18. মানত ও শপথ

【1】

গুনাহের কাজের উদ্দেশ্যে মানত করা বৈধ নয়

আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গুনাহের কাজ সম্পাদনের উদ্দেশ্যে মানত করা বৈধ হবে না। শপথ ভঙ্গের কাফফারার অনুরূপ এ কাফফারা। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২১২৫) আইশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলার নাফরমানী করার উদ্দেশ্যে মানত করা যাবে না এবং শপথ ভঙ্গের কাফফারার মতই তার কাফফারা। পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ্

【2】

যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের মানত করল সে যেন তার আনুগত্য করে।

আইশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা‘আলার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে কোন লোক মানত করলে সে যেন তা পূর্ণ করে। আর কোন লোক আল্লাহ্ তা‘আলার অবাধ্যাচরণের উদ্দেশ্যে মানত করলে সে যেন তা পূর্ণ না করে। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২১২৬), বুখারী

【3】

যে জিনিসে আদম সন্তানের মালিকানা নেই তার মানত করা যায় না

সাবিত ইবনু যাহ্‌হাক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে জিনিসে বান্দার মালিকানা নেই তার মানত হয় না। সহীহ্, ইরওয়া (২৫৭৫), নাসা-ঈ

【4】

অনির্দিষ্ট মানতের কাফফারা

উকবা ইবনু আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নাম উল্লেখ না করে মানত করা হলে তার কাফফারা শপথ ভঙ্গের কাফফারার মতই। যঈফ, হাদীসে বর্ণিত “নাম উল্লেখ না করে” অংশ বাদে হাদীনটি সহীহ্, ইরওয়া (২৫৮৬)। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব।

【5】

শপথের বিপক্ষে কাজ করাকে কল্যাণকর মনে করলে

আবদুর রাহমান ইবনু সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আবদুর রাহমান! শাসকের পদ চেয়ে নিও না। কেননা এ পদ চাওয়ার কারণে তোমার আয়ত্বে এলে তোমাকে এর যিম্মায় (সহায়হীনভাবে) ছেড়ে দেয়া হবে। এ পদটি যদি না চাইতেই তোমার আয়ত্বে আসে তবে তুমি (দায়িত্বভার বহনে) সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। তুমি কোন কাজের মানত করার পরে তার বিপরীত করার মধ্যে কল্যাণ দেখতে পেলে কল্যাণকর কাজটিই করবে এবং শপথ ভঙ্গের কাফফারা প্রদান করবে। সহীহ্, ইরওয়া (৭/১৬৬), (৮/২২৮,২৬০১) সহীহ্ আবূ দাউদ (২৬০১), নাসা-ঈ

【6】

শপথ ভঙ্গের আগেই কাফফারা প্রদান করা।

আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বিষয়ে কেউ শপথ করার পর তার বিপক্ষে কাজ করার মধ্যে মঙ্গল দেখতে পেলে সে যেন তার শপথ ভঙ্গের কাফফারা প্রদান করে এবং কল্যাণকর কাজটি সম্পাদন করে। সহীহ্, ইরওয়া (২০৮৪), রাওযুন নাযীর (১০২৯), মুসলিম

【7】

শপথে ইনশাআল্লাহ বলা

ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক শপথ করার সময় ইনশাআল্লাহ (যদি আল্লাহ চান) বললে শপথ ভঙ্গের অপরাধ তার উপর আসবে না। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২১০৫) আবূ হুরাইরা (রা) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ শপথ করে ইনশা-আল্লাহ বললে তার শপথ ভঙ্গের কারণে কোন আপরাধ হবে না। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২১০৪)

