24. জিহাদ

【1】

আল্লাহর পথে জিহাদ করার ফযীলত

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় বের হয়, আমার রাস্তায় জিহাদ, আমার উপর ঈমান এবং আমার রাসুলগণকে সত্যবাদী বলে মেনে নেয়াই তাকে এ পথে বের করে, তার জন্য আমার যিম্মাদারি এই যে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো অথবা তাকে তার বের হওয়ার স্থান অর্থাৎ তার আবাসে তাকে সওয়াব ও গণীমাতসহ ফিরিয়া আনবো। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আমি মুসলমানদের জন্য কষ্টসাধ্য মনে না করলে তারা আল্লাহর রাস্তায় যে যুদ্ধেই যায় আমি পেছনে থেকে যেতাম না। কিন্তু আমার এতোটুকু সঙ্গতি নাই যে, আমি তাদের প্রত্যেকের জন্য সওয়ারীর ব্যবস্থা করে দিবো এবং তাদেরও সঙ্গতি নেই যে, প্রতিটি যুদ্ধে তারা আমার সাথে যাবে। আমি তাদেরকে আমার সাথে না নিয়ে গেলে তাদেরও দুশ্চিন্তা হবে। সেই সত্তার শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ! আমার ইচ্ছা হয় যে, আমি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হই, তারপর আবার জিহাদ করে শহীদ হই, তারপর আবার জিহাদ করে শহীদ হই। [২৭৫৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ তাঁর রাস্তায় জিহাদকারীর জিম্মাদার। হয় তিনি তাকে তার ক্ষমা ও রহমাতে ধন্য করে উঠিয়ে নিবেন অথবা তাকে সওয়াব ও গণীমাতসহ ফিরিয়ে আনবেন। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী সেই ব্যক্তির ন্যায় যে অক্লান্তভাবে (দিনভর) সিয়াম রাখে এবং (রাতভর) নামায পড়ে জিহাদ থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত। [২৭৫৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【2】

মহান আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল বা একটি বিকাল অতিবাহিত করার ফযীলত

আবু হুরায়রা(রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল বা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে উত্তম। [২৭৫৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। সাহল বিন সাদ আস-সাইদী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল বা একটি বিকাল অতিবাহিত করা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে কল্যাণকর। [২৭৫৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আনাস বিন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর রাস্তায় একটি সকাল অথবা একটি বিকাল ব্যয় করা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছু থেকে কল্যাণকর। [২৭৫৭] তাহকীক আলবানী : সহীহ।

【3】

যে ব্যক্তি কোন যোদ্ধাকে জিহাদের সরঞ্জাম যোগাড় করে দেয়

উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি কোন গাযীকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের সরঞ্জামের ব্যবস্থা করে দেয় যাতে সে যুদ্ধ করতে সক্ষম হয়, এতে তার সেই যোদ্ধার অনুরূপ সওয়াব হতে থাকে যতক্ষণ না সে মৃত্যুবরণ করে (বা নিহত হয়) অথবা ফিরে আসে। [২৭৫৮] তাহকীক আলবানী : দঈফ। যায়দ বিন খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন গাযীকে (যুদ্ধের) সরঞ্জাম সংগ্রহ করে দেয়, তার সেই গাযীর সমপরিমাণ সওয়াব হয় এবং এতে গাযীর সওয়াব থেকে মোটেও কমানো হয় না। [২৭৫৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【4】

মহান আল্লাহর রাস্তায় খরচ করার ফযীলাত

সাওবান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ লোকে যে দীনারগুলো (অর্থ-সম্পদ) খরচ করে তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দীনার হলো- যা সে তার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করে, যা সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের ঘোড়া প্রতিপালনে ব্যয় করে এবং যা সে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী সহ-যোদ্ধাদের জন্য খরচ করে। [২৭৬০] তাহকীক আলবানী : সহীহ। আবূ দারদা’, আবদুল্লাহ বিন উমার, আবূ হুরাইরা, আবূ উমামা আল-বাহিলী, আবদুল্লাহ বিন আমর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের খরচ বহন করে এবং সে নিজ আবাসে থেকে যায়, সে তার প্রতিটি দিরহামের বিনিময়ে সাত শত দিরহামের সওয়াব লাভ করে। আর যে ব্যক্তি সশরীরে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে এবং এর খরচ বহন করে, তার প্রতিটি দিরহামের বিনিময়ে সে সাত লাখ দিরহামের সওয়াব পায়। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ) : “আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন” (সূরা বাকারাঃ ২৬১)। [২৭৬১] তাহকীক আলবানী : দঈফ।

【5】

জিহাদ পরিত্যাগ করার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সতর্কবাণী

আবূ উমামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি জিহাদ করে না বা জিহাদকারীর সরঞ্জাম প্রস্তুত করে দেয় না অথবা জিহাদকারী (যুদ্ধে) যাওয়ার পর তার পরিবার-পরিজনের উত্তমরূপে খোঁজ–খবর নেয় না, মহান আল্লাহ তাকে কিয়ামতের পূর্বে ভীষণ বিপদে নিক্ষেপ করবেন। [২৭৬২] তাহকীক আলবানী :হাসান। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে এমতাবস্থায় সাক্ষাত করবে যে, তার মধ্যে আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের) কোন চিহ্ন নাই সে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে। [২৭৬৩] তাহকীক আলবানী : দইফ।

【6】

যে ব্যক্তি ওজরবশত জিহাদ থেকে বিরত থাকে

আনাস বিন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবুকের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে মদীনার নিকটবর্তী হয়ে বলেনঃ মদীনায় এমন কতক লোক আছে যে, তোমরা যেখানেই গিয়েছো এবং যে উপত্যকাই অতিক্রম করেছো, তারা তোমাদের সাথেই ছিল। সাহাবাগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তারা মদীনায় থেকেও (আমাদের সাথে ছিলেন) ! তিনি বলেনঃ তারা মদীনায় থেকেও, তাদের অক্ষমতা তাদের প্রতিরোধ করে রেখেছে। [২৭৬৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মদীনায় এমন কতক লোক আছে যে, তোমরা যে উপত্যকাই অতিক্রম করেছো এবং যে পথই চলেছো তারা সওয়াবে তোমাদের সাথে শরীক আছে, প্রতিবন্ধকতা তাদের আটকে রেখেছে। আবূ আবদুল্লাহ ইবনু মাজা (রহঃ) বলেন, আহমাদ বিন সিনান অনুরূপ কিছু বলেছেন। আমি তার মূল পাঠ লিখে নিয়েছি। [২৭৬৫] তাহকীক আলবানী : সহীহ।

【7】

আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয়ার ফযীলাত

আবদুল্লাহ ইবনুয যুবায়র (রাঃ) উসমান বিন আফ্ফান (রাঃ) লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বলেন, হে জনগণ! আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট একটি হাদীস শুনেছি। সেটি তোমাদের নিকট বর্ণনা করা থেকে আমাকে বিরত রেখেছে তোমাদের সাহচর্যের প্রতি আমার কৃপণতা। অতএব কেউ চাইলে তা নিজের জন্য গ্রহণ করতে পারে অথবা পরিহারও করতে পারে। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার রাস্তায় এক রাত সীমান্ত অঞ্চলে পাহারা দেয়, তা এক হাজার দিন সিয়াম রাখা এবং এক হাজার রাত জেগে নামায পড়ার সমতুল্য। [২৭৬৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবু হুরায়রাহ(রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত অঞ্চল পাহারাদানরত অবস্থায় মারা গেলে আল্লাহ তার জন্য সেইসব নেক আমলের সওয়াব প্রদান অব্যাহত রাখবেন যা সে করতো, জান্নাতে তাকে রিযিক দান করবেন, কবরের বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে নিরাপদ রাখবেন এবং কিয়ামতের ভয়ভীতি থেকে মুক্ত অবস্থায় উঠাবেন। [২৭৬৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উবায় বিন কা‘ব (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রমাদান মাস ব্যতীত অন্য মাসে সওয়াবের আশায় মুসলমানদের জন্য আল্লাহর রাস্তায় সীমান্ত চৌকিতে একদিন পাহারা দেয়া একশত বছরের ইবাদত, সিয়াম ও (নফল) নামায অপেক্ষা অধিক সওয়াবের কাজ। আর রমাদান মাসে সওয়াবের আশায় আল্লাহর রাস্তায় মুসলমানদের নিরাপত্তার জন্য এক দিন পাহারা দেয়া আল্লাহর নিকট এক হাজার বছরের বছরের ইবাদত, সিয়াম ও নামায অপেক্ষা অধিক সওয়াবের কাজ। আল্লাহ যদি তাকে নিরাপদে তার পরিবার-পরিজনের নিকট ফিরিয়ে আনেন তবে এক হাজার বছর পর্যন্ত তার কোন গুনাহ লেখা হবে না, তার জন্য নেকী লেখা হবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য সীমান্ত চৌকিতে পাহারাদানের সওয়াব অব্যাহতভাবে লিপিবদ্ধ হতে থাকবে। [২৭৬৮] তাহকীক আলবানীঃ বানোয়াট।

【8】

আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদান ও তাকবীর ধ্বনির ফযীলাত

উকবাহ বিন আমির আল-জুহানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তায়ালা নিরাপত্তামূলক পাহারাদানকারীদের উপর রহমত বর্ষণ করুন। [২৭৬৯] তাহকীক আলবানীঃ দইফ। আনাস বিন মালিক (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহর রাস্তায় একরাত পাহারা দেয়া কোন লোকের নিজ পরিবারে অবস্থানরত থেকে এক হাজার বছর সিয়াম রাখা ও নামাজ পড়ার চেয়ে অধিক উত্তম। এক বছর হলো তিন শত ষাট দিনে, যার প্রতিটি দিন এক হাজার বছরের সমান। [২৭৭০] তাহকীক আলবানীঃ বানোয়াট। আবূ হুরায়রাহ(রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বলেনঃ আল্লাহভীতি অবলম্বনের এবং প্রতিটি উঁচু স্থানে আরোহণকালে তাকবীর ধ্বনি করার জন্য আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি। [২৭৭১] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।

