9. দুই ঈদের সালাত

【1】

দু’ ঈদের দিনে নারীদের ঈদগাহে যাওয়া এবং পুরুষদের থেকে পৃথক থেকে খুত্‌বায় শারীক হওয়ার বৈধতা প্রসঙ্গে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এবং আবূ বাক্‌র, ‘উমার ও ‘উসমান (রাঃ)-এর সাথে ঈদুল ফিত্বরের সলাতে উপস্থিত ছিলাম। তাঁরা সবাই খুত্‌বার আগে সলাত আদায় করেছেন এবং পরে খুত্‌বাহ পাঠ করেছেন। তিনি বলেন, এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মিম্বার থেকে) অবতরণ করলেন। যখন তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে লোকদের বসিয়ে দিচ্ছিলেন, তা যেন আমি দেখতে পাচ্ছি। অতঃপর তিনি লোকদের মধ্য দিয়ে সামনে অগ্রসর হয়ে মহিলাদের নিকট আসলেন। এ সময় তাঁর সাথে বিলাল (রাঃ) ছিলেন। এরপর তিনি এ আয়াতটুকু পাঠ করলেন: (আরবী) “হে নাবী! ঈমানদার মহিলারা আপনার নিকট আসে, তখন তারা এ কথার ওপর বাইয়াত করবে যে, তারা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করবে না”- (সূরাহ্‌ আল মুম্‌তাহিনাহ্‌ ৬০:১২)। এ আয়াত পাঠ সমাপ্ত করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ তোমরা কি এ কথার ওপর অটল আছ? তখন মাত্র একজন মহিলাই উত্তর করল, হ্যাঁ। হে আল্লাহর নাবী! সে ব্যতীত তাদের মধ্যে থেকে আর কেউ প্রতি উত্তর করেননি। অবশ্যই মহিলাটি কে তখন তা জানা যায়নি। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তারা সদাক্বাহ করতে লাগল আর বিলাল (রাঃ) তাঁর কাপড় বিছিয়ে দিলেন অতঃপর বললেন, তোমাদের প্রতি আমার মা-বাপ কুরবান হোক! এগিয়ে আসো। তখন মহিলারা তাদের ছোট-বড় আংটিসমূহ বিলালের কাপড়ের উপর ফেলতে লাগল। (ই.ফা. ১৯১৪, ই.সে. ১৯২১) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের সলাত খুত্‌বার পূর্বেই আদায় করেছেন। সলাতের পর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্‌বাহ্‌ দিয়েছেন। তাই তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের কাছে এসে তাদেরকে বুঝালেন ও উপদেশ দিলেন এবং তাদেরকে দান সদাক্বার জন্যে আদেশ করলেন। বিলাল (রাঃ) তাঁর কাপড় বিছিয়ে রেখেছিলেন। মহিলাগণ নিজ নিজ আংটি, বালা অন্যান্য জিনিস এতে ঢেলে দিতে লাগল। (ই.ফা. ১৯১৫, ই.সে. ১৯২২) আবুর রাবী’ আয্ যাহরানী, ইয়া‘কুব আদ্ দাওরাক্বী (রহঃ) ..... উভয়েই আইয়ূব (রহঃ) একই সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৯১৬, ই.সে. ১৯২৩) আত্বা (রহঃ) তিনি বলেন আমি জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিত্বরের দিন দাঁড়ালেন, অতঃপর সলাত আদায় করলেন। তিনি খুত্‌বাহ্‌ দেয়ার আগে প্রথমে সলাত আদায় করেছেন, পরে জনতার উদ্দেশে খুত্‌বাহ্‌ দিয়েছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্‌বাহ্‌ শেষ করে মহিলাদের কাছে এসে উপদেশ দিলেন। এ সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলালের হাতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এবং বিলাল তাঁর কাপড় প্রসারিত করে রেখেছিলেন। মহিলারা এতে দান বস্তু ফেলছিল। আমি (ইবনু জুরায়জ) ‘আত্বাকে জিজ্ঞেস করলাম, তা কি ঈদুল ফিত্বরের যাকাত (সদাক্বায়ে ফিতর)? ‘আত্বা বললেন, না বরং তা সাধারণ সদাক্বাই ছিল। মহিলারা তাদের মূল্যবান আংটি (দানপাত্রে) ফেলছিল এবং সম্ভব সবকিছু বিলিয়ে দিচ্ছিল। আমি ‘আত্বা (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, বর্তমানে কি ইমামের জন্য খুত্‌বাহ্‌ সমাপ্ত করার পর মহিলাদের কাছে এসে তাদেরকে উপদেশ শুনানোর বিধি সম্মত? ‘আত্বা বললেন, হ্যাঁ। আমার জীবনের রবের শপথ! এটা ইমামদের ওপর অবশ্য কর্তব্য। তাদের এ কাজ না করার কি কারণ থাকতে পারে? (ই.