13. বিচার ও বিধান

【1】

বিচারকমণ্ডলী সম্পর্কে আলোচনা

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যাকে জনগনের বিচারক নিযুক্ত করা হলো, তাঁকে বিনা ছুরিতে যবেহ করা হলো। [২৩০৮] আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কাযীর পদ প্রার্থনা করে নেয় তাঁর দায়দায়িত্ব তার উপরই চাপানো হয়। আর যাকে এই পদ গ্রহনে বাধ্য করা হয়, তাঁর নিকট একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়ে তাঁকে সঠিক পথে চালিত করেন। [২৩০৯] আলী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ইয়ামানে পাঠান। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি আমাকে পাঠাচ্ছেন, অথচ আমি একজন যুবক মাত্র। আমি লোকদের মধ্যে মীমাংসা করবো, অথচ বিচার কি জিনিস তাই আমি জানি না। রাবী বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাত দিয়ে আমার বুকে আঘাত করে বলেনঃ “ইয়া আল্লাহ! আপনি তাঁর অন্তরে হেদায়েত দান করুন এবং তাঁর জিহবাকে (বাকশক্তিকে) সুস্থির রাখুন”। আলী বলেন, এরপর পক্ষদ্বয়ের মধ্যে বিচার করতে আমি কখনো সন্দেহে পতিত হইনি। [২৩১০]

【2】

জুলুম ও উৎকোচ সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারি

আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে বিচারকই মানুষের বিচার করে, সে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় হাজির হবে যে, একজন ফেরেশতা তাঁর ঘাড় ধরে থাকবেন। অতঃপর সে আকাশের দিকে মাথা তুলবে। আল্লাহ যদি বলেন, তাঁকে নিক্ষেপ করো, তবে সেই ফেরেশতা তাঁকে একটি গর্তে নিক্ষেপ করবেন, যার মধ্যে সে চল্লিশ বছর ধরে গড়িয়ে পড়তে থাকবে। [২৩১১] আবদুল্লাহ বিন আবূ আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কাযী যতক্ষণ পর্যন্ত জুলুম না করে, আল্লাহ তাঁর সাথে থাকেন। যখন সে জুলুম করে, তখন তিনি তাকে তার নিজের উপর ছেড়ে দেন। [২৩১২] আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘুষদাতা ও ঘুষ গ্রহীতার উপর আল্লাহর অভিসম্পাত। [২৩১৩]

【3】

বিচারকের ইজতিহাদ ক’রে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছা

আমর ইবনুল আস (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ বিচারক যখন ইজতিহাদ করে (চিন্তাভাবনা করে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছার চেষ্টা করে) বিচার করে, অতঃপর সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায়, তাঁর জন্য রয়েছে দু’টি পুরস্কার। আর সে যখন ইজতিহাদ করে বিচার করতে গিয়ে ভুল করে বসে তবুও তাঁর জন্য রয়েছে একটি পুরস্কার। [২৩১৪] বুরায়দাহ ইবনুল হাসীব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কাযীগণ তিন শ্রেণীভুক্ত। দু’ শ্রেণীর কাযী জাহান্নামী এবং এক শ্রেণীর কাযী জান্নাতী। যে ব্যক্তি (কাযী) ন্যায়সঙ্গত ফয়সালা দান করে সে জান্নাতী। যে ব্যক্তি (কাযী) সত্য উপলদ্ধি না করে অজ্ঞতার ভিত্তিতে বিবদমান দলের মধ্যে রায় প্রদান করে সে জাহান্নামী এবং যে ব্যক্তি (কাযী) জ্ঞাতসারে অন্যায় রায় প্রদান করে সেও জাহান্নামী। আবূ হাশিম (রাঃ) বলেন, যদি বিন বুরাইদা থেকে তাঁর পিতার সুত্রে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এ হাদীসটি না থাকতো তাহলে আমরা অবশ্যই বলতাম যে, কাযী ইজতিহাদ করে বিচার করলে সে জান্নাতী হবে। [২৩১৫]

【4】

বিচারক উত্তেজিত অবস্থায় বিচারকার্য করবে না

আবূ বাকরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বিচারক যেন রাগান্বিত অবস্থায় দু’ (বিবাদমান) পক্ষের মধ্যকার বিচারকার্য পরিচালনা না করে। রাবী হিশাম (রাঃ) তাঁর হাদীসে বলেনঃ রাগান্বিত অবস্থায় দু’ (বিবাদমান) পক্ষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করা বিচারকের জন্য সংগত নয়। [২৩১৬] তাহকীক আলবানীঃ প্রথম শব্দে সহীহ।

