেউ এ ‘আমাল করবে তার জন্যও (এ বিধান)। (ই.ফা. ৬৭৪৫, ই.সে. ৬৮০১) ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) জনৈক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, সে জনৈক মহিলাকে চুম্বন করেছে বা স্বীয় হাত দ্বারা ছুঁয়েছে কিংবা এ রকম কোন কিছু করেছে। এ বলে সে যেন এর কাফ্‌ফারার ব্যাপারে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জানতে চাচ্ছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর আল্লাহ তা‘আলা উপরোক্ত আয়াত নাযিল করলেন। অতঃপর তিনি ইয়াযীদের হাদীসের হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৭৪৬, ই.সে. ৬৮০২) সুলাইমান আত্ তাইমী (রহঃ)-এর সানাদে উক্ত সূত্র জনৈক লোক যিনায় জড়িয়ে পড়া ব্যতীত এক মহিলার সঙ্গে কিছু অসৌজন্যমূলক আচরণ করল। এরপর সে ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর কাছে আসলো। ‘উমার (রাঃ) তার এ কর্মটিকে মারাত্মক অন্যায় মনে করলেন। অতঃপর সে আবূ বকর (রাঃ)-এর নিকট আসলো। তিনিও কর্মটি কঠিন অপরাধ মনে করলেন। পরিশেষে সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলো। তারপর বর্ণনাকারী হাদীসটি ইয়াযীদ এবং মু‘তামির (রাঃ)-এর হাদীসের অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৭৪৭, ই.সে. ৬৮০৩) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মাদীনার এক প্রান্তে এক মহিলাকে কাবু করার জন্যে চেষ্টা তদবীর করেছি। সহবাস ব্যতিরেকে তার সাথে আমি একান্তে মিলিত হয়েছি। আমিই সে লোক। আপনি আমার ব্যাপারে যা ইচ্ছা সিন্ধান্ত দিন। তখন ‘উমার (রাঃ) তাকে বললেন, আল্লাহ তো তোমার অন্যায়কে লুক্কায়িত রেখেছেন। তুমিও যদি তোমার স্বীয় বিষয়টি গোপন রাখতে। রাবী বলেন, কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে আর কোন জবাব দেননি। এরপর লোকটি উঠে যেতে লাগল। এমতাবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক লোককে তার পিছনে পাঠালেন। যেন সে তাকে ডেকে আনে। অতঃপর তিনি তার সামনে এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেনঃ “সলাত প্রতিষ্ঠা করবে দিনের দু’ প্রান্তে এবং রাতের কিয়দংশে। অবশ্যই নেককর্ম অসৎকর্মকে দূর করে দেয়। যারা উপদেশ গ্রহণ করে, এ হলো তাদের জন্য এক উপদেশ।” তখন লোকেদের মধ্য হতে জনৈক লোক বলল, হে আল্লাহর নাবী! এ বিধান কি তার জন্য নির্দিষ্ট? জবাবে তিনি বললেন, না; বরং সকল মানুষের জন্যই এ বিধান কার্যকর। (ই.ফা. ৬৭৪৮, ই.সে. ৬৮০৪) ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আবূ আহ্‌ওয়াস-এর অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, তবে এ হাদিসের মধ্যে আছে, তখন মু‘আয (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এ হুকুম কি শুধু তার জন্য, না আমাদের সবার জন্য সার্বিকভাবে প্রযোজ্য? জবাবে তিনি বললেন, না; বরং তোমাদের সবার জন্য সার্বিকভাবে প্রযোজ্য। (ই.ফা. ৬৭৪৯, ই.সে. ৬৮০৫) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক লোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি ‘হদ্দ্‌’ যোগ্য অপরাধ করে ফেলেছি। অতএব আপনি আমার উপর তা’ প্রয়োগ করুন। রাবী বলেন, তখন সলাতের সময় হলো এবং লোকটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সলাত আদায় করল। সলাত আদায় হয়ে গেলে লোকটি বলল, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি ‘হদ্দ্‌’ যোগ্য অন্যায় করে ফেলেছি। তাই আপনি আল-কুরআনের বিধানানুসারে আমার উপর ‘হদ্দ্‌’ কার্যকর করুন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি আমাদের সাথে সলাত আদায় করছিলে? লোকটি বলল, হ্যাঁ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাকে মাফ করা হয়েছে। (ই.ফা. ৬৭৫০, ই.সে. ৬৮০৬) আবূ উমামাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে বসা ছিলেন এবং আমরাও তাঁর সাথে বসে ছিলাম। তখন জনৈক লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ‘হদ্দ্’ যোগ্য অন্যায় করে ফেলেছি। অতএব আপনি আমার উপর ‘হদ্দ্’ কার্যকর করুন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব থাকলেন। সে আবার বলল, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি ‘হদ্দ্’ যোগ্য অন্যায় করে ফেলেছি। তাই আপনি আমার উপর ‘হদ্দ্’ কার্যকর করুন। এবারও রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব থাকলেন। লোকটি তৃতীয়বার পুনরাবৃত্তি করল। এমন সময় সলাত শুরু হলো। সলাত শেষ হয়ে গেলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিলে এলেন। রাবী আবূ উমামাহ (রাঃ) বলেন, লোকটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পশ্চাদ্ধাবন করল। আবূ উমামাহ্‌ (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকটিকে কি উত্তর দেন তা দেখার জন্য তিনি সলাত শেষে ফিরে এলে আমিও তাঁর অনুসরণ করলাম। তারপর প্রশ্নকারী লোকটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে আবার বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার উপর ‘হদ্দ্’ হওয়ার মতো অপরাধ করে ফেলেছি। তাই আমার উপর ‘হদ্দ্’ কার্যকর করুন। আবূ উমামাহ্‌ (রাঃ) বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ঘর হতে বের হবার সময় খেয়াল করেছো কি? তুমি কি ভালভাবে উযূ করোনি? সে বলল, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই, হে আল্লাহর রসূল! এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আমাদের সাথে সলাত আদায় করোনি? সে বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমার ‘হদ্দ্’ মাফ করে দিয়েছেন। কিংবা বললেন, তোমার পাপ মাফ করে দিয়েছেন। (ই.ফা. ৬৭৫১, ই.সে. ৬৮০৭)

【8】

হত্যাকারীর তাওবাহ্‌ গ্রহণযোগ্য হওয়ার বর্ণনা; যদিও বহু হত্যা করে থাকে

আবূ সা‘ঈদ আল খুদ্‌রী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের আগেকার লোকেদের মধ্যে এক লোক ছিল। সে নিরানব্বই লোককে হত্যা করেছে। তারপর জিজ্ঞেস করল, এ দুনিয়াতে সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান লোক কে? তাকে এক ‘আলিম দেখিয়ে দেয়া হয়। সে তার নিকট এসে বলল যে, সে নিরানব্বই লোককে হত্যা করেছে। এমতাবস্থায় তার জন্য কি তাওবাহ্‌ আছে? ‘আলিম বলল, না। তখন সে ‘আলিমকেও হত্যা করে ফেলল। সুতরাং সে ‘আলিমকে হত্যা করে একশ’ সম্পূর্ণ করল। অতঃপর সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, এ দুনিয়াতে সবচেয়ে জ্ঞানী কে? তখন তাকে জনৈক ‘আলিম লোকের সন্ধান দেয়া হলো। সে ‘আলিমকে বলল যে, সে একশ’ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, তার জন্য কি তাওবাহ্‌ আছে? ‘আলিম লোক বললেন, হ্যাঁ। এমন কে আছে যে ব্যক্তি তার মাঝে ও তার তাওবার মাঝে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে? তুমি অমুক দেশে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ‘ইবাদাতে নিমগ্ন আছে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ‘ইবাদাতে লিপ্ত হও। নিজের ভূমিতে আর কক্ষনো প্রত্যাবর্তন করো না। কেননা এ দেশটি ভয়ঙ্কর খারাপ। তারপর সে চলতে লাগল। এমনকি যখন সে মাঝপথে পৌঁছে তখন তার মৃত্যু আসলো। এবার রহ্‌মাতের ফেরেশ্‌তা ও ‘আযাবের ফেরেশ্‌তার মধ্যে তার ব্যাপারে বাক-বিতন্ডা দেখা গেল। রহ্‌মাতের ফেরেশ্‌তারা বললেন, সে আন্তরিকভাবে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাওবার উদ্দেশে এসেছে। আর ‘আযাবের ফেরেশ্‌তারা বললেন, সে তো কক্ষনো কোন সৎ কাজ করেনি। এমতাবস্থায় মানুষের আকৃতিতে এক ফেরেশ্‌তা আসলেন। তাঁরা তাঁকে তাঁদের মাঝে মধ্যস্থতা বানালেন। তিনি উভয়কে বললেন, তোমরা উভয় স্থান পরিমাপ কর (নিজ ভূখণ্ড ও যাত্রাকৃত ভূখণ্ড)। এ দু’টি ভূখণ্ডের মধ্যে যা সন্নিকটবর্তী হবে সে অনুযায়ী তার ফায়সালা হবে। তারপর উভয়ে পরিমাপ করে দেখলেন যে, সে ঐ ভূখণ্ডেরই বেশি নিকটবর্তী যেখানে পৌঁছার জন্যে সংকল্প করেছে। অতঃপর রহ্‌মাতের ফেরেশ্‌তা তার রূহ কবয করে নিলেন। কাতাদাহ্‌ (রহঃ) বলেন, হাসান (রহঃ) বলেছেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, যখন তার মৃত্যু এলো, তখন সে বুকের উপর ভর দিয়ে কিছু এগিয়ে গেল। (ই.