46. ঈমান এবং এর বিধানাবলী

【1】

উত্তম আমলের বর্ণনা

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে প্রশ্ন করা হলো: কোন্‌ আমল উত্তম? তিনি বললেন: আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনা। আবদুল্লাহ ইব্‌ন হাবাশী খাসআমী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে প্রশ্ন করা হলো: কোন্‌ আমল উত্তম? তিনি বললেন: এমন ঈমান, যাতে কোন সন্দেহ নেই এবং এমন জিহাদ, যাতে কোন খিয়ানত নেই, আর মকবুল হজ্জ।

【2】

ঈমানের স্বাদ

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকে সে ঈমানের স্বাদ ও মিষ্টতা পেয়ে যায়; (১) যার নিকট আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল অন্য সব কিছু অপেক্ষা বেশি প্রিয়; (২) যে আল্লাহর জন্য ভালবাসা রাখে এবং আল্লাহর জন্য শত্রুতা পোষণ করে; (৩) আর যদি ভয়াবহ আগুন প্রজ্জ্বলিত করা হয়, তবে তাতে প্রবেশ করা তার নিকট আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা অপেক্ষা বেশি পছন্দনীয় হয়।

【3】

ঈমানের মিষ্টতা

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তিনি বলেন: যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে; সে ঈমানের মিষ্টতা পাবে; ১. যে কাউকে ভালবাসলে কেবল আল্লাহ্‌র সন্তূষ্টির জন্যই তাকে ভালবাসবে; ২. আল্লাহ্‌ এবং আল্লাহ্‌র রাসূল তার কাছে অন্য সবকিছুর চাইতে বেশি প্রিয় হবে এবং ৩. আল্লাহ্‌ তাকে কুফর হতে পরিত্রাণ করার পর পুনঃ কুফরীতে ফিরে যাওয়ার চেয়ে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়া তার নিকট পছন্দনীয় হবে।

【4】

ইসলামের স্বাদ

আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে, সে ইসলামের মিষ্টতা উপলব্ধি করবে; ১. আল্লাহ্‌ এবং আল্লাহ্‌র রাসুল তার নিকট অন্য সমস্ত কিছু হতে প্রিয় হবে; ২. সে কাউকে ভালবাসলে তাকে আল্লাহ্‌র সন্তূষ্টির জন্যই ভালবাসবে; ৩. আর সে কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে ঐরূপই ঘৃণা করবে, যেরূপ সে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে ঘৃণা করে।

【5】

ইসলামের পরিচয়

উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট উপস্থিত ছিলাম, এমন সময় এক ব্যক্তি আগমন করলেন, যার কাপড় অত্যধিক সাদা ছিল এবং চুল অধিক কাল ছিল। বুঝা যাচ্ছিল না যে, তিনি সফর হতে এসেছেন; আর আমাদের মধ্যে কেউ তাঁকে চিনতে পারছিল না। তিনি নিজ হাঁটুদ্বয় তাঁর হাঁটুদ্বয়ের সাথে লাগিয়ে বসলেন, তাঁর হস্তদ্বয় তাঁর উভয় উরুর উপর রাখলেন এবং বললেন: হে মুহাম্মদ! আমাকে বলুন: ইসলাম কি? তিনি বললেন: এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, আর মুহাম্মদ আল্লাহ্‌র বাসুল এবং সালাত আদায় করা, যাকাত দেওয়া, রমযানের রোযা রাখা ও পথ খরচের সামর্থ্য থাকলে হজ্জ করা। সে লোকটি বললো: আপনি সত্যই বলেছেন। আমরা আশ্চর্যান্বিত হলাম যে, তিনি প্রশ্ন করলেন এবং বললেন: আপনি সত্য বলেছেন। এরপর তিনি বললেন: ঈমান কি, আমাকে বলুন? তিনি বললেন: বিশ্বাস স্থাপন করা আল্লাহ্‌র উপর, ফিরিশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসুলগণ, কিয়ামত দিবস এবং নিয়তির ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাস। তিনি বললেন: আপনি সত্য বলেছেন। তারপর বললেন: ইহসান কি? তিনি বললেন: এমনভাবে আল্লাহ্‌র ইবাদত করবে, যেন তুমি আল্লাহ্‌কে দেখছো, যদি তুমি তাঁকে না দেখতে পাও, তবে তিনি তো তোমাকে দেখছেন। তারপর বললেন: কিয়ামত কখন হবে? তিনি বললেন: যার নিকট প্রশ্ন করা হচ্ছে তিনি প্রশ্নকারী হতে অধিক জ্ঞাত নন। সে ব্যক্তি বললো: কিয়ামতের নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করুন। তিনি বললেন: দাসী তার মুনিবকে প্রসব করবে, নগ্ন পদ, বিবস্ত্র, গরীব, বকরীর রাখালরা বড় বড় প্রাসাদ নির্মার্ণে প্রতিযোগিতা করবে। উমর (রাঃ) বলেন, আমি তিন দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম, পরে রাসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন: হে উমর! তুমি কি অবগত আছ, এই প্রশ্নকারী ব্যক্তি কে? আমি বললাম: আল্লাহ্‌ এবং আল্লাহ্‌র রাসুলই সমধিক অবগত। তিনি বললেন: তিনি ছিলেন জিব্‌রাঈল (আ), তিনি তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন।

