15. জিহাদ

【1】

হিজরাত প্রসঙ্গে

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) জনৈক গ্রাম্যলোক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে হিজরাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃহায়! হিজরাতের বিষয়টি খুবই কঠিন। তোমার উট আছে কি? সে বললো হাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন: তুমি কি এর সদাক্বাহ দিয়ে থাকো? সে বললো, হাঁ। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতুমি নদীর ওপারে থেকে আমল করে যাও। আল্লাহ তোমার আমলের নেকী কিছুই কমাবেন না। আল-মিক্বদাম ইবনু শুরাইহ (রঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, আমি "আয়িশাহ (রাঃ) কে ইবাদাতের উদ্দেশে নির্জনবাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্জনবাসের জন্য এ টিলাভূমিতে যেতেন। তিনি একবার নির্জনবাসে যাওয়ার ইচ্ছা করেন এবং আমার কাছে সদাক্বাহ্‌র একটি আনাড়ী উট পাঠিয়ে দেন। তিনি বললেনঃহে 'আশিয়াহ! সদয় হও। কেননা সহানুভূতি কোন জিনিষের সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে। আর সহানুভূতি উঠে গেলে তা ত্রুটিযুক্ত হয়।

【2】

হিজরাত কি শেষ?

মু'আবিয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: তাওবাহ্‌র দরজা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত হিজরাত শেষ হবে না। আর তাওবাহ্‌র দরজা বন্ধ হবে না যতক্ষণ পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত না হয়। ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের দিন বলেছেন: আর হিজরাত নেই। কিন্তু জিহাদ ও নিয়্যাত থাকবে। এরপর তোমাদের জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়ার নির্দেশ দেয়া হলে তোমরা বেরিয়ে পড়বে। 'আমির (র:) একদা 'আব্দুল্লাহ ইবনু 'আমর (রাঃ) এর কাছে একটি লোক এলো। তখন কতিপয় লোক সেখানে উপস্থিত ছিল। লোকটি তার নিকটে বসে বললো, আপনি আমাকে এমন কিছু অবহিত করুন যা আপনি সরাসরি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন। তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শূনেছি : সে-ই প্রকৃত মুসলিম যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট হতে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর ঐ ব্যক্তি প্রকৃত মুহাজির যে আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ পরিত্যাগ করে।

【3】

সিরিয়ায় বসবাস সম্পর্কে

'আবদুল্লাহ ইবনু 'আমর (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: (মদিনায়) হিজরাতের পর আরেকটি হিজরাত হবে (সিরিয়াতে)। পৃথিবীবাসীর যারা এ সময় ইবরাহীম (আঃ) এর হিজরাতের স্থানে (সিরিয়াতে) একত্রিত হবে তারাই হবে উত্তম। ঐ সময় দুনিয়ার খারাপ লোকেরাই অন্যান্য এলাকায় অবশিষ্ট থাকবে। তাদের আবাসস্থল তাদেরকে স্থানান্তরে নিক্ষেপ করবে। আল্লাহ তাদেরকে মন্দ জানেন। আগুন তাদেরকে বাঁদর ও শূকরের সাথে সমবেত করবে। দুর্বল : যঈফ আল-জামি'উস সাগীর (৩২৫৯)। ইবনু হাওয়ালা (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: শিঘ্রই ইসলামের ব্যপক প্রসার ঘটবে যখন জিহাদের জন্য তিনটি সেনাদল গঠিত হবে, সিরিয়ার সেনাবাহিনী, ইয়ামানের সেনাবাহিনী এবং ইরাকের সেনাবাহিনী। ইবনু হাওয়ালা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সেই যুগ পেলে আমার জন্য কোন দলের সঙ্গী হওয়া মঙ্গলজনক মনে করেণ? তিনি বললেনঃতুমি অবশ্যই সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগ দিবে। কেননা তখন এ এলাকাটাই আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম গণ্য হবে। আল্লাহ তার সৎকর্মশীল বান্দাদের এখানে একত্র করবেন। আর তুমি সিরিয়া যেতে রাজী না হলে অবশ্যই ইয়ামানী সেনাবাহিনীর সঙ্গী হবে। তোমাদের নিজেদের এবং তোমাদের কূপগুলো হতে পানি উত্তোলন করো। কেননা মহান আল্লাহ আমার ওয়াসিলায় সিরিয়া ও এর অধিবাসীদের ভরণ পোষনের দায়িত্ব নিয়েছেন।

【4】

জিহাদ অব্যাহত থাকবে

'ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের একটি দল সর্বদা সত্যের পক্ষে জিহাদ করতে থাকবে এবং তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হবে। অবশেষে তাদের সর্বশেষ দলটি ঈসা (আঃ) এর নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে।

【5】

জিহাদের সওয়াব

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হলো: কোন ধরণের মুমিন পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী? তিনি বললেনঃযে ব্যক্তি নিজের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে এবং ঐ ব্যক্তি যে নিজের অনিষ্ট হতে লোকদের নিরাপদ থাকার জন্য কোন নির্জন গুহায় আল্লাহর ইবাদাতে লিপ্ত থাকে।

【6】

বনবাসী জীবন নিষেধ

আবূ উমামাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সন্ন্যাসী জীবন অবলম্বনের অনুমতি দিন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃআমার উম্মাতের সন্ন্যাসবাদ হল মহান আল্লাহর পথে জিহাদ করা।

【7】

জিহাদ শেষে প্রত্যাবর্তনের ফাযীলত

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যুদ্ধ থেকে ফেরা যুদ্ধে যোগদানের মতই নেকীর কাজ।

【8】

অন্যান্য জাতির তুলনায় রোমবাসীদের বিরুদ্ধে জিহাদের মর্যাদা

‘আবদুল খাবীর ইবনু সাবিত ইবনু ক্বায়িস ইবনু শাম্মাস (রহঃ) হতে তার পিতা ও দাদা তিনি (তার দাদা) বলেন, একদা উম্মু খাল্লাদ নামক এক মহিলা মুখমন্ডল আবৃত অবস্থায় তার নিহত পুত্রের কথা জিজ্ঞেস করতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কতিপয় সাহাবী মহিলাকে বললেন, তুমি মুখমন্ডল আবৃত অবস্থায় তোমার ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতে এসেছো। তিনি বললেন, যদিও আমার ছেলেকে হারিয়েছি, কিন্তু আমার লজ্জা-শরম তো হারাইনি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার ছেলের জন্য দু’জন শহীদের সমান সওয়াব রয়েছে। উম্মু খাল্লাদ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তা কিসের জন্য? তিনি বললেনঃ কারণ তাকে আহলে কিতব হত্যা করেছে।

【9】

জিহাদের জন্য সমুদ্রযাত্রা

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ হাজ্জ, ‘উমরাহ অথবা আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশ্য ছাড়া যেন সমুদ্রযাত্রা না করে। কারণ সমুদ্রের নীচে আগুন আছে এবং আগুনের নীচে আছে সমুদ্র। দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৬৩৪৩), সিলসিলাতুল আহাদীসিয যঈফাহ ওয়াল মাওযু’আহ (৪৭৮), ইরওয়া (৯৯১)।

【10】

সমুদ্র জিহাদের ফাযীলত

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মু সুলাইমের বোন উম্মু হারাম বিনতু মিলকান (রাঃ) (অর্থাৎ আমার খালা) আমার কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকট দুপুরে বিশ্রাম নিলেন। অতঃপর তিনি হাসতে হাসতে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। উম্মু হারাম (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার হাসির কারণ কি? তিনি বললেনঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম, (আমার উম্মাতের) কিছু লোক এই সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে। যেন তারা রাজার মত সিংহাসনে বসে আছে। উম্মু হারাম বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করুন, যেন আমি তাদের দলভুক্ত হই। তিনি বললেনঃ তুমি তাদের দলভুক্ত হবে। উম্মু হারাম বলেন, তিনি আবারো ঘুমালেন এবং হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি হাসলেন কেন? তিনি আবারো একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য দু’আ করুন, যেন আল্লাহ আমাকে তাদের দলভুক্ত করেন। তিনি বললেনঃ তুমি তাদের প্রথম দলে থাকবে। আনাস (রাঃ) বলেন, পরবর্তীতে ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) তাকে বিবাহ করেন। অতঃপর তিনি নৌ-যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং উম্মু হারামকেও সাথে নেন। যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তনকালে উম্মু হারামকে একটি খচ্চর বাহন হিসাবে দেয়া হয়। খচ্চরটিতে আরোহণ করলে সেটা তাকে পিঠ থেকে ফেলে দেয়ায় তার ঘাড় ভেঙ্গে যায়, ফলে তিনি মারা যান। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) যখনই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুবা নামক পল্লীতে যেতেন, তিনি উম্মু হারাম বিনতু মিলহানের (রাঃ) বাড়িতে উঠতেন। তিনি ‘উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) এর স্ত্রী ছিলেন। একদা তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু হারামের বাড়িতে গেলে তিনি তাঁকে আহার করান এবং তার মাথায় উঁকুন বেছে দিতে বসেন। হাদীসের বাকী অংশ পূর্বের হাদীসের অনুরূপ। উম্মু সুলাইমের (রাঃ) বোন রুমাইসা তিনি বলেন, একবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমালেন এবং হাসতে হাসতে ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। তখন তিনি (উম্মু হারাম) নিজের মাথা ধৌত করছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে মাথা ধৌত করতে দেখে হাসছেন? তিনি বললেনঃ না। অতঃপর হাদীসের বাকী অংশ কিছুটা কম-বেশিসহ পূর্বের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। উম্মু হারাম (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সমুদ্রে সফরকারী সৈনিকের নৌযানের ঝাঁকুনিতে বমি হলে তার জন্য একজন শহীদের সওয়াব রয়েছে এবং সমুদ্রে ডুবে যাওয়া ব্যক্তির জন্য রয়েছে দু’জন শহীদের সওয়াব। আবূ উমামাহ আল-বাহিলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তিন প্রকার লোকের প্রত্যেকেই মহান আল্লাহর দায়িত্বে থাকে। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য বের হয়, তার মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহ তার দায়িত্বশীল। অতঃপর আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন কিংবা তাকে নিরাপদে তার নেকী ও গনীমাতসহ তার বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন। দ্বিতীয়ত, যে ব্যক্তি আগ্রহ সহকারে মসজিদে যায়, আল্লাহ তার দায়িত্বশীল। এমনকি তার মৃত্যুর পর আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন কিংবা তাকে নিরাপদে তার নেকী ও গনীমাতসহ তার বাড়িতে ফিরিয়ে আনবেন। তৃতীয়ত, যে ব্যক্তি নিজ পরিবার-পরিজনের সাথে মিলিত হয়ে সালাম বিনিময় করে, আল্লাহ তার জিম্মাদার।

【11】

কাফিরকে হত্যাকারীর মর্যাদা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন কাফির ও তার হত্যাকারী (মুসলিম) কখনও জাহান্নামে একত্র হবে না।

【12】

মুজাহিদ পরিবারের নারীদের সতীত্ব রক্ষা করা

ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি (বুরাইদাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বসে থাকা লোকদের উপর মুজাহিদগনের স্ত্রীদের সতীত্ব রক্ষা করা তাদের মায়েদের সম্ভ্রম হিফাযাত করার সমতুল্য। মুজাহিদগনের পরিবারের তত্বাবধানকারী বসে থাকা লোকদেরকে কিয়ামাতের দিন মুজাহিদ ব্যক্তির সামনে দাঁড় করানো হবে। তাকে বলা হবে, এ ব্যক্তি তোমার অনুপস্থিতিতে (খিয়ানাতের সাথে) তোমার পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করেছে। এখন তুমি তার নেক আমল থেকে যা ইচ্ছা নিয়ে নাও। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেনঃ কাজেই তোমাদের ধারণা কেমন?

【13】

গনীমাত ছাড়া মুজাহিদ বাহিনী প্রত্যাবর্তন করলে

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন যোদ্ধাদল আল্লাহর পথে জিহাদ করে গনীমাত লাভ করলে তারা তাদের পুরস্কারের দুই-তৃতীয়াংশ পেয়ে গেলো এবং একভাগ অবশিষ্ট রইলো আখিরাতের জন্য। আর যদি তারা গনীমাত না পায় তাহলে তাদের সম্পূর্ণ পুরস্কার আখিরাতে দেয়া হবে।

【14】

আল্লাহর পথে যিকরের সওয়াব বৃদ্ধি হওয়া সম্পর্কে

সাহল ইবনু মু’আয (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সলাত, সাওম ও যিক্‌র মহান আল্লাহর পথে খরচের তুলনায় নেকীর দিক দিয়ে সাত শত গুণ মর্যাদা রাখে। দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (১৪৯৩)।

【15】

যে যুদ্ধে গিয়ে নিহত হয়

আবূ মালিক আল-আশ’আরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কেউ মহান আলাহর পথে (জিহাদের উদ্দেশ্যে) বের হয়ে মারা গেলে কিংবা নিহত হলে সে শহীদের মর্যাদা লাভ করে। ঘোড়া বা উট তাকে পায়ের তলায় পিষ্ট করলে কিংবা বিষধর প্রাণী তাকে দংশন করলে বা আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী বিছানায় মৃত্যুবরণ করলেও সে শহীদের মর্যাদা পায় এবং তার জন্য জান্নাত নির্ধারিত হয়ে যায়। দুর্বলঃ মিশকাত (৩৮৪০)।

【16】

সীমান্ত পাহাড়া দেয়ার ফাযীলত

ফাদালাহ ইবনু ‘উবাইদ (রাঃ) সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ প্রত্যেক ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে সাথে তার আমল শেষ হয়ে যায়, কিন্তু সীমান্ত প্রহরার সওয়াব বন্ধ হয় না। কিয়ামাত পর্যন্ত তার আমলের সওয়াব বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং সে ক্ববরের যাবতীয় ফিত্বনাহ থেকে নিরাপদ থাকবে।

【17】

মহান আল্লাহর পথে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রহরা দেয়ার ফাযীলাত

সাহল ইবনুল হানযালিয়া (রাঃ) তারা (সাহাবীগণ) রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে হুনাইনের যুদ্ধের উদ্দেশ্যে সফরে বের হন। রাত আসা পর্যন্ত তার একে অপরের অনুসরন করে চলতে থাকেন। পথিমধ্যে রাসূলুলাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সলাতের সময় উপস্থিত হওয়ার কথা জানানো হলো। এমন সময় একজন অশ্বারোহী এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাদের কাছে থেকে পৃথক হয়ে অমুক অমুক পাহাড়ে উঠে দেখতে পেলাম যে, হাওয়াযিন গোত্রের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই তাদের উট, বকরী সবকিছু নিয়ে হুনাইনে একত্র করেছে, একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেসে বললেনঃ ইনশাআল্লাহ আগামীকাল এসব কিছুই মুসলিমদের গনীমাতের বস্তু হবে। অতঃপর তিনি বললেনঃ আজ রাতে কে আমাদের পাহাড়া দিবে? আনাস ইবনু আবূ মারসাদ আল-গানাবী (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি। তিনি বললেনঃ তাহলে ঘোড়ায় চড়ো। তিনি তার একটি ঘোড়ায় চড়ে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি এ গিরিপথের দিকে খেয়াল করবে এবং এর শেষ চূড়ায় গিয়ে পাহারা দিবে। সাবধান! আমরা যেন তোমার অসর্তকতার কারণে ধোঁকায় না পড়ি। অতঃপর ভোর হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতের জন্য বেরিয়ে এসে দু’ রাক’আত (সুন্নাত) সলাত আদায় করে বললেনঃ তোমাদের অশ্বারোহীর কি খবর? সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তার কোন খবর অবহিত নই। অতঃপর সলাতের ইক্বামাত দেয়া হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাত পড়ালেন এবং গিরিপথের দিকে তাকাতে থাকলেন। সলাত শেষে সালাম ফিরিয়ে তিনি বললেনঃ তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, তোমাদের অশ্বারোহী এসে গেছে। সাহাবীগণ বললেন, আমরা গাছের ফাঁক দিয়ে গিরিপথের দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি আসতেছেন। এমনকি তিনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে এসে তাঁকে সালাম দিয়ে বললো, আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ অনুযায়ী গিরিপথের শেষ প্রান্তে গিয়েছি এবং ভোর বেলায় উভয় পাহাড়ের চূড়ায় উঠেছি, কিন্তু কোন (শত্রুকেই) দেখতে পাইনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি কি রাতে ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমেছিলে? তিনি বললেন, সলাত ও প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া নামিনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি তোমার জন্য (জান্নাত) অবধারিত করেছো, এরপর তোমার কোন (অতিরিক্ত) নেক কাজ না করলেও চলবে।

【18】

যুদ্ধ পরিহার করা অপছন্দনীয়

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় মারা গেলো যে, সে জিহাদ করেনি এবং মনে জিহাদের আকাঙ্খাও রাখেনি, তবে সে মুনাফিক্বী অবস্থায় মারা গেলো। আবূ উমামাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে নিজে জিহাদ করেনি যা কোন মুজাহিদকে জিহাদের সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে দেয়নি অথবা মুজাহিদ পরিবারের উপকারও করেনি, আল্লাহ ক্বিয়ামাতের পূর্বে তাকে কঠিন বিপদে ফেলবেন। আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে নিজেদের সম্পদ, জীবন ও কথার দ্বারা জিহাদ করো।

【19】

কতিপয় লোকের যুদ্ধে অংশ গ্রহনের মাধ্যমে সার্বজনীন অংশগ্রহনের নির্দেশ রহিত

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, (মহান আল্লাহর বাণী): “তোমরা যুদ্ধের জন্য বের না হলে তিনি তোমাদেরকে পীড়াদায়ক শাস্তি দিবেন... (সূরাহ আত-তাওবাহঃ আয়াত ৩৯)। “মাদীনাহ্‌র অধিবাসী... তারা যা করে” পর্যন্ত (সূরাহ আত-তাওবাহঃ ১২০-১২১)। উল্লেখিত আয়াতগুলোর হুকুম নিম্নের আয়াত দ্বারা মানসুখ হয়েছেঃ “সকল মুমিনের একসঙ্গে বের হওয়া জরুরী নয়... (সূরাহ আত-তাওবাহঃ ১২২)। সহীহ। এটি নিকাহ অধ্যায়ের প্রথম দিকে গত হয়েছে। নাজাদা ইবনু নুফাই’ (রহঃ) আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-কে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলামঃ “তোমরা যুদ্ধের জন্য বের না হলে তিনি তোমাদেরকে পীড়াদায়ক শাস্তি দিবেন... (সূরাহ আত-তাওবাহঃ আয়াত ৩৯)। তিনি বললেন, (যারা যুদ্ধে যায়নি) তাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ রাখা হয়েছিল। আর এটাই ছিল তাদের শাস্তি (অর্থাৎ দুর্ভিক্ষ)।

【20】

গ্রহণযোগ্য ওযর থাকলে জিহাদে অংশগ্রহণ না করার অনুমতি

যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহর(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাশে ছিলাম। এমতাবস্থায় প্রশান্তি ও নীরবতা তাঁকে আচ্ছন্ন করলো। রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঊরু আমার ঊরুর উপর পড়লো। আমি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঊরুর চাইতে অধিক ভারি কোন জিনিস অনুভব করিনি। অতঃপর ওয়াহীর প্রভাব কেটে গেলে তিনি বল্‌লেন: লিখ! কাজেই আমি (ছাগলের) কাঁধের (চামড়ার) উপর লিখলাম, “মুমিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে, তারা সম্মানের দিক দিয়ে মু্জাহিদগণের সমান নয়।”(সূরাহ আন-নিসা : আয়াত ৯৫)। ইবনু উম্মু মাকতুম (রাঃ) মুজাহিদদের মর্যাদার কথা শুনে দাঁড়ালেন। তিনি ছিলেন জন্মান্ধ। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! মুমিনদের মধ্যে যারা জিহাদ করতে অক্ষম তাদের অবস্থা কি হবে? তিনি কথা শেষ করার পর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (ওহী অবতীর্ণের কারণে) প্রশান্তি ও নীরবতা আচ্ছন্ন করে ফেললো। তাঁর ঊরু আমার ঊরুর উপর পতিত হলো। আমি প্রথমবারের মতই দ্বিতীয়বার অনুরূপ ভারি অনুভব করলাম। অতঃপর রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপর থেকে ওয়াহীর প্রভাব কেটে গেলে তিনি বললেনঃহে যায়িদ! পড়ো। আমি পড়লাম, “মুমিনদের মধ্যে যারা ঘরে বসে থাকে, তারা সম্মানের দিক দিয়ে মুজাহিদগণের সমান নয়”। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “অক্ষমতার ওজর ছাড়াই.....” পুরো আয়াত বলেন। যায়িদ (রাঃ) বলেন, দ্বিতীয়বার মহান আল্লাহ আলাদাভাবে এ অংশটুকু অবতীর্ণ করলেন। আমি নির্দিষ্ট জায়গাতে এটি সংযোজন করে দিলাম। ঐ সত্ত্বার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! হাড়ের ফাটা স্থানে উল্লেখিত অংশটুকু সংযোজন করার দৃশ্য এখনো আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। মূসা ইবনু আনাস ইবনু মালিক (রঃ) হতে তার পিতা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা (যুদ্ধে আসার সময়) মাদীনাহ হতে কিছু লোক রেখে এসেছো। তোমরা যে স্থানই সফর করেছো, যা কিছুই ব্যয় করেছো এবং যে কোনো প্রান্তর অতিক্রম করেছো, তারা তোমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তারা কিভাবে আমাদের সাথে আছেন, অথচ তারা তো মাদীনাহ্‌তেই অবস্থান করছেন! তিনি বললেনঃঅক্ষমতা তাদেরকে আটকে রেখেছে।

【21】

যে কাজে জিহাদের সওয়াব রয়েছে

যায়িদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি কোন মুজাহিদকে আল্লাহর পথে জিহাদের সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে দিলো, সেও যেন জিহাদ করলো। আর যে ব্যক্তি মঙ্গলের সাথে কোন মুজাহিদ পরিবারের দেখাশুনা করলো সেও যেন জিহাদ করলো। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (একদল সাহাবীকে) লিহ্‌য়ান গোত্রের বিরুদ্ধে পাঠানোর সময় বলেছিলেন: প্রত্যেক পরিবারের প্রতি দুইজনের মধ্যে একজন জিহাদে যোগ দিবে। অতঃপর তিনি পিছনে থেকে যাওয়া লোকদের উদ্দেশ্যে বললেনঃ তোমাদের যে ব্যক্তি বাইরে যাওয়া ব্যক্তির পরিবার ও সম্পদের কল্যাণকর হিফাযাত করবে তার জন্য জিহাদে গমনকারীর অর্ধেক সওয়াব।

【22】

বীরত্ব ও কাপুরুষতা প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তির চরিত্রে কৃপণতা, ভীরুতা ও হীনমানসিকতা রয়েছে সে খুবই নিকৃষ্ট।

【23】

মহান আল্লাহর বাণী : তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না

আবূ ‘ইমরান আসলাম ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা মাদীনাহ হতে কনস্টান্টিনোপলে অভিমুখে বের হলাম। আমাদের সেনাপতি ছিলেন ‘আবদুর রহমান ইবনু খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ)। রোমের সৈন্যবাহিনী শহরের প্রাচীর-বেষ্টনীর বহির্ভাগ থেকে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত ছিল। জনৈক মুসলিম সৈনিক শত্রুবাহিনীর উপর হামলা করে বসলো। লোকেরা বললো, হায়, থামো! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। সে নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আবূ আইউব আল-আনসারী (রাঃ) বললেন, এ আয়াত আমাদের আনসার সম্প্রদায় সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছিলো। আল্লাহ যখন তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সাহায্য করলেন এবং দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করলেন, আমরা মনে মনে বললাম, এসো! এবার আমরা নিজেদের ধন-সম্পদ দেখাশুনা ও ঠিকঠাকে মনোযোগ দেই। মহান আল্লাহ তখন এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন : “তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না।“ (সূরাহ আল-বাক্বারাহ, আয়াত ১৯৫)। আমাদের নিজেদের হাতকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করার অর্থ হচ্ছে, ধন-সম্পদ নিয়েই ব্যস্ত থাকা, এর পরিবৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করা এবং জিহাদ ছেড়ে দেয়া। আবূ ‘ইমরান (রাঃ) বলেন, এরপর থেকে আবূ আইউব আল-আনসারী (রাঃ) সর্বদা আল্লাহর পথে জিহাদে শরীক হতেন, অবশেষে তিনি জিহাদ করতে করতে কুস্ত্তনতুনিয়াতে সমাহিত হন।

【24】

তীরন্দাজী সম্পর্কে

‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : একটি তীরের কারণে মহান আল্লাহ তিন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। তীর প্রস্তুতকারী, যদি সে জিহাদের নেক আশা প্রস্তুত করে, (যুদ্ধে) তীর নিক্ষেপকারী এবং যে ব্যক্তি তা নিক্ষেপের উপযোগী করে নিক্ষেপকারকে সরবরাহ করে। তোমরা তীরন্দাজী ও অশ্বারোহীর প্রশিক্ষণ নাও। তোমাদের অশ্বরোহীর প্রশিক্ষণের চাইতে তীরন্দাজীর প্রশিক্ষণ আমার নিকট অধিক প্রিয়। তিন ধরণের খেলাধুলা অনুমোদিত-কোন ব্যক্তির তার ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেয়া, নিজ স্ত্রীর সাথে খেলা-স্ফুর্তি করা এবং তীর ধনুকের প্রশিক্ষণ নেয়া। যে ব্যক্তি তীরন্দাজী শিখার পর অনাগ্রহবশত তা ছেড়ে দেয়, সে আল্লাহর দেয়া এক নি‘আমাত বর্জন করলো। অথবা তিনি বলেছেন: সে এই নি‘আমাতের অকৃতজ্ঞ হলো। দুর্বল: যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (২৭৭/১৭০৩), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৬১৮/২৮১১)। ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির আল-জু্হানী (রাঃ) তিনি বলেন আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বারের উপরে বলতে শুনেছি: “দুশমনের মুকাবিলার জন্য তোমরা যথাসাধ্য শক্তি অর্জন করো” (সুরাহ আন-আনফাল: আয়াত ৬০)। জেনে রাখ! এখানে শক্তির অর্থ হচ্ছে তীরন্দাজী (ক্ষেপনাস্ত্র),জেনে রাখ! এখানে শক্তির অর্থ হচ্ছে তীরন্দাজী (ক্ষেপনাস্ত্র), জেনে রাখ! এখানে শক্তির অর্থ হচ্ছে তীরন্দাজী (ক্ষেপনাস্ত্র)।

【25】

যে ব্যক্তি দুনিয়াবী স্বার্থে জিহাদ করে

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যুদ্ধ দুই প্রকার। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যুদ্ধ করে, ইমামের আনুগত্য করে, উত্তম জিনিস খরচ করে, সহকর্মীর সাথে কোমল ব্যবহার করে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাজ হতে বিরত থাকে, তার নিদ্রা ও জাগরণ সবকিছুই সওয়াবে পরিণত হয়। আর যে ব্যক্তি অহংকার, লোক দেখানো ও সুনামের জন্য যুদ্ধ করে, ইমামের অবাধ্য হয় এবং দুনিয়াতে বিপর্যয় সৃষ্টি করে, সে জিহাদের সামান্য সওয়াব নিয়েও বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করে না। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদের ইচ্ছা করেছে এবং সে এর দ্বারা পার্থিব সম্পদও অর্জন করতে চায়, (এ ব্যক্তির কি হবে?)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃসে কোন নেকী পাবে না। লোকেরা এতে অবাক হলো। তারা ঐ ব্যক্তিকে বললো, তুমি পুনরায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করে দেখো। মনে হয় তুমি তাঁকে বুঝিয়ে বলতে পারনি। সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদের ইচ্ছা করেছে এবং সে এর দ্বারা পার্থিব সম্পদও অর্জন করতে চায়। তিনি বললেনঃসে কোন নেকী পাবে না। লোকেরা বললো, তুমি বিষয়টি আবারো রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করো। লোকটি তৃতীয়বার তাঁকে জিজ্ঞেস করলো। তিনি বললেনঃসে কোন নেকী পাবে না।

【26】

যে লোক আল্লাহ্‌র কালেমাকে সমুন্নত করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে

আবূ মুসা (রাঃ) জনৈক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বলল, কোন ব্যক্তি নাম প্রচারের জন্য যুদ্ধ করে, এক ব্যক্তি প্রশংসা লাভের জন্য যুদ্ধ করে, কোন ব্যক্তি গনীমাত লাভের জন্য যুদ্ধ করে এবং কোন ব্যক্তি তার বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র কালেমাকে বুলন্দ করার জন্য যুদ্ধ করে কেবল সে-ই মহান আল্লাহ্‌র পথে জিহাদরত গণ্য হবে। ‘আমর ইবনু মুররাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ ওয়াইলের নিকট এমন একটি হাদিস শুনেছি, যা আমাকে হতবাক করেছে ... অতঃপর বাকি অংশ উপরের হাদিসের অনুরূপ। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমাকে জিহাদ ও যুদ্ধের সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলেনঃ হে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর! তুমি ধৈর্য ও নেকীর আশায় যুদ্ধ করলে আল্লাহ্ তোমাকে এ দুটি গুণে করে কিয়ামতের দিন উপস্থিত করবেন। আর যদি তুমি প্রদর্শন ইচ্ছা ও সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করো, তাহলে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তোমাকে রিয়াকারী ও সম্পদলোভী করে উপস্থিত করাবেন। হে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর! তুমি যে মানসিকতা নিয়ে যুদ্ধ করবে কিংবা নিহত হবে, আল্লাহ্‌ তোমাকে উক্ত অবস্থায়ই উত্থিত করবেন। দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৬৩৯৭), মিশকাত (৩৮৪৭)।

