21. রক্তপণ

【1】

অন্যায়ভাবে কোন মুসলমানকে হত্যা করার ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি

আবদুল্লাহ (বিন মাসঊদ) (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কিয়ামতের দিন মানুষের (অপরাধের) মধ্যে সর্বপ্রথম নরহত্যার (অপরাধের) বিচার করা হবে। [২৬১৫] আবদুল্লাহ (বিন মাসঊদ) (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মানুষ অন্যায়ভাবে নিহত হলেই তার পাপের একটি অংশ আদম (আঃ) এর প্রথম সন্তানের (কাবীলের) আমলনামায় যোগ হয়। কারন সে-ই সর্বপ্রথম নরহত্যা প্রচলন করেছিল। [২৬১৬] আবদুল্লাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম নরহত্যার (অপরাধের) বিচার করা হবে। [২৬১৭] উকবাহ বিন আমির আল-জুহানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ এর সাথে এমতাবস্থায় সাক্ষাত করবে যে, সে আল্লাহর সাথে কোন কিছু শরীক করেনি এবং অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করেনি, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [২৬১৮] আল-বারা’ বিন আযিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, একজন ঈমানদার ব্যক্তির অন্যায়ভাবে নিহত হওয়ার চেয়ে গোটা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়া আল্লাহ এর নিকট অধিক সহজ ও সাধারণ ব্যাপার। [২৬১৯] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হাদিসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। মিশকাত ৩৪৮৪, যইফাহ ৫০৩, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ২০২। তাহকীক আলবানীঃ খুবই দুর্বল। উক্ত হাদিসের রাবী ইয়াযীদ বিন যিয়াদ সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল, তিনি মুনকার। ইমাম তিরমিযি বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। ইবনু হাজার আল-আসকালানী বলেন, তিনি মিথ্যার সাথে জড়িত। ইমাম দারাকুতনী বলেন, তার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহণযোগ্য নয়। ইমাম যাহাবী বলেন, তিনি দুর্বল। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৬৯৯০, ৩২/১৩৪ নং পৃষ্ঠা)

【2】

ঈমানদার মুসলমানের হত্যাকারীর তওবা কবুল হবে কি?

সালিম বিন আবুল জা‘দ ইবনু আব্বাস (রাঃ) কে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যে কোন ঈমানদার মুসলমানকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলো, অতঃপর তওবা করলো, ঈমান আনলো (ইসলাম গ্রহন করলো), সৎকাজ করলো, অতঃপর হেদায়েত মত চললো। তিনি বলেন, আফসোস তার জন্য! কোথায় তার জন্য হেদায়েত? আমি তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন হত্যাকারী তার মাথার সাথে নিহত ব্যক্তির মাথা লটকানো অবস্থায় উপস্থিত হবে। নিহত ব্যক্তি বলবে, হে প্রভু! তাকে জিজ্ঞেস করুন, সে কেন আমাকে হত্যা করেছে? আল্লাহর শপথ! অবশ্যি আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের নবীর উপর এ কথা নাযিল করেছেন এবং অতঃপর এমন কিছু নাযিল করেননি যা উক্ত কথাকে রহিত করতে পারে। [২৬২১] আবূ রাফি‘ (রাঃ) তিনি (আবূ সাঈদ খুদরী) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুখে শুনেছি এবং যা আমার দু’ কান শুনেছে এবং আমার অন্তর যা সংরক্ষণ করেছে তা কি তোমাদের অবহিত করবো না? এক বান্দা নিরানব্বই ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। এরপর তার তওবা করার খেয়াল হলে সে জানতে চাইলো যে, পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় আলেম কে? তাকে একটি লোক সম্পর্কে অবহিত করা হলো। সে তার কাছে এসে বললো, আমি নিরানব্বই ব্যক্তি কে হত্যা করেছি, আমার জন্য কি তওবার কোন সুযোগ আছে? লোকটি বললো, নিরানব্বই ব্যক্তিকে হত্যা করার পর (এখন আবার তওবা)! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তখন সে তার তরবারি কোষমুক্ত করে তাকে হত্যা করলো এবং তার দ্বারা এক শতজন পূর্ণ করলো। পুনরায় তার তওবার খেয়াল হলে সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আলেম ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলো। তাকে এক লোক সম্পর্কে বলা হলে সে তার নিকট গিয়ে বললো, আমি একশত ব্যক্তি কে হত্যা করেছি, আমার জন্য কি তওবার কোন সুযোগ আছে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সেই লোকটি বললো, তোমার জন্য আফসোস! তোমার এবং তওবার মধ্যে কে প্রতিবন্ধক হতে পারে? তুমি যে নিকৃষ্ট জনপদে আছো সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে উত্তম জনপদে, অমুক অমুক জনপদে যাও। সেখানে গিয়ে তোমার রবের ইবাদত করো। অতঃপর সে সেই উত্তম জনপদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো। পথিমধ্যে তার মৃত্যু এসে উপস্থিত হলো। তখন তার ব্যাপারে রহমাতের ফেরেশতা ও আযাবের ফেরেশতা বিবাদে লিপ্ত হলো। ইবলীস বললো, আমিই তার উপযুক্ত হকদার। সে মুহূর্তের জন্যও আমার অবাধ্য হয়নি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, রহমাতের ফেরেশতা বললেন, সে অনুতপ্ত হয়ে যাত্রা করেছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তখন মহামহিম আল্লাহ একজন ফেরেশতা পাঠান। উভয় ফেরেশতা তার কাছে মামলা রুজু করলেন। মীমাংসাকারী ফেরেশতা বললেন, তোমরা দেখো, উভয় জনপদের যেটি তার নিকটবর্তী তাকে সেই জনপদের অন্তর্ভুক্ত করো। কাতাদা (রাঃ) বলেন, হাসান (রাঃ) আমাদের নিকট একথাও বর্ণনা করেছেন যে, তার মৃত্যু এসে গেলে সে হামাগুরি দিয়ে উত্তম জনপদের নিকটবর্তী হয়ে গেল এবং নিকৃষ্ট জনপদের থেকে দূরে সরে গেলো। তাই ফেরেশতাগণ তাকে উত্তম জনপদের বাসিন্দাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। [২৬২২] ৩/২৬২২(১). <আবুল আব্বাস বিন আব্দুল্লাহ বিন ইসমাঈল আল-বাগদাদী><আফ্ফান><হাম্মাম><কাতাদাহ><আবুস সিদ্দীক আন-নাজী><আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ)><আবুল আব্বাস বিন আবদুল্লাহ বিন ইসমাঈল আল-বাগদাদী><আফ্ফান><হাম্মাম বিন ইয়াহইয়া><হুমায়দ আত-তাবীল><বাকর বিন আবদুল্লাহ><আবূ রাফি (রাঃ)> [২৬২২] তাহকীক আলবানীঃ “তার মৃত্যু এসে গেলে সে হামাগুড়ি দিয়ে উত্তম জনপদের নিকটবর্তী হয়ে গেলো এবং নিকৃষ্ট জনপদ থেকে দূরে সরে গেলো। তাই ফেরেস্তাগণ তাকে উত্তম জনপদের বাসিন্দাদের অন্তর্ভুক্ত করেন।” এ বাক্য ব্যতীত সহীহ। কারণ, বাক্যটি হাসান।

