14. সওম (রোজা)

【1】

সওম ফারয হওয়ার সূচনা

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) (আল্লাহর বাণী) “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম পালন ফারয করা হয়েছে যেমন ফারয করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর” (সূরাহ আল-বাক্বারাহঃ ১৮৩)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময় (ইসলামের প্রথম যুগে) লোকেরা যখন এশার সলাত আদায় করতো তখন থেকে তাদের উপর খানাপিনা ও স্ত্রী-সহবাস হারাম হয়ে যেতো এবং তারা পরবর্তী রাত পর্যন্ত সওম পালন করতো। কিন্তু এক ব্যক্তি নফসের উপর খিয়ানত করে তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে ফেলে, অথচ সে এশার সলাত আদায় করেছে কিন্তু তখনও সে পূর্বের সওমের ইফতার করেনি। এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ যেসব সাহাবী এ অন্যায়ে লিপ্ত হয়নি তাদের প্রতি সহনশীল ও কল্যাণ প্রদর্শনের ইচ্ছা করলেন এবং বললেনঃ “আল্লাহ জানেন, তোমরা নিজেদের নফসের সাথে খিয়ানাত করেছিলে” (সূরাহ আল-বাক্বারাহঃ ১৮৭)। এর দ্বারা আল্লাহ মানুষের উপকার করেছেন এবং এটা তাদের জন্য সহজ ও ঐচ্ছিক করে দিয়েছেন। আল-বারাআ (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা যখন সওম পালন করতো তখন তাদের কেউ যদি কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়তো তাহলে পরের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে কিছুই খেতে পারতো না। সিরমা ইবনু ক্বায়িস আল-আনসারী (রাঃ) সওম পালন অবস্থায় স্ত্রীকে এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কিছু আছে কি? স্ত্রী বললেন, না, তবে আমি খুঁজে দেখি আপনার জন্য কিছু যোগার করতে পারি কিনা। স্ত্রী খাবারের সন্ধানে গেলে স্বামী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। স্ত্রী ফিরে এসে এ অবস্থা দেখে বললেন, তোমার জন্য বঞ্চনা। (ক্ষুধার কারণে) পরদিন দুপুর না হতেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। এ দিন তিনি নিজ ভূমিতে কাজকর্ম করছিলেন। বিষয়টি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে উল্লেখ করা হলে আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “রমাযানের রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো” তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়াতটির ‘ভোর পর্যন্ত’ তিলাওয়াত করেন।

【2】

“যারা সওম পালনে সক্ষম তারা ফিদ্ইয়া দিবে” এই বিধান রহিত

সালামাহ ইবনুল আকওয়া‘ (রাঃ)–এর আযাদকৄত গোলাম ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, (আল্লাহর বাণী) “যারা সামর্থবান (কিন্তু সওম পালনে অক্ষম) তারা এর পরিবর্তে ফিদ্ইয়া হিসেবে একজন মিসকীনকে খাদ্য দিবে” (সূরাহ আল-বাক্বারাহঃ ১৮৪) এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর আমাদের কারোর ইচ্ছে হলে সওম না রেখে ফিদ্ইয়া দিতে চাইলে তাই করতো। অতঃপর পরবর্তী আয়াত (২: ১৮৫ ) দ্বারা উপরের প্রথম বিধানটি মানসূখ হয়ে যায়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) “যারা সামর্থবান (কিন্তু সওম পালনে অক্ষম) তারা এর পরিবর্তে ফিদ্ইয়া হিসেবে একজন মিসকীনকে খাদ্য দিবে” (সূরাহ আল-বাক্বারাহঃ ১৮৪) এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর যে লোক প্রতিদিন খাওয়াতে সক্ষম ছিলো সে সওম না রেখে ফিদ্ইয়া দিতো, এভাবে তার সিয়াম পূর্ণ হতো। অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “আর যে ব্যক্তি অধিক সদাক্বাহ করবে তা তার জন্য উত্তম। আর যদি তোমরা সওম পালন করো তবে তা অধিক উত্তম”। আল্লাহ আরো বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে যারা এ মাসে উপনীত হবে তারা সওম পালন করবে। কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূর্ণ করবে”।

【3】

যিনি বলেন, বৃদ্ধ ও গর্ভবতীর জন্য উক্ত বিধান বহাল আছে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) গর্ভবতী ও দুগ্ধ প্রদানকারিণী মহিলার জন্যে ফিদ্ইয়া প্রদানের বিধান বহাল রয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আল্লাহর বাণীঃ “যারা সামর্থবান (কিন্তু সওম পালনে অক্ষম) তারা এর পরিবর্তে ফিদ্ইয়া হিসেবে একজন মিসকীনকে খাদ্য দিবে” (সূরাহ আল-বাক্বারাহঃ ১৮৪)। তিনি বলেন এ আয়াতে অতিবৃদ্ধ ও বৃদ্ধার জন্য সওম ভঙ্গের বিধান রয়েছে। এরা উভয়ে যখন সওম পালনের শক্তি হারিয়ে ফেলেছে, এমতাবস্থায় সওম না রেখে প্রত্যেক দিন একজন মিসকীনকে খাবার দিবে। গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করলে তাদের জন্যও সওম ভঙ্গের অনুমতি আছে। [২৩১৮] শাযঃ ইরওয়া (৯১২)।

【4】

মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমরা ‘উম্মী জাতি, লিখতে জানি না, হিসাব করতেও জানি না। তবে মাস এতো দিনে, এতো দিনে এবং এতো দিনে হয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, সুলায়মান তৃতীয় বারে আঙ্গুল গুটিয়ে নেন। অর্থাৎ মাস কখনো ঊনত্রিশ দিনে এবং কখনো ত্রিশ দিনে হয়। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাস কখনো ঊনত্রিশ দিনে হয়। সুতরাং চাঁদ না দেখে তোমরা সওম পালন করবেনা এবং চাঁদ না দেখা পর্যন্ত সওম পালন বন্ধও করবে না। আর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে চাঁদ দেখা না গেলে তোমরা মাস ত্রিশদিন পুরা করবে। নাফি‘ (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) শা‘বানের ঊনত্রিশ দিনে পৌঁছুলে আকাশের দিকে তাকাতেন, যদি চাঁদ দেখতে পেতেন তাহলে সওম রাখতেন। কিন্তু যদি না দেখতে পেতেন অথচ আকাশ মেঘ বা কুয়াশামুক্ত রয়েছে, তাহলে সওম রাখতেন না। আর যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন অথবা কুয়াশাচ্ছন্ন থাকতো তাহলে তিনি পরদিন সওম রাখতেন। বর্ণনাকারী বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) সেদিন সওম সমাপ্ত করতেন যেদিন লোকেরা ইফতার করতো (মাস শেষ করতো)। আইয়ূব (রহঃ) ‘উমার ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) বাসরাহ্ অধিবাসীদের কাছে লিখে পাঠালেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে যেভাবে হাদীস বর্ণনা করেছেন তা হুবহু অমুক অমুক তারিখে আমাদের নিকট পৌঁছেছে। তবে গণনার উত্তম পন্থা হলো, যখন আমরা শা‘বানের চাঁদ দেখবো তখন ইনশাআল্লাহ সওম রাখাবো। তবে যদি এক দিন পূর্বেই (ঊনত্রিশে শা‘বানের পর) চাঁদ দেখা যায় তাহলে সেই হিসেবে সওম রাখবো। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ত্রিশ দিন সওম পালনের তুলনায় বেশিরভাগই ঊনত্রিশ দিন সওম পালন করেছি। ‘আবদূর রহমান ইবনু আবূ বাকরাহ (রহঃ) হতে তার পিতা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুই ঈদের মাস সাধারণত ঊনত্রিশ দিনে হয় না। তা হলো রমাযান এবং যিলহাজ্জ মাস।

【5】

লোকেরা চাঁদ দেখতে ভুল করলে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যেদিন তোমরা সওম সমাপ্ত করবে সেদিন তোমাদের ঈদের দিন। আর যেদিন তোমরা কুরবানী করবে সেদিন তোমাদের ঈদুল আযহার দিন। ‘আরাফাহর পুরোটাই অবস্থানের জায়গা। ‘মিনার’ পুরাটাই কুরবানীর স্থান, মাক্কাহর প্রতিটি অলিগলিই কুরবানীর স্থান এবং গোটা ‘মুযদালিফার’ এলাকাই অবস্থানস্থল।

【6】

শা‘বান মাস মেঘাচ্ছন্ন থাকলে

‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বায়িস (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ) –কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শা‘বান মাসের হিসাব এতো গুরুত্ব সহকারে রাখতেন যে, অন্য কোন মাসের হিসাব ততোটা গুরুত্ব দিয়ে রাখতেন না। অতঃপর তিনি রমাযানের চাঁদ দেখেই সওম পালন করতেন। আর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে তিনি শা‘বান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ করতেন। এরপর সওম রাখতেন। হুযাইফাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা চাঁদ না দেখে কিংবা শা‘বানের ত্রিশ দিন পূর্ণ না করে (রমাযানকে) এগিয়ে আনবে না। আর (শাওয়াল মাসের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত অথবা রমাযানের ত্রিশ দিন পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত তোমরা সওম পালন করতে থাকবে। কতিপয় এ হাদীস বর্ণনায় হুযাইফাহ (রাঃ) এর নাম উল্লেখ করেননি।

【7】

যিনি বলেন, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে রমাযানের ত্রিশটি সওম পূর্ণ করো

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা রমাযান মাস আগমনের একদিন অথবা দু’দিন পূর্বে সওম পালন করবে না। তবে কেউ যদি (প্রতি মাসে) ঐ তারিখে সওম পালনে অভ্যস্ত হয়, সে রাখতে পারে। তিনি আরো বলেছেনঃ তোমরা চাঁদ না দেখে সওম পালন করবে না এবং শাওয়ালের চাঁদ না দেখা পর্যন্ত সওম অব্যাহত রাখবে। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয় তবে সওম ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে, অতঃপর সওম ভঙ্গ করবে। আর মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাতিম ইবনু আবূ সাগীর, শু‘বাহ ও হাসান ইবনু সালিহ ‘সিমাক’ হতে হাদীসটি অনুরূপ বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তাঁরা “সওম ভঙ্গ করবে” এ কথাটি বর্ণনা করেননি।

【8】

রমাযান মাস আসার পূর্বে সওম পালন

‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি শা‘বানের শেষ দিকে সওম রেখেছো? সে বললো, না। তিনি বললেনঃ যখন তুমি সওম রাখোনি, তখন (রমাযানের শেষে) একদিন বা দুই দিন সওম রাখবে। আবুল আযহার আল-মুগীরাহ ইবনু ফারওয়াহ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা মু‘আবিয়াহ (রাঃ) হিমস শহরের প্রবেশ দ্বারে অবস্থিত মুসতাহিল বাজারে লোকদের উদ্দেশে দাঁড়িয়ে বললেন, হে জনগণ! আমরা অমুক দিন, অমুক দিন চাঁদ দেখেছি। সুতরাং আমরা সওম আরম্ভ করতে যাচ্ছি। আর যে ব্যক্তি ভালো মনে করে সে যেন এরূপ করে। বর্ণনাকারী বলেন, তখন মালিক ইবনু হুবাইরাহ আস-সাবঈ দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে মু‘আবিয়াহ! আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ বিষয়ে কিছু শুনেছেন, নাকি আপনার ব্যক্তিগত অভিমত? মু‘আবিয়াহ (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা শা‘বান মাসে সওম পালন করো এবং বিশেষভাবে এর শেষদিকে। [২৩২৯] আবুল ওয়ালীদ (রহঃ) আমি আবূ ‘আমর আল-আওযাঈকে বলতে শুনেছি, ‘সাররাহ’ অর্থ মাসের প্রথমভাগ। [২৩৩০] আবূ মুসহির (রহঃ) সাঈদ ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) বলতেন, ‘সাররাহ’ অর্থ শা‘বানের প্রথম ভাগ। [২৩৩১] শায। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, কারো মতে, মাসের মধ্যভাগ, কারো মতে, শেষ ভাগ। সহীহঃ মাসের শেষভাগ।

