11. সালাত আরম্ভ করা

【1】

সালাতের প্রারম্ভিক কাজ

ইবন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, তিনি যখন সালাতে তাকবীর আরম্ভ করতেন তখন তাকবীরের সময় তাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং হাত দু'খানাকে উভয় কাঁধ বরাবর করতেন। আর যখন রুকূ করার জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন। এরপর যখন সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ্' বলতেন তখনও এরূপ করতেন এবং বলতেনঃ 'রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ' আর যখন তিনি সিজদা করতেন তখন এবং যখন সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখন এরূপ করতেন না।

【2】

তাকবীর বলার পূর্বে উভয় হাত উঠানো

ইবন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখেছি, যখন তিনি সালাতের জন্য দাঁড়াতেন উভয় হাত উঠাতেন। এমনকি তাঁর হাত দু'খানা দু' কাঁধের বরাবর হয়ে যেত। এরপর তিনি তাকবীর বলতেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি এরুপ করতেন যখন তিনি রুকুর জন্য তাকবীর বলতেন। আর যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এরূপ করতেন আর বলতেনঃ সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ্। আর তিনি সিজদায় এরূপ করতেন না।

【3】

উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত তোলা

আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আরম্ভ করতেন তখন দু'কাঁধ পর্যন্ত তাঁর উভয় হাত তুলতেন। আর যখন রুকূ করতেন এবং রুকূ থেকে মাথা তুলতেন তখনও দু'হাত এভাবে তুলতেন এবং বলতেনঃ সামি'আল্লাহু লিমান হামিদাহ্ রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ। আর তিনি সিজদার সময় এরূপ করতেন না।

【4】

কান পর্যন্ত উভয় হাত উঠানো

ওয়ায়িল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে সালাত আদায় করেছি। যখন তিনি সালাত আরম্ভ করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর উভয় হাত দু'কান পর্যন্ত তুলতেন। এরপর সূরা ফাতিহা পাঠ করা আরম্ভ করতেন। আর তা শেষ করে ''আমীন'' বলতেন এবং তা বলার সময় তাঁর স্বর উচ্চ করতেন। মালিক ইবন হুয়ায়রিছ (রাঃ) তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অন্যতম সাহাবী থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আদায় করতেন তখন তাঁর উভয় হাত কান পর্যন্ত তুলতেন। আর যখন তিনি রুকূ করার ইচ্ছা করতেন, আর যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন (তখনও এরূপ করতেন)। মালিক ইবন হুয়ায়রিছ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি যে, যখন তিনি সালাত আরম্ভ করতেন তখন তাঁর হাতদ্বয় উঠাতেন। আর যখন রুকূ করতেন, এবং রুকূ থেকে তাঁর মাথা তুলতেন তখন হাতদ্বয় উভয় কানের নিম্নভাগ (লতি) বরাবর হয়ে যেতো।

【5】

হাত তোলার সময় বৃদ্ধাঙ্গুলীর অবস্থান

ওয়াইল (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছেন, যখন তিনি সালাত আরম্ভ করতেন তখন তিনি তাঁর উভয় হাত উঠাতেন। তখন তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় তাঁর দু'কানের নিম্নভাগ ছোঁয় ছোঁয় অবস্থা হতো।

【6】

লম্বা করে উভয় হাত তোলা

সাঈদ ইবন সামআন (রাঃ) তিনি বলেন, আবু হুরায়রা (রাঃ) বনী যুরায়কের মসজিদে আগমন করে বললেন, তিনটি কাজ এমন যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছেন। কিন্তু লোকেরা তা ছেড়ে দিয়েছে। তিনি সালাতে হাত উঠাতেন লম্বা করে, আর তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন আর তিনি যখন সিজদা করতেন এবং সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখন তাকবীর বলতেন।

【7】

প্রথম তাকবীর ফরয

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে প্রবেশ করলে পরে এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল এবং সালাত আদায় করলো। তারপর এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে সালাম করল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, ফিরে যাও, আবার সালাত আদায় কর (কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি) সে ব্যক্তি প্রত্যাবর্তন করে পূর্বে যেরূপ সালাত আদায় করেছিল সেরূপ সালাত আদায় করল। তারপর এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম করল, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, ওয়া আলাইকাস সালাম। ফিরে যাও, সালাত আদায় কর। কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। তিনি এরূপ তিনবার করলেন। তারপর সে ব্যক্তি বলল, ঐ সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন। আমি এর চেয়ে অধিক ভাল সালাত আদায় করতে জানি না। অতএব, আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন- যখন সালাতে দাঁড়াবে, তখন তাকবীর বলবে, তারপর কুরআন থেকে যা তোমার পক্ষে সহজ হয় তা পড়বে। তারপর রুকূ করবে ধীর-স্থিরভাবে। তারপর মাথা উঠাবে এবং সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। এরপর সিজদা করবে ধীর-স্থিরভাবে। তারপর মাথে উঠিয়ে ধীর-স্থিরভাবে বসে পড়বে। অতঃপর এভাবে তোমার সালাত পূর্ণ করবে।

【8】

যে বাক্য দ্বারা সালাত আরম্ভ করা হয়

আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে বলল: (আরবী) তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কে এ কলেমা বলেছে? ঐ ব্যক্তি বলল- আমি, ইয়া নবী আল্লাহ! তখন তিনি বললেন- বারজন ফিরিশতা এ কলেমা তাড়াতাড়ি করে তুলে নিলেন। ইবন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাত আদায় করছিলাম। উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে এক ব্যক্তি বলে উঠল (আরবী) তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এমন এমন শব্দগুলো কে বলেছে? তখন ঐ ব্যক্তি বললো, আমি ইয়া রাসূলুল্লাহ্! তিনি বললেনঃ আমি এ ব্যপারে আশ্চর্যবোধ করলাম। অতঃপর তিনি যা বললেন, এর অর্থ হল, এর কারণে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়েছে। ইবন উমর (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ কথা বলতে শোনার পর থেকে আমি কখনও তা পড়া বাদ দেই নি।

【9】

সালাতে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা

ওয়ায়িল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন আমি তাঁকে ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরে রাখতে দেখেছি।

【10】

ইমাম কাউকে ডান হাতের উপর বাম হাত রাখতে দেখলে

ইবন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দেখলেন, আমি সালাতে ডান হাতের উপর বাম হাত রেখেছি। তিনি আমার ডান হাত ধরে তা বাম হাতের উপর রাখলেন।

【11】

সালাতে বাম হাতের ওপর ডান হাত রাখার স্থান

ওয়ায়িল ইবন হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললামঃ আমি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করব রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাতের প্রতি, তিনি কিরূপে সালাত আদায় করেন। আমি তাঁর দিকে তাকালাম। তিনি দাঁড়িয়ে তাকবীর বললেন এবং তাঁর হস্তদ্বয় উত্তোলন করলেন। আর হস্তদ্বয় কর্ণদ্বয়ের বরাবর হল। তারপর তিনি তাঁর ডান হাত রাখলেন বাম হাতের উপর অর্থাৎ এক কব্জি অন্য কব্জির ওপর কিংবা এক হাত অন্য হাতের ওপর রাখলেন। যখন তিনি রুকূ করার ইচ্ছা করলেন হস্তদ্বয় পূর্বের মত উঠালেন। রাবী বলেন, তিনি হস্তদ্বয় স্থাপন করলেন তাঁর দু'হাঁটুর উপর। এরপর যখন তিনি রুকূ থেকে মাথা উঠালেন তখন তদ্রুপ হাত উঠালেন। এরপর তিনি সিজদা করলেন, তিনি তাঁর হাতের তালুদ্বয় স্থাপন করলেন তাঁর উভয় কান বরাবর। তারপর তিনি বসলেন, তিনি বিছিয়ে দিলেন তাঁর বাম পা। আর তাঁর বাম হাতের তালু রাখলেন তাঁর বাম হাঁটু ও রানের উপর। আর ডান কনুইর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ডান রানের উপর রাখলেন। পরে তাঁর দু'টি অঙ্গুলী (বৃদ্ধ ও মধ্যমা) টেনে তা দিয়ে বৃত্তাকার বানালেন এবং তারপর একটি অঙ্গুলী (তর্জনী) উঠালেন। আমি দেখলাম, তিনি তা নাড়ছেন (ইশারার জন্য) এবং তা দ্বারা দোয়া করছেন।

【12】

সালাতে কোমরে হাত রাখা নিষেধ

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোমরে হাত রেখে কোন ব্যক্তিকে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। যিয়াদ ইবন সুবায়হ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবন উমরের পাশে সালাত আদায় করেছি, তখন আমি আমার কোমরে হাত রাখলাম। তিনি আমাকে তাঁর হাত মেরে বললেন, এভাবে যখন আমি সালাত শেষ করলাম, এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলাম, কে এ ব্যক্তি? সে বললো, আবদুল্লাহ ইবন উমর। আমি বললাম, হে আবু আবদুর রহমান। আমার কোন্ কাজে আপনার খটকা হলো? তিনি বললেনঃ এটা শূলের ন্যায় হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা থেকে আমাদের নিষেধ করেছেন।

【13】

সালাতে দু’পায়ের মধ্যে ফাঁক না রেখে দাঁড়ানো

আবু উবায়দা (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ) এক ব্যক্তিকে উভয় পা মিলিয়ে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে দেখলেন। তিনি বললেন, এ ব্যক্তি সুন্নতের বিরোধিতা করল। যদি এ ব্যক্তি পদদ্বয়ের মাঝখানে ব্যবধান বা ফাঁক রেখে দাঁড়াতো তাহলে তা উত্তম হতো। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রাঃ) তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে সালাত আদায় করছে দু' পা মিলিয়ে। তিনি বললেন, এ ব্যক্তি সুন্নতের খেলাফ করছে। যদি সে দু' পায়ের মধ্যে ফাঁক রেখে দাঁড়াত তা হলে তা আমার কাছে অধিক পছন্দনীয় হতো।

【14】

সালাত আরম্ভ করার পর ইমামের চুপ থাকা

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলূল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আরম্ভ করতেন তখন কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন। এ সময় দোয়া পড়তেন।

【15】

তাকবীর ও কিরাআতের মধ্যবর্তী দোয়া

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আরম্ভ করতেন তখন কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন। আমি বললাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার মাতা-পিতা আপনার প্রতি কুরবান হোক, আপনি তাকবীর ও কিরাআতের মধ্যস্থলে চুপ থেকে কি বলেন? তিনি বললেন আমি বলি, অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার ও আমার পাপরাশির মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে দাও যেমন পূর্ব পশ্চিমের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করেছ। হে আল্লাহ! আমাকে আমার পাপরাশি থেকে পবিত্র করে দাও যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়ে থাকে। হে আল্লাহ! আমাকে পানি, বরফ, শিলা বৃষ্টির সাহায্যে ধৌত কর।

【16】

কিরাআত ও তাকবীরের মধ্যে অন্য দোয়া

জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আরম্ভ করতেন তখন তাকবীর বলতেন। তারপর বলতেন: (আরবী)

【17】

তাকবীর ও কিরাআতের মধ্যে দোয়া ও যিকির

আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আরম্ভ করতেন তাকবীর বলতেন। তারপর বলতেন: (আরবী) অর্থ: আমি একনিষ্ঠভাবে তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়েছি যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভক্ত নই। নিশ্চয় আমার সালাত আমার ইবাদত (কুরবানী ও হজ্জ) আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তাঁর কোন শরীক নেই। আর এরই জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি মুসলমানদের অন্তর্গত। আল্লাহ, তুমিই বাদশাহ, তুমি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। তুমি আমার প্রভু আর আমি তোমার দাস। আমি নিজের উপর জুলুম করেছি এবং আমি আমার অপরাধ স্বীকার করছি- সুতরাং তুমি আমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয় তুমি ব্যতীত আর কেউ অপরাধসমূহ ক্ষমা করতে পারে না এবং চালিত কর আমাকে উত্তম চরিত্রের পথে তুমি ব্যতীত অপর কেউ চালিত করতে পারে না উত্তম চরিত্রের পথে এবং দূরে রাখ আমা থেকে মন্দ আচরণকে- তুমি ব্যতীত আমা থেকে তা অপর কেউ দূরে রাখতে পারে না। আল্লাহ! হাজির আছি আমি তোমার দরবারে আর প্রস্তুত আছি তোমার আদেশ পালনে, কল্যাণ সমস্তই তোমার হাতে এবং কোনও অকল্যাণই তোমার প্রতি বর্তায় না। আমি তোমার সাহায্যেই প্রতিষ্ঠিত আছি এবং তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করছি। তুমি মঙ্গলময়, তুমি সুমহান। আমি তোমার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করছি এবং তোমার দিকে ফিরছি। মুহাম্মদ ইবন মাসলামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নফল সালাত আদায় করতে দাঁড়াতেন তখন বলতেন: (আরবী) তারপর তিনি কুরআন পাঠ করতেন।

【18】

সালাত আরম্ভ ও কিরাআতের মাঝখানে অন্য দোয়া

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আরম্ভ করতেন তখন বলতেনঃ (আরবী) অর্থ: তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে। তোমার নাম মঙ্গলময়, উচ্চ তোমার মহিমা এবং তুমি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আরম্ভ করতেন তখন বলতেনঃ (আরবী)

【19】

তাকবীরের পর অন্য প্রকার দোয়া

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করছিলেন। হঠাৎ এক ব্যক্তি এসে মসজিদে প্রবেশ করল, সালাতের জন্য দৌড়ে আসার কারণে তার তার শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছিল। সে বলল (আরবী)। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত শেষ করে বললেন- তোমাদের মধ্যে কে এ বাক্যগুলো উচ্চারণ করল? এতে উপস্থিত সকলে নির্বাক হয়ে গেল। তিনি বললেন, সে কোন ক্ষতিকর কথা বলেনি। সে ব্যক্তি বলল- ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি বলেছি। আমি এসে পড়লাম আর আমার তখন শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তখন আমি তা বলেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি বারজন ফেরেশতাকে দেখলাম, তারা প্রতিযোগিতা করছে, কে তা তুলে নেবে।

【20】

অন্য সূরা পড়ার পূর্বে সূরা ফাতিহা পড়া

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবু বকর এবং উমর (রাঃ) কিরাআত আরম্ভ করতেন- “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন” দ্বারা। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এবং আবু বকর ও উমর (রাঃ)-এর সাথে সালাত আদায় করেছি। তাঁরা সালাত আরম্ভ করতেন, “আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন” দ্বারা।

【21】

‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ পাঠ করা

আনাস ইবন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন তিনি আমাদের মধ্যে ছিলেন অর্থাৎ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হঠাৎ ওহীর অবস্থা প্রকাশ পেল। তারপর তিনি মুচকি হাসতে হাসতে মাথা উঠালেন। আমরা তাঁকে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কেন হাসলেন? তিনি বললেন, এখন আমার উপর একটি সূরা নাযিল হলো: (আরবী) তারপর তিনি বললেন, তোমরা জান কি “কাওসার” কি? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই ভাল জানেন। তিনি বললেন, এটা একটি নহর। আমার রব! আমাকে তা জান্নাতে প্রদান করবেন বলে ওয়াদা করেছেন। তার পেয়ালাসমূহ তারকার সংখ্যা অপেক্ষা অধিক, আমার উম্মত তার কাছে আমার নিকট আসবে। তারপর তাদের মধ্য থেকে কাউকে হটিয়ে দেয়া হবে। তখন আমি বলব, হে আল্লাহ! সে তো আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত। তখন তিনি আমাকে বলবেন, নিশ্চয় আপনি জানেন না, সে আপনার পরে (শরীয়তের পরিপন্থী) কি নতুন বিষয় আবিষ্কার করেছিল। নুয়ায়ম মুজমির (রহঃ) তিনি বলেন: আমি আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর পেছনে সালাত আদায় করি। তিনি প্রথমে পড়লেন বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করলেন, যখন তিনি (আরবী) পর্যন্ত পৌছলেন তখন ‘আমীন’ বললেন, তারপর সকল লোক বলল, আমীন। যখনই তিনি সিজদা করতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহু আকবর’, আর যখন তিনি দ্বিতীয় রাকাআতে বসা থেকে দাঁড়াতেন তখনও আল্লাহু আকবর বলতেন। তিনি সালাম ফিরিয়ে বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ! আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মত সালাত আদায় করে তোমাদের দেখালাম।

【22】

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম বলতে উচ্চস্বর পরিত্যাগ করা

আনাস ইবন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। তখন বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম -এর কিরাআত আমরা শুনতে পাইনি। আর আবু বকর এবং উমর (রাঃ)-ও আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করেছেন। তাঁদের থেকেও আমরা তা শুনিনি। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আবু বকর, উমর, ও উসমান (রাঃ)-এর পেছনে সালাত আদায় করেছি। তাঁদের কাউকে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ উচ্চস্বরে পড়তে শুনিনি। ইবন আবদুল্লাহ ইবন মুগাফফাল (রহঃ) তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবন মুগাফফাল (রাঃ) আমাদের কাউকে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ পড়তে শুনলে বলতেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে সালাত আদায় করেছি এবং আবু বকর ও উমর (রাঃ)-এর পেছনেও। তাঁদের কাউকেও ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম’ পড়তে শুনিনি। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন সালাত আদায় করে আর তাতে সূরা ফাতিহা না পড়ে তা অসম্পূর্ণ, তা অসম্পূর্ণ, তা অসম্পূর্ণ, পূর্ণ হয় না। তখন আমি বললাম, হে আবু হুরায়রা! আমি অনেক সময় ইমামের পেছনে সালাত আদায় করে থাকি, তিনি আমার বাহুটান দিয়ে বললেন, হে পারসিক (ইরানী); তুমি তা মনে মনে পড়বে। কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার ও আমার বান্দার মধ্যে সালাত আধাআধি ভাগ করেছি। অতএব, এর অর্ধেক আমার জন্য আর অর্ধেক বান্দার জন্য। আর আমার বান্দার জন্য রয়েছে যা সে চায়। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা পড়। বান্দা যখন বলে, ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা আমার প্রশংসা করল। আর যখন বান্দা বলে, ‘আররহমানির রহীম’ তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা আমার স্তুতি বর্ণনা করল। আর বান্দা যখন বলে, ‘মালিকি ইয়াওমিদ্দীন’ তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা আমার মর্যাদা বর্ণনা করল। আর বান্দা যখন বলে, ‘ইয়্যাকা না‘বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাস্তা‘য়ীন’ তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এই আয়াতটি আমার ও আমার বান্দার মধ্যে। আর আমার বান্দার জন্য তা-ই রয়েছে, যা সে চায়। বান্দা বলে, ‘ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাতীম, সিরাতাল লাযীনা আন ‘আমতা ‘আলাইহিম, গাইরিল মাগদূবি ‘আলাইহিম ওয়ালাদ দ্বা-ল্লীন, (তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন) এসবই আমার বান্দার জন্য। আর আমার বান্দার জন্য রয়েছে, যা সে চায়।

【23】

সালাতে ফাতিহা পড়া ওয়াজিব

উবাদাহ ইবন সামিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাতে সূরা ফাতিহা পড়েনি তার সালাত হয়নি। উবাদা ইবন সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাতে সূরা ফাতিহা -এর পর অধিক (অন্য সূরা) পড়ল না, তার সালাত হয়নি।

【24】

সূরা ফাতিহার ফযীলত

ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মধ্যে ছিলেন আর তাঁর কাছে ছিলেন জিবরাঈল (আঃ)। হঠাৎ জিবরাঈল (আঃ) তাঁর মাথার উপর এক বিকট আওয়াজ শুনলেন তখন তিনি আকাশের দিকে চোখ তুলে দেখলেন যে, আকাশের একটি দরজা খুলে দেয়া হয়েছে, যা কখনও খোলা হয়নি। তিনি বলেন, এরপর দরজা দিয়ে একজন ফিরিশতা অবতীর্ণ হয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, আপনি এমন দু’টি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা শুধু আপনাকেই দান করা হয়েছে। আপনার পূর্বে অন্য কোন নবীকে তা দান করা হয়নি। একটি হলো, সূরা ফাতিহা এবং অন্যটি হলো, সূরা বাকারার শেষাংশ। এতদুভয়ের একটি অক্ষর পাঠ করলেও (তার প্রতিদান) তা আপনাকে দেওয়া হবে।

【25】

আল্লাহ্ তায়ালার বাণী: আমি তোমাকে সাতটি আয়াত দান করেছি, যা বারবার পড়া হয় এবং মহান কুরআন -এর ব্যাখ্যা

আবু সাঈদ ইবন মুআল্লা (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছ দিয়ে যাওয়ার কালে তাঁকে ডাকলেন, তিনি তখন সালাত আদায় করছিলেন। তিনি বলেন, আমি সালাত শেষ করে তাঁর কাছে আসলে তিনি বললেন, আমার আহ্বানে সাড়া দিতে তোমাকে কিসে নিষেধ করল? তিনি বললেন, আমি সালাত আদায় করছিলাম। তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলা কি বলেননি, হে মুমিনগণ! রাসূল যখন তোমাদের এমন কিছুর দিকে আহ্বান করে যা তোমাদের প্রাণবন্ত করে, তখন আল্লাহ্ ও রাসূলের আহ্বানে সাড়া দিবে। (সূরা: ৮, আয়াত: ২৪) মসজিদ থেকে বের হওয়ার পূর্বে আমি কি তোমাকে সর্বোৎকৃষ্ট সূরা শিক্ষা দিব না? তিনি বললেন, তারপর তিনি বের হতে গেলে আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার কথা? তিনি বললেন আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন অর্থাৎ সূরা ফাতিহা, ঐ সাত আয়াত যা বারবার পড়া হয়ে থাকে, যা আমাকে দান করা হয়েছে এবং মহান কুরআন। উবাই ইবন কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা সূরা ফাতিহার মত তাওরাত অথবা ইঞ্জিলে কোন আয়াত নাযিল করেন নি। তা সাত আয়াত, যা বারবার পাঠ করা হয়ে থাকে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন এ আমার ও আমার বান্দার মধ্যে ভাগ করা। আর আমার বান্দার জন্য রয়েছে, সে যা চায়। ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দান করা হয়েছে কুরআন মজীদের সাতটি বড় সূরা। তিনি অত্র হাদীছে ‘সাব’আম মিনাল মাছানী’ বলতে সাতটি বড় সূরার কথা বুঝিয়েছেন। ইবন আব্বাস (রাঃ) ‘‘সাব’আম মিনাল মাছানী’’ আয়াতের সম্বন্ধে বর্ণিত। তিনি বলেন, তা কুরআন মজীদের সাতটি বড় সূরা।

【26】

যে সালাতে কিরাআত চুপে চুপে পাঠ করা হয় সে সালাতে ইমামের পশ্চাতে কিরাআত ত্যাগ করা

ইমরান ইবন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জোহরের সালাত আদায় করলেন। এক ব্যক্তি তাঁর পেছনে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা’ পাঠ করল। তিনি যখন সালাত শেষ করলেন, তখন বললেন, ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা’ কে পাঠ করল? এক ব্যক্তি বলল, আমি পড়েছি। তখন তিনি বললেন, আমি জানতাম, তোমাদের কেউ কিরাআতে আমার সাথে ঝামেলা সৃষ্টি করবে। ইমরান ইবন হুসায়ন (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার জোহর অথবা আসরের সালাত আদায় করলেন। আর এক ব্যক্তি তাঁর পেছনে কুরআন পড়ছিল। তিনি সালাত শেষ করে বললেন, তোমাদের মধ্যে কে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা’ পাঠ করল? উপস্থিত লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি বলল, আমি পড়েছি। আর আমি তা দ্বারা কল্যাণ ব্যতীত কিছু কামনা করিনি। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি বুঝলাম তোমাদের কেউ কিরাআতে আমার সাথে ঝামেলা সৃষ্টি করেছ।

【27】

যে সালাতে ইমাম উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করেন তাতে মুকতাদীর কুরআন পাঠ ত্যাগ করা

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উচ্চ শব্দে কুরআন পাঠ করা সালাত সমাপ্ত করে বললেন, তোমাদের কেউ কি এখন আমার সাথে কুরআন পাঠ করেছে? এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমি বলছি কুরআন তিলাওয়াতে আমার সাথে কেন ঝামেলা সৃষ্টি করা হয়? বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সকল সালাতে কুরআন উচ্চস্বরে পড়তেন সে সকল সালাতে লোকেরা কুরআন পড়া থেকে বিরত থাকলো, যখন তারা এ ব্যাপারটি শুনতে পেল।

【28】

যে সালাতে ইমাম উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করে সে সালাতে ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পড়া

উবাদাহ ইবন সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে এক সালাত আদায় করলেন, যাতে উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করা হয়। তারপর তিনি বললেন, যখন আমি উচ্চস্বরে কুরআন পড়ি তখন সূরা ফাতিহা ব্যতীত তোমাদের কেউ যেন কিছু না পড়ে।

【29】

আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগ সহকারে তা শুনবে এবং চুপ থাকবে। আশা করা যায় তাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হবে- আয়াতের ব্যাখ্যা

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইমাম নিযুক্ত করা হয়েছে তাঁর অনুসরণ করার জন্য। অতএব, যখন সে তাকবীর বলে তখন তোমরাও তাকবীর বল, আর যখন সে কুরআন পড়ে তখন তোমরা চুপ থাকবে, আর যখন তিনি বলেন, ‘সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ তখন তোমরা বলবে, ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ইমাম তো এজন্য যে, তাঁর অনুসরণ করা হবে। অতএব, যখন ইমাম তাকবীর বলে তখন তোমরাও তাকবীর বল। আর যখন ইমাম কুরআন পড়ে তখন তোমরা চুপ থাক। আবু আবদুর রহমান বলেন, মুখাররিমী বলতেন, তিনি অর্থাৎ মুহাম্মদ ইবন সা’দ আনসারী নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী।

【30】

ইমামের কিরাআত মুকতাদীর জন্য যথেষ্ট হওয়া

আবুদ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হলো, প্রত্যেক সালাতেই কি কিরাআত আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এক আনসার ব্যক্তি বলল, তা ওয়াজিব। তখন তিনি আমার দিকে লক্ষ্য করলেন, আমি সকলের মধ্যে তাঁর নিকটবর্তী ছিলাম। তিনি বললেন, ইমাম যখন দলের ইমামতি করেন, তখন আমি মনে করি, ইমামই তাদের জন্য যথেষ্ট। আবু আবদুর রহমান (রহঃ) বলেন, এটা ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে’ বলা ভুল। এ হলো আবুদ দারদারই কথা।

【31】

যে ভালভাবে কুরআন পাঠ করতে জানে না, তার জন্য যা পাঠ করা যথেষ্ট

ইবন আবু আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে আরয করল, আমি কুরআন পাঠ করতে পারি না। অতএব, আমাকে এমন কিছু শিক্ষা দিন যা কুরআন পাঠের পরিবর্তে যথেষ্ট হয়। তিনি বললেনঃ তুমি বল, سُبْحَانَ اللَّهُ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ

【32】

ইমামের উচ্চস্বরে আমীন বলা

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তিলাওয়াতকারী আমীন বলে, তখন তোমরাও আমীন বলবে। কেননা, ফেরেশতাগণও আমীন বলে থাকেন। অতএব, যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার মত হবে, আল্লাহ পাক তার পূর্বের পাপ মার্জনা করবেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন তিলাওয়াতকারী (ইমাম) আমীন বলে তখন তোমরাও আমীন বল। কেননা, ফেরেশতাগণও আমীন বলে থাকেন। আর যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার মত হয় তার পূর্ববর্তী পাপ মার্জনা করে দেওয়া হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন ইমাম ‘গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালাদ দ্বাল্লীন’ বলেন তখন তোমরা আমীন বল। কেননা, ফেরেশতাগণও আমীন বলে থাকেন আর ইমামও আমীন বলেন। যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার মত হয়, তার পূর্বের পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন ইমাম আমীন বলে তখন তোমরাও আমীন বল। যার আমীন বলা ফেরেশতাদের আমীন বলার মত হয় তার পূর্ববর্তী পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।

【33】

ইমামের পেছনে আমীন বলার নির্দেশ

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন ইমাম ‘গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালাদ-দ্বা-ল্লীন’ বলেন, তখন তোমরা আমীন বলবে। কেননা যার কথা ফেরেশতাগণের কথার মত হবে, তার পূর্বের পাপ মার্জনা করা হবে।

【34】

আমীন বলার ফযীলত

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ আমীন বলে, আর ফেরেশতারাও আকাশে আমীন বলেন, তখন যদি একটির সাথে অপরটির মিল হয় তবে তার পূর্বের পাপ ক্ষমা করা হয়।

【35】

মুকতাদীর ইমামের পেছনে হাঁচি দিয়ে আলহামদু লিল্লাহ ...... বলা

রিফা’ ইবন রাফি’ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে সালাত আদায় করেছি। তখন আমি হাঁচি দিলাম এবং বললাম- (আরবী) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত সমাপ্ত করে ফিরে বললেন, সালাতে কে কথা বলেছে? তখন কেউই উত্তর দিল না। তিনি দ্বিতীয়বার বললেন, কে সালাতে তা বলেছে? তখন রিফাআ ইবন রাফি ইবন আফরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি বলেছি। তিনি বললেন, তুমি কি বলেছ? তিনি বললেন, আমি বলেছি- (আরবী) তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! ত্রিশজনের বেশি ফেরেশতা তা নিয়ে তাড়াহুড়ো করছে, কে তা নিয়ে উপরে উঠবে। ওয়ায়িল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে সালাত আদায় করেছি। যখন তিনি তাকবীর বললেন, তাঁর কর্ণদ্বয়ের নিম্ন পর্যন্ত উভয় হাত তুললেন, যখন তিনি ‘গাইরিল মাগদূবি আলাইহিম ওয়ালাদ দ্বাল্লীন’ বললেন, তখন আমীন বললেন। রাবী বলেন, আমি তাঁর পেছনে থেকে তা শ্রবণ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুনলেন, এক ব্যক্তি বলছে- (আরবী) যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের সালাম ফিরালেন তখন বললেন, সালাতে কে তা বলেছে? তখন ঐ ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি বলেছি। আর আমি এদ্বারা অন্য কিছু ইচ্ছা করিনি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বারজন ফেরেশতা তা দ্রুত আরশে তুলে নিয়ে গেল এবং তাতে কোন বাধা সৃষ্টি হয়নি।

