41. শিষ্টাচার

【1】

হাঁচিদাতার জবাব দেয়া

আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মুসলমানের সাথে অন্য মুসলমানের ছয়টি সদ্ব্যবহারের বিষয় আছেঃ (১) তার সাথে দেখা হলে তাকে সালাম করবে, (২) সে কোন ব্যাপারে আহ্বান করলে তাতে সাড়া দিবে, (৩) সে হাঁচি দিলে উত্তর দিবে (তার আলহামদুলিল্লাহ্‌র উত্তরে বলবে ইয়ারহামুকাল্লাহ), (৪) সে রোগাক্রান্ত হলে তাকে দেখতে যাবে, (৫) সে ইন্তেকাল করলে তার জানাযায় শারীক হবে এবং (৬) নিজের জন্য যা ভালোবাসবে পরের জন্যও তাই ভালোবাসবে। যঈফ, ইবনু মাজাহ (১৪৩৩), এ অনুচ্ছেদে আবূ হুরাইরা, আবূ আইয়ূব, বরাআ ও আবূ মাসঊদ (রাঃ) হতেও হাদিস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। অন্য সূত্রেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ হাদিস বর্ণিত আছে। কেউ কেউ আল-হারিস আল-আওয়াবের সমালোচনা করেছেন। আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক মু’মিনের জন্য আরেক মু’মিনের উপর ছয়টি দায়িত্ব রয়েছেঃ (১) সে অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাবে , (২) মারা গেলে তার জানাযায় উপস্থিত হবে , (৩) ডাকলে তাতে সাড়া দিবে ,(৪) তার সাথে দেখা হলে তাকে সালাম করবে (৫) সে হাঁচি দিলে তার জবাব দিবে এবং (৬) তার অনুপস্হিতিতে কিংবা উপস্থিতি সকল অবস্হায় তার শুভ কামনা করবে। সহীহঃ সহীহাহ (৮৩২) , মুসলিম অনুরুপ।

【2】

হাঁচি দিলে হাঁচিদাতা যা বলবে

নাফি’ (রাঃ) জনৈক ব্যক্তি ইবনু ‘উমর (রাঃ)এর পাশে হাঁচি দিয়ে বলল, “আলহামদু লিল্লাহি ওয়াসসালামু আলা রাসুলিল্লাহ”। ইবনু ‘উমর (রাঃ) বললেন, আমিও তো বলি, “আলহামদু লিল্লাহ ওয়াসসালামু আলা রাসুলিল্লাহ” (সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার জন্য নিবেদিত এবং তাঁর রাসুলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। কিন্তু রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)আমাদেরকে এ রকম বলতে শিখাননি , বরং তিনি আমাদেরকে “ আলহামদু লিল্লাহ আলা কুল্লি হাল “ (সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা) বলতে শিখিয়েছেন। হাসানঃ মিশকাত (৪৭৪৪) ইরওয়াহ (৩/২৪৫)।

【3】

হাঁচিদাতার জবাবে যা বলতে হবে

আবু মুসা (রাঃ) তিনি বলেন, ইয়াহুদীগন রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে হাঁচি দিত এবং আশা করত যে, তিনি তাদের জন্য হাঁচির জবাবে বলবেনঃ ইয়ারহামুকুল্লাহ “। কিন্তু তিনি বলতেনঃ” ইয়াহদীকুমুলাহ ওয়াইউসলিহু বা-লাকুম (আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে হিদায়াত করুন এবং তোমাদের অবস্থার সংশোধন করুন)। সহীহঃ মিশকাত (৪৭৪০) সালিম ইবনু উবাইদ (রহঃ) তিনি একদল লোকের সঙ্গে কোন এক সফরে ছিলেন। তাদের একজন হাঁচি দিয়ে বলল, আসসালামু আলাইকুম। একথা শুনে সালিম বললেন, আলাইকা ওয়া আলা উম্মিকা (তোমার উপর ও তোমার মায়ের উপর শান্তি বৰ্ষিত হোক)। এ উত্তরে মনে হল যেন সে অসন্তুষ্ট হয়েছে। সুতরাং তিনি বললেন, এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেছেন, আমি তো তাই বললাম জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে হাঁচি দিয়ে বলেছিল, আসসালামু আলাইকুম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেনঃ আলাইকা ওয়া আলা উষ্মিকা। কাজেই তোমাদের কেউ যেন হাঁচি দিয়ে বলে, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। আর যে ব্যক্তি তার জবাব দিবে সে যেন বলে, ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তা'আলা আপনাকে রহম করুন)। হাঁচিদাতা আবার বলবে, ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম (আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাদেরকে মাফ করুন)। যঈফ, ইরওয়া (৩/২৪৬, ২৪৭), মিশকাত তাহকীক ছানী (৪৭৪১), আবূ ঈসা বলেন, মানসূর হতে এ হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে রাবীগণ মতের অমিল করেছেন। তারা হিলাল ইবনু ইসাফ ও সালিম (রহঃ)-এর মাঝখানে আরো এক ব্যক্তির উল্লেখ করেছেন। আবু আইয়ূব (রাঃ) রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে কেউ যখন হাঁচি দিবে তখন সে যেন বলে, আল-হামদু লিল্লাহ আলা কুল্লি হাল। উত্তরদাতা বলবে , ইয়ারহামুকাল্লাহ। হাঁচিদাতা আবার বলবে , ইয়াহদীকুমুল্লাহু ওয়াইউসলিহু বা-লাকুম। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৩৭১৫)

【4】

হাঁচিদাতা আল-হামদু লিল্লাহ বললে তার জবাব দেয়া কর্তব্য

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে দু’জন লোক হাঁচি দিলো। তিনি তাদের একজনের হাঁচির জবাবে “ইয়ারহামুকাল্লাহ” বললেন, কিন্তু অন্যজনের জবাব দিলেন না। তিনি যার হাঁচির জবাব দেননি সে প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল ! আপনি তার হাঁচির জবাব দিলেন কিন্তু আমার হাঁচির জবাব দেননি। রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সে তো (আল-হামদু লিল্লাহ বলে) আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছে, কিন্তু তুমি তো “আল-হামদু লিল্লাহ “ বলনি। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【5】

হাঁচিদাতার জবাব কতবার দিতে হবে

ইয়াস ইবনু সালামাহ (রহঃ) হতে তার বাবা তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে হাঁচি দিল। আমিও তখন উপস্থিত ছিলাম। রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, “ইয়ারহামুকাল্লাহ”। সে আরেকবার হাঁচি দিলে রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ লোকটি সর্দিতে আক্রান্ত। সহীহ ; ইবনু মা-জাহ (৩৭১৪) উমার ইবনু ইসহাক ইবনু আবূ তালহা (রহঃ)এর নানা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিনবার পর্যন্ত হাঁচির উত্তর দাও। এরপরও সে যদি হাঁচি দেয় তবে তুমি চাইলে তার উত্তর দিতেও পার নাও দিতে পার। যঈফ, যঈফা (৪৮৩০), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব এবং এর সনদসূত্র অপরিচিত।

【6】

হাঁচির সময় মুখ ঢেকে রাখবে এবং আওয়াজ যথাসম্ভব নিচু করবে

আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন হাঁচি দিতেন, তখন তাঁর হাত কিংবা কাপড় দ্বারা মুখ ঢেকে রাখতেন এবং এর মাধ্যমে তাঁর আওয়াজ নীচুঁ করতেন। হাসান সহীহঃ রাওযুন নাযীর (১১০৯)

【7】

আল্লাহ তা’আলা হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হাঁচি আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আর হাই শাইতানের পক্ষ থেকে। সুতরাং তোমাদের মাঝে কেউ হাই তুললে সে যেন মুখের উপর হাত রাখে। আর সে যখন আহ আহ বলে, তখন শাইতান তার ভিতর হতে হাসতে থাকে। আল্লাহ –তা’আলা হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্ধ করেন। কাজেই কেউ যখন আহ আহ শব্দে হাই তোলে , তখন শাইতান তার ভিতর হতে হাসতে থাকে। হাসান সহীহঃ তা’লীক আলা ইবনে খুযাইমাহ (৯২১ ,৯২২) , ইরওয়াহ (৭৭৯) , বুখারী অনুরুপ। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন। সুতরাং তোমাদের মাঝে কেউ হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলার সময় সকল শ্রোতার জন্য ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা খুবই জরুরী হয়ে যায়। আর তোমাদের মাঝে কারও হাই উঠার সময় যথাসম্ভব সে যেন তা ফিরিয়ে রাখে এবং আহ্‌ আহ্‌ না বলে। কেননা এটা শাইতানের পক্ষ হতে এবং সে তাতে হাসতে থাকে। সহীহঃ ইরওয়াহ্‌ (৭৭৬), বুখারী।

【8】

নামাযে হাঁচি আসে শাইতানের পক্ষ থেকে

আদী ইবনু সাবিত (রহঃ) হতে পালাক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে আদী ইবনু সাবিত (রহঃ) হতে পালাক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে মারফূ হিসেবে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ নামাযের মধ্যে হাঁচি, তন্দ্রা ও হাই তোলা এবং হায়িয, বমি ও নাক দিয়ে রক্ত পড়া শাইতানের পক্ষ হতে। যঈফ, মিশকাত (৯৯৯), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র শারীক হতে ইয়াকযান সূত্রে এ হাদিস জেনেছি। আমি মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল (বুখারী)-কে ‘আদী ইবনু সাবিত-তার পিতা-তার দাদা' এই সনদসূত্র প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলাম। আমি বললাম, আদীর দাদার নাম কি? তিনি বললেন, আমি জানি না। ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু মাঈন প্রসঙ্গে উল্লেখ আছে যে, তিনি আদীর দাদার নাম দীনার বলেছেন।

【9】

কাউকে তার আসন থেকে তুলে সেই আসনে বসা মাকরুহ

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে কোন ব্যক্তি যেন তার কোন ভাইকে তার আসন থেকে তুলে দিয়ে সেই আসনে না বসে। সহীহঃ বুখারী (৬২৬৯), মুসলিম (৭/৯-১০)। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে কোন ব্যক্তি যেন তার ভাইকে তার আসন থেকে তুলে দিয়ে সে সেখানে না বসে। বর্ণনাকারী বলেন, লোকেরা ইবনু ‘উমারের জন্য জায়গা ছেড়ে দিত কিন্তু তিনি তাতে বসতেন না। সহীহঃ বুখারী (৬২৭০), মুসলিম (৭/১০)।

【10】

প্রয়োজনবশতঃ কেউ আসন ছেড়ে উঠে গিয়ে আবার ফিরে এলে সে ব্যক্তিই সে আসনের বেশি হক্বদার

ওয়াহ্‌হাব ইবনু হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ আসনের বেশি হক্বদার। সে ব্যক্তি কোন প্রয়োজনে বেরিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসলে এ জায়গার জন্য সেই বেশি হক্বদার। সহীহঃ ইরওয়াহ্‌ (২/২৫৮)

【11】

বিনা অনুমতিতে দু’জনের মাঝখানে বসা মাকরূহ

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ অনুমতি ব্যতীত দু’জন লোককে ফাঁক করে বসা কারো জন্য বৈধ নয়। হাসান সহীহঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (৭৪০৩)

