45. দু’আ সমূহ

【1】

দু‘আর ফাযীলাত

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু’আর চেয়ে কোন জিনিস বেশি সম্মানিত নয়। হাসানঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮২৯)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দু’আ হল ইবাদাতের মূল বা সার। এই শব্দে হাদীসটি যঈফ, রাওজুন নাযীর(২/২৮৯), মিশকাত(২২৩১), আবূ ঈসা বলেনঃ উপরোক্ত সনদসূত্রে এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু ইবনু লাহীআর রিওয়ায়াত হিসেবে এ হাদীস জ়েনেছি।

【2】

(দু‘আই ‘ইবাদাত)

নু‘মান ইবনু বাশীর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু‘আই হল ‘ইবাদাত। তারপর তিনি পাঠ করেন (অনুবাদ): “এবং তোমাদের রব বলেছেন, আমাকে তোমরা আহ্বান কর, আমি তোমাদের আহ্বানে সাড়া দিব। নিশ্চয় যে সকল লোক আমার ‘ইবাদাত করতে অহংকার করে (বিরত থাকে), শীঘ্রই তারা ভর্ৎ‍‌সনার সঙ্গে জাহান্নামে প্রবেশ করবে”- (সূরা মু’মিন ৬০)। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৩৮২৮)।

【3】

(আল্লাহর অসন্তুষ্টি)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলার কাছে যে লোক চায় না, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর নাখোশ হন। হাসানঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮২৭)

【4】

(জান্নাতের গুপ্তধন)

আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা কোন এক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথেই ছিলাম। আমরা যখন ফিরে আসলাম এবং মাদীনার উপকণ্ঠে উপস্থিত হলাম তখন কিছু লোক উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমাদের পালনকর্তা বধিরও নন এবং অনুপস্থিতও নন। তিনি তোমাদের মাঝে তোমাদের সৈন্য দলের সাথেই আছেন। তারপর তিনি বললেন, হে ‘আবদুল্লাহ ইবনু ক্বাইস আমি কি তোমাকে জান্নাতের গুপ্তঘন শিখিয়ে দিব না? তা হল “লা- হাওলা ওয়ালা কু-ওয়াতা ইল্লা- বিল্লা-হ”। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮২৪), বুখারী ও মুসলিম।

【5】

যিকিরের ফযীলত প্রসঙ্গে যা বর্ণিত হয়েছে

আবদুল্লাহ্ ইবনু বুস্‌র (রাঃ) এ লোক বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমার জন্য ইসলামের শারী‘আতের বিষয়াদি অতিরিক্ত হয়ে গেছে। সুতরাং আমাকে এমন একটি বিষয় জানান, যা আমি শক্তভাবে আঁকড়ে থাকতে পারি। তিনি বললেনঃ সর্বদা তোমার জিহ্বা যেন আল্লাহ তা‘আলার যিকিরের দ্বারা সিক্ত থাকে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৭৯৩)। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে প্রশ্ন করা হল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তা‘আলার নিকট বান্দাদের মধ্যে কে মর্যাদায় সর্বোত্তম হবে? তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলার অধিক পরিমাণে যিকিরকারীগণ। রাবী বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আল্লাহ্‌ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদকারীর চেয়েও অধিক মর্যাদাশালী? তিনি বললেনঃ যদি কেউ নিজের তলোয়ার দিয়ে কাফির ও মুশরিকদের উপর এমনভাবে আঘাত হানে যে, তা ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় এবং নিজেও রক্তাক্ত হয়ে যায়, তবে অধিক পরিমাণে আল্লাহ্‌ তা‘আলার যিকিরকারী বান্দাগণ মর্যাদায় তার চেয়েও উত্তম। যঈফ,তা‘লীকুর রাগীব (২/২২৮), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু দার্‌রাজের রিওয়ায়াত হিসেবে তা জেনেছি।

【6】

(সর্বোত্তম ‘আমাল)

আবুদ্‌ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কি তোমাদের অধিক উত্তম কাজ প্রসঙ্গে জানাব না, যা তোমাদের মনিবের নিকট সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের সম্মানের দিক হতে সবচেয়ে উঁচু, স্বর্ণ ও রৌপ্য দান-খাইরাত করার চেয়েও বেশি ভাল এবং তোমাদের শত্রুর মুকাবিলায় অবতীর্ণ হয়ে তাদেরকে তোমাদের সংহার করা ও তোমাদেরকে তাদের সংহার করার চাইতেও ভাল? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলার যিক্‌র। মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলার যিক্‌রের তুলনায় অগ্রগণ্য কোন জিনিস নেই। সহীহ : ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৭৯০)।

【7】

যে সকল লোক বসে বসে আল্লাহ তা‘আলার যিক্‌র করে তাদের মর্যাদা

আবূ হুরাইরাহ্‌ ও আবূ সা‘ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) আবূ হুরাইরাহ্‌ ও আবূ সা‘ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) প্রত্যেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রসঙ্গে সাক্ষ্য দেন যে, তিনি বলেছেন : যখনই কোন এক স্থানে কিছু সংখ্যক লোক আল্লাহ তা‘আলার যিক্‌রে মাশগুল হয়, তখনই ফেরেশতাগণ তাদের আবৃত করে রাখে, তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার রাহমাত ও করুণা ছেয়ে ফেলে এবং তাদের প্রতি প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়। আর আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং তাঁর সমীপে উপস্থিতদের কাছে তাদের আলোচনা করেন। সহীহ : ইবনু মাজাহ (হা : ৩৭৯১), মুসলিম। আবূ সা‘ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, মু’আবিয়াহ্‌ (রাঃ) মাসজিদে গেলেন। তিনি (মাসজিদে কিছুলোক বসা দেখে তাদেরকে) বললেন, তোমাদের কিসে বসিয়ে রেখেছে? তারা বললেন, আমরা বসে বসে আল্লাহ তা‘আলার যিক্‌র করছি। তিনি বললেন, আল্লাহর ক্বসম! তোমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার যিক্‌রই কি বসিয়ে রেখেছে? তারা বললেন, আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তা‘আলার যিক্‌রই আমাদেরকে বসিয়ে রেখেছে। তিনি বললেন, শোন! তোমাদের মিথ্যা বলার সন্দেহে আমি তোমাদেরকে শপথ করাইনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আমার চেয়ে কম হাদীস বর্ণনাকারীও কেউ নেই। একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাথীদের এক দরবারে পৌঁছে বললেনঃ তোমাদেরকে কিসে বসিয়ে রেখেছে? তারা বলেন, এখানে বসে আমরা আল্লাহ তা‘আলার যিক্‌র করছি এবং তাঁর প্রশংসা করছি, কেননা ইসলামের দিকে তিনিই আমাদেরকে পথ দেখিয়েছেন এবং ইসলামের মাধ্যমে আমাদের প্রতি বিরাট অনুগ্রহ করেছেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর শপথ! এটাই তোমাদেরকে বসিয়ে রেখেছে কি? তারা বললেন, আল্লাহর শপথ! আমাদেরকে শুধুমাত্র এটাই বসিয়ে রেখেছে। তিনি বললেনঃ তোমাদের মিথ্যা বলার সন্দেহে আমি তোমাদেরকে ক্বসম দেইনি। জিবরীল (‘আঃ) আমার কাছে এসে আমাকে জানিয়েছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের সম্মুখে তোমাদের নিয়ে গর্ব করছেন। সহীহ : মুসলিম (হাঃ ৮/৭২)

【8】

যারা মাজলিসে বসে আছে অথচ আল্লাহ তা‘আলার যিক্‌র করে না

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে সমস্ত লোক কোন দরবারে বসেছে অথচ তারা আল্লাহ তা‘আলার যিক্‌র করেনি এবং তাদের নাবীর প্রতি দরূদও পড়েনি, তারা বিপদগ্রস্ত ও আশাহত হবে। আল্লাহ তা‘আলা চাইলে তাদেরকে শাস্তিও দিতে পারেন কিংবা মাফও করতে পারেন। সহীহ : সহীহাহ্‌ (হাঃ ৭৪)

【9】

মুসলিম লোকের দু‘আ ক্ববূল হয়

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছি : কোন ব্যক্তি (আল্লাহ তা‘আলার কাছে) কোন কিছু দু‘আ করলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে তা দান করেন কিংবা তার পরিপ্রেক্ষিতে তার হতে কোন অকল্যান প্রতিহত করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কোন গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়ার বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার জন্য প্রার্থনা না করে। হাসান : মিশকাত (হা : ২২৩৬)। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক বিপদাপদ ও সংকটের সময় আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ লাভ করতে চায় সে যেন সুখ-স্বাচ্ছন্দের সময় বেশি পরিমাণে দু‘আ করে। হাসান : সহীহাহ্‌ (হাঃ ৫৯৫)। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছি : “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” অতি উত্তম যিক্‌র এবং “আলাহামদু লিল্লাহ্‌” অধিক উত্তম দু‘আ। হাসান : ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮০০)। আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রতিটি সময়েই আল্লাহ তা‘আলার যিক্‌র করতেন। সহীহ : ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩০২), মুসলিম।

【10】

দু‘আকারী নিজের জন্য প্রথমে দু‘আ করবে

উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উল্লেখপূর্বক কারো জন্য দু‘আ করলে প্রথমে তার নিজের জন্য দু‘আ করতেন। সহীহ : মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (হাঃ ২২৫৮)।

【11】

দু‘আ করার সময় দুই হাত উত্তোলন

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু'আ করার সময় যখন তাঁর উভয় হাত উঠাতেন, তিনি তা দিয়ে তাঁর মুখমন্ডল মর্দন না করা পর্যন্ত নামাতেন না। যঈফ, মিশকাত (২২৪৫), ইরওয়া (৪৩৩), মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্নার বর্ণনায় আছেঃ তাঁর মুখমন্ডলে না মোছা পর্যন্ত হাত দু'খানা তিনি সরিয়ে নিতেন না। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু হাম্মাদ ইবনু ঈসার সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি। এ হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি একাকী। উপরন্তু তিনি অতিঅল্প সংখ্যক হাদীস বর্ণনাকারী। লোকেরা তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। হানজালা ইবনু আবূ সুফিয়ান আল-জুমাহী একজন বিশ্বস্ত রাবী। ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আল-কাত্তান তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।

【12】

যে ব্যক্তি দু‘আয় (প্রতিফল লাভে) তাড়াহুড়া করে

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের যে কোন ব্যক্তির দু‘আই ক্ববূল হয়ে থাকে, যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়া করে বলতে থাকে, দু‘আ তো করলাম অথচ আমার দু‘আ ক্ববূল হয়নি। সহীহ : সহীহ আবূ দাঊদ (হাঃ ১৩৩৪), বুখারী ও মুসলিম।

【13】

সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করার দু’আ

উসমান ইবনু ‘আফ্‌ফান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : প্রতিদিন ভোরে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় যে কোন বান্দা এ দু‘আটি তিনবার পাঠ করবে কোন কিছুই তার অনিষ্ট করতে পারবে না : “বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াযুর্‌রু মা‘আস্‌মিহি শাইয়ূন ফিল আরযি, ওয়ালা ফিস্‌ সামায়ি ওয়া হুয়াস্‌ সামীউল ‘আলীম”। (অর্থ : “আল্লাহ তা‘আলার নামে” যাঁর নামের বারাকাতে আকাশ ও মাটির কোন কিছুই কোন অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।”) আবান (রহঃ)-এর শরীরের একাংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। (উক্ত হাদীস রিওয়ায়াতকালে) এক লোক (অধঃস্তন বর্ণনাকারী) তার দিকে তাকাতে থাকলে তিনি তাকে বলেন, তুমি কি প্রত্যক্ষ করছো? শোন! আমি তোমার কাছে যে হাদীস রিওয়ায়াত করেছি তা অবিকল বর্ণনা করেছি। তবে আমি যেদিন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছি ঐ দু‘আটি পাঠ করিনি এবং আল্লাহ তা‘আলা ভাগ্যের লিখন আমার উপর কার্যকর করেছেন। হাসান সহীহ : ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮৬৯)। সাওবান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সন্ধায় উপনীত হয়ে বলে, 'আল্লাহ তা'আলা আমার রব, ইসলাম আমার দ্বীন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার রাসূল হওয়ায় আমি সর্বান্তকরণে পরিতৃপ্ত আছি', তাকে পরিতৃপ্ত করা আল্লাহ তা'আলার করণীয় হয়ে যায়। যঈফ, নাকদুল কিত্তানী (৩৩/৩৪) আল-কালিমুত-তায়্যিব (২৪), যঈফা (৫০২০), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান এবং উপরক্ত সূত্রে গারীব। আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন : “আমরা রাতে উপনীত হলাম এবং আল্লাহ তা‘আলার বিশ্বজাহানও রাতে উপনীত হল। সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শারীক নেই”। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা হয় তিনি আরো বলেছেনঃ “রাজত্ব তাঁরই এবং সকল প্রশংসাও তাঁরই। সর্ববিষয়ে তিনি সর্বশক্তিমান। (হে আল্লাহ) তোমার নিকট আমি এ রাতের মাঝে নিহিত মঙ্গল এবং এ রাতের পরে নিহিত মঙ্গল কামনা করি। আর আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাইছি এ রাতের অমঙ্গল এবং এ রাতের পরে সমস্ত অমঙ্গল হতে। তোমার কাছে আমি আশ্রয় চাই অলসতা ও বার্ধক্যের অনিষ্ট হতে। আমি তোমার কাছে আরো আশ্রয় চাই (জাহান্নামের) আগুনের আযাব ও কবরের শাস্তি হতে।” তিনি ভোরে উপনীত হয়েও একই দু’আ করতেন : “আমরা ভোরে উপনীত হলাম এবং আল্লাহ তা‘আলার বিশ্বজাহানও ভোরে উপনীত হল। সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য......। সহীহ : মুসলিম (হাঃ ৮/৮২)। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদেরকে শিক্ষা দিয়ে বলতেন : তোমাদের কেউ যখন ভোরে উপনীত হয় তখন সে যেন বলে, “হে আল্লাহ! তোমার হুকুমে আমরা ভোরে উপনীত হই এবং তোমার নির্দেশেই সন্ধ্যায় উপনীত হই। তোমার নির্দেশেই আমরা জীবন ধারণ করি এবং তোমার নির্দেশেই মারা যাই। তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।” আর যখন সন্ধ্যায় উপনীত হয় তখন যেন বলে : “হে আল্লাহ! আমরা তোমার হুকুমেই সন্ধ্যায় উপনীত হই, তোমার নির্দেশেই সকালে উপনীত হই, তোমার নির্দেশেই জীবন ধারণ করি এবং তোমার নির্দেশেই মারা যাই। আবার তোমার কাছেই পুনরায় জীবিত হয়ে ফিরে যেতে হবে”। সহীহ : ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮৬৮)।

【14】

(সকালে, সন্ধ্যায় ও শয্যা গ্রহণকালের দু‘আ)

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন কিছুর হুকুম দিন যা আমি সকালে ও বিকেলে উপনীত হয়ে বলতে পারি। তিনি বললেনঃ তুমি বল, “হে আল্লাহ্‌! অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাত, আকাশ ও যামীনের সৃষ্টিকর্তা, প্রতিটি জিনিসের প্রতিপালক ও মালিক, আমি সাক্ষ্য দেই যে, তুমি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। আমি আমার শরীরের ক্ষতি হতে এবং শাইতানের ক্ষতি ও শির্‌কি কার্যকালাপ হতে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি এই দু’আ সকালে, বিকেলে ও শয্যা গ্রহণকালে পাঠ করবে। সহীহ : আল-কালিমুত্‌ তাইয়্যিব (হাঃ ২২), সহীহাহ্‌ (হাঃ ২৭৫৩)।

【15】

(সাইয়্যিদুল ইসতিগফার)

শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছেনঃ তোমাকে সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনার সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দু‘আ) আমি কি বলে দিব না? তা হল : “হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রভু, তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ্‌ নেই। আমাকে তুমিই সৃষ্টি করেছ এবং আমি তোমার দাস। যথাসাধ্য তোমার ওয়াদা ও অঙ্গীকারে আমি দৃঢ় থাকব। আমি আমার কার্যকলাপের খারাপ পরিণতি হতে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আমার প্রতি তোমার নি‘আমাতের কথা স্বীকার করি। আমি আরও স্বীকার করি আমার গুনাহে্‌র কথা। কাজেই আমার গুনাহগুলো তুমি ক্ষমা কর। কেননা তুমি ছাড়া গুনাহ্‌সমূহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই।” রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ সন্ধ্যাবেলায় এ কথাগুলো বললে, তারপর ভোর হওয়ার পূর্বেই তার মৃত্যু হলে তার জন্য জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়। একইভাবে তোমাদের কেউ ভোরবেলায় তা বললে, তারপর সন্ধ্যার পূর্বেই তার মৃত্যু হলে তার জন্যও জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়। সহীহ : সহীহাহ্‌ (হাঃ ১৭৪৭), বুখারী হাদীসটি “আমি কি তোমাকে বলে দিব না” অংশটুকু ব্যতীত অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।

【16】

বিছানাগত হওয়ার সময়কার দু‘আ

আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি কি তোমাকে কিছু দু‘আ শিখিয়ে দিব না যা তুমি বিছানাগত হওয়ার সময় পাঠ করবে? তাহলে ঐ রাতে তোমার মৃত্যু হলে ফিত্‌রাতের (ইসলামের) উপরই মৃত্যুবরণ করবে। আর তুমি (জীবিত থাকলে) ভোরে উপনীত হলে মঙ্গল লাভ করবে। তুমি বল, “হে আল্লাহ! নিজেকে আমি তোমার কাছে সমর্পণ করলাম, আমি আমার মুখ তোমার দিকে ফিরিয়ে দিলাম। আমার সকল বিষয় আমি তোমার উপর সমর্পণ করলাম, তোমার রাহমাতের আশা ও তোমার শাস্তির ভয় নিয়ে আমার পিঠ তোমার আশ্রয়ে সমর্পণ করলাম। তোমার হতে পালিয়ে আশ্রয় নেয়ার এবং নাজাত পাওয়ার তুমি ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল নেই। যে কিতাব তুমি অবতীর্ণ করেছ এবং যে নবী প্রেরণ করেছ তার উপর আমি ঈমান এনেছি।” আল-বারাআ (রাঃ) বলেন, আমি (বিনাবিয়্যিকা-এর স্থলে) ‘বিরাসূলিকাল্লাযী আরসাল্‌তা (তুমি যে রাসূল প্রেরণ করেছ) বললাম। সে সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার বুকে নিজের হাত দিয়ে খোঁচা মেরে বললেনঃ ‘ওয়াবিনাবিয়্যিকাল্লাযী আর্‌সাল্‌তা’ বল। সহীহ : আল-কালিমুত্‌ তাইয়্যিব (হাঃ ৪১/২৬), বুখারী ও মুসলিম। রাফি ইবনু খাদীজ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন বিছানায় ডান কাতে শুয়ে বলেঃ “হে আল্লাহ! আমি নিজেকে পুরোপুরিভাবে তোমার নিকট সমর্পণ করলাম, আমার মুখমন্ডল তোমার দিকে ফিরিয়ে দিলাম, আমার পিঠ তোমার আশ্রয়ে সমর্পণ করলাম, আমার সকল বিষয় তোমার উপর ছেড়ে দিলাম, তোমার থেকে আশ্রয় নেয়ার স্থান তুমি ছাড়া আর কোথাও নেই, আমি তোমার কিতাব ও তোমার রাসূলের উপর ঈমান আনলাম”, সে ঐ রাতে মারা গেলে জান্নাতে যাবে। সনদ দুর্বল। “তোমার রাসূলের প্রতি ঈমান আনলাম” হাদীসে বর্ণিত এই অংশটুকু সহীহ হাদীসের বিরোধী। সহীহ (৩৩৯৪) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন বিছানাগত হতেন তখন (ঘুমানোর জন্য) বলতেন : “সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার যিনি আমাদেরকে আহার করিয়েছেন, পান করিয়েছেন, (সৃষ্টির অনিষ্ট হতে) আমাদের রক্ষা করেছেন এবং আমাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন (বিছানায়)। কিন্তু অনেক লোক আছে যাদের কোন রক্ষাকারী নেই এবং আশ্রয়স্থলও নেই”। সহীহ : মুসলিম (হাঃ ৮/৭৯)।

【17】

(বিছানাগত হয়ে পড়ার দু'আ)

আবূ সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন লোক (শোয়ার জন্য) বিছানাগত হয়ে তিনবার বলেঃ “আমি আল্লাহ তা'আলার নিকট মাফের আবেদন করি, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, যিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী, এবং তাঁর নিকট তাওবা করি”, আল্লাহ তা'আলা তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেন, যদিও তা সমুদ্রের ফেনারাশির সমতুল্য হয়ে থাকে, যদিও তা গাছের পাতার মত অসংখ্য হয়, যদিও তা টিলার বালিরাশির সমান হয়, যদিও তা দুনিয়ার দিনসমূহের সমসংখ্যক হয়। যঈফ, আল-কালিমুত-তায়্যিব (৩৯), তা'লীকুর রাগীব (১/২১১), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আমরা শুধু উবায়দুল্লাহ ইবনুল ওয়ালীদ আল-ওয়াসসাফীর রিওয়াত হিসেবে উপরোক্ত সূত্রে এ হাদীস জেনেছি।

【18】

বিছানাগত হয়ে পড়ার দু'আ

হুযইফাহ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমানোর ইচ্ছা করতেন, সে সময় তিনি নিজের (ডান) হাত মাথার নীচে রেখে বলতেনঃ "হে আল্লাহ! যেদিন তুমি তোমার বান্দাদেরকে একত্রিত করবে অথবা পুনজীবিত করবে সেদিন আমাকে তোমার আযাব হতে হিফাযাতে রেখ।” সহীহঃ সহীহাহ (হাঃ ২৭৫৪), আল-কালিমুত তাইয়্যিব (হাঃ ৩৭/৩৯)। আল-বারাআ ইবনু আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, ঘুমানোর সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ডান হাতের উপর মাথা রাখতেন, তারপর বলতেনঃ “হে আমার প্রভু! যেদিন তুমি তোমার বান্দাদেরকে উত্থিত করবে, আমাকে সেদিন তোমার শাস্তি হতে নিরাপদে রেখ।’’ সহীহঃ সহীহাহ

【19】

(ঋণমুক্ত হওয়ার দু'আ)

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই মর্মে হুকুম করতেন যে, আমাদের কেউ ঘুমানোর জন্য যখন বিছানাগত হয় সে সময় সে যেন বলে: "হে আল্লাহ! আকাশমণ্ডলীর প্রভু, মাটিসমূহের প্রভু, আমাদের প্রভু, প্রতিটি বস্তুর প্রভু, শস্যবীজ ও আঁটির অংকুরোদ্গমনকারী এবং তাওরাত, ইনজীল ও কুরআন অবতীর্ণকারী! আমি প্রত্যেক অনিষ্টকারীর ক্ষতি হতে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি। এগুলো তোমারই আয়ত্তাধীন, তুমিই শুরু, তোমার আগে কিছুই নেই। আর তুমিই শেষ, তোমার পরে কিছুই নেই। তুমিই প্রকাশিত, তোমার উপরে কিছুই নেই। তুমিই লুকায়িত, তোমার হতে কিছুই গোপন নয়। সুতরাং তুমি আমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দাও এবং দরিদ্রতা হতে আমাকে সাবলম্বী করে দাও”। সহীহঃ আল-কালিমুত তাইয়্যিব (হাঃ ৪০), মুসলিম।

【20】

(ঘুমাবার পূর্বে করণীয়)

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার বিছানা হতে উঠার পর আবার বিছানায় প্রত্যাবর্তন করলে সে যেন তার লুঙ্গীর শেষাংশ দিয়ে বিছানাটি তিনবার পরিষ্কার করে নেয়। কারণ সে জানে না, তার অনুপস্থিতিতে তাতে কি পতিত হয়েছে (ময়লা বা ক্ষতিকর কিছু)। আর যখন সে শুয়ে পড়ে সে সময় যেন বলেঃ “হে আমার প্রতিপালক! তোমার নামে আমার পাশ্বদেশ আমি বিছানায় সোপর্দ করলাম এবং আবার তোমার নামেই তা উঠাব। যদি আমার জান তুমি রেখে দাও (মৃত্যু দান কর) তবে তার প্রতি দয়া কর, আর যদি তাকে ছেড়ে দাও তবে তা সেভাবে প্রতিরক্ষা কর যেভাবে তুমি তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের প্রতিরক্ষা কর"। আর ঘুম হতে জেগে উঠে সে যেন বলেঃ “সকল প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার যিনি আমার দেহকে হিফাযাত করেছেন এবং আমার জান আবার আমাকে ফেরত দিয়েছেন এবং তাকে স্মরণ করারও অনুমতি (তাওকীক) দান করেছেন”। হাসানঃ আল-কালিমুত তাইয়্যিব (হাঃ ৩৪), বুখারী ও মুসলিম “আর ঘুম থেকে জেগে” অংশ বাদে।

【21】

যে লোক শয়নকালে কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করে

আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, সে সময় “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ”, “কুল আউযু বিরব্বিল ফালাক" ও "কুল আউযু বিরব্বিন নাস" (সূরা তিনটি) পাঠ করে নিজের উভয় হাতের তালু একসাথে করে তাতে ফুঁ দিতেন, তারপর উভয় হাত যথাসম্ভব সারা শরীরে মলতেন। তিনি মাথা, চেহারা ও দেহের সম্মুখের অংশ হতে আরম্ভ করতেন। তিনি তিনবার এরূপ করতেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【22】

অনুরূপ প্রসঙ্গ

ফরওয়াহ ইবনু নাওফাল (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমাকে কিছু শিখিয়ে দিন, যা আমি বিছানাগত হওয়াকালে বলতে পারি। তিনি বললেনঃ তুমি "কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন" সূরাটি তিলাওয়াত কর। কারণ তা শিরক হতে মুক্তির ঘোষণা। সহীহঃ তা’লীকুর রাগীব (হাঃ ১/২০৯)। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা তানযীলুস সাজদা ও তাবারাকা (আল-মুলক) না পাঠ করা পর্যন্ত ঘুমাতেন না। সহীহঃ মিশকাত (হাঃ ২১৫৫), সহীহ হাদীস সিরিজ (হাঃ ৫৮৫), রাওযুন নাযীর (হাঃ ২২৭)। আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয-যুমার ও বানী ইসরাঈল সূরাগুলো পাঠ না করা পর্যন্ত ঘুমাতেন না। সহীহঃ ২৯২০ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আল-ইরবায ইবনু সারিয়াহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুসাব্বিহাত সূরাগুলো পাঠ না করা পর্যন্ত ঘুমাতেন না। তিনি বলতেনঃ এমন একটি আয়াত তাতে আছে যা হাজার আয়াত হতেও শ্রেষ্ঠ। হাসানঃ ২৯২১ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে।

【23】

কাজে অবিচল থাকার প্রার্থনা

বানী হানযালার কোন এক ব্যক্তি তিনি বলেনঃ আমি এক সফরে শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ)-এর সাথী হলাম। তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দেব না যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলতে শিখাতেন? “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করি কাজে অবিচলতা, সৎপথে দৃঢ়তা, তোমার দেয়া নিয়ামাতের কৃতজ্ঞতা ও নিষ্ঠার সাথে তোমার ইবাদাত করার যোগ্যতা। আমি তোমার নিকট আরো প্রার্থনা করি সত্যবাদী জিহ্বা ও বিশুদ্ধ অন্তর। আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই তোমার জানা সকল মন্দ হতে এবং কামনা করি তোমার জানা সকল কল্যাণ। আমি ক্ষমা চাই তোমার জানা সর্বপ্রকারের অপকর্ম হতে। অবশ্যই তুমি অদৃশ্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞাত।” যঈফ, মিশকাত (৯৫৫), আল-কালিমুত তায়্যিব (১০৪/৬৫) রাবী বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলতেনঃ কোন মুসলিম ব্যক্তি বিছানাগত হওয়ার সময় আল্লাহ তা'আলার কিতাবের একটি সূরা পাঠ করলে আল্লাহ তা'আলা তার নিরাপত্তার জন্য একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করেন। ফলে তার ঘুমভঙ্গ হওয়া পর্যন্ত কোন ক্ষতিকর জিনিস তার নিকট পৌঁছাতে পারবে না। যঈফ, মিশকাত (২৪০৫), তা'লীকুল রাগীব (১/২১০) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি আমরা শুধু উক্ত সনদসূত্রে জেনেছি। জুরাইরীর নাম সাঈদ ইবনু ইয়াস আবূ মাসউদ আল-জুরাইরী। আবুল আ'লার নাম ইয়াযীদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনুশ শিখখীর।