ফা. ১৯১৭, ই.সে. ১৯২৪) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ঈদের দিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি খুত্‌বার আগে প্রথমে সলাত আদায় করলেন-আযান ইক্বামাত ছাড়া। অতঃপর তিনি বিলালের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়ালেন এবং “আল্লাহ ভীতি” অর্জন করার আদেশ করলেন ও তাঁর আনুগত্য করার জন্য অনুপ্রাণিত করলেন। তিনি সমবেত জনতাকে উপদেশ দিলেন। তারপর বললেন, তোমরা সদাক্বাহ্‌ কর। কেননা তোমাদের বেশীর ভাগ মহিলাই জাহান্নামের জ্বালানী হবে। (এ কথা শুনে) মহিলাদের মধ্যে থেকে উভয় গালে কালো দাগ বিশিষ্ট একটি মেয়েলোক দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, কেন আল্লাহর রসূল? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কেননা তোমরা বেশী অজুহাত ও অভিযোগ পেশ করে থাক এবং স্বামীর অবাধ্যচরণ করে থাক। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর মহিলাগণ তাদের অলঙ্কারাদি দান করতে শুরু করল। তারা তাদের কানের ঝুমকা, রিং এবং আংটিসমূহ বিলালের কাপড়ে ফেলতে লাগল। (ই.ফা. ১৯১৮, ই.সে. ১৯২৫) ইবনু ‘আব্বাস ও জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল আনসারী (রাঃ) তাঁরা উভয়ে বলেন, (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়) ঈদুল ফিত্বরের দিন এবং ঈদুল আযহার দিন (ঈদের জন্য) আযান দেয়া হত না। ইবনু জুরায়জ বলেন, কিছু সময় পর আমি ‘আত্বাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে বলেন, আমাকে জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল আনসারী (রাঃ) জানিয়েছেন, ঈদুল ফিত্বরের দিন ঈদের সলাতের জন্য আযানও নেই ইক্বামাতও নেই। কোন ডাক বা কোন প্রকার ধ্বনিও নেই। ঐ দিন ঈদের জন্য কোন আযান ও ইক্বামাতের নিয়ম নেই। ইমাম (সলাতের উদ্দেশে) বের হওয়ার সময় এবং বের হওয়ার পরেও আযানের কোন প্রয়োজন নেই। (ই.ফা. ১৯১৯, ই.সে. ১৯২৬) আত্বা (রহঃ) আমাকে জানিয়েছেন যে, ইবনু যুবায়র-এর নিকট প্রথমে লোকেরা যখন বাইয়্যাত নিচ্ছিল- ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তাঁর কাছে এ সংবাদ পাঠালেন যে, ঈদুল ফিত্বরের দিন ঈদের সলাতের জন্য আযান দেয়া হতো না। অতএব তুমি ঈদের সলাতের জন্য আযানের প্রচলন করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, ইবনুয্‌ যুবায়র (রাঃ) তাঁর সময় আযানের প্রচলন করেননি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এ কথাটুকু ইবনুয্‌ যুবায়র-এর নিকট বলে পাঠান যে, খুত্‌বাহ্‌ সলাতের পরে হবে, আর এ নিয়ম পালিত হয়ে আসছে। বর্ণনাকারী বলেন, অতএব ইবনুয্‌ যুবায়র (রাঃ) খুত্‌বার পূর্বে ঈদের সলাত সমাপন করেছেন। (ই.ফা. ১৯২০, ই.