【8】

আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কিছুর নামে শপথ করা নিষেধ

সালিম (রহঃ) হতে তার বাবার সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উমার (রাঃ)-কে ‘আমার পিতার শপথ, আমার পিতার শপথ’ বলতে শুনলেন। তিনি বললেনঃ সাবধান! অবশ্যই তোমাদেরকে তোমাদের বাবার নামে শপথ করতে আল্লাহ তা‘আলা নিষেধ করেছেন। উমার (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্‌র শপথ! আমি এরপর হতে আর কখনো এভাবে শপথ করিনি বা অন্যের বরাতেও তা উল্লেখ করিনি। সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২০৯৪), নাসা-ঈ ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি কাফেলার সাথে উমার (রাঃ)-কে এরূপ অবস্থায় পেলেন যে, সে সময় তিনি তার বাবার নামে শপথ করছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ অবশ্যই তোমাদেরকে তোমাদের বাবার নামে শপথ করতে আল্লাহ তা‘আলা বারণ করছেন। হয় শপথকারী আল্লাহ্ তা‘আলার নামে শপথ করবে না হয় নিরব থাকবে। সহীহ্, প্রাগুক্ত, নাসা-ঈ সা’দ ইবনু উবাইদা (রাঃ) ইবনু উমার (রাঃ) একজন লোককে বলতে শুনলেন, না, কাবার শপথ! ইবনু উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা‘আলার নাম ব্যতীত অন্য কিছুর নামে শপথ করা যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমি বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তা‘আলার নাম ব্যতীত অন্য কিছুর নামে যে লোক শপথ করল সে যেন কুফরী করল অথবা শিরক করল। সহীহ্, ইরওয়া (২৫৬১), সহীহা (২০৪২)

【9】

কেউ হাঁটার শপথ করল অথচ সে হাঁটতে অক্ষম

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, কোন একজন মহিলা পায়ে হেঁটে বাইতুল্লাহ শারীফে যাওয়ার মানত করে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলা তার হাঁটার মুখাপেক্ষী নন। তোমরা তাকে সাওয়ার হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দাও। হাসান সহীহ্, নাসা-ঈ আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন অতি বৃদ্ধ লোকের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে তার দুই ছেলের কাঁধে ভর করে যাচ্ছিল। তিনি প্রশ্ন করেনঃ তার কি হয়েছে? লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সে (বাইতুল্লাহ শারিফে) হেঁটে যাওয়ার মানত করেছে। তিনি বললেনঃ এ লোকের নিজেকে কষ্টে নিক্ষেপ করা হতে আল্লাহ তা‘আলা মুক্ত। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে সাওয়ারীতে চড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। এ হাদীস আনাস (রাঃ) হতে অন্য এক সূত্রেও বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসটি হাসান সহীহ্। সহীহ্‌, নাসা-ঈ

【10】

মানত করা অপছন্দনীয়

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মানত কর না। কেননা মানত ভাগ্যের পরিবর্তন করতে অক্ষম। এর দ্বারা কৃপণ লোকের কিছু আর্থিক খরচ হয় মাত্র। সহীহ্‌, ইবনু মা-জাহ (২১২৩), নাসা-ঈ

【11】

মানত পুরো করা

উমার (রাঃ) তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! জাহিলী আমলে আমি এক রাত মাসজিদুল হারামে ইতিকাফের মানত করেছিলাম। তিনি বললেনঃ তুমি তোমার মানত পূর্ণ কর। সহীহ্‌, নাসা-ঈ

【12】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর শপথ কিরুপ ছিল?

সালিম ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে তার বাবার সূত্র তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, বেশির ভাগ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবে শপথ করতেনঃ ‘লা ওয়া মুকাল্লিবিল কুলূবি” (না! অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারীর শপথ!)। সহীহ্‌, ইবনু মা-জাহ (২০৯২), বুখারী

【13】

দাসমুক্তকারীর সাওয়াব

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমি বলতে শুনেছিঃ যদি কেউ কোন মুমিন গোলাম মুক্ত করে তবে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিনিময়ে তার (আযাদকারীর) প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্ত করে দেন। এমনকি তার লজ্জাস্থানের বিনিময়ে আযাদকারীর লজ্জাস্থানকে মুক্ত করেন। সহীহ্‌, ইরওয়া (১৭৪২), রাওযুন নাযীর (৩৫৩), নাসা-ঈ

