46. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণের মর্যাদা

【1】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মর্যাদা

ওয়াসিলাহ্‌ ইবনুল আসক্বা' (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা ইব্‌রাহীম ('আঃ)-এর সন্তানদের মধ্য হতে ইসমাঈল ('আঃ)-কে বেছে নিয়েছেন এবং ইসমাঈল-এর বংশে কিনানাহ্‌ গোত্রকে বংশ বেছে নিয়েছেন, কিনানাহ্‌ গোত্র হতে কুরাইশ বংশকে বেছে নিয়েছেন, কুরাইশ বংশ থেকে হাশিম উপগোত্রকে বেছে নিয়েছেন এবং বানী হাশিম হতে আমাকে বেছে নিয়েছেন। ইবরাহীম ('আঃ)-এর সন্তানদের মধ্যে হতে ইসমাঈল ('আঃ)-কে বেছে নিয়েছেন” অংশটুকু ব্যতীত হাদীসটি সহীহ। সহীহাহ্‌ (৩০২) । ওয়াসিলাহ্‌ ইবনুল আস্‌ক্বা' (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ইসমাঈল ('আঃ)এর বংশধর হতে কিনানাহ্‌ গোত্রকে বাছাই করেছেন, কিনানাহ্‌ গোত্র হতে কুরাইশকে বাছাই করেছেন, আবার কুরাইশদের মধ্য হতে হাশিমকে বাছাই করেছেন এবং বনূ হাশিম হতে আমাকে বাছাই করেছেন। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (৩০২), মুসলিম। আল-আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! কুরাইশগণ এক সাথে বসে একে অপরে তাদের বংশমর্যাদা প্রসঙ্গে আলোচনা করে এবং মাটিতে আবর্জনার স্তুপের উপরকার খেজুর গাছের সাথে আপনাকে তুলনা করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা সকল জীব সৃষ্টি করেছেন এবং আমাকে তাদের সব চাইতে ভাল গোত্রে সৃষ্টি করেছেন এবং দুই দলকে তিনি বেছে নেন (ইসহাক ও ইসমাঈল বংশ), তারপর গোত্র ও বংশগুলোকে তিনি বাছাই করেন এবং আমাকে সবচাইতে ভাল বংশে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি ঘরসমূহ বাছাই করেছেন এবং আমাকে সেই ঘরগুলোর মধ্যে সবচাইতে ভাল ঘরে সৃষ্টি করেছেন। অতএব আমি ব্যক্তিসত্তায় তাদের সবচাইতে উত্তম বংশ-খান্দানেও সবার চাইতে উত্তম। যঈফ, নাকদুল কাত্তানী (৩১-৩২), যঈফা (৩০৭৩) আল-মুত্তালিব ইবনু আবু ওয়াদাআ (রাহঃ) তিনি বলেনঃ আল-আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের) নিকটে এলেন। মনে হয় তিনি কিছু (কুরাইশদের মন্তব্য) শুনে এসেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিয়ারে উঠে দাড়িয়ে বললেনঃ আমি কে? সাহাবীগণ বললেন, আপনি আল্লাহর রাসূল, আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তিনি বললেনঃ আমি মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল্লাহ ইবনু আবদুল মুত্তালিব। আল্লাহ তা'আলা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের মধ্যে সবচাইতে ভাল লোকদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তারপর তিনি তার সৃষ্টিকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন এবং আমাকে তাদের মধ্যকার উত্তম দল হতে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি তাদেরকে কিছু গোত্রে ভাগ করেছেন এবং আমাকে তাদের মধ্যকার ভাল গোত্র হতে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি তাদেরকে কিছু পরিবারে ভাগ করেছেন এবং আমাকে তাদের মধ্যকার সবচাইতে ভাল পরিবারে ও ভাল ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন। যঈফ, যঈফা (৩০৭৩) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনার নবূওয়াত কখন অবধারিত হয়েছে? তিনি বললেনঃ যখন আদম ('আঃ) তাঁর শরীর ও রুহের মধ্যে ছিল। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (১৮৫৬), মিশকাত (৫৭৫৮) । আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে দিন লোকদেরকে উঠানো হবে (কবর হতে কিয়ামাতের মাঠে) সেদিন আমিই সর্বপ্রথম আত্মপ্রকাশকারী হব। যখন সকল মানুষ আল্লাহ্ তা'আলার আদালতে একত্র হবে, তখন আমি তাদের ব্যাপারে বক্তব্য উত্থাপন করব। তারা যখন নিরাশ ও হতাশাগ্রস্ত হবে তখন আমিই তাদের সুখবর প্রদানকারী হব। সে দিন প্রশংসার পতাকা আমার হাতেই থাকবে। আমার প্রতিপালকের নিকট আদম-সন্তানদের মধ্যে আমিই সবচাইতে সম্মানিত, এতে গর্বের কিছু নেই। যঈফ, মিশকাত (৫৭৬৫) আবু হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি যার জন্য যমিন ফাক করা হবে (সবার আগে আমিই কবর হতে উঠবো)। তারপর আমাকে জান্নাতের (একজোড়া) পোশাক পরানো হবে। তারপর আমি আরশের ডান পাশে গিয়ে দাড়াব। আমি ছাড়া সৃষ্টিকুলের কেউই সেই জায়গায় দাড়াতে পারবে না। যঈফ, মিশকাত (৫৭৬৬) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার জন্য তোমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে ওয়াসীলাহ্‌ কামনা কর। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! ওয়াসীলাহ্‌ কি? তিনি বললেনঃ জান্নাতের সবচাইতে উঁচু স্তর। শুধুমাত্র এক লোকই তা অর্জন করবে। আশা করি আমিই হব সেই ব্যক্তি। সহীহঃ মিশকাত (৫৭৬৭), মুসলিম (২/৪) । উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (পূর্ববর্তী) নাবীগণের মাঝে আমার উপমা সেই লোকের মত যে একটি সুরম্য, সম্পূর্ণ ও সুশোভিত প্রাসাদ নির্মাণ করল, কিন্তু একটি ইটের জায়গা অসম্পূর্ণ রেখে দিল। জনগণ প্রাসাদটি প্রদক্ষিণ করত এবং তাতে অবাক হয়ে বলত, যদি তার নির্মাণকারী ঐ ইটের জায়গাটি পূর্ণ করত! অতএব আমি নাবীগণের মাঝে সেই ইটের জায়গার সমতুল্য। সহীহঃ তাখরীজু ফিক্‌সিহ সীরাহ্‌ (১৪১), বুখারী ও মুসলিম জাবিরও আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। একই সনদে নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ ক্বিয়ামতের দিন আমিই হব নাবীগণের ইমাম (নেতা), তাঁদের মুখপাত্র এবং তাদের সুপারিশকারী, এতে কোন গর্ব নেই। হাসানঃ মিশকাত (৫৭৬৮) । আবদুল্লাহ ইবনু 'আম্‌র (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ তোমরা মু'আযযিনের আযান যখন শুনবে সে সময় তোমরা তার মতো বলবে, তারপর আমার উপর দরূদ পড়বে। কেননা যে লোক আমার প্রতি একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি এর বিনিময়ে দশবার দয়া বর্ষণ করেন। তারপর আমার জন্য তোমরা আল্লাহ তা’আলার নিকটে ওয়াসীলাহ্‌ প্রার্থণা কর। কেননা ওয়াসীলাহ্‌ হল জান্নাতের এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ জায়গা যা আল্লাহ তা’আলার বান্দাদের মাঝে শুধুমাত্র একজনই অর্জন করবে। আশা করি আমিই হব সেই বান্দা। আমার জন্য যে লোক উসীলা প্রার্থণা করল তার জন্য (আমার) সুপারিশ অবধারিত হল। সহীহঃ ইরওয়া (২৪২), তা'লীক্ব 'আলা বিদাইয়াতিস্‌ সূল (২০/৫২), মুসলিম। আবূ সা'ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ক্বিয়ামাতের দিন আমি আদম-সন্তানদের ইমাম (নেতা) হব, এতে অহংকার নেই। হামদের (আল্লাহ তা’আলার প্রশংসার) পতাকা আমার হাতেই থাকবে, এতেও গর্ব নেই। সে দিন আল্লাহ তা’আলার নবী আদম ('আঃ) এবং নাবীগণের সকলেই আমার পতাকার নীচে থাকবেন। সর্বপ্রথম আমার জন্য মাটিকে বিদীর্ণ করা হবে, এতে কোন অহংকার নেই। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৪৩০৮) এর কিছু অংশ মুসলিমেও আছে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের) কিছু সাহাবী তাঁর প্রতীক্ষায় বসে ছিলেন। রাবী বলেন, তিনি বের হয়ে তাদের নিকট এসে তাদের কথাবার্তা শুনলেন। তাদের কেউ বললেন, বিস্ময়ের বিষয়। আল্লাহ তা'আলা তার সৃষ্টিকুলের মধ্য হতে (একজনকে) নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বানিয়েছেন। তিনি ইবরাহীম (আঃ)-কে নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধু বানিয়েছেন। আরেকজন বললেন, এর চেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার হলঃ মূসা আলাইহিস সালাম-এর সাথে তাঁর সরাসরি কথাবার্তা। আরেকজন বললেন, ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কালিমা ("কুন" (হও) দ্বারা সৃষ্ট) এবং তাঁর দেয়া রূহ। আরেকজন বললেন, আদম আলাইহিস সালাম-কে আল্লাহ তা'আলা পছন্দ করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকটে বের হয়ে তাদেরকে সালাম করে বললেনঃ আমি তোমাদের কথাবার্তা ও তোমাদের বিস্ময়ের ব্যাপারটা শুনেছি। নিশ্চয় ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আল্লাহ তা'আলার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সত্যিই তিনি তাই। মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তা'আলার সাথে বাক্যালাপকারী, সত্যিই তিনি তাই। ঈসা আলাইহিস সালাম তার রূহ ও কালিমা, সত্যিই তিনি তাই। আর আদম আলাইহিস সালাম-কে আল্লাহ তা'আলা পছন্দ করেছেন, সত্যিই তিনিও তাই। কিন্তু আমি আল্লাহ্ তা'আলার হাবীব (প্রিয় বন্ধু), তাতে কোন গর্ব নেই। কিয়ামাত দিবসে আমিই হব প্রশংসার পতাকা বহনকারী তাতে কোন গর্ব নেই। কিয়ামাতের দিন আমিই সর্বপ্রথম শাফাআতকারী এবং সর্ব প্রথমে আমার শাফাআতই ক্ববূল হবে, তাতেও কোন গর্ব নেই। সর্ব প্রথমে আমিই জান্নাতের (দরজার) কড়া নাড়ব। সুতরাং আল্লাহ তা'আলা আমার জন্য তার দরজা খুলে দিবেন, আমাকেই সর্বপ্রথম জান্নাতে পাঠাবেন এবং আমার সাথে থাকবে গরীব মু’মিনগণও, এতেও গর্বের কিছু নেই। আমি আগে ও পরের সকল লোকের মধ্যে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন ও সম্মানিত, এতেও গর্বের কিছু নেই। যঈফ, মিশকাত (৫৭৬২) মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ ইবনি আব্দিল্লাহ ইবনি সালাম তার পিতা হতে তার দাদা (তার দাদা) বলেছেন তাওরাতে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং ঈসা আলাইহিস সালাম-এর গুনাবলী লিখা আছে এবং তাকে (ঈসা আলাইহিস সালাম-কে) তার সাথে দাফন করা হবে। আবু মাওদুদ বলেন (আইশা (রাঃ) ঘরে কবরের জন্য জায়গা অবশিষ্ট আছে। যঈফ, মিশকাত (৫৭৭২) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে দিন হিজরত করে মাদীনায় প্রবেশ করেন সেদিন সেখানকার প্রতিটি জিনিস জ্যোতির্ময় হয়ে যায়। তারপর যে দিন তিনি মৃত্যুবরণ করেন সেদিন আবার সেখানকার প্রত্যেকটি বস্তু অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। তাঁর দাফনকার্য আমরা সমাপ্ত করে হাত থেকে ধূলা না ঝাড়তেই আমাদের মনে পরিবর্তন এসে গেল (ঈমানের জোর কমে গেল) । সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৬৩১) ।

【2】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের) জন্ম হওয়া প্রসঙ্গে

কাইস ইবনু মাখরামা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হস্তী বছরে (আবরাহার বাহিনী ধ্বংসের বছর) জন্মগ্রহণ করি। তিনি বলেন, ইয়াসার ইবনু লাইস গোত্রীয় কুবাস ইবনু আশইয়ামকে উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) প্রশ্ন করেন, আপনি বড় নাকি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার চাইতে অনেক বড়, তবে আমি তাঁর আগে জন্মগ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতীর বছর জন্ম গ্রহণ করেছেন। আমার মা আমাকে এমন জায়গায় নিয়ে গেলেন যেখানে গিয়ে আমি পাখিগুলোর (হাতিগুলোর) মলের রং সবুজে বদল হয়ে যেতে দেখেছি।

【3】

নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুওয়াতের আবির্ভাব

আবূ মূসা আল–আশ'আরী (রাঃ) আবূ মূসা আল–আশ'আরী (রাঃ) বলেনঃ কিছু প্রবীণ কুরাইশসহ আবূ তালিব (ব্যবসার উদ্দেশ্যে) সিরিয়ার দিকে রওয়ানা হলে নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাথে রওয়ানা হন। তারা (বুহাইরাহ্‌) পাদ্রীর নিকট পৌঁছে তাদের নিজেদের সওয়ারী থেকে মালপত্র নামাতে থাকে, তখন উক্ত পাদ্রী (গীর্জা থেকে বেরিয়ে) তাদের নিকটে এলেন। অথচ এ কাফিলা এর আগে অনেকবার এখান দিয়ে চলাচল করেছে কিন্তু তিনি কখনও তাদের নিকট (গীর্জা) বেরিয়ে আসেননি বা তাদের প্রতি ভ্রুক্ষেপও করেননি। রাবী বলেন, লোকেরা তাদের বাহন থেকে সামানপত্র নামাতে ব্যস্ত থাকাবস্থায় উক্ত পাদ্রী তাদের ভেতরে ঢোকেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাত ধরে বলেন, ইনি “সাইয়্যিদুল 'আলামীন” (বিশ্ববাসীর নেতা), ইনি রাসূল রাব্বিল 'আলামীন (বিশ্ববাসীর প্রতিপালকের রাসূল) এবং আল্লাহ তা’আলা তাঁকে রহমাতুল্লিল 'আলামীন করে (বিশ্ববাসীর জন্য করুণা স্বরূপ) পাঠাবেন। তখন কুরাইশদের বৃদ্ধ লোকেরা তাকে প্রশ্ন করে, কে আপনাকে জানিয়েছে? তিনি বলেন, যখন তোমরা এ উপত্যকা হতে নামছিলে, (তখন আমি লক্ষ্য করেছি যে,) প্রতিটি গাছ ও পাথর সিজদায় লুটিয়ে পড়ছে। এই দু'টি নবী ব্যতীত অন্য কোন সৃষ্টিকে সাজদাহ্‌ করে না। এতদভিন্ন তাঁর ঘারের নীচে আপেল সদৃশ গোলাকার মোহরে নবুওয়াতের সাহায্যে আমি তাঁকে চিনেছি। পাদ্রী তার খানকায় ফিরে গিয়ে তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন। তিনি খাদ্যদ্রব্যসহ যখন তাদের নিকটে এলেন তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটের পাল চরাতে গিয়েছিলেন। পাদ্রী বলেন, তোমরা তাকে ডেকে আনার ব্যবস্থা কর। অতএব রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে এলেন, তখন একখন্ড মেঘ তাঁর উপর ছায়া বিস্তার করেছিল এবং কাফিলার লোকেরা যারা তাঁর পূর্বেই এসেছিল তাদেরকে তিনি গাছে ছায়ায় বসা অবস্থায় পেলেন। তিনি বসলে গাছের ছায়া তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়ে। পাদ্রী বলেন, তোমরা গাছের ছায়ার দিকে লক্ষ্য কর, ছায়াটি তাঁর দিকে ঝুঁকে পড়েছে। রাবী বলেন, ইত্যবসরে পাদ্রী তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে তাদেরকে শপথ দিয়ে বলেছিলেন, তোমরা তাঁকে নিয়ে রোম সাম্রাজ্যে যেও না। কেননা রূমীয়রা যদি তাঁকে দেখে তাহলে তাঁকে চিহ্নগুলোর দ্বারা সনাক্ত করে ফেলবে এবং তাঁকে মেরে ফেলবে। এমতাবস্থায় পাদ্রী লক্ষ্য করেন যে, রূমের সাতজন লোক তাদের দিকে আসছে। পাদ্রী তাদের দিকে অগ্রসর হয়ে প্রশ্ন করেন, তোমরা কেন এসেছ? তারা বলে, এ মাসে আখিরী যামানার নবীর আগমন ঘটবে। তাই চলাচলের প্রতিটি রাস্তায় লোক পাঠানো হয়েছে, তাই আমাদেরকে আপনাদের পথে পাঠানো হয়েছে। পাদ্রী রোমীয় নাগরিকদের প্রশ্ন করেন, তোমাদের পেছনে তোমাদের চেয়েও ভাল কোন ব্যক্তি আছে কি (কোন পাদ্রী তোমাদেরক এই নাবীর সংবাদ দিয়েছে কি)? তারা বলল, আপনার এ রাস্তায়ই আমাদেরকে ঐ নাবীর আসার খবর দেয়া হয়েছে। পাদ্রী বলেন, তোমাদের কি মত, আল্লাহ তা’আলা যদি কোন কাজ করার ইচ্ছা করেন তবে কোন মানুষের পক্ষে তা প্রতিহত করা কি সম্ভব? তারা বলল, না (অর্থাৎ শেষ যামানার নাবীর আগমন ঘটবেই, কোন মানুষ তা ঠেকাতে পারবে না) । রাবী বলেন, তারপর তারা তাঁর নিকট আনুগত্যের শপথ করে এবং তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করে। তারপর পাদ্রী (কুরাইশ কাফিলাকে) আল্লাহ্‌র নামে শপথ করে প্রশ্ন করেন, তোমাদের মধ্যে কে তাঁর অভিভাবক? লোকেরা বলল, আবূ তালিব। পাদ্রী আবূ তালিবকে অবিরতভাবে আল্লাহ তা’আলার নামে শপথ করে তাঁকে স্বদেশে ফেরত পাঠাতে বলতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত আবূ তালিব নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে (মক্কায়) ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন এবং আবূ বাক্‌র (রাঃ) বিলাল (রাঃ) কে তাঁর সাথে দেন। আর পাদ্রী তাঁকে পাথেয় হিসেবে কিছু রুটি ও যাইতূনের তৈল দেন। সহীহ ফিক্‌হুস সীরাহ, দিফা 'আনিল হাদীসিন নাবাবী (৬২-৭২), মিশকাত (৫৯১৮), তবে বিলালের উল্লেখটুকু মুনকার বলে কথিত।

【4】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নবুওয়াত লাভ এবং নবুওয়াত লাভকালে তাঁর বয়স কত ছিল?

ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর চল্লিশ বছর বয়সে ওয়াহী অবতীর্ণ হয়। অতঃপর তিনি মাক্কায় তের বছর ও মাদীনায় দশ বছর বসবাস করেন এবং যখন তিনি মৃত্যুবরণ করেন সে সময় তাঁর বয়স ছিল তেষট্টি বছর। সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (৩১৭), বুখারী ও মুসলিম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল পঁয়ষট্টি বছর। শাজ, প্রাগুক্ত আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিক লম্বাও ছিলেন না এবং অতি বেঁটেও ছিলেন না। তিনি অতিরিক্ত সাদাও ছিলেন না, আবার বেশী তামাটে বর্ণও ছিলেন না। তাঁর মাথার চুল একেবারে ঘন কুকড়ানো ছিল না এবং একেবারে খাড়াও ছিল না। আল্লাহ তা’আলা চল্লিশ বছর বয়সে তাঁকে নবূওয়াত দান করেন। তাপর তিনি মাক্কায় দশ বছর ও মাদীনায় দশ বছর বসবাস করেন। আল্লাহ তা’আলা ষাট বছরের মাথায় তাঁকে মৃত্যু দান করেন। সে সময় তাঁর মাথা ও দাড়ির বিশটি চুলও সাদা হয়নি। সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (১) ১৭৫৪ নং হাদীসে এর প্রথমাংশ বর্ণিত হয়েছে।

【5】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবূওয়াতের নিদর্শনাবলী এবং যে বিশেষ গুণে আল্লাহ তা’আলা তাঁকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছেন

জাবির ইবনু সামুরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবশ্যই মাক্কায় একখানা পাথর আছে যা আমার নবূয়াত অর্জনের রাতগুলোতে আমাকে সালাম করত। আমি এখনও অবশ্যই পাথরখানাকে চিহ্নিত করতে পারি। সহীহঃ মুসলিম (৭/৮৫) । সামুরাহ্‌ ইবনু জুনদাব (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি একটি পাত্র হতে আহার করতাম। দশজন আহার করে চলে যেত এবং আবার দশজন খেতে বসত। আবুল 'আলা বলেন, আমরা (সামুরাকে) প্রশ্ন করলাম, আপনাদের এ সহযোগিতা কোথা হতে আসত? সামুরাহ্‌ (রাঃ) বললেন, কিসে তুমি আশ্চর্য প্রকাশ করছ। এই দিক দিয়েই সহযোগিতা আসত। এই বলে তিনি আকাশের দিকে হাতের মাধ্যমে ইশারা করেন। সহীহঃ মিশকাত (৫৯২৮) । আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মক্কার কোন এক প্রান্তের উদ্দেশ্যে বের হলাম। তিনি যে কোন পাহাড় বা বৃক্ষের নিকট দিয়ে যেতেন তারা তাঁকে “আস-সালামু আলাইকুম ইয়া রাসূলুল্লাহ” বলে অভিবাদন জানাত। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৫৯১৯)

【6】

(মহানাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) যে খুঁটিতে ঠেস দিয়ে খুতবাহ্‌ দিতেন)

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাসজিদে নাববীতে) একটি খেজুর গাছের কান্ডের সাথে ঠেস দিয়ে খুত্‌বাহ্‌ দিতেন। তারপর তাঁর জন্য লোকেরা একখানা মিম্বার স্থাপন করলে তিনি মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে খুত্‌বাহ্‌ দান করেন। সে সময় খুঁটিটি উষ্ট্রীর মতো কাঁদতে লাগল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বার হতে অবতরণ করে তাকে স্পর্শ করলে তা কান্না বন্ধ করে (শান্ত হয়) । সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৪১৫) । ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এক বেদুঈন এসে বলল, আমি কিভাবে অবগত হব যে, আপনি নাবী? তিনি বললেনঃ ঐ খেজুর গাছের একটি কাঁদিকে আমি ডাকলে (তা যদি নেমে আসে) তাহলে তুমি কি সাক্ষ্য দিবে যে, আমি আল্লাহ তা’আলার রাসূল?রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহাকে ডাকলেন, সে সময় কাঁদি খেজুর গাছ থেকে নেমে নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সম্মুখে এসে গেল। তারপর তিনি বললেনঃ এবার প্রত্যাবর্তন কর এবং তা স্বস্থানে ফিরে গেল। সে সময় বেদুঈনটি ইসলাম গ্রহণ করলো। “বেদুঈন ইসলাম গ্রহণ করল” অংশ ব্যতীত হাদীসটি সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (৫৯২৬), সহীহাহ্‌ (৩৩১৫) আবূ যাইদ ইবনু আখত্বাব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাতখানা আমার চেহারায় মর্দন করেন এবং আমার জন্য দু'আ করেন। বর্ণনাকারী 'আযরাহ (রহঃ) বলেন, ঐ লোকটি (দু'আর বারাকাতে) একশত বিশ বছর জীবিত ছিলেন অথচ তার মাথার মাত্র কয়েকটি চুল সাদা হয়েছিল। সহীহঃ তা'লীক্বাতুল হাস্‌সান (৭১২৮) । আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ ত্বালহা আনসারী (রাঃ) তাঁর সহধর্মিণী উম্মু সুলাইম (রাঃ)-কে বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুর্বল কন্ঠস্বর শুনে আমি বুঝতে পারলাম, তিনি অতি ক্ষুধার্ত। তোমার নিকটে কি (খাবার) কিছু আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ আছে। উম্মু সুলাইম (রাঃ) কয়েকখানা যবের রুটি বের করলেন, তারপর নিজের একটি ওড়না বের করে তার একাংশে রুটি বাঁধলেন এবং তা আমার হাতে লুকিয়ে দেন এবং আমাকে ওড়নার অপরাংশ দেন, তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আমাকে পাঠান। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি ঐসব নিয়ে তাঁর লক্ষ্যে রাওয়ানা হলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাসজিদে বসা অবস্থায় পেলাম। সে সময় তাঁর সঙ্গে আরো লোক ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাদের সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করলেনঃ তোমাকে আবূ ত্বালহা পাঠিয়েছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ আহারের দা'ওয়াত? বর্ণনাকারী বলেন, হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাথীদের বললেনঃ তোমরা উঠে দাঁড়াও। আনাস (রাঃ) বলেন, তারা প্রত্যেকে রওয়ানা হলেন। আর আমি তাঁদের সামনে সামনে চললাম এবং আবূ ত্বালহা (রাঃ)-এর নিকট গিয়ে বিষয়টি অবহিত করলাম। আবূ ত্বালহা (রাঃ) বললেন, হে উম্মু সুলাইম! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো লোকজন নিয়ে এসে পড়েছেন, কিন্তু তাদের সকলকে আহার করানোর মত খাবার তো আমাদের নিকটে নেই। উম্মু সুলাইম (রাঃ) বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তা ভাল করেই জানেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আবূ ত্বালহা (রাঃ) এগিয়ে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে দেখা করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ ত্বালহা (রাঃ) একসাথে বাড়ির অভ্যন্তরে প্রবেশ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে উম্মু সুলাইম! তোমার নিকট খাবার জিনিস যা কিছু আছে তা এখানে নিয়ে এসো। উম্মু সুলাইম (রাঃ) ঐ রুটিগুলো নিয়ে এলেন। রুটিগুলোকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) টুকরা টুকরা করার হুকুম দিলে তা টুকরা টুকরা করা হল। একটি চামড়ার পাত্র হতে উম্মু সুলাইম (রাঃ) তাতে ঘি ঢেলে দিয়ে তা তরকারীবৎ তৈরী করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছানুযায়ী তাতে কিছু দু'আ-কালাম পাঠ করলেন এবং বললেনঃ দশজন করে আসতে বল। সুতরাং দশজনকে আহবান করা হল, তারা পেট ভরে আহার করে বের হয়ে গেলে তিনি পুনরায় বললেনঃ আরো দশজনকে আসতে বল। আবার দশজনকে আহবান করা হল। তারা পেট ভরে আহার করে বের হয়ে গেলে তিনি পুনরায় বললেনঃ আরো দশজনকে আসতে বল। সুতরাং আবার দশজনকে আহবান করা হল। এভাবে দলের প্রত্যেকে পেট ভরে আহার করলেন। দলে সর্বমোট সত্তর কিংবা আশিজন লোক ছিলেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি লক্ষ্য করলাম, আসরের নামাযের ওয়াক্তও হয়ে গেছে এবং লোকেরা উযূর পানি খোঁজ করছে কিন্তু তারা তা পায়নি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উযূর পানি আনা হল। তিনি নিজের হাত পানির পাত্রে রাখলেন এবং তা হতে লোকদেরকে উযূ করার হুকুম দিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি লক্ষ্য করলাম তাঁর আঙ্গুলের নীচ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। তারা সকলে উযূ করলেন, এমনকি তাদের শেষ লোকটি পর্যন্ত। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আয়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবূওয়াতের আবির্ভাব এভাবে হল যে, আল্লাহ তা’আলা যখন তাঁর বান্দাদের সম্মানিত ও তাদের প্রতি দয়া করতে চাইলেন, সে সময় এই পরিস্থিতি হল যে, যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা ভোরের আলোর ন্যায় স্পষ্ট হয়ে উদ্ভাসিত হত। তারপর আল্লাহ তা’আলা যত দিন চাইলেন তাঁর এই অবস্থা অব্যাহত থাকে। এ সময় তাঁর কাছে নির্জনতা এত পছন্দনীয় ছিল যার চাইতে অন্য কিছুই তাঁর কাছে বেশী পছন্দনীয় ছিল না। হাসান সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম এর চেয়ে আরো পূর্ণাঙ্গভাবে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, তোমরা আল্লাহ তা’আলার রাহমাতের নিদর্শনগুলোকে (অতি প্রাকৃতিক বিষয়াবলীকে) শাস্তি মনে কর, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আমলে আমরা এগুলোকে বারাকাত মনে করতাম। অবশ্যই আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে খাবার খেতাম এবং খাদ্যের তাসবীহ পাঠ শুনতে পেতাম। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মুখে একটি পানির পাত্র আনা হলে তিনি তার মাঝে নিজের হাত রাখলেন এবং তাঁর আঙ্গুলগুলো দিয়ে পানি উপচে বের হতে থাকে। নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা অতি মুবারাক ও আকাশের কল্যাণকর পানি দিয়ে উযূ করতে এদিকে এসো। এমনকি সেই পানিতে আমরা সবাই উযূ করলাম। সহীহঃ বুখারী, মুসলিম।

【7】

নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর কিরূপে ওয়াহী অবতীর্ণ হত

আয়িশাহ্‌ (রাঃ) আল–হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করেন, আপনার কাছে ওয়াহী কিরূপে আসে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কখনও ঘন্টাধ্বনির মতো তা আমার কাছে আসে এবং এটাই আমার জন্য সবচেয়ে কষ্টসাধ্য ওয়াহী। আবার কখনও ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে আমার কাছে এসে আমার সঙ্গে কথা বলেন এবং তিনি যা বলেন, আমি তা সঙ্গে সঙ্গেই আয়ত্ত করি। 'আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বলেন, আমি অতিরিক্ত শীতের দিনেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর ওয়াহী অবতীর্ণ হতে দেখেছি। তা বন্ধ হওয়ার পরও তাঁর কপাল হতে ঘাম গড়িয়ে পড়ত। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【8】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দেহের গঠন

আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি বলেন, লাল রং-এর পোশাক পরা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তুলনায় বেশি সুদর্শন আমি আর কোন বাবরি চুলওয়ালা লোক দেখিনি। তার বাবরি কেশ তাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে পর্যন্ত ঝুলন্ত ছিল। তাঁর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী জায়গা ছিল দীর্ঘ। তিনি না খর্বাকৃতির ছিলেন আর না দীর্ঘাকৃতির। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। পূর্বে ১৭২৫ নং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আবূ ইসহাক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, এক লোক আল-বারাআ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখমণ্ডল কি তলোয়ারের মতো (চকচকে) ছিল? তিনি বলেন, না, বরং চাঁদের মতো উজ্জ্বল ছিল। সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (৯), বুখারী। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) না অতি লম্বা ছিলেন আর না (অতি) বেঁটে ছিলেন। তাঁর দু’হাত ও দু’পা ছিল মাংসল, মাথা ছিল আকারে বৃহৎ এবং হাড়ের গ্রন্থিসমূহ ছিল স্থূল ও শক্তিশালী। তাঁর বুক হতে নাভি অবধি প্রলম্বিত ফুরফুরে পশমের একটি রেখা ছিল। চলার সময় তিনি সম্মুখের দিকে ঝুঁকে হাঁটতেন, যেন তিনি ঢালবিশিষ্ট জায়গা দিয়ে হেঁটে চলছেন। আমি তাঁর পূর্বে কিংবা তাঁর পরে আর কাউকে তাঁর মতো দেখিনি। সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (৪০)। আলী (রাঃ)-এর নাতি ইব্রাহীম ইবনু মুহাম্মাদ ইবনুল হানাফিয়্যা (রাহঃ) তিনি বলেনঃ আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বৈশিষ্ট বর্ণনা করতে গিয়ে বলতেনঃ তিনি বেশি লম্বা ছিলেন না এবং অত্যন্ত বেঁটেও ছিলেন না, বরং লোকদের মাঝে মধ্যম আকৃতির ছিলেন। তাঁর মাথার চুল খুব বেশি কোঁকড়ানোও ছিল না এবং একেবারে সোজাও ছিল না, বরং কিছুটা ঢেউ খেলানো ছিল। তিনি স্থুলকায় ছিলেন না, তাঁর মুখাবয়ব সম্পূর্ণ গোলাকার ছিল না, বরং কিছুটা গোলাকার ছিল। তিনি ছিলেন সাদা-লাল মিশ্রিত গৌরবর্ণের এবং লম্বা ভ্রুযুক্ত কালো চোখের অধিকারী। তাঁর হাড়ের গ্রন্থিগুলো ছিল মজবুত, বাহু ছিল মাংসল। তাঁর দেহে অতিরিক্ত লোম ছিল না, বুক হতে নাভি পর্যন্ত হালকা লোমের একটি রেখা ছিল। তাঁর হাতের তালু ও পায়ের পাতা ছিল গোশতে পুরু। তিনি দৃঢ় পদক্ষেপে চলতেন, যেন তিনি ঢালবিশিষ্ট স্থান হতে (নীচ সমতলে) নামছেন। তিনি কারো দিকে ফিরে তাকালে গোটা দেহ ঘুরিয়ে তাকাতেন। তাঁর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী স্থানে ছিল নাবূওয়াতের মোহর। তিনি ছিলেন খাতামুন নাবিয়্যীন (নবীগণের মোহর বা তাদের আগমন ধারার পরিসমাপ্তিকারী)। তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী ও দানশীল, বাক্যালাপে সত্যবাদী, কোমল হৃদয়ের অধিকারী এবং বন্ধু-বান্ধব ও সহোচরদের সাথে সম্মানের সাথে বসবাসকারী (অথবা সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত বংশোদ্ভূত)। যে কেউ তাঁকে প্রথম বারের মত দেখেই সে প্রভাবান্বিত হত। যে ব্যাক্তি তাঁর সাথে মিশত এবং তাঁর প্রসঙ্গে জানতো সে তাঁর প্রতি বন্ধু ভাবাপন্ন হয়ে যেত। তাঁর বর্ণনা প্রদাঙ্কারী বলতে বাধ্য হত, তাঁর আগে বা পরে আমি আর কাউকে তাঁর এরকম (সৌন্দর্যময়) দেখিনি। যঈফ, মুখতাসার শামায়িল, মিশকাত (৫৭৯১)।

【9】

নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথার ধরন

আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের মতো দ্রুত গতিতে কথা বলতেন না, বরং তিনি ধীরে সুস্থে প্রতিটি শব্দ পৃথকভাবে উচ্চারণ করে কথা বলতেন, ফলে তার কাছে বসা লোক খুব সহজেই তা আয়ত্ত করে নিতে পারত। হাসানঃ আল-মুখতাসার (১৯১), মিশকাত (৫৮২৮), বুখারী ও মুসলিম। “তিনি দ্রুত কথা বলতেন না” এই অংশটুকু বর্ণনা করেছেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেকটি বাক্য তিন তিনবার পুনরাবৃত্তি করতেন, যাতে তার কথা বুঝতে পারা যায়। হাসান সহীহঃ ২৭২৩ নং হাদীস পূর্বেও অনুরূপ উল্লেখ হয়েছে।

【10】

নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুচকি হাসি প্রসঙ্গে

আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনু জায্‌য়ি (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেয়ে বেশী মুচকি হাসি দিতে আমি আর কাউকে দেখিনি। সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (১৯৪), মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (৫৮২৯)। আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনু জায্‌য়ি (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুধুমাত্র মুচকি হাসিই দিতেন। সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (১৯৫), মিশকাত অনুরূপ।

【11】

মোহরে নবূওয়াত

আস্‌-সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাঃ) আমার খালা আমাকে নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমার এ বোনপুত্র রোগাক্রান্ত। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার মাথায় হাত বুলালেন, আমার জন্য বারাকাত ও কল্যাণের দু‘আ করলেন এবং তিনি উযূ করলে আমি তাঁর উযূর বাকি পানিটুকু পান করলাম। তারপর আমি তাঁর পেছনে গিয়ে দাঁড়ালে, তাঁর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী জায়গায় মোহরে নবুওয়াত প্রত্যক্ষ করি। তা ছিল তিতির পাখির ডিমের মতো। সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (১৪), বুখারী ও মুসলিম। জাবির ইবনু সামুরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুই কাঁধের মাঝামাঝি স্থানে কবুতরের ডিমের ন্যায় লাল মাংসপিণ্ড আকারে মোহরে নবূওয়াত ছিল। সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (১৫), মুসলিম।

【12】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখ, চোখ ও পায়ের আকৃতি

জাবির ইবনু সামুরা (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পায়ের জঙ্ঘাদ্বয় ছিল হাল্কা-পাতলা। তিনি মুচকি হাসিই দিতেন। আমি তাঁর দিকে তাকালে মনে হত তিনি উভয় চোখে সুরমা লাগিয়েছেন। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চোখে সুরমা লাগানো থাকত না। যঈফ, প্রাগুক্ত জাবির ইবনু সামুরাহ্‌ (রা:) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখ ছিল বেশ দীর্ঘ, চোখ দু’টি ছিল লাল এবং পায়ের জঙ্ঘা ছিল শীর্ণকায়। সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (৭), মুসলিম। জাবির ইবনু সামুরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন দীর্ঘ মুখের অধিকারী, তাঁর চোখ দু’টি ছিল লাল জঙ্ঘা ছিল শীর্ণকায়। শু‘বাহ্‌ (রহঃ) বলেন, আমি সিমাক (রহঃ)-কে বললাম, “যালীউল ফাম” অর্থ কি? তিনি বললেন, দীর্ঘ মুখ। আমি পুনরায় বললাম, “আশকালুল আয়নাইন” অর্থ কি? তিনি বললেন, লম্বা লাল রেখাযুক্ত দু'টি চোখ। আমি পুনরায় বললাম, “মানহূসুল আক্বিব” অর্থ কি? তিনি বলেন, শীর্ণকায়। সহীহঃ প্রাগুক্ত (৭), মুসলিম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চাইতে বেশি সুন্দর কোন জিনিষ দেখিনি। যেন সূর্য তাঁর চেহারায় (মুখমণ্ডলে) বিচরণ করছে। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ দ্রুত চলতেও আর কোন ব্যাক্তিকে দেখিনি। যেন তাঁর জন্য যমিনকে গুটানো হত। তাঁর সাথে পথ চলতে আমাদের প্রাণান্তকর অবস্থা হত, আর তিনি অনায়াসে চলে যেতেন। যঈফ, প্রাগুক্ত। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (মি‘রাজের রাতে) আমার সম্মুখে নাবীগণকে হাযির করা হয়। সে সময় মূসা (‘আঃ)-কে আমি দেখলাম, তিনি যেন শানুআহ্‌ গোত্রের একজন পুরুষ। আমি ‘'ঈসা ইবনু মারইয়াম (‘আঃ)-কেও লক্ষ্য করেছি, আমার দেখা লোকদের মাঝে তিনি ‘উরওয়াহ্‌ ইবনু মাস‘ঊদ-এর মত। আমি ইবরাহীম (‘আঃ)-কেও লক্ষ্য করেছি, আমার দেখা লোকের মাঝে তিনি তোমাদের বন্ধুর অর্থাৎ আমার মতো। জিবরাঈল (‘আঃ)-কেও আমি লক্ষ্য করেছি, তিনি আমার দেখা লোকেদের মাঝে দিহ্‌য়া ইবনু খালীফাহ্‌ আল-ক্বালবীর মতো। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (১১০০), মুসলিম।

【13】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর সময়কালীন বয়স

ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পঁয়ষট্টি বছর বয়সে মারা যান (জন্ম ও মৃত্যুর বছর দু’টিকে আলাদা দু’টি বছর ধরে)। শাজ, (৩৪৫৬) নং হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পঁয়ষট্টি বছর বয়সে মারা যান। শাজ, দেখুন পূর্বের হাদীস ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবূওয়াত লাভের পর মক্কায় তের বছর বসবাস করেন এবং তেষট্টি বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ৩৬২১ নং হাদীসে পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল-বাজালী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি মু‘আবিয়াহ্‌ ইবনু আবী সুফ্‌ইয়ান (রাঃ)-কে খুত্‌বাহ্‌ দানকালে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তেষট্টি বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন এবং আবূ বাক্‌র ও ‘উমার (রাঃ)-ও। আর এখন আমার বয়সও তেষট্টি বছর। সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (৩১৮), মুসলিম। আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তেষট্টি বছর বয়সে নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যুবরণ করেন। সহীহঃ প্রাগুক্ত (৩১৯), বুখারী ও মুসলিম।

【14】

আবূ বাক্‌র সিদ্দীক্ব (রাঃ)-এর গুণাবলী

আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি প্রত্যেক বন্ধুর বন্ধুত্ব হতে অব্যাহতি গ্রহন করছি। আমি যদি কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহন করতাম তাহলে আবূ কুহাফার ছেলে আবূ বাক্‌র সিদ্দীককেই বন্ধু বানাতাম। তোমাদের এই সাথী আল্লাহ তা‘আলার অন্তরঙ্গ বন্ধু। সহীহঃ যঈফাহ্‌ ৩০৩৪ নং হাদীসের অধীনে, মুসলিম। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তিনি বলেন, আবূ বাক্‌র (রাঃ) আমাদের নেতা, আমাদের মাঝে সবচাইতে উত্তম, আমাদের মাঝে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বেশী পছন্দনীয় ব্যক্তি। হাসানঃ মিশকাত (৬০১৮), বুখারী (৩৭৫৪) নং হাদীসে এর প্রথমাংশ উল্লেখ আছে। আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব (রহঃ) আয়িশাহ্‌ (রাঃ)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের মাঝে তাঁর কাছে কে সর্বাধিক প্রিয় ছিলেন। তিনি বললেন, আবু বাকর (রাঃ) । আমি আবার প্রশ্ন করলাম, তারপর কে? তিনি বললেন, 'উমর (রাঃ)। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, তারপর কে? তিনি বললেন, আবূ 'উবাইদাহ্‌ ইবনুল জাররাহ। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, তারপর কে?শাক্বীক্ব (রহঃ) বলেন, এবার তিনি চুপ থাকলেন। সহীহঃ মুসলিম। আবু সা'ঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (জান্নাতে) সর্বোচ্চ সম্মাননায় আসীন লোকদেরকে অবশ্যই তাদের নীচের মর্যাদার লোকেরা দেখতে পাবে, যেমন তোমরা আসমানের দিগন্তে উদিত তারকা দেখতে পাও। আবূ বাক্‌র ও 'উমার তাদেরই দলভুক্ত, বরং আরো বেশি রহমত ও মর্যাদার অধিকারী। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৯৬) ।

【15】

(এক বান্দা পার্থিব জীবনের উপর আল্লাহ তা'আলার সান্নিধ্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন)

আবুল মুআল্লা (রাঃ) একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুতবা (ভাষণ) দেবার সময় বলেনঃ আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁর এক বান্দাকে এই ইখতিয়ার দেন যে, সে যতদিন ইচ্ছা দুনিয়ার নিয়ামাতরাজি যথেচ্ছা ভোগ করবে অথবা আল্লাহ্‌ তা’আলার সাথে মিলিত হবে। ঐ বান্দা আল্লাহ্‌ তা'আলার সাথে মিলিত হওয়াকেই ইখতিয়ার করেছে। রাবী বলেন, (এ কথা শুনে) আবূ বাক্‌র (রাঃ) কেঁদে ফেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগন বলেন, তোমরা কি এ বৃদ্ধের কাণ্ড দেখে অবাক হবে না যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আল্লাহ্‌ তা’আলার এক পুন্যবান বান্দা প্রসঙ্গে আলোচনা করলেন, তাকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও আল্লাহ্‌ তা’আলার সান্নিধ্য অর্জন, এ দু’টির যে কোন একটি গ্রহনের ইখতিয়ার দিয়েছেন তখন সে বান্দা তাঁর রবের সান্নিধ্য অর্জনকেই ইখতিয়ার করেছেন (এতে কান্নার কি আছে)। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বলেছেন, তার তাৎপর্য বুঝার ব্যাপারে আবূ বাক্‌র (রাঃ)-ই ছিলেন তাদের মধ্যে বেশি জ্ঞানী। আবূ বাক্‌র (রাঃ) বলেন, বরং আমরা আমাদের পিতা-মাতা ও আমাদের ধন-সম্পদ আপনার জন্য উৎসর্গ করব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ লোকদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে নিজের সাহচর্য ও নিজস্ব সম্পদ দিয়ে ইবনু আবূ কুহাফার চাইতে অধিক আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছে। যদি আমি আল্লাহ্‌ তা’আলা ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তবে ইবনু আবূ কুহাফাকেই অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। কিন্তু বড় বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব হচ্ছে ঈমানের (বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্ব)। এ কথা তিনি দুই অথবা তিনবার বলেন। তোমরা জেনে রাখ! তোমাদের সাথী (মহানাবী) আল্লাহ্‌ তা’আলার একনিষ্ঠ বন্ধু। আবু সা'ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাসজিদে নাববীর) মিম্বারে বসে বললেনঃ আল্লাহ তাঁর এক বান্দাকে দুনিয়ার ভোগবিলাস ও আল্লাহ তা'আলার কাছে রক্ষিত ভোগবিলাস এ দুইয়ের মাঝে যে কোন একটি গ্রহণ করার এখতিয়ার দান করলে ঐ বান্দা আল্লাহ তা'আলার কাছে রক্ষিত ভোগবিলাসকে এখতিয়ার করেছেন। তখন আবূ বাক্‌র (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনার জন্য আমাদের বাবা-মা উৎসর্গিত হোক। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা (তার কথায়) বিস্মিত হলাম এবং লোকেরা বলল, এই বৃদ্ধ লোকের প্রতি খেয়াল কর, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বান্দা প্রসঙ্গে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তাকে আল্লাহ তা'আলা এখতিয়ার দিয়েছেন যে, তিনি ইচ্ছা করলে আল্লাহ তা'আলা তাকে দুনিয়ার ভোগ সামগ্ৰীও দান করতে পারেন কিংবা তিনি ইচ্ছা করলে আল্লাহ তা'আলার নিকট তাকে রক্ষিত ভোগসামগ্ৰীও দান করতে পারেন। অথচ এই লোক বলছেন, আপনার জন্য আমাদের বাবা-মাকে উৎসর্গ করলাম! সেই এখতিয়ারপ্রাপ্ত বান্দা হলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) । আর আবু বাক্‌র (রাঃ) আমাদের মাঝে, তাঁর প্রসঙ্গে সবচেয়ে অধিক জ্ঞানী। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ লোকদের মাঝে স্বীয় মাল ও সাহচর্য দিয়ে আমার প্রতি সবচাইতে উপকার (কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ) করেছেন আবু বাক্‌র। আমি যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে একনিষ্ঠ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তবে আবু বাক্‌রকেই একনিষ্ঠ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। কিন্তু ইসলামী ভ্রাতৃত্বই যথেষ্ট। মাসজিদে আবু বাক্‌রের দ্বার (বা জানালা) ছাড়া আর কোন দ্বার (বা জানালা) বাকি থাকবে না। সহীহঃ বুখারী (৩৬৫৪), মুসলিম (৭/১০৮) । আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আবু বাক্‌র ছাড়া আর কারো যে কোন ধরনের দয়া আমার উপর ছিল আমি তার প্রতিদান দিয়েছি। আমার উপর তার যে দয়া রয়েছে, ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা'আলা তাকে তার প্রতিদান দিবেন। আর আমাকে কারো সম্পদ এতটা উপকৃত করেনি, যতটা আবু বাক্‌রের সম্পদ আমাকে উপকৃত করেছে। আমি যদি কাউকে অন্তরঙ্গভাবে গ্রহণ করতাম, তাহলে আবু বাক্‌রকেই একনিষ্ঠ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম। অবগত হও! তোমাদের এই সাখী আল্লাহ তা'আলার অন্তরঙ্গ বন্ধু। যঈফঃ তবে “কারো সম্পদ আমাকে এতটা উপকার করেনি..." শেষ পর্যন্ত সহীহঃ তাখরীজু মুশকিলাতিল ফাক্বর (১৩) ।

【16】

আবু বাক্‌র ও 'উমার (রাঃ)-এর গুণাবলী ।

হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আমার পরে আবু বাক্‌র ও 'উমারের অনুসরণ করবে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৯৭) । হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আমরা অবস্থান করছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের মাঝে আমি আর কত দিন বেঁচে থাকব তা আমার জানা নেই। অতএব তোমরা আমার অবর্তমানে দু'জন লোকের অনুসরণ করবে- এ কথা বলে তিনি আবু বাক্‌র ও 'উমর (রাঃ)-এর দিকে ইশারা করলেন। সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু বাক্‌র ও 'উমার (রাঃ) প্রসঙ্গে বলেছেনঃ এরা দু'জন নাবী-রাসূলগণ ছাড়া পূর্বাপর জন্নাতের সকল বয়স্কদের নেতা হবেন। সহীহঃ দেখুন পরবর্তী হাদীস। আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। সে সময় আবু বাক্‌র ও 'উমর (রাঃ) আবির্ভূত হন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এরা দু'জন জান্নাতে নাবী-রাসূলগণ ছাড়া পূর্বাপর (সৰ্বকালের) পূর্ণ বয়স্কদের নেতা হবেন। হে 'আলী! এটা তাদেরকে জানাবে না। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৯৫) । আলী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আবু বাক্‌র ও 'উমার নাবী-রাসূলগণ ছাড়া পূর্বাপর সমস্ত বয়স্ক জান্নাতবাসীর নেতা হবেন। হে ‘আলী! তাদের দু'জনকে জানাইও না। সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু সা'ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আবু বাক্‌র (রাঃ) বলেছেন, আমি সেই লোক নই কি যে সর্বাগ্রে ইসলাম কবুল করেছে? আমি কি এমন কাজের অধিকারী নই? সহীহঃ আল-আহাদীসুল মুখতারাহ (১৯-২০) । আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মুহাজির ও আনসার সাহাবীদের আবূ বাক্‌র ও উমারসহ বসা অবস্থায় তাদের নিকট আসতেন। কিন্তু আবূ বাক্‌র ও উমার (রাঃ) ব্যতীত অন্য কেউই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে চোখ তুলে তাকাতেন না। অথচ তাঁরা উভয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে তাকাতেন এবং তিনিও তাদের উভয়ের দিকে তাকাতেন। তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতেন এবং তিনিও তাদের উভয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতেন। যঈফ, মিশকাত (৬০৫৩) ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাক্‌র ও উমার (রাঃ)-এর হাত ধরা অবস্থায় বেরিয়ে এসে মাসজিদে ঢুকেন। তাদের একজন ছিলেন তাঁর ডান পাশে এবং অপরজন ছিলেন তাঁর বাম পাশে। তিনি বলেনঃ কিয়ামাতের দিন আমরা এভাবে (হাত ধরা অবস্থায়) উঠবো। যঈফ, ইবনু মাজাহ (৯৯) ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাক্‌র (রাঃ)-কে বলেনঃ আপনি হাওযে (কাওসারে) আমার সাথী এবং (হিযরাতকালেও ছাওর পর্বত) গুহায় আপনিই (ছিলেন) আমার সাথী। যঈফ, মিশকাত (৬০১৯) আবদুল্লাহ ইবনু হান্‌ত্ত্বাব (রহঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু বাক্‌র ও 'উমার (রাঃ)-কে প্রত্যক্ষ করে বলেনঃ এদের উভয়ের কান ও চোখ একই। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (৮১৪) । আয়িশাহ্‌ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আবু বাক্‌রকে হুকুম দাও তিনি যেন লোকদের নামায আদায় করান। 'আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আবু বাক্‌র আপনার স্থানে দাঁড়ালে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ার কারণে লোকদেরকে কিরাআত শুনাতে পারবেন না। অতএব আপনি 'উমার (রাঃ)-কে হুকুম দিন তিনি যেন লোকদের নামায আদায় করান। 'আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বলেন, তিনি পুনরায় বললেনঃ আবু বাক্‌রকে নির্দেশ দাও তিনি যেন লোকদের নামায আদায় করান। 'আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বলেন, এবার আমি হাফ্‌সাহ্‌ (রাঃ)-কে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলুন, আবু বাক্‌র (রাঃ) তাঁর স্থানে দাঁড়ালে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ার কারণে লোকদেরকে (তার কিরাআত) শুনাতে পারবেন না। অতএব আপনি 'উমার (রাঃ)-কে বলুন তিনি যেন লোকদের নামায আদায় করান। হাফসাহ্‌ (রাঃ) তাই করলেন। সে সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমারই তো ইউসুফ ('আঃ)-এর জন্য সমস্যা সৃষ্টিকারী সঙ্গী (যার ফলে তিনি জেলে যেতে বাধ্য হন)। আবু বাক্‌রকেই লোকদের নামায আদায় করানোর হুকুম দাও। সে সময় হাফসাহ্‌ (রাঃ) 'আয়িশাহ্‌ (রাঃ)-কে বললেন, কখনো আমি তোমার নিকট হতে মঙ্গল পাইনি। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১২৩২), বুখারী ও মুসলিম। আইশা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন জাতির মধ্যে আবূ বাক্‌র হাযির থাকতে তাদের ইমামতি করা অন্য কারো জন্য কাম্য নয়। অত্যন্ত দুর্বল, যঈফা (৪৮২০) আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক একই মালের এক জোড়া আল্লাহ তা'আলার রাস্তায় খরচ করে তাকে জান্নাতে ডাকা হবে, হে আল্লাহ তা'আলার বান্দা! এটাই উত্তম জায়গা। সুতরাং যে লোক নামাযী, তাকে নামাযের দ্বার হতে আহবান করা হবে। যে লোক মুজাহিদ তাকে জিহাদের দ্বার হতে আহবান করা হবে। যে লোক দানশীল তাকে দান-খাইরাতের দ্বার হতে আহবান করা হবে। যে লোক রোযাদার তাকে রোযার বিশেষ দ্বার (রাইয়্যান) হতে আহবান করা হবে। সে সময় আবু বাক্‌র (রাঃ) বললেন, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক! কোন লোককে সকল দরজা হতে ডাকার তো দরকার নেই। তা সত্ত্বেও কোন লোককে কি এসবগুলো দরজা হতে আহবান করা হবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, এবং আমি আশা করি আপনিও তাদের অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (২৮৭৮), বুখারী ও মুসলিম। যাইদ ইবনু আসলাম (রহঃ) কর্তৃক তাঁর পিতা তিনি বলেন, 'উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাবূকের যুদ্ধের প্রাক্কালে) আমাদেরকে দান-খাইরাত করার হুকুম করেন। সৌভাগ্যক্রমে ঐ সময় আমার সম্পদও ছিল। আমি (মনে মনে) বললাম, যদি আমি কোন দিন আবু বাক্‌র (রাঃ)-কে ডিঙ্গাতে পারি তাহলে আজই সেই সুযোগ। 'উমার (রাঃ) বলেন, আমি আমার অর্ধেক সম্পদ নিয়ে এলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমার পরিবার-পরিজনদের জন্য তুমি কি বাকি রেখে এসেছ? আমি বললাম, এর সমপরিমাণ। আর আবু বাক্‌র (রাঃ) তার সমস্ত মাল নিয়ে আসলেন। তিনি বললেনঃ হে আবু বাক্‌র! তোমার পরিবার-পরিজনদের জন্য তুমি কি বাকি রেখে এসেছ? তিনি বললেন, তাদের জন্য আল্লাহ ও তার রাসূলকেই রেখে এসেছি। আমি (মনে মনে) বললাম, কখনও আমি কোন প্রসঙ্গে আবু বাক্‌র (রাঃ)-কে ডিঙ্গাতে পারব না। হাসানঃ মিশকাত (৬০২১) ।

【17】

আবু বাক্‌র (রাঃ)-এর খলীফাহ্‌ হওয়ার ইঙ্গিত

জুবাইর ইবনু মুত্ব'ইম (রাঃ) এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে তাঁর সঙ্গে কোন প্রসঙ্গে কথা বলল। তিনি তাকে কিছু করার ব্যাপারে হুকুম দেন। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আচ্ছা আমি (আবার এসে) আপনাকে যদি না পাই?তিনি বললেনঃ যদি তুমি আমাকে না পাও তবে আবু বাক্‌রের কাছে এসো। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একদিন এক লোক একটি গরুর পিঠে আরোহিত থাকা অবস্থায় গরুটি বলল, আমাকে এজন্য সৃষ্টি করা হয়নি, আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে কৃষিকাজের জন্য। সে সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি, আবু বাক্‌র ও 'উমার (রাঃ) -এই বিষয়টির উপর দৃঢ় আস্থা স্থাপন করলাম। আবু সালামাহ্ (রহঃ) বলেন, তারা দু'জন সেদিন জনতার মাঝে হাযির ছিলেন না। সহীহঃ ইরওয়াহ্‌ (২৪৭), বুখারী ও মুসলিম। আয়িশাহ্‌ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু বাক্‌রের দ্বার ছাড়া আর সমস্ত দ্বার বন্ধ করে দেয়ার হুকুম দেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম, দেখুন হাদীস নং ৩৬৬০। আয়িশাহ্‌ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আবু বাক্‌র (রাঃ) প্রবেশ করলে তিনি বললেনঃ আপনি জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তিপ্রাপ্ত আল্লাহর বান্দা (আত্বীকুল্লাহ) । সেদিন হতে তিনি আত্বীক নামে ভূষিত হন। সহীহঃ মিশকাত তাহক্বীক্ব সানী (হাঃ ৬০২২) আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক নাবীরই আকাশবাসীদের মধ্য হতে দু'জন উযীর এবং যমিনবাসীদের মধ্য হতে দু'জন উযীর ছিল। আকাশবাসীদের মধ্য হতে আমার দু'জন উযীর হলেন জিবরাঈল ও মীকাঈল আলাইহিস সালাম এবং যমিনবাসীদের মধ্য হতে আমার দু'জন উযীর হলেন আৰু বাকর ও উমার। যঈফ, মিশকাত (৬০৫৬)

