56. তাফসীর

【1】

মহান আল্লাহর বাণী : “যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহর স্মরণে তাদের হৃদয় ভক্তিতে বিগলিত হওয়ার সময় কি আসেনি”

আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিঃ) তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে কয়েকটি হাদীস আলোচনা করেছেন। তন্মধ্যে একটি হাদীস হচ্ছে এই যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বানী ইসরাঈলদেরকে বলা হয়েছিল, তোমরা দরজা দিয়ে প্রবেশ করার সময় সাজ্দাহ্বনতঃ হয়ে প্রবেশ কর এবং বলো ……… আমাদেরকে ক্ষমা কর। তাহলে আমি তোমাদের গুনাহ্ ক্ষমা করে দিব। কিন্তু তারা এ কথার পরিবর্তন করতঃ পাছার উপর ভর করে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে দরজা দিয়ে প্রবেশ করল এবং (ক্ষমা মার্জনার স্থলে) ……… অর্থাৎ- ‘যবের শীষে দানা দাও’ বলতে থাকল। (ই.ফা. ৭২৪২, ই.সে. ৭২৯৭) আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) তিনি বলেন, ইন্তিকালের পূর্বে ও ইন্তিকাল পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর ধারাবাহিকাভাবে ওয়াহী অবতীর্ণ করেন। যেদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকাল করেন সেদিনও তার প্রতি অনেক ওয়াহী অবতীর্ণ হয়। (ই.ফা. ৭২৪৩, ই.সে. ৭২৯৮) তারিক ইবনু শিহাব (রহঃ) তিনি বলেন, ইয়াহূদী লোকেরা ‘উমার (রাঃ)-কে বলল, তোমরা এমন একটি আয়াত পাঠ করে থাকো তা যদি আমাদের সম্বন্ধে অবতীর্ণ হত, তবে এ দিনটিকে আমরা আনন্দোৎসবের দিন হিসেবে পালন করতাম। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি জানি, ঐ আয়াতটি কখন, কোথায় ও কোন্ দিন অবতীর্ণ হয়েছিল। আর যখন তা অবতীর্ণ হয়েছিল তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোথায় অবস্থান করছিলেন তাও জানি। আয়াতটি ‘আরাফার দিন অবতীর্ণ হয়েছিল, রসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন ‘আরাফাতেই অবস্থান করছিলেন। রাবী সুফ্ইয়ান (রহঃ) বলেন, “আজ আমি তোমাদের দীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং আমার নি‘আমাত তোমাদের প্রতি পূর্ণ করে দিলাম”- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫:৩)। এ আয়াতটি যেদিন অবতীর্ণ হয়েছিল তা জুমু’আর দিন ছিল কি-না, এ বিষয়ে আমি সন্দিহান। (ই.ফা. ৭২৪৪, ই.সে. ৭২৯৯) তারিক ইবনু শিহাব (রহঃ) তিনি বলেন, জনৈক ইয়াহূদী ‘উমার (রাঃ)-কে বলল, ……… অর্থাৎ “আজ আমি তোমাদের দীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম”- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫:৩) এ আয়াতটি আমাদের ইয়াহূদী সম্প্রদায় সম্বন্ধে অবতীর্ণ হলে এ দিনটিকে আমরা আনন্দোৎসব দিবস হিসেবে পালন করতাম। আমরা জানি, কোন্ দিন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে। রাবী বলেন, এ কথা শুনে ‘উমার (রাঃ) বললেন, কোন্ দিন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে, কোন্ সময়ে অবতীর্ণ হয়েছে এবং এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার প্রাক্কালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোথায় ছিলেন, তাও আমি সম্যক অবগতি আছি। এ আয়াতটি মুযদালিফার রাতে অবতীর্ণ হয়েছে। তখন আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ‘আরাফার মাঠে ছিলাম। (ই.ফা. ৭২৪৫, ই.