【3】

নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসগণের তিনটি বিকল্প ব্যবস্থার যে কোন একটি গ্রহণ করার এখতিয়ার থাকবে।

আবূ শুরায়হ আল-খুযাঈ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার কেউ নিহত হয় অথবা যাকে আহত করা হয় তার তিনটি বিকল্প বিষয়ের যেকোন একটি গ্রহন করার এখতিয়ার আছে। সে চতুর্থটি গ্রহন করতে চাইলে তোমরা তার উভয় হাত ধরে রাখো (তাকে বাধা দাও)। সে হত্যাকারীকে হয় হত্যা করবে অথবা ক্ষমা করবে অথবা দিয়াত (আর্থিক ক্ষতিপূরন) গ্রহন করবে। যে ব্যক্তি এই (তিনটি বিকল্পের) যেকোন একটি গ্রহন করার পর আরও কিছু (অতিরিক্ত) দাবি করবে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে সে স্থায়ী হবে। [২৬২৩] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার কেউ নিহত হয় তার দুটি বিকল্প ব্যবস্থার যে কোন একটি গ্রহনের এখতিয়ার রয়েছে। (হত্যাকারীকে কিসাসস্বরূপ) হত্যা করা হবে অথবা ফিদয়া (দিয়াত) আদায় করা হবে। [২৬২৪]

【4】

যাকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়েছে তার ওয়ারিসগন দিয়াত গ্রহণে সম্মত হলে

যায়দ বিন দুমায়রাহ আমার পিতা ও আমার চাচা আমাকে হাদীস শুনিয়েছেন এবং তারা উভয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে হুনায়নের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তারা উভয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুহরের নামায পড়ার পর একটি গাছের নিচে বসলেন। তখন আকরা‘ বিন হারিস তাঁর সামনে দাঁড়ালেন। তিনি ছিলেন খিনদিফ গোত্রের নেতা। তিনি (নিহত) মুহাল্লিম বিন জাসসামার কিসাসের দাবি উত্থাপন করলেন। অপরদিকে উয়াইনা বিন হিসনও দাঁড়িয়ে আমের বিন আদবাত আল-আশজাঈর কিসাসের দাবি উত্থাপন করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা দিয়াত গ্রহণ করো। তারা তা অস্বীকার করলো। তখন লাইছ গোত্রের মুকাইতিল নামক এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর শপথ, ইসলামের বিজয় যুগে এ হত্যার দৃষ্টান্ত হলো সেই মেষ পালের মতো যা পানি পান করতে আসলে তার প্রতি তীর নিক্ষিপ্ত হলো এবং ভয়ে শেষের মেষটি পর্যন্ত পলায়ন করলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমাদের সফরে থাকা অবস্থায় (এখানে) তোমরা পঞ্চাশটি উট পাবে এবং (মদীনায়) প্রত্যাবর্তনের পর পঞ্চাশটি উট পাবে। অতএব তারা দিয়াত গ্রহণ করলো। [২৬২৫] আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি (কাউকে) ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলে তাকে নিহত ব্যক্তির অভিভাবকদের নিকট সোপর্দ করা হবে। তারা ইচ্ছা করলে তাকে হত্যা করবে অথবা ইচ্ছা করলে দিয়াত গ্রহণ করবে। আর দিয়াত হলো তিরিশটি হিক্কা (চার বছরের উট), তিরিশটি জাযাআ (পাঁচ বছরের উট), এবং চল্লিশটি খালিফা (গর্ভধাত্রী উষ্ট্রী)। এটাই হলো ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার দিয়াত। উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা (সোলেহ)-ও হতে পারে। আর এটা হলো কঠোর দিয়াত। [২৬২৬]

【5】

কতলে শিবহে আমদ-এর ক্ষেত্রেও কঠোর দিয়াত প্রযোজ্য

আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ভুলবশত হত্যা (কাতলে খাতা) হলো শিবহে আমদ-এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন চাবুক বা লাঠির আঘাতে মৃত্যু। এতে এক শত উট (দিয়াতস্বরূপ) দিতে হবে। তার মধ্যে চল্লিশটি হতে হবে গর্ভবতী। [২৬২৭] [উপরোক্ত হাদীসে মোট ৩টি সানাদের ২টি বর্ণিত রয়েছে, অপর সানাদটি হলোঃ] ২/২৬২৭(১). আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। [২৬২৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন কাবা ঘরের সিঁড়ির উপর দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও গুনগান করলেন, অতঃপর বললেনঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি নিজ প্রতিশ্রুতি সত্যে পরিণত করেছেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সম্মিলিত বাহিনীকে পরাভূত করেছেন। জেনে রাখো, চাবুক বা লাঠির আঘাতে নিহত হলে তা কতলে খাতা (ভুলবশত হত্যা) এর দিয়ত একশত উষ্ট্রী, যার চল্লিশটি হতে হবে গর্ভবতী। জেনে রাখো, জাহিলী যুগের সকল রীতিনীতি এবং রক্তপাত (হত্যার প্রতিশোধ) আমার এই দু’ পায়ের নিচে। তবে বায়তুল্লাহর সেবা এবং হাজীদের পানি পান করানোর যে প্রথা প্রচলিত ছিল তা বহাল থাকবে। জেনে রাখো, এ দু’টি বিষয়কে আমি পূর্ববৎ তার সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গের দায়িত্বে বহাল রাখলাম। [২৬২৮]

