35. কিয়ামত ও মর্মস্পর্শী বিষয়

【1】

কিয়ামত প্রসঙ্গে

আদী ইবনু হাতিম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের সকলের সাথেই তার প্রতিপালক আল্লাহ তা'আলা কিয়ামত দিবসে কথা বলবেন। তার ও তার প্রতিপালকের মধ্যে কোন দোভাষী থাকবে না। সে তার ডানপাশে তাকিয়ে তার দুনিয়াবী জীবনে পাঠানো আমল ব্যতীত আর কোন কিছুই দেখতে পাবে না। সে তার বাম পাশে তাকিয়েও তার দুনিয়াবী জীবনে কৃত আমল ব্যতীত আর কোন কিছুই দেখতে পাবে না। তারপর সে তার সম্মুখে তাকাতেই জাহান্নাম দেখতে পাবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই এক টুকরা খেজুরের বিনিময়ে হলেও জাহান্নাম হতে আত্মরক্ষা করতে সক্ষম হয় সে যেন তাই করে। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (১৮৫), বুখারী, মুসলিম। ইবনু মাসউদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগপর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ্ তা'আলার নিকট হতে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে? তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে ; তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে এবং তা কি কি খাতে খরচ করেছে এবং সে যত টুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মুতাবিক কি কি আমল করেছে। সহীহ, সহীহাহ্ (৯৪৬), তা’লীকুর রাগীব (১/৭৬), রাওযুন নাযীর (৬৪৮)। আবূ বারযা আল-আসলামী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বান্দার পদদ্বয় (কিয়ামাত দিবসে) এতটুকুও সরবে না, তাকে এ কয়টি বিষয় সম্পর্কে যে পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ না করা হবেঃ কিভাবে তার জীববনকালকে অতিবাহিত করেছে; তার অর্জিত জ্ঞান অনুযায়ী কি আমল করেছে ; কোথা হতে তার ধন-সম্পদ উপার্জন করেছে ও কোন কোন খাতে ব্যয় করেছে এবং কি কি কাজে তার শরীর বিনাশ করেছে। সহীহ্‌, প্রাগুক্ত, তাখরীজ ইক্‌তিযাউল ইলমি আল-আমাল (১৫/১)।

【2】

হিসাব-নিকাশ ও প্রতিশোধ প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জান, দেউলিয়া কে? তারা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদের মধ্যে দেউলিয়া হচ্ছে সেই ব্যক্তি যার দিরহামও (নগদ অর্থ) নেই, কোন সম্পদও নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে দেউলিয়া যে কিয়ামাত দিবসে নামায, রোযা, যাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সাথে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত (হত্যা) করেছে, কাউকে মারধর করেছে, ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল হতে এ ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে, ও ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে সম্পূর্ণ বদলা (বিনিময়) নেয়ার আগেই তার সৎ আমল নিঃশেষ হয়ে গেলে তাদের গুনাহসমূহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সহীহ, সহীহাহ্‌ (৮৪৫), আহকামুল জানাইয (৪), মুসলিম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সেই বান্দার উপর আল্লাহ তা’আলা রাহমাত বর্ষণ করুন, যে তার কোন ভাইয়ের মান-সম্মান ও ধন-সম্পদের ব্যাপারে যুলুম করেছে। কিয়ামাত দিবসে এ ব্যাপারে তাকে পাকড়াও করার পূর্বেই যেন সে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। কারণ, সে স্থানে (আখিরাতে) দিরহাম, দীনারের (বিনিময় প্রদানের) ব্যবস্থার থাকবে না। সুতরাং তার কোন ভালো আমল থাকলে (যুলুমের পরিমাণ অনুযায়ী) তা নিয়ে যাওয়া হবে। আর ‍যদি কোন ভালো আমল না থাকে, তাহলে মাযলুমদের গুনাহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। সহীহ্, সহীহাহ্ (৩২৬৫)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে (কিয়ামাত দিবসে) সকল হকদারের হক আদায় করা হবে। এমনকি শিংবিহীন বকরীর পক্ষে শিংবিশিষ্ট বকরীর (গুতোর) বদলা নেওয়া হবে। সহীহ, সহীহাহ্ (১৫৮৮)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী মিকদাদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামাত দিবসে সূ্র্যকে মানুষের এত নিকটে আনা হবে যে, তা মাত্র এক অথবা দু’মাইল ব্যবধানে থাকবে। সুলাইম ইবনু আমির (রাহঃ) বলেন, আমি জানি না উক্ত মাইল দ্বারা যামীনের দূরত্ব জ্ঞাপক মাইল বুঝানো হয়েছে, না চোখের সুরমা লাগানোর শলাকা বুঝানো হয়েছে। তিনি বলেন, সূর্য তাদের গলিয়ে দেবে। তারা তখন নিজেদের আমল (গুনাহ) অনুপাতে ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে। আর তা কারো পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো মুখ পর্যন্ত ঘাম পৌঁছে লাগামের মতো বেষ্টন করবে। এই কথা বলার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত দ্বারা মুখের দিকে ইশারা করেন, অর্থাৎ লাগামের মতো বেষ্টন করাকে বুঝালেন। সহীহ, সহীহাহ্‌ (১৩৮২), মুসলিম। ইবনু উমার (রাঃ) হাম্মাদ (রাহঃ) বলেন, আমাদের নিকট এ হাদীসটি মারফূভাবে অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। “মানুষ যেদিন জগতসমূহের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে” (সূরাঃ মুতাফফিফীন-৬) আয়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মানুষ কানের অর্ধেক পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকাবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকবে। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪২৭৮), বুখারী, মুসলিম।

【3】

হাশরের ময়দানের অবস্থা

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে মানুষকে খালি পায়ে, উলঙ্গ শরীরে ও খাৎনাবিহীন অবস্থায় হাযির করা হবে, যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টি করা হয়েছিল। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ “আমি যেভাবে প্রথমবার সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবেই আবার সৃষ্টি করব। প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা আমার কর্তব্য, আমি তা পালন করবই” (সূরাঃ আম্বিয়া-১০৪)। ইবরাহীম (আঃ)-কে সকল সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম পোশাক পরিধান করানো হবে। আমার সাহাবীগণের মধ্যকার কিছু সংখ্যক লোককে বন্দী করে ডানে-বামে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে প্রভু! এরা তো আমার অনুসারী। আমাকে তখন বলা হবে, আপনি তো জানেন না, আপনার পরে এরা যে কি সব বিদ’আতী কাজ করেছে। আপনি তাদের কাছ থেকে পৃথক হওয়ার পর হতে তারা পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে আরম্ভ করেছে। তখন আমি আল্লাহ্‌ তা’আলার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাহ [ঈ’সা (আঃ)-এর] মতো বলব, (সূরাঃ মাইদা-১১৮): “আপনি যদি তাদের শাস্তি দেন তাহলে তারা তো আপনারই বান্দাহ, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন তাহলে নিশ্চয়ই আপনি মহা পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়”। সহীহ, বুখারী, মুসলিম। বাহ্য ইবনু হাকীম (রাহঃ) হতে তার বাবা, অতঃপর তার দাদা তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ (কিয়ামাত দিবসে) তোমাদের পায়ে হাঁটিয়ে, সাওয়ারী হিসেবে এবং কিছু সংখ্যককে মুখের উপর উপুর করে টেনে হাযির করা হবে। সহীহ, ফাযাইলুশ্‌শাম (১৩)।

【4】

কিয়ামাত ও মর্মষ্পর্শী বিষয়

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন মানুষকে তিনবার হাযির করা হবে। দুইবারের হাযিরা হবে ঝগড়া-বিবাদ ও বিভিন্ন ওযর-আপত্তি শুনানী প্রসঙ্গে এবং তৃতীয়বারের হাযিরাতে প্রত্যেকের (নিজ নিজ) আমলনামা উড়তে থাকবে। কেউ তা পাবে ডান হাতে আর কেউ পাবে বাম হাতে। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৪২৭৭)

【5】

সহজ হিসাব

আয়েশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যার হিসাব গ্রহণ করা হবে সে তো ধ্বংস হয়ে যাবে। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল (স্বল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম)! আল্লাহ্‌ তা’আলা তো বলেছেন, “যে ব্যক্তির ডান হাতে তার আমলনামা প্রদান করা হবে, খুব সহজেই তার হিসাব-নিকাশ হবে” (সূরাঃ ইনশিকাক-৭-৮)। তিনি বললেনঃ সেটা তো শুধু নামমাত্র উপস্থাপন করা। সহীহ, যিলালুল জান্নাত (৮৮৫), বুখারী, মুসলিম।

【6】

দুনিয়ার সঞ্চিত সম্পদ পরকালে ব্যয় করার আকাঙ্খা

আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামাতের দিন আদম-সন্তানকে ভেড়ার (সদ্য প্রসূত) বাচ্চার ন্যায় অবস্থায় হাযির করা হবে। তারপর তাকে আল্রাহ তা’আলার সামনে দাঁড় করানো হবে। আল্লাহ তা’আলা তাকে প্রশ্ন করবেন, আমি তোমাকে ক্ষেত-খামার, দাস-দাসী ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দান করেছিলাম এবং আরো বিভিন্ন ধরণের অনুগ্রহ দিয়েছিলাম। তুমি কি আমল করে এসেছ? সে বলবে, হে রব! আমি সেগুলো সঞ্চয় করে রেখেছি, বহু গুণে বৃদ্ধি করেছি এবং যা ছিল তার চাইতে অনেক বাড়িয়ে রেখে এসেছি। আমাকে একটুখানি ফেরত যেতে দিন, আমি সেগুলো আপনার নিকটে নিয়ে আসব। তিনি তাকে বলবেন, তুমি কি কি আমল করে এসেছ আগে তা আমাকে দেখাও। অতঃপর দেখা যাবে সে এমন এক বান্দা, যে কোন ভাল কাজই করে নাই, ফলে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। যঈফ, তা’লীকুর রাগীব (৩/১১) আবূ হুরাইরা (রাঃ) ও আবূ সাঈদ (রাঃ) তারা দুজনেই বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন কোন বান্দাকে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে প্রশ্ন করবেন, আমি কি তোমাকে কান, চোখ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দেইনি এবং তোমার অধীনে জীব-জন্তু ও খেত-খামার দেইনি? তোমাকে তো স্বাধীনভাবে ছেড়ে রেখেছিলাম সর্দারী করতে এবং মানুষের নিকট হতে এক-চতুর্থাংশ গ্রহণ করতে (জাহিলী যুগের একটি রীতি)। তুমি কি ধারণা করতে যে, এই দিনে আমার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে? সে বলবে, না। তিনি তাকে বলবেন, তুমি যেভাবে আমাকে ভুলে গিয়েছিলে, আমিও আজ তোমাকে ভুলে গেলাম। সহীহ, যিলালুল জান্নাত (৬৩২), মুসলিম।

【7】

পৃথিবী তার বৃত্তান্ত পেশ করবে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “যে দিন পৃথিবী তার বৃত্তান্ত পরিবেশন করবে” (সূরাঃ যিলযাল-৪) তিলাওয়াত করে প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জান পৃথিবীর পরিবেশনযোগ্য বৃত্তান্ত কি? সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তার বৃত্তান্ত এই যে, সে সমস্ত নারী-পুরুষের সেইসব কাজের সাক্ষ্য দিবে, যা তারা তার উপরে করেছে। সে বলবে, অমুক দিন অমুক ব্যক্তি এই এই কাজ করেছে। এভাবে সে সাক্ষ্য দেবে। তিনি বললেন, এটাই হবে পৃথিবীর পেশকৃত বৃত্তান্ত। দুর্বল সনদ

