1. পবিত্রতা

【1】

রাতের বেলা সালাত আদায় করতে উঠলে মিস্‌ওয়াক করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ নিদ্রা থেকে জাগ্রত হলে সে যেন তার হাত তিনবার না ধোয়া পর্যন্ত পানিতে না ঢোকায়। কেননা তোমাদের কারো জানা নেই যে, তার হাত রাতে কোথায় পৌঁছেছিল। হুযায়ফা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রিবেলা সালাত আদায় করতে উঠলে মিসওয়াক দ্বারা আপন দাঁত মাজতেন।

【2】

মিসওয়াক কিভাবে করতে হবে

আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট গেলাম তখন তিনি মিসওয়াক করছিলেন আর মিসওয়াকের একপার্শ্ব তাঁর জিহ্বার উপর ছিল এবং ‘আ’ ‘আ’ করছিলেন।

【3】

ইমাম তাঁর অধঃস্তনের সামনে মিস্‌ওয়াক করবেন কি

আবূ বুরদা (রাঃ) [তাঁর পিতা] আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এলাম, আমার সঙ্গে ছিল আশ’আর গোত্রের দু’জন লোক। তাদের একজন ছিল আমার ডানদিকে আর অন্যজন ছিল আমার বাঁদিকে। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন মিসওয়াক করছিলেন। তারা উভয়ে তাঁর কাছে কাজ চাইল। আমি বললামঃ যিনি আপনাকে সত্য নবী রুপে পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ ! তাদের অন্তরে কি ছিল তা আমাকে অবগত করেনি আর আমিও বুঝতে পারিনি যে, তারা কাজ চাইবে। আমি তখন তাঁর ঠোঁটের নিচে রাখা মিসওয়াকের দিকে লক্ষ্য করছিলাম। তাঁর ঠোঁট তখন উঁচু ছিল। তিনি বললেনঃ যে ব্যাক্তি কাজ চায় আমরা তাকে কাজ দিই না। তবে তুমি যাও, পরে আবূ মূসাকে ইয়ামানে পাঠান আর মুয়ায ইব্‌ন জাবালকে তাঁর অনুগামী করলেন।

【4】

মিস্‌ওয়াকের প্রতি উৎসাহ দান

আয়েশা (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেনঃ তিনি বলেছেন যে, মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ ও আল্লাহ্‌র সন্তোষ লাভের উপায়।

【5】

বারবার মিসওয়াক করা

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি মিসওয়াক করার ব্যাপারে তোমাদেরকে অত্যধিক উৎসাহিত করছি।

【6】

সিয়াম পালনকারীর জন্য অপরাহ্নে মিসওয়াক করার অনুমতি

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মতের জন্য যদি কষ্টকর মনে না করতাম তবে তাঁদেরকে প্রত্যেক সালাতের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।

【7】

সর্বদা মিসওয়াক করা

শুরায়হ্‌ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে প্রবেশ করার পর প্রথমে কি করতেন ? তিনি বলেনঃ মিসওয়াক করতেন।

【8】

ফিতরত প্রসঙ্গঃ খাতনা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পাঁচটি বিষয় মানুষের ফিতরাতের অন্তর্গত। খাতনা করা, নাভীর নিম্নভাগের লোম চেঁছে ফেলা, গোঁফ ছাঁটা, নখ কাটা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা।

【9】

নখ কাটা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচটি বিষয় মানুষের ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত। গোঁফ ছাঁটা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা, নাভীর নিম্নাংশের লোম চেঁছে ফেলা এবং খাতনা করা।

【10】

বগলের পশম উপড়ে ফেলা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচটি বিষয় মানুষের ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত। খাতনা করা, নাভীর মিম্নাংশের লোম চেঁছে ফেলা, বগলের পশম উপড়ে ফেলা, নখ কাটা এবং গোঁফ ছাঁটা।

【11】

নাভীর নিম্নাংশের লোম চাঁছা

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের ফিতরাত হলো নখ কাটা, গোঁফ ছাঁটা এবং নাভীর নিম্নভাগের লোম চেঁছে ফেলা।

【12】

গোঁফ ছাঁটা

যায়দ ইব্‌ন আরকাম (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গোঁফ না ছাঁটে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

【13】

উল্লেখিত কাজসমূহের জন্য মেয়াদ নির্ধারণ

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের জন্য গোঁফ ছাঁটা, নখ কাটা, নাভীর নিম্নভাগের লোম চেঁছে ফেলার ও বগলের পশম উপড়ে ফেলার মেয়াদ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন যে, আমরা যেন এ কাজগুলো চল্লিশ দিনের বেশী সময় পর্যন্ত ফেলে না রাখি। রাবী বলেন আরেকবার চল্লিশ রাতের কথাও বলেছেন।

【14】

গোঁফ ছাঁটা ও দাড়ি বর্ধিত করা

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ তোমরা গোঁফ খাট কর এবং দাড়ি বর্ধিত কর।

【15】

পায়খানা—পেশাবের প্রয়োজনের সময় দূরে গমন করা

আবদুর রহমান ইব্‌ন আবূ কুরাদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি একবার রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে ময়দানের দিকে বের হলাম। যখন তিনি পায়খানা—পেশাব করার ইচ্ছা করতেন তখন (লোকালয় হতে) দূরে গমন করতেন। মুগীরা ইব্‌ন শু’বা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানা—পেশাবের স্থানের দিকে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন (লোকালয় হতে) দূরে চলে যেতেন। বর্ণনাকারী বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন এক সফরে পায়খানা—পেশাবের প্রয়োজনে (লোকালয় হতে) দূরে গিয়েছিলেন। তারপর বললেন, আমার জন্য উযূর পানি আন। আমি তাঁর জন্য উযূর পানি আনলাম। তিনি উযূ করলেন এবং মোজার উপর মসেহ করলেন।

【16】

দূরে না যাওয়ার অনুমতি

হুযায়ফা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে হাঁটছিলাম। তিনি এক সম্প্রদায়ের আবর্জনা ফেলবার স্থান পর্যন্ত গেলেন এবং (সেখানে) দাঁড়িয়ে পেশাব করলেন। এমতাবস্থায় আমি তাঁর নিকট হতে দূরে সরে দাঁড়ালাম। কিন্তু তিনি আমাকে ডাকলেন, আমি (এসে) তাঁর গোড়ালির কাছে (অর্থাৎ নিকটেই) থাকলাম, যাবৎ না তিনি পেশাবের কাজ সমাধা করলেন। এরপর তিনি উযূ করলেন এবং মোজার উপর মসেহ করলেন।

【17】

পায়খানা—পেশাবের স্থানে প্রবেশ করার সময় দোয়া পাঠ করা

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানা—পেশাবের স্থানে প্রবেশের ইচ্ছা করতেন তখন পড়তেনঃ (আরবি) “হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি – পুরুষ শয়তান ও নারী শয়তান থেকে।”

【18】

পায়খানা—পেশাবের সময় কিবলামুখী হওয়া নিষেধ

রাফী‘ ইব্‌ন ইসহাক (রহঃ) তিনি আবূ আইয়্যূব আনসারী (রাঃ)-এর মিসর অবস্থানকালে তাঁকে বলতে শুনেছেন – আল্লাহ্‌র শপথ ! আমি জানি না কিভাবে (মিসরের) এই পায়খানাগুলো ব্যাবহার করবো। অথচ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন মল—মূত্র ত্যাগের উদ্দেশ্যে গমন করবে, তখন সে যেন কিবলামুখী হয়ে ও কিবলাকে পেছনে রেখে না বসে।

【19】

পায়খানা—পেশাবের সময় কিবলাকে পেছনে রেখে বসা নিষেধ

আবূ আইয়্যূব আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পেশাব ও পায়খানার জন্য তোমরা কিবলামূখী হয়ে এবং কিবলাকে পেছনে রেখে বসবে নাঃ বরং পূর্বদিক ও পশ্চিম দিক ফিরে বসবে। [১]

【20】

পায়খানা—পেশাবের সময় পূর্ব অথবা পশ্চিমদিকে ফিরে বসার নির্দেশ [২]

আবূ আইয়ূব আনসারী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন (পায়খানার জন্য) ঢালু জমির দিকে যাবে তখন সে যেন কিবলামুখী হয়ে না বসে এবং সে যেন পূর্ব ও পশ্চিমদিকে মুখ করে বসে।

【21】

ঘরের ভেতর কিবলামুখী হয়ে বসার অনুমতি

আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি (একদিন) আমাদের ঘরের ছাদে উঠেছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে পায়খানা পেশাবের প্রয়োজনে দু’টি ইটের উপবিষ্ট অবস্থায় দেখেছি। [১] আবু কাতাদা (রাঃ) , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন পেশাব করবে, তখন সে যেন ডান হাত দ্বারা তার লিঙ্গ স্পর্শ না করে। আবূ কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন পায়খানা বা পেশাবখানায় প্রবেশ করবে, তখন সে যেন ডান হাত দ্বারা তার লিঙ্গ স্পর্শ না করে।

【22】

মাঠে-ময়দানে দাঁড়িয়ে পেশাব করার অনুমতি

হুযায়ফা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের আবর্জনা ফেলার স্থানে আসেন এবং (সেখানে) দাঁড়িয়ে পেশাব করেন। [১] হুযায়ফা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের আবর্জনা ফেলার স্থানে আসেন এবং (সেখানে) দাঁড়িযে পেশাব করেন। হুযায়ফা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবর্জনা ফেলবার স্থানে গমন করলেন এবং দাঁড়িয়ে পেশাব করলেন।

【23】

ঘরের ভেতর বসে পেশাব করা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি তোমাদের বলে যে; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে পেশাব করেছেন, তোমরা তার কথা বিশ্বাস করবে না। (কেননা) তিনি বসেই পেশাব করতেন।

【24】

কোন সুতরার [১] দ্বারা আড়াল করে পেশাব করা

আবদুর রহমান ইব্ন হাসানা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আমাদের কাছে আগমন করলেন। তাঁর হাতে চামড়ার তৈরি ঢালের মত একটি বস্তু ছিল। তিনি তা স্থাপন করলেন। এরপর তার পেছনে বসলেন এবং সেদিকে ফিরে পেশাব করলেন। জনৈক ব্যক্তি বললো, দেখ, তিনি স্ত্রীলোকের ন্যায় পেশাব করছেন। লোকটির কথা তিনি শুনে ফেললেন এবং বললেনঃ তুমি কি জান না যে, বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তির শাস্তি হয়েছে? তাদের যদি পেশাবের কোন ফোটা শরীরে লাগত তাহলে কাঁচি দিয়ে সে অংশ তারা কেটে ফেলত। তাদের এক ব্যক্তি তাদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করে। এজন্য তাকে কবরে শাস্তি দেওয়া হয়।

【25】

পেশাবের ছিটা হতে বেঁচে থাকা

ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘টি কবরের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। (এমনি সময়) তিনি বললেনঃ এ দুটি কবরের লোককে আযাব দেওয়া হচ্ছে। (অবশ্য) কোন কবীরা গুনাহর কারণে আযাব দেওয়া হচ্ছে না। (এরপর তিনি কবর দু‘টির দিকে ইংগিত করে বললেন) এই যে, কবরের অধিবাসী, সে তার পেশাবের (ফোঁটা) হতে বেঁচে থাকত না। আর এই যে কবরের অধিবাসী, সে চুগলি করে বেড়াত। তারপর তিনি একটি খেজুরের তাজা শাখা আনতে বললেন। (শাখা আনা হলে) তিনি তা দু‘ভাগে বিভক্ত করলেন এবং উভয় কবরের উপর একটি করে শাখা পুঁতে দিলেন। তারপর বললেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা হয়ত শাখাগুলো না শুকানো পর্যন্ত এদের আযাব হালকা করে দেবেন।

【26】

পাত্রে পেশাব করা

উমায়মা বিনত রুকায়কা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি কাঠের পেয়ালা ছিল। তিনি তাতে (রাত্রে) পেশাব করতেন এবং তা খাটের নিচে রেখে দিতেন। [১]

【27】

তশতরিতে পেশাব করা

আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ লোকেরা বলে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (হযরত) আলী (রাঃ)-কে ওসিয়ত করেছেন। (অথচ তিনি তার অন্তিমকালে) পেশাব করবার জন্য একটি তশতরি আনতে বললেনঃ আর অমনি তাঁর দেহ মুবারক (মৃত্যুর কারণে) ঢলে পড়ল, অথচ আমি টের পেলাম না (যে তার মৃত্যু হয়েছে)। কাজেই তিনি কাকে (কখন) ওসিয়ত করলেন?

【28】

গর্তে পেশাব করা মাকরূহ

আবদুল্লাহ ইব্ন সারজিস্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ যেন গর্তে পেশাব না করে। লোকেরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলোঃ গর্তে পেশাব করা দূষণীয় কেন? তিনি জবাব দেন যে, বলা হয়ে থাকে, গর্ত জিন্নের বাসস্থান। [১]

【29】

বদ্ধ পানিতে পেশাব করা নিষেধ

জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদ্ধ পানিতে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন।

【30】

গোসলখানায় পেশাব করা মাকরূহ

আবদুল্লাহ ইব্ন মুগাফ্ফাল (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন গোসলখানায় পেশাব না করে। কেননা এর কারণেই অধিকাংশ বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।

【31】

পেশাবরত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া

আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেশাব করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সে তাঁকে সালাম দিল। কিন্তু তিনি তার সালামের জবাব দিলেন না। [১]

【32】

উযূ করার পর সালামের জবাব দেয়া

মুহাজির ইব্ন কুনফুয (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেশাব করছিলেন, এমতাবস্থায় তিনি তাঁকে সালাম দেন। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করার পূর্বে সালামের জবাব দেননি; উযূ করার পর সালামের জবাব দেন।

【33】

হাড় দ্বারা পবিত্রতা অর্জন (ঢেলা হিসেবে ব্যবহার) করা নিষিদ্ধ

আবদুল্লাহ্ ইব্ন মাসউদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে হাড় এবং শুষ্ক গোবর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে নিষেধ করেছেন।

【34】

গোবর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন নিষিদ্ধ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তো তোমাদের জন্য পিতৃতুল্য। আমি তোমাদেরকে শিক্ষা দেই। তোমাদের মধ্যে কেউ যখন পেশাব-পায়খানার স্থানে যাবে, তখন সে যেন কিবলার দিকে ফিরে অথবা কিবলাকে পেছনে রেখে না বসে। আর ডান হাতে যেন পবিত্রতা অর্জন না করে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনটি পাথর (ঢেলা) ব্যবহার করতে হুকুম করতেন এবং গোবর ও হাড়কে ঢেলা হিসেবে ব্যবহার করতে নিষেধ করতেন।

【35】

তিনটির কম ঢেলা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা নিষিদ্ধ

সালমান (রাঃ) তিনি বলেনঃ তাঁকে এক ব্যক্তি বলল, তোমাদের নবী তোমাদেরকে শিক্ষা দেন। এমনকি পায়খানা-পেশাবে কিভাবে বসবে তাও। সালমান (রাঃ) (উত্তরে) বললেনঃ নিশ্চয়ই। তিনি আমাদেরকে পেশাব-পায়খানাকালে কিবলামূখী হয়ে বসতে, ডান হাতে ইস্তিঞ্জা করতে এবং তিনটি কুলুখের কমে ক্ষান্ত হতে নিষেধ করেছেন।

【36】

দু‘টি ঢেলার দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের অনুমতি

আসওয়াদ (রহঃ) আবদুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন (পায়খানার জন্য) ঢালু জমিতে আসেন এবং আমাকে তিনটি পাথর (ঢেলা) আনার জন্য হুকুম করেন। আমি দু‘টি পাথর পেলাম। তৃতীয়টি খোঁজ করলাম। কিন্তু পেলাম না। কাজেই আমি একটি গোবরের টুকরা নিলাম এবং এগুলো নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলাম। তিনি পাথর দু‘টি নিলেন ও গোবর ফেলে দিলেন এবং বললেন, ইহা ‘রিকস’। আবূ আবদুর রহমান বলেনঃ ‘রিকস’ হলো জীনের খাদ্য।

【37】

একটি ঢেলা দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের অনুমতি

সালামা ইব্ন কায়স (রাঃ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যখন ঢেলা ব্যবহার কর তখন বেজোড় ব্যবহার কর।

【38】

শুধু ঢেলা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন যথেষ্ট

আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন (পায়খানার জন্য) ঢালু ভূমিতে যাবে, সে যেন সাথে করে তিনটি পাথর নিয়ে যায় এবং এগুলোর দ্বারা যেন সে পবিত্রতা অর্জন করে। এটা তার (পবিত্রতা অর্জনের) জন্য যথেষ্ট হবে।

【39】

পানির দ্বারা পবিত্রতা অর্জন

আতা ইব্ন আবূ মায়মূনা (রহঃ) আমি আনাস ইব্ন মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন পায়খানা-পেশাবের প্রয়োজনে উন্মুক্ত স্থানে প্রবেশ করতেন তখন আমি এবং আমার সাথে আমার মতই আর একটি ছেলে পানির পাত্র বয়ে আনতাম। তিনি পানি দ্বারা ইস্তিঞ্জা করতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ তোমাদের স্বামীদেরকে পানি দ্বারা শৌচকার্য করতে বল। আমি নিজে তাদেরকে বলতে লজ্জাবোধ করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করতেন।

【40】

ডান হাতে ইস্তিঞ্জা করা নিষিদ্ধ

আবূ কাতাদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন পান করে, তখন সে যেন পাত্রে নিঃশ্বাস না ফেলে এবং যখন পায়খানা-প্রস্রাবের জন্য যায়, তখন সে যেন তার ডান হাত দ্বারা লিঙ্গ স্পর্শ না করে এবং ডান হাত দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করে। আবূ কাতাদা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে এবং ডান হাতে লিঙ্গ স্পর্শ করতে ও ডান হাতে শৌচকার্য করতে নিষেধ করেছেন। সালমান (রাঃ) তিনি বলেনঃ মুশরিকরা বললোঃ তোমাদের নবীকে দেখেছি যে, তোমাদেরকে পায়খানা-পেশাবের পদ্ধতি শিক্ষা দেন! সালমান (রাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই। তিনি আমাদের নিষেধ করেছেন যে, আমাদের কেউ যেন ডান হাতে ইস্তিঞ্জা না করে এবং কিবলামূখী হয়ে (পায়খানা-পেশাবে) না বসে। তিনি আরও বলেছেন যে, তোমাদের কেউ যেন তিনটির কম কুলুখ (ঢেলা) দ্বারা ইস্তিঞ্জা না করে।

【41】

ইস্তিঞ্জার পর হাত মাটিতে ঘষা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইস্তিঞ্জা করার পর মাটিতে হাত ঘষেন এবং উযূ করেন। জারীর (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি পায়খানা-পেশাবের স্থানে গেলেন এবং প্রয়োজন সমাধা করলেন। তারপর বললেন, হে জারীর ! পানি আন, আমি তাঁকে পানি এনে দিলাম। তিনি পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করেন এবং হাত মাটিতে ঘষেন। আবূ আবদুর রহমান বলেনঃ এটি শারীকের হাদীসের তুলনা অধিক সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়। আল্লাহ সম্যক অবগত।

【42】

পানির (পাক-নাপাক হওয়ার) ব্যাপারে পরিমাণ নির্ধারণ

আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পানির (পাক-নাপাক হওয়ার) পরিমাণ এবং যে পানিতে চতুষ্পদ জন্তু ও হিংস্র জন্তু আসা-যাওয়া করে, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি (উত্তরে) বলেনঃ পানি যখন দুই ‘কুল্লা’ হবে তখন তা নাপাক হবে না। [১]

【43】

পানির পরিমাণ নির্ধারণ না করা

আনাস (রাঃ) জনৈক বেদুঈন মসজিদে পেশাব করে দেয়। কেউ কেউ (বাধা দিতে) উঠে দাঁড়ায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও, তার পেশাবে বাধার সৃষ্টি করো না। সে ব্যক্তি পেশাব শেষ করলে তিনি এক বালতি পানি আনতে বলেন। তারপর তার পেশাবের উপর তা ঢেলে দেন। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক বেদুঈন ব্যক্তি মসজিদে পেশাব করে দেয়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বালতি পানি আনতে আদেশ করেন। তারপর ঐস্থানে পানি ঢেলে দেয়া হয়। ইয়াহইয় ইব্ন সা‘ঈদ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আনাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, এক বেদুঈন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে এবং পেশাব করতে শুরু করে। এতে লোকেরা চিৎকার করে উঠল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। তারা তাকে ছেড়ে দেয়। সে ব্যক্তি পেশাব শেষ করে। পরে তিনি এক বালতি পানি আনতে নির্দেশ দেন এবং তা পেশাবের উপর ঢেলে দেয়া হয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক বেদুঈন মসজিদে এসে পেশাব করে দেয়। লোকেরা তাকে ধমক দিতে আরম্ভ করলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের কে বললেনঃ তোমরা তাকে ছেড়ে দাও এবং তার পেশাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। কেননা তোমরা নম্র ব্যবহারের জন্য প্রেরিত হয়েছ, কঠোর ও রূঢ় আচরণের জন্যে নয়।

