19. ই’তিকাফ

【1】

ই’তিকাফের বর্ণনা

নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রা) তিনি বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ই’তিকাফে থাকা অবস্থায় তাঁর শির আমার দিকে ঝুঁকিয়ে দিতেন, আমি তাঁর চুল চিরুনি দিয়ে আঁচড়িয়ে দিতাম। আর তিনি হাজতে-ইনসানী (পায়খানা-প্রস্রাবের আবশ্যক) ব্যতীত গৃহে প্রবেশ করতেন না। (বুখারী ২০২৯, মুসলিম ২৯৭) ‘আমরা বিন্ত আবদুর রহমান (র) আয়েশা (রা) যখন ই’তিকাফ করতেন, তখন তিনি রোগীর অবস্থা জিজ্ঞাসা করতে গমন করতেন না। কিন্তু চলার পথে না দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে নিতেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহ্ইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, ই’তিকাফকারী কোন প্রয়োজনে মসজিদের বাহিরে যাবে না এবং কোন কারণে বাহিরও হবে না। আর কাউকে সাহায্যও করবে না। কিন্তু যদি হাজতে-ইনসানীর (প্রস্রাব-পায়খানা) জন্য বাহির হয় তা বৈধ হবে। আর যদি কারো আবশ্যকের জন্য বের হওয়া জায়েয হত তবে রোগীর অবস্থা দেখা, জানাযার নামায পড়া ও উহার অনুগমন তার জন্য সর্বাগ্রে বৈধ হত (কিন্তু সেগুলোর জন্যও বের হওয়া নিষেধ)। ইয়াহ্ইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, ই’তিকাফকারী (প্রকৃত) ই’তিকাফকারী হবে না যতক্ষণ যেসব বস্তু হতে তার পরহেয করতে হয় সেসব হতে সে পরহেয না করবে (যথা রোগী দেখতে যাওয়া, জানাযার নামায পড়া, হাজতে-ইনসানী ব্যতীত গৃহে প্রবেশ করা)। মালিক (র) তিনি ইবনু শিহাব (র)-কে প্রশ্ন করলেন, এক ব্যক্তি সম্পর্কে যে ই’তিকাফ করতেছে, সে কি তার প্রস্রাব-পায়খানার প্রয়োজনে (গৃহের) ছাদের নিচে প্রবেশ করতে পারবে ? তিনি বললেন, হ্যাঁ, এতে কোন ক্ষতি নেই। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) ইয়াহ্ইয়া (র) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, আমাদের নিকট যাতে কোন ইখতিলাফ নেই তা এই যে, যে সকল মসজিদে জুম’আর নামায পড়া হয়, সেই সকল মসজিদে ই’তিকাফ করা মাকরূহ নয়। আর আমি মনে করি না যে, যে সকল মসজিদে জুম’আর নামায পড়া হয় না, সে সকল মসজিদে ই’তিকাফকে তিনি (মালিক র.) মাকরূহ বলেছেন। ব্যাপার হল এই যে, ই’তিকাফকারী যে মসজিদে ই’তিকাফ করতেছে উহা হতে বের হবে অথবা জুম’আ ছেড়ে দিবে, সে জন্য তিনি মাকরূহ বলেছেন। তাঁর মতে, যদি এরূপ মসজিদ হয় যাতে জুম’আ পড়া হয় না এবং ই’তিকাফকারীর উপর সেই মসজিদ ছাড়া অন্য কোন মসজিদে জুম’আতে যাওয়া ওয়াজিব না হয় তবে সেই মসজিদে ই’তিকাফ করতে কোন দোষ নেই। কারণ আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, [১] وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ এতে