【5】

বিচারক রায় দিলেই হারাম হালাল হয় না এবং হালাল হারাম হয় না

উম্মু সালামাহ (রাযিআল্লাহু তায়ালা আনহা) তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আমার কাছে বিবদমান বিষয় মীমাংসার জন্য এসে থাকো। আমিও একজন মানুষ। হয়তো তোমাদের কেউ (একপক্ষ) অপর কারো (বিপক্ষের) তুলনায় নিজের যুক্তি-প্রমাণ পেশে অত্যন্ত বাকপটু হয়ে থাকবে। আর আমি তো তোমাদের বক্তব্য শুনেই তার ভিত্তিতে বিচারকার্য করি। অতএব আমি তোমাদের কারো পক্ষে তার ভাইয়ের হকের কোন অংশের ফয়সালা দিয়ে ফেলতে পারি। এ অবস্থায় সে যেন তার কিছুই গ্রহণ না করে। কারণ আমি তাকে জাহান্নামের একটি টুকরাই কেটে দিচ্ছি , যা নিয়ে সে কিয়ামতের দিন হাজির হবে। [২৩১৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমিও একজন মানুষ। হয়তো তোমাদের কেউ অপর কারো তুলনায় নিজের যুক্তি-প্রমাণ পেশে অত্যন্ত বাকপটু হয়ে থাকবে। অতএব আমি তাকে তার ভাইয়ের হক থেকে কিছু কর্তন করে দিয়ে থাকলে তাকে জাহান্নাম এর একটি টুকরাই কর্তন করে দিলাম। [২৩১৮]

【6】

কেউ পরের মাল নিজের বলে দাবি করে তা হস্তগত করার জন্য মামলা দায়ের করলে

আবূ যার (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি এমন জিনিস দাবি করে যা তার নয়। সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং সে যেন জাহান্নামে তার বাসস্থান বানিয়ে নেয়। [২৩১৯] ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কারো যুলুমমূলক মামলায় সহযোগিতা করে অথবা যুলুমে সহায়তা করে, তা থেকে নিবৃত্ত না হওয়া পর্যন্ত সর্বদাই সে আল্লাহর গযবে নিপতিত থাকে। [২৩২০]

【7】

বাদীর দায়িত্ব সাক্ষ্য-প্রমাণ পেশ করা এবং বিবাদীর দায়িত্ব শপথ করা।

ইবনু আব্বাস (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ লোকেদেরকে তাদের দাবি মোতাবেক ফয়সালা দেয়া হলে অবশ্যই কতক লোক অন্য লোকের জীবন (মৃত্যুদন্ড) ও সম্পদ দাবি করে বসতো। কিন্তু বিবাদীকেই শপথ করতে হবে। [২৩২১] আল-আশআস বিন কায়স (রাঃ) তিনি বলেন, আমার এবং এক ইহুদীর যৌথ মালিকানাধীন এক খন্ড জমি ছিল। সে আমার অংশ অস্বীকার করলে তাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) - এর নিকট পেশ করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেনঃ তোমার কি দলীল-প্রমাণ আছে? আমি বললাম, না। তিনি ইহুদীকে বলেনঃ শপথ করো। আমি বললাম, এ সম্পর্কে সে শপথ করার সাথে সাথে আমার সম্পত্তি নিয়ে যাবে। তখন আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ) : “ নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, পরকালে তাদের কোন অংশ নেই”। সূরা আল-ইমরানঃ ৭৭ ... আয়াতের শেষ পর্যন্ত। [২৩২২]

【8】

যে ব্যক্তি অপরের মাল আত্মসাতের উদ্দেশ্যে মিথ্যা শপথ করে

আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি অপর মুসলমানের মাল আত্মসাতের লক্ষ্যে সজ্ঞানে মিথ্যা শপথ করে, সে কিয়ামতের দ্বীন এমন অবস্থায় আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হবে যে, তিনি তার প্রতি চরম অসন্তুষ্ট থাকবেন। [২৩২৩] আবূ উমামাহ আল-হারিসী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ কোন ব্যক্তি অপর মুসলমানের প্রাপ্য স্বত্ব মিথ্যা শপথ করে কর্তন করে নিলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন এবং জাহান্নাম তার জন্য অবধারিত করে দিবেন। উপস্থিত লোকজনের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! যদি তা সামান্য জিনিস হয়। তিনি বললেনঃ যদি তা পিলু গাছের একটি মেসওয়াকও হয়। [২৩২৪]