ফা. ৬৭৫২, ই.সে. ৬৮০৮) আবূ সা‘ঈদ আল খুদ্‌রী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি নিরানব্বই লোককে হত্যা করে বলাবলি করে বেড়াতে লাগল, তার কি তাওবাহ্‌ (’র সুযোগ) আছে? অবশেষে সে এক বিশিষ্ট ‘আলিমের নিকট এসে এ ব্যাপারে জানতে চায়। ‘আলিম বলল, তোমার জন্য তাওবাহ্‌ (’র সুযোগ) নেই। তখন সে ‘আলিমকে হত্যা করল। তারপর সে পুনরায় লোকদের জিজ্ঞেস করতে থাকলো। তারপর সে এক জনগদ হতে অন্য জনগদের দিকে যাত্রা করলো যেখানে কিছু সৎ লোকের বসবাস ছিল। অতঃপর যখন সে রাস্তায় ভ্রমনরত ছিল তখন তার মৃত্যু এসে গেল। তখন সে বুকের উপর ভর করে সম্মুখে এগিয়ে গেল। তারপর সে মারা গেল। তখন রহ্‌মাতের ফেরেশ্‌তা ও ‘আযাবের ফেরেশ্‌তা তার সম্পর্কে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লো। তখন দেখা গেল যে, সে সৎ লোকদের জনপদের দিকে এক বিঘত পরিমাণ বেশি নিকটবর্তী রয়েছে। তাই তাকে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হলো। (ই.ফা. ৬৭৫৩, ই.সে. ৬৮০৯) কাতাদাহ্ (রাঃ) এ সানাদে মু‘আয ইবনু মু‘আয-এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসে বর্ণনা করেছে যে, তখন আল্লাহ এ ভূমির প্রতি আদেশ করলেন যেন তা দূরবর্তী হয়ে যায় এবং ঐ ভূমির প্রতি আদেশ করলেন যেন তা নিকটবর্তী হয়ে যায়। (ই.ফা. ৬৭৫৪, ই.সে. ৬৮১০) আবূ মূসা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মুসলিমের নিকট একজন খ্রীস্টান বা ইয়াহূদী দিয়ে বলবেন, এ হচ্ছে তোমার জন্যে জাহান্নামের অগ্নি হতে মুক্তিপণ। (ই.ফা. ৬৭৫৫, ই.সে. ৬৮১১) আবূ বুরদার পিতা আবূ মূসা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখনই কোন মুসলিম মারা যায় তখন আল্লাহ তা‘আলা তার স্থানে একজন ইয়াহূদী বা খ্রীস্টান লোককে জাহান্নামে প্রবেশ করান। তারপর ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) আবূ বুরদাহ্‌ (রাঃ)-কে যিনি ভিন্ন কোন মা‘বূদ নেই সে আল্লাহর শপথ দিয়ে তিনবার প্রশ্ন করলেন যে, তার পিতা কি সত্যিই এ কথাটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে শুনে তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন? তিনি শপথ করে বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। এ কথাটি সা‘ঈদ আমার কাছে বর্ণনা করেনি। রাবী বলেন, “উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) তাকে কসম দিয়েছেন সা‘ঈদ এ কথা বলেননি এবং ‘আওন-এর কথাটিও অস্বীকার করেননি।” (ই.ফা. ৬৭৫৬, ই.সে. ৬৮১২) কাতাদাহ্‌ (রহঃ) এ সূত্রে ‘আফ্‌ফান-এর হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। তবে এ হাদীসে রয়েছে ‘আওন ‘উতবার ছেলে। (ই.ফা. ৬৭৫৭, ই.সে. ৬৮১৩) আবূ বুরদাহ্ (রাঃ)-এর সূত্রে তার পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কিছু মুসলিম পাহাড়সম পাপ নিয়ে কিয়ামাতের মাঠে আসবে এবং আল্লাহ তা‘আলা তাদের পাপ মার্জনা করে দিবেন। আর তা ইয়াহূদী ও খ্রীস্টানদের উপর রেখে দিবেন। রাবী হাদীসের শেষের কথাটি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। রাবী আবূ রাওহ (রহঃ) বলেন, কার পক্ষ থেকে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে, তা আমি জানি না। আবূ বুরদাহ্ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি আমি ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ)-এর কাছে বর্ণনা করার পর তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, তোমার পিতা এ হাদীসটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে সরাসরি শুনে তোমার কাছে বর্ণনা করেছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। (ই.ফা. ৬৭৫৮, ই.সে. ৬৮১৪) সাফ্‌ওয়ান ইবনু মুহরিয (রহঃ) তিনি বলেন, এক লোক ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, নাজওয়া (আল্লাহ ও বান্দার গোপন কথা) সম্পর্কে আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কিভাবে শুনেছেন? তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি, কিয়ামাতের দিনে মু’মিন ব্যক্তিকে তার প্রভূর নিকটবর্তী করা হবে। তারপর আল্লাহ তা‘আলা তার উপর পর্দা ঢেলে দিবেন এবং তার পাপের ব্যাপারে তার থেকে জবানবন্দি নিবেন। তিনি প্রশ্ন করবেন, তুমি তোমার পাপ সম্বন্ধে জান কি? সে বলবে, হে রব! আমি জানি। এরপর তিনি বলবেন, তোমার এ পাপ দুনিয়ায় আমি লুক্কায়িত রেখেছিলাম। আজ তোমার এ পাপগুলোকে আমি মাফ করে দিলাম। এরপর তার নেকীর ‘আমালনামা তার কাছে দেয়া হবে। এরপর কাফির ও মুনাফিক লোকদেরকে উপস্থিত সকল মানুষের সম্মুখে ডেকে বলা হবে, এরাই তারা যারা আল্লাহ তা‘আলার উপর মিথ্যারোপ করেছে। (ই.ফা. ৬৭৫৯, ই.সে. ৬৮১৫)

【9】

কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) ও তাঁর দু’ সাথীর তাওবার বিবরণ

ইবনু শিহাব (রহঃ) তিনি বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূকের যুদ্ধে শারীক হন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সিরিয়ার আরব খ্রিস্টান ও রোমকরা। ইবনু শিহাব বলেন, আমাকে ‘আবদুর রহ্‌মান ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক (রহঃ) অবিহিত করেছেন যে, প্রকৃতপক্ষে ‘আবদুল্লাহ ইবনু কা‘ব বলেছেন, কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) অন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তার সন্তানদের মাঝে তিনি ছিলেন তাঁর চালক। তিনি বলেন, আমি কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ)-কে তাবূক যুদ্ধে রসূলের সাথে অংশগ্রহণ না করার ইতিবৃত্ত স্বীয় মুখে বর্ণনা করতে শুনেছি। কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যত যুদ্ধ করেছেন তাবূক যুদ্ধ ছাড়া এর সব ক’টির মাঝেই আমি তাঁর সাথে অংশগ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু বদর যুদ্ধে আমি তাঁর সাথে অংশগ্রহণ করতে পারিনি। তবে যারা তাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি তাদের কাউকেও দোষারোপ করেননি। তখন তো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মুসলিমগণ কেবলমাত্র কুরায়শ কাফিলার উদ্দেশে বের হয়েছিলেন। পরিশেষে আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম ও কাফিরদের অনির্ধারিত সময়ে একত্রিত করে দিলেন। ‘আকাবার রাত্রে যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আমরা ইসলামের উপর অঙ্গীকার নিচ্ছিলাম, সে রাত্রে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। যদিও বদর যুদ্ধ মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশী প্রসিদ্ধ, তথাপি ‘আকাবাহ্‌ রাত্রির পরিবর্তে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা আমার নিকট বেশি প্রিয় নয়। তাবূক যুদ্ধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে অংশগ্রহণ না করার খবর হচ্ছে এই যে, (যখন এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল) তখন আমি যেমন শক্তিশালী ও স্বচ্ছল ছিলাম, তেমন আর কখনো ছিলাম না। আল্লাহর শপথ! এর পূর্বে দু’টি সওয়ারী কখনো একত্রে জমা করতে পারিনি। কিন্তু এ যুদ্ধের সময় দু’টি সওয়ারী একত্রিত করেছিলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ অভিযানে যান প্রচণ্ড গরমের মধ্যে। মরুভূমিতে দীর্ঘসফরে যাত্রা করলেন। বহু সংখ্যক শত্রুর সম্মুখীন হতে যাচ্ছিলেন। তাই তিনি বিষয়টি মুসলিমদের সামনে স্পষ্ট করে তুললেন, যাতে তারা যুদ্ধের জন্যে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করে নিতে পারে। তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কেও রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে অবহিত করেছেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মুসলিমের সংখ্যা ছিল বেশি এবং তাদের নাম একত্র করেনি কোন সংরক্ষণকারী কিতাবে অর্থাৎ-রেজিস্ট্রারে। কা‘ব বলেন, সুতরাং যে লোক অনুপস্থিত