42. কুরআনের ফযিলত

【1】

সূরা আল-ফাতিহার ফযিলত

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-এর নিকট গেলেন এবং তাকে ডাকলেনঃ হে উবাই! উবাই (রাঃ) তখন নামাযরত ছিলেন। তিনি তাঁর প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন কিন্তু জবাব দিলেন না। তবে তিনি সংক্ষেপে নামায শেষ করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলেন এবং বললেনঃ আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ওয়া ‘আলাইকাস সালাম। হে উবাই! আমি তোমাকে ডাকলে কিসে তোমাকে জবাব দিতে বাধা দিল? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো নামাযরত ছিলাম। তিনি বললেনঃ আমার নিকট আল্লাহ তা'আলা যে ওয়াহী প্রেরণ করেছেন, তার মধ্যে তুমি কি এ হুকুম পাওনি “রাসূল যখন তোমাদের এমন কিছুর দিকে ডাকে যা তোমাদেরকে প্রাণবন্ত করে, তখন আল্লাহ তা'আলা ও রাসূলের ডাকে সাড়া দিবে” — (সূরা আল-আনফাল ২৪)? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আর কখনো এরূপ করব না ইন্‌শাআল্লাহ। তিনি বললেনঃ তুমি কি চাও যে, আমি এমন একটি সূরা তোমাকে শিখিয়ে দেই যার মত কোন সূরা তাওরাত, ইনজীল, যাবুর এমনকি কুরআনেও অবতীর্ণ হয়নি? তিনি বললেন, হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করলেনঃ তুমি নামাযে কি পাঠ কর? বর্ণনাকারী বলেনঃ তিনি (উবাই) উন্মুল কুরআন (ফাতিহা) পাঠ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যাঁর হাতে আমার প্রাণ, সেই সত্তার শপথ! এ সূরার মত (মর্যাদা সম্পন্ন) কোন সূরা তাওরাত, ইনজীল, যাবূর, এমনকি কুরআনেও অবতীর্ণ করা হয়নি। আর এটি বারবার পঠিত সাতটি আয়াত সম্বলিত সূরা এবং মহাসম্মানিত কুরআন যা আমাকে দেয়া হয়েছে। সহীহঃ সহীহ আবূ দাঊদ (১৩১০), মিশকাত তাহ্ক্বীক্ব সানী (২১৪২), তা’লীকুর রাগীব (২/২১৬)।

【2】

সূরা আল-বাক্বারাহ ও আয়াতুল কুরসীর ফযিলত

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (এক অভিযানে) একটি ক্ষুদ্র বাহিনী পাঠান। তারা সংখ্যায় খুব অধিক ছিল না। তিনি তাদেরকে কুরআন তিলাওয়াত করতে বলেন। সুতরাং প্রত্যেকেই যার যা মুখস্ত ছিল তা তিলাওয়াত করে শুনায়। অবশেষে তিনি এদের মধ্যে সবচাইতে কম বয়সী এক ব্যক্তির নিকটে আসলেন। তিনি তাকে প্রশ্ন করলেনঃ হে আদমি! তোমার নিকটে কি আছে? সে বলল, আমার এই সূরা ও সূরা আল-বাকারা মুখস্ত আছে। তিনি আবার প্রশ্ন করেনঃ তোমার সূরা আল-বাকারা মুখস্ত আছে? সে বলল হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ যাও তুমিই এ বাহিনীর দলপতি। দলের একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আল্লাহ্‌র শপথ! আমি সূরা আল-বাকারা এই ভয়ে হেফয করিনি যে, আমি এটা নিয়ে (রাতের নামাযে) দাঁড়াতে পারব না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কুরআন শিক্ষা কর এবং তা তিলাওয়াত কর। কেননা যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করতে শিখে, তা পাঠ করে এবং এটা নিয়ে নামাযে দাঁড়ায় তার জন্য কুরআনের নমুনা হল কস্তুরী ভর্তি চামড়ার থলের মত যার খুশবু সবখানে ছড়িয়ে পড়ছে। আর যে ব্যক্তি তা শিখে ঘুমিয়ে আছে তার উদাহরন হল মুখবন্ধ কস্তুরীর থলের মত। যঈফ, ইবনু মাজাহ (২১৭) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরসমূহ কবরস্থানে পরিণত করো না। যে ঘরে সূরা আল-বাক্বারাহ্‌ তিলাওয়াত করা হয় তাতে শাইতান প্রবেশ করে না। সহীহ : আহকা-মুল জানা-য়িয (২১২), মুসলিম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি বস্তুরই চূড়া আছে। কুরআনের উঁচু চূড়া হল সূরা আল-বাকারা। এতে এমন একটি আয়াত আছে যা কুরআনের আয়াতসমূহের প্রধান। তা হল আয়াতুল কুরসী। যঈফ, যঈফা (১৩৪৮), তা'লীকুর রাগীব (২/২১৮) আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালবেলা সূরা আল-মু'মিন-এর হা-মী-ম হতে ইলাইহিল মাসীর (১, ২, ও ৩ নং আয়াত) পর্যন্ত এবং আয়াতুল কুরসী তিলাওয়াত করবে সে এর উসীলায় সন্ধ্যা পর্যন্ত (আল্লাহ্ তা'আলার) হিফাযাতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যা বেলায় তা পাঠ করবে সে ব্যক্তি এর উসীলায় সকাল পর্যন্ত হিফাযাতে থাকবে। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (২১৪৪)