【8】

শিঙ্গার ফুৎকার প্রসঙ্গে

আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক গ্রাম্য লোক নাবীর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট এসে প্রশ্ন করল, শিঙ্গা কি? তিনি বললেনঃ এটা একটা শিং যাতে ফুৎকার দেয়া হবে। সহীহ, সহীহাহ্‌ (১০৮০)। আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কিভাবে নিশ্চিন্তে আরাম করতে পারি, অথচ শিঙ্গাওয়ালা (ফেরেশতা ইসরাফীল আ:) মুখে শিঙ্গা নিয়ে অধীর আগ্রহে কান পেতে শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার নির্দেশ শোনার অপেক্ষায় আছেন, কখন ফুঁ দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হবে, আর অমনি তিনি ফুঁ দিবেন। বিষয়টি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের নিকট অত্যন্ত ভীতিকর মনে হলো। তখন তিনি তাদেরকে বললেনঃ তোমরা বল যে, আমাদের জন্য আল্লাহ্‌ তা’আলাই যথেষ্ট, তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধানকারী। আমরা আল্লাহ্‌ তা’আলার উপর ভরসা করলাম। সহীহ, সহীহাহ্‌ (২০৭৯)।

【9】

পুলসিরাতের অবস্থা

মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পুলসিরাত পার হওয়ার সময় মু’মিনদের নিদর্শন হবেঃ হে প্রভু! রক্ষা কর রক্ষা কর। যঈফ, যঈফা (১৯৭৩) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট নিবেদন করলাম যে, তিনি যেন কিয়ামাত দিবসে আমার জন্য সুপারিশ করেন। তিনি বললেন, ঠিক আছে আমি সুপারিশ করব। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আপনাকে কোথায় খোঁজ করব? তিনি বললেন, তুমি সর্বপ্রথম আমাকে পুলসিরাতের সামনে খোঁজ করবে। আমি বললাম, পুলসিরাতে যদি আপনাকে না পাই? তিনি বললেন, তাহলে মীযানের ঐখানে খুঁজবে। আমি আবার বললাম, মীযানের ঐখানেও যদি আপনাকে না পাই? তিনি বললেন, তাহলে হাওযে কাওসারের সামনে খুঁজবে। আমি এ তিনটি জায়গায় যে কোন একটিতে অবশ্যই উপস্থিত থাকব। সহীহ, মিশকাত (৫৫৯৫), তা’লীকুর রাগীব (৪/২১১)।

【10】

শাফা’আত প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে গোশত আনা হলো। তারপর তাঁকে সামনের একটি রান উঠিয়ে দেয়া হলো। তিনি তা খুবই পছন্দ করতেন- আর তিনি তা দাঁত দিয়ে ছিড়ে ছিড়ে খেতে থাকলেন। তারপর তিনি বললেনঃ কিয়ামাত দিবসে আমিই হবো সকল মানুষের নেতা। তোমরা কি জান এর কারণ কি? আল্লাহ্‌ তা’আলা সেদিন পূর্বেকার ও পরের সকল মানুষকে এক জায়গায় সমবেত করবেন। একজনের আওয়াজই সবার কাছে পৌছে যাবে এবং সবাই একজনের দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকবে। সূর্য তাদের খুব নিকটে এসে যাবে। মানুষ সীমাহীন দুর্ভোগ ও সামর্থ্যের অতীত দুর্ভাবনায় পড়ে যাবে এবং ধৈর্য্যহারা হয়ে পড়বে। তারা পরস্পরকে বলবে, তোমরা কি এ দুঃসহ বিপদ দেখতে পাচ্ছ না? তোমাদের প্রভুর নিকট তোমাদের জন্য সুপারিশ করতে পারে এরূপ কাউকে খুঁজে দেখছ না কেন? লোকেরা একে অপরকে বলবে, তোমাদের উচিত আদম (আ:)-এর কাছে যাওয়া। অতএব, তারা আদম (আ:)-এর নিকট গিয়ে বলবে, আপনি তো মানব জাতির আদি পিতা। আল্লাহ্‌ তা’আলা আপনাকে তাঁর নিজ হাতে বানিয়েছেন এবং আপনার মধ্যে তাঁর সৃষ্ট রূহ্‌ ফুঁকে দিয়েছেন। তারপর ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলে তারা আপনাকে সাজদাহ করেছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না আমরা কি অবস্থার মধ্যে পতিত আছি? আপনি কি লক্ষ্য করছেন না আমরা দুঃখ-দুর্দশার শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি! আদম (আ:) তাদেরকে বলবেন, আমার প্রভু তো আজ এতই ক্রোধান্বিত হয়েছেন যেরূপ ইতিপূর্বে আর কখনো হননি এবং পরেও কখনো হবেন না। তিনি আমাকে একটি গাছের ব্যাপারে (তার ফল খেতে) নিষেধ করেছিলেন। আমি সেটা অমান্য করেছি। নাফসী, নাফসী, নাফসী (অর্থাৎ- আমারই তো কোন উপায় দেখছি না)। তোমরা অন্য কারো নিকটে যাও। তোমরা বরং নূহ্‌ (আ:)-এর নিকট যাও। তারা তখন নূহ্‌ (আ:)-এর নিকট গিয়ে বলবে, হে নূহ! আপনি তো দুনিয়াবাসীদের জন্য প্রথম রাসূল। আল্লাহ্‌ তা’আলা আপনাকে ‘আব্‌দ শাকূর’ (কৃতজ্ঞ বান্দাহ) উপাধি দিয়েছেন, আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না যে, আমরা কি অবস্থায় পতিত আছি, আপনি কি লক্ষ্য করছেন না আমরা দু:খ-দুর্দশার শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি! নূহ্‌ (আ:) তাদেরকে বলবেন, আজ আমার প্রতিপালক এতই রাগান্বিত হয়েছেন যেমনটি এরপূর্বে আর কখনো হননি এবং পরেও হবেন না। আমাকে একটি দু’আ করার অধিকার দেয়া হয়েছিল (যে উদ্দেশ্যেই দু’আ করব আল্লাহ্‌ তা’আলা তা ক্ববূল করবেন বলে অঙ্গীকার ছিল)। কিন্তু আমি আমর উম্মাতের বিরুদ্ধে সেই দু’আ করেছি। নাফসী, নাফসী, নাফসী। তোমরা অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা বরং ইবরাহীম (আ:)-এর নিকট যাও। তারা ইবরাহীম (আ:)-এর নিকট গিয়ে বলবে, হে ইবরাহীম ! আপনি আল্লাহ্‌র নবী এবং দুনিয়াবাসীদের মধ্যে তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু। আমরা কি অবস্থার মধ্যে পতিত আছি আপনি দেখতে পাচ্ছেন না? আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। তিনি বলবেন, আমার পরোয়ারদিগার আজ এতই রাগান্বিত হয়েছেন, যেমনটি এরপূর্বে তিনি আর কখনো হননি এবং পরেও কখনো হবেন না। আমি তিনটি মিথ্যা কথা বলেছি। আবূ হাইয়্যান তাঁর বর্ণিত হাদীসে সেগুলো উল্লেখ করেছেন। নাফসী, নাফসী, নাফসী (আমি আজ আমার নিজের চিন্তায় অস্থির)। তোমরা বরং অন্য কারো নিকট যাও, তোমরা মূসা (আ:)-এর নিকট যাও। তখন তারা মূসা (আ:)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলবে, হে মূসা ! আপনি তো আল্লাহ্‌র রাসূল, আল্লাহ্‌ তাঁর রিসালাত ও বাক্যালাপ দ্বারা আপনাকে মানুষের উপর মর্যাদা প্রদান করেছেন। আপনি কি আমাদের প্রাণান্তকর এ করুণ অবস্থা দেখছেন না? আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। তিনি বলবেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা তো আজ এতই ক্রোধান্বিত হয়েছেন, যেমনটি এরপূর্বে তিনি আর কখনো হননি আর পরেও হবেন না। আমি তো এক লোককে হত্যা করেছি। অথচ তাকে হত্যার নির্দেশ আমাকে প্রদান করা হয়নি। নাফসী, নাফসী, নাফসী। তোমরা বরং অন্য কারো নিকট যাও। তোমরা ঈসা (আ:)-এর নিকট যাও। তখন ঈসা (আ:)-এর নিকট গিয়ে তারা বলবে, হে ঈসা ! আপনি আল্লাহ্‌র রাসূল, তাঁর একটি বাণী যা তিনি মারইয়ামের গর্ভে নিক্ষেপ করেছেন এবং তাঁর সৃষ্ট আত্মা। আপনি দোলনায় থাকাবস্থায় মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আপনি কি আমাদের এ করুণ অবস্থা দেখছেন না? আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। তখন ঈসা (আ:) বলবেন, আমার পরোয়ারদিগার আজ এতই রাগান্বিত হয়েছেন, যেমনটি এর আগে তিনি আর কখনো হননি এবং পরে কখনো হবেন না। তিনি কোন গুনাহের কথা উল্লেখ করবেন না। তিনি বললেন, নাফসী, নাফসী, নাফসী। তোমরা অন্য কারো নিকট যাও। তোমরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যাও। তখন তারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির হয়ে বলবে, হে মুহাম্মাদ ! আপনি আল্লাহ্‌র রাসূল, নাবীগণের মধ্যে সর্বশেষ নাবী, আপনার পূর্বাপর সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি অবস্থায় পতিত আছি! আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। তখন আমি রাওয়ানা হয়ে আরশের নীচে উপস্থিত হবো। তারপর আমার প্রভুর উদ্দেশ্যে সাজদায় লুটিয়ে পড়ব। তারপর আল্লাহ তা’আলা আমার জন্য তাঁর প্রশংসা ও সর্বোত্তম গুণগানের এমন কিছু উন্মুক্ত করে দিবেন যা আমার পূর্বে আর কারো জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। তারপর বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! তুমি মাথা উঠাও এবং আবেদন কর, তোমার আবেদন পূরণ করা হবে, সুপারিশ কর তোমার সুপারিশ ক্ববূল করা হবে। তারপর আমি মাথা তুলে বলব, হে পরোয়ারদিগার! আমার উম্মাত, হে পরোয়ারদিগার! আমার উম্মাত (তাদের রক্ষা করুন)। তখন আল্লাহ্‌ তা’আলা বলবেন, হে মুহাম্মাদ! তোমার উম্মাতের মধ্যে যাদের কোন হিসাব-নিকাশ নেই তাদেরকে তুমি জান্নাতের ডান দরজা দিয়ে প্রবেশ করাও। অধিকন্তু তারা অন্য মানুষের সাথে শরীক হয়ে অন্যান্য দরজা দিয়ে প্রবেশ করার অধিকারও পাবে। তারপর তিনি বললেন, যার হাতে আমার প্রাণ সেই মহান সত্তার শপথ! জান্নাতের দরজার দুটি চৌকাঠের মধ্যকার ব্যবধান মক্কা ও হাজার এবং মক্কা ও বুসরার মধ্যকার ব্যবধানের সমান। সহীহ, তাখরীজ তাহাভীয়া (১৯৮), যিলালুল জান্নাত (৮১১)।

【11】

কাবীরা গুনাহের অপরাধীদের জন্য শাফায়াত

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে আমার শাফা’আত রয়েছে কাবীরা গুনাহের অপরাধীদের জন্য। সহীহ, মিশকাত (৫৫৯৯), আয্‌যিলাল (৮৩১-৮৩২), রাওযুন নাযীর (৬৫)। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে কাবীরা গুনাহগারদের জন্যই আমার সুপারিশ। সহীহ, প্রাগুক্ত।

【12】

সত্তরহাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে

আবূ উমামা (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আমার প্রভূ আমার সাথে অঙ্গীকার করেছেন যে, তিনি আমার উম্মাতের মধ্যে সত্তরহাজার লোককে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যাদের কোন হিসাবও নেয়া হবে না এবং শাস্তিও প্রদান করা হবে না। আর প্রতি হাজারের সাথে থাকবে আরো সত্তরহাজার। আর আমার পরোয়ারদিগারের দুই হাতের মুঠির তিনমুঠি পরিমাণ। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪২৮৬)। আবদুল্লাহ ইবনু শাকীক্ব (রাহঃ) তিনি বলেন, আমি একটি দলের সাথে ইলিয়া (বাইতুল মাকদিসের একটি নগর) নামক জায়গায় অবস্থান করছিলাম। দলের একজন লোক বলল, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ আমার উম্মাতের একজন লোকের সুপারিশে তামীম বংশের সকল ব্যক্তির চেয়ে বেশি সংখ্যক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশে? তিনি বললেন, হ্যাঁ আমি ছাড়াই। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর বর্ণনাকারী উঠে দাঁড়ালে আমি প্রশ্ন করলাম, ইনি কে? লোকেরা বলল, ইনি হলেন ইবনু আবুল জায’আ (রাঃ)। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪৩১৬)।