থাকতে সংকল্প করে সে কমপক্ষে এ চিন্তা করতে পারত যে, তার অনুপস্থিতির বিষয়টি গোপন থাকবে, যতক্ষন না আল্লাহর তরফ থেকে তার ব্যাপারে ওয়াহী অবতীর্ণ হয়। এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, যখন গাছের ফল পাকছিল এবং বৃক্ষের ছায়া ছিল আনন্দদায়ক। আর আমিও ছিলাম এসবের প্রতি আকৃষ্ট। পরিশেষে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মসুলমগণ যুদ্ধের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করলেন। আমিও তাঁদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্দেশে বাড়ী হতে সকালে বের হতাম, কিন্তু কোন কিছু সিদ্ধান্ত না করেই ফিরে আসতাম এবং মনে মনে বলতাম, আমি তো যুদ্ধে যেতে সক্ষম, যখনই সংকল্প করি। আমার ব্যাপারটি এভাবেই চলতে থাকল। এদিকে লোকজন সত্যিই প্রস্তুতি চালিয়ে যেতে লাগল। পরিশেষে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভোরে রওনা হলেন এবং তাঁর সাথে মুসলিমগণও রওনা হয়ে গেল। কিন্তু আমি কোন প্রস্তুতি গ্রহণ করিনি। পরদিন ভোরে আমি বের হলাম। তবে কোন প্রস্তুতি না নিয়েই ফিরে আসলাম। এভাবে আমার সময় দীর্ঘায়িত হতে লাগল। এদিকে লোকজন দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয় আর মুজাহিদ্বীনের দল বহু দূরে চলে যায়। তখন আমি চিন্তা করলাম যে, আমিও রওনা হয়ে তাদের সঙ্গে একত্রিত হয়ে যাই। হায় আফসোস! আমি যদি তা করতাম। তবে আমার ভাগ্যে তা নির্ধারিত হয়নি। অতএব রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুদ্ধে চলে যাওয়ার পর আমি যখন লোকালয়ে বের হতাম তখন এ সম্পর্কে আমাকে দুঃখ দিত যে, আমি অনুসরণীয় নমুনা দেখতে পেতাম না, কেবলমাত্র এমন এক লোক যাদের উপর নিফাকের অভিযোগ রয়েছে অথবা সে সকল অক্ষম লোক যাদের আল্লাহ তা‘আলা মাযূর হিসেবে অবকাশ দিয়েছেন। এদিকে তাবূক পৌঁছার পূর্বে রাস্তায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কথা মোটেই আলোচনা করেননি। কিন্তু তাবূক পৌঁছার পর লোকেদের মধ্যে বসা অবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, কা‘ব ইবনু মালিক কি করছে? তখন বানূ সালামাহ্‌ গোত্রের এক লোক বলল, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তার লালজোড়া চাদর এবং তার অহঙ্কার তাকে দূরে রেখেছে। তখন মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বললেন, তুমি অনেক খারাপ কথা বলল। আল্লাহ শপথ, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা তো তাকে ভালই জানি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব থাকলেন। ইতিমধ্যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুভ্র পেশাক পরিহিত এক লোককে ধূলা উড়িয়ে আসতে দেখে বললেন, আবূ খাইসামাই হবে। দেখা গেল, তিনি আনসারী সহাবা আবূ খাইসামাহ্‌ (রাঃ) আর তিনি সে লোক যিনি এক সা‘ খেজুর সদাকাহ্‌ করেছিলেন যার জন্য মুনাফিকরা তার দূর্নাম রটনা করেছিল। কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূক হতে ফিরে (মাদীনাহ্‌ অভিমুখে) রওনা হওয়ার সংবাদ আমার নিকট পৌঁছার পর আমার উপর চিন্তার ছাপ পড়ে গেল। আমি মনে মনে মিথ্যা ওযর কল্পনা করতে লাগলাম এবং এমন কথা ভাবতে লাগলাম যা বলে সকালে আমি তাঁর রাগ হতে বাঁচতে পারি। আর এ বিষয়ে আমি বুদ্ধিমান আপনজনেরও সহযোগিতা নিতে লাগলাম। পরিশেষে যখন আমাকে বলা হলো যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পৌঁছেই যাচ্ছেন, তখন আমার অন্তর হতে সকল বাতিল কল্পনা দূরে সরে গেল। এমনকি আমি বুঝতে পারলাম যে, কোন কিছুতেই আমি তাঁর কাছ থেকে মুক্তি পাব না। তাই আমি তাঁর নিকট সত্য বলারই ইচ্ছা করলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকাল বেলা সফর থেকে আগমন করলেন। তাঁর রীতি ছিল, সফর থেকে ফিরে প্রথমে তিনি মাসজিদে আসতেন এবং সেখানে দু’রাক‘আত (সলাত) আদায় করে মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যে বসতেন। এবারও যখন তিনি বসলেন, তখন যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি তারা এসে অজুহাত দেয়া শুরু করল এবং এর উপর কসম খেতে লাগল। এ সমস্ত লোক সংখ্যায় আশির বেশি ছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের প্রকাশ্য অজুহাত গ্রহণ করলেন এবং তাদের হতে বাই‘আত নিয়ে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চাইলেন। আর তাদের অন্তর্নিহিত অবস্থা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলেন। পরিশেষে আমি উপস্থিত হয়ে সালাম করলাম। তখন তিনি ক্রুদ্ধ লোকের হাসির মতো মুচকি হাসলেন। তারপর তিনি বললেন, এসো। আমি এসে তাঁর সম্মুখে বসলাম। তখন তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, কিসে তোমাকে পিছনে ফেলে দিয়েছিল? তুমি কি সওয়ারী কিনে ছিলে না? তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহর শপথ, আমি যদি আপনি ছাড়া কোন দুনিয়াদারী মানুষের নিকট বসতাম তবে আপনি দেখতেন যে, অবশ্যই আমি কোন অজুহাত পেশ করে তার গোস্বা হতে বের হতাম। কারণ আমাকে বাকশক্তির ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর শপথ! আমার দৃঢ় ধারণা, আজ যদি আমি মিথ্যা কথা বলি যাতে আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হন, তবে শীঘ্রই আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট করবেন না। আর যদি আমি সত্য কথা বলি এবং এতে আপনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হন, তবে এতে আল্লাহর তরফ হতে আমি কল্যাণজনক পরিণামের প্রত্যাশা রাখি। আল্লাহর শপথ! আমার কোন ওযর-আপত্তি ছিল না। আল্লাহর শপথ! আপনার (অভিযান) হতে পিছনে থাকার সময়ের চেয়ে কোন সময় আমি অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ও অধিক ধন-সম্পদের অধিকারী ছিলাম না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বরলেন, নিশ্চয়ই এ লোক সত্য কথা বলেছে। এরপর তিনি বললেন, তুমি চলে যাও, যতক্ষণ না আল্লাহ তা‘আলা তোমার সম্বন্ধে কোন সিদ্ধান্ত দেন। তারপর আমি চলে গেলাম। তখন বানূ সালামাহ্‌ গোত্রের কিছু লোক দৌড়িয়ে আমার নিকটে এসে বলল, আল্লাহর কসম! আমরা তো ইতিপূর্বে তোমাকে আর কোন অন্যায় করতে দেখিনি। যারা পশ্চাতে রয়ে গিয়েছিল, তারা যেমন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে ওযর পেশ করেছে সেভাবে ওযর পেশ করতে কি তুমি অক্ষম ছিলে? অতএব রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইস্‌তিগফারই তোমার পাপের জন্য যথেষ্ট হত। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম। এভাবে তারা আমাকে এত ভর্ৎসনা করতে লাগল যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আবার গিয়ে আমার স্বীয় উক্তি মিথ্যা প্রতিপন্ন করার ইচ্ছা হতে লাগল। আমি লোকদের বললাম, আমার মতো আর কারো এমন অবস্থা হয়েছে কি? তারা বলল, হ্যাঁ, আরো দু’ জন তোমার মতো করেছেন। তুমি যা বলেছ তারাও অবিকল বলেছেন এবং তোমাকে যা বলা হয়েছে তাদেরও তাই বলা হয়েছে। আমি বললাম, তারা কারা? তারা বলল, তাঁরা হলেন, মুরারাহ্‌ ইবনু রাবী‘আহ্‌ ‘আমিরী এবং হিলাল ইবনু উমাইয়্যাহ্‌ আল ওয়াকিফী (রাঃ)। কা‘ব বলেন, তাঁরা আমার কাছে এমন দু’ লোকের কথা বর্ণনা করল, যাঁরা ছিলেন নেক্‌কার, বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী। এঁরা দু’জনই ছিলেন নমুনা স্বরূপ। কা‘ব (রাঃ) বলেন, যখন তারা ঐ দু’ লোকের কথা বর্ণনা করল, তখন আমি স্বীয় অবস্থার উপর থেকে গেলাম। এদিকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি তাদের মধ্য থেকে শুধু আমাদের তিন জনের সাথে মুসলিমদের কথা বলতে নিষেধ করে দিলেন। এরপর লোকেরা আমাদের পরিহার করল অথবা বলেছেন, আমাদের সাথে তাদের ব্যবহার বদলে গেল। এমনকি পৃথিবীও যেন অপছন্দ করতে লাগল, (মনে হলো) যে ভূমি আমি চিনতাম, এ যেন তা নেই। এমনি করে পঞ্চাশ রাত কাটালাম। আর আমার দু’ সাথী ছিলেন হীনবল, তাই তাঁরা নিজ নিজ গৃহে নীরবে বসে রইলেন এবং কাঁদতে লাগলেন। আর আমি তাদের মাঝে কম বয়স্ক ও সবল ছিলাম। আমি রাস্তায় বের হতাম, সলাতে শারীক