31. চিকিৎসা

【1】

আল্লাহ যে রোগই সৃষ্টি করেছেন, তার প্রতিষেধকও সৃষ্টি করেছেন

উসামাহ বিন শরীক (রাঃ) আমি উপস্থিত থাকা অবস্থায় বেদুইনরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করলো, এতে কি আমাদের গুনাহ হবে, এতে কি আমাদের গুনাহ হবে? তিনি বলেনঃ আল্লাহর বান্দাগণ! কোন কিছুতেই আল্লাহ গুনাহ রাখেননি, তবে যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ইজ্জতহানি করে তাতেই গুনাহ হবে। তারা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা যদি (রোগীর) চিকিৎসা না করি তবে কি আমাদের গুনাহ হবে? তিনি বলেনঃ আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা চিকিৎসা করো। কেননা মহান আল্লাহ বার্ধক্য ছাড়া এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার সাথে প্রতিষেধকেরও ব্যবস্থা করেননি (রোগও রেখেছেন, নিরাময়ের ব্যবস্থাও রেখেছেন)। তারা বললো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! বান্দাকে যা কিছু দেয়া হয় তার মধ্যে উত্তম জিনিস কী? তিনি বলেনঃ সচ্চরিত্র। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ খিযামাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করা হলো, যে সকল ঔষধ দ্বারা আমরা চিকিৎসা করি, যে ঝাড়ফুঁক করি এবং যে সকল প্রতিরোধমূলক বা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি, সে সম্পর্কে আপনার মতামত কী? সেগুলো কি আল্লাহ নির্ধারিত তাকদীর কিছুমাত্র রদ করতে পারে? তিনি বলেনঃ সেগুলোও তাকদীরের অন্তর্ভুক্ত। [৩৪৩৭] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। আবদুল্লাহ (বিন মাসঊদ) (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ এমন কোন রোগ পাঠাননি, যার প্রতিষেধক পাঠাননি। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবু হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ এমন কোন রোগ পাঠাননি যার প্রতিষেধকের ব্যবস্থা করেননি। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【2】

রোগী কিছুর আগ্রহ প্রকাশ করলে

ইবনু আব্বাস (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেলেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার কি কিছুর প্রতি লোভ জাগে? সে বললো, আমি গমের রুটি খেতে চাই। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যার গমের রুটি আছে সে যেন তার ভাইকে তা পাঠিয়ে দেয়। অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কোন রোগী কিছু খেতে চাইলে সে যেন তাকে তা খাওয়ায়। [৩৪৪০] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। আনাস বিন মালিক (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রোগীকে দেখতে গিয়ে তার নিকট উপস্থিত হলে বলেনঃ তুমি কি কিছু (খেতে) চাও? সে বললো, আমি পিঠা খেতে চাই। তিনি বলেনঃ আচ্ছা। তারা তার জন্য সেটা তালাশ করে জোগাড় করলো। [৩৪৪১] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।

【3】

হুমিয়্যা (রোগীর পথ্য)

উম্মুল মুনযির বিনতু কায়স আল-আনসারী (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিকট প্রবেশ করলেন। তাঁর সাথে ছিলেন আলী বিন আবু তালিব (রাঃ)। আলী (রাঃ) সদ্য রোগমুক্তির কারণে দুর্বল ছিলেন। আমাদের এখানে খেজুরের ছড়া ঝুলিয়ে রাখা ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা খেতে লাগলেন। আলীও তা খাওয়ার জন্য নিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ থামো হে আলী! তুমি তো অসুস্থতাজনিত দুর্বল। রাবী বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য রুটি ও বার্লি তৈরি করে আনলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (রাঃ) কে বললেনঃ এটা থেকে খাও। এটা তোমার জন্য অধিক উপকারী। [৩৪৪২] তাহকীক আলবানীঃ হাসান। দাদা (সুহায়ব বিন সিনান) (রাঃ), আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট উপস্থিত হলাম। তাঁর সামনে ছিল রুটি ও খেজুর। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কাছে এসো এবং খাও। আমি খেজুর থেকে খেতে শুরু করলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তুমি খেজুর খাচ্ছো, তোমার তো চোখ উঠেছে। আমি বললাম, আমি অপর পাশ দিয়ে চিবাচ্ছি। এ কথায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুচকি হাসলেন। [৩৪৪৩] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।

【4】

তোমরা রোগীকে জোরপূর্বক খাওয়াবে না

উকবাহ বিন আমির আল-জুহানী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের রোগীকে পানাহার করতে পীড়াপীড়ি করবে না। কেননা আল্লাহ তাদের পানাহার করান। [৩৪৪৪] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।

【5】

তালবীনা (রোগীর পথ্য)

আয়েশা (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পরিবারের লোকেদের জ্বর হলে, তিনি দুধ ও ময়দা সহযোগে তরল পথ্য তৈরি করার নির্দেশ দিতেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, তিনি বলতেনঃ এটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মনে শক্তি যোগায় এবং রোগীর মনের ক্লেশ ও দুঃখ দূর করে, যেমন তোমাদের কোন নারী পানি দ্বারা তার চেহারার ময়লা দূর করে। [৩৪৪৫] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। আয়েশা (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অপ্রিয় কিন্তু উপকারী বস্তুটি তোমরা অবশ্যই গ্রহণ করবে। তা হলো তালবীনা অর্থাৎ হাসা (দুধ ও ময়দা সহযোগে প্রস্তুত তরল পথ্য)। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসা-এর পাতিল চুলার উপর থাকতো, যতক্ষণ না রোগী সুস্থ হতো অথবা মারা যেত। [৩৪৪৬] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি দুর্বল।

【6】

কালিজিরা

আবু হুরায়রাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেনঃ কালিজিরায় মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের নিরাময় আছে। ‘আস-সাম’ অর্থ মৃত্যু, হাব্বাতুস সাওদা অর্থ কালিজিরা। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অবশ্যই তোমারা এই কালো দানা ব্যবহার করবে কেননা তাতে মৃত্যু ছাড়া সব রোগের নিরাময় রয়েছে। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। খালিদ বিন সা’দ (রাঃ) আমরা রওয়ানা হলাম এবং গালিব বিন আবজারও আমাদের সাথে ছিলেন। পথিমধ্যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি অসুস্থ থাকতেই আমরা মদিনায় পৌছে গেলাম। ইবনু আবু আতীক (রাঃ) তাকে দেখতে এলেন। তিনি আমাদের বললেন, তোমরা এই কালো দানাগুলো ব্যবহার করবে। তা থেকে পাঁচটি বা সাতটি দানা নিয়ে সেগুলো পিষে তেলের সাথে মিশিয়ে নাকের এপাশে ওপাশে অর্থাৎ উভয় ছিদ্রপথে ফোঁটা ফোঁটা করে দাও। কেননা আয়েশা (রাঃ) তাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছেনঃ এই কালো দানা ‘সাম’ ব্যতীত সব রোগের ঔষধ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘সাম’ কী? তিনি বলেনঃ মৃত্যু। [৩৪৪৯] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【7】