【24】

শোয়ার সময় তাসবীহ, তাকবীর ও তাহমীদ পাঠ করা প্রসঙ্গে

আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমার কাছে ফাতিমাহ (রাঃ) অভিযোগ করে যে, গম পেষার চাকতি ঘুরানোর ফলে তার প্রত্যেক হাতে ফোস্কা পড়ে গেছে। আমি বললাম, তুমি তোমার বাবার (রাসূলুল্লাহর) কাছে গিয়ে যদি তাঁর নিকট একটি খাদিম প্রদানের আবেদন করতে। (ফাতিমাহ আবেদন জানানোর পর) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তোমাদের দু’জনকে এমন জিনিস কি বলে দিব না যা তোমাদের জন্য দাসের চেয়ে ভাল? তোমরা শয়নকালে ৩৩ বার "আলহামদু লিল্লাহ", ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ" এবং ৩৪ বার "আল্লাহু আকবার" বলবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। হাদীসে আরও ঘটনা আছে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে ফাতিমাহ্‌ (রাঃ) তার দু’হাতে ফোস্‌কা পড়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন। তাকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘আলহামদু লিল্লাহ’ পাঠ করার হুকুম দেন। সহীহঃ যঈফ আদাবুল মুফরাদ (হাঃ১০০/৬৩৫), বুখারী ও মুসলমি।

【25】

(দু'টি অভ্যাস জান্নাতে যাবার উপায়)

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মুসলমান ব্যক্তি দুইটি অভ্যাসে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হতে পারলে সে নিশ্চয় জান্নাতে প্রবেশ করবে। জেনে রাখ! উক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো আয়ত্ত করা সহজ। সে অনুসারে অনেক অল্প সংখ্যক ব্যক্তিই তা ‘আমল করে থাকে। (এক) প্রতি ওয়াক্তের (ফরয) নামাযের পর দশবার ‘সুবহানাল্লাহ’, দশবার ‘আল্‌হামদু লিল্লাহ’ ও দশবার ‘আল্লাহু আক্‌বার’ বলবে। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি নামাযের পর স্বীয় হস্তে গণনা করতে দেখেছি। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ (পাঁচ ওয়াক্তে) মুখের উচ্চারণে একশত পঞ্চাশবার এবং মীযানে (দাঁড়িপাল্লায়) দেড় হাজার হবে। (দুই) আর (ঘুমাতে) শয্যা গ্রহণকালে তুমি ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আক্‌বার’ ও ‘আল্‌হামদু লিল্লাহ’ একশত বার বলবে, ফলে তা মীযানে এক হাজারে রুপান্তর হবে। তোমাদের মাঝে কে এক দিন ও এক রাতে দু্ই হাজার পাঁচশত গুনাহে লিপ্ত হয়? (অর্থাৎ এতগুলো পাপও ক্ষমাযোগ্য হবে)। সাহাবীগণ বলেন, কোন ব্যক্তি সব সময় এরুপ একটি ‘ইবাদাত কেন করবে না! রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ নামাযে অবস্থানরত থাকাকালে তার কাছে শাইতান এসে বলতে থাকে, এটা মনে কর ওটা মনে কর। ফলে সেই নামাযী (শাইতানের ধোঁকাবাজির মাঝেই রত থাকা অবস্থায়) নামায় শেষ করে। আর উক্ত তাস্‌বীহ ‘আমল করার সে সুযোগ পায় না। পুনরায় তোমাদের কেউ শোয়ার জন্য শয্যা গ্রহণ করলে শাইতান তার নিকট এসে তাকে ঘুম পাড়ায় এবং সে তাসবীহ না পাঠ করেই ঘুমিয়ে পড়ে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৯২৬)। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি গুনে গুনে তাসবীহ পাঠ করতে দেখেছি। সহীহঃ প্রাগুক্ত কা’ব ইবনু ‘উজরাহ্‌ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নামাযের পরে তিলাওয়াত করার মত এমন কিছু বিষয় আছে যে, যার তিলাওয়াতকারী কখনো বঞ্চিত হয় না। প্রতি ওয়াক্তের নামাযের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’, ৩৩ বার ‘আল্‌হামদু লিল্লাহ’ এবং ৩৪ বার ‘আল্লাহু আক্‌বার’ পাঠ করবে। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (হাঃ ১০২), মুসলিম। যাইদ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা প্রত্যেক নামাযের পরে ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’, ৩৩ বার ‘আল্‌হামদু লিল্লাহ’ ও ৩৪ বার ‘আল্লাহু আক্‌বার’ পাঠ করতে আদিষ্ট হলাম। এক আনসারী ব্যক্তি স্বপ্নে দেখতে পেলেন যে, কোন এক ব্যক্তি তাকে বলছে তোমাদেরকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি প্রতি নামাযের পরে ৩৩ বার তাসবীহ, ৩৩ বার তাহমীদ ও ৩৪ বার তাকবীর পাঠ করতে আদেশ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, এগুলো তোমরা ২৫ বার করে পাঠ কর। আর তার সাথে ২৫ বার তাহলীল অর্থাৎ ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ কর। লোকটি সকাল বেলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর কছে গিয়ে তা বর্ণনা করল। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আচ্ছা তাই কর। সহীহঃ ইবনু খুযাইমাহ্‌ (৭৫২)।

【26】

রাতে ঘুম ভাঙ্গার সময় পাঠ করার দু’আ

'উবাদাহ্ ইবনুস সামিত (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রাতে জাগ্রত হয়ে যে লোক বলে, "আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত কোন মা'বুদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শারীক নেই, সার্বভৌমত্ব তাঁর, সকল প্রশংসা তাঁর জন্য এবং সমস্ত কিছুর উপর তিনি সর্বশক্তিমান। আল্লাহ তা’আলা সম্পূর্ণ পবিত্র, আল্লাহ তা'আলাই সকল প্রশংসার অধিকারী। আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, আল্লাহ আ'আলা সুমহান। আল্লাহ তা'আলার অনুগ্রহ ছাড়া অন্যায় হতে বিরত থাকার কিংবা ন্যায় কাজ করার শক্তি কারো নেই।" অতঃপর সে বলবে, "হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করে দাও।" কিংবা তিনি বলেছেনঃ সে দু'আ করলে তা ক্ববূল করা হয়। আর যদি সে সাহস করে উযূ করে নামায় আদায় করে তবে তার নামাযও ক্ববূল করা হয়। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮৭৮)। মাসলামা ইবনু আমর তিনি বলেনঃ উমাইর ইবনু হাণী প্রত্যেকদিন এক হাজার রাক'আত নামায আদায় করতেন এবং এক লক্ষবার তাসবীহ পাঠ করতেন। সনদ দুর্বল, বিচ্ছিন্ন।

【27】

(রাত্রিকালে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর 'আমাল)

রাবী'আহ্ ইবনু কা'ব আল-আসলামী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঘরের দ্বারদেশে আমি রাত যাপন করতাম এবং তার উযূর পানি সরবরাহ করতাম। রাতে আমি দীর্ঘ সময় ধরে তাঁকে বলতে শুনতাম, সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্ (যে আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করে, তিনি তা শুনেন)। আমি আরো শুনতে পেলাম যে, দীর্ঘ রাত পর্যন্ত তিনি আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন (সকল প্রশংসা জগতসমুহের প্রতিপালক আল্লাহ তা'আলারই) বলছেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮৭৯), মুসলিম।

【28】

(শয়ন করার দু'আ)

হুযাইফা্হ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিদ্রা যাওয়ার ইচ্ছা করতেন তখন বলতেন : "হে আল্লাহ! আমি তোমার নামেই মৃত্যুবরণ করি ও জীবন লাভ করি"। তিনি ঘুম হতে উঠে বলতেন : "সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার, যিনি মৃত্যুদানের পর আমার এ দেহকে পুনরায় জীবিত করেছেন এবং তাঁর নিকটই ফিরে যেতে হবে"। সহীহ : ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮৮০), বুখারী।

【29】

রাতে (তাহাজ্জুদের) নামায আদায় করতে উঠে যে দু'আ পাঠ করবে

আবদুল্লাহ ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মাঝরাতে বা গভীর রাতে (তাহাজ্জুদের) নামাযে দাঁড়াতেন সে সময় বলতেনঃ " হে প্রভু ! সকল প্রশংসা তোমার জন্য, তুমি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর আলো এবং সকল প্রশংসার অধিকারী তুমিই। তুমিই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছ। সকল প্রশংসা তোমার। তুমি আকাশমণ্ডলী, দুনিয়া এবং উভয়ের মাঝখানের সমস্ত কিছুর প্রতিপালক, তুমি সত্য, তোমার প্রতিশ্রুতি সত্য, (আখিরাতে) তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য এবং ক্বিয়ামাত (সংঘটিত হওয়ার প্রসঙ্গটি) সত্য। হে আল্লাহ! তোমার নিকট আমি আত্মসমর্পণ করেছি, তোমার উপর ঈমান এনেছি, তোমার উপর তাওয়াককুল (নির্ভর) করেছি, তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি, তোমার জন্যই যুদ্ধ করি এবং তোমাকে বিচারক মানি। সুতরাং আমার পূর্বের-পরের এবং লুকায়িত ও প্রকাশ্য সকল গুনাহ তুমি ক্ষমা করে দাও। তুমিই আমাদের মা'বূদ, তুমি ছাড়া আর কোন মা'বূদ নেই"। সহীহ : ইবনু মাজাহ (হাঃ ১৩৫৫), বুখারী ও মুসলিম।

【30】

রাতে নামায শেষে পাঠ করার দু'আ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে রাতে (তাহাজ্জুদের) নামায শেষে বলতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট হতে রাহমাত ও দয়া আশা করি, এর দ্বারা তুমি আমার মনকে হিদায়াত দান কর, আমার সকল কাজ গুছিয়ে দাও, আমার অগোছাল অবস্থাকে সুশৃঙ্খল করে দাও, আমার অজানা কাজকে সংশোধন করে দাও, আমার উপস্থিতিকে উন্নত কর, আমার কাজকর্ম পরিচ্ছন্ন করে দাও, সরল-সঠিক পথ আমাকে শিখিয়ে দাও, তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাকে বাড়িয়ে দাও এবং প্রত্যেক প্রকারের খারাপ হতে আমাকে নির্বিঘ্ন রাখ। হে আল্লাহ! আমাকে ঈমান ও দৃঢ় প্রত্যয় দান কর, যার পরে আর যেন কুফরী অবশিষ্ট না থাকে। আর তুমি আমাকে রাহমাত দান কর যার দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতে আমি তোমার মহান করুণার অধিকারী হতে পারি। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দানের ব্যাপারে সাফল্য চাই, আরো আশা করি শহীদদের মত আতিথেয়তা, সৌভাগ্যবানদের জীবন এবং শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য। হে আল্লাহ! আমি আমার প্রয়োজন তোমার নিকটেই পেশ করলাম। আমার বুদ্ধিমত্তা অক্ষম ও ত্রুটিপূর্ণ এবং আমার কর্মতৎপরতা দুর্বল হওয়ায় আমি তোমার অনুগ্রহের মুখাপেক্ষী। অতএব আমি তোমার নিকটে আশা করি, হে সকল কাজকর্ম ফায়সালাকারী, বক্ষসমূহের আরোগ্যকারী! আমাকে জাহান্নামের শাস্তি হতে এমনভাবে দূরে সরিয়ে রাখ যেমন তুমি দুই সমুদ্রের মিলনকে প্রতিরোধ করে রাখ। তুমি আমাকে ধ্বংসকারী আহ্বান হতে ও কবরের সংকট হতে বিপদমুক্ত রাখ। হে আল্লাহ! আমার ধারণায় যে কল্যাণের কথা আসেনি, আমার ইচ্ছায় ও প্রার্থনা যে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি, যে কল্যাণ তুমি তোমার কোন সৃষ্টিকে দান করার শপথ করেছ অথবা তোমার কোন বান্দাকে যে কল্যাণ তুমি দান করবে, হে বিশ্বের রক্ষণাবেক্ষণকারী! তোমার দয়ার উসীলায় আমি সেই কল্যাণ আশা করি। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট মহাভীতির (কিয়ামতের) দিন নিরাপত্তা আশা করি এবং রুকূ-সিজদাকারী, তোমার নৈকট্য লাভকারী ও তোমার সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণকারী বান্দাদের সাথে চিরস্থায়ী জান্নাতে যাওয়ার ইচ্ছা করি। নিশ্চয় তুমি অধিক দয়ালু ও অনুগ্রহপরায়ণ বন্ধু। তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পার। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে হিদায়াতকারীদের ও হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত কর, যারা বিপথগামীও নয় এবং বিপথগামীকারীও নয়, যারা তোমার প্রিয় বান্দাদের সাথে শান্তি স্থাপনকারী এবং তোমার শত্রুদের সাথে শত্রুতা পোষণকারী। যে তোমায় ভালোবাসে আমরা তোমার মুহাব্বাতে তাকে ভালোবাসি এবং শত্রুতা বশতঃ যে তোমার বিরোধিতা করে, আমরা তার সাথে শত্রুতা রাখি। হে আল্লাহ! এই আমার আরযি এবং এটা ক্ববূল করা তোমার ইচ্ছাধীন। এই আমার প্রচেষ্টা এবং তোমার উপরই আমার আস্থা। হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তরে একটি নূর ঢেলে দাও। আমার কবরে নূর দাও, আমার সম্মুখে নূর, আমার পেছনে নূর, আমার ডানে নূর, আমার বামে নূর, আমার উপরে নূর, আমার নীচে নূর, আমার কানে নূর, আমার চোখে (দৃষ্টিশক্তিতে) নূর, আমার পশমে নূর, আমার চামড়ায় নূর, আমার গোশতে নূর, আমার রক্তে নূর এবং আমার হাড়ে নূর দান কর। হে আল্লাহ! আমার নূরকে বৃদ্ধি কর, আমাকে নূর দান কর এবং আমার জন্য স্থায়ী নূরের ব্যবস্থা কর। তিনিই (আল্লাহ) পবিত্র যিনি সম্মান ও মহত্বের চাদরে আবৃত এবং নিজের জন্য তাকে বিশিষ্ট করে নিয়েছেন। তিনি পবিত্র, যিনি সম্মানের পোশাক পরিহিত এবং মর্যাদার দ্বারা সম্মানিত হয়েছেন। তিনিই পবিত্র, যিনি সমস্ত দানের ও নিয়ামাতের অধিকারী, যিনি সুমহান ও মর্যাদাবান। পবিত্র তিনি যিনি মহিমাময় ও মহাবুভব”। সনদ দুর্বল, আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। ইবনু আবূ লাইলার রিওয়ায়াত হিসেবে আমরা শুধু উপরোক্ত সূত্রে এ হাদীস এরকম জেনেছি। শুবা ও সুফিয়ান সাওরী (রহঃ) সালামা ইবনু কুহাইল হতে, তিনি কুরাইব হতে, তিনি ইবনু আব্বাস হতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে উক্ত হাদীসের অংশবিশেষ বর্ণনা করেছেন এবং এত দীর্ঘাকারে বর্ণনা করেননি।

【31】

রাতের তাহাজ্জুদ নামায আরম্ভ করার দু’আ

আবূ সালামাহ (রহঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ)- কে আমি প্রশ্ন করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে যখন (তাহাজ্জুদ) নামায আদায় করতে দন্ডায়মান হতেন তখন কিসের মাধ্যমে নামায শুরু করতেন (তাকবীরে তাহরীমার পর এবং ফাতিহার আগে কি পাঠ করতেন)? তিনি বলেন, তিনি রাতে (তাহাজ্জুদ) নামায আদায় করতে দাঁড়িয়ে তা আরম্ভ করে বলতেনঃ “হে জিবরীল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের রব, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা , প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য জ্ঞাতা! তোমার বান্দাদের মধ্যে তুমিই মীমাংসাকারী যে ব্যাপারে তারা মতবিরোধ করছে। সত্যের ব্যাপারে যে মতবিরোধ করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে তুমি তোমার আদেশবলে আমাকে সঠিক পথের হিদায়াত দান কর, তুমিই যাকে ইচ্ছা তাকে হিদায়াত দান করে থাক”। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ১৩৫৭), মুসলিম।

【32】

(রাতের নামাযের বিশেষ দু’আ)

আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন নামাযে দাঁড়াতেন, তখন বলতেনঃ “একনিষ্ঠভাবে আমি আমার চেহারা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম যিনি আকাশমন্ডলী ও দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের দলভুক্ত নই”- (সূরা আন’আম ৭৯)। “আমার নামায, আমার ইবাদাত (কুরবানী ও হাজ্জ), আমার প্রান ও আমার মৃত্যু জগতসমূহের পালনকর্তা আল্লাহ তা‘আলার জন্যই। তাঁর কোন শরীক নেই এবং এ (ঘোষণা দেয়ার) জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি। আমি মুসলমানদের দলভুক্ত”-(সূরা আন’আম ১৬২-৬৩)। হে আল্লাহ! তুমি রাজার রাজা, তুমি ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই, তুমিই আমার প্রতিপালক এবং আমি তোমার দাস। আমার নিজের উপর আমি অত্যাচার করেছি, আমার অপরাধ আমি স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমার সকল অপরাধ ক্ষমা করে দাও। কেননা তুমি ছাড়া অপরাধ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই। তুমি আমাকে ভালো চরিত্রের পথনির্দেশ কর। তুমি ব্যতীত অন্য কেউ সবচেয়ে ভাল চরিত্রের দিকে পথনির্দেশ করতে পারেনা। তুমি আমার হতে মন্দ চরিত্র দূর করে দাও। তুমি ছাড়া অন্য কেউ আমার হতে তা দূর করতে পারে না। তোমার উপর আমি ঈমান এনেছি। তুমি কল্যাণময়, সুমহান। তোমার কাছে আমি মাফ চাই এবং তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি”। তারপর যখন রুকূ‘ দিতেন তখন বলতেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার জন্য আমি রুকূ করলাম, তোমার উপর ঈমান আনলাম এবং তোমার খুশির জন্যই আত্মসমর্পণ করলাম। আমার কান, আমার চোখ, আমার মস্তিষ্ক, আমার হাঁড় এবং আমার স্নায়ু তোমার জন্যই ঝুঁকে পড়েছে”। তিনি রুকূ‘ হতে মাথা তুলে বলতেনঃ “হে আল্লাহ, আমার প্রভু! আকাশ্মন্ডলী ও সম্পূর্ণ জগৎসমুহ এবং উভয়ের মাঝে যা কিছু আছে , সমস্ত কিছু পরিপূর্ণ পরিমাণ তোমার প্রশংসা এবং তুমি যা আকাঙ্ক্ষা কর সেটাও পরিপূর্ণ পরিমাণ তোমার প্রশংসা”। তিনি সাজদাহতে বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্যই সাজদাহ করলাম, তোমার উপর ঈমান আনলাম, তোমার জন্যই ইসলাম ক্ববূল করলাম। আমার মুখমন্ডল তাঁর জন্য সাজদাহ্ করল। যিনি আমার চেহারা সৃষ্টি করেছেন, তারপর তাকে সুন্দর মুখমন্ডল দান করেছেন এবং তা ভেদ করে কান ও চোখ ফুটিয়েছেন। সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা কত মহান”। তারপর তাশাহহূদ ও সালামের মাঝখানের সময়ে তিনি বলতেনঃ “হে আল্লাহ ! আমি পূর্বে ও পরে , লুকায়িত ও প্রকাশ্য এবং আমার প্রসঙ্গে তোমার জানা মতে যা কিছু আমি করেছি, তুমি তা ক্ষমা করে দাও। তুমিই শুরু এবং তুমিই শেষ। তুমি ব্যতীত আর কোন মা‘বূদ নেই”। সহীহঃ সিফাতুস সালাত, সহীহ আবূ দাঊদ (হাঃ ৭৩৮), মুসলিম। আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ) যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (রাতে তাহাজ্জুদ) নামাযে দন্ডায়মান হতেন তখন বলতেনঃ “একনিষ্ঠভাবে আমি আমার মুখমন্ডল তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম যিনি আকাশমন্ডলী ও দুনিয়া সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের দলভুক্ত নই”- (সূরা আন’আম ৭৯)। “আমার নামায, আমার ইবাদাত (হাজ্জ ও কুরবানী), আমার প্রান ও আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহ তা‘আলার জন্য।তাঁর কোন অংশীদার নেই এবং আমি এজন্যই আদিষ্ট হয়েছি। আমি একজন মুসলিম”- (সূরা আন‘আম ১৬২-১৬৩)। “হে আল্লাহ ! তুমিই বাদশাহ, তুমি ব্যতীত আর কোন মা ‘বূদ নেই , তুমিই আমার প্রভু, আমি তোমার দাস। আমার আত্মার প্রতি আমি যুলম করেছি এবং আমি আমার কৃত অন্যায় স্বীকার করেছি। সুতরাং আমার সকল অন্যায় তুমি ক্ষমা করে দাও। কেননা তুমি ছাড়া অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। তুমি আমাকে সর্বোত্তম চরিত্রের পথে পরিচালিত কর। কেননা তুমি ব্যতীত অন্য কেউ সর্বোত্তম চরিত্রের রাস্তায় পরিচালিত করতে পারে না। আমাকে অপরাধ হতে তুমি ফিরিয়ে রাখ, কেননা তুমি ছাড়া অন্য কেউ আমাকে খারাপ পথ হতে ফিরিয়ে রাখতে পারে না। তোমার সমীপে আমি উপস্থিত, সকল সৌভাগ্য ও মঙ্গল তোমার আয়ত্তাধীন।আর খারাপের কিছুই তোমার দিকে সম্পর্কিত করা যায় না। আমি তোমার জন্যই এবং তোমার নিকটেই আমার ফিরে আসা।তুমি মঙ্গলময় ও সুমহান। তোমার কাছে আমি মাফ চাই এবং তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি”। তিনি রুকূ‘তে গিয়ে বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্য রুকূ‘ করলাম, তোমার উপর ঈমান আনলাম এবং তোমার নিকট আত্মসমর্পণ করলাম সুতরাং আমার কান , আমার চোখ , আমার সকল হাঁড় ও স্নায়ুগুলো তোমার জন্যই অবনমিত”। তিনি ((রুকূ‘ হতে) মাথা তুলে বলতেনঃ “হে আল্লাহ, আমাদের প্রভু! তোমার জন্য সকল প্রশংসা-আকাশ-যমীন ও আ দু’য়ের মাঝে যা কিছু আছে এবং তুমি যা চাও এ সকল পূর্ণ পরিমাণ”।তিনি সাজদাহতে গিয়ে বলতেনঃ “হে আল্লাহ আমি সাজদাহ করলাম, তোমার উপর ঈমান আনলাম, আমি তোমার নিকট আত্মসমর্পণ করলাম। আমার চেহারা তাঁর উদ্দেশে সাজদাহ করল, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, তাকে সুন্দর আকৃতি দান করেছেন এবং (তা ভেদ করে) তার কান ও চোখ ফুটিয়েছেন। সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা বারাকাতময়”। তারপর তাশাহহুদ ও সালামের মাঝে সবশেষে তিনি বলতেনঃ “হে আল্লাহ ! আমি পূর্বে ও পরে, লুকায়িত ও প্রকাশ্য যে গুনাহ করেছি, যে উচ্ছৃংখলতা করেছি এবং আমার প্রসঙ্গে তোমার জানা মতে, যা কিছু আমি (অন্যায়-অপরাধ) করেছি সে সব তুমি ক্ষমা করে দাও। তুমিই শুরু এবং তুমিই শেষ। তুমি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। সহীহঃ প্রাগুক্ত। ‘আলী ইবনু আবী তালিব (রাঃ) যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরয নামাযে দাঁড়াতেন তখন তাঁর হাত দুইখানি তাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন। যখন তিনি কিরাআত সমাপ্ত করতেন (রূকুতে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন), তখনও পুনরায় একই রকম করতেন (দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন), আবার যখন রুকূ‘ হতে মাথা উঠাতেন তখনও একই রকম করতেন। কিন্তু বসা অবস্থায় তাঁর নামাযে কোথাও তিনি তাঁর দু’হাত উঠাতেন না। তারপর তিনি দুই সাজদাহ সেরে (দুই রাক‘আত শেষে) যখন উঠে দাঁড়াতেন তখনও তাকবীর পাঠ করে তাঁর দুই হাত তুলতেন। তিনি তাকবীরে তাহরীমার পর নামায আরম্ভ হতেই বলতেনঃ “একনিষ্ঠভাবে আমি তাঁর দিকে আমার চেহারা প্রত্যাবর্তন করলাম যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরিকদের দলভুক্ত নই” –(সূরা আন‘আম ৭৯)। ‘আমার নামায, আমার ‘ইবাদাত , আমার প্রান ও আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশে।তাঁর কোন শারীক নেই এবং আমি এজন্যই আদিষ্ট হয়েছি। আমি একজন মুসলিম”- (সূরা আন‘আম ১৬২-১৬৩)।“হে আল্লাহ ! তুমিই রাজার রাজা, তুমি ব্যতীত কোন মা‘বুদ নেই। তুমি পবিত্র, তুমি আমার মনিব এবং আমি তোমার দাস। আমার সত্তার উপর আমি যুলম করেছি এবং আমার কৃত অন্যায় আমি স্বীকার করেছি। সুতরাং তুমি আমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দাও। তুমি ছাড়া পাপ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই। তুমি আমাকে উত্তম চরিত্রের পথে পরিচালিত কর। তুমি ব্যতীত আর কেউ সেই উত্তম পথে পরিচালিত করতে পারে না। তুমি আমার হতে খারাপকে দূরে সরিয়ে দাও। তুমি ছাড়া অন্য কেউ আমার হতে খারাপকে দূরীভূত করতে পারে না। আমি তোমার সামনে উপস্থিত আছি। সৌভাগ্য তোমার অধিকারে, তোমার জন্যই আমি এবং তোমার দিকেই আমি ফিরে আসি। তোমার শাস্তি হতে মুক্তি লাভের সাধ্য কারোর নেই এবং তোমার হতে পালিয়ে থাকার আশ্রয়ও নেই। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই এবং তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি”। তারপর তিনি ক্বিরাআত পাঠ করতেন। তিনি যখন রুকূ‘তে যেতেন তখন রুকূতে এই কথা বলতেনঃ হে আল্লাহ ! তোমার উদ্দেশে আমি রুকূ করলাম, তোমার উপর ঈমান আনলাম, তোমার নিকট আত্মসমর্পণ করলাম এবং তুমিই আমার প্রভু। আমার কান, আমার চোখ, আমার মস্তিস্ক ও আমার হাঁড় বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহ তা‘আলার ভয়ে ভীত”। তিনি রুকূ হতে মাথা তুলে বলতেনঃ “কেউ আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করলে তিনি তা শুনেন”। এর সঙ্গে তিনি আরো বলতেনঃ “হে আল্লাহ, আমাদের প্রভু ! সকল আকাশ ও যামীন পরিপূর্ণ এবং এরপরও তোমার ইচ্ছানুসারে পরিপূর্ণ প্রশংসা তোমার জন্য”। তিনি সাজদাহতে গিয়ে বলতেনঃ “হে আল্লাহ ! তোমার উদ্দেশে আমি সাজদাহ করলাম, তোমার উপর ঈমান আনলাম, তোমার নিকট আত্মসমর্পণ করলাম এবং তুমিই আমার প্রভু। সেই মহান সত্তার জন্য আমার চেহারা সাজদাহ করেছে যিনি তা তৈরী করেছেন এবং তা ভেদ করে তাতে কান ও চোখ ফুটিয়েছেন। সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ তা‘আলা কত বারাকাতময়” তিনি নামায শেষ করে বলতেনঃ “হে আল্লাহ ! আমাকে ক্ষমা করে দাও আমার পূর্বের ও পরের গুনাহসমূহ এবং আমি যা কিছু লুকায়িত ও প্রকাশ্যে করেছি তাও। তুমিই আমার মা‘বূদ, তুমি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই”। হাসান সহীহঃ সহীহ আবূ দাঊদ (হাঃ ৭২৯)।