【6】

কতলে খাতার দিয়াত

ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) “বারো হাজার দিরহাম” দিয়াত নির্ধারণ করেছেন। [২৬২৯] আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যাক্তি ভুলবশত নিহত হলো তার দিয়াত ৩০টি বিনতু মাখায (এক বছরের উষ্ট্রী), ৩০ টি বিনতু লাবূন (দু বছরের উষ্ট্রী), ৩০ টি হিক্কা (চার বছরের উষ্ট্রী) এবং দশটি ইবনুলাবূন (দু বছরের উট)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গ্রামবাসীদের বেলায় এগুলোর মূল্য নির্ধারণ করেন চারশত দীনার অথবা তার সমতুল্য রৌপ্যমুদ্রা। তিনি দিয়াতের নগদ মূল্য নির্ধারণ করতেন উটের বাজার দর অনুসারে। উটের বাজার দর বৃদ্ধি পেলে দিয়াতের পরিমাণও বেড়ে যেতো এবং উটের বাজার দর হ্রাস পেলে দিয়াতের পরিমাণও হ্রাস পেতো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে এর মূল্য চারশত দীনার থেকে আটশত দীনার পর্যন্ত অথবা এর সমমূল্যের (রৌপ্য) মুদ্রায় আট হাজার দিরহাম পর্যন্ত পৌঁছেছিল। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সিদ্ধান্তও দিয়েছিলেন যে, গরুর মালিক গরুর দ্বারা তাদের দিয়াত পরিশোধ করতে চাইলে দুইশত গরু এবং বকরীর মালিক বকরী দ্বারা দিয়াত পরিশোধ করতে চাইলে দু’ হাজার বকরী দিতে হবে। [২৬৩০] আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কতলে খাতার (ভুলবশত হত্যার) দিয়াত বিশটি হিক্কা, বিশটি জাযাআ, বিশটি বিনতু মাখায, বিশটি বিনতু লাবুন এবং বিশটি বিন মাখায। [২৬৩১] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিয়াত নির্ধারন করেছেন বার হাজার (দিরহাম)। আল্লাহর বাণীঃ “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নিজ কৃপায় তাদের অভাবমুক্ত করেছিলেন বলেই তারা বিরোধিতা করেছিল” (সূরা তওবাঃ ৭৪), এ আয়াতের তাৎপর্য দিয়াত গ্রহনের দ্বারা (তাদের অভাবমুক্ত করেছিলেন)। [২৬৩২]

【7】

দিয়াত আকিলার উপর ধার্য হবে। আকিলা না থাকলে তা রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে পরিশোধযোগ্য হবে

মুগীরাহ বিন শু‘বাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আকিলার উপর দিয়াত ধার্য করেছেন। [২৬৩৩] মিকদাম আশ-শামী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যার ওয়ারিস নেই আমি তার ওয়ারিস। আমি তার দিয়াতও পরিশোধ করবো এবং তার পরিত্যক্ত সম্পদের ওয়ারিসও হবো। যার কোন ওয়ারিস নেই (তার) মামা তার ওয়ারিস। সে তার পক্ষ থেকে দিয়াতও পরিশোধ করবে এবং তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির ওয়ারিসও হবে। [২৬৩৪]

【8】

যে ব্যক্তি নিহতের ওয়ারিসগণকে কিসাস অথবা দিয়াতের মধ্যে যে কোন একটি গ্রহনে বাধা দেয়

ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যাক্তি অন্ধ বিদ্বেষ অথবা গোত্রীয় বিদ্বেষের বশবর্তী হয়ে পাথর, চাবুক অথবা লাঠির আঘাতে হত্যাকাণ্ড ঘটায় তার উপর কতলে খাতার দিয়াত ধার্য হবে। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে তার উপর কিসাস বাধ্যকর হবে। আর যে ব্যক্তি হত্যাকারী ও নিহত ব্যাক্তির ওয়ারসগণের মধ্যে প্রতিবন্ধক হবে তার উপর আল্লাহর, ফেরেশতাকুলের এবং মানবজাতির অভিসম্পাত। তার নফল অথবা ফরয কোন ইবাদতই কবুল হবে না। [২৬৩৫]

【9】

যে সব অপরাধের ক্ষেত্রে কিসাস বাধ্যকর হয় না

জারিয়াহ (রাঃ) এক ব্যাক্তি অপর ব্যাক্তির বাহুতে তরবারি দ্বারা আঘাত করে তা গ্রন্থির বাইরে থেকে কেটে ফেলে। আহত ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট মামলা রুজু করলো। তিনি তাকে দিয়াত প্রদানের নির্দেশ দিলেন। সে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি কিসাস দাবী করছি। তিনি বলেনঃ তুমি দিয়াত গ্রহন করো, আল্লাহ এতে তোমায় বরকত দান করুন। তিনি তার পক্ষে কিসাসের রায় দেননি। [২৬৩৬] আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মস্তিস্কের মূলে (আঘাত) না পৌঁছালে, পেটের অভ্যন্তরে (আঘাত) না পৌঁছালে এবং হাড় ভেঙ্গে স্থানচ্যুত না হলে তাতে কিসাস নেই। [২৬৩৭]