【9】

যখন কোন শহরে অন্যান্য শহরের এক রাত আগে চাঁদ দেখা যায়

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)- এর আযাদকৃত গোলাম কুরাইব (রহঃ) উম্মুল ফাদল বিনতুল হারিস তাকে মু‘আবিয়াহ (রাঃ) -এর নিকট সিরিয়াতে কোন দরকারে পাঠালেন। কুরাইব বলেন, আমি সিরিয়া এসে তার কাজটি পুরা করি। এমতাবস্থায় রমাযানের চাঁদও উদিত হলো। আমরা সেখানে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখি। রমাযানের শেষদিকে আমি মদিনায় ফিরে এলে ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বিভিন্ন আলোচনার পর চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কখন চাঁদ দেখেছো? আমি বললাম, আমি বৃহস্পতিবার চাঁদ দেখেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি স্বচক্ষে চাঁদ দেখেছো? আমি বললাম, হ্যাঁ, লোকেরাও দেখেছে এবং সওম রেখেছে এবং মু‘আবিয়াহ (রাঃ) -ও সওম রেখেছেন। তিনি বললেন, আমরা চাঁদ দেখেছি শুক্রবার সন্ধ্যায়। সুতরাং আমরা ত্রিশ দিন পূর্ণ হওয়া অথবা (শাওয়ালের) চাঁদ না দেখা পর্যন্ত সওম পালন অব্যাহত রাখবো। তখন আমি বললাম, মু‘আবিয়াহর চাঁদ দেখা ও তাঁর সওম পালন কি আপনার সওম পালন ও ভঙ্গের জন্য যথেষ্ট নয়? তিনি উত্তর দিলেন, না, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে এরূপই নির্দেশ দিয়েছেন। আল-হাসান (রহঃ) আল-হাসান (রহঃ) কোন এক শহরের অধিবাসী সম্পর্কে বর্ণিত। লোকটি সোমবার সওম পালন করে এবং দুই ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, তারা রবিবার দিবাগত সন্ধ্যায় চাঁদ দেখেছে। তিনি বললেন, ঐ লোক এবং তার অধিবাসীকে সওম ক্বাযা করতে হবে না যতক্ষণ না তারা জানতে পারে যে, ঐ জনপদের লোকেরা রবিবার সওম পালন করেছে। তাহলে তারা সওম ক্বাযা করবে।

【10】

সন্দেহের দিন সওম পালন মাকরূহ

সিলাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা এক সন্দেহজনক দিনে আম্মারের (রাঃ) নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন একটি ভূনা বকরী সেখানে উপস্থিত করা হলে কিছু লোক এক দিকে সরে গেলো (খাওয়া থেকে বিরত থাকলো)। তখন আম্মার (রাঃ) বললেন, যে ব্যক্তি সন্দেহজনক দিনে সওম পালন করেছে, সে আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নাফরমানী করেছে।

【11】

যে ব্যক্তি শা‘বানকে রমাযানের সাথে যুক্ত করে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা রমাযানের একদিন অথবা দু’দিন পূর্বে সওম রাখবে না। অবশ্য কেউ প্রতি মাসে ঐ তারিখে সওম পালনে অভ্যস্ত হলে সে রাখতে পারে। উম্মে সালামাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শা‘বান মাস ছাড়া বছরের পূর্ণ একটি মাস কখনো সওম রাখতেন না। তিনি সওম অব্যাহত রেখে শা‘বানকে রমাযানের সাথে মিলাতেন।

【12】

শা‘বানের শেষ দিকে সওম পালন মাকরূহ

আবদুল ‘আযীয ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) আব্বাদ ইবনু কাসীর (রহঃ) মদিনায় আগমন করে আল-আ‘লা (রহঃ) -এর মাজলিস এ উপস্হিত হলেন। তিনি তার হাত ধরে তাকে দাঁড় করালেন, অতঃপর বললেন, হে আল্লাহ ! এ লোকটি তার পিতার সূত্রে আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর থেকে বর্ননা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শা‘বান মাসের অর্ধেক অতিবাহিত হলে তোমরা (নাফল) সওম রাখবে না। আল-আ‘লা বলেন, আল্লাহ সাক্ষী, আমার পিতা আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে উক্ত হাদীস আমার নিকট বর্ননা করেছেন। সহীহ। ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বলেন, আস-সাওরী, শিবল ইবনুল আলা, উমাইস ও যুহাইর ইবনু মুহাম্মাদ (রঃ) আল-আলা (রঃ) সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ‘আবদুর রহমান (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করতেন না। আমি ইমাম আহমাদ (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করি, তা কেন? তিনি বলেন, তার কাছে হাদীস রয়েছে যে, নাৰী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওমের পালনের দ্বারা শা’বানকে রমাযানের সাথে মিলাতেন। কিন্তু আল-আ’লা (রঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এর বিপরীত বর্ণনা করেছেন। ইমাম দাউদ (রঃ) বলেন, আমার মতে, দুই হাদীসের মধ্যে বিরোধ নাই। আল-আ’লা ছাড়া অন্য কেউ এটি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেননি।

【13】

শাওয়ালের চাদঁ দেখার বিষয়ে দুই ব্যক্তির সাক্ষ্য প্রদান

হুসাইন ইবনুল হারিস আল-জাদালী (রহঃ) একদা মাক্কাহয় আমীর ভাষণ প্রদানের সময় বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে চাঁদ দেখে হাজ্জের অনুষ্ঠান আদায়ের উপদেশ দিয়েছেন। যদি চাঁদ না দেখি তাহলে দু’জন নিষ্ঠাবান ব্যক্তির সাক্ষ্যের ভিত্তিতে যেন আমাদের হাজ্জের অনুষ্ঠানাদি পালন করি। আবূ মালিক (রহঃ) বলেন, আমি হুসাইন ইবনুল হারিস (রহঃ) -কে জিজ্ঞেস করি, মাক্কাহর আমীর কে? তিনি বলেন, আমার জানা নেই। পরবর্তীতে তার সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি বলেন, মাক্কাহর আমীর হলেন মুহাম্মাদ ইবনু হাতিবের ভাই হারিস ইবনু হাতিব। অতঃপর উক্ত আমীর বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন একজন আছেন যিনি আমার চাইতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্বন্ধে অধিক জ্ঞাত। আর তিনিই এ কথাটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন। একথা বলে তিনি এক লোকের দিকে ইঙ্গিত করলেন। হুসাইন (রহঃ) বলেন, আমার পাশে বসা এক বৃদ্ধ লোককে আমি জিজ্ঞেস করলাম, আমীরের ইঙ্গিতকৃত এই লোকটি কে? তিনি বললেন, ইনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)। তিনি যে বলেছেন, উনি (ইবনু ‘উমার) আমার চেয়ে অনেক জ্ঞাত, তাও সঠিক। এরপর ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে উক্ত নির্দেশ দিয়েছেন। রিব‘ঈ ইবনু হিরাশ (রহঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জনৈক সাহাবী তিনি বলেন, রমাযানের শেষদিন সম্পর্কে লোকদের মধ্যে মত পার্থক্য দেখা দিলো, এমতাবস্হায় দু’জন বেদুঈন এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে আল্লাহর নামে শপথ করে সাক্ষ্য দিলেন যে, তারা উভয়ে গতকাল সন্ধ্যার চাঁদ দেখেছেন। সুতরাং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের সওম ভঙ্গ করার নির্দেশ দিলেন। খালফ (রহঃ) তার হাদীসে বর্ণনা করেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে সকালে তাদের ঈদগাহে গমনের নির্দেশ দিয়েছেন।

【14】

রমযানের চাঁদ দেখার বিষয়ে এক জনের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এক বেদুঈন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, আমি রমযানের চাঁদ দেখেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলা্হ নেই? সে বললো, হ্যাঁ। তিনি পুনরায় বললেন, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল? সে বললো, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ হে বিলাল! ঘোষণা করে দাও, লোকেরা যেন কাল সওম পালন করে। [২৩৪০] দুর্বলঃ মিশকাত (১৯৭৮), যঈফ সুনান তিরমিযী (১০৮ /৬৯৪), যঈফ সুনান নাসায়ী (১২১ /২১১২), যঈফ সুনান ইবনু মাজা্হ (৩৬৪), ইরওয়া (৯০৭)। ‘ইকরিমাহ (রহঃ) একদা সাহাবীগন রমযানের চাঁদ দেখা নিয়ে সন্দিহান হলে তারা তারাবীহ না পড়া ও সওম না রাখার ইচ্ছা করেন। এমন সময় হাররাহ এলাকা থেকে এক বেদুঈন এসে সাক্ষ্য দিলো যে, সে চাঁদ দেখেছে। তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট উপস্হিত করা হলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলা্হ নেই, এবং আমি আল্লাহর রাসূল? সে বললো, হ্যাঁ, এবং সে সাক্ষ্য দিলো যে, সে চাঁদ দেখেছে। অতঃপর তিনি বিলাল (রাঃ) -কে নির্দেশ দিলেনঃ লোকদের মধ্যে ঘোষণা করে দাও যে, তারা যেন ক্বিয়াম করে এবং সওম রাখে। ইমাম আবু দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি এক জামা‘আত সিমাকের মাধ্যমে ‘ইকরিমাহ (রহঃ) সূত্রে মুরসালভাবে বর্ণনা করেছেন, তিনি একে মারফু করেছেন। তবে হাম্মাদ (রহঃ) ছাড়া কেউই ক্বিয়াম তথা তারাবীহ সলাতের কথা উল্লেখ করেননি। [২৩৪১] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন লোকেরা রমযানের চাঁদ অন্বেষণ করছিল। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জানালাম যে, আমি চাঁদ দেখেছি। অতঃপর তিনি নিজেও সওম রাখলেন এবং লোকদেরকেও রমযানের সওম পালনের আদেশ দিলেন।

【15】

সাহারী খাওয়ার গুরুত্ব

‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাদের ও আহলে কিতাবের সওমের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সাহারী খাওয়া।

【16】

যারা সাহারীকে ভোরের নাস্তা আখ্যায়িত করেন

আল-‘ইরবাদ ইবনু সারিয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে রমাযানের সাহারীর সময় ডাকলেন এবং বললেনঃ বরকতময় সকালের খাবারের দিকে এসো। আবূ হুরাইরা্হ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ঈমানদার ব্যক্তির জন্য খেজুর দিয়ে সাহারী খাওয়া কতোই না উত্তম।