【3】

(আয়াতুল কুরসীর ফযিলত)

আবূ আইয়ূব আল-আনসারী (রাঃ) তাঁর খেজুর বাগানে একটি ছোট মাচান ছিল। তিনি তাতে শুকনো খেজুর রাখতেন। রাতে শাইতান জিন এসে মাচান হতে খেজুর নিয়ে যেত। তিনি এ বিষয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নালিশ করলেন। তিনি বললেনঃ যাও, তুমি যখন এটিকে দেখবে তখন বলবে, বিসমিল্লাহ, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ডাকে তুমি সাড়া দাও। বর্ণনাকারী বলেন, জিন আসতেই তিনি তাকে ধরে ফেললেন। সে তখন কসম করে বলল যে, সে আর কখনও আসবে না। কাজেই তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। তারপর তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসলে তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তোমার বন্দী কি করেছে? তিনি বললেন, সে শপথ করেছে যে, সে আর কখনও আসবে না। তিনি বললেনঃ সে মিথ্যা বলেছে এবং সে তো মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি তাকে আবার ধরলেন। এবারও সে শপথ করল যে, সে আর কখনো আসবে না। তিনি তাকে ছেড়ে দিলেন। তারপর তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির হলে তিনি প্রশ্ন করলেনঃ কি হে! তোমার বন্দীর কি খবর? তিনি বললেন, সে কসম করে বলেছে যে, সে আর আসবে না, (কাজেই আমি তাকে ছেড়ে দিয়েছি)। তিনি বললেন, সে এবারও মিথ্যা বলেছে, আর সে মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি আবারো তাকে ধরে ফেললেন এবং বললেন, আমি তোকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট না নিয়ে ছাড়ছি না। সে বলল, আমি আপনাকে একটি বিষয় স্মরণ করাতে চাই। আপনি আপনার ঘরে আয়তুল কুরসী পাঠ করবেন। তাহলে শাইতান বা অন্য কিছু এতে প্রবেশ করতে পারবে না। এবার তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির হলে তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তোমার বন্দী কি করেছে? বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাঁকে জিনের কথা ব্যক্ত করলেন। তিনি বললেনঃ সে মিথ্যাবাদী হলেও এ কথাটা সত্য বলেছে। সহীহঃ তা’লীকুর রাগীব (২/২১২), মুসলিম।

【4】

সূরা আল-বাক্বারার শেষ আয়াতের ফযিলত

আবূ মাস‘ঊদ আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সে ব্যক্তি সূরা আল-বাক্বারার শেষ দুই আয়াতে রাতের বেলা তিলাওয়াত করবে তা তার জন্য যথেষ্ট হবে। সহীহঃ সহীহ আবূ দাঊদ (১২৬৩)। নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা আসমান-যামীন সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখেছেন। সেই কিতাব হতে তিনি দু‘টি আয়াত নাযিল করছেন। সেই দু‘টি আয়াতের মাধ্যমেই সূরা আল-বাক্বারা সমাপ্ত করেছেন। যে ঘরে তিন রাত এ দু‘টি আয়াত তিলাওয়াত করা হয় শাইতান সেই ঘরের নিকট আসতে পারে না। সহীহঃ রাওযুন নাযীর (৮৮৬), তা’লীকুর রাগীব (২/২১৯), মিশকাত (২১৪৫)।