【10】

জখমকারী কিসাসের পরিবর্তে ফিদ্‌য়া দিলে

আয়িশাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ জাহম বিন হুযায়ফা (রাঃ) কে যাকাত আদায়কারী নিয়োগ করে পাঠান। এক ব্যক্তি তার যাকাতের ব্যাপারে তার সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়। আবূ জাহম (রাঃ) তাকে আঘাত করলে তার মাথা ফেটে যায়। সেই গোত্রের লোকজন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা কিসাস দাবী করছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা এতো এতো পরিমান মাল পাবে। কিন্তু তারা তাতে রাজী হলো না। তিনি বলেনঃ তোমরা এতো এতো পরিমান মাল পাবে। এবার তারা রাযী হয়ে গেল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি কি লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে তোমাদের রাজী হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দিবো? তারা বললো, হাঁ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাষণ দেন এবং বলেনঃ এই লাইস গোত্রের লোকজন আমার নিকট কিসাসের দাবী নিয়ে এসেছে। আমি তাদেরকে এতো এতো পরিমান মাল প্রদানের প্রস্তাব করে জিজ্ঞেস করলামঃ তোমরা কি সম্মত হলে? তারা বললো, না। এতে মুহাজিরগণ ক্ষিপ্ত হয়ে তাদেরকে শাস্তি দিতে উদ্যত হলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বিরত হতে নির্দেশ দিলে তারা বিরত হন। তিনি মালের পরিমান আরো বাড়িয়ে তাদেরকে পুনরায় প্রস্তাব দিয়ে বলেনঃ তোমরা কি সম্মত হলে? তারা বললো, হাঁ। তিনি বলেন, আমি কি লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে তাদেরকে তোমাদের সম্মত হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দিবো? তারা বললো, হাঁ। অতএব নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাষণ দিলেন, অতঃপর জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কি সম্মত হয়েছ? তারা বললো, হাঁ। ইমাম ইবনু মাজা (রহঃ) বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া (রহঃ)-কে বলতে শুনেছি, এ হাদীসটি বর্ণনার ক্ষেত্রে মা‘মার নিঃসঙ্গ। তিনি ছাড়া অপর কেউ এটি রিওয়ায়াত করেছেন কিনা তা আমার জানা নেই। [২৬৩৮]

【11】

গর্ভস্থ ভ্রুণের দিয়াত

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গর্ভস্থ ভ্রুণের দিয়াত বাবত একটি ক্রীতদাস অথবা একটি ক্রীতদাসী নির্ধারণ করেন। তিনি যার উপর দিয়াত ধার্য করেন সে বললো, আমরা কি এমন মানুষের দিয়াত দিব যে না পান করেছে, না চীৎকার করেছে আর না শব্দ করে কেঁদেছে? এর রক্ত (দিয়াত) তো বাতিল, অর্থহীন! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, লোকটি তো কবিসুলভ কথা বলছে। ভ্রুণের জন্য একটি ক্রীতদাস অথবা একটি ক্রীতদাসী দিয়াতস্বরূপ দিতে হবে। [২৬৩৯] মুগীরাহ বিন শু‘বাহ ও মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ (রাঃ) (মিসওয়ার) বলেন, আঘাতের কারণে কোন নারীর গর্ভপাত হলে তার ব্যাপারে উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) লোকজনের পরামর্শ তলব করলেন। মুগীরা বিন শো‘বা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত থাকা অবস্থায় তিনি এ ক্ষেত্রে একটি ক্রীতদাস অথবা একটি ক্রীতদাসী দিয়াতস্বরূপ ধার্য করেছেন। উমার (রাঃ) বলেন, তোমার কথার একজন সমর্থক উপস্থিত কর। তখন মুহাম্মাদ বিন মাসলামা (রাঃ) তার কথা সমর্থন করলেন। [২৬৪০] হামল বিন মালিক বিন নাবিগাহ (রাঃ) উমার (রাঃ) লোকজনের নিকট গর্ভস্থ ভ্রুণের (দিয়াতের) ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ফয়সালা জানতে চাইলেন। তখন হামল বিন মালিক বিন নাবিগাহ (রাঃ) উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, আমি আমার দু’ স্ত্রীর মাঝখানে ছিলাম। তাদের একজন তাঁবুর কিলক দ্বারা অপরজনকে আঘাত করে তার গর্ভস্থ ভ্রুণসহ তাকে হত্যা করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে হত্যা করার এবং গর্ভস্থ ভ্রুণের দিয়াতস্বরূপ একটি ক্রীতদাস প্রদানের নির্দেশ দেন। [২৬৪১]

【12】

দিয়াতে উত্তরাধিকার স্বত্ব বর্তাবে

আদ-দাহহাক বিন সুফইয়ান (রাঃ) (সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব) বলেন, উমার (রাঃ) বলতেন, দিয়াত আকিলার প্রাপ্য এবং স্ত্রী উত্তরাধিকার সূত্রে তার স্বামীর দিয়াত থেকে কিছুই পাবে না। (তার এ রায়ের কথা জানতে পেরে) আদ-দাহহাক বিন সুফইয়ান (রাঃ) তাকে লিখে পাঠান যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশয়াম আদ-দিবাবীর স্ত্রীকে তার স্বামীর দিয়াত থেকে উত্তরাধিকার স্বত্ব দান করেছেন। [২৬৪২] উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হামল বিন মালিক আল হুযালী আল-লিহয়ানীকে তার স্ত্রীর দিয়াত থেকে ওয়ারিসী স্বত্ব দান করেন, যাকে তার অপর স্ত্রী হত্যা করেছিল। [২৬৪৩]

【13】

কাফের-এর দিয়াত

আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফয়সালা দেন যে, দু’ আহলে কিতাব সম্প্রদায় অর্থাৎ ইহূদী ও নাসারাদের দিয়াত হবে মুসলমানদের দিয়াতের অর্ধেক। [২৬৪৪]

【14】

হত্যাকারী ওয়ারিস হবে না

আবূ হুরায়রাহহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হত্যাকারী (নিহতের) ওয়ারিস হবে না। [২৬৪৫] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) মুদলিজ গোত্রীয় আবূ কাতাদা নামক এক ব্যক্তি নিজ পুত্রকে হত্যা করে। উমার (রাঃ) তার থেকে একশত উট আদায় করেন, যার মধ্যে ছিল তিরিশটি হিক্কা, ত্রিশটি জাযাআ এবং চল্লিশটি গর্ভবতী উষ্ট্রী। অতঃপর তিনি বললেন, নিহতের ভাই কোথায়? আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ হত্যাকারীর জন্য (নিহতের) উত্তরাধিকার স্বত্ব নাই। [২৬৪৬]