【18】

'উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর মর্যাদা

ইবনু 'উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ “হে আল্লাহ! আবু জাহ্‌ল কিংবা 'উমার ইবনুল খাত্তাব- এই দু'জনের মাঝে তোমার নিকট যে বেশি প্রিয়, তার মাধ্যমে তুমি ইসলামকে মজবুত কর ও মর্যাদা দান কর"। ইবনু 'উমার (রাঃ) বলেন, ঐ দু'জনের মাঝে 'উমার (রাঃ)-ই আল্লাহ তা'আলার প্রিয় হিসেবে আবির্ভূত হন। সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (৬০৩৬) । ইবনু 'উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা উমার (রাঃ)-এর মুখে ও হৃদয়ে সত্যকে স্থাপন করেছেন। ইবনু 'উমার (রাঃ) বলেন, জনগণের সম্মুখে কখনো কোন প্রসঙ্গ আবির্ভূত হলে লোকজনও তা সম্পর্কে মন্তব্য ব্যক্ত করত এবং 'উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-ও অভিমত ব্যক্ত করতেন। দেখা যেত, 'উমার (রাঃ)-এর অভিমত এর সমর্থনে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১০৮) । ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “হে আল্লাহ! আবু জাহল ইবনু হিশাম অথবা উমার ইবনুল খাত্তাবের মারফত ইসলামকে শক্তিশালী কর"। রাবী বলেনঃ পরের দিন সকালে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির হয়ে ইসলাম ক্ববূল করেন। অত্যন্ত দুর্বল, মিশকাত (৬০৩৬) জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেনঃ উমার (রাঃ) আবু বাকর (রাঃ)-কে বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরেই হে সর্বোত্তম মানুষ। আবূ বাকর (রাঃ) বলেন, আপনি আমার প্রসঙ্গে এমন মন্তব্য করলেন! অথচ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অবশ্যই বলতে শুনেছিঃ উমারের চাইতে অধিক ভালো কোন লোকের উপর দিয়ে সূর্য উঠেনি। মাওযু যঈফা (১৩৫৭) মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন আমি মনে করি না যে, এমন কোন ব্যক্তি আছেন যিনি নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভালবাসেন অথচ আবু বাক্‌র ও 'উমার (রাঃ)-এর মর্যাদা খাটো করে দেখেন। সনদ সহীহ মাকতু' । উক্ববাহ্‌ ইবনু 'আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার পরবর্তীতে কেউ নবী হলে অবশ্যই 'উমার ইবনুল খাত্তাবই নবী হত। হাসানঃ সহীহাহ্‌ (৩২৭) । ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম যেন আমার কাছে এক পেয়ালা দুধ আনা হয়েছে, তা হতে আমি পান করলাম এবং বাকি অংশটুকু ‘উমার ইবনুল খাত্তাবকে দিলাম। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এর কি ব্যাখ্যা করেন? তিনি বললেনঃ “জ্ঞান”। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ২২৮৪ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মি’রাজের রাতে আমি জান্নাতে প্রবেশ করে তাতে একখানা সোনার বালাখানা প্রত্যক্ষ করলাম। আমি প্রশ্ন করলাম, এ বালাখানা কার? ফেরেশতারা বললেন, কুরাইশের এক যুবকের। আমি ধারণা করলাম, আমিই সেই যুবক। আমি প্রশ্ন করলামঃ কে সেই যুবক? ফেরেশতারা বললেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব। সহীহঃ সহীহাহ্ (১৪০৫, ১৪২৩), বুখারী ও মুসলিম। বুরাইদাহ্ (রাঃ) এক দিন ভোরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে ডেকে বললেনঃ হে বিলাল! তুমি জান্নাতে কি কারণে আমার আগে আগে থাকছ? যখনই আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি সে সময়ই আমার আগে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। গত রাতেও আমি জান্নাতে প্রবেশ করেছি এবং আমার আগে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। আমি স্বর্ণনির্মিত একটি বর্গাকার সুউচ্চ প্রাসাদের নিকট এসে বললামঃ এ প্রাসাদটি কার? ফেরেশতারা বললেন, এটা আরবের এক ব্যক্তির। আমি বললাম, আমি একজন আরব। সুতরাং এ প্রাসাদটি কার? তারা বললেন, কুরাইশ বংশের এক লোকের। আমি বললামঃ আমি কুরাইশ বংশীয়, অতএব এ প্রাসাদটি কার? তারা বললেন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উম্মাতের এক ব্যক্তির। আমি বললাম, আমিই মুহাম্মাদ, সুতরাং এ প্রাসাদটি কার? তারা বললেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাবের। তারপর বিলাল (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কখনো আমি আযান দিলেই দুই রাক’আত নামায আদায় করি এবং কখনো আমার উযূ ছুটে গেলেই আমি উযূ করি এবং মনে করি আল্লাহ তা’আলার নামে দুই রাক’আত নামায আদায় করা আমার কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ দু’টি কারণেই (তোমার এ মর্যাদা)। সহীহঃ তা’লীকুর রাগীব (১/৯৯)। বুরাইদাহ্‌ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন এক যুদ্ধাভিযানে যান। তিনি ফিরে এলে এক কৃষ্ণবর্ণা মেয়ে এসে বলে, হে আল্লাহর রাসূল! আমি মানত করেছিলাম যে, আপনাকে আল্লাহ তা’আলা হিফাযাতে (সুস্থাবস্থায়) ফিরিয়ে আনলে আপনার সম্মুখে আমি দফ বাজাব এবং গান করব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি সত্যিই যদি মানত করে থাক তবে দফ বাজাও, তা না হলে বাজিও না। সে দফ (এক মুখ খোলা ঢোল) বাজাতে লাগল। এই অবস্থায় সেখানে আবূ বাক্‌র (রাঃ) এলেন এবং সে দফ বাজাতে থাকে, তারপর 'আলী (রাঃ) এলেন এবং সে ওটা বাজাতে থাকে। তারপর 'উসমান (রাঃ) এলেন, সে সময়ও সে তা বাজাতে থাকে। তারপর ‘উমার (রাঃ) এসে প্রবেশ করলে সে দফটি তার নিতম্বের নীচে রেখে তার উপর অবস্থান করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে 'উমার! তোমাকে দেখলে শাইতানও ভয় পায়। আমি উপবিষ্ট ছিলাম আর ঐ মেয়েটি দফ বাজাচ্ছিল। পরে আবূ বাক্‌র এসে প্রবেশ করলে সে সময়ও সে তা বাজাতে থাকে। এরপর 'আলী প্রবেশ করলে সে সময়ও সে তা বাজাতে থাকে। এরপর ‘উসমান এসে প্রবেশ করলে তখনও সে তা বাজাতে থাকে। অবশেষে তুমি এসে যখন প্রবেশ করলে, হে ‘উমার! সে সময় সে দফটি ফেলে দিল। সহীহঃ নাক্বদুল কিত্তানী (৪৭-৪৮), সহিহাহ্‌ (২২৬১)। আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসা ছিলেন। সে সময় আমরা একটা সোরগোল ও শিশুদের হৈচৈ শুনতে পেলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে গিয়ে দেখলেন, এক হাবশী নারী নেচেকুদে খেলা দেখাচ্ছে আর শিশুরা তার চারিদিকে ভীড় জমিয়েছে। তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ্‌! এসো এবং প্রত্যক্ষ কর। অতএব আমি গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাঁধের উপর আমার চিবুক রেখে তার খেলা প্রত্যক্ষ করতে লাগলাম। আমার চিবুক ছিল তাঁর মাথা ও কাঁধের মধ্যবর্তী জায়গায়। (কিছুক্ষণ পর) আমাকে তিনি বললেনঃ তুমি কি তৃপ্ত হওনি, তোমার কি তৃপ্তি পূর্ণ হয়নি? তিনি বলেন, আমি না, না বলতে থাকলাম। আমার লক্ষ্য ছিল, আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতটুকু খাতির করেন তা পর্যবেক্ষণ করা। ইত্যবসরে ‘উমার (রাঃ) আবির্ভূত হন এবং মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত লোক তার কাছ হতে সটকে পড়ে। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, সে সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি দেখলাম জিন ও মানববেশধারী শাইতানগুলো ‘উমারকে দেখেই সরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তারপর আমি ফিরে এলাম। সহীহঃ মিশকাত (৬০৩৯) । ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার জন্যই প্রথমে (কবর) বিদীর্ণ করা হবে, তারপর আবু বকরের, তারপর উমারের জন্য। তারপর আমি আল-বাকী’র কবরবাসীদের নিকট আসব এবং তাদেরকে আমার সাথে হাশরের মাঠে সমবেত করা হবে। তারপর আমি মক্কাবাসীদের জন্য প্রতীক্ষা করব। পরিশেষে হারামাইন শরীফাইন (মক্কা ও মদীনা)-এর মধ্যবর্তী স্থানে আমাকে উঠানো হবে। যঈফ, যঈফা (২৯৪৯) আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাবেক উম্মাতদের মাঝে ‘মুহাদ্দাস’ (তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও সূক্ষদর্শী লোক) আবির্ভাব হতেন। আমার উম্মাতদের মাঝে কেউ মুহাদ্দাস হলে তা ‘উমার ইবনুল খাত্তাবই। হাসান সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের সামনে জান্নাতীদের একজন আবির্ভূত হবেন। ইত্যবসরে আবু বাকর (রাঃ) আবির্ভূত হন। তিনি আবার বলেনঃ তোমাদের সামনে জান্নাতীদের একজন আবির্ভূত হবেন। ইত্যবসরে উমর (রাঃ) আবির্ভূত হন। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৫) আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একদিন এক লোক তার মেষ (বকরী) পাল চরাচ্ছিল। হঠাৎ একটি নেকড়ে বাঘ এসে একটি বকরী ধরে ফেলে। তার মালিক এসে নেকড়ের কাছ থেকে বকরীটি ছিনিয়ে নিল। নেকড়ে বলল, হিংস্র জন্তুর দিনে (যেদিন মানুষ মারা যাবে এবং হিংস্র জন্তুরা বাকি থাকবে) তুমি কি করবে, যেদিন আমি ছাড়া এদের কোন রাখাল থাকবে না? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি নিজে এবং আবূ বকর ও ‘উমার এতে (নেকড়ের মন্তব্যে) বিশ্বাস স্থাপন করলাম। আবূ সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, সেই মজলিসে ঐ দিন তারা দু’জন হাযির ছিলেন না। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। এটি ৩৬৭৭ নং হাদীসের পূর্ণাঙ্গরূপ।

【19】

‘উসমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেরা পর্বতে ছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে ছিলেন আবূ বকর, ‘উমার, ‘উসমান, ‘আলী, ত্বালহা ও আয্-যুবাইর (রাঃ)। (তাদের পদতলের) পাথরটি নড়াচড়া করলে নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ স্থির হয়ে থাক। কেননা তোমার উপর একজন নবী কিংবা একজন সিদ্দীক অথবা একজন শহীদ রয়েছেন। সহীহঃ সহীহাহ্ (২/৫৬২), মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বাক্র, ‘উমার ও ‘উসমান (রাঃ)-সহ উহূদ পাহাড়ে আরোহণ করেন। তাদেরকে নিয়ে পাহাড় কেঁপে উঠে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (পদাঘাত করে) বললেনঃ হে উহুদ! শান্ত হও। তোমার উপরে একজন নাবী, একজন সিদ্দীক্ব (পরম সত্যবাদী) ও দু’জন শহীদ রয়েছেন। সহীহঃ সহীহাহ্ (৮৭৫), বুখারী। তালহা ইবনু উবাইদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক নাবীর একজন করে ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছে। জান্নাতে আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হবেন উসমান (রাঃ)। যঈফ, ইবনু মাজাহ (১০৯) আবূ ‘আবদুর রহমান আস্-সুলামী (রহঃ) তিনি বলেন, যখন ‘উসমান (রাঃ) বিদ্রোহীদের মাধ্যমে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন, সে সময় তিনি তার ঘরের উপরিতলে (ছাদে) উঠলেন, তারপর বললেন, আজ আল্লাহর ক্বসম করে আমি তোমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি, তোমরা কি অবহিত আছ যে, হেরা পর্বত কম্পিত হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেনঃ হে হেরা! শান্ত হয়ে যাও, কেননা তোমার উপর রয়েছেন একজন নবী কিংবা একজন সিদ্দীক্ব কিংবা একজন শহীদ? লোকেরা বলল, হ্যাঁ। তিনি পুনরায় বললেন, আমি আল্লাহ তা’আলার নামে ক্বসম করে তোমাদেরকে মনে করিয়ে দিচ্ছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উসরা বাহিনীর (তাবূকের যুদ্ধের) জন্য বলেছিলেনঃ কে এটা পছন্দনীয় বা ক্ববূল হওয়ার যোগ্য (অধিক পরিমাণের) খরচ দিতে তৈরী আছে? সে সময় লোকেরা চরম আর্থিক সংকট ও কঠিন পরিস্থিতির মুকাবিলা করছিল। অতএব সেই বাহিনীর প্রয়োজনীয় ব্যয় আমিই বহন করেছি। লোকেরা বলল, হ্যাঁ। আবার তিনি বললেন, আল্লাহ্ তা’আলার নামে প্রতিজ্ঞা করে তোমাদেরকে আমি আরও মনে করিয়ে দিতে চাই, তোমরা কি জ্ঞাত আছ যে, রূমা কূপের পানি কেউই ক্রয় করা ব্যতীত পান করতে পারত না? সেই কূপ আমি ক্রয় করে আমি ধনী, দরিদ্র ও মুসাফিরদের জন্য ওয়াক্ফ করে দিয়েছি। লোকেরা বলল, ইয়া আল্লাহ! হ্যাঁ (আমরা জানি)। তিনি তার আরো কিছু (জনহিতকর) সমাজকল্যাণমূলক কথা মনে করিয়ে দেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১০৯)। আবদুর রহমান ইবনু খাব্বাব (রাঃ) তিনি বলেনঃ যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনসাধারণকে জাইশুল উসরাত অর্থাৎ তাবুকের সামরিক অভিযানে আর্থিক সহায়তা দেবার জন্য উৎসাহিত করছিলেন, তখন আমি সেখানে হাযির ছিলাম। উসমান (রাঃ) দাড়িঁয়ে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি সুসজ্জিত এক শত উট (গদি-পালানসহ) আল্লাহ্ তা'আলার রাস্তায় দান করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবার যুদ্ধের (আর্থিক খরচ বহনের উদ্দেশ্যে) লোকদেরকে উৎসাহিত করলেন। উসমান (রাঃ) দাড়িঁয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! গদি-পালানসহ আমি দুই শত উট আল্লাহ্ তা'আলার রাস্তায় দান করলাম। তিনি আবারও লোকদেরকে যুদ্ধের জন্য উৎসাহিত করেন। উসমান (রাঃ) দাড়িঁয়ে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি গদি-পালানসহ তিন শত উট আল্লাহ্ তা'আলার রাস্তায় দান করলাম। রাবী আবদুর রহমান (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিম্বারের উপর হতে এ কথা বলতে বলতে নামতে দেখছি- আজকের পর হতে উসমান যাই করুক তার জন্য তাকে কৈফিয়াত দিতে হবে না। আজকের পর হতে উসমান যাই করুক তার জন্য তাকে কৈফিয়ত দিতে হবে না। যঈফ, মিশকাত (৬০৬৩) আবদুর রহমান ইবনু সামুরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উসমান (রাঃ) এক হাজার দীনারসহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাযির হলেন। বর্ননাকারী আল-হাসান ইবনু ওয়াক্বি’ (রহঃ) বলেন, আমার কিতাবের (পাণ্ডুলিপির) অন্য জায়গায় আছে, তিনি তার জামার হাতার মধ্যে করে সেগুলো নিয়ে আসেন যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূকের যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মুদ্রাগুলো তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোলে ঢেলে দেন। ‘আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি সেগুলো তাঁর কোলে ওলট-পালট করতে করতে বলতে শুনলামঃ আজকের পর হতে ‘উসমান যে কার্যকলাপই করুক তা তার কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। তিনি কথাটি দু’বার বললেন। হাসানঃ মিশকাত (৬০৬৪)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেনঃ যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (লোকদেরকে) স্বতস্ফূর্তভাবে আনুগত্যের শপথ (বাইআতুর রিদওয়ান) করার হুকুম দেন তখন উসমান ইবনু আফ্ফান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে মক্কার বাসিন্দাদের নিকট গিয়েছিলেন। আনাস (রাঃ) বলেনঃ লোকেরা আনুগত্যের শপথ করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ উসমান আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রয়োজনীয় কাজে গেছে। তারপর তিনি নিজের এক হাত অপর হাতের উপর রাখেন (উসমানের বাইআতস্বরূপ)। রাবী বলেনঃ উসমান (রাঃ)-এর জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতখানা লোকদের নিজেদের জন্য তাদের হাতের চাইতে বেশি ভাল ছিল। যঈফ, মিশকাত (৬০৬৫) সুমামাহ্ ইবনু হায্ন আল-কুশাইরী (রহঃ) তিনি বলেন, যখন ‘উসমান (রাঃ) (তার) ঘরের ছাদে উঠেন (বিদ্রোহীদের শান্ত করার জন্য) সে সময় আমি সেই গৃহে ছিলাম। তিনি বললেন, তোমাদের যে দুই সহকর্মী তোমাদেরকে আমার বিপক্ষে উপস্থিত করেছে আমার সম্মুখে তাদেরকে উপস্থিত কর। বর্ননাকারী বলেন, তাদেরকে আনা হল, যেন দু’টি উট অথবা দু’টি গাধা (অর্থাৎ মোটাতাজা)। বর্ননাকারী বলেন, উপর হতে ‘উসমান (রাঃ) তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহ ও দ্বীন ইসলামের ক্বসম দিয়ে প্রশ্ন করছি, তোমরা কি জান যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (হিজরাত করে) মাদীনায় এলেন এবং রূমার কূপ ছাড়া এখানে অন্য কোথায়ও মিষ্টি পানির বন্দোবস্ত ছিল না? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে লোক রূমার কূপটি ক্রয় করে মুসলিম সর্বস্তরের জন্য ওয়াক্ফ করে দিবে সে জান্নাতে তার তুলনায় বেশি উত্তম প্রতিদান পাবে। তারপর আমি আমার মূল সম্পত্তি দিয়ে তা ক্রয় করি (এবং উৎসর্গ করে দেই)। অথচ আজ আমাকে সেই কূপের পানি পান করতে তোমরা বাধা দিচ্ছ, এমনকি আজ আমি সাগরের (লোনা) পানি পান করছি। লোকেরা বলল, হে আল্লাহ! হ্যাঁ, সত্য। তিনি পুনরায় বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহ তা’আলা এবং দ্বীন ইসলামের ক্বসম দিয়ে প্রশ্ন করছি, তোমরা কি জান যে, মাসজিদে নাববী মুসল্লীদের জন্য একেবারে ক্ষুদ্র ছিল? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যে লোক অমুক গোত্রের জমিখণ্ড ক্রয় করে মাসজিদের সঙ্গে সংযুক্ত করবে, তার প্রতিদানে সে জান্নাতের মাঝে এর তুলনায় উত্তম প্রতিদান পাবে। আমি আমার মূল সম্পত্তি দিয়ে তা ক্রয় করে মাসজিদের সাথে সংযুক্ত করেছি আর আজকে তোমরা আমাকে সেখানে দুই রাক’আত নামায আদায় করতে বাধা দিচ্ছ। তারা বলল, হে আল্লাহ! হ্যাঁ (তা সত্য)। তিনি বললেন, তোমরা কি জান যে, আমি আমার মূল সম্পত্তি দিয়ে জাইশে উসরাত (তাবুকের যুদ্ধের সৈন্যদের) যুদ্ধ সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা করেছি? লোকেরা বলল, হে আল্লাহ সাক্ষী, হ্যাঁ, সত্য। তারপর তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহ ও দ্বীন ইসলামের শপথ দিয়ে প্রশ্ন করছি, তোমরা কি জান যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কার সাবীর পর্বতের উপর ছিলেন এবং তাঁর সাথে ছিলেন আবূ বাক্র, ‘উমার ও আমি? পর্বত (আনন্দে) কম্পিত হয়, ফলে তা হতে পাথরও খসে নীচে পড়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাহাড়কে পদাঘাত করে বললেনঃ হে সাবীর! শান্ত ও স্থির হয়ে যাও। কেননা তোমার উপর একজন নাবী, একজন সিদ্দীক্ব (পরম সত্যবাদী) ও দু’জন শহীদ অবস্থানরত রয়েছেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহ! হ্যাঁ, সত্য। বর্ণনাকারী বলেন, ‘উসমান (রাঃ) তাকবীর ধ্বনি দিয়ে বললেন, কা’বার প্রভুর ক্বসম! তোমরা আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছ। আমি নিশ্চিত শহীদ। তিনি এ কথাটি তিনবার বলেন। হাসানঃ ইরওয়াহ্‌ (১৫৯৪)। আবুল আশ’আস আস্-সান’আনী (রহঃ) তিনি বলেন, [উসমান (রাঃ) শহীদ হলে] সিরিয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বক্তা (ঐ বিষয়ে) বক্তব্য রাখেন। তাদের মাঝে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কিছু সাহাবীও ছিলেন। তাদের মাঝে হতে সর্বশেষে মুর্রাহ্ ইবনু কা’ব (রাঃ) বক্তৃতা দিতে দাঁড়ান। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক একটি হাদীস না শুনে থাকলে আমি বক্তৃতা দিতে দাঁড়াতাম না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঝগড়া-বিবাদের কথা উল্লেখ করেন এবং শীঘ্রই তা সংঘটিত হবে বলে ইংগিত করেন। বর্ণনাকারী বলেন, সে সময়ে এক ব্যক্তি কাপড় দিয়ে মূখমণ্ডল আবৃত করে সেখান দিয়ে অতিক্রম করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাকে ইঙ্গিত করে) বললেনঃ এ লোকটি ঐ সময় সৎপথে দণ্ডায়মান থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি উঠে তার নিকটে গিয়ে দেখি, তিনি ‘উসমান ইবনু ‘আফফান (রাঃ)। তারপর আমি তাকে সহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এসে প্রশ্ন করলাম, ইনিই কি সেই (সৎপথপ্রাপ্ত) লোক? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১১১)। আয়িশাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে 'উসমান! আল্লাহ তা’আলা হয়ত তোমাকে একটি জামা পরিধান করাবেন (খিলাফত দান করবেন)। তোমার হতে লোকেরা তা খুলে নিতে চাইলে তুমি তাদের দাবিতে তা ত্যাগ করবে না। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১১২)। এ হাদীসে দীর্ঘ ঘটনা আছে। উসমান ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাওহিব (রহঃ) এক মিসরবাসী বাইতুল্লাহ্‌র হাজ্জ আদায় করে। সে একদল লোককে বসা দেখে বলে, এরা কারা? লোকেরা বলল, এরা কুরাইশ বংশীয়। সে পুনরায় বলে, এই বয়স্ক (শায়খ) লোকটি কে? লোকেরা বলল, ইবনু ‘উমার (রাঃ)। সে সময় সে তার নিকটে এসে বলল, আপনাকে আমি কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন করব। অতএব আপনি আমাকে (তা) বলুন। আমি এ বাইতুল্লাহ্‌র মর্যাদার শপথ দিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করছি, আপনি কি অবহিত আছেন যে, ‘উসমান (রাঃ) উহূদ যুদ্ধের দিন (যুদ্ধক্ষেত্র হতে) পলায়ন করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সে আবার বলল, আপনি কি জানেন, তিনি (হুদাইবিয়ায় অনুষ্ঠিত) বাই’আতুর রিযওয়ানে অনুপস্থিত ছিলেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সে পুনরায়ও বলল, আপনি কি অবহিত আছেন যে, তিনি বদ্‌রের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন এবং তাতে উপস্থিত হননি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। সে বলল, আল্লাহু আকবার। তারপর ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাকে বললেন, এবার এসো! যেসব বিষয়ে তুমি প্রশ্ন করেছ তা তোমাকে আমি সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেই। উহূদের দিন তার পলায়নের ঘটনা প্রসঙ্গে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তার ঐ ব্যাপারটি ইতোমধ্যেই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দিয়েছেন, সম্পূর্ণভাবে মাফ করেছেন। তারপর বাদ্‌রের যুদ্ধে তার অনুপস্থিতির কারণ এই যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মেয়ে (রুকাইয়াহ্‌) তার সহধর্মিণী ছিলেন (এবং সে সময় তিনি মারাত্নক অসুস্থ ছিলেন)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ যে লোক বদ্‌রের যুদ্ধে যোগদান করেছে তার সমপরিমাণ সাওয়াব ও গানীমাত তুমি পাবে। আর তিনি রুকাইয়ার দেখাশুনা করার জন্য তাকে মাদীনাতে থাকারই নির্দেশ দিলেন। আর বাই’আতে রিদওয়ানে তার অনুপস্থিতির কারণ এই যে, মাক্কাবাসীদের কাছে ‘উসমান (রাঃ)-এর চাইতে বেশি মর্যাদাবান কোন মুসলিম লোক (হুদাইবিয়ায়) উপস্থিত থাকলে রাসুলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তার পরিবর্তে) তাকেই প্রেরণ করতেন। তা না থাকাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উসমান (রাঃ)-কেই (মাক্কায়) প্রেরণ করলেন। আর ‘উসমান (রাঃ)-এর মক্কার অভিমূখে রওয়ানা হয়ে যাওয়ার পর বাই’আতুর রিযওয়ান অনুষ্ঠিত হয়। বর্ণনাকারী বলেন, (বাই’আত অনুষ্ঠানকালে) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাতের দিকে ইশারা করে বললেনঃ এটা ‘উসমানের হাত। তারপর তিনি ঐ হাতটি তাঁর অন্য হাতের উপর স্থাপন করে বললেনঃ এটি ‘উসমানের (বাই’আত)। তারপর ইবনু ‘উমার (রাঃ) লোকটিকে বললেন, এবার তুমি এ ব্যাখ্যা সঙ্গে নিয়ে যাও। সহীহঃ বুখারী (৯৬৯৮)। ইবনু 'উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশাতেই আমরা আবু বাক্‌র, 'উমার ও 'উসমান (রাঃ)-কে গণ্যমান্য লোক বলতাম। সহীহঃ মিশকাত (৬০৭৬), বুখারী (৩৬৯৭) । ইবনু 'উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি ঝগড়ার কথা উল্লেখ করে বলেনঃ সে অর্থাৎ 'উসমান ইবনু 'আফ্‌ফান সেই ঝগড়ায় অন্যায়ভাবে নিহত হবে। জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ এক লোকের মরদেহ তার জানাযার নামায আদায়ের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের) নিকটে আনা হয়। কিন্তু তিনি তার জানাযার নামায আদায় করলেন না। তাঁকে বলা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমরা এই লোকের পূর্বে আপনাকে আর কারো জানাযা আদায় করা হতে বিরত থাকতে দেখিনি। তিনি বললেনঃ এ লোকটি উসমানের প্রতি হিংসা পোষণ করত, তাই আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি নারাজ হয়েছেন। মাওযূ, যঈফা (১৯৬৭) আবু মূসা আল-আশ'আরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে রওয়ানা হলাম। তিনি এক আনসারীর বাগিচায় ঢুকে তাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন সাড়েন, তারপর আমাকে বললেনঃ হে আবু মূসা! দরজায় যাও, যাতে বিনা অনুমতিতে কেউ আমার নিকট প্রবেশ করতে না পারে। এক লোক এসে দরজায় আঘাত করলে আমি বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি আবু বাক্‌র। সে সময় আমি গিয়ে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এই যে আবু বাক্‌র অনুমতিপ্রার্থী। তিনি বললেনঃ তাকে অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুখবর দাও। অতএব তিনি প্রবেশ করলেন এবং আমি তাকে জান্নাতের সুখবর জানালাম। তারপর এক লোক এসে দরজায় আঘাত করলে আমি বললাম, আপনি কে? তিনি বলেন, 'উমার। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এই যে 'উমার আপনার অনুমতি চায়। তিনি বললেনঃ তাকে দরজা খুলে দাও এবং তাকেও জান্নাতের সুসংবাদ দাও। অতএব আমি দরজা খুলে দিলে তিনি প্রবেশ করেন এবং তাকেও আমি জান্নাতের সুসংবাদ দিলাম। তারপর আরেক লোক এসে দরজায় আঘাত করলে আমি বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, 'উসমান। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এই যে 'উসমান অনুমতিপ্রার্থী। তিনি বললেনঃ তাকে দরজা খুলে দাও এবং তার উপর কঠিন বিপদ আসবে এ কথা বলে তাকেও জান্নাতের সুসংবাদ জানাও। সহীহঃ সহীহ আদাবুল মুফরাদ, বুখারী ও মুসলিম। আবু সাহ্‌লাহ্‌ (রহঃ) উসমান (রাঃ) নিজগৃহে অবরুদ্ধ থাকাকালে বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে একটি ওয়া'দা (উপদেশ) দিয়েছেন। সুতরাং আমি তাতে ধৈর্য ধারণ করব। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১১৩)।