সে. ৭৩০০) তারিক ইবনু শিহাব (রহঃ) তিনি বলেন, জনৈক ইয়াহূদী ব্যক্তি ‘উমার (রাঃ) –এর কাছে এসে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনাদের কিতাবের মধ্যে এমন একটি আয়াত আপনারা তিলওয়াত করে থাকেন। যদি তা আমাদের ইয়াহূদী সম্প্রদায় সম্পর্কে অবতীর্ণ হত তাহলে ঐ দিনটিকে আমরা আনন্দোৎসব দিবস হিসেবে পালন করতাম। ‘উমার (রাঃ) প্রশ্ন করলেন, আয়াতটি কি? সে বলল, আয়াতটি হলো, (আরবী) অর্থাৎ “আজ আমি তোমাদের দীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম”-(সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ :৩)। এ কথা শুনে ‘উমার (রাঃ) বললেন, যে দিন, যে স্থানে আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে অবশ্যই আমি তা জানি। আয়াতটি জুমু’আর দিন ‘আরাফাতের মাঠে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। (ই.ফা. ৭২৪৬, ই.সে. ৭৩০১) ‘উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (রাযিঃ) তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে মহান আল্লাহর বাণী সম্পর্কে প্রশ্ন করলেনঃ “তোমরা যদি ভয় করো যে, ইয়াতীমদের মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিয়ে করবে স্ত্রীলোকদের মধ্যে যাকে তোমাদের পছন্দ হয়। (সূরাহ্ আন্ নিসার) দু’ , তিন অথবা চার” –এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, হে ভাগ্নে! যেসব ইয়াতীম মেয়েরা তাদের তত্ত্বাবধানকারী অভিভাবকদের সম্পদের অংশীদার হত তার সম্পদের লালসা ও রূপ-যৌবনের সৌন্দর্যের প্রতি উক্ত অভিভাবক তাকে অন্যরা যে পরিমান মুহরানা দিয়ে বিয়ে করতে প্রস্তুত ইনসাফের নীতি অনুযায়ী উক্ত পরিমান মুহরানা দিয়ে বিয়ে করতে চাইতো না। এ আয়াতে তাদেরকে ঐসব ইয়াতীমদের বিয়ে করতে বারণ করা হয়েছে। তবে তাদের মুহরানা প্রদানের ব্যাপারে সর্বোত্তম রীতি-নীতি অনুসরণ করলে তা স্বতন্ত্র কথা। অন্যথায় তাদের পছন্দমত অন্য মেয়েদের বিয়ে করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ‘উরওয়াহ্ (রাঃ) বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর কতিপয় লোক বিষয়টি সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলে আল্লাহ তা’আলা ‘ইরশাদ করেনঃ “এবং লোকেরা আপনার কাছে নারীদের বিষয়ে ব্যবস্থা জানতে চায়। বলুন, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা জানাচ্ছেন এবং ইয়াতীম নারী সম্পর্কে-যাদের প্রাপ্য তোমরা প্রদান করো না অথচ তোমরা তাদেরকে বিবাহ করতে চাও ও নিপীড়িত শিশুদের বিষয়ে এবং ইয়াতীমদের প্রতি তোমাদের ন্যায়বিচার সম্পর্কে যা কিতাবে তোমাদেরকে শুনানো হয়, তাও পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন। আর যে সৎকাজ তোমরা করো আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত”- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১২৭)। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর বাণী- (আরবী)- এর দ্বারা প্রথম আয়াতটিকে বুঝানো হয়েছে, যার মধ্যে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, তোমরা যদি আশঙ্কা করো যে ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না তবে বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে দু’ , তিন অথবা চার। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর বাণী- (আরবী)- এর মানে হচ্ছে, অর্থ-সম্পদ ও রূপ-যৌবন কম থাকার কারণে তোমাদের কেউ ইয়াতীম মেয়েদের বিবাহ করতে অপছন্দ করলে-তাদেরকে অর্থ সম্পদ ও রূপ যৌবনবতী ইয়াতীম স্ত্রীলোককে পছন্দ হলেও বিয়ে করতে বারণ করা হয়েছে। তবে অর্থ-সম্পদ ও রূপ-যৌবন না থাকার কারণে পছন্দনীয় না হলেও যদি ইনসাফের ভিত্তিতে মুহরানা পরিশোধ করে তবে বিয়ে করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। (ই.ফা. ৭২৪৭, ই.