【17】

সা্হরীর সময়

সামুরা্হ ইবনু জুনদুব (রাঃ) একদা সামুরা্হ ইবনু জুনদুব (রাঃ) খুত্ববাহ প্রদানের সময় বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিলালের আযান যেন তোমাদেরকে পানাহার থেকে বিরত না রাখে, আর না (পূর্ব) আকাশের শুভ্র আলো যতক্ষন না পূর্ব দিগন্তে বিস্তৃত হয়। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিলালের আযান যেনো তোমাদেরকে সা্হরী খাওয়া থেকে বিরত না রাখে। কেননা সে আযান দেয় (বা আহবান জানায়) রাতের সলাত আদায়কারীদেরকে ফিরিয়ে আনার জন্য, আর যারা ঘুমিয়েছিলো তাদেরকে জাগ্রত করতে। আর এরুপ না হওয়া পর্যন্ত ফাজর হয় না। ইয়াহইয়া (রহঃ) হাতের তালুকে একত্র করে বলেন, এরূপ, ইয়াহহিয়া তর্জনীদ্বয়কে প্রসারিত করেন। ক্বায়িস ইবনু ত্বালক্ব (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ খাও এবং পান করো। উর্ধাকাশে ভোরের যে লম্বা রেখা ফুটে উঠে, তা যেন তোমাদেরকে (সাহরী খাওয়া থেকে) বিরত না রাখে। সুতরাং আকাশের দিগন্তে লাল রঙ্গের ফর্সা উঠা পর্যন্ত তোমরা খাও এবং পান করো। ‘আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ ‘তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ না রাতের কালো সুতা থেকে ভোরের সাদা সুতা (রেখা) স্পষ্টরুপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত হয়’ (সুরাহ আল- বাক্বারাহঃ ১৮৭)। তখন আমি একটি কালো ও একটি সাদা রংয়ের সুতা নিয়ে আমার বালিশের নীচে রাখি। এরপর আমি তা দেখতে থাকি কিন্তু স্পষ্টভাবে দেখতে পেলাম না। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে গিয়ে বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি হেসে উঠলেন এবং বললেন, বালিশ তো দৈর্ঘ্য প্রস্থকারী। বরং এটা হচ্ছে রাত ও দিন। ‘উসমানের বর্ণনায় রয়েছেঃ তা তো রাতের অন্ধকার ও দিনের শুভ্রতা।

【18】

খাবার পাত্র হাতে থাকাবস্হায় ফাজরের আযান শুনলে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ ফাজরের আযান শুনতে পায় অথচ খাবারের পাত্র তার হাতে থাকে, সে যেন তা রেখে না দেয় যতক্ষন না তার প্রয়োজন পূরণ হয়।

【19】

সওম পালনকারীর ইফতারের সময়

‘আসিম ইবনু ‘উমার (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন এদিক (পূর্বদিকে) থেকে রাত আসে এবং এদিক (পশ্চিম দিক) থেকে দিন তিরোহিত হয় অর্থাৎ সূর্য অস্তমিত যায়, তখন সওম পালনকারীর ইফতারের সময়। ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবু ‘আওফা (রাঃ) একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সফরে গেলাম। তখন তিনি সওম পালনরত ছিলেন। সূর্য ডুবে গেলে তিনি বললেন, হে বিলাল! সওয়ারী থেকে নেমে আমাদের জন্য ছাতু তৈরি করে আনো। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সন্ধ্যা হতে দিন। তিনি বলেনঃ সওয়ারী থেকে নেমে আমাদের জন্য ছাতু তৈরি করে আনো। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এখনও তো দিন বাকী আছে। তিনি আবারও বললেনঃ নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু বানাও। অতঃপর তিনি নেমে ছাতু তৈরি করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা পান করে বললেনঃ যখন তোমরা এদিক (পূর্বদিক) থেকে রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে আসতে দেখবে তখনই সওম পালনকারী ইফতার করবে। তিনি তাঁর আঙ্গুল দিয়ে পূর্বদিক ইঙ্গিত করে দেখালেন।

【20】

অবিলম্বে ইফতার করা মুস্তাহাব

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দ্বীন বিজয়ী থাকবে যতদিন লোকেরা অবিলম্বে ইফতার করবে। কেননা ইহুদী ও খৃস্টানরা বিলম্বে ইফতার করে। আবু ‘আত্বিয়্যাহ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ও মাসরূক (রহঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ) -এর নিকট গিয়ে বলি, হে উম্মুল মু’মিনীন! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দুইজন সাহাবীর একজন সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করেন এবং খুব তাড়াতাড়ি (মাগরিবের) সলাত আদায় করে নেন। আর দ্বিতীয়জন বিলম্বে ইফতার করেন এবং সলাতও বিলম্বে আদায় করেন। তিনি বললেন, তাদের মধ্যে কে ইফতার অনতিবিলম্বে করেন এবং সলাত তারাতারি আদায় করেন? আমরা বললাম, তিনি হচ্ছেন ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপই করতেন।

【21】

ইফতারের খাদ্য

সালমান ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ সওম রাখলে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি পবিত্রকারী। [২৩৫৫] দূর্বলঃ যঈফ সুনান আত-তিরমিযী ( ১০১ /৬৬১, ১১০/৬৯৯), যঈফ সুনান মাজাহ (৩৭৪), ইরওয়া (৯২২)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাগরিবের) সলাতের পূর্বে কয়েকটি পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন, পাকা খেজুর না পেলে খোরমা দিয়ে, তাও না পেলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে (ইফতার করতেন)।

【22】

ইফতারের সময় দু‘আ পাঠ

মাওয়ান ইবনু সালিম আল-মুকাফফা‘ (রহঃ) আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ) -কে তার দাড়ি মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে মুষ্টির বাড়তি অংশ কেটে ফেলতে দেখেছি। আর তিনি বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইফতারের সময় বলতেনঃ ‘পিপাসা দূরীভূত হয়েছে, শিরা-উপশিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ প্রতিদানও নির্ধারিত হয়েছে’। মুয়ায ইবনু যুহরা (রাঃ) তাঁর নিকট হাদীস পৌঁছেছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইফতারের সময় বলতেনঃ “আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া ‘আলা রিযক্বিক্বা আফতারতু”। অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার উদ্দেশ্যেই সওম পালন করেছি এবং আপনার দেয়া রিযিক দ্বারাই ইফতার করেছি। [২৩৫৮] দুর্বলঃ মিশকাত (১৯৯৪), ইরওয়া (৪/৩৭)।

【23】

সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করলে

আসমা’ বিনতু আবূ বাকর (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময় রমযানে এক মেঘাচ্ছন্ন দিনে ইফতার করার পর সূর্য প্রকাশ হয়ে পড়লো। আবূ উসামাহ (রহঃ) বলেন, আমি হিশামকে বললাম, তাদেরকে কি তা কাযা করার নির্দেশ করা হয়েছিলো? তিনি বললেন, তা অবশ্যই করণীয়।

【24】

সাওমে বিসাল বা বিরতিহীন রোযা রাখা

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরতিহীন সওম পালন করতে নিষেধ করেছেন। লোকেরা বললো, আপনি তো সাওমে বিসাল রাখেন। তিনি বললেনঃ আমার অবস্থা তোমাদের মতো নয়। কেননা আমাকে পানাহার করানো হয়। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছেনঃ তোমরা বিরতিহীন সওম পালন করো না। অবশ্য কেউ ‘সাওমে বিসাল’ করতে চাইলে সাহারী পর্যন্ত করতে পারে। সাহাবীরা বললেন, আপনি তো ক্রমাগত সওম পালন করেন? তিনি বলেনঃ আমার অবস্থা তোমাদের মতো নয়। আমার খাদ্যদাতা ও পানীয়দাতা আছেন। তিনি আমাকে পানাহার করান।

【25】

সওম পালনকারীর জন্য গীবাত করা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ যদি সওম পালন করেও মিথ্যা বলা ও অপকর্ম ত্যাগ না করে, তাহলে তার পানাহার বর্জন করাতে আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ সওম পালন করলে সে যেন পাপাচারে লিপ্ত না হয় এবং মূর্খের ন্যায় আচরণ না করে। কেউ তার সাথে ঝগড়া করলে বা তাকে গালমন্দ করলে সে যেন বলে, আমি সায়িম (রোযাদার), আমি সায়িম।

【26】

সওম পালনকারীর মিসওয়াক করা

‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আমির ইবনু রাবীআ‘ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সওম পালন অবস্থায় এতো বেশি মিসওয়াক করতে দেখেছি যে, তা সংখ্যায় নির্ণয় করা মুশকিল। [২৩৬৪] দুর্বলঃ মিশকাত (৯০০২), ইরওয়া ,(৮৬) যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (১১৬/৭২৮)

【27】

পিপাসার কারণে সওম পালনকারীর শরীরে পানি ঢালা এবং বারবার নাকে পানি দেয়া

আবূ বাকর ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন এক সাহাবী তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের বছরে এক সফরে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে লোকদের প্রতি সওম ভঙ্গের নির্দেশ দিতে দেখেছি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুশমনের মোকাবিলায় তোমরা শক্তি সঞ্চয় করো। অবশ্য রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে সওম রেখেছেন। আবূ বাকর (রহঃ) বলেন, হাদীস বর্ণনাকারী বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে ‘আল-‘আরজ’ নামক স্থানে পিপাসার কারণে বা গরমের ফলে সওমরত অবস্থায় তাঁর মাথায় পানি ঢালতে দেখেছি। লাক্বীত্ব ইবনু সাবরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি উত্তমরূপে নাকে পানি দিয়ে তা পরিষ্কার করো- যদি তুমি সওম পালনের অবস্থায় না থাকো। সহীহ। এটি পূর্বের ১৪২ নং হাদীসের অংশ বিশেষ।

【28】

সওম পালনকারীর শিংগা লাগানো

সাওবান (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রক্তমোক্ষণকারী এবং যার রক্তমোক্ষণ করানো হয়েছে তাদের বলেনঃ উভয়ের সওম নষ্ট হয়েছে। শাইবান (রহঃ) বলেন, আবূ ক্বিলাবাহ বলেছেন, আবূ আসমা আর-রাহবী তাকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আযাদকৃত গোলাম সাওবান (রাঃ) তা নবী থেকে শুনেছেন। একদা শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে চলছিলেন... অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযানের আঠার দিন অতিবাহিত হবার পর আমার হাত ধরে জান্নাতুল বাকী‘তে এক ব্যক্তির নিকট আসলেন, যে শিংগা লাগাচ্ছিল। তিনি বললেনঃ রক্তমোক্ষণকারী ও যার রক্তমোক্ষণ করা হয়েছে তাদের উভয়ের সওম নষ্ট হয়ে গেছে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আযাদকৃত গোলাম সাওবান (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রক্তমোক্ষণকারী ও যে রক্তমোক্ষণ করায় তাদের উভয়ের সওম নষ্ট হয়ে যায়। সাওবান (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রক্তমোক্ষণকারী ও যে রক্তমোক্ষণ করায় তাদের উভয়ের সওম নষ্ট হয়ে যায়।

