26. জ্ঞান

【1】

জ্ঞানার্জনের ফাযীলাত

কাসীর ইবনু (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আমি আবূ দারদার (রাঃ) সঙ্গে দামেশকের মাসজিদে বসা ছিলাম। তখন তার নিকট এক ব্যক্তি এসে বললো, হে আবূ দারদা! আমি একটি হাদীসের জন্য সুদূর মাদীনাতুর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এসেছি। জানতে পারলাম, আপনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেন। এ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে আমি আসিনি। আবূ দারদা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের জন্য কোন পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ্‌ তার পরিবর্তে তাকে জান্নাতের পথসমূহের মধ্যে কোন একটি পথে পৌঁছে দেন। ফেরেশতারা জ্ঞান অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। জ্ঞানীর জন্য আসমান ও যমীনের যারা আছে তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা ও দু‘আ প্রার্থনা করে, এমনকি পানির গভীরে বসবাসকারী মাছও। আবেদ (সাধারণ ইবাদাতগুজারী) ব্যক্তির উপর ‘আলিমের ফাযীলাত হলো যেমন সমস্ত তারকার উপর পূর্ণিমার চাঁদের মর্যাদা। জ্ঞানীরা হলেন নাবীদের উত্তরসূরি। নাবীগণ কোন দীনার বা দিরহাম মীরাসরূপে রেখে যান না; তারা উত্তরাধিকার সূত্রে রেখে যান শুধু ইল্‌ম। সুতরাং যে ইল্‌ম অর্জন করেছে সে পূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে। আবূ দারদা (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্র উপরোল্লিখিত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। [৩৬৪২] আমি এটি সহীহ এবং যঈফেও পাইনি। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি ইল্‌ম অর্জনের জন্য কোন পথ অবলম্বন করলে তার বিনিময়ে আল্লাহ্‌ তার জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। যার আমল তাকে পিছিয়ে রেখেছে, তার বংশগৌরব তাকে এগিয়ে দিতে পারে না।

【2】

আহলে কিতাবের হাদীস বর্ণনা করা

ইবনু আবূ নামলাহ আল-আনসারী (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র একদা আবূ নাম্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসা ছিলেন। এ সময় এক ইয়াহুদীও তাঁর নিকট বসা ছিল। তাঁর সামনে দিয়ে একটি লাশ নিয়ে যাওয়া হলো। ইয়াহুদী বললো, হে মুহাম্মাদ! এই জানাযা (লাশ) কি কথা বলতে পারে? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। ইয়াহুদী বললো, সে (কবরে) কথা বলবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কিতাবধারীরা তোমাদের যেসব কথাবার্তা বলে তা তোমরা বিশ্বাসও করো না এবং মিথ্যাও ভেবো না। তোমরা বলো, আমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। তাদের কথা যদি বাতিল হয় তাহলে তা বিশ্বাস করলে না আর যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে তোমরা মিথ্যাও মনে করলে না। [৩৬৪৪] দুর্বলঃ যঈফাহ (১৯৯১)। যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ইয়াহুদীদের লেখা (ভাষা) শিখার আদেশ দিলেন। আমি তদনুযায়ী ইয়াহুদীদের লেখা শিখলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র শপথ! ইয়াহুদীরা আমার পক্ষ হতে সঠিক লিখবে বলে আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। বর্ণনাকারী বলেন, পনের দিন যেতে না যেতেই আমি তাদের লেখা আয়ত্ত করে ফেললাম। তিনি চিঠিপত্র লেখানোর ইচ্ছা করলে আমি লিখে দিতাম এবং তার নিকট চিঠিপত্র এলে আমি তা তাঁকে পড়ে শুনাতাম।

【3】

জ্ঞানের কথা লিখে রাখা

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যা কিছু শুনতাম লিখে রাখতাম। মনে রাখার জন্যই আমি এরূপ করতাম। কুরাইশরা আমাকে সবকিছু লিখতে বারণ করলেন এবং বললেন, তুমি কি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে শোনা সবকিছুই লিখে রাখো? তিনি তো একজন মানুষ, রাগ ও শান্ত উভয় অবস্থায় কথা বলে থাকেন। সুতরাং আমি লেখা স্থগিত রাখলাম। আমি এটা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উল্লেখ করলাম। তিনি আঙ্গুল দিয়ে তাঁর মুখের দিকে ইশারা করে বললেনঃ তুমি লিখে রাখো, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! এ মুখ হতে সর্বাবস্থায় সত্য ব্যতীত অন্য কিছু বের হয় না। আল-মুত্তালিব ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু হানতাব (রহঃ) তিনি বলেন, একদা যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) মু‘আবিয়াহ (রাঃ)-এর নিকট গেলেন। মু’আবিয়াহ (রাঃ) তাকে একটি হাদীস সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন এবং এক ব্যক্তিকে তা লিখে রাখার আদেশ দিলেন। যায়িদ (রাঃ) তাকে বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে হাদীস না লিখতে আদেশ দিয়েছেন এবং যা লেখা হয়েছিল তাও মুছে দিলেন। [৩৬৪৭] আবূ সাইদ আল-খুদরী (রহঃ) আমরা তাশাহুদ ও আল-কুরআন ছাড়া আর কিছু লিখতাম না। [৩৬৪৮] আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) মাক্কাহ বিজয় হলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন। অতঃপর আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ভাষণ উল্লেখ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আবূ শাহ নামক ইয়ামানের এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনারা আমাকে লিখে দেয়ার ব্যবস্থা করে দিন। তিনি বলেনঃ তোমরা আবূ শাহকে লিখে দাও। আল-ওয়ালীদ (রহঃ) আমি আবূ ‘আমর (রহঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, তারা কী লিখেছেন? তিনি বলেন, সে সময়ে তিনি তাঁর যে ভাষণ শুনেছিলেন তা। [৩৬৫০]

