26. ঘোড়া

【1】

ঘোড়ার ললাটে কল্যাণ সংযুক্ত

সালামা ইব্‌ন নুফায়ল কিন্‌দী (রাঃ) তিনি বলেনঃ (একদিন) আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ‌্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), লোকেরা ঘোড়ার মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করেছে, অস্ত্রসস্ত্র রেখে দিয়েছে এবং তারা বলছেঃ যুদ্ধ তার অস্রসস্ত্র রেখে দিয়েছে (এখন আর জিহাদ নেই, জিহাদ শেষ হয়ে গেছে)। এ কথা শুনে তিনি তার প্রতি লক্ষ্য করে বললেনঃ তারা মিথ্যা বলছে। এখনই জিহাদের আদেশ এসেছে। আর সর্বদা আমার উম্মতের একদল দ্বীনের জন্য যুদ্ধ করতে থাকবে। এখনই আল্লাহ্ তাদের জন্য লোকের অন্তর ঘুরিয়ে দেবেন। আর আল্লাহ্ তাদেরকে ওদের দ্বারা রিযিক দান করবেন কিয়ামত পর্যন্ত। আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার ললাটের সাথে কল্যাণ ও মঙ্গলকে সন্পৃক্ত করে রেখেছেন। আমাকে এ কথা ওহী দ্বারা জনানো হয়েছে যে, অচিরেই আমাকে তুলে নেয়া হবে (ইন্‌তিকাল হবে); (চিরদিন) আমাকে রাখা হবে না। আর তোমরা আমার পরে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। তোমরা একে অন্যের সাথে মারামারি কাটাকাটি করবে, আর ঈমানদারদের নিরাপদ ঠিকানা হবে শামে (সিরিয়ায়)। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ‌্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলা কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার ললাটে কল্যাণ বেঁধে রেখেছেন। ঘোড়া তিন প্রকার যা দ্বারা মানুষ সওয়াব লাভ করে। আর এক প্রকার ঘোড়া, যা (অসচ্ছলতার জন্য) আচ্ছাদন (ঢাল স্বরুপ) হয়ে থাকে এবং এক প্রকার ঘোড়া বোঝাস্বরুপ হয়ে থাকে। সওয়াবের ঘোড়া তো ঐ ঘোড়া, যাকে (মালিক) আটকে রাখে (লালন পালন করে) আল্লাহ্‌র পথে জিহাদের জন্য এবং প্রয়োজনমত তাকে জিহাদে ব্যবহার করা হয়। যা কিছু সে খায়, যা কিছু তার পেটের ভেতরে গায়েব করে, তা সবই তার জন্য সওয়াব লেখা হয়। যদিও নতুন চারণভূমিতে সে তার সামনে উদ্ভাসিত হয়। হাদিসের শেষ পর্যন্ত বর্নণা করেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘোড়া কোন লোকের জন্য সওয়াবের কারন হয়ে থাকে, আর কারো জন্য তা আচ্ছদন (ঢালস্বরুপ), আর কারো জন্য তা বোঝা (গুনাহের কারণ) হয়ে থাকে। ঘোড়া ঐ ব্যক্তির জন্য সওয়াবের কারন হয়ে থাকে, যে তাকে আল্লাহ্‌র রাস্তায় বাঁধে (প্রতিপালন করে)। আর সে তার রশি বাগান এবং চারণভূমিতে লম্বা করে দেয়, সেই ঘোড়া সে রশিতে যতদুর পর্যন্ত চরবে, তার জন্য নেকী লেখা হবে। যদি রশি ছিঁড়ে কোন উঁচু স্থানে (টিলায়) বা দুই উঁচু স্থানে চরে, তবে তার প্রত্যেকে পদক্ষেপে তার জন্য নেকী লেখা হবে এবং হারিসের হাদীসে আছে, তার গোবরেও নেকী লেখা হবে। যদি ওই ঘোড়া কোন নহরে গিয়ে পানি পান করে, অথচ মালিকের পানি পান করাবার ইচ্ছা না থাকে, তবুও তা মালিকের জন্য নেকী রুপে লেখা হবে। এইরুপ ঘোড়া সওয়াবের কারন হয়ে থাকে। আর, যে তা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য বেঁধে রাখে, অথবা মানুষের কাছে চাওয়া থেকে বাঁচার জন্য এবং তাতে অর্থাৎ (ঘোড়ার) ঘাড়ে ও পিঠে পালনীয় মহান মহীয়ান আল্লাহ্‌র ‘হক’-এর কথা বিস্মৃত হয় না (এর যাকাত আদায় করে), তবে তা (ঘোড়া) তার জন্য আচ্ছাদন। আর ওই ব্যক্তির জন্য পাপ, যে ব্যক্তি তাকে গর্ব করা, লোক দেখানো এবং মুসলমানের সাথে শত্রুতার জন্য বাঁধে (পালন করে)। কোন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে গাধার কথা জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বললেনঃ এ ব্যাপারে এখনও কিছু আমার উপর নাযিল হয়নি। তবে এই আয়াত যা সর্বব্যাপী মূলবিধি (রুপে স্বীকৃত, যাতে সামগ্রিক বিষয় শামিল রয়েছে)। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ কেউ অণু পরিমাণ নেককাজ করলে তা সে দেখতে পাবে, আর কেউ অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করলে তা-ও সে দেখতে পাবে।

