6. মুসাফিরদের সালাত ও তার কসর

【1】

মুসাফিরদের সলাত এবং তার ক্বস্‌র (সংক্ষিপ্ত করা)

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী 'আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, বাড়িতে কিংবা সফরে যে কোন অবস্থায় প্রথমে সলাত দু' দু' রাক‘আত করে ফর্‌জ করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে সফরের সলাত দু' রাক‘আত ঠিক রাখা হলেও বাড়ীতে অবস্থানকালীন সলাতের রাক‘আত সংখ্যা বৃদ্ধি করা দেয়া হয়েছে। (ই. ফা. ১৪৪০ , ই. সে. ১৪৫০) [বিঃদ্রঃ হাদিস নং ১৪৫৫ দুইবার এসেছে, তাই প্রথমটি হাদিস নং ১৪৫৪ এর সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হল।] নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী 'আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, সলাত ফরয করার সময় আল্লাহ তাআলা দু ' রাক‘আত করে ফরয করেছিলেন। তবে পরে বাড়ীতে অবস্থানকালীন সলাতে বৃদ্ধি করে পূর্নাঙ্গ করা হয়েছে এবং সফরকালীন সলাত পূর্বের মত দু' রাক‘আতই রাখা হয়েছে। (ই. ফা. ১৪৪১, ই. সে. ১৪৫১) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) প্রথমে সলাত ফর্‌য হয়েছিল দু’ রাক‘আত করে। পরবর্তী সময়ে সফরকালীন সলাত দু’ রাক‘আত ঠিক রাখা হয়েছে কিন্ত বাড়ীতে অবস্থানকালীন সলাত পূর্ণাঙ্গ (অর্থাৎ চার রাক‘আত) করা হয়েছে। বর্ণনাকারী যুহরী বলেছেনঃ আমি ‘উরওয়াহ্‌কে জিজ্ঞেস করলাম-তাহলে কী কারণে ‘আয়িশা (রাঃ) সফরকালীন সলাত পুরো আদায় করতেন? জবাবে ‘উরওয়াহ্‌ বললেনঃ ‘আয়িশাহ্‌ ‘উসমানের ব্যাখ্যার মতো এ হাদীসটির ব্যাখ্যা করেছেন। (ই.ফা. ১৪৪২,ই.সে ১৪৫২) ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ আমি ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাবকে জিজ্ঞেস করলাম যে,আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “কাফিররা তোমাদেরকে কষ্ট দিবে এ আশঙ্কা থাকলে সলাত ক্বস্‌র করে আদায় করতে তোমাদের কোন দোষ হবে না”-(সূরাহ্‌ আন্‌ নিসা ৪:১০১)। কিন্ত এখন তো লোকেরা নিরাপত্তা লাভ করেছেন। (সুতরাং এখন ক্বস্‌র সলাত আদায় করার প্রয়োজন কী?) এ কথা শুনে ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব বললেনঃ তুমি যে কারনে বিস্মিত হয়েছ আমিও ঠিক একই কারণে বিস্মিত হয়েছিলাম (অর্থাৎ আমিও ক্বস্‌র সলাত আদায়ের কোন যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছিলাম না)। তাই উক্ত বিষয়ে আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ এটি তোমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সদাক্বাহ্‌ বা দান। সুতরাং তোমরা তাঁর দেয়া সদাক্বাহ্‌ গ্রহণ কর। (ই.ফা. ১৪৪৩,ই.সে ১৪৫৩) ইয়া’লা ইবনু উমাইয়্যাহ্ (রহঃ) আমি ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাবকে জিজ্ঞেস করলাম। এ পর্যন্ত বর্ণনা করার পর তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ইদরীস বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৪৪৪,ই.সে ১৪৫৪) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, তোমাদের নাবীর জবানীতে আল্লাহ তা’আলা বাড়ীতে অবস্থানকালীন সলাত চার রাক‘আত, সফরের সলাত দু’ রাক‘আত এবং ভীতিকর অবস্থানকালীন সলাত এক রাক‘আত ফারয্‌ করেছেন। (ই.ফা. ১৪৪৫, ই.সে ১৪৫৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, মহান আল্লাহ তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জবানীতে মুসাফিরের সলাত দু’ রাক‘আত, মুকীম বা বাড়ীতে অবস্থানকালীন সলাত চার রাক‘আত এবং ভীতিকর অবস্থায় সলাত এক রাক‘আত ফরয করেছেন। (ই.ফা. ১৪৪৬, ই.সে ১৪৫৬) মূসা ইবনু সালামাহ্‌ আল হুযালী (রহঃ) তিনি বলেন,আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি মাক্কায় অবস্থানকালে যদি ইমামের পিছনে সলাত আদায় না করি তাহলে কীভাবে সলাত আদায় করব। জবাবে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস বললেন, দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করবে। এটি আবুল ক্বাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত। (ই.ফা. ১৪৪৭, ই.সে ১৪৫৭) ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) একই সানদে অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৪৪৮, ই.সে ১৪৫৭-ক) ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তিনি বলেন,আমি মাক্কার কোন একটি পথে ‘আসিম ইবনু ‘উমার-এর সাথে চলছিলাম। এ সময় তিনি আমাদের সাথে করে যুহরের সলাত আদায় করলেন এবং মাত্র দু’ রাক‘আত আদায় করলেন। তারপর তিনি তাঁর কাফিলার মধ্যে ফিরে আসলেন। আমরাও তাঁর সাথে ফিরে আসলাম। তিনি সেখানে বসে পড়লে আমরাও তাঁর সাথে বসে পড়লাম। এ সময় যে স্থানে তিনি সলাত আদায় করেছিলেন সে স্থানে তাঁর দৃষ্টি পড়লে কিছু সংখ্যক লোককে সেখানে দাঁড়ানো দেখতে পেয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এরা ওখানে কী করছে? আমি বললাম, তারা সুন্নাত পড়ছে। তিনি এ কথা শুনে বললেনঃ ভাতিজা, আমাদেরকে যদি সুন্নাত আদায় করতে হ’ত তাহলে আমি ফরয সলাত ও পূর্ণ আদায় করতাম। আমি সফরে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে থেকে দেখেছি আমৃত্যু তিনি দু’ রাক’আতের অধিক আদায় করেননি। আমি সফরে আবূ বাক্‌রের সাথে থেকে দেখেছি আল্লাহ তাকে ওফাত দান না করা পর্যন্ত তিনি দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করেছেন। আমি সফরে ‘উমারের সাথে দেখেছি তিনি দু’রাক‘আত সলাতই আদায় করেছেন। মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “আল্লাহর রসূলের জীবনে তোমাদের অনুসরনের উত্তম নমুনা রয়েছে”-(সূরাহ আল আহ্‌যাব ৩৩ : ২১)। (ই.ফা. ১৪৪৯,ই.সে ১৪৫৮) হাফস্‌ ইবনু ‘আসিম থেকে (রহঃ) তিনি বলেন, একবার আমি সাংঘাতিকভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়লাম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার আমাকে দেখতে আসলেন। সে সময় আমি তাঁকে সফরে সুন্নাত সলাত আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন- আমি সফরে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গী হয়েছি। কিন্ত কখনো তাঁকে নাফ্‌ল সলাত আদায় করতে দেখেনি। আর আমি যদি সফরে সুন্নাত সলাত আদায় করতাম তাহলে ফরয সলাত ও পূর্ণ করে আদায় করতাম। কেননা আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ ‘‘আল্লাহর রসূলের জীবনে তোমাদের অনুসরণের জন্য উত্তম নীতিমালা রয়েছে”-(সূরাহ্‌ আল আহ্‌যাব ৩৩ : ২১)। (ই.ফা. ১৪৫০, ই.সে ১৪৫৯) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বিদায় হাজ্জের সফরে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহ্‌ থেকে যুহরের সলাত চার রাক‘আত আদায় করে রওয়ানা হয়েছিলেন এবং যুল-হুলায়ফাতে পৌছে ‘আস্‌রের সলাত দু’ রাক‘আত আদায় করেছিলেন। (ই.ফা. ১৪৫১, ই.সে ১৪৬০) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জের সফরে আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মাদীনায় যুহরের সলাত চার রাক‘আত আদায় করে বের হয়েছি এবং যুল-হুলায়ফাতে পৌছে তাঁর সাথে ‘আস্‌রের সলাত মাত্র দু’ রাক‘আত আদায় করেছি। (ই.ফা. ১৪৫২, ই.সে ১৪৬১) ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইয়াযীদ আল হুনায়ী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে সফররত অবস্থায় সলাতে ক্কস্‌র করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তিন মাইল অথবা তিন ফারসাখ দূরত্বের সফরে বের হতেন তখনই দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইয়াযীদ আল হুনায়ী তিন মাইল দূরত্বের কথা বলেছেন, না তিন ফারসাখ দূরত্বের কথা বলেছেন তাতে শু’বার সন্দেহ রয়েছে। (ই.ফা. ১৪৫৩, ই.সে ১৪৬২) জুবায়র ইবনু নুফায়র (রহঃ) তিনি বলেন, আমি শুরাহ্‌বীল ইবনু আস্‌ সিম্‌ত্ব (রাঃ)-এর সাথে সতের বা আঠার মাইল দূরবর্তী এক গ্রামে গেলাম। তিনি সেখানে (চার রাক’আতের পরিবর্তে) দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। আমি তাঁকে কারণ জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেলনঃ আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যা করতে দেখেছি তাই করে থাকি। (ই.ফা. ১৪৫৪, ই.সে ১৪৬৩) শু’বাহ্ (রহঃ) শু’বাহ্ (রহঃ) এ সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি (শু’বাহ্) শুরাহবীল না বলে মুহাম্মাদ ইবনুস্ সিম্ত্ব (রহঃ) উল্লেখ করেছেন। তিনি তার বর্ণিত হাদীসে এতটুকু কথা অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তিনি হিম্স-এর আঠার মাইল দূরবর্তী “দূমীন” নামে পরিচিত একটি স্থানে উপনীত হলেন। (ই.ফা. ১৪৫৫, ই.সে ১৪৬৪) আনাস ইবন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, (বিদায় হাজ্জের সফরে) আমরা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মাদীনাহ্‌ থেকে মাক্কার দিকে বের হলাম। (এ সফরে) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সব ওয়াক্তের সলাতই দু’ রাক‘আত করে আদায় করেছেন এবং মাদীনায় ফিরে এসেছেন। বর্ণনাকারী ইসহাক্ব ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া বর্ণনা করেছেন- আমি আনাস ইবনু মালিককে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি মাক্কায় ক’দিন পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন? জবাবে আনাস ইবনু মালিক বললেনঃ দশদিন। (ই.ফা. ১৪৫৬, ই.সে ১৪৬৫) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হুশায়ম বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৪৫৭,ই.সে ১৪৬৬) ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু আবূ ইসহাক্ব (রহঃ) তিনি বলেন,আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমরা মাদীনাহ্‌ থেকে হাজ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম …। এরপর তিনি পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করলেন। (ই.ফা. ১৪৫৮, ই.সে ১৪৬৭) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে এতে তিনি হাজ্জের কথা উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ১৪৫৯, ই.সে ১৪৬৮)

【2】

মিনায় সলাত ক্বস্‌র করা

সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তাঁর পিতা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার-এর মাধ্যমে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি মিনা এবং অন্যান্য স্থানে মুসাফিরের মতো দু’ রাক‘আত করে সলাত আদায় করেছিলেন। আর আবূ বকর, ‘উমার তাদের খিলাফাত যুগে এবং ‘উসামান তাঁর খিলাফাতের প্রথম দিকে সফরকালের সলাত দু’ রাক‘আত করে আদায় করেছেন এবং পরবর্তী সময়ে পূর্ণ চার রাক‘আত আদায় করেছেন। (ই.ফা. ১৪৬০,ই.সে ১৪৬৯) যুহ্‌রী (রহঃ) তিনি এতে ‘মিনাতে' কথাটি উল্লেখ করেছেন। তবে ‘অন্যান্য স্থানে’ কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ১৪৬১, ই.সে ১৪৭০) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, (বিদায় হাজ্জের সময়) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনাতে (ফরয সলাত চার রাক’আতের পরিবর্তে) দু’ রাক‘আত আদায় করেছেন। পরে আবূ বাক্‌র তাঁর খিলাফাতকালে তাই করেছেন। আবূ বাক্‌রের পর ‘উমারও তাই করেছেন। কিন্ত পরে চার রাক‘আত আদায় করেছেন। সুতরাং, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার ইমামের পিছনে সলাত আদায় করলে চার রাক‘আত আদায় করতেন। কিন্ত যখন তিনি একাকী সলাত আদায় করতেন দু’ রাক‘আত আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৪৬২, ই.সে ১৪৭১) ’উবায়দুল্লাহ (রহঃ) একই সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৪৬৩, ই.সে ১৪৭২) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জের সময় মিনাতে অবস্থানকালে মুসাফিরের ন্যায় দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করেছেন। অতঃপর আবূ বাক্‌র, ‘উমার এবং ‘উসমানও তাঁদের খিলাফাতকালে আট বছর অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহে) ছয় বছর যাবৎ তাই করেছেন। হাফস্‌ বর্ণনা করেছেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার মিনাতে অবস্থানকালে সলাত দু’ রাক‘আত আদায় করতেন এবং পরে তাঁর বিছানায় চলে আসলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চাচা, আপনি আরও দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলে ভাল হ’ত। তিনি বললেনঃ আমার যদি এরূপ করতে হ’ত তাহলে আমি ফরয সলাত পূর্নাঙ্গ করে (চার রাক‘আত) আদায় করতাম। (ই.ফা. ১৪৬৪, ই.সে ১৪৭৩) শু‘বাহ্ (রহঃ) একই সানাদে হাদীসটি বর্ণিত। তবে তারা তাঁদের বর্ণিত হাদীসে মিনাতে অবস্থাকালে কথাটি উল্লেখ করেননি। বরং বলেছেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে এভাবে সলাত আদায় করেছেন। (ই.ফা. ১৪৬৫, ই.সে ১৪৭৪) 'আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি বলেন, 'উসমান মিনাতে অবস্থানকালে আমাদের সাথে নিয়ে ফারয্‌ সলাত চার রাক‘আত আদায় করলেন। বিষয়টি 'আবদুল্লাহ ইবনু মাস'ঊদকে অবহিত করা হলে তিনি ''ইন্না- লিল্লা-হি ওয়া ইন্না- ইলাই-হি র-জিঊন'' পরলেন। পরে তিনি বললেনঃ আমি মিনাতে অবস্থানকালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দু' রাক‘আত সলাত আদায় করেছি। আবূ বাক্‌র সিদ্দীকের সাথেও দু' রাক‘আত সলাত আদায় করেছি। আমি মিনাতে অবস্থানকালে 'উমার ইবনুল খাত্ত্বাবের সাথেও দু' রাক‘আত সলাত আদায় করেছি। চার রাক'আতের পরিবর্তে দু' রাক‘আত সলাতই যদি আমার জন্য মাকবূল হ'ত তাহলে কতই না ভাল হ'ত। (ই.ফা. ১৪৬৬, ই. সে. ১৪৭৫) আবূ বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ্ ও আবূ কুরায়ব, ‘উসমান ইবনু আবূ শায়বাহ্, ইসহাক্ব ও ইবনু খশ্রাম (রহঃ) ….. সকলেই আ’মাশ একই সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৪৬৭, ই.সে ১৪৭৬) হারিসাহ্‌ ইবনু ওয়াহ্‌ব (রহঃ) তিনি বলেন, মিনাতে অবস্থানকালে আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করেছি। অথচ লোকজন নিরাপদ ও আতঙ্কহীন ছিল। (ই.ফা. ১৪৬৮,ই.সে ১৪৭৭) হারিসাহ্‌ ইবনু ওয়াহ্‌ব আল খুযা‘ঈ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি বিদায় হাজ্জের সময় মিনাতে অবস্থানকালে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পিছনে সলাত আদায় করেছি। তিনি তখন দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করেছিলেন। তখন তাঁর পিছনে বহু সংখ্যক লোক ছিল। ইমাম মুসলিম (রহঃ) বলেনঃ হারিসাহ্‌ ইবনু ওয়াহ্‌ব খুযা‘ঈ ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাবের ভাই। তারা একই মায়ের গর্ভজাত সন্তান। (ই.ফা. ১৪৬৯, ই.সে ১৪৭৮)

【3】

বর্ষণমুখর দিনে গৃহে সলাত আদায়

নাফি ‘ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেন, একদিন ঝড় ও শীতের রাতে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সলাতে আযান দিলেন। আযানে তিনি বললেনঃ তোমরা যার যার বাড়ীতে সলাত আদায় করে নাও। পরে তিনি বললেন যে, শীতের রাত অথবা মেঘাচ্ছন্ন রাত হলে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয়ায্‌যিনকে এ কথা ঘোষণা করতে আদেশ দিতেনঃ ‘তোমরা বাড়ীতে সলাত আদায় কর।‘ (ই.ফা. ১৪৭০, ই.সে ১৪৭৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার তিনি শীত ও ঝড়-বৃষ্টি কবলিত এক রাতে সলাতের আযান দিলেন। তিনি তার আযানে শেষে উচ্চৈঃস্বরে বলেন, শোন! তোমরা নিজ নিজ অবস্থানস্থলে সলাত আদায় করে নাও। শোন! তোমরা নিজ নিজ অবস্থানস্থলে সলাত আদায় করে নাও। অতঃপর তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফররত অবস্থায় শীত বা বর্ষণমুখর রাতে মুয়ায্‌যিনকে নির্দেশ দিতেন, সে যেন বলে, শোন! তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে সলাত আদায় করে নাও। (ই.ফা. ১৪৭১, ই.সে ১৪৭৯-ক) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) একবার তিনি ‘যজনান’ নামক স্থানে সলাতের আযান দিলেন। এ পর্যন্ত বর্ণনা করার পর তিনি উপরে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করলেন। তবে এতটুকু কথা অধিক বর্ণনা করলেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার বললেনঃ তোমরা যার যার অবস্থান স্থলেই সলাত আদায় করে নাও। তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার-এর কথা, “তোমরা যার যার অবস্থান স্থলেই সলাত আদায় করে নাও” কথাটি দ্বিতীয়বার বললেন না। (ই.ফা. ১৪৭২, ই.সে. ১৪৮০) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক সফরে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গী ছিলাম। ইতোমধ্যে বৃষ্টি হলে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কেউ চাইলে নিজের জায়গাতে অবস্থান করে সেখানেই সলাত আদায় করে নিতে পারো। (ই.ফা. ১৪৭৩, ই.সে. ১৪৮১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এক বৃষ্টিঝরা দিনে তিনি মুয়াযযিনকে বললেনঃ আজকের আযানে যখন তুমি “আশহাদু আল্লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লা-হ” বলে শেষ করবে তার পরে কিন্তু “হাইয়্যা ‘আলাস সলা-হ” বলবে না। বরং বলবে, “সল্লু ফী বুয়ূতিকুম” অর্থাৎ- তোমরা তোমাদের বাড়ীতেই সলাত আদায় করে নাও। হাদীসের বর্ণনা কারী (‘আবদুল্লাহ ইবনু হারিস) বলেছেনঃ এরূপ করা লোকজন পছন্দ করল না বলে মনে হ’ল। তা দেখে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস বললেনঃ তোমরা এ কাজকে আজগুবি মনে করছ? অথচ যিনি আমার চেয়ে উত্তম তিনি এরূপ করেছেন। জুমু’আর সলাত আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু তোমরা কাদাযুক্ত পিচ্ছিল পথে কষ্ট করে চলবে তা আমি পছন্দ করিনি। (ই.ফা. ১৪৭৪, ই.সে. ১৪৮২) ‘আবদুল হামীদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু হারিস (রহঃ) - কে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, এক বৃষ্টিঝরা দিনে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস আমাদের সামনে বক্তৃতা করলেন। এতটুকু বর্ণনা করে তিনি পূর্বোক্ত ইবনু ‘উলাইয়্যাহ্‌ বর্ণিত। তিনি বলেছেন, হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি জুম’আর দিনের কথা উল্লেখ করেননি। তিনি বলেছেন, যিনি আমার চেয়ে উত্তম অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছেন। আবূ কামিল বলেছেনঃ হাম্মাদ ‘আসিম-এর মাধ্যমে ‘আবদুল্লাহ ইবনু হারিস থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৪৭৫, ই.সে. ১৪৮৩) আইয়ূব ও 'আসিম আল-আহ্ওয়াল (রহঃ) একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি পূর্বোক্ত হাদীসের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ১৪৭৬, ই.সে. ১৪৮৪) ‘আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস (রহঃ) তিনি বলেন, এক বৃষ্টিঝরা জুমু‘আর দিনে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস-এর (নিযুক্ত) মুয়াযযিন আযান দিলেন। এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি ইবনু ‘উলাইয়্যাহ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বিষয়বস্তু বর্ণনা করলেন। তিনি (‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস) বললেনঃ তোমরা কর্দম্ময় ও পিচ্ছিল পথে চলবে তা আমার পছন্দ হয়নি। (ই.ফা. ১৪৭৭, ই.সে. ১৪৮৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস (রহঃ) 'আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) বৃষ্টিঝরা জুমু’আর দিনে তার (নিযুক্ত) মুয়ায্‌যিনকে আযান দেয়ার আদেশ দিলেন। মা’মার-এর হাদীসে রয়েছে, বৃষ্টিঝরা জুমু’আর দিনে উক্ত বর্ণনাকারীর অনুরূপ এবং মা’মার-এর বর্ণিত হাদীসে এ কথাও আছে যে, যিনি আমার চেয়ে উত্তম অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছেন। (ই.ফা. ১৪৭৮, ই.সে. ১৪৮৬) আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস (রহঃ) এর মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) বৃষ্টিঝরা জুমুআর দিনে তার (নিযুক্ত) মুয়াজ্জিনকে আযান দেয়ার আদেশ দিলেন। এভাবে তিনি অন্য বর্ণনাকারীদের অনুরূপ বর্ণনা করলেন। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪৭৯, ইসলামীক সেন্টার ১৪৮৭)