【44】

বদ্ধ পানির বর্ণনা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন: তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে পেশাব না করে যেখানে সে পরে উযূ করবে। [১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে পেশাব না করে, যাতে সে পরে গোসল করবে। ইমাম নাসাঈ (রহঃ) বলেন: ইয়াকূব (রহঃ) এ হাদীসখানা বর্ণনা করতেন এক দীনার নিয়ে।

【45】

সমূদ্রের পানি প্রসঙ্গে

আবূ হুরায়রা (রাঃ) জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করল। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা সমুদ্রে ভ্রমণ করি। আমাদের সঙ্গে অল্প পরিমাণ পানি নিয়ে থাকি। এ পানি দ্বারা যদি আমরা উযূ করি তবে (পানি নিঃশেষ হয়ে যাবে) আমরা পিপাসায় কষ্ট পাবো। (এমতাবস্থায়) আমরা কি সমুদ্রের পানি দ্বারা উযূ করব? জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং সমুদ্রের মৃত প্রাণীও হালাল। [১]

【46】

বরফ দ্বারা উযূ করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আরম্ভ করার পর অল্পক্ষণ নীরব থাকতেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোক; তাকবীর ও কিরাআতের মধ্যবর্তী নীরবতার সময় আপনি কি পড়েন? তিনি বলেনঃ আমি তখন পড়ি : “হে আল্লাহ! পূর্ব পশ্চিমের মধ্যে আপনি যেমন দূরত্ব সৃষ্টি করেছেন তেমনি আমার ও আমার অপরাধসমূহের মধ্যে দূরত্ব করে দিন। হে আল্লাহ! আমার গুনাহসমূহ থেকে আমাকে পবিত্র করুন যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পবিত্র করা হয়। হে আল্লাহ! আমার গুনাহসমূহ্ থেকে আমাকে ধৌত করে দিন বরফ, পানি এবং শিলাবৃষ্টির পানি দ্বারা।”

【47】

বরফের পানি দ্বারা উযূ করা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পড়তেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহসমূহ বরফের পানি এবং বৃষ্টির ঠান্ডা পানি দ্বারা ধৌত করে দিন এবং আমার অন্তরকে গুনাহসমূহ থেকে পবিত্র করে দিন যেমন আপনি সাদা কাপড় পবিত্র করেছেন ময়লা থেকে।”

【48】

শিলাবৃষ্টি পানি দ্বারা উযূ সম্পর্কে

যুবায়ের ইব্‌ন নুফায়র (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আউফ ইব্‌ন মালিক (রাঃ)-এর নিকট গমন করি। তখন তিনি বলেছিলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মৃত ব্যক্তির জানাযার সালাতের সময় যে দোয়া পড়েছিলেন আমি তা শুনেছি। তিনি পড়েছিলেনঃ “হে আল্লাহ্! আপনি তাকে মাফ করে দিন এবং তার উপর রহম করুন। তাকে আরাম দিন এবং ক্ষমা করুন! তার আতিথেয়তাকে সম্মানজনক করুন। তার কবর প্রশস্ত করুন এবং তাকে পানি, বরফ ও শিলাবৃষ্টির পানি দ্বারা ধৌত করুন। তাকে গুনাহ থেকে পবিত্র করুন যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পবিত্র করা হয়।”

【49】

কুকুরের উচ্ছিষ্ট

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যদি তোমাদের কারও পাত্র থেকে কুকুর পান করে তবে সে যেন তার পাত্রটি সাতবার ধৌত করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারও পাত্রে যখন কুকুর মুখ দেবে, তখন সে যেন পাত্রটি সাতবার ধৌত করে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

【50】

কুকুর পাত্রে মুখ দিলে পাত্রের জিনিস ঢেলে ফেলে দেয়ার নির্দেশ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো পাত্রে কুকুর মুখ দিলে সে যেন পাত্রের জিনিস ঢেলে ফেলে দেয়। তারপর যেন তা সাতবার ধুয়ে ফেলে। আবূ আবদুর রহমান বলেনঃ (পাত্রের জিনিস ঢেলে ফেলে দেয়) এই কথায় (সনদের উর্ধ্বতন রাবী) আলী ইব্‌ন মুসহিরকে কেউ অনুসরণ করেছে বলে আমি জানি না।

【51】

কুকুরের মুখ দেওয়া পাত্র মাটি দ্বারা মাজা সম্পর্কে

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মুগাফফাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অবশ্য শিকার ও ছাগপালের পাহারাদারীর জন্য কুকুর রাখার অনুমতি দিয়েছিলেন এবং তিনি বলেছেন যে, কোন পাত্রে যখন কুকুর মুখ দেয় তখন তা সাতবার ধৌত করবে এবং অষ্টমবারে মাটি দ্বারা মেজে নেবে।

【52】

বিড়ালের উচ্ছিষ্ট

আবূ কাতাদা (রাঃ) একদিন তাঁর নিকট আগমন করেন। তারপর কাবশা কিছু কথা বলেনঃ যার অর্থ হচ্ছে, আমি আবূ কাতাদা (রাঃ)-এর জন্য উযূর পানি রাখি। ইত্যবসরে একটি বিড়াল এসে পাত্র থেকে পানি পান করে। আবূ কাতাদা (রাঃ) পাত্রটি কাত করে দিলে বিড়ালটি পানি পান করে। কাবশা বলেনঃ আবূ কাতাদা (রাঃ) আমাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, হে ভাতিজী! (আমি বিড়ালকে পাত্র থেকে পানি পান করিয়েছি দেখে) তুমি আশ্চর্যান্বিত হয়েছ কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, বিড়াল অপবিত্র নয়। কারণ যে সব প্রাণী প্রতিনিয়ত তোমাদের আশে পাশে থাকে, তাদের মধ্যে বিড়ালও একটি।

【53】

গাধার উচ্ছিষ্ট

আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমাদের নিকট রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘোষণাকারী এসে বললো : আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদেরকে গাধার গোশত (খেতে) নিষেধ করেছেন। কেননা তা অপবিত্র।

【54】

ঋতুমতি মহিলার উচ্ছিষ্ট

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি হাড় থেকে গোশত কামড়ে নিতাম। তারপর আমি যেখানে মুখ রাখতাম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–ও সেখানে তাঁর মুখ রাখতেন। অথচ তখন আমি ঋতুমতি ছিলাম। আমি পাত্র থেকে পানি পান করতাম। তারপর তিনি সে স্থানে মুখ রাখতেন, যেখানে আমি মুখ রাখতাম। অথচ আমি তখন ঋতুমতি ছিলাম।

【55】

নারী-পুরুষের একত্রে উযূ করা

ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যামানায় নারী-পুরুষ একত্রে উযূ করতেন। [১]

【56】

জুনুব [২] ব্যক্তির (গোসলের পর) অবশিষ্ট পানি

উরওয়া (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সাথে একই পাত্রে গোসল করতেন।

【57】

উযূর জন্য একজন পুরুষের জন্য কি পরিমাণ পানি যথেষ্ট

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মাক্কুক [৩] পরিমাণ পানি দ্বারা উযূ করতেন এবং পাঁচ মাক্কুক পরিমাণ পানি দ্বারা গোসল করতেন। উম্মু উমারা বিনত কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করেন (এ উযূর জন্য) এমন একটি পাত্রে পানি আনা হয় যাতে এক মুদ-এর দু-তৃতীয়াংশ পানি ছিল। হাবীব থেকে বর্ণনাকারী শু’বা বলেনঃ আমার এ কথাও স্মরণ আছে যে, তিনি উভয় হাত মর্দন করে ধৌত করেন এবং উভয় কানের ভেতর দিকে মসেহ করেন। কানের দিকে মসেহ করেছেন কিনা তা আমার খেয়াল নেই।

【58】

উযূতে নিয়্যত প্রসঙ্গ

উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সব কাজই নিয়্যত অনুযায়ী হয়। মানুষ যা নিয়্যত করে, তাই লাভ করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য হিজরত করবে, তার হিজরত আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত হবে দুনিয়া লাভের জন্য, সে তাই লাভ করবে। অথবা যার হিজরত হবে কোন মহিলাকে বিবাহ করার জন্য, তার হিজরত সে জন্যই হবে যার উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে।

【59】

পাত্র থেকে উযূ করা

আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলাম যে, আসরের নামায নিকটবর্তী (অথচ পানি নেই) লোকেরা পানির অনুসন্ধান করল কিন্তু পানি পেল না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একটি পাত্র আনা হয়। তিনি পাত্রটির ভেতরে হাত রাখেন এবং লোকদের উযূ করার নির্দেশ দেন। আমি দেখলাম, তাঁর হাতের আঙ্গুল থেকে পানি উৎসারিত হচ্ছে। তাঁদের সর্বশেষ ব্যক্তিসহ সকলেই (সে পানি দ্বারা) উযূ করলেন। আবদুল্লাহ (ইব্‌ন মাসঊদ) (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা (এক সফরে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। লোকেরা পানি পাচ্ছিলেন না। তাঁর কাছে একটি (তশতরীর ন্যায়) পাত্র নিয়ে আসা হয় এবং তিনি তাতে হাত ঢোকান। আমি দেখলাম, তাঁর হাতের আঙ্গুলের ফাঁক হতে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। তিনি বলছিলেন, তোমরা আল্লাহ্‌র তরফ থেকে পানি ও বরকত নিতে এসো। আ’মাশ (রাঃ) বলেনঃ আমাকে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন সালিম ইব্‌ন আবুল জা’দ। তিনি বলেনঃ আমি জাবির (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনারা তখন কতজন লোক ছিলেন? তিনি বলেনঃ আমরা তখন দেড় হাজার লোক ছিলাম।

【60】

উযূ করার সময় বিসমিল্লাহ বলা

আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ (কোন এক সফরে) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কয়েকজন সাহাবী পানি তালাশ করলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের কারো নিকট পানি আছে কি? (একজন পানি এনে দিলে) তিনি পানিতে হাত রাখলেন এবং বললেনঃ বিসমিল্লাহ্‌ বলে উযূ কর। আমি তাঁর আঙ্গুলের ফাঁক থেকে পানি বের হতে দেখলাম। তাদের সর্বশেষ ব্যক্তিসহ সকলেই এই পানিতে উযূ করেন। সাবিত (রহঃ) বলেনঃ আমি আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি উপস্থিত লোকের সংখ্যা কত মনে করেন? তিনি বললেন, সত্তরজনের মত। [১]

【61】

পুরুষের উযূর জন্য খাদেমের পানি ঢেলে দেয়া

উরওয়া ইব্‌ন মুগীরা (রাঃ) তিনি তাঁর পিতা [মুগীরা (রাঃ)]-কে বলতে শুনেছেনঃ তাবূকের যুদ্ধে আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযূ করার পানি ঢেলে দিয়েছি। তিনি মোজার উপর মসেহ করেছিলেন।

【62】

উযূর অঙ্গসমূহ একবার করে ধৌত করা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উযূর সংবাদ দেব কি? পরে তিনি (প্রত্যেক অঙ্গ) এক-একবার (ধৌত) করে উযূ করলেন।

【63】

উযূর অঙ্গসমূহ তিনবার ধৌত করা

মুত্তালিব ইব্‌ন আবদুল্লাহ ইব্‌ন হানতাব (রাঃ) আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিন-তিনবার ধৌত করে উযূ করেছেন এবং বলেছেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ উযূ করেছেন।[১]

【64】

উযূর বর্ণনাঃ উভয় কব্জি ধৌত করা

মুগীরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। তাঁর কাছে একটি লাঠি ছিল। (পথের এক স্থানে) তিনি লাঠিটি দিয়ে আমার পিঠে ঠোকা দিলেন। পরে তিনি রাস্তা থেকে সরে গেলেন। আমিও তাঁর সঙ্গে সরে গেলাম। (কিছুক্ষণ চলার পর) এক স্থানে এসে উট থামালেন। তারপর তিনি আবার চলতে লাগলেন। রাবী বলেনঃ তিনি এতদূর গেলেন যে, আমার থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। (ক্ষণিক পর) ফিরে এসে বললেন, তোমার নিকট পানি আছে? আমার সাথে একটি পানির পাত্র ছিল। আমি তা নিয়ে তাঁর নিকট আসলাম এবং পানি ঢেলে দিতে লাগলাম। তিনি তাঁর হাত মুখ ধুলেন এবং কব্জির উপরিভাগ ধৌত করতে চাইলেন। তখন তাঁর পরিধানে ছিল চিকন হাতার একটি শামী (সিরীয়) জুব্বা। তিনি জুব্বার ভেতর থেকে হাত বের করে আনলেন এবং মুখমণ্ডল ও হাত ধৌত করলেন। তিনি কপাল ও পাগড়ির কিছু অংশ মসেহ করেছিলেন বলে রাবী উল্লেখ করেছেন। (হাদীসের একজন রাবী) ইব্‌ন আওন (রহঃ) বলেনঃ আমার যেমন ইচ্ছা ছিল হাদিসটি তেমন স্মরণ রাখতে পারিনি। (অতঃপর রাবী বলেন,) এরপর তিনি তাঁর মোজার উপর মসেহ করেন এবং বললেনঃ তোমার প্রয়োজন সমাধা করো। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ ! আমার প্রয়োজন নেই। তারপর আমরা চলে আসলাম। আবদুর রহমান ইব্‌ন আউফ (রাঃ) অগ্রগামী দলে ছিলেন। (এদিকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিলম্বের কারণে) আবদুর রহমান ইব্‌ন আউফ (রাঃ) লোকদেরকে নিয়ে ফযরের সালাত এক রাকাআত আদায় করলেন। আমি আবদুর রহমান ইব্‌ন আউফ (রাঃ)-কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আগমন সংবাদ দেয়ার ইচ্ছা করি কিন্তু তিনি আমাকে নিষেধ করেন। অতএব আমরা যতটুকু পেলাম তা (জামাআতে) আদায় করলাম এবং যা আমরা পাইনি তা নিজেরা আদায় করে নিলাম।

【65】

কতবার ধৌত করতে হবে

ইব্‌ন আওস (রহঃ) করেন। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (উযূর সময়) তিনবার করে পানি ঢালতে দেখেছি।

【66】

কুলি করা ও নাক পরিষ্কার করা

হুমরান ইব্‌ন আবান (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি উসমান ইব্‌ন আফফান (রাঃ)-কে উযূ করতে দেখেছি। তিনি তিনবার হাতে পানি ঢেলে হাত ধৌত করেন। এরপর গড়গড়া করে কুলি করেন এবং নাকে পানি দিয়ে পরিষ্কার করেন, তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন এবং কনুই পর্যন্ত তিনবার ডান হাত ধৌত করেন। অনুরূপভাবে বাম হাতও। এরপরে মাথা মসেহ করেন এবং ডান পা তিনবার ধৌত করেন। অনুরূপভাবে বাম পাও। এভাবে উযূ শেষ করে তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ উযূ করতে দেখেছি এবং বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আমার এ উযূর ন্যায় উযূ করবে এবং তারপরে একাগ্রতার সাথে দু’রাকা’আত সালাত আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

【67】

কোন হাত দ্বারা কুলি করতে হবে

হুমরান (রাঃ) তিনি উসমান (রাঃ)-কে উযূর পানি চাইতে দেখলেন। (পানি আনা হলে) তিনি পাত্র হতে হাতে পানি ঢালেন এবং হস্তদ্বয় তিনবার করে ধৌত করেন। পরে ডান হাত পাত্রে ঢুকান এবং কুলি করেন ও পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করেন। এরপরে মাথা মসেহ করেন ও প্রত্যেক পা তিনবার করে ধৌত করেন ও বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি যে, তিনি আমার ন্যায় উযূ করেছেন এবং বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার এ উযূর ন্যায় উযূ করবে এবং একাগ্রতা সহকারে দু’রাকাআত সালাত আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।

【68】

নাক পরিষ্কার করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন উযূ করবে, তখন সে যেন তার নাকে পানি দেয় এবং নাক পরিষ্কার করে ফেলে।

【69】

নাকে ভালভাবে পানি দেয়া

লাকীত ইব্‌ন সাবরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্ ! আমাকে উযূ সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেনঃ পূর্ণরূপে উযূ করবে, আর তুমি যদি রোজাদার না হও তাহলে উত্তমরূপে নাকে পানি পৌঁছাবে।

【70】

নাক ঝাড়ার নির্দেশ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উযূ করবে সে যেন নাক ঝারে এবং যে ব্যক্তি ঢেলা ব্যবহার করবে সে যেন বেজোড় ব্যবহার করে। সালামা ইব্‌ন কায়স (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন উযূ কর তখন নাক ঝেড়ে নাও। যখন কুলুখ ব্যবহার কর, তখন বেজোড় ব্যবহার কর।

【71】

ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর নাক ঝেড়ে ফেলার নির্দেশ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ যখন ঘুম হতে জাগ্রত হয়ে উযূ করে, সে যেন তিনবার নাক ঝেড়ে নেয়। কেননা শয়তান নাকের (মস্তক সংলগ্ন) ছিদ্রের উপরিভাগে রাত্রি যাপন করে।

【72】

কোন হাতে নাক ঝাড়তে হবে

আলী (রাঃ) তিনি পানি আনতে বলেন, পরে তিনি কুলি করেন এবং নাকে পানি দেন। বাম হাতে নাক ঝাড়েন। তিনবার এরূপ করেন। পরে বলেনঃ এই হলো নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযূ।

【73】

মুখমণ্ডল ধৌত করা

আবদ খায়র (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমরা আলী ইব্‌ন আবূ তালিব (রাঃ)-এর নিকট এলাম। এমতাবস্থায় যে, তিনি সালাত আদায় করে ফেলেছেন। (আমাদেরকে দেখে) তিনি উযূর পানি আনতে বলেন। আমরা বললাম, তিনি তো সালাত আদায় করেছেন, এখন পানি দিয়ে কি করবেন? (পরে বুঝলাম) তিনি আমাদেরকে উযূ শিক্ষা দেওয়ার জন্যই এরূপ করেছেন। তাঁর হুকুম অনুযায়ী পানি ভর্তি একটি পাত্র ও অন্য একটি পাত্র আনা হলো। তিনি পাত্র হতে হাতে পানি ঢেলে তিনবার হাত ধৌত করলেন। এরপর ডান হাতে পানি দিয়ে তিনবার কুলি করেন ও নাকে পানি দেন। এরপর তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন। আর ডান ও বাম হাত তিনবার করে ধৌত করেন এবং একবার মাথা মসেহ করেন। পরে ডান পা ও বাম পা তিনবার করে ধৌত করেন এবং বলেনঃ যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযূ জানতে আগ্রহী, সে জেনে রাখুক এটাই তাঁর উযূ।

【74】

মুখমণ্ডল কতবার ধৌত করতে হবে

আলী (রাঃ) তাঁর নিকট একটি বসার চৌকি নিয়ে আসা হয় এবং তিনি তাতে বসেন। পরে পানি ভর্তি একটি পাত্র আনতে বলেন। (পানি আনা হলে) তিনি উভয় হাতের উপর পাত্রটি কাত করে তিনবার করে পানি ঢালেন। পরে এক-এক অঞ্জলি পানি দ্বারা তিনবার কুলি করেন ও নাকে পানি দেন এবং তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন। আর তিনবার করে কনুই পর্যন্ত উভয় হাত ধৌত করেন এবং হাতে কিছু পানি নিয়ে মাথা মসেহ করেন। শু’বা (আলোচ্য হাদীসের রাবী) তাঁর মাথার অগ্রভাগ থেকে মাথার শেষভাগ পর্যন্ত একবার ইঙ্গিত করে দেখান এবং বলেনঃ তিনি হাত দু’টি সম্মুখের দিকে ফিরিয়ে এনেছিলেন কিনা তা আমার মনে নেই এবং তিনি [ হযরত আলী (রাঃ)] তিনবার করে পা ধৌত করেন এবং তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযূ দেখে খুশি হতে চায় (সে যেন আমার এ উযূ দেখে), এটাই তাঁর উযূ।

【75】

উভয় হাত ধৌত করা

আবদ খায়র (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আলী (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, তিনি একটি চৌকি আনতে বলেন। (চৌকি আনা হলে) তিনি তাতে বসেন এবং একটি পাত্রে পানি আনতে বলেন। (পানি আনা হলে) তিনি তিনবার করে উভয় হাত ধৌত করেন। এক-এক অঞ্জলি পানি দ্বারা তিনবার কুলি করেন ও নাকে পানি দেন। পরে তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন ও উভয় হাত তিনবার করে ধৌত করেন। এরপর হাত পানির পাত্রে প্রবিষ্ট করান এবং মাথা মসেহ করেন। পরে উভয় পা তিনবার করে ধৌত করেন এবং বলেনঃ যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযূ দেখে খুশি হতে চায় (সে যেন আমার উযূ দেখে), এরূপই তাঁর উযূ।

