7. কুরআন তিলাওয়াতের সিজদাসমূহ

【1】

সিজদাসমূহের অনুচ্ছেদমালা এবং কুরআন তিলাওয়াতের সিজদা সংখ্যা

আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে কুরআনের মধ্যে পনেরটি সিজদা পাঠ করিয়েছেন। তন্মধ্যে সূরাহ মুফাস্‌সলে তিনটি এবং সূরাহ হাজ্জের মধ্যে দু’টি। [১৪০১] ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আবূ দারদা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে, সিজদা এগারটি। তবে এ বর্ণনার সানাদ নিকৃষ্ট। দুর্বল : মিশকাত (১০২৯)। ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করি, হে আল্লাহর রসূল! সূরাহ হাজ্জে কি দু’টি সিজদা রয়েছে? তিনি বলেন, হাঁ। যে ব্যক্তি এ দু’টি সিজদা আদায় করবে না সে যেন তা তিলাওয়াত না করে।

【2】

যার ধারণা, ‘মুফাস্‌সল’ সূরাহগুলোতে সিজদা নেই

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনায় আগমনের পর মুফাস্‌সলের কোথাও সিজদা করেননি। [১৪০৩] দুর্বল : মিশকাত (১০৩৪)। যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সম্মুখে সূরাহ নাজ্‌ম তিলাওয়াত করেছি কিন্তু তিনি এ সূরাহ্‌তে সিজদা করেননি। খারিজাহ ইবনু যায়িদ ইবনু সাবিত (রহঃ) হতে তার পিতা থেকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, যায়িদ (রাঃ) ইমাম হওয়া সত্ত্বেও সিজদা করেননি। [১৪০৫]

【3】

যাদের মতে, তাতে একাধিক সিজদা রয়েছে

‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরাহ নাজ্‌ম তিলাওয়াতের পর সিজদা করলে উপস্থিত সকলেই সিজদা করলো। কিন্তু এক ব্যক্তি সিজদা না করে এক মুষ্টি কংকর অথবা মাটি স্বীয় কপালের কাছে নিয়ে বললো, আমার জন্য এটুকুই যথেষ্ট। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, পরবর্তীতে আমি লোকটিকে কাফির অবস্থায় মরতে দেখেছি। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম।

【4】

সূরাহ ইযাস-সামাউন-শাক্কাত ও সূরাহ ইক্বরা- এর সিজদা সম্পর্কে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে ‘ইযাস-সামাউন শাককাত্‌ এবং ‘ইক্বরা বিসমি রব্বিকাল্লাযী খালাক্বা’ সূরাহ দু’টিতে সিজদা করেছি। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) ষষ্ঠ হিজরীতে খায়বার যুদ্ধের বছরে ইসলাম কবুল করেন। আর এ সিজদা ছিলো রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনের শেষ দিকের আমল। সহীহ : মুসলিম। আবূ রাফি’ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ)-এর সাথে ‘ইশার সলাত আদায় করি। তিনি সূরাহ ‘ইযাস্‌-সামাউন শাক্কাত’ তিলাওয়াত করে সিজদা করলেন। আমি তাকে বলি, এ সিজদা কিসের? তিনি বললেন, আমি আবুল ক্বাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে এ সিজদা করেছি এবং মৃত্যু পর্যন্ত আমি এ সিজদা আদায় করতে থাকবো। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম।

【5】

সূরাহ সোয়াদের সিজদা

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, সূরাহ সোয়াদের সিজদা আবশ্যক নয়। তবে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এখানে সিজদা করতে দেখেছি। সহীহ : বুখারী। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারের উপর ‘সূরাহ সোয়াদ’ তিলাওয়াতকালে সিজদার আয়াত পৌছলে নীচে নেমে সিজদা করলে লোকজনও তাঁর সাথে সিজদা করলো। অতঃপর আরেক দিন তিনি তা তিলাওয়াত করলেন, তখন সিজদার আয়াত পর্যন্ত পৌছলে লোকজন সিজদার জন্য প্রস্তুত হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা নাবীর জন্য তওবাহ স্বরূপ ছিলো। অথচ আমি দেখেছি তোমরা সিজদা করার জন্য প্রস্তুত। অতঃপর তিনি সিজদা করলে লোকেরাও সিজদা করলো।

【6】

বানে আরোহী অবস্থায় কিংবা সলাতের বাইরে সিজদার আয়াত শুনলে

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাক্কাহ বিজয়ের বছরে (বিজয়ের দিন) সিজদার আয়াত পাঠ করলে উপস্থিত সকলেই সিজদা করলো। তাদের মধ্যে কেউ আরোহী ছিলো এবং কেউ ছিলো মাটিতে সিজদাকারী। এমনকি আরোহী নিজ হাতের উপর সিজদা আদায় করেছে। [১৪১১] দুর্বল : মিশকাত (১০৩৩)। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সামনে সূরাহ পড়লেন। ইবনু নুমাইর বলেন, সলাতের বাইরে, অতঃপর উভয় বর্ণনাকারী বর্ণনা করেন, তিনি সিজদা করলে আমরাও তাঁর সাথে সিজদা করতাম। এমনকি (ভীড়ের কারণে) আমাদের কেউ কেউ স্বীয় কপাল রাখার জায়গাও পেতো না। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সামনে কুরআন পড়ার সময় সিজদার আয়াত অতিক্রমকালে তাকবীর বলে সিজদা করতেন এবং আমরাও সিজদা করতাম। [১৪১৩] ‘আবদুর রায্‌যাক বলেন, ইমাম সাওরী এ হাদীস পছন্দ করতেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, কেননা এতে তাকবীর উচ্চারণের কথা রয়েছে। মুনকার, তাকবীর শব্দ উল্লেখ দ্বারা। মাহফূয হচ্ছে : তাকবীর ছাড়া। যেমন এর পূর্বেরটিতে রয়েছে।

【7】

সিজদাতে কি বলবে?

আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে কুরআন তিলাওয়াতের সিজদা করতেন এবং সিজদাতে বারবার বলতেন : ‘সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহু ওয়া শাক্‌কা সাম্‌‘আহু ওয়া বাসরহু, বি-হাওলিহী ওয়া কুওয়াতিহী। (অর্থঃ আমার মুখমণ্ডল ঐ সত্ত্বাকেই সিজদা করেছে, যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন, কানে শ্রবণশক্তি এবং চোখে দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন। তাঁর দয়া ও শক্তির বলেই এগুলো বলীয়ান।)

【8】

ফাজ্‌রের সলাতের পর যিনি সিজদার আয়াত পাঠ করলে

আবূ তামীমাহ আল-হুজাইমী (রহঃ) যখন আমরা কাফেলার সাথে মদিনায় আসি তখন ফজরের সলাতের পর আমি লোকদেরকে ওয়ায করতাম, এ সময় সিজদার আয়াত পাঠ করলে আমি সিজদা করতাম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) আমাকে পরপর তিনবার নিষেধ করা সত্ত্বেও আমি তার কথায় কর্ণপাত না করায় তিনি পুনরায় নিষেধ করে বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাকর, ‘উমার এবং ‘উসমান (রাঃ)-এর পেছনে সলাত আদায় করেছি। কিন্তু তাঁরা সূর্য না উঠা পর্যন্ত সিজদা করেননি। [১৪১৫]