【12】

বৈঠকের মাঝখানে বসা নিষেধ

আবূ মিজলায (রহঃ) কোন এক লোক বৈঠকের মাঝখানে বসে পড়লে হুযাইফা (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি বৈঠকের মাঝখানে বসে, সে মুহাম্মাদের ভাষায় লানত প্রাপ্ত অথবা আল্লাহ মুহাম্মাদের জবানীতে তাকে অভিশাপ দিয়েছেন। যঈফ, যঈফা (৬৩৮), মিশকাত (৪৭২২), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আবূ মিজলাযের নাম লাহিক ইবনু হুমাইদ।

【13】

কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো অপছন্দনীয়

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, সাহাবীদের নিকট রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর চাইতে বেশি প্রিয় ব্যক্তি আর কেউ ছিলেন না। অথচ তারা তাঁকে দেখে দাঁড়াতেন না। কেননা তারা জানতেন যে, তিনি এটা পছন্দ করেন না। সহীহঃ মুখতাসার শামা-য়িল (২৮৯), যঈফা ৩৪৬ নং হাদীসের অধীনে, মিশকাত (৪৬৯৮), নাকদুল কাত্তানী পৃষ্ঠা (৫১)। আবূ মিজলায (রহঃ) তিনি বলেন, মু‘আবিয়াহ্‌ (রাঃ) বাইরে বের হলে তাকে দেখে ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর ও ইবনু সাফ্‌ওয়ান দাঁড়িয়ে গেলেন। তিনি বললেন, তোমরা দু’জনেই বস। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ এতে যে লোক আনন্দিত হয় যে, মানুষ তার জন্য মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকুক, সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান নির্দিষ্ট করে নেয়। সহীহঃ মিশকাত (৪৬৯৯)

【14】

নখ কাটা

আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ পাঁচ প্রকার কাজ ফিতরাতের (স্বভাব ধর্মের) অন্তর্গত। (১) নাভীর নীচের লোম কেটে ফেলা, (২) খাৎনাহ্‌ করা, (৩) গোঁফ কাটা, (৪) বগলের চুল উপড়িয়ে ফেলা এবং (৫) নখ কাটা। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (২৯২), বুখারী ও মুসলিম। আয়িশাহ্‌ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ দশ প্রকার কাজ ফিত্‌রাতের (স্বভাব ধর্মের) অন্তর্গতঃ (১) গোঁফ কাটা, (২) দাড়ি লম্বা করা, (৩) মিসওয়াক করা, (৪) নাকে পানি দেয়া, (৫) নখ কাটা, (৬) আঙ্গুলের গ্রন্থিগুলো ধোয়া, (৭) বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলা, (৮) নাভীর নিম্নাংশের চুল কামানো এবং (৯) পানি দ্বারা শৌচ করা। যাকারিয়াহ্‌ (রহঃ) বলেন, মুস‘আব (রহঃ) বলেছেন, আমি দশম কাজটি ভুলে গেছি। তবে সম্ভবতঃ সেটা হবে কুলি করা। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (২৯৩), মুসলিম।

【15】

গোঁফ ও নখ কাটার সময়সীমা

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীদের জন্য চল্লিশ দিন অন্তর একবার নখ কাটা, গোঁফ খাটো করা এবং নাভীর নিম্নাংশের লোম কামানোর জন্য সময় নির্ধারণ করেছেন। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (২৯৫), মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের জন্য গোঁফ ছাটা, নখ কাটা, নাভীর নিম্নাংশের লোম কামানো এবং বগলের লোম উপড়িয়ে ফেলার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে এমনভাবে যে, তা যেন চল্লিশ দিনের বেশি রেখে না দেয়া হয়। সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস।

【16】

গোঁফ কাটা

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর গোঁফ ছেটে খাটো করতেন এবং বলতেনঃ দয়াময়ের প্রিয় বন্ধু ইবরাহীম (আঃ) এরকম করতেন। সনদ দূর্বল আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। যাইদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) , রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গোঁফ খাটো করে না, সে আমাদের (সুন্নাতের) অনুসারী নয়। সহীহঃ রাওযুন নাযীর (৩১৩), মিশকাত (৪৪৩৮)

【17】

দাড়ি ছাঁটা প্রসঙ্গে

আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দৈঘ্যে-প্রস্থে দু’ দিকে তাঁর দাড়ি ছাঁটতেন। মাওযূ, যঈফা (২৮৮), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমি মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল (আল-বুখারী)-কে বলতে শুনেছি, উমার ইবনু হারূনের বর্ণিত হাদিস গ্রহণ যোগ্য বলা যায়। "রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দাড়ির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ উভয় দিকে ছাঁটতেন” এই হাদিস ছাড়া তার অন্য কোন রিওয়ায়াত সম্পর্কে আমার জানা নাই, যার কোন বুনিয়াদ নাই বা যা তিনি এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আমরা শুধুমাত্র ইবনু হারূনের রিওয়ায়াত হিসেবে উপরোক্ত হাদিস জেনেছি। আমি ইমাম বুখারীকে উমার ইবনু হারূন সম্পর্কে উত্তম অভিমত মনে ধারণ করতে দেখেছি। আবূ ঈসা বলেন, আমি কুতাইবাকে বলতে শুনেছি, উমার ইবনু হারূন ছিলেন হাদিসের ধারক। তিনি বলতেন, “কথা ও কাজের সমষ্টি হল ঈমান” (আল-ঈমান কাওল ওয়া আমাল)। কুতাইবা বলেন, ওয়াকী ইবনু জাররাহ আমাদেরকে জানিয়েছেন এক ব্যক্তির সূত্রে, তিনি সাওর ইবনু ইয়াযীদের সূত্রেঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাইফবাসীদের বিপক্ষে মিনজানীক (পাথর নিক্ষেপক যন্ত্র) স্থাপন করেছেন। কুতাইবা বলেন, আমি ওয়াকীকে প্রশ্ন করলাম, ইনি কে? তিনি বলেন, আপনাদের সঙ্গী উমার ইবনু হারূন।

【18】

দাড়ি লম্বা হওয়ার জন্য ছেড়ে দেয়া

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা গোঁফ খাটো কর এবং দাড়ি লম্বা কর। সহীহঃ আদাবুয্‌ যিফাফ নতুন সংস্করণ (২০৯) ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে গোঁফ খাটো করতে এবং দাড়ি লম্বা করতে আদেশ করেছেন। সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস, বুখারী ও মুসলিম।

【19】

চিৎ হয়ে শুয়ে এক পায়ের উপর অন্য পা রাখা

আব্বাদ ইবনু তামীম (রহঃ) হতে তাঁর চাচার সূত্রে তিনি মাসজিদের মধ্যে রাসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে এক পায়ের উপর অন্য পা (ভাঁজ করে হাঁটু দাঁড় করিয়ে) রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকতে দেখেছেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম আবূ ‘ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আব্বাদ ইবনু তামীমের চাচার নাম ‘আবদুল্লাহ ইবনু যাইদ ইবনু ‘আসিম আল-মাযিনী।

【20】

এক পায়ের উপর অন্য পা রেখে চিৎ হয়ে শোয়া মাকরূহ

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের মাঝে কেউ যখন পিঠের উপর চিৎ হয়ে শয়ণ করে তখন যেন সে এক পা অপর পায়ের উপর না রাখে। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (৩/২৫৪) জাবির (রাঃ) (রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) )ইশতিমালুস সাম্মা (বাম কাঁধ অনাবৃত রেখে চাদরের দুই প্রান্ত দান কাঁধে জড়ো করে পরতে) , ইহতিবা (নিতম্বে ভর করে হাঁটুদ্বয় উঁচু করে পেটের সাথে চাদর পেচিয়ে বসতে) এবং এক পায়ের উপড় অপর পা (হাঁটু ভাঁজ করে) উঠিয়ে পিঠের উপর চিত হয়ে শুতে বারণ করেছেন। সহীহঃ সহীহাহ (১২৫৫) মুসলিম।

【21】

উপুড় হয়ে শোয়া মাকরূহ

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জনৈক ব্যক্তিকে পেটের উপর হয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বললেনঃ আল্লাহ তাআলা এ রকম শোয়া পছন্দ করেন না। হাসান সহীহঃ মিশকাত (৪৭১৮, ৪৭১৯)

【22】

লজ্জাস্থানের হিফাযাত করা

বাহ্‌য ইবনু হাকীম (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর বাবা ও তাঁর দাদার সূত্রে তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম , হে আল্লাহর রাসূল ! আমাদের লজ্জাস্থান কতটুকু ঢেকে রাখব এবং কতটুকু খোলা রাখতে পারব? তিনি বললেনঃ তোমার স্ত্রী ও দাসী ছাড়া সকলের দৃষ্টি হতে তোমার লজ্জাস্থান হিফাযাত করবে। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, পুরুষেরা একত্রে অবস্থানরত থাকলে? তিনি বললেনঃ যতদূর সম্ভব কেউ যেন আভরণীয় স্থান দেখতে না পারে তুমি তাই কর। আমি আবার প্রশ্ন করলাম , মানুষ তো কখনো নির্জন অবস্থায়ও থাকে। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা তো লজ্জার ক্ষেত্রে বেশি হাক্বদার। হাসানঃ ইবনু মা-জাহ (১৯২০) আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। বাহ্‌যের দাদার নাম মুআবিয়াহ ইবনু হাইদাহ্‌ আল-কুশাইরী। আল-জুরাইরী হাকীম ইবনু মুআবিয়ার সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি হলেন বাহ্‌যের বাবা।

【23】

বালিশে হেলান দিয়ে শোয়া

জাবির ইবনু সামুরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে তাঁর বাম পার্শ্বদেশে বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখেছি। সহীহঃ মুখতাসার শামা-য়িল (১০৪) জাবির ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বালিশে হেলান দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখেছি। সহীহ : দেখুন পূর্বের হাদিস।

【24】

(কারো প্রভাবাধীন এলাকায় ইমামতি করা)

আবূ মাস'ঊদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির প্রভাবাধীন এলাকায় কেউ ইমামতি করবে না এবং তার বাড়ীতে তার নির্দিষ্ট আসনে তার অনুমতি ব্যতীত বসবে না। সহীহ : ইরওয়াহ্ (৪৯৪), সহীহ আবূ দাঊদ (৫৯৪)

【25】

মালিক তার জন্তুযানের সামনের আসনে বসার বেশি হকদার

বুরাইদাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, কোন একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (কোথাও) হেঁটে যাচ্ছিলেন। তখন জনৈক ব্যাক্তি একটি গাধা সাথে নিয়ে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি আরোহন করুন, এবং সে পিছনে সরে গেল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ না, তুমি পিছনে যেও না, তুমি তোমার বাহনের সামনে বসার অধিকারী, তবে আমার জন্য স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিলে ভিন্ন কথা। লোকটি বলল, আমি তা আপনাকে দিয়ে দিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি সাওয়ার হলেন। সহীহ : মিশকাত (৩৯১৮), ইরওয়াহ্ (২/২৫৭)