【27】

শহীদের মর্যাদা

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উহুদ যুদ্ধের দিন যখন তোমাদের ভাইয়েরা শহীদ হয়, মহান আল্লাহ্‌ তাদের রুহগুলোকে সবুজ রঙের পাখির মধ্যে স্থাপন করলেন। তারা জান্নাতের ঝর্ণা সমূহের উপর দিয়ে যাতায়াত করে, সেখানকার ফলমূল খায় এবং ‘আরশের ছায়ায় ঝুলানো সোনার ফানুসে বসবাস করে। তারা যখন নিজেদের মনঃপূত খাবার, পানীয় ও বাসস্থান পেলো, তখন বললো, কে আমাদের এ সংবাদ আমাদের ভাইদের নিকট পৌঁছে দিবে, আমরা জান্নাতে জীবিত আছি, এখানে আমাদেরকে নিয়মিত রিযিক দেয়া হচ্ছে! (এটা জানতে পারলে) তারা জিহাদে অমনোযোগী হবে না এবং যুদ্ধের ব্যাপারে অলসতা করবে না। অতঃপর মহান আল্লাহ্‌ বললেনঃ আমি তাদের নিকট তোমাদের এ সংবাদ পৌঁছে দিবো। বর্ণনাকারী বলেন, মহান আল্লাহ্‌ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ “যারা আল্লাহ্‌র পথে নিহত হয়েছে তোমারা তাদেরকে মৃত মনে করো না। প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত, তারা তাদের রবের নিকট নিয়মিত রিযিক পাচ্ছে”। (সূরাঃ আল-ইমরানঃ ১৬৯) হাসনাআ বিনতু মু’আবিয়াহ আস-সারীমিয়্যাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমার চাচা আমাদেরকে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন, একদা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করলাম কোন লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে? তিনি বললেন, নাবীগণ (আ) জান্নাতে প্রবেশ করবেন, শহীদগণ জান্নাতে প্রবেশ করবে, গর্ভের মৃত শিশু জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং জীবন্ত প্রথিত সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করবে।

【28】

শহীদের শাফা’আত সম্পর্কে

নিমরান ইবনু ‘উতবাহ আয-যামারী (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা কতক ইয়াতীম উম্মুদ দারদা (রাঃ) এর কাছে প্রবেশ করলাম। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহন করো। কেননা আমি আবূ দারদা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শহীদ তার পরিবারের সত্তর জনের জন্য শাফা’আত করবে এবং তার সুপারিশ কবুল করা হবে।

【29】

শহীদের কবরে নূর দৃষ্টিগোচর হওয়া

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন (বাদশা) নাজ্জাশী মারা যান, তখন আমরা বলাবলি করছিলাম যে, তার কবরের উপর সর্বদা নূর দেখা যাবে। ‘উবাইদ ইবনু খালিদ আস-সুলামী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ব্যক্তির মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করে দিলেন। তাদের একজন (যুদ্ধে) নিহত হন এবং অন্যজন তার পরে কোন এক জুম’আর দিন কিংবা তার কাছাকাছি কোন দিনে মারা যান। আমরা তার জানাযা আদায় করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা (দ্বিতীয় ব্যক্তির জন্য) কি দু’আ করেছো? আমরা বললাম, আমরা তার জন্য দু’আ করেছি এবং বলেছি, “হে আল্লাহ্‌! তাঁকে ক্ষমা করুন এবং তাঁকে তার সঙ্গীর সাথে মিলিত করুন”। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে প্রথম ব্যক্তির সালাতের পর দ্বিতীয় ব্যক্তির সালাত, প্রথম ব্যক্তির সওমের পর দ্বিতীয় ব্যক্তির সওম ও অন্যান্য আমল কোথায় যাবে? এ দুই ব্যক্তির (মর্যাদার) মধ্যে আসমান-যমীনের ব্যবধান। উল্লেখ্য, এতে সওমের কথা উল্লেখ হয়েছিল কিনা এ বিষয়ে বর্ণনাকারী শু’বাহ সন্দিহান।

【30】

মজুরীর বিনিময়ে যুদ্ধে শ্রমদান

আবূ আইউব আল-আনসারী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ অচিরেই বহু শহর তোমাদের অধীনস্থ হবে এবং সুসংগঠিত সৈন্যবাহিনী গঠন করা হবে। তোমরা তাতে সৈনিক নিয়োজিত হবে। সে সময় তোমাদের মধ্যকার কেউ কেউ (পারিশ্রমিক ছাড়া) উক্ত বাহিনীতে যোগ দিতে অপছন্দ করবে। সেজন্য সে দল থেকে কেটে পড়বে। অতঃপর সে বিভিন্ন গোত্রে গোত্রে গিয়ে তাদের কাছে নিজেকে সেনাদলে ভাড়ায় নেয়ার জন্য পেশ করে বলবে, কে আমাকে মজুরীর বিনিময়ে কাজে লাগাবে? কে আমাকে মজুরীর বিনিময়ে কাজে লাগাবে? জেনে রেখো! এ ব্যক্তি তার শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত ভাড়াটিয়া শ্রমিকই থাকবে (মুজাহিদের মর্যাদা লাভ করতে পারবে না)। দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৩২৫২), মিশকাত (৩৮৪৩)।

【31】

অর্থের বিনিময়ে সৈন্য বা যুদ্ধাস্ত্র গ্রহনের অনুমতি সম্পর্কে

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ গাজীর জন্য তার নির্ধারিত সওয়াব রয়েছে। আর যুদ্ধের সরঞ্জাম দানকারীর জন্য সওয়াব রয়েছে, অধিকন্তু সে গাজীর সমান সওয়াবও পাবে (অর্থাৎ সে দ্বিগুণ সওয়াব পাবে)।

【32】

কেউ জিহাদে অংশ গ্রহণকালে নিজের সঙ্গে খাদেম নিলে

‘আবদুল্লাহ ইবনু দায়লামী (রহঃ) ইয়া’লা ইবনু মুনইয়া (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধের জন্য আহবান জানালেন। তখন আমি খুবই বৃদ্ধ ছিলাম এবং আমার কোন খাদেম ছিল না। তাই আমি এমন একজন শ্রমিক খোঁজ করলাম যে আমার সহায়তা করতে সক্ষম এবং আমি তাকে (গনীমাতের) অংশ প্রদানেরও চিন্তা করলাম। অতঃপর আমি এমন এক ব্যক্তিকে পেয়েও গেলাম। যুদ্ধে যাবার সময় ঘনিয়ে এলে সে এসে আমাকে বলল, আমি সৈনিকের প্রাপ্য অংশ সম্পর্কে কিছুই অবহিত নই এবং আমাকে কি পরিমাণ প্রাপ্য দেয়া হবে তাও আমি জানি না, কাজেই আমার মজুরী নির্ধারণ করুন। আমি তার জন্য তিন দিনার মজুরী নির্ধারণ করলাম। অতঃপর গনীমাত বণ্টনের সময় উপস্থিত হলে আমি তাকে এর একটি অংশ দেয়ার ইচ্ছা করলাম। এমতাবস্থায় দিনারের কথা স্মরণ হল। অতঃপর আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বিষয়টি তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি বললেনঃ আমি এ যুদ্ধের বিনিময়ে দুনিয়া এবং আখিরাতে তার জন্য নির্ধারিত (দিনার) ছাড়া আর কিছুই দেখছি না।

【33】

পিতা-মাতার অনুমতি ছাড়া জিহাদে যোগদান প্রসঙ্গে

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বলল, আমি আপনার কাছে হিজরতের বাই’আত নিতে এসেছি এবং আমার মাতা-পিতাকে কান্নারত অবস্থায় রেখে এসেছি। তিনি বললেনঃ তুমি ফিরে যাও। তাদেরকে যেভাবে কাঁদিয়েছ ঐভাবে তাদেরকে হাসাও। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি জিহাদ করবো। তিনি বললেনঃ তোমার পিতা-মাতা আছেন কি? সে বললো, হাঁ। তিনি বললেনঃ তাদের সেবা করো, এটাই তোমার জন্য জিহাদ হিসাবে গণ্য হবে। আবূ সাইদ আল-খুদরী (রাঃ) এক ব্যক্তি ইয়ামান থেকে হিজরাত করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হল। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ ইয়ামানে তোমার কেউ আছেন কি? জবাবে সে বলল, আমার মাতা-পিতা আছেন। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ তারা তোমাকে জিহাদের অনুমতি দিয়েছেন কিনা? সে বলল, না। তিনি বলেনঃ তবে তুমি ফিরে গিয়ে তাদের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করো। তারা তোমাকে অনুমতি দিলে জিহাদে অংশগ্রহণ করবে, অন্যথায় তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে।

【34】

যুদ্ধে নারীদের অংশগ্রহন

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মু সুলাইমকে এবং কতিপয় আনসার মহিলাকে যুদ্ধে নিয়ে যেতেন। তারা মুজাহিদদের পানি সরবরাহ করতেন এবং আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন।

【35】

স্বৈরাচারী শাসকের নেতৃত্বে যুদ্ধ করা সম্পর্কে

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিনটি বিষয় ঈমানের মূলের অন্তর্ভুক্ত। (এক) যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ পড়বে তার ক্ষতি করা হতে বিরত থাকা, কোন গুনাহের কারণে তাকে কুফরির দিকে ঠেলে না দেয়া এবং (শরী’আতের বিরোধী) কোন কাজের কারণে তাকে ইসলাম থেকে বহিস্কার না করা। (দুই) আমাকে (রাসূল করে) প্রেরনের সময় থেকে জিহাদ চালু রয়েছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। অবশেষে উম্মাতের জিহাদকারী সর্বশেষ দল দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। কোন অত্যাচারী শাসকের অত্যাচার অথবা কোন ন্যায়পরায়ণ শাসকের ইনসাফ এটাকে রহিত করতে পারবে না। (তিন) তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস রাখা। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, প্রত্যেক শাসকের নেতৃত্তে জিহাদ করা তোমাদের উপর ওয়াজিব - চাই সে সৎ হোক বা অসৎ। প্রত্যেক মুসলিমের পিছনে সালাত আদায় করা তোমাদের ওপর ওয়াজিব, চাই সে সৎ হোক বা অসৎ, এমনকি সে কবীরাহ গুনাহ করলেও। প্রত্যেক (মৃত) মুসলিমের জানাযা পড়া ওয়াজিব, চাই সে নেককার হোক অথবা পাপী, এমনকি সে কবীরাহ গুনাহ করলেও। দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (২৬৭৩), মিশকাত (১১২৫)।

【36】

অন্যের বাহনে চড়ে জিহাদে যোগদান

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্র একদা তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধে বের হওয়ার সময় বললেনঃ ‘হে মুজাহির ও আনসার সম্প্রদায়! তোমাদের ভাইদের মধ্যে এমন কিছু লোকও রয়েছে, যাদের যুদ্ধে খরচ করার নিজস্ব আর্থিক সামর্থ্য নাই এবং তাদেরকে সহযোগিতা করার মত কোন আত্মীয়-স্বজনও নাই। তোমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজ (বাহন ও আহারে) তাদের দুই কিংবা তিনজনকে শামিল করে নেয়া।’ তখন আমাদের কারো সাথে একের অধিক মালবাহী সাওয়ারী ছিল না, পালা করা ছাড়া কোন বিকল্প ছিল না। জাবির (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি তাদের দুই বা তিনজনকে আমার সঙ্গে মিলিয়ে নিলাম। জাবির বলেন, আমার মাত্র একটি উট ছিল। আমিও অন্যদের মত তাতে পালা করে আরোহণ করি।

【37】

যে ব্যক্তি সওয়াব ও গনীমাতের আশায় যুদ্ধ করে

দামরাহ ইবনু যুগ্‌ব আল-ইয়াদী (রহঃ) তিনি বলেন, একদা ‘আবদুল্লাহ ইবনু হাওয়ালা আল-আযদী (রাঃ) আমার মেহমান হলেন। তিনি আমাকে বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি পদাতিক বাহিনীকে গনীমাতের লাভের উদ্দেশ্যে যুদ্ধে প্রেরণ করলেন। আমরা ফিরে এলাম, অথচ কোন গনীমাত পেলাম না। তিনি আমাদের চেহারায় ক্লান্তির ছাপ লক্ষ্য করলেন। তিনি আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেন, “হে আল্লাহ্‌! তাদের ক্লান্তি দূর করতে তাদেরকে আমার দিকে সোপর্দ করো না। এবং তাদেরকে তাদের দিকেও সোপর্দ করো না, তাহলে লোকেরা তাদের উপর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাবে”। (ইবনু হাওয়ালা বলেন), এরপর তিনি আমার মাথা বা মাথার তালুতে হাত রেখে বললেন, হে ইবনু হাওয়ালা! যখন তুমি দেখবে যে, বাইতুল মাকদিসে (সিরিয়ার) ভূমিতে খিলাফাত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তখন মনে করবে অধিক ভূমিকম্প, বিপদ-আপদ, মহা দুর্ঘটনা ও পেরেশানী সন্নিকটে। কিয়ামত তখন মানুষের এতই নিকটবর্তী হবে, যেমন আমার এ হাত তোমার মাথার যত নিকটে রয়েছে।

【38】

যে ব্যক্তি নিজেকে (আল্লাহ্‌র রাহে) বিক্রি করে

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাদের মহান রব ঐ ব্যক্তির প্রতি সন্তুষ্ট হবেন, যে আল্লাহ্‌র পথে জিহাদে লিপ্ত হয়েছে। তার সাথীরা পালিয়ে গেছে, কিন্তু সে জানতে পারলো তার উপর আল্লাহ্‌র হক রয়েছে। কাজেই সে পুনরায় (যুদ্ধের ময়দানে) ফিরে গেলো। অতঃপর তার রক্ত বয়ে দিয়ে শহীদ হলো। মহান আল্লাহ্‌ তাঁর ফেরেশতাদের বলেন, আমার বান্দার দিকে তাকিয়ে দেখ, সে আমার কাছে সওয়াবের আশা নিয়ে এবং আমার ‘আযাবের ভয় করে (যুদ্ধের ময়দানে) ফিরে গিয়ে নিজের রক্ত প্রবাহিত করেছে।

【39】

কেউ যুদ্ধক্ষেত্রে ইসলাম গ্রহনের পর পরই সেখানে নিহত্ হলে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) ‘আমর ইবনু উক্বাইশের জাহিলী যুগের কিছু সুদ অনাদায়ী ছিল। সেগুলো আদায় না করে তিনি মুসলমান হওয়া অপছন্দ করলেন। কাজেই তিনি উহুদ যুদ্ধের দিন এসে জিজ্ঞাসা করলেন, আমার চাচাতো ভাইয়েরা কোথায়? লোকেরা বললো, তারা উহুদের যুদ্ধে গিয়েছে। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, অমুক কোথায়? লোকেরা বললো, তারা উহুদের যুদ্ধে গিয়েছে। তিনি তার যুদ্ধের সাজে সজ্জিত হয়ে নিজ ঘোড়ায় চড়ে উহুদে রওয়ানা হলেন। মুসলমানগন তাকে দেখতে পেয়ে বললেন, হে আমর! আমাদের থেকে তুমি অন্য দিকে যাও। (আমাদের মধ্যে প্রবেশ করোনা। কেননা তুমি কাফের)। তিনি বললেন, আমিতো ঈমান এনেছি। তিনি কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আহত হলেন। আহত অবস্থায় তাকে তার পরিবার-পরিজনের কাছে নিয়ে যাওয়া হল। সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) তার বাড়িতে আসলেন। তিনি তার বোনকে বললেন, তুমি তাকে জিজ্ঞেস করো, তুমি কি তোমার গোত্রের প্রতিপত্তি রক্ষার জন্য অথবা তাদের (দুশমনদের) প্রতি আক্রোশের বশবর্তী হয়ে অথবা আল্লাহর গযব থেকে বাচার জন্য যুদ্ধ করেছো? তিনি (আমর) বললেন, আমি বরং আল্লাহ ও তার রাসূলের অভিশাপ থেকে বাচার জন্য জিহাদ করেছি। তিনি মারা গেলেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করলেন। অথচ তিনি আল্লাহর জন্য এক ওয়াক্ত নামাযও পড়ার সুযোগ পান নি।

【40】

যে ব্যক্তি নিজের অস্ত্রের আঘাতে নিহত্ হয়

‘আব্দুর রহমান ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রহঃ) সালামাহ ইবনুল আকওয়া’ (রাঃ) বলেন, খায়বার যুদ্ধে আমার ভাই কঠোরভাবে যুদ্ধ করলেন। ঘটনাক্রমে নিজের তরবারি তার দিকে ঘুরে গেলে এর আঘাতেই তিনি নিহত হন। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাহাবীগণ বলাবলি করলেন এবং তার মৃত্যুর ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে বললেন, তিনি তো নিজ অস্ত্রের আঘাতে মারা গেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে জিহাদকারি মুজাহিদ হিসেবে মারা গেছে। বর্ননাকারী ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, অতঃপর আমি সালামাহ ইবনুল আকওয়া’র এক ছেলেকে জিজ্ঞেস করলে সেও তার পিতার সূত্রে একই কথা বললো। তবে সে এও বলেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাদের ধারণা মিথ্যা। সে জিহাদকারী মুজাহিদ হিসেবে মারা গেছে এবং তার জন্য দ্বিগুন সওয়াব রয়েছে। ’আবিয়াহ ইবনু আবূ সাল্লাম (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা আবূ সাল্লাম তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জনৈক সাহাবী সূত্রে বর্ননা করেন যে, আমরা (সাহাবীগণ) জুহাইনাহ বংশের এক উপ-গোত্রের বিরুদ্ধে আক্রমন চালালাম। মুসলিমদের এক ব্যক্তি কাফিরদের এক ব্যক্তিকে অনুসরন করে তার উপর আঘাত হানলো, কিন্তু আঘাত লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তরবারি ঘুরে এসে তার নিজের উপরই পড়লো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে মুসলিম সম্প্রদায়! তোমাদের ভাই কোথায়, তার সংবাদ নাও। লোকজন তার খোঁজ নিতে দ্রুত বেরিয়ে পড়লো এবং তাকে মৃত অবস্থায় পেল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে তার রক্তমাখা পরিধেয় বস্ত্রেই জড়িয়ে নিলেন (কাফন দিলেন), অতঃপর তার জানাযা পড়ে দাফন করলেন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে কি শহীদ? তিনি বললেন, হাঁ, আমি তার সাক্ষী।

【41】

দুশমনের মোকাবেলার সময় দু’আ করা

সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুই সময়ের দু’আ প্রত্যাখ্যাত হয় না অথবা খুব কমই প্রত্যাখ্যাত হয়। আযানের সময়ের দু’আ এবং যখন একে অপরের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকে। (হাদীসের মধ্যবর্তী বর্ননাকারী) মূসা ইবনু ইয়াকূব অন্য সানাদে রিয্বক ইবনু সাঈদ হতে...নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে বর্ননা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বৃষ্টির সময়ের দু’আও (কবুল হয়ে থাকে)। সহীহ। তবে “বৃষ্টির সময়” কথাটি বাদে। মিশকাত (৬৭২)।

【42】

যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে শাহাদাত কামনা করে

মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি উষ্ট্রির দুধ দুইবার দোহনের মধ্যবর্তী সময়টুকু আল্লাহর পথে জিহাদ করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজীব। যে ব্যক্তি দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আল্লাহর কাছে শাহাদাতের প্রার্থনা করে, অতঃপর (নিজ ঘরেই) মারা যায় অথবা নিহত হয়, তার জন্য শহীদের সওয়াব রয়েছে। (মধ্যবর্তী বর্ননাকারী) ইবনুল মুসান্না এরপর আরো বর্ননা করেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (যুদ্ধে) আহত হয় কিংবা কোন বিপদে পতিত হয়, ক্বিয়ামাতের দিন তার এ যখমের স্থান পুর্বের মত তাজা থাকবে এবং এর রং হবে জা’ফরানের রংয়ের মত আর এর ঘ্রান হবে কস্তরীর ঘ্রানের অনুরুপ। মহান আল্লাহর পথে যার শরীরে কোন ফোড়া উঠে, তাতে শহীদের সীলমোহর অংকিত হবে।

【43】

ঘোড়ার কপালের চুল ও লেজ কাটা অপছন্দনীয়

‘উতবাহ ইবনু আবদ আস-সুলামী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন, তোমরা ঘোড়ার কপালের, ঘাড়ের ও লেজের চুল কাটবে না। কেননা এর লেজ মাছি তাড়ানোর জন্য, ঘাড়ের চুল শীত নিবারনের জন্য এবং কপালের চুলে কল্যাণের প্রতীক।

【44】

ঘোড়ার প্রিয় রং

আবূ ওয়াহব আল-জুশামী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের অবশ্যই এমন ঘোড়া থাকা উচিৎ যা লাল কালো মিশ্রিত, সাদা কপাল ও সাদা পা বিশিষ্ট অথবা গাড় লাল বর্নের এবং সাদা কপাল ও সাদা পা বিশিষ্ট কিংবা সাদা-কালো মিশ্রিত, সাদা কপাল ও সাদা পা বিশিষ্ট। দুর্বলঃ মিশকাত (৩৮৭৮) আবূ ওয়াহ্ব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের অবশ্যই উজ্জ্বল লাল রং এবং সাদা কপাল ও সাদা পা বিশিষ্ট ঘোড়া কিংবা কালো মিশ্রিত লাল রঙয়ের এবং সাদা কপাল ও সাদা পা বিশিষ্ট ঘোড়া থাকা উচিৎ। অতঃপর উপরের হাদীসদের অনুরুপ। মুহাম্মাদ ইবনু মুহাজির বলেন, আমি আকীল ইবনু শাবীবকে জিজ্ঞেস করি, উজ্জ্বল লাল বর্ণকে অগ্রাধিকার দেয়ার কারন কি? তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি অভিযানকারী দল প্রেরন করেছিলেন। সর্বপ্রথম বিজয়ের সংবাদ দাতা ছিল উজ্জ্বল লাল বর্ণের ঘোড়ার সওয়ারী। ঈসা ইবনু ‘আলী (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, লাল বর্নের ঘোড়ায় কল্যান নিহীত।

【45】

ঘুড়ীকে ঘোড়ার মধ্যে শুমার করা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদী ঘোড়াকে ফার্স নামে আখ্যায়িত করতেন।

【46】

যে ধরনের ঘোড়া অপছন্দনীয়

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শ্বেতিযুক্ত ঘোড়া অপছন্দ করতেন। শেকাল হল কোন ঘোড়ার পিছনের দিকে ডান পায়ে এবং সামনের দিকে বাম পায়ে সাদা রং হওয়া, অথবা সামনের দিকের ডান পায়ে এবং পিছনের দিকের বাম পায়ে সাদা রং হওয়া।

【47】

উত্তমরুপে পশুর সেবা যত্ন করা নির্দেশ

সাহল ইবনুল হানযালিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন একটি উটের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন যে, অনাহারে উটটির পেট পিঠের সাথে লেগে গিয়েছিল। তিনি বললেন, তোমরা এসব বাকশক্তিহীন পশুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। সুস্থ সবল পশুর পিঠে আরোহন করবে এবং এদেরকে উত্তমরুপে আহার করাবে। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু জা’ফার (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তার খচ্চরের পিঠে তার পিছনে বসালেন। তিনি আমাকে গোপনে কিছু কথা বলে এ মর্মে সতর্ক করে দিলেন যে, আমি যেন কাঊকে তা না বলি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার প্রাকৃতিক প্রয়োজনের সময় গোপনীয়তা রক্ষার্থে উঁচু জায়গা অথবা ঘন খেজুরকুঞ্জ পছন্দ করতেন। তিনি এক আনসারীর খেজুর বাগানে প্রবেশ করলে হঠাৎ একটি উট তার দৃষ্টিগোচর হয়। উটটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখে কাঁদতে লাগলো এবং তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটটির কাছে গিয়ে এর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন। এতে উটটি কান্না থামালো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ উটের মালিক কে? তিনি আবারো ডাকলেনঃ উটটি কার? এক আনসারি যুবক এসে বললো হে আল্লাহর রাসূল! আমার। তিনি বললেন, আল্লাহ যে তোমাকে এই নিরীহ প্রানীটির মালিক বানালেন, এর অধিকারের ব্যাপারে তুমি কি আল্লাহকে ভয় করনা? উটটি আমার কাছে অভিযোগ করেছে, তুমি একে ক্ষুধার্ত রাখো এবং একে কষ্ট দাও। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, একদা এক লোক রাস্তায় চলতে চলতে পিপাসায় কাতর হয়ে পড়লো। সে একটি কুপ দেখতে পেয়ে তাতে নেমে পানি পান করলো। কুপ থেকে উঠে সে দেখলো, একটি কুকুর হাপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে কাদামাটি চাটছে। সে ভাবলো, আমার যেরুপ পিপাসা পেয়েছিল কুকুরটিরও অনুরুপ পিপাসা পেয়েছে। সে আবার কুপের মধ্যে নামলো এবং পায়ের মোজায় পানি ভরে তা মুখে কামড়ে ধরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করালো। আল্লাহ তার এ কাজে খুশী হয়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দিলেন। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এসব প্রানীর সেবা করলেও আমাদেরকে সওয়াব দেয়া হবে? তিনি বললেন, প্রতিটি জীবিত প্রানীর সেবার জন্য সওয়াব আছে।

【48】

গন্তব্যে নামা

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা কোন স্থানে অবতরন করলে বাহনের পিঠ থেকে হাওদা নামিয়ে এর বিশ্রামের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত সলাত আদায় করতাম না।

【49】

ধনুকের তার দিয়ে ঘোড়ার গলায় মালা বাধা

‘আব্বাদ ইবনু তামীম (রহঃ) আবূ বাশীর আল-আনসারী (রাঃ) তাকে জানান যে, তিনি কোন এক সফরে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে ছিলেন। আবূ বাশীর বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন ঘোষক পাঠালেন। (মধ্যবর্তী বর্ননাকারি) আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ বাকর (রহঃ) বলেন, আমার ধারণা আব্বাদ বলেছেন যে, লোকজন তখন ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। (ঘোষক এ মর্মে ঘোষনা দিলেন যে,) উটের গলায় ধনুকের তারের পট্টি এবং সাধারন কোন পট্টি যেন অবশিষ্ট না থাকে, ওগুলো কেটে ফেলো। (বর্ননাকারী) মালিক (রহঃ) বলেন, আমার ধারণা, বদ নজর থেকে বাঁচার জন্য এই পট্টি বাঁধা হত।

【50】

ঘোড়ার প্রতিপালন ও রক্ষনাবেক্ষনে যত্নবান হওয়া ও এর নিতম্বে হাত বুলানো

আবূ ওয়াহব আল-জুশামী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা (যুদ্ধের জন্য) ঘোড়া প্রস্তুত রাখবে এবং এর কপালের চুল ও নিতম্বে হাত বুলাবে। অথবা তিনি বলেছেন, এর নিতম্বে হাত বুলাবে এবং গলায় মালা পরাবে, কিন্তু ধনুকের তারের মালা পরাবে না।

【51】

পশুর গলায় ঘন্টা ঝুলানো

উম্মু হাবীবাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে দলের পশুর গলায় ঘন্টা থাকে রহমাতের (ফেরেশতা) তাদের সঙ্গী হয় না। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রহমাতের ফেরেশতা তাদের সংগী হয় না যাদের মধ্যে ঘন্টা কিংবা কুকুর থাকে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ঘন্টা (নুপুর) শয়তানের বাদ্যযন্ত্র।

【52】

পায়খানাখোর পশুর পিঠে চড়া

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, পায়খানাখোর পশুর পিঠে সওয়ার হতে নিষেধ করা হয়েছে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পায়খানাখোর উটে সওয়ার হতে নিষেধ করেছেন।

【53】

যে ব্যক্তি নিজ পশুর নাম রাখে

মু’আয (রাঃ) তিনি বলেন, আমি উফাইর নামীয় একটি গাধার পিঠে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে আরোহী ছিলাম।

【54】

হে আল্লাহর অশ্বারোহী! ঘোড়ায় চড়ো – এ বলে যুদ্ধযাত্রার ডাক দেয়া

সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান বর্ণনার পর বললেন, আমরা ভীত হয়ে পড়লে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ঘোড়াকে আল্লাহর ঘোড়া নামে ডাকতেন। আর আমরা ভীত হয়ে পড়লে বা যুদ্ধে লিপ্ত হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সংঘবদ্ধ থাকতে, ধৈর্য ধরতে এবং ধীরস্থির অবলম্বনের আদেশ দিতেন।

【55】

পশুকে অভিশম্পাত করা নিষেধ

‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সফরে পথিমধ্যে অভিশাপের শব্দ শুনতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন: এটা কে? সাহাবীগণ বললেন এটা অমুক মহিলা, সে তার সওয়ারী পশুকে অভিশাপ দিচ্ছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এর পিঠ থেকে পালান নামিয়ে ফেলো। কেননা এটা অভিশপ্ত। লোকেরা তাই করলো। ‘ইমরান (রাঃ) বলেন, আমি যেন এখনো ঐ সাদা-কালো বর্ণের উস্ট্রীটি দেখতে পাচ্ছি।

【56】

জন্তুদের মধ্যে লড়াই লাগানো

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চতুস্পদ জন্তুদের মধ্যে লড়াই লাগাতে নিষেধ করেছেন। দুর্বল: যইফ সুনান আত-তিরমিযী (২৮৭/১৭৭৬), যইফ আল-জামি’উস সাগীর (৬০৩৬), গায়তুল মারাম (৩৮৩)।

【57】

জন্তুর গায়ে দাগ দেয়া

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার নবজাত ভাইয়ের তাহনীক করতে তাকে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে উপস্থিত হই। এ সময় তিনি খোঁয়াড়ের মধ্যে মেষের শরীরে দাগ দিচ্ছিলেন। বর্ণনাকারী শু’বাহ বলেন, আমার ধারণা, হিশাম মেষপালের কানে দাগ দেয়ার কথা বলেছেন।

