37. যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন

【1】

যুদ্ধলব্ধ মাল বণ্টন

ইয়াযীদ ইব্‌ন হুরমুয (রাঃ) খারিজী নেতা নাজ্‌দা হারুরী যখন আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন যুবায়র (রাঃ)-এর আমলের গণ্ডগোলের সময়ে মাঠে নামে, তখন সে আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন আব্বাসের নিকট বলে পাঠায় যে, নিকটাত্মীয়দের অংশ কে কে পেতে পারে বলে আপনি মনে করেন ? তখন ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) বললেনঃ তা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটাত্মীয় তথা আমরাই পাব। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের মধ্যেই তা বণ্টন করেছেন। উমর (রাঃ) আমাদেরকে কিছু দিতে চাইলে আমরা দেখলাম যে, তা আমাদের প্রাপ্য অপেক্ষা কম। তখন আমরা তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করি। তিনি তা দ্বারা তাদের বিবাহকারীকে সাহায্য করতে এবং কর্য আদায় করতে এবং তাদের মধ্যে যে অভাবগ্রস্ত তাদের দিতে চেয়েছিলেন, আর এর অধিক দিতে অস্বীকার করেছিলেন। ইয়াযীদ ইব্‌ন হুরমুয (রাঃ) তিনি বলেনঃ নাজদা হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) কে লিখেন যে, নিকটাত্মীয়দের অংশ কারা পাবে ? ইয়াযীদ ইব্‌ন হুরমুয (রাঃ) বলেনঃ আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) এর পক্ষ হতে নাজদাকে জবাবে লিখলামঃ তুমি আমার কাছে নিকটাত্মীয়দের অংশ সম্বন্ধে জানতে চেয়েছ, তা আহ্‌লে বায়তের জন্য। উমর (রাঃ) আমাদেরকে বলেছিলেন যে, তিনি এর দ্বারা আমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহের ব্যবস্থা করে দেবেন, আমাদের মাঝে যারা গরীব, তাদের সাহায্য করবেন এবং আমাদের মাঝে যারা ঋণগ্রস্ত তাদের ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করবেন। আমরা তা অস্বীকার করি এবং দাবি জানাই যে, তা আমাদের কাছেই অর্পণ করতে হবে। কিন্তু তিনি তা দিতে অস্বীকার করলেন। শেষে আমরা তা তাঁর উপর ছেড়ে দেই। আওযাঈ (রহঃ) তিনি বলেনঃ উমর ইব্‌ন আবদুল আযীয (রহঃ) উমর ইব্‌ন ওয়ালীদকে লিখলেনঃ তোমার পিতার খুমুসের অংশ সম্পূর্ণই তোমার। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তোমার পিতার অংশ মুসলমানদের এক ব্যক্তির অংশের সমান ছিল। আর তাতে আল্লাহ্‌র এবং রাসূলের, নিকটাত্মীয়দের, ইয়াতীমদের, মিসকীনদের এবং মুসাফিরদের হক ছিল, চিন্তা করে দেখ কিয়ামতের দিন তোমার পিতার কাছে দাবিদার কত বেশি হবে? আর যার বিরুদ্ধে এত অধিক দাবিদার হবে, তার নিস্তার কিভাবে হবে? আর তুমি যে বাদ্যযন্ত্র ও সেতার বের করেছ, তা তো ইসলামে বিদআত। আমি স্থির করেছি তোমার নিকট এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাব, যে তোমার মাথার লম্বা বাবড়ি সমান করে কেটে দেবে। জুবায়র ইব্‌ন মুত‘ইম (রাঃ) তিনি এবং উসমান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গিয়ে হুনায়নের মালের ব্যাপারে বললেন, যা তিনি বনূ হাশিম এবং বনূ মুত্তালিবের মধ্যে বণ্টন করেছিলেন। তারা দু’জন বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌। আপনি আমাদের ভাই বনূ আবদুল মুত্তালিবকে দান করলেন এবং আমাদেরকে কিছুই দিলেন না। অথচ আমরাও আপনার ঐরূপ আত্মীয়? তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেনঃ আমি তো বনূ হাশিম ও বনূ আবদুল মুত্তালিবকে একই মনে করি। জুবায়ের ইব্‌ন মুত‘ইম (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনূ আবদ শামস ও বনূ নওফলকে তা থেকে কিছুই দিলেন না, যেমন তিনি বনূ হাশিম এবং আবদুল মুত্তালিবকে দিলেন। জুবায়র ইব্‌ন মুত‘ইম (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আত্মীয়দের অংশ বনূ হাশিম এবং বনূ মুত্তালিবের মধ্যে বণ্টন করলেন তখন আমি ও উসমান ইব্‌ন আফ্‌ফান তাঁর কাছে এসে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌! ওই যে বনূ হাশিম, আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাদের সাথে আপনার যে সম্পর্ক রেখেছেন, তজ্জনিত তাদের শ্রেষ্ঠত্বকে আমরা অস্বীকার করি না। কিন্তু আপনি আমাদের ভাই বনূ আবদুল মুত্তালিবকে দান করলেন এবং আমাদেরকে কিছুই দিলেন না। অথচ আমরা ও তারা সমপর্যায়ের আত্মীয়? তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তারা জাহেলিয়াতে এবং ইসলামে আমাকে ছেড়ে যায়নি।১ আমি তো বনূ হাশিম ও বনূ আবদুল মুত্তালিবকে একই মনে করি। এই বলে তিনি নিজ আঙ্গুলসমূহ পরস্পর গেঁথে দিলেন। উবাদা ইব্‌ন সাবিত (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুনায়নের দিন একটি উটের পার্শ্বদেশ থেকে কিছু পশম নিলেন। তারপর বললেন, হে লোক সকল! আল্লাহ্‌ তা‘আলা তোমাদেরকে যে গনীমত দিয়েছেন, তা থেকে খুমুস ব্যতীত এটুকু নেয়াও আমার জন্য হালাল নয়, আর খুমুসও তোমাদের মধ্যেই ফিরিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ্‌ সম্যক অবগত। আমর ইব্‌ন শুআয়ব (রাঃ) তাঁর পিতা হতে তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি উটের নিকট গিয়ে তার কুঁজ হতে একটি পশম তাঁর দুই আঙ্গুলের মধ্যে নিয়ে বললেনঃ যুদ্ধলব্ধ মালের পঞ্চমাংশ ব্যতীত আমার জন্য এতটুকুও নেই। আর আমার পঞ্চমাংশও তোমাদের মধ্যে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌ তা‘আলা বনু নযীরের সম্পদ তাঁর রাসূল-কে ফায়১ হিসেবে দান করেছেন। মুসলমানগণ তা পেতে ঘোড়াও দৌড়ায়নি এবং উটও না। তিনি তা থেকে এক বছরের খরচ নিজের জন্য নিতেন এবং অবশিষ্ট মাল যুদ্ধের জন্য ঘোড়া, হাতিয়ার এবং জিহাদের উপকরণ ক্রয়ের জন্য ব্যয় করতেন। আয়েশা (রাঃ) ফাতিমা (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট তাঁর মীরাস চাওয়ার জন্য এক ব্যক্তিকে পাঠান, যা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাদকা এবং খায়বরের খুমুস থেকে রেখে যান। আবু বকর (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ আমাদের ওয়ারিস হয় না, আমরা যা ছেড়ে যাই তা সাদকা। আতা (রাঃ) আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেছেনঃ জেনে রাখ যে, তোমরা যুদ্ধে যা লাভ কর, তার এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ্‌র, আল্লাহ্‌র রাসূলের, আর তাঁর আত্মীয়দের। এখানে আল্লাহ্‌র পঞ্চমাংশ এবং রাসূলের পঞ্চমাংশ একই। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা থেকে লোকদের সওয়ারীর ব্যবস্থা করতেন, লোকদের দান করতেন। যেখানে ইচ্ছা খরচ করতেন এবং যা ইচ্ছা ব্যয় করতেন। কায়স ইব্‌ন মুসলিম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি হাসান ইব্‌ন মুহাম্মদকে [আরবি] এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলেনঃ এটি [অর্থাৎ বণ্টনে আল্লাহ্‌র উল্লেখ এই হিসেবে যে এটি] দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ্‌র কালামের চাবি [অর্থাৎ সূচনা] দুনিয়া ও আখিরাত তো আল্লাহ্‌রই। তবে রাসূলের এবং রাসূলের নিকটাত্মীয়ের অংশের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তিকালের পরে মতভেদ দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অংশ তাঁর পরে খলীফার প্রাপ্য। কেউ কেউ বললেনঃ আত্মীয়দের অংশ রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আত্মীয়দের প্রাপ্য। কেউ বললেন, আত্মীয়দের অংশ খলীফার আত্মীয়দের জন্য। অবশেষে সকলে এ কথায় একমত হলেন যে, এই অংশদ্বয় ঘোড়া এবং যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করার জন্য ব্যয় হওয়া উচিত। আবু বকর এবং উমর (রাঃ)-এর সময় এই দুই অংশ এভাবেই ব্যয় হতো। মূসা ইব্‌ন আবু আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইয়াহ্‌ইয়া ইব্‌ন জায্‌যারকেঃ [আরবি] এ আয়াতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য খুমুসে কত অংশ ছিল, জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেনঃ খুমুসে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অংশ ছিল পাঁচ ভাগের এক ভাগ। মুতাররিফ (রহঃ) তিনি বলেন, শা’বী (রাঃ) এর নিকট রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অংশ এবং তাঁর সফী১ সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অংশ তো ছিল একজন মুসলমান-এর অংশের সমান। আর ‘সফী’র অংশ হিসেবে তাঁর যা ইচ্ছা তা নেওয়ার ইখতিয়ার ছিল। ইয়াযীদ ইব্ন শিখ্খীর (রহঃ) তিনি বলেন, আমি মিরবাদ নামক স্থানে মুতাররিফের সঙ্গে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি চামড়ার এক টুকরো নিয়ে উপস্থিত হলো এবং বললেনঃ এটা রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে লিখে দিয়েছেন, তোমাদের মধ্যে কি কেউ পড়তে পারে? আমি বললামঃ হ্যাঁ, আমি পড়তে পারবো। তাতে লেখা ছিলোঃ ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ্‌-এর পক্ষ হতে বনী যুহায়র ইব্ন উকায়শ এর প্রতি, তাদের জানা উচিত যদি তারা এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোনো ইলাহ্‌ নেই, আর মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র রাসুল এবং তারা মুশরিক হতে পৃথক হয়ে যায়, আর তারা একথা স্বীকার করে যে, গনীমতের পঞ্চমাংশ নবীর অংশ এবং সফীও তাঁর, তবে তারা আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসুলের প্রদত্ত নিরাপত্তায় থাকবে।'' মুজাহিদ (রাঃ) তিনি বলেন, কুরআন মাজীদে যে বলা হয়েছে। খুমুস বা পঞ্চমাংশ আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসুলের জন্য, তা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর নিকটাত্মীয়দের জন্য, কারন তাঁদের জন্য সদকা গ্রহন করা বৈধ ছিলো না। রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ পঞ্চমাংশের পঞ্চমাংশ গ্রহন করতেন আর তাঁর আত্মীয়দের জন্য ছিলো পঞ্চমাংশের পঞ্চমাংশ। আর ইয়াতিমদের জন্যও ছিলো অনুরূপ। আর মুসাফিরদের জন্য অনুরূপ এবং নিকট আত্মীয়দের জন্য অনুরূপ অংশ ছিল। আবূ আবদুর