【13】

আমি শাফা’আতের প্রস্তাবই গ্রহণ করলাম

হাসান বাসরী (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) কিয়ামাতের দিন রবীআ ও মুদার গোত্রের সমসংখ্যক লোকের জন্য সুপারিশ করবে। দুর্বল সনদ, মুরসাল আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে কেউ বিরাট জনগোষ্ঠীর জন্য সুপারিশ করবে, কেউ একটি গোত্রের জন্য, কেউ একটি ছোট দলের জন্য, কেউ একজন লোকের জন্য সুপারিশ করবে এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। যঈফ, মিশকাত (৫৬০২) আওফ ইবনু মালিক আল-আশজাঈ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার পক্ষ হতে একজন আগন্তুক আমার সামনে আসলেন এবং দুইটি প্রস্তাবের যে কোন একটি গ্রহণের ইখতিয়ার (স্বাধীনতা) দিলেনঃ (১) হয় আমার উম্মাতের অর্ধেক সংখ্যক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে অথবা (২) আমার সুপারিশের সুযোগ থাকবে। আমি সুপারিশ করাকেই বেছে নিলাম। আর তা হবে সেই সকল ব্যক্তির জন্য যে সকল ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার সাথে কোন শরীক না করে মৃত্যুবরণ করেছে। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪৩১৭)।

【14】

হাওযে কাওসারের বর্ণনা

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার হাওযে কাওসারের পাশে আকাশের তারকার সমসংখ্যক পানপাত্র রয়েছে। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪৩০৪), বুখারী, মুসলিম। সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক নাবীর জন্য একটি করে হাওয হবে। আর এ নিয়ে তাঁরা পরস্পর গর্ববোধ করবেন যে, কার হাওযে কত বেশি লোক অবতরণ করবে। আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি যে, আমার হাওযেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোক আসবে। সহীহ, তাখরীজু তাহাভীয়া (১৯৭), মিশকাত (৫৫৯৪), সহীহাহ্‌ (১৫৮৯)।

【15】

হাওযের পানপাত্রের বর্ণনা

আবূ সাল্লাম আল-হাবশী (রাহঃ) তিনি বলেন, উমার ইবনু আবদুল আযীয (রাহঃ) এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করেন আমাকে তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। সে একটি খচ্চরের পিঠে আমাকে বহন করিয়ে নিয়ে চললো। তারপর তিনি (আবূ সাল্লাম) খালীফার দরবারে হাযির হয়ে বললেন, আমীরুল মু’মিনীন! আমাকে এই খচ্চরের পিঠে সাওয়ার হয়ে আসতে খুবই কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তিনি বললেন, হে আবূ সাল্লাম! আমি আপনাকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে এখানে আনিনি, বরং আমি শুনতে পেলাম, আপনি নাকি হাওযে কাওসার সম্পর্কে সাওবান (রাঃ)-এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন? অতএব, আমি পছন্দ করলাম যে, আপনি আমার সামনে তা বর্ণনা করবেন। আবূ সাল্লাম বলেন, সাওবান (রাঃ) আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইয়ামান দেশের আদান হতে সিরিয়ার অন্তর্গত বালকা শহরের আম্মান নামক জায়গার দূরত্বের সমান হবে আমার হাওযের দৈর্ঘ্য-প্রস্থের পরিমান। এর পানির রং দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্টি এবং পানপাত্রের সংখ্যা হবে আকাশের তারকার সমসংখ্যক। যে ব্যক্তি তা হতে এক ঢোক পানি পান করবে, সে আর কখনো পিপাসার্ত হবে না। সর্বপ্রথম এর পানি পানের সৌভাগ্য অর্জন করবে দরিদ্র মুহাজিরগণ, যাদের মাথার চুল উষ্কখুষ্ক, পোশাক ধূলিমলিন, যারা ধনীর দুলালীদের বিয়ে করেননি এবং যাদের জন্য বন্ধ দরজা খোলা হতো না। উমার (রাহঃ) বলেন, কিন্তু আমি তো সুখ-স্বাচ্ছন্দে লালিতা-পালিতাকে বিয়ে করেছি, আমার জন্য বন্ধ দরজা খোলা হয়, আমি খালীফা আবদুল মালিকের আদরের দুলালী ফাতিমাকে বিয়ে করেছি। আমার মাথার চুল ধূলিমলিন হওয়ার আগ পর্যন্ত তা ধুবো না এবং আমার পরনের জামা ময়লাযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ধুবো না। হাদীসের মারফূ অংশটুকু সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪৩০৩)। আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! হাওযে কাওসারের পানপাত্রের সংখ্যা কত হবে? তিনি বললেনঃ সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! অন্ধকার রাতের আকাশের গ্রহ ও তারকারাজির সংখ্যার চেয়েও বেশি হবে এর পানপাত্রের সংখ্যা। আর সেগুলো হবে জান্নাতের পাত্র। তা হতে যে লোক একবার পান করবে, সে তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। এর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ সমান যা সিরিয়ার অন্তর্গত ‘আম্মান’ হতে ইয়ামানের ‘আইলার’ (দূরত্বের) সমান। এর পানি হবে দুধের চেয়েও সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি। সহীহ, আয্‌যিলাল (৭২১), মুসলিম।

【16】

এই উম্মাতের সত্তরহাজার বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিরাজের রাত্রিতে যখন ঊর্ধারোহণ করলেন, তখন তিনি নবী ও নাবীগণের দলের পাশ দিয়ে যান। তিনি তখন দেখতে পেলেন তাদের সাথে আছে তাদের উম্মাতগণ। কোথাও বা একজন নবী ও তাঁর সাথে আছে ছোট একটি দল। আর কোন কোন নাবীর সাথে কেউ নেই। অবশেষে তিনি একটি বিরাট দলের পাশদিয়ে এগিয়ে গেলেন। তিনি বলেনঃ আমি প্রশ্ন করলাম, এ বিরাট দলটি কারা? বলা হলো, মূসা (আ:) ও তাঁর উম্মাতগণ। আপনি আপনার মাথা তুলে দেখুন। তিনি বলেন, তখন আমি মাথা তুলে দেখলাম, অসংখ্য মানুষের একদল যারা আকাশের এই দিগন্ত ও সেই দিগন্ত পূর্ণ করে আছে। বলা হলো, এরা আপনার উম্মাত। আপনার উম্মাতের মধ্যে এরা ছাড়াও সত্তরহাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। একথা বলার পর তিনি ঘরের ভিতর ঢুকলেন, কিন্তু এ ব্যাপারে তারা তাকে প্রশ্ন করেনি এবং তিনিও এর ব্যাখ্যা করে বলেননি। তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি শুরু করলেন। কেউ বলেন, আমরাই সেই দলের, যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কেউ বলেন, তারা আমাদের সন্তান যারা ইসলামী ফিতরাতে জন্মগ্রহণ করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইতিমধ্যে বেরিয়ে এসে বলেনঃ যারা গায়ে গরম লোহার দাগ দেয় না, ঝাড়ফুঁক করে না, ফাল অর্থ্যাৎ শুভাশুভ লক্ষণ নির্ণয় করে না এবং তাদের প্রভুর উপর পূর্ণ নির্ভরশীল থাকে, তারা হবে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশকারী দল। একথা শুনার পর উক্কাশা ইবনু মিহসান (রাঃ) দাঁড়িয়ে বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি কি সেই দলের অন্তর্ভূক্ত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর আরেকজন এসে বলল, আমিও কি সেই দলের অন্তর্ভূক্ত? তিনি বললেন, উক্কাশা তোমার অগ্রবর্তী হয়ে গেছে। সহীহ, বুখারী, মুসলিম।

【17】

কতই না নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা দ্বীনের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে যে অবস্থায় ছিলাম বর্তমানে তো সেগুলো দেখতেই পাচ্ছি না। (বর্ণনাকারী বলেন) আমি বললাম, বর্তমানে নামাযের অবস্থা কি? তিনি বললেন, তোমরা কি নামাযের ভিতর এমন সব কাজ কর নি যা তোমরা জান (প্রতিটি আমলে নতুন নতুন নিয়ম প্রবেশ করেছে)? সহীহ, বুখারী (৫২৯, ৫৩০)। আসমা বিনতু উমাইস আল-খাসআমিয়্যা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যে নিজেকে বড় মনে করে এবং অহংকার করে আর আল্লাহ্ তা’আলাকে ভুলে যায়। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ, যে যালিম হয়ে যুলুম করে এবং পরাক্রমশালী আল্লাহ্ তা’আলাকে ভুলে যায়। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ, যে সত্যবিমুখ হয়ে অনর্থক কাজে লিপ্ত হয় এবং গোরস্থান ও মাটিতে মিশে যাওয়ার কথা ভুলে যায়। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ, যে বিদ্রোহী হয়ে অবাধ্যতা করে এবং তার সূচনা ও পরিণতিকে ভুলে যায়। আর সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যে দ্বীনের বিনিময়ে দুনিয়া হাসিল করার পথ অবলম্বন করে। আর সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যে সন্দেহজনক বিষয়ের উপর আমল করে দ্বীনের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করে। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যে লালসার গোলাম হয়ে যায়, লালসা তাকে টেনে নিয়ে যায়। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যাকে তার প্রবৃত্তি ভুল পথে পরিচালিত করে। সেই ব্যক্তি কতই না খারাপ যাকে প্রবৃত্তির চাহিদা লাঞ্ছিত করে। যঈফ, মিশকাত তাহকীক ছানী (৫১১৫), যঈফা (২০২৬) যিলাল (৯-১০)

【18】

মু’মিনকে সাহায্য করার সাওয়াব

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ঈমানদার ব্যক্তি কোন ক্ষুধার্ত ঈমানদার ব্যক্তিকে খাদ্য দান করে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন। যে মু’মিন ব্যক্তি কোন তৃষ্ণার্ত মু’মিন ব্যক্তিকে পানি পান করাবে কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে সীলমোহর করা খাঁটি “রাহীক মাখতূম” পান করাবেন। যে মু’মিন ব্যক্তি কোন বস্ত্রহীন মু’মিন ব্যক্তিকে পোশাক দান করে, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতে সবুজ পোশাক পরাবেন। যইফ, মিশকাত (১৯১৩), যঈফ আবূ দাঊদ (৩০০) আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক ভয় পায় সে ভোররাতেই যাত্রা শুরু করে, আর ভোররাতেই যে লোক যাত্রা শুরু করে, সে গন্তব্য স্থলে পৌঁছতে পারে। জেনে রাখ, আল্লাহ তা‘আলার পণ্য খুবই দামী। জেনে রাখ, আল্লাহ তা‘আলার পণ্য হল জান্নাত। সহীহ, সহীহাহ্‌ (৯৫৪, ২৩৩৫), মিশকাত তাহকীক ছানী (৫৩৪৮)।

【19】

বৈধ অক্ষতিকর বিষয় ছেড়ে দেওয়ার ফাযীলত

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী আতিয়্যা আস-সাদী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বান্দা ক্ষতিকর কাজে জড়িয়ে পড়ার ভয়ে বৈধ অক্ষতিকর বিষয় না ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত মুত্তাকীদের পর্যায়ে উন্নীত হতে পারবে না। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৪২১৫)

