15. কুরআন

【1】

কুরআন স্পর্শ করার জন্য ওযূর নির্দেশ

আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বাকর ইবনু হাযম (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আমর ইবনু হাযমের কাছে যে পত্র লিখেছিলেন তাতে এটাও লিখিত ছিল যে, পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কুরআনকে যেন কেউ স্পর্শ না করে। (‘আমর বিন হাযেম (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি ইমাম হাকেম বর্ণনা করেছেন। ১/৫৫২, বাইহাকী, কুবরা ১/৮৭, হাদীসটি আল্লামা আলবানী সহীহ বলেছেন [ইরওয়া ১২২]) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, কুরআন শরীফকে জুয্বদান-এর ফিতা ধরে অথবা বালিশের উপর রেখে যেন উত্তোলন না করে, তবে পবিত্রতাবস্থায়। যদি তা (ফিতা ধরে এবং বালিশের উপর কুরআন রেখে ওযূ ছাড়া স্পর্শ করা) যায়েজ হত, তবে জিলদকেও পবিত্রতা ছাড়া স্পর্শ করা যেত। আর এটা এই কারণে মাকরূহ করা হয়নি যে, যে ব্যক্তি কুরআন উঠাচ্ছে তার হাতে এমন কোন জিনিস আছে যাদ্বারা’ এটা অপরিষ্কার হয়ে যাবে। অপবিত্র অবস্থায় উহা উঠান মাকরূহ, এই হুকুম করা হয়েছে কুরআন শরীফের তাযীম ও সম্মানার্থে। ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন [১] , لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ এই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে সর্বোত্তম যা আমি শুনেছি তা হল যেরূপ সূরা ‘আবাসা’তে ইরশাদ করা হয়েছে كَلاَّ اِنَّهَا تَذْكِرَةٌ فَمَنْ شَاءِ ذَكَرَهُ فِى صُحُفٍ مُكَرَّمَةٍ مَرْفُوعَةٍ مُطَهَّرَةٍ . এই প্রকার আচরণ অনুচিত, ইহা উপদেশবাণী; যে ইচ্ছা করবে সে ইহা স্মরণ রাখিবে। উহা আছে মহান উন্নত মর্যাদাসম্পন্ন পবিত্র গ্রন্থে, মহান, পুতচরিত্র লিপিকারদের হস্তে। (৮০/১১-১৫)

【2】

ওযূ ব্যতীত কুরআন পাঠে অনুমতি

এক সময় উমার (রা) এমন এক সম্প্রদায়ের মধ্যে ছিলেন, যারা কুরআন পাঠ করতেছিলেন, (ইতিমধ্যে) তিনি প্রস্রাব-পায়খানার আবশ্যকে গমন করলেন, পুনরায় প্রত্যাবর্তন করলেন এবং কুরআন পাঠ করতে শুরু করলেন। (এটা দেখে) এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, হে আমিরুল মু’মিনীন! আপনি (কুরআন) পাঠ করতেছেন অথচ আপনি বে-ওযূ। তখন উমার (রা) বললেন এইরূপ ফত্ওয়া কে দিয়েছে? মুসায়লামা কি? (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【3】

তাহযিবুল কুরআন

আবদুর রহমান ইবনু আবদিল কারী (র) তিনি বলেছেন, উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বলেন, যার রাত্রের (নির্দিষ্ট তিলাওয়াতের) অংশ ছুটে যায়, সে উহা যোহরের নামাযের পূর্ব পর্যন্ত (সময়ে) পড়ে নিবে; তবে তার সে ওযীফা যেন ছুটেনি (রাবী বলেন) অথবা তিনি বলেছেন, যেন তা পূর্ণ করেছে। (সহীহ, মুসলিম ৭৪৭) ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ (র) আমি ও মুহাম্মদ ইবনু ইয়াহইয়া ইবনু হাব্বান (র) (এক জায়গায়) বসা ছিলাম। তারপর মুহাম্মদ ইবনু ইয়াহইয়া এক ব্যক্তিকে ডাকলেন এবং বললেন, আপনার পিতা হতে যা শুনেছেন তা আমার কাছে বলুন। সে ব্যক্তি বললেন, আমাকে আমার পিতা বলেছেন তিনি একবার যায়দ ইবনু সাবিত (রা)-এর কাছে গেলেন; তারপর তাঁকে বললেন, সাত দিনে কুরআন পাঠ (খতম) করা সম্বন্ধে আপনি কি মনে করেন? (উত্তরে) যায়দ (রা) বললেন, ভাল। কিন্তু পনর অথবা বিশ দিনে পাঠ (শেষ) করা আমার কাছে অতি পছন্দনীয়। আর তুমি এর কারণ কি জানতে চাইলে শোন (তিনি বললেন), এটা এজন্য যে, (কুরআনকে) থেমে থেমে পড়লে আমি কুরআনের মর্ম বোঝার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করতে পারব। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【4】