【4】

সফরে সওয়ারী জন্তুর উপর নাফ্‌ল সলাত আদায় বৈধ, তারটি মুখটি যেদিকে হোক না কেন

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সওয়ারীর মুখ যেদিকেই থাক না কেন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সওয়ারীর পিঠে বসে নাফ্‌ল সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৪৮০, ই.সে. ১৪৮৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) উটের মুখ যেদিকেই থাকুক না কেন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উটের পিঠে বসেই নাফ্‌ল সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৪৮১, ই.সে. ১৪৮৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা থেকে মাদীনায় আসার পথে যে দিকেই তাঁর মুখ হোক না কেন সওয়ারীতে বসে সলাত আদায় করতেন। এ ব্যাপারেই আয়াত (অর্থ) “তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাবে সেটিই আল্লাহ্‌র দিক” – (সূরাহ আল বাক্বারাহ ২ : ১১৫) অবতীর্ণ হয়। (ই.ফা. ১৪৮২, ই.সে. ১৪৯০) আবূ কুরায়ব, ইবনু নুমায়র (রহঃ) ...... সকলে ‘আবদুল মালিক (রহঃ) একই সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনুল মুবারাক ও ইবনু আবূ যায়িদাহ্ বর্ণিত হাদীসে এ কথা উল্লেখিত হয়েছে যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) “তোমরা যেদিকেই মুখ করনা কেন সবই আল্লাহ্‌র দিক” – (সূরাহ আল বাক্বারাহ ২ : ১১৫)। এ আয়াতটি তিলওয়াত করে বললেন, এ আয়াতটি এ ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়। (ই.ফা. ১৪৮৩, ই.সে. ১৪৯১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একটি গাধার পিঠে আরোহণ করে খায়বারের দিকে মুখ করে সলাত আদায় করতে দেখেছি। (ই.ফা. ১৪৮৪, ই.সে. ১৪৯২) সা‘ঈদ ইবনু ইয়াসার (রহঃ) তিনি বলেন, একদিন আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমারের সাথে মাক্কার পথ ধরে চলছিলাম। ভোর হয়ে যাচ্ছে মনে করে একসময় সওয়ারী থেকে নেমে বিত্‌র এর সলাত আদায় করলাম এবং পড়ে তাঁর কাছে গিয়ে পৌছলাম। তখন 'আবদুল্লাহ ইবনে 'উমার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোথায় ছিলে? আমি বললাম, ফাজ্‌রের সময় হয়ে যাচ্ছে দেখে সওয়ারী থেকে নেমে বিত্‌র এর সলাত আদায় করলাম। এ কথা শুনে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার বললেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবনে কি তোমার অনুসরণের জন্য উত্তম আদর্শ নেই। আমি বললাম, আল্লাহ্‌র শপথ! তা অবশ্যই আছে। তিনি বললেন, উটের পিঠে বসেই রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্‌র সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৪৮৫, ই.সে. ১৪৯৩) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, সওয়ারীর মুখ যেদিকেই থাক না কেন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সফরে) সওয়ারীর পিঠে সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৪৮৬, ই.সে. ১৪৯৪) 'আবদুল্লাহ ইবনু দীনার বলেছেনঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমারও এরূপ করতেন। (অর্থাৎ সফরে তিনি সওয়ারীর পিঠে আরোহণরত অবস্থায় নাফ্‌ল সলাত আদায় করতেন। সওয়ারী কোন্‌ দিকে মুখ করে চলছে তাতে কোন দোষ আছে বলে মনে করতেন না।) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সওয়ারীর উপর বসেই বিত্‌র সলাত আদায় করতেন। (ই. ফা. ১৪৮৭, ই. সে. ১৪৯৫) 'আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ) তিনি বলেন, সওয়ারী যে দিকেই মুখ করে চলুক না কেন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওয়ারীর উপর বসে নাফ্‌ল সলাত আদায় করতেন এবং সওয়ারীর উপরেই বিত্‌র সলাত আদায় করতেন। তবে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওয়ারীর উপর ফরয সলাত আদায় করতেন না। (ই.ফা. ১৪৮৮, ই.সে. ১৪৯৬) 'আবদুল্লাহ ইবনু 'আমির ইবনু রবী'আহ্ (রাঃ) তিনি সফররত অবস্থায় রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাতের বেলা নফল সলাত সওয়ারীর পিঠে বসে যেদিকে সওয়ারীর মুখ ছিল সেদিকে মুখ করে আদায় করতে দেখেছেন। (ই.ফা. ১৪৮৯, ই.সে. ১৪৯৭) আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) তিনি বলেছেনঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) যখন শাম (যা বর্তমানে সিরিয়া) থেকে (অথবা শামে) আসলেন, তখন আমরা তাঁর সাথে আইনুত্ তাম্‌র নামক স্থানে সাক্ষাৎ করলাম। তখন দেখলাম তিনি একটি গাধার পিঠে বসে ঐ দিকে মুখ করে সলাত আদায় করছেন। বর্ণনাকারী হুমাম ক্বিবলার বাম দিকে ইশারা করে দেখালেন। তখন আমি তাঁকে বললাম, আমি আপনাকে ক্বিবলাহ্ ছাড়া অন্য দিকে মুখ করে সলাত আদায় করতে দেখলাম যে, তিনি বললেনঃ যদি আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এরূপ করতে না দেখতাম তাহলে আমিও এরূপ করতাম না। (ই.ফা. ১৪৯০, ই.সে. ১৪৯৮)

【5】

সফরে দু' ওয়াক্তের সলাত একত্রে (এক ওয়াক্তে) আদায় জায়িয

'আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ) তিনি বলেন, কোন সফরে দ্রুত চলতে হলে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিব এবং 'ইশার সলাত একসাথে আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৪৯১, ই.সে. ১৪৯৯) নাফি' (রহঃ) কোন সফরে 'আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ) -কে দ্রুত পথ চলতে হলে সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশের লালিমা অদৃশ্য হওয়ার পর তিনি মাগরিব এবং 'ইশার সলাত একত্র করে আদায় করতেন। এ ব্যাপারে তিনি বলতেনঃ সফরে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যখন দ্রুত চলতে হ'ত তখন তিনি মাগরিব এবং 'ইশার সলাত একসাথে আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৪৯২, ই.সে. ১৫০০) সালিম ইবনু 'আবদুল্লাহ (রাঃ) -এর মাধ্যমে তাঁর পিতার তিনি ('আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার) বলেছেনঃ আমি দেখেছি সফরে দ্রুত পথ চলার প্রয়োজন হলে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিব এবং 'ইশার সলাত একসাথে আদায় করে নিতেন। (ই.ফা. ১৪৯৩, ই.সে. ১৫০২) 'আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি দেখেছি সফরে কখনো রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দ্রুত চলতে মাগরিব এবং 'ইশার সলাত দেরী করে একসাথে আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৪৯৪, ই.সে. ১৫০৩) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ার পূর্বেই যদি তিনি সফরে রওয়ানা হতেন তাহলে 'আস্‌রের সলাতের সময় পর্যন্ত দেরী করতেন এবং তারপর কোথাও থেমে যুহর ও 'আস্‌রের সলাত একসাথে আদায় করতেন। কিন্তু রওয়ানা হওয়ার পূর্বেই যদি সূর্য ঢলে পড়ত তাহলে তিনি যুহরের সলাত আদায় করে তারপর যাত্রা করতেন। (ই.ফা. ১৪৯৫, ই.সে. ১৫০৪) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে থাকাকালীন দু'ওয়াক্ত সলাত একসাথে আদায় করতে মনস্থ করলে যুহর সলাত আদায় করতে বিলম্ব করতেন। পরে 'আস্‌রের ওয়াক্ত শুরু হলে তিনি যুহর ও 'আস্‌রের সলাত এক সাথে আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৪৯৬, ই.সে. ১৫০৫) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সফররত অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন তাড়াহুড়ো থাকলে 'আস্রের সময় পর্যন্ত যুহরের সলাত আদায় করতে দেরী করতেন এবং 'আস্রের প্রাথমিক সময়ে যুহর ও 'আস্রের সলাত একসাথে আদায় করতেন। আর এ অবস্থায় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিবের সলাত ও দেরী করে পশ্চিমাকাশে রক্তিম আভা অন্তর্হিত হওয়ার সময় মাগরিব ও 'ইশার সলাত একসাথে আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৪৯৭, ই.সে. ১৫০৬)

【6】

আবাসে দু' ওয়াক্তের সলাত একত্রে আদায়

'আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভীতিকর অবস্থা কিংবা সফররত অবস্থা ছাড়াই এবং 'আস্‌রের সলাত একসাথে এবং মাগরিব ও 'ইশার সলাত একসাথে আদায় করেছেন। (ই.ফা. ১৪৯৮, ই.সে. ১৫০৭) 'আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, সফররত বা ভীতিকর অবস্থা ছাড়াই রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় অবস্থানকালে যুহর এবং 'আস্‌রের সলাত একসাথে আদায় করেছেন। আবুয্ যুবায়র বলেছেনঃ (এ হাদীস শুনে) আমি সা‘ঈদ ইবনু যুবায়রকে জিজ্ঞেস করলাম যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছেন? তিনি বললেনঃ তুমি যেন আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমিও তেমনি 'আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ)-কে (বিষয়টি) জিজ্ঞেস করেছিলাম। জবাবে তিনি আমাকে বলেছিলেন, এ দ্বারা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইচ্ছা ছিল তাঁর উম্মাতের মনে যেন কোন প্রকার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব না থাকে। [২৭] (ই.ফা. ১৪৯৯, ই.সে. ১৫০৮) 'আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তাবূক যুদ্ধকালে কোন এক সফরে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একাধিক) সলাত একসাথে করেছিলেন। সুতরাং তিনি যুহর এবং 'আস্‌র আর মাগরিব ও 'ইশার সলাত একত্রে আদায় করেছিলেন। সা‘ঈদ ইবনু যুহায়র বর্ণনা করেছেন- আমি 'আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাসকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তিনি কী কারণে এরূপ করেছিলেন জবাবে সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র বললেন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উম্মাতকে বাধ্য করতে বা কষ্ট দিতে চাননি। (ই.ফা. ১৫০০, ই.সে. ১৫০৯) মু'আয (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা তাবূক অভিযানে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ছিলাম। (এ সফরে) তিনি যুহর ও 'আস্‌র এবং মাগরিব ও 'ইশার সলাত একসাথে একই ওয়াক্তে আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৫০১, ই.সে. ১৫১০) মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, তাবূক অভিযানকালে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহর ও ‘আস্‌রের সলাত এবং মাগরীব ও ‘ইশার সলাত একসাথে আদায় করেছেন। আবূ তূফায়ল বর্ণনা করেছেনঃ আমি মু’আয ইবনু জাবালকে জিজ্ঞেস করলাম, কী কারণে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছেন? জবাবে মু’আয ইবনু জাবাল বললেন- তিনি তাঁর উম্মাতকে বাধ্যবাধকতার মধ্যে ফেলতে বা কষ্ট দিতে চাননি (এ কারণেই তিনি এরূপ করেছেন)। (ই.ফা. ১৫০২, ই.সে. ১৫১১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, মাদীনায় অবস্থানরত কোন ভীতিকর পরিস্থিতি কিংবা বৃষ্টি-বাদল ছাড়াই রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহর, ‘আস্‌র, মাগরিব এবং ‘ইশার সলাত আদায় করেছেন। (ওয়াকী’ বর্ণিত হাদীসে) এ কথার উল্লেখ রয়েছে যে, সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র বলেছেন- আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললাম, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করেছেন এজন্যে যাতে তাঁর উম্মাতের কোন কষ্ট না হয়। তবে আবূ মু’আবিয়াহ্‌ বর্ণিত হাদীসে আছে যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -কে বলা হ’ল- রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী উদ্দেশে এরূপ করেছেন? জবাবে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস বললেনঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চেয়েছেন তাঁর উম্মাতের যেন কোন কষ্ট না হয়। (ই.ফা. ১৫০৩ ই.সে. ১৫১২) ’আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পিছনে আট রাক‘আত (ফারয্‌) সলাত এবং একত্রে সাত রাক‘আত সলাত আদায় করেছি। আমি বললামঃ হে আবুশ্‌ শা’সা! আমার মনে হয় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের সলাত দেরী করে শেষ ওয়াক্তে এবং ‘আস্‌রের সলাত প্রথমভাগে আদায় করেছেন। আর তেমনি মাগরিবের সলাত দেরী করে এবং ‘ইশার সলাত প্রথমভাগে আদায় করেছেন। এ কথা শুনে তিনি বললেন, আমিও তাই মনে করি। (ই.ফা. ১৫০৪,ই.সে. ১৫১৩) ’আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মাদীনায় অবস্থানরত অবস্থায় রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাত রাক‘আত ও আট রাক‘আত সলাত একত্রে আদায় করেছেন। অর্থাৎ যুহর ও ‘আস্‌রের আট রাক‘আত একসাথে এবং মাগরিব ও ‘ইশার সাত রাক‘আত এক সাথে আদায় করেছেন। (ই.ফা. ১৫০৫, ই.সে. ১৫১৪) ’আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, একদিন ‘আস্‌রের সলাতের পর ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস আমাদের সামনে বক্তব্য পেশ করতে থাকলেন। এ অবস্থায় সূর্য ডুবে গেল এবং তারকারাজি দৃষ্টিগোচর হতে থাকল। তখন লোকজন বলতে শুরু করল, সলাত! সলাত! (অর্থাৎ সলাতের সময় চলে যাচ্ছে, সলাত আদায় করুন)। ‘আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব বলেনঃ এ সময় বানূ তামীম গোত্রের একজন লোক তাঁর কাছে আসল এবং শান্ত ও বিরত না হয়ে বারবার আস্‌ সলাত (সলাত! সলাত!) বলে চলল। তা দেখে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ তোমার সর্বনাশ হোক! তুমি কি আমাকে সুন্নাত (রসূলের পদ্ধতি) শিখাচ্ছ? পরে তিনি বললেনঃ আমি দেখেছি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহর ও ‘আস্‌রের সলাত এবং মাগরিব ও ‘ইশার সলাত একত্র করে আদায় করেছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব বলেন, এ কথা শুনে আমার মনে কিছু প্রশ্ন জাগল। তাই আমি আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর কথার সত্যতা স্বীকার করলেন। (ই.ফা. ১৫০৬, ই.সে. ১৫১৫) ’আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব আল ‘উক্বায়লী (রহঃ) তিনি বলেন, একদিন জনৈক ব্যক্তি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে বলল- সলাতের সময় হয়েছে, সলাত আদায় করুন। কিন্তু তিনি চুপ করে রইলেন। সে আবার বলল- সলাত আদায় করুন। তিনি এবারও চুপ করে থাকলেন। লোকটি পুনরায় বলল- সলাতের সময় হয়েছে, সলাত আদায় করুন। এবার ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেনঃ তুমি আমাকে সলাত সম্পর্কিত ব্যাপারে শিখাচ্ছ? আমরা তো রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়ে দু’ওয়াক্ত সলাত একসাথে আদায় করতাম। (ই.ফা. ১৫০৭, ই.সে. ১৫১৬)

【7】

সলাত শেষে ডানে-বামে ফেরার বৈধতা

’আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমাদের মধ্য হতে কেউ যেন তার পক্ষ থেকে শাইত্বনের জন্য কোন অংশ নির্ধারণ না করে। অর্থাৎ সে যেন এরূপ মনে না করে যে, সলাত শেষে ডান দিকে ছাড়া অন্য কোন দিকে মুখ ফিরানো যাবে না। কেননা আমি অধিকাংশ সময় রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বাম দিকে মুখ ফিরাতে দেখেছি। (ই.ফা. ১৫০৮, ই.সে. ১৫১৭) ইসহাক্ব ইবনু ইব্রাহীম, ‘আলী ইবনু খশ্রাম (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন উভয়ে আ’মাশ একই সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৫০৯, ই.সে. ১৫১৮) ইসমা‘ঈল ইবনু ‘আবদুর রহমান আস্‌ সুদ্দী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি সলাত শেষ করে কোন্‌ দিকে মুখ ফিরাব- ডানে না বাঁয়ে? তিনি বললেনঃ আমি অধিকাংশ সময় রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি (সলাত শেষ করে) ডান দিকে মুখ ফিরাতেন। (ই.ফা. ১৫১০, ই.সে ১৫১৯) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সলাত শেষে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ডানদিকে (মুখ) ফিরাতেন। (ই.ফা. ১৫১১, ই.সে. ১৫২০)

【8】

(মুক্তাদীর) ইমামের ডানপাশে থাকা মুস্তাহাব হওয়া

বারা ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পিছনে সলাত আদায় করতাম তখন পিছনে তাঁর ডান দিকে দাঁড়ানো পছন্দ করতাম যাতে তিনি ঘুরে বসলে আমাদের দিকে মুখ করে বসেন। বারা ইবনু ‘আযিব বলেন, আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, “হে আমার রব! যেদিন তুমি তোমার বান্দাদেরকে পুনরায় জীবিত করবে; অথবা বলেছেন, একত্রিত করবে সেদিনের 'আযাব থেকে আমাকে রক্ষা কর।” (ই.ফা. ১৫১২, ই.সে. ১৫২১) মিস‘আর (রহঃ) একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন- তবে এ সানাদে বর্ণিত হাদীসটিতে তিনি “আমাদের দিকে ঘুরে বসেন” কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ১৫১৩,ই.সে. ১৫২২)

【9】

মুয়ায্‌যিন ইক্বামাত দেয়া শুরু করলে নাফ্‌ল সলাত শুরু করা মাকরূহ

আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলে ফরয সলাত ছাড়া অন্য সলাতের নিয়্যাত করা যাবে না। (ই.ফা. ১৫১৪, ই.সে ১৫২৩) মুহাম্মাদ ইবনু হাতিম ও ইবনু রাফি’ (রহঃ) শাবাবাহ্ (রহঃ) হতে, তিনি ওয়ারক্বা (রহঃ) সূত্রে একই সানাদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। (ই.ফা. ১৪১৫, ই.সে. ১৫২৩-ক) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ফরয সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলে তখন উক্ত ফরয ব্যতীত অন্য কোন সলাত আদায় করা যাবে না। (ই.ফা. ১৫১৬, ই.সে. ১৫২৩-খ) যাকারিয়্যা ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ) উক্ত সানাদে অনুরূপ বিষয়বস্তু সম্বলিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৫১৭, ই.সে. ১৫২৪) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছে। হাম্মাদ বর্ণনা করেছেন- অতঃপর আমি ‘উমার ইবনু খাত্ত্বাবের সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি আমাকে হাদীসটি বর্ণনা করে শুনালেন। তবে তিনি হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেননি। (ই.ফা. ১৫১৮, ই.সে. ১৫২৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মালিক বুহায়নাহ্‌ (রাঃ) একদিন ফাজ্‌রের সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতরত জনৈক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে কিছু বললেন যা আমরা বুঝতে পারলাম না। সলাত শেষে আমরা তাকে ঘিরে ধরলাম। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলামঃ রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাকে কী বললেন? সে বলল, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ মনে হচ্ছে কেউ ফাজ্‌রের সলাত চার রাক‘আত আদায় করছে। ক্বা’নাবী বর্ণনা করেছেন- ‘আবদুল্লাহ ইবনু মালিক ইবনু বুহায়নাহ্‌ তার পিতা বুহায়নাহ্‌ থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইমাম মুসলিম বলেছেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মালিক তার পিতা বুহাইনাহ্‌ থেকে বর্ণনা করেন ক্বা’নাবীর এ উক্তি ভুল। (ই.ফা. ১৫১৯, ই.সে. ১৫২৬) ইবনু বুহায়না (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন ফাজ্‌রের সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, মুয়ায্‌যিন ইক্বামাত দিচ্ছে আর সে লোকটি সলাত আদায় করছে। তখন তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তুমি কি ফাজ্‌রের (ফরয ) সলাত চার রাক‘আত আদায় করবে? (ই.ফা. ১৫২০, ই.সে. ১৫২৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি মাসজিদে আসল। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে সময় ফাজ্‌রের সলাত আদায় করেছিলেন। লোকটি মাসজিদের এক পাশে গিয়ে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সলাতে শামিল হ’ল। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফেরার পর তাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ হে অমুক! তুমি কোন্‌ দু’ রাক‘আত সলাতকে ফরয সলাতরূপে গণ্য করলে? একাকী যে দু’রাক‘আত আদায় করলে সে দু’রাক‘আতকে, না আমাদের সাথে যে দু’ রাক‘আত আদায় করলে সে দু’ রাক‘আতকে? [২৮] (ই.ফা ১৫২১, ই.সে. ১৫২৮)

【10】

মাসজিদে প্রবেশের সময় কি বলবে

আবু উসায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন মাসজিদে প্রবেশ করবে তখন বলবেঃ ''আল্ল-হুম্মাফ তাহ্‌লী আব্‌ওয়া-বা রহ্‌মাতিক” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি তোমার অনুগ্রহের দরজা আমার জন্য খুলে দাও)। যখন বের হয়ে যাবে, তখন বলবে- ''আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্‌আলুকা মিন ফায্‌লিক” (অর্থাৎ- আমি আপনার কাছে আপনার অনুগ্রহ প্রার্থী)। ইমাম মুসলিম বলেছেনঃ আমি ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন- আমি সুলায়মান ইবনু হিলালের একটি গ্রন্থ থেকে এ হাদীসটি লিপিবদ্ধ করেছি। তিনি আরো বলেছেন যে, ইয়াহ্‌ইয়া আল্‌ হিমানী আবূ উসায়দ থেকে বর্ননা করেছেন। (ই.ফা. ১৫২২, ই.সে. ১৫২৯) ’আব্দুল মালিক ইবনু সা‘ঈদ ইবনু সুওয়াইদ আল আনসারী (রাঃ) এবং আবূ হুমায়দ অথবা আবূ উসায়দ (রাঃ) এর মাধ্যমে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৫২৩, ই.সে. ১৫৩০)