【9】

অপরের প্রাপ্য অধিকার বা স্বত্ব আত্মসাতের উদ্দেশ্যে শপথ করলে

জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার এই মিম্বারের নিকট দাঁড়িয়ে মিথ্যা শপথ করবে, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়, যদিও তা একটি সবুজ মিসওয়াকের জন্যও হয়। [২৩২৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এই মিম্বারের নিকট কোন পুরুষ অথবা নারী মিথ্যা শপথ করলে সে যেন জাহান্নামে তার আবাস নির্ধারণ করলো, তা একটি কাঁচা দাঁতনের জন্য হলেও। [২৩২৬]

【10】

আহলে কিতাব সম্প্রদায়কে শপথ উচ্চারণপূর্বক কিছু বলা

বারা' বিন আযিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ইহূদী সম্প্রদায়ের এক পন্ডিত ব্যক্তিকে ডেকে বলেনঃ " আমি তোমাকে সেই মহান সত্ত্বার শপথ করে বলছি যিনি মূসা (আলাইহিস সালাম) -এর উপর তাওরাত কিতাব নাযিল করেছেন। "[২৩২৭] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু' ইহূদীকে বলেনঃ " আমি তোমাদের দু'জনকে সেই আল্লাহর শপথ দিচ্ছি যিনি মূসা (আলাইহিস সালাম) -এর উপর তাওরাত কিতাব নাযিল করেছেন" [২৩২৮]

【11】

দু' ব্যক্তি একই পণ্যের মালিকানা দাবী করলে এবং তাদের কারো কাছে কোন দলীল-প্রমাণ না থাকলে

আবূ হুরায়রা (রাঃ) দু' ব্যক্তি একটি জন্তুর মালিকানা দাবি করলো কিন্তু তাদের কারো নিকটই দলীল-প্রমাণ ছিলো না। নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে লটারী করে তাতে যার নাম উঠে, তাকে শপথ করার পর তা নিতে বলেন। [২৩২৯] আবূ মূসা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট দু' ব্যক্তি একটি জন্তুর ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করলো এবং তাদের একজনের নিকটও কোন প্রমাণ ছিলো না। তিনি তাদের উভয়কে সেটির অর্ধেক অর্ধেক মালিকানা দান করেন। [২৩৩০]

【12】

কোন ব্যক্তি তার চুরি যাওয়া মাল ক্রেতার নিকট পেলে

সামুরাহ বিন জুনদুব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "যদি কোন ব্যক্তির কোন মাল বিনষ্ট হয়ে যায় অথবা চুরি হয়ে যায়, অতঃপর সে তা কোন ক্রেতার নিকট পেয়ে যায়, তবে সে তা ফেরত পাবে এবং ক্রেতা বিক্রেতার নিকট থেকে তার মূল্য ফেরত নিবে। "[২৩৩১]

【13】

গবাদি পশু কিছু বিনষ্ট করলে তার হুকুম

ইবনু মুহায়্যিসাহ আল-আনসারী (রাঃ) বারা' বিন আযিব (রাঃ) -র একটি দুষ্ট উটনী ছিল। সেটি এক সম্প্রদায়ের বাগানে ঢুকে তা বিনষ্ট করে দেয়। বিষয়টি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে আলাপ করা হলে তিনি সিদ্ধান্ত দেন যে, দিনের বেলা সম্পদের হেফাযত করার দায়িত্ব তার মালিকের (তাই দিনে ফসল বিনষ্ট করলে তার জন্য জন্তুর মালিক দায়ী নয়)। আর জন্তু রাতে যে ক্ষতি করবে, তা জন্তুর মালিকের উপর বর্তাবে। "[২৩৩২] [উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলোঃ] ২/২৩৩২ (১) . বারা' বিন আযিব (রাঃ) , বারা' এর পরিবারের একটি উষ্ট্রী কিছু ফসল নষ্ট করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফয়সালা দেন.....পূর্বোক্ত অনুরুপ। [২৩৩২] তাহক্বীক আলবানীঃ সহীহ।