কুরআন সম্পর্কীয় বর্ণনা

আবদুর রহমান ইবনু আবদিল কারী (র) আমি উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-কে বলতে শুনেছি হিশাম ইবনু হাকিম ইবনু হিযামকে সূরা আল-ফুরকান আমি যেভাবে পড়ে থাকি উহার ভিন্নরূপ পড়তে শুনলাম। অথচ রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সে সূরাটি পড়ায়েছেন। (আমি ক্রোধে) তাঁকে ধরবার উপক্রম করেছিলাম। কিন্তু নামায সমাপ্ত করা পর্যন্ত তাঁকে আমি সময় দিলাম। অতঃপর তাঁর চাদর দ্বারা আমি তাঁকে পেঁচিয়ে নিলাম। পরে তাঁকে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে নিয়ে এলাম এবং আরজ করলাম ইয়া রসূলাল্লাহ! সূরায়ে আল-ফুরকান আপনি আমাকে যেরূপ পড়ায়েছেন, আমি ইহাকে উহার ভিন্নরূপ পড়িতে শুনেছি। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তাঁকে ছেড়ে দাও। অতঃপর তাঁকে বললেন, তুমি পাঠ কর। তারপর আমি যেরূপ কিরাআত পড়িতে তাঁকে শুনেছি সে কিরাআতই তিনি পড়লেন। (এই কিরাআত শুনে) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এইরূপ অবতীর্ণ করা হয়েছে। অতঃপর আমাকে (উদ্দেশ্য করে) বললেন, তুমি পড়। আমি তা (ফুরকান) পাঠ করলাম। তিনি বললেন, এইরূপ অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং কুরআন সাত অক্ষরের উপর নাযিল হয়েছে, ফলে তোমরা তা হতে যেটি সহজ হয় সেটি পাঠ কর। (বুখারী ২৪১৯, মুসলিম ৮১৮) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কুরআনওয়ালা রশিতে বাঁধা উটওয়ালার মত; যদি উহাকে তদারক করে, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে; আর যদি উহাকে ছেড়ে দেয়, তবে উহা চেপে যাবে। (বুখারী ৫০৩১, মুসলিম ৭৮৯) আয়েশা (রা) (একবার) হারিস ইবনু হিশাম (রা) নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে প্রশ্ন করলেন আপনার কাছে ওহী কিরূপে আসে? রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উত্তরে) বললেন, কখনও কখনও আমার কাছে (ওহী) আসে ঘণ্টাধ্বনির মত, এই (প্রকারের অবতীর্ণ) ওহী আমার উপর অতি কঠিন হয়। তারপর আমা হতে (এই অবস্থার) অবসান হয়, (এই দিকে) তিনি যা বলেছেন আমি তা হিফাযত করেছি। আর কোন কোন সময় ফেরেশতা কোন ব্যক্তির রূপ ধারণ করে আমার কাছে আসেন এবং আমার সাথে কথা বলেন, তিনি যা বলেন আমি তা হিফাযত করি। আয়েশা (রা) বলেন, আমি অবশ্য রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি প্রচণ্ড শীতের দিনে তাঁর প্রতি ওহী অবতীর্ণ হচ্ছে। অতঃপর সেই অবস্থার অবসান হয়েছে, তখন তাঁর ললাট হতে ঘাম টপকাচ্ছে। (বুখারী ২, মুসলিম ২৩৩৩) হিশাম ইবনু উরওয়াহ (র) তার তিনি বলেছেন, عَبَسَ وَتَوَلَّى অবতীর্ণ করা হয়েছে আবদুল্লাহ ইবনু উম্মে মাকতুম (রা)-এর শানে। তিনি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলতে লাগলেনঃ হে মুহাম্মদ! আমাকে আপনার কাছে বসতে দিন, সে সময় নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে মুশরিকগণের নেতাদের একজন বড় নেতা উপস্থিত ছিল। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা হতে মনোযোগ ফিরিয়ে সে নেতা ব্যক্তির দিকে মনোনিবেশ করলেন এবং বলছিলেন হে আবূ ফুলান (অমুকের পিতা), আমি যা বলি তাতে কোন ত্রুটি দেখেছ কি? (উত্তরে) সে বলছিলঃ মূর্তির কসম, না, আপনি যা বলেন তাতে কোন প্রকার ত্রুটি দেখছি না। অতঃপর এই সূরা [১] عَبَسَ وَتَوَلَّى أَنْ جَاءَهُ الْأَعْمَى অবতীর্ণ হয়। (সহীহ, মুত্তাসিল, ইমাম তিরমিযী আয়েশা (রা) কর্তৃক হাদীসটি মুত্তাসিল সনদে বর্ণনা করেছেন [তিরমিযী ৩৩৩১] আলবানী (রহ) হাদীসটি সহীহ বলেছেন) যায়দ ইবনু আসলাম (র) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সফরসমূহের কোন এক সফরে পথ চলছিলেন। রাত্রে উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-ও তাঁর সাথে চলছিলেন। তখন উমার (রা) কোন বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করলেন। রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে কোন উত্তর দিলেন না। উমার (রা) পুনরায় সওয়াল করলেন। কিন্তু তিনি তার জবাব দিলেন না। অতঃপর তাঁর কাছে (উমার) আবার সওয়াল করলেন, কিন্তু (এইবারও) তিনি তার জবাব দিলেন না। তখন উমার (রা) (মনে মনে) বললেন, উমার, তোমার মাতা তোমাকে হারিয়ে ফেলুন (এবং কাঁদতে থাকুন অর্থাৎ তোমার সর্বনাশ)। তুমি বিনয় সহকারে রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে সওয়াল করলে, আর তিনি তোমাকে কোন জবাব দিলেন না। উমার (রা) বলেন, তারপর আমার উটকে আমি চালিত করলাম, এমন কি আমি লোকের আগে আগে চলে গেলাম। আমি আশংকা করলাম আমার বিষয়ে কুরআন আবতীর্ণ হতে পারে। তারপর আমি (বেশিক্ষণ) অবস্থান করিনি, (হঠাৎ) এর উচ্চৈঃস্বরে আহ্বানকারী আমাকে ডাকছিল। তিনি (উমার) বলেন, আমি আশংকা করছিলাম আমার বিষয়ে হয় তো কুরআন নাযিল হয়েছে। (উমার) বলেন, অতঃপর আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এলাম এবং সালাম করলাম। অতঃপর তিনি বললেন, অবশ্য এই রাত্রে আমার উপর একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে। নিঃসন্দেহে সে সূরাটি আমার কাছে অধিক প্রিয়, সে সব বস্তু অপেক্ষা যার উপর সূর্য উদিত হয়েছে। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন إِنَّا فَتَحْنَا لَكَ فَتْحًا مُبِينًا এই সূরাটি। (সহীহ, বুখারী ৪১৭৭) আবূ সাইদ খুদরী (রা) আমি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তোমাদের মধ্যে এক সম্প্রদায় বের হবে যারা তুচ্ছ মনে করবে তোমাদের নামাযকে তাদের নামাযের মুকাবেলায় এবং তোমাদের রোযাসমূহকে তাদের রোযার মুকাবেলায় এবং তোমাদের আমলসমূহকে তাদের আমলসমূহের মুকাবেলায়। তারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের গলদেশের নিচে যাবে না। তারা ধর্ম হতে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমন তীর শিকারকে ভেদ করে বের হয়ে যায়। তীরের ফলা দেখবে, তাতেও কোন কিছু দেখবে না, তীরের লাকড়ি দেখবে, সেখানেও কিছু দেখতে পাবে না, পালকের প্রতি লক্ষ করবে, পালকেও কিছু দেখবে না, ধনুকের ছিলার দিকে দেখবে, সেখানে কিছু রক্ত লেগেছে কিনা সন্দেহ করবে। (বুখারী ৫০৫৮, মুসলিম ১০৬৫) মালিক (র) আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা) সূরা বাকারা শিক্ষা করতে আট বৎসর অতিবাহিত করেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【5】