【5】

সূরা আল-‘ইমরানের ফযিলত

নাওওয়াস ইবনু সাম‘আন (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিবসে কুরআন ও কুরআনের ধারক-বাহকগণ যারা দুনিয়াতে তদনুযায়ী ‘আমাল করবে এমন ভাবে হাযির হবে যে, সূরা আল-বাক্বারাহ্ ও আল ‘ইমরান তাদের আগে আগে থাকবে। নাওওয়াস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সূরা দু‘টি আগমনের তিনটি উদাহরণ দিয়েছিলেন, আমি সেগুলো এখনও ভুলিনি। তিনি বলেনঃ (১) এ সূরা দু‘টি ছায়ার মত আসবে, আর এতদুভয়ের মাঝে থাকবে আলো। (২) অথবা এ দু‘টি কালো মেঘ খন্ডের ন্যায় (৩) অথবা ডানা বিস্তার করে ছায়াদানকারী পাখীর ন্যায় আসবে এবং তাদের সাথীর পক্ষ হয়ে বিতর্ক করবে। সহীহঃ মুসলিম (২/১৯৭) মুহাম্মদ ইবনু ইসমাঈল মুহাম্মদ ইবনু ইসমাঈল-হুমাইদী হতে, বর্ণনা করেন যে, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসঃ “আসমান-যামীনের মধ্যে আয়াতুল কুরসীর চাইতে মহান আর কোন কিছুই আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করেননি”, এর ব্যাখ্যায় সুফ্ইয়ান ইবনু ‘উয়াইনাহ্ বলেন, আয়াতুল কুরসী হল আল্লাহ তা‘আলার কালাম, আর আল্লাহ তা‘আলার কালাম তো নিঃসন্দেহে আসমান-যামীনের সকল সৃষ্টির চাইতে মহান। সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস।

【6】

সূরা আল-কাহ্ফের ফযিলত

আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) একদা এক লোক সূরা আল-কাহ্‌ফ তিলাওয়াত করছিল। সে লোকটি হঠাৎ দেখতে পেল, তার পশুটি লাফাচ্ছে। সে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মেঘমালা বা ছায়ার মত কিছু দেখল। লোকটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে এ ঘটনা বলল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এটা হল বিশেষ প্রশান্তি যা কুরআনের সাথে বা কুরআনের উপর অবতীর্ণ হয়েছে। সহীহঃ বুখারী (৫০১১), মুসলিম (২/১৯৩-১৯৪)। আবুদ্ দারদা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা আল- কাহ্‌ফের প্রথম তিনটি আয়াত পাঠ করবে তাকে দাজ্জালের ফিতনা হতে বিপদমুক্ত রাখা হবে। “মান হাফিযা আশারা আয়াতিন” যে ব্যক্তি দশটি আয়াত মুখস্থ করবে এই শব্দে হাদীসটি সহীহঃ সহীহাহ্ (৫৮২), আর এখানে বর্ণিত “মান ক্বারায়া ছালাছা আয়া তিন” শব্দে হাদীসটি শাজঃ যঈফাহ্ (১৩৩৬)।

【7】

সূরা ইয়াসীনের ফযীলাত

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেকটা বস্তুর কলব (হৃদয়) আছে। কুরআনের কলব হচ্ছে সূরা ইয়াসীন। যে ব্যক্তি এ সূরা একবার পাঠ করবে আল্লাহ্ তা’আলা এর পরিবর্তে তার জন্য দশবার কুরআন পাঠের সমান সাওয়াব নিরূপণ করবেন। মাওযূ , যঈফা (১৬৯)

【8】

সূরা হা-মীম আদ-দুখানের ফাযীলাত

আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাতে সূরা হা-মীম আদ-দুখান পাঠ করে, ভোর হওয়া পর্যন্ত তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা আল্লাহ্ তা’আলার নিকটে ক্ষমা চাইতে থাকে। মাওযূ, মিশকাত (২১৪৯) আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জুমুআর রাতে সূরা হা-মীম আদ-দুখান পাঠ করবে তাকে ক্ষমা করা হবে। যঈফ, যঈফা (৪৬৩২), মিশকাত তাহকীক ছানী (২১৫০) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক সাহাবী একটি ক্ববরের উপর তার তাঁবু খাটান। তিনি জানতেন না যে, তা একটি কবর। তিনি হঠাৎ বুঝতে পারেন যে, ক্ববরে একটি লোক সূরা আল-মুলক পাঠ করছে। সে তা পাঠ করে সমাপ্ত করলো। তারপর তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এসে বললেনঃ হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি একটি ক্ববরের উপর তাঁবু খাটাই। আমি জানতাম না যে, তা ক্ববর। হঠাৎ বুঝতে পারি যে, একটি লোক সূরা আল-মুলক পাঠ করছে এবং তা সমাপ্ত করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ সূরাটি প্রতিরোধকারী নাজাত দানকারী। এটা কবরের আযাব হতে তিলাওয়াতকারীকে নাজাত দান করে। যঈফ, “হিয়া আল-মানি ‘আতু” উহা প্রতিরোধকারী অংশটুকু সহীহ, সহীহাহ্ (১১৪০)।

