7. সিয়াম বা রোজা

【1】

সিয়াম বা রোযার ফযিলত।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌র মর্জি হলে আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকাজের প্রতিদান দশ গুণ থেকে সাত শত গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। আল্লাহ্‌ বলেন, তবে সিয়াম ব্যতীত, তা আমার জন্যই (রাখা হয়) এবং আমিই তার প্রতিদান দিবো। সে তার প্রবৃত্তি ও পানাহার আমার জন্যই ত্যাগ করে। রোযাদারের জন্য দু’টি আনন্দঃ একটি আনন্দ তার ইফতারের সময় এবং আরেকটি আনন্দ রয়েছে তার প্রভু আল্লাহ্‌র সাথে তার সাক্ষাতের সময়। রোযাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌র নিকট কস্তুরীর ঘ্রাণের চেয়েও অধিক সুগন্ধময়। [১৬৩৮] উসমান (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যুদ্ধের মাঠে ঢাল যেমন তোমাদের রক্ষাকারী, সিয়ামও তদ্রূপ জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল। [১৬৩৯] সাহ্‌ল বিন সা’দ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জান্নাতের একটি দরজার নাম ‘রায়্যান’। কিয়ামাতের দিন সেখান থেকে আহ্বান করা হবেঃ রোযাদারগণ কোথায়? যে ব্যক্তি রোযাদার হবে, সে উক্ত দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে এবং যে উক্ত দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে, সে কখনও পিপাসার্ত হবে না। [১৬৪০]

【2】

রমজান মাসের ফযিলত

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় রমজান মাসের সিয়াম রাখলো, তার পূর্বের গুণাহরাশি মাফ করা হলো। [১৬৪১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে, তখন শয়তান ও অভিশপ্ত জিনদের শৃংখলিত করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না, জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এর একটি দরজাও বন্ধ হয় না এবং একজন ঘোষক ডেকে বলেন, হে সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি! অগ্রসর হও, হে অসৎকর্মপরায়ণ! থেমে যাও। আল্লাহ্‌ (রমযানের) প্রতিটি রাতে অসংখ্য লোককে জাহান্নাম থেকে নাজাত দেন। [১৬৪২] জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌ তাআলা প্রতি ইফতারের অর্থাৎ প্রতি রাতে বেশ সংখ্যক লোককে (জাহান্নাম থেকে) মুক্তি দেন। [১৬৪৩] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রমজান মাস শুরু হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের নিকট এ মাস সমুপস্থিত। এতে রয়েছে এমন এক রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ থেকে যে ব্যক্তি বঞ্চিত হলো সে সমস্ত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। কেবল বঞ্চিত ব্যক্তিরাই তা থেকে বঞ্চিত হয়। [১৬৪৪]

【3】

সন্দেহের দিনের (ইয়াওমুশ-শাক্ক) রোযা।

সিলাহ বিন যুফার (রহঃ) সন্দেহের দিনে আমরা আম্মার (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তখন একটি (ভুনা) বকরী পেশ করা হলো। কতক লোক পিছনে সরে গেলো। আম্মার (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আজ সিয়াম রাখলো সে তো অবশ্যই আবুল কাসিম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর অবাধ্যাচরণ করলো। [১৬৪৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) চাঁদ দেখার একদিন আগে থেকে সিয়াম রাখতে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। [১৬৪৬] কাসিম আবূ আবদুর রহমান (রহঃ) তিনি মুআবিয়া বিন আবূ সুফ্‌‌ইয়ান (রাঃ) কে মিম্বারের উপর বলতে শুনেছেন, রমজান মাস শুরু হওয়ার পূর্বে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেনঃ সিয়াম অমুক অমুক দিন। আমরা আগেই সেই সিয়াম রাখবো। অতএব যার ইচ্ছা সে আগে সিয়াম রাখুক, আর যার ইচ্ছা পরে রাখুক। [১৬৪৭]

【4】

শা’বান মাসে সিয়াম রাখতে রাখতে রমজান মাসে পৌছা।

উম্মু সালামাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শা‘বান মাসে সিয়াম রাখতে রাখতে রমাদানে পৌঁছতেন। [১৬৪৮] রবীআহ ইবনুল গায (রহঃ) তিনি আয়িশা (রাঃ) এর নিকট রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রায় গোটা শা‘বান মাস সিয়াম রাখতেন, এমনকি এভাবে রমজান মাসে উপনীত হতেন। [১৬৪৯]

【5】

রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের দিন সিয়াম রাখা নিষেধ, কিন্তু কারো নিয়মিত সিয়াম রাখতে রাখতে সেদিন পৌঁছলে তার জন্য নয়।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন রমজান মাসের এক দিন বা দু’দিন আগে সিয়াম রাখা শুরু না করে। তবে যে ব্যক্তি অনবরত সিয়াম রাখতে অভ্যস্ত, সে ঐ দিন সিয়াম রাখতে পারে। [১৬৫০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ শা‘বান মাসের অর্ধেক অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে রমজান মাস না আসা পর্যন্ত কোন সিয়াম নাই। [১৬৫১]

【6】

নতুন চাঁদ দেখার সাক্ষ্য প্রদান।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) এক বেদুইন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, আমি আজ রাতে (সন্ধ্যায়) নতুন চাঁদ দেখেছি। তিনি বলেন, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, “আল্লাহ্‌ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রসূল”? সে বললো, হাঁ। তিনি বলেন, হে বিলাল! ওঠো এবং লোকদের মধ্যে ঘোষণা দাও যে, তারা যেন আগামীকাল থেকে সিয়াম রাখে। [১৬৫২] আবূ উয়ায়মির বিন আনাস বিন মালিক (রহঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহাবী এবং আনসার সম্প্রদায়ভুক্ত আমার এক চাচা (ইসমু মুবহাম বা নাম অজ্ঞাত) আমার নিকট বর্ণনা করেন, মেঘের কারণে আমরা শাওয়ালের নতুন চাঁদ দেখতে পাইনি। আমরা (পরের দিন) সিয়াম রাখলাম। দিনের শেষভাগে একটি কাফেলা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে গতকাল চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদেরকে ইফতার (সিয়াম ভঙ্গ) করার এবং পরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দেন। [১৬৫৩]

【7】

চাঁদ দেখে সিয়াম রাখো এবং চাঁদ দেখে ইফতার (ঈদ) করো।

ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা চাঁদ দেখে সিয়াম রাখা শুরু করবে এবং চাঁদ দেখে ইফতার (রোযার সমাপ্তি) করবে। তোমাদের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে (ত্রিশ দিন) পূর্ণ করবে। ইবনু উমার (রাঃ) নতুন চাঁদ দেখার একদিন আগেও সিয়াম রাখতেন। [১৬৫৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা নতুন চাঁদ দেখে সিয়াম রাখা শুরু করবে এবং (শাওয়ালের) নতুন চাঁদ দেখে ইফতার (ঈদ) করবে। তোমাদের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে তোমরা ৩০ দিন সিয়াম রাখবে। [১৬৫৫]