【14】

কোন ব্যক্তি কোন জিনিস ভেঙ্গে ফেললে তার হুকুম

সাওআত গোত্রের এক ব্যক্তি (ইসমু মুবহাম বা নাম অজ্ঞাত) আমি আয়িশাহ (রাঃ) কে বললাম, আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলেন, তুমি কি কুরআন পড়ো না। “তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত। ” (সূরা আল-কালামঃ ৪)। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের সাথে ছিলেন। আমি তাঁর জন্য আহার তৈরী করলাম এবং হাফসা (রাঃ) -ও তাঁর জন্য আহার তৈরী করলেন। তিনি বলেন, হাফসা (রাঃ) আমার আগে (খাবার নিয়ে) গেলেন। আমি দাসীকে বললাম, যাও, তার পাত্র উল্টে ফেলে দাও। অতএব সে হাফসার নিকট গেলো। হাফসা (রাঃ) যখন তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সামনে রাখতে গেলো অমনি সে তা উল্টে ফেলে দিলো। ফলে পাত্রটি ভেঙ্গে গেলো এবং খাদ্যদ্রব্য ছড়িয়ে পড়লো। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাত্রের টুকরাগুলো একত্রিত করলেন এবং তাঁর খাবার স্বীয় তালুর সম্মুখে রাখলেন অতঃপর তা খেলেন। তারপর তিনি আমার পাত্রটি হাফসাকে দিয়ে বলেনঃ " তোমার পাত্রের বদলে এই পাত্র নাও এবং এতে যা আছে তা খাও। " আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর চেহারায় এর কোন প্রতিক্রিয়াই লক্ষ্য করলাম না। [২৩৩৩] তাহকিক আলবানীঃ সনদ দুর্বল। আনাস বিন মালিক (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মু'মিন জননীগনের একজনের হুজরায় ছিলেন। তাদের অন্যজন একটি পাত্রভর্তি আহার্য তাঁর নিকট পাঠান। তিনি (হুজরার জননী) আহার্যের পাত্র বহনকারীর হাতে আঘাত করলে পাত্রটি নীচে পড়ে ভেঙ্গে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাত্রের টুকরা দু'টি তুলে নিয়ে একটির সাথে অপরটি জোড়া লাগিয়ে তার মধ্যে পতিত খাবার জমা করেন এবং বলেনঃ "তোমাদের মাতার আত্নসম্মানে আঘাত লেগেছে। তোমরা (এটা) খাও। " অতএব তারা তা আহার করলেন। অতঃপর তিনি তার ঘরের খাবার ভর্তি পাত্র নিয়ে এলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অক্ষত পাত্রটি বাহককে দিলেন এবং ভাঙ্গা পাত্রটি ভঙ্গকারিণীর ঘরে রেখে দিলেন। [২৩৩৪]

【15】

কোন ব্যক্তি তার প্রতিবেশীর দেয়ালের সাথে খুঁটি পুঁতলে

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ " তোমাদের কেউ তার প্রতিবেশীর নিকট তার দেয়ালের সাথে নিজের খুঁটি গাড়ার অনুমতি চাইলে সে যেন তাকে নিষেধ না করে। "আবূ হুরায়রা (রাঃ) উপস্হিত লোকদের নিকট এ হাদীস বর্ণনা করলে তারা মাথা নত করে দেয়। তিনি তাদের এ অবস্হা দেখে বলেন, কী ব্যাপার, আমি দেখছি তোমরা এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাদের দু' কাঁধের মাঝখানে খুঁটি গাড়বো। [২৩৩৫] মুজাম্মি বিন ইয়া্যীদ (ইকরিমা বিন সালামাহ সংবাদ দিয়েছেন যে) মুগীরা গোত্রের দু' ভাইয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এক ভাই বলে যে, অপর ভাই তার দেয়ালের সাথে খুঁটি পুঁতলে তার গোলাম আযাদ হয়ে যাবে। অতঃপর মুজাম্মি' বিন ইয়াযীদ (রাঃ) সহ আনসারদের আরো অনেক লোক এসে বলেন, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমাদের কেউ যেন তার প্রতিবেশীকে তার দেয়ালের সাথে খুঁটি গাড়তে বাধা না দেয়।” তখন বিতর্ককারী ভাই বললো, হে ভাই! ফয়সালা আমার বিপক্ষে এবং তোমার অনুকূলেই রয়েছে। যেহেতু আমি শপথ করেছি, তাই তুমি আমার দেয়ালের পাশে একটি বড় খুঁটি পুঁতে তার উপর তোমার কাঠ রাখো। [২৩৩৬] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নাবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "তোমাদের কেউ যেন তার প্রতিবেশীকে তার দেয়ালের সাথে কাঠ পুঁততে নিষেধ না করে। "[২৩৩৭]

