34. পোশাক-পরিচ্ছেদ

【1】

নতুন কাপড় পরার সময় যা বলতে হয়

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নতুন কাপড় পরিধান করতেন, জামা অথবা পাগড়ি, এর নাম উচ্চারণ করে তিনি এ দু’আ পাঠ করতেনঃ (আরবী) আবু নাদরাহ (রহঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের কেউ নতুন কাপড় পরলে তাকে বলা হতো, “এ কাপড় যেন তোমার দ্বারা পুরাতন হয় এবং মহান আল্লাহ যেন এর পরে তোমায় আরো কাপড় পরান”। আল-জুরাইরী (রহ) সূত্র তার সানাদে উপরোক্ত হাদীসের অর্থবোধক হাদীস বর্ণিত। আল-জুরাইরী (রহ) সূত্র তার সানাদে উপরোক্ত হাদীসের অর্থবোধক হাদীস বর্ণিত। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল ওয়াহ্হাব আস-সাক্বাফী (রহ) এতে আবূ সাঈদের (রাঃ) উল্লেখ করেননি। হাম্মাদ ইবনু সালামাহ ........ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে বর্ণিত। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, হাম্মাদ ইবনু সালামাহ ও আস-সাক্বাফীর এ হাদীস শ্রবণ একই রূপ। [৪০২২] সাহল ইবনু মু’আয ইবনু আনাস (রহ) হতে তার পিতার সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি খাওয়ার পরে এ দু’আ পাঠ করবে তার আগে পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (আরবী) অর্থঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এ খাদ্য খাওয়ালেন এবং আমার পক্ষ হতে কোন কৌশল ও ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যতীতই রিযিক্ব দান করলেন।” তিনি আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন কাপড় পরার সময় এ দু’আ পাঠ করবে তার আগে ও পরের সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবেঃ (আরবী) অর্থঃ “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমার কৌশল ও ক্ষমতা প্রয়োগ ব্যতীতই আমাকে এ কাপড়ের ব্যবস্থা করে পরালেন।” হাসানঃ দুই জায়গাতে ‘পরবর্তী গুনাহ’ এ অতিরিক্ত অংশ বাদে।

【2】

কেউ নতুন কাপড় পরিধান করলে তার জন্যে দু’আ করা

উম্মু খালিদ বিন্‌তে খালিদ ইবনু সাঈদ ইবনুল ‘আস (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কতকগুলো পরিধেয় বস্ত্র আনা হলো। তাতে কালো রঙ্গের ডোরাদার ছোট একটি পশমী চাঁদর ছিল। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তোমাদের মতে কে এটা পাওয়ার যোগ্য? সবাই চুপ থাকলেন। তিনি বললেনঃ উম্মু খালিদকে আমার কাছে নিয়ে এসো। তাকে আনা হলে তিনি চাদরটি তাকে পরিয়ে দিলেন এবং দু’বার বললেনঃ এটা পরিধান করো এবং পুরাতন করো। আর তিনি চাঁদরের লাল অথবা হল্‌দে রঙের চিহ্নের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ হে উম্মু খালিদ! খুব সুন্দর! খুব সুন্দর! (আরবী) শব্দের অর্থ -হাবশী ভাষায় সুন্দর।

【3】

জামা সম্পর্কে

উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সবচেয়ে প্রিয় পোষাক ছিল জামা। উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট জামার চেয়ে অধিক পছন্দনীয় কোন পোশাক ছিল না। আসমা বিনতু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জামার হাতা ছিল কব্জি পর্যন্ত লম্বা।

【4】

লম্বা ঢিলা জামা সম্পর্কে

মিস্‌ওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু লম্বা ঢিলা জামা বন্টন করেন; কিন্তু মাখরামাহ (রাঃ)-কে কিছু দেননি। মাখরামাহ (রাঃ) বললেন, হে বৎস! রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে চলো। অতঃপর তার সঙ্গে আমি সেখানে গেলাম। তিনি বললেন, ভিতরে প্রবেশ করে তাঁর নিকট আমার আসার সংবাদ দাও। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে ডাকলে তিনি একটি লম্বা ঢিলা জামা পরিহিত অবস্থায় বেরিয়ে এসে বললেনঃ আমি তোমার জন্য এটা লুকিয়ে রেখেছিলাম। মাখরামাহ (রাঃ) তাঁর দিকে তাকালেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এবার মাখরামাহ খুশী হয়েছে।

【5】

খ্যাতি লাভের পোশাক পরা

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, যে ব্যক্তি খ্যাতি লাভের জন্য পোশাক পরে, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাকে সেরূপ পোশাক পরাবেন, অতঃপর তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হবে। আবূ ‘আওয়ানাহ (রহ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে গর্ব অহংকারের উদ্দেশ্য পোশাক পরবে, (ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তাকে ঐরূপ পোশাক পরাবেন, অতঃপর তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হবে)। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত গণ্য হবে।

【6】

পশম ও লোমের তৈরী পোশাক পরা

‘আয়িশাহ (রাঃ) ৪০৩২/১. তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাড়ি হতে বের হলেন, তখন তাঁর গায়ে কারুকার্য খচিত কালো পশমী চাঁদর ছিল। সহীহ ---------------------- ৪০৩২/২. ‘উতবাহ ইবনু ‘আব্‌দ আস-সুলামী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আমাকে চাঁদর পরিয়ে দেয়ার আবেদন করলে তিনি আমাকে ‘কাতান’ জাতীয় দু’টি সুক্ষ্ম কাপড় পরিয়ে দিলেন। আমি আমার গায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, আমি সকল বন্ধুদের চাইতে উত্তম পোশাক পরিধানকারী। সহীহ। আবূ বুরদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার পিতা বলেন, হে বৎস! তুমি যদি দেখতে, একদা আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজে এমন হলাম যে, আমাদের শরীর হতে ভেড়ার গন্ধ বের হচ্ছিল। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, পশমী পোশাক (এর কারণে)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) যূ-ইয়াযান অঞ্চলের অধিপতি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একটি দামী পোশাক উপঢৌকন পাঠালেন, যা তিনি তেত্রিশটি উট বা তেত্রিশটি উটনীর বিনিময়ে কিনেছিলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা গ্রহণ করেন। [৪০৩৪] ইস্‌হাক্ব ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশ এর অধিক তরুন উটনীর বিনিময়ে একটি মূল্যবান পোশাক কিনলেন এবং তা যু-ইয়াযান অধিপতির নিকট উপঢৌকন হিসেবে পাঠালেন। [৪০৩৫]

【7】

মোটা পোশাক পরিধান করা

আবূ বুরদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট প্রবেশ করলে তিনি ইয়ামানের তৈরী একটি মোটা লুঙ্গি ও মূলাব্বাদা নামক একটি মোটা চাঁদর বের করে এনে আল্লাহর কসম করে বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় এ দু’টি কাপড় তাঁর পরিধানে ছিল। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, খারিজীরা যখন ‘আলী (রাঃ)-এর দল ছেড়ে ‘হারূরা’ নামক অঞ্চলে চলে গেলো, তখন আমি ‘আলী (রাঃ)-এর নিকট আসলাম। তিনি বললেন, তুমি এদের কাছে যাও। অতঃপর আমি ইয়ামান দেশের তৈরী আকর্ষণীয় পোশাক পরলাম। আবূ যুমাইল বলেন, ইবনু ‘আব্বাস ছিলেন লাবণ্যময় সুপুরুষ ও সুঠাম দেহের অধিকারী। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর আমি তাদের নিকট গেলাম। তারা আমাকে মারহাবা জানিয়ে প্রশ্ন করলো, হে ইবনু ‘আব্বাস ! এটা কেমন পোশাক? তিনি বললেন, তোমরা যার জন্য আমাকে দোষারোপ করছো, অথচ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এর চেয়ে উত্তম পোশাক পরতে দেখেছি।

【8】

রেশম ও পশম মিশ্রিত কাপড় পরিধান করা সম্পর্কে

সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বোখারাতে রেশম ও পশমের তৈরী কালো পাগড়ি পরিহিত এক লোককে সাদা খচ্চরের উপর আরোহী দেখতে পেলাম। লোকটি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটা (পাগড়ি) আমাকে পরিয়ে দিয়েছেন। [৪০৩৮] ‘আবদুর রহমান ইবনু গানম আল-আশ’আরী (রহ) আবূ ‘আমির (রাঃ) বা আবূ মালিক (রাঃ) আমাকে বলেছেন, আল্লাহর কসম এবং কসম, কখনও তিনি আমাকে মিথ্যা বলেননি। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ আমার উম্মতের এমন কিছু লোক হবে, যারা পশম ও রেশমের তৈরী পোশাক এবং রেশমী পোশাক পরা হালাল গণ্য করবে। তাদেরকে ক্বিয়ামাতের দিন শূকর ও বানরের আকৃতিতে পরিবর্তিত করা হবে। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশ-এর অধিক সাহাবী রেশম ও পশম মিশ্রিত সূতার তৈরী পোশাক পরেছেন। আনাস ও আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তাদের অন্তর্ভুক্ত।