সে. ৭৩০২) ‘উরওয়াহ্ (রাযিঃ) তিনি ‘আয়িশা (রাঃ) –কে আল্লাহর বাণী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমরা যদি শঙ্কিত হও যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না”- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪:৩) এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। অতঃপর রাবী ইউনু্সের সানাদে যুহরী (রহঃ) হতে বর্ণিত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। তবে হাদীসের শেষাংশে তিনি (আরবী)-এর পরিবর্তে (আরবী) অর্থাৎ “যখন তারা সামান্য সম্পদ ও কম সৌন্দর্যের অধিকারী হয় তখন আর তাদের তত্ত্বাবধায়করা এদেরকে বিয়ে করতে সম্মত হয়না”- কথাটি বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৭২৪৮, ই.সে. ৭৩০৩) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তা’আলার বাণী, “তোমরা যদি আশঙ্কা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি ইনসাফ রক্ষা করতে পারবে না”- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪:৩) এর ব্যাখ্যায় বলেন, এ আয়াতটি ঐ পুরুষ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে; যার তত্ত্বাবধানে রয়েছে ইয়াতীম মহিলা এবং এ পুরুষই হচ্ছে তাঁর ওলী ও অভিভাবক। আর এ মেয়েটির আছে কিছু ধন-সম্পদ। কিন্তু তার পক্ষ সমর্থন করার জন্য সে ব্যতীত আর কেউই নেই। ওলী এ ধরনের মেয়েকে তার সম্পদের উদ্দেশে বিয়ে করে তাকে কষ্ট দিতে এবং তার সাথে নিষ্ঠুরভাবে জীবন-যাপন করতে পারবে না। এ ব্যক্তি সম্পর্কেই আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ তোমরা যদি শঙ্কা করো যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি ইনসাফ রক্ষা করতে পারবে না তবে বিবাহ করবে নারীদের মাঝে যাকে তোমাদের পছন্দ হয় দু’, তিন অথবা চার। অর্থাৎ- যে মহিলাদেরকে আমি তোমাদের জন্য হালাল করেছি তাদেরকে বিবাহ করো এবং যে ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি তুমি নিষ্ঠুর আচরণ করছ তাদের থেকে দূরে থাকো। (ই.ফা. ৭২৪৯, ই.সে. ৭৩০৪) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, মহান আল্লাহর বানীঃ “এবং ইয়াতীম মেয়ে সম্পর্কে যাদের অধিকার তোমরা দান করো না, অথচ তোমরা তাদেরকে বিবাহ করতে চাও ও অসহায় শিশুদের বিষয়ে এবং ইয়াতীমদের প্রতি তোমাদের ন্যায় বিচার সম্পর্কে যা কিতাবে তোমাদেরকে শুনানো হয়, তাও পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয়”-(সূরাহ্ আন্ নিসা ৪:১২৭) বিষয়ে বলেন, এ আয়াতটি ঐ ইয়াতীম মেয়েদের সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে, যে এমন এক পুরুষের তত্ত্বাবধানে রয়েছে, যার সাথে সে সম্পদের মধ্যে শারীক আছে। কিন্তু সে তাকে বিয়ে করা অপছন্দ করছে এবং অপর কোন লোকের সঙ্গে তার বিয়ে হোক এটাও অপছন্দ করছে এ আশঙ্কায় যে, সে তার সম্পদের শারীক হয়ে যাবে। পরিশেষে সে তাকে এমনিই ছেড়ে রাখছে; নিজেও তাকে বিবাহ করছে না এবং অন্য কারো কাছে বিবাহও দিচ্ছে না। (ই.ফা. ৭২৫০, ই.সে. ৭৩০৫) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তা’আলার বাণী: “এবং লোকেরা আপনার কাছে নারীদের সম্পর্কে বিধান জানতে চায়, বলুন, আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের ব্যাপারে বিধান জানিয়ে দিচ্ছেন”- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪:১২৭) এর ব্যাখ্যায় বলেন, আয়াতটি ঐ ইয়াতীম মেয়েদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে, যে রয়েছে এমন এক পুরুষের তত্ত্বাবধানে যার সম্পদে এমনকি খেজুর বাগানেও উক্ত নারী অংশীদার। সে তাকে বিয়ে করতেও আগ্রহী নয় এবং অন্যের কাছে বিয়ে দিতেও আগ্রহী নয়। কেননা তাহলে সে তার সম্পদের শারীক হয়ে যায়। ফলে সে তাকে বিয়ের ব্যবস্থা না করে এমনিই ফেলে রাখে। (ই.