【16】

রাস্তার প্রস্হের পরিমাণ নিয়ে মতভেদ হলে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ " তোমরা রাস্তা সাত হাত পরিমাণ চওড়া করো "[২৩৩৮] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "তোমরা রাস্তার প্রস্হ নিয়ে মতানৈক্য করলে তা সাত হাত চওড়া করো। "[২৩৩৯]

【17】

যে ব্যক্তি নিজের মালিকানাস্বত্বে প্রতিবেশীর জন্য ক্ষতিকর কিছু নির্মাণ করে।

উবাদাহ ইবনুস সাবিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন যে, "ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহাও যাবে না। " [২৩৪০] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ "ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহাও যাবে না। "[২৩৪১] আবূ সিরমাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "যে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করবে, আল্লাহ তার ক্ষতি করবেন এবং যে ব্যক্তি অন্যকে কষ্ট দিবে, আল্লাহ তাকে কষ্ট দিবেন। "[২৩৪২]

【18】

দু' ব্যক্তি একই কুঁড়ে ঘরের মালিকানা দাবী করলে।

জারিয়াহ বিন যুফর (রাঃ) কতক লোক একটি কুঁড়ে ঘরের মালিকানা নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট নালিশ দায়ের করলো। তিনি হুযায়ফাহ (রাঃ) -কে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিতে পাঠান। যাদের রশি দিয়ে সে ঘর বাঁধা ছিল তিনি তাদের পক্ষে রায় দেন। অতঃপর তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট ফিরে এসে তাঁকে তার মীমাংসার কথা জানান। তিনি বলেনঃ "তুমি যথার্থ ফয়সালা করেছো এবং ভালো করেছো। "[২৩৪৩]

【19】

যে ব্যক্তি অপরের নিকট থেকে ছাড়ানোর শর্ত করলো।

সামুরাহ বিন জুনদুব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন কোন জিনিস দু ব্যাক্তির কাছে বিক্রয় করা হলে তা প্রথম খরিদদার পাবে। রাবী আবুল ওয়ালীদ (রাঃ) বলেন, এ হাদীসে অপরের থেকে ছাড়িয়ে এনে দেয়ার শর্ত বাতিল করা হয়েছে। [২৩৪৪]

【20】

লটারীর মাধ্যমে মীমাংসা।

ইমরান বিন হুসায়ন (রাঃ) এক ব্যক্তির ছয়টি গোলাম ছিল, এদের ব্যতীত তার আর কোন মাল ছিলো না। সে তার মৃত্যুর পূর্বে তাদেরকে দাসত্বমুক্ত করে দেয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লটারীর মাধ্যমে এদের মধ্যে দু'জনকে দাসত্বমুক্ত করে দেন এবং চারজনকে গোলাম হিসেবে বহাল রাখেন। [২৩৪৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) দু' ব্যক্তি একটি বিক্রীত পণ্য নিয়ে ঝগড়া করছিল। তাদের একজনের নিকটও কোন প্রমাণ ছিল না। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে নির্দেশ দেন যে, "লটারীতে তাদের দু'জনের মধ্যে যার নাম উঠবে সে শপথ করে পণ্য নিবে, তাতে তারা সন্তুষ্ট হতে পারুক বা না পারুক। "[২৩৪৬] আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সফরে যেতেন, তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে লটারী করতেন। [২৩৪৭] যায়দ বিন আরকাম (রাঃ) তিনি বলেন, আলী বিন আবূ তালিব ইয়ামান থাকাকালে তার সামনে মীমাংসার জন্য এই মর্মে একটি বিষয় উত্থাপিত হয় যে, তিন ব্যাক্তি একই তুহরে এক নারীর সাথে সংগম করে (ফলে তার একটি সন্তান হয়)। আলী (রাঃ) দু’জনকে জিজ্ঞেস করেন (তৃতীয় ব্যাক্তিকে দেখিয়ে) : তোমরা কি সন্তানটি এই ব্যাক্তির বলে স্বীকার করো? তারা বললো, না। তিনি আবার দুজনকে জিজ্ঞেস করেন, তোমরা কি সন্তানটি এই ব্যাক্তির বলে স্বীকার করো? তারা বলল, না। তিনি যখনই দু'জনকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি সন্তানটি তার বলে স্বীকার করো, তখনই তারা বলে, না। অতঃপর আলী (রাঃ) তাদের মধ্যে লটারির ব্যবস্থা করেন এবং লটারিতে যার নাম উঠে তিনি তাকে সন্তানটি দিলেন এবং তার উপর দু’-তৃতীয়াংশ দইয়াত ধার্য করেন। এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে বলা হলে তিনি এমনভাবে হেসে দিলেন, যে তাঁর সামনের পাটির দাঁত প্রকাশ পেলো। [২৩৪৮]