【9】

রেশমী কাপড় পরিধান সম্পর্কে

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) মাসজিদের দরজায় একজোড়া রেশমী পোশাক বিক্রি হতে দেখে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যদি এক পোশাকটি ক্রয় করতেন তাহলে জুমু’আহ্‌র দিন ও প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাতকালে পরতে পারতেন! একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এ পোশাক সেই ব্যাক্তিই পরে যার আখিরাতে কোন প্রাপ্য নেই। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কিছু রেশমী কাপড় এলে তিনি তা হতে ‘উমার ইবনুল খাত্তাবকে একজোড়া কাপড় দিলেন। ‘উমার (রাঃ) বললেন বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এটা আমাকে ব্যবহার করতে দিলেন, অথচ ‘উতারিদের’ (জনৈক কাপড় ব্যাবসায়ী) কাপড় সম্পর্কে আপনি এই মন্তব্য করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি তোমাকে এটা পরতে দেইনি। অতঃপর ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এটা মক্কাহ্‌য় তার এক মুশরিক ভাইকে দিয়ে দিলেন। সইলম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহ) হতে তার পিতার সূত্র এ ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তা ছিল মোটা রেশমী পোশাক। উক্ত ঘটনা সম্পর্কে বলেন, অতঃপর তিনি তার নিকট একটি মোটা রেশমী জুব্বা পাঠালেন এবং বললেনঃ তুমি এটা বিক্রি করে তোমার প্রয়োজন মেটাও। আবূ ‘উসমান আন-নাহ্‌দী (রহ) তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) ‘উতবাহ ইবনু ফারকাদের কাছে ফরমান লিখে পাঠান যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেশমী কাপড় ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন, তবে এভাবে দুই আঙ্গুল, তিন আঙ্গুল ও চার আঙ্গুল পরিমাণ রেশম থাকলে তা পুরুষের জন্য বৈধ। ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট একজোড়া রেশমী চাঁদর উপহার এলো। তিনি তা আমার কাছে পাঠালেন। আমি সেটা পরে তার কাছে আসলে তাঁর চেহারায় অসন্তষ্টির ভাব দেখতে পেলাম। তিনি বললেনঃ তোমার পরার জন্য এটা পাঠাইনি। অতঃপর তিনি আমাকে আদেশ দিলে আমি তা টুকরা করে আমার পরিবারের মহিলাদের মাঝে বন্টন করে দিলাম।

【10】

রেশমী পোশাক পরা নিষেধ

‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেশমী পোশাক ও হলুদ রঙের কাপড় পরতে, স্বর্ণের আংটি পরতে এবং রুকূ’তে কুরআন পড়তে নিষেধ করেছেন। ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সূত্র এ হাদীস বর্ণিত। এতে রুকূ’ ও সিজদায় কুরআন পড়তে নিষেধ করেছেন। ইবরাহীম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহ) সূত্র এতে আরো রয়েছেঃ “আমি এ কথা বলছি না যে, তিনি তোমাদেরকে তা নিষেধ করেছেন”। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রোমের সম্রাট নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একটি কিংখাব উপঢৌকন পাঠালেন। তিনি তা পরিধান করলেন। আমি যেন তাঁর হাত দু’টিকে নাড়াচাড়া করতে দেখছি। অতঃপর তিনি জা’ফারের নিকট তা পাঠিয়ে দিলেন। তিনি তা পরিধান করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলে তিনি বলেনঃ আমি এটা তোমাকে ব্যবহার করতে দেইনি। তিনি প্রশ্ন করলেন, তবে আমি এটা কি করবো? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমার ভাই নাজ্জাশীর নিকট পাঠিয়ে দাও। হাসান বাসরী (রহ) ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ)-এর সূত্র আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি লাল রঙের জিনপোষে সওয়ার হই না, হলদে (কুসুম) বর্ণের কাপড় পরিধান করি না এবং রেশম আটকানো জামা পরিধান করি না। বর্ণনাকারী বলেন, হাসান এ কথার দ্বারা জামার পকেটের দিকে ইশারা করেন। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ জেনে রাখো! পুরুষ লোক এমন সুগন্ধি ব্যবহার করবে, যার কোন রঙ থাকবে না এবং নারীরা এমন সুগন্ধি ব্যবহার করবে যার রঙ আছে কিন্তু ঘ্রাণ নেই। সাঈদ (রহ) বলেন, আমার ধারণা, নারীদের সুগন্ধি ব্যবহার সম্পর্কিত কথার দ্বারা তাঁরা এরুপ বুঝেছেন যে, নারীরা যখন বাইরে যায় তখন যেন এরুপ সুগন্ধি ব্যবহার করে যার গন্ধ নেই, আর যখন স্বামীর নিকট থাকে, তখন যেমন ইচ্ছে সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারে। আবুল হুসাইন হাইসাম ইবনু শাফী’ (রহ) তিনি বলেন, আমি ও মা’আফির গোত্রের আবূ ‘আমির নামক আমার এক সাথী বায়তুল মুকাদ্দাসে সলাত আদায়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। ‘আয্‌দ’ গোত্রীয় আবূ রায়হানাহ (রাঃ) নামক এক সাহাবী তখন বায়তুল মুকাদ্দাসবাসীদের ওয়ায নসীহত করতেন। আবুল হুসাইন বলেন, আমার সাথী আমার আগেই মাসজিদে প্রবেশ করলেন। অতঃপর আমি গিয়ে তার পাশে বসলাম। তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, আপনি কি আবূ রায়হানার ওয়ায নসীহত শুনেছেন? আমি বললাম, না। তিনি বলেন, আমি তাকে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দশটি কাজ নিষেধ করেছেনঃ (১) দাঁতের অগ্রভাব সানিত করা, (২) উল্কি লাগানো, (৩) চুল উপড়িয়ে ফেলা, (৪) বিবস্ত্র অবস্থায় এক পুরুষের অন্য পুরুষের সাথে একই বিছানায় ঘুমানো, (৫) বিবস্ত্র অবস্থায় এক মহিলা অপর মহিলার সাথে এভাবে একই বিছানায় ঘুমানো, (৬) অনারবদের ন্যায় পুরুষের কাপড়ের নিম্নভাগে রেশম ব্যবহার করা অথবা (৭) আনারবদের ন্যায় কাঁধের উপর রেশম লাগানো, (৮) লুটতরাজ করা, (৯) চিতাবাঘের উপর আরোহী হওয়া (বাঘের চামড়ার গদিতে বসা) এবং (১০) বাদ্‌শাহ ব্যাতীত অন্য লোকের আংটি ব্যবহার করা। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আংটি সম্পর্কিত বর্ণনাটি নিঃসঙ্গ। [৪০৪৯] ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নরম রেশমী জিনপোষে বসতে নিষেধ করা হয়েছে। ‘আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে নিষেধ করেছেন স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করতে, রেশমী কাপড় পরতে এবং নরম তুলতুলে লাল রঙের রেশমী জিনপোষে বসতে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কারুকার্য খচিত একটি চাঁদর পরে সলাত আদায় করলেন, (সলাতের অবস্থায়) এর কারুকার্যের দিকে তাঁর দৃষ্টি চলে যায়। ফলে সালাম ফিরানোর পর তিনি বললেনঃ এ চাঁদরটি নিয়ে আবূ জাহমের (উপহারদাতার) নিকট যাও, এর কারুকার্য আমার সলাতে বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে এবং তার সাদা চাঁদর নিয়ে এসো। ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্র পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। তবে প্রথম বর্ণনাটি অধিক শুদ্ধ।

【11】

রেশমী সুতার সেলাই ও কারুকার্য করার অনুমতি সম্পর্কে

আস্‌মা বিনতু আবূ বাক্‌র (রাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম ‘আবদুল্লাহ আবূ ‘উমার (রহ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বাজারে একটি সিরীয় পোশাক কিনতে দেখলাম। তিনি তাতে লাল রঙের সূতা দেখে ফেরত দিলেন। আমি আস্‌মা (রাঃ)-এর নিকট এসে তা জানালাম। তিনি এক কৃতদাসীকে ডেকে বললেন, হে দাসী! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জুব্বাটা আমার কাছে নিয়ে এসো। অতঃপর সে কারূকার্য খচিত পকেটে, দুই আস্তিনে ও আগে-পিছের ফাড়া স্থানে রেশমী কাজ করা একটি জুব্বা বের করে আনলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেবল রেশমের তৈরী পোশাক পরতে বারণ করেছেন। তবে রেশমের কারুকার্য খচিত ও কাপড়ের দুই পাড়ে রেশমী সূতা থাকলে কোন অসুবিধা নাই।

【12】

ওযরবশত রেশমী পোশাক পরা সম্পর্কে

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ ও যুবাইর ইবনুল ‘আওয়াম (রাঃ)-কে তাদের শরীরে চর্মরোগের কারণে সফরের সময় রেশমী পোশাক ব্যাবহারের অনুমতি দিয়েছেন।