মধু

আবু হুরায়রাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন ভোরবেলা মধু চেটে চেটে খেলে সে মারাত্মক কোন বিপদে আক্রান্ত হবে না। [৩৪৫০] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মধু উপঢৌকন দেয়া হলে তিনি তা আমাদের মধ্যে অল্প অল্প চেটে খাওয়ার জন্য বণ্টন করেন। আমি আমার চেটে খাওয়ার পরিমাণ নেয়ার পর বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাকে আরো একবার দিন। তিনি বলেনঃ আচ্ছা। [৩৪৫১] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি দুর্বল। আবদুল্লাহ (বিন মাসঊদ) (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু’ আরোগ্য দানকারী বস্তুকে অবশ্যই তোমাদের গ্রহণ করা উচিতঃ মধু ও কুরআন মজীদ। [৩৪৫২] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল তবে মাওকূফ সূত্রে সহীহ।

【8】

ছত্রাক ও আজওয়া খেজুর

আবু সাঈদ ও জাবির (রাঃ) তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ছত্রাক হলো ‘মান্ন’ নামক আসমানী খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত এবং তার পানি চক্ষুরোগের নিরাময়য়। ‘আজওয়া’ হলো জান্নাতের খেজুর এবং তা উন্মাদনার প্রতিষেধক। [উপরোক্ত হাদিস মোট ৪টি সানাদের ২টি বর্ণিত হয়েছে, অপর ২টি সানাদ হলোঃ] ২/৩৪৫৩ (১). আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) [৩৪৫৩] তাহকীক আলবানীঃ (আরবি) অর্থাৎ তা “বিষের প্রতিষেধক” কথাটি দ্বারা সহীহ। সাঈদ বিন যায়দ বিন আমর বিন নুফায়ল (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ছত্রাক হলো ‘মান্ন’-এর অন্তর্ভুক্ত, যা আল্লাহ বনী ইসরাঈলের আহারের জন্য নাযিল করেছিলেন। এর নির্যাস চক্ষুরোগের প্রতিষধক। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবু হুরায়রাহ (রাঃ), আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে আলোচনারত ছিলাম। আমরা ছত্রাকের উল্লেখ করলে কতক সাহাবী বলেন, ছত্রাক জমিনের বসন্তরোগ। কথাটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কর্ণগোচর হলে তিনি বলেনঃ ছত্রাক হলো ‘মান্ন’-এর অন্তর্ভুক্ত। আজওয়া হলো জান্নাতের খেজুর এবং বিষের প্রতিষেধক। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। রাফি’ বিন আমর আল-মুযানী (রাঃ), আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ ‘আজওয়া’ খেজুর ও সাখরা বা সাহ্ওয়া (পাথর) হলো জান্নাতের উপকরণ। আবদুর রহমান (রাঃ) বলেন, আমি ঊর্ধ্বতন রাবীর মুখ থেকে সাখরা (পাথর) শব্দটি মুখস্থ করে নিয়েছি। [৩৪৫৬] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।

【9】

সানা ও সান্নুত (উদ্ভিজ্জ ও ঘি)

আবূ উবায় (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে উভয় কিবলার (বাইতুল মুকাদ্দাস ও কা’বা) দিকে নামায পড়েছেন। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ অবশ্যই তোমাদের সানা ও সান্নুত ব্যবহার করা উচিত। কারণ তাতে সাম ছাড়া সব রোগের প্রতিষেধক রয়েছে। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ‘সাম’ কি? তিনি বলেনঃ ‘মৃত্যু’। রাবী আমর (রাঃ) বলেন, বিন আবূ আবলা বলেছেন, সান্নুত হলো এক ধরনের উদ্ভিজ্জ, অন্যরা বলেন, বরং তা ঘি রাখার চামড়ার পাত্রে রক্ষিত মধু। যেমন কবি বলেনঃ “তারা পরস্পর মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধ থাকে ঘি ও সান্নুতের মত, তাই তাদের মধ্যে নাই কোন বিবাদ। তারা প্রতিবেশীকে ধোঁকার আশ্রয় নিতে বারণ করে”। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【10】

নামায রোগমুক্ত করে

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরত করলেন, আমিও হিজরত করলাম। আমি নামায পড়ার পর তাঁর পাশে বসলাম। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার দিকে দৃষ্টিপাত করে বলেনঃ তুমি উঠে দাঁড়িয়ে নামায পড়ো। কেননা সলাতের মধ্যে রোগমুক্তি আছে। [উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলোঃ] ২/৩৪৫৮. দাউদ বিন উলবাহ সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। তাতে আরো আছেঃ তিনি ফারসী শব্দযোগে (দরদ) বলেনঃ “তোমার পেটে কি ব্যথা অনুভব করছ”? আবূ আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি এ হাদীসের বরাতে তার পরিবারবর্গে বললো, “সলাতের দ্বারা সাহায্য নিয়ে সাফল্য অর্জন করো”। [৩৪৫৮]

【11】

নিকৃষ্ট ও অনিষ্টকর ঔষধ ব্যবহার করা নিষেধ

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকৃষ্ট ও অনিষ্টকর ঔষধ অর্থাৎ বিষ ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করলো, সে অনন্তকালের জন্য জাহান্নামী হয়ে এই বিষ গলাধঃকরণ করতে থাকবে। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【12】

জোলাব ব্যবহার করা

আসমা’ বিনতু উমায়স (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কিসের জোলাব নাও? আমি বললাম, শুবরুম (ছোলা সদৃশ এক প্রকার দানা) দিয়ে। তিনি বলেনঃ তা তো খুব গরম ঔষধ। অতঃপর আমি সোনামুখী গাছের পাতা দ্বারা জোলাপ নিলাম। তখন তিনি বলেনঃ কোন ঔষধ যদি মৃত্য থেকে নিরাময় দিতে পারতো তবে তা হত সোনামখী গাছ। সোনামুখী যেন মৃত্যু থেকে নিরাময় দানকারী। [৩৪৬১] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।

【13】

কন্ঠনালীর ব্যথার ঔষধ এবং কন্ঠনালীতে চাপ দেয়া নিষেধ

উম্মু কায়স বিনতু মিহসান (রাঃ) তিনি বলেন, আমি আমার এক পুত্রসহ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট প্রবেশ করলাম। তার আলজিহবার ব্যথার দরুন আমি জোরে চাপ দিয়েছিলাম। তিনি বলেনঃ কেন তোমরা তোমাদের বাচ্চাদের আলজিহবার ব্যথায় এভাবে চাপ দিয়ে কষ্ট দাও? এই চন্দন কাঠ অবশ্যই তোমাদের ব্যবহার করা উচিত। কেননা তাতে সাত ধরনের নিরাময় আছে। আলজিহবার ব্যথায় নাকের ছিদ্রপথে তা প্রবেশ করাতে হবে এবং ফুসফুসের আবরক ঝিল্লীর প্রদাহে তা মুখের ভেতর ঢেলে দিতে হবে। [উপরোক্ত হাদীসে মোট ৩টি সানাদের ২টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলোঃ] ২/৩৪৬২(১). উম্মু কায়স বিনতু মিহসান (রাঃ)> নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রেও পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【14】

পাছার বাতরোগের চিকিৎসা

আনাস বিন মালিক (রাঃ), আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ পাছার বাতরোগের চিকিৎসায় দুম্বার নিতম্ব গলিয়ে নিয়ে তা তিন ভাগ করতে হবে, অতঃপর প্রতিদিন এক ভাগ পান করতে হবে। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【15】