【20】

আমার কাছে এলে তোমাদের যে অবস্থা হয় তা বহাল থাকলে

হানযালা আল-উসাইদী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আমার সামনে এসে যেরূপ অবস্থায় থাক, সদা-সর্বদা যদি এভাবেই থাকতে, তাহলে নিশ্চয়ই ফেরেশতারা তাদের ডানা দিয়ে তোমাদের উপর ছায়া বিস্তার করে রাখত। হাসান সহীহ, সহীহাহ্‌ (১৯৭৬), মুসলিম অনুরূপ।

【21】

প্রতিটি জিনিসের উত্থান-পতন আছে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সকল কাজের পিছনে থাকে প্রেরণা ও উদ্দীপনা, আর উদ্দীপনার পিছনেই লুকিয়ে থাকে অলসতা ও কর্মবিমুখতা। কাজেই যে লোক সোজা পথে চলে এবং নিজেকে মাঝামাঝি পর্যায়ে সোজাভাবে কাজে অটল রাখতে পারে তার সফলতা অর্জনের আশা করতে পার। আর যদি তার দিকে আঙ্গুলে ইঙ্গিত করা হয় (লোক দেখানো আমল করলে) তাহলে তাকে সফলকাম ব্যক্তিদের মধ্যে গন্য করো না। হাসান, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৫৩২৫), তা’লীকুর রাগীব (১/৪৬), আয্‌যিলাল (১/২৮)।

【22】

মানুষ কামনা-বাসনা ও বিপদাপদে বেষ্টিত

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, কোন একদিন আমাদেরকে (বুঝানোর) উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বর্গাকৃতির চতুর্ভুজ আঁকলেন, তারপর এর মাঝ বরাবর একটি লম্বারেখা টানলেন, তারপর একটি লম্বারেখা টানলেন চতুর্ভুজের বাইরে দিয়ে, তারপর মাঝের লম্বারেখার চারিদিকে অনেকগুলো রেখা টানলেন এবং বললেনঃ এটি হলো আদম-সন্তান এবং বেষ্টনী হলো তার জীবনকালের সীমা, যা তাকে বেষ্টন করে রেখেছে। মাঝের লম্বারেখাটি হলো মানুষ, এর চারপাশের রেখাসমূহ হলো তার বিপদাপদ। এর একটি হতে সে মুক্তি পেলে অন্যটি তাকে দংশন করে। আর বাইরের রেখাটি হলো তার কামনা-বাসনা। সহীহ, বুখারী, মুসলিম। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আদম-সন্তান বৃদ্ধ হওয়ার পরেও তার দুটি স্বভাব যুবকই থাকেঃ সম্পদের লোভ ও বেঁচে থাকার লালসা। সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪২৩৪), বুখারী, মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনুশ শিখখীর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আদম-সন্তানকে নিরানব্বইটি (অসংখ্য) বিপদাপদ দ্বারা বেষ্টন করেই সৃষ্টি করা হয়। বিপদসমূহ অতিক্রান্ত হলেও সে বার্ধক্যে উপনীত হয়। হাসান, ২০৫৮ নং হাদীসে পূর্বে উল্লেখ হয়েছে।

【23】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর কত সময় দরুদ পড়বে

উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) তিনি বলেন, রাতের দুই-তৃতীয়াংশ চলে যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুম থেকে জেগে দাঁড়িয়ে বলতেনঃ হে মানবগণ! তোমরা আল্লাহ্‌ তা’আলাকে স্মরণ কর, তোমরা আল্লাহ্‌ তা’আলাকে স্মরণ কর। কম্পন সৃষ্টিকারী প্রথম শিঙ্গাধ্বনি এসে পড়েছে এবং এর পরপর আসবে পরবর্তী শিঙ্গাধ্বনি। মৃত্যু তার ভয়াবহতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে, মৃত্যু তার ভয়াবহতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। উবাই (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি তো খুব অধিক হারে আপনার প্রতি দরুদ পাঠ করি। আপনার প্রতি দরুদ পাঠের জন্য আমি আমার সময়ের কতটুকু খরচ করবো? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ ইছা কর। আমি বললাম, এক-চতুর্থাংশ সময়? তিনি বললেন, তুমি যতটুকু ইচ্ছা কর, তবে এর চেয়ে অধিক পরিমাণে পাঠ করতে পারলে এতে তোমারই মঙ্গল হবে। আমি বললাম, তাহলে আমি কি অর্ধেক সময় দরুদ পাঠ করবো? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ চাও, যদি এর চেয়েও বাড়াতে পারো সেটা তোমার জন্যই কল্যাণকর। আমি বললাম, তাহলে দুই-তৃতীয়াংশ সময় দরুদ পাঠ করবো? তিনি বললেন, তুমি যতক্ষণ ইচ্ছা কর, তবে এর চেয়েও বাড়াতে পারলে তোমারই ভাল। আমি বললাম, তাহলে আমার পুরো সময়টাই আপনার দরুদ পাঠে কাটিয়ে দিব? তিনি বললেনঃ তোমার চিন্তা ও কষ্টের জন্য তা যথেষ্ট হবে এবং তোমার পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে। হাসানঃ সহীহাহ (৯৫৪), ফাযলুস সালাত আল্লান্নাবী (১৩,১৪)।

【24】

আল্লাহ্‌কে যথাযথ লজ্জা করা

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্‌ তা’আলাকে যথাযথভাবে লজ্জা কর। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা তো নিশ্চয়ই লজ্জা করি, সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌ তা’আলার জন্য। তিনি বললেনঃ তা নয়, বরং আল্লাহ্‌ তা’আলাকে যথাযথভাবে লজ্জা করার অর্থ এই যে, তুমি তোমার মাথা এবং এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা সংরক্ষন করবে এবং পেট ও এর এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা হিফাযত করবে, মৃত্যুকে এবং এরপর পঁচে-গলে যাবার কথা স্মরণ করবে। আর যে লোক পরকালের আশা করে, সে যেন দুনিয়াবী জাঁকজমক পরিহার করে। যে লোক এইসকল কাজ করতে পারে সে-ই আল্লাহ্‌কে যথাযথভাবে লজ্জা করে। হাসানঃ রাওযুন নাযীর (৬০১), মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (১৬০৮)।

【25】

কোন ব্যক্তি বুদ্ধিমান

শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সেই ব্যক্তি বুদ্ধিমান যে নিজের নাফসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মৃত্যুর পরবর্তী সময়ের জন্য কাজ করে। আর সেই ব্যক্তি নির্বোধ ও অক্ষম যে তার নাফসের দাবির অনুসরণ করে আর আল্লাহ্ তা’আলার নিকটে বৃথা আশা পোষণ করে। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৪২৬০)

【26】

মৃত্যুকে অধিক পরিমাণ স্মরণ করার ফাযীলাত

আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযে (জানাযার) এসে দেখেন যে, কিছু লোক হাসাহাসি করছে। তিনি বললেন, ওহে! তোমরা যদি জীবনের স্বাদ ছিন্নকারী মৃত্যুকে বেশী বেশী মনে করতে তাহলে আমি তোমাদের যে অবস্থায় দেখছি অবশ্যই তা থেকে বিরত থাকতে। তোমরা জীবনের স্বাদ ছিন্নকারী মৃত্যুকে খুব বেশী স্মরণ কর। কেননা কবর প্রতিদিন দুনিয়াবাসীকে সম্বোধন করে বলতে থাকে, আমি প্রবাসী মুসাফিরের বাড়ী, আমি নির্জন কুটির, আমি মাটির ঘর, আমি পোকা-মাকড় ও কীট-পতঙ্গের আস্তানা। তারপর কোন ঈমানদারকে যখন দাফন করা হয় তখন কবর তাকে বলে, ‘মারহাবা, স্বাগতম’, আমার পিঠের উপর যত লোক চলাফেরা করেছে তাদের মধ্যে তুমিই ছিলে আমার নিকট সবচাইতে প্রিয়। আজ তোমাকেই আমার নিকট সমর্পণ করা হয়েছে, আর তুমি আমার কাছেই এসেছ। সুতরাং তুমি শীঘ্রই দেখবে যে, আমি তোমার সাথে কেমন সৌজন্যমূলক ব্যবহার করি। তারপর কবর তার জন্য দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত হয়ে যাবে এবং জান্নাতের দিকে তার একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। আর অপরাধী পাপী কিংবা কাফিরকে যখন দাফন করা হয় তখন কবর তাকে বলে, তোমার আগমন অশুভ ও তোমার জন্য স্বাগতম নেই। কেননা আমার উপর যত লোক চলাফেরা করেছে তাদের মধ্যে তুমিই ছিলে আমার নিকট সবচাইতে ঘৃণিত ও অপ্রিয়। আজ তোমাকেই আমার নিকট সমর্পণ করা হয়েছে এবং তুমি আমার নিকট ফিরে এসেছ। সুতরাং শীঘ্রই দেখবে, আমি তোমার সাথে কেমন জঘন্য আচরণ করি। এই বলে সে সংকুচিত হয়ে যাবে এবং তার উপর একেবারে চেপে যাবে, ফলে তার পাঁজরের হাড়সমূহ পরষ্পরের মধ্যে ঢুকে যাবে। রাবী বলেন, এ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক হাতের আংগুলসমূহ অপর হাতের আংগুলে ঢুকিয়ে বললেন, ‘এভাবে’। তিনি আরও বললেন, তার জন্য এরূপ সত্তরটি অজগর সাপ নিয়োগ করা হবে, তার মধ্যে একটি সাপও যদি যমিনে একবার ফুঁ দেয় তাহলে এতে কোন কিছুই উৎপন্ন হবে না। তারপর হিসাব-নিকাশ না হওয়া পর্যন্ত সে অজগরগুলো তাকে দংশন করতে থাকবে, খামচাতে থাকবে। রাবী (আবূ সাঈদ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কবর হল জান্নাতের উদ্যানসমূহের একটি উদ্যান, অথবা জাহান্নামের গর্তসমূহের একটি গর্ত। খুবই দুর্বল, যঈফা (৪৯৯০), স্বাদ কর্তনকারী অংশটুকু সহীহ, সহীহা (২৪০৯)

【27】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শরীরে চাটাইয়ের দাগ পড়া প্রসঙ্গে

ইবনু আব্বাস (রাঃ) উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ কোন এক সময় আমি রাসূল্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে দেখলাম একটি মাদুরের উপর তিনি কাৎ হয়ে শুয়ে আছেন। আমি তাঁর শরীরের পিঠের অংশে মাদুরের দাগ দেখতে পেলাম। সহীহঃ তাখরীজুত তারগীব (৪/১১৪), বুখারী, মুসলিম।

【28】

দুনিয়াবী আসক্তি ধ্বংসের কারণ হবে

‘আমর ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ ‘উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রাঃ)-কে (বাহরাইনে) প্রেরণ করেন। পরে তিনি বাহরাইন হতে কিছু ধন-দৌলত নিয়ে মাদীনায় ফিরে আসেন। আনসারগণ আবূ ‘উবাইদাহ (রাঃ)-এর ফিরে আসার খবর পেয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ফজরের নামাযে উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাজ আদায় শেষে মুসল্লীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসলেন। আনসারগন তখন তার নিকটে এসে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের দেখে সামান্য হেসে বললেন, আমার ধারনা তোমরা হয়তো শুনেছো যে, আবূ ‘ঊবাইদাহ কিছু ধন-সম্পদ নিয়ে ফিরে এসেছে। তারা বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তিনি বললেন তাহলে তোমরা সুখবর গ্রহণ কর। তোমারা যাতে সন্তুষ্ট হবে এমন বিষয়ের আশা পোষণ কর। আল্লাহ্‌র কসম! আমি তোমাদের গরিবী ও অভাব-অনটনের ভয় করি না, বরং ভয় করি পৃথিবীটা তোমাদের জন্য সম্প্রসারিত করা হবে, তোমরদের পূর্ববর্তীদের জন্য যেভাবে করা হয়েছিল। তারপর তোমরা পৃথিবীর প্রতি অনুরক্ত হয়ে যাবে, যেভাবে তারা অনুরক্ত হয়েছিল। ফলে পৃথিবী তোমাদের বিনাশ করে দিবে, যেভাবে তাদেরকে বিনাশ করেছিল। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৩৯৯৭), বুখারী, মুসলিম।

