9. যাকাত

【1】

যাকাত দেয়া ওয়াজিব

আবূ হুরাইরাহ (রা:) সূত্র তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তিকালের পর আবূ বকর (রাঃ) খলীফা হিসেবে নিযুক্ত হন। তখন আবনের কিছু গোত্র কুফরী করলো। ‘উমার (রাঃ) আবূ বকর (রাঃ) কে বললেন, আপনি এ লোকদের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন? অথচ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষণ না তারা বলে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে, তার জান-মাল আমার থেকে নিরাপদ। তবে আইনের বিষয়টি ভিন্ন এবং তার প্রকৃত বিচার মহান আল্লাহর উপর ন্যস্ত।” তখন আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ শপথ! যে ব্যক্তি সলাত ও যাকাত র মধ্যে পার্থক্য করবে আমি অবশ্যই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। অর্থ সম্পদের প্রদেয় অংশ হলো যাকাত। আল্লাহর শপথ! যদি তারা আমাকে একটি রশি দিতেও অস্বীকৃতি জানায় যা তারা রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দিতো, তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ ! আমি বুঝতে পারলাম যে মহান আল্লাহ আবূ বকরের হৃদয়কে যুদ্ধের জন্য উম্মুখ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি বুঝতে পারলাম যে, এটাই হাক্ব ও সঠিক। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। কিন্তু তার উক্তি শায। মাহফূয হচ্ছে (আরবি)। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, রাবাহ ইবনু যায়িদ মা’মার হতে, তিনি যুহরী হতে উল্লেখিত সানাদে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন উটের রশি। বর্ণনাকারী ইবনু ওয়াহাব ইউনুস সূত্রে বলেছেন, ছাগল ছানা। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, শু’আইব ইবনু আবূ হামযাহ এবং মা’মার ও যুবাইদী যুহরী হতে এ হাদীস বলেছেন, ‘যদি তারা একটি বকরীর বাচ্চা দিতেও অস্বীকার করে’। আর আনবাসাহ ইউনুস হতে যুহরী সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ বকরীর বাচ্চা। সহীহঃ বুখারী,এবং তিনি বলেছেন,এটি (আরবী) এর বর্ণনার চাইতে অধিক বিশুদ্ধ। যুহরী (রঃ) সূত্র তিনি বলেন, আবূ বাকর (রাঃ) বলেছেন, মালের হাক্ব হচ্ছে যাকাত এবং তিনি রশির কথা উল্লেখ করেছেন। সহীহঃ কিন্তু হাদীসটি এ শব্দে শায।

【2】

যে পরিমাণ সম্পদে যাকাত ওয়াজিব

‘আমর ইবনু ইয়াহইয়া আল-মাযিনী (রঃ) হতে তার পিতার তিনি বলেন, আমি আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পাঁচটি উটের কমে যাকাত নেই, পাঁচ উকিয়ার কমে যাকাত নেই এবং পাঁচ ওয়াসাকের কমে যাকাত নেই। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পাঁচ ওয়াসাকের কমে যাকাত নেই। এক ওয়াসাক হচ্ছে ষাট সা‘। দুর্বল। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আবুল বাখতারী (রঃ) আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে হাদীস শুনেননি। ইবরাহীম (রহঃ) তিন বলেন, এক ওয়াসাক হচ্ছে ষাট সা‘। এটি আল-হাজ্জাজ কর্তৃক নির্ধারিত। সুরাদ ইবনু আবূ মানাযিল (রঃ) আমি হাবীব আল-মালিকী (রঃ)-কে বলতে শুনেছি, এক ব্যক্তি ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ)-কে বললো, হে আবূ নুজাইদ! আপনারা আমাদের কাছে এমন হাদীসও বর্ণনা করেন, যার কোনো বুনিয়াদ কুরআনে পাই না। এ কথা শুনে ‘ইমরান (রাঃ) অসন্তুষ্ট হয়ে লোকটিকে বললেন, তোমরা কি কুরআনের মধ্যে কোথাও পেয়েছো যে, প্রত্যেক চল্লিশ দিরহামে (যাকাত) দিতে হবে? সে বললো, না। তিনি বললেন, তাহলে এটা তোমরা কোথায় পেয়েছ? মূলতঃ তোমরা এটা সাহাবীদের কাছ থেকে জেনেছো এবং আমরা পেয়েছি আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে। তিনি অনুরূপ আরো কিছু বিষয়ের কথাও উল্লেখ করেন।[১৫৬১]

【3】

বাণিজ্যিক পণ্যের যাকাত দিতে হবে কি?

সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বাণিজ্যিক পণ্যের যাকাত দিতে নির্দেশ করেছেন।

【4】

গচ্ছিত মাল কি এবং অলংকারের যাকাত প্রসঙ্গে

আমর ইবনু শু‘আইব (রঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার একদা এক মহিলা তার কন্যাকে নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে আসলো। তার কন্যার হাতে দু’টি মোট স্বর্ণের কঙ্কন ছিলো। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এর যাকাত দাও? সে বললো, না। তিনি বললেনঃ তুমি কি এতে সন্তুষ্ট যে, মহান আল্লাহ এর বিনিময়ে ক্বিয়ামাতের দিন তোমাকে আগুনের দু’টি কঙ্কন পরিয়ে দিবেন? বর্ণনাকারী বলেন, সে তৎক্ষণাত তা খুলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে রেখে দিলে বললো, এ দু’টি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্য।১৫৬৩ উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি স্বর্ণের অলংকার পরতাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এটা কি কান্‌য (সঞ্চিত সম্পদ) হিসেবে গণ্য হবে? তিনি বললেনঃ যে সম্পদ নিসাব পরিমাণ হয় এবং তার যাকাত দেয়া হয়, তা ‘কান্‌য’ নয়। হাসানঃ এর কেবল মারফু অংশটুকু। ‘আবদুল্লাহ ইবনু শাদ্দাদ ইবনুল হাদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী ‘আয়িশাহর (রাঃ) নিকট গেলে তিনি বললেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে এসে আমার হাতে রূপার বড় আংটি দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলনঃ হে ‘আয়িশাহ! এটা কি? আমি বললাম, হে আল্লাহ রসূল! আপনার উদ্দেশে সাজসজ্জার জন্য আমি এটা বানিয়েছি। তিনি বললেন, তুমি কি এগুলোর যাকাত দাও? আমি বললাম, না, অথবা আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন। তিনি বললেন, তোমাকে (জাহান্নামের) আগুনে নিয়ে যেতে এটাই যথেষ্ট। উমার ইবনু ই‘য়ালা (রহঃ) এ সূত্রেও আংটি সম্পর্কিত পূর্বানুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সুফায়ানকে জিজ্ঞাসা করা হলো, এর যাকাত কিভাবে দিবে? তিনি বলেন, যাকাতের অন্যান্য মালের সাথে যোগ করে।[১৫৬৬]