ক্ষত বা জখমের চিকিৎসা

সাহল বিন সা’দ আস-সাইদী (রাঃ), উহুদ যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহত হলেন। তাঁর সামনের পাটির দাঁত ভেঙ্গে গেলো এবং শিরস্ত্রাণের আংটা তাঁর মাথায় ঢুকে গেলো। আলী (রাঃ) ক্ষতস্থানে তার ঢাল দ্বারা পানি ঢালছিলেন এবং ফাতিমা (রাঃ) তার ক্ষতের রক্ত ধুয়ে দিচ্ছিলেন। ফাতিমা (রাঃ) যখন দেখলেন যে, পানিতে আরো অধিক রক্ত নির্গত হচ্ছে, তখন তিনি এক খণ্ড চাটাই নিয়ে তা পোড়ালেন, অতঃপর তার ছাই তাঁর ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলেন। এতে রক্ত নির্গমন বন্ধ হয়ে গেলো। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। সাহল বিন সা’দ আস-সাইদী (রাঃ), আমি ভালো করেই চিনি যে, উহূদ যুদ্ধের দিন কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখমন্ডল জখম করেছিলো, কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জখম ধুয়েছিল এবং তাতে ঔষুধ লাগিয়েছিল, কে ঢালে করে পানি বয়ে এনেছিলেন, কিসের দ্বারা জখমে প্রলেপ দেয়া হয়েছিল যার ফলে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছিল। অতএব যিনি ঢালে করে পানি বয়ে এনেছিলেন তিনি হলেন আলী (রাঃ), যিনি জখমের চিকিৎসা করেছিলেন তিনি হলেন ফাতিমা (রাঃ)। রক্ত বন্ধ না হলে তিনি তাঁর জন্য এক টুকরা পুরানো চাটাই পোড়ালেন এবং তার ছাই তাঁর জখমের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলেন, ফলে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে গেলো। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【16】

চিকিৎসা বিজ্ঞানে অজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও যে চিকিৎসা করে

আবদুল্লাহ বিন আমর ইবনুল আস (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তি চিকিৎসা বিদ্যা অর্জন না করেই চিকিৎসা করলে সে দায়ী হবে। [৩৪৬৬] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।

【17】

ফুসফুস আবরক ঝিল্লির প্রদাহের ঔষধ

যায়দ বিন আরকাম (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফুসফুস আবরক ঝিল্লির প্রদাহে ওয়ারস ঘাস, চন্দন ও যয়তূন তেল (পিষে একত্রে) মিশিয়ে প্রলেপ দেয়ার ব্যবস্থাপত্রের প্রশংসা করেছেন। [৩৪৬৭] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। মিহসান-কন্যা উম্মু কায়স (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই উদে হিন্দী (চন্দন কাঠ) ব্যবহার করবে কেননা তাতে সাতটি রোগের প্রতিষেধক রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হলো ফুসফুস আবরক ঝিল্লির প্রদাহ। বিন সামআনের বর্ণনায় এভাবে আছেঃ কেননা তাতে সাতটি রোগের প্রতিষেধক আছে, যার একটি হল ফুসফুস আবরক ঝিল্লির প্রদাহ। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【18】

জ্বর

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সামনে জ্বরের বিষয় উল্লিখিত হলে এক ব্যক্তি জ্বরকে গালি দেয়। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জ্বরকে গালি দিও না। কেননা তা পাপসমূহ দূর করে, যেমন আগুন লোহার ময়লা দূর করে। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে জ্বরাক্রান্ত এক রোগীকে দেখতে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রোগীকে বললেনঃ সুসংবাদ গ্রহণ করো। কেননা মহান আল্লাহ্ বলেন, এটা আমার আগুন যা আমি দুনিয়াতে আমার মুমিন বান্দার উপর চাপিয়ে দেই, যাতে আখেরাতে তাঁর প্রাপ্য আগুনের বিকল্প হয়ে যায়। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【19】

জ্বর জাহান্নামের তাপ থেকে, তা পানি দিয়ে ঠান্ডা করো

আয়িশাহ (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জ্বর হলো জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। তোমরা পানি ঢেলে ঠান্ডা করো। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জ্বরের তীব্রতা জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। তোমরা পানি ঢেলে তা ঠান্ডা করো। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। রাফি বিন খাদীজ (রাঃ), আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ জ্বর হলো জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। তোমরা পানি ঢেলে তা ঠান্ডা করো। তিনি আম্মার (রাঃ)-র এক পুত্রকে দেখতে গেলেন এবং বললেনঃ “ইকশিফিল বাসা রব্বান নাস ইলাহান নাস” (হে মানুষের রব, হে মানবের ইলাহ! আপনি ক্ষতি বিদূরিত করুন)। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আসমা বিনতু আবূ বাকর (রাঃ), জ্বরাক্রান্ত কোন নারীকে তার নিকট আনা হলে তিনি পানি চেয়ে নিয়ে তার গলদেশে (বা বুকে) ঢালতেন আর বলতেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ এটাকে পানি ঢেলে ঠান্ডা করো। তিনি আরো বলেছেনঃ এটা হলো জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) রাসূলুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ জ্বর হলো জাহান্নামের হাপরসমূহের মধ্যকার একটি হাপর। তোমরা ঠান্ডা পানি ঢেলে নিজেদের থেকে তা দূর করো। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【20】

রক্তমোক্ষণ

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা যে সকল জিনিস দ্বারা চিকিৎসা করো তার কোনটির মধ্যে উপকার থাকলে তা রক্তমোক্ষণের মধ্যে আছে। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মিরাজের রাতে আমি ফেরেশতাদের যে দলকেই অতিক্রম করেছিলাম, তাদের সকলে আমাকে বলেছেন, হে মুহাম্মাদ! আপনি অবশ্যই রক্তমোক্ষণ করবেন। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ), (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রক্তমোক্ষণকারী বান্দা কতই না উত্তম! সে খারাপ রক্ত বের করে দিয়ে (উপার্জনের মাধ্যমে) পিঠের বোঝা হালকা করে এবং চোখের ময়লা দূর করে। [৩৪৭৮] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। আনাস বিন মালিক (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মিরাজের রাতে আমি ফেরেশতাদের যে দলকেই অতিক্রম করেছি, তারা আমাকে বলেছেন, হে মুহাম্মাদ! হে মুহাম্মাদ! আপনার উম্মাতকে রক্তমোক্ষণ করানোর নির্দেশ দিন। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্ত্রী উম্মু সালামা (রাঃ) তার নিকট রক্তমোক্ষণ করানোর অনুমতি চাইলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ তাইবাকে তার রক্তমোক্ষণ করার নির্দেশ দিলেন। রাবী বলেন, আমার মনে হয়, আবূ তাইবা তার দুধ ভাই ছিলেন কিংবা অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【21】

দেহে রক্তমোক্ষণের স্থান

আবদুল্লাহ বিন বুহায়নাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘লাহী জামাল’ নামক স্থানে ইহরাম অবস্থায় তাঁর মাথার মধ্যখান বরাবর রক্তমোক্ষণ করিয়েছেন। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আলী (রাঃ) জিবরাঈল (আলায়হিস সালাম) ঘাড়ের দু’পাশের শিরায় এবং ঘাড়ের কাছাকাছি পিঠের ফোলা অংশে রক্তমোক্ষণ করানোর পরামর্শ নিয়ে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসেন। [৩৪৮২] তাহকীক আলবানীঃ খুবই দুর্বল। আনাস (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’ পাশের শিরায় এবং ঘাড়ের কাছাকাছি পিঠের ফোলা অংশে রক্তমোক্ষণ করান।[৩৪৮৩] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ কাবশাহ আল-আনমারী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাথার মাঝখানে এবং দু’ কাঁধের মাঝ বরাবর রক্তমোক্ষণ করাতেন এবং বলতেনঃ যে ব্যক্তি নিজ দেহের এ অংশ থেকে রক্তমোক্ষণ করাবে, সে তার কোন রোগের চিকিৎসা না করালেও তার কোন ক্ষতি হবে না। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ঘোড়া থেকে একটি খেজুর কাণ্ডের উপর ছিটকে গেলে তাঁর পা মচকে যায়। ওয়াকী (রাঃ) বলেন, অর্থাৎ ব্যথার কারণে মচকে যাওয়া স্থানে তিনি রক্তমোক্ষণ করান। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【22】

কোন দিন রক্তমোক্ষণ করানো উচিত?