【6】

ঈমান ও ইসলামের বিবরণ

আবু হুরায়রা এবং আবু যর (রাঃ) রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে বসতেন: নবাগত লোক এসে তাঁকে চিনতে পারত না যতক্ষন না জিজ্ঞাসা করতো। আমরা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট তাঁর জন্য একটি বসার স্থান নির্মাণের জন্য অনুমতি চাইলাম। যাতে নবাগত লোক তাঁকে সহজে চিনতে পারে। আমরা তাঁর জন্য মাটির একটি উঁচু স্থান তৈরী করলাম। তিনি তার উপর উপবেশন করতেন। একদা আমরা বসা ছিলাম, আর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্থানে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় এক নবাগত ব্যক্তির আগমন হলো, যার মুখমণ্ডল সকলের চেয়ে সুন্দর ছিল এবং যার শরীরের সুগন্ধি ছিল সকলের চেয়ে উত্তম। তাঁর বস্ত্রে একটু ময়লাও ছিল না। সে ব্যক্তি বিছানার কিনারা হতে সালাম করে বললেন: হে মুহাম্মদ! আপনাকে সালাম। তিনি তাঁর সালামের উত্তর দিলে তিনি বললেন: আমি কি নিকটে আসবো? তিনি বললেন: আস! এভাবে কয়েকবার বললেন, তিনিও কয়েকবার উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, নিকটে আস। এমনকি তিনি নিকটে এসে নিজ হাত রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর হাঁটুর উপর রাখলেন এবং বললেন: হে মুহাম্মদ! আমাকে ইসলাম সম্বন্ধে বলুন। তিনি বললেন: ইসলাম হলো তুমি আল্লাহ্‌ তা’আলার ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না, সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত আদায় করবে, কা’বা শরীফের হজ্জ করবে এবং রমজানের রোযা রাখবে। তিনি বললেন: আমি যদি এটা করি, তবে কি আমি মুসলমান হয়ে যাব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সে ব্যক্তি বললেন, আপনি সত্যই বলেছেন। ঐ ব্যক্তির ‘আপনি সত্য বলেছেন’ বাক্য শুনে আমাদের বিস্ময় জাগল। এরপর বললেন: হে মুহাম্মদ! আমাকে বলুন, ঈমান কি? তিনি বললেন: আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাগণের, নবীগণের এবং কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং কদরে বিশ্বাস করা। তিনি বললেন: আমি যদি এরূপ করি, তবে কি আমি মু’মিন হয়ে যাব? রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন; হ্যাঁ। তখন সে ব্যক্তি বললেন: আপনি সত্যই বলেছেন। এরপর তিনি বললেন: হে মুহাম্মদ! আমাকে বলুন, ইহসান কি? তিনি বললেন: তুমি এমনভাবে ইবাদত করবে, যেন তুমি আল্লাহ্‌ তা’আলাকে দেখছো। কেননা যদিও তুমি তাঁকে দেখছো না, তিনি তো তোমাকে দেখছেন। তিনি বললেন: আপনি সত্যই বলেছেন। তিনি আবার বললেন: হে মুহাম্মদ! কিয়ামত কবে হবে? তিনি কিছু বললেন না, বরং মাথা নিচু করলেন। লোকটি আবারও সেই প্রশ্ন করলেন কিন্তু তিনি তাকে কোন উত্তর দিলেন না। আবারও প্রশ্ন করলেন কিন্তু এবারও তিনি তাকে কোন উত্তর দিলেন না, অতঃপর তিনি মাথা উঠিয়ে বললেন: তুমি যার নিকট জিজ্ঞাসা করছো, তিনি প্রশ্নকারী হতে অধিক জ্ঞাত নন। কিন্তু এর অনেক আলামত রয়েছে। তুমি তা জানতে পার। যখন তুমি দেখবে পশুপালের রাখালরা সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করবে, আর তুমি দেখবে, নগ্ন পদ ও নগ্ন দেহ লোকেরা ভুখণ্ডের বাদশাহ হবে, আরো তুমি দেখবে যে, দাসী তার মালিককে প্রসব করবে, তখন মনে করবে যে, কিয়ামত নিকটবর্তী। পাঁচটি বস্তু আল্লাহ্‌ ব্যতীত কেউ অবগত নয়। এরপর তিনি (আরবী) হতে (আরবী) পর্যন্ত পাঠ করলেন [১]। এরপর তিনি বললেন: ঐ সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মদকে সত্য সহকারে পথ প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা রূপে প্রেরণ করেছেন, আমি তাঁকে তোমাদের চাইতে অধিক জানি না। তিনি ছিলেন, জিব্‌রাঈল (আঃ) যিনি দিহ্‌ইয়া কালবীর রূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