সাধারণভাবে সকল মসজিদকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে এবং কোন মসজিদকে আল্লাহ্ নির্দিষ্ট করে দেননি। মালিক (র) বলেন, এজন্যই ই’তিকাফকারীর পক্ষে জুম’আ অনুষ্ঠিত হয় না সেইরূপ মসজিদে ই’তিকাফ করা জায়েয হবে, যদি মসজিদ হতে বের হয়ে জুম’আ মসজিদে যাওয়া তার উপর ওয়াজিব না হয়। মালিক (র) বলেন, যে মসজিদে ই’তিকাফ করেছে (ই’তিকাফকারী) সেই মসজিদেই রাত্রি যাপন করবে, তবে যদি তাঁর তাঁবু মসজিদের চত্বরের কোন চত্বরে হয়। মালিক (র) বলেন, আমি শুনি নাই, ই’তিকাফকারী রাত্রি যাপন করার জন্য কোন কিছু নির্মাণ করবে কিন্তু তার রাত্রি যাপন হবে মসজিদে অথবা মসজিদের চত্বরে। মসজিদ ব্যতীত অন্যত্র রাত্রি যাপন সে করবে না, এর প্রমাণ হল আয়েশা (রা)-এর উক্তি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ই’তিকাফ করতেন তখন হাজতে-ইনসানী ছাড়া গৃহে প্রবেশ করতেন না। মালিক (র) বলেন, কেউ মসজিদের ছাদের উপর ই’তিকাফ করবে না এবং সাওমাআতেও (মিনার) না। মালিক (র) বলেন, ই’তিকাফকারী যেই রাত্রে ই’তিকাফের ইচ্ছা করেছে, সেই রাত্রের সূর্যাস্তের পূর্বে ই’তিকাফের স্থানে প্রবেশ করবে যাতে যে রাত্রে ই’তিকাফ করবে, সে রাত্রের প্রথম অংশকে সে ই’তিকাফ দ্বারা মুবারকবাদ জানাতে পারে। মালিক (র) বলেন, ই’তিকাফকারী নিজের ই’তিকাফে মশগুল থাকবে ই’তিকাফ ভিন্ন তিজারত বা অন্যকিছুর দিকে যে সবের প্রতি মশগুল হওয়া যায় সেদিকে মনোযোগী হবে না। ই’তিকাফকারীর পক্ষে তার কোন আসবাব অথবা পরিবারের উপকারী ও উপযোগী কোন কাজ, তার মাল বিক্রয় অথবা অন্য কোন কাজ যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে না (এই জাতীয়) নিজের কোন আবশ্যকে নির্দেশ দেয়াতে কোন ক্ষতি নেই। এতে কোন দোষ নেই, যদি তিনি ছোটখাট কাজের জন্য কোন ব্যক্তিকে সেই কার্য সমাধা করতে নির্দেশ দেন। মালিক (র) বলেন, কোন আহলে ইলম কর্তৃক ই’তিকাফে কোন শর্ত আরোপ করতে আমি শুনিনি। ই’তিকাফ অন্যান্য আমলের মত একটি আমল; যথা নামায, রোযা, হজ্জ এবং অন্যান্য যা এ সকল আমলের অনুরূপ এবং যা উহাদের মধ্যে ফরয অথবা নফল। (শরীয়তের) এই সকল আমলের মত ই’তিকাফও একটি আমল। যে ব্যক্তি এর কোন আমলে প্রবেশ করবে, সে প্রতিষ্ঠিত সুন্নত মুতাবিক আমল করবে। মুসলমানগণ যে তরীকায় চলেছেন সে তরীকা ছাড়া এতে নূতন কোন পন্থা আবিষ্কার করার অধিকার তার নেই। না কোন শর্ত আরোপ করবে, না কোন বিদ’আত সৃষ্টি করবে। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ই’তিকাফ করেছেন, উহা হতে মুসলমানরা ই’তিকাফের সুন্নত অবগত হয়েছেন। ইয়াহ্ইয়া (রা) বলেন, মালিক (র) বলেছেন, ই’তিকাফ এবং মসজিদে অবস্থান এক সমান। আর গ্রাম ও শহরের লোকের ই’তিকাফ এক সমান (আহকামের ব্যাপারে)।