【13】

নারীদের জন্য রেশমী পোশাক বৈধ

‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) তিনি ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, একদা আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ডান হাতে রেশম ও বাম হাতে স্বর্ণ নিয়ে বললেনঃ এ দু’টি জিনিস আমার উম্মাতের পুরুষদের জন্য হারাম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা উম্মেরু কুলসূম (রাঃ)-এর পরিধানে একটি রেশমী চাঁদর দেখেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, (আরবী) হলো রেশমী সুতা দ্বারা কারুকার্য খচিত চাঁদর। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা ছেলেদের শরীর থেকে রেশমী জামা খুলে ফেলতাম এবং মেয়েদের গায়ে থাকতে দিতাম। মিস’আর (রহ) বলেন, এ বিষয়ে আমি ‘আমর ইবনু দীনারকে প্রশ্ন করলে তিনি কিছু বলতে পারেননি।

【14】

কারুকার্য খচিত ইয়ামানী চাঁদর পরা

ক্বাতাদাহ (রহ) তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনু মালিকে (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কোন জামা সবচেয়ে পছন্দনীয় ছিল বা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল? তিনি বলেন, কারুকার্য খচিত ইয়ামানী চাঁদর।

【15】

সাদা কাপড় পরিধান

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সাদা পোশাক পরো, কেননা তা তোমাদের সর্বোত্তম পোশাক। আর তোমাদের মৃতদেরকেও সাদা কাপড়ে কাফন দাও। আর তোমাদের উত্তম সুরমা হলো ‘ইসমিদ’ নামক সুরমা। কেননা তা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং চোখের পাপড়িতে চুল গজায়।

【16】

ময়লা কাপড় ধুয়ে পরিষ্কার করা

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের এখানে এসে এক বিক্ষিপ্ত চুলওয়ালাকে দেখে বললেনঃলোকটি কি তার চূলগুলো আচড়ানোর জন্য কিছু পায়না? তিনি ময়লা কাপড় পরিহিদ অপর ব্যক্তিকে দেখে বলেন: লোকটি কি তার কাপড় ধোয়ার জন্য কিছু পায়না? আবুল আহ্ওয়াস (রহ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, একদা আমি কম মূল্যের পোশাক পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলে তিনি বললেনঃ তোমার ধন-সম্পদ আছে কি? তিনি বললেন, হাঁ। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ কোন ধরনের সম্পদ? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে উট, ছাগল, ঘোড়া ও দাস ইত্যাদি সম্পদ দিয়েছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যেহেতু আল্লাহ তোমাকে সম্পদশালী করেছেন, কাজেই আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের নিদর্শন তোমার মাঝে প্রকাশিত হওয়া উচিত।

【17】

হলুদ রং দ্বারা রঞ্জিত করা

যায়িদ ইবনু আসলাম (রহ) ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার দাঁড়িতে পীত রঙের খেযাব লাগাতেন। এতে তার কাপড়েও ঐ রঙ লেগে যেতো। তাকে প্রশ্ন করা হলো, আপনি পীত রঙ ব্যবহার করেন কেন? তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ রঙ ব্যবহার করতে দেখেছি এবং তাঁর নিকট এর চাইতে প্রিয় অন্য কোন রঙ ছিলো না। তিনি দাড়িতে রঙ লাগানোর সময় তাঁর কাপড়ে, এমনকি তাঁর পাগ্‌ড়িতে এ রঙ লেগে যেতো।

【18】

সবুজ রং সম্পর্কে

আবূ রিমসাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি আমার পিতার সাথে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলাম। তখন আমি তাঁর পরিধানে দু’টি সবুজ রঙের চাঁদর দেখেছি।

【19】

লাল রং ব্যবহার করা

‘আমর ইবনু শু’আইব (রহ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা দাদার সূত্র তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সঙ্গে একটি টিলা হতে নামছিলাম। তিনি আমার দিকে তাকাচ্ছিলেন, তখন আমার পরিধানে ঈশৎ লালের সাথে পীত বর্ণের একটি চাঁদর ছিল। তিনি বললেনঃ তোমার গায়ে এ চাঁদর কেন? আমি তাঁর অসন্তুষ্টি বুঝতে পারলাম এবং বাড়ীতে এসে দেখলাম, পরিবারের লোকজন চুলায় রান্না করছে। আমি চাঁদরটা আগুনে ফেলে দিলাম। অতঃপর আমি সকালে তাঁর নিকট আসতেই তিনি প্রশ্ন করলেনঃ হে আল্লাহর বান্দা! তোমার ঐ চাদরটি কি করেছো? আমি তাকে বিষয়টি অবহিত করলাম। তিনি বললেন, তুমি বরং সেটা তোমার পরিবারের কোন নারীকে ব্যবহার করতে দিতে। কেননা নারীদের জন্য এতে কোন অসুবিধা নেই। হিশাম ইবনুল গায (রহ) পূর্বের হাদীসে (আরবি) বলতে এমন রঙ বুঝানো হয়েছে যা গাঢ় লাল নয় এবং ফিকে লালও নয়। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুস ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার দিকে তাকালেন। (আবূ ‘আলী বলেন, আমার ধারণা তিনি বলেছেন) এ সময় আমার গায়ে ছিল হলদে গোলাপী রঙ মিশানো একটি জামা। তিনি বললেনঃ এরূপ কাপড় পরেছ কেন? অতঃপর আমি চলে আসলাম এবং তা পুড়ে ফেললাম। পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার কাপড়টি কি করেছ? আমি বললাম, জ্বালিয়ে দিয়েছি। তিনি বললেনঃ তোমার পরিবারের কোন নারীকে তা ব্যবহার করতে দিলেও তো পারতে। [৪০৬৮] ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি দু’টি লাল কাপড় পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রমের সময় তাঁকে সালাম দিলো। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সালামের জবাব দেননি। [৪০৬৯] রাফী’ ইবনু খাদীজ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে সফরে বের হলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের হাওদাগুলোতে ও উটের পিঠে তুলার লাল সূতার ডোরাযুক্ত চাঁদরগুলো দেখে বললেনঃ আমি দেখছি যে, লাল রঙ তোমাদের কাবু কুরে ফেলেছে। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একথায় আমারা লাল কাপড় সরানোর জন্য এতো দ্রুত ছুটলাম যে, কতগুলো উট ভয় পেয়ে পালাতে লাগলো। আমরা চাঁদরগুলো খুলে ফেললাম। [৪০৭০] হুরাইস ইবনুল আবাজ্জ আস-সালীহী (রহ) বনী আসাদের এক মহিলা বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রী যাইনাব (রাঃ) এর কাছে ছিলাম। আমরা তার কাপড়ে লাল গেরুয়া রঙ লাগাচ্ছিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে আসলেন এবং গেরুয়া রঙ দেখে চলে গেলেন। যাইনাব (রাঃ) তখন বুঝতে পারলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কাজে অসন্তষ্ট হয়েছেন। সুতরাং তিনি কাপড় ধুয়ে সবটুকু লাল রঙ উঠিয়ে ফেলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে এসে তা দেখতে না পেয়ে ঘরে প্রবেশ করেন। [৪০৭১]

【20】

লাল রং ব্যবহারের অনুমতি

আল-বারাআ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুল কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল। আর আমি তাঁকে লাল রং-এর চাদর পরিহিত দেখেছি। ইতোপূর্বে তাঁর চেয়ে চমৎকার কিছু দেখেনি। হিলাল ইবনু ‘আমির (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্র তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ‘মিনা’ উপত্যকায় লাল রঙ এর চাঁদর পরে একটি খচ্চরের পিঠে আরোহিত অবস্থায় ভাষণ দিতে দেখেছি। ‘আলী (রাঃ) তাঁর সামনে থেকে তাঁর ভাষণ উচ্চস্বরে পুনরাবৃত্তি করছিলেন।

【21】

কালো রং ব্যবহার করা

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য একটা কালো চাদর রঙ করে দিলাম। তিনি তা পরিধান করলেন। তিনি ঘামের কারণে পশমের দুর্গন্ধ পেয়ে তা খুলে ফেললেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা (ঊর্ধ্বতন বর্ণনাকারী) বলেছেন, সুগন্ধি তাঁর খুব প্রিয় ছিল।

【22】

কাপড়ের ঝালর সম্পর্কে

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে দেখলাম, তিনি চাঁদর জড়িয়ে আছেন, চাঁদরের ঝালর তাঁর দু’ পায়ের উপর ঝুলছে। [৪০৭৫]

【23】

পাগড়ি সম্পর্কে

জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের সময় কালো পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করেন। আমর ইবনু হুরাইস (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কালো পাগ্ড়ি পরিহিত অবস্থায় মিম্বারে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিতে দেখেছি, তাঁর পাগ্ড়ির দু’পাশ তাঁর কাঁধের উপর ঝুলছিল। আবূ জা’ফার ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু ‘আলী ইবনু রুকানাহ (রহ) হতে তার পিতার সূত্র এই রুকানাহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মল্লযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে মল্লযুদ্ধে ভূপাতিত করেন। রুকানাহ (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আমাদের ও মুশরিকদের মাঝে পার্থক্য হল, টুপির উপর পাগ্ড়ি পরিধান করা।[৪০৭৮] ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে পাগড়ি পরিয়েছেন এবং তার প্রান্তভাগ আমার সামনে ও পিছনে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। [৪০৭৯]

