4. কিতাবুল জুমু’আ (জুমু’আর নামায)

【1】

জুমু’আর দিনের ফযিলত

আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যেসব দিনে সূর্য উদয় হয় তাঁর মধ্যে জুমু’আর দিনই উত্তম। এ দিনেই আদম (আঃ) -কে সৃষ্টি করা হয়েছে, এ দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এ দিনই তাঁকে জান্নাত হতে বের করা হয়েছে। আর জুমু’আর দিনেই ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে। -সহীহ্‌। সহীহাহ্‌- (১৫০২), সহীহ্‌ আবূ দাঊদ- (৯৬১), মুসলিম, তা’লীক সহীহ্‌ ইবনু খুজাইমাহ- (৩/১১৬)।

【2】

জুমু’আর দিনে এমন একটি সময় রয়েছে যখন দু’আ ক্ববূলের আশা করা যায়

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জুমু’আর দিনের যে মুহূর্তে (দু’আ ক্ববূল হওয়ার) আশা করা যায় তা আসরের পর হতে সূর্যাস্তের মধ্যে খোঁজ কর। -হাসান। মিশকাত- (১৩৬০), তা’লীকুর রাগীব- (১/২৫১)। আমর ইবনু আওফ (রাঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জুমু’আর দিনের মধ্যে একটি বিশেষ সময় আছে। এ সময়ে বান্দাহ আল্লাহ তা’আলার নিকট যা চায় আল্লাহ তা’আলা তাকে তা দান করেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এ সময়টি কখন? তিনি বললেনঃ যখন নামায শুরু হয় তখন হতে তা শেষ হওয়া পর্যন্ত। খুবই দুর্বল, ইবনু মাজাহ (১৩৮৪)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যেসব দিনে সূর্য উদয় হয় তাঁর মধ্যে জুমু’আর দিনই সর্বশ্রেষ্ঠ। এ দিনেই আদম (আঃ) -কে সৃষ্টি করা হয়েছিল। এদিনেই তাঁকে সেখান হতে (পৃথিবীতে) নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ দিনের মধ্যে এমন একটি সময় আছে যখন কোন মুসলিম বান্দা নামায আদায় করে আল্লাহ তা’আলার নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তাকে তা দান করেন। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু সালামের সাথে সাক্ষাত করে তাঁকে এ হাদীস প্রসঙ্গে জানালাম। তিনি বলেন, আমি সে সময়টি জানি। আমি বললাম, তাহলে আমাকেও বলে দিন, এ ব্যাপারে কৃপণতা করবেন না। তিনি বললেন, এ সময়টি আসরের পর হতে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। আমি বললাম, তা কি করে আসরের পর হতে পারে? অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বান্দা নামাযরত অবস্থায় এই মুহূর্তটি পেয়ে...। অথচ আপনি যে সময়ের কথা বলেছেন, তখন তো নামায আদায় করা হয় না। ‘আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বলেননিঃ যে ব্যক্তি নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকে প্রকারান্তরে সে নামাযের মধ্যেই থাকে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, সেটাই এ সময়। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১১৩৯)।

【3】

জুমু’আর দিন গোসল করা

সালিম (রহঃ) হতে তাঁর পিতার তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর নামাযে আসে সে যেন গোসল করে আসে। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১০৮৮)। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে অন্য সূত্রেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ইবনু ‘উমার (রাঃ) “একদা ‘উমার (রাঃ) জুমু’আর নামাযের খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একজন সাহাবী এসে (মসজিদে) ঢুকলেন। তিনি (উমার) প্রশ্ন করলেন, এটা কোন সময় (দেরি কেন)? তিনি বললেন, আমি আযান শুনেই ওযূ করে চলে এসেছি, মোটেই দেরি করিনি। তিনি (উমার) বললেন, শুধু ওযূই করলেন? অথচ আপনার জানা আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোসল করারও নির্দেশ দিয়েছেন। -সহীহ্‌। সহীহ্‌ আবূ দাঊদ- (৩৬৭), বুখারী ও মুসলিম। যুহরী ইউনুস যুহরী হতে এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবূ ‘ঈসা বলেনঃ আমি মুহাম্মাদ বুখারীকে এই হাদীস প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম, তিনি বললেন, সালিম তার পিতা থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

【4】

জুমু’আর দিনে গোসলের ফযিলত

আওস ইবনু আওস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ যে ব্যক্তি গোসল করল এবং গোসল করাল, সকাল সকাল মসজিদে আসল, ইমামের নিকটবর্তী হয়ে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনল এবং নিশ্চুপ থাকল- তাঁর জন্য প্রতি কদমের বিনিময়ে এক বছরের (নফল) রোযা ও নামাযের সাওয়াব রয়েছে। ওয়াকী বলেন, ‘গোসল করল এবং করাল’ শব্দের অর্থ নিজে গোসল করল এবং স্ত্রীকে গোসল করাল। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১০৮৭)।

【5】

জুমু’আর দিনে ওযূ করা

সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন শুধু ওযূ করল সেটাই তাঁর জন্য যথেষ্ট। আর যে ব্যক্তি গোসল করল, গোসল করাই উত্তম। -সহীহ। ইবনু মাজাহ– (১০৯১)। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ভালভাবে ওযূ করে জুমু‘আর নামায আদায় করতে আসে, ইমামের নিকটবর্তী হয়ে মনোযোগ সহকারে নীরবে খুতবা শুনে, তাঁর এ জুমু‘আ হতে ঐ জুমু‘আ পর্যন্ত এবং আরো তিন দিনের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি কাঁকর-বালি ইত্যাদি নাড়াচাড়া করল সে বাজে কাজ করল। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১০৯০), মুসলিম।

【6】

জুমু’আর দিন সকাল সকাল মসজিদে যাওয়া

আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন নাপাকির গোসলের মত গোসল সেরে প্রথমে (জুমু‘আর নামায আদায় করার জন্য) মসজিদে আসল সে যেন একটি উট কুরবানী করল। অতঃপর দ্বিতীয় মুহূর্তে যে ব্যক্তি আসল সে যেন একটি গাভী কুরবানী করল। তৃতীয় মুহূর্তে যে আসল সে যেন শিংযুক্ত একটি মেষ কুরবানী করল। চতুর্থ মুহূর্তে যে ব্যক্তি আসল সে যেন একটি মুরগী কুরবানী করল। পঞ্চম মুহূর্তে যে ব্যক্তি আসল সে যেন একটি ডিম কুরবানী করল। অতঃপর ইমাম যখন (নামাযের জন্য) বের হয়ে আসেন তখন ফেরেশতাগণ আলোচনা শুনার জন্য উপস্থিত হয়ে যান। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১০৯২)।

【7】

কোন ওজর ছাড়াই জুমু‘আর নামায ছেড়ে দেয়া

আবুল জা’দ আয-যমরী মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমরের ধারণানুযায়ী তিনি একজন সাহাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক নিছক অলসতা ও গাফলতি করে পর পর তিন জুমু‘আ ছেড়ে দেয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অন্তরে মোহর মেরে দেন। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ– (১১২৫)।

【8】

নাই

জনৈক সাহাবী তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে কুবা পল্লী হতে জুমু’আর নামাজে হাযির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই হাদীসটির সনদ দুর্বল আহমাদ ইবনু হাসান আমি (তিরমিযী) আহমাদ ইবনু হাসানকে বলতে শুনেছিঃ আমরা আহমাদ ইবনু হাম্বলের নিকট উপস্থিত ছিলাম। কার উপর জুমু’আ ওয়াজিব এ নিয়ে আলোচনা জমে উঠল। আহমাদ ইবনু হাম্বল এ বিষয়ের উপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কোন হাদীস উল্লেখ করেননি। আহমাদ ইবনু হাসান বলেন, আমি আহমাদ ইবনু হাম্বলকে বললাম, আবূ হুরাইরা (রাঃ) এ প্রসঙ্গে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস! আমি বললাম, হ্যাঁ। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি রাত হতে হতে বাড়ি পৌঁছতে পারবে তাঁর উপরও জুমু’আ ওয়াজিব’। এ হাদীস শুনে আহমাদ ইবনু হাম্বল আমার উপর রেগে গেলেন এবং বললেন, তোমার আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চাও, তোমার আল্লাহর নিকটে ক্ষমা চাও। খুবই দুর্বল, মিশকাত (১৩৭৬)