হতাম এবং বাজারেও হাঁটাহাঁটি করতাম। কিন্তু কেউ আমার সাথে কোন কথা বলত না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায়ের পর স্বীয় স্থানে বসাবস্থায় আমি তাঁর নিকট আসতাম, তাকে সালাম করতাম এবং মনে মনে ভাবতাম, তিনি সালামের জওয়াব প্রদান করে তাঁর ওষ্ঠযুগল নাড়িয়েছেন কি-না? তারপর আমি তাঁর কাছে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করতাম এবং গোপন চাহনির মাধ্যমে আমি তাঁর দিকে লক্ষ্য করতাম। যখন আমি সলাতে নিমগ্ন হতাম তখন তিনি আমার প্রতি দৃষ্টি দিতেন। কিন্তু আমি যখন তাঁর দিকে তাকাতাম তখন তিনি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেন। আমার প্রতি মুসলিমের এ রূঢ় আচরণ যখন দীর্ঘায়িত হয়ে গেল তখন আমি গিয়ে আবূ কাতাদাহ্‌ (রাঃ)-এর বাগানের দেয়াল টপকিয়ে তার কাছে গেলাম। তিনি ছিলেন আমার চাচাতো ভাই এবং আমার খুবই প্রিয় ব্যক্তি। উপরে উঠেই আমি তাঁকে সালাম করলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম! তিনি আমার সালামের কোন জবাব দিলেন না। আমি তাঁকে বললাম, হে আবূ কাতাদাহ্‌! আমি তোমাকে আল্লাহর শপথ করে জিজ্ঞেস করছি, তুমি কি জান না যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভালবাসি? তিনি কোন জবাব দিলেন না। আমি আবার তাঁকে শপথ করে জিজ্ঞেস করলাম। এবারও তিনি কোন জবাব দিলেন না। তারপর পুনরায় আমি তাঁকে শপথ করে জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই ভাল জানেন। এ কথা শুনে আমার দু’চোখ দিয়ে পানি ঝড়তে লাগল। পরিশেষে পিছন ফিরে আমি আবার প্রাচীর টপকিয়ে ফিরে এলাম। তারপর আমি কোন একদিন মাদীনার বাজার দিয়ে হাঁটতেছিলাম, তখন মাদীনার বাজারে শাক-সবজি বিক্রির উদ্দেশে আগত সিরিয়ার কৃষকদের মাঝখান থেকে একজন বলতে লাগল, এমন কোন লোক আছে কি, যে আমাকে কা‘ব ইবনু মালিকের ঠিকানা বলতে পারে? লোকেরা ইঙ্গিতে আমাকে দেখিয়ে দিলে সে আমার কাছে আসলো এবং গাস্‌সান সম্রাটের তরফ হতে আমাকে একটি চিঠি দিল। আমি লেখাপড়া জানতাম। তাই আমি তা পড়লাম। এতে লেখা ছিল, “আমি জানতে পারলাম যে, তোমার সাথী মুহাম্মাদ তোমার প্রতি অন্যায় আচরণ করছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে নীচু গৃহে জন্ম দেননি এবং ধ্বংসাত্মক স্থানেও নয়। সুতরাং তুমি আমাদের কাছে চলে এসো। আমরা তোমার সাথে ভাল আচরণ করব।” এ চিঠি পড়া মাত্র আমি বললাম, এটাও এক রকমের পরীক্ষা। তখন এ চিঠিটি নিয়ে আমি চুলার কাছে গেলাম এবং আগুনে তা পুড়িয়ে দিলাম। চল্লিশ দিন অতিক্রান্ত হলো। এখনও এদিকে কোন ওয়াহী আসছে না। এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক বার্তাবাহক আমার কাছে এসে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে আপনার সহধর্মিণী থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, আমি কি তাকে তালাক্‌ দিব, না অন্য কিছু করব? তিনি বললেন, না তালাক্‌ দিতে হবে না। বরং তুমি তার হতে আলাদা হয়ে যাও এবং তার সঙ্গে মিলন করো না। তিনি বলেন, আমার অপর সাথীদের কাছেও এমন খবর পাঠানো হলো। কা‘ব (রাঃ) বলেন, তারপর আমি আমার সহধর্মিণীকে বললাম, তুমি তোমার পিতার বাড়ী চলে যাও এবং যে পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত না দেন ততদিন সেখানেই অবস্থান করবে। কা‘ব (রাঃ) বলেন, এরপর হিলাল ইবনু উমাইয়্যাহ্‌ (রাঃ)-এর সহধর্মিণী রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! হিলাল ইবনু উমাইয়্যাহ্‌ একজন বয়োঃবৃদ্ধ লোক। তাঁর কোন সেবক নেই। আমি যদি তাঁর সেবা করি, আপনি কি তাতে আপত্তি করেন? তিনি বললেন, না। কিন্তু সে তোমার সঙ্গে সহবাস করতে পারবে না। এ কথা শুনে হিলাল (রাঃ)-এর সহধর্মিণী বললেন, আল্লাহ শপথ! কোন কাজের ব্যাপারেই তার মনে কোন স্পন্দন নেই এবং আল্লাহর কসম! ঐ ঘটনার পর হতে অদ্যাবধি সে প্রতিদিন কেঁদে চলছে। তিনি বলেন, আমার পরিবারের কেউ বললেন, আচ্ছা তুমিও যদি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে তোমার সহধর্মিণীর ব্যাপারে অনুমতি নিয়ে নিতে। তিনি তো হিলাল ইবনু উমাইয়্যার স্ত্রীকে তাঁর স্বামীর সেবার অনুমতি দিয়েছেন। আমি বললাম, না, আমি স্ত্রীর ব্যাপারে অনুমতি প্রার্থনা করব না। কারণ আমি যুবক মানুষ। আমি আমার স্ত্রীর ব্যাপারে অনুমতি চাইলে না জানি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বলেন। এ অবস্থায় আরো দশ রাত কাটালাম। এভাবে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন থেকে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে বারণ করেছিলেন, তখন থেকে আমাদের পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হয়। কা‘ব বলেন, পঞ্চাশতম রাত্রের ফাজ্‌রের সলাত আমি আমার ঘরের ছাদের উপর আদায় করলাম। এরপর যখন আমি ঐ অবস্থায় বসা ছিলাম, যা আল্লাহ আমাদের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন, “অর্থাৎ- আমার মন সংকীর্ণ হয়ে গেছে এবং প্রশস্ত পৃথিবী আমার নিকট সংকুচিত হয়ে পড়েছে”, তখন আমি একজন ঘোষণাকারীর শব্দ শুনলাম, যিনি সালা পর্বতের চূড়ায় উঠে উচ্চ আওয়াজে বলছেন, হে কা‘ব ইবনু মালিক! তোমার জন্যে সুসংবাদ। কা‘ব বলেন, তখন আমি সাজ্‌দায় অবনত হলাম এবং আমি বুজতে পারলাম যে, প্রশস্ততা আগমন করেছে। কা‘ব বলেন, এদিকে ফাজ্‌রের সলাতের পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের নিকট ঘোষণা করলেন যে, আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তাওবাহ্‌ গ্রহণ করেছেন। তখনই লোকেরা আমাদের সুখবর দেয়ার জন্যে ছুটে গেলেন এবং আমার সঙ্গীদ্বয়কে সুখবর পৌছানোর জন্যে কিছু লোক তাদের কাছে গেলেন। আর আমার দিকে একজন ঘোড়ার উপর আরোহণ হয়ে রওনা হলেন এবং আসলাম সম্প্রদায়ের আরেক লোকও রওনা হলেন। আর তিনি পাহাড়ের উপর উঠে ঘোষণা দিলেন। আর ঘোড়ার চেয়েও শব্দের গতি অতি দ্রুত ছিল। এরপর যার সুখবরের শব্দ আমি শুনেছিলাম- তিনি আমার কাছে আসলে আমি আমার পরিধেয় কাপড় দু’টো সুখবরের উপঢৌকন স্বরূপ তাকে দিয়ে দিলাম। আল্লাহর শপথ! সেদিন ঐ দু’টো কাপড় ছাড়া আমি আর কোন কাপড়ের মালিক ছিলাম না। অতএব আমি দু’টো কাপড় ধার নিয়ে তা পড়লাম। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দেখা করার জন্যে আমি রওনা দিলাম। আমার তাওবাহ্‌ গ্রহণের মুবারকবাদ জানানোর জন্য লোকেরা দলে দলে আমার সাথে দেখা করতে লাগল এবং বলতে লাগল, আল্লাহর মার্জনা তোমার জন্য মুবারক হোক। এমতাবস্থায় আমি মাসজিদে ঢুকে দেখলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদেই উপবিষ্ট আছেন এবং তাঁর পাশে লোকজন রয়েছে। তখন তাল্‌হাহ্‌ ইবনু ‘উবাইদুল্লাহ (রাঃ) দণ্ডায়মান হলেন এবং দৌড়ে এসে আমার সঙ্গে মুসাফাহা করলেন এবং তিনি আমাকে মুবারকবাদ জানালেন। আল্লাহর শপথ! মুহাজিরদের মাঝে তখন তিনি ছাড়া আর কেউ (আমাকে দেখে) দাঁড়াননি। রাবী বলেন, কা‘ব তালহার এ সদ্ব্যবহারের কথা ভুলে যাননি। কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, এরপর আমি যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম করলাম তখন তাঁর মুখায়ব আনন্দে উচ্ছাসিত ছিল। তিনি বললেন, তোমার মা তোমাকে জন্ম দেয়ার পর থেকে যতদিন অতিবাহিত হয়েছে, তার মধ্যে তোমার জন্যে এ মুবারক দিনটির সুখবর। কা‘ব (রাঃ) বলেন, আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম, তা কি আপনার তরফ থেকে, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! না মহান আল্লাহর তরফ থেকে? তিনি বললেন, না, বরং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আনন্দিত হতেন, তখন তাঁর মুখায়ব এমন উজ্জ্বল হতো যেন তা এক টুকরো চাঁদ। কা‘ব (রাঃ) বলেন, আমরা তাঁর মুখায়ব দেখেই তা উপলব্ধি করতে পারতাম। তিনি বলেন, আমি যখন তাঁর সম্মুখে বসলাম তখন বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার তাওবার শুকরগুজার হিসেবে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্য সদাকাহ্‌ করে আমি সকল প্রকার ধন-সম্পদ থেকে মুক্ত হওয়ার মনস্থ করেছি। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কিছু সম্পদ তোমার নিজের জন্যে রেখে দাও। এ-ই তোমার জন্য সবচেয়ে ভাল। আমি বললাম, তাহলে আমি খাইবারে প্রাপ্য অংশটুকু রেখে দিব। কা‘ব (রাঃ) বলেন, তারপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সত্য কথাই আল্লাহ আমাকে মুক্তি দিয়েছে; তাই যতদিন জীবন থাকে আমি শুধু সত্যই বলব। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আর কোন মুসিলম ব্যক্তিকে সত্য বলার জন্য এমন পুরস্কৃত করেছেন বলে আমার জানা নেই। আল্লাহর শপথ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এ আলোচনা করার পর অদ্যাবধি স্বেচ্ছায় আমি কখনো মিথ্যা কথা বলিনি। আমার প্রত্যাশা, অবশিষ্ট জীবনেও আল্লাহ তা‘আলা আমাকে মিথ্যা থেকে রক্ষা করবেন। কা‘ব (রাঃ) বলেন, আমার তাওবাহ্‌ কবূলযোগ্য হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা তখন নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ করেছিলেনঃ “আল্লাহ দয়াপরবেশ হলেন নাবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা তার অনুসরণ করেছিল সংকটকালে, এমনটি যখন তাদের এক দলের হৃদয়-বক্রের উপক্রম হয়েছিল। পরে আল্লাহ তাদেরকে মার্জনা করলেন। তিনি তাদের প্রতি দয়াশীল এবং অপর তিন ব্যক্তি যাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিলম্বিত করা হয়েছিল, যে পর্যন্ত না পৃথিবী বিশাল হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্যে সংকুচিত হয়েছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য অতিষ্ঠ হয়েছিল এবং তারা বুঝতে পেরেছিল যে, আল্লাহ ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল নেই। পরে তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ হলেন, যাতে তারা তাওবাহ্‌ করে। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালূ। হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করে এবং সত্যবাদীদের শামিল হও”- (সূরাহ্‌ আত্‌ তাওবাহ্‌ ৯ : ১১৭-১১৯) কা‘ব (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে সেদিন সত্য কথা বলার জন্যে আল্লাহ তা‘আলা আমার প্রতি যে নি‘আমাত দান করেছেন, তেমন নি‘আমাত ইসলাম কবূলের পর আল্লাহ তা‘আলা আমার উপর আর কক্ষনো করেননি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সেদিন আমি মিথ্যা বলিনি। যদি বলতাম তবে নিশ্চয়ই আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতাম, যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল মিথ্যাবাদীগণ। ওয়াহী নাযিলকালে আল্লাহ তা‘আলা মিথ্যাবাদীদের এমন কঠোর সমালোচনা করেছেন, যা আর কাউকে করেননি। তিনি বলেছেন, “তোমরা তাদের কাছে ফিরে এলে তারা আল্লাহর কসম করবে, যেন তোমরা তাদেরকে এড়িয়ে চলো। কাজেই তোমরা তাদেরকে এড়িয়ে চলবে তারা অপবিত্র, তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান জাহান্নাম তাদের আবাসস্থল। তারা তোমাদের কাছে হলফ করবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি তুষ্ট হও। তোমরা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেও আল্লাহ ফাসিক (সত্যত্যাগী) লোকেদের উপর সন্তুষ্ট হবেন না।” (সূরাহ্‌ আত্‌ তাওবাহ্‌ ৯ : ৯৫-৯৬)। কা‘ব (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কসম করার পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাদের ওযর গ্রহণ করেছিলেন, যাদের বাই‘আত করেছিলেন এবং যাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন তাদের থেকে আমাদের তিনজনের ব্যাপারটিকে দেরী করা হয়েছিল। আল্লাহর পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত আসা পর্যন্ত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ব্যাপারটিকে স্থগিত রেখেছিলেন। তাই আল কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ “আর তিনি মাফ করলেন অপর তিনজনকেও যাদের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল।” (আরবী) শব্দের অর্থ “যুদ্ধ হতে আমাদের পশ্চাতে থাকা” নয়। বরং এর অর্থ হচ্ছে, রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক “আমাদের বিষয়টিকে স্থগিত রাখা।” ঐ সকল লোকেদের চেয়ে যারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে কসম করেছিল এবং ওযর উপস্থিত করেছিল; অতঃপর তা গৃহীত হয়েছিল। (ই.ফা. ৬৭৬০, ই.সে. ৬৮১৫) ইবনু শিহাব (রহঃ) ইবনু শিহাব (রহঃ)-এর সানাদে ইউনুস (রহঃ)-এর অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৬৭৬০, ই.সে. ৬৮১৬) ‘আবদুর রহ্‌মান ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু কা‘ব ইবনু মালিক (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উবাইদুল্লাহ ইবুন কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) যিনি (তার বাবা) কা‘ব (রাঃ) অন্ধ হয়ে যাবার পর তাকে আনা নেয়া করতেন। তিনি (‘উবাইদুল্লাহ) বলেছেন, তাবূক যুদ্ধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে অংশগ্রহণ না করে ঘরে বসে থাকার সম্পর্কে কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ)-কে আমি এ কথা বলতে শুনেছি। অতঃপর তিনি অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে অতিরিক্ত রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেদিকে যুদ্ধ করার জন্যে যেতেন সাধারণতঃ তিনি আলোচনায় ঐ স্থানের কথা আলোচনা না করে অন্য জায়গার কথা আলোচনা করতেন। তবে এ যুদ্ধের কথা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছিলেন। যুহরীর ভ্রাতুষ্পুত্রের এ হাদীসের মধ্যে আবূ খাইসামার কথা এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে তাঁর সাক্ষাতের কথা আলোচনা নেই। (ই.ফা. ৬৭৬১, ই.সে. ৬৮১৬) ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু কা‘ব (রাঃ) কা‘ব (রাঃ) চক্ষু রোগে আক্রান্ত হবার পর ‘উবাইদুল্লাহ তাঁকে পরিচালন করতেন। তিনি তাঁর কাওমের মাঝে সবচেয়ে প্রজ্ঞাবান লোক ছিলেন এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবাদের হাদীস বেশি হিফাযাতকারী ছিলেন। তিনি বলেনঃ যে তিনজন লোকের তাওবাহ্‌ গ্রহণ করেছিলেন, আমার পিতা কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) ঐ তিন লোকের অন্যতম ছিলেন। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যত যুদ্ধ করেছেন এর মধ্যে তিনি দু’টি ছাড়া আর কোন যুদ্ধে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে পেছনে থাকেননি। তারপর তিনি পূর্বের অনুরূপ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। তবে এতে রয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বহু সৈন্য সামন্ত নিয়ে এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাদের সংখ্যা দশ হাজারের চেয়েও বেশি ছিল। কোন তালিকায় তাঁদের নাম লিখে রাখা ছিল না। (ই.ফা. ৬৭৬২, ই.সে. ৬৮১৭)

【10】

মিথ্যা অপবাদ দেয়া এবং অপবাদ রটনাকারীর তাওবাহ্‌ গৃহীত হওয়া