【9】

সূরা আল-মুল্কের ফযিলত

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুরআনের মধ্যে ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট একটি সূরা আছে যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেয়া হয়। এ সূরাটি হল তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুল্‌ক। হাসানঃ তা‘লীকুর রাগীব (২/২২৩), মিশকাত (২১৫৩)। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা আলিফ লাম-মীম তান্যীল ও সূরা “তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল্ মুল্ক” না পাঠ করে ঘুমাতেন না। সহীহঃ সহীহাহ্ (৫৮৫), আর-রওয (২২৭), মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (২১৫৫)।

【10】

সূরা আয-যিলযালের ফযিলত

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সূরা “ইযা যুলযিলাত” পাঠ করবে তাকে অর্ধেক কুরআনের সমান এবং যে ব্যক্তি “কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরূন” পাঠ করবে তাকে কুরআনের এক-চতুর্থাংশের সমান এবং যে ব্যক্তি সূরা “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করবে তাকে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান সাওয়াব দেয়া হবে। সূরা ইযাযুল যিলাত-এর ফযিলত ব্যতীত হাদীসটি হাসান, যঈফা (১১৪২)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সূরা ইযা যুলযিলাতিল আরদু কুরআনের অর্ধেকের সমান, কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ এক-তৃতীয়াংশের সমান এবং কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরূন এক-চতুর্থাংশের সমান। সূরা “ইযাযুল যিলাত”-এর ফযিলত ব্যতীত সহীহ। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর এক সাহাবীকে প্রশ্ন করলেনঃ হে অমুক! তুমি কি বিয়ে করেছ? তিনি বললেনঃ না, হে আল্লাহ্‌র রাসূল। আল্লাহ্‌র কসম! আমার কাছে বিয়ে করার মত মাল নেই। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ “তোমার কি সূরা ক্কুল্ হুওয়াল্লাহু আহাদ মুখস্ত নেই”? তিনি বলেনঃ হ্যাঁ আছে। তিনি বলেনঃ এটা কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ। তিনি আবারও প্রশ্ন করলেনঃ তোমার কি সূরা ইযা জাআ নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহু মুখস্ত নেই? তিনি বলেন, হ্যাঁ আছে। তিনি বলেনঃ এটা কুরআনের এক-চতুর্থাংশ। তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ তোমার কি সূরা ক্কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরূন জানা নেই? তিনি বলেন, হ্যাঁ আছে। তিনি বলেনঃ এটা কুরআনের এক-চতুর্থাংশ। তিনি আবার প্রশ্ন করেনঃ তোমার কি সূরা ইযা যুলযিলাতিল আরযু মুখস্ত নেই? তিনি বলেন, হ্যাঁ আছে। তিনি বলেনঃ এটা কুরআনের এক-চতুর্থাংশ। অতএব তুমি বিয়ে কর, বিয়ে কর। যঈফ, তা’লীকুর রাগীব (২/২২৪)