【58】

মুখমণ্ডলে দাগ দেয়া এবং আঘাত করা নিষেধ

জাবির (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট দিয়ে মুখমণ্ডলে দাগ দেয়া একটি গাধা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তিনি বললেনঃ তোমরা কি জানতে পারোনি, যে ব্যক্তি তার পশুর চেহারায় দাগ দেয় বা প্রহার করে আমি তাকে অভিশম্পাত করেছি। (বর্ণনাকারী বলেন) অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরূপ করতে নিষেধ করলেন।

【59】

ঘোটকী ও গাধার মিলন ঘটানো অনুচিত

‘আলী ইবনু আবূ তালিব (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একটি খচ্চর উপঢৌকন দেয়া হয়। তিনি এর উপর আরোহণ করলেন। তখন ‘আলী (রাঃ) বললেন, আমরা গাধা ও ঘোটকীর যৌনমিলন ঘটাতে পারলে আমাদেরও এরূপ খচ্চর হতো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃনিঃসন্দেহে মূর্খরাই এরূপ করে থাকে।

【60】

এক পশুতে তিনজন আরোহণ

‘আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফার (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সফর থেকে ফিরে আসলে তাঁকে অভ্যর্থনার জন্য আমাদের (ছোটদের) নিয়ে যাওয়া হতো। আমাদের মধ্যে যে সবার আগে তাঁর নিকট পৌঁছতো, তিনি তাকে তাঁর বাহনের সামনে বসাতেন। একদা আমাকে সবার আগে পেয়ে তিনি তাঁর বাহনের সামনের আসনে আমাকে বসালেন, অতঃপর হাসান বা হুসাইন (রাঃ)-কে পৌঁছানো হলো। তিনি তাঁকে পিছনের আসনে বসালেন। আর আমরা (তিনজন) আরোহী অবস্থায় মাদীনায় প্রবেশ করলাম।

【61】

বিনা প্রয়োজনে পশুর পিঠে বসে থাকা অনুচিত

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা তোমাদের পশুর পিঠকে মিম্বার বানানো হতে সাবধান। কেননা আল্লাহ পশুকে তোমাদের অনুগত করেছেন তোমাদের এক জনপদ থেকে আরেক জনপদে পৌঁছার জন্য, যেখানে তোমরা দৈহিক কষ্ট ছাড়া পৌঁছাতে সক্ষম হতে না। তিনি যমীনকে তোমাদের বসবাসের উপযোগী করেছেন। তোমরা এর উপর নিজেদের সকল প্রয়োজন পূরণ করো।

【62】

আরোহীবিহীন ঘোড়া বা উট

সাঈদ ইবনু আবূ হিন্দ (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিছু উট শয়তানের জন্য এবং কিছু ঘরও শয়তানের জন্য। যে উট শহয়তানের জন্য তা আমি দেখেছি। তোমাদের কেউ আরোহীবিহীন উট নিয়ে বের হয় এবং তা খুব মোটাতাজা করে। সে এর পিঠে কাউকে চড়ায় না। পায়ে হাঁটতে অক্ষম ভাইকে যেতে দেখেও তার উটে চড়ায় না। আর যে ঘরটি শয়তানের জন্য সেটা আমি দেখি নি। সাঈদ (রাঃ) বলতেন, আমার মতে, শয়তানের ঘর হচ্ছে উটের ঐ হাওদা যা লোকেরা রেশমের কাপড়ে ঢেকে রাখে।

【63】

দ্রুত গতিতে পথ চলা

আবূ হুরাইরাহ (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমরা যখন তৃণভূমি দিয়ে সফর করবে তোমাদের উটের হক আদায় করবে (ঘাস খাওয়াবে)। আর শুষ্ক এলাকায় ভ্রমণ করলে দ্রুত গতিতে চলবে। তোমরা রাত যাপন করতে চাইলে পথ থেকে সরে যাবে। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাণীতে ‘হাক্কাহা’ শব্দের পর এও আছে: তোমরা (রাত যাপনের জন্য চেনা জায়গায় তাঁবু ফেলবে) গন্তব্যস্থল অতিক্রম করবে না।

【64】

রাতের প্রথমভাগে ভ্রমণ করা

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের রাতের প্রথমাংশে সফর করা উচিত। কেননা রাতের বেলা যমীন সংকুচিত হয়।

【65】

বাহনের মালিক সামনের দিকে বসার অধিক হকদার

‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আমার পিতা বুরাইদাহ (রাঃ)- কে বলতে শুনেছি, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেঁটে যাচ্ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি একটি গাধা নিয়ে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আরোহণ করুন। এ বলে লোকটি একটু পিছনে সরে গেলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, আমার চেয়ে তুমিই সামনের দিকে বসার অধিক হকদার। অবশ্য তুমি আমার জন্য তা ছেড়ে দিলে (ভিন্ন কথা)। সে বললো, আমি তা আপনার জন্য ছেড়ে দিলাম। অতঃপর তিনি তাতে আরোহণ করলেন।

【66】

যুদ্ধক্ষেত্রে পশুর পা কেটে ফেলা

ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) তার পিতা ‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু জুবাইরের সূত্র এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমার দুধ পিতা বলেছেন, যিনি মুতার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুকরাহ ইবনু ‘আওফ গোত্রের লোক ছিলেন। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি যেন জা’ফারকে দেখছি, তিনি তার উজ্জ্বল লাল বর্ণের ঘোড়ার পিঠ থেকে লাফিয়ে পড়ছেন। তিনি এর পা কেটে ফেললেন (যেন শত্রুরা এটি ব্যবহার করতে না পারে) অতঃপর শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হলেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস শক্তিশালী নয়।

【67】

দৌড় প্রতিযোগিতা

আবূ হুরাইরাহ (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: উটের দৌড়, ঘোড়ার দৌড় অথবা তীরের ফলা ছাড়া অন্য কোন প্রতিযোগিতা বাজি ধরা জায়িয নয়। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাফিয়া থেকে সানিয়্যাতুল বিদা’ নামক উপত্যকা পর্যন্ত সীমা নির্দিষ্ট করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়াগুলোর মধ্যে দৌড় প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করলেন। আর প্রশিক্ষণহীন ঘোড়াগুলোর মধ্যে তিনি দৌড় প্রতিযোগিতা করান সানিয়্যাতুল বিদা’ হতে যুরাইক গোত্রের মাসজিদ পর্যন্ত। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) ছিলেন উক্ত প্রতিযোগিতার অন্যতম বিজয়ী। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতিযোগিতার দৌড়ের মাধ্যমে ঘোড়াকে ছিপছিপে ও সুঠাম করাতেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়াদৌড়ের প্রতিযোগিতা করাতেন এবং পাঁচ বছর বয়সে পদার্পণকারী ঘোড়ার জন্য দূরত্ব নির্দিষ্ট করতেন।

【68】

লোকদের মাঝে দৌড় প্রতিযোগিতা

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি এক সফরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলেন। তিনি বলেন, আমি তাঁর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করে তাঁর আগে চলে গেলাম। অতঃপর আমি মোটা হয়ে যাওয়ার পর তাঁর সাথে আবারো দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে পিছে ফেলে দিলেন বিজয়ী হলেন। তিনি বলেনঃ এই বিজয় সেই বিজয়ের বদলা।

【69】

দুজনের বাজির মধ্যে তৃতীয় প্রবেশকারী

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি প্রতিযোগিতায় রত দুটি ঘোড়ার মধ্যে তৃতীয় ঘোড়া প্রবেশ করাবে- অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় তার ঘোড়া অন্যগুলোকে অতিক্রম করবে বলে নিশ্চিত নয়-তাহলে এটা জুয়া নয়। আর যে ব্যক্তি দৌড় প্রতিযোগিতায় দু’টি ঘোড়ার মাঝে তার ঘোড়া প্রবেশ করলো এবং সে নিশ্চিত যে, তার ঘোড়া অন্যগুলোকে অতিক্রম করে যাবে, তা জুয়া গণ্য হবে। দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৫৩৭১), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৬২৭/২৮৭৬) আয-যুহরী (রহঃ) আব্বাদের সানাদ সূত্রে অনুরূপ বর্ণীত হয়েছে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, উপরোক্ত হাদীস মা’মার, শু’আইব ও উক্বাইর- আয-যুহরী (রহঃ) একদল জ্ঞানী ব্যক্তির সূত্রে বর্ণনা করেছেন। আমাদের মতে এই সানাদ সর্বাধিক সহীহ।

【70】

ঘোড়াদৌড় প্রতিযোগিতায় ঘোড়াকে তাড়া দেওয়া

‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ টানা বা তাড়া দেয়া বা খোঁচা মারা বৈধ নেই। ইয়াহইয়া (রহঃ) তার হাদীসে ‘রিহান’ (ঘোড়দৌড়) শব্দটিও উল্লেখ করেছেন। ক্বাতাদাহ (রহঃ) তিনি বলেন, ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় ঘোড়াকে তাড়া দেয়া ও পার্শ্বে খোঁচা মারা হয়।

【71】

তরবারি অলংকার করা

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তরবারির বাঁট রূপা দিয়ে বাঁধানো ছিল। সাঈদ ইবনু আবূল হাসান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তরবারির বাঁটের অগ্রভাগ রূপা দিয়ে বাঁধানো ছিল। ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেন, কেউ এ হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণনা করেছেন বলে আমার জানা নেই। সহীহ। এর পূর্বেরটি দ্বারা (২৫৮৩)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্র উপরের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। আবূ দাঊদ (রাঃ) বলেন, উল্লেখিত বর্ণনাগুলোর মধ্যে সাঈদ ইবনু আবূল হাসান (রহঃ) এর হাদীস অধিক শক্তিশালী, এছাড়া অন্য সবগুলো দুর্বল। সহীহ। এর পূর্বেরটি দ্বারা (২৫৮৪)।

【72】

তীরসহ মাসজিদে প্রবেশ

জাবির (রাঃ) এক ব্যক্তি মাসজিদের মধ্যে তীর বিতরণ করছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে মাসজিদ অতিক্রমকালে তীরের ফলা ধরে রাখার নির্দেশ দিলেন। আবূ মূসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ তার তীরসহ আমাদের মসজিদ বা বাজার অতিক্রম করলে সে যেন তীরে সংযত রাখে অথবা তিনি বলেনঃ সে যেন তীরে ফলা মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে। কেননা তা কোন মুসলিমের গায়ে লেগে যেতে পারে।

【73】

খোলা তরবারি লেনদেন নিষেধ

জাবির (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খোলা তরবারি আদান-প্রদান করতে নিষেধ করেছেন।

【74】

দুই আঙ্গুলের মাঝখানের চামড়া কাটা নিষেধ

সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই আঙ্গুলের মাঝখানের চামড়া কাটতে বারণ করেছেন। দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৬০২২), মিশকাত (৩৫২৭)।

【75】

লৌহবর্ম পরিধান

আস-সায়িব ইআস-সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ)বনু ইয়াযীদ (রহঃ) আস-সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে বর্ণনা করেন যে, উহুদের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি বর্ম পরিধান করে বের হলেন।

【76】

রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পতাকা

মুহাম্মাদ ইবনুল ক্বাসিমের মুক্তদাস ইউনুস ইবনু ‘উবাইদ (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পতাকা কিরূপ ছিল তা জিজ্ঞেস করার জন্য মুহাম্মাদ ইবনুল ক্বাসিম আমাকে আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) এর নিকট প্রেরণ করেন। তিনি (বারাআ) বললেন, তাঁর পতাকা ছিল কালো রঙের এবং বর্গাকৃতির যা চিতাবাগের (চামড়ার) ন্যায়। জাবির (রাঃ) জাবির (রাঃ) মারফু’ভাবে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, মাক্কাহ্য় প্রবেশের দিন তাঁর পতাকা ছিল সাদা রঙের। সিমাক (রহঃ) হতে তার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি হতে এবং তিনি আরেক ব্যক্তির সূত্র আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পতাকা দেখেছি। তা ছিল হলুদ রঙের।

【77】

অক্ষম ঘোড়া ও দুর্বল লোকের সাহায্য দান

জুবাইর ইবনু নুফাইর আল-হাদরামী (রহঃ) তিনি আবূ দারদা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা দুর্বল লোকদেরকে খোঁজ করে আমার কাছে নিয়ে এসো। কেননা তোমরা তোমাদের মধ্যকার দুর্বল লোকদের ওয়াসিলায় রিয্বিক এবং সাহায্য প্রাপ্ত হয়ে থাকো।

【78】

যুদ্ধে সাংকেতিক নামে ডাকা

সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, মুহাজিরদের সাংকেতিক ডাক ছিল ‘আবদুল্লাহ’, আর আনসারদের সাংকেতিক ডাক ছিল ‘আবদুর রহমান’। ইয়্যাস ইবনু সালামাহ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি (সালামাহ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে আবূ বকর (রাঃ) এর সেনাপতিত্বে যুদ্ধ করেছিলাম। সে সময় আমাদের সাংকেতিক ডাক ছিল ‘আমিত, আমিত’। মুহাল্লাব ইবনু আবূ সুফরাহ (রহঃ) তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি আমাকে জানালেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন: তোমরা রাতের অন্ধকারে শত্রুবাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হলে তোমাদের সাংকেতিক পরিচয় হবে, ‘হা-মীম লা ইউনসারূন’।

【79】

সফরে বের হলে যে দু’আ পড়তে হয়

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে যাওয়ার সময় এ দু’আ পাঠ করতেন, “হে আল্লাহ! আপনিই (আমাদের) সফরসঙ্গী এবং পরিবারের অভিভাবক। হে আল্লাহ! সফরের কষ্ট হতে, বিপদাপদে পতিত হয়ে ফিরে আসা হতে এবং সন্তান-সন্ততি ও সম্পদের উপর কুদৃষ্টি পড়া হতে আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য যমিনকে অনুকূল ও সফরকে সহজ ও আরামদায়ক করে দিন।” আবুয যুবাইর (রহঃ) ‘আলী-আযদী (রহঃ) তাকে জানিয়েছেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে বের হওয়ার সময় উঠের পিঠে সোজা হয়ে বসে তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে এ আয়াত পড়তেনঃ (আরবী) “মহান পবিত্র তিনি, যিনি একে আমাদের অনুগত বানিয়েছেন, তা না হলে একে বশ করতে আমরা সক্ষম ছিলাম না। নিশ্চয়ই আমাদেরকে আমাদের রব্বের নিকট ফিরে যেতে হবে” (সূরা আয-যুখরুকঃ আয়াত ১৩-১৪)। অতঃপর এ দু’আ পাঠ করতেনঃ (আরবী) তিনি যখন ফিরে আসতেন, এ দু’আই পাঠ করতেন, শুধু এটুকু বাড়িয়ে বলতেনঃ (আরবী) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সেনাবাহিনী কোন উঁচু স্থানে উঠার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন এবং নীচে নামার সময় সুবহানাল্লাহ বলতেন। অতঃপর এভাবেই (শুকরিয়া) সলাতে নির্ধারণ হয়।

【80】

বিদায়ের সময় দু’আ

ক্বাযা’আহ (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) আমাকে বললেন, এসো তোমাকে ঐভাবে বিদায় জানাই, যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বিদায় দিয়েছেনঃ “আমি আল্লাহর নিকট তোমার দীন, আমানাত ও সর্বশেষ আমলের হিফাযাতের জন্য দু’আ করছি।” ‘আবদুল্লাহ আল-খাত্বমী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সেনাবাহিনীকে বিদায় দেয়ার সময় বলতেনঃ “আমি আল্লাহর নিকট তোমাদের দীন, আমানাত ও সর্বশেষ আমলের হিফাযাতের জন্য দু’আ করছি”।

【81】

বাহনে চড়ার সময় যে দু’আ পড়তে হয়

‘আলী ইবনু রবী’আহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি দেখলাম, ‘আলী (রাঃ) এর কাছে আরোহণের একটি পশু আনা হলে তিনি এর পা-দানিতে পা রাখতেই বললেন, ‘বিসমিল্লাহ’ এবং এর পিঠে চড়ে সোজা হয়ে বসে বললেন, আল-হামদুলিল্লাহ”। অতঃপর তিনি এ আয়াত পড়লেনঃ “মহান পবিত্র তিনি, যিনি একে আমাদের অনুগত বানিয়েছেন, তা না হলে একে বশ করতে আমরা সক্ষম ছিলাম না। নিশ্চয়ই আমাদেরকে আমাদের রব্বের নিকট ফিরে যেতে হবে” (সূরাহ আয-যুখরুক : আয়াত ১৩-১৪)। পুনরায় তিনি তিনবার ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ এবং তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বললেন। অতঃপর বললেন, “(হে আল্লাহ!) আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আমিই আমার উপর যুলুম করেছি, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আপনি ছাড়া কেউই গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না”। অতঃপর তিনি হেসে দিলেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি কেন হাসলেন? তিনি বললেন, আমি যেরূপ করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কেও এরুপ করতে দেখেছি। তিনি যখন হেসেছিলেন তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি হাসলেন কেন? তিনি বললেনঃনিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক তাঁর বান্দার উপর সন্তুষ্ট হন যখন সে বলে: “(হে আমার রব্ব!) আপনি আমার গুনাহ ক্ষমা করুন”। আর বান্দা তো জানে যে, আমি (আল্লাহ) ছাড়া কেউই গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।

【82】

কোন স্থানে অবতরণ করে যে দু’আ পড়তে হয়

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর অবস্থায় রাত ঘনিয়ে এলে বলতেনঃ “হে যমীন! আমার ও তোমার রব্ব আল্লাহ। আমি আল্লাহর নিকট তোমার অনিষ্ট হতে, তোমার ভেতরের খারবী হতে, তোমার মধ্যে সৃষ্ট অনিষ্ট হতে এবং তোমার বুকে যেসব অনিষ্ট চলাফেরা করে তা হতে আশ্রয় চাইছি। আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই সিংহ, বিষধর কালো সাপ, বিচ্ছু, তোমার শহরে অনিষ্ট জন্মদানকারী অধিবাসী ও এদের বংশধরের অনিষ্ট হতে”।

【83】

রাতের প্রথমভাগে সফর করা অনুচিৎ

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: সূর্য ডুবে যাওয়ার পর রাতের প্রাথমিক অন্ধকার দূর না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের গৃহপালিত জন্তু ছাড়বে না। কারণ সূর্য ডোবার সাথে সাথে রাতের প্রাথমিক অন্ধকার দূর না হওয়া পর্যন্ত শয়তানেরা বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

【84】

কোন দিন সফর করা উত্তম

কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বৃহস্পতিবার ছাড়া অন্য দিন খুব কমই সফরে যেতেন।

【85】

ভোরবেলা সফরে বের হওয়া

সাখর আল-গামিদী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মাতকে ভোরের বরকত দান করুন”। তিনি কোন ক্ষুদ্র বা বিশাল বাহিনীকে কোথাও প্রেরণ করলে দিনের প্রথমভাগেই পাঠাতেন। বর্ণনাকারী সাখর (রাঃ) একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তার পণ্যদ্রব্য দিনের প্রথমভাগে (ভোরে) পাঠাতেন, ফলে তিনি সম্পদশালী হয়েছিলেন এবং এভাবে তিনি অনেক সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন।

【86】

একাকী সফর করা

‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা তিনি (দাদা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: একাকী সফরকারী হচ্ছে একটি শয়তান, আর একত্রে দুইজন সফরকারী দু’টি শয়তান। তবে একত্রে তিনজন সফরকারীই হচ্ছে প্রকৃত কাফেলা।

【87】

সফরকারীদের মধ্য হতে একজনকে নেতা বানানো

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তিন ব্যক্তি একত্রে সফর করলে তারা যেন নিজেদের মধ্য হতে একজনকে আমীর বানায়। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তিন ব্যক্তি একত্রে সফর করলে তারা যেন তাদের একজনকে আমীর নিযুক্ত করে। নাফি’ (রহঃ) আবূ সালামাহকে বললেন, তাহলে আপনি আমাদের নেতা।

【88】

কুরআন সাথে নিয়ে শত্রু এলাকায় সফর করা

নাফি’ (রহঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআন সাথে নিয়ে শত্রু এলাকায় সফর করতে নিষেধ করেছেন। (মধ্যকারী বর্ণনাকারী) মালিক বলেন, আমার ধারণা শত্রুর হাতে পড়ে কুরআন অবমাননার আশঙ্কায় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন।

【89】

সাজোয়া বাহিনী, ছোট সেনাদল ও সফরসঙ্গী কতজন হওয়া উত্তম

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সফরে উত্তম হচ্ছে চারজন সঙ্গী হওয়া, ক্ষুদ্রবাহিনীতে চারশো এবং সেনাবাহিনীতে চার হাজার সৈন্য হওয়া উত্তম। আর বারো হাজার সৈন্য হলে সংখ্যা সল্পতার কারণে পরাজিত হয় না।

【90】

মুশরিকদেরকে ইসলামের দাওয়াত প্রদান

সুলাইমান ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি (বুরাইদাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাউকে কোন সামরিক অভিযানের অধিনায়ক নিযুক্ত করে পাঠানোর সময় তাকে বিশেষভাবে আল্লাহকে ভয় করার এবং অধীনস্থ মুসলিম সৈন্যদের সাথে উত্তম ব্যবহার করার উপদেশ দিতেন। তিনি আরো বলতেনঃ তুমি মুশরিক বাহিনীর সম্মুখীন হলে তাদেরকে তিনটি বিষয়ের যে কোন একটি গ্রহনের আহ্বান জানাবে। অতঃপর তারা যে কোন একটি গ্রহণ করলে তুমি তা মেনে নিবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হতে বিরত থাকবে। (এক) তুমি তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের আহ্বান জানাবে। যদি তারা এটা মেনে নেয় তাহলে তাদের ইসলাম গ্রহণ মেনে নিবে এবং যুদ্ধ হতে বিরত থাকবে। এরপর তাদেরকে নিজ শহর ছেড়ে মুহাজিরদের শহরে হিজরাত করার আহ্বান জানাবে এবং তাদেরকে জানাবে, তারা এরুপ করলে তারাও মুহাজিরদের ন্যায় সুযোগ-সুবিধা পাবে এবং মুহাজিরদের উপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তাদের উপরও তা বর্তাবে। আর যদি তারা দেশ ত্যাগে রাজী না হয় এবং নিজেদের দেশেই থাকতে চায়, তাহলে তাদের জানিয়ে দিবে, তাদের মর্যাদা বেদুঈন মুসলিমদের মত। তাদের উপরও আল্লাহর সেসব হুকুম প্রয়োগ হবে যা মুমিনদের উপর হয়েছে। আর তারা মুসলিম বাহিনীর সাথে একত্রে জিহাদ না করলে তার ফাই ও গনিমাতের কোন অংশ লাভ করবে না। (দুই) তারা ইসলাম গ্রহনে অস্বীকৃতি জানালে তাদের জিয্‌য়া প্রদানের আহ্বান জানাবে। তারা এটা মেনে নিলে তা অনুমোদন করবে এবং যুদ্ধ হতে বিরত থাকবে। (তিন) তারা জিয্‌য়া প্রদানে অস্বীকার করলে আল্লাহর সাহায্য চাইবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাবে। আর তুমি যদি কোন দুর্গবাসীদের অবরোধ করো এবং তারা যদি আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী দুর্গ থেকে নামার জন্য তোমার নিকট আবেদন করে, তাহলে তুমি তাদের সেই আবেদন মানবে না। কারণ আল্লাহ তাদের বিষয়ে কি ফায়সালা দিবেন তা তোমরা অবহিত নও। বরং তোমরা নিজেদের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে তাদেরকে বাধ্য করবে এবং তোমরা তোমাদের সুবিধামত তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। নু’মান ইবনু মুকাররিন (রাঃ)-ও এটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন। সুলাইমান ইবনু বুরাইদাহ (রহঃ) হতে তার পিতা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমারা আল্লাহর নাম নিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো। যারা আল্লাহর পথে কুফরী করেছে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। তোমারা যুদ্ধ করে যাও কিন্তু বিশ্বাসঘাতকতা করো না, ওয়াদা ভঙ্গ করো না, গনীমাতের মাল আত্মসাৎ করো না, লাশ বিকৃত করো না এবং শিশুদের হত্যা করো না। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমরা যুদ্ধ করার সময় আল্লাহর নাম নিবে, আল্লাহর উপর ভরসা করবে এবং আল্লাহর রাসূলের মিল্লাতের উপর অটল থাকবে। অতি বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর ও নারীদের হত্যা করবে না এবং গনীমাতের মাল আত্মসাৎ করবে না। তোমাদের গনীমাত একত্রে জড়ো করবে, নিজেদের অবস্থার সংশোধন করবে এবং সৎ কাজ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন। দুর্বল: যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (১৩৪৬), মিশকাত (৩৯৫৬)।

【91】

শত্রুর জনপদে অগ্নিসংযোগ

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন ইয়াহুদী গোএের বনী নাদীরের ‘বুওয়াইরাহ’ নামক খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দেন ও কেটে ফেলেন, তখন মহান আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেন: “তোমরা যে খেজুরগাছ গুলো কেটেছো বা যেগুলো এর শিকড়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে দিয়েছো, তা আল্লাহর নির্দেশেই ছিল। এটা ছিল পাপীদের লাঞ্ছিত করার জন্য” (সূরাহ আল-হাশরঃ আয়াত ৫)। আয-যহূরী (রহঃ) ‘উরওয়াহ (রহঃ) বলেন, আমাকে উসামাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) বলেছেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে এক অভিযানের দায়িত্ব দিয়ে তার কাছ থেকে এ মর্মে প্রতিশ্রুতি নিলেন যে, তিনি বললেনঃ তুমি খুব ভোরে উবনা নামক জনপদে আক্রমণ করবে এবং তা অগ্নিসংযোগ করবে। দুর্বল: যঈফ ইবনু মাজাহ (২৮৪৩) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর আল-গাযযী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি শুনেছি আবূ মুসহিরকে উবনা নামক জনপদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, আমরা তো ফিলিস্তীনের ‘ইউবনা’ নামক স্থানকেই ‘উবনা’ বলে জানি। তাহকিক আলবানী - হাদিসের মানঃ মাক্কতু

【92】

গুপ্তচর প্রেরণ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ সুফিয়ানের কাফেলার গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘বুসাইসা’ নামক এক ব্যক্তিকে গুপ্তচর হিসেবে পাঠালেন।

【93】

পথচারীদের জন্য (মালিকের অনুমতি ছাড়া) পথে পড়ে থাকা খেজুর ভক্ষন ও পশুর দুধ পান

সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ কোন পশুপালের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে যদি মালিককে উপস্থিত পায় তাহলে তার নিকট অনুমতি প্রার্থনা করবে। সে অনুমতি দিলে দুধ দোহন করে পান করবে। আর যদি সেখানে মালিক উপস্থিত না পায় তাহলে তিনবার ডাক দিবে। তাতে কেউ সাড়া দিলে অনুমতি চাইবে। আর কেউ সাড়া না দিলে দুধ দোহন করে পান করবে, কিন্তু সঙ্গে নিতে পারবে না। ‘আব্বাস ইবনু শুরাহবীল (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ক্ষুধায় কাতর হয়ে মাদীনাহর একটি বাগানে ঢুকে খেজুরের খোশা পরিষ্কার করে তা খেলাম এবং কিছু খেজুর কাপড়ে বেঁধে নিলাম। বাগানের মালিক এসে আমাকে মারধর করলো এবং আমার কাপড় ছিনিয়ে নিলো। আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে এসে ঘটনাটি বললাম। তিনি বাগানের মালিককে (ডেকে এনে) বললেনঃ ছেলেটি অজ্ঞ ছিল তুমি তাঁকে জ্ঞান দাওনি। সে ক্ষুধার্ত ছিল তুমি খাওয়াওনি। তিনি তাকে আমার কাপড় ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিলে বাগানের মালিক তা ফেরত দিলো এবং আমাকে এক কিংবা অর্ধ ওয়াসক খাদ্য দিলো। আবূ বিশর এই সানাদে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ অর্থের হাদীস বর্ণিত।

【94】

গাছতলায় পড়ে থাকা ফল খাওয়া

আবূ রাফি ‘ইবনু ‘আমর আল-গিফারীর (রহঃ) চাচা তিনি (চাচা) বলেন, আমি বালক বয়সে আনসারদের খেজুর গাছে ঢিল ছুঁড়ে মারতাম। একদা আমাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট ধরে নিয়ে আসা হলে তিনি বললেনঃ হে বালক! তুমি খেজুর গাছে ঢিল ছুঁড়ো কেন? সে বললো, খেজুর খাওয়ার জন্য। তিনি বললেনঃ ঢিল ছুঁড়ে খেজুর পেড়ো না, বরং গাছতলায় পড়ে থাকা খেজুর খাও। অতঃপর তিনি তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেনঃ হে আল্লাহ! এর পেট ভরে দিন, একে পরিতৃপ্ত করুন। দুর্বলঃ যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (২২০/১৩১২) এর কাছাকাছি শব্দে।

【95】

যারা বলেন, দুধ দোহন করবে না

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কেউ যেন মালিকের অনুমতি ছাড়া মালিকের পশুর দুধ দোহন না করে। তোমাদের কেউ কি পছন্দ করবে যে, কেউ তার গুদাম ঘরে ঢুকে তা ভেঙ্গে তার খান্যদ্রব্য লুটপাট করুক? বস্তুর লোকদের পশুর স্তনসমূহে তাদের খাবার সঞ্চিত থাকে। কাজেই মালিকের অনুমতি ছাড়া তার পশুর দুধ দোহন করবে না।

【96】

নেতার আনুগত্য প্রসঙ্গে

ইবনু জুরাইজ (রহঃ) (আল্লাহর বাণী) “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো, রসূলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের নেতৃবৃন্দের প্রতিও” (সূরাহ আন-নিসাঃ আয়াত ৫৯)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ক্বায়িস ইবনু ‘আদী (রাঃ) কে একটি অভিযানে ক্ষুদ্র বাহিনীর সেনাপতি করে পাঠান। এ সময় ‘আবদুল্লাহকে উপলক্ষ করে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। ‘আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সেনাদল প্রেরণ করলেন এবং একজনকে এর সেনাপতি বানিয়ে তাদেরকে সেনাপতির কথা শোনার ও আনুগত্য করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর ঐ সেনাপতি আগুন জ্বালিয়ে তাদেরকে তাতে ঝাঁপ দেয়ার নির্দেশ দিলেন। একদল লোক তাতে ঝাঁপ দিতে অস্বীকার করে বললো, আমরা তো আগুন থেকেই পালিয়াছি (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্যই ইসলাম কবুল করেছি)। আবার কিছু লোক আগুনে ঝাঁপ দেয়ার মনস্থ করলো। বিষয়টি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কানে পৌঁছালে তিনি বললেনঃ তারা যদি আগুনে ঝাঁপ দিতো তাহলে চিরস্থায়ী জাহান্নামী হয়ে যেতো। তিনি আরো বললেনঃ আল্লাহর অবাধ্যতায় কারোর আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবল সৎ কাজে। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ নেতা পাপ কাজের নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত তার নির্দেশ শোনা এবং আনুগত্য করা মুসলিম ব্যক্তির অবশ্য কর্তব্য, চাই তার মনঃপূত হোক বা না হোক। আর নেতা যখন পাপকাজের নির্দেশ দিবে তখন তার নির্দেশ শোনা ও আনুগত্য করা যাবে না। ‘উক্ববাহ ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি ক্ষুদ্র সেনাদল অভিযানে পাঠালেন। আমি তাদের একজনকে একটি তরবারি দিলাম। লোকটি অভিযান থেকে ফিরে এসে আমাকে বললো, তুমি যদি দেখতে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের (অযোগ্যতার কারণে) কিভাবে তিরস্কার করেছেন! তিনি বলেছেনঃ আমি যখন তোমাদের একজনকে (অধিনায়ক করে) পাঠালাম, অথচ সে আমার নির্দেশ মোতাবেক চললো না, তখন আমার নির্দেশ কার্যকর করার জন্য অন্য কাউকে কেন তার স্থলাভিষিক্ত করলে না। তোমরা কি এতই অপারগ ছিলে?