রহমান (ইমাম নাসাঈ) বলেন, আল্লাহ্‌ তা‘য়ালা যে নিজের নাম নিয়ে শুরু করে (আরবি) বলেছেনঃ এটা বাক্যের সুচনাবিশেষ। কারন সমুদয় বস্তু আল্লাহ্‌রই। এবং 'ফায়' ও 'খুমুস'-এর ক্ষেত্রে তিনি প্রথমে নিজের নাম নিয়ে শুরু করেছেন। এর কারন এই যে, এ দু'টো উত্তম অর্জন। আর সাদকার ক্ষেত্রে নিজের নাম নিয়ে আরম্ভ করেন নি। বরং বলেছেনঃ (আরবি) অর্থাৎ, সাদকা ফকিরদের জন্য----। কারন সাদকা মানুষের ময়লা-স্বরূপ। কেউ কেউ বলেছেনঃ গনিমতের মালের কিছু অংশ নিয়ে কা'বার মধ্যে রেখে দেওয়া হবে আর সেটাই আল্লাহ্‌র অংশ। রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অংশ ইমাম বা শাসক পাবেন। তিনি তা দিয়ে ঘোড়া, অস্ত্র-শস্ত্র ক্রয় করবেন, যাকে দেওয়া ভাল মনে করবেন, দেবেন, যাকে দিলে মুসলিম সাধারনের উপকার ও কল্যাণ হয় তাকে এবং মুহাদ্দিস, ফুকাহা ও কুরআনচর্চাকারীদের দেবেন। রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আত্মীয়দের অংশ বনু হাশিম ও বনু মুত্তালিব পাবেন; চাই তাঁরা ধনী হন বা দরিদ্র। কেউ কেউ বলেনঃ তাদের মধ্যে যারা দরিদ্র কেবল তারাই পাবেন, ধনীরা পাবেন না। যেমন ইয়াতীম ও মুসাফিরদের মধ্যে যারা দরিদ্র, তারাই পাবে। এ মতই আমার কাছে অধিক সঠিক বলে মনে হয়। কিন্তু পাওয়ার ক্ষেত্রে ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সবাই সমান। কেননা আল্লাহ্‌ তা'য়ালা এই সম্পদ তাদের দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের মধ্যে বন্টন করেছেন। আর হাদীসে উল্লেখ নেই যে, রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাউকে বেশি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কাউকে কম। এই মাসআলায় ইমামগনের কোন মতভেদ আছে বলে আমাদের জানা নেই যে, যদি কেউ কারো সন্তানদের জন্য নিজের এক-তৃতীয়াংশ মাল প্রদানের ওসীয়ত করে, তাহলে সকল সন্তানই সমান হারে পাবে; চাই তারা ছেলে হোক বা মেয়ে- যদি তাদের পরিসংখ্যান জানা থাকে। এমনিভাবে যদি কোন জিনিস কারো সন্তানদের দেওয়ার জন্য বলা হয়, তাহলে ওই জিনিস সকল সন্তানই সমান হারে পাবে। অবশ্য যে ব্যক্তি দেয়ার নির্দেশ দেয়, সে যদি পরিস্কার বলে দেয় যে, অমুক এতটুকু পাবে, আর অমুক এতোটুকু, তাহলে তার কথানুযায়ী দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। আর এক অংশ মুসলমান ইয়াতীমগন পাবে। এক অংশ মুসলমান মিসকীনগন এবং এক অংশ মুসাফিরগন পাবে। আর কাউকে মিসকিনের অংশ ও মুসাফিরের অংশ-এই দুই অংশ একত্রে দেয়া হবে না; বরং তাকে বলা হবে তুমি হয় মিসকিনের অংশ গ্রহন কর অথবা মুসাফিরের অংশ গ্রহন কর। গনীমতের মালের অবশিষ্ট চারভাগ ইমাম ওই মুসলমানদের দেবেন, যারা বালেগ এবং যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছিল। মালিক ইব্ন আউস ইব্ন হাদাসান (রাঃ) তিনি বলেনঃ আব্বাস এবং আলী (রাঃ) বিবাদমান অবস্থায় উমর (রাঃ)-এর কাছে আসেন। এরপর আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আমার এবং এর মধ্যে ফয়সালা করে দিন। লোকেরাও বললেনঃ এদের মধ্যে বন্টন করে দিন। তখন উমর (রাঃ) বললেনঃ আমি তাদের মধ্যে বন্টন করবো না। তাঁরা নিশ্চয় অবগত আছেন যে, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কেউ আমাদের ওয়ারিস হয় না। আমরা যা রেখে যাই, তা সাদকা। রাবী বলেনঃ এরপর যুহরী