【5】

মাঠে স্বাধীনভাবে বিচরণশীল পশুর যাকাত

হাম্মাদ (রঃ) আমি সুমামাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু আনাস (রাঃ) হতে একখান কিতাব গ্রহণ করি। সুমামাহর ধারণা, আবূ বাকর (রাঃ) এটি আনাস (রাঃ)-কে যাকাত আদায়ের জন্য প্রেরণকালে লিখেছিলেন এবং তাতে রসূলুল্লাহর মোহরাঙ্কিত ছিলো। তাতে লিখা ছিলোঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফারয যাকাতের বিষয়ে মুসলিমদের উপর যা নির্ধারিত হয়েছে এবং এ বিষয়ে মহান আল্লাহ তাঁর রসূলকে যা আদেশ করেছেন। কাজেই যে কোন মুসলিমের নিকট বিধি অনুসারে যাকাত চাওয়া হবে সে যেন তা দিয়ে দেয়। কিন্তু কোরো কাছে অতিরিক্ত দাবি করা হলে সে যেন অতিরিক্ত না দেয়। পঁচিশটি উটের কম হলে প্রতি পাঁচটি উটের জন্য একটি বকরী দিতে হবে। উটের সংখ্যা পঁচিশ থকে পঁয়ত্রিশ হলে তাতে একটি বিনতু মাখাদ (দুই বছরে(রঃ) উষ্ট্রী দিতে হবে। তার কাছে এরূপ উট না থাকলে একটি ‘ইবনু লাবূন’ (তিন বছরের) উট দিতে হবে। উটের সংখ্যা ছত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশের মধ্যে হলে তাতে একটি ‘বিনতু লাবূন’ (তিন বয়সের উষ্ট্রী) দিতে হবে। উটের সংখ্যা ছেচল্লিশ থেকে ষাট পর্যন্ত হলে তাতে একটি ‘হিককাহ’ (চার বছরের) উষ্ট্রী দিতে হবে। উটের সংখ্যা একষট্রি থেকে পঁচাত্তর হলে তাতে একটি ‘জাযাআহ’ (পাঁচ বছরের) উষ্ট্রী দিতে হবে। উটের সংখ্যা ছিয়াত্তর থেকে নব্বই হলে তাতে দু’টি ‘বিনতু লাবূন’ দিতে হবে। উটের সংখ্যা একানব্বই থেকে এক শত বিশ-এর উর্ধে হলে প্রতি চল্লিশটির জন্য একটি করে ‘বিনতু লাবূন’ এবং প্রতি পঞ্চাশটির জন্য একটি করে ‘হিককাহ’ দিবে। যদি যাকাতযোগ্য বয়সের উট না থাকে, যেমন, কারো জাযাআহ্ ওয়াজিব, কিন্তু তার কাছে সেটার পরিবর্তে হিককাহ আছে, তখন হিককাহ গ্রহণ করতে হবে এবং এর সাথে সহজলভ্য হলে দু’টি বকরী কিংবা বিশ দিরহামও দিতে হবে। একইভাবে কারো উপর হিককাহ দেয়া ওয়াজিব, কিন্তু তার কাছে সেটা নেই বরং জাযাআহ আছে। তখন তার থেকে জাযাআহ গ্রহণ করতে হবে এবং যাকাত উসুলকারী বিশ দিরহাম কিংবা দু’টি বকরী যাকাত প্রদানকারীকে দিবে। এমনিভাবে কারো উপর হিককাহ ওয়াজিব, কিন্তু তার কাছে তা নেই, বরং জাযাআহ আছে। তার থেকে সেটাই নিতে হবে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এখানে আমি আমার উস্তাদ মূসা ইবনু ইসমাঈল হতে আশানূরূপ আয়ত্ব করতে পারিনি। এখানেও যাকাতদাতা সহজলভ্য দু’টি বকরী অথবা বিশ দিরহাম প্রদান করবে। যার উপর বিনতু লাবূন ওয়াজিব কিন্তু সেটা তার কাছে নেই, বরং তার কাছে হিককাহ আছে। সেটাই তার কাছ থেকে নিতে হবে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ পর্যন্ত আমি সন্দিহান ছিলাম, পরবর্তীতে আমি পূর্ণ আস্থাশীল হই। অর্থাৎ তহশীলদার বিশ দিরহাম অথবা দু’টি বকরী যাকাত প্রদানকারীকে ফেরত দিবে। যদি কারো উপর বিনতু লাবূন ওয়াজিব হয় এবং সেটা তার কাছে না থাকে, বরং বিনতু মাখাদ থাকে, তখন তার থেকে সেটাই গ্রহন করবে এবং এর দু’টি বকরী অথবা বিশ দিরহাম প্রদান করবে। যদি কারো উপর বিনতু মাখাদ ওয়াজিত হয়, অথচ তা তার কাছে নেই, বরং তার নিকট আছে ইবনু লাবূন, তখন সেটাই গ্রহণ করবে এবং সাথে কিছুই দিতে হবে না। আর কারো কাছে চারটি উট থাকলে তাকে কিছুই দিতে হবে না। অবশ্য উটের মালিক স্বেচ্ছায় কিছু দিলে তা ভিন্ন কথা। স্বাধীনভাবে চরে বেড়ানো মেষ-বকরীর সংখ্যা চল্লিশ থেকে একশো বিশ পর্যন্ত পৌছলে একটি বকরী দিতে হবে। একশত বিশ অতিক্রম করে দুইশো পর্যন্ত পৌঁছলে দু’টি বকরী। বকরীর সংখ্যা দুইশো অতিক্রম করে তিনশো পর্যন্ত হলে তিনটি বরকী এবং তিনশো থেকে অধিক হলে প্রতি একশোটির জন্য একটি বকরী যাকাত দিতে হবে। যাকাত হিসেবে অতিবৃদ্ধ অথবা অন্ধ বকরী-ছাগল নেয়া হবে না। তবে আদায়কারী তা নিতে চাইলে ভিন্ন কথা। যাকাতের ভয়ে বিচ্ছিন্নকে যেন একত্র না করা হয় এবং একত্রকে বিচ্ছিন্ন না করা হয়। দুই শরীকের কাছ থেকে যে যাকাত আদায় করা হবে সেটা তারা নিজ নিজ অংশ হিসাবে বহন করবে। চরে বেড়ানো বকরীর সংখ্যা চল্লিশ না হলে কিছুই দিতে হবে না। তবে মালিক স্বেচ্ছায় কিছু দিতে চাইলে ভিন্ন কথা। রূপার যাকাতের পরিমাণ হলো চল্লিশ ভাগের এক ভাগ। রৌপ্য মুদ্রা একশো নব্বই হলে কিছুই দিতে হবে না। হাঁ, মালিক স্বেচ্ছায় কিছু দিলে তাতে আপত্তি নেই। সহীহঃ বুখারী সংক্ষেপে। সালিম (রঃ) হতে তার পিতার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাত হিসেবে যে পত্র লিখেছেন তা কর্মকর্তাদের নিকট পৌঁছার পূর্বেই তিনি ইনতিকাল করেন। ফলে তা তাঁর তরবারির খাপের মধ্যেই থেকে যায়। অতঃপর আবূ বকর (রাঃ) তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত সে বিধান অনুযায়ী কাজ করেন। তাঁর পরে ‘উমার (রাঃ) তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তদানুযায়ী কাজ করেন। তাতে লিখা ছিলঃ প্রত্যেক পাঁচটি উটের জন্য একটি বকরী, দশটির জন্য দু’টি বকরী, পনেরটির জন্য তিনটি বরকী এবং বিশটির জন্য চারটি বকরী প্রদান করতে হবে। পঁচিশটির জন্য দিতে হবে একটি বিনতু মাখাদ এবং তা পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত। এর থেকে একটিও বৃদ্ধি পেলে পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত একটি বিনতু লাবূন দিতে হবে। এর থেকে একটিও বৃদ্ধি পেলে ষাট পর্যন্ত দিতে হবে একটি হিককাহ। যখন এর থেকে একটিও বর্ধিত হবে, তখন পঁচাত্তর পর্যন্ত দিতে হবে একটি জাযাআহ। যখন এর থেকে একটিও বর্ধিত হবে, তখন দু’টি বিনতু লাবূন দিতে হবে। যখন এর থেকেও একটি বৃদ্ধি পাবে, তখন দু’টি হিককাহ দিতে হবে, তা একশো বিশ পর্যন্ত। উটের সংখ্যা এর অধিক হলে প্রত্যেক পঞ্চাশে একটি হিককাহ এবং প্রত্যেক চল্লিশে একটি বিনতু লাবূন দিতে হবে। ছাগলের ক্ষেত্রে প্রত্যেক চল্লিশটি ছাগলের জন্য একটি বকরী একশো বিশ পর্যন্ত। এর থেকে একটিও বর্ধিত হলে দুইশো পর্যন্ত দু’টি বকরী। দুই শতের অথিক হলে তিনশো পর্যন্ত তিনটি বকরী। ছাগলের সংখ্যা এর চাইতে অধিক হলে প্রত্যেক একশো’তে একটি বকরী দিতে হবে। ছাগলের সংখ্যা একশো না হলে কিছুই দিতে হবে না। যাকাত দেয়ার ভয়ে বিচ্ছিন্নকে একত্র এবং একত্রকে ভিন্ন ভিন্ন করা যাবে না। দুই শরীকের উপর যে যাকাত ধার্য হবে, তা উভয়ে সমান হারে বহন করবে। যাকাত হিসেবে অতিবৃদ্ধ অথবা দোষযুক্ত (পশু) গ্রহণ করা যাবে না। বর্ণনাকারী বলেন, যুহরী (রঃ) বলেছেন, যাকাত আদায়কারীর উচিত হলো, যাকাত আদায়ের সময় সমস্ত বকরীগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করবে। এক ভাগ নিকৃষ্ট, এক ভাগ উৎকৃষ্ট এবং এক ভাগ মধ্যম। সুতরাং আদায়কারী ‘মধ্যম’ মানের পশুই নিবে। যুহরীর বর্ণনায় গরুর যাকাত সম্বন্ধে কিছুই উল্লেখ নেই। সুফয়ান ইবনু হুসাইন (রঃ) উপরোক্ত সানাদে এ হাদীসের ভাবার্থ বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, বিনতু মাখাদ না থাকলে উবনু লাবূন দিতে হবে। এ বর্ণনায় যুহরীর কথাটি উল্লেখ নেই। ইবনু শিহাব (রঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাত সম্পর্কে যে ফরমান লিখিয়েছেন এটা সেই পান্ডুলিপি যা ‘উমার ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) পরিবারে সংরক্ষিত আছে। ইবনু শিহাব (রঃ) বলেন, সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তা আমাকে পড়িয়েছেন এবং আমি তা হুবহু মুখস্ত করি। পরবর্তীতে তা ‘উমার উবনু ‘আবদুল ‘আযীয় (রঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) এবং সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে কপি করেন। তিনি বলেন, উটের সংখ্যা একশো একুশ থেকে একশো উনত্রিশ হলে তিনটি বিনতু লাবূন দিতে হবে। একশো ত্রিশ থেকে একশো ঊনচল্লিশ হলে দু’টি বিনতু লাবূন ও একটি হিককাহ দিতে হবে। আর একশো চল্লিশ থেকে ঊনপঞ্চাশ হলে দু’টি হিককাহ ও একটি বিনতু লাবূন দিতে হবে। একশো পঞ্চাশ থেকে একশো উনষাট হলে দিতে হবে তিনটি হিক্কাহ। একশো ষাট থেকে একশো উনসত্তর পর্যন্ত তিনটি বিনতু লাবূন ও একটি হিক্কাহ দিতে হবে। একশো আশি থেকে একশো ঊননব্বই পর্যন্ত দু’টি হিক্কাহ ও দুটি বিনতু লাবূন দিতে হবে। একশো নব্বই হলে তা থেকে একশো নিরানব্বই পর্যন্ত তিনটি হিক্কাহ ও একটি বিনতু লাবূন। দুইশো হলে চারটি হিককাহ অথবা পাঁচটি বিনতু লাবূন দিতে হবে। এ উভয় বয়সের মধ্যে যেটাই পাওয়া যাবে সেটাই নেয়া হবে। আর চরে বেড়ানো ছাগল (এর যাকাত সম্বন্ধে) ইবনু শিহাব ইতিপূর্বে সূফয়ান ইবনু হুসাইনের হাদীসে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছে, যাকাত বাবদ অতিবৃদ্ধ ও দোষযুক্ত বকরী নেয়া হবে না, এবং পুরুষ জাতীয় (পাঠা)- ও না। অবশ্য যাকাত আদায়কারী প্রয়োজনে নিতে চাইলে নিতে পারে। ইমাম মালিক (রঃ) ‘উমার ইবনুল খাত্তাবের (রাঃ) উক্তিঃ “একত্রকে বিচ্ছিন্ন এবং বিচ্ছিন্নকেও একত্র করা যাবে না”। এর ব্যাখ্য হলো, দুই মালিকের পৃথক পৃথকভাবে চল্লিশটি ছাগল আছে। অতঃপর তাদের কাছে যাকাত আদায়কারী উপস্থিত হলে তারা উভয়ের পৃথক পৃথক ছাগলগুলোকে একত্র করে (তা যৌথ বলে দাবী করলো)। যাতে তাদের একটির অধিক বকরী দিতে না হয়। আর একত্রকে বিচ্ছিন্ন না করার ব্যাখ্যা হলো, যেমন দু’জন সমান অংশীদারের প্রত্যেকের একশো একটি ছাগল আছে। (হিসেব মতে, দুইশো দু’টিতে) যাকাত দিতে হয় তিনটি বকরী। কিন্তু যখন তাদের কাছে যাকাত আদায়কারী উপস্থিত হয় তখন তারা (একশো একটি করে) পৃথক করে ফেললো। ফলে উভয়কে একটি করে বকরী দিতে হলো। ইমাম মালিক (রঃ) বলেন, এর ব্যাখ্যা আমি এরূপই শুনেছি। সহীহ মাক্বতূ‘। আলী (রাঃ) যুহাইর (রঃ) বলেন, আমার ধারনা, এ হাদীস নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা প্রতি চল্লিশ দিরহামে এক দিরহাম (যাকাত) দিবে এবং দুইশো দিরহাম পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কোন যাকাত নেই। আর দুইশো দিরহাম পূর্ণ হলে তাতে পাঁচ দিরহাম দিতে হবে। এর অতিরিক্ত হলে, উপরোক্ত হিসাব অনুযায়ী দিতে হবে। ছাগলের যাকাত হলো, প্রতি চল্লিশটির জন্য একটি বকরী। বকরীর সংখ্যা ঊনচল্লিশ হলে যাকাত হিসেবে তোমার উপর কিছুই ওয়াজিব নয়। অতঃপর বকরীর হিসাব ও যাকাত যুহরীর বর্ণনানুযায়ী বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী বলেন, গরুর যাকাত হচ্ছে, প্রতি ত্রিশটি গরুর জন্য পূর্ণ এক বছর বয়সী একটি বাছুর এবং চল্লিশটির জন্য পূর্ণ দুই বছরের একটি বাছুর। তবে কৃষিকাজে নিয়োজিত পশুর যাকাত নেই। উটের যাকাতও যুহরীর বর্ণনানুরূপ দিতে হবে। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পঁচিশটি উটের জন্য পাঁচটি বকরী এবং একটিও বর্ধিত হলে পঁয়ত্রিশ পর্যন্ত একটি বিনতু মাখাদ দিতে হবে। বিনতু মাখাদ না থাকলে একটি ইবনু লাবূন দিবে। এর থেকে একটিও বৃদ্ধি পেলে ষাট পর্যন্ত গর্ভধারণ করার উপযোগী একটি হিককাহ দিতে হবে। অতঃপর যুহরীর হাদীসের বর্ণনানুরূপ। তিনি বলেনঃ যদি একটিও বর্ধিত হয় অর্থাৎ একানব্বই হয়, তা থেকে একশো বিশ পর্যন্ত গর্ভধারণ করার উপযোগী দু’টি হিককাহ দিবে। আর যাকাত দেয়ার ভয়ে একত্রকে বিচ্ছিন্ন এবং বিচ্ছিন্নকে একত্র করা যাবে না। যাকাত হিসেবে অতিবৃদ্ধ এবং দোষযুক্ত পশু গ্রহণ করা যাবে না। এবং কোন পাঠাও নেয়া যাবে না। তবে আদায়কারী নিতে চাইলে নিতে পারবে। শস্যের যাকাত হচ্ছে, ভুমি নদ-নদী অথবা বৃষ্টির পানি দ্বারা সিঞ্চিত হলে ‘উশর’ দিতে হবে (এক-দশমাংশ)। আর যেসব ভূমিতে পানিসেচ করতে হয় তাতে দিতে হবে বিশ ভাগের এক ভাগ। ‘আসিম ও হারিসের হাদীসে এটাও রয়েছে, যাকাত প্রতি বছরই দিতে হবে। যুহাইর বলেন, আমার ধারণা, প্রতি বছর একবার বলেছেন। ‘আসিমের হাদীসে রয়েছে, বিনতু মাখাদ ও ইবনু লাবূন না থাকলে দশ দিরহাম অথবা দু’টি বকরী প্রদান করতে হবে। আলী (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ হাদীসের প্রথম দিকের কিছু অংশ বর্ণনার পর বলেন, তিনি বলেছেন, তোমার কাছে দুইশো দিরহাম থাকলে এবং তা পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হলে পাঁচ দিরহাম (যাকাত) দিবে। স্বর্ণের ক্ষেত্র বিশ দীনারের কমে যাকাত নেই। বিশ দীনারের পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হলে অর্ধ দীনার দিতে হবে। এরপর যা বাড়বে তাতে উপরোক্ত হিসেবে যাকাত দিতে হবে। বর্ণনাকারী বলেন, “উপরোক্ত হিসেবে যাকাত দিতে হবে” এটা ‘আলীর (রাঃ) কথা নাকি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা আমার জানা নেই। আর পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কোন সম্পদেই যাকাত দিতে হয় না। উবনু ওয়াহব বলেন, জারীর তার বর্ণনায় বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এক বছর অতিবাহিত না হলে কোন সম্পদেই যাকাত নেই। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি ঘোড়া ও গোলামের যাকাত মাফ করেছি। কিন্তু রৌপ্যের যাকাত প্রতি চল্লিশ দিরহামে এক দিরহাম দিতে হবে এবং একশো নব্বই তোলা পর্যন্ত যাকাত নেই, যখন দুইশো পূর্ণ হবে তখন পাঁচ দিরহাম দিতে হবে। বাহ্য ইবনু হাকীম (রাঃ) হতে তার পিতা ও তার দাদার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, চারণভূমিতে বিচরণশীল উটের চল্লিশটির জন্য একটি বিনতু লাবূন যাকাত দিতে হবে এবং একটি উটকেও বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। যে ব্যক্তি সওয়াবের উদ্দেশে দিবে, উবনুল ‘আলা’ বলেন, “যে সওয়াবের জন্য দিবে, সে তাই পাবে। আর যে ব্যক্তি তা দিতে অস্বীকৃতি জানাবে, আমি তা আদায় করবোই এবং (শাস্তিস্বরূপ) তার সম্পদের অর্ধেক নিবো। কেননা এটাই আমাদের মহান রব্বের হাক্ব। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পরিবার-পরিজনের জন্য এর থেকে সামান্য পরিমাণও নেই। মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইয়ামান দেশে পাঠানোর সময় এ নির্দেশ দেন যে, গরুর (যাকাত) প্রতি ত্রিশটির জন্য পূর্ণ এক বছর বয়সী একটি এড়ে বাছুর বা বকনা বাছুর এবং প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক যিম্মী থেকে এক দীনার বা এর সম-মূল্যের কাপড়- যা ইয়ামেনে তৈরি হয় আদায় করতে হবে। মু‘আয (রাঃ) সূত্র তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ইয়ামান দেশে প্রেরণ করেন..... অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসর অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে ইয়ামান দেশের তৈরি কাপড়ের কথা উল্লেখ করেননি এবং প্রাপ্তবয়স্কদের সম্পর্কে কিছুই বলেননি। সুওয়াইদ ইবনু গাফালার (রঃ) তিনি বলেন, আমি সফর করেছি অথবা যে ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যাকাত আদায়কারীর সঙ্গে সফর করেছেন তিনি আমাকে বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে (নিয়ম ছিলো) দুগ্ধ প্রদানকারী পশু নেয়া যাবে না। বিচ্ছিন্নকে একত্র করা এবং একত্রকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। এরপর লোকেরা তাদের পশুপালকে পানি পান করানোর জন্য কূপের কাছে নিয়ে এলে আদায়কারী পানির কূপের নিকট এসে বলতেন, তোমরা তোমাদের সম্পদের যাকাত আদায় করো’। বর্ণনাকারী বলেন, তাদের এক ব্যক্তি একটি কূমাআ উষ্ট্রী নিয়ে এলো। আমি বললাম, হে আবূ সলিহ! কূমাআ কি? তিনি বললেন, উঁচু কুঁজবিশিষ্ট। বর্ণনাকারী বলেন, (আদায়কারী সেটা গ্রহণে অস্বকৃতি জানালে) যাকাতদাতা বললো, আমি আকাঙ্খা করেছি যে, আপনি আমার সর্বোৎকৃষ্ট উটটি গ্রহন করুন। বর্ণনাকরী বলেন, আদায়কারী তা গ্রহণ না করায় সে ওটার চেয়ে নিকৃষ্ট মানের একটি উটে লাগাম ধরে নিয়ে এলা কিন্তু তিনি এটাও গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালে পরে ওটার চাইতে আরো নিকৃষ্ট মানের একটি উট লাগাম ধরে নিয়ে আসেন এবং তিনি তা গ্রহণ করলেন। অতঃপর বললেন, আমি তা গ্রহণে এজন্য ভয় করছি যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে একথা না বলেন যে, এ ব্যক্তির তার উটের উপর তোমাকে স্বাধীনতা দেয়ার তুমি তার উত্তম সম্পদটিই নিয়ে এসেছো। সুয়াইদ ইবনু গাফালাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যাকাত আদায়কারী আমাদের নিকট আসলে আমি তার হাত ধরে মুসাফাহা করি। অতঃপর আমি তার কাছে যাকাত সম্পর্কিত যে নির্দেশনামা ছিলো তাতে এ বিষয়টি পাঠ করেছিঃ যাকাত আদায়ের ভয়ে বিচ্ছিন্নকে একত্র এবং একত্রকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। তবে তিনি এ কথা বর্ণনা করেননি যে, ‘দুদ্ধ দানকারী পশু’ (নেয়া যাবে না)। মুসলিম ইবনু শু‘বাহ (রঃ) নাফি’ ইবনু আলক্বামাহ (রঃ) আমার পিতাকে নিজ গ্রোত্রপ্রধান নিযুক্ত করে তাদের কাছ থেকে যাকাত আদায়ের নির্দেশ দেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার পিতা আমাকে তাদের এক গোষ্ঠীর কাছে প্রেরণ করেন। অতঃপর আমি সি‘র ইবনু দায়সাম নামক এক বৃদ্ধের কাছে এসে বললাম, আমার পিতা আমাকে আপনার কাছে যাকাত উসূল করতে পাঠিয়েছেন। তিনি বললেন, হে ভাতিজা! তুমি কিভাবে নিবে? আমি বললাম, আমার বাছাই করবো, আমরা বকরীর বাঁট দেখে যাচাই করবো। তিনি বললেন, হে ভাতিজা! আমি তোমাকে একটি হাদীস বলছি। রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে একদা আমি কোন এক উপত্যকায় আমার মেষপাল চরাচ্ছিলাম। এমন সময় দুইজন লোক একটি উটে চড়ে আমার নিকট এসে বললো, আমরা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতিনিধি হিসাবে আপনার মেষপালের যাকাত উসূল করতে আপনার কাছে প্রেরিত হয়েছি। আমি বললাম, আমি কি প্রদান করবো? তারা বলেন, বকরী। সুতরাং আমি এমন একটি বিশেষ বকরী দেয়ার মনস্থ করলাম, সেটির বাট দুদ্ধে ভরতি, খুব মোটতাজা চর্বিওয়ালা। আমি তাদেরকে সেটা বের করে দিলে তারা বললেন এটা তো জোড়াওয়ালা (বাচ্চাওয়ালা) বকরী। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে জোড়াওয়ালা বকরী নিতে বারণ করেছেন। আমি বললাম, তাহলে আপনারা কেমন বকরী নিবেন? তারা বললেন, এক বছর কিংবা দুই বছর বয়সী বকরী। তিনি বলেন, তখন আমি একটি ‘সু‘তাত্’ বকরীর দেয়ার মনস্থ করলাম। সু‘তাত্ ঐ বকরীকে বলে যা কোনো বাচ্চা দেয়নি, কিন্তু গর্ভধারণের উপযুক্ত হয়েছে। সেটি এনে তাদেরকে দিলে তারা বললেন, হাঁ, আমরা এটি নিতে পারি। অতঃপর তারা বকরীটিকে তাদের উটের পিঠে তুলে নিয়ে চলে যায়।[১৫৮১] যাকারিয়্যাহ ইবনু ইসহাক্ব (রঃ) তার সানাদে উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত। বর্ণনাকরীর মুসলিম ইবনু শু‘বাহ তার বর্ণনায় বলেন, শাফি’ বলা হয় গর্ভবতী বকরীকে। দুর্বল। গাদিরাহ ক্বায়িসের ‘আবদুল্লাহ ইবনু মু‘আবিয়াহ আল-গাদিরী সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি তিনটি কাজ করেছে সে ঈমানের স্বাদ পেয়েছে। (এক) যে এক আল্লাহ ‘ইবাদাত করে। (দুই) এ বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। (তিন) যে স্বতঃস্ফূর্ত মনে নিঃসঙ্কোচে প্রতি বছর তার মালের যাকাত দেয়। বৃদ্ধ বয়সের রোগগ্রস্থ, ত্রুটিপূর্ণ ও নিকৃষ্টি মাল যাকাত দেয় না, বরং মধ্যম মানের যাকাত দিয়ে থাকে। কেননা আল্লাহ তোমাদের উৎকৃষ্ট সম্পদ চান না এবং তোমাদের নিকৃষ্ট দেয়ারও নিদের্শ করেন না। সহীহ। উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে যাকাত আদায়কারী হিসেবে পাঠালেন। অতঃপর আমি এক ব্যক্তির নিকট উপস্থিত হলে সে তার মাল (উট) একত্র করলো। আমি দেখলাম যে, তার উপর একটি বিনতু মাখাদ ফার্য হয়েছে। সুতরাং আমি তাকে বললাম, একটি বিনতু মাখাদ দিন। কেননা তোমার যাকাত সেটাই। সে বললো, এর এতে দুগ্ধও নেই এবং এটি বাহনের উপযোগীও নয়, বরং এর পরিবর্তে আমার এই বড় মোটতাজা যুবতী উটনী নিন। আমি বললাম, আমি এটা নিতে পারবো না, এরূপ নিতে আমাকে আদেশ করা হয়নি। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো তোমার নিকটেই আছেন। তুমি আমাকে যা বলেছো, তা ইচ্ছে হলে তাঁকে বলে দেখতে পারো। তিনি এটা গ্রহণ করলে আমি নিবো, আর প্রতাখ্যান করলে আমিও প্রত্যাখ্যান করবো। সে বললো, আমি তাই করবো। অতঃপর সে আমাকে নিয়ে উক্ত উষ্ট্রী সহ রওয়ানা হলো। অবশেষে আমার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সম্মুখে উপস্থিত হই। লোকটি বললো, হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতিনিধি আমার কাছে আমার সম্পদের যাকাত নিতে এসেছে। আল্লাহর শপথ! এর পূর্বে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বয়ং কিংবা তাঁর প্রতিনিধি কখনো আমার সম্পদের যাকাত নিতে আসেননি। কাজেই আমি আমার সমস্ত মাল তাঁর সম্মুখে একত্র করেছি। কিন্তু তিনি বলেন, আমার মালের উপর নাকি একটি মাখাদ ফার্য। অথচ তাতে দুগ্ধও নেই বা আরোহণেরও অনুপযোগী। তাই আমি একটি বড় ও মোটতাজা যুবতী উষ্ট্রী পেশ করেছি। কিন্তু তিনি এটা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। আর সেটি এটাই, আমি আপনার কাছে নিয়ে এসেছি। হে আল্লাহর রসূল! এটা গ্রহণ করুন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, আদায়কারী যা বলেছে তাই তোমার উপর ফার্য। তবে তুমি স্বেচ্ছায় অতিরিক্তি দিলে আল্লাহ তোমাকে এর প্রতিদান দিবেন এবং আমরাও সেটা তোমার থেকে গ্রহন করলাম। সে বললো, এটাই সেই উষ্ট্রী হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনার নিকট নিয়ে এসেছি, গ্রহণ করুন। উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা গ্রহণ করতে আদেশ দিলেন এবং তার ও তার সম্পদের বরকতের জন্য দু‘আ করলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মূ‘আয (রাঃ) -কে ইয়ামানে প্রেরণকালে বললেন, তিমি এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছো যারা আহলি কিতাব। তুমি (সর্বপ্রথম) তাদেরকে এ সাক্ষ্য দিতে আহবান করবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। এবং আমি (মুহাম্মাদ) আল্লাহ রসূল। তারা তোমার এ কথা মেনে নিলে তাদেরকে অবহিত করবে, আল্লাহ তাদের উপর তাদের মালের যাকাত প্রদান ফার্য করেছেন, যা তাদের ধনীদের কাছ থেকে নেয়া হবে এবং তাদের গরীবদের মাঝে বিতরণ করা হবে। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদের উত্তম সম্পদগুলো গ্রহণ করা হতে বিরত থাকবে। আর মযলুমের বদদু‘আকে ভয় করবে। কেননা তার দু‘আ ও আল্লাহর মাঝে কোনো প্রতিবন্ধক নেই। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যাকাত সংগ্রহে সীমালংঘনকারী ঐ ব্যক্তির মতই যে যাকাত দিতে অস্বীকার করে।