ফা. ৭২৫১, ই.সে. ৭৩০৬) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, মহান আল্লাহর বাণী: “এবং যে গরীব সে যেন ন্যায়ানুগ পন্থায় আহার করে”- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ৬)। তিনি বলেন, এ আয়াতটি ইয়াতীমের ধন-সম্পদের ঐ তত্ত্বাবধায়ক সম্বন্ধে অবতীর্ণ হয়েছে, যে তার সম্পদের তত্ত্বাবধান করছে এবং সেটা রক্ষণাবেক্ষণ করছে। যদি তত্ত্বাবধানকারী ব্যক্তি গরীব হয় তবে সে ন্যায়ানুগ পরিমাণ তা হতে পারিশ্রমিক হিসেবে আহার করতে পারবে। (ই.ফা. ৭২৫২, ই.সে. ৭৩০৭) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, মহান আল্লাহর বানীঃ “যে অভাবমুক্ত সে যেন নিবৃত থাকে এবং যে গরীব সে যেন ন্যায়ানুগ পরিমাণ ভোগ করে”- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪:৬) এর ব্যাখ্যায় বলেন, এ আয়াতটি ইয়াতীমের তত্ত্বাবধানকারী ব্যক্তির ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, সে যদি নিতান্তই গরীব হয় তবে সে যেন তার সম্পদ হতে ন্যায়ানুগ পন্থায় নির্দিষ্ট পরিমাণ পারিশ্রমিক গ্রহণ করে। (ই.ফা. ৭২৫৩, ই.সে. ৭৩০৮) হিশাম (রহঃ)-এর সূত্র এ সানাদে অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৭২৫৪, ই.সে. ৭৩০৯) ‘আয়িশাহ্ (রাযিঃ) তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তা’আলার বাণী: “যখন তারা তোমাদের (বিপক্ষে) উপর হতে ও নীচ হতে সমাগত হয়েছিল- (ভয়ের কারণে) তোমাদের চোখ বিস্ফারিত হয়ে গিয়েছিল, তোমাদের প্রাণ হয়েছিল কন্ঠাগত এবং তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে নানা রকম বিরূপ ধারণা পোষণ করছিলে”- (সূরাহ্ আল আহযাব ৩৩:১০)এর ব্যাখ্যায় বলেন, এ আয়াতটি খন্দক যুদ্ধের দিন অবতীর্ণ হয়েছে। (ই.ফা. ৭২৫৫, ই.সে. ৭৩১০) আইশাহ্ (রাযি:) আল্লাহর বাণীঃ “কোন সহধর্মিণী যদি তার স্বামীর দুর্ব্যবহার ও উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তবে স্বামী-স্ত্রী যদি সমঝোতা করতে চায় তাদের কোন দোষ নেই এবং সমঝোতা (সন্ধি) সর্বাবস্থায়ই উত্তম”- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪ : ১২৮) তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেন, এ আয়াতটি ঐ মহিলাদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে, যে এমন একজন পুরুষের কাছে ছিল, যার সাহচর্যে সে দীর্ঘদিন ছিল। এখন সে তাকে তালাক দিতে চায়। আর মহিলা বলে, আমাকে তালাক দিও না বরং আমাকে তোমার সাথে থাকতে দাও। তবে তোমার জন্য আমার পক্ষ হতে অন্য স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি থাকল। এ প্রসঙ্গে উপরোল্লিখিত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (ই.ফা. ৭২৫৬, ই.সে. ৭৩১১) আয়িশাহ্ (রাযি:) আল্লাহর বাণীঃ “কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর অসদাচরণ ও উপেক্ষার আশঙ্কা করে তবে তারা আপোষ-মীমাংসা করতে চাইলে তাদের কোন দোষ নেই বরং সমঝোতাই (সন্ধিই) উত্তম”- (সূরাহ্ আন্ নিসা ৪:১২৮) তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেন, এ আয়াতটি ঐ মহিলা সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, যে এমন একজন পুরুষের কাছে ছিল, সম্ভবতঃ সে তার প্রতি ভালবাসা ও আকর্ষণ অনুভব করে না। অথচ সে তার দীর্ঘ সাহচর্যে ছিল এবং তার সন্তান-সন্ততিও রয়েছে। ফলে সে তার স্বামী হতে পৃথক হওয়া অপছন্দ করছে। তখন উক্ত মহিলা তাকে বলছে, তুমি আমার পক্ষ হতে মুক্ত (অন্য স্ত্রী গ্রহণে অনুমতি থাকল)। (ই.ফা. ৭২৫৭, ই.