13. সফরে সালাত সংক্ষিপ্ত করা

【1】

সফরে সালাত সংক্ষিপ্ত করা

ইয়া’লা ইব্‌ন উমাইয়া (রহঃ) তিনি বলেন, আমি উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ)-কে বললামঃ (আরবি) অর্থঃ যদি তোমাদের আশংকা হয় যে, কাফিরগণ তোমাদের জন্য ফিৎনা সৃষ্টি করবে তবে, সালাত সংক্ষিপ্ত করলে তোমাদের কোন দোষ নেই। (১৯:৪) এখন তো মানুষ (কাফিরদের ফিৎনা থেকে) নিরাপদ আছে! তখন উমর (রাঃ) বললেন, আমিও সে ব্যাপারে আশ্চর্যবোধ করেছি, তুমি যে ব্যাপারে আশ্চর্যবোধ করেছ। তাই আমি সে ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন, এ হল একটি দান বিশেষঃ যা আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রদান করেছেন। অতএব, তাঁর দানকে কবূল করে নাও। উমাইয়া ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রহঃ) তিনি আব্দুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ)-কে বললেন, আমরা তো বাড়ীতে অবস্থানকালীন এবং সংকটকালীন সময়ের সালাতের উল্লেখ কুরআনে দেখতে পাই, কিন্তু সফরকালীন সালাতের উল্লেখ কুরআনে দেখতে পাই না। তখন ইব্‌ন উমর (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা আমাদের কাছে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পাঠিয়েছেন এমতাবস্থায় যে, আমরা তখন কিছুই জানতাম না। আমরা তদ্রুপই করি যেরূপ মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে করতে দেখতাম। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) যে, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মক্কা থেকে মদীনা অভিমুখে বের হলেন, তিনি রাব্বুল আলামীন ব্যতীত আর কাউকে ভয় করতেন না। (এতদসত্ত্বেও) তিনি সালাত দু’ রাকআতই আদায় করতেন। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মক্কা এবং মদীনার মধ্যে সফর করতাম, তখন আমরা আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করতাম না। এতদসত্ত্বেও আমরা সালাত দু’ রাকআতই আদায় করতাম। ইব্‌নুস সিম্‌ত (রহঃ) তিনি বলেন, আমি উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ)-কে যুলহুলায়কাতে সালাত দু’রাকআত আদায় করতে দেখেছি। তখন আমি তাঁকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, আমি তদ্রুপই করছি যেরূপ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে করতে দেখেছি। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মদীনা থেকে মক্কা অভিমুখে বের হলাম। তিনি প্রত্যাবর্তন করা পর্যন্ত সর্বদাই সালাত সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করতেন। তিনি মক্কায় দশ দিন অবস্থান করেছিলেন। আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এক সফরে সালাত দু’রাকআত আদায় করলাম, আর আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ)-এর সাথেও (সফরে) দু’রাকআত আদায় করেছি। উমর (রাঃ) তিনি বলেন, জুমু’আর সালাত দু’রাকআত, ঈদুল ফিত্‌রের সালাত দু’রাকআত, ঈদুল আযহার সালাত দু’রাকআত আর সফরের সালাত দু’রাকআতই পরিপূর্ণ, অসম্পূর্ণ নয়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ভাষ্য মতে। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ভাষ্য মতে বাড়ীতে অবস্থানকালীন সালাত চার রাকআত, আর সফরকালীন সালাত দু’রাকআত, এবং সংকটকালীন সময়ের সালাত এক রাকআত ফরয করা হয়েছে। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ভাষ্য মতে আল্লাহ্‌ তা’আলা বাড়ীতে অবস্থানকালীন সময়ে চার রাকআত, সফরকালীন দু’রাকআত এবং সংকটকালীন এক রাকআত সালাত ফরয করেছেন।

【2】

মক্কায় সালাত আদায় করা

মূসা ইব্‌ন সালামা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-কে বললাম, আমি মক্কায় কিভাবে সালাত আদায় করব যখন আমি জামাআতে সালাত আদায় না করি? তিনি বললেন, দু’রাকআত আদায় করবে, এটাই আবুল কাসেম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত। মূসা ইব্‌ন সালামা (রাঃ) তিনি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেন যে, এরপর আমি জামাআতে সালাত পেলাম না, তখন আমি “বাথহা” নামক স্থানে ছিলাম। তা কিরূপে আদায় করা সমীচীন মনে করেন? তিনি বললেন, দু’রাকআত আদায় করবে, এটাই আবুল কাসেম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাত।