【26】

নরম চাদর ব্যবহারের অনুমতি প্রসঙ্গে

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করলেন : তোমাদের চাদর আছে কি? আমি বললাম, আমরা চাদর কোথায় পাব? তিনি বললেনঃ খুব শীঘ্রই তা তোমাদের নিকট থাকবে। জাবির (রাঃ)বলেন, আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, আমার নিকট হতে তোমার চাদরটি সরিয়ে নাও। সে বলল, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বলেননি যে, অচিরেই তোমাদের নিকট চাদর থাকবে? তিনি (জাবির) বলেন, এরপর আমি তাকে এ কথা বলা হতে বিরত হলাম। সহীহ : বুখারি ও মুসলিম

【27】

একটি জন্তুযানে তিনজনের আরোহণ

ইয়াস ইবনু সালামাহ্ (রহঃ) হতে তার বাবা তিনি বলেন, কোন একদিন আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আশ্-শাহ্ববাহ্ নামক খচ্চরটি টেনে নিয়ে যাচ্ছিলাম। হাসান ও হুসাইন (রাঃ)তাঁর সামনে-পিছনে বসা ছিলেন। আমি সেটা টেনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হুজরার নিকটে নিয়ে গেলাম। হাসান : মুসলিম (৭/১৩০)

【28】

হঠাৎ দৃষ্টি পড়া প্রসঙ্গে

জারীর ইবনু 'আব্দুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে(কারো প্রতি) হঠাৎ দৃষ্টি পড়া বিষয়ে প্রশ্ন করলাম। তিনি আমাকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতে আদেশ করলেন। সহীহ: হিজাবুল মারয়াহ্ (৩৫),সহীহ আবূ দাঊদ (১৮৬৪),মুসলিম। বুরাইদাহ্ (রাঃ) বুরাইদাহ্ (রাঃ)হতে মারফূ' হিসেবে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে 'আলী! বারবার (অননুমোদিত জিনিসের প্রতি) তাকাবে না। তোমার প্রথম দৃষ্টি জায়িয ( ও ক্ষমাযোগ্য) হলেও পরের দৃষ্টি (ক্ষমাযোগ্য) নয়। হাসান : হিজাবুল মারয়াহ্ (৩৪), সহীহ আবূ দাঊদ (১৮৬৫)। আবূ 'ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এটি শুধু শারীকের রিওয়ায়াত হিসেবে জেনেছি।

【29】

স্ত্রীলোকগণ পুরুষদের থেকে পর্দা করবে

উম্মু সালামা (রাঃ) তিনি ও মাইমূনা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশে হাযির ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা দু’জন তাঁর নিকটে অবস্থানরত থাকতেই ইবনু উম্মু মাকতূম (রাঃ) তাঁর নিকট এলেন। এটা পর্দার নির্দেশ অবতীর্ণ হওয়ার পরের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা উভয়ে তার থেকে পর্দা কর। আমি (উম্মু সালামা) বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতেও পারছেন না চিনতেও পারছেন না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরাও কি অন্ধ, তোমরাও কি তাকে দেখতে পাচ্ছ না। যঈফ, মিশকাত (৩১১৬), ইরওয়া (১৮০৬), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।

【30】

স্বামীদের অনুমতি ব্যতীত তাদের স্ত্রীদের নিকট যাওয়া নিষেধ

আমর ইবনুল আস (রাঃ)এর মুক্তদাস( আবূ কাইস 'আবদুর রাহমান ইবনু সাবিত) কোন একদিন 'আমর ইবনুল আস (রাঃ)আসমা বিনতু উমাইসের নিকট যাবার অনুমতি প্রার্থনার জন্য তাকে 'আলী (রাঃ)-এর নিকট পাঠান। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। তিনি ('আমর) যখন প্রয়োজনীয় আলাপ শেষ করলেন, তখন উক্ত গোলাম এ প্রসঙ্গে 'আমর ইবনুল 'আস রাদিল্লাহু আনহু-কে প্রশ্ন করল। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বামীদের অনুমতি ব্যতীত তাদের স্ত্রীদের নিকট যেতে আমাদের নিষেধ করেছেন। সহীহ : আদাবুয্ যিফাক নতুন সংস্করন (২৮২-২৮৩)

【31】

স্ত্রীলোকের ফিতনাকে ভয় করা

উসামাহ্ ইবনু যাইদ ও সা'ঈদ ইবনু 'আমর ইবনু নুফাইল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার পরে ( মানুষের মাঝে) পুরুষের জন্য স্ত্রীলোকের ফিতনার চাইতে মারাত্নক ক্ষতিকর ফিতনা রেখে যাচ্ছি না। সহীহ : সহীহাহ্ ( ২৭০১), বুখারি ও মুসলিম। আবূ 'ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। উক্ত হাদীস সুলাইমান আত-তাইমী হতে, তিনি আবূ 'উসমান হতে, তিনি উসামা ইবনু যাইদ( রা:) হতে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এই সূত্রে একাধিক নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন। তারা এই সনদসূত্রে সা'ঈদ ইবনু 'আমর ইবনু নুফাইলের উল্লেখ করেননি। আল-মু'তামির ব্যতীত অন্য কোন বর্ণনাকারী উপরোক্ত সনদে উসামা ইবনু যাইদ ও সা'ঈদ ইবনু যাইদ (রাঃ)-এর উল্লেখ করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। আবূ সা'ঈদ ( রা:) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনু আবী 'উমার সুফইয়ান হতে, তিনি সুলাইমান আত-তাইমী হতে, তিনি আবূ 'উসমান হতে, তিনি উসামা ইবনু যাইদ হতে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

【32】

অপরের চুল ব্যবহার মাকরূহ

হুমাইদ ইবনু 'আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি মু'আবিয়াহ্ (রাঃ)-কে মাদীনার এক ভাষণে বলতে শুনেছেন : হে মাদীনাবাসীগণ! তোমাদের আলিমগণ কোথায়? আমি তো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এসব ’কুসসা' (অন্যের চুল) ব্যবহার করতে নিষেধ করতে শুনেছি। তিনি আরো বলতন : বানী ইসরাঈলগণ তখনি ধ্বংস হয়েছে, যখন তাদের রমনীগণ কুসসা( অপরের চুল) ব্যবহার শুরু করে। সহীহ : গাইয়াতুল মারাম (১০০), বুখারি ও মুসলিম।

【33】

পরচুলা প্রস্তুতকারিনী ও ব্যবহারকারিনী এবং উলকি উৎকীর্ণকারিনী ও যে উৎকীর্ণ করায়

'আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন সব নারীর উপর লানত করেছেন, যারা অঙ্গে উলকি আঁকে ও অন্যকে দিয়ে উল্কি আঁকায় এবং সৌন্দর্যের জন্য ভ্রুর চুল উপড়িয়ে আল্লাহ তা'আলার সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে। সহীহ : আদাবুয্ যিফাক (২০২-২০৪) নতুন সংস্করণ। ইবনু 'উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে পরচুলা বানায় এবং যে তা ব্যবহার করে, যে উলকি আঁকে এবং অন্যকে দিয়ে আঁকায়, আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে লা'নাত করেছেন। নাফি' ( রাহ:) বলেন, উলকি আঁকা হয় সাধারণত : নীচের মাড়িতে। সহীহ : ইবনু মা-জাহ (১৯৮৭), বুখারি ও মুসলিম।

【34】

পুরুষদের বেশধারিণী নারীগণ

ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, যেসব নারী পুরুষের বেশ ধারণ করে এবং যেসব পুরুষ নারীদের বেশ ধারণ করে তাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অভিসম্পাত করেছেন। সহীহ : ইবনু মা-জাহ (১৯০৪),বুখারি। ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারীর বেশধারী পুরুষদেরকে এবং পুরুষের বেশধারী নারীদেরকে লা'নাত করেছেন। সহীহ :দেখুন পূর্বের হাদীস ,বুখারি ও মুসলিম।

【35】

নারীদের সুগন্ধি মেখে বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ

আবূ মূসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি চোখই যেনাকারী। কোন নারী সুগন্ধি মেখে কোন মজলিসের পাশ দিয়ে গেলে সে এমন এমন অর্থাৎ যেনাকারিণী। হাসান : তাখরীজুল ইমান লি আবী 'উবাইদা(৯৬/১১০), তাখরীজুল মিশকাত (৬৫), হিজাবুল মারয়াহ্ (৬৪)।

【36】

নারী-পুরুষের সুগন্ধি ব্যবহার প্রসঙ্গে

আবু হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পুরুষের সুগন্ধি এমন হবে যার সুগন্ধ প্রকাশ পায় কিন্তু রং গোপন থাকে এবং নারীর সুগন্ধ এমন হবে যার রং প্রকাশ পায় কিন্তু সুগন্ধ গোপন থাকে। সহীহ : মিশকাত (৪৪৪৩), মুখতাসার শামা-য়িল (১৮৮), আর-রাদ্দু আলাল কিত্তানী পৃঃ (১১) 'ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেছেনঃ যে সুগন্ধির গন্ধ আছে কিন্তু রং নেই সেটিই পুরুষের জন্য উত্তম সুগন্ধি এবং যে সুগন্ধির রং আছে কিন্তু গন্ধ নেই সেটিই নারীর জন্য উত্তম সুগন্ধি। আর তিনি লাল রেশমের তৈরি আসনে বসতে বারণ করেছেন। সহীহ : প্রাগুক্ত

【37】

সুগন্ধি দ্রব্যের উপহার প্রত্যাখ্যান করা মাকরূহ

সুমামাহ্ ইবনু 'আবদুল্লাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আনাস (রাঃ) কখনো সুগন্ধি ফিরিয়ে দিতেন না। আনাস (রাঃ) বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও সুগন্ধি ফিরিয়ে দিতেন না। সহীহ : মুখতাসার শামা-য়িল (১৮৬), বুখারি। ইবনু 'উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তিনটি বস্তু প্রত্যাখ্যান করা যায় না : (১) বালিশ, (২) সুগন্ধি, (৩) দুধ। হাসান : প্রাগুক্ত (১৮৭) আবূ উসমান আন-নাহদী (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কাউকে সুগন্ধি (হাদিয়া) দেয়া হলে সে যেন তা ফিরিয়ে না দেয়। কেননা এটা জান্নাত হতে নিঃসৃত। যঈফ, মুখতাসার শামায়িল (১৮৯) যঈফা (৭৬৪), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। উক্ত হাদিস ছাড়া হানানের সূত্রে আর কোন হাদিস বর্ণিত আছে কি-না তা আমাদের জানা নেই। আবূ উসমান আন-নাহদীর নাম আবদুর রাহমান ইবনু মুল্ল। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময়কাল পেলেও তাঁকে দেখেননি এবং তাঁর নিকট সরাসরি হাদিসও শুনেননি।

【38】

পুরুষে পুরুষে এবং নারীতে নারীতে উলঙ্গ অবস্থায় গায়ে গা লাগানো মাকরূহ

আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন নারী অন্য নারীর সাথে (বস্ত্রহীন অবস্থায়) শরীর মিলিয়ে শোবে না। কেননা সে তার স্বামীর নিকট অপর নারীর শরীরের বর্ণনা দিবে এবং মনে হবে সে যেন তাকে চাক্ষুস দেখছে। সহীহ : সহীহ আবী দাঊদ (১৮৬৬), বুখারী। আবূ সা'ঈদ খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক পুরুষ অন্য পুরুষের গুপ্তাঙ্গের দিকে এবং এক নারী অন্য নারীর গুপ্তাঙ্গের দিকে তাকাবে না। এক পুরুষ অন্য পুরুষের সাথে এবং এক নারী অন্য নারীর সাথে এক কাপড়ের ভেতর শোবে না। সহীহ : ইবনু মা-জাহ (৬৬১),মুসলিম।