【29】

গ্রহণকারীর চাইতে প্রদানকারী উত্তম

হাকীম ইবনু হিযাম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আমি কিছু ধন-সম্পদ চাইলাম। তিনি আমাকে (সেটা) দিলেন। আমি আবার চাইলে তিনি আবারো দিলেন। আমি আবার চাইলে তিনি আবারো দিলেন, তারপর বললেন, হে হাকীম! ধন-দৌলত হলো সবুজ-শ্যামল ও লোভনীয় বস্তু। সুতরাং যে লোক এটাকে উদার মনে গ্রহণ করবে, তার জন্যে এতেই মঙ্গল ও রাহমত প্রদান করা হবে। আর যে লোক তা লোভাতুর মনোভাব নিয়ে গ্রহণ করবে, সে তাতে বারকাত ও মঙ্গল্প্রাপ্ত হবে না। সে এমন লোকের সাথে তুলনীয়, যে খাদ্য গ্রহণ করে প্রচুর কিন্তু তৃপ্ত হয় না। উপরের হাত (দাতার হাত) নিচের (প্রার্থনাকারীর) হাত হতে উত্তম। হাকীম (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সেই মহান সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্যসহকারে প্রেরণ করেছেন! আমি মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত আপনার পর আর কারো নিকট প্রার্থনা করে তার সম্পদে কমতি করবো না। তারপর আবূ-বাকর (রাঃ) তার আমলে হাকীম (রাঃ)-কে কিছু দেয়ার জন্য ডেকে পাঠান। কিন্তু তিনি তা নিতে অসম্মতি জানান। তারপর উমার (রাঃ)-ও তাকে কিছু দেয়ার জন্য ডেকে পাঠান। কিন্তু তিনি কিছু নিতে অসম্মতি প্রকাশ করেন। অতঃপর উমার (রাঃ) বলেন, হে মুসলিম সমাজ! আমি হাকীমের ব্যাপারে তোমাদেরকে সাক্ষী করছি যে, আমি তাকে গানীমাতের সম্পদ হতে তার প্রাপ্য উপস্থাপন করেছি, কিন্তু তিনি তা নিতে অসম্মতি জানান। তারপর হাকীম (রাঃ) মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরে আর কারো নিকট হতে কোন কিছুই নেননি। সহীহঃ বুখারী, মুসলিম। আবদুর রাহমান ইবনু আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আমাদেরকে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। আমরা এতে ধৈর্য ধারণ করেছি। তাঁর মৃত্যুর পরে সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও আরাম-আয়িশ দ্বারা আমাদেরকে পরীক্ষা করা হলে আমরা ধৈয্য ও সহনশীলতার স্বাক্ষর রাখতে পারিনি। সনদ সহীহ।

【30】

--

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তির একমাএ চিন্তার বিষয় হবে পরকাল, আল্লাহ্‌ সেই ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্রিত করে সুসংযত করে দিবেন, তখন তার নিকট দুনিয়াটা নগণ্য হয়ে দেখা দিবে। আর যে ব্যক্তির একমাএ চিন্তার বিষয় হবে দুনিয়া, আল্লাহ্‌ তা’আলা সেই ব্যক্তির গরীবি ও অভাব-অনটন দুচোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দিবেন। তার জন্য যা নির্দিষ্ট রয়েছে, দুনিয়াতে সে এর চাইতে বেশি পাবে না। সহীহঃ সহীহা (৯৪৯-৯৫০)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেনঃ হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদাতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা কর, আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব দূর করে দিব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুইহাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দিব এবং তোমার অভাব-অনটন রহিত করবো না। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪১০৭)।

【31】

ওজন করায় বারাকাত চলে গেল

আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর সময় আমাদের ঘরে সামান্য কিছু যব ছিল। আল্লাহ্‌ তা’আলার ইচ্ছানুযায়ী আমরা তা থেকে খেতে থাকলাম। আমি একদিন দাসীকে বললাম, এগুলো কৌটা দ্বারা পরিমাপ কর। সে তা পরিমাপ করল। এরপর কিছু দিনের মধ্যে তা শেষ হয়ে গেল। তিনি {আয়িশাহ (রাঃ)} বলেন, আমরা এগুলো এমনি রেখে দিলে (যদি না পরিমাপ করতাম) আরো অধিক দিন খেতে পারতাম। সহীহঃ বুখারী (৬৪৫১), মুসলিম (৮/২১৮) সংক্ষেপিত।

【32】

ছবিযুক্ত কাপড় দিয়ে পর্দা না বানানো

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের ঘরের দরজায় একটি পাতলা রঙিন পর্দা ঝুলানো ছিল, এতে কিছু ছবি ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা দেখে বললেনঃ এটা খুলে নামিয়ে ফেলো। যেহেতু, এটা আমাকে দুনিয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি [আয়িশাহ (রাঃ)] আরো বলেন, আমাদের নিকট একটি রেশমি বুটিদার চাদর ছিল, আমরা তা পরিধান করতাম। সহীহঃ গাইয়াতুল মারাম (১৩৬), মুসলিম। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘুমানোর বালিশটি ছিল চামড়ার তৈরি এবং তার ভিতর ছিল খেজুর গাছের ছাল-বাকলে ভরা। সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (২৮২), বুখারী, মুসলিম।

【33】

দানকৃত বস্তুই অবশিষ্ট থাকে

আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, কোন একদিন সাহাবীগণ একটি ছাগল যবেহ করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করলেন, এর আর কি বাকী আছে? তিনি [আয়িশা (রাঃ)] বললেন, এর কাঁধের অংশ ছাড়া আর কিছু বাকী নেই (দান করা হয়েছে)। তিনি বললেন, কাঁধ ব্যতীত সবটুকুই অবশিষ্ট রয়েছে (যা কিছু দান করা হয়েছে তা-ই আল্লাহ্‌র নিকট বাকী রয়েছে)। সহীহঃ সহীহা (২৫৪৪)।

【34】

রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দারিদ্র্যতা

আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের সদস্যগণ সারামাস যাবত এমন অবস্থায়ও কাটিয়েছি যে, চুলায় আগুন ধরাইনি। আমাদের খাবারের জন্য পানি ও খেজুর ব্যতীত আর কিছুই থাকতো না। সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (১১১), বুখারী, মুসলিম। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে আল্লাহ্‌র পথে যেভাবে ভয় দেখানো হয়েছে, আর কাউকে ঐভাবে ভয় দেখানো হয়নি। আমাকে আল্লাহ্‌ তা’আলার উদ্দেশ্যে যেভাবে যন্ত্রণা দেয়া হয়েছে আর কোন ব্যক্তিকে সেইভাবে যন্ত্রণা প্রদান করা হয়নি। আমার উপর দিয়ে ত্রিশটি দিবারাত্রি এমনভাবে অতিবাহিত হয়েছে যে, বিলালের বগলের মধ্যে রক্ষিত সামান্য খাদ্য ছিল আমার ও বিলালের সম্বল। তা ছাড়া এতটুকু আহারও ছিল না যা কোন প্রাণধারী প্রাণী খেয়ে বাঁচতে পারে। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (১৫১)। আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি এক শীতের দিনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘর হতে বের হলাম। এর পূর্বে আমি একটি লোমহীন চামড়া নিয়ে তা মাঝামাঝি কেটে গলায় ঢুকালাম এবং খেজুরের পাতা দিয়ে কোমরে শক্ত করে বাঁধলাম। আমি তখন খুব বেশী ক্ষুধার্ত ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরে কোন খাদ্যসামগ্রী থাকলে তা অবশ্য খেয়ে ফেলতাম। আমি খাদ্যের খোঁজে বের হয়ে গেলাম। তারপর জনৈক ইয়াহূদীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, সে তার বাগানে (কপিকল জাতীয়) চরকির সাহায্যে কুয়া হতে পানি তুলছিল। আমি প্রাচীরের একটি ছিদ্র দিয়ে তাকে দেখলাম। সে প্রশ্ন করল, হে বিদুঈন! কি চাও? তুমি প্রতি বালতির বিনিময়ে একটি করে খেজুর পাবে, আমার বাগানের পানি তুলে দিবে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ, দরজা খোল, আমি ভেতরে আসি। সে দরজা খুললে আমি ভেতরে গেলাম। তারপর সে একটি বালতি এনে দিল। আমি বালতি ভরে পানি উঠাতে লাগলাম আর সে প্রতি বালতিতে একটি করে খেজুর দিতে লাগল। অবশেষে খেজুরে আমার হাতের মুঠি ভরে গেল। আমি তখন বালতি রেখে দিয়ে বললাম, আমার যথেষ্ট হয়েছে। আমি খেজুরগুলো খেয়ে পানি পান করলাম এবং মসজিদে এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সেখানে পেলাম। যঈফ, তা’লীকুর রাগীব (৩/১০৯, ১১০) আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, একবার তাদেরকে দুর্ভিক্ষে পেল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে একটি করে খেজুর দেন। শাজ, ইবনু মাজাহ (৪১৫৭) জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, এক অভিযানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের তিনশত লোকের একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। আমরা আমাদের রসদপএ ও অন্যান্য সামগ্রী আমাদের কাঁধে নিয়ে যাত্রা শুরু করলাম। রসদ (পাথেয় ছিল খুবই সামান্য, কাজেই তাড়াতাড়ি তা) ফুরিয়ে গেল। এমনকি প্রতি জনের জন্য দিনশেষে একটি করে খেজুর নির্ধারিত হতো। তাকে বলা হলো, হে আবূ আব্দুল্লাহ! একজন লোকের জন্য সারাদিনে একটি খেজুরে কি হতো? তিনি বললেন, একটি খেজুরে কিছুই হতো না, কিন্তু আমরা একটির উপকারিতাও তখন বুঝতে পারলাম, যখন হতে একটি করে খেজুর পাবার সুযোগও ফুরিয়ে গেল। তারপর আমরা সাগরের সামনে এসে একটি বিরাট আকারের মৎস্য দেখতে পেলাম। সমুদ্র তা নিক্ষেপ করেছে। আমরা আঠার দিন পর্যন্ত এটা খেলাম। আমাদের নিকট তা কতই না প্রিয় ছিল। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪১৫৯), বুখারী, মুসলিম।

【35】

দারিদ্রতা স্বচ্ছলতার চাইতে উত্তম

আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। এমন সময় চামড়ার তালিযুক্ত একটি ছেড়া চাদর গায়ে জড়িয়ে মুসআব ইবনু উমাইর (রাঃ) এসে আমাদের সামনে হাযির হন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বর্তমান করুণ অবস্থা দেখে এবং তার পূর্বের স্বচ্ছল অবস্থার কথা মনে করে কেঁদে ফেললেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে সময় তোমাদের কি অবস্থা হবে, যখন তোমাদের কেউ সকালে এক জোড়া পোশাক পরবে আর বিকেলে পরবে অন্য জোড়া। আর তার সামনে খাদ্যভর্তি একটি পেয়ালা রাখা হবে আর অন্যটি উঠিয়ে নেয়া হবে। তোমরা তোমাদের ঘরগুলো এমনভাবে পর্দায় ঢেকে রাখবে, যেভাবে কা’বা ঘরকে গেলাফে ঢেকে রাখা হয়। সাহাবীগণ আরয করেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো তখন বর্তমানের চাইতে অনেক স্বচ্ছল থাকব। বিপদাপদ ও অভাব-অনটন হতে নিরাপদ থাকব। ফলে ইবাদাত বন্দিগীর জন্য যথেষ্ট অবসর পাব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ বরং বর্তমানটাই তোমাদের জন্য তখনকার তুলনায় অনেক ভালো। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৫৩৬৬) দেখুন হাদীস নং (২৫৯১)

