19. দাসমুক্তি

【1】

মুদাব্বার (প্রতিশ্রুতিপ্রাপ্ত দাস) সম্পর্কে।

জাবির (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুদাব্বার গোলাম বিক্রয় করেছেন। [২৫১২] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) আমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি একটি দাসকে মুদাব্বার বানালো। এ দাসটি ছাড়া তার আর কোনো সম্পত্তি ছিলো না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা বিক্রয় করেন এবং আদী গোত্রের ইবনু নাহ্হাম তা কিনে নেন। [২৫১৩] ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মুদাব্বার (মৃতের) সম্পদের এক–তৃতীয়াংশের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম ইবনু মাজা (রহঃ) বলেন, আমি উছমান বিন আবূ শায়বা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, “মুদাব্বার মৃতের (সম্পদের) এক-তৃতীয়াংশের অন্তর্ভুক্ত” শীর্ষক হাদীসটি ভুল। আবূ আবদুল্লাহ ইবনু মাজা (রহঃ) বলেন, এ হাদীসের কোন ভিত্তি নেই। [২৫১৪] তাহকীক আলবানীঃ বানোয়াট।

【2】

উম্মু ওয়ালাদ সম্পর্কে

ইবনু আব্বাস (রা:) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তির ঔরসে তার বাঁদীর গর্ভে সন্তান হলে, সে বাঁদী তার (মালিকের) মৃত্যুর পর স্বয়ং দাসত্বমুক্ত হয়ে যাবে। [২৫১৫] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট (তাঁর পুত্র) ইবরাহীমের মা (মারিয়া কিবতিয়া) ’র কথা উত্থাপিত হলে তিনি বলেনঃ তাঁর সন্তান তাকে দাসত্বমুক্ত করেছে। [২৫১৬] জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে জীবিত থাকা অবস্থায় আমরা আমাদের যুদ্ধবন্দিনী ক্রীতদাসী ও উম্মু ওয়ালাদ বিক্রয় করতাম। আমরা এটিকে দুষণীয় মনে করতাম না। [২৫১৭]

【3】

মুকাতাব (চুক্তিবদ্ধ দাস) সম্পর্কে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন শ্রেনীর লোকের প্রত্যেককে সাহায্য করা আল্লাহর কর্তব্য (যদিও কোন কাজ তার জন্য বাধ্যতামূলক নয়) : আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী, মুকাতাব চুক্তিবদ্ধ দাস যে তার চুক্তিকৃত অর্থ পরিশোধ করতে সংকল্পবদ্ধ এবং যে বিবাহকারী পূত-পবিত্র থাকতে ইচ্ছুক। [২৫১৮] আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে গোলাম এক শত উকিয়ার বিনিময়ে মুক্তিলাভ করতে চুক্তিবদ্ধ, দশ উকিয়া ব্যতিত বাকিটা পরিশোধ করতে পারলে সে আযাদ। [২৫১৯] উম্মু সালামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের (মহিলাদের) মালিকানায় কারো মুকতাব দাস থাকলে এবং তার নিকট চুক্তিকৃত অর্থের সম-পরিমান সম্পদ থাকলে তার থেকে তোমাদের পর্দা করা উচিত। [২৫২০] নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী আয়িশাহ (রাঃ) বারীরা (রাঃ) তার নিকট এলেন, তিনি ছিলেন মুকাতাবা। তিনি তার মালিকের সাথে নয় উকিয়া পরিশোধে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। আয়িশাহ (রাঃ) তাকে বলেন, তোমার মালিক চাইলে আমি এককালীন তাদেরকে তা পরিশোধ করে দিতে পারি এই শর্তে যে, ওয়ালার মালিক হবো আমি। রাবী বলেন, বারীরা তার মালিকের নিকট এসে একথা জানালে তারা এতে অসম্মতি জানায় এবং ওয়ালার মালিকানা তাদের থাকার শর্ত আরোপ করে। আয়িশাহ (রাঃ) বিষয়টি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেনঃ তুমি তাকে ক্রয় করো। রাবী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের উদ্দেশে দাঁড়িয়ে খুতবা দিলেন। তিনি প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুনগান করেন, তারপর বলেনঃ লোকদের কী হলো যে, তারা এমন সব শর্ত আরোপ করে, যা আল্লাহর কিতাবে নাই। যেসব শর্ত আল্লাহর কিতাবে নাই তা বাতিল, যদিও তা সংখ্যায় একশত হয়। আল্লাহর কিতাবই যথার্থ এবং আল্লাহর শর্তই অধিক মজবুত। ওয়ালার মালিক হবে আযাদকারী। [২৫২১]