আনাস বিন মালিক (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তি রক্তমোক্ষণ করাতে চাইলে যেন মাসের সতের, উনিশ বা একুশ তারিখ বেছে নেয়। তোমাদের কারো যেন উচ্চ রক্তচাপ না হয়। কারণ তাতে জীবননাশের আশংকা আছে। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ), হে নাফে! আমার রক্তে উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে (রক্তচাপ বেড়েছে)। অতএব আমার জন্য একজন রক্তমোক্ষণকারী খুঁজে আনো, আর সম্ভব হলে সদাশয় কাউকে আনবে। বৃদ্ধ বা বালককে আনবে না। কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ বাসী মুখে রক্তমোক্ষণ করালে তাতে নিরাময় ও বরকত লাভ হয় এবং তাতে জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। অতএব আল্লাহর বরকত লাভে ধন্য হতে তোমরা বৃহস্পতিবার রক্তমোক্ষণ করাও, কিন্তু বুধ, শুক্র, শনি ও রবিবারকে রক্তমোক্ষণ করানোর জন্য বেছে নেয়া থেকে বিরত থাকো। সোম ও মঙ্গলবারে রক্তমোক্ষণ করাও, কেননা এই দিনই আল্লাহ আইউব (আলাইহিস সালাম)-কে রোগমুক্তি দান করেন এবং বুধবার তাকে রোগাক্রান্ত করেন। আর কুষ্ঠরোগ ও ধবল বুধবার দিনে বা রাতেই শুরু হয়। [৩৪৮৭] তাহকীক আলবানীঃ হাসান। ইবনু উমার (রাঃ), হে নাফে! আমার রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। অতএব আমার জন্য তুমি এক যুবক রক্তমোক্ষণকারীকে নিয়ে এসো, বৃদ্ধকেও নয় এবং বালককেও নয়। রাবী বলেন, বিন উমার (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ বাসি মুখে রক্তমোক্ষণ করানো উত্তম, তা জ্ঞান বৃদ্ধি করে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে এবং হাফেজের মুখস্থ শক্তি বৃদ্ধি করে। কেউ রক্তমোক্ষণ করাতে চাইলে যেন আল্লাহর নামে বৃহস্পতিবারে তা করায়। তোমরা শুক্র, শনি ও রবিবার রক্তমোক্ষণ করানো পরিহার করো এবং সোমবার ও মঙ্গলবার রক্তমোক্ষণ করাও, কিন্তু বুধবার তা করাবে না। কারণ এইদিনই আইউব (আলাইহিস সালাম) বিপদে পতিত হন। আর কুষ্ঠ রোগ ও শ্বেতরোগ বুধবার দিনে বা রাতেই শুরু হয়। [৩৪৮৮] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।

【23】

লোহা দ্বারা দগ্ধ করা

মুগীরাহ (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি তপ্ত লোহা দ্বারা (দেহে) দাগ নেয় বা ঝাড়ফুঁক গ্রহণ করায় সে তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা) থেকে বিচ্যুত হলো (আ. তি,না)। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইমরান ইবনুল হুসায়ন (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তপ্ত লোহা দ্বারা দাগ দিতে নিষেধ করেছেন। রাবী বলেন, আমি উত্তপ্ত লোহার দাগ লাগালে ব্যর্থতা ও বিফলতা ছাড়া আর কিছুই পাইনি। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ), তিন জিনিসে রোগমুক্তি নিহিতঃ মধুপানে, রক্তমোক্ষণে এবং তপ্ত লোহার দাগ গ্রহণে। তবে আমার উম্মাতকে আমি তপ্ত লোহার দাগ গ্রহণ করতে বারণ করেছি। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হাদীসটি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেন। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【24】

যে ব্যক্তি উত্তপ্ত লোহা দ্বারা দহন করে

ইয়াহইয়া বিন আসআদ (রাঃ) তার কণ্ঠনালীতে ‘যাব্‌হ’ নামীয় ব্যথা হলো। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আবূ উমামার চিকিৎসার ব্যাপারে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। অতঃপর তিনি নিজ হাতে তাকে তপ্ত লোহার দ্বারা সেঁক দিলেন। তিনি ইন্তিকাল করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তার মৃত্যুতে ইহূদীদের খারাপ অপবাদ হস্তগত হলো। তারা বলবে, সে তার সাথীর মৃত্যু ঠেকাতে পারলো না; অথচ আমি নিজের জন্য অথবা কারো জন্য কিছু করার ক্ষমতা রাখি না। [৩৪৯২] তাহকীক আলবানীঃ (আরবি) ব্যতীত হাসান জাবির (রাঃ), উবাই বিন কাব (রাঃ) খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট চিকিৎসক পাঠালেন। সে তার (হাতের) শিরায় তপ্ত লোহার সেঁক দিলো। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাদ বিন মুআজ (রাঃ) এর হাতের শিরায় দু’বার গরম লোহার সেঁক দিলেন। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【25】

ইসমিদ পাথরের সুরমা ব্যবহার

আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই ইসমিদ সুরমা ব্যবহার করবে। কেননা তা চোখের ময়লা দূর করে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং চোখের পাতায় লোম গজায়। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। জাবির (রাঃ) আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা ঘুমানোর সময় অবশ্যই ইসমিদ সুরমা ব্যবহার করবে। কেননা তা দৃষ্টিশক্তিকে প্রখর করে এবং চোখের পাতায় লোম গজায়। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের জন্য উত্তম সুরমা হচ্ছে ইসমিদ। তা চোখের জ্যোতি বাড়ায় এবং চোখের পাতায় লোম গজায়। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【26】

যে ব্যক্তি বেজোড় সংখ্যকবার সুরমা লাগায় ।

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি সুরমা লাগায়, সে যেন বেজোড় সংখ্যকবার লাগায়। যে তা করলো, সে ভালো করলো এবং যে তা করলো না, তার দোষ হবে না। [৩৪৯৮] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। ইবনু আব্বাস (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একটি সুরমাদানি ছিল। তিনি তা থেকে প্রতি চোখে তিনবার করে সুরমা লাগাতেন। [৩৪৯৯] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।

【27】

মাদক দ্রব্য ঔষধ হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ ।

তারিক বিন সুওয়াদ আল-হাদরামী (রাঃ), আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের এলাকায় প্রচুর আঙ্গুর হয়, আমরা তার রস নিংড়িয়ে পান করি। তিনি বলেনঃ না (পান করো না)। আমি পুনরায় বললাম, আমরা রোগীর ঔষধরুপে তা ব্যবহার করি। তিনি বলেনঃ তা ঔষধ নয়, বরং রোগ। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【28】