কুরআনের সিজদাসমূহ

আবূ সালমা ইবনু আবদুর রহমান (র) আবূ হুরায়রা (রা) তাঁদের উদ্দেশ্যে (সূরা: ইনশিকাক, ৮৪) إِذَا السَّمَاءُ انْشَقَّتْ পাঠ করলেন এবং এ সূরায় সিজদা করলেন। তিনি নামায সমাপ্ত করলে পর তদেরকে জানালেন যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সূরায় সিজদা করেন। (বুখারী ১০৭৪, মুসলিম ৫৭৮) মিসরের বাসিন্দাদের একজন নাফি’ (রা) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) একবার সূরা-এ হজ্জ পাঠ করলেন এবং তিনি এ সূরায় দু’টি সিজদা করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, নিশ্চয় এই সূরাকে দু’টি সিজদা দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করা হয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (র) আমি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা)-কে সূরা-এ হজ্জে দু’টি সিজদা করতে দেখেছি। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আ’রজ (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) (সূরা: আন-নাজম, ৫৩) و النَّجْمِ إِذَا هَوَى (সূরাটি) পাঠ করলেন এবং উহাতে সিজদা করলেন। তিনি দাঁড়ালেন এবং অন্য একটি সূরা পাঠ করলেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) উরওয়াহ (র) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) একটি সিজদার আয়াত পাঠ করলেন জুম’আ দিবসে। আর তিনি ছিলেন মিম্বরের উপর। অতঃপর তিনি অবতরণ করলেন এবং সিজদা করলেন এবং তাঁর সঙ্গে লোকেরাও সিজদা করলেন। (সহীহ, বুখারী ১০৭৭) পরবর্তী জুম’আয় তিনি সে সূরা পাঠ করলেন। লোকেরা সিজদার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে লাগলেন। উমার (রা) তখন বললেন, আপনারা অপেক্ষা করুন। আল্লাহ তা’আলা আমাদের উপর সিজদা ফরয করেননি, তবে আমরা যদি ইচ্ছা করি তা স্বতন্ত্র কথা। (এটা শুনে) তাঁরা আর সিজদা করলেন না। তিনি তাঁদেরকে সিজদা হতে বিরত রাখলেন। মালিক (র) বলেন, সিজদার আয়াত মিম্বরের উপর পাঠ করলে, ইমামের মিম্বর হতে অবতরণ করে সিজদা করার প্রতি (আমাদের) আমল নেই (অর্থাৎ মিম্বর হতে অবতরণ জরুরী নয়)। মালিক (র) বলেন, আমাদের অভিমত এই যে, কুরআন শরীফে সিজদাসমূহের মধ্যে তাকিদী সিজদা হচ্ছে এগারটি। এগুলোর একটিও মুফাস্সালাতে নেই। মালিক (র) বলেন, সুজুদুল কুরআন (কুরআন শরীফে সিজদাসমূহের) হতে কোন সিজদার আয়াত ফজরের নামাযের এবং আসরের নামাযের পর পাঠ করা কারো পক্ষে উচিত নয়। কারণ ফজরের পর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত এবং আসরের পর (সূর্য) অস্ত যাওয়া পর্যন্ত নামায পড়িতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেন। আর সিজদাও নামাযে গণ্য, কাজেই কারো পক্ষে উচিত নয় যে, সেই দুই সময়ে কোন সিজদার আয়াত পাঠ করা। মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হয়েছে ঐ ব্যক্তি সম্বন্ধে যিনি একটি সিজদার আয়াত পাঠ করেন, আর একজন ঋতুমতী মহিলা তা শুনল। তবে সে মহিলা কি সিজদা করবে ? (উত্তরে) মালিক (র) বললেন, পুরুষ বা নারী, পবিত্রাবস্থা ব্যতীত সিজদা করবে না। ইয়াহ্ইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হয় একজন মহিলা সম্পর্কে যিনি সিজদার আয়াত পাঠ করেন, অন্য এক ব্যক্তি তা শুনতেছে। সে ব্যক্তির জন্য সিজদা করা জরুরী কি ? (উত্তরে) মালিক (র) বলেন, সিজদা করা এ ব্যক্তির জন্য জরুরী নয়। সিজদা ওয়াজিব হয় সে লোকের উপর যেসব লোক কোন ব্যক্তির সাথে নামাযে শরীক থাকেন এবং তাঁর পেছনে ইকতিদা করেন। অতঃপর তাঁদের ইমাম সিজদার আয়াত পাঠ করলে তাঁরাও তাঁর সাথে সিজদা করবেন। আর যে ব্যক্তি সিজদার আয়াত শুনেছে কোন লোকের মুখে (যিনি তা পাঠ করতেছেন), কিন্তু সে ব্যক্তি এ লোকের ইমাম নন, তাঁর জন্য এ সিজদা জরুরী নয়।