【36】

আহলে সুফফার মধ্যে দুধ বন্টন

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, সুফফাবাসীগণ ছিলেন মুসলিমদের অতিথি, তাদের আশ্রয় লাভের মতো ধন-দৌলত, পরিবার-স্বজন কিছুই ছিল না। আল্লাহর শপথ, যিনি ব্যতীত আর কোন মা'বূদ নেই! আমি ক্ষুধার কষ্টে আমার পেট মাটিতে চেপে ধরে থাকতাম, আর কখনো পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। কোন একদিন আমি তাদের (সাহাবাদের) পথে বসে গেলাম। এমন সময় আবূ বাকর (রাঃ) আমাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন করলাম। উদ্দেশ্য ছিল তিনি আমাকে তার পিছনে যেতে বলেন (এবং কিছু খেতে দেন)। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছুই করলেন না। এরপর ‘উমার (রাঃ) এই পথ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। আমি তাকেও আল্লাহ তা'আলার কিতাবের একটি আয়াত প্রসঙ্গে সেই একই উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলাম, কিন্তু তিনিও চলে গেলেন এবং কিছুই করলেন না। তারপর আবুল কাসিম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে দেখা মাত্রই (আসল ব্যাপার বুঝতে পেরে) মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আবু হুরায়রা্! আমি বললাম, লাব্বাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তিনি বললেন, চলো, তারপর তিনি চললেন, আমি তার অনুসরণ করলাম। তিনি তার গৃহে প্রবেশ করলেন, আমিও ঢোকার অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে সম্মতি প্রদান করলেন। তিনি ঘরে এক পেয়ালা দুধ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের জন্য এই দুধ কোথা হতে এসেছে? বলা হলো, আমাদের জন্য অমুক ব্যক্তি উপহারস্বরূপ পাঠিয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ হুরায়রা্! আমি বললাম, লাব্বাইকা। তিনি বললেন, যাও সুফফাবাসীদেরকে ডেকে নিয়ে এসো, তারা তো মুসলিমদের অতিথি, তাদের নির্ভর করার মতো ধন-সম্পদ, পরিবার পরিজন বলতে কিছুই নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সাদাকাহর কোন মাল আসলে তিনি তার কোন অংশই না রেখে তাদের জন্য সবটুকু পাঠিয়ে দিতেন। আর উপহার আসলে তিনি তা হতে তাদের জন্য কিছু পাঠিয়ে দিতেন এবং নিজেও কিছু নিতেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আদেশ শুনে আমি নিরাশ হয়ে গেলাম এবং (মনে মনে) বললাম, এই এক পেয়ালা দুধ দিয়ে আসহাবে সুফফার কি হবে? অথচ আমাকে তাদের নিকট পাঠানো হচ্ছে। এই দুধ তাদের মধ্যে পরিবেশন করার জন্য তো তিনি আমাকেই আদেশ করবেন। তখন তার কোন অংশই আমার জন্য জুটবে না। অথচ আমি আশা করছিলাম যে, আমি এটুকু পান করতে পারলে আমার জন্য যথেষ্ট হবে। কিন্তু আল্লাহ ও তার রাসূলের আদেশ পালন করা ব্যতীত আর কোন পথও নেই। অতএব আমি তাদের নিকট এসে তাদেরকে ডাকলাম। তারা এসে ঘরে প্রবেশ করে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলে তিনি বললেনঃ হে আবু হুরায়রা! পেয়ালাটা নিয়ে তাদেরকে দুধ পরিবেশন কর। আমি পেয়ালাটি নিলাম তারপর আমি একজন করে দিতে থাকলাম। সে পান করে পরিতৃপ্ত হয়ে পেয়ালাটি আমাকে ফিরত দিলে আমি অন্যজনকে দিতাম। সেও পরিতৃপ্ত হতো। এভাবে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌছলাম। সমবেত সকলেই পরিতৃপ্ত হলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেয়ালাটি তার হাতে নিয়ে মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে মুচুকি হাসলেন এবং বললেন, আবু হুরায়রা্! এখন তুমি পান কর। আমি পান করলাম। তিনি আবার বললেন, পান কর। তারপর আমি পান করতেই থাকলাম আর তিনি বলতেই থাকলেন, পান কর। অবশেষে আমি বলতে বাধ্য হলাম যে, আল্লাহর শপথ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহকারে পাঠিয়েছেন, আমার পেটে আর জায়গা নেই। তারপর তিনি পেয়ালা হাতে নিয়ে আল্লাহ্ তা'আলার প্রশংসা করলেন এবং বিসমিল্লাহ বলে অবশিষ্ট দুধ পান করলেন। সহীহঃ বুখারী (৬৪৫২)।

【37】

পেট পূর্ণ করে খাদ্যগ্রহণকারী ব্যক্তি কিয়ামাতের দিন ক্ষুধার্ত থাকবে

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, কোন একদিন এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে ঢেকুর তুললো। তিনি বললেন, আমাদের সামনে তোমার ঢেকুর তোলা বন্ধ কর। অবশ্যই যে সকল ব্যক্তি দুনিয়াতে বেশি পরিতৃপ্ত হবে তারাই কিয়ামাতের দিন সবচেয়ে বেশি ক্ষুধার্ত থাকবে। হাসানঃ ইবনু মা-জাহ (৩৩৫০-৩৩৫১)।

【38】

সাহাবীদের জীর্ণ পোশাক

আবু বুরদা (রাহঃ) তিনি (আবু মূসা) বলেন, হে বাছা! যদি তুমি আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বৃষ্টিতে সিক্ত অবস্থায় দেখতে তাহলে নিশ্চয়ই আমাদের শরীরের গন্ধকে ভেড়ার গন্ধ বলে ধারণা করতে। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৩৫৬২)।

【39】

যে ব্যক্তি বিনয়ের পোশাক পরিধান করে

ইবরাহীম নাখঈ তিনি বলেনঃ দালান কোঠা সবই বিপদের কারণ। আবূ হামযা বলেনঃ আমি প্রশ্ন করলাম যা না হইলেই নয় সে সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি বললেনঃ এতে সাওয়াবও নেই, গোনাহ্ও নেই। দুর্বল সনদ, বিচ্ছিন্ন। মু'আয ইবনু আনাস আল-জুহানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক ক্ষমতা থাকার পরেও আল্লাহ তা'আলার প্রতি নম্রতাবশতঃ দামী জামা পরা ছেড়ে দিবে, তাকে কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তা'আলা সকল সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং ঈমানদারদের পোশাকের মধ্যে যে কোন পোশাক পরিধান করার অধিকার দিবেন। হাসানঃ সহীহা (৭১৭)।

【40】

সব ব্যয় আল্লাহ তা'আলার পথে, অট্টালিকা নির্মাণের ব্যয় ব্যতীত

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দালানকোঠা নির্মাণের খরচ ব্যতীত জীবন যাপনের সকল খরচই আল্লাহ তা’আলার রাস্তায় বলে পরিগণিত। দালানকোঠা নির্মাণের খরচের মধ্যে কোন কল্যাণ নেই। যঈফ, যঈফা (১০৬১), তা’লীকুর গারীব (২/১১৩) হারিসা ইবনু মুযাররিব (রাহঃ) তিনি বলেন, কোন একদিন আমরা রুগ্ন খাব্বাব (রাঃ)-কে দেখতে গেলাম। তখন তিনি তার শরীরে সাতবার উত্তপ্ত লোহার দাগ দিয়েছেন। তিনি বললেন, আমার রোগ দীর্ঘস্থায়ী হলো। যদি আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে না শুনতামঃ “তোমরা মৃত্যু কামনা করো না", তাহলে আমি নিশ্চয়ই মৃত্যু কামনা করতাম। তিনি আরো বললেন, মানুষকে শুধুমাত্র মাটিতে খরচ (দালান-কোঠা স্থাপনে খরচ) ছাড়া, সকল খরচেই নেকি দেয়া হবে। সহীহঃ বুখারী, মুসলিম। ৯৫৭ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।

【41】

বস্ত্র দানকারী আল্লাহ্‌র হিফাযাতে থাকে

হুসাইন (রহঃ) তিনি বলেন, জনৈক ভিক্ষুক এসে ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট কিছু চাইল। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাকে প্রশ্ন করলেন, তুমি কি এ কথার সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ্‌র রাসূল? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, তুমি কি রমযানের রোযা রাখ? সে বলল, হ্যাঁ। এবার তিনি বললেন, তুমি আমার নিকট কিছু চেয়েছ। আর যাঞ্চাকারীর অধিকার আছে। এখন তোমার সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করা আমার কর্তব্য। এ কথা বলে তিনি তাকে একটি কাপড় দান করলেন, তারপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কোন মুসলমান অপর মুসলমানকে কাপড় পরতে দিলে সে তত দিন আল্লাহ্‌ তা’আলার হিফাযাতে থাকে, যত দিন পর্যন্ত সেই কাপড়ের সামান্য অংশও তার শরীরে থাকে। যইফ, মিশকাত(১৯২০), তা’লীকুর রাগীব(৩/১১২)

【42】

সালামের প্রসার, খাদ্যদান ও গভীর রাতে নামায

আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) হ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাদীনায় এসে পৌছলেন, মানুষ তখন দলে দলে তার নিকট দৌঁড়ে গেল। বলাবলি হতে লাগলো যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসেছেন। অতএব তাকে দেখার জন্য আমিও লোকদের সাথে উপস্থিত হলাম। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখে বুঝতে পারলাম যে, এই চেহারা কোন মিথ্যুকের চেহারা নয়। তখন তিনি সর্বপ্রথম যে কথা বললেন তা এইঃ হে মানুষগণ! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, খাদ্য দান কর এবং মানুষ ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় (তাহাজ্জুদ) নামায আদায় কর। তাহলে নিশ্চয়ই তোমরা সহীহ-সালামতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (১৩৩৪, ৩২৫১)।

【43】

কৃতজ্ঞ ভোজনকারী

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কৃতজ্ঞ আহারকারী ধৈর্যশীল রোযাদারের সমান মর্যাদাশীল। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (১৭৬৪, ১৭৬৫)।

【44】

মুহাজিরদের প্রতি আনসারদের উদারতা

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাদীনায় আগমন করলেন, মুহাজিরগণ তখন তার নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা যাদের কাছে হিজরাত করে এসেছি, তাদের মতো আর কাউকে দেখিনি সম্পদশালী অবস্থায় ও অস্বচ্ছল অবস্থায় (আল্লাহ তা'আলার পথে) এত ব্যয় করতে এবং এত উত্তমরূপে সহানুভূতি দেখাতে। আমাদের দুঃখ-দুর্দশা কমানোর জন্য তারাই যথেষ্ট এবং তারা নিজেদের পরিশ্রমে অর্জিত সম্পদে আমাদেরকে ভাগীদার করেছেন। এমনকি আমাদের ভয় হচ্ছে যে, তারাই সমস্ত সাওয়াব নিয়ে যাবেন। এসব কথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না, তোমরা যতদিন তাদের জন্য দু'আ করবে এবং তাদের গুণগান করবে ততদিন তোমাদেরও সাওয়াব হতে থাকবে। সহীহঃ মিশকাত (৩২০৬), তা’লীকুর রাগীব (২/৫৬)।

【45】

যে ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবো না, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি (জনপ্রিয়), সহজ-সরল, নম্রভাষী ও সদাচারী। সহীহঃ সহীহাহ (৯৩৫)। আসওয়াদ ইবনু ইয়াযীদ (রাহঃ) তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে থাকাবস্থায় কি করতেন? তিনি বললেন, তিনি সংসারের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতেন, তারপর নামাযের সময় ঘনিয়ে এলে তিনি উঠে গিয়ে নামায আদায় করতেন। সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (২৯৩)।

【46】

মোসাফাহা

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, কোন ব্যক্তি যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাক্ষাতে এসে মুসাফাহা (করমর্দন) করত, তখন সেই ব্যক্তি তার হাত টেনে না নেয়া পর্যন্ত তিনি নিজের হাত টেনে নিতেন না। আর সে তার চেহারা ফিরিয়ে না নেয়া পর্যন্ত তিনি ঐ ব্যক্তি হতে নিজের চেহারা ফিরিয়ে নিতেন না। তিনি কখনো তাঁর পা দুটি তাঁর সামনে বসা লোকদের দিকে প্রসারিত করতেন না। দূর্বল, তবে মুসাফাহার অংশটুকু সহীহ ইবনু মাযাহ (৩৭১৬)