সে. ১৯২৭) জাবির ইবনু সামুরাহ্‌ (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে একবার দু’বার নয়, অনেক বার দু’ ঈদেরসলাত আযান ও ইক্বামাত ব্যতীত আদায় করেছি। (ই.ফা. ১৯২১, ই.সে. ১৯২৮) আবদুল্লাহ ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বকর (রাঃ) ও ‘উমার (রাঃ) ঈদের সলাত খুত্‌বার আগে আদায় করতেন। (ই.ফা. ১৯২২, ই.সে. ১৯২৮) আবূ সা‘ঈদ আল খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিত্বরের দিন বের হতেন এবং প্রথমে সলাত আদায় করতেন। যখন সলাত সম্পন্ন করে সালাম ফিরাতেন, লোকদের দিকে মুখ করে দাঁড়াতেন। তারা নিজ নিজ সলাতের স্থানে বসে থাকত। তারপর যদি কোথাও সৈন্য পাঠানোর প্রয়োজন হতো, তবে তা লোকদের নিকট ব্যক্ত করতেন। অথবা যদি অন্য কোন প্রয়োজন হতো তবে সে সম্পর্কে তাদেরকে নির্দেশ দিতেন এবং তিনি বলতেন, তোমরা সদাক্বাহ্‌ কর, সদাক্বাহ্‌ কর। দানের সবচেয়ে অগ্রগামী ছিল মহিলাগণ। অতঃপর তিনি ঘরে ফিরতেন। পরবর্তীকালে মারওয়ান যখন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হল, তখন একবার আমি তাঁর হাত ধরে চলতে চলতে ঈদগাহে এসে উপনীত হলাম। এসে দিখি কাসীর ইবনু সাল্‌ত শক্ত মাটি ও ইট দিয়ে একটা মিম্বার তৈরি করে রেখেছে। মারওয়ান আমার থেকে এমনভাবে হাত টেনে ছুটাচ্ছিল যেন আমাকে মিম্বারের দিকে টানা হেঁচড়া করছে আর আমি তাকে সলাতের দিকে টানা হেঁচড়া করছি। যখন আমি তাঁর এ মনোভাব দেখলাম আমি জিজ্ঞেস করলাম, প্রথমে সলাত আদায়ের নিয়ম কি হল? মারওয়ান বলল, না হে আবূ সা’ঈদ! তুমি যে নিয়ম সম্পর্কে অবহিত তা রহিত হয়ে গেছে। আমি বললাম, কখনও না! সে সত্তার ক্বসম যার হাতে আমার প্রাণ! আমি যে নিয়ম সম্পর্কে অবহিত এর চেয়ে উত্তম কিছু তোমরা কখনও করতে পারবে না। এ কথা তিনি তিনবার উচ্চারণ করলেন। এরপর তিনি চলে আসলেন। (ই.ফা. ১৯২৩, ই.সে. ১৯৩০) উম্মু ‘আত্বিয়্যাহ্‌ (রাঃ) আমাদেরকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করেছেন, আমরা যেন পরিণত বয়স্কা মেয়েদেরকে ও পর্দানশীন মেয়ে লোকদেরকে ঈদের সলাতে যাওয়ার জন্য বলি এবং তিনি ঋতুবতী নারীদেরকে আদেশ করেছেন তারা যেন মুসলিমদের সলাতের স্থান থেকে কিছুটা পৃথক থাকে। (ই.ফা. ১৯২৪, ই.সে. ১৯৩১) উম্মু ‘আতিয়্যাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদেরকে (রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়) ঈদের মাঠে বের হওয়ার আদেশ করা হত এমনকি গৃহবাসিনী পর্দানশীন মহিলা ও প্রাপ্তবয়স্কা কুমারীকেও অনুমতি দেয়া হতো। উম্মু ‘আতিয়্যাহ্‌ বলেন, ঋতুবতী মহিলারাও বের হয়ে আসত এবং সব লোকের সাথে তাকবীর পাঠ করত। (ই.ফা. ১৯২৫, ই.সে. ১৯৩২) উম্মু ‘আতিয়্যাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করেছেন। আমরা যেন মহিলাদেরকে ঈদুল ফিত্বর ও ঈদুল আযহাতে বের করে দেই- পরিণত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহবাসিনী সবাইকে। তবে ঋতুবতী মহিলারা সলাত থেকে বিরত থাকবে। বাকী পুণ্যের কাজে ও মুসলিমদের দু‘আয় শারীক হবে। আমি বললাম : হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কারো কারো চাদর ওড়না নেই। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার জন্য বোন তাকে নিজ চাদর বা ওড়না পরিয়ে দিবে। (ই.ফা. ১৯২৬, ই.সে. ১৯৩৩)