【24】

আঁটসাট কাপর পরা নিষেধ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুইভাবে কাপড় পরতে নিষেধ করেছেন। (১) মানুষের এমনভাবে লেপ্টে পোশাক পরা যে, লজ্জাস্থান আকাশের দিকে উন্মুক্ত হয়ে থাকে, (২) কাপড় এভাবে পরা যে, শরীরের একদিক বের হয়ে থাকে, আর অবশিষ্ট কাপড় কাঁধে ফেলে রাখা হয়। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই হাত ভিতরে রেখে আঁটসাঁট কাপড় পরতে এবং এক কাপড়ে জড়সড় হয়ে দুই হাতে হাঁটু জড়িয়ে বসতে নিষেধ করেছেন।

【25】

বোতাম খোলা রাখা বৈধ

মু’আবিয়াহ ইবনু কুররাহ (রহ) তিনি বলেন, আমার পিতা বলেন, আমি মুযাইনাহ গোত্রের প্রতিনিধি দলের সাথে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে বাই’আত করতে যাই। আমরা তাঁর নিকট বাই’আত নিলাম। এসময় তাঁর জামার বোতাম খোলা ছিল। আমি আমার হাত তাঁর জামার বুকের ফাঁক দিয়ে ভিতরে ঢুকিয়ে মোহরে নবূওয়াত স্পর্শ করলাম। ‘উরওয়াহ (রহ) বলেন, এরপর থেকে মুআবিয়াহ ও তার ছেলেকে সর্বদা তাদের জামার বোতাম খুলে রাখতে দেখেছি। চাই তা শীতকাল হোক বা গরমকাল, তারা কখনো বোতাম লাগাতেন না।

【26】

চাঁদর মুড়ি দিয়ে মাথা ঢেকে রাখা সম্পর্কে

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলে, একদা ঠিক দুপুরের প্রথমভাগে আমরা সবাই আমাদের ঘরে বসা। তখন এক ব্যাক্তি আবূ বকর (রাঃ)-কে বললো, ওই তো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাঁদর মুড়িয়ে এদিকে আসছেন। তিনি তো সাধারণত এসময়ে আমাদের এখানে আসেন না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তাঁকে অনুমতি দেয়া হলে তিনি ভেতরে ঢুকলেন।

【27】

লুঙ্গি-পাজামা পায়ের টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরার পরিনতি

আবু জুরায়্যি জাবির ইবনু সুলাইম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এমন এক ব্যাক্তিকে দেখেছি, যার কথা সবাই মেনে চলে এবং যা কিছু বলেন সবাই তা পালন করে। আমি বললাম, ইনি কে? তারা বললো, ইনি হলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আমি দুইবার বললাম, ‘আলাইকাস সালাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেনঃ ‘আলাইকাস সালাম বলো না, কেননা ‘আলাইকাস সালাম দ্বারা মৃত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া হয়। বরং তুমি বলো, আস্‌সালামু ‘আলাইকা। বর্ণনাকারী বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, আপনি কি আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেনঃ আমি সেই আল্লাহর রাসূল, যাকে তুমি বিপদে পড়ে ডাকলে তিনি তোমার বিপদ দূর করেন; দুর্ভিক্ষের সময়ে তাঁকে ডাকলে তিনি তোমার জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদন করেন; ঘাস-পানিহীন মরু প্রান্তরে তোমার সওয়ারী হারিয়ে গেলে তাঁকে ডাকলে তিনি তোমার নিকট তা ফিরিয়ে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে আমাকে উপদেশ প্রদানের অনুরোধ জানালাম। তিনি বললেনঃ তুমি কখনো কাউকে গালি দিবে না। বর্ণনাকারী বলেন, এর পরে আমি কখনো স্বাধীন, গোলাম, উট ও ছাগল কোন কিছুকেই গালি দেইনি। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ভালো কাজে অবজ্ঞা প্রদর্শন করো না। তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে কথা বলাটা নিঃসন্দেহে ভালো কাজের অন্তর্ভুক্ত। তোমার কাপড় পায়ের নলার মাঝামাঝি পর্যন্ত উঠিয়ে রাখো, যদি এতে সন্তষ্ট না হও তবে টাখনু পর্যন্ত রাখো। টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরা হতে সাবধান; কারণ তা করা অহংকারের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ অহংকার পছন্দ করেন না। কেউ যদি তোমার মধ্যকার জানা কোন দোষ উল্লেখ করে তোমাকে মন্দ কথা বলে এবং লজ্জিত করে তবে তুমি কিন্ত তাঁর জ্ঞাত দোষ উল্লেখ করে তাকে লজ্জা দিবে না। কেননা এর কৃতকর্মের প্রতিফল তাকে ভোগ করতেই হবে। সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অহংকার বশতঃ পরিধেয় বস্ত্র মাটিতে হেঁচড়িয়ে চলে, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না। একথা শুনে আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমার লুঙ্গির একদিক মাঝে মধ্যে ঝুলে পড়ে। আমি তো সেদিকে সর্বদা সতর্ক হতে পারি না। তিনি বললেনঃ যারা অহংকারবশে এরূপ করে আপনি তো তাদের মত নন। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি লুঙ্গি ঝুলিয়ে সলাত আদায় করছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ যাও, উযু করে এসো। লোকটি গিয়ে উযু করে আসলে তিনি তাকে বললেনঃ যাও, উযু করে এসো। লোকটি গিয়ে উযু করে এলে তিনি তাকে আবার বললেনঃ যাও, উযু করে আসো। তখন এক লোক তাঁকে জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তাকে কি জন্য উযুর আদেশ দিলেন, অতঃপর তিনি নীরব থাকলেন। তিনি বলেনঃ লোকটি লুঙ্গি ঝুলিয়ে সলাত আদায় করছিল। মহান আল্লাহ ঐ লোকের সলাত কবুল করেন না যে টাখনুর নীচে লুঙ্গি ঝুলিয়ে সলাত আদায় করে। [৪০৮৬] আবূ যার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তিন প্রকার লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি (রহমাতের নজরে) দেখবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না, আর তারা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এরা কারা? নিঃসন্দেহে এরা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একথাটা তিন বার বললেন, আর আমিও তাঁকে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! এরা কেমন লোক? এরা তো ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি বললেনঃ(১) যে ব্যক্তি টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে রাখে; (২) যে ব্যক্তি দান করে খোঁটা দেয় এবং (৩) যে ব্যক্তি মিথ্যা বা ধোঁকাপূর্ণ কসম করে পণ্য বিক্রি করে। আবূ যার (রাঃ) হতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুত্র উপরের হাদীস বর্ণিত। তাঁর প্রথম হাদীসটি পুর্ণাঙ্গ। বর্ণনাকারী বলেন, “আল-মান্নান” হলো, যে কাউকে কোন কিছু দান করলেই খোঁটা দেয়। ক্বায়িস ইবনু বিশর আত-তাগ্লিবী (রহ) তিনি বলেন, আমার পিতা আমার কাছে বর্ণনা করেন, তিনি আবূ দারদান (রাঃ)এর সঙ্গি ছিলেন। তিনি বলেন, সে সময় দামিশকে ইবনুল ‘হান্‌যালিয়া’ (রাঃ) নামে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এক সাহাবী বাস করতেন, যিনি নিঃসঙ্গ থাকতেন, লোকজনের সাথে খুব কম মিশতেন। তিনি অধিকাংশ সময় সালাতে মশগুল থাকতেন, সালাত শেষ হলে তাসবীহ্-তাহলীলে মশগুল হতেন, এরপর বাড়ী ফিরে যেতেন। তিনি বলেন, একদা আমরা আবূ দারদার (রাঃ) নিকট বসা, তখন তিনি আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবূ দারদা (রাঃ) তাকে বললেন, আপনি এমন একটি কথা শুনান যা আমদের উপকারে আসবে, অথচ আপনার ক্ষতি হবে না। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন অভিযানে একটি বাহিনী পাঠালেন। বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্র হতে ফেরার পর তাদের এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্থানে বসে পড়লো এবং তাঁর পাশের এক ব্যক্তিকে বললো, যদি তুমি দেখতে, আমরা যখন শত্রুবাহিনীর মুখমুখী হই, তখন অমুক কোন শত্রুর উপর বর্শা নিক্ষেপ করলো, আর শত্রু কে বললো, এবার সামাল দাও দেখি এই বর্শাটা, আমি তো গিফার বংশের ছেলে। সে বলল, আমার মতে তার নেকি বিনষ্ট হয়েছে। আরেকজন তার এ মন্তব্য শুনে বলল, আমর মতে তার কোন দোষ হবে না। অতঃপর তারা এ নিয়ে কথা ঝগড়ায় লিপ্ত হলো। এমনকি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একথা শুনতে পেয়ে বললেনঃ আল্লাহ পবিত্র, সওয়াব পাওয়াতে এবং প্রশংসিত হওয়াতে কোন দোষ নেই। আমি আবূ দারদা(রাঃ)-কে খুশি হতে দেখলাম। তিনি তার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন, আপনি এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট থেকে শুনেছেন? তিনি বললেন, হাঁ। তিনি বারবার এ কথা বলতে লাগলেন। অবশেষে আমি বললাম, তিনি হয়ত তার হাটুঁদ্বয়ে চেপে বসবেন। তিনি বলেন, আরেকদিন তিনি আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আবূ দারদা(রাঃ) তাকে অনুরোধ করলেন, আপনি এমন কিছু বলুন যা আমাদের উপকারে আসবে; কিন্ত আপনার কোন ক্ষতি হবে না। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেনঃ ঘোড়ার জন্য খরচকারী খোলা হাতে সদাক্বাহকারীর মত যে দান করা হতে বিরত হয় না। অতঃপর আরেকদিন তিনি আমাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবূ দারদা(রাঃ) তাকে বললেন, আপনি এমন একটি কথা বলুন, যা আমদের উপকারে আসে, কিন্তু আপনার ক্ষতি হবে না। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেছেনঃ খুরাইম আল-আসাদী আত্যন্ত ভালো মানুষ, তবে তার চুলের গোছা যদি লম্বা না হতো এবং টাখনুর নীচে লুঙ্গি ঝুলিয়ে না পরতো। তাঁর এ মন্তব্য শুনে খুরাইম (রাঃ) সাথে সাথে একটি বড় ছুরি নিয়ে বাব্‌রি চুল কেটে তা কানের লতি পর্যন্ত রাখেন, আর পায়ের টাখনুর অর্ধেক পর্যন্ত পরিধেয় বস্ত্র উঠিয়ে পরতে শুরু করেন। অতঃপর আরেকদিন তিনি আমাদের পাশ দিয়া যাওয়ার সময় আবূ দারদা(রাঃ) তাকে অনুরোধ জানালেন, আপনি এমন একটি কথা বলুন যা আমাদের উপকারে আসবে; কিন্তু আপনার ক্ষতি হবে না। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ (যেহেতু) তোমরা তোমাদের ভাইদের নিকট যাচ্ছো, কাজেই তোমাদের বাহনগুলো ঠিকঠাক করে নাও এবং পোশাক পরিপাটি করো, তোমরা যেন সমাজের কেন্দ্রবিন্দু। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ কদর্য ও অশ্লীলতা পছন্দ করেন না। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আবূ নু’আইম হিশাম সুত্রে এরূপ বর্ণনাই করেছেনঃ “তোমরা এমনভাবে পরিপাটি হও, যেন তোমরা লোক সমাজে তিলক চিহ্ন। [৪০৮৯]