【2】

যা ছাড়া ই’তিকাফ হয় না

মালিক (র) তাঁর কাছে খবর পৌঁছেছে যে, কাসিম ইবনু মুহাম্মদ (র) ও আবদুল্লাহ্ ইবনু উমার (রা)-এর মাওলা নাফি’ (র) বলেছেন, ই’তিকাফ জায়েয নয় রোযা ব্যতীত, কারণ কুরআনে ইরশাদ হয়েছে وَكُلُوْا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمْ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ مِنْ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنْ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ إِلَى اللَّيْلِ وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ . আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাত্রির কৃষ্ণ রেখা হতে উষার শুভ্র রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়। অতঃপর নিশাগমন-পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। তোমরা মসজিদে ই’তিকাফরত অবস্থায় তাদের সাথে সঙ্গত হইও না। ২ ১৮৭ আল্লাহ তা‘আলা ই‘তিকাফের উল্লেখ করেছেন রোযার সাথে। মালিক (র) বলেন, আমাদের নিকট মাসআলা অনুরূপ। রোযা ব্যতীত ই‘তিকাফ হয় না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)

【3】

ই’তিকাফকারীর ঈদের উদ্দেশ্যে গমন

সুমাই (র) আবূ বক্‌র ইবনু আবদুর রহমান (র) ই’তিকাফ করতেন এবং তিনি স্বীয় প্রয়োজনে মালিক ইবনু ওয়ালিদ (র)-এর গৃহে ছাদওয়ালা একটি হুজরায় গমন করতেন, অতঃপর তিনি ঈদের জামাআতে মুসলমানদের সাথে উপস্থিত হওয়ার পূর্বে ই’তিকাফ হতে বের হতেন না। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) যিয়াদ (র) মালিক (র) হতে যিয়াদ (র) বর্ণনা করেন তিনি কিন্তু আহলে ইলমকে দেখেছেন, তাঁরা রমযানের শেষ দশ দিন যখন ই’তিকাফ করতেন তখন মুসলমানদের সাথে ঈদুল ফিতরে হাজির না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের পরিজনের নিকট ফিরতেন না। মালিক (র) বলেন, জ্ঞান ও গুণের আধিকারী আমার পূর্ববর্তী মনীষিগণের নিকট হতে আমার নিকট এটা পৌঁছেছে যে, যখন তাঁরা ই’তিকাফ করতেন তখন অনুরূপ করতেন। এই ব্যাপারে আমি যা শুনেছি তন্মধ্যে এটা আমার কছে পছন্দনীয়।

【4】

ই’তিকাফ কাযা করা

‘আমরাহ্ বিন্ত আবদুর রহমান (র) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ই’তিকাফ করতে মনস্থ করলেন। অতঃপর যে স্থানে তিনি ই’তিকাফ করবার মনস্থ করেছিলেন সে স্থানে গমন করলে (সেখানে) কয়েকটি তাঁবু দেখতে পেলেন। (এটা) আয়েশা (রা)-এর তাঁবু, এটা হাফসা (রা)-এর তাঁবু এবং এটা যায়নব (রা)-এর তাঁবু। তিনি তাঁবু সম্পর্কে জেনে তাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। তাঁকে বলা হল, এটা আয়েশা, এটা হাফসা এবং যায়নব (রা)-এর তাঁবু। তারপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, এই সকলের দ্বারা তাঁরা কি পূণ্যের নিয়ত করিয়াছেন? অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং ই’তিকাফ করলেন না। পরে তিনি শাওয়াল মাসের দশ দিন ই’তিকাফ করলেন। (বুখারী ২০৩৪, মুসলিম ১১৭৩) যিয়াদ (র) বলেন, মালিক (র)-কে প্রশ্ন করা হল সে ব্যক্তি সম্পর্কে যে রমযানের শেষের দশদিনে ই’তিকাফের উদ্দেশ্যে মসজিদে প্রবেশ করেছে, অতঃপর একদিন অথবা দুইদিন অবস্থান করার পর পীড়িত হয়ে পড়ে এবং মসজিদ হতে বের হয়, সে সুস্থ হলে অবশিষ্ট দিনের ই’তিকাফ করা তার উপর ওয়াজিব হবে কি ? কিংবা উহার কাযা তার উপর আদৌ ওয়াজিব হবে না? ইহা তার উপর ওয়াজিব হলে কোন মাসে সে ই’তিকাফ করবে ? উত্তরে মালিক (র) বলেন, সুস্থ হয়ে গেলে রমযান বা পর-রমযানে তার উপর যে ই’তিকাফ ওয়াজিব হয়েছে তা কাযা করবে। আমার নিকট খবর পৌঁছেছে যে, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একবার রমযানে ই’তিকাফ করার মনস্থ করলেন। পরে তিনি মত পাল্টালেন এবং ই‘তিকাফ করলেন না। অতঃপর রমযান অতিবাহিত হলে শাওয়াল মাসে দশ দিন ই‘তিকাফ করলেন। নফল ই’তিকাফকারী ও যার উপর ই’তিকাফ ওয়াজিব হালাল ও হারামের বিষয়ে দু’জনের হুকুম এক অর্থাৎ যা হালাল দু’জনের জন্য হালাল এবং যা হারাম দু’জনের জন্য হারাম। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ই’তিকাফ ছিল নফল ই’তিকাফ এইরূপই আমার নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে। মালিক (র) বলেন, যে স্ত্রীলোক ই’তিকাফ করে এবং ই’তিকাফ থাকতে তার হায়েয (ঋতুস্রাব) হয়, সে স্ত্রীলোক নিজ ঘরে ফিরে যাবে। তারপর যখন পাক হবে সে মুহূর্তে মসজিদে উপস্থিত হবে। এতে বিলম্ব করবে না। অতঃপর তার ই’তিকাফের যে কয়দিন পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে উহা বাদ দিয়ে বাকি দিনগুলো ই’তিকাফ করবে। মালিক (র) বলেন, অনুরূপ যে স্ত্রীলোকের উপর একাধারে দুই মাসের রোযা ওয়াজিব তার যদি ঋতুস্রাব হয়, তৎপর পাক হয়, তবে সে যে রোযা পূর্বে রেখেছিল তার উপর ভিত্তি করে বাকি রোযা রাখবে। উহাতে বিলম্ব করবে না। ইবনু শিহাব (র) রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ই’তিকাফের অবস্থায় হাজতে ইনসানীর জন্য গৃহে প্রবেশ করতেন। (এমনটি ইমাম বুখারী বর্ণনা করেছেন ২০২৯, মুসলিম ৭১১, তবে, ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) মালিক (র) বলেন, ই’তিকাফকারী মাতাপিতার জানাযা এবং তাঁরা ব্যতীত অন্য কারো জানাযায় শরীক হওয়ার জন্য বের হবে না।