【6】

تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ এবং قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ পাঠ করা

আবূ সাঈদ খুদরী (রা) তিনি এক ব্যক্তিকে, قُلْ هُوَ اللهُ পাঠ করতে শুনলেন। সে বারবার তা পাঠ করছিল। ফজরে যখন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমতে হাযির হলেন, তখন তাঁর কাছে এ বিষয়ে উল্লেখ করলেন (আবূ সাইদ খুদরী) এই সূরা (পাঠ করা)-কে সাধারণ আমল মনে করছিলেন। (এটা শুনে) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর শপথ, নিশ্চয় এই সূরাটি কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান মর্যাদা রাখে। (সহীহ, বুখারী ৫০১৩) আল-ই-যায়দ ইবনু খাত্তাবের মাওলা ওবায়দ ইবনু হুনায়ন (র) আমি আবূ হুরায়রা (রা)-কে বলতে শুনেছি আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আসলাম, তিনি এক ব্যক্তিকে قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ পড়তে শুনলেন। (এটা শুনে) তিনি বললেন, وَجَبَتْ (ওয়াজিব হয়েছে)। তখন আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম مَاذَا يَا رَسُولَ اللهِ (হে আল্লাহ্‌র রসূল, কি ওয়াজিব হয়েছে)। তিনি বললেন, জান্নাত। (রাবী) বলেন, আবূ হুরায়রা (রা) বলেছেন, (তারপর) আমি ইচ্ছা করলাম, সে ব্যক্তির কাছে যাই এবং তাঁকে শুভ সংবাদ শুনিয়ে দেই। কিন্তু আমার আশংকা হল, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে প্রাতঃকালীন আহার ছুটে যাবে। তাই আমি প্রাতঃকালীন আহার গ্রহণকে অগ্রাধিকার প্রদান করলাম। অতঃপর সে ব্যক্তির কাছে গেলাম, কিন্তু তখন তিনি (সে স্থান হতে) প্রস্থান করেন। (সহীহ, তিরমিযী ২৮৯৭, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [আত-তারগীব ওয়াত তারহীব ১৪৭৮]) হুমায়দ ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আউফ (র) খবর দিয়েছেন ইবনু শিহাব (র)-কে قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ আর تَبَارَكَ الَّذِ উহার (পাঠকারী) সাথীর পক্ষে ঝগড়া করবে। (বুখারী ৫০১৩, মুসলিম ১৯২৪)