【9】

জুমু‘আর নামাযের ওয়াক্ত

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য ঢলে গেলে জুমু‘আর নামায আদায় করতেন। -সহীহ্‌। সহীহ্‌ আবূ দাঊদ- (৯৯৫), বুখারী। উসমান ইবনু আব্দুর রহমান তাইমী উসমান ইবনু আব্দুর রহমান তাইমীর সূত্রেও আনাস (রাঃ) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে সালামা ইবনুল আকওয়া, জাবির ও যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ‘ঈসা বলেনঃ আনাস (রাঃ) –এর হাদীসটি হাসান সহীহ্‌। বেশিরভাগ মনীষীর মতে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর জুমু‘আর ওয়াক্ত শুরু হয়, যেমন যুহরের ওয়াক্ত। ইমাম শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক এই মত ব্যক্ত করেছেন। একদল ‘আলিমের মতে, জুমু‘আর নামায সূর্য ঢলে যাওয়ার পূর্বে আদায় করে নিলে তাও জায়িয এবং নামায হয়ে যাবে। ইমাম আহমাদ বলেন, যে ব্যক্তি সূর্য ঢলে যাওয়ার পূর্বে জুমু‘আ আদায় করে নিল আমার মতে তার নামায আবার আদায় করা তার উপর ওয়াজিব নয়।

【10】

মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়া

ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খেজুর গাছের গুড়ির সাথে ভর দিয়ে জুমু‘আর বক্তৃতা করতেন। যখন মিম্বার তৈরী করা হল খেজুরের গুঁড়িটা কাঁদতে লাগল। তিনি গাছটির নিকট গেলেন এবং তা স্পর্শ করলেন। ফলে এটা চুপ করল। -সহীহ। সহীহাহ্‌- (২১৭৪), বুখারী।

【11】

দুই খুতবার মাঝখানে বসা

ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু‘আর দিনে খুতবা দিতেন, অতঃপর বসতেন, অতঃপর উঠে আবার খুতবা দিতেন, যেমন আজকালকার দিনে তোমরা কর। সহীহ্‌ । সহীহ্‌ আবূ দাঊদ- (১০০২), ইরওয়া- (৬০৪), বুখারী ও মুসলিম সংক্ষিপ্তভাবে।

【12】

খুতবা সংক্ষিপ্ত করা

জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে নামায আদায় করেছি। তাঁর নামায ছিল মাঝারি ধরণের এবং খুতবাও ছিল মাঝারি ধরণের (সংক্ষেপও নয়, দীর্ঘও নয়)। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১১০৬), মুসলিম।

【13】

মিম্বারের উপর কুরআন পাঠ করা

সাফওয়ান ইবনু ইয়া’লা (রাঃ) হতে তাঁর পিতা তিনি (ইয়া’লা) বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে “ওয়া নাদাও ইয়া মালিকু......” (সূরাঃ যুখরুফ- ৭৭) আয়াত পাঠ করতে শুনেছি। -সহীহ্‌। ইরওয়া- (৩/৭৫), বুখারী ও মুসলিম।

【14】

ইমামের খুতবার সময় তার দিকে মুখ করে বসতে হবে

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মিম্বারে উঠতেন তখন আমরা তাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে বসতাম। -সহীহ্‌। সহীহাহ্‌- (২০৮০), বুখারী অনুরূপ।

【15】

ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় কোন ব্যক্তি আসলে তাঁর দুই রাক’আত নামায আদায় করা প্রসঙ্গে

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু‘আর খুতবা দিচ্ছিলেন। এমন সময় একটি লোক এসে উপস্থিত হল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি (তাহিয়্যাতুল মসজিদ) নামায আদায় করেছ? সে বলল, না। তিনি বললেনঃ ওঠো এবং নামায আদায় কর। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১১১২), বুখারী ও মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনু আবূ সারহ (রাঃ) আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) জুমু’আর দিন (মসজিদে) ঢুকলেন। মারওয়ান তখন খুতবা দিচ্ছিল। তিনি নামায আদায় করতে দাঁড়ালেন। মারওয়ানের চৌকিদার তাঁকে বসিয়ে দেওয়ার (নামায হতে বিরত রাখার) জন্য আসল। কিন্তু তিনি তা মানলেন না এবং নামায আদায় করলেন। তিনি অবসর হলে আমরা তাঁর নিকট আসলাম। আমরা বললাম, আল্লাহ তা’আলা আপনার উপর দয়া করুন, তারা আপনাকে পরাজিত করার জন্য এসেছিল। তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে এটা করতে দেখেছি। এরপর আমি এ দুই রাক’আত কখনও ছাড়তে পারি না। তারপর তিনি উল্লেখ করলেন, জুমু’আর দিন এক ব্যক্তি তাড়াহুড়া করে উস্কখুস্ক অবস্থায় মসজিদে আসল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন জুমু’আর খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি তাকে নির্দেশ দিলে সে দুই রাক’আত নামায আদায় করল। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবা দিতে থাকলেন। -হাসান সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১১১৩)।

【16】

খুতবা চলাকালে কথাবার্তা বলা মাকরূহ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি জুমু’আর দিনে ইমামের খুতবা দানকালে (অন্যকে) বুলল, ‘চুপ কর’ সে অকারণে কথা বলল। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১১১০), বুখারী ও মুসলিম।

【17】

জুমু’আর দিন লোকদের ডিঙ্গিয়ে সামনে যাওয়া মাকরূহ

সাহাল ইবনু মুআয ইবনু আনাস (রাঃ) হতে তাঁর পিতা তিনি (মুয়ায রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, জুমু’আর দিন (নামাজের সময়) যে ব্যক্তি লোকের ঘাড় টপকিয়ে (কাতার ভেদ করে) সামনে যাবার চেষ্টা করল সে যেন (এই কাজ টিকে) জাহান্নামের পুল (সাঁকো) বানাল। যঈফ, ইবনু মাজাহ (১১১৬)।

【18】

ইমামের খুতবা চলাকালে পায়ের নলা জড়িয়ে বসা মাকরূহ

সাহল ইবনু মুআয (রাঃ) হতে তাঁর পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু’আর দিনে ইমামের খুতবা চলার সময়ে দুই হাতে (পায়ের) নলা জড়িয়ে ধরে বসতে নিষেধ করেছেন। -হাসান। মিশকাত- (১২৯৩), সহীহ্‌ আবূ দাঊদ- (১০১৭)

【19】

মিম্বারে অবস্থানকালে দু’আর মধ্যে হাত তোলা মাকরূহ

উমারা ইবনু রুওয়াইবা (রাঃ) একদিন বিশর ইবনু মারওয়ান জুমু’আর খুতবা দেওয়াকালে দু’আ করার সময় উভয় হাত উপরে তুললেন। এতে ‘উমারা বললেন, আল্লাহ এই বেঁটে হাত দুটিকে কুৎসিত করুন। আমি নিশ্চিতরূপে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে দেখেছি, তিনি নিজের হাত দিয়ে এর বেশি কিছু করতেন না। (অধঃস্তন রাবী) হুশাইম এ কথা বলার সময় নিজের তর্জনী দ্বারা ইঙ্গিত করলেন। -সহীহ্‌। সহীহ্‌ আবূ দাঊদ- (১০১২), মুসলিম।

【20】

জুমু’আর আযান সম্পর্কে

সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাক্‌র ও উমার (রাঃ) -এর যুগে ইমাম বের হয়ে আসলে এবং নামায শুরু হওয়ার সময় জুমু’আর আযান হত। উসমান (রাঃ) খালীফা হওয়ার পর ‘যাওরায়’ তৃতীয় আযানের প্রচলন করেন। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১১৩৫), বুখারী।

【21】

ইমামের মিম্বার হতে নামার পর কথা বলা

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মিম্বার হতে নামতেন তখন প্রয়োজনবোধে কথা বলতেন। শাজ, ইবনু মাজাহ (১১১৭) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি ইক্বামাত হয়ে যাওয়ার পর এক ব্যক্তিকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কথা বলতে দেখলাম। লোকটি তাঁর ও কিবলার মাঝখানে দাঁড়ানো ছিল। সে অনেক সময় কথা বলল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এই দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার ফলে আমি লোকদেরকে নিদ্রার আবেশে আচ্ছন্ন হতে দেখেছি। -সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (১৯৭), বুখারী ও মুসলিম।