【14】

কোন লোক তার খাদেমকে থাপ্পড় মারলে

সুয়াইদ ইবনু মুকাররিন আল-মুযানী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা সাত ভাই ছিলাম। আমাদের মাত্র একজন খাদিম ছিল। আমাদের এক ভাই তাকে থাপ্পর মারে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে হুকুম করলেন তাকে মুক্ত করে দেয়ার জন্য। সহীহ্‌, মুসলিম

【15】

ইসলাম ধর্ম ব্যতীত অন্য ধর্মের শপথ করা নিষেধ

সাবিত ইবনু যাহহাক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মানুষ ইসলাম ধর্ম ব্যতীত অন্য ধর্মের নামে মিথ্যা শপথ করল, সে যেরুপ বলেছে সে তদ্রুপ। সহীহ্‌, ইবনু মা-জাহ (২০৯৮), নাসা-ঈ

【16】

(পায়ে হেটে যাওয়ার শপথ ভঙ্গ করার কাফফারা)

উকবা ইবনু আমির (রাঃ) তিনি বলেছেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার বোন খালি পায়ে, খালি মাথায় ওড়নাবিহীন অবস্থায় পায়ে হেটে বাইতুল্লাহ শরীফ যাওয়ার মানত করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমার বোনের এমন কষ্ট স্বীকারে আল্লাহ তা’আলার কিছু যায় আসে না। সে যেন, সাওয়ার হয়ে ওড়না পরে যায় এবং তিন দিন রোযা রাখে। যঈফ, ইবনু মাজাহ (২১৩৪)।

【17】

(জুয়া খেলার প্রস্তাবেও দান-খাইরাত করতে হবে)

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কোন লোক হলফ করলে এবং লাতের শপথ, উযযার শপথ ইত্যাদি বললে তবে সে যেন সাথে সাথে উচ্চারণ করে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আর কোন প্রভু নেই)। আর যে লোক অন্য লোককে প্রস্তাব দেয়, এসো আমরা জুয়া খেলি, সে যেন (জরিমানাস্বরুপ) দান-খাইরাত করে। সহীহ্‌, ইবনু মা-জাহ (২০৯৬), নাসা-ঈ

【18】

মৃত ব্যক্তির পক্ষে মানত আদায় করা

ইবনু আব্বাস (রাঃ) সা‘দ ইবনু উবাদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এসে তার মায়ের একটি মানতের ব্যাপারে ফাতাওয়া জিজ্ঞেস করেন, যা আদায়ের আগেই তিনি মৃত্যু বরণ করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তার পক্ষে এটা পূর্ণ কর। সহীহ্‌, নাসা-ঈ

【19】

দাস আযাদকারীর মর্যাদা

আবু উমামা (রাঃ)-সহ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কয়েকজন সাহাবী নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলমান অন্য কোন মুসলমানকে আযাদ করলে সে তার জন্য জাহান্নামের আযাব হতে মুক্তি পাওয়ার উপায় হবে। আযাদকৃত ব্যক্তির একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মুক্তির জন্য আযাদকারীর এক একটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যথেষ্ট হবে। কোন মুসলমান দু'জন মুসলমান মহিলাকে আযাদ করলে তারা উভয়ে তার জন্য জাহান্নাম হতে মুক্তি পাওয়ার মাধ্যম হবে। তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মুক্তির জন্য এদের উভয়ের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যথেষ্ট হবে। কোন মুসলমান মহিলাকে কোন মুসলমান মহিলা আযাদ করলে সে আযাদকারীণীর জন্য জাহান্নাম হতে মুক্তির উপায় হবে। তার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মুক্তির জন্য এর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পর্যাপ্ত হবে। সহীহ্‌, ইবনু মা-জাহ (২৫২২)