【76】

উযূর বর্ণনা

হুসায়ন ইব্‌ন আলী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার পিতা আলী (রাঃ) আমাকে উযূর পানি আনতে বলেন। আমি তাঁর নিকট পানি এনে দিলাম। তিনি উযূ করতে আরম্ভ করলেন। (প্রথমে) উযূর পানিতে হাত ঢুকাবার পূর্বে হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করলেন। তারপর তিনবার কুলি করলেন ও তিনবার নাক ঝাড়লেন। তারপর তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করলেন এবং ডান হাত তিনবার কনুই পর্যন্ত ধৌত করলেন। অনুরূপভাবে বাম হাত ধৌত করলেন এবং একবার মাথা মসেহ করলেন। তারপর গোড়ালি পর্যন্ত ডান পা তিনবার এবং অনুরূপভাবে বাম পা ধৌত করলেন। পরে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন এবং বললেন, পানির পাত্রটা (আমার হাতে) দাও। আমি (তাঁর উযূর পর যে পানিটুকু পাত্রে ছিল তা সহ) পাত্রটি তাঁকে দিলাম। তিনি উযূর অবশিষ্ট পানি টুকু দাঁড়িয়ে পান করলেন। আমি তাঁকে দাঁড়িয়ে পান করতে দেখে অবাক হলাম। তিনি আমার অবস্থা দেখে বললেনঃ অবাক হয়ো না। তুমি আমাকে যেমন করতে দেখলে, আমিও তোমার নানা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ করতে দেখেছি। আলি (রাঃ) তাঁর এ উযূ এবং অবশিষ্ট পানি দাঁড়িয়ে পান করা সম্পর্কে বলছিলেন।

【77】

হাত কতবার ধৌত করবে

আবূ হায়্যা ইব্‌ন কায়স (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আলী (রাঃ)-কে উযূ করতে দেখেছি। তিনি (সর্বপ্রথম) হাতের কব্জি পর্যন্ত অত্যন্ত পরিষ্কার করে ধৌত করেন। তারপর তিনবার কুলি করেন তিনবার নাকে পানি দেন ও তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন এবং উভয় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধৌত করেন। পরে মাথা মসেহ করেন এবং উভয় পা গোড়ালি পর্যন্ত ধৌত করেন। তারপর দাঁড়িয়ে উযূর অবশিষ্ট পানি পান করেন এবং বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযূর পদ্ধতি কিরূপ ছিল, আমি তা তোমাদেরকে দেখাতে চেয়েছি। (তাই আমি তোমাদের উযূ করে দেখালাম)।

【78】

ধৌত করার সীমা

ইয়াহইয়া মাযিনী (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী আবদুল্লাহ ইব্‌ন যায়দ ইব্‌ন আসিম (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলামঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে উযূ করতেন, আপনি আমাকে তা দেখাতে পারবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, দেখাতে পারি। এই বলে তিনি পানি আনতে বলেন। পানি আনা হলে তিনি হাতে পানি ঢালেন এবং উভয় হাত দু’দুবার করে ধৌত করেন। তিনবার কুলি করেন ও তিনবার নাকে পানি দেন। পরে মুখমণ্ডল তিনবার ধৌত করেন এবং উভয় হাত দু’বার করে কনুই পর্যন্ত ধৌত করেন। তারপর দু’হাতে মাথা মসেহ করেন। একবার দু’হাত পেছনে নেন, আর একবার মাথার সামনের দিকে আনেন। মাথার সামনের দিক হতে শুরু করে পেছনে ঘাড় পর্যন্ত নিয়ে যান। আবার হাত ফিরিয়ে আনেন, মাথার যে স্থান থেকে মসেহ শুরু করেছিলেন সে স্থান পর্যন্ত। পরিশেষে উভয় পা ধৌত করেন।

【79】

মাথা মসেহ করার পদ্ধতি

ইয়াহইয়া মাযিনী (রহঃ) তিনি আবদুল্লাহ ইব্‌ন যায়দ ইব্‌ন আসিম মাযিনী (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে উযূ করতেন তা আমাকে দেখাতে পারেন? আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ হ্যাঁ, এরপর তিনি পানি আনতে বলেন। পানি আনা হলে তিনি ডান হাতে পানি ঢালেন এবং দু’বার করে উভয় হাত ধৌত করেন এবং দু’বার উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করেন। পরে দু’হাতে মাথা মসেহ করেন। একবার সামনে আনেন একবার হাত পেছনে নেন, আর মাথার অগ্রভাগ হতে শুরু করেন এবং উভয় হাত পেছনে ঘাড় পর্যন্ত নেন। আবার মসেহ যে স্থান থেকে শুরু করেন সে স্থান পর্যন্ত উভয় হাত ফিরিয়ে আনেন। তারপর উভয় পা ধৌত করেন।

【80】

কতবার মাথা মসেহ করতে হবে

আবদুল্লাহ ইব্‌ন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উযূ করতে দেখেছি। তিনি (হাত ধোয়া, কুলি করা ইত্যাদির পর) তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন এবং দু’বার করে হাত ধৌত করেন এবং দু’বার করে পা ধৌত করেন ও মাথা মসেহ করেন। [১]

【81】

মহিলাদের মাথা মসেহ করা

আবূ আবদুল্লাহ সালিম সাবলান (রহঃ) তিনি বলেনঃ আয়েশা (রাঃ) তাঁর আমানতদারীতে অত্যন্ত মুগ্ধ ছিলেন এবং তাঁকে অর্থের বিনিময়ে কাজে নিযুক্ত করতেন। (সে) সালিম বলেন, আয়েশা (রাঃ) আমাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে উযূ করতেন তা দেখান। তিনি তিনবার কুলি করেন ও নাক পরিষ্কার করেন। তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন। তিনবার করে ডান ও বাম হাত ধৌত করেন এবং হাত মাথার অগ্রভাগে রাখেন ও মাথার পেছন পর্যন্ত একবার মসেহ করেন। পরে তিনি উভয় কান মসেহ করেন। তারপর মুখমণ্ডলে হাত বুলান। সালিম বলেন, আমি যখন মুকাতাব [২] ছিলাম তখন তাঁর নিকট আসা-যাওয়া করতাম। তিনি তখন আমার থেকে পর্দা করতেন না। তিনি তখন আমার সম্মুখে বসতেন এবং আমার সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। একদিন আমি তাঁর নিকট এলাম এবং বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনি আমার জন্য বরকতের দোয়া করুন। তিনি বললেনঃ কিসের জন্য দোয়া করব? বললাম, আল্লাহ্‌ আমাকে আযাদ করে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আল্লাহ্‌ তোমাকে বরকত দিন। (এই কথা বলে) তিনি আমার সামনে পর্দা ফেলে দিলেন। এরপর আমি তাঁকে কোনদিন দেখিনি।

【82】

কান মসেহ করা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে উযূ করতে দেখেছি। তিনি (প্রথমে) হাত ধৌত করেন এবং এক অঞ্জলি পানি দ্বারা কুলি করেন ও নাকে পানি দেন। মুখমণ্ডল ও উভয় হাত একবার করে ধৌত করেন। একবার মাথা ও উভয় কান মসেহ করেন। আবদুল আযীয (রহঃ) বলেনঃ ইব্‌ন আজলান (রহঃ) হতে যিনি শুনেছেন, তিনি আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, ইব্‌ন আজলান এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উভয় পা ধৌত করার কথাও বলেছেন।

【83】

মাথার সাথে কান মসেহ করা এবং যা দ্বারা প্রমান করা হয় উভয় কান মাথার অংশ, তাঁর বর্ণনা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করেন (উভয় হাত ধৌত করেন)। তিনি এক অঞ্জলি পানি দ্বারা কুলি করেন ও নাকে পানি দেন। আবার এক অঞ্জলি পানি নেন এবং মুখমণ্ডল ধৌত করেন। আবার এক অঞ্জলি পানি নিয়ে ডান হাত ধৌত করেন। আবার এক অঞ্জলি পানি নিয়ে বাম হাত ধৌত করেন। তারপর মাথা ও কান মসেহ করেন। কানের ভেতরের দিক শাহাদত আঙ্গুলি ও বাহির দিক বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা মসেহ করেন। আবার এক অঞ্জলি পানি নিয়ে ডান পা ধৌত করেন এবং আবার এক অঞ্জলি পানি নিয়ে বাম পা ধৌত করেন। আবদুল্লাহ সুনাবিহী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মুমিন বান্দা যখন উযূ এবং কুলি করে, তখন তার মুখের গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন নাকে পানি দেয়, তখন নাকের গুনাহ বের হয়ে যায়। যখন মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন মুখমণ্ডলের গুনাহ বের হয়ে যায়। এমনকি গুনাহ বের হয়ে যায় দু’ চোখের পাতার নিচ থেকে। যখন হাত ধৌত করে, তখন হাতের গুনাহ বের হয়ে যায়। এমনকি তা বের হয়ে যায় দু’ হাতের নখের নিচ থেকে। যখন মাথা মসেহ করে, তখন মাথার গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তা বের হয়ে যায় তার দু’কান থেকে। যখন পা ধৌত করে, তখন পা-এর গুনাহ বের হয়ে যায়। এমনকি তা বের হয়ে যায় নখের নিচ থেকে। তারপর মসজিদে যাওয়া ও সালাত আদায় করা তার জন্য অতিরিক্ত ইবাদত (অতিরিক্ত সওয়াব) হিসাবে গণ্য হয়। [১]

【84】

পাগড়ির উপর মসেহ করা

বিলাল (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মোজা ও পাগড়ির উপর মসেহ করতে দেখেছি। বিলাল (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উভয় মোজার উপর মসেহ করতে দেখেছি। বিলাল (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উভয় পাগড়ি ও মোজার উপর মসেহ করতে দেখেছি।

【85】

মাথার অগ্রভাগসহ পাগড়ির উপর মসেহ করা

মুগীরা (রাঃ) বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করেন। তাতে মাথার অগ্রভাগ [২], পাগড়ি ও মোজার উপর মসেহ করেন। মুগীরা ইব্‌ন শু‘বা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (এক সফরে কাফেলা হতে) পেছনে থেকে যান। আমিও তাঁর সঙ্গে পেছনে থেকে যাই। তিনি পায়খানা-পেশাবের কাজ সমাধা করলেন। তারপর আমাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমার নিকট কি পানি আছে? আমি তাঁর নিকট একটি পানির পাত্র নিয়ে উপস্থিত হলাম। তিনি হাত ও মুখমণ্ডল ধৌত করলেন। তারপর কনুই থেকে আস্তিন উপরে উঠাতে চাইলেন। কিন্তু জামার হাতা সংকীর্ণ হওয়াতে তা পারলেন না। তাই জামার হাতা খুলে কাঁধের উপর রেখে দেন এবং কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত করেন এবং মাথার অগ্রভাগ ও পাগড়ির উপর মসেহ করেন এবং মোজার উপর মসেহ করেন।

【86】

পাগড়ির উপর কিভাবে মসেহ করতে হবে

ইব্ন ওহাব সাকাফী (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি মুগীরা ইব্ন শু‘বা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, দু’টি বিষয়ে আমি কারো নিকট কিছু জিজ্ঞাসা করব না। কেননা এ দু’টি কাজের সময় আমি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত ছিলাম৷ (একটি হলো মসেহ্) তিনি বলেনঃ আমরা এক সফরে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম৷ তিনি পায়খানা-পেশাবের প্রয়োজনে বাইরে গেলেন৷ সেখান থেকে এসে উযূ করেন এবং মাথার অগ্রভাগ ও পাগড়ির দু’পার্শ্ব এবং মোজার উপর মসেহ করেন৷ আর (দ্বিতীয়টি হলো) অধঃস্তনের পেছনে ইমামের (নেতার) সালাত আদায় করা। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সফরে গিয়েছিলেন। আমিও তাঁর সঙ্গে ছিলাম৷ (তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন সমাধার জন্য) দূরে চলে গিয়েছিলেন। এদিকে সালাতের সময় হয়ে যায়৷ (সালাতের সময় শেষ হচ্ছে দেখে) লোকেরা সালাত শুরু করে দিল। আবদুর রহমান ইব্ন আউফ (রাঃ)-কে তারা ইমাম নিযুক্ত করেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করেন। (এমন সময় ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে আসেন এবং ইব্ন আউফের পেছনে অবশিষ্ট সালাত আদায় করেন। ইব্ন আউফ সালাম ফিরালে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে যান এবং যতটুকু সালাত ছুটে গিয়েছিল তিনি তা আদায় করেন।

【87】

পা ধৌত করার প্রমাণ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আবুল কাসেম (রাসূলুল্লাহ্‌) (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (উযূর সময়) যার পায়ের গোড়ালী শুষ্ক থাকবে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ। আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন আমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক দল লোককে উযূ করতে দেখেন। তাদের পায়ের গোড়ালীর প্রতি লক্ষ্য করে দেখেন যে তা শুষ্ক রয়েছে। তখন তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেনঃ যাদের পায়ের গোড়ালী শুষ্ক থাকবে, তাদের জন্য জাহান্নামের দুর্ভোগ। তোমরা পরিপূর্ণরূপে উযূ কর।

【88】

কোন পা প্রথমে ধৌত করতে হবে

আয়েশা (রাঃ) তিনি উল্লেখ করেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করা, জুতা পরিধান করা ও চুল আঁচড়াতে যথাসম্ভব ডানদিক থেকে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন। হাদীসের অন্যতম রাবী শু‘বা বলেনঃ ওয়াসিত শহরে আমি আশআছ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ডানদিক হতে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন তাঁর সকল কাজ। তারপর কূফাতে আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, তিনি (রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) যথাসাধ্য ডানদিক হতে আরম্ভ করা পছন্দ করতেন।

【89】

উভয় হাত দ্বারা পা ধৌত করা

কায়সী (রাঃ) এক সফরে তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সঙ্গে ছিলেন, এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর জন্য পানি আনা হলে তিনি পাত্র হতে পানি ঢালেন এবং উভয় হাত একবার ধৌত করেন। এক-একবার করে মুখমণ্ডল ও দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করেন। পরে উভয় হাত দ্বারা পদদ্বয় ধৌত করেন।

【90】

আঙ্গুল খিলাল করার নির্দেশ

লাকীত (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি যখন উযূ করবে পরিপূর্ণরূপে উযূ করবে এবং খিলাল করবে।

【91】

পা কতবার ধৌত করবে

আবূ হাইয়াহ্‌ ওয়াদায়ী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আলী (রাঃ)-কে উযূ করতে দেখেছি। তিনি তিনবার উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করেন, তিনবার কুলি করেন, তিনবার নাক পরিষ্কার করেন, তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন এবং তিনবার করে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করেন। পরে মাথা মসেহ করেন এবং উভয় পা তিনবার করে ধৌত করেন এবং বলেনঃ এটাই রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর উযূ।

【92】

হাত ও পায়ের কতটুকু ধৌত করতে হবে

হুমরান (রহঃ) উসমান (রাঃ) উযূর পানি আনতে বলেন। প্রথমে তিনি তিনবার উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করেন। পরে কুলি করেন ও নাকে পানি দেন। তারপর তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন। এরপর তিন-তিনবার ডান ও বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করেন। এরপর মাথা মসেহ করেন এবং তিন-তিনবার ডান ও বাম পা গোড়ালী পর্যন্ত ধৌত করেন। পরে বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ উযূ করতে দেখেছি; তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার এই উযূর ন্যায় উযূ করবে এবং দাঁড়িয়ে দু’রাকাত সালাত (তাহিয়্যাতুল উযূ) একাগ্রচিত্তে আদায় করবে, তার পেছনের গুনাহ্‌ মাফ করে দেওয়া হবে।

【93】

জুতা পরিহিত অবস্থায় উযূ করা

উবায়দ ইব্‌ন জুরায়জ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ)-কে বললামঃ আমি দেখেছি আপনি এই সিবতী [১] জুতা পরিধান করেন এবং এগুলো পরিধান করেই উযূ করেন (এর কারণ কি)? আবদুল্লাহ বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে এ সিবতী জুতা পরিধান করতে এবং তা রেখে উযূ করতে দেখেছি।

【94】

মোজার উপর মসেহ করা

জারীর ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি উযূ করেন এবং মোজার উপর মসেহ করেন। তাঁকে বলা হল, কি ব্যাপার! আপনি মোজার উপর মসেহ করেন? তিনি উত্তরে বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে মসেহ করতে দেখেছি। আবদুল্লাহর শাগরিদগণ জারীরের এই কথা পছন্দ করতেন। আর জারীর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর ইন্তিকালের সামান্য কিছুকাল পূর্বে ইসলাম কবূল করেন। আমর ইব্‌ন উমাইয়া যামরী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে উযূ করতে এবং (উযূতে) মোজার উপর মসেহ করতে দেখেছেন। উসামা ইব্‌ন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং বিলাল (রাঃ) হারামে মদীনায় (আসওয়াক) প্রবেশ করেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পায়খানা-পেশাবের প্রয়োজনে বাইরে যান এবং কিছুক্ষন পর ফিরে আসেন। উসামা (রাঃ) বলেনঃ আমি বিলাল (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে কি করেছেন? বিলাল (রাঃ) বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রয়োজনে বাইরে গিয়েছিলেন এবং ফিরে এসে উযূ করেন। তাঁর মুখমণ্ডল ও হাত ধৌত করেন, মাথা এবং মোজার উপর মসেহ করেন। তারপর সালাত আদায় করেন। সা‘দ ইব্‌ন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি মোজার উপর মসেহ করেছেন। সা‘দ ইব্‌ন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, মোজার উপর মসেহ করাতে কোন অসুবিধা নেই। মুগীরা ইব্‌ন শু‘বা (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদা) পায়খানা-পেশাবের প্রয়োজনে বাইরে গিয়েছিলেন। তিনি যখন প্রত্যাবর্তন করেন তখন আমি পানির পাত্র নিয়ে উপস্থিত হই৷ আমি তাঁকে পানি ঢেলে দেই, তিনি উযূ করেন। (প্রথমে) হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করেন। পরে মুখমণ্ডল ধৌত করেন। তারপর কনুই পর্যন্ত হাত ধুতে চান। কিন্তু জামার হাতা চিকন হওয়াতে তা পারেননি। তাই জুব্বার (জামার) নিচের দিক দিয়ে হাত বের করেন এবং কনুই পর্যন্ত ধৌত করেন এবং মোজার উপর মসেহ করেন। এরপর আমাদের সঙ্গে নিয়ে সালাত আদায় করেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রয়োজন সমাধার জন্য বের হলেন। মুগীরা (রাঃ) পানির পাত্র নিয়ে তাঁর অনুগমন করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রয়োজন সমাধার পর উযূ করেন এবং মোজার উপর মসেহ করেন। উযূ করার সময় মুগীরা (রাঃ) তাঁকে পানি ঢেলে দেন।

【95】

সফরে মোজার উপর মসেহ করা

মুগীরা ইব্‌ন শু‘বা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি এক সফরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আমাকে বলেনঃ হে মুগীরা! তুমি পেছনে থাক এবং (লোকদের বললেন,) হে লোক সকল! তোমরা চলতে থাক। আমি (কাফেলার) পেছনে থাকলাম, আমার সঙ্গে পানির একটি পাত্র ছিল। লোকেরা চলে গেলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রয়োজন সমাধার জন্য গেলেন। তিনি যখন ফিরে আসেন তখন আমি তাঁকে (উযূর জন্য) পানি ঢেলে দিতে থাকি। তাঁর পরনে চিকন হাতওয়ালা একটি রুমী জুব্বা ছিল। তিনি তাঁর হাত বের করতে চাইলেন কিন্তু জামার হাতা চিকন হওয়ার কারণে পারলেন না ৷ ফলে জুব্বার নিচের দিক দিয়ে হাত বের করেন। তারপর মুখমণ্ডল ও হাত ধৌত করেন এবং মাথা ও মোজার উপর মসেহ করেন।

【96】

মুসাফিরের জন্য মোজার উপর মসেহের মেয়াদ নির্ধারণ

সাফওয়ান ইব্‌ন আস্‌সাল (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে, আমরা যখন সফরে থাকি তখন আমাদের মোজা তিন দিন তিন রাত না খোলার অনুমতি দিয়েছেন। যির(রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি সাফ্ওয়ান ইব্‌ন আসসাল (রাঃ)-কে মোজার উপর মসেহ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে আদেশ করতেন, আমরা যখন সফররত অবস্থায় থাকি তখন যেন মোজার উপর মসেহ করি এবং জানাবাতের অবস্থা ব্যতীত, পায়খানা-পেশাব অথবা নিদ্রার কারনে তিন দিন তা না খুলি।