【33】

কুরআনের সাজদাহর আয়াত তিলাওয়াতের পর সাজদাহতে যা বলতে হবে

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এক লোক এসে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আজ রাতে আমি ঘুমন্ত অবস্থায় (স্বপ্নে) দেখি যে, আমি যেন একটি গাছের পেছনে নামায আদায় করছি। আমি সাজদাহ করলে আমার সাজদাহর মত গাছটিও সাজদাহ করে। ঐ গাছটিকে আমি বলতে শুনলাম, “হে আল্লাহ ! এ সাজদাহর বিনিময়ে আমার জন্য তোমার নিকট পুরস্কার লিপিবদ্ধ কর, এর বিনিময়ে আমার একটি গুনাহ অপসারণ কর, আমার জন্য এটাকে পুঁজি হিসেবে জমা রাখ এবং এটাকে আমার পক্ষ হতে গ্রহণ কর, যেমন তুমি তোমার বান্দা দাঊদ (‘আঃ) হতে গ্রহন করেছিলে”। ইবনু জুরাইজ (রহঃ) ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু আবূ ইয়াযীদকে বলেন, আমাকে তোমার দাদা বলেছেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার সাজদাহর আয়াত পাঠ করলেন এবং সাজদাহ করলেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, তাঁকে সেই গাছের একই রকম দু‘আ আমি তিলাওয়াত করতে শুনলাম, যে প্রসঙ্গে আগে লোকটি তাঁকে জানিয়েছিল। হাসানঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ১০৫৩)। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাজদাহর আয়াত পাঠ করার পর সাজদাহতে বলতেনঃ “সেই মহান সত্তার উদ্দেশে আমার মুখমন্ডল সাজদাহ করল যিনি তাকে তৈরী করেছেন এবং নিজের প্রবল ক্ষমতায় তার মাঝে শোনার শক্তি ও দেখার শক্তি দান করেছেন”। সহীহঃ মিশকাত (হাঃ ১০৩৫), সহীহ আবূ দাঊদ (হাঃ ১২৭৪)।

【34】

ঘর হতে বের হওয়ার সময় পাঠ করার দু ‘আ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘর হতে কেউ বাইরে রাওয়ানা হওয়াকালে যদি বলে, “আল্লাহ তা‘আলার নামে, আল্লাহ তা‘আলার উপরই আমি নির্ভর করলাম, আল্লাহ‘তা আলার সাহায্য ব্যতীত বিরত থাকা ও মঙ্গল লাভ করার শক্তি কারো নেই”, তবে তাকে বলা হয় (আল্লাহ তা‘আলাই) তোমার জন্য যথেষ্ট, (অনিষ্ট হতে) তুমি হিফাযাত অবলম্বন করেছ। আর তার হতে শাইতান দূরে সরে যায়। সহীহঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (হাঃ ২৪৪৩), তা’লীকুর রাগীব (হাঃ ২/২৬৪), আল-কালিমুত তাইয়্যিব (হাঃ ৫৮/৪৯)।

【35】

(ঘর হতে বের হওয়ার সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পঠিত দু ‘আ)

উম্মু সালামাহ (রাঃ) যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘর হতে বাইরে রাওয়ানা হতেন তখন বলতেনঃ “আল্লাহ তা‘আলার নামে, আল্লাহ তা’আলার উপর আমি নির্ভর করলাম। হে আল্লাহ ! আমরা পদস্থলন হতে কিংবা পথভ্রষ্ঠতা হতে কিংবা যুলম করা হতে কিংবা অত্যাচারিত হওয়া হতে কিংবা অজ্ঞতাবশত কারো প্রতি মন্দ আচরণ হতে বা আমাদের প্রতি কারো অজ্ঞতা প্রসূত আচরণ হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাই”। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮৮৪)।

【36】

বাজারে প্রবেশের দু’আ

মুহাম্মাদ ইবনু ওয়াসি‘ (রহঃ) আমি মক্কায় পৌঁছালে আমার ভাই সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) আমার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি তার বাবা হতে, তার দাদার সনদে আমার কাছে হাদীস রিওয়ায়াত করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক বাজারে প্রবেশ করে বলে, “আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোন মাবূদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই, সকল ক্ষমতা তাঁরই, সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য, তিনিই প্রাণ দান করেন ও মৃত্যু দেন, তিনি চিরজীবি, তিনি কক্ষনো মৃত্যুবরণ করবেন না, তাঁর হাতেই মঙ্গল এবং তিনিই সবসময় প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতার অধিকারী”, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা দশ লক্ষ নেকী বরাদ্দ করেন, তার দশ লক্ষ গুনাহ মাফ করেন এবং তার দশ লক্ষ গুণ সম্মান বৃদ্ধি করেন। হাসানঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ২২৩৫)। সালিম ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও তার দাদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বাজারে গিয়ে বলে, “আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই, তিনিই সমস্ত কিছুর ক্ষমতার অধিকারী, সকল প্রশংসা তাঁর তিনিই প্রাণ দান করেন এবং মৃত্যু দেন, তিনি চিরজীবি, তিনি কক্ষনো মৃত্যুবরণ করবেন না, তাঁর হাতেই কল্যাণ, সমস্ত কিছুর উপর তিনি সর্বশক্তিমান”, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য দশ লক্ষ নেকী বরাদ্দ করেন, তার দশ লক্ষ গুনাহ মাফ করেন এবং তার জন্য জান্নাতে একখানা ঘর তৈরি করেন। হাসানঃ দেখুন পূর্বের হাদীস।

【37】

পীড়িত ব্যক্তি যে দু আ পাঠ করবে

আবূ সা‘ঈদ ও আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার” বললে সে সময় তার প্রভু তার কথাটি সত্য বলে অনুমোদন দেন এবং বলেনঃ আমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আমিই মহান। আর যখন বান্দা বলে, “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু” (আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, তিনি এক), তখন বলেনঃ আমি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আমি এক। যখন বান্দা বলে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু” (আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই), তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, আমি এক, আমার কোন অংশীদার নেই। যখন বান্দা বলে, “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু” (আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই, তাঁরই রাজত্ব, সমস্ত প্রশংসাও তাঁর), তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, রাজত্ব আমারই এবং সকল প্রশংসা আমার জন্যই। যখন বান্দা বলে, “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” (আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোন অনিষ্ট বা উপকার করার ক্ষমতা কারো নেই), তক্ষনি আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ আমি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, আমি ছাড়া (আমার সহযোগিতা ব্যতীত) অকল্যাণ দূর করা ও মঙ্গল লাভ করার সামর্থ্য কারো নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলতেনঃ যে লোক রোগাক্রান্ত অবস্থায় এই বাক্যগুলো পাঠ করল, তারপর মৃত্যুবরণ করল, জাহান্নামের আগুন তাকে ভক্ষণ করবে না। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৭৯৪)।

【38】

বিপদ্গ্রস্থ লোককে প্রত্যক্ষ করে যে দু‘আ পাঠ করবে

উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক কোন বিপদগ্রস্থ লোককে প্রত্যক্ষ করে বলে, “সকল প্রশংসা আল্লাহ তা আলার জন্য, তিনি যে বিপদে তোমাকে জড়িত করেছেন তা হতে আমাকে হিফাযাতে রেখেছেন এবং তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির উপর আমাকে সম্মান দান করেছেন”, সে তার মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত উক্ত অনিষ্ট হতে হিফাযাতে থাকবে । তা যে কোন বিপদেই হোক না কেন । হাসানঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮৯২)। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে লোক কোন রোগাক্রান্ত বা বিপদগ্রস্ত লোককে প্রত্যক্ষ করে বলে, "সকল প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার, যিনি তোমাকে যে ব্যাধিতে আক্রান্ত করেছেন, তা হতে আমাকে নিরাপদ রেখেছেন এবং তার অসংখ্য সৃষ্টির উপর আমাকে সম্মান দান করেছেন", সে উক্ত ব্যাধিতে কক্ষনো আক্রান্ত হবে না। সহীহ: সহীহ হাদীস সিরিজ (হা: ২৭৩৭)।

【39】

মজলিস হতে উঠে যাওয়ার দু'আ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) , তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে লোক মজলিসে বসে প্রয়োজন ছাড়া অনেক কথা-বার্তা বলেছে, সে উক্ত মাজলিস হতে উঠে যাওয়ার আগে যদি বলে: "হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র এবং সমস্ত প্রশংসা তোমার জন্য। আমি সাক্ষ্য দেই যে, তুমি ব্যতীত আর কোন মা'বূদ নেই, তোমার কাছে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি’ , তাহলে উক্ত মজলিসে তার যে অপরাধ হয়েছিলো তা ক্ষমা করে দেয়া হবে। সহীহ: মিশকাত (হা: ২৪৩৩)। ইবনু 'উমার (রাঃ) তিনি বলেন, প্রতিটি মাজলিসে হিসাব করে দেখা গেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত মাজলিস হতে উঠে যাওয়ার আগে এক শতবার বলতেন: "হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার তাওবা গ্রহণ কর। কারন তুমিই তাওবাহ কবুলকারী, ক্ষমাকারী"। সহীহ: ইবনু মাজাহ (হা: ৩৮১৪)।

【40】

বিপদকালে 'আমাল করার দু'আ

ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিপদ কালে এই দু'আ পাঠ করতেন: " আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত কোন মা'বূদ নেই, তিনি পরম সহিষ্ণু (মহান) ও মহাজ্ঞানী। আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি মহান আরশের প্রভু। আল্লাহ তা'আলা ছাড়া কোন মা'বূদ নেই, তিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবীর প্রভু এবং মহা মর্যাদাবান আরশের প্রভু"। সহীহ: ইবনু মাজাহ (হা:৩৮৮৩), বুখারী ও মুসলিম । আবূ হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন ভয়াবহ বিপদে পড়লে আকাশে দিকে নিজ মাথা তুলতেনঃ “মহান আল্লাহ খুবই পবিত্র”। আর যখন তিনি আকুতি সহকারে দু'আ করতেন তখন বলতেনঃ “হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী”। অত্যন্ত দুর্বল, আলকালিমুত তায়্যিব (১১৯/৭৭), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব।

【41】

কোন জায়গায় যাত্রাবিরতি করলে যে দু’আ পাঠ করবে

খাওলা বিনতুল হাকীম আস-সুলামিয়াহ (রাঃ) রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ কোন লোক যদি কোন জায়গায় অবতরন করে বলে, “ আমি আল্লাহ তা’আলার সম্পূর্ণ বাক্যর দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করি তাঁর সকল সৃষ্টির ক্ষতি হতে” , সে উক্ত জায়গা ত্যাগ করা পর্যন্ত কোন কিছুই তার অনিষ্ট করতে পারবে না। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৫৪৭), মুসলিম।

【42】

সফরে যাওয়ার সময় যে দু’আ পাঠ করতে হয়

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সফরে বের হতেন, সে সময় প্রথমে সওয়ারীতে আরোহণ করতেন, তারপর নিজের আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করতেন। অধঃস্তন বর্ণনাকারী শু’বাহ আঙ্গুল উঁচু করে ইশারা করে দেখিয়েছেন। তারপর রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেনঃ ” হে প্রভু! সফরে তুমি আমার সঙ্গী এবং আমার (অনুপস্হিতিতে) আমার পরিবার –পরিজনের (আমার) প্রতিনিধি। হে আল্লাহ ! মঙ্গল সহকারে তুমি আমাদের সঙ্গী হও এবং তোমার জামানতে আমাদেরকে ফিরাও। হে আল্লাহ! মাটিকে (সফরের দীর্ঘ পথ) আমাদের জন্য সংকুচিত করে দাও এবং সফর আমাদের জন্য সহজ কর। হে আল্লাহ ! তোমার নিকট আমি সফরের ক্লান্তি হতে এবং ফিরে আসার দুশ্চিন্তা ও ব্যর্থতা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করি “। সহীহঃ সহীহ আবু দাউদ (হাঃ ২৩৩৯) ‘আবদুল্লাহ ইবনুস সারজিস (রাঃ) । তিনি বলেন, যখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সফরে রাওয়ানা হতেন , সে সময় বলতেনঃ “ হে আল্লাহ ! তুমি সফরে আমার সঙ্গী এবং আমার (অনুপস্হিতিতে) আমার পরিবার-পরিজনের তুমিই (আমার) স্হলাভিষিক্ত। হে আল্লাহ ! আমাদের সফরে তুমি আমাদের সাথী হও এবং আমাদের পরিবার –পরিজনের জন্য আমাদের প্রতিনিধি হও। হে আল্লাহ ! তোমার কাছে আমরা সফরের ক্লান্তি , ফিরে আসার ব্যর্থতা , প্রাচুর্যের পরে রিক্ততা , নির্যাতিতের অভিশাপ এবং পরিবার –পরিজন ও মাল-সম্পত্তির প্রতি কু- দৃষ্টি হতে তোমার নিকট আশ্রয় কামনা করি “। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮৮৮) ,মুসলিম।

【43】

সফর হতে ফিরে এসে যে দু’আ পাঠ করবে

আল-বারাআ ইবনু ‘আযিয (রাঃ) সফর হতে প্রত্যাবর্তন করে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেনঃ “ আমরা (সফর হতে হিফাযাতে) ফিরে আসা ব্যক্তি , তাওবাহকারী ,’ ইবাদাতকারী , আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী।“ সহীহঃ সহীহ আবু দাউদ (হাঃ ২৩৩৯)। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সফর হতে ফিরে এসে মাদীনার প্রাচীরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন এবং মাদীনার প্রতি মুহাব্বতের কারনে তাঁর উস্ট্রী দ্রুত হাঁকাতেন , আর অপর কোন পশু হলে তাও তাড়াতাড়ি চালাতেন। সহীহঃ বুখারী ৮৭৪ নং হাদীসের সংক্ষেপিত।

【44】

কোন লোককে বিদায় দেয়ার সময় যে দু’আ পাঠ করতে হয়

ইবনু ‘উমর (রাঃ) তিনি বলেন কোন লোককে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিদায় দেয়ার সময় তাকে নিজের হাতে ধরতেন এবং যতক্ষন পর্যন্ত সে নিজের হাত নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে না ছাড়াতেন সে পর্যন্ত তিনিও তার হাত ছাড়তেন না। তিনি বলতেনঃ ‘তোমার দ্বীন , ঈমান ও সর্বশেষ ‘আমলের ব্যাপারে আমি আল্লাহ তা’আলাকে আমানতদার নিযুক্ত করলাম “। সহীহঃ সহীহাহ ,(হাঃ ১৬,২৪৮৫) , আল-কালিমুত , তাইয়্যিব তাহক্বিক্ব সানী (হাঃ ১৬৯/১২২) সালিম (রহঃ) কোন লোক সফরের উদ্দেশে রাওয়ানা হলে ইবনু ‘উমর (রাঃ) তাকে বলতেন , আমার কাছে আস। আমি তোমাকে বিদায় সম্ভাষণ জানাব। যেভাবে রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে বিদায় সম্ভাষণ জানাতেন। তিনি বলতেনঃ ‘তোমার দ্বীন , ঈমান ও সর্বশেষ ‘আমলের জন্য আমি আল্লাহ তা’আলাকে যিম্মাদার করলাম “। সহীহঃ প্রাগুক্ত।

【45】

অনুরুপ প্রসঙ্গ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন , নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে এক লোক এসে বলল , হে আলাহর রাসুল ! আমি সফরে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি। সুতরাং আপনি আমাকে পাথেয় দিন। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা তোমাকে তাক্বওয়ার পাথেয় দান করুন। সে বলল, আরো বেশি দিন। তিনি বললেনঃ তোমার গুনাহ আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করুন। সে বলল , আমার মাতা পিতা আপনার প্রতি উৎসর্গ হোক ! আমাকে আরো বেশি দান করুন। তিনি বললেনঃ তিনি (আল্লাহ তা’আলা) তোমার জন্য মঙ্গলকে সহজতর করুন , তুমি যেখানেই থাক। হাসান সহীহঃ আল-কালিমুত , তাইয়্যিব তাহক্বিক্ব সানী (হাঃ ১৭০)।

【46】

(সফরকালে দু’আ চাওয়া)

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) এক ব্যক্তি বলল, হে আলাহর রাসুল ! আমি সফরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছি, অতএব উপদেশ দিন। তিনি বললেনঃ অবশ্যই তুমি আল্লাহ তা’আলার ভয় (তাক্বওয়া) অবলম্বন করবে এবং প্রতিতি উচ্চ জায়গায় যাওয়ার সময় তাকবীর ধ্বনি দিবে। যখন লোকটি চলে যাচ্ছিল সে সময় রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে আল্লাহ ! তার পথের ব্যবধান কমিয়ে দাও এবং তার জন্য সফর সহজতর করে দাও “। হাসানঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ২৭৭১)।

【47】

যানবাহনে আরোহণের সময় দু’আ পাঠ করা

আলী ইবনু রাবীআহ (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ) এর কাছে আমি উপস্থিত থাকা অবস্থায় তার নিকট আরোহণের জন্য একটি জন্তু আনা হল। তিনি পা দানীতে তার পা রেখে বললেন, “ বিসমিল্লাহ্‌ “। তারপর তিনি তার পিঠের উপর ঠিকমত বসার পর বললেন ,” আলহামদু লিল্লাহ্‌ “। তারপর বললেন , “ পবিত্র ও মহান তিনি যিনি একে আমাদের নিয়ন্ত্রনাধীন করেছেন , তা না হলে আমরা একে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না। অবশ্যই আমরা আমাদের পালনকর্তার কাছে ফিরে যাব “ –(সূরা আয-যুখরুখ ১৩—১৪)। এরপর তিনি “ আলহামদু লিল্লাহ “তিনবার ও “ আল্লাহু আকবর “ তিনবার বললেন এবং আরো বললেনঃ তুমি অত্যন্তঃ পবিত্র সত্তা , আমার উপর আমি অত্যাচার করেছি। অতএব তুমি আমাকে মাফ কর , কেননা তুমি ব্যতীত আর কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না।“ তারপর তিনি হাসলেন। আমি প্রশ্ন করলাম , হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি কি কারনে হাসলেন? তিনি বললেন, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমি তা-ই করতে দেখেছি যা আমি করলাম। তারপর তিনি হেসেছিলেন। আমি প্রশ্ন করেছিলাম , হে আল্লাহর রাসুল ! আপনি কি কারনে হাসলেন? তিনি বললেনঃ যখন বান্দা বলে , “হে আল্লাহ ! আমার অপরাধসমুহ ক্ষমা কর। কেননা তুমি ছাড়া অন্য কেউ অপরাধ ক্ষমা করতে পারে না” , সে সময় আল্লাহ তা’আলা তার এ কথায় খুশি হন। সহীহঃ আল-কালিমুত তাইয়্যিব (১৭২/১২৬) , সহীহ আবু দাউদ (হাঃ ২৩৪২)। ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সফরে রাওয়ানা হতেন তখন বাহনে আরোহণ করে তিনবার তাকবীর বলতেন এবং আরো বলতেনঃ “অতি পবিত্র ও মহান তিনি যিনি একে আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন করেছেন, তা না হলে আমরা একে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ছিলাম না। অবশ্যই আমরা আমাদের পালনকর্তার কাছে ফিরে যাব”— (সূরা যুখরুফ ১৩-১৪)। তারপর তিনি বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমার এ সফরে আমি তোমার নিকট পুণ্য ও তাকওয়া এবং তোমার পছন্দনীয় কাজ করার তাওফীক প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ! আমাদের সফরটি আমাদের জন্য সহজসাধ্য করে দাও এবং আমাদের জন্য পথের ব্যবধান সংকুচিত করে দাও। হে আল্লাহ! সফরে তুমিই আমাদের সঙ্গী এবং আমাদের পরিবার-পরিজনের প্রতিনিধি। হে আল্লাহ! আমাদের এ সফরে তুমি আমাদের বন্ধু এবং আমাদের পরিজনের প্রতিনিধি হয়ে যাও।" তিনি সফর হতে পরিজনের কাছে প্রত্যাবর্তন করে বলতেনঃ “ইনশা আল্লাহ আমরা প্রত্যাবর্তনকারী এবং তাওবাহকারী ও আমাদের রবের ইবাদতকারী ও প্রশংসাকারী”। সহীহঃ সহীহ আবু দাউদ (হাঃ ২৩৩৯), মুসলিম।

【48】

মুসাফিরের দু'আ প্রসঙ্গে যা উল্লেখ আছে

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন লোকের দুআ কুবুল করা হয়। নির্যাতিতের দুআ, মুসাফিরের দুআ এবং সন্তানদের উপর পিতার অভিশাপ। হাসানঃ সহীহাহ (হাঃ ৫৯৮, ১৭৯৭)।

【49】

প্রচণ্ড বেগে বায়ু প্রবাহের কালে যে দু'আ পাঠ করবে

আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রবল বেগে বায়ু প্রবাহিত হতে দেখলে বলতেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার নিকট আমি এ বাতাসের মঙ্গল, এর মাঝে নিহিত মঙ্গল এবং যে মঙ্গলসহ এটা পাঠানো হয়েছে তা প্রার্থনা করি। আর এর ক্ষতিকর দিক, এর মাঝে নিহিত ক্ষতি এবং যে ক্ষতিসহ এটা পাঠানো হয়েছে তা হতে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি”। সহীহঃ সহীহ হাদীস সিরিজ (হাঃ ২৭৫৭), বুখারী ও মুসলিম।

【50】

বজ্রধ্বনি শুনে যে দু'আ পাঠ করতে হবে

আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বজ্রধ্বনি ও মেঘের গর্জন শুনলে বলতেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার গযব দিয়ে আমাদেরকে মেরে ফেলো না, তোমার শাস্তি দিয়ে আমাদেরকে নিশ্চিহ্ন করো না, বরং তার আগেই আমাদেরকে মাফ করে দাও”। যঈফ, যঈফা (১০৪২), আল কালিমুত তায়্যিব (১৫৮/১১১), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু উপরোক্ত সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি।

【51】

নতুন চাঁদ দেখে যে দু'আ পড়তে হয়

ত্বালহা ইবনু ‘উবাইদুল্লাহ (রাঃ) নতুন চাঁদ দেখার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমাদের জন্য চাঁদটিকে বারাকাতময় (নিরাপদ), ঈমান, নিরাপত্তা ও শান্তির বাহন করে উদিত করো। হে নতুন চাঁদ আল্লাহ তা'আলা আমারও প্রভু, তোমারও প্রভু। সহীহঃ সহীহাহ (হাঃ ১৮১৬), আল-কালিমুত তাইয়্যিব (১৬১/১১৪)

【52】

রাগের আবির্ভাব হলে যে দু'আ পাঠ করবে

মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে দুই লোক পরস্পরকে গালি গালাজ করে। এমনকি তাদের একজনের মুখমণ্ডলের রাগের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠে। সে সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ নিশ্চয় আমি এমন একটি বাক্য জানি, এ ব্যক্তিটি যদি তা উচ্চারণ করত তবে অবশ্যই তার ক্রোধ চলে যেত। তা হলঃ “আমি বিতাড়িত শাইতান হতে আল্লাহ তা'আলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।“ সহীহঃ রাওযুন নাযীর (হাঃ ৬৩৫), বুখারী (হাঃ ৬১১৫), মুসলিম (হাঃ ৮/৩০-৩১), সুলাইমান ইবনু সুরাদ হতে।

【53】

মন্দ স্বপ্ন দেখলে যে দু’আ পাঠ করবে

আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তিনি বলতে শুনেছেনঃ তোমাদের কেউ তার পছন্দনীয় স্বপ্ন দেখে থাকলে তা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে। অতএব সে যেন এজন্য আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা করে এবং যা সে দেখেছে তা অন্যের নিকট প্রকাশ করে। আর সে এর বিপরীত মন্দ স্বপ্ন দেখলে তা শাইতানের পক্ষ হতে। অতএব সে যেন এর অনিষ্ট হতে আল্লাহ তা'আলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং অন্য কারো নিকট তা ব্যক্ত না করে। তাহলে তাতে তার কোন অনিষ্ট হবে না। সহীহঃ তা’লীকুর রাগীব (হাঃ ২/২৬২), সহীহ আল-জামি' (হাঃ ৫৪৯, ৫৫০), বুখারী।

【54】

বাগানে নতুন ফল প্রত্যক্ষ করলে যে দু'আ পাঠ করবে

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, সাহাবাগণ (তাদের বাগানে) সর্বপ্রথম পাকা ফল দেখলে তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে (হাদীয়াহ স্বরূপ) নিয়ে আসত। ফলটি নিজ হাতে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমাদের ফলমূলে আমাদেরকে বারাকাত দাও, আমাদের শহরে আমাদেরকে বারাকাত দাও এবং আমাদের দাড়িপাল্লায় আমাদের বারাকাত দাও। হে আল্লাহ! ইবরাহীম নিশ্চয়ই তোমার বান্দা, তোমার বন্ধু ও তোমার নবী এবং আমিও তোমার বান্দা ও তোমার নাবী। তোমার নিকট তিনি মক্কা ভূমির জন্য দু'আ করেছিলেন। তোমার নিকট আমিও মাদীনার জন্য দু'আ করছি, যেভাবে তিনি মক্কার জন্য তোমার নিকট দু'আ করেছিলেন এবং আরও সম-পর্যায়ের”। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তিনি কোন বালককে উপস্থিত দেখতে পেলে ফলটি তাকে দিয়ে দিতেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৩২৯), মুসলিম।

【55】

খানা খাওয়ার সময় পাঠ করার দু’আ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ও খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সঙ্গে মাইমূনাহ (রাঃ)-এর কাছে গেলাম। আমাদের জন্য তিনি এক পাত্র দুধ নিয়ে এলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তা হতে) পান করলেন। তাঁর ডান পাশে ছিলাম আমি এবং খালিদ ছিলেন তার বাম পাশে। তিনি আমাকে বললেনঃ এখন তোমার পান করার পালা। তবে তুমি চাইলে তোমার উপর খালিদকে অগ্রাধিকার দিতে পার। আমি বললাম, আপনার উচ্ছিষ্টে আমি আমার উপর কোন লোককে অগ্রাধিকার দিব না। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আল্লাহ তা’আলা যাকে আহার করান সে যেন বলে, “হে আল্লাহ! আমাদেরকে এ খাদ্যে বারাকাত দাও এবং আমাদেরকে এর চাইতে উত্তম খাবার আহার করাও।” আর আল্লাহ তা'আলা যাকে দুধ পান করান সে যেন বলে, “হে আল্লাহ! এ দুধে আমাদেরকে বারাকাত দাও এবং এর চাইতেও বেশি আমাদেরকে দান কর।” এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ একই সঙ্গে পান ও আহারের জন্য যথেষ্ট হওয়ার মত দুধের বিকল্প কোন খাবার নেই। হাসানঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৩২২)।

【56】

খাবার শেষে যে দু'আ পাঠ করবে

আবু উমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে হতে (খাবার শেষে) দস্তরখান তুলে নেয়া কালে তিনি বলতেনঃ “সকল প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার জন্য, পবিত্র ও বারাকাতময় বিপুল প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার জন্য। হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা তা কখনো ছাড়তে পারব না এবং তা হতে অমুখাপেক্ষীও হতে পারব না"। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩২৮৪), বুখারী। আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন খেতেন অথবা কিছু পান করতেন, তখন বলতেনঃ “সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌ তা’আলার জন্য, যিনি আমাদেরকে খাবার খাইয়েছেন ও পান করিয়েছেন এবং মুসলমানদের অন্তর্গত করেছেন”। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৩২৮৩)। সাহল ইবনু মু’আয ইবনু আনাস (রাঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক আহার করার পর বলল, “সকল প্রশংসা আল্লাহ তা'আলার জন্য যিনি আমাকে এটা আহার করিয়েছেন এবং এটা আমাকে রিযক দিয়েছেন, আমার তা লাভ করার প্রচেষ্টা বা শক্তি ব্যতীত", তার আগের সকল অপরাধ ক্ষমা করা হয়। হাসানঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩২৮৫)।