【11】

দু’ রাক‘আত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় মুস্তাহাব এবং দু’ রাক‘আত আদায়ের পুর্বে বসা মাকরুহ এবং এটা সর্বাবস্থায় পালনীয়

আবু ক্বাতাদাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ মাসজিদে প্রবেশ করলে বসার আগেই যেন দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করে। (ই.ফা. ১৫২৪, ই.সে. ১৫৩১) রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহাবী আবু ক্বাতাদাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন আমি মাসজিদে প্রবেশ করে দেখতে পেলাম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকজনের মধ্যে বসে আছেন। সুতরাং আমিও গিয়ে বসে পড়লাম। এ দেখে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ সবার আগে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতে তোমার কি অসুবিধা ছিল? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসুল! আমি দেখলাম আপনি বসে আছেন এবং আরো অনেক লোক বসে আছে (তাই আমিও বসে আদায় করেছি)। তিনি বললেন, তোমরা কেউ কোন সময় মাসজিদে প্রবেশ করলে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় না করে বসবে না। (ই.ফা. ১৫২৫, ই.সে. ১৫৩২) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আমার কিছু পাওনা ছিল। তিনি আমাকে তা পরিশোধ করে দিলেন এবং অধিক পরিমানেই দিলেন। আমি একদিন মাসজিদে তার কাছে গেলে তিনি আমাকে বললেনঃ দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করে নাও। (ই.ফা. ১৫২৬, ই.সে. ১৫৩৩)

【12】

সফরে থেকে ফিরে এসে প্রথমে মাসজিদে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করা মুস্তাহাব

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট থেকে একটি উট কিনে ছিলেন। অতঃপর তিনি মাদীনায় আগমন করলে আমাকে মাসজিদে এসে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতে বললেন। (ই.ফা. ১৫২৭, ই.সে. ১৫৩৪) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে গিয়েছিলাম। (ফিরে আসার সময়) আমার উটটি বেশ দেরি করলো। সেটি বেশ ক্লান্ত শ্রান্তও হয়ে পড়েছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার আগেই এসে পৌছেছিলেন। আর আমি পরদিন সকালে পৌছলাম। আমি মাসজিদে এবং সেখানে মাসজিদের দরজায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখতে পেলাম। তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বলেলেনঃ তুমি এখন এসে পৌছলে? আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এখন উটটি রেখে মাসজিদে দু রাক‘আত সলাত আদায় করে নাও। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ বলেছেনঃ এরপর আমি মাসজিদে গিয়ে সলাত আদায় করে আসলাম। (ই.ফা. ১৫২৮, ই.সে. ১৫৩৫) কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিবাভাগে বেশ কিছু বেলা করা ব্যতীত সফর থেকে ফিরে আসতেন না। সফর থেকে ফিরে তিনি প্রথমেই মাসজিদে যেতেন এবং সেখানে তিনি দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। তারপর সেখানে কিছুক্ষন বসতেন। (ই.ফা. ১৫২৯, ই.সে. ১৫৩৬)

【13】

যুহার সলাত মুস্তাহাব আর তার সর্বনিম্ন (রাক’আতের পরিমান) হচ্ছে দু’ রাক‘আত, আর সম্পুর্ন হচ্ছে আট রাক‘আত, মধ্যম পরিমান হচ্ছে চার অথবা ছয় রাক‘আত এবং এগুলো রক্ষনাবেক্ষন করার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান

’আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ্‌কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি চাশ্‌তের সলাত আদায় করতেন? জবাবে তিনি বললেনঃ না, তিনি সলাতুয্‌ যুহা আদায় করতেন না। তবে যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন তখন আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৫৩০, ই.সে. ১৫৩৭) ’আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ্‌কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি যুহা বা চাশ্‌তের সলাত আদায় করতেন। জবাবে তিনি বললেনঃ না, তবে তিনি যখন সফর থেকে ফিরে আসতেন তখন আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৫৩১, ই.সে. ১৫৩৮) ’আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কখনো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে 'যুহা' বা চাশ্‌তের সলাত আদায় করতে দেখিনি। তবে আমি নিজে চাশ্‌তের সলাত আদায় করে থাকি। অনেক কাজ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পছন্দ করা সত্বেও এ আশংকায় তা করতেন না যে, লোকজন সে অনুযায়ী কাজ করলে তা ফরয করে দেয়া হতে পারে। (ই.ফা. ১৫৩২, ই.সে. ১৫৩৯) মু’আযাহ্ (রহঃ) ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘যুহা’ বা চাশ্‌তের সলাত কয় রাক‘আত আদায় করতেন? জবাবে ‘আয়িশা (রাঃ) বললেন, তিনি ‘যুহা’ বা চাশতের সলাত সাধারণতঃ চার রাক‘আত আদায় করতেন এবং অনেক সময় ইচ্ছামত আরো বেশী আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৫৩৩, ই.সে. ১৫৪০) মুহাম্মাদ ইবনু জা’ফার ও শু’বাহ্ ইয়াযীদ থেকে একই সানাদে অনুরুপ হাদীস বর্ননা করেছেন। তবে ইয়াযীদ তার বর্ননায় “মা-শা-আল্ল-হু” (আল্লাহ যা চান) কথাটি উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ১৫৩৪, ই.সে. ১৫৪১) ’আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘যুহা’ বা চাশ্‌তের সলাত চার রাক‘আত আদায় করতেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় বেশীও আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৫৩৫, ই.সে. ১৫৪২) আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ) একই সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৫৩৬, ই.সে. ১৫৪৩) ’আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লা (রহঃ) তিনি বলেন, একমাত্র উম্মু হানী ছাড়া আর কেউ-ই আমাকে এ কথা বলেন নি যে, সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘যুহা’ বা চাশতের সলাত আদায় করতে দেখেছে। উম্মু হানী বর্ণনা করেছেন যে, মক্কা বিজয়ের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে গিয়ে আট রাক‘আত সলাত আদায় করেছেন। (তিনি এ কথাও বলেছেন যে,) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আর কখনো এত সংক্ষিপ্ত করে সলাত আদায় করতে দেখিনি। তবে তিনি রুকু’ ও সাজদাহ্‌গুলো পূর্ণরূপে আদায় করছিলেন। ইবনু বাশ্‌শার তার বর্ণিত হাদীসে ‘কাত্‌তু’ (কখনো) শব্দটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ১৫৩৭, ই.সে. ১৫৪৪) ‘আবদুল্লাহ ইবনু হারিস ইবনু নাওফাল (রহঃ তিনি বলেন, এমন কোন লোকের সন্ধান পেতে আমি খুবই আকাঙ্ক্ষী ছিলাম এবং এ ব্যাপারে লোকদের জিজ্ঞেসও করতাম যে, এমন কেউ আমাকে এ মর্মে জ্ঞাত করতে পারবে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘সলাতুয যুহা’ বা চাশ্‌তের সলাত আদায় করেছেন। তবে একমাত্র আবূ ত্বলিবের কন্যা উম্মু হানী ছাড়া আর কাউকেই এমন পাইনি যে, আমাকে এ ব্যাপারে কিছু অবহিত করতে পেরেছে। তিনি (উম্মু হানী) আমাকে জানিয়েছেন যে, মক্কা বিজয়ের দিন সুর্যোদয়ের পর বেলা কিছু বাড়লে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছে আসলেন। একটি কাপড় আনা হল এবং তা দিয়ে পর্দা করে দিলে তিনি গোসল করলেন। তারপর সলাতে দাড়ালেন এবং আট রাক‘আত আদায় করলেন। উম্মু হানী (রাঃ) বলেছেন- এ সলাতে তার ক্বিয়াম (দাঁড়ানো) দীর্ঘতর ছিল, না রুকু’ দীর্ঘতর ছিল, না সাজদাহ্‌ দীর্ঘতর ছিল তা আমি জানিনা। তবে ক্বিয়াম, রুকু’ ও সাজদাহ্‌ সবগুলোই মনে হয় এক রকমের দীর্ঘ ছিল। উম্মু হানী (রাঃ) বলেছেনঃ এর আগে কিংবা পরে আর কখনো আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ‘সলাতুয্‌ যুহা’ বা চাশ্‌তের সলাত আদায় করতে দেখিনি। হাদীসটির বর্ণনাকারী মুরাদী এটি ইউনুস থেকে বর্ণনা করেছেন। তবে তিনি ‘আখবারানী’ অর্থাৎ ‘ইউনুস আমাকে বলেছেন’ কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ১৫৩৮, ই.সে. ১৫৪৫) উম্মু হানী (রাঃ)-এর আযাদকৃত দাস আবূ মুর্‌রাহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, তিনি আবূ ত্বলিবের কন্যা উম্মু হানী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন। (তিনি বলেছেন) মক্কা বিজয়ের বছরে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে গিয়ে দেখলাম, তিনি গোসল করছেন আর তাঁর কন্যা ফাত্বিমাহ্‌ একটি কাপড় দিয়ে তাঁকে পর্দা করে রেখেছেন। উম্মু হানী বলেন- আমি তাঁকে সালাম দিলাম। তখন তিনি জানতে চাইলেন, কে? আমি বললামঃ আমি আবূ ত্বলিবের কন্যা উম্মু হানী। তিনি (খুশীতে) বললেনঃ উম্মু হানীকে স্বাগতম। অতঃপর গোসল শেষ করে তিনি সলাতে দাড়াঁলেন এবং একটি মাত্র কাপড় গায়ে জড়িয়ে আট রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। সলাত শেষে আমি তাঁকে বললামঃ হে আল্লাহর রসুল! আমার ভাই ‘আলী ইবনু আবু ত্বলিব বলেছেনঃ তিনি আবু হুরায়রাহ্‌ (রাঃ)-এর পুত্র অমুককে হত্যা করে ছাড়বেন অথচ আমি তাকে নিরাপত্তা দিয়েছি। সব শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে উম্মু হানী! তুমি যাকে নিরাপত্তা দান করেছ আমিও তাকে নিরাপত্তা দান করেছি। উম্মু হানী বর্ণনা করেছেনঃ এ ঘটনা ছিল ‘যুহা’ বা চাশ্‌তের সময়ের। (ই.ফা. ১৫৩৯, ই.সে. ১৫৪৬) উম্মু হানী (রাঃ) মক্কা বিজয়ের বছর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে একটি কাপড় গায়ে জড়িয়ে তার দু’ প্রান্ত দু’ দিকে উঠিয়ে আট রাক‘আত সলাত আদায় করেছেন। (ই.ফা. ১৫৪০, ই.সে. ১৫৪৭) আবূ যার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি দিন শুরু হওয়ার সাথে সাথে তোমাদের প্রত্যেকের প্রতিটি অস্থি-বন্ধনী ও গিঁটের উপর সদাক্বাহ্‌ ওয়াজিব হয়। সুতরাং প্রতিটি তাসবীহ্‌ অর্থাৎ ‘সুবহানাল্ল-হ’ বলা সদাক্বাহ্‌ হিসেবে গন্য হয়। প্রতিটি তাহমীদ অর্থাৎ ‘আলহম্‌দুলিল্লা-হ’ বলা তার সদাক্বাহ্‌ হিসেবে গন্য হয়। প্রতিটি ‘আল্ল-হু আকবর’ তার জন্য এবং ‘নাহী আনিল মুনকার’ অর্থাৎ খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার প্রতিটি প্রয়াসও তার জন্য অনুরুপ সদাক্বাহ বলে গন্য হয়। তবে ‘যুহা’ বা চাশ্‌তের মাত্র দু রাক‘আত সলাত যদি সে আদায় করে তাহলে তা এ সবগুলোর সমকক্ষ হতে পারে। (ই.ফা. ১৫৪১, ই.সে. ১৫৪৮) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার বন্ধু [অর্থাৎ রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] আমাকে তিনটি কাজ করতে উপদেশ দিয়েছেন। সেগুলো হ’ল – প্রতি মাসে তিনটি করে সওম (রোযা) পালন করতে, ‘যুহা’ বা চাশ্‌তের দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতে এবং ঘুমানোর পূর্বে বিত্‌র সলাত আদায় করতে। (ই.ফা. ১৫৪২, ই.সে.১৫৪৯) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) -এর মাধ্যমে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৫৪৩, ই.সে.১৫৫০) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার বন্ধু আবুল ক্বাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তিনটি কাজ করতে আদেশ করেছেন। এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি আবূ হুরায়রাহ্ থেকে আবূ ‘উসমান বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা.১৫৪৪, ই.সে.১৫৫১) আবুদ্ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার প্রিয়তম বন্ধু আমাকে তিনটি কাজ করতে আদেশ করেছেন। আমার জীবদ্দশায় তা কখনো পরিত্যাগ করব না। (তিনি আমাকে আদেশ করেছেন) প্রতি মাসে তিনটি করে সিয়াম পালন করতে ‘যুহা’ বা চাশ্‌তের সলাত আদায় করতে আর বিত্‌র সলাত আদায় করার আগে না ঘুমাতে। (ই.ফা.১৫৪৫, ই.সে.১৫৫২)

【14】

ফাজ্‌রের দু’ রাক‘আত সুন্নাত, তার জন্য উৎসাহ দান, সেটা সংক্ষেপে ও সর্বদা আদায় করা এবং এতে যে ক্বিরাআত পাঠ মুস্তাহাব।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) উম্মুল মু‘মিনীন হাফসাহ্ তাকে বললেন যে, ফাজ্‌রের সলাতের আযানের পর মুয়ায্‌যিন যখন থেমে যেত এবং ভোরের আলো প্রকাশ পেত তখন রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরয সলাতের ইক্বামাত দেয়ার পূর্বে সংক্ষিপ্তভাবে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৫৪৬, ই.সে.১৫৫৩) হাফ্‌সাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, ফাজ্‌র উদিত হলে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হালকা করে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা.১৫৪৭,ই.সে.১৫৫৪) হাফ্‌সাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, ফাজ্‌র উদিত হলে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হালকা করে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা.১৫৪৮, ই.সে.১৫৫৫) শু‘বাহ্ (রহঃ) একই সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা.১৫৪৯, ই.সে. ১৫৫৬) হাফ্‌সাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্‌রের আলো প্রকাশিত হওয়ার পর দু‘ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৫৫০, ই.সে.১৫৫৭) ‘আয়িশাহ্‌হ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আযান শোনার পর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্‌রের দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন আর তা সংক্ষিপ্ত আদায় করতেন। (ই.ফা.১৫৫১, ই.সে.১৫৫৮) ‘আলী ইবনু হুজ্‌র, আবূ কুরায়ব, আবূ বকর ও ইবনু নুমায়র, 'আম্‌র আন্ নাক্বিদ (রহঃ) ..... সকলে হিশাম (রহঃ) একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে আবূ উসামাহ্ বর্ণিত হাদীসে “যখন ফজরের উদিত হলো” কথাটি উল্লেখ আছে। (ই.ফা.১৫৫২, ই.সে.১৫৫৯) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্‌রের সলাতের আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা.১৫৫৩, ই.সে. ১৫৬০) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্‌রের দু’ রাক‘আত (সুন্নাত) সলাত এত সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করতেন যে, আমি বলতাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি সলাতের দু’ রাক‘আতে সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পড়েছেন? (ই.ফা.১৫৫৪, ই.সে. ১৫৬১) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) ফাজ্‌রের সময় অর্থাৎ ভোর হলে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ রাক‘আত (সুন্নাত) সলাত আদায় করতেন। সলাত দু’ রাক‘আত এত সংক্ষিপ্ত হ’ত যে, আমার মনে প্রশ্ন জাগত- তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি সলাতে সূরাহ্ ফাতিহাহ্ পড়েছেন? (ই.ফা.১৫৫৫, ই.সে.১৫৬২) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্‌রের (ফরয সলাতের) পূর্বের দু’ রাক‘আত সুন্নাত আদায় করার প্রতি যত কঠোরভাবে খেয়াল রাখতেন অন্য কোন নাফ্‌ল সলাতের প্রতি ততখানি রাখতেন না। (ই.ফা.১৫৫৬, ই.সে. ১৫৬৩) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) ফাজ্‌রের দু’ রাক‘আত নাফল্‌ সলাতের জন্য আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যত ব্যস্ততা প্রকাশ করতে দেখেছি অন্য কোন নাফ্‌ল সলাতের জন্য ততটা ব্যস্ততা প্রকাশ করতে দেখিনি। (ই.ফা.১৫৫৭, ই.সে.১৫৬৪) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ফাজ্‌রের দু’ রাক‘আত (সুন্নাত) সলাত দুন্‌ইয়া ও তার সব কিছুর থেকে উত্তম। (ই.ফা.১৫৫৮, ই.সে. ১৫৬৫) ইয়াহ্ইয়া ইবনু হাবীব (রহঃ) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের দু’ রাক‘আত সলাত সম্পর্কে বলেছেন যে, ঐ দু’ রাক‘আত সলাত আমার কাছে সারা দুন্ইয়ার সব কিছু থেকে অধিক প্রিয়। (ই.ফা.১৫৫৯, ই.সে. ১৫৬৬) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্‌রের দূ’ রাক‘আত সলাতে (আরবী) পড়েছেন। (ই.ফা.১৫৬০, ই.সে.১৫৬৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্‌রের দু’ রাক‘আত সুন্নাত সলাতের প্রথম রাক‘আতে সূরাহ বাক্বারার (আরবী)-(সূরাহ্ বাক্বারাহ্ ২:১৩৬) আয়াতটি এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে (আরবী) (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান ৩:৬৪) আয়াতটি পড়তেন। (ই.ফা. ১৫৬১, ই.সে. ১৫৬৮)। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্‌রের দু’রাক‘আত সুন্নাত সালাতে (সূরা বাক্বারার আয়াত) (আরবী) (সূরা বাক্বারা ২:১৩৬) আয়াতটি এবং দ্বিতীয় রাক’আতে (আরবী) (সূরাহ আল ’ইমরান ৩:৬৪) আয়াতটি পড়তেন। (ই.ফা. ১৫৬২, ই.সে.১৫৬৯) ‘উসমান ইবনু হাকীম (রহঃ) মারওয়ান আল ফাযার একই সানাদে হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা ১৫৬৩, ই. সে. ১৫৭০)

【15】

ফার্‌যের পূর্বে ও পরে নিয়মিত সুন্নাতের ফাযীলাত এবং তার সংখ্যার বিবরণ

‘আম্‌র ইবনু আওস (রহঃ) তিনি বলেন, যে রোগে ‘আমবাসাহ ইবনু আবূ সুফ্‌ইয়ান মৃত্যুবরণ করেছেন-সে রোগ শয্যায় থাকাকালে তিনি আমার কাছে এমন একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যা খুবই খুশীর বা আনন্দের। তিনি বলেছেন: আমি উম্মু হাবীবাহ্‌কে বলতে শুনেছি; তিনি বলেছেনঃ আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, দিন ও রাতে যে ব্যক্তি মোট ১২ রাক‘আত (সুন্নাত) সলাত আদায় করে তার বিনিময়ে জান্নাতে ঐ ব্যক্তির জন্য একটি ঘর নির্মাণ করা হয়। উম্মু হাবীবাহ্‌ বলেছেন: আমি যে সময়ে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে এ সলাত সম্পর্কে শুনেছি তখন থেকে আর কখনো তা আদায় করা পরিত্যাগ করিনি। ‘আম্‌বাসাহ ইবনু আবূ সুফ্‌ইয়ান বলেছেন: এ সলাত সম্পর্কে যখন আমি উম্মু হাবীবার কাছে শুনেছি; তখন থেকে আর ঐ সলাত গুলো কখনো পরিত্যাগ করিনি। ‘আম্‌র ইবনু আওস বলেছেনঃ যে সময়ে এ সলাত সম্পর্কে আমি ‘আম্‌বাসাহ্‌ ইবনু আবূ সুফ্‌ইয়ান- এর নিকট থেকে শুনেছি সে সময় থেকে আর কখনো তা পরিত্যাগ করিনি। নু’মান ইবনু সালিম বলেছেন: যে সময় আমি এ হাদীসটি ‘আম্‌র ইবনু আওস- এর নিকট থেকে শুনেছি তখন থেকে কখনো আর তা পরিত্যাগ করিনি। (ই.ফা. ১৫৬৪, ই.সে.১৫৭১) নু’মান ইবনু সালিম (রহঃ) একই সানাদে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে, (হাদীসটি হ’ল) যে ব্যক্তি দিনে ১২ রাক‘আত নফল (সুন্নাত) সলাত আদায় করে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হয়।[২৯]( ই.ফা. ১৫৬৫, ই.সে.১৫৭২) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মু হাবীবাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি। (তিনি বলেছেন) কোন মুসলিম বান্দা যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে প্রতিদিন ফার্য ছাড়াও আরো ১২ রাক‘আত নাফ্‌ল সলাত আদায় করে আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করেন অথবা (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) জান্নাতে তার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করা হয়। উম্মু হাবীবাহ্‌ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন- এরপর আর কখনো এ সলাত সমূহ আদায় করতে বিরত থাকিনি। আর ‘আমর ইবনু আওস বলেছেন-পরবর্তী সময়ে কখনো আমি এ সলাত আদায় করতে বিরত হই না। নু’মান ইবনু সালিমও অনুরূপ কথাই বলেছেন। (ই.ফা. ১৫৬৬, ই.সে. ১৫৭৩) উম্মু হাবীবাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কোন মুসলিম বান্দা যদি উত্তমরূপে ওযু করে আল্লাহর উদ্দেশে প্রতিদিন সলাত আদায় করে- এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি উপরে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। ( ই.ফা. ১৫৬৭ , ই.সে.১৫৭৪) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে যুহরের পূর্বে দু’ রাক‘আত, পরে দু’ রাক‘আত, মাগরিবের সালাতের পর দু’ রাক‘আত, ’ইশার সালাতের পর দু’ রাক‘আত এবং জুমু’আর সালাতের পর দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করেছি। তবে মাগরিব, ‘ইশা ও জুমু’আর সালাতের পরের দু’ রাক‘আত সলাত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তাঁর বাড়ীতে আদায় করেছি। (ই.ফা. ১৫৬৮, ই.সে. ১৫৭৫)