【8】

ঊনত্রিশ দিনেও মাস হয়।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করেনঃ মাসের কত দিন গত হয়েছে? রাবী বলেন, আমরা বললাম, বাইশ দিন এবং আট দিন বাকী আছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ মাস এত দিনে হয়, মাস এত দিনে হয় এবং মাস এত দিনেও হয়। তৃতীয়বার তিনি এক আঙ্গুল বন্ধ রাখেন। [১৬৫৬] সা‘দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মাস এত দিনে হয়, মাস এত দিনে হয়, মাস এত দিনেও হয় এবং তৃতীয়বারে তিনি একটি আঙ্গুল বন্ধ করে রাখেন। [১৬৫৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে ঊনত্রিশ দিনের চেয়ে বেশির ভাগ ত্রিশ দিনই (রমাদানের রোযা) রেখেছি। [১৬৫৮]

【9】

ঈদের দু’ মাস

আবূ বাক্রাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ঈদের দু’মাস রমজান এবং যুল-হিজ্জা (সাধারণত) একই বছরে কম (ঊনত্রিশ দিনে) হয় না। [১৬৫৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে দিন তোমরা ইফতার (সিয়াম শেষ) করো সেদিন ঈদুল ফিতর এবং যেদিন তোমরা কুরবানী করো সেদিন ঈদুল আদহা। [১৬৬০]

【10】

সফররত অবস্থায় সিয়াম রাখা।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কখনো সফররত অবস্থায় সিয়াম রাখতেন এবং কখনো রাখতেন না। [১৬৬১] আয়িশা (রাঃ) হামযাহ আল-আসলামী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করে বলেন, আমি সিয়াম রাখি। আমি কি সফররত অবস্থায়ও সিয়াম রাখবো? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি চাইলে সিয়াম রাখো, আর যদি চাও না রাখো। [১৬৬২] আবূ দারদা’ (রাঃ) আমরা প্রচণ্ড গরমের মৌসুমে রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে এক সফরে প্রচণ্ড খরতাপের শিকার হলাম। গরমের তীব্রতার কারণে লোকেরা তাদের হাত মাথার উপর রাখছিল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহাহ (রাঃ) ব্যতীত দলের মধ্যে আর কেউ রোযাদার ছিলো না। [১৬৬৩]

【11】

সফররত অবস্থায় সিয়াম না রাখা।

কা’ব বিন আসিম (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সফরে সিয়াম রাখা সাওয়াবের কাজ নয়। [১৬৬৪] ইবনু উমার (রাঃ) রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ সফরে সিয়াম রাখা সাওয়াবের কাজ নয়। [১৬৬৫] আবদুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সফরে সিয়াম রাখে সে আবাসে উপস্থিত সিয়াম ভঙ্গকারী ব্যক্তির অনুরূপ। আবূ ইসহাক (রহঃ) বলেন, হাদীসটি নির্ভরযোগ্য নয়। [১৬৬৬]

【12】

গর্ভবতী নারী ও দুগ্ধপোষ্য শিশুর মায়ের সিয়াম না রাখার সুযোগ।

আনাস বিন মালিক (রাঃ) আবদুল আশহাল গোত্রের এবং আলী বিন মুহাম্মাদের মতে আবদুল্লাহ বিন কা’ব গোত্রের এক ব্যক্তি বললেন, রসূলু্ল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর অশ্বারোহী বাহিনী আমাদের উপর হামলা করলো। আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট উপস্থিত হয়ে দেখলাম যে, তিনি সকালের নাস্তা করছেন। তিনি বলেন, কাছে এসো এবং আহার করো। আমি বললাম, আমি রোযাদার। তিনি বলেন, বসো, আমি তোমার সাথে সিয়াম সম্পর্কে আলোচনা করবো। মহান আল্লাহ্ মুসাফির থেকে অর্ধেক সলাত হ্রাস করেছেন এবং মুসাফির, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারিণীকে সিয়াম রাখার ব্যাপারে অবকাশ দিয়েছেন। আল্লাহ্‌র শপথ! নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের দু’টি অথবা একটির কথা বলেছেন। আমার নিজের জন্য দুঃখ হয়, আমি কেন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে আহার করলাম না! [১৬৬৭] আনাস বিন মালিক (রাঃ) যে গর্ভবতী নারী নিজ জীবনের ক্ষতির আশঙ্কা করে এবং যে স্তন্যদায়িনী মা তার সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে সিয়াম না রাখার অনুমতি দিয়েছেন। [১৬৬৮]

【13】

রমাদানের সিয়াম কাদা’ করা।

আয়িশা (রাঃ) তিনি বলেন, আমার উপর রমজান মাসের রোযার কাদা’ থাকলে আমি শা’বান মাস না আসা পর্যন্ত তা রাখতাম না। [১৬৬৯] আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় আমরা ঋতুবতী হতাম। তিনি আমাদের (ছুটে যাওয়া) রোযার কাদা’ করার নির্দেশ দিতেন। [১৬৭০]

【14】

যে ব্যক্তি রমাদানের একটি রোযাও ভঙ্গ করে তার কাফফারা।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললো, আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। তিনি বলেন, কিসে তোমাকে ধ্বংস করলো। সে বললো, আমি রমযানের রোযারত অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তুমি একটি গোলাম আযাদ করো। সে বললো, আমার সেই সামর্থ্য নেই। তিনি বলেন, তাহলে একাধারে দু’মাস সিয়াম রাখো। সে বললো, আমার সেই সামর্থ্যও নেই। তিনি বলেন, তাহলে ষাটজন মিসকীনকে আহার করাও। সে বললো, আমার সেই সামর্থ্যও নেই। তিনি বলেন, তুমি বসো। অতএব সে বসে থাকলো। ইতোমধ্যে এক ঝুড়ি খেজুর এলো। তিনি বলেন, যাও এটা দান করে দাও। সে বললো, হে আল্লাহ্‌র রসূল! সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন! মদীনার দু’ কংকরময় প্রান্তরের মাঝে আমাদের চেয়ে অধিক অভাবগ্রস্ত আর কেউ নেই। তিনি বললেন, যাও, এগুলো তোমার পরিবার-পরিজনদের খাওয়াও। [১৬৭১] [উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের একটি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলোঃ] ১/১৬৭১(১). আবূ হুরায়রা (রাঃ), রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তার পরিবর্তে একদিন সিয়াম রাখো। [১৬৭১] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি বিনা ওজরে রমজান মাসের একদিন সিয়াম ভাঙ্গে সে সারা জীবন সিয়াম রাখলেও তার ক্ষতিপূরণ হবে না। [১৬৭২]

【15】

কোন ব্যক্তি ভুলবশত সিয়াম ভঙ্গ করলে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন রোযাদার ভুলক্রমে আহার করলে সে যেন তার সিয়াম পূর্ণ করে। কেননা আল্লাহ্‌ তাকে পানাহার করিয়েছেন। [১৬৭৩] আসমা’ বিনত আবূ বাক্‌র (রাঃ) আমরা একবার রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সময় মেঘাচ্ছন্ন দিনে ইফতার করলাম, তারপর সূর্য প্রকাশ পেলো। অধঃস্তন রাবী বলেন, আমি হিশাম (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, তাদেরকে কাযা’ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল কি? তিনি বলেন, অবশ্যই। [১৬৭৪] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ, বুখারী তাতে অতিরিক্ত মুয়াল্লাক রূপে আছে বিধায় হিশাম বলেছেনঃ আমি জানিনা তারা কি কাযা করেছেন না করেন নি?