【22】

জুমু’আর নামাযের কিরা’আত

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আযাদকৃত গোলাম আবূ রাফি (রাঃ) -এর পুত্র উবাইদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেন, একবার মারওয়ান আবূ হুরাইরা (রাঃ) -কে মাদীনায় তাঁর প্রতিনিধি করে মক্কায় চলে গেলেন। আবূ হুরাইরা (রাঃ) আমাদের জুমু‘আর নামায আদায় করালেন। তিনি প্রথম রাক‘আতে সূরা জুমু‘আ এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরা ইযা জাআকাল মুনাফিকূন পাঠ করলেন। উবাইদুল্লাহ বলেন, আমি আবূ হুরাইরার সাথে দেখা করে তাঁকে বললাম, আপনি এমন দুটি সূরা পাঠ করলেন যা ‘আলী (রাঃ) কুফায় পাঠ করতেন। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে এ দুটো সূরা পাঠ করতে শুনেছি। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১১১৮), মুসলিম।

【23】

জুমু‘আর দিন ভোরের নামাযের কিরা‘আত প্রসঙ্গে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু‘আর দিন ফজরের নামাযে ‘তানযীলুস সাজদাহ’ এবং হাল আতা ‘আলাল ইনসান’ সূরা দুটি পাঠ করতেন। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (৮২১), মুসলিম।

【24】

জুমু‘আর (ফরযের) পূর্বের ও পরের নামায

সালিম (রহঃ) হতে তাঁর পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু‘আর (ফরযের) পরে দুই রাক‘আত নামায আদায় করতেন। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১১৩১), বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি জুমু‘আর (ফরয) নামায শেষ করে বাড়িতে গিয়ে দুই রাক‘আত নামায আদায় করতেন। তারপর তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটা করতেন। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১১৩০), বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জুমু‘আর নামাযের পর নামায আদায় করতে চায় সে যেন চার রাক‘আত আদায় করে। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১১৩২)।

【25】

যে ব্যক্তি জুমু‘আর নামাযের এক রাক‘আত পায়

আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি (ইমামের সাথে) এক রাক‘আত নামায পেল সে পূর্ণ নামায পেল। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১১২২), বুখারী ও মুসলিম।

【26】

জুমু‘আর দিন দুপুরের বিশ্রাম (কাইলুলা)

সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে জুমু‘আর নামাযের পরেই দুপুরের খাবার খেতাম ও বিশ্রাম নিতাম। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১০৯৯), বুখারী ও মুসলিম।

【27】

জুমু‘আর নামাযের সময় তন্দ্রা আসলে নিজ স্থান হতে উঠে যাবে

ইবনু ‘উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জুমু‘আর দিন তোমাদের কোন ব্যক্তির ঘুমের আবেশ আসলে সে যেন নিজ জায়গা হতে উঠে যায়। -সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (১০২৫), তা‘লীক ইবনু খুজাইমাহ্- (১৮১৯)।

【28】

জুমু’আর দিন সফর করা

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ)–কে একটি সৈন্য বাহিনীর সাথে পাঠালেন। ঘটনাক্রমে তা ছিল জুমু’আর দিন। তাঁর সঙ্গীরা সকাল বেলা রওয়ানা হয়ে গেলেন। তিনি বললেন, আমি পিছনে থেকে যেতে চাই, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর সাথে নামায আদায় করব, তারপর তাদের সাথে মিলিত হব। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর সাথে নামায আদায় করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে দেখে ফেললেন। তিনি তাঁকে বললেন, সকাল বেলা তোমার সঙ্গীদের সাথে একত্রে যেতে কোন্‌ জিনিষ তোমাকে বাধা দিল? তিনি বললেন, আমি আপনার সাথে নামায আদায় করার ইচ্ছা করেছি, তারপর তাদের সাথে গিয়ে মিলিত হব। তিনি বললেনঃ দুনিয়ার সমস্ত কিছু ব্যয় করলেও তুমি সকাল বেলায় চলে যাওয়া দলের সমান ফাযীলাত ও মর্যাদা লাভ করতে পারবে না। সনদ দুর্বল

【29】

জুমু’আর দিন মিসওয়াক করা ও সুগন্ধি লাগানো

বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানদের কর্তব্য হল, তারা যেন জুমু’আর দিন গোসল করে। তাদের প্রত্যেকে যেন নিজ পরিবারে সুগন্ধি থাকলে তা ব্যবহার করে। তা না পাওয়া গেলে গোসলের পানিই তার জন্য সুগন্ধি। যইফ, মিশকাত (১৪০০)।

【30】

‘ঈদের দিন পায়ে হেঁটে চলাচল করা

আলী (রাঃ) তিনি বলেন, ঈদের মাঠে পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং যাওয়ার আগে কিছু খাওয়া সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত। -হাসান। ইবনু মাজাহ- (১২৯৪-১২৯৭)

【31】

খুতবার পূর্বে দুই ‘ঈদের নামায আদায় করবে

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাকর ও ‘উমার (রাঃ) খুতবা দেওয়ার পূর্বে দুই ঈদের নামায আদায় করতেন, তারপর খুতবা দিতেন। -সহী্হ। ইবনু মাজাহ- (১২৭৬), বুখারী ও মুসলিম।

【32】

‘ঈদের নামাযে আযান ও ইক্বামাত নেই

জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে দুই ‘ঈদের নামায আযান এবং ইক্বামাত ব্যতীত একবার দু’বার নয় একাধিকবার আদায় করেছি (আহমাদ, মুসলিম, আবূ দাঊদ)। -হাসান সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাউদ- (১০৪২), মুসলিম।

【33】

দুই ‘ঈদের নামাযের কিরা’আত

নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ‘ঈদের নামাযে এবং জুমু‘আর নামাযে “সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা” এবং “হাল আতাকা হাদীসুল গাশিয়াহ্” সূরা দুটি পাঠ করতেন। কখনো কখনো ঈদ এবং জুমু’আর নামায একই দিনে হয়ে যেত। তিনি তখনও দুই নামাযে উল্লেখিত সূরা দুটিই পাঠ করতেন। সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১১১৯), মুসলিম। উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উতবা (রাঃ) ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আবূ ওয়াকিদ লাইসী (রাঃ) -কে প্রশ্ন করলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামাযে কোন্ কোন্ সূরা পাঠ করতেন? তিনি বললেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) ‘কাফ ওয়াল কুরআনিল মাজীদ’ ও ‘ইকতারাবাতিস সা’আতু ওয়ান শাক্কাল কামার’ সূরা দুটি পাঠ করতেন। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১২৮২), মুসলিম।

【34】

দুই ‘ঈদের নামাযের তাকবীর

কাসীর ইবনু আবদুল্লাহ (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও দাদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উভয় ঈদের নামাযে প্রথম রাক‘আতে কিরা‘আত পাঠ করার আগে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে কিরা‘আত পাঠ করার আগে পাঁচ তাকবীর বলেছেন। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১২৭৯)।

【35】

দুই ‘ঈদের নামাযের পূর্বে এবং পরে কোন নামায নেই

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিতরের দিন নামায আদায় করতে বের হলেন। তিনি দুই রাক’আত নামায আদায় করালেন এবং তার পূর্বেও তিনি কোন (নফল) নামায আদায় করেননি এবং পরেও আদায় করেননি। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১২৯১), বুখারী ও মুসলিম। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি এক ‘ঈদের দিন নামায আদায় করতে বের হলেন। তিনি এর পূর্বেও কোন (নফল) নামায আদায় করেননি এবং পরেও আদায় করেননি। তিনি বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনটিই করেছেন। -হাসান সহীহ্‌। ইরওয়া- (৩/৯৯)।