【9】

সামরিক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে রওয়ানা হওয়া

আনাস বিন মালিক(রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বাধিক সুন্দর, সর্বাধিক দানশীল এবং সর্বাধিক সাহসী বীর পুরুষ। এক রাতে মদীনাবাসী সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো। তারা একটি বিকট শব্দ শুনে সেদিকে ছুটলো। পথিমধ্যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সাথে মিলিত হলেন। অবশ্য তিনি তাদের আগেই সেই বিকট শব্দের কারণ অনুসন্ধানে গিয়েছিলেন। তিনি আবূ তালহা(রাঃ) -র ঘোড়ার গদিহীন খালি পিঠে সওয়ার ছিলেন। তাঁর ঘাড়ে তরবারি ঝুলানো ছিল। তিনি বলছিলেনঃ হে জনগণ! তোমরা সন্ত্রস্ত হয়ো না। এই বলে তিনি তাদের ফিরিয়ে আনছিলেন। অতঃপর তিনি ঘোড়া সম্পর্কে মন্তব্য করেনঃ আমি এটিকে সমুদ্রের ন্যায় পেয়েছি অথবা এটি যেন একটি সমুদ্র। রাবী হাম্মাদ (রহঃ) বলেন, সাবিত (রহঃ) বা অপর কেউ আমাকে বলেছেন যে, আবূ তালহা (রাঃ) -র ঘোড়াটি ছিল মন্থর গতিসম্পন্ন। কিন্তু এ দিনের পর থেকে কোন ঘোড়াই দৌড় প্রতিযোগিতায় একে অতিক্রম করতে পারেনি। [২৭৭২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস(রাঃ) নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদেরকে জিহাদে যোগদানের আহবান জানানো হলে তোমরা বেরিয়ে পড়বে। [২৭৭৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহর পথে ধুলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কোনো মুসলমান বান্দার পেটে একত্র হতে পারবে না। [২৭৭৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আনাস বিন মালিক(রাঃ) রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি বিকাল চললো, তাতে সে যতোটা ধূলিমলিন হলো, তা কিয়ামতের দিন তার জন্য এর সমপরিমাণ কস্তরীতে পরিণত হবে। [২৭৭৫] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।

【10】

নৌযুদ্ধের ফযীলাত

উম্মু হারাম বিনতু মিলহান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক দিন আমার ঘরে ঘুমালেন। তিনি হাসতে হাসতে জাগ্রত হলেন। আমি বললাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকে কে হাসালো? তিনি বলেনঃ আমার উম্মতের কতক লোককে সমুদ্রপৃষ্ঠে উপবিষ্ট অবস্থায় আমার সামনে পেশ করা হয়েছে, যেভাবে বাদশাহ সিংহাসনে উপবিষ্ট থাকে। উম্মু হারাম(রাঃ) বলেন, আপনি আল্লাহর নিকট দোয়া করুন যাতে তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আনাস(রাঃ) বলেন, তিনি তার জন্য দোয়া করলেন। তিনি পুনরায় ঘুমিয়ে পড়লেন, অতঃপর পূর্বের ন্যায় জাগ্রত হলেন। উম্মু হারাম(রাঃ) জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূর্বানুরুপ জবাব দেন। থাকে। উম্মু হারাম(রাঃ) বলেন, আপনি আল্লাহর নিকট দোয়া করুন যাতে তিনি আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি প্রথম দলের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আনাস(রাঃ) বলেন, মুসলমানগণ মুআবিয়া বিন আবূ সুফিয়ান (রাঃ) -র নেতৃত্বে সর্বপ্রথম নৌযুদ্ধে রওয়ানা হলে উম্মু হারাম (রাঃ) ও তার স্বামী উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) -এর সাথে জিহাদে রওয়ানা হলেন। তারা জিহাদ থেকে ফিরে এসে সিরিয়ায় অবতরণ করেন। আরোহণের জন্য তার নিকট একটি জন্তুযান আনা হলো। জন্তুটি তাকে ছুড়ে ফেলে দিলে তিনি তাতে নিহত হন। [২৭৭৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ দারদা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, একটি নৌযুদ্ধ দশটি স্থলযুদ্ধের সমতুল্য। আর সমুদ্রে যার মাথাঘুরানি হবে সে মহান আল্লাহর রাস্তায় রক্তে রঞ্জিত (নিহত) ব্যক্তির সমতুল্য। [২৭৭৭] তাহকীক আলবানীঃ দইফ। আবূ উমামাহ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি; একজন শহীদ নৌযোদ্ধার মর্যাদা দু’জন শহীদ স্থলযোদ্ধার সমান। আর নৌ-পথে যার মাথাঘুরানি হয়, তার মর্যাদা স্থলযুদ্ধে শহীদের মর্যাদার সমান। আর দু’টি ঢেউয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব অতিক্রমকারীর মর্যাদা আল্লাহ্‌র আনুগত্যে সারা দুনিয়া সফরকারীর সমান। আল্লাহ তাআলা মৃত্যুদূতকে নৌযোদ্ধা ব্যতীত সকলের রূহ হরণ করার দায়িত্ব দিয়েছেন। স্বয়ং আল্লাহ নৌযোদ্ধার রূহ নিয়ে নেন। তিনি যুদ্ধে শহীদের সকল গুনাহ মাফ করেন তার ঋণ ব্যতিত, কিন্তু নৌ-যুদ্ধে শহীদের সকল গুনাহ এবং ঋণও মাফ করেন। [২৭৭৮] তাহকীক আলবানীঃ খুবই দুর্বল।

【11】

দায়লামের বিবরণ এবং কাযবীনের ফযীলাত

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দুনিয়ার একটি মাত্র দিনও যদি অবশিষ্ট থাকে তবে মহামহিম আল্লাহ সেই দিনটিকে দীর্ঘায়িত করবেন, যে পর্যন্ত না আমার আহলে বাইত-এর এক ব্যক্তি দায়লামের পাহাড় এবং কুসতুনতিয়ার কন্সট্যান্টিনোপলের অধিপতি হবে। [২৭৭৯] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ। আনাস বিন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, অচিরেই তোমরা বেশ কয়েকটি দেশ এবং কাযবীন নামক শহর জয় করবে। যে ব্যক্তি তথায় চল্লিশ দিন অথবা চল্লিশ রাত প্রতিরক্ষামূলক পাহারা দিবে, জান্নাতে তার জন্য স্বর্ণের গম্বুজবিশিষ্ট পীত বর্ণের মনি-মুক্তার স্তম্ভসমূহের বালাখানা থাকবে। এতে সোনার তৈরি সত্তর হাজার দরজা থাকবে এবং প্রতিটি দরজায় থাকবে একজন করে আয়তলোচনা হূর। [২৭৮০] তাহকীক আলবানীঃ বানোয়াট।

【12】

পিতা-মাতা জীবিত থাকতে কারো জিহাদে গমন

মুআবিয়াহ বিন জাহিমাহ আস-সুলামী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর সন্তোষ লাভের এবং আখেরাতে জান্নাত প্রাপ্তির আশায় আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। তিনি বলেনঃ তোমার জন্য দুঃখ হয়, তোমার মা কি জীবিত আছে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেনঃ ফিরে গিয়ে তার সেবাযত্ন করো। এরপর আমি অপর পাশ থেকে তাঁর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আখেরাতে জান্নাত লাভের আশায় আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। তিনি বলেনঃ তোমার জন্য দুঃখ হয়, তোমার মা কি জীবিত আছে? আমি বললাম,ইয়া রাসূলাল্লাহ! হাঁ। তিনি বলেন, তুমি ফিরে যাও এবং তার সেবাযত্ন করো। এরপর আমি সম্মুখভাগে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আখেরাতে জান্নাত লাভের আশায় আমি আপনার সাথে জিহাদে যেতে চাই। তিনি বলেনঃ তোমার জন্য দুঃখ হয়, তোমার মা কি জীবিত আছে? আমি বললাম, হাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বলেনঃ তোমার জন্য আফসোস! তার পায়ের কাছে পড়ে থাকো, সেখানেই জান্নাত। [২৭৮১] [উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলোঃ] --------- ২/২৭৮১(১) . মুআবিয়া বিন জাহিমাহ আস-সুলামী(রাঃ) , জাহিমাহ(রাঃ) নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এলেন... পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। আবূ আবদুল্লাহ ইবনু মাজাহ (রহঃ) বলেন, ইনি হলেন জাহিমাহ বিন আব্বাস বিন মিরদাস আস-সুলামী যিনি হুনায়ন যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ভর্ৎসনা করেছিলেন (পরে ইসলাম গ্রহণ করেন)। [২৭৮১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং আখেরাতে জান্নাত লাভের আশায় আপনার সাথে জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে এসেছি। আমি আমার পিতা- মাতাকে কাঁদিয়ে এসেছি। তিনি বলেনঃ তাদের নিকট ফিরে যাও এবং তাদের মুখে হাসি ফুটাও, যেভাবে তুমি তাদেরকে কাঁদিয়ে এসেছো। [২৭৮২] তাহকীক আলবানীঃসহীহ।