【39】

আভরণীয় অঙ্গের হিফাযাত করা

বাহয ইবনু হাকীম (রহঃ) হতে পপর্যায়ক্রমে তাঁর বাবা ও দাদার সূত্রে তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নাবী! আমাদের আভরণীয় অঙ্গের কতটুকু অংশ ঢেকে রাখব এবং কতটুকু অংশ খোলা রাখতে পারব? তিনি বললেনঃ তোমার স্ত্রী ও দাসী ব্যতীত ( সবার দৃষ্টি হতে) তোমার আভরণীয় অঙ্গের হিফাযাত কর। বর্ণনাকারী বলেন, আমি আবার প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! দলের লোকেরা কখনো একত্রিত হলে? তিনি বললেনঃ তোমার দ্বারা যতটুকু সম্ভব তা ঢেকে রাখবে, কেউ যেন তা দেখতে না পায়। তিনি বলেন, আমি আবারো বললাম, হে আল্লাহর নাবী! আমাদের মাঝে কেউ নির্জন স্থানে থাকলে? তিনি বললেনঃমানুষের চাইতে আল্লাহ তা'আলাকে বেশি লজ্জা করা দরকার। হাসান : (২৭৬৯) নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আবূ 'ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান।

【40】

উরুদেশ আভরণীয় অঙ্গের অন্তর্ভুক্ত

জারহাদ আল-আসলামী (রাঃ) তিনি বলেনঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদের মধ্যে জারহাদের পাশ দিয়ে গেলেন। সে সময় তার ঊরুদেশ উলঙ্গ অবস্থায় ছিল। তিনি বললেনঃ ঊরুদেশও আভরণীয় অঙ্গ। সহীহ : ইরওয়াহ্ (১/২৯৭-২৯৮), মিশকাত (৩১১৪) ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঊরুও একটি আভরণীয় অঙ্গ। সহীহ : দেখুন পূর্বের হাদীস। জারহাদ (রা:) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উরুও আভরণীয় অঙ্গ। সহীহ। জারহাদ (রা:) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন আর তখন তার উরু খোলা অবস্থায় ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তোমরা উরু ঢেকে রাখ, কেননা এটাও আভরণীয় অঙ্গ। সহীহ।

【41】

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা প্রসঙ্গে

সালিহ ইবনু আবূ হাসসান(রহ:) আমি সাঈদ ইবনুল মুসাঈয়্যাব(রহ:)-কে বলতে শুনেছি, অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা পবিত্র এবং পবিত্রতা ভালোবাসেন। তিনি পরিচ্ছন্ন এবং পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। তিনি মহান ও দয়ালু, মহত্ব ও দয়া ভালোবাসেন। তিনি দানশীল, দানশীলতাকে ভালোবাসেন। সুতরাং তোমরাও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থেক। আমার মনে হয় তিনি বলেছেনঃ তোমাদের আশেপাশের পরিবেশকেও পরিচ্ছন্ন রাখ এবং ইয়াহুদীদের অনুকরণ করো না। সালিহ বলেন, আমি এ প্রসঙ্গে মুহাজির ইবনু মিসমারের নিকটে বর্ণনা করলাম। তিনি বলেন, আমির ইবনু সা’দ তার পিতার সূত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে একই রকম হাদীস আমার কাছে বলেছেন, তোমাদের আশেপাশের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখ। যঈফঃ গা-ইয়াতুল মারাম (১১৩), তবে “আল্লাহ দানশীল…” এই অংশটুকু সহীহ, সহীহাহ্(২৩৬-১৬২৭), হিজাবুল মারয়াহ্ (১০১)।

【42】

সহবাসের সময় শারীর ঢেকে রাখা

ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা নগ্নতা হতে বেঁচে থাক। কেননা তোমাদের এমন সঙ্গী আছেন (কিরামান-কাতিবীন) যারা পেশাব- পায়খানা ও স্বামী-স্ত্রীর সহবাসের সময় ছাড়া অন্য কোন সময় তোমাদের হতে আলাদা হন না। সুতরাং তাদের লজ্জা কর এবং সম্মান কর। যঈফ, ইরওয়া (৬৪), মিশকাত, তাহকীক ছানী (৩১১৫),আবূ ঈসা বলেন, এই হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই এ হাদিস জানতে পেরেছি। আবূ মুহাইয়্যার নাম ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু ইয়া’লা।

【43】

গোসলখানায় প্রবেশ করা

জাবির (রা:) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ও পরকালের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে সে যেন ইযার(লুঙ্গি) পরিহিত অবস্থা ছাড়া গোসলখানায় প্রবেশ না করে। আল্লাহ তা’আল ও পরকালের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে সে যেন তার স্ত্রীকে গোসলখানায় প্রবেশ না করায়। আল্লাহ তা’আলা ও পরকালের প্রতি যে লোক ঈমান রাখে সে যেন এমন দস্তরখানে(খাদ্যের মাজলিসে) না বসে যেখানে মদ পরিবেশন করা হয়। হাসানঃ তা’লীকুর রাগীব (১/৮৮-৮৯), ইরওয়াহ্(১৯৪৯), গাইয়াতুল মারাম (১৯০)। আইশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নারী-পুরুষ উভয়কে গোসলখানায় যেতে বারণ করেছিলেন। পরে অবশ্য পুরুষের লুঙ্গি পরে সেখানে যাবার সম্মতি দিয়েছেন। যঈফ, ইবনু মাজাহ (২৭৪৯), আবূ ঈসা বলেন, আমরা শুধুমাত্র হাম্মাদ ইবনু সালামার রিওয়ায়াত হিসাবে এ হাদিস জেনেছি। এ হাদিসের সনদসূত্র খুব দৃঢ় নয়। আবুল মালী আল-হুযালী (রহঃ) কোন এক সময় হিম্‌স অথবা সিরিয়ার বসবাসকারী কয়েকজন মহিলা ‘আয়িশা (রাঃ)-এর নিকট আসল। তিনি বললেন, তোমরা তো সেই এলাকার অধিবাসী, যার মহিলারা গোসলখানায় প্রবেশ করে। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ যে নারী তার স্বামীর ঘর ছাড়া অন্য কোথাও তার কাপড় খোলে, সে তার ও আল্লাহ তা’আলার মধ্যকার পর্দা ছিড়ে ফেলে। সহীহ। ইবনু-মাজাহ (৩৭৫০)

【44】

যে ঘরে ছবি কিংবা কুকুর থাকে সে ঘরে ফেরেশতারা প্রবেশ করেন না।

আবূ তালহা (রা:) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছিঃ কুকুর অথবা ভাস্কর্যের ছবি থাকে এমন ঘরে ফেরেশতারা প্রবেশ করেন না। সহীহঃ ইবনু ম-জাহ (৩৬৪৯), বুখারী ও মুসলিম। রাফি’ ইবনু ইসহাক(রহ:) রোগাক্রান্ত আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ)-কে আমি ও আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ তালহা(রহ:) দেখতে গেলাম। আবূ সাঈদ (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের অবহিত করেছেনঃ যে ঘরে (জীবজন্তুর) প্রতিকৃতি অথবা ছবি থাকে, সে ঘরে(রাহমাতের) ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। ইসহাক সন্দেহে নিপতিত হয়েছেন, ছবির কথা না প্রতিকৃতির কথা বলেছেন। সহীহঃ গাইয়াতুল মারাম (১১৮), মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ্ (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেঃ জিবরীল(আ)আমার নিকট এসে বললেন, গতরাতে আমি আপনার নিকট এসেছিলাম, কিন্তু আপনার অবস্থানরত ঘরের দরজায় একটি পুরুষের প্রতিকৃতি, ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি সূক্ষ্ম কাপড়ের পর্দা এবং একটি কুকুর আমাকে ভিতরে প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করেছে। সুতরাং আপনি দরজার পাশে রাখা প্রতিকৃতিটির মাথা কেটে ফেলার আদেশ করুন, তাহলে সেটা গাছের আকৃতি হয়ে যাবে। আর পর্দাটিও কেটে ফেলতে বলুন আর তা দিয়ে সাধারণতঃ ব্যবহারের জন্য দু’টি গদি বানানো যাবে এবং কুকুরটিকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দিন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরীলের পরামর্শ মুতাবিক কাজ করলেন। আর কুকুর ছানাটি হাসান কিংবা হুসাইনের চৌকির নীচে বসা ছিল। যা হোক তিনি আদেশ করলেন এবং সে মুতাবিক এটাকেও বের করে দেয়া হল। সহীহঃ আদবুয যিফাফ নতুন সংস্করণ (১৯০-১৯৬)।

【45】

পুরুষের জন্য হলুদ রঙের কাপড় এবং রেশমী কাপড় পরা নিষেধ

আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) তিনি বলেনঃ দু’টি লাল কাপড় পরা কোন এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাঁকে সালাম দিল। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সালামের উত্তর দেননি। সনদ দূর্বল, আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। আলিমের মতে এ হাদিসের অর্থ হল, তারা কুসুম রংয়ের জামা-কাপড় অপছন্দ করেছেন। তাদের মতে কুসুম রং ছাড়া লাল, মেটে ইত্যাদি রং দিয়ে যদি কাপড় লাল করা হয়, তবে কোন দোষ নেই। আলী ইবনু আবূ তালিব (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোনার আংটি, কাসসী(রেশমী) কাপড়, রেশমী জীনপোষ (গদি) এবং যবের তৈরী বদ নিষিদ্ধ করেছেন। আবুল আহওয়াস(রহ:) বলেন, জি’আহ্ হল মিসরে যব হতে তৈরী করা এক প্রকার মদ। হাদীসের বক্তব্য সহীহ। বারাআ ইবনু ‘আযিব (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে সাতটি কাজ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি আমাদেরকে জানাযার অনুসরণ করতে, রোগীর খোঁজ-খবর নিতে, হাঁচিদাতার জবাব দিতে, দাওয়াতকারীর দাওয়াত গ্রহণ করতে, মযলিমের সাহায্য করতে, প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করতে এবং সালামের উত্তর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর তিনি সাতটি কাজ হতে আমাদের বারণ করেছেঃ সোনার আংটি বা শাখা, রুপার পাত্র ব্যবহার করতে, রশমী বস্ত্র, মিহী রেশমী কাপড়, মোটা রেশমী কাপড়, কাসসী কাপড় পরিধান করতে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ ‘ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আশ’আস ইবনু সুলাইম হলেন আশ’আস ইবনু আবীশ শা’সা। আবুশ্ শা’মার নাম সুলাইম ইবনুল আসওয়াদ।

【46】

সাদা পোশাক পরিধান

সামুরাহ্ ইবনু জুনদাব (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সাদা পোশাক পরিধান কর। কেননা এটা সবচেয়ে পবিত্র ও উত্তম। আর তোমাদের মৃতদেরকেও এ কাপড়ে কাফন দিও। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (১৪৭২)