সে. ৭৩১২) ‘উরওয়াহ্ (রাযি:) তার পিতা তিনি (‘উরওয়াহ্) বলেন, ‘আয়িশাহ্ (রাযি:) আমাকে বলেছেনঃ হে ভাগ্নে! লোকদেরকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবাদের জন্য মাফ চাইতে আদেশ দেয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা তাদের গাল-মন্দ করেছে। (ই.ফা. ৭২৫৮, ই.সে. ৭৩১৩) হিশাম (রঃ)-এর সূত্র এ সানাদে অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ৭২৫৯, ই.সে. ৭৩১৪) সা’ঈদ ইবনু জুবায়র (রাযি:) তিনি বলেন, কুফাবাসী লোকেরা মহান আল্লাহর এ বাণীকে কেন্দ্র করে মতভেদে লিপ্ত হলঃ “কেউ স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে কোন মু’মিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম; সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ্ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে লা’নত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করবেন”- (সূরাহ্ আন্ নাস ৪:৯৩) এ আয়াত সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করলে আমি ইবনু আব্বাস (রাযি:)-এর কাছে আসলাম এবং তাঁকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, এ আয়াত শেষ পর্যায়ে নাযিল হয়েছে। সুতরাং অন্য কোন আয়াত সেটাকে মানসুখ করতে পারেনি। (ই.ফা. ৭২৬০, ই.সে. ৭৩১৫) শু’বাহ্ (রহ:) থেকে এ সূত্র অবিকল হাদীস বর্ণনা। কিন্তু মুহাম্মাদ ইবনু জা’ফার-এর বর্ণনায় আছে ---আরবী---। ঐ আয়াত সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। আর নায্র-এর হাদীসের মধ্যে রয়েছে ---আরবী---। নিশ্চয় ঐ আয়াত সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াতগুলোর অন্তর্ভুক্ত। (ই.ফা. ৭২৬১, ই.সে. ৭৩১৬) সা’ঈদ ইবনু জুবায়র (রাযি:) তিনি বলেন, ‘আবদুর রহ্মান ইবনু আবযা আমাকে নিম্নোক্ত দু’টি আয়াতের ব্যাপারে ইবনু আব্বাস (রাযি:)-কে জিজ্ঞেস করার জন্য আদেশ দিলেন। তন্মধ্যে প্রথমটি হলো , “কেউ স্বেচ্ছায় কোন মু’মিনকে হত্যা করলে”-(সূরাহ্ আন্ নিসা ৪:৯৩) এর হুকুম সম্বন্ধে আমি তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, কোন আয়াত এ আয়াতটিকে রহিত করেনি। আর দ্বিতীয় আয়াতটি হচ্ছে, “এবং তারা আল্লাহর সঙ্গে কোন মা’বূদকে আহ্বান করে না। আল্লাহ্ যার হত্যা বারণ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না”- (সূরাহ্ আল ফুরকান ২৫:৬৮)। এ সম্পর্কে আমি তাকে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, এ আয়াতটি মুশরিকদের বিষয়ে নাযিল হয়েছিল। (ই.ফা. ৭২৬২, ই.সে. ৭৩১৭) ইবনু ‘আব্বাস (রাযি:) তিনি বলেন, “এবং তারা আল্লাহ্ ছাড়া কোন মা’বূদকে ডাকে না। আল্লাহ্ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যে এগুলো করে সে শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামাতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে স্থায়ী হবে লাঞ্ছিত অবস্থায়”- (সূরাহ্ আল ফুরকান ২৫:৬৮)। উক্ত আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ হবার পর মুশরিকরা বলতে আরম্ভ করল যে, ইসলাম গ্রহণ করলে আমাদের কি উপকার হবে, আমরা তো আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করেছি, যাদেরকে হত্যা করা আল্লাহ্ হারাম করেছেন, তাদের হত্যা করেছি এবং অশ্লীল কাজ-কর্মে লিপ্ত হয়েছি। তখন আল্লাহ্ তা’আলা নাযিল করেন, “তারা নয় যারা তাওবাহ্ করে, ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ্ তাদের পাপরাশি পুণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” – (সূরাহ্ আল ফুরকান ২৫:৭০)। অতঃপর ইবনু ‘আব্বাস (রাযি:) বলেন, যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করল এবং ইসলাম সম্বন্ধে যথাযথ উপলব্ধি অর্জন করল তারপর হত্যা করল, তার তাওবাহ্ কবূলযোগ্য নয়। (ই.