【97】

মুকীমের জন্য মোজার উপর মসেহের মেয়াদ নির্ধারণ

আলী (রাঃ) তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসেহর ব্যাপারে মুসাফিরের জন্য তিন দিন তিন রাত এবং মুকীমের জন্য এক দিন এক রাত সময় নির্ধারণ করেছেন। শুরাইহ ইব্‌ন হানী (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আয়শা (রাঃ)-কে মোজার উপর মসেহ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ আলী (রাঃ)-এর নিকট যাও, তিনি এ ব্যাপারে আমার থেকে অধিক জ্ঞাত। তারপর আমি আলী (রাঃ)-এর নিকট গেলাম এবং তাঁকে মসেহর ব্যাপারে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের আদেশ করতেন যে, মুকীম এক দিন এক রাত এবং মুসাফির তিন দিন তিন রাত মসেহ করবে।

【98】

উযূ ভঙ্গ হওয়া ব্যতীত উযূ করার বর্ণনা

আবদুল মালিক ইব্‌ন মাসায়রা (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি নাযযাল ইব্‌ন সাবরাহকে বলতে শুনেছি যে, আমি আলী (রাঃ)-কে দেখলাম যে, তিনি যোহরের সালাত আদায় করলেন এবং জনসাধারণের প্রয়োজন পূরণার্থে বসলেন। যখন আসরের সময় উপস্থিত হল তখন তাঁর নিকট একটি পানির পাত্র আনা হল। তিনি তা হতে এককোষ পানি নিলেন এবং তা দ্বারা মুখমণ্ডল, হস্তদ্বয়, মাথা এবং উভয় পা মসেহ করলেন। পরে দাড়িয়ে উদ্বৃত্ত পানি পান করলেন এবং বললেনঃ অনেক লোক এরূপ পান করাকে খারাপ মনে করে। অথচ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ করতে দেখেছি। আর এটা হলো ঐ ব্যক্তির উযূ, যার উযূ ভঙ্গ হয়নি।

【99】

প্রত্যেক সালাতের জন্য উযূ করা

আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পানির একটা ছোট পাত্র আনা হলো এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করলেন। আমি (আমর) বললাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি প্রত্যেক সালাতের জন্য উযূ করতেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমর বললেনঃ আর আপনারা (সাহাবীগণ)? তিনি বললেন, আমরা উযূ ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত সালাত আদায় করতাম। তিনি (আমর) বলেনঃ আমরা একই উযূ দ্বারা একাধিক সালাত আদায় করতাম। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শৌচাগার হতে বের হলে তাঁর নিকট কিছু খাদ্য আনা হলো। উপস্থিত লোকেরা বললেনঃ আপনার জন্য উযূর পানি আনবো কি ? তিনি বললেন, আমাকে তো উযূ করার আদেশ করা হয়েছে যখন আমি সালাতের জন্য প্রস্তুত হই। বুরায়দা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক সালাতের জন্য উযূ করতেন। কিন্তু মক্কা বিজয়ের দিন তিনি একই উযূ দ্বারা কয়েক ওয়াক্তের সালাত আদায় করলেন। তখন উমর (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ (ইয়া রাসূলুল্লাহ!) আজ আপনি এমন কাজ করলেন যা এর পূর্বে করেননি। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে উমর! ইচ্ছা করেই আমি এরূপ করেছি।

【100】

পানি ছিটানো

সুফয়ান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন উযূ করতেন তখন এককোষ পানি নিতেন এবং তা এরূপ ছিটাতেন। শু’বা (বিশিষ্ট রাবী) তা স্বীয় পুরুষাঙ্গের উপর ছিটিয়ে দেখালেন। আমি এটা ইবরাহিমের নিকট উল্লেখ করলে তিনি আশ্চর্যান্বিত হলেন। শায়েক ইব্‌ন সুন্নী বলেনঃ হাকাম সুফয়ান সাকাফীর পুত্র। হাকাম ইব্‌ন সুফয়ান (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে দেখেছি, তিনি উযূ করলেন এবং তাঁর লজ্জাস্থানের উপর পানি ছিটালেন। আহমদ বলেছেন, পরে তাঁর লজ্জাস্থানের উপর পানি ছিটালেন।

【101】

উযূর উদ্বৃত্ত পানি দ্বারা উপকৃত হওয়া

আবূ হায়্যা (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আলী (রাঃ)–কে দেখলাম, তিনি তিন-তিনবার করে (উযূর অঙ্গগুলো ধৌত করে) উযূ করলেন, পরে দাঁড়ালেন এবং উযূর উদ্বৃত্ত পানি পান করলেন, আর বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেরূপ করেছিলেন আমি সেরূপ করেছি। আবূ জুহায়ফা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি বাতহা নামক স্থানে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন দেখলাম বিলাল (রাঃ) তাঁর উযূর অবশিষ্ট পানি বের করলেন, আর লোক সেদিকে দৌঁড়াচ্ছে। আমি-ও তার কিছু পেলাম। তারপর তাঁর সম্মুখে একটি লাঠি স্থাপন করা হলো। তিনি লোকদের ইমাম হয়ে সালাত আদায় করলেন। আর গাধা, কুকুর এবং স্ত্রীলোক তাঁর সম্মুখ দিয়ে চলাচল করছিল। সুফয়ান (রহঃ) তিনি ইবনুল মুনকাদির (রহঃ)–কে বলতে শুনেছেনঃ আমি জাবির (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, আমি একবার অসুস্থ হলাম। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আবূ বকর (রাঃ) আমাকে দেখতে আসলেন। তাঁরা দেখলেন, আমি জ্ঞানশুন্য হয়ে পড়েছি। এরূপ দেখে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করলেন এবং আমার উপর তাঁর উযূর পানি ছিটিয়ে দিলেন।

【102】

উযূর ফরয হওয়া

উসামা ইব্‌ন উমায়র (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা’আলা পবিত্রতা ব্যতীত কোন সালাত কবুল করেন না এবং অবৈধভাবে অর্জিত মালের সদকা গ্রহণ করেন না।

【103】

উযূতে সীমালঙ্ঘন

আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর ইব্‌ন আস (রাঃ) তিনি বলেনঃ একজন বেদুঈন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট এসে তাঁকে উযূ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলো। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে উযূর অঙ্গ তিন-তিনবার ধৌত করে দেখালেন। আর বললেন, উযূ এরূপেই করতে হয়। যে ব্যক্তি এর উপর বাড়ালো সে অন্যায় করল, সীমালঙ্ঘন ও যুলুম করল।

【104】

পূর্ণরূপে উযূ করার আদেশ

আবদুল্লাহ ইব্‌ন উবায়দুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন যে, আমরা আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)–এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম, তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র শপথ, অন্য লোকদের বাদ দিয়ে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বিশেষভাবে কোন বিষয়ে বলেনি, তিনটি বিষয় ব্যতীতঃ (১) তিনি আমাদেরকে পূর্ণরূপে উযূ করার নির্দেশ দিয়েছেন; (২) আমাদেরকে সাদকা খেতে নিষেধ করেছেন এবং (৩) নিষেধ করেছেন গাধাকে ঘোড়ার উপর পাল দিতে। আবদুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা পূর্ণরূপে উযূ করবে।

【105】

পূর্ণরূপে উযূ করার ফযীলত

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের এমন বস্তুর সন্ধান দিব না, যা দ্বারা আল্লাহ্‌ তা’আলা গুনাহসমূহ দুর করে দেবেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন ? তা হলো, কষ্ট অবস্থায়ও পূর্ণরূপে উযূ করা, মসজিদের দিকে অধিক পদচালনা করা, আর এক সালাতের পর অন্য সালাতের অপেক্ষায় থাকা। এটাই রিবাত, এটাই রিবাত, এটাই রিবাত। [১]

【106】

নির্দেশ মুতাবিক উযূ করার সওয়াব

আসিম ইব্‌ন সুফয়ান সাকাফী (রহঃ) তাঁরা ‘সুলাসিল’ যুদ্ধে যোগদান করেছিলেন কিন্তু যুদ্ধ করার সুযোগ পান নি। পরে তাঁরা শত্রুর মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত রইলেন এবং মুআবিয়া (রাঃ)–এর নিকট প্রত্যাবর্তন করলেন। তখন তাঁর নিকট আবূ আইয়ুব এবং উকবা ইব্‌ন আমির ছিলেন। তখন আসিম বললেন, হে আবূ আইয়ুব ! এ বৎসর আমরা যুদ্ধের সুযোগ পেলাম না। আর আমাদের সংবাদ দেয়া হয়েছে যে, যে ব্যক্তি চারটি মসজিদে সালাত আদায় করবে, তার পাপ মার্জনা করা হবে। তিনি বললেন, হে ভাতিজা! আমি কি তোমাকে এর চেয়ে সহজতর পন্থা বলে দেব না ? আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি নির্দেশ মুতাবিক উযূ করবে আর নির্দেশ মুতাবিক সালাত আদায় করবে, তার পূর্বেকার পাপ ক্ষমা করা হবে। সত্যি কি তাই হে উকবা ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তাই। হুমরান ইব্‌ন আবান (রহঃ) তিনি আবূ বুরদা (রহঃ)–কে মসজিদে এ মর্মে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি উসমান (রাঃ)–কে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র নির্দেশ মুতাবিক উযূ সম্পন্ন করবে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত তার মধ্যবর্তী সময়ের পাপসমূহের জন্য কাফফারা স্বরূপ গণ্য হবে। হুমরান (রহঃ) উসমান (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে উযূ করে এবং পরে সালাত আদায় করে, তার এ সালাত ও পরবর্তী সালাত আদায়ের মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মাফ করে দেয়া হবে। মুআবিয়া ইব্‌ন সালেহ (রহঃ) তিনি বলেন,আবু ইয়াহয়া সুলায়ম ইব্‌ন আমির, যামরাহ ইব্‌ন হাবীব এবং আবূ তালহা নুয়ায়ম ইব্‌ন যিয়াদ (রহঃ) আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, আমরা আবূ উমামা বাহিলী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি আমর ইব্‌ন আবাসা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! উযূ কিরূপ করতে হয়? তিনি বললেন, উযূ! তুমি যখন উযূ কর এবং তোমার হস্ত তালুদ্বয় ধৌত কর এবং পরিস্কার করে ধৌত কর তখন তোমার পাপসমূহ তোমার নখের ভেতর হতে এবং তোমার অঙ্গুলির অগ্রভাগ হতে বের হয়ে যায়।আর যখন তুমি কুলি কর এবং নাকের ভেতরকার অংশ ধৌত কর এবং তোমার মুখমন্ডল ধৌত কর এবং কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর এবং মাথা মসেহ কর এবং গোড়ালী পর্যন্ত পা ধৌত কর, তখন তুমি তোমার সাধারণ পাপসমূহ ধুয়ে ফেললে। আর যখন তুমি তোমার মুখমন্ডল আল্লাহ তা’আলার জন্য স্থাপন কর, তখন তুমি পাপ হতে ঐ দিনের মত মুক্ত হয়ে যাও, যেদিন তোমার জননী তোমাকে জন্ম দিয়েছিল। আবূ উমামা বলেনঃ আমি বললাম, হে আমর ইব্‌ন আবাসা! দেখ তুমি কি বলছ। একই মজলিসে কি এসব কিছু দান করা হয়? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হয়েছি আর আমার মৃত্যু নিকটবর্তী। আর আমার কোন অভাবও নেই,এমতাবস্থায় কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্পর্কে মিথ্যা বলবো? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আমার উভয় কান তা শ্রবণ করেছে আর আমার অন্তর তা স্মরণ রেখেছে।

【107】

উযূ শেষে যা বলতে হয়

উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযূ করে আর বলে, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বান্দা ও রাসূল” তার জন্য বেহেশতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা করে প্রবেশ করবে।

【108】

উযূর জ্যোতি

আবূ হাযিম (রহঃ) তিনি বলেনঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) সালাতের জন্য উযূ করছিলেন। আর আমি তাঁর পিছনে ছিলাম,তিনি তাঁর হস্তদ্বয় ধৌত করছিলেন তাঁর বগল পর্যন্ত, তখন আমি তাঁকে বললাম,হে আবূ হুরায়রা! এ কোন ধরনের ঊযূ?? তিনি আমাকে বললেনঃ হে ফর্‌রুখের বংশধর! তোমরা এখানে? যদি আমি পূর্বে জানতাম যে, তোমরা এখানে আছ তাহলে আমি এরূপ উযূ করতাম না।আমি আমার বন্ধু রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে,মুমিনের জ্যোতি ঐ পর্যন্ত পৌঁছবে, যে পর্যন্ত পানি পৌঁছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার কবরস্থানের দিকে গেলেন।(তথায় উপস্থিত হয়ে) তিনি বললেনঃ হে মুমিন সম্প্রদায়ের ঘরের অধিবাসী! তোমাদেরকে সালাম, আমরাও ইনশাল্লাহ তোমাদের সাথে মিলিত হবো।আমি আশা করি আমার ভ্রাতৃবৃন্দকে দেখতে পাব। উপস্থিত সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কি আপনার ভ্রাতা নই? তিনি বললেনঃ বরং তোমরা আমার আসহাব। আর আমার ভ্রাতৃবৃন্দ হল যারা পরবর্তীকালে আসবে,আর আমি হাউযে কাউসারে তাদের সাথে মিলিত হবো। তাঁরা বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার যে সকল উম্মত পরবর্তীকালে আগমন করবে,আপনি তাঁদের কিভাবে চিনবেন? তিনি বললেনঃ তোমরা বল তো, যদি কোন ব্যক্তির একদল কালো ঘোড়ার মধ্যে সাদা চেহারা ও সাদা পদবিশিষ্ট ঘোড়া থাকে,তবে কি সে ব্যক্তি তার ঘোড়া চিনে নিতে পারবে না ? তাঁরা বলেনঃ নিশ্চয়ই। তিনি বললেনঃ কিয়ামতের দিন উযূর দরূন তাদের হস্তপদ উজ্জ্বল হবে।আর আমি হাউযে কাউসারে তাদের আগে গিয়ে অপেক্ষা করব।

【109】

যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযূ করে দু’রাকাত সালাত আদায় করে, তার সওয়াব

উক্‌বা ইব্‌ন আমির জুহানী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি উত্তমরূপে উযূ করে তারপর দু’রাকাত সালাত নিষ্ঠার সাথে আদায় করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।

【110】

মযী কখন উযূ নষ্ট করে এবং কখন করে না

আবূ আবদূর রহমান (রাঃ) তিনি বলেনঃ আলী (রাঃ) বলেছেন,আমি এমন ছিলাম যে,প্রায় আমার মযী [১] নির্গত হতো, আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কন্যা আমার সহধর্মিণী হওয়ায় আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জাবোধ করতাম। অতএব আমি আমার পার্শ্বে উপবিষ্ট এক ব্যক্তিকে এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করতে বললাম। সে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ এতে উযূ করতে হবে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন,আমি মিকদাদকে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করুন যে, যদি কোন ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীর সাথে আমোদ করে এবং তদ্দরূন তার মযী নির্গত হয় অথচ সে সহবাস করেনি, তাহলে সে কি করবে? কেননা তাঁর কন্যা আমার সহধর্মিণী হওয়ায় আমি জিজ্ঞাসা করতে লজ্জাবোধ করি। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে ব্যক্তি তার লজ্জাস্থান ধৌত করবে এবং সালাতের ন্যায় উযূর ন্যায় উযূ করবে। আয়িশ ইব্‌ন আনাস (রাঃ) আলী (রাঃ) বলেছেনঃ আমার প্রায়ই মযী নির্গত হতো। রাসূললুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কন্যা আমার সহধর্মিণী হওয়ায় আম্মার ইব্‌ন ইয়াসিরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট জিজ্ঞাসা করতে অনুরোধ করলাম। তিনি উত্তরে বললেন, এর জন্য উযূ করলেই চলবে। রাফি ইব্‌ন খাদীজ (রাঃ) আলী (রাঃ) আম্মারকে আনুরোধ করলেন, তিনি যেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে মযীর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে তিনি বললেনঃ সে ব্যক্তি তার লজ্জাস্থান ধৌত করবে ও উযূ করবে। মিকদাদ ইব্‌ন আসওয়াদ (রাঃ) আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করার জন্য অনুরোধ করলেন যে, কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর নিকটবর্তী হলে যদি তদ্দরূন মযী নির্গত হয়,তাহলে তার কি করতে হবে? কারণ তাঁর কন্যা আমার সহধর্মিণী থাকায় আমি তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জাবোধ করি। তারপর আমি এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ যদি তোমাদের কারও এরূপ হয় তাহলে সে যেন স্বীয় লজ্জাস্থান ধৌত করে আর সালাতের উযূর ন্যায় উযূ করে। আলী (রাঃ) তিনি বলেনঃ ফাতিমা (রাঃ) আমার বিবাহাধীন থাকায় মযী সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করতে লজ্জাবোধ করতাম। অতএব আমি মিকদাদ ইব্‌ন আসওয়াদকে অনুরোধ করলাম। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এতে উযূ করতে হবে।

【111】

পায়খানা-পেশাবান্তে উযূ

আসিম (রাঃ) তিনি যির ইব্ন হুবায়শকে বর্ণনা করতে শুনেছেন, তিনি বলেনঃ আমি সাফওয়ান ইব্‌ন আস্সাল নামক এক ব্যক্তির নিকট আসলাম এবং তার দরজায় বসে রইলাম। তিনি বের হয়ে বললেন, তোমার খবর কি ? আমি বললাম, ইল্মের সন্ধানে এসেছি। তিনি বললেন, ইল্ম অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ফেরেশতাগণ ডানা বিছিয়ে দেন। তারপর তিনি বললেন, কোন বিষয় তুমি জিজ্ঞাসা করতে চাও? আমি বললাম, মোজা পরিধান সম্বন্ধে। তিনি বললেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সফরে আসতাম, তিনি আমাদের আদেশ করতেন, আমরা যেন একমাত্র জানাবাত ব্যতীত, পায়খানা-পেশাব এবং নিদ্রার কারণে তিন দিন পর্যন্ত তা না খুলি।

【112】

পায়খানার পর উযূ

যির্ (রহঃ) তিনি বলেনঃ সাফওয়ান ইব্ন আস্সাল (রাঃ) বলেছেনঃ আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সফরে বের হতাম তখন তিনি আমাদের আদেশ করতেন আমরা যেন একমাত্র জানাবাত ব্যতীত পায়খানা-পেশাব এবং নিদ্রার কারণে তিন দিন পর্যন্ত তা না খুলি।

【113】

বাতাস নির্গমনে উযূ

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অভিযোগ করল, সে সালাতে কিছু অনুভব করে। [১] তিনি বললেনঃ সে সালাত পরিত্যাগ করবে না যতক্ষন না গন্ধ বা শব্দ শুনতে পায়। [২]

【114】

নিদ্রার কারণে উযূ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ যখন নিদ্রা হতে জাগ্রত হয় তখন সে যেন তার হাত পানির পাত্রে প্রবিষ্ট না করায় যতক্ষণ না তার উপর তিনবার পানি ঢালে, কেননা সে জানে না তার হাত রাত্রে কোথায় ছিল।

【115】

পরিচ্ছেদ : তন্দ্রার বর্ণনা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কোন ব্যক্তির সালাতে তন্দ্রা আসে, তবে সে যেন হালকাভাবে সালাত শেষ করে চলে যায়। কেননা অজ্ঞাতসারে সে হয়ত নিজের উপরেই বদদোয়া করে বসবে।

【116】

পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করার কারনে উযূ

আবদুল্লাহ ইব্ন আবূ বকর ইব্ন আমর ইব্ন হায্ম তিনি উরাওয়া ইব্ন যুবায়রকে বলতে শুনেছেন যে, আমি মারওয়ান ইব্ন হাকাম-এর নিকট এসে কোন কোন কারণে উযূ করতে হয় তা জিজ্ঞাসা করলাম। মারওয়ান বললেনঃ পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে উযূ করতে হবে। উরওয়া বললেন, আমি তা অবগত নই। মারওয়ান বললেনঃ বুসরা বিন্তে সাফওয়ান (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ স্বীয় পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করে তখন তার উযূ করা উচিত। যুহ্রী (রহঃ) তিনি বলেনঃ আবদুল্লাহ ইব্‌ন আবূ বকর ইব্ন আমর ইব্ন হায্ম (রহঃ) আমাকে বলেছেন, তিনি উরওয়া ইব্ন যুবায়রকে বলতে শুনেছেন যে, মারওয়ান তার মদীনায় শাসনকালে উল্লেখ করেছেন, কোন ব্যক্তি স্বীয় হস্ত দ্বারা পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে সে উযূ করবে। আমি অস্বীকার করলাম এবং বললাম, যে ব্যক্তি তা স্পর্শ করে, তার উযূ করতে হবে না। তখন মারওয়ান বললেন, বুসরা বিন্তে সাফওয়ান আমাকে বলেছেন যে, তিনি যে যে কারণে উযূ করতে হয় রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে তা উল্লেখ করতে শুনেছেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, আর পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে উযূ করতে হবে। উরওয়া বলেনঃ অতএব আমি এ ব্যাপারে মারওয়ানের সাথে বিতর্কে লিপ্ত রইলাম। অবশেষে তিনি তার দেহরক্ষীদের একজনকে ডেকে বুস্রার নিকট প্রেরন করলেন। সে বুস্রাকে মারওয়ানের নিকট তিনি যে হাদিস বর্ণনা করেছেন সে সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করল। বুসরা তার নিকট ঐরূপই বলে পাঠালেন যেরূপ মারওয়ান আমার নিকট বুস্রা থেকে বর্ণনা করেছেন।