【16】

দাঁড়িয়ে ও বসে নাফ্‌ল সলাত আদায় এবং একই রাক’আতের অংশ বিশেষ দাঁড়িয়ে ও অংশ বিশেষ বসে আদায় করার বৈধতা

‘আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাফ্‌ল সলাত সম্পর্কে ‘আয়িশাহ্‌কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃরসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের (ফার্য সালাতের ) পূর্বে আমার ঘরে চার রাক‘আত নাফ্‌ল আদায় করতেন। তারপর গিয়ে মাসজিদে লোকদের সাথে সলাত আদায় করতেন। পরে ঘরে এসে আবার দু’ রাক‘আত নাফ্‌ল আদায় করতেন। অত:পর লোকজনের সাথে মাগরিবের সলাত আদায় করতেন এবং ঘরে এসে দু’ রাক‘আত নাফ্‌ল আদায় করতেন। আবার ‘ইশার সলাত লোকজনের সাথে আদায় করে আমার ঘরে এসে দু’ রাক‘আত নাফ্‌ল আদায় করতেন। আর রাতের বেলা বিত্রসহ নয় রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নাফ্‌ল সলাত আদায় করতেন, আবার দীর্ঘ সময় বসে বসেও নাফ্‌ল সলাত আদায় করতেন। যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে ক্বিরআত পড়তেন তখন দাঁড়িয়েই রুকূ’ ও সিজদাহ করতেন। আবার যখন বসে ক্বিরআত করতেন তখন রুকূ’ ও সিজদাহ বসেই করতেন। আর ফাজ্‌রের সময় বা ভোর হলেও দু’ রাক‘আত নাফ্‌ল আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৫৬৯. ই.সে.১৫৭৬) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা দীর্ঘ সময় সলাত আদায় করতেন। যখন তিনি দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করতেন তখন দাঁড়িয়েই রুকূ’ আদায় করতেন। আর যখন বসে সলাত আদায় করতেন তখন বসেই রুকূ’ করতেন। (ই.ফা. ১৫৭০, ই. সে. ১৫৭৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি পারস্যে অবস্থানকালীন সময় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। তখন আমি বসে বসে সলাত আদায় করতাম। পরে আমি ‘আয়িশাহ্‌কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃরসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা দীর্ধ সময় পর্যন্ত সলাত আদায় করতেন। এরপর তিনি উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণনা করলেন। ( ই. ফা. ১৫৭১, ই.সে. ১৫৭৮) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু শাক্বীক্ব আল ‘উক্বায়লী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ) কে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রাত্রিকালীন সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে এবং দীর্ঘ সময় বসে সলাত আদায় করতেন। যখন তিনি দাঁড়িয়ে ক্বিরাআত পড়তেন তখন দাঁড়িয়েই রুকু’ করতেন এবং যখন বসে ক্বিরাআত পড়তেন তখন বসেই রুকু’ করতেন। (ই.ফা. ১৫৭২, ই.সে. ১৫৭৯) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু শাক্বীক্ব আল ‘উক্বায়লী (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর (নাফ্‌ল) সলাত সম্পর্কে ‘আয়িশা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন: রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিকাংশ সলাতই দাঁড়িয়ে এবং বসে আদায় করতেন। যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে সলাত শুরু করতেন তখন দাঁড়িয়েই রুকু’ করতেন। আর যখন বসে সলাত শুরু করতেন তখন বসেই রুকু’ করতেন। (ই.ফা. ১৫৭৩, ই.সে. ১৫৮০) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কখনো রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাতের সলাতে বসে কিছু পড়তে (ক্বিরাআত করতে) দেখিনি। তবে পরবর্তী সময়ে তিনি বৃদ্ধ হয়ে পড়লে বসে বসেই ক্বিরাআত করতেন এবং শেষের সূরার ত্রিশ কিংবা চল্লিশ আয়াত যখন অবশিষ্ট থাকত তখন দাঁড়িয়ে ঐ আয়াতগুলো পড়তেন এবং রুকু’ করতেন। (ই.ফা. ১৫৭৪, ই.সে ১৫৮১) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নাফ্‌ল সলাত বসে আদায় করতেন তখন বসে বসেই ক্বিরাআত পড়তেন। এভাবে যখন আনুমানিক ত্রিশ অথবা চল্লিশ আয়াত পর্যন্ত পড়তে অবশিষ্ট থাকত তখন তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্বিরাআত করতেন। অতঃপর রুকু’ ও সিজদাহ্ করতেন। পরে দ্বিতীয় রাক‘আতে পুনরায় অনুরূপ করতেন। (ই.ফা. ১৫৭৫, ই.সে. ১৫৮২) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাফ্‌ল সলাতে বসে ক্বিরাআত পড়তেন। অতঃপর রুকু’ করতে মনস্থ করলে উঠে এতটুকু সময় পর্যন্ত দাঁড়ালেন, যে সময়ের মধ্যে একজন লোক চল্লিশ আয়াত পর্যন্ত পড়তে পারে। (ই.ফা. ১৫৭৬, ই.সে. ১৫৮৩) ‘আলক্বামাহ্ ইবনু ওয়াক্বক্বাস (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম যে রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রাতের বেলার দু‘ রাকআত সলাত বসে কীভাবে আদায় করতেন জবাবে ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু‘ রাক‘আত সলাতে ক্বিরাআত পড়তেন। তারপর রুকু’ করার সময় উঠে দাঁড়িয়ে রুকু’ করতেন। (ই.ফা. ১৫৭৭, ই.সে. ১৫৮৪) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু শাক্বীক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বসে সলাত আদায় করতেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, লোকজন তাকে বৃদ্ধ করে দেয়ার পর আদায় করতেন।[৩০] (ই.ফা. ১৫৭৮, ই.সে. ১৫৮৫) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু শাক্বীক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৫৭৯, ই.সে. ১৫৮৬) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যুর পূর্বে বেশীর ভাগ সলাত বসে বসে আদায় করেছেন। (ই.ফা. ১৫৮০, ই.সে. ১৫৮৭) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বয়স যখন বেশী হয়ে শরীর ভারী হয়ে গিয়েছিল তখন তিনি অধিকাংশ সলাত বসে বসে আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৫৮১, ই.সে. ১৫৮৮) হাফ্‌সাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কখনো বসে নাফ্‌ল সলাত আদায় করতে দেখিনি। পরবর্তী সময়ে তাঁর ওয়াফাতের এক বছর পূর্বে তাঁকে বসে নাফ্‌ল সলাত আদায় করতে দেখেছি। তিনি অতি উত্তমরূপে স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে সূরাহ্ পড়তেন। এ কারণে তার সলাত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে যেত। (ই.ফা. ১৫৮২, ই.সে. ১৫৮৯) আবুত্ ত্বহির, হারমালাহ্, ইসহাক্ব ইবনু ইব্রাহীম ও ‘আব্‌দ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ..... সবাই যুহরী একই সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তবে তারা উভয়ে (ইবনু ইউসুফ ও মা‘মার) “এক বছর অথবা দু’বছর পূর্বে” কথাটি উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ১৫৮৩, ই.সে. ১৫৯০) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে সলাত না আদায় করে (অর্থাৎ বসে সলাত আদায়ের মত বার্ধক্যে পৌছার পূর্বে) মারা যাননি। (ই.ফা. ১৫৮৪,ই.সে. ১৫৯১) ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ বসে সলাত আদায় করলে তা অর্ধেক সলাতের সমকক্ষ। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আম্‌র বর্ণনা করেছেন, এরপর একদিন আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে গিয়ে দেখলাম তিনি বসে সলাত আদায় করেছেন। আমি তাঁর মাথার উপর হাত রাখলাম। তিনি বললেনঃ হে আবদূল্লাহ্ ইবনু ‘আম্‌র! কী ব্যাপার? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আপনি বলেছেনঃ কেউ বসে সলাত আদায় করলে তা অর্ধেক সলাতের সমান হয়। কিন্তু এখন দেখেছি আপনি নিজেই বসে সলাত আদায় করছেন। এ কথা শুনে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ , তবে আমি তোমাদের কারো মত না।[৩১] (ই.ফা. ১৫৮৫, ই.সে. ১৫৯২) আবূ বাকর ইবনু শায়বাহ্, মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না ও ইবনু বাশ্শার, ইবনুল মুসান্না (রহঃ) ..... উভয়ে মানসূর (রহঃ) একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে শু’বাহ্ (রহঃ) ইয়াহ্ইয়া আল আ‘রাজ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৫৮৬, ই.সে. ১৫৯৩)

【17】

রাতের সলাত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রাতের সলাতের রাক‘আত সংখ্যা, বিত্‌র সলাত এক রাক’আত এবং এক রাক’আত সলাত আদায় সহীহ্ সাব্যস্ত

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা এগার রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। তার মধ্যে এক রাক‘আত বিত্‌র আদায় করতেন। সলাত শেষ করে তিনি ডান পাশে ফিরে শুতেন। অতঃপর ভোরে মুয়ায্‌যিন আসলে তিনি (উঠে) সংক্ষিপ্তভাবে দু‘ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৫৮৭, ই.সে. ১৫৯৪) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার সলাত ও ফাজ্‌রের সলাতের মধ্যবর্তী সময়ে এগার রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। এর মধ্যে এক রাক‘আত বিত্‌র আদায় করতেন এবং প্রতি দু‘রাকআতে সালাম ফিরাতেন। ‘ইশার সলাত কে লোকজন ঐ সময়ে ‘আতামাহ্’ বলত। মুয়ায্‌যিন আযান দিয়ে শেষ করলে এবং ফাজ্‌রের সময় স্পষ্ট হয়ে উঠলে মুয়ায্‌যিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসত। তখন তিনি সংক্ষিপ্তভাবে দু‘ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। এরপর ডান কাত হয়ে শুয়ে পড়তেন। পরে মুয়ায্‌যিন পুনরায় ইক্বামাতের জন্য আসত (তখন উঠে তিনি সলাত আদায় করতেন)। (ই.ফা. ১৫৮৮, ই. সে ১৫৯৫) ইবনু শিহাব (রহঃ) একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে হারমালাহ্ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসে- “ফজরের সময় স্পষ্ট হয়ে উঠলে মুয়াজ্জিন তাঁর কাছে আসত” কথাটি উল্লেখ করেননি। আর তিনি ইক্বামাতের কথাও উল্লেখ করেননি। এছাড়া হাদীসের অবশিষ্ট অংশ তিনি ‘আম্‌র ইবনু হারিস বর্ণিত হাদীসের মতো হুবহু বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৫৮৯, ই.সে. ১৫৯৬) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা তের রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। এর মধ্যে পাঁচ রাক‘আত আদায় করতেন বিত্‌র এবং এতে একেবারে শেষে ছাড়া কোন বৈঠক করতেন না। (ই.ফা. ১৫৯০, ই.সে. ১৫৯৭) আবু বাকর ইবনু আবূ শায়বাহ্ এবং আবূ কুরায়ব (রহঃ) ..... সকলে হিশাম (রহঃ) একই সানাদে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৫৯১, ই.সে. ১৫৯৮) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা ফাজ্‌রের দু‘রাকআত সুন্নাতসহ তের রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৫৯২, ই.সে. ১৫৯৯) আবূ সালামাহ্ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রমাযান মাসের (রাতের) সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযান মাসে কিংবা অন্য কোন সময়ে রাতের বেলা এগার রাক‘আতের বেশী সলাত আদায় করতেন না। প্রথম চার রাক‘আত তিনি এমনভাবে আদায় করতেন যে, তার সৌন্দর্য সম্পর্কে আর কি জিজ্ঞেস করবে? তারপর চার রাক‘আত তিনি এত সুন্দর করে আদায় করতেন যে, তার সৌন্দর্য সম্পর্কে ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে আর কি জিজ্ঞেস করবে? এরপর তিনি আরো তিন রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ কথা শুনে আমি জিজ্ঞেস করলাম যে, হে আল্লাহর রসূল! আপনি বিত্‌র সলাত আদায়ের পূর্বেই ঘুমাতেন? জবাবে তিনি বললেন, হে ‘আয়িশাহ্‌! আমার চোখ দুটি ঘুমায় কিন্তু আমার হৃদয়-মন ঘুমায় না। (ই.ফা. ১৫৯৩, ই.সে. ১৬০০) আবূ সালামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ) -কে রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর (রাতের) সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ তের রাক‘আত আদায় করতেন। প্রথমে তিনি আট রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। তারপর বিত্‌র আদায় করতেন। সবশেষে বসে বসে আরো দু‘ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। পরে রুকু করার সময় উঠে দাঁড়িয়ে রুকু’ করতেন। অতঃপর ফাজ্‌রের সলাতের আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়েও দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৫৯৪, ই.সে. ১৬০১) আবূ সালামাহ্ (রাঃ) তিনি ‘আয়িশা (রাঃ) কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। ..... পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করলেন। তবে তাদের উভয়ের বর্ণিত হাদীসে দাঁড়িয়ে নয় রাক‘আত সলাত আদায় করার কথা উল্লেখ আছে এবং তার মধ্যে বিতরের সলাত ও অন্তর্ভূক্ত আছে। (ই.ফা. ১৫৯৫, ই.সে. ১৬০২) আবূ সালামাহ্ (রাঃ} তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আম্মাজান! আমাকে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাত সম্পর্কে অবহিত করুন তো। তিনি বললেনঃ রমাযান ও অন্যান মাসে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজ্‌রের দু’ রাক‘আত (সুন্নাত) সলাত সহ রাতের বেলা মোট তের রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৫৯৬, ই.সে. ১৬০৩) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাতের এক বেলা রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দশ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। আর এক রাক‘আত বিত্‌র এবং দু’ রাক‘আত ফাজ্‌রের সুন্নাতসহ মোট তের রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৫৯৭, ই.সে. ১৬০৪) আবূ ইসহাক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে ‘আস্‌ওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ-এর কাছে বর্ণিত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের প্রথমভাগে ঘুমাতেন এবং শেষভাগে জাগতেন। এ সময় যদি স্ত্রীদের সাহচর্য লাভের প্রয়োজন হ'ত তাহলে তা পূরণ করতেন এবং এরপর আবার ঘুমাতেন। ফাজ্‌রের আযানের সময় (তাহাজ্জুদের ওয়াক্তে) তিনি ত্বরিতে উঠতেন। আল্লাহর শপথ! তিনি [আয়িশাহ্‌ (রাঃ)] বলেননি যে, তিনি গোসল করতেন। তার উদ্দেশ্য আকাঙ্খা আমি ভাল করেই জানতাম। তিনি নাপাক না হয়ে থাকলে কোন লোক শুধু সলাতের জন্য যেভাবে ওযূ করে থাকে সেভাবে ওযূ করতেন এবং তারপর ফাজ্‌রের দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৫৯৮, ই.সে. ১৬০৫) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা যে সলাত আদায় করতেন তাতে সর্বশেষে আদায় করতেন বিত্‌র সলাত। (ই. ফা. ১৫৯৯, ই.সে. ১৬০৬) মাসরূক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর 'আমাল সম্পর্কে ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়মিত ‘আমালকে পছন্দ করতেন। মাসরূক্ব বলেন, আমি তাঁকে আবার জিজ্ঞেস করলাম : তিনি সলাত আদায় করতেন কোন্‌ সময়? ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ তিনি যখন মোরগের ডাক শুনতেন তখন উঠে সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৬০০, ই.সে. ১৬০৭) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার ঘরে অথবা আমার কাছে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় সব সময় ‘সুবহে কাযিব’ (সাহরীর শুরু) এর সময় হয়ে যেত। (ই.ফা. ১৬০১, ই.সে. ১৬০৮) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, ফাজ্‌রের দু’ রাক‘আত নাফ্‌ল (সলাত) আদায় করার পর আমি জাগ্রত থাকলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে কথাবার্তা বলতেন। অন্যথায় শুয়ে পড়তেন। (ই.ফা. ১৬০২, ই.সে. ১৬০৯) ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৬০৩, ই.সে. ১৬১০) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা সলাত আদায় করতেন। তাঁর বিত্‌র পড়া শেষ হয়ে গেলে তিনি ‘আয়িশা (রাঃ) কে লক্ষ্য করে বলতেন : হে ‘আয়িশাহ্‌! ওঠো এবং বিত্‌র পড়। (ই.ফা. ১৬০৪, ই.সে. ১৬১১) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাতের বেলা সলাত আদায় করতেন তখন ‘আয়িশা (রাঃ) তাঁর সামনে তাড়াতাড়ি শুয়ে থাকতেন। সলাত শেষে যখন তাঁর শুধুমাত্র বিত্‌র পড়া বাকি থাকত তখন তিনি ‘আয়িশাহ্‌ কে জাগিয়ে দিতেন। আর তিনি [আয়িশাহ্‌ (রাঃ)] তখন উঠে বিত্‌র আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৬০৫,ই.সে.১৬১২) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, সারা রাতের যে কোন সময় রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্‌র আদায় করেছেন। এমন কি কোন কোন সময় রাতের শেষভাগেও তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্‌র সলাত আদায় করেছেন। (ই.ফা. ১৬০৬, ই.সে. ১৬১৩) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, সারা রাতের যে কোন অংশে রসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্‌র সলাত আদায় করেছেন। তিনি রাতের প্রথমভাগে, মধ্যভাগে, শেষভাগে এবং এমনি ভোরে বিত্‌র আদায় করেছেন। (ই.ফা. ১৬০৭, ই.সে. ১৬১৪) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, সারা রাতের মধ্যে যে কোন সময় রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিত্‌রের সলাত আদায় করেছেন। এমনকি তিনি শেষ রাতেও বিত্‌র আদায় করেছেন। (ই.ফা. ১৬০৮, ই.সে. ১৬১৫)