【4】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর প্রতি মিথ্যারোপ করা সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারি

‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি যুবাইর (রাঃ)-কে বললাম, আপনি অন্যান্য সাহাবীদের মতো রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীস বর্ণনা করেন না কেন? তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র কসম! আমি তাঁর নৈকট্য লাভ করেছি, তাঁর সাহচর্যে থেকেছি। কিন্তু আমি তাঁকে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করলো, সে (জাহান্নামের) আগুনে তার বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নিলো।

【5】

না জেনে আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে আলোচনা করা

জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআনের ব্যাখ্যায় নিজ মনগড়া কথা বলে, তার কথা সঠিক হয়ে গেলেও সে ভুল করেছে। [৩৬৫২]

【6】

কথায় পুনরাবৃত্তি প্রসঙ্গ

আবূ সাল্লাম (রহঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক খাদেমের সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন কথা বললে তা তিনবার পুনরাবৃত্তি করতেন। [৩৬৫৩]

【7】

দ্রুত কথা বলা ঠিক নয়

‘উরওয়াহ (রহঃ) তিনি বলেন, একদা আবূ হুরায়রা (রাঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর ঘরের পাশে এসে বসলেন। তিনি তখন সলাত আদায় করছিলেন। আবূ হুরায়রা (রাঃ) দু’বার বললেন, হে ঘরেরবাসিনী! শুনুন। ‘আয়িশাহ (রাঃ) সলাত শেষ করে ‘উরওয়াহ্‌কে বললেন, তুমি কি এ ব্যক্তি ও তার কথায় অবাক হচ্ছো না? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন কথা বললে এতো স্পষ্ট ও ধীরস্থিরভাবে বলতেন যে, কোন গণনাকারী তা গণনা করতে চাইলে অনায়াসেই তা গণনা করতে পারতো। ‘উরওয়াহ ইবনুয যুবাইর (রহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা্‌র আচরণ তোমাকে কি অবাক করে না? সে এসে আমার ঘরের এক পাশে বসে আমাকে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি হাদীস পড়ে শুনাতে লাগলো। আমি তখন সলাতরত ছিলাম। আমার সলাত শেষ হওয়ার পূর্বেই সে উঠে চলে গেলো। আমি যদি তাকে পেতাম তবে তাকে বলতাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের ন্যায় তাড়াহুড়া করে কথা বলতেন না।

【8】

ফাতাওয়াহ প্রদানে সাবধানতা অবলম্বন

মু‘আবিয়াহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন করতে আমাদের বারণ করেছেন। [৩৬৫৬] দুর্বলঃ মিশকাত (২৪৩)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে ফাতাওয়াহ দেয়া হয়...। আবূ হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তিকে অজ্ঞাত প্রসূত ফাতাওয়াহ দেয়া হয় তার পাপ ফাতাওয়াদানকারীর উপর বর্তাবে। সুলাইমানের বর্ণনায় রয়েছেঃ যে ব্যক্তি তার ভাইকে ক্ষতিকর পরামর্শ দেয়, অথচ সে জানে যে, কল্যাণ তার বিপরীতে রয়েছে তাহলে সে তার ভাইয়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো।

【9】

জ্ঞানের কথা গোপন করা অপছন্দনীয়

আবূ হুয়াইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জানা ইল্‌ম সম্পর্কে জিজ্ঞেসিত হয়ে তা গোপন করলো, ক্বিয়ামাতের দিন মহান আল্লাহ তাকে আগুনের লাগাম পরিয়ে দিবেন।

【10】

জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেয়ার ফাযীলাত

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ভালভাবে জ্ঞানের কথা শুনে রাখো। কেননা লোকেরা তোমাদের কাছ থেকে তা শুনবে। অতঃপর তোমাদের কাছ থেকে যারা শুনবে, তাদের কাছ থেকেও পরবর্তীরা শুনবে। যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আমার নিকট হতে হাদীস শুনে তা মুখস্থ রাখলো এবং অন্যের নিকটও তা পৌছে দিলো, আল্লাহ তাকে চিরউজ্জ্বল করে রাখবেন। জ্ঞানের অনেক বাহক তার চেয়ে অধিক সমঝদার লোকের নিকট তা বহন করে নিয়ে যায়; যদিও জ্ঞানের বহু বাহক নিজেরা জ্ঞানী নয়। সাহল ইনবু সা‘দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহর শপথ! যদি তোমার চেষ্টার দ্বারা আল্লাহ একটি লোককেও হেদায়াত দেন, তবে তা হবে তোমার জন্য একপাল লাল উটের চেয়েও উত্তম।