【13】

জিহাদের সংকল্প

আবূ মুসা আল-আশআরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, সে জিহাদ করে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য, সে জিহাদ করে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং সে জিহাদ করে প্রদর্শনীর জন্য। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে আল্লাহর কলেমা (দীন) সমুন্নত করার জন্য জিহাদ করে সে-ই হলো আল্লাহর পথে (জিহাদরত)। [২৭৮৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ উকবাহ(রাঃ) তিনি ছিলেন পারস্যবাসীর মুক্ত দাস। তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে উহুদ যুদ্ধের দিন হাজির ছিলাম। আমি এক মুশরিককে তরবারির আঘাত হেনে বললাম, নে এটা আমার পক্ষ থেকে, আর আমি হলাম পারস্য যুবক। ঘটনাটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানতে পেরে বলেনঃ তুমি কেন বললে না, নে এটা আমার পক্ষ থেকে, আর আমি হলাম আনসারী যুবক। [২৭৮৪] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ। আবদুল্লাহ বিন আমর(রাঃ) আমি নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে সেনাদল আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে গনীমাতের মাল লাভ করলো, তারা তাদের দু’তৃতীয়াংশ সওয়াব সাথে সাথে পেয়ে গেলো। আর গনীমাতের মাল না পেলে তারা (আখেরাতে) পূর্ণ সওয়াব লাভ করবে। [২৭৮৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【14】

আল্লাহর পথে (জিহাদের উদ্দেশে) ঘোড়া প্রতিপালন

উরওয়াহ আল-বারিকী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘোড়ার কপালে কিয়ামত পর্যন্ত কল্যাণ ও প্রাচুর্য বাঁধা থাকবে। [২৭৮৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার কপালে কল্যাণ ও প্রাচুর্য যুক্ত থাকবে। [২৭৮৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ঘোড়ার কপালে বাঁধা রয়েছে কল্যাণ ও বরকত অথবা তিনি বলেছেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার কপালে কল্যাণ ও বরকত বাঁধা থাকবে। ঘোড়া তিন ধরনেরঃ একজনের জন্য তা সওয়াব বয়ে আনে, একজনের জন্য তা পর্দাস্বরূপ; আরেকজনের জন্য তা পাপের কারণ হয়। ঘোড়া তার জন্য সওয়াব বয়ে আনেঃ যে লোক আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য তা পোষে এবং একে সেজন্য প্রস্তুত করে রাখে। সেই ঘোড়ার পেটে যা কিছু যায় তার জন্যও তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হয়। যদি তার ঘোড়া চারণভূমিতে চরায় তবে ঘোড়া যা কিছুই খায় তার বিনিময়ে তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হয়। সে যদি ঘোড়াকে বহমান নদীর পানি পান করায় তবে তার পেটে যাওয়া প্রতিটি ফোঁটা পানির বিনিময়েও তার আমলনামায় একটি করে সওয়াব লেখা হয়। এমনকি তিনি ঘোড়ার পেশাব ও গোবরের বিনিময়েও সওয়াব হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন। আর তা যদি একটি বা দু’টি টিলা অতিক্রম করে তবে তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হয়। আর যে লোক ঘোড়া পোষে সম্মান ও সৌন্দর্যের উপকরণস্বরূপ তা তার জন্য আবরণ। অবশ্য সে তার ঘোড়ার সহজ বা কঠিন কর্তব্য বিস্মৃত হয় না। আর ঘোড়া যার জন্য পাপের কারণঃ যে লোক ঘোড়া পোষে অহংকারবশে ও প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে, তা তার জন্য পাপের কারণ হয়, তার জন্য ঘোড়া শাস্তিস্বরূপ। [২৭৮৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ কাতাদা আল-আনসারী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কালো রং-এর ঘোড়া সর্বোত্তম যার কপাল ও উপরের ওষ্ঠ সাদা। অতঃপর যে ঘোড়ার ডান পা ও কপাল ব্যতীত অবশিষ্ট পাগুলো সাদা। যদি কালো ঘোড়া না পাওয়া যায় তবে লাল- কালো মিশ্রিত বর্ণের ঘোড়া উত্তম। [২৭৮৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিকাল ঘোড়া (অর্থাৎ তিন পা সাদা এবং এক পা শরীরের রং-বিশিষ্ট) অপছন্দ করেছেন। [২৭৯০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। তামীম আদ-দারী (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (জিহাদের উদ্দেশ্যে) একটি ঘোড়া পোষে, অতঃপর স্বহস্তে একে ঘাস ও শস্যদানা খাওয়ায়, তার আমলনামায় প্রতিটি দানার বিনিময়ে একটি করে সওয়াব লেখা হয়। [২৭৯১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【15】

মহান আল্লাহর পথে জিহাদ করা

মুআয বিন জাবাল (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেন, কোন মুসলমান ব্যক্তি মহামহিম আল্লাহর পথে একটি উষ্ট্রী দোহনের সময় পরিমাণ যুদ্ধ করলে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। [২৭৯২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আনাস বিন মালিক (রাঃ) আমি এক যুদ্ধে উপস্থিত ছিলাম। আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহাহ (রাঃ) বললেন, “হে আত্মা! আমি কি দেখছি না যে, তুমি জান্নাতকে অপছন্দ করছো! আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমাকে অবশ্যই জান্নাতে যেতে হবে আনন্দে হোক বা নিরানন্দে”। [২৭৯৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আমর বিন আবাসাহ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কোন জিহাদ উত্তম? তিনি বলেনঃ যে যুদ্ধে মুজাহিদের রক্ত প্রবাহিত হয় এবং তার ঘোড়াও আহত হয়। [২৭৯৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলে, রাসূলল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহর পথে আহত ব্যক্তি, আল্লাহই ভালো জানেন কে তার পথে আহত হয়, কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার ক্ষতস্থান আহত হওয়ার দিনের মত দগদগে তাজা থাকবে, তার রং হবে রক্তিম বর্ণ এবং তার ঘ্রাণ হবে কস্তরীর মত সুগন্ধে ভরপুর। [২৭৯৫] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ। আবদুল্লাহ বিন আবূ আওফা (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাফের বাহিনীসমুহকে বদদোয়া করে বলেনঃ “হে কিতাব নাযিলকারী, দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী আল্লাহ! আপনি বাহিনীসমুহকে পরাস্ত করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাদের পরাস্ত করুন এবং তাদের ভীত-কম্পিত করুন। [২৭৯৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। সাহল বিন হুনায়ফ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি সর্বান্তঃকরণে সত্যিকারভাবে আল্লাহর নিকট শাহাদাত কামনা করবে, আল্লাহ তাকে শহীদদের মর্যাদা দান করবেন, যদিও সে তার বিছানায় মারা যায়। [২৭৯৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【16】

আল্লাহর পথে শহীদ হওয়ার ফযিলাত

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট শহীদদের বিষয় উল্লেখ করা হলে তিনি বলেনঃ শহীদের রক্ত মাটিতে শুকিয়ে যাবার আগেই তার দু’জন স্ত্রী (জান্নাতের হূর) এসে তাকে এমনভাবে তুলে নেয়, যেন তারা স্তন্যদানকারিনী, যারা তাদের দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে জঙ্গলে হারিয়ে ফেলেছে। তাদের দু’জনের প্রত্যেকের হাতে থাকবে একটি করে চাদর যা দুনিয়া ও তার মধ্যকার সব কিছুর চেয়ে উত্তম। [২৭৯৮] তাহকীক আলবানীঃ খুবই দুর্বল। মিকদাম বিন মা’দীকারিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ শহীদের জন্য আল্লাহর নিকট ছয়টি বৈশিষ্ট্য রয়েছেঃ (১) তার দেহের রক্তের প্রথম ফোঁটাটি বের হতেই তিনি তাকে ক্ষমা করেন এবং জান্নাতে তার ঠিকানা তাকে দেখানো হয়, (২) কবরের আযাব থেকে তাকে রক্ষা করা হয়, (৩) (কিয়ামতের) ভয়ংকর ত্রাস থেকে সে নিরাপদ থাকবে; (৪) তাকে ঈমানের চাদর পড়ানো হবে; (৫) আয়তলোচনা হুরের সাথে তার বিবাহ দেয়া হবে এবং (৬) তার নিকট আত্মীয়দের মধ্য থেকে সত্তরজনের পক্ষে তাকে শাফাআত করার অনুমতি দেয়া হবে। [২৭৯৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) উহুদের যুদ্ধের দিন আবদুল্লাহ বিন ‘আমর বিন হারাম (রাঃ) শহীদ হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ হে জাবির! মহামহিম আল্লাহ তোমার পিতাকে যা বলেছেন তা কি আমি তোমাকে অবহিত করবো না? আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তায়ালা যার সাথেই কথা বলেছেন, পর্দার অন্তরাল থেকে বলেছেন, কিন্তু তোমার পিতার সাথে সামনা সামনি কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, হে আমার বান্দা! তুমি আকাঙ্ক্ষা করো, আমি তোমাকে দিবো। সে বললো, হে প্রভু! আমাকে জীবিত করুন আমি পুনরায় আপনার রাস্তায় শহীদ হবো। তিনি বলেন, আমার পক্ষ থেকে পূর্বেই এটা সাব্যস্ত হয়ে গেছে যে, এখানে আসার পর তারা আর প্রত্যাবর্তন করবে না। সে বললো, প্রভু! আমার পক্ষ থেকে আমার পশ্চাতের (পৃথিবীর) লোকেদের সুসংবাদ পৌঁছে দিন। তখন মহান আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ) : “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে তোমরা কখনও মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত এবং তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তারা জীবিকাপ্রাপ্ত....” (সূরা আল ইমরানঃ ১৬৯-১৭১)। [২৮০০] তাহকীক আলবানীঃ হাসান। আবদুল্লাহ (রাঃ) আল্লাহ তা’আলার নিম্মোক্ত বাণী সম্পর্কে বর্ণিতঃ “যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়েছে তাদেরকে তোমরা কখনো মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত এবং তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তারা রিযিকপ্রাপ্ত” (সূরা আল ইমরানঃ ১৬৯)। তিনি বলেন, আমরা উক্ত আয়াতের তাৎপর্য জিজ্ঞেস করলে মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ শহীদগণের রূহ সবুজ পাখির ন্যায় স্বাধীনভাবে জান্নাতে যত্রতত্র উড়ে বেড়ায় এবং আরশের সাথে ঝুলন্ত ফানুসের মধ্যে বিশ্রাম গ্রহণ করে। একদা তাদের রূহসমূহ ঐ অবস্থায় থাকাকালে তোমার প্রতিপালক তাদের নিকট উদ্ভাসিত হয়ে বলেন, তোমরা যা ইছা আমার নিকট চাও। তারা বললো, আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনার নিকট আর কি চাবো! আমরা তো স্বাধীনভাবে জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা ঘুড়ে বেড়াই। তারা যখন দেখলো যে, কিছু না চাওয়া পর্যন্ত তাদেরকে ছাড়া হচ্ছে না, তখন তারা বললো, আমরা আপনার নিকট চাই যে, আপনি আমাদের দেহে আমাদের রূহ ফেরত দিয়ে আমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠাবেন, যাতে আমরা আপনার রাস্তায় জিহাদ করতে পারি। আল্লাহ যখন দেখলেন যে, তারা এটাই চাচ্ছে, তখন তাদেরকে (স্ব স্ব অবস্থায়) ত্যাগ করা হলো। [২৮০১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, শহীদ ব্যক্তি নিহত হওয়ার সময় কোন কষ্টই অনুভব করে না, শুধু এতটুকু যে, তোমাদের কাউকে পিঁপড়ায় দংশন করলে সে যতটুকু ব্যাথা অনুভব করে। [২৮০২] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।