【47】

পুরুষদের লাল রং-এর পোশাক পরিধানের অবকাশ প্রসঙ্গে

জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক জোছনা রাতে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাকিয়ে দেখলাম। তাঁর পরনে ছিল একজোড়া লাল রং-এর পোশাক। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে এবং চাঁদের দিকে তাকাতে লাগলাম। তিনিই আমার কাছে চাঁদের চাইতে অধিক সুন্দর মনে হল। যঈফ, মুখতাসার শামায়িল (৮)। উহাকে সহীহ বলা ভুল। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধুমাত্র আশআসের রিওয়ায়াত হিসাবে এ হাদিস জেনেছি। শুবা ও সুফিয়ান সাওরী তাঁরা উভয়েই আবূ ইসহাক হতে বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ)- এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন তিনি বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরনে একজোড়া লাল পোশাক দেখেছি”। সহীহ, পূর্বে ১৭২৪ নং হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। মাহমূদ ইবনু গাইলান-ওয়াকী হতে তিনি সুফিয়ান হতে তিনি আবূ ইসহাক হতে তিনি মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার হতে তিনি মুহাম্মাদ ইবনু জাফার হতে তিনি শুবা হতে তিনি আবূ ইসহাক হতে উপরোক্ত হাদিস বর্ণনা কারেছেন। এ হাদিসে আরো অধিক কথা আছে। আমি মুহাম্মাদকে প্রশ্ন করলাম, আবূ ইসহাক-আল-বারাআ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি বেশি সহীহ না জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ)- এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসটি? তিনি উভয় হাদিস সহীহ বলে মত দিয়েছেন। এ অনুচ্ছেদে বারাআ ও আবূ জুহাইফা (রাঃ) হতেও হাদিস বর্ণিত আছে।

【48】

সবুজ পোশাক প্রসঙ্গে

আবূ রিমসা (রা:) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দু’টি সবুজ চাদর পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। সহীহঃ মুখতাসার শামা-য়িল (৩৬)। আবূ ‘ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা এ হাদীসটি শুধুমাত্র ‘উবাইদুল্লাহ্ ইবনু ইয়াদের সূত্রেই জেনেছি। আবূ রিমসা আত্-তাইমীর নাম হাবীব ইবনু হাইয়্যান, মতান্তরে রিফাআ ইবনু ইয়াসরিবী।

【49】

কালো পোশাক প্রসঙ্গে

আয়িশাহ্ (রা:) তিনি বলেন, একদিন সকালে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কালো পশমী চাদর পরিহিত অবস্থায় বের হলেন। সহীহঃ মুখতাসার শামা-য়িল (৫৬), মুসলিম।

【50】

হলুদ রংয়ের পোশাক প্রসঙ্গে

ক্বাইলা বিনতু মাখ্রামাহ্ (রা:) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট হাযির হলাম। তারপর তিনি লম্বা হাদীস বর্ণনা করেন। সূর্য প্রখর হয়ে উঠার পর জনৈক ব্যাক্তি এসে বলল, আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ওয়ালাইকাস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পরণে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া জাফরানী রং-এর দু’টি পুরনো কাপড় ছিল এবং নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ছিল একটি খেজুরের ডাল। হাসানঃ মুখতাসার শামা-য়িল, তাহকীক সানী (৫৩)।

【51】

যাফরানী রং এবং যাফরান মিশ্রিত সুগন্ধি ব্যবহার পুরুষের জন্য মাকরূহ

আনাস ইবনু মালিক (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুরুষদেরকে জাফরানী রং ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। সহীহঃ বুখারী (৫৮৪৬), মুসলিম (৬/১৫৫)। ইয়ালা ইবনু মুররা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে খালুক (যাফরান মিশানো সুগন্ধি) ব্যবহার করেছে। তিনি বললেনঃ যাও, এটা ধুয়ে ফেল আবার ধুয়ে ফেল, পুনরায় তা লাগিও না। সনদ দূর্বল, আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। এ হাদিসের সনদে আতা ইবনুস সাইব (রহঃ) হতে বর্ণনার ব্যপারে কিছু হাদিস বিশারদ মতের অমিল করেছেন। আলী (রহঃ) বলেনঃ ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু সাঈদ বলেছেন, যারা পূর্বে আতা ইবনুস সাইব এর নিকট হাদিস শুনেছেন তাদের উক্ত শ্রবণ যথার্থ। আতা ইবনুস সাইব যাযান সূত্রে বর্ণিত দু’টি হাদিস ব্যতীত তার বরাতে শুবা ও সুফিয়ানের হাদিস শ্রবণের বিষয়টি সঠিক। শুবা বলেনঃ আতা হতে যাযান সূত্রে বর্ণিত হাদিসদুটো আমি আতার অন্তিম বয়সে শুনেছি। কথিত আছে যে, শেষ বয়সে আতার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। এ আনুচ্ছেদে আম্মার, আবূ মূসা ও আনাস (রাঃ) হতেও হাদিস বর্ণিত আছে। রাবী আবূ হাফস হলেন ইবনু উমার।

【52】

রেশমী কাপড় পরা (পুরুষের জন্য) নিষিদ্ধ

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ‘উমার (রাঃ)-কে উল্লেখ করতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুনিয়াতে যে লোক রেশমী কাপড় পরবে, সে আখিরাতে তা পরতে পারবে না। সহীহঃ গায়তাতুল মারাম (৭৮), বুখারী ও মুসলিম

【53】

(কুবা পরিধান করা)

মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ (রাঃ) কোন এক সময় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কয়েকটি কুবা বন্টন করলেন, কিন্তু মাখরামাকে এর কোন অংশই দিলেন না। তখন মাখরামাহ বললেন, ‘হে পুত্র! চল আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট যাই। তিনি (মিসওয়ার) বলেন, আমি তার সাথে চললাম। (ঐখানে পৌছে) তিনি বললেন, ভিতরে যাও এবং আমার জন্য তাঁর নিকট আবেদন কর। আমি তাঁর নিকট গিয়ে তার জন্য আবেদন করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুবা গুলো হতে একটি কুবা হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসলেন। এবং বললেনঃ তোমার জন্য এগুলো লুকিয়ে রেখেছিলাম। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিকে তাকিয়ে বললেনঃ মাখরামাহ এবার খুশি হয়েছো। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম

【54】

আল্লাহ তায়ালা বান্দার উপর তাঁর নিয়ামাতের চিহ্ন দেখতে ভালবাসেন

‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর বাবা ও তাঁর দাদার সূত্রে তাঁর দাদা বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা তাঁর দেয়া নি‘মাতের নিদর্শন তাঁর বান্দার উপর দেখতে ভালবাসেন (অর্থাৎ যাকে যে রকম নি‘মাত প্রদান করা হয়েছে সেনুযায়ী পোশাক-পরিচ্ছেদ ব্যবহার করা আল্লাহ পছন্দ করেন)। হাসান সহীহঃ গাইয়াতুল মারাম (৭৫) আবুল আহওয়াস তার বাবা হতে, ‘ইমরান ইবনু হুসাইন ও ইবনু মাস’উদ (রাঃ) হতে এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান।

【55】

কালো রংয়ের চামড়ার মোজা পরা

বুরাইদা (রাঃ) (বাদশাহ) নাজাশী নকশাবিহীন দু’টি কালো রংয়ের চামড়ার মোজা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে উপহার দিয়েছিলেন। তিনি তা পরিহিত অবস্হায় উযু করলেন এবং তাঁর উপর মাসিহ করলেন। সহীহ ইবনু মা-জাহঃ (৫৪৪৯)

【56】

পাকা চুল উপড়িয়ে ফেলা নিষেধ

‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর বাবা ও তাঁর দাদার সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পাকা চুল উপড়িয়ে ফেলতে নিষেধ করেছেন। তিনি আরো বলেনঃ এটি মুসলিমের নূর। সহীহঃ মিশকাত ৪৪৫৮, সহীহাহ ১২৪৩ আবূ ঈ’সা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান এ হাদীস ‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর বাবা ও তাঁর দাদার সূত্রে বর্ণিত ‘আব্দুর রাহমান ইবনুল হারিস এবং আরো অনেকে বর্ণনা করেছেন।

【57】

পরামর্শদাতা হল আমানতদার

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যাক্তির নিকট পরামর্শ চাওয়া হ্য় সে একজন আমানাতদার। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৩৭৪৫)। উম্মু সালামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পরামর্শদাতা হল আমানতদার। (সুতরাং তার আমানত রক্ষা করা দায়িত্ব অর্থাৎ কল্যানময় সৎ পরামর্শ প্রদান করা উচিত)। পূর্বের হাদীস সহায়তায় সহীহ

【58】

কুলক্ষণ সম্পর্কে

আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (কুলক্ষণ সম্পর্কে কিছু থাকলে) এ তিনটিতে থাকতোঃ ১. নারী ২. ঘর ও ৩. জন্তু। “কোন বস্তুতে কুলক্ষণ থাকলে” অংশসহ হদীসটি সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ঐ অংশ ব্যাতীত হাদীসটি শাযঃ সহীহাহ (৪৪৩, ৭৯৯, ১৮৯৭)

【59】

তৃতীয় ব্যাক্তিকে বাদ দিয়ে দু’জনে কানাকানি (গোপন আলাপ) করবে না

আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা তিনজন একত্রে থাকবে তখন দু’জনে তাদের সাথীকে বাদ দিয়ে কানাকানি (গোপন আলাপ) করবে না। সুফইয়ানের বর্ণনায় আছেঃ দু’জনে তৃতীয়জনকে বাদ দিয়েগোপন আলাপ না করে, কেননা ইহা তাকে চিন্তিত করে। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৩৭৭৫), বুখারী ও মুসলিম।

【60】

ওয়া’দাহ আঙ্গীকার

আবূ জুহাইফা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে রক্তিমাভ সাদা দেখলাম এবং তাঁর কিছু চুল সাদা হয়ে গিয়েছিল। আর হাসান ইবনু ‘আলী ছিলেন ঠিক তারই প্রকৃতির। তিনি (রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ))-এর তেরটি উঠতি বয়সের উটনি আমাদেরকে দেওয়ার জন্য আদেশ করলেন। কাজেই সেগুলো সংগ্রহের উদেশ্যে তাঁর নিকট রওয়ানা হলাম। এমন সময় আমাদের নিকট তাঁর মৃত্যুর সংবাদ এল। সেহেতু লোকেরা একটি উটনিও আমাদের দিলনা। তারপর আবু বকর (রাঃ) খিলাফাতে অধিষ্ঠিত হয়ে বললেন, যে ব্যাক্তির রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ওয়া’দাহ আছে সে যেন উপস্হিত হয়। কাজেই আমি তাঁর নিকট উপস্থিত হয়ে সব কথা খুলে বললাম। তিনি আমাদেরকে উটনিগুলো দেয়ার আদেশ কার্যকর করলেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম আবূ জুহাইফা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে দেখেছি এবং হাসান ইবনু ‘আলী (রাঃ) ছিলেন তাঁর মতোই (অবয়ব সম্পন্ন)।