【36】

মহিলাদের ‘ঈদের মাঠে যাওয়া

উম্মু আতিয়্যা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিতর ও ‘ঈদুল আযহার দিন কুমারী, তরুণী, প্রাপ্তবয়স্কা, পর্দানশিন এবং ঋতুবতী সব মহিলাদের (নামাযের জন্য) বের হওয়ার (‘ঈদের মাঠে যাওয়ার) হুকুম করতেন। ঋতুবতী মহিলারা নামাযের জামা’আত হতে এক পাশে সরে থাকতো কিন্তু তারা মুসলমানদের দু’আয় শারীক হত। এক মহিলা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! যদি কোন নারীর নিকট (শরীর ঢাকার মত) চাদর না থাকে? তিনি বললেনঃ তার (মুসলিম) বোন তার অতিরিক্ত চাদর তাকে ধার দিবে। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১৩০৭, ১৩০৮), বুখারী ও মুসলিম।

【37】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাস্তা দিয়ে ‘ঈদের মাঠে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদের দিন এক পথ দিয়ে যেতেন এবং অন্য পথ দিয়ে ফিরে আসতেন। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১৩০১)।

【38】

‘ঈদুল ফিতরের দিন নামায আদায় করতে যাওয়ার পূর্বে কিছু খাওয়া

আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদা (রাঃ) হতে তাঁর পিতা তিনি (বুরাইদা) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিতরের দিন কিছু না খাওয়া পর্যন্ত নামাযে বের হতেন না এবং ‘ঈদুল আযহার দিন নামায না আদায় করা পর্যন্ত কিছু খেতেন না। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১৭৫৬)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিতরের দিন নামায আদায় করতে বের হওয়ার আগে খেজুর দিয়ে নাস্তা করতেন। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১৭৫৪)।

【39】

সফরকালে নামায কসর করা

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাক্‌র, ‘উমার ও ‘উসমান (রাঃ) -এর সাথে একত্রে সফর করেছি। তাঁরা যুহর ও আসরের (ফরয) নামায দুই রাক’আত দুই রাক’আত আদায় করেছেন। তাঁরা এর আগে বা পরে কোন (সুন্নাত বা নফল) নামায আদায় করেননি। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমাকে যদি এর (ফরযের) আগে অথবা পরে নামায আদায় করতেই হত তবে আমি ফরয নামায পূর্ণ আদায় করতাম! সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১০৭১), বুখারী ও মুসলিম সংক্ষিপ্ত। আবূ নায্‌রাহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) -কে মুসাফিরের নামায প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে হাজ্জ করেছি। তিনি চার রাক’আতের পরিবর্তে দুই রাক’আত আদায় করেছেন। আবূ বাক্‌র (রাঃ) -এর সাথেও হাজ্জ করেছি তিনিও দুই রাক’আত আদায় করেছেন। ‘উমার (রাঃ) -এর সাথেও এবং তিনিও দুই রাক’আত আদায় করেছেন। আমি ‘উসমান (রাঃ) -এর সাথেও হাজ্জ করেছি। তিনিও তাঁর খিলাফতের (প্রথম) ছয় অথবা আট বছর দুই রাক’আতই আদায় করেছেন। -সহীহ্‌। পূর্বের হাদীসের কারণে। মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির ও ইবরাহীম ইবনু মাইসারা (রহঃ) তাঁরা দুজনেই আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) -কে বলতে শুনেছেনঃ আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মাদীনায় যুহরের নামায চার রাক’আত আদায় করেছি এবং যুল-হুলাইফায় ‘আসরের নামায দু’রাক্‌’আত আদায় করেছি। -সহীহ্‌। সহীহ্‌ আবূ দাঊদ- (১০৮৫), বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কার উদ্দেশ্যে মাদীনা হতে বের হলেন। এ সময় সারা বিশ্বের প্রতিপালক ছাড়া আর কারো ভয় তাঁর ছিল না। তিনি (চার রাক্‌’আত ফরযের স্থলে) দুই রাক’আত আদায় করেছেন। -সহীহ্‌। ইরওয়া- (৩/৬)।

【40】

কত দিন পর্যন্ত কসর করা যাবে?

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মক্কার উদ্দেশ্যে মাদীনা হতে রাওয়ানা হলাম। তিনি দুই রাক’আত নামায আদায় করলেন। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইসহাক বলেন, আমি আনাস (রাঃ) -কে প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কত দিন মক্কায় ছিলেন? তিনি বললেন, দশ দিন। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১০৭৭), বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সফরে গিয়ে ঊনিশ দিন থাকলেন। এ কয়দিন তিনি দুই রাক’আত দুই রাক’আত করে নামায আদায় করলেন (চার রাক’আত ফরযের পরিবর্তে) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, আমরাও আমাদের (মাদীনার ও মক্কার) মধ্যেকার ঊনিশ দিনের পথে দুই রাক’আত দুই রাক’আত করে নামায আদায় করে থাকি। যখন এর চেয়ে বেশি দিন থাকি তখন চার রাক’আতই আদায় করে থাকি। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১০৭৫), বুখারী।

【41】

সফরে নফল নামায আদায় করা

বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আঠার মাস রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সঙ্গী ছিলাম। আমি তাকে সূর্য ঢলে যাওয়ার পর যুহরের (ফরজ নামাযের) পূর্বে দু’ রাকা’আত (সুন্নাত) নামায ছেড়ে দিতে দেখিনি। যঈফ, যঈফ আবূ দাঊদ (১১২) ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে সফরে যুহরের নামায দুই রাকা’আত আদায় করেছি। এরপর আরো দুই রাকা’আত আদায় করেছি। সনদ দুর্বল। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নিজ এলাকায় থাকার সময় এবং সফরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে নামায আদায় করেছি। বাড়িতে থাকার সময় তাঁর সাথে যুহরের (ফরয)নামায চার রাকা’আত আদায় করেছি। অতঃপর দুই রাকা’আত (সুন্নাত) নামায আদায় করেছি। সফরে তাঁর সাথে যুহরের (ফরয) নামায দুই রাকা’আত আদায় করেছি। অতঃপর দুই রাকা’আত (সুন্নাত) নামায আদায় করেছি। আসরের (ফরয) নামায দুই রাকা’আত আদায় করেছি। তারপর তিনি আর কোন নামায আদায় করেননি। মাগরিবের (ফরয) নামায সফরে ও বাসস্থানে সমানভাবে তিন রাকা’আত আদায় করেছি। এটা সফরে ও বাসস্থানে কম হয় না। আর এটাই হল দিনের বিতরের (বেজোড়) নামায। তারপর দুই রাকা’আত (সুন্নাত) আদায় করেছি। সনদ দুর্বল, মতন মুনকার। দেখুন পূর্বের হাদীস।

【42】

দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে আদায় করা

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবুকের যুদ্ধে ব্যস্ত থাকাকালে সূর্য ঢলে যাওয়ার আগে নিজের তাঁবু ত্যাগ করলে যুহরের নামায দেরি করে আসরের সাথে একত্রে আদায় করতেন। তিনি সূর্য ঢলে যাওয়ার পর তাঁবু ত্যাগ করলে ‘আসরের নামায এগিয়ে এনে যুহরের সাথে একত্রে আদায় করতেন। তিনি মাগরিবের আগে তাঁবু ত্যাগ করলে মাগরিব দেরি করে ‘ইশার সাথে একত্রে আদায় করতেন। তিনি মাগরিবের পর তাঁবু ত্যাগ করলে ‘ইশাকে এগিয়ে এনে মাগরিবের সাথে একত্রে আদায় করতেন। -সহীহ্‌। সহীহ্‌ আবূ দাঊদ- (১১০৬), ইরওয়া (৫৭৮) আব্দুস সামাদ ইবনু সুলাইমান আব্দুস সামাদ ইবনু সুলাইমান স্বীয় সানাদের কুতাইবার অর্থাৎ মু‘আযের হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। লাইসের সূত্রে কুতাইবা ছাড়া আর কেউ এ হাদীস বর্ণনা করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। লাইস-ইয়াযীদ-আবুত তুফাইল-মুআয (রাঃ) -এর সূত্রে বর্ণনাটি গারীব। বিদ্বানদের নিকট আবুয-যুবাইর-আবুত তুফাইল-মু‘আয (রাঃ) -এর সনদে বর্ণিত হাদীসটি প্রসিদ্ধ যে, ‘‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবুক যুদ্ধে যুহর ও আসর এবং মাগরিব ও ‘ইশা একত্রে আদায় করেছেন।” ইমাম শাফিঈ, আহমাদ এবং ইসহাক এই মতের সমর্থক। তাঁরা বলেছেন, সফরে দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে আদায় করতে কোন অপরাধ নেই। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাঁর নিকট তাঁর কোন এক স্ত্রীর মুমূর্ষু অবস্থার খবর এলে তিনি তাড়াতাড়ি রওনা হলেন এবং পথ চলতে চলতে (পশ্চিম আকাশের লালিমা) অদৃশ্য হয়ে গেল। তারপর তিনি (বাহন হতে) নেমে মাগরিব ও ‘ইশার নামায একত্রে আদায় করলেন। তারপর তিনি সফরসঙ্গীদের বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যখন তাড়াহুড়া করে যাওয়ার দরকার হত তখন তিনি এমনটিই করতেন। -সহীহ্‌। সহীহ্‌ আবূ দাঊদ- (১০৯০), বুখারী ও মুসলিম মারফূরূপে।