ফা. ৭২৬৩, ই.সে. ৭৩১৮) সা’ঈদ ইবনু জুবায়র (রাযি:) তিনি বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাযি:)-কে বললাম, যে লোক স্বেচ্ছায় কোন মু’মিনকে হত্যা করে তার তাওবাহ্ গ্রহণযোগ্য হবে কি? তিনি বললেন, না গ্রহণযোগ্য হবে না। এরপর আমি তার কাছে সূরাহ আল ফুরকানে বর্ণিত উল্লেখিত আয়াতটি পাঠ করলাম, “যারা আল্লাহর সঙ্গে কোন মা’বূদকে ডাকে না। আল্লাহ্ যার হত্যা বারণ করেছেন যথোপযুক্ত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যাভিচারও করে না। যে এগুলো করে যে শাস্তি ভোগ করবে” – (সূরাহ্ আল ফুরকান ২৫:৬৮)। তিনি বললেন, এটা তো হচ্ছে মাক্কী আয়াত। মাদানী আয়াত সেটাকে মানসুখ করে দিয়েছে। আর তা হলো, “যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মু’মিনকে হত্যা করে তার আযাব জাহান্নাম” –(সূরাহ আন্ নিসা ৪:৯৬) কিন্তু ইবনু হাশিম-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, অতঃপর আমি তার কাছে সূরাহ্ আল ফুরকানে উল্লেখিত ---আরবী--- (সূরাহ্ আল ফুরকান ২৫:৭০) আয়াতটি তিলাওয়াত করলাম। (ই.ফা. ৭২৬৪, ই.সে. ৭৩১৯) ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উতবাহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, আমাকে ইবনু ‘আব্বাস (রাযি:) বললেন, তোমার কি জানা আছে? হারূন (রহঃ) বলেন, তিনি বলেছেন, কুরআনের সর্বশেষ নাযিলকৃত পূর্ণাঙ্গ সূরাহ্ কোনটি? আমি বললাম, হ্যাঁ, তা হলো ---আরবী---। তিনি বললেন, তুমি সত্য বলেছ। ইবনু আবূ শাইবার বর্ণনায় ---আরবী--- (সর্বশেষ)-এর পরিবর্তে ---আরবী--- কথাটি উল্লেখ রয়েছে। (ই.ফা. ৭২৬৫, ই.সে. ৭৩২০) আবূ উমায়স (রহঃ) উপরের হাদীসের অবিকল বর্ণনা করেছেন। তিনি তার বর্ণনায় -- বলেছেন। আর তিনি ইবনু সুহায়ল' না বলে শুধু 'আবদুল মাজীদ’ বাক্যটি উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা ৭২৬৬, ই.সে ৭৩২১) ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক লোক একটি ছোট্ট বকরীর পাল চরাচ্ছিল, এমতাবস্থায় কতক মুসলিম তার কাছে আগমন করলে সে বলল, আসসালামু ‘আলাকুম'। এতদসত্ত্বেও তারা তাকে পাকড়াও করল। অতঃপর তারা তাকে হত্যা করতঃ তার এ ছোট্ট বকরীর পালটি নিয়ে নিল। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হলো : “যারা তোমাদেরকে সালাম করে, ইহ-জীবনের সম্পদের লালসায় তাকে বলো না, তুমি ঈমানদার নও"-(সুবাহু আননিসা ৪৯৪)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) -- বলেছেন, তবে কেউ কেউ - আলিফ ছাড়া পাঠ করেছেন। (ই.ফা ৭২৬৭, ই.সে, ৭৩২২) বারা (রাঃ) তিনি বলেন, আনসারী লোকেরা হাজ্জ সমাপ্তি শেষে বাড়ী ফেরার পর দরজা দিয়ে প্রবেশ না করে পেছন দিক থেকে ঘরে প্রবেশ করত। অতঃপর এক আনসারী সহাবা দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে এ ব্যাপারে তাকে কিছু (ভাল-মন্দ) বলা হলে "পেছন দিক দিয়ে তোমাদের বাড়ীতে ঢুকাতে কোন সাওয়াব নেই" (সূরাহ্ আল বাকারাহ ২ : ১৮৯) এ আয়াতটি অবতীর্ণ হলো। (ই.ফা ৭২৬৮, ই.সে, ৭৩২৩) ইবনু মাস’উদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের ইসলাম গ্রহণ করা ও নিম্নোক্ত আয়াত তথা- "যারা ঈমান আনে আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর কি ভক্তিতে বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি "- (সূরাহ আল হাদীদ ৫৭ : ১৬) এর দ্বারা আমাদেরকে উপহাস করার মধ্যে চার বছরের ব্যবধান ছিল। (ই.ফা ৭২৬৯,ই.সে, ৭৩২৪)