【20】

'আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা।

ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক সামরিক বাহিনী পাঠানোর সময় 'আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ)-কে তাদের সেনাপতি নিযুক্ত করেন। তিনি সেনাদলের একটি খণ্ডাংশের (সারিয়্যা) পরিদর্শনে যান এবং এক যুদ্ধবন্দিনীর সঙ্গে মিলিত হন। কিন্তু তার সাথীরা তার এ কাজ পছন্দ করলেন না। অতএব রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চারজন সাহাবী শপথ করে বললেন, যখন আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দেখা পাব, তাঁকে তখন 'আলীর কার্যকলাপ প্রসঙ্গে জানাব। মুসলিমদের নিয়ম ছিল যে, তারা কোন সফর বা অভিযান শেষে ফিরে এসে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে সালাম করতেন, তারপর নিজ নিজ গৃহে ফিরে যেতেন। সুতরাং উক্ত সেনাদল ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম জানায় এবং চার সাহাবীর একজন দাঁড়িয়ে বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! লক্ষ্য করুন, 'আলী ইবনু আবী ত্বালিব এই এই করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি দাঁড়িয়ে পূর্বোক্ত ব্যক্তির মতো বক্তব্য পেশ করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হতেও মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এবার তৃতীয়জন দাঁড়িয়ে পূর্বোক্তজনের একই রকম বক্তব্য পেশ করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হতেও মুখ ফিরিয়ে নেন। অবশেষে চতুৰ্থজন দাঁড়িয়ে পূর্বোক্তদের একই রকম বক্তব্য পেশ করেন। এবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার চেহারায় অসন্তুষ্টির ভাব নিয়ে তাদের দিকে মনোনিবেশ করে বললেনঃ 'আলী প্রসঙ্গে তোমরা কি বলতে চাও? তোমরা 'আলী প্রসঙ্গে কি বলতে চাও? ‘আলী প্রসঙ্গে কি বলতে চাও? (বংশ, বৈবাহিক সম্পর্ক, অগ্রগণ্যতা, ভালবাসা ইত্যাদি প্রসঙ্গে) 'আলী আমার হতে এবং আমি 'আলী (রাঃ) হতে। আমার পরে সে-ই হবে সমস্ত মু'মিনের সঙ্গী ও পৃষ্ঠপোষক। আবু সারীহাহ্‌ অথবা যাইদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি যার সাখী বা পৃষ্ঠপোষক, 'আলীও তার সাখী বা পৃষ্ঠপোষক। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (১৭৫০), রাওযুন্‌ নায়ীর (১৭১), মিশকাত (৬০৮২)। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা'আলা আবূ বাকরের মঙ্গল করুন। তিনি তার মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিয়েছেন, আমাকে দারুল হিজরাতে (মাদীনাতে) নিয়ে এসেছেন এবং নিজের মাল দিয়ে বিলালকে গোলাম হতে আযাদ করেছেন। আল্লাহ তা'আলা উমারকে দয়া করুন। অপ্রিয় হলেও তিনি হাক (সত্য) কথা বলেন। তার সত্য ভাষণই তাকে সঙ্গহীন করেছেন। আল্লাহ তা'আলা উসমানের প্রতি দয়া করুন। সে এত অধিক লাজুক যে, ফেরেশতারা পর্যন্ত তাকে দেখে লজ্জাবোধ (সম্মান) করেন। আল্লাহ তা'আলা আলীকে দয়া করুন। হে আল্লাহ! সে যেখানেই থাকুক, সত্যকে তার চিরসাথী করুন। অত্যন্ত দুর্বল, যঈফা (২০৯৪), মিশকাত (৬১২৫) রিবঈ ইবনু হিরাশ (রাহ:) তিনি বলেনঃ আলী (রাঃ) কূফার মুক্তাঙ্গনে (আর-রাহবায়) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ হুদাইবিয়ার দিন মুশরিকদের ক'জন লোক আমাদের নিকটে আসে। তাদের মধ্যে সুহাইল ইবনু আমরসহ আরো ক'জন গণ্যমান্য মুশরিক ছিল। তারা বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমাদের সন্তান-সন্তুতি, ভাই ও ক্রীতদাসসহ কিছু সংখ্যক লোক আপনার নিকট এসে পরেছে। ধর্ম সম্পর্কে তারা মূর্খ এবং তারা আমাদের ভূসম্পত্তি ও ক্ষেত- খামার হতে পালিয়ে এসেছে। অতএব আপনি তাদেরকে আমাদের নিকট ফিরিয়ে দিন। যদিও তাদের ধর্মের বিষয়ে তেমন জ্ঞান নেই, তাই আমরা তাদেরকে বুঝাব। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেলেনঃ হে কুরাইশের লোকেরা! তোমরা এরকম কর্মকাণ্ড হতে বিরত হও। অন্যথায় আল্লাহ তা'আলা তোমাদের বিরদ্ধে এমন লোকদের পাঠাবেন, যারা তোমাদের ঘাড়ে দ্বীনের তরবারি দিয়ে আঘাত করবে। আল্লাহ তা'আলা তাদের অন্তরগুলোকে ঈমানের ব্যপারে পরীক্ষা করে নিয়েছেন। তখন মুসলমানরা প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূ্ল! কে সেই ব্যক্তি? আবূ বাকর (রাঃ)-ও বলেন, ইয়া রাসূ্লুল্লাহ! কে সেই ব্যক্তি? উমার (রাঃ)- ও বলেন,হে আল্লাহ্‌র রাসূ্ল! কে সেই লোক? তিনি বললেনঃ সে একজন জুতা সেলাইকারী! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (রাঃ)-কে তাঁর জুতাটা সেলাই করতে দিয়েছিলেন। রাবী বলেনঃ আলী (রাঃ) আমাদের দিকে তাকালেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজ ইচ্ছায় আমার প্রতি মিথ্যারোপ করল, সে যেন জাহান্নামে তার থাকার জায়গা নির্ধারণ করল।

【21】

মুনাফিক্বরা ‘আলী (রাঃ)-এর প্রতি বিদ্বেষী

আল-বারাআ ইবনু 'আযিব (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) 'আলী (রাঃ)-কে বললেনঃ তুমি আমা হতে, আর আমিও তোমা হতে। অর্থাৎ আমরা পরস্পরে অভিন্ন পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (৩/১৭৮), সহীহ আল-জামি' (১৪৮৫)। এ হাদীসে একটি ঘটনা আছে। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা আনসার সম্প্রদায় মুনাফিকদের নিশ্চয়ই চিনি। তারা আলী (রাঃ)-এর প্রতি হিংসা পোষণকারী। আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদা (রাহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ চার ব্যক্তিকে ভালোবাসাতে আল্লাহ তা'আলা আমাকে হুকুম করেছেন এবং তিনি আমাকে এও জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনিও তাদের ভালোবাসেন। বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে তাদের নামগুলো বলুন। তিনি বললেনঃ আলীও তাদের একজন। এ কথা তিনি তিনবার বললেন। (অবশিষ্ট তিনজন হলেন) আবূ যার, মিকদাদ ও সালমান (রাঃ)। তাদেরকে ভালোবাসাতে তিনি আমাকে আদেশ করেছেন এবং তিনি আমাকে এও জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনিও তাদেরকে ভালোবাসেন। যঈফ, ইবনু মাজাহ(১৪৯) হুবশী ইবনু জুনাদাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ 'আলী আমার হতে এবং আমি 'আলী হতে। আমার কোন কাজ থাকলে আমি নিজেই সম্পন্ন করি অথবা আমার পক্ষ হতে তা ‘আলীই সম্পন্ন করে। হাসানঃ ইবনু মাজাহ্‌ (১১৯)। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের মধ্যে ভায়ের সম্পর্ক সৃষ্টি করলেন। তারপর আলী (রাঃ) কান্না ভেজা চোখে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আপনার সাহাবীদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন, অথচ আমাকে কারো সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করেননি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ দুনিয়া ও পরকালে তুমি আমারই ভাই। যঈফ, মিশকাত(৬০৮৪) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের) নিকট পাখির ভুনা গোশত হাযির ছিল। তিনি বলেনঃ ইয়া আল্লাহ! তোমার সৃষ্টির মধ্যে তোমার নিকট সবচাইতে প্রিয় ব্যক্তিকে আমার সাথে এই পাখির গোশত খাওয়ার জন্য হাযির করে দাও। ইত্যবসরে আলী (রাঃ) এসে হাযির হন এবং তাঁর সাথে খাবার খান। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৫) আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু হিন্দ আল-জামালী (রহঃ) তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেনঃ আমি যখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কিছু চেয়েছি তখনই তিনি আমাকে দিয়েছেন এবং যখন নিশ্চুপ থেকেছি তখনও আমাকেই প্রথম দিয়েছেন। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৬) আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি (জ্ঞানের ভান্ডার) পাঠশালা এবং আলী তার দরজা। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৭) আমির ইবনু সা'দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, মু'আবিয়াহ্‌ ইবনু আবী সুফ্‌ইয়ান (রাঃ) সা'দ (রাঃ)-কে আমীর নিযুক্ত করে বললেন, আবু তুরাবকে গালি দিতে তোমায় বাধা দিল কিসে? সা'দ (রাঃ) বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তিনটি কথা মনে রাখব, যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সে সময় পর্যন্ত আমি তাকে গালমন্দ করব না। ঐগুলোর একটি কথাও আমার নিকটে লাল রংয়ের উট লাভের তুলনায় বেশি প্রিয়। (এক) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি 'আলী (রাঃ)-এর লক্ষ্যে একটি কথা বলতে শুনেছি, যে সময় তিনি তাকে মাদীনায় তাঁর জায়গায় নিয়োগ করে কোন এক যুদ্ধাভিযানে যান। সে সময় 'আলী (রাঃ) তাকে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি আমাকে শিশু ও নারীদের সঙ্গে কি রেখে যাচ্ছেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ হে ‘আলী! তুমি কি এতে খুশি নও যে, তোমার মর্যাদা আমার নিকট মূসা ('আঃ)-এর নিকট হারূন ('আঃ)-এর মতই? কিন্তু (পার্থক্য এই যে,) আমার পরবর্তীতে কোন নবী নেই। (দুই) আমি খাইবারের (যুদ্ধাভিযানের) দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ এমন এক লোকের হাতে আমি (যুদ্ধের) পতাকা অর্পণ করব যে আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসূলও তাকে মুহাব্বাত করেন। বর্ণনাকারী বলেন, প্রত্যেকে তা লাভের আশায় অপেক্ষা করতে থাকলাম। তিনি বললেনঃ তোমরা 'আলীকে আমার নিকটে ডেকে আন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাঁর কাছে এসে হাযির হন, তখন তার চোখ উঠেছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দুই চোখে স্বীয় মুখ নিঃসৃত লালা লাগিয়ে দেন এবং তার হাতে পতাকা অর্পণ করেন। আল্লাহ তা'আলা তাকে বিজয়ী করলেন। (তিন) এ আয়াত যখন অবতীর্ণ হল (অনুবাদ): আমরা আহ্‌বান করি আমাদের পুত্রদেরকে ও তোমাদের পুত্রদেরকে, আমাদের নারীদেরকে ও তোমাদের নারীদেরকে....."— (সূরা আ-লি 'ইমরান ৬১)। সে সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) 'আলী, ফাতিমাহ্‌, হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-কে ডাকেন (এবং তাদেরকে নিয়ে খোলা ময়দানে গিয়ে) বললেনঃ হে আল্লাহ! এরা সকলে আমার পরিবার-পরিজন। সহীহঃ মুসলিম (হাঃ ৭/১২০)। আল-বারাআ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু'টি সামরিক বাহিনী প্রেরণ করলেন এবং একদলের সেনাপতি বানালেন আলী (রাঃ)-কে এবং অপর দলের অধিনায়ক বানালেন খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ (রাঃ)-কে। তিনি আরো বলেনঃ যখন যুদ্ধ শুরু হবে তখন আলী হবে (সমগ্র বাহিনীর) প্রধান সেনাপতি। রাবী বলেন, আলী (রাঃ) একটি দুর্গ জয় করেন এবং সেখান হতে একটি যুদ্ধবন্দিনী নিয়ে নেন। এ প্রসঙ্গে খালিদ (রাঃ) এক চিঠি লিখে আমার মাধ্যমে তা (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের) নিকট পাঠান যাতে তিনি আলী (রাঃ)-এর দোষ চর্চা করেন। রাবী বলেন, আমি চিঠি নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের) নিকট হাযির হলাম। তিনি চিঠি পড়ার পর তাঁর (মুখমন্ডলের) রং বিবর্ণ হয়ে গেল। তারপর তিনি বললেনঃ তুমি এমন লোক প্রসঙ্গে কি ভাবো যে আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসে এবং আল্লাহ তা'আলা ও তাঁর রাসূলও যাকে ভালোবাসেন? রাবী বলেন, তখন আমি বললাম, আমি আল্লাহ্ তা'আলার অসন্তোষ ও তাঁর রাসূলের অসন্তোষ হতে আল্লাহ তা'আলার আশ্রয় চাই। আমি একজন বার্তাবাহক মাত্র। (এ কথায়) তিনি নীরব হন। সনদ দূর্বল, ১৬৮৭ নং হাদীসে পূর্বেও বর্ণিত হয়েছে। জাবির (রাঃ) তিনি বলেনঃ তাইফ অভিযানের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (রাঃ)-কে নিকটে ডেকে তার সাথে চুপিচুপি কথাবার্তা বললেন। জনসাধারন বলল, তিনি তাঁর চাচাত ভাইয়ের সাথে দীর্ঘক্ষন চুপিসারে কথাবার্তা বললেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি তার সাথে চুপিসারে কথা বলিনি, বরং আল্লাহ্ তা'আলাই তার সাথে চুপিসারে কথা বলেছেন। যঈফ,মিশকাত (৬০৮৮), যঈফ (৩০৮৪), আবূ সাঈদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (রাঃ)-কে বললেনঃ হে আলী! তুমি ও আমি ছাড়া আর কারো জন্য এ মাসজিদে নাপাক হওয়া বৈধ নয়। যঈফ, মিশকাত (৬০৮৯) যঈফা (৪৯৭৩), আলী ইবনুল মুনযির বলেন, আমি যিরার ইবনু সুরাদকে প্রশ্ন করলাম, এ হাদীসের মর্মার্থ কি? তিনি বলেন, তুমি ও আমি ছাড়া নাপাক অবস্থায় এ মসজিদের মধ্য দিয়ে হাটাচলা করা অন্য কারো জন্য জায়িজ নয়। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাবূওয়াত পেয়েছেন সোমবার এবং আলী (রাঃ) নামায আদায় করেন মঙ্গলবার। আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনু হিন্দ আল-জামালী (রহঃ) তিনি বলেন, আলী (রাঃ) বলেছেনঃ আমি যখনই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের) নিকট কিছু চেয়েছি তখনই তিনি আমাকে দিয়েছেন এবং যখন নিশ্চুপ থেকেছি তখনও আমাকেই প্রথম দিয়েছেন। হাদীসটি ৩৭২২ নং হাদীসেও বর্ণনা করা হয়েছে। জাবির ইবনু ‘আবদিল্লাহ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আলী (রাঃ)-কে বললেনঃ আমার নিকটে মর্যাদায় মুসা (‘আঃ)-এর নিকট হারূনের মর্যাদার মত। তবে আমার পরে কোন নবী নেই। পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ। সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্‌কাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (রাঃ)-কে বললেনঃ আমার কাছে তুমি মর্যাদায় মুসা (‘আঃ)-এর ক্ষেত্রে হারুন স্থানীয়। তবে আমার পরে নবী নেই। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১২১), বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাসজিদে) ‘আলী (রাঃ)-এর দ্বার ছাড়া সকল দ্বার বন্ধ করার হুকুম দিয়েছেন। সহীহঃ যঈফাহ্‌ (৪৯৩২, ৪৯৫১) নং হাদীসের অধীনে। আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বলেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসে এবং এ দু'জন ও তাদের পিতা-মাতাকে ভালোবাসে, সে কিয়ামতের দিন আমার সাথে একই মর্যাদায় থাকবে। যইফ, যইফা (৩১২২), তাখরীজুল মুখতারাহ্ (৩৯২-৩৯৭), ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, (ইসলাম গ্রহণ করে) ‘আলী (রাঃ)-ই সর্বপ্রথম নামায আদায় করেন। সহীহঃ যঈফাহ্‌ (৪৯৩২) নং হাদীসের অধীনে, মুসলিম। যাইদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) তিনি বলেন, সর্বপ্রথম ‘আলী (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ‘আম্‌র ইবনু মুর্‌রাহ্‌ বলেন, আমি এ কথাটি ইবরাহীম নাখঈর কাছে উল্লেখ করলে তিনি তা অস্বীকার করে বলেন, সর্বপ্রথম আবূ বাক্‌র (রাঃ)-ই ইসলাম গ্রহণ করেছেন। সহীহঃ যঈফাহ্‌ (৪১৩৯) নং হাদিসের অধীনে, নাখা’ঈর বর্ণানাটি মাকতু’। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মী নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে এ ওসীয়াত করেন যে, মু’মিনরাই তোমাকে ভালবাসবে এবং মুনাফিক্বরাই তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে। আদী ইবনু সাবিত (রাঃ) বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে যুগের জন্য দু’আ করেছেন, আমি সে যুগেরই অন্তর্ভূক্ত। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১১৪), মুসলিম। উম্মু আতিয়্যা (রা) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সেনা বাহিনী প্রেরণ করেন, তাদের সঙ্গে আলী (রাঃ)-ও ছিলেন। রাবী বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর দুই হাত উপরে তুলে বলতে শুনলামঃ ইয়া আল্লাহ! আলীকে না দেখিয়ে আমাকে মৃত্যু দান করো না। যঈফ, মিশকাত (৬০৯০),

【22】

ত্বালহা ইবনু ‘উবাইদুল্লাহ (রাঃ)-এর মর্যাদা

যুবাইর ইবনু আও্‌ওয়াম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহূদের যুদ্ধের দিন দু’টি লৌহবর্ম পরা ছিলেন। (যুদ্ধে আহত হওয়ার পর) তিনি একটি পাথরের উপরের ঊঠার চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি (উঠতে) পারলেন না। তিনি ত্বালহা (রাঃ)-কে তাঁর নিচে বসিয়ে তার কাঁধে চড়ে পাথরের উপর উঠে অবস্থান করেন। বর্ণানাকারী বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ ত্বালহা (তার জন্য জান্নাত) অনিবার্য করে নিয়েছে। হাসানঃ ১৬৯২ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। জাবির ইবনু ‘আব্‌দিল্লাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ যদি কেউ পৃথিবীর বুকে চলাচলরত কোন শহীদ লোককে দেখে খুশি হতে চায়, তবে সে যেন ত্বালহা ইবনু ‘উবাইদুল্লাহ্‌ (রাঃ)-এর প্রতি দৃষ্টি দেয়। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১২৫)। মূসা ইবনু ত্বালহা (রহঃ) আমি মু’আবিয়াহ্ (রাঃ)-এর কাছে প্রবেশ করলে তিনি বললেনঃ আমি তোমাকে কি সুখবর দিব না? আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যারা নিজেদের ওয়া’দা সম্পূর্ণ করেছে ত্বালহা তাদের অন্তর্ভূক্ত। হাসানঃ এটা ৩২০২ নং হাদীসের পুনরুক্তি। আলী ইবনু আবু তালিব (রাঃ) তিনি বলেনঃ আমার কান রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুখে বলতে শুনেছেঃ তালহা ও যুবাইর দু’জনই জান্নাতে আমার প্রতিবেশী। যঈফ, মিশকাত (৬১১৪), যঈফা (২৩১১), ত্বালহা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণ এক মূর্খ বেদুঈনকে বলেন, তুমি আল্লাহ তা’আলার নাবীকে প্রশ্ন কর, তিনি কে যে লোক নিজের ওয়া'দা পূর্ণ করেছেন? সাহাবীগণ তাঁকে কিছু প্রশ্ন করতে দুঃসাহস করতেন না। তারা তাঁকে শ্রদ্ধা করতেন এবং তাঁর মর্যাদাবোধে তারা আকৃষ্ট ছিলেন। অতএব তাঁকে বেদুঈন প্রশ্ন করলে তিনি তার হতে মুখ ফিরিয়ে নেন। সে পুনরায়ও প্রশ্ন করলে এবারও তিনি তার দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নেন। (ত্বালহা বলেন) তারপর আমি সবুজ পোশাক পরিধান করা অবস্হায় মাসজিদের দরজা দিয়ে উপস্হিত হলাম। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দেখেই বললেনঃ “কোন লোক তার ওয়া'দা পূরণ করেছে” এই প্রশ্নকারী কোথায়? বেদুঈন বলল, এই যে আমি, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার দিকে ইশারা করে বললেনঃ যারা নিজেদের ওয়া’দা পূর্ণ করেছে এই লোক তাদের অন্তর্ভূক্ত। হাসান সহীহঃ এটা ৩২০৩ নং হাদীসের পুনরুক্তি।

【23】

আয্‌-যুবাইর ইবনুল ‘আও্‌ওয়াম (রাঃ)-এর মর্যাদা

আয-যুবাইর (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনূ কুরাইযার যুদ্ধের দিন আমার লক্ষ্যে একত্রে তাঁর বাবা-মার উল্লেখ করে বলেনঃ আমার পিতা-মাতা তোমার জন্য উৎসর্গ হোক। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【24】

আমার সাহায্যকারী আয্‌-যুবাইর ইবনুল ‘আও্‌ওয়াম (রাঃ)

আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক নাবীরাই হাওয়ারী (নিষ্ঠাবান সাহায্যকারী) ছিলেন। আর আমার হাওয়ারী হল আয-যুবাইর ইবনুল 'আও্‌ওয়াম। হাসান সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১২২)।

【25】

অনুরুপ প্রসঙ্গ

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ প্রত্যেক নাবীরাই হাওয়ারী (একনিষ্ঠ সাহায্যকারী) ছিল। আর আমার হাওয়ারী হল আয-যুবাইর ইবনুল ‘আও্‌ওয়াম। আবূ নু’আইমের রিওয়ায়াতে আরও আছেঃ (এ কথা তিনি) আহ্‌যাবের দিন (খন্দকের যুদ্ধের দিন) বলেন। তিনি বললেনঃ আমাকে কুরাইশদের (কাফিরদের) সংবাদ কে সংগ্রহ করে দিতে পার ? আয্‌-যুবাইর (রাঃ) বললেন, আমি। উক্ত কথা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার বললেন এবং আয-যুবাইর (রাঃ)–ও (তিনবারই) বললেন, আমি। সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। হিশাম ইবনু ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) তিনি বলেন, আয-যুবাইর (রাঃ) উষ্ট্রীয় যুদ্ধের দিন সকালে নিজ পুত্র ‘আব্দুল্লাহ (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, বৎস! আমার শরীরে এমন কোন অঙ্গ নেই, যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে (জিহাদে) ক্ষত-বিক্ষত হয়নি, এমনকি আমার লজ্জাস্থানও (ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে)।

【26】

‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ আয-যুহ্রী (রাঃ)-এর মর্যাদা

আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আবূ বকর জান্নাতী, ‘উমার জান্নাতী, ‘উসমান জান্নাতী, ‘আলী জান্নাতী, ত্বালহা জান্নাতী, যুবাইর জান্নাতী, ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ জান্নাতী, সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস জান্নাতী, সা’ঈদ জান্নাতী এবং আবূ ‘উবাইদাহ্ ইবনুল জাররাহ জান্নাতী। সহীহঃ মিশকাত (৬১১), তাখরীজ ত্বাহাভীয়াহ্ (৭২৮)। সা’ঈদ ইবনু যাইদ (রাঃ) তিনি একদল লোকদের মাঝে রিওয়ায়াত করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দশজন লোক জান্নাতী। (তারা হলেন) আবূ বকর জান্নাতী, ‘উমার জান্নাতী এবং ‘আলী, ‘উসমান, যুবাইর, ত্বালহা, ‘আবদুর রহমান, আবূ ‘উবাইদাহ্ এবং সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ)। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি উক্ত নয়জনকে গণনা করেন এবং দশম লোক প্রসঙ্গে নীরব থাকেন। সে সময় লোকেরা বলল, হে আবুল আও্ওয়ার! আপনাকে আমরা আল্লাহর নামে ক্বসম দিয়ে বলছি, দশম লোক কে? তিনি বলেন, তোমরা আমাকে আল্লাহ্‌র নামে ক্বসম দিয়ে প্রশ্ন করেছ। আবুল আ’ওয়ার জান্নাতী। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৩৩)। আয়িশাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (তাঁর স্ত্রীদের) বলতেনঃ আমার (মৃত্যুর) পরে তোমাদের পরিস্থিত (ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা) যে কি হবে তা সম্পর্কে আমি চিন্তিত (কারণ তোমাদের জন্য কোন উত্তরাধিকার স্বত্ব রেখে যাইনি)। ধৈর্য ধারণকারী ও সহিষ্ণুতা অনুরাগী ব্যাক্তি ছাড়া তোমাদের অধিকারের প্রতি কেউ ভ্রুক্ষেপ করবে না। আবূ সালামাহ্ (রহঃ) বলেন, পরবর্তী সময়ে ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা’আলা যেন তোমার বাবাকে অর্থাৎ ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ)-কে জান্নাতের সালসাবীল নামক ঝর্ণার পানি পান করান। কেননা তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদের জন্য যে সম্পদ নিয়োগের মাধ্যমে তার সম্পত্তি তাদের সেবায় নিয়োজিত করেন পরবর্তীকালে তা চল্লিশ হাজার (দিনার মূল্যে) বিক্রয় করা হয়। হাসানঃ মিশকাত (৬১২১,৬১২২)। আবূ সালামাহ্ (রহঃ) ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ) তার একটি বাগিচা উম্মুহাতুল মু’মিনীনদের জন্য উৎসর্গ করেন তা চার লক্ষ দিরহাম মূল্যে বিক্রয় করা হয়। সনদ হাসানঃ পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ।

【27】

সা'দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ)-এর মর্যাদা

সা’দ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “হে আল্লাহ! আপনার নিকট সা’দ দু’আ করলে তা গ্রহণ করুন”। সহীহঃ মিশকাত (৬১১৬)। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, সা’দ (রাঃ) এসে হাযির হলে নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ইনি আমার মামা। কেউ আমাকে দেখাক তো তার মামাকে (যে আমার মামার সমপর্যায়ের হতে পারে)! সহীহঃ মিশকাত (৬১১৮)। আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সা’দ (রাঃ) ছাড়া অন্য কারো জন্য নিজের পিতা-মাতাকে একত্র করেননি। তিনি উহুদের যুদ্ধের দিন তাকে বলেনঃ আমার আব্বা-আম্মা তোমার জন্য কোরবান হোক। হে নও জোয়ান! (শত্রুর প্রতি) তীর নিক্ষেপ করো। ‘‘হে নও জোয়ান’’ এ শব্দটি মুনকার ২৮২০ নং হাদীসে পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) তিনি বলেন, উহূদের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার লক্ষ্যে তাঁর বাবা-মাকে একত্রে কুরবান করেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম, (২৮৩০) নং হাদীস পূর্বে উল্লেখ হয়েছে। আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমি সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) ছাড়া আর কারো লক্ষ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তাঁর বাবা-মাকে একসাথে কুরবান করতে শুনিনি। উহূদের যুদ্ধের দিন আমি তাঁকে বলতে শুনেছিঃ হে সা’দ! তীর নিক্ষেপ কর। তোমার জন্য আমার পিতা-মাতা উৎসর্গ হোক। সহীহঃ বুখারি ও মুসলিম, (২৮২৮) নং হাদীসে পূর্বেও উল্লিখিত হয়েছে। আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাদীনায় আগমন করার পর কেন যেন রাতে নিদ্রা যাপন করতে পারলেন না। তিনি (মনে মনে) বললেনঃ আহা! যদি কোন সৎকর্মপরায়ণ লোক আজকের রাতটুকু আমাকে পাহারা দিত। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমরা এই চিন্তায় ছিলাম, তখনই অস্ত্রের শব্দ শুনতে পেলাম। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ কে? উত্তর এল, আমি সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃ তুমি কি কারণে এসেছ? সা’দ (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে আমার মনে শংকা জাগ্রত হওয়ায় আমি তাঁকে পাহারা দিতে এসেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য দু’আ করেন, তারপর ঘুমিয়ে যান। সহীহঃ সহীহুল আদাবুল মুফরাদ (৬২২), বুখারী ও মুসলিম।

【28】

সা’ঈদ ইবনু যাইদ ইবনু ‘আম্‌র ইবনু নুফাইল ও আবূ ‘উবাইদাহ (রাঃ)-এর মর্যাদা

সা’ঈদ ইবনু যাইদ ইবনু ‘আম্‌র ইবনু নুফাইল (রাঃ) তিনি বলেন, নয়জন লোক প্রসঙ্গে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তারা জান্নাতী। যদি আমি দশম ব্যাক্তি প্রসঙ্গেও সাক্ষ্য দেই তবে তাতেও আমি পাপী হব না। প্রশ্ন করা হল, তা কীভাবে? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আমরা হেরা পর্বতের উপর অবস্থানরত ছিলাম। (হেরা কেঁপে উঠলে) তিনি বললেনঃ হেরা! শান্ত হও। অবশ্যই তোমার উপরে একজন নবী কিংবা একজন সিদ্দীক্ব (পরম সত্যবাদী) অথবা একজন শহীদ আছেন। বলা হল, তারা কারা? তিনি বললেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আবূ বাক্র, ‘উমার, ‘উসমান, ‘আলী, ত্বালহা, যুবাইর, সা’দ ও ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ)। তাকে প্রশ্ন করা হল, দশম লোকটি কে? তিনি বললেন, আমি। সহীহঃ (৩৭৪৮) নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ‘আয়িশা (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের মাঝে কে তাঁর সবচাইতে বেশি প্রিয় ছিলেন? তিনি বললেন, আবূ বকর (রাঃ)। আমি পুনরায় প্রশ্ন করলাম, তারপর কে? তিনি বললেন, ‘উমার (রাঃ)। আমি আবারও প্রশ্ন করলাম, তারপর কে? তিনি বললেন, তারপর আবূ ‘উবাইদাহ্ ইবনুল জাররাহ্‌ (রাঃ)। আমি পুনরায় প্রশ্ন করলাম, তারপর কে? এবার তিনি নিশ্চুপ রইলেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১০২)। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আবূ বকর অতি ভালো লোক, ‘উমার অতি উত্তম লোক এবং ‘উবাইদাহ্ ইবনুল জার্রাহ্ও অতি চমৎকার লোক। সহীহঃ সহীহাহ্ (২/৫৩৪), মিশকাত (হাঃ ৬২২৪), ৩৭৯৫ নং হাদীসে আরো পূর্ণাঙ্গরূপে বর্ণনা আসবে।

【29】

আল-‘আব্বাস ইবনু ‘আবদুল মুত্তালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা

আলী (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল-‘আব্বাস (রাঃ) প্রসঙ্গে ‘উমার (রাঃ)-কে বলেনঃ কোন লোকের চাচা তার পিতৃ সমতুল্য। আল-‘আব্বাস (রাঃ)-এর যাকাত প্রদান প্রসঙ্গে ‘উমার (রাঃ) কিছু বলেছিলেন। সহীহঃ ইরওয়া (৩/৩৪৮-৩৫০)। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল-‘আব্বাস হলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চাচা। আর চাচা হল পিতৃ সমতুল্য। সহীহঃ সহীহাহ্ (৮০৬), সহীহ আবূ দাঊদ (১৪৩৫), ইরওয়া (৩/৩৪৮-৩৫০)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল-‘আব্বাস (রাঃ)-কে বললেনঃ আগামী সোমবার প্রভাতে আপনি আমার কাছে আসবেন এবং আপনার সন্তানদেরকেও সাথে নিয়ে আসবেন। আপনার জন্য এবং আপনার সন্তানদের জন্য আমি একটি দু’আ করব, যার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা’আলা আপনাকেও উপকৃত করবেন এবং আপনার সন্তানদেরওে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, প্রভাতে তিনি গেলেন এবং তার সঙ্গে আমরাও গেলাম। তিনি আমাদের শরীরে একখানা চাদর জড়িয়ে দিলেন, তারপর বললেনঃ “হে আল্লাহ! আল-‘আব্বাস ও তার সন্তানদের বাহির ও ভিতর উভয় দিক এমনভাবে ক্ষমা করে দিন যার পর তাদের আর কোন অপরাধ বাকি না থাকে। হে আল্লাহ! তাকে তার সন্তানদের ব্যাপারে হিফাযাত করুন”। হাসানঃ মিশকাত (৬১৪৯)।