【11】

সূরা আল-ইখলাসের ফযিলত

আবূ আইয়ূব (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি কি এক রাতে এক-তৃতীয়াংশ কুরআন তিলাওয়াত করতে অপারগ? যে লোক আল্লাহু ওয়াহিদুস্ সামাদ (সূরা আল-ইখলাস) পাঠ করল সে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ পাঠ করল। সহীহঃ তা’লীকুর রাগীব (২/২২৫), মুসলিম, আবূ দারদা হতে। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে আসছিলাম। তখন তিনি এক ব্যক্তিকে “কুল হুওয়াল্লাহু আদাদ, আল্লাহুস সামাদ” পাঠ করতে শুনলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ওয়াজিব (অবধারিত) হয়ে গেছে। আমি প্রশ্ন করলাম, কি ওয়াজিব হয়ে গেছে? তিনি বললেনঃ জান্নাত। সহীহঃ আত্তা’লীক (২/২২৪)। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি প্রতিদিন দুইশত বার সূরা ক্কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ পাঠ করবে তার পঞ্চাশ বছরের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে, কিন্তু তার কর্জের বোঝা থাকলে তা ছাড়া। যঈফ, যঈফা (৩০০), মিশকাত (২১৫৮) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সূরা ‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৩৭৮৩), মুসলিম, বুখারী। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা একত্র হও, আমি তোমাদেরকে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করে শুনাব। তিনি (বর্ণনাকরী) বলেন, অতএব যাদের একত্র হওয়ার সুযোগ হয়েছে তারা একত্র হল। আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ঘর হতে) বেরিয়ে এসে কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ (সূরাঃ আল-ইখলাস) তিলাওয়াত করলেন, তারপর ভেতরে চলে গেলেন। আমরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেনঃ আমি কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ তোমাদের সামনে তিলাওয়াত করব। মনে হয় এ বিষয়ে এখন তাঁর নিকট আসমান হতে খবর এসেছে। তারপর আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেরিয়ে এসে বললেনঃ আমি বলেছিলাম তোমাদেরকে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করে শুনাব। জেনে রাখ! এ সূরাইটিই কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। সহীহঃ তা’লীকুর রাগীব (২/২২৪), সিফাতুস সালাত (৮৫), বুখারী। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, কুবা মসজিদে আনসার সম্প্রদায়ের এক লোক তাদের ইমামতি করতেন। তিনি নামাযে সূরা আল-ফাতিহার পর কোন সূরা পাঠ করা্র ইচ্ছা করলে প্রথমে সূরা ‘কুল হওয়াল্লাহু আহাদ’ পাঠ করতেন এবং এ সূরা শেষ করার পর এর সাথে অন্য সূরা পাঠ করতেন। তিনি প্রতি রাক‘আতেই এরূপ করতেন। তার সাথীরা তার সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করে বললেন, আপনি এ সূরাটি পাঠ করার পর মনে করেন যে, এটা বুঝি যথেষ্ট হয়নি, তাই এর সাথে অন্য আরেকটি সূরাও পাঠ করেন। আপনি হয় এ সূরাটিই পাঠ করবেন, না হয় এটা বাদ দিয়ে অন্য কোন সূরা পাঠ করবেন। তিনি বললেন, আমি এ সূরা বাদ দিতে পারব না। যদি তোমাদের পছন্দ হয় তবে আমি এ সূরাসহ ইমামতি করি, আর পছন্দ না হলে ইমামতি ছেড়ে দেই। কিন্তু তাদের দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সবচাইতে উত্তম ব্যক্তি। তাই তাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে ইমাম বানাতে তারা সম্মত হলেন না। পরে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকট এলে তারা বিষয়টি তাঁকে জানালেন। তিনি বললেনঃ হে অমুক! তোমার সাথীরা তোমাকে যে নির্দেশ দিচ্ছে তা পালন করতে তোমাকে কিসে বাধা দিচ্ছে? আর তোমাকে প্রতি রাক্আতে এ সূরা পাঠ করতে কিসে উদ্বুদ্ধ করছে? তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি এটি খুব ভালোবাসি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এর প্রতি তোমার ভালোবাসাই তোমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। হাসান সহীহঃ তা’লীকুর রাগীব (২/২৪৪), সিফাতুস সালাত (৮৫), বুখারী, মু‘আল্লাক হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

【12】

মুআব্বিযাতাইনের (সূরা আল-ফালাক্ব ও সূরা আন-নাস) ফযিলত

উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির আল-জুহানী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা আমার উপর এমন কতগুলো আয়াত অবতীর্ণ করেছেন যার কোন তুনলা হয় নাঃ “কুল আ‘ঊযু বিরব্বিন নাস......” শেষ পর্যন্ত এবং “কুল আ‘ঊযু বিরব্বিল ফালাক্ব” হতে সূরার শেষ পর্যন্ত। সহীহঃ মুসলিম (২/২০০)। উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে প্রতি ওয়াক্ত নামাযের পর সূরা আন্-নাস ও সূরা আল-ফালাক্ব পাঠের আদেশ করেছেন। সহীহঃ সহীহাহ্ (১৫১৪), সহীহ আবূ দাঊদ (১৩৬৩), তা’লীক আলা ইবনে খুযাইমাহ্ (৭৫৫)।

【13】

কুরআন তিলাওয়াতকারীর মর্যাদা

আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি (আখিরাতে) সম্মানিত নেককার লিপিকর ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। আর যে ব্যক্তি উহা পাঠ করে এবং এটা তার পক্ষে (হিশামের বর্ণনায়) খুবই কঠিন ও (শু‘বাহ্র বর্ণনায়) কষ্টকর, সে দু’টি পুরস্কার পাবে। সহীহঃ সহীহ আবূ দাঊদ (১৩০৭), বুখারী ও মুসলিম। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করেছে এবং তা হেফয রেখেছে, এর হালালকে হালাল এবং হারামকে হারাম মেনেছে, তাকে আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তার পরিবারের এমন দশজন ব্যক্তি সর্ম্পকে তার শাফায়াত ক্ববূল করবেন যাদের প্রত্যেকের জন্য জাহান্নাম অনিবার্য ছিল। অত্যন্ত দুর্বল, ইবনু মাজাহ (২১৬)