【2】

মহান আল্লাহর বাণী : “প্রত্যেক সলাতের সময় সৌন্দর্য অবলম্বন করবে"

ইবনু আব্বাস (রাঃ তিনি বলেন, স্ত্রীলোকেরা উলঙ্গ অবস্থায় বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করত এবং বলত, কে আমাকে একটি কাপড় ধার দিবে? এর দ্বারা উদ্দেশ্য স্বীয় লজ্জাস্থান ঢাকা। আর এটাও বলত, আজ খুলে যাচ্ছে কিয়দংশ বা পূর্ণাংশ। তবে যে অংশটা খুলে সেটা আমি আর কখনো হালাল করব না। তখন অবতীর্ণ হলো, "প্রত্যেক সলাতের সময় সৌন্দর্য অবলম্বন করবে"- (সূরাহ আল আরাফ ৭:৩১)। (ই.ফা. ৭২৭০,ই-সে, ৭৩২৫)

【3】

মহান আল্লাহর বাণী : “তোমরা তোমাদের দাসীদেরকে ব্যভিচারে বাধ্য করো না"

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালুল তার বাদীকে বলত, যাও বেশ্যাবৃত্তির মাধ্যমে সম্পদ উপার্জন করে নিয়ে এসো। তখন আল্লাহ তা'আলা অবতীর্ণ করলেন, “তোমাদের বাদীদেরকে সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে পার্থিব জীবনের ধন লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে লিপ্ত করতে বাধ্য করবে না। আর যে তাদেরকে বাধ্য করে, তবে তাদের (দাসীদের) উপর জবর-দস্তির পর আল্লাহ তো (দাসীদের জন্য) ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু” (সূরা: আন নূর ২৪:৩৩)। (ই.ফা, ৭২৭১, ই.সে, ৭৩২৬) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, 'আবদুল্লাহ ইবনু উবাই এর দু'জন বাদী ছিল। একজনের নাম ছিল মুসাইকাহ এবং অপরজনের নাম ছিল উমাইমাহ। সে দু'জন বাদীকে দিয়ে জোরপূর্বক বেশ্যাবৃত্তি করাতো। তাই তারা এ বিষয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট অভিযোগ করল। তখন আল্লাহ তা'আলা নাযিল করলেন : “তোমাদের বাদীরা সতীত্ব রক্ষা করতে চাইলে পার্থিব জীবনের ধন-লালসায় তাদেরকে ব্যভিচারে লিপ্ত হতে জোর-জবরদস্তি করবে না। আর যে তাদেরকে জোরজবরদস্তি করে তবে তাদের (বাদীদের) উপর জবরদস্তির পর আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (ই.ফা ৭২৭২, ই.সে, ৭৩২৭)

【4】

মহান আল্লাহর বাণী : “তারা যাদেরকে আহবান করে তারাই তো তাদের প্রতিপালকের নৈকট্যার্জনের উপায় খোজ করে"

আবদুল্লাহ (রা:) তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তা'আলার বাণী : “তাঁরা যাদেরকে আহ্বান করে তারাই তো তাদের প্রতিপালকের নৈকটা লাভের উপায় খোজ করে"- (সূরা আল ইসরা ১৭:৫৭) এর ব্যাখ্যায় বলেন, একদা একদল জিন ইসলাম গ্রহণ করলো। (একদল মানুষ) তাদের (জিনদের) পূজা করতো। কিন্তু পূজায় রত এ লোকগুলো তাদের পূজাতেই অটল থাকল। অথচ জিনের একদল ইসলাম গ্রহণ করেছে। (ই.ফা ৭২৭৩, ই.সে ৭৩২৮) আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন মহান আল্লাহ্‌র বানীঃ তারা যাদেরকে আহবান করে তারাই তো তাদের পালনকর্তার নৈকট্যার্জনের উপায় সন্ধান করে”- (সূরা আল ইসৱা ১৭:৫৭)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, একদল মানুষ কয়েকটি জিনের পূজা করত। তারপর জিনের দলটি ইসলাম গ্রহণ করল। কিন্তু এ লোকগুলো তাদের পূজার উপর অটল থাকে। তখন অবতীর্ণ হলো "তারা যাদেরকে ডাকে, তারাই তো তাদের পালনকর্তার নৈকট্যার্জনের উপায় সন্ধানে লিপ্ত থাকে"- (সূরাঃ আল ইসরা ১৭:৫৭)। (ই.ফা ৭২৭৪, ই.সে ৭৩২৯) সুলাইমান (রাঃ) হতে এ সূত্র অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা, ৭২৭৪,ই.সে, ৭৩৩০) 'আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, মহান আল্লাহর বাণী : “তারা যাদেরকে ডাকে তারাই তো তাদের পালনকর্তার নৈকট্যার্জনের উপায় খোঁজ করে"- (সূরা আল ইসরা ১৭:৫৭)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, অত্র আয়াতটি আরবের এক দল লোক সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে। তারা কতগুলো জিনের আরাধনা করত। অতঃপর জিনেরা তো ইসলাম গ্রহণ করলো; কিন্তু তাদের ইবাদাতে রত এ মানুষগুলো তা বুঝতে পারল না। তখন অবতীর্ণ হলো, "তারা যাদেরকে ডাকে তারাই তো তাদের প্রতিপালকের নৈকট্যার্জনের উপায় সন্ধানে লিপ্ত থাকে"- (সূরা আল ইসরা ১৭:৫৭) (ই.ফা ৭২৭৫, ই.সে, ৭৩৩১)

【5】

সূরাহ বারাআহ (আত তাওবাহ্), আল আনফাল ও আল হাশর

সাঈদ ইবনু জুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, সূরাহ আত তাওবাহ। বরং এটা হচ্ছে অপমানকারী সূরাহ। এ সূরাতে কেবল......... (এদের মধ্যে, এদের মধ্যে) বর্ণিত হয়েছে। ফলে মানুষেরা ধারণা করতে লাগল যে, এ সূরায় আমাদের কেউ আলোচনা ব্যতীত অবশিষ্ট থাকবে না, সকলের দুর্বলতা তুলে ধরবে। অতঃপর আমি বললাম, সূরাহ আল আনফাল। এ কথা শুনে তিনি বললেন, এ সূরাহ তো বদর যুদ্ধের পটভূমিতে নাযিল হয়েছে। এরপর আমি সূরাহ আল হাশরের কথা বললাম। তিনি বললেন, এতো বানু নায়ীর গোত্র সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। (ই.ফা ৭২৭৬, ই.সে, ৭৩৩২)