বলেনঃ যে, উমর (রাঃ) বললেন, রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে সম্পদের মুতাওয়াল্লী ছিলেন। তিনি তা হতে তার পরিবারের খরচ পরিমাণমতো গ্রহন করতেন এবং অবশিষ্ট যা থাকতো তা আল্লাহ্‌র রাস্তায় ব্যয় করতেন। তাঁর পরে এই মালের মুতাওয়াল্লী ছিলেন আবু বকর (রাঃ)। আবূ বকরের পর আমি এর মুতাওয়াল্লী হয়েছি। আমিও ঐরূপই করেছি, যেরূপ তিনি করতেন। এখন এঁরা দু'জন আমার নিকট এসে এই মাল তাঁদেরকে দেয়ার জন্য বললেন, যেন তাঁরা মুতাওয়াল্লী হতে পারেন, যেরূপ রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আবু বকর (রাঃ) মুতাওয়াল্লী ছিলেন এবং আমি এর মুতাওয়াল্লী হয়েছি। সুতরাং তখন আমি ঐ মাল তাদেরকে দিয়ে দিলাম এবং তাদের হতে অঙ্গীকার গ্রহন করলাম। পরে তারা উভয়ে আবার আসলেন। একজন বললেনঃ আমার ভাতিজার থেকে আমার অংশ ভাগ করে দিন। অপরজন বললেন, আমার স্ত্রীর পক্ষ হতে আমার প্রাপ্য অংশ আমাকে ভাগ করে দিন। তিনি বললেনঃ যদি তারা সম্মত হন তাহলে আমি এই মাল তাদেরকে দিয়ে দিবো এই শর্তে যে, তারা মালের ব্যাপারে ঐরূপ কাজ করবেন, যেরূপ রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করতেন এবং তারপরে আবু বকর (রাঃ) করতেন এবং তাঁর পরে আমি করেছি। যদি তাঁরা দু'জন এতে সম্মত না হন তাহলে তাঁরা যেনো তাদের ঘরে বসে থাকেন, আর মাল আমি আমার তত্ত্বাবধানে রাখবো। এরপর উমর (রাঃ) বললেনঃ মালের গনিমত সম্বন্ধে আল্লাহ্‌ তা’য়ালা বলেনঃ জেনে রাখ, যুদ্ধে যা তোমরা লাভ কর, তাঁর এক-পঞ্চমাংশ আল্লাহ্‌ তা’য়ালার, রাসুলের এবং নিকটাত্মীয়দের, ইয়াতীমদের, মিসকিনদের ও মুসাফিরদের। আল্লাহ্‌ আরো বলেনঃ আর সাদকা ফকীর, মিসকীন, তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের এবং যাদের হৃদয় আকৃষ্ট করা হয় তাদের জন্য, দাস মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্ত ও আল্লাহ্‌র পথে জিহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য। যে মাল আল্লাহ্‌ তা’য়ালা তাঁর রাসুলকে দান করেছেন। তোমরা তাতে নিজেদের ঘোড়া বা উট হাঁকাও নি। যুহরী (রহঃ) বলেনঃ এই মাল রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য নির্দিষ্ট, আর তা হলো, কয়েকটি আরব গ্রাম, তথা ফিদক এবং অন্যান্য। এই মালের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ তা’য়ালা বলেনঃ জনপদবাসীদের থেকে যে মাল আল্লাহ্‌ তা’য়ালা তাঁর রাসুলকে দান করলেন, তা আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসুলের, রাসূলের স্বজনদের, ইয়াতীম, মিসকিন, মুসাফিরদের। আল্লাহ্‌ তা’য়ালা আরো বলেনঃ এ সম্পদ ঐ অভাবগ্রস্ত মুহাজিরদের জন্য, যারা নিজেদের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি থেকে উৎখাত হয়েছে। মহান আল্লাহ্‌ আরো বলেনঃ এই মালে ঐ সকল লোকের হোক রয়েছে। যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে এই নগরীতে এসে বসবাস করেছে এবং ঈমান এনেছে। আর ঐ সকল লোকেরও হক রয়েছে, যারা এদের পরে এসেছে। এই আয়াতে প্রত্যেক মুসলমান শামিল রয়েছে, কোন মুসলমানই অবশিষ্ট নেই যার এ মালে হক নেই। তবে তোমাদের মাঝে কিছু দাস-দাসী রয়েছে, যাদের এ মালে হক নেই। এরপর উমর (রাঃ) বলেনঃ যদি আমি জীবিত থাকি, তবে ইন্শাআল্লাহ্‌ প্রত্যেক মুসলমানের কাছে তার হক পৌঁছে যাবে।