【28】

অহংকার সম্পর্কে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহান আল্লাহ বলেন, অহংকার হলো আমার চাঁদর এবং মহত্ব হলো আমার লুঙ্গি। যে কেউ এর কোন একটি নিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে সরিষা পরিমাণ ঈমান থাকবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) একদা এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এলো। লোকটি ছিল খুবই সুন্দর। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সৌন্দর্যকে ভালবাসি। আপনি তো দেখতে পাচ্ছেন আমাকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা হয়েছে। এদিক দিয়ে কেউ আমার উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করুক তা আমি চাই না, এমনকি কেউ যদি বলে, আমার জুতার ফিতার চাইতে তার ফিতাটা ভালো, সেটাও পছন্দ করি না। এরূপ করা কি অহংকার? তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, বরং অহংকার হলো সত্যকে অবজ্ঞা করা এবং মানুষকে তুচ্ছ মনে করা।

【29】

লুঙ্গি-পাজামার নিচ দিকের সীমা

আল-‘আলা ইবনু ‘আব্দুর রহমান (রহ) হতে তার পিতার সুত্র তিনি বলেন, আমি আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) কে লুঙ্গি পরিধানের স্থান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তুমি এ বিষয়ে সম্যক অবগত লোকের কাছেই এসেছো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলিমের পরিধেয় লুঙ্গি-পাজামা নলার মধ্যভাগ পর্যন্ত থাকবে, তবে টাখনুদ্বয় পর্যন্ত রাখলেও কোন গুনাহ হবে না। কিন্তু টাখনুদ্বয়ের নীচে গেলে তা জাহান্নামের আগুনে যাবে। যে অহংকারবশে নিজের লুঙ্গি হেঁচড়িয়ে চলে, আল্লাহ তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করবেন না। সালিম ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রহ) হতে তার পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লুঙ্গি, জামা ও পাগড়ী হেঁচড়ানো সম্পর্কে বলেন, যে ব্যক্তি অহংকারবশত এর কোনটি হেঁচড়িয়ে চলে, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না। [নাসায়ী, ইবনু মাযাহ] ইয়াযীদ ইবনু আবূ সুমাইয়্যহ (রহ) তিনি বলেন, আমি ইবনু ‘উমার (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লুঙ্গি সম্পর্কে যা বলেছেন জামা সম্পর্কেও তাই বলেছেন। মুহাম্মাদ ইবনু আবূ ইয়াহ্‌য়া (রহ) তিনি বলেন, ‘ইকরিমাহ (র) আমার নিকট বর্ণনা করেন, তিনি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) কে লুঙ্গি পরিধান করতে দেখছেন। তিনি লুঙ্গির কিনারা সামনের দিকে পায়ের পিঠে ছেড়ে দিয়েছেন এবং পিছনের পাড় কিছুটা উপরে উঠিয়েছেন। আমি তাকে বললাম, আপনি এভাবে লুঙ্গি পরেছেন কেন? তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এভাবে লুঙ্গি পরিধান করতে দেখেছি।

【30】

নারীদের পোশাক

ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আভিশাপ দিয়েছেন যেসব নারী পুরুষের বেশ ধারণ করে এবং যেসব পুরুষ নারীদের বেশ ধারণ করে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিসম্পাত করেছেন ঐসব পুরুষকে যারা নারীর অনুরুপ পোশাক পরে এবং ঐসব নারীকে যে পুরুষের অনুরুপ পোশাক পরিধান করে। ইবনু আবূ রুলাইকাহ (রহ) তিনি বলেন, একদা ‘আয়িশাহ (রাঃ) কে বলা হলো, এক মহিলা (পুরুষদের জুতার মত) জুতা ব্যবহার করে। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষবেশী নারীদের প্রতি অভিশম্পাত করেছেন।

【31】

আল্লাহর বাণীঃ “তারা যেন তাদের ওড়নার কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়” (সূরাহ আল-আহযাবঃ ৫৯)

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি আনসার মহিলাদের আলোচনা প্রসঙ্গে তাদের প্রশংসা করেন এবং তাদের সম্পর্কে উত্তম মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সূরাহ আন-নূর যখন অবতীর্ণ হয়, তখন তারা লুঙ্গি বা এ জাতীয় জামা ছিঁড়ে ওড়না বানিয়ে নেন। [৪১০০] উম্মু সালামাহ(রাঃ) তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “হে নাবী! আপনার স্ত্রী ও কন্যাদেরকে এবং অন্যান্য মু’মিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন নিজেদের চাঁদরের কিয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়...”(সূরাহ আল-আহযাবঃ ৫৯)। তখন থেকে আনাসার মহিলারা তাদের মাথায় এমন চাঁদর জড়িয়ে বের হতেন, (চাঁদর কালো বর্ণের হওয়ায়) মনে হতো তাতে যেন কাক বসে আছে।

【32】

মহান আল্লাহর বাণীঃ “তারা যেন তাদের গলদেশ ও বক্ষদেশ মাথার ওড়না দিয়ে আবৃত করে” (সুরাহ আন-নূর:৩১)

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ প্রথম সারির মুহাজীর নারীদের প্রতি রহমাত বর্ষণ করুন। কেননা আল্লাহ যখন এ আয়াত আবতীর্ণ করেনঃ “তারা যেন তাদের গলদেশ ও বক্ষদেশ মাথার ওড়না দ্বারা আবৃত করে নেয়”- তখন তারা তাদের সেলাইবিহীন কাপড় ছিঁড়ে তা দ্বারা ওড়না বানিয়ে নেন। ইবনুস সারহ (রহ) আমি আমার মামার পাণ্ডুলিপিতে ‘উক্বাইল হতে ইবনু শিহাব (রহ) সুত্রে ভিন্ন অনুরুপ অর্থের হাদীস লিপিবদ্ধ দেখেছি।

【33】

নারীদের শরীরের কোন অংশ খোলা রাখা যাবে

‘আয়িশাহ (রাঃ) একদা আসমা বিনতু আবূ বকর (রাঃ) পাতলা কাপড় পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার থেকে নিজের মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেনঃ হে আসমা! মেয়েরা যখন সাবালিকা হয়, তখন এই দু’টি অঙ্গ ছাড়া অন্য কোন অঙ্গ প্রকাশ করা তার জন্য সংগত নয়, এ বলে তিনি তাঁর চেহারা ও দুই হাতের কব্জির দিকে ইশারা করেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এটি মুরসাল হাদীস। খালিদ ইবনু দুরাইক (রহ) ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর সাক্ষাত পাননি। আর সাঈদ ইবনু বাশীরও তেমন শক্তিশালী বর্ণনাকারী নন।

