2. পানির বর্ণনা

【1】

আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর সহধর্মিণীদের মধ্যে একজন জানাবাতের গোসল করলে তাঁর গোসলের উদ্ধৃত্ত পানি দ্বারা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করলেন। পরে তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট তা উল্লেখ করলে তিনি বললেনঃ পানিকে কোন বস্তুই নাপাক করে না। [১]

【2】

বুযা’আ নামক কূপ প্রসঙ্গে আলোচনা

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে প্রশ্ন করা হলোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমরা কি বুযাআ নামক কূপের পানিতে উযূ করব? তা এমন একটি কূপ যাতে কুকুরের মাংস, হায়যের ন্যাকড়া ও আবর্জনা নিক্ষেপ করা হয়। তিনি বললেনঃ পানি পবিত্র, তাতে কোন বস্তুই নাপাক করে না। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পাশ দিয়ে গমন করলাম, তখন তিনি বুযাআ কূপের পানি দ্বারা উযূ করছিলেন। আমি বললাম, আপনি কি এই কূপের পানি দ্বারা উযূ করছেন? অথচ তাতে ঘৃণ্য ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ করা হয়ে থাকে। তখন তিনি বললেনঃ পানিকে কোন বস্তুই নাপাক করে না।

【3】

পানির পরিমাণ নির্ণয়

আবদুল্লাহ ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে পানি এবং তাতে যে কোন সময় চতুস্পদ জন্তু ও হিংস্র পশু অবতরন করে, সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বললেনঃ যখন পানি দুই ‘কুল্লা’ পরিমাণ হয় তখন তা নাপাক হয় না। [১] আনাস (রাঃ) এক বেদুঈন মসজিদে পেশাব করলে উপস্থিত লোকদের মধ্যে কেউ কেউ তাকে তিরস্কার করতে উদ্যত হল। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে বাধা দিও না। যখন ঐ ব্যক্তি পেশাব করা শেষ করল, তখন তিনি এক বালতি পানি আনিয়ে তা পেশাবের উপর ঢেলে দিলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক বেদুঈন মসজিদে দাঁড়িয়ে পেশাব করল। উপস্থিত লোকজন তাকে পাকড়াও করতে উদ্যত হলে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেনঃ তাকে ছেড়ে দাও এবং তার পেশাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। তোমাদেরকে নরম ব্যবহার করার জন্য পাঠানো হয়েছে, কঠোর ব্যবহারের জন্য নয়।

【4】

বদ্ধ পানিতে জুনুব ব্যক্তির গোসল করার প্রতি নিষেধাজ্ঞা

বুকায়র (রহঃ) আবূ সায়িব তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) -কে বলতে শুনেছেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, তোমাদের কেউ যেন জানাবাত অবস্থায় বদ্ধ পানিতে গোসল না করে।

【5】

সমুদ্রের পানি দ্বারা উযূ করা

সাঈদ ইব্‌ন আবূ সালামা (রহঃ) মুগীরা ইব্‌ন আবূ বুরদা (রহঃ) তাঁকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) -কে বলতে শুনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! আমরা সমুদ্রে ভ্রমন করি এবং আমাদের সাথে করে স্বল্প পানি নিয়ে যাই। আমরা যদি ঐ পানি দ্বারা উযূ করি তবে আমরা পিপাসায় কষ্ট পাব, এমতাবস্থায় আমরা সমুদ্রের পানি দ্বারা উযূ করব কি? রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এর পানি পবিত্র আর এর মৃত জীব হালাল।

【6】

বরফ ও বৃষ্টির পানি দ্বারা উযূ করা

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ (আরবি) “হে আল্লাহ্‌! আমার পাপসমূহ বরফ ও মেঘের পানি দ্বারা ধৌত কর আর আমার অন্তঃকরনকে গুনাহ থেকে পরিষ্কার কর, যেমন তুমি সাদা কাপড়কে ময়লা হতে পরিষ্কার করে থাক।” আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ (আরবি) “হে আল্লাহ্‌! আমার পাপসমূহ বরফ, পানি এবং মেঘের পানি দ্বারা ধুয়ে ফেল।”

【7】

কুকুরের উচ্ছিষ্ট

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুকুর তোমাদের কারো কোন পাত্রে মুখ দিলে সে যেন পাত্রের বস্তু ফেলে দেয় আর পাত্রটি সাতবার ধুয়ে ফেলে।