【16】

রোযাদার বমি করলে

ফাদালাহ বিন উবায়দ আল-আনসারী (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন রোযারত অবস্থায় তাদের নিকট বেরিয়ে আসেন। তিনি পানির পাত্র চেয়ে নিয়ে পানি পান করেন। আমরা বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি তো এই দিন (নফল) সিয়াম রেখেছিলেন। তিনি বলেন, হাঁ, তবে আমি বমি করেছি। [১৬৭৫] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যার মুখ ভরে বমি হয় তাকে সিয়াম কাদা’ করতে হবে না। যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় বমি করে তাকে রোযার কাদা’ করতে হবে। [১৬৭৬]

【17】

রোযাদারের মিসওয়াক করা ও সুরমা লাগানো।

আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রোযাদারের উত্তম গুণাবলির একটি হলো দাঁতন করা। [১৬৭৭] আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোযারত অবস্থায় সুরমা লাগিয়েছেন। [১৬৭৮]

【18】

রোযাদারের রক্তমোক্ষণ করানো

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রক্তমোক্ষণকারী ও যার রক্তমোক্ষণ করা হয়, তারা উভয়ে সিয়াম ভঙ্গ করেছে। [১৬৭৯] সাওবান (রাঃ) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ রক্তমোক্ষণকারী ও যার রক্তমোক্ষণ করা হয়েছে তারা উভয়ে সিয়াম ভঙ্গ করেছে। [১৬৮০] শাদ্দাদ বিন আওস (রাঃ) (আবূ কিলাবাহ) অবহিত করেন যে, একদা শাদ্দাদ বিন আওস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বাকী‘ নামক স্থানে হাঁটছিলেন। তিনি এক ব্যক্তির নিকট দিয়ে গমন করেন, যে রক্তমোক্ষণ করছিল, তখন রমজান মাসের আঠার দিন গত হয়েছে। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, রক্তমোক্ষক ও যার রক্তমোক্ষণ করা হয়েছে তারা উভয়ে সিয়াম ভঙ্গ করেছে। [১৬৮১] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সিয়াম ও ইহরামরত অবস্থায় রক্তমোক্ষণ করিয়েছেন। সহীহ, এ শব্দে তিনি মুহরিম অবস্থায় শিঙ্গা লাগিয়েছেন। [১৬৮২] তাহকীক আলবানীঃ (“আরবী’) শব্দ দ্বারা সহীহ।

【19】

রোযাদারের চুমু দেয়া সম্পর্কে

আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমজান মাসে চুমা দিতেন। [১৬৮৩] আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোযারত অবস্থায় চুমা দিতেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেমন নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতেন, তোমাদের মধ্যে কে নিজের উপর তদ্রূপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা রাখে! [১৬৮৪] হাফসাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোযারত অবস্থায় চুমা দিতেন। [১৬৮৫] নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুক্ত দাসী মায়মূনাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রোযাদার দম্পতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, স্বামী তাকে চুমা দিয়েছে। তিনি বলেন, তারা সিয়াম ভঙ্গ করেছে। [১৬৮৬] তাহকীক আলবানীঃ অত্যন্ত দঈফ, তা’লীক ইবনু মাজাহ।

【20】

সিয়াম অবস্থায় স্ত্রীর দেহ স্পর্শ করা।

আয়িশা (রাঃ) (ইবরাহীম) বলেন, আসওয়াদ ও মাসরূক আয়িশা (রাঃ)–এর নিকট উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোযারত অবস্থায় কি স্ত্রীর দেহের সাথে নিজ দেহ মিলাতেন? তিনি বলেন, তিনি তা করতেন। আর তিনি ছিলেন তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সংযমী। [১৬৮৭] ইবনু আব্বাস (রাঃ) বৃদ্ধ রোযাদারকে স্ত্রীর দেহ স্পর্শ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে এবং যুবকদের জন্য তা অপছন্দ করা হয়েছে। [১৬৮৮]

【21】

রোযাদার ব্যক্তির গীবত ও অশ্লীল কাজে লিপ্ত হওয়া ।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মিথ্যাচার, মূর্খতা ও মূর্খতাসুলভ কাজ ত্যাগ করলো না, তার পানাহার বর্জন করায় আল্লাহ্‌র কোন প্রয়োজন নেই। [১৬৮৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কত রোযাদার আছে যাদের রোযার বিনিময়ে ক্ষুধা ছাড়া আর কিছুই জোটে না। কত সলাত আদায়কারী আছে যাদের রাত জাগরণ ছাড়া আর কিছুই জোটে না। [১৬৯০] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন সিয়াম অবস্থায় অশ্লীল ও মূর্খতাসুলভ আচরণ না করে। কেউ তার সাথে মূর্খতাসুলভ আচরণ করলে সে যেন বলে, আমি রোযাদার। [১৬৯১]

【22】

সাহরী খাওয়া

আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা সাহরী খাবে। কেননা সাহরীতে বরকত আছে। [১৬৯২] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা সাহরী খাওয়ার মাধ্যমে দিনে সিয়াম রাখার জন্য এবং দিনে বিশ্রামের মাধ্যমে রাতে নামায পড়ার জন্য সাহায্য গ্রহণ করো। [১৬৯৩]

【23】

বিলম্বে সাহরী খাওয়া

যায়িদ বিন সাবিত (রাঃ) আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে সাহরী খেলাম, এরপর সালাতে দাঁড়ালাম। রাবী কাতাদাহ (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, সাহরী ও সলাতের মধ্যে কত সময়ের ব্যবধান ছিল? তিনি বলেন, পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করার পরিমাণ সময়। [১৬৯৪] হুযায়ফাহ (রাঃ) একদা আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে বলতে গেলে দিনেই সাহরী খেয়েছি, পার্থক্য এতটুকু যে, তখনও সূর্য উদিত হয়নি। [১৬৯৫] আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বিলালের আযান যেন তোমাদের কাউকে তার সাহরী খাওয়া থেকে বিরত না রাখে। কেননা সে তোমাদের ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগাবার বা সতর্ক করার জন্য এবং তোমাদের সলাতীকে সলাতে রত বা অবসর হওয়ার জন্য আযান দিয়ে থাকে। আর এ সময়কে ফজর বলা হয় না, বরং উর্ধাকাশে আড়াআড়িভাবে সাদা আভা প্রকাশ পাওয়াই ফজর। [১৬৯৬]

【24】

যথাসময়ে ইফতার করা

সাহল বিন সা’দ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মানুষ কল্যাণের সাথে থাকবে, যাবত তারা জলদি (যথাসময়ে) ইফতার করতে থাকবে। [১৬৯৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যাবত লোকেরা যথাসময়ে ইফতার করবে তাবত তারা কল্যাণের সাথে থাকবে। তাই তোমরা যথাসময়ে ইফতার করো। কারণ ইহুদীরা বিলম্বে ইফতার করে। [১৬৯৮]