【57】

গাঁধার চীৎকার শুনে যে দু'আ পাঠ করবে

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা মোরগের ডাক শুনতে পেলে সে সময় আল্লাহ তা'আলার কাছে তার অনুগ্রহ প্রার্থনা করবে। কেননা সে ফেরেশতাকে প্রত্যক্ষ করেছে। আর যখন তোমরা গাধার চীৎকার শুনবে তখন আল্লাহ তা'আলার নিকট শাইতান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। কেননা সে শাইতানকে দেখেছে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【58】

সুবহানাল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ ও আলহামদু লিল্লাহ পাঠ করার ফাযীলাত

আবদুল্লাহ ইবনু 'আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পৃথিবীর বক্ষে যে লোকই বলে, “আল্লাহু তা'আলা ব্যতীত কোন মা'বূদ নেই, আল্লাহ সুমহান, খারাপকে রোধ করা এবং কল্যাণকে লাভ করার শক্তি আল্লাহ তা'আলা ছাড়া অন্য কারো নেই", তার অপরাধগুলো মাফ করা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির ন্যায় (বেশি) হয়। হাসানঃ তা’লীকুর রাগীব (হাঃ ২/২৪৯)। আবু মূসা আল-আশ'আরী (রাঃ) , তিনি বলেন, এক যুদ্ধে আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে ছিলাম। ফেরার কালে যখন আমরা মাদীনার উঁচু ভূমি পার হচ্ছিলাম সে সময় লোকেরা সজোরে তাকবীর ধ্বনি উচ্চারণ করে। ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমাদের প্রভু বধিরও নন এবং অনুপস্থিতও নন। তিনি তোমাদের মাঝেই আছেন এবং তোমাদের সওয়ারীর সম্মুখেই আছেন। তারপর তিনি বললেনঃ হে আবদুল্লাহ ইবনু কাইস (আবু মূসা)। আমি কি তোমাকে জান্নাতের অন্যতম রত্ন ভাণ্ডার সম্পর্কে জানাব না? তা হল “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ"। সহীহঃ সহীহ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮২৪), বুখারী ও মুসলিম।

【59】

(জান্নাতের গাছের নাম)

ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মি'রাজের রাতে আমি ইবরাহীম (আঃ)-এর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বললেনঃ হে মুহাম্মাদ" আপনার উম্মাতকে আমার সালাম পৌছিয়ে দিন এবং তাদেরকে জানান যে, জান্নাতের যামীন অতীব সুগন্ধি সমৃদ্ধ এবং সেখানকার পানি অত্যন্ত সুস্বাদু। তা একটি সমতল ভূমি এবং তার গাছপালা হল "সুবহানাল্লাহ ওয়ালহামৃদু লিল্লাহ ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার"। হাসানঃ তা’লীকুর রাগীব (হাঃ ২/২৪৫, ২৫৬), আল-কালিমুত তাইয়্যিব (হাঃ ১৫/৬), সহীহাহ (হাঃ ১০৬)। সা'দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সঙ্গে উপস্থিত সাহাবীগণকে বললেনঃ তোমাদের কেউ কি এক হাজার নেকী অর্জন করতে অক্ষম? উপস্থিতদের একজন প্রশ্ন করলেন, আমাদের একজন কিভাবে এক হাজার নেকী অর্জন করবে? তিনি বললেনঃ তোমাদের কেউ একশতবার তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পাঠ করলে তার আমালনামায় এক হাজার নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তার এক হাজার অপরাধ ক্ষমা করা হবে। সহীহঃ মুসলিম (হাঃ ৮/৭১)।

【60】

(সুবহানাল্লাহর ফাযীলাত)

জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক (একবার) বলে “সুবহানাল্লাহিল আযীম ওয়াবিহামদিহী”, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ লাগানো হয়। সহীহঃ রাওযুন নাযীর (হাঃ ২৪৩), সহীহাহ (হাঃ ৬৪)। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক বলে “সুবৃহানাল্লাহিল ‘আযীম ওয়াবিহামদিহী” (আমি মহান আল্লাহ তা'আলার প্রশংসা সহকারে পবিত্রতা ঘোষণা করছি) জান্নাতে তার জন্য একটি খেজুর গাছ লাগানো হয়। সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক একশত বার “সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী” বলে তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়, তা সাগরের ফেনারাশির সমপর্যায় হলেও। সহীহঃ আল-কালিমুত তাইয়্যিব তাহকীক সানী, বুখারী। আবু হুরাইয়া (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এমন দুটি বাক্য আছে যা মুখে উচ্চারন করা অতি সহজ, ওজনে খুবই ভারী এবং করুণাময় আল্লাহ তায়ালার নিকট অতি প্রিয়ঃ “সুবাহানাল্লহি ওয়া বিহামদিহি, সুবাহানাল্লাহিল আযীম (মহা পবিত্র আল্লাহ তাআলা, তিনি মহামহিম, মহা পবিত্র আল্লাহ তাআলা, সকল প্রশংসা তাঁর জন্য)। সহিহঃ বুখারি ও মুসলিম। আবু হুরাইরাহ (রাঃ) রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক প্রত্যহ একশত বার বলেঃ “আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন মা’বুদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, সকল প্রশংসা তাঁর জন্য। তিনিই প্রান দান করেন এবং মৃত্যু দেন। সকল কিছুর উপর তিনি সর্বশক্তিমান”, সে দশটি গোলাম মুক্ত করার সমপরিমান সওয়াব পায়, একশত সাওয়াব তাঁর আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা হয় এবং তার (আমলনামা হতে) একশত গুনাহ মুছে ফেলা হয়। ঐ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে শয়তান হতে রক্ষা করা হয় এবং তার চাইতে উত্তম বস্তু নিয়ে আর কেও আসবে না , তবে যে লোক উক্ত দোয়া তার তুলনায় বেশি সংখ্যায় পাঠ করে তার কথা আলাদা। “প্রান দান করেন এবং মৃত্যু দেন” এই অংশ ব্যতিত হাদীসটি সাহীহঃ আল – কালিমুত তাইয়্যিব তাহকীক সানি পৃষ্ঠা (২৬) বুখারি ও মুসলিম ঐ অতিরিক্ত অংশ ব্যতীত।

【61】

(সুবাহানালাহ ওয়া বিহামদিহি এর ফাযীলাত)

আবু হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক সকালে ও বিকালে একশত বার বলেঃ সুবাহানাল্লহি ওয়া বিহামদিহী”, কিয়ামতের দিন তার চাইলে উত্তম (আমালকারী) আর কেউ হবে না। তবে যে লোক তার ন্যায় কিংবা তার চাইতে অধিক পরিমান তা বলে (সে উত্তম ‘আমালকারী বলে গণ্য হবে)। সহীহঃ তাহ’লীকুর রাগিব (হাঃ ১/২২৬), মুসলিম। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীগণ কে বললেনঃ তোমরা “সুব্‌হানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহী” এক শত বার বল। যে ব্যক্তি তা একবার বলে তার জন্য দশটি সাওয়াব লিখা হয়। যে ব্যক্তি তা দশবার বলে তার এক শত সাওয়াব হয়। আর যে ব্যক্তি তা এক শতবার বলে তার জন্য এক হাজার সাওয়াব লিখা হয় এবং যে ব্যক্তি তা এর চেয়েও বেশি বলে আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে আরও অধিক সাওয়াব দান করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চান তিনি তাকে মাফ করেন। অত্যন্ত দুর্বল, যঈফা (৪০৬৭), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান ও গারীব।

【62】

তাসবীহ, তাহ্‌মীদ, তাহ্‌লীল ও তাকবীর বলার ফাযীলাত

আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও তাঁর দাদা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে এক শতবার এবং সন্ধ্যায় এক শতবার “সুবহানাল্লাহ” বলে সে এক শতবার হাজ্জ আদায়কারীর অনুরুপ। যে ব্যক্তি সকালে এক শতবার এবং সন্ধ্যায় এক শতবার “আলহামদুলিল্লাহ” বলে সে আল্লাহ্‌ তা’আলার পথে (জিহাদে) এক শত ঘোড়া দানকারীর মত অথবা তিনি বলেছেনঃ এক শত জিহাদে অংশ গ্রহণকারীর মত। যে ব্যক্তি সকালে একশত বার এবং সন্ধ্যায় এক শতবার “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে যে ইসমাঈল (আঃ) এর বংশের এক শত দাস আযাদকারীর মত। আর যে ব্যক্তি সকালে এক শতবার এবং সন্ধ্যায় এক শতবার “আল্লাহু আকবার” বলে, সেই দিনের মধ্যে তার চেয়ে আর কেউ অধিক কিছু (আমল) উপস্থাপন করতে পারবে না, তবে যে ব্যক্তি তার অনুরূপ সংখ্যায় পড়েছে অথবা তার চেয়ে অধিক সংখ্যায় পড়েছে সে ছাড়া। মুনকার, যঈফা (১৩১৫), মিশকাত, তাহকীক ছানী (২৩১২), তা’লীকুর রাগীব (১/২২৯), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। যুহ্‌রী (রহঃ) যুহ্‌রী (রহ:) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ রামাযান মাসের এক তাসবীহ অন্য মাসের হাজার তাসবীহ হতেও বেশি ফাযীলাতপূর্ণ। সনদ দুর্বল, বিচ্ছিন্ন।

【63】

যে দু’আ পাঠ করলে চল্লিশ লাখ সাওয়াব হয়

তামীমুদ-দারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি দশবার বলে, “আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ্‌ তা’আলা ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শারীক নেই, তিনি একমাত্র ইলাহ এবং একক সত্তা, তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ, তিনি গ্রহন করেননি কোন বিবি এবং কোন সন্তান, তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই”, আল্লাহ্‌ তা’আলা (তার আমলনামায়) চল্লিশ লক্ষ সাওয়াব লিখে দেন। যঈফ, যঈফা (৩৬১১), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব, এই একটি মাত্র সনদসূত্রেই আমরা এ হাদীস জেনেছি। আল-খালীল ইবনু মুর্‌রা হাদীসবেত্তাদের মতে তেমন মজবুত রাবী নন। মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল (আল-বুখারী) (রহঃ) বলেন তিনি পরিত্যক্ত রাবী। আবূ যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের নামাযের পর তার দুই পা ভাজ করা অবস্থায় (তাশাহুদের অবস্থায়) কোন কথাবার্তা বলার পূর্বে দশবার বলে, “আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শারীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁর জন্য, তিনিই জীবন দান করেন এবং মৃত্যু দান করেন, তিনি সকল কিছুর উপর সর্বশক্তিমান”, তার আমলনামায় দশটি সাওয়াব লেখা হয়, তার দশটি গুনাহ মুছে ফেলা হয় এবং তার সম্মান দশগুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। সে ঐ দিন সব রকমের সংকট হতে নিরাপদ থাকবে এবং শাইতানের ধোঁকা হতে তাকে পাহারা দেয়া হবে এবং ঐ দিন শিরকীয় গুনাহ ছাড়া অন্য কোন প্রকারের গুনাহ তাকে সংকটাপন্ন করতে পারবে না। যঈফ, তা’লীকুর রাগীব (১/১৬৬), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব।

【64】

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত বিভিন্ন দু’আর সমষ্টি

‘আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ্‌ আল-আসলামী (রাঃ) হতে তার বাবা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক লোককে তার দু’আ এভাবে বলতে শুনেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমিই একমাত্র আল্লাহ, তুমি ছাড়া অন্য কোন মা’বূদ নেই, তুমি একক সত্তা, স্বয়ংসম্পূর্ণ, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেয়া হয়নি, তার সমকক্ষ কেউ নেই”। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেনঃ সেই মহান সত্তার ক্বসম যাঁর হাতে আমার জীবন! নিঃসন্দেহে এই লোক আল্লাহ তা’আলার মহান নামের ওয়াসীলায় তার নিকটে প্রার্থনা করেছে, যে নামের ওয়াসীলায় দু’আ করা হলে তিনি ক্ববূল করেন এবং যে নামের ওয়াসীলায় প্রার্থনা করলে তিনি দান করেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮৫৭)।

【65】

(দু’আ করার আগে আল্লাহর তা’আলার প্রশংসা ও রাসূলের প্রতি দরূদ পাঠ করবে)

ফাযালাহ্‌ ইবনু ‘উবাইদ (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাসজিদে) বসা অবস্থায় ছিলেন। সে সময় জনৈক লোক মাসজিদে প্রবেশ করে নামায আদায় করল, তারপর বলল, “হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি দয়া কর”। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে নামাযী! তুমি তো তড়িঘড়ি করলে। যখন তুমি নামায শেষ করে বসবে সে সময় শুরুতে আল্লাহ তা’আলার যথোপযুক্ত প্রশংসা করবে এবং আমার উপর দরূদ ও সালাম প্রেরণ করবে, তারপর আল্লাহ তা’আলার নিকটে দু’আ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর অপর লোক এসে নামায আদায় করে প্রথমে আল্লাহর তা’আলার প্রশংসা করল, তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদ ও সালাম পেশ করল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেন, হে নামাযী! এবার দু’আ কর ক্ববূল করা হবে। সহীহঃ সিফাতুস্‌ সালাত, সহীহ আবূ দাঊদ (হাঃ ১৩৩১)। ফাযালাহ্‌ ইবনু ‘উবাইদ (রাঃ) এক লোককে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নামাযের মাঝে দু’আ করতে শুনলেন, কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর সে দরূদ পড়েনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ ব্যক্তিটি তাড়াহুড়া করেছে। তারপর তিনি তাকে ডাকলেন এবং তাকে বা অপর কাউকে বললেনঃ তোমাদের কেউ নামায আদায় করলে সে যেন আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা ও তাঁর গুণগান করে, তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর দরূদ পাঠ করে, তারপর তার মনের কামনা অনুযায়ী দু’আ করে। সহীহঃ দেখুন পূর্বে বর্ণিত হাদীসটির পূর্বের হাদীস। আসমা বিনতু ইয়াযিদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার মহান নাম (ইসমে আযম) এই দুই আয়াতের মাঝে নিহিত আছে (অনুবাদ) : “আর তোমাদের মা’বূদ একমাত্র আল্লাহ। তিনি ছাড়া অন্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি দয়াময়, অতিদয়ালু”- (সূরা বাক্বারাহ্‌ ১৬৩)। আর সূরা আ-লি ‘ইমরানের প্রারম্ভিক আয়াত (অনুবাদ) “আলিফ-লাম-মীম। তিনিই আল্লাহ, তিনি ছাড়া অন্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী”- (সূরা আ-লি ‘ইমরান ১-২)। হাসানঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮৫৫)।

【66】

(অমনোযোগীর দু’আ কবূল হয় না)

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা ক্ববূল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহ তা’আলার কাছে দু’আ কর। তোমরা জেনে রাখ যে, আল্লাহ তা’আলা নিশ্চয় অমনোযোগী ও অসাড় মনের দু’আ ক্ববূল করেন না। হাসানঃ সহীহ হাদীস সিরিজ (হাঃ ৫৯৬)।

【67】

শারীরিক সুস্থতা কামনা করা

আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “হে আল্লাহ্‌! আমাকে দৈহিক সুস্থতা দান কর, আমার দৃষ্টি শক্তির সুস্থতা দান কর এবং উহাকে আমার উত্তরাধিকার বানিয়ে দাও। আল্লাহ্‌ ভিন্ন কোন ইলাহ্‌ নেই। তিনি অতি সহনশীল ও দয়ালু। মহান আরশের মালিক আল্লাহ্‌ তা’আলা অতি পবিত্র। বিশ্বের রক্ষণাবেক্ষণকারী আল্লাহ্‌ তা’আলার জন্য সকল প্রশংসা”। সনদ দুর্বল, আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। তিনি আরও বলেনঃ আমি মুহাম্মাদ (ইমাম বুখারী)–কে বলতে শুনেছি, হাবীব ইবনু আবূ সাবিত উরওয়া ইবনুয যুবাইর (রহঃ) হতে সরাসরি কিছুই শুনেননি।

【68】

[ফাতিমাহ্‌ (রাঃ)-কে শিখানো দু’আ]

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে ফাতিমাহ্ (রাঃ) একটি খাদিম চাইলেন। তিনি তাকে বললেনঃ তুমি বল, “হে আল্লাহ, সাত আকাশের প্রতিপালক এবং মহান আরশের প্রভূ, আমাদের প্রতিপালক এবং প্রতিটি বস্তুর পালনকর্তা, তাওরাত, ইনজীল ও কুরআন অবতীর্ণকারী এবং শস্যবীজ ও আঁটির অংকুর উদগমনকারী! আমি এমন প্রতিটি জিনিসের অনিষ্ট হতে তোমার নিকটে আশ্রয় চাই যার মস্তকের অগ্রভাগের চুলগুলো তুমি ধরে রেখেছ (অর্থাৎ তোমার নিয়ন্ত্রণাধীন)। তুমিই শুরু, তোমার আগে কিছুই নেই। তুমিই শেষ, তোমার পরেও কিছুই নেই। তুমিই প্রবল ও বিজয়ী, তোমার উপর কিছুই নেই। তুমিই লুকানো, তুমি ছাড়া আর কিছুই নেই। অতএব আমার ঋণ তুমি মিটিয়ে দাও এবং দরিদ্রতা হতে আমাকে স্বাবলম্বী করে দাও”। সহীহঃ মুসলিম (হাঃ ৮/৭৯)।

【69】

(চার বস্তু হতে আশ্রয় প্রার্থনা)

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার কাছে আমি আশ্রয় প্রার্থনা করি এমন মন হতে যা (তোমার ভয়ে) ভীত হয় না, এমন দু’আ হতে যা শুনা হয় না (প্রত্যাখ্যান করা হয়), এমন আত্মা হতে যা পরিতৃপ্ত হয় না এবং এমন জ্ঞান হতে যা কাজে আসে না। তোমার নিকট আমি এ চার জিনিস হতে আশ্রয় চাই”। সহীহঃ তা’লীকুর রাগীব (হাঃ ১/৭৫-৭৬), সহীহ আবূ দাঊদ (হাঃ ১৩৮৪-১৩৮৫)।

【70】

উপকারী দু’টি বাক্য

ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার পিতাকে বললেনঃ হে হুসাইন! তুমি প্রতিদিন কত উপাস্যের পূজা-আর্চনা কর? আমার পিতা বললেন, সাতজন, ছয়জন এ মাটির দুনিয়াতে এবং একজন আকাশে। এবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি এদের মধ্যে কার থেকে আশা ও ভীতি অনুভব কর? তিনি বললেন, যে আকাশে আছে তার হতে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে হুসাইন, আহা! যদি তুমি ইসলাম গ্রহণ করতে তাহলে আমি তোমাকে দু’টি বাক্য শিখিয়ে দিতাম যা তোমার কল্যাণে আসত। রাবী বলেনঃ হুসাইন (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করার পর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে যে দু’টি বাক্য শিখিয়ে দেয়ার ওয়াদা করেছিলেন, এখন তা আমাকে শিখিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি বল, “হে আল্লাহ! আমাকে হিদায়াত নসীব কর এবং আমার নাফসের অনিষ্ট হতে আমাকে বাঁচাও”। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (২৪৭৬), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) হতে এ হাদীস অন্যসূত্রেও বর্ণিত হয়েছে।

【71】

(দুশ্চিন্তা হতে আশ্রয় প্রার্থনা)

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আমি অনেকবার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নিম্নোক্ত বাক্যের মাধ্যমে দু’আ করতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই দুর্ভাবনা ও দুশ্চিন্তা হতে, অক্ষমতা ও অলসতা হতে, কৃপণতা ও ঋণের বোঝা হতে এবং মানুষের প্রাধান্য থেকে”। সহীহঃ গাইয়াতুল মারাম (হাঃ ৩৪৭), সহীহ আবূ দাঊদ (হাঃ ১৩৭৭-১৩৭৮), বুখারী ও মুসলিম। আনাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আ করে বলতেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার কাছে আমি আশ্রয় প্রার্থনা করি অলসতা, বার্ধক্য, কাপুরূষতা, কৃপণতা, মাসীহ্‌ দাজ্জালের পরীক্ষা এবং ক্ববরের শাস্তি হতে”। সহীহঃ সহীহ আবূ দাঊদ (হাঃ ১৩৭৭), বুখারী ও মুসলিম।

【72】

হাতের আঙ্গুলে গুনে গুনে তাসবীহ পাঠ করা

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি তাঁর স্বীয় হস্তে গুণে গুণে তাসবীহ পাঠ করতে দেখেছি। সহীহঃ এটি ৩৪১১ নং হাদীসের পুনরুক্তি। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রোগাক্রান্ত লোকের খোঁজ – খবর নিতে গিয়ে দেখেন যে , সে রোগে জর্জরিত হয়ে একেবারে চড়ুই পাখির বাচ্চার ন্যায় ক্ষীণ হয়ে গেছে। তিনি তাকে বললেনঃ রোগ মুক্তির জন্য তুমি কি আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট দু’আ করনি, তুমি কি তোমার প্রভুর কাছে শান্তি ও সুস্থতা কামনা করনি? সে বলল, আমি বলেছিলাম, “হে আল্লাহ্‌~ আমাকে তুমি আখিরাতে যে শাস্তি দিবে তা এ দুনিয়াতে আগেভাগেই দিয়ে দাও”। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সুবাহানাল্লাহ! তা সহ্য করার মত শক্তি –সামর্থ্য তোমার কোনটাই নাই। তুমি এভাবে কি বলতে পারলে না, “হে আল্লাহ্‌! দুনিয়াতেও আমাদের মঙ্গল দান কর, আখিরাতেও মঙ্গল দান কর এবং জাহান্নামের অগ্নি হতে আমাদের হিফাযাত কর?” সহীহঃ সহীহ আবূ দাউদ (হাঃ ১৩২৯), মুসলিম, বুখারি শুধুমাত্র দু’আর অংশ বর্ণনা করেছেন। হাসান (রহঃ) “রাব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আ-খিরাতি হাসানাহ” এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হাসান (রহঃ) বলেনঃ দুনিয়ার কল্যান হল জ্ঞান ও ইবাদাত, আখিরাতের কল্যাণ হল জান্নাত। হাসান লিগাইরিহীঃ তাফসীর ত্বাবারী (৪/২০৫)।

【73】

(হিদায়াত কামনা করা)

‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস’উদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ দু’আ করতেন, “হে আল্লাহ্‌! তোমার কাছে আমি হিদায়াত, তাকওয়া , চরিত্রের নির্মলতা ও আত্মনির্ভরশীলতা প্রার্থনা করি”। সহীহঃ ইবনু মা’জাহ (হাঃ ৩৮৩২), মুসলিম। আবুদ্ দারদা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দাঊদ (আঃ)-এর দু’আসমূহের একটি হল এই যে, তিনি বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট তোমার ভালোবাসা এবং যে তোমাকে ভালোবাসে তার ভালোবাসা প্রার্থনা করি এবং এমন আমল করার সামর্থ্য চাই যা তোমার ভালোবাসা লাভ করা পর্যন্ত পৌঁছে দিবে। হে আল্লাহ! তোমার ভালোবাসাকে আমার নিজের জান-মাল, পরিবার-পরিজন ও ঠান্ডা পানির চেয়েও বেশি প্রিয় করে দাও।” রাবী বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই দাঊদ (আঃ)-এর আলোচনা করতেন তখনই তাঁর প্রসঙ্গে বলতেনঃ তিনি সকল লোকের চাইতে বেশি ইবাদাতকারী ছিলেন। হাদীসে বর্ণিত, “দাঊদ (আঃ) সমস্তলোকের চাইতে বেশি ইবাদাতকারী ছিলেন” এই অংশটুকু মুসলিমে ইবনু উমার হতে বর্ণিত আছে। বাকী অংশ যঈফ, সহীহা (৭০৭), মিশকাত, তাহকীক ছানী (২৪৯৬), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব।

【74】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দু‘আয় যা বলতেন

আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ আল-খাতমী আল-আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর দু‘আয় বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমাকে তোমার ভালোবাসা দান কর এবং ঐ ব্যক্তির ভালোবাসাও দান কর যার ভালোবাসা তোমার নিকটে আমার উপকারে আসবে। হে আল্লাহ! আমার প্রিয় জিনিসের মধ্য হতে যা তুমি আমাকে দান করেছ এটিকে আমার শক্তিতে পরিণত কর, তুমি যা ভালোবাস তা অর্জনের জন্য। হে আল্লাহ! আমার প্রিয় জিনিসের মধ্য হতে যা তুমি আটকে রেখেছ সেটিকে তুমি যা ভালোবাস তা অর্জনের জন্য আমার অবকাশ বা সুযোগে পরিণত কর”। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (২৪৯১)

【75】

(আশ্রয় প্রার্থনার দু’আ)

শাকাল ইবনু হুমাইদ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কাছে এসে বললাম , হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাকে আশ্রয় প্রার্থনার একটি বাক্য শিখিয়ে দিন যা দিয়ে আমি (আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকটে) আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারি। বর্ণনাকারী বলেন, আমার হাত ধরে তিনি বললেন, তুমি বল, “হে আল্লাহ্‌! তোমার কাছে আমি আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার কানের অনিষ্ট, আমার চোখের (দৃষ্টির) অনিষ্ট, আমার জিহবার (কথার) অনিষ্ট, আমার মনের অনিষ্ট এবং আমার বীর্য অর্থাৎ লজ্জাস্থানের অনিষ্ট হতে”। সহীহঃ মিশকাত (হাঃ ২৪৭২), সহীহ আবূ দাউদ (হাঃ ১৩৮৭)

【76】

(আল্লাহ্‌ তা’আলার অখুশি হতে তাঁর খুশির আশ্রয় প্রার্থনা)

‘আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর পাশেই আমি ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলাম। রাতে আমি তাঁকে (বিছানা হতে) হারিয়ে ফেললাম। তাই (অন্ধকারে) তাঁকে আমি খুঁজতে থাকলাম। আমার হস্ত তাঁর দু’পায়ের উপরে পড়ল। তখন তিনি সাজদাহ্‌রত ছিলেন এবং তিনি বলছিলেনঃ “(হে আল্লাহ্‌), আমি তোমার অখুশি হতে তোমার খুশির আশ্রয় চাই , তোমার শাস্তি হতে তোমার ক্ষমার আশ্রয় চাই, তোমার পূর্ণ প্রশংসা করা আমার সাধ্যাতীত, তুমি তেমন গুনেই গুণান্বিত যেভাবে তুমি নিজের গুন উল্লেখ করেছ”। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮৪১) , মুসলিম।

【77】

(যে দু’আটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআনের সূরা শিখানোর ন্যায় গুরুত্ব নিয়ে শিখাতেন)

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন , এ দু’আটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে এমন ভাবে শিক্ষা দিতেন, যেভাবে তিনি কুরআনের কোন সূরা তাদেরকে শিক্ষা দিতেনঃ “ হে আল্লাহ্‌! তোমার কাছে আমি আশ্রয় চাই জাহান্নামের শাস্তি হতে, কবরের শাস্তি হতে এবং তোমার নিকট আরো আশ্রয় চাই মাসীহ দাজ্জালের ফিত্‌না হতে। তোমার নিকট আমি আরো আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর বিপর্যয় হতে”। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮৪০) , মুসলিম। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সকল বাক্য দিয়ে দু’আ করতেনঃ “হে আল্লাহ্‌! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাইঃ জাহান্নামের বিপর্যয় ও জাহান্নামের শাস্তি হতে, কবরের পরীক্ষা ও কবরের শাস্তি হতে, প্রাচুর্যের বিপর্যয়কর অনিষ্ট হতে, দরিদ্রতার বিপর্যয়কর অকল্যাণ হতে এবং মাসীহ দাজ্জালের অনিষ্ট হতে। হে আল্লাহ্‌! তুমি আমার গুনাহসমুহ বরফ-শিলা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেল, আমার মনকে সকল পাপ হতে পরিচ্ছন্ন কর যেমনভাবে পরিচ্ছন্ন করেছ সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে এবং আমার ও আমার গুনাহসমুহের মধ্যে এতটা ব্যবধান সৃষ্টি করে দাও যতটা ব্যবধান তুমি সৃষ্টি করেছ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ্‌! তোমার নিকট আশ্রয় চাই অলসতা, বার্ধক্য , গুনাহের প্রলুব্ধকর বস্তু ও ঋণগ্রস্ততা হতে”। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮৩৮), বুখারি ও মুসলিম। ‘আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমি তাঁর মৃত্যুবরণ কালে বলতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ্‌! আমাকে মাফ করুন, আমার প্রতি দয়া করুন এবং সুমহান সঙ্গির সঙ্গে আমাকে মিলিত করুন”। সহীহঃ বুখারি ও মুসলিম।