【2】

ঘোড়ার প্রতি ভালোবাসা

আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট স্ত্রীজাতির পর ঘোড়া অপেক্ষা আর কোন বস্তু প্রিয় ছিল না।

【3】

কোন‌্ বর্ণের ঘোড়া উত্তম?

আবূ ওয়াহাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবী ছিলেন, তাঁর থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ‌্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা নবীগণের নামে নাম রাখবে। আর আল্লাহ্‌র নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় নাম হল আবদুল্লাহ এবং আবদূর রহমান। ঘোড়া বেঁধে রাখবে (লালন-পালন করবে) এবং এর মাথায় এবং পেছনে হাত বুলাবে, আর এর গলায় কালাদা পরাবে, তাকে(জাহিল) যুগের অনুকরণীয় ঘুনটীর কালাদা পরাবে না, লাল কাল মিশান (খয়রী) বর্ণের ঘোড়া পছন্দ করবে, যার ললাট এবং সামনের ও পেছনের পা সাদা হয় অথবা টকটকে লাল রঙ এর ঘোড়া, যার ললাট সাদা হয় এবং সামনের পা-ও সাদা।

【4】

যে ঘোড়ার তিন পা সাদা ও এক পা শরীরের বর্ণের

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিকাল ঘোড়া (ঐ সকল ঘোড়া) পছন্দ করতেন না যেগুলোর তিন পা সাদা এবং এক পা অন্য বর্ণের (এর দেহের বর্নের) হতো। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্নিত যে, তিনি শিকাল ঘোড়া অপছন্দ করতেন। আবূ আবদুর রহমান (রহঃ) বলেনঃ শিকাল ঐ ঘোড়াকে বলা হয়, যার তিন পা সাদা এবং এক পা অন্য রঙের হয়। অথবা তিন পা অন্য রঙের এবং এক পা সাদা। আর শিকাল শুধু পায়ে হয়, হাতে হয় না।

【5】

ঘোড়ার অশুভ হওয়া প্রসঙ্গ

সালিম(রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, (কুলক্ষণ যদি থেকে থাকে তবে) তিন বস্তুর মধ্যে অশুভ লক্ষণ (অপয়া) রয়েছেঃ নারী, ঘোড়া এবং ঘরে।[১] আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন তিন বস্তুর মধ্যে কুলক্ষণ (অপয়া) রয়েছেঃ নারী, ঘোড়া এবং ঘর। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কোন বস্তুতে (কুলক্ষণ) থেকে থাকে, তবে তা ঘর, নারী এবং ঘোড়ার মধ্যে।

【6】

ঘোড়ার বরকতের বর্ণনা

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: বরকত ঘোড়ার ললাটে।

【7】

ঘোড়ার ললাটের চুল বানিয়ে দেওয়া

জারির (রাঃ) তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ্ (সালল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেছি, তিনি ঘোড়ার ললাটের চুল তাঁর দুই আঙ্গুল দিয়ে বানিয়ে দিতেন এবং বলতেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার মাথায় খায়ের-বরকত বাঁধা থাকবে, আর সে খায়ের-বরকত হলো সওয়াব এবং গনীমত। ইব্ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ ঘোড়ার ললাটে কিয়ামত পর্যন্ত খায়ের-বরকত নিবদ্ধ থাকবে। উরওয়া বারিকী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘোড়ার ললাটে কিয়ামত পর্যন্ত কল্যাণ ও মঙ্গল নিবদ্ধ থাকবে। উরওয়া ইব্ন আবূ জা‘আদ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার ললাটে মঙ্গল ও কল্যাণ নিবদ্ধ থাকবে, আর তা হলো সওয়াব ও গনীমত। উরওয়া (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার ললাটে খায়ের-বরকত নিবদ্ধ থাকবে, আর তা হলো সওয়াব ও গনীমত। উরওয়া ইব্‌ন আবূ জা‘আদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার ললাটে কল্যাণ ও মঙ্গল নিবদ্ধ থাকবে, আর তা হলো সওয়াব ও গনীমত।