【61】

আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক -এ কথা বলা

আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কস (রাঃ) ব্যাতিত আর কারো জন্য তাঁর বাবা-মাকে একত্র করতে শুনিনি। (অর্থাৎ এমন বলতে শুনিনি যে, আমার বাবা-মা তোমার জন্য কুরবান হোক)। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (১৩০), বুখারী ও মুসলিম আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কস (রাঃ) ছাড়া আর কারো জন্য তাঁর বাবা-মাকে একত্র করে বলেননি যে, আমার বাবা-মা তোমার জন্য কুরবান হোক। উহুদ যুদ্ধের দিন তিনি তাকে (সা’দকে) বলেছেনঃ চালাও তীর, আমার বাবা-মা তোমার জন্য কুরবান হোক। হে নওজোয়ান যুবক! তীর ছুড়ো। "হে তরুন যুবক" এর উল্লেখ মুনকার, নাসাঈ। বুখারী ও মুসলিম এ অতিরিক্ত অংশ ব্যতীত বর্ণনা করেছেন। সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কস (রাঃ) তিনি বলেন, উহুদের দিন আমার জন্য রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বাবা-মাকে একত্র করে বলেছেনঃ তোমার জন্য আমার বাবা-মা কুরবান হোক। সহীহঃ বুখারী (৩৭২৫), মুসলিম আনুরুপ

【62】

“হে আমার পুত্র” বলে কাউকে সম্বোধন করা

আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে “হে আমার পুত্র” বলে সম্বোধন করেছেন। সহীহঃ সহীহাহ (২৯৫৭), মুসলিম

【63】

দ্রুত সদ্যজাত শিশুর নাম রাখা

‘আমর ইবনু শু’আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও তার দাদার সূত্রে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে তার নাম রাখতে, মাথা মুন্ডন করতে এবং আকীকা করতে আদেশ করেছেন। হাসানঃ ইরওয়াহ (৪/৩৯৯-৪০০), তাহকীক সানী। আবূ ‘ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব।

【64】

(আল্লাহ তা’য়ালার নিকট) পছন্দীয় নাম

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘আবদুল্লাহ ও ‘আবদূর রাহমান নাম আল্লাহ তা’য়ালার নিকট বেশি পছন্দনীয়। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ(৩৭২৮), মুসলিম ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আবশ্যই আল্লাহ তা’য়ালার নিকট অধিক পছন্দীয় নাম হলো ‘আবদুল্লাহ ও ‘আবদূর রাহমান। সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদিস

【65】

(আল্লাহ তা’য়ালার নিকট) অপছন্দীয় নাম

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবশ্যই আমি নিষেধ করছি রাফি’ , বারাকাত ও ইয়াসার নাম রাখতে। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৩৮২৯), মুসলিম। সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সন্তানদের নাম রাবাহ, আফলাহ, ইয়াসার ও নাজীহ রেখোনা। কেউ প্রশ্ন করবে, ঐখানে ওমুক আছে কি? বলা হবেঃ না। সহীহঃ ইবনু ম-জাহ (৩৬৩০), মুসলিম আবূ হুরাইরাহ্‌ (রা:) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামাত দিবসে সেই ব্যক্তির নাম আল্লাহ তা‘আলার নিকট সবচাইতে নিকৃষ্ট নাম হবে, যে (দুনিয়ায়) ‘রাজাধিরাজ’ (মালিকুল আমলাক) নাম ধারন করে। সহীহ : সহীহাহ্‌ (৯১৪), বুখারী ও মুসলিম।

【66】

নাম পরিবর্তন করা

ইবনু ‘উমার (রা:) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আসিয়া (রাঃ)-এর নাম পরিবর্তন করে বলেনঃ তুমি জামীলাহ্‌। সহীহ : ইবনু মা-জাহ (৩৭৩৩), মুসলিম। আয়িশাহ্‌ (রা:) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকৃষ্ট নামসমূহ পরিবর্তন করে (ভালো নাম রেখে) দিতেন। সহীহ : সহীহাহ্‌ (২০৭, ২০৮)।

【67】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নামসমূহ

জুবাইর ইবনু মুত‘ইম (রা:) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার কতগুলো নাম আছে। আমি মুহাম্মাদ (প্রশংসিত), আমি আহ্‌মাদ (সর্বাধিক প্রশংসাকারী), আমি মাহী (বিলীনকারী)। আল্লাহ তা‘আলা আমার দ্বারা কুফরী বিলীন করেন। আর আমি হাশির (সমবেতকারী), আমার পদাংক অনুসরণে মানুষকে হাশর করা হবে। আমি আক্বিব (চূড়ান্ত পরিণতি বা সবার পশ্চাতে আগমনকারী)। আমার পরে কোন নবী নেই। সহীহ : মুখ্‌তাসার শামা-য়িল (৩১৫), রাওযুন নাযীর (১/৩৪০)।

【68】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নাম ও ডাকনাম একত্রে মিলিয়ে কারো নাম রাখা মাকরূহ।

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রা:) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নাম ও ডাকনাম মিলিয়ে ‘মুহাম্মাদ আবুল কাসিম’ এভাবে নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। হাসান সহীহ : মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (৪৭৬৯), সহীহাহ্‌ (২৯৪৬)। জাবির (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আমার নামে নাম রাখলে এক সঙ্গে আমার ডাকনামও রেখো না। সহীহ : ইবনু মা-জাহ (৩৭৩৬), বুখারী ও মুসলিম। আলী ইবনু আবী তালিব (রা:) তিনি বলেন, হে রাসূলুল্লাহ! আপনার পরে যদি আমার কোন ছেলে হয়, তাহলে তার নাম মুহাম্মাদ এবং আপনার ডাকনামে তার ডাকনাম রাখতে পারি কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি (‘আলী) বলেন, এর দ্বারা আমাকে অনুমতি দেয়া হল। সহীহ : মুখতাসার তুফাতুল ওয়াদূদ, মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (৪৭৭২)।

【69】

কিছু কবিতা প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ

আবদুল্লাহ (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই কোন কোন কবিতায় হিকমাত ও প্রজ্ঞা আছে। হাসান সহীহ : বুখারী ও মুসলিম উবাই ইবনু কা‘ব হতে। ইবনু ‘আব্বাস (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিঃসন্দেহে কোন কোন কবিতায় প্রজ্ঞাপূর্ণ কথাও আছে। হাসান সহীহ : ইবনু মা-জাহ (৩৭৫৬)

【70】

কবিতা আবৃত্তি প্রসঙ্গে

আয়িশাহ্‌ (রা:) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (কবি) হাসসানের জন্য মসজিদে একটা মিম্বার রেখে দিতেন। তিনি তাতে দাঁড়িয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর গৌরবগাঁথা আবৃত্তি করতেন অথবা তিনি (‘আয়িশাহ্‌) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর পক্ষ থেকে (কাফিরদের কটূক্তির) জবাব দিতেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন : আল্লাহ তা‘আলা রূহুল কুদুস জিবরীল এর মাধ্যমে হাস্‌সানকে সহযোগিতা করেন যতক্ষণ তিনি গৌরবগাঁথা আবৃত্তি করেন অথবা রাসূলের পক্ষ থেকে (কাফিরদের তিরস্কারের) জবাব দেন। হাসান : সহীহাহ্‌ (১৬৫৭) আনাস (রা:) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কাযা উমরা আদায়ের উদ্দেশ্যে মাক্কায় প্রবেশ করলেন, তখন কবি ‘আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা (রাঃ) তাঁর সামনে সামনে এ কবিতা বলে হেঁটে যাচ্ছিলেন : হে বানী কুফ্‌ফার! ছেড়ে দে তাঁর চলার পথ। আজ মারবো তোদের কুরআনের ভাষায় মারার মতো। কল্লা উড়ে যাবে তোদের গর্দান হতে, বন্ধু হতে বন্ধু হবে পৃথক তাতে”। ‘উমার (রাঃ) তাকে বললেন, হে ইবনু রাওয়াহা! তুমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সামনে আল্লাহ তা‘আলার হেরেমের মধ্যে কবিতা বলছ? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ হে ‘উমার! তাকে বলতে দাও। কেননা এই কবিতা তীরের চাইতেও দ্রুতগতিতে গিয়ে তাদেরকে (কাফিরদের) আহতকারী। সহীহ : মুখতাসার শামা-য়িল (২১০) শুরাইহ্‌ (রহ:) তিনি বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হল, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি উপমা দেয়ার জন্য কবিতা আবৃত্তি করতেন? তিনি বললেন, তিনি ইবনু রাওয়াহার এ কবিতা আবৃত্তি করে উপমা দিতেন। “যাকে তুমি দাওনি তোশা, খবর আনবে সে নিশ্চয়ই।” সহীহ : সহীহাহ্‌ (২০৫৭) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রা:) নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আরব কবিদের মধ্যে সর্বোত্তম ও সত্য কথা বলেছেন লাবীদ। তা হল এই “শুনে রেখ আল্লাহ ব্যতীত সব কিছুই বাতিল”। হাদীসে বর্ণিত ''আশআর'' এর পরিবর্তে "আসদাক" শব্দে হাদীসটি সহীহ, মুখতাসার শামায়িল (২০৭), ফিকহুস্ সীরাহ (২৭)। জাবির ইবনু সামুরাহ্‌ (রা:) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে শতাধিক বৈঠকে ছিলাম। সে সব বৈঠকে তাঁর সাহাবীগণ কবিতা আবৃত্তি করতেন এবং জাহিলিয়াত যুগের বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করতেন। তিনি সেগুলো চুপ করে শুনতেন এবং কখনো কখনো মুচকি হাসতেন। সহীহ : মুখতাসার শামা-য়িল (২১১)

【71】

তোমাদের কারো পেট কবিতার চাইতে বমি দ্বারা ভর্তি করাই উত্তম

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রা:) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো পেট কবিতার চাইতে বমিতে পূর্ণ থাকাই উত্তম যা উহাকে (পেটকে) খারাপ করে ফেলে। সহীহ : প্রাগুক্ত। সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রা:) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কারো পেট (খারাপ ও চরিত্র বিধ্বংসী) কবিতার চাইতে বমি দ্বারা পূর্ণ থাকাই উত্তম। সহীহ : ইবনু মা-জাহ (৩৭৫৯), বুখারী ও মুসলিম।

【72】

বাকপটুতা ও বাগ্মিতা

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সেসব বাকপটু-বাগ্মী লোকদেরকে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই ঘৃণা করেন, যারা গরুর জাবর কাটার ন্যায় কথা বলে। সহীহ : সহীহাহ্‌ (৮৭৮)। জাবির (রা:) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেয়ালবিহীন ছাদে ঘুমাতে নিষেধ করেছেন। সহীহ : সহীহাহ্‌ (৮২৬) আবদুল্লাহ (রা:) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সপ্তাহের দিনসমূহে আমাদেরকে ওয়াজ-নাসীহাতের ব্যাপারে আমাদের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রাখতেন, যাতে আমরা বিরক্ত হয়ে না যাই। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম।

【73】

(নিয়মিত ‘আমাল অল্প হলেও পছন্দনীয়)

আবূ সালিহ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আয়িশাহ্‌ ও উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হল, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট কোন্‌ ধরনের ‘আমাল বেশী পছন্দনীয় ছিল? তারা বললেন। যে ‘আমাল নিয়মিত করা হয়, যদিও তা অল্প হয়। সহীহ : বুখারী (১১৩২), মুসলিম (২/১৬৭) অনুরূপ, ওয়াইন কাল্লা শব্দ ব্যতীত।