【78】

(দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে দু’আ করা)

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন এভাবে না বলে, “ হে আল্লাহ্‌ ! তুমি চাইলে আমাকে মাফ কর। হে আল্লাহ্‌! তুমি চাইলে আমার প্রতি দয়া কর”। বরং সে যেন পূর্ণ দৃঢ়তার সঙ্গে কামনা করে। কেননা আল্লাহ্‌ তা’আলার উপর জবরদস্তকারী কেউ নাই। সহীহ ইবনু মাজাহ (হাঃ ৩৮৫৪), বুখারি ও মুসলিম।

【79】

(আল্লাহ্‌ তা’আলা প্রতি রাতে পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন)

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকি থাকতে আমাদের প্রভু দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। অতঃপর তিনি বলেন, “আমার কাছে যে দু’আ করবে তার দু’আ আমি কবুল করব। যে ব্যক্তি আমার নিকট (কিছু) প্রার্থনা করবে আমি তাকে তা দান করব। যে ব্যক্তি আমার নিকট মাফ চাইবে আমি তাকে মাফ করে দিব। সহীহঃ বুখারি ও মুসলিম, ৪৪৬ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আবূ উমামাহ (রাঃ) তিনি বলেন, বলা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! কোন সময়ের দু’আ বেশী (শোনা) গ্রহণযোগ্য হয়? তিনি বললেন, শেষ রাতের মাঝ ভাগের এবং ফরয নামায গুলোর পরবর্তী দু’আ। হাসানঃ তা’লিকুর রাগীব (হাঃ ২/২৭৬), আল –কালিমুত তাইয়্যিব (হাঃ ১১৩/৭০), তাহকিক সানী। আবূ হুরাইরা (রাঃ) এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আজ রাতে আমি আপনার দু’আ শুনেছি। আমি তা হতে যা মনে রাখতে পেরেছি তা এই যে, আপনি বলেছেনঃ “হে আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ করে দাও, আমার ঘর প্রশস্ত কর এবং তুমি আমাকে যে রিযিক দিয়েছ তাতে বারকাত দান কর”। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি মনে কর যে, এ দু‘আ কিছু বাদ দিয়েছে। যঈফ, দু‘আটি হাসান। রাওযুন নাযীর (১১৬৭), গায়াতুল মারাম (১১২) আনাস (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি সকাল বেলায় উপনীত হয়ে বলেঃ ‘হে আল্লাহ! আমরা ভোরে উপনীত হলাম, আমরা তোমাকে সাক্ষী বানালাম, আরও সাক্ষী বানালাম তোমার আরশ বহনকারীদেরকে এবং তোমার ফেরেশতাগণকে ও তোমার সকল সৃষ্টিকে এই বিষয়ে যে, তুমিই আল্লাহ, তুমি আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, তুমি এক, তোমার কোন অংশীদার নেই এবং মুহাম্মাদ তোমার বান্দা ও রাসূল”, আল্লাহ তা‘আলা তার সে দিনে সম্পাদিত সকল গুনাহ মাফ করে দেন। আর সে যদি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে ঐ কথা বলে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার সেই রাতের কৃত সকল গুনাহ মাফ করে দেন। যঈফ, আলকালিমুত তায়্যিব (২৫), মিশকাত তাহকীক ছানী (২৩৯৮), যঈফা (১০৪১), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব।

【80】

(আল্লাহ্‌! নির্দয় লোককে আমাদের শাসক পদে নিয়োগ করো না)

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিম্নোক্ত বাক্যে তাঁর সাহাবীগণের জন্য দু’আ না করে হঠাৎ মাজলিস হতে খুব কমই বিদায় হতেনঃ “হে আল্লাহ্‌! আমাদের মাঝে তুমি এতো পরিমাণ আল্লাহ্‌ভীতি ভাগ কর যা আমাদের মাঝে ও তোমার প্রতি অবাধ্যচারী হওয়ার মাঝে বাধা হতে পারে এবং আমাদের মাঝে তোমার প্রতি আনুগত্য এতো পরিমাণ প্রদান করো যার দ্বারা তুমি আমাদেরকে তোমার জান্নাতে পৌঁছে দিবে, এতটা দৃঢ় প্রত্যয় প্রদান কর যার মাধ্যমে তুমি পৃথিবীর যে কোন অনিষ্ট আমাদের জন্য সহজসাধ্য করবে, যতক্ষণ আমাদের তুমি জীবিত রাখ ততক্ষণ আমাদের কর্ণ, আমাদের চক্ষু ও আমাদের শক্তি –সামর্থ্য দিয়ে আমাদের জীবনোপকরণ দান কর (কিংবা আমাদের চোখ –কান মৃত্যু পর্যন্ত তাজা ও সুস্থ রাখ), আর তাকে আমাদের উত্তরাধিকার বানিয়ে দাও। আমাদের উপর যে যুল্‌ম করে তার প্রতি আমাদের প্রতিশোধ সুনির্ধারিত কর, আমাদের প্রতি যে দুশমনি করে তার বিরুদ্ধে আমাদেরকে সহযোগিতা কর, আমাদের ধর্ম পালনে আমাদের বিপদাক্রান্ত করো না , দুনিয়া অর্জনকে আমাদের ও আমাদের জ্ঞানের উদ্দেশে রুপান্তর করোনা এবং আমাদের প্রতি যে দয়া করবে না তাকে আমাদের উপর প্রভাবশালী (শাসক নিয়োগ) করো না”। হাসানঃ আল-কালিমুত তাইয়িব (হাঃ ২২৫/১৬৯), মিশকাত তাহক্কিক সানী (হাঃ ২৪৯২) মুসলিম ইবনু আবূ বাকারাহ্‌ (রহঃ) আমার পিতা আমাকে বলতে শুনলেনঃ “হে আল্লাহ্‌! তোমার কাছে আমি দুশ্চিন্তা , অলসতা ও কবরের শাস্তি হতে আশ্রয় প্রার্থনা করি”। তিনি বললেন, হে প্রিয় বৎস! এটা তুমি কার নিকট শুনেছ? আমি বললাম, আমি এ বাক্য গুলো আপনাকেই বলতে শুনেছি। তিনি বললেন, তোমার জন্য এগুলোকে আবশ্যকীয় করে নাও। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে আমি এ শব্দগুলো বলতে শুনেছি। সানাদ সহীহ।

【81】

আলী (রাঃ)- কে শিখানো দু‘আ

আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ আমি কি তোমাকে কিছু বাক্য শিখিয়ে দিব না, যেগুলো তুমি বললে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে মাফ করবেন, যদিও তুমি ক্ষমতাপ্রাপ্ত। তিনি বললেন, তুমি বলঃ “আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, তিনি অতি সম্মান সম্পন্ন, অতি মহান। আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি অতি সহনশীল, অতি দয়ালু। আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তিনি অতি পবিত্র, তিনি মহান আরশের মালিক”। আলী ইবনু খাশরাম (রহঃ) বলেনঃ আলী ইবনু হুসাইন ওয়াকিদ তাঁর পিতার সূত্রে আমাদের নিকট একই রকম হাদীস বর্ণনা করেছেন, তবে তিনি হাদীসের শেষে বলেছেনঃ ‘আলহামদু লিল্লাহে রব্বিল আলামীন’ (সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক)। যঈফ, রাওযুন নাযীর (৬৭৯-৭১৭), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু আবূ ইসহাক-আল-হারিস-আলী (রাঃ) সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি।

【82】

(দু’আ ইউনুস)

সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার নবী যুন- নুন [ইউনুস (আঃ)] মাছের পেটে থাকাকালে যে দু’আ করেছিলেন তা হল, “ তুমি ব্যতিত কোন মা’বূদ নেই, তুমি অতি পবিত্র। আমি নিশ্চয়ই যালিমদের দলভুক্ত”- (সূরা আম্বিয়া ৮৭)। যে কোন মুসলিম লোক কোন বিষয়ে কখনো এ দু’আ করলে অবশ্যই আল্লাহ্‌ তা’আলা তার দু’আ কবুল করেন। সহীহঃ আল- কালিমুত, তাইয়্যিব (হাঃ ১২২/৭৯), তা’ লিকুর রাগীব (২/২৭৫, ৩/৪৩) , মিশকাত তাহক্কিক সানী (হাঃ ২২৯২)।

【83】

(আল্লাহ্‌ রব্বুল ‘আলামীনের নিরানব্বই নাম)

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন , আল্লাহ্‌ তা’আলার নিরানব্বইটি নাম আছে অর্থাৎ এক কম এক শত। যে লোক এই নামসমুহ মুখস্ত করবে বা পড়বে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সহীহঃ মিশকাত তাহক্কিক সানী (হাঃ ২২৮৮), বুখারি ও মুসলিম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার নিরানব্বইটি নাম আছে অর্থাৎ এক কম এক শত। যে ব্যক্তি তা গণনা (মুখস্ত) করবে সে জান্নাতে যাবে। তিনিই আল্লাহ যিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ্‌ নেই। তিনি আর-রহমান (মহান দয়ালু), আর-রহীমু (অসীম করুণাময়), আল-মালিকু (স্বত্বাধিকারী), আল-কুদ্দূসু (মহাপবিত্র), আস-সালামু (অধিক শান্তিদাতা), আল-মু’মিনু (নিরাপত্তাদানকারী), আল-মুহাইমিনু (চিরসাক্ষী), আল-আযীযু (মহাপরাক্রমশালী), আল-জাব্বারু (মহাশক্তিধর), আল-মুতাকাব্বিরু (মহাগৌরবান্বিত), আল-খালিকু (স্রষ্টা), আল-বারিউ (সৃজনকর্তা), আল-মুসাব্বিরু (অবয়বদানকারী), আল-গাফ্‌ফারু (ক্ষমাকারী), আল-কাহ্‌হারু (শাস্তিদাতা), আল-ওয়াহ্‌হাবু (মহান দাতা), আর-রাযযাকু (রিযিকদাতা), আল-ফাত্তাহ (মহাবিজয়ী), আল-আলীমু (মহাজ্ঞানী), আল-কাবিযু (হরণকারী), আল-বাসিতু (সম্প্রসারণকারী), আল-খাফিযু (অবনতকারী), আর-রাফিউ (উন্নতকারী), আল-মুইয্যু (ইজ্জতদাতা), আল-মুযিল্লু (অপমানকারী), আস-সামিউ ( শ্রবণকারী), আল-বাছীরু (মহাদ্রষ্টা), আল-হাকামু (মহাবিচারক), আল-আদলু (মহান্যায়পরায়ণ), আল-লাতীফু (সূক্ষ্ণদর্শী), আল-খাবীরু (মহা সংবাদরক্ষক), আল-হালীমু (মহাসহিষ্ণু), আল-আযীমু (মহান), আল-গাফূরু (মহাক্ষমাশীল), আশ-শাকূরু (কৃতজ্ঞতাপ্রিয়), আল-আলীয়্যু (মহা উন্নত), আল-কাবীরু (অতীব মহান), আল-হাফীজু (মহারক্ষক), আল-মুকীতু (মহাশক্তিদাতা), আল-হাসীবু (হিসাব গ্রহনকারী), আল-জালীলু (মহামহিমান্বিত), আল-কারীমু (মহাঅনুগ্রহশীল), আর-রাকীবু (মহাপর্যবেক্ষক), আল-মুজীবু (ক্ববূলকারী), আল-ওয়াসিউ (মহাবিস্তারক), আল-হাকীমু (মহাবিজ্ঞ), আল-ওয়াদূদু (মহত্তম বন্ধু), আল-মাজীদু (মহাগৌরবান্বিত), আল-বাইছু (পুনরুত্থানকারী), আশ-শাহীদু (সর্বদর্শী), আল-হাক্কু (মহাসত্য), আল-ওয়াকীলু (মহাপ্রতিনিধি), আল-কাবিয়্যু (মহাশক্তিধর), আল-মাতীনু (দৃঢ় শক্তির অধিকারী), আল-ওয়ালিয়্যু (মহাঅভিভাবক), আল-হামীদু (মহাপ্রশংসিত), আল-মুহসিয়্যু (পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব সংরক্ষণকারী), আল-মুবদিও (সৃষ্টির সূচনাকারী), আল-মুঈদু (পুনরুত্থানকারী), আল-হাইয়্যু (চিরঞ্জীব), আল-কাইয়্যুম (চিরস্থায়ী), আল-মুহ্‌য়ী (জীবনদাতা), আল-মুমীতু (মৃত্যুদাতা), আল-ওয়াজিদু (ইচ্ছামাত্র সম্পাদনকারী), আল-মাজিদু (মহাগৌরবান্বিত), আল-ওয়াহিদু (একক), আস্‌-সামাদু (স্বয়ংসম্পূর্ণ), আল-কাদিরু (সর্বশক্তিমান), আল-মুকতাদিরু (মহাক্ষমতাবান), আল-মুকাদ্দিমু (অগ্রসরকারী), আল-মুআখ্‌খির (বিলম্বকারী), আল-আওয়ালু (অনাদি), আল-আখিরু (অনন্ত), আয-যাহিরু (প্রকাশ্য), আল-বাতিনু (লুকায়িত), আল-ওয়ালিউ (অধিপতি), আল-মুতাআলী (চিরউন্নত), আল-বাররু (কল্যাণদাতা), আত্‌-তাওওয়াবু (তাওবা ক্ববূলকারী), আল-মুনতাকিমু (প্রতিশোধ গ্রহণকারী), আল-আফুব্বু (ক্ষমাকারী, উদারতা প্রদর্শনকারী), আর-রাঊফু (অতিদয়ালু), মালিকুল মুলকি (সার্বভৌমত্বের মালিক), যুলজালালি ওয়াল ইকরাম (গৌরব ও মহত্বের অধিকারী), আল-মুকসিতু (ন্যায়বান), আল-জামিউ (সমবেতকারী), আল-গানিয়্যু (ঐশ্বর্যশালী), আল-মুগনিয়্যু (ঐশ্বর্যদাতা), আল-মানিউ (প্রতিরোধকারী), আয-যাররু (অনিষ্টকারী), আন-নাফিউ (উপকারকারী), আন-নূরু (আলো), আল-হাদিউ (পথপ্রদর্শক), আল-বাদীউ (সূচনাকারী), আল-বাকিউ (চিরবিরাজমান), আল-ওয়ারিস (স্বত্বাধিকারী), আর-রাশীদ (সৎপথে চালনাকারী), আস-সাবূরু (মহা ধৈর্যশীল)। নাম সমূহ উল্লেখে হাদীসটি দুর্বল। প্রাগুক্ত। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ্‌র নিরানব্বই নাম রয়েছে। যে লোক তা কণ্ঠস্থ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সহীহ : মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (হাঃ ২২৮৮)। এ হাদীসে সেই নামগুল উল্লেখ নেই। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যখনই জান্নাতের বাগানসমূহ পার হতে যাবে তখনই ওখান হতে পাকা ফল সংগ্রহ করবে। রাবী বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! জান্নাতের বাগানসমূহ কি? তিনি বললেনঃ মাসজিদসমূহ। আমি আবার বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! পাকা ফল সংগ্রহ করার অর্থ কি? তিনি বললেনঃ “সুবহানাল্লাহ্‌ ওয়ালহামদু লিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার” (আল্লাহ মহাপবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র, আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, আল্লাহ মহান) বলা। যঈফ, যঈফা (১১৫০), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা যখন জান্নাতের বাগানগুলোর পার্শ্ব দিয়ে যাবে সে সময় সেখান হতে পাকা ফল তুলে নিবে। লোকজন প্রশ্ন করল, জান্নাতের বাগানগুলো কি? তিনি বললেন, যিকিরের মাজলিস। হাসান: সহীহ্ (হাঃ ২৫৬২), তা’লীকুল রাগীব (হাঃ ২/৩৩৫)।

【84】

( বিপদে নিপতিত অবস্থায় পাঠ করার দু'আ)

আবূ সালামাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কারো উপর কোন বিপদ এলে অবশ্যই সে যেন বলে: নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহ তা’আলার এবং আমাদেরকে অবশ্যই তাঁর দিকে ফিরে যেতে হবে। হে আল্লাহ! তোমার নিকট আমি আমার বিপদের প্রতিদান চাই। অতএব তুমি আমাকে এর প্রতিদান দাও এবং এর বিনিময়ে ভালো কিছু দান কর।’’ তারপর আবূ সালামাহ্ (রাঃ) এর মৃত্যু হাযির হলে তিনি বললেনঃহে আল্লাহ! আমার অবর্তমানে আমার পরিবারের জন্য আমার চাইতে উত্তম স্থালাভিষিক্ত নিযুক্ত করে দাও”। তারপর আবূ সালামাহ্ (রাঃ) মৃত্যুবরণ করলে উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, “আমরা আল্লাহ তা’আলার জন্য এবং আমাদেরকে তাঁর কাছে প্রত্যার্বতন করতে হবে। ‘আমার এই বিপদের প্রতিদান আমি আল্লাহ তা’আলার নিকট পাওয়ার আশা করি। অতএব হে আল্লাহ! তুমি আমাকে প্রতিদান দাও”। সানাদ সহীহ। উম্মু সালামাহ্ হতে অনুরূপ বর্ণিত আছে।

【85】

(পৃথিবী ও আখিরাতের শান্তি ও হিফাযত আশা করা)

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এসে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! কোন দু’আ সবচেয়ে ভালো? তিনি বললেনঃ তুমি তোমার রবের নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা কর। তারপর সে দ্বিতীয় দিন তাঁর নিকট এসে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কোন দু’আ সর্বোত্তম? তিনি তাকে আগের মতই উত্তর দেন। তারপর সে তাঁর নিকট তৃতীয় দিন এলে তিনি আগের মতই উত্তর দেন এবং বলেনঃ যদি তুমি দুনিয়াতে শান্তি এবং আখিরাতে নিরাপত্তা লাভ করতে পার তাহলে মনে রেখো তুমি সফলতা লাভ করলে। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৩৮৪৮), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। আমরা শুধু সালামা ইবনু ওয়ারদানের সূত্রে এ হাদীস জেনেছি। আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! যদি আমি “লাইলাতুল ক্বদ্র’’ জানতে পারি তাহলে সে রাতে কি বলব? তিনি বললেনঃতুমি বল হে আল্লাহ! তুমি সম্মানিত ক্ষমাকারী, তুমি মাফ করতেই পছন্দ কর, অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও”। সহীহ : ইবনু মাজাহ (হা : ৩৮৫০)। আল-আব্বাস ইবনু ‘আবদিল মুত্তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এমন কিছু আমাকে শিখিয়ে দিন, যা আল্লাহ তা’আলার নিকট আমি প্রার্থনা করতে পারি। তিনি বললেনঃআল্লাহ তা’আলার নিকট আপনি শান্তি ও হিফাযাত কামনা করুন। কিছু দিন যাওয়ার পর আবার গিয়ে আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এমন কিছু আমাকে শিখিয়ে দিন যা আমি আল্লাহ তা’আলার কাছে প্রার্থনা করতে পারি। তিনি আমাকে বললেনঃহে আব্বাস, হে আল্লাহ্‌র রাসূলের চাচা! আল্লাহ তা’আলার নিকট আপনি পৃথিবী ও আখিরাতের শান্তি ও হিফাযাত প্রার্থনা করুন। সহীহ : মিশকাত তাহক্বীক সানী (হাঃ ২৪৯০), সহীহাহ্ (হাঃ ১৫২৩।)

【86】

(ভোরে উপনীত হয়ে মানুষ নিজেকে বিক্রয় করে)

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর নিকট শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনার চাইতে অধিক প্রিয় কিছু তার কাছে চাওয়া হয় না। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধুমাত্র আব্দুর রহমান ইবনু আবী বাকার আল-মুলাইকীর সূত্রেই এ হাদীসটি জানতে পেরেছি। যঈফ, মিশকাত (২২৩৯)। আবু বাকর আস-সিদ্দীক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন কাজের ইচ্ছা করতেন তখন বলতেনঃ “হে আল্লাহ্‌! আমার জন্য কল্যাণ নির্ধারণ করুন এবং আমার কাজে কল্যাণ দান করুন”। যঈফ, যঈফা (১৫১৫), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু যানফালের রিওয়ায়াত হতে এ হাদীস জেনেছি। তিনি হাদীসবিদদের মতে যঈফ। তাকে যানফাল ইবনু আব্দুল্লাহ আল-আরাফীও বলা হয়। কেননা তিনি ‘আরাফাত’ এলাকায় বসবাস করতেন। তিনি এককভাবে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং এ হাদীস বর্ণনায় তার কোন পক্ষাবলম্বনকারী নেই। আবূ মালিক আল-আশ’আরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অযূ ঈমানের অর্ধেক। আলহামদু লিল্লাহ দাঁড়ি পাল্লাকে পূর্ণ করে দেয়। সুবাহানাল্লাহ্ ও আলহামদু লিল্লাহ একসাথে আকাশমন্ডলী ও যামীনের মধ্যবর্তী জায়গা ভর্তি করে দেয়। নামায হলো নূর (জ্যোতি), সাদাক্বহ্ (দান-খাইরাত) হলো (মুক্তির) দলীল এবং ধৈর্য ও সহনশীলতা হলো আলোকবর্তিকা। কুরআন তোমার সপক্ষে অথবা্ বিপক্ষে সনাদ বা সাক্ষ্যস্বরূপ। ভোরে উপনীত হয়ে প্রতিটি মানুষ নিজেকে বিক্রয় করে। (এর মাধ্যমে) সে নিজেকে হয় আযাদ করে অথবা ধ্বংস করে। সহীহ : ইবনু মাজাহ (হাঃ ২৮০), মুসলিম।

【87】

তাসবীহ, তাহলীল, তাহমীদ ও তাকবীরের ফাযীলাত

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তাসবীহ” (সুবহানাল্লাহ) মীযানের (দাঁড়িপাল্লার) অর্ধেক, “আলহামদু লিল্লাহ” মীযানকে পুরো করে দেয় এবং “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” ও আল্লাহ্‌ তা’আলার মাঝখানে কোন প্রকারের অন্তরায় বা বাধা নেই, এমনকি তা আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট পৌঁছে যায়। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (২৩১৩), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। এর সনদসূত্র তেমন শক্তিশালী নয়। সুলাইম গোত্রের এক ব্যক্তি তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার হতে অথবা তাঁর হতে এসব বাক্য গুনে গুনে বলেনঃ “তাসবীহ” (সুবহানাল্লাহ) হল মীযানের অর্ধেক, “আলহামদু লিল্লাহ” তাকে পূর্ণ করে দেয় এবং তাকবীর (আল্লাহু আকবার) আকাশ ও যমিনের মধ্যবর্তী জায়গা পরিপূর্ণ করে দেয়। রোযা সবর ও সহিষ্ণুতার অর্ধেক এবং পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। যঈফ, মিশকাত (২৯৬), তা’লীকুর রাগীব (২/২৪৬), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। শুবা ও সুফিয়ান সাওরী এ হাদীস আবূ ইসহাক হতে বর্ণনা করেছেন।

【88】

আরাফাতে দুপুরের পর পাঠের দু’আ

আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফাত দিবসে আরাফাতে অবস্থানকালে দুপুরের পর বেশিরভাগ সময় যে দু’আ পাঠ করতেন তা এই যে, “হে আল্লাহ্‌! সকল প্রশংসা তোমার যেভাবে তুমি বলেছ এবং আমরা যা বর্ণনা করি তার চেয়েও বেশি উত্তম। হে আল্লাহ্‌! আমার নামায, আমার ইবাদাত (হাজ্জ ও কুরবানী), আমার জীবন ও আমার মরণ তোমার জন্য। পরিশেষে তোমার দিকেই আমার ফিরে আসা এবং আমার মালিকানা তোমার মালিকানাভুক্ত। হে আল্লাহ্‌! আমি তোমার নিকট সহায়তা চাই কবরের শাস্তি, অন্তরের কুচিন্তা ও কাজ-কর্মের অনিশ্চয়তা হতে। হে আল্লাহ্‌! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই বায়ু বাহিত ক্ষতি হতেও”। যঈফ, যঈফা (২৯১৮), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি উক্ত সনদসূত্রে গারীব। এর সনদসূত্র তেমন মজবুত নয়।

【89】

সকল দু’আর সমাহার

আবূ উমামা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনেক দু’আই করেছেন কিন্তু আমরা তার কিছুই মনে রাখতে পারিনি। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি অনেক দু’আই করেছেন কিন্তু আমরা তার কিছুই মনে রাখতে পারিনি। তিনি বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু বলে দিব না, যা সেই সকল দু’আর সমষ্টি হবে? তোমরা বলঃ “হে আল্লাহ্‌! আমরা তোমার নিকট সেই কল্যাণ আশা করি যা তোমার নবী রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমার নিকট আশা করেছেন এবং আমরা তোমার নিকট সেই অনিষ্ট হতে রক্ষা চাই যে অনিষ্ট হতে তোমার নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশ্রয় চেয়েছেন। তুমিই একমাত্র সাহায্যকারী এবং তুমিই (কল্যাণ) পৌঁছিয়ে দাও। আল্লাহ্‌ তা’আলা ছাড়া অনিষ্ট রোধ করার এবং কল্যাণ পৌঁছানোর আর কোন ক্ষমতাবান নেই”। যঈফ, যঈফা (৩৩৫৬), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব।

【90】

(রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেশী বেশী যে দু’আ পাঠ করতেন)

শাহর ইবনু হাওশাব (রহঃ) তিনি বলেন, উম্মু সালামাহ্ (রাঃ)-কে আমি বললাম, হে উম্মুল মু’মিনীন! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনার কাছে অবস্থানকালে অধিকাংশ সময় কোন দু’আটি পাঠ করতেন? তিনি বললেন, তিনি অধিকাংশ সময় এ দু’আ পাঠ করতেন: ‘‘হে মনের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর স্থির রাখ’’। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি অধিকাংশ সময় ‘’হে মনের পরিবর্তনকারী! আমার মনকে তোমার দ্বীনের উপর স্থির রাখ’’ দু’আটি কেন পাঠ করেন? তিনি বললেনঃহে উম্মু সালামাহ্! এরূপ কোন মানুষ নেই যার মন আল্লাহ তা’আলার দুই আঙ্গুলের মধ্যবর্তীতে অবস্থিত নয়। যাকে ইচ্ছা তিনি (দ্বীনের উপর) স্থির রাখেন এবং যাকে ইচ্ছা (দ্বীন হতে) বিপথগামী করে দেন। তারপর অধ:স্তন বর্ণনাকারী মু’আয (রহঃ) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ): হে আমাদের রব! আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করার পর তুমি আমাদের অন্তরসমূহকে বাঁকা করে দিও না। সহীহ : যিলালুল জান্নাহ (হা: ২২৩)। সুলাইমান ইবনু বুরাইদা (রহঃ) তিনি বলেনঃ খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ আল-মাখযূমী (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট অভিযোগ করে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! দুশ্চিন্তা বা স্নায়ুবিক চাপের কারণে রাতে আমি ঘুমাতে পারি না। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যখন তুমি বিছানায় আশ্রয় গ্রহণ কর তখন বল, “হে আল্লাহ্‌! সাত আকাশের প্রতিপালক এবং যা কিছুর উপর তা ছায়া বিস্তার করেছে, সাত যমিনের প্রতিপালক এবং যা কিছু তা উত্থাপন করেছেন, আর শাইতানদের প্রতিপালক এবং এরা যাদেরকে বিপথগামী করেছে! তুমি আমাকে তোমার সকল সৃষ্টিকুলের খারাবী হতে রক্ষার জন্য আমার প্রতিবেশী হয়ে যাও, যাতে সেগুলোর কোনটি আমার উপর বাড়াবাড়ি করতে না পারে অথবা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে না পারে। সম্মানিত তোমার প্রতিবেশী, সুমহান তোমার প্রশংসা। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তুমি ব্যতীত আর কোন মাবূদ নেই”। যঈফ, আল-কালিমুত তায়্যিব (৪৭/৩৩), মিশকাত (২৪১১), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসের সনদ তেমন শক্তিশালী নয়। হাকাম ইবনু জুহাইর পরিত্যক্ত রাবী। কিছু হাদীস বিশারদ তার হতে হাদীস গ্রহণ বাদ দিয়েছেন। এ হাদীসটি ভিন্নসূত্রে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে মুরসালরূপেও বর্ণিত হয়েছে।