কুরআন মজীদ দ্বারা আরোগ্য লাভ করা

আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উত্তম আরোগ্যকারী হল কুরআন মজীদ। [৩৫০১] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।

【29】

মেহেদী

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুক্তদাসী সালমা উম্মু রাফি’ (রা) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো আঘাত পেলে বা তাঁর কাটা বিদ্ধ হলে তিনি আহত স্থানে মেহেদী লাগাতেন। [৩৫০২] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।

【30】

উটের পেশাব

আনাস (রাঃ) উরায়নাহ গোত্রের কতক লোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসে। কিন্তু মদীনার আবহাওয়া তাদের অনুকূল হলো না। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যদি তোমরা আমাদের উটের পালে চলে যেতে এবং সেগুলোর দুধ ও পেশাব পান করতে! তারা তাই করলো।

【31】

পাত্রে মাছি পড়লে

আবূ সাঈদ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মাছির দু’টি ডানার একটিতে বিষ এবং অন্যটিতে আরোগ্য আছে। অতএব খাদ্যদ্রব্যে মাছি পড়লে সেটিকে তাতে ডুবিয়ে দাও। কেননা সেটি বিষের ডানাকে আরোগ্যের ডানার আগে খাদ্যে লাগায়। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের পানীয়তে মাছি পড়লে সেটাকে তাতে ডুবিয়ে দাও, অতঃপর সেটিকে তুলে ফেলে দাও। কেননা তার একটি ডানায় রোগ এবং অন্যটিতে আরোগ্য রয়েছে। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【32】

বদনজর

আমির বিন রাবীআহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ বদনজর সত্য। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বদনজর সত্য। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রা), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করো। কেননা বদনজর সত্য বা বাস্তব ব্যাপার। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ উমামাহ বিন হুনায়ফ (রাঃ), আমির বিন রাবীআহ (রাঃ) সাহল বিন হুনায়ফ (রাঃ) এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তখন গোসল করছিলেন। আমির (রাঃ) বলেন, আমি এমন খুবসুরত সুপুরুষ দেখিনি, এমনকি পর্দানশীন নারীকেও এরুপ সুন্দর দেখিনি, যেমন আজ দেখলাম। অতঃপর কিছুক্ষণের মধ্যেই সাহল (রাঃ) বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন। তাকে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট নিয়ে যাওয়া হল এবং তাঁকে বলা হলো, ধরাশায়ী সাহলকে রক্ষা করুন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কাকে অভিযুক্ত করছো? তারা বললো, আমির বিন রাবীআহ কে। তিনি বলেন, তোমাদের কেও বদনজর লাগিয়ে তার ভাইকে কেন হত্যা করতে চায়? তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের মনোমুগ্ধকর কিছু দেখলে যেন তার জন্য বরকতের দুআ’ করে। অতঃপর তিনি পানি নিয়ে ডাকলেন, অতঃপর আমিরকে উযু করতে নির্দেশ দিলেন। তিনি তার মুখমণ্ডল, দু’হাত কনুই পর্যন্ত, দু’পা গোছা পর্যন্ত ও লজ্জাস্থান ধৌত করলেন। তিনি আমিরকে পাত্রের (অবশিষ্ট) পানি সকলের উপর ঢেলে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি সাহলের পেছন দিক থেকে পানি ঢেলে দেয়ার জন্য আমিরকে নির্দেশ দেন। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【33】

যে ব্যক্তি বদনজরের ঝাড়ফুঁক করে

উবায়দ বিন রিফায়াহ আয-যুরাকী (রাঃ) আসমা’ (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! জাফরের সন্তানদের বদনজর লেগেছে, আপনি তাদের ঝাড়ফুঁক করুন। তিনি বলেনঃ আচ্ছা। যদি কোন কিছু তাকদীরকে পরাভূত করতে পারতো, তবে বদনজরই তাকে পরাভূত করতো। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ সাঈদ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিন ও মানুষের বদনজর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। অতঃপর সূরা ফালাক ও সূরা নাস নাযিল হলে তিনি এ সূরা দু’টি গ্রহণ করেন এবং অন্যগুলো ত্যাগ করেন (তি,না)। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বদনজর ও বিষাক্ত প্রাণীর দংশন ছাড়া অন্য কিছুতে ঝাড়ফুঁক বৈধ নয়। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【34】

জায়েয ঝাড়ফুঁক সম্পর্কে ।

বুরায়দাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, বদনজর ও বিষাক্ত প্রাণীর দংশন ছাড়া অন্য কিছুতে ঝাড়ফুঁক বৈধ নয়। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আনাস এর কন্যা উম্মু বানী হাযম খালিদাহ আস-সাইদিয়্যাহ (রাঃ) তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আসেন এবং ঝাড়ফুঁক করার মন্ত্র পেশ করেন। তিনি তাকে তা দ্বারা ঝাড়ফুঁক করার অনুমতি দেন। [৩৫১৪] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। জাবির (রাঃ), আনসার সম্প্রদায়ভুক্ত আমর বিন হাযম নামক পরিবার বিষাক্ত প্রাণীর দংশনে ঝাড়ফুঁক করতো। অথচ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঝাড়ফুঁক করতে নিষেধ করেছেন। তারা তাঁর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো ঝাড়ফুঁক করতে নিষেধ করেছেন, অথচ আমরা বিষাক্ত প্রাণীর দংশনে ঝাড়ফুঁক করি। তিনি তাদের বলেনঃ সেগুলো আমার সামনে পেশ করো। তারা তা তাঁর নিকট পেশ করেন। তিনি বলেনঃ এগুলো দোষের কিছু নেই। এগুলো নির্ভরযোগ্য। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আনাস (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিষাক্ত প্রাণীর দংশন, বদনজর ও ব্রণ-ফুসকুড়ি (pimple) সারাতে ঝাড়ফুঁক করার অনুমতি দিয়েছেন। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【35】

সাপ, বিছা ইত্যাদির দংশনে ঝাড়ফুঁক

আয়িশাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাপ ও বিছার দংশনে ঝাড়ফুঁক করার অনুমতি দিয়েছেন। তাহকীক আলবানীঃ সনদ সহীহ আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), একটি বিছা এক ব্যক্তিকে দংশন করলে ঐ রাতে সে আর ঘুমাতে পারেনি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলা হলো, অমুক ব্যক্তিকে বিছায় দংশন করায় সে গত রাতে ঘুমাতে পারেনি। তিনি বলেনঃ আহা, সে যদি সন্ধ্যায় উপনিত হয়ে বলতো, “আউযূ বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক” (আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালামের ওয়াসিলায় তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই), তাহলে বিছার দংশন সকাল পর্যন্ত তার কোন ক্ষতি করতে পারতো না। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আমর বিন হাযম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে আমি সর্পদংশনের ঝাড়ফুঁকের দুআ’ পেশ করলে তিনি আমাকে এর অনুমতি দেন। [৩৫১৯] তাহকীক আলবানীঃ সানাদটি দুর্বল।

【36】

মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে দুআ’ পড়ে ঝাড়ফুঁক করেছেন এবং তাঁকে যে দুআ’ পড়ে ঝাড়ফুঁক করা হয়েছে