【74】

পাত্র ঢেকে রাখা ও বাতি নিভিয়ে দেয়া

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা খাবারের পাত্রগুলো ঢেকে রেখো, মশক বা পানির পাত্রগুলোর মুখ বন্ধ করে দিও, দরজাগুলো বন্ধ করে দিও এবং (শোয়ার সময়) বাতিগুলো নিভিয়ে দিও। কেননা অনেক সময় ছোট্ট ইদুরগুলো বাতির সালতে টেনে নিয়ে যায় এবং ঘরের সবাইকে জ্বালিয়ে দেয়। সহীহ: মুসলিম।

【75】

উটকে তার প্রাপ্য দাও

আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তোমরা উর্বর তৃণভূমি দিয়ে ভ্রমণ কর তখন তোমরা যমীন হতে উটকে তার প্রাপ্য দিবে, (চরে ফিরে খাবার সুযোগ দিও) এবং শুষ্ক ও উষর ভূমি দিয়ে ভ্রমণ করলে খুব দ্রুত গতিতে পথ অতিক্রম কর, যাতে জন্তুযানের শক্তি বজায় থাকে। আর তোমরা কোন মনযিলে (গন্তব্যে) শেষরাতে যাত্রাবিরতি করলে পথ থেকে সরে বিশ্রাম নিবে। কারণ এ পথ হল পশুর এবং রাতে বিচরণশীল কীট-পতঙ্গের আশ্রয়স্থল। সহীহ : সহীহাহ (১৩৫৭), মুসলিম।

【76】

বান্দার জন্য আল্লাহ তা'আলার দেয়া উপমা

আন-নাওয়াস ইবনু সাম'আন আল-কিলাবী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা এভাবে সোজা পথের একটি উদাহরণ দিয়েছেন-রাস্তার দু’ধারে দুটি প্রাচীর। প্রাচীর দুটিতে আছে অনেকগুলো খোলা দরজা। এগুলোতে পর্দা ঝুলানো রয়েছে। একজন আহবানকারী রাস্তার মাথায় দাড়িয়ে আহবান করছেন। অন্য এক আহবানকারী পথের উপর থেকে ডাকছেন। “আর আল্লাহ তা'আলা শান্তিময় আবাসের দিকে ডাকছেন। তিনি যাকে ইচ্ছা সোজা পথের হিদায়াত দান করেন”— (সূরা ইউনুস ২৫)। রাস্তার দু’পাশে দরজাগুলো হল আল্লাহ তা'আলার নির্ধারিত সীমাসমূহ। সুতরাং কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার নির্ধারিত সীমালঙ্ঘন করলে তাতে (দরজার) পর্দা সরে যায়। আর উপর থেকে যে আহবায়ক আহবান করছেন তিনি হলেন আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে উপদেশদাতা ! সহীহ: মিশকাত (১৯১ ও ১৯২)। জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আল-আনসারী (রাঃ) কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে আমাদের নিকটে এসে বলেনঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম, জিবরাঈল (আঃ) যেন আমার মাথার দিকে এবং মীকাঈল (আঃ) আমার পাদুটির দিকে আছেন। তাঁদের একজন তাঁর সঙ্গীকে বলছেন, তাঁর কোন উদাহরন দিন। তিনি বলেনঃ তাহলে শুনুন। আপনার কান যেন শুনে এবং আপানার অন্তর যেন হৃদয়ঙ্গম করে। আপনার ও আপনার উম্মাতের তুলনা এই যে, কোন বাদশাহ একটি রাজমহল তৈরী করলেন এবং তাতে একটি ঘর তৈরি করলেন, তারপর তাতে রকমারি খানা ভর্তি খাঞ্চা রাখলেন। তারপর তিনি একজন আহ্বানকারীকে পাঠালেন লোকদেরকে খাবারের জন্য দাওয়াত দিতে। একদল লোক তার ডাকে সাড়া দিল এবং অন্য দল তা পরিত্যাগ করল। আল্লাহ্ তা'আলা হলেন সেই বাদশাহ, মহলটি হল ইসলাম, ঘরটি হল জান্নাত। আর হে মুহাম্মাদ! আপনি সেই আহ্বানকারী। যে ব্যক্তি আপনার ডাকে সাড়া দিল সে ইসলামে প্রবেশ করল, আর যে ইসলামে প্রবেশ করল সে জান্নাতে গেল। যে জান্নতে যাবে সে তাতে যা আছে তা খাবে। সনদ দুর্বল। উপরোক্ত হাদীস রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অন্যভাবে আরো সহীহ সনদসূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি মুরসাল। সাঈদ ইবনু আবূ হিলাল জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) এর দেখা পাননি। এ অনুচ্ছেদে আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক রাতে এশার নামায আদায় করে বের হলেন। তারপর আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদকে হাত ধরে মক্কার কংকরময় স্থান বাতহায় নিয়ে গেলেন এবং সেখানে তাকে বসালেন। তিনি তার চতুর্দিকে একটি বৃত্তরেখা টানলেন এবং বললেনঃ তুমি এ রেখা হতে সরবে না। কয়েকজন লোক তোমার সামনে পর্যন্ত আসবে। তুমি তাদের সাথে কোন কথা বলবে না। তারাও তোমার সাথে কথা বলবে না। এই বলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেদিকে ইচ্ছা চলে গেলেন। আমি আমার বৃত্তের মধ্যে বসা। হঠাৎ কয়েকজন লোক আসল। তাদের চুল ও শারীরিক অবস্থা দেখে মনে হল যেন তারা জাঠ সম্প্রদায়ের। তাদের উলঙ্গও দেখা যাচ্ছিল না আবার পোশাক পরিহিতও মনে হচ্ছিল না। তারা আমার নিকটই এগিয়ে এলো কিন্তু বৃত্তরেখা অতিক্রম করল না। তারপর তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর খোজে বেরিয়ে গেল। শেষ রাত পর্যন্ত তারা আর ফিরে এলো না। আমি তখনও বসা, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে এসে বললেনঃ আমি আজ সন্ধ্যারাত থেকেই ঘুমাতে পারিনি। তিনি বৃত্তের মধ্যে প্রবেশ করলেন এবং আমার উরুর উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমানোর সময় তার নাক ডাকতো। আমি বসে থাকলাম আর তিনি আমার উরুতে মাথা রেখে ঘুমিয়ে রইলেন। হঠাৎ আমি সাদা পোশাক পরিহিত কয়েকজন লোককে দেখতে পেলাম। তাদেরকে কত যে সুন্দর দেখা যাচ্ছিল সেটা আল্লাহ তা'আলাই ভাল জানেন। তারা আমার নিকট এলো এবং তাদের মাঝে একদল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মাথার নিকট আরেক দল তার পদদ্বয়ের নিকট বসে পড়লো। তারপর তারা পরস্পর বলাবলি করল, এ নবী -কে যা দেয়া হয়েছে আর কাউকে এমন দিতে দেখিনি। তার চোখ দু’টো ঘুমিয়ে থাকলেও তার অন্তর জাগ্রত থাকে। তোমরা তার একটা উপমা বর্ণনা কর। (উদাহরণ) এক নেতা একটি প্রাসাদ নির্মাণ করলেন, তারপর মেহমানদারির আয়োজন করে লোকদেরকে পানাহারের জন্য দা'ওয়াত করলেন। যে সব ব্যক্তি তার দাওয়াত গ্রহণ করল তারা মেহমানীর খাবার ও পানীয় গ্রহণ করল, আর যে সব ব্যক্তি দা'ওয়াত গ্রহণ করেনি তিনি তাদেরকে শাস্তি দিলেন। এই বলে তারা উঠে চলে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জেগে উঠলেন। তিনি বললেনঃ এরা যা বলেছে তুমি কি তা শুনেছ? তুমি কি জানো, এরা কারা? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই বেশি জানেন। তিনি বললেনঃ এরা হল ফেরেশতা। এরা যে উপমা বর্ণনা করল তা কি জান? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসূলই অধিক ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ তারা যে উপমা দিল, তার অর্থ হল : আল্লাহ তা'আলা জান্নাত বানালেন এবং তার বান্দাদেরকে সেদিকে আহবান করলেন। যে সব ব্যক্তি তার ডাকে সাড়া দিয়েছে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে সব ব্যক্তি সাড়া দেয়নি তাদেরকে আল্লাহ তা'আলা শাস্তি দিবেন।

【77】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও অপরাপর নাবীগণের উপমা

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহঃ বলেছেনঃ আমার ও অপরাপর সকল নাবীর উপমা এই যে, যেমন এক ব্যক্তি একটি ঘর নির্মাণ করলেন। তিনি এটিকে পূর্ণাঙ্গ ও অত্যন্ত মনোরম করলেন। কিন্তু একটি ইটের জায়গা খালি (ফাকা) থেকে গেল। লোকজন এ বাড়ীতে প্রবেশ করে এবং (কারুকার্য ও সৌন্দর্য) দেখে বিক্ষিত হয় আর বলে, যদি এ একটি ইটের জায়গা খালি না থাকত। সহীহ: ফিকহুস সীরাহ (১৪১), বুখারী ও মুসলিম।