【34】

কৃতদাস তার নারী মনিবের চুল দেখতে পারে

জাবির (রাঃ) উম্মু সালামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট রক্তমোক্ষণের অনুমতি চাইলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ত্বাইবাকে তার রক্তমোক্ষণ করার আদেশ দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা, তিনি (আবূ ত্বাইবাহ) তার দুধভাই কিংবা নাবালেগ গোলাম ছিলেন। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক কৃতদাসকে সঙ্গে নিয়ে ফাত্বিমাহ (রাঃ) এর নিকট এলেন, যে কৃ্তদাসটি তিনি তাকে দান করেছিলেন। ফাত্বিমাহ (রাঃ)-র পরিধানে এরূপ একটি কাপড় ছিল যা দিয়ে তিনি মাথা ঢাকলে পা দু’টিতে পৌঁছে না; আর পা ঢাকলে মাথা পর্যন্ত পৌঁছে না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার এ অবস্থা দেখে বলেনঃ তোমার কোন পাপ হবে না, কারণ এখানে তো শুধু তোমার পিতা ও তোমার কৃ্তদাস রয়েছে।

【35】

মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ “যৌন কামনা রহিত পুরুষ”

আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রীদের নিকট এক নপুংসক (হিজড়া) কৃতদাস আসা-যাওয়া করতো। সকলেই তাকে ‘যৌন কামনা রহিত পুরুষ’ হিসেবে গন্য করতো। একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট আসলেন। এ সময় সে তাঁর কোন স্ত্রীর ঘরে ছিল এবং সে একটি নারীর প্রশংসা করে বললো, নারীটি যখন সামনের দিকে আসে মনে হয় চারভাঁজে আসছে আর যখন পিছনের দিকে যায় মনে হয় আটভাঁজে যাচ্ছে (অর্থাৎ খুব মোটা)। একথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি তো দেখছি, সে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ। সে যেন তোমাদের নিকট কখনো প্রবেশ না করতে পারে। অতঃপর সবাই তার থেকে পর্দা করলেন। আয়িশাহ (রাঃ) সূত্র উপরের হাদীসের অর্থানুরূপ বর্ণিত আছে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) সূত্র অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। এতে আরও রয়েছেঃ “তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে আল-বায়দা নামক স্থানে পাঠিয়ে দিলেন। এরপর সে (হিজড়া) প্রতি শুক্রবার খাদ্যের জন্য শহরে আসতো।” আল-আওযাঈ সূত্র আল-আওযাঈ সূত্রে এ ঘটনা বর্ণিত। বলা হলো, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! তাহলে সে তো না খেয়ে মারা যাবে। কাজেই তিনি প্রতি সপ্তাহে দু’বার শহরে আসার জন্য তাকে অনুমতি দিলেন, অতঃপর সে খাবার সংগ্রহ করে চলে যাবে।

【36】

মহান আল্লাহ্‌র বানীঃ “আর মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে”

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, “ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখে” –আলোচ্য আয়াতকে আয়াত দ্বারা ব্যতিক্রম করা হয়েছেঃ “এবং বৃদ্ধা মহিলা যাদের বিয়ের যোগ্যতা নেই” উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট ছিলাম এবং তাঁর নিকট মাইমূনাহ (রাঃ)-ও ছিলেন। এ সময় ইবনু উম্মু মাক্‌তূম (রাঃ) (অন্ধ সাহাবী) এলেন। ঘটনাটি আমাদের উপর পর্দার হুকুম নাযিলের পরের। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তার থেকে আড়ালে চলে যাও। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! সে কি অন্ধ নয়? সে তো আমাদের দেখতে ও চিনতে পারছে না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যদিও সে অন্ধ কিন্তু তোমরা উভয়ে কি তাকে দেখছো না? ইমাম আবু দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ বিধান নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট। তুমি কি ইবনু উম্মু মাক্‌তূমের (রাঃ) বাড়িতে ফাত্বিমাহ বিনতু কায়িসের (রাঃ) ইদ্দাত পালনের বিষয়টি লক্ষ্য করো না? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাত্বিমাহ বিনতু কায়িস (রাঃ) কে বলেছেনঃ “তুমি ইবনু উম্মু মাক্‌তূমের বাড়িতে ইদ্দাত পালন করো। কারণ সে অন্ধ লোক। তুমি সেখানে খোলামেলা পোশাকে থাকতে পারবে।” [৪১১২] আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ নিজ কৃতদাসীকে নিজ কৃতদাসের সাথে বিয়ে দিলে সে যেন তার গুপ্ত অঙ্গের দিকে না তাকায়। আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ তার কৃতদাসীকে কৃতদাসের সাথে অথবা মজদুরের সাথে বিয়ে দিলে, সে তার (দাসীর) নাভির নীচ হতে হাঁটুর উপর পর্যন্ত দেখবে না।

【37】

ওড়না কিভাবে পরবে

উম্মু সালামাহ (রাঃ) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকট এলেন, এ সময় তিনি ঘোমটা দেয়া অবস্থায় ছিলেন। তিনি বললেন, এক ভাঁজে ঘোমটা দাও, দুই ভাঁজে নয়, দুই ভাঁজে নয়। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, তাঁর একথার অর্থ হলো, তোমরা পুরুষদের পাগড়ির মত একাধিক ভাঁজ করবে না। [৪১১৫]

【38】

নারীদের জন্য পাতলা কাপড় ব্যবহার

দিহ্‌ইয়াহ ইবনু খলীফাহ আল-কাল্‌বী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট কিছু মিসরীয় কাতান কাপড় এলো। তিনি সেগুলো থেকে আমাকে একটি কাতান দিয়ে বললেনঃ এটাকে দুই টুকরা করো। এক টুকরা কেটে জামা বানাবে এবং অপরটি তোমার স্ত্রীকে ওড়না বানাতে দিবে। তিনি ফিরে যাওয়ার সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার স্ত্রীকে এর নীচে আরেকটি কাপড় লাগিয়ে নিতে বলবে, যেন তার দেহের আকৃতি দেখা না যায়। [৪১১৬]

【39】

কাপড়ে আঁচলের পরিমাণ

সাফিয়্যাহ বিনতু আবু ‘উবাইদ (রহঃ) তিনি বর্ণনা করেন যে, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্ন করলেন, যখন তিনি পরিধেয় বস্ত্র সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! নারীদের ইযার ব্যবহারের বিধান কি? তিনি বললেনঃ তারা এক বিঘত নীচে পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখতে পারে। উম্মু সালামাহ (রাঃ) বলেন, এতেও তার কিছু অংশ খোলা থাকবে। তিনি বললেনঃ তবে এক হাত ঝুলিয়ে পরবে; এর বেশি নয়। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে উম্মু সালামাহ (রাঃ) উম্মু সালামাহ (রাঃ) হতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীস বর্ণিত। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, অপর সনদে নাফি’ হতে সাফিয়্যাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। [নাসায়ী] ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মুল মু’মিনীনদেরর জন্য এক বিঘত আঁচল (নীচে) ঝুলানোর অনুমতি দিয়েছেন। অতঃপর তারা আরও বাড়িয়ে দেয়ার আবেদন জানালে তিনি তাদের জন্য আরও এক বিঘত বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছেন। অতঃপর তারা আমাদের নিকট তাদের কাপড় পাঠিয়ে দিতেন, আর আমরা এক গজ করে মেপে দিতাম।

