29. বিশেষ দান

【1】

‘নাহল’ সম্পর্কিত নু’মান ইব্‌ন বশীর (রাঃ) –এর হাদীসের বর্ণনায় বিরোধ

নু’মান ইব্‌ন বশীর (রাঃ) তাঁর পিতা তাঁকে একটি দাস দান করলেন। এরপর তিনি এর সাক্ষী রাখার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলে তিনি বললেনঃ তুমি কি তোমার প্রত্যেক সন্তানকে দান করেছো ? তিনি বললেনঃ না। তিনি বললেনঃ তা হলে তা প্রত্যাহার করে নাও। নু‘মান ইব্‌ন বশীর (রাঃ) তাঁর পিতা তাকে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেনঃ আমি আমার একটি গোলাম আমার এ ছেলেকে দান করেছি। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার প্রত্যেক সন্তানকেই দান করেছ? তিনি বললেনঃ না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তা (তোমার দান) ফিরিয়ে নাও। নু‘মান ইব্‌ন বশীর (রাঃ) তাঁর পিতা বশীর ইব্‌ন সা’দ (রাঃ) তার ছেলে নু‘মানকে সঙ্গে নিয়ে এসে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌ ! আমি আমার এই ছেলেকে একটি দাস দান করেছি। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার সকল ছেলেকে কি দান করেছ? তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেনঃ না। তিনি বললেনঃ তাহলে তা ফিরিয়ে নাও। বশীর ইব্‌ন সা’দ (রাঃ) তিনি নু’মান ইব্‌ন বশীরকে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেনঃ আমি আমার এই ছেলেকে একটি দাস দান করেছি। যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমি এই দান বহাল রাখবো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি তোমার সকল ছেলেকে দান করেছ? বশীর বললেনঃ না। তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ) বললেনঃ তুমি তা ফিরিয়ে নাও। নু‘মান ইব্‌ন বশীর (রাঃ) তাঁর পিতা তাঁকে কিছু দান করলেন; তখন তাঁর মাতা তাঁর পিতাকে বললেন: এই দানের জন্য আপনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাক্ষী রাখুন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে একথা তাঁর কাছে উল্লেখ করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য সাক্ষী হওয়া অপছন্দ করলেন। বশীর (রাঃ) তিনি তার এক ছেলেকে একটি দাস দান করলেন, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ ব্যাপারে সাক্ষী রাখতে ইচ্ছা করলেন। তিনি বললেন: তুমি কি তোমার প্রত্যেক ছেলেকে অনুরূপ দান করেছ? তিনি (বশীর) বললেন: না। তখন তিনি [রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন: তাহলে তা (এই দান) ফিরিয়ে নাও। উরওয়া (রহঃ) বশীর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন: হে আল্লাহ্‌র নবী! আমি নু‘মানকে কিছু দান করেছি। তিনি বললেন: তুমি কি তার ভাইদেরকেও দান করেছ? বশীর বললেন: না। তিনি বললেন: তাহলে তুম\ ি তা ফিরিয়ে নাও। নু‘মান (রাঃ) থেকে তিনি বলেন: তাঁর পিতা তাঁকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে গেলেন এবং বললেন, আপনি সাক্ষী থাকুন আমি আমার ছেলে নু‘মানকে আমার এই এই মাল দান করেছি। তিনি বললেন: তুমি তোমার প্রত্যেক ছেলেকে অনুরূপ দান করেছ, যা নু‘মানকে করেছ? নু‘মান (রাঃ) তাঁর পিতা তাঁকে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসেন, তাকে যে দান করেন তার ব্যাপারে তাঁকে সাক্ষী করার জন্য। তখন তিনি বললেন: তোমার প্রত্যেক ছেলেকেই কি তার দানের মত দান করেছ? তিনি বললেন: না। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তাহলে এ ধরনের দানের ব্যাপরে আমি সাক্ষী থাকছি না। বশীরকে বললেন: তোমাকে আনন্দিত করে না যে, তারা (পুত্ররা) সকলেই তোমার সাথে ভাল ব্যবহার করুক। তিনি বললেন: হ্যাঁ-অবশ্যই। তখন তিনি বললেন: তবে এমন (কাজ) করো না (সাক্ষী বানিয়ো না।) নু‘মান ইব্‌ন বশীর আনসারী (রাঃ) তার মাতা, রাওয়াহার কন্যা তার পিতার কাছে তার মাল হতে তার পুত্রের জন্য কিছু দান দাবি করলেন। তিনি এক বছর পর্যন্ত এ ব্যাপারে টাল-বাহানা করতে লাগলেন। পরে ভাল মনে হলে তিনি তাকে দান করলেন। তিনি (নু‘মানের মা) বললেন : রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাক্ষী না করা পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট হবো না। এরপর তিনি (নু‘মানের পিতা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গিয়ে) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! এর মা রাওয়াহার কন্যা একে কিছু দান করার জন্য আমার সাথে ঝগড়া করায় আমি তাকে দান করেছি। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: হে বশীর! এই ছেলে ব্যতীত তোমার আরও ছেলে আছে কি? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তুমি এই ছেলেকে যেরূপ দান করেছ, সেরূপ তাদের সকলকে দান করেছ? তিনি বললেন: না। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তাহলে তুমি আমাকে সাক্ষী রেখো না। কেননা আমি যুলুমের সাক্ষী হই না। নু‘মান (রাঃ) তিনি বলেন: আমার মাতা আমার পিতার নিকট আমার জন্য কিছু দান চাইলে তিনি আমাকে তা দান করলেন। তখন আমার মাতা বললেন: রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাক্ষী না করা পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট হবো না। তিনি [নু‘মান (রাঃ)] বলেন: আমার পিতা আমার হাত ধরে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে গেলেন। ঐ সময় আমি ছোট বালক ছিলাম। তিনি বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এর মা, রাওয়াহার কন্যা আমার নিকট কিছু দান চায় এবং এতে আপনি সাক্ষী থাকলে সে সন্তুষ্ট হবে। তখন তিনি [রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন: হে বশীর! এই ছেলে ব্যতীত তোমার আর কোন ছেলে আছে কি? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তিনি [রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন: তুমি একে যা দান করেছো তাকেও কি এই দানের অনুরূপ দান করেছ? তিনি বললেন: না। তখন তিনি [রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন: তাহলে তুমি আমাকে সাক্ষী রেখো না। কারণ আমি যুলুমের সাক্ষী হই না। আমির (রহঃ) তিনি বলেন: আমাকে অবহিত করা হয়েছে যে, বশীর ইব্‌ন সা‘দ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন: আমার স্ত্রী, আমার বিন্‌ত রাওয়াহা আমাকে তার ছেলে নু‘মানকে কিছু দান করতে বলছে; সে আরো বলছে যে, আমি যেন এ ব্যাপারে আপনাকে সাক্ষী রাখি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন: এই ছেলে ব্যতীত তোমার কি আরো ছেলে আছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তিনি [রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন: একে যেমন দান করেছ, তাদেরকেও তেমন দান করেছ? তিনি বললেন: না। তিনি [রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন: তাহলে তুমি আমাকে যুলুমের সাক্ষী রেখো না। আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন উৎবা ইব্‌ন মাসঊদ (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো: আমি আমার ছেলেকে কিছু দান করেছি। আপনি এর সাক্ষী থাকুন। তিনি বললেন: এই ছেলে ব্যতীত তোমার আরো ছেলে আছে কি? সে বললো: হ্যাঁ। তিনি বললেন: এই ছেলেকে যেমন দান করেছ, তাদেরকেও কি তেমন দান করেছ, সে বললো: না। তিনি বললেন: আমি (কি) যুলুমের সাক্ষী হবো? মুসলিম ইব্‌ন সুবায়হ (রাঃ) তিনি বলেন: নু’মান ইব্‌ন বশীর (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি: আমার পিতা আমাকে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হলেন, আমাকে যা দান করেছেন, তাঁকে তার সাক্ষী করার জন্য। তিনি বললেন: এই ছেলে ব্যতীত তোমার আরো ছেলে আছে কি? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তিনি তালুর সাথে হাত একত্রিত করে ইশারা করে বললেন যে, তাদের মধ্যে সমতা রক্ষা করলে না কেন? নু‘মান (রাঃ) আমার পিতা আমাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপস্থিত হন, তিনি আমাকে যে দান করেন, তাঁকে তার সাক্ষী করার জন্য। তিনি বললেন: এই ছেলে ব্যতীত তোমার আরও ছেলে আছে কি? তিনি (পিতা) বললেন: হ্যাঁ। তিনি [রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন: তাদের মধ্যে সমতা বিধান কর। জাবির ইব্‌ন মুফায্‌যাল ইব্‌ন মুহাল্‌লাব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি নু‘মান ইব্‌ন বশীর (রাঃ)-কে খুতবায় বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের ছেলেদের মধ্যে (সমতা এবং) ইনসাফ করবে, তোমরা তোমাদের ছেলেদের মধ্যে (সমতা এবং) ইনসাফ করবে।