【18】

রাত্রিকালীন সলাত- আর যে ঘুমিয়ে পড়ে অথবা অসুস্থ হয়ে পড়ে

যুরারাহ্ (রহঃ) সা‘দ ইবনু হিশাম ইবনু 'আমির (রহঃ) আল্লাহর পথে (আজীবন) লড়াই করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। তাই তিনি মাদীনায় আগমন করলেন। তিনি চাচ্ছিলেন এ উদ্দেশে তিনি তার জমি-জমা বিক্রি করে তা দ্বারা অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধের ঘোড়া কিনবেন এবং রোমান অর্থাৎ খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে আমৃত্যু জিহাদ করবেন। তাই মদীনায় এসে তিনি মাদীনাহ্‌বাসী কিছু লোকের সাথে সাক্ষাৎ করলে তারা তাঁকে ঐরূপ করতে নিষেধ করলেন। তারা তাকে এ কথাও জানালেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবদ্দশায় ছয়জন লোকের একটি দল এ একই করতে চাইলে আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা করতে নিষেধ করেছিলেন : আমার জীবন ও কর্মে কি তোমাদের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ নেই? তারা (মাদীনাহ্‌বাসী) যখন তাকে এ কথাটি শুনালেন তখন তিনি তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিলেন (রুজ‘আত করলেন) এবং কিছু লোককে এ ব্যাপারে সাক্ষী রাখলেন। কেননা এ কাজের (জিহাদের) জন্য তিনি তার স্ত্রীকে ত্বলাক দিয়েছিলেন। এরপর তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস-এর কাছে এসে তাঁকে রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিত্‌র সলাত আদায় করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস তাঁকে বললেনঃ রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিত্‌র সলাত সম্পর্কে পৃথিবীর অধিবাসীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী জানে আমি এমন একজন লোকের সন্ধান কি তোমাকে দিব না? তিনি (সা‘দ ইবনু হিশাম ইবনু 'আমির) বললেনঃতিনি কে? ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আব্বাস বললেনঃ তিনি হলেন ‘আয়িশা (রাঃ)। তার কাছে গিয়ে তুমি জিজ্ঞেস করবে, তারপর তোমাকে দেয়া তাঁর জবাব আমাকে এসে জানাবে। আমি তখন তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হলাম। প্রথমে আমি হাকীম ইবনু আফ্‌লাহ-র কাছে গেলাম। আমি তাকে আমার সাথে তাঁর (‘আয়িশাহ্‌) এ দু’ দলের ব্যাপারে কোন কিছু বলতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্ত তিনি তা না শুনে বরং একটি পক্ষাবলম্বন করেছিলেন। সা‘দ ইবনু হিশাম ইবনু 'আমির বলেনঃ তখন আমি তাঁকে ক্বসম দিয়ে যেতে বললাম। তাই তিনি যেতে রাজি হলেন। আমরা ‘আয়িশা (রাঃ) এর কাছে গিয়ে তাঁকে অবহিত করলে তিনি আমাদেরকে অনুমতি দান করলেন। আমরা তাঁর কাছে গেলে তিনি হাকীম আফ্‌লাহ কে চিনতে পারলেন। তাই বললেনঃ আরে , এ যে হাকীম? তিনি (হাকীম ইবনু আফ্‌লাহ) বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করলেন : তোমার সাথে কে আছে? তিনি বললেন ” সা‘দ ইবনু হিশাম (ইবনু আমির)। তিনি প্রশ্ন করলেন। কোন্‌ হিশাম? হাকীম ইবনু আফ্‌লাহ বললেনঃ আমিরের পুত্র হিশাম। এ কথা শুনে তিনি তার প্রতি খুব স্নেহপ্রবণ হলেন এবং তার ব্যাপারে ভাল মন্তব্য করলেন। ক্বাতাদাহ্ বর্ণনা করলেন : আফ্‌লাহ উহুদের যু্দ্ধে শাহীদ হয়েছিলেন। এরপর আমি বললাম : হে উম্মুল মু‘মিনীন! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আখলাক্ব সম্পর্কে আমাকে কিছু অবহিত করুন। এ কথা শুনে তিনি আমাকে বললেন, তুমি কি কুরআন পড় না? আমি বললাম হ্যাঁ, পড়ি। তিনি বললেন, আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আখলাক্ব তো ছিল কুরআন। সা‘দ ইবনু হিশাম ইবনু 'আমির বলেছেনঃ আমি তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম উঠে চলে আসি এবং মৃত্যু পর্যন্ত এ ব্যাপারে আর কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করি। কিন্তু আমার মনে আবার একটি নতুন ধারণা জাগল। তাই আমি বললাম : আমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রাতের ইবাদাত (ক্বিয়ামুল লায়ল) সম্পর্কে কিছু অবহিত করুন। তিনি এবার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন : তুমি কি সুরাহ্ “ইয়া আইয়ুহাল মুযযা্‌ম্‌মিল” পড় না? আমি বললাম-হ্যাঁ পড়ি। তিনি বললেন ” মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ এ সূরার প্রথমভাগে “ক্বিয়ামুল লায়ল” বা রাতের ‘ইবাদাত বন্দেগী ফরয করে দিয়েছেন। তাই এক বছর পর্যন্ত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ রাতের বেলা ‘ইবাদাত করেছেন। মহান আল্লাহ বারো মাস পর্যন্ত এ সূরার শেষাংশ আসমানে ঠেকিয়ে রেখেছিলেন (অর্থাৎ বারো মাস পর্যন্ত এ সূরার শেষাংশ অবতীর্ণ করেননি)। অবশেষে (বারো মাস পরে) এ সূরার শেষে আল্লাহ তা‘আলা রাতের ‘ইবাদাতের হুকুম লঘু করে আয়াত অবতীর্ণ করলেন। আর এ কারণে রাত জেগে ‘ইবাদাত যেখানে ফরয ছিল সেখানে তা নাফ্‌ল বা ঐচ্ছিক হয়ে গেল। সা‘দ ইবনু হিশাম বলেনঃ আমি বললাম, হে উম্মূল মুমিনীন! রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিত্‌র সলাত সম্পর্কে আমাকে কিছু অবহিত করুন। তিনি বললেনঃ আমরা তাঁর জন্য মিসওয়াক এবং ওযূর পানি প্রস্তুত করে রাখতাম। অতঃপর রাতের বেলা মহান আল্লাহ যখন চাইতেন তখন তাঁকে জাগিয়ে দিতেন। তিনি উঠে মিসওয়াক করতেন। ওযূ করতেন এবং নয় রাক‘আত (বিত্‌র) সলাত আদায় করতেন। এতে অষ্টম রাক‘আত ছাড়া বসতেন না। এ বৈঠকে তিনি আল্লাহকে স্মরণ করতেন, তাঁর প্রশংসা করতেন এবং তার কাছে প্রার্থনা করতেন। অতঃপর এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যে আমরা তা শুনতে পেতাম। এবার সালাম ফিরানোর পর ঘরে বসেই তিনি দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। তারপর বললেনঃ হে বৎস! এ এগার রাক‘আত সলাত তিনি রাতে আদায় করতেন। পরবর্তীতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বয়স বেড়ে গিয়েছিল এবং শরীরও কিছুটা মাংসল হয়ে গিয়েছিল তখন তিনি সাত রাক‘আত বিত্‌র আদায় করতেন। এক্ষেত্রেও তিনি শেষের দু’ রাক‘আত সলাত পূর্বের মতো করেই আদায় করতেন : হে বৎস! এভাবে তিনি নয় রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সলাত আদায় করলে তা সর্বদা নিয়মিত আদায় করা পছন্দ করতেন। যখন ঘুমের প্রাবল্য বা ব্যথা-বেদনার কারণে তিনি রাতে ‘ইবাদাত (সলাত আদায়) করতে পারতেন না, তখন দিনের বেলা বারো রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাতে পুরো কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করেছেন বা সকাল পর্যন্ত সারা রাত আদায় করেছেন কিংবা রমাযান মাস ছাড়া সারা মাস সিয়াম (রোযা) পালন করেছেন এমনটি আমি কখনো দেখিনি। সা'দ ইবনু হিশাম ইবনু 'আমির বর্ণনা করেছেন পরে আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে এসে ‘আয়িশা (রাঃ)-এর বর্ণিত হাদীসটি বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ তিনি সঠিক বলেছেন। আমি যদি তাঁর কাছে থাকতাম বা তাঁর কাছে যেতাম তাহলে নিজে তাঁর মুখ থেকে হাদীসটি শুনতে পেতাম। সা‘দ ইবনু হিশাম বললেনঃ আমার যদি জানা থাকত যে, আপনি তাঁর কাছে যান না, তাহলে আপনাকে আমি তাঁর কথা বলতাম না। (ই.ফা. ১৬০৯, ই.সে. ১৬১৬) সা'দ ইবনু হিশাম (রহঃ) তিনি তার স্ত্রীকে ত্বলাক্ব দিয়ে নিজের জমিজমা বিক্রি করার জন্য মদীনায় আসলেন ..... পুর্বোক্ত হাদীসের মতো বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৬১০, ই.সে. ১৬১৭) সা'দ ইবনু হিশাম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে গিয়ে তাঁকে রসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিত্‌র সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। এ পর্যন্ত বর্ণনা করার পর তিনি হাদীসটি হুবহু পূর্বে বর্ণিত হাদীসের মতো বর্ণনা করলেন। তবে এতে তিনি এ কথাও বর্ণনা করেছেন যে, আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বললেনঃ কোন্‌ হিশাম? তখন আমি বললাম 'আমির-এর পুত্র হিশাম। এ কথা শুনে তিনি বললেনঃ 'আমির কত উত্তম মানুষ ছিলেন। তিনি উহুদ যুদ্ধে শাহাদাত লাভ করেছিলেন। (ই.ফা. ১৬১১, ই.সে. ১৬১৮) যুরারাহ্ ইবনু আওফা (রহঃ) সা’দ ইবনু হিশাম (রহঃ) ছিলেন তাঁর প্রতিবেশী। তিনি যুরারাহ্‌কে স্বীয় স্ত্রীকে ত্বলাক দেয়ার কথা জানালেন। এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি সা‘ঈদ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করলেন যাতে এ কথাও বর্ণিত হয়েছে যে, ‘আয়িশা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন : কোন্ হিশাম-এর কথা বলছ? তখন হাকীম ইবনু আফ্‌লাহ বললেনঃ‘আমিরের পুত্র হিশামের কথা বলছি। এ কথা শুনে ‘আয়িশাহ্‌ বলে উঠলেন- ‘আমির কত ভাল লোক ছিলেন। তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে উহুদ যুদ্ধে শারীক হয়ে শাহাদাত বরণ করেছেন। এ হাদীসে এ কথাও বর্ণিত হয়েছে যে, হাকীম ইবনু আফ্‌লাহ বললেনঃযদি আমার জানা থাকত যে, আপনি ‘আয়িশা (রাঃ)-এর কাছে যান না তাহলে আমি আপনাকে তার সম্পর্কে বলতাম না। (ই.ফা. ১৬১২, ই.সে. ১৬১৯) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) ব্যথা-বেদনা বা অন্য কোন কারণে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রাত্রিকালীন কোন সলাত ক্বাযা হয়ে গেলে দিনের বেলা তিনি বারো রাক‘আত সলাত আদায় করে নিতেন। (ই,ফা. ১৬১৩, ই.সে.১৬২০) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন 'আমাল বা কাজ করলে তা সর্বদা অর্থাৎ নিয়মিতভাবে করতেন। আর রাতের বেলা ঘুমিয়ে পড়লে বা অসুস্থ হলে পরিবর্তে দিনের বেলা বারো রাক‘আত সলাত আদায় করে নিতেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেছেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কখনো ভোর পর্যন্ত সারারাত জেগে ইবাদাত করতে বা রমাযান মাস ছাড়া এক নাগাড়ে পুরো মাস সিয়াম পালন করতে দেখেনি। (ই.ফা. ১৬১৪, ই.সে. ১৬২১) ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ তার (রাতের বেলার) অযীফাহ্ বা করণীয় কাজ কিংবা তার কিছু অংশ করতে ভুলে গেলে তা যদি সে ফাজ্‌র ও যুহরের সলাতের মধ্যবর্তী কোন এক সময়ে আদায় করে নেয় তাহলে তা এমনভাবে তার জন্য লিখে নেয়া হবে যেন সে তা রাতের বেলায়ই সম্পন্ন করেছে। (ই.ফা. ১৬১৫, ই.সে. ১৬২২)

【19】

যখন উটের বাচ্চা গরম অনুভব করে (দিনের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়) তখনই সলাতুল আও্ওয়াবীন (চাশ্তের সলাতের সময়)

ক্বাসিম আশ্ শায়বানী (রহঃ) যায়দ ইবনু আর্‌ক্বাম (রাঃ) একদল লোককে ‘যুহা’ বা চাশ্‌তের সলাত আদায় করতে দেখে বললেনঃ এখন তো লোকজন জেনে নিয়েছে যে , এ সময় ব্যতীত অন্য সময় সলাত আদায় করা উত্তম বা সর্বাধিক মর্যাদার। কেননা রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘সলাতুল আওয়াবীন’ বা আল্লাহকে অধিক স্মরনকারী বান্দাদের সলাতের সময় হল তখন, যখন সূর্যতাপে উটের বাচ্চাদের পা গরম হয়ে যায়। (ই.ফা. ১৬১৬, ই.সে. ১৬২৩) যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুবাবাসীদের এলাকায় গেলেন। সে সময় তারা সলাত আদায় করছিলেন। এ দেখে তিনি বললেনঃ ‘সলাতুল আও্ওয়াবীন’ বা চাশ্‌তের সলাতের উত্তম সময় হ'ল যখন সূর্যতাপে বালু গরম হাওয়ার কারণে উটের বাচ্চাগুলো পা উত্তপ্ত হতে শুরু করে। (ই.ফা. ১৬১৭, ই.সে. ১৬২৪)

【20】

রাত্রিকালের সলাত দু' দু' রাক‘আত, আর রাত্রির শেষে এক রাক‘আত বিতর

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাতের সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ রাতের সলাত দু‘ দু‘ রাক‘আত করে আদায় করবে। যখন ভোর হওয়ার সম্ভাবনা দেখবে তখন এক রাক‘আত সলাত আদায় করে নিবে। যে সলাত আদায় করেছে এভাবে তা বিতরে পরিণত হবে। (ই.ফা. ১৬১৮, ই.সে. ১৬২৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) জনৈক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে রাতের (নাফ্‌ল) সলাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন-রাতের সলাত দু‘ দু‘ রাক‘আত করে আদায় করবে। তবে ভোর হয়ে আসছে দেখলে এক রাক‘আত বিত্‌র আদায় করে নিবে। (ই.ফা. ১৬১৯, ই.সে. ১৬২৬) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) তিনি বলেন, (একদিন) জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল-হে আল্লাহর রসূল! রাতের সলাত কীভাবে আদায় করতে হবে? জবাবে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ রাতের সলাত দু‘ দু‘ রাক‘আত করে আদায় করবে। অতঃপর যখন ভোর হয়ে আসছে বলে মনে করবে তখন এক রাক‘আত বিত্‌র আদায় করবে। (ই.ফা. ১৬২০, ই.সে. ১৬২৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ) একদিন জনৈক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রসূল! রাতের সলাত কিভাবে আদায় করতে হবে? আমি সে সময় প্রশ্নকারী ও নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মাঝে (দাঁড়িয়ে) ছিলাম। জবাবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ দু’ রাক‘আত দু’ রাকআত সলাত আদায় করবে। আর বিত্‌র পড়ে তোমার সলাত শেষ করবে। (‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার বলেন) এক বছর পর জনৈক ব্যক্তি তাকে একই প্রশ্ন করল। আমি জানি না এ ব্যক্তি পূর্বের প্রশ্নকারী সে ব্যক্তি না অন্য আরেক ব্যক্তি। এবারও আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পাশে একই স্থানে ছিলাম। তিনি তাকে পূর্বের মতই জবাব দিলেন। (ই.ফা. ১৬২১, ই.সে. ১৬২৮) 'আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করল। এতটুকু বর্ণনা করার পর উভয়ে (আবূ কামিল ও মুহাম্মাদ ইবনু ‘উবায়দ আল গুবারী) পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করলেন। তবে তাদের বর্ণিত হাদীসে ‘অতঃপর এক বছর পরে তাঁকে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল’ এবং এর পরের কথাগুলোর উল্লেখ নেই। (ই.ফা. ১৬২২, ই.সে. ১৬২৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ভোর হওয়ার পূর্বেই বিত্‌র আদায় কর। (ই.ফা. ১৬২৩, ই.সে. ১৬৩০) আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ তিনি বলেন, যে ব্যক্তি রাতের বেলায় নাফ্‌ল সলাত আদায় করবে সে যেন বিত্‌র সলাত সর্বশেষে আদায় করবে। কেননা, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবেই সলাত আদায় করতে আদেশ করতেন। (ই.ফা. ১৬২৪, ই.সে. ১৬৩১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের রাতের সলাত বিত্‌র দিয়ে শেষ কর। (ই.ফা. ১৬২৫, ই.সে. ১৬৩২) ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, কেউ রাতের বেলা সলাত আদায় করলে সে যেন ফাজ্‌রের পূর্বে শেষ সলাত হিসেবে বিত্‌র আদায় করে নেয়। কেননা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে (সাহাবীগণকে) এভাবে (সলাত আদায় করতে) আদেশ করতেন। (ই.ফা. ১৬২৬, ই.সে. ১৬৩৩) ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শেষ রাতে বিত্‌র সলাতের সময়। আর বিত্‌র সলাত এক রাক‘আত মাত্র (অথবা শেষ রাতে বিত্‌র সলাত এক রাক‘আত আদায় করবে)। (ই.ফা. ১৬২৭, ই.সে. ১৬৩৪) ‘আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিত্‌র সলাত রাতের শেষাংশে এক রাক‘আত মাত্র আদায় করতে হয়। (ই.ফা. ১৬২৮, ই.সে. ১৬৩৫) আবূ মিজলায (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু 'আব্বাস ('আবদুল্লাহ) (রাঃ)-কে বিত্‌র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি : এক রাক‘আত সলাত রাতের শেষ ভাগে আদায় করতে হবে। তিনি (আবূ মিজলায) আরো বলেছেনঃ আমি একইভাবে ইবনু ‘উমার ('আবদুল্লাহ) (রাঃ)-কেও বিষয়টি জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনিও বলেছিলেন : আমি রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি বিত্‌র সলাত এক রাক‘আত, (সলাত ) রাতের শেষ ভাগে আদায় করতে হবে। (ই.ফা. ১৬২৯, ই.সে. ১৬৩৬) ‘আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ) জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে উচ্চৈঃস্বরে ডাকল। তিনি তখন মাসজিদে ছিলেন। সে বলল : হে আল্লাহর রসূল! আমি রাতের সলাত কীভাবে বিত্‌র বা বেজোড় সলাত আদায় করব? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ কেউ রাতে (নাফ্‌ল) সলাত আদায় করলে দু‘রা ’আত দু‘ রাক‘আত করে আদায় করবে। অতঃপর ভোর হওয়ার আভাস পেলে এক রাক‘আত সলাত আদায় করে নিবে। এ এক রাক‘আত সলাতই সে যত সলাত আদায় করছে সেগুলোকে বিত্‌র বা বেজোড় করে দিবে। আবূ কুরায়ব তার বর্ণনায় 'আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ)-এর নাম উল্লেখ না করে ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ১৬৩০, ই.সে. ১৬৩৭) আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, ফাজ্‌রের সলাতের পূর্বের দু‘ রাক‘আত সলাতে আমি কিরাআত দীর্ঘায়িত করে থাকি-এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী? তিনি বললেনঃরসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা নাফ্‌ল সলাত দু‘ দু‘ রাক‘আত করে আদায় করতেন এবং এক রাক‘আত বিত্‌র বা বেজোড় আদায় করতেন। আনাস ইবনু সীরীন বলেন-এ সময় আমি বললাম : আমি তো আপনাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করছি না। (আমার এ কথা বলার পর) তিনি বললেনঃতুমি তো মোটা বুদ্ধির লোক দেখছি! তুমি কি আমাকে হাদীসটা (পুরো) বলতে দিবে না।! রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা নাফ্‌ল সলাত দু‘ দু‘ রাক‘আত করে আদায় করতেন এবং পরে এক রাক‘আত বিত্‌র বা বেজোড় আদায় করতেন। আর ফাজ্‌রের সলাতের পুর্বে দু‘ রাক‘আত নাফ্‌ল এমনভাবে আদায় করতেন যেন তিনি ‘ইক্বামাত' বা তাকবীর শুনতে পাচ্ছেন। খালাফ ইবনু হিশাম তাঁর বর্ণনাতে “ফাজ্‌রের পূর্বের দু‘ রাক‘আত সলাত সম্পর্কে আপনার মতামত কী” কথাটি উল্লেখ করেছেন। তিনি ‘সলাত’ শব্দটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ১৬৩১, ই.সে. ১৬৩৮) আনাস ইবনু সীরীন (রহঃ) তিনি বলেন, “আমি আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম” ..... পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। তবে তার বর্ণনাতে তিনি এতটুকু কথা অধিক বলেছেন যে, আর তিনি রাতের শেষভাগে এক রাক‘আত বিত্‌র আদায় করতেন। তাঁর বর্ণনাতে এ কথাও উল্লেখ আছে যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার বললেনঃ আরে থামো থামো! তুমি তো মোটা বুদ্ধির লোক দেখছি। (ই.ফা. ১৬৩২, ই.সে. ১৬৩৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রাতের সলাত (নাফ্‌ল সলাত ) দু’ রাক‘আত করে আদায় করবে। তবে যখন দেখবে যে, সকাল হয়ে যাচেছ তখন এক রাক‘আত বিত্‌র আদায় করবে। ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল-দু‘ দু‘ রাক‘আত কীভাবে আদায় করতে হবে? তিনি বললেনঃ প্রতি দু‘ রাক‘আত আদায় করে সালাম ফিরাবে। (ই.ফা.১৬৩৩, ই.সে. ১৬৪০) আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ভোর (ফাজ্‌র) হবার পূর্বেই বিত্‌র সলাত আদায় কর। (ই.ফা. ১৬৩৪,ই.সে. ১৬৪১) আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিত্‌র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ফাজ্‌রের ওয়াক্তের পূর্বেই বিত্‌র আদায় করে নাও। (ই.ফা. ১৬৩৫, ই.সে. ১৬৪২)

【21】

যে ব্যক্তি এ আশঙ্কা করে যে, সে শেষ রাত্রে (ঘুম থেকে) জাগ্রত হতে পারবে না, সে যেন রাতের প্রথম অংশেই তা আদায় করে নেয়।

জাবির ইবনু 'আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শেষ রাতে জাগতে পারবে না বলে কারো আশঙ্কা হলে সে যেন রাতের প্রথমভাগেই ('ইশার সলাতের পর) বিত্‌র আদায় করে নেয়। আর কেউ যদি শেষ রাতে জাগতে আগ্রহী থাকে (অর্থাৎ শেষ রাতে জাগতে পারবে বলে নিশ্চিত হতে পারে) তাহলে সে যেন শেষভাগে বিত্‌র আদায় করে নেয়। কেননা, শেষ রাতের সলাতে (মালাকগণের) উপস্থিতি থাকে। আর এটাই সর্বোত্তম ব্যবস্থা। হাদীসটি বর্ণনাকারীর আবূ মু‘আবিয়াহ্ (আরবী) শব্দের পরিবর্তে (আরবী) শব্দ উল্লেখ করেছেন। (ই.ফা. ১৬৩৬, ই.সে. ১৬৪৩) জাবির ইবনু 'আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ যদি শেষ রাতে জাগতে পারবে না বলে আশঙ্কা করে তাহলে বিত্‌র সলাত আদায় করে ঘুমাবে। আর যার শেষরাতে জাগতে পারার আত্মবিশ্বাস বা নিশ্চয়তা আছে সে শেষ রাতে বিত্‌র আদায় করবে। কেননা শেষ রাতের কুরআন পাঠে মালায়িকাহ্ উপস্থিত থাকে। আর এটা সর্বাপেক্ষা উত্তমও বটে। (ই.ফা. ১৬৩৭, ই.সে. ১৬৪৪)

【22】

ঐ সলাত সর্বোত্তম যাতে ক্বিরাআত লম্বা করা হয়

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে সলাতে দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে ক্বিরাআত পড়া হয় সে সলাতই সর্বোত্তম সলাত। (ই.ফা. ১৬৩৮, ই.সে. ১৬৪৫) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল : কোন্ সলাত সবচেয়ে উত্তম? জবাবে তিনি বলেছিলেন : দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে যে সলাত আদায় করা হয় সে সলাত সবচেয়ে উত্তম। আবূ বাক্‌র ইবনু আবূ শায়বাহ্ বলেছেন যে, হাদীসটি আবূ মু‘আবিয়াহ্ আ‘মাশের নিকট থেকে শুনে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৬৩৯, ই.সে. ১৬৪৬)

【23】

রাতে এমন একটি সময় রয়েছে যে সময় দু‘আ কবূল হয়

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি : সারা রাতের মধ্যে এমন একটি বিশেষ সময় আছে যে সময়ে কোন মুসলিম আল্লাহর কাছে দুন্ইয়া ও আখিরাতের কোন কল্যাণ প্রার্থনা করলে তিনি তাকে তা দান করেন। আর ঐ বিশেষ সময়টি প্রত্যেক রাতেই থাকে। (ই.ফা. ১৬৪০, ই.সে. ১৬৪৭) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রাতের মধ্যে একটি বিশেষ সময় আছে, সে সময় কোন মুসলিম বান্দা যদি আল্লাহর কাছে কোন কল্যাণ প্রার্থনা করে তাহলে তিনি তাকে তা দান করেন। (ই.ফা. ১৬৪১, ই.সে. ১৬৪৮)