【29】

সওম পালনকারীর শিংগা লাগানোর অনুমতি আছে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওম অবস্থায় রক্তমোক্ষণ করিয়েছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, উহাইব ইবনু খালিদ (রহঃ) এ হাদীস আইউব (রহঃ) থেকে তার সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আবার জা‘ফার ইবনু রবী‘আহ (রহঃ) ও হিশাম ইবনু হাসসান (রহঃ) ইকরিমা-ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওম ও ইহরাম অবস্থায় রক্তমোক্ষণ করিয়েছেন। [২৩৭৩] দুর্বলঃ যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (১২৪/৭৭৯), ইরওয়া (৯৩২), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৩৭১), তাকরীজ হাক্বীক্বাতুস সিয়াম (পৃঃ ৬৭-৬৮) ‘আবদুর রহমান ইবনু আবূ লায়লাহ (রহঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জনৈক সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রক্তমোক্ষণ করানো এবং সাওমে বিসাল পালন করতে নিষেধ করেছেন। তবে তিনি এ দুটো কাজ সাহাবীদের প্রতি অনুগ্রহ করে হারাম করেননি। তাঁকে বলা হলো, হে আল্লাহর রসূল! আপনি তো ভোর রাত পর্যন্ত ক্রমাগত সওম পালন করেন! তিনি বললেনঃ আমি অবশ্যই ভোর রাত পর্যন্ত সওমে বিসাল করি। কেননা আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করান। সাবিত (রহঃ) তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) বলেছেন, সওম পালনকারী রক্তমোক্ষণ করালে দুর্বল হয়ে যাবে বিধায় আমরা তা পরিত্যাগ করতাম।

【30】

রমাযান মাসে দিনের বেলাঃ সওম পালনকারীর স্বপ্নদোষ হলে

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জনৈক সাহাবী তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কারো বমি হলে, স্বপ্নদোষ হলে এবং রক্তমোক্ষণ করালে সে সওম ভঙ্গ করবে না। [২৩৭৬]

【31】

সওম পালনকারী নিদ্রার সময় সুরমা লাগানো

‘আব্দুর রহমান ইবনুন নু‘মান ইবনু মা‘বাদ ইবনু হাওযা (রহঃ) হতে তার পিতা ও তার দাদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদেরকে ঘুমের সময় সুগন্ধিযুক্ত ইসমিদ সুরমা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়া বলেছেনঃ সওম পালনকারী তা বর্জন করবে। ইমাম আবু দাঊদ বলেন, ইয়াহ্ইয়া ইবনু মাঈন আমাকে বলেছেন, সুরমা ব্যবহার এর হাদীসটি মুনকার। [২৩৭৭] আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি সওম অবস্থায় সুরমা লাগাতেন। আল-আ‘মাশ (রহঃ) সূত্র তিনি বলেন, আমি আমাদের কোন সাথীকে সওম পালনকারীর জন্য সুরমা ব্যবহার করাকে অপছন্দনীয় বলতে দেখিনি। ইবরাহিম নাখঈ (রহঃ) সওম পালনকারীর জন্য ‘সিবর’ সুরমা ব্যবহার এর অনুমতি দিয়েছেন।

【32】

সওম পালনকারী ইচ্ছকৃত বমি করলে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন সওম পালনকারীর অনিচ্ছাকৃত বমি হলে তাকে তা ক্বাযা করতে হবে না। তবে কেউ সেচ্ছায় বমি করলে তাকে অবশ্যই সওম ক্বাযা করতে হবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাফস ইবনু গিয়াস (রহঃ) হতে হিশাম (রহঃ) সূত্রে অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। মা‘দান ইবনু ত্বালহাহ (রহঃ) আবূ দারদা (রাঃ) তাকে বর্ণনা করেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বমি করার পর সওম করেন। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুক্তদাস সাওবানের সঙ্গে দামিশকের জামে মাসজিদ এ সাক্ষাত করে বলি, আবূ দারদা (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বমি করার কারনে ইফতার করেছেন। তিনি বলেন, তিনি সত্য বলেছেন। ঐ সময় আমি তাঁকে অযুর পানি ঢেলে দিয়েছি।

【33】

সওম অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওম অবস্থায় (তাকে) চুমু দিতেন এবং একত্রে অবস্থান করতেন। তিনি প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রনে অধিক সক্ষম ছিলেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামযান মাসে (স্ত্রীদেরকে) চুমু দিতেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওমরত অবস্থা আমাকে চুমা দিতেন। তখন আমিও সওমরত ছিলাম। জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উমার ইবনুল খত্তাব (রাঃ) বলেন, একদা আমি কামোদ্দিপ্ত হয়ে সওম অবস্থায় স্ত্রীকে চুমা দিলাম। এরপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আজ এক গুরুতর কাজ করে ফেলেছি, আমি সওম অবস্থায় স্ত্রীকে চুমু দিয়েছি। তিনি বললেন, তুমি পানি দিয়া কুলি করলে কি হতো? ঈসা ইবনু হাম্মাদের বর্ণনায় রয়েছেঃ আমি (‘উমার) বললাম, তাতে কোন ক্ষতি হতো না। আমি বলিঃ তাতে অসুবিধা নেই।

【34】

সওম পালনকারী নিজের থুথু গিললে

‘আয়িশাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওম পালন অবস্থায় তাকে চুমু দিতেন এবং তাঁর জিহ্বাও চুষতেন। ইবনুল আ‘রাবী বলেন, আমি ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) থেকে জানতে পেরেছি, তিনি বলেছেন, এ হাদীসের সানাদ যথাথ নয়। [২৩৮৬] দুর্বলঃ মিশকাত (২০০৫)।

【35】

(রোযাদার) যুবকের জন্য (চুম্বন) মাকরূহ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট সওম অবস্থায় স্ত্রীর সাথে অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে অনুমতি প্রদান করেন। অতঃপর অন্য এক ব্যক্তি এসে অনুরূপ জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে নিষেধ করে দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি যাকে অনুমতি দিয়েছেন সে ছিল বৃ্দ্ধ এবং যাকে নিষেধ করেছেন সে ছিল যুবক।

【36】

যে ব্যাক্তি রমাযান মাসে নাপাক অবস্থায় ভোর করে

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ ও উম্মু সালামাহ (রাঃ) তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযান মাসে নাপাক অবস্থায় ভোরে উপনীত হতেন। বর্ণনাকারী ‘আব্দুল্লাহ আল-আযরামী তার হাদিসে বলেন, তিনি রমযানের রাতে স্বপ্ন দোষের কারনে নয় বরং সহবাসজনিত নাপাক অবস্থায় সওম পালন করতেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) একদা এক ব্যক্তি দরজায় দাঁড়ানো অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি নাপাক অবস্থায় ভোর করেছি এবং আমি সওম পালনের ইচ্ছা রাখি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমিও (কখনো) নাপাক অবস্থায় ভোর করি এবং সওম পালনের ইচ্ছা রাখি। তাই আমি গোসল করে সওম পালন করি। লোকটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাদের মত নন। আল্লাহ আপনার আগের ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসন্তুষ্ট হয়ে বললেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি আশা করি যে, নিশ্চয় আমি আল্লাহকে তোমাদের সকলের চেয়ে অধিক ভয় করবো এবং যা আমি অনুসরণ করবো তার মাধ্যমে তোমাদের চেয়ে অধিক প্রিয় হবো।

【37】

কেউ রমযানের সওম পালন অবস্থায় স্ত্রীসহবাস করলে তার কাফফারাহ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, আমি ধ্বংস হয়েছি। তিনি বললেনঃ তোমার কি হয়েছে? সে বললো, আমি সওম পালন অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কাছে আযাদ করার মত কোন গোলাম আছে কি? সে বললো, না। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি একাটানা দুই মাস সওম পালন করতে পারবে? সে বললো, না। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার ষাটজন মিসকীনকে খাওয়ানোর সামর্থ্য আছে কি? সে বললো, না। তখন তিনি তাকে বললেনঃ তুমি বসো। এমন সময় একটি ঝুড়িভর্তি খেজুর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট নিয়ে এলে তিনি তাকে বললেনঃ এগুলো সদাক্বাহ করে দাও। লোকটি বললো, হে আল্লহর রাসূল! মাদীনাহর দুই পার্শ্বে আমাদের চাইতে অভাবী পরিবার আর নেই। বর্ণনাকারী বলেন, এতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনভাবে হাসলেন যে, তাঁর সামনের দাঁতগুলো প্রকাশ হয়ে পড়ে। তিনি বললেনঃ তাহলে এগুলো তোমার পরিবারের লোকদের খাওয়াও। মুসাদ্দাসের বর্ণনায় রয়েছে তাঁর দাঁতগুলো প্রকাশ পেলো। আয-যুহরী (রহঃ) এই সানাদে পূর্বোক্ত হাদিসের অনরূপ বর্ণিত। তবে আয-যুহরী আরো বর্ণনা করেন যে, নিজের কাফফারাহ নিজেই ভোগ করা বা তার উপর কাফফারাহ ধার্য না করা কেবল ঐ ব্যক্তির জন্যই প্রযোজ্য ছিল। তাই বর্তমানে কোন ব্যক্তি অনরূপ করলে তাকে অবশ্যই কাফফারাহ দিতে হবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, লাইস ইবনু সা‘দ, আল-আওযাঈ, মানসূর ইবনুল মু‘তামির ও ‘ইরাক ইবনু মালিক (রহঃ) ইবনু উয়াইনাহ্ বর্ণিত হাদিসের অর্থানুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে আল-আওযাঈর বর্ণনায় রয়েছেঃ “এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে”। সহীহ। আর যুহরীর উক্তি মূলের বিপরীত। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি রমাযানের সওম ভঙ্গ করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে একটি গোলাম আযাদ করার অথবা একটানা দুই মাস সওম পালন অথবা ষাটজন মিসকীনকে আহার করানোর নির্দেশ দেন। ফলে লোকটি বলে, আমি এর কোনটিই করতে সক্ষম নই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি বসো। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট একটি ঝুড়িভর্তি খেজুর এলে তিনি তাকে বলেনঃ এগুলো নিয়ে গিয়ে সদাক্বাহ করে দাও। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার চেয়ে অধিক গরীব লোক নেই। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনভাবে হাসলেন যে, তার মাড়ির দাঁত প্রকাশ হয়ে পড়ে। তিনি লোকটিকে বললেনঃ তাহলে এগুলো তুমি খাও। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইবনু জুরাইজ হতে আয-যুহরীর মাধমে মালিকের শব্দে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি সওম ভঙ্গ করে। তিনি তাতে বলেছেনঃ ‘অথবা একটি গোলাম আযাদ করো অথবা দুই মাস সওম রাখো কিংবা ষাটজন মিসকীনকে আহার করাও’। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রমাযান মাসের সওম ভঙ্গ করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এলো। অতঃপর পূর্বের হাদিসের অনুরূপ। বর্ণনাকারী বলেন, পরে একটি ঝুড়িভর্তি খেজুর আসলো, যাতে পনের সা‘ খেজুর ছিলো। তিনি আরো বলেছেনঃ তুমি এবং তোমার পরিবার এগুলো খাও এবং একদিন সওম পালন করো আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি রমাযান মাসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট মাসজিদে এ আগমন করলো। সে বললও, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জাহান্নামের যোগ্য হয়েছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তার কি ব্যাপার? লোকটি বললো, আমি স্ত্রীর সাথে সঙ্গম করেছি। তিনি বললেনঃ সাদাক্বাহ করো। সে বললো, আল্লাহর শপথ! আমার কাছে কিছুই নেই, আর আমি সাদাক্বাহ করতে সক্ষম নই। তিনি বললেনঃ বসো। লোকটি বসলো। অতঃপর তার বসা অবস্থায়ই এক লোক গাধার পিঠে করে খাদ্যের বোঝা নিয়ে উপস্থিত হলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ জাহান্নামের যোগ্য ব্যক্তিটি কোথায়? লোকটি দাঁড়ালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এগুলো সাদাক্বাহ করে দাও। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের চেয়ে গরীব লোকদেরকে? আল্লাহর শপথ! আমরা সবচেয়ে গরীব। আমাদের কিছুই নেই। তিনি বললেনঃ তবে এগুলো তোমারাই খাও। আয়িশাহ (রাঃ) সূত্র এই সানাদে ঘটনাটি বর্ণিত। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর বিশ সা‘ (খেজুর) ভর্তি একটি ঝুড়ি এলো। [২৩৯৫]