【43】

বৃষ্টি প্রার্থনার নামায (সালাতুল ইসতিসকা)

আব্বাদ ইবনু তামীম (রাঃ) হতে তাঁর চাচা একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের নিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য বের হলেন। তাদেরকে নিয়ে তিনি দুই রাক’আত নামায আদায় করলেন। এতে তিনি সশব্দে কিরা’আত পাঠ করলেন। তিনি তাঁর চাদর উল্টিয়ে দিলেন, দুই হাত উপরে তুললেন এবং কিবলামুখী হয়ে দু’আ করলেন। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১২৬৭), বুখারী ও মুসলিম। আবুল লাহ্‌ম (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে আহজারুয-যাইত নামক জায়গায় বৃষ্টি প্রার্থনা করতে দেখলেন। তিনি দুই হাত তুলে দু’আ করলেন। -সহীহ্‌। সহীহ্‌ আবূ দাঊদ- (১০৬৩)। হিশাম ইবনু ইসহাক (রহঃ) হতে তাঁর পিতা তিনি (ইসহাক) বলেন, মাদীনার গভর্নর ওয়ালীদ ইবনু ‘উক্ববা (রাঃ) আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ‘বৃষ্টি প্রার্থনা’ প্রসঙ্গে জানার জন্য ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) -এর নিকটে পাঠালেন। আমি তাঁর নিকট এলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাধারণ পোশাক পরে বিনয় ও নম্রতা সহকারে বৃষ্টি প্রার্থনার জন্য বের হয়ে ‘ঈদের মাঠে আসেন। তিনি তোমাদের এ খুতবা দেওয়ার মত খুতবা দেননি। বরং তিনি অবিরত দু’আ-আরাধনা ও তাকবীর বলতে থাকেন। তিনি ‘ঈদের নামাযের মত দুই রাক‘আত নামাযও আদায় করলেন। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১২৬৬)। বর্ণনাকারী অপর একটি সূত্রে ও একই রকম হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তাতে ‘মুতাখাশশিআন’ (ভীত-সন্ত্রস্ত) শব্দটিও উল্লেখ আছে এবং এ শেষোক্ত সূত্রে বর্ণিত হাদীসটিও হাসান সহীহ্‌।

【44】

সূর্যগ্রহণের নামায (সালাতুল কুসূফ)

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্যগ্রহণকালে নামায আদায় করলেন। তিনি কিরা‘আত পাঠ করলেন, তারপর রুকূ করলেন, আবার কিরা‘আত পাঠ করলেন, তারপর রুকূ করলেন, আবার কিরা‘আত পাঠ করলেন, তারপর রুকূ করলেন, তারপর দুটি সাজদাহ্‌ করলেন। দ্বিতীয় রাক‘আতও তিনি এভাবেই আদায় করলেন। -সহীহ্‌। সহীহ্‌ আবূ দাউদ- (১০৭২), বুখারী ও মুসলিম। আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূল্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুযে সূর্যগ্রহণ হল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের নিয়ে (জামা‘আতে) নামায আদায় করলেন। তিনি অধিক সময় ধরে কিরা‘আত পাঠ করলেন, তারপর রুকূ করলেন এবং দীর্ঘসময় রুকূতে থাকলেন, তারপর মাথা তুললেন (রুকূ’ হতে উঠলেন)। তিনি আবার দীর্ঘ কিরা‘আত পাঠ করলেন কিন্তু প্রথমবারের চেয়ে কম লম্বা করলেন, তারপর রুকূতে গেলেন এবং দীর্ঘ সময় রুকূতে থাকলেন, কিন্তু আগের চেয়ে সংক্ষেপে করলেন। তারপর তিনি রুকূ থেকে মাথা তুলে সাজদাহ্‌তে গেলেন। তিনি দ্বিতীয় রাক‘আতও উল্লেখিত পদ্ধতিতে আদায় করলেন। -সহীহ্‌। সহীহ্‌ আবূ দাঊদ- (১০৭১), বুখারী ও মুসলিম।

【45】

সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণের নামাযের কিরা‘আতের ধরণ

সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সূর্যগ্রহণের নামায আদায় করালেন। কিন্তু আমরা তাঁর (কির’আত পাঠের) কোন আওয়াজ শুনতে পাইনি। যঈফ,ইবনু মাজাহ (১২৬৪)। আয়িশাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূর্য বা চন্দ্র গ্রহণের নামায আদায় করলেন এবং তাতে সুস্পষ্ট আওয়াজে কিরা‘আত পাঠ করলেন। -সহীহ্‌। সহীহ্‌ আবূ দাঊদ- (১০৭৪), বুখারী ও মুসলিম।

【46】

শংকাকালীন নামায (সালাতুল খাওফ)

সালিম (রহঃ) থেকে তাঁর পিতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই দলের মধ্য থেকে এক দলের সাথে এক রাক‘আত নামায আদায় করলেন। এ সময় অপর দল শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকলো। তারপর প্রথম দল এক রাক‘আত আদায় করে দ্বিতীয দলের জায়গায় অপেক্ষায় থাকল। দ্বিতীয় দল আসলে তিনি তাদের সাথে দ্বিতীয় রাক‘আত নামায আদায় করে সালাম ফিরান। তারা উঠে নিজেদের বাকী রাক‘আত পূর্ণ করলো। তারপর তারা আবার অপেক্ষায় থাকলো এবং প্রথম দল এসে তাদের বাকি রাক‘আত পূর্ণ করলো। -সহীহ্‌। সহীহ্‌ আবূ দাঊদ- (১১৩২), ইরওয়া- (৩/৫০), বুখারী ও মুসলিম। সাহল ইবনু আবূ হাসমা (রাঃ) তিনি বিপদকালীন নামায সম্পর্কে বলেন, ইমাম কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াবে। একদল তার সাথ দাঁড়াবে এবং অপর দল শত্রুকে বাধা দান করবে। তাদের অবস্থান শত্রুর দিকে থাকবে। ইমাম প্রথম দলের সাথে এক রাক‘আত আদায় করবে, তারপর মুক্তাদীরা এক রুকূ ও দুই সাজদাহ্‌ করবে (আরো এক রাক‘আত আদায় করবে)। অতঃপর তারা গিয়ে প্রতিরক্ষা বুহ্য রচনা করবে এবং দ্বিতীয় দল আসলে ইমাম তাদের সাথে আর এক রাক‘আত নামায আদায় করবে। তাদের সাথে দুটি সাজদাহ্‌ করবে, এতে তার দুই রাক‘আত পূর্ণ হবে এবং তাদের হবে এক রাক‘আত। অতঃপর তারা আরো এক রাক‘আত আদায় করবে এবং দুটি সাজদাহ্‌ করবে। -সহীহ্‌। ইবনু মাজাহ- (১২৫৯), বুখারী ও মুসলিম। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ অন্য সূত্রে এ হাদীসটি সাহল ইবনু হাসমার হাদীসের মত বর্ণনা করেছেন। তিনি আমাকে আরো বলেন, এ হাদীসটি ঐ হাদীসটির পাশাপাশিই লিখে নাও। হাদীসটি আমার মনে না থাকলেও এটা ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু সাঈদ আল-আনাসারীর হাদীসের মতই ছিল। ইমাম মালিক ইমাম মালিক তাঁর সনদ পরম্পরায় এ হাদীসের মতো হাদীস এমন একজন সাহাবী হতে বর্ণনা করেছেন যিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সালাতুল খাওফ (শংকাকালীন নামায) আদায় করেছেন।