【7】

আল্লাহ্‌র বাণী -এর ব্যাখা

সা’দ ইব্‌ন আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতিপয় লোককে কিছু দান করলেন; আর তাদের মধ্যে এক লোককে কিছুই দিলেন না। সা’দ (রাঃ) বললেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌। আপনি অমুক, অমুককে দান করলেন কিন্তু অমুককে দান করলেন না, অথচ সে মু’মিন। রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: অথবা সে মুসলিম। সা’দ (রাঃ) কথাটি তিনবার পুনরাবৃত্তি করলেন। আর রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবারই বললেন, অথবা সে মুসলিম। পরে তিনি বললেন: আমি কোন কোন লোককে দান করি, আর কাউকে দান করি না, অথচ সে আমার নিকট তাদের চেয়ে অধিক প্রিয়, এই ভয়ে যে, তাদেরকে উপুর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সা’দ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু মাল বন্টন করলেন। তিনি কতিপয় লোককে দিলেন, আর অপর কতককে দিলেন না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম: ইয়া রাসূলাল্লাহ্‌। আপনি অমুক অমুককে দান করলেন, অমুককে দান করলেন না, অথচ সেও মু’মিন। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: মু’মিন বলো না, বরং বলো মুসলিম। এরপর রাবী ইব্‌ন শিহাব (রহঃ) এই আয়াত (আরবী) [১] তিলাওয়াত করলেন। বিশ্‌র ইব্‌ন সুহায়ম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে আইয়্যামে তাশরীকে এই কথা ঘোষণা করতে বললেন যে, জান্নাতে শুধু মু’মিনই প্রবেশ করবে।

【8】

মুমিনের পরিচয়

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মুসলিম ঐ ব্যক্তি যার হাত ও রসনা হতে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। আর মু’মিন ঐ ব্যাক্তি যার থেকে অন্য লোক নিজের জান ও মালকে নিরাপদ মনে করে।

【9】

মুসলিমের পরিচয়

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌ন উমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বলতে শুনেছি: মুসলিম ঐ ব্যক্তি, যার হাত ও রসনা হতে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে, আর মুহাজির ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু থেকে দূরে থাকে। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করে, আর আমাদের কিবলার দিকে মুখ করে এবং আমাদের যবেহকৃত পশু খায় সে মুসলিম।

【10】

ব্যক্তির ইসলামের উৎকৃষ্টতা [১]