【14】

কুরআন মাজীদের মযার্দা প্রসঙ্গে

আল-হারিস আল-আওয়ার (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক সময় আমি মাসজিদে গিয়ে দেখি যে, কিছু লোক নানারকম আলাপ করছে। আমি আলী (রাঃ)-এর নিকটে গিয়ে বললাম, হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না যে, লোকেরা নানারকম আলাপ করছে? তিনি প্রশ্ন করলেন, তারা কি তাই করছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, শোন! আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ হুঁশিয়ার! শীঘ্রই ফিতনা-ফাসাদ দেখা দিবে। আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এ ফিত্‌না হতে আত্নরক্ষার পন্থা কি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্ তা’আলার কিতাব (কুরআন)। এতে আছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের সংবাদ ও পরবর্তীদের সংবাদ এবং তোমাদের মাঝে ফায়সালার বিধান। এটা (সত্য-মিথ্যার মধ্যে) সুস্পষ্ট বিভাজনকারী, কোন অর্থহীন ব্যাপার নয়। যে ব্যক্তি গর্ববশে এটা ছেড়ে দেবে, আল্লাহ্ তা’আলা তার গর্ব চূর্ণ করবেন। এটাকে বাদ দিয়ে যে হিদায়াত খোঁজ করবে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে পথভ্রষ্ট করবেন। এটা হল আল্লাহ্ তা’আলার মযবুত রশি, হিকমাত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ এবং সহজ-সরল পথ। তা অনুসরণ করলে মানুষের চিন্তাধারা বিপথগামী হয় না এবং এতে যবানও আড়ষ্ট হয় না। আলিমগণ এ থেকে তৃপ্ত হয় না (যতই পড়ে ততই ভালো লাগে), বারবার পড়লেও এটা পুরানো হয় না এবং এর রহস্য ও নিগূঢ় তত্ত্বের শেষ নেই। এটা সেই গ্রস্থ যা শোনা মাত্রই জিনেরা বলে উঠলো, “আমরা এক আশ্চর্যজনক কুরআন শুনলাম যা সঠিক পথের সন্ধান দেয়। সুতরাং আমরা এতে ঈমান এনেছি” (সূরাঃ জ্বিন-১, ২)। যে ব্যক্তি কুরআন অনুযায়ী কথা বলে সে সত্য বলে এবং যে সে অনুসারে আমল করে সে প্রতিদান পায়। যে এর সাহায্যে ফায়সালা করে সে ইনসাফ করে এবং যে এর দিকে আহ্বান করে সে সঠিক পথ দেখায়। হে আওয়ার! তুমি এটা শক্তভাবে আকড়ে ধর। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (২১৩৮)

【15】

কুরআন শিক্ষার ফযিলত

উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সে লোকই তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যে কুরআন শিক্ষা করে এবং অন্যকে তা শিক্ষা দেয়। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (২১১), বুখারী। উসমান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সে লোকই তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বা উত্তম যে নিজে কুরআন শিখে এবং তা অন্যকে শিখায়। সহীহঃ দেখুন পূর্বে হাদীস। আলী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সে লোকই তোমাদের মধ্যে উত্তম যে কুরআন শিক্ষা করে এবং তা অন্যকে শিখায়। পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ।

【16】

কুরআনের একটি অক্ষরও পাঠকারী ব্যক্তির সাওয়াব প্রসঙ্গে

আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের একটি হরফ যে ব্যক্তি পাঠ করবে তার জন্য এর সাওয়াব আছে। আর সাওয়াব হয় তার দশ গুণ হিসেবে। আমি বলি না যে, ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি হরফ, বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ। সহীহঃ তাখরীজুত্ তাহাবীয়াহ (১৩৯), মিশকাত (২১৩৭)।

【17】

(কুরআন পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’আলার অধিকতর নৈকট্য অর্জন করা যায়)

আবূ উমামা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা বান্দার দুই রাক্আত নামাযে যেভাবে মনঃসংযোগ করেন এর চেয়ে কোন কিছুতেই এই প্রকার করেন না। বান্দা যতক্ষণ নামাযে নিয়োজিত থাকে ততক্ষণ তার মাথার উপর সাওয়াব বর্ষিত হতে থাকে। বান্দা কুরআন পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’আলার যতটুকু নৈকট্য অর্জন করতে পারে অন্য কিছু দ্বারা তাঁর এত নৈকট্য অর্জন করতে পারে না। যঈফ, মিশকাত (১৩৩২), যঈফা (১৯৫৭) জুবাইর ইবনু নুফাইর (রহঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা হতে নিঃসৃত জিনিস অর্থাৎ কুরআন মাজীদের তুলনায় শ্রেষ্ঠতর কোন কিছু নিয়ে তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার কাছে ফিরে যেতে পারবে না। যঈফ, যঈফা।

【18】

(কুরআন পাঠকারীর অবস্থান)

ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যার হৃদয়ে কুরআনের কিছুই নেই সে বর্জিত ঘরের মত। যঈফ, মিশকাত (২১৩৫)। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (ক্বিয়ামাতের দিন) কুরআনের বাহককে বলা হবে, পাঠ করতে থাক ও উপরে আরোহণ করতে থাক এবং দুনিয়াতে যেভাবে ধীরে সুস্থে পাঠ করতে ঠিক সেরূপে ধীরে সুস্থে পাঠ করতে থাক। যে আয়াতে তোমার পাঠ সমাপ্ত হবে সেখানেই তোমার স্থান। হাসান সহীহঃ মিশকাত (২১৩৪), তা’লীকুর রাগীব (২/২০৮), সহীহ আবূ দাঊদ (১৩১৭), সহীহাহ্ (২২৪০)। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কুরআন ক্বিয়ামাত দিবসে হাযির হয়ে বলবে, হে আমার প্রভু! একে (কুরআনের বাহককে) অলংকার পরিয়ে দিন। তারপর তাকে সম্মান ও মর্যাদার মুকুট পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু! তাকে আরো পোশাক দিন। সুতরাং তাকে মর্যাদার পোশাক পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে আমার প্রভু! তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। কাজেই তিনি তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। তারপর তাকে বলা হবে, তুমি এক এক আয়াত পাঠ করতে থাক এবং উপরের দিকে উঠতে থাক। এমনিভাবে প্রতি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে সাওয়াব (মর্যাদা) বাড়ানো হবে। হাসানঃ তা’লীকুর রাগীব (২/২০৭)।

【19】

(কুরআন ভুলে যাওয়ার গুনাহ ভয়াবহ)

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের সকল সাওয়াব আমার সামনে উপস্থাপন করা হয়, এমনকি মাসজিদ হতে জঞ্জাল দূর করার সাওয়াবও। আমার উম্মাতের গুনাহসমূহও আমার সামনে উপস্থাপন করা হয়। কাউকে কুরআনের কোন সূরা বা আয়াত প্রদান করার পর তা বিস্মৃত হওয়ার চাইতে বড় গুনাহ আমি আর দেখিনি। যঈফ, মিশকাত (৭২০), রওযুননাযীর (৭২), যঈফ, আবূ দাঊদ (৭১)

【20】

(কুরআনকে ভিক্ষার উপায় বানানো নিষেধ)

ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) একদা তিনি জনৈক কুরআন তিলাওয়াতকারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। লোকটি তখন কুরআন পাঠ করতে করতে (মানুষের নিকট) ভিক্ষা করছিল। তিনি “ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজি‘ঊন” পাঠ করে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ কুরআন তিলাওয়াতকারী ব্যক্তি যেন এর দ্বারা শুধু আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করে। কেননা অচিরেই এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা কুরআন পাঠের মাধ্যমে মানুষের নিকট ভিক্ষা করবে। হাসানঃ সহীহাহ্ (২৫৭)। সুহাইব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কুরআনের হারামসমূকে হালাল মনে করে সে কুরআনের প্রতি ঈমান আনেনি। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (২২০৩) উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ প্রকাশ্যে কুরআন পাঠকারী প্রকাশ্যে দান-খাইরাতকারীর সমতুল্য এবং গোপনে কুরআন পাঠকারী গোপনে দান-খাইরাতকালরি সমতুল্য। সহীহঃ মিশকাত তাহ্‌ক্বীক্ব সানী (২২০২), সহীহ আবূ দাঊদ (১২০৪)।

【21】

(রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমানোর পূর্বে যেসব সূরা পাঠ করতেন)

আয়িশাহ্‌ (রাঃ) সূরা বানী ইসরাঈল ও সূরা আয্‌-যুমার তিলাওয়াত না করা পর্যন্ত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমাতেন না। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (৬৪১)। ইরবায ইবনু সারিয়া (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমানোর পূর্বে মুসাব্বিহাত সূরাসমূহ পাঠ করতেন এবং বলতেনঃ এ আয়াতসমূহের মধ্যে এমন একটি আয়াত আছে, যা হাজার আয়াতের চাইতেও উত্তম। সানাদ দূর্বলঃ তা’লীকুর রাগীব (১/২১০)।

【22】

(সূরা আল-হাশরের শেষ তিন আয়াতের ফাযীলাত)

মাকিল ইবনু ইয়াসার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি সকালে উপস্থিত হয়ে তিনবার বলবে “আঊযু বিল্লাহিস্ সামীইল আলীমি মিনাশ্ শাইতানির রাজীম”, তারপর সূরা আল-হাশরের শেষের তিন আয়াত পাঠ করবে, আল্লাহ্ তা’আলা তার জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা নিয়োজিত করবেন। তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য দু’আ করতে থাকবেন। সে ঐ দিন ইন্তেকাল করলে তার শহীদী মৃত্যু হবে। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এরূপ পাঠ করবে, সেও একই রকম গৌরবের অধিকারী হবে। যঈফ, তা’লীকুর রাগীব (২/২২৫)