【91】

(কঠিন কাজ হাযির হলে যে দু’আ পাঠ করবে)

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সম্মুখে কঠিন কাজ হাযির হলে তিনি বলতেন: হে চিরজীবি, হে চিরস্থায়ী! আমি তোমার রহমাতের ওয়াসীলায় সাহায্য প্রার্থনা করি’’। হাসান : আল-কালিমুত্ তাইয়্যিব (হাঃ ১১৮/৭৬)। একই সনদসূত্রে আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সবসময় “ইয়া যাল-জালালি ওয়াল-ইকরাম’’ পাঠ করাকে অপরিহার্য করে নাও। সহীহ : সহীহাহ্ (হাঃ ১৫৩৬)। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমরা সবসময় “ইয়া যাল-জালালিওয়াল-ইকরাম” (হে গৌরব ও মহত্ত্বের অধিকারী) পাঠ করাকে অপরিহার্য করে নাও। সহীহ : দেখুন পূর্বের হাদীস।

【92】

ঘুম না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলার যিকির করার ফাযীলত

আবূ উমামা আল-বাহিলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি ঘুমানোর উদ্দেশ্যে পবিত্র অবস্থায় বিছানায় যায় এবং ঘুম না আসা পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলার যিকির করতে থাকে, সে পার্শ্ব পরিবর্তন করার আগেই আল্লাহ তা’আলার নিকটে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ হতে যা কিছু প্রার্থনা করবে, আল্লাহ তা’আলা তাকে নিঃসন্দেহে তা দান করবেন। যঈফ, ত’লীকুর রাগীব (১/২৭০), মিশকাত (১২৫০), আল-কালিমুত তায়্যিব তাহকীক ছানী (৪৩/২৯), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। এ হাদীস শাহ্‌র ইবনু হাওশাব হতে, তিনি আবূ যাবিয়্যা হতে, তিনি আমর ইবনু আবাসার সূত্রেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত হয়েছে।

【93】

(ঘুমের মধ্যে আতংকিত হলে যা পড়বে)

মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুনতে পেলেন যে, এক ব্যক্তি তার দু’আয় বলছে “হে আল্লাহ! আমি তোমার সকল নিআমাত কামনা করি”। তিনি বলেনঃ সকল নিয়ামত কি? সে বলল, আমি একটি দু’আ করেছি যার উসীলায় কল্যাণ লাভের কামনা করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেলেনঃ পূর্ণ নিয়ামাত হচ্ছে জান্নাতে প্রবেশলাভ এবং জাহান্নাম হতে রেহাই। তিনি আরেক ব্যক্তিকে বলতে শুনেনঃ “হে মর্যাদা ও মহত্বের অধিকারী”। তিনি বলেলেনঃ তোমার দু’আ ক্ববুল করা হবে, অতএব প্রার্থনা কর। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরেক ব্যক্তিকে বলতে শুনেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট সবরের প্রার্থনা করি”। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেলেনঃ তুমি তো আল্লাহ তা’আলার নিকটে দুরবস্থা প্রার্থনা করেছ, অতএব তাঁর নিকটে শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা কর। যঈফ, যঈফা (৪৫২০), আহামাদ ইবনু মানী ইসমাঈল ইবনু ইবরাহীম হতে তিনি আল-জুরাইরী (রহঃ)-এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের মতই বর্ণনা করেছেন। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। আম্‌র ইবনু শু’আইব (রাঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা ও তাঁর দাদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদের কেউ ঘুমের মধ্যে ভয় পেলে সে যেন বলে : আমি আল্লাহ্‌ তা’আলার পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা আশ্রয় চাই তাঁর ক্রোধ ও শাস্তি হতে, তাঁর বান্দাদের খারাবী হতে, শাইতানদের কুমন্ত্রণা হতে এবং আমার নিকট যারা হাযির হয় সেগুলো হতে’’। তাহলে সেগুলো তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। ‘আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তার সন্তানদের মধ্যে প্রাপ্ত বয়স্কদের উক্ত দু’আ শিখিয়ে দিতেন এবং উক্ত দু’আ কাগজের টুকরায় লিখে তার নাবালেগ সন্তানদের গলায় ঝুলিয়ে দিতেন। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার …… ঝুলিয়ে দিতেন” অংশটুকু বাদে হাদীসটি হাসান। আল-কালিমুত্‌ তাইয়্যিব (৪৮/৩৫)

【94】

[আবূ বাক্‌র (রাঃ) কে শিখানো দু’আ]

আবূ রাশিদ আল-হুবরানী (রহঃ) তিনি বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আম্‌র ইবনুল আস (রাঃ)-এর কাছে এসে আমি তাকে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে যা কিছু শুনেছেন, তা হতে আমাদের কাছে কিছু বর্ণনা করুন। একখানা পান্ডুলিপি আমাকে দিলেন এবং বললেন, এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে লিখিয়ে দিয়েছেন। আবূ রাশিদ বলেন, তাতে আমি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলাম, তাতে লিখা আছে আবূ বাক্‌র আস-সিদ্দীক্ব (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এমন কিছু (দু’আ) আমাকে শিখিয়ে দিন যা আমি সকালে ও বিকালে উপনীত হয়ে বলতে পারি। তিনি বললেনঃ হে আবূ বাক্‌র! বলুন, হে আল্লাহ, আকাশসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা, অদৃশ্য ও দৃশ্যের জ্ঞাতা! তুমি ছাড়া আর কোন মা’বূদ নেই, তুমি প্রতিটি বস্তুর পালনকর্তা ও মালিক। আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিজের অন্তরের অনিষ্ট হতে এবং শাইতানের ক্ষতি ও তার শির্‌কী হতে এবং আমি আমার নিজের জন্য ক্ষতিকর কিছু লাভ করা হতে কিংবা উক্ত অনিষ্টকর জিনিস কোন মুসলিমের কাছে টেনে নিয়ে যাওয়া হতে। সহীহ : আল-কালিমুত্‌ তাইয়্যিব (হা: ২২/৯), সহীহাহ্‌ (হা: ২৭৬৩)

【95】

(আল্লাহ তা’আলা সর্বাধিক আত্মমর্যাদাবোধের অধিকারী)

আম্‌র ইবনু মুর্‌রাহ (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ ওয়ায়িল (রহঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, আমি ‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি। আম্‌র বলেন, আবূ ওয়ায়িলকে আমি প্রশ্ন করলাম, আপনি কি সত্যিই এ হাদীস আব্দুল্লাহ (রাঃ) এর কাছে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ এবং তিনি তা মারফূ’রূপে রিওয়ায়াত করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার চেয়ে বেশি আত্নমর্যাদাবোধ সম্পন্ন আর কেউ নেই। এ কারণেই তিনি প্রকাশ্য ও লুকায়িত সর্বপ্রকার অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন। আল্লাহ তা’আলার চাইতে বেশি প্রশংসাপ্রিয় আর কেউ নেই। এজন্যই নিজের প্রশংসা তিনি নিজেই করেছেন। সহীহ : বুখারী ও মুসলিম।

【96】

(নিজের উপর অনেক অত্যাচার করেছি)

আবূ বাক্‌র আস-সিদ্দীক্ব (রাঃ) তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এমন একটি দু’আ আমাকে শিখিয়ে দিন যা আমি আমার নামাযের মাঝে পাঠ করতে পারি। তিনি বললেনঃতুমি বল, ‘‘হে প্রভু! আমার সত্তার উপর আমি অনেক যুল্‌ম করেছি। তুমি ব্যতীত গুনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। অতএব আমাকে তুমি নিজগুনে ক্ষমা করে দাও। আমার প্রতি করুণা কর। নিশ্চয় তুমি ক্ষমাকারী, অতীব দয়ালু। সহীহ : ইবনু মাজাহ (হা: ৩৮৩৫), বুখারী ও মুসলিম। মুত্তালিব ইবনু আবী ওয়াদাআ (রাঃ) তিনি বলেনঃ আব্বাস (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এলেন, মনে হয় তিনি যেন কিছু শুনতে পেয়ে মিম্বারে অরোহন করলেন। অতঃপর বললেনঃ কোন ব্যক্তি প্রত্যাবর্তন (তাওবা) করেছে? সাহাবাগণ বললেনঃ আপনি আল্লাহ্‌র রাসূল, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হউক। তিনি বললেনঃ আমি মুহাম্মাদ ইবনু আব্দিল্লাহ ইবনি আব্দিল মুত্তালিব। আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি কুলকে সৃষ্টি করে আমাকে উত্তম দলের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি উত্তম দলকে বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত করে আমাকে উত্তম গোত্রের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি উত্তম গোত্রকে বিভিন্ন ঘরে বিভক্ত করে আমাকে উত্তম ঘর ও উত্তম বংশের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যঈফ, যঈফা (৩০৭৩), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান।

【97】

(গুনাহ ঝরে পরা)

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি শুকনা পাতাওয়ালা গাছের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তাঁর লাঠি দিয়ে তাতে আঘাত করলে হঠাৎ পাতাগুলো ঝরে পরে। অতঃপর তিনি বললেন কোন বান্দা “আলহামদুলিল্লাহ “ সুবহানাল্লাহ” এবং লাইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার” (সকল প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার আল্লাহ তা’আলা অতি পবিত্র এবং আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত সত্য কোন মা’বূদ নেই, তিনি অতি মহান) বললে তা তার গুনাহ সমূহ এরূপভাবে ঝরিয়ে দেয় যেভাবে এ গাছের পাতাসমূহ ঝরে পড়েছে। হাদীসটি হাসান : তা’লীকুর রাগীব (হা: ২/২৪৯) উমারাহ্‌ ইবনু শাবীব আস্‌-সাবায়ী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মাগরিবের নামাযের পর যে লোক দশবার বলে: আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কোন মা’বূদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই, সমস্ত কিছুই তাঁর এবং তিনিই সকল প্রশংসার অধিকারী, তিনিই জীবন দান করেন ও মুত্যু দেন এবং প্রতিটি জিনিসের উপর তিনিই মহা ক্ষমতাশালী”’ আল্লাহ তা’আলা তার নিরাপত্তার জন্য ফেরেশতা পাঠান যারা তাকে শয়তানের ক্ষতি হতে ভোর পর্যন্ত নিরাপত্তা দান করেন, তার জন্য (আল্লাহ তা’আলা অনুগ্রহ) অবশ্যম্ভাবী করার ন্যায় দশটি পূণ্য লিখে দেন, তার দশটি ধ্বংসাত্মক গুনাহ বিলুপ্ত করে দেন এবং তার জন্য দশটি ঈমানদার দাস মুক্ত করার সমপরিমাণ সাওয়াব রয়েছে। হাদীসটি হাসান : সহীহ আত্‌-তারগীব ওয়াত্‌ তারহীব ১/১৬০/৪৭২।

【98】

তাওবাহ ও ক্ষমা প্রার্থনার ফাযীলাত এবং বান্দাদের প্রতি আল্লাহ তা’আলার দয়া ও অনুগ্রহ প্রসঙ্গে

যির ইবনু হুবাইশ (রহঃ) তিনি বলেন, মোজাদ্বয়ের উপর মাসিহ করা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করার উদ্দেশে আমি সাফওয়ান ইবনু আসসাল আল-মুরাদী (রাঃ) এর কাছে আগমন করলাম। তিনি বললেন, হে যির! তোমাকে কিসে নিয়ে এসেছে? আমি বললাম, জ্ঞানের অন্বেষা! তিনি বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলার ফেরেশতাগন জ্ঞানের অন্বেষায় খুশি হয়ে জ্ঞান অন্বেষণকারীর জন্য তাদের পাখা বিছিয়ে দেন। আমি বললাম, আমার মনে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে মলমূত্র ত্যাগের পর মোজার উপর মাসেহ করা প্রসঙ্গে। আর আপনি হলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একজন সাহাবী। তাই আপনাকে আমি প্রশ্ন করতে এসেছি যে, এ প্রসঙ্গে আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কিছু আলোচনা করতে শুনেছেন কি? তিনি বললেন হ্যাঁ। আমাদেরকে তিনি নির্দেশ দিতেন যে, আমরা সফররত অবস্থায় থাকলে এবং নাপাকির গোসলের প্রয়োজন না হলে তিন দিন ও তিন রাত পর্যন্ত যেন আমাদের মোজাদ্বয় না খুলি। মলমূত্র ত্যাগ এবং ঘুমানোর কারণে তা খোলার দরকার নেই, বরং শুধু তার উপর মাসেহ্‌ করলেই চলবে। যির (রহঃ) বলেন, আমি বললাম মহব্বত (ভালবাসা) প্রসঙ্গে আপনি কি তাকেঁ কিছু আলোচনা করতে শুনেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ। এক সফরে আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে ছিলাম। একদিন আমরা তাঁর নিকটেই ছিলাম, এমন সময় এক বেদুঈন উচ্চৈঃস্বরে তাকেঁ ডাক দিয়ে বলে হে, মুহাম্মাদ! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তার ন্যায় একই রকম উচ্চ শব্দে তার ডাকে জবাব দিলেন : আস। সেই বেদুঈনকে আমরা বললাম, তোমার অমঙ্গল হোক, তোমার কন্ঠস্বর নীচু কর। কেননা তুমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সম্মুখে আছ। নাবীর সম্মুখে তোমাকে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে বারণ করা হয়েছে (কুরআনে)। লোকটি বলল, আল্লাহর শপথ! আমি নীচু স্বরে কথা বলতে পারি না। এবার সে বলল, এক লোক এক গোত্রকে ভালবাসে, কিন্তু তাদের সঙ্গে সে মিলিত হতে পারেনি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন লোক যাকে ভালবাসে ক্বিয়ামাতের দিন সে তার সঙ্গেই থাকবে। তারপর তিনি আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে থাকলেন। অবশেষে তিনি পাশ্চাত্যে অবস্থিত একটি দরজার কথা উল্লেখ করলেন যা এত দীর্ঘ যে, একটি সাওয়ারীর সেই দরজার এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পার করতে চল্লিশ কিংবা সত্তর বছর সময় লাগবে। সুফ্‌ইয়ান (রহঃ)বলেন, পাশ্চাত্যের সেই দরজা সিরিয়ার দিকে অবস্থিত। যে দিন আল্লাহ তা’আলা আকাশসমূহ ও যামীন সৃষ্টি করেছেন সেদিন ঐ দরজাও সৃষ্টি করেছেন। তা তাওবার জন্য খোলা রয়েছে। পশ্চিম দিকে হতে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত তা রুদ্ধ করা হবে না। হাদীসটি হাসান : তা’লীকুর রাগীব (৪/৭৩).৯৬ নং হাদীসে এর অংশ বিশেষ বর্ণিত হয়েছে। যির ইবনু হুবাইশ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি সাফওয়ান ইবনু আসসাল আল-মুরাদী (রাঃ) এর কাছে আসলাম। তিনি আমাকে বললেন তোমাকে কিসে নিয়ে এসেছে? আমি বললাম জ্ঞানের সন্ধানে। তিনি বললেন, আমি অবগত হয়েছি যে, জ্ঞান অন্বেষণকারীর কাজের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে ফেরেশতাগণ তার জন্য তাদের পাখা বিছিয়ে দেন। যির (রহঃ) বললেন, মলমূত্র ত্যাগের পর মোজাদ্বয়ের উপর মাসাহ করা প্রসঙ্গে আমার মনে একটা দ্বিধার সঞ্চার হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে আপনি এ প্রসঙ্গে কিছু জানেন কি? তিনি বললেন হ্যাঁ। আমাদেরকে তিনি হুকুম দিয়েছেন যে, আমরা সফররত অবস্থায় নাপাকীর গোসলের প্রয়োজন না হলে যেন তিন দিন ও তিন রাত পর্যন্ত আমাদের মোজা না খুলি। মলমূত্র ত্যাগ ও ঘুমানোর কারণেও তা খোলার প্রয়োজন নেই। যির (রহঃ) বললেন, আমি পুনরায় বললাম, আপনি ভালবাসা প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে কিছু জানেন কি? তিনি বললেন হ্যাঁ। কোন এক সফরে আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সথে ছিলাম। লোকদের একেবারে পেছন হতে এক লোক খুব উচ্চৈঃস্বরে তাঁকে ডাক দিল। লোকটি নির্বোধ বেদুঈন ও রুক্ষ ছিল। সে বলল, হে মুহাম্মাদ, হে মুহাম্মাদ! লোকেরা তাকে বলল, থাম! এভাবে আল্লাহ তা’আলার নাবীকে সম্বোধন করতে তোমাকে (কুরআনে) বারণ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাকে তার ন্যায় উচ্চৈঃস্বরে উত্তর দিলেন: আস। লোকটি বলল, এক লোক কোন গোত্র কে ভালবাসে, কিন্তু তাদের সঙ্গে সে মিলিত হতে পারেনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কোন লোক যাকে ভালবাসে সে তার সাথী হবে। যির (রহঃ) বলেন, আমার সঙ্গে সাফওয়ান (রাঃ) অবিরত কথা বলে যাচ্ছিলেন। পরিশেষে তিনি আমাকে বললেন, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তা’আলা তাওবার জন্য পাশ্চাত্যে একটি দরজা রেখেছেন, যার এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তের ব্যবধান সত্তর বছরের। সূর্য সেদিক হতে উদিত না হওয়া পর্যন্ত সেই দরজা বন্ধ হবে না। আর সে কথার প্রমাণ প্রাচুর্যময় মহান আল্লাহ তা’আলার বাণী (অনুবাদ): ‘‘এমন একদিন সংঘটিত হবে যে দিন তোমার প্রভুর কিছু নিদর্শন আসবে, সেই দিন কোন লোকের ঈমান তার কাজে আসবে না যে আগে কখনো ঈমান আনেনি’’। হাদীসটি সানাদ সহীহ : দেখুন পূর্বের হাদীস। ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ রূহ কন্ঠাগত না হওয়া (মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত) পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা বান্দার তাওবাহ্‌ ক্ববূল করেন। হাদীসটি হাসান : ইবনু মাজাহ হা: ৪২৫৩। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ তার হারানো মাল ফিরে পেলে যতটা আনন্দিত হয়, তোমাদের কারো তাওবায় (ক্ষমা প্রার্থনায়) আল্লাহ তা’আলা তার চাইতে বেশি আনন্দিত হন। সহীহ : ইবনু মাজাহ (হা: ৪২৪৭), মুসলিম। আবূ আইউব (রাঃ) তিনি মুমূর্ষু অবস্থায় বলেন, তোমাদের হতে আমি একটি বিষয় লুকিয়ে রেখেছি যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আমি শুনেছি। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি: তোমরা যদি গুনাহ না করতে, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা এমন এক দলের আবির্ভাব করতেন যারা গুনাহ করত, তারপর আল্লাহ তা’আল তাদেরকে মাফ করতেন। হাদীসটি সহীহ ; সহীহাহ্‌ হা: ৯৬৭-৯৭০, ১৯৬৩), মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আমি বলতে শুনেছি : বারাকাতময় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হে আদম সন্তান! যতক্ষণ আমাকে তুমি ডাকতে থাকবে এবং আমার হতে (ক্ষমা পাওয়ার) আশায় থাকবে, তোমার গুনাহ যত অধিক হোক, তোমাকে আমি ক্ষমা করব, এত কোন পরওয়া করব না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ্‌র পরিমাণ যদি আসমানের কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্তও পৌছে যায়, তারপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি পরওয়া করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি সম্পূর্ণ পৃথিবী পরিসাণ গুনাহ নিয়েও আমার নিকট আস এবং আমার সঙ্গে কাউকে অংশীদার না করে থাক, তাহলে তোমার কাছে আমিও পৃথিবী পূর্ণ ক্ষমা নিয়ে হাযির হব। সহীহ : সহীহাহ্‌ (হা: ১২৭, ১২৮), রাওযুন নাযীর (হা: ৪৩২), মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (হা: ২৩৩৬) তা’লীকুর রাগীব (হাঃ ২/২৬৮)।

【99】

আল্লাহ তা’আলা একশত রাহমাত সৃষ্টি করেছেন

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা একশত রহমাত সৃষ্টি করেছেন, তা হতে কেবল একটি রহমাত তাঁর সৃষ্টিকুলের মাঝে রেখেছেন, তার মধ্যমে তারা একে অপরের প্রতি দয়া ও অনুকম্পা প্রদর্শন করে। আর বাকি নিরানব্বইটি রহমাত আল্লাহ তা’আলার নিকট রয়েছে। হাদীসটি সহীহ ইবনু মাজাহ (হা.৪২৯৩, ৪২৯৪), মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যদি মুমিন বান্দা অবগত থাকত যে কি ভীষণ শাস্তি আল্লাহ তা’আলার কাছে তৈরী রয়েছে তাহলে কেউই জান্নাতে প্রবেশের কামনা করত না। আর যদি কাফির লোক অবগত থাকত যে আল্লাহ্‌র কাছে কি অপরিসীম দয়া রয়েছে তাহলে কেউই জান্নাতে প্রবেশে আশাহতে নিরাশ হত না। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (১৬৩৪), বুখারী ও মুসলিম অনুরুপ বর্ণনা করেছেন। আবূ হুরাইরাহ্‌(রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যখন আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেন, সে সময় নিজের হাতে নিজের উপর অনিবার্য করে লিখে নিয়েছেন : আমার রাহমাত আমার ক্রোধের উপর বিজয়ী থাকবে। হাসান সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৮৯), বুখারী ও মুসলিম। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে প্রবেশ করলেন, সে সময় এক লোক নামায আদায় করে দু’আ করছিল এবং সে তার দু’আয় বলছিল হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া আর কোন মা’বূদ নেই, তুমি পরম অনুগ্রহকারী, আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, অসীম ক্ষমতাবান ও মহাসম্মানিত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কি জানো আল্লাহ তা’আলার নিকট সে কিসের মাধ্যমে দু’আ করেছে? সে আল্লাহ তা’আলার নিকটে তাঁর মহান নাম এর মাধ্যমে দু’আ করেছে। যে নামে দু’আ করা হলে তিনি তা ক্ববূল করেন এবং ঐ নামের মাধ্যমে প্রার্থনা করা হলে তিনি দান করেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৩৮৫৮)

【100】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী তাঁর নাক ভূলুণ্ঠিত হোক

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তার নাক ভূলুন্ঠিত হোক যার কাছে আমার নাম উল্লেখিত হল, কিন্ত সে আমার উপর দরূদ পাঠ করেনি। ভুলুন্ঠিত হোক তার নাক যার নিকট রমযান মাস এলো অথচ তার গুনাহ্‌ মাফ হয়ে যাওয়ার পূর্বেই তা পার হয়ে গেল। আর ভূলুন্ঠিত হোক তার নাক যার নিকট তার বাবা-মা বৃদ্ধে উপনিত হলো, কিন্ত তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করায়নি (সে তাদের সঙ্গে ভাল আচরণ করে জান্নাত অর্জন করেনি)। আবদুর রহমানের রিওয়াইয়াতে কিংবা ‘‘যে কোন একজন’’ কথাটুকুও আছে। হাসান সহীহঃ মিশকাত (৯২৭), তা’লীকুর রাগীব (২/২৮৩), নাবীর উপর দরূদ পাঠের ফযীলাত (১৬), মুসলিম হাদীসের শেষ অংশ বর্ণনা করেছেন। আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কৃপণ সেই লোক যার কাছে আমার আলোচনা করা হয় অথচ সে আমার উপর দরূদ পড়ে না। সহীহঃ মিশকাত (৯৩৩), সালাতের ফাযীলাত (১৪/৩১-৩৯) তা’লীকুর রাগীব (২/২৮৪)।

【101】

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দু’আ

আবদুল্লাহ ইবনু আবী আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তরকে বরফ, শিশির ও ঠান্ডা পানি দ্বারা শীতল করে দাও। হে আল্লাহ! আমার অন্তরকে গুনাহ হতে এমনভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে দাও যেরূপে তুমি সাদা কাপড়কে ময়লা হতে পরিষ্কার করেছ”। সহীহঃ মুসলিম (২/৭৩)। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যার জন্য দু’আর দরজা খুলে দেয়া হল, মুলত তার জন্য রাহমাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হল। আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকটে যা কিছু কামনা করা হয়, তার মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করা তাঁর নিকট বেশি প্রিয়। যঈফ, মিশকাত (২২৩৯), তা’লীকুর রাগীব (২/২৭২) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেনঃ যে বিপদ-আপদ এসেছে আর যা (এখনও) আসেনি তাতে দু’আয় কল্যাণ হয়। অতএব হে আল্লাহ্‌র বান্দাগণ! তোমরা দু’আকে আবশ্যিক করে নাও। হাসান, মিশকাত (২৫৩৯), তা’লীকুর রাগীব (২/২৭২) বিলাল (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা অবশ্যই রাতের ইবাদাত করবে। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের নিত্য আচরণ ও প্রথা। রাতের ইবাদাত আল্লাহ্‌ তা’আলার সান্নিধ্য অর্জনের উপায়, পাপকর্মের প্রতিবন্ধক, গুনাহসমূহের কাফফারা এবং দেহের রোগ দূরকারী। যঈফ, ইরওয়া (৪৫২), তা’লীকুর গারীব (২/২১৬), মিশকাত (১২২৭), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান ও গারীব। কেননা এ হাদীস আমরা শুধু বিলাল (রাঃ) হতে উপরোক্ত সূত্রে জেনেছি। সনদসূত্রের দিক হতে এটি সহীহ নয়। আমি মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল (আল-বুখারী)-কে বলতে শুনেছি, মুহাম্মদ আল-কুরাশী হলেন মুহাম্মদ ইবনু সাঈদ আশ-শামী। ইবনু আবূ কাইস হলেন মুহাম্মাদ ইবনু হাসসান এবং তাঁর হাদীস বাদ দেয়া হয়েছে। মুআবিয়া ইবনু সালিহ (রহঃ) এ হাদীস রবীআ ইবনু ইয়াযীদ হতে তিনি আবূ ইদরীস আল-খাওলানী হতে তিনি আবূ উমামা (রাঃ) হতে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ “তোমরা অবশ্যই রাতের ইবাদাত করবে। কেননা উহা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎ-কর্মপরায়ণগণের অভ্যাস, আল্লাহ্‌র সান্নিধ্য অর্জনের উপায়, গুনাহসমূহের কাফফারা এবং পাপ কর্মের প্রতিবন্ধক” আবূ ঈসা বলেন, এই বর্ণনাটি ইদরীসের সূত্রে বিললের বর্ণনা হতে অধিকতর সহীহ। হাসান, ইরওয়া (৪৫২), তা’লীকুর রাগীব (২/২১৬), মিশকাত (১২২৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের স্বাভাবিক বয়স ষাট হতে সত্তর বছরের মাঝে হবে এবং তাদের কম সংখ্যকই এই বয়সসীমা পার করবে। হাসানঃ ২৩৩১ নং হাদীস পূর্বে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।