【47】

কুরআনের সিজদাসমুহ

আবূ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে (কুরাআনে) এগারটি সিজদা করেছি যার মধ্যে সূরা নাজমের সিজদাটিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। যঈফ, ইবনু মাজাহ(১০৫৫) আবূ দারদা (রাঃ) আবূ দারদা (রাঃ) এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে………পূর্বোক্ত হাদীসের মতো। যঈফ, প্রাগুক্ত।

【48】

মহিলাদের মসজিদে যাতায়াত

মুজাহিদ (রহঃ) তিনি বলেন, কোন এক সময় আমরা ইবনু ‘উমার (রাঃ) -এর কাছে হাজির ছিলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মহিলাদেরকে রাতের বেলা মসজিদে যাওয়ার সম্মতি দাও। তাঁর (ইবনু উমারের) ছেলে বললো, আল্লাহ তা’আলার কসম! তাদেরকে মসজিদে যাওয়ার অনুমতি কখনো দিব না। কেননা তারা এটাকে মওকা হিসেবে গ্রহন করবে। ইবনু ‘উমার বললেন, আল্লাহ তোমার অমঙ্গল করেছেন এবং করবেন! আমি বলছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন (অনুমতি দিতে), আর তুমি বলছো, অনুমতি দিব না। -সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাউদ- (৫৭৭), বুখারী ও মুসলিম।

【49】

মসজিদে থুথু ফেলা মাকরূহ

তারিক ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল-মুহারিবী (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তুমি নামায আদায়কালে তোমার ডান দিকে থুথু ফেল না, বরং তোমার পিছনে অথবা বাঁ দিকে অথবা বাঁ পায়ের নীচে থুথু ফেল। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১০২১)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মসজিদে থুথু ফেলা গুনাহের কাজ। এর জরিমানা হলো তা মাটিতে পুঁতে ফেলা। -সহীহ্। রওজ- (৪৮), সহীহ্ আবূ দাউদ- (৪৯৪), বুখারী ও মুসলিম।

【50】

সূরা ইনশিকাক ও সূরা ইকরার সাজদাহ্ প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ‘ইক্বরা বিসমি রব্বিকা’ ও ‘ইযাস সামাউন শাক্কাত’ সূরা দুটিতে সাজদাহ্ করেছি। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১০৫৮), মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) অপর একটি সূত্রে আবূ হুরাইরার নিকট হতেও এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসের সনদে চারজন তাবিঈ রয়েছেন তারা পরস্পরের নিকট হতে বর্ণনা করেছেন। বেশিরভাগ বিদ্বান এ হাদীসের উপর আমল করেছেন তাদের মতে উল্লেখিত সূরা দুটিতে সাজদাহ্ আছে।

【51】

সূরা আন্-নাজমের সাজদাহ্

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা নাজম-এ সাজদাহ্ করেছেন। মুসলিম, মুশরিক, জ্বিন ও মানুষ সবাই তাঁর সাথে সাজদাহ্ করেছেন। -সহীহ্। বুখারী, কিস্সাতুল গারানীক-(১৮, ২৫, ৩১ পৃঃ), বুখারী।

【52】

যে ব্যক্তি সূরা নাজমে সাজদাহ্ করে না

যাইদ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে সূরা নাজম পাঠ করে শুনালাম, কিন্তু তিনি সাজদাহ্ করেননি। -সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (১২৬৬), বুখারী ও মুসলিম।

【53】

সূরা সা’দ -এর সাজদাহ্

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসল্লামকে সূরা ‘সা’দ’ -এ সাজদাহ্ করতে দেখেছি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ এটা ওয়াজিব সাজদাহ্‌র অন্তর্ভুক্ত নয়। -সহীহ্। সহীহ্‌ আবূ দাঊদ- (১২৭০)।

【54】

সূরা হাজ্জের সাজদাহ্

উকবা ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! সূরা হাজ্জকে অত্যন্ত অধিক মর্যাদা দেয়া হয়েছে। কেননা এর মধ্যে দুটি সাজদাহ্ রয়েছে। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। যে ব্যক্তি এই সাজদাহ্ দুটো না করে সে যেন এই দুটো (সাজদাহ্‌র আয়াত) পাঠ না করে। -হাসান। সহীহ আবূ দাঊদ- (১২৬৫), মিশকাত- (১০৩০)

【55】

তিলাওয়াতের সিজদায় পাঠের দু’আ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে বললো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি আজ রাতে নিজেকে স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি ঘুমিয়ে আছি, আমি যেন একটি গাছের পিছনে নামায আদায় করছি। আমি তিলাওয়াতের সাজদাহ্ করলাম এবং গাছটিও আমার সাজদাহ্‌র সাথে সাথে সাজদাহ্ করলো। আমি গাছটিকে বলতে শুনলাম- “হে আল্লাহ! এই সাজদাহ্‌র বিনিময়ে তোমার কাছে আমার জন্য সাওয়াব নির্ধারণ করে রাখ, এর বিনিময়ে আমার একটি গুনাহ দূর কর, এটাকে তোমার কাছে আমার জন্য সঞ্চয় হিসেবে জমা রাখ এবং এটা আমার নিকট হতে গ্রহণ করে নাও, যেভাবে তুমি তোমার বান্দা দাঊদ (আঃ) -এর নিকট গ্রহণ করেছিলে।” ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহ্‌র আয়াত পাঠ করলেন এবং সাজদাহ্ করলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) আবার বললেন, আমি তাঁকে তখন সেই গাছের দু’আটির মতো পাঠ করতে শুনলাম, যে সম্পর্কে ইতিপূর্বে লোকটি তাঁকে জানিয়েছিল। -হাসান। ইবনু মাজাহ- (১০৫৩)। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা তিলাওয়াতের সাজদাহতে এই দু‘আ পাঠ করতেনঃ “আমার চেহারা সেই মহান সত্তার জন্য সাজদাহ্ করলো যিনি নিজ শক্তি ও সামর্থ্যে একে সৃষ্টি করেছেন এবং এতে শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন।” -সহীহ। সহীহ আবূ দাঊদ- (১২৭৩)।

【56】

কারো রাতের নিয়মিত তিলাওয়াত ছুটে গেলে সে তা দিনে পূর্ণ করে নিবে

আবদুর রহমান ইবনু ‘আবদুল ক্বারী (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমি ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) -কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের নিয়মিত ‍ও নির্দিষ্ট পরিমাণ (কুরআন) তিলাওয়াত অথবা তার অংশবিশেষ বাকী রেখে ঘুমিয়ে গেল এবং ফজর ও যুহরের মাঝামাঝি সময়ে তা পাঠ করে নিল, সে যেন তা রাতেই পাঠ করে নিয়েছে বলে গণ্য হবে। -সহীহ। ইবনু মাজাহ- (১৩৪৩), মুসলিম।

【57】

ইমামের আগে রুকূ-সাজদাহ্ হতে মাথা উত্তোলনকারীর প্রতি কঠোর হুশিয়ারী

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইমামের আগে (রুকূ-সাজদাহ্ থেকে) মাথা উত্তোলনকারীর কি ভয় নেই যে, আল্লাহ্ তা’আলা তার মাথাকে গাধার মাথায় রূপান্তরিত করে দিবেন? -সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৯৬১), বুখারী ও মুসলিম।

【58】

ফরয নামায আদায় করার পর আবার লোকদের ইমামতি করা

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করতেন, তারপর নিজের গোত্রে গিয়ে তাদের ইমামতি করতেন। -সহীহ। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (৭৫৬), বুখারী ও মুসলিম আরো পূর্ণরূপে।

【59】

গরম অথবা ঠাণ্ডার কারণে কাপড়ের উপর সাজদাহ করার অনুমতি আছে

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমরা গরমের দিনে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে নামায আদায়কালে গরম থেকে বাঁচার জন্য কাপড়ের উপর সাজদাহ করতাম। -সহীহ। ইবনু মাজাহ– (১০৩৩), বুখারী ও মুসলিম।