【17】

যার জন্যে শহীদের মর্যাদা আশা করা যায় (শহীদের শ্রেণীবিভাগ)

জাবর বিন আতীক (রাঃ) তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে দেখতে আসেন। জাবর (রাঃ) -এর পরিবারের কেউ বললো, আমরা আশা করতাম যে, সে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যু বরণ করবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তাহলে আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা তো খুব কম হয়ে যাবে। আল্লাহর পথে নিহত হলে শহীদ, মহামারীতে নিহত হলে শহীদ, যে মহিলা গর্ভাবস্থায় মারা যায় সে শহীদ এবং পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও ক্ষয়রোগে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। [২৮০৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কাদের তোমরা শহীদ মনে করো? সাহাবীগণ বলেন, আল্লাহর পথে যারা নিহত হয়। তিনি বলেনঃ তাহলে তো আমার উম্মাতের শহীদের সংখ্যা কম হবে। যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে নিহত হয়, সে শহীদ, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মারা যায় সে শহীদ, যে ব্যক্তি পেটের পীড়ায় মারা যায় সে শহীদ এবং যে ব্যক্তি মহামারীতে মারা যায় সেও শহীদ। আবূ হুরায়রাহ(রাঃ) , (সুহায়ল) বলেন, এ সুত্রে আমাকে অবহিত করেন যে, তিনি তাঁর রিওয়ায়াতে আরো উল্লেখ করেছেনঃ পানিতে ডুবে মরা ব্যক্তিও শহীদ। [২৮০৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【18】

সমরাস্ত্র

আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন শিরস্ত্রাণ পরিহিত অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করেন। [২৮০৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। সাইব বিন ইয়াযীদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উহুদের যুদ্ধের দিন দুটি লৌহবর্ম একটির উপর অপরটি পরিধান করেন। [২৮০৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। সুলায়মান বিন হাবীব (রাঃ) আমরা আবূ উমমাহ(রাঃ) এর নিকট প্রবেশ করলাম। তিনি আমাদের তরবারিতে রূপার অলঙ্করণ দেখতে পেয়ে অসন্তুষ্ট হন এবং বলেন, (আগেকার) লোকেরা বহু বিজয় অর্জন করেছিলো। কিন্তু তাদের তরবারি সোনা বা রূপা দ্বারা অলঙ্কৃত ছিলো না, বরং শিশা, লোহা বা উটের রগ দ্বারা অলংকৃত ছিল। আবুল হাসান আল-কাত্তান(রহঃ) বলেন, হাদীসে উল্লিখিত শব্দ “আলাবী” এর অর্থ ‘রগ’। [২৮০৭] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ‘যুল-ফাকার’ নামক তরবারি বদরের যুদ্ধের দিন গনীমতস্বরূপ গ্রহণ করেন। [২৮০৮] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি হাসান। আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) মুগীরাহ বিন শু‘বাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে জিহাদ করতে গেলে সাথে একটা বর্শা নিতেন। ফিরে এসে তিনি বর্শাটি ফেলে দিতেন। শেষে কেউ তা তুলে এনে তাকে দিতো। ‘আলী (রাঃ) তাকে বলেন, আমি অবশ্যই এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলবো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ এটা করো না। কেননা তুমি যদি এরূপ করো তবে কেউ আর কোন পড়ে থাকা জিনিস কুড়িয়ে নিয়ে ফেরত দিবে না। [২৮০৯] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি দঈফ। আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হতে একটি আরবীয় ধনুক ছিল। তিনি এক ব্যক্তির হতে একটি পারসিক ধনুক দেখে বলেনঃ এটা কি? এটা ফেলে দাও। তোমরা এটার অনুরূপ ধনুক রাখো এবং বর্শাও রাখো। কেননা আল্লাহ তা’আলা এই ধনুক ও বর্শা দ্বারা তোমাদের দ্বীনের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের দ্বারা বিভিন্ন দেশ জয় করাবেন। [২৮১০] তাহকীক আলবানীঃ সানাদ দুর্বল।

【19】

আল্লাহর রাস্তায় তীরন্দাজী

উকবাহ বিন আমির আল-জুহানী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ নিশ্চয় আল্লাহ একটা তীরের উপলক্ষে তিন ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেনঃ (১) তীর নির্মাতা যে তা নির্মাণকালে কল্যাণের আশা করে, (২) (জিহাদে) এই তীর নিক্ষেপ কারী এবং (৩) যে তা নিক্ষেপে সাহায্য করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা তীরন্দাজী করো এবং ঘোড়দৌড় শিক্ষা করো। তবে তোমার ঘোড়দৌড় শেখার তুলনায় তীরন্দাজী শিক্ষা করা আমার কাছে অধিক প্রিয়। মুসলিম ব্যক্তির সকল ক্রীড়া-কৌতুকই বৃথা। তবে তাঁর ধনুক দ্বারা তীর নিক্ষেপ, তার ঘোড়াকে প্রশিক্ষন দান এবং স্ত্রীর সাথে তাঁর ক্রীড়া-কৌতুক বৃথা নয়। কারন এগুলো উপকারী ও বিধিসম্মত। [২৮১১] তাহকীক আলবানীঃ “মুসলিম ব্যক্তির সকল ক্রীড়াকৌতুক বৃথা। তবে তাঁর ধনুক দ্বারা তীর নিক্ষেপ, তার ঘোড়াকে প্রশিক্ষন দান এবং স্ত্রীর সাথে তাঁর ক্রীড়াকৌতুক বৃথা নয়”। এই কথা ব্যাতীত হাদীসটি দঈফ। “কারন এগুলো উপকারী ও বিধিসম্মত।“ এই বাক্যটি দুর্বল। আমর বিন আবাসাহ (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি শত্রুবাহিনীর প্রতি একটি তীর নিক্ষেপ করলো, অতঃপর তা শত্রুবাহিনী পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে লক্ষ্যে আঘাত হানুক বা লক্ষ্যভ্রষ্ঠ হোক, তা একটি গোলাম আযাদ করার সমান। [২৮১২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উকবাহ বিন আমির আল-জুহানী (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে তিলাওয়াত করতে শুনেছি (অনুবাদ) : “তোমরা দুশমনের বিরুদ্ধে যথাসাধ্য শক্তি সঞ্চয় করো” (সূরা আনফালঃ ৬০)। জেনে রেখো! এই শক্তি হলো তীরন্দাজী। কথাটি তিনি তিনবার বলেন। [২৮১৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ উকবাহ বিন আমির আল-জুহানী(রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি তীরন্দাজী শিক্ষা করার পর তা ত্যাগ করলো সে আমার নাফরমানী করলো। [২৮১৪] তাহকীক আলবানীঃ [আরবী] শব্দে সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন যারা তীরন্দাজী করছিল। তিনি বলেন, হে ইসমাঈলের বংশধর! তোমরা তীরন্দাজী করো। কেননা তোমাদের পিতা ছিলেন তীরন্দাজ। [২৮১৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ

【20】

বড় পতাকা ও ক্ষুদ্র পতাকা

আল হারিস বিন হাসসান (রাঃ) আমি মদীনায় পৌঁছে দেখলাম, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে আছেন এবং বিলাল (রাঃ) তার গলায় তরবারি ঝুলিয়ে তাঁর সামনে দন্ডায়মান। আরো ছিল একটি কালো পতাকা। আমি বললাম, এই লোক কে? লোকেরা বললো, আমর ইবনুল আস (রাঃ)। তিনি একটি যুদ্ধ থেকে ফিরে এসেছেন। [২৮১৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন মক্কায় প্রবেশ করেন এবং তাঁর পতাকাটি ছিল সাদা রং-এর। [২৮১৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বড় পতাকাটি ছিল কালো রং-এর এবং ক্ষুদ্র পতাকাটি ছিল সাদা রং-এর। [২৮১৮] তাহকিক আলবানীঃ হাসান।