【36】

কুরআন সম্বন্ধীয় বিবিধ রেওয়ায়ত

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, হারিস ইবন হিশাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার নিকট কি রূপে ওহী আসে? তিনি বললেন, ঘণ্টার শব্দের মত। তারপর তা শেষ হলে দেখা যায় আমি তা মুখস্থ করে ফেলেছি। এটাই আমার নিকট অত্যন্ত কঠিন বোধ হয়। আর কোন কোন সময় আমার নিকট (ওহীর ফেরেশতা) মানুষের বেশে আগমন করে তা আমাকে বলে যান। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, হারিস ইব্ন হিশাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার নিকট ওহী কী রূপে আসে? তিনি বললেন, কোন কোন সময় আমার নিকট ওহী আসে ঘন্টা ধ্বনির ন্যায়, আর এটিই আমার উপর কষ্টদায়ক হয়। আর আমার থেকে তা সমাপ্ত হলে দেখা যায় আমি তা মুখস্ত করে ফেলেছি, যা বলা হয়েছে। আর কোন কোন সময় ফেরেশতা মানুষের বেশ ধরে আমার কাছে এসে কথাবার্তা বলেন। তখন তিনি যা বলেন, তা আমি মুখস্থ করে নেই। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি প্রচন্ড শীতের দিনে তাঁর উপর ওহী অবতীর্ণ হতে এবং যখন তা শেষ হতো তখন তাঁর ললাট থেকে ঘাম দরদর করে পড়তে দেখেছি। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওহী নাযিল হওয়ার সময় কষ্ট অনুভব করতেন। আর তিনি তাঁর ওষ্ঠদ্বয় নাড়তেন। আল্লাহ তা’আলা বললেন, তা তাড়াতাড়ি মুখস্থ করার জন্য আপনি আপনার জিহবা তার সাথে সঞ্চালন করবেন না। কেননা, তা আপনার অন্তরে সংরক্ষণ এবং পাঠ করাবার দায়িত্ব আমারই। পরে তিনি বলেন, (আরবি) সুতরাং আমি তা পাঠ করি। তখন আপনি সেই পাঠের অনুসরণ করুন। তারপর মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করুন ও চুপ থাকুন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যখন জিবরাঈল (আঃ) আগমন করতেন তখন তিনি শুনতে থাকতেন। যখন চলে যেতেন তখন তিনি ঐরূপই পাঠ করতেন যেরূপ তাঁকে পাঠ করানো হতো। ইব্ন মাখরামা (রাঃ) উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ) বলেন, আমি হিশাম ইব্ন হাকীম ইব্ন হিযাম (রাঃ)-কে সূরা ফুরকান পড়তে শুনেছি। তিনি তাতে এমন কতগুলো অক্ষর পাঠ করলেন যা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে পাঠ করান নি। আমি বললাম, আপনাকে এ সূরা কে পড়িয়েছেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আমি বললাম, আপনি মিথ্যা বলছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপে পড়ান নি। আমি তাঁকে তাঁর হাত ধরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে নিয়ে এসে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আমাকে সূরা ফুরকান পড়িয়েছেন। আমি এ ব্যক্তিকে তা পড়তে শুনলাম এমন কতগুলো অক্ষর তাতে তিনি পড়ছেন যা আপনি আমাকে পড়ান নি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে হিশাম! তুমি পড়ে শুনাও তো; তিনি ঐরূপ পড়লেন যেরূপ পূর্বে পড়েছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এরূপই নাযিল হয়েছে। এরপর বললেন, হে উমর! তুমি পড়। তখন আমি পড়লাম, আবারও তিনি বললেন, এরূপই নাযিল হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কুরআন সাত লুগাতে১ অবতীর্ণ হয়েছে। আবদুর রহমান ইব্ন আবদুল কারী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আমি হিশাম ইব্ন হাকীমকে সূরা ফুরকান পড়তে শুনলাম, আমি যেভাবে পড়ি সেভাবে না পড়ে অন্যভাবে। আর আমাকে তা পড়িয়েছেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আমি তো তাকে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছিলাম। অতঃপর আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। তিনি পড়া বন্ধ করলেন না। আমি তার চাদর দ্বারা পেঁছিয়ে তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি একে সূরা ফুরকান পড়তে শুনলাম যেভাবে আপনি আমাকে সূরা ফুরকান পড়িয়েছেন তাছাড়া অন্যভাবে। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, পড়। আমি তাকে যেভাবে পড়তে শুনেছি তিনি সেভাবেই পড়লেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এরূপই নাযিল হয়েছে। এরপর আমাকে বললেন, পড়। আমি পাঠ করার পর বললেন, এরূপই নাযিল হয়েছে। এ কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে সাত লুগাতে (উপ-ভাষায়) অতএব, তোমরা তা পাঠ কর যেরূপ তোমাদের পক্ষে সহজ হয়। উমর ইব্ন খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় হিশাম ইব্ন হাকীমকে সূরা ফুরকান পড়তে শুনেছি। আমি তাঁর কিরাআত লক্ষ্য করে শুনলাম। শুনলাম, তিনি তা পড়ছেন এমন কতকগুলো অক্ষরসহ যা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে পড়ান নি। সালাতের মধ্যেই আমি তাঁকে আক্রমণ করতে মনস্থ করলাম। কিন্তু আমি আমি তাঁর সালাম ফিরান পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। যখন তিনি সালাম ফিরালেন আমি তাঁকে তাঁর চাদর দ্বারা বেঁধে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাকে এ সূরাটি কে শিক্ষা দিয়েছে? যা আপনাকে পড়তে শুনলাম। তিনি বললেন, আমাকে তা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিক্ষা দিয়েছেন। আমি বললাম, আপনি মিথ্যা বলছেন। আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই আমাকে তা পড়িয়েছেন, যা আমি আপনাকে পড়তে শুনেছি। আমি তাঁকে টেনে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি তাঁকে সূরা ফুরকান পড়তে শুনছি এমন কতকগুলো অক্ষরসহ যা আপনি আমাকে পড়ান নি। অথচ আপনিই আমাকে তা শিক্ষা দিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে উমর! তাকে ছেড়ে দাও। হে হিশাম! পড়। তখন তিনি ঐ কিরাআত পড়লেন যা আমি তাকে পড়তে শুনেছি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এরূপই নাযিল হয়েছে। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে উমর! পড়। তখন আমি ঐরূপই পড়লাম, তিনি আমাকে যেরূপ পড়তে শিখিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এরূপই অবতীর্ণ হয়েছে, অতএব রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ কুরআন নাযিল হয়েছে সাত ভাষায়। অতএব, তোমাদের যেরূপ সহজ হয় সেরূপ পড়। উবাই ইব্ন কা’ব (রাঃ) একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনূ গিফারের কূয়ার নিকট ছিলেন। এমন সময় তাঁর নিকট জিবরাঈল (আঃ) আগমন করলেন এবং বললেন, আল্লাহ্ তা’আলা আপনাকে আদেশ করেছেন, আপনি যেন আপনার উম্মতকে এক উপভাষায় কুরআন পড়ান। তিনি বললেন, আমি আল্লাহ্ তা’আলার নিকট তাঁর ক্ষমা কামনা করি, আমার উম্মত এর ক্ষমতা রাখবে না। তারপর তাঁর নিকট দ্বিতীয়বার আগমন করে বললেন, আল্লাহ্ তা’আলা আপনাকে আদেশ করেছেন, আপনি যেন আপনার উম্মতকে দু’হরফ বা উপভাষায় কুরআন পড়ান। তিনি বললেন, আমি আল্লাহ্ তা’আলার নিকট তাঁর ক্ষমা ভিক্ষা করি। আমার উম্মত এরও ক্ষমতা রাখবে না। তারপর জিবরাঈল তাঁর নিকট তৃতীয়বার এসে বললেন, আল্লাহ তা’আলা আপনাকে আদেশ করছেন, আপনি যেন আপনার উম্মতকে তিন হরফ বা উপভাষায় কুরআন পড়ান। তিনি বললেন, আমি আল্লাহ তা’আলার নিকট তাঁর ক্ষমা ভিক্ষা করি। আমার উম্মত এরও ক্ষমতা রাখবে না। এরপর জিবরাঈল তাঁর নিকট চতুর্থবার আগমন করে বললেন, আল্লাহ তা’আলা আপনাকে আদেশ করছেন, আপনি যেন আপনার উম্মতকে সাত হরফ বা উপভাষায় কুরআন পড়ান। যে লুগাতেই পড়ুক না কেন তা-ই সঠিক হবে। উবাই ইব্ন কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে একটি সূরা পড়ালেন। আমি মসজিদে বসা থাকতেই শুনতে পেলাম, এক ব্যক্তি তা আমার কিরাআতের বিপরীত পাঠ করছে। আমি তাকে বললাম, তোমাকে এ সূরা কে শিক্ষা দিয়েছে? সে ব্যক্তি বলল, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আমি বললাম, আমার কাছ থেকে পৃথক হবে না, যতক্ষণ না আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে যাই। আমি তাঁর কাছে এসে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি আমাকে এই সূরাটি যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন। ঐ ব্যক্তি তা উল্টোভাবে পাঠ করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে উবাই! তুমি পড়; আমি পড়লাম। তখন আমাকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি ঠিক পাঠ করেছ। অতঃপর ঐ ব্যক্তিকে বললেন, তুমি পড়। সে আমার পড়ার অনুরূপ পড়ল। তাকেও রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি ঠিকই পড়েছ। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে উবাই! ব্যাপার এই যে, কুরআন সাত প্রকার লুগাতে নাযিল হয়েছে। তার প্রত্যেক প্রকারই রোগ মুক্তি এবং উদ্দেশ্য অনুধাবনে যথেষ্ট। আবু আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, মা’কাল ইব্ন উবায়দুল্লাহ তত সবল নন। উবাই (রাঃ) তিনি বলেন, আমার ইসলাম গ্রহণের পর থেকে আমার অন্তরে কোন প্রকার সন্দেহ উপস্থিত হয়নি। কিন্তু আমি একটি আয়াত পাঠ করলাম, আর তা অন্য একজন আমার কিরআতের বিপরীত পাঠ করল। আমি বললাম, আমাকে এটা রাসূলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিক্ষা দিয়েছেন। ঐ ব্যক্তিও বলল, আমাকেও এটা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিক্ষা দিয়েছেন। তারপর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমেত উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাকে অমুক অমুক আয়াত পাঠ করিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আর সে ব্যক্তি বলল, আপনি কি আমাকে অমুক অমুক আয়াত পাঠ করাননি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। জিবরাঈল (আঃ) আমার ডান পাশে এবং মীকাঈল (আঃ) আমার বামপাশে উপবেশন করলেন। তখন জিবরাঈল (আঃ) বললেন, আপনি কুরআন এক উপভাষায় পাঠ করুন আর মীকাঈল (আঃ) বললেন, তা আরও বাড়িয়ে দিন, তা আরও বাড়িয়ে দিন। এমনিভাবে তা সাত উপভাষায় পৌঁছলো। আর প্রত্যেক উপভাষায়ই রোগ মুক্তি এবং উদ্দেশ্য অনুধাবনে যথেষ্ট। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কুরআন ওয়ালার দৃষ্টান্ত এক বাঁধা উটের মালিকের ন্যায়। যখন সে তার যত্ন করে তখন তাকে ধরে রাখে। আর যখন তাকে ছেড়ে দেয় তখন তা চলে যায়। আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, কত মন্দ পরিণতি ঐ ব্যক্তির জন্য, যে বলে আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গিয়েছি। বরং তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। কুরআন স্মরণ রেখ। কেননা তা মানুষের অন্তর থেকে চতুষ্পদ জন্তুর তার রশি থেকে পালাবার চেয়েও তাড়াতাড়ি অন্তর্হিত হয়ে পড়ে।

【37】

ফজরের সুন্নত দু’ রাকা’আতে কিরাআত

ইব্ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সুন্নত দু’রাকাআতের প্রথম রাকাআতে সূরা বাকারার (আরবি) এই আয়াতখানা শেষ পর্যন্ত পাঠ করতেন। আর দ্বিতীয় রাকআতে (আরবি) আয়াতখানা পাঠ করতেন। (সূরা আল-ইমরান)

【38】

ফজরের সুন্নত দু’ রাকা’আতে সূরা কাফিরুন ও ইখলাস পড়া

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সুন্নত দু’ রাকা’আতে (আরবি) এবং (আরবি) পাঠ করেছেন।

【39】

ফজরের সুন্নত দু’ রাক’আত তাড়াতাড়ি আদায় করা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলাম, তিনি ফজরের (সুন্নত) দু’ রাক’আত আদায় করতেন এবং উক্ত দু’ রাক’আত এত তাড়াতাড়ি আদায় করতেন যে, আমি বলতাম-তিনি কি ঐ রাক’আতদ্বয়ে সূরা ফাতিহা পড়েছেন?

【40】

ফজরের সালাতে সূরা রূম পাঠ করা

মুহাম্মদ ইব্ন বাশ্শার (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি ফজরের সালাত আদায় করলেন এবং তাতে সূরা রূম পড়লেন। এতে তাঁর কিরাআত এলোমেলো হয়ে গেলো। যখন তিনি সালাত শেষ করলেন তখন বললেন, ঐ সকল লোকের কি হলো, তারা আমাদের সাথে সালাত আদায় করে অথচ উত্তম রূপে পবিত্রতা অর্জন করে না। তারাই আমাদের কিরাআত এলোমেলো করে ফেলে।

【41】

ফজরের সালাতে ষাট থেকে একশত আয়াত পড়া

আবু বরযা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সালাতে ষাট থেকে একশত আয়াত পাঠ করতেন।

【42】

ফজরের সালাতে সূরা কাফ পাঠ করা

উম্মে হিশাম বিনতে হারিসা ইব্ন নুমান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে সালাতে শরীক হয়ে সূরা কাফ মুখস্থ করেছি। তিনি ঐ সালাতে তা পাঠ করতেন। যিয়াদ ইব্ন ইলাকা (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আমার চাচাকে বলতে শুনেছি, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করেছি। তিনি এর এক রাক’আতে (আরবি) পাঠ করলেন। (হাদীসের অন্যতম রাবী শু’বা বলেন) তারপর বাজারের ভিড়ের মধ্যে তাঁর সাথে দেখা হলে তিনি বললেন, সূরা কাফ পড়েছিলেন।

【43】

ফজরের সালাতে সূরা ‘ইযাশ্ শামসু কুব্বিরাত’ পাঠ করা

আমর ইব্ন হুরায়ছ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ফজরের সালাতে (আরবী) পাঠ করতে শুনেছি।

【44】

ফজরের সালাতে মু’আওয়াযাতায়ন পড়া

উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মু’আওয়াযাতায়ন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। উকবা বলেন, তারপর রাসূলূল্লাহ্ ((সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত সূরাদ্বয় দ্বারা আমাদের ফজরের সালাতের ইমামতি করলেন।

【45】

মু’আওয়াযাতায়ন পাঠের ফযীলত

উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে পেছনে চললাম। তখন তিনি ছিলেন আরোহী। আমি তাঁর পায়ে হাত রেখে বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে সূরা হুদ এবং সূরা ইউসুফ পড়িয়ে দিন। তিনি বললেন, তুমি সূরা নাস ও সূরা ফালাক অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাশীল কোন কিছুই পাঠ করবে না। উকবা ইব্ন আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আজ রাতে আমার উপর কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়েছে। তার ন্যায় আর কোন আয়াতই দেখা যায়নি। তা হলো সূরা ফালাক এবং সূরা নাস।

【46】

জুমু’আর দিন ফজরের সালাতে কিরাআত

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আর দিন ফজরের সালাতে (আরবি) এবং (আরবি) সূরা পাঠ করতেন। ইব্ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আর দিন ফজরের সালাতে (আরবি) এবং (আরবি) সূরা পাঠ করতেন।

【47】

কুরআনের সিজদাহ সমূহ, সূরা সোয়াদ-এ সিজদা

ইব্ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা সোয়াদে সিজদা করেছেন এবং বলেছেন, দাউদ (আঃ) তওবা করার জন্য এ সিজদা করেছেন, আর আমরা শোকর আদায়ের জন্য সিজদা করি, (যে আল্লাহ তা’আলার হযরত দাউদ (আঃ)-এর দোয়া কবূল করেছেন।)

【48】

ওয়ান নাজমি সূরায় সিজদার বর্ণনা

মুত্তালিব ইব্ন আবু ওদাআ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় সূরা নাজম পাঠ করে সিজদা করলেন। তখন তাঁর নিকট যাঁরা ছিলেন তাঁরাও সিজদা করলেন, আমি তখন আমার মাথা উঠিয়ে রাখলাম এবং সিজদা করতে অস্বীকার করলাম। আর তখন (আবু ওদাআর পুত্র) মুত্তালিব ইসলাম গ্রহণ করেনি। আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা নাজম পাঠ করে সিজদা করলেন।

【49】

সূরা নাজম- এ সিজদা না করা

আতা ইব্ন ইয়াসার (রাঃ) যে, তিনি যায়দ ইব্ন ছাবিত (রাঃ)-কে ইমামের সাথে কিরাআত পড়া সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তিনি বললেন, ইমামের সাথে কোন সালাতে কিরাআত নেই। আর বলেন, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে ওয়ান নাজমি পড়েছেন কিন্তু তিনি সিজদা করেন নি।

【50】

(আরবী) এ সিজদা করা

আবু সালমা ইব্ন আবদুর রহমান যে, আবু হুরায়রা (রাঃ) তাঁদের নিয়ে (আরবি) পাঠ করলেন। আর তাতে সিজদা করলেন। সিজদা শেষ করে তাঁদের সংবাদ দিলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতে সিজদা করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আরবি) সূরায় সিজদা করেছেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে (আরবি) এবং (আরবি).সূরায় সিজদা করেছি। আবু হুরায়রা (রাঃ) অনুরূপ বর্ণিত আছে। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আবু বকর (রাঃ) এবং উমর (রাঃ) (আরবী) সূরায় সিজদা করেছেন এবং তাঁদের থেকে যিনি উত্তম তিনিও।

【51】

ইকরা বিস্‌মি রাব্বিকাতে সিজদা করা

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, উমর এবাং তাদের চেয়ে উত্তম ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আরবী) এবং (আরবী) সূরাদ্বয়ে সিজদা করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে (আরবী) এবং (আরবী) সূরাদ্বয়ে সিজদা করেছি।

【52】

ফরয সালাতে সিজদা করা

আবু রাফি (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা)-এর পেছনে ইশার সালাত আদায় করেছি। তিনি (আরবী) পাঠ করে তাতে সিজদা করলেন। যখন সালাত শেষ করলেন, আমি বললাম, হে আবু হুরায়রা! আমরা তো এ সিজদা করতাম না। তিনি বললেন, এ সিজদা করেছেন আবুল কাসেম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তখন আমি তাঁর পেছনে ছিলাম। অতএব, আমি সর্বদা এ সিজদা করতে থাকব, যতদিন না আমি আবুল কাসেম-এর সঙ্গে মিলিত হব।

【53】

দিনের কিরাআত

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন প্রত্যেক সালাতেই কিরাআত রয়েছে। অতএব যা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের শুনিয়ে পড়তেন আমরা তা তোমাদের শুনিয়ে পড়বো, আর তিনি যা আমাদের থেকে চুপে-চুপে পড়েছেন তা আমরা তোমাদের থেকে চুপে-চুপে পড়ব। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, প্রত্যেক সালাতে কিরাআত রয়েছে। অতএব, যা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)আমাদের শুনিয়ে পড়তেন তা আমরা তোমাদের শুনিয়ে পড়বো। আর যা তিনি নীরবে পড়েছেন আমরাও তা তোমাদের থেকে নীরবে পাঠ করব।

【54】

জোহরের কিরাআত

বারা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পেছনে জোহরের সারাত আদায় করতাম। তখন আমরা সূরা লোকমান এবং যারিয়াতের কয়েক আয়াতের পর তা থেকে একটি আয়াত শুনতাম। আবু বক্‌র ইব্‌ন নযর তিনি বলেন, আমরা ‘তফ’ নামক স্থানে আনাস (রাঃ)-এর নিকট ছিলাম। তিনি তাদের নিয়ে জোহরের সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষে তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে জোহরের সালাত আদায় করেছি। তিনি দু’রাকাআতে আমাদের জন্য সাব্বিহিসমা- রাব্বিকাল আলা এবং হাল আতাকা হাদীসুল গাশিয়াহ পাঠ করলেন।

【55】

জোহরের সালাতে প্রথম রাকাআতে কিয়াম লম্বা করা

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, জোহরের সালাত আরম্ভ হল। এরপর কোন ব্যক্তি বাকী-এর দিকে গমন করে তার প্রয়োজন শেষ করত। তারপর উযূ করে এসে দেখতে পেত রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রথম রাকাআতে রয়েছেন। তিনি তা এত দীর্ঘ করতেন। আবু কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে জোহরের সালাত আদায় করতেন। তিনি এর প্রথম দু’রাকাআতে সূরা পাঠ করতেন এবং আমাদের এক/আধ আয়াত শুনাতেন, তিনি জোহর সালাতের (প্রথম) রাকাআত এবং প্রথম রাক‘আত অর্থাৎ ফজর সালাতের প্রথম রাকাআত লম্বা করতেন (দ্বিতীয় রাকাআতের তুলনায়)।

【56】

জোহরের সালাতে ইমামের আয়াত শুনা যায় এমনভাবে পাঠ করা

আবু কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জোহর এবং আসরের প্রথম দু’রাকা‘আতে সূরা ফাতিহা এবং দূটি সূরা পাঠ করতেন। আর কোন কোন সময় আমাদের আয়াত শুনাতেন। আর তিনি প্রথম রাকাআত লম্বা করতেন।

【57】

জোহরের দ্বিতীয় রাকআতে কিয়াম সংক্ষিপ্ত করা

আবু কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে জোহরের সালাত আদায় করতেন। প্রথম দু’রাকাআতে আমাদের কখনো কখনো কিরাআত শুনাতেন। তিনি প্রথম রাকআত লম্বা করতে আর দ্বিতীয় রাকআত সংক্ষিপ্ত করতেন। তিনি ফজরের সালাতেও এরূপ করতেন। প্রথম রাকআত লম্বা করতে আর দ্বিতীয় রাকআত সংক্ষিপ্ত করতেন। আর তিনি আসরের সালাতের প্রথম দু’রাকআত আমাদের সাথে নিয়ে এমনভাবে আদায় করতেন যে, প্রথম রাকআত লম্বা করতেন এবং দ্বিতীয় রাকআত সংক্ষিপ্ত করতেন।

【58】

জোহরের সালাতে প্রথম দু’রাকা‘আতে কিরাআত

আবু কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জোহর এবং আসরের সালাতের প্রথম দু’রাকা‘আতে সূরা ফাতিহা এবং অন্য দু’টি সূরা আর শেষের দু’রাকা‘আতে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন। আর কোন সময় আমাদের কিরাআত শুনাতেন। আর তিনি জোহরের প্রথম রাকা‘আত লম্বা করতেন। [১] আবু কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জোহর এবং আসরের প্রথম দু’রাকআতে সূরা ফাতিহা এবং অন্য দু’টি সূরা পাঠ করতেন। আর কোন কোন সময় আমাদের আয়াত শুনাতেন। তিনি জোহরেরর প্রথম রাকআত লম্বা করতেন আর দ্বিতীয় রাকআত সংক্ষিপ্ত করতেন। তিনি এরূপ করতেন ফজরের সালাতেও। জাবির ইব্‌ন সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জোহর এবং আসরের সালাতে ‘ওয়াস্‌সামায়ি যাতিল বুরুজ’ এবং ‘ওয়াস্‌সামায়ি ওয়াত্‌ তারিক’ এবং এতদুউভয়ের মত সূরা পাঠ করতেন। জাবির ইব্‌ন সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জোহর সালাতে ‘ওয়াল লাইলি ইযা ইয়াগ্‌শা’ এবং আসর সালাতে এর মত সূরা এবং ফজর সালাতে এরচেয়েও লম্বা সূরা পাঠ করতেন।

【59】

কিয়াম এবং কিরাআত সংক্ষিপ্ত করা

যায়িদ ইব্‌ন আসলাম (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ)-এর নিকট পৌঁছালাম। তিনি বললেন, তোমরা সালাত আদায় করেছ কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, হে বালিকা! আমার জন্য উযূর পানি আন। আমি অন্য কোন ইমামের পেছনে সালাত আদায় করিনি, যার সালাত তোমাদের এই ইমাম (উমর ইব্‌ন আবদুল আযীয)-এর চেয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাতের সাথে অধিক সাদৃশপূর্ণ। যায়দ বলেন, ‘উমর ইব্‌ন আবদুল আযীয (রহঃ) রুকূ এবং সিজদা পূর্ণ আদায় করতেন। আর দাঁড়ানো এবং বসায় অপেক্ষাকৃত কম দেরী করতেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাতের সাথে অমুকের চেয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ সালাত আর কারও পেছনে আদায় করিনি। সুলাইমান (রাঃ) বলেন -তিনি জোহরের প্রথম দু’রাকআত লম্বা করতেন, শেষের দু’রাকআত সংক্ষিপ্ত করতেন। আর আসরের সালাত সংক্ষিপ্ত করতেন। আর মাগরিবের সালাত কিসারে মুফাস্‌সাল দ্বারা আদায় করতেন। আর ইশার সালাত আওসাতে মুফাস্‌সাল দ্বারা আদায় করতেন। আর ভোরের সালাত অর্থাৎ ফজর তিওয়ালে মুফাস্‌সাল দ্বারা আদায় করতেন।১

【60】

মাগরিবের সালাতে কিসারে মুফাস্‌সাল পড়া

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এমন কোন ব্যক্তির পেছনে সালাত আদায় করিনি যার সালাত অমুক ব্যক্তির চেয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাতের সাথে সঠিক সামাঞ্জস্যপূর্ণ। অতএব, আমরা ঐ ব্যক্তির পেছনে সালাত আদায় করলাম। তিনি জোহরের প্রথম দু’রাকআত লম্বা করতেন, পরের দু’রাকআত সংক্ষিপ্ত করে আদায় করতেন। আসরের সালাতও সংক্ষিপ্ত করে আদায় করতেন। আর মাগরিবে কিসারে মুফাস্‌সাল পড়তেন। আর ইশার সালাত আদায় করতেন ‘ওয়াশ্‌ শামসি ওয়াদ্‌দুহাহা’ এবং এর মত সূরা দ্বারা। আর ফজরের সালাত আদায় করতেন দু’টি লম্বা সূরা দ্বারা।

【61】

মাগরিবে (...আরবী) পড়া

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, এক আনসারী ব্যক্তি দু’টি উট নিয়ে মু‘আয (রাঃ)-এর নিকট গেলেন।তখন তিনি মাগরিব সালাত আদায় করছিলেন। তিনি সূরা বাকারা আরম্ভ করলেন। ঐ ব্যক্তি পৃথকভাবে সালাত আদায় করে চলে গেল। একথা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বললেন, হে মু‘আয! তুমি কি (লোকদের) ফিতনা ও কষ্টে ফেলতে চাও? হে মু‘আয! তুমি কি (লোকদের) ফিতনা ও কষ্টে ফেলতে চাও? তুমি কেন সাব্বিহিস্‌মা রাব্বিকা অথবা ওয়াশ্‌শামসি ওয়াদুহাহা’ অথবা এ জাতীয় সূরা পাঠ করলে না?

【62】

মাগরিবে সূরা মুরসালাত পাঠ করা

উম্মুল ফযল বিন্‌ত হারিস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে তাঁর গৃহে মাগরিবের সালাত আদায় করলেন। তিনি তাতে সূরা ওয়াল মুরসালাত পড়লেন। এরপর তিনি লোকদের নিয়ে তাঁর ইন্তিকালের পূর্বে আর কোন সালাত আদায় করেন নি।১ ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাগরিব সালাতে সূরা ‘ওয়াল মুরসালাত’ পাঠ করতে শুনেছেন।

【63】

মাগরিবে সূরা তূর পাঠ করা

জুবায়র ইব্‌ন মুতয়িম (রাঃ) তিনি বলেন, মাগরিবের সালাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সূরা তূর পড়তে শুনেছি।

【64】

মাগরিবের সারাতে সূরা হা-মীম দুখান পাঠ করা

আবদুল্লাহ ইব্‌ন উতবা ইব্‌ন মাসঊদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিব সালাতে সূরা হা-মীম দুখান পাঠ করেছেন।

【65】

মাগরিবে ‘আলিফ-লাম-মীম-সোয়াদ’ পাঠ করা

যায়দ ইব্‌ন সাবিত (রাঃ) মারওয়ানকে বললেন, হে আবু আবদুল মালিক! আপনি কি মাগরিবের সালাতে (… আরবী) এবং ‘ইন্না আ‘তাইনা’ পড়ে থাকেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি তিনি দীর্ঘ সূরার মধ্যে বড় সূরা ‘আলিফ লাম মীম সোয়াদ’ পড়েছেন।১ মারওয়ান ইব্‌ন হাকাম যায়িদ ইব্‌ন সাবিত (রাঃ) বললেন, আমার কি হলো আমি দেখছি আপনি মাগরিবের সালাতে ছোট ছোট সূরা পড়লেন। অথচ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি তিনি তাতে দু’টি দীর্ঘ সূরার মধ্য থেকে যে সূরা অধিক দীর্ঘ তা পাঠ করতেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ঐ দীর্ঘ সূরা কি? তিনি বললেন, তা হলো সূরা আরাফ। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাগরিবের সালাতে সূরা আ‘রাফ পাঠ করতেন। আর তিনি তা দু’রাকাআতে ভাগ করেছেন।

【66】

মাগরিবের পর দু’রাকআতে কিরাআত

ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি বিশ বার লক্ষ্য করেছি যে, তিনি মাগরিবের পর দু’রাকআতে এবং ফজরের পূর্বের (সুন্নত) দু’রাকআতে, কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন এবং কুল হুয়াল্লাহু আহাদ পাঠ করেছেন।

【67】

‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ পড়ার ফযীলত

আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এক ব্যক্তিকে যুদ্ধের নেতা করে পাঠালেন। তিনি তাঁর সাথীদের নিয়ে সালাতে কুরআন পাঠ করতেন আর তিনি ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ দ্বারা শেষ করতেন। সঙ্গী লোকের ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ ঘটনা উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, তোমরা তাঁকে জিজ্ঞাসা কর, সে কেন এরূপ করেছে? তারা তাঁকে প্রশ্ন করলে, তিনি বললেন, কেননা তা মহামহিমান্বিত দয়াময়ের গুণ। তাই আমি তা পড়া পছন্দ করি। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা তাঁকে সংবাদ দাও যে, আল্লাহ তা’আলা তাঁকে ভালবাসেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আসলাম। তিনি শুনলেন যে, এক ব্যক্তি পড়ছে (বল, তিনিই আল্লাহ্‌, একক ও অদ্বিতীয় তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি এবং তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।) তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, অবধারিত হয়ে গিয়েছে। আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম, ইয়া রসূলুল্লাহ্‌! কী অবধারিত হয়ে গিয়েছে? তিনি বললেন, জান্নাত। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তে শুনল, সে তা বারবার পড়ছিল। সকাল বেলা সে ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে ঘটনা বর্ণনা করলে তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র শপথ! তা কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য (সওয়াবের দিক থেকে)। আবু আইয়ূব (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন, ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ কুরআনের এক তৃতীয়াংশ।

【68】

ইশার সালাতে ‘সাব্বিহিস্‌মা রাব্বিকাল আ’লা’ পাঠ করা

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, মুআয (রাঃ) দাঁড়িয়ে ইশার সালাত আদায় করলেন এবং তা দীর্ঘায়িত করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে মুআয; তুমি কি (লোকদের) ফিৎনা ও বিপদে ফেলবে? তুমি কি (লোকদের) ফিৎনা ও কষ্টে ফেলবে তুমি সাব্বিহিসমা রাব্বিকা, ওয়াদ্‌দুহা এবং ইযাস্‌সামা উনফাতারাত’ পাঠ কর না কেন?