【30】

জা’ফার ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ)-এর মর্যাদা

আবু হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি (স্বপ্নে) জা’ফারকে জান্নাতের মধ্যে ফেরেশতাদের সঙ্গে উড়ে বেড়াতে দেখেছি। সহীহঃ সহীহাহ্ (১২২৬), মিশকাত (৬১৫৩)। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পর জা’ফার (রাঃ)-এর চেয়ে উত্তম কোন লোক জুতা পরিধান করেনি, জন্তুযানে আরোহণ করেনি, উটের হাওদায় উঠেনি। সনদ সহীহ, মাওকূফ। আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জা’ফার ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ)-কে বলেনঃ তুমি দৈহিক গঠনে ও স্বভাব-চরিত্রে আমার মতো। এ হাদীসে একটি ঘটনা আছে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, অন্যের চেয়ে ভালোভাবে কুরআনের তাৎপর্য আমার জানা থাকা সত্ত্বেও আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যে কোনো সাহাবীর নিকট তার তাৎপর্য জানতে চাইতাম এ উদ্দেশে যাতে তিনি আমাকে (তার বাড়ীতে নিয়ে) কিছু খাওয়ান। আমি জাফর ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)-কে প্রশ্ন করলেই তিনি আমাকে জবাব না দিয়ে তার বাড়ীতে নিয়ে যেতেন, তারপর তার স্ত্রীকে বলতেন, হে আসমা! আমাদেরকে খানা খাওয়াও। তার স্ত্রী আমাদের খানা খাওয়ানোর পর তিনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেন। জাফর (রাঃ) ছিলেন দরিদ্র্য বৎসল এবং তিনি তাদের সাথে উঠা-বসা করতেন, তাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতেন এবং তারাও তাদের সাথে কথাবার্তা বলত। তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে আবুল মাসাকীন (গরীবদের পিতা) উপনামে আখ্যায়ীত করেন। অত্যন্ত দুর্বল, মিশকাত তাহকীক ছাণী (৬১৫২) আবূ হূরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা জা’ফর ইবনু আবী তালিবকে আবুল মাসাকীণ বলে সম্বোধন করতাম, আমরা যখন তার নিকট আগমন করতাম। উপস্থিত যা থাকতো তাই আমাদের সামনে নিয়ে আসত, একদিন আমরা তার নিকট আগমন করলে তিনি কিছুই পেলেন না, ফলে তিনি একটি মধুর মটকা নিয়ে এলেন এবং তা ভেঙ্গে ফেললেন, তারপর আমরা চেটে চেটে খেতে থাকলাম। যঈফ, যঈফ ইবণূ মাজাহ(৯০১)।

【31】

আল-হাসান ইবনু 'আলী এবং আল-হুসাইন ইবনু 'আলী ইবনু আবী ত্বালীব (রাঃ)-এর মর্যাদা

আবূ সা’ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল-হাসান ও আল-হুসাইন (রাঃ) প্রত্যেকেই জান্নাতী যুবকদের সরদার। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (৭৯৬) উসামাহ্‌ ইবনু যাইদ (রাঃ) এক রাতে আমার কোন দরকারে নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে গেলাম। অতএব নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন অবস্থায় বাইরে এলেন যে, একটা কিছু তাঁর পিঠে জড়ানো ছিল যা আমি অবগত ছিলাম না। আমি আমার দরকার সেরে অবসর হয়ে প্রশ্ন করলাম, আপনার দেহের সঙ্গে জড়ানো এটা কি? তিনি পরিধেয় বস্ত্র উন্মুক্ত করলে দেখা গেলো তাঁর দুই কোলে হাসান ও হুসাইন (রাঃ)। তিনি বললেন, এরা দু’জন আমার পুত্র এবং আমার কন্যার পুত্র। হে আল্লাহ্‌! আমি এদের দু’জনকে মুহাব্বাত করি। সুতরাং তুমি তাদেরকে মুহাব্বাত কর এবং যে ব্যক্তি এদেরকে মুহাব্বাত করবে, তুমি তাদেরকেও মুহাব্বাত কর। হাসানঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (৬১৫৬) আবদুর রহমান ইবনু আবী নু'ম (রহ:) এক ইরাকবাসী মাছির রক্ত কাপড়ে লাগলে তার বিধান প্রসঙ্গে ইবনু 'উমার (রাঃ)–এর কাছে জানতে চায়। ইবনু 'উমার (রাঃ) বললেন, তোমরা তার প্রতি লক্ষ্য কর, সে মাছির রক্ত প্রসঙ্গে প্রশ্ন করছে। অথচ তারাই রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পুত্রকে (নাতি হুসাইন) হত্যা করেছে। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ আল-হাসান ও আল-হুসাইন দু’জন এই পৃথিবীতে আমার দু’টি সুগন্ধময় ফুল। সহীহঃ মিশকাত (৬১৫৫), সহীহ (৫৬৪), বুখারী সংক্ষিপ্তভাবে। সালমা (আল-বাকরিয়া) (রাহঃ) আমি উম্মূ সালমা (রাঃ)–এর নিকট গিয়েছিলাম, তখন তিনি কাঁদছিলেন। আমি বললাম, কিসে আপনাকে কাঁদাচ্ছে? তিনি বললেন, আমি স্বপ্নে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছি যে, তাঁর মাথায় ও দাড়িতে ধূলা জড়িয়ে আছে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ! আপনার কি হয়েছে? তিনি বললেনঃ আমি এইমাত্র হুসাইনের নিহত হওয়ার জায়গায় হাযির হয়েছি। যঈফ, মিশকাত (৬১৫৭) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হল, আপনার আহলে বাইত–এর সদস্যগণের মধ্যে কে আপনার নিকট সবচাইতে প্রিয়? তিনি বললেনঃ আল-হাসান ও আল-হুসাইন। তিনি ফাতেমা (রাঃ)-কে বলতেনঃ আমার দুই সন্তানকে আমার কাছে ডাক। তিনি তাদের ঘ্রাণ নিতেন এবং নিজের বুকের সাথে লাগাতেন। যঈফ, মিশকাত (৬১৫৮) আবূ বাক্‌রাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মাসজিদে নাববীর) মিম্বারে উঠে বললেনঃ আমার এ পুত্র (হাসান) নেতা হবে এবং আল্লাহ্‌ তা‘আলা তার মাধ্যমে (মুসলমানদের) দু’টি বিবাদমান দলের মাঝে সমঝোতা স্থাপন করাবেন। সহীহঃ রাওযুন্‌ নাযীর (৯২৩), ইরওয়া (১৫৯৭), বুখারী। আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদাহ্‌ (রাঃ) আমি আমার পিতা বুরাইদাহ্‌ (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। হঠাৎ হাসান ও হুসাইন (রাঃ) লাল বর্ণের জামা পরিহিত অবস্থায় (শিশু হওয়ার কারণে) আছাড় খেতে খেতে হেঁটে আসেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বার হতে নেমে তাদের দু’জনকে তুলে এনে নিজের সম্মুখে বসান, তারপর বলেনঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলা সত্যই বলেছেন, “তোমাদের সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি তো পরীক্ষা বিশেষ”-(সুরা তাগাবুন ১৫)। আমি তাকিয়ে দেখলাম এই শিশু দু’টি আছাড় খেতে খেতে হেঁটে আসছে। আমি আর সহ্য করতে পারলাম না, এমনকি আমার বক্তৃতা বন্ধ করে তাদেরকে তুলে নিতে বাধ্য হলাম। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৩৬০০) । ইয়া‘লা ইবনু মুর্‌রাহ্‌ (রাঃ) রাসুল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হুসাইন আমার হতে এবং আমি হুসাইন হতে। যে লোক হুসাইনকে মহাব্বত করে, আল্লাহ্‌ তাকে মুহাব্বাত করেন। নাতিগণের মাঝে একজন হল হুসাইন। হাসানঃ ইবনু মাজাহ (১৪৪)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, লোকদের মাঝে দৈহিক কাঠামোয় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আল-হাসান ইবনু ‘আলীর তুলনায় বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ আর কেউ ছিল না। সহীহঃ বুখারী। আবূ জুহাইফাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি দেখেছি। আল-হাসান ইবনু ‘আলী ছিলেন (দৈহিক কাঠামোয়) তাঁর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। পূর্বে (২৬৭৬) নং হাদীস বর্ণিত হয়েছে। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আমি ইবনু যিয়াদের নিকট হাজির ছিলাম। সে সময় আল-হুসাইন (রাঃ)-এর শির (কারবালা হতে) এনে হাজির করা হল। সে তাঁর নাকে ছড়ি মারতে মারতে (ব্যঙ্গোক্তি করে) বলতে লাগলো, এর ন্যায় সুশ্রী আমি কাউকে তো দেখিনি! বর্ণনাকারী বলেন, সে সময় আমি বললাম, সতর্ক হও! লোকদের মাঝে (দৈহিক কাঠামোয়) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আল-হুসাইন ইবনু ‘আলীর তুলনায় বেশি সাদৃশ্যপূর্ণ আর কেউ ছিল না। সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (৬১৭০), বুখারী। আলী (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের) বুক হতে মাথা পর্যন্ত অংশের সাথে আল-হাসানের শরীরের সাদৃশ্য ছিল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বুক হতে পা পর্যন্ত নীচের অংশের সাথে আল-হুসাইনের শরীরের সাদৃশ্য ছিল। যঈফ, মিশকাত (৬১৬১) উমারাহ ইবনু ‘উমাইর (রাঃ) তিনি বলেন, ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদ ও তার সাথীদের ছিন্ন মস্তক এনে কূফার আর-রাহ্‌বা নামক জায়গায় মাসজিদে স্তূপীকৃত করা হলে আমি সেখানে গেলাম। সে সময় লোকেরা এসে গেছে, এসে গেছে বলে চেঁচামিচি করতে লাগলো। দেখা গেলো একটি সাপ এসে ঐসব মাথাসমূহের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছিল। এমনকি সাপটি ‘উবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদের নাকের ছিদ্রে প্রবেশ করে কিচ্ছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করল, তারপর বের হয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো। লোকেরা আবারও চিৎকার করে বলতে লাগলো, এসে গেছে, এসে গেছে। এরুপে সাপটি দু’বার অথবা তিনবার এসে তার নাকের ছিদ্রে ঢুকে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর বের হয়ে যায়। হুযাইফাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমার মা আমাকে প্রশ্ন করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট তুমি কখন যাবে? আমি বললাম, আমি এতদিন হতে তাঁর নিকট উপস্থিত পরিত্যাগ করেছি। এতে তিনি আমার উপর নারাজ হন। আমি তাকে বললাম, নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আমাকে মাগরিবের নামায আদায় করতে ছেড়ে দিন। তাহলে আমি তাঁর কাছে আমার ও আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করব। অতএব নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আমি হাযির হয়ে তাঁর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করলাম। তারপর তিনি নফল নামায আদায় করতে থাকলেন, অবশেষে তিনি এশার নামায আদায় করলেন। তারপর তিনি বাড়ির দিকে যাত্রা করলেন এবং আমি তাঁর পিছু পিছু গেলাম। তিনি আমার আওয়াজ শুনতে পেলেন এবং প্রশ্ন করলেন, তুমি কে, হুযাইফাহ্‌? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ তোমার কি দরকার, আল্লাহ্‌ তা‘আলা তোমাকে এবং তোমার মাকে ক্ষমা করুন। তিনি বললেনঃ একজন ফেরেশতা যিনি আজকের এ রাতের আগে কখনও পৃথিবীতে অবতরণ করেননি। তিনি আমাকে সালাম করার জন্য এবং আমার জন্য এ সুখবর বয়ে আনার জন্য আল্লাহ্‌ তা‘আলার কাছে অনুমতি চেয়েছেনঃ ফাতিমাহ্‌ জান্নাতের নারীদের নেত্রী এবং হাসান ও হুসাইন জান্নাতের যুবকদের নেতা। সহীহঃ তা‘লীকুর রাগীব (২০৫, ২০৬), মিশকাত (২১৬২), সহীহাহ্‌ (২৭৮৫)। আল-বারাআ ইবনু ‘আবিব (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান ও হুসাইনকে দেখে বললেনঃ হে আল্লাহ্‌। আমি এ দু’জনকে মুহাব্বাত করি, সুতরাং তুমিও তাদেরকে মুহাব্বাত কর। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (২৭৮৯)। আদী ইবনু সাবিত (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আল-বারাআ ইবনু 'আযিব (রাঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ‘আলীর পুত্র হাসানকে তাঁর কাঁধে তুলে নিয়ে আমি বলতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ্‌! একে আমি মুহাব্বাত করি, অতএব তাকে তুমিও মুহাব্বাত কর। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (২৭৮৯), বুখারী ও মুসলিম। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আলীর ছেলে হাসানকে স্বীয় কাঁধে বহণ করছিলেন। এক লোক বলেন, হে বালক! কতই না উত্তম বাহনে তুমি আরোহন করেছ! (তার মন্তব্য শুনে) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সে কতই না উত্তম আরোহী। যঈফ, মিশকাত (৬১৬৩), আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রত্যেক নাবীকে সাতজন করে প্রতিনিধি দান করা হয়েছে এবং আমাকে দান করা হয়েছে চৌদ্দজন। আমরা বললাম, তারা কারা? তিনি বললেনঃ আমি (আলী), আমার দুই পুত্র (হাসান ও হুসাইন), জাফর, হামযা, আবূ বাক্‌র, উমার, মুসআব ইবনু উমাইর, বিলাল, সালমান, আল-মিকদাদ, হুযাইফা, আম্মার ও আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ)। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৬২৪৬)

【32】

আহ্‌লে বাইত-এর মর্যাদা

জাবির ইবনু ‘আবদিল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি তাঁর বিদায় হাজ্জে আরাফার দিন তাঁর কাসওয়া নামক উষ্ট্রীতে আরোহিত অবস্থায় বক্তৃতা দিতে দেখেছি এবং তাঁকে বলতে শুনেছিঃ হে লোক সকল! নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আমি এমন জিনিষ রেখে গেলাম, তোমরা তা ধারণ বা অনুসরণ করলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে নাঃ আল্লাহ্‌ তা‘আলার কিতাব (আল-কুরআন) এবং আমার ইতরাত অর্থাৎ আমার আহ্‌লে বাইত। সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (৬১৪৩)। নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পোষ্য 'উমার ইবনু আবী সালামাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ)-এর ঘরে এ আয়াত নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর অবতীর্ণ হয় (অনুবাদ): “হে নাবীর পরিবার! আল্লাহ্‌ তা'আলা তো চান তোমাদের হতে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণভাবে পবিত্র করতে”- (সূরা আহ্‌যাব ৩৩)। সে সময় নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতিমাহ্‌, হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-কে ডাকেন এবং তাদেরকে একখানা চাদরে আবৃত করেন। তাঁর পেছনে 'আলী (রাঃ) ছিলেন। তিনি তাঁকেও চাদরে ঢেকে নেন, তারপর বললেনঃ “হে আল্লাহ্‌! এরা আমার আহলে বাইত। অতএব তুমি তাদের হতে অপবিত্রতা অপসারণ করে দাও এবং তাদেরকে উত্তমভাবে পবিত্র কর"। সে সময় উম্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত কি? তিনি বললেনঃ তুমি স্বস্থানে আছ এবং তুমি কল্যাণের মাঝেই আছ। সহীহঃ ৩২০৫ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। যাইদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে আমি এমন জিনিস রেখে গেলাম যা তোমরা শক্তরুপে ধারণ (অনুসরণ) করলে আমার পরে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তার একটি অন্যটির তুলনায় বেশি মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণঃ আল্লাহ্‌ তা'আলার কিতাব যা আকাশ থেকে মাটি পর্যন্ত দীর্ঘ এক রশি এবং আমার পরিবার অর্থাৎ আমার আহ্‌লে বাইত। এ দু'টি কখনও আলাদা হবে না কাওসার নামক ঝর্ণায় আমার সঙ্গে একত্রিত না হওয়া পর্যন্ত। অতএব তোমরা লক্ষ্য কর আমার পরে দু'জনের সঙ্গে তোমরা কিভাবে আচরণ কর। সহীহঃ মিশকাত (৬১৪৪), রাওযুন্‌ নাযীর (৯৭৭, ৯৭৮), সহীহাহ্‌ (৪/৩৫৬-৩৫৭)। ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহ্‌ তা‘আলাকে মহব্বত কর। কেননা তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিয়ামাতরাজি খাবার খাওয়াচ্ছেন। আর আল্লাহ্‌ তা‘আলার মহব্বতে তোমরা আমাকেও মহব্বত এবং আমার মহব্বতে আমার আহ্‌লে বাইতকেও মহব্বত কর। যঈফ, তাখরীজু ফিকহিস্‌ সারাহ্ (২৩),

【33】

মু'আয ইবনু জাবাল, যাইদ ইবনু সাবিত, উবাই ইবনু কা'ব ও আবু ‘উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ্‌ (রাঃ)-এর মর্যাদা

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মাঝে আবূ বাক্‌র আমার উম্মাতের প্রতি সবচাইতে বেশী দয়ালু। আল্লাহ্‌ তা'আলার বিধান প্রয়োগে 'উমার তাদের মাঝে সবচাইতে বেশী কঠোর। তাদের মাঝে 'উসমান ইবনু 'আফ্‌ফান সবচাইতে বেশী লাজুক। তাদের মাঝে হালাল ও হারাম প্রসঙ্গে মু'আয ইবনু জাবাল সবচাইতে বেশী ওয়াকিফহাল। তাদের মাঝে ফারায়িয (উওরাধিকার সম্পর্কিত বিধান) সম্বন্ধে যাইদ ইবনু সাবিত সবচাইতে বেশী অভিজ্ঞ। তাদের মধ্যে অধিক উত্তমরুপে কুরআন মাজীদ পাঠকারী উবাই ইবনু কা'ব। আর প্রত্যেক উম্মাতের একজন সবচাইতে বেশী বিশ্বস্ত লোক থাকে। এ উম্মাতের সর্বাধিক বিশ্বস্ত লোক আবূ 'উবাইদাহ ইবনুল জার্‌রাহ। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৫৪)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের মাঝে আবূ বাক্‌র (রাঃ) হলেন আমার উম্মাতের প্রতি সর্বাধিক দয়ালু, তাদের মধ্যে আল্লাহ্‌র বিধান প্রয়োগে সর্বাধিক কঠোর হলেন 'উমার, তাদের মাঝে সর্বাধিক লজ্জাশীল হলেন 'উসমান, তাদের মাঝে সর্বাধিক উত্তম কুরআন পাঠকারী হলেন উবাই ইবনু কা'ব, তাদের মাঝে ফারাইয সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত হলেন যাইদ ইবনু সাবিত এবং তাদের মাঝে হালাল-হারাম সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত হলেন মু'আয ইবনু জাবাল, সাবধান প্রত্যেক উম্মাতের মাঝে একজন সর্বাধিক বিশ্বস্ত লোক আছে। আমার উম্মাতের মাঝে সর্বাধিক বিশ্বস্ত লোক হলেন আবূ 'উবাইদাহ্‌ ইবনুল জার্‌রাহ্‌। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (হাঃ ১৫৪)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ)-কে বললেনঃ আল্লাহ্‌ তা'আলা আমাকে হুকুম দিয়েছেন আমি তোমাকে যেন “লাম ইয়াকুনিল্লাযীনা কাফারু” সূরাটি পাঠ করে শুনাই। উবাই (রাঃ) প্রশ্ন করলেন, তিনি কি আমার নামোল্লেখ করেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। এতে উবাই (রাঃ) কেঁদে ফেলেন। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (২৯০৮), বুখারী ও মুসলিম। উবাই ইবনু কা'ব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছেন, আল্লাহ্‌ তা'আলা আমাকে আপনার নিকট কুরআন পাঠ করতে আদেশ করেছেন, অতঃপর তিনি পাঠ করলেন, “আহলে কিতাবদের মাঝে কাফির নয়", আর তাতে পাঠ করলেন, “আল্লাহ্‌র নিকট দ্বীনদার লোক হলেন একনিষ্ঠ মুসলিম ব্যক্তি। ইয়াহুদীরাও নয় নাস্‌রানীরাও নয়। যে ব্যক্তি ভাল 'আমাল করবেন তিনি তা অস্বীকার করবেন না। তিনি আরও পাঠ করলেন, ইবনু আদামের নিকট যদি এক উপত্যকা সম্পদ থাকে তাহলে সে দ্বিতীয় উপত্যকা কামনা করবে, আর যদি দ্বিতীয় উপত্যকা থাকে, তাহলে সে তৃতীয় উপত্যকা কামনা করে। মাটি ব্যতীত আর কিছুতেই ইবনু আদামের পেট ভরবে না। যে তাওবাহ্‌ করবে আল্লাহ তার তাওবাহ্‌ ক্ববূল করবেন। সহীহঃ বুখারী মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যমানায় চারজন ব্যক্তি কুরআন সংকলন করেন, তাঁরা সকলেই আনসারদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেনঃ উবাই ইবনু কা'ব, মু'আয ইবনু জাবাল, যাইদ ইবনু সাবিত ও আবূ যাইদ (রাঃ)। আমি (ক্বাতাদাহ্‌) আনাস (রাঃ)-কে বললাম, আবূ যাইদ কে? তিনি বললেন, আমার একজন চাচা। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আবূ বাক্‌র কতই না ভাল, 'উমার কতই না ভাল, আবূ 'উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ্‌ কতই না ভাল, উসাইদ ইবনু হুযাইর কতই না ভাল, সাবিত ইবনু ক্বাইস ইবনু শাম্‌মাস কতই না ভাল, মু'আয ইবনু জাবাল কতই না ভাল এবং মু'আয ইবনু 'আম্‌র ইবনুল জামূহ কতই না ভাল। সহীহঃ হাদীসের প্রথমাংশ (৩৫১২) নং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। হুযাইফাহ্‌ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) তিনি বলেন, নাজরানবাসীদের নেতা ও তার নায়েব নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলে, আমাদের সঙ্গে আপনার বিশ্বস্ত লোককে প্রেরণ করেন। তিনি বললেনঃ আমি শীঘ্রই তোমাদের সঙ্গে একজন বিশ্বস্ত লোককে প্রেরণ করব যিনি প্রকৃতই বিশ্বস্ত। লোকেরা এই সেবা আঞ্জাম দেয়ার আশা করতে থাকে। তিনি আবূ 'উবাইদাহ্‌ (রাঃ)-কে প্রেরণ করেন। অধঃস্তন বর্ণনাকারী আবূ ইসহাক্ব যখনই সিলাহ্‌ হতে উক্ত হাদীস রিওয়ায়াত করতেন সে সময় বলতেন, আমি এ হাদীস ‘সিলাহ্‌’ হতে প্রায় ষাট বছর আগে শুনেছি। সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (৬১২৩), বুখারী ও মুসলিম, দেখুন সহীহাহ্‌ (১৯৬৪)।

【34】

সালমান ফারসী (রাঃ)-এর মর্যাদা

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জান্নাত তিনজন লোকের জন্য খুবই আগ্রহীঃ আলী, আম্মার ও সালমান (রাঃ)। যঈফ, যঈফা (২৩২৯)

【35】

'আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ)-এর মর্যাদা

আলী (রাঃ) তিনি বলেন, আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) এসে নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে দেখার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। তিনি বলেনঃ তোমরা তাকে আসার অনুমতি দাও। স্বাগতম পবিত্র সত্তা ও পবিত্র স্বভাবের ব্যক্তিকে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৪৬)। আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যখনই আম্মারকে দু'টি বিষয়ের মাঝে একটি গ্রহণের এখতিয়ার দেয়া হয়েছে সে সময় সে প্রত্যেকটির মাঝে সর্বোত্তমটিকে (অপেক্ষাকৃত মজবুতটিকে) এখতিয়ার করেছে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৪৮)। আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হে 'আম্মার! সুখবর গ্রহণ কর বিদ্রোহী দলটি তোমাকে হত্যা করবে। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (৭১০)।

【36】

আবূ যার আল-গিফারী (রাঃ)-এর মর্যাদা

আবদুল্লাহ ইবনু 'আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ আবূ যার হতে বেশি সত্যবাদী কাউকে আকাশ ছায়া দান করেনি এবং মাটি ও তার বুকে বহন করেনি। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৫৬)। আবূ যার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ বাচনিক সত্যবাদিতায় ও সত্য প্রকাশে আবূ যারের তুলনায় উত্তম কাউকে আকাশ ছায়াদান করেনি এবং দুনিয়া তার বুকে আরোহন করেনি। সে ঈসা ইবনু মারইয়াম আলাইহিস সালাম অনুরুপ। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হিংসুটে লোকের মত বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমরা কি এটা তাকে জানাবোনা? (তাকে জানানো হবে?) তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তোমরা তাকে জানিয়ে দাও। যঈফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৬২৩০)

【37】

'আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)-এর মর্যাদা

আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)-এর ভাতিজা তিনি বলেনঃ উসমান (রাঃ)-কে যখন মেরে ফেলার চক্রান্ত করা হয় তখন আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ) তাঁর নিকট তার নিরাপত্তার জন্য আসেন। উসমান (রাঃ) তাকে বলেন, আপনি কেন এসেছেন? তিনি বললেন, আমি আপনাকে সাহায্য করতে এসেছি। উসমান (রাঃ) বললেন, তাহলে আপনি বাইরে বিদ্রোহীদের নিকট যান এবং তাদেরকে আমার নিকট হতে সরিয়ে দিন। আপনার বাড়ির ভেতরে থাকার চাইতে বাইরে থাকাই আমার জন্য উপকারী। অতএব আবদুল্লাহ (রাঃ) বাইরে লোকদের নিকট গিয়ে তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, হে লোকেরা! জাহিলী যুগে আমার অমুক নাম ছিল। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নাম রাখেন আবদুল্লাহ। আমার সম্পর্কে আল্লাহ্‌ তা’আলার কিতাবে কয়েকটি আয়াতও অবতীর্ণ হয়। আমার সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়ঃ “এবং বানী ইসরাঈলের একজন এর মতই কিতাব প্রসঙ্গে সাক্ষ্য দিয়েছে এবং এতে ঈমান এনেছে, অথচ তোমরা অহংকার করছ। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা যালিমদেরকে সৎপথে পরিচালিত করেন না” (সূরাঃ আল-আহ্‌কাফ-১০)। আরও অবতীর্ণ হয়ঃ “আপনি বলুন, আমার ও তোমাদের মাঝে আল্লাহ্‌ তা’আলার সাক্ষ্য এবং যার নিকট কিতাবের জ্ঞান আছে তার সাক্ষ্যই যথেষ্ট” (সূরাঃ রাদ-৪৩)। তোমাদের জন্য আল্লাহ্‌ তা’আলার একখানা কোষবদ্ধ তলোয়ার আছে। আর তোমাদের এই যে শহরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (হিজরাত করে) আসেন, এখানের ফেরেশতারা তোমাদের প্রতিবেশী। অতএব তোমরা এই ব্যক্তিকে হত্যা করার ব্যাপারে আল্লাহ্‌ তা’আলাকে ভয় কর। আল্লাহ্‌র কসম! যদি তোমরা তাকে মেরে ফেল, তাহলে অবশ্যই তোমাদের প্রতিবেশী ফেরেশতারা তোমাদেরকে ছেড়ে চলে যাবে এবং আল্লাহ্‌‌ তা’আলার যে তলোয়ার তোমাদের হতে কোষবদ্ধ আছে তা কোষমুক্ত হলে কিয়ামাত পর্যন্ত আর কোষবদ্ধ হবে না। বিদ্রোহীরা বলল, তোমরা এই ইয়াহূদীকেও হত্যা কর এবং উসমানকেও হত্যা কর। সনদ দুর্বল। ৩০৯৮ নং হাদীসে পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। ইয়াযীদ ইবনু ‘উমাইরাহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, মু'আয ইবনু জাবাল (রাঃ)-এর মৃত্যু উপস্থিত হলে তাকে বলা হল, হে 'আব্দুর রহমানের বাবা! আমাদেরকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে বসাও। তিনি বললেন, ‘ইল্‌ম ও ঈমান নিজস্ব জায়গায়ই বিদ্যামান আছে, যে তা অন্বেষণ করবে সে তা লাভ করবে। তিনি তিনবার এ কথা বললেন। তোমরা চার লোকের নিকট 'ইল্‌ম অনুসন্ধান করঃ 'উয়াইমির আবুদ্‌ দারদা (রাঃ)-এর নিকট, সালমান ফারসী (রাঃ)-এর নিকট, 'আবদুল্লাহ ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ)-এর নিকট 'আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রাঃ)-এর নিকট। শেষোক্তজন প্রথমে ইয়াহূদী ধর্মাবলম্বী ছিলেন, পরে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তার প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ নিশ্চয়ই 'আবদুল্লাহ ইবনু সালাম জান্নাতের দশজনের মাঝে দশম লোক। সহীহঃ মিশকাত (৬২৩১)।