【6】

যাকাত আদায়কারীর সন্তুষ্টি অর্জন সম্পর্কে

বাশীর ইবনুল খাসাসিয়্যাহ (রাঃ) বর্ণনাকারী ইবনু ‘উবাইদ তার বর্ণনায় বলেন, আসলে তার নাম বাশীর ছিলো না, বরং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নাম বাশীর রাখেন। তিনি বলেন, আমরা বললাম, যাকাত আদায়কারীরা আমাদের উপর সীমালঙ্ঘন করেন (ফারযের অধিক নিয়ে যান)। কাজেই তারা যে পরিমাণ মাল আমাদের উপর সীমালঙ্ঘন করেন ঐ পরিমাণ মাল কি আমরা গোপন করবো? তিনি বলেন, না। আইয়ূব (রহঃ) উপরোক্ত হাদীসের ভাবার্থ একই সানাদে বর্ণিত হয়েছে। তবে তাতে রয়েছেঃ আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! যাকাত আদায়কারীগণ সীমালঙ্ঘন করে। [১৫৮৭] দুর্বল। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এটি ‘আবদুর রাযযাক্ব (রহঃ) মা’মার হতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসরূপে বর্ণনা করেছেন। আবদুর রহমান ইবনু জাবির ইবুন আতীক (রহঃ) হতে তার পিতার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অচিরেই তোমাদের কাছে এমন যাকাত আদায়কারী দল আসবে, যাদের আচরণে তোমরা অসন্তুষ্ট হবে। তারা এলে তোমরা তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাবে এবং যা গ্রহণ করতে চায়, তাদের মাঝে তা উন্মুক্ত করে দিবে। তারা ন্যায়নীতি অনুসরণ করলে তাদের নিজেদের জন্যই কল্যাণকর হবে। আর যদি যুলুম করে তাহলে এর পাপ তাদেরই উপর বর্তাবে। তোমরা তাদের সন্তুষ্ট করবে, কেননা তোমাদের যাকাতের পরিপূর্ণতা তাদের সন্তুষিটর মধ্যেই নিহিত। তাদের উচিত হলো, তারা যেন তোমাদের জন্য দু’আ করে। [১৫৮৮] জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রা.) তিনি বলেন, একদা কতিপয় বেদুঈন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, যাকাত আদায়কারীগণ আমাদের কাছে এসে আমাদের উপর যুলুম করেন। বর্ণনাকারী বলেন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের যাকাত আদায়কারীদেরকে তোমরা সন্তুষ্ট রাখবে। তারা বললো, হে আল্লাহর রসূল! তারা আমাদের উপর যুলুম করলেও? তিনি বললেন, তোমাদের যাকাত আদায়কারীদেরকে সন্তুষ্ট রাখবে। বর্ণনাকারী ‘উসমানের বর্ণনায় এটাও আছেঃ যদিও তারা তোমাদের উপর যুলুম করে। বর্ণনাকারী আবূ কামিল তার হাদীসে বলেন, জারীর (রাঃ) বলেছেন, আমি যখন থেকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একথা শুনেছি, তখন থেকে প্রত্যেক যাকাত আদায়কারী আমার উপর সন্তুষ্ট হয়েই ফিরেছেন।

【7】

যাকাত প্রদানকারীর জন্য যাকাত আদায়কারীর দুয়া করা

আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রা.) তিনি বলেন, আমার পিতা ছিলেন গাছের নিচে বাইয়াতে রিদওয়ান গ্রহণকারীদের একজন। কোন সম্প্রদায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট তাদের যাকাত নিয়ে এলে তিনি বলতেন, হে আল্লাহ! অমুক পরিবারের উপর রহমাত বর্ষণ করুন। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমার পিতা তাঁর কাছে তার সদাক্বাহ নিয়ে এলে তিনি বলেন, হে আল্লাহ! আবূ আওফার পরিবারের উপর রহমাত বর্ষণ করুন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【8】