【69】

ইশার সালাতে ওয়াশ্‌শামসি ওয়াদ্‌দুহা পাঠ করা

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, মুআয ইব্‌ন জাবাল (রাঃ) তাঁর সাথীদের নিয়ে ইশার সালাত আদায় করছিলেন। তিনি সালাতে দীর্ঘ করলে আমাদের মধ্যে এক ব্যক্তি চলে গেল। মু’আয (রাঃ)-কে এ সংবাদ দেয়া হলে তিনি বললেন, সে ব্যক্তি মুনাফিক। ঐ ব্যক্তির নিকট এ সংবাদ পৌছলে সে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেল এবং মু’আয (রাঃ) যা বলেছিলেন তা তাঁকে অবহিত করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, হে মু’আয! তুমি কি (লোকদের মধ্যে) ফিৎনা সৃষ্ঠি করতে চাও? যখন তুমি লোকের ইমামতি করবে তখন ‘ওয়াশ্‌শামসি ওয়াদুহাহা; সাব্বিহিস্‌মা রাব্বিকাল আ’লা, ওয়াল লাইলি ইযা ইয়াগ্‌শা এবং ইকরা বিসমি রাব্বিকা পাঠ করবে। বুরায়দা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সালাতে ‘ওয়াশ্‌শামসি ওয়াদুহাহা বা এ জাতীয় অন্যান্য সূরা পাঠ করতেন।

【70】

ইশার সালাতে সূরা ‘তীন’ পাঠ করা

বারা ইব্‌ন আযিব (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ইশার সালাত আদায় করেছি। তিনি তাতে ওয়াত্তীনি ওয়ায্‌ যায়তুন পড়েছেন।

【71】

ইশার প্রথম রাক’আতে সূরা ‘তীন’ পাঠ করা

বারা ইব্‌ন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সফরে ছিলেন। তিনি ইশার প্রথম রাক’আতে ওয়াত্তীনি ওয়ায্‌ যায়তুন পড়লেন।

【72】

প্রথম দু’রাকআত লম্বা করা

জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ) উমর (রাঃ) সা’দ (রা)-কে বললেন, লোক প্রত্যেক কাজে তোমার বিপক্ষে অভিযোগ করে। এমনকি সালাত সম্পর্কেও। তখন সাদ বললেন, আমি প্রথম দু’রাকআত লম্বা করি আর শেষের দু’রাকআত সংক্ষিপ্ত করি। আর আমি যে সকল সালাত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ইকতিদা করে আদায় করেছি সে সকল সালাতে তাঁর অনুকরণ করতে ত্রুটি করি না। তিনি বললেন, তোমার প্রতি আমার ধারণাও তাই। জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, কূফার কিছু লোক উমর (রাঃ)-এর নিকট সা’দ (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনল, তারা বলল, আল্লাহ্‌র শপথ ! তিনি সালাত উত্তমরূপে আদায় করেন না, তিনি (সাদ) বললেন, আমি তো তাদের নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাতের ন্যায় সালাত আদায় করে থাকি। তা থেকে কোন রকম কম করি না। আমি প্রথম দু’রাকআত লম্বা করি আর শেষের দু’রাকআত সংক্ষিপ্ত করি। তিনি (উমর) বললেন, তোমার প্রতি আমার ধারণা তাই। আর আমি যে সকল সালাত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ইকতিদা করে আদায় করেছি সে সকল সালাতে তাঁর অনুকরণ করতে ত্রুটি করি না। তিনি বললেন, তোমার প্রতি আমার ধারণাও তাই।

【73】

এক রাক’আতে দুই সূরা পাঠ করা

আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ যেসব সূরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাঠ করতেন আমি সেসব সূরার সাথে পরিচিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দশ রাক’আতে অনুরূপ বিশটি সূরা পাঠ করতেন। তারপর তিনি আলকামার হাত ধরে ভিতরে প্রবেশ করলেন। পরে আলকামা আমাদের নিকট বেরিয়ে এলেন। আমরা তাঁকে প্রশ্ন করলাম, তিনি আমাদের সে সকল সূরার সংবাদ দিলেন। আমর ইব্‌ন মুররা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবু ওয়ায়িলকে বলতে শুনেছি, আবদুল্লাহর নিকট এক ব্যক্তি বলল, আমি এক রাক’আতে মুফাস্‌সাল পড়েছি। তিনি বললেন, কবিতার ন্যায় তাড়াতাড়ি পড়া? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ যে সুরাগুলো মিলিয়ে পাঠ করতেন তা আমি জানি। তারপর তিনি মুফাস্‌সালের বিশটি সূরার উল্লেখ করলেন এক রাক’আতে দু’ দু’ সূরা করে। আবদুল্লাহ (রাঃ) যে, তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, আমি এ রাত্রে এক রাক’আতে মুফাস্‌সাল পাঠ করেছি। তিনি বললেন, তাড়াতাড়ি কবিতা আবৃত্তির মত? কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ মুফাস্‌সালের বিশটি সূরা পাঠ করতেন, যেগুলোর আরম্ভ হয়েছে (আরবী) দিয়ে।

【74】

এক সূরার কিয়দংশ পাঠ করা

আবদুল্লাহ ইব্‌ন সায়িব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি কা’বার সম্মুখে সালাত আদায় করলেন। তিনি তাঁর পাদুকাদ্বয় খুলে তাঁর বাম পাশে রাখলেন, তারপর তিনি সূরা মুমিনূন আরম্ভ করলেন। যখন তিনি মূসা বা ঈসা (আঃ)-এর ঘটনায় পৌছলেন, তাঁর কান্নার কারণে কাশির উদ্রেক হলে তিনি রুকূ করলেন।

【75】

আযাবের আয়াতে পৌছলে পাঠকের আল্লাহ্‌র নিকট পানাহ চাওয়া

হুযায়ফা (রাঃ) তিনি এক রাত্রিতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেছেন। তিনি কিরাআত পড়তে পড়তে যখন আযাবের আয়াতে পৌঁছতেন, তখন থেমে যেতেন এবং দোয়া করতেন। আর তিনি রুকূতে বলতেন, সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম, আর সিজদায় বলতেন, সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা।

【76】

রহমতের আয়াতে পৌছে পাঠকের দোয়া করা

হুযায়ফা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাক’আতে সূরা বাকারা, আল-ইমরান এবং নিসা পাঠ করতেন। তিনি যখনই রহমতের আয়াতে পৌঁছতেন প্রার্থনা করতেন। আর আযাবের আয়াতে পৌছলে আশ্রয় ভিক্ষা করতেন।

【77】

বারবার এক আয়াত পাঠ করা

আবু যর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভোর পর্যন্ত একটি আয়াত দিয়েই সালাত আদায় করলেন। আর সে আয়াতখানা হলোঃ (... আরবী)।

【78】

মহান আল্লাহ্‌র বাণী- (...আরবী) -এর ব্যাখ্যা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) (...আরবী) আয়াত সম্বন্ধে তিনি বলেন, যখন এ আয়াত নাযিল হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় চুপে চুপে কুরআন পড়তেন। কিন্ত যখন তাঁর সাথীদের নিয়ে সালাত আদায় করতেন, তখন তাঁর আওয়াজ বুলন্দ করতেন। ইব্‌ন মানী বলেন, তখন তিনি উচ্চৈঃ স্বরে কুরআন পড়তেন। আর মুশরিকরা যখন তাঁর শব্দ শুনত তখন তারা কুরআনকে, কুরআন অবতরণকারীকে এবং যিনি এ কুরআন নিয়ে এসেছেন তাঁকে গালি দিত। তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, আপনার সালাতকে অর্থাৎ সালাতের কিরআতকে উচ্চ করবেন না। কেননা, মুশরিকরা তা শুনে কুরআনকে গালি দিবে। আর আপনার সাথীদের থেকে তা চুপে চুপেও পড়বেন না। তাহলে তারা শুনতে পাবে না, এতদুভয়ের মধ্য পন্থা অবলম্বন করুন। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করতেন। আর মুশরিকরা যখন তাঁর আওয়াজ শ্রবণ করত তখন কুরআনকে এবং যিনি তা আনয়ন করেছেন তাঁকে গালি দিত। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিম্নস্বরে কুরআন পড়তে আরম্ভ করলেন যা সাহাবায়ে কিরাম শুনতে পেতেন না। তখন আল্লাহ তা’আলা নাযিল করলেন, ‘আপনি আপনার সালাত উচ্চৈঃস্বরে পড়বেন না, আবার একেবারে নীরবেও পড়বেন না, বরং এতদুভয়ের মধ্যপন্থা অবলম্বন করুন’।

【79】

উচ্চস্বরে কুরআন পাঠ করা

উম্মি হানী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কুরআন পাঠ শ্রবণ করতাম আমার ঘরের উপর থেকে।

【80】

কিরাআতে স্বর লম্বা করা

কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কুরআন পাঠ কিরূপ ছিল? তিনি বললেন, তিনি তাঁর স্বর লম্বা করে পড়তেন।

【81】

সুললিত কন্ঠে কুরআন পাঠ করা

বারা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা সুন্দর স্বরে কুরআন পাঠ করবে। বারা ইব্‌ন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা সুন্দর স্বরে কুরআন পাঠ করবে। ইব্‌ন আওসাজাহ বলেন, আমি “কুরআন পাঠ সুন্দর কর” এ কথাটি ভুলে গিয়েছিলাম। দাহহাক ইব্‌ন মযাহিম আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ আল্লাহ তা’য়ালা কোন জিনিসকে (এমন মহব্বত ও গুরুত্বের সাথে) শোনেন না যেমন তিনি কুরআন শোনেন ঐ নবীর মুখে যিনি সুললিত কন্ঠের অধিকারী ও সুললিত কন্ঠে উচ্চঃস্বরে আল্লাহর কালাম পাঠ করেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ আল্লাহ তা’য়ালা কোন জিনিসকে ঐরূপ শোনেন না যেরূপ তিনি কুরআন শোনেন, সুললিত কন্ঠের অধিকারী নবীর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুখে যিনি সুললিত কন্ঠে কুরআন পাঠ করেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু মূসার কুরআন পাঠ শ্রবণ করে বললেন, তাঁকে দাঊদ (আঃ)-এর সুললিত কন্ঠস্বর দান করা হয়েছে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু মূসা (রাঃ)-এর কুরআন পাঠ শ্রবণ করে বললেন, তাঁকে দাঊদ (আঃ)-এর সুন্দর স্বর দান করা হয়েছে। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু মূসা (রাঃ)-এর কুরআন পাঠ শ্রবণ করে বললেন, একে দাঊদ (আঃ)-এর সুন্দর স্বর দান করা হয়েছে। ইয়া’লা ইব্‌ন মামলাক (রাঃ) তিনি উম্মে সালামা (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কুরআন পাঠ এবং তাঁর সালাত সম্বন্ধে জিজ্ঞসা করলেন। তিনি বললেন, তোমাদের তাঁর সালাতের সাথে কি সম্বন্ধ ? তারপর তিনি তাঁর কুরআন পাঠের বর্ণনা দিলেনঃ তা ছিল এমন কুরআন পাঠ যার শব্দ শব্দ স্পষ্ট ও পরিস্কারভাবে বোঝা যেত।

【82】

রুকূর জন্য তাকবীর বলা

আবু সালামা ইব্‌ন আবদুর রহমান যখন মারওয়ান আবু হুরায়রা (রা)-কে মদীনায় প্রতিনিধি করে পাঠালেন, তখন তিনি ফরয সালাতে দাঁড়াবার সময় তাকবীর বলতেন। এরপর যখন রুকূ করতেন তাকবীর বলতেন, অতঃপর রুকূ থেকে যখন তাঁর মাথা তুলতেন তখন বলতেন, (আরবি)। আবার যখন সিজদার জন্য নিচু হতেন তখন তাকবীর বললেন। অতঃপর যখন তাশাহহুদ পড়ে দ্বিতীয় রাক’আত শেষ করে উঠতেন তখন তাকবীর বলতেন, এভাবে তিনি সালাত শেষ করতেন। যখন তিনি সালাত শেষ করে সালাম ফিরাতেন তখন মসজিদের লোকদের প্রতি মুখ করতেন এবং বলতেন, আল্লাহর শপথ! তোমাদের চেয়ে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাতের সঙ্গে আমার সালাত অধিক সামঞ্জস্যশীল।

【83】

রুকূর জন্য কানের লতি পর্যন্ত হাত উঠানো

মালিক ইব্‌ন হুয়ায়রিছ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, তিনি যখন তাকবীর বলতেন, আর যখন রুকূ করতেন এবং রুকূ থেকে মাথা তুলতেন তখন স্বীয় উভয় হাত উঠাতেন যা তাঁর কানের নিম্ন ভাগ (লতি) পর্যন্ত পৌছত।

【84】

রুকূর জন্য উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠানো

আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- দেখেছি যখন সালাত আরম্ভ করতেন স্বীয় উভয় হাত তুলতেন কাঁধ পর্যন্ত। এ রকম হাত তুলতেন যখন তিনি রুকূ করতেন এবং রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন।

【85】

তা পরিত্যাগ করা

আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি তোমাদের রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত সম্বন্ধে সংবাদ দেব না? রাবী বলেন, এরপর তিনি সালাতে দাঁড়িয়ে প্রথমবার তাঁর উভয় হাত উঠালেন। তারপর আর উঠালেন না।

【86】

রুকূ’তে পিঠ সোজা রাখা

আবু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যাক্তি রুকূ এবং সিজদায় তার পিঠ সোজা রাখে না তার সালাত পূর্ণ হয় না।

【87】

রুকূতে সর্বাঙ্গ যথাযথভাবে রাখা

আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা রুকূ এবং সিজদা ঠিকঠাকভাবে করো। আর তোমাদের কেউ যেন কুকুরের ন্যায় উভয় হাত (জমিনে) না বিছিয়ে দেয়।

【88】

তৎবীক -হাতের আঙ্গুল মিলিয়ে রাখা

আলকামা এবং আসওয়াদ (রাঃ) তাঁরা উভয়ে আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর সাথে তাঁর ঘরে ছিলেন। তিনি বললেন, তারা কি সালাত আদায় করেছে? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তিনি তাঁদের ইমামতি করলেন। আর তাঁদের দু’জনের মধ্যে দাঁড়ালেন, আযান ও ইকামত ব্যতীত। তিনি বললেন, তোমরা যখন তিনজন হবে তখন এরূপ করবে, আর যখন এর চেয়ে বেশি লোক হবে তখন তোমাদের মধ্যে একজন ইমাম হবে এবং উভয় হাত রানের উপর বিছিয়ে রাখবে। আমি যেন এখনও দেখছি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতের আঙ্গুলের মধ্যস্থিত ফাঁক। আসওয়াদ এবং আলকামা (রাঃ) তাঁরা উভয়ে বলেন, আমরা আবদুল্লাহ ইব্‌ন মাসঊদ (রা)- এর ঘরে তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। তিনি আমাদের মধ্যে দাঁড়ালেন। আমরা আমাদের হাত রানের উপর রাখলাম। তিনি তা টেনে নিলেন এবং আমাদের অঙ্গুলীসমূহের মধ্যে ফাঁক করে দিলেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরূপ করতে দেখেছি। আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সালাত শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি দাঁড়িয়ে তাকবীর বললেন, যখন তিনি রুকু করতে ইচ্ছা করলেন, উভয় হাত হাঁটুদ্বয়ের মধ্যস্থলে রাখলেন, এবং রুকূ করলেন। এ সংবাদ সা’দ (রাঃ)-এর নিকট পৌঁছলে তিনি বললেন, আমার ভাই সত্যই বলেছেন। আমরা এরূপ করতাম। তারপর আমরা এরূপ করতে আদিষ্ট হয়েছি অর্থাৎ হাঁটু ধরে রাখতে।

【89】

তা রহিত হওয়া

মুস’আব ইব্‌ন সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার পিতার পাশে সালাত আদায় করলাম, আর আমি আমার উভয় হাত হাঁটুদ্বয়ের মধ্যস্থলে রাখলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমার উভয় হাতের তালু তোমার হাঁটুদ্বয়ের উপর রাখ। তিনি বলেন, তারপর আমি তা পুনরায় করলাম। এরপর তিনি আমার হাত ধরে বললেন, আমাদের এরূপ করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং আমরা আদিষ্ট হয়েছি হাঁটুর উপর হাত রাখতে। মুস’আব ইব্‌ন সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রুকূ করলাম এবং তাতে তৎবীক করলাম। আমার পিতা বললেন, আমরা পূর্বে এরূপ করতাম। তারপর আমরা আদিষ্ট হয়েছি হাঁটুতে হাত রাখতে। মুস’আব ইব্‌ন সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রুকূ করলাম এবং তাতে তৎবীক করলাম। আমার পিতা বললেন, আমরা পূর্বে এরূপ করতাম। তারপর আমরা আদিষ্ট হয়েছি হাঁটুতে হাত রাখতে।

【90】

রুকূতে হাঁটু জড়িয়ে ধরা

উমর (রাঃ) তিনি বলেন, হাঁটু জড়িয়ে ধরা তোমাদের জন্য সুন্নত করা হয়েছে। অতএব, তোমরা হাঁটু জড়িয়ে ধরবে। আবু আবদুর রহমান সালামী (রহঃ) তিনি বলেন, উমর (রাঃ) বলেছেনঃ সুন্নত হলো হাঁটু জড়িয়ে ধরা।

【91】

রুকূতে হাতের তালু রাখার স্থান

সালিম (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আবু মাসঊদের নিকট আসলাম। তাঁকে বললাম, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত সম্বন্ধে বর্ণনা করুন। তখন তিনি আমাদের সামনে দাঁড়ালেন এবং তাকবীর বললেন, যখন তিনি রুকূ করলেন তখন তাঁর উভয় হাতের তালু হাঁটুদ্বয়ের উপর স্থাপন করলেন। আর তাঁর আঙ্গুলগুলো তার নিচে রাখলেন এবং তাঁর উভয় কনুই পার্শ্বদেশ থেকে দূরে রাখলেন। যাতে তাঁর সকল অঙ্গ সোজা হয়ে গেল। তারপর বললেন, ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ তখন দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন তাঁর সকল অঙ্গ সোজা হয়ে গেল।

【92】

রুকূতে হাতের আঙ্গুল রাখার স্থান

উকবা ইব্‌ন আমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের জন্য ঐরূপ সালাত আদায় করব না যেরূপ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি সালাত আদায় করতে? আমরা বললাম, হ্যাঁ, তখন তিনি দাঁড়ালেন। যখন তিনি রুকূ করলেন তখন তাঁর হাতদ্বয়ের তালু তাঁর উভয় হাঁটুর উপর রাখলেন। আর আঙ্গুলসমূহ রাখলেন তাঁর হাঁটুর নিচের দিকে। আর তাঁর বগল (পার্শ্বদেশ থেকে) পৃথক রাখলেন। তখন তাঁর সকল অঙ্গ সোজা হয়ে গেল। তারপর তিনি তাঁর মাথা উঠালেন এবং দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন তাঁর সকল অঙ্গ সোজা হয়ে গেল। তারপর সিজদা করলেন এবং তাঁর বগল (পার্শ্বদেশ থেকে) পৃথক রাখলেন এবং তাঁর সকল অঙ্গ সোজা হয়ে গেল। তারপর বসলেন এবং সকল অঙ্গ সোজা হয়ে গেল, এরপর আবার সিজদা করলেন এবং সকল অঙ্গ সোজা হয়ে গেল। এরূপে চার রাকাআত আদায় করলেন। তারপর বললেন, এরূপই আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সালাত আদায় করতে দেখেছি। আর তিনি এরূপেই আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করতেন।

【93】

রুকূতে বগল পৃথক করে রাখা

সালিম বাররাদ (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন, আমি কি তোমাদের দেখাব না- রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে সালাত আদায় করতেন? আমরা বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি দাঁড়িয়ে তাকবীর বললেন, যখন তিনি রুকূ করলেন, তাঁর উভয় বগল পৃথক করে রাখলেন। যখন তাঁর সকল অঙ্গ সোজা হয়ে গেল, তিনি তাঁর মাথা উঠালেন, এভাবে তিনি চার রাক’আত আদায় করলেন। তারপর বললেন, এভাবে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সালাত আদায় করতে দেখেছি।

【94】

রুকূতে সর্বাঙ্গ যথাযথভাবে রাখা

আবু হুমায়দ সাঈদী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রুকূ করতেন, তখন তিনি সোজা হয়ে যেতেন। তিনি তাঁর মাথা তুলতেন না। আর তাঁর উভয় হাত হাঁটুর উপর রাখতেন।

【95】

রুকূ’তে কিরাআত পড়ার নিষেধাজ্ঞা

আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে নিষেধ করেছেন, রেশম মিশ্রিত কাপড়, রেশমি কাপড় এবং সোনার আংটি থেকে, আর রুকূ অবস্থায় কিরাআত থেকে। অন্য সময় বলেছেন, রুকূ অবস্থায় কিরাআত থেকে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে সোনার আংটি, রুকূ অবস্থায় কিরাআত, রেশম মিশ্রিত কাপড় এবং কুসুম রংয়ের কাপড় থেকে নিষেধ করেছেন। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে নিষেধ করেছেন, আর আমি বলি না যে, তোমাদের নিষেধ করেছেন- সোনার আংটি, রেশম মিশ্রিত কাপড়, গাড় লাল রংয়ের কাপড় এবং কুসুম রং-এর কাপড় থেকে নিষেধ করেছেন এবং রুকূ অবস্থায় কিরাআত থেকে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে সোনার আংটি, রেশম মিশ্রিত কাপড়, কুসুম রং -এর কাপড়, রুকু অবস্থায় কিরাআত থেকে নিষেধ করেছেন। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে রেশম মিশ্রিত কাপড়, কুসুম রং- এর কাপড়, সোনার আংটি পরিধান করতে এবং রুকূতে কিরাআত থেকে নিষেধ করেছেন।

【96】

রুকুতে প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা বর্ণনা করা

ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর্দা উন্মোচন করলেন, তখন লোক আবু বকর (রাঃ)- এর পেছনে কাতারে দাঁড়ানো ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে লোক সকল! নবুয়তের সুসংবাদ আর অবশিষ্ট থাকবে না, নেক সপ্ন ব্যতিত যা মুসলমান দেখবে এবং তাঁকে দেখানো হবে। এরপর তিনি বললেন, তোমরা শুনে রেখ ! আমাকে নিষেধ করা হয়েছে রুকু অবস্থায় কিরাআত থেকে এবং সিজদা অবস্থায়। রুকুতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা বর্ণনা কর। আর সিজদায় তোমরা দোয়া করতে চেষ্টা কর। তোমাদের জন্য দোয়া কবুল হওয়ার উপযুক্ত সময় এটাই।

【97】

রুকূ’র দোয়া

হুযায়ফা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সালাত আদায় করেছি। তিনি রুকু করতে গিয়ে বললেন, ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম’ আর সিজদা করতে গিয়ে বললেন, ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা’।

【98】

রুকূ’র অন্য প্রকার দোয়া

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিকাংশ সময় রুকূ এবং সিজদায় বলতেনঃ (আরবী)।

【99】

এর অন্য প্রকার দোয়া

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রুকূতে বলতেনঃ (আরবী)।

【100】

রুকূর অন্য প্রকার দোয়া

ইবন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ এর সঙ্গে সালাতে দাঁড়ালাম, যখন তিনি রুকূ করলেন, সূরা বাকারা পড়া পরিমাণ সময় তিনি রুকূতে থেকে বলেছিলেন ----(আরবী)

【101】

এর অন্য প্রকার দোয়া

আলী ইবন আবু তালিব (রাঃ) যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রুকূ করতেন তখন বলতেনঃ (আরবী)।

【102】

অন্য প্রকার দোয়া

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি যখন রুকূ করতেন তখন বলতেন – (আরবী)। মুহাম্মদ ইবনে মাসলামা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নফল সালাত আদায় করতে দাঁড়াতেন তখন রুকূ করে বলতেন (আরবী)।

【103】

রুকূতে কিছু না পড়ার অনুমতি

রিফা’আ ইবনে রাফি বদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল এবং সালাত আদায় করল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে দেখছিলেন। কিন্তু সে তা টের পায়নি। সে সালাত শেষ করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে তাঁকে সালাম করলে তিনি তাঁর সালামের জওয়াব দিয়ে বললেন, ‘যাও পুনরায় সালাত আদায় কর। কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি।’ তিনি (রাবী) বলেন, আমার স্মরণ নেই, দ্বিতীয়বার কিংবা তৃতীয়বারে সে ব্যক্তি বলল, ঐ সত্তার শপথ ! যিনি আপনার উপর কিতাব নাজিল করেছেন। আমি তো খুব চেষ্টা করলাম। অতএব, আমাকে শিখিয়ে দিন এবং দেখিয়ে দিন। তিনি বললেন, যখন তুমি সালাত আদায় করতে ইচ্ছা করবে তখন উত্তমরূপে ওযু করবে। তারপর দাঁড়িয়ে কিবলার দিকে মুখ করবে। তারপর তাকবীর বলবে, এরপর কুরআন পড়বে, তারপর রুকূ করবে ধীরস্থিরভাবে। তারপর মাথা তুলে সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। এরপর সিজদা করবে স্থিরভাবে, তারপর মাথা তুলে স্থিরভাবে বসে পড়বে। আবার সিজদা করবে স্থিরভাবে। যখন তুমি এরূপ করলে তখন তুমি তোমার সালাত পূর্ণ করলে। তা থেকে যতটুকু কম করলে, ততটুকু তোমার সালাত থেকে কম করলে।

【104】

রুকূ পূর্ণ করার আদেশ

আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন রুকূ করবে এবং সিজদা করবে তখন রুকূ ও সিজদা পূর্ণরূপে আদায় করবে।

【105】

রুকূ থেকে উঠার সময় হাত উঠানো

ওয়ায়িল ইবনে হুজর (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পেছনে সালাত আদায় করেছি। আমি তাঁকে দেখেছি তিনি হাত উঠাতেন যখন সালাত আরম্ভ করতেন আর যখন রুকূ করতেন এবং যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা’ বলতেন, এরূপে। (এ বলে হাদীসের অন্যতম রাবী) কায়স ইঙ্গিত করলেন উভয় কানের দিকে।

【106】

রুকূ থেকে ওঠার সময় কানের লতি পর্যন্ত হাত উঠানো

মালিক ইবনে হুয়ারিছ (রাঃ) যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে উভয় হাত উঠাতে দেখেছেন। যখন তিনি রুকূ করলেন আর রুকূ থেকে মাথা উঠালেন এসময় হাতদ্বয় কানের লতি পর্যন্ত পৌঁছত।

【107】

রুকূ থেকে ওঠার সময় কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠানো

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আরম্ভ করতেন তখন কাঁধ পর্যন্ত তাঁর উভয় হাত উঠাতেন। আর যখন তিনি রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এরূপ করতেন। যখন তিনি ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন, তখন ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলতেন। আর তিনি দু’সিজদার মধ্যে হাত উঠাতেন না।

【108】

তা পরিত্যাগের অনুমতি

আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সালাতের ন্যায় সালাত আদায় করবো না? এরপর তিনি সালাত আদায় করলেন, তখন তিনি একবারের অধিক হাত উঠান নি।

【109】

রুকূ থেকে মাথা ওঠাবার সময় ইমাম কি বলবেন ?