আয়িশাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন রোগীর নিকট এলে তিনি এই দুআ’ করতেনঃ “আযহিবিল বাসা রব্বানা নাস ওয়াশফে আনতাশ শাফী লা শিফাউকা শিফাআন লা ইউগাদিরু সাকামান” (হে মানুষের প্রভু! ব্যাধি ও কষ্ট দূর করে দাও, রোগমুক্তি দান করো তুমিই আরোগ্য দানকারী, তোমার আরোগ্য দানই আসল, যা কোন রোগকেই ছাড়ে না)। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ আয়িশাহ (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর আংগুলে লালা লাগিয়ে রোগীর জন্য এই বলে দুআ’ করতেনঃ “বিসমিল্লাহ তুরবাতু আরদিনা বিরীকাতি বা’দিনা লিয়ুশফা সাকীমুনা বিইযনি রব্বিনা” (আল্লাহর নামে আমাদের এ যমীনের মাটি আমাদের কারো লালার সাথে মিশিয়ে দিলাম, যেন তাতে আমাদের প্রভুর নির্দেশে আমাদের রোগী আরোগ্য লাভ করে) তাহকীক আলবানীঃ সহীহ উসমান বিন আবুল আস আস-সাকাফী (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট মারাত্মক ব্যথা নিয়ে উপস্থিত হলাম, যা আমাকে অকেজো প্রায় করেছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেনঃ তুমি তোমার বাম হাত ব্যথার স্থানে রেখে সাতবার বলোঃ “আউযু বি-ইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহী মিন শাররি মা আজিদু ওয়া উহাযিরু” (আল্লাহর নামে আমি আল্লাহর অসীম সম্মান ও তাঁর বিশাল ক্ষমতার ওয়াসিলায় আমার অনুভূত এই ব্যথার ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি)। [৩৫২২] আবূ সাঈদ (রাঃ), জিবরাঈল (আঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলেনঃ হে মুহাম্মাদ! আপনি কি রোগাক্রান্ত হয়েছেন? তিনি বলেনঃ হাঁ। জিবরাঈল (আঃ) বলেন, “বিসমিল্লাহি আরকীকা মিন কুল্লি শায়ইন ইউযিকা মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আয়নিন আও হাসিদিন, আল্লাহু ইয়াশফীকা বিসমিল্লাহি আরকীকা” (আমি আল্লাহর নামে এমন প্রতিটি জিনিস থেকে আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি যা আপনাকে কষ্ট দেয়, প্রতিটি সৃষ্টিজীবের এবং প্রতিটি চোখের এবং প্রতিটি হিংসুকের অনিষ্ট থেকে আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন। আমি আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি)। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দেখতে এসে বলেনঃ জিবরাঈল (আঃ) ঝাড়ফুঁকের যে দুআ’ সহ আমার নিকট এসেছিলেন, সেই দুআ’ দিয়ে আমি কি তোমাকে ঝাড়ফুঁক করবো না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক! হাঁ ঝাড়ফুঁক করুন। তিনি তিনবার বললেনঃ “বিসমিল্লাহি আরকীকা ওয়াল্লাহু ইয়াশফীকা মিন কুল্লি দাইন ফীকা মিন শাররিন নাফ্‌ফাছাত ফিল উকাদ ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ” (আল্লাহর নামে আমি তোমাকে ঝাড়ছি, আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করুন, তোমার ভেতরের সমস্ত রোগ থেকে, সমস্ত নারীর অনিষ্ট থেকে যারা গ্রন্থিতে ফুৎকার দেয় এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে)। [৩৫২৪] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। ইবনু আব্বাস (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান ও হুসাইন (রাঃ) কে ঝাড়ফুঁক করে বলতেনঃ “আউযু বিকালিমা তিল্লাহি তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়তানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আয়নিল লাম্মাতিন” (আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কল্যাণময় বাক্যাবলির ওয়াসীলায় প্রতিটি শয়তান, প্রাণনাশী বিষাক্ত জীব ও অনিষ্টকারী বদনজর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি)। তিনি বলতেনঃ আমাদের পিতা ইসমাইল (আঃ) ও ইয়া’কূব (আঃ)-কে এই দুআ’ পড়ে ঝাড়ফুঁক করতেন অথবা রাবী বলেছেন, ইসমাইল (আঃ) ও ইয়া’কূব (আঃ)-কে ঝাড়ফুঁক করতেন। শেষোক্ত বর্ণনা ওয়াকী’ (রহঃ)-এর। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【37】

যে দুআ’ পড়ে জ্বরের ঝাড়ফুঁক করা হয়

ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদেরকে জ্বর ও যাবতীয় ব্যথার ঝাড়ফুঁকের জন্য এ দুআ’ শিক্ষা দিতেনঃ “বিসমিল্লাহিল কাবীর আউযু বিল্লাহিল আযীম মিন শাররি ইরকিন না’আরিন ওয়া মিন শাররি হাররিন নার” (মহামহিম আল্লাহর নামে মহান আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি, রক্তচাপে ফুলে উঠা শিরার অনিষ্ট থেকে এবং আগুনের তাপের অনিষ্ট থেকে)। আবূ আমির (রাঃ) বলেন, সবার বিপরীতে আমি ‘ইয়াআর’ শব্দটি বলে থাকি। উপরোক্ত হাদীসে মোট ২ টি সানাদের ১ টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলোঃ ২/৩৫২৬(১). ইবনু আব্বাস (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তার শব্দ হলোঃ “মিন শাররি ইরকিন ইয়া’আর”। [৩৫২৬] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। উবাদাহ ইবনুস সামিত (রাঃ), জিবরাঈল (আঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জ্বরাক্রান্ত অবস্থায় তাঁর নিকট আসেন। তিনি তাকে ঝাড়ফুঁক করে বলেনঃ “বিসমিল্লাহি আরকীকা মিন কুল্লি শায়ইন ইয়ুযীকা মিন হাসাদি হাসিদিন ওয়া মিন কুল্লি আয়নিন আল্লাহু ইয়াশফীকা” (আমি আল্লাহর নামে আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি এমন প্রতিটি জিনিস থেকে যা আপনাকে কষ্ট দেয়, হিংসুকের হিংসা থেকে এবং সকল বদনযর থেকে, আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন)। [৩৫২৭] তাহকীক আলবানীঃ হাসান।

【38】

তাবিজ-তুমার ও ঝাড়ফুঁক

আয়িশাহ (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছু পড়ে ঝাড়ফুঁক করতেন। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আয়িশাহ (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনও অসুস্থ বোধ করলে আরোগ্য লাভের জন্য সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে নিজ দেহে ফুঁ দিতেন। তাঁর অসুস্থতা বেড়ে গেলে আমি তা তাঁর উপর পাঠ করতাম এবং তাঁর হাত তাঁর দেহে বরকতের আশায় মলে দিতাম। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【39】