【117】

পরিচ্ছেদ : পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করায় উযূ না করা

তালক ইব্ন আলী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা আমাদের গোত্রের প্রতিনিধি হিসাবে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এলাম, তারপর তার নিকট বায়আত গ্রহণ করলাম এবং তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। সালাত শেষ হলে এক ব্যক্তি আসলো, মনে হলো যেন সে একজন গ্রাম্য লোক। সে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! কোন ব্যক্তি সালাতে পুরুষাঙ্গ স্পর্শ করলে তার সম্বন্ধে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেনঃ এটা তোমার শরীরের এক টুকরা গোশত বৈ আর কি? অথবা তিনি বললেনঃ তা তোমাদের শরীরের একটি অংশ। [১]

【118】

কামভাব ব্যতীত কোন ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীকে স্পর্শ করলে উযূ না করা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করতেন আর আমি জানাযার ন্যায় তাঁর সামনে শায়িত থাকতাম। এমনকি তিনি যখন সিজদা দিতে ইচ্ছা করতেন তখন আমাকে তাঁর পা দ্বারা স্পর্শ করতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি দেখেছি, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে আড়াআড়ি শুয়ে আছি আর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করতেন। যখন তিনি সিজদা করতে মনস্থ করতেন আমার পা স্পর্শ করতেন। আমি তা আমার দিকে টেনে নিতাম। তারপর তিনি সিজদা করতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে শায়িত থাকতাম আর আমার পদদ্বয় তার কিবলার দিকে থাকত। যখন তিনি সিজদা করতেন আমাকে স্পর্শ করতেন আর আমি আমার পদদ্বয় টেনে নিতাম আর যখন তিনি দাঁড়াতেন তখন আমি তা মেলে দিতাম। আর ঘরে তখন কোন বাতি থাকত না। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বিছানায় পাচ্ছিলাম না। তখন আমি আমার হাত দ্বারা তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। তখন আমার হাত তার পদযুগলের উপর পতিত হলো। তখন তাঁর পা খাড়া ছিল আর তিনি ছিলেন সিজদারত। তিনি বলছিলেনঃ “(হে আল্লাহ!) আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি তোমার ক্রোধ হতে তোমার সন্তুষ্টির, তোমার শাস্তি থেকে তোমার ক্ষমার আর আমি তোমার আশ্রয় গ্রহণ করছি তোমা হতে। তোমার প্রশংসা করে আমি শেষ করতে পারব না, তুমি নিজে ঐরূপ, যেরূপ তুমি নিজের প্রশংসা করেছ। ”

【119】

চুম্বনের পরে উযূ না করা

আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জনৈক স্ত্রীকে চুম্বন করতেন, পরে সালাত আদায় করতেন কিন্তু তিনি উযূ করতেন না। আবূ আবদুর রহমান বলেন: এ অধ্যায়ে এর চেয়ে উত্তম হাদীস আর নেই যদিও হাদীসটি মুরসাল। এ হাদীসটি আ'মাশ-হাবীব ইব্‌ন আবূ সাবিত থেকে এবং তিবি উরওয়া থেকে এবং তিনি আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। ইয়াহইয়া কাত্তান বলেন: হাবীবের এ হাদীসটি, যা তিনি উরওয়া থেকে এবং উরওয়া আয়েশা (রাঃ) এবং হাবীবের থেকে বর্ণনা করেছেন। অন্য একটি হাদীস,যা তিনি উরওয়া থেকে এবং উরওয়া আয়েশা(রাঃ) থেকে এই মর্মে বর্ণনা করেছেন যে, "মুস্তাহাযা মহিলা সালাত আদায় করবে যদিও রক্তের ফোঁটা বিছানায় টপকায়"-এর কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। [১]

【120】

আগুনে জ্বাল দেয়া বস্তু আহার করাতে উযূ করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, আগুনে জ্বাল দেয়া বস্তু আহার করলে উযূ করবে। [২] আবূ হুরায়রা(রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা আগুনে জ্বাল দেয়া বস্তু আহার করলে উযূ করবে। আবদুল্লাহ ইব্‌ন ইবরাহীম ইব্‌ন ক্বারিয (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে মসজিদের ছাদে উযূ করতে দেখেছি। তিনি বললেন,আমি কয়েক টুকরা পণীর খেয়েছি,তাই আমি উযূ করলাম। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আগুনে জ্বাল দেয়া বস্তু আহার করাতে উযূ করার নির্দেশ দিতে শুনেছি। আবদুর রহমান ইব্‌ন আমর আল-আওযাঈ(রহঃ) তিনি মুত্তালিব ইব্‌ন আবদুল্লাহ ইব্‌ন হানতাব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ আগুন স্পর্শ করার কারণে আমাকে কি ঐ খাদ্যের জন্য উযূ করতে হবে যাকে আমি আল্লাহর কিতাবে (কুরআনে) হালাল পেয়েছি? এতদশ্রবণে আবূ হুরায়রা (রাঃ) কতকগুলো পাথর টুকরা একত্র করলেন এবং বললেনঃ আমি এই কংকর পরিমাণ সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা উযূ করবে ঐ সকল বস্তু হতে যা আগুন স্পর্শ করেছে। আবূ হুরায়রা(রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা উযূ করবে ঐ সকল বস্তু আহার করলে যা আগুন স্পর্শ করেছে। আবূ আইয়্যূব (রাঃ) নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা উযূ করবে ঐ সকল বস্তু আহার করলে যা আগুন পরিবর্তন করেছে। আবূ তালহা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা উযূ করবে ঐ সকল বস্তু আহার করলে যা আগুন পরিবর্তন করেছে। আবূ তালহা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা উযূ কর ঐ সকল বস্তু আহার করার জন্য যা আগুন দ্বারা রান্না করা হয়েছে। যায়দ ইব্‌ন সাবিত (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে,তোমরা উযূ করবে ঐ সকল বস্তু আহার করলে যা আগুন স্পর্শ করেছে। আবূ সুফয়ান ইব্‌ন সাঈদ ইব্‌ন আখনাস ইব্‌ন শারীক (রহঃ) তিনি একবার তাঁর খালা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী উম্মে হাবীবা (রাঃ)-এর নিকট গেলেন। তিনি (উম্মে হাবীবা) তাঁকে ছাতু খাওয়ালেন। পরে তাকে বললেনঃ হে ভাগ্নে! উযূ করে নাও। কেননা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা উযূ কর ঐ সকল বস্তু আহার করলে যা আগুন স্পর্শ করেছে। আবূ সুফয়ান ইব্‌ন সাঈদ ইব্‌ন আখনাস (রাঃ) তিনি বলেন যে,রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী উম্মে হাবীবা (রাঃ) তাকে ছাতু খাওয়ার পর বলেছিলেন, হে ভাগ্নে,তুমি উযূ করে নাও। কারণ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : তোমরা উযূ কর ঐ সকল বস্তু আহার করলে যা আগুন স্পর্শ করেছে।

【121】

আগুনে সিদ্ধ বস্তু খাওয়ার পর উযূ না করা

উম্মে সালামা (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (বকরির) কাঁধের গোশত আহার করলেন, তারপর বিলাল (রাঃ) এলে তিনি সালাত আদায় করতে গেলেন। অথচ তিনি পানি স্পর্শ করলেন না। সুলায়মান ইব্‌ন ইয়াসার (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি উম্মে সালামার নিকট গেলাম। তিনি আমার নিকট বর্ণনা করলেন যে,রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বপ্নদোষ ব্যতীত (সহবাস জনিত কারণে) জানাবাত অবস্থায় ভোর করতেন এবং সিয়ামও পালন করতেন। বর্ণনাকারী রাবীদের মধ্যে খালিদ বলেন যে, এ হাদীসের সাথে এ-ও বর্ণনা করেছেন যে, একদা উম্মে সালামা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ভূনা গোশত রাখলেন। তিনি তা হতে কিছু খেলেন। পরে সালাতের জন্য প্রস্তুত হলেন কিন্তু উযূ করলেন না। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলাম। তিনি রুটি ও গোশত খেলেন। পরে সালাতের জন্য গেলেন কিন্তু উযূ করলেন না। মুহাম্মদ ইব্‌ন মুনকাদির (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, যে সকল বস্তুকে আগুনে স্পর্শ করেছে তা আহার করার পরে উযূ করা ও না করার মধ্যে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শেষ কাজটি ছিল উযূ না করা।

【122】

ছাতু খাওয়ার পর কুলি করা

বুশারয় ইব্‌ন ইয়াসার (রহঃ) সুয়ায়দ ইব্‌ন নু’মান (রাঃ) তাঁকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি খায়বার যুদ্ধের বৎসর একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বের হলেন। যখন তাঁরা সাহবা নামক স্থানে পৌঁছলেন-আর তা খায়বারের শেষ সীমায় অবস্থিত, তখন তিনি আসরের সালাত আদায় করলেন। পরে তিনি কিছু খাদ্যদ্রব্য চাইলে তাঁর নিকট কেবল ছাতু পরিবেশন করা হলো। তাঁর আদেশক্রমে তা পানির সাথে মিশানো হলো,তারপর তিনি তা খেলেন আর আমরাও তা খেলাম। তারপর তিনি মাগরিবের সালাত আদায়ের জন্য প্রস্তুত হলেন এবং কুলি করলেন আর আমরাও কুলি করলাম। পরে সালাত আদায় করলেন অথচ আর উযূ করলেন না।

【123】

দুধ পান করার পর কুলি করা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুধ পান করার পর পানি চাইলেন এবং তা দ্বারা কুলি করলেন এবং বললেনঃ ওতে চর্বি আছে।

【124】

যাতে গোসল ফরয হয় আর যাতে ফরয হয় না এবং ইসলাম গ্রহণকালে কাফিরের গোসল করা

কায়স ইব্‌ন আসিম (রাঃ) তিনি মুসলমান হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে কুলপাতা মিশ্রিত পানি দ্বারা গোসল করতে আদেশ করলেন।

【125】

ইসলাম গ্রহণের জন্য কাফিরের আগে-ভাগে গোসল করে নেয়া

সাঈদ ইব্‌ন আবূ সাঈদ (রহঃ) তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, সুমামা ইব্‌ন উসাল হানাফী মসজিদে নববীর নিকটবর্তী একটি বাগানে গেলেন সেখানে গোসল করার পর মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলেন এবং বললেনঃ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা এবং রাসূল।” হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর শপথ, পৃথিবীতে আমার কাছে কোন চেহারাই আপনার চেহারা থেকে অধিক অপ্রিয় ছিল না, এখন আপনার চেহারা আমার নিকট সকল চেহারা থেকে প্রিয়। আপনার সৈনিকরা আমাকে গ্রেফতার করেছে অথচ আমি উমরার ইচ্ছা করেছিলাম। এখন এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কি? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে সুসংবাদ দান করলেন এবং তাঁকে উমরাহ্ করতে অনুমতি দিলেন।

【126】

মুশরিককে দাফন করার পর গোসল

আলী (রাঃ) একবার তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এলেন এবং বললেনঃ আবূ তালিব মরে গিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ যাও, তাকে দাফন কর, আলী (রাঃ)বললেনঃ তিনি তো মুশরিক অবস্থায় মারা গিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবার বললেনঃ যাও তাকে দাফন কর। যখন আমি তাকে দাফন করে তাঁর নিকট ফিরে আসলাম, তখন তিনি আমাকে বললেনঃ গোসল করে নাও।

【127】

দুই লজ্জাস্থান পরস্পর মিলিত হলে গোসল ফরয হওয়া

আবূ হুরায়রা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যখন স্ত্রীর চার শাখার মাঝে বসে তার সাথে সহবাসের চেষ্টা করে, তখন গোসল ওয়াজিব হয়ে যায়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যখন কেউ তার স্ত্রীর চার শাখার মাঝে বসে তার সাথে সঙ্গমের চেষ্টা চালায় [১] তখন গোসল ওয়াজিব হয়।

【128】

বীর্যপাতের দরুন গোসল

আলী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি এমন ছিলাম যে, আমার অধিক মযী নির্গত হতো, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেনঃ যখন তুমি মযী দেখবে, তখন তোমার পুরুষাঙ্গ ধৌত করবে এবং সালাতের উযূর ন্যায় উযূ করবে। আর যখন বীর্য নির্গত হয়, তখন গোসল করবে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন আমার অত্যধিক মযী নির্গত হতো, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম [১] , তখন তিনি আমাকে বললেনঃ যখন তুমি মযী দেখতে পাও, তখন তোমার পুরুষাঙ্গ ধৌত করো ও উযূ করো, আর যখন বীর্যের ফোঁটা দেখতে পাবে, তখন গোসল করবে।

【129】

পুরুষের ন্যায় নারী স্বপ্ন দেখলে তার গোসল

আনাস (রাঃ) পুরুষের ন্যায় মহিলার স্বপ্নে দেখা সম্পর্কে উম্মে সুলায়ম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ বীর্য নির্গত হলে গোসল করবে। উরওয়া (রহঃ) আয়েশা (রাঃ) তাঁকে সংবাদ দিলেন যে, উম্মু সুলায়ম রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন আয়েশা (রাঃ) উপবিষ্ট ছিলেন। উম্মু সুলায়ম বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আল্লাহ্ সত্যের ব্যাপারে লজ্জা করেন না, আমাকে বলেন কোন নারী যদি স্বপ্নে এমন কিছু দেখে যা পুরুষ দেখে থাকে, এতে কি তারও গোসল করতে হবে? রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ হ্যাঁ। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি তাঁকে বললাম, ধিক তোমায়! নারীও কি তা দেখে? তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার দিকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমার হাত ধুলো-মলিন হোক, তা না হলে সন্তান মাতার মত হয় কি করে? [২] উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আল্লাহ্ তা’আলা সত্য প্রকাশে লজ্জা করেন না। নারীদের যখন স্বপ্নদোষ হয় তখন তার উপর কি গোসল ওয়াজিব হয়? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, যখন সে বীর্য দেখবে। এতে উম্মু সালামা হেসে দিলেন, তিনি বললেনঃ নারীরও কি স্বপ্নদোষ হয়? তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা না হলে সন্তান মায়ের সদৃশ হয় কিরূপে? খাওলা বিনত হাকীম (রাঃ) তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এমন নারীর কথা জিজ্ঞাসা করলাম যার স্বপ্নদোষ হয়। তিনি বললেন: সে যখন বীর্য দেখবে, তখন গোসল করবে।

【130】

যার স্বপ্নদোষ হয় অথচ বীর্য দেখে না

আবূ আইয়্যূব (রাঃ) তিনি বলেনঃ পানির ব্যবহার পানির কারণেই অপরিহার্য হয় (অর্থাৎ বীর্যপাত হলেই গোসল করতে হয়) [১] আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পুরুষের বীর্য গাঢ় সাদা বর্ণের এবং নারীর বীর্য পাতলা হলদে বর্ণের। এতদুভয়ের যেটিই পূর্বে নির্গত হয় সন্তান তার সদৃশ হয়ে থাকে।

【131】

হায়যের পর গোসল

ফাতিমা বিনতে কায়স (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে উল্লেখ করলেন যে, তার অতিরিক্ত রক্তস্রাব হয়। তাঁর ধারণা যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বলেছেন যে, তা একটি শিরার রক্ত [১] মাত্র। অতএব যখন হায়য আরম্ভ হয় তখন সালাত ছেড়ে দেবে-আর যখন হায়যের মেয়াদ অতিবাহিত হয়, তখন রক্ত ধৌত করবে তারপর সালাত আদায় করবে। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যখন হায়য আরম্ভ হয় তখন সালাত ছেড়ে দেবে আর যখন তা বন্ধ হয়ে যায় (অর্থাৎ হায়যের মেয়াদ অতিবাহিত হয়) তখন গোসল করবে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ উম্মে হাবীবা বিনত জাহশ সাত বছর ইস্তেহাযায় ভুগছিলেন। তিনি এব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অবহিত করলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা হায়য নয় বরং এটা একটি শিরার রক্ত মাত্র। অতএব, তুমি গোসল কর এবং সালাত আদায় কর। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন আব্দুর রহমান ইব্‌ন আউফ (রাঃ)-এর স্ত্রী উম্মে হাবীবা বিন্ত জাহ্শ (রাঃ) যিনি ছিলেন উম্মুল মুমিনীন যয়নব বিন্ত জাহ্শ (রাঃ)-এর বোন—ইস্তেহাযায় আক্রান্ত ছিলেন, আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ বিষয়ে ফতওয়া জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ এটা হায়য নয়। এটা একটি শিরার রক্ত মাত্র। অতএব যখন হায়য বন্ধ হয়ে যায়, তখন গোসল করবে এবং সালাত আদায় করবে। আবার যখন হায়য আরম্ভ হবে, তখন সালাত ছেড়ে দেবে। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ এরপর তিনি প্রত্যেক সালাতের জন্য গোসল করতেন এবং সালাত আদায় করতেন। কোন কোন সময় তিনি তাঁর বোন যয়নবের কক্ষে যখন যয়নব রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট থাকতেন, একটি বড় গামলায় গোসল করতেন। এমনকি রক্তের লাল রং পানির উপর উঠে আসত। তারপর তিনি বের হতেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাতে শরীক হতেন। এটা তাকে সালাতে বাধা প্রদান করত না। আয়েশা (রাঃ) আবদুর রহমান ইব্‌ন আউফ (রাঃ)-এর স্ত্রী, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শ্যালিকা উম্মে হাবীবা (রাঃ) সাত বছর যাবত ইস্তেহাযায় ভুগছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ফতওয়া জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা হায়য নয়, বরং এটা একটি শিরার রক্ত। অতএব তুমি গোসল কর এবং সালাত আদায় কর। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ উম্মে হাবীবা বিনত জাহ্শ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ফতওয়া জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি ইস্তেহাযায় আক্রান্ত। তিনি বললেনঃ এটা একটি শিরার রক্ত মাত্র। অতএব তুমি গোসল কর এবং সালাত আদায় কর। এরপর উম্মে হাবীবা প্রত্যেক সালাতের জন্য গোসল করতেন। আয়েশা (রাঃ) উম্মে হাবীবা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে (ইস্তেহাযার) রক্ত প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি তাঁর টব রক্তে পূর্ণ দেখেছি। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ তোমার হায়য যতদিন তোমাকে তোমার সালাত হতে বিরত রাখত, ততদিন বিরত থাক তারপর গোসল কর। কুতায়বা (রহঃ) থেকে অন্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তাতে তিনি জাফরের [১] নাম উল্লেখ করেননি। উম্মে সালামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময়ে জনৈকা মহিলার সর্বদা রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, উম্মে সালামা তাঁর এ ব্যপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্ন করলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ (রক্তস্রাব বন্ধ না হওয়ার) যে রোগে সে আক্রান্ত, সে রোগ হওয়ার পূর্বে তার প্রত্যেক মাসে কতদিন কত রাত হায়য আসত সে তার প্রতি লক্ষ্য রাখবে। মাসের সেই দিন ও রাত্রিগুলোতে সালাত আদায় করবে না। তারপর সে দিনগুলো অতিবাহিত হলে সে গোসল করবে ও লজ্জাস্থান কাপড় দিয়ে বেঁধে নেবে এবং সালাত আদায় করবে।