【11】

বনী ইসরাঈলীদের কাছ থেকে শোনা কথা বর্ণনা করা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বনী ইসরাঈলের নিকট শোনা কথা বর্ণনা করতে পারো, এতে কোন অসুবিধা নেই। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট বনী ইসরাঈল সম্পর্কে (দীর্ঘক্ষণ) আলোচনা করতেন, সকালে শুধু ফরয সলাত আদায়ের জন্যই আলোচনা বন্ধ করে উঠতেন।

【12】

মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য উদ্দেশ্যে জ্ঞানার্জন করা।

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ইল্মের দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা যায়, কোন লোক যদি দুনিয়াবী স্বার্থ লাভের জন্য তা শিক্ষা করে, তবে সে ক্বিয়ামাতের দিন জান্নাতের সুগন্ধি পাবে না।

【13】

কিসসা-কাহিনী প্রসঙ্গ

‘আওফ ইনবু মালিক আল-আশাজাঈ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–কে বলতে শুনেছিঃ শাসক, তার অধীনস্ত ব্যক্তি বা কোন অহংকারী ব্যতীত আর কেউই কিস্‌সা বর্ণনা করে না। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি একদল নিঃস্ব মুহাজিরের সঙ্গে বসলাম। তাদের অবস্থা এতোই শোচনীয় ছিলো যে, (পরিধেয় বস্ত্র খুবই ছোট হওয়ায়) পরস্পর পরস্পরের সতর আড়াল করে বসছিলেন। একজন পাঠক আমাকেরকে (কুরআন) পড়ে শুনাচ্ছিলেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে দাঁড়ালে পাঠক তার পাঠ বন্ধ করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম করার পর প্রশ্ন করলেনঃ তোমারা কী করছিলে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ইনি আমাদের নিকট কুরআন পড়েন আর আমরা মহান আল্লাহর কিতাব মনোযোগ দিয়ে শুনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সমস্থা প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার উম্মাতের মধ্যে এমন ধৈর্যশীল লোক রেখেছেন, যাদের সাথে আমাকেও ধৈর্য ধারণের আদেশ দিয়েছেন। আবূ সাঈদ আল-খুদরী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে এসে বসলেন এবং আমাদের জামা’আতকে পূর্ণাঙ্গ করলেন। অতঃপর তিনি উপস্থিত লোকদেরকে হাত দিয়ে ইশারা করে গোল হয়ে বসার আদেশ দিলেন। তারা গোলাকার হয়ে বসলেন এবং সবার চেহারা তাঁর দিকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) বলেন, আমার মনে হয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমি ছাড়া তাদের মধ্যে আর কাউকে চিনতে পারেননি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে নিঃস্ব-দুর্বল মুহাজিরগণ! তোমাদের জন্য ক্বিয়ামাতের দিনের পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ। তোমরা ধনীদের চেয়ে অর্ধ দিবস আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর এই অর্ধ দিবসের পরিমাণ হলো পাঁচশো বছর। [৩৬৬৬] দুর্বলঃ তবে জান্নাতে প্রবেশের বাক্যটি সহীহ। মিশকাত (২১৯৮)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি এমন একটি দলের সাথে বসবো যারা ফাজ্‌রের সলাত হতে শুরু করে সূর্য উঠা পর্যন্ত মহান আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকে। এ কাজ আমার নিকট ইসমাঈলের (আঃ)-এর বংশের দাসী আযাদ করার চেয়ে অধিক প্রিয়। আমি এমন একটি দলের সাথে বসবো যারা ‘আসরের সলাত হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকে। আমার নিকট এ কাজ চারটি দাসী আযাদ করার চেয়েও অধিক প্রিয়। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তুমি আমাকে সূরাহ আন-নিসা পড়ে শুনাও। আমি বললাম, আমি আপনাকে পড়ে শোনাবো, অথচ তা আপনার উপরই অবতীর্ণ হয়েছে! তিনি বললেনঃ আমি অন্যকে দিয়ে তা পড়িয়ে শুনতে চাই। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি সূরাহ আন-নিসা পড়তে পড়তে (৪১ নং আয়াত) “আমি যখন প্রত্যেক উম্মাতের মধ্য হতে একজন করে সাক্ষী উপস্থিত করবো এবং আপনাকে সাক্ষী হিসেবে পেশ করবো তখন কী অবস্থা হবে!” এ পর্যন্ত পৌঁছে মাথা তুলে দেখলাম, তাঁর দু’চোখ বেয়ে পানি ঝরছে।