【21】

যুদ্ধক্ষেত্রে রেশমী বস্ত্র পরিধান

আসমা’ বিনতু আবূ বাকর (রাঃ) তিনি একটি সোনার বোতামযুক্ত জামা বের করে বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শত্রুবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করার সময় এটি পরিধান করতেন।[২৮১৯] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ। উমার (রাঃ) তিনি রেশমী পোশাক পরিধান করতে নিষেধ করতেন, কিন্তু এতটুকু পরিমাণ হলে (দোষ নেই)। অতঃপর তাঁর আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করলেন, তারপর দ্বিতীয় আঙ্গুল দিয়ে, তারপর তৃতীয় আঙ্গুল দিয়ে, তারপর চতুর্থ আঙ্গুল দিয়ে, অতঃপর বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের তা পরিধান করতে নিষেধ করতেন। [২৮২০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ

【22】

যুদ্ধের ময়দানে পাগড়ি পরিধান

আমর বিন হুরায়স (রাঃ) আমি যেন এখনো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাঁর মাথায় কালো পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি এবং তিনি তাঁর পাগড়ির উভয় প্রান্ত তাঁর দু’কাঁধের উপর ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন। [২৮২১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাথায় কালো পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় মক্কায় প্রবেশ করেন। [২৮২২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【23】

যুদ্ধক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় করা

যায়দ বিন সাবিত (রাঃ) আমি দেখলাম এক ব্যক্তি আমার পিতার নিকট এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছেন, যে যুদ্ধে যোগদান করে যুদ্ধক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় করছে। আমার পিতা তাকে বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে তাবুকে অবস্থানকালে ক্রয়-বিক্রয় করতাম। তিনি আমাদের দেখতেন কিন্তু নিষেধ করতেন না। [২৮২৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【24】

মুজাহিদ বাহিনীকে এগিয়ে দেওয়া এবং তাদের বিদায় জানানো

মুআয বিন আনাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহর পথের মুজাহিদকে বিদায় জানানো, অতঃপর তাকে সকালে বা সন্ধ্যায় তাঁর সওয়ারীতে তুলে দেয়া আমার নিকট দুনিয়া ও তার মধ্যকার সব কিছু থেকে অধিক পছন্দনীয়। [২৮২৪] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বিদায় দিয়ে বলেন, আমি তোমাকে আল্লাহর আমানতে সোপর্দ করলাম, যাঁর নিকট সোপর্দকৃত জিনিস ধ্বংস হয় না। [২৮২৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার(রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সামরিক বাহিনীকে বিদায় দিয়ে বলতেনঃ আমি তোমার দীন, তোমার বিশ্বস্থতা ও তোমার সর্বশেষ আমল আল্লাহর নিকট সোপর্দ করলাম। [২৮২৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【25】

সারিয়্যা (ক্ষুদ্র যুদ্ধাভিযান)

আনাস বিন মালিক (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আকসাম বিন জাওন আল-খুযাঈ (রাঃ) কে বলেনঃ হে আকসাম! তুমি তোমার সম্প্রদায় ব্যাতীত অন্য সম্প্রদায়ের সাথে একত্ত্রে জিহাদ করো, তাহলে তোমার চরিত্র সুন্দর হবে। তোমার সঙ্গীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করো (বা সঙ্গীদের সম্মান করো)। উত্তম সঙ্গী চারজন এবং উত্তম সারিয়্যা (ক্ষুদ্র যুদ্ধাভিযান) হলো চারটি, যার সৈন্যসংখ্যা চারশত। চার হাজার সৈন্য সম্বলিত সেনাদল হলো উত্তম। আর ১২ হাজার সদস্যবিশিষ্ঠ সেনাদল সংখ্যা স্বল্পতার দরুন কখনো পরাজিত হবে না। [২৮২৭] তাহকীক আলবানীঃ হাদীসের ২য় অংশ ব্যাতীত খুবই দুর্বল। কারণ (আরবি) অংশটি সহিহ। বারা’ বিন আযিব (রাঃ) আমরা আলোচনা করতাম যে, বদরের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীর সংখ্যা ছিল তিন শত দশের কিছু বেশী। এই সংখ্যা ছিল তালূতের সাথে নদী অতিক্রমকারী সেনাদলের সমান। তালূতের সাথে মুমিন ব্যক্তিগনই নদী পার হয়েছিলেন। [২৮২৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবুল ওয়ারদ(রাঃ) তোমরা সেই সেনাদল পরিহার করো যারা শত্রুর মোকাবিলায় অবতীর্ণ হলে পলায়ন করে এবং গনীমাত পেলে তাতে প্রতারণা করে। [২৮২৯] তাহকীক আলবানীঃ সনদটি দুর্বল।

【26】

মুশরিকদের পাত্রে আহার করা

হুলব (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট নাসারাদের (খৃস্টানদের) খাদ্যদ্রব্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, তোমার অন্তরে যেন কোন খাদ্য সন্দেহ সৃষ্টি না করে, তাহলে তুমিও এ ক্ষেত্রে নাসারাদের অনুরূপ হয়ে যাবে। [২৮৩০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ সা’লাবাহ আল-খুশানী (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! মুশরিকদের হাঁড়ি-পাতিলে কি আমরা রান্না করব? তিনি বলেনঃ তোমরা তাতে রান্না করো না। আমি বললাম, আমরা যদি এর মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ি এবং সেগুলো ছাড়া যদি আমরা পাত্র না পাই? তিনি বলেনঃ তাহলে তোমরা তা উত্তমরূপে ধুয়ে নাও, অতঃপর তাতে রান্না করো এবং আহার করো। [২৮৩১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【27】

মুশরিকদের সাহায্য চাওয়া

আয়িশাহ(রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নিশ্চয় আমরা কোন মুশরিকের সাহায্য চাইনা। ‘আলী (রাঃ) তার রিওয়ায়াতে উল্লেখ করেছেন যে, রাবীর নাম ‘আবদুল্লাহ বিন ইয়াযীদ অথবা যায়েদ। [২৮৩২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【28】

যুদ্ধে কৌশল অবলম্বন

আয়িশাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যুদ্ধ হলো কৌশল। [২৮৩৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ মুতাওয়াতির। ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যুদ্ধ হলো কৌশল। [২৮৩৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【29】

মল্লযুদ্ধ ও নিহত শত্রুর মাল

আবূ যার (রাঃ) এরা দু’টি বিবদমান পক্ষ, তারা তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে বিবাদে লিপ্ত...’’ (সূরা হজ্জঃ১৯) শীর্ষক আয়াত নাযিল হয় বদর যুদ্ধের দিন ছয় ব্যক্তি সম্পর্কেঃ (মুসলমানদের) হামযা বিন আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) , ‘আলী বিন আবূ তালিব (রাঃ) ও উবায়দা ইবনুল হারিছ( রাঃ) এবং (কাফেরদের) উতবা বিন রবীআ, শায়বা বিন রবীআ ও ওয়ালীদ বিন উতবা সম্পর্কে। বদরের দিন তারা পরস্পরের সাথে মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। [২৮৩৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। সালামাহ ইবনুল আকওয়া (রাঃ) আমি এক ব্যক্তির সাথে মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তাকে হত্যা করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মালপত্র আমাকে দিলেন। [২৮৩৬] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি সহীহ। আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হুনায়নের যুদ্ধের দিন তিনি যাকে হত্যা করেছিলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মালপত্র তাকে দিলেন। [২৮৩৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। সামুরাহ বিন জুনদুব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (যুদ্ধের ময়দানে) যে যাকে হত্যা করে তার মালপত্র হত্যাকারীর প্রাপ্য। [২৮৩৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【30】

রাতের বেলা অতর্কিত আক্রমণ এবং নারী ও শিশু নিধন প্রসঙ্গে

সা’ব বিন জাসসামাহ (রাঃ) রাতের বেলা মুশরিকদের মহল্লায় অতর্কিত আক্রমণ প্রসঙ্গে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হলো যাতে নারী ও শিশু নিহত হয়। তিনি বলেনঃ তারাও (নারী ও শিশু) তাদের অন্তর্ভুক্ত। [২৮৩৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। সালামা ইবনুল আকওয়া‘ (রাঃ) আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে আবূ বাকর (রাঃ) -এর সাথে হাওয়াযিন গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। আমরা ফাযারা গোত্রের পানির উৎসে পৌঁছে সেখানে রাত কাটাই। ভোর হলে আমরা তাদেরকে অতর্কিত আক্রমণ করলাম। অতঃপর আমরা পানির মালিকদের নিকট এসে তাদেরকে আক্রমণ করে তাদের নয় অথবা সাত ঘর লোককে হত্যা করি। [২৮৪০] তাহকীক আলবানীঃ হাসান। ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক নারীকে নিহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখলেন। অতঃপর তিনি নারী ও শিশুদের হত্যা করতে নিষেধ করলেন। [২৮৪১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ হানযালাহ আল-কাতিব (রাঃ) তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে যুদ্ধ করলাম। আমরা নিহত নারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, যার নিকট লোকজন ভীড় জমিয়েছিল। লোকেরা তাঁর জন্যে পথ করে দিলো। তিনি বলেনঃ যারা যুদ্ধ করে, সে তো তাদের সাথে যুদ্ধ করতো না! অতঃপর তিনি এক ব্যক্তিকে বলেনঃ তুমি খালিদ ইবনুল ওয়ালিদকে গিয়ে বলো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তোমাদের এই বলে নির্দেশ দিয়েছেনঃ তোমরা কখনো শিশু ও শ্রমিককে হত্যা করো না। [উপ্রোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়ীছে, অপর সানাদটি হলোঃ] ------------ ৪/২৮৪২(১). রাবাহ ইবনুর রাবী‘ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুত্রে অনুরূপ বর্ণিত আছে। আবূ বাকর বিন আবূ শায়বাহ বলেন, সাওবী তার এই রিয়ায়াতে ভুল করেছেন। [২৮৪২] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।