【25】

যা দিয়ে ইফতার করা মুস্তাহাব

সালমান বিন আমির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ ইফতার করলে সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। সে খেজুর না পেলে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কারণ তা পবিত্র। [১৬৯৯] তাহকীক আলবানীঃ দঈফ, আর সহীহ হলো নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কর্ম ছিলো।

【26】

রাত থাকতে ফরদ রোযার নিয়াত করা এবং নফল রোযার নিয়াতে বিলম্ব করা যায়।

হাফসাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাত থাকতে ফরদ রোযার নিয়াত করলো না তার সিয়াম হয়নি। [১৭০০] আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট এসে বলেন, তোমাদের কাছে (আহার করার মত) কিছু আছে কি? আমরা বললাম, না। তিনি বলেন, তাহলে আমি সিয়াম রাখলাম। অতঃপর তিনি সিয়াম অবস্থায় থাকেন। আমাদের নিকট কিছু হাদিয়া এলে তিনি সিয়াম ভঙ্গ করেন। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তিনি কখনো সিয়াম রাখতেন আবার কখনো সিয়াম রাখতেন না। রাবী মুজাহিদ (রাঃ) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তা কিভাবে? আয়িশা (রাঃ) বলেন, তার দৃষ্টান্ত এরূপ যে, কোন ব্যক্তি সদকার মাল নিয়ে দান করার উদ্দেশ্যে বের হয়ে এর কিছু অংশ দান করে, আর কিছু অংশ রেখে দেয়। [১৭০১]

【27】

সিয়াম রাখতে ইচ্ছুক ব্যক্তির অপবিত্র অবস্থায় ভোর হলে।

আবদুল্লাহ বিন আম্‌র আল-কারী (মাকবূল) আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, না, কা‘বার প্রভুর শপথ! এ কথা আমি বলছি নাঃ “যে ব্যক্তি নাপাক অবস্থায় ভোরে উপনীত হলো সে সিয়াম ভঙ্গ করুক”। বরং মুহাম্মাদ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা বলেছেন। [১৭০২] আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাপাক অবস্থায় রাতে ঘুমাতেন। অতঃপর বিলাল (রাঃ) তাঁর নিকট এসে তাঁকে সলাতের জন্য ডাকতেন। তখন তিনি উঠে গোসল করতেন। আমি তাঁর মাথা থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়তে দেখেছি। তারপর তিনি বের হয়ে যেতেন এবং ফজরের সলাতে আমি তাঁর কন্ঠস্বর শুনতে পেতাম। মুতাররিফ (রাঃ) বলেন, আমি আমির (রাঃ)-কে বললাম, তা কি রমাদানে? তিনি বলেন, রমজান ও অন্য মাস একই সমান। [১৭০৩] নাফি (রহঃ) আমি উম্মু সালামাহ (রাঃ) এর নিকট জানতে চাইলাম যে, এক ব্যক্তি নাপাক অবস্থায় ভোরে উপনীত হলো, সে সিয়াম রাখতে ইচ্ছুক। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বপ্নদোষজনিত নয়, বরং সহবাসজনিত নাপাক অবস্থায় ভোরে উপনীত হতেন, অতঃপর গোসল করতেন এবং তাঁর সিয়াম পূর্ণ করতেন। [১৭০৪]

【28】

সারা বছর সিয়াম রাখা।

আবদুল্লাহ্‌ ইবনুশ শিখখীর (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সর্বদা সিয়াম রাখে সে রোযাও রাখেনি, আবার সিয়াম ভঙ্গও করেনি। [১৭০৫] আবদুল্লাহ্‌ বিন আম্‌র (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সর্বদা সিয়াম রাখে, সে রোযাই রাখেনি। [১৭০৬]

【29】

প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম রাখা

মিনহাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সওমুল বীদ অর্থাৎ প্রতি মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনের তারিখে সিয়াম রাখার নির্দেশ দিতেন এবং বলতেন, তা সারা বছর সিয়াম রাখার সমতুল্য। [১৭০৭] [উপরোক্ত হাদীসে মোট ২টি সানাদের ১টি বর্ণিত হয়েছে, অপর সানাদটি হলো:] ১/১৭০৭(১). কাতাদাহ বিন মালহান আল-কায়সী হতে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। ইবনু মাজাহ বলেন, এক্ষেত্রে শু’বাহ ভুল করেছেন এবং হাম্মাম ঠিক করেছেন। [১৭০৭] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ লিগাইরিহি। আবূ যার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম রাখলো, সে যেন সারা বছর সিয়াম রাখলো। আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁর কিতাবে এর সমর্থনে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল করেন (অনুবাদ): “কেউ কোন সৎকাজ করলে, সে তার দশ গুণ পাবে” (সূরা আনআমঃ ১৬০)। অর্থাৎ প্রতিটি দিন দশ দিনের সমান। [১৭০৮] আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম রাখতেন, রাবী বলেন, আমি বললাম, মাসের কোন্‌ কোন্‌ দিন? তিনি বলেন, তিনি যে কোন দিন সিয়াম রাখতে ইতস্তত করতেন না। [১৭০৯]

【30】

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর রোযা।

আবূ সালামাহ (রাঃ) আমি আয়িশা (রাঃ) এর নিকট নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, তিনি একাধারে সিয়াম রেখেই যেতেন। এমনকি আমরা বলতাম, তিনি সিয়াম রেখেই যাবেন। আবার তিনি একাধারে রোযাহীন অবস্থায় কাটাতেন, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি রোযাহীন অবস্থায়ই থাকবেন। শা‘বান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে আমি তাঁকে এত অধিক সিয়াম রাখতে দেখিনি। তিনি প্রায় পুরা শা‘বান মাসই সিয়াম রাখতেন। তিনি শা‘বানের অল্প কিছুদিন বাদ দিয়ে পুরা মাসই সিয়াম রাখতেন। [১৭১০] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাধারে সিয়াম রেখে যেতেন, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি আর সিয়াম ভঙ্গ করবেন না। আবার কখনো তিনি একাধারে রোযাহীন থাকতেন, এমনকি আমরা বলতাম, তিনি আর সিয়াম রাখবেন না। মাদীনায় আসার পর থেকে তিনি রমজান মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে সম্পূর্ণ মাস সিয়াম রাখেননি। [১৭১১]

【31】

দাঊদ (আ.) এর রোযা

আবদুল্লাহ্‌ বিন আম্‌র (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রোযাসমূহের মধ্যে দাঊদ (আলাইহিস সালাম) এর সিয়াম আল্লহ্‌র নিকট অধিক প্রিয়। তিনি এক দিন সিয়াম রাখতেন এবং পরবর্তী দিন সিয়াম রাখতেন না। আল্লাহ্‌র নিকট দাঊদ (আলাইহিস সালাম) এর সলাত অধিক প্রিয়। তিনি রাতের অর্ধাংশ ঘুমাতেন, এক-তৃতীয়াংশ সলাতে কাটাতেন এবং আবার এক-ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন। [১৭১২] উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হে আল্লাহ্‌র রসূল! যে ব্যক্তি দু’ দিন সিয়াম রাখে এবং এক দিন রাখে না, তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? তিনি বলেন, কেউ কি তার সামর্থ্য রাখে? উমার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! যে ব্যক্তি এক দিন সিয়াম রাখে এবং এক দিন রাখে না? তিনি বলেন, সেটা হলো দাঊদ (আলাইহিস সালাম) -এর রোযা। উমার (রাঃ) বললেন, যে ব্যক্তি একদিন সিয়াম রাখে এবং দু’ দিন রাখে না? তিনি বলেন, আমি পছন্দ করি যে, আমাকে এ ধরনের সিয়াম রাখার সামর্থ্য দান করা হোক। [১৭১৩]