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন কোন ব্যক্তি উত্তমরূপে ইসলাম গ্রহণ করে, তখন আল্লাহ্‌ তা’আলা তার ঐ সকল নেকী লিখে নেন, যা সে পূর্বে করেছিল আর তার সেই সকল পাপ মুছে ফেলেন যাতে অতীতে লিপ্ত হয়েছিল। এরপর তার হিসাব এইভাবে লিখিত হয় যে, তার প্রত্যেক নেকীর পরিবর্তে দশ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত সওয়াব লেখা হয়। আর প্রত্যেক পাপ শুধু অতটুকুই লেখা হয়, যা সে করে যদি না আল্লাহ্‌ তা‘আলা ক্ষমা করেন।

【11】

কোন্‌ ইসলাম উত্তম

আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! কোন্‌ ইসলাম উত্তম? তিনি বললেনঃ যার রসনা ও হাত হতে অন্য মুসলমানগণ নিরাপদ থাকে।

【12】

কোন্‌ ইসলাম ভাল

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলোঃ কোন্‌ ইসলাম (অর্থাৎ ইসলামের কোন কর্ম) ভাল? তিনি বললেনঃ খাদ্য দান করা, পরিচিত অপরিচিত সকলকে সালাম করা।

【13】

ইসলামের বুনিয়াদ কয়টি

ইব্‌ন উমর (রাঃ) এক ব্যক্তি তাঁকে বললোঃ আপনি কি যুদ্ধ করেন না? তিনি বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বলতে শুনেছিঃ ইসলাম পাঁচটি বস্তুর উপর প্রতিষ্ঠিত, এই কথার সাক্ষ্য দান করা যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, সালাত আদায় করা, যাকাত দেওয়া, রমযানের রোযা রাখা এবং হজ্জ করা।

【14】

ইসলামের উপর বায়আত গ্রহণ করা

উবাদা ইব্‌ন সামিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা এক মজলিসে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা আমার নিকট একথার উপর বায়আত কর যে, তোমরা আল্লাহ্‌ তা’আলার সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না। তিনি তাদের সামনে এতদসংক্রান্ত পূর্ণ আয়াতটি [১] তিলাওয়াত করলেনঃ তারপর বললেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এটা রক্ষা করবে, আল্লাহ্‌র নিকট তার প্রতিদান রয়েছে। আর যদি কেউ এর কোনও একটি অপরাধ করে ফেলে, আর আল্লাহ তা’আলা পৃথিবীতে তা ঢেকে রাখেন, তবে আখিরাতে তা আল্লাহ্‌র ইচ্ছা উপর নির্ভরশীল। তিনি ইচ্ছা করলে ক্ষমা করবেন, আর ইচ্ছা করলে শাস্তি দেবেন।

【15】

কখন লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে লোকের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আদেশ করা হয়েছে, যতক্ষণ না তারা এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ্‌ নেই, আর মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র রাসূল। যদি তারা এই সাক্ষ্য দেয় এবং আমাদের কিবলার দিকে মুখ করে, আমাদের যবাহকৃত পশু খায়, আমাদের ন্যায় সালাত আদায় করে, তখন তাদের জান মাল আমাদের উপর হারাম হয়ে যাবে, তবে এর হক ব্যতীত। অন্যান্য মুসলমানের যে প্রাপ্য রয়েছে তাদের জন্যও তা রয়েছে। আর এদের উপর যে দায়-দায়িত্ব বর্তায় তাদের উপরও তা বর্তাবে।

【16】

ঈমানের শাখা-প্রশাখার বর্ণনা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঈমানের শাখা সত্তর হতেও অধিক, লজ্জা-শরমও ঈমানের একটি শাখা। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঈমানের সত্তরটির উপরে শাখা রয়েছে। এর সর্বোত্তমটি হলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌ বলা, আর এর সর্বনিম্নটি হলো রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা, আর লজ্জাও ঈমানের একটি শাখা। আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।