উটের বয়স সম্পর্কে

ইমাম আবু দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি আর-রিয়াশী, আবূ হাতিম ও অন্যান্যদের কাছে শুনেছি এবং নাদর ইবনু শুমাইল ও আবূ ‘উবাইদের কিতাবে দেখেছি। তাদের দু’জনের একজন কর্তৃক আলোচ্য বিষয়টি উল্লেখ হয়েছে। তারা বলেছেন, গর্ভস্থ ভ্রুণের নাম ‘আল-হুয়ার’। নবজাত বাচ্চার নাম ‘আল-ফাসিল’। এক বছর হতে দু’বছরে পদার্পণকারী হচ্ছে ‘বিনতু মাখাদ’। তৃতীয় বছরে পদার্পণকারী ‘ইবনাতু লাবূন’। তিন বছর হতে চতুর্থ বছর পূর্ণ হলে ‘হিককাহ’। কারণ তখন তা আরোহণ এবং প্রজননের উপযোগী হয়। আর ছয় বছর পূর্ণ হওয়ার আগে পুরুষ উট বালেগ হয় না। হিককহকে ‘ত্বরুক্বাতুল ফাহল’ বলার কারণ হলো পুরুষ উট তাকে পাল দেয়। চতুর্থ বছর শেষে পঞ্চম বছরে পদার্পণকারীকে ‘জাযাআহ’ আবে। যষ্ঠ বছরে পদার্পণ করলে এবং সামনে দুটি দাঁত পড়ে গেলে তা হয় ‘সানি’। এ নাম ষষ্ঠ বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকে। অতঃপর সপ্তম বছর হলে উটের মান হয় ‘রুবাঈ’ এবং উষ্ট্রীর নাম হয় ‘রুবাঈয়াহ’, সপ্তম বছর শেষ হওয়া পর্যন্ত এ নাম বহাল থাকে। অতঃপর নবম বছরে প্রবেশ করলে এবং পাশের ধারালো দাঁত প্রকাশ হলে এ দাঁত প্রকাশ হওয়ার কারণে তাকে বলা হয় ‘বাযিল’। সবশেষে দশম বছরে পদার্পণ করলে তার নাম ‘মাখলাফ’। এরপর তার আর কোন নাম নেই। অবশ্য (এরপর) এক বর্ষীয়া ‘বাযিল’, দুই বর্ষীয়া ‘বাযিল’ এবং এক এক বর্ষীয়া ‘মাখলাফ’, দুই বর্ষীয়া মাখলাফ এবং তিন বর্ষীয়া ‘মাখলাফ’ এভাবে পাঁচ বছর পর্যন্ত। খুলফাহ হচ্ছে গর্ভধারী উষ্ট্রী। আবূ হাতিম (রহঃ) বলেন, ‘আল-জাযু’আহ শব্দটি কালের একটি সময়কে বুঝায়, এর অর্থ দাঁত নয়। উটের বয়সের ব্যবধান ঘটে সাহাইল তারকার উদয়ের সাথে। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, কবি আর-রিয়াশী আমাদের নিকট তা কয়েক লাইন কবিতার মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেনঃ “রাতের প্রথম প্রহরে যখন সুহাইল তারকা উদিত হয় তখন ইবনু লাবূন হয় হিককাহ আর হিককাহ হয় জাযাআহ। তারপর হুবা’ ছাড়া উটের বয়স আর গণনা করা হয় না। সুহাইল তারকার উদয়ের সাথে জন্মগ্রহণকারী উটকে হুবা’ বলা হয়।

【9】

যে স্থানে সম্পদ সমূহের যাকাত গ্রহণ করবে

আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দূরে অবস্থান করে যাকাত আদায় করবে না এবং যাকাতের মালও দুরে সরিয়ে নিবে না। যাকাত দাতাদের বসতি থেকেই যাকাত আদায় করতে হবে। মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ) লা জালাবা ওয়া লা জানাবা’-এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, চতুষ্পদ জন্তুর যাকাত তার অবস্থানস্থল থেকেই নিতে হবে। কোন অবস্থাতেই তা আদায়কারীর নিকট টেনে নিতে বাধ্য করা যাবে না এবং ‘ওয়া লা জানাবা’-ও একই রূপ। মালের অধিকারী তা আদায়কারীর কাছে হাঁকিয়ে নিবে না। বর্ণনাকারী বলেন, যাকাত আদায়কারী যাকাত দাতার নিকট থেকে দূরে অবস্থান করবে না, বরং মালের স্থানে থেকেই যাকাত নেয়া হবে।

【10】

যাকাত দিয়ে ঐ মাল পুনরায় ক্রয় করা

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রা.) একদা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এক ব্যক্তিকে জিহাদের উদ্দেশে একটি ঘোড়া দান করেন। পরে তিনি ঐ ঘোড়াটি বিক্রি হতে দেখে তা কেনার ইচ্ছা করলেন এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি তা কিনবে না এবং তোমার সদাক্বাহ তুমি ফিরিয়ে নিবে না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【11】

দাস-দাসীর যাকাত সম্পর্কে

আবূ হুরাইরাহ (রা.) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ঘোড়া ও দাস-দাসীতে কোন যাকাত নেই। কিন্তু দাস-দাসীর পক্ষ হতে সদাক্বাতুল ফিতর (ফিতরাহ) দিতে হবে। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মুসলিমদের উপর তার দাস-দাসী ও তার ঘোড়ার কোন যাকাত নেই। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【12】

ফসলের যাকাত সম্পর্কে

সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে তার পিতার তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ভূমি বৃষ্টি, নদ-নদী ও ঝর্ণার পানি দ্বারা সিঞ্চিত হয় অথবা যে ভূমিতে তলদেশে থেকে আপনা আপনিই পানি সিঞ্চত হয়, তাতে ‘উশর’ দেয়া ওয়াজিব (অর্থাৎ উৎপাদিত ফসলের এক-দশমাংশ যাকাত দিবে)। আর যে ভূমি উষ্ট্রী, বালতি কিংবা সেচ যন্ত্র দিয়ে সিঞ্চন করা হয়, তার যাকাত হলো, উশরের অর্ধেক (অর্থাৎ বিশ ভাগে এক ভাগ)। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ভূমি নদ-নদী ও ঝর্ণার পানি দ্বারা সিঞ্চিত হয়, তার যাকাত হলো, এক-দশমাংশ। আর যে ভূমি উষ্ট্রী দ্বারা (অন্য উপায়ে) সিঞ্চিত হয়, তার যাকাত বিশ ভাগের এক ভাগ। সহীহঃ মুসলিম। ওয়াকী’ (রহঃ) কাবূস-কেই বা’ল ভূমি বলা হয়। যে ভূমিতে বৃষ্টির পানির সাহায্যে ফসল জন্মায়, তাই ‘কাবূস’। ইবনুল আসওয়াদ (রহঃ) বলেন, ইয়াহইয়া ইবনু আদাম (রহঃ) বলেছেন, আমি আবূ ইয়াস আল-আসাদীকে ‘বা’ল’ (ভূমি) সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি দ্বারা সিঞ্চিত ভূমি। মু’আয ইবনু জাবাল (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে ইয়ামানে প্রেরণের সময় বললেন, ফসল থেকে ফসল, বকরীপাল থেকে বকরী, উটপাল থেকে উষ্ট্রী, গরুর পাল থেকে গাভী যাকাত বাবদ গ্রহণ করবে। [১৫৯৯] দুর্বল। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি মিসরের একটি শসা মেপেছি তের বিঘত লম্বা এবং একটি তরমুজ বা লেবু দেখেছি, যা দুই টুকরা করে একটি উষ্ট্রীর উপ্ দু’টি বোঝার মত সমান ভারী অবস্থায় ছিল।

【13】

মধুর যাকাত

আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদা মুত্‌য়ান গোত্রের হিলাল নামক এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট তার মুধর ‘উশর’ নিয়ে এলেন এবং তাঁর নিকট ‘সালাবাহ্‌’ নামক একটি সমতলভূমি বন্দোবস্ত চাইলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে উক্ত ভূমিটি বন্দোবস্ত দিলেন। পরবর্তীতে যখন ‘উমার (রাঃ) খলীফা হন, তখন (এ এলাকার আমীর) সুফয়ান ইবনু ওয়াহাব ‘উমার ইবনুল খাত্তাবকে (রাঃ) ঐ ভূমির বিষয়ে চিঠি লিখে জানতে চাইলেন। উত্তরে ‘উমার (রাঃ) তাকে লিখেনঃ তিনি (হিলাল) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট তার মধুর যে ‘উশর’ দিতেন তিনি যদি তা তোমাকেও দেন তাহলে ‘সালাবা’ ওয়াদীতে তার বন্দোবস্ত বহাল রাখবে। অন্যথায় তা বনের মৌমাছি হিসেবে গণ্য হবে এবং যে কেউ তার মধু খেতে পারবে। আমর ইবনু শু’আইব (রা.) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার ‘শাবাবাহ’ হচ্ছে ফাহ্‌ম গোত্রের উপগোত্র। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্বের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী বলেন, (মধুর যাকাত হচ্ছে) প্রত্যেক দশ মশকের জন্য এক মশক। সুফয়ান ইবনু ‘আবদুল্লাহ আস-সাকাফী তাদেরকে দু’টি সমতলভূমি বন্দোবস্ত দিয়েছিলেন। তারা তাকে (মধুর) যাকাত সেভাবেই দিতেন যেমনটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দিতেন। তিনি তাদের দু’টি সমভূমির বন্দোবস্ত বহাল রেখেছিলেন। [১৬০১] ‘আমার ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার ফাহ্‌ম গোত্রের উপগোত্র... অতঃপর মুগীরাহ্‌র হাদীসের অনুরূপ। তিনি বলেন, (মধুর যাকাত) দশ মশকে এক মশক দেয়া ওয়াজিব। তিনি আরো বলেন, সমভূমি দু’টি তাদের মালিকানায় ছিল। [১৬০২]

【14】

অনুমানে আঙ্গুরের পরিমাণ নির্ধারণ করা

আত্তাব ইবনু আসীদ (রা.) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আঙ্গুরের পরিমাণ নির্ধারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন, যেমন খেজুরের পরিমাণ নির্ধারণ হয় এবং আঙ্গুরের যাকাত গ্রহণ করবে কিশমিশ দ্বারা, যেমন খেজুরের যাকাত খুরমা দ্বারা নেয়া হয়। [১৬০৩] ইবনু শিহাব (রহঃ) পূর্বোক্ত সানাদে এ হাদীসের ভাবার্থ বর্ণিত হয়েছে। [১৬০৪]

【15】

গাছের ফলের পরিমাণ অনুমানে নির্ধারণ করা

আবদুর রহমান ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা সাহল ইবনু আবূ হাসমাহ (রাঃ) আমাদের মাজলিসে এসে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেনঃ যখন অনুমানে পরিমাণ নির্ধারণ করবে, তখন তা হতে এক-তৃতীয়াংশ বাদ দিবে। এক-তৃতীয়াংশ বাদ দিতে অসম্মত হলে এক-চতুর্থাংশ ছেড়ে দিবে। [১৬০৫]

【16】

খেজুরের পরিমাণ কখন অনুমান করবে?

আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি খায়বারের আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ)-কে খায়বারের ইহুদীদের কাছে প্রেরণ করলেন। তিনি গাছের খেজুর অনুমানে নির্ধারণ করতেন- যখন তা পুষ্ট হতো, তবে খাওয়ার উপযোগী হওয়ার পূর্বে। [১৬০৬]

【17】

কোন ধরনের ফল যাকাত হিসেবে গ্রহন জায়েয নয়

আবূ উমামাহ ইবনু সাহল (রহঃ) হতে তার পিতার তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাত হিসেবে জু’রূর ও হুবাইক বর্ণের খেজুর গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেন, এগুলো মাদীনাহ্‌র দু’টি বিশেষ বর্ণের খেজুর। ‘আওফ ইবনু মালিক (রাঃ) একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে আমাদের নিকট প্রবেশ করলেন, তাঁর হাতে একটি লাঠি ছিলো। মাসজিদে আমাদের এক ব্যক্তি নিকৃষ্ট মানের এক গুচ্ছ খেজুর ঝুলিয়ে রেখেছিল। তিনি ঐ খেজুর গুচ্ছে লাঠি দিয়ে আঘাত করে বলেনঃ এর সদাক্বাহ্‌কারী ইচ্ছে করলে এর চাইতে উত্তমটি সদাক্বাহ করতে পারতো। তিনি আরো বলেনঃ এর সদাক্বাহকারীকে ক্বিয়ামাতের দিন নিকৃষ্ট ফল খেতে হবে।[১৬০৮]

【18】

যাকাতুল ফিতর (ফিতরাহ)

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সদাক্বাতুল ফিতর ফরয করেছেন- অশ্লীল কথা ও বেহুদা কাজ হতে (রমাযানের) সওমকে পবিত্র করতে এবং মিসকীনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য। যে ব্যক্তি (ঈদের) সলাতের পূর্বে তা আদায় করে সেটা কবুল সদাক্বাহ গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি সলাতের পরে আদায় করে, তা সাধারণ দান হিসেবে গৃহীত হবে। [১৬০৯]

【19】

ফিতরাহ প্রদানের সময় ?

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেরা সলাতের উদ্দেশে (ঈদগাহে) যাওয়ার পূর্বেই আমাদেরকে সদাক্বাতুল ফিতর প্রদান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। নাফি’ (রহঃ) বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) ঈদের একদিন ও দুইদিন পূর্বেই তা আদায় করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম ইবনু ‘উমারের কর্ম বাদে। অনুরূপ বুখারীতে।

【20】

সদাক্বাতুল ফিতর কি পরিমাণ দিতে হবে ?