【102】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একটি দুআ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুআ করতেন এবং বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমাকে সহযোগিতা কর এবং আমার বিরুদ্ধে (কাউকে) সহযোগিতা করো না, আমাকে সাহায্য কর এবং আমার বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করো না, আমার জন্য পরিকল্পনা এঁটে দাও এবং আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পনা এঁটো না, আমাকে হিদায়াত দান কর, আমার জন্য হিদায়াতের পথ সহজসাধ্য কর এবং যে লোক আমার উপর যুলম ও সীমালঙ্ঘন করে তার বিরুদ্ধে আমাকে সহযোগিতা কর। হে আল্লাহ! আমাকে তোমার জন্য কৃতজ্ঞ বান্দা কর, তোমার জন্য অধিক যিকরকারী, তোমাকে বেশি ভয়কারী, তোমার অনেক আনুগত্যকারী, তোমার কাছে অনুনয়-বিনয়কারী ও তোমার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী কর। হে আমার প্রভু! আমার তাওবাহ কবূল কর, আমার সকল গুনাহ ধুয়ে-মুছে ফেল, আমার দুআ কবূল কর, আমার সাক্ষ্য-প্রমাণ বহাল কর, আমার যবানকে দৃঢ় কর, আমার অন্তরে হিদায়াত দান কর এবং আমার বুক হতে সমস্ত হিংসা দূর কর”। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৩৮৩০) আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক তার প্রতি অত্যাচারকারীর বিরুদ্ধে দু‘আ করল সে প্রতিশোধ গ্রহণ করল। যঈফ, যঈফা (৪৫৯৩), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু আবূ হামযার রিওয়ায়াত হিসেবে এ হাদীস জেনেছি। কিছু বিশেষজ্ঞ আলিম আবূ হামযার স্মৃতিশক্তির সমালোচনা করেছেন। তিনি হলেন মাইমূন আল-আ’ওয়ার। কুতাইবা-হুমাইদ ইবনু আবদুর রহমান আর-রুয়াসী হতে, তিনি আবুল আহওয়াস হতে, তিনি আবূ হামযা (রহঃ) হতে উক্ত সূত্রে একইরকম হাদীস বর্ণনা করেছেন।

【103】

(একটি দুআ দশবার পাঠ করার সাওয়াব)

আবূ আইউব আল –আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক দশবার বলে, “আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বূদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই, সার্বভৌমত্ব তাঁর, সকল প্রশংসা তাঁর। তিনি জীবন দান করেন, তিনি মৃত্যু দেন এবং সমস্ত কিছুর উপর তিনিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী”, সে হযরত ইসমাঈল (আঃ) এর বংশের [অর্থাৎ কুরাইশ বংশের] চারজন দাস মুক্ত করার সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। সহীহঃ যঈফাহ (৫১২৬) নং হাদীসের অধীনে, বুখারী ও মুসলিম “তিনি জীবিত করেন মৃত্যুদান করেন” এই অংশ বাদে। উম্মুল মুমিনীন সাফিয়্যা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকটে এলেন, তখন আমার নিকট চার হাজার খেজুরের বিচি ছিল, যা দিয়ে আমি তাসবীহ পাঠ করে থাকি। তিনি বললেনঃ তুমি কি এগুলো দিয়ে তাসবীহ গণনা করেছ? আমি কি তোমাকে এমন তাসবীহ শিখাব না যা সাওয়াবের দিক হতে এর চেয়ে বেশি হবে? আমি বললাম, হ্যাঁ আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বললেনঃ তুমি বল, “আল্লাহ্‌ তা”আলা তাঁর সৃষ্টিকুলের সমপরিমাণ পবিত্র”। মুনকার, আর-রাদ্দু আলাত তা’কীবিল হাসীস (৩৫-৩৮) উম্মুল মুমিনীন জুওয়াইরিয়াহ বিনতুল হারিস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাছ দিয়ে অতিক্রম করলেন, সে সময় তিনি তার (ঘরে) নামাযের জায়গায় ছিলেন। আবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায় দুপুরে তার কাছ দিয়ে গমন করেন এবং তাকে বললেনঃ তুমি কি তখন হতে এই অবস্থায় আছ? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কি কিছু বাক্য শিখিয়ে দিব না যা তুমি বলবে? “আল্লাহ তা’আলা তাঁর সৃষ্টিকুলের সমপরিমাণ মহাপবিত্র” (৩ বার), “আল্লাহ তা’আলা তাঁর সত্তার সন্তোষ মোতাবিক মহাপবিত্র” (৩ বার), “আল্লাহ তা’আলা তাঁর আরশের ওজনের সমপরিমাণ মহাপবিত্র” (৩ বার), “আল্লাহ তাঁর কালামের সমান মহাপবিত্র” (তিন বার)। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৩৮০৮), মুসলিম

【104】

(হাত তুলে দু’আ করলে আল্লাহ তা’আলা সেই হাত শুন্য ফিরান না)

সালমান আল ফারিসী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা অত্যধিক লজ্জাশীল ও দাতা। যখন কোন ব্যক্তি তাঁর দরবারে তার দুই হাত তুলে (প্রার্থনা করে) তখন তিনি তার হাত দু’খানা শুন্য ও বঞ্চিত ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৩৮৬৫) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) এক লোক দুই আঙ্গুলে (ইঙ্গিত করে) দুআ করছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ একটির মাধ্যমে একটির মাধ্যমে। হাসান সহীহঃ মিশকাত (৯১৩)

【105】

(দুআ প্রসঙ্গে বিভিন্ন হাদীস)

মুআয ইবনু রিফা’আহ (রহঃ) হতে তার বাবা তিনি বলেন, আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) মাসজিদে নাববীর মিম্বারে দাঁড়ালেন, তারপর কেঁদে দিলেন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গত বছর এ মিম্বারে দাঁড়িয়ে কাঁদেন, তারপর বলেনঃ আল্লাহ তা’আলার নিকট তোমরা ক্ষমা, শান্তি ও হিফাযাত প্রার্থণা কর। কেননা ঈমানের পর তোমাদের কাউকে শান্তি ও হিফাযাতের চাইতে বেশি উত্তম আর কিছুই দেয়া হয়নি। হাসান সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৩৮৪৯)

【106】

যে ক্ষমা প্রার্থনা করল সে গুনাহ হতে মুক্ত হল

আবূ বাকর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ক্ষমা প্রার্থনা করেছে (গুনাহ হতে) সে গুনাহর উপর অটল থাকেনি, যদিও সে প্রতিদিন সত্তরবার গুনাহ করে থাকে। যঈফ, মিশকাত (২৩৪০), যঈফ আবূ দাঊদ (২৬৭), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু আবূ নুসাইরার সুত্রেই হাদীসটি জেনেছি। এ হাদীসের সনদসূত্র তেমন মজবুত নয়।

【107】

নতুন পোশাক পরার দু‘আ

আবূ উমামা (রাঃ) তিনি বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) একখানা নতুন পোশাক পরেন এবং বলেন, “সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌ তা‘আলার জন্য যিনি আমাকে পরিয়েছেন, যা দিয়ে আমি লজ্জাস্থান ঢেকে রেখেছি এবং আমার জীবনকে সুসজ্জিত করেছি।” তারপর তিনি তাঁর পুরাতন কাপড়টি দান করে দিলেন। অতঃপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি নতুন কাপড় (পোশাক) পরে বলে, “সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌ তা‘আলার যিনি আমাকে পরিয়েছেন, যা দিয়ে আমি আমার লজ্জাস্থান ঢেকে রেখেছি এবং আমার জীবনকে (দৈহিক সৌষ্ঠব) সুসজ্জিত করেছি”, তারপর নিজের পরার পুরানো বস্ত্র দান করে, সে জীবনে ও মরণে আল্লাহ্‌ তা’আলার আশ্রয়ে, আল্লাহ্‌ তা‘আলার হিফাজাতে এবং আল্লাহ্‌ তা’আলার সুরক্ষিত প্রাচীরে থাকে। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৩৫৫৭), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। হাদীসটি ইয়াহ্‌ইয়া ইবনু আইউব (রহঃ) উবাইদুল্লাহ ইবনু যাহর হতে, তিনি আলী ইবনু ইয়াযীদ হতে, তিনি কাসিম হতে, তিনি আবূ উমামা (রাঃ) হতে বর্ণনা করছেন।

【108】

সর্বোত্তম গানীমাত

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাজদের দিকে এক অভিযানে একটি সেনাদল পাঠান। তারা প্রচুর গানীমাতের সম্পদ অর্জন করে এবং তাড়াতাড়ি ফিরে আসে। তাদের সাথে যায়নি এমন এক লোক বলল, অল্প সময়ের মধ্যে এত পরিমাণে উত্তম গানীমাত নিয়ে এদের চেয়ে তাড়াতাড়ি আর কোন সেনাদলকে আমরা ফিরে আসতে দেখিনি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এমন এক দলের কথা বলব না যারা এদের চেয়ে তাড়াতাড়ি উত্তম গানীমাত নিয়ে ফিরে আসে? যারা ফজরের নামাযের জামা’আতে হাযির হয়, (নামায শেষে) সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহ্‌ তা’আলার যিকির করতে থাকে, তারাই অল্প সময়ের মধ্যে উত্তম গানীমাতসহ প্রত্যাবর্তনকারী। যঈফ, তা’লীকুর রাগীব (১/১৬৬), সহীহা (২৫৩১) নং হাদীসের অধীনে, আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসিটি গারীব। আমরা শুধু উপরোক্ত সনদসুত্রেই এ হাদীস জেনেছি। আর হাম্মাদ ইবনু আবূ হুমাইদ হলেন মুহাম্মদ ইবনু আবূ হুমাইদ এবং তিনি হলেন আবূ ইবরাহীম আল-আনসারী আল–মাদীনী। তিনি হাদীস শাস্ত্রে দুর্বল।

【109】

মুসাফিরের নিকট দু‘আর আবেদন

উমার (রাঃ) তিনি উমরা করার লক্ষে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সম্মতি চান। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হে স্নেহের ভাই! তোমার দু‘আয় আমাদেরকেও অংশীদার করবে এবং আমাদেরকে ভুলে যেও না। যইফ, ইবনু মাজাহ (২৮৯৪), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ।

【110】

(ঋণমুক্তির দুআ)

আলী (রাঃ) একটি চুক্তিবদ্ধ গোলাম তার নিকটে এসে বলে, আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে আমি অপরাগ হয়ে পড়েছি। আমাকে আপনি সহযোগিতা করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কি এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দিব না যা আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর সীর (সাবীর) পর্বত পরিমাণ ঋণও থাকে তবে আল্লাহ তাআলা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। তিনি বলেনঃ তুমি বল, “হে আল্লাহ! তোমার হালালের মাধ্যমে আমাকে তোমার হারাম হতে বিরত রাখ বা দূরে রাখ এবং তোমার দয়ায় তুমি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া হতে আমাকে আত্মনির্ভরশীল কর”। হাসানঃ তালীকুর রাগীব (২/৪০), আল –কালিমুত তাইয়্যিব (১৪৩/৯৯)

【111】

রোগীকে দেখতে গিয়ে যে দু’আ পাঠ করবে

আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি অসুস্থ (রোগাক্রান্ত) ছিলাম। রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকটে এলেন এবং তখন আমি বলছিলামঃ “হে আল্লাহ! যদি আমার শেষ মুহূর্ত হাযির হয়ে থাকে তবে আমাকে দয়া কর, তাতে যদি দেরী থাকে তবে আমাকে উঠিয়ে দাও (সুস্থ কর), আর যদি বিপদের পরীক্ষায় ফেল তাহলে সবর দান কর”। রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি কিভাবে বললে? তিনি তার কথার পুনরাবৃত্তি করে তাঁকে শুনান। রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পা দিয়ে তাকে আঘাত করেন এবং বলেনঃ “হে আল্লাহ! তাকে আরোগ্য দান কর, অথবা তাকে নিরাময় দান কর”। শুবার সন্দেহ (তার ঊর্দ্ধতন রাবী কোনটি বলেছেন)। আলী (রাঃ) বলেনঃ এরপর আমি ব্যথা অনুভব করি নাই। যঈফ, মিশকাত(৬০৯৮), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন রোগীকে দেখতে গেলে বলতেনঃ “হে মানুষের প্রভু! তুমি রোগ দূর কর, তুমি সুস্থতা দান কর, তুমিই সুস্থতা দানকারী। তোমার আরোগ্যদান ব্যতীত কোন আরোগ্য নেই। তুমি এমনভাবে সুস্থতা দান কর যাতে কোন রোগই বাকি না থাকে”। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম আয়িশাহ (রাঃ) হতে।

【112】

বিতর নামাযের দু’আ

আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বিতরের নামাযে বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার খুশির জন্য তোমার অখুশি হতে আশ্রয় প্রার্থণা করি, তোমার ক্ষমা ও অনুকম্পার জন্য তোমার শাস্তি হতে আশ্রয় প্রার্থণা করি এবং তোমার সত্বা হতে তোমার কাছেই আশ্রয় প্রার্থণা করি। তোমার প্রশংসা করে আমি শেষ করতে পারি না, তুমি তেমনি যেমন তুমি নিজের প্রশংসা করেছ। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১১৭৯)

【113】

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি নামাযের পর যে দু’আ দ্বারা আশ্রয় প্রার্থণা করতেন

মুসআব ইবনু সাদ ও আমর ইবনু মাইমূন (রহঃ) তারা প্রত্যেকে বলেন, সাদ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) নিম্নোক্ত বাক্যগুলো তাঁর সন্তানদেরকে এমনভাবে শিক্ষা দিতেন, যেমনভাবে মক্তবে শিক্ষক শিশুদেরকে শিক্ষা দেন। তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাযের পর এগুলো দ্বারা আল্লাহ তাআলার নিকট আশ্রয় প্রার্থণা করতেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার কাছে আমি ভীরুতা হতে আশ্রয় চাই, তোমার কাছে কৃপণতা হতে আশ্রয় চাই, তোমার কাছে অতি বার্ধক্যে পৌঁছার বয়স হতে আশ্রয় চাই এবং তোমার কাছে দুনিয়ার ঝগড়া-বিবাদ ও ক্ববরের শাস্তি হতে আশ্রয় চাই”। সহীহঃ বুখারী (২৮২২, ৬৩৬৯) আইশা বিনতু সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, তিনি রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এক মহিলার ঘরে যান, যার সামনে ছিল খেজুরের অনেকগুলো বিচি অথবা নুড়ি পাথর, যার সাহায্যে সে তাস্বীহ পাঠ করত। রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি কি তোমাকে এর চেয়েও সহজ ও উত্তম পথ প্রসঙ্গে জানাবো না? “আল্লাহ মহাপবিত্র আকাশে তাঁর সৃষ্টি জীবের সমসংখ্যক, আল্লাহ মহাপবিত্র দুনিয়াতে তাঁর সৃষ্ট জীবের সমসংখ্যক, আল্লাহ তা’আলা মহাপবিত্র এতদুভয়ের মধ্যকার সৃষ্টির সমসংখ্যক, আল্লাহ তা’আলা মহাপবিত্র তিনি যেসকল প্রাণী সৃষ্টি করবেন তার সমসংখ্যক, অনুরূপ পরিমাণ আল্লাহ তা’আলা মহান, অনুরূপ পরিমাণ আল্লাহ্ তা’আলার প্রশংসা, অনুরূপ সংখ্যকবার আল্লাহ তা’আলা ছাড়া কল্যাণ করার বা ক্ষতিসাধনের আর কোন শক্তি নেই”। মুনকার, আর রাদ্দু আলা আত-তা’কীবিল হাছীস (২৩-৩২), মিশকাত (২৩১১), যঈফা(৮৩), আল কালিমুত তায়্যিব (১৩/৪), আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান এবং সা’দ (রাঃ)-এর হাদীস হিসেবে গারীব। যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বান্দা প্রতিদিন ভোরে উপনীত হলে একজন ঘোষক ডেকে বলেন, “সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী ত্রুটিমুক্ত আল্লাহ্ তা‘আলা মহাপবিত্র ও মহিমাময়”। যঈফ, যঈফা, আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব।

【114】

মুখস্থশক্তি বাড়ানোর দু‘আ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, কোন এক সময় আমরা রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ছিলাম। তখন আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) এসে বলেন, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! এই কুরআন আমার হৃদয় হতে বেরিয়ে যায় (মুখস্থ থাকে না)। আমি তা নিজের মধ্যে ধরে রাখতে সক্ষম নই। রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ হে আবুল হাসান! আমি কি তোমাকে এমন কথা শিখাব না যার দ্বারা আল্লাহ তা’আলা তোমাকে উপকৃত করবেন, তুমি যাকে তা শিখাবে তাকেও উপকৃত করবেন এবং যা তুমি শিখবে তাও তোমার হৃদয়ের মধ্যে গেঁথে থাকবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তা আমাকে শিখিয়ে দিন। তিনি বলেনঃ জুমু’আর রাত আসার পর তোমার পক্ষে সম্ভব হলে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে (নামাযে) দাঁড়িয়ে যাও। এ সময় আল্লাহ্ তা’আলার ফেরেশতা হাযির হয় এবং তখন দু‘আ ক্ববূল হয়। আমার ভাই ইয়াকূব (আঃ) তাঁর সন্তানদের বলেছিলেনঃ আমি তোমাদের জন্য আমার রবের নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করব। পরিশেষে তিনি জুমু’আর রাতেই তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যদি তুমি (তখন নামায আদায় করতে) সক্ষম না হও তাহলে মধ্য রাতে দাঁড়াও এবং তখনও সম্ভব না হলে রাতের প্রথম তৃতীয়াংশে দাঁড়াও এবং চার রাক’আত (নফল) নামায আদায় কর। প্রথম রাক’আতে সূরা আল-ফাতিহার পর সূরা ইয়াসীন, দ্বিতীয় রাক’আতে সূরা আল-ফাতিহার পর সূরা হা-মীম আদ-দুখান, তৃতীয় রাক’আতে সূরা আল-ফাতিহার পর সূরা আলিফ-লাম-মীম তানযীলুস সাজদা এবং চতুর্থ রাক’আতে সূরা আল-ফাতিহার পর সূরা তাবারাকা আল-মুফাস্সাল (সূরা আল-মূল্ক) পাঠ করবে। তুমি তাশাহুদ পাঠ শেষ করে আল্লাহ্ তা’আলার প্রশংসা করবে এবং ভালভাবে তাঁর গুণকীর্তন করবে, তারপর আমার উপর দরূদ পাঠ করবে এবং সকল নাবী-রাসূলের প্রতি ভালভাবে দুরূদ ও সালাম পাঠ করবে, তারপর সকল মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীদের জন্য এবং তোমার যে সকল ভাই ঈমানের সাথে অতীতে ইন্তিকাল করেছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে। সবশেষে তুমি বলবেঃ “হে আল্লাহ! পাপাচার ছেড়ে দিতে আমাকে অনুগ্রহ কর যাবত তুমি আমাকে বাঁচিয়ে রাখ, আমার প্রতি দয়া কর যেন আমি নিস্ফল আচরণে জড়িয়ে না পড়ি এবং তোমার পছন্দনীয় বিষয়ে আমাকে ভালভাবে ভাববার তাওফীক দাও। হে আল্লাহ! আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টা, মর্যাদা ও মহত্বের অধিকারী এবং এমন মর্যাদার অধিকারী যার আকাংখা করা যায় না, আমি তোমার নিকটে প্রার্থনা করি, হে আল্লাহ, হে রহমান, তোমার অসীম মহত্ব ও চেহারার নূরের উসীলায় আমি প্রার্থনা করি যে, আমার অন্তরে তোমার কিতাবকে বদ্ধমূল করে দাও যেমন তুমি আমাকে শিখিয়েছ, যে ভাবে পাঠ করলে তুমি সন্তুষ্ট হও সেইভাবে পাঠ করতে আমাকে তাওফীক দান কর, হে আল্লাহ, আকাশ ও জমীনের সৃষ্টিকর্তা মর্যাদা ও মহত্বের অধিকারী যার আকাংখা করা যায় না। হে দয়াময়, তোমার মহত্ব ও নুরের উসীলায় আমি প্রার্থনা করছি। তুমি তোমার কিতাবের উসীলায় আমার চক্ষুকে উজ্জ্বল করে দাও, তা দিয়ে আমার যবান (জিহ্বা) খুলে দাও এবং তা দিয়ে আমার অন্তরকে উন্মুক্ত কর, আর তা দিয়ে আমার বক্ষকে প্রসারিত, আমার দেহটিকে তা দিয়ে ধুয়ে ফেল। সত্যের উপর তুমি ব্যতীত অন্য কেউই আমার সাহায্য করতে পারে না এবং তুমি ব্যতীত কেউই আমাকে তা দিতে পারে না। সুউচ্চ ও সুমহান আল্লাহ ছাড়া অনিষ্ট রোধ করার এবং কল্যাণ অর্জনের আর কোন শক্তি নেই। ” হে আবুল হাসান! তুমি তিন অথবা পাঁচ অথবা সাত জুমু’আ পর্যন্ত এ আমল করতে থাক। আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছায় তোমার দু’আ ক্ববূল হবে। সেই মহান সত্তার কসম, যিনি আমাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন! কোন মু’মিনই (এ দু’আ পাঠ করে) কখনও বঞ্চিত হবে না। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্ তা’আলার শপথ! আলী (রাঃ) পাঁচ অথবা সাত জুমু’আ পর্যন্ত এই আমল করে একদিন এরকম এক আসরে এসে রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আগে আমি চার আয়াত পাঠ করতাম আর তা আমার হৃদয় হতে চলে যেত। আর এখন আমি চল্লিশ আয়াত অথবা এরকম পরিমাণ মুখস্থ করে যখন পাঠ করি তখন মনে হয় যেন আল্লাহ্ তা’আলার কিতাব আমার চোখের সামনে উন্মুক্ত আছে। একইভাবে আমি হাদীস শুনতাম এবং পরে তা পুনঃপাঠ করতে গিয়ে দেখতাম যে, তা আমার অন্তর থেকে চলে গেছে। আর এখন আমি হাদীসসমুহ শুনি এবং পরে তা পুনঃপাঠ করি এবং তা হতে একটি শব্দও বাদ পড়ে না। তখন রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ হে হাসানের পিতা, কা’বার প্রভুর কসম! অবশ্যই তুমি একজন মু’মিন। মাওযূ. তা’লীকুর রাগীব (২/২১৪), যঈফা(৩৩৭৪)

【115】

সুখ-স্বাচ্ছন্দ ইত্যাদির জন্য অপেক্ষা করা প্রসঙ্গে

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্ তা’আলার নিকটে তাঁর দয়া প্রার্থনা কর। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকট কিছু পাওয়ার প্রার্থনাকে ভালোবাসেন। আর সর্বোত্তম ইবাদাত হল দু’আ ক্ববূল হওয়ার অপেক্ষায় থাকা। যঈফ, যঈফা (৪৯২), আবূ ঈসা বলেনঃ হাম্মাদ ইবনু ও য়াকিদ এভাবেই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, তার রিওয়ায়াতে মতভেদ করা হয়েছে। এই হাম্মাদ ইবনু ওয়াকিদ আস-সাফফার তিনি হাফিজ নন। আমাদের মতে তিনি বাসরার শাইখ। আবূ নুয়াইম এই হাদীসটি ইসরাঈল হতে, তিনি হাকীম ইবনু জুবাইর হতে, তিনি এক ব্যক্তি হতে তিনি রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে, মুর্সাল রূপে বর্ণনা করেছেন। আবূ নূরাইমের বর্ণনাটি অধিক সহীহ। যাইদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! তোমার নিকট আমি অলসতা, অক্ষমতা ও কৃপণতা হতে আশ্রয় চাই”। একই সনদসূত্রে আরও বর্ণিত আছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “বার্ধক্য ও ক্ববরের শাস্তি হতেও” আশ্রয় প্রার্থণা করতেন। সহীহঃ মুসলিম (৮/৮১-৮২) উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ পৃথিবীর বক্ষে যে মুসলিম লোকই আল্লাহ তা’আলার নিকটে কোন কিছুর জন্য দুআ করে, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তাকে তা দান করেন কিংবা তার হতে একই রকম পরিমাণ ক্ষতি সরিয়ে দেন, যতক্ষণ না সে পাপে জড়িত হওয়ার জন্য অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দু’আ করে। সমবেত ব্যক্তিদের একজন বলল, তাহলে আমরা অত্যধিক দুআ করতে পারি। তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাআলা তার চাইতেও বেশী ক্ববূলকারী। হাসান সহীহঃ তালীকুর রাগীব (২/২৭১-২৭২)

【116】

(রাতে শোয়ার সময় যে দুআ পাঠ করবে)

আল –বারাআ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখন তুমি শোয়ার জন্য বিছানায় যেতে চাও সে সময় নামাযের উযূর মত উযূ কর, অতঃপর তোমার ডান কাতে শয়ন কর, অতঃপর বলঃ “হে আল্লাহ! আমার চেহারা আমি তোমার দিকে সোপর্দ করলাম, আমার সমস্ত বিষয় তোমার কাছে সমর্পণ করলাম, আশা ও ভয় নিয়ে তোমার দিকে আমার পিঠ সপে দিলাম, তোমার হতে (পালিয়ে) আশ্রয় নেয়ার এবং রক্ষা পাওয়ার তুমি ব্যতীত আর কোন জায়গা নেই। আমি ঈমান আনলাম তোমার অবতীর্ণ কিতাবের উপর এবং তোমার পাঠানো নাবীর উপর”। তারপর যদি ঐ রাতে তুমি মারা যাও, তাহলে দ্বীনের (ইসলামের) উপরই মৃত্যুবরণ করবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি এ দু’আর বাক্যগুলো পুণরায় বললাম যাতে তা আমার মুখস্থ হয়ে যায়। আমি তাতে যোগ করলাম, আমি তোমার পাঠানো রাসূলের উপর ঈমান আনলাম। তখন তিনি বললেনঃ তুমি বল, “আমি তোমার পাঠানো নাবীর উপর ঈমান আনলাম”। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম (৩৩৯৪) নং পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনু খুবাইব (রাঃ) তিনি বলেন, এক ঘুটঘুটে অন্ধকার ও বৃষ্টিমুখর রাতে আমাদের নামায আদায় করানোর জন্য আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সন্ধানে বের হলাম। আমি তাঁর দেখা পেলে তিনি বললেনঃ বল। কিন্তু আমি কিছুই বললাম না। তিনি পুণরায় বললেনঃ বল। এবারও আমি কিছুই বললাম না। তিনি আবার বললেন, বল। এবার আমি প্রশ্ন করলাম, আমি কি বলব? তিনি বললেনঃ তুমি প্রতি দিন বিকালে ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার করে সূরা কুল হুআল্লাহু আহাদ (সূরা আল -ইখলাস) ও আল –মুআওবিযাতাইন (সূরা আল –ফালাক্ব ও সুলা আন -নাস) পাঠ করবে, আর তা প্রত্যেকটি ব্যাপারে তোমার জন্য যথেষ্ট হবে। হাসানঃ তালীকুর রাগীব (১/২২৪), আল –কালিমুত তাইয়্যিব (১৯/৭)

【117】

মেহমানের দু’আ করা

আবদুল্লাহ ইবন বুসর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার বাবার নিকটে এলেন। আমরা তাঁর জন্য খাদ্য পরিবেশন করলে তিনি তা আহার করলেন। তারপর খেজুর আনা হলে তিনি তা খেতে থাকলেন এবং দুই আঙ্গুলের মাধ্যমে খেজুরের বিচি ফেলে দিতে লাগলেন মধ্যমা ও তর্জনী একত্র করে। শু’বাহ বলেন, এটা আমার সন্দেহ, ইনশাআল্লাহ এটাই সঠিক। তারপর পানীয় দ্রব্য আনা হলে তিনি তা পান করলেন, তারপর পানপাত্র তার ডান পাশের ব্যক্তিকে দিলেন। আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) বলেন, তারপর আমার বাবা তাঁর সওয়ারীর লাগাম ধরে বললেন, আমাদের জন্য দু’আ করুন। তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ! তাদের যে রিযিক্ব দিয়েছ তাতে বারাকাত দান কর, তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদের প্রতি দয়া কর”। সহীহঃ মুসলিম (৬/১২২) যাইদ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ যে লোক বলে, “মহান আল্লাহ তাআলার নিকট আমি ক্ষমা চাই যিনি ছাড়া কোন মাবূদ নেই, যিনি চিরজীবি, চিরস্থায়ী এবং আমি তাঁর কাছে তাওবাহ করি”, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, যদিও সে রণক্ষেত্র হতে পলায়ন করে থাকে। সহীহঃ তালীকুর রাগীব (২/২৬৯), সহীহ আবূ দাঊদ (১৩৫৮)