【17】

ঈমানদারদের মধ্যে শ্রেণী বিভাগ

নবী করিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর এক সাহাবী থেকে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আম্মারের অস্থিমজ্জা ঈমানে পরিপূর্ণ। আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যখন তোমাদের কেউ কোন অপকর্ম দেখতে পায়, তখন সে যেন তা নিজ হাতে প্রতিহত করে, যদি ততটুকু শক্তি তার না থাকে, তবে সে যেন মুখে তা দূর করতে তৎপর হয়, যদি এই শক্তিও তার না থাকে, তবে সে যেন উক্ত মন্দ কাজকে মনে মনে ঘৃণা করে। আর এ হলো ঈমানের নিম্নতম পর্যায়। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি; তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কোন মন্দ কাজ দেখতে পায় আর সে তা নিজ হাতে প্রতিহত করে, তবে সে দায়িত্বমুক্ত হল। যদি তার হাতে বাধা দেওার ক্ষমতা না থাকে, তাই মুখে এর বিরোধিতা করে, তবে সেও দায়িত্বমুক্ত হল। আর যে ব্যক্তি মুখে এর বিরোধিতা করার ক্ষমতা না রাখে, আর সে মনে মনে এর বিরুদ্ধাচরণ করে, সেও দায়িত্বমুক্ত হল; আর এ হলো দুর্বলতর ঈমান।

【18】

ঈমান বৃদ্ধি পাওয়া

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের পার্থিব কোন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ঝগড়া এত তীব্র হয় না, যা মু’মিন তার দোযখী ভাইদের জন্য আল্লাহ্‌ তা’আলার সাথে করবে। তিনি বলেন, তারা বলবেঃ ইয়া আল্লাহ্‌! আমাদের ভাইগণ আমাদের সাথে সালাত আদায় করতো, আমাদের সাথে রোযা রাখতো এবং আমাদের সাথে হজ্জ করতো, আর আপনি তাদেরকে দোযখে দাখিল করেছেন। তখন আল্লাহ্‌ তা’আলা বলবেনঃ তোমরা গিয়ে যাকে চিনতে পার তাকে বের করে নাও। তিনি বললেনঃ তারা এসে তাদেরকে চিনতে পারবে তাদের চেহারা দেখে। তাদের মধ্যে এমন লোক হবে, যাকে আগুন তার পায়ের গোছার অর্ধেক পর্যন্ত ধরেছে, কাউকে হাঁটু পর্যন্ত, তারা তাদেরকে বের করবে এবং বলবেঃ হে আমাদের রব! আপনি যাদেরকে বের করার আদেশ দিয়েছেন, আমরা তাদেরকে বের করেছি। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলবেনঃ তাদেরকেও বের কর যাদের অন্তরে এক দীনার পরিমাণ ঈমান রয়েছে। এরপর বলবেনঃ ঐ সকল লোকদেরকেও বের কর যাদের অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণ ঈমান রয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত বলবেনঃ এমন লোকদেরকেও বের কর যাদের অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান রয়েছে। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেনঃ যার বিশ্বাস না হয়, সে এই আয়াতঃ (আরবী) হতে শেষ পর্যন্ত পাঠ করতে পারে [১]। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি নিদ্রিত অবস্থায় দেখলাম, কোন কোন লোককে আমার নিকট উপস্থিত করা হচ্ছে এবং তারা সকলেই জামা পরিহিত। কারো জামা বুক পর্যন্ত, আর কারো তা অপেক্ষা নীচে। এরপর আমার নিকট উমর ইব্‌ন খাত্তাবকে আনা হল আর তার গায়ে এমন একটা জামা, যা সে মাটিতে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারা বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আপনি এর কি ব্যাখ্যা করলেন? তিনি বললেনঃ দীন। তারিক ইব্‌ন শিহাব (রাঃ) তিনি বলেন, এক ইহুদী উমর ইব্‌ন খাত্তাবের নিকট এসে বললোঃ হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনাদের কুরআনে একটি আয়াত আছে, যা আপনারা পাঠ করে থাকেন, যদি ঐ আয়াতটি ইয়াহূদীদের উপর নাযিল হতো, তবে আমরা ঐ দিনকে ঈদের দিন হিসাবে ধার্য করতাম। তিনি বললেনঃ তা কোন আয়াত? সে বললোঃ তা হলো (আরবী)। উমর (রাঃ) বললেনঃ যে স্থানে, যে সময় ঐ আয়াত নাযিল হয়েছে, তা আমার জানা আছে। ঐ আয়াত রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর উপর আরাফাতে শুক্রবারে নাযিল হয়।