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সদাক্বাতুল ফিতর ফরয করেছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামাহ (রহঃ) তার বর্ণনায় বলেন, ইমাম মালিক (রহঃ) তাকে পাঠ করে শুনিয়েছেন যে, প্রত্যেক স্বাধীন অথবা গোলাম, পুরুষ কিংবা নারী নির্বিশেষে সকল মুসলিমের উপর মাথাপিছু এক সা’ খেজুর বা যব রমাযানের ফিতরাহ ওয়াজিব। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাতুল ফিতর এক সা’ ফরয করেছেন। অতঃপর মালিকের হাদীসের ভাবার্থ বর্ণনা করেন। তাতে এ কথাটিও আছেঃ ছোট এবং বড় সকলের পক্ষ হতেই। তিনি লোকদের (ঈদের) সলাতে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, এ হাদীস ‘আবদুল্লাহ আল-উমারী (রহঃ) নাফি’ (রহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তাতে রয়েছেঃ ‘প্রত্যেক মুসলিমের উপর’। আল-জুমাহী ‘উবায়দুল্লাহ হতে, তিনি নাফি’ হতে বর্ণনা করেছেন, তাতে ‘মুসলিমের পক্ষ হতে, কথাটি উল্লেখ নেই। সহীহঃ বুখারী। আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বাধীন ও গোলাম, ছোট ও বড়- এদের উপর সদাক্বাতুল ফিতর এক সা’ ফরয করেছেন। বর্ণনাকারী মূসা “পুরুষ ও নারীর” কথাটি বৃদ্ধি করেছেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, আইয়ূব ও ‘আবদুল্লাহ আল-‘উমারী তাদের হাদীসে নাফি’ হতে “পুরুষ ও নারী” কথাটি বর্ণনা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে লোকেরা মাথাপিছু এক সা’ যব কিংবা খেজুর অথবা খোসাবিহীন গম অথবা কিসমিস সদাক্বাতুল ফিতর দিতো। নাফি’ (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ‘উমার (রাঃ) খলীফা নিযুক্ত হওয়ার পর পর্যাপ্ত পরিমাণে গম উৎপাদিত হলে ‘উমার (রাঃ) ঐ বস্তুগুলোর এক সা’ এর স্থলে অর্ধ সা’ গম নির্ধারণ করলেন। [১৬১৪] নাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, পরবর্তীতে লোকেরা (‘উমারের নির্ধারিত) অর্ধ সা’ গম দিতে থাকলো। নাফি’ (রহঃ) বলেন, ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) নিজে খেজুর (ফিতরাহ) দিতেন। অতঃপর একবার মাদীনাহতে খেজুরের আকাল হওয়ায় তিনি যব দিয়ে (ফিতরাহ) দেন। সহীহঃ বুখারী সংক্ষেপ। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, যতদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে ছিলেন, আমরা ফিতরাহ দিতাম- প্রত্যেক ছোট, বড়, স্বাধীন ও গোলামের পক্ষ হতে মাথাপিছু এক সা’ খাদ্য এক সা’ পনির অথবা এক সা’ যব অথবা এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ কিসমিস। আমরা এ নিয়মেই ফিতরাহ দিয়ে আসছিলাম। অবশেষে মু’আবিয়াহ (রাঃ) হাজ্জ কিংবা ‘উমরাহ্‌ করতে এসে মিম্বারের আরোহন করে ভাষণ দানকালে লোকদেরকে বললেন, আমার মতে সিরিয়ার দুই মুদ্দ গম এক সা’ খেজুরের সমান। ফলে লোকেরা তাই গ্রহণ করলো। কিন্তু আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি যত দিন বেঁচে থাকি সর্বদা এক সা’ ফিতরাহই দিবো। সহীহঃ মুসলিম। মুসাদ্দাদ হতে ইসমাঈল সূত্র হাদীসে গমের কথাটি উল্লেখ নেই। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মু‘আবিয়াহ ইবনু হিমাম এ হাদীসে আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে অর্ধ সা’ গমের কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এটা মু‘আবিয়াহ ইবনু হিশাম অথবা তার সূত্রে বর্ণনাকারীর অনুমান মাত্র।[১৬১৭] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সর্বদা এক সা’ ফিতরাহই দিবো। কেননা আমার রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে এক সা’ খেজুর বা এক সা’ যব কিংবা এক সা’ কিসমিস দিতাম। এটা ইয়াহইয়া বর্ণিত হাদীস। সুফয়ান বর্ধিত করেনঃ অথবা এক সা’ আটা। ইমাম হামিদ (রহঃ) বরেন, মুহাদ্দিসগণ এ বাক্যটি গ্রহণ করেননি। পরবর্তীতে সুফয়ান এ কথাটি পরিহার করেছেন। দুর্বল। ইমাম আবূ দাঈদ (রহঃ) বলেন, আসলে এ বর্ধিত কথাটি সুফয়ান ইবনু ‘উয়াইনার অনুমান।

【21】

অর্ধ সা’ গম ফিতরাহ দেয়ার বর্ণনা

আবদুল্লাহ ইবনু আবূ সু’আইর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ছোট, বড়, স্বাধীন, গোলাম, পুরুষ অথবা নারী প্রত্যেক দুইজনের উপর এক সা’ গম (ফিতরাহ) নির্ধারিত। আল্লাহ তোমাদের ধনীদেরকে এ দ্বারা পবিত্র করবেন এবং তোমাদের দরিদ্রদেরকে আল্লাহ তাদের দানের চাইতে অধিক দিবেন। সুলায়মান তার বর্ণনায় ‘ধনী ও দরিদ্র’ শব্দ বৃদ্ধি করেছেন। সা‘লাবাহ ইবনু সু‘আইর (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে ভাষণ দানকালে নির্দেশ দিলেন, ফিতরাহ মাথাপিছু এক সা’ যব। ‘আলী ইবনুল হাসান তার বর্ণনায় বলেন, অথবা প্রতি দুইজনে এক সা’ গম। অতঃপর উভয়ের বর্ণনা একই রকমঃ ‘প্রত্যেক ছোট, বড়, স্বাধীন এবং গোলামের পক্ষ হতে আদায় করতে হবে। ইবনু শিহাব ‘আবদুল্লাহ ইবনু সা‘লাবাহ ও আহমাদ ইবনু সলিহ তার সাথে আল-আদাবী অর্থাৎ আল-‘উযরী বলেছেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দুই দিন পূর্বে লোকদের উদ্দেশে বক্তৃতা দিলেন। অতঃপর মুকরীর (‘আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদের) হাদীসের অনুরূপ। হাসান বসরী (রঃ) একদা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রমাযানের শেষভাগে বাসরাহতে মিম্বারে ভাষন দিতে গিয়ে বলেন, তোমরা তোমাদের সওমের সদাক্বাহ প্রদান করো। লোকেরা হয়ত বিষয়টি অবগত ছিল না। তিনি বললেন, এখানে মাদীনাহবাসী কেউ আছে কি? তোমরা তোমাদের ভাইদের কাছে গিয়ে তাদেরকে এ বিষয়ে শিক্ষা দাও। কেননা তারা (ফিতরাহ সম্পর্কে) অজ্ঞ। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিতরাহ নির্ধারণ করছেন মাথাপিছু এক সা’ খেজুর বা যব বা অর্ধ সা’ গম স্বাধীন কিংবা গোলাম, পুরুষ অথবা নারী, ছোট অথবা বড়- সকলের পক্ষ হতে। পরবর্তীতে ‘আলী (রাঃ) বাসরাহতে এসে জিনিসপত্রের দাম খুবই কম দেখে বললেন, আল্লাহ তোমাদেরকে প্রাচুর্য দান করেছেন। সুতরাং তোমরা প্রত্যেক বস্তু হতে এক সা‘ প্রদান করো (এটাই ভাল হয়)। হুমাইদ আত-তাবীল (রঃ) বলেন, হাসান বাসরীর মতে, কেবল সওম পালনকারীর উপর রমাযানের ফিতরাহ দেয়া ওয়াজিব।

【22】

অবিলম্বে যাকাত প্রদান

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকাত আদায়ের জন্য ‘ইমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) -কে প্রেরণ করেন। (তিনি ফিরে এসে বললেন) ইবনু জামীল, খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ ও ‘আব্বাস (রাঃ) যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ইবনু জামীলের আপত্তি করার তেমন কোন কারণ নেই। ইতিপূর্বে সে গরীব ছিলো কিন্তু এখন মহান আল্লাহ তাকে ধনী বানিয়েছেন। আর খালিদের উপর তোমরা (যাকাত চেয়ে) যুলুম করেছো। কেননা সে তার লৌহবর্ম ও যুদ্ধ-সরঞ্জামাদি আল্লাহর পথে ওয়াক্ফ করে দিয়েছে। আর ‘আব্বাস! রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাচা, যার যাকাত ও অনুরূপ খরচের ভার আমাকে বহন করতে হবে। অতঃপর তিনি বললেনঃ (হে ‘উমার!) তুমি কি জানো না, কোন ব্যক্তির চাচা পিতার সমতুল্য? সহীহঃ মুসলিম। বুখারীতে তার এ কথা বাদেঃ “তুমি কি জানো না, কোন ব্যক্তির চাচা তার পিতার সমতুল্য।” এবং তিনি বলেছেনঃ (….আরবী), আর এটাই প্রাধান্যযোগ্য। আলী (রাঃ) একদা ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আগাম যাকাত দেয়ার আবেদন করলে তিনি তাকে এ ব্যাপারে অনুমতি দেন।

【23】

এক শহর হতে অন্য শহরে যাকাত স্থানান্তর করা সম্পর্কে

ইবরাহীম ইবনু ‘আত্বা (রাঃ) হতে তার পিতার যিয়াদ কিংবা অন্য কোনো শাসক ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ)–কে যাকাত আদায়ের উদ্দেশে প্রেরণ করেন। অতঃপর তিনি ফিরে এলে শাসক তাকে জিজ্ঞেস করেন, (যাকাতের) মাল কোথায়? তিনি বললেন, আপনি আমাকে যে মাল নিয়ে আসার জন্য পাঠিয়েছেন তা আমার এমন স্থান হতে আদায় করেছি, যেখান থেকে আমার রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে আদায় করতাম এবং তা এমন খাতে ব্যয় করেছি, যেখানে আমরা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে ব্যয় করতাম।

【24】

কাকে যাকাত দিবে এবং ধনী কাকে বলে?

আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি পর্যাপ্ত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষা করে, সে ক্বিয়ামাতের দিন তার মুখমন্ডলে অসংখ্য যখম, নখের আঁচড় ও ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উপস্থিত হবে। কেউ জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! সম্পদশালী কে? তিনি বললেনঃ পঞ্চাশ দিরহাম অথবা এ মূল্যের স্বর্ণ (যার আছে)।১৬২৬ 'আত্বা ইবনু ইয়াসার হতে বনী আসাদের এক ব্যক্তির সুত্র তিনি বলেন, একদা আমি ও আমার পরিবার-পরিজন বাকী’ আল-গার্কাদ (ক্ববরস্থানে) যাত্রাবিরতী করি। আমার স্ত্রী বললো, আপনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে গিয়ে আমাদের আহারের জন্য কিছু খাবার চান। পরিবারের প্রত্যেকেই তাদের প্রযোজন বর্ণনা করলো। অতঃপর আমি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে গিয়ে দেখি, এক লোক তাঁর নিকট কিছু চাইছে। আর রসূলুল্লাহ বললেন, আমার কাছে তোমাকে দেয়ার মতো কিছু নাই। অতঃপর লোকটি রাগান্বিত অবস্থায় একথা বলতে বলতে চলে গেলো যে, আমার জীবনের শপথ! আপনি কেবল আপনার পছন্দের লোককেই দিয়ে থাকেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ ব্যক্তি আমার উপর এ জন্যই ক্ষুদ্ধ হয়েছে যে, আমি তাকে দিতে পারলাম না। তোমাদের যে কেউ ভিক্ষা করে, অথচ তার এক ‘উকিয়া বা তার সমপরিমান সম্পদ আছে, সে তো উত্যক্ত করার জন্যই ভিক্ষা করে। আসাদী লোকটি বলেন, (আমি ভাবলাম) আমাদের একটি উষ্ট্রী আছে, যা উকিয়া চাইতে উত্তম, এক উকিয়া হচ্ছে চল্লিশ দিরহাম। অতঃপর আমি তার কাছে কিছু না চেয়েই ফিরে আসি। পরে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট কিছু যব ও কিশমিশ এলে তিনি তা থেকে আমাদেরকেও একভাগ দিলেন, অথবা বর্ণনাকার যেমন বলেছেন। এমনকি মহান আল্লাহ আমাদেরকে সম্পদশালী করেন। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি ভিক্ষা চায়, অথচ তার কাছে এক উকিয়া মূল্যের সম্পদ আছে, সে নিশ্চিত অসংগতভাবে ভিক্ষা চাইল। আমি (মনে মনে) বললাম, আমার ইয়াকুত নামক উষ্টীটি তো এক উকিয়ার চেয়েও উত্তম। হিশাম বলেন, চল্লিশ দিরহামের চাইতে উত্তম। অতঃপর তার কাছে কিছু না চেয়েই আমি ফিরে আসি। হিশাম তার বর্ণনায় আরো বলেন, রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে এক উকিয়া ছিল চল্লিশ দিরহামের সমান। সাহল ইবনুল হানযালিয়্যাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা ‘উয়াহইনাহ ইবনু হিস্ন ও আকরা’ ইবনু হাবিস (রাঃ) রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট এসে কিছু চাইলে তিনি তাদেরকে তা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে তা লিখার জন্য মু‘আবিয়াহ (রাঃ) -কে আদেশ করেন। অতঃপর আকরা’ নিদের্শনামা নিয়ে তা ভাঁজ করে নিজের পাগরীর ভেতর ঢুকিয়ে চলে গেলেন। কিন্তু ‘উয়াইনাহ তার পত্রখানা নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বাড়িতে এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি চান যে, আমি ‘মুতালাম্মিসের’ মতো এমন একটি পত্র নিয়ে আমার সম্প্রদায়ের নিকট যাই যে, আমি নিজেও পত্রের বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞ? মু‘আবিয়াহ (রাঃ) তার বক্তব্য রসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানালেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে ব্যক্তি ভিক্ষা করে, অথচ তার নিকট এ পরিমাণ সম্পদ আছে যা তাকে ভিক্ষা হতে বিরত রাখতে পারে তার এ কাজ কেবল আগুনই বৃদ্ধি করে। বর্ণনাকরী আন-নুফাইলীর অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ সে জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনের কয়লাই বৃদ্ধি করলো। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, হে আল্লাহর রসূল! কি পরিমাণ সম্পদ ভিক্ষা হতে বিরত রাখতে পারে? নুফাইলী অন্যত্র বর্ণনা করেন, কি পরিমাণ সম্পদ থাকলে ভিক্ষা করা অনুচিত? তিনি বলেছেনঃ সকাল ও বিকাল খাওয়ার জন্য যথেষ্ট হয় এ পরিমাণ সম্পদ থাকা। নুফাইলী অন্যত্র বর্ণনা করেন, একদিন ও একরাত অথবা বলেছেন, একরাত ও একদিন তৃপ্তি সহকারে খেতে যথেষ্ট হয় এ পরিমাণ সম্পদ। ইমাম আবূ দাউস (রহঃ) বলেন, আমি এখানে যে শব্দগুলোর দিয়ে হাদীস বর্ণনা করেছি নুফাইলী আমাদেরকে তা সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন। যিয়াদ ইবনুল হারিস আস-সুদায়ী (রাঃ) একদা আমি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে দিয়ে তাঁর নিকট বায়‘আত গ্রহণ করি। অতঃপর তিনি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করে বলেন, এ সময় তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললো, আমাকে সদাক্বাহ দিন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ মহান আল্লাহ যাকাত বিতরণের ব্যাপারে কোনো নবী এবং অন্য কারোর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন। বরং তিনি এ বিষয়ে নিজেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তিনি তা আট ভাগে বিভক্ত করেছেন। সুতরাং যদি তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হও, তাহলে আমি তোমাকে তোমর প্রাপ্য প্রদান করবো। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি একটি বা দু’টি খেজুর অথবা এক বা দুই লোকমা খাবারের জন্য ঘুরে বেড়ায় সে প্রকৃত মিসকীন নয়। বরং প্রকৃত মিসকীন ঐ ব্যক্তি যে লোকদের নিকট চায় না এবং তারাও তার অবস্থা অবহিত নয় যে, তাকে কিছু দান করবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ...... পূবোর্ক্ত হাদীসের অনুরূপ। প্রকৃত মিসকীন ঐ ব্যক্তি, যে অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে। মুসাদ্দাদ আরো বলেন, তার নিকট নিজেকে অভাবমুক্ত রাখার মত সম্পদ নেই, তা সত্ত্বেও সে চায় না, এবং লোকেরাও তার অভাব সম্পর্কে অবহিত নয় যে, তাকে কিছু দান করবে। বস্তুত এমন ব্যক্তি নিঃস্ব। সহীহঃ তার একথা বাদেঃ “এমন ব্যক্তি নিঃস্ব।” কেননা তা মাক্বতু’ এবং যুহরীর উক্তিঃ বুখারী ও মুসলিম। মুসাদ্দাদ তার বর্ণনায় “এ ব্যক্তিই মুতা‘আফ্ফিফ যে চেয়ে বেড়ায় না।” এ বাক্যটি উল্লেখ করেননি ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, মুহাম্মাদ ইবনু সাওর ও ‘আবদুর রাযযাক্ব, মা‘মার হতে বর্ণনা করেন যে, ‘আল-মাহরূম’ শব্দটি যুহরীর উক্তি। উবায়দুল্লাহ ইবনু ‘আদী উবনুল খিয়ার (রঃ) তিনি বলেন, দু’ ব্যক্তি আমাকে সংবাদ দেন যে, তারা বিদায় হাজ্জের সময় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট উপস্থিত হন, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সদাক্বাহ বিতরণ করছিলেন। তারা উভয়ে তাঁর কাছে যাকাত হতে কিছু চাইলেন। তিনি আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে আবার চোখ নামালেন। তিনি দেখলেন, তারা উভয়েই স্বাস্থ্যবান। তিনি বললেনঃ তোমরা চাইলে আমি তোমাদের দিবো, কিন্তু এতে ধনী ও কর্মক্ষম ব্যক্তির অংশ নেই। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ধনী এবং সুস্থ-সবল ব্যক্তির জন্য যাকাত হালাল নয়। ইমাম আবূ দাউদ (রহঃ) বলেন, শু‘বাহ (রঃ) সা‘দ হতে বর্ণনা করেন যে, কর্মক্ষম শক্তিশালী ব্যক্তি।