【15】

নারীর দিয়াত পরিশোধ করবে তার আসাবাগণ এবং তার মীরাস পাবে তার সন্তানগণ

আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, কোন নারীর উপর দিয়াত বাধ্যকর হলে তার বিদ্যমান (বংশীয়) আত্নীয়গণ পরিশোধ করবে। কিন্তু তারা তার ওয়ারিস হবে না। তবে তার ওয়ারিসদের প্রদানের পর কিছু অবশিষ্ট থাকলে তা তারা পেতে পারে। কোন নারী নিহত হলে তার দিয়াত পাবে তার ওয়ারিসগণ। তারাই হত্যাকারীকে (কিসাসস্বরূপ) হত্যা করার অধিকারী। [২৬৪৭] জাবির (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হত্যাকারী নারীর উপর ধার্যকৃত দিয়াত প্রদানের দায় তার বংশীয় আত্নীয়গণের উপর আরোপ করেন। তখন নিহত নারীর বংশীয় আত্নীয়রা বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তার মীরাছ কি আমরা পাবো? তিনি বলেনঃ না, তার মীরাছ তার স্বামী ও সন্তানের প্রাপ্য। [২৬৪৮]

【16】

দাঁতের কিসাস

আনাস (রাঃ) তার ফুফু রুবায়্যি একটি বালিকার সামনের পাটির দাঁত ভেঙ্গে ফেলেছিল। অপরাধীর গোত্র ক্ষমা প্রার্থনা করলে আহতের গোত্র তা অস্বীকার করে। তারা দিয়াত প্রদানের প্রস্তাব দিলে তাও তারা প্রত্যাখ্যান করে। অতঃপর তারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হলে, তিনি কিসাস গ্রহণের নির্দেশ দেন। তখন আনাস বিন নাযর (রাঃ) বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! রুবায়্যির সামনের পাটির দাঁত ভেঙ্গে ফেলা হবে। সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য দীনসহ প্রেরণ করেছেন, তার দাঁত ভাঙ্গা যাবে না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হে আনাস! আল্লাহর কিতাবের বিধান হলো কিসাস। রাবী বলেন, তখন আহত মেয়েটির গোত্র সম্মত হয়ে (কিসাস) ক্ষমা করে দেয়। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যে আল্লাহর নামে শপথ করলে আল্লাহ তা অবশ্যই পূর্ণ করার ব্যবস্থা করেন। [২৬৪৯]

【17】

দাঁতের দিয়াত

ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সব দাঁতের মূল্য এবং মর্যাদা সমান। সামনের দাঁত ও মাড়ির দাঁত (দিয়াতের ক্ষেত্রে) এক সমান। [২৬৫০] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতিটি দাঁতের দিয়াত পাঁচটি উট নির্ধারণ করেছেন। [২৬৫১]

【18】

আঙ্গুলসমূহের দিয়াত

ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এটা এবং এটা অর্থাৎ কনিষ্ঠা, ও বৃদ্ধাঙ্গুলির (দিয়াত) সমান। [২৬৫২] আবদুলাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সবগুলো আঙ্গুল (দিয়াত) সমান। প্রতিটি আঙ্গুলের দিয়াত দশটি করে উট। [২৬৫৩] আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সব আঙ্গুল (দিয়াত) সমান। [২৬৫৪]

【19】

হাড় উন্মুক্তকারী যখম (মাওযিহা)

আবদুলাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, হাড় উন্মুক্তকারী প্রতিটি যখমের দিয়াত পাঁচটি করে উট। [২৬৫৫]

【20】

কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির হাত কামড়ে ধরলে এবং সে তার হাত টান দেয়ার ফলে প্রথমোক্ত ব্যক্তির সামনের দাঁত পড়ে গেলে

উমায়্যার পুত্রদ্বয় ইয়ালা ও সালামা (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তাবুক যুদ্ধে রওয়ানা করলাম। আমাদের সাথে এক সাথীও ছিল। পথিমধ্যে সে এবং অপর এক ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হয়। রাবী বলেন, আমাদের লোকটি তার প্রতিপক্ষের হাত কামড়ে ধরলো। সে তার মুখ থেকে নিজের হাত মুক্ত করার জন্য সজোরে টান দিলো। এতে তার সামনের পাটির দাঁত উপড়ে পড়ে গেল। সে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে তার দাঁতের দিয়াত দাবি করলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের কেউ তার ভাইকে ষাঁড়ের মত কামড়ে ধরে, অতঃপর এসে দিয়াত দাবি করে। এর কোন দিয়াত নেই। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার দাঁতের দিয়াতের দাবি নাকচ করে দিলেন। [২৬৫৬] ইমরান বিন হুসায়ন (রাঃ) এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির হাতের বাহু কমড়ে ধরলে, লোকটি তার হাত টান দিলো। এতে তার সামনের পাটির দাঁত উপড়ে পড়ে গেল। সে বিষয়টি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট পেশ করলে তিনি তার দাবি নাকচ করে দেন এবং বলেনঃ তোমাদের এক জন অপরজনকে ষাঁড়ের মত কামড়ায়! [২৬৫৭]

【21】

কাফের ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে মুসলিম ব্যক্তিকে হত্যা করা যাবে না

আবূ জুহায়ফাহ (রাঃ) আমি আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) কে বললাম, আপনাদের নিকট এমন কোন জ্ঞান আছে কি যা অন্যদের অজ্ঞাত? তিনি বলেন, না, আল্লাহর শপথ! লোকেদের নিকট যে জ্ঞান আছে তা ব্যতীত বিশেষ কোন জ্ঞান আমাদের নিকট নাই। তবে আল্লাহ যদি কাউকে কুরআন বুঝার জ্ঞান দান করেন এবং এই সহীফার মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে দিয়াত ইত্যাদি প্রসঙ্গে যা আছে (তাহলে স্বতন্ত্র কথা)। এই সহীফার মধ্যে আরো আছেঃ কোন কাফেরকে হত্যার অপরাধে কোন মুসলমানকে হত্যা করা যাবে না। [২৬৫৮] আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কোন কাফেরকে হত্যার অপরাধে কোন মুসলমানকে হত্যা করা যাবে না। [২৬৫৯] ইবনুল আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কোন কাফেরকে হত্যার অপরাধে কোন মুসলমানকে হত্যা করা যাবে না এবং চুক্তিভুক্ত কোন যিম্মিকেও তার চুক্তি বহাল থাকা অবস্থায় হত্যা করা যাবে না। [২৬৬০]

【22】

সন্তানকে হত্যার অপরাধে পিতাকে হত্যা করা যাবে না

ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: সন্তানকে হত্যার অপরাধে পিতাকে হত্যা করা যাবে না। [২৬৬১] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ সন্তানকে হত্যার অপরাধে পিতাকে হত্যা করা যাবে না। [২৬৬২]

【23】

স্বাধীন ব্যক্তিকে ক্রীতদাস হত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয়া যাবে কি?