【7】

আল্লাহর যিকরের বর্ণনা

আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ এ দোয়াটি দৈনিক একশত বার পাঠ করবে, এটা তাঁর জন্য দশটি গোলাম আযাদ করা সমতুল্য হবে তাঁর জন্য একশত নেকী হবে এবং তাঁর (আমলনামা) হতে একশত গুনাহ মিটিয়ে দেয়া হবে আর সেদিন সন্ধা পর্যন্ত এটা তাঁর জন্য শয়তান হতে রক্ষাকবচ হবে; আর সে যে আমল পেশ করেছে অন্য কেউ তা হতে শ্রেষ্ঠ কোন আমল পেশ করে নি একমাত্র সে ব্যক্তি ব্যতীত যে ব্যক্তি (তাঁর) এই আমল অপেক্ষা অধিক আমল করেছে। (বুখারী ৩২৯৩, মুসলিম ২৬৭১) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ দৈনিক একশত বার পাঠ করবে তাঁর পাপসমূহ মাফ করে দেয়া হবে, যদি তা সাগরের ফেনার পরিমাণও হয়। (বুখারী ৬৪০৫, মুসলিম ২৬৯১) আবূ হুরায়রা (রা) যে ব্যক্তি প্রতি নামাযের শেষে বলবে سُبْحَانَ اللهِ তেত্রিশ বার, اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ তেত্রিশ বার এবং اَللهُ اَكْبَرُ তেত্রিশ বার আর لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ তাঁর গুনাহ মাফ করা হবে, যদিও তা সাগরের ফেনা পরিমাণও হয়। (সহীহ মারফু, মুসলিম ৫৯৭) উমারা ইবনু সাইয়্যাদ (রা) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র)-কে বলতে শুনেছেন, ‘বাকিয়াতুস সালিহাত’ (যা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে) সম্পর্কে তিনি বলেছেন, اللهُ أَكْبَرُ وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ হচ্ছে বাকিয়াতুস সালিহাত। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবুদ্দারদা (রা) আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেব না তোমাদের আমলসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম আমলের, যা তোমাদেরকে সর্বাপেক্ষা উচ্চ মর্যাদায় সমাসীনকারী এবং তোমাদের প্রভুর সর্বাপেক্ষা পবিত্র, সে আমলের আর (যা) তোমাদের জন্য স্বর্ণ ও রৌপ্য দান করা হতে উত্তম এবং তা উত্তম তোমাদের জন্য এটা হতে যে, তোমরা তোমাদের শত্র“র সাথে যুদ্ধ কর, ফলে তারা তোমাদেরকে হত্যা করে এবং তোমরা তাদের গর্দান কাট। উপস্থিত (লোকেরা) বললেন, হ্যাঁ, বলুন। তিনি বললেন, এ আমল হচ্ছে ذِكْرِ اللهِ (আল্লাহর যিকির)। (সহীহ মারফু, তিরমিযী ৩৩৭৭, ইবনু মাজাহ ৩৭৯০, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহ আল-জামে’ ২৬২৯) যিয়াদ ইবনু আবি যিয়াদ (র) বলেন, আবূ আবদুর রহমান মুআয ইবনু জাবাল (রা) বলেছেন, আল্লাহর যিকির অপেক্ষা আযাব হতে অধিক নাজাত প্রদানকারী কোন আমল আদম সন্তান সম্পাদন করেনি। রিফায়া ইবনু রাফি’ (রা) আমরা একদিন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে নামায আদায় করছিলাম, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকূ হতে মাথা উঠালেন سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বললেন, তাঁর পশ্চাতে এক ব্যক্তি বলল, رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ অতঃপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায সমাপ্ত করলেন, তখন বললেন, এখন মুতাকাল্লিম (তসবীহ পাঠকারী) কে ছিল ? সে ব্যক্তি বলল, আমি, ইয়া রসূলুল্লাহ ! অতঃপর রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি অবশ্য ত্রিশোর্ধ ফেরেশতাকে দেখেছি, তাঁদের মধ্যে এটাকে সর্বপ্রথম কে লিপিবদ্ধ করবেন, এটা নিয়ে তারা খুব তাড়াহুড়া করতেছেন। (সহীহ, বুখারী ৭৯৯)