【25】

ধনী হওয়া সত্ত্বেও যার জন্য যাকাত গ্রহণ জায়িয

আত্বা ইবনু ইয়াসার (রঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ধনীর জন্য যাকাত গ্রহণ হালাল নয়। তবে পাঁচ শ্রেনীর ধনীর জন্য তা জায়িযঃ (১) আল্লাহর পথে জিহাদরত ব্যক্তি (২) যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী (৩) ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি (৪) কোন ধনী ব্যক্তির দরিদ্রের প্রাপ্ত যাকাতের মাল নিজ অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করা (৫) মিসকীন প্রতিবেশী তার প্রাপ্ত যাকাত হতে ধনী ব্যক্তিকে উপঢৌকন দেয়া। সহীহঃ পরবর্তী হাদীসের কারণে। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন .... পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ ভাবার্থ বর্ণিত। সহীহ আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রা:) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ধনী ব্যক্তির জন্য যাকাত নেয়া হালাল নয়। তবে সে আল্লাহর পথে জিহাদেরত থাকলে অথবা মুসাফির হলে অথবা দরিদ্র প্রতিবেশী প্রাপ্ত যাকাত হতে তাকে উপঢৌকনস্বরূপ কিছু দিলে অথবা তোমাকে দাওয়াত করে খাওয়ালে তা বৈধ। [১৬৩৭]

【26】

এক ব্যক্তিকে কি পরিমাণ মাল যাকাত দেয়া যায় ?

বুশাইর ইবনু ইয়াসার (রহ:) তিনি বলেন, সাহল ইবনু আবূ হাসমাহ (রাঃ) নামক এক আনসারী তাকে বলেন যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দিয়াত হিসেবে একশো যাকাতের উট দান করেছেন। অর্থাৎ সেই আনসারীর দিয়াত যিনি খায়বারে নিহত হয়েছিলেন।) সহীহ : বুখারী ও মুসলিম দীর্ঘভাবে। সামনে তা আসছে (৪৫২০ নং হাদীসে)।

【27】

যে অবস্থায় যাকাত চাওয়া জায়িয

সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রা:) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ভিক্ষাবৃত্তি হচ্ছে ক্ষতবিক্ষতকারী। মানুষ এর দ্বারা স্বীয় মুখমন্ডল ক্ষতবিক্ষত করে। কাজেই যার ইচ্ছে ভিক্ষাবৃত্তি করে স্বীয় মুখকে ক্ষতবিক্ষত রাখুক। আর যে ইচ্ছে তা পরিহার করুক। তবে রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে চাওয়া কিংবা নিরুপায় হয়ে কিছু চাওয়ার বিষয়টি ভিন্ন। ক্বাবীসাহ ইবনু মুখারিক আল-হিলালী (রহ:) তিনি বলেন, একদা আমি অন্যের ঋণের জামিনদার হলাম। পরে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গেলে তিনি বললেনঃ হে ক্বাবীসাহ ! আমাদের কাছে যাকাতের মাল আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। আমরা তা থেকে তোমাকে কিছু দেয়ার নির্দেশ দিবো। পরে তিনি বললেন, হে ক্বাবীসাহ ! তিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারো জন্য সওয়াল করা বৈধ নয়। (১) যে ব্যক্তি কোন ঋণের জামিনদার হয়েছে ঋণ পরিশোধ করা পর্যন্ত তার জন্য সওয়াল করা হালাল, পরিশোধ হয়ে গেলে সে বিরত থাকবে। (২) যে ব্যক্তির সমস্ত মাল আকস্মিক দুর্ঘটনায় ধ্বংস হয়ে গেছে, তার জীবন ধারণের পরিমাণ সম্পদ পাওয়া পর্যন্ত তার জন্য সওয়াল করা হালাল। (৩) যে ব্যক্তি দুর্ভিক্ষ কবলিত, এমনকি তার গোত্র-সমাজের তিনজন বিবেচক ও সুধী ব্যক্তি বলে যে, অমুক ব্যক্তি দুর্ভিক্ষ পীড়িত। তখন জীবন ধারণের পরিমাণ সম্পদ পাওয়া পর্যন্ত তার জন্য সওয়াল করা বৈধ, এরপর তা থেকে বিরত থাকবে। অতঃপর বলেন, হে ক্বাবীসাহ ! এ তিন প্রকারের লোক ছাড়া অন্যদের জন্য সওয়াল করা হারাম এবং কেউ করলে সে হারাম ভক্ষণ করলো। (১৬৪০) সহীহ : মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রহ:) একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এক আনসারী ব্যক্তি এসে ভিক্ষা চাইলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন : তোমার ঘরে কিছু আছে কি? সে বললো, একটি কম্বল আছে, যার কিছু অংশ আমরা পরিধান করি এবং কিছু অংশ বিছাই। একটি পাত্রও আছে, তাতে আমরা পানি পান করি। তিনি বললেন, সেগুলো আমার কাছে নিয়ে এসো, লোকটি তা নিয়ে এলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা হাতে নিয়ে বললেনঃ এ দুটি বস্তু কে কিনবে? এক ব্যক্তি বললো, আমি এগুলো এক দিরহামে নিবো। তিনি দুইবার অথবা তিনবার বললেনঃ কেউ এর অধিক মূল্য দিবে কি? আরেকজন বললো, আমি দুই দিরহামে নিতে পারি। তিনি ঐ ব্যক্তিকে তা প্রদান করে দিরহাম দু’টি নিলেন এবং ঐ আনসারীকে তা প্রদান করে বললেনঃ এক দিরহামে খাবার কিনে পরিবার-পরিজনকে দাও এবং আরেক দিরহাম দিয়ে একটি কুঠার কিনে আমার কাছে নিয়ে এসো। লোকটি তাই করলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বহস্তে তাতে একটি হাতল লাগিলে দিয়ে বললেনঃযাও, তুমি কাঠ কেটে এনে বিক্রি করো। পনের দিন যেন আমি আর তোমাকে না দেখি। লোকটি চলে গিয়ে কাঠ কেটে বিক্রি করতে লাগলো। অতঃপর সে আসলো, তখন তার নিকট দশ দিরহাম ছিলো। সে এর থেকে কিছু দিয়ে কাপড় এবং কিছু দিয়ে খাবার কিনলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ভিক্ষা করে বেড়ানোর চেয়ে এ কাজ তোমার জন্য অধিক উত্তম। কেননা ভিক্ষার কারণে ক্বিয়ামাতের দিন তোমার মুখমন্ডলে একটি বিশ্রী কালো দাগ থাকতো। ভিক্ষা করা তিন ব্যক্তি ছাড়া অন্য কারোর জন্য বৈধ নয়। (১) ধুলা-মলিন নিঃস্ব ভিক্ষুকের জন্য ; (২) ঋণে জর্জরিত ব্যক্তি ; (৩) যার উপর রক্তপণ আছে, অথচ সে তা পরিশোধ করতে অক্ষম। (১৬৪১)

【28】

ভিক্ষাবৃত্তি অপছন্দনীয়

‘আওফ ইবনু মালিক (রহ:) তিনি বলেন, আমরা সাতজন অথবা আটজন অথবা নয়জন রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট ছিলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা কি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট বাই’আত গ্রহণ করবে না? অথচ আমরা কয়েকদিন আগেই বাই’আত নিয়েছি, তাই আমরা বললাম, আমরা তো আপনার কাছে বাই’আত হয়েছি। এমনকি তিনি এ কথাটি তিনবার বললেন। অতঃপর আমরা আমাদের হাত প্রসারিত করে বাই’আত গ্রহণ করলাম। একজন বললেন, হে আল্লাহর রসূল ! আমরা তো বাই’আত করেছি, তাহলে এখন আবার কিসের উপর বাই’আত হবো? তিনি বললেনঃ তোমরা এক আল্লাহর ‘ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না, পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করবে এবং আমীরের কথা শুনবে ও তার আনুগত্য করবে। তিনি সংক্ষেপে নিচু স্বরে বললেনঃ মানুষের কাছে কিছু সওয়াল করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, এদের কেউই (সফরে) একটি ছড়ি নীচে পড়ে গেলেও অন্যকে তা তুলে দিতে অনুরোধ করেননি। (১৬৪২) সহীহ : মুসলিম। সাওবান (রহ:) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে নিশ্চয়তা দিবে যে, সে অন্যের কাছে কিছু চাইবে না, তাহলে আমি তার জান্নাতের যিম্মাদার হবো। সাওবান (রাঃ) বলেন, আমি। এরপর তিনি কারো কাছে কিছু সওয়াল করেননি। (১৬৪৩)

【29】

কারো নিকট কিছু চাওয়া থেকে বিরত থাকা

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রহ:) একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট কতিপয় আনসারী কিছু চাইলে তিনি তাদেরকে দান করলেন, তারা পুনরায় চাইলে তিনি তাদেরকে পুনরায় দান করলেন। এভাবে দান করতে করতে তাঁর সম্পদ শেষ হয়ে গেলো। তখন তিনি বললেনঃ আমার কাছে সম্পদ থাকলে আমি তোমাদেরকে না দিয়ে তা জমা করে রাখি না। কেউ সওয়াল থেকে পবিত্র থাকতে চাইলে আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন। যে অমুখাপেক্ষী থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী রাখেন এবং যে ধৈর্য ধারণ করতে চায়, আল্লাহ তাকে তাই দান করেন। ধৈর্যের চেয়ে অধিক ব্যাপক কিছু দান করা হয়নি। (১৬৪৪) সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। ইবনু মাসউদ (রহঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুর্ভিক্ষে পড়ে মানুষের দুয়ারে দুয়াতে চেয়ে বেড়ায়, তার ক্ষুধা কখনো বন্ধ হবে না। আর যে আল্লাহর স্মরণাপন্ন হয়েছে শীঘ্রই মহান আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করবেন, হয়ত দ্রুত মৃত্যুর দ্বারা অথবা সম্পদশালী বানিয়ে। [১৬৪৫] ইবনুল ফিরাসী (রহ:) একদা তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বললেন, হে আল্লাহর রসূল ! আমি কি লোকদের কাছে কিছু চাইতে পারি? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না। যদি তোমাকে চাইতেই হয় তাহলে নেককার লোকদের কাছে চাও। [১৬৪৬] ইবনুস সাঈদী (রহ:) তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) আমাকে যাকাত আদায়ের জন্য নিযুক্ত করেন। আমি তা আদায়ের পর তার নিকট পৌঁছিয়ে দিলে তিনি আমার কাজের পারিশ্রমিক প্রদানের নির্দেশ দেন। আমি বললাম, আমি এ কাজ আল্লাহর ওয়াস্তে করেছি, তাই এর বিনিময় আল্লাহর কাছেই চাই। তিনি বললেন, তোমাকে যা দেয়া হয় গ্রহণ করো। কেননা আমি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সময় এ কাজ করেছিলাম। তিনি আমাকে পারিশ্রমিক দিলে আমিও তোমার মত বলেছিলাম। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ চাওয়া ছাড়াই তোমাকে যা কিছু দেয়া হয় তা খাও এবং সদাক্বাহ করো। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রহ:) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারে দাঁড়িয়ে যাকাত গ্রহণ, তা থেকে বিরত থাকা এবং ভিক্ষা সম্পর্কে উপরের হাত নীচের হাতের চেয়ে উত্তম বলেছেন। উপরের হাত হলো দাতার হাত এবং ভিক্ষার হাত হলো নীচের হাত। ইমাম আবূ দাউদ (রহ:) বলেন, নাফি’ হতে আইয়ূব সূত্রে বর্ণিত হাদীসে মতভেদ আছে। ‘আবদুল ওয়ারিস বলেন, এমন হাতই উপরের হাত যা ভিক্ষা হতে বিরত থাকে এবং অনেকেই হাম্মাদ ইবনু যায়িদ হতে আইয়ূব সূত্রে বলেছেন, দানকারীর হাতই উপরের হাত। আরেক বর্ণনাকারী বলেন, (তা হচ্ছে) ভিক্ষা হতে বিরত হাত। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম। এছাড়া তার “ভিক্ষা হতে বিরত হাত।” কথাটি শায। মালিক ইবনু নাদলাহ (রহ:) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (দানের) হাত তিন প্রকার। (১) আল্লাহর হাত সবার উপরে (২) অতঃপর দানকারীর হাত (৩) এবং ভিক্ষার হাত সবার নীচে। কাজেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ দান করো এবং প্রবৃত্তির কাছে অক্ষম হয়ো না।