【32】

নূহ আলাইহিস সালামের রোযা।

আবদুল্লাহ্‌ বিন আম্‌র (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ নূহ (আলাইহিস সালাম) ঈদুল ফিতরের দিন ও ঈদুল আযহার দিন ব্যতীত সারা বছর সিয়াম রাখতেন। [১৭১৪]

【33】

শাওয়াল মাসের ছয় দিনের রোযা।

রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মুক্ত দাস সাওবান (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের পর ছয় দিন সিয়াম রাখলো, তা পূর্ণ বছর সিয়াম রাখার সমতুল্য। “কেউ কোন সৎকাজ করলে, সে তার দশ গুণ পাবে” (সূরা আনআমঃ ১৬০)। [১৭১৫] আবূ আয়্যূব (রাঃ) , রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমজান মাসের সিয়াম রাখার পর শাওয়াল মাসে ছয়টি সিয়াম রাখবে, তা যেন সারা বছর সিয়াম রাখার সমতুল্য। [১৭১৬]

【34】

আল্লাহ্‌র রাস্তায় এক দিন সিয়াম রাখার ফযিলত ।

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় একদিন সিয়াম রাখে, আল্লাহ্‌ ঐ দিনের বিনিময়ে জাহান্নামকে তার মুখমন্ডল থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে দেন। [১৭১৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র রাস্তায় একদিন সিয়াম রাখে, আল্লাহ্‌ তার বিনিময়ে জাহান্নাম থেকে তার মুখমন্ডলকে সত্তর বছরের দূরত্বে রাখেন। [১৭১৮]

【35】

আইয়্যামে তাশরীকে সিয়াম রাখা নিষেধ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মিনার দিনসমূহ হলো পানাহারের দিন। [১৭১৯] বিশ্‌র বিন সুহায়ম (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আইয়্যামে তাশরীকে ভাষণ দেন। তিনি বলেন, মুসলিম ব্যক্তি ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং এই দিনসমূহ হচ্ছে পানাহারের দিন। [১৭২০]

【36】

ঈদুল ফিতর ও ইদুল আযহার দিন সিয়াম রাখা নিষেধ ।

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর ও ইদুল আযহার দিন সিয়াম রাখতে নিষেধ করেছেন। [১৭২১] আবূ উবায়দ (রহঃ) তিনি বলেন, আমি উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সাথে ঈদের দিন উপস্থিত ছিলাম। তিনি খুতবাহ্‌র আগে সলাত পড়েন, অতঃপর বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা এ দু’ দিন সিয়াম রাখতে নিষেধ করেছেন। কেননা ঈদুল ফিতরের দিন হচ্ছে তোমাদের সিয়াম ভঙ্গের দিন এবং ঈদুল আযহার দিন তোমরা তোমাদের কুরবানির গোশত খাবে। [১৭২২]

【37】

জুমুআর দিন সিয়াম রাখা।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমুআর আগের দিন বা পরের দিনসহ সিয়াম রাখা ব্যতীত, কেবলমাত্র জুমুআর দিন সিয়াম রাখতে নিষেধ করেছেন। [১৭২৩] মুহাম্মাদ বিন আব্বাদ বিন জা’ফর (রহঃ) আমি আল্লাহ্‌র ঘর তাওয়াফকালে জাবির বিন আবদুল্লাহ্‌ (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি জুমুআর দিন সিয়াম রাখতে নিষেধ করেছেন? তিনি বলেন, হাঁ, এই ঘরের প্রভুর শপথ! [১৭২৪] আবদুল্লাহ্‌ বিন মাসউদ (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জুমুআর দিন খুব কমই রোযাহীন দেখেছি। [১৭২৫]

【38】

শনিবারের রোযা

আবদুল্লাহ্‌ বিন বুসর (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের উপর যে সিয়াম ফরয করা হয়েছে সেই সিয়াম ব্যতীত তোমরা শনিবার সিয়াম রাখবে না। তোমাদের কেউ আঙ্গুরের ডাল বা গাছের ছাল ব্যতীত কিছু না পেলে সে যেন তা চুষে (শনিবারের) সিয়াম ভঙ্গ করে। ১/১৭২৬(১). আস-সমা’ বিনতু বুসর (রাঃ), রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন- বলে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। [১৭২৬] তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।

【39】

দশ দিনের রোযা।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌র নিকট (যুলহিজ্জার) দশ দিনের সৎকাজের চাইতে অধিক পছন্দনীয় সৎকাজ আর নেই। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহ্‌র পথে জিহাদও নয় কি? তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র পথে জিহাদও নয়, কিন্তু যে ব্যক্তি তার জান-মালসহ আল্লাহ্‌র পথে বের হয়ে তার কোন কিছু নিয়ে আর ফিরে আসে না (তার মর্যাদা অনেক)। [১৭২৭] আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (যুলহিজ্জার) দশ দিনের ইবাদাতের চেয়ে দুনিয়ার অন্য কোন দিনের ইবাদাত মহান আল্লাহ্‌র নিকট অধিক প্রিয় নয়। এই ক’দিনের মধ্যকার এক এক দিনের সিয়াম এক বছর সিয়াম রাখার সমান এবং তার এক একটি রাত কদরের রাতের সমান। [১৭২৮] আয়িশা (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে (যুলহিজ্জার) দশ দিন কখনো সিয়াম রাখতে দেখিনি। [১৭২৯]

【40】

আরাফাত দিবসের রোযা।

আবূ কাতাদাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমি আল্লাহ্‌র নিকট আরাফাত দিবসের রোযার এই সওয়াব আশা করি যে, তিনি তার বিনিময়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন। [১৭৩০] কাতাদাহ্‌ বিন নু’মান (রাঃ) আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আরাফাত দিবসে সিয়াম রাখলো, তার আগের বছরের ও পরের বছরের গুনাহ মাফ করা হলো। [১৭৩১] ইকরিমাহ (রহঃ) আমি আবূ হুরায়রা (রাঃ) এর বাড়িতে গিয়ে তাকে আরাফাতের ময়দানে আরাফাত দিবসে সিয়াম রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফাতের ময়দানে আরাফাত দিবসে সিয়াম রাখতে নিষেধ করেছেন। [১৭৩২]