【5】

ই’তিকাফ অবস্থায় বিবাহ করা

মালিক (র) বলেন, ই’তিকাফকারীর পক্ষে নিকাহ (অর্থাৎ) আক্দ করাতে কোন ক্ষতি নেই যাতে সহবাস করা না হয়। ই’তিকাফকারী মহিলাকেও বিবাহ করা যায় সহবাস ব্যতীত কেবল খিতবার (প্রস্তাবের) মাধ্যমে। মালিক (র) বলেন, ই’তিকাফকারীর জন্য তার স্ত্রীদের সহিত দিনে যা হারাম রাতেও তা হারাম। মালিক (র) বলেন, কোন ব্যক্তির জন্য ই’তিকাফে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রীকে স্পর্শ (সহবাস) করা হালাল নয় এবং চুমু খাওয়া ইত্যাদি দ্বারা স্ত্রীকে উপভোগ করবে না। মালিক (র) বলেন, ই’তিকাফকারী পুরুষ ও স্ত্রীলোক দু’জনের জন্য ই’তিকাফ অবস্থায় নিকাহ্ করা মাকরূহ বলতে আমি কাউকেও শুনিনি যতক্ষণ সহবাস না হয়। আর রোযাদারের জন্য রোযা অবস্থায় বিবাহ করা মাকরূহ নয়। ই’তিকাফকারীর বিবাহ করা এবং মুহরিম-এর (যিনি হজ্জ উমরার উদ্দেশ্যে ইহরাম করেছেন) বিবাহ করার মধ্যে পার্থক্য এই যে, মুহরিম পানাহার করতে পারবে না। আর ই’তিকাফকারীর পুরুষ ও স্ত্রীলোক তারা দু’জনে তৈল ব্যবহার করতে পারবে, খোশবু ব্যবহার করতে পারবে। তারা প্রত্যেকে চুল কাটতে পারবে কিন্তু জানাযায় শরীক হতে পারবে না। জানাযা নামায পড়িতে পারবে না। আর তাঁরা রোগী দেখতে যেতে পারবে না। তাই বিবাহের ব্যাপারে দু’জনের (মুহরিম ও ই’তিকাফকারী) হুকুম ভিন্ন ভিন্ন। মালিক (র) বলেন, মুহরিম, ই’তিকাফকারী এবং রোযাদারের বিবাহের ব্যাপারে এটা পূর্ববর্তীদের নীতি ছিল।