তাবিজ লটকানো

যায়নাব (রাঃ), এক বৃদ্ধা আমাদের এখানে আসতো এবং সে চর্মপ্রদাহের ঝাড়ফুঁক করতো। আমাদের একটি লম্বা পা-বিশিষ্ট খাট ছিল। আব্দুল্লাহ (রাঃ) ঘরে প্রবেশের সময় সশব্দে কাশি দিতেন। একদিন তিনি আমার নিকট প্রবেশ করলেন। সে তার গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে একটু আড়াল হলো। তিনি এসে আমার পাশে বসলেন এবং আমাকে স্পর্শ করলে এক গাছি সুতার স্পর্শ পেলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি? আমি বললাম, চর্মপ্রদাহের জন্য সূতা পড়া বেঁধেছি। তিনি সেটা আমার গলা থেকে টেনে ছিঁড়ে ফেললেন এবং তা ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললেন, আবদুল্লাহর পরিবার শিরকমুক্ত হলো। আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছিঃ “মন্ত্র, রক্ষাকবচ, গিটযুক্ত মন্ত্রপূত সূতা হলো শিরকের অন্তর্ভুক্ত”। আমি বললাম, আমি একদিন বাইরে যাচ্ছিলাম, তখন অমুক লোক আমাকে দেখে ফেললো। আমার যে চোখের দৃষ্টি তার উপর পড়লো তা দিয়ে পানি ঝরতে লাগলো। আমি তার মন্ত্র পড়ে ফুঁ দিলে তা থেকে পানি ঝরা বন্ধ হল এবং মন্ত্র পড়া বন্ধ করলেই আবার পানি পড়তে লাগলো। তিনি বলেন, এটা শয়তানের কাজ। তুমি শয়তানের আনুগত্য করলে সে তোমাকে রেহাই দেয় এবং তার আনুগত্য না করলে সে তোমার চোখে তার আঙ্গুলের খোঁচা মারে। কিন্তু তুমি যদি তাই করতে, যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) করেছিলেন, তবে তা তোমার জন্য উপকারী হতো এবং আরোগ্য লাভেও অধিক সহায়ক হতো। তুমি নিম্নোক্ত দুআ’ পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে তা তোমার চোখে ছিটিয়ে দাওঃ “আযহিবিল বা’স রব্বান নাস, ইশফি আনতাশ শাফী, লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা শিফাআন লা ইউগাদিরু সাকামান” (হে মানুষের প্রভু! কষ্ট দুর করে দাও, আরোগ্য দান করো, তুমিই আরোগ্য দানকারী, তোমার আরোগ্যদান ছাড়া আরোগ্য লাভ করা যায় না, এমনভাবে আরোগ্য দান করো যা কোন রোগকে ছাড়ে না)। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইমরান ইবনুল হুসায়ন (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির হাতে পিতলের বালা পরিহিত দেখে জিজ্ঞেস করেনঃ এই বালাটা কী? সে বললো, এটা অবসন্নতাজনিত রোগের জন্য ধারণ করেছি। তিনি বলেনঃ এটা খুলে ফেলো। অন্যথায় তা তোমার অবসন্নতা বৃদ্ধিই করবে। [৩৫৩১] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।

【40】

কোন কিছুর কুপ্রভাব (আছর)

উম্মু জুনদুব (রাঃ), আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কোরবানীর দিন উপত্যকার মাঝখানে দাঁড়িয়ে জামরাতুল আকাবায় কংকর নিক্ষেপ করতে দেখেছি। তারপর তিনি ফিরে এলেন। তখন খাছআম গোত্রের এক মহিলা তাঁর পিছনে পিছনে আসলো এবং তার কোলে ছিলো তার এক শিশু সন্তান। সে কোন অসুখের কারণে কথা বলতে পারতোনা। মহিলা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! এ আমার পুত্র, আমার পরিবারের একমাত্র অধস্তন বংশধর। কিন্তু সে একটি বিপদে লিপ্ত, যার ফলে সে কথা বলতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা আমার নিকট একটু পানি আনো। পানি আনা হলে তিনি তাঁর হস্তদ্বয় ধৌত করলেন এবং কুলি করলেন। অতঃপর অবশিষ্ট পানি ঐ মহিলাকে দিয়ে বলেনঃ এই পানি তাকে পান করাও, তার গায়ে ছিটাও এবং আল্লাহর নিকট তার জন্য আরোগ্য প্রার্থনা করো। উম্মু জুনদুব (রাঃ) বলেন, আমি মহিলার সাথে দেখা করে বললাম, আমাকে যদি এ পানির কিছুটা দান করতেন। সে বললো, এটা তো এই বিপদগ্রস্তের জন্য নিয়েছি। তিনি বলেন, বছর শেষে সেই মহিলার সাথে সাক্ষাত করে আমি তাকে শিশুটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। সে বললো, সে সুস্থ হয়েছে এবং তার মেধাশক্তি সাধারণ মানুষের মেধাশক্তির তুলনায় অধিক বেড়েছে। [৩৫৩২] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।

【41】

কুরআন মজীদ দ্বারা আরোগ্য প্রার্থনা

আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ উত্তম ঔষধ হলো কুরআন মজীদ। [৩৫৩৩] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।

【42】

দু’ মুখো সাপ নিধন

আয়িশাহ (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’মুখো সাপ নিধনের নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা এই নিকৃষ্ট সাপ দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে এবং গর্ভপাত ঘটায়। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা সাপ মেরে ফেলো, বিশেষত দু’মুখো সাপ এবং লেজবিহীন সাপ! কেননা এ দু’টি সাপ দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে এবং গর্ভপাত ঘটায়। তাহকীক আলবানীঃ ১মঃ হাসান সহীহ, ২য়ঃ সহীহ।

【43】

যে ব্যক্তি ফাল পছন্দ করে এবং অশুভ লক্ষন অপছন্দ করে

আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), (অদৃশ্য থেকে শ্রুত) উত্তম কথা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পছন্দনীয় ছিল কিন্তু তিনি (কিছুকে) কুলক্ষণ মনে করা অপছন্দ করতেন। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ আনাস (রাঃ), নাবি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রোগ সংক্রমন ও কুলক্ষণ বলে কিছু নেই। তবে আমি (অদৃশ্য থেকে শ্রুত ) উত্তম কথা পছন্দ করি। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবদুল্লাহ (বিন মাসঊদ) (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অশুভ লক্ষণ (বিশ্বাস করা) শেরেকী কাজ। রাবী বলেন, আমাদের মধ্যে অশুভ লক্ষণের ধারনা আসে, তবে আল্লাহর উপর ভরসার দ্বারা তা দূরীভুত হয়। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু আব্বাস (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রোগ সংক্রমণ, কুলক্ষণ ও হামাহ বলে কিছু নেই এবং সফর মাসও অশুভ নয়। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ) তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রোগ সংক্রমণ, কুলক্ষণ ও হামাহ বলে কিছু নেই। এক ব্যক্তি তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! উটের চর্মরোগ হয়, পরে অন্যান্য উট তার সংস্পর্শে এসে চর্মরোগাক্রান্ত হয়। তিনি বলেনঃ এটা হলো তাকদীর। আচ্ছা, প্রথমটি কে চর্মরোগাক্রান্ত করেছে? [৩৫৪০] তাহকীক আলবানীঃ (আরবি) অর্থাৎ এটাই তাকদীর ব্যতীত সহীহ। আবূ হুরায়রাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অসুস্থকে সুস্থদের সংস্পর্শে নেয়া উচিত নয়। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【44】