【21】

কিয়াফা সম্পর্কে।

আ'য়িশাহ (রাঃ) তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রফুল্ল মনে ঘরে প্রবেশ করে বলতে লাগলেন, হে আ'য়িশাহ! তুমি কি দেখনি, যে মুজাযযায আল-মুদলিজী আমার ঘরে প্রবেশ করে উসামা ও যায়েদকে একটি চাদর মুড়ি দিয়ে তাদের মাথা ঢাকা ও পা বের করা অবস্থায় ঘুমন্ত দেখতে পেল। সে বললো, এই পা গুলোর কতক অপর কতক থেকে। [২৩৪৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) কুরাইশগণ এক জ্যোতিষী নারীর কাছে গিয়ে তাকে বললো, আমাদের মধ্যে মাকামে ইব্রাহীমের মালিকের (ইব্রাহীম আঃ) সাথে কার অধিক সাদৃশ্য তা বলে দিন। সে বললো, তোমরা যদি এই নরম মাটির উপর দিয়ে একটি চাদর টেনে দেবার পর উক্ত মাটির উপর দিয়ে (নগ্নপদে) হেঁটে যাও তবে আমি তোমাদের তা বলতে পারব। ইবনু আব্বাস (রাঃ বলেন, অতঃপর তারা একটি চাদর টেনে নেয়ার পর ঐ মাটির উপর দিয়ে হেঁটে গেল। অতঃপর সেই নারী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পদ চিহ্ন দেখিয়ে বলল, তোমাদের মধ্যে ইনিই তাঁর (ইব্রাহিমের) সাথে অধিক সাদৃশ্যপুর্ণ। এই ঘটনার পর তারা আল্লাহর মর্জি বিশ বছর বা ততোধিক অপেক্ষা করল। শেষে আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে নবুয়াত দান করেন। [২৩৫০]

【22】

শিশু পিতা-মাতার মধ্যে যাকে ইচ্ছা বেছে নিতে পারবে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি শিশুকে তার পিতা ও মাতার মধ্যে (যাকে ইচ্ছা গ্রহণ করার) এখতিয়ার দিয়ে বললেনঃ হে বৎস! এই তোমার মা এবং এই তোমার বাপ। [২৩৫১] ইসমু মুবহাম বা নাম অজ্ঞাত তার পিতা-মাতা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সামনে (সন্তানের তত্ত্বাবধানের ব্যাপারে) বিবাদ পেশ করে। তাদের একজন ছিল কাফের, অপরজন মুসলমান। তিনি সন্তানকে এখতিয়ার দিলে সে কাফেরের প্রতি আকৃষ্ট হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হে আল্লাহ! তাকে হেদায়াত দান করুন। অতঃপর সে মুসলমানের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এতএব তিনি তাকে মুসলমানের সাথে থাকার ফয়সালা দেন। [২৩৫২]

【23】

সন্ধি ও সমঝোতা স্থাপন।

আমর বিন আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, মুসলমানের মধ্যে সন্ধি ও সমঝোতা স্থাপন করা জায়েজ, তবে হালালকে হারামকারী এবং হারামকে হালালকারী সন্ধি ব্যতীত। [২৩৫৩]

【24】

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ নষ্ট করে তার উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপ।