【38】

'আবদুল্লাহ ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ)-এর মর্যাদা

ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার পরে তোমরা আমার সাহাবীদের মাঝে আবূ বাক্‌র ও 'উমারের অনুসরণ কর এবং 'আম্মারের অনুসৃত পথ অবলম্বন কর আর ইবনু মাস'ঊদের ওয়াসীয়াত শক্তভাবে ধারণ কর। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৯৭)। আবূ মূসা আল-আশ'আরী (রাঃ) আমি ও আমার সহোদর ইয়ামান হতে (মাদীনায়) আসা মাত্র আমরা ধারনা করতাম যে, 'আবদুল্লাহ ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের একজন সদস্য। কেননা আমরা তাকে ও তার মাতাকে প্রায়ই নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসা-যাওয়া করতে দেখতাম। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আব্দুর রহমান ইবনু ইয়াযীদ (রহঃ) তিনি বলেন, আমরা হুযাইফা (রাঃ) এর কাছে এসে বললাম, আপনি আমাদেরকে এরুপ এক ব্যাক্তির সন্ধান দিন, যিনি আচার-আচরনে অপরদের চাইতে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বেশি কাছের, যাতে আমরা তাঁর নিকট দ্বীন শিখতে পারি ও হাদীস শুনতে পারি। হুযাইফা (রাঃ) বলেন, আচার-আচরন ও চাল-চলনে ব্যাক্তিদের মাঝে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনেক নিকটবর্তী হলেন ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ)। তিনি আমাদের মাঝ হতে অন্তরাল হয়ে তাঁর ঘরে অবস্থান করতেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিশ্বস্ত সাহাবীগন ভালভাবে অবগত আছেন যে, ইবনু উম্মু আব্‌দ ('আবদুল্লাহ ইবনু মাস'ঊদ) তাদের প্রত্যেকের তুলনায় আল্লাহ্‌ তা'আলার বেশি নৈকট্যলাভকারী। সহীহঃ তা'লীকাত আল-হাস্‌সান (৭০২৩), বুখারী সংক্ষিপ্তাকারে। আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি যদি তাদের কাউকে পরামর্শ ছাড়া দলনেতা নিযুক্ত করতাম, তাহলে ইবনু উম্মি আব্‌দকে দলনেতা নিযুক্ত করতাম। যঈফ, ইবনু মাজাহ (১৩৭), আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি পরামর্শ ছাড়া কাউকে নেতার পদ দিলে ইবনু উম্মি আব্‌দকেই নেতার পদ দিতাম। যঈফ, দেখুন পূর্বের হাদীস। আবদুল্লাহ ইবনু 'আম্‌র (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা চার লোকের কাছ থেকে কুরআন শিক্ষা করঃ ইবনু মাস'ঊদ, উবাই ইবনু কা'ব, মু'আয ইবনু জাবাল ও হুযাইফাহ্‌র মুক্ত দাস সালিম হতে। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (১৮২৭), বুখারী ও মুসলিম। খাইসামাহ্‌ ইবনু আবূ সাবরাহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি মাদীনায় এসে আল্লাহ্‌ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করলাম যে, তিনি যেন আমাকে একজন সৎকর্মপরায়ণ সঙ্গী জুটিয়ে দেন। অতএব তিনি আবূ হুরাইয়াহ্‌ (রাঃ)-কে আমার ভাগ্যে জুটিয়ে দিলেন। তার পাশে বসে আমি তাকে বললাম, আমি আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রার্থনা করেছিলাম যে, তিনি যেন আমাকে একজন সৎকর্মপরায়ন সঙ্গী মিলিয়ে দেন। অতএব আপনি আমার জন্য সহজলভ্য হয়েছেন। তিনি (আমাকে) প্রশ্ন করেন, তুমি এসেছ কোথা হতে? আমি বললাম, আমি কূফার অধিবাসী। আমি মঙ্গলের সন্ধানে এসেছি এবং তাই খোঁজ করছি। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কি সা'দ ইবনু মালিক (রাঃ), যার দু'আ ক্ববুল হয়, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উযুর পানি ও জুতা বহনকারী ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ), রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গোপন তথ্যের খাজাঞ্চী হূ্যাইফাহ্‌ (রাঃ), 'আম্মার (রাঃ) যাকে আল্লাহ তাঁর নাবীর ভাষায় শাইতানের আক্রমণ হতে নিরাপত্তা দান করেছেন এবং দুই কিতাবধারী সালমান (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগন বিদ্যমান নেই? ক্বাতদাহ (রাঃ) বলেন, দুই কিতাব হল ইনজীল ও কুরআন। সহীহঃ বুখারী (৩৭৪২,৩৭৪৩) হুযাইফাহ্‌ হতে, এ হাদিসদ্বয়ে সালমানের উল্লেখ নেই।

【39】

হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ)-এর মর্যাদা

হুযাইফা (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! যদি আপনি কাউকে খালীফা (স্থলাভিসিক্ত) নিযুক্ত করে যেতেন। তিনি বললেনঃ আমি কাউকে তোমাদের খালীফা নিযুক্ত করে গেলে এবং তোমরা তার অবাধ্যাচারী হলে তোমাদেরকে সাজা দেয়া হবে। সুতরাং হুযাইফা (রাঃ) তোমাদের নিকট যা বর্ণনা করে তাকে সত্য বলে গ্রহণ কর এবং ইবনু মাসঊদ (রাঃ) তোমাদেরকে যা কিছু পাঠ করায় তা পাঠ করে নাও। যঈফ, মিশকাত (৬২৩২), আবদুল্লাহ ইবনু আবদুর রহমান বলেন, আমি ইসহাক ইবনু ঈসাকে বললাম, লোকেরা বলেন, এ হাদীস আবূ ওয়াইল হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, না, বরং তা ইনশা আল্লাহ যাযান থেকে।

【40】

যাইদ ইবনু হারিসাহ্‌ (রাঃ)-এর মর্যাদা

উমার (রাঃ) তিনি উসামা (রাঃ)-এর মাহিনা নির্ধারণ করলেন তিন হাজার পাঁচ শত দিরহাম এবং আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ)-এর মাহিনা নির্ধারণ করলেন তিন হাজার। সুতরাং আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) তার পিতাকে বললেন, আপনি উসামাকে কেন আমার উপর স্থান দিলেন? আল্লাহ্‌র কসম! সে কোন যুদ্ধে আমাকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। উমার (রাঃ) বললেন, তোমার পিতার চাইতে (তার পিতা) যাইদ (রাঃ) ছিল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের) বেশি প্রিয়পাত্র। আর তোমার চাইতে উসামা ছিল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের) বেশি পছন্দনীয় ব্যক্তি। তাই আমি আমার পছন্দনীয় ব্যক্তির উপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের) পছন্দনীয় ব্যক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। যঈফ, মিশকাত (৬১৬৪) সালিম ইবনু 'আবদুল্লাহ ইবনু 'উমার (রাঃ) হতে তাঁর বাবা তিনি বলেন, আমরা যাইদ (রাঃ)-কে যাইদ ইবনু হারিসাহ্‌ না বলে বরং যাইদ ইবনু মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলে সম্বোধন করতাম। অবশেষে এ আয়াত অবতীর্ণ হয় (অনুবাদে): "তোমরা তাদের কে তাদের পিতৃ-পরিচয়ে ডাকো, এটাই আল্লাহ তা'আলার দৃষ্টিতে বেশি ন্যায়সঙ্গত"-(সূরা আহ্‌যাব ৫)। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। এটি ৩২০৯ নং হাদীসের পুনরুক্তি। যাইদ ইবনু হারিসাহ্‌ (রাঃ)-এর সহোদর জাবালাহ্‌ (রাঃ) আমি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হাজির হয়ে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! আমার সহোদর যাইদকে আমার সাথে পাঠিয়ে দিন। তিনি বললেন, এইতো সে হাজির। সে যদি তোমার সঙ্গে চলে যেতে চায়, তাকে আমি বাধা দিবো না। যাইদ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! আল্লাহ্‌র ক্বসম! আমি আপনাকে ছেড়ে অন্য কাউকে গ্রহণ করবো না। বর্ণনাকারী (জাবালাহ্‌) বলেন, আমি দেখলাম আমার সিদ্ধান্তের তুলনায় আমার ভাইয়ের সিদ্ধান্তই বেশি উত্তম। হাসানঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (৬১৬৫)। ইবনু 'উমার (রাঃ) কোন এক যুদ্ধাভিযানে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সামরিক বাহিনী পাঠান এবং উসামাহ্‌ ইবনু যাইদ (রাঃ)-কে তাদের সেনাপতি নিযুক্ত করেন। কিছু লোক উসামাহ্‌র নেতৃত্বের ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করে। সে সময় নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেলেনঃ যদি আজ তোমরা উসামাহ্‌র নেতৃত্বের ব্যাপারে বিরূপ সমালোচনা করে থাকো, তবে ইতোপূর্বে তোমরা তার বাবার নেতৃত্বের প্রসঙ্গেও বিরুপ সমালোচনা করেছিলে। আল্লাহ্‌র ক্বসম! নিশ্চয়ই সে নেতৃত্বের ব্যাপারে বেশি যোগ্য ছিল এবং সমস্ত লোকের মাঝে আমার সবচাইতে বেশি পছন্দনীয় ছিল। আর তার পরে তার ছেলেও আমার কাছে সবার তুলনায় বেশি প্রিয়। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【41】

উসামাহ্ ইবনু যাইদ (রাঃ)-এর মর্যাদা

মুহাম্মাদ ইবনু উসামাহ্ ইবনু যাইদ (রাঃ) হতে তাঁর বাবা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিক অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি ও আরো কিছু লোক মাদীনায় গেলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আমি প্রবেশ করলাম। তিনি নীরব ছিলেন এবং কোন কথা বলেননি। তাই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত দু’খানা আমার শরীরের উপর রাখতেন এবং তা উত্তোলন করতেন। তাতে আমি বুঝতে পারলাম যে, তিনি আমার জন্য দু’আ করছেন। হাসানঃ মিশকাত (৬১৬৬)। উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উসামাহ্‌র নাকের শ্লেষ্মা মুছে দেওয়ার ইচ্ছা করলেন। ‘আয়িশা (রাঃ) বলেন, আমাকে অনুমতি দিন আমিই তা মুছে দেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ্‌! তুমি তাকে মুহাব্বাত করবে, কেননা আমি তাকে মুহাব্বাত করি। সহীহঃ মিশকাত (৬১৬৭)। উসামা ইবনু যাইদ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসে থাকাকালীন সময়ে আলী ও আব্বাস (রাঃ) হাযির হয়ে সম্মতি চেয়ে বলেন, হে উসামা! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে আমাদের ঢোকার অনুমতি চাও। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আলী ও আব্বাস (রাঃ) প্রবেশের অনুমতিপ্রার্থী। তিনি বললেন: তুমি কি জান তারা কেন এসেছে? আমি বললাম, না, আমি জানি না। তিনি বললেন, কিন্তু আমি জানি। তাদেরকে সম্মতি দিলেন। তারা দুজনে ভেতরে আসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার নিকট এ কথা জানতে এসেছি যে, আপনার পরিজনদের মধ্যে কে আপনার বেশি আদরের? তিনি বললেনঃ ফাতিমা বিনতু মুহাম্মাদ। তারা বললেন, আমরা আপনার পরিজন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতে আসিনি। তিনি বললেন, আমার পরিজনদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আমার বেশি আদরের যার প্রতি আল্লাহ তা’আলাও দয়া করেছেন এবং আমিও দয়া করেছি অর্থাৎ উসামা ইবনু যাইদ। তারা আবার প্রশ্ন করেন, তারপর কে? তিনি বললেনঃ তারপর আলী ইবনু আবূ তালিব। আব্বাস (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আপনার চাচাকে সবার শেষ ভাগে রাখলেন? তিনি বললেন: হিজরাতের কারণে আলী আপনাকে ছেড়ে গেছে। যঈফ, মিশকাত (৬১৬৮)

【42】

জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ আল-বাজালী (রাঃ)-এর মর্যাদা

জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর হতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে কখনো তাঁর নিকট প্রবেশে বাধা প্রদান করেননি এবং আমাকে যখনই দেখেছেন তখনই হেসে দিয়েছেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৫৯), বুখারী ও মুসলিম। জারীর (রাঃ) তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর হতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর ঘরে প্রবেশ করতে কখনো বাধা দেননি এবং তিনি যখনই আমাকে দেখেছেন তখনই মুচকি হেসেছেন। সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। অত্র হাদীসে বর্ণিত শব্দাবলী অধিক প্রণিধানযোগ্য।

【43】

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর মর্যাদা

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি জিবরাঈল আলাইহিস সালামকে দু’বার দেখেছেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার জন্য দু’বার দু’আ করেছেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা’আলার নিকট দু’বার দু’আ করেছেন। সহীহঃ রাওযুন্‌ নাযীর (৩৯৫)। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তাঁর বুকে চেপে ধরে বললেনঃ হে আল্লাহ! তাকে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করুন। সহীহঃ প্রাগুক্ত, বুখারী।

【44】

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ)-এর মর্যাদা

ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, আমি স্বপ্নে দেখি যে, আমার হাতে একখণ্ড রেশমী কাপড়। আমি জান্নাতের যে দিকেই ইশারা করি সেটি আমাকে সেদিকেই উড়িয়ে নিয়ে যায়। আমি ঘ্টনাটি হাফসা (রাঃ)-এর কাছে বর্ণনা করি। হাফসাহ্‌ (রাঃ) তা নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানান। তিনি বলেনঃ তোমার ভাই নিশ্চয়ই একজন সৎলোক অথবা বলেছেন, নিশ্চয়ই ‘আবদুল্লাহ একজন সৎলোক। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【45】

‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ)-এর মর্যাদা

আয়িশাহ্‌ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুবাইর (রাঃ)-এর ঘরে প্রদীপ জ্বলতে দেখে বললেনঃ হে 'আয়িশাহ্‌! আমার মনে হয় আসমা সন্তান প্রসব করেছে। তোমরা তার নাম রেখ না, আমিই তার নাম রাখব। অতএব তিনি তার নাম রাখলেন ‘আবদুল্লাহ এবং একটি খেজুর চর্বন করে তা নিজ হাতে তাঁর মুখে দেন। হাসানঃ বুখারী (৩৯০৯, ৩৯১০)।

【46】

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর মর্যাদা

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (আমাদের এখান দিয়ে) যাচ্ছিলেন এবং আমার মা উম্মু সুলাইম (রাঃ) তাঁর আওয়াজ শুনতে পেয়ে বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, এই যে (আমার পুত্র) উনাইস। আনাস (রাঃ) বলেন, তারপর আমার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনটি দু’আ করেন। অবশ্য এর মাঝে দু’টি আমি দুনিয়াতেই লাভ করেছি এবং তৃতীয়টি আখিরাতে পাওয়ার আশা রাখি। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায়ই আমাকে বলতেনঃ হে দুই কানের অধিকারী। আবূ উসামাহ্‌ বলেন, অর্থাৎ তাঁর সাথে তিনি (এ কথা বলে) রসিকতা করতেন। উম্মু সুলাইম (রাঃ) তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আনাস ইবনু মালিক আপনার সেবক, আল্লাহ তা’আলার নিকট তাঁর জন্য দু’আ করুন। তিনি বললেনঃ হে আল্লাহ! আনাসের ধন-মাল ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দাও এবং তুমি তাকে যা কিছু দিয়েছ তাতে বারাকাত দান কর। সহিহঃ সহীহাহ্‌ (২২৪৬), তাখরীজ মুশকিলাতুল ফাক্‌র (১২), বুখারী ও মুসলিম। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি সবজির নামানুসারে আমার নামের উপনাম রাখেন, সে সবজি তুলে আনতাম। সাবিত আল-বুনানী (রাহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) আমাকে বললেন, হে সাবিত! আমার হতে (হাদীস) সংগ্রহ কর। যেহেতু আমার তুলনায় বেশি নির্ভরযোগ্য কারো নিকট হতে কিছু (হাদীস) সঞ্চয়ন করতে পারবে না। কারণ আমি তা সঞ্চয়ন করেছি সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা সংগ্রহ করেছেন জিবরাইল আলাইহিস সালাম হতে এবং জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তা সঞ্চয়ন করেছেন আল্লাহ্ তা’আলার নিকট হতে। আবূ কুরাইব-যাইদ তিনি মাইমূন আবূ আবদুল্লাহ হতে, তিনি সাবিত হতে, তিনি আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে ইবরাহীম ইবনু ইয়াকূব বর্ণিত হাদীসের মতই বর্ণনা করেছেন। তবে এ সূত্রে এ কথার উল্লেখ নেই ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরাঈল আলাইহিস সালাম হতে তা গ্রহণ করেছেন’। দেখুন পূর্বের হাদীস। আবূ খাল্‌দাহ্‌ (রহঃ) আবুল ‘আলিয়াহ্‌ (রহঃ)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, আনাস (রাঃ) কি নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে হাদীস শুনেছেন? আবুল ‘আলিয়াহ্‌ (অবাক হয়ে) বলেন, তিনি তো একাধারে দশ বছর তাঁর সেবা করেছেন এবং তাঁর জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’আ করেছেন। তাঁর একটি বাগান ছিল যাতে বছরে দু’বার ফল ধরত। ঐ বাগানে একটি ফুলগাছ ছিল যা হতে কস্তুরির ঘ্রাণ আসত। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (২২৪১)।

【47】

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ)-এর মর্যাদা

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে তাঁর সম্মুখে আমার কাপড় (চাদরখানা) বিছিয়ে দিলাম। তারপর কাপড়খানা তুলে জড়ো করে তিনি আমার বুকের উপড় রাখলেন। এরপর হতে আমি আর কোন কিছুই ভুলিনি। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনার কাছ হতে আমি যা কিছু শ্রবণ করি তা মনে রাখতে পারি না। তিনি বললেন, তোমার চাদরখানা বিছাও। অতএব আমি তা বিছালাম। তারপর তিনি বহু হাদীস রিওয়ায়াত করলেন যা আমি কখনো ভুলিনি। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ)-কে তিনি বললেন, হে আবূ হুরায়রা্‌! আপনি আমাদের চেয়ে বেশি সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছাকাছি কাটিয়েছেন এবং আমাদের তুলনায় তাঁর বেশি হাদীস মুখস্থ করেছেন। মালিক ইবনু আবূ আমির (রাহঃ) তিনি বলেন, এক লোক তালহা ইবনু উবাইদুল্লাহ (রাঃ)-এর নিকট এসে বলল, হে আবূ মুহাম্মাদ! ঐ ইয়ামানী লোকটি অর্থাৎ আবূ হুরাইরা (রাঃ) প্রসঙ্গে আপনার কি বক্তব্য? তিনি কি আপনাদের চাইতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস অনেক বেশি জানেন? তার নিকট আমরা এমন কিছু হাদীস শুনি যা আপনাদের নিকট শুনতে পাই না। অথবা তিনি কি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বরাতে এমন কথা বলেন যা প্রকৃতপক্ষে তিনি বলেননি? তালহা (রাঃ) বললেন, বস্তুত তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এ হাদীস শুনেছেন যা আমরা শুনতে পারিনি। তার কারণ এই যে, তিনি ছিলেন একজন গরীব লোক, তার কিছুই ছিল না। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অতিথি। তার হাত থাকত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতের সাথে (অর্থাত সব সময় তাঁর সঙ্গে থাকতেন)। আর আমরা ছিলাম বাড়ি-ঘর ও পরিবার-পরিজনসহ ধনবান। তাই আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমাতে হাযির হওয়ার সুযোগ পেতাম দিনের দুই ভাগে (সকাল ও সন্ধ্যায়)। তাই নিঃসন্দেহে তিনি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণী শুনেছেন, যা আমরা শুনিনি। আর তুমি এমন একজন সৎ লোকও খুঁজে পাবে না যিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বরাতে এমন কথা বলবেন, যা সত্যিকার অর্থে তিনি বলেননি। আবু হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমাকে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করেনঃ তুমি কোন গোত্রের লোক? আমি বললাম, দাওস গোত্রীয়। তিনি বললেনঃ আমি জ্ঞাত ছিলাম না যে, দাওস গোত্রে কোন উত্তম ব্যাক্তি আছে। সহীহঃ সহিহাহ্‌ (২৯৩৬)। তাইসীরুল ইনতিফা’ মুহাজির ইবনু মাখলাদ হতে। আবু হুরায়রাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি কয়েকটি খেজুরসহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এ খেজুরগুলোতে বারাকাত হওয়ার জন্য আল্লাহ তা’আলার নিকট দু’আ করুন। তিনি খেজুরগুলো জড়ো করলেন, তারপর আমার জন্য খেজুরগুলোয় বারাকাত হওয়ার দু’আ করলেন, তারপর আমাকে বললেনঃ এগুলো নাও এবং তোমার এই থলেতে রাখ। আর যখনই তা হতে তুমি কিছু খেজুর নিতে চাও, সে সময় থলের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে বের করে নিবে এবং কখনও থলেটি ঝেড়ে ফেল না। এরপর আমি উক্ত থলে হতে এত এত ওয়াসাক খেজুর আল্লাহ তা’আলার রাস্তায় দান করেছি। আর এ হতে আমরা নিজেরাও খেতাম এবং অন্যকেও খাওয়াতাম। থলেটি আমার কোমড় হতে কখনো আলাদা হয়নি। অবশেষে ‘উসমান (রাঃ) যেদিন শাহাদাত বরণ করেন সেদিন আমার (কোমড়) হতে থলেটি পড়ে যায়। আবদুল্লাহ ইবনে রাফি’ (রহঃ) তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ)-কে আমি প্রশ্ন করলাম, আবূ হুরায়রা্‌ (বিড়ালের বাপ) আপনার ডাকনাম হলো কেন? তিনি বললেন, তুমি আমাকে কি ভয় পাও? আমি বললাম, হ্যাঁ আল্লাহ্‌র শপথ, অবশ্যই আপনাকে আমি ভয় করি। তিনি বললেন, আমি আমার পরিবারের মেষপাল চড়াতাম এবং আমার একটি ছোট বিড়াল ছিল। রাতের বেলা আমি এটিকে একটি গাছে বসিয়ে রাখতাম। আর দিন হলে আমি এটাকে আমার সঙ্গে নিয়ে যেতাম এবং এর সাথে খেলা করতাম। তাই লোকেরা আমাকে আবূ হুরায়রা্‌ ডাকনাম দেয়। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ্‌ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) ছাড়া আর কেউ আমার চেয়ে অধিক রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদীস রেওয়ায়েত করেনি। কেননা তিনি (হাদীস) লিখে রাখতেন কিন্তু আমি লিখতাম না। সহীহঃ বুখারী (২৬৬৮) নং হাদীস পুর্বে উল্ল্যেখ হয়েছে।

【48】

মু’আবিয়াহ্‌ ইবনু আবী সুফ্‌ইয়ান (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আবদুর রহমান ইবনু আবী ‘উমাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী ছিলেন; নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু’আবিয়া (রাঃ)-এর জন্য দু’আ করেনঃ “হে আল্লাহ্‌! তুমি তাকে পথপ্রদর্শক ও হেদায়াতপ্রাপ্ত বানাও এবং তার মাধ্যমে (মানুষকে) সৎপথ দেখাও। সহীহঃ মিশকাত (৬২৩) সহীহাহ্‌ (১৯৬৯)। আবূ ইদরিস আল-খাওলানী (রহঃ) তিনি বলেন, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) যখন ‘উমাইর ইবনু সা’দ (রাঃ)-কে পদচ্যুত করে সে পদে মু’আবিয়াহ্‌ (রাঃ)-কে হিমসের গভর্নর নিযুক্ত করলেন তখন লোকেরা বলল, তিনি ‘উমাইরকে পদচ্যুত করে সে পদে ম’আবিয়াহ্‌কে শাসক নিযুক্ত করেছেন। ‘উমাইর (রাঃ) বলেন, তোমরা মু’আবিয়াহ্‌কে ভালভাবে স্মরণ কর। কেননা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ্‌! তুমি তার মাধ্যমে (লোকদের) পথ দেখাও। পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ।

【49】

‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ)-এর মর্যাদা।

উক্কবাহ্‌ ইবনু ‘আমির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লোকেরা ইসলাম কবূল করেছে আর ‘আমর ইবনুল ‘আস বিশ্বাস স্থাপন করেছে। হাসানঃ সহীহাহ্‌ (১১৫), মিশকাত (৬২৩৬) তালহা ইবনু উবাইদুল্লাহ (রাঃ) আমি রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ আমর ইবনু আস কুরাইশদের অধিক ভালো ব্যক্তিদের দলভুক্ত।

【50】

খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাঃ)- এর মর্যাদা।

আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে আমরা এক মানযিলে যাত্রা বিরতি করলাম। আমাদের সম্মুখ দিয়ে লোকেরা চলাফেরা করতে লাগল। আর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করতে থাকলেনঃ হে আবূ হুরায়রা্‌! ইনি কে? আমি বলতাম, অমুক। তখন তিনি বলতেন, আল্লাহ্‌ তা’আলার এ বান্দা খুব ভাল লোক। আবার এক ব্যাক্তি গেলে তিনি প্রশ্ন করতেনঃ ইনি কে? আমি বলতাম, অমুক। তখন তিনি বলতেন, আল্লাহ্‌ তা’লার এ বান্দা খুব মন্দ ব্যাক্তি। অবশেষে সেখান দিয়ে খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ অতিক্রম করলে তিনি প্রশ্ন করলেনঃ এ লোকটি কে? আমি বললাম, ইনি খালিদ ইবনু ওয়ালীদ। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌ তা’আলার এ বান্দা খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ খুব ভাল ব্যাক্তি। ইনি আল্লাহ্‌ তা’আলার তরবারিগুলোর মাঝের একখানা তরবারি। সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (৬২৫৩), সহীহাহ্‌ (১২৩৭, ১৮২৬) আহকামুল জানায়িয (১৬৬)।

【51】

সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আল-বারাআ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে একখানা রেশমী কাপড় উপহার দেয়া হয়। সাহাবীগণ তার কোমলতায় বিস্মিত হন। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা এটা দেখে অবাক হচ্ছ। অথচ জান্নাতে সা’দ ইবনু মু’আযির রুমাল-এর তুলনায় আরো অনেক উন্নত মানের হবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি সা’দ ইবনু মু’আযের লাশ সম্মুখে রেখে বলতে শুনেছিঃ দয়াময় আল্লাহ্‌র আরশ তার জন্য নড়ে উঠেছে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৫৮) বুখারী ও মুসলিম। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, যখন সা’দ ইবনু মু’আযের জানাযা (লাশ) বয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সে সময় মুনাফিক্বরা বলে, কতই না হালকা তার মৃতদেহটি। তাদের এমন মন্তব্যের কারণ ছিল বানূ কুরাইযা প্রসঙ্গে তার ফাইসালা। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এ খবর পৌঁছলে তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই ফেরেশতারা তার জানাযা (লাশ) বহন করতেছিলেন (তাই হালকা মনে হচ্ছিলো)। সহীহঃ মিশকাত (৬২২৮)।

【52】

ক্বাইস ইবনু সা’দ ইবনু 'উবাদাহ্‌ (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, ক্বাইস ইবনু সা’দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য শাসকের দেহরক্ষীর মত ছিলেন। (অধঃস্তন বর্ণনাকারী) মুহাম্মাদ ইবনু আবী ‘আবদিল্লাহ আল-আনসারী বলেন, তিনি রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনেক কাজ সমাধা করতেন। সহীহঃ বুখারী (৭১৫৫)।

【53】

জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর মর্যাদা।

জাবির ইবনু ‘আবদিল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে এসেছেন খচ্চরে কিংবা তুর্কী ঘোড়ায় চড়ে নয় (বরং পায়ে হেঁটে)। সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (২৯১), বুখারী অনুরূপ অর্থে হাদীস বর্ণনা করেছেন। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উটের রাতে আমার জন্য পঁচিশবার ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যইফ, মিশকাত (৬২৩৮)।

【54】

মুস’আব ইবনু ‘উমাইর (রাঃ)-এর মর্যাদা।

খাব্বাব (রাঃ) তিনি বলেন, আল্লাহ্‌ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই আমরা রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে হিজরত করি। সুতরাং এর পুরস্কার আল্লাহ্‌ তা’আলার কাছেই আমাদের প্রাপ্য। আমাদের মাঝে কেউ এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন যে, তিনি তার পুরস্কার কিছুই (পৃথিবীতে) ভোগ করতে পারেননি। আবার আমাদের মাঝে কারো ফল পেকেছে এবং তিনি তা (পৃথিবীতে) ভোগ করেছেন। আর মুস’আব ইবনু ‘উমাইর (রাঃ) মাত্র একখানা কাপড় ছাড়া আর কোন সম্পদই রেখে যাননি। (তার মৃত্যুর পর) লোকেরা ঐ কাপড়খানা দিয়ে তার মাথা ঢাকলে তার পা দু’টি বের হয়ে যেত, আবার তা দিয়ে তার পা দু’টি ঢেকে দিলে তার মাথাটি অনাবৃত হয়ে যেত। সে সময় রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কাপড়টি দিয়ে তার মাথা ঢেকে দাও এবং তার পায়ের উপর ইয্‌খির ঘাস বিছিয়ে দাও। সহীহঃ আহকামুল জানায়িয (৫৭, ৫৮) বুখারী ও মুসলিম।

【55】

আল-বারাআ ইবনু মালিক (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাথায় উস্কুখুস্কু চুল ও দেহে ধূলিমলিন দু’খানা পুরাতন কাপড় পরিহিত এরূপ অনেক ব্যাক্তি রয়েছে যার প্রতি লোকেরা দৃষ্টিপাত করেনা। অথচ সে আল্লাহ্‌র নামে শপথ করে ওয়া’দা করলে তিনি তা সত্যে পরিণত করেন। আল-বারাআ ইবনু মালিক তাদের দলভুক্ত। সহীহঃ মিশকাত (৬২৩৯) তাখরীজুল মুশকিলাহ (১২৫)।