【19】

ঈমানের আলামত

আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউই পূর্ণ মু’মিন হবে না, যতক্ষণ না আমি তার সন্তান-সন্ততি, মাতা-পিতা এবং সকল লোক হতে তার নিকট অধিক প্রিয় হই। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ পূর্ণ মু’মিন হবে না, যে পর্যন্ত না আমি তার নিকট তার পরিবার-পরিজন এবং মাল-সম্পদ এবং সকল লোক হতে অধিক প্রিয় হই। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঐ সত্তার শপথ! যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের মধ্যে কেউ পূর্ণ ঈমানদার হবে না, যে পর্যন্ত না আমি তার নিকট তার সন্তান ও পিতা হতে অধিক প্রিয় হই। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ পূর্ণ মু’মিন হবে না, যে পর্যন্ত না সে স্বীয় ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর কসম! তোমাদের কেউ পূর্ণ মু’মিন হবে না, যে পর্যন্ত না সে নিজের ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ না করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে থাকে। যিরর (রাঃ) আলী (রাঃ) বলেছেনঃ আমার নিকট উম্মী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অঙ্গীকার হচ্ছে, কেবল মু’মিনই তোমাকে ভালবাসবে, আর মুনাফিকই তোমার প্রতি শত্রুতা পোষণ করবে। আনাস (রাঃ) সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে তিনি বলেনঃ আনসারের প্রতি ভালবাসা ঈমানের আলামত আর আনসারের প্রতি শত্রুতা নিফাকের আলামত।

【20】

মুনাফিকের আলামত

আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির মধ্যে চারটি অভ্যাস থাকবে, সে মুনাফিক। আর যদি ঐ চারটি অভ্যাসের একটি অভ্যাস থাকে, তবে তার মধ্যে একটি নিফাকের অভ্যাস হলো, যতক্ষণ না তা পরিত্যাগ করেঃ সে যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে, কোন ওয়াদা করলে তা খেলাফ করে, যখন কোন অঙ্গীকার করে তা ভঙ্গ করে এবং করো সাথে ঝগড়া করার সময় গালি দেয়। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুনাফিকের চিহ্ন তিনটিঃ সে যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে তা পূর্ণ করে না এবং তার নিকট আমানত রাখা হলে তার খিয়ানত করে। যির ইবন হুবায়শ (র) আলী (রা) বলেছেন, রাসূলুল্লাহু (সাঃ) আমার নিকট অঙ্গীকার করে বলেছেন : কেবল মু'মিনই আমার সাথে মহব্বত রাখবে, আর মুনাফিকই আমার প্রতি শক্ৰতা পোষণ করবে। আবু ওয়ায়ল (রা) তিনি বলেন, আবদুল্লাহ (রা) বলেছেন ; যার মধ্যে তিনটি অভ্যাস থাকবে, সে মুনাফিক : যখন সে কথা বলে, তখন মিথ্যা বলে, কেউ আমানত রাখলে, খিয়ানত করে এবং যখন কোন অঙ্গীকার করে, তা ভঙ্গ করে। আর যার মধ্যে এর একটি অভ্যাস থাকবে, তার মধ্যে মুনাফিকের একটি অভ্যাস থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত।

【21】

রমযানে রাত জাগরণ

আবু হুরায়রা (রা) নবী (সাঃ) বলেছেন : যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযান মাসে রাত্রি জাগরণ করবে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে। আবু হুরায়রা (রা) নবী (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমযান মাসে রাত্রি জাগরণ করবে, তার পূর্ববতী সকল পাপ ক্ষমা করা হবে। আবূ হুরায়রা (রা) নবী (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি রমযান মাসে ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রাত্রি জাগরণ করবে, তার পূর্ববতী সকল পাপ ক্ষমা করা হবে।

【22】

শবে কদরে জাগরণ

আবু হুরায়রা (রা) রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি রমযানে ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় রাত্রি জাগরণ করবে, তার পূর্বকৃত সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে। আর যে ব্যক্তি কদরের রাত্রে ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় জাগরণ করবে, তার পূর্ববর্তী সকল পাপ ক্ষমা করা হবে।