【8】

দু’আ

আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রত্যেক নবীর জন্য একটি (মাকবুল) দু’আ রয়েছে. যে দু’আ তিনি করে থাকেন। আমি ইচ্ছা করেছি আমার (জন্য নির্ধারিত) দু’আটি গোপন রাখবার আখেরাতে আমার উম্মতের সুপারিশের উদ্দেশ্যে। (বুখারী ৬৩০৪, ৬৩০৫, মুসলিম ১৯৭) ইয়াহইয়া ইবনু সাইদ (র) তাঁর কাছে খবর পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করতে বলতেন, اَللّٰهُمَّ فَالِقَ الْإِصْبَاحِ وَجَاعِلَ اللَّيْلِ سَكَنًا وَالشَّمْسِ وَالْقَمَرِ حُسْبَانًا اقْضِ عَنِّي الدَّيْنَ وَأَغْنِنِي مِنْ الْفَقْرِ وَأَمْتِعْنِي بِسَمْعِي وَبَصَرِي وَقُوَّتِي فِي سَبِيلِكَ. “হে আল্লাহ তুমি ঊষার ঘটাও, রাতকে বিশ্রামের জন্য নির্ধারিত করেছ, গণনার জন্য সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছ, আমার ঋণ শোধ করে দাও, আমাকে অভাবমুক্ত কর; আমার দৃষ্টিশক্তি শ্রবণশক্তি এবং তোমার পথে জিহাদ করার শক্তি দ্বারা আমাকে উপকৃত কর”। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ দু’আ করার সময় এরূপ যেন না বলে اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِي إِنْ شِئْتَ اَللّٰهُمَّ ارْحَمْنِي إِنْ شِئْتَ হে আল্লাহ্, আপনি ইচ্ছা করলে আমাকে ক্ষমা করুন। বরং দৃঢ় প্রত্যয় দু’আ করবে, কারণ আল্লাহকে বাধ্য করবার মত কেউ নেই। (বুখারী ৬৩৩৮, মুসলিম ২৬৭৯) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের এক ব্যক্তির দু’আ কবূল করা হয় (যখন দু’আ করে) যদি সে তাড়াতাড়ি না করে। সে বলে আমি দু’আ করেছিলাম, কিন্তু আমার দু’আ কবূল করা হল না। (বুখারী ৬৩৪০, মুসলিম ২৭৩৫) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাদের প্রভু মহান ও মহিমান্বিত আল্লাহ্ অবতরণ করেন প্রতি রাত্রে দুনিয়ার আসমানে, যখন রাত্রের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে। অতঃপর বলেন, কে (আছে এমন) আমাকে ডাকবে ? আমি তাঁর ডাকে সাড়া দেব। কে (আছে এমন) আমার কাছে সওয়াল করবে ? আমি তাকে দান করব। কে (আছে এমন) ক্ষমা প্রার্থনা করবে ? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। (বুখারী ১১৪৫, মুসলিম ৭৫৮) উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রা) আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পার্শ্বে (একবার) নিদ্রিত ছিলাম। রাত্রির এক অংশে আমি তাঁকে হারিয়ে ফেললাম। তারপর (সন্ধান করতে করতে এক পর্যায়ে) আমার হাত দ্বারা তাঁকে স্পর্শ করলাম এবং আমি আমার হাত তাঁর উভয় কদমের উপর ন্থাপন করলাম। তিনি তখন সিজদায় ছিলেন এবং বলতেছিলেন اَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَجْطِكَ وَبِمَعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ. وَبِكَ مِنْكَ. لاَ اُحْصِى ثَنَاءً عَلَيْكَ. اَنْتَ كَمَا اَثْيْتَ عَلَى نَفْسِكَ. “আমি আপনার ক্রোধ হতে আপনার সন্তুষ্টির, আপনার আযাব হতে আপনার ক্ষমার শরণ নিচ্ছি। আপনার শরণ নিচ্ছি আপনার দ্বারা আপনারই পক্ষ হতে। আপনার প্রশংসার উপযুক্ত হক আমি আদায় করতে পারব না। আপনি সেরূপ যেরূপ আপনি স্বয়ং নিজের সত্তার প্রশংসা করেন।” (সহীহ, মুসলিম ৪৮৫, তবে ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ ইবনু কুরায়য (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দু’আর মধ্যে সর্বোত্তম দু’আ হল আরাফাতের দিবসের দু’আ, আর উত্তম যা আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণ বলেছেন, তা হচ্ছে, لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ. (তিরমিযী ৩৫৮৫, আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন [সহীহ আল-জামে’ ৩২৭৪]) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে (নিম্নে বর্ণিত) এই দু’আটি কুরআনের সূরা যেরূপ শিক্ষা দিতেন সেরূপ শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, اَللّٰهُمَّ اِنِّىِ اَعْوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ. وَاَعُودُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ. وَاَعُوذُبِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسيِحِ الدَّجَّالِ. وَاَعُو ذُبِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ. হে আল্লাহ্! আমি জাহান্নামের আযাব হতে, কবরের আযাব হতে, মসীহ দাজ্জালের ফিতনা হতে, জীবিত এবং মৃতের ফিতনা হতে আপনার শরণ নিচ্ছি। (সহীহ, মুসলিম ৫৮৮) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্য রাত্রে যখন (তাহাজ্জুদ) নামাযের জন্য দাঁড়াতেন, তখন বলতেন, اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيَّامُ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ أَنْتَ الْحَقُّ وَقَوْلُكَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ الْحَقُّ وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ وَالْجَنَّةُ حَقٌّ وَالنَّارُ حَقٌّ وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، اَللّٰهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَأَخَّرْتُ وَأَسْرَرْتُ وَأَعْلَنْتُ أَنْتَ إِلَهِي لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ হে আল্লাহ্! হামদ আপনারই জন্য, আপনি আসমান ও যমীনের জ্যোতি, আপনারই জন্য হামদ, আপনি আসমান ও যমীনের রক্ষক, আপনারই জন্য হামদ, আসমান ও যমীনের এবং এতদুভয়ে যা কিছু সকলেরই প্রভু আপনি। আপনি সত্য, আপনার বাণী সত্য, আপনার ওয়াদা সত্য, আপনার সাক্ষাৎ সত্য, জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য, কিয়ামত সত্য। হে আল্লাহ্! আপনার প্রতি আমি অনুগত হয়েছি, আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনার উপরই তাওয়াক্কুল করেছি, আপনার দিকেই রুজু করেছি, আপনার জন্যই আপনার শত্রুদের সাথে বিবাদ করেছি এবং আপনারই কাছে বিচার প্রার্থনা করেছি, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন আমার পূর্বের ও পরের পাপসমূহ, আমার গোপন ও প্রকাশ্যে কৃত অপরাধসমূহ। আপনিই আমার মা’বুদ আপনি ব্যতীত অন্য কোন মা’বুদ নেই। (বুখারী ১১৬০, মুসলিম ৭৬৯) আবদুল্লাহ্ ইবনু জাবির ইবনু আতিক (র) আমাদের নিকট আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) এলেন বনু মুআবিয়াতে-এটা আনসারগণ অধ্যুষিত একটি লোকালয়। তিনি বললেন তোমাদের মসজিদের কোন স্থানে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করেছেন, তোমরা তা অবগত আছ কি? আমি তাঁকে বললাম হ্যাঁ এবং সে মসজিদের এক কিনারার দিকে ইশারা করলাম। তারপর তিনি আমাকে বললেন, তুমি জান কি সে তিনটি দু’আ কি ছিল যা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে স্থানে করেছিলেন? আমি বললাম হ্যাঁ। তিনি বললেন তবে আমাকে সে দু’আগুলির খবর দাও। অতঃপর আমি বললাম তিনি দু’আ করেন- (১) যেন তাদের উপর অমুসলিম শত্রুকে বিজয়ী না করা হয়। (২) আর দুর্ভিক্ষ দ্বারা যেন তাদেরকে ধ্বংস করা না হয়। এ দু’টি তাঁকে প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও দু’আ করেন, (৩) তাদের ধ্বংস তাদের পরস্পরের হানাহানি দ্বারা যেন না হয়। কিন্তু তাঁর এ দু’আ মঞ্জুর করা হয়নি। তিনি বললেন, তুমি ঠিক বলেছ। আবদুল্লাহ (রা) বললেন, তবে পরস্পরের কলহ বরাবর থাকবে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত। (সহীহ, মুসলিম ২৮৯০) যায়দ ইবনু ইসলাম (র) যে কোন ব্যক্তি দু’আ করে, সে তিনটির একটি অবশ্যই পাবে; হয় তো তার দু’আ কবুল করা হবে, অথবা প্রার্থিত বস্তু তার জন্য সঞ্চিত রাখা হবে, অথবা এই দু’আ তার গুনাহের কাফফারা হবে। (একই অর্থে ইমাম তিরমিযী মারফু সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন তিরমিযী ৩৯৫৭, এবং আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহীহ আল জামে ৫৭১৪]। التكفير অংশটুকু ব্যতীত আর التكفير শব্দ সহ তিনি যয়ীফ বলেছেন [যয়ীফ আল-জামে] ৫১৭৭)