【41】

আশূরার দিনের রোযা

আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশূরার দিন সিয়াম রাখতেন এবং এ দিন সিয়াম রাখতে নির্দেশ দিতেন। [১৭৩৩] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (হিজরত করে) মদিনায় পৌঁছে ইহূদীদের সিয়াম অবস্থায় দেখতে পেয়ে তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ এটা কী? তারা বললো, এ দিনে আল্লাহ্‌ মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে মুক্তি দেন এবং ফিরাউনকে ডুবিয়ে মারেন। তাই মূসা (আলাইহিস সালাম) এ দিন শোকরানা সিয়াম রাখেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমরা মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর (অনুসরণের) ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। তারপর তিনি এদিনে সিয়াম রাখেন এবং অন্যদেরও সিয়াম রাখার নির্দেশ দেন। [১৭৩৪] মুহাম্মাদ বিন সায়ফী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশূরার দিন আমাদের জিজ্ঞেস করেনঃ তোমাদের কেউ আজ আহার করেছ কি? আমরা বললাম, আমাদের কতক আহার করেছে এবং কতক আহার করেনি। তিনি বলেন, তোমরা যারা আহার করেছো এবং যারা আহার করোনি, তোমাদের অবশিষ্ট দিনটি সিয়াম রাখো। আর তোমরা মাদীনাহ্‌র পার্শ্ববর্তীদের নিকট লোক পাঠিয়ে দাও, তারাও যেন দিনটির অবশিষ্টাংশ সিয়াম রাখে। [১৭৩৫] ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি আগামী বছর বেঁচে থাকলে অবশ্যই (মুহাররমের) নবম তারিখে সিয়াম রাখবো। ইবনু আবূ যি’ব-এর বর্ণনায় আরো আছেঃ তাঁর থেকে আশূরার সিয়াম চলে যাওয়ার আশঙ্কায় (তিনি এ কথা বলেন)। [১৭৩৬] আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আশূরার দিন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জাহিলী যুগে লোকেরা এ দিন সিয়াম রাখতো। অতএব তোমাদের কেউ এ দিন সিয়াম রাখতে আগ্রহী হলে রাখতে পারে এবং কেউ অনাগ্রহী হলে নাও রাখতে পারে। [১৭৩৭] আবূ কাতাদাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আশূরার দিনের রোযার দ্বারা আমি আল্লাহ্‌র নিকট বিগত বছরের গুনাহ মাফের আশা রাখি। [১৭৩৮]

【42】

সোমবার ও বৃহস্পতিবার সিয়াম রাখা।

রবীআহ ইবনুল গায (রহঃ) তিনি আয়িশা (রাঃ) এর নিকট রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সিয়াম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোযার প্রতি খুবই খেয়াল রাখতেন। [১৭৩৯] আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সোমবার ও বৃহস্পতিবার সিয়াম রাখতেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি সোমবার ও বৃহস্পতিবার সিয়াম রেখে থাকেন। তিনি বলেন, আল্লাহ্‌ তাআলা সোমবার ও বৃহস্পতিবার এ দু' দিন পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারী দু' ব্যক্তি ব্যতীত প্রত্যেক মুসলমানকে ক্ষমা করেন। তিনি (ফেরেশতাদের) বলেন, তারা সন্ধিতে আবদ্ধ হওয়া অবধি তাদের ত্যাগ করো। [১৭৪০]

【43】

হারাম মাসসমূহের রোযা

ইসমু মুবহাম (বা নাম অপরিচিত) আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহ্‌র নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি সেই ব্যক্তি, গত বছরও আপনার নিকট এসেছিলাম। তিনি [রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বলেন, কী ব্যাপার, আমি তোমার শরীর দুর্বল দেখছি কেন? তিনি বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি দিনে আহার করি না, রাতেই আহার করি। তিনি বলেন, নিজের দেহকে শাস্তি দিতে কে তোমাকে নির্দেশ দিয়েছে? আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি অধিক শক্তিশালী। তিনি বলেন, তুমি ধৈর্যের মাসের সিয়াম রাখো এবং এরপর (প্রতি মাসে) এক দিন সিয়াম রাখো। আমি বললাম, আমি তো অধিক শক্তিশালী। তিনি বলেন, তুমি ধৈর্যের মাসের সিয়াম রাখো এবং প্রতি মাসে দু' দিন সিয়াম রাখো। আমি বললাম, আমি এর অধিক শক্তি রাখি। তিনি বলেন, তুমি ধৈর্যের মাসের সিয়াম রাখো, অতঃপর প্রতিমাসে তিন দিন এবং হারাম মাসসমূহে সিয়াম রাখো। [১৭৪১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলো, রমজান মাসের পর কোন্‌ সিয়াম উত্তম? তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র সেই মাস যাকে তোমরা মুহাররম বলে থাকো। [১৭৪২] ইবনু আব্বাস (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রজব মাসে সিয়াম রাখতে নিষেধ করেছেন। [১৭৪৩] উসামাহ বিন যায়দ (রাঃ) উসামাহ বিন যায়দ (রাঃ) হারাম মাসসমূহে সিয়াম রাখতেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেন, তুমি শাওয়াল মাসে সিয়াম পালন করো। অতঃপর তিনি হারাম মাসসমূহের সিয়াম পালন করা ছেড়ে দেন এবং আমরণ শাওয়াল মাসে সিয়াম পালন করেন। [১৭৪৪]

【44】

সিয়াম হলো দেহের যাকাত ।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ প্রতিটি জিনিসের যাকাত আছে। সিয়াম হলো শরীরের যাকাত। মুহরিযের হাদীসে আরো আছে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সিয়াম হলো ধৈর্যের অর্ধাংশ। [১৭৪৫]

【45】

যে ব্যক্তি রোযাদারকে ইফতার করালো তার সওয়াব ।

যায়দ বিন খালিদ আল-জুহানী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রোযাদারকে ইফতার করায়, তার জন্য রয়েছে ইফতারকারীদের সমান সওয়াব এবং এজন্য তাদের সওয়াব থেকে কিছুই হ্রাসপ্রাপ্ত হবে না। [১৭৪৬] আবদুল্লাহ্‌ ইবনুয-যুবায়র (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সা’দ বিন মুআয (রাঃ)-এর এখানে ইফতার করেন, অতঃপর বলেন, তোমাদের এখানে রোযাদারগণ ইফতার করেছেন, নেককারগণ তোমাদের খাদ্যদ্রব্য আহার করেছেন এবং ফেরেশতাগণ তোমাদের জন্য রহমাত কামনা করেছেন। [১৭৪৭] তাহকীক আলবানীঃ ইফতার করার কথা ব্যতীত সহীহ।

【46】

রোযাদারের সামনে কেউ পানাহার করলে।

উম্মু উমারাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের এখানে আসলে আমরা তাঁর সামনে খাদ্যসামগ্রী পরিবেশন করলাম। তাঁর সাথের কতক লোক ছিল রোযাদার। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ রোযাদারের সামনে আহার করা হলে ফেরেশতাগণ তার জন্য (আল্লাহ্‌র) অনুগ্রহ কামনা করেন। [১৭৪৮] বুরায়দাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিলাল (রাঃ)-কে বললেনঃ হে বিলাল! সকালের খাবার। বিলাল (রাঃ) বলেন, আমি রোযাদার। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমরা আমাদের রিযিক আহার করবো, আর বিলালের অংশ রয়েছে জান্নাতে। হে বিলাল! তুমি কি জানো যে, রোযাদারের সামনে খাওয়া-দাওয়া করা হলে, তার হাড়সমূহ আল্লাহ্‌র গুণগান করে এবং ফেরেশতাগণ তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে! [১৭৪৯] তাহকীক আলবানীঃ বানোয়াট।