【60】

ফজরের নামায আদায়ের পর সূর্য উঠা পর্যন্ত মসজিদে বসে থাকা মুস্তাহাব

জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামায আদায়ের পর সূর্য উঠা পর্যন্ত নিজের নামাযের জায়গায় বসে থাকতেন। -সহীহ। সহীহ আবু দাঊদ- (১১৭১), মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামা’আতে আদায় করে, তারপর সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহ তা’আলার যিকর করে, তারপর দুই রাক’আত নামায আদায় করে- তার জন্য একটি হাজ্জ ও একটি উমরার সাওয়াব রয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পূর্ণ, পূর্ণ, পূর্ণ (হাজ্জ ও উমরার সাওয়াব)। -হাসান। তা’লীকুর রাগীব- (১/১৬৪, ১৬৫), মিশকাত- (৯৭১)

【61】

নামাযে এদিক-সেদিক তাকানো

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযরত অবস্থায় ডানে-বাঁয়ে তাকাতেন কিন্তু পিছনের দিকে ঘাড় ফেরাতেন না। -সহীহ্। মিশকাত- (৯৯৮) ইকরামার কিছু সঙ্গী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযে এদিক-সেদিক চোখ ঘুরাতেন উপরের হাদীসের মতো। -সহীহ্। দেখুন পূর্বোক্ত হাদীস। আনাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ হে প্রিয় বৎস সাবধান! নামাযের মধ্যে কখনো এদিক-সেদিক দেখবে না। কেননা নামাযরত অবস্থায় এদিক-সেদিক তাকানো সর্বনাশ ডেকে আনে। যদি তাকানোর খুবই দরকার হয় তবে নফল নামাযে তাকাও, ফরয নামাযে নয়। যঈফ, তালিকাতুল জিয়াদ, তা’লিকুর রাগীব- (১৯৯১), মিশকাত- (৯৯৭) , আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে নামাযরত অবস্থায় এদিক-সেদিক তাকানো প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেনঃ এটা শাইতানের ছোঁ মারা, শাইতান সুযোগ বুঝে ছোঁ মেরে কোন ব্যক্তির নামায থেকে কিছু অংশ নিয়ে যায়। -সহীহ্। ইরওয়া- (৩৭০), বুখারী।

【62】

কোন ব্যক্তি ইমামকে সাজদাহতে পেলে সে তখন কি করবে?

মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ নামায আদায় করতে এসে ইমামকে কোন এক অবস্থায় পেল। ইমাম যেরূপ করে সেও যেন অনুরূপ করে (তাকে যে অবস্থায় পাবে সেই অবস্থায় তার সাথে নামাযে শারীক হয়ে যাবে)। -সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (৫২২), আস-সাহীহাহ্- (১১৮৮)

【63】

নামায শুরু হওয়ার সময় দাঁড়িয়ে ইমামের অপেক্ষা করা মাকরূহ

আব্দুল্লাহ ইবনু কাতাদা (রাঃ) হতে তার পিতা তিনি (আবূ কাতাদা) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নামাযের জন্য ইক্বামাত দেয়া হলে আমাকে (কামরা হতে) বের হতে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না। ¬ -সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (৫৫০), আর রাউজুন নাযীর- (১৮৩), বুখারী ও মুসলিম।

【64】

‘আর পূর্বে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা ও রাসূলের প্রতি দরূদ ও সালাম পাঠ করবে

আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নামায আদায় করছিলাম এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আবূ বকর এবং উমার (রাঃ) -ও উপস্থিত ছিলেন। আমি (শেষ বৈঠকে) বসলাম, প্রথমে আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করলাম, তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি সালাম নিবেদন করলাম, তারপর নিজের জন্য দু‘আ করলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি প্রার্থনা করতে থাক তোমাকে দেয়া হবে, তুমি প্রার্থনা করতে থাক তোমাকে দেয়া হবে। -হাসান সহীহ্। সিফাতুস সালাত, তাখরীজুল মুখতারাহ- (২৫৫), মিশকাত- (৯৩১)।

【65】

মসজিদ সুগন্ধময় করে রাখা

আইশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করতে, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং সুবাসিত করতে হুকুম দিয়েছেন। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (৭৫৯) হিশাম ইবনু ‘উরাওয়া (রহঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে হিশাম ইবনু ‘উরাওয়া (রহঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন…… উপরের হাদীসের মতোই। হিশাম ইবনু ‘উরাওয়া (রহঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্র হিশাম ইবনু ‘উরাওয়া (রহঃ) হতে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন…… উপরের হাদীসের মতোই।

【66】

দিন ও রাতের (নফল) নামায দুই দুই রাক‘আত করে

ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ রাত ও দিনের (নফল) নামায দুই রাক‘আত দুই রাক‘আত। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (১৩২২)।

【67】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিনের নামায কিরূপ ছিল?

আসিম ইবনু যামরা (রহঃ) তিনি বলেনঃ আমরা আলী (রাঃ) -কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিনের বেলার নামায প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন, তোমরা সে রকম নামায আদায় করতে সক্ষম হবে না। আমরা বললাম, আমাদের মধ্যে কে সে রকম আদায় করতে সক্ষম হবে? তিনি বললেন, যখন সূর্য এদিকে (পূর্বাকাশে) এরূপ হতো যেমন আসরের সময় হয়ে থাকে, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই রাক‘আত (সালাতুল ইশরাক) নামায আদায় করতেন। আবার যখন সূর্য এদিকে (পূর্বাকাশে) এরূপ হতো, যেমন যুহরের ওয়াক্তের সময় (পশ্চিমাকাশে) হয় তখন তিনি চার রাক‘আত (সালাতুদ যুহা) নামায আদায় করতেন। তিনি যুহরের পূর্বে চার রাক‘আত এবং পরে দুই রাক‘আত এবং ‘আসরের পূর্বে চার রাক‘আত নামায আদায় করতেন। তিনি নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতা, নাবী-রাসূল এবং তাঁদের অনুসারী মু‘মিন মুসলমানদের প্রতি সালাম পাঠানোর মাধ্যমে প্রতি দুই রাক‘আতের মাঝখানে অন্তরাল সৃষ্টি করতেন। (অর্থাৎ দুই দুই রাক‘আত করে আদায় করতেন)। -হাসান। ইবনু মাজাহ- (১১৬১)। আসিম (রাঃ) অপর একটি সূত্রেও আসিম (রাঃ) হতে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। এটি হাসান হাদীস।

【68】

মহিলাদের দোপাট্টা, চাদর ইত্যাদিতে নামায আদায় করা মাকরূহ

আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বিবিদের ওড়না, চাদর ইত্যাদিতে নামায আদায় করতেন না। -সহীহ্। আবূ দাঊদ- (৩৯১)।

【69】

নফল নামাযরত অবস্থায় হাঁটা এবং কোন কাজ করা

আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি (যখন) আসলাম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তখন) নামায আদায় করছিলেন। এ সময় ভিতর হতে ঘরের দরজা আটকানো ছিল। তিনি (নামাযরত অবস্থায়) হেঁটে এসে আমার জন্য দরজা খুলে দিলেন। তারপর তিনি নিজের জায়গায় ফিরে আসলেন। দরজাটি কিবলার দিকে ছিল। -হাসান। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (৮৫৫), মিশকাত- (১০০৫), আল-ইরওয়া- (৩৮৬)।

【70】

এক রাক‘আতে দুটি সূরা পাঠ করা

আ‘মাশ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আবূ ওয়ায়িলকে বলতে শুনেছি, এক ব্যক্তি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) -কে (সূরা মুহাম্মাদের) একটি শব্দ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করল, এটা কি ‘গাইর আসিনিন’ হবে না ‘গাইরু ইয়াসিনিন’ হবে? তিনি বললেন, এটা ছাড়া তুমি কি সমগ্র কুরআন পাঠ করে নিয়েছ? সে বললঃ হ্যাঁ। তিনি বললেন, একদল লোক কুরআন পাঠ করে এবং তারা এটাকে ঝাড়ে নিম্নমানের খেজুর ঝাড়ার মত। তাদের (কুরআন) পাঠ তাদের কণ্ঠনালীর উপরে উঠে না। আমি দুই দুইটি সাদৃশ্যপূর্ণ সূরা সম্পর্কে জানি যেগুলো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একত্রে মিলিয়ে পাঠ করতেন। রাবী বলেন, আমরা আলকামা (রহঃ) -কে প্রশ্ন করতে বললে তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) -কে প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন, মুফাসসাল সূরাগুলোর মধ্যে এমন বিশটি সূরা রয়েছে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেগুলোর দুই দুইটিকে পরস্পরের সাথে মিলিয়ে প্রতি রাক‘আতে পাঠ করতেন (অর্থাৎ এক এক রাক‘আতে দুটি করে সূরা পাঠ করতেন)। -সহীহ্। সহীহ্ আবূ দাঊদ- (১২৬২), সিফাতুস সালাত, বুখারী ও মুসলিম।