【31】

শত্রুর জনপদ ভস্মীভূত করা

উসামাহ বিন যায়দ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে উবনা’ নামে কথিত একটি জনপদে পাঠালেন এবং বললেনঃ তুমি ভোরবেলা উবনা পৌঁছে তাকে ভস্মীভূত করো। [২৮৪৩] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ। ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়াহূদি নাদীর গোত্রের বুওয়ায়রা নামক খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দেন এবং কেটে ফেলেন। তখন আল্লাহ তায়ালা নাযিল করেন (অনুবাদ) : “তোমরা যে খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলেছো এবং যেগুলো কাণ্ডের উপর স্থির রেখেছো ...’’ (সূরা হাশরঃ ৫)। [২৮৪৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার(রা) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনূ নাযীরের খেজুর বাগান জ্বালিয়ে দেন এবং কেটে ফেলেন। এ বিষয়ে তাদের (মুসলিমদের) কবি (হাসসান বিন সাবিত রাঃ) বলেনঃ “লুআয়্যি (কুরায়শ) গোত্রের নেতৃবৃন্দের পক্ষে বুওয়ায়রা নামক বাগানটি ব্যাপকভাবে জ্বালিয়ে দেয়া সহজ”। [২৮৪৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【32】

বন্দীদের মুক্তিপণস্বরূপ দেয়া

সালামাহ ইবনুল আকওয়া (রাঃ) আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে আবূ বকর (রাঃ) -র সাথে হাওয়াযিন গোত্রের বিরুদ্ধে জিহাদ করি। তিনি ফাযারা গোত্রের একটি কন্যা গনীমতের অতিরিক্ত আমাকে দেন। সে ছিল আরবের সেরা সুন্দরী। তার পরনে ছিল চামড়ার পোশাক। আমি তার কাপড় উন্মোচন করিনি। এমতাবস্থায় আমি মদীনায় পৌঁছি। বাজারে আমার সাথে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাক্ষাত হলে তিনি বলেনঃ তোমার পিতা ছিল উত্তম লোক (তোমার পিতা, আল্লাহর শপথ!) , ঐ মেয়েটিকে আমাকে দান করো। আমি মেয়েটিকে দান করলাম। অতঃপর তিনি সেই মেয়েটিকে মক্কায় বন্দী মুসলমানদের মুক্তিপণস্বরূপ তথায় পাঠিয়ে দেন। [২৮৪৬] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।

【33】

শক্রপক্ষ কোন জিনিস দখলে নিয়ে যাবার পর পুনরায় তা মুসলমানদের দখলে আসলে

ইবনু উমার (রাঃ) তার একটি ঘোড়া ছুটে চলে গেলে শত্রুপক্ষ তা ধরে নিয়ে যায়। এরপর মুসলমানগণ তাদের উপর বিজয়ী হলে তার ঘোড়া তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সময়কার। ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, তার একটি গোলাম পলায়ন করে রূম এলাকায় চলে যায়। অতঃপর মুসলমানগণ তাদের উপর বিজয়ী হলে (এবং গোলামটিকে গ্রেপ্তার করে আনা হলে) খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ (রাঃ) তা তাকে ফেরত দেন। এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইন্তিকালের পরের ঘটনা। [২৮৪৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【34】

গনীমতের মাল আত্মসাৎ করা

যায়দ বিন খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) আশজাআ গোত্রের এক ব্যক্তি খায়বারে যুদ্ধের দিন মারা গেল। নবী(সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তোমাদের সাথীর নামায পড়ো। লোকদের কাছে বিষয়টি খুব খারাপ লাগলো এবং এর কারনে তাদের চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। তিনি তা দেখে বলেনঃ তোমাদের সাথী আত্মসাৎ করেছে। যায়েদ (রাঃ) বলেন, তারা তার মালপত্র তালাশ করলে তার মধ্যে ইহূদীদের দু’দিরহাম মূল্যের আংটির পাথর বা মনি পাওয়া গেল।[২৮৪৮] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ। আবদুল্লাহ বিন আমর(রাঃ) কিরকিরা নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মালপত্র পাহারা দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। সে মারা গেলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ সে জাহান্নামী। সাহাবীগন অনুসন্ধান করে তার সঙ্গে একটি কম্বল অথবা একটি আবা পেলো যা সে আত্মসাৎ করেছিল। [২৮৪৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উবাদাহ ইবনুস সামিত(রাঃ) হুনায়নের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে গনীমতের উটের পাশে নামায পরলেন। তারপর তিনি উটের দেহ থেকে একটি পশম নিয়ে তা তাঁর দু’আঙ্গুলের মাঝে রেখে বলেনঃ হে লোকসকল! অবশ্য এটা তোমাদের গনীমতের মাল। সুতা এবং সুঁই, আর যা পরিমানে তার চেয়ে বেশী এবং যা তার চেয়ে কম, সবই তোমরা গনীমতের মালের মধ্যে জমা দাও। কেননা গনীমতের মাল চুরি করার ফলে কিয়ামতের দিন তা চোরের জন্য অপমান ও গ্লানি এবং জাহান্নামের শাস্তির কারন হবে। [২৮৫০] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ।

【35】

গণীমতের মাল থেকে পুরস্কারস্বরূপ কিছু দান করা

হাবীব বিন মাসলামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক পঞ্চমাংশ নেয়ার পর অবশিষ্ট মালের এক তৃ্তীয়াংশ থেকে নফল (পুরস্কার) দিয়েছেন। [২৮৫১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উবাদাহ ইউনুস সাবিত (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধের প্রথমভাগের গণীমতের মালের এক-চতুর্থাংশ এবং ফিরতি যুদ্ধে এক-তৃতীয়াংশ থেকে (পুরস্কারস্বরূপ) অতিরিক্ত দেন। [২৮৫২] তাহকীক আলবানীঃ সানদটি দুর্বল। আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, এর পর আর কোন নফল (অতিরিক্ত) দেওয়া যাবে না। শক্তিশালী মুসলামানগণ দুর্বল মুসলমানকে গণীমতের মাল ফেরত দিবে। রাবী রাজা (রাঃ) বলেন, আমি সুলায়মান বিন মূসাকে বলতে শুনেছি, মাকহূল আমাকে হাবীব বিন মাসলামা্র সূ্ত্রে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধের প্রথমভাগের অর্জিত গণীমতের মালের এক-চতুর্থাংশ এবং শেষভাগে অর্জিত গনীমতের এক-তৃ্তীয়াংশ পুরস্কারস্বরূপ দিতেন। আমর (রাঃ) বলেন, আমি যেখানে তোমাকে আমার পিতা ও দাদার সূ্ত্রে হাদীস শুনাচ্ছি, সেখানে তুমি আমাকে মাকহূ্লের সূ্ত্রে হাদীস শুনাচ্ছো। [২৮৫৩] তাহকীক আলবানীঃ আমর থেকে মাওকূফ ব্যতীত সহীহ।

【36】

গণীমতের মাল বন্টন

ইবনূ উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বারের যুদ্ধের দিন গনীমতের মাল বন্টন করে অশ্বারোহীর জন্য তিনভাগঃ ঘোড়ার জন্য দু’ভাগ এবং পদাতিকের জন্য একভাগ। [২৮৫৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【37】

গোলাম ও মহিলারা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে শরীক হলে

ওয়াকী (রাঃ) আবুল লাহম (রাঃ) গোশত খেতেন না। উমাইর (রাঃ) বলেন, আমি গোলাম অবস্থায় আমার মনিবের সাথে খায়বারের দিন যুদ্ধ করেছিলাম। গনীমতের মালে আমাকে ভাগ দেওয়া হয়নি। আমাকে ঘরের আসবাবপত্র থেকে একখানি তরবারি দেয়া হয়। আমি তা কোমরে বেঁধে মাটিতে হেঁচরিয়ে নিয়ে যেতাম। [২৮৫৫] তাহকীক আলবানীঃ হাসান। উম্মু আতিয়্যাহ আল আনসারী (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আমি তাদের সওয়ারী ও মালপত্র রক্ষানাবেক্ষণের জন্য পশ্চাতে থাকতাম, তাদের খাবার তৈ্রী করতাম, আহতদের চিকিৎসা করতাম এবং রোগীদের দেখাশোনা করতাম। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【38】