【118】

(দুআতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাধ্যমে বানানো)

উসমান ইবনু হুনাইফ (রাঃ) এক অন্ধ ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর নাবী! আমার জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করুন, যেন আমাকে তিনি আরোগ্য দান করেন। তিনি বললেনঃ তুমি কামনা করলে আমি দুআ করব, আর তুমি চাইলে ধৈর্য্য ধারণ করতে পার, সেটা হবে তোমার জন্য উত্তম। সে বলল, তাঁর নিকটে দুআ করুন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে উত্তমভাবে উযূ করার হুকুম করলেন এবং এই দুআ করতে বললেন, “হে আল্লাহ! তোমার নিকট আমি প্রার্থনা করি এবং তোমার প্রতি মনোনিবেশ করি তোমার নাবী, দয়ার নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর (দু’আর) মাধ্যমে। আমি তোমার দিকে ঝুঁকে পড়লাম, আমার প্রয়োজনের জন্য আমার প্রভুর দিকে ধাবিত হলাম, যাতে আমার এ প্রয়োজন পূর্ণ করে দেয়া হয়। হে আল্লাহ! আমার প্রসঙ্গে তুমি তাঁর সুপারিশ ক্ববূল কর”। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৩৮৫) আবূ উমামাহ (রাঃ) আমর ইবনু আবাসাহ (রাঃ) আমার কাছে রিওয়ায়াত করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তিনি বলতে শুনেছেনঃ আল্লাহ তাআলা শেষ রাতে তাঁর বান্দার সবচেয়ে নিকটবর্তী হন। অতএব যারা এ সময় আল্লাহর যিকর করে (নামায পড়ে ও দুআ করে), তুমি পারলে তাদের দলভূক্ত হয়ে যাও। সহীহঃ তালীকুর রাগীব (২/২৭৬), মিশকাত (১২২৯) উমারা ইবনু যা’কারা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা বলেনঃ আমার পূর্ণ বান্দা সেই ব্যক্তি যে তার শত্রুর সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় আমাকে মনে করে। যঈফ, যঈফা (৩১৩৫),আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু উপরোক্ত সূত্রে এ হাদীস জেনেছি। এর সনদসূত্র তেমন মজবুত নয়। এই হাদীসটি ব্যতীত উমার ইবনু যা’কারার কোন হাদীস আমাদের জানা নেই।

【119】

“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” পাঠ করার ফাযীলাত

ক্বাইস ইবনু সাদ ইবনু উবাদাহ (রাঃ) তার বাবা তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সেবার জন্য তাঁর কাছে অর্পণ করেন। তিনি বলেন, আমি নামাযরত থাকা অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছ দিয়ে গমন করলেন। তিনি নিজের পা দিয়ে আমাকে আঘাত (ইশারা) করে বললেনঃ আমি তোমাকে কি জান্নাতের দরজাগুলোর একটি দরজা সম্পর্কে জানাব না? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” (আল্লাহ ব্যতীত অনিষ্ট দূর করার এবং কল্যাণ লাভের কোন শক্তি কারো নেই)। সহীহঃ সহীহাহ (১৭৪৬) সাফওয়ান ইবনু সুলাইম তিনি বলেন, কোন ফেরেশতাই “লা –হাওলা ওয়ালা কু-ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” পাঠ না করে ঊর্ধ্বাকাশের দিকে গমন করেন না। এর সনদ সহীহ মাকতূ।

【120】

তাসবীহ, তাহলীল ও তাক্বদীসের ফাযীলাত

ইউসাইরাহ (রাঃ) তিনি ছিলেন হিজরতকারিণী মহিলাদের একজন –তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবশ্যই তোমরা তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ), তাহলীল (লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ) ও তাক্বদীস (সুব্বুহুন কুদ্দূসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ অথবা সুবহানালা মালিকিল কুদ্দূস) আঙ্গুলের গিরায় হিসাব করে পড়বে। কেননা এগুলোকে ক্বিয়ামাতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবে এবং কথা বলতে আদেশ দেয়া হবে। সুতরাং তোমরা রহমাত (অনুগ্রহের কারণ) সম্পর্কে উদাসীন থেকো না এবং তা ভুলে যেও না। হাসানঃ সহীহ আবূ দাঊদ (১৩৪৫), মিশকাত (২৩১৬), যঈফার (৮৩) নং হাদীসের অধীনে।

【121】

যুদ্ধের সময় দু’আ

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, জিহাদ করার সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! তুমিই আমার বাহুবল, তুমিই আমার সাহায্যকারী এবং তোমার সহযোগিতায় আমি যুদ্ধ করি”। সহীহঃ আল –কালিমুত তাইয়্যিব (১২৫), সহীহ আবূ দাঊদ (২৩৬৬)

【122】

আরাফার দিনের দুআ

‘আমর ইবনু শুআইব (রহঃ) কর্তৃক পর্যায়ক্রমে তার বাবা ও তার দাদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আরাফাতের দিনের দু’আই উত্তম দু’আ। আমি ও আমার আগের নাবীগণ যা বলেছিলেন তার মধ্যে সর্বোত্তম কথাঃ “আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই, সার্বভৌমত্ব তারই এবং সমস্ত কিছুর উপর তিনি সর্বশক্তিমান”। হাসানঃ মিশকাত (২৫৯৮), তা’লীকুর রাগীব (২/২৪২), সহীহাহ (১৫০৩)।

【123】

উমার (রাঃ)-কে শিখানো দু‘আ

উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে (দু’আ) শিখিয়ে বলেনঃ তুমি বল, “হে আল্লাহ্‌! আমার বাহিরের অবস্থার চেয়ে আমার ভিতরের অবস্থাকে বেশি ভাল কর এবং আমার বাহিরের অবস্থাকেও অতি উত্তম কর। হে আল্লাহ্‌! তুমি মানুষকে যে ধন-দৌলত, পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্তুতি দিয়ে থাক, তাতে আমাকে উত্তমগুলোই দাও, যারা বিপথগামী এবং বিপথগামীকারীও নয়। ” যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (২৫০৪), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি গারীব। আমরা শুধু উপরোক্ত সূত্রেই এ হাদীস জেনেছি এবং এর সনদসূত্র তেমন মজবুত নয়।

【124】

হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী

আসিম ইবনু কুলাইব (রাহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদা ৩৫৮৭. আসিম ইবনু কুলাইব (রাহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের) নিকট গেলাম, তখন তিনি নামায আদায় করছিলেন। তিনি তার বাম হাত বাম ঊরুর উপর এবং ডান হাত ডান ঊরুর উপর রাখেন এবং তর্জনী উঠিয়ে অবশিষ্ট আঙ্গুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে রেখে বলেনঃ “হে অন্তরসমূহের ওলট-পালটকারী! তুমি আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর অটল রাখ”। এই বর্ণনায় হাদীসটি মুনকার, দেখুন হাদীস নং (২৯১, ২৯২, ২১২৮, ৩৩৫০), আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি উক্ত সনদূত্রে গারীব।

【125】

ব্যথা উপশমের দুআ

মুহাম্মাদ ইবনু সালিম (রহঃ) সাবিত আল –বুনানী (রহঃ) আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ! তোমার কোন অংশে ব্যথা হলে তুমি ব্যথার জায়গায় তোমার হাত রেখে বলঃ “আল্লাহ তাআলার নামে, আমি আল্লাহ তাআলার অসীম সম্মান ও তাঁর বিরাট ক্ষমতার নিকট আমার এ ব্যথার অনুভূতি ও অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থণা করি”। তারপর তোমার হাত তুমি তুলে নাও, পরে পুণরায় ঐ নিয়মে বেজোড় সংখ্যায় উক্ত দুআ পাঠ কর। কেননা আমাকে আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেছেন যে, তাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ দু’আ বলে দিয়েছেন। সহীহঃ সহীহাহ (১২৫৮)

【126】

উম্মু সালামার দু’আ

উম্মু সালামা (রাঃ) উম্মু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এই দু‘আটি শিখিয়েছেন এবং বলেছেনঃ তুমি পাঠ কর “হে আল্লাহ্‌! এটা তোমার রাত আসার, তোমার দিন চলে যাওয়ার, তোমার দিকে আহবানকারীর (মুয়াজ্জিনের) আওয়াজ দেয়ার এবং তোমার নামাযে হাযির হওয়ার সময়। আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করি যে, তুমি আমাকে মাফ করে দাও”। যঈফ, আল-কালিমুত-তায়্যির (৭৬/৩৫), যঈফ আবূ দাঊদ (৮৫), মিশকাত (৬৬৯) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন বান্দা সততার সাথে “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” বললে তার জন্য আকাশের দ্বারগুলো খোলা হয়। ফলে উক্ত কালিমাহ আরশে আজীম পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যতক্ষণ সে কবীরাহ গুনাহ ত্যাগ করে”। হাসানঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (২৩১৪), তালীকুর রাগীব (২/২৩৮) যিয়াদ ইবনু ইলাক্বাহ (রহঃ) হতে তার চাচা তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে গর্হিত চরিত্র, গর্হিত কাজ ও কু-প্রবৃত্তি হতে আশ্রয় চাই”। সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (২৪৭১) ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে নামায পড়ছিলাম। সে সময় সমাগত লোকদের মাঝে হতে এক লোক বলল, “আল্লাহ মহান, অতি মহান, আল্লাহ তা’আলার জন্য অনেক অনেক প্রশংসা এবং সকাল-সন্ধ্যা আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি”। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এই এই কথা কে বলেছে? উপস্থিত লোকদের মাঝে এক লোক বলল, আমি হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেনঃ এ দু’আয় আমি খুব আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। এ বাক্যগুলোর জন্য আকাশের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে আমি এ কথা শুনার পর থেকে কখনো তা পাঠ করা পরিহার করিনি। সহীহঃ সিফাতুস সালাত (৭৪), মুসলিম

【127】

আল্লাহ তা’আলার নিকট কোন কথাটি বেশি প্রিয়

আবূ যার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখতে যান অথবা তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখতে যান। আবূ যার (রাঃ) বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক। আল্লাহ তা’আলার নিকট কোন কথা বেশি প্রিয়? তিনি বললেনঃ আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাদের জন্য যে বাক্যটি নির্বাচন করেছেনঃ “সুবাহানা রাব্বী ওয়া বিহামদিহী সুবহানা রাব্বী ওয়া বিহামদিহী” (আমার পালনকর্তা অতীব পবিত্র, সকল প্রশংসা তাঁর জন্য, আমার পালনকর্তা অতীব পবিত্র, সকল প্রশংসা তাঁর জন্য) সহীহঃ তালীকুর রাগীব (২/২৪২), সহীহাহ (১৪৯৮), মুসলিম

【128】

ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আযান ও ইক্বামাতের মাঝের সময়ের দুআ প্রত্যাখ্যাত হয় না”। সাহাবাগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! (ঐ সময়ে) আমরা কি বলব? তিনি বললেনঃ “তোমরা আল্লাহর নিকট ইহকাল ও পরকালের নিরাপত্তা প্রার্থনা কর”। এই পূর্ণাঙ্গ বর্ণনাটি মুনকারঃ আল–কালিমুত তাইয়্যিব (৪৭/৫১), ‘ইরওয়াহ (১/২৬২), নাক্বদুত তাজ (৯৫), তা’লীকুর রাগীব (১/১১৫), সহীহ আবূ দাঊদ (৫৩৪)। তবে “সালুল্লাহা….” বর্ণনাটি অন্য হাদীসে সাব্যস্ত আছে। ৩২৮৩ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত রয়েছে। আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না। সহীহঃ ২১২ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হালকা-পাতলা লোকেরা অগ্রগামী হয়ে গেছে। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! হালকা-পাতলা লোক কারা? তিনি বলেনঃ যে সকল লোক আল্লাহ্‌ তা’আলার স্মরণে নিমগ্ন থাকে এবং আল্লাহ্‌র যিকির (স্মরণ) তাদের (পাপের) ভারী বোঝাটি তাদের হতে সরিয়ে ফেলে। ফলে কিয়ামাতের দিন তারা আল্লাহ্‌ তা’আলার সম্মুখে হালকা বোঝা নিয়েই হাযির হবে। যঈফ, যঈফা (৩৬৯০), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “সুবহানাল্লাহ ওয়াল-হামদু লিল্লাহ ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার” (আল্লাহ অতীব পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবূদ নেই, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ) বলা আমার কাছে যে সকল জিনিসের উপর সূর্য উদিত হয় তা হতে বেশি পছন্দনীয়। সহীহঃ মুসলিম (৮/৭০) আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন ধরনের লোকের দু’আ কখনও ফিরিয়ে দেয়া হয় না। রোযাদার যতক্ষণ ইফতার না করে, সুবিচারক শাসকের দু’আ এবং মজলুমের (নির্যাতিতের) দু’আ। আল্লাহ্‌ তা’আলা ঐ দু’আগুলি মেঘমালার উপরে (আকাশের) তুলে নেন এবং এর জন্য আকাশের দ্বারগুলো খুলে দেয়া হয়। রব্বুল আলামীন বলেনঃ আমার মর্যাদার শপথ ! আমি নিশ্চয়ই তোমার সাহায্য করব কিছু দেরি হলেও। দুর্বল, কিন্তু হাদীসের প্রথম অংশ সহীহ, আর তাতে ন্যায় পরায়ন শাসকের পরিবর্তে মুসাফির শব্দ আছে। আরেক বর্ণনায় পিতার উল্লেখ আছে। ইবনু মাজাহ (১৭৫২)। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। সাদান আল-কুম্মী হলেন সাদান ইবনু বিশর। ঈসা ইবনু ইউনুস, আবূ আসিম প্রমুখ বয়স্ক হাদীস বিশারদগণ তার সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবূ মুজাহিদ হলেন সা’দ আত-তাঈ এবং আবূ মুদিল্লাহ হলেন উম্মুল মু’মিনীন আইশা (রাঃ)-এর স্বাধীন গোলাম। আমরা শুধু এ হাদীসের মাধ্যমেই তার পরিচয় পেয়েছি এবং তার হতে এ হাদীসটি আরো বর্ধিত ও সম্পূর্ণভাবে বর্ণিত হয়েছে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে আল্লাহ! আমাকে তুমি যা শিখিয়েছ তা দিয়ে আমাকে উপকৃত কর, আমার জন্য যা উপকারী হবে তা আমাকে শিখিয়ে দাও এবং আমার ইলম (জ্ঞান) বাড়িয়ে দাও। সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা এবং আমি জাহান্নামীদের অবস্থা থেকে হিফাযাতের জন্য আল্লাহর নিকটে আশ্রয় প্রার্থণা করি। হাদীসে বর্ণিত আলহামদুলিল্লাহ ….. অংশ বাদে হাদীসটি সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ২৫১, ৩৮৩৩)

【129】

যামীনে আল্লাহর পক্ষ হতে বিচরণকারী ফেরেশতা প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরাহ্ অথবা আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের ‘আমালনামা লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতাগণ ছাড়া আল্লাহ তা’আলার আরও কিছু ফেরেশতা আছেন যারা দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ান। তারা আল্লাহ তা’আলার যিকরে রত ব্যক্তিদের পেয়ে গেলে একে অন্যকে ডেকে বলেন, নিজেদের উদ্দেশ্যে তোমরা এদিকে চলে এসো। অতএব তারা সেদিকে ছুটে আসেন এবং যিকরে রত লোকদের পৃথিবীর নিকটবর্তী আকাশ পর্যন্ত পরিবেষ্টন করে রাখেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা সে সময় (ফেরেশতাদের) বলেন, আমার বান্দাদেরকে তোমরা কি কাজে রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছ? ফেরেশতারা বলেন, আমরা তাদেরকে আপনার প্রশংসারত, আপনার মর্যাদা বর্ণনারত এবং আপনার যিকরে রত অবস্থায় ছেড়ে এসেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তাদেরকে আল্লাহ তা’আলা বলেন, তারা আমাকে দেখেছে কি? তারা বলেন, না। নবী বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা পুণরায় প্রশ্ন করেন, তারা আমাকে দেখলে কেমন হত? ফেরেশতারা বলেন, তারা আপনার দর্শন পেলে আপনার অনেক বেশি প্রশংসাকারী, অধিক মাহাত্ম্য বর্ণনাকারী এবং অধিক যিকরকারী হত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা ফেরেশতাদের আবারও বলেন, আমার কাছে তারা কি চায়? ফেরেশতারা বলেন, আপনার নিকট তারা জান্নাত পেতে চায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা প্রশ্ন করেন, তারা তা দেখেছে কি? ফেরেশতারা বলেন, না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে প্রশ্ন করেন, তারা তা প্রত্যক্ষ করলে কেমন হত? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ফেরেশতাগণ বলেন, তারা জান্নাতের দর্শন পেলে তা পাওয়ার আরও অধিক প্রার্থনা করত, আরো বেশি আকাঙ্ক্ষা করত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা আবারও প্রশ্ন করেন, তারা কোন বস্তু থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে? ফেরেশতারা বলেন, তারা জাহান্নাম হতে আশ্রয় প্রার্থণা করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, তারা তা দেখেছে কি? ফেরেশতারা বলেন, না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, তারা তা প্রত্যক্ষ করলে কেমন হত? ফেরেশতারা বলেন, তারা তা প্রত্যক্ষ করেলে তা থেকে আরো অধিক পালিয়ে যেত, আরো বেশি ভয় করত এবং তা থেকে বাঁচার জন্য বেশি বেশি আশ্রয় প্রার্থণা করত। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, তোমাদেরকে আমি সাক্ষী করছি যে, আমি তাদেরকে মাফ করে দিলাম। তখন ফেরেশতারা বলেন, তাদের মাঝে এমন এক লোক আছে যে তাদের সঙ্গে একত্র হওয়ার জন্য আসেনি, বরং ভিন্ন কোন দরকারে এসেছে। সে সময় আল্লাহ তা’আলা বলেন, তারা এরূপ একদল ব্যক্তি যে, তাদের সাথে উপবেশনকারী-ও বঞ্চিত হয় না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【130】

“লা-হাওলা ওয়ালা কু-ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” –এর ফাযীলাত

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) আমাকে মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বেশি বেশি বল। কেননা, তা জান্নাতের রত্নভান্ডারের অন্তর্ভূক্ত। মাকহূল (রহঃ) বলেন, যে লোক “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ ওয়ালা মানজায়া মিনাল্লাহি ইল্লা ইলাইহি” পাঠ করে, আল্লাহ তা’আলা তার হতে সত্তর প্রকারের অনিষ্ট অপসারণ করেন এবং এগুলোর মাঝে সাধারণ বা ক্ষুদ্র বিপদ হল দরিদ্রতা। মাকহুলের উক্তি “ফামান ক্বালা …..” এই অংশ ব্যতীত হাদীসটি সহীহ কেননা ঐ অংশ মাক্বতূ সহীহাহ (১০৫, ১৫২৮) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি নাবীরই একটি দুআ আছে যা ক্ববূল হয়। আমার উক্ত দুআ (ক্বিয়ামাতের দিন) আমি আমার উম্মাতের শাফা’আতের জন্য সংরক্ষিত রেখেছি। ইনশাআল্লাহ সেই দু’আটি সে লোক পাবে যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলার সঙ্গে অন্য কিছুকে অংশীদার করেনি। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম

【131】

আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে সু-ধারণা রাখা

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমাকে আমার বান্দা যেভাবে ধারণা করে আমি (তার জন্য) সে রকম। যখন সে আমাকে মনে করে সে সময় আমি তার সঙ্গেই থাকি। সুতরাং সে আমাকে মনে মনে স্মরণ করলে তাকে আমিও মনে মনে স্মরণ করি। আমাকে সে মাজলিসে স্মরণ করলে আমিও তাকে তাদের চাইতে ভাল মজলিসে (ফেরেশতাদের মাজলিসে) মনে করি। সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে এলে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে, তবে তার দিকে আমি এক বাহু এগিয়ে যাই। সে আমার দিকে হেটে অগ্রসর হলে আমি তার দিকে দৌঁড়িয়ে এগিয়ে যাই। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৩৮২২), বুখারী ও মুসলিম।

【132】

আশ্রয় প্রার্থনা প্রসঙ্গে

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ তা’আলার নিকটে জাহান্নামের শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থণা কর, আল্লাহ তা’আলার নিকট তোমরা ক্ববরের শাস্তি হতে মুক্তি কামনা কর, তোমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে মসীহ দাজ্জালের যুলম হতে মুক্তি চাও, তোমরা আল্লাহ তা’আলার নিকট জীবন ও মুত্যর বিপর্যয় হতে আশ্রয় প্রার্থনা কর। সনদ সহীহঃ মুসলিম (২/৯৩), তাশাহুদের বর্ণনার সাথে আরেক বর্ণনায় শেষ তাশাহুদে” এই কথা উল্লেখ আছে। সিফাতুস সালাত (১৬৩) আবূ ঈসা বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ। ----------------- ৩৬০৪/১. আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে তিনবার বলে, “আল্লাহ তা’আলার নিকট আমি তাঁর সম্পূর্ণ কালামের ওয়াসীলায় আশ্রয় প্রার্থনা করি, সে সকল অনিষ্ট হতে, যা তিনি সৃষ্টি করেছেন”, ঐ রাতে কোন বিষ তার অনিষ্ট করতে পারবে না। সুহাইল (রহঃ) বলেন, আমার পরিবারের লোকেরা এই দুআ শিখে তা প্রতি রাতে পড়ত। একদিন তাদের একটি মেয়ে দংশিত হয়, কিন্তু তাতে সে কোন যন্ত্রণা অনুভব করেনি। সহীহঃ তালীকুর রাগীব (১/২২৬), মুসলিম সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনা করেছেন। আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান। মালিক ইবনু আনাস (রহঃ) এ হাদীস সুহাইল ইবনু আবী সালিহ্ হতে, তিনি তাঁর বাবা হতে, তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এই সনদে রিওয়ায়াত করেছেন। এ হাদীস উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘উমার প্রমুখ সুহাইল (রহঃ) হতে রিওয়ায়াত করেছেন, কিন্তু তাতে আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর উল্লেখ করেননি। ----------------------- ৩৬০৪/২. আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের) নিকট হতে একটি দু’আ আয়ত্ত করেছি, যা আমি কখনও বাদ দেই নাঃ “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে বেশি পরিমাণে তোমার প্রতি শুকরিয়া প্রকাশকারী, তোমাকে অধিক স্মরণকারী, তোমার নাসিহাতের অনুসারী এবং তোমার ওয়াসিয়াত (নির্দেশ) স্মরণকারী বানাও”। যইফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (২৪৯৯), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। ------------------ অনুচ্ছেদ-১৩৪ সম্পর্ক ছিন্নকারী দু’আ ব্যতীত দু’আ ক্ববূল হওয়া প্রসঙ্গে। ৩৬০৪/৩. আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কোন ব্যক্তি আল্লাহর নিকট কোন দু’আ করলে তার দু’আ ক্ববূল হয়। হয়তোবা সে দুনিয়াতেই তার ফল পেয়ে যায় অথবা তা তার আখিরাতের পাথেয় হিসেবে জমা রাখা হয় অথবা তার দু’আর সম-পরিমাণ তার গুনাহ মাফ করা হয়, যতক্ষণ না সে পাপ কাজের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার দুআ করে অথবা দুআ ক্ববূলের জন্য তাড়াতাড়ি করে। সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাড়াতাড়ি করে কিভাবে? তিনি বলেনঃ সে বলে, আমি আমার আল্লাহর নিকটে দু’আ করেছিলাম, কিন্তু আমার দু’আ তিনি ক্ববূল করেননি। “হয়তোবা তার দু’আর সমপরিমাণ গুনাহ মাফ করা হয়” এই অংশ ব্যতীত হাদীসটি সহীহ। যঈফাহ (হাঃ ৪৪৮৩) আবূ ঈসা বলেন, উপর্যুক্ত সূত্রে এ হাদীসটি গারীব। ----------------------- ৩৬০৪/৪. আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে সময় কোন বান্দা তার দুই হাত উপরের দিকে উত্তোলন করে, এমনকি তার বগল খুলে আল্লাহর নিকটে কিছু প্রার্থনা করে, তখন তিনি অবশ্যই তাকে তা দেন, যদি সে তাড়াহুড়া না করে। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তার তাড়াহুড়া কি? তিনি বললেনঃ সে বলে, আমি তো প্রার্থনা করছি, আবারও প্রার্থনা করেছি (অধিকবার প্রার্থনা করছি), কিন্তু আমাকে কিছুই দান করা হয়নি। “হাত উত্তোলন” অংশ ব্যতীত হাদীসটি সহীহঃ প্রাগুক্ত, মুসলিম অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটি যুহরী (রহঃ) ইবনু ‘আযহারের মুক্তদাস আবূ উবাইদ হতে, তিনি আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে, তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এই সনদে রিওয়ায়াত করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের যে কারো দু’আ ক্ববূল হয়ে থাকে, যতক্ষণ না সে তড়িঘড়ি করে এবং বলে, আমি দু’আ করলাম কিন্তু ক্ববূল তো হল না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ----------------- অনুচ্ছেদ-১৩৫ আল্লাহ! আমার শ্রবণ শক্তি দ্বারা আমাকে উপকৃত কর। ৩৬০৪/৫. আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আলাহ তা’আলা প্রসঙ্গে ভাল উপলব্ধি পোষণও আল্লাহ্‌র উত্তম ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত। যঈফ, যঈফা (৩১৫০), আবূ ঈসা বলেনঃ উক্ত সনদসূত্রে এ হাদীসটী গারীব। ----------------- অনুচ্ছেদ-১৩৬ সকল সময়েই কল্যাণের ইচ্ছা করবে ৩৬০৪/৬. আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান (রাঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের যে কেউ অবশ্যই লক্ষ্য রাখবে যে, সে কি (পাওয়ার) ইচ্ছা করছে। যেহেতু সে জানেনা যে, তার চাওয়ার ভিত্তিতে তার জন্য কি লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে (তাই সর্বদা উত্তম ধারণা ও উত্তম কিছু চাইতে হবে)। দুর্বল, যঈফা (৪৪০৫), আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। ------------------- ৩৬০৪/৭. আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! আমার কর্ণ ও চক্ষুর মাধ্যমে আমাকে উপকৃত কর এবং এ দুটোকে আমার উত্তরাধিকারী কর (মৃত্যু পর্যন্ত অটুট রাখ), যে লোক আমার উপর অত্যাচার করে তার বিরুদ্ধে আমায় তুমি সহযোগিতা কর এবং তার হতে তুমি আমার প্রতিশোধ গ্রহণ কর”। হাসানঃ রাওযুন নাযীর (১৯০) আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি উক্ত সনদসূত্রে হাসান গারীব। ---------------- ৩৬০৪/৮. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই যেন তার প্রতিটি অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে তার রবের নিকটে প্রার্থনা করে, এমনকি তার জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলে তাও যেন তাঁর নিকটে চায়। যঈফ, যঈফা (১৩৬২) আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। একাধিক রাবী এ হাদীস জাফর ইবনু সুলাইমান হতে তিনি সাবিত আল-বুনানী হতে তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তাতে তারা আনাস (রাঃ)-এর উল্লেখ করেননি। ------------------- ৩৬০৪/৯. সাবিত আল-বুনানী (রাহঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের সকলেই যেন তার অভাব পূরণের উদ্দেশ্যে তার রবের নিকটে প্রার্থনা করে, এমনকি তার লবণের জন্যও, এমনকি তার জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলে তার জন্যও তাঁর নিকটে প্রার্থনা করে। যঈফ, প্রাগুক্ত আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি কাতান হতে জাফর ইবনু সুলাইমান-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসের তুলনায় বেশি সহীহ।