【24】

শেষ রাতে যিক্‌র ও প্রার্থনা করা এবং দু‘আ কবূল হওয়ার আলোচনা

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক রাতে যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ থাকে তখন আমাদের প্রতিপালক মহান ও কল্যাণময় আল্লাহ দুন্‌ইয়ার আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন : কে এমন আছ, যে এখন আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিব। এখন কে এমন আছ যে, আমার কাছে প্রার্থনা করবে, আমি তাকে দান করব। আর কে এমন আছ, যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। (ই.ফা. ১৬৪২, ই.সে. ১৬৪৯) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ প্রত্যেক রাতে যখন রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয় তখন আল্লাহ তা‘আলা দুন্‌ইয়ার আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন-আমিই একমাত্র বাদশাহ্! কে এমন আছ আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে এমন আছ আমার কাছে প্রার্থনা করবে, আমি তাকে দান করব। কে এমন আছ যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব, ফাজ্‌রের আলো ছড়িয়ে না পড়া পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা এরূপ বলতে থাকেন। (ই.ফা. ১৬৪৩, ই.সে. ১৬৫০) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রাতের অর্ধেক অথবা দু‘ তৃতীয়াংশ অতিক্রম হলে মহান ও বারাকাতময় আল্লাহ দুন্‌ইয়ার আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন : কোন প্রার্থনাকারী আছে কি যাকে দেয়া হবে? কোন আহ্বানকারী আছে কি যার আহ্বানে সাড়া দেয়া হবে? কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি, যাকে ক্ষমা করা হবে? আল্লাহ তাআলা ভোর প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত এরূপ বলতে থাকেন। (ই.ফা. ১৬৪৪, ই.সে. ১৬৫১) ইবনু মারজানাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রাতের অর্ধেকের সময় অথবা শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে মহান আল্লাহ দুন্‌ইয়ার আসমানে অবতরণ করে বলতে থাকেন : কে আছে আহ্বানকারী? (আহ্বান কর) আমি তার আহবানে সাড়া দান করব। কে আছে প্রার্থনাকারী? (প্রার্থনা কর) আমি দান করব। এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলতে থাকেন : এমন সত্তাকে কে কর্জ দিবে যিনি কখনো ফকির বা দরিদ্র হবেন না বা যুল্‌ম করতে পারেন না? [৩২] ইমাম মুসলিম বলেছেনঃ ইবনু মারজানাহ্ হলেন সা‘ঈদ ইবনু ‘আবদুল্লাহ। মারজানাহ্ তার মায়ের নাম। (ই.ফা. ১৬৪৫, ই.সে. ১৬৫২) সা‘দ ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) সা‘দ ইবনু সা‘ঈদ (রহঃ) থেকে এই একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এতে তিনি অতিরিক্ত এতটুকু বর্ণনা করেছেন যে, অতঃপর মহান ও বারাকাতময় আল্লাহ নিজের দু‘হাত প্রসারিত করে বলেনঃ যিনি কখনো দরিদ্র হবেন না, কিংবা যুলম করেন না এমন সত্তাকে ঋন দেয়ার জন্য কে আছ? (ই.ফা. ১৬৪৬, ই.সে. ১৬৫৩) আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী ও আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তাঁরা বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা অবকাশ দেন বা দেরী করেন না। এভাবে যখন রাতের প্রথম এক তৃতীয়াংশ অতিক্রম হয়ে যায় তখন তিনি দুন্ইয়ার আকাশে নেমে এসে বলতে থাকেন : কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি (যে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আর আমি তাকে ক্ষমা করব)? কোন তাওবাহ্‌কারী আছে কি (যে তাওবাহ্‌ করবে আর আমি তার তাওবাহ্‌ ক্ববুল করব)? কোন প্রার্থনাকারী আছে কি (যে প্রার্থনা করবে আর আমি তার প্রার্থনা ক্ববূল করব)? কোন আহ্বানকারী আছে কি(আমি যার আহ্বানে দিব)? এভাবে ফাজ্‌রের ওয়াক্ত পর্যন্ত তিনি বলতে থাকেন। (ই.ফা. ১৬৪৭,ই.সে. ১৬৫৪) শু‘বাহ্-এর মাধ্যমে আবূ ইসহাক্ব (রহঃ) একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে মানসূর (রহঃ) বর্ণিত হাদীসটি পূর্ণাঙ্গ ও বেশী স্পষ্ট। (ই.ফা. ১৬৪৮, ই.সে. ১৬৫৫)

【25】

রমাযানে তারাবীহ সলাত আদায় করা প্রসঙ্গে উৎসাহ প্রদান করা

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) যে ব্যক্তি রমাযান মাসে ঈমানের সাথে ও একান্ত আল্লাহর সন্তষ্টির নিমিত্তে তারাবীহ পড়ে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়। (ই.ফা. ১৬৪৯, ই.সে. ১৬৫৬) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দৃঢ় বা কঠোরভাবে নির্দেশ না দিয়ে রমাযান মাসের তারাবীহ পড়তে উৎসাহিত করে বলতেন: যে ব্যক্তি ঈমানসহ ও একান্ত আল্লাহর সন্তষ্টির নিমিত্তে রমাযান মাসের তারাবীহ পড়ল তার পূর্বের সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যুবরণ করলেন। তখনও এ অবস্থা চলছিল (অর্থাৎ মানুষকে তারাবীহ পড়তে নির্দেশ না দিয়ে শুধু উৎসাহিত করা হত)। আবূ বকর (রাঃ) এর খিলাফতকালে এবং ‘উমার (রাঃ) এর খিলাফতের প্রথম দিকেও এ নীতি কার্যকর ছিল। (ই.ফা. ১৬৫০, ই.সে. ১৬৫৭) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমাযান মাসে ঈমান ও একান্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তে সিয়াম পালন করবে তার পূর্ববর্তী সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ক্বদরের রাতে ঈমানসহ ও একান্ত আল্লাহর সন্তষ্টির নিমিত্তে সলাত আদায় করবে তারও পূর্ববর্তী সব পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। (ই.ফা. ১৬৫১, ই.সে. ১৬৫৮) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ক্বদরের রাতে জাগরণ করতে গিয়ে তা পেয়ে গেল, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। (রাবী বলেন) আমার মনে হয় তিনি ‘ঈমান ও সাওয়াবের আশায়’ কথাটি বলেছেন। (ই.ফা. ১৬৫২, ই.সে. ১৬৫৯) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) এক রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে সলাত আদায় করলেন। তাঁর সাথে কিছু সংখ্যক লোকও সলাত আদায় করল। পরের রাতেও তিনি মাসজিদে সলাত আদায় করলেন। লোকজন সংখ্যায় অনেক বেশী হয়ে গেল। অতঃপর তৃতীয় কিংবা চতুর্থ রাতেও অনেক লোক এসে একত্র হ‘ল। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আর তাদের সাথে যোগ দিলেন না। সকাল বেলা তিনি সবাইকে বললেনঃ (গত রাতে) তোমরা যা করেছ তা আমি দেখেছি। তবে শুধু এ আশঙ্কায় আমি তোমাদের সাথে যোগদান করিনি যে, তোমাদের ওপর তা ফরয করে দেয়া হতে পারে। তিনি (‘আয়িশাহ্‌) বলেছেনঃ ঘটনাটি রমাযান মাসে সংঘটিত হয়েছে। (ই.ফা. ১৬৫৩, ই.সে. ১৬৬০) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) এক রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাড়ী থেকে মাসজিদে গিয়ে সলাত আদায় করলেন, অনেক লোকও তাঁর সাথে সলাত আদায় করল। পরদিন লোকজন এ ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করল। সুতরাং ঐ দিন রাতে আরো বেশী লোক (মাসজিদে) একত্রিত হ‘ল। ঐ দ্বিতীয় রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে তাদের মাঝে উপস্থিত হলেন। সবাই তাঁর সাথে সলাত আদায় করল। পরদিনও লোকজন এ ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা করল। সুতরাং তৃতীয় রাতে লোকের সংখ্যা আরো বেড়ে গেল। রাতেও তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে তাদের মাঝে গেলেন। লোকজন তাঁর সাথে সলাত আদায় করল। কিন্তু চতুর্থ রাতে লোক সংখ্যা এত বেশী হ‘ল যে, মাসজিদে জায়গা সংকুলান হ‘ল না। কিন্তু রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে আসলেন না। তাঁদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক লোক সলাত বলে ডাকতে শুরু করল। কিন্তু তিনি ঐ রাতে আর বের হলেন না। বরং ফাজ্‌রের ওয়াক্তে বের হলেন। ফাজ্‌রের সলাত শেষ করে তিনি লোকদের দিকে ঘুরলেন, তাশাহ্‌হুদ পড়লেন, তারপর “আম্মাবাদ” বলে শুরু করলেন। তিনি বললেনঃ গতরাতে তোমাদের ব্যাপারটা আমার অজানা নয়। কিন্তু আমি আশঙ্কা করেছিলাম যে, রাতের এ সলাতটি তোমাদের জন্য ফরয করে দেয়া হতে পারে। আর তোমরা তা পালন করতে অক্ষম হয়ে পড়বে। (ই.ফা. ১৬৫৪, ই.সে. ১৬৬১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস'উদ (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সারা বছর রাত জেগে সলাত আদায় করবে সে ক্বদরের রাত প্রাপ্ত হবে। এ কথা শুনে উবাই ইবনু ক্বা'ব বললেনঃ যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই সে মহান আল্লাহর ক্বসম! নিশ্চিতভাবে লায়লাতুল ক্বদর রমাযান মাসে। এ কথা বলতে তিনি ক্বসম করলেন কিন্তু ইন-শা-আল্লাহ বললেন না (অর্থাৎ তিনি নিশ্চিতভাবেই বুঝলেন যে, রমাযান মাসের মধ্যেই ‘লায়লাতুল ক্বদর’ আছে)। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার বললেনঃ আল্লাহর কসম! কোন্‌ রাতটি ক্বদ্‌রের রাত তাও আমি জানি। সেটি হ'ল এ রাত, যে রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কে সলাত আদায় করতে আদেশ করেছেন। সাতাশ রমাযান তারিখের সকালের পূর্বের রাতটিই সে রাত। আর ঐ রাতের আলামাত বা লক্ষন হ'ল-সে রাত শেষে সকালে সূর্য উদিত হবে তা উজ্জ্বল হবে কিন্তু সে সময় (উদয়ের সময়) তার কোন তীব্র আলোকরশ্মি থাকবে না (অর্থাৎ দিনের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ হবে)। (ই.ফা. ১৬৫৫, ই.সে. ১৬৬২) উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি ‘লাইলাতুল ক্বদ্‌র’ বা ক্বদ্‌রের রাত সম্পর্কে বলেনঃ আল্লাহর ক্বসম! আমি রাতটি সম্পর্কে জানি এবং এ ব্যাপারে আমি যা জানি তা হচ্ছে, যে রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সলাত আদায় করতে আদেশ করেছেন সেটিই অর্থাৎ সাতাশ তারিখের রাতই ক্বদ্‌রের রাত। হাদীসটির ঐ অংশ সম্পর্কে যে রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সলাত আদায় করতে আদেশ করেছেন। শু‘বাহ্ সন্দেহ পোষন করেছেন। বর্ণনাকারী শু‘বাহ্ বলেছেনঃ আমার এক বন্ধু (‘আবদাহ্ ইবনু আবূ লুবাবাহ্ ) তার থেকে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৬৫৬, ই.সে. ১৬৬৩) শু‘বাহ্ (রহঃ) একই সানাদে হাদীসটি অনুরূপভাবে বর্ণনা করেছেন। তবে শু‘বাহ্ এ বর্ণনাতে সন্দেহ পোষন করেছেন এবং এর পরের কথাগুলো উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ১৬৫৭, ই.সে. ১৬৬৪)