【23】

যাকাত

আবু সুহায়ল তাঁর পিতা আবু সুহায়ল তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি তালহা ইবন উবায়দুল্লাহকে বলতে শুনেছেনঃ এলোমেলো চুলবিশিষ্ট নজ্‌দবাসী এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হলো। গুণগুণ শব্দ ব্যতীত তার কথার কিছুই শুনা যাচ্ছিল না, বুঝাও যাচ্ছিল না। সে নিকটে আসলে বুঝা গেল যে, সে ইসলাম সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করছে। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তাকে বললেন : দিবারাত্রির মধ্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায। সে জিজ্ঞাসা করলো, এটা ছাড়া আমার আরও কিছু করণীয় আছে ? তিনি বললেন : না, কিন্তু ইচ্ছা করলে নফল পড়তে পারো। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: আর রমযান মাসের রোযা। সে বললো : এটা ছাড়াও কি আমার কিছু করণীয় আছে ? তিনি বললেন : না, তবে চাইলে নফল রোযা রাখতে পারো। এরপর রাসূলুল্লাহ সময়ঃ তাকে যাকাতের কথা বললেন, সে বললো : এটা ছাড়াও কি আমার কিছু করণীয় আছে ? তিনি বললেন : না, তবে তুমি নফল সাদকা করতে পার। তারপর ঐ ব্যক্তি এই বলতে বলতে চলে গেল যে, আমি এতে কিছু বাড়াবও না এবং এর থেকে কিছু কমাবও না, তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন: যদি এই ব্যক্তি সত্য বলে থাকে, তবে সে কৃতকার্য হয়ে গেল।

【24】

জিহাদ

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় বের হয়, আল্লাহ এই বলে তার জামিন হয়ে যান যে, তাকে আমার উপর ঈমান এবং আমার রাস্তায় জিহাদ করা ব্যতীত আর কিছুই বের করেনি। সুতরাং আমি তাকে জান্নাতে দাখিল করব তা দুয়ের যেভাবেই হোক। সে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হোক অথবা স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করুক, অথবা তাকে ঐ ঘরে প্রত্যাবর্তন করান, যে ঘর হতে সে বের হয়েছিল; সওয়াব এবং যুদ্ধলব্ধ মালসহ। আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তির যামিন হয়ে যান, যে ব্যক্তি তাঁর রাস্তায় বের হয়। আল্লাহ বলেনঃ তাকে আমার রাস্তায় জিহাদ, আমার উপর ঈমান এবং আমার রাসুলগনের উপর বিশ্বাস ছাড়া অন্য কিছু বের করেনি। আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব অথবা তাকে ঐ ঘরে প্রত্যাবর্তন করাব, যে ঘর হতে সে বের হয়েছিল, সে যে সওয়াব ও গনীমতপ্রাপ্ত হয়, তা সহ।

【25】

খুমুস আদায় করা

ইব্‌ন আব্বাস (রাঃ) আবদুল কায়স গোত্রের এক প্রতিনিধি দল রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, আমরা রবীআ গোত্রের লোক। আর আমরা ‘নিষিদ্ধ মাস’ ব্যতীত আপনার নিকট উপস্থিত হতে পারি না। অতএব আমাদেরকে এমন কিছু শিক্ষা দিন, যা আমরা আপনার নিকট হতে শিখে যেতে পারি এবং আমাদের অন্যান্য লোককে এর প্রতি আহবান করতে পারি। তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে চারটি বস্তুর প্রতি আদেশ করছি এবং চারটি বস্তু হতে নিষেধ করছি। যে চার বস্তুর আদেশ করছি তা হল আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান। এরপর তিনি তাদের জন্য এর ব্যাখ্যা দিলেন যে, “আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আমি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র রাসুল” এই সাক্ষ্য দেওয়া, সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, তোমরা যে গনীমতের মাল পাও, তার পঞ্চমাংশ আমার নিকট আদায় করা। আর আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছিঃ দুববা (কদুর খোল দ্বারা প্রস্তুত পাত্র), হান্তম (মাটির সবুজ পাত্র বিশেষ), নাকীর (কাঠের পাত্রবিশেষ) এবং মুযাফফাত (তৈলাক্ত পাত্র বিশেষ) হতে।