【23】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ক্বিরাআত কিরূপ ছিল

ইয়ালা ইবনু মামলাক (রহঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী উম্মু সালামা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর (রাতের) কিরা'আত ও নামায কেমন ছিল? তিনি বললেনঃ তার নামাযের কথা শুনে তোমাদের কি ফায়দা? তিনি যতক্ষণ নামায আদায় করতেন ঠিক ততক্ষণ ঘুমাতেন, আবার উঠে যতক্ষণ ঘুমিয়েছেন ততক্ষণ নামায আদায় করতেন, আবার এ নামাযের সমপরিমাণ সময় ঘুমাতেন। এভাবে তাঁর সকাল হত। তারপর তিনি তাঁর কিরা'আতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ তাঁর পাঠ ছিল অত্যন্ত সহজবোধ্য তিনি প্রতিটি অক্ষর পৃথক করে পরিষ্কারভাবে উচ্চারণ করতেন। যঈফ, যঈফ আবু দাউদ (২৬০), মিশকাত, তাহকীক ছানী (১২১০) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ ক্বাইস (রহঃ) তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিত্‌রের নামায বিষয়ে ‘আয়িশা (রাঃ) কে প্রশ্ন করলাম যে, তিনি কি রাতের প্রথম ভাগে বিতর আদায় করতেন না শেষ ভাগে? তিনি বললেন, তিনি দুই সময়েই তা আদায় করতেন। তিনি কখনো তা রাতের প্রথম ভাগে আদায় করে নিতেন আবার কখনো শেষ রাতে আদায় করতেন। আমি বললাম, আলহামদুলিল্লাহ, সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহ্‌র যিনি এ ব্যাপারে ব্যাপক সুবিধাজনক ব্যবস্থা রেখেছেন। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, তাঁর ক্বিরাআত পাঠ কেমন ছিল? তিনি কি তা চুপি চুপি পড়তেন না সশব্দে পড়তেন? তিনি বললেন, উভয়ভাবেই পড়তেন। কখনো তিনি তা চুপে চুপে পড়তেন, আবার কখনো সশব্দে পড়তেন। আমি বললাম, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার যিনি এ ব্যাপারে প্রশস্ততর ব্যবস্থা রেখেছেন। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, তিনি জানাবাতের (স্ত্রীসহবাস জনিত গোসল) ব্যাপারে কি করতেন? তিনি কি ঘুমিয়ে যাওয়ার পূর্বেই গোসল সারতেন না গোসলের পূর্বেই ঘুমিয়ে যেতেন? তিনি বললেন, তিনি দু’টোই করতেন। তিনি কখনো গোসলের পর ঘুমাতেন আবার কখনো ওযূ করে ঘুমিয়ে যেতেন (জাগ্রত হওয়ার পর গোসল করতেন)। আমি বললাম, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌ তা’আলার যিনি এ ব্যাপারেও প্রশস্ততর ব্যবস্থা রেখেছেন। সহীহঃ সহীহ আবূ দাঊদ (২২২, ১২৯১), মুসলিম, বুখারী শুধু বিত্‌র সংক্রান্ত বিষয় আরো পূর্ণভাবে বর্ণিত হয়েছে।

【24】

(হাজীদের নিকটে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজেকে পেশ করতেন)

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজ্জের মৌসুমে নিজেকে বিভিন্ন গোত্রের সামনে পেশ করে বলতেনঃ এমন কোন লোক নেই কি যে আমাকে তার সম্প্রদায়ের নিকট নিয়ে যেতে পারে? কেননা কুরাইশগণ আমাকে আমার প্রভূর বাণী প্রচার করতে বাধা দিচ্ছে। সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (২০১)।

【25】

(আল্লাহ্ তা’আলার কালামের মর্যাদা)

আবু সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মহান রাব্বুল ইজ্জাত বলেন, কুরআন (চর্চার ব্যস্ততা) ও আমার যিকির যাকে আমার নিকটে কিছু আবেদন করা হতে নিবৃত্ত রেখেছে আমি তাকে আমার কাছে যারা চায় তাদের চাইতে অনেক উত্তম বখশিশ দিব। সব কালামের উপর আল্লাহ্ তা'আলার কালামের গৌরব এত বেশি যত বেশি আল্লাহ্ তা'আলার সম্মান তাঁর সকল সৃষ্টির উপর। যঈফ, মিশকাত (২১৩৬), যঈফা (১৩৩৫)