【30】

বনু হাশিমকে যাকাত প্রদান

আবূ রাফি’ (রহ:) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাখযূম গোত্রের এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায়ের উদ্দেশে প্রেরণ করলে তিনি আবূ রাফি’ (রাঃ)-কে বলেন, তুমি আমার সাথে গেলে তুমিও তা থেকে কিছু পাবে। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে নিবো। অতঃপর তিনি এসে তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন সম্প্রদায়ের মুক্তদাস তাদেরই একজন। আর আমাদের জন্য যাকাত হালাল নয়। আনাস (রা:) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাস্তায় পড়ে থাকা একটি খেজুরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি শুধু এ কারণেই তুলে নেননি যে, হয়ত ওটা যাকাতের (খেজুর)। আনাস (রা:) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পথে একটি খেজুর পেয়ে বলেনঃ আমি এটি যাকাতের খেজুর হওয়ার আশংকা না করলে এটি খেতাম। সহীহ: মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রা:) তিনি বলেন, আমার পিতা আমাকে রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট একটি উটের জন্য প্রেরণ করেন- যা তিনি তাকে যাকাতের মাল হতে দান করেছিলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রা:) সূত্র অনুরূপ বর্ণিত। তাতে এ কথাটি অতিরিক্ত আছে : আমার পিতা তা পরিবর্তন করে নিয়েছেন।

【31】

ফকীর যাকাত থেকে ধনীকে উপঢৌকন দিলে

আনাস (রা:) একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খিদমাতে গোশত পেশ করা হলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন : এটা কি ধরনের গোশত? লোকেরা বললো, এটা বারীরাহকে সদাক্বাহ দেয়া হয়েছিলো। তিনি বললেনঃ এটা তার জন্য সদাক্বাহ, কিন্ত আমাদের জন্য উপঢৌকন। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম।

【32】

কেউ স্বীয় সদাক্বাহ কৃত বস্তুর ওয়ারিস হলে

বুরাইদাহ (রা:) এক মহিলা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট এসে বললো, আমি আমার মাকে একটি দাসী দান করেছিলাম। তিনি ঐ দাসীটি রেখে মারা গেছেন। তিনি বললেনঃ তুমি দানের সওয়াব পেয়েছো এবং সে উত্তরাধিকার সূত্রে তোমার কাছে ফিরে এসেছে। সহীহ : মুসলিম। (আরবী) অতিরিক্ত যোগে। যেমন সামনে আসছে হাদীস (২৮৭৭ নং)।

【33】

মালের হাক্ব সমূহ

আবদুল্লাহ (রা:) তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগে ‘মাউন’ গন্য করতাম বালতি, হাঁড়ি-পাতিল ইত্যাদি ছোট-খাটো বস্তু ধারে আদান-প্রদান করাকে। [১৬৫৭] আবূ হুরাইরাহ (রা:) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ধনী ব্যক্তি তার হাক্ব (যাকাত) আদায় না করলে ক্বিয়ামাতের দিন সোনা ও রুপা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে তার ললাটে, তার পার্শ্বদেশে ও তার পৃষ্ঠদেশে সেঁক দেয়া হবে। এমন শাস্তি অব্যাহত থাকবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে ফায়সালা করার দিন পর্যন্ত, যে দিন হবে তোমাদের গণনা অনুসারে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। এরপর সে নিজের গন্তব্যস্থান চাক্ষুস দেখবে, জান্নাত অথবা জাহান্নাম। আর যে মেষপালের মালিক তার যাকাত দেয় না ক্বিয়ামাতের দিন সেগুলো পূর্বের চেয়েও সংখ্যায় অধিক ও মোটা-তাজা অবস্থায় উপস্থিত হবে এবং তাকে শিং দিয়ে গুতা মারবে ও খুর দিয়ে দলিত করবে। ওসবের কোনোটিই বাঁকা শিং বিশিস্ট বা শিংবিহীন হবে না। যখন সর্বশেষ জানোয়ারটি তাকে দলিত করে চলে যাবে, তখন প্রথমটিকে আবার তার কাছে আনা হবে। এরূপ চলতে থাকবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে ফয়সালা করার দিন পর্যন্ত, যে দিনটি হবে তোমাদের হিসাব মতে পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। এরপর সে তার গন্তব্যস্থান প্রত্যক্ষ করবে, জান্নাত অথবা জাহান্নাম। আর যে উটের মালিক উটের যাকাত প্রদান করে না ক্বিয়ামাতের দিন ঐ উট পূর্বের চাইতেও সংখ্যায় অধিক ও মোটা-তাজা অবস্থায় মালিকের নিকট উপস্থিত হবে। তাকে এক বিশাল সমভূমিতে উপুড় করে শোয়ানো হবে এবং পশুগুলো তাকে খুর দিয়ে দলন করতে থাকবে। সর্বশেষ পশুটি তাকে অতিক্রম করার পর প্রথমটিকে পুনরায় তার কাছে ফিরে আনা হবে। এরূপ চলতে থাকবে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মাঝে ফয়সালা করার দিন পর্যন্ত, যেদিন হবে তোমাদের গণনা অনুযায়ী পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। অতঃপর সে তার গন্তব্যস্থল প্রত্যক্ষ করবে, হয়তো জান্নাত অথবা জাহান্নাম। সহীহ : মুসলিম। বুখারী সংক্ষেপে। আবূ হুরাইরাহ (রা:) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেন। তাতে উটের ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে: যে ব্যক্তি তার হাক্ব আদায় করে না। এর হাক্ব হচ্ছে, পানি পান করার দিন তার দুধ দোহন করা। সহীহ : মুসলিম। বুখারী সংক্ষেপে। আবূ হুরাইরাহ (রা:) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে এরূপই বলতে শুনেছি। বর্ণনাকারী আবূ হুরায়রা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, উটের হাক্ব কি? তিনি বললেন, উত্তমটি দান করা, অধিক দুগ্ধবতী দান করা, তার পৃষ্ঠে আরোহণ করতে দেয়া, পুরুষ উট দ্বারা প্রজনন করতে দেয়া এবং দুধ (অভাবীদের) পান করতে দেয়া। [১৬৬০] হাসান, পরবর্তী হাদীসের কারণে। উবাইদ ইবনু ‘উমাইর (রহ:) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রসূল! উটের হাক্ব কি? অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে এতে অতিরিক্ত রয়েছে : তার দুধ ধার দেয়া। সহীহ : মুসলিম। জাবির হতে। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রহ:) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন ‘দশ ওয়াসাক্ব খেজুর কাটলে এক কাঁদি খেজুর মিসকীনদের জন্য মাসজিদে ঝুলিয়ে রাখবে। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রা:) তিনি বলেন, একদা এক সফরে আমরা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তার উটে আরোহণ করে সেটিকে ডানে-বামে হাঁকাতে লাগলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যার অতিরিক্ত সওয়ারী আছে সে যেন তা যার কোনো সওয়ারী নেই তাকে দান করে এবং যার অতিরিক্ত পাথেয় আছে, সে যেন তা এমন ব্যক্তিকে দান করে যার পাথেয় নেই। বর্ণনাকারী বলেন, আমাদের ধারণা হলো যে, আমাদের অতিরিক্ত সম্পদ রাখার কোন অধিকার নেই। সহীহ : মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রা:) তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো : “যারা সোনা-রুপা সঞ্চিত করে রাখে …..” (সূরাহ আত-তাওবাহ : ৩৪), মুসলমানদের উপর তা ভারী মনে হলো। তখন ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমিই তোমাদের পক্ষ হতে এর সুষ্ঠু সমাধান নিয়ে আসবো। অতঃপর তিনি গিয়ে বললেন, হে আল্লাহর নবী ! এ আয়াতটি আপনার সঙ্গীদের উপর কষ্টকর অনুভূত হচ্ছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয় মহান আল্লাহ তোমাদের অতিরিক্ত মাল পবিত্র করার জন্যই যাকাত ফারয করেছেন। আর তিনি উত্তরাধিকারীর ব্যবস্থা ফারয করেছেন এজন্যই যেন তা তোমাদের পরবর্তীদের জন্য থাকে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর ‘উমার (রাঃ) আল্লাহু আকবার ধ্বনি উচ্চারণ করলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ আমি কি তোমাকে মানুষের সর্বোত্তম সম্পদ সম্পর্কে অবহিত করবো না? তা হলো, নেককার স্ত্রী। সে তার দিকে তাকালে সে তাকে আনন্দ দেয় এবং তাকে কোন নির্দেশ দিলে সে তা মেনে নেয় এবং সে যখন তার থেকে অনুপস্থিত থাকে, তখন সে তার সতীত্ব ও তার সম্পদের হিফাযাত করে। [১৬৬৪]

【34】

যাঞ্ঝাকারীর অধিকার সম্পর্কে

হুসাইন ইবনু ‘আলী (রা:) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (তোমাদের সম্পদে) যাঞ্ঝাকারীর অধিকার রয়েছে, যদিও সে ঘোড়ায় চড়ে আসে। [১৬৬৫] ‘আলী (রা:) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। [১৬৬৬] উম্মু বুজাইদ (রাঃ) তিনি ছিলেন রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে বাই‘আত প্রহণকারিণীদের একজন। তিনি তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ আপনার প্রতি অনুগ্রহ করুন। মিসকীন আমার দরজায় এসে দাড়ায়, কিন্তু তাকে দেয়ার মতো কিছুই আমি পাই না। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তাকে দেয়ার মতো কিছু না পেলে অন্তত রান্না করা পশুর একখান পায়া হলেও তার হাতে তুলে দাও।

【35】

অমুসলিম নাগরিকদেরকে সদাক্বাহ দেয়া

আসমা (রাঃ) তিনি বলেন, (হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়) আমার মা-যিনি ইসলাম বিদ্বেষী ও কুরাইশদের ধর্মাবলম্বী ছিলেন, তিনি সদ্ব্যবহার পাবার আশায় আমার নিকট আসলেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমার মা আমার কাছে এসেছেন, অথচ তিনি ইসলাম বিদ্বেষী মুশরিকা। আমি কি তার সাথে সদাচরণ করবো? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার মায়ের সাথে অবশ্যই সদাচরণ করবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম

【36】

যে বস্তু চাইলে বাধা দেয়া নিষেধ

বুহায়সাহ (রঃ) তার পিতা আমার পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর (শরীরে চুমু দেয়ার) অনুমতি চাইলেন। অতঃপর তিনি তাঁর জামার ভেতরে প্রবেশ করে চুমা দিতে লাগলেন এবং তাঁকে জড়িয়ে ধরে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! কোন বস্তু চাইলে নিষেধ করা হালাল নয়? তিনি বললেনঃ পানি। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, কোন বস্তু চাইলে নিষেধ করা হালাল নয়? তিনি বললেনঃ লবণ। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, কোন বস্তু চাইলে নিষেধ করা হালাল নয়? তিনি বললেনঃ তোমার কোন ভালো কাজ করাটাই তোমার জন্য কল্যাণকর।

【37】

মাসজিদে যাঞ্চা করা

আবদুর রহমান ইবনু আবূ বক্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে আজ মিসকীনকে আহার করিয়েছে? আবূ বকর (রাঃ) বললেন, আমি মাসজিদে ঢুকেই এক ভিক্ষুকের সাক্ষাত পেলাম। আমি ‘আবদুর রহমানের হাতে এক টুকরা রুটি পেয়ে তার থেকে সেটা নিয়ে ভিক্ষুককে দান করলাম। দূর্বলঃ তবে ভিক্ষুকের ঘটনা বাদে সহীহ।

【38】

আল্লাহর দোহাই দিয়ে কিছু চাওয়া অপছন্দনীয়।

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর নামের দোহাই দিয়ে জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু চাওয়া উচিৎ নয়।

【39】

কেউ আল্লাহর দোহাই দিয়ে কিছু চাইলে তাকে দান করা

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে নিরাপত্তা চায়, তাকে নিরাপত্তা দাও। যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে ভিক্ষা চায়, তাকে দাও। যে ব্যক্তি তোমাদেরকে দাওয়াত করে তার ডাকে সাড়া দাও। যে ব্যক্তি তোমাদের সাথে সদ্ব্যবহার করে তোমরা তার উত্তম প্রতিদান দাও। প্রতিদান দেয়ার মতো কিছু না পেলে তার জন্য দু‘আ করতে থাকো, যতক্ষণ না তোমরা অনুধাবন করতে পারো যে, তোমরা তার প্রতিদান দিতে পেরেছো।