【40】

মৃত প্রাণীর চামড়া সম্পর্কে

মাইমূনাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের এক মুক্তদাসীকে যাকাতের একটি বকরী দান করা হলো। পরে সেটা মারা গেলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেটির পাশ দিয়ে অতিক্রমের সময় বললেনঃ তোমরা এর চামড়া পাকা করলে না কেন? তোমরা তো এর দ্বারা উপকৃত হতে পারতে। তারা বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! এটা তো মৃত। তিনি বললেনঃ এটা খাওয়া হারাম। যুহরী (রহঃ) সূত্র যুহরী (রহঃ) সূত্রে এ হাদীস বর্ণিত। এতে মাইমুনাহ (রাঃ) এর উল্লেখ নেই। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা এর চামড়া কাজে লাগাও না কেন? অতঃপর অনুরূপ অর্থের হাদীস বর্ণনা করেন, তবে বর্ণনাকারী চামড়া দাবাগাত করার কথা উল্লেখ করেননি। মা’মার (রহঃ) যুহরী (রহঃ) চামড়া দাবাগাত করা শব্দটি অস্বীকার করতেন। তিনি বলতেন, চামড়া দ্বারা বিভিন্ন প্রকার কাজে উপকৃত হওয়া যায়। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, আওযাঈ, ইউনুস ও ‘উকাইল যুহরী বর্ণিত হাদিসে দাবাগাতের কথা উল্লেখ করেননি। কিন্তু যুবাইদী, সাইদ ইবনু ‘আবদুল ‘আযীয এবং হাফ্স ইবনু ওয়ালীদ দাবাগাতের কথা উল্লেখ করেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ চামড়া দাবাগাত করা হলে পবিত্র হয়। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত প্রাণীর চামড়া দাবাগাত করার পর কাজে লাগিয়ে উপকৃত হওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। [৪১২৪] সালামাহ ইবনুল মুহাব্বিক (রাঃ) তাবুক যুদ্ধের সময় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বাড়িতে গিয়ে সেখানে একটি ঝুলন্ত মশক দেখে তা হতে পানি চাইলেন। তারা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! এটা তো মৃত প্রাণীর চামড়ার তৈরি মশক। তিনি বললেনঃ দাবাগাত করলেই এটা পবিত্র হয়ে যায়। আল-‘আলিয়াহ বিনতু সুবাই’ (রহঃ) তিনি বলেন, উহুদের ময়দানে আমার বকরী ছিল। সেখানে মহামারী দেখা দিলে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী মাইমুনাহ (রাঃ) এর নিকট গিয়ে বিষয়টি তাকে জানালাম। তিনি আমাকে বললেন, তুমি তো এর চামড়া নিয়ে এর দ্বারা উপকৃত হতে পারো। আমি বললাম, এর দ্বারা উপকৃত হওয়া কি বৈধ? তিনি বলেন, হাঁ, কতিপয় কুরাইশী পুরুষ প্রায় গাধার সমান তাদের একটি বকরী রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পাশ দিয়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বললেনঃ তোমরা যদি এর চামড়া রেখে দিতে? তারা বলল, এটা মৃত। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পানি ও ছলম বৃক্ষের পাতার রস এটাকে পবিত্র করে।

【41】

যাদের মতে মৃত প্রাণীর চামড়া ব্যবহার করা যবে না

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উকাইম (রাঃ) তিনি বলেন, আমি যখন যু্বক, তখন জুহাইনাহ গোত্রের এলাকায় অবস্থানকালে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি পত্র পাঠ করে শুনানো হয়। তাতে ছিলঃ “তোমরা মৃত প্রাণীর চামড়া ও পেশিতন্ত দ্বারা উপকৃত গ্রহণ করো না।” আল-হাকাম ইবনু উতাইবাহ (রহ) তিনি কতিপয় লোকসহ জুহাইনাহ গোত্রের ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উকাইম (রাঃ)-এর নিকট গেলেন। হাকাম বলেন, তারা ভেতরে ঢুকলেন আর আমি বাইরে দরজার পাশে বসে রইলাম। অতঃপর তারা বেরিয়ে এসে আমার কাছে বর্ণনা করলেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উকাইম (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মৃত্যুর এক মাস পূর্বে জুহাইনাহ গোত্রে এ কথা লিখে একটি পত্র প্রেরণ করেছেনঃ “তোমরা মৃত জন্তর চামড়া ও তন্তু দ্বারা উপকৃত হয়ো না”। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আন-নাদর ইবনু শুমাইল (রহ) বলে দাবাগাত না করা পর্যন্ত চমড়াকে ‘ইহাব’ বলে। দাবাগাত করার পর একে শান্ন ও ক্বিরবাহ (পাকা চামড়া) বলা হয়।

【42】

চিতা বাঘ ও হিংস্র জন্তুর চামড়া সম্পর্কে

মু‘আবিয়াহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা রেশমের এবং চিতা বাঘের তৈরী গদিতে আরোহী হবে না। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মালায়িকাহ (ফেরেশতারা) চিতা বাঘের চামড়ার তৈরী আসনে আসীন ব্যক্তির সঙ্গী হয় না। খালিদ (রহ) তিনি বলেন, একদা আল-মিক্বদাম ইবনু মা‘দীকারিব (রাঃ), ‘আমর ইবনুল আসওয়াদ ও কিন্নাসিরীনবাসী বনী আসাদের এক লোক মু‘আবিয়াহ ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাঃ)-এর নিকট গেলেন। মু‘আবিয়াহ (রাঃ) মিক্বদাম (রাঃ)-কে বললেন, জানতে পারলাম, হাসান ইবনু ‘আলী মারা গেছেন। একথা শুনে মিক্বদাম (রাঃ) “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” পড়লেন। অমুক ব্যক্তি মু‘আবিয়াহকে বললেন, এর মৃত্যুকে আপনি কি বিপদ মনে করেন? তিনি বললেন, আমি এটাকে কেন বিপদ মনে করবো না, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকে নিজের কোলে নিয়ে বলতেনঃ হাসান আমার এবং হুসাইন ‘আলীর। আমাদী বললো, তিনি ছিলেন এক জ্বলন্ত কয়লা যাকে আল্লাহ নিভিয়ে দিয়েছেন। বর্ণনাকারী, অতঃপর মিক্বদাম (রাঃ) বলেন, আজ আমি আপনাকে অসন্তুষ্ট না করে ছাড়বোনা। তিনি বললেন, হে মু‘আবিয়াহ! আমি যদি সত্য বলি তবে আমাকে সমর্থন করবেন আর মিথ্যা বললে আমাকে মিথ্যাবাদী বলাবেন। তিনি বললেন, ঠিক আছে। তিনি বলেন, আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আপনি কি শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বর্ণ (পুরুষদের) ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, হাঁ। তিনি আবার বললেন, আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আপিন কি জানেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেশমী পোশাক (পুরুষদের) ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, হাঁ। তিনি আবারও বললেন, আল্লাহর কসম দিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করছি, আপনি কি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিংস্র জন্তুর চামড়া ব্যবহার করতে এবং এর চামড়ার তৈরী আসনে আরোহী হতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, হাঁ। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি আপনার প্রাসাদে এসবের কিছুই দেখছি না। মু‘আবিয়াহ (রাঃ) বলেন, হে মিক্বদাম! আমি জানতাম যে, তোমার কাছ থেকে রক্ষা পাবো না। খালিদ (রহ) বলেন, অতঃপর মু‘আবিয়াহ (রাঃ) তার জন্য এত পরিমাণ সম্পদ দেয়ার আদেশ দেন, যা অপর দু’জন সাথীর জন্য দেননি। আর তার ছেলের জন্য দুইশো দীনার প্রদান করেন। মিক্বদাম (রাঃ) এগুলো তার সাথীদের মাঝে বন্টন করে দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আসাদী এখানে যা পেয়েছে তা থেকে কাউকে কিছু দেয়নি। এ সংবাদ মু‘আবিয়াহ্‌র নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, মিক্বদাম হলো লম্বা হাতের দানশীল লোক, আর আসাদী নিজের জন্য আটকিয়ে রাখার লোক। আবুল মালীহ ইবনু উসামাহ (রহ) হতে তার পিতার সূত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিংস্র প্রাণীর চামড়া ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন।

【43】

পায়ে জুতা পরার নিয়ম

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। তিনি বলেনঃ তোমার (সফরকালে) জুতা বেশী রাখবে। কারণ জুতা পরিধান করে সব সময় সফর করা যায়। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর জুতার দু’টি তসমা (ফিতা) ছিল। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদেরকে দাঁড়িয়ে জুতা পরতে নিষেধ করেছেন। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ এক পায়ে জুতা পরে হাঁটবে না। হয় উভয় পায়ে জুতা পরবে অথবা উভয় পা থেকে জুতা খুলে রাখবে। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো একটি জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলে তা ঠিক না করা পর্যন্ত সে অপর জুতাটি পায়ে দিয়ে হাঁটবে না, আর এক মোযা পরিধান করেও চলবে না এবং বাম হাতে খাবে না। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, সুন্নাত হলো বসার সময় পায়ের জুতা খুলে পাশে রেখে দেয়া। [৪১৩৮] আবু হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ জুতা পরার সময় ডান পা হতে আরম্ভ করবে এবং খোলার সময় বাম পা হতে আরম্ভ করবে। জুতা পরার সময় ডান পা হতে প্রথম এবং খোলার সময় শেষে হবে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রতিটি কাজ যথাসাধ্য ডান থেকে আরম্ভ করা ভালোবাসতেন। পবিত্রতা অর্জন, চুলে চিরুনী করা এবং জুতা পরতে তিনি ডান থেকে আরম্ভ করতেন। মুসলিম (রহ) বলেন, মেস্ওয়াক করার সময়ও ডান পাশ থেকে আরম্ভ করতেন। তবে তার বর্ণনায় ‘প্রতিটি কাজ’ শব্দ নেই। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মু‘আয (রহ) শু‘বাহ (রহ) হতে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন; তবে তিনি ‘মিসওয়াক’ শব্দ উল্লেখ করেননি। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখন পোশাক বা জুতা পরিধান করো এবং উযু করো, তখন ডান দিক থেকে শুরু করবে।