【6】

মদ্যপান হারাম হওয়ার বিধান নাযিলের প্রসঙ্গে

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন উমর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মিম্বারে উঠে খুৎবাহ প্রদান করতঃ প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা এবং গুণকীর্তন করলেন। অতঃপর বললেন- মদ হারাম হওয়ার বিধান যেদিন অবতীর্ণ হওয়ার অবতীর্ণ হয়েছে। তখন তা পাঁচটি জিনিস হতে বানানো হতো, গম, যব, খেজুর, আঙ্গুর এবং মধু হতে। আর যা মানুষের বিবেকবুদ্ধি বিলোপ করে দেয়, তা-ই মদ। আর তিনটি বিষয়, হে লোক সকল! আমার প্রত্যাশা। যদি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে দাদার (পরিত্যক্ত সম্পত্তি), কালালাহ্ (নিঃসন্তান ব্যক্তির পরিত্যাজ্য সম্পত্তি) এবং সুদের বিভিন্ন অধ্যায় সম্পর্কে (আরো স্পষ্ট) বলে যেতেন। (ই.ফা ৭২৭৭ ই.সে, ৭৩৩৩) আবূ কুরায়ব (রা:) ইবনু উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মিম্বারে উঠে খুৎবাহু রত অবস্থায় এ কথা বলতে শুনেছি যে, অতঃপর হে লোক সকল! মদ হারাম হওয়ার বিধান অবতীর্ণ হয়েছে। তা পাঁচটি জিনিস হতে বানানো হয়। আঙ্গুর, খেজুর, মধু, গম ও যব হতে। আর যা মানুষের হিতাহিত জ্ঞান বিলুপ্ত করে দেয় তা-ই মদ। আর তিনটি বিষয়, হে লোক সকল! আমার মনের কামনা, যদি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে (নিম্নোক্ত কতিপয় বিষয়ে) আরো বিশদভাবে সুস্পষ্টভাবে বলে যেতেন তবে তো আমরা এ সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পৌছে যেতে পারতাম। আর তা হচ্ছে, দাদার (মীরাস বন্টন), কালালাহ্ (নিঃসন্তান ব্যক্তির পরিত্যাজ্য সম্পত্তি) এবং সুদের কতিপয় বিষয়াদি সম্পর্কিত বিধান বলে দিতেন। (ই.ফা. ৭২৭৮, ই.সি. ৭৩৩৪) আবূ হাইয়্যান (রাঃ) হতে এ সূত্র অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে ইবনু উলাইয়্যাহ আবূ ইদরীস-এর মতো তার হাদীসে (আঙ্গুর) বাক্যটি উল্লেখ করেছেন। আর রাবী ঈসা ইবনু মুসহির (রাঃ)-এর ন্যায় তার হাদীসের মধ্যে...... (আঙ্গুর) শব্দটি উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা ৭২৭৯, ই.সে. ৭৩৩৫)

【7】

মহান আল্লাহর বাণী : “তারা দুটি বিবদমান পক্ষ তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে বাক-বিতণ্ডা করে”

আবূ যার (রাঃ) তিনি শপথ করে বলতেন, "তারা দুটি বিবদমান পক্ষ তাদের পালনকর্তা সম্পর্কে বাক-বিতণ্ড করে"- (সূরাহ আল হাজ্জ ২২ : ১৯) আল্লাহর এ বাণী ঐ লোকেদের সম্বন্ধেই অবতীর্ণ হয়েছে, যারা বাদরের দিন যুদ্ধ করার জন্য যুদ্ধ ক্ষেত্রে অবতরণ করেছিল। এদের একদিকে ছিলেন হামযাহ, আলী ও উবাইদাহ ইবনুল হারিস (রাঃ) আর অপরদিকে ছিল, উতবাহ ও শইবাহ রাবী'আর দু পুত্র এবং ওয়ালীদ ইবনু উতবাহ। (ই.ফা ৭২৮০, ই.সে ৭৩৩৬) আবূ যার (রাঃ) তিনি শপথ করে বলতেন, ......... আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে- অতঃপর হুশায়মের অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা ৭২৮১,ই.সে, ৭৩৩৭)