আনাস বিন মালিক (রাঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে এক ব্যাক্তি ক্রয় বিক্রয়ের চুক্তি করতে গিয়ে (বুদ্ধির দুর্বলতার কারণে) ঠকে যেত। তার পরিবারের লোকজন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তার উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপ করুন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডেকে নিয়ে ক্রয়-বিক্রয়ে লিপ্ত হতে নিষেধ করলেন। সে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি ক্রয় বিক্রয় ত্যাগ করে ধৈর্য্য ধারণ করতে পারব না। তিনি বললেনঃ তুমি ক্রয়-বিক্রয় করাকালে বলো, নগদ আদান-প্রদান হবে এবং যেন প্রতারণা করা না হয়। [২৩৫৪] মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া বিন হাব্বান তিনি বলেন, মুনকিয বিন আমর হলেন আমার নানা। তার মাথায় একটি প্রচন্ড আঘাত লাগার ফলে তার জিহবা আড়ষ্ট হয়ে গেল। এতদসত্ত্বেও তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য ত্যাগ করেননি। তিনি প্রায়ই ঠকে যেতেন। তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বিষয়টি তাঁকে জানান। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ তুমি যখন ক্রয়-বিক্রয় করবে তখন বল, যেন প্রতারণা করা না হয়। অতঃপর তুমি যে পণ্যই ক্রয় করবে, তিন দিনের এখতিয়ার পাবে। তুমি সন্তুষ্ট হতে পারলে পণ্য রেখে দিবে আর অসন্তুষ্ট হলে তা তার মালিককে ফেরত দিবে। [২৩৫৫]

【25】

ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির দেউলিয়া হওয়া এবং তার পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধের জন্য তার সম্পত্তি বিক্রয় করা।

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে এক ব্যাক্তি ফলের বাগান ক্রয় করে লোকসানের শিকার হয় এবং মারাত্মকভাবে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের বলেনঃ তোমরা তাকে দান-খয়রাত কর। এতএব লোকজন তাকে দান-খয়রাত করল, কিন্তু তাতেও তার ঋণ শোধ হল না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাওনাদারদের বললেনঃ তোমরা যা পেয়েছ তা ই নিয়ে নাও, এর বেশি আর পাবেনা। [২৩৫৬] জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুআয বিন জাবাল (রাঃ) কে তার পাওনাদারদের থেকে নিষ্কৃতি দেন, তারপর তাকে ইয়ামানের শাসক নিয়োগ করেন। মুআয (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার মাল দ্বারা আমাকে ঋণমুক্ত করেন, অতঃপর আমাকে শাসক নিয়োগ করেন। [২৩৫৭]

【26】

ঋণদাতা দেউলিয়ার দখলে অবিকল তার মাল পেয়ে গেলে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তি দেউলিয়ার দখলে অবিকল তার মাল পেয়ে গেলে অন্যের তুলনায় সে-ই তার অগ্রগণ্য হকদার। [২৩৫৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট বাকিতে তার পণ্য বিক্রয় করার পর ক্রেতা দেউলিয়া হয়ে গেলে এবং তার পণ্য অবিকল অবস্থায় তার নিকট বিদ্যমান থাকলে সে-ই তা ফেরত পাবে। আর তার পণ্যের কিছু মূল্য আদায় করে থাকলে সে অন্যান্য পাওনাদারের অন্তর্ভুক্ত হবে। [২৩৫৯] আবু হুরায়রা (রাঃ) ইবনু খালদাহ ছিলেন মদীনার বিচারপতি। তিনি বলেন, আমরা আবূ হুরায়রা (রাঃ) -এর কাছে আমাদের এক দেউলিয়া সঙ্গীর ব্যাপারে জানতে আসলাম। তিনি বলেন, এ ধরনের লোক সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই মীমাংসা দিয়েছেন যে, কোন ব্যক্তি দেউলিয়া হলে অথবা মারা গেলে, ঋণদাতা তার মাল অবিকল তার নিকট বিদ্যমান পেলে সে-ই হবে তার অগ্রগণ্য প্রাপক। [২৩৬০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যদি কোন ব্যক্তি নিজ দখলে অপরের মাল অবিকল অবস্থায় রেখে মারা যায় এবং মালিক তার আংশিক মুল্য আদায় করে থাকুক বা না থাকুক, সে অন্যান্য পাওনাদারের অন্তর্ভুক্ত হবে। [২৩৬১]