【40】

যে ব্যক্তি তার সমস্ত সম্পদ দান করতে চায়

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমরা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট অবস্থানকালে এক ব্যক্তি একটি ডিম পরিমাণ স্বর্ণ নিয়ে এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমি এ স্বর্ণ খনি থেকে পেয়েছি, এটি দান হিসেবে গ্রহণ করুন। এছাড়া আমার আর কিছুই নেই। রসূলুল্লাহ তার মুখ ফিরিয়ে নিলে লোকটি তাঁর ডান পাশ এসে আগের মতই বললো। এরপর সে তাঁর বাম পাশে এসেও তাই বললো। আর তিনিও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। অবশেষে সে তাঁর পিছনে এসে অনুরূপ বললে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা নিয়ে এমন জোরে তার দিকে ছুড়ে মারলেন যে, তার শরীরে লাগলে সে অবশ্যই যখম বা আহত হতো। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের কেউ তার সমস্ত মাল আমার কাছে নিয়ে এসে বলে, এটা সদাক্বাহ। পরে সে (সম্বলহীন হয়ে) লোকের কাছে ভিক্ষা করে বেড়ায়। বস্তুত সর্বোত্তম সদাক্বাহ সেটাই যা অভাবমুক্ত থেকে দান করা হয়। দুর্বলঃ তবে হাদীসের এ বাক্যটি সহীহঃ “সর্বোত্তম সদাক্বাহ সেটাই যা অভাবমুক্ত থেকে দান করা হয়।” ইবনু ইসহাক্ব (রঃ) উল্লেখিত সানাদে অনুরূপ অর্থের হাদীস বর্ণিত। তাতে আরো রয়েছেঃ ‘তুমি তোমার মাল নিয়ে যাও, আমাদের এর কোনই প্রয়োজন নেই’।[১৬৭৪] আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদেরকে বস্ত্র দানের আদেন করেন। তখন লোকেরা বস্ত্র দান করলো। তিনি ঐ ব্যক্তিকে তা থেকে দু’টি কাপড় দেয়ার নির্দেশ দিলেন। এরপর তিনি আবারো দান করতে উৎসাহিত করলে ঐ ব্যক্তি তার দু’টি কাপড়ের একটি কাপড় দান করায় তিনি তাকে ধমক দিলে বললেনঃ তোমার কাপড় নিয়ে যাও। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সচ্ছলতা বজায় রেখে যে দান করা হয় সেটাই সর্বোত্তম দান। দান আরম্ভ করবে তোমার পোষ্যদের থেকে। সহীহঃ বুখারী।

【41】

সমস্ত সম্পদ দানের অনুমুতি সম্পর্কে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল ! কোন ধরণের দান অতি উত্তম? তিনি বললেনঃ সামান্য সম্পদের মালিক নিজ সামর্থ্যানুযায়ী যা দান করে এবং নিজের পোষ্যদের থেকে আরম্ভ করে। ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) একদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সদাক্বাহ করার নির্দেশ দেন। ঘটনাক্রমে সেদিন আমার কাছে মালও ছিল। আমি (মনে মনে) বললাম, আজ আমি আবূ বাকর (রাঃ) এর অগ্রগামী হবো, যদিও আমি কোনো দিন দানে তার অগ্রগামী হতে পারিনি। কাজেই আমি আমার অর্ধেক মাল নিয়ে উপস্থিত হলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ পরিবারের জন্য কি অবশিষ্ট রেখে এসেছো? আমি বললাম, এর সম-পরিমাণ। ‘উমার (রাঃ) বলেন, আর আবূ বাকর (রাঃ) তার সমস্ত মাল নিয়ে উপস্থিত হলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ পরিবারের জন্য কী অবশিষ্ট রেখে এসেছো? তিনি বললেন, আল্লাহ আর তাঁর রসূলকে রেখে এসেছি। তখন আমি (‘উমার) বললাম, আমি কখনো কোনো বিষয়েই আপনাকে অতিক্রম করতে পারবো না।

【42】

পানি পান করানোর ফযীলত

সাঈদ (রা:) একদা সা’দ ইবনু ‘উবাধ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট এসে বললেন, আপনার কাছে কোন সাক্বাহ অধিক পছন্দনীয়? তিনি বললেনঃ পানি (পান করানো)। সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। [১৬৮০] সা’দ ইবনু ‘উবাদাহ (রাঃ) তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! উম্মু সা’দ মৃত্যুবরণ করেছেন (তার পক্ষ হতে) কোন সদাক্বাহ সর্বোত্তম হবে? তিনি বললেনঃ পানি। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (সা’দ) একটি কূপ খনন করে বললেন, এটা উম্মু সা’দের (কল্যাণের) জন্য ওয়াক্‌ফ। [১৬৮১] আবূ সাঈদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মুসলিম কোন বস্ত্রহীন মুসলিমকে কাপড় পরাবে, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবুজ পোশাক পরাবেন। যে মুসলিম কোন অভূক্ত মুসলমানকে আহার করাবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের ফল- ফলাদি খাওয়াবেন। আর যে মুসলিম কোন পিপাসু মুসলিমকে পানি পান করাবে, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের সীলমোহরকৃত বিশুদ্ধ পানীয় পান করাবেন।

【43】

দুগ্ধবতী পশু ধার দেয়া সম্পর্কে

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ চল্লিশটি বৈশিষ্টপূর্ণ কাজের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে (দুধ পানের জন্য) কাউকে দুগ্ধবতী বকরী দান করা। যে ব্যক্তি নেকীর আশায় এবং অঙ্গীকারের উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে এ চল্লিশটি কাজের যেকোনো একটি করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। ইমাম আবূ দাউদ (রহ:) বলেন, হাসসান (রাঃ) বলেন, দুগ্ধবতী বকরী ছাড়া (অন্যান্য কাজের মধ্যে রয়েছে)- সালামের জবাব দেওয়া, হাঁচির জবাব দেওয়া এবং রাস্তা হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা ইত্যাদি। শেষ পর্যন্ত আমরা পনেরটি কাজ পর্যন্তও পৌঁছাতে পারিনি। সহীহঃ বুখারী।

【44】

কোষাধ্যক্ষের সওয়াব সম্পর্কে

আবু মূসা আল-আশ’আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বিশ্বস্ত কোষাধ্যক্ষ্য সেই ব্যক্তি যে নির্দেশ মতো সন্তুষ্টচিত্তে পরিপূর্ণভাবে কাজ সম্পন্ন করে, এমনকি যাকে যা দান করতে বলা হয় তাকে তাই দান করে, সে দুই দানকারীর একজন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【45】

স্ত্রী স্বীয় স্বামীর ঘর হতে দান করা সম্পর্কে

আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কোনো স্ত্রী স্বামীর ঘর থেকে নষ্টের উদ্দেশ্যে না রেখে কিছু দান করে, তবে সে দানের কারণে সওয়াব পাবে এবং তার স্বামীও অনুরূপ সওয়াব পাবে উপার্জন করার কারণে। রক্ষণাবেক্ষণকারীও অনুরূপ সওয়াব পাবে। কিন্তু এতে কারোর সওয়াবে অন্যের কারণে ঘাটতি হবে না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। সা’দ ইবনু আবূ ওয়াককাস (রাঃ) তিনি বলেন, যখন মহিলারা রসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট বাই’ইয়াত হন তখন তাদের মধ্যে এক স্থূলদেহী মহিলাও ছিল, সম্ভবত মহিলাটি মুদার গোত্রীয়। তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, হে আল্লাহর রসূল ! আমরা আমাদের পিতা, পুত্রের উপর নির্ভরশীল। ইমাম আবূ দাঊদ (রাঃ) বলেন, আমার ধারণা হাদীসে এটাও আছেঃ এবং আমাদের স্বামীদের উপর নির্ভরশী। এমতাবস্থায় তাদের ধন-সম্পদে আমাদের কী পরিমাণ অধিকার আছে? তিনি বললেনঃ তোমরা যা (রাতাব হিসেবে) খাও এবং দান কর। ইমাম আবূ দাঊদ (রহ:) বলেন, ‘আর-রাতাব’ হচ্ছে রুটি, তরি-তরকারি ও তাজা খেজুর। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ স্ত্রী বিনা অনুমতিতে তার স্বামীর উপার্জিত সম্পদ হতে দান করলে অর্ধেক সওয়াব পাবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে এমন নারী সম্পর্কে বর্ণিত, যিনি তার স্বামীর ঘর থেকে দান করে থাকেন। তিনি বলেছেন, (দান করা) বৈধ নয়, তবে স্বামী তাকে যা খোরাকী দিয়েছে, তা থেকে দান করতে পারবে, আর এতে উভয়ই সওয়াব পাবে। স্বামীর বিনা অনুমতিতে তার সম্পদ থেকে স্ত্রীর দান-খয়রাত করা বৈধ নয়। সহীহ মাওকুফ। ইমাম আবূ দাউদ (রহ:) বলেন, এ হাদীস হাম্মাদের হাদীসকে দুর্বল করে।

【46】

নিকটাত্মীয়দের সাথে সদাচরণ করা

আনাস (রাঃ) যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ “তোমরা তোমাদের ভালবাসার বস্তু ব্যয় না করা পর্যন্ত কখনো পুণ্য লাভ করবে না” (সূরাহ আলে ‘ইমরানঃ ৯২), তখন আবূ ত্বালহাহ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রসূল ! আমার মনে হচ্ছে, আমাদের রব্ব আমাদের সম্পদের অংশ চান। আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে আরীহাতে অবস্থিত আমার ভূমিটি আল্লাহর উদ্দেশ্যে দান করলাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি তা তোমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের দাও। অতঃপর তিনি তা হাসসান ইবনু সাবিত (রাঃ) এবং ইবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) এর মধ্যে বণ্টন করে দিলেন। সহীহঃ মুসলিম, অনুরূপ বুখারী। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী মায়মূনাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার একটি দাসী ছিল, তাকে আমি মুক্ত করে দেই। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে এলে আমি তাঁকে বিষয়টি জানাই। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তোমাকে এর সওয়াব দিন। কিন্তু তুমি যদি তা তোমার মাতুল গোষ্ঠীকে দান করতে তাহলে সর্বশ্রেষ্ঠ সওয়াব পেতে। সহীহঃ মুসলিম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা সদাকাহ প্রদান কর। জনৈক ব্যক্তি বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার নিকট একটি দিনার (স্বর্ণ মুদ্রা) আছে। তিনি বললেন- তুমি ওঁটা নিজেকেই দান কর (রেখে দাও)। লোকটা বললঃ আমার নিকট আরও একটি আছে। তিনি উত্তরে বললেনঃ এটা তোমার ছেলেদের (সন্তানদের) জন্য খরচ কর। লোকটা বললো আমার নিকট আরও একটি আছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ওঁটা তোমার স্ত্রীর জন্য খরচ কর। সে বলল, আমার আরো একটি আছে। তিনি বললেনঃ তোমার খাদিমের জন্য সদাক্বাহ কর। লোকটা বললো আমার নিকট আরও একটি আছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমিই ভাল জানো (এটা কোথায় খরচ করবে)। আবূ দাউদ, নাসায়ী, আর ইবনু হিব্বান ও হাকিম একে সহিহ বলেছেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ পাপী হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার উপর নির্ভরশীলদের রিযিক্ব নষ্ট করে। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি স্বীয় রিযিক্ব বৃদ্ধি ও দীর্ঘজীবী হতে চায় সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখে। আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছিঃ মহান আল্লাহ বলেছেন, আমিই রহমান (দয়ালু), আত্মীয়তার বন্ধন হচ্ছে রহিম, যা আমি আমার নাম থেকে নির্গত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি আত্মীয়দেরকে সংযুক্ত রাখে আমিও তাকে সংযুক্ত রাখব এবং তাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবে আমিও তার থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করি। আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) সূত্র তিনি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন... পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। [১৬৯৫] জুবাইর ইবনু মুত্বঈম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আত্মীয়তার সর্ম্পক রক্ষাকারী ঐ ব্যক্তি নয়, যে বরাবর ব্যবহার করে। বরং প্রকৃত আত্মীয়তা রক্ষাকারী ঐ ব্যক্তি যার আত্মীয় সর্ম্পক ছিন্ন করলেও সে তা পুনঃস্থাপন করে। সহীহঃ বুখারী।

【47】

কৃপণতা সর্ম্পকে

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাষণ দিলেন এবং বললেনঃ তোমরা কৃপণতার ব্যাপারে সাবধান হও। কেননা তোমাদের পূর্বর্তীরা কৃপণতার কারনে ধ্বংস হয়েছে। অর্থলোভ তাদেরকে কৃপণতার নির্দেশ দিয়েছে, ফলে তারা কৃপণতা করেছে, তাদেরকে আত্মীয়তা ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে, যখন তারা তাই করেছে এবং তাদেরকে পাপাচারে প্ররোচিত করেছে, তখন তারা তাতে লিপ্ত হয়েছে। আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আমার স্বামী) যুবাইর (রাঃ) ঘরে যা উপার্জন করে নিয়ে আসেন তা ছাড়া অন্য কোন মাল আমার নেই। সুতরাং আমি কি তা থেকে সাদক্বাহ করতে পারি? তিনি বললেনঃ সাদক্বাহ করো , ধরে রেখো না, তাহলে তোমার (রিযিক) ধরে রাখা হবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি কতিপয় মিসকিন সর্ম্পকে আলোচনা করলেন। ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, আরেকজনের বর্ননায় আছে অথবা কতিপয় মিসকিনকে সাদক্বাহ করা সর্ম্পকে জিজ্ঞেস করলেন। তখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, দান খয়রাত করো এবং তা গুনে রেখো না। তাহলে তোমাকেও না দিয়ে রেখে দেয়া হবে।