【132】

হায়যের মুদ্দত সম্পর্কিত বর্ণনা

আয়েশা (রাঃ) উম্মে হাবীবা বিনত জাহ্‌শ যিনি আবদুর রহমান ইব্‌ন আউফের সহধর্মিণী ছিলেন- ইস্তেহাযায় আক্রান্ত হলেন যা অবিরাম চলতে লাগল। তাঁর এ অবস্থা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উল্লেখ করা হলে তিনি বললেনঃ তা হায়য নয়, বরং তা জরায়ুর স্পন্দন মাত্র। অতএব সে যেন তার হায়যের মুদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রাখে এবং সে দিনগুলোতে সালাত আদায় হতে বিরত থাকে। হায়যের মুদ্দত অতিবাহিত হলে সে যেন প্রত্যেক সালাতের জন্য গোসল করে। আয়েশা (রাঃ) উম্মে হাবীবা বিনত জাহ্‌শ (রাঃ) সাত বছর ইস্তেহাযায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এ ব্যপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ এটা হায়য নয়, বরং এটা একটি শিরা মাত্র (যা হতে রক্ত নির্গত হয়)। অতএব তিনি তাকে তার হায়যের মুদ্দত পরিমাণ সালাত ত্যাগ করতে আদেশ দিলেন। তারপর গোসল করতে ও সালাত আদায় করতে বললেন। এরপর তিনি প্রত্যেক সালাতের জন্য গোসল করতেন। উরওয়া (রহঃ) ফাতিমা বিনত আবূ হুবায়শ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে তাঁর রক্তক্ষরণ জনিত অসুবিধার কথা জানালেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ এটা একটি শিরা মাত্র (যা হতে রক্ত নির্গত হয়)। অতএব লক্ষ্য রাখবে যখন তোমার হায়য উপস্থিত হয়, তখন সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকবে। আর যখন তোমার হায়য অতিবাহিত হয় এবং তুমি পবিত্র হও, তখন তুমি সালাত আদায় করবে এক হায়য হতে অন্য হায়য-এর মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত। এ হাদীস হতে বুঝা যায় (আরবি) ‘আকরা’ এখানে হায়য অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। আবূ আব্দুর রহমান বলেনঃ হিশাম ইব্‌ন উরওয়া (রহঃ) এ হাদীসটি উরওয়া থেকে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু মুনযির (রাবী) তাতে এ (হায়য) সম্পর্কে যা উল্লেখ করেছেন তা তিনি উল্লেখ করেন নি। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ ফাতিমা বিন্‌ত আবী হুবায়শ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেনঃ আমি একজন ইস্তেহাযায় আক্রান্ত মহিলা; আমি পাক হই না। এমতাবস্থায় আমি কি সালাত ত্যাগ করব? তিনি বললেনঃ না, এটা হায়য নয়। এটা একটি শিরার রক্ত মাত্র। যখন তোমার হায়য আরম্ভ হবে তখন সালাত ছেড়ে দেবে। যখন তা আতিবাহিত হয় তখন রক্ত ধুয়ে সালাত আদায় করবে।

【133】

ইস্তেহাযায় আক্রান্ত নারীর গোসল

আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময় একজন ইস্তেহাযাগ্রস্ত নারীকে বলা হয়েছিল যে, এটা একটি শিরামাত্র, যার রক্ত বন্ধ হয় না। তাঁকে আদেশ করা হয়েছিল, সে যেন যোহ্‌র সালাতকে পিছিয়ে শেষ ওয়াক্তে এবং আসরের সালাতকে প্রথম ওয়াক্তে আদায় করে এবং উভয় সালাতের জন্য একবারই গোসল করে এবং মাগরিবকে শেষ ওয়াক্তে এবং ইশাকে প্রথম ওয়াক্তে আদায় করে এবং এ দুই সালাতের জন্য একবারই গোসল করে। আর ফজরের সালাতের জন্য একবার গোসল করে।

【134】

নিফাসের গোসল

জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি আসমা বিনতে উমায়স (রাঃ) এর হাদীসে বর্ণনা করেন যে, তিনি যখন যুল-হুলায়ফা নামক স্থানে নিফাসগ্রস্ত হলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর (রাঃ)-কে বললেনঃ তাকে (আসমা বিনতে উমায়স) গোসল করে ইহরাম বাঁধতে বল।

【135】

হায়য ও ইস্তেহাযার রক্তের পার্থক্য

ফাতিমা বিনতে আবূ হুবায়শ (রাঃ) তাঁর ইস্তেহাযা হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ যখন হায়যের রক্ত হয়, যা কাল রক্ত, চেনা যায়, তখন তুমি সালাত থেকে বিরত থাকবে, আর যখন অন্য রক্ত হয় তখন উযূ করে নেবে। কেননা তা একটি শিরামাত্র (যা হতে রক্ত নির্গত হয়)। আয়েশা (রাঃ) ফাতিমা বিনত আবূ হুবায়শ (রাঃ) এর ইস্তেহাযা হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ হায়যের রক্ত কাল বর্ণের হয়ে থাকে যা সহজে চেনা যায়। যখন এ রক্ত দেখা দেবে তখন সালাত থেকে বিরত থাকবে, আর যখন অন্য রক্ত দেখা দেবে তখন উযূ করবে এবং সালাত আদায় করবে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ ফাতিমা বিনত আবূ হুবায়শ (রাঃ) এর ইস্তেহাযা হলে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার ইস্তেহাযা হয়, অতএব আমি পাক হই না। এমতাবস্থায় আমি কি সালাত ত্যাগ করব? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা হায়য নয়, এটা একটা শিরামাত্র। অতএব যখন হায়য দেখা দেয় তখন সালাত আদায় করবে না। আর যখন হায়য বন্ধ হবে তখন রক্তের চিহ্ন ধৌত করবে এবং উযূ করে নেবে। কারণ এটা হায়য নয়, বরং (একটা শিরা মাত্র যা হতে রক্ত নির্গত হয়)। তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, হায়য বন্ধ হওয়ার পর কি গোসল করতে হবে? তিনি বললেনঃ এতে কারও সন্দেহ থাকতে পারে না। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ ফাতিমা বিনত আবূ হুবায়শ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমি পাক হই না, আমি কি সালাত ত্যাগ করব? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা একটি শিরামাত্র (যা হতে রক্ত নির্গত হয়), এটা হায়য নয়। যখন হায়য দেখা দেবে, তখন সালাত ত্যাগ করবে আর যখন হায়যের মুদ্দত অতিবাহিত হবে, তখন গোসল করে রক্ত দূর করবে এবং সালাত আদায় করবে। আয়েশা (রাঃ) আবূ হুবায়শের কন্যা বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি পাক হই না, অতএব আমি কি সালাত ত্যাগ করবো? তিনি বললেনঃ না, এটা একটি শিরামাত্র (যা হতে রক্ত নির্গত হয়)। খালিদ বললেনঃ আমি তার নিকট যা পাঠ করেছি তাহলো, তা হায়য নয়, অতএব যখন হায়য আসে তখন সালাত ছেড়ে দেবে আর যখন শেষ হয়ে যায় তখন তোমরা গোসল করে সালাত আদায় করবে।

【136】

বদ্ধ পানিতে জুনুব [১] ব্যক্তির গোসল না করা

বুকায়র (রহঃ) আবূ সায়িব তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন জানাবাত অবস্থায় বদ্ধ পানিতে গোসল না করে।

【137】

বদ্ধ পানিতে পেশাব এবং তাতে গোসল না করা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে পেশাব না করে, যাতে সে পরে গোসল করবে।

【138】

রাতের প্রথমভাগে গোসল করা

গুযায়ফ ইব্‌ন হারিস (রহঃ) তিনি আয়েশা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের কোন অংশে গোসল করতেন? তিনি বললেনঃ কোন কোন সময় তিনি রাতের প্রথমভাগে গোসল করতেন আবার কোন কোন সময় রাতের শেষ ভাগে গোসল করতেন। আমি বললাম, সকল প্রশংসা সেই আল্লাহ্‌র, যিনি এ ব্যাপারে অবকাশ রেখেছেন।

【139】

প্রথমাংশে ও শেষাংশে গোসল করা

গুযায়ফ ইব্‌ন হারিস (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আয়েশা (রাঃ) –এর নিকট গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের প্রথমভাগে গোসল করতেন না শেষভাগে? তিনি বললেনঃ সব রকমই করেছেন। কোন সময় রাতের প্রথমভাগে গোসল করেছেন আবার কোন সময় রাতের শেষভাগে গোসল করেছেন। আমি বললাম, সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌ তা’আলার, যিনি এ ব্যাপারে অবকাশ রেখেছেন।

【140】

গোসলের সময় পর্দা করা

মুহিল ইব্‌ন খলীফা (রহঃ) তিনি বলেনঃ আবূস সামহ্‌ (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর খেদমত করতাম। তিনি যখন গোসল করার ইচ্ছা করতেন, তখন বলতেনঃ তোমার পিঠটা আমার দিকে ঘুরিয়ে দাও। তখন আমি আমার পিঠ তাঁর দিকে ঘুরিয়ে দিতাম। এভাবে তাঁকে পর্দা করতাম। উম্মে হানী (রাঃ) তিনি মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট গিয়ে দেখলেন, তিনি গোসল করছেন আর ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে একখানা কাপড় দ্বারা পর্দা করে আছেন। তিনি তাঁকে সালাম করলেন, তিনি বললেন ইনি কে? আমি বললাম, আমি ‘উম্মে হানী’। তিনি গোসল শেষ করলেন এবং পরে একখানা কাপড় জড়িয়ে আট রাকআত সালাত আদায় করলেন।

【141】

পুরুষের গোসলের জন্য পানির পরিমাণ

মুসা জুহানী (রহঃ) তিনি বলেনঃ মুজাহিদ (রহঃ)-এর নিকট একটি পেয়ালা আনা হলো, আমার অনুমান তাতে আট রত্‌ল [১] পরিমাণ পানি হবে। পরে তিনি বললেনঃ আমাকে আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ পরিমাণ পানি দ্বারা গোসল করতেন। আবু বকর ইব্‌ন হাফ্‌স (রহঃ) আমি আবূ সালামাকে বলতে শুনেছি, আমি এবং আয়েশা (রাঃ)–এর দুধভাই তাঁর নিকট গেলাম। তাঁর ভাই রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর গোসল সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তিনি এমন একটি পাত্র আনলেন যাতে এক সা’ পরিমাণ পানি ছিল। তারপর তিনি যথাযথ পর্দা করে গোসল করলেন এবং তাঁর মাথায় তিনবার পানি ঢাললেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন এক পানির পাত্রে গোসল করতেন যার নাম ফারাক (যাতে ষোল রত্‌ল পানি ধরত) আর আমি এবং তিনি একই পাত্রে গোসল করতাম। আবদুল্লাহ ইব্‌ন জাবর (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মাক্‌কুক [২] দ্বারা উযূ করতেন এবং গোসল করতেন পাঁচ মাক্‌কুক দ্বারা। [৩] আবূ জাফর (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমরা জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহর সম্মুখে গোসলের ব্যাপারে সন্দেহে পতিত হলাম। তখন জাবির (রাঃ) বললেনঃ জানাবাতের গোসলে এক সা [১] পানিই যথেষ্ট। আমরা বললাম এক সা’ অথবা দুই সা’ কোনরূপই যথেষ্ট নয়। জাবির বললেনঃ তোমাদের থেকে উত্তম ও অধিক কেশযুক্ত ব্যক্তির (রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর) জন্য তা যথেষ্ট হতো।

【142】

এ ব্যাপারে কোন নির্দিষ্ট পরিমাণ না থাকার বর্ণনা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম আর সে পাত্র ছিল ফারাক (ষোল রাত্‌ল পরিমাপের একটি পাত্র)

【143】

স্বামী এবং স্ত্রীর একই পাত্র থেকে গোসল করা

আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আমি একই পাত্র থেকে গোসল করতাম। আমরা অঞ্জলিপূর্ণ করে তা থেকে একই সময় পানি নিতাম। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র থেকে জানাবাতের গোসল করতাম। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার স্মরণ আছে, আমি এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে পাত্র থেকে গোসল করতাম সে পাত্র নিয়ে আমি ও রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাড়াকাড়ি করতাম। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমাকে আমার খালা (উম্মুল মু’মিনীন) মায়মূনা (রাঃ) সংবাদ দিয়েছেন, তিনি এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র থেকে গোসল করতেন। আবদুর রহমান ইব্‌ন হুরমূয আল-আ’রাজ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমাকে উম্মে সালামার আযাদকৃত গোলাম না’য়িম বর্ণনা করেছেন যে, উম্মে সালামা (রাঃ)–কে জিজ্ঞাসা করা হলো, স্ত্রী কি পুরুষের সাথে গোসল করতে পারে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, করতে পারে যখন স্ত্রী বুদ্ধিমতী হয়। আমার স্মরণ আছে, আমি এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই গামলা থেকে গোসল করতাম। আমরা আমাদের উভয় হাতে পানি ঢালতাম এবং তা ধুইতাম পরে তার উপর পানি ঢালতাম। আ’রাজ (রহঃ) ‘বুদ্ধিমতী’–এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেনঃ যে লজ্জাস্থানের উল্লেখ করে না এবং নির্বোধ মহিলার ন্যায় আচরণ করে না।’

【144】

জুনুব ব্যক্তির উদ্বৃত্ত পানি দ্বারা গোসল করার উপর নিষেধাজ্ঞা

হুমায়দ ইব্‌ন আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি সাক্ষাৎ লাভ করেছি এমন এক ব্যক্তির যিনি চার বৎসর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহচর্য লাভ করেছিলেন যেরূপ আবূ হুরায়রা (রাঃ) তাঁর সাহচর্য লাভ করেছেন। তিনি বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের প্রতিদিন মাথা আচঁড়াতে এবং গোসলের স্থানে পেশাব করতে নিষেধ করেছেন আর স্ত্রীর উদ্বৃত্ত পানি দ্বারা পুরুষের এবং পুরুষের উদ্বৃত্ত পানি দ্বারা স্ত্রীর গোসল করতে এবং তাদের একত্রে অঞ্জলি দিয়ে পানি নিতেও নিষেধ করেছেন।

【145】

এ ব্যাপারে অনুমতি

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম। তিনি আমার পূর্বে পানি নেয়ার জন্য তাড়াতাড়ি করতেন, আমি তাঁর পূর্বে নেয়ার জন্য তাড়াহুড়া করতাম। এমনকি তিনি বলতেন, আমার জন্য রাখ, আর আমি বলতাম আমার জন্য রাখুন। সুওয়ায়দ (রহঃ) বলেনঃ আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, তিনি আমার পূর্বে ও আমি তাঁর পূর্বে পানি নেয়ার জন্য চেষ্টা করতাম। এক পর্যায়ে আমি বলতাম, আমার জন্য রাখুন, আমার জন্য রাখুন।

【146】

আটা-খামির করার পাত্রে গোসল করা

উম্মে হানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও মায়মূনা (রাঃ) একই পাত্রে গোসল করেছেন্‌ তা এমন পাত্র ছিল যাতে আটার খামিরের চিহ্ন ছিল।

【147】

জানাবাতের গোসলে নারীর মাথার খোপা না খোলা

উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি শক্ত করে বেণী করি। আমি কি জানাবাতের গোসলের সময় তা ধোয়ার জন্য খুলে ফেলবো? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার মাথায় তিন অঞ্জলি পানি দিয়ে পরে তোমার শরীরে পানি ঢালবে। [১]

【148】

ইহ্‌রামের গোসলে ঋতুমতির জন্য এর আদেশ

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা বিদায় হজ্জের বছর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সঙ্গে বের হলাম, তারপর আমি উমরার ইহ্‌রাম বাধঁলাম। আর আমি হায়য অবস্থায় মক্কায় উপস্থিত হলাম। ফলে আমি কা’বাঘরের ও সাফা-মারওয়ার তা’ওয়াফ করতে পারলাম না। আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ ব্যাপারে মনঃকষ্টের কথা জানালাম। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার মাথার চুল খুলে ফেল এবং আঁচড়াও, আর হজ্জের ইহরাম বাঁধ, উমরার নিয়্যত ছাড়। আমি তাই করলাম। তারপর যখন আমরা হজ্জের কাজ সমাপ্ত করলাম, তিনি আমাকে আবদুর রহমান ইব্‌ন আবূ বকরের সাথে তান’ঈমে [১] পাঠালেন। তখন আমি উমরা করলাম। তিনি বললেনঃ এ-ই তোমার উমরার স্থান। আবূ আবদুর রহমান বলেনঃ এ হাদীসটি গরীব, কারণ মালিক থেকে আশ্‌হাব ভিন্ন আর কেউ এটি বর্ণনা করেন নি।

【149】

পাত্রে হাত ঢুকাবার পূর্বে জুনুব ব্যক্তির উভয় হাত ধৌত করা প্রসঙ্গ

আবূ সালামা ইব্‌ন আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি বলেনঃ আয়েশা (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানাবাতের গোসল করতেন, তাঁর জন্য পাত্র রাখা হত, তখন তিনি তাঁর হাতদ্বয়কে পাত্রে ঢুকাবার পূর্বে তার উপর পানি ঢেলে নিতেন তারপর যখন উভয় হাত ধুয়ে নিতেন তখন নিজ ডান হাত পাত্রে ঢুকাতেন। তারপর ডান হাতে পানি ঢালতেন আর বাম হাতে তাঁর লজ্জাস্থান ধৌত করতেন। এ কাজ শেষ করার পর তিনি ডান হাতে বাম হাতের উপর পানি ঢাললেন এভাবে উভয় হাত ধুয়ে ফেলতেন। তারপর তিনি তিনবার কুল্লি করতেন এবং নাকে পানি দিতেন। পরে উভয় হাতের তালুভরে মাথায় তিনবার পানি ঢালতেন। তারপর দেহে পানি ঢালতেন।

【150】

উভয় হাত পাত্রে ঢুকাবার পূর্বে কতবার ধৌত করতে হবে

আবূ সালমা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আয়েশা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জানাবাতের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার হাতে পানি ঢালতেন, তারপর লজ্জাস্থান ধুতেন। তারপর উভয় হাত ধুতেন, পরে কুলি করতেন এবং নাকে পানি দিতেন। তারপর মাথার উপর তিনবার পানি ঢালতেন। এরপর তাঁর সমস্ত শরীরের উপর পানি ঢালতেন।

【151】

হাত ধোয়ার পর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে জুনুব ব্যক্তির নাপাকী দূর করা

আতা ইব্‌ন সায়িব (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আবূ সালামা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে তাঁকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জানাবাতের গোসল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পানির পাত্র আনা হলে তিনি নিজ হাত তিনবার পানি ঢেলে ধৌত করতেন। তারপর তিনি ডান হাত দ্বারা বাম হাতে পানি ঢালতেন। সে পানি দ্বারা উভয় উরু ধৌত করতেন। পরে উভয় হাত ধৌত করতেন, কুলি করতেন এবং নাক পরিস্কার করতেন। তারপর মাথায় তিনবার পানি ঢালতেন। এরপর সমস্ত শরীরে পানি ঢালতেন।

【152】

দেহ হতে ময়লা দূর করার পর জুনুব ব্যক্তির পুনরায় উভয় হাত ধৌত করা

আবূ সালামা ইব্‌ন আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি বলেনঃ আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জানাবাতের গোসলের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন যে, তিনি উভয় হাত তিনবার ধৌত করতেন। তারপর তাঁর ডান হাত দ্বারা বাম হাতের উপর পানি ঢালতেন। এরপরে তাঁর লজ্জাস্থান ধৌত করতেন এবং যে সকল স্থানে নাপাকী লেগেছে তা ধুতেন। উমর ইব্‌ন উবায়দ বলেনঃ আমি তাঁকে [বর্ণনাকারী ‘আতা ইব্‌ন সায়িব (রহঃ)-কে] এ ব্যতীত আর কিছু বলতে শুনিনি। তিনি বলেছেন যে, তিনি ডান হাতে বাম হাতের উপর তিনবার পানি ঢালতেন এবং তিনবার কুলি করতেন। আর তিনবার নাকে পানি দিতেন এবং তাঁর চেহারাও দুহাত তিনবার ধুয়ে ফেলতেন। তারপর মাথায় তিনবার পানি ঢালতেন। পরিশেষে তাঁর সর্বাঙ্গে পানি ঢালতেন।

【153】

গোসলের পূর্বে জুনুব ব্যক্তির উযূ করা

আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানাবাতের গোসল করতেন তখন উভয় হাত ধোয়ার মাধ্যমে আরম্ভ করতেন। তারপর সালাতের উযূর মত উযূ করতেন। তারপর আঙ্গুলসমূহ পানিতে ডুবিয়ে তদ্বারা তাঁর চুলের গোড়া খিলাল করতেন। পরে মাথায় তিন অঞ্জলি পানি দিতেন। এরপর সর্বাঙ্গে পানি ঢালতেন।

【154】

জুনুব ব্যক্তির মাথা খিলাল করা

উরওয়া (রহঃ) তিনি বলেনঃ আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর জানাবাতের গোসল সম্বন্ধে আমাকে বলেছেন যে, তিনি উভয় হাত ধৌত করতেন, উযূ করতেন এবং মাথায় খিলাল করতেন, যেন পানি তাঁর চুলের গোড়া পর্যন্ত পৌঁছে, তারপর সমস্ত শরীরে পানি ঢালতেন। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাথায় (খিলালের সাহায্যে) পানি পৌঁছাতেন তারপর মাথায় তিন অঞ্জলি পানি ঢালতেন।

【155】

জুনুব ব্যক্তির মাথায় কতটুকু পানি ঢালা যথেষ্ট

জুবায়র ইব্‌ন মুত’ঈম (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সামনে সাহাবীগণ গোসল সম্বন্ধে বিতর্কে লিপ্ত হলেন। তাঁদের কেউ বললেনঃ আমি এভাবে গোসল করি। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কিন্তু আমি আমার মাথায় তিন অঞ্জলি পানি ঢালি।