ইবনে উমর (রাঃ) যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আদায় আরম্ভ করতেন, তখন তাঁর হাতদ্বয় কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন। আর যখন রুকূর জন্য তাকবীর বলতেন এবং রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন, তখন হাতদ্বয় এরূপ উঠাতেন এবং বলতেন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা’ ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’। আর তিনি সিজদায় এরূপ করতেন না। আবু হুরায়রা (রাঃ) যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন, তখন বলতেন (আরবী)।

【110】

মুকতাদী যা বলবে

আনাস (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়া থেকে ডান কাতে পড়ে গেলেন। তখন লোক তাঁকে দেখার জন্য আসলেন। এমতাবস্থায় সালাতের সময় উপস্থিত হল। তিনি সালাত শেষ করে বললেন, ইমাম তো হন এজন্য তাঁর ইকতিদা করা হবে। যখন সে রুকূ করবে তখন তোমরাও রুকূ করবে। আর যখন সে উঠবে তখন তোমরাও উঠবে। আর যখন ইমাম ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে তখন তোমরা ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলবে। রিফা’আ ইবনে রাফি (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর পেছনে সালাত আদায় করছিলাম। তিনি যখন রুকূ থেকে মাথা ওঠালেন, তখন বললেন, ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’। তাঁর পেছনে এক ব্যাক্তি বলে উঠল। (আরবী) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত শেষ করে বললেন, এখন এ কথা কে বলল? সে ব্যাক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি ত্রিশের ঊর্ধ্বে ফেরেশতাকে দেখেছি তা নিয়ে তাড়াহুরা করছে, কে তা সর্বাগ্রে লিখবে।

【111】

মুকতাদির ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলা

আবু হুরায়রা (রাঃ) যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন ইমাম ‘ সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলেন, তখন তোমরা ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলবে। কেননা, যার কথা ফেরেশতার কথার মত হবে তাঁর পূর্বকৃত পাপ মার্জনা করা হবে। আবু মুসা আশ‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সামনে ওয়াজ করলেন এবং আমাদেরকে আমাদের কর্মপদ্ধতি শিক্ষা দিলেন, সালাত শিক্ষা দিলেন। তিনি বললেন, যখন তোমরা সালাত আদায় করবে, তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করবে। তারপর তোমাদের একজন ইমামতি করবে। যখন ইমাম তাকবীর বলবে তখন তোমরাও তাকবীর বলবে। আর যখন (আরবী) “গাইরিল মাগদূবি আ‘লাইহিম ওয়াদ্দোয়াল্লীন” বলবে তখন তোমরা ‘আমীন’ বলবে। তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তা কবুল করবেন। আর যখন ইমাম তাকবীর বলে রুকূ করবে তখন তোমরাও তাকবীর বলে রুকূ করবে। আর ইমাম রুকূ করবে তোমাদের পূর্বে আর রুকূ থেকে উঠবে তোমাদের পূর্বে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেন, এটা তার পরিপূরক হবে। আর যখন ইমাম বলবে, ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ তখন তোমরা বলবে ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ্‌’। আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কথা শুনবেন। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীর ভাষায় বলেন, যে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করে আল্লাহ তা শ্রবণ করেন। অতঃপর ইমাম যখন তাকবীর বলে সিজদায় যাবে তোমরা তখন তাকবীর বলে সিজদায় যাবে। কেননা, ইমাম তোমাদের পূর্বে সিজদা করে আর তোমাদের পূর্বে মাথা উঠায়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন, এটা তার পরিপূরক। আর যখন বৈঠকের নিকটবর্তী হবে তখন তোমাদের প্রথম কথা হবে (আরবি) এ সাতটি বাক্য হচ্ছে সালাতের পরিপূরক।

【112】

রুকূ থেকে মাথা ওঠানো ও সিজদা করা এর মাঝে কি পরিমান সময় নেয়া হত তার বর্ণনা

বারা ইব্‌ন আযিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রুকূ, রুকূ থেকে মাথা ওঠানো এবং সিজদা ও সিজদার মাঝে বসার সময় প্রায় এক সমান হত।

【113】

এ দাঁড়ানো অবস্থায় যা বলতেন

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন, তখন তিনি বলতেন, (আরবী)। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূর পর যখন সিজদা করতে ইচ্ছা করতেন তখন বলেতেন (আরবী)। আবু সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন, তখন বলেতেন- (আরবী)। হুযায়ফা (রাঃ) তিনি একরাতে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করেন। তিনি যখন তাকবীর বললেন, তখন তাঁকে বলতে শুনলেন (আরবী)। আর তিনি রুকূতে বলতেন (আরবী)। আর যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখন বলতেন, (আরবী)। আর তিনি সিজদায় গিয়ে বলতেন, (আরবী)। আর দু’ সিজদার মধ্যে বলতেন, (আরবী)। আর তাঁর কিয়াম আর রুকূ। রুকূ থেকে যখন মাথা উঠাতেন সে সময়, আর তাঁর সিজদা আর দু’ সিজদার মধ্যবর্তী সময় প্রায় সমান সমান হতো।

【114】

রুকূর পর কুনুত

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একমাস পর্যন্ত রুকূ করার পর কুনূত পাঠ করেছেন, যাতে তিনি বদদোয়া করেছেন রিল যাকওয়ান এবং উসাইয়্যা গোত্রের প্রতি যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করেছে।

【115】

ফজরের সালাতে কুনূত

ইব্‌ন সীরীন (রহঃ) আনাস ইব্‌ন মালিককে প্রশ্ন করা হলো, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি ফজরের সালাতে কুনূত পাঠ করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তাঁকে বলা হলো, তা কি রুকূর পূর্বে না পরে? তিনি বললেন, রুকূর পর। ইব্‌ন সীরীন (রহঃ) যাঁরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করেছেন তাদের কেউ আমার কাছে রেওয়ায়েত করেছেন যে, যখন তিনি দ্বিতীয় রাকাআতে (আরবী) বললেন, তখন কিছুক্ষন দাঁড়ালেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সালাতের দ্বিতীয় রাকাআতে মাথা উঠালেন। তখন বললেন, ইয়া আল্লাহ! ওলীদ ইব্‌ন ওলীদ এবং সালামা ইব্‌ন হিশাম, আইয়াশ ইব্‌ন আবু রাবী‘আ এবং মক্কার দূর্বল মুসলমানদেরকে নাজাত দাও। আর তুমি মুদার গোত্রের উপর তোমার কঠিন আযাব অবতীর্ণ কর। তাদের বছরগুলোকে ইউসুফ (আঃ)-এর বছরগুলোর ন্যায় করে দাও। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে যখন সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন তখন দোয়া করতেন। তারপর সিজদার পূর্বে তিনি দাঁড়িয়ে বলতেন, ইয়া আল্লাহ! ওলীদ ইব্‌ন ওলীদ, সালামা ইব্‌ন হিশাম, আইয়াশ ইব্‌ন আবু রবী‘আ এবং অসহায় মু’মিনদের নাজাত দাও। ইয়া আল্লাহ! মুদার গোত্রের উপর তোমার শাস্তি কঠিন কর। আর তাদের বছরগুলোকে তাদের জন্য ইউসুফ (আঃ)-এর বছরগুলোর ন্যায় করে দাও। তারপর তিনি ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সিজদা করতেন। আর মুদার গোত্রের উপজাতীয়রা তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরোধী ছিল।

【116】

জোহরের সালাতে কুনূত

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাতকে নিকটবর্তী করে দেব।১ রাবী বলেন, আবু হুরায়রা (রাঃ) কুনূত পাঠ করতেন জোহর, ইশা এবং ফজরের সালাতের শেষ রাকাআতে ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলার পর। তিনি মুমিনদের জন্য দোয়া করতেন এবং কাফিরদের অভিসম্পাত করতেন।

【117】

মাগরিবের সালাতে কুনূত

বারা ইব্‌ন আযিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুনূত পাঠ করতেন ফজর এবং মাগরিবের সালাতে।

【118】

কুনূতে অভিসম্পাত করা

আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একমাস পর্যন্ত কুনূত পাঠ করেন। এতে তিনি কয়েকজন লোক কিংবা আরবের কতিপয় গোত্রকে অভিসম্পাত করেন। আর তিনি এ কুনূত রুকূর পর পাঠ করেন। এরপর তা ত্যাগ করেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এক মাস যাবত কুনূত পাঠ করেন যাতে তিনি রিল, যাকওয়ান ও লিহয়ান গোত্রের উপর অভিসম্পাত করেন।

【119】

কুনূতে মুনাফিকদের উপর অভিসম্পাত

আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ফজরের সালাতে শেষ রাকাআতের রুকূ থেকে মাথা ওঠালেন তখন তিনি তাঁকে ইয়া আল্লাহ! অমুক অমুক ব্যক্তির উপর অভিসম্পাত কর বলে কতিপয় মুনাফিকের উপর বদদোয়া করতে শুনেছেন। এসময় আল্লাহ, তা‘আলা নাযিল করেন (আরবী) “তিনি তাদের ওপর ক্ষমাশীল হবেন অথবা তাদের শাস্তি দেবেন- এই বিষয়ে তোমার করণীয় কিছুই নেই; কারন তারা জালিম” (৩: ১২৮)।

【120】

কুনূত পাঠ না করা

আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুনূত পড়েছেন একমাস, যাতে তিনি আরবের গোত্রসমূহ থেকে কোন গোত্রের উপর বদদোয়া করছিলেন। এরপর তা পরিত্যাগ করেন। মালিক ইব্‌ন আশজায়ী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে সালাত আদায় করেছি। তিনি কুনূত পড়েন নি। আর আবু বকর (রাঃ)-এর পেছনে সালাত আদায় করেছি, তিনিও কুনূত পড়েন নি। আর উমর (রা)-এর পেছনে সালাত আদায় করেছি। তিনিও কুনূত পড়েন নি। উসমান (রা)-এর পেছনে সালাত আদায় করেছি, তিনিও কুনূত পড়েন নি। আর আলী (রা)-এর পেছনে সালাত আদায় করেছি, তিনিও কুনূত পড়েন নি।২ তারপর বললেন, হে বৎস! এটা বিদ‘আত (নতুন আবিস্কৃত)।

【121】

সিজদার জন্য পাথরের টুকরা ঠাণ্ডা করা

জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে জোহরের সালাত আদায় করলাম। আমি এক মুষ্টি পাথর টুকরা তা ঠাণ্ডা করার জন্য হাতে নিলাম। তারপর আমি তা আমার অন্য হাতে নাড়াচাড়া করতে লাগলাম। যখন আমি সিজদা করলাম তখন তা আমার কপাল রাখার স্থানে রেখে দিলাম।

【122】

সিজদার জন্য তাকবীর বলা

মুতাররিফ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি এবং ইমরান ইব্‌ন হুসাইন, আলী ইব্‌ন আবু তালিব (রাঃ)-এর পেছনে সালাত আদায় করলাম। তিনি যখন সিজদা করলেন, তখন তাকবীর বললেন। আর যখন তিনি সিজদা থেকে মাথা তুললেন, তখন তাকবীর বললেন। যখন দু‘রাকাতের পর দাঁড়ালেন তখনও তাকবীর বললেন। সালাত শেষ হওয়ার পর ইমরান আমার হাত ধরে বললেন, ইনি [আলী (রাঃ) আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন, তিনি এমন একটি বাক্য বললেন, যার অর্থ হলো- মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত। আবদুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক নীচু হওয়ার সময় এবং ওঠার সময় তাকবীর বলতেন। এবং তাঁর ডানে ও বামে সালাম করতেন। আর আবু বকর এবং উমর (রাঃ) তা করতেন।

【123】

কিরূপে সিজদায় ঝুঁকবে?

হাকীম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করেছি এ কথার উপর যে, আমি সোজা হয়ে দাঁড়ানো অবস্থা ব্যতীত সিজদার জন্য নীচু হব না।

【124】

সিজদার জন্য হাত ওঠানো

মালিক ইব্‌ন হুয়াইরিছ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাতে উভয় হাত ওঠাতে দেখেছেন। যখন তিনি রুকূ করতেন, যখন রুকূ থেকে তাঁর মাথা তুলতেন আর যখন সিজদা করতেন এবং সিজদা থেকে মাথা ওঠাতেন। তাঁর হাতদ্বয় তাঁর উভয় কানের লতি বরাবর হতো। মালিক ইব্‌ন হুয়াইরিছ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাতে উভয় হাত ওঠাতে দেখেছেন। তারপর তিনি পূর্ববত উল্লেখ করেন। মালিক ইব্‌ন হুয়াইরিছ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আরম্ভ করতেন, এরপর তিনি অনুরূপ বর্ণনা করলেন, তাতে অতিরিক্ত বাড়িয়েছেন – আর যখন তিনি রুকূ করলেন, এরূপ করলেন। আর যখন রুকূ থেকে তাঁর মাথা ওঠালেন, এরূপ করলেন, আর যখন তিনি সিজদা থেকে স্বীয় মাথা তুললেন, অনুরূপ করলেন।

【125】

সিজদায় হাত না ওঠানো

ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আরম্ভ করতেন তখন তাঁর হাতদ্বয় ওঠাতেন। আর যখন রুকূ করতেন এবং রুকূ থেকে (মাথা) ওঠাতেন। আর তিনি সিজদায় এরূপ করতেন না।

【126】

সিজদায় সর্বাগ্রে যে অঙ্গ যমীনে পৌঁছাবে

ওয়ায়িল ইব্‌ন হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, যখন তিনি সিজদা করতেন তখন তাঁর হাতদ্বয়ের পূর্বে তাঁর উভয় হাঁটু (যমীনে) স্থাপন করতেন। আর যখন উঠতেন তখন হাঁটুর পূর্বে উভয় হাত ওঠাতেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন তোমাদের কেউ সালাতে বসতে চায় এরপর সে এমনভাবে বসে, যেভাবে উট বসে।১ আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন সিজদা করে তখন সে যেন হাঁটু স্থাপনের পূর্বে তার উভয় হাত স্থাপন করে আর সে যেন উটের বসার মত না বসে।

【127】

সিজদায় মুখমন্ডলের সাথে উভয় হাত স্থাপন করা

ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, উভয় হাতও সিজদা করে যেরূপ মুখমন্ডল সিজদা করে। অতএব, যখন তোমাদের কেউ তার মুখমন্ডল স্থাপন করে তখন সে যেন তার উভয় হাতও স্থাপন করে। আর যখন তা ওঠাবে তখন উভয় হাতকেও ওঠাবে।

【128】

কত অঙ্গের উপর সিজদা ?

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদিষ্ট হয়েছেন সাত অঙ্গের উপর সিজদা করতে। আর তাঁর কাপড় ও চুল একত্র না করতে। আব্বাস ইব্‌ন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, যখন কোন বান্দা সিজদা করে তখন তার সপ্ত অঙ্গ সিজদা করে। তার মুখমণ্ডল, উভয় হাতের তালু, উভয় হাঁটু এবং উভয় পা।

【129】

ললাটের উপর সিজদা করা

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমার দু’চোখ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ললাটে এবং নাকের উপর পানি এবং কাদা মাটির চিহ্ন একুশ তারিখের ভোর থেকে দেখেছে।(সংক্ষিপ্ত)

【130】

নাকের উপর সিজদা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি আদিষ্ট হয়েছি সাত অঙ্গের উপর সিজদা করতে। আর যেন আমি চুল ও কাপড় একত্র করে না রাখি (সে সাত অঙ্গ হচ্ছে) ললাট, নাক, উভয় হাত, উভয় হাঁটু এবং উভয় পা।১

【131】

দু’হাতের উপর সিজদা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি সাত অঙ্গের উপর সিজদা করতে আদিষ্ট হয়েছি। ললাটের উপর, নাকের উপর এবং দু’হাঁটু, দু’হাত এবং দু’পায়ের প্রান্তের ওপরে, আর তিনি হাত দ্বারা ইঙ্গিত করলেন।

【132】

হাঁটুর উপর সিজদা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাত অঙ্গের উপর সিজদা করতে আদিষ্ট হয়েছেন এবং চুল ও কাপড় একত্র করে রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। ঐ সাত অঙ্গ হল-- হাতদ্বয়, উভয় হাঁটু এবং পায়ের আঙ্গুলের কিনারা। সুফিয়ান বলেন, ইব্‌ন তাঊস তাঁর হাতদ্বয় তাঁর ললাটের উপর রাখলেন এবং তা তাঁর নাকের উপর ঘুরালেন এবং আমাদের বললেন, এ হলো একটা। ইমাম নাসাঈ (রহঃ) বলেনঃ আমি এ হাদীস দু’ব্যাক্তি থেকে শুনেছি- মুহাম্মদ ইব্‌ন মনসূর ও আবদুল্লাহ ইব্‌ন মুহাম্মদ। তবে এ হাদীসের শব্দমালা মুহাম্মদ ইব্‌ন মানসূরের।

【133】

পদদ্বয়ের উপর সিজদা করা

আব্বাস ইব্‌ন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, যখন কোন বান্দা সিজদা করে তখন তার সাথে সাত অঙ্গ সিজদা করেঃ তার চেহারা, তার দু’হাতের তালু, দু’হাঁটু এবং দু’পা।

【134】

সিজদায় উভয় পায়ের পাতা খাড়া রাখা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, একরাতে আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে না পেয়ে তাঁর নিকট পৌঁছে দেখি তিনি সিজদায় আছেন আর তাঁর পায়ের পাতাদ্বয় খাড়াবস্থায়। আর তিনি বলছেন- (আরবী)।

【135】

সিজদায় উভয় পায়ের আঙ্গুল খাড়া রাখা

আবু হুমায়দ সা’য়িদী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সিজদার জন্য যমীনের দিকে যেতেন, তখন তিনি তাঁর বাহু উভয় বগল থেকে পৃথক রাখতেন এবং তাঁর উভয় পায়ের আঙ্গুল খাড়া রাখতেন। (সংক্ষিপ্ত)

【136】

সিজদায় হাতের স্থান

ওয়ায়িল ইব্‌ন হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মদীনায় আগমন করে বললাম, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত প্রত্যক্ষ করবো। তিনি তাকবীর বললেন, এবং তাঁর হাতদ্বয় তুললেন যাতে দেখলাম তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় তাঁর কানের নিকটে। যখন তিনি রুকূ করতে ইচ্ছা করলেন তখন তাকবীর বললেন এবং তাঁর হাতদ্বয় তুললেন। অতঃপর তাঁর মাথা ওঠালেন এবং বললেন, ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’। তারপর তাকবীর বললেন এবং সিজদা করলেন। তখন তাঁর হাতদ্বয় কানের ঐস্থানে ছিলো, যেখানে সালাত আরম্ভ করার সময় ছিল।

【137】

সিজদায় বাহূদ্বয় বিছিয়ে দেয়ার নিষেধাজ্ঞা

আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন সিজদায় তার বাহুদ্বয় বিছিয়ে না দেয়, যেমন কুকুর বিছিয়ে দিয়ে থাকে।

【138】

সিজদা করার নিয়ম

আবু ইসহাক (রহঃ) তিনি বলেন, বারা (রাঃ) আমাদেরকে সিজদার নিয়ম বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর হাতদ্বয় মাটিতে স্থাপন করলেন এবং তাঁর নিতম্ব উঠিয়ে রাখলেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে এরূপ করতে দেখেছি। বারা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আদায় করতেন তখন প্রত্যেক অঙ্গ পৃথক পৃথক রাখতেন। আবদুল্লাহ ইব্‌ন মালিক ইব্‌ন বুহায়না (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আদায় করতেন তখন তাঁর হাতদ্বয় এমনভাবে পৃথক রাখতেন যে, তাঁর বগলের শুভ্রতা প্রকাশ পেত। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যদি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে থাকতাম (যখন তিনি সিজদায় থাকতেন) তাহলে তাঁর বগল দেখতে পেতাম। (এই পরিমাণ তিনি বাহুদ্বয় খোলা রাখতেন)। আবদুল্লাহ ইব্‌ন আকরাম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করেছি। তিনি যখন সিজদা করতেন আমি তাঁর বগলের শুভ্রতা দেখতে পেতাম।

【139】

সিজদায় অঙ্গ পৃথক রাখা

মায়মূনা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সিজদা করতেন তখন তাঁর হাতদ্বয় পৃথক রাখতেন। এমনকি যদি একটি বকরীর বাচ্চা তাঁর হাতদ্বয়ের নীচ দিয়ে যেতে চাইতো, যেতে পারত।

【140】

সিজদায় মধ্যপন্থা অবলম্বন

আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সিজদায় মধ্যপন্থা অবলম্বন কর। তোমাদের কেউ যেন, তার বাহুদ্বয় কুকুরের ন্যায় বিছিয়ে না রাখে।

【141】

সিজদায় পিঠ সোজা রাখা

আবু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঐ সালাত পূর্ণ হয় না, যে সালাতে কোন ব্যাক্তি রুকূ ও সিজদায় তার পিঠ সোজা রাখে না।

【142】

কাকের ন্যায় ঠোকর মারার নিষেধাজ্ঞা

আবদূর রহমান ইব্‌ন শিবল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনটি কাজ থেকে নিষেধ করেছেন। কাকের ন্যায় ঠোকর মারা থেকে, চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় হাত বিছিয়ে দেয়া থেকে এবং কোন ব্যাক্তির একস্থানকে সালাতের জন্য নির্দিষ্ট করা থেকে যেরূপ উট কোন স্থান নির্দিষ্ট করে নেয়।

【143】

সিজদায় চুল একত্র করে রাখার নিষেধাজ্ঞা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি সাত অঙ্গে সিজদা করতে এবং সালাতে চুল অথবা কাপড় একত্র করে না রাখার জন্য আদিষ্ট হয়েছি।

【144】

চুলে বেণী করে সালাত আদায়কারীর উদাহরণ

আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি আবদুল্লাহ ইব্‌ন হারিসকে সালাত আদায় করতে দেখেছেন। তখন তাঁর মাথা পেছন দিক থেকে বেণী করা ছিল। তিনি দাঁড়িয়ে তা খুলতে লাগলেন। সালাত শেষ করে তিনি ইব্‌ন আব্বাসের দিকে ফিরে বললেন, আমার মাথার সাথে তোমার কি সম্পর্ক? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, এর উদাহরণ ঐ ব্যাক্তির ন্যায়, যে সালাত আদায় করে আর তার উভয় হাত বাঁধা থাকে।

【145】

সিজদায় কাপড় একত্র করার নিষেধাজ্ঞা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদিষ্ট হয়েছেন সাত অঙ্গের উপর সিজদা করতে। আর তাঁকে নিষেধ করা হয়েছে চুল ও কাপড় একত্র করে রাখতে।

【146】

কাপড়ের উপর সিজদা

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন দুপুরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পেছনে সালাত আদায় করতাম তখন আমরা উত্তাপ থেকে রক্ষা পাবার জন্য আমাদের কাপড়ের উপর সিজদা করতাম।

【147】

সিজদা পূর্ণ করার আদেশ

আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ তোমারা রুকূ এবং সিজদা পূর্ণভাবে আদায় কর। আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদেরকে আমার পেছন থেকে তোমাদের রুকূতে এবং তোমাদের সিজদায় দেখে থাকি।

【148】

সিজদায় কুরআন পড়ার নিষেধাজ্ঞা

আলী ইব্‌ন আবু তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমার বন্ধু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তিনটি কাজ থেকে নিষেধ করেছেন। আমি বলি না যে, লোকদের নিষেধ করেছেন। তিনি আমাকে নিষেধ করেছেন সোনার আংটি পরিধান করতে, রেশম মিশ্রিত কাপড়, কুসুম রংয়ের কাপড় এবং গাঢ় লাল রংয়ের কাপড় পরিধান করতে। আর আমি যেন রুকূ এবং সিজদা অবস্থায় কুরআন পাঠ না করি। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে নিষেধ করেছেন, রুকূ এবং সিজদা অবস্থায় কুরআন পাঠ করতে।

【149】

সিজদায় বেশি বেশি দোয়া করার নির্দেশ

আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে অসুখে ইনতিকাল করেন, সে অসুস্থ অবস্থায় তিনি পর্দা খুললেন, তখন তার মাথার পট্টি বাঁধা ছিল। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আমি পৌঁছিয়েছি, একথা তিনবার বললেন। বস্তুত যথার্থ স্বপ্ন ব্যতীত নবুওতের সুসংবাদ থেকে আর কিছুই বাকি রইল না। বান্দা তা দেখে অথবা তাকে তা দেখানো হয়। তোমরা শুনে রেখ ; আমাকে রুকূ এবং সিজদায় কিরাআত থেকে নিষেধ করা হয়েছে। অতএব, যখন তোমারা রুকূ করবে তখন তোমাদের রবের তা’যীম করবে। আর যখন তোমারা সিজদা করবে তখন তোমারা বেশি বেশি দোয়া করার চেষ্টা করবে। কেননা, এটা তোমাদের দোয়া কবুলের উপযুক্ত সময়।

【150】

সিজদায় দোয়া করা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মূনা বিনত হারিছের নিকট রাত যাপন করলাম। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তার নিকট রাত যাপন করলেন। আমি তাঁকে দেখলাম, তিনি তাঁর প্রয়োজনে উঠে দাঁড়ালেন। তিনি পানির পাত্রের নিকট এসে তার ঢাকনা খুললেন। তারপর, তিনি ওযু করলেন এক ধরনের (অর্থাৎ হাত ধুইলেন) পরে তিনি তাঁর বিছানায় আগমন করে নিদ্রা গেলেন। তারপর তিনি পুনরায় ঘুম থেকে জাগলেন এবং পানির নিকট এসে তার ঢাকনা খুলে পূর্ণ ওযু করলেন (সালাতের ওযুর ন্যায়)। তারপর দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন এবং তিনি সিজদায় বলেছিলেন,

【151】

সিজদায় অন্য প্রকার দোয়া

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ এবং সিজদায় বলতেন, (এইখানে একটি দোয়া আছে) এর দ্বারা তিনি কুরআনের মর্ম বর্ণনা করতেন।১ আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকূ এবং সিজদায় বলতেন, (এইখানে একটি দোয়া আছে) মাধ্যমে তিনি কুরআনের মর্ম বর্ণনা করতেন। আয়েশা (রাঃ) (একরাতে) আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর বিছানায় না পেয়ে তাঁকে হাতড়িয়ে তালাশ করতে লাগলাম। আমি মনে করেছিলাম তিনি তাঁর কোন দাসীর নিকট গিয়ে থাকবেন। এমতাবস্থায় আমার হাত তাঁর উপর পতিত হলো, তখন তিনি সিজদায় থেকে বলেছিলেন , (এইখানে একটি দোয়া আছে) আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে না পেয়ে মনে করলাম তিনি হয়তো তাঁর কোন দাসীর নিকট গিয়ে থাকবেন। তাঁকে খুঁজে দেখলাম, তিনি সিজদারত অবস্থায় বলছেন- (এইখানে একটি দোয়া আছে) আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সিজদা করতেন, তখন বলতেন : (এইখানে একটি দোয়া আছে) জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত, তিনি সিজদায় বলতেন : (এইখানে একটি দোয়া আছে)

【152】

অন্য প্রকার দোয়া

মুহাম্মদ ইব্‌ন মাসলামা (রাঃ) যে, রাত্রে যখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নফল সালাতে দাঁড়াতেন। তখন সিজদায় বলতেন, (এইখানে একটি দোয়া আছে) আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে কুরআনের সিজদায় বলতেন (এইখানে একটি দোয়া আছে) আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে না পেয়ে পরে তাঁকে সিজদারত অবস্থায় পেলাম; তাঁর পদদ্বয়ের আঙ্গুলসমূহ ছিল কিবলার দিকে। তাঁকে বলতে শুনলাম, (এইখানে একটি দোয়া আছে) আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে না পেয়ে মনে করলাম তিনি তাঁর অন্য কোন বিবির নিকট গিয়ে থাকবেন। হাতড়িয়ে দেখলাম তিনি রুকু অথবা সিজদা অবস্থায় বলছেনঃ (আরবী) তখন আমি বললাম, আমার মাতা-পিতা আপনার উপর উৎসর্গ হোক। আমি এক অবস্থায় ছিলাম আর আপনি আছেন অন্য অবস্থায়।

【153】

সিজদায় অন্য প্রকার দোয়া

আউফ ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে উঠলাম। তিনি মিসওয়াক করতে আরম্ভ করলেন। তারপর ওযু করে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলেন। তিনি শুরুতেই সূরা বাকারা আরম্ভ করলেন। তিনি কোন রহমতের আয়াতে পৌছালে তাতে দোয়া না করে ছাড়তেন না। আর কোন আযাবের আয়াতে পৌছালে সেখানে থেমে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করতেন। তারপর তিনি রুকূ করলেন, তিনি কিয়ামের সময় পরিমাণ অবস্থান করলেন। তিনি রুকূতে বলছিলেন (আরবী) তারপর তিনি এক রাকাতের সমপরিমাণ সময় সিজদা করলেন। আর সিজদায় বলছিলেন (আরবী) তারপর তিনি আলে-ইমরান পাঠ করলেন। তারপর এক সূরা তারপর আর এক সূরা এরূপ করলেন।

【154】

অন্য প্রকার দোয়া

হুযায়ফা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক রাতে রাসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে সালাত আদায় করলাম। তিনি সূরা বাকারা আরম্ভ করলেন এবং এক শত আয়াত পড়লেন। তিনি রুকূ না করে সামনে চললেন। আমি বললাম, তা দু'রাকআতে শেষ করবেন ও তারপর রুকূ করবেন। তিনি চলতে থাকলেন, এমনকি সূরা নিসা শেষ করলেন। অতঃপর সূরা আলে ইমরান। তারপর তিনি রুকূ করলেন তাঁর কিওয়ামের কাছাকাছি সময় নিয়ে। তিনি রুকূতে বলছিলেনঃ (আরবী) পরে তিনি তাঁর মাথা ওঠালেন এবং বললেন (আরবী) এরপর বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। তারপর সিজদা করলেন এবং সিজদা লম্বা করলেন। আর তিনি সিজদায় বলছিলেন (আরবী) তিনি আল্লাহর ভয় অথবা তাযীমের আয়াত পৌছলেই স্মরণ করতেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রুকু এবং সিজদায় বলতেনঃ (আরবি)

【155】

সিজদায় তাসবীহর সংখ্যা

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাতের সাথে অধিক সামন্জস্যশীল সালাত আদায় করতে এ যুবকের অর্থাৎ উমর ইব্‌ন আবদুল আযীযের মত আর কাউকে দেখিনি। আমরা তাঁর রুকূতে দশ তাসবীহ অনুমান করেছি। আর তার সিজদায়ও দশ তাসবীহ।

【156】

সিজদায় তাসবীহ পরিত্যাগ করার অনুমতি

রিফায়া ইব্‌ন রাফি (রাঃ) তিনি বলেন, এক সময় রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপবিষ্ট ছিলেন আর আমরা তাঁর আশেপাশে বসা ছিলাম। এমন সময় একব্যক্তি প্রবেশ করে কিবলার দিকে এসে সালাত আদায় করল। সে সালাত শেষ করে এসে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম করল এবং দলের অন্যদেরকেও। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, যাও, সালাত আদায় কর। কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। সে ব্যক্তি গিয়ে আবার সালাত আদায় করল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সালাতের প্রতি লক্ষ্য রাখছিলেন। সে ব্যক্তি বুঝতে পারল না, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতে কি ভুল ধরছেন। সে এবারও সালাত শেষ করে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে তাঁকে এবং দলের অন্যদেরকে সালাম করল। এবারও রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সালামের উত্তর দিয়ে তাকে বললেন, যাও, সালাত আদায় কর। কেননা, ‍তুমি সালাত আদায় করনি। সে ব্যক্তি এভাবে দু’বার কি তিনবার সালাত পুনঃ আদায় করলেন। তারপর সে ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আপনি আমার সালাতে কি ভুল পেলেন? তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের কারও সালাত পূর্ণ হয় না যতক্ষণ না সে আল্লাহ তা‘আলা‌ যেরুপ ওযু করতে আদেশ করেছেন সেরুপ ওযু না করে। অর্থাৎ সে তার চেহারা এবং উভয় হাত কুনই পর্যন্ত ধৌত না করে এবং মাথা মসেহ না করে এবং তার উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত না করে। তারপর আল্লাহর তাকবীর না বলে (তাকবীর তাহরীমা না বলে) এবং তাঁর তাহমীদ ও তামজীদ না করে (ছানা না পড়ে)। তারপর কুরআনের যতটুকু সম্ভব পড়বে, আল্লাহ তাকে যতটুকু শিক্ষাদান করেছেন এবং যার অনুমতি দান করেছেন। তারপর তাকবীর বলে রুকু করবে যেন তার সকল অঙ্গ স্থির হয়ে যায়। তারপর বলবে (আরবি) তারপর সোজা হয়ে দাঁড়াবে যেন তার পিঠ সোজা হয়ে যায়। পরে তাকবীর বলে সিজদা করবে যেন তার চেহারা ঠিকভাবে স্থাপিত হয়। আর তার সকল অঙ্গ সোজা হয়ে স্থির হয়ে যায়। এরপর তাকবীর বলবে এবং মাথা তুলে সোজা হয়ে বসবে বসার অঙ্গের উপর। আর পিঠ সোজা রাখবে। তারপর তাকবীর বলে সিজদা করতে যেন তার চেহারা ঠিকভাবে স্থাপিত হয় এবং স্থির হয়ে যায়। যখন এরুপ না করবে তার সালাত পূর্ণ হবে না।

【157】

বান্দা যে অবস্থায় আল্লাহর অধিক নিকটবর্তী হয়

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বান্দা আল্লাহ তা‘আলার অধিক নিকটবতী হয়, যে অবস্থায় সে সিজদারত থাকে। অতএব, তখন তোমরা অধিক দোয়া করতে থাক।

【158】

সিজদার ফযীলত

রাবি‘আ ইব্‌ন কা‘ব আসলামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তার ওযূর পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে আসতাম। একদিন তিনি আমাকে বললেন, তুমি আমার নিকট কিছু চাও। আমি বললাম, আমি বেহেশতে আপনার সঙ্গ কামনা করি। তিনি বললেন, এছাড়া অন্য কিছু কি চাও? আমি বললাম, না, এটাই। তিনি বললেন, তা হলে তুমি অধিক সিজদা দ্বারা তোমার এ কাজে আমাকে সহায়তা কর।

【159】

যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করল তার সওয়াব

মা‘দান ইবন্ তালহা ইয়ামারী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আযাদকৃত দাস ছাওবানের সাথে আমি সাক্ষাৎ করলাম। আমি বললাম, আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলুন যা আমার উপকারে আসবে অথবা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তিনি আমার জবাব না দিয়ে কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। তারপর আমার প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, আপনি সিজদা করতে থাকুন। কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে বান্দাই আল্লাহর উদ্দেশে একটি সিজদা করবে, আল্লাহ তা‘আলা এর বিনিময়ে তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। আর এর দ্বারা তার একটি পাপ মুছে ফেলবেন। মা‘দান (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি আবুদ্ দারদার সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাঁকেও ঐ প্রশ্ন করলাম যা আমি ছাওবান (রাঃ)-কে করেছিলাম। তিনিও আমাকে বললেন, আপনি সিজদাকে অবশ্য করণীয়রুপে গ্রহণ করুন। কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে কোন বান্দা আল্লাহর উদ্দেশে একটি সিজদা করে, আল্লাহ তা‘আলা তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং তার দ্বারা তার একটি পাপ মার্জনা করেন।