【47】

রোযাদারকে আহার গ্রহণের জন্য আহ্বান করা হলে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন তোমাদের কাউকে আহার করার জন্য ডাকা হয়, অথচ সে রোযাদার, তখন সে যেন বলে, আমি রোযাদার। [১৭৫০] জাবির (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রোযাদার ব্যক্তিকে আহার গ্রহণের আহবান জানানো হলে সে যেন তাতে সাড়া দেয়। অতঃপর তার ইচ্ছা হলে খাবে অথবা খাবে না। [১৭৫১]

【48】

রোযাদারের দুআ প্রত্যাখ্যাত হয় না (কবুল হয়)।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তিন ব্যক্তির দুআ রদ হয় নাঃ ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোযাদার যতক্ষণ না ইফতার করে এবং মজলুমের দুআ। কিয়ামাতের দিন আল্লাহ্‌ তার দুআ মেঘমালার উপরে তুলে নিবেন এবং তার জন্য আসমানের দ্বারসমূহ খুলে দেয়া হবে এবং আল্লাহ্‌ বলবেনঃ আমার মর্যাদার শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করবো, একটু বিলম্বেই হোক না কেন। [১৭৫২] আবদুল্লাহ বিন আম্‌র ইবনুল আস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ইফতারের সময় রোযাদারের অবশ্যই একটি দুআ আছে, যা রদ হয় না (কবুল হয়)। বিন আবূ মুলাইকা (রাঃ) বলেন, আমি আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ)-কে ইফতারের সময় বলতে শুনেছিঃ “হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার দয়া ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি যা সব কিছুর উপর পরিব্যাপ্ত, যেন আপনি আমাকে ক্ষমা করেন”। [১৭৫৩]

【49】

ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে আহার করা।

আনাস বিন মালিক (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতরের দিন খেজুর না খেয়ে (ঈদের মাঠে) রওয়ানা হতেন না। [১৭৫৪] ইবনু উমার (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতরের দিন ভোরে তাঁর সহাবীদের ফিতরা পরিশোধের নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত (ঈদগাহে) রওয়ানা হতেন না। [১৭৫৫] বুরায়দাহ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতরের দিন আহার না করে (ঈদের মাঠে) রওয়ানা হতেন না এবং কুরবানীর দিন ঈদগাহ থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত আহার করতেন না। [১৭৫৬]

【50】

যে ব্যক্তি অবহেলা করে রমাযানের সিয়াম অনাদায় রেখে মারা গেলো।

ইবনু উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি তার যিম্মায় রমজান মাসের সিয়াম বাকি রেখে মারা গেলো, তার পক্ষ থেকে প্রতি দিনের রোযার জন্য যেন একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে আহার করানো হয়। [১৭৫৭]

【51】

যে ব্যক্তি মানতের সিয়াম যিম্মায় রেখে মারা গেলো।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার বোন তার যিম্মায় রমাদানের পর পর দু’ মাসের সিয়াম রেখে মারা গেছে। তিনি বলেন, তুমি কি মনে করো, তোমার বোন ঋণগ্রস্ত থাকলে তুমি তা পরিশোধ করতে? সে বললো, হাঁ। তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র প্রাপ্য তো অধিক পরিশোধযোগ্য। [১৭৫৮] বুরায়দাহ (রাঃ) এক মহিলা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার মা তার যিম্মায় সিয়াম রেখে মারা গেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে সিয়াম রাখবো? তিনি বলেন, হাঁ। [১৭৫৯]

【52】

যে ব্যক্তি রমজান মাসে ইসলাম গ্রহণ করলো।

ইসমু মুবহাম বা নাম অপরিচিত আমাদের যে প্রতিনিধি দলটি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট গিয়েছিল, তারা সাকীফ গোত্রের ইসলাম গ্রহণের বর্ণনা দেয়। রাবী বলেন, তারা তাঁর দরবারে রমজান মাসে উপস্থিত হয়। তিনি মাসজিদে তাদের জন্য একটি তাঁবু খাঁটিয়ে দিয়েছিলেন। তারা ইসলাম গ্রহণ করার পর রমজান মাসের অবশিষ্ট রোযাগুলো রেখেছিল। [১৭৬০]

【53】

যে মহিলা তার স্বামীর সম্মতি ব্যতীত (নফল) সিয়াম রাখে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) স্বামীর উপস্থিতিতে তার সম্মতি ব্যতীত স্ত্রী রমজান মাসের সিয়াম ছাড়া এক দিনও সিয়াম রাখবে না। [১৭৬১] আবূ সাঈদ (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদেরকে তাদের স্বামীদের সম্মতি ব্যতীত সিয়াম রাখতে নিষেধ করেছেন। [১৭৬২]

【54】

কোন ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের মেহমান হলে সে তাদের সম্মতি ব্যতীত (নফল) সিয়াম রাখবে না।

আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের মেহমান হলে সে যেন তাদের সম্মতি ব্যতীত (নফল) সিয়াম না রাখে। [১৭৬৩]

【55】

যে ব্যক্তি বলে, কৃতজ্ঞ আহারকারী ধৈর্যশীল রোযাদারের সমতুল্য।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কৃতজ্ঞ আহারকারী ধৈর্যশীল রোযাদারের সমতুল্য। [১৭৬৪] নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবী সিনান বিন সান্নাহ আল-আসলামী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কৃতজ্ঞ আহারকারীর জন্য রয়েছে ধৈর্যশীল রোযাদারের অনুরূপ প্রতিদান। [১৭৬৫]

【56】

লায়লাতুল কদর (কদরের রাত) সম্পর্কে

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) আমরা রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে রমজান মাসের মধ্যম দশকে ই‘তিকাফ করেছিলাম। তিনি বলেন, আমাকে লায়লাতুল কদর দেখানো হয়েছিল; পরে তা আমাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। অতএব তোমরা রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতসমূহে তা অনুসন্ধান করো। [১৭৬৬]

【57】

রমজান মাসের শেষ দশকের ফযিলত।

আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমজান মাসের শেষ দশকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় ইবাদাতে অধিক মশগুল থাকতেন। [১৭৬৭] আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমজান মাসের শেষ দশকে রাত জাগতেন, তহবন্দ শক্ত করে বেঁধে নিতেন এবং তাঁর পরিবার-পরিজনকে (ইবাদাতে মশগুল হওয়ার জন্য) জাগিয়ে দিতেন। [১৭৬৮]

【58】

ই‘তিকাফ সম্পর্কে।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি বছর দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। তবে তিনি ইনতিকালের বছর বিশ দিন ই‘তিকাফ করেন। প্রতি বছর (রমজান মাসে) তাঁর কাছে একবার কুরআন পাশ করা হতো। তবে তাঁর ইনতিকালের বছর তাঁর কাছে তা দু’বার পেশ করা হয়। [১৭৬৯] উবাই বিন কা’ব (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাদানের শেষ দশ দিন ই‘তিকাফ করতেন। তবে তিনি কোন এক বছর এ সময় সফরে অতিবাহিত করেন। এরপর পরবর্তী বছর তিনি বিশ দিন ই‘তিকাফ করেন। [১৭৭০]