【47】

অহঙ্কারীর পরিণতি

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের আগের উম্মাতের মধ্যে কোন এক লোক তার দামী জামা পরে গর্বভরে পথে বের হলে আল্লাহ তা'আলা তখন তাকে গ্রাস করার জন্য যমীনকে নির্দেশ দিলেন। অতএব যমীন তাকে গ্রাস করে এবং সে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত এভাবে ধ্বসতেই থাকবে। সহীহঃ আস-সহীহ আল জামি' (৩২১৭), বুখারী, মুসলিম আবু হুরায়রা হতে। আমর ইবনু শু'আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার বাবার ও তার দাদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দাম্ভিক ব্যক্তিদেরকে ক্বিয়ামাত দিবসে ক্ষুদ্র পিপড়ার ন্যায় মানুষের রূপে সমবেত করা হবে। তাদেরকে চারদিক হতে অপমান ও লাঞ্ছনা ছেয়ে ফেলবে। জাহান্নামের ‘বুলাস’ নামক একটি কারাগারের দিকে তাদেরকে টেনে নেয়া হবে, আগুন তাদেরকে গ্রাস করবে, জাহান্নামীদের গলিত রক্ত ও পুঁজ তাদেরকে পান করানো হবে। হাসানঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (৫১১২), তা’লীকুর রাগীব (৪/১৮)।

【48】

ক্রোধ সংবরণকারীর মর্যাদা

মু'আয ইবনু আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাগ কার্যকর করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তা দমন করে, আল্লাহ্ তা'আলা কিয়ামাতের দিন তাকে আহবান করে সকল মাখলুকের (সৃষ্টি) সামনে আনবেন এবং তাকে তার ইচ্ছামতো যে কোন হূর বেছে নেয়ার ক্ষমতা (স্বাধীনতা) দিবেন। হাসানঃ রাওযুন নাযীর (৪৮১, ৮৫৪), তা’লীকুর রাগীব (৩/২৭৯)। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার মধ্যে নিম্নোক্ত তিনটি গুণ রয়েছে, আল্লাহ তা’আলা তার উপর তাঁর (রহমাতের) ডানা প্রসারিত করবেন এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেনঃ দূর্বলদের সাথে ভদ্র ব্যবহার, পিতা-মাতার সাথে মমতা জড়ানো কোমল ব্যবহার এবং দাস-দাসীর প্রতি অনুগ্রহপূর্ণ ও সৌজন্যমূলক আচরণ। মাওযূ, যঈফা (৯২) আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হে আমার বান্দাগণ! তোমরা তো সবাই পথভ্রষ্ট, তবে তারা নয়, যাদের আমি হিদায়াত করি। সুতরাং তোমরা আমার নিকট হিদায়াতের আবেদন কর, আমি হিদায়াত করব। আর যাদের আমি ধনী করেছি তাদের ব্যতীত তোমাদের সবই তো দরিদ্র। তোমরা আমার নিকটে প্রার্থনা কর আমি রিযিক দেব। আর আমি যাদের মাফ করেছি তাদের ব্যতীত তোমাদের সকলেই তো গুনাহগার। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ কথা জানা যে, আমি মাফ করার ক্ষমতা রাখি, তারপর সে ক্ষমা ভিক্ষা করে, আমি তার গুনাহ মাফ করে দেই। আমি এ ব্যাপারে কোন ভ্রুক্ষেপ করি না। তোমাদের পূর্বের ও পরের, জীবিত ও মৃত, সিক্ত ও শুষ্ক (স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল) সকলেই যদি আমার বান্দাদের মধ্যে সর্বাধিক তাকওয়ার অধিকারী ব্যক্তির হৃদয়ের মত হয়ে যায়, তাহলে একটি মশার পাখার সম-পরিমাণও আমার রাজত্বের শ্রীবৃ্দ্ধি ঘটবে না। আর তোমাদের আগের ও পরের, জীবিত ও মৃত, ভিজা ও শুষ্ক (স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল) সকলেই যদি আমার বান্দাদের মধ্যে সবচাইতে বড় পাপী বান্দার মত হয়ে যায়, তাহলে একটি মশার পাখার সম-পরিমাণও আমার রাজত্বের হানি ঘটবে না। আর যদি তোমাদের আগের ও পরের, জীবিত ও মৃত, ভিজা ও শুষ্ক সকলে একটি জায়গায় সমবেত হয় এবং প্রত্যেকেই তার পূর্ণ চাহিদামত আমার নিকট প্রার্থনা করে, আর আমি তাদের চাওয়া অনুযায়ী সবকিছু যদি দেই, তাহলেও আমার রাজত্বের কিছুই কমবে না, তবে এতটুকু পরিমাণ যে, তোমাদের কেউ সমুদ্রের মধ্য দিয়ে যাবার সময় তাতে একটি সুঁই ডুবিয়ে তা তুলে নিলে তাতে সমুদ্রের পানি যতটুকু কমবে। কারণ আমি হলাম দাতা, দয়ালু ও মহান। আমি যা চাই তাই করি। আমার দান হল আমার কথা আর আমার আযাব হল আমার নির্দেশ। আমার ব্যাপার এই যে, আমি যখন কিছু ইচ্ছা করি তখন বলি, “হয়ে যাও” অমনি তা হয়ে যায়। এই বর্ণনাটি যঈফ, তবে হাদিসের অধিকাংশই সহীহ, মুসলিম, ইবনু মাযাহ (৪২৫৭)। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একটি হাদিস বর্ণনা করতে শুনেছি। আমি সে হাদীসটি তাঁকে একবার, দু’বার, এমনকি সাতবারের বেশী বর্ণনা করতে শুনেছি। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ বনী ইসরাঈলের মধ্যে ‘কিফ্‌ল’ নামক জনৈক ব্যক্তি কোন গুনাহ হতে বিরত থাকত না। কোন এক সময় জনৈকা মহিলা (দারিদ্র্যক্লিষ্ট হয়ে) তার নিকটে আসলো। সে তাকে যেনা করার শর্তে ষাট দীনার দিল। স্বামী যেমন স্ত্রীর উপর উঠে সে যখন তেমনই উঠল তখন মহিলা কাঁপতে লাগল এবং কেঁদে ফেলল। সে প্রশ্ন করল, তুমি কাঁদছ কেন? আমি কি তোমার উপর জোরযবরদস্তি করছি? মহিলা বলল, না; কিন্তু এ গুনাহর কাজটি আমি কখনো করিনি। প্রয়োজন ও অভাব আজ আমাকে এ কাজ করতে বাধ্য করেছে। সে বলল, অভাবে পড়েই তুমি এসেছ এবং কখনও তা করনি? তুমি চলে যাও এবং যা দিয়েছি এগুলো তোমার। সে বলল, আল্লাহ্‌ তা’আলার কসম ! এরপর হতে আমি আর কখনো আল্লাহ্‌ তা’আলার নাফারমানী করব না। ঐ রাতেই সে মারা গেল সকাল হলে দেখা গেল তার বাড়ীর দরজায় লেখা রয়েছেঃ “আল্লাহ্‌ তা’আলা কিফ্‌লকে মাফ করে দিয়েছেন”। যঈফ, যঈফা (৪০৮৩)

【49】

আল্লাহ তা'আলা বান্দাহর তাওবায় অত্যধিক খুশি হন

আল-হারিস ইবনু সুয়াইদ (রাহঃ) তিনি বলেন, আমাদের নিকট আবদুল্লাহ (রাঃ) দুটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, একটি তার পক্ষ হতে এবং আরেকটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, ঈমানদার লোক তার পাপকে এমনভাবে ভয় করে যেন সে পাহাড়ের গোড়ায় অবস্থান করছে, আর ভয় করছে যে, পাহাড় ভেঙ্গে তার উপর পড়বে। আর অসৎ লোক তার পাপকে মনে করে যেন তার নাকের ডগায় বসা একটি মাছি, হাত নাড়ালো আর অমনি তা উড়ে গেল। সহীহঃ বুখারী (৬৩০৮), মুসলিম (৮/৯২)। বর্ণনাকারী তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কারো তাওবায় সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশি সন্তুষ্ট হন, যে এমন এক জন-মানবশূন্য প্রান্তরে যাত্রা করেছে, যেখানে পদে পদে ভয়, আতংকজনক ও ভীতিপূর্ণ অবস্থা। তার সাথে আছে একটি জন্তুযান, এর উপর তার আহার-পানীয় ও অন্যান্য মাল সামান। হঠাৎ জন্তুটি হারিয়ে গেল। সে তা খোঁজ করতে লাগলো। অবশেষে সে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় মৃতপ্রায় হয়ে গেল। মনে মনে সে বললো, আমি জন্তুটি যে জায়গায় হারিয়েছি সে জায়গায় গিয়েই মৃত্যুবরণ করবো। তারপর সে পূর্বের জায়গায় ফিরে এলো এবং গভীর ঘুমে অচেতন হলো। সে জেগে উঠে দেখতে পেলো যে, তার জন্তুযানটি তার শিয়রে দাঁড়ানো এবং তার পিঠে খাবার-পানীয় ও অন্যান্য বস্তু-সামগ্রী যথাযথ আছে। (এই ব্যক্তি হারানো জন্তু ও বস্তু-সামগ্রী পেয়ে যেমন আহলাদিত হয়, আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাহর তাওবাতে এর চেয়েও বেশি তুষ্ট হন)। সহীহঃ বুখারী, মুসলিম। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ মাত্রই গুনাহগার (অপরাধী)। আর গুনাহগারদের মধ্যে তাওবাহকারীরাই উত্তম। হাসানঃ ইবনু মা-জাহ (৪২৫১)।

【50】

উত্তম কথা বল অন্যথায় চুপ থাকো

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার অতিথির অভ্যর্থনা ও আদর-যত্ন করে। আর যে লোক আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা নীরব থাকে। সহীহঃ ইরওয়া (২৫২৫), বুখারী, মুসলিম। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক নীরব থাকলো, সে নাজাত (মুক্তি) পেলো। সহীহঃ সহীহাহ (৫৩৫)।

【51】

ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা বা নকল সাজা নিষেধ

‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি জনৈক ব্যক্তির চালচলন নকল করে দেখালাম। তিনি বললেনঃ আমাকে এই পরিমাণ সম্পদ প্রদান করা হলেও কারো চালচলন নকল করা আমাকে আনন্দ দেয় না। ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সাফিয়্যা তো বামন মহিলা লোক, এই বলে তিনি তা হাতের ইশারায় দেখালেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি এমন একটি কথার দ্বারা বিদ্রুপ করেছো, তা সাগরের পানির সাথে মিশালেও তা উক্ত পানিকে দূষিত করে ফেলতো। সহীহঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (৪৮৫৩, ৪৮৫৭), গাইয়াতুল মারাম (৪২৭)। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমাকে এত এত পরিমাণ সম্পদ দিলেও আমি কারো বিকৃত করে নকল করা পছন্দ করি না। সহীহঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব ছানী (৪৮৫৭)।

【52】

উত্তম মুসলিম

আবূ মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হলোঃ সবচেয়ে ভাল মুসলিম কে? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তির জিহ্বা (কথাবার্তা) ও হাত (কাজ) হতে মুসলিমগণ নির্বিঘ্ন থাকে। সহীহঃ বুখারী, মুসলিম।

【53】

গুনাহ থেকে তাওবাকারীকে খোঁটা দেয়া নিষেধ

মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি তার কোন ভাইকে কোন গুনাহর জন্য লজ্জা দিলে সে উক্ত গুনাহে না জড়িয়ে পরা পর্যন্ত মারা যাবে না। মাওযূ, যঈফা (১৭৮)