【38】

ইচ্ছাকৃতভাবে সওম ভঙ্গের পরিণতি

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমযানে আল্লাহের দেয়া অনুমতি ছাড়া সওম ভঙ্গ করলো সে সারা বছরেও তা পূরণ করতে সক্ষম নয়। [২৩৯৬] দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৫৪৬২), মিশকাত (২০১৩), যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (১১৫/৭২৬), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৩৬৮)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অতঃপর ইবনু কাসীর ও সুলাইমান বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ। ইমাম আবু দাঊদ (রহঃ) বলেন, সুফিয়ান ও শু‘বাহ (রহঃ) ইবনুল মুতাব্বিস ও আবুল মুতাব্বিসের নাম নিয়ে মতভেদ করেছেন। [২৯৩৭]

【39】

যে ব্যাক্তি ভুলবশত আহার করে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে একটি লোক এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি সওম অবস্থায় ভুলবশত পানাহার করেছি। তিনি বলেনঃ আল্লাহই তোমাকে পানাহার করিয়েছেন।

【40】

রমযানের ক্বাযা সওম আদায়ে বিলম্ব করা

‘আয়িশাহ (রাঃ) যদি আমার উপর রমযানের ক্বাযা সওম থাকতো, তাহলে শা‘বান মাস আসার আগে আমি তা আদায় করতে সক্ষম হতাম না।

【41】

কোন ব্যক্তি ক্বাযা সওম রেখে মারা গেলে

‘আয়িশাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিজের উপর ক্বাযা সওম রেখে মারা যায় তার পক্ষ হতে তার উওরাধিকারীরা তা আদায় করবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এই বিধান মানতের সওমের জন্য প্রযোজ্য। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল (রহঃ) -এর অভিমত এটাই। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, যদি কোন ব্যক্তি রমাযান মাসে অসুস্থ হয়ে রমাযান মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত সুস্থ না হয় এবং এ অবস্থায়ই মারা যায় তাহলে তার পক্ষ হতে মিসকীনকে আহার করাতে হবে। আর তার উপর মানতের সওম থকলে তার পক্ষ হতে অভিভাবক তার ক্বাযা আদায় করবে।

【42】

সফর অবস্থায় সওম পালন

‘আয়িশাহ (রাঃ) একদা হামযাহ আল-আসলামী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এমন ব্যক্তি যে, অনবরত সওম পালন করি, আমি কি সফরের অবস্থায়ও সওম রাখবো? তিনি বললেনঃ ইচ্ছা হলে সওম রাখো আর ইচ্ছা হলে রেখো না। হামযাহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু হামযাহ আল-আসলামী (রহঃ) হতে তার পিতা ও তার দাদা তিনি বলেন, আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমি উটের মালিক, আমি এগুলোকে কাজে লাগাই। আমি এগুলোর উপর চড়ে সফর করি এবং ভাড়ায়ও খাটাই। আমার (সফর থাকা অবস্থায়) এই রমাযান মাস এসে যায়। আমি তো একজন স্বাস্থ্যবান যুবক। হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি (সফরে) সওম পালন করবো? সওম তো আমার উপর ঋণ, কাজেই তা পরে রাখার (ক্বাযা করার) চেয়ে এখন রেখে দেয়াই আমার পক্ষে সহজ। হে আল্লাহর রাসূল! অধিক নেকীর আশায় আমি কি সওম রাখবো নাকি ভঙ্গ করবো? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে হামযাহ! তোমার যা ইচ্ছা করতে পারো। [২৪০৩] দুর্বলঃ ইরওয়া (৯২৬)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহ্ থেকে মক্কাহর উদ্দেশে বের হলেন। তিনি ‘উসফান’ নামক জায়গায় পৌঁছে একপাত্র পানি চাইলেন এবং লোকদেরকে দেখানোর উদ্দেশে তা উঁচু করে মুখের কাছে ধরলেন। এটি রমাযান মাসের ঘটনা। এজন্যই ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে কখনো সওম রেখেছেন, আবার কখনো সওম রাখেননি। কাজেই কারো ইচ্ছা হলে সওম রাখতেও পারে, আবার নাও রাখতে পারে। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রমাযান মাসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সফর করেছি। এ সময় আমাদের কেউ সওম রেখেছেন এবং কেউ সওম রাখেননি। কিন্তু এ সময় সওম পালনকারী রোযাহীনকে এবং রোযাহীন সওম পালনকারীকে দোষারোপ করেননি। ক্বাযা‘আহ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি আবূ সাইদ আল-খুদরী (রাঃ) এর নিকট আসি। তখন তিনি লোকদের প্রশ্নের উওর দিচ্ছিলেন এবং লোকেরা শান্তভাবে তাঁর কথা শুনছিলো। আমি তাঁর সাথে একান্তে সাক্ষাতের অপেক্ষায় রইলাম। তিনি একাকী হলে আমি তাকে সফরের অবস্থায় রমাযানের সওম রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তিনি বললেন, আমরা মক্কাহ বিজয়ের সময় রমাযান মাসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে রওয়ানা হই। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওম রেখেছিলেন এবং আমরাও সওম রেখেছিলাম। তিনি কোন এক মানযিলে নামলে তিনি পুনরায় বললেনঃ নিশ্চয় তোমরা শত্রুর কাছাকাছি এসে গেছো। এখন সওম ভঙ্গ করাটাই হবে তোমাদের শক্তিবর্ধক হবে। আমাদের কেউ কেউ সওম রাখলাম এবং কেউ কেউ সওমহীন অবস্থায় ভোর করলাম। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমরা পুনরায় সফর শুরু করলাম এবং এক মানযিলে নামলে তিনি পুনরায় বললেনঃ তোমরা শত্রুর মোকাবেলায় অবতীর্ণ হবে। এখন সওম ভঙ্গ করাটাই হবে তোমাদের শক্তিবর্ধক হবে। কাজেই তোমরা সওম ভঙ্গ কর। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দৃঢ় সংকল্পের উপর স্থির রইলেন। আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সফরে এই ঘটনার পূর্বেও সওম পালন করেছি এবং এর পরেও সওম পালন করেছি।

【43】

কষ্টের আশঙ্কা হলে সফরে সওম না রাখা ভাল

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখলেন যে, এক ব্যক্তি কে ছায়া দেওয়া হচ্ছে এবং তার চারপাশে লোকেরা ভীড় করেছে। তখন তিনি বললেনঃ সফরে সওম পালন সওয়াবের কাজ নয়। বনী ‘আবদুল্লাহ ইবনু কা‘বের কুশাইর উপগোত্রীয় সদস্য আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের উপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অশ্বারোহী বাহিনী অতর্কিত হামলা করলে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট পৌঁছি বা আসি। এ সময় তিনি আহার করছিলেন। তিনি বললেনঃ বসো এবং আমাদের সাথে খাও। আমি বললাম, আমি সওম অবস্থায় আছি। তিনি বললেনঃ বসো আমি তোমাকে সলাত ও সওম সম্পর্কে কিছু বলবো। নিশ্চয় আল্লাহ মুসাফির, দুগ্ধদানকারিনী ও গর্ভবতী থেকে অর্ধেক সলাত ও সওম কমিয়ে দিয়েছেন। (বর্ণনাকারী বলেন), আল্লাহর শপথ! তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই সাথে এ শব্দ (দুগ্ধদানকারিনী ও গর্ভবতী) অথবা এর একটি শব্দ বলেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, পরে আমি এজন্য অনুতপ্ত হলাম যে, আমি কেন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে আহারে অংশগ্রহন করলাম না।

【44】

যে ব্যক্তি (সফর অবস্থায়) সওম পালনকে প্রাধান্য দেন

আবূ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, প্রচন্ড গরমের দিনে আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে কোন এক যুদ্ধাভিযানে বের হই। তখন (গরমের কারণে) আমাদের কেউ হাত মাথার উপর রাখেন। শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহ (রাঃ) ছাড়া আমাদের কেউ সওম রাখেনি। সিনান ইবনু সালামাহ ইবনুল মুহাব্বাক আল-হুযালী (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির কাছে এমন বাহন আছে যা তাকে পর্যাপ্ত আহারের স্থানে পৌঁছে দিবে, তার উচিত রমযানে সওম পালন করা যেখানেই সে (রমাযান মাস) পাবে। [২৪১০] দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৫৮১০), মিশকাত (২০২৬)। সালামাহ ইবনুল মুহাব্বাক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সফর অবস্থায় রমাযান মাস পাবে… অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অর্থানুযায়ী বর্ণিত। [২৪১১]

【45】

সফরে রওয়ানা হয়ে মুসাফির কখন সওম ভঙ্গ করবে?

জা‘ফার ইবনু খাইর (রহঃ) আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবী আবূ বাসরাহ আল-গিফারীর (রাঃ) সাথে রমাযান মাসে মিসরের আল-ফুসতাত থেকে ‘আমর ইবনুল ‘আসের (রাঃ) জাহাজে সওয়ার ছিলাম। নৌযানের নোঙ্গর উঠানোর পরে তার সম্মুখে সকালের নাস্তা আনা হলো। জা‘ফার তার বর্ণনায় বলেন, তিনি স্বীয় ঘর-বাড়ি থেকে দূরে যাওয়ার আগেই খাবারের দস্তরখান চাইলেন এবং আমাকে (খাদ্য গ্রহণের জন্য) কাছে ডাকলেন। আমি বললাম, আপনি কি ঘর-বাড়ি দেখছেন না? আবূ বাসরাহ (রাঃ) বললেন, তুমি কি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাত ছাড়তে চাও? জা‘ফার বলেন, এরপর তিনি খেলেন।

【46】

কতদূর সফর করলে মুসাফির সওম ভঙ্গ করতে পারে?