ইমামের উপদেশ

সফওয়ান বিন আসসাল (রাঃ) রাসূ্লূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে একটি ক্ষুদ্র সামরিক অভিযানে পাঠান, তিনি বলেনঃ তোমারা আল্লাহর নামে আল্লাহর রাস্তায় রওয়ানা হয়ে যাও, যারা আল্লাহর সাথে কুফরী করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, লাশ (নাক-কান কেটে) বিকৃ্ত করো না, বিশ্বাসঘাতকতা করো না, গণীমতের মাল আত্মসাৎ করো না এবং শিশুদের হত্যা করো না। [২৮৫৭] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ। বুরায়দাহ(রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন ব্যক্তিকে ক্ষুদ্র সেনা-অভিযানে অধিনায়ক করে পাঠানোর সময় বিশেষভাবে তার জন্য আল্লাহভীতি অবলম্বনের এবং তার সহ যোদ্ধাদের সাথে উত্তম ব্যবহারের উপদেশ দিতেন। তিনি বলতেনঃ তোমারা আল্লাহর নামে এবং আল্লাহর পথে যুদ্ধ করো,যারা আল্লাহর সাথে কুফরী করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। তোমরা জিহাদ করো, বিশ্বাসঘাতকতা করো না, চুরি করো না, কারো অঙ্গহানি বা অঙ্গ বিকৃ্ত করো না এবং শিশুদের হত্যা করো না। যখন তুমি শত্রুপক্ষের মুশরিকদের বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে, তখন তাদেরকে তিনটি বিষয়ের প্রতি আহবান জানাবে। তারা সেগুলোর যেকোন একটির প্রতি সাড়া দিলে তুমি তাদের থেকে তা কবুল করো এবং তাদেরকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকো। (১) তুমি তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দাও। তারা যদি তা কবুল করে তবে তাদের পক্ষ থেকে তা মেনে নাও এবং তাদেরকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকো, অতঃপর তাদেরকে স্বদেশ ছেড়ে মুহাজিরদের দেশে চলে আসার আহবান জানাও এবং তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, তারা যদি এ কাজ করে তবে যেসব সুযোগ সুবিধা মুহাজিরগণ পাবে তারাও তা পাবে এবং মুহাজিরদের উপর যেসম দায়দায়িত্ব বর্তাবে তা তাদের উপরও বর্তাবে। তারা যদি (স্বদেশ ত্যাগ করতে) অসম্মত হয় তবে তাদের জানিয়ে দাও যে, তারা বেদুইন মুসলমানদের সমান মর্যাদা পাবে, তাদের উপর আল্লাহর সেইসব হুকুম জারি হবে যা মুমিন মুসলমানদের উপর জারি হয় এবং তারা গণীমত ও ফাই-এর কিছুই পাবে না, তবে তারা মুসলমানদের সাথে মিলে জিহাদ করতে পারবে। (২) তারা যদি ইসলামে দাখিল হতে অস্বীকার করে তবে তাদেরকে জিযয়া দিতে বলো। তারা যদি তা দেয় তবে তাদের নিকট থেকে তা গ্রহণ করো এবং তাদেরকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকো। (৩) তারা যদি জিযয়া দিতেও অস্বীকার করে, তবে তুমি তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থণা করো এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। আর তুমি কোন দুর্গ অবরোধ করলে পর তারা তোমার নিকট আল্লাহর যিম্মাদারি আর তোমার নবীর যিম্মাদারি লাভের আশা করলে তুমি তাদের জন্য আল্লাহর যিম্মাদারি এবং তোমার নবীর যিম্মাদারি দান করো। কারণ তোমাদের নিজেদের এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদের যিম্মাদারি ভঙ্গ করা আল্লাহ ও তাঁর রাসূ্লের যিম্মাদারি ভঙ্গ করার চেয়ে তোমাদের জন্য অধিকতর সহজ। আর তুমি কোন দুর্গ অবরোধ করলে পর তারা তোমার নিকট আল্লাহর হুকুমে দূ্র্গ থেকে বেরিয়ে আসার আবেদন করলে তুমি তাদেরকে আল্লাহর হুকুমে বেরিয়ে আসার অনুমতি দিও না, বরং তাদেরকে তোমার নিজের হুকুমে বেরিয়ে আশার অনুমতি দাও। কারণ তোমার জানা নেই যে, তাদের ব্যাপারে তুমি আল্লাহর হুকুম কার্যকর করতে পারবে কি না। নু’মান বিন মুকাররিন (রাঃ) , সূ্ত্রে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আমার কাছে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।। [২৮৫৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【39】

ইমামের আনুগত্য করা

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করলো সে আল্লাহর আনুগত্য করলো। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্য হলো সে আল্লাহরই অবাধ্য হলো। যে ব্যক্তি ইমামের আনুগত্য করলো সে আমারই আনুগত্য করলো। আর যে ব্যক্তি ইমামের অবাধ্য করলো সে আমারই অবাধ্য করলো। [২৮৫৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আনাস বিন মালিক (রাঃ) রাসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, (নেতৃ-আদেশ) শ্রবণ করো এবং আনুগত্য করো, এমনকি আংগুর ফল সদৃশ (ক্ষুদ্র) মস্তিষ্কবিশিষ্ট কাফ্রী ক্রীতদাসকেও যদি তোমাদের নে্তৃপদে নিয়োগ করা হয়। [২৮৬০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উম্মুল হুসায়ন (রাঃ) আমি রাসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি; নাক কান কর্তিত কোন কাফ্রী ক্রীতদাসকেও যদি তোমাদের নেতৃপদে নিয়োগ করা হয় তবুও তোমরা তার নির্দেশ শোনো ও আনুগত্য করো, যতক্ষণ সে তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব (কুরআন) অনুযায়ী পরিচালনা করে। [২৮৬১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ যার (রাঃ) তিনি যখন (নির্বাসনে) রাবাযা নামক স্থানে পৌছালেন তখন নামাযের একামত হচ্ছিল। এক ক্রীতদাস লোকেদের নামাযে ইমামতি করছিল। (তাকে) বলা হলো, ইনি আবূ যার(রাঃ)। (এ কথায়) ক্রীতদাস পেছনে সরে আসতে উদ্যত হলে আবূ যার (রাঃ) তাকে বলেন, আমার প্রিয়তম বন্ধু মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ওসীয়াত করেছেনঃ আমি যেন (নেতৃ-আদেশ) শ্রবণ করি ও আনুগত্য করি, যদিও সে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কর্তিত কাফ্রী ক্রীতদাস হয়। [২৮৬২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【40】

আল্লাহর নাফরমানীমূ্লক কাজে আনুগত্য নাই

আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) রাসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলকামা বিন মুজাযযিয (রাঃ) কে একটি সামরিক বাহিনীর অধিনায়ক নিয়োগ করেন। আমিও তাতে শরীক ছিলাম। তিনি যখন গন্তব্যে পৌছেন অথবা পথিমধ্যে ছিলেন, তখন একদল সৈ্ন্য তার নিকট (কোন বিষয়ে) অনুমতি চাইলে তিনি তাদের অনুমতি দিলেন এবং আবদুল্লাহ বিন হুযাফা বিন কায়স আস-সাহমী (রাঃ) কে তাদের অধিনায়ক নিযুক্ত করেন। যেসব লোক আবদুল্লাহ(রাঃ) -এর সঙ্গী হয়ে জিহাদ করেছে, আমিও তাদের সাথে ছিলাম। লোকেরা পথিমধ্যে ছিলো। এ অবস্থায় একদল লোক উত্তাপ গ্রহণের জন্য অথবা অন্য কোন কাজে আগুন প্রজ্জ্বলিত করলো। আবদুল্লাহ (রাঃ) তাদের বলেন (তিনি কিছুটা রসিক প্রকৃ্তির ছিলেন) , আমার নির্দেশ শোনা ও আনুগত্য করা কি তোমাদের জন্য বাধ্যতামূ্লক নয়? তারা বললো, হাঁ। তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে যা করার নির্দেশই দিবো তোমরা কি তাই করবে? তারা বললো, হাঁ। তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে চুড়ান্ত নির্দেশ দিচ্ছি যে, তোমরা এই আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ো। কতক লোক (আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য) দাঁড়িয়ে গেলো এবং কোমর বাঁধলো। তিনি যখন দেখলেন, লোকেরা সত্যিই আগুনে ঝাঁপ দিতে প্রস্তুত হয়েছে, তখন বললেন, থামো। আমি তোমাদের সাথে ঠাট্টা করেছি। (রাবী বলেন) আমরা ফিরে এলে লোকেরা মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এ ঘটনা উল্লেখ করলো। রাসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ কেউ তোমাদেরকে আল্লাহর নাফরমানী করার নির্দেশ দিলে তোমরা তার আনুগত্য করবে না। [২৮৬৩] তাহকীক আলবানীঃ হাসান। ইবনু উমার (রাঃ) রাসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, পাপকাজ ব্যতীত যে কোন কাজে মুসলিম ব্যক্তির (নেতৃবৃন্দের) আনুগত্য করা অপরিহার্য, তা তার মনঃপূত হোক বা না হোক। অতএব পাপ কাজের নির্দেশ দেয়া হলে তা শোনাও যাবে না, আনুগত্য করাও যাবে না। [২৮৬৪] তাহকীক আলবানীঃ সানদটি সহীহ। আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অচিরেই আমার পরে এমন সব লোক তোমাদের নেতা হবে যারা সুন্নাতকে বিলুপ্ত করবে, বিদআতের অনুসরণ করবে এবং নামায নির্দিষ্ট ওয়াক্ত থেকে বিলম্বে পড়বে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূ্ল! আমি যদি তাদের (যুগ) পাই, তবে কি করবো? তিনি বলেন, হে উম্মু আবদ-এর পুত্র! তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করছো যে, তুমি কি করবে? যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যচরণ করে, তার আনুগত্য করা যাবে না। [২৮৬৫] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【41】