【59】

যে ব্যক্তি ই’তিকাফে বসলো এবং ই’তিকাফের কাযা সম্পর্কে।

আয়িশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই‘তিকাফ করার ইচ্ছা করলে ফজরের সলাত পড়ার পর ই’তিকাফের উদ্দেশ্যে নির্ধারিত স্থানে প্রবেশ করতেন। তিনি রমাদানের শেষ দশদিন ই‘তিকাফ করার ইচ্ছা করলেন এবং তাঁর জন্য একটি বেষ্টনী তৈরি করার নির্দেশ দিলেন। আয়িশা (রাঃ)-ও তাঁর জন্য একটি বেষ্টনী তৈরির নির্দেশ দেন। অতএব তার জন্যও বেষ্টনী তৈরি করা হলো। হাফসা (রাঃ)-ও একটি বেষ্টনী তৈরির নির্দেশ দিলে তাঁর জন্যও তা তৈরি করা হলো। যয়নাব (রাঃ) তাদের দু’জনের বেষ্টনী দেখে আরেকটি বেষ্টনী তৈরির নির্দেশ দেন এবং তাঁর জন্যও তা তৈরি করা হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে বলেন, তোমরা কি পুণ্য লাভের উদ্দেশ্যে এমনটি করছো! এরপর তিনি আর রমজান মাসে ই‘তিকাফ করলেন না, পরে শাওয়াল মাসের দশ দিন ই‘তিকাফ করেন। [১৭৭১]

【60】

এক দিন অথবা এক রাত ই‘তিকাফ করা।

উমার (রাঃ) উমার (রাঃ), জাহিলী যুগে তার এক রাত ই‘তিকাফ করার মানত ছিল। তিনি এ সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি তাকে ই‘তিকাফ করার নির্দেশ দেন। [১৭৭২]

【61】

ই‘তিকাফকারী মাসজিদের একটি স্থান নির্ধারণ করে নিবে।

আবদুল্লাহ্‌ বিন উমার (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমজান মাসের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন। নাফি’ (রহঃ) বলেন, আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) আমাকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ই’তিকাফের স্থানটি দেখিয়েছেন। [১৭৭৩] ইবনু উমার (রাঃ) ইবনু উমার (রাঃ) ই’তিকাফের ইচ্ছা করলে তার জন্য “উসতুওয়ানায়ে তাওবা”-এর পেছনে তাঁর বিছানা দেয়া হতো অথবা তাঁর খাট রাখা হতো। [১৭৭৪]

【62】

মাসজিদের অভ্যন্তরে তাঁবুতে ই‘তিকাফ করা।

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি তুর্কী তাঁবুর মধ্যে ই’তিকাফে বসেন, যার জানালায় টাঙ্গানো ছিলো চাটাইয়ের টুকরা। রাবী বলেন, তিনি তাঁর হাত দিয়ে চাটাইটি সরিয়ে বেষ্টনীর পাশে রাখেন, অতঃপর মাথা বের করে লোকদের সাথে কথা বলেন। [১৭৭৫]

【63】

ই’তিকাফকারির রোগীকে দেখতে যাওয়া ও জানাযায় উপস্থিত হওয়া।

আয়িশা (রাঃ) আমি ই’তিকাফরত অবস্থায় কেবলমাত্র প্রাকৃতিক প্রয়োজনে ঘরে যেতাম এবং ঘরে রোগী থাকলে হাঁটতে হাঁটতে তাকে দেখতে যেতাম। তিনি আরো বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই’তিকাফকালে প্রাকৃতিক প্রয়োজন ছাড়া ঘরে যেতেন না। [১৭৭৬] আনাস বিন মালিক (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ই‘তিকাফকারী জানাযায় শরীক হতে পারে এবং রোগীকেও দেখতে যেতে পারে। [১৭৭৭] তাহকীক আলবানীঃ বানোয়াট।

【64】

যে ই‘তিকাফকারী তার মাথা ধোয় এবং চুল আঁচড়ায়।

আয়িশা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই‘তিকাফরত অবস্থায় তাঁর মাথা আমার দিকে এগিয়ে দিতেন। আমি তা ধৌত করে দিতাম এবং আঁচড়িয়ে দিতাম। তখন আমি হায়িয অবস্থায় আমার ঘরে থাকতাম এবং তিনি মাসজিদে থাকতেন। [১৭৭৮]

【65】

ই‘তিকাফকারির সাথে তার পরিবার-পরিজনের সাক্ষাত করা।

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী সাফিয়্যাহ বিনতু হুইয়ায় (রাঃ) রমজান মাসের শেষ দশকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাসজিদে ই‘তিকাফ করেছিলেন। তখন সাফিয়্যা (রাঃ) তাঁর সাথে দেখা করতে আসেন এবং রাতের কিছুক্ষণ তাঁর সাথে কথাবার্তা বলেন। অতঃপর তিনি চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও তাকে বিদায় দেয়ার জন্য দাঁড়ান। সাফিয়্যা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অপর স্ত্রী উম্মু সালামাহ (রাঃ)-এর ঘরের নিকটবর্তী মাসজিদের দরজার কাছাকাছি পৌঁছলে দু‘জন আনসারী তাদেরকে অতিক্রম করে গেলেন এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সালাম দিয়ে তাড়াতাড়ি চলে যেতে লাগলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বলেন, থামো! এ হচ্ছে সাফিয়্যা বিনতু হুইয়ায়। তারা বলেন, সুবহানাল্লাহ, হে আল্লাহ্‌র রসূল! বিষয়টি তাদের জন্য কঠিন মনে হলো। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, শয়তান আদম-সন্তানের শিরা-উপশিরায় রক্ত প্রবাহের মত ধাবিত হয়। আমি আশঙ্কা করছিলাম, শয়তান তোমাদের অন্তরে কোনরূপ কুধারণার সৃষ্টি করে কিনা? [১৭৭৯]

【66】

রক্তপ্রদর রোগিনীর ই'তিকাফ করা।

ইকরামাহ (রহঃ) আয়িশা (রাঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এক স্ত্রী তাঁর সাথে ই‘তিকাফ করেন। তিনি লাল ও হলদে বর্ণের রক্ত দেখতে পেতেন। তাই অধিকাংশ সময় তিনি তার নিচে একটি ছোট প্লেট পেতে রাখতেন। [১৭৮০]

【67】

ই‘তিকাফের সওয়াব।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই‘তিকাফকারী সম্পর্কে বলেন, সে নিজেকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে এবং নেককারদের সকল নেকী তার জন্য লেখা হয়। [১৭৮১]

【68】

যে ব্যক্তি দু’ ঈদের রাতে ইবাদাত করে।

আবূ উমামাহ (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি দু’ ঈদের রাতে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদাত করবে তার অন্তর ঐ দিন মরবে না, যে দিন অন্তরসমূহ মরে যাবে। [১৭৮২] তাহকীক আলবানীঃ বানোয়াট।