【8】

ঘোড়াকে যুদ্ধ কৌশল শিক্ষা দেয়া

খালিদ ইব্‌ন ইয়াযীদ জুহানী (রাঃ) তিনি বলেনঃ উকবা ইব্‌ন আমির (রাঃ)আমার নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় বলতেনঃ হে খালিদ! আমাদের সাথে চল, আমরা তীরন্দাযী করবো। একদিন আমি দেরী করলে তিনি বললেনঃ হে খালিদ! এসো, আমি তোমাকে এমন কথা অবহিত করব, যা আমাকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন। আমি তাঁর কাছে গেলে তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্‌ তা ৱ‘আলা এক তীর দ্বারা তিন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (প্রথম,) তীর প্রস্তুতকারী যদি সে তীর তৈরি করার সময় নেক নিয়্যত রাখে; দ্বিতীয়, তীর নিক্ষেপকারী; তৃতীয়, তীর নিক্ষেপকারীকে তীর সরবরাহকারী (তীরে ফলা সংযোগকারী)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেনঃ তোমরা তীর নিক্ষেপ কর এবং আর আরোহণ কর, আর আরোহণ করার চেয়ে তীর নিক্ষেপ করা আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়। আর তিন ধরনের খেলা ব্যতীত কোন খেলা গ্রহণযোগ্য নয়; ১. মানুষ কর্তৃক তার ঘোড়াকে যুদ্ধ কৌশল শিক্ষা দেয়া; ২. নিজ স্ত্রীর সাথে প্রেম খেলা করা; ৩. তীর এবং ধনুক দ্বারা তীর নিক্ষেপ করা। যে ব্যক্তি একবার তীর নিক্ষেপ করা শিক্ষা করে তার প্রতি অনীহার কারণে তা ছেড়ে দেয়, সে এক নিয়ামতের নাশোকরী করে। অথবা তিনি বলেছেনঃ সে যেন তা অস্বীকার করে।

【9】

ঘোড়ার দু‘আ

আবূ যর (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আরবী ঘোড়াকে প্রতি ভোর রাতে দুটো দু‘আ করার অনুমতি দেয়া হয়ঃ হে আল্লাহ্! যে মানুষের হাতে তুমি আমাকে সোপর্দ করেছ, আমাকে তার নিকট তার মালের এবং তার পরিবারের মধ্যে অধিক প্রিয় করে দাও, অথবা তিনি বলেছেনঃ তার মালের এবং পরিবারের অধিক প্রিয়দের মধ্য হতে করে দাও।

【10】

গাধাকে ঘোড়ার উপর চড়ানোর ব্যাপারে কঠোর আপত্তি

আলী ইব্‌ন আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - কে একটি খচ্চর হাদিয়া দেয়া হল। তিনি তাতে সওয়ার হলে আলী (রাঃ)বললেনঃ যদি আমরা (প্রজননের উদ্দেশ্যে) গাধাকে ঘোড়ার উপর চড়াই, তাহলে আমাদের নিকট এরূপ হবে (খচ্চর জন্ম নেবে)। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এরূপ কাজ তারাই করে, যারা অজ্ঞ। আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন উবায়দুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ (একদা) আমি ইব্‌ন আব্বাস (রা:)- এর নিকট ছিলাম, তখন এক ব্যক্তি তাঁর নিকট জিজ্ঞেস করলোঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি জুহর এবং আসরে কিরাআত পড়তেন? তিনি বললেনঃ (পড়তেন) না। সে ব্যক্তি বললঃ হয়তো মনে মনে পড়তেন। তিনি বললেনঃ তোমার মাথা, এ তো প্রথম অপেক্ষা মন্দ। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র বান্দা ছিলেন। আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁকে যা আদেশ করেছেন, তিনি তা পৌঁছে দিয়েছেন, আল্লাহ্‌র কসম! তিনি আমাদেরকে বিশেষ কিছু বলেন নি, কিন্তু আমাদেরকে তিনটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেনঃ ১. আমরা যেন পূর্ণরূপে উযূ করি, ২. আমরা যেন সাদকার মাল না খাই, আর ৩. আমরা যেন গাধাকে ঘোড়ার উপর না চড়াই।