【97】

সৈন্যদের এক স্থানে সমবেত থাকার নির্দেশ

আবূ সা‘লাবাহ আল-খুশানী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে সেনাবাহিনীর লোকজন যখন কোন স্থানে (বিশ্রামের জন্য) নামতেন তখন তারা বিভিন্ন গিরিপথে ও উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়তেন। সেজন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এসব গিরিপথে ও পাহাড়ী উপত্যকায় তোমাদের বিভক্ত হয়ে পড়াটা শয়তানের ষড়যন্ত্র। (বর্ণনাকারী বলেন) এরপর থেকে যে স্থানেই তিনি নামতেন, দলের লোকজন একত্রে অবস্থান করতো। এমনকি এরূপ বলা হতো যে, যদি একটি কাপড় তাদের উপর বিছিয়ে দেয়া হয় তাদের সবাইকে এর মধ্যে ঢেকে নেয়া সম্ভব। সাহল ইবনু মু‘আয ইবনু আনাস আল-জুহানীর হতে তার পিতা তিনি (মু‘আয) বলেন, আমি আল্লাহর নাবীর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে অমুক অমুক যুদ্ধে যোগদান করেছি। একদা সৈনিকেরা (বিক্ষিপ্তভাবে তাঁবু ফেলে) স্থান সংকীর্ণ ও পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সাহাবীকে লোকদের মাঝে ঘোষণা দেয়ার জন্য প্রেরণ করলেনঃ যে লোক স্থান সংকীর্ণ করেছে এবং যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দিয়াছে, তার জিহাদ নেই। সাহল ইবনু মু‘আয (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর নাবীর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। এরপর বাকী অংশ উপরের হাদীসের অনুরূপ। আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি।

【98】

শত্রুর মুখোমুখি হওয়ার আশা করা অনুচিত

‘উমার ইবনু ‘উবাইদুল্লাহর মুক্ত দাস সালিম আবূন নাদর (রহঃ) তিনি ‘উমারের সচিব ছিলেন। তিনি বলেন, ‘উমার (রহঃ) হারূরার যুদ্ধে রওয়ানা হলে ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ‘আওফা (রাঃ) তাকে পত্র লিখে জানালেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন কোন যুদ্ধে শত্রুর সম্মুখীন হয়েছেন, তিনি বলেছেনঃ “হে লোকসকল! তোমরা শত্রুবাহিনীর সাক্ষাৎ কামনা করো না, বরং আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করো। যখন তোমরা শত্রুর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে, ধৈর্য ধারণ করবে। আর জেনে রাখো, তরবারির ছায়ার নিচে জান্নাত”। অতঃপর তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি কিতাব অবতীর্ণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী এবং শত্রুবাহিনীকে পর্যুদন্তকারী, আপনি তাদেরকে পরাজিত করুন এবং তাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।”

【99】

শত্রুর মোকাবেলার সময় যে দু‘আ পড়তে হয়

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধ আরম্ভের সময় বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আপনিই আমার শক্তির উৎস ও সাহায্যকারী, আপনার সাহায্যেই আমি কৌশল অবলম্বন করি, আপনার সাহায্যেই বিজয়ী হই এবং আপনার সাহায্যেই যুদ্ধ করি”।

【100】

মুশরিকদের প্রতি ইসলাম গ্রহণের আহবান

ইবনু ‘আওন (রহঃ) তিনি বলেন, আমি যুদ্ধের সময় মুশরিকদের ইসলাম গ্রহণের দা‘ওয়াত দেয়া সম্পর্কে জানতে চেয়ে নাফি’ (রহঃ) এর নিকট পত্র লিখলাম। তিনি আমাকে লিখে জানালেন, এ নিয়ম ছিল ইসলামের প্রাথমিক যুগে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনী মুসত্বালিকের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়েছেন। অথচ তারা মুসলিমদের এরূপ আক্রমণ সম্পর্কে কিছুই জানতো না। তাদের পশুগুলো তখন পানি পান করছিল। এমতাবস্থায় অতর্কিত আক্রমণ করে তিনি তাদের যুদ্ধে সক্ষম ব্যক্তিদের হত্যা করলেন এবং অবশিষ্টদের বন্দী করলেন। আর সেদিনই জুয়াইরিয়্যাহ বিনতুল হারিস তার হাতে বন্দী হন। এ ঘটনা আমার কাছে ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি সেদিন ঐ সৈন্যবাহিনীতে শরীক ছিলেন। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এটি একটি উত্তম হাদীস। ইবনু ‘আওন (রহঃ) হাদীসটি নাফি’ (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন। এ হাদীস বর্ণনায় তার সাথে কেউ অংশগ্রহণ করেননি। আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাজর সলাতের সময় আক্রমণ করতেন এবং আযান শোনার প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। তিনি আযান শুনতে পেলে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকতেন (জনপদে মুসলিম থাকার কারণে), অন্যথায় (আযান না শোনা গেলে) তিনি আক্রমণ চালাতেন। ইবনু ‘ইসাম আল-মুযানী (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের একটি ক্ষুদ্র বাহিনী প্রেরণের সময় বললেনঃ জনপদে কোন মাসজিদ দেখতে পেলে কিংবা মুয়াজ্জিনের আযান ধবনি শুনতে পেলে কাউকে হত্যা করবে না। দুর্বলঃ মিশকাত (৩৯৩৫), যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (২৬৭/১৬০৫)।

【101】

যুদ্ধে কৌশল অবলম্বন করা

‘আমর (রহঃ) তিনি জাবির (রাঃ) এর নিকট শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যুদ্ধ হচ্ছে ধোঁকা বা রণকৌশল। কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন দিকে যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলে তা অন্যদের থেকে গোপন রাখতেন। তিনি বলতেনঃ যুদ্ধ একটি ধোঁকা বা কৌশল মাত্র।

【102】

গোপনে নৈশ আক্রমণ করা

ইয়্যাস ইবনু সালামাহ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি (সালামাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুদ্ধে আবূ বাকর (রাঃ) কে সেনাপতি নিয়োগ দিলেন। আমরা রাতের বেলা মুশরিকদের উপর আক্রমণ করে তাদেরকে হত্যা করলাম। ঐ রাতে আমাদের সাংকেতিক ডাক ছিল ‘আমিত, আমিত’। সালামাহ (রাঃ) বলেন, ঐ রাতে আমি নিজ হাতে সাতজন মুশরিক নেতাকে হত্যা করেছি।

【103】

সেনাবাহিনীর পিছনে অবস্থান করা

আবূয যুবাইর (রহঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তাদেরকে বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে কাফেলার পিছনে অবস্থান করতেন। তিনি দুর্বলদের নিজের বাহনে পিছনে উঠিয়ে নিতেন এবং তাদের জন্য দু‘আ করতেন।

【104】

মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ চলবে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি লোকদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ না তারা এ সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই”। তারা এ কালেমা পাঠ করলে তাদের জীবন ও সম্পদ আমার থেকে নিরাপদ থাকবে। তবে এ কালেমার হকের (ইসলামের দণ্ডবিধির) কথা ভিন্ন। তাদের চূড়ান্ত হিসাব মহান আল্লাহর উপর ন্যস্ত। সহীহ মুতাওয়াতির। হাদীসটি যাকাত অধ্যায়ের প্রথম দিকে গত হয়েছে। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি লোকদের বিরুদ্ধে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ না তারা এ সাক্ষ্য দেয় যে, “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল এবং আমাদের ক্বিবলাহ্‌কে নিজেদের ক্বিবলাহ না মানবে, আমাদের নিয়মে যবেহকৃত পশু না খাবে এবং আমাদের সলাত না পড়বে। তারা এগুলো করলে তাদের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি করা আমাদের জন্য বৈধ নয়। তবে কোন অপরাধের কারণে ইসলামী বিধানে তাদের শাস্তি হলে তা ভিন্ন কথা। মুসলিমদের প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা তারাও ভোগ করবে এবং মুসলিমদের উপর অর্পিত দায়িত্ব তাদের উপরও বর্তাবে। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি... বাকী অংশ উপরের হাদীসের অনুরূপ। সহীহ। এর পূর্বেরটি দেখুন। উসামাহ ইবনু যায়িদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে আল-হুরূকাত (নামক স্থানে) অভিযানে প্রেরণ করলেন। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে শত্রুরা পালিয়ে গেলো। আমরা তাদের এক ব্যক্তিকে ধরে ফেলতে যখন ঘেরাও করলাম, তখন সে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” পাঠ করলো। এ সত্ত্বেও আমরা তাকে আঘাত করে হত্যা করলাম। পরে ঘটনাটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জানালাম। তিনি বললেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ তোমার বিরুদ্ধে বাদী হলে কে তোমার জন্য সুপারিশ করবে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো তরবারির ভয়ে কালেমা পাঠ করেছে। তিনি বললেনঃ সে তরবারির ভয়েই কালেমা পাঠ করেছে, তা কি তুমি তার অন্তর ফেড়ে দেখেছো? ক্বিয়ামাতের দিন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’-র সামনে কে তোমাকে নাজাত দিবে (বর্ণনাকারী বলেন,) তিনি বারবার একথা বলতে থাকলেন। এমনকি আমার মনে হচ্ছিল, আমি যদি এ দিনটির পূর্বে মুসলিম না হতাম! আল-মিক্বদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রাঃ) তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি কোন কাফিরের মোকাবিলায় লড়তে গিয়ে তার তরবারির আঘাতে আমার একটি হাত কেটে যায়। তারপর সে আমার পাল্টা আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার জন্য কোন গাছে আড়ালে আশ্রয় নিয়ে বলে, ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মুসলিম হয়েছি’- একথা বলার পর হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি তাকে হত্যা করবো? তিনি বললেনঃ না, তাকে হত্যা করো না। আমি আবার বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তো আমার হাত কেটে ফেলেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে হত্যা করো না। কেননা তুমি তাকে হত্যা করলে এ হত্যার পূর্বে তুমি (ঈমান আনার কারণে) যে মর্যাদায় ছিলে, সে ঐ মর্যাদায় পৌছে যাবে। আর এ কালেমা পাঠের পূর্বে সে যে অবস্থায় ছিল, তুমি তার অবস্থায় চলে যাবে।

【105】

কেউ দৃঢ়ভাবে সাজদাহ্‌য় পড়ে থাকলে তাকে হত্যা করা যাবে না

জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাস’আম গোত্রের বিরুদ্ধে একটি ক্ষুদ্র বাহিনী প্রেরণ করলেন। সৈন্যদল সেখানে পৌছে দেখলো যে, ঐ গোত্রের কিছু লোক সাজদাহ্‌য় পড়ে আছে। কিন্তু এ সত্ত্বেও তাদেরকে তাড়াতাড়ি হত্যা করা হলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর কাছে এ সংবাদ পৌছলে তিনি তাদের ওয়ারিশদেরকে অর্ধেক দিয়াত (রক্তপন) প্রদানের নির্দেশ দিলেন। তিনি বললেনঃ আমি ঐ মুসলিম থেকে দায়মুক্ত যারা মুশরিকদের মধ্যে বসবাস করে। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! রক্তপণের অর্ধেক রহিত হওয়ার কারণ কি? তিনি বললেনঃ দুই অঞ্চলের আগুনকে এক দৃষ্টিতে দেখা যাবে না। সহীহ। অর্ধেক দিয়াত সম্পর্কিত বাক্যটি বাদে। ইরওয়া (১২০৭)।

【106】

যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করা সম্পর্কে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, (মহান আল্লাহর বানী): “যদি তোমাদের বিশজন ধৈর্যশীল লোক থাকে, তবে তারা দুইশো (কাফির) ব্যক্তির উপর বিজয়ী হবে” (সূরাহ আল-আনফালঃ আয়াত ৬৫)। এ আয়াত অবতীর্ণ করে আল্লাহ মুসলিমদের উপর ধার্য করে দিলেন যে, একজন মুসলিম সৈন্যের বিরুদ্ধে দশজন কাফির থাকলে সে পালাতে পারবে না। বিষয়টি মুসলিমদের কাছে খবই কঠিন নির্দেশ বলে মনে হলো। অতঃপর তাদের জন্য সহজ হুকুম আসলো। মহান আল্লাহ বলেন, “এখন আল্লাহ তোমাদের প্রতি নির্দেশ হালকা করে দিয়েছেন। তিনি জেনেছেন, এখনো তোমাদের মধ্যে দুর্বলতা আছে। সুতরাং তোমাদের একশো ধৈর্যশীল লোক তাদের দুইশো লোকের উপর বিজয়ী হবে” (সূরাহ আল-আনফালঃ আয়াত ৬৬)। বর্ণনাকারী আবূ তাওবাহ (রহঃ) ‘ইয়াগলিবূ মিআতাইন’ পর্যন্ত পড়লেন। ইবনু ‘আব্বাস বলেন,আল্লাহ যখন তাদের সংখ্যা কমিয়ে দিলেন, সেই পরিমাণে তাদের ধৈর্যও কমে গেলো। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক প্রেরিত কোন এক সামরিক অভিযানকারী দলের সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, সৈন্যরা (কৌশলগত কারণে) পলায়ন করলে আমিও তাদের সাথে আত্মগোপন করি। অতঃপর বিপদমুক্ত হয়ে বাইরে এসে পরামর্শ করি, এখন কি করা যায়? আমরা তো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালানোর কারণে আল্লাহর অসন্তুষ্টির পাত্র হয়েছি। আমরা বললাম, চলো আমরা মদিনাহ্‌য় গিয়ে আত্মগোপন করে থাকি যেন কেউ আমাদের দেখতে না পায়। দ্বিতীয়বার জিহাদের সুযোগ এলে আমরা তাতে যোগদান করবো। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা মদিনাহ্‌য় প্রবেশ করে পরস্পর বলাবলি করলাম, আমরা যদি নিজেদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে পেশ করি এবং আমাদের জন্য যদি তাওবাহ্‌র সুযোগ থাকে তাহলে মদিনায় থেকে যাবো। এর বিপরীত কিছু হলে মাদীনাহ্‌ ছেড়ে চলে যাবো। তিনি (ইবনু ‘উমার) বলেন, আমরা ফাজ্‌রের সলাতের পূর্বেই (মাসজিদে) গিয়ে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপেক্ষায় বসে থাকলাম। অতঃপর তিনি বেরিয়ে এলে আমরা দাঁড়িয়ে বললাম, আমরা তো পলাতক সৈনিক। তিনি আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেনঃ না, বরং তোমরা পুনরায় যুদ্ধে যোগদানকারী। ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমরা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর হাতে চুমা দিলাম। তিনি বললেনঃ আমি মুসলিমদের আশ্রয়স্থল। দুর্বলঃ ইরওয়া (১২০৩)। আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধের দিন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ “যে ব্যক্তি সেদিন পশ্চাঁদমুখী হয়ে পলায়ন করবে”।(সূরাহ আল-আনফালঃ ১৬)।

【107】

মুসলিম বন্দীকে কুফরী করতে বাধ্য করা হলে

খাব্বাব ইবনুল আরাত্তি (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট আসলাম। তখন তিনি তাঁর চাঁদরকে বালিশ বানিয়ে তাতে ঠেস দিয়ে কা’বা ঘরের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা তাঁর নিকট অভিযোগ করে বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য সাহায্য চাইবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দু’আ করবেনা না? অতঃপর তিনি উঠে বসলেন। তাঁর মুখমন্ডল রঙিন হয়ে গেলো। তিনি বললেনঃ তোমাদের পূর্বে যারা ছিল, তাদের কাউকে ধরে নিয়ে এসে তাকে গর্ত করে তাতে পুঁতে ফেলা হতো। অতঃপর করাত এনে তার মাথার উপর রেখে তা দিয়ে তাকে দ্বিখন্ডিত করা হতো। এরূপ নির্মম অত্যাচারও তাকে তার দ্বীন থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। আল্লাহর শপথ! তিনি এই ইসলামকে পূর্ণতা দান করবেন। এমকি ভ্রমণকারী সান’আ হতে হাদারামাওত পর্যন্ত নিরাপদে যাতায়াত করবে। আল্লাহর ভয় এবং তার মেষপালের জন্য বাঘের ভয় ব্যতীত তার জন্য অন্য কোন ভয় থাকবে না। অথচ তোমরা তাড়াহুড়া করছো।

【108】

গুপ্তচর মুসলিম হলে তার বিধান

‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে, আয-যুবাইরকে এবং আল-মিক্বদাদ (রাঃ)-কে পাঠিয়ে দিয়ে বললেনঃ তোমরা ‘রওদা খাখ’ নামক বাগানের নিকট গিয়ে পৌঁছবে। সেখানে গিয়ে এক বৃদ্ধা মহিলাকে পাবে। তার নিকটে একটা চিঠি রয়েছে, তোমরা তা উদ্ধার করে আনবে। আমাদের ঘোড়াগুলো নিয়ে আমরা দ্রুত ছুটে চললাম এবং রওদায় পৌঁছে এক বৃদ্ধা মহিলাকে পেয়ে তাকে বললাম, চিঠিটি বের করো। সে বললো, আমার কাছে কোন চিঠি নেই। আমি বললাম, হয় চিঠি বের করে দাও, নতুবা তোমার পরনের কাপড় খুলে খোঁজ করবো। ‘আলী (রাঃ) বলেন, সে তার চুলের খোপার মধ্য থেকে চিঠিটি বের করে দিলো। আমরা তা নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হলাম। দেখা গেলো যে, তা হাত্বিব ইবনু আবূ বালতাআহ কর্তৃক লিখিত মক্কায় কতিপয় মুশরিকের নামে পাঠানো চিঠি। তাতে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামরিক তৎপরতার কিছু তথ্য উল্লিখিত ছিলো। তিনি হাত্বিবকে বললেনঃ এটা কি করলে? সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমার ব্যাপারে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিবেন না। কুরাইশদের সাথে আমার সম্পর্কযুক্ত থাকলেও প্রকৃতপক্ষে আমি কুরাইশ বংশীয় নই। এখানকার বহু মুহাজিরদের মক্কার কুরাইশদের সাথে আত্মীয়তা রয়েছে। তারা তাদের মাধ্যমে মক্কায় অবস্থিত স্বীয় পরিবারের নিরাপত্তা বিধান করে থাকেন। কিন্তু আমার তাদের সাথে বংশগত আত্মীয়তা নেই। তাই আমি তাদের কিছু উপকার করে আমার পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করার মনস্থ করেছিলাম। হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ! আমি কুফরী বশতঃ কিছু করিনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে তোমাদেরকে সত্যই বলেছে। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমাকে এই মুনাফিকের গর্দান কেটে ফেলার অনুমতি দিন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে তো বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলো। তুমি কি অবহিত নও যে, আল্লাহ নিজেই বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি সুসংবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ “তোমরা যা ইচ্ছে হয় করো, আমি তোমাদের অবশ্যই ক্ষমা করে দিয়েছি। ‘আলী (রাঃ) তিনি পূর্ববর্তী ঘটনাটি সম্পর্কে বলেন, হাত্বিব মক্কাবাসীদের প্রতি একটি পত্র লিখলো। তাতে লিখা ছিল, ‘মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন’। এ বর্ণনায় ‘আলী আরো বললেনঃ মহিলাটি বললো, ‘আমার কাছে কোন চিঠি নেই’। আমরা তার উট বসিয়ে খোঁজ করেও তার কাছে কোন চিঠি পেলাম না। ‘আলী বললেন, সেই সত্ত্বার শপথ! যাঁর নামে শপথ করা হয়! হয়ত তুমি চিঠি বের করে দিবে, নতুবা আমি অবশ্যই তোমাকে হত্যা করবো। এরপর বর্ণনাকারী বাকী হাদীস বর্ণনা করেন।

【109】

যিম্মী গুপ্তচর সম্পর্কে

ফুরাত ইবনু হাইয়ান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। সে আবূ সুফিয়ানের গুপ্তচর ও এক আনসার লোকের আশ্রিত ব্যক্তি ছিলো। একদা আনসারদের এক সমাবেশের নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় সে বললো, আমি মুসলিম। জনৈক আনসার বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দিচ্ছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যাদেরকে আমি তাদের ঈমানের উপর ছেড়ে দেই। ফুরাত ইবনু হাইয়ান তাদেরই একজন।

【110】

নিরাপত্তাপ্রাপ্ত অমুসলিম ব্যক্তির মুসলিমদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি

ইয়াস ইবনু সালামাহ ইবনু আকওয়া’ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে ছিলেন। এমতবস্থায় মুশরিকদের এক গুপ্তচর তাঁর কাছে এলো এবং কিছু সময় তাঁর সাহাবীদের নিকট বসে থাকার পর গোপনে সরে পড়লো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে খুঁজে বের করো এবং তাকে হত্যা করো। সর্বপ্রথম আমিই তাকে পেলাম এবং তাকে হত্যা করে তার মাল-পত্র কেড়ে নিলাম। পরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকেই ঐ মাল-পত্রগুলো দিয়ে দিলেন। ইয়াস ইবনু সালামাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা সালামাহ (রাঃ) আমাকে বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গী হয়ে হাওয়াযিন গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদান করেছি। আমরা দুপুরের খাবার খাচ্ছিলাম। আর আমাদের অধিকাংশ লোক ছিল পদাতিক ও দুর্বল। ইতোমধ্যে এক ব্যক্তি লাল রঙের একটি উটে চড়ে আমাদের কাছে এলো। সে উটের কোমর থেকে রশি খুলে তার উটটিকে বেঁধে রেখে লোকদের সঙ্গে খেতে বসলো। সে তাদের শারীরিক দুর্বলতা ও বাহনের স্বল্পতা লক্ষ্য করে দৌড়ে তার উটের কাছে গিয়ে উটের রশি খুলে সেটাকে বসিয়ে তার পিঠে চড়লো। অতঃপর তার উট হাঁকিয়ে চলে গেলো। আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তি ছাই রঙের একটি উষ্ট্রী নিয়ে তার পিছু করলো। দলের মধ্যে এটাই ছিল সেরা সওয়ারী। বর্ণনাকারী বলেন, আমি দৌড়ে তার পিছনে ছুটলাম। আমি যখন তার নিকট পৌঁছি তখন উষ্ট্রীর মাথা ছিল ঐ গুপ্তচরের উটের পাছার নিকটে। আমি সামনে এগিয়ে তার উটের পিছু ধরে ফেলি এবং আমি আরো এগিয়ে তার উটের লাগাম ধরে ফেলি এবং উটটিকে বসিয়ে দেই। উটটি হাঁটু গেড়ে বসলে আমি খাপ থেকে তরবারী বের করে লোকটির মাথায় আঘাত হানলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আমি তার বাহন ও মালপত্র নিয়ে আসলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকলের মাঝখান দিয়ে আমার সামনে এসে বললেনঃ কে লোকটিকে হত্যা করেছে? লোকেরা বললো, সালামাহ ইবনুল আকওয়া’। তিনি বললেনঃ নিহতের সব মাল-পত্র তার প্রাপ্য।

【111】

দুশমনের মুখোমুখি হওয়ার উত্তম সময় কোনটি?