【9】

দু’আর নিয়ম

আবদুল্লাহ ইবনু দীনার (র) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) আমাকে দেখলেন যখন আমি দু’আ করছিলাম এবং ইশারা করছিলাম দুই আঙুল দ্বারা, (প্রতি হাতের এক আঙ্গুল দিয়ে)। তিনি এরূপ করতে আমাকে নিষেধ করলেন। (روى النهي مرقوعًا তিরমিযী ৩৫৫৭, নাসাঈ ১২৭২, আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন [মিশকাত ৯১৩]) সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) নিঃসন্দেহে লোকের দরজা বুলন্দ করা হয় তার মৃত্যুর পর তার সন্তানের দু’আর কারণে। আর তিনি তাঁর হাত দ্বারা আসমানের দিকে ইশারা করে উভয় হাত উপরে উঠালেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) হিশাম ইবনু উরওয়াহ (র) তিনি বলেছেন وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلًا আয়াতটি দু’আ সম্বন্ধেই নাযিল করা হয়েছে। (বুখারী ২৩২৭, মুসলিম ৪৪৭, এবং ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) ইয়াহইয়া (র) বলেন, মালিক (র)-কে ফরয নামাযে দু’আ পাঠ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, ফরয নামাযে দু’আ করাতে কোন ক্ষতি নেই। মালিক (র) তাঁর নিকট খবর পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’আ করতেন ও বলতেন, اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَتَرْكَ الْمُنْكَرَاتِ وَحُبَّ الْمَسَاكِينِ وَإِذَا أَرَدْتَ فِي النَّاسِ فِتْنَةً فَاقْبِضْنِي إِلَيْكَ. “হে প্রভু! আমি যেন ভাল কাজ করি ও মন্দকে পরিত্যাগ করতে পারি এবং মিসকিনদের ভালবাসতে পারি, সে তওফিক আপনার নিকট হতে সাওয়াল করছি, আর যখন লোকদেরকে পরীক্ষায় ফেলতে ইচ্ছা করেন তখন আমাকে গোলযোগমুক্ত অবস্থায় আপনার নিকট গ্রহণ করে নিবেন।” غَيْرَ مَفْتُوْنٍ. (সহীহ, তিরমিযী ৩২৩৩, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন [সহহি আল-জামে ৫৯] মালিক (র) তাঁর নিকট খবর পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যেকোন আহ্বানকারী হিদায়াতের দিকে আহ্বান করবে তবে তাকে তার অনুসরণকারীদের সমান পুণ্য দেয়া হবে। অনুসরণকারীদের পুণ্য হতে বিন্দুমাত্র কম করা হবে না। আর যেকোন আহ্বানকারী পথভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করবে, তবে তার উপর অনুসরণকারীদের পাপসমূহের সমান পাপ বর্তাবে। তাতে অনুসরণকারীদের পাপসমূহের এতটুকুও কম করা হবে না। মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) দু’আ করেন, اَللّٰهُمَّ اجْعَلْنِي مِنْ أَئِمَّةِ الْمُتَّقِيْنَ. “হে প্রভু! আমাকে আদর্শ মুত্তাকিনদের অন্তভূক্ত কর।” (সহীহ, মুসলিম ২৬৭৪) মালিক (র) তাঁর নিকট খবর পৌঁছেছে যে, আবুদ্দারদা (রা) যখন মধ্যরাত্রে নামাযে দাঁড়াতেন তখন বলতেন, نَامَتْ الْعُيُونُ وَغَارَتْ النُّجُومُ وَأَنْتَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ. “চক্ষুসমূহ ঘুমিয়েছে, নক্ষত্ররাজি অস্ত গিয়েছে এবং তুমি চিরঞ্জীব, চিরন্তন, স্বাধিষ্ঠ।” (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【10】