【4】

দাসত্বমুক্তি

কা’ব বিন মুররাহ (রাঃ) আমি কাব (রাঃ) কে বললাম, হে কাব বিন মুররাহ! আমাদের নিকট রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীস বর্ণনা করুন এবং সাবধানতা অবলম্বন করুন। তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যাক্তি একটি মুসলমান গোলাম আযাদ করলো, সে তার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের বিনিময় হবে। আজাদকৃত দাসের প্রতিটি হাড় তার হাড়ের প্রতিদান হবে। যে ব্যাক্তি দু’জন মুসলিম দাসীকে আযাদ করবে তারা তার জন্য জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের বিনিময় হবে। তাদের দুটি হাড় তার একটি হাড়ের প্রতিদান হবে। [২৫২২] আবূ যার (রাঃ) আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! কোন গোলাম আযাদ করা অধিক উত্তম? তিনি বলেনঃ যে গোলাম তার মনিবের বেশী পছন্দনীয় এবং বেশী মূল্যবান। [২৫২৩]

【5】

কেউ রক্ত সম্পর্কের বন্ধনযুক্ত গোলামের মালিক হলে সে স্বয়ং দাসত্বমুক্ত হয়ে যাবে।

সামুরাহ বিন জুনদুব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ নিজের সাথে রক্ত সম্পর্কযুক্ত দাসের মালিক হলে সে স্বয়ং আযাদ হয়ে যাবে। [২৫২৪] ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কেউ নিজের সাথে রক্ত সম্পর্কযুক্ত দাসের মালিক হলে, সে আপনা আপনি আযাদ হয়ে যাবে। [২৫২৫]

【6】

কেউ গোলাম আযাদ করলো এবং তার সেবা লাভের শর্ত আরোপ করলো

সাফীনাহ আবূ আবদুর রহমান (রাঃ) আমাকে উম্মু সালামাহ (রাঃ) দাসমুক্ত করেন এবং এই শর্ত আরোপ করেন যে আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খেদমত করবো, যাবত তিনি জীবিত থাকেন। [২৫২৬]

【7】

কোন ব্যাক্তি যৌথ মালিকানভুক্ত গোলামের নিজ অংশ আযাদ করলে

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন কোন মালদার ব্যাক্তি এজমালি গোলামের নিজ অংশ আযাদ করলে তার বাকী অংশও নিজের মাল দিয়ে আযাদ করে দেয়া উচিত। সে মালদার না হলে উক্ত গোলামকে (অবশিষ্ট মূল্য পরিশোধের জন্য) তার সামর্থ্য অনুযায়ী আয়াসসাধ্য কাজে মজুরী খাটাবে। [২৫২৭] ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি এজমালি গোলামের তার নিজ অংশ আযাদ করে দিলে সে তার ন্যায়সঙ্গত মূল্য নির্ধারণপূর্বক তার মাল দ্বারা অন্যান্য শরীকের অংশের মূল্যও পরিশোধ করবে। অন্যথায় যতটুকু আযাদ করা হয়েছে সে ততটুকুই আযাদ গণ্য হবে। [২৫২৮]

【8】

কেউ মালদার গোলাম আযাদ করলে

ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি মালদার গোলাম আযাদ করলে গোলামই উক্ত মালের মালিক। তবে মনিব নিজের জন্য তার মালের জন্য শর্ত যুক্ত করলে তা তারই হবে। ইবনু লাহীআ (রাঃ) -এর রিওয়ায়াতে আছেঃ তবে মনিব যদি সেই মাল (নিজের জন্য) নির্দিষ্ট করে নেয়। [২৫২৯] আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) তাকে বললেন , হে উমাইর ! আমি তোমাকে সন্তোষের সাথে আযাদ করতে চাই। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি তার এমন গোলাম আযাদ করল যে গোলাম নিজ মালের বিষয় উল্লেখ করেনি , তাহলে উক্ত মাল তারই (অর্থাৎ আযাদকারীর) অতএব আমাকে বলো , তোমার কী মাল আছে? [উপরোক্ত হাদীসে মোট ২ টি সানাদের ১ টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলো] ৩/২৫৩০ (১) . আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) আমার দাদা (উমায়র) -কে বললেন , .........পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। [২৫৩০] তাহকীক আলবানী; দঈফ।

【9】

জারজ সন্তান আযাদ করা

মায়মূনাহ বিনতু সাদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট জারজ সন্তান আযাদ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বলেনঃ আমি যে জুতাজোড়া পরে জিহাদ করি তা , আমা কর্তৃক জারজ সন্তান আযাদ করার তুলনায় অধিক উত্তম। [২৫৩১]

【10】

কোন ব্যক্তি তার দাস-দাসী দম্পতিকে আযাদ করতে চাইলে, প্রথমে যেন পুরুষ লোকটিকে আযাদ করে

আয়িশাহ (রাঃ) তার একজোড়া দাস-দাসী দম্পতি ছিল। তিনি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমি এদের দু’জনকেই আযাদ করতে চাই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি ওদের উভয়কে আযাদ করতে চাইলে স্ত্রী লোকটির পূর্বে পুরুষ লোকটিকে আযাদ করো। [২৫৩২]