কুষ্ঠরোগ

জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুষ্ঠ রোগগ্রস্ত এক ব্যক্তির হাত ধরে তা নিজের আহারের পাত্রের মধ্যে রেখে বলেনঃ আল্লাহর উপর আস্থা রেখে এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে খাও। [৩৫৪২] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল। ইবনু আব্বাস (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কুষ্ঠ রোগীদের দিকে অপলক নেত্রে তাকিয়ে থেকো না। [৩৫৪৩] তাহকীক আলবানীঃ হাসান সহীহ। শারীদ বিন সুওয়ায়দ (রাঃ), সাকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দলে এক কুষ্ঠরোগী ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট লোক পাঠিয়ে বলেনঃ তুমি ফিরে যাও, আমি তোমার বাইয়াত করেছি। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【45】

যাদুমন্ত্র

আয়িশাহ (রাঃ), যুরাইক গোত্রের লাবীদ বিন আসাম নামক জনৈক ইহূদী নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর যাদু করে। শেষে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মনে হতো যে, কোন কাজ তিনি করেছেন অথচ তা তিনি করেননি। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, শেষে একদিন বা এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার ডাকার পর বললেনঃ হে আয়িশাহ! তুমি কি অবগত আছো, আমি যে বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম, আল্লাহ তা আমাকে জানিয়ে দিয়েছেন? আমার নিকট দু’জন লো্ক (ফেরেশতা) এসে তাদের একজন আমার শিয়রের কাছে এবং অপর জন আমার পায়ের কাছে বসেন। আমার মাথার কাছের জন আমার পায়ের কাছের জনকে অথবা আমার পায়ের কাছের জন আমার শিয়রের কাছের জনকে বললেন, লো্কটার কী অসুখ হয়েছে? সাথী বলেন, তাঁকে যাদু করা হয়েছে। তিনি বলেন, কে তাকে যাদুগ্রস্ত করেছে? অপরজন বলেন, লাবীদ ইবনুল আসাম। তিনি বলেন, কোন জিনিসের মধ্যে? অপরজন বলেন, চিরুনীর ভগ্নাংশ ও চিরুনীর সাথে লেগে থাকা চুল নর খেজুর গাছের সরু খোলসে ঢুকিয়ে। তিনি বলেন, তা কোথায় আছে? অপরজন বলেন, যী-আরওয়ান কূপের মধ্যে। আয়িশাহ(রাঃ) বলেন, তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর একদল সাহাবীসহ সেখানে গেলেন (এবং সেগুলো কূপ থেকে বের করা হলো)। অতঃপর তিনি ফিরে এসে বলেনঃ হে আয়িশাহ, আল্লাহর শপথ! ঐ কূপের পানি মেহেদী পেষা পানির মত হয়ে গেছে এবং তথাকার খেজুর গাছগুলো যেন শয়তানের মাথার মত। আয়িশাহ(রাঃ) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি সেগুলো কি ভস্মীভূত করেন নি? তিনি বলেনঃ না। আল্লাহ তো আমাকে আরোগ্য দান করেছেন। তাই আমি মানুষের মাঝে এর অপচর্চা ছড়িয়ে দেয়া পছন্দ করি না। অতঃপর তিনি কূপটি ভরাট করার নির্দেশ দিলে তা ভরাট করে দেয়া হয়। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। ইবনু উমার (রাঃ), উম্মু সালামা (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যে বিষমিশ্রিত বকরীর গোশত আহার করেছিলেন তার ফলে প্রতি বছরই তো আপনি ব্যথা অনুভব করেন। তিনি বলেনঃ তাতে আমার যা ক্ষতি হয়েছে, তা আদম (আঃ) মাটির দলার মধ্যে থাকা অবস্থায়ই আমার তাকদীরে লেখা ছিল। [৩৫৪৬] তাহকীক আলবানীঃ দূর্বল।

【46】

ভীতিকর পরিস্থিতি ও নিদ্রাহীনতা এবং তা থেকে মুক্ত হওয়ার দুআ’

খাওলাহ বিনতু হাকিম (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ কোন গন্তব্যে পৌঁছে যদি এই দুআ’ পড়েঃ “আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক” (আমি আল্লাহ পাকের কল্যাণকর বাক্যাবলীর ওয়াসীলায় তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি), তাহলে সে স্থান থেকে বিদায় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কোন কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উসমান বিন আবুল আস (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তায়েফের প্রশাসক নিযুক্ত করলেন। (তথায়) সলাতের মধ্যে আমার সামনে কিছু বাধা আসতে লাগলো। ফলে আমার মনে থাকতো না যে, আমি কত রাক‘আত নামায পড়েছি। আমার এই অবস্থা লক্ষ্য করে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাত করার জন্য রওয়ানা হলাম। তিনি (আমাকে দেখে) বলেনঃ আবুল আসের পুত্র নাকি? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ তুমি কেন এসেছ? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সলাতের মধ্যে আমার সামনে কিছু বাধা আসে। ফলে আমি বলতে পারি না যে আমি কত রাক‘আত পড়েছি। ত্তিনি বলেনঃ এটা শয়তান। আমার নিকট এসো। আমি তাঁর নিকটে হাঁটু গেড়ে বসলাম। রাবী বলেন, তিনি নিজ হাতে আমার বুকে মৃদু আঘাত করলেন এবং আমার মুখে লালা দিয়ে তিনবার বলেনঃ আল্লাহর শত্রু! ভেগে যা। অতঃপর তিনি বলেনঃ যাও নিজের কাজে যোগ দাও। উসমান (রাঃ) বলেন, আমার জীবনের শপথ! এরপর থেকে শয়তান আমার অন্তরে আর তালগোল পাকাতে পারেনি। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ আবূ লায়লা (রাঃ) তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসে থাকা অবস্থায় এক বেদুইন তাঁর নিকটে এসে বললো, আমার এক অসুস্থ ভাই আছে। তিনি বলেনঃ তোমার ভাই কী রোগে আক্রান্ত? সে বললো, (কোন কিছুর) কুপ্রভাব (আছর)। তিনি বলেনঃ তুমি যাও এবং তাকে আমার নিকট নিয়ে এসো। আবূ লায়লা (রাঃ) বলেন, সে গিয়ে তার ভাইকে নিয়ে আসলে তিনি তাকে নিজের সামনে বসান। আমি শুনতে পেলাম, তিনি সূরা ফাতিহা, সূরা বাকারার প্রথম চার আয়াত মধ্যখানের দু’ আয়াত (১৬৩-১৬৪ নং আয়াত), আয়াতুল কুরসী (২৫৫ নং আয়াত) এবং বাকারার শেষ তিন আয়াত (২৮৪-২৮৬ আয়াত) এবং আল ইমরানের একটি আয়াত, আমার মনে হয় তিনি ১৮ নং আয়াত পড়েছিলেন এবং সূরা আরাফের এক আয়াত (৫৪ নং আয়াত), সূরা মুমিনূনের এক আয়াত (১১৭ নং আয়াত), সূরা জিন-এর এক আয়াত (৩ নং আয়াত), সুরা সাফ্‌ফাত-এর প্রথম দশ আয়াত, সুরা হাশরের শেষ তিন (২২, ২৩ ও ২৪) আয়াত, সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে তাকে ফুঁ দিলেন। তাতে বেদুইন এমনভাবে সুস্থ হয়ে দাঁড়ালো যে, তার কোন রোগই অবশিষ্ট নেই। [৩৫৪৯] তাহকীক আলবানীঃ দুর্বল।