【2】

ঈদের সলাতের পূর্বে ও পরে ঈদগাহে সুন্নাত সলাত আদায় না করা

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিত্বরের দিন বের হলেন এবং দু’ রাক‘আত সলাত আদায় করলেন। এর পূর্বে ও পরে কোন সলাত আদায় করেননি। অতঃপর তিনি মহিলাদের নিকট আসলেন। এ সময় তাঁর সাথে বিলাল (রাঃ) ছিলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে সদাক্বাহ্‌ করতে আদেশ করলেন। মহিলারা নিজ নিজ কানের রিং ও গলার হার বিলিয়ে দিতে লাগল। (ই.ফা. ১৯২৭, ই.সে. ১৯৩৪) ‘আম্‌র আন্‌ নাক্বিদ, আবূ বাক্‌র ইবনু নাফি’ ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্‌শার (রহঃ) ..... তারা শু‘বাহ্‌ (রহঃ) একই সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। (ই.ফা. ১৯২৮, ই.সে. ১৯৩৫)

【3】

দু’ ঈদের সলাতে কোন্‌ সূরাহ পাঠ করবে

উবায়দুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) আবূ ওয়াক্বিদ আল লায়সী (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিত্বর ও আযহার সলাতে কি ক্বিরাআত পাঠ করতেন? আবূ ওয়াক্বিদ (রাঃ) বললেন, তিনি এতে “ক্বাফ, ওয়াল কুরআ-নিল মাজীদ” (সূরাহ ক্বাফ) এবং “ইক্বতারাবাতিস্‌ সা-‘আতু ওয়ান্‌ শাক্বক্বাল ক্বামার” (সূরাহ্‌ ক্বামার) পাঠ করতেন। (ই.ফা. ১৯২৯, ই.সে. ১৯৩৬) আবূ ওয়াক্বিদ আল লায়সী (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিনে কোন্‌ সূরাহ্‌ পড়েছেন? আমি উত্তরে বললাম, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “ইক্বতারাবাতিস্‌ সা-‘আতু” (সূরাহ্‌ ক্বামার) এবং “ক্বাফ, ওয়াল কুরআ-নিল মাজীদ” (সূরাহ ক্বাফ) পাঠ করেছেন। (ই.ফা. ১৯৩০, ই.সে. ১৯৩৭)