মা’ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) নু’মান ইবনু মুক্বাররিন (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। তিনি দিনের প্রথমভাগে যুদ্ধে আরম্ভ না করলে তা বিলম্বিত করতেন যতক্ষণ না সূর্য ঢলে পড়তো, বাতাস শুরু হতো এবং সাহায্য অবতীর্ণ হতো।

【112】

যুদ্ধের সময় নীরব থাকার নির্দেশ

ক্বায়িস উমামাহ ইবনু ‘আব্বাস (রহঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীগণ যুদ্ধের সময় উচ্চস্বরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। আবূ বুরদাহ (রাঃ) হতে তার পিতার থেকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্র পুর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।

【113】

যুদ্ধের সময় বাহন থেকে অবতরণ

আল-বারাআ (রাঃ) তিনি বলেন, হুনাইনের যুদ্ধের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুশরিকদের মুখোমুখি হন এবং মুসলিমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, তখন তিনি তাঁর খচ্চর থেক নেমে পায়ে হাঁটতে লাগলেন।

【114】

যুদ্ধের সময় ময়দানে অহংকার প্রদর্শন

জাবির ইবনু আতীক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ আল্লাহ এক প্রকার আত্মমর্যাদা পছন্দ করেন, এবং আরেক প্রকার আত্মমর্যাদা তিনি ঘৃণা করেন। মহান আল্লাহ যেটা পছন্দ করেন তা হলো, সন্দেহজনক বিষয় বর্জনের আত্মসম্মানবোধ। সন্দেহজনক বিষয় ব্যতীত অন্য ক্ষেত্রে আত্মসম্মানবোধ প্রদর্শনকে আল্লাহ ঘৃণা করেন। অনুরূপভাবে, এক প্রকার অহংকার প্রদর্শনকে আল্লাহ অপছন্দ করেন, আর এক প্রকার অহংকারকে পছন্দ করেন। আল্লাহ যে অহংকার প্রদর্শন পছন্দ করেন তা হলো, যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুর মোকাবিলায় অহংকার প্রদর্শন করা (যেন দুশমন ভয় পায়) এবং সদাক্বাহ্‌ দেয়ার সময় নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করা। মহান আল্লাহ যেরূপ অহংকারকে ঘৃণা করেন তা হলো, যুলুম-অত্যাচার ও বিদ্রোহমূলক কাজে অহংকার প্রদর্শন করা। বর্ণনাকারী মূসা স্বীয় বর্ণনায় খুয়ালা শব্দের পর ফাখর (অহংকার) শব্দ উল্লেখ করেছেন।

【115】

শত্রু দ্বারা ঘেরাও হলে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আসিম ইবনু সাবিতের নেতৃত্বে দশজনকে গুপ্তচর হিসেবে পাঠালেন। হুযাইল গোত্রের প্রায় একশো তীরন্দাজ তাদের মোকাবিলা করতে বের হলো। ‘আসিম (রাঃ) তাদের আগমন টের পেয়ে সাথীদের নিয়ে একটি টিলায় আত্মগোপন করলেন। শত্রুরা তাদেরকে বললো, তোমরা নেমে এসে আত্মসমর্পণ করো। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, তোমাদের কাউকে হত্যা করবো না। ‘আসিম (রাঃ) বললেন, আমি কাফিরদের দেয়া নিরাপত্তা ওয়াদায় আমি টিলা থেকে নামবো না। তারা তীর ছুঁড়ে ‘আসিম (রাঃ)-সহ সাতজনকে শহীদ করলো। বাকী তিনজন কাফিরদের প্রতিশ্রুতির উপর নির্ভর করে টিলা থেকে নেমে আসেন। এ তিনজন হলেন খুবাইব(রাঃ), যায়িদ ইবনু দাসিনাহ (রাঃ) এবং আরেকজন (‘আবদুল্লাহ ইবনু তারিক)। কাফিররা তাদেরকে কাবু করে ধনুকের রশি খুলে তা দিয়ে তাদেরকে শক্ত করে বাঁধলো। এ দেখে তৃতীয় জন বললেন, এটা তো প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের সঙ্গে যাবো না। আমি আমার (নিহত) সাথীদের সাথে মিলিত হওয়াই পছন্দ করি। কাফিররা তাঁকে টেনে-হিঁচড়ে নিতে চাইলে তিনি যেতে অস্বীকার করায় তারা তাকেও শহীদ করলো। খুবাইব (রাঃ) বন্দী অবস্থায় থাকলেন। কাফিররা তাকে হত্যার জন্য একত্র হলে খুবাইব (রাঃ) নাভীর নীচের চুল পরিষ্কার করার জন্য একটা ক্ষুর চেয়ে নিলেন। কাফিররা যখন তাকে হত্যা করার জন্য বের হলো, খুবাইব (রাঃ) তাদেরকে বললেন, আমাকে দুই রাক’আত সলাত আদায়ের সুযোগ দাও। অতঃপর তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি যদি তোমাদের এরূপ ধারণা করার আশংকা না করতাম যে, আমি ভয় পেয়েছি, তাহলে আমি সলাত আরো দীর্ঘায়িত করতাম। আয-যুহরী (রহঃ) তিনি বলেন, আমাকে ‘আমর ইবনু আবূ সুফিয়ান ইবনু উসাইদ ইবনু জারিয়া আস-সাক্বাফী এ হাদীস জানিয়েছেন। তিনি আবূ হুরায়রার (রাঃ) সাথী ছিলেন। উল্লেখিত সানাদে তিনি উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

【116】

আক্রমণের উদ্দেশ্যে ওঁৎ পেতে থাকা

আল-বারাআ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুলাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের যুদ্ধের দিন ‘আবদুল্লাহ ইবনু জুবাইরের (রাঃ) পঞ্চাশজন তীরন্দাজের নেতা নিযুক্ত করলেন। তিনি তাদেরকে সতর্কতামূলক বললেনঃ যদি তোমরা দেখ পাখি আমাদের গোশত ছিঁড়ে খাচ্ছে, তবুও তোমাদের ডেকে না পাঠানো পর্যন্ত তোমরা এ স্থান ত্যাগ করবে না। আর যদি দেখো, আমরা শত্রুদের পরাজিত করেছি, তবুও ডেকে না পাঠানো পর্যন্ত তোমরা তোমাদের স্থান ত্যাগ করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহ মুশরিকদের পর্যুদস্ত করলেন। আল্লাহর শপথ! আমি দেখলাম, শত্রুপক্ষের নারীরা (পালানোর জন্য) পাহাড়ে উঠছে। ‘আবদুল্লাহ ইবনু জুবাইরের (রাঃ) সাথীরা বললো, হে লোকেরা! গণীমাতের মাল সংগ্রহ করো। তোমারদের সাথীরা যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে। এখনও কিসের জন্য অপেক্ষা করছো? একথা শুনে ‘আবদুল্লাহ ইবনু জুবাইর (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ কি তোমরা ভুলে গেছো? তারা বললো, আল্লাহর শপথ! আমরা নিশ্চয়ই যাবো এবং গনীমাত সংগ্রহ করবো। তারা চলে গেলো। ফলে তাদের মুখের উপর মারা হলো এবং তারা পরাজিত হলো।

【117】

যুদ্ধক্ষেত্রে সারিবদ্ধভাবে অবস্থান করা

হামযাহ ইবনু আবূ উসাইদ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি (পিতা) বলেন, আমরা বদর প্রান্তরে সারিবদ্ধ হওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ শত্রুসৈন্য তোমাদের নাগালে এসে গেলে তোমরা তীর ছুড়বে এবং কিছু তীর অবশিষ্ট রাখবে।

【118】

শত্রু নিকটবর্তী হলে তরবারি চালানো

মালিক ইবনু হামযাহ ইবনু আবূ উসাইদ আস- সাইদী (রহঃ) হতে তার পিতা ও দাদা তিনি (দাদা) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদরের যুদ্ধের দিন বললেনঃ শত্রুরা তীরের নাগালে এসে গেলে তোমাদের ধনুক থেকে তীর ছুড়বে এবং তোমাদের তরবারির কাছাকাছি না আসা পর্যন্ত তরবারি চালাবে না। দুর্বলঃ মিশকাত (৩৯৫৪)।

【119】

মল্লযুদ্ধ সম্পর্কে

‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, বদরের দিন যুদ্ধের ময়দানে ‘উতবাহ ইবনু রবী’আহ অগ্রসর হলো এবং তার পিছনে তার ছেলে ও তার ভাই আসলো। ‘উতবাহ ডেকে বললো, আমার মোকাবিলা করার মত কে আছো? কতিপয় আনসার যুবক তার জবাব দিলে ‘উতবাহ বললো, তোমরা কে? তারা তাকে জবাব দিয়ে জানালো। সে বললো, তোমাদের সাথে যুদ্ধ করার ইচ্ছা আমাদের নেই। আমরা আমাদের চাচাতো ভাইদের চাই। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ উঠো হে আলী, হে হামযা, ওঠো হে ‘উবাইদাহ ইবনুল হারিস। হামযাহ (রাঃ) ‘উতবাহ্‌র দিকে এবং আমি (‘আলী) শইবাহ্‌র দিকে অগ্রসর হয়ে উভয়কে হত্যা করলাম। ‘উবাইদাহ (রাঃ) ও ওয়ালীদের মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকলো। দু’জনেই দু’জনকে আহত করলো। অতঃপর আমরা ওয়ালীদের দিকে অগ্রসর হয়ে তাকে হত্যা করলাম এবং আহত ‘উবাইদাহ্‌কে তুলে আনলাম।

【120】

অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্তন নিষেধ

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে নিস্কলুষ হত্যাকারী ঈমানদার বটে। দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৯৬৩), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৫৮৪/২৬৮২) আল হাইয়্যজ (রহঃ) ‘ইমরানের (রাঃ) একটি গোলাম পালিয়ে গেলো। তিনি আল্লাহর নামে মানত করলেন যে, তিনি তাকে কাবু করতে পারলে তার হাত কেটে দিবেন। তিনি আমাকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করতে সামুরাহ ইবনু জুনদুবের (রাঃ) নিকট পাঠান। আমি তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে দান-খয়রাতের প্রতি উৎসাহিত করতেন এবং মানুষের অঙ্গ–প্রতঙ্গ কেটে বিকৃত করতে নিষেধ করতেন। অতঃপর আমি ‘ইমরান ইবনু হুসাইনের (রাঃ) নিকট আসি এবং তাকেও একই বিষয়ে জিজ্ঞেস করি। তিনিও বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে দান খয়রাত করতে উৎসাহিত করতেন আর মানুষের নাক-কান বিকৃত করা নিষেধ করতেন।

【121】

নারী হত্যা সম্পর্কে

‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন এক যুদ্ধে এক মহিলাকে নিহত অবস্থায় পাওয়া গেলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারী ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করলেন। রাবাহ ইবনু রবী’ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা কোন এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। তিনি লোকদেরকে একটি স্থানে ভিড় জমাতে দেখে এক লোককে পাঠিয়ে বললেনঃ দেখে আসো, ঐ লোকেরা কি জন্য ভিড় জমিয়েছে। লোকটি এসে বললো, তারা একটি নিহত মহিলার লাশের কাছে একত্র হয়েছে। তিনি বললেনঃ এ মহিলা তো যুদ্ধ করেনি। একে কেন হত্যা করা হলো! বর্ণনাকারী বলেন, খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ) অগ্রবর্তী দলের নেতৃত্বে ছিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে বললেনঃ খালিদকে বলো, নারী এবং শ্রমিককে হত্যা করবে না। সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (যোদ্ধাবাজ) মুশরিক বৃদ্ধদের হত্যা করবে এবং তাদের অল্প বয়স্কদের অবশিষ্ট রাখবে। দুর্বল: যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (২৭২/১৬৪৮) এ শব্দে: মিশকাত (৩৯৫২), যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (১০৬৩)। ‘আয়ীশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, বনী কুরাইযার কোন মহিলাকে হত্যা করা হয়নি। তবে এক মহিলাকে হত্যা করা হয়। সে আমার পাশে বসে কথা বলছিল এবং অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিলো। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাজারে তাদের পুরুষদেরকে হত্যা করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি তার নাম ধরে ডেকে বললো, অমুক মহিলাটি কোথায়? সে বললো, আমি। আমি (‘আয়ীশাহ) বললাম, তোমার কি হলো? (ডাকছো কেন?) সে বললো, আমি যা ঘটিয়েছি সেজন্য (সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়েছিলো)। ‘আয়ীশাহ (রাঃ) বলেন, তাকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হলো। আমি ঘটনাটি আজও ভুলতে পারিনি। আমি তার এ আচরণে অবাক হয়েছিলাম যে, তাকে হত্যা করা হবে একথা জেনেও সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছিলো। আস-সা’ব ইবনু জাস্‌সামাহ (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, মুশরিকদের বাসস্থানে রাতে আক্রমন করলে তাদের নারী ও শিশুরাও নিহত হতে পারে, (এমতাবস্থায় এর হুকুম কি)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তারাও তাদের অন্তর্ভুক্ত। ‘আমর ইবনু দীনার (রহঃ) বললেন, তারা তাদের পিতাদের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারী ও শিশুদের হত্যা করা নিষেধ করেছেন।

【122】

শত্রুকে আগুনে পোড়ানো অপছন্দনীয়

মুহাম্মাদ ইবনু হামযাহ আল-আসলামী (রহঃ) হতে তার পিতা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক অভিযানে তার পিতাকে সেনাপতি নিযুক্ত করেন। হামযাহ (রাঃ) বলেন, আমরা অভিযানে বের হওয়ার সময় তিনি বলে দিলেন যে, অমুক ব্যক্তিকে পেলে আগুন দিয়ে পোড়াবে। আমি পিঠ ফিরে চলে যাওয়ার সময় তিনি আমাকে পুনরায় ডাকলেন। আমি তাঁর নিকট ফিরে এলে তিনি বললেনঃ তোমরা অমুক ব্যক্তিকে পেলে হত্যা করবে, আগুনে পোড়াবে না। কেননা কেবল আগুনের প্রভুই আগুন দিয়ে শাস্তি দেয়ার অধিকারী, অন্য কেউ নয়। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে এক অভিযানে প্রেরণের সময় বললেনঃ তোমরা যদি অমুক অমুক ব্যক্তিকে পাও ... অতঃপর বাকী অংশ উপরের হাদীসের অনুরুপ। ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর সঙ্গী ছিলাম। তিনি তাঁর প্রয়োজনে অন্যত্র গেলেন। আমরা দু’টি বাচ্চাসহ একটি পাখি দেখতে পেয়ে বাচ্চা দুটোকে ধরে নিলাম। মা পাখিটা সাথে সাথে আসলো এবং পাখা ঝাঁপটিয়ে বাচ্চার জন্য অস্থিরতা প্রকাশ করতে লাগলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে এসে বললেনঃ কে এর বাচ্চা নিয়ে এসে একে অস্থিরতায় ফেলেছে? বাচ্চাগুলো এদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দাও। তিনি আমাদের পুড়িয়ে দেয়া একটা পিঁপড়ার ঢিবি দেখতে পেয়ে বললেনঃকে এগুলো পুড়িয়েছে? আমরা বললাম, আমরা। তিনি বললেনঃআগুনের রব্ব ব্যতীত আগুন দিয়ে কিছুকে শাস্তি দেয়ার কারো অধিকার নেই।

【123】

কেউ তার পশু গনীমতের অর্ধেক বা অংশবিশেষ দেয়ার শর্তে ভাড়া দিলে

ওয়াসিলাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূকের যুদ্ধে অংশ গ্রহণের ঘোষণা দিলেন। ইতোমধ্যে আমি আমার পরিবারের সঙ্গে একত্রে ফিরে আসি। এরই মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীদের প্রথম দলটি রওয়ানা হয়ে গেছে। আমি মাদীনাহ্‌র অলিগলিতে ডেকে ডেকে বললাম, এমন কেউ আছে কি একজনকে বাহন দিবে, তার জন্য তার গনিমাতের অংশ থাকবে। এক প্রবীণ আনসারী ডেকে বললেন, তার অংশ আমি নিতে চাই। সে আমাদের বাহনের পিছনে চড়বে এবং আমাদের সাথেই খাওয়া-দাওয়া করবে। আমি বললাম, হাঁ, ঠিক আছে। প্রবীণ লোকটি বলেন, তাহলে এসো এবং মহান আল্লাহ্‌র আশু বরকতের উপর ভরসা করে যাত্রা করো। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আমার উত্তম সাথীর সঙ্গে রওয়ানা দিলাম। আল্লাহ আমাদেরকে গনিমাত দান করলেন। আমার ভাগে কিছু উট পড়লো। আমি এগুলো দ্রুত হাকিঁয়ে আমার সেই উত্তম বন্ধুর কাছে নিয়ে আসি। প্রবীণ ব্যক্তি বেরিয়ে এসে তার উটের পালানের উপর বসলেন, তারপর বললেন, এগুলোকে আমার দিকে পিঠ করে হাঁকাও। তিনি পুনরায় বললেন, এগুলো আমার দিকে মুখ উত্তম মনে হয়। তিনি বললেন, এগুলো আপনার সেই মাল যার চুক্তি আমি আপনার সাথে করেছি। তিনি বললেন, হে ভাতিজা! তুমি তোমার উটগুলোকে নিয়ে যাও। গনিমাতের অংশ নেয়ার ইচ্ছা আমার নেই।

【124】

কয়েদীকে শক্ত করে বেধেঁ রাখা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি: আমাদের রব্ব মহান আল্লাহ ঐ লোকদের দেখে বিস্মিত হবেন, যাদেরকে শৃঙ্খলিত অবস্হায় জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। জুনদুব ইবনু মাকীস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুল্লাহ ইবনু গালিব আল-লাইসীকে (রাঃ) একটি অভিযানে পাঠালেন। তাদের সাথে আমিও ছিলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে নির্দেশ দিলেন যে, কাদীদের বনূ মালু্হ গোত্রকে কয়েক দিক থেকে আক্রমন করবে। আমরা রওয়ানা হলাম এবং কাদীদ এলাকায় পৌছে সেখানে আল-আরিস ইবনুল বারসায়া আল–লাইসীর সাক্ষাৎ পেলাম। আমরা তাকে গ্রেফতার করলে সে বললো, আমি ইসলাম কবুলের জন্য রাসূললাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট যাওয়ার উদ্দেশ্য বেড়িয়েছি। আমরা বললাম, তুমি মুসলিম হলে তোমাকে একদিন ও এক রাত বেধেঁ রাখাতে তোমার কোনো ক্ষতি হবে না। আর যদি অন্য কিছু হও তাওলে আমরা তোমাকে শক্ত করে বাধঁবো। অতঃপর আমরা তাকে শক্ত করে বেধেঁ রাখলাম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজদ এলাকায় অশ্বারোহী কাফেলা পাঠালেন। তারা বনী হানিফা্হ গোত্রের সুমামাহ ইবনু ইসাল নামক এক ব্যাক্তিকে ধরে নিয়ে এলো। সে ইয়ামামাবাসীদের নেতা ছিলো। লোকটিকে মাসজিদে নাববীর একটি খুটিঁতে বেধেঁ রাখা হলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছে এসে বললেনঃহে সুমামাহ! তোমার নিকট কি আছে? সে বললো, হে মুহাম্মাদ! আমার কাছে কল্যান আছে। আপনি আমাকে হত্যা করলে এমন এক ব্যাক্তিকে হত্যা করলেন যার রক্তের প্রতিশোধ নেয়া হবে। আর আপনি যদি অনুগ্রহ করেন, তাহলে একজন সন্মানি লোককে অনুগ্রহ করলেন। আপনি সম্পদের আশা করলে যত ইচ্ছে চাইতে পারেন, দেয়া হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলে গেলেন। পরবর্তী সকাল বেলায় তিনি জিজ্ঞেস করলেন: এ সুমামাহ! তুমি তোমার সাথে কেমন আচরনের প্রত্যাশা করো? সে আগের মতই জবাব দিলো। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চলে গেলেন। তৃতীয় দিনের সকাল বেলায় সে একই জবাব দিলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সুমা্মাহকে ছেড়ে দাও। সে মাসজিদের নিকটস্হ খেজুর বাগানে ঢুকে (কুপের পানিতে) গোসল করে মাসজিদে এসে বললো, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি ,আল্লাহ ছারা কনো ইলা্হ নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসূল। বর্ণনাকারী ঈসা বলেন, লাইস (রাঃ) আমাদের জানিয়েছেন, সুমামা্হ বললো, আপনি আমাকে হত্যা করলে একজন অপরাধীকেই হত্যা করলেন। ইয়াহইয়া ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু সা’দ ইবনু যুরারাহ (রাঃ) তিনি (ইয়াহইয়া) বলেন, যখন বদরের যুদ্ধের সময় বন্দীদের আনা হয় তখন সাওদা্হ বিনতু যাম’আহ (রাঃ) ‘আফরা পরিবারের নিকট ‘আফরার ছেলে ‘আওফ ও মুআব্বিজের পাশে উটশালায় ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এটি পর্দার বিধানের পুর্বের ঘটনা। বর্ণনাকারী বলেন, সাওদা্হ (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি তাদের কাছে ছিলাম। আমি ফিরে আসলে বলা হলো, এরা সবাই বন্দী। এদেরকে আনা হয়েছে। আমি নিজের ঘরে এলাম। তখন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ঘরেই ছিলেন। আমাদের ঘরের এক কোনে আবূ ইয়াযীদ সুহাইল ইবনু ‘আমরকে দেখতে পেলাম। তার দুই হাত রশি দিয়ে ঘাড়ের সাথে বাধাঁ। অতঃপর বর্ণনাকারী অবশিষ্ট হাদীস বর্ণনা করেন। আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘আওফ ইবনু ‘আফরা্হ ও মুআব্বিজ ইবনু ‘আফরা্হ (রাঃ) বদর যুদ্ধে আবূ জাহল ইবনু হিশামকে হত্যা করেন। তারা তার বিরুদ্ধে লড়েছেন, আবূ জাহল কে তারা চিনতেন না। তারাও বদর যুদ্ধে নিহত হোন।

【125】

বন্দীদেকে মারধর ও হুমকি দিয়ে তথ্য উদ্ধার করা

আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের যুদ্ধে অংশ গ্রহনের আ্হবান জানালেন। তারা বদর অভিমুখে রওয়ানা হলেন। তার হাজ্জাদ গোত্রের এক কালো কৃতদাস কে কুরাইশদের পানি বহনকারী উটের সংঙ্গে পেয়ে গেলেন। সাহাবায়ী কিরাম তাকে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগলেন। আবূ সুফিআন কোথায় বলো? সে বললো, আল্লাহর শপথ! তার সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। তবে কুরাইশ বাহিনী আসছে, সঙ্গে আবূ জাহল, ’উতবাহ ও শাইবাহ ইবনু রবী’আ্হ এবং উমাইয়াহ ইবনু খালাফ রয়েছে। সে একথা জানালে সাহাবীগণ তাকে মারধর করতে লাগলেন। সে চিৎকার করে বললো, ছাড়ো ছাড়ো! আমি বলছি। তারা তাকে ছেরে দিলে সে বললো, আল্লাহর শপথ! আবূ সুফিয়ান সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। তবে এই কোরাইশ বাহিনী আসছে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সলাতরত ছিলেন। তিনি কথাগুলা শুনলেন। সলাত শেষ করে তিনি বলেন: ঐ সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রান। সে যখন তোমাদের সত্য কথা বলেছে, তোমরা তাকে প্রহার করেছো, আর যখন মিথ্যা বলেছে তখন ছেরে দিয়েছো। কোরাইশ বাহিনী আবূ সুফিয়ানের (কাফেলা) রক্ষা করতে এসেছে। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃএটা আগামীকাল অমুকের নিহত হওয়ার স্হান, এই বলে তিনি যমিনের উপর হাত রাখলেন। এটা আগামীকাল অমুকের নিহত হওয়ার স্হান, এই বলে তিনি নির্দিষ্ট স্হান এর উপর হাত রাখলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, সে সত্তর শপথ যার হাতে প্রান, কাফিরদের কেউই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাত রাখার নির্দিষ্ট স্হান অতিক্রম করেনি (তারা ওই নির্দিষ্ট স্হানে নিহত হয়) অতঃপর রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ মোতাবেক ওদের লাশের পা ধরে টেনে –হেচড়েঁ নিয়ে গিয়ে বদরের একটি অন্ধকার কুপে নিঃক্ষেপ করা হয়।

【126】

বন্দীকে ইসলাম গ্রহনে বাধ্য করা উচিত নয়

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, জাহিলী যুগে যদি কোনো মহিলার সন্তান বেচেঁ না থাকতো তাহলে সে এ মর্মে মানত করতো যে, তার সন্তান বাচলেঁ তাকে ইয়াহুদী ধর্মে দীক্ষিত করাবে। অতঃপর যখন ইয়াহুদী গোত্র বনী নাযীরকে উচ্ছেদ করা হয়, তখন তাদের মধ্যে আনসারদের কতিপয় ঐরুপ সন্তান ছিলো। আনসারগন বললেন, আমরা আমাদের সন্তানদের (ইয়াহুদীদের সাথে) ছেড়ে দিতে পারবো না। তখন মহান আল্লাহর আয়াত অবতীর্ন করলেন, ”দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই। হিদিয়াতের নির্ভূল পথকে ভ্রান্ত পথ হতে সুস্পষ্টভাবে পৃথক করা হয়েছে।” (সুরা্হ আল-বাক্বারা্হ, আয়াত ২৫৬) আবূ দাউদ বলেন, যেসব মহিলাদের সন্তান বেচেঁ থাকে না তাদেরকে ‘মিক্বলাত’ বলা হয়।

【127】

ইসলামের দা’ওয়াত না দিয়ে যুদ্ধবন্দীকে হত্যা করা

সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের দিন চারজন পুরুষ ও দুজন মহিলা ছারা অন্য সবাইকে নিরাপত্তার (ক্ষমার) ঘোষনা দিলেন। তিনি তাদের নামও উল্লেখ করলেন। তন্মধ্যে ইবনু আবূ সারহও ছিলো। অতঃপর বর্ণনাকারী হাদীসের বাকি অংশ বর্ণনা করেন। সা’দ (রাঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ সারহ ‘উসমান ইবনু আ’ফফানের (রাঃ) নিকট আত্নগোপন করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জনসাধারনকে বায়’আত গ্রহনের জন্য আহবান জানালে ‘উসমান (রাঃ) তাকে নিয়ে এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে দাড়ঁ করিয়ে বললেন, হে আল্লাহর নাবী! ’আবদুল্লাহর বায়’আত নিন। তিনি মাথা তুলে তার দিকে পর পর তিনবার তাকালেন, এবং প্রতিবারই অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। তিনবারের পর তিনি ‘আবদুল্লাহর বায়’আত গ্রহন করলেন, অতঃপর সাহাবীদের লক্ষ্য করে বলেন: তোমাদের মধ্যে কি কোন বুদ্ধিনাম লোক ছিলো না, যখন সে আমাকে দেখলো যে আমি বায়’আত নিচ্ছি না, তখন সে তাকে কেনো হত্যা করলো না? সাহাবীগণ বললেন, এ আল্লাহর রাসূল! আপনার মনের ইচ্ছা আমরা উপলব্ধি করতে পারনি। আপনি আমাদেরকে চোখ দিয়ে ইশারা করলেন না কেনো! তিনি বলেন: কোনো নাবীর জন্য চোখের খেয়ানাতকারী হওয়া শোভা পায় না। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ সারহ হলো ‘উসমানের (রাঃ) দুধভাই এবং ওয়ালীদ ইবনু ‘উক্ববাহ তার বৈপিত্রেয় ভাই। ’উসমানের (রাঃ) খিলাফাতের সময় ওয়ালীদ মদ পান করলে তিনি তাকে শাস্তি দেন। সাঈদ ইবনু ইয়ারবূ’ আল-মাখযূমী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের দিন ঘোষনা করেনঃ চার ব্যাক্তির জন্য হারাম শরীফ অথবা এর বাইরে কোথাও নিরাপত্তার অঙ্গীকার নাই। তিনি তাদের নামও বলেন দিলেন। তিনি মাক্বীসের দুই গায়িকা ক্রীতদাসীর নামও উল্লেখ করেন। এদের একজনকে হত্যা দেয়া এবং অপরজন পলায়ন করে। পরবর্তীতে সে ইসলাম গ্রহন করে। আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আমি ইবনুল ‘আলার থেকে এর সানাদ উত্তমরুপে বুঝতে পারিনি। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) মাক্কাহ বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লৌহ শিরস্ত্রান পরিহিত অবস্হায় মাক্কাহতে প্রবেশ করেন। তিনি যখন শিরস্ত্রান খুলেন, তখন এক ব্যাক্তি এসে বললো, ইবনু খাতাল কা’বার পর্দার আড়ালে লুকিয়ে আছে। তিনি বলেন: তোমরা তাকে হত্যা করো। আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইবনু খাতালের নাম ‘আবদুল্লাহ। আবূ বারযাহ আল-আসলামী (রাঃ) তাকে হত্যা করেন।

【128】

বন্দীকে হাত পা বেধেঁ হত্যা করা

ইবরাহীম (রহঃ) তিনি বলেন, দা্হহাক ইবনু ক্বায়িস উমামাহ (রাঃ) মাসরুক (রহঃ) কে কর্মকর্তা নিয়োগ করার ইচ্ছা করলেন। ‘উমারা্হ ইবনু ‘উক্ববাহ তাকে বললেন, আপনি কি ‘উসমান (রাঃ) এর হত্যাকারীদের মধ্যে বেচেঁ থাকা একজন কর্মচারী নিয়োগ করবেন? মাসরুক (রহঃ) আমাদের মধ্যে নির্ভরযোগ্য হাদীসবক্তা। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তোমার পিতা (‘উক্ববা্হ) কে মৃত্যুদন্ড দেয়ার ইচ্ছা করেন, তখন তোমার পিতা বললো, আমার বাচচাদের কি অবস্হা হবে? তিনি জবাবে বলেন: আগুন। মাসরুক বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমার জন্য যা পছন্দ করেছেন, আমিও তোমার জন্য সেটাই পছন্দ করেছি।

【129】

কয়েদীকে বেধেঁ তীর নিক্ষেপে হত্যা করা নিষেধ

’উবাইদ ইবনু তাগলা তিনি বলেন, একদা আমরা খালিদ ইবনুল ওয়ালীদের (রাঃ) পুত্র ‘আবদুর রহমানের সাথে এক যুদ্ধে জোগদান করি। শত্রুদের চারজন হ্বষ্টপুস্ট লোককে ধরে আনা হলো। তিনি তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিলেন এবং সেই মোতাবেক তাদেরকে হাত পা বেধেঁ হত্যা করা হলো। আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, সাঈদ ছাড়া অন্য সব বর্ণনাকারী হাদীসটি ইবনু ওয়াহব হতে বর্ণনা করেছেন। “বেধেঁ তীর মেরে হত্যা করা হয়েছে।” এ সংবাদ আবূ আইয়ুব আল-আনসারী (রাঃ) নিকট পৌছালে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ কাউকে হাত পা বেধেঁ হত্যা করা নিষেধ। সেই সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রান। একটি মুরগীকেও আমি এভাবে বেধেঁ হত্যা করবো না। একথা ‘আবদুর রহমান ইবনু খালিদ ইবনুল ওয়ালীদের (রহঃ) কানে পৌছালে তিনি চারজন গোলামকে আযাদ করে দেন।

【130】

মুক্তিপণ না নিয়ে বন্দীদের প্রতি অনুগ্রহ দেখানো

আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীদের হত্যার জন্য মাক্কাহর আশি জন মুশরিক ফাজরের সলাতের সময় আত-তানঈ’ম পর্বত থেকে অবতরন করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে আত্নসমর্পন করিয়ে ধরে ফেলেন। অতঃপর বিনিময় ছাড়াই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে মুক্ত করে দিলেন। মহান আল্লাহ আয়াত অবতীর্ন করলেন: তিনি তো মাক্কাহর উপত্যক্যয় তাদের হাত তোমাদের থেকে এবং তোমাদের হাত তাদের থেকে বিরত রেখেছিলেন---আয়াতের শেষ পর্যন্ত। যুবাইর ইবনু মুত্বইম (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদরের যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে বলেনঃ মুত্বইম ইবনু ‘আদী জীবিত থাকলে এবং সে এসব নীচ কয়েদীদের মুক্তির জন্য সুপারিশ করলে আমি তার কারনে এদেরকে ছেড়ে দিতাম।