【26】

রাত্রিকালীণ সলাতে দু‘আ ও ক্বিয়াম

'আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক রাতে আমার খালা মায়মূনাহ্-এর [রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীর] ঘরে কাটালাম। (আমি দেখলাম) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা উঠলেন এবং প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে এসে মুখমন্ডল এবং দু‘হাত ধুলেন। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমালেন। পরে পুনরায় উঠে মশকের পাশে গেলেন এবং এর বন্ধন খুলে ওযূ করলেন। ওযূতে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মধ্যমপন্থা অবলম্বন করলেন (অর্থাৎ ওযূ করতে খুব যত্নও নিলেন না আবার একেবারে খুব হালকাভাবেও ওযূ করলেন না)। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেশী পানি ব্যবহার করলেন না। তবে পূর্ণাঙ্গ ওযূ করলেন। তারপর দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করলেন। আমি সে সময় উঠলাম এবং তাঁর কাজকর্ম দেখার জন্য জেগে ছিলাম বা সতর্কভাবে তা লক্ষ্য করছিলাম, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটা যেন না ভেবে বসেন তাই আড়মোড়া ভাঙ্গলাম। এবার আমি ওযূ করলাম এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতে দাঁড়ালেন, অতঃপর আমিও তাঁর বা পাশে দাঁড়ালাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে এনে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। এভাবে রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রাতের সলাত তের রাক‘আত শেষ হল। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি (ঘুমের মধ্যে তাঁর) নাক ডাকতে শুরু করল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বভাবতঃ যখনই ঘুমাতেন তখন নাক ডাকত। পরে বিলাল (রাঃ) তাঁকে সলাতের কথা বলে গেলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘আল্ল-হুমাজ্‘আল ফী ক্বল্‌বী নূরাওঁ ওয়া ফী বাসারী নূরাওঁ, ওয়া ফী সাম‘ঈ নূরাওঁ ওয়া আই ইয়ামীনী নূরাওঁ, ওয়া 'আই ইয়াসা-রী নূরাওঁ, ওয়া ফাওক্বী নূরাওঁ, ওয়া তাহতী নূরাওঁ, ওয়া আমা-মী নূরাওঁ, ওয়া খল্‌ফী নূরাওঁ, ওয়া ‘আযযিম্‌লী নূরা”-(অর্থাৎ হে আল্লাহ ! তুমি আমার হৃদয়ে আলো দান কর, আমার চোখে আলো দান কর, আমার কানে বা শ্রবণ শক্তিতে আলো দান কর। আমার ডান দিকে আলো দান কর, আমার বাঁ দিকে আলো দান কর, আমার উপর দিকে আলো দান কর, আমার নীচের দিকে আলো দান কর, আমার সামনে আলো দান কর, আমার পিছনে আলো দান কর এবং আমার আলোকে বিশাল করে দাও।) বর্ণনাকারী কুরায়ব বলেছেনঃ তিনি এরূপ আরো সাতটি কথা বলেছিলেন যা আমি ভূলে গিয়েছি। হাদীসের বর্ণনাকারী সালামাহ্ ইবনু কুহায়ল বলেনঃ এরপর আমি ‘আব্বাস (রাঃ) এর এক পুত্রের সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি ঐগুলো (অবশিষ্ট সাতটি) আমার কাছে বর্ণনা করলেন। তাতে তিনি উল্লেখ করলেন : আমার স্নায়ুতন্ত্রীসমূহে, আমার শরীরের গোশতে , আমার রক্তে, আমার চুলে এবং আমার গাত্রচর্মে আলো দান কর। এছাড়াও তিনি আরো দুটি বিষয় উল্লেখ করে বললেনঃ এ দুটিতে তিনি আলো চেয়েছেন। (ই.ফা. ১৬৫৮,ই.সে. ১৬৬৫) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি একদিন উম্মুল মুমিনীন মায়মুনাহ্ (রাঃ) এর ঘরে রাত কাটালেন। মায়মূনাহ্ (রাঃ) তাঁর খালা। তিনি বলেছেন, আমি বিছানাতে আড়াআড়িভাবে শুলাম। এরপরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে পড়লেন। রাতের অর্ধেকের কিছু পূর্বে অথবা অর্ধেকের কিছু পর তিনি জেগে উঠলেন এবং মুখমন্ডলের উপর হাত রগড়িয়ে ঘুমের আলস্য দূর করতে থাকলেন। এরপর সূরাহ্‌ আ-লি ‘ইমরান এর শেষ দশটি আয়াত পাঠ করলেন এবং (ঘরে) ঝুলানো একটি মশকের পাশে গিয়ে উত্তমরূপে ওযূ করলেন। অতঃপর তিনি উঠে সলাত আদায় করলেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন : তখন আমিও উঠে দাঁড়ালাম এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা যা করেছিলেন আমিও তাই করলাম। তারপর তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম এবং তাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন আর আমার ডান কান ধরে মোচড়াতে থাকলেন।[৩৩] তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। তারপর আরো দু’ রাকআত সলাত আদায় করলেন। পরে আরো দু’ রাক‘আত, এরপর আরো দু’ রাক‘আত এবং পরে আরো দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। আর সর্বশেষে বিত্‌র পড়লেন।[৩৪] তারপর শুয়ে পড়লেন। অবশেষে মুয়ায্‌যিন এসে সলাত সম্পর্কে অবহিত করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে সংক্ষেপে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন এবং তারপর বাড়ী থেকে (মাসজিদে) গিয়ে ফাজ্‌রের সলাত আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৬৫৯, ই.সে. ১৬৬৬) মাখরামাহ্ ইবনু সুলাইমান (রহঃ) একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে এতে তিনি এতটুকু অতিরিক্ত বলেছেন, এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি পুরনো মশকের কাছে গেলেন এবং মিসওয়াক করে ওযূ করলেন। তিনি বেশী পানি খরচ না করেই উত্তমরূপে ওযূ করলেন তারপর আমাকে ঝাঁকুনি দিলেন। তখন আমি উঠলাম। এরপর তিনি হাদীসের অবশিষ্ট অংশটুকু মালিক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করলেন। (ই.ফা. ১৬৬০, ই.সে. ১৬৬৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী মাইমূনাহ্‌র (খালা) ঘরে আমি ঘুমালাম আর সেই রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ঘরে ছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর ঘরে রাত্রি যাপন করলেন। রাতে তিনি ওযূ করে সলাত আদায় করতে দাঁড়ালে আমিও তাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তখন তিনি আমাকে ধরে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। ঐ রাতে তিনি তের রাক‘আত সলাত আদায় করলেন এবং তারপর ঘুমালেন। ঘুমের মধ্যে তিনি নাক ডাকলেন। আর তিনি যখনই ঘুমাতেন নাক ডাকত। পরে মুয়াযযিন তাঁর কাছে আসলেন তিনি (মাসজিদে) চলে গেলেন এবং নতুন ওযূ না করেই সলাত আদায় করলেন। হাদীসের বর্ণনাকারী 'আম্‌র বলেছেন, আমি বুকায়র ইবনুল আশাজ্জ-এর কাছে এ হাদীস বর্ণনা করলে তিনি বললেনঃ আমার কাছেও তিনি হাদীসটি অনুরূপভাবে বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৬৬১, ই.সে. ১৬৬৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রাতে আমি আমার খালা মায়মূনাহ্ বিনতু হারিস-এর ঘরে রাত্রি যাপন করলাম। আমি তাঁকে বললাম, রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (রাতে) যখন উঠবেন তখন আপনি আমাকে জাগিয়ে দিবেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠলে আমিও উঠলাম এবং তাঁর বাম পাশে দিয়ে দাঁড়ালাম। তখন তিনি আমার হাত ধরে তাঁর ডান পাশে নিলেন। পরে যখনই আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিলাম তখন তিনি আমার কানের নিম্নভাগ ধরে টান দিচ্ছিলেন। 'আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস বলেন-তিনি এগার রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। এরপর তিনি শুয়ে থাকলেন। আমি তাঁর নাক ডাকানোর শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। অতঃপর ফাজ্‌রের সময় স্পষ্ট হয়ে গেলে তিনি সংক্ষিপ্তাকারে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। (ই.ফা. ১৬৬২, ই.সে. ১৬৬৯) আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি তাঁর খালা [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী] মায়মুনাহ্‌-এর ঘরে রাত্রি যাপন করলেন। রাতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে ঝুলিয়ে রাখা একটি পুরনো মশক থেকে পানি নিয়ে হালকাভাবে ওযূ করলেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাসের আযাদকৃত ক্রীতদাস কুরায়ব বলেছেনঃ ‘আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস বলেন, তখন আমিও উঠলাম এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা যা করেছিলেন আমিও তাই করলাম এবং পরে গিয়ে তাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। কিন্তু তিনি আমাকে তাঁর পিছন দিক দিয়ে ঘুরিয়ে ডান পাশে নিয়ে দাঁড় করালেন। এরপর সলাত আদায় করে তিনি শয্যা গ্রহণ করলেন এবং ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি নাকও ডাকলেন। পরে বিলাল এসে তাঁকে সলাতের সময়ের কথা জানালে তিনি গিয়ে ফাজ্‌রের সলাত আদায় করলেন। কিন্তু নতুন ওযূ করলেন না। হাদীসের বর্ণনাকারী সুফ্‌ইয়ান বলেছেন, এ ব্যবস্থা শুধু (ঘুমানোর পর নতুন ওযূ না করে সলাত আদায় করা) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য নির্দিষ্ট। কেননা আমরা এ কথা জানি যে, তাঁর চোখ দুটি ঘুমায় কিন্তু হৃদয় মন ঘুমায় না। (ই.ফা. ১৬৬৩, ই.সে. ১৬৭০) ‘আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একদা আমার খালা মায়মূনাহ্-এর ঘরে রাত্রিযাপন করলাম আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কীভাবে সলাত আদায় করেন তার প্রতি লক্ষ্য রাখলাম। তিনি (আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস) বলেছেনঃ (রাতে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে প্রস্রাব করলেন এবং মুখমন্ডল ও দু’ হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। পরে আবার উঠে মশকের পাশে গেলেন, এর বাঁধন খুললেন এবং বড় থালা বা কাষ্ঠ নির্মিত প্লেটে পানি ঢাললেন। পরে হাত দিয়ে তা নীচু করলেন এবং দু’ ওযুর মাঝামাঝি উত্তম ওযূ করলেন (অর্থাৎ অত্যধিক যত্নের সাথে ওযূ করলেন না, আবার খুব হালকাভাবেও করলেন না)। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতে দাঁড়ালে আমিও উঠে গিয়ে তাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ধরে তাঁর ডান পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। মোট তের রাক‘আত সলাত দ্বারা তাঁর সলাত শেষ হল। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমিয়ে পড়লেন। তখন নাক ডাকতে শুরু করল। আমরা নাক ডাকানোর আওয়াজ শুনে তাঁর ঘুমানো বুঝতে পারতাম। তারপর সলাতের জন্য (মাসজিদে) চলে গেলেন এবং সলাত আদায় করলেন। সলাতের মধ্যে অথবা সিজদায় গিয়ে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ বলে দু‘আ করতে থাকলেন “আল্ল-হুম্মাজ্’আল ফী ক্বলবী নূরাওঁ ওয়া ফী সাম’ঈ নূরাওঁ ওয়া ফী বাসারী নূরাওঁ ওয়া ‘আই ইয়ামীনী নূরাওঁ ওয়া ‘আন্ শিমালী নূরাওঁ ওয়া আমা-মী নূরাওঁ ওয়া খলফী নূরাওঁ ওয়া ফাওক্বী নূরাওঁ ওয়া তাহ্‌তী নূরাওঁ ওয়াজ ‘আল্‌লী নূরান্‌ আও ক্ব-লা ওয়াজ্‘আলনী নূরা-” -(অর্থাৎ- হে আল্লাহ ! তুমি আমার হৃদয়-মনে আলো দান কর, আমর শ্রবণ শক্তিতে আলো দান কর, আমার ডান দিকে আলো দান কর, আমার বাম দিকে আলো দান কর, আমার উপর দিকে আলো দান কর, আমার নীচের দিকে আলো দান কর এবং আমার জন্য আলো সৃষ্টি কর। অথবা তিনি বললেনঃ আমাকে আলোতে পরিণত করে দাও।) (ই.ফা. ১৬৬৪, ই.সে. ১৬৭১) 'আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মূনাহ্-এর কাছে ছিলাম। সে সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে আসলেন। এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি গুনদার (রহঃ) বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বিষয়বস্তু উল্লেখ করলেন। এতে তিনি “ওয়াজ্’আলনী নূরান” অর্থাৎ আমাকে আলো বানিয়ে দাও কথাটি বলতে কোনরূপ সন্দেহ প্রকাশ করলেন না। (ই.ফা. ১৬৬৫, ই.সে. ১৬৭২) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মূনাহ্-এর ঘরে রাত্রি যাপন করলাম। অতঃপর পূর্ণ হাদীসটি বর্ণনা করেন কিন্তু হাতের কব্জিদ্বয় ও মুখমন্ডল ধোয়ার কথা উল্লেখ করেননি। বর্ণনাতে তিনি বলেছেনঃ পরে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মশকের পাশে গেলেন, এটির বাঁধন খুললেন এবং দু‘ ওযূর মাঝামাঝি ওযূ করলেন। এরপর বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর আবার উঠে মশকের পাশে গিয়ে ওটির বন্ধন খুললেন এবং ওযূ যেমনটি হওয়া দরকার তেমনি করলেন। আর তিনি আমাকে এতে বলেছেন, “আ’যিম্‌ লী নূরান ” অর্থাৎ ‘(হে আল্লাহ!) আমার আলোকে বড় করে দাও।’ তবে এতে তিনি “ওয়াজ্‘আলনী নূরান” অর্থাৎ- ‘আমাকে নূর বা আলো বানিয়ে দাও’ কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ১৬৬৬, ই.সে. ১৬৭৩) কুরায়ব (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে (তাঁর ঘরে) রাত্রি যাপন করলেন। তিনি বলেছেনঃ রাতের বেলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে একটি মশকের পাশে গেলেন এবং তা থেকে পানি ঢেলে ওযূ করলেন। এতে তিনি অধিক পানি ব্যবহার করলেন না বা ওযূ সংক্ষিপ্তও করলেন না। এতটুকু বর্ণনা করার পর তিনি হাদীসটি পূর্বের হাদীসটির অনুরূপ বর্ণনা করলেন। তবে এতে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ রাতে ঊনিশটি কথা বলে দু'আ করলেন। সালামাহ্ ইবনু কুহায়ল বলেছেন-কুরায়ব ঐ কথাগুলো সব আমার কাছে বর্ণনা করেছেন। আমি তার বারোটি মাত্র মনে রাখতে পেরেছি আর অবশিষ্টগুলো ভুলে গিয়েছি। তিনি তাঁর দুআয় বলেছিলেন ” “হে আল্লাহ ! তুমি আমার জন্য আমার হৃদয় মনে আলো দান কর, আমার জিহ্বা বা বাকশক্তিতে আলো দান কর। আমার শ্রবণশক্তিতে আলো দান কর, আমার দৃষ্টিশক্তিতে আলো দান কর, আমার উপর দিকে আলো দান কর, আমার নীচের দিকে আলো দান কর, আমার ডান দিকে আলো দান কর, আমার বাঁ দিকে আলো দান কর, আমার সামনে আলো দান কর, আমার পিছন দিকে আলো দান কর, আমার নিজের মধ্যে আলো সৃষ্টি করে দাও এবং আমার আলোকে বিশালতা দান কর। (ই,ফা. ১৬৬৭, ই.সে. ১৬৭৪) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একরাতে আমার খালা [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী] মায়মূনাহ্-এর ঘরে ঘুমালেন। উক্ত রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে কিভাবে সলাত আদায় করেন তা দেখা ছিল আমার উদ্দেশ্য। 'আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস বলেছেনঃ তিনি তাঁর স্ত্রীর সাথে কিছুক্ষন কথাবার্তা বললেন এবং তারপর ঘুমিয়ে পড়লেন। .......এতটুকু বলার পর পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে এতে এতটুকু কথা অধিক আছে যে, তিনি উঠে ওযূ ও মিসওয়াক করলেন। (ই.ফা. ১৬৬৮, ই.সে. ১৬৭৫) আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) একদিন রাতে তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে জেগে উঠে মিসওয়াক ও ওযূ করলেন। এ সময় তিনি (কুরআন মাজীদের এ আয়াতগুলো) পড়ছিলেন : (আরবি) “আসমান ও জমিনের সৃষ্টি কৌশলে এবং রাত ও দিনের পালাক্রমে আগমন নির্গমনে সুধী ও জ্ঞানীজনদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে”- (সূরাহ্‌ আলি ইমরান ৩ : ১৯০)। এভাবে তিনি সূরার শেষ পর্যন্ত পড়লেন। এরপর উঠে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। এতে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্বিয়াম, রুকু ও সিজদাহ্ দীর্ঘায়িত করলেন এবং শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লেন। এমনকি নাক ডেকে ঘুমালেন। তিনবার তিনি এরূপ করলেন এবং এভাবে তিনি ছয় রাক‘আত সলাত আদায় করলেন প্রত্যেক বার তিনি মিসওয়াক করলেন, ওযূ করলেন এবং এ আয়াতগুলো পড়লেন। সর্বশেষে তিন রাক‘আত বিত্‌র পড়লেন। অতঃপর মুয়ায্‌যিন আযান দিলে তিনি সলাতের জন্য (মাসজিদে ) চলে গেলেন। তখন তিনি এ বলে দুআ করেছিলেন: “আল্ল-হুম্মআজ্’আল ফী ক্বলবী নূরাওঁ ওয়াফী লিসা-নী নূরাওঁ ওয়াজ’আল ফী সাম’ঈ নূরাওঁ ওয়াজ্‌’আল ফী বাসারী নূরাওঁ ওয়াজ্‌’আল মিন খলফী নূরাওঁ ওয়ামিন আমা-মী নূরাওঁ ওয়াজ্‌’আল মিন ফাওক্বী নূরাওঁ ওয়ামিন তাহ্‌তী নূরান্‌, আল্ল-হুম্মা আ’ত্বিনী নূরা-” অর্থাৎ হে আল্লাহ আমার হৃদয় মনে আলো (নূর) সৃষ্টি করে দাও, আমার দৃষ্টিশক্তিতে আলো সৃষ্টি করে দাও, আমার পিছন দিকে আলো সৃষ্টি করে দাও, আমার সামনের দিকে আলো সৃষ্টি করে দাও , আমার উপর দিক থেকে আলো সৃষ্টি করে দাও এবং আমার নীচের দিক থেকেও আলো সৃষ্টি করে দাও। হে আল্লাহ ! আমাকে নূর বা আলো দান কর।) (ই.ফা. ১৬৬৯, ই.সে. ১৬৭৬) 'আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একরাতে আমি আমার খালা [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী] মায়মুনাহ্ এর কাছে (তাঁর ঘরে) রাত্রি যাপন করলাম। রাতের বেলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাফ্‌ল সলাত আদায় করতে উঠলেন। তিনি মশকের পাশে গিয়ে ওযূ করলেন এবং তারপর সলাত আদায় করতে দাঁড়ালেন। তাঁকে এরূপ করতে দেখে আমিও উঠে মশকের পানি দিয়ে ওযূ করলাম। তারপর তাঁর বাম পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পিঠের দিক থেকে আমার হাত ধরে সোজা তাঁর পিঠের দিকে দিয়ে নিয়ে ডান পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। হাদীসের বর্ণনাকারী ‘আত্বা বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তিনি নাফ্‌ল সলাত আদায়কালে এরূপ করেছিলেন। জবাবে তিনি ('আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস) বললেনঃ হ্যাঁ। (ই.ফা. ১৬৭০, ই.সে. ১৬৭৭) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন আমার পিতা ‘আব্বাস আমাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে পাঠালেন। সেদিন আমার খালা মায়মূনাহ্-এর ঘরে ছিলেন। উক্ত রাতে আমি তাঁর সাথে কাটালাম। রাতে তিনি সলাত আদায় করতে উঠলে আমিও উঠলাম এবং গিয়ে তাঁর বাম পাশে দাঁড়ালাম। কিন্তু তিনি আমাকে তাঁর পিছন দিক দিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে ডান পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। (ই.ফা. ১৬৭১, ই.সে. ১৬৭৮) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একদিন আমার খালা মায়মুনাহ্‌-এর ঘরে রাত্রি যাপন করলাম। এ পর্যন্ত বর্ণনা করার পর বর্ণনা কারী ইবনু জুরায়জ ও ক্বায়স ইবনু সা’দ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করলেন। (ই. ফা. ১৬৭২, ই.সে. ১৬৭৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা তের রাক‘আত সলাত আদায় করতেন। ই.ফা. ১৬৭৩,ই.সে. ১৬৮০) যায়দ ইবনু খালিদ আল জুহানী (রাঃ) তিনি বলেন, রাতে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সলাত দেখব। রাতের বেলা প্রথমে তিনি সংক্ষিপ্ত ভাবে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। তারপর অনেক অনেক দীর্ঘায়িত করে দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। তারপর দু’রাক‘আত সলাত আদায় করলেন যা পূর্বের দু’ রাক‘আত থেকে কম দীর্ঘ ছিল। এরপর দু’ রাক‘আত আদায় করলেন যা পূর্বের দু’ রাক‘আত থেকে কম দীর্ঘায়িত ছিল। এরপর দু’ রাক‘আত আদায় করলেন যা পূর্বের দু’ রাক‘আত থেকে কম দীর্ঘায়িত ছিল। পরে আরো দু’রাক‘আত আদায় করলেন যা পূর্বের দু’ রাক‘আত থেকেও কম দীর্ঘায়িত ছিল। এরপর বিত্‌র অর্থাৎ এক রাক‘আত সলাত আদায় করলেন এবং এভাবে মোট তের রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। (ই.ফা. ১৬৭৪ ই.সে. ১৬৮১) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। এক সময়ে আমরা এক (পানির কিনারে) ঘাটে গিয়ে পৌছলাম। তিনি আমাকে জিঞ্জেস করলেনঃ জাবির তুমি কি ঘাট পার হবে না? আমি বললাম, হ্যাঁ। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপর পারে গিয়ে অবতরণ করলে আমি ও পার হলাম। (জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ বর্ণনা করেছেন যে,) এরপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে গেলে আর আমি তাঁর ওযুর পানি প্রস্তত করে রাখলাম। (তিনি বর্ণনা করেছেন) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে ওযু করলেন এবং একখানা মাত্র কাপড় গায়ে জড়িয়ে সালাতে দাঁড়ালেন। কাপড় খানার আচল বিপরীত দিকের দু’ কাধে দিলেন। তখন আমি গিয়ে তাঁর পিছনে দাড়ালাম। কিন্তু তিনি আমার কান ধরে তাঁর ডান পাশে খাড়া করে দিলেন। (ই.ফা. ১৬৭৫, ই.সে. ১৬৮২) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে সলাত আদায় করতে উঠলে সংক্ষিপ্তভাবে দু’ রাক‘আত (প্রথম দু’ রাক‘আত) সলাত শুরু করতেন। (ই.ফা. ১৬৭৬, ই.সে. ১৬৮৩) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ রাতের সলাত আদায় করতে শুরু করলে সে যেন সংক্ষিপ্তভাবে দু’ রাক‘আত সলাত দিয়ে শুরু করে। (ই.ফা. ১৬৭৭. ই.সে. ১৬৮৪) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাতের বেলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাত আদায় করতে উঠতেন তখন এ বলে দু’আ করতেনঃ “আল্লা-হুম্মা লাকাল হাম্‌দু আন্‌তা নূরুস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আর্‌যি ওয়ালাকাল হাম্‌দু আন্‌তা ক্বইয়্যামুস্‌ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আর্‌যি ওয়ালাকাল হাম্‌দু আন্‌তা রব্বুস্‌ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আর্‌যি ওয়ামান ফীহিন্না আন্‌তাল হাক্কু ওয়া ওয়া‘দুকাল হাক্কু’ ওয়াক্বাওলুকাল হাক্কু ওয়ালিক্বা-উকা হাক্কুন্‌ ওয়াল জান্নাতু হাক্কুন্‌ ওয়ান্না-রু হাক্কুন ওয়াস্‌ সা-‘আতু হাক্কুন, আল্ল-হুম্মা লাকা আস্‌লামতু ওয়াবিকা আ-মান্‌তু ওয়া 'আলায়কা তাওয়াক্কালতু ওয়া ইলায়কা আনাব্‌তু ওয়াবিকা খা-সাম্‌তু ওয়া ইলায়কা হা-কাম্‌তু ফাগ্‌ফিরলী মা-ক্বদ্দাম্‌তু ওয়া আখ্‌খারতু ওয়া আস্‌রার্‌তু ওয়া আ’লান্‌তু আন্‌তা ইলা-হী লা-ইলা-হা ইল্লা- আন্‌তা” (অর্থাৎ - হে আল্লাহ! তোমার জন্যই সব প্রশংসা। তুমি আসমান ও জমিনের নূর বা আলো। তোমার জন্যই সব প্রশংসা, তুমিই আসমান ও জমিনের ব্যবস্থাপক। তোমার জন্যই সব প্রশংসা তুমিই আসমান জমিনের এবং এ সবের মধ্যে অবস্থিত সবকিছুর প্রতিপালক। তুমিই হাক্ব বা সত্য। তোমার ওয়া’দা সত্য, তোমার সব বাণী সত্য। তোমার সাথে সাক্ষাতের বিষয়টি সত্য। জান্নাত সত্য, জাহান্নামও সত্য এবং ক্বিয়ামতও সত্য। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছি, তোমারই প্রতি ঈমান এনেছি, তোমার অপর তাওয়াক্কুল বা নির্ভর করেছি, তোমার কাছেই প্রত্যাবর্তন করেছি, তোমারই জন্যে অন্যদের সাথে বিবাদ করেছি এবং তোমার কাছেই ফায়সালা চেয়েছি। তাই তুমি আমার আগের ও পরের এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে কৃত সব পাপ ক্ষমা করে দাও। একমাত্র তুমিই আমার ইলাহ। তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই)। (ই.ফা. ১৬৭৮, ই.সে. ১৬৮৫) আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে উপরে বর্ণিত হাদীস টি বর্ণনা করেছেন। তবে শুধু দু’টি শব্দ ছাড়া ইবনু জুরায়জ বর্ণিত হাদীসের শব্দসমূহ মালিক বর্ণিত হাদীসের শব্দসমূহের অনুরূপ। দু’টি স্থানের একটি ইবনু জুরায়জ (আরবী) শব্দের পরিবর্তে (আরবী) শাব্দটি উল্লেখ করেছেন। আর অপর স্থানটিতে শুধু (আরবী) কথাটি উল্লেখ করেছেন। আর ইবনু ‘উয়াইনাহ্‌ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ হাদীসটিতে কিছু অতিরিক্ত শব্দ আছে এবং অনেকগুলো শব্দের ব্যাপারে তিনি মালিকের এবং ইবনু জুরায়জ-এর সাথে পার্থক্য করেছেন। (ই.ফা.১৬৭৯, ই.সে. ১৬৮৬) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এই একই সানাদে হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসের শব্দ উপরের বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। (ই.ফা. ১৬৮০ ই.সে ১৬৮৭) ‘আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিঞ্জেস করলাম যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা যখন সলাত আদায় করতেন তখন কীভাবে তাঁর সলাত শুরু করতেন? জবাবে ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ রাতে যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত আদায় করতে উঠতেন তখন এ দু’আটি পড়ে সলাত শুরু করতেনঃ “ আল্ল-হুম্মা রব্বা জিবরীলা ওয়া মীকাঈলা ওয়া ইস্‌রা-ফীলা ফা-ত্বিরাস্‌ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আর্‌যি ‘আ-লিমান গয়বি ওয়াশ্‌ শাহা-দাতি আন্‌তা তাহ্‌কুমু বায়না 'ইবা-দিকা ফীমা-কা-নূ ফীহি ইয়াখ্‌তালিফূ নাহ্‌দিনী লিমাখ তুলিফা ফীহি মিনাল হাক্কি বি ইয্‌নিকা ইন্নাকা তাহ্‌দী মান্‌ তাশা-উ ইলা- সিরা-ত্বিম মুসতাক্বীম” (অর্থাৎ - হে আল্লাহ্‌! জিব্‌রীল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের প্রতিপালক, আসমান ও জমিনের স্রষ্টা, প্রকাশ্য ও গোপন বিষয়সমূহের জ্ঞানের অধিকারী। তোমার বান্দারা যেসব বিষয়ে মতানৈক্য পোষণ করে তুমিই সেগুলোর ফায়সালা করবে। সত্য ও ন্যায়ের যেসব বিষয়ে মতানৈক্য পোষণ করা হয়েছে সে বিষয়ে তুমি আমাকে পথ দেখাও। তুমিই তো যাকে ইচ্ছা সরল-সহজ পথ দেখিয়ে থাকো )। (ই.ফা. ১৬৮১ ই.সে. ১৬৮৮) ‘আলী ইবনু আবূ ত্বলিব (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সলাত আদায় করতে দাঁড়াতেন তখন এ বলে শুরু করতেনঃ “ওয়াজ্জাহ্‌তু ওয়াজ্‌হিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস্‌ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আর্‌যা হানীফাওঁ ওয়ামা– আনা-মিনাল মুশরিকীনা ইন্না সলা-তী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ্‌ইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামীনা লা শারীকা লাহূ ওয়াবি যা-লিক উমিরতু ওয়া আনা- মিনাল মুসলিমীন, আল্ল-হুম্মা আনতাল মালিকু লা- ইলা-হা ইল্লা – আনতা আন্‌তা রব্বি ওয়া আনা- আব্‌দুকা যলাম্‌তু নাফ্‌সী ওয়া‘তারাফ্‌তু বিযাম্‌বী ফাগফিরলী যুনূবী জামী’আন ইন্নাহূ লা- ইয়াগ্‌ফিরুয্‌ যুনূবা ইল্লা-আন্তা ওয়াহদিনী লিআহ্‌সানিল আখলা-ক্বি লা-ইয়াহ্‌দী লিআহ্‌সানিহা- ইল্লা- আন্‌তা ওয়াস্‌রিফ ‘আন্নি সাইয়্যিআহা-লা- ইয়াস্‌রিফু ‘আন্নী সাইয়্যিআহা- ইল্লা- আন্‌তা লাব্বায়কা! ওয়া সা’দায়কা! ওয়াল খায়রু কুল্লুহূ ফী ইয়াদায়কা ওয়াশ্‌ শুর্‌রু লায়সা ইলায়কা আনা –বিকা ওয়া ইলায়কা তাবা-রাকতা ওয়াতা ‘আ-লাইয়তা আস্‌তাগ্‌ফিরুকা ওয়া আতূবু ইলায়ক” (অর্থাৎ- আমি একনিষ্ট হয়ে আমার মুখ সে মহান সত্তার দিকে ফিরিয়ে দিলাম যিনি আসমান ও জমিনকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার সলাত , আমার কুরবানী, আমার জীবন ও মৃত্যু সবকিছুই আল্লাহর জন্য যিনি সারা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক। তাঁর কোন শরীক নেই। আমি এ জন্যই আদিষ্ট হয়েছি। আমি মুসলীম বা আত্মসমর্পণকারী। হে আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম বাদশাহ। তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তুমি আমার প্রতিপালক, আর আমি তোমার বান্দা। আমি নিজে আমার প্রতি যুলুম করেছি। আমি আমার পাপ স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমার সব পাপ ক্ষমা করে দাও। কেননা তুমি ছাড়া আর কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না।আমাকে সর্বোত্তম আখলাক বা নৈতিকতার পথ দেখাও। তুমি ছাড়া এ পথ আর কেউ দেখাতে সক্ষম নয়। আর আখলাক্ব বা নৈতিকতর মন্দ দিকগুলো আমার থেকে দূরে রাখ। তুমি ছাড়া আর কেউ মন্দগুলোকে দূরে রাখতে সক্ষম নয়। আমি তোমার সামনে হাজির আছি – তোমার আনুগত্য করতে প্রস্তত আছি। সব রকম কল্যাণের মালিক তুমিই। অকল্যাণের দায় দায়িত্ব তোমার নয়। আমার সব কামনা বাসনা তোমার কাছেই কাম্য। আমার শক্তি-সামর্থ্যও তোমারই দেয়া। তুমি কল্যাণময়, তুমি মহান। আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার কাছেই তাওবাহ্‌ করছি)।আর রুকু করার সময় বলতেনঃ “আল্ল-হুম্মা লাকা রাকা’তু ওয়াবিকা আ-মান্‌তু ওয়ালাকা আস্‌লাম্‌তু খশা’আ লাকা সাম’ঈ ওয়া বাসারী ওয়া মুখ্‌খী ওয়া ‘আয্‌মী ওয়া ‘আসাবী” -(অর্থাৎ -হে আল্লাহ্‌! তোমার উদ্দেশ্যেই আত্মসমর্পণ করলাম। আমার কান, চোখ, মগজ, হাড় এবং সব স্নায়ুতন্ত্রী তোমার কাছে নত ও বশীভূত হ’ল)। আর রুকু থেকে বলতেনঃ “আল্ল-হুম্মা রব্বানা– লাকাল হা্‌মদু মিলআস্‌ সামা-ওয়া-তি ওয়ামিল আল আর্‌যি ওয়ামিলআ মা- বায়নাহুমা ওয়ামিলআ মা- শি’তা মিন শাইয়িন্‌ বা’দু”-( অর্থাৎ - হে আল্লাহ্! হে আমার প্রতিপালক, সব প্রশংসা তোমারই প্রাপ্য। আসমান ভর্তি প্রশংসা একমাত্র তোমারই প্রাপ্য)। আর যখন সিজদায় যেতেন তখন বলতেনঃ “আল্ল-হুম্মা লাকা সাজাদ্‌তু ওয়াবিকা আ-মান্‌তু ওয়ালাকা আস্‌লাম্‌তু সাজাদা ওয়াজহী লিল্লাহী খালাক্বাহূ ওয়াসাও্‌ ওয়ারাহূ ওয়াশাক্বক্বা সাম’আহূ ওয়া বাসারাহূ তাবা-রাকাল্ল-হু আহসানুল খ-লিক্বীন”- (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তোমারই উদ্দেশে আমি সাজদাহ্‌ করলাম। তোমারই প্রতি আমি ঈমান পোষণ করেছি। তোমার উদ্দেশে আমি আত্মসমর্পণ করেছি। আমার মুখমণ্ডল সে মহান সত্তার উদ্দেশে সাজদাহ্‌ করল যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আকৃতি দান করেছেন আর কান ও চোখ ফুটিয়ে শোনা ও দেখার উপযোগী করে তৈরী করেছেন। মহা কল্যাণময় আল্লাহ, তিনি কতই না উত্তম সৃষ্টিকারী)। অতঃপর সবশেষে তাশাহ্‌হুদ ও সালামের মধ্য বর্তী সময়ে তিনি বলতেনঃ “আল্ল-হুম্মাগ্‌ফীর্‌লী মা- ক্বদ্দাম্‌তু ওয়ামা- আখ্‌খার্‌তু ওয়ামা- আস্‌সরার্‌তু ওয়ামা- আ’লান্‌তু ওয়ামা- আস্‌রাফ্‌তু ওয়ামা- আন্‌তা আ’লামু বিহী মিন্নী আন্‌তাল মুক্বদ্দিমু ওয়া আন্‌তাল মুআখ্‌খিরু লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্‌তা” (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বের ও পরের, গোপনে এবং প্রকাশ্যে কৃত গুনাহ ক্ষমা করে দাও। আর যে সব ব্যাপারে আমি বাড়াবাড়ি করেছি তাও ক্ষমা করে দাও। আমার কৃত যেসব পাপ সম্পর্কে তুমি আমার চাইতে বেশী জান তাও ক্ষমা করে দাও। তুমিই আদি এবং তুমিই অন্ত, তুমি ছাড়া আর কেউ ইলাহ নেই )। (ই.ফা. ১৬৮২, ই.সে. ১৬৮৯) আ’রাজ (রহঃ) একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এতে তিনি বলেছেনঃ সলাত শুরু করার সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীর বলতেনঃ তারপরে “ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহী” বলতেন। এরপর শেষের দিকে “ওয়া আনা-আও্ওয়ালুল মুসলিমীন” বলতেন। এ হাদীসে তিনি আর বলেছেনঃ যখন তিনি রুকু’ থেকে মাথা উঠাতেন তখন “সামি ‘আল্ল-হু-লিমান হামিদাহ, রব্বানা- ওয়ালাকাল হাম্দ” এবং তিনি “ওয়া সাও্ওয়ারাহূ ফা আহ্সানা সুওয়ারাহূ” –ও বলতেন (অর্থাৎ তিনি আকৃতি দান করেছেন এবং উত্তম আকৃতি দান করেছেন)। এ বর্ণনাতে আরো আছে, তিনি যখন সালাম ফিরাতেন তখন “আল্ল-হুম্মাগ্ ফিরলী মা-ক্বদ্দামতু” কথাটি থেকে শুরু করে পূর্বোক্ত হাদীসের শেষ পর্যন্ত বলতেন। আর তিনি তাশাহুদ ও সালামের কথা বলেননি। (ই.ফা. ১৬৮৩, ই.সে. ১৬৯০)