【26】

জানাযায় উপস্থিত হওয়া

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের নিয়্যতে কোন মুসলমানের জানাযায় গমন করে এবং তার জানাযার সালাত আদায় করে, এরপর তাকে কবরে রাখা পর্যন্ত অপেক্ষা করে, সে দুই কীরাত সওয়াব প্রাপ্ত হবে। এক কীরাত হল উহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে ব্যক্তি সালাত আদায় করেই চলে আসে, সে এক কীরাত পাবে।

【27】

লজ্জা

সালিম (রাঃ) তার পিতা [ইব্‌ন উমর (রাঃ)] থেকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে তার ভাইকে লজ্জার ব্যাপারে উপদেশ দিচ্ছিল। তিনি বললেনঃ তাকে ছাড়, লজ্জা ঈমানের অংশ।

【28】

দীন সহজ

আবু হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এই দ্বীন সহজ, যে কেউ দ্বীনের ক্ষেত্রে কঠিন পন্থা অবলম্বন করবে, সে দ্বীন পালনে ব্যর্থ হয়ে যাবে। অতএব তোমরা সোজা পথে চল, পরিপূর্ণতার কাছাকাছি থাকতে চেষ্টা কর, সুসংবাদ দাও, সহজ পন্থা অবলম্বন কর, সকাল সন্ধ্যা এবং কিছু রাত পর্যন্ত ইবাদতে থেকে সাহায্য প্রার্থনা কর।

【29】

আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকট পছন্দনীয় দীন

আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকট আসলেন, তখন তাঁর নিকট একজন মহিলা ছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ এই মহিলা কে? তিনি বললেনঃ অমুক মহিলা। সে ঘুমায় না। তিনি তার সালাত আদায়ের বিবরন দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এরূপ করো না, অতটুকু ইবাদত করবে, যতটুকু তোমার শক্তিতে কুলায়। আল্লাহ্‌র শপথ! আল্লাহ তা‘আলা (ছওয়াব দিতে) বিমুখ হন না, যাবত না তোমরা অবসন্ন হয়ে পড়। আল্লাহ্‌র নিকট ঐ আমল সর্বোত্তম, যা সদা সর্বদা করা হয়।

【30】

ফিতনা থেকে দ্বীন রক্ষার্থে পলায়ন করা

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বেশী দিন দূরে নয়, যখন বকরী হবে মানুষের উত্তম মাল, যা নিয়ে সে পাহাড়ের উপরে এবং যেখানে বৃষ্টির পানি জমে সেখানে চলে যাবে, আর নিজের দীনকে ফিতনা হতে রক্ষা করবে।

【31】

মুনাফিকের উদাহরণ

ইব্‌ন উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুনাফিকের উদাহরণ ঐ বকরীর ন্যায়, যে দুই বকরীর পালের মধ্যস্থলে থাকে। কখনও এই পালের দিকে আসে, কখনও ঐ পালের দিকে যায়, সে বুঝতে পারেনা সে কোন দলের সাথে থাকবে।

【32】

কুরআন তিলাওয়াতকারী মু’মিন ও মুনাফিক

আবু মুসা আশআরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মু’মিন কুরআন তিলাওয়াত করে তার উদাহরণ যেন কমলালেবু, এর স্বাদ ও ঘ্রাণ উভয়ই উত্তম, আর যে মু’মিন কুরআন পড়ে না, তার উদাহরণ যেন খুরমা, যার স্বাদ উত্তম, কিন্তু কোনও ঘ্রাণ নেই। আর যে মুনাফিক কুরআন পড়ে, সে যেন রায়হানা ফুল, যার ঘ্রাণ তো উত্তম, কিন্তু স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কুরআন পড়ে না সে যেন হানযালা ফল, এর স্বাদ তিক্ত আবার ঘ্রাণও নেই।

【33】

মু’মিনের আলামত

আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কেউ পূর্ণ মু’মিন হবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।