【131】

মালের বিনিময়ে বন্দীদের মুক্তি দেওয়া

‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধর পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধবন্দীদের কাছ থেকে মুক্তিপন আদায় করেন।এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ আয়াত অবতীর্ন করেন: “কোনো নাবীর জন্য শোভনীয় নয়, তার কাছে যুদ্ধবন্দী থাকবে, যতক্ষন সে পৃথিবীর বুক থেকে শত্রু-বাহিনীকে পুরোপুরি নির্মূল না করবে ----তোমরা যা গ্রহন করেছো সেই জন্য তোমাদের উপর মহাশাস্তি আসতো” (সুরা্ আল-আনফাল: ৬৭-৬৮) অতঃপর আল্লাহ তাদের মুসলিমদের জন্য গনীমতের মাল হালাল করে দেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদরের মুশরিক যুদ্ধবন্দীদের জন্য মুক্তিপণ নির্ধারন করেন চারশো (দিরহাম)। সহীহ: চারশো কথাটি বাদে। ইরওরা [১২১৮]। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মাক্কাহবাসীরা যখন তাদের বন্দীদের মুক্তিপনের অর্থ পাঠায় তখন যাইনাব (রাঃ) আবূল ‘আসের মুক্তিপন এবং সাথে তার গলার হার পাঠান। মা খাদীজাহ (রাঃ) আবূল ‘আসের সাথে বিয়েতে হারটি তাকে উপহার দিয়েছিলেন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হারটি দেখে খাদিজা্র কথা মনে পরে যায়। তিনি আবেগাপুত হয়ে সাহাবীদের বললেনঃযদি তোমরা ভালো মনে করো তাহলে যাইনাবের বন্দীকে ছেরে দাও এবং তার প্রেরিত মুক্তিপণও তাকে ফেরত দিয়ে দাও। সাহাবীরা বললেন, হ্যাঁ ঠিক আছে। আবূল ‘আসের কাছে থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে প্রতিশ্রুতি নিলেন যে, সে যাইনাবকে তার কাছে আসার পথ পরিস্কার করে দিবে। তাকে নিয়ে আসার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে যায়িদ ইবনু হারিসাহ (রাঃ) এবং একজন আনসারীকে পাঠান। তিনি তাদেরকে বললেনঃতোমরা ইয়াজিজ উপত্যক্যয় অবস্হান করবে। যাইনাব তোমাদের সাথে ঐ স্হানে একত্র হলে তোমরা তাকে নিয়ে চলে আসবে। মারওয়ান ও আল-মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) হাওয়াযিন গোত্রের লোক ইসলাম গ্রহন করে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট এসে তারা তাদের সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য তাঁর কাছে আবেদন জানালো। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেনঃ আমার সাথে এদেরকে দেখছো? আমার নিকট সত্য কথা অধিক পছন্দনীয়। সুতরাং তোমরা বিবেচনা করো তোমরা কি তোমাদের বন্দীদের ফেরত নিবে, নাকি ধন সম্পদ ফিরত নিবে। তারা বললো, আমরা বন্দীদের ছাড়িয়ে নিতে চাই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে দাঁড়িয়ে আল্লাহর গুনগান করার পর বলেনঃ তোমাদের এই ভাইয়েরা তাওবা্হ করে তোমাদের নিকট এসেছে। আমি তাদের বন্দীদের ফেরত দেয়া সঠিক মনে করি। তোমাদের কেও খুশি মনে বন্দীদের ছাড়তে চাইলে সে যেনো বন্দীকে ছেড়ে দেয়। আর যে ব্যক্তি মুক্তিপন চায়, তাকে আল্লাহর পক্ষ্য থেকে গনীমতের পাওয়ার সাথে সাথে তা আদায় করে দিবো, সেও যেনো বন্দীদের ছেড়ে দেয়। লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা খুশি মনে মুক্তিপণ ব্যতীতই বন্দীদের মুক্তি দিচ্ছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের কে মুক্তিপনের ছাড়া আর কে মুক্তিপনের নিয়ে বন্দীদের মুক্তি দিতে ইচ্ছুক তা আমি আলাদা জানতে পারিনি। কাজেই তোমরা চলে যাও এবং তোমাদের নেতৃবৃন্দের সাথে এ নিয়ে আলোচনা করো। নেতৃবৃন্দেরা এসে তাকে জানালেন, প্রত্যেকেই বন্দীদের স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিতে সন্মতি দিয়েছে। ‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) তিনি তার পিতা হতে তার দাদার সূত্রে উক্ত ঘটনা সম্পর্কে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাদের নারী ও শিশুদের তাদের কাছে ফিরিয়ে দাও। যে ব্যাক্তি নিজ অংশ বিনিময় ছাড়া ফেরত দিতে রাজি নয়, আমরা বিনিময় হিসাবে তাকে ছয়টি উট দিবো। যখন গনিমতের মাল আল্লাহর পক্ষ্য থেকে আমাদের হাতে আসবে তখন তা হতে এটি পরিশোধ করা হবে। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি উটের কাছে আসলেন। তিনি তার কুঁজ থেকে কিছু পশম নিয়ে বললেনঃ হে লোকেরা! এই “ফাই”—এ আমার কোনো অংশ নেই, এমনকি এই পশম পরিমাণও নয়। তিনি এ বলে পশমসহ আঙ্গুল উচুঁ করে দেখালেন। শুধুমাত্র এক-পঞ্চমাংশ ছাড়া। আবার তাও তোমাদের কল্যানের জন্যই ব্যয় করা হবে। সুতরাং তোমরা সুইঁ সূতাটা পর্যন্ত জমা করো। এক ব্যক্তি এক টুকরা পশমি সূতা হাতে নিয়ে দাড়িয়েঁ বললো, আমি এই সুঁতাটুকু গদির কম্বলের ছেড়াঁ অংশ মেরামত করার জন্য নিয়েছিলেম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার এবং ‘আবদুল মোত্তালিব গোত্রের অংশ আমি তোমাকে ছেড়ে দিলাম। লোকটি বললো, আমি দেখলাম এটুকুও গুনা্হর কারণ হচ্ছে, সেজন্য আমার আর কোনো প্রয়োজন নেই। এই বলে সে সূতাটুকু ছুড়ে ফেলে দেয়।

【132】

যুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার পর দুশমনের এলাকায় নেতার অবস্হান নেয়া

আবূ ত্বালহা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোনো জাতির বিরুদ্ধে বিজয়ী হতেন, তখন সেখানে তিন দিন অবস্হান করতেন। ইবনুল মুসান্নার বর্ণনায় রয়েছে, যখন তিনি কোনো জাতির বিরুদ্ধে বিজয়ী হতেন, তখন তাদের এলাকায় তিন দিন অবস্হান করা তিনি উত্তম মনে করতেন। আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান (রহঃ) এ হাদীসের দোষারোপ করতেন। কারন এই হাদীসটি সাঈদ ইবনু আরুবার প্রথম দিকের হাদীস নয়। ৪৫ হিজরীতে তার স্মরনশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। এই হাদীসটি তার শেষ বয়সেই বর্ণিত। আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, তার স্মরনশক্তির এ পরিবর্তনের যুগেই ওয়াকী (রহঃ) তার কাছ থেকে হাদীসটি অর্জন করেন।

【133】

বন্দীদের পরস্পর পৃথক করা

‘আলী (রাঃ) তিনি বাঁদী ও তার সন্তানদের পৃথক করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে এভাবে (আলাদাভাবে) বিক্রয় করতে নিষেধ করে এ বিক্রয় বাতিল করেন। আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, বর্ণনাকারী মাইমূন (রহঃ) ‘আলীর (রাঃ) সাক্ষাৎ পাননি। মাইমূন (রাঃ) আল-জামাজিমের যুদ্ধে ৮৩ হিজরীতে নিহত হোন। আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন হাররার ঘটনা ঘটে ৬৩ হিজরী সনে এবং ইবনুয যুবাইর (রাঃ) ৭৬ হিজরীতে শহীদ হোন।

【134】

প্রাপ্তবয়স্ক বন্দীদের পৃথক করা

ইয়াস ইবনু সালামাহ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি (সালামাহ) বলেন, আমরা আবূ বাকর (রাঃ) এর সঙ্গে অভিযানে বের হওয়ার সময়, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে আমাদের সেনাপতি নিযুক্ত করেন। আমরা ফাযারাহ গোত্রের বিরুদ্ধে হামলা করে তাদেরকে তছনছ করে দেই। অতঃপর আমি কিছু লোক দেখতে পাই। যাদের সাথে শিশু ও নারী ছিলো। আমি একটি তীর ছুড়ঁলে সেটা তাদের এবং পাহাড়ের মাঝখানে যেয়ে পরে। এতে তারা দাঁড়িয়ে যায়। আমি তাদেরকে ধরে আবূ বাকর এর কাছে নিয়ে আসি। তাদের মধ্যে ফাযারাহ গোত্রের এক মহিলা ছিলো। সে শুকনা চামড়া পরা ছিলো। তার কন্যাও তার সাথে ছিলো। ঐ কন্যাটি আরবের অন্যতম সুন্দরী। তার কন্যাকে আবূ বাকর (রাঃ) আমাকে (গনীমাত হিসাবে) প্রদান করলেন। আমি মদীনা্হয় ফিরে গেলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সাথে সাক্ষাৎ করে আমাকে বললেনঃ হে সালামাহ! কন্যাটি আমাকে উপহার হিসাবে দিয়ে দাও। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! তার সৌন্দর্য আমাকে হতবাক করেছে। আমি তার পোষাক খুলিনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিশ্চুপ থাকলেন। পরের দিন সকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাজারে আমার সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি আমাকে বললেনঃ হে সালামা্হ! তুমি আল্লাহর ওয়াস্তে কন্যাটি আমাকে দিয়ে দাও। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ! আমি তার পোশাক খুলিনি। সে আপনার জন্যই। কন্যাটি তিনি মাক্কাহবাসীদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। মাক্কাহবাসীদের হাতে কিছু মুসলিম বন্দী ছিলো। তাদের মুক্তির জন্য তিনি মেয়েটিকে বিনিময় হিসাবে মাক্কাহয় ফেরত দিয়ে তাদেরকে মুক্ত করেন।

【135】

যদি কোনো মুসলিমের সম্পদ শত্রুবাহিনীর হস্তগত হওয়ার পর পুনরায় মালিক তা গনীমাত হিসাবে ফিরে পায়

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন ইবনু ‘উমারের একটি গোলাম পালিয়ে শত্রুবাহিনীতে চলে যায়। মুসলিম সেনাবাহিনী যুদ্ধে বিজয়ী হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইবনু ‘উমারের নিকট ফেরত দেন। তাকে গনিমাত হিসাবে বন্টন করেননি। আবূ দাউদ (রাঃ) বলেন, তিনি ছাড়া অন্য বর্ণনাকারী বলেছেন, খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ) গোলামটি তাকে ফেরত দেন। ইবনু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন, তার একটি ঘোড়া ছুটে গেলে তা দুশমনরা ধরে নিয়ে যায়। অতঃপর মুসলিমরা বিজয়ী হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে তা পুনরায় তাকে ফেরত দেয়া হয়। (অপর বর্ণনায় রয়েছে) ইবনু ‘উমরের একটি গোলাম পালিয়ে রুম এলাকায় চলে যায়। মুসলিমরা রুমীদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পর খালিক ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ) গোলামটি পুনরায় তাকে ফিরিয়ে দেন।

【136】

যদি মুশরিকদের কৃতদাস পালিয়ে এসে মুসলিমদের সাথে মিলিত হয়ে ইসলাম কবুল করে

‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) তিনি বলেন, হুদায়বিয়ার দিন সন্ধি করার পূর্বে মুশরিকদের কিছু গোলাম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে পালিয়ে এলে তাদের মনিবরা তাকে চিঠি লিখে বলল, হে মুহাম্মাদ, আল্লাহর শপথ! এরা তোমার ধর্মের প্রতি আকৃস্ট হয়ে তোমার নিকট আসেনি। তারা তাদের গোলামী থেকে পালিয়ে এসেছে। কতিপয় লোক বলল, হে আল্লাহর রাসূল! মনিবরা সত্যেই বলেছে, এদেরকে তাদের নিকট ফিরিয়ে দিন। এতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুবই নারাজ হলেন এবং বললেনঃ হে কুরাইশরা! আমি দেখছি তোমরা অন্যায় হতে বিরত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদের বিরুদ্ধে এমন লোক না পাঠান যারা তোমাদের গর্দান উড়িয়ে দেয়। তিনি তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকার করে বলেন; এরা মহান আল্লাহর অনুগ্রহে স্বাধীন।

【137】

শত্রু দেশের খাদ্য হালাল হওয়া সম্পর্কে

ইবনু ‘উমর (রাঃ) একদল সৈনিক রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে গনীমাত হিসাবে কিছু খাদ্যশস্য ও মধু পায়। কিন্তু তার এক –পঞ্চমাংশ নেয়া হয়নি। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) তিনি বলেন, খায়বার যুদ্ধের দিন চর্বিভর্তি একটি ব্যাগ পরে থাকতে দেখে আমি তা উঠিয়ে নিয়ে বললাম, এ চর্বি থেকে কাউকে একটুও দিবো না। বর্ণনাকারী বলেন, দৃষ্টি ফিরিয়ে দেখি, রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছেন।

【138】

শত্রু এলাকায় খাদ্য ঘাটতি হলেও তা লুটপাট করা নিষেধ

আবূ লাবীদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা এক অভিযানে কাবুল নামক জায়গায় ‘আবদুর রাহমান ইবনু মাসুরাহর (রাঃ) সঙ্গী হই। গনীমাত সংগ্রহণের সুযোগ এলে লোকেরা তা লুণ্ঠন করে নেয়। ‘আবদুর রহমান (রাঃ) দাঁড়িয়ে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে “গনীমাত বণ্টনের পূর্বে তা থেকে কিছু নিতে নিষেধ করতে শুনেছি”। সুতরাং লোকেরা যা নিয়েছিল তা ফেরত দিলো। পরে তিনি সেগুলোকে তাদের মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে কি আপনারা খাদ্যদ্রব্য থেকেও এক-পঞ্চমাংশ বের করতেন? এক সাহাবী বললেন, খায়বারের যুদ্ধের দিন আমরা খাদ্যদ্রব্য পাই। লোকজন এসে তাদের প্রয়োজন মত খাদ্যদ্রব্য উঠিয়ে নিয়ে চলে যেতো। ‘আসিম ইবনু কুলাইব (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি একজন আনসারীর নিকট হতে বর্ণনা করেন যে, আনসার লোকটি বললেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে এক সফরে বের হই। লোকেরা ভীষণ খাদ্যকস্টের শিকার হলো। ইতোমধ্যে কিছু সংখ্যক বকরী তাদের হস্তগত হয়। কিন্তু বণ্টনের পূর্বেই তারা সেগুলো লুণ্ঠন করে নেয়। আমাদের হাঁড়িগুলাতে গোশত টগবগ করে ফুটছিল। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ধনুকে ভর দিয়ে এখানে উপস্থিত হলেন এবং ধুনুক দিয়ে গোশতের হাঁড়ি উল্টিয়ে ফেলে দিয়ে তা বালির সাথে মিশিয়ে দিলেন। তিনি বললেনঃ এই লুটের মাল মৃত জন্তুর চাইতে কিছু কম নয় অথবা বলেছেনঃ মৃত জন্তু এই লুটের মালের চেয়ে কিছু কম নয়।

【139】

শত্রু দেশ থেকে খাদ্যদ্রব্য নিয়ে আসা

‘আবদুর রহমানের (রহঃ) আযাদকৃত গোলাম আল-ক্বাসিম (রহঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জনৈক সাহাবী হতে বর্ণনা করেন, আমরা যুদ্ধের সময় (গনীমাতের) উট যবাহ করে খেতাম, বণ্টন করতাম না। এমনকি আমরা যখন দেশে ফিরে যেতাম তখন আমাদের থলি গোশতে ভরা থাকতো। দুর্বল, মিশকাত (৪০২২)।

【140】

শত্রুদেশে লোকদের উদ্ধৃত্ত খাদ্য বিক্রি করা

‘আবদুর রহমান ইবনু গানাব (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা শুরাহবীল ইবনুস সিমতের (রাঃ) নেতৃত্বে কিন্নাসরীন শহর অবরোধ করি। তা বিজিতি হলে সেখানে মেষ ও গরু গনীমাত হিসাবে লাভ হলো। তিনি এর একটি অংশ আমাদের মধ্যে বন্টন করে বাকী অংশ গনীমাতের খাতে রেখে দিলেন। পরে আমি মু’আয ইবনু জাবালের সাথে দেখা করে তার সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ করি। তিনি বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে খায়বারের যুদ্ধে যোগদান করেছিলাম। সেখানে আমরা কিছু মেষ পেলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার একটা অংশ আমাদের মাঝে বন্টন করেন এবং বাকী অংশ গনীমাতের খাতে রেখে দেন।

【141】

গনীমাতের বস্তু দ্বারা কোন ব্যক্তির উপকার লাভ করা

রুয়াইফি’ ইবনু সাবিত আল-আনসারী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে সে যেন মুসলিমদের ‘ফাই’লব্ধ পশুর পিঠে সওয়ার না হয়। সে সওয়ারী হিসাবে ব্যবহার করে তাকে দুর্বল করে গনীমাতে ফেরত দেয় (এরূপ করা উচিত নয়)। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন মুসলিমদের গনীমাতের পোশাক না পরে, এমনকি সে তা পুরাতন করে গনীমাতে ফেরত দেয় (এটা ঠিক নয়)।

【142】

যুদ্ধের সময় শত্রুর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া অস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি (বদর) যুদ্ধের ময়দানে আবূ জাহলকে মাটিতে ধরাশায়ী দেখতে পেয়ে তার পায়ে আঘাত করে বললাম, হে আল্লাহর দুশমন! হে জাহল! অবশেষে আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছিত করলেন। তিনি (রাঃ) বলেন, আমি এ সময় তাকে একটুও ভয় করিনি। সে বললো, আশ্চর্যের বিষয়, এক ব্যক্তিকে তার কওমের লোকেরাই হত্যা করলো। আমি তাকে তরবারি দিয়ে আঘাত হানলাম, কিন্তু কাজ হলো না। তবে তার হাত থেকে তার তরবারিটা পড়ে গেল। আমি তা তুলে নিয়ে তাকে পুনরায় আঘাত হানলে সে ঠান্ডা হয়ে যায় (মৃত্যু বরণ করে)।

【143】

গনীমাতের মাল আত্নসাতের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারী

যায়িদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীদের একজন খায়বার যুদ্ধের দিন মারা যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে খবর দেয়া হলে তিনি বললেনঃ তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযা পড়ে নাও। তাঁর এ কথা শুনে লোকদের চেহারা (ভয়ে) পরিবর্তন হলো। তিনি বললেনঃ তোমাদের সাথী আল্লাহর পথে (গনীমাতের মাল) চুরি করেছে। আমরা তাঁর জিনিসপত্র অনুসন্ধান করে ইয়াহুদীদের ব্যবহৃত একটি পুঁতির মালা পাই, যার মূল্য দুই দিরহামও নয়। দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৩৪৮১), যঈফ সুনান ইবনু মাজাহ (৬২৫/২৮৪৮), ইরওয়া (৭২৬), মিশকাত (৪০১১)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে আমরা খায়বারের যুদ্ধে বের হলাম। তাতে গনীমাত হিসেবে কাপড়-চোপড়, মালপত্র ইত্যাদি ছাড়া সোনা-রূপা পাইনি। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়াদিল-কুরার দিকে রওয়ানা হলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মিদ’আম নামের একটি কালো গোলাম উপহার দেয়া হয়েছিল। অবশেষে তারা ওয়াদিল কুরায় পৌঁছলে মিদ’আম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উটের পালান খুলছিল। হঠাৎ একটি তীর এসে তার উপর পতিত হলে সে মারা যায়। লোকেরা বললোঃ তার জন্য কল্যাণ হয়েছে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কখনও নয়। ঐ সত্ত্বার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ। খায়বারের যুদ্ধের দিন বন্টনের পূর্বে সে গনীমাতের যে চাদর চুরি করেছিল তা আগুন হয়ে তাকে দগ্ধ করছে। অতঃপর তারা যখন এ কথা শুনলো, এক ব্যক্তি একটি বা দু’টি চামড়ার লম্বা টুকরা নিয়ে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে হাজির হলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ চামড়ার টুকরাটি আগুনের, অথবা তিনি বললেনঃ চামড়ার এই টুকরা দু’টি আগুনের ফিতা।

【144】

গনীমাতের সামান্য জিনিস আত্নসাৎ করলে ইমাম তাকে ছেড়ে দিবে এবং তার মালপত্র জ্বালাবে না

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গনীমাতের মাল জমা করার জন্য বিলাল (রাঃ)-কে ঘোষণা করার নির্দেশ দিতেন। তিনি ঘোষণা দিলে লোকেরা তাদের গনীমাত নিয়ে এসে জমা করতো। তিনি তা থেকে এক-পঞ্চমাংশ বাদ দিয়ে অবশিষ্ট মালবন্টন করে দিতেন। একদা এক ব্যক্তি গনীমাত বন্টনের পর পশমের একটি দড়ি নিয়ে উপস্থিত হয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এই দড়িটা আমাদের গনীমাতের অংশ। তিনি বললেনঃ বিলাল যে তিনবার ঘোষণা দিল তা কি তুমি শুনতে পেয়েছিলে? লোকটি বলল, হাঁ। তিনি বললেনঃ তাহলে কিসে তোমাকে এটা নিয়ে উপস্থিত হতে বাঁধা দিলো? সে কিছু ওজর পেশ করলে তিনি বললেনঃ তুমি এভাবেই থাকো, তুমি ক্বিয়ামাতের দিন এটাসহ উপস্থিত হবে। আমি তোমার থেকে এটা গ্রহণ করবো না।

【145】

গনীমাতের মাল আত্মসাৎকারীর শাস্তি

সালিহ ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু যায়িদাহ (রহঃ) আবূ দাঊদ ও সালিহ বলেন, ইনি হলেন আবূ ওয়াক্বিদ। তিনি বলেন, আমি মাসলামাহর (রাঃ) সাথে রূম এলাকায় প্রবেশ করি। গনীমাত আত্মসাৎকারী এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হয়। এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য মাসলামাহ (রাঃ) সালিম (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন। সালিম বলেন, আমি আমার পিতা ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-কে তার পিতা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করতে শুনেছি, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কোন গনীমাত আত্নসাৎকারীকে পেলে তার মালপত্র পুড়িয়ে ফেলবে এবং তাকে প্রহার করবে। আবূ ওয়াক্বিদ বলেন, আমরা ধৃত ব্যক্তির জিনিসপত্রে একটি মাসহাফ (কুরআন) পাই। মাসলামাহ (রাঃ) ঐ ব্যক্তির বিষয়ে সালিমকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, মাসহাফ বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ দান করুন। দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৭১৭), যঈফ সুনান আত-তিরমিযী (২৪৫/১৫০২), মিশকাত (৩৬৩৩)। সালিহ ইবনু মুহাম্মাদ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা ওয়ালীদ ইবনু হিশামের নেতৃত্বে যুদ্ধে যোগদান করি। আমাদের সাথে সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ উবনু ‘উমার (রহঃ) এবং ‘উমার ইবনু আবদুল ‘আযীয (রহঃ)-ও ছিলেন। আমাদের মধ্যকার এক লোক গনীমাতের মাল চুরি করলে ওয়ালীদ তার জিনিসপত্র পুড়ে ফেলার নির্দেশ দিলে তা পুড়ে ফেলা হয়, তাকে পথে পথে ঘুরানো হয় এবং গনীমাত থেকে বঞ্চিত করা হয়। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, দুই হাদীসের মধ্যে শেষোক্ত হাদীসটি অধিক সহীহ। কেননা একাধিক বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন যে, ওয়ালীদ ইবনু হিশাম যিয়াদ ইবনু সা’দের জিনিসপত্র পুড়িয়ে ফেলেন এবং তাকে প্রহার করেন। কারণ সে গনীমাতের মাল আত্নসাৎ করেছিল। আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাকর্ (রাঃ) ও ‘উমার (রাঃ) গনীমাত আত্নসাৎকারীর মালপত্র পুড়িয়ে ফেলেন এবং তাকে দৈহিক শাস্তি প্রদান করেন। দুর্বলঃ মিশকাত (৪০১৩)। বর্ননাকারী ‘আবদুল ওয়াহ্হাবের বর্ণনায় ‘গনীমাত আত্নসাৎকারীকে তার প্রাপ্য বঞ্চিত করার কথা উল্লেখ নেই’। দুর্বল মাক্বতু।

【146】

গনীমাত আত্নসাৎকারীর অপরাধ গোপন রাখা নিষেধ

সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ কেউ গনীমাত আত্নসাৎকারীর কথা গোপন রাখলে সেও তার সমান অপরাধী। দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (৫৮১২), মিশকাত (৪০১৪)

【147】

নিহত কাফিরের মালপত্র হত্যাকারী পাবে

আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে হুনাইনের যুদ্ধে রওয়ানা হলাম। আমরা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে মুসলিমদের মধ্যে পরাজয়ের লক্ষণ দেখি। আমি দেখি, এক মুশরিক এক মুসলিমকে পরাজিত করছে। আমি ঘুরে গিয়ে পেছন থেকে তার গর্দানে তরবারির আঘাত করলে সে আমার দিকে ফিরে আমাকে এমন জোরে চেপে ধরলো যে, আমি যেন মরেই যাব। কিন্তু একটু পরেই সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো এবং আমকে ছেড়ে দেয়। অতঃপর আমি ‘উমার ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) সাথে মিলিত হই। আমি তাকে বলি, লোকদের কি হলো! তিনি বললেন, আল্লাহর হুকুম এটাই ছিল। লোকেরা আবার ফিরে এলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসা অবস্থায় বললেনঃ কেউ কোন কাফিরকে প্রমাণ সাপেক্ষে হত্যা করলে নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত জিনিসপত্র হত্যাকারী পাবে। আমি দাঁড়িয়ে বললাম, কেউ কি আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে? অতঃপর আমি বসে পড়ি। তিনি তৃতীয়বারও একথা বললেন। আমাকে দাঁড়াতে দেখে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ ক্বাতাদাহ! তোমার কী হলো? আমি তাঁকে ঘটনা খুলে বলি। দলের মধ্যকার এক লোক বললো, হে আল্লাহর রাসূল! সে সত্যই বলেছে। তবে নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত জিনিসপত্র আমার নিকট আছে। তাঁকে রাজি করিয়ে জিনিসগুলো আমাকে দিন। এ কথা শুনে আবূ বাকর্‌ সিদ্দীক্ব (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! কখনও নয়। আল্লাহর এক সিংহ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হয়ে লড়াই করেছে। কাজেই নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাকে তা কিভাবে দিবেন! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আবূ বাকর্‌ ঠিকই বলেছেন। নিহতের পরিত্যক্ত জিনিস আবূ ক্বাতাদাহকে ফিরিয়ে দাও। আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন, সে আমাকে তা ফিরিয়ে দিলো। আমি লৌহ বর্মটি বিক্রি করে বনী সালামাহ গোত্রের মহল্লায় বাগান খরিদ করি। ইসলাম কবুলের পর এটাই আমার প্রথম অর্জিত সম্পদ। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, হুনাইনের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা দিলেনঃ কেউ কোন কাফিরকে হত্যা করলে সেই হবে নিহতের মালপত্রের অধিকারী। সেদিন আবূ ত্বালহা বিশ জনকে হত্যা করে তাদের মালপত্রেরে অধিকারী হন। আবূ ত্বালহা (রাঃ) উম্মু সুলাইমের (রাঃ) এর সাথে মিলিত হন। তখন উম্মু সুলাইমের হাতে একটি বড় খঞ্জর ছিল। তিনি বললেন, হে উম্মু সুলাইম! তোমার নিকট এটা কী? তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ! যদি তাদের কেউ আমার কাছে আসে, এটা দিয়ে আমি তার পেট চিরে ফেলবো। আবূ ত্বালহা (রাঃ) ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানালেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাদীসটি হাসান। তিনি আরো বলেন, ঐ সময়ে খঞ্জরটি ছিল অনারবদের যুদ্ধাস্ত্র।

【148】

ইমাম ইচ্ছা করলে নিহতের পরিত্যক্ত মাল হত্যাকারীকে নাও দিতে পারেন, নিহতের ঘোড়া ও হাতিয়ার তার মালেরই অন্তর্ভূক্ত

‘আওফ ইবনু মালিক আল-আশজা’ঈ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যায়িদ ইবনু হারিসের (রাঃ) সাথে মুতার যুদ্ধে বের হই। এ সময় ইয়ামানের মাদাদ গোত্রীয় এক সাহায্যকারী ব্যক্তি আমার সঙ্গী হলো। তার কাছে একটি তরবারি ছাড়া আর কিছু ছিলো না। মুসলিমদের এক ব্যক্তি একটি উট যাবাহ করলে মাদাদী লোকটি তার কাছে চামড়ার অংশ বিশেষ চাইলো। সে তাকে কিছু চামড়া দিলে সে তা নিয়ে ঢালের মত তৈরি করলো। আমরা রোমীয় সৈন্যদের মুখোমুখী হলাম। তাদের এক ব্যক্তি একটি লাল রঙের ঘোড়ার উপর সাওয়ার ছিল। সেটি সোনার কারুকার্য খচিত এবং তার অস্ত্রও ছিল স্বর্ণে মোড়ানো। রোমীয় সৈন্যটি মুসলিমদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত হয়ে যুদ্ধ করছিল। ইয়ামানী মাদাদ গোত্রীয় লোকটি একটি পাথরের আড়ালে ঐ লোকটির অপেক্ষায় ওঁৎ পেতে বসেছিল। রোমক সৈন্যটি যখন তার কাছ দিয়ে যচ্ছিল, সে তার ঘোড়াকে আঘাত করে ঘোড়ার পা কেটে ফেলায় লোকটি ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যায়, ফলে ইয়ামানী তার উপর চেপে বসে তাকে হত্যা করে তার ঘোড়া ও অস্ত্র নিয়ে আসলো। মহান আল্লাহ যখন মুসলিমদের বিজয় দিলেন, খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ) লোক পাঠিয়ে তার কাছ থেকে মালপত্র নিয়ে নিলেন। ‘আওফ (রাঃ) বলেন, আমি এসে বললাম, হে খালিদ! তুমি কি জানো না, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিহতের মালপত্র হত্যাকারীকে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হাঁ। কিন্তু আমার ধারণা, এক্ষেত্রে এটা বেশি হয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম, তার মাল অবশ্যই তাকে ফেরত দাও। অন্যথায় তোমার এ কাজের কথা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে অবহিত করবো। তিনি লোকটিকে তার প্রাপ্য ফেরত দিতে অসম্মতি জানান। ‘আওফ (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট সমবেত হই, ইয়ামানীর ঘটনাটি তাঁকে জানাই এবং খালিদের আচরণের কথাও অবহিত করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে খালিদ! কিসে তোমাকে এ কাজে উদ্ভুদ্ধ করেছে? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে তার জন্য মালপত্র অত্যধিক মনে হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ খালিদ! তার প্রাপ্য থেকে তুমি যা নিয়েছ তা তাকে ফেরত দাও। ‘আওফ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে খালিদ! এখন হলো তো, তোমাকে যা বলেছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ কি কথা! ‘আওফ (রাঃ) বললেনঃ আমি তাঁকে আমাদের পরস্পরের বিতর্কের কথা বললাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতে অসন্তুষ্ট হয়ে বললেনঃ হে খালিদ! তার মাল ফিরিয়ে দিও না। তোমরা কি আমার নিযুক্ত নেতাদের পরিত্যাগ করবে? তারা ভালো করলে তা থেকে তোমরা উপকৃত হবে, আর খারাপ করলে সেটা তাদের উপর চাপিয়ে দিবে? আওফ ইবনু মালিক আল-আশজা’ঈ (রাঃ) এ সূত্র উপরের হাদীসের বিষয়বস্তুর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আমি এটি সহীহ ও যঈফেও পাইনি।