【56】

আবূ মুসা আল-আশ’আরী (রাঃ)-এর মর্যাদা।

আবূ মুসা আল-আশ’আরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে আবূ মুসা! তোমাকে দাঊদ (‘আঃ)-এর পরিবারের সুমধুর কণ্ঠস্বরসমূহের মাঝের একটি সুর দান করা হয়েছে। সহীহঃ বুখারী (৫০৮৪), মুসলিম (২/১৯৩)। সাহ্‌ল ইবনু সা’দ (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পাশে ছিলাম। তিনি পরিখা খনন করছিলেন, আর আমরা মাটি সরাচ্ছিলাম। আমাদের পাশ দিয়ে তিনি চলাচল করতেন আর বলতেনঃ “হে আল্লাহ্‌! পরকালের ভোগবিলাসই আসল (স্থায়ী)। অতএব তুমি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করে দাও”। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (পরিখা খননকালে ছন্দাকারে) বলতেনঃ “হে আল্লাহ! পরকালের সুখ শান্তিই হচ্ছে প্রকৃত সুখ-শাস্তি। সুতরাং তুমি আনসার ও মুহাজিরদেরকে মর্যাদা দান কর”। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【57】

যে লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখেছেন এবং তাঁর সাহচর্য লাভ করেছেন তার মর্যাদা

জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) আমি রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ জাহান্নামের আগুন এমন মুসলিম লোককে ছুঁবে না যে আমাকে দেখেছে অথবা আমার দর্শনলাভকারীকে দেখেছে। তালহা ইবনু খিরাশ বলেন, আমি জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) কে দেখেছি। মূসা ইবনু ইবরাহীম বলেন, তালহা ইবনু খিরাশকে কে দেখেছি। ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব বলেন, মূসা ইবনু ইবরাহীম আমাকে বলেছেন, ‘তুমি অবশ্যই আমাকে দেখেছ (আমার সান্নিধ্য লাভ করেছ)। সুতরাং আমরা আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট নাজাতের আশা রাখি। যইফ, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৬০০৪), আবদুল্লাহ ইবনু মাস'ঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার যুগের ব্যক্তিরাই উত্তম। তারপর তাদের পরবর্তীগণ, তারপর তার পরবর্তীগণ। তারপর এরূপ ব্যক্তিদের আগমন ঘটবে, যারা সাক্ষী দেবার আগে শপথ করবে অথবা শপথের আগে সাক্ষ্য দিবে। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (২৩৬২), বুখারী ও মুসলিম।

【58】

যারা গাছের নীচে বাই’আত গ্রহণ করেছেন তাদের মর্যাদা

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যেসব ব্যক্তি (হুদাইবিয়ার প্রান্তরে) গাছের নীচে শপথ গ্রহণ করেছে তাদের কেউই জাহান্নামে যাবে না। সহীহঃ যিলালুল জান্নাত (৮৬০), সহীহাহ্‌ (২১৬০), মুসলিম।

【59】

যে ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের গালি দেয়

আবু সা'ঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার সাহাবীদের তোমরা গালি দিও না। যাঁর হাতে আমার প্রাণ সেই সত্তার শপথ! তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও দান-খাইরাত করে তবে তা তাদের কারো এক মুদ্দ বা অর্ধ মুদ্দ দান-খাইরাতের সমান মর্যাদা সম্পন্ন হবে না। সহীহঃ আয্‌-যিলাল (৯৮৮), বুখারী ও মুসলিম। আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্‌ফাল (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হুঁশিয়ার! আমার সাহাবীদের বিষয়ে আল্লাহ্‌ তাআলাকে ভয় কর। আমার পরে তোমরা তাদেরকে (গালি ও বিদ্রূপের) লক্ষ্যবস্তু বানিও না। যেহেতু যে ব্যক্তি তাদের প্রতি ভালবাসা পোষণ করল, সে আমার প্রতি ভালবাসার খাতিরেই তাদেরকে ভালবাসল। আর যে ব্যক্তি তাদের প্রতি শত্রুতা ও হিংসা পোষণ করল, সে আমার প্রতি শত্রুতা ও হিংসাবশেই তাদের প্রতি শত্রুতা ও হিংসা পোষণ করল। যে ব্যক্তি তাদেরকে কষ্ট দিল, সে আমাকেই কষ্ট দিল। যে আমাকে কষ্ট দিল, সে আল্লাহ্‌ তা’আলাকেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহ্‌ তাআলাকে কষ্ট দিল, শীঘ্রই আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে পাকড়াও করবেন। যইফ, তাখরীজুত্ তাহা বিয়া(৪৭১), যইফা (২৯০১) জাবির (রাঃ) রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে লোক (হুদাইবিয়ায়) বৃক্ষের নীচে বাইয়াত (রিদওয়ান) করেছে, সে অবশ্যই জান্নাতে যাবে, লাল বর্ণের উটের মালিক ছাড়া। যইফ, সহীহা (২১৬০) নং হাদীসের অধীন জাবির (রাঃ) হাতিব ইবনু আবী বালতা'আহ্‌ (রাঃ)-এর এক ক্রীতদাস রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এসে তার বিরুদ্ধে নালিশ করে বলে, হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় সে জাহান্নামে যাবে। তিনি বললেনঃ তুমি মিথ্যা বলেছ, সে কখনও জাহান্নামে যাবে না। কেননা সে বাদ্‌রের যুদ্ধে এবং হুদাইবিয়ায় অংশগ্রহণ করেছে। সহীহঃ মুসলিম (৭/১৬৯)। আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বুরাইদা (রাহঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার সাহাবীদের মধ্যে কেউ যে অঞ্চলেই মারা যাবে কিয়ামতের দিন সেখানকার মানুষের নেতা ও নূর (জ্যোতি) হয়ে উঠবে। যইফ, যইফা (৪৪৬৮),

【60】

যারা সাহাবীদের গালি দেয়

ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যারা আমার সাহাবীদের গালি দেয় তাদের দেখলে তোমরা বলবে, তোদের দুষ্কর্মের উপর আল্লাহ্‌ তা’আআলার অভিসম্পাত। অত্যন্ত দুর্বল, মিশকাত, তাহকীক ছানী (৬০০৮),

【61】

মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা ফাতিমাহ্ (রাঃ)-এর মর্যাদা

আল-মিসওয়ার ইবনু মাখরামাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছিঃ হিশাম ইবনুল মুগীরাহ্ গোত্রের লোকেরা 'আলী ইবনু আবী ত্বালিবের নিকট তাদের মেয়ে বিবাহ দেয়ার প্রসঙ্গে আমার নিকট সম্মতি চেয়েছে। কিন্তু আমি অনুমতি দিব না, অনুমতি দিব না, অনুমতি দিব না। তবে 'আলী ইবনু আবী ত্বালিব ইচ্ছা করলে আমার কন্যাকে ত্বালাক দিয়ে তাদের মেয়ে বিবাহ করতে পারে। ফাতিমাহ্ হচ্ছে আমার শরীরের অংশ। তার কাছে যা খারাপ লাগে আমার নিকটও তা খারাপ লাগে, যা তার জন্য কষ্টদায়ক, তা আমার জন্যও কষ্টদায়ক। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৯৯৮), বুখারী ও মুসলিম। বুরাইদা (রা:) তিনি বলেনঃ নারীদের মধ্যে ফাতিমা (রাঃ) আর পুরুষদের মধ্যে আলী (রাঃ) ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট সবচাইতে প্রিয়। ইবরাহীম (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ তাঁর পরিবারস্থ লোকদের মধ্যে। মুনকার, নাকদুল কাত্তানী (২৯), আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাঃ) আলী (রাঃ) আবূ জাহলের কন্যাকে বিয়ে করার আলোচনা করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা শুনে বললেনঃ প্রকৃতপক্ষে ফাতিমাহ্ আমার শরীরের একটি অংশ। যা তাকে কষ্ট দেয়, তা আমাকেও কষ্ট দেয়, যা তাকে ক্লান্ত করে তা আমাকেও ক্লান্ত করে। সহীহঃ ইরওয়া (৮/২৯৪) । যাইদ ইবনু আরকাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ তোমরা যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে আমিও তাদের বিপক্ষে লড়াই করব এবং তোমরা যাদের সাথে শান্তি স্থাপন করবে আমিও তাদের সাথে শান্তি স্থাপন করবো। যঈফ, ইবনু মাজাহ (১৪৫) উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান, হুসাইন, 'আলী ও ফাতিমাহ্ (রাঃ)-কে একখানা চাদরে ঢেকে বললেনঃ "হে আল্লাহ! এরা আমার পরিবার-পরিজন এবং আমার একান্ত আপনজন। সুতরাং তাদের হতে তুমি অপবিত্রতা দূরে সরিয়ে দাও এবং তাদেরকে উত্তমরূপে পবিত্র কর"। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমিও কি তাদের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই তুমি মঙ্গলের কাছে আছ। সহীহঃ পূর্বে বর্ণিত (৩২০৫) নং হাদীসের সহায়তায়। উম্মুল মু'মিনীন 'আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উঠা-বসা, আচার-অভ্যাস ও চালচলনের সাথে তাঁর কন্যা ফাতিমাহ্ (রাঃ)-এর অপেক্ষা বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ আমি আর কাউকে দেখিনি। 'আয়িশাহ্ (রাঃ) আরও বলেন, ফাতিমাহ্ (রাঃ) যখনই নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসতেন তিনি তখনই তার নিকট উঠে যেতেন, তাকে চুমু দিতেন এবং নিজের স্থানে বসাতেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ঘরে গেলে তিনিও নিজের জায়গা হতে উঠে তাঁকে (পিতাকে) চুমা দিতেন এবং নিজের জায়গায় বসাতেন। নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মৃত্যুশয্যায়) অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর নিকট এসে ফাতিমাহ্ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখের উপর ঝুঁকে পড়েন এবং তাঁকে চুমু দেন, তারপর মাথা তুলে কাঁদেন। আবার তিনি তাঁর মুখের উপর ঝুঁকে পড়েন, তারপর মাথা তুলে হাসেন। আমি ('আয়িশাহ্) বললাম, আমি অবশ্যই জানি যে, তিনি নিশ্চয়ই আমাদের নারীদের মাঝে সর্বাধিক বুদ্ধিমতী, কিন্তু (তার হাসি দেখে ভাবলাম) অন্যান্য নারীর মত সে একজন নারীই। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকাল করলে তাকে আমি প্রশ্ন করলাম, কি ব্যাপার! আপনি নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখের উপর ঝুঁকে পড়লেন, তারপর মাথা তুলে কাঁদলেন, আবার ঝুঁকে পড়লেন, তারপর মাথা তুলে হাসলেন। আপনি কি কারণে এরূপ করলেন? ফাতিমাহ্ (রাঃ) বললেন, তাঁর জীবদ্দশায় আমি কথাটি গোপন রেখেছি (কারণ তিনি গোপন কথা প্রকাশ করা সঙ্গত মনে করতেন না)। আমাকে তিনি জানান যে, এই অসুখেই তিনি ইন্তিকাল করবেন, তাই আমি কেঁদেছি। তারপর তিনি আমাকে জানান যে, তাঁর পরিবারস্থ লোকদের মাঝে সবার পূর্বে আমিই তাঁর সঙ্গে একত্রিত হব। তাই আমি হেসেছি। সহীহঃ নাক্বদুল কিত্তানী (৪৪-৪৫), বুখারী ও মুসলিম। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতিমাকে ডেকে তার সাথে চুপিসারে কিছু কথা বলেন। এতে ফাতিমা কেঁদে ফেলেন। তারপর তিনি কিছু কথা বললে ফাতিমা হাসেন। উম্মু সালামাহ্ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তিকালের পরে আমি ফাতিমাকে তার হাসি-কান্নার কারণ প্রশ্ন করি। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে অবহিত করেন যে, অচিরেই তিনি মৃত্যুবরণ করবেন, তাই আমি কেঁদেছি। তারপর তিনি আমাকে অবহিত করেন যে, মারইয়াম বিনতু ইমরান ব্যতীত আমি জান্নাতের নারীদের নেত্রী হব, তাই আমি হেসেছি। সহীহঃ মিশকাত (৬১৮৪), সহীহাহ্ (২/৪৩৯) । জুমায়্যি ইবনু উমাইর আত-তাইমী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি আমার ফুফুর সাথে আইশা (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন তাকে প্রশ্ন করা হল, কোন লোকটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সবচাইতে প্রিয়? তিনি বলেন, ফাতিমা (রাঃ)। আবার প্রশ্ন করা হল, পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বললেন, তাঁর স্বামী এবং তিনি ছিলেন বেশি পরিমাণে রোযা পালনকারী এবং বেশি পরিমাণে (রাতে) নামায আদায়কারী। মুনকার, নাকদুল কাত্তানী (২০ পৃ:)

【62】

খাদীজাহ্ (রাঃ)-এর মর্যাদা

আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, খাদীজাহ্ (রাঃ)-এর প্রতি আমার যতটা ঈর্ষা হত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অন্য কোন সহধর্মিণীর প্রতি আমি ততটা ঈর্ষা পোষণ করতাম না। অথচ আমি তার দেখাও পাইনি। তা এজন্য যে, প্রায়ই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কথা মনে করতেন। আর তিনি বকরী যবাহ করলে খাদীজাহ্ (রাঃ)-এর বান্ধবীদেরকে খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের জন্য গোশত উপহার পাঠাতেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৯৯৭), বুখারী ও মুসলিম। আয়িশাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, খাদীজাহ্ (রাঃ)-এর প্রতি আমি যতটা ঈর্ষা পোষণ করতাম অপর কোন নারীর প্রতি আমি ততটা ঈর্ষা পোষণ করিনি। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদীজার মৃত্যুবরণের পরই আমাকে বিয়ে করেছেন। আর ঈর্ষার কারণ এই ছিল যে, তিনি তার (খাদীজার) জন্য জান্নাতে এমন একটা মনি-মুক্তা খচিত সুরম্য প্রাসাদের সুখবর দিয়েছেন যাতে না আছে কোন হৈ-হুল্লোড় আর না আছে কোন কষ্টক্লেশ। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। দেখুন পূর্বের হাদীস। আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ খাদীজাহ্‌ বিনতু খুয়াইলিদ হলেন এই উম্মাতের নারীদের মাঝে শ্রেষ্ঠা। আর মারইয়াম বিনতু 'ইমরান ছিলেন (তৎকালীন উম্মাতের) নারীদের মাঝে শ্রেষ্ঠা। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সারা বিশ্বের নারীদের মধ্যে মারিয়াম বিনতু 'ইমরান, খাদীজাহ্‌ বিনতু খুয়াইলিদ, ফাতিমাহ্‌ বিনতু মুহাম্মাদ এবং ফিরআউনের স্ত্রী আসিয়াহ্‌ তোমার জন্য যথেষ্ট। সহীহ মিশকাত (৬১৮১) ।

【63】

'আয়িশাহ্‌ (রাঃ)-এর মর্যাদা

আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা তাদের উপটৌকন প্রদানের জন্য 'আয়িশাহ্‌ (রাঃ)-এর পালার দিনের অপেক্ষায় থাকত (যে দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট থাকেন)। 'আয়িশাহ্‌ (রাঃ) বলেন, আমার সতীনেরা উন্মু সালামাহ্ (রাঃ)-এর কাছে মিলিত হয়ে বলেন, হে উম্মু সালামাহ্‌! লোকেরা তাদের উপটৌকন 'আয়িশাহ্‌র পালার দিনে পেশ করার অপেক্ষায় থাকে। অথচ আমাদেরও কল্যাণ লাভের আকাংখা আছে, যেমন 'আয়িশাহ্‌র আছে। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আপনি বলুন, তিনি যেন লোকদের বলেন যে, তিনি যেখানেই থাকুন তারা যেন তাদের উপটৌকন সেখানে পাঠিয়ে দেয়। উন্মু সালামাহ্‌ (রাঃ) বিষয়টি জানালে তিনি কোন ভ্রুক্ষেপ করলেন না। তিনি পুনরায় আগমন করার পর উম্মু সালামাহ্ বিষয়টি উত্থাপন করে বলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমার সতীনেরা আলোচনা করেছে যে, লোকেরা তাদের উপটৌকন 'আয়িশাহ্‌র জন্য নির্দিষ্ট দিনে আপনার নিকট পাঠিয়ে থাকে। সুতরাং আপনি তাদেরকে হুকুম করুন যে, আপনি যেখানেই থাকুন তারা যেন তাদের উপটৌকন পাঠাতে থাকে। তিনি প্রসঙ্গটি তৃতীয়বার বললে তিনি বললেনঃ হে উম্মু সালামাহ্‌! তুমি 'আয়িশাহ্‌র বিষয়ে আমাকে ব্যথিত করো না। কেননা 'আয়িশাহ্‌ ছাড়া তোমাদের মাঝে অপর কারো লেপের নীচে থাকা অবস্থায় আমার নিকট ওয়াহী আসেনি। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আয়িশাহ্ (রাঃ) জিবরীল ('আঃ) একখানা সবুজ রংয়ের রেশমী কাপড়ে তার (‘আয়িশাহ্‌র) প্রতিচ্ছবি নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে নিয়ে এসে বলেন, ইনি দুনিয়া ও আখিরাতে আপনার স্ত্রী। সহীহঃ বুখারী (৫১২৫, ৭০১১, ৭০১২), মুসলিম (৭/১৩৪), অনুরূপ আখিরাত শব্দ ব্যতীত। আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হে 'আয়িশাহ্‌! এই যে জিবরীল ('আঃ), তোমাকে সালাম বলেছেন। আমি বললাম, তার প্রতিও সালাম, আল্লাহ তা'আলার রাহমাত ও কল্যাণ বর্ষিত হোক। যা আপনি দেখেন আমরা তা দেখতে পাই না। সহীহঃ যঈফাহ্‌ (৫৪৩৩) নং হাদীসের অধীনে, বুখারী ও মুসলিম। আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ জিবরীল ('আঃ) তোমাকে সালাম বলেছেন। আমি বললাম, তার উপরও শান্তি ও আল্লাহ তা'আলার রহমাত বর্ষিত হোক । সহীহঃ ২৬৯৩ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আবু মূসা (রাঃ) তিনি বলেন, আমাদের রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের- নিকট কোন হাদীসের অর্থ বুঝা কষ্টসাধ্য হলে 'আয়িশাহ্‌ (রাঃ)-কে প্রশ্ন করে তার নিকট এর সঠিক জ্ঞাত লাভ করেছি। সহীহঃ মিশকাত (৬১৮৫)। মূসা ইবনু ত্বালহা (রাঃ) তিনি বলেন, 'আয়িশাহ্‌ (রাঃ)-এর তুলনায় বেশি বিশুদ্ধভাষী আমি আর কাউকে দেখিনি। সহীহঃ মিশকাত (৬১৮৬)। আম্‌র ইবনুল 'আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে যাতুস সালাসিল যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করেন। 'আম্‌র (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনার নিকট কোন লোক সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বললেন, “আয়িশাহ্‌। আমি বললাম, পুরুষদের মাঝে কে? তিনি বললেনঃ তার বাবা। সহীহঃ আত-তা’লীক 'আলা আল-ইহসান (৪৫২৩), বুখারী ও মুসলিম। আম্‌র ইবনুল 'আস (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বললেন, আপনার নিকট সর্বাধিক প্রিয় কোন ব্যক্তি? তিনি বললেনঃ 'আয়িশাহ্‌। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, পুরুষদের মাঝে কে? তিনি বললেনঃ তার পিতা। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাবতীয় খাদ্যের উপর যেরূপ সারীদের (শোরবাতে ভেজানো রুটি) মর্যাদা, সকল স্ত্রীলোকের উপর তেমন 'আয়িশাহ্‌র মর্যাদা। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৩২৮১), বুখারী ও মুসলিম। আমর ইবনু গালিব (রহঃ) এক লোক আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ)-এর নিকটে বসে আইশা (রাঃ) প্রসঙ্গে কিছু বিরূপ মন্তব্য করলে আম্মার (রাঃ) বলেনঃ দূর হও পাপিষ্ঠ এখান থেকে! তুমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রিয়তমাকে কষ্ট দিচ্ছ! আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ) তিনি ('আয়িশাহ্‌) নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী দুনিয়াতে এবং আখিরাতেও। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম অনুরূপ, দেখুন হাদীস নং (৩৮৮০) আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, বলা হল, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! লোকের মাঝে কে আপনার সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বললেন, 'আয়িশাহ্‌। পুনরায় প্রশ্ন করা হল, পুরুষদের মাঝে কে? তিনি বললেনঃ তার পিতা। সহীহঃ তা’লীক 'আলা আল-ইহসান।

【64】

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের মর্যাদা

ইকরিমাহ্‌ (রহঃ) তিনি বলেন, ইবনু 'আব্বাস (রাঃ)-কে ফাজ্‌র নামাযের পর বলা হল যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অমুক স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি সাজদাহ্‌য় পড়ে গেলেন। তাকে বলা হল, আপনি এ সময় সাজদাহ্‌ করলেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি বলেননিঃ তোমরা যখন কোন নিদর্শন দেখ, সে সময় সাজদাহ্‌ কর? অতএব নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদের দুনিয়া হতে বিদায়ের চেয়ে বড় নিদর্শন আর কি আছে? হাসানঃ সহীহ আবু দাউদ (১০৮১), মিশকাত (১৪৯১)। সাফিয়্যা বিনতু হুয়াই (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট এলেন, হাফসা ও আইশা (রাঃ) হতে আমার সম্পর্কে কিছু কথা আমার নিকট পৌঁছুল। ঐ বিষয়টি আমি তাঁর নিকট উল্লেখ করলাম, তিনি বললেনঃ তুমি একথা কেন বললেনা যে, তোমরা আমার চেয়ে কিভাবে উত্তম হতে পার? বাস্তব অবস্থা হল, আমার স্বামী মুহাম্মাদ, পিতা হারুন আর চাচা হল মূসা আলাইহিস সালাম সাফিয়্যার নিকট পৌঁছেছিল তা এই যে, তারা বলেছিল আমরা তাঁর চেয়ে সম্মানিত, কেননা আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী আবার তাঁর চাচাত বোন। সনদ দুর্বল, দেখুন আর রাদ্দু আলাল হাবাশী, হাদীস নং ৩৩৮৫, পৃঃ (৩৫-৩৮), এ অনুচ্ছেদে আনার (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। উন্মু সালামাহ্ (রাঃ) মাক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফাতিমাহ্‌কে ডেকে তার সাথে গোপনে কিছু কথা বললেন। এতে ফাতিমাহ্‌ কেঁদে ফেললেন। তারপর তিনি কিছু কথা বললে ফাতিমাহ্‌ হাসলেন। উম্মু সালামাহ (রাঃ) বলেন, আমি ফাতিমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইনতিকালের পরে তার হাসি-কান্নার কারণ জানতে চাই। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জানান যে, খুব তাড়াতাড়ি তিনি মৃত্যুবরণ করবেন, তাই আমি কেঁদেছি। তারপর তিনি আমাকে জানান যে, মারইয়াম বিনতু 'ইমরান ছাড়া জান্নাতের নারীদের নেত্রী হব, তাই আমি হেসেছি। সহীহঃ ৩৮৭৩ নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, সাফিয়্যাহ্‌ (রাঃ)-এর কানে পৌঁছে যে, হাফসাহ্‌ (রাঃ) তাকে ইয়াহূদীর মেয়ে বলে ঠাট্টা করেছেন। তাই তিনি কাঁদছিলেন। তার ক্ৰন্দনরত অবস্থায় নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ঘরে প্রবেশ করেন। তিনি বললেনঃ তোমাকে কিসে কাঁদাচ্ছে? তিনি বললেন, হাফসাহ্‌ আমাকে ইয়াহূদীর মেয়ে বলে তিরস্কার করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ অবশ্যই তুমি একজন নাবীর কন্যা, তোমার চাচা অবশ্যই একজন নবী এবং তুমি একজন নাবীর সহধর্মিণী। অতএব কিভাবে হাফসাহ্‌ তোমার উপরে অহংকার করতে পারে? তারপর তিনি বললেনঃ হে হাফসাহ্‌! আল্লাহ তা'আলাকে ভয় কর। সহীহঃ মিশকাত (৬১৮৩)। আয়িশাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের মাঝে সে-ই ভাল যে তার পরিবারের নিকট ভাল। আর আমি আমার পরিবারের নিকট তোমাদের চাইতে উত্তম। আর তোমাদের কোন সঙ্গী মৃত্যুবরণ করলে তার সমালোচনা পরিত্যাগ করো। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (২৮৫)। আবদুল্লাহ ইবনু মাস্উদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার সাহাবীগনের কেউ যেন তাদের অপরজনের কোন খারাপ কথা আমার নিকট না পৌছায়। যেহেতু আমি তাদের সাথে পরিষ্কার ও উদার মন নিয়েই দেখা করতে ভালবাসি। আব্দুল্লাহ্‌ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে কিছু সম্পদ আসলে তিনি (জনতার মধ্যে) তা বিতরণ করেন। আমি একই সাথে বসে থাকা দুই ব্যক্তির নিকট গেলাম, তারা বলছিল, আল্লাহ্‌র শপথ! মুহাম্মাদ এই যে বিলি-বণ্টন করলেন তা আল্লাহ্‌ তা’আলার তুষ্টি লাভের ইচ্ছাই তাঁর ছিল না এবং পরকালের বাসস্থান (জান্নাত) অর্জনেরও নয়। কথাটি শুনে আমি মনে রাখলাম এবং ফিরে এসে তাঁকে জানালাম। এতে তাঁর মুখমণ্ডল রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো এবং তিনি বললেনঃ তুমি আমাকে ছেড়ে দাও। মূসা (আঃ)-কে এর চেয়েও বেশি যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি ধৈর্য ধরেছেন। মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাইল তিনি আবদুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ-উবাইদুল্লাহ ইবনু মূসা হতে, তিনি হুসাইন ইবনু মুহাম্মাদ হতে, তিনি ইসরাইল হতে, তিনি সুদ্দী হতে, তিনি ওয়ালীদ ইবনু আবূ হিশাম হতে, তিনি যাইদ ইবনু যাইদা হতে, তিনি ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেনঃ কেউ যেন তাদের অপরজনের খারাপ কথা আমার নিকট না পৌছায়। যঈফ, মিশকাত (৪৮৫২)।

【65】

উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর মর্যাদা

উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেছেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমাকে হুকুম করেছেন যে, আমি যেন তোমাকে কুরআন পাঠ করে শুনাই। তিনি তাকে “লাম ইয়াকুনিল্লাযীনা কাফারূ” সূরাটি পাঠ করে শুনান। তাতে তিনি এও পাঠ করেন যে, আল্লাহ তা‘আলার কাছে আত্মসমর্পণের একনিষ্ঠ ভাবধারাপূর্ণ দীনই গ্রহণযোগ্য, ইয়াহূদীবাদ, খৃষ্টবাদ বা মাজূসীবাদ (অগ্নি উপাসনা) নয়। কেউ সৎকর্ম করলে তা কখনো প্রত্যাখান করা হবে না (প্রতিদান দেয়া হবে)। তারপর তিনি তাকে আরো তিলাওয়াত করে শুনানঃ কোন আদম সন্তান এক উপত্যকাপূর্ণ সম্পদের অধিকারী হয়ে গেলে সে তাঁর কাছে দ্বিতীয় উপত্যকা ভর্তি সম্পদের আকাঙ্ক্ষা করবে। তার দ্বিতীয় উপত্যকা ভর্তি সম্পদ হয়ে গেলে সে তাঁর নিকট তৃতীয় উপত্যকা ভর্তি সম্পদ লাভের আকাঙ্ক্ষা করবে। ইবনু আদমের উদর মাটি ব্যতীত অন্য কিছু দিয়ে ভর্তি হবে না। কেউ তাওবাহ্ করলে আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবাহ্ ক্ববূল করেন। হাসানঃ তাখরীজুল মুশকিলাহ্ (১৪), সহীহাহ্ (২৯০৮) । লাও আন্না ……… শেষ পর্যন্ত সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【66】

আনসারগণের ও কুরাইশদের মর্যাদা

উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি দ্বীন ইসলামে হিজরাত না থাকত তাহলে আমি আনসারদের একজনই হতাম। হাসান সহীহঃ সহীহাহ্ (১৭৬৮), বুখারী ও মুসলিম। আল-বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন অথবা তিনি বলেছেন, নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের প্রসঙ্গে বলেছেনঃ মু’মিন মাত্রই তাদেরকে ভালবাসে এবং মুনাফিক্ব মাত্রই তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। যে লোক তাদেরকে ভালবাসে, আল্লাহ তা‘আলাও তাদের ভালবাসেন। আর যে লোক তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, আল্লাহও তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেন। শু‘বাহ্ (রহঃ) বলেন, আমি আদী ইবনু সাবিতকে প্রশ্ন করলাম, আপনি হাদীসটি সরাসরি আল-বারাআ (রাঃ) হতে শুনেছেন কি? তিনি বললেন, তিনিই তো আমার কাছে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (১৬৩), বুখারী। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনসারদের কিছু সংখ্যক লোককে একত্রিত করে বললেনঃ তোমাদের মাঝে আনসারদের ব্যতীত অপর কেউ আছে কি? তারা বললেন, না, তবে আমাদের এক ভাগ্নে আছে। তিনি বললেনঃ সম্প্রদায়ের ভাগ্নে তাদের অন্তর্ভূক্ত। তারপর তিনি বললেনঃ সবেমাত্র কুরাইশরা জাহিলিয়াত ত্যাগ করে মুসলমান হয়েছে এবং তারা বিপদে পতিত। তাই তাদের ভগ্নহৃদয়ে আমি কিছুটা সহানুভূতির ছোয়া লাগাতে চাই এবং তাদের মনজয় করতে চাই (কিছু অতিরিক্ত সম্পদ দিয়ে) । তোমরা কি খুশি নও যে, লোকেরা দুনিয়া (মাল) নিয়ে বাড়ি ফিরবে আর তোমরা আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরবে? তারা বললেন, হ্যাঁ। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যদি লোকেরা কোন গিরিপথ বা গিরিখাদ পার করে এবং আনসাররা যদি অন্য কোন গিরিসংকট বা গিরিখাদে চলে, তবে আমি আনসারদের গিরিসংকট বা গিরিখাদেই একসঙ্গে চলব। সহীহঃ সহীহাহ্ (১৭৭৬), রাওযুন্ নাযীর (৯৬১), বুখারী ও মুসলিম। যাইদ ইবনু আরক্বাম (রাঃ) আল-হাররার দিন আনাস (রাঃ)-এর পরিবার ও তার চাচার পরিবার যে নির্যাতনের শিকার হয় তাকে শোক প্রকাশ করে তিনি (যাইদ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-এর কাছে একখানা লোকবার্তা লিখে প্রেরণ করেন। তিনি তাকে লিখেন, আপনাকে আমি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে একটি সুখবর দিচ্ছি। নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ্! তুমি আনসারদেরকে ক্ষমা করে দাও, তাদের সন্তানদেরও এবং তাদের সন্তানদের সন্তানদেরকও”। সহীহঃ বুখারী (৪৯০৬), মুসলিম মারফূ' অংশ বর্ণনা করেছেন। আবু তালহা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ তুমি তোমার জাতির লোকদেরকে আমার সালাম পৌছাও। আমার জানামতে তারা সংযমী ও ধৈর্যশীল। যঈফ, মিশকাত (৬২৪২), হাদীসটির ২য় অংশ সহীহ আবু সাঈদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হুঁশিয়ার! আমার আহলে বাইত হল আমার আশ্ৰয়স্থল, যেখানে আমি ফিরে আসি। আর আমার গোপনীয়তার রক্ষক হল আনসারগণ। সুতরাং তোমরা তাদের ভুল-ভ্রান্তি মাফ কর এবং তাদের শিষ্টাচার গ্রহণ কর। “আহলে বাইত” উল্লিখিত অংশটুকু মুনকার, মিশকাত (৬২৪০) মুহাম্মাদ ইবনু সা‘দ (রহঃ) হতে তাঁর বাবা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে কেউ কুরাইশদেরকে অপদস্ত করার ইচ্ছা করবে, আল্লাহ তাকে অপদগ্রস্ত করবেন। সহীহঃ সহীহাহ্ (১১৭৮) । ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে এরূপ কোন লোক কখনো আনসারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে পারে না। সহীহঃ সহীহাহ্ (হাঃ ১২৩৪), মুসলিম আবূ হুরাইরা্হ্ ও আবূ সা‘ঈদ হতে বর্ণনা করেছেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আনসারগণ আমার গোপনীয়তার রক্ষক ও আমানতদার। শীঘ্রই জনসংখ্যা বেড়ে যাবে কিন্তু আনসারদের সংখ্যা কমে যাবে। অতেএব তোমরা তাদের সদাচার গ্রহণ কর এবং তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি পরিত্যাগ কর। সহীহঃ বুখারী (৩৮০১), মুসলিম (৭/১৭৪) । ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “হে আল্লাহ! প্রথমে আপনি কুরাইশদেরকে শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন; অতএব পরে তাদেরকে দান ও অনুগ্রহের স্বাদ আস্বাদন করান”। হাসান সহীহঃ যঈফাহ্ (৩৯৮) নং হাদীসের অধীনে। আনাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “হে আল্লাহ! তুমি আনসারদের মাফ করে দাও, আনসারদের সন্তানদেরকেও, আনসারদের সন্তানদের সন্তানদেরকেও এবং আনসারদের নারীদেরকেও”। সহীহঃ মুসলিম (৭/১৭৩-১৭৪) ।

【67】

আনসারদের কোন ঘর শ্রেষ্ঠ?