【78】

নামায, রোযা ও দান-খাইরাতের উপমা

আল-হারিস আল-আশ'আরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা ইয়াহইয়া ইবনু যাকারিয়া (আঃ)-কে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ করলেন যেন তিনি নিজেও তদনুযায়ী আমাল করেন এবং বানী ইসরাঈলকেও তা ‘আমাল করার আদেশ করেন। তিনি এ নির্দেশগুলো লোকদেরকে জানাতে বিলম্ব করলে ঈসা (আঃ) তাকে বললেনঃ আল্লাহ তা'আলা আপনাকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন যেন আপনি সে মুতাবিক ‘আমাল করেন এবং বানী ইসরাঈলকেও তা আমাল করার আদেশ করেন। এখন আপনি তাদেরকে এগুলো করতে নির্দেশ দিন, তা না হলে আমিই তাদেরকে সেগুলো করতে নির্দেশ দিব। ইয়াহইয়া (আঃ) বললেনঃ আপনি এ বিষয়ে যদি আমার অগ্রবর্তী হয়ে যান তবে আমার ভয় হচ্ছে যে, আমাকে ভূগর্ভে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে কিংবা আযাব নেমে আসবে। সুতরাং তিনি লোকদেরকে বাইতুল মাকদিসে একত্র করলেন। সব লোক সমবেত হওয়াতে মসজিদ ভরে গেল, এমনকি তারা ঝুলন্ত বারান্দায় গিয়েও বসল। তারপর ইয়াহইয়া (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ আল্লাহ তা'আলা আমাকে পাচটি বিষয়ের নির্দেশ প্রদান করেছেন, যেন আমি সে মুতাবিক ‘আমাল করি এবং তোমাদেরকেও আমাল করার আদেশ করি। এগুলোর প্রথম নির্দেশটি হল : তোমরা আল্লাহ তা'আলার ইবাদাত করবে এবং তার সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থাপন করবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার সাথে অংশীদার স্থাপন করে তার উদাহরণ হল এমন এক ব্যক্তি যে তার খালিস সম্পদ অর্থাৎ- সোনা অথবা রুপার বিনিময়ে একটি দাস কিনল। সে তাকে (বাড়ী এনে) বলল, এটা আমার বাড়ী আর এগুলো আমার কাজ। তুমি কাজ করবে এবং আমাকে আমার প্রাপ্য দিবে। তারপর সেই দাস কাজ করত ঠিকই কিন্তু মালিকের প্রাপ্য দিয়ে দিত অন্যকে। তোমাদের মধ্যে কে এমন আছে যে স্বীয় দাসের এমন আচরণে সন্তুষ্ট থাকতে পারে? আর আল্লাহ তা'আলা তোমাদেরকে নামায আদায়ের জন্য আদেশ করেছেন। তোমরা নামায আদায়কালে এদিক সেদিক তাকাবে না। কেননা আল্লাহ তা'আলা তার চেহারা নামায়ীর চেহারার দিকে নিবিষ্ট করে রাখেন বান্দা নামাযের মধ্যে এদিক সেদিক না তাকানো পর্যন্ত। আর আমি তোমাদের রোযার নির্দেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তি যে কন্তুর ভর্তি একটি থলেসহ একদল মানুষের সাথে আছে। কস্তুরীর সুগন্ধ দলের সবার নিকট খুবই ভালো লাগে। আর রোযাদারের মুখের সুগন্ধ আল্লাহ তা'আলার নিকট কন্তুরীর সুগন্ধের চাইতেও অধিক প্রিয়। আমি তোমাদের দান-খাইরাতের আদেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির ন্যায় যাকে শক্ররা বন্দী করে তার ঘাড়ের সাথে হাত বেঁধে ফেলেছে এবং তাকে হত্যার জন্য বদ্ধভূমিতে নিয়ে যাচ্ছে। তখন সে বলল, আমি আমার প্রাণের বিনিময়ে আমার সমস্ত সম্পদ তোমাদেরকে দিচ্ছি। তারপর সে নিজেকে মালের বিনিময়ে ছাড়িয়ে নিল (দান-খাইরাতের মাধ্যমেও বান্দা নিজেকে বিপদমুক্ত করে নেয়)। আমি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি যেন তোমরা আল্লাহ তা'আলার যিকর কর। যিকরের উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির ন্যায় যার দুশমনেরা তার পিছু ধাওয়া করছে। অবশেষে সে একটি সুরক্ষিত দুর্গে প্রবেশ করে শক্র হতে নিজের প্রাণ রক্ষা করল। তদ্রুপ কোন বান্দা আল্লাহ তা'আলার যিকির ব্যতীত নিজেকে শাইতানের হাত থেকে মুক্ত করতে পারে না। (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমিও তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি যেগুলো প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা আমাকে আদেশ করেছেন। কথা শুনবে, আনুগত্য করবে, জিহাদ করবে, হিজরাত করবে এবং জামা'আতবদ্ধ হয়ে থাকবে। যে লোক জামাআত হতে এক বিঘত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হল সে ইসলামের বন্ধন তার ঘাড় হতে ফেলে দিল, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। আর যে লোক জাহিলিয়াত আমলের রীতি-নীতির দিকে আহবান করে সে জাহান্নামীদের দলভুক্ত। জনৈক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল ! সে নামায আদায় করলেও, রোযা রাখলেও তিনি বললেনঃ হ্যা, সে নামায-রোযা করলেও। সুতরাং তোমরা সেই আল্লাহ তা'আলার ডাকেই নিজেদেরকে ডাকবে যিনি তোমাদেরকে মুসলিম, মু'মিন ও আল্লাহ তা'আলার বান্দা নাম রেখেছেন। সহীহ: মিশকাত (৩৬৯৪), তা’লীকুর রাগীব (১/১৮৯-১৯০), সহীহুল জামি' (১৭২৪) মুহাম্মাদ ইববু বাশশার-আবু দাউদ আত-তাইয়ালিসী মুহাম্মাদ ইববু বাশশার-আবু দাউদ আত-তাইয়ালিসী হতে, তিনি আবান ইবনু ইয়াযীদ হতে, তিনি ইয়াহইয়া ইবনু আবু কাসীর হতে,আল-আশ'আরী (রাঃ) হতে, তিনি নবী ত্র হতে এই সূত্রে একই মর্মে উপরোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব। আবু সাল্লাম আল-হাবশী’র নাম মামতুর। আলী ইবনুল মুবারাক-ইয়াহইয়া ইবনু আবী কাসীর-এর সূত্রে উক্ত হাদীস বর্ণনা করেছেন।

【79】

যে মুসলিম কুরআন পাঠ করে আর যে করে না তাদের উপমা

আৰু মূসা আল-আশ'আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে মু’মিন কুরআন তিলাওয়াত করে তার উদাহরণ হল কাগজী লেবুর মতো যার গন্ধও সুবাসিত, স্বাদও ভালো। আর যে মুমিন কুরআন তিলাওয়াত করে না তার উদাহরণ হল খেজুরের মতো যার কোন গন্ধ নেই, তবে স্বাদ খুব মিষ্টি। আর কুরআন তিলাওয়াতকারী মুনাফিক হল রাইহানা ফুলের মতো যার গন্ধ ভালো কিন্তু স্বাদ অত্যন্ত তিক্ত। কুরআন তিলাওয়াত করে না এমন মুনাফিক হল মাকাল ফলের মতো যার গন্ধও তিক্ত স্বাদও তিক্ত। সহীহ: নাকদুল কাত্তানী (৪৩), বুখারী ও মুসলিম। আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুমিনের উদাহরণ হল ক্ষেতের শস্যের মতো যাকে বাতাস সর্বদা আন্দোলিত করতে থাকে। মু'মিন সদাসর্বদাই বিপদগ্ৰস্ত হতে থাকবে। মুনাফিক হল বট গাছের মতো যা বাতাসে না হেললেও (ঝড়ে) সমূলে উৎপাটিত হয়। সহীহ: তাখরাজুল ঈমান ইবনু আবী শাইবা (৮৬), সহীহাহ (২৮৮৩), বুখারী ও মুসলিম। ইবনু উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ গাছসমূহের মধ্যে এমন একটি গাছ আছে যার পাতা কখনো ঝরে না। সেটিই মুমিনের উদাহরণ। তোমরা আমাকে বল, সেটা কোন গাছ? আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, সকলেই ধারণা করতে লাগল পাহাড়ী অথবা জংলী গাছ হবে কিন্তু আমার মনে হল সেটা নিশ্চই খেজুর গাছ। অবশেষে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সেটা খেজুর গাছ। অথচ আমি সেটা বলতে লজ্জা পাচ্ছিলাম (বয়সে ছোট হবার কারণে তা বলিনি)। আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি উমর (রাঃ)-এর নিকট আমার মনের ধারণা প্রকাশ করলাম। তিনি বললেন, তুমি যদি সেই কথাটা বলে দিতে তাহলে সেটা আমার নিকট এত এত সম্পদের চাইতেও অধিক প্রিয় হতো। সহীহ: বুখারী ও মুসলিম।

【80】

পাচ ওয়াক্ত নামাযের উপমা

আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা কি মনে কর, যদি তোমাদের মধ্যে কারো বাড়ীর আঙ্গিনায় একটি ঝর্ণা থাকে আর সে প্রতিদিন পাচবার তাতে গোসল করে তাহলে তার শরীরে কোন ময়লা থাকতে পারে? তারা বলল, না, কোন ময়লাই থাকবে না। তিনি বললেনঃ পাচ ওয়াক্ত নামাযও ঠিক সে রকমই। আল্লাহ তা'আলা এগুলোর সাহায্যে গুনাহসমূহ বিলীন করে দেন। সহীহ: ইরওয়াহ (১৫), বুখারী ও মুসলিম।

【81】

এই উম্মাতের সূচনা ও সমাপ্তি দু’টোই উত্তম

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাত সেই বৃষ্টির মতো যার প্রথম ভাগ না শেষ ভাগ বেশী ভালো তা জানা যায় না। হাসান সহীহ: মিশকাত (৬২৭৭), সহীহাহ (২২৮৬)।

【82】

মানুষ এবং তার আয়ু ও কামনা-বাসনার উপমা

বুরাইদা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু'টি নুড়ি পাথর ছুড়ে দিয়ে বললেন, এটা এবং ওটা কিসের মত তোমরা জান কি? সাহাবীগন বলেনঃ আল্লাহ্ তা'আলা ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই ভাল জানেন। তিনি বলেলনঃ এটা হল মানুষের কামনা-বাসনা এবং এটা হল তার হায়াৎ। যঈফ, তা'লীকুর রাগীব (৪/১৩৩), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান এবং এই সূত্রে গারীব। ইবনু উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পূর্ববর্তী উম্মাতগণের তুলনায় তোমাদের আয়ুষ্কাল হল আসরের নামায হতে সূর্যস্ত পর্যন্ত সময়। তোমাদের ও ইয়াহুদী-খ্ৰীষ্টানদের দৃষ্টান্ত এই যে, এক লোক কয়েকজন শ্রমিক নিয়োগ করতে চাইল। সে বলল, এমন কে আছে যে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আমার কাজ করে দিবে এক কীরাতের বিনিময়েঃ অতএব ইয়াহুদীরা দুপুর পর্যন্ত এক কীরাতের বিনিময়ে কাজ করল। লোকটি আবার বলল, এমন কে আছে যে দুপুর হতে আসর এবার নাসারাগণ এক কীরাতের বিনিময়ে কাজ করল। তারপর তোমরা দুই কীরাতের বিনিময়ে কাজ করলে।এতে ইয়াহুদী-খ্ৰীষ্টানগণ রাগান্বিত হয়ে বলল, আমরা বেশি কাজ করা সত্বেও পারিশ্রমিক কম পেলাম। তিনি (আল্লাহ তা'আলা) বলেন, আমি কি তোমাদের উপর যুলুম করে তোমাদের হক নষ্ট করেছি? তারা বলল, না। তিনি বলেন, এটা আমার অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা আমি তাকেই তা দান করি। সহীহ: মুখতাসারুল বুখারী (৩১২), বুখারী। আৰু ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের উপমা হল যেমন- একশত উট যার মধ্যে কোন ব্যক্তি একটি সওয়ারীযোগ্য বাহনও পায় না (অর্থাৎ শতকরা একজনও সত্যিকার মানুষ পাওয়া দুষ্কর)। সহীহ: ইবনু মা-জাহ (৩৯৯০), বুখারী ও মুসলিম। ইবনু উমার (র:) রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মানুষের দৃষ্টান্ত হল এক শত উট, যার মধ্যে তুমি একটু উটও সোয়ারীর উপযুক্ত পাবে না। অথবা তিনি বলেছেন: তুমি এগুলোর মধ্যে একটি ছাড়া আরোহণযোগ্য কোন উট পাবে না। সহীহ: দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমার ও আমার উম্মাতের উদাহরণ হল এমন এক লোক, যে আগুন প্রজ্জলিত করল। তারপর তাতে কীট-পতঙ্গ এসে ঝাপিয়ে পড়তে লাগল। আর আমি তোমাদের কোমর ধরে (আগুনে পতিত হওয়া থেকে) বাধা দিচ্ছি, কিন্তু তোমরা তাতে ঝাপিয়ে পড়ছে। সহীহ: যঈফা (৩০৮২) নং হাদীসের অধীনে, বুখারী ও মুসলিম।