【156】

হায়যের গোসলে কি করতে হয়

আয়েশা (রাঃ) এক মহিলা তার হায়যের গোসল সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট জিজ্ঞাসা করলো। তিনি তাকে কিভাবে গোসল করতে হবে তা বললেন। তারপর বললেনঃ মিশ্‌ক মিশ্রিত একখন্ড তুলা নিয়ে তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। সে বলল, তা দ্বারা কিভাবে পবিত্র হবো? তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) [লজ্জায়] এভাবে মুখ ঢাকলেন [বর্ণনাকারী নিজ মুখ ঢেকে দেখালেন] এবং বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করবে। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ তখন আমি ঐ মহিলাকে টেনে নিলাম এবং বললাম, এটা যেখানে রক্তের চিহ্ন আছে সেখানে লাগাবে।

【157】

গোসলের পর উযূ না করা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোসলের পর উযূ করতেন না। [১]

【158】

গোসলের স্থান ত্যাগ করে অন্য স্থানে পা ধৌত করা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার খালা মায়মূনা (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর জানাবাতের গোসলের সময় তাঁর কাছে পানি এগিয়ে দিলাম। তিনি দু’বার কি তিনবার উভয় হাত (কব্জি পর্যন্ত) ধুলেন, তারপর তাঁর ডান হাত পাত্রে ঢুকালেন। ঐ হাতে তাঁর লজ্জাস্থানে পানি ঢাললেন এবং বাম হাতে তা ধুলেন। তারপর বাম হাত মাটিতে রেখে তা উত্তমরূপে ঘষলেন। তারপর সালাতের উযূর মত উযূ করলেন। এরপর অঞ্জলিভরে তিন অঞ্জলি পানি মাথায় ঢাললেন। তারপর সমস্ত শরীর ধৌত করলেন। এরপর গোসলের স্থান হতে সরে উভয় পা ধৌত করলেন। পরিশেষে আমি তাঁর নিকট রুমাল নিয়ে গেলে তিনি তা ফিরিয়ে দিলেন।

【159】

গোসলের পর রুমাল ব্যবহার না করা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোসল করার পর তাঁর নিকট রুমাল আনা হলো। কিন্তু তিনি তা স্পর্শ করলেন না এবং এরূপে পানি ঝেড়ে ফেলতে লাগলেন। [১]

【160】

পানাহার করতে চাইলে জুনুব ব্যক্তির জন্য উযূ করা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাবাত অবস্থায় যখন আহার করতে অথবা নিদ্রা যেতে ইচ্ছা করতেন তখন তিনি উযূ করতেন। আমর তাঁর বর্ণনায় বলেছেন, সালাতের উযূর মত উযূ।

【161】

জুনুব ব্যক্তি আহার করতে ইচ্ছা করলে শুধু তার উভয় হাত ধৌত করা

আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাবাত অবস্থায় নিদ্রার ইচ্ছা করলে উযূ করতেন আর আহার করার ইচ্ছা করলে উভয় হাত ধৌত করতেন।

【162】

পানাহারের ইচ্ছা করলে জুনুব ব্যক্তির শুধু উভয় হাত ধৌত করা

আবূ সালামা (রহঃ) আয়েশা (রাঃ) বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাবাত অবস্থায় নিদ্রার ইচ্ছা করলে উযূ করতেন। আর যখন পানাহারের ইচ্ছা করতেন তখন উভয় হাত ধুতেন, তারপর পানাহার করতেন।

【163】

নিদ্রার ইচ্ছা করলে জুনুব ব্যক্তির উযূ করা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাবাত অবস্থায় নিদ্রার ইচ্ছা করলে নিদ্রা যাওয়ার পূর্বে সালাতের উযূর ন্যায় উযূ করতেন। আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) উমর (রাঃ) বলেছেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমাদের কেউ জানাবাত অবস্থায় নিদ্রা যাবে কি? তিনি বললেনঃ যদি উযূ করে নেয়।

【164】

জুনুব ব্যক্তি নিদ্রা যেতে ইচ্ছা করলে উযূ করা এবং লজ্জাস্থান ধৌত করা

ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট উল্লেখ করলেন যে, রাতে তিনি জানাবাতগ্রস্ত হন। (এরপর ঘুমাতে চাইলে কি করবেন?) তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এরূপ হলে তুমি উযূ করবে এবং লজ্জাস্থান ধৌত করবে, তারপর ঘুমাবে।

【165】

জুনুব ব্যক্তি যদি উযূ না করে

আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ঘরে ছবি, কুকুর বা জুনুব ব্যক্তি থাকে, সে ঘরে ফেরেশ্‌তা প্রবেশ করে না। [১]

【166】

জুনুব ব্যক্তি পুনঃ সহবাস করতে চাইলে

আবূ সাঈদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন তোমাদের কেউ পুনঃ সহবাস করতে চাইলে সে উযূ করে নেবে।

【167】

গোসল না করে একাধিক স্ত্রীর নিকট গমন করা

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই গোসলে একরাতে তাঁর সকল সহধর্মিণীর নিকট গমন করেছেন। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই গোসলে সকল স্ত্রীর নিকট গমন করতেন।

【168】

জুনুব ব্যক্তির কুরআন তিলাওয়াত থেকে বিরত থাকা

আবদুল্লাহ ইব্‌ন সালামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি এবং অন্য দু-ব্যক্তি আলী (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শৌচাগার হতে বের হয়ে কুরআন পড়তেন এবং আমাদের সাথে গোশ্‌ত খেতেন। জানাবাত অবস্থা ব্যতীত তাঁকে কোন কিছুই কুরআন পাঠ হতে বিরত রাখত না। আলী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানাবাতের অবস্থা ব্যতীত সর্বাবস্থায়ই কুরআন তিলাওয়াত করতেন।

【169】

জুনুব ব্যক্তিকে স্পর্শ করা ও তার সাথে বসা

হুযায়ফা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই তাঁর সাহাবীগণের কারো সাথে সাক্ষাৎ করতেন, তাঁর সাথে মুসাফাহা করতেন এবং তার জন্য দোয়া করতেন। হুযায়ফা বলেন, একদিন ভোরে আমি তাঁর দেখা পেলাম। তাঁকে দেখে আমি দূরে সরে গেলাম। তারপর যখন কিছু বেলা হলো, আমি তাঁর নিকট এলাম। তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে দেখলাম, তারপর তুমি আমার থেকে দূরে সরে গেলে? আমি বললাম, আমি জুনুব অবস্থায় ছিলাম। আমার ভয় হলো, এমতাবস্থায় আপনি আমাকে স্পর্শ করে না বসেন। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মুসলমান নাপাক হয় না। [১] হুযায়ফা (রাঃ) তাঁর জানাবাত অবস্থায় তাঁর সঙ্গে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দেখা হলো। (হুযায়ফা বলেন) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার দিকে আসছেন দেখে আমি বললাম, আমি জানাবাত অবস্থায় আছি। তিনি বললেনঃ মুসলমান নাপাক হয় না। আবু হুরায়রা (রাঃ) তাঁর সাথে মদীনার কোন এক রাস্তায় রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-সাক্ষাৎ হলো, তখন তিনি ছিলেন জানাবাত অবস্থায়। সেজন্য তিনি সন্তর্পণে সরে পড়লেন এবং গোসল করলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে দেখতে পেলেন না। যখন পুনরায় আসলেন, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবূ হুরায়রা! তুমি কোথায় ছিলে? তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমার সাথে যখন আপনার সাক্ষাৎ হয়েছিল তখন আমি জানাবাত অবস্থায় ছিলাম। আমি গোসল করার পূর্বে আপনার সাথে বসাকে খারাপ মনে করলাম। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সুব্‌হানাল্লাহ! মুমিন নাপাক হয় না।

【170】

ঋতুমতি স্ত্রীর খেদমত নেয়া

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে ছিলেন, হঠাৎ তিনি বললেনঃ হে আয়েশা আমাকে কাপড়টি দাও। তিনি বললেনঃ আমি তো সালাত হতে বিরত আছি। তিনি বললেনঃ হায়য তোমার হাতে নয়, পরে আয়েশা (রাঃ) তাঁকে কাপড় দিলেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মসজিদ হতে আমাকে জায়নামাযটি এনে দাও। তিনি বললেনঃ আমি তো হায়য অবস্থায় আছি। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার হায়য তোমার হাতে নয়। আবূ মুআবিয়া (রাঃ) তিনি আ’মাশ (রাঃ) থেকে এ সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

【171】

মসজিদে ঋতুমতির চাটাই বিছানো

মান্‌বুয (রহঃ) বর্ণিত। মায়মূনা (রাঃ) বলেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ মাথা আমাদের কারো কোলে রেখে কুরআন তিলাওয়াত করতেন অথচ (যার ক্রোড়ে মাথা রাখতেন) তিনি তখন ঋতুমতি। আর আমাদের কেউ ঋতুবতী অবস্থায় মসজিদে চাটাই বিছিয়ে দিতেন। [২]

【172】

ঋতুমতি স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে কুরআন তিলাওয়াত করা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমাদের ঋতুমতি কারো কোলে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথা রেখে কুরআন তিলাওয়াত করতেন।

【173】

ঋতুমতি স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর মাথা ধৌত করা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইতিকাফ অবস্থায় আমার দিকে তাঁর মাথা বের করে দিতেন আর আমি তা ধুয়ে দিতাম অথচ তখন আমি ঋতুমতি। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইতিকাফ অবস্থায় মসজিদ হতে তাঁর মাথা আমার দিকে বের করে দিতেন আর আমি তা ধুয়ে দিতাম, অথচ তখন আমি ঋতুমতি। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথা আঁচড়ে দিতাম অথচ তখন আমি ঋতুমতি। আয়েশা (রাঃ) (অর্থাৎ তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথা আঁচড়ে দিতাম অথচ তখন আমি ঋতুমতি )। ‎

【174】

ঋতুমতির সঙ্গে খাওয়া এবং তার ভুক্তাবশেষ পান করা

শুরায়হ (রহঃ) আমি আয়েশা (রাঃ) কে প্রশ্ন করলামঃ হায়য অবস্থায় স্ত্রী কি তার স্বামীর সঙ্গে খেতে পারে ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ডাকতেন, আমি তাঁর সঙ্গে খেতাম অথচ তখন আমি ঋতুমতি। আর তিনি হাড় নিতেন এবং বলতেন, আল্লাহর কসম, তুমি আগে খাও। তারপর আমি তার কিছু অংশ চিবাতাম এবং রেখে দিতাম। পরে তিনি তা চিবাতেন। হাড়টির ঐখানেই মুখ দিতেন যেখানে আমি মুখ দিয়েছিলাম। আর তিনি পানীয় আনিয়ে বলতেনঃ আল্লাহর কসম, তুমি এটি আগে পান কর। তখন আমি পাত্রটি নিয়ে তা পান করতাম এবং আমি রেখে দিলে তিনি উঠিয়ে তা থেকে পান করতেন। আর আমি পেয়ালার যেখানে মুখ দিয়েছিলাম তিনি সেখানেই মুখ দিতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে মুখ রাখতেন যেখানে মুখ রেখে আমি পান করতাম। তিনি আমার ভুক্তাবশেষ থেকে পান করতেন অথচ তখন আমি ঋতুমতি।

【175】

ঋতুমতির ভুক্তাবশেষ আহার করা

মিকদাম ইব্‌ন শুরায়হ তিনি বলেনঃ আমি আয়েশা (রাঃ)- কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে পাত্র দিতেন আমি তা থেকে পান করতাম অথচ তখন আমি ঋতুমতি। তারপর আমি তাঁকে সে পাত্র দিতাম আর তিনি আমার পান করার জায়গা তালাশ করে সে জায়গায় তাঁর মুখ রাখতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি হায়য অবস্থায় পাত্র থেকে পান করতাম এবং তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিতাম। আমি যেখানে মুখ রেখে পান করতাম তিনি সেখানে মুখ রাখতেন। আমি হায়য অবস্থায় হাড় চিবাতাম তারপর তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিতাম। আর তিনি আমার মুখ রাখার স্থানে মুখ রাখতেন।

【176】

ঋতুমতির সাথে শয়ন করা

উম্মে সালামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে একই চাদরে শায়িত ছিলাম, হঠাৎ আমার হায়য দেখা দিল। আমি সরে পড়লাম এবং আমার হায়যের কাপড় পরিধান করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি ঋতুমতি হয়েছ ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি আমাকে ডাকলেন আর আমি তাঁর সঙ্গে একই চাদরে শয়ন করলাম। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই চাদরে রাত্রিযাপন করতাম অথচ তখন আমি ঋতুমতি। যদি আমার কোন কিছু তাঁর শরীরে লাগত, তখন তিনি ঐ স্থানই ধুয়ে নিতেন এর বেশি ধুতেন না। আর এ অবস্থাতেই তিনি সালাত আদায় করতেন, আবার তিনি বিছানায় ফিরে আসতেন। যদি আমার কোন কিছু তাঁর শরীরে লাগত, তিনি শরীরের ঐ অংশটুকু ধুয়ে নিতেন, এর বেশি ধুতেন না। আর এ অবস্থাতেই তিনি সালাত আদায় করতেন।

【177】

ঋতুমতির শরীরের সাথে শরীর মিলানো

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমাদের কেউ ঋতুমতি অবস্থায় থাকলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইযার [১] পরার আদেশ দিতেন। তারপর তিনি তার শরীরের সাথে শরীর লাগাতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমাদের কেউ ঋতুমতি থাকলে তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তার ইযার পরিধান করতে বলতেন। তারপর তিনি তার শরীরে শরীর লাগাতেন। মায়মূনা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন সহধর্মিণীর হায়য অবস্থায় যখন তার পরনে ইযার থাকত যা হাঁটু ও রানের মধ্যস্থল পর্যন্ত পৌঁছে, তখন তিনি তার শরীরে শরীর মিলাতেন। লায়সের হাদীসে আছে, তিনি (সহধর্মিণী) ঐ ইযার দ্বারা (দেহের মধ্যাংশ) আবৃত করতেন।

【178】

মহান আল্লাহর বাণীঃ “তারা তোমাকে হায়য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে” -এর ব্যাখ্যা

আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ ইয়াহূদীদের স্ত্রীরা যখন ঋতুমতি হত তখন তারা তাদের সাথে একত্রে পানাহার করত না এবং তারা ঘরে তাদের সাথে একত্রে অবস্থানও করত না। অতএব সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন আল্লাহ তা'য়ালা আয়াতটি [১] নাযিল করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের আদেশ করলেন তারা যেন তাদের স্ত্রীদের সাথে পানাহার করে ও ঘরে একত্রে অবস্থান করে এবং তাদের সাথে সহবাস ব্যতীত আর সব কিছু করা বৈধ মনে করে। এতে ইয়াহূদীরা বলল, আমাদের রীতিনীতির কোনটিরই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরোধীতা না করে ছাড়বেন না। উসায়দ ইব্ন হুযায়র ও আব্বাদ ইব্ন বিশ্র (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গমন করে একথাটি জানালেন এবং প্রশ্ন করলেন, আমরা হায়য অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে সহবাস করব কি? এতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারা রক্তিম হয়ে গেল, তখন তারা ধারণা করলেন যে, তিনি রাগান্বিত হয়েছেন এবং উভয়ই সেখান থেকে প্রস্থান করলেন। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু হাদীয়ার দুধ গ্রহন করলেন। তখন তিনি সাহাবীদ্বয়-এর অনুসন্ধানে লোক পাঠালেন। তাদের ডেকে আনা হল এবং উভয়কে তিনি দুধ পান করালেন। এতে জানা গেল যে, তাদের প্রতি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাগ করেন নি।

【179】

যে ব্যক্তি হায়য অবস্থায় আল্লাহর নিষেধ সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও সহবাস করে তার উপর কি ওয়াজিব হবে

ইব্ন আব্বাস (রাঃ) তিনি তিনি রাসূলুল্লাহ (স) হতে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বর্ণনা করেনঃ যে ব্যক্তি হায়য অবস্থায় স্ত্রী সঙ্গম করে, সে এক দীনার অথবা অর্ধ দীনার [২] সাদকা করবে।

【180】

মুহরিম [১] মহিলা ঋতুমতী হলে কি করবে

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সঙ্গে হজ্জের নিয়তে বের হলাম। যখন আমরা সারিফ নামক স্থানে পৌঁছলাম, আমার হায়য আসল। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার নিকট আসলেন, তখন আমি কাঁদছিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন। তোমার কি হল? তোমার কি হায়য হয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ এ এমন একটি ব্যাপার যা আল্লাহ্ তা’আলা আদম কন্যাদের জন্য অবধারিত করেছেন। অতএব, তুমি হজ্জের সকল আহকাম আদায় কর তবে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর সহধর্মিণীদের পক্ষ থেকে গরু কুরবানী দিলেন।

【181】

ইহ্রামের সময় নিফাসওয়ালী [২] নারীরা কি করবে

জা'ফর ইব্ন মুহাম্মদ (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমাকে আমার পিতা বলেছেন, আমরা জাবির ইব্ন আবদুল্লাহ (রাঃ) এর নিকট গমন করে তাকে রাসূলুল্লাহ (স)-এর বিদায় হজ্জ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাদের নিকট বর্ণনা করেন যে, রাসূলূল্লাহ (স) যুলক্বা'দা মাসের পাঁচ দিন অবশিষ্ট থাকতে হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হলেন। আমরাও তাঁর সাথে বের হলাম। যখন তিনি যুল-হুলায়ফা পৌঁছলেন, তখন আসমা বিন্তে উমায়স (রাঃ) মুহাম্মদ ইব্ন আবূ বকরকে প্রসব করলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (স)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করে পাঠালেনঃ আমি এখন কি করব? তিনি বললেনঃ তুমি গোসল কর তারপর পট্টি পরে নাও এবং ইহরাম বাঁধ।

【182】

হায়যের রক্ত কাপড়ে লাগলে

আদী ইব্ন দীনার (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি উম্মে কায়স বিনত মিহসান (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (স)এর নিকট হায়যের রক্ত কাপড়ে লাগার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে শুনেছি, তিনি বললেন, কাঠ দ্বারা তা ঘষে নিবে এবং কুলপাতা মিশ্রিত পানি দ্বারা ধুয়ে ফেলবে। আস্মা বিনত আবূ বকর (রাঃ) এক মহিলা রাসূলুল্লাহ্ (স)-এর নিকট কাপড়ে লাগা হায়যের রক্ত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ তা খুঁটবে, তারপর পানি দিয়ে রগড়াবে, তারপর তা ধুয়ে নেবে আর তাতেই সালাত আদায় করবে।

【183】

কাপড়ে যদি বীর্য লাগে

মুআবিয়া ইব্ন আবূ সুফয়ান (রাঃ) তিনি একবার রাসূলুল্লাহ্ (স)-এর সহধর্মিণী উম্মে হাবীবা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন, রাসূলুল্লাহ (স) যে কাপড়ে সহবাস করতেন তাতে কি তিনি সালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন হ্যাঁ। যদি তাতে কোন নাপাকী না দেখতেন।

【184】

কাপড় থেকে বীর্য ধৌত করা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (স)-এর কাপড় হতে জানাবাতের নাপাকী ধুতাম, তারপর তিনি সালাতের জন্য বের হতেন অথচ পানির চিহ্ন তাঁর কাপড়ে বিদ্যামান থাকত।

【185】

কাপড় থেকে বীর্য ঘষে ফেলা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাপড় থেকে জানাবাতের নাপাকী ঘষে ফেলতাম। আর এক সময় বলেছেনঃ কাপড় থেকে বীর্য ঘষে ফেলতাম। আয়েশা(রাঃ) তিনি বলেছেনঃ আমার মনে আছে যে, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাপড় থেকে জানাবাতের নাপাকী ঘষে ফেলার অতিরিক্ত কিছু করতাম না। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাপড় থেকে তা ঘষে ফেলতাম। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাপড়ে তা দেখতাম আর তা ঘষে ফেলতাম। আয়েশা(রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার মনে পড়ে, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাপড় থেকে জানাবাতের চিহ্ন ঘষে ফেলতাম। আয়েশা(রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার মনে পড়ে, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কাপড় থেকে জানাবাতের চিহ্ন ঘষে পরিষ্কার করতাম।

【186】

খাদ্য গ্রহণ করেনি এমন শিশুর পেশাব প্রসঙ্গে

উম্মে কায়স বিনতে মিহসান (রাঃ) তিনি খাদ্য গ্রহণ করেনি তাঁর এমন একটি ছোট শিশুকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট উপস্থিত হলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তাঁর কোলে বসালেন, সে তাঁর কাপড়ে পেশাব করে দিল। তিনি কিছু পানি আনিয়ে তা কাপড়ে ঢেলে দিলেন, তা ধুলেন না। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট একটি শিশু আনা হল। সে তাঁর কোলে পেশাব করে দিল। তিনি কিছু পানি আনালেন এবং তা পেশাবের উপর ঢেলে দিলেন।

【187】

ছোট বালিকার পেশাব প্রসঙ্গে

আবূস্ সামহ্ (রাঃ) [১] থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ছোট মেয়ের পেশাব ধুয়ে ফেলতে হয় আর ছোট ছেলের পেশাবের উপর পানি ছিটাতে [২] হয়।