বায়আত (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ

উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ) তিনি বলেন দুঃসময় ও সুসময়, আনন্দ ও বিষাদে এবং নিজেদের উপরে অন্যদের অগ্রাধিকার প্রদানে (নেতৃ-আদেশ) শ্রবণ ও আনুগত্য করার জন্য রাসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট থেকে বায়আত (শপথ) গ্রহণ করেন। তিনি আমাদের থেকে এ বিষয়ে বায়আত নেন যে, (রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে) আমরা যেন যোগ্য ব্যক্তির সাথে (গদি নিয়ে) বিবাদে লিপ্ত না হই। আর যেখানেই থাকি আমরা যেন সত্য কথা বলি এবং আল্লাহর ব্যাপারে নিন্দুকের নিন্দার যেন পরোয়া না করি। [২৮৬৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আওফ বিন মালিক আল-আশজাঈ (রাঃ) আমরা সাত, আট অথবা নয় ব্যক্তি মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন তিনি বলেনঃ তোমরা কি আল্লাহর রাসূ্লের নিকট বায়আত হবে না? তৎক্ষণাৎ আমরা আমাদের হাত প্রসারিত করে দিলাম। এক ব্যক্তি বললো, ইয়া রাসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আমরা তো আপনার নিকট (ইতোপূর্বে) বায়আত হয়েছি, এখন (আবার) কিসের জন্য আপনার নিকট বায়আত হবো? তিনি বলেনঃ (তোমরা এ বিষয়ে বায়আত হবে যে) তোমরা আল্লাহর ইবাদাত করবে, তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না, পাঁচ ওয়াক্তের নামায কায়েম করবে, (নেতৃ-আদেশ) শ্রবণ করবে ও আনুগত্য করবে। (একটি কথা তিনি গোপনে বললেন) : মানুষের কাছে কিছু প্রার্থনা করবে না। রাবী বলেন, অতঃপর আমি তাদের যে কোন ব্যক্তিকে দেখেছি যে, তার চাবুক নিচে পড়ে গেলেও তিনি কাউকে তা তুলে দিতে বলতেন না। [২৮৬৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আনাস বিন মালিক(রাঃ) আমরা রাসূ্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট শ্রবণ ও আনুগত্য করার জন্য বায়আত হলাম। তিনি বলেন, “যতদূ্র তোমাদের সাধ্যে কুলায়”। [২৮৬৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ) একজন ক্রীতদাস এসে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট হিজরত করার শপথ নেয়। কিন্তু নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানতেন না যে, সে ক্রীতদাস। তার মনিব তাকে ফেরত নিতে এলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তাকে আমার নিকট বিক্রয় করো। তিনি দু’টি কৃষ্ণকায় গোলামের বিনিময়ে তাকে খরিদ করেন। এরপর থেকে তিনি কাউকে বায়আত করার পূর্বেই জিজ্ঞেস করে নিতেন যে, সে ক্রীতদাস কি না? [২৮৬৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【42】

বায়আত অবশ্যই পূর্ণ করতে হবে

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিন শ্রেনীর লোকের সাথে আল্লাহ কিয়ামতের দিন কথা বলবে না, তদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেন না, তাদের পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে পীড়াদায়ক শাস্তি। (১) যে ব্যক্তি মাঠে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি রাখে কিন্তু তা পথিকদের ব্যবহার করতে দেয় না; (২) যে ব্যক্তি আসরের নামাযের পর অপর কোন ব্যক্তির নিকট পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করে এবং আল্লাহর নামে শপথ করে বলে যে, সে তা এত এত মূল্যে খরিদ করেছে এবং ক্রেতা তার কথা বিশ্বাস করে, অথচ তার কথা সত্য নয় এবং (৩) যে ব্যক্তি পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে নেতার কাছে আনুগত্যের শপথ নেয়, নেতা তাকে কিছু পার্থিব স্বার্থ দিলে সে তার শপথ পূর্ণ করে এবং না দিলে শপথ পূর্ণ করে না। [২৮৭০] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বনী ইসরাঈলের রাজনীতি পরিচালনা করতেন তাদের নবীগণ। যখনই একজন নবী চলে যেতেন (ইনতিকাল করতেন) তখনই আরেকজন নবী নেতৃত্ব গ্রহণ করতেন। কিন্তু আমার পরে তোমাদের মধ্যে আর কেউ নবী হবে না। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাহলে কী অবস্থা হবে? তিনি বলেনঃ খলীফা হবে এবং তাদের সংখ্যা অনেক হবে। সাহাবীগণ বলেন, আমরা কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো? তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি প্রথমে খলীফা হবে তোমরা তার আনূগত্যের শপথ করো, অতঃপর তার পরবর্তী খলীফার। তোমাদের উপর তাদের যে অধিকার রয়েছে তোমরা তা আদায় করো। আর তাদের উপর (তোমাদের) যে অধিকার প্রাপ্য আছে (তা আদায় না করলে) , মহান আল্লাহ তাদের নিকট থেকে তার হিসাব নিবেন। [২৮৭১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবদুল্লাহ (বিন মাসউদ) (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্য একটি করে পতাকা স্থাপন করা হবে এবং বলা হবে, এটা অমুকের বিশ্বাসঘাতকতার পতাকা। [২৮৭২] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ মুতাওয়াতির। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সাবধান! কিয়ামাতের দিন প্রত্যেক প্রতারক ও বিশ্বাসঘাতকের জন্য তার প্রতারণার মাত্রা অনুযায়ী একটি করে পতাকা স্থাপন করা হবে। [২৮৭৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【43】

মহিলাদের বায়আত গ্রহণ

উমায়মাহ বিনতু রুকায়কাহ (রাঃ) বায়আত হওয়ার উদ্দেশ্যে আমি কতক মহিলা সমভিব্যাহারে মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হলাম। তিনি আমাদের বললেন, যতদূর তোমাদের সামর্থ্যে ও শক্তিতে কুলায়। আমি মহিলাদের সাথে মুসাফাহাহ (করমর্দন) করি না। [২৮৭৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ) ঈমানদার মহিলাগণ হিজরত করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হলে তিনি আল্লাহ তাআলার লিম্নোক্ত বাণীর নির্দেশ অনুযায়ী তাদের পরীক্ষা করতেনঃ “হে নবী! ঈমানদার মহিলাগণ যখন তোমার নিকট এসে বায়আত করে...”(সূরা মুমতাহিনাহঃ ১২)। আয়িশাহ(রাঃ) বলেন, যে কোন ঈমানদার মহিলা উপরোক্ত আয়াত অনুযায়ী স্বীকার করতো সে যেন কঠিন পরীক্ষাকে স্বীকার করে নিতো। মহিলাগন বাচনিক এসব কথা স্বীকার করে নিলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের বলতেনঃ তোমরা চলে যাও, আমি তোমাদের বায়আত গ্রহণ করেছি। (রাবী বলেন,) না, আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাত কখনো কোন মহিলার হাত স্পর্শ করতো না, তিনি শুধু কথার মাধ্যমে তাদের বায়আত করতেন। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের নিকট থেকে কেবলমাত্র সেইসব কথার স্বীকারোক্তি করাতেন যার নির্দেশ আল্লাহ তাআলা তাঁকে দান করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাত কখনও কোন মহিলার হাত স্পর্শ করতো না। তিনি তাদের শপথবাক্য পাঠ করানোর পর বলতেনঃ আমি বাচনিক তোমাদের বায়আত করলাম। [২৮৭৫] তাহকিক আলবানীঃ সহীহ।

【44】

ঘোড় দৌড়ের বর্ণনা

আবু হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি একটি ঘোড়া দু’টি ঘোড়ার সাথে (দৌড় প্রতিযোগিতায়) শরীক করলো, কিন্তু তার ঘোড়া জিতবে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত না হলে তা জুয়ার পর্যায়ভুক্ত নয়। আর যে ব্যক্তি একটি ঘোড়া দু’টি ঘোড়ার সাথে (দৌড় প্রতিযোগিতায়) শরীক করলো এবং তার ঘোড়া জিতবে বলে সে নিশ্চিত হলে তা জুয়ার পর্যায়ভুক্ত। [২৮৭৬] ইবনু ঊমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোড়াকে বিশেষ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণ দিলেন। বিশেষ পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়ার দ্বারা তিনি আল-হাফয়া’ নামক স্থান থেকে সানিয়্যাতুল বিদা' পর্যন্ত ঘোড়দৌড়ের ব্যবস্থা করলেন। আর যেসব ঘোড়া প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলো না সেগুলো দ্বারা সানিয়্যাতুল বিদা’ থেকে যুরায়ক মসজিদ পর্যন্ত (ঘোড়দৌড়ের ব্যবস্থা করেন)। [২৮৭৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দৌড় প্রতিযোগীতায় বিজয়ী হলে (মাল অথবা অর্থ গ্রহণ করা বৈধ নয়) , উট ও ঘোড়া ব্যতীত। [২৮৭৮] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【45】

শত্রুরাষ্ট্রে কুরআন নিয়ে সফর করা নিষিদ্ধ

ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআন মাজীদ নিয়ে শত্রু এলাকায় সফরে যেতে নিষেধ করেছেন, এই আশংকায় যে, তা দুশমনদের হস্তগত হয়ে যেতে পারে। [২৮৭৯] তাহকিক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআন মাজীদ সাথে নিয়ে শত্রুর এলাকায় সফরে যেতে নিষেধ করতেন এই আশংকায় যে, তা দুশমনদের হস্তগত হয়ে যেতে পারে। [২৮৮০] তাহকিক আলবানীঃ সহীহ।

【46】

যুদ্ধলব্ধ সম্পদ (গনীমত) বণ্টন

জুবায়র বিন মুতইম (রাঃ) তিনি ও উসমান বিন আফফান (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হলেন খায়বারে প্রাপ্ত যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বণ্টনের বিষয়ে তাঁর সাথে আলাপ করার জন্য। তারা বললেন, আপনি আমাদের ভ্রাতৃগোষ্ঠী বনূ হাশিম ও বনূ মুত্তালিবের মধ্যে বন্টন করেছেন, অথচ আমাদের আত্মীয় সম্পর্ক তো একই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি বনূ হাশিম ও বনূ মুত্তালিবকে একই মনে করি। [২৮৮১] তাহকিক আলবানীঃ সহীহ।