【11】

ঘোড়াকে ঘাস ও দানাপানি খাওয়ানো

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র উপর ঈমান রেখে এবং তাঁর ওয়াদাকে সত্য জেনে আল্লাহ্‌র পথে ঘোড়া বাঁধবে, তবে তার (ঘোড়ার) ঘাস খাওয়া, পানি পান, পেশাব ও পায়খানা করা তার পাল্লায় পুণ্যরূপে যুক্ত হবে।

【12】

যে ঘোড়ার ইয্‌মার১ করা হয়নি, সে ঘোড়ার দৌড়ের শেষ প্রান্ত

ইব্‌ন উমর (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুলাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড় দৌড় করিয়েছেন। হাফ্‌য়া নামক স্থান হতে ঘোড়া ছেড়ে দেন যার শেষ সীমা ছিল সানিয়াতুল বিদা পর্যন্ত। আর তিনি যে ঘোড়ার ইয্‌মার করা হয়নি সেগুলোর দৌড় করিয়েছিলেন সানিয়া হতে বনী যুরায়ক মসজিদ পর্যন্ত।

【13】

প্রতিযোগিতার জন্য ঘোড়াকে ইয্‌মার করা

ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুলাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ সকল ঘোড়ার মধ্যে ঘোড়দৌড় করান, যেগুলোর ইয্‌মার করা হয়েছিল। আর তার সীমানা ছিল হাফ্‌য়া হতে সানিয়াতুল বিদা পর্যন্ত। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ সকল ঘোড়ার জন্য যাদের ইয্‌মার করা হয়নি, সানিয়া হতে বনী যুরায়কের মসজিদ পর্যন্ত দৌড়ের ব্যবস্থা করেন। আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ)ঐ ঘোড়দৌড়ে শরীক ছিলেন।

【14】

প্রতিযোগিতা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তীর, ঘোড়া এবং উট ব্যতীত আর কিছুতে প্রতিযোগিতা নেই। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তীর, উট এবং ঘোড়া ব্যতীত আর কিছুতে প্রতিযোগিতা নেই। আবূ হুরায়রা (রাঃ) উট এবং ঘোড়া ব্যতীত আর কিছুতে প্রতিযোগিতা বৈধ নয়। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ‘আয্‌বা’ নামক একটি উটনী ছিল, যা প্রতিযোগিতায় কখনও পরাজিত হতো না। হঠাৎ আরবের এক গ্রাম্য লোক একটি জোয়ান উটের উপর সওয়ার হয়ে আসে এবং তা প্রতিযোগিতায় (আয্‌বার) চেয়ে অগ্রগামী হয়ে যায়, যা মুসলমানদের জন্য অতি কষ্টের কারণ হয়। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের চেহারার অবস্থা (বিষণ্ণতা) লক্ষ্য করলে, তারা বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! আয্‌বা পিছে পড়ে গেল! তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌ যখন কোন বস্তুকে উঁচুতে উঠান, তখন তিনি তাকে (একবারের জন্য হলেও) নীচু করে থাকেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ উট ও ঘোড়া ব্যতীত অন্য কিছুতে প্রতিযোগিতা নেই।

【15】

জালাব [১] প্রসঙ্গে

ইমরান ইব্‌ন হুসায়ন (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে, তিনি বলেছেনঃ ইসলামে জালাব, জানাব ও শিগার নেই। আর যে ব্যক্তি লুন্ঠন করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।

【16】

জানাব [১] সম্পর্কে

ইমরান ইব্‌ন হুসায়ন (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইসলামে জালাব, জানাব এবং শিগার [২] নেই। আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ‌্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (এর উটনী) এক গ্রাম্য লোকের সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয় এবং লোকটি অগ্রগামী (বিজয়ী) হয়। এতে সাহাবিগণ মনঃক্ষুণ্ণ হন এবং তাঁর নিকট এ বিষয়ে আলোচনা করা হলে তিনি বলেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলার করণীয় এরূপ যে, কেউ নিজেকে উঁচুতে তুললে আল্লাহ্‌ তাকে নীচু করে দেন।

【17】

(গনীমতে) ঘোড়ার অংশ

আব্বাদ ইব্‌ন আব্দুল্লাহ ইব্‌ন যুবায়র (রাঃ) তিনি বলতেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বর যুদ্ধের পর যুবায়র ইব্‌ন আওয়ামকে গণীমতের মাল থেকে চার অংশ দেন। এক অংশ তাঁর নিজের, এক অংশ যুবায়রের মাতা সাফ্‌য়্যা বিন্‌ত আব্দুল মুত্তালিবের- নিকটাত্মীয়ের অংশরূপে এবং দুই অংশ ঘোড়ার জন্য।