সামুরাহ বিন জুনদুব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: কোন ব্যাক্তি তার ক্রীতদাসকে হত্যা করলে আমরা তাকে হত্যা করবো এবং কেউ তার দেহের কোন অঙ্গ কর্তন করলে আমরা তার দেহের অঙ্গ কর্তন করবো। [২৬৬৩] আবদুলাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) এবং ‘আমর বিন শুআইব (রাঃ) এক ব্যক্তি তার ক্রীতদাসকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করলো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে একশত বেত্রাঘাত করেন, এক বছরের নির্বাসন দেন এবং মুসলমানদের (জায়গীর, ভাতা ইত্যাদী) প্রাপ্য অংশের মধ্য থেকে তার অংশ বিলোপ করেন। [২৬৬৪]

【24】

হত্যাকারী যেভাবে হত্যা করবে, তাকেও সেভাবেই হত্যা করা হবে

আনাস বিন মালিক (রাঃ) এক ইহূদী দু’টি পাথরের মাঝখানে এক মহিলার মাথা রেখে তা পিষ্ট করে তাকে হত্যা করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি পাথরের মাঝখানে অপরাধীর মাথা রেখে তা পিষ্ট করে তাকে হত্যা করান। [২৬৬৫] আনাস বিন মালিক (রাঃ) এক ইহূদী একটি বালিকাকে তার অলঙ্কারপত্রের লোভে হত্যা করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুমূর্ষু বালিকাকে (একজনের নামোল্লেখ করে) জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাকে কি অমুকে আঘাত করেছে? সে তার মাথার ইশারায় বললো, না। তিনি আবার (অন্য একজনের নামোল্লেখ করে) তাকে জিজ্ঞেস করলে সে তার মাথার ইশারায় বললো না। তিনি তাকে (ইহূদীর নামোল্লেখ করে) আবার জিজ্ঞেস করলে সে তার মাথার ইশারায় বললো, হাঁ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উক্ত ইহূদীর মাথা দু’টি পাথরের মাঝখানে রেখে পিষ্ট করে হত্যা করান। [২৬৬৬]

【25】

তরবারির আঘাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে

নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তরবারির আঘাতেই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হবে। [২৬৬৭] আবূ বাকরাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তরবারির আঘাতেই মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হবে। [২৬৬৮]

【26】

একজনের অপরাধে অপরজনকে অপরাধী সাব্যস্ত করা যাবে না

আমর ইবনুল আহওয়াস (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বিদায় হজ্জের দিন বলতে শুনেছিঃ সাবধান! অপরাধী তার অপরাধের দ্বারা নিজেকেই দায়বদ্ধ করে। পিতার অপরাধে পুত্রকে এবং পুত্রের অপরাধে পিতাকে দায়বদ্ধ করা যাবে না। [২৬৬৯] তারিক আল-মুহারিবী (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর হস্তদ্বয়কে এত উপরে তুলে বলতে শুনেছি যে, তাঁর বগলের শুভ্রতা আমার দৃষ্টগোচর হয়েছেঃ সাবধান! সন্তানের অপরাধে মাকে অভিযুক্ত করা যাবে না। সাবধান! সন্তানের অপরাধে মাকে অভিযুক্ত করা যাবে না। [২৬৭০] আল-খাশখাশ আল-আম্বারী (রাঃ) আমি আমার এক পুত্রসহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এলাম। তিনি বলেনঃ তোমার অপরাধের প্রতিশোধ তার কাছ থেকে নেয়া যাবে না এবং তার অপরাধের প্রতিশোধ তোমার কাছ থেকে নেয়া যাবে না। [২৬৭১] উসামাহ বিন শরীক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একজনের অপরাধের জন্য অপরজনকে দায়বদ্ধ করা যাবে না। [২৬৭২]

【27】

যে সব অপরাধের প্রতিবিধান নেই

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পশুর আঘাতে দণ্ড নেই, খনিতে দণ্ড নেই এবং কূপে পরাতে দণ্ড নেই। [২৬৭৩] আমর বিন আওফ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ পশুর আঘাতে দণ্ড নেই এবং খনিতে দণ্ড নেই। [২৬৭৪] উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফয়সালা করেছেন যে, খনিতে দণ্ড নেই, কূপে পতিত হওয়ায় দণ্ড নেই, পশুর আঘাতে দণ্ড নেই। পশু বলতে গৃহপালিত পশু ইত্যাদি বুঝায়। ‘দণ্ড নেই’ অর্থাৎ ক্ষতিপূরণ আদায় করা যাবে না। [২৬৭৫] আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আগুনে পতিত হওয়ায় দণ্ড নেই এবং কূপে পতিত হওয়ায়ও দণ্ড নেই। [২৬৭৬]

【28】

কাসামা (গণ-শপথ)