মানসুল আল-কালবী (রহঃ) একদা রমাযান মাসে দিহ্‌য়া ইবনু খালীফাহ (রাঃ) দামিশকের এক অঞ্চল হতে ‘আক্বাবাহ ও ফুসতাতের মধ্যবর্তী দূরত্বের সম-পরিমাণ অর্থাৎ তিন মাইল দূরত্ব পর্যন্ত সফর করেন। তখন তিনি সওম ভঙ্গ করলেন এবং তাঁর সাথের কিছু লোকও সওম ভঙ্গ করলেন। এ সময় কিছু লোক সওম ভঙ্গ করা অপছন্দ করলো। পরে তিনি নিজ গ্রামে ফিরে এসে বললেন, আল্লাহর শপথ! আজ আমি এমন বিষয় দেখেছি, যা কখনো দেখার ধারণাও করিনি। কিছু লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর সাহাবীদের সুন্নাত থেকে বিমুখ হয়েছে। তিনি ঐ লোকদের নিন্দা করলেন যারা (সফরে) সওম রেখেছিলো। তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌! আমাকে তোমার হিফাযাতে নাও। [২৪১৩] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি আল-গাবা বনভূমিতে যেতেন। তখন তিনি সওম ভঙ্গ করতেন না এবং সলাত ক্বসর করতেন না।

【47】

যিনি বলেন, আমি পুরো রমাযানের সওম রেখেছি

আবূ বাক্‌রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন না বলে, আমি পুরো রমাযান মাস সওম রেখে এবং এর পূর্ণ রাত (সলাতে) দাঁড়িয়ে কাটিয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ আত্মপবিত্রতা প্রকাশ অপছন্দ করেছেন নাকি কিছু সময় নিদ্রা ও বিশ্রামের প্রয়োজন বলেছেন তা আমার জানা নেই। [২৪১৫] দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি‘‘উস সাগীর (৬৩৬৭), যঈফ সুনান নাসায়ী (১২০/২১০৯)।

【48】

দুই ঈদের দিন সওম পালন

আবূ ‘উবাইদ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা ‘উমার (রাঃ) এর সাথে আমি এক ঈদের সলাতে উপস্থিত ছিলাম। তিনি খুত্ববাহ্‌র পূর্বে সলাত পড়লেন। অতঃপর বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু’’দিন সওম রাখতে নিষেধ করেছেন। কেননা কুরবানীর দিন তোমরা তোমাদের কুরবানীর পশুর গোশত খেয়ে থাকো। আর ঈদুল ফিতরের দিন হল তোমাদের সওমের সমাপ্তি। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেনঃ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা- এ দু’’দিন সওম পালন করতে এবং দুই ধরনের পোশাক পরতে, (সাম্মা) এক কাপড়ে সমগ্র শরীর পেঁচিয়ে নিয়ে শরীরকে এভাবে ঢাকা যে, হাঁটু উঁচু করে বসলে নীচ থেকে লজ্জাস্তান খোলা থাকে এবং দুই সময়ে সালাত আদায় করতে- ফাজরের পর এবং ‘আসরের পর।

【49】

তাশরীকের দিনসমূহে সওম পালন

উম্মু হানী (রাঃ)-এর মুক্তদাস আবু মুররাহ (রহঃ) একদা তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমরের সাথে তার পিতা ‘আমর ইবনুল ‘আসের (রাঃ) এর নিকট যান। তিনি তাদের উভয়ের সামনে খাবার এনে তা খেতে বললেন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বললেন, আমি সওমরত আছি। ‘আমর (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দিনগুলোতে আমাদেরকে সওম ভাঙ্গার নির্দেশ দিয়েছেন এবং সওম রাখতে নিষেধ করেছেন। মালিক (রহঃ) বলেন, তা হল তাশরীকের দিনগুলো। ‘উকবাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) রাসুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আরাফাহর দিন, কুরবানীর দিন এবং তাশরিকের দিনগুলো হচ্ছে আমাদের মুসলিমদের ঈদের দিন, এগুলো পানাহারের দিন।

【50】

শুধু জুমু’‘আহর দিনকে সওম পালনের জন্য নির্দিষ্ট করা নিষেধ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন কেবল জুমু’‘আহর দিন সওম না রাখে। (রাখতে চাইলে) জুমু’‘আহর আগে অথবা পরের দিনও যেন সওম রাখে।

【51】

কেবল শনিবারকে সওম পালনের জন্য নির্দিষ্ট করা নিষেধ

‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর আস-সুলামী (রহঃ) হতে তার বোন আস-সাম্মা’’ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা শুধু শনিবারে সওম রেখো না। তবে ঐ দিন তোমাদের উপর ফারয কৃত সওম রাখতে পারো। তোমাদের কেউ যদি সওম ভঙ্গের জন্য আঙ্গুর গাছের ছাল বা অন্য গাছের ডালা ছাড়া কিছু না পায়, তাহলে তা চিবিয়ে সওম ভঙ্গ করবে। ইমাম আবু দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীসটি মানসূখ।

【52】

এ ব্যাপারে অনুমতি প্রসঙ্গে

জুয়াইরিয়াহ বিনতুল হারিস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’‘আহর দিন তাঁর কাছে আসলেন তখন তিনি সওম পালন অবস্তায় ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি গতকাল সওম রেখেছিলে? তিনি বললেন, না। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কি আগামীকাল সওম পালনের ইচ্ছা আছে? তিনি বললেন, না। তিনি বললেনঃ তাহলে সওম ভঙ্গ করো। ইবনু শিহাব (রহঃ) সূত্র তার নিকট শুধু শনিবার সওম রাখা নিষেধ সম্পর্কিত হাদীস আলোচনা করা হলে তিনি বলেন, এটাতো হিমসী বর্ণিত হাদীস। [২৪২৩] আল-আওযাঈ (রহঃ) তিনি বলেন, শনিবারের সওম সম্পর্কিত ইবনু বূসর বর্ণিত হাদীসটি আমি গোপন রেখেছিলাম। কিন্ত আমি দেখলাম যে, তা ব্যপকভাবে প্রসার পেয়েছে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন, এ হাদীসটি মিথ্যা।

【53】

সারা বছর সওম পালন

আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কিভাবে সওম রাখেন? এতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসন্তুষ্ট হলেন। ‘উমার (রাঃ) তা দেখেতে পেয়ে বললেন, আমরা আল্লাহকে আমাদের রব, ইসলামকে আমাদের দ্বীন এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমাদের নবী হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট। আমরা আল্লাহর কাছে তাঁর রাসূলের অসন্তুষ্টি থেকে আশ্রয় চাই। ‘উমার (রাঃ) উক্ত বাক্যটি বারবার বলতে লাগলেন, এক পর্যায়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অসন্তুষ্টির ভাব দূরীভূত হল। এরপর ‘উমার (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ বাক্তি কেমন যে সারা বছর সওম রাখে? তিনি বললেনঃ এমনও কি কেউ সামর্থ্য রাখে? তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ বাক্তি কেমন যে দুই দিন সওম পালন করে এবং একদিন রোযাহীন থাকে? তিনি বললেন, কেউ কি এরূপ করতে সহ্মম? তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ ব্যক্তি কেমন যে একদিন সওম পালন করে এবং একদিন রযাহীন থাকে? তিনি বললেন, তা দাঊদ (আঃ) এর সাওমের মতই। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ঐ ব্যক্তির সওম কেমন যে একদিন সওম রেখে দু’দিন রোযাহীন থাকে? তিনি বললেনঃ আমি এটাই কামনা করি, যেন আমাকে এরূপ শক্তি দেয়া হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ প্রতি মাসে তিনটি সওম এবং এক রমাযান থেকে পরবর্তী রমাযান পর্যন্ত প্রতি বছরের রমাযানের সওম, এটাই হচ্ছে সর্বদা সওম পালনের সমতুল্য। আরাফাহ্ দিনের সওম আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, এর দ্বারা তিনি পূর্বের বছর এবং পরের বছরের গুনাহ ক্ষমা করবেন। আর আশূরার সওম, আমি আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি (এর বিনিময়ে) আগামী এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করবেন। আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) এই সানাদে পূর্বোক্ত হাদীস বর্ণিত। তাতে অতিরিক্ত রয়েছেঃ তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সোমবার ও বৃহস্পতিবার সওম পালনের ব্যাপারে আপনার কি অভিমত? তিনি বললেনঃ ঐ দিন আমি জন্মগ্রহন করেছি এবং ঐ দিনই আমার উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমার ইবনুল ‘আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে সাক্ষাত করে বললেনঃ আমাকে কি জানানো হয়নি যে, তুমি বলেছো, আল্লাহর শপথ! আমি সারা দিন সওম রাখবো এবং সারা রাত দাঁড়িয়ে সলাত পড়বো? তিনি বললেন হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এরূপ বলেছি। তিনি বললেনঃ সলাত আদায় করবে এবং নিদ্রায়ও যাবে। সওম পালন করবে এবং কোন দিন সওম থেকে বিরত থাকবে। তুমি প্রতি মাসে (১৩, ১৪, ও ১৫ তারিখ) তিনটি সওম রাখো, এটাই সারা বছর সওম পালনের সমতুল্য। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি এর চেয়ে অধিক শক্তি রাখি। তিনি বললেনঃ তাহলে একদিন সওম রাখো এবং একদিন সওম থেকে বিরত থেকো। এটিই সর্বোত্তম সওম এবং এটিই হচ্ছে দাঊদ (আঃ)-এর সওম। আমি বললাম, আমি এর চাইতেও অধিক শক্তি রাখি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এর চেয়ে উত্তম সওম নেই।

【54】

হারাম (সম্মানিত) মাসসমূহে সওম পালন সম্পর্কে

বাহিলিয়্যাহ গোত্রীয় ‘মুজীবা’ নাম্নী নামক জনৈক মহিলা হতে তার পিতা অথবা চাচা একদা তিনি (পিতা অথবা চাচা) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে দেখা করে চলে যান। অতঃপর এক বছর পরে তিনি আসেন। তখন তার মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি ঘটেছিলো। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে চিনতে পারেননি? তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কে? তিনি বললেন, আমি ঐ বাহিলী, আমি গত বছর এসেছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ কি কারণে তোমার এরূপ পরিবর্তন ঘটলো, অথচ তুমি তো সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলে? আমি বললাম, আমি আপনার নিকট থেকে বিদায় নেয়ার পর থেকে রাত ছাড়া আহার করিনি ( দিনে অনবরত সওম রেখেছি)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তোমার নাফসকে কেন এরূপ কষ্ট দিয়েছো? অতঃপর তিনি বলেনঃ ধৈর্যের মাস (রমাযান) এবং প্রতি মাসে একটি করে সওম রাখো। তিনি বললেন, আমাকে আরো বাড়িয়ে দিন, কেননা আমার সামর্থ্য আছে। তিনি বললেনঃ দু’’দিন সওম রাখো। লোকটি বললেন, আরো বাড়িয়ে দিন। তিনি বললেনঃ ( প্রতি মাসে) তিন দিন সওম রাখো। লোকটি বললেন, আরো বাড়িয়ে দিন। তিনি বললেনঃ তুমি হারাম মাসগুলোতে সওম রাখো এবং সওম বর্জনও করো। তুমি হারাম মাসগুলোতে সওম রাখো এবং সওম বর্জনও করো। তুমি হারাম মাসগুলোতে সওম রাখো এবং সওম বর্জনও করো। একথা বলে তিনি তিনটি আঙ্গুল একত্র করার পর ফাঁক করে দিলেন। [২৪২৮]

【55】

মুহাররম মাসের সওম

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রমাযান মাসের পর আল্লাহর মাস মুহররম-এর সওম হচ্ছে সর্বোত্তম এবং ফরয সালাতের পর রাতের সলাতই সর্বোত্তম।

【56】

রজব মাসের সওম

উসমান ইবনু হাকীম (রহঃ) আমি সাঈদ ইবনু জুবাইর (রহঃ)-কে রজব মাসের সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আমাকে জানিয়েছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনবরত সওম পালন করতেন, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি এ মাসে সওম বর্জন করবেন না। আবার তিনি অনবরত সওম বর্জন করতেন, এমনকি আমরা বলতাম তিনি (হয়তো) আর সওম রাখবেন না।

【57】

শা‘বান মাসের সওম

আয়িশাহ (রাঃ) রাসূল্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট সকল মাসের মধ্যে শা‘বান মাসে অধিক সওম রাখা অধিক পছন্দনীয় ছিলো? তিনি এ মাসে সওম অব্যাহত রেখে তা রমযানের সাথে যুক্ত করতেন।