【3】

মিনায় সালাত আদায় করা

হারিছা ইব্‌ন ওয়াহ্‌ব খুযায়ী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মিনায় দু’রাকআত সালাত আদায় করলাম অথচ মানুষ তখন অধিক নিরাপদ ছিল। হারিছা ইব্‌ন ওয়াহ্‌ব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে মিনায় দু’রাকআত সালাত আদায় করলেন, অথচ তখন মানুষ অধিক নিরাপদ ছিল। আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মিনায় দু’রাকআত সালাত আদায় করেছি এবং আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ)-এর সাথেও আর উসমান (রাঃ)-এর সাথেও দু’ রাকআত আদায় করেছি তাঁর খিলাফতের প্রথম যামানায়। আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মিনায় রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দু’ রাকআত সালাত আদায় করেছি। আব্দুর রহমান ইব্‌ন ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, উসমান (রাঃ) মিনায় চার রাকআত সালাত আদায় করলেন এবং এ সংবাদ আব্দুল্লাহ (রাঃ)-এর কাছে পৌঁছল। তখন তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাত দু’রাকআত আদায় করেছি। ইব্‌ন উমর (রাঃ) । তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মিনায় সালাত দু’ রাকআত আদায় করেছি, আবূ বকর (রাঃ)-এর সাথে এবং উমর (রাঃ)-এর সাথেও সালাত দু’ রাকআত আদায় করেছি। আব্দুল্লাহ্‌ ইবন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিনায় সালাত দু’ রাকআত আদায় করেছেন, আবূ বকর (রাঃ) তা দু’ রাকআত আদায় করেছেন, উমর (রাঃ) তা দু’ রাকআত আদায় করেছেন, আর উসমান (রাঃ)-ও তা তাঁর খিলাফতের প্রথম যামানায় দু’ রাকআত আদায় করেছেন।

【4】

যতটুকু দূরত্বে সালাত সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করা যায়

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মদীনা থেকে মক্কা অভিমুখে বের হলাম। তখন তিনি আমাদের নিয়ে প্রত্যাবর্তন করা পর্যন্ত সালাত দু’ রাকআত আদায় করতেন। আমি বললাম, তিনি কি মক্কায় অবস্থান করেছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমরা তথায় দশ দিন অবস্থান করেছিলাম। ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কায় পনের দিন অবস্থান করেছিলেন, তথায় তিনি সালাত দু’ রাকআত দু’ রাকআত আদায় করতেন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের সময় ১৫ (পনের) দিন এবং বিদায় হজ্জের সময় ১০ (দশ) দিন মক্কায় অবস্থান করেছিলেন। আলা ইব্‌ন হাযরামী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মুহাজির তার হজ্জ কর্ম সম্পাদনের পর তিন দিন অবস্থান করবে। আলা ইব্‌ন হাযরামী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মুহাজির মক্কায় হজ্জ কর্ম সম্পাদনের পর তিন দিন অবস্থান করবে। আয়েশা (রাঃ) তিনি উমরার উদ্দেশ্যে মদীনা থেকে মক্কা অভিমুখে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে রওয়ানা হয়ে মক্কায় পৌছে বললেন, আমার পিতা মাতা আপনার উপর কুরবান হোক, আপনি সালাত সংক্ষিপ্ত আদায় করেছেন, আর আমি পরিপূর্ণ আদায় করেছি। আপনি রোযা রাখেন নি, কিন্তু আমি রোযা রেখেছি। তিনি বললেন, তুমি ভালই করেছ হে আয়েশা (রাঃ)। তিনি আমাকে দোষারোপ করলেন না।

【5】

সফরের সময় নফল সালাত ছেড়ে দেওয়া

ওয়াবারা ইব্‌ন আব্দুর রহমান (রাঃ) তিনি বলেন, ইব্‌ন উমর (রাঃ) সফরে সালাত দু’ রাকআত থেকে বেশী আদায় করতেন না, দু’ রাকআতের আগেও কোন সালাত আদায় করতেন না এবং তার পরেও না। তখন তাঁকে বলা হল, এ কি রকম সালাত? তিনি বললেন, এ রকমই আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে করতে দেখেছি। ঈসা ইব্‌ন হাফ্‌স (রহঃ) । তিনি বলেন, আমার পিতা আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আমি এক সফরে ইব্‌ন উমর (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম। তিনি জোহর এবং আসরে দু’রাকআত করে আদায় করলেন। তারপর তিনি তার বিছানায় ফিরে গেলেন। তখন তিনি দেখলেন যে, মুসল্লীরা তাসবীহ পড়া আরম্ভ করে দিয়েছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কি করছে? আমি বললাম, তাঁরা তাসবীহ পড়ছে। তিনি বললেন, যদি আমি এই দু’রাকআত ফরযের পূর্বে বা পরে নফল সালাত আদায় করতাম তাহলে এই দু’ রাকআত ফরযকে পূর্ন চার রাকআত আদায় করতাম। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে অবস্থান করেছি, তিনি সফরে দু’রাকআতের বেশী আদায় করতেন না। আমি আবূ বকর (রাঃ) উমর (রাঃ) ও উসমান (রাঃ)-এরও সাহচর্য লাভ করেছি। তাঁরাও মৃত্যু অবধি অনুরূপ করতেন।