ফজর ও আসরের পর নামায নিষিদ্ধ হওয়া

আবদুল্লাহ সুনাবিহি (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় সূর্য উদিত হয় এবং উহার সাথে শয়তানের শিং থাকে। অতঃপর যখন সূর্য ঊর্ধ্বে উঠে তখন শিং সূর্য হতে পৃথক হয়ে যায়। এর পর সূর্য যখন বরাবর হয়, তখন উহা শয়তানের শিং-এর সাথে মিলিত হয়। এর পর যখন সূর্য হেলে যায়, তখন উহা পৃথক হয়ে যায়। সূর্য যখন অস্তমিত হওয়ার সময় হয়, তখন উহা সূর্যের সাথে মিলিত হয়। অতঃপর যখন অস্তমিত হয়, তখন উহাকে ছেড়ে দেয়। এই সময়গুলোতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন। (যয়ীফ, নাসাঈ ৫৫৯, ইবনু মাজা ১২৫৩, আলবানী হাদীসটি যয়ীফ বলেছেন, [যয়ীফ আল-জামে’ ১৪৭২]) হিশাম ইবনু উরওয়াহ (র) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন সূর্যের উপর দিকের অংশ উদিত হয় তখন তোমরা নামায বিলম্বে পড়, সূর্য পরিষ্কারভাবে ওঠা পর্যন্ত। আর যখন সূর্য অস্ত যায় তখন নামাযকে পিছিয়ে দাও উহা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত। (বুখারী ৫৮৩, মুসলিম ৮২৯, ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) আলী ইবনু আবদুর রহমান (র) আমরা যোহরের পর আনাস ইবনু মালিক (রা)-এর নিকট গেলাম, তিনি আসর আদায় করতে দাঁড়ালেন। যখন তিনি নামায সমাপ্ত করলেন, তখন নামাযে তাড়াতাড়ি করার বিষয় উল্লেখ করলাম অথবা তিনি উল্লেখ করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি উহা মুনাফিকদের নামায, উহা মুনাফিকদের নামায, উহা মুনাফিকদের নামায। তাদের একজন বসে থাকে। যখন সূর্য হলুদ বর্ণের হয়ে যায় এবং উহা মিলিত হয় শয়তানের শিংয়ের সাথে। সে উঠে এবং চারটি ঠোকর মারে [১] । উহাতে আল্লাহকে স্মরণ করে অতি অল্প। (সহীহ, মুসলিম ৬২২) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন সূর্য উদয়ের সময় এবং অস্ত যাওয়ার সময় নামায আদায়ের ইচ্ছা না করে। (বুখারী ৫৮৫, মুসলিম ৮২৮) আবূ হুরায়রা (রা) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের পর সূর্য অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত নামায আদায় করতে নিষেধ করেন আর ফজরের পর সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত নামায আদায় করতে নিষেধ করেন। (সহীহ, মুসলিম ৮২৫) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) উমার ইবনু খাত্তাব (রা) বলতেন, তোমরা সূর্য উদয় এবং অস্ত যাওয়ার সময় তোমাদের নামায আদায় করার ইচ্ছা করো না। কারণ শয়তান তার শিং দু’টি বের করে সূর্য উদয়ের সাথে এবং উভয়কে (শিং) অস্তমিত করে সূর্যাস্তের সাথে। আর তিনি (উমার রাঃ) লোকদের এই (সময়) নামায আদায় করার কারণে প্রহার করতেন। (মারফু, বুখারী ৩২৭৩, মুসলিম ৮২৮) সায়িব ইবনু ইয়াযিদ (র) তিনি উমার ইবনু খাত্তাব (রা)-কে দেখেছেন যে, তিনি (উমার (রা) আসরের পর নামায আদায় করার কারণে মুনকাদির (র)-কে প্রহার করছেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) এককভাবে বর্ণনা করেছেন)