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কি আনসারদের ঘরগুলোর মাঝে শ্রেষ্ঠ ঘর অথবা আনসারদের মধ্যকার শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি প্রসঙ্গে জানাব না? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আনসারদের মাঝে শ্রেষ্ঠ হল বানু নাজ্জার , তারপর তাদের নিকটতর যারা অর্থাৎ ‘আবদুল আশহাল, তারপর তাদের নিকটতম যারা অর্থাৎ বানুল হারিস ইবনুল খাযরাজ, তারপর তাদের কাছের যারা অর্থাৎ বানু সা’ইদাহ্‌। এরপর তিনি দুই হাতে ইশারা করে তাদের আঙ্গুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ করলেন, তারপর হাত দু’খানা এমনভাবে প্রসারিত করলেন যেমন কেউ তার হাত দিয়ে কিছু নিক্ষেপ করলো। অতঃপর তিনি বললেন, আনসারদের সব ঘরই উত্তম ও শ্রেষ্ঠ। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। আবূ উসাইদ আস-সা’ঈদী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আনসারদের ঘরগুলোর মাঝে ভাল হল বানু নাজ্জারের ঘরগুলো, তারপর বানু ‘আবদুল আশহালের ঘরগুলোর, তারপর ইবনুল হারিস ইবনুল খাযরাজ, তারপর বানু সা’ইদাহ্‌। আনসারদের প্রত্যেক পরিবারের মাঝেই মঙ্গল রয়েছে। সা’দ (রাঃ) বলেন, আমি দেখছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের গোত্রের উপর অন্যান্য আনসার পরিবারকে মর্যাদা দিয়েছেন। সে সময় তাকে বলা হল, তিনি তোমাদেরকে তো অনেকের উপরই মর্যাদা দিয়েছেন। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। জাবির ইবনু ‘আবদিল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আনসারদের ঘরগুলোর মাঝে বানু নাজ্জারই সবচাইতে ভাল। সহীহঃ পূর্বের হাদীসের সহায়তায়। জাবির (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আনসারদের মাঝে বানু ‘আবদুল আশহালই ভাল। এই হাদীসের পূর্বের হাদীসের সহায়তায় সহীহ।

【68】

মাদীনা মুনাও্‌ওয়ারার মর্যাদা

আলী ইবনু আবী ত্বালিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বের হলাম। অবশেষে যখন আমরা সা’দ ইবনু আবী ওয়াক্‌কাস (রাঃ)-এর বসতি এলাকা ‘হার্‌রাতুস-সুক্‌ইয়া’-তে পৌঁছলাম, সে সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার জন্য উযূর পানি নিয়ে এসো। তিনি উযূ করলেন, তারপর ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে বললেনঃ "হে আল্লাহ্! ইবরাহীম ('আঃ) তোমার বান্দা ও অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন। মাক্কাবাসীদের জন্য তিনি বারাকাতের দু’আ করেছেন। আর আমিও তোমরা বান্দা ও রাসূল। আমি মাদীনাবাসীদের জন্য তোমার নিকট দু’আ করছি যে, তুমি মাক্কাবাসীদের জন্য যে পরিমাণ বারাকাত দান করেছ, মাদীনাবাসীদের মুদ্দ ও সা’-এ তার দ্বিগুন বারাকাত দান কর এবং এক বারাকাতের সঙ্গে দু'টি বারাকাত দান কর। সহীহঃ তা’লীকুর রাগীব (২/১৪৪)। আলী ইবনু আবী ত্বালিব ও আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তারা প্রত্যেকে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মাঝের জায়গা জান্নাতের বাগিচাগুলোর মধ্যকার একটি বাগিচা। হাসান সহীহঃ যিলালুল জান্নাত (৭৩১), রাওযুন্‌ নাযীর (১১১৫), বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার ঘর ও আমার মিম্বারের মাঝের জায়গা জান্নাতের বাগিচাগুলোর মধ্যকার একটি বাগিচা। হাসান সহীহঃ যিলালুল জান্নাত (৭৩১), রাওযুন্‌ নাযীর (১১১৫), বুখারী ও মুসলিম। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ মাদীনাতে মৃত্যুবরণ করতে সক্ষম হলে সে যেন সেখানেই মৃত্যুবরণ করে। কারণ যে ব্যক্তি সেখানে মৃত্যুবরণ করবে আমি তার জন্য সুপারিশ করব। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৩১১২)। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার এক মুক্ত দাসী এসে তাঁকে বললেন, আমার জন্য দিনাতিপাত কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই আমি ইরাকের দিকে যেতে চাই। তিনি বললেন, তবে তুমি সিরিয়ার দিকে যাবার মনস্থ করলে না কেন? সেটা টো হাশরের মাঠ। তিনি আরও বললেন, আরে নির্বোধ? ধৈর্যধারণ কর। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি বলতে শুনেছিঃ যে লোক মাদীনার কষ্ট–কাঠিন্য ও দুর্ভিক্ষে ধৈর্যধারণ করে, ক্বিয়ামাতের দিন আমি তার জন্য সাক্ষী হব এবং সুপারিশকারী হব। সহীহঃ তাখরিজু ফিক্‌হিস্‌ সীরাহ্‌ (১৮৪), মুসলিম। আবু হুরাইরা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইসলামী শহরগুলোর মধ্যে সবশেষে জনমানবশূন্য হবে মদীনা। যঈফ, যঈফা (১৩০০) জাবির (রাঃ) একদিন এক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ইসলামের উপর বাই'আত হয়। মাদীনার জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সেই বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলে, আমার বাই'আত প্রত্যাহার করুন। কিন্তু তিনি অস্বীকার করেন। অতএব সে চলে গেল। বেদুঈন পুনরায় এসে বলল, আমার বাই'আত প্রত্যাহার করুন। এবারও তিনি অস্বীকার করেন। ফলে বেদুঈন চলে গেল। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এ মাদীনা হল কামাড়ের হাপড়ের মত, যা তার ময়লা দূর করে এবং পবিত্রতাকে খাঁটি করে। সহীহঃ সহিহাহ্‌ (২১৭), বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, মাদীনায় আমি যদি হরিণকে চরে বেড়াতে দেখি, তবে সেটাকে ভয় দেখাব না। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাদীনার দুই কংকরময় এলাকার মধ্যবর্তী জায়গা হারাম। সহীহঃ বুখারী (১৮৭৩), মুসলিম (৪/১১৬)। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) উহূদ পাহাড় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি বললেনঃ এ পাহাড় আমাদেরকে মুহাব্বাত করে এবং আমরাও তাকে মুহাব্বাত করি। হে আল্লাহ্‌! ইব্‌রাহীম (‘আঃ) নিশ্চয়ই মাক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন, আর আমি দুই কংকরময় এলাকার মধ্যবর্তী জায়গাটিকে হারাম ঘোষণা করলাম। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। জারীর ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা আমার নিকটে ওয়াহী পাঠান যে, এ তিনটি জায়গার যেটিতেই তুমি যাবে, সেটিই হবে তোমার হিজরাতের জায়গাঃ মাদীনা অথবা বাহরাইন অথবা কিন্নাসরীন। মাওযু, আর-রাদ্দু আলাল কাত্তানী, হাদীস নং (১) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ মাদীনায় দুর্ভিক্ষ ও কষ্ট-কাঠিন্য সহ্য করলে ক্বিয়ামাতের দিন তার জন্য আমি অবশ্যই সাক্ষী অথবা সুপারিশকারী হব। সহীহঃ তাখরীজু ফিক্‌হিস্‌ সীরাহ্‌ (১৮৪), মুসলিম।

【69】

মাক্কা মুআজ্জামার মর্যাদা

আবদুল্লাহ ইবনু ‘আদী ইবনু হাম্‌রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি মাক্কার একটি ক্ষুদ্র টিলার উপর দণ্ডায়মানরত দেখলাম। তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র ক্বসম! তুমি নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তা’আলার সকল ভূমির মাঝে সর্বোত্তম এবং আল্লাহ্‌ তা’আলার নিকট তুমিই সবচেয়ে প্রিয়ভূমি। আমাকে যদি তোমর বুক হতে (জোরপূর্বক) বিতাড়িত না করা হত তবে আমি কখনও (তোমায় ছেড়ে) চলে যেতাম না। সহীহঃ ইবনু মাজাহ (৩১০৮)। ইবনু 'আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা ভূমিকে উদ্দেশ্য করে বলেনঃ কতই না পবিত্র ও উত্তম শহর তুমি এবং আমার নিকট কতই না প্রিয়। আমার স্বজাতি যদি তোমার হতে আমাকে বিতাড়িত না করত তবে আমি তোমাকে ব্যতীত অন্য কোথাও বসবাস করতাম না। সহীহঃ মিশকাত (হাঃ ২৭২৪)।

【70】

আরবদেশের মর্যাদা

সালমান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেনঃ হে সালমান! আমার প্রতি হিংসা করো না, তাহলে তুমি তোমার দীনকে টুকরো করে ফেলবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার প্রতি কি করে হিংসা পোষণ করতে পারি, অথচ আল্লাহ তা'আলা আপনার মাধ্যমেই আমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আরবের প্রতি হিংসা পোষণ করাই হচ্ছে আমার প্রতি হিংসা পোষণ। যঈফ, যঈফা (২০২০), মিশকাত (৫৯৮৯) উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আরবদের সাথে ঠকবাজী করবে সে আমার শাফাআতের সীমায় প্রবেশ করবে না এবং সে আমার ভালোবাসাও অর্জন করতে পারবে না। মাওযু, যঈফা (৫৪৫), মিশকাত (৫৯৯০) মুহাম্মাদ ইবনু আবু রাযীন (রহঃ) হতে তার মা তিনি বলেন ঃ উন্মুল হারীরের অবস্থা এই ছিল যে, আরবের কোন লোক ইন্তিকাল করলে তিনি তাতে গভীরভাবে শোকাভিভূত হতেন। তাকে বলা হল, আমরা লক্ষ্য করেছি যে, আরবের কোন লোক ইন্তিকাল করলে আপনি তাতে গভীরভাবে শোকাভিভূত হন। তিনি বললেন, আমি আমার মনিবকে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আরবের লোকদের মৃত্যু হচ্ছে কিয়ামাত কাছাকাছি হওয়ার লক্ষণ। যঈফ, যঈফা (৪৫১৫) জাবির ইবনু ‘আবদিল্লাহ (রাঃ) তিনি উম্মু শারীক (রাঃ)–কে বলতে শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লোকেরা দাজ্জালের ভয়ে পলায়ন করবে, অবশেষে তারা পাহাড়-পর্বতে গিয়ে আশ্রয় নিবে। উম্মু শারীক প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! সে সময় আরবরা কোথায় থাকবে? তিনি বলেন, সে সময় তারা সংখ্যায় অতি নগণ্য হবে। সহীহঃ সহিহাহ্‌ (৩০৭৯), মুসলিম। সামুরা ইবনু জুনদুব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সাম হল আরবদের আদিপিতা, ইয়াফিস হল রূমীদের (তুর্কীদের) আদিপিতা এবং হাম হল আবিসিনীয়দের আদিপিতা। যঈফ, যঈফা (৩৬৩৮)

【71】

আজমীদের (অনারবদের) মর্যাদা

আবু হুরাইরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে অনারবদের উল্লেখ করা হল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি তাদেরকে অথবা তাদের কিছুকে তোমাদের চেয়ে অথবা তোমাদের কিছুর চেয়ে নির্ভরযোগ্য মনে করি। যঈফ, মিশকাত (৬২৪৫) আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট আমরা উপস্থিত ছিলাম। সে সময় সূরা আল-জুমু’আহ্‌ অবতীর্ণ হয় এবং তিনি তা পাঠ করেন। তিনি ‘ওয়া আখারীনা মিনহুম লাম্মা ইয়াল্‌হাকু বিহিমি” (এবং তাদের অন্যেরা যারা এখনও তাদের সঙ্গে একত্রিত হয়নি) পর্যন্ত পৌঁছলে এক ব্যক্তি তাঁকে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! এসব লোক কারা, এখনো যারা আমাদের সঙ্গে একত্রিত হয়নি? তিনি তাকে কিছুই বললেন না। আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) বলেন, সালমান আল-ফারিসী (রাঃ) আমাদের মধ্যে হাযির ছিলেন। আবূ হুরায়রা্‌ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের হাতখানা সালমান (রাঃ)-এর উপর রেখে বললেন, সেই সত্তার ক্বসম যাঁর হাতে আমার জীবন! সুরাইয়্যাহ্‌ তারকায় ঈমান থাকলেও এদের (অনারবদের) কিছু লোক তা নিয়ে আসবে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম। এটা ৩৩১০ নং হাদীসের পুনরুক্তি।

【72】

ইয়ামানের মর্যাদা

যাইদ ইবনু সাবিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়ামান দেশের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ “হে আল্লাহ্‌! তাদের মন (আমাদের দিকে) ফিরিয়ে দিন এবং আমাদের সা ও মুদ্দ-এ বারাকাত দান করুন”। হাসান সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (৬২৬৩), ইরওয়া (৪/১৭৬)। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের নিকট ইয়ামানবাসী এসেছে। তারা খুব নরম মন ও কোমল হৃদয়ের লোক। ঈমান ইয়ামান হতে এসেছে এবং প্রজ্ঞাও ইয়ামান হতে এসেছে। সহীহঃ রাওযুন্‌ নাযীর (১০৩৪), বুখারী ও মুসলিম। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রাজত্ব কুরাইশদের মাঝে, বিচার–বিধান আনসারদের মধ্যে, (সুমধুর সুরে) আযান হাবশীদের মাঝে এবং আমানতদারী আয্‌দ অর্থাৎ ইয়ামানবাসীদের মাঝে। সহীহঃ সহিহাহ্‌ (১০৮৩)। আনাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল আযদ (ইয়ামানীরা) হল দুনিয়ার বুকে আল্লাহর সহায়তাকারী। লোকেরা তাদেরকে দাবিয়ে রাখতে চাইবে। কিন্তু আল্লাহ তা'আলা তা হতে দিবেন না, বরং তিনি তাদেরকে সমুন্নত করবেন। মানুষের সামনে অবশ্যই এমন এক যামানা আসবে, যখন কোন ব্যক্তি বলবে, হায় যদি আমার পিতা ইয়ামানী (আযদী) হতেন? হায়, যদি আমার মাতা ইয়ামানী (আযদী) গোত্রীয় হতেন? যঈফ, যঈফা (২৪৬৭) গাইলান ইবনু জারীর (রহঃ) আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)-কে আমি বলতে শুনেছি, আমরা আয্‌দ গোত্রভুক্ত না হলে উত্তম মানুষই হতাম না। সনদ সহীহঃ মাওকুফ। আবু হুরাইরা (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে হাযির থাকা অবস্থায় তার নিকতে এক লোক আসে। আমার ধারণা লোকটি কাইস গোত্রীয়। সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! হিমৃইয়ার গোত্রকে অভিসম্পাত করুন। তিনি তার হতে অন্য দিকে মুখ সরিয়ে নেন। সে অপর পাশ দিয়ে এলে তিনি এবারও তার হতে মুখ সরিয়ে নেন। আবার সে অপর পাশ দিয়ে এলে তিনি এবারও তার হতে মুখ সরিয়ে নেন। লোকটি অপর পাশ দিয়ে এলে এবারও তিনি তার হতে মুখ সরিয়ে নেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হিমূইয়ার গোত্রের প্রতি আল্লাহ তা'আলা দয়া করুন, তাদের মুখে সালাম (শান্তি), তাদের হাতে খাদ্যসম্ভার এবং তারা নিরাপত্তা ও ঈমানের ধারক। মাওষু, যঈফা (৩৪৯)

【73】

গিফার, আসলাম, জুহাইনাহ্‌ ও মুযাইনাহ্‌ গোত্রসমূহ প্রসঙ্গে

আবূ আইউব আল-আনসারী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আনসারগণ ও মুযাইনাহ্‌, জুহাইনাহ্‌, আশজা', গিফার গোত্রগুলো ও বানু ‘আবদুদ দার–এর লোকেরা আমার সঙ্গী ও সাহায্যকারী। আল্লাহ ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী সঙ্গী নেই। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই তাদের সাহায্যকারী সঙ্গী বা সাথী। সহীহঃ মুসলিম (৭/১৭৮)। ইবনু 'উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আসলাম গোত্রকে আল্লাহ হিফাযাতে রাখুন। গিফার গোত্রকে আল্লাহ তা’আলা মাফ করুন। আর উসাইয়্যাহ্‌ গোত্র আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যাচরণ করেছে। সহীহঃ বুখারী ও মুসলিম।

【74】

বানু সাক্বীফ ও বানু হানীফাহ্‌ গোত্র দু'টি প্রসঙ্গে

জাবির (রাঃ) তিনি বলেন, লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! সাকীফ সম্প্রদায়ের তীরগুলো আমাদেরকে ছিন্নভিন্ন করেছে। সুতরাং আপনি তাদের বদদু'আ করুন! তিনি বললেন ঃ হে আল্লাহ! সাকীফ সম্প্রদায়কে হিদায়াত দান করুন। যঈফ, মিশকাত (৫৯৮৬) ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনটি গোত্রের প্রতি মন্দ মনোভাব রেখে মারা যানঃ বানু সাকীফ, বানু হানীফা ও বানু উমাইয়্যা। ইবনু ‘উমার (রাঃ) তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাক্বীফ গোত্রে এক চরম মিথ্যাবাদী ও এক নরঘাতকের সৃষ্টি হবে। সহীহঃ মুসলিম (২১২৩) নং হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এক বেদুঈন একটি জোয়ান উষ্ট্রী উপহার দেয়। তিনি তার বিনিময়ে তাকে ছয়টি উষ্ট্রী দেন। কিন্তু লোকটি তারপরও অখুশি থাকে। বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানতে পারলে তিনি আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা ও গুণগান করার পর বলেনঃ অমুক লোক আমাকে একটি উষ্ট্রী উপঢৌকন দিলে আমি এর বিনিময়ে তাকে ছয়টি উষ্ট্রী প্রদান করি। তারপরও সে অখুশি। অতএব আমি প্রতিজ্ঞা করলাম যে, আমি কুরাইশী অথবা আনসারী অথবা সাক্বাফী অথবা দাওসীদের ছাড়া আর কারো নিকট হতে উপঢৌকন কবুল করব না। সহীহঃ মিশকাত, তাহক্বীক্ব সানী (৩০২২), সহিহাহ্‌ (১৬৮৪)। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, ফাযারা গোত্রের এক ব্যক্তি গাবা নামক জায়গায় প্রাপ্ত তার উটপাল হতে একটি উষ্ট্রী নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উপঢৌকন দেন। তিনি এর বিনিময়ে তাকে কিছু দান করেন। কিন্তু তাতে সে সন্তুষ্ট হয়নি। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আমি মিম্বারের উপর বলতে শুনেছিঃ আরবের কোন এক লোক আমাকে কিছু উপহার দিলে আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে কিছু দান করি। কিন্তু সে তাতে অখুশি প্রকাশ করে। এমনকি এ ব্যপারে সে আমার উপর অখুশিই হয়ে যায়। আল্লাহ্‌র ক্বসম! এরপর হতে আমি আর কুরাইশী কিংবা আনসারী অথবা সাক্বাফী অথবা দাওসী লোক ছাড়া আরবের আর কোন লোকের উপহার গ্রহণ করব না। সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। আমির ইবনু আবু আমির আল-আশআরী (রাঃ) হতে তার পিতা তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আসাদ গোত্র ও আশআরী গোত্র কত ভাল। তারা যুদ্ধের মাঠ হতে পালায় না এবং গানীমাতের মাল আত্মসাৎ করে না। কাজেই তারা আমার হতে এবং আমি তাদের হতে। আমির (রহঃ) বলেন, আমি উক্ত হাদীস মুআবিয়া (রাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, এইরূপ নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবে বলেননি, বরং বলেছেনঃ তারা আমার হতে এবং আমারই। আমির (রহঃ) বলেন, আমার পিতা আমাকে এরকম বলেননি, বরং তিনি আমাকে বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি ঃ তারা আমার হতে এবং আমি তাদের হতে। মুআবিয়া (রাঃ) বলেন, তুমি তোমার পিতার বর্ণিত হাদীস বেশি জান। যঈফ, যঈফা (৪৬৯২) ইবনু ‘উমার (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আসলাম গোত্রকে আল্লাহ তা’আলা হিফাযাতে রাখুন, গিফার গোত্রকে আল্লাহ মাফ করুন। সহীহঃ বুখারী (হাঃ ১০০৬, ৩৫১৩, ৩৫১৪), মুসলিম (হাঃ ৭/১৭৭, ১৭৮)। মুহাম্মাদ ইবনু বাশ্‌শার, মুওয়াম্মাল তিনি সুফ্‌ইয়ান হতে, তিনি ‘আবদুল্লাহ ইবনু দীনার হতে, শু’বার হাদীসের মতই বর্ণনা করেছেন। আর তাতে অতিরিক্ত আছে “উসাইয়্যাহ্‌ আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হয়েছে”। সহীহঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সেই সত্তার ক্বসম, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন! গিফার, আসলাম ও মুযাইনাহ্‌ গোত্র এবং যারা জুহাইনাহ্‌ গোত্রীয় এবং মুযাইনাহ্‌ গোত্রীয়, তারা ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা’আলার কাছে অবশ্যই আসাদ, তাঈ ও গাতাফান গোত্রের তুলনায় ভাল বিবেচিত হবে। সহীহঃ সহিহাহ্‌ (৩২১২), বুখারী ও মুসলিম। ইমরান ইবনু হুসাইন (রাঃ) তিনি বলেন, তামীম গোত্রের প্রতিনিধিদল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাজলিসে হাযির হলে তিনি বলেনঃ হে বানূ তামীম! সুখবর গ্রহণ কর। তারা বলল, আপনি আমাদের সুখবর দিয়েছেন, তাই আমাদেরকে কিছু দান করুন। বর্ণনাকারী বলেন, এতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে যায়। তারপর ইয়ামান দেশীয় এক প্রতিনিধিদল আগমন করলে তিনি বলেন, তোমরা সুখবর কবূল কর, যা তামীম গোত্র গ্রহণ করেনি। তারা বলল, অবশ্যই আমরা তা গ্রহণ করলাম। সহীহঃ সহীহাহ্‌ (৩২১২), বুখারী ও মুসলিম। আবদুর রহমান ইবনু আবূ বাক্‌রাহ্‌ (রহঃ) হতে তার বাবা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আসলাম, গিফার ও মুযাইনাহ্‌ গোত্রসমূহ তামীম, আসাদ, গাতাকান ও ‘আমির ইবনু সা’সা’আহ্‌ গোত্রসমূহ হতে ভাল। তিনি উচ্চস্বরে কথাটি বললেন। লোকেরা বলেনঃ ঐ গোত্রের লোকগুলো তো ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হল। তিনি বলেনঃ ঐ গোত্রগুলোর ব্যক্তিগুলো এসব গোত্রের লোকদের চেয়ে অধিক ভাল। সহীহঃ বুখারী (৩৫১৬), ও মুসলিম (৭/১৭৯-১৮০)।

【75】

শাম ও ইয়ামানের মর্যাদা।

ইবনু ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হে আল্লাহ্‌! আমাদের শামদেশে বারাকাত দান করুন, হে আল্লাহ্‌! আমাদের ইয়ামানদেশে বারাকাত দান করুন। লোকেরা বলল, আমাদের নাজদের জন্যও (দু’আ করুন)। তিনি পুনরায় বলেনঃ হে আল্লাহ্‌! আমাদের সিরিয়ায় বারাকাত দান করুন, আমাদের ইয়ামানদেশে বারাকাত দান করুন। এবারও লোকেরা বলল, আমাদের নাজদের জন্যও (দু’আ করুন)। তিনি বললেনঃ সেখানে ভূমিকম্প, বিশৃঙ্খলা বা বিপর্যয় রয়েছে অথবা তিনি বলেছেনঃ সেখান হতেই শাইতানের শিং আবির্ভাব হবে। সহীহঃ তাখরীজু ফাযায়িলিশ শাম (৮), সহিহাহ্‌ (২২৪৬)। যাইদ ইবনু সাবিত (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে চামড়ার উপর হতে কুরআন সংকলন করেছিলাম। সে সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ সিরিয়ার জন্য মঙ্গল। আমরা বললাম, তা কেন হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তিনি বললেনঃ কেননা দয়াময় রহমানের ফেরেশতাগণ তার উপর নিজেদের ডানা বিস্তার করে রেখেছেন। সহীহঃ ফাযায়িলিশ শাম (১), মিশকাত (৬৬২৪), সহিহাহ্‌ (৫০২)। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে সমস্ত সম্প্রদায় তাদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে গর্ব করে, তারা যেন অবশ্যই তা হতে বিরত থাকে। কেননা তারা জাহান্নামের কয়লায় পরিণত হয়েছে। নতুবা তারা আল্লাহ তা’আলার দরবারে গোবরে পোকার তুলনায় বেশি অপমানিত হবে, যা নিজের নাক দিয়ে গোবরের ঘুঁটা তৈরী করে। তোমাদের হতে আল্লাহ তা’আলা জাহিলী যুগের গরব-অহংকার ও পূর্বপুরুষদের নিয়ে আত্মগর্ব প্রকাশ দূরীভূত করেছেন। এখন সে মু’মিন-মুত্তাক্বী অথবা পাপাত্মা–দুরাচার। সমস্ত মানুষ আদম ('আঃ)–এর সন্তান। আর আদম ('আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি হতে। হাসানঃ তা’লীকুর রাগীব (৪/২১, ৩৩, ৩৪), গাইয়াতুল মারাম (৩১২)। আবূ হুরাইরাহ্‌ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা জাহিলী যুগের গর্ব-অহংকার ও পূর্বপুরুষদের নিয়ে আভিজাত্যের অহংকার তোমাদের হতে অপসারণ করেছেন। এখন কোন লোক হয় খোদাভীরু মু’মিন কিংবা বদ-নাসীব পাপী। মানুষ আদমের সন্তান, আর আদম ('আঃ) মাটি হতে সৃষ্টি। হাসানঃ দেখুন পূর্বের হাদীস।