【8】

কোন পাত্রে কুকুরের মুখ দেয়ার দরুন তা মাটি দ্বারা ঘষা

আবদুল্লাহ ইব্‌ন মুগাফ্‌ফাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুরকে হত্যা করতে আদেশ করেছেন এবং বকরীপালের ও শিকারের কুকুরের বিষয়ে অনুমতি দান করেছেন। তিনি বলেছেনঃ কুকুর কোন পাত্রে মুখ দিলে তা সাতবার ধুয়ে নেবে আর অষ্টমবারে তা মাটি দ্বারা ঘষবে। আবদুল্লাহ ইব্‌ন মুগাফ্‌ফাল (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর হত্যার নির্দেশ প্রদান করেন। পরে বলেন, কুকুরের বিষয়ে তাদের কী হল? আবদুল্লাহ বলেনঃ আর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিকারের কুকুর ও বকরীপালের কুকুর পোষার অনুমতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ যখন কুকুর পাত্রে মুখ দেয়, তখন তা সাতবার ধুয়ে নেবে আর অষ্টমবার মাটি দ্বারা ঘষে নেবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) -এর বর্ণনা আবদুল্লাহ ইব্‌ন মুগাফ্‌ফাল (রাঃ) -এর বর্ণনা হতে ভিন্নরূপ। তিনি বলেছেনঃ তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তন্মধ্যে একবার মাটি দ্বারা। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কুকুর তোমাদের কারো পাত্রে মুখ দেয়, তখন তা সাতবার ধুয়ে ফেলবে তন্মধ্যে প্রথমবার মাটি দ্বারা। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ যখন কুকুর তোমাদের কারো পাত্রে মুখ দেয়, তখন ঐ পাত্র সাতবার ধুয়ে ফেলবে যার প্রথমবার হবে মাটি দ্বারা।

【9】

বিড়ালের উচ্ছিষ্ট

কাব্‌শা বিন্‌তে কা’ব ইব্‌ন মালিক (রাঃ) আবূ কাতাদা তাঁর নিকট আগমন করলেন, তারপর বর্ণনাকারী কিছু কথা বললেনঃ যার অর্থ এই; আমি তার জন্য পানিভর্তি একটি উযূর পাত্র উপস্থিত করলাম। এমন সময় একটি বিড়াল তা হতে পান করল। তারপর তিনি ঐ বিড়ালটির জন্য পাত্রটি কাত করে দিলেন যাতে সে পান করতে পারে। কাব্‌শা বলেন, তখন আবূ কাতাদা দেখলেন, আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে আছি, তিনি বললেন, হে ভাতিজী! তুমি কি আশ্চর্যবোধ করছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এরা (বিড়াল) অপবিত্র নয়, এরা তোমাদের আশেপাশে বিচরণকারী এবং বিচরণকারিণী।

【10】

ঋতুমতি নারীর ভুক্তাবশেষ

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি গোশ্‌তযুক্ত হাড় হতে গোশত আলগা করতাম, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মুখ সেখানেই রাখতেন যেখানে আমি মুখ রেখেছিলাম। আর আমি পাত্র হতে পানি পান করতাম এবং তিনি সেখানেই মুখ রাখতেন যেখানে আমি রেখেছিলাম, অথচ আমি তখন ঋতুমতি।

【11】

স্ত্রীর উদ্বৃত্ত পানি ব্যবহারের অনুমতি

ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সময়ে নারী-পুরুষ সকলে একত্রে উযূ করত।[১]

【12】

নারীর উযূর উদ্বৃত্ত পানি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা

হাকাম ইব্‌ন আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীর উদ্বৃত্ত উযূর পানি দ্বারা পুরুষদের উযূ করতে নিষেধ করেছেন।

【13】

জানাবাতগ্রস্থ ব্যক্তির উদ্বৃত্ত পানি ব্যবহারের অনুমতি

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গে একত্রে একই পাত্রে গোসল করতেন।

【14】

একজন লোকের উযূ এবং গোসলের জন্য কতটুকু পানি যথেষ্ট

আবদুল্লাহ ইব্‌ন আবদুল্লাহ ইব্‌ন জাব্‌র (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মাক্‌কূক পানি দ্বারা উযূ করতেন এবং পাঁচ মাক্‌কূক পানি দ্বারা গোসল করতেন। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক মুদ পরিমাণ পানি দ্বারা উযূ করতেন আর গোসল করতেন এক সা পানি দ্বারা। আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযূ করতেন এক মুদ পানি দ্বারা এবং গোসল করতেন এক সা’ পানি দ্বারা।