হাব্বান ইবনু মূসা, ইসহাক্‌ ইবুন ইব্‌রাহীম আল হান্‌যালী, মুহাম্মাদ ইবনু রাফি‘ ও ‘আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ), সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব, ‘উরওয়াহ্‌ ইবুন যুবায়র, ‘আলকামাহ্‌ ইবনু ওয়াক্কাস এবং ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উত্‌বাহ্‌ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) তাঁরা সকলেই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ)-এর ঐ কাহিনীটি বর্ণনা করেছেন, অপবাদ রটনাকারীরা তাঁর সম্পর্কে যে অপবাদ দিয়েছিল। তারপর রটানো অপবাদ হতে আল্লাহ তাঁকে নির্দোষ বর্ণনা করলেন। রাবী যুহরী (রহঃ) বলেন, তাঁরা সবাই আমার কাছে হাদীসের এক এক অংশ বর্ণনা করেছেন। তাঁদের কেউ কেউ অন্যের চেয়ে উক্ত হাদীসের কঠোর সংরক্ষণকারী ছিলেন এবং তা ভালভাবে বর্ণনা করতে সক্ষম ছিলেন। তাঁরা আমার কাছে যা বর্ণনা করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকের বর্ণনা আমি যথাযথভাবে আয়ত্ব করে নিয়েছি। একজনের হাদীস অন্যের হাদীসকে সত্যায়িত করে। তাঁরা সকলেই উল্লেখ করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্ সিদ্দীকা (রাঃ) বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সফরে যাওয়ার সংকল্প করতেন তখন তিনি তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে লটারী করতেন। যাঁর নাম আসত তাঁকেই তিনি তাঁর সাথে সফরে নিতেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, এক যুদ্ধ-সফরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লটারী করলেন এবং এতে আমার নাম উঠল। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সে যুদ্ধে শারীক হই। পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর এ যুদ্ধে আমি শারীক হয়েছিলাম। আরোহী অবস্থায় আমাকে ভিতরে রাখা হতো এবং অবতেরণের সময়ও হাওদার ভিতর থাকতাম। পরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধ হতে অব্যাহতির পর ফিরে এসে মাদীনার কাছাকাছি জায়গায় পৌঁছার পর এক রাতে তিনি রওনা হবার আদেশ দিলেন। লোকজন যখন রওনা হবার ব্যাপারে ঘোষণা দিল, তখন আমি দাঁড়িয়ে চলতে লাগলাম; এমনকি আমি সৈন্যদেরকে ছাড়িয়ে দূরে চলে গেলাম। এরপর আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজন (প্রস্রাব পায়খানা) সেরে আরোহীর নিকট এলাম এবং নিজ বক্ষে হাত দিয়ে দেখলাম, যিফারী পুতির প্রস্তুত আমার হারটি হারিয়ে গিয়েছে। তাই আগের স্থানে ফিরে গিয়ে আমি আমার হারটি সন্ধান করলাম। (এতে আমার দেরী হয়ে গেল।) এদিকে হাওদা বহনকারী লোকজন এসে দ্রব্য-সামগ্রী উঠিয়ে আমার বহনকারী উটের উপর রেখে দিল। তারা ধারণা করেছিল, আমি হাওদার ভিতরেই আছি। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখনকার মহিলারা হালকা-পাতলা গঠনেরই হতো। না বেশি ভারী, না বেশি মোটা। কেননা তারা কম খানা খেত। তাই উঠানোর সময় হাওদার ওজন তাদের কাছে সাধারণ অবস্থা হতে ব্যতিক্রম মনে হয়নি। অধিকন্তু তখন আমি অল্প বয়সী ছিলাম। পরিশেষে লোকেরা উট দাঁড় করিয়ে পথ চলতে শুরু করে দিল। সৈন্যদের রওনা হয়ে যাবার পর আমি আমার হার খুঁজে পেলাম। এরপর আমি আগের স্থানে ফিরে এসে দেখলাম, তথায় কোন জন-মানুষের শব্দ নেই আর সাড়া দেয়ার মতো কোন লোকও তথায় নেই। তখন আমি সংকল্প করলাম, আমি যেখানে বসা ছিলাম সেখানেই বসে থাকব এবং আমি ভাবলাম, লোকেরা যখন খুঁজে আমাকে পাবে না তখন নিশ্চয়ই তারা আমার খোঁজে আমার নিকট ফিরে আসবে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি আমার সে স্থানে বসা অবস্থায় ঘুম এলো আর আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সাফ্ওয়ান ইবনু মুয়াত্তাল আস্ সুলামী আয্ যাক্ওয়ানী নামক এক লোক ছিল। আরামের উদ্দেশ্যে সৈন্যদের পেছনে শেষ রাত্রে সে আগের জায়গায়ই রয়ে গিয়েছিল। পরে সে রওনা হয়ে প্রত্যূষে আমার স্থানে পৌঁছল। দূর থেকে সে একটি মানব দেহ দেখতে পেয়ে আমার কাছে এলো এবং আমাকে দেখে সে চিনে ফেলল। কেননা পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে সে আমাকে দেখেছিল। আমাকে চিনে সে “ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলাইহি রাজি‘ঊন” পড়লেন তাঁর “ইন্না- লিল্লা-হ .....” এর শব্দে আমার ঘুম ছুটে গেল। অকস্মাৎ আমি আমার চাদর দিয়ে স্বীয় মুখমণ্ডল আবৃত করে নিলাম। আল্লাহর শপথ! সে আমার সাথে কোন কথা বলেনি এবং “ইন্না- লিল্লা-হ .....” পাঠ ব্যতীত আর তার কোন কথাই আমি শুনিনি। এরপর সে তার উট বসিয়ে নিজ হাত বিছিয়ে দিলেন আমি তার উটের উপরে উঠলাম। আর সে পায়ে হেঁটে আমাকে সহ উট হাঁকিয়ে নিয়ে চলল। যেতে যেতে আমরা সৈন্য দলের কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। তখন তারা দ্বিপ্রহরের প্রচণ্ড রোদের মধ্যে সওয়ারী থেকে নেমে ভূমিতে অবস্থান করছিল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার (অপবাদের) সম্পর্কে জড়িত হয়ে কতক লোক নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনেছে আর এ সম্পর্কে যে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল তার নাম ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল। পরিশেষে আমরা মাদীনায় পৌঁছলাম। মাদীনায় পৌঁছার পর এক মাস যাবৎ আমি অসুস্থ ছিলাম। এদিকে মাদীনার মানুষজন অপবাদ রটনাকারীদের কথা গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখতে লাগল। এ সম্পর্কে আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। তবে এ অসুস্থ অবস্থায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তরফ থেকে পূর্বের ন্যায় স্নেহ না পাওয়ার ফলে আমার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে ঢুকে কেবল সালাম করে বলতেন, এই তুমি কেমন আছো? এ আচরণ আমাকে সন্দেহে ফেলে দিল। আমি সে (মন্দ) বিষয়টি সম্পর্কে জানতাম না। তারপর কিছুটা সুস্থ হবার পর আমি মানাসি‘ প্রান্তরের দিকে বের হলাম। আমার সাথে মিসতাহ্-এর আম্মাও ছিল। তা আমাদের শৌচাগার ছিল। আমরা রাতে বের হতাম এবং রাতেই চলে আসতাম। এ হলো আমাদের গৃহের নিকট শোচাগার নির্মাণের পূর্ববর্তী সময়ের ঘটনা। তখন আগের দিনের আরব মানুষের মতো মাঠে গিয়ে আমরা শৌচকার্য সারতাম। আর আমরা ঘরের কোণে শৌচাগার তৈরি করা পছন্দ করতাম না। অতএব আমি এবং মিসতাহ্-এর মা যেতে লাগলাম। সে ছিল আবূ রুহম ইবনু মুত্তালিব ইবনু ‘আব্দ মান্নাফ-এর কন্যা এবং তার মা ছিল আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ)-এর খালা সাখ্র ইবুন ‘আমির-এর মেয়ে। তাঁর সন্তানের নাম ছিল মিসতাহ্ ইবনু উসাসাহ্ ইবুন ‘আব্বাদ ইবনু মুত্তালিব। মোটকথা, আমি ও বিনতু আবূ রহ্ম (মিসতাহ্-এর মা) নিজ নিজ শৌচকার্য সেরে ঘরের দিকে রওনা হলাম। তখন মিসতাহ্-এর মা স্বীয় চাদরে পেঁচিয়ে হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। আর সে বলে উঠে মিস্তাহ ধ্বংস হোক। তখন আমি বললাম, তুমি অন্যায় কথা বলেছো। তুমি কি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী লোককে বকছ? সে বলল, হে অবলা নারী! মিসতাহ্ কি বলেছে, তুমি কি শোননি? আমি বললাম, সে কি বলেছে? “আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, তারপর সে অপবাদ রটনাকারীরা যা বলেছে, সে সম্পর্কে আমাকে সংবাদ দিল। এতে আমার অসুস্থতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেল। আমি যখন ঘরে ফিরে আসলাম, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ঘরে প্রবেশ করে আমাকে সালাম দিলেন এবং বললেন, এই তুমি কেমন আছো? তখন আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি আমাকে আমার বাবা-মায়ের বাড়ীতে যাওয়ার অনুমতি দিবেন? ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আমি আমার বাবা-মায়ের ঘরে গিয়ে এ বিষয়টির খোঁজ করার সংকল্প করেছিলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি আমার মাতা-পিতার নিকট চলে আসলাম। তারপর আমি আমার মাকে বললাম, আম্মাজান! লোকেরা কী কথা বলছে? তিনি বললেন, মা! এদিকে কান দিয়ো না এবং একে মন্দ মনে করো না। আল্লাহর শপথ! কারো যদি কোন সুন্দরী সহধর্মিণী থাকে ও সে তাকে ভালবাসে আর ঐ মাহিলার কোন সতীনও থাকে তবে সতীনরা তার দোষচর্চা করবে না এমন খুব কমই হয়। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ! লোকেরা এ কথা রটাতে শুরু করেছে? এরপর কেঁদে কেঁদে আমি সারা রাত কাটালাম। এমনকি সকালেও অশ্রু বন্ধ হলো না। আমি ঘুমোতে পারিনি। প্রভাতে আমি কাঁদছিলাম। এদিকে আমাকে তালাক দেয়ার ব্যাপারে পরামর্শ করার জন্য রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) এবং উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে ডাকলেন। তখন ওয়াহী স্থগিত ছিল। তিনি বলেন, উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিবীদের সতীত্ব এবং তাঁদের সাথে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ভালবাসার ক্ষেত্রে যা জানতেন সে দিকেই তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ইশারা করলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ‘আয়িশাহ্ আপনার সহধর্মিণী, ভাল ছাড়া তাঁর সম্পর্কে কোন কথাই আমাদের জানা নেই। আর ‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তো আপনার উপর কোন সংকীর্ণতা চাপিয়ে দেননি। ‘আয়িশা (রাঃ) ব্যতীতও অনেক স্ত্রীলোক রয়েছে। আপনি যদি দাসী (বারীরাহ্)-কে প্রশ্ন করেন তবে সে সত্য বলে দিবে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারীরাহ্ (রাঃ)-কে ডেকে বললেন, হে বারীরাহ্! সন্দেহমূলক কোন কর্মে ‘আয়িশাকে তুমি কখনো দেখেছ কি? বারীরাহ্ (রাঃ) তাঁকে বললেন, ঐ সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন, আমি যদি তাঁর মাঝে কোন কিছু দেখতাম তবে নিশ্চয়ই এর ত্রুটি আমি উল্লেখ করতাম। তবে সে একজন অল্প বয়সী কন্যা। পরিবারের জন্যে আটার খামীর রেখেই সে ঘুমিয়ে থাকতো আর বকরী এসে তা খেয়ে ফেলতো। এ ত্রুটি ছাড়া বেশি কোন ত্রুটি ‘আয়িশার মাঝে আছে বলে আমার জানা নেই। তিনি বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারে দাঁড়িয়ে ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবুন সালূল হতে প্রতিশোধ আশা করলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, তিনি মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন, হে মুসলিম সমাজ! আমার পরিবারের ব্যাপারে যে লোকের পক্ষ হতে কষ্টদায়ক বাক্যের খবর আমার নিকট পৌঁছেছে তার প্রতিশোধ গ্রহণ করার মতো কোন লোক এখানে আছে কি? আমি তো আমার স্ত্রীর ব্যাপারে উত্তম ছাড়া অন্য কোন কথা জানি না এবং যে লোকের ব্যাপারে তারা অপবাদ রটনা করছে তাকেও আমি সৎলোক বলে জানি। সে তো আমাকে ছাড়া আমার ঘরে কখনো প্রবেশ করতো না। এ কথা শুনে সা‘দ ইবনু মু‘আয আল আনসারী (রাঃ) দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আপনার তরফ হতে প্রতিশোধ নিবো। অপবাদ রটনাকারী লোক যদি আওস গোত্রের হয় তবে আমি তার গর্দান উড়িয়ে দিব। আর যদি সে আমাদের ভ্রাতা খায্রাজ গোত্রের হয় তবে আপনি আমাদেরকে আদেশ দিন। আমরা আপনার আদেশ পালন করব। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন খাযরাজ সর্দার সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ্ (রাঃ) দাঁড়ালেন। তিনি একজন নেক্কার লোক ছিলেন। তবে তখন বংশীয় আত্মমর্যাদা তাঁকে মূর্খ বানিয়ে ফেলেছিল। তাই তিনি সা’দ ইবনু মু‘আযকে বললেন, তুমি মিথ্যা বলছো। আল্লাহ শপথ! তুমি তাকে হত্যা করবে না। তুমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না। এ কথা শুনে সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাঃ)-এর চাচাতো ভাই উসায়দ ইবনু হুযায়র (রাঃ) দাঁড়িয়ে সা‘দ ইবনু ‘উবাদাহ্ (রাঃ)-কে বললেন, তুমি মিথ্যা বলছো। আল্লাহর শপথ! নিশ্চয়ই আমরা তাকে হত্যা করব। নিশ্চয়ই তুমি মুনাফিক। তাই মুনাফিকদের পক্ষে কথা বলছো। এ সময় আওস ও খাযরাজ দু’ গোত্রের লোকেরা একে অপরের উপর উত্তেজিত হয়ে উঠল। এমনকি তারা যুদ্ধের ইচ্ছা করে বসলো। অথচ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখনও তাদের সম্মুখে মিম্বারে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদেরকে থামিয়ে শান্ত করলেন। তারা নীরব থাকলো এবং তিনি নিজেও আর কোন কথা বললেন না। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, সেদিন আমি সারাক্ষণ কান্নাকাটি করলাম। অবিরত ধারায় আমার অশ্রুপাত হচ্ছিল। রাত্রে একটুও আমার ঘুম আসলো না। অতঃপর সামনের রাতেও আমি কেঁদে কাটালাম। এ রাতেও অঝোর ধারায় আমার অশ্রুপাত হলো এবং একটুকুও নিদ্রা যেতে পারলাম না। এ দেখে আমার আব্বা-আম্মা মনে করছিলেন যে, কান্নায় আমার কলিজা টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। আমি কাঁদতে ছিলাম, আমার আব্বা-আম্মা আমার নিকটে বসা ছিলেন। এমন সময় একজন আনসার মহিলা আমার কাছে আসার অনুমতি চাইলে আমি তাকে অনুমতি দিলাম। সে এসে বসে কাঁদতে লাগল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমাদের যখন এ অবস্থা এমন সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে প্রবেশ করলেন এবং আমাদেরকে সালাম করে বসলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, অথচ আমার সম্বন্ধে যা বলাবলি হচ্ছে তারপর থেকে তিনি কখনো আমার কাছে বসেননি। এমনিভাবে এক মাস অতিক্রান্ত হলো। আমার সম্পর্কে তাঁর কাছে কোন ওয়াহী আসলো না। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে তাশাহুদ পড়লেন। এরপর বললেন, যা হোক হে ‘আয়িশাহ্! তোমার ব্যাপারে আমার কাছে এমন এমন খবর পৌঁছেছে। যদি তুমি এ বিষয়ে নিষ্পাপ এবং পবিত্র হও, তবে শীঘ্রই আল্লাহ তা‘আলা তোমার পবিত্রতার বিষয়ে ঘোষণা করবেন। আর যদি তোমার দ্বারা কোন পাপ হয়েই থাকে তবে তুমি আল্লাহর কাছে মার্জনা প্রার্থনা এবং তাওবাহ্ করো। কেননা বান্দা পাপ স্বীকার করে তাওবাহ্ করলে আল্লাহ তার তাওবাহ্ গ্রহণ করেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁর কথা সমাপ্ত করলেন, তখন আমার অশ্রুধারা বন্ধ হয়ে গেল। এমনকি তারপর আর এক ফোটা অশ্রুও আমি অনুভব করলাম না। তারপর আমি আমার পিতাকে বললাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বললেন, আমার তরফ হতে তার উত্তর দিন। তিনিও বললেন, আল্লাহর শপথ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কি উত্তর দিব, আমার তা অজানা। এরপর আমি আমার মাকে বললাম, আমার তরফ হতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উত্তর দিন। তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র শপথ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কি উত্তর দিব, আমি তা জানি না। আমি বললাম, তখন আমি ছিলাম কম বয়সী কিশোরী। কুরআন মাজীদও অধিক পাঠ করতে পারতাম না। এ অবস্থা দেখে আমিই তখন বললাম, আল্লাহ শপথ! আমি জানি, আপনারা এ অপবাদের কথা শুনেছেন, মনে তা গেঁথে গেছে এবং আপনারা তা বিশ্বাস করে নিয়েছেন। কাজেই এখন যদি আমি বলি, আমি নিষ্কলুষ তবে এ বিষয়ে আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না। আর যদি আমি মেনে নেই, যে সম্পর্কে আল্লাহ জানেন যে, আমি নিষ্পাপ, তবে আপনারা তা বিশ্বাস করবেন। আল্লাহর শপথ! আমার ও আপনাদের জন্য (নাবী) ইউসুফ (‘আঃ)-এর পিতার কথার দৃষ্টান্ত ছাড়া ভিন্ন কোন দৃষ্টান্ত আমার দৃষ্টিতে পড়ে না। তিনি বলেছিলেন, “কাজেই পরিপূর্ণ ধৈর্যই উত্তম, তোমরা যা বলছো সে ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহই আমার আশ্রয়স্থল।” তিনি [‘আয়িশাহ (রাঃ)] বলেন, অতঃপর আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম এবং বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তো ঐ সময়েও জানেন যে, নিশ্চয়ই আমি নিষ্পাপ এবং নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আমার পবিত্রতা উন্মোচন করে দিবেন। কিন্তু আল্লাহর শপথ! আমি মনে করিনি যে, আল্লাহ তা‘আলা আমার এ ব্যাপারে ওয়াহী অবতীর্ণ করবেন, যা পড়া হবে। কেননা আমার ব্যাপারে পড়ার মতো আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন আয়াত অবতীর্ণ করা হবে আমার অবস্থা তার চেয়ে বেশি নিম্নমানের বলে আমি মনে করতাম। তবে আমি প্রত্যাশা করেছিলাম যে, স্বপ্নের মধ্যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন কোন বিষয় দেখবেন যার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দিবেন। ‘আয়িশাহ্ সিদ্দীকা (রাঃ) বলেন, আল্লাহ শপথ! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখনো তাঁর জায়গা ছেড়ে যাননি এবং গৃহের লোকও কেউ বাইরে যায়নি। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবীর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ করেন। ওয়াহী অবতীর্ণের প্রাক্কালে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর যে যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা দেখা দিত তার অনুরূপ অবস্থা দেখা দিলো। এমনকি তাঁর প্রতি অবতীর্ণকৃত বাণীর ওযনের কারণে প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের দিনেও তাঁর শরীর হতে মুক্তার মতো বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরে পড়তো। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা চলে গেলে তিনি হাসতে লাগলেন এবং প্রথমে যে কথাটি বললেন তা হলো : হে ‘আয়িশাহ্! সুসংবাদ গ্রহণ করো। আল্লাহ তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করেছেন। এ কথা শুনে আমার মা আমাকে বললেন, তুমি উঠে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-সে সম্মান প্রদর্শন করো। আমি বললাম, আমি তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবো না এবং আল্লাহ ব্যতীত আর কারো প্রশংসা করবো না। তিনিই আমার পবিত্রতার ব্যাপারে আয়াত নাযিল করেছেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা আমার পবিত্রতার ব্যাপারে দশটি আয়াত (সূরাহ্ আন্ নূর ২৪ : ১১-২১) অবতীর্ণ করেছেন। “যারা অপবাদ রটনা করেছে তারা তো তোমাদেরই একটি দল, একে তোমরা তোমাদের জন্যে ক্ষতিকর মনে করো না; বরং এ তো তোমাদের জন্য কল্যাণকর।” ..... ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আত্মীয়তার বন্ধন ও দারিদ্রের কারণে আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) মিসতাহ্কে আর্থিক সাহায্য করতেন। কিন্তু ‘আয়িশাহ্ সম্বন্ধে সে যা বলেছিল সে কারণে আবূ বকর (রাঃ) শপথ করে বসলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি আর কোন সময় মিসতাহ্কে আর্থিক সহযোগিতা দিব না। তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন : “তোমাদের মাঝে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন কসম না করে যে, তারা দান করবে না আত্মীয়-স্বজনকে .....। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদের মাফ করেন”..... পর্যন্ত। হাব্বান ইবনু মূসা (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুবারক (রহঃ) বলেছেন, আল-কুরআনের মধ্যে এ আয়াতটিই অধিক আশাব্যঞ্জক। তারপর আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) বললেন, আল্লাহ শপথ! আমি অবশ্যই ভালোবাসি যে, আল্লাহ আমাকে মাফ করে দিন। এরপর মিসতাহ্ (রাঃ)-এর জন্যে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতেন তা পুনরায় খরচ করতে শুরু করলেন। আর বললেন, তাকে আমি এ অর্থ দেয়া কোন সময় বন্ধ করবো না। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রী যাইনাব বিন্ত জাহ্শ (রহঃ)-কে আমার সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি যাইনাবকে বলেছিলেন, তুমি ‘আয়িশাহ্ সম্বন্ধে কি জানো বা দেখেছো? জবাবে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার কান ও চোখকে হিফাযাত করেছি। আল্লাহর শপথ! তাঁর ব্যাপারে আমি উত্তম ব্যতীত কিছুই জানি না। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদের মাঝে তিনিই আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। কিন্তু আল্লাহ ভীতির মাধ্যমে আল্লাহ তাঁকে হিফাযাত করেছেন। অথচ তাঁর বোন হামানাহ্ বিন্ত জাহ্শ তাঁর পক্ষাবলম্বন করে ঝগড়া করে, আর এভাবে সে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। রাবী যুহরী (রহঃ) বলেন, ঐ লোকদের নিকট থেকে আমাদের কাছে যা পৌঁছেছে তা এ হাদীস। তবে রাবী ইউনুসের হাদীসের মধ্যে রয়েছে, ‘গোত্রীয় আত্মম্ভরিতা তাকে উত্তেজিত করে।’ (ই.ফা. ৬৭৬৩, ই.সে. ৬৮১৮) যুহরী (রহঃ) ইউনুস এবং মা‘মার-এর অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাকারী ফুলায়হ্-এর হাদীসে রয়েছে, গোত্রীয় আত্মম্ভরিতা তাকে অজ্ঞতামূলক আচরণ করতে উত্তেজিত করেছিল। মা‘মার তাঁর বর্ণনায় যেমন বলেছেন। আর সালিহ-এর হাদীসের মধ্যে ইউনুসের বর্ণনার মতো এতে রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ- ‘গোত্রীয় আত্মম্ভরিতা তাকে উত্তেজিত করলো।’ সালিহ-এর হাদীসে এটাও রয়েছে যে, ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) হাস্সান ইবনু সাবিত (রাঃ)-কে কটু বাক্য বলার বিষয়টিকে অপছন্দ করতেন। তিনি বলতেন, হাস্সান তো নিম্নোক্ত কবিতা রচনা করেছেন, “আমার পিতা-মাতা, আমার ইয্যত সবই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইয্যত-সম্মানের জন্যে রক্ষাকবচ।” এতে এটাও বর্ধিত রয়েছে যে, ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, যে লোকের ব্যাপারে দোষারোপ করা হয়েছে তিনি বলতেন, সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর কসম! আমি কক্ষনো কোন মহিলার-আবরণ খুলিনি। অতঃপর তিনি আল্লাহর পথে শাহীদ হন। ইয়া’কূব ইবনু ইব্রাহীম-এর হাদীসে রয়েছে (আরবী) কিন্তু ‘আবদুর রায্যাক (রহঃ) বলেন, (আরবী) ‘আব্দ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) বলেন, আমি ‘আবদুর রায্যাককে (আবরী) শব্দের ব্যাখ্যা সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, (আরবী) অর্থ কঠিন গরম। (ই.ফা. ৬৭৬৪, ই.সে. ৬৮১৯) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমার সম্পর্কে মানুষেরা যখন কুৎসা রটাতে শুরু করল, যা আমি জানি না, তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বক্তব্য দেয়ার জন্যে দাঁড়িয়ে তাশাহ্‌হুদ পড়লেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করলেন। এরপর বললেন, অতঃপর যারা আমার সহধর্মিণী সম্পর্কে অপবাদ রটাচ্ছে তাদের ব্যাপারে তোমরা আমাকে পরামর্শ দাও। আল্লাহর শপথ! আমি আমার সহধর্মিণী সম্পর্কে খারাপ কোন কিছুই জানি না এবং তারা যার ব্যাপারে অপবাদ রটাচ্ছে তাঁর সম্পর্কেও খারাপ কিছু আমি জানি না। আমার অনুপস্থিতিতে সে আমার ঘরে কক্ষনো প্রবেশ করেনি এবং আমি যখন সফরে বের হয়েছি সেও তখন আমার সঙ্গে সফরে বের হয়েছে। অতঃপর বর্ণনাকারী সম্পূর্ণ ঘটনাসহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। অবশ্য এতে বর্ধিত রয়েছে যে, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ঘরে প্রবেশ করে আমার বাঁদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তখন সে বলল, আল্লাহর শপথ! ‘আয়িশা (রাঃ)-এর মধ্যে আমি কোন ত্রুটি দেখিনি। তবে তিনি নিদ্রায় যেতেন, আর বকরী এসে মথিত আটা খেয়ে ফেলত। অথবা বললেন, খামীর খেয়ে ফেলত। বর্ণনাকারী হিশাম এতে সন্দেহ করেছেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন সহাবা তাকে ধমক দিয়ে বললেন, তুমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সত্য কথা বলো। এমনকি তাঁরা তার সম্মুখে ঘটনা উত্থাপন করলেন। তখন বারীরাহ্‌ বললেন, সুব্‌হানাল্লাহ! আল্লাহর শপথ! স্বর্ণকার খাঁটি স্বর্ণের টুকরা সম্পর্কে যেমন জানে আমিও ‘আয়িশাহ্‌ সম্বন্ধে অনুরূপ জানি। যে লোক সম্পর্কে এ অপবাদ রটানো হচ্ছিল তার কাছে এ সংবাদ পৌঁছার পর তিনিও বললেন, সুব্‌হানাল্লাহ। আল্লাহর শপথ! আমি কক্ষনো কোন মহিলার আবরণ খুলিনি। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, পরে তিনি আল্লাহর রাস্তায় শাহীদ হন। এতে আরো বর্ধিত রয়েছে যে, অপবাদ রটনাকারীদের মাঝে ছিলেন মিসতাহ্‌, হামনাহ্‌, হাস্‌সান। আর মুনাফিক ‘আবদুল্লাহ ইবনু উবাই সে ছিল ঐ লোক যে খুঁজে খুঁজে বের করে এসব জমা করত। সে এবং হামনাই এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেছে। (ই.ফা. ৬৭৬৫, ই.সে. ৬৮২০)

【11】

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মর্যাদা সন্দেহমুক্ত হওয়া

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উম্মু ওয়ালাদের (দাসীদের) সঙ্গে এক লোকের প্রতি অভিযোগ আসে। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আলী (রাঃ)-কে বললেন, যাও, তার শীরোচ্ছেদ কর। ‘আলী (রাঃ) তার কাছে গিয়ে দেখলেন, সে কূয়ার মধ্যে শরীর ঠাণ্ডা করছে। ‘আলী (রাঃ) তাকে বললেন, বেরিয়ে এসো। সে ‘আলী (রাঃ)-এর দিকে হাত এগিয়ে দিলো। তিনি তাকে বের করলেন এবং দেখলেন, তার পুরুষাঙ্গ সম্পূর্ণ কাটা, তার লিঙ্গ নেই। তখন ‘আলী (রাঃ) তাকে হত্যা করা হতে বিরত থাকলেন। তারপর তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সে তো লিঙ্গকাটা, তার যে লিঙ্গ নেই। (ই.ফা. ৬৭৬৬, ই.সে. ৬৮২১)