【160】

সিজদার স্থান

আতা ইব্‌ন ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এবং আবূ সাঈদ (রা)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলাম। তাঁদের একজন শাফাআতের হাদীস বর্ণনা করলেন, আর অন্যজন ছিলেন নিশ্চুপ। তিনি বলেন, তারপর ফেরেশতা এসে সুপারিশ করবেন এবং রাসূলগণ সুপারিশ করবেন, তারপর তিনি পুলসিরাতের উল্লেখ করে বললেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যাদের অনুমতি দেয়া হবে তাঁদের মধ্যে আমি-ই হবো প্রথম। তারপর যখন আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির বিচারকার্য থেকে অবসর গ্রহণ করবেন এবং দোযখ থেকে যাকে বের করতে ইচ্ছা করবেন তাকে বের করবেন। আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতা ও রাসূলগণকে আদেশ করবেন সুপারিশ করার জন্য। তখন তাঁরা তাদের চিহ্ন দ্বারা চিনে নিবেন যে, আদম সন্তানের সিজদার স্থান ব্যতীত আর সব কিছুই আগুন জ্বালিয়ে ফেলেছে। তারপর তাদের উপর ‘আবে হায়াত’ ঢেলে দেয়া হবে। তখন তারা নবজীবন লাভ করবে যেরুপ স্রোতের ধারে বীজ গজিয়ে ওঠে।

【161】

এক সিজদা অন্য সিজদা থেকে লম্বা হওয়া

শাদ্দাদ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ইশার সালাতে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমাদের দিকে বেরিয়ে আসলেন। তখন তিনি হাসান অথবা হুসায়ন (রা)-কে বহণ করে আনছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে অগ্রসর হয়ে তাঁকে রেখে দিলেন। তারপর সালাতের জন্য তাকবীর বললেন ও সালাত আদায় করলেন। সালাতের মধ্যে একটি সিজদা লম্বা করলেন। (হাদীসের অন্যতম রাবী আবদুল্লাহ বলেন), আমার পিতা (শাদ্দাদ) বলেন, আমি আমার মাথা উঠালাম এবং দেখলাম, ঐ ছেলেটি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিঠের উপর রয়েছেন। আর তিনি সিজদারত। তারপর আমি আমার সিজদায় গেলাম। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত শেষ করলে লোকেরা বলল, ইয়া রাসূলু্ল্লাহ্! আপনি আপনার সালাতের মধ্যে একটি সিজদা এত লম্বা করলেন, যাতে আমরা ধারণা করলাম, হয়তো কোন ব্যাপার ঘটে থাকবে। অথবা আপনার উপর ওহী নাযিল হচ্ছে। তিনি বললেন, এর কোনটাই ঘটেনি। বরং আমার এ সন্তান আমাকে সাওয়ারী বানিয়েছে। আমি তাড়াতাড়ি উঠতে অপছন্দ করলাম, যেন সে তার কাজ সমাধা করতে পারে।

【162】

সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় তাকবীর

আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, তিনি (সালাতের মধ্যে) প্রত্যেক নীচু হওয়ার সময় এবং মাথা উত্তোলনের সময় আর প্রত্যেক দাঁড়ানোর এবং বসার সময় তাকবীর বলতেন এবং তিনি ডান ও বাম দিকে আস্ সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ বলে সালাম করতেন। তখন তাঁর চেহারায় শুভ্রতা দেখা যেত। রাবী বলেন, আর আমি আবু বকর (রাঃ) এবং উমর (রা)-কেও এরুপ করতে দেখেছি।

【163】

প্রথম সিজদা থেকে মাথা ওঠানোর সময় হাতদ্বয় ওঠানো

মালিক ইব্‌ন হুয়ায়রিছ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাতে প্রবেশ করতেন তখন তাঁর হাতদ্বয় ওঠাতেন। আর যখন রুকূ করতেন ঐরুপ করতেন, আর যখন রুকূ থেকে মাথা ওঠাতেন তখনও ঐরুপ করতেন। আর যখন সিজদা থেকে মাথা ওঠাতেন তখনও ঐরুপ করতেন। অর্থাৎ তাঁর হাতদ্বয় ওঠাতেন।

【164】

দু’ সিজদার মাঝে হাত না ওঠানো

আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত আরাম্ভ করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর হাত ওঠাতেন, আর যখন রুকূ করতেন এবং রুকূর পরেও। আর তিনি হাত ওঠাতেন না দু’সিজদার মাঝে।

【165】

দু’সিজদার মধ্যে দোয়া

হুযায়ফা (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে তাঁর পাশে দাঁড়ালেন। তিনি বললেন, (আরবি) তারপর তিনি সূরা বাকারা পড়তে আরাম্ভ করলেন, পরে তিনি রুকূ করলেন। তাঁর রুকূ তাঁর কিয়ামের প্রায় বরাবর ছিল। তিনি রুকূতে বললেন- (আরবি) আর যখন তিনি মাথা উঠালেন, তখন বললেন, (আরবি) আর তিনি তাঁর সিজদায় বলতেন (আরবি) আর তিনি তাঁর দু’সিজদার মধ্যে বলতেন (আরবি)

【166】

দু’সিজদার মধ্যে চেহারা বরাবর হাত উঠানো

নযর ইব্‌ন কাসারী আবু সাহল আযদী (রাঃ) তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইব্‌ন তাঊস (রহঃ) মিনার মসজিদে খায়ফে আমার পাশে সালাত আদায় করলেন। যখন তিনি প্রথম সিজদা করতেন এবং সিজদা থেকে মাথা ওঠাতেন, তখন তিনি তাঁর চেহারা বরাবর তাঁর উভয় হাত ওঠাতেন। তা আমার না-পছন্দ হওয়ায় আমি উহায়ব ইব্‌ন খালিদকে বললাম, এ ব্যক্তি এমন কিছূ করছে যা আমি কাউকে করতে দেখিনি। উহায়ব তাঁকে বললেন, আপনি এমন কিছু করছেন যা আমরা কাউকে করতে দেখিনি, তখন আবদুল্লাহ ইব্‌ন তাঊস বললেন, আমি আমার পিতাকে তা করতে দেখেছি। আর আমার পিতা বলেছেন, আমি আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাসকে এরুপ করতে দেখেছি। আর আবদুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরুপ করতে দেখেছি।

【167】

দু’সিজদার মধ্যে কিভাবে বসবে?

মায়মূনা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সিজদা করতেন তখন তাঁর হাত দু’খানা এত দূরে রাখতেন যে, তাঁর পেছন দিক থেকে তাঁর বগলদ্বয়ের শুভ্রতা দেখা যেত। আর যখন তিনি বসতেন তখন তিনি তাঁর বাম উরুর উপর স্থির হয়ে বসতেন।

【168】

দু’সিজদার মধ্যে বসার পরিমাণ

বারা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাতে তাঁর রুকূ-সিজদা এবং রুকূ থেকে মাথা উত্তোলনের পর দাঁড়ানোর এবং দু’সিজদার মধ্যবর্তী সময় প্রায় বরাবর হতো।

【169】

সিজদার জন্য তাকবীর

আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর উমর ও উসমান (রাঃ) (মাথা) উত্তোলনের সময়, সিজদার সময়, দাঁড়ানোর সময় এবং বসার সময় তাকবীর বলতেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন তাকবীর বলতেন। তারপর যখন রুকূ করতেন তখনও তাকবীর বলতেন। যখন তিনি রুকূ থেকে স্বীয় পিঠ ওঠাতেন তখন বলতেন (আরবি) এরপর যখন তিনি সিজদার জন্য নীচু হতেন, তখনও তাকবীর বলতেন। তারপর যখন তিনি মাথা উত্তোলন করতেন তখন তাকবীর বলতেন। এরপর তিনি সম্পূর্ণ সালাতে এরুপ করতেন এবং সালাত সম্পন্ন করতেন। আর তিনি দু’রাকাআত এর পর বসা থেকে যখন দাঁড়াতেন তখন তাকবীর বলতেন।

【170】

দু’সিজদার পর ওঠার সময় সোজা হয়ে বসা

আবু কিলাবা (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ সূলায়মান মালিক ইব্‌ন হুয়াইরিছ (রাঃ) আমাদের মসজিদে এসে বললেন, আমি তোমাদের দেখাতে ইচ্ছা করি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি কিরুপে সালাত আদায় করতে দেখেছি। (এরপর তিনি সালাত আদায় করেন) তিনি যখন প্রথম রাকা‘আতে শেষ সিজদা থেকে মাথা ওঠালেন তখন বসে পড়লেন। মালিক ইব্‌ন হুয়াইরিছ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাত আদায় করতে দেখেছি। তিনি যখন তাঁর সালাতের বেজোড় রাক‘আত আদায় করতেন তখন সোজা হয়ে বসে ওঠতেন না।

【171】

ওঠার সময় মাটিতে ঠেক লাগানো

আবু কিলাবা (রাঃ) তিনি বলেন, মালিক ইব্‌ন হুয়াইরিছ (রাঃ)আমাদের নিকট এসে বলতেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত সম্বন্ধে বর্ণনা করব না? তারপর তিনি সালাতের সময় ছাড়াই (নফল) সালাত আদায় করতেন। যখন তিনি প্রথম রাকআতে দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা ওঠাতেন, তখন সোজা হয়ে বসতেন। তারপর মাটিতে ঠেক দিয়ে দাঁড়াতেন।

【172】

হাঁটুর পূর্বে হাত ওঠানো

ওয়ায়িল ইব্‌ন হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে দেখেছি, যখন তিনি সিজদা করতেন তখন তাঁর হাঁটুদ্বয় হাতদ্বয়ের পূর্বে রাখতেন। আর যখন তিনি ওঠতেন তখন উভয় হাঁটু ওঠানোর পূর্বে উভয় হাত ওঠাতেন। আবু আবদুর রহমান বলেন, ইয়াযীদ ইব্‌ন হারুন ছাড়া আর কেউ এ হাদীস শরীফ (জনৈক রাবী) থেকে বর্ণনা করেন নি। আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

【173】

ওঠার জন্য তাকবীর বলা

আবু সালমা (রহঃ) আবু হুরায়রা (রাঃ) তাদের (সাহাবীদের) নিয়ে সালাত আদায় করতেন। তিনি যখনই ওঠতেন বা নীচু হতেন তখনই তাকবীর বলতেন। সালাত শেষ করে তিনি বলতেন, আল্লাহর শপথ! তোমাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাতের সাথে আমার সালাত অধিক সামঞ্জস্যশীল। আবু সালমা ইব্‌ন আবদুর রহমান (রহঃ) তাঁরা উভয়েই আবু হুরায়রা (রা)-এর পেছনে সালাত আদায় করেন। যখন তিনি রুকূ করলেন তখন তাকবীর বলতেন। যখন মাথা ওঠালেন তখন বললেন (আরবি) তারপর সিজদা দিতে তাকবীর বললেন এবং যখন তাঁর মাথা ওঠালেন তখনও তাকবীর বললেন। এরপর এক রাক‘আতের পর যখন দাঁড়ালেন তখন তাকবীর বললেন। পরে বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ! আমি তোমাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে অধিক সামঞ্জস্যশীল। পৃথিবী ত্যাগ করা পর্যন্ত তাঁর সালাত এরুপই ছিল।

【174】

প্রথম তাশাহহুদের জন্য কিভাবে বসবে ?

আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, সালাতের নিয়মের মধ্যে এটাও যে, তুমি তোমার বাম পা বিছিয়ে রাখবে এবং ডান পা খাড়া রাখবে।

【175】

তাশাহহুদের বসার সময় পায়ের আঙ্গুল কিবলার দিকে রাখা

আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, সালাতের সুন্নতের মধ্যে এটাও যে, ডান পা খাড়া রাখা আর তার আঙ্গুলসমূহ কিবলার দিকে রাখা এবং বাম পায়ের উপর বসা।

【176】

প্রথম তাশাহহুদের বসার সময় উভয় হাতের স্থান

ওয়ায়িল ইব্‌ন হুজর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলাম। দেখলাম, তিনি যখন সালাত আরাম্ভ করলেন তাঁর হাতদ্বয় ওঠালেন, তা তাঁর স্কন্ধ বরাবর হলো। আর যখন তিনি রুকূ করতে ইচ্ছা করলেন তখনও এরুপ করলেন। তিনি যখন দু’রাক‘আতের পর বসলেন, তখন বাম পা বিছিয়ে দিলেন। আর ডান পা খাড়া রাখলেন। আর তাঁর ডান হাত তাঁর উরুর ‍উপর রাখলেন। আর দোয়ার জন্য তাঁর আঙ্গুল ওঠালেন। আর তাঁরা বাম হাত বাম উরুর উপর রাখলেন। তিনি বলেন, তারপর আমি সম্মুখ দিয়ে তাদের নিকট আসলাম তাদেরকে দেখলাম, তারা কাপড়ের মধ্যে হাত ওঠাচ্ছিলেন।

【177】

তাশাহহুদের সময় চোখের দৃষ্টির স্থান

আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে সালাতে থাকা অবস্থায় তার হাত দ্বারা পাথরের টুকরা নাড়ছে। তার সালাত শেষ হলে তাকে আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, তুমি সালাতে থাকা অবস্থায় পাথরের টুকরা নেড়ো না। কেননা, তা শয়তানের কাজ, বরং তুমি ঐরুপ কর যেরুপ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করতেন। সে ব্যক্তি বলল, তিনি কি করতেন? আবদুল্লাহ (রাঃ)তাঁর ডান হাত ডান উরুর উপর রাখলেন। আর তা ঐ আঙ্গুল দ্বারা কিবলার দিকে ইশারা করলেন যা বৃদ্ধা আঙ্গুলির নিকটবর্তী (অর্থাৎ তর্জনি আঙ্গুল দ্বারা) আর তার দৃষ্টি তার প্রতি রাখলেন। তারপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এরুপই করতে দেখেছি।

【178】

প্রথম তাশাহহুদে আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করা

আবদুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন দুই অথবা চার রাকাআতে বসতেন তাঁর উভয় হাত উরুর উপর রাখতেন। তারপর তাঁর আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন।

【179】

প্রথম তাশাহহুদ কিরুপে করবে?

আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, আমরা যখন দু’রাকআতে বসি তখন আমরা যেন বলি (আরবি) আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা জানতাম না, আমরা প্রত্যেক দু’রাকআতে কি বলব এ ব্যতীত যে, আমরা তাসবীহ পড়তাম তাকবীর বলতাম, আর আমাদের প্রভুর প্রশংসা করতাম এবং বলতাম যে, হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এমন কথা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যার শুরু ও শেষ কল্যানময়। তখন তিনি বললেন দু’রাকআতের পর তোমরা বসে বলবে- (আরবি) আর যার যে দোয়া ভাল লাগে সে দোয়া (পড়ার জন্য) গ্রহণ করবে, তারপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট দোয়া করবে। আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)আমাদের সালাতের তাশাহহুদ এবং প্রয়োজনের সময় পড়ার তাশাহহুদ শিক্ষা দিয়েছেন। সালাতের তাশাহহুদ হলো------ ইয়াহয়া ইবন আদম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সুফিয়ানকে ফরয ও নফল সালাতে এ তাশাহহুদ পড়তে দেখেছি আরা তাঁকে বলতে শুনেছি- আমি আবু ইসহাকের নিকট এ তাশাহহুদ শুনেছি। তিনি শুনেছেন আবুল আহয়াসের নিকট এবং তিনি শুনেছেন আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রা)-এর নিকট এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছেন। আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সাথে ছিলাম। আমারা কিছুই জানতাম না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)আমাদের বললেন, তোমরা প্রত্যেক বৈঠকে বলবে (......আরবী)। আবদুল্লাহ(রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন সালাত আদায় করতাম তখন কি বলব আমরা তা জানতাম না। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের এক পূর্ণাংগ দোয়া শিক্ষা দিলেন। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা বলো (------আরবী) আলকামা (রহঃ) বলেন, ইবন মাসঊদ (রহঃ) এ বাক্যগুলো আমাদের এমনভাবে শিক্ষা দিতেন যেমনি ভাবে তিনি আমাদের কুরআন শিক্ষা দিতেন। ইবন মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাত আদায় করতাম তখন আমারা বলতাম, আসসালামু আলাল্লাহ আসসালামু আলা জিব্রাঈল, আসসালামু আলা মীকাঈল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বললেন, তোমরা আসসালামু আলাল্লাহ বলো না, কেননা আল্লাহ তা’আলা-ই সালাম। বরং তোমরা বলো-(আরবী)। ইবন মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাত আদায় করতাম ও বলতাম (......আরবী) তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা (.........আরবী) বলো না। কেননা, আল্লাহই সালাম বরং তোমরা বলো-(......আরবী)। আব্দুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি তাশাহহদে পড়েছেন, (...আরবী)। আবু আবদুর রহমান বলেন, আবু হাশিম বর্ণনাকারীদের মধ্যে মশহুর নন। আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের তাশাহহুদ শিক্ষা দিয়েছেন। যেরূপ তিনি আমাদের কুরআনের শিক্ষা দিতেন। আর তখন আমার হাত তাঁর হস্ত মুবারক দ্বয়ের মধ্যে থাকতো। (আর তা হচ্ছে)ঃ (...আরবী)।

【180】

তাশাহহদের অন্য প্রকার

হিত্তান ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) আবু মূসা আশ’আরী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে লক্ষ্য করে ওয়াজ করলেন, আমাদের সুন্নত শিখালেন। আমাদের সালাত সম্বন্ধে বর্ণনা করলেন। বললেন, তোমরা তোমাদের কাতার ঠিক করবে। তারপর তোমাদের একজন ইমাম হবে। যখন সে তাকবীর বলবে, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে। আর যখন সে (...আরবী) বলবে, তখন তোমরা (......আরবী) বলবে। তাহলে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের ভালবাসবেন। আর যখন ইমাম তাকবীর বলবে এবং রুকূ করবে তখন তোমরাও তাকবীর বলে রুকু করবে। কারণ ইমাম তোমাদের পুর্বে রুকূ করবে আর তোমাদের পূর্বে মাথা উঠাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন, এটা তার পরিবর্তে হয়ে যাবে। আর যখন ইমাম (...আরবী) বলবে, তখন তোমরা বলবে (...আরবী) আল্লাহ তোমাদের কথা শুনবেন। কেননা আল্লাহ তাঁর নবী (স) এর ভাষায় বলেছেন, আল্লাহ ঐ ব্যক্তির কথা শ্রবণ করেন, যে তাঁর প্রশংসা করে। তারপর যখন ইমাম তাকবীর বলে সিজদা করবে তখন তোমরাও তাকবীর বলে সিজদা করবে। কেননা, ইমাম তোমাদের পুর্বে সিজদা করবে আরা তোমাদের পূর্বে মাথা উঠাবে। আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এটা তার পরিবর্তে। আর যখন বৈঠকে পৌছবে, তখন তোমরা সর্বপ্রথম বলবেঃ (.........আরবী)। হিত্তান ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) তারা (কিছু সংখ্যক লোক) আবু মূসা (রা)-এর সাথে সালাত আদায় করেছেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বলেছেন, যখন শেষ বৈঠকের নিকট হবে তখন তোমাদের প্রথম কথাই হবে (----------আরবী)। ইবন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ঐরূপেই তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন যেভাবে আমাদের কুরআন শিখাতেন, তিনি বলতেন (......আরবী)। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন যেভাবে আমাদের কুরআনের শিক্ষা দিতেন। (তিনি বলতেন) (--------আরবী)।

【181】

প্রথম বৈঠক সংক্ষিপ্ত করা

আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের দুই রাক’আতের পর এমন অবস্থায় হতেন, যেন তিনি গরম পাথরের উপর রয়েছেন। (রাবী বলেন) আমি (আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদকে) এমন জিজ্ঞাসা করলাম বৈঠক থেকে ওঠা পর্যন্ত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এটা তিনি ইচ্ছা করে করতেন।

【182】

(ভুলবশত) প্রথম বৈঠক পরিত্যাগ করা

ইবন বুহায়না (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করলেন, তিনি যে দুই রাকা’আতের পর বসতে ইচ্ছা করেছিলেন, তাতে তিনি না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি সালাত চালু রাখলেন। যখন তিনি সালাতের শেষ দিকে পৌছলেন তখন সালাম ফিরাবার পূর্বে দু’টি সিজদা করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন। ইবন বুহায়না (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে দু’রাক’আতের পরে না বসে দাঁড়িয়ে গেলেন। তখন সাহাবায়ে কিরাম সুবহানাল্লাহ বলে উঠলেন। কিন্তু তিনি সালাত চালিয়ে গেলেন। তারপর যখন তিনি সালাতের শেষ অবস্থায় পৌছলেন, তখন দু’টি সিজদা করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন।

【183】

দ্বিতীয় রাক’আত থেকে দাঁড়াতে তাকবীর বলা

আবদুর রহমান ইবন আমাম (রহঃ) আনাস ইবন মালিক (রাঃ) সালাতে তাকবীর বলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে বললেন, (মুসল্লী) তাকবীর বলবে, যখন সে রুকূতে যাবে, সিজদায় যাবে, সিজদা থেকে তাঁর মাথা ওঠাবে এবং যখন দ্বিতীয় রাক’আত থেকে দাঁড়াবে। হুতায়ম (রহঃ) [আনাস ইবন মালিক (রাঃ)-কে] প্রশ্ন করলেন, কার কাছ থেকে আপনি এগুলো শুনে মনে রেখেছেন? তিনি বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু বকর (রাঃ) এবং ঊমর (রাঃ) থেকে। তখন হুতায়ম (রহঃ) তাঁকে বললেন, আর উসমান (রা)? তিনি বললেন, উসমান (রাঃ) থেকেও (শুনে মনে রেখেছি)। মুতাররাফ ইবন আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আলী ইবন আবু তালিব (রাঃ) একদা সালাত আদায় করছিলেন, তিনি প্রত্যেক নীচু স্থানে অবতরণ এবং উচুতে ওঠার সময় পূর্ণাংগভাবে তাকবীর বলছিলেন। তখন ইমরান ইবন হুসায়ন (রহঃ) বললেন, আলী ইবন আবু তালিব (রাঃ) তিনি আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন।

【184】

শেষ রাক’আতের জন্য দাঁড়াবার সময় হস্তদ্বয় উত্তোলন

আবু হুমায়দ সায়ীদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন দু’ সিজদার পর দাঁড়াতেন, তাকবীর বলতেন এবং হস্তদ্বয় তাঁর উভয় কাঁধ বরাবর উত্তোলন করতেন, যেমন সালাত শুরু করার সময় তিনি করতেন।

【185】

শেষ দু’রাক’আতের জন্য দাঁড়াবার সময় উভয় কাঁধ পর্যন্ত হস্তদ্বয় উত্তোলন

(আবদুল্লাহ) ইবন উমর (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি যখন সালাত আরম্ভ করতেন, তখন তাঁর হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন। আর যখন রুকূতে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, যখন রুকূ থেকে মাথা ওঠাতেন এবং যখন দ্বিতীয় রাক’আত থেকে দাঁড়াতেন তখনও অনুরূপভাবে উভয় কাঁধ বরাবর তাঁর হস্তদ্বয় ওঠাতেন।

【186】

সালাতে হস্তদ্বয় ওঠানো এবং হামদ (আলহামদুলিল্লাহ) ও ছানা (সুবহানা-কাল্লাহ) পাঠ করা

সহল ইবন সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনূ আমর ইবন আউফে (কোন সঙ্কট) মীমাংসার জন্য গেলেন। এরপর সালাতের সময় হলে মুয়াযযিন আবু বকর (রা)-এর কাছে এসে সাহাবীগণকে একত্র করে তাঁদের ইমামতি করতে অনুরোধ করলেন। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে কাতার ফাঁক করে প্রথম সারিতে দাড়িয়ে গেলেন। সাহাবীগণ আবু বকর (রা)-কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আগমন সম্পর্কে অবহিত করার জন্য হাতে তালি দিলেন। আবু বকর (রাঃ) সালাতে (একাগ্রচিত্ততার কারণে) অন্য দিকে লক্ষ্য করতেন না। যখন হাত তালির মাত্রা বেড়ে গেল তিনি বুঝতে পারলেন যে, তাঁদের সালাতে কোন কিছু ঘটেছে। তিনি লক্ষ্য করে রাসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আগমন সম্বন্ধে অবহিত হলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দিকে ইশারা করলেন যে, তুমি নিজ অবস্থায় থাক। তখন আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এ কথার জন্য তাঁর হস্তদ্বয় উত্তোলন পূর্বক আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা ও তাঁর গুণগান করলেন এবং পিছু হটে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অগ্রসর হয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে তিনি আবু বকর (রাঃ) কে বললেন, আমি যখন তোমার প্রতি ইশারা করেছিলাম তখন তোমাকে সালাত আদায় করতে কিসে বারণ করেছিল? তিনি বললেন, ইবন আবু কোহাফার (আবু বকর) জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে ইমামতি করা সমীচীন ছিল না। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণকে বললেন, তোমাদের কি হয়েছিল? তোমরা হাতে তালি দিয়েছিলে কেন? হাতে তালি দেওয়া তো নারীদের জন্য। এরপর বললেন, যদি তোমাদের সালাতে কিছু ঘটে যায় তবে তোমরা তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পড়বে।

【187】

সালাতের শেষে হাত উত্তোলন করে সালাম ফিরানো।

জাবির ইবন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আমাদের কাছে আসলেন। তখন আমরা অর্থাৎ সালাত শেষে সালাম ফিরাবার সময় স্বীয় হস্ত উঠিয়ে রেখেছিলাম। তখন তিনি বললেন, এদের কি হল যে এরা সালাতের শেষে স্বীয় হস্ত উঠিয়ে রেখেছে? যেন সালাতের অবাধ্য ঘোড়ার লেজ। তোমরা সালাতে ধীর স্থির থাকবে। জাবির ইবন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পেছনে সালাত আদায় করছিলাম। তারপর আমরা (সালাত শেষে) হস্ত দ্বারা (ইশারা করে) সালাম ফেরাচ্ছিলাম। তখন তিনি বললেন, এদের কি হল যে, এরা স্বীয় হস্ত দ্বারা সালাম ফিরাচ্ছে? যেন সালাত অবাধ্য অস্থির ঘোড়ার লেজ। এদের প্রত্যেকের জন্য কি এটাই যথেষ্ট নয় যে, সে উরুর উপর হাত রেখে বলে, ‘আসসালামু আলাইকুম, আসসালামু আলাইকুম’।

【188】

সালাত আদায়কালীন ইশারায় সালামের উত্তর দেওয়া

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশ দিয়ে (একদা) যাচ্ছিলাম, তখন তিনি সালাত আদায় করছিলেন। আমি তাঁকে সালাম করলে তিনি ইশারায় আমার সালামের উত্তর দিলেন। আমি এর বেশি কিছুই জানি না যে, তিনি [সুহায়ব (রা)] বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করেছিলেন। যায়দ ইবন আসলাম (রাঃ) তিনি বলেন, (আবদুল্লাহ) ইবন উমর (রাঃ) বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করার জন্য একদা মসজিদে কুবায় প্রবেশ করলেন। এরপর কয়েকজন সাহাবী তাঁকে সালাম করার জন্য তাঁর কাছে আসলেন। সুহায়ব (রা)-ও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম করা হল, তখন তিনি কি করলেন? তিনি বললেন, তিনি হাত দ্বারা ইশারা করলেন। আম্মার ইবন ইয়াসির (রাঃ) তিনি সালাত আদায়কালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম করলেন, তিনি তাঁর সালামের জবাব দিলেন। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে (কোথাও) কোন প্রয়োজনে পাঠালেন, এরপর আমি (এসে) তাঁকে সালাত আদায়রত পেলাম। তখন আমি তাঁকে সালাম করলে তিনি আমার দিকে ইশারা করলেন। যখন সালাত শেষ করলেন, আমাকে ডেকে বললেন যে, তুমি কি আমাকে সালাত আদায় রত অবস্থায় সালাম করেছিলে? [জাবির (রাঃ)বলেন] তখন তিনি পূর্ব দিকে মুখ করে ছিলেন। (কারণ তখন তিনি বাহনের উপর ছিলেন।) জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে (কোন প্রয়োজনে কোথাও) পাঠালেন। তারপর আমি তাঁর কাছে ফিরে আসলাম। তিনি তখন পূর্ব দিকে বা পশ্চিম দিকে সফর করছিলেন। আমি তাঁকে সালাম করলে তিনি হাত দ্বারা ইশারা করলেন। আমি পুনরায় তাঁকে সালাম করলে তিনি হাত দ্বারা ইশারা করলেন। আমি চলে যেতে থাকলে তিনি আমাকে ডাকলেন, হে জাবির! এরপর সাহাবীগণও ডাকলেন, হে জাবির! আমি তাঁর কাছে এসে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনাকে সালাম করলে আপনি তাঁর উত্তর দেন নি (শব্দের মাধ্যমে)। তখন তিনি বললেন, আমি তখন সালাত আদায় করছিলাম।

【189】

সালাতে কংকর স্পর্শ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা

আবু যর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ায় তখন সে যেন কংকর স্পর্শ না করে। কেননা, তখন তাঁর প্রতি (আল্লাহর) রহমত মুতাওজ্জাহ থাকে।

【190】

সালাতে একবার কংকর স্পর্শ করার অনুমতি

মুআয়কীব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যদি তোমার তা (কংকর স্পর্শ) করা একান্তই প্রয়োজন হয়ে পড়ে তবে একবার (করতে পার)।

【191】

সালাতে আকাশের দিকে দেখার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা

আনাস ইবন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মানুষের কি হল যে, তারা সালাতে আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে? এ ব্যাপারে তাঁর কথা এত কঠোর হলো যে, তিনি বললেন, হয় তারা এ থেকে বিরত থাকবে, না হয় অতি দ্রুত তাঁদের দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নেয়া হবে। উবায়দুল্লাহ ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একজন সাহাবী তাঁকে বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন যে, যখন তোমাদের কেউ সালাতে থাকবে তখন সে যেন আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত না করে। যাতে (অতি দ্রুত) তার দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে না নেওয়া হয়।

【192】

সালাতে (কোন দিকে) দেখার ব্যাপারে কঠোরতা

আবু যর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, আল্লাহ্‌ তা'আলা বান্দার প্রতি তার সালাতে দণ্ডায়মান থাকাকালীন পর্যন্ত রহমতের দৃষ্টিপাত করতে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সে অন্য দিকে দৃষ্টিপাত না করে। যখন সে অন্য দিকে দৃষ্টিপাত করে তখন আল্লাহ তা'আলাও তার থেকে রহমতের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন। আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাতে এদিক-ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, তা হল ছোঁ মারা। যা দ্বারা শয়তান সালাতের একাগ্রতা ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ রেওয়ায়ত করেছেন। আয়েশা (রাঃ) সুত্রে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণিত রয়েছে। আবু আতিয়্যা (রহঃ) তিনি বলেন, আয়েশা (রাঃ) বলেছেন, সালাতে এদিক ওদিক দেখা ছোঁ মারা যা দ্বারা শয়তান সালাতের একাগ্রতা ছোঁ মেরে নিয়ে যায়।

【193】

সালাতে ডানে-বামে তাকানোর অনুমতি

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একবার) অসুস্থ হলেন। আমরা তখন তাঁর পেছনে সালাত আদায় করছিলাম। তিনি তখন বসা অবস্থায় ছিলেন আর আবু বক্‌র (রাঃ) তাকবীর বলে মুসল্লীদেরকে তাঁর তাকবীর শুনাচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের প্রতি লক্ষ্য করে আমাদের দাঁড়ানো অবস্থায় দেখলেন। তিনি আমাদের প্রতি ইশারা করলে আমরা বসে গেলাম এবং তাঁর সাথে বসে বসে সালাত আদায় করলাম। যখন তিনি সালাম ফিরালেন তখন বললেন, এখন তোমরা ইরান এবং রোমানদের ন্যায় কাজ করলে। তাঁরা তাঁদের বাদশাহদের সামনে দণ্ডায়মান থাকতো আর বাদশাহরা থাকতো বসা। অতএব, তোমরা সে রকম করবে না, তোমরা স্বীয় ইমামের অনুসরণ করবে। ইমাম যদি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেন, তবে তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবে, আর যদি ইমাম বসে সালাত আদায় করেন তবে তোমরাও বসে সালাত আদায় করবে। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সালাতে ডানে এবং বামে তাকাতেন। কিন্তু তিনি তাঁর ঘাড় তাঁর পিঠের পেছনে ফিরাতেন না।[১]