【4】

ঈদের দিনগুলোতে আল্লাহর নাফরমানী হয় না এমন ক্রীড়া-কৌতুক করার অবকাশ প্রদান

আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) আমার নিকট আসলেন। এ সময় আমার কাছে আনসার সম্প্রদায়ের দু’টি মেয়ে গান গাচ্ছিল। আনসারগণ বু‘আস যুদ্ধের সময় এ গানটি গেয়েছিল। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, তারা অবশ্য (পেশাগত) গায়িকা ছিল না। আবূ বাক্‌র (রাঃ) বললেন, একি? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আবূ বাক্‌র! প্রত্যেক জাতির জন্য উৎসবের ব্যবস্থা আছে। আর এটা হচ্ছে আমাদের উৎসবের দিন। (ই.ফা. ১৯৩১, ই.সে. ১৯৩৮) ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া ও আবূ কুরায়ব (রহঃ) ..... উভয়ে হিশাম (রহঃ) একই সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। এ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে- দু’টি বালিকা দফ্‌ বাজিয়ে খেলা করছিল। (ই.ফা. ১৯৩২, ই.সে. ১৯৩৯) আয়িশাহ্‌ (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) আইয়্যামে তাশরীকের দিনে ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে দেখেন যে, তাঁর কাছে দুটি বালিকা গান করছে এবং দফ বাজাচ্ছে। আর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাদর দিয়ে মাথা ঢাকা অবস্থায় ছিলেন। আবূ বকর (রাঃ) এটা দেখে বালিকাদ্বয়কে খুব শাসালেন বা ধমক দিলেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর চেহারা থেকে কাপড় সরিয়ে বলেন, হে আবূ বাক্‌র! এদেরকে ছেড়ে দাও। এ দিনগুলো হলো ঈদের দিন! ‘আয়িশা (রাঃ) আরও বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর চাদর দ্বারা ঢেকে দিচ্ছেন, যখন আমি আবিসিনিয়ার যুবকদের (কৃষ্ণাঙ্গ) খেলার দৃশ্য অবলোকন করছিলাম। তখন আমি সবেমাত্র বালক। অতএব তোমরা অল্পবয়স্কা বালিকাদের সখের মূল্যায়ন কর। অল্পবয়স্কা বালিকারা অনেকক্ষণ আমোদ-ফূর্তিতে মেতে থাকে। (ই.ফা. ১৯৩৩, ই.সে. ১৯৪০) আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলাম, তিনি আমার হুজরার দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন আর কৃষ্ণাঙ্গ যুবকেরা তাদের অস্ত্র দ্বারা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাসজিদে নাবাবীতে তাদের যুদ্ধের কলাকৌশল দেখাচ্ছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর চাদর দ্বারা আড়াল করে দিচ্ছেন যাতে আমি তাদের খেলা দেখতে পারি। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকলেন, যতক্ষণ আমি নিজে ফিরে না আসি। অতএব অল্পবয়স্কা বালিকাদের খেল-তামাশার প্রতি যে লোভ রয়েছে তার মূল্যায়ন কর (তার সখ পূর্ণ কর)। (ই.ফা. ১৯৩৪, ই.সে. ১৯৪১) আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে প্রবেশ করে দেখেন, আমার কাছে দু’টি বালিকা জাহিলিয়্যাত যুগে সংঘটিত বু’আস যুদ্ধের গান গাইছে। তিনি বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে দিলেন। এমন সময় আবূ বকর (রাঃ) প্রবেশ করলেন। তিনি (এ দৃশ্য দেখে) আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর নিকটে শাইত্বনের বাদ্য চলছে? (এ কথা শুনে) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দিকে ফিরে বললেন, হে আবূ বাক্‌র! এদের ছেড়ে দাও। এরপর তিনি যখন অন্যমনস্ক হলেন, আমি বালিকাদ্বয়কে আস্তে খোঁচা দিলাম। তারা বের হয়ে চলে গেল। এটা ঈদের ঘটনা। কৃষ্ণাঙ্গ যুবকেরা ঢাল-বল্লম দ্বারা রণকৌশল ও খেল-তামাশা করছিল। তখন হয়ত আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আবেদন করেছি না হয় তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন তুমি কি তা দেখতে আগ্রহী? আমি বললাম- জি হ্যাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর পিছনে এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দিলেন যে, আমার গণ্ডদেশ তাঁর গণ্ডদেশের উপর সংলগ্ন হলো। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, হে বানী আরফিদাহ্‌! তোমরা তোমাদের খেলা চালিয়ে যাও। অনেকক্ষণ পর আমি যখন একটু বিরক্তবোধ করলাম, তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হয়েছে তো? আমি বললাম, জ্বি হ্যাঁ! তিনি বললেন, তাহলে এবার যাও। (ই.ফা. ১৯৩৫, ই.সে. ১৯৪২) আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, কিছু সংখ্যক আবিসিনীয় লোক মাদীনায় পৌঁছে ঈদের দিন মাসজিদে নাবাবীতে (অস্ত্র নিয়ে) খেলা করছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁর কাঁধের উপর মাথা রেখে তাদের খেলা দেখতে লাগলাম। অনেকক্ষণ এ দৃশ্য উপভোগ করে শেষ পর্যন্ত আমি নিজেই তাদের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম। (ই.ফা. ১৯৩৬, ই.সে. ১৯৪৩) ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইয়াহ্‌ইয়া, ইবনু নুমায়র (রহঃ) ..... উভয়ে হিশাম (রহঃ) উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তাঁরা ‘মাসজিদের’ কথাটি উল্লেখ করেননি। (ই.ফা. ১৯৩৭, ই.সে. ১৯৪৪) উবায়দ ইবনু ‘উমায়র (রহঃ) আমাকে ‘আয়িশা (রাঃ) জানিয়েছেন, তিনি ক্রীড়া প্রদর্শনকারীদের বলে পাঠালেন যে, তিনি তাদেরকে দেখতে আগ্রহী। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আমি উভয়ে দরজার উপর দাঁড়ালাম। আমি তাঁর দু’কানের মাঝে ও কাঁধ সংলগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে তা দেখেছিলাম তারা মাসজিদে (হাতিয়ার নিয়ে) খেলছিল। ‘আত্বা বলেন, তারা পারস্যের অথবা আবিসিনিয়ার অধিবাসী ছিল। আর ইবনু ‘আতীক্ব আমাকে বলেনঃ বরং তারা আবিসিনিয়ার অধিবাসী ছিল। (ই.ফা. ১৯৩৮, ই.সে. ১৯৪৫) আবূ হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, এক সময় আবিসিনীয় লোকেরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে যুদ্ধাস্ত্রের সাহায্যে খেলাধূলা করছিল। এমন সময় ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) সেখানে আসলেন। তিনি (এ দৃশ্য দেখে) প্রস্তর খণ্ড তুলে তাদের প্রতি নিক্ষেপ করতে উদ্যত হলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, এদেরকে খেলতে দাও হে উমার! (ই.ফা. ১৯৩৯, ই.সে. ১৯৪৬)