【149】

নিহত কাফিরের পরিত্যক্ত জিনিসে খুমুস নাই

আওফ ইবনু মালিক আল-আশজা’ঈ ও খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিহত কাফিরের পরিত্যক্ত জিনিসপত্র হত্যাকারীকে দেয়ার হুকুম করেন এবং তিনি নিহতের মালে এক-পঞ্চমাংশ ধার্য করননি।

【150】

কেউ মুমুর্ষু কাফিরকে হত্যা করবে সে তার পরিত্যক্ত মাল থেকে উপহার হিসেবে কিছু পাবে

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদর যুদ্ধের দিন আমাকে আবূ জাহলের তরবারিটি অতিরিক্ত হিসেবে দেন। (কেননা) তাকে তিনি হত্যা করেছিলেন। দূর্বলঃ মিশকাত (৪০০৪)

【151】

কেউ গনিমাতের মাল বন্টিত হওয়ার পর উপস্থিত হলে এর অংশ পাবে না

সাঈদ ইবনুল ‘আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবান ইবনু সাঈদ ইবনুল ‘আস (রাঃ)-কে মাদীনাহ থেকে নাজদ এলাকায় একটি অভিযানে প্রেরণ করেন। অভিযান শেষে আবান ইবনু সাঈদ (রাঃ) ও তার সাথীরা খায়বার বিজয়ের পর সেখানে এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে মিলিত হলেন। তাদের ঘোড়ার জিনপোষ ছিল ছাল-বাকল দ্বারা তৈরী। আবান বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকেও গনীমতের ভাগ দিবেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এদেরকে গনীমতের অংশ দিবেন না। আবান বললেন, হে খরগোশ (জংলী বিড়াল)! তুমি এই কথা বলছো! তুমি তো এইমাত্র ‘দাল’ পাহাড়ের চূড়া থেকে নেমে আমাদের কাছে এসেছো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবান! বসো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে গনীমাতের ভাগ দেননি। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যখন মাদীনাহ্‌ থেকে আসি তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার বিজয়ের পর সেখানে অবস্থান করছিলাম। আমাকে গনীমাতের ভাগ দেয়ার জন্য আমি তার কাছে আবেদন করি। সাঈদ ইবনুল ‘আসের (রাঃ) এক পুত্র বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! তাঁকে ভাগ দিবেন না। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, ইনিই তো ইবনু কাওকালের হত্যাকারী। এ কথা শুনে সাঈদ ইবনুল ‘আস (রাঃ) বললেন, ‘দাল’ পাহাড়ের চূড়া থেকে নেমে আসা খরগোশটির কথায় অবাক হতে হয়। সে আমাদের একজন মুসলিমের হত্যার অপবাদ দিচ্ছে। যাকে আল্লাহ আমাদের হাতে সম্মানিত করেছেন, তার হাতে আমাদের অপমানিত করেননি। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, তারা ছিল প্রায় দশজন। তন্মমধ্যে ছয়জন নিহত হয় এবং বাকীরা ফিরে যায়। আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা হাবশা ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে সাক্ষাৎ করি। তিনি খায়বার বিজয়ী হয়ে কেবল প্রত্যাবর্তন করেছেন। তিনি আমাদেরকে খায়বারে প্রাপ্ত গনীমত থেকে ভাগ দিলেন অথবা দান করলেন। খায়বার বিজয়ে যারা অনুপস্থিত ছিল তিনি তাদের কাউকে গনীমতের অংশ দেননি, দিয়েছেন শুধু অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের। কিন্তু (অভিযানে যোগদান না করা সত্ত্বেও) আমাদের জাহাজের যাত্রী জা’ফর (রাঃ) এবং তার সাথীদের তিনি গনীমাতের অংশ দিয়েছেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদর যুদ্ধের দিন দাঁড়িয়ে বললেনঃ ‘উসমান (রাঃ) আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রয়োজনেই গিয়েছে। আমি তার পক্ষ হতে বাই’আত গ্রহণ করছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে গনীমতের ভাগ দিলেন। ‘উসমান ছাড়া অনুপস্থিত অন্য কাউকে তিনি গনীমতের ভাগ দেননি।

【152】

নারী ও কৃতদাসকে গনীমাতের অংশ প্রদান

ইয়াযীদ ইবনু হুরমুয (রহঃ) তিনি বলেন, একদা (খারিজী নেতা) নাজদাহ কিছু বিষয় উল্লেখ করে ইবনু 'আব্বাসের (রাঃ) নিকট চিঠি লিখলো। তাতে এও ছিল যে, ক্রীতদাস কি 'ফাই'-এর অংশ পাবে? নারীরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে যুদ্ধে যেতো কিনা এবং তাদেরকে কি গনীমাতের অংশ দেয়া হতো কিনা? ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) বললেন, সে আহাম্মকী করে বসবে (এরূপ আশঙ্কা না হলে) আমি তার চিঠির উত্তর দিতাম না। অতঃপর তিনি চিঠির উত্তরে লিখলেন, গোলামকে গনীমাতের অংশ দেয়া হতো, নারীরা আহতদের সেবা করতো এবং সৈনিকদের জন্য পানি সরবরাহ করতো। ইয়াযীদ ইবনু হুরমুয (রহঃ) তিনি বলেন, হারূরার খারিজী নেতা নাজদাহ কয়েকটি প্রশ্ন করে ইবনু 'আব্বাসের (রাঃ) নিকট চিঠি লিখলো। (তা হলো) নারীরা কি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে যুদ্ধে যোগদান করতো কিনা? উত্তরে জানালাম, নারীরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে যুদ্ধক্ষেত্রে আসতো। তবে তিনি তাদের জন্য গনীমাতের অংশ নির্ধারণ করতেন না, অবশ্য উপঢৌকন হিসেবে কিছু দিতেন। হাশরাজ ইবনু যিয়াদ (রহঃ) তার পিতার মা অর্থাৎ তার দাদীর সূত্র তিনি (দাদী) পাঁচজন মহিলাসহ রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে খায়বারের যুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশে রওয়ানা হন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানতে পেয়ে আমাদেরকে ডেকে পাঠান। আমরা এসে তাঁর চেহারায় অসন্তুষ্টির ছাপ লক্ষ্য করি। তিনি বললেনঃ তোমরা কার সাথে এবং কার হুকুমে রওয়ানা হয়েছো? আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এজন্য বেরিয়েছি যে, আমরা দড়ি পাকাবো এবং তা দিয়ে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করতে সাহায্য করবো, আহতদের চিকিৎসার জন্য আমাদের কাছে ঔষধপত্র রয়েছে, আমরা সৈন্যদের তীর-ধনুক এগিয়ে দিবো এবং তাদেরকে ছাতু তৈরি করে দিবো। তিনি বললেনঃ ঠিক আছে, চলো। আল্লাহ তাঁর রাসূলকে খায়বারের যুদ্ধে বিজয় দান করলেন। তিনি পুরুষদের ন্যায় আমাদেরকেও গনীমাতের ভাগ দেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে দাদী! ভাগে কি ছিল? তিনি বললেন, খেজুর। দুর্বলঃ ইরওয়া (১২৩৮)। আবূল লাহমের আযাদকৃত গোলাম 'উমাইর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার মনিবের সাথে খায়বারের যুদ্ধে গমন করি। তারা আমার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে আলাপ করলে তাঁর নির্দেশ মোতাবেক আমার কোমরে তরবারি ঝুলানো হলো। তা আমি যমীনে হেঁচড়িয়ে চলতাম। তিনি পরে অবহিত হলেন যে, আমি মুক্তদাস। তিনি আমাকে কিছু জিনিসপত্র দেয়ার নির্দেশ দিলেন। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হলো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে গনীমাতের অংশ দেননি। আবূ দাঊদ (রহঃ) আরো বলেন, আবূ 'উবাইদ (রহঃ) বলেছেন, তিনি তার জন্য গোশত ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেন। সেজন্য তার নাম আবূল লাহম (গোশতের পিতা)। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধের দিন আমি আমার সাথীদের জন্য পানি সরবরাহ করেছি।

【153】

মুশরিকদের জন্য গনীমাতের অংশ আছে কিনা?

'আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, জনৈক মুশরিকদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর সাথে যুদ্ধে অংশ গ্রহণের ইচ্ছে করলে তিনি বললেনঃ তুমি ফিরে যাও। আমরা মুশরিকদের সাহায্য চাই না।

【154】

গনীমাতের মালে ঘোড়ার (দুই) অংশ

ইবনু 'উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সৈনিক ও তার ঘোড়ার জন্য তিন ভাগ গনীমাত নির্ধারণ করেন। এক ভাগ সৈনিকের এবং দুই ভাগ ঘোড়ার। আবূ 'আমরাহ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি (পিতা) বলেন, আমরা চার ব্যক্তি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে এলাম। আমাদের সাথে একটি ঘোড়াও ছিল। তিনি আমাদের প্রত্যেককে গনীমাত থেকে এক ভাগ করে দিলেন, আর ঘোড়ার জন্য দুই ভাগ দিলেন। আবূ 'আমরাহ (রহঃ) এ সূত্র আবূ 'আমরাহ (রহঃ) এ সূত্রে বর্ণিত হাদীসের সমার্থক হাদীস বর্ণনা করেন। তবে তিনি এ বর্ণনায় তিনজনের কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন, ঘোড় সওয়ারীর জন্য ছিল তিন ভাগ।

【155】

পদাতিকের জন্য এক অংশ

মুজাম্মি' ইবনু জারিয়াহ আল-আনসারী (রাঃ) তিনি ছিলেন অন্যতম ক্বারী। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে হুদায়বিয়াতে ছিলাম। আমরা সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করলে লোকেরা তাদের উটগুলোকে এক স্থানে সমবেত হওয়ার জন্য দ্রুত হাঁকাতে লাগলো। লোকেরা পরস্পর বলাবলি করলো, দ্রুত হাঁকানোর কারণ কি? পরে তারা জানতে পারলো, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর ওহী অবতীর্ণ হয়েছে। অন্যান্য লোকের সাথে আমরাও জলদি করে ছুটলাম। আমরা 'কুরাউল গামীম' নামক স্থানে পৌঁছে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর সওয়ারীতে বসা দেখতে পেলাম। লোকেরা তাঁর কাছে সমবেত হলে তিনি তাদেরকে "ইন্না ফাতাহনা লাকা ফাতহাম মুবীনা" নামক সূরাহ পড়ে শুনালেন। এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি বিজয়? তিনি বললেনঃ হাঁ, ঐ সত্তার শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! এটাই বিজয়। যারা হুদায়বিয়ায় যোগদান করেছে তাদের মাঝে খায়বারের গনীমাত বন্টন করা হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রাপ্ত গনীমাত আঠার ভাগে বিভক্ত করেন। যোদ্ধা ছিল পনের শত এবং এর মধ্যে অশ্বারোহী ছিল তিনশো। তিনি অশ্বারোহীদের দুই ভাগ এবং পদাতিকদের এক ভাগ করে গনীমাত প্রদান করলেন। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আবূ মু'আবিয়হ (রহঃ) বর্ণিত হাদীসটি অধিক সহীহ। এ হাদীসের উপরই আমল করা হয়। আমার মতে মুজাম্মি'র (রাঃ) হাদীসে ভুল আছে। কারণ তিনি বলেছেন, অশ্বারোহী ছিল তিনশো, অথচ অশ্বারোহী ছিল দুইশো।

【156】

গনীমাত থেকে কাউকে পুরস্কার দেয়া

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, বদরের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি এই এই কাজ করতে পারবে তাকে গনীমাত থেকে এই এই (পুরস্কার) দেয়া হবে। এ কথা শুনে যুবকরা সম্মুখে এগিয়ে গেলো এবং বয়স্করা পতাকার কাছে অটলভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন। আল্লাহ তাদেরকে বিজয়ী করলে বয়স্করা বললেন, আমরা তোমাদের সাহায্যকারী পৃষ্ঠপোষক। তোমরা পরাজিত হলে আমাদের কাছেই ফিরে আসতে। সুতরাং আমাদেরকে বাদ দিয়ে তোমরা একাই গনীমাত নিতে পারো না। কিন্তু যুবকরা এ প্রস্তাব না মেনে বললো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসব আমাদেরকে দিয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “তারা আপনাকে গনীমাতের মাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন, এ গনীমাতের মাল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। যখন আপনার রব্ব আপনাকে সত্য সহকারে আপনার ঘর থেকে বের করে আনলেন এবং একদল ঈমানদারের নিকট তা ছিল খুবই দুঃসহ” (সূরাহ আল-আনফালঃ ১-৫)। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এটাই উভয় দলের জন্য কল্যাণকর হলো। সুতরাং তোমরা আমার অনুসরণ করো। কেননা আমি এর পরিণতি সম্পর্কে তোমাদের চেয়ে অধিক জানি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদরের যুদ্ধের দিন ঘোষণা করলেনঃ কেউ কোন শত্রুকে হত্যা করলে তার জন্য এই এই (পুরস্কার)। আর কেউ কোন শত্রুকে বন্দী করলে তার জন্যও এই এই (পুরস্কার)। এরপর পূর্বের হাদীসের অনুরূপ। খালিদের হাদীসটি পূর্ণাঙ্গ। দাউদ (রহঃ) এ হাদীস তার সানাদ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গনীমাতের মাল সবাইকে সমান ভাগে বন্টন করে দিলেন। খালিদের বর্ণিত হাদীস (পূর্বেরটি) ইয়াহইয়া ইবনু আবূ যায়িদাহর এ হাদীসের চেয়ে পূর্ণাঙ্গ। সা‘দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বদর যুদ্ধ শেষে একটি তরবারি নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে গিয়ে বলি, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয়ই আল্লাহ আজকের দিন শত্রু নিধনের ব্যাপারে আমার অন্তরকে নিরাময় দিয়েছেন। সুতরাং এই তরবারি আমাকে দিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ এটা আমারও নয় তোমারও নয়। তখন আমি এই বলতে বলতে ফিরে যাই যে, আজকের এ তরবারি এমন লোককে দেয়া হবে, যুদ্ধের ময়দানে যে আমার মত পরীক্ষার সম্মুখীন হয়নি। এমন সময় রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দূত আমার কাছে এসে বললো, চলো। আমি ভাবলাম, আমার ঐ কথার কারণে আমার বিরুদ্ধে কিছু অবতীর্ণ হয়েছে। আমি আসলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তুমি আমার কাছে এ তরবারিটা চেয়েছিলে, তখন এর মালিকানা আমারও ছিল না, তোমারও ছিল না। এখন আল্লাহ আমাকে এটা দান করেছেন। কাজেই এটা এখন তোমার। অতঃপর তিনি এ আয়াত পড়লেনঃ “তারা আপনাকে গনীমাতের মাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলুন, গনীমাতের মাল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের...” আয়াতের শেষ পর্যন্ত (সূরাহ আল-আনফালঃ ১)। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, ইবনু মাসউদ (রাঃ) এর ক্বিরাআত হলোঃ ‘ইয়াসআলূনাকান-নাফলা’।

【157】

মুজাহিদ বাহিনীর গনীমাত থেকে ক্ষুদ্র সামরিক বাহীনীকে পুরস্কার প্রদান

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে এক মুজাহিদ বাহিনীর সাথে ‘নাজাদ’ এলাকায় প্রেরণ করেন এবং সেনাবাহিনীর একটি অংশকে অভিযানে পাঠান। সেনাবাহিনীর সকল সৈন্য ভাগে বারোটি করে গনীমাতের উট পেলো এবং অভিযানে প্রেরিত সৈন্যদেরকে তিনি একটি করে উট অতিরিক্ত দিলেন। ফলে তাদের প্রত্যেকের ভাগে তেরটি করে উট পড়ে। ওয়ালীদ ইবনু মুসলিম (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইবনুল মুবারকের নিকট উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করি। আমি বলি, আমাদের কাছে ইবনু আবূ ফারওয়াহ নাফি’ হতে হাদীসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন। ইবনুল মুবারক বললেন, তুমি যার যার নাম উল্লেখ করেছ তারা কোন দিক দিয়েই মালিক ইবনু আনাসের সমক্ষ নন। নাফি’ (রহঃ) হতে ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজাদ এলাকায় একটি বাহিনী পাঠালে তাদের সাথে আমিও হই। সেখানে আমরা প্রচুর পরিমাণ গনীমাত লাভ করি। আমাদের সেনাপতি আমাদের প্রত্যেককে একটি উট পুরস্কার দিলেন। অতঃপর আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে ফিরে এলে তিনি আমাদের মাঝে গনীমাতের মাল বন্টন করেন। এক-পঞ্চমাংশ বাদ দেয়ার পর আমাদের প্রত্যেকে বারোটি করে উট গনীমাতের পায়। আমাদের সেনাপতি যে উটগুলো পূর্বে আমাদেরকে দিয়েছিলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা হিসাবে আনেননি। তিনি এ কাজের জন্য সেনাপতির কোন দোষও ধরেননি। ফলে আমাদের প্রত্যেকের ভাগে তার দেয়া অতিরিক্ত একটি সহ মোট তেরোটি করে উট পড়লো। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজাদ এলাকায় একটি অভিযান পাঠান, তাতে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-ও ছিলেন। তারা তাতে প্রচুর পরিমাণে গনীমাতের মাল লাভ করেন। এতে তাদের প্রত্যেককে বারোটি করে উট দেয়া হলো। বর্ণনাকারী ইবনু মাওহাবের বর্ণনায় রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উল্লেখিত বন্টন কোন পরিবর্তন করেননি। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে একটি সামরিক অভিযানে পাঠালেন। আমরা প্রত্যেকেই ভাগে বারোটি করে উট পেলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের প্রত্যেককে অতিরিক্ত একটি করে উট দিলেন। আরেক বর্ণনায় অতিরিক্ত একটি করে উট দেয়ার কথা রয়েছে। তবে তাতে এ কথা নেই যে, তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিয়েছেন। ‘আবদূল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পক্ষ হতে বিশেষ অভিযানে প্রেরিত সেনাদের গনীমাত থেকে অতিরিক্ত দিতেন। যা সাধারণভাবে সব বাহিনীকে দেয়া হতো না। অবশ্য সমস্ত গনীমাত থেকে এক-পঞ্চমাংশ নেয়া হতো। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনশো পনের জন নিয়ে বদরের প্রান্তরে রওয়ানা হলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “হে আল্লাহ! এরা পদাতিক বাহিনী, এদেরকে বাহন দান করুন। হে আল্লাহ! এরা বস্ত্রহীন, এদেরকে পরিধেয় বস্ত্র দান করুন। হে আল্লাহ! এরা অন্নহীন, এদেরকে খাদ্য দিয়ে পরিতৃপ্ত করুন।” অতঃপর আল্লাহ তাঁকে বদরে বিজয়ী করলেন। সাহাবীরা যখন সেখান থেকে ফিরে আসেন তখন তাদের প্রত্যেকেই একটি বা দুইটি উট নিয়ে, পোশাকে সজ্জিত হয়ে এবং পরিতৃপ্ত হয়ে ফিরলেন।

【158】

যিনি বলেন, অতিরিক্ত দেয়ার আগেই এক-পঞ্চমাংশ পৃথক করবে

হাবীব ইবনু মাসলামাহ আল-ফিহরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গনীমাতের এক-পঞ্চমাংশ বের করার পর অবশিষ্ট মালের এক-তৃতীয়াংশ অতিরিক্ত হিসেবে প্রদান করতেন। হাবীব ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক-পঞ্চমাংশ বের করার পর অবশিষ্ট মালের এক-চতুর্থাংশ অতিরিক্ত হিসেবে দান করতেন এবং যুদ্ধ হতে ফেরার পর এক-পঞ্চমাংশ পৃথক রেখে তাদেরকে অবশিষ্ট মালের এক-তৃতীয়াংশ অতিরিক্ত দান করতেন। মাকহুল (রহঃ) তিনি বলেন, আমি মিসরে হুযাইল গোত্রের এক মহিলার গোলাম ছিলাম। অতঃপর তিনি আমাকে আযাদ করেন। আমার জানা মতে মিসরে সামগ্রিক জ্ঞান অর্জন না করা পর্যন্ত আমি সেখান থেকে বের হইনি। অতঃপর আমি হিজাযে আগমন করে সেখান থেকে সেখানকার কেন্দ্রগুলো থেকে জ্ঞান অর্জন করি। অতঃপর ইরাকে আসি এবং সেখানকার কেন্দ্রগুলো থেকে জ্ঞানার্জন করে সেখান থেকে বের হই। অতঃপর আমি সিরিয়ায় পৌছে এর বিভিন্ন এলাকা ভ্রমণ করি এবং গনীমাত সম্পর্কে জিজ্ঞস করি। কিন্তু এ সম্পর্কে আমাকে অবহিত করার মত কাউকে পাইনি। অবশেষে আমি যিয়াদ ইবনু জারিয়াহ আত-তামীমী নামক এক বৃদ্ধের সাক্ষাৎ পেয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি, আপনি গনীমাত সম্পর্কে কিছু শুনেছেন কি? তিনি বললেন, হাঁ। আমি হাবীব ইবনু মাসলামাহ আল-ফিহরী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। তিনি প্রথমে গনীমাত থেকে (এক-পঞ্চমাংশ বের করার পর বাকী মালের) এক-চতুর্থাংশ অতিরিক্ত দিতেন এবং যুদ্ধশেষে ফেরার পথে এক-তৃতীয়াংশ অতিরিক্ত দিতেন।

【159】

ক্ষুদ্র সামরিক অভিযান শেষে মূল বাহিনীতে প্রত্যাবর্তন

‘আমর ইবরু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সকল মুসলিমের রক্ত সমান। একজন সাধারণ মুসলিমও যে কোন ব্যক্তিকে নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিলে তার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা সকলের কর্তব্যে পরিণত হয়। অনুরুপভাবে দূরবর্তী স্থানের মুসলিমরাও তাদের পক্ষে এ ধরনের আশ্রয় দিতে পারে। প্রত্যেক মুসলিম তার প্রতিপক্ষ শত্রুর বিরুদ্ধে অন্য মুসলিমকে সাহায্য করবে। যার শক্তিশালী ও দ্রুত পতিসম্পন্ন সওয়ারী আছে, সে দুর্বল ও ধীর গতিসম্পন্ন সওয়ারীর অধিকারী ব্যক্তির সাথে থেকে চলবে। সেনাবাহিনীর কোন বিশেষ অংশ গনীমাতের মাল অর্জন করলে তা সকলের মধ্যে বন্টিত হবে। কোন কাফিরকে হত্যার অপরাধে কোন মুমিনকে হত্যা করা যাবে না। চুক্তিবদ্ধ কোন কাফিরকে চুক্তির মেয়াদের মধ্যে হত্যা করা যাবে না। বর্ণনাকারী ইসহাক্ব তার বর্ণনায় “আলমুসলিমূনা তাতাকাফা দিমাউহুম” এবং “ওয়ালা ইউক্বতালু মুমিনুন বি কাফিরিন” বাক্য দুটি উল্লেখ করেননি। ইয়াস ইবনু সালামাহ (রাঃ) তিনি (সালামাহ) বলেন, ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘উয়াইনাহ রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উট লুন্ঠন করলো এবং তাঁর রাখালকে মেরে ফেললো। অতঃপর সে ও তার অশ্বারোহী সাথীরা উটগুলোকে হাঁকিয়ে নিয়ে যেতে থাকলো। আমি (সালামাহ) মাদীনার দিকে মুখ ফিরিয়ে (সাহায্যের জন্য) তিনবার ডাক দিলাম, হুশিয়ার! (ডাকাত দল এসেছে)। অতঃপর আমি তাদের পিছু ধাওয়া করে তীর ছুঁড়ে তাদেরকে আহত করতে লাগলাম। তাদের কোন অশ্বারোহী আমার দিকে ফিরলে আমি গাছের আড়ালে লুকাতাম। এভাবে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উটগুলোকে (উদ্ধার করে) আমার পিছনে ফেললাম। তারা বোঝা হালকা করে দ্রুত পালানোর জন্য তিরিশের অধিক বর্শা এবং তিরিশের অধিক চাদর বাহনের পিঠ থেকে ফেলে দেয়। তাদের সাহায্য করতে ‘উয়াইনাহ এগিয়ে এসে বললো, তার (সালামাহর) মোকাবিলার জনঃ কয়েকজন অগ্রসর হও। অতঃপর আমার মোকাবিলার জন্য তাদের চার জন সামনে অগ্রসর হয়ে পাহাড়ে উঠলো। আমার অবস্থান যখন তাদের থেকে এতটুকু দূরে ছিলো যে, তারা আমার ডাক শুনতে পাবে, তখন আমি বললাম, তোমরা কি আমাকে চেনো! তারা বললো, তুমি কে? আমি বললাম, আমি আকওয়া‘র পুত্র। সেই সত্ত্বার শপথ, যিনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর চেহারাকে সম্মানিত করেছেন! তোমাদের কেউ আমাকে ধরতে চাইলে, সে কখনোই আমাকে ধরতে পরবেনা। পক্ষান্তরে আমি কাউকে ধরতে পারলে তার রক্ষা নাই। এমন সময় আমি দেখতে পেলাম যে, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অশ্বারোহী বাহিনী গাছপালার ভিতর দিয়ে এগিয়ে আসছে। আখরাম আল-আসাদী (রাঃ) ছিলেন তাদের সবার আগে। আখরাম আল-আসাদী (রাঃ) ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘উযাইনাহর দিকে অগ্রসর হলেন, সেও তাকে দেখতে পেলো। উভয়ের মধ্যে আক্রমণ পাল্টা-আক্রমণ চললো। আখরাম (রাঃ) তার ঘোড়াকে আঘাত করে হত্যা করলেন। ‘আবদুর রহমান (বল্লমের আঘাতে) আখরামকে শহীদ করে আখরামের ঘোড়ায় আরোহণ করলো। এবার আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) ‘আবদুর রহমানের মোকাবিলায় এগিয়ে এলেন। দু’জনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হলো। সে আবূ ক্বাতাদাহর (রাঃ) ঘোড়াকে হত্যা করলো। আর আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) তাকে হত্যা করলেন। অতঃপর তিনি আখরামের ঘোড়ার সওয়ার হলেন। এরপর আমি (সালামাহ) রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে আসি। এ সময় তিনি যু ক্বারাদ নামক কূপের নিকটে অবস্থান করছিলেন। এখান থেকেই আমি লুটেরাদের ধাওয়া করেছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে পাঁচশো লোক ছিলো। তিনি আমাকে (বীরত্বের জন্য) একজন অশ্বারোহীর ভাগ দিলেন এবং পদাতিকের ভাগও দিলেন।

【160】

সোনা-রূপা ও গনীমাতের প্রাথমিক মাল থেকে অতিরিক্ত প্রদান

আবূল জুওয়াইরিয়াহ আল-জারমী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি মু‘আবিয়াহর (রাঃ) শাসনামলে রোম এলাকায় স্বর্ণমুদ্রা ভর্তি লাল রঙের একটি কলস পাই। এ সময়ে আমাদের অধিনায়ক ছিলেন বনী সুলাইম গোত্রের মা‘ন ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) নামক নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এক সাহাবী। আমি কলসটি নিয়ে তার কাছে আসলে তিনি সৈনিকদের মধ্যে দীনারগুলি ভাগ করে দিলেন। তিনি অন্যদের মত আমাকেও এক ভাগ দিলেন। তিনি বললেন, আমি যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একথা বলতে না শুনতামঃ “এক-পঞ্চমাংশ নির্ধারণ করার পরই অতিরিক্ত দেয়া যায়।”, তাহলে আমি তোমাকে অতিরিক্ত দিতাম। অতঃপর তিনি তার অংশ থেকে আমাকে কিছু দিতে চাইলে আমি নিতে অসম্মতি জানাই। আসিম ইবনু কুলাইব (রহঃ) উল্লেখিত হাদীস ‘আসিম ইবনু কুলাইব (রহঃ) হতে একই সানাদে একই অর্থে বর্ণিত হয়েছে। আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি।

【161】

ফাই থেকে ইমাম নিজের জন্য কিছু রাখবে

‘আমর ইবনু ‘আবাসাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (সুতরাহ স্বরূপ) গনীমাতের একটি উটকে সামনে রেখে আমাদের নিয়ে সলাত আদায় করলেন। সালাম ফিরিয়ে তিনি উটের পার্শ্বদেশের একটি পশম নিয়ে বললেনঃ এক-পঞ্চমাংশ ছাড়া তোমাদের গনীমাত থেকে আমার জন্য এতটুকু বৈধ নয়। আর এই এক-পঞ্চমাংশ তোমাদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়।

【162】

ওয়াদা পূরণ করা

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন বিশ্বাসঘাতকের জন্য একটি পতাকা স্থাপন করা হবে। বলা হবে, এটা অমুকের পু্ত্র অমুকের বিশ্বাসঘাতকতার নিদর্শন।