【58】

শাওয়াল মাসের সওম

‘উবাইদুল্লাহ ইবনু মুসলিম আল-ক্বারাশী (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, একদা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করেছি (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) অথবা তাঁকে সারা বছর সওম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলেনঃ তোমার স্ত্রীর প্রতি তোমার কর্তব্য রয়েছে। সুতরাং তুমি রমাযান মাস এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট মাসে আর প্রতি বুধবার ও বৃহস্পতিবার সওম পালন করো। তুমি এরূপ করলে সারা বছরই সওম রাখলে। দুর্বলঃ যইফ আল-জামি‘উস সাগীর (১৯১৪), মিশকাত (২০৬১), যইফ সুনান আত-তিরমিযী (১২২/৭৫২)।

【59】

শাওয়াল মাসের ছয় দিন সওম পালন

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবী আবূ আইয়ূব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমাযান মাসের সওম রাখার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি সওম রাখলো, সে যেন সারা বছর সওম রাখলো।

【60】

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে সওম পালন করতেন

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাধারে সওম রাখতেন, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি সওম বর্জন করবেন না। আবার তিনি সওম বর্জন করতেন, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি হয়তো আর সওম রাখবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রমাযান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে পূর্ণ মাস সওম পালন করতে দেখিনি। আর আমি তাঁকে শা‘বান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে অধিক (নফল) সওম রাখতে দাখিনি। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অর্থের অনুরূপ বর্ণিত। তাতে রয়েছেঃ তিনি (শা‘বান মাসে) সামান্য ক’দিন ছাড়া গোটা মাসই সওম পালন করতেন।

【61】

সোমবার ও বৃহস্পতিবার সওম পালন

উসামাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) এর আযাদকৃত গোলাম তিনি উাসমাহ (রাঃ) এর সাথে তার কোন মালের সন্ধানে ওয়াদিয়ুল কুরায় যান। উসামাহ (রাঃ) প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার সওম পালন করতেন। তার মুক্তদাস তাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি সোমবার ও বৃহস্পতিবার কেন সওম রাখেন অথচ আপনি একজন বৃদ্ধ মানুষ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোমবার ও বৃহস্পতিবার সওম রাখতেন। তাঁকে এর কারন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ সোমবার ও বৃহস্পতিবার আল্লাহর নিকট বান্দার আমলসমূহ পেশ করা হয়।

【62】

(যিলহাজ্জের) দশ দিন সওম পালন

হুনাইদাহ ইবনু খালিদ (রহঃ) তার স্ত্রী হতে এবং তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন এক স্ত্রী সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিলহাজ্জ মাসের নয় তারিখ পর্যন্ত, আশূরার দিন, প্রত্যেক মাসে তিনদিন, মাসের প্রথম সোমবার ও বৃহস্পতিবার সওম রাখতেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহান আল্লাহর নিকট যে কোন দিনের সৎ আমলের চাইতে যিলহাজ্জ মাসের দশ প্রথম দিনের আমলের অধিক প্রিয়। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? তিনি বললেনঃ না, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান-মাল নিয়ে জিহাদে বের হয় এবং এর কোন একটি নিয়েও ফিরে না আসে তার কথা স্বতন্ত্র।

【63】

যিলহাজ্জের দশ দিন সওম না রাখার বর্ণনা

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে কখনো (যিলহাজ্জ মাসে) দশ দিন সওম পালন করতে দেখিনি।

【64】

আরাফাহর দিন আরাফাহর ময়দানে সওম পালন প্রসঙ্গ

ইকরিমাহ (রহঃ) আমরা আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর কাছে তারঘরে অবস্থান করছিলাম। তখন তিনি আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফাহর দিন আরাফাহর ময়দানে সওম রাখতে নিষেধ করেছেন। [২৪৪০] দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৬০৬৯), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৩৭৮/১৭৩২), সিলসিলাতুল আহাদীসিয যঈফাহ (৪০৪), মিশকাত(২০৬৩)। আল-হারিস কন্যা উম্মুল ফাদল (রাঃ) আরাফাহর দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওম পালন করেছেন কিনা এ নিয়ে কতিপয় লোক তার নিকট বিতর্ক করেন। তাদের কেউ বললেন, তিনি সওম রেখেছেন, আবার কতিপয় বললেন, তিনি সওম রাখেননি। সুতরাং আমি তাঁর কাছে এক পেয়ালা দুধ পাঠালাম, তখন তিনি তাঁর উষ্ট্রীর পিঠের উপর আরাফাহতে অবস্থান করছিলেন। তিনি দুধটুকু পান করলেন।

【65】

আশূরার দিন সওম পালন

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, জাহিলিয়াতের যুগে কুরাইশরা আশূরার সওম পালন করতো। জাহিলী যুগে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -ও এ দিন সওম রাখতেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় এসে এ দিন সওম রেখেছেন এবং লোকদেরকেও সওম পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। অত:পর রমযানের সওম ফরয হলে সেটিই ফরয হিসেবে বহাল হলো এবং আশূরার দিন সওম রাখার আবশ্যকতা পরিত্যক্ত হলো। ফলে যার ইচ্ছা সওম রাখতো এবং যার ইচ্ছা ত্যাগ করতো। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আশূরা এমন দিন ছিলো যে, জাহিলী যুগে আমরা এ দিন সওম পালন করতাম। অতঃপর রমাযান মাসের সওম ফারয করা হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটি আল্লাহর দিনসমূহের একটি দিন। কাজেই যার ইচ্ছা সওম রাখুক, আর যার ইচ্ছা তা ত্যাগ করুক। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনাহয় এসে ইয়াহুদীদের আশূরার দিন সওম পালনরত পেলেন। তাদেরকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বললো, এটি একটি মহান দিন, যেদিন মহান আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে ফেরাউনের উপর বিজয়ী করেছেন। সুতরাং এ মহান দিনের সম্মানার্থে আমরা সওম পালন করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের চাইতে আমরা মূসা (আঃ) -এর বেশি হকদার। অতঃপর তিনি ঐদিন সওম পালনের নির্দেশ দেন।

【66】

বর্ণিত আছে যে, মুহাররমের নয় তারিখ আশূরার দিন

‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নিজে আশূরার দিন সওম রাখলেন এবং আমাদেরকেও এ সওম পালনের নির্দেশ দেন, তখন লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা এ দিনটিকে সম্মান করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আগামী বছর এলে আমরা নবম দিনও সওম পালন করবো। কিন্ত আগামী বছর না আসতেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকাল করেন। আল-হাকাম ইবনু আ‘রাজ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) এর নিকট এলাম। এ সময় তিনি মাসজিদুল হারামে তার চাঁদরে হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। আমি তাকে আশূরার সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, যখন তুমি মুহাররমের নতুন চাঁদ দেখবে, তখন থেকে গণনা করতে থাকবে। এভাবে যখন নবম দিন আসবে তখন সওম অবস্থায় ভোর করবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি এভাবে সওম রাখতেন? তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবেই সওম রাখতেন।

【67】

আশূরার সওম পালনের ফাযীলত

‘আব্দুর রহমান ইবনু মাসলামাহ (রহঃ) হতে তার চাচা একদা আসলাম গোত্রের লোকেরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আগমন করলে তিনি বললেনঃ তোমরা কি তোমাদের এই দিনে সওম রেখেছো? তারা বললো, না। তিনি বললেনঃ দিনের বাকী অংশটুকু (পানাহার না করে) পূর্ণ করো এবং এদিনের সওম ক্বাযা করে নাও। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ আশূরার দিন। [২৪৪৭]

【68】

একদিন সওম রাখা ও একদিন বিরতি দেয়া

‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ  আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সওম হলো দাঊদ (আঃ) -এর সওম এবং আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় সলাত হলো দাঊদ (আঃ) -এর সলাত। তিনি রাতের অর্ধেক অংশ ঘুমাতেন এবং এক-তৃতীয়াংশ ক্বিয়াম করতেন। আবার এক ষষ্ঠমাংশ ঘুমাতেন। আর তিনি একদিন সওম ত্যাগ করতেন এবং একদিন সওম রাখতেন।

【69】

প্রতি মাসে তিনদিন সওম পালন

ইবনু মিলহান আল-ক্বায়সী (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আইয়ামে বীয অর্থৎ চাদেঁর ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সওম পালনে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এগুলো সারা বছর সওম রাখার সমতুল্য। ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি মাসের প্রথম দিকে তিনদিন সওম পালন করতেন।

【70】

যিনি বলেন, (ঐ তিনটির দু’টি হলো) সোম ও বৃহস্পতিবার

হাফসাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি মাসে তিন দিন সওম রাখতেনঃ (প্রথম সপ্তাহে) সোমবার ও বৃহস্পতিবার এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে সোমবার। হুনাইদাহ আল-খুযাঈ (রহঃ) হতে তার মা তিনি বলেন, আমি উম্মু সালামাহ (রাঃ) এর কাছে গিয়ে সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে প্রতি মাসে তিন দিন সওম পালনের নির্দেশ দিতেন। মাসের প্রথম সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতিবার এবং (দ্বিতীয় সপ্তাহের) বৃহস্পতিবার। [২৪৫২] মুনকারঃ মিশকাত (২০৬০)।

【71】

যিনি বলেন, মাসের যে কোন দিন সওম পালন করা যায়

মু‘আযাহ (রাহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ) -কে জিজ্ঞেস করি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সওম পালন করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি জিজ্ঞেস করি , মাসের কোন্ কোন্ দিনে সওম রাখতেন? তিনি বললেন, তিনি নির্দিধায় যে কোন তিন দিন সওম রাখতেন।

【72】

সওম পালনের নিয়্যাত সম্পর্কে

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী হাফসাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ফাজরের পূর্বে সওমের নিয়্যাত করেনি তার সওম হয়নি।

【73】

এ ব্যাপারে অনুমতি প্রসঙ্গে

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে এসে বলতেনঃ তোমাদের কাছে কোন খাবার আছে কি? আমরা না বললে তিনি বলতেনঃ আমি সওম রাখলাম। একদিন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে আগমন করলে আমরা বলি, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেকে কিছু ‘হাইস’’ হাদিয়া দেয়া হয়েছে। আমরা তা আপনার জন্য রেখে দিয়েছি। তিনি বললেনঃ তা আমার কাছে নিয়ে এসো। অথচ তিনি সওম অবস্থায় ভোর করেছেন, পরে তা খেয়ে ইফতার করলেন। উম্মু হানী (রাঃ) তিনি বলেন, মাক্কাহ বিজয়ের দিন ফাত্বিমাহ (রাঃ) এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাম পাশে বসলেন আর উম্মু হানী (রাঃ) বসলেন তাঁর ডান পাশে। বর্ণনাকারী বলেন, এক দাসী এক পাত্র পানীয় এনে তাঁকে দিলে তিনি তা থেকে কিছু পান করার পর উম্মু হানীর দিকে পাত্রটি এগিয়ে দিলেন এবং তিনি তা থেকে পান করলেন। উম্মু হানী (রাঃ) বললেন হে আল্লাহর রাসূল! আমি যে এখন ইফতার করলাম, আমি তো সওম রেখেছিলাম! তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি এগুলো ক্বাযা করতে চাও? তিনি বললেন, না। তিনি বললেনঃ যদি তা নফল (সওম) হয় তাহলে কোন ক্ষতি নেই।