【6】

লাইলাতুল ক্বদর-এর বর্ণনা

আবূ সাঈদ খুদরী (রা) তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমযানের মাঝের দশদিন ই’তিকাফ করতেন। তাঁর ই’তিকাফের বর্ণনা এই এক বৎসর তিনি ই’তিকাফ করলেন, অতঃপর যখন একুশের রাত্রি উপস্থিত হল, সে রাত্রির ফজরে ই’তিকাফ হতে বের হলেন। তিনি ফরমালেন যে ব্যক্তি আমার সাথে ই’তিকাফ করেছে, সে যেন শেষের দশ দিনও ই’তিকাফ করে। আমি এই রাত্রিতে শবে-ক্বদর মালুম করেছি। তারপর আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি সে রাত্রির ভোরবেলা আমাকে পানি ও কাদামাটিতে সিজ্দা করতে অনুভব করেছি। তাই তোমরা উহা তালাশ কর শেষের দশদিনে এবং উহার সন্ধান কর প্রতি বিজোড় রাত্রে। (বুখারী ২০২৭, মুসলিম ১১৬৭) আবূ সাঈদ (রা) বলেন, সেই রাত্রিতে বৃষ্টিপাত হয়, আর মসজিদ (তখন) খেজুরের ডালের। তাই বৃষ্টির পানি চুয়াইয়া মেঝেতে পড়েছিল। আবূ সাঈদ (রা) বলেন, আমার দুই নয়ন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছে। তিনি একুশে রাত্রির ফজরের নামায পড়ে ফিরলেন (এই অবস্থায় যে) তাঁর ললাট ও নাকে পানি ও কাদামাটির নিশান রয়েছে। উরওয়াহ্ ইবনু যুবায়র (র) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, রমযানের শেষ দশদিনে তোমরা শবে-ক্বদরের সন্ধান কর। (বুখারী ২০২০, ইমাম মুসলিম আয়েশা (রা) থেকে বর্ণনা করেন মুসলিম ১১৬৯, আর ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি মুরসাল) আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা) নিশ্চয় রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, তোমরা রমযানের শেষের সাত দিনে শবে-ক্বদরের অনুসন্ধান কর। (বুখারী ২০১৫, মুসলিম ১১৬৫) আবদুল্লাহ্ ইবনু উনায়স জুহানী (রা) তিনি রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে আরজ করলেন, আমি এমন এক ব্যক্তি যার বাড়ি অনেক দূরে অবস্থিত, তাই আমাকে আপনি একটি রাত বলে দিন যে রাত্রে আমি (ইবাদতের জন্য এই মসজিদে) আগমন করব। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে বললেন, তুমি রমযানের তেইশে রাত্রে আগমন কর। (সহীহ, মুসলিম ১১৬৮, ইমাম মালিক কর্তৃক বর্ণিত সনদে মুনকাতে তথা বিচ্ছিন্নতা রয়েছে) আনাস ইবনু মালিক (রা) রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বের হয়ে আমাদের কাছে এলেন, অতঃপর বললেন, আমাকে অবশ্য এই রাত্রিটি (শবে-ক্বদর) রমযানে দেখান হয়েছে, হঠাৎ দু’জন লোক বিতর্কে লিপ্ত হল, ফলে উহা (আমার স্মৃতি হতে) তুলে নেওয়া হয়। অতঃপর তোমরা উহাকে তালাশ কর নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাত্রে। (সহীহ, বুখারী ৪৯, আনাস (রা) থেকে উবাদা বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর নিকট রেওয়ায়ত পৌঁছেছে যে, নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের মধ্যে কিছু লোককে লাইলাতুল ক্বদর স্বপ্নে দেখানো হয় শেষের সাত রাত্রে। তারপর রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমি মনে করি তোমাদের স্বপ্ন শেষের সাতদিনের ব্যাপারে পরস্পর মুয়াফিক (সামঞ্জস্যপূর্ণ) হয়েছে। অতঃপর যে উহাকে (লাইলাতুল ক্বদর) তালাশ করে, সে যেন শেষের সাত দিনে উহাকে তালাশ করে। (বুখারী ২০১৫, মুসলিম ১১৬৫) মালিক (র) তিনি নির্ভরযোগ্য আহলে ইলমকে বলতে শুনেছেন রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর পূর্ববর্তী লোকদের আয়ু দেখান হয়। অথবা উহাতে যতটুকু আল্লাহ্ চেয়েছেন তা দেখান হয়। ফলে তিনি যেন তাঁর উম্মতের আয়ুকে সংক্ষিপ্ত মনে করলেন যার কারণে আমলের দিক দিয়ে তাঁরা পূর্ববর্তী ব্যক্তিদের সমপর্যায়ে পৌঁছাতে সক্ষম হবে না। অতঃপর আল্লাহ্ তাঁকে হাজার মাস হতে উত্তম লাইলাতুল ক্বদর প্রদান করেন। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন) মালিক (র) তাঁর কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, সাঈদ ইবনু মুসায়্যাব (র) বলতেন, যে ব্যক্তি শবে-ক্বদরের ইশার নামাযে উপস্থিত হয়েছে, সে উহার (শবে-ক্বদর) অংশ প্রাপ্ত হয়েছে। (হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) একক ভাবে বর্ণনা করেছেন)