【188】

হালাল পশুর পেশাব প্রসঙ্গে

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) উকল গোত্রের কিছু লোক রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাদের ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দিল। তারপর তারা বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমরা দুগ্ধবতী পশু রাখি; আমরা কৃষিকাজের লোক নই। মদীনার আবহাওয়া তাদের উপযোগী হলো না। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে কিছু উট ও একজন রাখাল প্রদানের নির্দেশ দিলেন এবং তিনি তাদের উটের প্রতিপালনের কাজে মদীনার বাইরে যেতে এবং উটের দুধ ও এর পেশাব পান করার নির্দেশ দিলেন। যখন তারা সুস্থ হয়ে গেল এবং হাররা নামক স্থানে অবস্থান করল, তখন তারা ইসলাম ত্যাগ করল। আর তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাখালকে হত্যা করে উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে গেল।এ খবর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট পৌঁছলে তিনি তাদের পেছনে অনুসন্ধানকারী দল পাঠালেন এবং তাদের গ্রেফতার করে আনা হল। তাদের চোখে লৌহ শলাকা গরম করে লাগান হল এবং হাত-পা কেটে দেয়া হল। পরে তাদের হাররার জমিতে ঐ অবস্থায় ফেলে রাখা হল। এভাবে তারা প্রাণ ত্যাগ করল। [১] আনাস ইব্‌ন মালিক(রাঃ) তিনি বলেনঃ উরায়না গোত্রের কয়েকজন বেদুঈন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলাম কবূল করল। মদীনায় বসবাস তাদের উপযোগী হল না। এমনকি তাদের রং ফ্যাকাসে হয়ে গেল এবং পেট স্ফীত হয়ে গেল।রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের আপন দুগ্ধবতী উষ্ট্রের পালের দিকে পাঠিয়ে দিলেন। আর তাদের তার দুধ ও পেশাব পান করার আদেশ দিলেন। এতে তারা সুস্থ হয়ে গেল। তারপর উটের রাখালকে হত্যা করে উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের খুঁজে আনার জন্য লোক পাঠালেন। তাদের ধরে আনা হলে তাদের হাত-পা কেটে দেওয়া হল এবং গরম শলাকা দিয়ে তাদের চোখ ফুঁড়ে দেওয়া হল। আমীরুল মুমিনীন আবদুল মালিক আনাস (রাঃ)-এর নিকট এ হাদীস শুনে তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করলেনঃ এ শাস্তি কি কুফরের জন্য, না গুনাহের জন্য। তিনি বললেন, কুফরের জন্য।

【189】

হালাল পশুর উদরস্থ গোবর কাপড়ে লাগা প্রসঙ্গে

আমর ইব্‌ন মায়মুন (রহঃ) তিনি বলেনঃ আবদুল্লাহ ইব্‌ন মাসঊদ (রাঃ) আমাদের নিকট বায়তুলমাল সম্পর্কিত একটি হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বায়তুল্লাহর নিকট সালাত আদায় করছিলেন। তখন একদল কুরায়শ তথায় উপবিষ্ট ছিল। তারা একটি উট যবেহ করেছিল। তাদের একজন বলল, তোমাদের মধ্যে কে এর রক্তমাখা উদরস্থ গোবর (নাড়ি-ভূড়িসহ) নিয়ে তার কাছে গিয়ে অপেক্ষা করতে পারবে, তারপর যখন সে সিজদায় কপাল ঠেকাবে তখন তা পিঠের উপর রেখে দিবে? আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, তাদের সবচাইতে নিকৃষ্ট ব্যক্তিটি প্রস্তুত হল এবং গোবরযুক্ত নাড়ি-ভূঁড়ি নিয়ে অপেক্ষায় রইল। যখন তিনি সিজদায় গেলেন, তখন তা তাঁর পিঠের উপর রেখে দিল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ)-এ খবর পেলেন-এ সময় তিনি ছিলেন অল্পবয়স্কা। তিনি দৌড়ে এলেন এবং তাঁর পিঠ হতে তা সরিয়ে ফেললেন। তিনি সালাত শেষ করে তিনবার বললেনঃ আয় আল্লা্‌হ্! কুরায়শকে ধর। হে আল্লাহ্‌! আবূ জাহল ইব্‌ন হিশাম, শায়িবা ইব্‌ন রবীআ, ‘উৎবা ইব্‌ন রবীআ, উকবা ইব্‌ন আবূ মুআয়ত প্রমুখকে পাকড়াও কর। এভাবে তিনি কুরায়শদের সাতজনের নাম উল্লেখ করলেন। আবদুল্লাহ বলেন, সেই আল্লাহ্‌র কসম যিনি তাঁর উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছেন, আমি তাদের সকলকে বদরের দিন একই গর্তে মৃত অবস্থায় পতিত দেখেছি।

【190】

থুথু কাপড়ে লাগা প্রসঙ্গে

আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর চাদরের একদিক উঠিয়ে তাতে থুথু ফেললেন, এরপর এক অংশের উপর অন্য অংশ চাপা দিলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায় করে, তখন সে যেন সামনে অথবা তার ডানে থুথু না ফেলে। বরং বামদিকে কিংবা পায়ের নিচে ফেলে। অথবা এরকম (এ বলে) করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কাপড়ে থুথু ফেললেন ও তা মললেন।

【191】

তায়াম্মুমের সূচনা

আয়েশা(রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে কোন এক সফরে বের হলাম। আমরা যখন বায়দা অথবা যাতুল জায়শ নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন আমার একটি হার হারিয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সংগীগণ তার তালাশে সেখানে অবস্থান করলেন। তাদের অবস্থান পানির নিকটে ছিল না এবং তাদের সাথে পানিও ছিল না। লোকজন আবূ বকর (রাঃ)-এর নিকট এসে বলল, আপনি কি দেখছেন না আয়েশা (রাঃ) কি করলেন? তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এবং অন্যান্য লোকদের এমন স্থানে অবস্থানে বাধ্য করেছেন যার নিকটে কোন পানি নেই এবং লোকদের সাথেও কোন পানি নেই। তখন আবূ বকর (রাঃ) আমার নিকট এলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন আমার উরুর উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আবূ বকর(রাঃ) বললেন, তুমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং অন্যান্য লোকদের এমন স্থানে আটকিয়ে রেখেছ যেখানে পানির কোন উৎস নেই আর তাদের সাথেও পানি নেই। আয়েশা(রাঃ)বলেনঃ তিনি আমাকে খুব তিরস্কার করলেন আর আল্লাহ্‌র যা ইচ্ছা ছিল তাই বললেন এবং তাঁর হাত দিয়ে আমার কোমরে খোঁচা দিতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শরীর আমার উরুর উপর থাকার কারণে আমি নড়াচড়া করতে পারছিলাম না। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিদ্রায় রইলেন, এমনকি পানির কোন ব্যবস্থা ছাড়াই ভোর হয়ে গেল। তখন আল্লাহ্‌ তা’আলা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করলেন। এতে উসায়দ ইব্‌ন হুযায়র (রাঃ) বললেনঃ হে আবূ বকরের পরিজন! এটাই তোমাদের প্রথম বরকত নয়। আয়েশা (রাঃ)বলেনঃ আমি যে উটের উপর ছিলাম সেটিকে উঠালে তার নিচে আমার হারটি পেলাম।

【192】

মুকীমের তায়াম্মুম

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন যে, আমি এবং মায়মূনা (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম আবদুল্লাহ ইব্‌ন ইয়াসার আবূ জুহায়াম ইব্‌ন সিম্মা আনসারী (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। আবূ জুহায়ম বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘বি’র আল- জামাল’–এর দিক থেকে আসছিলেন, তাঁর সাথে এক ব্যক্তির সাক্ষাত হল। সে তাঁকে সালাম করল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সালামের উত্তর দিলেন না। তিনি একটি দেওয়ালের নিকট আসলেন এবং তাঁর চেহারা ও উভয় হাত মসেহ করলেন, এরপর সালামের জবাব দিলেন।

【193】

মুকীমের তায়াম্মুম

আবদুর রহমান ইব্‌ন আবযা (রহঃ) এক ব্যক্তি উমর (রাঃ)-এর নিকট এসে বলল, আমি জানাবাত অবস্থায় আছি কিন্তু পানি পাইনি। উমর (রাঃ)বললেনঃ তুমি সালাত আদায় করো না। এ কথা শুনে আম্মার ইব্‌ন ইয়াসির বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনার কি স্মরণ নাই যে, এক সময় আমি এবং আপনি এক যুদ্ধে ছিলাম, আমরা উভয়ে জুনুবী হয়ে পড়লাম, আর আমরা পানি পেলাম না। এতে আপনি সালাত আদায় করলেন না কিন্তু আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম, তারপর সালাত আদায় করলাম। তারপর আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁর নিকট ঘটনা বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমার জন্য এ-ই যথেষ্ট ছিল। এ বলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হস্তদ্বয় মাটিতে মারলেন এরপর তাতে ফুঁ দিলেন এবং তা দ্বারা তাঁর চেহারা এবং উভয় হাত মসেহ করলেন। বর্ণনাকারী সালামা সন্দেহ করলেন, এ ব্যাপারে তাঁর মনে নেই কনুই পর্যন্ত বলেছেন, না কব্জি পর্যন্ত। এ কথা শুনে উমর (রাঃ) বললেনঃ তুমি যা বর্ণনা করলে তার দায়-দায়িত্ব তোমার উপরই অর্পণ করলাম। আম্মার ইব্‌ন ইয়াসির (রাঃ) তিনি বলেনঃ একবার আমি জুনুবী হয়ে পড়লাম, তখন আমি ছিলাম উটপালের মধ্যে। এ সময়ে আমি পানি পেলাম না। তখন আমি চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে এই সংবাদ জানালাম। তিনি বললেনঃ এ রকম না করে বরং তায়াম্মুম করাই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল।

【194】

সফরে তায়াম্মুম

আম্মার (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শেষরাতে উলাতুল জায়শ নামক স্থানে যাত্রা বিরতি দিলেন। আর তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর সহধর্মিণী আয়েশা(রাঃ)। তাঁর ইয়ামানী মোতির হার হারিয়ে গেলে এর তালাশে সমস্ত লোক আটকা পড়ল। অবশেষে ভোর হয়ে গেল অথচ লোকদের পানি ছিল না। যদ্দরুন আবূ বকর (রাঃ) তাঁর উপর রাগান্বিত হয়ে বললেনঃ তুমি লোকদের আটকিয়ে রেখেছ অথচ তাদের সাথে পানি নেই। তখন আল্লাহ তা’আলা মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করার অনুমতি সংক্রান্ত আয়াত নাযিল করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন মুমিনগণ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে উঠে মাটিতে নিজেদের হাত মারলেন আর তাদের হাত উঠালেন এবং হাত থেকে মাটি একটুও ঝাড়লেন না, বরং তা দ্বারা তাদের চেহারা ও হাত [উপর দিক থেকে] কাঁধ পর্যন্ত মসেহ করলেন আর তাদের হাতের নিচের দিক থেকে বগল পর্যন্ত মসেহ করলেন।

【195】

তায়াম্মুমের পদ্ধতি সম্পর্কে মতভেদ

আম্মার ইব্‌ন ইয়াসির (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করলাম। এতে আমরা আমাদের চেহারা এবং কাঁধ পর্যন্ত আমাদের হাত মসেহ করেছিলাম।

【196】

আরেক প্রকারের তায়াম্মুম এবং উভয় হাতে ফুঁ দেওয়া

আবদুর রহমান ইব্‌ন আবযা (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমরা উমর(রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আমীরুল মুমিনীন! অনেক সময় আমরা এক মাস বা দুই মাস পর্যন্ত কোথাও অবস্থান করি আর আমরা পানি পাই না। উমর(রাঃ)বললেন, আমি পানি না পেলে সালাত আদায় করবার নই, যাবৎ না পানি পাই। তখন আম্মার ইব্‌ন ইয়াসির (রাঃ) বললেনঃ হে আমীরুল মুমিনীন! আপনার মনে আছে কি, যখন অমুক অমুক স্থানে ছিলাম আর আমরা উট চরাতাম, আপনি জানেন যে, আমরা জানাবাতগ্রস্ত হলাম। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তখন আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম। পরে আমরা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলে তিনি হেসে বললেনঃ মাটিই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল, আর তিনি উভয় হাত মাটিতে মারলেন এবং তাতে ফুঁ দিলেন। তারপর তিনি তাঁর চেহারা এবং তাঁর উভয় হাতের কিয়দাংশ মসেহ করলেন। উমর (রাঃ) বললেনঃ হে আম্মার! আল্লাহকে ভয় কর। আম্মার বললেনঃ হে আমীরুল মুমিনীন! যদি আপনি চান তাহলে আমি এটা বর্ণনা করব না। উমর (রাঃ) বললেনঃ না। কিন্তু আমার নিকট যা বর্ণনা করলে, এর দায়িত্বভার তোমার উপর অর্পণ করলাম (তাই হাদীস বর্ণনায় সাবধানতা অবলম্বনের জন্য এটা বললাম)।

【197】

আরেক প্রকারের তায়াম্মুম

আবদুর রহ’মান ইব্‌ন আবযা (রহঃ) এক ব্যক্তি উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ)-কে তায়াম্মুম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। এ প্রশ্নের তিনি কোন উত্তর খুঁজে পেলেন না। তখন আম্মার বললেন, আপনার কি স্মরণ আছে? যখন আমরা এক যুদ্ধে ছিলাম, আমি জানাবাতগ্রস্ত হলাম। তখম আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি বললেনঃ তোমার এরূপ করাই যথেষ্ট ছিল। এ বলে শু‘বা হাঁটুর উপর তাঁর উভয় হাত মেরে তাঁর হস্তদ্বয়ে ফুঁ দিলেন আর উভয় হাত দ্বারা তার মুখ ও হস্তদ্বয় একবার করে মসেহ করলেন। ইব্‌ন আবদুর রহমান (রহঃ) এক ব্যক্তি জানাবাতগ্রস্ত হলে উমর (রাঃ)-এর নিকট এসে বলল, আমি জানাবাত অবস্থায় উপনীত হয়েছি কিন্তু পানি পাই না। তিনি বললেন, তুমি সালাত আদায় করবে না। তখন আম্মার বললেন, আপনার কি স্মরণ নেই যে, আমরা এক যুদ্ধে ছিলাম। আমরা জানাবাত অবস্থায় পতিত হলাম, তখন আমরা পানি পাইনি, এতে আপনি সালাত আদায় করলেন না কিন্তু আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম এবং সালাত আদায় করলাম। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে তা বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমার জন্য এটাই যথেষ্ট ছিল, এ বলে শু‘বা (রহঃ) একবার মাটিতে হাত মারলেন আর তাতে ফুঁ দিলেন আর তা দিয়ে এক হাত অন্য হাতের সাথে ঘষলেন এবং উভয় হাত দ্বারা তার মুখমণ্ডল মসেহ করলেন। তখন উমর (রাঃ) বললেন, আমি জানি না এটা কী? আম্মার বললেন, যদি আপনি চান তাহলে আমি এটা বর্ণনা করব না। সালামার বর্ণনায় অতিরিক্ত আছে যে, উমর (রাঃ) বললেনঃ তুমি যা বর্ণনা করলে, তার দায়দায়িত্ব তোমার।

【198】

তায়াম্মুম-এর অন্য প্রকার

আবদুর রহমান ইব্‌ন আবযা (রহঃ) এক ব্যক্তি উমর(রাঃ)-এর নিকট এসে বলল, আমি জানাবাতগ্রস্ত হয়েছি কিন্তু পানি পেলাম না। উমর (রাঃ) বললেন, তুমি সালাত আদায় করো না। তখন আম্মার (রাঃ)বললেন, হে আমীরুল মুমিনীন! আপনার স্মরণ আছে কি? একবার আমি এবং আপনি এক যুদ্ধে ছিলাম আর আমরা জানাবাতগ্রস্ত হলাম কিন্তু পানি পাচ্ছিলাম না। তখন আপনি সালাত আদায় করলেন না। কিন্তু আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম এবং সালাত আদায় করলাম। পরবর্তীতে যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তা ব্যক্ত করলাম, তিনি বললেনঃ তোমার জন্য এ-ই যথেষ্ট ছিল এ বলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাটিতে হাত রাখলেন এবং উভয় হাতে ফুঁ দিলেন তারপর উভয় হাত দ্বারা আপন মুখমণ্ডল ও উভয় কব্জি মসেহ করলেন। সালামা সন্দেহ করে বলেন, আমার জানা নেই(তিনি এতে উভয় কনুই বলেছেন না উভয় কব্জি)। উমর(রাঃ)বললেন, তুমি যা করলে তার দায়িত্ব তোমার উপরই অর্পণ করলাম। শু‘বা (রহঃ) বলেন, তিনি উভয় হাত, মুখমণ্ডল এবং বাহুদ্বয়ের কথা বলতেন। এজন্য মানসূর তাঁকে বললেন, আপনি কি বলছেন? আপনি ব্যতীত কেউই বাহুর কথা উল্লেখ করেন নি। এজন্য সালামার সন্দেহ হল। তিনি বললেনঃ আমার স্মরণ নেই তিনি বাহুর কথা উল্লেখ করেছেন কিনা।

【199】

জুনুব ব্যক্তির তায়াম্মুম

শাকীক(রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি আবদুল্লাহ এবং আবূ মূসা (রাঃ)-এর সঙ্গে বসা ছিলাম, তখন আবূ মূসা বললেন, আপনি কি আম্মারের কথা শোনেন নি যে, তিনি উমর (রাঃ)-কে বলেছিলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক কাজে পাঠালেন, আমি জানাবাতগ্রস্ত হলে পানি পেলাম না। অতএব আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম। পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে উপস্থিত হয়ে এ ঘটনা বর্ণনা করলাম। তিনি বললেনঃ তোমার জন্য এ-ই যথেষ্ট ছিল। এই বলে তাঁর হস্তদ্বয় একবার মাটিতে মারলেন। তারপর উভয় হাতের তালু মুছলেন ও ঝাড়লেন, তারপর তাঁর বাম হাত ডান হাতের উপর মারলেন আর ডান হাত বাম হাতের উপর এবং উভয় কব্জি ও মুখমণ্ডল মসেহ করলেন। আবদুল্লাহ বললেন, তুমি কি দেখছ না যে, উমর (রাঃ) আম্মারের কথায় তৃপ্ত হননি।

【200】

মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করা

আবূ রাজা (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি ইমরান ইব্‌ন হুসায়ন (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি,রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে লোকদের সঙ্গে সালাত আদায় না করে আলাদা থাকতে দেখলেন। তিনি বললেনঃ হে অমুক! লোকদের সঙ্গে সালাত আদায় করতে কোন্ বস্তুটি তোমাকে বাধা দিল? সে ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! আমি জানাবাত অবস্থাই আছি অথচ পানি পাইনি। তিনি বললেনঃ তুমি মাটি ব্যবহার কর, তা-ই তোমার জন্য যথেষ্ট।

【201】

এক তায়াম্মুমে কয়েক সালাত আদায় করা

আবূ যর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন পবিত্র মাটি মুমিনের উযূর উপকরণ, যদি সে দশ বৎসরও পানি না পায়।

【202】

যে ব্যক্তি পানি এবং মাটি কোনটাই না পায়

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উসায়দ ইব্‌ন হুযায়র (রাঃ) এবং আরও কয়েক ব্যক্তিকে হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর একটি হার তালাশের জন্য পাঠিয়েছিলেন, যা তিনি যে মনযিলে অবতরণ করেছিলেন সেখানে হারিয়েছিলেন। এমতাবস্থায় সালাতের সময় উপস্থিত হল, অথচ লোকদের উযূ ছিল না আর তারা পানিও পাচ্ছিলেন না। তখন তারা উযূ ব্যতীতই সালাত আদায় করলেন। তারপর তারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তা উল্লেখ করলেন। আল্লাহ্‌ তা‘আলা তায়াম্মুমের আয়াত অবতীর্ণ করলেন। উসায়দ ইব্‌ন হুযায়র(রাঃ)বলে উঠলেন, আল্লাহ্‌ তা‘আলা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন, যখনই আপনার প্রতি এমন কোন বিপদ আপতিত হয়েছে যা আপনি অপছন্দ করেন, তার মধ্যেই আল্লাহ্‌ তা‘আলা আপনার ও মুসলমানদের জন্য কল্যাণ নিহিত রেখেছেন। তারিক (রাঃ) বর্ণিত। এক ব্যক্তি জানাবাতগ্রস্ত হলে সে সালাত আদায় করল না। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে তা বর্ণনা করল। তিনি বললেনঃ তুমি ঠিক করেছ। এরপর অন্য একটি লোক জানাবাতগ্রস্ত হয়ে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করল। তারপর সে তাঁর নিকট আসল। তিনি অন্য ব্যক্তিকে যা বলেছিলেন তাকেও তাই বললেন। অর্থাৎ তুমি ঠিকই করেছ। [১]