【71】

পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফযিলত এবং প্রতিটি পদক্ষেপের পুরস্কার

আবূ হুরাইরা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযূ করল তারপর নামাযের উদ্দেশ্যে রাওয়ানা হল। একমাত্র নামাযই তাকে (ঘর হতে) বের করল অথবা নামাযই তাকে উঠিয়েছে, এ অবস্থায় তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা তার একগুণ মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন অথবা একটি করে গুনাহ মাফ করে দিবেন। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (৭৭৪), বুখারী ও মুসলিম।

【72】

মাগরিবের (ফরয) নামাযের পর (নফল) নামায ঘরে আদায় করাই উত্তম

সা’দ ইবনু ইসহাক ইবনু কা’ব ইবনু উজরা (রাঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা এবং দাদা তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবদুল আশহাল গোত্রের মসজিদে মাগরিবের নামায আদায় করলেন। লোকেরা নফল নামায আদায় করতে দাঁড়াল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ নামায অবশ্যই তোমাদের ঘরে আদায় করা উচিৎ। -হাসান। ইবনু মাজাহ- (১১৬৫)।

【73】

ইসলাম গ্রহণ করার সময় গোসল করা

ক্বাইস ইবনু ‘আসিম (রাঃ) তিনি ইসলাম ক্ববূল করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে কূলের পাতা মেশানো পানি দিয়ে গোসল করার হুকুম দিলেন। -সহীহ্। তাখরীজুল মিশকাত- (৫৪৩), সহীহ্ আবূ দাঊদ- (৩৮১)।

【74】

পায়খানায় যাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ্‌ বলা

আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জ্বিনের দৃষ্টি ও আদম সন্তানের লজ্জাস্থানের মাঝখানে পর্দা হলো, যখন তাদের কেউ পায়খানায় প্রবেশ করে সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। -সহীহ্। ইবনু মাজাহ- (২৯৭)।

【75】

কিয়ামাতের দিন এই উম্মাতের নিদর্শন হবে সাজদাহ ও ওযূর চিহ্ন

আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতের মুখ-মণ্ডল সাজদাহর কল্যাণে আলোক উদ্ভাসিত হবে এবং ওযূর কল্যাণে হাত-মুখ চমকপ্রদ (আলোকিত) হবে। -সহীহ। আস-সহীহাহ- (২৮৩৬)।

【76】

পবিত্রতা অর্জনের জন্য ডানদিক হতে শুরু করা মুস্তাহাব

আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পবিত্রতা অর্জন, মাথা আচড়ানো এবং জুতা পরার সময় এ কাজগুলো ডান দিক থেকে শুরু করাই পছন্দ করতেন। -সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৪০১)। বুখারী ও মুসলিম অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

【77】

ওযূর জন্য কতটুকু পানি যথেষ্ট

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দুই রিতল পানিই ওযূর জন্য যথেষ্ট। -সহীহ। ইবনু মজাহ- (২৭০)।

【78】

দুগ্ধপোষ্য শিশুর পেশাবে পানি ছিটিয়ে দেয়া

আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুগ্ধপোষ্য শিশুর পেশাব প্রসঙ্গে বলেনঃ পুরুষ শিশুর পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে এবং কন্যা শিশুর পেশাব ধুয়ে ফেলতে হবে। ক্বাতাদা (রহঃ) বলেনঃ শিশুরা যতক্ষণ শক্ত খাবার না ধরবে ততক্ষণ এই নির্দেশ বহাল থাকবে। শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করলে উভয়ের পেশাবই ধুয়ে ফেলতে হবে। -সহীহ। ইবনু মাজাহ- (৫২৫)।

【79】

সূরা আল-মায়িদাহ অবতীর্ণ হওয়ার পর মুজার উপর মাসাহ করা প্রসঙ্গ

শাহর ইবনু হাওশাব শাহর ইবনু হাওশাব হতে বর্ণিত; তিনি বলেনঃ আমি জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) –কে ওযূ করতে ও মুজার উপর মাসাহ করতে দেখলাম। ও তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে ওযূ করতে ও মুজার উপর মাসাহ করতে দেখেছি। আমি তাকে বললাম, এটা কি সূরা আল-মায়িদাহ অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে না পরে? তিনি বললেনঃ আমি তো মায়িদাহ অবতীর্ণ হওয়ার পরেই মুসলমান হয়েছি। -সহীহ। ইরওয়া- (১/১৩৭)। খালিদ ইবনু যিয়াদ খালিদ ইবনু যিয়াদ থেকে অন্য সূত্রেও হাদীসটি অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।

【80】

নাপাক অবস্থায় ওযু করে পানাহার ও ঘুমানোর অনুমতি

আম্মার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপবিত্র ব্যক্তিকে নামাযের ওয়ূর মতো ওযু করে খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমানোর সম্মতি দিয়েছেন। যঈফ, যঈফ আবু দাউদ (২৮)। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ।

【81】

নামাযের ফযিলত

কা’ব ইবনু উজারা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ হে কা’ব ইবনু উজরা! আমার পরে যেসব নেতার উদয় হবে আমি তাদের (খারাবী) থেকে তোমার জন্য আল্লাহ তা’আলার সহায়তা প্রার্থনা করি। যে ব্যক্তি তাদের দ্বারস্থ হলো (সান্নিধ্য লাভ করলো), তাদের মিথ্যাকে সত্য বললো এবং তাদের স্বৈরাচার ও যুলুম-নির্যাতনে সহায়তা করলো, আমার সাথে ঐ ব্যক্তির কোন সম্পর্ক নেই এবং এ ব্যক্তির সাথে আমারো কোন সংস্রব নেই। ঐ ব্যক্তি ‘কাওসার’ নামক হাউজের ধারে আমার নিকট আসতে পারবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি তাদের দ্বারস্থ হলো (তাদের কোন পদ গ্রহণ করলো) কিন্তু তাদের মিথ্যাকে সত্য বলে মানল না এবং তাদের স্বৈরাচার ও যুলুম-নির্যাতনে সহায়তা করলো না, আমার সাথে এ ব্যক্তির সম্পর্ক রয়েছে এবং এ ব্যক্তির সাথে আমারও সম্পর্ক রয়েছে। শীঘ্রই সে ‘কাওসার’ নামক হাউজের কাছে আমার সাথে দেখা করবে। হে কা’ব ইবনু উজরা! নামায হল (মুক্তির) সনদ, রোজা হল মজবুত ঢাল (জাহান্নামের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক) এবং সাদাকা (যাকাত বা দান-খায়রাত) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেয়, যেভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। হে কা’ব ইবনু উজরা! হারাম (পন্থায় উপার্জিত সম্পদ) দ্বারা সৃষ্ট ও পরিপুষ্ট গোশত (দেহ) -এর জন্য (জাহান্নামের) আগুনই উপযুক্ত। -সহীহ। তালীকুর রাগীব- (৩/১৫, ১৫০) ইমাম মুহাম্মাদ ইমাম মুহাম্মাদ বলেনঃ ইবনু নুমাইর উবাইদুল্লাহ ইবনু মূসার সূত্রে গালিব হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবূ উমামা (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বিদায় হাজ্জের ভাষণে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেনঃ তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলাকে ভয় কর, তোমাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় কর। তোমাদের রামাযান মাসের রোজা রাখ, তোমাদের ধন-দৌলতের যাকাত আদায় কর এবং তোমাদের আমীরের অনুসরণ কর, তবেই তোমাদের রবের জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। আমি (সুলাইম) আবূ উমামা (রাঃ) -কে প্রশ্ন করলাম, আপনি কতদিন পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ হাদীস শুনেছেন? তিনি বলেনঃ আমি তিরিশ বছর বয়সে তাঁর নিকট এ হাদীস শুনেছি। -সহীহ। আস-সহীহাহ- (৮৬৭)।