【74】

যিনি বলেন, নফল সওম ভঙ্গ করলে এর ক্বাযা করতে হবে

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমাকে ও হাফসাহ (রাঃ) -কে কিছু খাবার উপঢৌকন দেয়া হয়। তখন আমরা দু’জনেই সওম অবস্থায় ছিলাম। আমরা সওম ভাঙ্গলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এলে আমরা তাঁকে বললাম হে, আল্লাহর রসূল! আমাদেরকে হাদিয়া দেয়া হয়েছিল। আমাদের তা খেতে ইচ্ছে হওয়ায় আমরা তা খেয়ে সওম ভেঙ্গে ফেলি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন অসুবিধা নেই, তবে এর পরিবর্তে অন্য দিন সওম রেখে নিবে। [২৪৫৭] দুর্বলঃ যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (১১৮/৭৩৮) পরবর্তী দিন শব্দে, যঈফ আল-জামি‘উস সাগীর (৬৩০৩), মিশকাত (২০৮০)।

【75】

স্বামীর অনুমতি ছাড়া স্ত্রীর নফল সওম রাখা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্বামীর উপস্থিতিতে তার সম্মতি ছাড়া স্ত্রী রমাযান মাসের সওম ব্যতীত নফল সওম রাখবে না এবং তার উপস্থিতিতে তার সম্মতি ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তিকে তার ঘরে আসার অনুমতি দিবে না। আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় তার কাছে এক মহিলা এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমার স্বামী সাফওয়ান ইবনু মু‘আত্তাল যখন আমি সলাত আদায় করি তখন আমাকে প্রহার করে। আমি সওম রাখলে সে আমাকে সওম ভঙ্গ করায় এবং সূর্য উঠার পূর্বে সে ফাজরের সলাত আদায় করে না। বর্ণনাকারী বলেন, সেখানে সাফওয়ানও উপস্থিত ছিলেন। তার স্ত্রী তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করেছে সে সম্পর্কে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! তার অভিযোগ হলো, ‘আমি যখন সলাত আদায় করি সে আমাকে প্রহার করে’, কারণ হচ্ছে, সে এমন দু’টি দীর্ঘ সূরাহ দিয়ে সলাত আদায় করে যা পাঠ করতে আমি তাকে নিষেধ করি। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি বললেনঃ (ফাতিহার পর) সংক্ষিপ্ত একটি সূরাহই লোকদের জন্য যথেষ্ঠ। তার অভিযোগ, ‘আমাকে সওম ভাঙ্গতে বাধ্য করে’, ব্যাপার এই যে, সে প্রায়ই সওম রাখে। আমি একজন যুবক, ধৈর্যধারণ করতে পারিনা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দিনই বললেনঃ কোন নারী তার স্বামীর অনুমতি ছাড়া (নাফল) সওম রাখবে না। এবং তার অভিযোগ, ‘সূর্য উঠার পূর্বে আমি (ফাজরের) সলাত আদায় করি না’, কারণ হলো, আমার পরিবারের লোকেরা সর্বদা কাজে (পানি সরবরাহে) ব্যস্ত থাকে। ফলে সূর্য উঠার আগে আমরা ঘুম থেকে জাগতে পারি না। তার কথা শুনে তিনি বললেনঃ যখনই তুমি জাগ্রত হবে তখনই সলাত আদায় করে নিবে।

【76】

সওম পালনকারীকে বিবাহভোজের দাওয়াত দিলে

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কাউকে খাওয়ার দাওয়াত দেয়া হলে সে যেন তাতে যোগদান করে। সে রোযাহীন হলে যেন খাবার খায়, আর সওম রেখে থাকলে যেন দাওয়াতকারীর জন্য দু‘আ করে। হিশাম (রহঃ) বলেন, এখানে ‘সলাত’ অর্থ দু‘আ।

【77】

খাবার খেতে ডাকলে সওম পালনকারী যা বলবে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কোন (সওম পালনকারী) ব্যক্তিকে খাবার দাওয়াত দেয়া হলে সে যেন বলে, নিশ্চয়ই আমি রোযাদার।

【78】

ই‘তিকাফ

‘আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযান মাসের শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন যতদিন না আল্লাহ তাঁকে মৃত্যুদান করেন। এরপর তাঁর স্ত্রীগণও (ই‘তিকাফ করেন)। উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযান মাসের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন। এক বছর তিনি ই‘তিকাফ করতে না পারায় পরবর্তী বছর বিশ দিন ই‘তিকাফ করেছেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই‘তিকাফের ইচ্ছা করলে ফজরের সলাত আদায়ের পর তাঁর ই‘তিকাফের স্থানে প্রবেশ করতেন। তিনি বলেন, একবার তিনি রমাযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফের ইচ্ছা করলেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তিনি একটি তাঁবু খাটানোর নির্দেশ দিলে তা খাটানো হয়। এরপর তা দেখে আমিও আমার জন্য একটি তাঁবু খাটানোর নির্দেশ দিলে তা খাটানো হয়। তিনি বলেন, আমি ছাড়া নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্যান্য স্ত্রীরাও অনুরূপ তাঁবু খাটানোর নির্দেশ দিলে তাদের জন্যও তা খাটানো হয়। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজর সলাতের পর তাবুঁগুলোর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ এগুলো কি? এটা এমন কি ভালো কাজ যা তোমরা করতে চাইছো? ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তিনি নির্দেশ দিলে তাঁর তাঁবু ভেঙ্গে ফেলা হলো। স্ত্রীগণও নির্দেশ দিলে তাঁদের তাঁবুগুলোও ভেঙ্গে ফেলা হলো। অতঃপর তিনি শাওয়াল মাসের প্রথম দশক পর্যন্ত ই‘তিকাফ পিছিয়ে দেন। ইমামা আবু দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস ইবনু ইসহাক্ব ও আল-আওযাঈ (রহঃ) ইয়াহিয়া ইবনু সাঈদ (রহঃ) সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইমাম মালিক (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ সূত্রে বর্ণনা করে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শাওয়াল মাসে বিশ দিন ই‘তিকাফ করেছেন।

【79】

ই‘তিকাফ কোথায় করবে?

ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযান মাসের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন। নাফি‘ (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদের যে স্থানে ই‘তিকাফ করতেন ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) ঐ স্থানটি আমাকে দেখিয়েছেন। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি রমাযানে দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। কিন্তু যে বছর তিনি মৃত্যুবরণ করেন সে বছর বিশ দিন ই‘তিকাফ করেছেন।

【80】

ই‘তিকাফকারী প্রয়োজনে (মাসজিদ থেকে বেরিয়ে) ঘরে প্রবেশ করতে পারে

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই‘তিকাফরত অবস্থায় স্বীয় মাথা আমার নিকটবর্তী করতেন। আর আমি তাঁর মাথা আঁচড়িয়ে দিতাম এবং তিনি মানবীয় প্রয়োজন ছাড়া ঘরে প্রবেশ করতেন না। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এই সনদে পূর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইউনুস (রহঃ) যুহরী হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তবে ‘উরওয়াহ ও ‘আমরাহর বর্ণনার উপর কেউই ইমাম মালিকের অনুসরণ করেননি এবং মা‘মার, যিয়াদ ইবনু সা‘দ প্রমুখ যুহরীর মাধ্যমে ‘উরওয়াহ হতে ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। [২৪৬৮] আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে ই‘তিকাফরত অবস্থায় তাঁর ঘরের ফাঁক দিয়ে তাঁর মাথা আমার দিকে এগিয়ে দিতেন। আমি হায়িয অবস্থায় তাঁর মাথা ধুয়ে দিতাম এবং চিরুনী করে দিতাম। সাফিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই‘তিকাফরত ছিলেন। এক রাতে আমি তাঁর সাথে দেখা করতে যাই। তাঁর সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর আমি ঘরে প্রত্যাবর্তনের উদ্দেশ্যে দাঁড়ালে তিনিও আমাকে এগিয়ে দিতে উঠলেন। তার (সাফিয়্যাহর) বাসস্থান ছিলো উসামাহ ইবনু যায়িদের ঘরের সাথে। দু’জন আনসারী ব্যক্তি ঐ পথ অতিক্রমকালে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখতে পেয়ে দ্রুত চলে যেতে লাগলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা স্বাভাবিক গতিতে হাঁটো। এ মহিলাটি হচ্ছেন হুয়াইর কন্যা সাফিয়্যাহ। তারা উভয়ে বললেন, সুবহানাল্লাহ, হে আল্লাহ রসূল। তিনি বললেনঃ শয়তান রক্তপ্রবাহের ন্যায় মানুষের শিরায়-উপশিরায় প্রবেশ করে। আমার আশঙ্কা হলো, সে তোমাদের মনে কুধারণা বা খারাপ কিছুর উদ্রেক করতে পারে। আয-যুহরী (রহঃ) এই সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। সাফিয়্যাহ (রাঃ) বলেন, তিনি যখন উম্মু সালামাহ (রাঃ) এর দরজার নিকটস্থ মাসজিদের দরজা পর্যন্ত পৌছলেন তখন তাঁদের পাশ দিয়ে দু’জন লোক অতিক্রম করলো। অতঃপর বর্ণনাকারী উপরোক্ত হাদীসটির অর্থে বর্ণনা করেন।

【81】

ই‘তিকাফকারীর রোগী দেখতে যাওয়া

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই‘তিকাফরত অবস্থায় রোগীর কাছে যেতেন এবং তাকে দেখেই চলে যেতেন, সেখানে (অবস্থান করে) তাকে কিছু জিজ্ঞেস করতেন না। ইবনু ঈসার (রহঃ) বর্ণনায় রয়েছেঃ ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই‘তিকাফ অবস্থায় রোগী দেখতে যেতেন। [২৪৭২] দুর্বলঃ মিশকাত (২১০৫)। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, ই‘তিকাফকারীর জন্য সুন্নাত হলোঃ সে কোন রোগী দেখতে যাবে না, জানাযায় অংশগ্রহণ করবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না, তার সাথে সহবাস করবে না এবং অধিক প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাবে না, সওম না রেখে ই‘তিকাফ করবে না এবং জামে মাসজিদে ই‘তিকাফ করবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘উল্লিখিত বিষয়গুলোকে ‘আয়িশাহ (রাঃ) সুন্নাত বলেছেন’ এ কথাটি ‘আবদুর রহমান ইবনু ইসহাক্ব ব্যতীত অন্য কেউ বলেননি। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, তিনি একে ‘আয়িশাহ (রাঃ) এর উক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘উমার (রাঃ) জাহিলী যুগে মানত করেছিলেন যে, তিনি এক রাত বা এক দিন কা‘বা ঘরের চত্বরে ই‘তিকাফ করবেন। তিনি এ বিষয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ ই‘তিকাফ করো এবং সওম পালন করো। সহীহঃ তবে “অথবা একদিন” এবং “সওম পালন করো” - এ কথাটুকু বাদে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু বুদাইল (রহঃ) উক্ত সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। একদা ‘উমার (রাঃ) ই‘তিকাফরত অবস্থায় মাসজিদের বাইরে লোকদের তাকবীর ধ্বনি শুনে জিজ্ঞেস করলেন, হে ‘আব্দুল্লাহ! এটা কিসের শব্দ? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাওয়াযিন গোত্রের বন্দীদের মুক্ত করে দিয়েছেন। তিনি বললেন, তুমি এ দাসীটিকেও (মুক্ত করে) তাদের সাথে পাঠিয়ে দাও।

【82】

মুস্তাহাযা মহিলার ই‘তিকাফ

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তাঁর কোন এক স্ত্রী ই‘তিকাফ করেছিলেন। তাঁর স্রাবের রক্তের রং হলুদ ও লাল দেখা যেতো। আর আমরা কখনো তার (দু’ পায়ের মাঝে) একটি পাত্র রেখে দিতাম। এ অবস্থায় তিনি সলাত আদায় করতেন।