【194】

সালাতে সাপ এবং বিচ্ছু মারা

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই কালো প্রাণী (সাপ এবং বিচ্ছু)-কে সালাতে হত্যা করার আদেশ করেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই কালো প্রাণীকে সালাতে হত্যা করার আদেশ করেছেন।

【195】

সালাতে শিশু সন্তানকে কোলে তুলে নেওয়া এবং (নিচে) রাখা

আবু কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায়কালীন সময়ে (তাঁর দৌহিত্রী) উমামা (রাঃ)-কে কাঁধে তুলে নিতেন এবং যখন সিজদায় যেতেন তাকে (নিচে) রেখে দিতেন। আবার যখন দাঁড়াতেন কোলে তুলে নিতেন। আবু কাতাদা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলাম যে, তিনি সাহাবীদেরকে নিয়ে ইমামতি করছেন এবং উমামা বিনত আবুল আস (রাঃ)-কে তাঁর কাঁধে তুলে রেখেছেন, যখন তিনি রুকূতে যেতেন তাঁকে (নিচে) রেখে দিতেন এবং যখন সিজদা সমাপন করতেন তাঁকে পুনরায় কাঁধে তুলে নিতেন।

【196】

সালাত আদায়কালীন কিবলার দিকে কয়েক কদম হাটা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, (একবার) আমি দরজা খুলতে চাইলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নফল সালাত আদায় করছিলেন আর দরজা ছিল কিবলার দিকে। তখন তিনি বাম দিকে অথবা কয়েক কদম হেঁটে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন এবং পুনরায় সালাতের স্থানে ফিরে আসলেন।

【197】

সালাতে হাতে তালি দেওয়া

আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, (সালাতে) তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পড়া পুরুষদের জন্য আর হাতে তালি দেওয়া নারীদের জন্য, (মুহাম্মদ) ইব্‌ন মুছান্না (রহঃ) 'সালাতে' এ শব্দটি বেশি বলেছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পড়া পুরুষদের জন্য আর হাতে তালি দেওয়া নারীদের জন্য।

【198】

সালাতে তাসবীহ পড়া

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তাসবীহ পুরুষদের জন্য আর হাতে তালি দেওয়া নারীদের জন্য। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তাসবীহ পুরুষদের জন্য আর হাতে তালি দেওয়া নারীদের জন্য।

【199】

সালাতে গলা খাঁকার দেয়া

আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমার জন্য রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসার একটা নির্দিষ্ট সময় ছিল, তখন আমি তাঁর কাছে আসতাম, আমি যখন তাঁর কাছে আসতাম অনুমতি চাইতাম। যদি তাঁকে সালাতরত পেতাম তবে তিনি গলা খাঁকার দিলে আমি প্রবেশ করতাম, আর অবসর থাকলে আমাকে অনুমতি দিতেন। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষ থেকে আমার জন্য প্রবেশের দুটি নির্দিষ্ট সময় ছিল। একটি রাতে অপরটি দিনে। যখন রাতে প্রবেশ করতাম তখন তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে গলা খাঁকার দিতেন। নুজাই (রাঃ) তিনি বলেন, আলী (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আমার একটা বিশেষ মর্যাদা ছিল যা সৃষ্টি জগতের মধ্যে অন্য কারো জন্য ছিল না, আমি তাঁর কাছে প্রতি রাতের শেষাংশে আসতাম এবং আসসালামু আলাইকুম ইয়া নবীয়াল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! বলতাম। তখন যদি তিনি গলা খাঁকার দিতেন তা হলে আমি ঘরে ফিরে যেতাম আর তা না হলে তাঁর কাছে যেতাম।

【200】

সালাতে কাঁদা

আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসলাম, তখন তিনি সালাত আদায় করছিলেন, আর তাঁর ভিতরে ডেকচির শব্দের ন্যায় শব্দ হচ্ছিল। অর্থাৎ তিনি কাঁদছিলেন।

【201】

সালাতে ইবলীসকে লানত দেয়া এবং তার থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাওয়া

আবুদ্‌দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একবার) সালাতে দাঁড়ালে আমরা তাঁকে বলতে শুনলাম, আমি তোর (ইবলীস) থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। তারপর বললেন, আমি আল্লাহর লানত দ্বারা তোকে লানত দিচ্ছি। (এ বাক্যটি তিনি) তিনবার (বললেন) এবং হাত প্রসারিত করলেন যেন কোন কিছু ধরতে চাচ্ছেন। যখন তিনি সালাত শেষ করলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! (আজ) আমরা সালাতে আপনাকে এমন কিছু বলতে শুনেছি যা ইতিপূর্বে আর কখনো বলতে শুনিনি, আর (আজ) আপনাকে হাত প্রসারিত করতে দেখেছি। তিনি বললেন, আল্লাহর দুশমন ইবলীস অগ্নিস্ফুলিঙ্গ নিয়ে এসেছিল আমার চেহারায় নিক্ষেপ করার জন্য, তখন আমি তিনবার বললাম, আমি তোর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। এরপর আমি তিনবার বললাম – আল্লাহর লানত দ্বারা আমি তোকে লানত দিচ্ছি। এতেও সে যখন পেছনে সরে গেল না, তখন আমি তাকে ধরতে ইচ্ছা করেছিলাম। আল্লাহর শপথ ! যদি আমার ভাই সুলায়মান (আ.)-এর দোয়া না থাকতো তা হলে সে ভোর পর্যন্ত খুঁটির সাথে বাঁধা থাকতো; তার সাথে মদীনার শিশু-কিশোররা খেলা করত।

【202】

সালাতে কথা বলা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদা) সালাতে দাঁড়ালেন আমরাও তাঁর সঙ্গে দাঁড়ালাম, তখন এক বেদুঈন সালাতরত অবস্থায় বলে উঠলো, "ইয়া আল্লাহ! তুমি আমার এবং মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর রহম কর, আর আমাদের সাথে আর কারোর উপর রহম করো না।" রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরালে ঐ বেদুঈনকে বললেন, তুমি একটি প্রশস্ত বস্তুকে সংকুচিত করে দিলে। এর দ্বারা তিনি আল্লাহর রহমতকে বুঝিয়েছেন। [১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) এক বেদুঈন (একদা) মসজিদে প্রবেশ করল এবং দু'রাকআত সালাত আদায় করে বললো, "ইয়া আল্লাহ! তুমি আমার ও মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর রহম কর এবং আমাদের সাথে আর কারো উপর রহম করো না।" রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি একটি প্রশস্ত বস্তুকে সংকুচিত করে দিলে। মু'আবিয়া ইব্‌ন হাকাম সুলামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা নিকট অতীতে জাহেলিয়াতে নিমজ্জিত ছিলাম, তারপর আল্লাহ তা'আলা ইসলাম পাঠালেন। আমাদের মধ্যে কিছু লোক শুভ অশুভ লক্ষণ মানে। তিনি বললেন, তা এক প্রকার কুসংস্কার, যা তাদের মনে উদ্রেক হয়ে থাকে এটা যেন তাদের কোন কাজ থেকে বিরত না রাখে। আমি আরো বললাম, আমাদের মধ্যে কিছু লোক গণকদের কাছে যাতায়াত করে। তিনি বললেন, তোমরা গণকদের কাছে যেয়ো না। তিনি বললেন, "ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমদের মধ্যে কিছু লোক রেখা টেনে থাকে", তিনি বললেন, নবীদের মধ্যে একজন নবী রেখা টানতেন। [ইদ্রীস (আ.) অথবা দানিয়াল [আ.]] অতএব, যার রেখা তাঁর রেখার সাথে মিলে যায় তা সঠিক বলে প্রতিপন্ন হবে। রাবী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সালাতে ছিলাম, এমন সময় এক ব্যক্তি হাঁচি দিলে আমি 'يَرحَمُكَ اللهُ' বললাম, তখন উপস্থিত লোকজন আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতে থাকলে আমি বললাম, তোমাদের মাতারা তোমাদের হারিয়ে ফেলুক! তোমাদের কি হল তোমরা আমার দিকে এরূপ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছ কেন? তখন লোকজন (আশ্চর্যান্বিত হয়ে) তাদের উরুদেশে তাদের হাত মারতে আরম্ভ করলো, আমি যখন দেখলাম যে, তারা আমাকে চুপ করাতে চাচ্ছে আমি (রাগান্বিত না হয়ে) চুপ হয়ে গেলাম। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত শেষ করলেন আমাকে ডাকলেন, তাঁর উপর আমার মাতা-পিতা কোরবান হোক। তিনি (সালাতে আমার অবাঞ্ছিত কথাবার্তার জন্য) আমাকে তিরস্কারও করলেন না এবং কটু কথাও বললেন না। আমি তার পূর্বে বা পরে তাঁর থেকে উত্তম কোন শিক্ষক দেখিনি। তিনি বললেন, আমাদের এ সালাতে কারো কথা বলা সমীচীন ময়। এতো হল তাসবীহ, তাকবীর এবং তিলাওয়াতে কুরআনের সমষ্টি। রাবী বলেন, এরপর আমার একটি বকরীর পাল আমার দিকে এগিয়ে আসল যা আমার দাসী উহুদ এবং জাওয়ানীয়ায় চরাচ্ছিল। আমি দেখলাম যে, বাঘে পাল থেকে একটি বকরী নিয়ে গেছে। আমিও তো এক আদম সন্তান তাই আমি (দাসীর উপর) রাগান্বিত হয়ে গেলাম, যেমন অন্যরাও রাগান্বিত হয়ে থাকে। অতএব, আমি দাসীকে একটা চড় মারলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে তাঁর সংবাদ দিলাম। তিনি চড় মারাকে খুবই অন্যায় কাজ মনে করলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কি তাঁকে (এর প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ) আযাদ করে দেব? তিনি বললেন, আযাদ করে দাও, সে দাসীকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ্‌ কোথায়? সে বললো, আসমানে। তিনি তাঁকে আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কে? সে বললো, আপনি আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। এরপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, "সে মু'মিন, অতএব তাকে আযাদ করে দাও।" যায়দ ইব্‌ন আরকাম (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর যামানায় তাঁর সঙ্গীর সাথে কোন প্রয়োজনে কথা বলছিল, তখন এ আয়াত নাযিল হলঃ حافِظوا عَلى الصَلَواتِ وَالصَلوةِ الوُسطَى وَقوموا للَّهِ قانِتينَ অর্থঃ তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে, বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীতভাবে দাঁড়াবে (২ঃ ২৩৮)। তখন আমাদের (সালাতে) চুপ থাকতে আদেশ করা হল। আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে তাঁর সালাতরত অবস্থায় আসতাম, আমি তাঁকে সালাম করতাম, তিনি উত্তর দিতেন। একদিন আমি তাঁর কাছে এসে তাঁকে সালাম করলাম, তখন তিনি সালাত আদায় করছিলেন কিন্তু তিনি উত্তর দিলেন না। যখন তিনি সালাম ফিরালেন মুসল্লীদের দিকে লক্ষ্য করে বললেন, আল্লাহ তা'আলা সালাতের ব্যাপারে একটি নতুন হুকুম নাযিল করেছেন যে, তোমরা (এতে) আল্লাহর যিকির ছাড়া অন্য কোন কথা বলবে না। আর তা তোমাদের জন্য সমীচীনও নয় আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে দাঁড়াবে। (আবদুল্লাহ) ইব্‌ন মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম করলে তিনি উত্তর দিতেন (কিন্তু) আমরা হাবশা (ইথিওপিয়া) থেকে ফিরে এসে তাঁকে সালাম করলে তিনি উত্তর দিলেন না। তখন আমি নিকট-অতীত এবং দূর-অতীতের স্বীয় ঘটিত কোন অপরাধের কথা চিন্তা করতে লাগলাম ও বসে গেলাম। এরপর তিনি সালাত শেষ করে বললেন, আল্লাহ তা'আলা যখনই ইচ্ছা করেন নতুন নতুন হুকুম নাযিল করেন। তিনি একটি (নতুন) হুকুম নাযিল করেছেন যে, সালাতে কথা বলা যাবে না।

【203】

দ্বিতীয় রাকআতে তাশাহ্‌হুদ না পড়ে যে ভুলে দাঁড়িয়ে যায় সে কি করবে ?

আবদুল্লাহ ইব্‌ন বুহায়না (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাথে দু'রাক'আত সালাত আদায় করে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বসলেন না। মুসল্লীরাও তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেল। যখন তিনি তাঁর সালাত শেষ করলেন এবং আমরা সবাই তাঁর সালাম ফিরাবার অপেক্ষায় ছিলাম, তিনি তাকবীর বললেন এবং বসা অবস্থায় সালাম ফিরানোর পূর্বে দু'টি সিজদা করলেন। তারপর (শেষ) সালাম ফিরালেন। আবদুল্লাহ ইব্‌ন বুহায়না (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি সালাতে (এমন সময়) দাঁড়িয়ে গেলেন যখন তাঁর উপর বসা প্রয়োজন ছিল, তারপর বসা অবস্থায় সালাম ফিরাবার পূর্বে দু'টি সিজদা করলেন।

【204】

যে দু’রাক’আতের পর ভুলে সালাম ফিরিয়ে ফেলল এবং কথা বলে ফেলল সে কি করবে?

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাথে অপরাহ্নের (জোহর ও আসর) দু’সালাতের এক সালাত আদায় করলেন। রাবী বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেছেন যে, তবে কোন সালাত তা আমি ভুলে গেছি। তারপর তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সহ দু’রাকআত সালাত আদায় করে সালাম ফিরিয়ে ফেললেন। এরপর মসজিদে প্রস্থে রাখা একটি কাঠ খন্ডের দিকে অগ্রসর হয়ে তাতে ঠেস দিলেন যেন তিনি রাগান্বিত, আর সব কাজে অগ্রে থাকা সাহাবীগণ মসজিদের দরজা দিয়ে বের হয়ে গেলেন এবং বলতে লাগলেন, সালাত কি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে ? তাঁদের মধ্যে আবূ বকর এবং উমর (রা)-ও ছিলেন। তাঁরা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কথা বলতে সংকোচবোধ করছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আরো একজন সাহাবী ছিলেন যার হাত কিছুটা লম্বা ছিল। (রাবী বলেন) তাঁকে যুল ইয়াদাইন [১] (দু’হাত বিশিষ্ট) বলা হত। তিনি বলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আপনি কি ভুলে গেছেন না সালাত সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে?” রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি ভুলেও যাইনি এবং সালাত সংক্ষিপ্তও হয়নি। রাবী বলেন, তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমবেত সাহাবীগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, যুল ইয়াদাইন যা বলছে তা কি ঠিক ? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। তারপর তিনি মসজিদে ফিরে আসলেন এবং যা ছুটে গিয়েছিল তা আদায় করে নিয়ে সালাম ফিরালেন এবং তাকবীর বলে পূর্বের মত বা তার চেয়েও দীর্ঘ একটা সিজদা করলেন। তারপর মাথা উঠিয়ে তাকবীর বললেন আবার তাকবীর বলে পূর্বের মত বা তার চেয়েও দীর্ঘ আরো একটা সিজদা করলেন। পরে মাথা উঠিয়ে তাকবীর বললেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’রাকআত সালাতের পর সালাম ফিরিয়ে ফেললেন। তখন তাঁকে যুল ইয়াদায়ন (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), সালাত কি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে নাকি আপনি ভুলে গেছেন ? তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যুল ইয়াদাইন কি সত্যি বলছে ? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন এবং দু’রাকআত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। তারপর তাকবীর বলে পূর্বের সিজদার মত বা তার চেয়েও দীর্ঘ একটা সিজদা করলেন। পরে মাথা ওঠালেন এবং পূর্বের সিজদার মত বা তার চেয়েও দীর্ঘ আরো একটা সিজদা করে মাথা ওঠালেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদা) আমাদের নিয়ে আসরের সালাত আদায় করলেন। তিনি দু’রাকাআতের পর সালাম ফিরিয়ে ফেললে যুল ইয়াদায়ন (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌ ! সালাত কি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে নাকি আপনি ভুলে গেছেন? তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এর কোনটাই না। যুল ইয়াদায়ন (রাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই এতদুভয়ের কোন একটা হবে ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, যুল ইয়াদায়ন কি সত্যি বলছে? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। তারপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবশিষ্ট সালাত পুরা করলেন এবং সালামের পর বসা অবস্থায় দু’টি সিজদা করলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জোহরের দু’রাকাআত সালাত আদায় করে সালাম ফিরালেন। তখন সাহাবীগণ বললেন, সালাত কি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে ? তখন তিনি দাঁড়িয়ে দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন। তারপর সালাম ফিরিয়ে দু’টি সিজদা করলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা সালাত আদায়কালে দ্বিতীয় রাকআতে সালাম ফিরিয়ে ফেললেন। সালাত শেষ করে ফেলার সময় যুল ইয়াদায়ন (রাঃ) তাঁকে পেয়ে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! সালাত কি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে না আপনি ভুলে গেছেন? তিনি বললেন, সালাত সংক্ষিপ্তও করা হয়নি আর আমিও ভুলিনি। যুল ইয়াদয়ন (রাঃ) বললেন, আপনাকে যিনি সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ! (নিশ্চয় এতদুভয়ের কোনটা হয়েছে) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যুল ইয়াদায়ন (রাঃ) কি সত্য বলছে ? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি তাঁদের নিয়ে (আর) দু’রাকাআত সালাত আদায় করলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভুল করে (একদা) দু’রাকাআতের পরই সালাম ফিরিয়ে ফেললেন, তখন তাঁকে যুল ইয়াদায়ন (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! সালাত কি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে, না আপনি ভুলে গেছেন? রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যুল ইয়াদায়ন কি সত্য বলছে? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি দাঁড়িয়ে সালাত পূর্ণ করে নিলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জোহর অথবা আসরের সালাত আদায়কালে দু’রাকাআতের পর সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করলেন। তখন তাঁকে যুল ইয়াদায়ন ইব্‌ন আমর (রাঃ) বললেন, সালায় কি সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে, না আপনি ভুলে গেছেন? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যুল ইয়াদায়ন কী বলছে? সাহাবীগণ বললেন, ইয়া নবী আল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে সত্যই বলছে, তখন তিনি তাঁদের নিয়ে যে দু’রাকাআত কম হয়েছিল, তা আদায় করে নিলেন। আবূ বকর ইব্‌ন সুলায়মান ইব্‌ন আবূ হাসমা (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’রাকাআত সালাত আদায় করলে যুল ইয়াদায়ন (রাঃ) তাঁকে অনুরূপ বলেছিলেন।

【205】

দু’সিজদা সম্পর্কে আবূ হুরায়রা (রা)-এর রেওয়ায়তের মধ্যে পার্থক্য

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে দিন সালামের পূর্বে বা পরে সিজদা করেন নি। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনুরূপ বর্ণিত। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুল ইয়াদায়ন (রাঃ)-এর দিন সালামের পর দু' সিজদা করেছিলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় ভুলের কারণে সালামের পর সিজদা করেছিলেন। ইমরান ইব্‌ন হুসায়ন (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁদের নিয়ে সালাত আদায়কালে ভুল করে ফেললেন এবং দু' সিজদা করে সালাম ফিরালেন। ইমরান ইব্‌ন হুসায়ন (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসরের সালাতের তিন রাকাআত আদায় করে সালাম ফিরিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন, তখন খিরবাক (রাঃ) নাম্মী এক সাহাবী তাঁর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! সালাত কি সংক্ষিপ্ত হয়েছে? তখন তিনি রাগান্বিত হয়ে চাদর সামলাতে সামলাতে বের হয়ে বললেন, এ কি সত্য বল্‌ছে? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি দাঁড়িয়ে সে রাকাআত আদায় করলেন এবং সালাম ফিরিয়ে সে রাকাআতের জন্য দু'সিজদা করলেন ও সালাম ফিরালেন।

【206】

মুসল্লীর সন্দেহ হলে যা স্মরণ আছে তার উপর সালাত শেষ করা

আবূ সাঈদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যখন তোমাদের কেউ সালাতে সন্দেহ করে তখন সে যেন সন্দেহ ত্যাগ করে দৃঢ় বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে। যখন সমাপ্তি সম্পর্কে দৃঢ় বিশ্বাস হয়ে যায় তখন বসা অবস্থায় দু'টি সিজদা করবে। যদি সে পাঁচ রাকাআত আদায় করে থাকে তা হলে এ দু'টি সিজদা তাঁর (ঐ পাঁচ রাকাআত) সালাতকে জোড় (দু'রাকাআত) বানিয়ে দেবে। আর যদি সে চার রাকাআত আদায় করে থাকে, তা হলে এ দু'সিজদা শয়তানের জন্য অপমানের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যখন (তোমাদের) কেউ বুঝতে না পারে যে, সে তিন রাকাআত আদায় করেছে না চার রাকাআত? তখন সে যেন আরো এক রাকাআত আদায় করে নেয়, এবং বসা অবস্থায় তার পরে দু'টি সিজদা করে নেয়। যদি সে পাঁচ রাকাআত আদায় করে থাকে তা হলে এ দু'টি সিজদা তাঁর সালাতকে জোড় (দু'রাকাআত) বানিয়ে দেবে, আর যদি সে চার রাকাআত আদায় করে থাকে তা হলে এ দু'সিজদা শয়তানের জন্য অপমানের কারণ হবে।

【207】

(সালাত আদায়কালে সন্দেহ হলে) ভেবে দেখা

আব্দুল্লাহ (ইব্‌ন মাসঊদ) (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের কারো যদি সালাতে সন্দেহের উদ্রেক হয় তা হলে সে যেন ভেবে দেখে। যা সে সঠিক মনে করে তা পূর্ণ করবে, তারপর দু'টি সিজদা করে নেবে। রাবী বলেন, আমি হাদীসের কিছু শব্দ যেরকম ভাবে ইচ্ছা করেছিলাম সে রকমভাবে বুঝে উঠতে পারিনি। আব্দুল্লাহ (রা)১ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কারো যদি সালাতে সন্দেহের উদ্রেক হয়, তখন সে যেন ভেবে দেখে এবং সালাত শেষে দু'টি সিজদা করে নেয়। আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদা) সালাত আদায়কালে কিছু বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে ফেল্‌লেন। যখন তিনি সালাম ফিরালেন তখন আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! সালাতে কি কোন কিছু ঘটেছে? তিনি বললেন, যদি সালাতে কোন কিছু ঘটে থাকত তা হলে আমি তা তোমাদের জানিয়ে দিতাম, কিন্তু আমি তো একজন মানুষ, আমিও ভুলে যেতে পারি যেমনিভাবে তোমরা ভুলে যেতে পার। অতএব, তোমাদের কারো যদি তার সালাতে সন্দেহের উদ্রেক হয় তা হলে সে যেন ভেবে দেখে যে, কোন্‌টা সঠিকের কাছাকাছি। যা সঠিক বলে মনে হয় তার উপর ভিত্তি করে সালাত শেষ করবে। তারপর সালাম ফিরিয়ে দু'টি সিজদা করে নেবে। আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদা) সালাত আদায়কালে কিছু বাড়িয়ে অথবা কমিয়ে ফেল্‌লেন। যখন তিনি সালাম ফিরালেন, আমরা বললাম, ইয়া নবী আল্লাহ! সালাতে কি কিছু ঘটেছে? তিনি বললেন, তা কি? তখন তিনি যা করেছেন আমরা তাঁকে সে সম্পর্কে অবহিত করলাম। তখন তিনি পা গুটিয়ে কিবলার দিকে মুখ করে সহুর (ভুলের) জন্য দু'টি সিজদা করলেন। তারপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন, যদি সালাতে কিছু ঘটে থাকত তাহলে তা আমি তোমাদের অবহিত করে দিতাম। তারপর বললেন, আমিও তো একজন মানুষ, তোমরা যেমন ভুলে যেতে পার আমিও তেমনিভাবে ভুলে যেতে পারি। অতএব, যদি তোমাদের কারো সালাতে সন্দেহের উদ্রেক হয় তা হলে সে যেন ভেবে দেখে কোন্‌টা সঠিক, তারপর সালাম ফিরিয়ে সহুর (ভুলের) জন্য দু'টি সিজদা করে নেয়। আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদিন) জোহরের সালাত আদায় করে মুসল্লীদের দিকে মুখ ফিরালেন তখন তারা বলল, সালাতে কি কিছু ঘটেছে? তিনি বললেন, তা কি? তখন মুসল্লীগণ তাঁর কৃত কাজ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করলেন। তখন তিনি তাঁর পা গুটিয়ে নিলেন, এবং কিবলার দিকে মুখ করে দু'টি সিজদা করলেন ও সালাম ফিরালেন। তারপর তাদের দিকে ফিরে বললেন, আমিও তো একজন মানুষ, তোমরা যেমন ভুলে যেতে পার আমিও তেমনিভাবে ভুলে যেতে পারি। যদি আমি ভুলে যাই তা হলে তোমরা আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবে। তিনি আরো বলেন, যদি সালাতে কিছু ঘটে থাকত তা হলে আমি তোমাদের তা জানিয়ে দিতাম। তিনি আরো বললেন, তোমাদের কারো যদি সালাতে সন্দেহের উদ্রেক হয় তবে সে যেন ভেবে দেখে যা সঠিকের কাছাকাছি বলে মনে হয় তার উপর ভিত্তি করে সালাত শেষ করে নেয় ও দু'টি সিজদা করে। আব্দুল্লাহ (রাঃ) মুসল্লীর সালাতে সন্দেহের উদ্রেক হলে সে যেন কোন্‌টা সঠিক তা ভেবে দেখে, তারপর সালাত শেষ করে বসা অবস্থায় দু'টি সিজদা করে নেয়। আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যে মুসল্লী সালাতে সন্দেহে পতিত হয় সে যেন কোনটা সঠিক তা ভেবে দেখে তারপর দু'টি সিজদা করে নেয়। ইবরাহীম (রাঃ) তিনি বলেন, সাহাবীগণ বলতেন, কেউ যদি সালাতে সন্দেহে পতিত হয় তা হলে সে যেন কোন্‌টা সঠিক তা ভেবে দেখে তারপর দু'টি সিজদা করে নেয়। আব্দুল্লাহ ইব্‌ন জা'ফর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে মুসল্লীর সালাতে সন্দেহের উদ্রেক হয়, সে যেন সালাম ফিরাবার পর দু'টি সিজদা করে নেয়। আব্দুল্লাহ ইব্‌ন জাফর (রাঃ) যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে মুসল্লীর সালাতে সন্দেহের উদ্রেক হয় সে যেন সালাম ফিরাবার পর দু'টি সিজদা করে নেয়। আব্দুল্লাহ ইব্‌ন জাফর (রাঃ) যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে মুসল্লীর সালাতে সন্দেহের উদ্রেক হয় সে যেন সালাম ফিরাবার পর দু'টি সিজদা করে নেয়। আব্দুল্লাহ ইব্‌ন জাফর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে মুসল্লীর সালাতে সন্দেহের উদ্রেক হয়, সে যেন দু'টি সিজদা করে নেয়। রাবী হাজ্জাজ (রহঃ) বলেন, সালামের পর; রাবী রাওহ্‌ (রহঃ) বলেন, বসা অবস্থায়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায় করতে দাঁড়ায় তখন শয়তান এসে তাঁর সালাতে ভ্রান্তি সৃষ্টি করে। ফলে সে বুঝতে পারে না কত রাকআত সালাত আদায় করেছে। অতএব, যখন তোমাদের কেউ এরূপ অবস্থার সম্মুখীন হয় তখন সে যেন বসা অবস্থায় দু'টি সিজদা করে নেয়।১ আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন সালাতের জন্য আযান দেওয়া হয় তখন শয়তান পৃষ্ঠ প্রদর্শনপূর্বক পালাতে থাকে। আর তার থেকে আওয়ায সহকারে বায়ু বের হতে থাকে। আর যখন ইকামাত শেষ হয় তখন সে পুনঃ আগমন পূর্বক মুসল্লীদের মনে নানা খটকা সৃষ্টি করতে থাকে, ফলে মুসল্লী বুঝতে পারে না যে, সে কত রাকাআত আদায় করল। অতএব, তোমাদের মধ্যে যদি কেউ তা অনুভব করে তবে সে যেন দু'টি সিজদা করে নেয়।

【208】

যে পাঁচ রাক’আত সালাত আদায় করলে সে কি করবে?

আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন জোহরের সালাত পাঁচ রাক’আত আদায় করে ফেললেন। তখন তাকে বলা হল, সালাত কি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে? তিনি বললেন, তা কিভাবে? সাহাবীগন বললেন, আপনি পাঁচ রাক’আত আদায় করে ফেলেছেন। তখন তিনি তার পা গুটিয়ে দুটি সিজদা করে নিলেন। আব্দুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি একদিন সাহাবীগনকে নিয়ে একদিন জোহরের সালাত পাঁচ রাক’আত আদায় করে ফেললেন। তখন সাহাবীগন বললেন, আপনি পাঁচ রাক’আত আদায় করে ফেলেছেন। তখন তিনি সালামের পর বসা অবস্থায় দু’টি সিজদা করে নিলেন। ইবরাহীম ইবন সুওয়ায়দ (রহঃ) তিনি বলেন, আলকামা (রহঃ) একদিন পাঁচ রাক’আত সালাত আদায় করে ফেললেন। তখন তাঁকে বলা হলে তিনি বললেন, আমি (অনুরূপ) করিনি। [ইবরাহীম (রহঃ) বলেন] আমি আমার মাথার দ্বারা ইশারা করলাম নিশ্চয়ই (আপনি পাঁচ রাক’আত আদায় করে ফেলেছেন)। তিনি বললেন, হে অন্ধ! তুমি (এরুপ) সাক্ষ্য দিচ্ছ? আমি বললাম হ্যা; তখন তিনি দুটি সিজদা করলেন তারপর আমাদের হাদীস বর্ণনা করলেন। শাবী (রহঃ) যে, (একদা) আলকামা ইবন কায়স (রহঃ) সালাতে ভুল করে ফেললে (সালাত শেষে) কথা বলার পর লোকেরা তাঁকে স্মরন করিয়ে দিলে তিনি বললেন, হে আওয়ার! ঘটনা কি এরুপই? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বাহু বন্ধন খুলে ফেলে সহুর (ভুলের) জন্য দুটি সিজদা করলেন, এবং বললেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরুপই করেছিলেন। রাবী বলেন, আমি হাকাম (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আলকামা (রহঃ) সে দিন পাঁচ রাক’আত আদায় করে ফেলছিলেন। ইবরাহীম (রহঃ) যে, আলকামা (রহঃ) (একদা) পাঁচ রাক’আত সালাত আদায় করে ফেললেন। সালাম ফিরালে ইবরাহীম ইবন সুওয়ায়দ (রহঃ) বললেন, হে আবূ শিবল (আলকামা) (রহঃ)! আপনি পাঁচ রাক’আত আদায় করে ফেলেছেন। তখন তিনি বললেন, হে আওয়ার! ঘটনা কি এরুপই? পরে সহুর জন্য দুটি সিজদা করলেন, তারপর বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরুপই করেছিলেন। আব্দুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপরাহ্নের দু’সালাতের এক সালাতে পাঁচ রাক’আত আদায় করে ফেললে তাঁকে বলা হল, সালাত কি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে? তিনি বললেন, তা কিভাবে? সাহাবীগন বললেন, আপনি পাঁচ রাক’আত আদায় করে ফেলেছেন। তখন তিনি বললেন, আমিও তো একজন মানুষ! তোমরা যেরুপ ভুলে যেতে পার আমিও তদ্রুপ ভুলে যেতে পারি। তোমাদের যেরূপ স্মরন থাকে আমারও তদ্রুপ স্মরন থাকে। তারপর দুটি সিজদা করে সালাত শেষ করে নিলেন।

【209】

যে সালাতের কিছু ভুলে যায় সে কি করবে?