【44】

বিছানা সম্পর্কে

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিছানা সম্পর্কে বলেনঃ পুরুষের জন্য একটি বিছানা, নারীর জন্য একটি বিছানা এবং একটি অতিথির জন্য। আর চতুর্থটি হলো শয়তানের জন্য। জাবির ইবনু সামুরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ঘরে গিয়ে তাঁকে বালিশে বাম কাতে ঠেস দিয়ে বসা দেখেছি। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি ইয়ামানের একদল সাথীকে দেখতে পেলেন, যাদের সওয়ারীর গদিগুলো ছিল চামড়ার তৈরী। তিনি বলেন, কেউ যদি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের সাদৃশ্য দেখতে চায়, তবে যেন এদেরকে দেখে। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেনঃ তোমরা কি নরম গদি বানিয়েছ? আমি বললাম, আমরা নরম গদি কোথায় পাবো? তিনি বলেনঃ অচিরেই তোমাদের জন্য নরম গদি হবে। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর রাতের ঘুমানোর বালিশ ছিল চামড়ার তৈরী, সেটির ভেতরে ছিল খেজুরের ছাল-বাকল। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য চামড়ার তৈরী একটি তোষক ছিল, যার ভেতরে খেজুরের ছাল-বাকল ভরা ছিল। উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, তার বিছানা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সলাত আদায়ের স্থানের ঠিক সামনে ছিল।

【45】

(দরজা-জানালায়) পর্দা ঝুলানো সম্পর্কে

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাত্বিমাহ (রাঃ)-এর নিকট এসে দরজায় পর্দা ঝুলানো দেখতে পেয়ে তিনি ভেতরে ঢুকলেন না। বর্ণনাকারী বলেন, অধিকাংশ সময় তিনি ভেতরে ঢুকেই সর্বপ্রথম ফাত্বিমাহ্‌র সঙ্গে সাক্ষাত করতেন। এসময় ‘আলী (রাঃ) এসে ফাত্বিমাহ্‌কে চিন্তিত দেখে বললেন, তোমার কি হয়েছে? তিনি বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট আসতে চেয়েও আসেননি। অতঃপর ‘আলী (রাঃ) তাঁর নিকট গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ফাত্বিমাহ্‌র নিকট গিয়েও প্রবেশ না করায় এটা তার জন্য অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তিনি বলেনঃ দুনিয়াদারী ও চাকচিক্যতার সাথে আমার কী সম্পর্ক। একথা শুনে ‘আলী ফাত্বিমাহ্‌র নিকট গিয়ে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বক্তব্য বর্ণনা করলেন। তিনি বলেন, আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলুন, তিনি আমাকে এটাকে কি করতে আদেশ দেন? (‘আলীর বর্ণনা শুনে) তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাঁকে (ফাত্বিমাহ্‌কে) বলো, তা (পর্দাটি) যেন অমুক গোত্রে পাঠিয়ে দেয়। ইবনু ফুদাইল (রহ) তার পিতার সূত্র এ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, পর্দাটি ছিল ডোরাযুক্ত ও নকশা খচিত।

【46】

ক্রুশ চিহ্নযুক্ত কাপড় সম্পর্কে

‘আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘরে ক্রুশ চিহ্নযুক্ত কোন জিনিসই রাখতে দিতেন না। তিনি সেগুলোকে ছিঁড়ে ফেলতেন।

【47】

ছবি সম্পর্কে

‘আলী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সেই ঘরে (রহমাতের) ফেরেশতা প্রবেশ করেন না, যেখানে ছবি, কুকুর এবং অপবিত্র লোক থাকে। [৪১৫২] যায়িদ ইবনু খালিল আল-জুহানী (রাঃ) আবূ ত্বালহা আল-আনসারী (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ঘরে কুকুর ও ছবি থাকে সেই ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। অতঃপর তিনি (যায়িদ) বলেন, চলো আমরা উম্মূল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ (রাঃ)-আর নিকিট গিয়ে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করি। আমরা তার নিকট পৌঁছে বললাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! আবূ ত্বালহা (রাঃ) আমাদের কাছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। আপনি কি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ বিষয়ে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বলেন, না, তবে আমি তাঁকে যা করতে দেখেছি, সে সম্পর্কে একটি হাদীস আপনাদের বলছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক যুদ্ধাভিযানে গেলেন। আমি তাঁর ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলাম। আমি আমাদের একটি পশমী কাপড় দরজার চৌকাঠে পর্দা হিসেবে ঝুলিয়ে রাখলাম। তিনি যখন ফিরে এলেন, আমি স্বাগতম জানিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমাত ও বরকত বর্ষিত হোক। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য যিনি আপনাকে সন্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন করেছেন। তিনি ঘরের দরজার দিকে তাকাতেই পশমী পর্দা দেখেন, কিন্তু আমার কথার কোন জবাব দিলেন না। আমি তাঁর চেহারায় অসন্তুষ্টির ছাপ দেখতে পেলাম। তিনি পশমী (ছবিযুক্ত) কাপড়টির নিকট গিয়ে তা ছিঁড়ে ফেলে বলেনঃ আল্লাহ্‌ আমাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছেন, তা পাথর ও ইটকে পরানোর আদেশ দেননি। তিনি (‘আয়িশাহ) বলেন, আমি কাপড়টা কেটে দুইটি বালিশ তৈরি করলাম এবং ভেতরে খেজুরের ছাল-বাকল ভরে দিলাম; তিনি আমার এ কাজ অপছন্দ করেননি। সুহাইল (রহ) সূত্র যায়িদ (রহ) অনুরূপ বর্ণনা করে বলেন, আমি বললাম, হে আম্মাজি! তিনি (আবূ তালহা) আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসব কথা বলেছেন। বনী নাজ্জারের মুক্তদাস সাঈদ ইবনু ইয়াসারও একথা বলেন। যায়িদ ইবনু খালিদ (রাঃ) বলেন, আবূ ত্বালহা (রাঃ) সূত্র তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। বুস্র (রহ) বলেন, অতঃপর যায়িদ (রাঃ) অসুস্থ হলে আমরা তাকে দেখতে তার বাড়িতে গেলাম। তার ঘরের দরজায় ছবিযুক্ত একটি পর্দা দেখলাম। আমি তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী মাইমুনাহ (রাঃ)–এর পালিত পুত্র ‘উবাইদুল্লাহ আল-খাওলানীকে বললাম, যায়িদ (রাঃ) আমাদের ছবি না রাখার হাদীস শুনিয়েছেন। ‘উবাইদুল্লাহ (রহ) বলেন, আপনি কি শুনেন নি, সে হাদীসে তিনি একথাও উল্লেখ করেছেন, কাপড়ের মধ্যে যদি গাছপালা, লতাপাতা ইত্যাদি ছবি থাকে, তা নিষেধ নয়। জাবির (রাঃ) মাক্কাহ বিজয়ের সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আল-বাতহা’ নামক স্থানে দাঁড়িয়ে ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে আদেশ দিলেন যেন তিনি কা’বার ভেতরে গিয়ে এর মধ্যে বিদ্যমান সব ছবি মিটিয়ে দেন। অতঃপর সব ছবি মিটিয়ে দেয়ার পূর্ব পর্যন্ত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভেতরে প্রবেশ করেননি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী মাইমূনাহ (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জিবরাঈল (আ) আমার সাথে রাতে সাক্ষাত করার ওয়াদা করেছিলান; কিন্তু সাক্ষাত করেননি। অতঃপর তাঁর মনে পড়লো যে, আমাদের বিছনার নীচে একটি কুকুর শাবক আছে। তিনি এটাকে বের করে দিতে আদেশ দিলে তা বের করা হলো। অতঃপর তিনি নিজেই পানি দিয়ে সে স্থানটা ধুয়ে ফেলেন। জিবরাঈল (আ) তাঁর সাথে সাক্ষাতের সময় বললেন, যে ঘরে কুকুর এবং ছবি থাকে সে ঘরে আমরা কখনো প্রবেশ করি না। সকালবেলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুকুর মারতে আদেশ দিলেন, এমনকি ছোট বাগান পাহারার কুকুর হত্যা করারও আদেশ দেন, বড় বাগানের পাহারাদার কুকুর ছাড়া। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জিবরীল আমার নিকট এসে বলেন, গত রাতে আমি আপনার কাছে এসেছিলাম, কিন্তু আমি প্রবেশ করিনি। কারণ ঘরের দরজায় ছবি ছিল, ঘরের মধ্যে ছিল ছবিযুক্ত পর্দা এবং ঘরে ভেতরে ছিল কুকুর। সুতরাং আপনি ঘরে ঝুলানো ছবির মাথা কেটে দেয়ার আদেশ করুন, তাহলে তা গাছের আকৃতিতে পরিণত হবে। এর পর্দাটি কেটে দুইটি বালিশের ভেতরের কাপড় বানাতে আদেশ করুন এবং কুকুরটিকে বের করে দেয়ার হুকুম দিন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপদেশ মত কাজ করলেন। কুকুরটি ছিল হাসান বা হুসাইনের এবং তা তাদের খাটের নীচে শুয়েছিল। তিনি সেটাকেও বের করে দেয়ার আদেশ দেন এবং তা বের করে দেয়া হলো। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আন-নাযাদ হচ্ছে কাপড় রাখার বস্তু, গদি সদৃশ।