【27】

কাউকে সাক্ষ্য দিতে না বললে স্বউদ্যোগে সাক্ষ্য দেয়া মাকরুহ।

আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন ব্যক্তি উত্তম? তিনি বলেনঃ আমার ‘যুগ’, অতঃপর তার নিকটতর (পরবর্তী) যুগ, অতঃপর তার নিকটতর যুগ। অতঃপর এমন সব লোক আসবে যারা শপথের পূর্বে সাক্ষ্য দিবে এবং সাক্ষ্যের পূর্বে শপথ করবে। [২৩৬২] জাবীর বিন সামুরাহ (রাঃ) উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমাদের উদ্দেশে (দামিশকের) জাবিয়া নামক স্থানে ভাষণ দিলেন। তিনি বলেন, তোমাদের সামনে যেমন (ভাষণ দিতে) দাঁড়ালাম, তদ্রূপ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বলেনঃ তোমরা আমার সাহাবীদের (আমার সাহচর্য লাভের মর্যাদার) হেফাজত করবে, অতঃপর তাদের নিকটবর্তীদের (মর্যাদার) হেফাজত করবে, অতঃপর তাদের পরবর্তীদের। অতঃপর এমনভাবে মিথ্যার প্রসার ঘটবে যে, কারো কাছে সাক্ষ্য তলব না করতেই সে সাক্ষ্য দিবে এবং শপথ করতে না বলতেই শপথ করবে। [২৩৬৩]

【28】

(বিবদমান বিষয়ে জ্ঞাত) সাক্ষী সম্পর্কে বাদী অনবহিত থাকলে

যায়দ বিন খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ সাক্ষীগণের মধ্যে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে তলব করার আগেই সাক্ষ্য দেয়। [২৩৬৪]

【29】

দেনা সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান।

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করলে (অনুবাদঃ) “হে মুমিনগণ ! তোমরা যখন একে অপরের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য ঋণের লেনদেন করো তখন তা লিপিবদ্ধ করে রাখো...” (২:২৮২)। তিনি তিলাওয়াত করতে করতে “তোমাদের একে অপরকে বিশ্বাস করলে, যাকে বিশ্বাস করা হয়, সে যেন আমানত প্রত্যর্পণ করে” (২: ২৮৩) পর্যন্ত পৌঁছে বলেন, এই শেষোক্ত বিধান তার পূর্ববর্তী বিধানকে রহিত করেছে। [২৩৬৫]

【30】

যে সব লোকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।

আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতারক (খেয়ানতকারী) নারী-পুরুষ, ইসলামী আইনের আওতায় হদ্দের শাস্তি ভোগকারী এবং বিপক্ষের প্রতি শত্রুতা পোষণকারীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। [২৩৬৬] আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ নগরবাসীর পক্ষে গ্রামবাসীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। [২৩৬৭]

【31】

একজন সাক্ষী এবং (বাদীর) শপথের ভিত্তিতে মীমাংসা করা।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন সাক্ষীর সাথে (বাদীর) শপথের ভিত্তিতে ফয়সালা করেছেন। [২৩৬৮] জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন সাক্ষীর সাথে (বাদীর) শপথের ভিত্তিতে মোকদ্দমার রায় দিয়েছেন। [২৩৬৯] ইবনু আব্বাস (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন সাক্ষী ও (বাদীর) শপথের ভিত্তিতে ফয়সালা করেছেন। [২৩৭০] সুররাক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন সাক্ষী ও বাদীর শপথ (দ্বারা ফয়সালা করা) অনুমোদন করেছেন। [২৩৭১]

【32】

মিথ্যা সাক্ষ্য প্রসঙ্গে।

খুরায়ম বিন ফাতিক আল-আসদী (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের নামায পড়লেন। নামায শেষে তিনি সুষ্ঠুভাবে দাঁড়িয়ে বলেনঃ মিথ্যা সাক্ষ্যদানকে আল্লাহর সাথে শরীক করার সমতুল্য (অপরাধ) গণ্য করা হয়েছে। তিনি তিনবার একথা বলেন, অতঃপর এ আয়াত তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ) : “তোমরা মিথ্যা কথন থেকে দূরে থাকো আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ হয়ে এবং তাঁর সাথে কোন শরীক না করে”। (২২:৩০-৩১)। [২৩৭২] ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (কিয়ামতের দিন) মিথ্যা সাক্ষ্যদাতার জন্য আল্লাহ্‌ তাআলা জাহান্নামের ফয়সালা না দেয়া পর্যন্ত সে তার পদদ্বয় একটুও নাড়াতে পারবে না। [২৩৭৩] তাহকীক আলবানীঃ বানোয়াট।

【33】

আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের পরস্পরের পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষ্যদান।

জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের পরস্পরের পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষ্যদান অনুমোদন করেছেন। [২৩৭৪]