(ইউসুফ) (রহঃ) যে, মুয়াবিয়া (রাঃ) (একদিন) তাদের সামনে সালাত আদায় করলেন। তিনি সালাতে এমন সময় দাঁড়িয়ে গেলেন, যখন তাঁর উপর বসা প্রয়োজন ছিল। মুসল্লীরা সুবহানাল্লাহ বললে তিনি দাঁড়ানো অবস্থায়ই থাকলেন। সালাতে শেষ করার পর বসা অবস্থায় দু’টি সিজদা করলেন, তারপর মিম্বারের উপর বসে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে মুসল্লি তার সালাতে কোন কিছু ভুলে যায় সে যেন এ দু’টি সিজদার ন্যায় (দু’টি) সিজদা করে নেয়।

【210】

সহুর দু’সিজদায় তাকবীর বলা।

আব্দুল্লাহ ইবন বুহায়না (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা জোহরের দ্বিতীয় রাক’আত থেকে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং বসলেন না। যখন সালাত শেষ করলেন তখন বসা অবস্থায় সালাম ফিরবার পূর্বে দুটি সিজদা করলেন, প্রত্যেক সিজদায় তাকবীর বললেন, অন্য মুসল্লীরাও ভুলে না বসার জন্য তার সঙ্গে ঐ দু’সিজদা করে নিলেন।

【211】

যে রাকাতে সালাত শেষ হবে তাতে কিভাবে বসতে হবে।

আবূ হুমায়দ সাঈদী (রাঃ) তিনি বলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ওই রাকা’আতে পৌছতেন, যে দু’রাকা’আতের পর সালাত শেষ হবে তখন তার বাম পা নিতম্বের নিচ দিয়ে ডান পাশে বের করে দিতেন এবং নিতম্বের নিচ দিয়ে পা বের করা অবস্থায় নিতম্বের উপর বসতেন। ওয়াইল ইবন হুজুর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, তিনি যখন সালাত আরম্ভ করতেন তাঁর হস্তদ্বয় উত্তোলন করতেন, আর যখন রুকু করতেন ও রুকু থেকে মাথা ওঠাতেন, আর তাঁর বাম হাত বাম উরুর উপর এবং ডান হাত ডান উরুর উপর রাখতেন এবং মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলী দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানিয়ে ইশারা করতেন।

【212】

(সালাতে) হস্তদ্বয় রাখার স্থান।

ওয়াইল ইবন হুজুর (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলেন যে, তিনি সালাতে বসে তাঁর বাম পা বিছিয়ে দিলেন আর তাঁর হস্তদ্বয় তাঁর উরুদ্বয়ের উপর রাখলেন এবং তর্জনি আঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করে তদ্দারা দোয়া করলেন।

【213】

(সালাতে) কুনইদ্বয় রাখার স্থান।

ওয়াইল ইবন হুজুর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি (মনে মনে) বললাম, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাতের প্রতি লক্ষ্য রাখব যে, তিনি কীভাবে সালাত আদায় করেন। একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে দাড়ালেন এবং কিবলার দিকে মুখ করে তাঁর হস্তদ্বয় ওঠালেন এমনভাবে যে, তা তাঁর কর্ণদ্বয়ের বরাবর হয়ে গেল, তারপর তিনি তাঁর ডান হাত দ্বারা বাম হাত ধরলেন, যখন তিনি রুকু করার ইচ্ছা করলেন তখন হস্তদ্বয় পূর্বের ন্যায় ওঠালেন এবং হস্তদ্বয় তাঁর হাটুর উপর রাখলেন,যখন তিনি তার মাথা রুকু হতে ওঠালেন হস্তদ্বয়কে পূর্বের ন্যায় ওঠালেন। তারপর যখন তিনি সিজদা করলেন, তার মাথা হস্তদ্বয়ের মধ্যস্থলে রাখলেন। পরে বসে তাঁর বাম পা বিছালেন ও বাম হাত বাম উরুর ওপর রাখলেন। আর তাঁর ডান কনুই ডান উরুর ওপর রাখলেন এবং দু’আঙ্গুল দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানালেন। তাকে এরুপই করতে দেখেছি। রাবী বিশর (রহঃ) তর্জনি আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করলেন এবং মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানালেন।

【214】

(সালাতে) পাঞ্জাদ্বয়া রাখার স্থান।

আলী ইবন আব্দুর রহমান (রাঃ) তিনি বলেন আমি আব্দুল্লাহ ইবন উমার (রাঃ)-এর পার্শ্বে সালাত আদায় করছিলাম, তখন আমি কংকর (সিজদার স্থান থেকে) সরালে তিনি আমাকে বললেন, তুমি (সিজদার স্থান থেকে) কংকর সরাবে না, কেননা তা শয়তানের কুমন্ত্রনা থেকেই হয়ে থাকে এবং তুমি করবে যেরুপ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি করতে দেখেছি। (আলী (রাঃ)বলেন ) আমি বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কিরুপ করতে দেখেছেন? তিনি বলেন এরুপ। ডান পা খাড়া করলেন ও বাম পা বিছালেন এবং তার ডান হাত তার ডান উরু ও বাম হাত বাম উরুর ঊপর রাখলেন এবং তর্জনি দ্বারা ইশারা করলেন।

【215】

তর্জনি ব্যতীত ডান হাতের অন্যান্য আঙ্গুল বন্ধ করা।

আলী ইবন আব্দুর রহমান (রহঃ) তিনি বলেন, (আব্দুল্লাহ) ইবন উমার (রাঃ) আমাকে দেখলেন যে, আমি সালাতে পাথর নিয়ে খেলা করছি। যখন তিনি সালাম ফিরালেন আমাকে (তা থেকে) নিষেধ করলেন ও বললেন, তুমি সেরুপই করবে যেরুপ তিনি অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করতেন। আমি বললাম, তিনি কিরুপ করতেন? তিনি বললেন, যখন তিনি সালাতে বসতেন তার ডান হাত তার উরুর উপর রাখতেন ও বন্ধ করে দিতেন অর্থাৎ তার সমস্ত আঙ্গুলি এবং বৃদ্ধাঙ্গুলির সংলগ্ন আঙ্গুলি (তর্জনি) দ্বারা ইশারা করতেন আর তার বাম হাত তার বাম উরুর উপর রাখতেন।

【216】

ডান হাতের দুআঙ্গুলি বন্ধ রাখার এবং এর মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানানো।

ওয়াইল ইবন হুজুর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি (মনে মনে) বললাম যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাতের প্রতি লক্ষ্য রাখব যে, তিনি কীভাবে সালাত আদায় করেন। অতএব, আমি তার প্রতি লক্ষ্য রাখতে লাগলাম। পরে তিনি বর্ণনা করে বলেন, তিনি [রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)সালাতে] বসলেন এবং তাঁর বাম পা বিছিয়ে দিলেন ও তাঁর বাম হাত তাঁর উরুর ও বাম হাঁটুর উপর রাখলেন আর তাঁর ডান উরুর উপর ডান কনুই খাড়া করলেন এবং তাঁর দুটি অঙ্গুলি বন্ধ রাখলেন ও (অন্য দুটির দ্বারা) গোলাকার বৃত্ত বানালেন তারপর একটি অঙ্গুলি ওঠালেন। আমি তাকে দেখলাম যে, তিনি সেই অঙ্গুলিটা নাড়াচ্ছেন আর তদ্বারা ইশারা করছেন। (সংক্ষেপিত)

【217】

বাম হাত হাটুর উপর খুলে রাখা।

(আব্দুল্লাহ) ইবন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাতে বসতেন তাঁর উভয় হাত উভয় উরুর উপর রাখতেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলির সংলগ্ন অঙ্গুলি (তর্জনি) উপরে উঠাতেন ও তদ্দ্বারা ইশারা করতেন আর তাঁর বাম হাত হাটুর উপর রাখতেন। আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন দোয়া করতেন, অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতেন কিন্তু তা নাড়াতেন না। ইবন জুরায়জ (রহঃ) বলেন, হাদীসের অন্যতম রাবী আমর (রহঃ) এতটুকু বাড়িয়ে দিয়েছেন যে, আমির তার পিতা আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়র (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অনুরুপভাবে দোয়া করতে এবং তার বাম হাত দ্বারা তার বাম পায়ের উপর ঠেস দিতে দেখেছেন।

【218】

(সালাতে) তাশাহহুদ(আততাহিয়্যাতূ) আদায়কালে অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করা।

মাওসিলী নুমায়র খুযায়ী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি (একদা) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখলাম যে, তিনি সালাতে তার ডান হাত তার ডান ঊরুর উপর রেখেছেন এবং অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করেছেন।

【219】

দুআঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করার নিষেধাজ্ঞা এবং কোন আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতে হবে তার বর্ণনা

আবূ হুরাইরা (রাঃ) এক সাহাবী, সাদ (রাঃ) দু’অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন তুমি এক অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করবে, এক অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করবে। সাদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদিন) আমার কাছে দিয়ে গেলেন। তখন আমি আমার সমুদয় অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, তুমি এক অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করবে, এক অঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করবে এবং তিনি তর্জনি দ্বারা ইশারা করলেন।

【220】

ইশারা করার সময় তর্জনি অঙ্গুলি ঝুঁকানো

বসরার অধিবাসী নুমায়র খুযায়ী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাতে বসা অবস্থায় ডান হাত ডান উরুর উপর রেখে তর্জনি উঁচু করে কিছুটা ঝুঁকিয়ে রেখে ইশারা করতে দেখেছেন।

【221】

(সালাতে) তর্জনি দ্বারা ইশারা করার সময় দৃষ্টি রাখার স্থান

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাশাহহুদ আদায় করতে বসতেন তখন তাঁর বাম হাত তাঁর বাম উরুর উপর রাখতেন এবং তর্জনি দ্বারা ইশারা করতেন। আর দৃষ্টি তাঁর ইশারা অতিক্রম করত না।

【222】

সালাতে দোয়া করার সময় আকাশের দিকে দৃষ্টি তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুসল্লীগণ সালাতে দোয়া করার সময় আকাশের দিকে তাদের দৃষ্টিপাত করা থেকে বিরত থাকবে। নতুবা তাদের দৃষ্টিশক্তি আল্লাহ তা’আলা কেড়ে নেবেন।

【223】

সালাতে তাশাহহুদ ওয়াজিব হওয়া

ইব্‌ন মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা তাশাহহুদ-এর বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে সালাতে বলতামঃ আল্লাহর উপর সালাম, জিবরাঈল ও মীকাঈলের উপর সালাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা এরূপ বলবে না। কেননা আল্লাহ তা’আলাই স্বয়ং সালাম বরং তোমরা বলবেঃ (...আরবী)।

【224】

কুরআন শরীফের সূরা শিক্ষা দানের ন্যায় তাশাহহুদ শিক্ষা দান

(আব্দুল্লাহ) ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন যেরূপভাবে আমাদের কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন।

【225】

তাশাহহুদ কিরূপ? (তাশাহহুদের বর্ণনা)

আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলাই স্বয়ং সালাম। অতএব, তোমাদের কেউ যখন (সালাত আদায়কালে) বসে তখন সে যেন বলেঃ (আরবি) এরপর দোয়া মাছুরা (কুরআন-হাদীসে বর্ণিত) দোয়া থেকে যা ইচ্ছা হয় পড়বে।

【226】

অন্য আর এক প্রকার তাশাহহুদ

(আবূ মূসা) আশ’আরী (রাঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সামনে (একদিন) খুতবায় আমাদের সুন্নাত শিক্ষা দিলেন, আমাদের সালাত সম্পর্কে বর্ণনা করলেন। তিনি বললেন, তোমরা যখন সালাতে দাঁড়াবে তখন তোমাদের কাতার সোজা করে নেবে। তারপর তোমাদের একজন তোমাদের ইমামতি করবে। যখন সে তাকবীর বলবে, তোমরাও তাকবীর বলবে আর যখন সে ওয়ালাদদ্বাল্লীন বলবে, তোমরা তখন ‘আমীন’ বলবে, আল্লাহ তোমাদের দোয়া কবুল করবেন। তারপর যখন সে তাকবীর বলে রুকূতে যাবে তখন তোমরাও তাকবীর বলে রুকূতে যাবে। কেননা, ইমাম তোমাদের পূর্বে রুকূতে যাবে এবং তোমাদের পূর্বে রুকূ থেকে উঠবে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ (তোমাদের রুকূতে পরে যাওয়া এবং রুকূ থেকে পরে ওঠা) তার (ইমামের রুকূতে তোমাদের আগে যাওয়া ও তোমাদের আগে ওঠার) সমান হয়ে যাবে। আর যখন ইমাম ‘সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলবে, তখন তোমরা ‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলবে। আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখ দ্বারা বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে আল্লাহ তা’আলা তা শুনেন। তারপর যখন ইমাম তাকবীর বলে সিজদা করবে, তখন তোমরাও তাকবীর বলে সিজদা করবে। কেননা, ইমাম তোমাদের পূর্বে সিজদা করবে এবং তোমাদের পূর্বে সিজদা থেকে ওঠবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ (তোমাদের সিজদায় ইমামের পরে যাওয়া ও পরে ওঠা) তাঁর (ইমামের) সিজদায় তোমাদের আগে যাওয়া ও আগে ওঠারও সমান হয়ে যাবে। আর যখন তোমরা বসবে তখন তোমাদের প্রত্যেকে বলবেঃ (আরবি)

【227】

আর এক প্রকার তাশাহহুদ

জাবির ইব্ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন যেরূপভাবে আমাদের কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন তা এইরূপঃ (আরবি)

【228】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর সালাম পাঠানো

আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলার কতক ফেরেশতা এমনো রয়েছেন, যাঁরা পৃথিবীতে বিচরণ করে বেড়ায়, তাঁরা আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌঁছিয়ে থাকেন। আবূ তালহা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন সানন্দে আমাদের কাছে আসলেন। আমরা বললাম, (আজ) আমরা আপনার চেহারায় প্রফুল্লতা দেখছি! তিনি বললেন, আমার কাছে (একজন) ফেরেশতা এসে বলল, হে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনার প্রভু বলছেন যে, আপনাকে কি একথা খুশি করবে না, যে ব্যক্তি আপনার উপর একবার দরূদ পড়বে আমি তাঁর উপর দশটি রহমত নাযিল করব। আর যে ব্যক্তি আপনার উপর একবার সালাম পাঠাবে আমি তাঁর উপর দশটি শান্তি বর্ষণ করব (সালাম পাঠাব)।

【229】

সালাতে আল্লাহর মাহাত্ম্য বর্ণনা করা ও রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করা

ফাজালা ইব্‌ন উবায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে সালাতে দোয়া করতে শুনলেন সে (দোয়া) আল্লাহর প্রশংসাও করল না এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদও পড়ল না। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, হে মুসল্লী! তুমি দোয়া খুব তাড়াতাড়ি করে ফেলেছ। তারপর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসল্লীদের দোয়া শিক্ষা দিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে সালাত আদায় করল এবং আল্লাহ তা’আলার মাহাত্ম্য বর্ণনা করল, তাঁর প্রশংসা এবং রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করল। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাকে) বললেন, তুমি দোয়া কর, তা (নিশ্চয়) কবূল করা হবে এবং আল্লাহর কাছে চাও, তোমাকে দেওয়া হবে।

【230】

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করার আদেশ

আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, সা’দ ইব্‌ন উবাদা (রাঃ)-এর মজলিসে আমাদের কাছে (একদিন) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসলেন, তাঁকে বশীর ইব্‌ন সা’দ (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আল্লাহ তা’আলা আমাদের আপনার উপর দরূদ পড়তে আদেশ করেছেন, আমরা কিভাবে আপনার উপর দরূদ পড়ব? তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুপ রইলেন। আমরা অনুতাপ করলাম যে, যদি তাঁকে জিজ্ঞাসাই না করতাম! তারপর তিনি বললেন, তোমরা বলবেঃ (আরবি) আর সালামও করবে যেরূপ তোমরা শিখলে।

【231】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদ শরীফ কিভাবে পড়তে হবে?

আবূ মাসঊদ আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলা হল, আপনার উপর দরূদ পড়তে ও সালাম পাঠাতে আমাদের আদেশ করা হয়েছে, সালাম কিভাবে পাঠাতে হয় তা তো আমরা জানি, কিন্তু আপনার উপর দরূদ কিভাবে পাঠ করবো? তিনি বললেন, তোমরা বলবেঃ (আরবি)

【232】

আর এক প্রকার (দরূদ শরীফ)

কা’ব ইবন উজরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আপনাকে সালাম কিভাবে পাঠাতে হয় তা তো আমরা জানি, কিন্তু (আপনার উপর) দরূদ কিভাবে পড়ব? তিনি বললেন, তোমরা (আরবি) (আবদুর রহমান) ইব্‌ন আবূ লায়লা (রহঃ) বলেন, আমরা বলে থাকি তাঁদের সাথে আমাদের উপরেও (রহমত এবং বরকত বর্ষণ কর)। আবূ আব্দুর রহমান (নাসাঈ) (রহঃ) বলেন, আমার উস্তাদ কাসিম ইব্‌ন যাকারিয়া উল্লেখিত হাদীস অত্র সনদ সূত্রে বর্ণনা করেছিলেন, কিন্তু অত্র সনদ ভুল। কা’ব ইব্‌ন উজরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ ! আপনাকে সালাম পাঠানোর নিয়ম তো আমরা জানি, কিন্তু আপনার উপর দরূদ কিভাবে পড়বো? তিনি বললেন, তোমরা বলবেঃ (আরবি) আব্দুর রহমান (রহঃ) বলেন, আমরা বলে থাকি তাদের সঙ্গে আমাদের উপরেও (রহম ও বরকত বর্ষণ কর)। আবূ আব্দুর রহমান (নাসাঈ) (রহঃ) বলেন, পূর্ববর্তী সনদের তুলনায় অত্র সনদ অধিকতর সঠিক। কাসিম ইব্‌ন যাকারিয়া (রহঃ) ব্যতীত অন্য কেউ পূর্ববর্তী সনদে আমর ইব্‌ন মুররা (রহঃ)-এর নাম উল্লেখ করেন নি। ইব্‌ন আবূ লায়লা (রহঃ) তিনি বলেন, কা’ব ইব্‌ন উজরা (রাঃ) আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে কিছু হাদিয়া দেব না? (পরে বললেন,) আমরা বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আপনাকে সালাম পাঠানোর নিয়ম তো আমরা জানি, কিন্তু আপনার উপর দরূদ কিভাবে পাঠ করবো? তিনি বললেন, তোমরা বলবেঃ (আরবি) তালহা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আপনার উপর দরূদ কিভাবে পাঠ করতে হবে? তিনি বললেন, তোমরা বলবেঃ (আরবি) তালহা (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, ইয়া নবীআল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা আপনার উপর দরূদ কিভাবে পাঠ করব? তিনি বললেন, তোমরা বলবেঃ (আরবি) যায়দ ইব্‌ন খারিজা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ কর এবং বেশি বেশি দোয়া কর আর তোমরা বলঃ (আরবি) (আরবি) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আপনার উপর সালাম পাঠানোর নিয়ম তো আমরা জানি, কিন্তু আপনার উপর দরূদ কিভাবে পাঠ করব? তিনি বললেন, তোমরা বলবেঃ (আরবি) আবূ হুমায়দ সাঈদী (রাঃ) সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমরা আপনার উপর দরূদ কিভাবে পাঠ করব? তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা বলবেঃ (আরবি) হারিছের হাদীসে রয়েছেঃ (আরবি) তারপর উভয় রাবী একত্রে বলেনঃ (আরবি) আবূ আব্দুর রহমান (নাসাঈ) (রহঃ) বলেন, কুতায়বা (রহঃ) অত্র হাদীস আমাদের কাছে দু’বার বর্ণনা করেছিলেন, হয়তো তাঁর বর্ণিত হাদীসের কিয়দংশ [যা হারিছ (রহঃ) উল্লেখ করেছে] বাদ পড়ে গেছে।

【233】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদ শরীফ পাঠের ফযীলত

আবূ তালহা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন (আমাদের কাছে) আগমন করলেন। তখন তাঁর চেহারায় প্রফুল্লতা দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। তিনি বললেন, জিবরাঈল (আঃ) আমার কাছে এসে বলল, “ইয়া মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনাকে কি এই সংবাদ খুশি করে না যে, আপনার উম্মতের মধ্য থেকে যদি কোন ব্যক্তি আপনার উপর একবার দরূদ পাঠ করে আমি তাঁর দশবার মাগফিরাত চাইব, আর কেউ যদি আপনাকে একবার সালাম পাঠায় আমি তার প্রতি দশবার সালাম পাঠাব।” আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তা’আলা তাঁর উপর দশবার রহমত নাযিল করবেন। আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে আল্লাহ তা’আলা তাঁর উপর দশবার রহমত নাযিল করবেন, তাঁর দশটি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে এবং তাঁর জন্য দশটি মর্যাদা উন্নীত করা হবে।

【234】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদ শরীফ পাঠ করার পর দোয়া নির্ধারণের ব্যাপারে স্বাধীনতা

আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন একদিন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সালাত আদায়কালে বসলাম, তখন বললাম, আল্লাহর উপর সালাম আল্লাহর বান্দাদের পক্ষ থেকে আর অমুক অমুকের উপর সালাম। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)বললেন, তোমরা আল্লাহর উপর সালাম বলো না, কেননা, আল্লাহই স্বয়ং সালাম, তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায়কালে বসে তখন সে যেন বলেঃ (আরবি) কেননা তোমরা যখন এ তাশাহহুদ পড়বে তা আসমান এবং যমীনের সকল নেক বান্দার রূহে পৌঁছবে। (আরবি) তারপর যে দোয়া ইচ্ছা হয় সে দোয়া করবে।

【235】

তাশাহহুদের পর যিকির করা

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মে সুলায়ম (রহঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌ ! আমাকে এমন কিছু বাক্য শিক্ষা দিন যা আমি আমার সালাতে পাঠ করতে পারি। তিনি বললেন, তুমি সুবহানাল্লাহ দশবার, আলহামদু লিল্লাহ দশবার এবং আল্লাহু আকবর দশবার বলে আল্লাহর কাছে তোমার যা প্রয়োজন হয় তা চাইবে। তিনি বলবেন- হ্যাঁ, হ্যাঁ অর্থাৎ নিশ্চয় তিনি তোমার দোয়া কবুল করবেন।

【236】

যিকিরের পর দোয়া করা

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বসা ছিলাম, অর্থাৎ তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিল, যখন সে রুকূ-সিজদা এবং তাশাহহুদ পড়ে দোয়া করতে আরম্ভ করল তখন সে তাঁর দোয়া বললঃ (আরবি) তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণকে বললেন, তোমরা কি জান সে কিসের দ্বারা দোয়া করল? তাঁরা বললেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তখন তিনি বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! সে আল্লাহর ঐ ইসমে আজম দ্বারা দোয়া করেছে যা দ্বারা দোয়া করা হলে তিনি তা কবুল করেন, আর যদ্বারা কোন কিছু চাওয়া হলে তা তিনি দান করেন। মিহজান ইব্‌ন আদরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদিন) মসজিদে প্রবেশ করে দেখলেন যে, এক ব্যক্তি তাশাহহুদ পড়ে সালাত শেষ করার সময় বললো (আরবি) তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। এ বাক্যটি তিনি তিনবার বললেন।

【237】

আর এক প্রকার দোয়া

আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, আমাকে এমন একটা দোয়া শিক্ষা দিন যদ্বারা আমি সালাতে দোয়া করব। তিনি বললেন, তুমি বলবেঃ (আরবি) মু’আয ইব্‌ন জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার হাত ধরে বললেন, হে মু’আয! আমি তোমাকে ভালবাসি। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌ ! আমিও আপনাকে ভালবাসি। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি প্রত্যেক সালাতে বলতে বাদ দেবে না (আরবি) শাদাদ ইবন আউস (রাঃ) যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সালাতে বলতেনঃ (আরবি)। আতা ইবন সায়িব (রাঃ) তিনি বলেন, আম্মার ইবন ইয়াসির (রাঃ) একবার আমাদের সাথে সালাত আদায় করলেন এবং সালাত সংক্ষিপ্ত করে ফেললেন। তখন কেউ কেউ তাকে বললেন, আপনি সালাত সংক্ষিপ্ত করে ফেলেছেন। তিনি বললেন, কিন্তু এতদসত্ত্বেও তো আমি ঐ সমস্ত দোয়া পাঠ করে ফেলেছি যা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি। তারপর যখন তিনি (চলে যাওয়ার জন্য) উঠে দাড়ালেন, লোকদের মধ্য হতে একজন তার অনুসরণ করতে লাগলেন আতা (রাঃ) বলেন তিনি ছিলেন আমার পিতা কিন্তু তিনি তার নাম বলেননি। তিনি তাকে ঐ দোয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন এবং এসে সবাইকে ঐ দোয়ার সংবাদ দিলেন। সেই দোয়াটি ছিলঃ (… আরবি)। কায়স ইবন উবাদ (রহঃ) তিনি বলেন, একবার আম্মার ইবন ইয়াসির (রাঃ) একদল লোক নিয়ে সালাত আদায় করলেন, যাতে তিনি সংক্ষেপ করে ফেললেন আর মুসল্লীরা যেন ঐ সংক্ষিপ্ত করণকে খারাপ মনে করলেন। তখন তিনি বললেন, আমি কি রুকু এবং সিজদা পরিপূর্ণ রূপে আদায় করিনি। তারা বললেন, নিশ্চয়ই। তখন তিনি বললেন, আমি তাতে এমন দোয়াও পড়েছি যা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পড়তেন। সেই দোয়াটি হল : (আরবি)।

【238】

সালাতে তা'আউউয পড়া (বিতাড়িত শয়তান থেকে পানাহ চাওয়া)

ফরওয়াহ ইবন নওফল (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃ)-কে বললাম, আমাকে এমন কিছু বলুন যদ্বারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সালাতের দোয়া করতেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, (বলব) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাঁর সালাতে) বলতেন (----আরবি)।

【239】

আর এক প্রকার (তা’আউউয)

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে কবরের আযাব সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, হ্যাঁ! কবরের আযাব সত্য, আয়েশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমি রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এমন কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি যাতে তিনি কবরের আযাব থেকে পানাহ না চেয়েছেন। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে এই দোয়া পড়তেন, (আরবি) তখন তাকে কেউ বলল, আপনি প্রায়ই ঋণগ্রস্ততা থেকে পানাহ চেয়ে থাকেন কেন? তিনি বললেন, কোন লোক যখন ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তখন সে কথা বলতে মিথ্যা বলে এবং ওয়াদা করে খেলাফ করে। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায়কালে তাশাহহুদ পড়বে, তখন চার বস্তু থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবে ঃ ১. দোযখের আযাব থেকে। ২. কবরের আযাব থেকে। ৩. জীবন ও মরণের ফিৎনা থেকে। ৪. এবং মসীহে দাজ্জালের অনিষ্ট থেকে। অতঃপর তার জন্য যা (প্রয়োজনীয়) মনে আসে তার দোয়া করবে।

【240】

তাশাহহুদের পর আর এক প্রকার যিকির

জাবির (রহঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতে তাশাহহুদের পর বলতেনঃ (আরবি)।

【241】

সালাত সংক্ষেপ করা

হুযায়ফা (রাঃ) যে, তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন সে সালাত সংক্ষেপে আদায় করছে। হুযায়ফা (রাঃ) তাকে বললেন, তুমি কতদিন থেকে এভাবে সালাত আদায় করছ? সে বলল, চল্লিশ বছর যাবত। তিনি বললেন, তুমি চল্লিশ বছর যাবত সালাত আদায় করছ না (পরিপূর্ণরূপে)। যদি তুমি এভাবে সালাত আদায় করতে করতে মৃত্যুবরণ কর তা হলে তুমি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সালাতের তরীকা ব্যতীত মৃত্যুবরণ করবে। তারপর তিনি বললেন, কোন ব্যক্তি সালাতে কিরাআত সংক্ষিপ্ত করতে পারে এভাবে যে, সে সালাতের ফরয ওয়াজিবসমূহ ঠিকমত আদায় করবে এবং সালাত সুন্দরভাবে আদায় করবে। (সুন্নত ও মুস্তাহাব আমলগুলো পালনের মাধ্যমে)।

【242】

সর্বনিম্ন পর্যায়ের সংক্ষিপ্ত করণ যদ্বারা সালাত শুদ্ধ হয়ে যায়

রিফা'আ ইবন রাফি (রাঃ) তিনি বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি একদা মসজিদে প্রবেশ করে সালাত আদায় করতে লাগাল আর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার প্রতি লক্ষ্য রাখছিলেন অথচ আমরা তা জানতামও না। সে ব্যক্তি সালাত শেষ করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম করলে তিনি বললেন, তুমি ফিরে গিয়ে পুনরায় সালাত আদায় কর। কেননা, তুমি সালাত আদায় করনি। সে ব্যক্তি ফিরে গিয়ে পুনরায় সালাত আদায় করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসলে তিনি বললেন, তুমি ফিরে গিয়ে পুনরায় সালাত আদায় কর। কেননা তুমি সালাত আদায় করনি। রাসুলুল্লাহু (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ তিনবার কি চার বার করলে ঐ ব্যক্তি তাঁকে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! সেই আল্লাহর শপথ, যিনি আপনাকে সম্মানিত করেছেন, আমি তো খুব চেষ্টা করে দেখলাম, আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন তিনি বললেন, তুমি যখন সালাত আদায়ের ইচ্ছা কর, তখন উত্তমরূপে ওযু করবে। তারপর কিবলামুখী হয়ে তাকবীর বলবে। তারপর কুরআন পাঠ করে তাকবীর বলে রুকূতে যাবে এবং খুব স্থিরতার সাথে রুকূ করবে। তারপর মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাড়িয়ে যাবে। তারপর সিজদা করবে এবং স্থিরতার সাথে সিজদা করে মাথা ওঠাবে। পরে মাথা উঠিয়ে স্থিরতার সাথে বসবে। পুনরায় সিজদা করবে এবং স্থিরতার সাথে সিজদা করে মাথা ওঠাবে। তারপর তুমি এরূপ করে স্বীয় সালাত সমাপ্ত করবে। রিফা'আ ইবন রাফি (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সঙ্গে মসজিদে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি এসে দু’রাকআত সালাত আদায় করল। তারপর এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে সালাম করল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সালাতের প্রতি লক্ষ্য রাখছিলেন। তিনি তাঁর সালামের উত্তর দিয়ে তাঁকে বললেন, তুমি ফিরে গিয়ে পুনরায় সালাত আদায় কর, যেহেতু তুমি সালাত আদায় করনি। তারপর সে ফিরে গিয়ে সালাত আদায় করলো। পরে এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম করলোঃ তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, তুমি ফিরে গিয়ে সালাত আদায় কর। কারণ তুমি সালাত আদায় করনি। এমনিভাবে তৃতীয় অথবা চতুর্থবারে সে বলল, সেই আল্লাহর শপথ, যিনি আপনার উপর কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছেন, আমি তো খুব চেষ্টা করলাম এবং আমি সালাত আদায় করতে চাইও, আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। তখন তিনি বললেন, তুমি যখন সালাত আদায় করতে ইচ্ছা কর তখন উত্তমরূপে ওযূ করবে, তারপর কিবলার দিকে মুখ করে তাকবীর বলবে, তারপর কুরআন পড়ে (তাকবীর বলে) রুকূতে যাবে। রুকূতে স্থির হবে। তারপর মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে। তারপর সিজদায় গিয়ে স্থিরভাবে সিজদা করবে তারপর সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে স্থিরভাবে বসবে। আবার সিজদায় গিয়ে স্থিরভাবে সিজদা করবে। তারপর মাথা ওঠাবে। যদি তুমি এই নিয়মে তোমার সালাত শেষ কর, তবে তোমার সালাত পূর্ণ হবে। আর যদি এই নিয়মে কোন ত্রুটি হয় তবে তোমার সালাতও ততটুকু ত্রুটি যুক্ত হবে। সা’দ ইব্‌ন হিশাম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিত্‌র-এর সালাত সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন। তিনি বললেন, আমরা তাঁর জন্য মিসওয়াক প্রস্তুত রাখতাম এবং ওযূর পানি রাখতাম। তারপর যখন রাতে আল্লাহর ইচ্ছা হত তাঁকে তুলে দিতেন, তখন তিনি মিসওয়াক করে ওযূ করতেন এবং আট রাকআত সালাত আদায় করতেন। তাতে তিনি অষ্টম রাকআতের শেষে বসতেন, এবং আল্লাহর যিকির ও দোয়া করতেন। তারপর এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যা আমরা শুনতে পেতাম।

【243】

সালাতে সালাম ফিরানো

সা’দ (রাঃ) যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সালাতে) তাঁর ডান দিকে এবং বাম দিকে সালাম ফিরাতেন। সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখতাম যে, তিনি তাঁর ডান দিকে এবং বাম দিকে সালাম ফিরাতেন তখন তাঁর গণ্ডদেশের শুভ্রতা দেখা যেত।

【244】

সালামের সময় হস্তদ্বয় রাখার স্থান

জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পেছনে সালাত আদায় করতাম তখন বলতাম ‘আসসালামু আলাইকুম, আসসালামু আলাইকুম’ হাদীসের অন্যতম রাবী মিসআর (রাঃ) তাঁর হাত দ্বারা ডান দিকে এবং বাম দিকে ইশারা করছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন তাঁদের কি হল? তাঁরা এমনভাবে হাত দ্বারা ইশারা করে যেন তা অস্থির ঘোড়ার লেজ। তোমাদের প্রত্যেকের জন্য এটা কি যথেষ্ট নয় যে, সে উরুর উপর হাত রাখবে এবং ডানে এবং বামে আপন ভাই-এর প্রতি সালাম করবে।

【245】

ডান দিকে কিভাবে সালাম ফিরাবে?

আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি যে, তিনি প্রত্যেক নীচু হওয়ার সময় এবং উপরে উঠার সময় তাকবীর বলতেন ,আর দাঁড়াবার সময় এবং বসার সময়েও তাকবীর বলতেন। আর তিনি তাঁর ডান দিকে এবং বাম দিকে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহ্‌মাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহ্‌মাতুল্লাহ” বলে সালাম ফিরাতেন, তখন তাঁর গণ্ডদেশের শুভ্রতা দেখা যেত। আর আমি আবূ বক্‌র(রাঃ) এবং উমর (রাঃ)-কেও অনুরূপ করতে দেখেছি।” ওয়াসি ইব্‌ন হাব্বান (রহঃ) তিনি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, তিনি প্রত্যেক বার যখন মাথা নিচু করতেন তখন এবং যখন মাথা উঠাতেন তখন আল্লাহু আকবার বলতেন তারপর তাঁর ডান দিকে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ এবং তাঁর বাম দিকে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতেন।

【246】

বাম দিকে কিভাবে সালাম ফিরাবে?

ওয়াসি ইব্‌ন হাব্বান (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্‌ন উমর (রাঃ)-কে বললাম, আপনি আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সালাত সম্পর্কে অবহিত করুন যে, তা কিরূপ ছিল? রাবী বলেন, তিনি তাকবীরের কথা উল্লেখ করলেন। রাবী বলেন, তিনি অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) এমন কিছু বাক্য উল্লেখ করলেন, যার অর্থ হল- নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকবীর এবং ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে ডান দিকে এবং ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে বাম দিকে সালাম ফিরাতেন। আব্দুল্লাহ(রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি যেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারার শুভ্রতা দেখছি। তিনি ডান দিকে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ এবং বাম দিকে ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম ফিরাতেন। আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান দিকে সালাম ফিরাতেন, তখন তাঁর চেহারার শুভ্রতা দেখা যেত। আর যখন বাম দিকে সালাম ফিরাতেন তখনও তাঁর চেহারার শুভ্রতা দেখা যেত। আব্দুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত যে, তিনি তাঁর ডান দিকে এবং বাম দিকে সালাম ফিরাতেন, ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ’ ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ’ বলে তখন তাঁর চেহারার শুভ্রতা দেখা যেত, এদিক থেকে এবং ওদিক থেকে। আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসঊদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান দিকে সালাম ফিরাতেন ‘আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহ্‌মাতুল্লাহ’ বলে তখন তাঁর চেহারার ডান দিকের শুভ্রতা দেখা যেত। অনুরূপভাবে বাম দিকে আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহ্‌মাতুল্লাহ বলে সালাম ফিরালে তাঁর চেহারার বাম দিকের শুভ্রতা দেখা যেত।

【247】

উভয় হাত দ্বারা সালাম ফিরানো

জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি (একদিন) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করছিলাম, আমরা যখন সালাম ফিরালাম তখন হাত দ্বারা ইশারা করে বললাম, ‘আসসালামু আলাইকুম, আসসালামু আলাইকুম’ তিনি বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের কি হল যে, তোমরা হাত দ্বারা ইশারা করছ? যেন তা অস্থির ঘোড়ার লেজ ! যখন তোমাদের কেউ সালাম ফিরাবে তখন সে তার সাথীর প্রতি তাকাবে এবং স্বীয় হাত দ্বারা ইশারা করবে না।

【248】

ইমামের সালাম ফিরানোর সময় মুকতাদির সালাম ফিরানো

ইতবান ইব্‌ন মালিক (রহঃ) তিনি বলেন, আমার গোত্রে বনূ সালিমের সাথে সালাত আদায় করতাম। একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আমি এসে বললাম (ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)!) আমার দৃষ্টি শক্তি হ্রাস পেয়েছে, আর (কখনো কখনো) আমার এবং আমার গোত্রের মসজিদের মাঝখানে বন্যা প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়, তাই আমার একান্ত ইচ্ছা যে, আপনি এসে আমার ঘরের কোন এক স্থানে সালাত আদায় করেন যাকে আমি আমার সালাতের স্থান রূপে নির্দিষ্ট করে নিতে পারি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইনশাআল্লাহ! অতি শীঘ্রই আমি তা করব। পরের দিন সূর্য প্রখর হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে আসলেন, আর আবূ বক্‌র (রা)-ও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে আমার কাছে অনুমতি চাইলেন, আমি তাঁকে অনুমতি দিলে তিনি না বসেই বললেন, তুমি তোমার ঘরের কোন্‌ স্থানে আমার সালাত আদায় করা পছন্দ করো? তখন আমি তাঁকে ঐ স্থান দেখিয়ে দিলাম যে স্থানে তাঁর সালাত আদায় করা আমি পছন্দ করেছি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন, আমরাও তাঁর পেছনে কাতার বন্দী হয়ে দাঁড়ালাম। তারপর তিনি (সালাতের শেষে) সালাম ফিরালে আমরাও তাঁর সঙ্গে সালাম ফিরালাম।

【249】

সালাতের পর সিজদা করা

আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইশার সালাত শেষ করার পর ফজর পর্যন্ত এগার রাকআত সালাত আদায় করতেন এবং সেই এগার রাকআত সালাতকে একটি রাকআত দ্বারা বেজোড় করে দিতেন এবং প্রতিটি সিজদা এত দীর্ঘ করতেন যে, তাতে তোমাদের কেউ তাঁর মাথা উঠাবার পূর্বে পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করতে পারতো। এই হাদীসের কোন কোন রাবী একে অন্যের থেকে কিছু অংশ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

【250】

সালাতে সালাম দেওয়ার এবং কথা বলার পর সাহুর (ভুল সংশোধনের জন্য) দু’টি সিজদা করা

আব্দুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদা সালাতে) সালাম ফিরালেন। পরে কথা বলে ফেললেন। তারপর সাহুর (ভুলের) দু’টি সিজদা করলেন।

【251】

সাহুর দু’টি সিজদার পর সালাম (ফিরানো)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদা সালাতে) সালাম ফিরিয়ে ফেললেন এবং সেই বসা অবস্থায় থেকেই দু’টি সাহুর সিজদা করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন। ইমরান ইব্‌ন হুসায়ন (রাঃ) (একদা) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিন রাকআত সালাত আদায় করে সালাম ফিরিয়ে ফেললেন। তখন তাঁকে খিরবাক (রাঃ) বললেন, আপনি সালাত তিন রাকআত আদায় করেছেন। তখন তিনি মুসল্লীদের নিয়ে অবশিষ্ট এক রাকআত আদায় করে নিলেন। তারপর সালাম ফিরিয়ে সাহুর দু’টি সিজদা করে নিলেন এবং আবারো সালাম ফিরালেন।

【252】

সালাম ফিরানো এবং ইমামের কিবলার দিক থেকে মুসল্লীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসার মধ্যবর্তী সময়ে ইমামের বসা

বারা ইব্‌ন আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর দিকে তাঁর সালাত আদায়কালে লক্ষ্য রাখছিলাম, আমি তাঁর কিয়াম (দাঁড়ানো), রুকূ এবং রুকূর পর সোজা হয়ে দাঁড়ানো দেখছিলাম। তাঁর সিজদা, সিজদার মাঝখানের বসা, তাঁর সিজদা, তাঁর সালাম ফিরানো এবং মুসল্লীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসা প্রায়ই সমান হতো। উম্মে সালামা (রাঃ) মহিলারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে যখন সালাতের শেষে সালাম ফিরাত, দাঁড়িয়ে যেত১ এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের স্থানে বসে থাকতেন। আর পুরুষদের মধ্যে যারা যারা সালাত শেষ করে ফেলত (তারাও বসে থাকত) যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়াতেন তখন পুরুষরাও দাঁড়িয়ে যেত। ইয়াযীদ ইব্‌ন আসওয়াদ (রাঃ) তিনি (একদা) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করছিলেন। যখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত শেষ করলেন তখন তিনি মুসল্লিদের দিকে ফিরে বসলেন।

【253】

ইমামের সালাম ফিরানোর পর তাকবির বলা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাত শেষ হওয়া জানতে পারতাম তাকবিরের দ্বারা।

【254】

সালাতের সালাম ফিরাবার পর মু'আওয়াযাত (সূরা ফালাক ও সূরা নাস) পড়ার নির্দেশ

উকবা ইব্‌ন আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে প্রত্যেক সালাতের পর সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়তে আদেশ করেছেন।

【255】

সালাম ফিরানোর পর ইস্তিগফার করা (মাগফিরাত চাওয়া)

মাহমূদ ইবন খালিদ (রহঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর (আযাদকৃত) গোলাম সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁর সালাতে সালাম ফিরাতেন, তিনবার ইস্তিগফার করতেন এবং বলতেনঃ (আরবি)।

【256】

ইস্তিগফার করার পর যিকির করা

আয়েশা (রাঃ) যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন (সালাতে) সালাম ফিরাতেন তখন বলতেনঃ (আরবি)।

【257】

সালাম ফিরানোর পর তাহলীল পড়া (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়া)

আবু যুবায়র (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র (রাঃ) কে এই মিম্বরের উপর বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জকহ্ন সালাম ফিরাতেন তখন বলতেনঃ (আরবি)।

【258】

সালামের পর যিকির ও তাহলীলের সংখ্যা

আবু যুবায়র (রহঃ) তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র (রাঃ) প্রত্যেক সালাতের পর তাহলীল করতেন। তিনি বলতেনঃ (আরবি) তারপর ইব্‌ন যুবায়র (রাঃ) বলতেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই সমস্ত বাক্য দ্বারা (প্রত্যেক) সালাতের পর তাহলীল পড়তেন।

【259】

সালাত শেষে আরেক প্রকার দোয়া

ওয়াররাদ (রহঃ) তিনি বলেন, মুআবিয়া (রাঃ) মূগীরা ইব্‌ন শু'বা (রাঃ) এর কাছে লিখলেন যে, আপনি আমাকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছ থেকে শোনা কিছু দোয়া সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বললেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাত শেষ করতেন তখন বলতেনঃ (আরবি)। ওয়াররাদ (রহঃ) তিনি বলেন, মুগীরা ইব্‌ন শু'বা (রাঃ) মুআবিয়া (রাঃ) এর কাছে লিখেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (প্রত্যেক) সালাতের পর যখন সালাম ফিরাতেন তখন বলতেনঃ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ ওয়াররাদ (রাঃ) তিনি বলেন, মুগীরা ইব্‌ন শুবা (রাঃ) মুয়াবিয়া (রাঃ)-এর কাছে লিখেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) (প্রত্যেক) সালাতের পর যখন সালাম ফিরাতেন তখন বলতেনঃ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ

【260】

সালাম ফিরানোর পর অন্য প্রকার যিকির

আয়েশা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন মজলিসে বসতেন অথবা সালাত আদায় করতেন তখন কিছু বাক্য উচ্চারন করতেন। আয়েশা (রাঃ) তাঁকে উক্ত বাক্যসমূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, কেউ যদি ভাল বাক্য বলে তা হলে সেগুলো কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর মোহরস্বরূপ হবে। আর সে যদি অন্য ধরনের বাক্য বলে তা হলে সেগুলো তাঁর জন্য কাফ্‌ফারা স্বরূপ হবে। (সে বাক্যগুলো হল)ঃ (আরবি)।

【261】

সালাম ফিরানোর পর আরেক প্রকার দোয়া ও যিকির

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার কাছে এক জন ইহুদী মহিলা এসে বলল, কবরের আযাব পেশাব থেকে (সাবধানতা অবলম্বন না করার কারনে) হবে। [আয়েশা (রাঃ) বলেন] তখন আমি তাঁকে বললাম, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। সে বলল - না, সত্য। আমরা পেশাব লাগলে চামড়া এবং কাপড় অবশ্যই কেটে ফেলতাম। এ সময় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের জন্য বের হয়ে এলেন। ইত্যবসরে আমাদের আওয়াজ বড় হয়ে গিয়েছিল। তাই তিনি বললেন, কি ব্যাপার? আমি তাঁকে ঐ ইহুদী মহিলা যা যা বলেছিল সে সম্পর্কে অবহিত করলাম। তখন তিনি বললেন, সে সত্যই বলেছে। তারপর তিনি এমন কোন সালাত আদায় করেননি, যে সালাতের পর (আরবি) বলেননি।

【262】

সালাত শেষে আরেক প্রকার দোয়া

আবূ মারওয়ান (রহঃ) কা'ব (রাঃ) তাঁর কাছে ঐ আল্লাহর শপথ করে বলেছেন, যিনি মূসা (আ.) এর জন্য সমুদ্রকে বিদীর্ণ করেছিলেন, নিশ্চয়ই আমরা তাওরাতে দেখতে পাই যে, দাউদ নবীয়্যুল্লাহ (আঃ) যখন তাঁর সালাত থেকে সালাম ফিরাতেন তখন বলতেনঃ -------মারওয়ান (রহঃ) বলেন, কা'ব (রাঃ) আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, সুহায়ব (রাঃ) তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ সমস্ত দোয়া তাঁর সালাত শেষে সালাম ফিরানোর পর বলতেন।

【263】

সালামের পর (বিতাড়িত শয়তান থেকে) পানাহ চাওয়া

মুসলিম ইব্‌ন আবূ বাকরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা প্রত্যেক সালাতের পর বলতেনঃ (আরবি) তারপর আমিও তা বলতে থাকলে আমার পিতা আমাকে বললেন, হে বৎস! তুমি এ দোয়াগুলো কার কাছ থেকে শিখেছ? আমি বললাম, আপনার কাছ থেকে। তারপর তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (প্রত্যেক) সালাতের পর এই দোয়াগুলো বলতেন।

【264】

সালাম ফিরানোর পর তাসবীহের সংখ্যা

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রাঃ) তিনি বলে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দুটি অভ্যাস এমন রয়েছে যে, কোন মুসলমান ঐ দুটি অভ্যাসে অভ্যস্ত হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ঐ দুটি অভ্যাস সহজ অথচ তার আমলকারী হবে খুবই কম। তিনি বলে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে তোমাদের কেউ যদি প্রত্যেক সালাতের পর দশবার তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পড়ে, দশবার আলহামদুলিল্লাহ পড়ে, আর দশবার আল্লাহু আকবর বলে, তাহলে একশত পঞ্চাশ বার মুখে বলা হয় আর তা পাল্লায় হবে এক হাজার পাঁচশত বার আর আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে দেখলাম যে, তিনি তা অঙ্গুলি দ্বারা গণনা করছেন। আর যখন তোমাদের কেউ তার বিছানায় অথবা শয়নের স্থানে আসবে, তখন সে যেন সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার আর আল্লাহু আকবর ৩৪ বার বলে। এ তো মুখে বলা হবে একশত বার, আর পাল্লায় হবে এক হাজার বার। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের মধ্যে কে প্রত্যেক দিন রাতে দুই হাজার পাঁচশত গুনাহ করে? কেউ বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা কেন তার অভ্যাস গড়ে তুলব না? তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, শয়তান তোমাদের আরো কাছে এসে তার সালাতরত অবস্থায় বলতে থাকে, অমুক কাজ স্মরণ কর, অমুক কাজ স্মরণ কর আর তার নিদ্রার সময় তার কাছে এসে তাঁকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।

【265】

আর এক প্রকার তাসবীহর সংখ্যা

কা'ব ইব্‌ন উজরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এমন কতগুলো তাসবীহ রয়েছে যার পাঠকারী তার সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে না। প্রত্যেক সালাতের পর সে 'সুবহানাল্লাহ' ৩৩ বার 'আলহামদুলিল্লাহ' ৩৩ বার এবং ‘আল্লাহু আকবর' ৩৪ বার বলবে। যায়দ ইব্‌ন সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, (একদা) সাহাবায়ে কেরামকে আদেশ করা হলো - তারা যেন প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩ বার 'সুবহানাল্লাহ' ৩৩ বার 'আলহামদুলিল্লাহ' এবং ৩৪ বার 'আল্লাহু আকবর' বলে। তারপর যায়দ ইব্‌ন সাবিত (রাঃ) এর স্বপ্নে এক আনসারী সাহাবী নীত হলে যায়দ (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলা হল, তোমাদের কি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করেছেন যে, তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩ বার 'সুবহানাল্লাহ' ৩৩ বার 'আলহামদুলিল্লাহ' এবং ৩৪ বার 'আল্লাহু আকবর' বলবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন ঐ আনসারী বললেন, তোমরা ঐ তাসবীহগুলোকে ২৫ বার পড়বে এবং তাতে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহুকেও অন্তর্ভুক্ত করে নেবে। যখন সকাল হল তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আসে স্বপ্ন বৃত্তান্ত করাতে তিনি বললেন, তোমরা তাসবীহগুলোকে অনুরুপভাবেই পড়বে। ইবন উমর (রাঃ) এক ব্যক্তি স্বপ্নে দেখল যে, কেউ তাঁকে জিজ্ঞাসা করছে যে, তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিসের আদেশ করেছেন? সে বলল, আমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ৩৩ বার 'সুবহানাল্লাহ' ৩৩ বার 'আলহামদুলিল্লাহ' এবং ৩৪ বার 'আল্লাহু আকবর' বলতে আদেশ করেছেন। এ হল একশত বার। সে বলল, তোমরা ২৫ বার 'সুবহানাল্লাহ' ২৫ বার 'আলহামদুলিল্লাহ' এবং ২৫ বার 'আল্লাহু আকবর' এবং ২৫ বার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে, তাও একশত বার হবে। যখন সকাল হল ঐ ব্যক্তি স্বপ্ন বৃত্তান্ত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জানাল। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা তাসবীহ অনুরুপই বলবে, যেরূপ আনসারী ব্যক্তি বলেছে। জুওয়ায়রিয়া বিনত হারিস (রাঃ) যে, (একদা) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কাছ দিয়ে গেলেন। তখন তিনি মসজিদে দোয়া করছিলেন। পুনরায় প্রায় দ্বিপ্রহরের সময় তাঁর কাছ দিয়ে গেলেন, তখন তাঁকে বললেন, তুমি তোমার পূর্বাবস্থায় এখনো রয়ে গেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ; রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি কি তোমাকে শিক্ষা দেব না অর্থাৎ এমন কিছু দোয়া যেগুলো তুমি বলবে ? (আরবি)। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, কিছু দরিদ্র লোক (একদা) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে সে বলল, ইয়া রাসুল্লাল্লাহ! ধনীরাও সালাত আদায় করে থাকে যেমনিভাবে আমরা আদায় করে থাকি আর তারাও সিয়াম পালন করে থাকে যেমনিভাবে আমরা পালন করে থাকি, কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে সম্পদ, যা থেকে তারা দান-সদকা করে থাকে এবং গোলাম (কিনে) আযাদ করে থাকে। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যখন তোমরা সালাত আদায় করবে, তখন বলবে, সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবর ৩৩ বার এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ১০ বার। কেননা, এর দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের সমপর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারবে এবং তোমাদের পরবর্তী থেকে অগ্রগামী হয়ে যেতে পারবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালের সালাতের পর একশত বার সুবহানাল্লাহ এবং একশত বার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনাসম হয়।

【266】

তাসবীহ গণনা করা

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেছি যে, তিনি তাসবীহ গণনা করতেন।

【267】

সালাম ফিরানোর পর কপাল না মোছা

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (প্রতি) মাসের মধ্যবর্তী দশ দিন ই’তিকাফ করতেন। যখন বিংশতিতম রাত অতিবাহিত হওয়ার এবং একবিংশতিতম রাতের আগমনের সময় হত তিনি তাঁর ঘরে ফিরে আসতেন এবং তাঁর সঙ্গে যারা ই’তিকাফ করতেন তারাও ফিরে আসতেন। তারপর তিনি অন্য এক সাথে, যে মাসে ই’তিকাফ করেছিলেন ঐ রাতেও রয়ে গেলেন যে রাতে তিনি ঘরে ফিরে আসতেন এবং লোকদের সামনে খুতবা দিলেন। তাঁদেরকে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী আদেশ করলেন। তারপর বললেন, আমি এই মধ্যবর্তী দশদিন ই’তিকাফ করতাম, পরে আমার কাছে প্রকাশ পেল যে, আমি এই শেষ দশ দিনেও ই’তিকাফ করি, অতএব জারা আমার সাথে গত মধ্যবর্তী দশদিন ই’তিকাফ করেছ তাঁরা স্বীয় ই’তিকাফের স্থানে স্থির থাকবে। আমি এই শবে কদরকে স্বপ্নে দেখেছিলাম কিন্তু আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে, অতএব তোমরা তা এই শেষ দশ রাতে প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ করো। স্বপ্নে আমাকে দেখলাম যে, আমি পানি এবং কাদার মধ্যে সিজদা করছি। আবূ সাঈদ (রাঃ)বলেন, আমাদের উপর একবিংশতিতম রাতে বৃষ্টি হল, বৃষ্টির পানি মসজিদে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সালাত আদায় করার জায়গার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেল। আমি তাঁর দিকে লক্ষ্য করলাম যে, তিনি ফজরের সালাত থেকে সালাম ফিরিয়ে নিয়েছেন, আর তাঁর চেহারা পানি ও কাদা দ্বারা আপ্লুত ছিল।

【268】

সালাম ফিরানোর পর ইমামের তাঁর সালাতের স্থানে বসে থাকা

জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সালাতের পর তাঁর সালাতের স্থানে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থাকতেন। সিমাক ইব্‌ন হার্‌ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি জাবির ইব্‌ন সামুরা (রাঃ)-কে বললাম, আপনি তো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে উঠা-বসা করে থাকতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ; যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের সালাত আদায় করতেন, তাঁর সালাতের স্থানে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে থাকতেন। তখন তাঁর সাহাবীগণের সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন, তাঁরা জাহিলী যুগের ঘটনাসমুহের আলোচনা করতেন, কবিতা আবৃত্তি করতেন এবং হাসা-হাসিও করতেন, আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হাসতেন।

【269】

সালাত আদায় শেষে ফিরে বসা

সুদ্দী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, আমি যখন সালাত শেষ করি তখন কিভাবে ফিরে বসব? আমার ডান দিক থেকে না আমার বাম দিক থেকে? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে যা অধিকাংশ সময় দেখেছি তা হলো তিনি তাঁর ডান দিক থেকে ফিরে বসতেন। আসওয়াদ (রহঃ) তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন শয়তানের জন্য তার মনে কোন অংশ না রাখে এরূপ মনে করে যে, তার জন্য (সালাত শেষে) ডান দিক থেকে ফেরাই জরুরী। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি, তাঁর অধিকাংশ ফিরে বসা তাঁর বাম দিক থেকেই হত। আয়শা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দাঁড়িয়ে ও বসে পানি পান করতে, খালি পায়ে ও জুতা পরিহিত অবস্থায় সালাত আদায় করতে এবং সালাত শেষে তাঁর ডান দিক থেকে ও বাম দিক থেকে ফিরে বসতে দেখেছি।

【270】

মহিলারা সালাত শেষে কখন ফিরে যাবে?

আয়শা (রাঃ) তিনি বলেন, মহিলারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে ফজরের সালাত আদায় করত। যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম ফিরাতেন তখন তারা চাদর মুড়ি দেওয়া অবস্থায় ফিরে যেত। তাদেরকে অন্ধকারের দরুন চেনা যেত না।

【271】

সালাত শেষে ফিরে যাওয়ার সময় ইমামের অগ্রে গমনের নিষেধাজ্ঞা

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন, তারপর তিনি আমাদের দিকে তাঁর চেহারা ফিরিয়ে বললেন, আমি হলাম তোমাদের ইমাম। অতএব, তোমরা রুকুতে আমার আগে যাবে না। সিজদাতেও না, দাঁড়ানোতেও না এবং ফিরে যাবার সময়েও না। কেননা, আমি তোমাদের আমার সামনের দিক থেকেও দেখি এবং পেছনের দিক থেকেও। তারপর তিনি বললেন, ঐ আল্লাহর শপথ যাঁর কুদরতী হাতে আমার প্রাণ! যদি তোমরা ঐ জিনিস দেখতে যা আমি দেখেছি, তাহলে তোমরা অবশ্যই কম হাসতে এবং অধিক কাঁদতে। আমরা বললাম, আপনি কি দেখেছেন ইয়া রাসূলুল্লাহ ! তিনি বললেন, জান্নাত এবং জাহান্নাম।

【272】

যে ব্যক্তি ইমামের সাথে তাঁর সালাম ফিরানো পর্যন্ত সালাত আদায় করে তাঁর সওয়াব

আবূ যর (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা এক রমযানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সিয়াম পালন করলাম, সেবার তিনি আমাদের সাথে তারাবীহ্‌র সালাত আদায় করলেন না, যত দিন পর্যন্ত না মাসের সাত দিন অবশিষ্ট রইল; তখন তিনি আমাদের সাথে তারাবীহ্‌র সালাত আদায় করলেন তাতে রাতের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হয়ে গেল। তারপর যখন ছয়দিন অবশিষ্ট রইল, তখনও তিনি আমাদের সাথে তারাবীহ্‌র সালাত আদায় করলেন না। পরে যখন পাঁচ দিন অবশিষ্ট রইলো আবার তিনি আমাদের সাথে তারাবীহ্‌র সালাত আদায় করলেন এবং তাতে রাত্রের প্রায় অর্ধেক অতিবাহিত হয়ে গেল। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! যদি আপনি আমাদের নিয়ে পুরো রাত তারাবীহ্‌র সালাত আদায় করতেন! তিনি বললেন, কোন ব্যক্তি যখন ইমামের সাথে সালাম ফিরিয়ে সালাত থেকে বের হওয়া পর্যন্ত তার সালাত আদায় করে তার জন্য এক পূর্ণ রাত সালাত আদায় করার সওয়াব লেখা হয়। তারপর যখন চারদিন অবশিষ্ট রইল তিনি তখনও আমাদের নিয়ে তারাবীহ্‌র সালাত আদায় করলেন না। তারপর যখন মাসের তিনদিন অবশিষ্ট রইল, তিনি তাঁর কন্যা এবং স্ত্রীগণের কাছে লোক পাঠালেন এবং সাহাবীগণকে একত্র করলেন এবং আমাদের নিয়ে তারাবীহ্‌র সালাত এমনিভাবে আদায় করলেন যে, আমরা ভয় পেয়ে গেলাম- আমরা ফালাহ-এর সময় না হারিয়ে ফেলি। তারপর তিনি আমাদের নিয়ে ঐ মাসের আর কোনদিন তারাবীহ্‌র সালাত আদায় করেননি। রাবী দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ফালাহ’-এর অর্থ কি? তিনি বললেন, সাহরী খাওয়া।

【273】

ইমামের জন্য মুসল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়ার অনুমতি

উকবা ইব্‌ন হারিস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে মদীনাতে একবার আসরের সালাত আদায় করলাম। তারপর তিনি সালাম ফিরিয়ে দ্রুত মুসল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে চলে গেলেন। মুসল্লীরা তাঁর দ্রুততায় আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেলে, তাঁর কিছু সাহাবী তাঁকে অনুসরণ করলেন। পরে তিনি তাঁর কোনো এক বিবির কাছে গিয়ে বের হয়ে এলেন এবং বললেন, আসরের সালাত আদায়রত অবস্থায় আমার কাছে থাকা কিছু স্বর্ণের কথা মনে পড়লো। আমি সমীচীন মনে করলাম না যে, সেগুলো আমার কাছে রাতে থাকুক। অতএব, আমি সেগুলো বন্টন করে দেওয়ার আদেশ দিয়ে এসেছি।

【274】

যখন কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয় তুমি কি সালাত আদায় করেছ ? তখন সে কি ‘না’ বলবে?

জাবির ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাঃ) যে, উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ) খন্দকের যুদ্ধের দিন সুর্যাস্তের পর কাফির কুরাইশদের গালমন্দ করতে লাগলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আসরের সালাত আদায় না করতেই সূর্য অস্তমিত হওয়ার উপক্রম হয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমিও তো উক্ত সালাত আদায় করিনি। তারপর আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর সঙ্গে বুতহান১ নামক স্থানে অবতরণ করলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাতের জন্য ওযূ করলেন, আমরাও সালাতের জন্য ওযূ করলাম। তারপর তিনি সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আসরের সালাত আদায় করলেন। পরে তিনি মাগরিবের সালাত আদায় করলেন।