【54】

কারো বিপদে আনন্দ প্রকাশ নিষিদ্ধ

ওয়াসিলা ইবনুল আসকা’ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমার কোন ভাইয়ের বিপদে তুমি আনন্দ প্রকাশ করো না। অন্যথায় আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে দয়া করবেন এবং তোমাকে সেই বিপদে নিক্ষিপ্ত করবেন। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৪৮৫৬)

【55】

মানুষের সাথে মেলামেশাকারী ও তাদের কষ্ট সহ্যকারী ব্যক্তিই উত্তম

ইয়াহইয়া ইবনু ওয়াস‌্সাব (রাহঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মুসলিম মানুষের সাথে মেলামেশা করে এবং তাদের দেয়া যন্ত্রণায় ধৈর্য ধারণ করে সে এমন মুসলিমের চেয়ে উত্তম যে মানুষের সাথে মেলামেশাও করে না এবং তাদের দেয়া যন্ত্রণায় ধৈর্যও ধরে না। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪০৩২)।

【56】

পরস্পর সুসম্পর্ক স্থাপন ও বিদ্বেষ বর্জন

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করা হতে নিবৃত্ত থাকো। যেহেতু, তা দ্বীনকে মুন্ডন (বিনাশ) করে দেয়। হাসানঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব ছানী (৫০৪১)। আবুদ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি কি তোমাদেরকে নামায, রোযা ও সাদাকাহর চেয়ে উত্তম কাজ প্রসঙ্গে অবহিত করবো না? সাহাবীগণ বলেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ পরস্পর সুসম্পর্ক স্থাপন। কারণ, পরস্পর সুসম্পর্ক নষ্ট হওয়ার অর্থ হলো দ্বীন বিনাশ হওয়া। সহীহঃ গাইয়াতুল মারাম (৪১৪), মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (৫০৩৮)। যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের আগেকার উম্মাতদের রোগ তোমাদের মধ্যেও সংক্রমিত হয়েছে। তা হলো পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণা। আর এই রোগ মুন্ডন করে দেয়। আমি বলছি না যে, চুল মুন্ডন করে দেয়, বরং এটা দ্বীনকে মুন্ডন (বিনাশ) করে দেয়। সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন! তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তোমরা যদি পরস্পরকে না ভালবাস তাহলে ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে বলবো না যে, পারস্পারিক ভালবাসা কোন কাজের মাধ্যমে মজবুত হয়? তোমরা পরস্পর সালামের বিস্তার ঘটাও। হাসানঃ তা’লীকুর রাগীব (৩/১২), ইরওয়া (২৩৮), তাখরীজু মুশকিলাতিল ফাকর (২০), গাইয়াতুল মারাম (৪১৪), সহীহুল আদব (১৯৭)।

【57】

দু’টি পাপের শাস্তি দুনিয়াতে এবং পরকালেও দেয়া হয়

আবূ বাকরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (ন্যায়পরায়ণ শাসকের বিরুদ্ধে) বিদ্রোহ ও রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার মতো মারাত্মক আর কোন পাপ নেই, আল্লাহ তা‘আলা যার সাজা পৃথিবীতেও প্রদান করেন এবং আখিরাতের জন্যও অবশিষ্ট রাখেন। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪২১১)।

【58】

দ্বীনের ব্যাপারে উচ্চশ্রেণীর এবং দুনিয়াবী ব্যাপারে নিম্নশ্রেণীর লোকের প্রতি দৃষ্টিপাত করা

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যার মধ্যে দু’টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আল্লাহ্‌ তা’আলা কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীলদের মধ্যে তার নাম লিখে রাখেন। আর যার মধ্যে এ দু’টি বৈশিষ্ট্য নেই, আল্লাহ্‌ তা’আলা কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীলদের দলে তার নাম লিখেন না। যে ব্যক্তি ধর্মীয় ব্যাপারে তার চাইতে উঁচু স্তরের লোকের দিকে দেখে এবং তার অনুসরণ করে; আর পার্থিব ব্যাপারে তার চাইতে নীচু স্তরের লোকের দিকে দেখে এবং আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে সে লোকের উপর যে মর্যাদা ও নি’আমাত দান করেছেন তার শুকরিয়া আদায় করে এবং আল্লাহ্‌ তা’আলার প্রশংসা করে, আল্লাহ্‌ তা’আলা তার নাম কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীলদের দলে লিখে রাখেন। আর যে ব্যক্তি ধর্মীয় ব্যাপারে তার চাইতে নিম্নমানের লোকের দিকে এবং পার্থিব ব্যাপারে তার চাইতে উঁচু স্তরের লোকের দিকে দেখে এবং তার কাছে পার্থিব সামগ্রী না থাকার কারণে আফসোস করে, আল্লাহ্‌ তা’আলা তার নাম কৃতজ্ঞ ও ধৈর্যশীল বান্দাদের দলে লিখেন না। য’ঈফ, য’ঈফাহ্‌- হাঃ নং- ৬৩৩, ১৯২৪ আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের চেয়ে কম সম্পদশালী মানুষদের প্রতি (পার্থিব ব্যাপারে) দৃষ্টি দিও, তোমাদের চেয়ে ধনশালী মানুষদের দিকে নয়। এতে করে তোমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার দেয়া নি‘আমাতসমূহ নগন্য মনে হবে না। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪১৪২), মুসলিম।

【59】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে সাহাবীগণের এক অবস্থা এবং পরে অন্য অবস্থা

হানযালা আল-উসাইদী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সচিবগণের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি কোন একদিন কাঁদতে কাঁদতে আবূ বাকর (রাঃ) এর সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আবূ বাকর (রাঃ) তাঁকে প্রশ্ন করেন, হে হানযালা! তোমার কি হয়েছে? তিনি বললেন, হে আবূ বাকর! হানযালা তো মুনাফিক্ব হয়ে গেছে। আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাজলিসে অবস্থান করি এবং তিনি আমাদেরকে জান্নাত-জাহান্নামের স্মরণে নাসীহাত করেন, তখন মনে হয় যেন আমরা সেগুলো স্বচক্ষে দেখছি। কিন্তু বাড়ি ফিরে আসার পর স্ত্রী-পুত্র-পরিজন ও বিষয়-সম্পদের কাজে ব্যাকুল হয়ে পড়ি এবং অনেক কিছুই ভুলে যাই। আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমাদেরও তো এই অবস্থা। চলো আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যাই। তারপর আমরা সেদিকে যাত্রা শুরু করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে দেখে প্রশ্ন করেন, হে হানযালা! কি সংবাদ? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! হানযালা তো মুনাফিক্ব হয়ে গেছে। আমরা যখন আপনার নিকটে থাকি আর আপনি জান্নাত-জাহান্নামের নাসীহাত করেন, তখন মনে হয় যেন আমরা সেগুলো প্রত্যক্ষভাবে দেখছি। পরে যখন বাড়ি ফিরে গিয়ে স্ত্রী-পুত্র-পরিজন ও বিষয়-সম্পদের কাজে ব্যাকুল হয়ে পড়ি তখন অনেক কিছুই ভুলে যাই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা আমার নিকট হতে যে অবস্থায় ফিরে যাও, যদি সবসময় সেই অবস্থায় থাকতে তাহলে অবশ্যই তোমাদের বৈঠকে, বিছানায় এবং পথে-ঘাটে ফেরেশতারা তোমাদের সাথে মুসাফাহা (করমর্দন) করতো। হে হানযালা! সেই অবস্থা মাঝে মধ্যে হয়ে থাকে। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৪২৩৬), মুসলিম। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি নিজের জন্য যা পছন্দ করে সেটা তার ভাইয়ের জন্যও পছন্দ না করা পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৬৬)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক সময় আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পিছনে ছিলাম। তিনি বললেনঃ হে তরুণ! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিখিয়ে দিচ্ছি- তুমি আল্লাহ তা‘আলার (বিধি-নিষেধের) রক্ষা করবে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে রক্ষা করবেন। তুমি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখবে, আল্লাহ তা‘আলাকে তুমি কাছে পাবে। তোমার কোন কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হলে আল্লাহ তা‘আলার নিকট চাও, আর সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে আল্লাহ তা‘আলার নিকটেই কর। আর জেনে রাখো, যদি সকল উম্মাতও তোমার কোন উপকারের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে ততটুকু উপকারই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। অপরদিকে যদি সকল উম্মাত তোমার কোন ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে একতাবদ্ধ হয়, তাহলে ততটুকু ক্ষতিই করতে সক্ষম হবে, যতটুকু আল্লাহ তা‘আলা তোমার তাক্বদিরে লিখে রেখেছেন। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজসমূহও শুকিয়ে গেছে। সহীহঃ মিশকাত (৫৩০২), যিলালুল জান্নাত (৩১৬-৩১৮)।

【60】

উট বাঁধো তারপর তাওয়াক্কুল (ভরসা) কর

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বললেন কোন একজন লোক বললো, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি কি সেটা (উট) বেঁধে রেখে আল্লাহর তা’আলার উপর ভরসা করবো, না বাঁধন খুলে রেখে আল্লাহ্ তা'আলার উপর ভরসা করবো? তিনি বললেনঃ তুমি সেটা বেঁধে রেখে (আল্লাহ্ তা'আলার উপর) ভরসা করবে। হাসানঃ তাখরীজুল মুশকিলাহ (২২)। আবুল হাওরা আস-সা'দী (রাহঃ) তিনি বলেন, হাসান ইবনু 'আলী (রাঃ)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে কোন কথাটা মনে রেখেছেন? তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এই কথাটি মনে রেখেছিঃ যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ কর। যেহেতু, সত্য হলো শান্তি ও স্বস্তি এবং মিথ্যা হলো দ্বিধা-সন্দেহ। সহীহঃ ইরওয়াহ্ (১২, ২০৭৪), আযযিলাল (১৭৯), আর রাওযুন নাযীর (১৫২)। এ হাদীসটিতে আরো বক্তব্য আছে। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সামনে কোন এক ব্যক্তির ‘ইবাদাত-বন্দিগী ও কঠোর সাধনার কথা এবং অন্য ব্যক্তির পরহিযগারী ও আল্লাহ্‌ ভীতি প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন কিছুই পরহেযগারী ও খোদাভীতির সমতুল্য হতে পারে না। য’ঈফ, য’ঈফাহ্‌- হাঃ নং-৪৮১৭ আবূ সা’ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি হালাল খাবার খায়, সুন্নাত মুতাবিক ‘আমাল করে এবং যার উৎপীড়ন হতে মানুষ নিরাপদ থাকে, সে জান্নাতে যাবে। জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল ! আজকাল তো এ ধরনের অনেক লোক রয়েছে। তিনি বললেনঃ আমার পরবর্তী যুগসমূহেও এমন লোক থাকবে। য’ঈফ, মিশকাত- হাঃ নং-১৭৮; তা’লীকুর রাগীব- হাঃ নং- ১/৪১ মু'আয ইবনু আনাস আল-জুহানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আল্লাহ্ তা'আলার উদ্দেশ্যে দান-খায়রাত করে, আল্লাহ্ তা'আলার উদ্দেশ্যে (দান করা হতে) নিবৃত্ত থাকে, আল্লাহ তা'আলার জন্য ভালবাসে, আল্লাহ তা'আলার জন্যই ঘৃণা করে এবং আল্লাহ তা'আলার (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে বিয়ে প্রদান করে, সে তাঁর ঈমান সুসম্পন্ন করেছে। হাসানঃ সহীহাহ্ (১/১১৩)। আবূ সাঈদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সর্বপ্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে সেই দলের সদস্যগণ হবেন পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল। আর দ্বিতীয় দলের সদস্যগন হবেন আকাশের মুক্তার মতো ঝল্ঝল্কারী তারকার ন্যায়। তাঁদের প্রত্যেকের দু'জন করে স্ত্রী থাকবে এবং প্রত্যেক স্ত্রীর শরীরে সত্তরজোড়া কাপড় থাকবে। এই সব কাপরের ভিতর থেকেও তার পায়ের জংঘার মগজ প্রকাশ পাবে। সহীহঃ সহীহাহ্ (১৭৩৬)।