সাহল বিন আবূ হাসমাহ (রাঃ) তাকে তার কওমের কয়েকজন সম্ভ্রান্ত লোক (ইসমু মুবহাব বা নাম অজ্ঞাত), জানিয়েছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনুসাহল এবং মুহাইয়্যাসা দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে খায়বার এলাকায় গেলেন। অতঃপর মুহাইয়্যাসার নিকট লোক মারফত খবর পৌছলো যে, আব্দুল্লাহ ইবনুসাহলকে হত্যা করে তার লাশ খায়বারের একটি গর্তে অথবা একটি কূপে নিক্ষেপ করা হয়েছে। মুহাইয়্যাসা (রাঃ) ইহুদীদের নিকট গিয়ে বললেন, আল্লাহর শপথ! তোমরাই তাকে হত্যা করেছো। তারা বললো, আল্লাহর শপথ! আমরা তাকে হত্যা করিনি। অতঃপর তিনি তাঁর গোত্রে ফিরে এসে তাদের নিকট এ ঘটনা বর্ণনা করলেন। তিনি ও তাঁর বড় ভাই হুহাইয়্যাসা এবং আবদুর রহমান ইবনু সাহল (রাঃ) মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এলেন। খায়বারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মুহাইয়্যাসা (রাঃ) কথা বলতে উদ্যত হলে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেনঃ জ্যেষ্ঠকে, জ্যেষ্ঠকে অগ্রাধিকার দাও। তিনি বয়সে বড় বুঝাতে চাচ্ছিলেন। হুহাইয়্যাসা কথা বললেন, তারপর মুহাইয়্যাসা কথা বললেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ইহুদীরা হয় তোমাদের সঙ্গীর দিয়াত প্রদান করবে অথবা যুদ্ধের ঘোষণা দিবে। এরপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিষয়টি সম্পর্কে পত্র লিখলে ইহুদীরা প্রতি উত্তরে লিখে পাঠায়, আল্লাহর শপথ! আমরা তাকে হত্যা করিনি। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুহাইয়্যাসা, মুহাইয়্যাসা ও আবদুর রহমান (রাঃ) কে বললেনঃ তোমরা কি শপথ করে তোমাদের সঙ্গীর খুনের বদলা দাবি করতে পারো? তারা বললো, (আমরা শপথ করবো) না। তিনি বললেনঃ তারা তো মুসলমান নয় (মিথ্যা শপথ করবে)। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের অর্থাৎ (রাষ্ট্রের) পক্ষ থেকে তার দিয়াত পরিশোধ করলেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকট একশত উষ্ট্রী পাঠান এবং সেগুলি তাদের বসতিতে পৌঁছে গেলো। সাহল (রাঃ) বলেন, সেগুলির মধ্যকার একটি লাল উষ্ট্রী আমাকে লাথী মেরেছিল। [২৬৭৭] আবদুলাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) মাসউদের দু’ পুত্র হুহাইয়্যাসা ও মুহাইয়্যাসা এবং সাহলের দু’ পুত্র আব্দুল্লাহ ও আবদুর রহমান কাজের সন্ধানে খায়বারের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লেন। আবদুল্লাহ শত্রুর শিকার হয়ে নিহত হলে বিষয়টি রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জানানো হলো। তিনি বললেনঃ তোমরা কি শপথ করে দিয়াতের অধিকারী হবে? তারা বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা তো ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম না, আমরা কিভাবে শপথ করবো? তিনি বলেনঃ তাহলে ইহূদীরা (শপথ করে) তোমাদের থেকে দায়মুক্ত হয়ে যাবে। তারা বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাহলে তারা তো আমাদের ধ্বংস করে ফেলবে! রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের পক্ষ থেকে তার দিয়াত পরিশোধ করেন। [২৬৭৮]

【29】

মালিকের দ্বারা গোলামের অঙ্গহানি হলে সে দাসত্বমুক্ত হয়ে যাবে

সালামাহ বিন ফারওয়াহ্ বিন যিনবা‘ (রাঃ) তার দাদা (যিনবা‘ বিন রাওহ) (রাঃ), তিনি তার এক গোলামকে নির্বীর্য করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে এই অঙ্গহানির কারণে দাসত্বমুক্ত করে দিলেন। [২৬৭৯] আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) এক ব্যক্তি চীৎকার করতে করতে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হলো। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ তোমার কী হয়েছে? সে বললো, আমার মনিব আমাকে তার এক দাসীকে চুমা দিতে দেখে আমার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলেছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ লোকটিকে আমার নিকট নিয়ে এসো। কিন্তু তাকে অনুসন্ধান করে পাওয়া গেল না। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যাও, তুমি স্বাধীন। সে বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! কে আমাকে সাহায্য করবে? রাবী বলেন, সে বলছিল, আপনি কী মনে করেন, আমার মনিব যদি আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে আবার গোলাম বানায়? রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাকে সাহায্য করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের কর্তব্য। [২৬৮০]

【30】

হত্যা করার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে ঈমানদারগণই সর্বাধিক ক্ষমাশীল

আবদুল্লাহ (বিন মাসউদ) (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ হত্যা করার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে ঈমানদারগণই সবচেয়ে বেশি ক্ষমাশীল। [২৬৮১] আবদুল্লাহ (বিন মাসউদ) (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষের মধ্যে সর্বাধিক ক্ষমাশীল হত্যাকারী হলো ঈমানদারগণ। [২৬৮২]

【31】

মুসলমানের জীবনের মূল্য এক সমান

ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মুসলমানের জীবনের মূল্য এক সমান। তারা বিজাতীয় শত্রুর বিরুদ্ধে একটি হাতস্বরূপ (একতাবদ্ধ)। তাদের একজন সাধারণ লোকও অপরকে তাদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিতে পারে। তাদের দূরবর্তী ব্যক্তিও গনীমতে শরীক হবে (সেনানায়ক যদি তাকে অন্যত্র কোন প্রয়োজনে পাঠিয়ে থাকে)। [২৬৮৩] মা‘কিল বিন ইয়াসার (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মুসলমানগণ অন্যদের (বিজাতীয় শত্রুর) বিরুদ্ধে একটি হাতস্বরূপ। তাদের জীবনের মূল্য এক সমান। [২৬৮৪] আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সকল মুসলমান তাদের বিজাতীয় শত্রুর বিরুদ্ধে এক হাতস্বরূপ ঐক্যবদ্ধ। তাদের সকলের জান ও মাল সমান মর্যাদাসম্পন্ন। মুসলিম সমাজের একজন সাধারণ লোকও (তাদের পক্ষ থেকে) অন্যকে আশ্রয় দিতে পারে। মুসলমানদের দূরবর্তী ব্যক্তিও তাদের গনীমতে শরীক হবে। [২৬৮৫]