【27】

রাতের সালাতে ক্বিরাআত দীর্ঘ করা মুস্তাহাব

হুযায়ফাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, এক রাতে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সাথে তাহাজ্জুদের সলাত আদায় করলাম। তিনি সূরাহ্‌ আল বাক্বারাহ্‌ পড়তে শুরু করলে আমি ভাবলাম তিনি হয়ত একশ আয়াত পড়ে রুকু’ করবেন। কিন্তু এর পরেও তিনি পড়ে চললেন। তখন আমি চিন্তা করলাম। তিনি এর (সূরা আল বাক্বারাহ্‌ ) দ্বারা পুরা দু’ রাকাত পড়ে সালাম ফিরাবেন। কিন্তু তিনি এরপরেও পড়তে থাকলে আমি ভাবলাম সূরাটি শেষ করে তিনি রুকু করবেন। কিন্তু এরপর তিনি সূরাহ নিসা পড়তে শুরু করলেন এবং তা পাঠ করলেন, অতঃপর তিনি সুরাহ্‌ আ-লি ‘ইমরান শুরু করলেন এবং তা পাঠ করলেন। তিনি থেমে থেমে ধীরে ধীরে পড়ছিলেন এবং তাসবীর আয়াত আসলে তাসবীহ পড়ছিলেন আর কিছু চাওয়ার আয়াত আসলে চাইলেন। যখন আশ্রয় প্রার্থনা করার কোন আয়াত পড়ছিলেন তখন প্রার্থনা করছিলেন। অতঃপর তিনি রুকু’ করলেন। রুকু’তে তিনি বলতে থাকলেন, “সুবহা-না রাব্বিয়াল ‘আযীম” (আমার মহান প্রভূ পবিত্র, আমি তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি)। তাঁর রুকু’ ক্বিয়ামের মতই দীর্ঘ ছিল। এরপর “সামি আল্ল-হু লিমান হামিদাহ” (আল্লাহ শুনে থাকেন যে তাঁর প্রশংসা করে) বললেনঃ এরপর যতক্ষন সময় রুকু’ করেছিলেন প্রায় ততক্ষণ সময় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকলেন। এরপর সাজদাহ্‌ করলেন। সাজদাতে তিনি বললেন, “সুবহা-না রাব্বিয়াল আ’লা” (মহান সুউচ্চ সত্তা আমার প্রভূ পবিত্র, আমি তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করছি)। তাঁর এ সাজদায়ও প্রায় ক্বিয়ামের সময়ের মতো দীর্ঘায়িত হলো। হাদীসটির বর্ণনা কারী বলেন যে, জারীর বর্ণিত হাদীসে এতটুকু কথা অধিক আছেঃ তিনি [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু’ থেকে উঠে] বললেন, “সামি’আল্ল-হু লিমান হামিদাহ, রব্বানা- লাকাল হাম্‌দ” ( আল্লাহ শুনেন যে ব্যক্তি তাঁর প্রশংসা করে। হে আমাদের প্রতিপালক, তোমার জন্যই সব প্রশংসা)। ( ই.ফা. ১৬৮৪, ই.সে. ১৬৯১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সলাত আদায় করলাম। এ সালাতে তিনি ক্বিরআত এত দীর্ঘায়িত করলেন যে, আমি একটি মন্দ ইচ্ছা করে বসলাম। আবূ ওয়ায়িল বলেছেনঃ তাঁকে (‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদকে ) জিঞ্জেস করা হ’ল, আপনি কী ধরণের মন্দ ইচ্ছা করেছিলেন? জবাবে তিনি বললেনঃ আমি বসে পড়ার এবং তাঁর পিছনে এ সলাত পরিত্যাগ করার ইচ্ছা করেছিলাম। ( ই.ফা. ১৬৮৫, ই.সে. ১৬৯২) আ’মাশ (রাঃ) একই সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৬৮৬, ই.সে. ১৬৯৩)

【28】

যে ব্যক্তি রাত্র ঘুমিয়ে সকাল করল তার প্রসঙ্গে আলোচনা ।

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাছে বলা হ’ল যে, সে সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটায় (অর্থাৎ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে না ) এ কথা শুনে তিনি বললেনঃ ঐ লোকটি এমন যার কানে শাইত্বন পেশাব করে দিয়েছে অথবা বলেছেন, দু’ কানে।[৩৫] ( ই.ফা. ১৬৮৭, ই.সে.১৬৯৮) ‘আলী ইবনু আবূ ত্বলিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন রাতের বেলা তাঁর ও ফাত্বিমাহ্‌ (রাঃ)–এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি (তাহাজ্জুদের) সলাত আদায় কর না? তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা সবাই তো আল্লাহর নিয়ন্ত্রণাধীন। তিনি ইচ্ছা করলে আমাদেরকে জাগিয়ে দিতে পারেন। [‘আলী (রাঃ) বলেছেন] আমি এ কথা বললেঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে গেলেন। যখন তিনি ফিরে যাচ্ছিলেন, আমি শুনলাম তখন তিনি উরুর উপরে সজোরে হাত চাপড়ে বলছেনঃ মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিতর্ক করতে অভ্যস্ত। (ই.ফা. ১৬৮৮, ই.সে. ১৬৯৫) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) তিনি এটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্যন্ত পৌছিয়েছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন নিদ্রা যায় তখন শাইত্বন তাঁর মাথার শেষ প্রান্তে অর্থাৎ ঘাড়ে তিনটা গিরা দেয়। প্রত্যেকটা গিরাতে সে ফুঁক দিয়ে বলে, এখনো অনেক রাত আছে (ঘুমিয়ে থাক) তাই যখন সে ঘুম থেকে জেগে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে তখন একটি গিরা খুলে যায়। এরপর সে ওযু করলে আরো একটি গিরাসহ মোট দু’টি গিরা খুলে যায়। আর যখন সে (তাহাজ্জুদের ) সলাত আদায় করে তখন সবগুলো গিরা খুলে যায়। এভাবে সে কর্মতৎপর ও প্রফুল্ল মনের অধিকারী হয়ে সকাল জেগে উঠে। অন্যথায় মানুষ বিমর্ষ ও অলস মন নিয়ে জেগে উঠে। ( ই.ফা. ১৬৮৯, ইউ.সে. ১৬৯৬)

【29】

নাফ্‌ল সলাত নিজ গৃহে আদায় করা মুস্তাহাব, মাসজিদে আদায়ও জায়িয

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কিছু কিছু সলাত বাড়ীতে আদায় করবে। (বাড়ীতে কোন সলাত না আদায় করে) বাড়ীকে তোমরা ক্ববর সদৃশ করে রেখো না। (ই.ফা. ১৬৯০,ই.সে. ১৬৯৭) 'আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা বাড়ীতেও সলাত আদায় কর। বাড়ী গুলোকে ক্ববর সদৃশ করে রেখো না। (ই. ফ. ১৬৯১, ই.সে. ১৬৯৮) জাবির ইবনু 'আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন মাসজিদে সলাত আদায় করবে তখন সে যেন বাড়ীতে আদায় করার জন্যও তার সলাতের কিছু অংশ রেখে দেয়। কেননা তার সলাতের কারণে আল্লাহ তা'আলা তার বাড়ীতে বারাকাত ও কল্যাণ দান করে থাকেন। (ই.ফা. ১৬৯২, ই.সে. ১৬৯৯) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় আর যে ঘরে আল্লাহকে স্মরণ করা হয় না এরূপ দু'টি ঘরের তুলনা করা যায় জীবিত ও মৃতের সঙ্গে। (ই.ফা. ১৬৯৩, ই.সে. ১৭০০) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের ঘরসমূহকে ক্ববর সদৃশ করে রেখো না (অর্থাৎ নাফ্‌ল সলাত সমূহ বাড়ীতে আদায় করবে, কারণ যে ঘরে সূরাহ্ বাক্বারাহ্ পাঠ করা হয় শাইত্বন সে ঘর থেকে পালিয়ে যায়)। (ই.ফা. ১৬৯৪, ই.সে. ১৭০১) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, খেজুর পাতা অথবা চাটাই দিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি ছোট কামরা তৈরী করে তাতে সলাত আদায় করতে গেলেন। এ দেখে কিছু সংখ্যক লোক এসে তাঁর সাথে সলাত আদায় করলেন। যায়দ ইবনু সাবিত বলেনঃ অন্য এক রাতেও লোকজন এসে জমা হ'ল। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সে রাতে) দেরী করলেন এবং এমনকি তিনি সে রাতে আসলেন না। তাই লোকজন উচ্চৈঃস্বরে তাঁকে ডাকাডাকি করল এবং বাড়ীর দরজায় কঙ্কর ছুঁড়তে শুরু করল। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাগান্বিত হয়ে তাদের মাঝে এসে বললেনঃ তোমরা যখন ক্রমাগত এরূপ করছিলে তখন আমার ধারণা হ'ল যে, এ সলাত হয়ত তোমাদের জন্য ফরয করে দেয়া হবে। অতএব তোমরা বাড়িতেই (নাফ্‌ল) আদায় করবে। কেননা ফরয সলাত ছাড়া অন্যসব সলাত বাড়ীতে আদায় করা মানুষের জন্য সর্বোত্তম। (ই.ফা. ১৬৯৫, ই.সে. ১৭০২) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ) এক সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাটাই দ্বারা ঘিরে মাসজিদের মধ্যে একটি কামরা বানালেন এবং কয়েক রাত পর্যন্ত সেখানে সলাত আদায় করলেন। তা দেখে কিছু লোক সেখানে সমবেত হ'ল। এতটুকু বর্ণনা করার পর বর্ণনাকারী উপরে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করলেন। এর বর্ণনাতে এতটুকু অধিক বর্ণনা হয়েছে যে, এ সলাতে যদি তোমাদের জন্য ফরয করে দেয়া হ'ত তাহলে তোমরা তা আদায় করতে সক্ষম হতে না। (ই.ফা. ১৬৯৬, ই.সে. ১৭০৩)

【30】

রাতের সলাত ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নিয়মিত 'আমালের ফযীলাত

‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একখানা চাটাই ছিল। রাতের বেলা তিনি এ চাটাই দিয়ে একটি কামরা বানাতেন এবং তার মধ্যে সলাত আদায় করতেন। লোকজন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এ সলাত আদায় করত এবং দিনের বেলা বিছিয়ে নিত। এক রাতে লোকজন বেশী ভীড় করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকজনকে সম্বোধন করে বললেনঃ হে লোকজন যতটা 'আমাল তোমরা স্থায়ীভাবে করতে সক্ষম হবে ততটা 'আমাল করবে। কেননা আল্লাহ তা'আলা তোমাদের 'ইবাদাতের সাওয়াব দিতে ক্লান্ত হবেন না। বরং তোমরাই 'ইবাদাত বন্দেগী করতে করতে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়বে। আর কম হলেও আল্লাহর কাছে স্থায়ী 'আমাল সর্বাপেক্ষা বেশী পছন্দনীয়। (বর্ণনাকারী বলেন) মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসারী ও বংশধরগণ যে 'আমাল করতেন তা স্থায়ীভাবে সর্বদাই করতেন। (ই.ফা. ১৬৯৭, ই.সে. ১৭০৪) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ মর্মে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, আল্লাহ তা'আলার কাছে কোন্ ধরনের 'আমাল সবচাইতে বেশী প্রিয়। জবাবে তিনি বলেছিলেনঃ কম হলেও যে 'আমাল স্থায়ী (সে 'আমাল আল্লাহ তা'আলার কাছে সবচাইতে বেশী প্রিয়)। (ই.ফা. ১৬৯৮, ই.সে. ১৭০৫) 'আলক্বামাহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি উম্মুল মু'মিনীন ‘আয়িশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম। বললামঃ হে উম্মুল মু'মিনীন! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর 'আমাল কেমন ছিল। তিনি কি কোন নির্দিষ্ট 'ইবাদাতের জন্য কোন বিশেষ দিন নির্দিষ্ট করে নিতেন? জবাবে ‘আয়িশা (রাঃ) বললেনঃ না। তবে তাঁর 'আমাল ছিল স্থায়ী প্রকৃতির। আর তোমাদের মধ্যে কে এমন আছে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে কাজ করতে পারেন সেও সে কাজ করতে পারবে? (ই.ফা. ১৬৯৯, ই.সে. ১৭০৬) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর কাছে এমন 'আমাল সবচেয়ে প্রিয় যা কম হলেও স্থায়ীভাবে করা হয়। হাদীসের বর্ণনাকারী ক্বাসিম ইবনু মুহাম্মাদ বলেছেনঃ ‘আয়িশা (রাঃ) কোন্ 'আমাল শুরু করলে তা স্থায়ী ও অবশ্য করণীয় করে নিতেন। (ই.ফা. ১৭০০, ই.সে. ১৭০৭)

【31】

সলাতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে অথবা কুরআন পাঠ ও যিক্‌রে জিহবা জড়িয়ে যেতে লাগলে, ঘুমিয়ে পড়া কিংবা বিশ্রাম নেয়ার আদেশ, যাতে তা কেটে যায়

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে প্রবেশ করে দেখলেন মাসজিদের দু'টি খুঁটির মাঝে রশি বেঁধে টানানো আছে। এ দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এটা কিসের জন্য? সবাই বললঃ এটা যায়নাবের রশি। তিনি সলাত আদায় করতে করতে যখন ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়েন তখন এ রশিটা দিয়ে নিজেকে আটকে রাখেন। এ কখা শুনে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটি খুলে ফেল। তোমরা সানন্দ সাগ্রহ ও স্বতঃস্ফূর্ততা নিয়ে সলাত আদায় করবে। সলাত আদায় করতে করতে কেউ যখন ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে পড়বে তখন বসে আদায় করবে। যুহায়র বর্ণিত হাদীসে (আরবী) শব্দ আছে যার অর্থ হ'ল সে যেন বসে পড়ে। (ই.ফা. ১৭০১, ই.সে. ১৭০৮) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৭০২, ই.সে. ১৭০৯) 'উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশা (রাঃ) তাঁকে বলেছেন যে, হাওলা বিনতু তুওয়াইত ইবনু হাবীব ইবনু আসাদ ইবনু 'আবদুল 'উয্‌যা একদিন তাঁর কাছে গেলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন তাঁর কাছে গেলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমি বললামঃ এ হ'ল হাওলা বিনতু তুওয়াইত। লোকজন বলে থাকে যে, সে রাতে ঘুমায় না। অর্থাৎ সারারাত 'ইবাদাত-বন্দেগী করে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথায় বিস্মিত হয়ে বললেনঃ সে রাতেও ঘুমায় না? তোমরা নাফ্‌ল ‘আমাল ততটুকু কর যতটুকু তোমাদের সাধ্য আছে। আল্লাহর ক্বসম, তিনি পুরস্কার দিতে ক্লান্ত হবেন না। বরং তোমরাই ('ইবাদাতে) ক্লান্ত হয়ে পড়বে। (ই.ফা. ১৭০৩, ই.সে. ১৭১০) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন সময় আমার কাছে আসলেন যখন আমার কাছে একজন মহিলা উপস্থিত ছিল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ কে? আমি বললামঃ এ সেই মহিলা যে রাতের বেলা না ঘুমিয়ে সলাত আদায় করে। (এ কথা শুনে) তিনি বললেনঃ তোমরা ততটুকু পরিমাণ 'আমাল করবে যা স্থায়ীভাবে করতে পারবে। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আল্লাহ তা'আলা (তোমাদের 'আমালের) সওয়াব বা পুরস্কার দিতে অক্ষম হবেন না। বরং তোমরাই 'আমাল করতে অক্ষম হয়ে পড়বে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দ্বীনের ততটুকু 'আমাল অত্যধিক পছন্দনীয় ছিল 'আমালকারী যা স্থায়ীভাবে করতে পারবে। আবূ উসামাহ্ বর্ণিত হাদীসে উল্লেখিত আছে, উক্ত মহিলা ছিলেন বানী আসাদ গোত্রের একজন। (ই.ফা. ১৭০৪, ই.সে. ১৭১১) ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ সলাত আদায়কালে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লে শুয়ে ঘুমিয়ে নিবে এবং তন্দ্রা বা ঘুম দূর হলে পরে আবার সলাত আদায় করবে। কারণ, তোমরা কেউ হয়ত তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় সলাত আদায় করলে দু'আ ও ক্ষমা প্রার্থনার স্থলে নিজেকে ভৎর্সনা (বদ্‌দু'আ) করে ফেলবে। (ই.ফা. ১৭০৫, ই.সে. ১৭১২) হাম্মাম ইবনু মুনাব্‌বিহ (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) আমার কাছে আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কিছু সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে একটি হাদীস হ'ল, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে থেকে কেউ যদি রাতে সলাত আদায় করতে ওঠে আর (ঘুমের প্রভাবে) তার কুরআন তিলাওয়াত আড়ষ্টতা আসে অর্থাৎ সে কি বলছে সে সম্পর্কে তার কোন চেতনা না থাকে তাহলে যেন সে শুয়ে (ঘুমিয়ে) পড়ে। (ই.ফা. ১৭০৬, ই.সে. ১৭১৩)