【163】

ইমামের সম্পাদিত চুক্তি মেনে চলা

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নেতা ঢালস্বরুপ, তার নির্দেশে যুদ্ধ করা হয়। আবু রাফি’ (রাঃ) তিনি বলেন, কুরাইশ নেতারা আমাকে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে পাঠালেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখা মাত্র আমার অন্তরে ইসলাম গ্রহনের প্রেরণা জাগলো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর শপথ! আমি কখনোই তাদের কাছে ফিরে যাবো না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি ওয়াদা ভঙ্গ করবো না এবং দূতকেও আটকে রাখবো না। বরং তুমি ফিরে যাও, তোমার অন্তরে এখন যা আছে, পরেও যদি তা থাকে তাহলে তুমি ফিরে এসো। আবূ রাফি’ (রাঃ) বলেন, সুতরাং আমি চলে যাই এবং পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে ফিরে এসে ইসলাম গ্রহন করি। বুকাইর (রঃ) বলেন, আমাকে হাসান ইবনু আলী জানিয়েছেন, আবূ রাফি’ ছিলেন কিবতী গোলাম। আবূ দাঊদ (রঃ) বলেন, এ নিয়ম ঐ যুগের প্রেক্ষাপটে ছিল। এ যুগে কোন দূত ইসলাম গ্রহন করে আশ্রয় চাইলে তাকে আশ্রয় দিবে।

【164】

মুসলিম নেতা ও শত্রুপক্ষের মধ্যে চুক্তি হওয়ার পর তিনি শত্রুদেশ ভ্রমন করতে পারবেন

হিময়ার গোত্রের সুলাইম ইবনু ‘আমির (রঃ) তিনি বলেন, মু’আবিয়াহ (রাঃ) ও রোমকদের মধ্যে (নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যুদ্ধ বিরতির) চুক্তি হয়। মু’আবিয়াহ (রাঃ) তাদের জনপদে সফর করছিলেন এবং চুক্তির মেয়াদ শেষ হতেই তিনি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। তখন এক ব্যাক্তি আরবী বা তুর্কী ঘোড়ায় চড়ে উপস্থিত হয়ে বলেন, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার; ওয়াদা রক্ষা করতে হবে, ভঙ্গ করা চলবে না। লোকেরা দেখলো, লোকটি ‘আমর ইবনু ‘আসবাহ (রাঃ)। অতঃপর মু’আবিয়াহ (রাঃ)তাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি ‘আমর (রাঃ)- কে (কিসের ওয়াদা ভঙ্গ হচ্ছে তা) জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যদি কারো সাথে কোন কওমের চুক্তি থাকে, তাহলে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে তা নবায়ন করে শক্তিশালী করা যাবে না, এবং ভঙ্গ করাও যাবে না। যখন চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে তখন ঘোষনা দিয়ে চুক্তি ভঙ্গ করবে। অতঃপর মু’আবিয়াহ (রাঃ) (যুদ্ধ না করে) ফিরে আসেন।

【165】

চুক্তি পুর্ণ করা এবং এর মর্যাদা রক্ষা করা

আবু বাকরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যাক্তি আকারণে কোন চুক্তিবদ্ধ ব্যাক্তিকে হত্যা করবে, তার জন্য আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিবেন।

【166】

দূত সম্পর্কে

নু’আইম (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মুসাইলামা (ভন্ডনবী) চিঠি লিখেন। অতঃপর চিঠি পড়া হলে তার উভয় দূতকে লক্ষ্য করে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: এ লোক সম্পর্কে তোমরা কি বলো? তারা বললো, আমরা তা-ই বলি যা সে বলে (অর্থাৎ তার নবুওয়াতের দাবী মানি)। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃআল্লাহর শপথ! দূত হত্যা করা নিষিদ্ধ না হলে আমি তোমাদের উভয়ের গর্দান উড়িয়ে দিতাম। হারিসাহ ইবনু মুদারবির (রঃ) তিনি ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদের (রাঃ) কাছে এসে বললেন, আরববাসীর কারো সাথেই আমার কোন শত্রুতা নাই। কিন্তু আমি বনূ হানীফার মাসজ়িদে যাওয়ার সময় দেখলাম, এ গোত্রের লোকেরা (ভন্ডনবী) মুসাইলামার প্রতি ঈমান এনেছে। তখন ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তাদেরকে ডেকে আনতে লোক পাঠালেন। সে তাদেরকে নিয়ে আসলে ইবনুন নাওয়াহা ব্যতীত সকলকে তিনি তাওবাহ করতে বললেন। তিনি তাদের বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : তুমি দূত না হলে আমি তোমার গর্দান বিচ্ছিন্ন করে দিতাম। (‘আবদুল্লাহ রা. বলেন) তুমি তো আজ দূত নও। অতঃপর তিনি তাকে হত্যা করতে ক্বারাযাহ ইবনু কা’বকে নির্দেশ দেন। তিনি তাকে বাজারে নিয়ে গিয়ে (জনসম্মুখে) হত্যা করলেন। অতঃপর তিনি (‘আবদুল্লাহ অথবা ক্বারাযাহ) বললেন, যে ব্যাক্তি ইবনুন নাওয়াহাকে দেখতে চায়, সে যেন বাজারে এসে তার লাশ দেখে যায়।

【167】

নারীর দেয়া নিরাপত্তা সম্পর্কে

উম্মু হানী (রাঃ) বিনতু আবূ ত্বালিব তিনি মাক্কাহ বিজয়ের দিন মুশরিকদের এক লোককে আশ্রয় দেন। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে তাঁকে বিষয়টি অবহিত করায় তিনি বললেনঃতুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছো আমরাও তাকে আশ্রয় দিলাম এবং তুমি যাকে নিরাপত্তা দিয়েছো, আমরাও তাকে নিরাপত্তা দিলাম। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, মহিলারা মুসলিমদের প্রতিপক্ষ কাউকে আশ্রয় দিলে তা বৈধ হবে।

【168】

শত্রুপক্ষের সাথে সন্ধি করা

আল-মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) তিনি বলে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদায়বিয়ার বছরে এক হাজারের বেশি সাহাবী নিয়ে বের হলেন। অতঃপর যুল-হুলাইফাহ নামক স্থানে পৌছে তিনি উটের গলায় কুরবানীর প্রতীক (ক্বিলাদাহ) বাঁধেন, পশুর কুঁজের পশম কাটেন এবং ‘উমরাহ্‌র ইহরাম বাঁধলেন। এরা চলতে চলতে সানিয়্যাহ নামক স্থানে পৌঁছালে তাঁর ‘কাসওয়া’ নামের উষ্ট্রীঁ তাঁকে নিয়ে বসে যায়। এখান থেকেই মাক্কাহ্র প্রবেশ পথ। লোকেরা এটাকে উঠাবার জন্য হাল হাল শব্দ করলো। কিন্তু ‘কাসওয়া’ উঠলো না। তারা এভাবে দু’বার চেষ্টা করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ‘কাসওয়া’ তো ক্লান্ত হয়নি এবং তার এরুপ বসার অভ্যাসও নেই, বরং হাতীর গতিরোধকারী (মহান আল্লাহই) এর গতিরোধ করেছেন। অতঃপর তিনি বললেনঃঐ সত্ত্বার শপথ! যাঁর হাতে আমার জীবন! আল্লাহর ঘরের মর্যাদা রক্ষার জন্য কুরাইশরা আমার কাছে যা কিছুই দাবি করবে আমি তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি তাদেরকে দিবো। তিনি উষ্ট্রীঁকে উঠাতে গেলে তা উঠে দাঁড়ালো। তিনি রাস্তা পরিবর্বতন করে হুদায়বিয়ার পৌঁছালেন। তিনি একটি কূপের কাছে নামলেন। তাতে সামান্য পানি ছিল। তাঁর কাছে বুদাইল ইবনু ওয়ারাকা আল-খুযাঈ আসলো। পরে ‘উরওয়াহ ইবনু মাসঊদ আসলো। ‘উরওয়াহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে আলাপ শুরু করলো। সে নাবীর সাথে কথা বলার সময় তাঁর দাড়ি স্পর্শ করতো। মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছেই তরবারি নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার মাথায় শিরস্ত্রাণ ছিল। তিনি ‘উরওয়াহ্র হাতে তরবারির খাপ দিয়া আঘাত করে বললেন, তাঁর দাড়ি থেকে হাত দূরে রাখো। ‘উরওয়াহ মাখা তুলে বললো, লোকটি কে? লোকেরা বললো, তিনি মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ)। সে বললো, হে বিশ্বাসঘাতক! আমি কি তোমার বিশ্বাসঘাতকতার মূল্য আদায় করিনি? জাহিলি যুগে (ইসলাম কবুলের আগে) তিনি একদল লোকের সাথে যাওয়ার সময় পথে তাদেরকে হত্যা করে তাদের মালপত্র ছিনিয়ে নেন। পরবর্তীতে তিনি মদিনায় এসে ইসলাম কবুল করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃআমরা তোমার ইসলাম গ্রহন মেনে নিলাম, কিন্তু তোমার এসব তো লুন্ঠন করা মাল। আমাদের এসব মালের কোন দরকার নাই। এরপর বর্ণনাকারী হাদীসের বাকি অংশ বর্ণনা করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আলীকে বললেনঃমুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে বিষয়ে সন্ধি করেছেন তুমি তা লিখো। অতঃপর বর্ণনাকারী পুরো ঘটনা বললেন। সুহাইল বললো, আমাদের কেউ তোমার ধর্ম গ্রহন করে তোমার কাছে চলে এলে তাকে অবশ্যই আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। যখন সন্ধিপত্র লিখা শেষ হলো, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদেরকে বললেন, ওঠো, কুরবানী করো এবং মাথা মুড়াও। অতঃপর কতিপয় মহিলা মুসলিম হয়ে হিজরত করে আসলো, আল্লাহ তাদের ফিরিয়ে দিতে মুসলিমদেরকে নিষেধ করলেন এবং তাদেরকে মুহরানা বাবদ যা দেয়া হয়েছিল তা ফেরত দেয়ার নির্দেশ দিলেন। সন্ধিচুক্তি সম্পাদানের পর তিনি মদিনায় প্রত্যাবর্তন করলেন। এ সময় আবূ বাসীর (রাঃ) নামক কুরাইশদের এক ব্যাক্তি ইসলাম গ্রহণ করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে চলে আসলেন। কুরাইশরা তাকে ফেরত নিতে দু’জন লোক পাঠালো। তিনি দুই ব্যাক্তির কাছে তাকে অর্পণ করলেন। তারা তাকে সঙ্গে নিয়ে চলে গেলো। অতঃপর তার যুল-হুলাইফাহ নামক স্থানে পৌঁছে সওয়ারী থেকে নেমে খেজুর খেতে লাগলেন। তখন আবূ বাসীর (রাঃ) তাদের একজনকে বললেন, হে অমুক! আল্লাহর শপথ! তোমার তরবারিটি আমার কাছে বেশ সুন্দর লাগছে। সে খাপ থেকে তরবারি বের করে বললো, হাঁ, আমি একে পরীক্ষা করেছি। আবূ বাসির বললেন, আমাকে দাও না, একটু দেখি। তিনি তার কাছ থেকে তরবারিখানা হাতে নিয়েই তাকে আঘাত করেন, ফলে সে ঠান্ডা (নিহত) হয়ে যায়। দ্বিতীয়জন পালিয়ে মদিনায় এসে ভীত অবস্থায় মাসজিদে প্রবেশ করে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ লোকটি ভয় পেয়েছে। সে বললো, আল্লাহর শপথ! আমার সঙ্গী নিহত হয়েছে, আমিও নিহত হলাম। আবূ বাসীর (রাঃ) ফিরে এসে বললেন, আল্লাহর আপনার যিম্মাদারী পূর্ণ করে দিয়েছেন। আপনি আমাকে তাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। অতঃপর আল্লাহ আমাকে তাদের থেকে মুক্তি দিয়েছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আবূ বাসীরের মায়ের জন্য দুঃখ, সে তো যুদ্ধের আগুন জ্বালালো। যদি তার কোন সাহায্যকারী থাকতো! এ কথা শুনে আবূ বাসীর বুঝতে পারলেন, তাকে পুনরায় তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে। তাই তিনি পালিয়ে সাইফুল বাহার নামক স্থানে চলে আসেন। অতঃপর আবূ জান্দাল (রাঃ)-ও মাক্কাহ্ থেকে পালিয়ে আবূ বাশিরের সাথে মিলিত হলেন। (ইসলাম গ্রহন করে) কুরাইশদের একদল লোক এভাবেই এখানে এসে একত্র হন। আল-মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) ও মারওয়ান ইবনুল হাকাম কুরাইশরা দশ বছর পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ রাখার সন্ধি করলো। এ সময়ে লোকজন নিরাপদে থাকবে; আমাদের পরস্পরের মাঝে কোন কুটিলতা থাকবেনা; গোপন ষড়যন্ত্র করবে না এবং কোন পক্ষই বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। হাসসান ইবনু ‘আত্বিয়্যাহ(রাঃ) তিনি বলেন, মাকহুল ও ইবনু আবূ যাকারিয়্যাহ (রহঃ) খালিদ ইবনু মা’দান (রহঃ)-এর কাছে গেলে তাদের সাথে আমিও গেলাম। তিনি জুবাইর ইবনু নুফাইর (রহঃ) হতে আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, জুবাইর (রাঃ) বলেন, আমাদের সঙ্গে যি-মিখবাবের (রাঃ) কাছে চলো। তিনি ছিলেন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীদের অন্যতম একজন। আমরা তার কাছে গেলে জুবাইর (রাঃ) তাকে সন্ধি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ অচিরেই তোমরা রোমকদের সাথে সম্মিলিতভাবে তোমাদের দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়াবে।

【169】

শত্রুর কাছে উপস্থিত হয়ে তাদের দলভুক্ত হওয়ার ভান করে তাকে হত্যা করা

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কা’ব ইবনু আশরাফকে হত্যা করার কেউ আছো কি? সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে। তখন মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ (রাঃ) উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আছি। আপনি কি চান যে, আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বললেনঃ হাঁ। মুহাম্মাদ ইবনু মাসালামাহ (রাঃ) বলেন, তাহলে আমাকে সেখানে গিয়ে (আপনার ব্যাপারে) কিছু বলার অনুমতি দিন। তিনি বললেনঃ আচ্ছা। তিনি কা’ব ইবনু আশরাফের কাছে গিয়ে বলতে লাগলেন, এই ব্যক্তি (মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম]) আমাদের নিকট বারবার সদাক্বাহ চেয়ে আমাদেরকে বিরক্ত করছে। কিন্তু আমরা তাঁর আনুগত্য স্বীকার করায় কিছু করতেও পারছি না। কা’ব বললো, জ্বালাতনের কি দেখছো (সবেতো শুরু)! সে তোমাদের অতিষ্ঠ করে তুলবে। তিনি বললেন, আমরা কেবল তাঁর আনুগত্য গ্রহণ করেছি, তাই তাঁর কাজের পরিণতি না দেখা পর্যন্ত তাঁকে এখনই পরিত্যাগ করা সমীচীন মনে করছি না। এখন আমি তোমার কাছে এজন্যই এসেছি যে, তুমি আমাদেরকে এক বা দুই ওয়াসাক (খাদ্য) ধার দিবে। সে বললো, এর বদলে আমার কাছে কি বন্ধক রাখবে? তিনি বললেন, তুমি আমাদের কাছে কি চাও? সে বললো, তোমাদের স্ত্রীদের। তারা বললেন, সুবহানাল্লাহ! তুমি আরবের সুন্দরতম ব্যক্তি হয়ে এরূপ বলছো? তোমার নিকট আমাদের মহিলাদের বন্ধক রাখলে তা আমাদের জন্য লজ্জার কারণ হবে। সে বললো, তাহলে তোমাদের সন্তানদেরকে আমার কাছে বন্ধক রাখো। তারা বললেন, সুবহানাল্লাহ! আমাদের সন্তানেরা বড়ো হলে লোকেরা তাদের তিরস্কার করে বলবে, এক বা দুই ওয়াসাকের বিনিময়ে তাদেরকে বন্ধক রাখা হয়েছিল। তারা বললেন, আমরা তোমার কাছে যুদ্ধাস্ত্র বন্ধক রাখতে চাই। কা’ব বললো, ঠিক আছে, তা-ই রাখো। (এরপর মাসলামাহ চলে গেলেন এবং পরে রাতের বেলায়) এসে কা’বকে ডেকে বাইরে নিয়ে যান। কা’ব সুগন্ধিমাখা ছিল, তার মাথার সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ছিল। তিনি কা’বের কাছে বসলেন। তাঁর সাথে আরো তিন-চারজন লোক ছিল। তারা কা’বের সুগন্ধির ব্যাপারে কা’বকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, আমার কাছে অমুক রমণী রয়েছে, সে অন্যান্য রমণীর চেয়ে অধিক সুগন্ধি মেখে থাকে। তিনি বললেন, তোমার চুল থেকে একটু ঘ্রাণ নেয়ার অনুমতি দাও। সে বললো, আচ্ছা। তিনি তার মাথায় হাত ঢুকালেন এবং মাথার ঘ্রাণ নিলেন। তিনি বললেন, আর একবার, সে বললো, ঠিক আছে। তখন মাসলামাহ তার মাথায় হাত ঢুকিয়ে মাথার চুল শক্তভাবে ধরে সাথীদের বললেন, এবার মারো। তখন তারা তাকে আঘাত করে হত্যা করলেন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ঈমানের দাবী হলো, কাউকে ধোঁকা দিয়ে হত্যা না করা। কাজেই কোন মুমিন গুপ্তহত্যা করবে না।

【170】

সফরে উচ্চ স্থানে উঠার সময় তাকবীর বলা

‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধ, হাজ্জ অথবা ‘উমরাহ করে ফেরার সময় কোন উঁচু স্থানে উঠার সময় তিনবার ‘আল্লাহু আকবর’ করতেন এবং বলতেনঃ “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নাই, মালিকানা ও সার্বভৌমত্ব তাঁরই; তাঁর জন্যই যাবতীয় প্রশংসা, তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আমারা তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তনকারী, তাঁর কাছেই ক্ষমাপ্রার্থী, তাঁরই ‘ইবাদাতকারী’ আমরা আমাদের রব্বের উদ্দেশেই সাজদাহকারী’ তাঁরই প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাঁর ওয়াদা সত্যে পরিণত করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই শত্রুদেরকে পরাজিত করেছেন।

【171】

নিষেধের পর প্রত্যাবর্তনের অনুমতি প্রসঙ্গে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) মহান আল্লাহর বাণী, “যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ঈমান এনেছে, তারা আপনার কাছে তাদের জান ও মাল নিয়ে জিহাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইবে না....” (সূরাহ আত-তাওবাহঃ ৪৪-৪৫) পর্যন্ত। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ আয়াতের নির্দেশ সূরাহ আন-নূরের এ আয়াত দ্বারা রহিত হয়েছেঃ “প্রকৃত মুমিন তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে.........নিশ্চই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু” (সূরাহ আন-নূরঃ ৬২)

【172】

সুসংবাদ প্রদানের জন্য কাউকে পাঠানো

জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তুমি আমাকে ‘যুল-খালাসা’ সম্পর্কে নিশ্চিত করছো না কেন? অতঃপর জারীর সেখানে গিয়ে তা জ্বালিয়ে দিলেন এবং আবূ আরত্বাত (রাঃ) নামক আহমাস গোত্রের এক লোককে পাঠিয়ে নাবীকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুসংবাদ জানান।

【173】

সুসংবাদ দাতাকে উপহার দেয়া

কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফর থেকে ফিরে এসে প্রথমে মাসজিদে ঢুকতেন। তারপর দু’ রাক‘আত সালাত আদায় করে লোকদের নিয়ে বসতেন। অতঃপর বর্ণনাকারী ইবনুস সারহ পুরো হাদীসটি বর্ণনা করেন। কা’ব (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের তিনজনের সাথে কথাবার্তা বলতে সবাইকে নিষেধ করলেন। এভাবে অনেক দিন অতিবাহিত হলো। একদিন আমি আমার চাচাতো ভাই আবূ ক্বাতাদাহর (রাঃ) বাগানের দেয়াল টপকে সেখানে ঢুকে তাকে সালাম করি। আল্লাহর শপথ! তিনি আমার সালামের উত্তর দেননি। অতঃপর পঞ্চাশ দিনের দিন সকালে আমি ঘরের ছাদের উপর ফাজরের সলাত আদায় করলাম। এমন সময় শব্দ শুনতে পেলাম, এক ব্যক্তি চিৎকার দিয়ে বলছে, হে কা‘ব ইবনু মালিক! তোমার জন্য সুসংবাদ। অতঃপর ঐ সুসংবাদদাতা আমার কাছে আসলে আমি আমার দুইখানা কাপড় খুলে তাকে পরিয়ে দিলাম। আমি উঠে সরাসরি মাসজিদে নাববীতে গিয়ে উপস্থিত হয়ে দেখি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে আছেন। তখন ত্বালহা ইবনু ‘উবাইদুল্লাহ (রাঃ) দ্রুত আমার দিকে এসে আমার সাথে মুসাফাহা করলেন এবং আমাকে মোবারকবাদ জানালেন।

【174】

কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সাজদাহ

আবূ বাকরাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে কোন খুশির খবর আসলে অথবা তিনি কোন সুসংবাদ পেলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়াস্বরুপ সাজদাহয় পড়ে যেতেন। ‘আমির ইবনু সা’দ (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি (সা’দ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে মাক্কাহ থেকে মাদীনাহর দিকে রওয়ানা হলাম। অতঃপর আমরা ‘আযওয়ারা’ নামক স্থানের নিকটে পৌঁছালে তিনি বাহন থেকে নেমে আল্লাহর নিকট হাত তুলে কিছুক্ষণ দু’আ করে সাজদাহয় লুটিয়ে পড়েন। তিনি অনেকক্ষণ সাজদাহয় থাকলেন। অতঃপর সাজদাহ থেকে উঠে পুনরায় মহান আল্লাহর কাছে হাত তুলে কিছুক্ষণ দু’আ করে আবার সাজদাহ করলেন এবং অনেকক্ষণ সাজদাহয় থাকলেন। আবার উঠে দু’হাত তুলে দু’আ করলেন এবং সাজদাহয় করলেন। বর্ণনাকারী আহমাদ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরুপ তিনবার করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি আমার রব্বের নিকট আবেদন করেছি এবং আমার উম্মাতের জন্য সুপারিশ করেছি। আমাকে এক-তৃতীয়াংশ উম্মাতের জন্য শাফা’আতের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তাই কৃতজ্ঞতা সরূপ আমি সাজদাহতে লুটিয়ে পড়েছি। আবার মাথা তুলে আমার রব্বের নিকট উম্মাতের জন্য আবেদন করেছি। তিনি আমাকে আমার উম্মাতের আরো এক-তৃতীয়াংশের জন্য শাফ’আত করার অনুমতি দিলেন। আমি পুনরায় সাজদাহয় অবনত হয় প্রভুকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি পুনরায় মাথা তুলে আমার মহান রব্বের নিকট উম্মাতের জন্য দু’আ করি। তিনি আমাকে আরো এক-তৃতীয়াংশ উম্মাতের জন্য শাফা’আত করার অনুমতি দেন। আমি আমার প্রভুকে সাজদাহ করে শুকরিয়া জানাই। আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস বর্ণনার সময় আহমাদ ইবনু সালিহ আমাদের কাছে আশ’আস ইবনু ইসহাক্বের নাম উল্লেখ না করেই মূসা ইবনু সাহল থেকে এ হাদীস বর্ণনা করেন। দুর্বলঃ যঈফ আল-জামু’উস সাগীর (২০৮৯), ইরওয়া (৪৭৪)।

【175】

রাতের বেলা সফর থেকে ফেরা

জাবির ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন ব্যক্তির সফর থেকে গভীর রাতে নিজ পরিবারের কাছে প্রত্যাবর্তন করা অপছন্দ করতেন। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মানুষের জন্য উত্তম হচ্ছে রাতের প্রথম অংশেই সফর থেকে ফিরে এসে পরিবারের সাথে মিলিত হওয়া। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে কোন এক সফর থেকে ফিরে যখন শহরে ঢূকছিলাম, তখন তিনি বললেনঃ থামো! আমরা রাত হলে প্রবেশ করবো। যেন স্ত্রীরা পরিচ্ছন্ন হয়ে চিরুনী করে এবং নিম্নাঙ্গের পশম কেটে পরিষ্কার করতে পারে। আবূ দাঊদ বলেন, যুহরী বলেছেন, ‘ইশার সলাতের পর আসলে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য। আবূ দাঊদ (রঃ) বলেন, মাগরিবের পর আসাতে কোন দোষ নেই।

【176】

আগন্তুকদের স্বাগত জানানো

আস-সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূকের যুদ্ধ হতে মাদীনাহয় ফিরে এলে জনগণ তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য এগিয়ে আসে। আমি বালকদের সঙ্গে নিয়ে ‘আল-বিদা’ উপত্যকায় গিয়ে তাঁকে সংবর্ধনা জানাই।

【177】

যুদ্ধে যেতে অক্ষম হলে সংগৃহীত সরঞ্জাম অন্য মুজাহিদকে দেয়া উত্তম

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আসলাম গোত্রের এক যুবক বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জিহাদের ইচ্ছা করেছি, কিন্তু এর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমার নেই। তিনি বললেনঃ অমুক আনসারীর নিকট যাও। সে জিহাদে অংশগ্রহণের রসদপত্র ব্যবস্থা করেছে কিন্তু এখন অসুস্থ। তুমি তাকে গিয়ে বলবে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাকে সালাম জানিয়েছেন। তুমি তাকে আরো বলবে, জিহাদের জন্য আপনি যে রসদপত্র সংগ্রহ করেছেন তা আমাকে দিন। যুবকটি তার নিকট গিয়ে বিষয়টি জানালো। আনসারী লোকটি তার স্ত্রীকে ডেকে বললেন, হে অমুক! আমার জন্য যে রসদপত্র তুমি সংগ্রহ করেছো তা এ যুবককে দিয়ে দাও, এর কোন কিছুই রেখে দিবে না। আল্লাহ শপথ! তুমি এর থেকে সামান্য বস্তুও রাখবে না, তবেই আল্লাহ এতে বরকত দিবেন।

【178】

সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের পর সলাত আদায় করা

কা‘ব ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিনের বেলায় সফর থেকে ফিরতেন। হাসান বাসরী (রঃ) বলেন, পূর্বাহ্নে ফিরতেন। কা‘ব (রাঃ) বলেন, তিনি সফর থেকে ফিরে প্রথমে মাসজিদে এসে দুই রাকা‘আত আদায় করার পর সেখানে বসতেন। ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জ শেষে প্রত্যাবর্তন করে মাদীনাহয় প্রবেশ করলেন। উষ্ট্রীকে মাসজিদের দরজায় বসিয়ে তিনি তাঁর মাসজিদে ঢুকে দুই রাকা‘আত সলাত আদায় করলেন, অতঃপর নিজ বাড়িতে গেলেন। নাফি’ (রঃ) বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ)–ও অনুরূপ করতেন।

【179】

বন্টনকারীর মজুরী

আবূ সাইদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন কিছু বন্টনের পারিশ্রমিক গ্রহণ থেকে বিরত থাকো। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা এর তাৎপর্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ একটি নির্দিষ্ট জিনিসে বিভিন্ন লোকের অধিকার থাকতে পারে। (অথচ বন্টনকারী বেশি পাওয়ার জন্য কারচুপি করে)। ফলে অন্যরা ভাগে কম পায়। দুর্বলঃ যঈফ আল-জামি’উস সাগীর (২২০৭)। ‘আত্বা ইবনু ইয়াসার (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। তিনি বলেনঃ এমনও লোক রয়েছে, যারা জনসাধারণের বন্টনকারী নিযুক্ত হয়ে এ ভাগ থেকে কিছু এবং ঐ ভাগ থেকে কিছু আত্মসাৎ করে থাকে।

【180】

জিহাদে গিয়ে ব্যবসা করা

‘উবাইদুল্লাহ ইবনু সুলাইমান (রঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কোন এক সাহাবী তাকে বলেছেন, আমরা খায়বার বিজয় করলে মুজাহিদরা গনীমাত থেকে নিজ নিজ ভাগের বন্দী ও মালপত্র গ্রহণ করলো। লোকজন তাদের গনীমাতের মাল পরস্পর ক্রয়-বিক্রয় করতে লাগলো। এক ব্যক্তি এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আজকে আমি এতই লাভ করেছি যে, এই প্রান্তরে কেউই অনুরূপ লাভ করতে পারেনি। তিনি বললেনঃ হায়! তুমি কি লাভ করেছো? সে বললো, আমি ক্রয়-বিক্রয় করে ‘তিনশো উকিয়াহ’ লাভ করেছি। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি কি তোমাকে এমন ব্যক্তির কথা জানাবো, যে তোমার চাইতে উত্তম লাভ করেছে? সে বললো, হে আল্লাহর রাসূল রাসূল! কে সেই লোক? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি ফারয সালাতের পর অতিরিক্ত দুই রাকা‘আত (নাফল) সলাত আদায় করেছে।

【181】

যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে শত্রু এলাকায় গমন

দিবাব গোত্রের যুল-জাওসান (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদরের যুদ্ধ থেকে অবসর হওয়ার পর আমি ইবনুল কারহা নামক একটি ঘোড়ার বাচ্চা নিয়ে তাঁর কাছে আসি। আমি বললাম, হে মুহাম্মদ! আমি আপনাকে দেয়ার জন্য কারহার বাচ্চাকে নিয়ে এসেছি। তিনি বললেনঃ এটি আমার দরকার নাই। তবে তুমি এর বিনিময়ে বদর যুদ্ধে প্রাপ্ত কোন একটি বর্ম নাও তাহলে তোমার ঘোড়ার বাচ্চাটি নিতে পারি। আমি বললাম, আজ আমি এর বিনিময়ে একটি ঘোড়াও নিতে রাজি নই। তিনি বললেনঃ তাহলে এটি আমার দরকার নাই।

【182】

মুশরিকদের এলাকায় অবস্থান সম্পর্কে

সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কেউ কোন মুশরিকের সাহচর্যে থাকলে এবং তাদের সাথে বসবাস করলে সে তাদেরই মত।