【32】

কেউ চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম যিম্মীকে হত্যা করলে

আবদুল্লাহ বিন ‘আমর (রা) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম যিম্মীকে হত্যা করবে সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধ অবশ্যই চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যাবে। [২৬৮৬] আবূ হূরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিরাপত্তা লাভকারী কোন যিম্মীকে হত্যা করবে সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না। অথচ সত্তর বছরের দূরত্ব থেকেও অবশ্যই তার সুগন্ধ পাওয়া যাবে। [২৬৮৭]

【33】

কোন ব্যক্তি কারো জীবনের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর তাকে হত্যা করলে

আমর ইবনুল হাকিম আল-খুযাঈ (রাঃ) (রিফাআহ বিন শাদ্দাদ) বলেন, আমর ইবনুল হাকিম আল-খুযাঈ (রাঃ)-র নিকট আমি যে বাক্যটি শুনেছি তা না থাকলে আমি মুখতারের মাথা ও দেহের মাঝখান দিয়ে হাঁটাচলা করতাম (তাকে হত্যা করতাম)। আমি তাকে বলতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন লোকের জানের নিরাপত্তা দেয়ার পর তাকে হত্যা করল সে কিয়ামতের দিন বিশ্বাসঘাতকতার ঝাণ্ডা বয়ে বেড়াবে। [২৬৮৮] সুলায়মান বিন সুরদ (রাঃ) (রিফাআহ) বলেন, আমি মুখতারের প্রাসাদে প্রবেশ করে তার নিকট উপস্থিত হলাম। সে বললো, এই মুহূর্তে জিবরাঈল (আঃ) আমার নিকট থেকে উঠে চলে গেলেন। তখন তাঁর গর্দানে সজোরে আঘাত হানা থেকে একটি হাদীসই আমাকে বিরত রেখেছে। আমি সুলায়মান ইবনুসুরাদ (রাঃ) কে বর্ণনা করতে শুনেছি যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমার থেকে কেউ তার জীবনের নিরাপত্তা লাভ করলে তুমি তাকে হত্যা করো না”। এ হাদীসই তাকে হত্যা করা থেকে আমাকে বিরত রেখেছে। [২৬৮৯]

【34】

হত্যাকারীর প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে এক ব্যক্তি হত্যার অপরাধ করলো। বিষয়টি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট পেশ করা হলে তিনি তাকে (হন্তাকে) নিহতের অভিভাবকের নিকট সোপর্দ করলেন। হত্যাকারী বললো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আল্লাহর শপথ! তাকে হত্যা করার ইচ্ছা আমার ছিলো না। তখন রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিহতের অভিভাবককে বললেনঃ সে সত্যবাদী হয়ে থাকলে এবং তারপরও তুমি তাকে হত্যা করলে তুমি জাহান্নামে যাবে। রাবী বলেন, তারা তাকে তার পথে ছেড়ে দিলো। সে একটি রশি দ্বারা পিঠমোড়া দিয়ে বাঁধা ছিল। সে তার রশি মাটির সাথে টানতে টানতে বেরিয়ে চলে গেলো। সেই থেকে তার নাম হলো ‘রশিধারী’। [২৬৯০] আনাস বিন মালিক (রাঃ) এক ব্যক্তি তার অভিভাবকের হত্যাকারীকে নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও। সে অস্বীকার করলো। তিনি বলেনঃ তাহলে তুমি দিয়াত গ্রহণ করো। সে তাও অস্বীকার করলো। তিনি বলেনঃ তাহলে যাও, তাকে হত্যা করো। কেননা তুমি তার মতই হবে। রাবী বলেন, তার নিকট গিয়ে তাকে বলা হলো, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবশ্যি বলেছেনঃ তাকে হত্যা করো, তুমি তার মতই হবে। অতঃপর সে তাকে তার পথে ছেড়ে দিলো। রাবী বলেন, তাকে তার রশি টানতে টানতে তার পরিবারের দিকে চলে যেতে দেখা গেলো। সম্ভবত নিহতের দাবিদারগণ তাকে রশি দিয়ে বেঁধেছিল। রাবী আবূ উমাইর (রাঃ) তার হাদীসে বলেন, ইবনু মাওযাব (রাঃ) আবদুর রহমান ইবনুল কাসিম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এর পর আর কারো পক্ষে এরূপ বলা জায়েয নয় যে, “তাকে হত্যা করো, তুমিও তার মতই হবে”। ইবনু মাজাহ (রাঃ) বলেন, এটা হলো রামলাবাসীদের বর্ণিত হাদীস, যা তাদের ছাড়া আর কারো কাছে নেই। [২৬৯১]

【35】

কিসাস ক্ষমা করা

আনাস বিন মালিক (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট কিসাস সংক্রান্ত কোন মোকদ্দমা উত্থাপিত হলেই তিনি তা ক্ষমা করে দেয়ার আহবান জানাতেন (বাদীর প্রতি)। [২৬৯২] আবূ দারদা’ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যার দেহের কোন স্থান আঘাতপ্রাপ্ত হলো, অতঃপর সে তা সদাকা করে দিলো (অপরাধীকে ক্ষমা করে দিলো) আল্লাহ এর বিনিময়ে তার এক ধাপ মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তার একটি গুনাহ মাফ করবেন। এ কথা আমার দু’কান শুনেছে এবং আমার অন্তর তা হেফাজত করেছে। [২৬৯৩]

【36】

গর্ভবতী নারী মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হলে

মুআয বিন জাবাল, আবূ উবায়দা ইবনুল জাররাহ, উবাদা ইবনুস সামিত ও শাদ্দাদ বিন আওস (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন নারী ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার অপরাধ করলে বা যেনা করলে এবং গর্ভবতী হয়ে থকলে, সন্তান প্রসব না করা পর্যন্ত এবং তার বাচ্চার লালন-পালন (দুধপানের মেয়াদ) শেষ না করা পর্যন্ত তাকে হত্যা বা রজম করা যাবে না। [২৬৯৪]